প্রেম_পুকুর পর্ব-০৩

0
358

#প্রেম_পুকুর
[৩]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

জিবন বড্ড ভয়ং*কর নাটকের চেয়েও নাটকীয় ভাবনার চেয়ে অভাবনীয়। সময়ের পরিক্রমায় কালো ছায়ায় মোরা।কিছুটা আশা আর কিছুটা ভ্রম।জিবনের সংঙ্গা কোনো ব্যাক্তি নির্দিষ্ট ভাবে দিতে পারবেনা।কারন এটি অসমান্তরাল পথের বাঁকের মতো।তাই জিবনের সমীকরণকে সহজ ভাবা অন্যায়।

রাতের আকাশ জুড়ে তারারা মিটি মিটি করে জ্বলছে অপরূপ সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে পুরো পৃথিবী জুড়ে। ছাদে দারিয়ে থাকা এক তরুণী নিজের ছোট জিবনের জটিল সব সমীকরণ মেলাতে ব্যাস্ত। কিন্তু বেলা শেষে সে হতাশ।

রাতের শীতল পরিবেশ অনুভব করার জন্য সাফোয়ান আর আয়ান ছাদে এসে ছিল।হঠাৎ তাদের দুজনের চোখ পরলো সাদা ওড়না মাথায় মোড়ানে একজন নারী অবয়বের দিকে। আয়ান কে হতে পারে বুঝতে পেরে নিঃশব্দে ছাদ থেকে প্রস্থান করে।
ভাইয়ের উপস্থিত বুদ্ধি দেখে সাফোয়ান মনে মনে খুশি হয়।
এবার পূর্ণ দৃষ্টি দেয় সামনে থাকা নারী অবয়বের দিকে।সেই নারী নিজের ভাবনা নিয়ে এতই বেশি বিভোর যে ছাদে সে ব্যাতিত যে অন্য কেও উপস্থিত আছে সে সম্পর্কে তার কোন ধারনাই নেই।

সাফোয়ান তার অর্ধাঙ্গিনীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। অতঃপর মনের সব সংকোচ ভুলে প্রশ্ন করন, “এত রাতে ছাদে একা কি করছেন?”

শিমু প্রথমে পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে কিছুটা ভরকে গেল। মাথা ঘুরিয়ে পিছনে ঘুরতেই তার নিশ্বাসের ক্রমশ বেড়ে গেল। হাত পা জড় বস্তুর ন্যায় স্থীর হয়ে গেল। নিজেকে স্বাভাবিক করতে শিমু কয়েকবার চোখের পলক ফেলল। কিছুটা স্বাভাবিক হতেই সাফোয়ানকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে শিমুর মনে হলো তার বুকে মধ্যে কে যেন ঢাক ঢোল বাজাচ্ছে।

সাফোয়ান শিমুর অস্বস্তি কিছুটা বুঝতে পারলো তবুও সে নির্বিকার হয়ে নিজের অর্ধাঙ্গিনীর সামনে এসে দারালো।
শিমুর নিজেকে কেমন শূন্য শূন্য মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সে এখোনি ঢলে পরবে।সে তো এতটা দূর্বল নয়। আর তার অস্বাভাবিক হবার কারনই বা কি?
কিন্তু নিজেকে প্রশ্ন করে শিমু কোন উওর পেলোনা।তবুও প্রাণপণ দিয়ে চেষ্টা করল নিজেকে স্বাভাবিক রাখার।

সাফোয়ান মুখ আরো কিছুটা সামনে নিয়ে আসল।শিমুর ছোট ছোট চুল গুলো বার বার মুখে এসে পরছে।সাফোয়ান সপ্তপর্ণে শিমু চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দিল। সাফোয়ানের মুখ জুড়ে একরাশ মুগ্ধতা ছরিয়ে পরেছে।

“এই মাইয়া তুই এতো রাতে ছাদে কেনো আইছোস”।

দাদির কর্কশ কন্ঠ পেয়ে সাফোয়ান শিমুর থেকে দূরে সরে দারালো।তার চোখ মুখে কিছুটা বিরক্ত ফুটে উঠেছে দাদীকে দেখে।

কিন্তু শিমু ছাড়া পেয়ে এক দৌরে নিচে চলে গেল।
রাজিয়া বেগম বিরক্ত হলেন ভাগ্যিস সে সময় মতো এসেছে না এলে কি হতো কে জানে।

“সাফু দেখলা কেমন মাইয়া “।

সাফোয়ান কিছু না বলে দাদীকে পাশ কাটিয়ে চল গেল।তার দাদীর প্রতি রাগ রাগ লাগছে।

শিমু নিজের কক্ষে এসে সঙ্গে সঙ্গে দরজা আটকে দিল। তার কেমন সব অজানা অনূভুতি হচ্ছে কিন্ত তার তো রেগে যাওয়া উচিত ছিলো।
নিজের করা কাজেই হতভম্ব হয়ে গেছে সে। কত দিন সে চিন্তা করেছে লোকটাকে সামনে পেলে নিজের সকল কষ্ট ঝেরে দেবে কত গুলো কড়া করে কথা শোনাবে কই সে তো পারলোনা। নিজের প্রতি ভীষণ রাগ লাগছে এবার শিমুর।

_____________

“আসবো,শিমু?”

শিমু বিছানা গোছাচ্ছিল হঠাৎ শাশুড়ির শব্দ পেয়ে সে শাশুড়ির দিকে ঘুরলো।এত সকাল বেলা শাশুড়িকে নিজের কামড়ায় দেখে কিছু অবাক হলো ।

“জ্বী আম্মা,আসুন।”

লায়লা বেগম এসে খাটের পাশে রাখা আরাম কেদারায় বসলেন।

“শিমু তুমি তো অনেক দিন হলো বাড়ি থেকে এসেছ প্রায় দেড় মাস হলো। আমি চাচ্ছিলাম তুমি কিছুদিনের জন্য তোমার বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে এসো।”

শিমু এখোন এমন কথা যদিও শাশুড়ির থেকে আশা করেনি কিন্ত তার চিত্ত আনন্দিত হলো।
কত দিন পর নিজ বাড়িতে যেতে পারবে ভেবে ভিতরে ভিতরে খুশির ঢেউ শুরু হলো কিন্তু শিমু সোটা প্রকাশ করল না।

“আচ্ছা তুমি বিকেলে তৈরি থেকো, সাফোয়ান তোমাকে নিয়ে যাবে।”

সাফোয়ানের সাথে যাবে ভাবতেই শিমুর সর্ব শরীর শিউরে উঠল। কিন্তু শাশুড়িকে সে কিছুই বললনা না। সম্মতি সূচক অর্থে নিজের মাথা ঝাকালো।
লায়লা বেগম নিজের কাঙ্ক্ষিত উওর পেয়ে খুশি হলেন।

শাশুড়ি চলে যেতে শিমু নিজের সাথে হিসেব নিকেশ করতে বসল।
অনেক ভেবে চিন্তে পেল, সাফোয়ানতো তার সাথে যাবে ঠিকই কিন্তু সে আবার পুনরায় চলেও আসবে তাকে রেখে। কারন এত বড়লোকের ছেলে তার মতো গরিবের বাড়িতে গিয়ে থাকতে পারবে না।

___________
শহরের সমান পিচ ঢালা রাস্তা পেরিয়ে গাড়ি টা গ্রামের মাটির রাস্তা ধরেছে। সাফোয়ান ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করছে। আর শিমু গাড়ির জানালা দিয়ে গ্রামের দৃশ্য অবলোকন করছে।
দুজনের মাঝে মধ্যে প্রগাঢ় নিস্তব্ধতা।

মাঝে মধ্যে সাফোয়ান লুকিং গ্লাসে দু একবার পিছনে তাকাচ্ছে আরব ড্রাইভিং করায় মনোযোগ দিচ্ছে।কিন্তু দুজনের কেউই নিরাবতা ভেঙে কোনো কথা বলছেনা।

এরকম পিনপতন নিরাবতা আরো কিছুক্ষন চলল।অবশেষে সাফোয়ান শিমু কে জিজ্ঞেস করল।

“আপনার গ্রাম টা কিন্তু অনেক সুন্দর “।

শিমু শুধু মুখ দিয়ে হুম উচ্চারণ করল।

“আচ্ছা আপনি কি কথা বলতে পারেন না? ”

শিমু এবার সাফোয়ানের দিকে ভ্রকুচকে তাকালো।

সাফোয়ান মেকি হাসি দিয়ে বলল, “আসলে আপনি তখোন থেকে চুপচাপ বসে আছেন তাই বললাম “।

শিমু এখোনো কোনো উওর দিলোনা একরাশ বিরক্ত নিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখল।
সাফোয়া একটু হতাশ হলো বুঝতে পারলো এ মেয়ে এতো সহজে গলবে না।

দুজনের মধ্যে আবারো নিস্তব্ধতা নেমে এলো। গাড়ি ছুটলো আবার নিজ গন্তব্যে।

_______________
গাড়ি এসে থামল একে বারে শিমুদের বাড়ির ওপর। গাড়ির শব্দ পেয়ে শিমু দুই বোন ফিহা আর রিহা দৌরে এলো।
অপ্রত্যাশিত ভাবে বোন কে দেখতে পেয়ে তারা একটু অবাক হলো পরক্ষনেই তাদের হুশ আসতেই জোরে চিৎকার দিলো।

“আব্বাগো দেখো আপা আইছে “।

ছোট মেয়েদের চিৎকার শুনে মজিদ বাড়ির পেছনের ক্ষেত থেকে দৌরে এলেন। তার শরীরে কাদামাটি দিয়ে মাখামাখি। মেয়ে ও মেয়ে জামই কে দেখে তিন ভীষণ খুশি হলেন দ্রুত এগিয়ে গিয়ে মেয়ের জামাই এর হাত থেকে জিনিস গুলো নিজের হাতে নিলেন।

ফিহা আর রিহা বোন কে গিয়ে জড়িয়ে ধরল।

সাফোয়ান কে ঘরে নিয়ে কেদারা পেতে বসতে দিলেন মজিদ।
মুহুর্তেই তিনি অস্থির হয়ে গেলেন কি করবেন না করবেন এই ভেবে।
সাফোয়ান শশুড়কে এতো অস্থির হতে নিষেদ করলো।

“আব্বু আপনি অস্থির হবেন না। আমি তো এ বাড়িরও ছেলে তাই নয় কি?”
মেয়ে জামাইয়ের কথা শুনে মজিদ কিছুটা শান্ত হলেন।

ফিহা রিহা দু বোনই শিমুর পাশে দারিয়ে আছে ।

সাফোয়ান তাদের কাছে ডাকলে তার নিজের কাপড়ের দিকে তাকিয়ে সাফোয়ানের আর দিকে এগোয়না।এইভয়ে তাদের দুবোনের জামাকাপড়ে থাকা ময়লা যদি ওর শরীরে লেগে যায়।
সাফোয়ান তাদের জড়তা দেখে মুচকি হাসে। মনে মনে ভাবল একদম বোনের মতো স্বভাব এদের।
নিজেই উঠে এগিয় গেলে তাদের দিকে। দু হাত এগিয়ে তাদের কাছে নিয়ে এসে আদর করল।
নিজের কাছ থেকে দুটো চকলেট বের করে তাদের হাতে দিলো ব্যাস তাদের সকল ভয় শেষ।
বোন জামাইয়ের ওপর খুশি হয়ে দুটি চুমু একে দিলো তার গালে।
শিমু সাফোয়ানের কাজে মুগ্ধ না হয়ে পারল না।
ছেলেটাকে সে হয়তো যতটা খারাপ ভাবে সে হয়তো ততটা খারাপ না।

__________

রাজিয়া বেগম রাগে ক্ষোভে চোখ মুখ লাল করে বসে আছেন। তিনি ভাবতেও পারছেননা তার নাতি ওই মেয়েটার সাথে ওর গ্রামের বাড়িতে আছে।

দাদীকে এমন মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে আয়ান দাদীর কাছে গিয়ে বসে।
আয়ান এতটুকু বুঝতে পারছে দাদী কোন কারনে ভীষণ রাগান্বীত।
আয়ান দাদীর পানের বাটা বের করে দাদীকে একটুকরো পান বানিয়ে দাদীর হাতে দিলো।

“ওহো সুন্দরী আমার, নাও পানটা খেয়ে নাও”।

“তোর পান তুই খা আমি খাবো না”।

“দাদী বুইঝো কিন্তু”।

দাদী আয়ানের হাত থেকে পান কেড়ে নিয়ে চিবুতে শুরু করলেন। পান খাবার স্বভার তার ততটা নেই কিন্তু রাগ উঠলে সে পান খায়। রাগ কমানোর জন্য।
রাজিয়া বেগম মনে মনে ভাবলেন এমন করে যদি শিমুকে দাতের গোরায় সে পিষ*তে পারতেন তবে তার আ*ত্মা ঠাণ্ডা হতো।

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে