প্রেম_পুকুর পর্ব-১০

0
307

#প্রেম_পুকুর
[১০]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

একটি বিষাদময় রাতের শেষে একটি সুন্দর প্রভাতের আগমন। যে প্রভাত মুছে দেবে হয়তো বিষাদের ঘনঘটা।
প্রভাতের সেই মিষ্টি আলো পৌছে যাবে সব আনাচে কানাচে,জাগাবে হয়তো কোন এক প্রেমিক পুরুষের জন্য তার প্রেয়সীর হৃদয়ে প্রেম। ভেঙে যাবে হয়তো পাহাড় সমান অভিমানের বাধা।

সূর্যের মিষ্টি আলো চোখে পড়তেই ঘুম ছুটে গেল সাফোয়ানের ।চোখ খুলতেই নিজের বুকে প্রেয়সীকে আবিষ্কার করে তার চিত্ত পুলকিত হলো। হৃদয় জানান দিল এবার বুঝি প্রেয়সীর অভিমান ভাঙবে। এই প্রথম তারা দুজন এত কাছে পুরো একটি রাত কাটিয়ে অভিমান বিলাস করল।

মৃদু শব্দে সাফোয়ান শিমু কে ডাক দিলো,”উঠুন সকাল হয়েছে”।

সাফোয়ানের ডাকে ঘুম ছুটে গেল শিমুর পিট পিট করে চোখ খুলতেই সাফোয়ানের বুকে নিজেকে আবিষ্কার করল।
মনে পড়ে গেল কাল রাতের কথা। সব কিছু মনে পরতেই লজ্জায় দু’গাল রাঙা হয়ে গেল।কিশোরী মেয়েদের মতো কালকে কি করছে ভাবতেই যুবতী মন অশান্ত হয়ে উঠল।লজ্জায় মাটির বুকে নিজেকে আড়াল করতে মন চাইল।

দ্রুত সাফোয়ানের বুক থেকে মাথা সড়িয়ে নিয়ে উঠে দারালো।
এভাবে সারারাত বেকায়দায় কাটানোর জন্য শরীরে কিছু টা ব্যথা অনুভব হলো।

সাফোয়ান শিমু সামনে উঠে দারালো।
তারপর শিমু দিকে একটু নিচু হয়ে শিমু কপালে নিজের ওষ্ঠ স্পর্শ করালো।
শিমুর সর্বশরীর কাপুঁনি দিয়ে উঠল যেন।
এটা ওর কাছো প্রথম বার ছিল যার জন্য ও একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।

সাফোয়ান শিমুর দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসি দিয়ে বলল,”কান্নাকাটি করে তো অবস্থা খারাপ করে ফেলছেন রাতে তো আমার বা আপনার কারোরই কিছু খাওয়া হয়নি। আমি ফ্রেস হয়ে নিচে যাচ্ছি খাবার কিনতে। আপনি সে পর্যন্ত ফ্রেস হয়ে নিন”।

সাফোয়ান নিজের বাক্য শেষ করে আবার একটু হাসি দিয়ে চলে গেল নিজের কক্ষে।
শিমুর মনে হলো আজ তার কাছে সাফোয়ানকে অনেক বেশি ভালো লাগছে। এইযে তার এই মেষ্টি হাসিটা যেন হৃদয়ে গিয়ে লেগেছে। নিজেকেও ভীষণ হালকা লাগছে ওর। সাফেয়ানের এই হাসিটা দেখার জন্য যুগ যুগ বাঁচতে ইচ্ছা করছে।
_____________

আয়ান আর আলতাফ প্রাতঃভ্রমণ শেষে বাসায় ফিরেছে মাত্র। রাজিয়া বেগম তাদের কাছে দু’গ্লাস পানি নিয়ে এসে বসলেন।
আলতাফের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিতে দিতে বললেন,”আমার মনে হয় বিয়ে নিয়ে এবার আমান দের পরিবারের সাথে কথা বলা দরকার।”
“হুম মা ঠিকই বলছেন এবার আমাদের এই বিষয় নিয়ে আগানো প্রয়োজন। আর সাফোয়ানকেও আমি এই ব্যাপারে আজকেই জানাবো।কি বলো আয়ান?”

“হুম আব্বু আপনি ভাইয়ার সাথে কথা বলুন।”

অনিকা আড়াল থেকে সব কথা শুনে নিজের কক্ষের দিকে দৌরে চলে গেল। তার ভীষণ লজ্জা লাগছে অবশেষে তার প্রণয় কুমার তার হবে ভাবতেই সারা শরীর জুড়ে অদ্ভুত শিহরণ হচ্ছে।
নিজের কক্ষে রাখা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে লাল ওড়না দিয়ে মুখ ডেকে দেখলো কেমন লাগে।
বধু বেশে নিজেকে কল্পনা করতে দু’গালে রক্তিম
আভা ছড়িয়ে পরলো।
আচ্ছা আমান এর কেমন অনুভুতি হবে যদি সে জানতে পারে খুব শিঘ্রই তাদের বিয়ে হচ্ছে।
না না সে আর ভাবতে পারছেনা লজ্জায় আড়ষ্ট হচ্ছে বারবার।
_____________

সাফোয়ান আজকে নিজের কর্ম ক্ষেত্র থেকে দ্রুত প্রস্থান করে শপিং মলের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়েছে।বউকে তেমন কিছুই দেওয়া হয়নি তার।
পরে বউ তাকে কৃপন বলুক সে সেটা চায় না।
গাড়ি পার্কিং লটে রেখে বেড়িয়ে গেল শপিং মলের দিকে উদ্দেশ্য বউকে উপহার দেওয়ার।

শপিং মল থেকে বের হতে হতেই বিকেল হয়ে গেল।
মনে মনে বলল,মেয়েদের জিনিস ক্রয় করা ভীষণ কষ্ঠ সাধ্য এটা মেয়েরাই ভালো করতে পারে।
এর পর শপিং ব্যাগ গুলো গাড়িতে রেখে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলো।

___________

বাসায় পৌছে দুবার কলিংবেল চাপতেই শিমু দরজা খুলে দিলো।
শিমু সাফোয়ানের হাতের দিকে তাকাতেই অবাক হলো। প্রায় দশ বারোটির মতো শপিং ব্যাগ।
সাফোয়ান শিমু দিকে ব্যাগ গুলো এগিয়ে দিয়ে বলল এগুলো তোমার জন্য।
শিমু সাফোয়ানের হাত থেকে ব্যাগ গুলো নিতেই
সাফোয়ান গিয়ে ড্রয়িংরুমে রাখা সোফার উপর বসে পরল। শিমু কে উদ্দেশ্য করে বলল,”আজকে রাতে আমরা ঘুরতে বেড় হব ।
আপনি এখান থেকে আপনার পছন্দ মতো একটি শাড়ি পরে তৈরি হয়ে নিবেন।”

প্রতিটা মেয়েই তার প্রিয় মানুষের দেওয়া ছোট ছোট উপহার গুলোতে পাহাড় সমান আনন্দ খুজে পায় শিমুও তার ব্যাতিক্রম নয়।সেও তার স্বামীর দেওয়া উপহার গুলো পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছে কিন্তু সেটা প্রকাশ করলোনা।
__________

নিজের পছন্দ মতো একটি কালো রঙের শাড়ি বেছে নিলো শিমু। আয়নার সামনে গিয়ে গায়ে জড়াতেই নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হলো। অনেক দিন পরে যেন নিজের মাঝে নিজেকে খুজে পেল ও। মাথায় ম্যাচিং করে কালো রঙের একটা হিজাব পড়ে নিলো।হাত ভরে চুড়ি পরে হাত নাড়াচাড়া করলো।
চুড়িতে ঝনঝন করে আওয়াজ হতেই ঠোঁঠের কোনে একচিলতে হাসি ফুটে ওঠলো।
ইচ্ছে করলো ঠোঁঠে আজ লাল টকটকে লিপস্টিক নিতে।নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে ঠোঁঠে রক্তরাঙা লিপস্টিক নিলো চোখে কালো কাজল নিতে ভুলল না।
নিজের সাজ সম্পূর্ন হতেই আয়নায় নিজেকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে নিলো কয়েকবার।

মনে মনে বলে উঠল,

“সব কিছু একদম পারফেক্ট। ”

সাফোয়ান অনেকক্ষণ যাবত শিমুর জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত রুম থেকে বেরুনোর নাম গন্ধ নেই। সে শুনেছিলো মেয়েদে ড্রেস আপে একটু সময় লাগে কিন্তু এতোটা সময় লাগে সে ভাবতেও পারেনি।
অধৈর্য হয়ে শিমুকে ডাকতে যাবে তার পূর্বেই শিমু শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
নিজের প্রিয়তমা কে শাড়িতে দেখে হৃদগতি কিছুটা অস্বাভাবিক হলো সাফোয়ানের।
বুকের মধ্য কে যেন কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে ওর। দু এক বার চোখ এদিক ওদিকে ঘুড়িয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল।
শিমু সাফোয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আমি প্রস্তুত।”

সাফোয়ান মনে মনে বলল”,আমাকে অপ্রস্তুত করে দিয়ে নিজেতো প্রস্তুত হবেনই ।”

মুখে বলল,”চলুন, যাওয়া যাক।”

আজকে সাফোয়ান নিজের প্রিয় গাড়িটাকে নিয়ে বেড় হয়নি এর পিছনে অবশ্য একটা কারন আছে।

বাসার নিচে নামতেই রিকশা পেয়ে গেল ওরা। সাফোয়ান আগে শিমুকে উঠতে বলল।
শিমু রিকশায় কিছুটা সংকোচ নিয়ে বসে পড়ল।
তার পর সাফোয়ান উঠে বসে পরল। শিমু সরে বসতে চাইলে সাফোয়ান শিমুর কোমড় আকরে ধরল।
কানে কানে ফেস করে বলল,”দূরে যেন সরে বসতে না পারেন তার জন্যই এতো আয়োজন।”

শিমু সাফোয়ানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। তবে কি এইজন্যই নিজের গাড়িটা নিয়ে বেড় হয়নি সাফোয়ান।

সাফোয়ান ঠোঁঠের কোনে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলল,”আপনার ঠোঁঠে লাল লিপস্টিক কিন্তু মারাত্মক লাগছে।পুরো রেড ওয়াইনের মতো দেখলেই নেশা ধরে যাচ্ছে।”

শিমু অপ্রস্তুত হয়ে অন্যদিকে মুখ ঘোরালো। তার কান গরম হয়ে গেছে লজ্জায়, সর্বাঙ্গ শরীর শিরশির করছে।
শিমুকে অন্যদিকে ঘুরতে দেখে সাফোয়ান কিছুটা অসহায় কণ্ঠে বলে উঠল,”মামা আমি কি দেখতে খারাপ বলুনতো।”

রিকশা ওয়ালা মামা বিষ্ময় নিয়ে পিছনে ঘুরল একবার।শিমুও সাফোয়ানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

“আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন সাফোয়ান। কিসব আবল তাবল বলছেন।”

সাফোয়ান শিমুর কথায় পাত্তা দিলোনা আবারো
বলে উঠল,”মামা কিছু বললেন না যে।”

“মামা আপনে দেখতে তো মেলা সুন্দর কিন্তু এমন কথা কইতাছেন কেন?”

সাফোয়ান শিমু দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছারল।

“আমি ভাবলাম আমি দেখতে হয়তো অনেক খারাপ সেই জন্য আপনার মামী আমার দিকে ঘুরেও তাকাচ্ছেনা।”

রিকশাওয়ালা মামা উচ্চস্বরে হেসে দিল।

“মামা আপনারা পরেনও বটে।”

শিমু সাফোয়ানের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে রইলো।
মনে মনে বলল, “লোকটা ভীষণ অসভ্য । হঠাত নিরামিষ থেকে আমিষ হয়ে গেল কি করে আল্লাহ জানেন।
লজ্জা শরম একেবার বিকিয়ে দিয়ে এসেছে মনে হচ্ছে।”

সাফোয়ান মিটি মিটি হাসছে আর শিমুর চোখ রাঙানো উপভোগ করছে।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে