Sunday, August 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 450



প্রেম_পুকুর পর্ব-১০

0

#প্রেম_পুকুর
[১০]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

একটি বিষাদময় রাতের শেষে একটি সুন্দর প্রভাতের আগমন। যে প্রভাত মুছে দেবে হয়তো বিষাদের ঘনঘটা।
প্রভাতের সেই মিষ্টি আলো পৌছে যাবে সব আনাচে কানাচে,জাগাবে হয়তো কোন এক প্রেমিক পুরুষের জন্য তার প্রেয়সীর হৃদয়ে প্রেম। ভেঙে যাবে হয়তো পাহাড় সমান অভিমানের বাধা।

সূর্যের মিষ্টি আলো চোখে পড়তেই ঘুম ছুটে গেল সাফোয়ানের ।চোখ খুলতেই নিজের বুকে প্রেয়সীকে আবিষ্কার করে তার চিত্ত পুলকিত হলো। হৃদয় জানান দিল এবার বুঝি প্রেয়সীর অভিমান ভাঙবে। এই প্রথম তারা দুজন এত কাছে পুরো একটি রাত কাটিয়ে অভিমান বিলাস করল।

মৃদু শব্দে সাফোয়ান শিমু কে ডাক দিলো,”উঠুন সকাল হয়েছে”।

সাফোয়ানের ডাকে ঘুম ছুটে গেল শিমুর পিট পিট করে চোখ খুলতেই সাফোয়ানের বুকে নিজেকে আবিষ্কার করল।
মনে পড়ে গেল কাল রাতের কথা। সব কিছু মনে পরতেই লজ্জায় দু’গাল রাঙা হয়ে গেল।কিশোরী মেয়েদের মতো কালকে কি করছে ভাবতেই যুবতী মন অশান্ত হয়ে উঠল।লজ্জায় মাটির বুকে নিজেকে আড়াল করতে মন চাইল।

দ্রুত সাফোয়ানের বুক থেকে মাথা সড়িয়ে নিয়ে উঠে দারালো।
এভাবে সারারাত বেকায়দায় কাটানোর জন্য শরীরে কিছু টা ব্যথা অনুভব হলো।

সাফোয়ান শিমু সামনে উঠে দারালো।
তারপর শিমু দিকে একটু নিচু হয়ে শিমু কপালে নিজের ওষ্ঠ স্পর্শ করালো।
শিমুর সর্বশরীর কাপুঁনি দিয়ে উঠল যেন।
এটা ওর কাছো প্রথম বার ছিল যার জন্য ও একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।

সাফোয়ান শিমুর দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসি দিয়ে বলল,”কান্নাকাটি করে তো অবস্থা খারাপ করে ফেলছেন রাতে তো আমার বা আপনার কারোরই কিছু খাওয়া হয়নি। আমি ফ্রেস হয়ে নিচে যাচ্ছি খাবার কিনতে। আপনি সে পর্যন্ত ফ্রেস হয়ে নিন”।

সাফোয়ান নিজের বাক্য শেষ করে আবার একটু হাসি দিয়ে চলে গেল নিজের কক্ষে।
শিমুর মনে হলো আজ তার কাছে সাফোয়ানকে অনেক বেশি ভালো লাগছে। এইযে তার এই মেষ্টি হাসিটা যেন হৃদয়ে গিয়ে লেগেছে। নিজেকেও ভীষণ হালকা লাগছে ওর। সাফেয়ানের এই হাসিটা দেখার জন্য যুগ যুগ বাঁচতে ইচ্ছা করছে।
_____________

আয়ান আর আলতাফ প্রাতঃভ্রমণ শেষে বাসায় ফিরেছে মাত্র। রাজিয়া বেগম তাদের কাছে দু’গ্লাস পানি নিয়ে এসে বসলেন।
আলতাফের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিতে দিতে বললেন,”আমার মনে হয় বিয়ে নিয়ে এবার আমান দের পরিবারের সাথে কথা বলা দরকার।”
“হুম মা ঠিকই বলছেন এবার আমাদের এই বিষয় নিয়ে আগানো প্রয়োজন। আর সাফোয়ানকেও আমি এই ব্যাপারে আজকেই জানাবো।কি বলো আয়ান?”

“হুম আব্বু আপনি ভাইয়ার সাথে কথা বলুন।”

অনিকা আড়াল থেকে সব কথা শুনে নিজের কক্ষের দিকে দৌরে চলে গেল। তার ভীষণ লজ্জা লাগছে অবশেষে তার প্রণয় কুমার তার হবে ভাবতেই সারা শরীর জুড়ে অদ্ভুত শিহরণ হচ্ছে।
নিজের কক্ষে রাখা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে লাল ওড়না দিয়ে মুখ ডেকে দেখলো কেমন লাগে।
বধু বেশে নিজেকে কল্পনা করতে দু’গালে রক্তিম
আভা ছড়িয়ে পরলো।
আচ্ছা আমান এর কেমন অনুভুতি হবে যদি সে জানতে পারে খুব শিঘ্রই তাদের বিয়ে হচ্ছে।
না না সে আর ভাবতে পারছেনা লজ্জায় আড়ষ্ট হচ্ছে বারবার।
_____________

সাফোয়ান আজকে নিজের কর্ম ক্ষেত্র থেকে দ্রুত প্রস্থান করে শপিং মলের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়েছে।বউকে তেমন কিছুই দেওয়া হয়নি তার।
পরে বউ তাকে কৃপন বলুক সে সেটা চায় না।
গাড়ি পার্কিং লটে রেখে বেড়িয়ে গেল শপিং মলের দিকে উদ্দেশ্য বউকে উপহার দেওয়ার।

শপিং মল থেকে বের হতে হতেই বিকেল হয়ে গেল।
মনে মনে বলল,মেয়েদের জিনিস ক্রয় করা ভীষণ কষ্ঠ সাধ্য এটা মেয়েরাই ভালো করতে পারে।
এর পর শপিং ব্যাগ গুলো গাড়িতে রেখে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলো।

___________

বাসায় পৌছে দুবার কলিংবেল চাপতেই শিমু দরজা খুলে দিলো।
শিমু সাফোয়ানের হাতের দিকে তাকাতেই অবাক হলো। প্রায় দশ বারোটির মতো শপিং ব্যাগ।
সাফোয়ান শিমু দিকে ব্যাগ গুলো এগিয়ে দিয়ে বলল এগুলো তোমার জন্য।
শিমু সাফোয়ানের হাত থেকে ব্যাগ গুলো নিতেই
সাফোয়ান গিয়ে ড্রয়িংরুমে রাখা সোফার উপর বসে পরল। শিমু কে উদ্দেশ্য করে বলল,”আজকে রাতে আমরা ঘুরতে বেড় হব ।
আপনি এখান থেকে আপনার পছন্দ মতো একটি শাড়ি পরে তৈরি হয়ে নিবেন।”

প্রতিটা মেয়েই তার প্রিয় মানুষের দেওয়া ছোট ছোট উপহার গুলোতে পাহাড় সমান আনন্দ খুজে পায় শিমুও তার ব্যাতিক্রম নয়।সেও তার স্বামীর দেওয়া উপহার গুলো পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছে কিন্তু সেটা প্রকাশ করলোনা।
__________

নিজের পছন্দ মতো একটি কালো রঙের শাড়ি বেছে নিলো শিমু। আয়নার সামনে গিয়ে গায়ে জড়াতেই নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হলো। অনেক দিন পরে যেন নিজের মাঝে নিজেকে খুজে পেল ও। মাথায় ম্যাচিং করে কালো রঙের একটা হিজাব পড়ে নিলো।হাত ভরে চুড়ি পরে হাত নাড়াচাড়া করলো।
চুড়িতে ঝনঝন করে আওয়াজ হতেই ঠোঁঠের কোনে একচিলতে হাসি ফুটে ওঠলো।
ইচ্ছে করলো ঠোঁঠে আজ লাল টকটকে লিপস্টিক নিতে।নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে ঠোঁঠে রক্তরাঙা লিপস্টিক নিলো চোখে কালো কাজল নিতে ভুলল না।
নিজের সাজ সম্পূর্ন হতেই আয়নায় নিজেকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে নিলো কয়েকবার।

মনে মনে বলে উঠল,

“সব কিছু একদম পারফেক্ট। ”

সাফোয়ান অনেকক্ষণ যাবত শিমুর জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত রুম থেকে বেরুনোর নাম গন্ধ নেই। সে শুনেছিলো মেয়েদে ড্রেস আপে একটু সময় লাগে কিন্তু এতোটা সময় লাগে সে ভাবতেও পারেনি।
অধৈর্য হয়ে শিমুকে ডাকতে যাবে তার পূর্বেই শিমু শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
নিজের প্রিয়তমা কে শাড়িতে দেখে হৃদগতি কিছুটা অস্বাভাবিক হলো সাফোয়ানের।
বুকের মধ্য কে যেন কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে ওর। দু এক বার চোখ এদিক ওদিকে ঘুড়িয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল।
শিমু সাফোয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আমি প্রস্তুত।”

সাফোয়ান মনে মনে বলল”,আমাকে অপ্রস্তুত করে দিয়ে নিজেতো প্রস্তুত হবেনই ।”

মুখে বলল,”চলুন, যাওয়া যাক।”

আজকে সাফোয়ান নিজের প্রিয় গাড়িটাকে নিয়ে বেড় হয়নি এর পিছনে অবশ্য একটা কারন আছে।

বাসার নিচে নামতেই রিকশা পেয়ে গেল ওরা। সাফোয়ান আগে শিমুকে উঠতে বলল।
শিমু রিকশায় কিছুটা সংকোচ নিয়ে বসে পড়ল।
তার পর সাফোয়ান উঠে বসে পরল। শিমু সরে বসতে চাইলে সাফোয়ান শিমুর কোমড় আকরে ধরল।
কানে কানে ফেস করে বলল,”দূরে যেন সরে বসতে না পারেন তার জন্যই এতো আয়োজন।”

শিমু সাফোয়ানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। তবে কি এইজন্যই নিজের গাড়িটা নিয়ে বেড় হয়নি সাফোয়ান।

সাফোয়ান ঠোঁঠের কোনে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলল,”আপনার ঠোঁঠে লাল লিপস্টিক কিন্তু মারাত্মক লাগছে।পুরো রেড ওয়াইনের মতো দেখলেই নেশা ধরে যাচ্ছে।”

শিমু অপ্রস্তুত হয়ে অন্যদিকে মুখ ঘোরালো। তার কান গরম হয়ে গেছে লজ্জায়, সর্বাঙ্গ শরীর শিরশির করছে।
শিমুকে অন্যদিকে ঘুরতে দেখে সাফোয়ান কিছুটা অসহায় কণ্ঠে বলে উঠল,”মামা আমি কি দেখতে খারাপ বলুনতো।”

রিকশা ওয়ালা মামা বিষ্ময় নিয়ে পিছনে ঘুরল একবার।শিমুও সাফোয়ানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

“আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন সাফোয়ান। কিসব আবল তাবল বলছেন।”

সাফোয়ান শিমুর কথায় পাত্তা দিলোনা আবারো
বলে উঠল,”মামা কিছু বললেন না যে।”

“মামা আপনে দেখতে তো মেলা সুন্দর কিন্তু এমন কথা কইতাছেন কেন?”

সাফোয়ান শিমু দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছারল।

“আমি ভাবলাম আমি দেখতে হয়তো অনেক খারাপ সেই জন্য আপনার মামী আমার দিকে ঘুরেও তাকাচ্ছেনা।”

রিকশাওয়ালা মামা উচ্চস্বরে হেসে দিল।

“মামা আপনারা পরেনও বটে।”

শিমু সাফোয়ানের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে রইলো।
মনে মনে বলল, “লোকটা ভীষণ অসভ্য । হঠাত নিরামিষ থেকে আমিষ হয়ে গেল কি করে আল্লাহ জানেন।
লজ্জা শরম একেবার বিকিয়ে দিয়ে এসেছে মনে হচ্ছে।”

সাফোয়ান মিটি মিটি হাসছে আর শিমুর চোখ রাঙানো উপভোগ করছে।

চলবে,,

প্রেম_পুকুর পর্ব-০৯

0

#প্রেম_পুকুর
[৯]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

একটি সুন্দর সন্ধ্যা শিমু বেলকোনিতে দাড়িয়ে আছে।সাফোয়ান আজকে বাসায়ই আছে। সাফোয়ান ড্রয়িংরুমে থাকায় শিমু রুম থেকে বের হচ্ছেনা।
সাফোয়ানের সামনে গেলে নিজের মধ্যে এক রকম জড়তা অনুভুত হয় ওর কেন এই জড়তা সেটা শিমু জানেনা।
সাফোয়ানের চোখে গভীর প্রণয় দেখলে মনে হয় সব কিছু ভুলে যেতে। কিন্তু তার যুবতী মন সাফোয়ানের জন্য তিব্র অভিমান পুষে রেখেছে।তার ইচ্ছে করে সাফোয়ানের বুকে মাথা রেখে সেই সব রাতের কথা জানাতে যেই রাত গুলোতে সে নির্ঘুম কাটিয়েছে।

জানাতে ইচ্ছে হয় মানুষের কথার দ্বারা কত অপমান মুখ বুজে সহ্য করেছে।
কিন্তু অতিরিক্ত চাপা স্বভাবের হওয়ার জন্য ও এগুলো কিছুই বলতে পারেনা।
অতিরিক্ত অভিমানে দু’চোখ ভেঙে জল পরতে শুরু করলো ।
একপর্যায় মেঝেতে পা ভেঙে বসে পরল শিমু।
_________

সাফোয়ান আজকে পরিপূর্ণ ভাবে নিজেকে ধাতস্তু করে নিয়েছে।
শিমু তার কাছে এসেছে গোটা একমাস হয়ে গেল কিন্তু তাদের সম্পর্কের বিশেষ কোনো উন্নতি হয়নি।
সে নিজের দিক থেকে সম্পূর্ন চেষ্টা করছে কিন্তু শিমু এখনো নির্বিকার।
সে আর শিমুর অবহেলা সইতে পারছেনা। অনেক তো হলো অনুভুতির লুকোচুরি আর সে কোন লুকোচুরি খেলতে চায়না।
সে চায় এবার নিজের প্রেয়সী কে আপন করে পেতে ।
নিজের সাথে বোঝাপড়া করে সাফোয়ান সোঝা শিমুর ঘরের দিকে চলে যায়।
কিন্তু গিয়ে দেখলো শিমু রুমে নেই।
বেলকোনির দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতেই এক কান্নারতা রমণীর দিকে দৃষ্টি আটকে গেল।যে রমণী হাটুতে মুখ গুঁজে গুন গুনিয়ে কান্না করছে। যার দীর্ঘ কালো কেশ পিঠ জুড়ে লুটোপুটি খাচ্ছে।
সাফোয়ান হাটু ভেঙে শিমুর কাছ ঘেষে বসল।

এই রমণী কান্না করাতে এতোটাই বিভোর যে তার সামনে যে কেউ বসে আছে সে সম্পর্কে তার কোন ধারনাই নেই।

সাফোয়ানের ভীষণ ইচ্ছো করল রমণীকে নিজের বুকে আগলে নিতে। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো,ওগো রমণী তোমার এত দুঃখ কিসের।
ওর মধ্য হঠাত কোথা থেকে যেন একরাশ অধিকার বোধ তৈরি হলো।হাত বাড়িয়ে আগলে নিলো নিজের প্রেয়সীকে।

শিমু পুরুষালী হাতের ছোঁয়া পেয়ে একটু ভড়কালো থমকালো স্তব্ধ হয়ে গেল।
নিজের লুকোনো কান্না কারো সামনে প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে সাফোয়ানের বুক থেকে মাথা তুলতে চাইলো।
কিন্তু সাফোয়ান তুলতে দিলোনা জোড় করেই মাথা নিজের বুকে চেপে রাখল।
শিমু স্পষ্ট শুনতে পেল সাফোয়ানে বুকের অস্বাভাবিক ধুকপুকানি।
দীর্ঘ সময় কেটে গেল নিরাবতার মধ্য।

নিরাবতা ভেঙে সাফোয়ান বলে উঠল,”শিমু আমরা কি পারিনা আমাদের মাঝের এই যোজন যোজন দুরত্বের ইতি টানতে।আমরা কি পারিনা আমাদের একটা সুখের সংসার সাজাতে।”

শিমুর কাছে সাফোয়ানের কণ্ঠ ভীষণ কাতর শোনালো, কি সহজ আবদার।
ইতিমধ্যে সাফোয়ানের হাতের বাধন আলগা হয়ে গেছে।

শিমু সাফোয়ানের বুক থেকে মাথা তুলে সাফোয়ানের চোখের দিকে তাকায়।

সাফোয়ান লক্ষ করল শিমুর চোখ অসম্ভব রকম লাল হয়ে আছে। কান্না করার ফলে নাকের ডগাও ফুলে লাল হয়ে গেছে।

শিমুর অভিমানে পরিপূর্ণ অক্ষিকোটরে জল থৈ থৈ করছে।

সাফোয়ান শিমুর নিরাবতা দেখে আবার প্রশ্ন করল।

” বলুননা আমরা পারিনা অতীত ভুলে গিয়ে আবার সবটা নতুন করে সাজাতে”।

হঠাতই অভিমানী মেয়েটা একরাশ অভীমান নিয়ে বলতে শুরু করল,”কোনটাকে ভুলে যেতে বলছেন সাফোয়ান আপনি?
বাসর রাতে স্ত্রীকে প্রত্যাখ্যান করে চলে যাওয়াকে নাকি প্রতিনিয়ত আমার অপমানিত হওয়াকে।
নাকি নিজের সম্মান বিকিয়ে দিয়ে একটা মেয়ের শশুর বাড়িতে পড়ে থাকাকে।
নাকি দিনের পর দিন আপনার দাদীর কটু কথাকে শোনাকে।
আপনার যখন এতটাই আমাকে অপছন্দ তবে কেন বিয়ে করেছিলেন আমায়?
প্রতিনিয়ত আপনার আত্মীয়রা প্রতিবেশিরা আমাকে ঠাট্টাতামাসা করতো। আম্মা আড়াল করতো কিন্তু আমি টের পেয়েই যেতাম।”

শিমু কিছুক্ষন থেমে আবার বলতে শুরু করল।

“আপনি কি কখোনো চিন্তা করেছেন বিয়ের রাতে একটা মেয়ে কতোটা আশা সপ্ন বুকের মাঝে পুষে রাখে।
কিন্তু সেদিন, সেদিন আপনি এলেননা। আমি পুরো রাত আপনার জন্য বসে ছিলাম।
সকাল বেলা আপনার দাদী এসে বলল আমি নাকি অপ*য়া কল*ঙ্কিনী তাই তার নাতি আমাকে ফেলে চলে গেছে।
আপনান দাদী প্রতিনিয়ত আপনার চলে যাওয়ার জন্য আমাকে দ্বায়ী করতো।বিয়ের পড়ে বাবা কত বার আপনার সাথে কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু আমি বাবাকে মিথ্যে বলেছি।নিজের কষ্টগুলোকে আড়াল করে আমি বাবার সাথে হাসি মুখে কথা বলেছি।”

শিমু এবার অসহায়ের মতো সাফোয়ানে দিকে তাকিয়ে বলল,”আচ্ছা আমি কি এতটাই অপ*য়া।
আমি যেটাই ধরতে যাই সেটাই কেন দুঃখ হয়ে যায় বলতে পারেন।
আমিও তো আপনার জন্য এক বুক ভালোবাসা নিয়ে এসেছিলাম।
কিন্তু আপনার প্রত্যাখ্যান পেয়ে সেগুলো কেমন ফিকে হয়ে গেছে।
আমি ও চাই সব ঠিক করে নিতে। কিন্তু আমার ভয় হয় যদি আপনি আবারো আমাকে ছেড়ে চলে যান।
আমি জানি আমি কোন অবুঝ কিশোরী নই কিন্তু আপনাকে আঁকড়ে বাচঁতে চাই আমি আপনাকে ভালোবেসে বৃদ্ধ হতে চাই।
কিন্তু পুরোনে কথাগুলো মনে পড়লে আমার বুকের ভিতরে হাহাকার করে উঠে।
মনের মাঝে তিব্র অশান্তি হয়।
আমি এই সব কিছুর থেকে নিস্তার পেতে চাই সাফোয়ান।
আমি আপনাকে ভালোবাসতে চাই।”

মোম যেমন আগুনের স্পর্শ পেয়ে গলে যায় শিমু তেমন সাফোয়ানের উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে নিজের বুকের মাঝে রাখা সকল কষ্ঠ প্রকাশ করে দিচ্ছে।
আজ নিজেকে অনেক হালকা মনে হচ্ছে শিমুর।নিজের সব অভিযোগ প্রকাশ করতে পেরে মনে শান্তি লাগছে ওর। খুব কাদঁতে ইচ্ছে করছে।

সাফোয়ান শিমুকে আবার বুকের মাঝে আগলে নিলো।
শিমু আবারে কাদঁতে শুরু করল।এই কান্না যেন দীর্ঘ কালের অভিমানের পাহাড় ধসে পড়ার কান্না।

সাফোয়ান শিমুর সমস্ত অভিযোগ মন দিয়ে শুনছে।নিজের করা ভুলের জন্য সে সত্যি ভীষণ অনুতপ্ত। নিজের রাগ জেদ কে প্রাধান্য না দিলে হয়তে আজকে মেয়েটার এই পাহাড় সমান অভীমান দেখতে হতো না।
তাদের ভালোবাসাময় একটা সংসার হতো এতদিন।

সাফোয়ান শিমুর মাথা তুলে নিজের দিকে ঘোরালে।শিমু কাদঁতে কাদঁতে অবস্তা খারাপ করে ফেলেছে নিজের।
সাফোয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,”আমি আপনার সাথে অনেক অনেক অন্যায় করেছি আমি জানি। আমি সেগুলোকে শুধরে নিতে চাই। আমার এই ভুল গুলো শুধরে নেবার জন্য আমি আপনার থেকে একটা সুযোগ চাই দয়া করে আমাকে ফেরাবেননা।”

সাফোয়ান আবার কাতর স্বরে বলল,”আমি গ্রামে বিয়ে করার জন্য মোটেই রাজি ছিলাম না।
কিন্তু মায়ের কথায় এক প্রকার বাধ্য হই মায়ের কথা রাখতে। মা আমাকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে থাকে। আবার আমার বন্ধুরাও আমাকে নিয়ে ঠাট্টাতামাসা করতে শুরু করে।
এদিকে মা বাবার চাপ অন্য দিকে বন্ধুদের ঠাট্টা সব মিলিয়ে আমি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম। মায়ের কথা রাখতে আপনাকে বিয়ে করলাম ঠিকই কিন্তু আপনাকে মেনে নিতে আমার ভীষণ কষ্ঠ হচ্ছিল। আপনি জানলে অবাক হবেন আমি আপনাকে বিয়ের আগে একবারের জন্য দেখিওনি।

কবুল বলার পড়েই আমি বিয়ের আসর ছেড়ে চলে এসেছিলাম।আপনার বাবা আমাকে আটকাতে গেলে আমি তাকে বলেছিলাম আমার জরুরী কাজ পড়ে গেছে।
আপনার বাবা সেটা বিশ্বাসও করে নিয়েছিলো হাসি মুখে বিদায় দিয়েছিলেন আমাকে ।মা ওই দিকটা সামলে নিয়েছিলো সেদিন তাই কোন ঝামেলা হয়নি।

নিজের সাথে অনেক বোঝাপড়ার পর সিদ্ধান্ত নিলাম মা আমাকে জোড় করে বিয়ে করিয়েছি কিন্তু আমি চাইলে সংসার নাও করতে পারি।
নিজের জেদ কে প্রাধান্য দিয়ে ঢাকায় চলে এসেছিলাম।ঢাকায় এসেই মাকে বলেছিলাম আমি আপনার সাথে সংসার করতে চাইনা।

সেই দিনের পর থেকে টানা দুই মাস আমার সাথে মায়ের কোন যোগাযোগ ছিলনা।এর মাঝেই আয়ান এলো আমার বাসায় হুট করে। ওকে দেখে আমি অবাকই হই। ও আমাকে আমার ভুল গুলো সম্পর্কে অবগত করে। ইতিপূর্বে আপনার কথা মনে পড়লেও আমি আমার জেদ কেই প্রাধান্য দিয়েছি।

আয়ান যখন আপনার সাথে আমার করা অন্যায় গুলোর সম্পর্কে ধারনা দিলো তখন আমি বুঝতে পারলাম নিজের জেদের বসে আমি আমার স্ত্রীকে কতটা কষ্ঠ দিয়েছি। ধীরে ধীরে আমার চিন্তা ধারা বদলালো আপনার প্রতি আমার অনুভুতি কাজ করতে শুরু করল।
আয়ানকে নিজের মনের কথা গুলো বললাম।আয়ান আমাকে আশ্বস্ত করল সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি ও নিজের করা ভুল গুলোর জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে মড়িয়া হয়ে উঠলাম।

আয়ানের সাথে গেলাম বাড়িতে যে সম্পর্কে বাড়ির কেউ কিছুই জানতোনা।
যাবার পরেরদিনই বাবা আমাকে আলাদা ডেকে নিয়ে অনেক বকা ঝকা করলেন। বাবাকে কোনরকমে আয়ান সামলে নিলো, বাবাও শান্ত হলেন আমি তার পর থেকে নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করছি নিজের ভুল শুধরে নেবার।
আপনি কি আমাকে এখনো ক্ষমা করবেন না শিমু। আমি সত্যি চাই আপনার সাথে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত কাটাতে।
আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি শিমু ।”

সাফোয়ান এবার আরো অসহায় কণ্ঠে বলে উঠল,”আমিতো ভুল করেছি আমি জানি। সেই জন্য আমি ভীষণ ভাবে অনুতপ্ত। আমি আর এই অপরাধবোধ নিয়ে বাচঁতে চাইনা।আপনি দয়া করে আমাকে এই অপরাধবোধ থেকে মুক্তি দিন।”

চলবে,,,

প্রেম_পুকুর পর্ব-০৮

0

#প্রেম_পুকুর
[৮]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

সময়ের বেড়াজালে আমরা সবাই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছি।আমাদেরকে সময় ধোকা দিয়ে চলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যখন আমরা সেটা অনুভব করি তখন অনেকটা দেরি হয়ে যায়।তাই আমাদের উচিত যে কোন সময় কে সঠিক ভাবে কাজে লাগানো যেন এই নিয়ে আমাদের পরে কোনো আফসোস না থাকে।

শিমু সাফোয়ানের বাসায় এসেছে গোটা সাত দিন হয়ে গেল।
কোনো রকম বই পড়ে টিভি দেখে সময় পাড় হয়ে যাচ্ছে ওর। কখনো হয়তো সে ভাবেনি তার এত বড়লোকের বাড়িতে বিয়ে হবে।এই সব কিছুই ছিলো তাদের কাছে ছেড়া কাঁথায় থেকে লক্ষ টাকার সপ্ন দোখার মতোন।কিন্তু সৃষ্টি কর্তা যে ভাগ্যর মতো অলৌকিক একটা জিনিস রেখেছে।এই ভাগ্য যখন ফলে যায় মানুষ মিসকিন থেকে লাখপতি হয়ে যায়।আবার লাখপতি থেকে মিসকিন হয়ে যায়।

সাফোয়ানের এই ফ্লাটে রয়েছে তিনটি কামড়া যার একটি কামড়ায় সে থাকছে অন্যটিতে সাফোয়ান। আরেকটি কামড়া খালি পড়ে আছে।

মাজে মধ্যে তার নিজের কাছে ভাবতেও অবাক লাগে তারা তো স্বামী-স্ত্রী তাদের মাঝে কি এই যোজন যোজন দুরত্ব মানায়।
তখনই তার ভেতরে সত্তা বলে উঠে মানায়। নিজের আত্মসম্মান প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে এটা মানায়।
যদি দ্রুত তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও তবে আবার সে ভুল একই ভুল করতে পারে। যদি সে সত্যি নিজের ভুল শুধরে নিতে চায় তাহলে তাকে পরখ করো যেন একই ভুল বারবার না হয়।মুমিন ব্যাক্তি একবারই ধোকা খায় বারবার নয়।

শিমু ও সেই ভুল করবেনা সাফোয়ানকে পরখ করবে গভীর ভাবে। এতে একটু সময় লাগলেও দোষোর কিছু নেই।

শিমু নিজের চিন্তা ভাবনার ইতি ঘটিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল।সাফোয়ান বলে গেছিলো আজকে ফিরতে রাত হবে।
তাই সেও রান্না ঘরে দেরি করেই ঢুকেছে।
উদ্দেশ্য কই মাছ টমেটো দিয়ে ভুনা করবে আর সাথে আলু ভাজি করবে। দুজন মানুষ বেশি রান্না করলে খাবার অপচয় হতে পারে।
কোমড়ে ওড়না গুজে রান্না করা শুরু করে দিলে।
প্রায় এক ঘন্ঠা সময় নিয়ে রান্না শেষ করল।
কিছু সালাদ আইটেম কেটে টেবিলে সব কিছু গরম গরম সাজিয়ে রাখল।

ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা হয়ে যাওয়ায় ফ্রেস হতে ওয়াস রুমে চলে গেল।এরই মাঝেই সাফোয়ান ডোর বেল বাজালো কিন্তু কয়েকবার বাজানোর পরও শিমু দরজা খুলল না। শিমু ফোনে কয়েক বার কলও দিলো কিন্তু শিমুর ফোন ড্রয়িংরুমে থাকায় সেটাও রিসিব হলো না।
সাফোয়ান ভীষণ চিন্তিত হলো।
সাফোয়ান আরো কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলো। শিমু যতোক্ষনে বেড় হয়েছে ফোনের কল বাজতে বাজতে কেটে গেছে।

