Friday, August 1, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 407



Revenge of love part-07

0

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_7

রাত সাড়ে নয়টা বাজে, নন্দিতা রাফির দেওয়া লাল সবুজ রঙের কাগজটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রাফির দেওয়া ধাঁধার মানে কিছুতেই বের করতে পারছে না নন্দিতা। চোখে মুখে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে হাতে রাখা কলমটা টেবিলের উপরে জোরে রেখে মুখ দিয়ে “চ” জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে। কিছুতেই কিছু মিলাতে পারচ্ছে‌‌ না। হঠাৎ করেই ফোনে মেসেজ আসার শব্দ শুনে নন্দিতা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে প্রতিদিন যে নাম্বার থেকে রাতে কল আসে সেই নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। নন্দিতা মেসেজ অপশনে ঢুকে মেসেজ পড়া শুরু করে।

“কি এখনো আমার দেওয়া ধাঁধাটার সমাধান করতে পারো নি?”

নন্দিতা মেসেজটা পড়ে চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা। নন্দিতা মেসেজ পড়ে বুঝতে পারলো এতো দিন রাত্রের বেলায় যে নাম্বার থেকে কল আসতো সে আর কই না রাফি। নন্দিতা বিড়বিড়িয়ে উঠে।

“কি ধরিবাজ লোক রে বাবা! আমার নাম্বার ফেলো‌ কোথায়?”

নন্দিতাকে এভাবে তব্দা হয়ে বসে থাকতে দেখে জমেলা বেগম বলেন, “কিরে! কি হয়েছে?”

নন্দিতা মায়ের আওয়াজ শুনে থতমত খেয়ে কাগজটা বইয়ের ভেতরে ঢুকিয়ে বলে, “কিছু হয় নি মা।”

“ঠিক আছে। মনযোগ দিয়ে পড় তাহলে।”

নন্দিতা ঠোঁট ফুলিয়ে মনে মনে বলে, “আর মনযোগ, সব মনযোগ তো এই রাফি নামক লোকটার দেওয়া কাগজটার উপরেই। পড়ালেখায় কি করে মনযোগ দিবো? নাহ বাবা এই ধাঁধা আমার পক্ষে খুজে বের করা সম্ভব না। এমনও তো হতে পারে আমার সাথে মজা করেছে। কিন্তু…. ”

_________

পরের দিন ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে বসে আছে নন্দিতা আর সুহা। নন্দিতা চুপ থাকলেও সুহা এক নাগাড়ে কথা বলেই‌ যাচ্ছে থামার কোনো নামেই নি। সুহা কথা বন্ধ করে নন্দিতাকে অন্যমনস্ক হয়ে থাকতে দেখে বলে।

“আরে ওই! আমি কিছু বলছি শুনছিস তো?”

নন্দিতা অন্যমনস্ক হয়ে বলে, “আজকে কি ওনি আসেন নি?”

সুহা ভ্রু কুচকে বলে, “কে আসি নি?”

“রাফি।”

সুহা বাকা হেসে বলে, “হুম! আপনি তাহলে রাফি ভাইকে চোখে হারাচ্ছেন।”

নন্দিতা যখনেই বুঝতে পারলো কথাটার মানে তখনেই নাকচ করে বলল, “একদমেই না আমি ওনাকে কেন খুজতে যাবো? আজব!”

সুহা মাথা নাড়িয়ে বলে, “হুম হুম! বুঝতে পেরেছি আর‌ শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না। এখন বল ওই লাল সবুজ কাগজের ধাঁধাটার মানে বের করতে পেরেছিস?”

নন্দিতা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে, “নাহ পারি না। আর আমি চেষ্টাও করি নি।”

সুহা জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “দেখ মানুষ বলে লাল রঙ নাকি ভালোবাসার প্রতীক। তবে সাদা আর নীল রঙও ভালোবাসার অনুভতি প্রকাশ করে। আর সবুজ রঙটি জীবনের শুরুতে নতুন কোনো সম্পর্ক বা প্রেমের প্রথম ধাপকে বুঝানো হয়। তার মানে…”

নন্দিতা ভ্রু কুচকে আগ্রহী হয়ে বলে, “কি?”

সুহা উত্তেজিত হয়ে জোরে বলে উঠে, “তার মানে রাফি ভাইয়া তোকে ভালোবাসে আর সেই ভালোবাসার ইঙ্গিত দিলো তোকে এই কাগজের মাধ্যমে নন্দিতা।”

সুহা কথাটা এতোটা জোরে বলেছে যে ক্যান্টিনের সকলে তাদের দিকে অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সুহার কথাটা শুনে একজনের ঠিক ভালো লাগে নি। রাগে নাকের পাটা ফুলে উঠেছে দিয়ার। একটু আগেই দিয়া ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনের দরজা খুলে ক্যান্টিনের ভেতের পা রাখতেই সুহার কথাটা শুনে থমকে যায়। সুহার কথাটা যেন দিয়ার মস্তিষ্কে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে দিয়া সুহার কাছে গিয়ে সুহার হাত ধরে সুহাকে বসা থেকে টেনে তুলে নন্দিতার দিকে আঙ্গুল তাক করে রাগী গলায় বলে।

“কি বললি তুই? এই মেয়েটাকে রাফি ভালোবাসে?”

আকস্মিক এমন হওয়াতে হকচকালো সুহা আর নন্দিতাও। নন্দিতাও বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সুহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই দিয়া নন্দিতার দিকে ফিরে ঝাঁঝালো গলায় বলে।

“এই‌ মেয়ে তোকে গতকালকে কি বলেছি আমি হুমম? বলেছি না আমার রাফির থেকে দূরে থাকতে তারপরও তুই‌ রাফির আশেপাশে থাকার জন্য বাহানা খুজছিস। বেহায়া মেয়ে কোথাকার?”

দিয়ার পাশে দাঁড়ানো তার বন্ধবী নাঈশা বলে উঠে, “আরে এসব ছোট লোক মেয়েদের একটাই লক্ষ্য কি করে বড় লোক ছেলেদের নিজের রুপের জালে ফাঁসানো যায়। যেই দেখেছে রাফি ভাই বড়লোকের ছেলে ওমনি রাফি ভাইয়ের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আসলে কি বলতো এদের বাবা মায়েরাই বড়লোক ছেলেদের পেছনে লেলিয়ে দেয় মেয়েদের।”

নন্দিতার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। আজ পর্যন্ত এসব কথা কারো কাছে থেকে শুনতে হয় নি। আর আজকে কি না রাফির জন্য এতো গুলা কথা শুনতে হচ্ছে এমন কি বাবা মায়ের নামেও।‌নন্দিতা কিছুতেই তার বাবা মায়ের অপমান সহ্য করবে না তাই নিজেকে সামলে নিয়ে গলার স্বর কঠিন করে বলে।

“মুখ সামলে কথা বলুন আমার বাবা মায়ের নামে একটাও বাজে কথা বলবেন না। আর কাকে বেহায়া বলছেন হুম? কি বেহায়ার মতো কাজ করেছি আমি যে আামকে বেহায়া বলছেন? আর এই ভার্সিটির সবাই জানে ঠিক কে বেহায়া?”

দিয়া কন্ঠে তেজ এনে ভ্রু কুচকে বলে, “কি বললি তুই? তুই কি কোনো মতে আমাকে বেহায়া বলছিস?”

সুহা শব্দ করে হেসে বলে, “যাক বুঝতে পেরেছে তাহলে।”

নন্দিতাও শব্দ‌ করে হেসে বলে, “চুরের মন পুলিশ পুলিশ।”

“তোর এতো বড় সাহস।”

কথাটা বলে দিয়া নিজের হাত তুলে নন্দিতাকে থাপ্পর মারতে নিলে দিয়ার হাত‌ কেউ ধরে ফেলে। নন্দিতা দিয়ার এমন আক্রমন দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। কিন্তু যখন নিজের উপরে দিয়ার কোনো আক্রমণ আসছে না বুঝতে পেরে পিটপিট চোখে নন্দিতা সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে রাফি দিয়ার হাত ধরে রাগী চোখে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রাফি রেগে দিয়ার হাতটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলে।

“কি হচ্ছে এখানে হুম? কি হচ্ছে?”

সারা ক্যান্টিন কেঁপে উঠে রাফির চিৎকারে। দিয়া ভয়ে দু কদম পিছিয়ে যায়। রাফি ভার্সিটিতে ছিলো না বাইকে তেল ভরার জন্য দোকানে গিয়েছিলো। কিন্তু যখনেই বিশাল ফোন করে এই পরিস্থিতির কথা বলছে তখনেই রাফি দ্রুত ভার্সিটিতে আসে। আর ক্যান্টিনে এসে দেখে দিয়া মারতে যাচ্ছিলো নন্দিতাকে।

রাফি নন্দিতার দিকে তাকায়। নন্দিতা মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফি সবাইকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে।

“কি হলো সবাই চুপ করে আছে কেন? কি হচ্ছিলো এখানে?”

সুহা বলে উঠ, “ভাইয়া আমি বলছি..”

সুহার কথার মাঝইে দিয়া বলে, “রাফি তুমি এই ফালতু মেয়ে গুলার কথা শুনো না।”

রাফি দিয়ার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “মুখটা বন্ধ রাখো দিয়া। আর একটু আগে তুমি কি করতে চাইছিলে সেটা আমি খুব ভালো করেই দেখেছি।”

তারপর সুহার দিকে ফিরে বলে, “কি হয়েছি সুহা বলো?”

“ভাইয়া আসলে গতকালকে আপনার দেওয়া ধাঁধাটার মানে বের করার চেষ্টা করেছিলাম। আমি জানি না এটা সত্যি কি না কিন্তু আমি জাস্ট ধাঁধাটার প্রেক্ষিতে বলেছিলাম আপনি হয়তো নন্দিতাকে ভালোবাসেন আর এটা শোনার পরেই দিয়া আপু নন্দিতার বাবা মা তুলে অপমান করে।”

রাফি সুহার কথাটা শুনে বাকা হেসে নন্দিতার দিকে চেয়ে নরম গলায় বলে, “হুম ভালোবাসি নন্দিতাকে নিজের থেকেও বেশি। সে কি ভালোবাসে আমায়?”

নন্দিতা এমন কথা শুনে চমকে রাফির দিকে তাকায়। সামনে দাঁড়ানো লোকটার জন্য আজকে তার বাবা মাকে অপমানিত হতে হয়েছে। আর রাফি ভাবলো কি করে নন্দিতা তাকে ভালোবাসবে। নন্দিতার চোখ বেয়ে আপনাআপনি দু ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। নন্দিতা দু চোখের পানি মুছে কাঠকাঠ গালায় বলে।

“নাহ! ভালোবাসি না আপনাকে আর আপনাকে ভালোবাসার মতোও এমন কিছু হয় নি যে আপনাকে ভালোবাসতে হবে।”

কথাটা বলেই নন্দিতা ব্যাগটা নিয়ে দৌঁড়ে বেরিয়ে যায় ক্যান্টিন থকে। পেছন থেকে সুহাও নন্দিতা বলে ডাকতে ডাকতে নন্দিতার পেছনে ছুটা শুরু করে। রাফির ঠোঁটের কোণে হাসি লেগে আছে। লাইফের ফাস্ট টাইম কাউকে প্রপোজ করেছে আর ফাস্ট টাইমেই রিজেক্ট হয়েছে। এক অদ্ভুত ফিল কাজ করছে মনের মাঝে রাফির। রাফির পাশে দাঁড়ানো দিয়া রাগী গলায় বলে।

“তুমি ওই‌‌ নন্দিতাকে ভালোবাসো রাফি।”

রাফি দিয়ার কথা শুনে প্যান্টের পকেটে হাত গুজে শান্ত গলায় বলে, “হে ভালোবাসি! তাতে কি তোমার সমস্যা?”

দিয়া নরম গলায় বলে, “আমি তোমাকে ভালোবাসি রাফি। প্লিজ আমার সাথে এমন করো না।”

“এটা তোমার প্রবলেম আমার না। আর আমি কাকে ভালোবাসবো আর ভালোবাসবো না এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।”

কথাটা বলে রাফির চলে যেতে নিলে‌ আবারো থেমে বলে, “আরেক একটা কথা, আজকে যেই কাজটা করতে যাচ্ছিলে‌ নেক্সট টাইম যেন এই‌ কাজটার পুনরাবৃত্তি না হয়। যদি এমন কিছু হয় তাহলে কিন্তু তোমার জন্য সেটা মঙ্গলজনক হবে না কথাটা যেন মনে থাক।”

কথাটা বলেই রাফি বের হয়ে যায় ক্যান্টিন থেকে। রাফি চলে যেতেই দিয়া রেগে একটা চেয়ারে লাথি মেরে টেবিলের উপরে হাত রেখে মনে মনে বলে।

“এতো সহজে আমি তোমাকে অন্য কারোর হতে দিবো না রাফি। ওই নন্দিতাকে কি করে তোমার জীবন থেকে দূরে সরাতে হয় সেটা আমি খুজে বের করবোই। যা যা করা লাগে সব করবো আমি সব।”

এদিকে সুহা নন্দিতার হাত ধরে বলে, “নন্দিতা আমার কথাটা শোন একটু।”

নন্দিতা ক্ষীণ গলায় বলে, “প্লিজ সুহা আমাকে একটু একা থাকতে দে। আর আমাকে এক্ষুণি বাসায় যেতে হবে।”

কথাটা বলেই ভার্সিটির গেইট পেরিয়ে রিকশায় উঠে বসে নন্দিতা। সুহা নন্দিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। এমন সময় রাফি দৌঁড়ে সুহার কাছে এসে বলে।

“নন্দিতা কোথায়?”

সুহা নিষ্প্রভ গলায় বলে, “চলে গেছে।”

“ওর সাথে কথা বলা দরকার আমার।”

রাফি বাইকের কাছে যেতে নিলে সুহা বলে উঠে, “ভাইয়া ওকে এখন ছেড়ে দেন। কালকে ও ভার্সিটিতে আসলে তখন না হয় কথা বলে নিবেন।”

রাফি মুহূর্তের মাঝে থেমে যায়। মেয়েটি কি আজকে একটু বেশিই কষ্ট পেয়ে গেছে! রাফি নন্দিতাকে এভাবে ভালোবাসার কথা জানাতে চায় নি। কিন্তু পরিস্থিতি আজকে এমন হয়ে গেছে যে রাফি কথাটা বলতে বাধ্য হয়েছে। সব দোষ এই দিয়ার আজকে যা কিছু হয়েছে সব কিছু এই মেয়েটার জন্য।

______

নন্দিতাকে এমন সময় ভার্সিটি থেকে বাসাত আসতে দেখে ভীষণ অবাক হোন জমেলা‌‌ বেগম।

“এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি যে?”

নন্দিতা কিছু না বলে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। জমেলা বেগম হতভম্ব হয়ে যাচ্ছেন মেয়েকে হঠাৎ করে এভাবে কান্না করতে দেখে। জমেলা বেগম মেয়েরে মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বলেন।

“কি হয়েছে মা?”

নন্দিতা ভাঙ্গা গলায় বলে, “বাবাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে মা।”

জমেলা বেগম বোঝানোর স্বরে বলেন, “ঠিক আছে তোর ভার্সিটি বন্ধ হোক তারপর আমরা যাবো।”

নন্দিতা মায়ের কাছ থেকে সরে এসে জেদি গলায় বলে, “না আমি এক্ষুনি যাবো বাবাকে দেখতে।”

”কিন্তু তোর ভার্সিটি।”

“কিচ্ছু হবে না।”

নন্দিতা কথাটা বলেই ব্যাগ গুজাতে শুরু করে। মায়ের আর নিজের কাপড় ব্যাগে ঢুকিয়ে মাকে বলে।

“ব্যাগ গুজানো শেষ এবার তুমি রেডি হয়ে নাও।”

জমেলা বেগমের আর কি করার মেয়ের জেদের কাছে হার মেনে বেরিয়ে পড়লো গ্রামের উদ্দেশ্যে। কিন্তু এটা বুঝতে পারছে না হঠাৎ করে মেয়ের হলোটা কি? সকালে তো হাসি মুখে গেলো ভার্সিটিতে তাহলে এখন হঠাৎ করে কি হলো? মেয়েকে কিছু জিঙ্গেস করলেই বলছে “বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।” কিন্তু মেয়ের চোখে মুখে ফুটে উঠছে অন্য কিছুর আভাস যেটা মা হয়ে জমেলা বেগম ধরতে পারছে না।

#চলবে______

Revenge of love Part-06

0

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_6

নন্দিতা সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বেল বাজিয়ে। নন্দিতার মা জমেলা বেগম বেলের আওয়াজ শুনে এসে দরজা খুলে দেন। নন্দিতাকে দেখে জমেলা বেগম বলেন।

“এতো দেরি হলো যে তোর?”

নন্দিতা বিছানার উপরে ব্যাগটা রেখে বলে, “প্রথম দিন তো তাই দেরি হয়ে গেছে।”

“আচ্ছা হাত মুখ ধুয়ে খেতে আয়।”

“তুমি খেয়েছো?”

“না এখনও খাই নি তোর জন্য অপেক্ষা করচ্ছিলাম।”

নন্দিতা মায়ের কথা শুনে ভ্রু কুচকে বলে, “আমার জন্য অপেক্ষা করার কি দরকার ছিলো তুমি খেয়ে নিতে। এর পরের বার আর আমার জন্য অপেক্ষা করবে না মনে থাকবে।”

“আচ্ছা বাবা মনে থাকবে এখন যা হাত মুখ ধুয়ে আয়।”

নন্দিতা গামছা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে বলে, “মা বাবার সাথে কথা হয়েছে?”

জমেলা বেগম খাবার বাড়তে বাড়তে বলেন, “তোর বাবা দুই ঘন্টা পরপর ফোন করে খুজ নিচ্ছে। হাত মুখ ধুয়ে তোর বাবাকে একটা কল কর। তোর সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো। তোর ফোনে কলও করেছিলো কিন্তু তুই তো আবার ফোন রেখে গিয়েছিলি।”

নন্দিতা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টেবিলের উপর থেকে ফোন নিয়ে বাবাকে কল করে। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পরে নন্দিতার বাবা মজনু আহমেদ কল ধরে বলেন।

“কি রে মা বাসায় চলে আসচ্ছিস?”

নন্দিতা মুচকি হেসে বলে, “হে বাবা একটু আগেই‌ আসছি।”

“কেমন লাগলো তোদের ভার্সিটি?”

“ভালো।”

“আচ্ছা শোন তোর মায়ের সাথে আজকে কিন্তু আমাকে ঝগড়া হয়েছে?”

“কি নিয়ে?”

