ভালোবেসে ঠাঁই দিও পরাণে পর্ব-০৪

0
333

#ভালোবেসে_ঠাঁই_দিও_পরাণে

#পর্ব_০৪

#নুজাইফা_নূন

-” রুকু চোখের পানি মুছে রিমনের কল কেটে দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল দিলো।আর তখনি কোথা থেকে রাদ এসে রুকুর হাত থেকে ছো মে’রে ফোন কেড়ে নিলো।”

-” এটা কোন ধরনের অ’স’ভ্য’তা ?”

-” অ’স’ভ্য’তার কি দেখলে?”

-” আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলেন কেনো?”

-” নিয়েছি বেশ করেছি।তোমার সাহস হয় কি করে আমার ফোনে হাত দেওয়ার?বাই দ্যা ওয়ে তুমি আমার ফোনের পাসওয়ার্ড জানলে কিভাবে?”

-” মামার গায়ের রঙের মতো অন্য কারো গায়ের রং হলেই সেটা আপনার মামা হয়ে যাবে না মিস্টার।ভালো করে দেখুন এটা আপনার নয় , আমার ফোন। কাকতালীয় ভাবে আমাদের দুজনের ফোন এক‌ই রকম দেখতে। আপনার হাতের টা আমার ফোন।আর আপনার ফোন এতিমের মতো সোফায় পড়ে রয়েছে।”

-” রাদ দেখলো সত্যিই তার ফোন সোফায় পড়ে রয়েছে।সে আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।রাদ রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর রুকু আবারো ও হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল দিলো।এই ফোন টা রুকুর নিজের টাকায় কেনা।রুকু ছোট খাটো একজন লেখিকা।যেটা তার পরিবারের কেউ জানে না। নিজের একাকিত্বের সঙ্গী হিসেবে লেখালেখি কে বেছে নেয় সে। প্রথমে ফেসবুকে লেখালেখি শুরু করলেও এখন আর তার লেখা ফেসবুকে সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমানে সে একজন স্ক্রিপ্ট রাইটার। তার লেখা গল্প দ্বারা নাটক , শর্টফিল্ম তৈরি হয়।যার দরুন লেখালেখি থেকে মাস শেষে বেশ ভালো টাকা আসে রুকুর।রুকু প্রথমে ভাবে নিজের চিকিৎসার কাজে টাকাগুলো ব্যবহার করবে। পরক্ষণেই তার মনে হয় সে তো নিজে হাতে খেতে পারছে।নিজে পায়ে চলতে পারছে। কিন্তু তার ভাই তো সেসব কাজে অক্ষম।রুকু সব দিক বিবেচনা করে প্রতিমাসে টাকাগুলো খরচা না করে জমিয়ে রাখছে ভাইকে বড় কোনো ডক্টর দেখাবে বলে।রুকু রিমনের সাথে কথা বলা শেষ করে কিচেনে এসে দেখে তমা মির্জা রান্না করছেন।রুকু কি করবে বুঝতে না পেরে আমতা আমতা করে বললো,

-” আমি কি আপনাকে রান্নার কাজে সাহায্য করবো আন্টি?”

-” রুকুর আন্টি ডাকে তমা মির্জা সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তিনি অনেক টা ধমকের সুরে বললেন,কাকে আন্টি বললে তুমি? তুমি নাকি অনেক শিক্ষিত? এই তোমার শিক্ষার নমুনা? ”

-” রুকু ভাবলো তিনি এতো বড়ো বাড়ির মালকিন।তিনি হয়তো তার মতো সামান্য মেয়ের মুখে আন্টি ডাক শুনতে চায়ছেন না। আকাশকুসুম চিন্তা করে রুকু মাথা নিচু করে বললো, সরি ম্যাডাম আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।আমাকে ক্ষমা করে দিন।”

-” এই মেয়ে কি সব আবোল তাবোল বকছো? একবার আন্টি একবার ম্যাডাম। ইয়ার্কি করছো আমার সাথে?বরের মা আন্টি , ম্যাডাম হয় এটা কোন ব‌ইয়ের পাতায় লেখা আছে?আর একবার যদি মা বাদে তোমার মুখে আন্টি বা ম্যাডাম ডাক শুনেছি , তাহলে তোমার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে ।এই আমি বলে দিলাম।”

-“কথাটা শোনা মাত্রই খুশিতে চোখ ছলছল করে উঠলো রুকুর ।সে ভাবতে পারে নি তমা মির্জা এতো তাড়াতাড়ি তাকে নিজের পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিবে। রুকু খুশি তে তমা মির্জা কে জড়িয়ে ধরে বললো, আপনি অনেক বড় মনের মানুষ মা।আমি কখনো ভাবিনি আপনি আমার মতো একটা মেয়েকে আপনার পুত্রবধূ হিসেবে গ্ৰহন করবেন। যেখানে আমি এই বাড়ির বউ হবার যোগ্যতায় রাখি না।”

-“থাক হয়েছে! আমার নিয়ে না ভেবে রাদ কে নিয়ে ভাবো। ভুল করে হোক আর যেভাবেই হোক তোমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বিয়ে কোনো ছেলে খেলা নয় ।এটা রাদ কে তোমার বোঝাতে হবে। তোমাকেই রাদের মনে নিজের জন্য ভালোবাসার সঞ্চার করতে হবে মা।”

-” তমা মির্জার কথা শুনে রুকু মনে মনে বললো, যে মানুষ টা বিয়ের রাতেই বলে দিয়েছে সে আমার মতো শ্বেতী রোগী কে নিয়ে সংসার করতে পারবে না। সেই মানুষটার মনে কি আদৌ আমার জন্য ভালোবাসার সৃষ্টি হবে? আদৌ কি ভালোবেসে তার পরাণে ঠাঁই দিবে আমাকে?”