সাফোয়ান শেষ বারের মতো কলিং বেল বাজালো,শিমু দ্রুত দরজা খুলে দিলো।শিমু দরজা খুলতেই তার চোখে পরলো সাফোয়ানের বিদ্ধস্ত চেহারা।
সাফোয়ান তাড়াহুড়ো করে ভিতরে ঢুকে গিয়ে শিমু কে স্পর্শ করতে গিয়েও করলোনা।
“তুমি ঠিক আছোতো।এতবার কলিং বেল বাজালাম, ফোনে কল করলাম কোনটাই কেন ধরলেনা?”
সাফোয়ানের অতিরিক্ত অস্থিরতার কারনে আপনির বদলে তুমি হয়ে গেছে।

শিমু দুঃখীত হয়ে উওর দিলো,”আম সরি,আসলে রান্না শেষে আমি ঘেমে গেছিলাম তাই শাওয়ার নিতে গেছিলাম একটু যার জন্য আমি শব্দ শুনতে পাইনি।”

“ওহ।”
সাফোয়ান ছোট করে ওহ বলে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল।শিমু বুঝতে পারলো সাফোয়ান ভীষণ ক্লান্ত তাই ওর সাথে তেমন কথা বলল না।
শিমু এই একসাপ্তাহে বুঝতে পেড়েছে সাফোয়ান কফিতে আসক্ত।
তাই সে কিচেনে চলে গেল কফি বানাতে।

সাফোয়ান ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসেছে ।দরজা খটখটানির শব্দ পেয়ে দরজার দিকে তাকালো।

“আসবো।”

“আসুন,আমি তো বলেছি আমার রুমে আসতে আপনি অনুমতি নিবেন না।”

শিমু কোন বাক বক্তিতায় না জড়িয়ে সাফোয়ানের কাছে এগিয়ে গেল।হাতে রাখা কফির মগটা সাফোয়ানের দিকে এগিয়ে দিলো।

“আপনার হয়তো এটা প্রয়োজন “।

সাফোয়ান শিমু হাতের দিকে তাকলো। এই মুহুর্তে তার সত্যি এক কাপ কফির প্রয়োজন ছিলো।আজকে অফিসে এক ক্লায়েন্টের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েছিল সে যার দরুন মাথাটা ভীষণ ধরেছে।

“ধন্যবাদ।”
“চাইলে কিন্তু আপনার জন্য এক কাপ আনতে পারতেন।”
“আমি কফি খাই না।”
“ওহ “।
সাফোয়ান কফি খেতে খেতে প্রশ্ন করলো আচ্ছা আপনি তো আমাকে পছন্দ করেননা তাহলে আমার কেয়ার করেন কেন?

“আসলে আমি মানুষ টাই একটু উদার প্রতৃতির তাই।”
সাফোয়ান মুচকি একটক হাসি দিয়ে বলল,”কতটা উদার দেখতেই পাচ্ছি। এতদিন যাবত ভালোবাসার আবদার করছি উদারতা দেখিয়ে সেটাও তো দিতে পারেন নাকি।”

“আপনাকে দেখলে আমার অদ্ভুত অনুভূতি হয়। ঠিক ঘৃনা নয় যেটা আপনাকে আমার করা উচিত”।

সাফোয়ান মুচকি হেসে উঠে গিয়ে শিমুর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,”যেদিন আপনি এই অনূভুতির স্বাদ পাবেন সেদিন আপনি সম্পূর্ন আমার হবেন।”

শিমুর একটু লজ্জা লজ্জা অনুভুত হয় কেন হয় সে সেটা জানেনা। শিমু নিজের কক্ষের দিকে যেতে যেতে বলল,”আপনার খিদে পেলে আমাকে ডেকে দিয়েন।”
সাফোয়ান মনে মনে বলল, “খিদে তো লেগেছে প্রেম প্রেম খিদে লেগেছে আমার”।
_______

এতো রাতে আমানের ফোন দেখে অনিকা অবাক হলো।ছেলেটা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।আগে এরকম ছিলোনা প্রথম প্রথম যখন আয়ান ভাইয়ার সাথে সাথে আসত তখন তাকে দেখে মনে হতো ভাজ মাছটাও উল্টে খেতে জানেনা। কিন্ত যেই থেকে
নিজের অনুভুতি সম্পর্কে ওকে জানিয়েছে সেই থেকে শুরু করল মি.অভদ্র হয়ে যাওয়া।
সেদিন দেখতে আসান পর থেকে ছেলেটা আরো বেপরোয়া হয়ে গেছে।হুটহাট কল দিচ্ছে আবার দেখা করার আবদার করছে।ছেলেটা যে ভয়ংকর প্রেমিক পুরুষ এটা তার জানা হয়ে গেছে।প্রেমিক পুরুষ ভালো কিন্তু ভয়ংকর প্রেমিক পুরুষ একুটু বেশিই ভালো হয়। এরা তাদের প্রিয়তমার জন্য সবই করতে পারে।
অনিকা ভাবনার ইতি টেনে কল রিসিব করল,”আসসালামু আলাইকুম।”
মেয়েলি কণ্ঠ পেয়ে আয়ানের চিত্ত শান্ত হলো।
যতবার এই কণ্ঠ শুনে ততবার তাকে একান্ত নিজের করে নেয়ার ইচ্ছেটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।নিজেকে শান্ত করে নিজেই নিজেকে আশ্বাস দেয় আর অল্প কিছু দিন তার পর সে একান্তই তোর। যাকে হাড়ানোর ভয় তোকে আর কুড়ে কুড়ে খাবেন।
__________

দাদী রহিমাকে দিয়ে পা টেপাচ্ছে কালকে রাতে সে এক ভয়ংকর সপ্ন দেখেছে।সাফোয়ান আর শিমু বাড়িতে এসেছে।এসেই পায়ের ওপর পা তুলে তাকে দিয়ে সব কাজ করাচ্ছে। নাতি, ছেলের বউ তার পাশে না থাকায় শিমুকে সে কিছুই বলতে পারছেনা।
এই দুঃসপ্ন দেখার পর থেকে রাজিয়া বেগমের আত্মা শুকিয়ে আছে শরীরও কেমন মেচ মেচ করছে।

আয়ান দাদীর ঘরের কাছ দিয়ে নিজের ঘরে যাচ্ছিল। দাদীকে এত রাতে জাগতে দেখে দাদীর ঘরে প্রবেশ করল।
গিয়েও দেখলো রহিমা খালা পা টিপছে আর ঘুমে ঢুলছে।
কিন্তু বুড়ির চোখে ঘুম নেই।
আয়ান রহিমা খালাকে চলে যেতে বলে নিজেই দাদীর
পা টিপে দিতে শুরু করলো।
কথায় কথায় দাদীকে জিজ্ঞেস করল, “ঘুমাচ্ছো না কেন?”
“ঘুম কি আমার আর আছে।”

“কেন?”

“ঘুমতো আমার কবেই উড়ে গেছে।যেদিন থেকে আমার নাতি গরীব একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে। জানিস আমার কত স্বাধ ছিলো,,,

আয়ান দাদীর কথা শেষ না করতে দিয়ে বলল,”দাদী আমার ঘুম পেয়েছে আমি আসছি।”

নিজের কথা শেষ করে আয়ান আর এক সেকেন্ড ও দেড়ি করলনা দ্রুত দাদীর কক্ষ থেকে বেড়িয়ে গেল।
রাজিয়া বেগম নাতির চলে যাওয়ার দিকে বিষণ্ণ চোখে তাকিয়ে রইলেন।তার কথা শোনার মতো কেও নেই।

চলবে,,

প্রেম পুকুর পর্ব-০৭

0

#প্রেম_পুকুর
[৭]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

আয়ান বন্ধুর চোখের দিকে গভীর চোখে তাকায়।মনে মনে আওড়ায়,”আমার বোনের সাথে শা*লা তুই এত কিছু করলি আমিই জানলাম না।”

আলতাফ সাহেব লায়লা কে বলল,”লায়লা তুমি একটু অনিকা কে নিয়ে আসোতো”।
অনিকার নাম শুনে আমানের চিত্ত পুলকিত হলো।
আয়ান চুপচাপ বসে আমানের কান্ড দেখছে।
কলেজ জিবনের একটা কথা মনে পড়ে গেল তার। তখন আয়ান আর আমান সবে ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। আমান কে যে মেয়েই পছন্দ করে না কেন আয়ান তাকে পটিয়ে নিতো।এমনকি শায়লা নামের একটা মেয়েকে আমানের অনেক ভালো লেগেছিল।বন্ধুকে সে এই ব্যাপারে জানালে আয়ান সেই মেয়েটাকে নিজ দায়িত্বে নিজের প্রেমিকা বানিয়ে নেয়।তাই আমান সেদিন আয়ানকে রাগ করে বলেছিল,”আমি এমন কাউরে গফ বানাবো দেখিস।তুই লাইন মারা তো দূরে থাক। আমার সাথে তাকে দেখলেই লজ্জা পাবি।”

আমান সত্যি সেটাই করেছে।তার নিজের বোনেরই প্রেমিক হয়েছে।

আয়ানের আকাশ পাতাল চিন্তার মাঝেই ড্রয়িং রুমে লায়লা অনিকাকে নিয়ে আসলো।
অনিকা আমানের দিকে চোখ তুলেও তাকাচ্ছে না কিন্তু আমান চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে তার প্রণয় কুমারীর দিকে। যাকে এবার সে চিরতরে নিজের করে নেবার জন্য এসেছে। আর তার প্রণয় কুমারী অভিমান দেখিয়ে দূরে যেতো পারবেনা।

অনিকাকে একদম আমানের মুখোমুখি বসানো হলো।অনিকা ভাবতেই পারছেনা ছেলেটা নিজের কথাকে এত তাড়াতড়ি সত্যি করে দেবে।
অতিরিক্ত অস্বস্তি হচ্ছে অনিকার কারন আমান একনজরে তাকিয়ে আছে তার দিকে।আর তার ভাই সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমানের দিকে ।
আমানের বাবা মা অনিকার সাথে কথা বলল। তাদের তেমন কিছু জানার নেই। মেয়েকে তারা আগে থেকেই চিনে।ছেলের জেদের কাছে হার মেনে এই রাত্রি বেলা তারা মেয়ে দেখতে এসেছে।

রাজিয়া বেগম চা মুখে দিতে দিতে বললেন,”আমার মনে হয় আমান আর অনিকাকে কিছুক্ষন একা কথা বলতে দেওয়া প্রয়োজন।”
রাজিয়া বেগমোর কথায় সবাই সম্মত হলেন।আমান যেন এই কথারই অপেক্ষায় ছিল।
অনিকা উঠতেই সেও অনিকার পিছন পিছন হাটা শুরু করল।
অনিকার রুমের ভিতরে আসার সাথেই আমান দরজা আটকে দিল।
অনিকার যেন নিশ্বাস আটকে গেল এমন অবস্থা তবুও কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,”দরজা কেন আটকাচ্ছ।”

আমান অনিকার কথায় পাত্তা না দিয়ে অনিকার মুখোমুখি এসে দারালো। অনিকার পুরো শরীরে কাঁপুনি ধরে গেল এবার।
আমান শান্ত কণ্ঠে বলল,”আমার ফোন কেন ধরছিলেনা। আমি বলছিনা আমার দুরত্ব সহ্য হয়না।অভিমান কর যাই কর ফোন কেন বন্ধ করছো। এমন ব্যবস্থা করে যাবো আজকের পর কখোনো অভীমান করে দূরে যেতে পারবেনা।”
অনিকা ঘামতে শুরু করল।ছেলেটার জেদ সম্পর্কে অবগত সে। কিন্তু একদিনের মধ্য যে বিয়ের প্রস্তাব এনে হাজির হবে সেটা কল্পনাতেও আসেনি ওর ।

অবশ্য আমান একবার বলেছিল রাগ করে ছেড়ে চলে যেতে চাইলে ডাইরেক্ট বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে।
আর ও সেটাই করেছে।

আমান এগিয়ে এসে অনিকার কপালে চুমু একে দিল,”আমার বউ হবার জন্য প্রস্তুত হও।আমি প্রেমিক হিসেবে ভীষণ সভ্য ভদ্র কিন্তু আমি জামাই হিসেবে কিন্তু ততটাই অসভ্য অভদ্র হবো।”
নিজের কথা শেষ করে আমান ড্রয়িংরুমে চলে গেল।আর অনিকা সেখানেই মূর্তির মতো দাড়িয়ে রইল।কিছুক্ষন সময় গড়ালো তার পর অনিকা ধীর পায়ে হেটে গিয়ে এসে সবার সাথে বসল।
আর একটি বারের জন্য ভুলেও আমানের দিকে তাকালোনা।

_____________

ঘুম ভাঙতেই নিজেকে বিছানায় আবিস্কার করল শিমু।কিছু মনে করার চেষ্টা করলো।
ভাবল সে তো গাড়িতে ছিলো বিছানায় এলো কিভাবে। মনে পড়লো কাদঁতে কাদঁতে গাড়িতে ঘুমিয়ে যাওয়ার কথা।
তাহলে কি সাফোয়ান তাকে নিয়ে এসেছে।কিন্তু কেমন করে নিয়ে এসেছে কোলে করে নয়তো।ভাবতেই শিমুর কান গরম হয়ে গেল।শেষমেশ ওই লোকটার কোলে উঠেছে ও।
নিজেকে নিজেই কতক্ষণ বকাঝকা করল।

তার ভাবনার মাঝেই সাফয়ান ওয়াসরুম থেকে বের হলো চুল মুছতে মুছতে।
শিমু সেদিকে তাকিয়ে ভ্রুকুচকে নিলো। মনে মনে ভাবলো এতোবড়ো দামড়া ছেলে একটা মেয়ের সামনে কিভাবে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর সেন্ডোগেন্জি পরে দাড়িয়ে থাকতে পারে এর কি লজ্জা নেই।
সাফোয়ান শিমু দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসি দিলো।শিমুর যেনো সেই হাসিতে গা জ্বলে গেল।
সাফোয়ান ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুলে চিড়ুনি চালাতে চালাতে বললো,”প্রায় তিন ঘন্ঠার রাস্তাতো ঘুমিয়ে এলেন। এখোনও কি ঘুমানোর প্লানিং আছে নাকি।
শিমু সাফোয়ানের কথার উওর দেবার প্রয়োজন বোধ করলো না। চুপচাপ উঠে নিজের পোশাক নিয়ে ওয়ামরুমে চলে গেল।

সাফোয়ান শিমুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,”ঘুম থেকে উঠেই ঝাঝ লবঙ্গ ঝাঝ
দেখানো শুরু করে দিয়েছে”।
_______