“আমাদের মাঝে কি কথা হয়েছে বলতো? আমার মেয়ে যতদিন পড়াশোনা করবে বাইরে থেকে ততো দিন তোর মা তোর কাছে থাকবে। কিন্তু তোর মা বলে গ্রামে চলে আসতে তোকে রেখে। তোর মায়ের নাকি আমার জন্য চিন্তা হয়।”

“মায়ের সাথে সাথে আমারো চিন্তা হয় বাবা তোমার জন্য। আমি তো বলেছি আমি একটা হোস্টেলে উঠে যাই তাহলে তোমাদের কাউকে আমার সাথে থাকা লাগবে না। কিন্তু তুমি মানো না।”

“না হোস্টেলে তোকে দিবো‌ না। এসব হোস্টেলের খাওন ভালা না। দেখিস নি মজিদ সাহেবের ছোট ছেলেটার কি অবস্থা হয়েছে এসব হোস্টেলের খাওন খেয়ে। আমার আম্মার এমন হোক আমি চাই না।”

“কিন্তু বাবা তোমার জন্য চিন্তা হয় আমাদের।”

মজনু আহমেদ রেগে বলেন, “বলেছি না আমার জন্য একদম চিন্তা করবি না আমি একদম ঠিক আছি। আর ভার্সিটি থেকে এসেছি খাওয়া দাওয়া কর আমি রাখি। আমার আবার বন্দে যাওয়া লাগবো ক্ষেতে পানি দেওয়ার জন্য।”

“বাবা তুমি খেয়েছো।”

“হু আমি খাইছি। তুই খেয়ে নে।”

“আচ্ছা।”

“ভালো করে খাওয়া-দাওয়া করবি কেমন? রাখি আম্মা।”

নন্দিতা কল কাটতেই জমেলা বেগম বলেন, “তোর বাপের অনেক স্বপ্ন তোকে নিয়ে নিজের কষ্ট হলেও সেটা হাসি মুখে মেনে নিবে। কিন্তু মেয়ে যাতে কষ্টে না থাকে সেই ব্যবস্থা যেভাবেই হোক করবেই করবে।”

নন্দিতা মুখ শুকনো করে বলে, “বাবার জন্য দুশ্চিন্তা হয়। তুমি এখানে কিছু দিন থেকে গ্রামে চলে যাবে বাবাকে না জানিয়ে।”

“তোর বাবা যদি কিছু বলে।”

“কিছু বলবে না আর আমি দেখি হোস্টেলে চলে যাবো। আর ওই মজিদ চাচার ছেলের হোস্টেলের খাবার খেয়ে কিছু হয় নি। ওসব ছাইপাঁশ খেয়ে এমন হইছে। এখন পুরো গ্রামে হোস্টেলের খাবারের দোষ বলে রটাচ্ছে।

“আচ্ছা তুই আয় খেতে বস।”

এভাবে চলতে থাকে নন্দিতার ভার্সিটির জীবন। কিন্তু ভার্সিটিতে যাওয়া আসা করার সময় মনে হয় ওকে কেউ ফলো করছে। কিন্তু যখনেই পেছনে ফিরে তাকায় কেউকে তেমন সন্দেহজনক মনে হয় না। মাঝে মাঝে রাতের বেলাতে অচেনা একটা নাম্বার থেকে কল আসে কিন্তু কথা না বলে চুপচাপ থাকে শুধু নিঃশ্বাস নেওয়ার ভারি শব্দ শোনা যায়। যখন কথা বলে না নন্দিতাই বিরক্ত হয়ে কল কেটে দেয়। বাবা-মাকে এসব ঘটনা এখনো বলে নি নন্দিতা যদি টেনশন করে তার জন্য।

এর মাঝে রাফির চাওনি নিয়ে পড়েছে এক সমস্যায় নন্দিতা। ভার্সিটির যেখানে যাক না কেন রাফিকে তার আশে পাশে দেখবেই দেখবেই। যখনেই রাফির দিকে তাকাবে তখনেই দেখে রাফি তার দিকে মন্ত্রমুগ্ধের নয়নে তাকিয়ে আছে।

দুই দিন আগের ঘটনা। নন্দিতা ভার্সিটিতে ঢুকার সাথে সাথে কোথা থেকে একটা ছেলে নন্দিতার সামনে এসে একগুচ্ছ লাল গোলাপ ধরে প্রপোজ করে বসে আর ঠিক সেই সময় রাফি কোথা থেকে এসে হাজির হয়ে ছেলেটাকে শাসানো শুরু করে। এর পর থেকে আর নন্দিতা এই ছেলেটাকে আর নিজের আশেপাশে দেখতে পায় নি। দেখতে পেলেও ছেলেটি মুখ নিচু করে চলে যায়। রাফির আরো অনেক ছোট ছোট কর্মকান্ড নিয়ে নন্দিতা অনেক চিন্তিত আছে। এমন নয় যে নন্দিতা কিছু বুঝতে পারে না কিন্তু যখনেই নিজের অবস্থানের কথা মনে পড়ে তখন হেসে এসব ভাবনা মন থেকে উড়িয়ে দেয়।

________

ক্যান্টিনে বসে আছে নন্দিতা আর সুহা। এমন সময় রাফি ক্যান্টিনে ঢুকে তার বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে। নন্দিতা রাফিকে দেখে উঠে চলে যেতে চাইলে সুহা নন্দিতার হাত টেনে ধরে বলে।

–যাস না। আজকে রাফির ভাইয়ের চোখের চাওনি দেখে আমি বোঝার চেষ্টা করবো আসলেই কি রাফি ভাইয়ার মনে তোর প্রতি কোনো অনুভতি আছে নাকি নেই।

নন্দিতা ফিসফিস করে বলে, “কি বলচ্ছিস এসব সুহা? চল আমরা বাইরে যাই।”

“নাহ এক‌ পাও নড়বি না তুই। যদি নড়িস তাহলে তোর সাথে সারা জীবনের জন্য কথা বলা অফ করে দিবো।”

নন্দিতার আর কি করার চুপচাপ বসে রইলো কিন্তু ভুলেও‌ সামনের দিকে তাকাচ্ছে না। তবে আড় চোখে একবার তাকিয়েছে তাকাতেই রাফির চোখের সাথে চোখ মিলে যায় নন্দিতার। এই একটা চাওনি নন্দিতার মনের ভেতর তোলপাড় করে তুলতে সক্ষম। নন্দিতা সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয়। লোকটা কেন তার দিকে সবসময় এভাবে তাকিয়ে থাকে? সে কি বুঝে না নন্দিতার যে খুব অস্বস্তি হয়।

অন্য দিকে রাফি নন্দিতার এমন লজ্জা রাঙা মুখ দেখে বড্ড মজা পাচ্ছে। কেন জানি রাফির বড্ড ভালো লাগে নন্দিতাকে এভাবে জ্বালাতে। তবে আজকে ভয়ংকর ভাবে নন্দিতাকে জ্বালানোর প্ল্যান করে এসেছে রাফি। রাফি ক্যান্টিনে‌ থাকা পিচ্চি ছেলেটাকে ডাক দেয়।

“মনির শোন তো এদিকে?”

“জি ভাই বলেন।”

“একটা কাজ করে দিবি আমার।”

“কি কাজ ভাই?”

রাফি চোখ দিয়ে ইশারা করে নন্দিতাকে দেখিয়ে দিয়ে বলে, “ওই যে নীল ড্রেস পড়া মেয়েটিকে দেখছিস এই মেয়েটিকে একটা কাগজটা দিয়ে আসতি পারবি।”

“হুম ভাই পারমু।”

রাফি প্যান্টের পকেট থেকে লাল আর সবুজের সমন্বয়ে একটা কাগজ বের করে মনিরের কাছে দিয়ে বলে।

“যা দিয়ে আয়।”

মনিরকে ওদের কাছে আসতে দেখে সুহা ফিসফিস করে বলে।

“ওই‌ নন্দিতা রাফি ভাই কি লাভ লেটার পাঠাচ্ছে নাকি।”

নন্দিতা অসহায় গলায় বলে, “তোকে আগেই বলেছিলাম এখান থেকে চলে যাই কিন্তু তুই রাজি হলি না। এখন যদি কোনো প্রবলেম হয় তাহলে।”

“আরে কিছু হবে না দেখি কি হয়?”

মনির নন্দিতার পাশে এসে দাঁড়ায়। নন্দিতা মনিরকে দেখেও না দেখার ভান ধরে বসে আছে। মনির বলে।

“আপা আপনাকে এটা রাফি দিয়েছেন নেন।”

নন্দিতা কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। কি একটা মুসিবতে পড়লো বেচারি। এর মাঝে সুহা বলে, “কি হয়েছে মনির?”

“এটা রাফি ভাই দিয়েছেন এই আপাটাকে।”

সুহা পাশ ফিরে রাফিদের দিকে তাকায়। রাফির দলের সবাই আগ্রহী চোখে তাকিয়ে আছে কি হয় দেখার জন্য।

সুহা মনিরের দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখে বলে, “তুমি আমাকে দাও কাগজটা।”

মনির নাকচ করে বলে, “আপনাকে কেন দিবো? রাফি ভাই এই আপাটাকে দিতে বলেছেন তাই ওনাকেই দিবো।”

সুহা রাগী গলায় বলে, “এতো বেশি কথা না বলে কাগজটা দে।”

কথাটা বলেই মনিরের হাত থেকে কাগজটা ছোঁ মেরে নিয়ে সুহা বলে।

“বেশি বেশি একে বারে যা এখান থেকে।”

মনিরও চুপচাপ‌ এখান থেকে চলে যায়। সুহা নন্দিতাকে খোঁচা দিয়ে বলে।

“দোস্ত লাভ লেটারটা তুই পড়বি নাকি আমি পড়ব। বুঝতে পারচ্ছিস তুই কার কাছ থেকে লাভ লেটার পেয়েছিস কলেজের মোস্ট পপুলার বয় রাফি তাজওয়ারের থেকে। আচ্ছা এ নিয়ে কটা লাভ লেটার পেয়েছিস তুই?”

নন্দিতা দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “তুই তোর মুখটা বন্ধ কর আর এখন থেকে চল।”

“একদম না চুপচাপ বসে থাক।”

সুহা কথাটা বলে খুব আগ্রহ নিয়ে ভাঁজ করা কাগজটা খুলে। কিন্তু ভেতরে কোনো লেখা নাই। সুহা তা দেখে হতবাক হয়ে বলে।

“এটার মানে কি? এমন অর্ধেক লাল আর অর্ধেক সবুজ রঙের কাগজ দেওয়ার‌ মানে কি? আজকে কি কোনো দিবস টিবস নাকি যে তোকে এমন অর্ধেক লাল আর অর্ধেক সবুজ রঙের কাগজ দিয়েছে পতাকা বানানোর জন্য।”

নন্দিতা কি বলবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। এতোক্ষণ কি ভেবেছিলো আর কি হলো? সুহা হতবাক হয়ে রাফিদের দিকে তাকায় সাথে নন্দিতাও তাকায়। রাফি বাকা হেসে বসা থেকে উঠে তাদের কাছে আসতে দেখে নন্দিতা সাথে সাথে মাথা নিচু করে নেয়। রাফি নন্দিতার কাছে এসে দাঁড়িয়ে কোমড় বাঁকিয়ে নিচু হয়ে বলে।

“একটা হিন্টস দিলাম এই‌ লাল সবুজ কাগজের মাধ্যমে। এর ধাঁধা খুজে বের করার চেষ্টা করো। আশা করি পারবে যদি না পারো তাহলে আমার কাছ থেকে এসে জেনে যাবে কেমন। আমি ভালো করে সবটা বুঝিয়ে দিবো।”

কথাটা বলে রাফি সোজা হয়ে দাঁড়ায়। নন্দিতা হা করে রাফির দিকে তাকিয়ে আছে। রাফি নন্দিতার চাওনি দেখে মুচকি হেসে যখনেই ক্যান্টিনের দরজার দিক অগ্রসর হতে নিবে তখনেই দেখে দিয়া দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে। রাফি দিয়ার চাওনি উপেক্ষা করে দিয়ার পাশ কাটিয়ে চলে যায়। রাফির পেছন পেছন ওর বন্ধুরাও চলে যায়। ওরা চলে যেতেই দিয়া নন্দিতার কাছে এসে চিৎকার করে বলে।

“রাফি কি বলেছে তোকে?”

নন্দিতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দিয়া আবারো বলা শুরু করে, “শোন একদম রাফির ধারে কাছে আসার চেষ্টা করবি না। তার ফল কিন্তু ভালো হবে না। তোকে ফাস্ট এন্ড লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি ওর থেকে দূরে দূরে থাকবি বুঝলি।”

কথাটা বলেই দিয়া হনহনিয়ে চলে যায়। ক্যান্টিনে থাকা গুটি কয়েকজন স্টুডেন্ট অবাক চোখে তাকিয়ে আছে হঠাৎ করে কি থেকে কি হয়ে গেলো। নন্দিতা আগের মতোই বসে আছে। সুহা নন্দিতার হাত ধরে বলে।

“বাদ দে তো এই সাইকোটার কথা। সবসময় বলে বেড়ায় রাফি ভাইকে নাকি ও ভালোবাসে, কিন্তু দেখ রাফি ভাই একে পাত্তাই দেয় না। তারপরও বেহায়ার মতো রাফির ভাইয়ের পিছনে পড়ে আছে।”

নন্দিতা কিছু না বলে চুপচাপ বসে আছে। সুহা তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে।

“ওই বেশরম মাইয়ার কথা চিন্তা বাদ দিয়ে এই লাল সবুজ কাগজটা নিয়ে ভাব। এর মাঝে কি অর্থ আছে এটা খুজে বের কর।”

নন্দিতা কাগজটা হাতে নিয়ে কিছু একটা ভেবে ব্যাগের চেইন খুলে তাতে কাগজটা ঢুকিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে।

“বাড়ি চল।”

সুহা আর কিছু না বলে বান্ধবীর পেছন পেছন যেতে থাকে। বুঝতে পারলো বন্ধবী তার ভেতরে ভেতরে বো’ম হয়ে আছে বেশি খোঁচালেই ফেটে যেতে পারে তাই চুপ থাকাটাই মঙ্গলজনক।

নন্দিতা ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে দেখে অদূরে দাঁড়িয়ে আছে রাফি। হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কি বলছে আর বাতাসে উড়তে থাকা অবাধ্য চুল গুলা ঠিক করছে। এই মুহূর্তে রাফিকে দেখতে ভীষণ ভালো লাগছে নন্দিতার কাছে। এই‌ প্রথম নন্দিতা পূর্ণ দৃষ্টি ফেলে রাফিকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। পাশে দাঁড়ানো সুহা তা দেখে মুচকি মুচকি হাসচ্ছে‌ বন্ধবী যে প্রেমে সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।

হঠাৎ করে রাফি নন্দিতার দিকে তাকাতেই‌ হকচকিয়ে উঠলো নন্দিতা। নন্দিতা দিশেহারা হয়ে সোজা ভার্সিটির গেইটের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। নন্দিতার পেছন সুহাও ছুটলো। ভার্সিটির গেইটের বাহিরে এসে বুকে হাত রেখে জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ে নন্দিতা। সুহা নন্দিতাকে এমন করতে দেখে বলে।

“কিরে ঠিক আছিস?”

“হুমহুম ঠিক আছি আমি।”

“কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুই ঠিক নেই।”

নন্দিতা ভ্রু কুচকে বলে, “মানে।”

“মানেটা হলো বান্ধবী আপনি প্রেম পড়েছেন তাও আবার মারাত্মকভাবে।”

“কি যা তা বলছিস?”

বলেই উল্টো দিক ফিরে হাঁটা শুরু করে নন্দিতা। সুহা মুচকি হেসে হাঁটতে হাঁটতে গানের স্বরে বলে।

“প্রেমে পড়েছে নন্দিতা, প্রেমে পড়েছে।
চেনা এক মানুষ নন্দিতাকে পাগল করেছে।”

#চলবে______

Revenge of love Part-05

0

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_5

রাফির শিয়রের পাশে বসে আছে নন্দিতা আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাফির মুখ পানে। বেডের পাশের টেবিল ল্যাম্পের আলো পড়াতে রাফি মুখের এক সাইড ভাল করে দেখে যাচ্ছে। নন্দিতা হেসে উঠে রাফি হা করে ঘুমিয়ে থাকার স্টাইল দেখে। নন্দিতা আলতো হাতে রাফির নাকের ডগা টেনে দেয়। এই কাজটা নন্দিতা আগে প্রায়ই করতো যখন রাফি রাগে নাক ফুলিয়ে নন্দিতার দিকে তাকিয়ে থাকত। এই কাজটা ছিলো নন্দিতা মেইন অ’স্ত্র রাফির রাগ কমানোর। রাগ করে যখন রাফি নাক ফুলিয়ে রাখতো তখন নন্দিতা হাসিমুখে যখনেই রাফির নাক টেনে দিতো তখন কিভাবে কিভাবে যেন রাফির রাগটা ভেনিস হয়ে যেত। কিন্তু এই কাজটা রাফির সাথে এখ. করতে সাহস পায় না। আগের এই ছোট ছোট মিষ্টি মুহূর্তগুলো নন্দিতা ভীষণ‌ মিস করে ভীষণ। নন্দিতা বেডের মাথার সাথে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে‌ নেয়। মনে পড়ে যায় প্রথম বারের মতো রাফির সাথে দেখা হওয়ার ঘটনাটা।

২০১৮ সাল, নন্দিতা প্রথম বারের মতো এতো বড় শহরে আসে। কিছুটা ভয় কিছুটা জড়তা কাজ করছে নিজের মনের মাঝে। নতুন শহর, নতুন ভার্সিটি‌ আর এক নতুন জীবন কিভাবে ম্যানেজ করবে তা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছে।

ভার্সিটির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নন্দিতা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে। নিজেকে শান্ত রাখার জন্য জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে ভার্সিটির গেইট পেরিয়ে ভার্সিটির ভেতরে ঢুকে। পুরো ভার্সিটিটা এক বার নজর বুলিয়ে নেয় নন্দিতা। কত্ত স্টুডেন্ট ভার্সিটির আলিতেগলিতে বসে আছে। নন্দিতা যতো ভেতরে যাচ্ছে ততই অবাক হচ্ছে ভার্সিটি দেখে। সে যে এমন একটা বড় ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পাবে কল্পনা করতে পারে নি। গুটিগুটি পায়ে নন্দিতা হেটে যাচ্ছে ঠিক তখনেই পাশ থেকে বলে উঠে।

“এই যে সাদা ড্রেস ওয়ালী সিনিয়রদের যে সালাম দিতে হয় জানা নেই বুঝি।”

নন্দিতা যে ভয়টা পেয়েছিলো সেটাই হলো শেষমেষ রেগিং এর শিকার হতে যাচ্ছে না তো। নন্দিতা দু হাত দিয়ে ব্যাগের ফিতা চেপে ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। নন্দিতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে।

“এই যে সাদা ড্রেস ওয়ালী এদিকে আসুন। সিনিয়রদের ডাকে সাড়া না দেওয়া কিন্তু ঘোর অন্যায়।”

নন্দিতা ঢোক গিলে পাশে তাকিয়ে দেখে চার পাঁচটা ছেলে একটা ওয়ালের উপরে পা ঝুলিয়ে বসে আছে আর তার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসচ্ছে। নন্দিতা ভয়ে ভয়ে তাদের কাছ গিয়ে দাঁড়াতে ছেলেগুলার মাঝে নেহাল নামের ছেলেটা বলে।

“সালাম দাও সিনিয়রদের।”

নন্দিতা গলার স্বর চিকন করে বলে, “আস-সালামু আলাইকুম।”

ছেলেগুলা সবাই এক সাথে সালামের জবাব দেয়। নেহাল আবারো বলা শুরু করে।

“নাম কি?”

“নন্দিতা আনজুম।”

“ফাস্ট ইয়ার!”

“জি”

নেহাল আর কিছু বলতে তখনেই শিহাব আরেকটা ছেলেকে নিয়ে এসে তার কাঁধে হাত রেখে বলে।

“একটা মুরগি পেয়েছি দোস্ত।”

শিহাব কথাটা বলে নন্দিতার দিকে তাকিয়ে বলে, “ও‌মা তোরাও দেখি একটা মুরগি পেয়ছিস।”

নেহাল বাকা হেসে বলে, “আর বলিস না এই সাদা মুরগি আমাদের সালাম না দিয়েই চলে যাচ্ছিলো তাই সালাম দেওয়ার ট্রেনিং দিচ্ছি।”

নন্দিতা শিহাবের পাশে দাঁড়ানো ছেলেটার দিকে আড় চোখে তাকায়। ছেলেটাও ভয়ে ভয়ে নন্দিতার দিকে তাকায়। নেহাল ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলে।

“কি নাম?”

“জি সুমন।”

নেহাল বা অন্য কেউ কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাশভারি একটা কন্ঠ ভেসে আসে।

“কি হচ্ছে এখানে?”

ছেলেগুলা সামনের দিকে তাকাতেই ভয় পেয়ে সাথে সাথে ওয়াল থেকে নেমে নেহাল বলে।

“কিছু না রাফি ভাই আমরা তো শুধু…”

রাফি নেহালকে কথা বলতে না দিয়েই‌ বলে, “শুধু রেগ দিচ্ছিলি।”

নেহাল থতমত খেয়ে বলে, “না ভাই আমরা তো শুধু কথা বলচ্ছিলাম।”

রাফি গলায় তেজ এনে বলে, “কথা বলা শেষ হয়ে থাকলে ক্লাসে যা। আর হে পরের বার যেন তদের না দেখি জুনিয়রদেরকে রেগ না দিতে।”

রাফির কথাটা শোনার সাথে সাথে ছেলে গুলা মাথা নাড়িয়ে এখান থেকে দৌঁড়ে চলে যায়। নন্দিতার জানে পানি আসলো যেন। ভেবেছিলো রাফিও হয়তো তাকে রেগ দিবে কিন্তু রাফি তাকে বাঁচালো রেগিং এর হাত থেকে।

রাফি নন্দিতার দিকে তাকাতেই চোখ বড় বড় করে, “তুমি এখানে!”

নন্দিতা রাফির দিকে তাকিয়ে হতবাক হয়ে বলে, “জি।”

রাফি পাগলের মতো হঠাৎ করে হেসে উঠে। নন্দিতা অবাক চোখে একবার রাফির দিকে তো আরেকবার সুমনের দিকে তাকায়। নন্দিতা মনে মনে বলে উঠে, “এই ছেলে পাগল নাকি, এভাবে হাসচ্ছে কেন হঠাৎ করে?”

রাফির এখনো বিশ্বাস‌ হচ্ছে না তার সামনে যে‌ নন্দিতা দাঁড়িয়ে আছে। কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে সব কিছু যে মেয়েকে রাফি প্রায় পনেরো দিন ধরে পাগলের মতো খুজে বেড়াচ্ছে। সে মেয়ে কি না ষোল দিনের মাথায় এসে রাফিকে দেখা দিলো। পনেরো দিনের আগের ঘটনা।

গোধূলি বেলা তখন, সূর্য প্রায় পশ্চিম দিকে অস্ত যাবে যাবে ভাব। রাফি তখন জ্যামের মাঝে বসে আছে বাইক নিয়ে তার পাশেই সিয়ামও নিজের বাইক নিয়ে বসে আছে। দুজনেরই চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ প্রকাশ পাচ্ছে। হঠাৎ করে চিকন মেয়েলি কন্ঠের স্বর কানে আসতেই পাশ ফিরে ফুটপাতের দিকে তাকায় রাফি। মেয়েটির দিকে তাকাতেই চোখ আটকে যায় রাফি। সূর্যের সোনালি আলো মেয়েটির মুখে পড়াতে বার বার হাত উঁচু করে সূর্যটাকে আড়াল করার প্রয়াস করছে। মেয়েটির পাশেই একটা ছোট বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে আর সেই বাচ্চাটিকে মেয়েটা বার বার প্রশ্ন করছে, “কি খাবে বলো?” বাচ্চাটির পোশাক দেখেই বুঝা যাচ্ছে বাচ্চাটি টুকাই। মেয়েটির এমন উদারতা দেখে আনমনেই রাফির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। এতোক্ষণের বিরক্তকর ভাবটা যেন নিমিষেই বিলীন হয়ে যায় রাফির চেহারা থেকে। পাশ থেকে সিয়াম তিরিক্ষি মেজাজে বলে উঠে।

“এই জ্যাম কবে ছুটবে ভাই?”

রাফির কোনো রেস্পন্স না পেয়ে সিয়াম রাফির বাইকে লাথি মেরে বলে।

“আরে ওই! তোকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তো?”

রাফি রাশভারি গলায় বলে, “উফফ! বিরক্ত করবি না তো দেখতে দে।”

সিয়াম রাফির কথা শুনে সামনে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলে।

“উমম! মেয়েটি তো মাশআল্লাহ দেখতে সুন্দর আছে দোস্ত।”

মেয়েটি বাচ্চাটিকে কিছু খাবার কিনে দিয়ে চলে যাওয়ার উদ্যত হতে নিলেই রাফি বাইক থেকে নেমে যায়। সিয়াম তা দেখে বলে।

“আরে আরে কই যাচ্ছিস তুই বাইকটা এমন জ্যামের মাঝে রেখে?”

রাফি কিছু না বলেই বাইক থেকে নেমে‌ মেয়েটি যে গলিতে ভেতরে ঢুকছে রাফিও সেই গলির ভেতরে ঢুকে। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না অনেক খুজাখুজি করেও মেয়েটিকে আর চোখের দেখা দেখতে পেলো না রাফি। বিষন্ন মুখ নিয়ে ফিরে আসে রাফি। রাফিকে দেখে সিয়াম রাগারাগি শুরু করে দেয়।

“ওই তোর কি মাথাটা পুরো গেছে। জানিস তোর এই হাতি মারা বাইকটার জন্য কতো গালিগালাজ খেয়েছি মানুষের কাছে সাথে বাইকের চাবিটাও নিয়ে চলে গেছিস।”

রাফি বাইকে উঠতে উঠতে বলে, “বন্ধুর জন্য একটু গা’লি গা’লা’জ খেলে সওয়াব হয় বুঝলি।”

এর মাঝে এক রিক্সাওয়াল বলে, “ওই মিয়া তাড়াতাড়ি আপনের মোটরসাইকেল এইনতে সরান। না হলে হুলিশ আইসা নিয়া যাইবো।”

রাফি বাইকে চাবি ঢুকিয়ে বাইক স্টার্ট দেয়। এর পর থেকে শুরু হয় রাফির পাগলামি প্রত্যেকটা দিন রাফি এমন সময় এই জায়গাতে আসে শুধু মাত্র মেয়েটিকে এক নজর দেখার জন্য। নিজেই নিজের এমন কার্যক্রম করার জন্য ভীষণ অবাক হতো। কিন্তু মেয়েটির আর দেখা পায় নি কিন্তু শেষমেষ সেই মেয়েটির দেখা পেলো আজকে।

পনেরো দিনে এসব কর্মকান্ড মনে পড়তেই হাসি পেয়ে যায় রাফির। রাফি নিজের হাসি থামিয়ে বলে, “সরি! আসলে নিজের করা একটা কাজ মনে পড়তেই হাসি উঠে গেছে কিছু মনে করো না।”

নন্দিতা মাথা নড়িয়ে বলে, “না না ভাইয়া কিছু মনে করি নি।”

রাফি রাশভারি গলায় বলে, “প্রথম দেখাতেই ভাইয়া বানিয়ে দিলে‌ আমাকে‌।”

নন্দিতা মুখ ছোট করে বলে, “না মানে তাহলে‌ কি বলে ডাকবো?”

রাফি মুচকি হেসে বলে, “কিছু বলে ডাকতে হবে না যাও ক্লাসে যাও দুজনে। আর‌ কোনো প্রবলেম হলে নির্দ্বিধায় আমাকে বলবে কেমন আমি হেল্প করবো।”

সুমন আর নন্দিতা মাথা নাড়িয়ে দুজন দুজনের ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে যায়। রাফি ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে নন্দিতার যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এমন সময় রাফির পাশে থেকে একটা মেয়েলি কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।

“মেয়েটা কে রাফি?”

রাফি পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে দিয়া দাঁড়িয়ে আছে চোখে মুখে বিরক্তিকর ছাপ নিয়ে। মনে হচ্ছে যেন দিয়ার মুখে কেউ করলার জুস টেলে‌ দিয়েছে তাই এমন করে রেখেছে মুখটা। রাফি দিয়াকে পাত্তা না দিয়ে “কেউ না বলে” পকেটে হাত গুজে এখান থেকে চলে যায়। দিয়ার প্রতি রাফির এমন অবহেলা করতে দেখে দিয়া নাক ফুলিয়ে বলে।

“কত দিন আমাকে এভোয়েড করে চলবে তুমি রাফি। এক দিন তো ঠিকেই আমার জালে ধরা তোমাকে দিতেই হবে। আর মেয়েটা কে যার দিকে তুমি এমন অদ্ভুদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলে। তোমার দৃষ্টি বড্ড অন্য রকম লাগছে রাফি।”

_____

রাফি ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছে আর মাঠের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসচ্ছে। আজকে রাফি ভীষণ খুশি মন চাইছে পুরো ভার্সিটির সকলকে বিরিয়ানে খাওয়াতে। তার এতো দিনের পরিশ্রম আজকে সফল‌ হলো। এমন সময় রাফির কাঁধে চাপড় মেরে সিয়াম চেয়ারে বসতে বসতে বলে।

“কিরে মামা? তোর মুখে এমন লজ্জা লজ্জা হাসি লেগে আছে কেন? কাহিনী কি?”

রাফি কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে, “তুই গেজ করতো তো কি কাহিনী হতে পারে?”

“উমম! কারো প্রেম পড়েচ্ছিস নাকি আবার।”

রাফি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে, “প্রেমে তো পড়েছি অনেক আগে, সেই গোধূলি বেলায় দেখা মেয়েটির প্রেমে।”

সিয়াম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “ভাই তুই আর ওই মেয়েকে খুজে পাবি না বুঝলে তাই গোধূলি বেলায় দেখা মেয়েটিকে ভুলে যা।”

“কে বলছে খুজে পাবো না ওলরেডি পেয়ে গেছি আর মেয়েটি এখন আমার চোখের সামনেই আছে।”

সিয়াম চোখ বড় বড় করে বলে, “কি? কোথায় মেয়েটি?”

বলেই মাঠের দিকে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে যায় নন্দিতাকে দেখে। বার কয়েক চোখের পলক ফেলে রাফির দিকে তাকিয়ে অবিশ্বাস্য গলায় বলে।

“ভাই তোর গোধূলি বেলায় দেখা মেয়েটি আমাদের ভার্সিটিতে পড়ে আর আমরা এই কলেজের সিনিয়র হয়ে সেটা জানি না।”

“ও নতুন ভর্তি হয়েছে আর‌ আজকেই প্রথম ভার্সিটিতে এসেছে তাই জানতাম না।”

“তোর কপাল আছে ভাই মেয়েটা তোর নাগলের ভেতরেই আছে।”

এমন সময় নন্দিতার পাশে এসে সুমন দাঁড়াতেই সিয়াম বলে উঠে।

“ওই ছেলেটা কে? চল দেখি গিয়ে।”

“না দরকার নেই বসে থাক।”

সুমন নন্দিতার কাছে এসে বলে, “হাই! সকাল বেলা ঘটনাটার জন্য নিশ্চয়ই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তাই না।”

নন্দিতার পাশে দাঁড়ানো সুহা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় সুমনের দিকে। সুহার সাথে নন্দিতার আজকে বন্ধুত্ব হলো। সুহা নন্দিতার কানে কানে বলে, “কে রে ছেলেটা?”

নন্দিতা ফিসফিসিয়ে বলে, “সকালের ছেলেটা।”

সুহা ছোট করে বলে, “ও”

নন্দিতা মুচকি হেসে বলে, “একটু তো ভয় পেয়েছিলাম।”

“হুম। আচ্ছা আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি।”

সুহা সুমনের কথা শুনে ভ্রু উঁচু করে বলে, “কেন? আমাদের সাথে আপনারা বন্ধুত্ব করা কি দরকার এতো স্টুডেন্ট থাকতে ভার্সিটিতে?”

“না এমনি এই ভার্সিটিতে নতুন আসলাম তাই বলচ্ছিলাম আর কি।”

সুহা দ্রুত গলায় বলে, “ওকে ওকে ফ্রেন্ড হলাম আজ থেকে আমার।”

সুহা কথাটা বলেই নন্দিতার হাত ধরে বলে, “চল এখন।”

কিছু দূরে যেতেই নন্দিতা অবাক হয়ে বলে, “এমন করলি কেন?”

“তুই এই শহরে নতুন তাই একটু বুঝেশুনে পা ফেলবি আর ছেলেদের একদম বিশ্বাস করবি না বুঝলি।”

“হুম”

নন্দিতাকে কলেজ থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেই রাফি ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে নন্দিতার পিছু নেওয়া শুরু করে। অর্ধেক রাস্তা আসতেই সুহা আলাদা হয়ে নন্দিতার থেকে। এখন নন্দিতা একাই হেঁটে চলছে। হঠাৎ করেই মনে হলো‌‌‌ কেউ ওর পিছু নিয়েছে ও হাঁটলে পেছনের মানুষটি হাঁটে ও থামলেও সেই লোকটিও থামে। নন্দিতা ভয় পেয়ে যায় কিন্তু নিজের বুদ্ধি কাটিয়ে লোকটিকে ধোকা দিয়ে চলে যায়।

এদিকে রাফি নন্দিতাকে হারিয়ে কোমড়ে হাত রেখে বলে উঠে, “বড্ড চালাক তো মেয়েটা কিভাব ধরে ফেললো সবটা!”

#চলবে_____

Revenge of love Part-04

0

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_4

রাফি গাড়িতে বসে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নন্দিতার দিকে । রাফির এভাবে তাকিয়ে থাকার কারনটা হলো নন্দিতার হাত ধরে রেখেছে একজন পুরুষ যেটা দেখে রাফির রাগের মাত্রাটা আরো বেড়ে যায়। কিন্তু অন্য দিকে নন্দিতা বলে।

“আমি ঠিক আছি আর মলম দিতে হবে না”

অচেনা পুরুষটি বলেন, “কি বলছেন কি? কোথায় ঠিক আছেন আপনি,,আপনার হাতের পাতাটা অনেকটা ছিলে গেছে। ভ্যাগিস আমার ব্যাগে ঔষধটা ছিলো তাই দিতে পারলাম,, আর আপনি রাস্তায় এভাবে দৌঁড়াছিলেন কেন যদি আরও বড় কিছু হয়ে যেতো তখন।”

“আমি একদম ঠিক আছি।”

ঠিক তখনেই রাফি নন্দিতার সামনে এসে দাঁড়ায়। নন্দিতা রাফিকে দেখে নন্দিতার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে কিন্তু পরক্ষণে হাসিটা উধাও হয়ে যায় রাফির চোখের দিকে তাকিয়ে। কারন রাফির চোখ দুটো ভয়ংকর দেখাচ্ছে,, নাকটা রাগে ফুলিয়ে রেখেছে, চোয়াল শক্ত করে রেখেছে। নন্দিতার বুঝতে বাকি রইলো না রাফি কেন এতটা রেগে আছে। নন্দিতা সাথে সাথে অচেনা লোকটার হাত থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নিয়ে ঢোক গিলে বলে।

“রাফি আমার কথাটা শুনো তুমি ভুল ভাবছো।”

রাফি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে, “ওয়াও জাস্ট ওয়াও এত্ত সুন্দর একটা সিন আমি দেখতে পাবো আমি ভাবতেই পারি নি, এই সিনটা দেয়ালে বাধিয়ে রাখার মতো তাই না।”

নন্দিতা রাফিকে বুঝানোর চেষ্টা করে বলে, “রাফি আমার কথাটা শুনো ও রকম কিছুই না।”

রাফি কন্ঠে তেজ এনে বলল, “তাহলে কি?? বল আমাকে,, এখন কি তুই রাস্তা ঘাটেও প্রেম লিলা শুরু করবি। তুই ভুলে যাচ্ছিস তুই এখন রাফি তাজওয়ারের ওয়াইফ আগে যা করেছিস করেছিস কিন্তু এখন তুই। কি সর্ম্পক ওর সাথে তোর?”

অচেনা পুরুষটি বলেন, “মিস্টার আপনি ভুল ভাবছেন,, ওনার সাথে আমার কোনো সর্ম্পক নেই, ওনি হাতে ব্যথা পেয়েছেন তাই আমি…. ।”

রাফি ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে, “শাট আপ জাস্ট শাট আপ! আপনার কাছ থেকে কৌফত চেয়েছি আমি। তাহলে আপনি কেন কথা বলছেন?

কথাটা বলে রাফি নন্দিতার দিকে চোখ রাঙিয়ে বলে, “আর তুই তোর এসব প্রেম লীলা শেষ হয়ে থাকলে চল আমার সাথে।”

রাফি কথাটা বলে রাগে নন্দিতার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে গাড়িতে তুলে। অচেনা লোকটা এসব দেখে মনে মনে বলে ওঠে, “আরে এতো পুরাই সাইকো একটা মাুনষ।”

রাফি নন্দিতাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। নন্দিতার আর বাবার বাড়িতে যাওয়া হলো না। রাফি বাড়ির সামনে এসে নন্দিতার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় নিজের রুমে সকলের সামনে দিয়ে। আর বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কেউ কিছু বলতেও সাহস পাচ্ছে না রাফির রাগী ফেইস দেখে।

রাফি নন্দিতা ঘরে এনে নন্দিতাকে ছুড়ে ফেলে ফ্লোরে। এভাবে ফেলে দেওয়াতে মনে হচ্ছে নন্দিতার শরীরের সব কিছু ভেঙ্গেই গেছে। রাফি দরজাটা লাগিয়ে নন্দিতাকে টেনে তুলে, নন্দিতার গলাটা চেপে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দেয়।

“রাফি প্লিজ ছাড়ো আমার খুব লাগছে।”

খুব কষ্টে করে নন্দিতা কথাটা বলে। রাফি দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

“লাগুক লাগার জন্যই তোকে ধরা, ইচ্ছে করছে তোকে খু’ন করে ফেলতে। কিন্তু তা আমি করবো না তোকে তিলে তিলে আমি মারবো।”

বলেই নন্দিতাকে ছেড়ে দেয় নন্দিতা কাশতে কাশতে নিচে বসে পড়ে, চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।‌ রাফি আবারো নন্দিতাকে তুলে বাহু চেপে ধরে বলে।

“আমার ভাবতেও ঘৃনা লাগে নিজের প্রতি,যে তোর মতো একটা মেয়েকে আমি নিজের সবটা দিয়ে ভালোবেসে ছিলাম। আসলে তুই একটা কি বলবো আমি তোকে, তুই বলে দে তোকে আমি কি বলবো।”

“রাফি তুমি আমাকে ভুল বুঝছো ওই লোককে তো আমি চিনিই না ওনি আমাকে সাহ….।”

নন্দিতা আর কিছু বলতে পারলো না সাথে সাথে নন্দিতার গালে ঠাস করে চড় মেরে বসে রাফি। চড়টা এতটাই জোরে ছিলো যে নন্দিতার ফর্সা গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসে গেছে।

“এতোটা বেহায়া কি করে হতে পারিস তুই,,হুম কি করে? ও হে বুঝতে পেরেছি আমি তোকে র্স্পশ করে নি,, তাই তোর এখন পরপুরুষের স্পর্শ দরকার তাই তো।”

“রাফি কি বলছো এসব। আমাকে এতোটা নিচে নামিয়ে দিও না প্লিজ।”

রাফি দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, “তবে যাই হয়ে যাক না কেন তোকে আমি কোনো দিনও ডির্ভোস দিবো না। তোর জীবনটা আমি নরকে পরিণত করবো। সারা জীবন তুই কষ্ট ভোগ করবি বুঝলি।”

রাফি নন্দিতাকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। নন্দিতা ফ্লোরে বসে ডুকরে কান্না করতে করতে বলে।

“রাফি তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। তুমি এতোটা রগচটা কি করে হয়ে গেলে? আমার কথাটা না শুনেই তুমি… ”

নন্দিতা আর রুম থেকে বের হয় নি, নন্দিতা ফোন করে বাবা মাকে কোনো মতে বুঝ দিলে এটা বলে “রাফির কাজ পড়ে গেছে তাই আসতে পারবে না। এখন একা গেলেও মানুষ দুই চারটা কথা বলবে তাই আর যাওয়া হয় নি।”

এর মাঝে নন্দিতাকে রাফা অনেক বার জিঙ্গেস করেছে কি হয়েছে কিন্তু নন্দিতা কিছু না বলে কথাটা কাটিয়ে দিয়েছে। তাই আর বাসার কেউ কিছু জানতে চায় নি তবে এটা বুঝতে পারছে নন্দিতা আর রাফির মাঝে কিছু একটা হয়েছে। রাফির মা‌ বাবাও এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে তাই ওনারও এ বিষয়ে কথা বলে নি। আসলে ছেলে বউয়ের সমস্যাটা তারা দুজনেই মিটিয়ে নেক এটায় চায় ওনার।

______

রাত প্রায় এগারোটা বাজে রাফি এখন ও আসে নি বাসায়। নন্দিতা ঘরের লাইট না জ্বালিয়ে বসে আছো তবে চাঁদের আলোতে ঘর আলোকিত হয়ে আছে। এর কিছুক্ষন পরেই রাফির গাড়ির শব্দ শুনতে পায় নন্দিতা। কিন্তু তখনও নন্দিতা এভাবেই বসে থাকে। রাফি কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে ঘরে ঢুকে। কিন্তু রাফির দিকে তাকিয়ে তো নন্দিতা চরম অবাক হয়। কেমন দুলছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ড্রিংক করে এসেছে। দারোয়ানের সাহায্যে রাফি কোনো মতে ঘরে আসে। রাফির এমন অবস্থা দেখে নন্দিতা রাফির কাছে গিয়ে বলে।

“কি হয়েছে তোমার? তুমি ড্রিংক করেছো?”