___________________________________________

-” দেখতে দেখতে রুকু রাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায় দুইটা দিন।রাদের ছুটি প্রায় শেষ হয়ে আসছে ।এর মধ্যে আবার রুকুর বাবা বারবার ফোন দিচ্ছেন তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু রাদ রুকুদের বাড়ি যেতে নারাজ।রাদ যাবে না শুনে রুকুর মন খারাপ হয়ে যায়।সে নিজেও যাবে না বলে রাজন শেখকে জানিয়ে দেয়। তমা মির্জা রুকুর মনের অবস্থা বুঝতে পারে।তিনি নিজের কাজ ফেলে রাদের রুমে এসে দেখেন রাদ কারো সাথে যেন ফোনে কথা বলছে।তমা মির্জা কে দেখে রাদ কল কে’টে দিয়ে বললো, কিছু বলবে ?”

-“তুমি একজন শিক্ষক। একজন সম্মানীয় ব্যক্তি। কিন্তু ইদানিং তুমি যা করছো তাতে মনে হচ্ছে তোমার মধ্যে একজন শিক্ষক হবার কোনো যোগ্যতা নেই। তুমি নিজেই যদি বড়দের সম্মান করতে না জানো।তাহলে বাচ্চাদের কি শিক্ষা দিবে তুমি? তোমার থেকে তোমার ছাত্র-ছাত্রীরা ঠিক কি শিখবে? রুকুর বাবা অসুস্থ্য অবস্থায় জামাই আদর করবেন বলে হাজার টাকা খরচা করে বাজার করেছেন।তিনি বারবার বলে দিয়েছেন আমি যেন তোমাকে আর রুকু কে সকাল সকাল ঐ বাড়িতে পাঠিয়ে দেই।তোমরা যাবে বলে আমি তাকে কথা দিয়েছি ।এখন তুমি যদি ঐ বাড়িতে না যাও আমার কথার কোনো দাম থাকবে ?”

-“ঠিক আছে আমি যাবো।তবে আমি সেখানে রাত্রি যাপন করতে পারবো না।আমি শুধু মাত্র মেয়েটাকে রেখে চলে আসবো।”

-” এটা ভালো দেখায় না বাবা। রুকু এমনিতেই মানুষের কটুক্তির স্বীকার হয়।এরপর যদি তুমি আবার রুকু কে একা রেখে চলে আসো ।তাহলে তারা আরো কথা শোনাবে রুকু কে।”

-” ঠিক আছে আমি তাকে সাথে করেই ফিরবো।”

-” তমা মির্জা রাদের কপালে চুমু দিয়ে বললো এইতো সোনা ছেলে আমার।আমি জানতাম আমার রাদ কখনো আমার কথার অবাধ্য হবে না।রাদ প্রতিত্তরে কিছু না বলে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। রাদ শা‌ওয়ার নিয়ে এসে দেখে তার প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা হয়েছে।রাদ বুঝতে পারে এটা রুকুর কাজ।রাদ মনে মনে বললো মেয়েটা অনেক পরিপাটি।সব কাজ বেশ গুছিয়ে করতে পারে। পরক্ষণেই রুকুর চেহারা তার সামনে ভেসে উঠতেই রাদ সমস্ত জিনিস এলোমেলো করে নিচে ছুড়ে ফেলে দিলো।রুকু তখন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তার বান্ধবী সাথীর সাথে প্রাইমারির পরীক্ষার বিষয়ে কথা বলছিলো।কয়েকমাস আগে রুকু প্রাইমারি তে আবেদন করেছিলো। গতকাল নাকি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।এটা নিয়েই দুই বান্ধবীর মধ্যে কথা হচ্ছিলো। রুমের মধ্যে কিছু পড়ার আ‌ওয়াজ শুনে ফোন কে’টে রুকু রুমে এসে দেখে রাদের জন্য তার গুছিয়ে রাখা জামাকাপড় , ওয়ালেট , ঘড়ি নিচে পড়ে রয়েছে।যা দেখে রুকু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-” এসবের মানে কি রাদ?”

-” বুঝতে পারছো না , নাকি বুঝতে চায়ছো না?আমি তোমাকে বারবার বলার পরেও আমার জিনিসে কেন হাত দিয়েছো তুমি?”

-” আপনার ভালোর জন্যই তো করেছিলাম।”

-” আমার ভালো খারাপ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি তোমার চরকায় তেল দাও।”

-” ঠিক আছে বলে রুকু রুম থেকে বেরিয়ে কয়েক কদম এগোনোর সাথে সাথেই ফ্লোরে পিচ্ছিল জাতীয় কিছুর উপর পা লেগে রুকু ঠাস করে পড়ে গেল।যার দরুন ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো রুকু।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে