ভালোবেসে ঠাঁই দিও পরাণে পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0
456

#ভালোবেসে_ঠাঁই_দিও_পরাণে

#অন্তিম_পর্ব

#নুজাইফা_নূন

-“আমার ভালো খারাপ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি তোমার চরকায় তেল দাও।”

-” ঠিক আছে বলে রুকু রুম থেকে বেরিয়ে কয়েক কদম এগোনোর সাথে সাথেই ফ্লোরে পিচ্ছিল জাতীয় কিছুর উপর পা লেগে রুকু ঠাস করে পড়ে গেল।যার দরুন ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো রুকু। রুকুর আর্তনাদ শুনে রাদ রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো রুকু নিচে পা ধরে বসে রয়েছে। চোখে মুখে ব্যাথার স্পষ্ট ছাপ ফুটে উঠেছে।রাজ কিছু একটা ভেবে রুকু কে পাঁজা কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে বসিয়ে দিয়ে বললো, কানা তুমি?দেখে চলতে পারো না? এক্ষুনি বড় কোনো অঘটন ঘটে যেতো পারতো।”

-” যা হবার আমার হতো তাতে আপনার কি আসে যায়? আপনি তো আর আমাকে ভালোবাসেন না। পুরুষ মানুষ আসলেই সৌন্দর্যের পুজারী।মনে হয় যেন সৌন্দর্য ধুয়ে তারা পানি খাবে।”

-” বেশি কথা না বলে দেখো হাঁটতে চলতে পারবে কিনা?নাকি ডক্টর কে কল করবো?”

-“ডক্টর ডাকার মতো তেমন কিছু হয় নি আমার। আমাকে নিয়ে আপনার এতো না ভাবলেও চলবে।”

-” তুমি ভাঙ্গবে তবু চমকাবে না । পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নাও।নয়তো বাবার বাড়ি তোমার একা একাই যেতে হবে।”

-” প্রায় ত্রিশ মিনিট পরে রুকু বোরকা হিজাব পরিধান করে নিচে এসে দেখে রাদ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রুকু কে দেখা মাত্রই রাদ হুংকার ছেড়ে বললো, তোমার কাছে সময়ের মূল্য না থাকলেও আমার কাছে সময়ের মূল্য অনেক বেশি।তোমাকে রেডি হবার জন্য পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিলো।সেখানে তুমি ত্রিশ মিনিট সময় ব্যয় করেছো।”

-” বাহ্ ! আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানেন না।আবার শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য দেখছি তর সইছে না আপনার।”

-” প্রতিত্তরে রাদ কিছু না বলে ড্রাইভার সিটে গিয়ে বসে পড়লো।রুকু ও কিছু না বলে চুপচাপ রাদের পাশের সিটে গিয়ে বসে ফোনে মনোযোগ দিলো। রাস্তায় তাদের মধ্যে আর কোনো কথা হলো না। রুকু মনোযোগ সহকারে তার পেজের কমেন্ট পড়ছিলো কে কি কমেন্ট করেছে। হুট করে রাদের গাড়ি থামিয়ে দেওয়ার জন্য রুকু ফোন থেকে মনোযোগ উঠিয়ে রাদের দিকে তাকালো।রাদ কিছু না বলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে বাজারের দিকে চলে গেলো।প্রায় এক ঘন্টা পরে রাদের দেখা মিললো।তবে রাদ একা নয়।তার সাথে হালকা পাতলা গড়নের কম বয়সী দুইটা ছেলে রয়েছে। একজনের হাতে রয়েছে মিষ্টি সহ নানা ধরনের ফলমূল।অন্য জনের হাতে রয়েছে বড় বড় দুইটা মাছ, বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি।এতো বাজার মিষ্টান্ন দেখে রুকুর চোখ বড়বড় হয়ে গেল।সে ভাবতে ও পারে নি রাদ তাদের জন্য এতো কিছু করবে।রাদ ছেলেগুলোর থেকে সবকিছু নিয়ে গাড়িতে রেখে দিয়ে দুজনের হাতে পাঁচশত টাকার দুইটা নোট ধরিয়ে দিলো।টাকা দেখে খুশি তে ছেলে দুটোর চোখ ছলছল করে উঠলো।তারা দুজনে বিনয়ের সাথে রাদ কে সালাম জানিয়ে প্রস্থান করলো।রাদ ড্রাইভিং সিটে এসে বসলে রুকু কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাদ বললো,