রাফি কিছু না বলে এক নজরে নন্দিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। রাফির মুখশ্রী দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি কেঁদে দিবে দিবে ভাব। রাফি আচমকাই নন্দিতাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে দু হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এভাবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দম বন্ধ হয়ে যাওয়া মতো অবস্থা নন্দিতার আর এর সাথে নন্দিতা কিছুটা শকড হয় রাফির এহেন কান্ডে। নন্দিতা মিহি স্বরে বলে।

“রাফি কি হয়েছে তোমার?”

রাফি ক্ষীণ গলায় বলে, “নন্দিতা আমি খুব খারাপ তাই না, খুব বাজে মানুষটা আমি তাই না। যে সব সময় তোমাকে কষ্ট দেয়, দুঃখ দেয়, আঘাত করে। জানো তোমাকে কষ্ট দিলে তোমার থেকে আমি দ্বিগুন কষ্ট পাই, তোমার চোখের কোণে পানি দেখলে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারি‌ না,, তাই তোমাকে আঘাত দেওয়ার পরেই আমি তোমার থেকে দূরে সরে যাই। কারন তোমার কাছ থাকলে যে নিজেকে শক্ত রাখতে পারি না, তোমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে যে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি নন্দিতা। তোমাকে তো আমি ঘৃনা করতে চাই কিন্তু পারি না বিশ্বাস করো, হয়তো এখনও তোমাকে ভালোবাসি তার জন্য।”

নন্দিতা কিছু বলে না চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে শক্ত হয়ে আর চোখ দিয়ে না চাওয়া সত্বেও পানি পড়ছে। রাফি নন্দিতাকে নিজের বাহুডোর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নন্দিতার মুখটা নিজের দু হাত দিয়ে আবদ্ধ করে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চোখের জলটা মুছে দেওয়ার সময় নন্দিতা আর্তনাত করে উঠে ব্যথায়। কারন গালে যে রাফির দেওয়া পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসে গেছে। রাফি হুট করে নন্দিতার চড় দেওয়া গালে গভীর ভাবে চুমু করে বসে। নন্দিতা কেঁপে উঠে রাফির এহেন কান্ডে, সারা শরীরের‌ লোমকূপ গুলা দাঁড়িয়ে যায়। তল পেট মুচরে উঠে, শিরদাঁড়া বেয়ে অদ্ভুদ‌ এক নাম না জানা শিহরণ বয়ে যায়। রাফি গভীর স্বরে বলে।

“খুব কষ্ট পেয়েছো তাই না এভাবে আঘাত করার জন্য। সরি বিশ্বাস করো রাগ উঠে গিয়েছিলো তখন। তোমাকে অন্য কারোর সাথে দেখলে মাথা ঠিক রাখতে পারি না আমি কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি নিজের। আর কোথায় ব্যথায় দিয়েছি আমি তোমাকে গলায় তাই তো।”

কথাটা বলেই রাফি হুট করে নন্দিতার গলায় মুখ ডুবিয়ে একের পর এক চুমু দিতে থাকে। নন্দিতার দম বন্ধ হয়ে আসছে রাফির এহেন কান্ডে। আর নন্দিতার এটাও বুঝতে বাকি নেই যে রাফি নিজের মাঝে নেই। যদি হুশে থাকতো তাহলে রাফি কোনো দিনও এমন করতো না। তাই নন্দিতা রাফিকে নিজের থেকে সরানোর জন্য বলে।

“রাফি আ… আমি ঠিক আছি আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না‌ বিশ্বাস করো।”

নন্দিতার কথা যেনো রাফির কানে পৌঁছায় নি বরং রাফি নন্দিতার গলায় আরও গভীর ভাবে মুখটা ডুবিয়ে দিয়ে নন্দিতার কোমড় ধরে নিজের আরো কাছে টেনে নিয়ে নেশাক্ত গলায় বলে।

“জানো তোমাকে কতোটা কাছে পেতে ইচ্ছে করে, মন চায় তোমার মাঝে নিজেকে অজীবন ডুবিয়ে রাখি। মন চায় তোমাকে আদরে আদের ভরিয়ে‌ রাখি।”

কথাটা বলে গলা থেকে নিজের মুখটা উঠিয়ে নন্দিতার দিকে মায়াবী চোখে তাকিয়ে থাকে আর ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে আর ছাড়চ্ছে। রাফি প্রত্যেকটা তপ্ত নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে নন্দিতার সারা মুখে। রাফির এই শ্বাস-প্রশ্বাসের মাঝে এক অস্থিরতা কাজ করছে মনে হচ্ছে, যেটা নন্দিতা খুব ভালো করেই বুঝতে পারচ্ছে। রাফি হুট করে ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে নন্দিতার ঠোঁটের আশপাশ স্লাইড করা শুরু করে দেয়। তাতে নন্দিতার তো নাজেহাল অবস্থা, না পারছো সইতে না পারছো দূরে সরে যেতে। রাফি নরম গলায় বলে।

“আচ্ছা নন্দিতা তুমি এতো নরম কেন বলো তো একেবারে তুলার মতো! আচ্ছা তোমার ঠোঁট গুলা এত লাল কেন বলো তো ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলতে।”

এ কথাটা শুনা মাত্রই সারা শরীর কেঁপে উঠে নন্দিতার। রাফি ঠোঁট ফুলিয়ে আবারো বলে।

“আচ্ছা নন্দিতা তুমি এমন কেন?”

নন্দিতা দুর্বল গলায় বলে, “কেমন আমি?”

রাফি কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, “আমাকে একটুও ভালোবাসো না তুমি, কেন ভালোবাসো না? আমি তো তোমাকে খুব ভালোবাসি। তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?

নন্দিতা শুকনো ঢোক গিলে বলে, “রাফি তুমি ঠিক নেই।‌ তুমি শুয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।”

“না আমার উত্তর চাই মানে চাই। সবসময় পালিয়ে যাও কেন বলতো? কই আগে তো পালাতে না? বলো না প্লিজ ভালোবাসা আমাকে।”

নন্দিতা কিছুক্ষণ নিচের ঠোঁট কাঁমড়ে ধরে বলে, ” হুমম বাসি খুব ভালোবাসি।”

রাফি মাথা দুলিয়ে বলে, “সত্যি ভালোবাসো।”

“হুমম”

“মিথ্যা কথা একটুও ভালোবাসো না আমায় ভালোবাসলে তো আমাকে আদর করতে কিন্তু তুমি আমাকে একটুও আদর করো না।”

“তুমি তোমার হুসে নেই তাই এমন বলছো। কিন্তু আমি জানি এগুলা তোমার মনের কথা। কিন্তু…. ”

রাফি টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে বলে, “কে বলেছে আমি হুসে নেই আমি এক দম ঠিক আছি। অল্প একটু মদ খেয়েছে।”

“ঠিক নেই তুমি।”

রাফি নন্দিতার ঠোঁট তর্জনী রেখে বলে, “হুসসসসসস এতো কথা বলো কেন তুমি? ঠিক আছে তোমাকে আদর করতে হবে না আমাকে আমি করি তোমাকে আদর।”

নন্দিতার বুক দুরুদুরু বুক কাঁপছে কিন্তু তারপর নিজেকে সামালে নিয়ে মুদৃ স্বরে চিৎকার করে বলে।

“কি করতে চাইছো কি তুমি রাফি? নিজের হুশে ফিরো।”

রাফি নন্দিতাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই নন্দিতার গোলাপি ওষ্ট জোড়ায় নিজের ওষ্ট ছুঁয়ে দিয়ে নন্দিতার কোমড় আঁকড়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। একে অন্যের ভারি নিঃশ্বাস মিলিত হয়ে যায় মুহূর্তের মাঝে। নাক মুখ কুচকে নেয় নন্দিতা। মদের গন্ধে গা গুলিয়ে আসছে নন্দিতার। নিজেকে রাফির বাহুডোর থেকে ছাড়াতে চাইলেও ছাড়াতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর রাফি নন্দিতাকে নিজে থেকে ছেড়ে দেয় কিন্তু নন্দিতাকে শ্বাস নেওয়ার সময় টুকু না দিয়েই রাফি হুট করেই নন্দিতাকে কোলে তুলে নেয়। নন্দিতা ভয়ে ভয়ে বলে।

“রাফি প্লিজ আমাকে নামাও। এমন কিছু করবে না তুমি।”

রাফি অস্পষ্ট স্বরে বলে, “সব করবো আমি আজকে তোমার সাথে।”

রাফি নন্দিতার কথার কোনো পাত্তা না দিয়ে নন্দিতা কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুয়েই দিয়ে। রাফি নেশায় বিভার হয়ে আছে। রাফি নন্দিতার উপরে নিজের সর্ম্পূন ভার দিয়ে নন্দিতার গলাতে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে। নন্দিতা চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে উঠে।

“এটা ঠিক হচ্ছে না, আমায় রাফিকে আটকাতে হবে। ও না হয় নিজের হুশে নেই কিন্তু আমি তো হুশে আছি। আমি চাই না এভাবে রাফি আমার কাছে আসুক না ওকে আটকাতে হবে।।

নন্দিতা রাফির বাহুতে হাত রেখে রাফিকে সরানোর‌ চেষ্টা করে বলে, “রাফি প্লিজ ছাড়া আমাকে।”

হঠাৎ করেই রাফির শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে, রাফির কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে নন্দিতা বুঝতে পারে ঘুমিয়ে পড়েছে। নন্দিতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে রাফি ঘুমিয়ে যাওয়ায় জন্য। কিন্তু নন্দিতা উঠতে গেলে বাঁধলো এক ভেজাল রাফি এমন ভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যে নন্দিতা বেচারি উঠতে পড়ছে না। হাতির মতো মানুষটা যদি নন্দিতার মতো একটা মশার উপর শুয়ে থাকে তাহলে উঠে বসা একটু কষ্টের বিষয়।

নন্দিতা ভ্রু কুচ করে বলে, “হায় আল্লাহ আমি আজকে মরেই যাবো। ওরে রাফিরে আজকে আমাকে তুমি মেরেই ফেলবে।”

তারপরও নন্দিতা অনেক কষ্টে রাফির শক্তপোক্ত বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে বলে।

“উফফ এখন একটু শান্তি লাগছে। এই বেডায় যদি সবসময় আমার উপরে এসে শুয়েই পড়ে তাহলে আমি আলু ভর্তা হয়ে যাবো নিশ্চিত। কি খায় এই লোক এতো ভারি কেন?”

নন্দিতা জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে রাফির দিকে তাকায়। কেমন নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে, চুল গুলা উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে। নন্দিতা নিজের হাত দিয়ে রাফির চুল গুলা ঠিক করে দেয়। নন্দিতা বসা থেকে উঠে রাফির পায়ের জুতা গুলো খুলে রাফিরে উপরে চাদর দিয়ে চলে আসার সময় রাফির কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে সরল গলায় বলে।

“আমি জানি রাফি তুমি আমাকে এখনও ভালোবাসা শুধু উপরে উপরে রাগ দেখাও কিন্তু মনে মনে আসীম ভালোবাসা আছে আমার জন্য।”

#চলবে______

Revenge of love Part-03

0

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_3

রাফি শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। সারা শরীর বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে আর চোখ বন্ধ করে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছাড়ছে। কিছুক্ষণ শাওয়ারের নিচে থাকার পর রাফি নিষ্প্রভ গলায় বলে।

“কেন কেন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না ওর মায়াবী মুখটা দেখলে। সবসময় চুম্বকের মতো টানে নিজেকে ওর দিকে। পারি না নিজেকে শক্ত করে রাখতে। ওকে দেখলে শরীরের অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায়। ওর ভর্য়াত মুখ, চোখ বন্ধ করে রাখা, কাঁপা কাঁপা গোলাপি ঠোঁট, ভয়ে পিছিয়ে যাওয়া যেটা ওর দিকে আরও আকৃষ্ট করে আমাকে। নিজেকে অনেক কষ্ট কন্ট্রোল করে রাখি কিন্তু আর পারছি না। জানি না কবে নিজের সেলফ কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি আমি। কত কিছু ভেবে রেখেছি কিভাবে ওকে শাস্তি দিবো কিন্তু ও সামনে আসলেই সব ভেনিস হয়ে যায় আমার। না আমাকে নিজেকে আরো শক্ত করতে হবে ওর দেওয়া প্রত্যেকটা কষ্ট আমি ওকে ফিরিয়ে দিবো।”

রাফি রাগের বশে আয়নাতে জোরে ঘুসি মারে আর সাথে সাথে আয়নাটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে নিচে পড়ে যায়। আয়নাতে আঘাত করার কারণে রাফির হাত অনেকটা কে’টে যায় কিন্তু তাতেও রাফির কোনো খেয়াল নেই।

রাফি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে রুমে নন্দিতা নেই। রাফি জোরে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে আগে রুমাল পেঁচিয়ে নেয় কাটা জায়গাটাতে। বিছানার উপরে চোখ পড়তেই দেখে নতুন কাপড় রাখা আর একটা চিরকুট “ভাইয়া তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আয়।”

রাফিও রেডি হয়ে নিচে যায় আর কাজের লোককে বলে যায় ওয়াশরুমটা পরিস্কার করার জন্য। রাফি নিচে নামতে চোখ গুলা বড় বড় হয়ে যায় নন্দিতার পাশে এতো ছেলে দেখে। আসলে সবাই নন্দিতাকে Congratulation জানাতে এসেছে। রাফি আনমনেই বলে উঠে।

“what the hell?”

রাফা ভাইকে দেখে ভাইয়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে নন্দিতার পাশে দাঁড় করায়। নন্দিতা তো নিচের দিকে তাকিয়ে আছো কিছুটা ভয়ে কিছুটা লজ্জায়। কিন্তু রাফি নন্দিতার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

রাফা বলে, “ভাইয়া এত দেরি করলি কেন? কতক্ষন ধরে ওয়েট করছিলাম তোর জন্য। তোর আর ভাবীর ছবি তুলবো বলে।”

নন্দিতার নজর যায় রাফির রুমাল পেঁচানো হাতের দিকে আর মনে মনে বলে।

“ওর হাতে কি হয়েছে একটু আগেই তো ভালো ছিলো, এর মাঝে কি এমন হয়ে গেলো?”

রাফি নন্দিতার পাশে দাঁড়িয়ে সবার সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছে আর নন্দিতা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এর মাঝে রাফা বলে।

“ভাইয়া এবার তোর আর ভাবির ছবি তুলা হবে।”

ছবি তুলা তো হচ্ছে কিন্তু নন্দিতা অনেকটা দূরত্ব রেখেই দাঁড়িয়ে আছে। রাফা ভাই আর ভাবির দূরত্ব দেখে বলে।

“আরে ভাবি তুমি এতো দূরে কেন দাঁড়িয়ে ভাইয়ার কাছে আসো।”

নন্দিতা রাফার কথাটা শুনে ঢোক গিলে। রাফির কাছে যাবে কি‌ যাবে না ভেবে পাচ্ছে না। দুটানায় পড়ে গেছে। এর মাঝে রাফি নিজেই নন্দিতাকে অবাক করে দিয়ে নন্দিতার কোমড় ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। নন্দিতার উনমুক্ত কোমড়ে রাফির শীতল হাত পড়তেই নন্দিতা কেঁপে উঠে।

রিসিপশন পার্টি শেষ হলো। রাফি রুমে বসে আছে। একটু পর নন্দিতা রুমে আসলে রাফির দিকে একবার তাকিয়ে নন্দিতা ওয়াশরুমে চলে যায়। ওয়াশরুমে ঢুকে নন্দিতা বুঝতে পারে রাফির হাতে রুমাল বাধার কারণ? নন্দিতা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে রাফি রুমে নেই।

“কোথায় গেলো ও? ওর হাতটা ড্রেসিং করা দরকার না হলে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।”

নন্দিতা বারান্দায় গিয়ে দেখে রাফি সিগারেট টানছে। নন্দিতা মনের মাঝে সাহস সঞ্জয় করে রাফির পাশে এসে দাঁড়ায়। রাফি নন্দিতার দিকে না তাকিয়েই বলে।

“কি সমস্যা? কি চাই?”

নন্দিতা জড়তা কাটিয়ে বলে, “না মানে আসলে তোমার হাতে কি হয়েছে?”

“আমার হাতে যাই হোক তাতে তোর কি?”

“আমার কিছু হবে না যা হবার তোমারেই হবে, যদি হাতের কিছু হয় তাহলে তোমার হবে আমার কিছু হবে না।”

“তাহলে তো বুঝতেই পারছিস তোর কিছু হবে না,তাই আমাকে একদম দরদ দেখাতে আসবি না।”

নন্দিতা এবার রাগী স্বরে বলে, “একদম চুপ হুম, চলো আমার সাথে বেশি বকবক না করে।”

নন্দিতা রাফির হাত ধরে রুমে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে বলে।

“এখানে চুপচাপ বসো একদম নড়বে না।”

“অর্ডার করছিস আমাকে।”

নন্দিতা জোরালো গলায় বলে, “হে অর্ডার করছি! আমি ফাস্ট এড বক্সটা নিয়ে আসছি হাতটা ভালো করে পরিস্কার করতে হবে।”

“আমারটা আমিই করতে পারবো।”

“চুপ থাকতে বলছিনা তোমাকে।”

নন্দিতা ফাস্ট এড বক্সটা এনে রাফির পাশে বসে রাফির হাতটা পরিস্কার করা শুরু করে। রাফি আর কিছু বলে না চুপচাপ নন্দিতার দিকে তাকিয়ে আছে আর নন্দিতা রাফির কাটা স্থানটা সেবলন দিয়ে খুব যত্ন সহকারে পরিস্কার করতে থাকে। রাফি একটু আর্তনাত করে উঠলে নন্দিতা কাটা স্থানে ফু দেয়। অজান্তেই রাফি বা হাত দিয়ে নন্দিতার মুখের উপরে পড়ে থাকা ছোট চুল গুলো সরিয়ে দেয়। নন্দিতা রাফির দিকে এক বার তাকিয়ে রাফির হাত ব্যান্ডেজ করাতে মনযোগ দেয়।

“হয়ে গেছে।”

নন্দিতা কথাটা বলে রাফির দিকে তাকিয়ে দেখে রাফি ওর দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে আছে। রাফি নরম গলায় বলে উঠে।

“কেন করলে এমন তুমি আমার সাথে নন্দিতা? কি দোষ ছিলো আমার?”

নন্দিতা আমতা আমতা করে বলে, “রাফি আমি আসলে।”

“কোনো উত্তর নেই তাই না তোমার কাছে। আগেও ছিলো না আর এখনও নেই। ঠিক আছে কোনো উত্তর দিতে হবে না।”

রাফি আর কিছু না বলে আবারো বারান্দায় চলে যায় আর নন্দিতা রাফির যাওয়ার পানে তাকিয়ে একট দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে।

_______

সকালে নন্দিতা ঘুম থেকে উঠে দেখে রাফি রুমে নেই। নন্দিতা তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। নিচে গিয়েও দেখে রাফি ছাড়া সবাই ডায়নিং টেবিলে বসে আছে। হেনা বেগম নন্দিতা দেখে বলে।

“নন্দিতা উঠেছো আসো ব্রেকফাস্ট করে নাও।”

নন্দিতা ইতস্তত হয়ে বলে, “মা রাফি।”

“কি জানি কি হয়েছে ওর সকাল সকাল উঠে চলে গেলো, নাস্তা পর্যন্ত করলো না শুধু বললো জরুরি কাজ পড়ে গেছে। কেন ও তোমাকে বলে যাই নি?”

“না মা আসলে তখন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম।”

“আচ্ছা শুনো ওর আসতে আসতে হয়তো বিকাল হয়ে যাবে, তুমি রেডি হয়ে থেকো বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্য। কড়া ভাবে বলে গেছে যদি লেইট হয় তোমার তাহলে নাকি ও যাবে না। ওকে নিয়ে আর পারি না জেদটা গেলো না এখনো, তুমি আসো নাস্তা করে নাও।”

বিকাল হবার আগেই রাফি বাড়িতে চলে আসে। আর এসেই ফ্রেশ হয়ে তৈরি হতে থাকে। কালো প্যান্ট, কালো শার্ট, ছোট ছোট চুল গুলা কপালে এসে পড়ে আছে দেখতে একদম চকলেট বয় লাগছে নন্দিতার কাছে। নন্দিতা রাফির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রাফির‌ এতো তাড়াতাড়ি চলে আসার কারণে। নন্দিতার এমন তাকানো দেখে রাফি বলে।

“কি হলো এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কি, বাপের বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি নেই।”

“না না যাওয়ার ইচ্ছে আছে।”

“দশ মিনিট সময় দিলাম এর মাঝে নিচে দেখতে চাই, এগারো মিনিট হলেই আমি যাবো না।”

রাফি কথাটা বলেই হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বেরিয়ে যায়। রাফি চোখের আড়াল হতেই‌ নন্দিতা রাগী গলায় বলে।

“কি লোক রে বাবা একে বারে দ জ্জা ল।”

নন্দিতাও রাফির কথামতো দশ মিনিটে রেডি হয়ে নিচে নামে। রাফি গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে। কিছু একটা ভেবে সামনের দিকে তাকাতেই চোখ আটকে যায়। নন্দিতা জানদানির মাঝে একটা কালো শাড়ি পড়েছো, দু হাতে চার পাঁচটা কালো চুরি, চুল গুলা এক সাইডে এনে রেখেছো, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। অল্প সাজেই নন্দিতাকে দেখে মাশআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। রাফির ওয়ার্নিং শুনে নন্দিতা কোনোমতে রেডি হয়েছ, মেকাপ করা তো দুরের কথা। তাই নারমাল ভাবেই সেজেছে নন্দিতা। কিন্তু তারপর রাফির চোখে নন্দিতাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। রাফিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নন্দিতা বলে।

“কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি?”

রাফির ধ্যান ভাঙ্গে আর চারাপাশটা নজর বুলিয়ে ক্ষীণ গলায় বলে, “হুম”

_______

রাফি ড্রাইভ করছে আর নন্দিতা রাফির পাশে বসে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। হঠাৎ করেই রাফি গাড়ি ব্রেক করে রাশভারি গলায় বলে।

“গাড়ি থেকে নাম এক্ষুনি।”

নন্দিতা হতভম্ব হয়ে বলে, “মানে।”

“বলছি গাড়ি থেকে নামার জন্য কথা কানে যায় না।”

নন্দিতা রাফির দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটু আগে রাফির বলা কথাটা এখনও কানে প্রতিধ্বনি হচ্ছে। নন্দিতা বুঝতে পারছে না তার সামনে বসা লোকের মাথায় হঠাৎ করে কি চেপে বসে এই ভালো তো এই খারাপ। রাফি আবারো ঝাঁঝালো গলায় বলে।

“কি এভাবে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেন? গাড়ি থেকে নামতে বলছি তো আমি তোকে।”

“কি বলছো কি রাফি, আমি গাড়ি থেকে কেন নামবো?”

“Because আমি বলছি তাই নামবি।”

“রাফি আমি এখানকার কিছু চিনি না আর আমার কাছে টাকাও নেই যে গাড়ি করে যেতে পারবো।”

“টাকা নেই তো কি হইছে দুটো পা আছে তো তোর,, হেঁটে হেঁটে যাবি তুই।”

“এমন কেন করছো তুমি রাফি আমার সাথে? একটু আগে তো সব কিছু ঠিক ছিলো।

রাফি বিদ্রুপ করে বলে, “ঠিক ছিলো, কি ঠিক ছিলো? কিচ্ছু ঠিক ছিলো না আর কোন দিন ঠিক হবেও না, তাই জলদি গাড়ি থেকে নাম।”

“রাফি আমার কথাটা একটু শুনো, আমরা যদি আলাদা আলাদা যাই তাহলে বাবা মা খুব কষ্ট পাবেন।”

“তুই গাড়ি থেকে নামবি না তাই তো, ঠিক আছে আমিই তোকে নামতে সাহায্য করছি।”

“রাফি প্লিজ আমার কথাটা একটু শুনো প্লিজ রাফি।”

অন্য দিকে রাফি গাড়ি থেকে নেমে নন্দিতার সাইডের দরজাটা খুলে নন্দিতাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ির দরজা লক করে দেয়।

“প্লিজ রাফি আমাকে এভাবে ফেলে রেখে যেও না প্লিজ, আমি এখানকার কিচ্ছু চিনি না।”

রাফি নন্দিতার কোনো কথা না শুনে গাড়িতে উঠে গাড়ি ড্রাইভ করে চলে যায়। নন্দিতা গাড়ির পেছনে দৌঁড় দেয় আর দৌঁড় দেওয়ার সময় নন্দিতা হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় আর রাফির গাড়িটাও মুহূর্তের মাঝে হারিয়ে যায়। নন্দিতা রাস্তার মাঝে বসেই কান্না শুরু করে দেয় আর বলতে থাকে।

“প্লিজ রাফি আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ। ফিরে আসো রাফি প্লিজ ফিরে আসো।”

রাফি অনেকটা রাস্তা চলে আসতেই গাড়ি জোরে ব্রেক করে, মাথাটা সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে। কিছুক্ষন পরে রাফি রাগে স্টিয়ারিং এ জোরে আঘাত করে বলে।

“কেন এত কষ্ট হয় আমার ওকে কষ্ট দিলে কেন? আমি চাই ও কষ্ট পাক কিন্তু ওকে কষ্ট দিতে গিয়ে যে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। নাহ এভাবে ওকে ফেলা রেখে আসা উচিত হয় নি আমার। ওর যদি কিছু হয়ে যায় আবার, না না আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে ওর কাছে। কষ্ট দিলেও ওকে ঘরের ভেতরে দিবো বাইরে না।”

রাফি গাড়ি ঘুরিয়ে নেয় নন্দিতার কাছে আসার জন্য। কিন্তু নন্দিতার কাছে এসে যা দেখে তাতে রাফির মাথা‌টা গরম হয়ে যায়, রাগে স্টিয়ারিং দু হাত দিয়ে জোরে চেপে ধরে। চোয়াল শক্ত করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।

#চলবে______

Revenge of love Part-02

0

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_2

রাফি খাবার টেবিলে বসে নাস্তা করা শুরু করে দিয়েছে। এমন সময় হেনা বেগম রাফিকে উদ্দেশ্য করে বলেন।

“তুই কি অফিসে যাবি নাকি আজকে।”

রাফি খেতে খেতে বলে, “হুম।”

“মানে আজকে তুই অফিসে! আজকে বাড়িতে একটা অনুষ্টান আছে আর তুই… ”

হেনা বেগমকে কিছু বলতে না দিয়ে রাফি বলে উঠে,

“প্লিজ মা বিয়ে করতে বলেছো বিয়ে করেছি এখন আর প্যারা দিও না।”

“কিসের প্যারা আজকে তোর বউ ভাত আর তুই অফিসে যাবি।”

“আমার Important একটা মিটিং আছে।”

“ঠিক আছে তোর মিটিং ফিটিং তাড়াতাড়ি শেষ করে বাড়ি আসবি।”

নন্দিতা কিছুক্ষন পরে আসে। নন্দিতাকে দেখে হেনা বেগম বলেন।

“কি রে মা তোর মুখটা এমন দেখাছে কেন?”

রাফি নন্দিতার দিকে তাকায় নন্দিতাও রাফির দিকে এক নজর তাকিয়ে শাশুড়ি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে।

‘কিছু হয় নি মা।”

“বুঝতে পারছি মা বাবার জন্য মন খারাপ লাগছে তাই তো, মন খারাপ করার কিছু হয় নি কালকে তো যাবি এবার আয় নাস্তা কর এসে।”

নন্দিরা রাফির সামনা সামনি বসে। কিন্তু রাফি নন্দিতার দিকে না তাকিয়ে নাস্তা করে যাচ্ছে। কিন্তু নন্দিতা রফির দিকে এক নজরে তাকিয় আছে। টেবিলের ওপরে তোমার রাখা হাতের লাল জায়গাটা দেখে হেনা বেগম বলে বলে উঠেন।

“একি তোর এমন লাল হয়ে আছে কেন? একটু আগেই তো দেখলাম ভালো তাহলে এটা কি করে হলো।”

নন্দিতা কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না একবার রাফির দিকে তো আরেক‌বার শাশুড়ি মার দিকে তাকায়।

“মা আসলে মানে…. ”

রাফি নন্দিতাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই বলা শুরু করে।

“মা আসলে হয়েছে কি জানো তোমার ছেলের বউটা একটু কেয়ারলেস বুঝলে,, তাই তো আমাকে চা দেওয়ার সময় ওর হাতে চা পড়ে গেছে অসাবধানতায়।”

হেনা বেগম আতকে উঠে বলেন, “কি বলছিস কি? নন্দিতা একটু সাবধানে কাজ করবে তো মলম লাগিয়েছো তো।”.

“না মা আসলে… ”

পুনরায় রাফি নন্দিতার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে।

“একি তুমি মলম লাগাও নি এখনও কত করে বললাম মলম টা লাগিয়ে নিচে আসো কিন্তু কে শুনে কার কথা। ঠিক আছে চলো আমি মলম লাগিয়ে দিছি।”

রাফি চেয়ার থেকে উঠে নন্দিতার হাত ধরে নন্দিতাকে উপরে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাটা ধরে। আর নন্দিয়া তো রাফির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাফির এই অন্য রকম রুপ দেখে।

রাফি নন্দিতাকে উপরে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে রাফির হাতের বাধন শক্ত হয়ে পড়ে। নন্দিতা ব্যথা কুঁকড়ে উঠে একে তো হাতে গরম চা পড়ার জন্য লাল হয়ে গেছে আর এক রাফি খুব শক্ত করে ধরেছে যার কারণে হাতের যন্ত্রণাটা দ্বিগুন হয়ে গেছে।

“রাফি আমার খুব লাগছে হাতে প্লিজ ছাড়ো।”

রাফি নন্দিতাকে রুমে এনে বিছানায় ছুড়ে ফেলে যার কারনে নন্দিতা কোমড়ে ব্যথা পায়, নন্দিতা ব্যথার উপর ব্যথা পেয়েই যাচ্ছে। রাফি দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে নন্দিতাকে বিছানা থেকে টেনে তুলে নন্দিতার দু বাহু চেপে ধরে রাগি কন্ঠে বলে ওঠে ।

“তোকে আমি কি বলেছিলাম, কি বলেছিলাম তোকে আমি মা বাবার সামনে মুখটা এমন বাংলার প্যাচের মতো করে রাখবি না কথা কান যায় না তোর।”

“আহ! রাফি লাগছে আমার প্লিজ ছাড়ো।”

“আমারো লেগেছে বুকে সেই পাঁচ বছর ধরে, যার ব্যথা এখনও কমে নি, তোর শরীরের ব্যথা তো কমে যাবে কিন্তু আমার বুকের ব্যথা কমবে কি করে? তোকে আমি আজকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিছি বাবা মার সামনে,,, না শুধু বাবার মার সামনে না সবার সামনে হাসি খুশি থাকবি বুঝতে পেরেছিস, নাকি এখনও বুঝতে পারচ্ছিস না আমার কথা।”

নন্দিতা ব্যথায় জর্জরিত হয়ে বলে, ” হু,,, ম,, বু,,, ঝতে পেরেছি।”

নন্দিতার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে তা দেখেও রাফির একটু মায়াও হচ্ছে না বরং চোখ গরম করে নন্দিতাকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে নিজের কোর্টটা হাত নিয়ে দরজা খুলে ঘর থেকে বের হয়ে যায় আর তুমি ফ্লোরে বসে জোরে জোরে কান্না শুরু করে দাও। রাফি বের হওয়ার সাথে সাথে রাফার সাথে দেখা হয়। রাফা রাফির ছোট বোন। রাফা গলার স্বর নিচু রেখে বলে।

“ভাইয়া কি হয়েছে?”

রাফি বোনের সাথে কোনো কথা না বলে চলে গেলো। রাফা মনে মনে বলে।

“কি হলো ব্যাপারটা।”

রাফা ভাইয়ের‌ ঘরের সামনে এসে দরজায় শব্দ করে বলে।

“ভাবি আসবো?”

নন্দিতা রাফার গলা শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি লরে ফ্লোর থেকে উঠে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে।

“হে রাফা এসো।”

রাফা ঘরে ঢুকে বলে, “কি হয়েছে ভাবি ভাইয়া এভাবে চলে গেলো কেন?”

“কিছু হয় নি রাফা।”

“তাহলে তোমার চোখের কোণে পানি কেন?”

নন্দিতা চোখের পানি মুছে বলে, “ও কিছু না আসলে বাবা মার জন্য মন খারাপ করছিলো।”

রাফা আর এই বিষয়ে কিছু বলে না। ভাই আর ভাবির ব্যক্তিগত বিষয়ে কিছু না বলাটাই ভালো। তাই অন্য বিষয়ে বলে।

“ও আচ্ছা কালকে তো যাবেই ও বাড়িতে, আচ্ছা মার কাছে শুনলাম তোমার হাতে নাকি গরম চা পড়েছে আসো মলম টা লাগিয়ে দেই আমি নাকি ভাইয়া লাগিয়ে দিয়ে গেছে।”

“না আসলে ওনার ইম্পর্টেন্ট একটা ফোন আসার সাথে সাথে চলে গেছে তাই আর লাগতে পারে নি মলমটা”

নন্দিতার হাতে রাফা মলম লাগিয়ে দিছে আর বলছে।

“জানো ভাবি আমার ভাইয়াটা এমন উগ্র মেজাজের কোনো দিনও ছিলো না। সবসময় হাসি খুশি, ঠাট্টা মজা করতো সবার সাথে। কিন্তু হঠাৎ করেই আমার ভাইটা চেইন্জ হয়ে গেলো নিজেকে পর্যন্ত ঘর বন্ধি করে ফেলছে। সবসময় আমাদের থেকে দুরে দুরে থাকতো কথা বলতে গেলেই জোর চিৎকার করে বলতো Don’t disturb me আর মাঝে মাঝে চাপা কান্নার শব্দ শুনা যেতে ভাইয়ার রুম থেকে। শুধু এটা বুঝতে পারতাম না ভাইয়া এমন কেন করছে? কিছু বললইে রাগে চিৎকার করত, তখন আমরাও আর ভাইয়ার সামনে ভয়ে যেতাম না। মা ভাইয়াকে খুব কষ্ট করে স্বাভাবিক লাইফে ফিরায় বলতে গেলে মায়ের কসম দিয়েই স্বাভাবিক লাইফে ফিরায় ভাইয়াকে। তারপর মা ভাবে তিন চার বছর পর ভাইয়ার বিয়ে দিবে এরপর তোমার সাথে বিয়ে হলো। কিন্তু মেজাজ আর পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না আজ যা দেখে বুঝলাম। তুমি প্লিজ ভাইয়াকে একটু দেখো হুম ও এমন না ও খুব নরম মনের মানুষ। বাহিরটা শামুকের খোলসের মতো শক্ত হলেও ভেতর নরম। আচ্ছা যাই হোক তোমার নাস্তাটা আমি এখানে পাঠিয়ে দেই নাস্তা করে রেস্ট নাও সন্ধ্যার দিকে রিসেপশন আছে তো অনেক দখল যাবে তোমার উপর‌ দিয়ে।”

নন্দিতা রাফার কথা শুনে মনে মনে ভাবে, “আমি জানি তোমার ভাই কেন এমন করে? সব দোষ যে আমার।”

কথাটা ভাবতেই নন্দিতার চোখ থেকে দু ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। বিকালের পার্লার থেকে আসা লোকেরা নন্দিতাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। কিন্তু নন্দিতার মন যে হাঁসফাঁস করছে রাফির জন্য। সকাল থেকে এখনও রাফির দেখা নেই। হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে নন্দিতা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় আর দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে রাফি দাঁড়িয়ে আছে হাতে কোর্টটা নিয়ে আর নন্দিতার দিকে কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে। রাফির হঠাৎ করেই কি যেন হয়ে গেলো নিজের হুসে ঠিক নেই, হাতের কোর্টটা সোফায় ছুড়ে ফেলে নন্দিতার দিকে এগিয়ে আসে নন্দিতা তো ভয়ে এক পা এক পা করে পিছিয়ে যায়। পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে আটকে যায়। রাফি নন্দিতার অনকেটা কাছে এসে দাঁড়ায় । রাফি নিজের ডান হাতের বৃদ্ধা‌ আঙ্গুল দিয়ে‌ নন্দিতার বা গালে মাঝখানের তিলটায় র্স্পশ করে। নন্দিতা তো চোখ মুখ খিচে রেখেছো দম বন্ধ হয়ে আসছে কেন জানি, সারা শরীর মৃদু কাঁপছে। রাফির গরম নিঃশ্বাস নন্দিতার সারা মুখে আছড়ে পড়ছে । রাফি নন্দিতার মুখটা দু হাত দিয়ে আবদ্ধ করে নন্দিতার নিচু মুখটা উপরে দিকে তুলে এক নজরে রাফি নন্দিতার মায়া ভরা চেহারাতে তাকিয়ে থাকে। রাফি নন্দিতার ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট নিতে নিবে ঠিক সেই সময় রাফা ডাক দেয়। রাফি সাথে সাথে নিজের হুসে ফিরে আসে আর নন্দিতাকে ছেড়ে দিয়ে সাথে সাথে ওয়াশরুমে চলে যায় । আর নন্দিতা জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ে।

#চলবে…….

Revenge of love Part-01

0

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#part_1

আজ নন্দিতা আর রাফির জীবনে বিশেষ একটা রাত। প্রত্যেকটা মেয়েরেই এই রাতটা নিয়ে হাজারটা স্বপ্ন থাকে। নন্দিতারও আছে কিন্তু নন্দিতা জানে এই রাতটা তার জন্য সুখের নয় বরং তার জন্য এই রাতটা অপমানে রাত, কষ্টের রাত। কারন রাফি যে তাকে খুব ঘৃণা করে। এই ঘৃনা জমে আছে পাঁচ বছর ধরে। রাফি তার বাবা মার চাপে পড়েই নন্দিতাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে। রাফির মা বাবা আর নন্দিতার বাবা মা কেউ জানে না ওরা দুজনে একে ওপরকে আগে থেকেই চিনে। রাফি রুমে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে নন্দিতার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে।

“বেড থেকে নাম”

নন্দিতা রাফির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। নন্দিতার চাওনি দেখে রাফি উচ্চস্বরে বলে উঠে।

“কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? তোকে আমি বেড থেকে নামতে বলেছি কানে কথা ঢুকে না তোর।”

নন্দিতা তাড়াতাড়ি বেড থেকে নেমে ঘরের এক কোণায় এসে দাঁড়ায়। রাফি বেডে এসে বসে কন্ঠে তেজ এনে বলে।

“আমার বেডে তোর মতো মেয়ের কোনো জায়গা নেই বুঝলি। এর পর যেন আমি তোকে আমার বেডে না দেখি বুঝতে পেরেছিস আর তোকে বিয়ে করেছি বলে মনে করিস না তোকে আমি আমার স্ত্রীর অধিকার দিবো সেই অধিকার তুই অনেক আগে হারিয়ে ফেলেছিস।”

নন্দিতা এতোক্ষণ চুপ করে থাকলে আর চুপ থাকতে পারলো না।
অস্পষ্ট স্বরে বলে।

“তাহলে আমাকে বিয়ে করলে কেন?”

নন্দিতার কথাটা বলতে দেরি হলো কিন্তু রাফির বেড থেকে উঠতে দেরি হলো। উঠে দ্রুত কদমে নন্দিতার কাছে এসে তার দু বাহু ধরে দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে বলে।

“তোকে বিয়ে করেছি দুইটা কারনে এক বাবা মা জোর
করেছে বলে, দুই তোর থেকে প্রতিশোধ নেওয়া জন্য,তা না হলে তোর মতো থার্ড ক্লাস মেয়েকে এই রাফি তাজওয়ার বিয়ে করবে ভাবলি কি করে।”

নন্দিতা বলে, “শুধু মাত্র প্রতি’শোধ নেওয়ার জন্যই আমাকে তুমি বিয়ে করেছো।”

“হুম প্রতি’শোধ নেওয়ার জন্য,, তুই কি ভেবেছিস তোকে আদর করার জন্য আমি বিয়ে করছি। আজ থেকে তোর লাইফ আমি হেল করে দিবো হেল, আমার লাইফটা যেভাবে পাঁচ বছর আগে হেল করেছিলি ঠিক সেই ভাবে। না ভুল বললাম সেই ভাবে না আরও ভ’য়ংক’র ভাবে তোর লাইফটা আমি হেল করবো বুঝতে পেরেছিস।”

কথাাটা বলেই রাফি নন্দিতাকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। এভাবে নন্দিতাকে ফ্লোরে ফেলে দেওয়াতে অনেকটা ব্যথা পায়। হাতে কাচের চুড়ি থাকার কারনে অনেকটা জায়গা কেটে যায়। তাই নন্দিতা একটু শব্দ করেই কেঁদে ফেলে। নন্দিতার কান্না দেখে রাফি বলে।

“একদম ন্যাকামো করবি না আমার সামনে হুম, তোর এই ন্যাকামো দেখে আগের রাফি ভুলে যেতো কিন্তু এখনের রাফি এত সহজে ভুলবে না। তাই তোর এই ন্যাকামো আমাকে না দেখিয়ে তোর প্রান প্রিয় আশিককে দেখবি। ও হে,, আচ্ছা তোর ওই আশিকের খবর কি যার জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গেছিলি নাকি ওই আশিকেও আর এক আশিকের জন্য ছেড়ে দিয়েছিস। আচ্ছা তোর লাইফে কয়টা আশিক ছিলো বলবি আমাকে একটু।”

“এসব কি বলছো তুমি রাফি আর তুমি আমাকে তুই তুকারি করচ্ছো কেন?”

রাফি এবার তোমার সামনে হাটু ঘেড়ে বসে রেগে তোমার মুখ চেপে ধরে বলে।

“তাহলে তোর সাথে কিভাবে কথা বলবো আমি আপনি করে তোকে বলতে হবে এখন আমাকে। শুন আমার সাথে তোকে এভাবেই থাকতে হবে সারাজীবন। তোর লাইফে সুখ বলতে কিচ্ছু থাকবে না থাকবে শুধু যন্ত্রনা আর অপমান। এখন থেকেই অভ্যাস করে নে। আমি এতো বছর যে যন্ত্রনায় ভুগেছি সেই যন্ত্রণা তোকেও ভুগতে হবে। ভুলেই তো গিয়েছিলাম তোকে তাহলে ফিরে আসলি কেন আবার আমার জীবনে। যখন এসেই পরেছিস তার ফল তোকে তো ভোগতেই হবে।”

রাফি নন্দিতাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “শুন আমার বাবা- মার সামনে স্বাভাবিক থাকবি ওনারা যাতে বুঝতে না পারে আমার আর তোর সর্ম্পকটা কেমন? বাইরের জগতে আমার একটা সুখী দম্পতি। কিন্তু ভেতরের জগত শুধু যন্ত্রনা যে যন্ত্রনা তুই ভোগ করবি।”

কথাটা বলে রাফি বেলকনিতে চলে যায়। পকেট থেকে সিগারেট বের করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে ঠোঁটের কোণে সিগারেট রেখে নিকোটিনের ধোঁয়াটা আকাশের দিকে ছেড়ে দিছে। রাফি যে ভেতরে ভেতরে পুড়ে যাচ্ছে নন্দিতার কষ্ট দেখে। যে রাফির কষ্ট বেশি হত নন্দিতার কষ্ট দেখে। আজ সেই রাফি নন্দিতাকে নিজ হাতে কষ্ট দিছে, ভ্যাগের কি পরিহাস তাই না। রাফি আধ ঘন্টা পর বেলকনি থেকে রুমে আসে। রুমে এসে দেখে নন্দিতা ফ্লোরে বসে দেয়ালের সাথে মাথাটা হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। নন্দিতাকে এভাবে দেখে রাফির বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠে। রাফি ধীর পায়ে নন্দিতার কাছে গিয়ে বসে। নন্দিতার চোখের কোণে পানি জমে আছে কান্না করার কারনে। রাফি নন্দিতার চোখের পানি মুছে দেয় নিজের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে। রাফি ঠোঁট দুটো চেপে ধরে মনে মনে বলে।

“পাঁচ বছর আগে যদি তুমি এমনটা না করতে তাহলে হয়তো আমাদের এই বিশেষটা রাতটা এমন হতো না মধুর একটা রাত হতো। কিন্তু তুমি সবটা শেষ করে দিল, সাথে আমার লাইফটাও । কেন করলে এমনটা তুমি কি দোষ ছিলো আমার? আমার ভালোবাসার কি কমতি ছিলো। আমার ভালোবাসাকে তুমি অমর্যাদা করেছো নন্দিতা এর শা’স্তি তো তোমাকে প্রতি পথে পথে পেতে হবে। আমি তোমাকে এর জন্য কোনো দিন ক্ষমা করবো না কোনো দিন না।”

রাফি রাগে উঠে চলে যায় আর বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ে। রাফি চলে যাওয়ার সাথে সাথে নন্দিতা চোখ মেলে তাকায়। নন্দিতা এতোক্ষণ জেগে ছিলে। নন্দিতা মনে মনে ভাবে।

“আমি জানি রাফি তুমি এখনও আমাকে ভালোবাসো কিন্তু আমার করা কাজটার জন্য তুমি আমার উপর প্রচন্ড রে’গে আছো, রেগে আছো বললে ভুল হবে প্রচন্ড ঘৃণা করো তুমি আমাকে কিন্তু তখন যে আমি নিরুপায় ছিলাম। এই কাজটা না করলে যে অনেক বড় কিছু হারিয়ে ফেলতাম। কিন্তু যে এই কাজটা করতে আমাকে বাধ্য করেছে সে কোথায় সে তো বলেছো তোমাকে সুখে রাখবে,, তোমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসবে কিন্তু সে এখন কোথায়?”

নন্দিতা এসব ভাবতে ভাবতে ভোর রাতে চোখটা লেগে যায়।

সকালে রাফি ঘুম থেকে উঠে দেখে নন্দিতা রুমে নেই। রাফি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। কিছু ক্ষন পর রাফি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে রেডি হতে থাকে অফিসে যাওয়ার জন্য। ঠিক সেই সময় নন্দিতাও রুমে আসে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে। রাফি নন্দিতাকে দেখে তো বড়সর একটা ক্রাশ খেয়ে বসে। ক্রাশ খাওয়ার কারনটা হলো নন্দিতার সাজ। নন্দিতা একটা লাল জামদানি শাড়ি পড়েছো মুখে তেমন সাজ নেই বলেই চলে, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, নাকে নাক ফুল থাকার কারনে নন্দিতার দিকে একটু বেশিই আর্কষণ অনুভব করছে রাফি। চুল গুলা ভেজা থাকার কারনেও নন্দিতাকে আরও বেশি সিন্ধ লাগছে। রাফির এভাবে তাকানো দেখে নন্দিতা হালকা লজ্জা পায়। রাফি নন্দিতার দিক থেকে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নেয়। নন্দিতাও নিজেকে আবার স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে।

“তোমার চা রাফি!!”

“এতক্ষনে চা নিয়ে আসার সময় হলো।”

“না আসলে আমি অনেক আগেই চা নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু তখন তুমি‌ ওয়াশরুমে ছিলে।”

“খুব ভালো এবার চা টা দিন।”

বিদ্রুপের স্বরে কথাটা বলে রাফি নন্দিতার হাত থেকে চা নিয়ে চুমুক দেওয়ার সাথে সাথে ভ্রু কুচকে নেয়। নন্দিতা তা দেখে বলে।

“কি হয়েছে?”

“এতো ঠান্ডা কেন চা?”

“কিন্তু আমি তো মাত্র….”

নন্দিতাকে আর কিচ্ছু বলতে না দিয়ে রাফি আচমকা নন্দিতার মুখে চা টা ছুড়ে মারে কিন্তু ভাগ্যক্রমে নন্দিতা নিজের ডান হাতটা দিয়ে মুখটা আড়াল করে ফেলে যার কারনে মুখে চা না পড়ে হাত পড়ে যায় চা টা। রাফি তেজ নিয়ে বলে।

“এটা কি চা এনেছিস নাকি শরবত এনেছিস এতো ঠান্ডা কেন? কোনো কাজেই ঠিক মতো করতে পারিস না তুই Useless একটা।”

বলেই রাফি হন হন করে ঘর থেকে বের হয়ে যায় রাগে। নন্দিতার তো বুক ফেটে কান্না আসছে একে তো হাতে গরম চা পড়েছে তার জন্য হাত জ্বলে যাচ্ছে আর এক রাফির কটু কথা। চা টা প্রচন্ড গরম ছিলো কিন্তু তারপরও রাঈি চা টা ঠান্ডা বলে নন্দিতার গায়ে ঢেলে দেয় ইচ্ছে করে নন্দিতাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সেটা নন্দিতা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। না চাইতেই চোখ দুটো নোনা জলে ভরে যায়। হঠাৎ করে রাফির মা হেনা বেগম নন্দিতাকে ডাক দেয়। নন্দিতা তাড়াতাড়ি করে চোখ মুছে জোরে একটা শ্বাস ছেড়ে নিচে চলে যায়।

চলবে।

মন গহীনের শব্দ পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

0

মন গহীনের শব্দ
| ১২ | (শেষ)
খুব সুন্দর একটা সাজানো গোছানো সংসার হতে পারত আমাদের। অথচ কোথা থেকে কী হয়ে গেল। ও বাড়ি থেকে বেড়িয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েই হেঁচকি তুলে কেঁদে উঠলাম আমি।

পরিচত কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম হঠাৎ, “এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদলে লোকজন তাকিয়ে দেখবে আর মজা নেবে। তারচেয়ে বরং গাড়ির মধ্যে চলো। তারপর যত খুশি কান্না কোরো। প্রয়োজনে আমার বুক পেতে দেব মুখ লুকিয়ে কাঁদার জন্য। এখন চোখেমুখে একটু পানি দাও, বিধ্বস্ত লাগছে তোমাকে।”
আলতাফ একটা পানির বোতল আমার দিকে এগিয়ে দিল।

ধ্যাত, এই লোকটাকে লুকিয়ে কিছুই করা যায় না। ঠিক ফলো করে চলে এসেছে। আমি বললাম, “তোমার জন্য কোথাও গিয়ে শান্তি নেই।”
সে হেসে বলল, “ইচ্ছে করেই অশান্তি বেছে নিয়েছ, এখন তো আর আমার কিছু করার নেই। আজীবনই এই অশান্তি ভোগ করতে হবে।”
আমি চোখ গরম করে তার দিকে তাকিয়ে থেকে গাড়িতে উঠে বসলাম। বাসার সামনে নামিয়ে দিয়েই চলে গেল সে।

বাসায় ফিরেও কেমন একটা ভোতা অনুভূতি আর বিষাদে মন ছেয়ে রইল আমার। তবুও সবার সামনে স্বাভাবিক থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করলাম। মধ্যরাতে হঠাৎ কোনো কারন ছাড়াই ঘুম ভেঙ্গে গেল। হঠাৎ এরকম অস্থির কেন লাগছে, বুঝতে পারলাম না। অনেকক্ষন হাসফাস করে আবার কখন জানি ঘুমিয়ে পড়লাম।

মোবাইলে কলটা এলো পরেরদিন খুব সকালে। ফজরের নামাজ আদায় করে ব্যালকনিতে বসেছি কেবল। কলটা করেছেন রাহেলা খালা। আমি ফোন রিসিভ করে চুপ করে থাকলাম। তিনি বললেন, “গতকাল তুমি বলে গিয়েছিলে, আর যেন কখনও তোমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা না করা হয়। আজকের পর থেকে সত্যিই তার আর প্রয়োজন পড়বে না। তোমার মা গতকাল রাতে ঘুমের মধ্যেই মারা গেছেন। আর কখনও কেউ আমাকে বলবে না, আমার তুলন মারে নিয়ে আয় রাহেলা, আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে ওরে।
আমারও তোমার কাছে আর ছুটে যেতে হবে না বারবার”
রাহেলা খালা কাঁদতে কাঁদতে লাইন কেটে দিলেন। আমিও কাঁদলাম। সজ্ঞানে যেই মায়ের একটুখানি আদরও পাইনি কখনও, তার জন্য এত কষ্ট কেন হচ্ছে? না, নিজেকে সামলাতে হবে। বাসার কাউকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না।

সকালে নাস্তার টেবিলে বসে সুলেখা আন্টিকে জিজ্ঞাসা করলাম, “বাবা কোথায়? ব্রেকফাস্ট করতে আসেনি কেন এখনও?”
“কী যে হয়েছে সেটাই তো বুঝতে পারছি না। কাল রাতেও ঠিকভাবে ঘুমায়নি। বারবার বলছিল অস্থির লাগছে। আমি তো শেষে তোমাদেরও ডাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তোমার বাবাই বারণ করলেন। রাতে ঘুম হয়নি বলে এখন ঘুমাচ্ছেন।”
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আমার মতো বাবাও অস্থিরতায় ভুগেছে। এটা কি শুধুই কাকতালীয় নাকি অদৃশ্য কোনো টান। নাস্তা করে বাবার রুমে গেলাম। বাবা দাঁড়িয়ে আছে ব্যালকনিতে। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, “কী করছ বাবা?”
“আরে আম্মা, আসো এদিকে। মাত্রই ঘুম ভেঙ্গেছে তাই এখানে এসে একটু দাঁড়ালাম।”
আমি বাগানের দিকে তাকিয়ে বললাম, “কৃষ্ণচূড়া গাছটা খুব সুন্দর লাগছে আজ দেখতে। একেবারে ফুলে ফুলে ভরে আছে। তাই না বাবা?”

“হ্যাঁ। তোমার মায়ের খুব সখ ছিল, বাগানের ওই কোনায় একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ থাকবে। মাঝে মাঝে ওখানে গিয়ে সময় কাটাবে সে। তোমার মা আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার পরেই গাছটা লাগিয়েছিলাম আমি। ভাবলাম, সে আমার পাশে না থাকলেও কিছু একটা অন্তত থাক যেটা আমাকে তার কথা মনে করিয়ে দেবে।”

আমার দুচোখ আবার ঝাপসা হয়ে আসছে। বাবা তাকিয়ে আছে গাছটির দিকে। নিশব্দে পিছন থেকে চলে এলাম আমি। একান্তই নিজের কান্নাগুলো কাউকে আমি দেখাতে চাই না।

দিন চলে যায়। কালেন্ডারের তারিখ বদলায়। মায়ের মারা যাওয়ার একমাস কেটে গেছে। আমাদের বাড়ি এখন আত্মীয়স্বজনে গিজগিজ করছে। এর অবশ্য বিশেষ একটি কারনও রয়েছে। আর ঠিক একসপ্তাহ পরেই আমার আর আলতাফের রিসেপশন। বাবা এলাহী আয়োজন করছে। শহরের সব গণ্যমান্য ব্যক্তিকে দাওয়াত করা হয়েছে। দেখতে দেখতে সেই বিশেষ দিনটিও এসে গেল। অফিশ্যালি আমি পা রাখলাম নতুন জীবনে এবং নতুন বাড়িতে। আলতাফদের বাড়িতেও প্রচুর আত্মীয়স্বজন আজ। সবাই এসে দেখা করে যাচ্ছে আমার সাথে। প্রচন্ড ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও হাসিমুখে সবার সাথেই কথা বলতে হচ্ছে। রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে যখন আমাকে রুমে দেওয়া হলো তখন রাত প্রায় একটা। বিছানায় শোয়ার সাথে সাথেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম আমি। আধো ঘুমেই টের পেলাম একজোড়া শক্ত হাত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিচ্ছে আমাকে। আমি বিচলিত হলাম না। কারন এই হাতের স্পর্শ আমার খুব পরিচিত।

চলে গেল আরও কয়েক মাস। এরমধ্যে ঘটে গেছে আরও অনেক কিছুই। আলতাফের ফুপু হঠাৎ করেই স্ট্রোক করলেন। হসপিটালাইজড করা হলো সাথে সাথেই। দুইদিন আইসিইউতে থেকে মারা গেলেন তিনি। আলতাফ ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকে সারাদিন। ফুপুর সাথেই তাই দিনের বেশিরভাগ সময় কাটত আমার।

ফুপু চলে যাওয়ার পর কেমন একটা একা একা লাগতে শুরু করল ওই বাড়িতে। একসময় তাই আমাদের বাসাতেই বেশিরভাগ সময় থাকা শুরু করলাম। সুলেখা আন্টিও খুব খুশি হলো আমাকে পেলে। আমার এবাড়িতে এসে থাকার অবশ্য আরও বিশেষ একটি কারন রয়েছে। কিছুদিন আগেই আমি জানতে পেরেছি, আমার মধ্যে আরও একজন বেড়ে উঠছে ধীরে ধীরে। এখনও কাউকেই জানাইনি খবরটা। আলতাফ ব্যস্ততার জন্য কয়েকদিন আমার সাথে দেখা করতে আসতে পারছে না। ভেবেছি ও আসলে ওকেই আগে জানাব। তারপর অন্য সবাইকে। কিন্তু আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছুই হলো না। তার আগেই প্রেগন্যান্সি টাইমের সব লক্ষন দেখা দিতে শুরু করল। সারাক্ষন ক্লান্তি ক্লান্তি ভাব, খাবারে অনীহা এবং বমি। দাদি আমার এই অবস্থা দেখেই বুঝে ফেলল সব। আলতাফকেও দাদিই কল করে জানাল৷ অভিনব কায়দায় আলতাফকে এই সুখবরটা দেওয়ার সমস্ত প্লান মাঠে মারা গেল আমার।

সবাই আবার ব্যস্ত হয়ে উঠল আমাকে নিয়ে। কিন্তু আমাদের হাসিখুশি ঘরটায় আবারও শোকের ছায়া নেমে এলো। সুলেখা আন্টি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ল। হসপিটালাইজড করা হলো তাকে। তিনদিন পার হয়ে গেলেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। ডাক্তার বলে দিলেন, যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকতে। আমি বুঝতে পারলাম, সেই সময়টা এসে গেছে। আমি, বাবা এবং দাদি। আমরা তিনজনেই আড়ালে কাঁদি তার জন্য। কিন্তু তার সামনে গেলে স্বাভাবিক থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করি। তারপরেও সুলেখা আন্টি বুঝে গেল সব। এক পড়ন্ত বিকেলে আমাকে একা পেয়ে বলল, “সু, আমার হাতে মনেহয় খুব বেশি সময় নেই আর।”
আমি চমকে উঠে বললাম, “এসব তুমি বলবে না আর।”

“বোকা মেয়ে। যেটা হওয়ার সেটা তো হবেই।”
হাসপাতালের বেডে ধবধবে সাদা বিছানায় রাখা তার হাতের উপর কপাল ঠেকিয়ে কাঁদলাম আমি৷ সুলেখা আন্টি বলল, “তবে আমার এখন আর কোনো আফসোস নেই জানো। খুব অল্পদিনের জন্য হলেও আমি তোমার বাবার ভালোবাসা পেয়েছি, আর পাঁচ দশটা স্বামী স্ত্রীর মতো একটা স্বাভাবিক দাম্পত্য সম্পর্ক পেয়েছি। পেটে না ধরেও তোমার মত একটা মেয়ে পেয়েছি। খুব ইচ্ছে ছিল, তোমার মধ্যে যে পুচকেটা বড় হচ্ছে তাকে দেখব, কিন্তু আল্লাহ বোধহয় সেটা আমার ভাগ্যে লিখে রাখেননি।”

আমি বললাম, “তোমাকে একটা কথা বলি বলি করেও বলা হয়নি কখনও। যেদিন নদীর পাড়ে বসে তুমি তোমার জীবনের সমস্ত বেদনা নিঙড়ে দিয়েছিলে আমার সামনে, সেদিনও বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সংকোচে বলতে পারিনি। মনে হয়েছে এতগুলো বছরেও যেটা করিনি সেটা এখন করাটাও অনুচিত। তবুও আজ সব সংকোচ একপাশে ঠেলে দিয়ে বলছি, আমি কি তোমাকে একবার ‘মা’ বলে ডাকতে পারি?”
“পাগলি একটা, মাকে মা বলে ডাকার জন্য কখনও অনুমতি নিতে হয় না।”

তার সাথে কথা বলা শেষ করে বাইরে বেরিয়েই চমকে গেলাম আমি। বাবা দাঁড়িয়ে আছে দরজার পাশেই। তার চোখের কোনের অশ্রুকনা বলে দিল, আমাদের কথোপকথন পুরোটাই শুনেছে সে।

সুলেখা আন্টি হাসপাতালে ছিল চারদিন। তারপর আর তাকে সেখানে রাখার প্রয়োজন হলো না। শুধু হাসপাতাল না, আমাদের বাড়ি সর্বোপরি পৃথিবী থেকেই বিদায় নিল সে। দাদি আর বাবা বাচ্চাদের মত চিৎকার করে কাঁদল। কিন্তু আমি শুধু নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকলাম।

বছর চলে গেল। এই এক বছরে বদলেছে অনেক কিছুই। সবচেয়ে অবাক করা যে বিষয়টা ঘটেছে সেটা হলো, তামিম ভাইয়ের সাথে তুলির বিয়ে। ফুপু নিজে তুলিদের বাসায় প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন ওকে পুত্রবধু করার জন্য। আমরাও নিজেদের মানিয়ে নিয়েছি সময়ের সাথে সাথে। নতুন অতিথি এসেছে আমাদের জীবনে। দাদি আর আমার সময় কেটে যায় এখন তাকে নিয়েই। আমরা সবাই নিজেকে সামলে নিলেও একমাত্র বাবাই আটকে আছে অতীতে। সুলেখা আন্টিকে কবর দেওয়া হয়েছে বাগানের এককোনে। অনেকদিন আগে বাবা বাগানে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগিয়েছিল। সুলেখা আন্টি মারা যাওয়ার কয়েকদিন পর বাবা তার কবরের পাশে আবার একটি গাছ লাগাল। বেলী ফুলের গাছ।

সেদিন দেখলাম, রুমের জানালা দিয়ে বাগানের দিকে তাকিয়ে একা একাই কথা বলছে বাবা, “সময় থাকতে কেন তোমার মর্ম বুঝলাম না, এই অনুশোচনায় শেষ হয়ে যাচ্ছি। প্রত্যেকটা মুহুর্তে তোমার শূন্যতা অনুভব করছি এখন। সুলেখা তুমি কি শুনতে পাচ্ছ? তোমাকে ছাড়া আমরা কেউ ভালো নেই।”

আমাদের দিনগুলো চলে যাচ্ছে। দৈনন্দিন কাজ, হাসি আনন্দ সবই চলছে। তারপরেও কোথাও একটা শুন্যতা লেগে আছে ঘরের আনাচে কানাচে। আমরা প্রত্যেকেই মনের মধ্যে খুব যত্নে লালন করে চলেছি একজনের স্মৃতি।
(শেষ)

#আমাতুল্লাহ_স্বর্ণা

মন গহীনের শব্দ পর্ব-১১

0

মন গহীনের শব্দ
| ১১ |
আমার মস্তিষ্ক তুমুল গতিতে চিন্তা করতে শুরু করল। কী এমন করেছে সুলেখা আন্টি যার জন্য আমি তার উপরে রেগে যেতে পারি। আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালাম সুলেখা আন্টির দিকে।

সে বলতে শুরু করল, “আজ থেকে তের বছর আগের কথা, আমি এবাড়িতে বউ হয়ে আসার দুই বছর হয়েছে তখন। এরকম একটা দিনে তোমার মায়ের সাথে দেখা হয়েছিল আমার। তখন তুমি ক্লাস ওয়ানে পড়ো। আমার খুব ন্যাওটা ছিলে তুমি তখন। তুমি যেখানে যাবে আমাকেও সেখানেই থাকতে হবে। এমনকি তুমি স্কুলে গেলেও আমার অপেক্ষা করতে হতো তোমার ক্লাসরুমের বাইরেই। সেদিনও আমি ক্লাসরুমের বাইরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ঠিক তখনই তিনি এসে আমার সামনে দাঁড়ালেন। আমি তাকে চিনতে পারলাম না, তিনি নিজেই সেধে পরিচয় দিলেন। সবকিছুই আমাকে খুলে বললেন তিনি। ভুল মানুষের প্ররোচনায় পরে তিনি বাড়ি ছেড়েছিলেন। কিন্তু নিজের ভুল বুঝতে পেরে তিনি আবার বাড়ি ফিরতে চান। আমার বুকটা ধ্বক করে উঠল সেদিন তার কথা শুনে। তিনি আমাকে অনুরোধ করলেন, তার স্বামী, সংসার এবং সন্তান তাকে ফিরিয়ে দিতে। আমার ভয় হলো প্রচন্ড। তোমার বাবা যদি জানতে পারেন তাহলে নিশ্চিত আমাকে ছেড়ে তাকেই বেছে নেবেন। তোমার মাও আমাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের টানাপোড়েনের কথা জানতে পারলে তোমার বাবার কাছে ফিরে যাবেন। সবটা ভেবেই ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো। কিছুতেই মানতে পারলাম না যে আমার সব অধিকার ছেড়ে দিতে হবে। ভালোবাসাহীন সংসার এবং তোমাকে আঁকড়ে ধরে আমি নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি তখন কেবল। সেদিন ভেবেচিন্তেই আমি খুব বড় একটা অন্যায় করলাম। নিজের সংসার বাঁচাতে স্বার্থপর হয়ে উঠলাম। একের পর এক মিথ্যে বলে গেলাম। বললাম তোমার বাবা তাকে ঘৃণা করেন। আমাকে নিয়েই এখন সে ভালো আছে। তাকে স্পষ্ট জানালাম, যে সংসার ছেড়ে স্বেচ্ছায় সে চলে গিয়েছিল, পুনরায় সেখানে ফেরার কোনো অধিকার নেই তার। সেদিন নিজের নড়বড়ে অবস্থান ধরে রাখতে সবচেয়ে বড় মিথ্যেটাও বললাম আমি। বললাম, আমি সন্তানসম্ভবা। আমার সামনে বসে তোমার মা শুধু কেঁদেই গেলেন। আমি বুঝতে পারলাম, ক্ষনিকের মোহে পড়ে যে ভুল তিনি করেছিলেন সেটা শুধরে নিতে চাইছেন। কিন্তু ক্রমাগত কথার আঘাতে আমি তাকে একপ্রকার অপমান করেই তাড়িয়ে দিলাম। হঠকারিতায় কাজটা করে ফেললেও পরে অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েছি আমি প্রতিনিয়ত। যতবার তোমার কিংবা তোমার বাবার চেহারার দিকে তাকাতাম, মনে হতো আমি মস্ত বড় অন্যায় করেছি। আমার জন্যই তুমি আরেকবার হারালে তোমার মাকে। মনে হতো তার সংসারে অনধিকার চর্চা করছি আমি। তোমার দাদি যখনই আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতেন, তখনই মনে হতো এই সংসারে আমি আসলে কিছুই না। অনেকবার এই কথাগুলো তোমাকে কিংবা তোমার বাবাকে বলতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি। যদি তোমরা আমাকে দোষারোপ করো সেই ভয়ে গুটিয়ে নিয়েছি নিজেকে। তোমার বাবাকে হয়তো কখনোই বলতে পারব না কথাগুকো। কিন্তু তোমাকে অন্তত জানিয়ে গেলাম এসব। এখন নিজের অপরাধবোদ হয়তো কিছুটা হলেও কমবে।”
সুলেখা আন্টি কথা শেষ করে চলে গেলেন। আমি ব্যাগ হাতড়ে মোবাইল নাম্বার লেখা সেই টুকরো কাগজটা বের করলাম। এবার মনেহয় সত্যিই মায়ের সাথে দেখা করা উচিৎ।

পরেরদিন কাঙ্ক্ষিত স্থানে যখন পৌঁছলাম তখন প্রায় মধ্যদুপর। ভার্সিটি থেকে সোজা এখানে চলে এসেছি। রাহেলা আন্টিও আছেন সাথে। সামনে প্রকান্ড জমিদারি স্টাইলের বাড়িটির দিকে তাকালাম আমি। রাহেলা আন্টি বললেন, “এটা তোমার মায়ের বাপের বাড়ি মানে তোমার নানাবাড়ি।”
আমি কোনো কথা বললাম না। আজ কথা যা বলার শুধু একজনের সাথেই বলব। বাড়ির ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেলাম আমি। মনে হলো যেন পুরোনো কোনো রাজপ্রাসাদে ঢুকে পড়েছি।

অন্দরমহলের মহিলারা খুব আগ্রহ নিয়েই দেখছে আমাকে। পাশে কানাঘুষাও শুনতে পাচ্ছি।
“চাঁদের মতো সুন্দর এই মেয়েটা আমাদের রেবেকার?”
“কালো মেয়ের গর্ভে এরকম পরীর মত মেয়ে। এই মেয়ে রেখে রেবেকা কীভাবে…”
সবার সব কথা উপেক্ষা করে আমি রাহেলা খালার সাথে নির্দিষ্ট একটি রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। প্রথমেই চোখ গেল বিছানার দিকে। ক্লান্ত বিষন্ন একটা মুখ দেখতে পেলাম আমি। চোখাচোখি হলো আমাদের। বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠল আমার। ইচ্ছে করল একছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু আমি সেটা করলাম না। একেবারে নিস্পৃহ আর নিরুত্তাপ হয়ে গিয়ে অপজিটের সোফায় বসলাম আমি। তিনি কথা বলে উঠলেন, “তুলন, তুই এসেছিস মা। এত দূরে কেন? আমার কাছে আয়।”
আমি শক্ত গলায় জবাব দিলাম, “আপনার মনে হয় কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। আপনি যার নাম ধরে ডাকছেন, আমি সে নই। আমার নাম সুজাতা।”
তিনি শব্দ করে কাঁদলেন। নিজেকে কঠিন খোলসে আবদ্ধ করে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেলাম আমি। তিনি বললেন, “এসবই আমার প্রাপ্য ছিল আসলে। পাপ তো আর কম করিনি জীবনে। তোকে তোর বাবাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তোর দাদি নিজের মেয়ের মত ভালোবাসতো আমাকে। ওই বৃদ্ধা মানুষটাকেও ধোঁকা দিয়েছি। এখন প্রত্যেকটা মুহুর্তে তার মাশুল দিয়ে যাচ্ছি।”
আমি বললাম, “এখন এসব কথা বলা অর্থহীন। তবুও শুধু একটা কথাই জানতে চাই আপনার কাছে। আমাদের সাথে কেন এমন করলেন?”

“লোভে পড়ে করে ফেলেছি। তোর বাবা যখন থেকে নিজের ব্যাবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল, ঠিক তখন থেকেই শুরু হলো সমস্যাটা। আমাকে সময় খুব কম দিত। কয়েক জায়গা থেজে বেশ বড় অঙ্কের একটা লোন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল। সেগুলো সময়মতো ফেরত দেওয়ার তাড়াও ছিল। প্রচুর প্রেসারে থাকত তোর বাবা। ছোটোখাটো ব্যাপার নিয়েও ঝগড়া লেগে যেত। একসময় নিজের গায়ের রং নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করলাম। মনে হতো, আমাকে বুঝি এখন আর আগের মত ভালোবাসে না সে। কত বোকা ছিলাম তখন! একবারও বোঝার চেষ্টা করলাম না, আমাদের ভালো রাখার জন্যই আসলে মানুষটা দিনরাত খেটে যাচ্ছে। তুই হওয়ার পরে আমি আরো খিটখিটে মেজাজের হয়ে গেলাম। তোর বাবা ততদিনে সব আর্থিক ব্যাপারগুলো সামলে নিয়েছে। আগের মতই আমাকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করে, ভালোবাসে। কিন্তু ততদিনে তৃতীয় একজন আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। তোর বাবার খুব কাছের বন্ধু হওয়ার সুবাদেই আমাদের বাড়িতে তার অবাধ যাতায়ত ছিল। আমার একাকীত্বের দিনগুলোতে সে আমাকে সঙ্গ দিতে শুরু করল। আমার সামান্য অসুস্থতার কথা শুনলেও পাগল হয়ে যেত। আমিও আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকলাম তার প্রতি। একসময় মনে হলো, আমি তোর বাবার চেয়ে তার সাথেই বেশি ভালো থাকব। তখনও বুঝিনি এসবই মিথ্যে মোহমায়া। একদিন ও বলল, বাড়ি থেকে পালিয়ে আসতে। আমিও তাই করলাম। সমস্ত গয়নাগাটি আর বেশ বড় অঙ্কের নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেলাম ওর সাথে। শহর থেকে কিছুটা দূরের একটা হোটেলে উঠলাম। ঠিক মধ্যরাতে দরজায় নক করল কেউ। খুলে দেখলাম তোর বাবা দাঁড়িয়ে আছে। তার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো আর ফিরেও তাকাত না আমার দিকে। কিন্তু অন্য একজন পুরুষের সাথে একরুমে দেখা সত্বেও সে আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। অন্তত তোর জন্য হলেও ফিরে যেতে বলেছিল আমাকে। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে জানিয়েছিলাম, আর কখনও তার কাছে ফিরব না। সেদিন আমার সামনে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেলল তোর বাবা। কিন্তু তার কান্না আর আকুতি আমার কাছে ছিল একেবারেই অর্থহীন। অথচ এখন আমি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি তার সেই কান্নাভেজা মুখটা। তিনদিন বাদেই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছিলাম তাকে। লেটার পাঠানোর পরেরদিন বিয়ে করে নিলাম আমার। আমার নতুন সংসার টিকেছিল মাত্র সাতদিন। তারপর আমাকে ধোঁকা দিয়ে লোকটা আমার সমস্ত টাকা আর গয়না নিয়ে পালিয়ে গেল। একা একটা মেয়ে কোথায় যাবো বুঝতেই পারছিলান না। বাবা মা অনেক আগেই ত্যাগ করেছিল আমাকে। তোর বাবার কাছে যাওয়ার মতো মুখও ছিল না৷ অনেক ভেবে আমার বাপের বাড়িতেই গেলাম শেষে। আমি ওবাড়ি থেকে চলে আসার পর রাহেলাও চলে এসে আমার বাবার বাড়িতে গিয়ে উঠেছিল। ও কিভাবে বাবা মাকে ম্যানেজ করল জানি না। তারা কেউ আমার সাথে কথা বলল না ঠিকই তবে আশ্রয় দিল আমাকে। ভাবীরা ক্রমাগত কটু কথা শোনাতেন এরকম জঘন্য একটা কাজ করেছি বলে। আমার নিজেরও তখন বিশ্বাস হতো না, এই কাজটা আমি সত্যিই করেছি। শুধু একটা না, একের পর এক ভুল করেছি আমি৷ স্বামী সংসার ছেড়ে যিনার মত জঘন্যতম পাপ করেছি। ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েই মনে করেছিলাম তালাক হয়ে গেছে। তারপরেরদিনই বিয়ে করলাম। অথচ তাতে তোর বাবা সই পর্যন্ত করেনি। মানে ডিভোর্স হয়নি, এমনকি ইদ্দত পালন করাও হয়নি আমার। মানে পরের বিয়েটার কোনো ধর্মীয় ভিত্তিই ছিল না। এগুলো সবই পরে জানতে পেরেছি আমি। অনেকবার ফিরতে চেয়েছি তোদের কাছে। কিন্তু আমি তো নিজের হাতেই ফেরার সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। আমি জানি, তুই আমাকে প্রচন্ড ঘেন্না করিস। আজকের এই কথাগুলো শোনার পর থেকে হয়তো আরও বেশি ঘেন্না করবি। তবুও বলছি, যদি সম্ভব হয়ে আমাকে ক্ষমা করে দিস, মা।”
আমি চুপচাপ বাকরুদ্ধ হয়ে শুনছিলাম তার কথা। বাবা সব জানত, মা কোথায় কার সাথে আছে। তবুও এই বিশ্বাসঘাতক মহিলাটির জন্য বছরের পর বছর বাবা সুলেখা আন্টির সাথে অন্যায় করে গেছে। তিনি আমার কাছে এগিয়ে এলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “আমি তো এ ঘরের বাইরে পা রাখি না এখন আর। নিজেকে এই ছোট্ট কক্ষটাতেই বন্দি করে রাখি। বাইরের পরিবেশ আজকাল অসহ্য লাগে। আচ্ছা তুলন, তোর বাবাকে একদিন নিয়ে আসবি আমার কাছে? অনেকদিন হয় তাকে দেখি না।”

“না। আমি চাই না বাবার সাথে আপনার দেখা হোক। আমাদের যখন প্রয়োজন ছিল, তখন যেহেতু আপনাকে পাইনি তাই আমাদের সুখের দিনেও আপনাকে আমাদের আর প্রয়োজন নেই। শুধু একটাই অনুরোধ করব আপনাকে। দয়া করে আর কখনও আমার বা আমার পরিবারের কারও সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না প্লীজ।”
“আচ্ছা, আর কখনও করব না যোগাযোগ।”
“আপনার যা বলার ছিল, বলা শেষ নিশ্চই। এখন আমি আসছি তাহলে।”

“সেকি, এখনও তো আমি তোকে ভালো করে দেখতেই পারলাম না। একবার আমার কাছে আয়। তোর কপালে একটা চুমু দিয়ে দেই।”

আমি এগিয়ে গেলাম তার কাছে। দুহাতের আজলায় আমার দুগাল ধরে তিনি চুমু দিলেন কপালের ঠিক মাঝ বরাবর। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। মাতাল করা চেনা পরিচিত একটা মা মা ঘ্রাণ এসে লাগল নাকে। আশ্চর্য, এত বছরে তো মায়ের গায়ের ঘ্রান আমার ভুলে যাওয়ার কথা, তবুও এত পরিচিত কেন লাগছে?

তিনি বললেন, “ছোটবেলায় তোর কপালে চুমু দিলে তুইও আমাকে পালটা চুমু দিতি। আজ দিবি না?”
কোনো কথা না বলে আমিও ঠিক একইভাবে চুমু দিলাম তাকে।আমার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল তার হাতের পিঠে। তিনি আবেগমাখা কণ্ঠে বললেন, “একবার মা বলে ডাকবি?”
আমি উত্তর দিলাম, “মাফ করবেন, আমার শুধু একজনই মা ছাড়া।তাকে ছাড়া অন্য কাউকে মা বলে ডাকা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।”

মুখে না বললেও মা বলে ডাকার আকন্ঠ তৃষ্ণায় ছটফট করছি আমি মনে মনে। তবু কেন যে না বলে দিলাম? হবে হয়তো ঘৃণা অথবা অভিমানে। হঠাৎই নিজেকে খুব দুর্ভাগা মনে হলো আমার। দুজন মা থাকা সত্বেও কাউকে মা বলে ডাকতে পারছি না। তিনি বললেন, “আচ্ছা, মা বলে ডাকতে হবে না। আমার সাথে আর কিছুক্ষন থেকে যা। আজ আমি নিজে হাতে তোকে একটু খাইয়ে দেই।”

“আসলে আমি ভার্সিটির পর সোজা এখানে চলে এসেছি। মায়ের কাছে না বলে সচরাচর আমি এভাবে বাইরে থাকি না। আমাকে যেতে হবে। নইলে মা চিন্তা করবে আমার জন্য।”

“বুঝেছি, আমার হাতে খেতেও চাইছিস না। আচ্ছা আর বেশিক্ষন তোকে থাকতে হবে না। অন্তত কিছুটা সময় তোকে দেখি। আজ চলে গেলে আর তো কখনও আসবি না আমার কাছে। এটাই তো শেষ দেখা। আর পাঁচটা মিনিট থেকে যা আমার কাছে।”

আমি গুনে গুনে পাঁচ মিনিট বসে উঠে দাঁড়ালাম। দরজার কাছে গিয়ে আরেকবার পিছনে ফিরে তাকালাম। সত্যিই আজকের পর আর আমি তাকে দেখতে আসব না। শেষবারের মত দেখে নিলাম নিজের জন্মদাত্রীকে। আহা! আমার মা। আমাকে দশমাস দশদিন গর্ভে ধারন করেছেন যিনি, আমার সেই মা ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি মনেমনে বললাম, “তোমাকে খুব ভালোবাসি, মা।”

খুব সুন্দর একটা সাজানো গোছানো সংসার হতে পারত আমাদের। অথচ কোথা থেকে কী হয়ে গেল। ও বাড়ি থেকে বেড়িয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েই হেঁচকি তুলে কেঁদে উঠলাম আমি।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)

#আমাতুল্লাহ_স্বর্ণা

মন গহীনের শব্দ পর্ব-১০

0

মন গহীনের শব্দ
| ১০ |
আমি উপলব্ধি করলাম, এতগুলো বছর ধরে যে মানুষটা আমাদের পরিবারকে শুধু দিয়েই গেছে, সেই মানুষটার প্রাপ্তির ঝুলি একেবারেই শূন্য। সুলেখা আন্টির জীবনের প্রত্যেকটা কষ্টের মুহূর্ত আমি হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করতে পারছি। বারবার চেষ্টা করেও কান্না থামাতে পারছি না।

সুলেখা আন্টিই কথা বললেন আবার, “সু, তোমার কাছে আমার আরও একটা আবদার আছে। আমি জানি না, আর কতদিন আল্লাহ আমার আয়ু লিখে রেখেছেন। কিন্তু যতদিনই বাঁচি, ততদিন আমি আমার সু কে হাসিখুশি দেখতে চাই ঠিক আগের মতো করে । কথা দাও, আজ থেকে আর কাঁদবে না।”
আমি হেঁচকি তুলে বললাম, “কথা দিলাম, আর কাঁদব না।”
“দেখ কান্ড। বলছ কাঁদবে না অথচ এখনও কেঁদেই যাচ্ছো। তুমি এভাবে কাঁদলে আমার আরও বেশি করে মনে পড়বে নিজের অসুস্থতার কথা। আজকের আবহাওয়াটা কী চমৎকার দেখ। কাল কী হবে না হবে সেটা না ভেবে চলো আজকের এই সময়টুকু উপভোগ করি আমরা। ওইযে সামনেই একটা ফুচকার স্টল দেখা যাচ্ছে। যাবে ওখানে?”
“চলো।”

পরের সময়টুকু আমরা আমাদের সমস্ত দুঃখ বিষাদ ভুলে গেলাম, অথবা বলা যায় ভুলে যাওয়ার অভিনয় করলাম। নিজেদের মতো করে বেশ খানিকটা সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরলাম।
বাসায় ফিরে আমিই সবাইকে রিপোর্টের কথাটা জানালাম। দাদি, বাবা দুজনেই হতভম্ব হয়ে শুনল আমার কথা। দাদি সব শুনে কাঁদল। বাবার চোখের কোনেও অশ্রুবিন্দু দেখলাম যেন। গুমোট একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেল কিছু সময়ের ব্যবধানে। আমার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সুলেখা আন্টি উঠে রুমে চলে গেল। সে যাওয়ার পর আমিও চলে এলাম নিজের রুমে।

আমাদের দিনগুলো আগের মতোই চলে যাচ্ছে। বাবা রাজনীতি আর ব্যাবসা নিয়ে ব্যস্ত, দাদি সারাক্ষন কোনো না কোনো দোষ ধরে চ্যাঁচামেচি করে যাচ্ছে। আমি ভার্সিটি জয়েন করেছি। আলতাফ আসছে মাঝে মধ্যে। সবই ঠিকঠাক চলছে তবু কোথাও যেন একটা দীর্ঘশ্বাস ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘরের প্রত্যেকটা আনাচে কানাচে। এরমধ্যে অবশ্য পরিবর্তনও এসেছে অনেকটা, বিশেষ করে বাবা আর দাদির মধ্যে। দাদি এখন আর সুলেখা আন্টির সাথে রাগারাগি করে না। বাবাও অনেকটাই নমনীয়। এরমধ্যেই একদিন দেখলাম বাবা হাতে করে বেলীফুলের গাজরা নিয়ে এসেছে। বেলী সুলেখা আন্টির প্রিয় ফুল। এরপর থেকে রোজই তার প্রিয় কিছু না কিছু নিয়ে আসে বাবা। সুলেখা আন্টিকে ট্রিটমেন্টের জন্য কিছুদিন পরপরই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয়। প্রথমে দুবার আমি নিয়ে গেলাম। তারপর হুট করেই একদিন বাবা বলল, “আম্মা, এখন থেকে আর ডাক্তারের কাছে তোমার যেতে হবে না। সুলেখাকে আমিই নিয়ে যাব।”
আমি সুলেখা আন্টির দিকে তাকালাম। তার চোখ ছলছল করছে।

ভার্সিটির দিনগুলো ভালোই কেটে যাচ্ছে। নিয়মিতই ক্লাসগুলো করছি। একদিন ভার্সিটি থেকে বাসায় ফেরার পথে দেখা হয়ে গেল সেই মহিলার সাথে। আজও নিজেকে আপাদমস্তক ঢেকে আছে কালো বোরখায়। এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করল, “কেমন আছো তুলন মা।”
আজ আর আমি এড়িয়ে গেলাম না। বরং তার প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করলাম, “আপনার নাম রাহেলা?”
তিনি চমকে উঠলেন ভীষনভাবে। কিছুক্ষন মৌন থেকে ছোট্ট করে জবাব দিলেন, “হ্যাঁ।”
“আমাকে জন্ম দিয়েছেন যে ভদ্রমহিলা, আপনিই তাহলে তার সেই বোন?”
আবারও একই জবাব, “হ্যাঁ।”
“এবার বলুন, আপনি আমার কাছে আসলে কী চান?”
“তোমার কিছুক্ষন সময় চাই, দেবে আমাকে?”
“এইযে আপনার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছি, এতে কি সময় দেওয়া হচ্ছে না?”
“এভাবে না মা। আমার সাথে চলো একদিন। তোমাকে একজন খুব দেখতে চায়।”
“কে দেখতে চায়? আপনার সেই বোন।”

তিনি নিশ্চুপ।
আমি বললাম, “তা হঠাৎ তিনি এতদিন পর আমাকে কেন দেখতে চাইছে? তাকে এখন আর আমার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনার বোনটিকে প্লিজ বলে দেবেন আমি তার সাথে দেখা করতে আগ্রহী নই।”

“তুলন মা, আমার কথা শোনো। জানি সে অনেক ভুল করেছে। তবুও বলছি, মৃতপ্রায় মানুষটার জন্য মনের মধ্যে এত ঘৃণা পুষে রেখ না। দয়া করে একদিন চলো আমার সাথে।”

আমি হঠাৎ করেই ধাক্কা খেলাম যেন। মৃতপ্রায় মানে? তার মানে মা কি অসুস্থ খুব। কোথাও একটা কষ্ট হচ্ছে খুব, কিন্তু আমি সামলে নিলাম নিজেকে। স্পষ্টভাবে তাকে জানালাম,”আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি।”
“তোমার মায়ের মতোই জেদি হয়েছ। যেতে না চাইলে আমি তো আর জোর করে নিয়ে যেতে পারব না। আমার মোবাইল নম্বরটা দিয়ে গেলাম তবুও। যদি কখনও ইচ্ছে হয়, আমাকে একটা কল কোরো শুধু। আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাব।”

তিনি চলে গেলেন। হাতের মুঠোয় কাগজের টুকরোটা নিয়ে কতক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম জানি না। হঠাৎ কাঁধে কারও স্পর্শে চমকে উঠলাম। আলতাফ কথা বলে উঠল পাশে থেকে, “কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে? সেই কখন থেকে হর্ন বাজাচ্ছি, শুনতে পাচ্ছো না। গাড়ি থেকে নেমে ডাকলাম, তাও কোনো সারা নেই। ব্যাপারটা কী বলোতো?”
হাতের মুঠোয় বন্দি দুমড়ে মুচরে যাওয়া কাগজটা ব্যাগের সাইড চেম্বারে রাখতে রাখতে হেসে বললাম, “তেমন কিছু না। একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম আরকি।”

আলতাফ একপ্রকার জোর করেই নিয়ে গেল ওর বাসায়। ফুপু নাকি দুপুরে যেতে বলেছে আমাকে। বাসায় ফিরতে বিকেল হয়ে গেল। সুলেখা আন্টিই দরজা খুলে দিল। তাকে দেখে আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললাম, “ও মাই গড!”
আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে লজ্জা পেলো খুব। বলল, “এভাবে তাকিয়ে কী দেখছ?”
“লাল শাড়িতে তোমাকে অস্থির সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে তোমার বয়স বিশ বছর কমে গেছে।”
“ধুর, আমি এবার প্রচন্ড রেগে যাচ্ছি। তোমরা বাবা মেয়ে মিলে যা শুরু করেছ। একজন এসে শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলল, আজ এটাই পড়তে হবে।এদিকে তুমি আবার উলটাপালটা কথা বলা শুরু করেছ।”

যদিও সে মুখে রেগে যাওয়ার কথা বলছে, কিন্তু তার চেহারায় সামান্যতম রাগের আভাসটুকু নেই। বরং চঞ্চলা কিশোরী হঠাৎ লজ্জা পেলে যেমন দেখায়, এখন ঠিক তেমনই দেখাচ্ছে সুলেখা আন্টিকে। আমি বললাম, “মোটেও আমি উলটাপালটা কথা বলছি না। সত্যিই তোমাকে খুব প্রিটি লাগছে, ডিয়ার।”

“অনেক হয়েছে। এবার যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। দুপুরে তো শ্বশুরবাড়ি থেকেই খেয়ে এসেছো। বিকালের জন্য হাল্কা কিছু নাস্তা তৈরি করেছি। আমি সেগুলো রেডি করে নিয়ে আসছি। তারপর দুজনে আড্ডা দেব জমিয়ে৷”

আমি বললাম, “খাওয়া না ছাই। বদ লোকটা আমাকে নিয়ে গিয়েছিল অন্য মতলবে। দিনে দুপুরে আমাকে নিয়ে দরজা আটকে দিল। ফুপুর সামনে যা একটা লজ্জায় পড়লাম, কিছুই খেতে পারলাম না। আমি পাঁচ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছি, তুমি খাবার নিয়ে জলদি আমার রুমে এসো। ক্ষিধেয় পেট চো চো করছে আমার।”

সুলেখা আন্টি শব্দ করে হেসে দিল। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখলাম সুলেখা আন্টি বাটিভর্তি বেগুনি, ফুলকপির চপ নিয়ে বসে আছে। খাবার পাওয়ার সাথে সাথেই হামলে পড়লাম আমি। টমেটো কেচাপে বেগুনি ডুবিয়ে কামড় দিতে দিতে বললাম, “এবার সিরিয়াসলি রান্নাটা তোমার থেকে শিখতে হবে। আমি খুব ভালো একজন গৃহীণি হতে চাই।”
সুলেখা আন্টি হাসতে হাসতে বলল, “আচ্ছা, সব শিখিয়ে দেব।”
আমি নিজ্ঞাসা করলাম, “দাদি কোথায়? ইদানিং তো বিকেলে তোমার সাথেই গল্প করে কাটায়, আজ তো দেখছি না তাকে।”

“শরীরটা বোধহয় ভালো লাগছে না। ঘুমাচ্ছে এখন। সত্যিই আজকাল সবাই খুব হাশিখুশি রাখতে চাইছে আমাকে। একদিকে অসুখটা ধরা পরে ভালোই হয়েছে বলো, অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও সবার ভালোবাসা পাচ্ছি। জানো সু, এই ভালোবাসাটুকু পাওয়ার জন্য বিয়ের পর থেকে চাতক পাখির মত অপেক্ষা করেছি আমি। কিন্তু সবার তুচ্ছতাচ্ছিল্য পেয়ে একসময় নিজেকে বুঝিয়েছিলাম, আমার ভাগ্যে ভালোবাসা নেই। অথচ আজ দেখ, সবাই আমাকে চোখে হারাচ্ছে। আমি খুব খুশি জানো, কিন্তু তবুও কোথাও একটা শূন্যতা আর হাহাকার। তাদের এই হঠাৎ পরিবর্তন আমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, আমার জীবনের অন্তিমলগ্ন এসে গেছে।”

আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম। যদিও তাকে কথা দিয়েছিলাম আর কখনও কাঁদব না। তবুও দুচোখ ছাপিয়ে অশ্রু এলো আমার। সুলেখা আন্টি বললেন, “জানো সু, তোমার বাবা এখন আমাকে খুব করে বোঝার চেষ্টা করে। সময় দেয়৷ আমার সব পছন্দ অপছন্দের খেয়াল রাখে৷ এজন্য তোমাকে আমার বিশেষভাবে ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ।”

আমি থতমত খেয়ে বললাম, “বাবা যেহেতু বদলে গেছে, ধন্যবাদ দিলে তাকে দেয়া উচিৎ। তাহলে আমাকে কেন ধন্যবাদ দিচ্ছ?”
“সু, আমি মানছি তুমি খুব বুদ্ধিমতী, তবে আমিও কিন্তু বোকা নই।”
আমি হেসে বললাম, “সত্যিই, মেয়েরা পৃথিবীর সবার সাথে চালাকি করলেও মায়ের কাছে ঠিক ধরা পড়ে যায়।”
সেও হাসল, “কথায় একদমই পেরে ওঠা যায় না তোমার সাথে। একেবারে বাবার মতোই হয়েছো। কথার পিঠে কথা সবসময় তৈরি করাই থাকে।”

“বাবার মেয়ে বাবার মতো হবে, এটাই তো স্বাভাবিক।”
“বুঝলাম।”

আমাদের কথোপকথন চলতে থাকল। কিছুক্ষন পর হঠাৎ সুলেখা আন্টি সিরিয়াস কন্ঠে বললেন, “সু, তোমার কাছে একটা ব্যাপারে কনফেশন দেওয়ার আছে আমার।”
আমি কিছুটা অবাক হয়েই প্রশ্ন করলাম, “কিসের কনফেশন?”
“বহুবছর আগে লোভে পড়ে আমি একটা অন্যায় কাজ করেছিলাম। আমি জানি, কাজটা আমার একদমই করা উচিৎ হয়নি। তবু আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি। সবটা শোনার পর তুমি হয়তো রেগে যাবে আমার উপর, তবুও আজ তোমাকে আমি কথাগুলো আজ বলতে চাই।”
আমার মস্তিষ্ক তুমুল গতিতে চিন্তা করতে শুরু করল।কী এমন করেছে সুলেখা আন্টি যার জন্য আমি তার উপরে রেগে যেতে পারি।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)

#আমাতুল্লাহ_স্বর্ণা