আমানের পরিবার একটু আগেই চলে গেছে।
অনিকা বসে বসে দাত কামড়াচ্ছে।আলতাফ বিয়ে সম্পর্কে তেমন কিছু জানায়নি আমানের পরিবারকে শুধু বলেছে, “দেখেন ভাই হুঠ করেই তো বিয়ের মতো এতো বড়ো কাজ সম্পন্ন করা যায়না তার জন্য সময় প্রয়োজন।আর ছেলে মেয়েদের ও আরেকটু নিজেদের জানার বোঝার প্রয়োজন। আর আমার বড় ছেলে আজকেই ঢাকা গেছে।আমি চাচ্ছিলাম আরেকটু সময় নিতে।”
সিরাজ ও আলতাফের কথার ওপর কোনো কথা বলেনি। তারাও কিছু সময় দিয়ে গেছেন বিয়ের সম্পূর্ন প্রস্তুতির জন্য।
আয়ান পুরো ড্রয়িং রুমে পায়চারী করছে।
অনিকা ভাইয়ের অবস্থা দেখে মেঝেতে নক খুঁটছে।
আয়ান অনিকার পাশে গিয়ে বলল,”তুই আমার ওই বোকা বোনটানা,যাকে আমি প্রেমের প ও সে জানেনা।”
আবার জোরে নিশ্বাস নিয়ে বলল,”আর আমন ও তো আমার ছোটকালের সেই বলদ বন্ধু টা। যে নাকি ভজা মাছ উল্টে খেতে জানেনা।”

নিজের কথা শেষ আয়ান আহাম্মকের মকো বসে রইলো। তার এত দিনের হিসেব সব উল্টো হয়ে যাচ্ছে।
রাজিয়া বেগম এসে সোফার ওপর বসলেন।মনে মনে তিনি একটু সাফোয়ান শিমুর প্রতি রাগান্বিত। তাই পরিবারের কারো সাথেই তিনি প্রয়োজন ব্যাতীত কথা বলছেননা।

লায়লা বেগম সকল খাবার উদ্দেশ্য ডাকলেন।
অনিকা ধীর পায়ে হেটে গিয়ে কাবার টেবিলে বসল।ধীরে ধীরে সবাই গিয়ে টেবিলে বসে পড়লে।
লায়লা বেগম খাবার সার্ভ করতে করতে বললেন,”সাফোয়ান আমায় কল করেছিল। ওরা কোন সমস্যা ছাড়াই বাসায় ভালো ভাবে পৌছে গেছে।”
চলবে,,,,

প্রেম_পুকুর পর্ব-০৬

0

#প্রেম_পুকুর
[৬]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

শিমু সকল কাজ শেষ করে সাফোয়ানের রুমে
নক করল।
সাফোয়ানের সাথে তার কথা বলা প্রয়োজন। সাফোয়ান ভিতরে আসতে বলায় সে ভিতরে ঢুকলো।কিন্তু রুমের ভিতরে ডুকে ভীষণ অবাক হলো। সাফোয়ান নিজের পোশাক আলমারির এক পাশে রেখে দিচ্ছে।
কৌতুহল নিয়ে শিমু জিজ্ঞেস করল,”আপনি আপনার জিনিস গুলো একপাশে রাখছেন কেন?”
সাফোয়ান কোন প্রতিক্রিয়া না করে এবার শিমু লাগেজ গুলো ধরতে যাবে অমনি শিমু দৌড়ে গিয়ে সাফোয়ানের হাত সরিয়ে দেয়।সাফোয়ান ভ্রকুচকে তাকায়।
“কি হলো হাত সরালেন কেন?”

“আপনি আমার লাগেজ ধরছেন কেন?”

সাফোয়ান শিমুর থেকে লাগেজ নিয়ে বললো “পোশাক গুছিয়ে রাখব।”

সহজ সাবলীল উওর দিয়ে সাফোয়ান লাগেজ নিয়ে যায়। শিমু আবার দৌরে গিয়ে আটকায়।

“আপনাকে রাখতে হবেনা।”

“কেন?”

“কারন আমার পোশাক আমিই রাখবো। ”

“আমি রাখলে কি সমস্যা বলুনতো!”

শিমু ভীষণ বিরক্ত হলো।রাগ দেখিয়ে বললো,
“আপনি বুঝতে পারছেননা একটা মেয়ের লাগেজে তার কত প্রয়োজনীয় জিনিস থাকে”।

সাফোয়ান এবার বুঝতে পারলো তবুও বউকে রাগানোর জন্য বলল,”না আমি কিভাবে বুঝবো আমি কি মেয়ে নাকি। আপনি বলুন আমি সব বুঝে নিচ্ছি।”
শিমু রাগে চোখ মুখ লাল করে লাগেজের ওপর থেকে সাফোয়ানের হাত সারিয়ে দিয়ে বলে,”আমার পোশাক আমি গোছাবো।যদি আরেক বার হাত বাড়ান তো হাত পা ভেঙে কাধে ঝুলিয় দিবো।”

সাফোয়ান এই প্রথম বউকে এতো রাগ করতে দেখে আর কথা বলতে দেখে অবাকই হলো।
কিন্তু শিমু তার সাথে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে বুঝতে পেরে মনে মনে খুশি হলো।

________________

অনিকা নিজের পড়ার টেবিলে বসে স্কেচ করছিল দু’টো চোখের।
দরজা খোলাই ছিল আয়ান চুপি চুপি পায়ে পিছন থেকে এসে বোন কে বলল,”কি করছিস পাকনী “।
আকষ্মিক শব্দ পেয়ে অনিকার হাতের স্কেচ বুকটা নিচে পড়ে যায়।
অনিকা দ্রুত স্কেচ বুকটা তুলতে যাবো অমনি আয়ান বুকটা নিজের হাতে তুলে নেয়।
হাত দিয়ে নাড়িয়ে নাড়িয়ে দেখে বলল,”কি বলত প্রেম পত্র লিখছিস নাকি। ”

“তুমি দাও তো খাতাটা। স্কেচ বুকে কি কেও প্রেম পত্র লিখতে পারে নাকি। ”

“পারে পারে মানুষ চাইলে সবই পারে।”

আয়ান খাতা টা খুলতে যাবে অমনি দ্রুত অনিক খাতা কেড়ে নিতে যায়। কিন্তু আয়ান খাতা দেয়না বোনের থেকে লম্বা হওয়ায় বোনকে এক বাহুর চিপায় আটকে রাখে।
অতঃপর খাতার পৃষ্ঠা উল্টাতে থাকে উল্টাতে উল্টাতে একটা পৃষ্ঠায় গিয়ে চোখ আটকে যায়।
এক জোড়া চোখ। চেনা চেনা লাগছে কিন্তু চিনতে পারছেনা। অনিকা কোন রকমে আয়ানের কাছ থেকে ছুটে হাত থেকে খাতাটা কেড়ে নেয়।

“ভাইয়া তুমি যে এমন করে আমাকে জ্বালাও।দোয়া করি তোমার বউ তোমাােকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিক।”

“তা যাই করুক একটা বউ হলেই চলবে আমার।”
___________

শিমু সাফোয়ানের মাঝে আজকে রয়েছে বিশাল কোলবালিশ। সাফোয়ানই রেখেছে এই ভয়ে যদি কিছু হয়ে যায়।যা মেয়ে পড়ে তার হাত পাই ভেঙে দিবে।
________________

কেটে গেছে দু’টো দিন সাফোয়ান শিমুর চলে যাবার সময় হয়ে গেছে ইচ্ছে না থাকা সত্বেও শিমু কে যেতে হচ্ছে।
শিমুর যাবতীয় জিনিস গাড়িতে তুলছে ড্রাইবার চাচা। শিমু শাশুড়ি কাছে দাড়িয়ে আছে মুখ ভার করে যেন যেন টুপ করে চোখের জল গড়িয়ে পড়বে। অনিকাও মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে।তার ইচ্ছে করছে না ভাবীকে যেতে দিতে।কিন্তু ভাই ভাবীর মাঝে যোজন যোজন দুরত্ব কমাতে তাদের একত্রে থাকাটা প্রয়োজন।
আয়ান সাফোয়ানের সাথে দুষ্টুমিতে ব্যাস্ত।
অবশেষে সকলকে বিদায় দিয়ে সাফোয়ান আর শিমু গাড়িতে বসল।

দাদী তাদের যাওয়া দেখেও কিছু বলল না।শুধু মুখে অন্ধকার নামিয়ে বসে রইল।

শিমুর চোখ এবার বাধ ভেঙে গেল। চোখ দিয়ে ফোটা ফোটা পানি পড়ছে আর ও হাতের সাহায্যে মুছে ফেলছে।
সাফোয়ান নিজের রুমাল এগিয়ে দিলো ।
শিমু সাফোয়ানের থেকে রুমালটা নিয়ে চোখ পরিস্কার করলো।
মুহুর্তের মাঝেই শিমুর চোখ মুখ লাল হয়ে গেল।
প্রায় তিন ঘন্টার রাস্তা। আধঘণ্টা মতো কান্না করে শিমু ঘুমিয়ে গেল।
সাফোয়ান সপ্তপর্ণে শিমুর মাথা সাফোয়ানের কাধে রাখল।মনে মনে ভাবল মেয়েটার কত রূপ দেখবে সে কখনো রুদ্রাণী কখনো কান্নাবতী কখনো আবার শান্ত নদীর মতো গভীর।

এই মেয়ের প্রেমে পড়ার মতো হাজার কারন আছে তার কাছে।তাই সে একটা কারনও মিস করবেনা। সব গুলো কারন দেখে তার প্রেম পুকুরে হাবু ডুবু খাবে।

সাফোয়ানের মনে একটা ইচ্ছে বার বার উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। মন চাচ্ছে একবার মেয়েটার গালে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করাতে।
কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে না এটা করলো তার ওয়াদা ভঙ্গ হবে।
মন মস্তিষ্কর সাথে লড়াই করে সে মস্তিস্ককেই জিতিয়ে দিল।
গভীর ভাবে তাকিয়ে রইল নিজ স্ত্রীর দিকে। নেই চোখের প্রণয় যদি শিমু দেখত তবে সাফোয়ান কে নির্বিঘ্নে আপন করে নিত।
___________
লায়লা বেগম রান্না ঘরে রহিমা খালার সাথে রান্না করছিলেন। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ হলো তিনি দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখলেন আমান আর তার পরিবার দাড়িয়ে আছে। এই সন্ধ্যা বেলায় তাদের আসার কারন বুঝতে পারলেননা।তবুও ভদ্রতার খাতিরে ভিতরে আসতে বললেন।
আমান সম্পর্কে আয়ানের বন্ধু সে মাঝে মাঝেই এ বাড়িতে আসে কিন্তু বাবা মাকে নিয়ে আসার কারন টা অস্পষ্ট।
তাই তিনি তাদের হালকা নাস্তা দিয়ে ওপরে আয়ানকে ডাকতে চলে যান।
অনিকার মন খারাপ দেখে আয়ান এটা সেটা বলে বোনকে খুশি করার চেষ্টা করছে।
লায়লা অনিকার রুমে আয়ানকে দেখে বললেন। “আয়ান তোর বন্ধু এসেছে।”

আয়ান বিষ্ময় নিয়ে বললো,”এই সন্ধ্যা বেলায়!”

“হ্যা আমান এসেছে পরিবার নিয়ে।”

আমানের নাম শুনে অনিকার হার্ট বিট ফাস্ট হয়ে গেল। অস্পষ্ট স্বরে বলল আমান পরিবার নিয়ে চলে এসেছে।

আয়ানের বন্ধুর হঠাৎ পরিবার নিয়ে আগমনের কারনটা বোধগম্য হলোনা।

দ্রুত নিচে গিয়ে আমানকে বলল,দোস্ত তুই এই সন্ধ্যা বেলা”।
“কেন আসতে পারিনা। ”

আমানের শিতল কণ্ঠে উওর দিয়ে আশে পাশে চোখ বুলিয়ে অনিকাকে খুজল। না কোথাও নেই, মেয়েটা তাকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেবার প্লানিং করেছে নাকি।

আলতাফ এসে আমানের বাবা সিরাজের পাশে গিয়ে বসলেন।
“ভাই এই অসময়ে আপনারা এখানে, কোথাও যাচ্ছিলেন বুঝি।”

“না ভাই এখানেই এলাম।”

আলতাফের ভ্রকুচকে গেল। ভদ্রতা সুলভ মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,”হঠাৎ এই পথে কি মনে করে”।

“এখন রোজই আসতে হবে সম্পর্ক দৃঢ় করতেই এসেছি।”

আলতাফ বিচক্ষণ মানুষ সিরাজের কথার মানে খুব দ্রুতই বুঝতে পারলেন। আমানের দিকে একবার গভীর ভাবে তাকালেন।আমান বারবার অনিকার রুমের দিকে তাকাচ্ছে।
যা বোঝার তিনি বুজে গেলেন। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে আমান।আমান ছেলে হিসেবে ভালোই বর্তমানে সে একজন হার্ট সার্জন। সিরাজও নামকরা ব্যাবসায়ী। সব মিলিয়ে তিনি অমত করার সুযোগ পেলেননা।
তাই মুখে এক গাল হাসি ফুটিয়ে বললেন,”লায়লা মাকে ডাকো আর মিষ্টি নিয়ে আসো।”
সিরাজ ও খুব খুশি হলেন, “যদিও আমার ডায়াবেটিস আছে তবে আজকে জন্য মিষ্টি খেলে কিছুই হবেনা”।

আমানের মা কামিনী বেগম স্বামীর দিকে চোখ গরম করে তাকালেন। বউ এর চোখ গরম দেখে সিরাজ মুখ ছোট করে বললেন,”অল্প করেই খাবো।”

সিরাজের কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে দিলেন।
আয়ান বন্ধুর চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকায়।মনে মনে আওড়ায়,”আমার বোনের সাথে শা*লা তুই এত কিছু করলি আমিই জানলাম না।”

চলবে,,,,

প্রেম_পুকুর পর্ব-০৫

0

#প্রেম_পুকুর
[৫]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ একাকী জীবনযাপন করতে পারেনা তার জন্যই গড়ে উঠে পরিবার।পরিবারের মানুষ গুলো একে ওপরের সাথে গভীর বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। কিন্তু সেই বাধন ছেদ করে মেয়েদের চলে যেতে হয় শশুড় বাড়ি এক মুহুর্তেই পর হয়ে যায় নিজের পরিবার আর শুরু হয় অন্য পরিবারের সাথে মানিয়ে চলা।এই জটিল সময়টাতে প্রত্যেকটা মেয়ের সাথে তার স্বামীর ভালোবাসাটা থাকা প্রয়োজনীয়।

গাড়িতে চুপ করে মন খারাপ করে বসে আছে শিমু। ভেবেছিলো এতোদিন পর বাড়িতে এসেছে কিছুদিন থাকতে পারবে কিন্তু আপসোস সেটা আর হলোনা। সকালে আয়ান ফোন করেছিল, বলল দাদী নাকি বাথরুমে পড়ে গিয়েছে। যার ফলে পায়ে ভীষণ ব্যাথা পেয়েছে।সাফোয়ানকে বার বার নাকি দেখতেও চাইছে, তাই এত তাড়াহুড়ো করে চলে আসা।
শিমু ইচ্ছে করছিলো না বাবা আর ছোট দুই বোন কে ফেলে আসতে। বাবার একাকী এইবয়সে থাকাটা অনেক কষ্টের। তার পরে তার ছোট দুই বোন ও মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত।
কত বলেছে বাবাকে বাবা আরেকটা বিয়ে করো কিন্তু বাবা মানতে নারাাজ।
কালকে রাতে সাফোয়ান ও কথায় কথায় বলছিল,”আব্বু আপনার একজন সঙ্গির প্রয়োজন ফিহা রিহার ও একজন মায়ের প্রয়োজন। ”
মজিদ এক গাল হাসি দিয়ে বলেছিল,”বাবা ভালোবাসার মানুষটার জায়গা তার জন্য একান্তই তোলা থাকে।তুমি যদি তাকে গভীর ভাবে ভালোবাসো তার অনুপস্থিতিতেও তোমার কখনো একা মনে হবেনা। মনে হবে সে তোমার আশে পাশে আছে।আর ফিহা রিহার কথা বলছো ওদের জন্য আমি মা আনতেই পারি কিন্তু সেই মা যে ওদের কে ভালোবাসবে তার কি গ্যারান্টি আছে।আর আমার কোন সঙ্গিনীর প্রয়োজন নেই।এক জীবনে যার সঙ্গ পেয়েছি তাকে ভেবে ভেবেই চলে যাবে আমার”

সাফোয়ান মুগ্ধ হয়ে শুনে তার শশুড়ের কথা। ভালোবাসা যে কতটা সুন্দর শুধু মাত্র যে ভালোবাসতে জানে সেই এর প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারে।আর স্বামী স্ত্রীর মাঝে যে ভালোবাসা থাকে সেটা হয় পবিত্র। যার মাঝে রয়েছে অন্যরকম প্রশান্তি।

শিমুর চিন্তা ভাবনার মাঝেই গাড়ি এসে থামলো সাফোয়ানদের বাড়ির সামনে।
সাফোয়ান নিজ স্ত্রী দিকে একবার তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল।
শিমু ও বেড়িয়ে এলো গাড়ি থেকে। দুজনে একসাথে ভিতরে আসল। কলিং বেল চাপতেই রহিমা খালা এসে দরজা খুলে দিল।

সাফোয়ান ভিতরে আসতেই দেখলো দাদী সোফার ওপর পা টান টান করে বসে আছে। পায়ে ব্যান্ডেজ করা।
সাফোয়ান এগিয়ে গিয়ে দাদীর পায়ের কাছে বসল,”কেমন আছো এখন?”
দাদী কাঁদো কাঁদো হয়ে উওর দিল,”এইতো যা দেখছিস”।
“বাথরুমে পড়ে গেলে কি করে?”

“কিভাবে যে পড়ে গেলাম “।

“ওহ! তাহলে তুমি রেস্ট করো আমি এখনই ফ্রেস হয়ে আসছি।”

শিমু গুটিশুটি মেরে এক কোণে দারিয়ে ছিল।
মনে মনে ভাবল মহিলাটা যতই খারাপ হোক ব্যাথা যেহেতু পেয়েছে তার একবার জিজ্ঞেস করা উচিত।
শিমু কাছে গিয়ে দাদী বলে ডাক দিল একবার। রাজিয়া বেগম অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। যেন সব কিছুর জন্য শিমু দায়ী। শিমু কিছুটা অপমান বোধ করল।

আর কিছু না বলে নিজের ঘরে ফ্রেস হতে যাবে অমনি শাশুড়ি কথা থেকে যেন ছুটে আসল

“শিমু ওই দিকে কই যাচ্ছো?”

“জ্বী আম্মা ফ্রেশ হতে যাচ্ছি”।

“ওই দিকে না তুমি সাফোয়ানের ঘরে যাও। আমি তোমার সব কিছু ওই ঘরে রেখে এসেছি “।

“কিন্তু আম্মা! ”

“আমি আশা রাখছি তুমি আমার ওপরে কোন কথা বলবেনা”।

দাদী মুখ বাকিয়ে ব্যঙ্গ করে বলল,”আদিক্ষেতা। ”

লায়লা বেগম তার কথায় কোন পাত্তা দিলেন না।

শিমু গুটি গুটি পায়ে সিড়ি ডিঙিয়ে সাফোয়ানের কক্ষে দরজার সামনে গেল।দরজা খোলাই আছে।

তবুও শিমু দরজায় খটখট আওয়াজ করল।

সাফোয়ান ভিতর থেকে আওয়াজ দিয়ে বললো ,”ভিতরে আসো”।

শিমু জানে এটা তাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়নি তবুও সে ভিতরে গেল।
সাফোয়ান বাথরুমে আছে সেখান থেকেই পানির শব্দ আসছে।শিমু পৃুরো ঘরে চোখ বুলালো।অতঃপর তার নজর পরল ঘরের এক কোণে রাখা লাগেজ গুলোর দিকে যেখানে লায়লা তার পোশাক জিনিস পত্র রেখে গেছে।
গুটি গুটি পায়ে সে দিকে এগুলো। লাগেজ খুলে একটা হালকা গোলাপি রঙের থ্রিপিছ বের করল।
এর মাঝেই দরজা খোলার শব্দ এলো, শিমু দ্রুত পিছনে ঘুরলো সাফোয়ান দারিয়ে আছে। আর তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।তাকে দেখেই মনে হচ্ছে সে এখানে শিমুকে দেখবে ভাবতেও পারিনি।
পড়নে একটা জিন্সের প্যান্ট আর কালো রঙের গেন্জি।আর কাধে টাওয়াল। চুল দিয়ে টপ টপ করে পানির ফোটা পড়ছে।
শিমু উঠে দারিয়ে নিজের লাগেজ গুলোর দিকে ইশারা করে বলল,”আম্মা বলেছে আজ থেকে এই রুমে থাকতে।”
সাফোয়ান লাগেজ গুলোর দিকে তাকালে সে এগুলো কিছু খেয়াল না করেই ওয়াশ রুমে চলে গেছিলো।
মনে মনে মায়ের সিদ্ধান্তে খুশি হলো। কিন্তু শিমুকে কিছু বুজতে দিলোনা চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।শিমু তার যাবার দিকে তাকিয়ে ভাবল। লোকটা কি তার এই ঘরে আসাতে বিরক্ত হয়েছে।

সাফোয়ান নিজের রুম থেকে বেরিয়েই মায়ের কাছে চলে গেল।মাকে একটা বিশাল ধন্যবাদ দিতে হবে।মনে মনে আওরালো,”আসলেই মা গ্রেট।”

তারাতারি মায়ের কাছে গিয়ে মাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল।
“মা তুমি বেস্ট “।

“ধন্যবাদ যদি কাওকে দেওয়ার থাকে আমাকে দে ব্রো।”

সাফোয়ান আয়ানের দিকে ভ্রকুচকে তাকালো।আয়ান বেশ আরাম করে বসে আপেল খাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

“কেন তোকে দিবো?”

“আমাকে দিবি না তো কাকে দিবি আমিই তো বুদ্ধিটা মাকে দিলাম”।

সাফোয়ান আয়ানের হাত থেকে আপেল নিয়ে কামড় বসিয়ে বলল,”ধন্যবাদ।”

“আমি শুধু ধন্যবাদ নিবোনা”।

“বল কি লাগবে তোর?”

“কানে কানে বলি”

“আচ্ছা”।

“আমার না বউ লাগবে”।

সাফোয়ান আয়ানের পিঠে জোড়ে করে থাপ্প*র বসিয়ে দিল,”কথা ঠিক করে বলিস আমি তোর বড়ো ভাই।”

আয়ান পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে ভাইয়ের দিকে অসয়াহের মতে তাকিয়ে আছে।যার জন্য এতো কিছু করতেছে।সেই ভাইও তার দুঃখ বুঝলোনা রে।
_________

ডিনারে সবাই একাসাথে খাবার খেতে বসেছে।
শিমু আর লায়লা বেগম খাবার সার্ভ করছে।
আলতাফ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,”সাফোয়া তুমি ঢাকায় ফিরছো কবে “।

“আব্বু ফিরবো ৩ তারিখে ।”

“ওহ তার মানে দু’দিন আছো।”

“জ্বী”।

আলতাফ এবার আরো গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,”তাহলে তোমার তো সেখানে একা সব কিছু করতে কষ্ঠ হয়। তুমি বরং বউমাকে নিয়ে যাও।”

রাজিয়া বেগম খাবার রেখে আলতাফের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালেন।
“কি বলছিস তুই আলাতাফ শিমু চলে গেলে বউমার কষ্ঠ হবে তো।”

আলতাফ মায়ের দিকে ভ্রকুচকে তাকিয়ে বললেন, “মা লায়লার জন্য রহিমা আর অনিকা আছে। কিন্তু সাফোয়ান সেখানে একা থাকে।তাই শিমু গেলে সাফোয়ানেরই ভালো হবে।”

লায়লা মনে মনে খুশি হলেন স্বামীর সিদ্ধান্তে। তার ছেলে আর ছেলের বউয়ের মধ্যকর সম্পর্ক ঠিক করার জন্য তাদের একত্র থাকা প্রয়োজন।
সবাই খুশি হলেও রাজিয়া বেগম মুখ ভার করে বসে রইলেন।
আয়ান অনিকা দাদীর দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে।
অনিকা আয়ানের কানে কানে বলল,”ভাইয়া ভালো হইছে কিন্তু বুড়ির বেশ শিক্ষা হয়েছে। ”

আয়ান দাদীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,”দাদী খাচ্ছো না কেন?”

আয়ানের কথা শুনে দাদী ভাতের লোকমা গালে নিয়ে চিবুতে শুরু করল।
আবারও ছেলের বউ এর কাছে হেরে গেল।ছেলে নাতি কাওকে তার আর নিজের বসে করা হলো না।

এই সবের মাঝে শিমু চোখ ছল ছল করে দাড়িয়ে রইল। সবাই তাকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিল কিন্তু তার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করল না।

সাফোয়ান খেতে খেতে শিমুর দিকে তাকালো। শিমুর অবস্থা দেখে বুঝতে পারলো শিমু তার সাথে যেতে চায়না।

চলবে,,

প্রেম পুকুর পর্ব-০৪

0

#প্রেম_পুকুর
[৪]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

শিমুদের বাড়ি থেকে কিছুটা সামনে এগুলে কালিগঙ্গা নদী। নদী থেকে সূর্যাস্ত এক অপরূপ সৌন্দর্য বহন করে।
সাফোয়ান মুগ্ধ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ সেই সূর্যাস্ত দেখল।
ফিহা আর রিহা দুই বোন দুলাভাইয়ের হাত ধরে তারাও উপভোগ করছে।

সাফোয়ানের মনে হলো শহর থেকে গ্রাম অনেক সুন্দর। তাদের গ্রামে আসাই হয়না বলতে গেলে। সেই ছোট বেলায় আসতো মায়ের সাথে। আজ এত দিন পর গ্রামের সৌন্দর্য দেখতে পেরে অনেক অনেক ভালো লাগার অনূভুতি হচ্ছে তার।

__________

শিমুর চিন্তা চিন্তায় মুখ কালো হয়ে গেছে।সাফোয়ানের তো চলে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু সে তো গেলোনা। এখন তাদের এক ঘরেই থাকতে হবে। লোকটা তো তেমন একটাভালো নয় যদি তার কাছে আসতে চায় তবে সে কি করবে।সে কি চেঁচাবে, না এটা করা যাবেনা। নিজের সাথে বোঝাপড়া করে কোন উওর পেলোনা শিমু।তাই হতাশ হয়ে বসে রইল।

ইতিমধ্যেই শশুরের সাথে কথা শেষ করে বউ এর ঘরে ঢুকলো সাফোয়ান। ভিতরে এসেই নজর পরল এক ভাবুক রমণীর দিকে। যে সর্বদাই নিজের ভাবনায় ডুবে থাকে। ভাগ্যিস মা তাকে এই বাড়িতে আসার বুদ্ধিটা দিলো না হলে বউ এর এত কাছাকাছি আসা যেতোনা।

সাফোয়ান গলা খাঁকারি দিলো।
সাফোয়ানের শব্দ পেয়ে শিমু সটানভাবে দারিয়ে গেল।
সাফোয়ান শিমুর কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।
শিমু সেটা খেয়াল করে আরো অস্বস্তিতে পরে গেল।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল কাছে আসতে চাইলে কড়া করে কিছু কথা শুনিয়ে দেবে।

” আপনি কি কিছু নিয়ে চিন্তিত।”

শিমু সাথে সাথে কথা নাকোচ করে বলল,”না না আমি চিন্তিত নই। আপনি কাছে আসতে চাইলে কি আমি আসতে দিবো নাকি।”

নিজের কথা শেষ করে শিমু ঠোঁটে কামড়ে ধরল। মনে মনে ভাবল এটা কি বলে ফেলল সে।

সাফোয়ানের মুখের হাসিটা আরো চওড়া করে বলল,”ওহ তার মানে আমি কাছে আসব?”

শিমু ভীষণ অস্বস্তি নিয়ে দারিয়ে রইল অতিরিক্ত চিন্তায় তার সব গুলিয়ে যাচ্ছে। তাই সে আর লজ্জায় কোন কথা বলতে পারলোনা। চুপ করে দারিয়ে রইলো।

সাফোয়ান গিয়ে বিছানায় বসলো।
পুরো ঘরে একটা খাট, একটা পড়ার টেবিল আর একটা টিনের বাক্স ব্যতীত কিচ্ছু নেই।

শিমু এখোনো একই ভাবে দারিয়ে আছে।

“আপনি কি ঘুমাবেননা না, নাকি না ঘুমিয়ে রাত পাড় করে দেবার ইচ্ছে আছে।”

“সত্যি বলতে আমার আপনার পাশে শুতে অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।”
শিমুর অকপটে উওর।”

“আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন আপনার অনুমতি ব্যতীত আমি আপনাকে কখোনো স্পর্শ করবোনা।”

শিমু তবুও পুরোপুরি শান্ত হলোনা।সাফোয়ান শিমুর অস্বস্তি বুঝতে পেরে বিছানার দিকে একবার তাকালো। বিছানায় একটা কাঁথা আর দুইটা বালিশ।
সাফোয়ান বিছানার মাঝ বরাবর কাঁথা ভাজ করে লম্বা করে বিছিয়ে বিছানা দু’ভাগ করল।

“আপনি এক পাশে থাকবেন আমি একপাশে থাকবো। আশা করছি আপনার কোন অস্বস্তি হবেনা। ”

অতঃপর সাফোয়ান নিজের পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো।
শিমু কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সেও নিজের পাশে এক কোণে গিয়ে শুয়ে পড়ল।

সাফোয়ান হঠাৎ চোখ খুলে বলে উঠল, “আমি অতিক্রম করবোনা কিন্তু আপনি চাইলে আসতে পারেন আমার পাশে। আমি কিছু মনে করব না।”

শিমু মনে মনে সাফোয়ানকে বেয়াদব বলে গা*লি দিল।

তারপর ক্লান্ত থাকায় চোখ বন্ধ করতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।

সাফোয়ান কিছুক্ষণ ঘুমের অভিনয় করে শুয়েছিল।

শিমু ঘুমিয়েছে বুঝতে পেরে সাফোয়ান চোখ মেলল।

মেয়েটা তার দিকে পিঠ করে শুয়ে আছে। সাফোয়ান আস্তে করে বিছানা ছেড়ে উঠল।শিমু যে পাশ করে শুয়ে ছিল উঠে সে পাশে গিয়ে দারালো।
শিমু গভীর ঘুমে তলিয়ে থাকায় সে বুঝতেও পারলোনা তার দিকে কেউ গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে।
সাফোয়ান শিমুর ঘুমের সুযোগ নিয়ে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো।

নিজের করা ভুল গুলো চরমভাবে অনুভব করল।আজকে তাদের সম্পর্ক সাধারণ স্বামী-স্ত্রীর মতো হতে পারতো। কিন্তু সে, সেই তো নিজের রাগ ক্ষোভ কে প্রাধান্য দিয়ে চলে গেছিলো।কোন মেয়েই চাইবে না তার স্বামী তাকে বিয়ের পরে একা ফেলে চলে যাক।

মেয়েটার সাথে এটুকু সময় থেকে সে যতটুকু বুঝতে পেরেছে মেয়েটা ভীষণ চাপা স্বভাবের। বুকে ফাটবে কিন্তু মুখে ফুটবেনা।

সাফোয়ানের খুব ইচ্ছে করল নিজের হাত বাড়িয়ে শিমুর গাল স্পর্শ করার।কিন্তু পরক্ষনেই নিজের করা ওয়াদার কথা মনে করে হাত সরিয়ে নিলো।সব যখোন সেই শুরু করেছে তখোন সেই শিমুর ভালোবাসা জয় করে নেবে এতে যতই তারে কাট খড় পোড়াতো হোক না কেন তাকে ।

__________

সকালে আজনের আওয়াজ পেয়ে ঘুম ছুটে গেল শিমুর। নিজের দিকে তাকাতেই অবাক হলো তার শরীরে কাঁথা দিয়ে জড়ানো। সাফোযা নিজের নির্দিষ্ট জায়গায়ই ঘুমিয়ে আছে।
নিজের স্বামীর দিকে একবার গভীর দৃষ্টিতে তাকালো শিমু।
ফর্সা মুখে কালো কালো ছোট ছোট চাপ দাড়িতে ভীষণ সুন্দর লাগছে ছেলেটাকে। কিছুক্ষণ সাফোয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কি করছিল বুঝতে পেরে নিজেকে গা*লি দিতে দিতে ওজু করতে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।

টিনের ফাঁকফোকর দিয়ে রোদের আলো এসে পড়ছিল সাফোয়ানের ওপর।সেই আলোতেই সাফোয়ানের ঘুম ভেঙে গেল। সাফোয়ান আশেপাশে তাকালো একবার। শিমু ঘরে নেই।
সাফোয়ান বিছানা থেকে উঠে ঘর থেকে বাহিরে বের হলো।
তার ছোট দুই শালিকা হাতে বল নিয়ে দৌরা দৌরি করছে। শিমু রান্না করছে রান্না ঘরে আর ওর শশুড় এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে।সাফোয়ান অনুভব করল তার শাশুড়ি থাকলে হয়তো তার আদর টা আরো কয়েকগুন বেড়ে যেত।
সাফোয়ান শালিকাদের কাছে গেল।
ফিহা আর রিহা সাফোয়ানকে কাছে পেয়ে বায়না করলো তাদের সাথে বল খেলতে।সাফোয়ান তাদের অনুরোধ ফেলতে পারলোনা।
তাদের সাথে খেলতে খেলতে বলটা একটু ঝোপের আড়ালে চলে গেল। ফিহা, রিহা আনতে যেতে চাইলে সাফোয়ান তাদের রেখে নিজেই বল আনতে গেল।
ঝোপড়ার নিচে নিচু হয়ে বল আনতে গিয়ে ভুল বসত ঝোপড়ার কাটা পড়নের শার্ট ভেধ করে পিঠে ঢুকে গেল ব্যাথায় মুখ থেকে আহ শব্দ বের হয়ে এলো সাফোয়ানের।
তবুও কষ্ঠ করে বলটা উদ্ধার করে শালিকাদের হাতে ধরিয়ে দিলো।
রিহা র*ক্ত দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠল।
“দুলাভাই র*ক্ত।”
রিহার চিৎককর শুনে শিমু দৌরে এলো।
দেখলো সাফোয়ানের পিঠে থেকে শার্ট ভেদ র*ক্ত বেরুচ্ছে ।
শিমু দ্রুত এগিয়ে গেলো সাফোয়ানের দিকে।
“শার্ট টা খুলেন।”
“আমার তেমন ইনজুরি হয় নাই তো “।
“চুপ করুনতো,আপনি কি কোন ভাবে শার্ট খুলতে লজ্জা পাচ্ছেন নাকি”।

সাফোয়ান ভাবল সে কি মেয়ে নাকি লজ্জা পাবে।

সাফোয়ান একটানে শার্ট খুলে ফেললো। শিমু দেখলো এক জায়গায় কাটা ফুঁটে গেছে, আরেকটা জায়গায় বেশ অনেকটা আচর লেগেছে।
শিমু দ্রুত কাটা টান দিয়ে বেড় করল।
সাফোয়ান ব্যাথায় চোখ মুখ কুচকে নিল।
অতঃপর শিমু কাটা জায়াগা পরিষ্কার করে মলম
লাগিয়ে দিলো।

“আপনি ঝোপঝাড়ার ভিতরে কেন গেছিলেন। দেখতেই তো পাচ্ছো ওখানে বেলের কাটা আর খেজুরের কাটা রাখা।”

সাফোয়ান চোখ বড়বড় করে তাকালো।

বেলের কাটা আর খেজুরের কাটার ভয়া*বহতার কথা শুনেছে সে। আজকে প্রত্যক্ষদর্শীও হলো।

শিমুর এবার সাফোয়ানের উন্মুক্ত বুকের দিকে নজর গেল। শার্ট লেস বুকে বলতে গেলে তেমন একটা লোম নেই।বেশ আকর্ষণীয় লাগছে দেখতে। শিমু অন্যদিকে ঘুরে ঢোক গিললো।
মনে মনে বললো,”লোকটা কি জিম করে নাকি?”

সাফোয়ান শিমুর চোখ ঘুরিয়ে নেওয়া দেখে মনে মনে হাসল।
ভাবল,”বউ যদি এতো আদর করে মেডিসিন লাগিয়ে দেয় তবে একটু আধটু ব্যাথাতে কিছুই হয়না”।

ফিহা আর রিহা অসহায়ের মতো বোন জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে এই ভেবে তাদের কারনে তাদের দুলাভাই কে এত কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।

চলবে,,,

প্রেম_পুকুর পর্ব-০৩

0

#প্রেম_পুকুর
[৩]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

জিবন বড্ড ভয়ং*কর নাটকের চেয়েও নাটকীয় ভাবনার চেয়ে অভাবনীয়। সময়ের পরিক্রমায় কালো ছায়ায় মোরা।কিছুটা আশা আর কিছুটা ভ্রম।জিবনের সংঙ্গা কোনো ব্যাক্তি নির্দিষ্ট ভাবে দিতে পারবেনা।কারন এটি অসমান্তরাল পথের বাঁকের মতো।তাই জিবনের সমীকরণকে সহজ ভাবা অন্যায়।

রাতের আকাশ জুড়ে তারারা মিটি মিটি করে জ্বলছে অপরূপ সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে পুরো পৃথিবী জুড়ে। ছাদে দারিয়ে থাকা এক তরুণী নিজের ছোট জিবনের জটিল সব সমীকরণ মেলাতে ব্যাস্ত। কিন্তু বেলা শেষে সে হতাশ।

রাতের শীতল পরিবেশ অনুভব করার জন্য সাফোয়ান আর আয়ান ছাদে এসে ছিল।হঠাৎ তাদের দুজনের চোখ পরলো সাদা ওড়না মাথায় মোড়ানে একজন নারী অবয়বের দিকে। আয়ান কে হতে পারে বুঝতে পেরে নিঃশব্দে ছাদ থেকে প্রস্থান করে।
ভাইয়ের উপস্থিত বুদ্ধি দেখে সাফোয়ান মনে মনে খুশি হয়।
এবার পূর্ণ দৃষ্টি দেয় সামনে থাকা নারী অবয়বের দিকে।সেই নারী নিজের ভাবনা নিয়ে এতই বেশি বিভোর যে ছাদে সে ব্যাতিত যে অন্য কেও উপস্থিত আছে সে সম্পর্কে তার কোন ধারনাই নেই।

সাফোয়ান তার অর্ধাঙ্গিনীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। অতঃপর মনের সব সংকোচ ভুলে প্রশ্ন করন, “এত রাতে ছাদে একা কি করছেন?”

শিমু প্রথমে পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে কিছুটা ভরকে গেল। মাথা ঘুরিয়ে পিছনে ঘুরতেই তার নিশ্বাসের ক্রমশ বেড়ে গেল। হাত পা জড় বস্তুর ন্যায় স্থীর হয়ে গেল। নিজেকে স্বাভাবিক করতে শিমু কয়েকবার চোখের পলক ফেলল। কিছুটা স্বাভাবিক হতেই সাফোয়ানকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে শিমুর মনে হলো তার বুকে মধ্যে কে যেন ঢাক ঢোল বাজাচ্ছে।

সাফোয়ান শিমুর অস্বস্তি কিছুটা বুঝতে পারলো তবুও সে নির্বিকার হয়ে নিজের অর্ধাঙ্গিনীর সামনে এসে দারালো।
শিমুর নিজেকে কেমন শূন্য শূন্য মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সে এখোনি ঢলে পরবে।সে তো এতটা দূর্বল নয়। আর তার অস্বাভাবিক হবার কারনই বা কি?
কিন্তু নিজেকে প্রশ্ন করে শিমু কোন উওর পেলোনা।তবুও প্রাণপণ দিয়ে চেষ্টা করল নিজেকে স্বাভাবিক রাখার।

সাফোয়ান মুখ আরো কিছুটা সামনে নিয়ে আসল।শিমুর ছোট ছোট চুল গুলো বার বার মুখে এসে পরছে।সাফোয়ান সপ্তপর্ণে শিমু চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দিল। সাফোয়ানের মুখ জুড়ে একরাশ মুগ্ধতা ছরিয়ে পরেছে।

“এই মাইয়া তুই এতো রাতে ছাদে কেনো আইছোস”।

দাদির কর্কশ কন্ঠ পেয়ে সাফোয়ান শিমুর থেকে দূরে সরে দারালো।তার চোখ মুখে কিছুটা বিরক্ত ফুটে উঠেছে দাদীকে দেখে।

কিন্তু শিমু ছাড়া পেয়ে এক দৌরে নিচে চলে গেল।
রাজিয়া বেগম বিরক্ত হলেন ভাগ্যিস সে সময় মতো এসেছে না এলে কি হতো কে জানে।

“সাফু দেখলা কেমন মাইয়া “।

সাফোয়ান কিছু না বলে দাদীকে পাশ কাটিয়ে চল গেল।তার দাদীর প্রতি রাগ রাগ লাগছে।

শিমু নিজের কক্ষে এসে সঙ্গে সঙ্গে দরজা আটকে দিল। তার কেমন সব অজানা অনূভুতি হচ্ছে কিন্ত তার তো রেগে যাওয়া উচিত ছিলো।
নিজের করা কাজেই হতভম্ব হয়ে গেছে সে। কত দিন সে চিন্তা করেছে লোকটাকে সামনে পেলে নিজের সকল কষ্ট ঝেরে দেবে কত গুলো কড়া করে কথা শোনাবে কই সে তো পারলোনা। নিজের প্রতি ভীষণ রাগ লাগছে এবার শিমুর।

_____________

“আসবো,শিমু?”

শিমু বিছানা গোছাচ্ছিল হঠাৎ শাশুড়ির শব্দ পেয়ে সে শাশুড়ির দিকে ঘুরলো।এত সকাল বেলা শাশুড়িকে নিজের কামড়ায় দেখে কিছু অবাক হলো ।

“জ্বী আম্মা,আসুন।”

লায়লা বেগম এসে খাটের পাশে রাখা আরাম কেদারায় বসলেন।

“শিমু তুমি তো অনেক দিন হলো বাড়ি থেকে এসেছ প্রায় দেড় মাস হলো। আমি চাচ্ছিলাম তুমি কিছুদিনের জন্য তোমার বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে এসো।”

শিমু এখোন এমন কথা যদিও শাশুড়ির থেকে আশা করেনি কিন্ত তার চিত্ত আনন্দিত হলো।
কত দিন পর নিজ বাড়িতে যেতে পারবে ভেবে ভিতরে ভিতরে খুশির ঢেউ শুরু হলো কিন্তু শিমু সোটা প্রকাশ করল না।

“আচ্ছা তুমি বিকেলে তৈরি থেকো, সাফোয়ান তোমাকে নিয়ে যাবে।”

সাফোয়ানের সাথে যাবে ভাবতেই শিমুর সর্ব শরীর শিউরে উঠল। কিন্তু শাশুড়িকে সে কিছুই বললনা না। সম্মতি সূচক অর্থে নিজের মাথা ঝাকালো।
লায়লা বেগম নিজের কাঙ্ক্ষিত উওর পেয়ে খুশি হলেন।

শাশুড়ি চলে যেতে শিমু নিজের সাথে হিসেব নিকেশ করতে বসল।
অনেক ভেবে চিন্তে পেল, সাফোয়ানতো তার সাথে যাবে ঠিকই কিন্তু সে আবার পুনরায় চলেও আসবে তাকে রেখে। কারন এত বড়লোকের ছেলে তার মতো গরিবের বাড়িতে গিয়ে থাকতে পারবে না।

___________
শহরের সমান পিচ ঢালা রাস্তা পেরিয়ে গাড়ি টা গ্রামের মাটির রাস্তা ধরেছে। সাফোয়ান ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করছে। আর শিমু গাড়ির জানালা দিয়ে গ্রামের দৃশ্য অবলোকন করছে।
দুজনের মাঝে মধ্যে প্রগাঢ় নিস্তব্ধতা।

মাঝে মধ্যে সাফোয়ান লুকিং গ্লাসে দু একবার পিছনে তাকাচ্ছে আরব ড্রাইভিং করায় মনোযোগ দিচ্ছে।কিন্তু দুজনের কেউই নিরাবতা ভেঙে কোনো কথা বলছেনা।

এরকম পিনপতন নিরাবতা আরো কিছুক্ষন চলল।অবশেষে সাফোয়ান শিমু কে জিজ্ঞেস করল।

“আপনার গ্রাম টা কিন্তু অনেক সুন্দর “।

শিমু শুধু মুখ দিয়ে হুম উচ্চারণ করল।

“আচ্ছা আপনি কি কথা বলতে পারেন না? ”

শিমু এবার সাফোয়ানের দিকে ভ্রকুচকে তাকালো।

সাফোয়ান মেকি হাসি দিয়ে বলল, “আসলে আপনি তখোন থেকে চুপচাপ বসে আছেন তাই বললাম “।

শিমু এখোনো কোনো উওর দিলোনা একরাশ বিরক্ত নিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখল।
সাফোয়া একটু হতাশ হলো বুঝতে পারলো এ মেয়ে এতো সহজে গলবে না।

দুজনের মধ্যে আবারো নিস্তব্ধতা নেমে এলো। গাড়ি ছুটলো আবার নিজ গন্তব্যে।

_______________
গাড়ি এসে থামল একে বারে শিমুদের বাড়ির ওপর। গাড়ির শব্দ পেয়ে শিমু দুই বোন ফিহা আর রিহা দৌরে এলো।
অপ্রত্যাশিত ভাবে বোন কে দেখতে পেয়ে তারা একটু অবাক হলো পরক্ষনেই তাদের হুশ আসতেই জোরে চিৎকার দিলো।

“আব্বাগো দেখো আপা আইছে “।

ছোট মেয়েদের চিৎকার শুনে মজিদ বাড়ির পেছনের ক্ষেত থেকে দৌরে এলেন। তার শরীরে কাদামাটি দিয়ে মাখামাখি। মেয়ে ও মেয়ে জামই কে দেখে তিন ভীষণ খুশি হলেন দ্রুত এগিয়ে গিয়ে মেয়ের জামাই এর হাত থেকে জিনিস গুলো নিজের হাতে নিলেন।

ফিহা আর রিহা বোন কে গিয়ে জড়িয়ে ধরল।

সাফোয়ান কে ঘরে নিয়ে কেদারা পেতে বসতে দিলেন মজিদ।
মুহুর্তেই তিনি অস্থির হয়ে গেলেন কি করবেন না করবেন এই ভেবে।
সাফোয়ান শশুড়কে এতো অস্থির হতে নিষেদ করলো।

“আব্বু আপনি অস্থির হবেন না। আমি তো এ বাড়িরও ছেলে তাই নয় কি?”
মেয়ে জামাইয়ের কথা শুনে মজিদ কিছুটা শান্ত হলেন।

ফিহা রিহা দু বোনই শিমুর পাশে দারিয়ে আছে ।

সাফোয়ান তাদের কাছে ডাকলে তার নিজের কাপড়ের দিকে তাকিয়ে সাফোয়ানের আর দিকে এগোয়না।এইভয়ে তাদের দুবোনের জামাকাপড়ে থাকা ময়লা যদি ওর শরীরে লেগে যায়।
সাফোয়ান তাদের জড়তা দেখে মুচকি হাসে। মনে মনে ভাবল একদম বোনের মতো স্বভাব এদের।
নিজেই উঠে এগিয় গেলে তাদের দিকে। দু হাত এগিয়ে তাদের কাছে নিয়ে এসে আদর করল।
নিজের কাছ থেকে দুটো চকলেট বের করে তাদের হাতে দিলো ব্যাস তাদের সকল ভয় শেষ।
বোন জামাইয়ের ওপর খুশি হয়ে দুটি চুমু একে দিলো তার গালে।
শিমু সাফোয়ানের কাজে মুগ্ধ না হয়ে পারল না।
ছেলেটাকে সে হয়তো যতটা খারাপ ভাবে সে হয়তো ততটা খারাপ না।

__________

রাজিয়া বেগম রাগে ক্ষোভে চোখ মুখ লাল করে বসে আছেন। তিনি ভাবতেও পারছেননা তার নাতি ওই মেয়েটার সাথে ওর গ্রামের বাড়িতে আছে।

দাদীকে এমন মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে আয়ান দাদীর কাছে গিয়ে বসে।
আয়ান এতটুকু বুঝতে পারছে দাদী কোন কারনে ভীষণ রাগান্বীত।
আয়ান দাদীর পানের বাটা বের করে দাদীকে একটুকরো পান বানিয়ে দাদীর হাতে দিলো।

“ওহো সুন্দরী আমার, নাও পানটা খেয়ে নাও”।

“তোর পান তুই খা আমি খাবো না”।

“দাদী বুইঝো কিন্তু”।

দাদী আয়ানের হাত থেকে পান কেড়ে নিয়ে চিবুতে শুরু করলেন। পান খাবার স্বভার তার ততটা নেই কিন্তু রাগ উঠলে সে পান খায়। রাগ কমানোর জন্য।
রাজিয়া বেগম মনে মনে ভাবলেন এমন করে যদি শিমুকে দাতের গোরায় সে পিষ*তে পারতেন তবে তার আ*ত্মা ঠাণ্ডা হতো।

চলবে,,,,

প্রেম পুকুর পর্ব-০২

0

#প্রেম_পুকুর
[২]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

একটা দীর্ঘ রাত কেটে গিয়ে নতুন একটি সকাল হয়। সেই সকাল কারো জন্য সুখ আনন্দ বয়ে আনে আবার কারো জন্য আনে বিষা*দ আর মর্ম*পীরা।

সকালে উঠে নির্দিষ্ট সময় সালাত আদায় করে নিজের কাজে লেগে পড়েছে শিমু। সঙ্গে বাড়ির কাজের বুয়া রহিমা খালা আর শাশুড়ি লায়লা বেগম ও আছেন।

লায়লা আর রহিমা গল্পে মশগুল হয়ে আছে শিমু টুকটাক তাদের কথা শুনছে আর কাজ করছে।
হঠাৎ অপ্রত্যাশীত ভাবে রান্না ঘরে আগমন হয় রাজিয়া বেগমের। শিমু এই বাড়িতে বউ হয়ে আসার পরে রান্না ঘরে এই মহিলাকে বলতে গেলে আসতেই দেখেনি। কারন শিমু যতটুকু জানে রাজিয়া বেগম আগু*নের তাপ মোটেও সহ্য করতে পারেনা তার নাকি মাথা ব্যা*থা করে।

শিমুর অবাক হওয়া দেখে রাজিয়া বেগম শিমু দিকে ঘুরে মুখ বাোকালেন। এই মেয়েটাকে তার শুরু থেকেই পছন্দ না। কত ইচ্ছে ছিল নাতির জন্য নিজের পছন্দ মতো স্মার্ট একটা মেয়েকে নাতিবউ করে আনবে। কিন্তু এ মেয়ে তার উল্টো ধার্মিক এবং সাদা মাটা প্রকৃতির একটা মেয়ে।
রাজিয়া বেগম শিমুকে ঠেলে সরিয়ে দেখল কি কি রান্না হচ্ছে।
মোটামোটি চার পাঁচ পদ তৌরি হয়েছে তবুও সে প্রশন্ন হলেননা।

” লায়লা আরো দু এক পদ করোতো আমার নাতিদের এই কটা পদ দিয়ে কি আর খাওয়া হবে”।

শিমু যদিও কিছু মুখে বলতে পারলোনা মনে মনে সে বিষন ক্ষু/ব্দ হলো। মুখে বলা খুবই সহজ কিন্তু রান্না ঠিক করা ততটাই কষ্টকর।

” মনে হয়না মা আমার ছেলেরা সকালে এতো খাবার খাবে”।

ছেলের বউ এর কথায় রাজিয়া বেগম মুখ কালো করে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। মনে মনে ভাবলেন নিজের ছেলেটাকে তো হাত করতে পারলেননা কিন্তু নিজের নাতিকে হাত করে ঠিকই এদের শায়েস্তা করবেন।

——————–

খাবার টেবিলে সব খাবার গুছিয়ে রাখছিল শিমু আর রহিমা ।লায়ল বেগম রুমে গেছন ফ্রেস হতে।
এর মাঝেই বাড়ির সবাই একে একে খাবার টেবিলে এসে বসতে শুরু করল।
অনিকা চোখ ডলতে ডলতে খাবার টেবিলে এসে বসল কিন্তু খাবারে দিকে তাকাতেই তার চোখের থেকে সমস্ত ঘুম উরে গেল।
ভিষন খুশি হয়ে খাবারে হাত দিতে যাবে অমনি আয়ান এসে বোনের হাত চাটি মারল।

আয়নের এহেন কাজে পচন্ড বিরক্ত হলো অনিকা,”তুই দেখিস তোর বউ কে আমি কোন বেলায় শান্তিতে খেতে দিবোনা”।

” আমার বউ কি তোরটা খাবে নাকি আমারটকা”।

“আমি কি তোর টা খাই না বাবার টা”।

“যারটাই খাস মুটিয়ে যাচ্ছিস দেখছিস না”।

“আমি মুটিয়ে যাচ্ছি এতো বড় কথা বলতে পারলি তুই”?

এই থামবি তোরা।

বাবার কন্ঠ পেয়ে দুই ভাই বোন একেবারে চুপ হয়ে গেল। কিন্তু একে ওপরকে চোখ দিকে শা*ষাতে মোটেও ভুললো না।

শিমু এদের দুই ভাইবোনের দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া দেখে নিজের বোনেদের কথা চিন্তা করল।

শিমুরা চার বোন। শিমু বড় বোনের বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর আগে । অভাবের সংসার হওয়ার তার বাবা খুব দ্রুত তার বড় বোন কে বিয়ে দিয়ে দেয়।
আর তার ছোট দুজন জমজ বোন আছে যাদের কে জন্ম দিতে গিয়ে তার মা পৃথিবী মায়া ত্যাগ করে চলে যান।
শিমু অনুভব করল ওর নিজের বোনদের কথা মনে পড়ছে।

“এই মেয়ে দারিয়ে না থেকে আমাদের খেতে দিবে তো নাকি। নাকি না খেয়েই বসে থাকতে হবে”।

রাজিয়া বেগমের কথায় হুশে ফিরল শিমু।
ইতিমধ্যে শাশুড়ি বাদে টেবিলে সবাই উপস্থিত।
শিমু একে একে সবার প্লেটে খাবার বারছিল। নিজের স্বামীর প্লেটে বড়তে গিয়ে হাত থেমে গেল অদৃশ্য জরতা তাকে আকরে ধরল।
সাফোয়ান শিমুর হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন কিন্তু মুখে টু শব্দ টিও করল না।

রাজিয়া বেগম বিরক্ত হলেন ভিষন। শিমু হাত থেকে খাবারের চামচ কেরে নিয়ে নিজেই বেড়ে দিলেন প্রান প্রিয় নাতিকে।

প্রথমবার রাজিয়ার কাজটা মনে মনে ভালো লাগল শিমুর।

“শিমু তোমায় খাবার সার্ভ করতে হবে না তুমি ও আমাদের সঙ্গেই বোসো”।

“আব্বু আম্মা আসুক আমারা একসাথেই খেতে বসব”।

আলতাফ আর কিছু বললেন না। নিজের খাওয়া শেষ করে দুই ছেলেকে তার কক্ষে যেতে বলে নিজের কক্ষে প্রস্থান করলেন ।
_________

শিমু নিজের কক্ষে বসে ছিল। প্রয়োজন ছারা সে খুব একটা নিজের কক্ষের বাইরে যায়না।

“আসবো ভাবী।”

শিমু দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল অনিকা এসেছে। মেয়েটা খুবই মিষ্টি সভাবের ব্যাবহারও খুব সুন্দর। এইযে এই বাড়িতে আসার পর মেয়েটা তাকে যতবার ডাক দেয় ততবার তার মধ্যে ভালো লাগার কাজ করে। মেয়েটা তার এক বছরের জুনিয়র। কিন্তু ভালোবাস আর সম্মান এই মেয়েটা থেকেই সবচেয়ে বেশি পেয়েছে সে।

“আসোনা, আমার ঘরে আসতে তোমার কোন অনুমতি নিতে হবেনা।”

“তবুও ভাবী অনুমতি ব্যাতিত কারো রুমে আসা ঠিক না ”

“ওকে ওকে তোমার যেটা ভালো লাগে তুমি সেটাই করবে”।

অনিকা শিমুর পাশি গিয়ে বসল।
“জানো ভাবী এই বাড়িতে তুমি আসার আগে আমার কোন গল্প করার মানুষ ছিলোনা। কিন্তু তুমি আসার পরে আমি আমার মনের কথা গুলো কোন সংকোচ ছাড়াই বলতে পারি”।

“তো গল্প বুড়ি আজকে কি নিয়ে গল্প করবেন আপনি “।

“সাফোয়ান ভাইয়াকে নিয়ে শুনবে তুমি”।

শিমুর হাসি মাখা মুখটা এক মুহুর্তেই মলিন হয়ে গেল। এই লোকটা তার মনের কোনে শুধু ঘৃ*নারই সৃষ্টি করেছে। তার জানা মতে কোনো আদর্শবান পুরুষই বিয়ে করে বউ কে একা ফেলে চলে যাবেনা। এর ফলে সেই মেয়েটাকে কতটা ক*ষ্ট পোহাতে হয় সেটা শুধু সেই জানে।

শিমুর থেকে কোন উওর না পেয়ে অনিকা বুঝতে পারলো সে ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে। যেটা কর তার মোটেও ঠিক হয়নি। তাই সে নিজের কথা কে অন্য দিকে ঘোরালো।
_______

সাফোয়ান ড্রয়িংরুমে সোফায় কোলের ওপর লেপটপ নিয়ে বসেছিল। লায়লা নিজের ছেলের পাশে গিয়ে বসলেন। সে সাফোয়ান কে এখোন বুঝতে পারেনা চেনা ছেলেটা কেমন অচেনা হয়ে গেছে। সকালে আলতাফ নিজের ছেলেদের সাথে প্রায় দুই ঘন্টা কথা বলেছেন কি বলেছন তার কিছুই লায়লা জানেনা তবে এটুকু জানেন তার ছেলেটা একটা মেয়ের প্রতি অন্যা*য় করছে। মেয়েটাকে নিজে পছন্দ করে নিজের ছেলের বউ করেছিল সে। কত আশা নিয়ে মেয়েটা এসেছিল এ বাড়িতে কিন্তু কি পাচ্ছে মেয়েটা।

মাকে লক্ষ্য করে নিজের কোলে থাকা ল্যাপটপ টা বন্ধ করলো সাফোয়ান। মা কি নিয়ে কথা বলবে সাফোয়ান তার কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো।
কোন কিছু না বলেই মায়ের কোলে টান টান হয়ে শুয়ে পরলো। ছেলে আচমকা কোলে শুয়ে পরার কিছুুটা বিস্মিত হলো লায়লা। কিছু বলতে যাবেন তার মাঝেই সাফোয়ান মায়ের কাছে একটা আবদার করল।

“মা একটু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাওনা”।

ছেলে আবদার লায়লা বেগম ফেলতে পারলেননা।

কিছুক্ষন পিনপতন নিরাবতা চলল মা ছেলের মাঝে ।

নিরাবতা ভেঙে সাফোয়ান বলতে শুরু করল।

“মা আমি দুঃখিত নিজের ভালো মন্দ এখোনো আমি বুঝতে পারিনি।নিজের তাড়াহুড়ায় নেয়া ভুল সিদ্ধান্ত কে সব সময় সঠিক মনে করেছি।
নিজের মায়ের কথা অবজ্ঞা ও স্রীকে অব*হেলা করেছি। মা আমি বুজতে পেরেছি আমার করা চরম অন্যা*য়। ”

নিজের কথা শেষ করে সাফোয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো।

“মা তুমি বলতেনা আয়ানের বিবেক বুদ্ধি কম কিন্তু জানো মা আয়ান খুবই বুদ্ধিমান একটা ছেলে। ও না বোঝালে আমি আমার চরম বোকামিটা করেই যেতাম।
মা আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি এর পরের থেকে আমি আর কোন বোকামি কোরবোনা প্রমিজ।”

দেরি করে হলেও যে ছেলে সঠিকটা বুঝতে পেরেছে তার জন্য লায়লা বেগম পচন্ড খুশি হলেন।

“আমারো কিছুটা ভুল আছে আমারো উচিৎ হয়নি তোমাকে বিয়ের জন্য ফোর্স করা।কিন্ত আমিও নিরুপায় নিজের ছেলের ভালোর জন্য আমি স্বার্থ পর হয়েছিলাম।বাবা অতিত সবারই থাকো কারো ভালো কারো আবার খারাপ। আমি চাই তুমি তোমার ওই পুরোনো জরাজীর্ণ জিবন কে পিছনে ফেলে বর্তমান জিবনকে সুন্দর করে তুলো।”

“ভাইয়া এইটা কিন্তু ঠিক না তুমি বউয়ের কোল ও দখোল করবে আবার মায়ের কোল ও দখোল করবে আর আমি এগুলো তাকিয়ে তাকিয় দেখবো। আমার নয় বউয়ের আদরের বয়স হয়নি কিন্তু মায়ের আদরের তো বয়স আছে তাই নয় কি?”

আয়ানের কথা শুনে সাফোয়ান মায়ের কোল থেকে উঠে আয়ানের কান ধরল।

“তোর এই ঠোঁট কাটা স্বভাব কবে যাবে বলতো”।

“বউ এনে দিলেই চলে যাবে “।

“কি বললি?”

“না মানে আর করব না সরি।”

দুই ছেলের কান্ড দেখে লায়লা উচ্চস্বরে হেসে দিলেন। কে বলবে এরা বড় হয়ে গেছে ।

চলবে,,,,

প্রেম পুকুর পর্ব-০১

0

#প্রেম_পুকুর
[১]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

বিয়ের প্রায় দুই মাস হয়ে গেছে বাসর রাতের পরে আমি আমার স্বামীকে দ্বিতীয় বারের জন্য দেখিনি এবং আমাদের মাঝে কোন রকম যোগাযোগ ও নেই।

নিজের প্রিয় বান্ধবীর এমন জটিল স্বীকার উক্তি পেয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল আশা।

তোর শাশুড়ি শশুড় এই নিয়ে কিছু বলেনি ।

কি বলবে?

শিমু প্রশ্নের বদলে প্রশ্ন করায় কিছুটা রু/ষ্ঠ হলো আশা। মেয়েটা চিরকালই এমন কখোনো কোন কিছু পরিষ্কার করে বলেনা।

দেখ শিমু তোদের মধ্য কি কিছু হয়েছে।

আমি এই সব কিছুই জানিনা আশা লোকটাকে আমি বিয়ের আগে মাত্র একবার দেখতে পেয়ে ছিলাম। তুইতো জানিস ঘরোয়া ভাবে আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হয়। আমরা একে অপরকে যেখানে ভালো করে চিনতাম না সেখানে ঝা/মেলা কেমন করে হবে বল তো।

তুই আংকেল আন্টিকে এই ব্যাপারে কিছু বলিস নি।

না এখোনো কিছু বলিনি বিয়ের পরে ফিরুনীতে আমার স্বামী না গেলেও আমার শাশুড়ি আমাকে নিয়ে যায়। শাশুড়ি বাবাকে জানায় হঠাৎ কাজ পরে যাওয়ায় সাফোয়ান বিদেশ গেছে আসতে কিছু দিন সময় লাগবে।

তুই তবুও কেন তাদের সত্যিটা বলছিস না শিমু।

আমাদের আর্থিক অবস্থা তোর জানা আশা এখোন আমি যদি বাড়িতে ফিরে যাই বাবার কষ্ঠ হয়ে যাবে। ওর থেকে আমি বেশ আছি দুইবেলা ভালো খাবার পোশাক সবই তো পাচ্ছি।

কার সাথে কথা বলছো বউমা?

শাশুড়ির কন্ঠ শুনে চোখের কোন বেয়ে গরিয়ে পরা পানি দ্রুত মুছে নেয় শিমু। আশাকে রাখছি বলে কল কেটে দিয়ে পিছনে ঘুরে দারায়।

না আম্মা তেমন কারো সাথে না।

ওহ ভালো, তো শুনো তোমাকে যেটা বলতে এসেছি সেটা শুনো।
আয়ান আজকে দুবাই থেকে ফিরবে। তাই আমি চাচ্ছি আমি আর তুমি মিলে নিজ হাতে কিছু রান্না করব। যেহেতু ও তোমার ছোট দেবর, তুমি পারবে?

জ্বী আম্মা।

লায়ালা ছেলের বউ এর কথায় প্রশন্ন হয়ে চলে গেলেন।
আয়ানকে শিমু কখোনো বাস্তবে দেখেনি দু এক বার তার ননদ অনিকা আয়ানকে দেখিয়েছে ছবিতে আর ভিডিও কলে একবার কথা হয়েছে।
শশুড়ের ব্যাবসার কাজে দুবাই থাকে আয়ান।

তাই সে বিয়েটা হুট করে হয়ে যাওয়ায় সে সেখানে উপস্থিত ছিলোনা ব্যাস আয়ানের ব্যাপারে সে এতটুকুই জানে।

শিমু তার কোমড় পর্যন্ত চুল হাত খোপা করে মাথায় ওরনা পেচিয়ে রান্না ঘরের দিকে ছুটলো।

যাওয়ার পথে তার দাদি শাশুড়ি রাজিয়া বেগমের সাথে দেখা হলো।
মহিলা যদিও শিমুকে খুব একটা পছন্দ করেনা। তবুও শ্রদ্ধার খাতিরে শিমু তাকে জিগ্যেস করলো,” দাদি আপনার কি কিছু লাগবে”।

রাজিয়া বেগম মুখ কালো করে বললেন, ” আমার কিছু দরকার নেই তবে দেখো স্বামীকে পটাইতে না পেরে দেবর কে পটিয়ো না”।

মহিলার কথা শুনে এক মুহুর্তেই অন্তর বিষি/য়ে উঠল শিমুর। কতটা নিচ মানসিকতা তার সেটা শিমু বুঝতে পারলো। রাজিয়া বেগম বিয়ের পরেরদিন থেকে কোনো অজানা কারনে তাকে সব সময় ক/টু কথা শোনায়। নিজের কষ্টকে নিজের বুকেই মাটি চাপা দিয়ে রান্না ঘরের দিকে ছুটল শিমু।

শাশুড়ির হাতে হাতে কাজ করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা লেগে গেলো তার। তাই কাজ শেষে ফ্রেস হতে সে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে চলে গেল সে।
প্রায় ত্রিশ মিনিট নিয়ে গোসল সেরে মাগরিবের নামাজ পরে কিছু বই পরছিল শিমু।

“ভাবী ভাবী দ্রুত আমার সাথে নিচে চলো। দেখো কে এসেছে”।

অনিকার কথায় দ্রুত জায়ানামাজ ভাজ করে অনিকার সাথে নিচে এলো শিমু।
যদিও সে জানতো আজকে তার দেবর আসার কথা। কিন্তু দেবরের সাথে নিজের স্বামীকে দেখে ভিষন অবাক হলো সে।
অস্পষ্ট স্বরে বলল, সাফোয়ান।

পরিস্থিতি অনেকটা জটিল হয়ে উঠল চারিদিকে গুমট পরিস্থিতি বিদ্যমান।
সকল নিস্তব্ধতা কে ভেঙে দাদি দৌরে চলে গেলো তার দুই আদরের নাতিদের কাছে। এমনিতে এই মহিলা যদিও ভালো করে হাটতে পারেনা কিন্তু তার আদরের নাতিদের দেখলে তার যেন দশ বছর বয়স কমে যায়।

” সাফু আমার কই ছিলি পরের মাইয়ার জন্য তুই কেন বাড়ি ছারবি”।

আবারো রাজিয়ার কথায় শিমুর মন তি/ক্ত হলো সাফোয়ানের চলে যাওয়ার পিছনে সে তো দ্বায়ী নয় তবে প্রতিবার তাকে কেন দ্বায় দেয় এই মহিলা।

শিমুর শশুড় শান্ত দৃষ্টিতে দুই ছেলের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললেন, তোমরা ফ্রেস হয়ে খেয়ে নাও আমি কাল সকাল দশটায় তোমাদের সাথে কথা বলব।

শিমুর শশুড় আলতাফ শান্ত মস্তিস্কের একজন ব্যাক্তি তাই তিনি এই জটিল পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য কিছুটা সময় নিলেন।
আলতাফ তার কথা শেষ করে নিজের কক্ষে চলে গেলেন।
লায়লা বেগম বুঝতে পারলেন তার স্বামী তার ছেলের প্রতি ভিষন রাগা/ন্বিত কিন্তু সাফোয়ান ক্লান্ত থাকায় কিছুই বললেন না।

তার ছেলে যতই অপরাধ কুরুক না কেন।

শিমুর নিজেকে এখানে বড্ড বেমানান লাগছে।
তার তথাকথিত স্বামী তার দিকে এইপর্যন্ত একবারের জন্য তাকায়নি।

আয়ান শিমুর অস্বস্তি কিছুটা আন্দাজ করে।

” ভাবী আপনি দূরে কেন দারিয়ে আছেন ভাইয়ের পাশে এসে দারান”।
যদিও আয়ান শিমুর অস্বস্তি কমানোর জন্যর বলেছিল কিন্তু শিমুর মাঝে অস্বস্তি কমার বদলে কয়েকগুন বেড়ে গেল।

রাজিয়া বেগম শিমুর দিকে মুখ বাকিয়ে বলল,
“ও যে মেয়ে স্বামীর কদরই তো বুঝেনা ও কি কইরা স্বামীরে দরদ করবো ।

লায়লা শাশুড়ির প্রতি ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললেন, “আপনার নাতি সেইরকম কদর দেবার স্বামী না”।

“অন্যের মেয়ের জন্য নিজের ছেলেরে কথা শুনাইনো না লায়লা”।

“আপনিও নিজের নাতির দো/ষ ডাকতে আসবেননা, আয়ান তোর ভাইকে নিয়ে ঘরে যা”।

আয়ান সাফোয়ান কে নিয়ে ঘরে চলে গেল।
শিমু দেখল তার পাথরের মত স্বামীর তার পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া। কথা বলা তো দূর একবার নিজের বিবাহিতা স্রীর দিকে তাকালোনা পর্যন্ত।
শিমুর চোখের কোন বেয়ে কয়েক ফোটা জল গরিয়ে পরল নিজের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে চলে গেল।

সে তার স্বামী কক্ষে থাকেনা, ইচ্ছে করেই থাকেনা যে মানুষটার প্রতি তার কোন অধিকার নেই তার ঘরের প্রতি অধিকার দেখিয়ে কি লাভ ?

শিমু খাবার গুলো টেবিলে গুছিয়ে রেখে নিজের রুমের দিকে চলে গেল।

নিজের ঘরে এসে দরজা টা বন্ধ করে আয়ানার সামনে দারালো নিজের কমতি খুজতে।

মাথার খোপা খুলে দিতেই কালো কেশ গুলো পুরো পিঠ জুরে ছরে ছরিয়ে পরল।

আয়নার সামনে দারিয়ে থেকে শিমু নিজেকে প্রশ্ন করল, ” কি লাভ এই রূপগুণ দিয়ে যেই রূপে আর গুণে স্বামীকেই মুগ্ধ করতে পারলাম না”।

নিজের সাথে কথা বলতে বলতেই শিমু হাটু মুরে বসে বসে পরল মেঝেতে। চোখ দুটোতে অশ্রু কণার ঝরনা শুরু হলো। বরফ যেমন পানির ফোটা আকারে ভূপৃষ্ঠে পানির ফোটা আকারে পতিত হয়ে বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে তেমনই শিমুর বুকে যত অভিমান ছিলো সব পানির ফোটা আকারে চোখ দিয়ে গরিয়ে পরছে।
________

সাফোয়ান দীর্ঘ সময় শেষে সাওয়ার নিয়ে ফ্রেস হয়ে বের হলো।
বের হতেই বিছানায় বসে থাকা বোনের দিকে নজর পরল।
অনিকা ভাইয়ের উদ্দেশ্য চেচিয়ে বলল, “ভাইয়া তুমি আসবে বললে না যে”।

সারপ্রাইজ দিলাম।

নিজের কথা শেষ করে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে শুরু করল।

অনিকা কিছুক্ষন গালে হাত দিয়ে আবার ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, “কাকে ভাইয়া “।

সাফোয়ান এবার বোনের মাথায় জোরে গাট্টা মারলো।
অনার্স পরুয়া ছাত্রী যে এত গাধী হয় সেটা তোকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না আমি।

ভাবীও তো অনার্স এ পরে।

সাফোয়ান ভ্রুকুচকে জিগ্যেস করেল, “কোন ভাবী “।

অনিকা ভিষন মজা পেল সেও অনুরূপ ভাবে ভাইয়ে মাথায় গাট্টা মেরে বললো, “অফিসের বস যে এত বোকা হয়ে সেট তো তোমাকে না দেখলে জানতেই পারতাম না। তুমি এত বড়ো গাধা যে নিজের বউ কোন ইয়ারে পরে সেটাই জানোনা”।

নিজের বাক্য সমাপ্ত করে অনিকা দ্রুত ভাইয়ের কক্ষ ত্যাগ করল।
সাফোয়ান এবার হাতের টাওয়াল নামিয়ে টি টেবিলের ওপর রাখল। মনে মনে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দিল একবার।

চলবে,,,