-” ভেবো না তোমাকে ভালোবেসে আমি এসব কিছু করেছি।যা কিছু করেছি আমার মানসম্মান রক্ষার্থে করেছি। বিয়ের পর প্রথম বার তোমাদের বাড়িতে যাচ্ছি। তোমাদের গ্ৰামের সবাই জানে তোমার বড়লোক চাকরিজীবী ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে।বড়লোক , চাকরিজীবী ছেলে হয়ে যদি এটুকু খরচা পাতি না করি তাহলে আর আমার সম্মান থাকলো কোথায় বলো?”

-” রুকু প্রতিত্তরে কিছু না বলে ফোনে মনোযোগ দিলো।”

___________________________________________

-” রুকুদের বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় বিকাল হয়ে যায়।রুকু গাড়ি থেকে নেমে দেখে তার মা ভাই তাদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।রুকু কালবিলম্ব না করে দৌড়ে গিয়ে ভাই কে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো , কেমন আছিস ভাই?”

-” রিমন মুখ ভার করে বললো, তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো।এখন তোমার মনে আমার জন্য একটু ও ভালোবাসা নেই। এখন তোমার সব ভালোবাসা ঐ লম্বু ব্যাডার জন্য।এই লম্বু ব্যাডা ভালো না। আপারে ফোনের মধ্যে বকা দিতে শুনেছি আছি। কথাটা শুনে লিমা বেগম ধমকের স্বরে বললেন, এটা কোন ধরনের বেয়াদবি রিমন? তোকে কতোবার বলেছি বড়দের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলবি। মানুষ টা দুলাভাই হয় তোর। ”

-” লিমা বেগম রিমন কে বকাবকি করছে দেখে রাদ এগিয়ে এসে বললো, আহ্ আন্টি! অসুস্থ্য বাচ্চা একটা ছেলেকে এইভাবে বকছেন কেন? ছোট মানুষ বুঝতে পারে নি।”

-” তুমি আর ওকে মাথায় তুলো না বাবা। ওকে বেশি লাই দিলে তোমার মাথায় চড়ে নাচতে শুরু করে দিবে।”

-” লিমা বেগমের কথা শুনে রাদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাজন শেখ এসে বললো, বুড়ি হয়ে গেলে তবু ও তোমার কাণ্ডজ্ঞান হলো না।মেয়ে জামাই কতো দূর থেকে এসেছে তুমি তাদের কে ভেতরে না নিয়ে গিয়ে এখনো রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছো?”

-” সরি সরি! ভুল হয়ে গেছে আমার।চলো বাবা ভেতরে চলো।”

-” রাদ গাড়ি থেকে সবকিছু বের করে রাজন শেখ আর লিমার হাতে দিলো।রাজন শেখ কিছু টা অবাক হয়ে বললো, এসবের দরকার কি ছিলো বাবা?তোমরা এসেছো তাতেই আমরা অনেক খুশি হয়েছি। আচ্ছা বাবা ভেতরে চলো।যদিও তোমাদের মতো এতো বড় বাড়ি না আমাদের। গরীবের ঘরে একটু মানিয়ে নিও বাবা।”

-” রাদ রাজন শেখ ,লিমা বেগমের ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হলো।সে মুচকি হেসে ভেতরে প্রবেশ করলো।রুকু রাদ কে নিজের রুমে নিয়ে আসলো।রাদ রুকুর রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। রুম টা খুব বেশি বড় নয়।তবে অনেক সুন্দর করে রুম টা গুছিয়ে রাখা হয়েছে। ততোক্ষণে রুকু বোরকা হিজাব খুলে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বললো, আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।”

-” রাদ বাধ্য ছেলের মতো ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।”

_______________________________________

-” রুকুর রুমে কোনো সোফা নেই।রাদ ডিনার শেষ করে রুমে এসে চিন্তায় পড়ে গেলো। বুঝতে পারছে না কে কোথায় থাকবে?রাদের ভাবনার মাঝে রুকু রুমে প্রবেশ করে বললো, নিশ্চয় এটা ভাবছেন যে আপনি কোথায় থাকবেন?নো টেনশন ডু ফুর্তি।আপনি আমাদের বাড়ির মেহমান। আমাদের বাড়িতে মেহমানদের কোনো অযত্ন অবহেলা হয় না।আপনি বিছানায় শুয়ে পড়ুন।”

-” তুমি কোথায় থাকবে ?”

-” আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না।আমি নিচে বিছানা করে থাকবো।”

-“তুমি বরং বিছানায় থাকো। ফ্লোরে থাকলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে তোমার।”

-” আপনার লাগবে না বুঝি?”

-” আমি পুরুষ মানুষ। মেয়েদের মতো ননীর পুতুল না । নিজের বাড়িতে নিজের সোফায় থাকতে হচ্ছে।আর এটাতো অন্যের বাড়ি।এখানে যে আমার ফ্লোরে থাকার জায়গা মিলছে এটাই অনেক।”

-“আপনার যদি সমস্যা না হয় আমরা দুজনেই বিছানায় থাকি? ”

-” ঠিক আছে।তবে একদম আমার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে না।”

-” রুকু দুজনের মাঝখানে একটা কোলবালিশ দিয়ে বললো ,রুকু গরীব হতে পারে।কিন্তু ছোটলোক না বলে রুকু রাদের থেকে বিপরীতমুখী হয়ে শুয়ে পড়লো।যা দেখে রাদ ও অন্য দিকে মুখ দিয়ে শুয়ে পড়লো। কিছু সময় অতিবাহিত হ‌ওয়ার এক পর্যায়ে দুজনেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।”

-” বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করতেই ঘুম থেকে গেলো রাদের।রাদ চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে রুকু তার বুকের উপর বিড়াল ছানার মতো লেপ্টে পড়ে রয়েছে। অথচ মেয়েটা রাতে কতো বড়ো মুখ করে বলেছিলো সে গরীব হতে পারে কিন্তু ছোট লোক না।”

________________

-” দেখতে দেখতে কে’টে গেলো পাঁচ মাস।রুকু রাদের সম্পর্কের অনেক উন্নতি হয়েছে। রাদের আর এখন রুকুর মুখের দিকে তাকালে বিরক্তি লাগে না। বরং সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বাসায় ফিরে রুকু কে দেখলে প্রশান্তি তে তার মনটা ভরে উঠে।হয়তো এটাই বিয়ে নামক পবিত্র সম্পর্কের জোর।এই পবিত্র সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে না চাইতেও একজন অন্যজনের প্রতি টান অনুভব করে। ঠিক এখন যেমন টা রাদ করে।রাদ এখন রুকু কে অনুভব করতে পারে।তার আশেপাশে থাকতে চায়। কিন্তু রুকু যেন তাকে পাত্তাই দেয় না।সে সেই বাসর রাতের কথা ধরেই পড়ে আছে। প্রতিদিন একবেলা নিয়ম করে ডিভোর্সের কথা মনে করিয়ে দেয়।রাদ নিজের কেবিনে বসে ভাবছে অনেক হয়েছে আর নয়। আজ এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে।রুকুর ভাবনায় রাদ ক্লাসেও মনোযোগ দিতে পারে না।সে কোনো মতো ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু রাদ রুমে এসে রুকু কে পায় না।রাদ নিচে আসতে যাবে তখনি তুলির রুম থেকে হাসাহাসির আ‌ওয়াজ পায়।রাদ না চায়তেও ভেতরে উঁকি দিয়ে রুকু কে প্রাণ খুলে হাসতে দেখে সে যেন থমকে গেল। আবার অবাক ও হলো তুলির সাথে তাকে এভাবে হাসাহাসি করতে দেখে।তুলি মেয়েটা প্রথম প্রথম রুকু কে পছন্দ করতো না।এমনকি তার হাতের পানি টুকু পর্যন্ত খেতো না। এরপর আবার তুলি তাদের বিয়ের পরের দিন যখন কিচেনের পাশে দাঁড়িয়ে তমা আর পাশের ফ্ল্যাটের মিলির কথা শুনে জানতে পারে রাদ তার নিজের আপন ভাই না। তখন থেকে যেন রুকুর প্রতি তার ঘৃণা আরো বেড়ে যায়।সে রুকু কে নানা ভাবে আঘাত করতে থাকে। কখনো ফ্লোরে তেল ফেলে, কখনো তার খাবারে লবণ, লঙ্কা গুঁড়ো মিশিয়ে কখনো বা তার জন্য রাখা খাবারে পানি ঢেলে দিয়ে। যদিও রুকু বুঝতে পেরেছিলো এসব তুলিও কাজ । তবু ও রুকু কিছু বলে নি। নিজের বোন মনে করে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। এভাবেই তুলির অত্যাচার চলতে থাকে কিছুদিন।তুলি সবার আড়ালে রিলেশন করতো। হুট করে একদিন তুলির বয়ফ্রেন্ড রাকিব তাকে নিজের বাবা মায়ের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেবার নাম করে একটা ক্লাবে নিয়ে এসে তুলি কে কুপ্রস্তাব দেয়‌।এক পর্যায়ে তুলি
রাকিবের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে তার উপর জবরদস্তি শুরু করে।আর তখনি রুকু পুলিশ নিয়ে এসে হাজির হয়।রুকু কে দেখে যেন তুলি প্রাণ ফিরে পায়।সে রুকু কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললো,

-” তুমি না থাকলে আজ হয়তো আমি শেষ হয়ে যেতাম।আমি তোমাকে এতো অপমান করেছি,তোমাকে আঘাত করেছি। আর তুমিই আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে ?”

-” রুকু তুলির পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, তুমি আমাকে পছন্দ নাই করতে পারো। কিন্তু আমি তোমাকে আমার নিজের বোন মনে করি। বোন হয়ে বোনের বিপদে এগিয়ে আসবো না?’

-” কিন্তু আমি তো তোমাকে কখনো রাকিবের ব্যাপারে কিছু বলি নি। তুমি কিভাবে জানলে?”

-” গতরাতে যখন তুমি রাকিবের সাথে কথা বলছিলে আমি তখন তোমার রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম।আর তখনি তোমাদের বেড়াতে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে পারি। এরপর যখন তুমি ফোন রেখে ওয়াশরুমে চলে যাও , আমি তোমার ফোন চেক করি। রাকিবের মতো একটা ছেলে তোমার বয়ফ্রেন্ড ভাবতেই আমার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠে। রাকিব ছেলেটা একদম ই ভালো নয়। মেয়েদের সাথে খারাপ আচরণ করার জন্য কয়েক বার জেলেও গিয়েছে।তোমরা কোথায় মিট করবে কখন বের হবে সেই ব্যাপারে জেনে আমি রুমে ফিরে আসি। সেদিন সারারাত তোমার টেনশনে আমি ঘুমোতে পারি না।পরের দিন যখন তুমি বের হ‌ও তোমাকে আমি ফলো করতে শুরু করি।আর যখনি দেখলাম তোমাকে রেস্টুরেন্ট থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছে তখনি আমার পুলিশ ফ্রেন্ড রাজ কে কল করি।ব্যাস হাতেনাতে ধরা পড়ে রাকিব।”

-” আজ যা হয়ে গেলো এই ব্যাপারে তুমি বাড়ির কাউকে কিছু বলো না আপু।আমি লজ্জায় তাদের সামনে মুখ দেখাতে পারবো না।”

-” আরে পাগলি এটা আবার বলে দিতে হয় নাকি? তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।আমি কাউকে এ ব্যাপারে কিছু বলবো না।”

-” আমি তোমার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। সেদিনের পর থেকে তুলির বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যায় রুকু।”

-” রাতে ডিনার শেষ করে রুকু তুলির রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।রাদ রুকু কে রুমে না পেয়ে তুলির রুমে গিয়ে দেখে বিছানায় রুকু শুয়ে রয়েছে। কিন্তু তুলি রুমে নেই।এই সুযোগে রাদ রুকু কে পাঁজা কোলে তুলে নিজের রুমে নিয়ে আসে। রুকু নামার জন্য ছটফট করলে রাদ রুকুর কপালে চুমু দিয়ে দেয়। রাদের এহেন কার্যে রুকু যেন জমে বরফ হয়ে যায়।তার মধ্যে এক রাশ লজ্জা এসে ভর করে।যা দেখে রাদ রুকুর হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে চুমু খেয়ে বললো,

-” আসলে ভালোবাসা কখনো ধর্ম বর্ণ গায়ের রং দেখে হয় না।এই কথাটা উপলব্ধি করতে বড্ড বেশি দেরি করে ফেলেছি আমি। বিশ্বাস করো যেদিন থেকে তোমাকে আমার মনের চোখ দিয়ে দেখতে শুরু করেছি , সেদিন থেকে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী তুমি। তোমার এই শ্বেতী দাগ তোমার সৌন্দর্য কে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।”

-” রুকু কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাদ রুকুর ঠোঁটে ‌আঙ্গুল ঠেকিয়ে বললো, হুঁশ আজ কোন কথা হবে শুধু ভালোবাসা বাসি হবে।চলো না রুকু পুরোনো সব ভুলে আমরা নতুন করে সবকিছু শুরু করি।চলো না আমরা একে অন্যের রঙ্গ নিজেদের গায়ে মাখিয়ে নেয়। দুজন দুজনের আপন হয়ে যায়।যতটা আপন হলে কেউ কারো থেকে দূরে যেতে পারবো না।”

-” রুকু প্রতিত্তরে কিছু না বলে লাজুক হেসে রাদের বুকে মুখ লুকালো। এতেই যেন রাদ নিজের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেল।সে রুকু কে নিয়ে এক অজানা সুখের সাগরে পাড়ি জমালো।”

________________________

-” সময় বহমান।সময় তার আপন গতিতে বয়ে চলে।যেন চোখের পলকে’ই দিন থেকে সপ্তাহ , সপ্তাহ থেকে মাস , মাস থেকে বছর পেরিয়ে যায়। ঠিক তেমনি দেখতে দেখতে রুকু রাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেল পাঁচটা বছর। রুকু এখন নিজেও একজন ভার্সিটির টিচার।সাথে একজন কন্যা সন্তানের জননী।আজ তাদের পঞ্চম বিবাহ বার্ষিকী। তাদের বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে পুরো বাড়ি বিয়ের সাজে সজ্জিত হয়ে উঠেছে।যেটা প্রতিবছরই হয়ে থাকে।তুলি রাজ আর তাদের তিন বছরের ছেলে তানজিল ও এসেছে তাদের বিবাহ বার্ষিকী তে। সেদিনের দুর্ঘটনার পর রাজ রাদের কাছে তুলি কে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।রাজের প্রস্তাবে কেউ দ্বিমত করে না।মহা ধুমধাম করে তুলি রাজের বিয়ে হয়‌।এখন তারা তাদের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সুখে শান্তিতে দিন পার করছে।”

-” রাতে অনুষ্ঠান শুরু হবে। ইতিমধ্যে মেহমান আসতে শুরু করেছে। রুকু রেডি হয়ে আয়নায় নিজেকে দেখছে এমন সময় রাদ এসে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে কানের লতিতে চুমু দিয়ে রুকুর হাতে একটা ডায়মন্ডের রিং পরিয়ে হাতে চুমু দিয়ে বললো,

-” দেখতে দেখতে কিভাবে যে বিবাহিত জীবনের পাঁচ টা বছর কে’টে গেলো টের ও পেলাম না। আজকের এই খুশির দিনে তোমাকে দেওয়ার মতো কোনো উপহার খুঁজে পাচ্ছিলাম না।তাই আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য ছোট্ট একটা গিফট। পছন্দ হয়েছে তোমার?”

-” রুকু রাদ কে জড়িয়ে ধরে বললো, আপনি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। বিশ্বাস করুন আমার ধন দৌলত মণি মুক্তা কিছু চাই না।আপনি শুধু সারাজীবন ভালোবেসে আপনার পরাণে আমার ঠাঁই দিবেন। এতেই আমি অনেক খুশি।”

-” রাদ তৎক্ষণাৎ রুকুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার দিকে এক গুচ্ছ গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বললো, আমি তোমারি প্রেম‌ও ভিখারি, #ভালোবেসে_ঠাঁই_দিও_পরাণে।

☘️☘️ সমাপ্ত☘️☘️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে