Thursday, July 31, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 406



ত্রিধারে তরঙ্গলীলা পর্ব-৮৪

0

#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৮৪|
বাবা, মা হারিয়ে যে তীব্র ধাক্কা খেয়েছে। সে ধাক্কা সহ্য করতে পারছে না সিমরান। তাই এমন একটি সিদ্ধান্ত। অবুঝ আর অতি-আবেগি সিদ্ধান্ত।
এ পৃথিবীতে তাকে বাবা, মা’ই নিয়ে এসেছে। অথচ তাদের দু’জনের কেউই আজ বেঁচে নেই। তাদের ভাই, বোনকে ছেড়ে চলে গেছে চিরতরে। আর কখনো ফিরে আসবে না। এই নির্মম সত্যিটুকু মেনে নিতে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে বুকে। স্মরণ হয়েছে একদিন এ পৃথিবী ছেড়ে তাকেও চলে যেতে হবে। এটাই নিয়ম। একদিন তার সন্তান হবে। তারাও বড়ো হবে। সে যখন মারা যাবে ওরাও ঠিক এমনই করে দুঃখ পাবে। ভেঙে পড়বে তীব্র যন্ত্রণায়। এতিম হওয়ার মতো দুর্বিষহ জীবন ভোগ করতে হবে৷ শিউরে উঠে অন্তঃকরণ। ভয়ে মস্তিষ্ক ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। যাদের এ পৃথিবীতে কোনো অস্তিত্ব নেই৷ তাদের কথা ভেবে আতঙ্কিত হয়৷ যদি তার সন্তানরাও একদিন এই কষ্ট ভোগ করে? নাহ, সে কিছুতেই এমনটা হতে দেবে না৷ সন্তানদের দুনিয়াতে একা ছেড়ে যদি চলে যেতেই হয় তাহলে তাদের দুনিয়াতে আনার কী দরকার। অবুঝ, অশান্ত এক অভিমান হয়৷ তার নেওয়া সিদ্ধান্ত, কিছুক্ষণ পূর্বে বলা কথাটি সৌধর ভেতরে কী প্রভাব ফেলেছে খেয়াল করে না। আকস্মিক যখন খেয়াল করে দেখতে পায় সৌধ স্তম্ভিত মুখে অনড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার পানে। বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠে নিমেষে। অসহায়, বেদনার্ত হয়ে বলে,

‘ আমি পারব না। ‘

সৌধর স্তব্ধতা কাটে। অস্থির হয়ে কাছে আসে৷ প্রগাঢ় চোখে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

‘ কী পারবে না তুমি? ‘

‘ আমাদের সন্তানকে দুনিয়ায় একা ছেড়ে চলে যেতে।’

সহসা নিভে যায় সৌধ। দুঃখের মাঝেও হেসে ফেলে অল্পখানি। হাত বাড়িয়ে ডান গালটা ছুঁয়ে দেয়। গাঢ় চোখে তাকিয়ে বলে,

‘ এমন পাগলামি করতে নেই সিনু। এ পৃথিবীর সব মানুষকে একদিন প্রাণ ত্যাগ করতে হবে৷ এই চিরন্তন সত্যিটা সবাই জানে। তাই বলে কি তাদের জীবন থেমে থাকে? তুমি জানো তুমি একদিন মারা যাবে। তাই বলে কি খাওয়া, দাওয়া ছেড়ে দেবে৷ পড়াশোনা থামিয়ে দেবে? আমি জানি একদিন আমি মরে যাব৷ তাই বলে কি সবকিছু ছেড়েছুড়ে বসে থাকব? নাহ, মৃত্যু যখন আসবে আসবেই। যতদিন বেঁচে থাকব জীবনের নিয়ম মেনে বাঁচতে হবে। পেটে খিদে পেলে খাবার খেতে হবে। খাবারের জন্য পরিশ্রম করে টাকা ইনকাম করতে হবে। একাকীত্ব গোচাতে সঙ্গী খুঁজতে হবে। এরপর সংসার। তারপর বংশধর বৃদ্ধি করা। বাবা, মা হওয়া৷ মানবজীবনের এই ধারাবাহিকতা মেনে চলতেই হবে। এসব ভালো না লাগলে সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করতে হবে৷ ধর্মকর্ম মানো যবে মৃত্যু আসবে তবে মৃত্যুকে বরণ করো৷ কিন্তু তোমার পক্ষে তো সন্ন্যাসী হওয়া সম্ভব না। কারণ তুমি আমাকে সন্ন্যাস জীবনে ঢুকতে দাওনি। যে পথে বাঁধা দিয়ে তোমাতে মত্ত করেছ। আজ সে পথ তোমার জন্য হারাম সিনুপাকনি। ‘

নিশ্চুপ সিমরান। দৃষ্টি নত করে ঘনঘন নিঃশ্বাস ছাড়ছে৷ সৌধ অপরহাত বাড়াল। দু-হাতের অঞ্জলিতে কোমল গালদুটো আঁকড়ে ধরে কপালে কপাল মিলিয়ে বলল,

‘ আমার একটা ছোট্ট পাকনি চাই। নিজের যত্ন করো বউপাখি৷ এক বছর সময় দিলাম তোমায়। এরমধ্যে ফাইনাল ইয়ারটা কমপ্লিট হয়ে যাবে। ব্যস, আর দেরি নয়। আমাদের হ্যাপিনেস ছোট্ট পাকনিকে আনতে হবে। ‘

সৌধর প্রগাঢ় চাউনি, মাতাল মাতাল স্বরে করা আবদারটিতে কী ছিল কী? জানে না সিমরান। শুধু জানে অদ্ভুত এক সম্মোহনী শক্তি বলে তার ভেতরের সমস্ত আগুন নিভে গেল৷ সর্বাঙ্গে বয়ে গেল কেবল শীতল স্রোত৷ বুকের বা পাশটায় কী যে আরাম আরাম অনুভব করল বলে বা লিখে বোঝানো সম্ভব না৷ ভালো লাগার শিহরণে ম্রিয়মাণ হয়ে উঠল ওর দেহশ্রী। সৌধ টের পেল সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে সিমরানকে। পারবে নাই বা কেন? মেয়েটা যে তাকে ভালোবাসে৷ বেপরোয়া ভাবে ভালোবাসে। বেসামাল ভাবে অনুভব করে। যে ভালোবাসা এ পৃথিবী আর কোনো মেয়ের মাঝে খুঁজে পায়নি সে। একজন ব্যতীত কারো কাছে খোঁজার চেষ্টা করেনি। যার মাঝে খোঁজার চেষ্টা করেছে সে আজ অতীত। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল সৌধ৷ পুরুষালি, উষ্ণ হাত দু’টোতে আরো গভীর করে চেপে ধরল গালে। সিমরানের নাকে নাক ঘঁষলো আলতো করে। ঠোঁটের অতি নিকটে ঠোঁট রেখে মোহঘোর স্বরে বলল,

‘ শুধু বন্ধু, বান্ধবীদের বাচ্চাদের মামা, কাকা হয়ে হয়ে বুড়ো হতে চাই না বউপাখি৷ বাবা ডাকটাও শুনতে চাই। যে তোমার, আমার অংশ হয়ে এ পৃথিবীতে জন্মাবে তার বাবা ডাক। ‘

সৌধর স্পর্শ, গাঢ় চাউনি আর গভীর ভালোবাসা দিয়ে বলা প্রতিটি কথা জাদুর মতো কাজ করল৷ ক্ষণে ক্ষণে শিউরে উঠল মেয়েটা। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে দৃষ্টি বুজে ফেলল আচমকা। সৌধ যেন শান্তি পেল৷ প্রশান্তির এক নিঃশ্বাস ছেড়ে সিমরানকে দ্বিতীয়বার দম ফেলার সুযোগ দিল না। পুরুষালি উত্তপ্ত ঠোঁটের অসহন ভালোবাসায় ভিজে উঠল কোমল, মসৃণ ঠোঁটজোড়া৷

মানুষের জীবনে লক্ষ্য থাকা জরুরি। লক্ষ্যহীন মানুষ পৃথিবীতে জড়ো বস্তুর মতোই৷ সৌধ বিচক্ষণ। যে কোনো পরিস্থিতি, যে কোনো মানুষের ভুল সে সঠিক বুঝ দিয়ে শুধরে দিতে পারে৷ হয় যদি ঘরের বউ। আর বউটি যদি হয় সিমরানের মতো স্বামী অন্ত প্রাণ। তাহলে যুদ্ধে বজয়ী হওয়ার মূল অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায় নিগূঢ় ভালোবাসা। বউকে আদর দিয়ে কত কী বোঝাল, মানালো। বিনিময়ে বউটি শুধু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা গুঁজে থাকল। পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ একটি গুহা। পুরুষ মানুষের বক্ষঃগহ্বরের মতো শ্রেষ্ঠ গুহা আর দ্বিতীয়টি নেই। এই গুহায় যে নারী প্রকৃত স্থান পায় সেই জানে পৃথিবী কত সুন্দর! জীবন কত সুখময়!
.
.
ভোরবেলা সুহাস তৈরি হচ্ছিল। রাতে সুহৃদ জ্বালিয়েছে আজ খুব৷ ঘুম হয়নি নামীর৷ তাই সে ঘুমুচ্ছে। ঘুম সুহাসেরও হয়নি৷ তবু আজ বন্ধু, বান্ধবীরা আসবে। কিছু বাজার করতে বেরুচ্ছে সে। তৈরি হয়ে বেরোনোর জন্য পা বাড়াতেই শুনতে পেল,

‘ কোথায় যাচ্ছো? ‘

হাই তুলতে তুলতে উঠে বসল নামী৷ সুহাস থেমে গেল। ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে বলল,

‘ বাজারে। ‘

চকিতে বিছানা ছাড়ল নামী। চিন্তিত হয়ে বলল,

‘ তুমি বাজার করতে পারবে! ‘

‘ পারতে হবে। ‘

ইশ! সুহাসকে কি এত কাঠিন্য, গম্ভীরতা মানায়? এ যেন হঠাৎ করেই দুরন্ত কিশোর পরিপক্ব যুবকে পরিণত হয়েছে। চুলোয় যাক সে চিন্তা। সুহাস যেই রূপেই পদার্পণ করুক৷ আগে বুঝতে হবে তাকে নিয়ে ওর অনুভূতিটা এই মুহুর্তে ঠিক কী? অনুভূতি না বুঝে সে পূর্ণ অধিকার খাঁটাতে পারবে না৷ সে জানে সুহাসের কাঁধে এখন অনেক বোঝা৷ এসব বহন করতে প্রচণ্ড মানসিক শক্তি প্রয়োজন। প্রয়োজন শারীরিক সুস্থতাও। আর একজন যোগ্য সঙ্গিনী। নিজেকে অবশ্যই যোগ্য মনে করে নামী। সে আত্মবিশ্বাস আছে তার৷ কিন্তু তাকে সুহাস পজিটিভলি কতটুকু নেবে তা নিশ্চিত না হয়ে পা বাড়ানোর সাহস পাচ্ছে না৷ স্বামী শব্দটা আজ বড়ো ভারিক্কি লাগছে নামীর৷ বেআক্কল, চঞ্চল, মাথা খারাপ সুহাস যতটা সহজ ছিল আজ এই নির্লিপ্ত, গম্ভীর সুহাস ততটাই কঠিন৷ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল নামী৷ রয়েসয়ে বলল,

‘ আমি আসি তোমার সঙ্গে? ‘

কপাল কুঁচকে তাকাল সুহাস৷ কিছু একটা ভেবে অনুমতি দিতে গিয়েও থেমে গেল৷ সুহৃদের পানে তাকিয়ে বলল,

‘ ঘুমুচ্ছে একা রেখে যাওয়া যাবে না। কান্না করবে। ‘

‘ কিচ্ছু হবে না৷ কাউকে বলে যাই খেয়াল রাখতে। কতক্ষণই বা দেরি হবে? ও উঠতে উঠতে আমরা চলে আসব। ‘

সন্তানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান বাবা, মা৷ কাকে ভরসা করবে সুহাস? তার চিন্তা কমালো নামী। চট করে বাইরে গিয়ে এদিকওদিক তাকিয়ে দেখতে পেল সুহাসের মামাত বোন রঞ্জিতাকে। ওকে ডেকেই দায়িত্ব দিল। যদি তারা আসার আগে উঠে যায় খেলনা দিয়ে মন ভুলাতে। এরপর ঝটপট ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ল। বাজার দূরে নয়৷ হেঁটে পাঁচ মিনিট৷ তাই গাড়ি বা বাইক নিল না। সকালবেলা হাঁটা শরীর, মন উভয়ের পক্ষে ভালো৷ তাই নামীই বলল,

‘ চলো হেঁটেই যাই। মনটা ভালো লাগবে। ‘

এক পলক তাকাল সুহাস। কিছু বলল না৷ হাঁটতে শুরু করল। নামী তাকিয়ে রইল ওর দিকে। বোঝার চেষ্টা করল হাবভাব। এরপর আশপাশে তাকিয়ে ওটা, সেটা প্রশ্ন করল। সুহাস উত্তর দিল কিছু। পথে দেখা হলো কয়েকজন পরিচিত মানুষের সঙ্গে। কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে কথা বলল তাদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথা বলে মন আরো বিষাদে ভরে গেল সুহাসের৷ সবাই আহারে, উহারে করছে। বাবার নামে প্রশংসা করছে। ‘ তোমার বাবা খুব ভালো মানুষ ছিলেন ‘ সুহাস জানে তার বাবা কেমন ছিলেন। বাবার ছেলে হিসেবে নিজের প্রতি আজ ধিক্কার আসছে৷ এ জীবনে সে কিছুই করতে পারল না। পড়াশোনা করে ডাক্তারি সার্টিফিকেট অর্জন করলেই মানুষ হওয়া যায় না৷ সফলতাকেও স্পর্শ করা যায় না। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সুহাস। ওর মুখাবয়ব দেখে নামীর বুক চিনচিন করে উঠল। সুহাস কেন কিছু বলছে? ওর একটু রাগ ঝাড়া বোধহয় প্রয়োজন। একটু রাগ, একটু অভিযোগ আর বুক পরিষ্কার করে কান্না। হাঁটতে হাঁটতে ওরা বাজারে পৌঁছে গেল। পরিচিত এক মুরুব্বি ডাক দিল,

‘ সুহাস না? ‘

‘ জি আংকেল আসসালামু আলাইকুম। ‘

‘ ওয়ালাইকুমুস সালাম। বাজার করতে আসছ বাবা। পাশে কে? ‘

‘ আমার স্ত্রী নামী রহমান। ‘

ভদ্রলোক তাকালেন নামীর দিকে। বললেন,

‘ বেশ বেশ। শুনেছি বউও ডাক্তার। ‘

স্মিত হাসল সুহাস৷ নামী চুপ৷ ভদ্রলোক ফের বললেন,

‘ কী করবা তাহলে বাবার এতবড়ো ব্যবসা দুজন মিলেই হাল ধরো নাকি? দূরে চাকরিবাকরি করলে এগুলো কে দেখভাল করব৷ ‘

‘ জি ভাবছি৷ দোয়া করবেন। ‘

কথা বাড়াল না সুহাস৷ এগিয়ে গেল। নামী ওর পিছু নিয়ে চলল কাঁচা বাজারের দিকে। মাথায় রাখল ভদ্রলোকের বলা কথাটি। সত্যি তো! সোহান আংকেল নেই এখন৷ ক্লিনিক গুলোর দায়ভার কার ওপর রয়েছে? সবকিছু ঠিকঠাক চলছে তো? এ ব্যাপারে সুহাসের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সিমরানের মতামতও গুরুত্বপূর্ণ। মালিকানা তো দু’ভাইবোনই পাবে এবার৷ সুহাস চাইলে সে মিলেমিশে সবকিছুর হাল ধরবে। সোহান খন্দকার যে আশা প্রত্যাশ্যা নিয়ে তাকে পুত্রবধূ করেছিল। সেগুলো পূরণ না করতে পারলে, সংসারটাকে নতুন করে সাজাতে না পারলে অশান্ত মনটা শান্ত হবে না৷ রেহাই পাবে না অপরাধী মন।

সবকিছুর বেশ চড়া দাম৷ প্রথম দোকানে গিয়ে টমেটো কিনল সুহাস৷ যা দাম চাইল তাই দিল। নামী কিছু বলার সুযোগ পেল না৷ কিন্তু পরের দোকানে অন্যান্য সবজি কিনতে গিয়ে সুহাসকে কিছু বলার সুযোগ দিল না৷ জামাকাপড়ের মতো সবজিতে তেমন দরদাম করা যায় না। তবু সবকিছুতে দশ টাকা হলেও কম দিল নামী। সুহাস ইশারা করল অনেক৷ তার ভীষণ লজ্জা লাগছিল। এমন না যে সে কম টাকা নিয়ে বাজারে এসেছে। বর্তমান যা বাজারমূল্য জানে সে। তাই পকেটে টাকা থাকা সত্বেও এমন কিপ্টেমি করার মানে হয় না। সবজির দোকান থেকে ওরা এবার মুরগির দোকানে পা বাড়ায়। সুহাস স্বাভাবিক গলায় বলে,

‘ এমন করে দাম করছ কেন! কী ভাববে উনারা? আমাদের কি পয়সা নেই?’

আশ্চর্য হয়ে তাকাল নামী। মানে টা কী? টাকা আছে বলে যে যা দাম চাইবে তাকে তাই দিতে হবে? চোখ দুটো ছোটো ছোটো করে সে বলল,

‘ টাকা থাকলেই যা চাচ্ছে তাই দিব নাকি? ‘

‘ উনারা বিজনেস করে নামী৷ সবজি বিক্রি করেই সংসার চালায় উনারা। ‘

‘ আহারে দরদ, তোমার কি মনে হয় দু পয়সা লাভ না করেই যে দাম বলেছি তাতে দিয়েছে? ‘

‘ তুমি দামাদামি করবে না। জাস্ট সব দেখে দেখে নিবে। পে আমি করব৷ ‘

‘ শুধু দেখে দেয়ার জন্য তো আসিনি৷ জীবনে বাজারঘাট করোনি জানি বলেই কীভাবে দামাদামি করে ভালো জিনিস কিনতে হয় শেখাতে এসেছি। ‘

‘ দামাদামি শেখাতে হবে না। লোকে ছোটোলোক বলবে৷ ‘

‘ আরেহ বাবা ছোটোলোক বলবে কেন? তুমি কী বোকা সুহাস। এভাবে চলাফেরা, কেনাকাটা করলে তো আমার সংসারটা উচ্ছ্বন্নে যাবে! ‘

সহসা চুপসে গেল সুহাস। থমকানো দৃষ্টিতে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে সরে গেল। নিশ্চুপ হয়ে গেল নামীও। চুপচাপ মুরগির দোকানে ঢুকল। সুহাস দামাদামি করতে নিলে সে ত্বরিত গিয়ে মুরগি কেজিতে পঞ্চাশ টাকা কম বলল। সুহাসের যেন মাথা কাটা গেল এবার। চোখ রাঙিয়ে চুপ করতে বলল। নামী কথা শুনল না। বিশ টাকা কমই দিল৷ সুহাস বিড়বিড় করে বলল,

‘ নিয়ে আসাটাই ভুল হয়েছে।’

নামী কথাটা স্পষ্ট না শুনলেও বুজে ফেলল। দোকান থেকে বেরিয়ে মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলল,

‘ রাগ করছ কেন? জীবনে চলার পথে সবকিছুতে হিসেব নিকেশ করে চলতে হয়। বাবা, মায়ের অবর্তমানে গোটা সংসার এখন আমাদের হাতে। বাচ্চাদের মতো করে তো চলা যাবে না৷ পকেটে এক কোটি টাকা থাকুক। তবু হিসেব করে খরচ করতে হবে। বেহিসাবি মানুষের কখনো ধন হয় না৷ বাবা, মা তাদের যে ধন রেখে গেছে তা তো রক্ষা করতে হবে? তারা তৈরি করেছেন আমাদের জন্য। তা রক্ষা করে আরো বেশি তৈরি করতে হবে আমাদের বাচ্চাদের জন্য। ‘

অসন্তুষ্টি কিছুটা কমল সুহাসের। দু’জনের দু’হাতে বাজারের ব্যাগ৷ পাশাপাশি হাঁটছে আর নামীর কথা শুনছে। হঠাৎ পাড়ার কয়েকটা ছেলেকে আসতে দেখল। এই এক্ষুনি পাশ কাটিয়ে যাবে তাদের। সুহাস অতি কৌশলে নামীর ডান পাশে চলে এলো। নিমেষে তার পাশ কাটিয়ে চলে গেল বারো, তেরো জন যুবকের দলটি। কথা বলার ফাঁকে বিস্ময়কর এই ঘটনাটি মনে দাগ কাটল নামীর৷ নতুন করে এক টুকরো প্রেমের হাওয়া দোল দিল কি মনে? দিল বোধহয়। তাই তো শ্যামলাটে মুখটা আরক্ত হলো। ছেলের মা বুঝি টোপ করে প্রেমে পড়ে গেল ছেলের বাবার? সুপাত্র, সুকৌশলে যত্নবান পুরুষ হয় যদি ছেলের বাবা, লজ্জাকে প্রশ্রয় না দিয়ে ছেলের মা নতুন করে প্রেমে হাবুডুবু খেতেই পারে।
.
.
চলবে!
® জান্নাতুল নাঈমা

ত্রিধারে তরঙ্গলীলা পর্ব-৮৩

0

#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৮৩|
লিভিং রুমে মামা, মামি আর নানুমনি বসে ছিল। সদর দরজা পেরিয়ে সেখানে উপস্থিত হলো সৌধ, সুহাস, নামী। সৌধ সবাইকে সালাম দিয়ে যতটুকু সম্ভব কথাবার্তা বলল। এরপর চলে গেল সিমরানের কাছে। সুহাস নিশ্চল দেহে ঠাঁই দাঁড়িয়ে। পাশে বাচ্চা কোলে নামী৷ দৃষ্টি ছলছল, মুখশ্রী বিমর্ষ। তীব্র আলোড়ন হৃদয়ে। নিজেকে প্রাণপনে শক্ত রাখার চেষ্টা করল নামী। আড়দৃষ্টিতে তাকাল সুহাসের পানে। দেশের মাটিতে পা দেওয়ার পর পরই সত্যিটা জানানো হয় সুহাসকে। বেচারা বিশ্বাস করেনি৷ আসলে এই নির্মম সত্যিটুকু বিশ্বাস করার সাহস হয়নি ওর। কিন্তু সত্যিটা তো আর অস্বীকার করা যাবে না। অস্বীকার করা গেলেও তা মিথ্যা হয়ে যাবে না৷ উপস্থিত সবাই নির্বাক। সুহাস তার অবিশ্বাস্য, রক্তিম চোখ দু’টো নানুমনির পবিত্র মুখপানে স্থির রেখে কয়েক পা এগুলো। লম্বাটে, বলিষ্ঠ শরীরটা আচমকা ছেড়ে হাঁটু ভেঙে বসল সামনে। নানুমনি হাত বাড়াল। নাতির মাথায়, মুখে বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

‘ মৃত্যুতে আমাদের কোনো হাত নাই নানাভাই৷ তুমি নিজেকে সামলাও। তোমার এখন অনেক দায়িত্ব। বাবা, মায়ের ফেলে যাওয়া সব দায়িত্ব এবার তোমাকে নিতে হবে৷ ‘

লাল টকটকে ফ্যাকাশে মুখটা স্থবির হয়ে তাকিয়ে। কান্না উপচে আসছে। কিন্তু ছেলেটা কাঁদতে পারছে না৷ মানুষ অল্প শোকে কাতর হয়। অধিক শোকে হয় পাথর৷ সুহাস আজকের পর কাঁদবে না আর। কাঁদতে পারবে না৷ সে এক মূর্তিমান পাথর। যে ভেতর থেকে একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেছে। তীব্র কষ্টে কান্নাটা গিলে ফেলে অসহায়, বেদনার্ত কণ্ঠে সুহাস বলল,

‘ আমি এতিম হয়ে গেলাম নানুমনি! যারা আমাকে এ দুনিয়ার আলো দেখাল তারা কেউ নেই। আমি এই সত্যিটা কীভাবে মেনে নিব? আমি আমার বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে পারলাম না! একটাবার ছুঁতে পারলাম না। আমার মতো হতভাগা কেন এ পৃথিবীতে জন্মেছিল বলতে পারো? ‘

রক্ত লাল ওই চোখ বেয়ে অশ্রু গড়ায় না। কিন্তু গড়াতে চায়৷ ছেলেটা জোর করে আঁটকায় রক্তাশ্রু। এ পৃথিবীটা এখন তার কাঁদার জন্য না। আজ থেকে গোটা পৃথিবীতে লড়াই করে বাঁচতে হবে তাকে৷ বটগাছের মতো ছায়া দিয়ে যেতে হবে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। এই ঘর, তাকে ঘিরে থাকা মানুষ, বাবার রেখে যাওয়া দায়িত্ব। সব যেন তার দুকাঁধে চেপে আছে৷ কী আশ্চর্য! বিনা নোটিশে কীভাবে সে একটা গাছে রূপান্তরিত হলো। তার ছায়াতলে এই ঘর, সংসার আর মানুষ গুলো। শরীর কাঁপছে সুহাসের। মাথা তুলে রাখতে পারছে না৷ বুকের ভেতর যেন একশোমণ বোঝা৷ সে শ্বাস নিতে পারছে না। কষ্ট হচ্ছে তীব্র। অথচ বলতে পারছে না৷ সে আর কখনো বলতে পারবে না তার ব্যথা কোথায়, কিসে?

আলাদা দেশ৷ আলাদা আবহাওয়া। অপরিচিত পরিবেশ আর মানুষ দেখে সুহৃদ কান্না শুরু করল। সবারই ধ্যান ভাঙল তখন৷ চকিতে তাকাল নামীর পানে। ওর কোলে থাকা ফুটফুটে বাচ্চার পানে। আচমকা সুহাসের বড়ো মামি বলে উঠল,

‘ আহারে কী সুন্দর বাচ্চা। এই বংশের প্রদীপকে না দেখেই দুলাভাই বিদায় নিল৷ ‘

ছোটো মামির স্বর অন্যরকম৷ সে ক্রুদ্ধ হয়ে নামীকে দোষারোপ করতে করতে বলল,

‘ এখন এসেছ কেন? সংসারটা একেবারে গিলে খেয়ে তারপর আসলা! সেই যখন আসবাই এত নাটক করে সবার কলিজা ঝাঁজরা করলা কেন? কেমন মেয়ে মানুষ তুমি? নিজের জেদের কারণে একটা পরিবারই ধ্বংস করে দিলা৷ ছেলেটা বাবাকে শেষ দেখা পর্যন্ত দেখতে পারল না। নিষ্পাপ বাচ্চা আদর পেল না দাদার৷ দুলাভাইও তার বংশধর দেখতে পারল না। ‘

সংসার জীবন খুবই জটিল৷ নারীরা তাদের মনের মতো সংসার গড়ে তুলতে পারলেও সংসারে থাকা প্রতিটি মানুষকে মনের মতো গড়ে তুলতে পারে না৷ ছোটো মামির কথাকে গুরুত্ব দিল না নামী৷ তার কাছে ইম্পর্ট্যান্ট সুহাস আর সুহাসের পরিবার। এর বাইরে কাউকে বা কারো কথাকে সে পাত্তা দেয় না৷ আজ এ পরিবারে সুহাস, সিনু আর সুহৃদ ছাড়া কেউ নেই৷ তাই অন্য কেউ কী বলল? কেন আঙুল তুলল এসব নিয়ে ভাবার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। যে মানুষটা একদিন সম্মান দিয়ে ভালোবেসে এ ঘরে তুলেছিল তাকে। আজ সে মানুষটা আর নেই। তীব্র এক যন্ত্রণায় সেও পুড়ছে। আফসোস নামক শব্দটা তাকেও পীড়া দিচ্ছে। কিন্তু ভাগ্যের ওপর, সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধান্তের ওপর তাদের মতো নগন্য মানুষের হাত নেই। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল নামী। সুহৃদকে সামলে রাখতে হিমশিম খেলো। বড়ো মামি এগিয়ে এসে কোলে নিতে চাইল ওকে। সুহৃদ তাকে দেখে আরো বেশি কান্না শুরু করল। নামী অসহায় চোখে তাকাল সুহাসের পানে। সুহাসের মন বিধ্বস্ত। জানে সে তবু একটি ভয় বিঁধছে বুকে। আবারো সুহাস তাঁকে ভুল বুঝবে না তো। অভিযোগ করবে না তো? জেনেভায় যে সম্পর্ক নতুন করে সুর খুঁজে পেয়েছে। তা আবার হারিয়ে যাবে না তো? নামীর প্রতি সবাই অসন্তুষ্ট থাকলেও সুহৃদের কান্নাকাটির জন্য অস্থির হয়ে পড়ল৷ কীভাবে বাচ্চাটা থামবে তা নিয়ে হৈচৈ বেঁধে গেল। নানুমনি বলল,

‘ মনে হয় ওর খিদে পাইছে।’

নামী নিজেও বুঝতে পারল সুহৃদের খিদে পেয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এমনই যে সে এখন কী করবে ভেবে পেল না৷ সুহাস এ মুহুর্তে তাকে কীভাবে গ্রহণ করবে? এ বাড়িতে তার স্থান কী? অধিকারই বা কতটুকু। এই নিয়ে দ্বিধায় ভুগতে শুরু করল। এমতাবস্থায় অকস্মাৎ উঠে দাঁড়াল সুহাস। রক্তিম চোখে তাকাল নামীর পানে। মুখটা গম্ভীর। বুকের ভেতর ছ্যাঁৎ করে উঠে নামীর৷ সুহাস দুর্বল চিত্তে এগিয়ে আসে। মুখোমুখি হয় ওর। সম্পূর্ণ অচেনা এক কণ্ঠস্বরে বলে উঠে,

‘ নিজের ঘরে যাও। ফ্রেশ হয়ে খাইয়ে ঘুম পাড়াও ওকে। ‘

এরপর তাকায় বড়ো মামির দিকে। আপাততঃ ছোটো মামিকে কিছু বলার নেই। তাই বড়ো মামিকেই বলে,

‘ বড়ো মামি আপনি ওদের সাথে থাকুন আপাতত।’

বড়ো মামি সঙ্গে সঙ্গে নামীকে নিয়ে সুহাসের ঘরে পা বাড়ায়। আর সুহাস স্তম্ভিত মুখাবয়ব নিয়ে যায় তার একমাত্র, আদুরে বোনটির কাছে। তার এখন অনেক দায়িত্ব অনেক। সবচেয়ে বড়ো দায়িত্ব হলো হতভাগী বোনটাকে আশ্বস্ত করা সে আছে। তার ভাই আছে। সেই ছোট্ট বেলা থেকে বাবা, মায়ের অনুপস্থিতিতে যেভাবে ছিল আজো ঠিক সেভাবেই আছে। আর সারাজীবন এভাবেই থেকে যাবে।
.
কিছু মুহুর্তে সান্ত্বনা নামক শব্দটি বড্ড বেশি বেমানান লাগে৷ আজ সৌধর কাছেও বেমানান লাগছে এই শব্দটিকে। নিশ্চল, ফিনফিনে শরীরটা বুকে আগলে বসে আছে সে। পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ বুকটিতে মাথা রেখে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে সিমরান। একেকটা নিঃশ্বাস যেন বহুদিন কেউ আঁটকে রেখেছিল। যা আজ মুক্ত পাখির ন্যায় উড়োউড়ি করছে৷ জমিয়ে রাখা কান্না গুলোও আপন নীড় পেয়ে উপচে বেরুচ্ছে। বুকের মাঝখানটায় শার্ট ভিজে চুপেচুপে সৌধর। চোখ বুজে সে স্থির করল নিজেকে। শান্ত করার চেষ্টা করল সিমরানকে। বলল,

‘ যে কষ্টটা তুমি পাচ্ছ। এটা বোঝার ক্ষমতা তোমার মতো ভুক্তভোগীদেরই আছে। আমি সান্ত্বনা দিচ্ছি না সিনু৷ আমি নির্ভরতা দিচ্ছি। তুমি যা হারিয়েছ তা হয়তো ফিরে আসবে না৷ কিন্তু সৃষ্টিকর্তা তোমাকে সবুর দেবে৷ দু-হাত ভরে পূর্ণতা দেবে। একটু সামলে নাও। মূল্যবান কিছু যেমন হারালে সৃষ্টিকর্তা মূল্যবান কিছু উপহারও দেবেন৷ এটাই জগত জীবনের নিয়ম৷’

বিরামহীন অশ্রু ঝড়ল সিনুর চোখ বেয়ে৷ দু-হাতে খামচে ধরল সৌধর শার্ট। বুকের বা পাশে কপাল ঠেকিয়ে কাঁপা স্বরে বলল,

‘ আমি এতিম হয়ে গেলাম সৌধ৷ আমার বাবা, মা কেউ রইল না, কেউ না। ‘

সৌধ চুপসে গেল। বুকের ভেতর যন্ত্রণা হলো তীব্র।
পরমুহূর্তেই আবার নিজেকে সামলে নিয়ে সিমরানের গালদুটোতে আলতো হাতে স্পর্শ করল। অশ্রুসিক্ত, অসহায় দৃষ্টিজোড়ায় কোমল দৃষ্টি রেখে কপাল ঠেকাল কপালে। দু’হাতের বুড়ো আঙুলে অশ্রু মুছে
নরম সুরে বলল,

‘ নিজেকে এভাবে ভেঙে দিও না বউপাখি৷ তোমার সৌধ আছে তো তোমার কাছে। মাথার ওপর ছায়া হয়ে, পাশে ঢাল হয়ে আর হৃদয়ে প্রশান্তি হয়ে আছে।’

চোখ মেলে তাকাল সিমরান। ওর ভেজা পাপড়ি গুলো থেকে অশ্রু মুছে দিল সৌধ৷ এরপর কপালে চুমু এঁটে বলল,

‘ আমার স্ত্রী অসহায় নয়। আমার স্ত্রী দুর্বল হতে পারে না। তাকে সবার সহায় হতে হবে। তাকে সব পরিস্থিতিতে শক্ত থাকতে হবে। সে এতিম নয়৷ তার বাবা, মা, ভাই, ভাবি আর স্বামী সৌধ চৌধুরী আছে৷ সব আছে তার সব৷ ‘

এ পর্যন্ত বলেই কিঞ্চিৎ আকুল স্বরে বলল,

‘ সিনুপাকনি, আমার আব্বা, আম্মা কি তোমার কেউ নয়? ‘

ফুপিয়ে উঠে সিমরান। নিজেকে কিছুতেই বোঝাতে পারছে না সে। সামলাতে পারছে না কোনোভাবে। সৌধ ওকে বুকে আগলে নেয় আবারো। ওরা একে-অপরের মাঝে খুঁজতে থাকে পরম সুখ, শান্তি। সুহাস দরজায় টোকা দেয়। ধীরেসুস্থে ওরা একেঅপরের থেকে সরে যায়। ভেতরে ঢুকে সুহাস। সিমরান এতদিন নিজেকে শান্ত, শীতল রেখেছিল। এতক্ষণ সৌধর সামনেও বীভৎস ভাবে ভেঙে পড়েনি। কিন্তু সুহাসকে দেখে সে নিজের সব খোলস ছেড়ে দিল। গগনবিদারী এক চিৎকার করল ‘ভাইয়া’ ডেকে। সুহাস ছুটে এলো নিমেষে। বোনকে জাপ্টে ধরল বুকে। ভাইয়ের বুকে মুখ গুঁজে হাউমাউ করে কাঁদল সিমরান। সৌধর দেহের আপাদমস্তক কেঁপে উঠল সেই কান্না দেখে। বিস্ময়াপন্ন হলো বিমূঢ় মুখের শক্তরূপী সুহাসকে দেখে। ভাইবোন দু’জনকেই বুকে আগলে ধরল সে। ক্ষীণ স্বরে সুহাসকে বলল,

‘ আই এম সরি দোস্ত। ‘

সৌধ যখন জানতে পারে সোহান আংকেল আর নেই। তখন কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিল না৷ এরপর তার আব্বা সুজা চৌধুরী নিজেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। সৌধ চেয়েছিল, সুহাসকে কিছু না জানিয়ে যতদ্রুত সম্ভব ওকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসবে৷ সোহান আংকেলের জানাজা পড়ে দাফনে অংশ নেবে৷ কিন্তু নামীকে সহ নিয়ে যাওয়া নিয়ে জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে। সুহাস নামীকে ছাড়া যাবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়ে যায়৷ এদিকে সুজা চৌধুরী দাফনে দেরি করতে নারাজ৷ সে সৌধকে বলে, মৃত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব জানাজা পড়িয়ে দাফন করতে হয়৷ হাদিস তুলে ধরেও সৌধকে বোঝায় সুজা চৌধুরী। মা, বাবা দুনিয়াতে নেই। বউয়ের সঙ্গেও সম্পর্কে ফাটল। যারা চলে গেছে তাদের তো আঁকড়ে ধরা যাবে না আর৷ তাই যারা আছে তাদের আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে হবে। আব্বার সে কথা মেনেই সুহাসকে ওদেশে কিচ্ছু জানায়নি সৌধ৷ দেশের মাটিতে পা রেখেই সবটা অবগত করেছে। সুহাস এ নিয়ে অবশ্য কাউকে দোষারোপ করল না শুধু নিজের ভাগ্যটুকু ছাড়া৷
.
.
তিনদিন পর:

মন মেজাজ ভালো নেই ফারাহর। সোহান আংকেলকে শেষবার দেখতে পারেনি সে। বিষয়টা নিয়ে ডিপ্রেশনে ভুগছিল৷ কত চেয়েছিল একবার যাবে দেখতে। শাশুড়ি আর স্বামীর আপত্তি থাকায় যেতে পারেনি৷ সবচেয়ে বড়ো বাঁধা শাশুড়িই দিয়েছে। গর্ভবতী নারীদের নাকি মৃতমুখ দেখতে নেই। স্ত্রীর প্রতি, সন্তানের প্রতি আইয়াজ ভীষণ দুর্বল। তাই মায়ের কথায় ভয় পেয়ে সাহস করেনি নিয়ে যাওয়ার। নামী, সুহাস বাংলাদেশে এসেছে। তাদের একমাত্র সন্তান সুহৃদকে নিয়ে। প্রিয় বান্ধবীর ওপর শত অভিমান থাকলেও মনটা ভীষণ ছটফট করছে ফারাহর। একছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করছে সুহাসদের বাড়ি। ছোট্টসোনাকে আদর করতে মনে আকুলিবিকুলি করছে। নিজের সেই অনুভূতি গুলো আইয়াজকে বললে সে রাজি হলো না৷ ফারাহ তাই অভিমান করে ঘরে এসে শুয়ে পড়ল। এরপর আর আইয়াজের সাথে কথা বলেনি সে। আইয়াজ কত চেষ্টা করল কথা বলার। বলল না। খাবারদাবারেও অরুচি ধরে গেল ফারাহর৷ খেয়াল করে ডিপ্রেশনে চলে গেল৷ মায়ের কাছে গিয়ে বলল,

‘ আমি ফারাহকে নিয়ে একবার টাঙ্গাইল যেতে চাই মা। কয়েকদিন বেড়িয়ে আসি ওখান থেকে। ‘

মা আশ্চর্য মুখে তাকাল৷ বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,

‘ তোর বউ তো দেখি বড্ড ঘাউড়া। এই অবস্থায় না বেড়ালে তার চলবে না? আর তো কয়টা মাস। তারপর তো সে মুক্ত। এটুকু ধৈর্য্য সহ্য হচ্ছে না? বেশ, যা খুশি কর৷ কোনো বিপদ ঘটলে আমাকে বলতে পারবি না, তুমি তো না করো নাই মা। ‘

শাশুড়ির কথা স্পষ্ট শুনতে পেল ফারাহ৷ এমনিতেই মন, মেজাজ ভালো নেই। অমন কথা শুনে মন ঘেঁটে গেল আরো। শান্ত মেজাজি সে সহসা উত্তপ্ত হয়ে উঠে ডাকল আইয়াজকে,

‘ আমি কোথ্থাও যাব না আয়াজ। ‘

এ প্রথম ফারাহর অমন ক্ষোভ মিশ্রিত কণ্ঠ শুনে অবাক হয়ে গেল শাশুড়ি। আইয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ দেখছিস দেখছিস তোর বউয়ের গলা? ‘

ঘর থেকে ফারাহর কান্নার শব্দ শোনা গেল। আইয়াজ আহত গলায় বলল,

‘ প্লিজ মা চুপ করো। ওর এই অবস্থায় তুমি এভাবে রাগ দেখিয়ে কথা না বলে একটু মোলায়েম সুরেও তো বলতে পারো। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো, আমাদের ভালো চাও৷ তাই আদেশ, নিষেধ করো। আমার রিকোয়েস্ট মা, তুমি সেসব একটু বিনয়ী হয়ে করো। আর আমি ফারাহকে নিয়ে সুহাসদের ওখানে যাবই। ওর দেখভাল, সেফটি সবটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। বউ আমার, বাচ্চা হবে আমার। ওদের সম্পূর্ণ দায়ভারও আমার। তুমি শুধু রাগ না করে আমাদের জন্য দোয়া করো। ‘

একশ্বাসে কথাগুলো বলে ঘরে এলো আইয়াজ৷ ফারাহ জেদি স্বরে বলল,

‘ আমি কোথাও যাব না। যাব না মানে যাব না। ‘

আইয়াজ ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,

‘ রাগ করে না৷ কী কী নিতে হবে বলো গুছিয়ে দিচ্ছি। আমরা কাল বেরুবো। ‘

‘ বললাম না যাব না? ‘

‘ আমি বললাম তো তোমাকে নিয়ে যাব। ‘

ফারাহ চ্যাঁচিয়ে উঠায় আইয়াজ ধমকে উঠল। ফলশ্রুতিতে চুপসে গেল ফারাহ৷ মাথা নত করে অশ্রু বিসর্জন দিল। আইয়াজে ওর থুতনি ছুঁয়ে মুখ উঁচু করে চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল,

‘ কাঁদে না। অবাধ্যতা করে না। ‘

ফারাহ চোখ তুলল না৷ আইয়াজ ওর সারা মুখে আদুরে স্পর্শ দিয়ে বলল,

‘ কথা শুনো বউ। কাঁদে না৷ বেবিরা কষ্ট পাচ্ছে। উহুম কাঁদে না৷ ‘

বলতে বলতেই হাঁটু মুড়িয়ে বসল। ফারাহর পেট বরাবর কান পেতে বলল,

‘ দেখেছিস তোদের মা কেমন ছিঁচকাদুনে? তোরা কি কাঁদবি শুধু আয় একবার৷ মায়ের কান্না দেখতে দেখতেই নিজেদের কান্না ভুলে যাবি। ‘

চুপ করে ছিল ফারাহ৷ শেষ কথা শুনে হেসে ফেলল কিঞ্চিৎ। তার সব দুঃখ সুখে, সব কান্নাকে হাসিতে পরিণত করার অসম্ভব ক্ষমতার অধিকারী আইয়াজ। নিজেকে শান্ত করল সে। এরপর স্বামী-স্ত্রী উচ্ছ্বসিত মনে নিজেদের ব্যাগপত্র গুছাতে শুরু করল।
.
একটু একটু করে দিন এগিয়ে চলবে। মলিন হবে সকল বিষণ্ন বেদনা৷ তবু দিনশেষে রয়ে যাবে একচ্ছত্র দীর্ঘশ্বাস। সুহৃদকে নিয়ে নিজের ঘরে বসে আছে সিমরান। সুহৃদ নিত্য, নতুন খেলা দিয়ে খেলছে। আর সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে আদর দিচ্ছে আব্বু, আব্বু ডেকে। নামীর সঙ্গে কথা বলে না সে৷ মন থেকে আগ্রহ পায়নি কথা বলার। তাই বলেনি৷ যদি মন থেকে আগ্রহ পায় কখনো তবেই বলবে। নামী সেধে এসেছিল কয়েকবার। সে এড়িয়ে চলে এসেছে। সুহৃদকে তার কাছে নিয়ে এসেছে সৌধ৷ মানুষটা তাকে ভালো রাখার, খুশি করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। একটুক্ষণের জন্যও একা ছাড়ছে না। মাত্রই বেরুলো। হয়তো তার বাড়িতে যাবে। তাই সুহৃদকে কাছে দিয়ে গেল। সুহৃদের সঙ্গে সময় কাটাতে কাটাতেই এসে যাবে নিশ্চিত। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে ওর৷ ভাইটাকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে। হাসিখুশি, চঞ্চল ছেলেটা কেমন নীরব হয়ে গেল। তারা ভাইবোন কি সত্যি কখনো আর স্বাভাবিক হতে পারবে? এই শোক কি কোনোদিন কাটবে তাদের?

খেলতে খেলতে হঠাৎ কান্না শুরু করল সুহৃদ। কান্না শুনে ছুটে এলো নামী৷ সিমরানের কান্না থামাতে পারছিল না৷ তাই নামী হাত পাতলে ওর কাছে দিয়ে নিজে সরে গেল। নামীও আর দেরি করল না। বেরিয়ে এসে ছেলেকে নিয়ে হাঁটতে লাগল বারান্দা দিয়ে৷ নিচ থেকে সুহাস উঠে এলো,

‘ কাঁদছে কেন? ‘

‘ জানি না, ঘুমানোর সময় হয়েছে বলেই হয়তো।’

সুহাস কোলে নিল সুহৃদকে। গম্ভীর গলায় বলল,

‘ বাইরে হেঁটে আসি৷ ঘুমালে নিয়ে আসব। ‘

আর দেরি করল না৷ নিচে নেমে গেল সুহাস৷ নামী হাঁপ নিঃশ্বাস ছেড়ে রুমে চলে গেল। তার মন ঠিক বুঝে উঠছে না সে। সুহাস কি তাকে অপরাধী করে রেখেছে মনে মনে? দিলখোলা ছেলে সুহাস৷ মনের ভিতর গিঁট বেঁধে রাখে না কিছু। মনে যা আসে মুখে বলে দেয় তা৷ চেনা সেই সুহাসের আজ এত পরিবর্তন বুকে হাহাকার তুলছে৷ একঘরে এক বিছানাতে থেকেও যেন বিশাল দূরত্ব তাদের মাঝে। অপ্রয়োজনে একটা কথাও বলে না৷ যতটুকু প্রয়োজন সব সুহৃদকে ঘিরেই। কবে স্বাভাবিক হবে সব, কবে? যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা কী দিয়ে পূরণ করবে সে? ঘরে এসে নামী দেখল ওর ফোন বাজছে। স্ক্রিনে সৌধ ভাইয়া নামটি জ্বলজ্বল। রিসিভ করতেই সৌধ বলল,

‘নামী আগামীকাল আইয়াজ, ফারাহ আসবে। আমি নিধিকেও ফোন করে ইনভাইট করে রাখি কী বলো?’

বিষণ্ন মনে এক টুকরো উষ্ণ হাওয়া বয়ে গেল। মৃদু হেসে নামী বলল,

‘ সত্যি! ফারাহ আসবে? হ্যাঁ হ্যাঁ নিধি আপুকেও কল করুন। আপনাদের অনুপস্থিতিতে আপু যেভাবে সবটা সামলেছে, পাশে থেকেছে। একবার মিট করে অন্তত কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। ‘

সৌধ এ ব্যাপারে আর কিছু বলল না। নামীর মতামত টুকু নিয়ে ফোন কেটে দিল। এরপর কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে কল করল নিধির ফোনে। দুপুরের রান্না বসিয়েছে নিধি৷ অর্পণ স্যার অনিরূপকে মুখে মুখে ইংরেজি বর্ণমালা শেখাচ্ছে। দু’বছর পূর্ণ হয়নি অনিরূপের৷ দু’মাস পর হবে। আধো স্বরে এ,বি এই দুটো বর্ণমালা সে বলতে পারে। ছেলেকে পড়ানোর সময়ই ফোনটা বেজে উঠল৷ নিধি ফোনের শব্দ পেয়ে রান্না ঘর থেকেই হাঁক ছাড়ল,

‘ স্যার, ফোনটা রিসিভ করে নিয়ে আসুন। ‘

অচেনা নাম্বার থেকে কল। রিসিভ করে সালাম দিল অর্পণ। একজনের ফোন আরেকজন ধরেছে৷ হোক হাজব্যান্ড। ফোন ধরবে কেন? মেজাজ খিঁচে উঠল সৌধর। পরপরই দমে গেল একটি কথা ভেবে। যদি সিনুর ফোনে কল আসত। সে কী ধরত না? তারা স্বামী-স্ত্রী। লাইফ পার্টনারদের অধিকার সম্পর্কে সে অজ্ঞ নয়৷ নিমেষে শান্ত হয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। সালাম ফিরিয়ে বলল,

‘ আমি সৌধ চৌধুরী বলছি। ‘

নীরব হয়ে গেল অর্পণ। ব্যস্ত পায়ে রান্নাঘরে ছুটলে সৌধ বলল,

‘ ধন্যবাদ। ‘

নিধিকে ফোন দিতে উদ্যত হয়েও থেমে গেল অর্পণ শিকদার। ধন্যবাদ? এটা কেন বুঝতে পারল না সে। অতীতে যা ঘটেছে সবটাই মিস্টেক৷ এরজন্য আইয়াজ, সুহাস সরি বলেছে তাকে। শুধু সৌধ ছাড়া। সৌধর থেকে অবশ্য সে সরি এসপেক্ট করে না৷ সৌধ ওই ধাঁচের ছেলেই নয়। কিন্তু ধন্যবাদ কেন?
মনের প্রশ্নটি মুখে বলার পূর্বেই সৌধ নিজে থেকেই বলল,

‘ আমার শশুরের মৃত্যুতে পাশে থাকার জন্য। আমার স্ত্রীর অসুস্থতায় সঠিক চিকিৎসা দিয়ে পাশে থাকার জন্য। ‘

‘ ধন্যবাদের কিছু নেই। এটা আমার রেসপনসিবিলিটির মধ্যে ছিল। সিমরান আমার স্ত্রীর প্রিয় বন্ধু সুহাসের বোন, সৌধর বউ। এছাড়াও আমি একজন ডক্টর। ‘

এ পর্যন্ত বলেই নিধির কাছে ফোন দিল অর্পণ। হতভম্ব মুখে নিধি ফোন নিলে সৌধ বলল,

‘ আগামীকাল সুহাসদের বাড়িতে আসার নিমন্ত্রণ রইল। আইয়াজ, ফারাহও আসবে। বন্ধুদের মধ্যে আজিজকেও ফ্রি পেলাম৷ আশা করি তুইও আসবি।’

ক্ষীণ স্বরে সম্মতি দিল নিধি। সৌধ স্মিত হেসে বলল,

‘ রূপকে নিয়ে আসিস৷ সুহৃদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে যাবে। ‘
***
ভরসন্ধ্যায় শুয়ে আছে সিমরান। সৌধ এসে পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

‘ অবেলায় শুয়ে থাকতে নেই সিনু। শরীরে রোগ বাসা বাঁধে। দেখি উঠো। সেলিনা আপা কফি আনছেন। একসঙ্গে কফি খাব। ‘

উত্তরে বিস্ময়কর এক কথা বলল সিনু। যা সৌধ কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। সে উঠে বসে সৌধর চোখে চোখ রেখে আকুল কণ্ঠে বলল,

‘ আমরা কখনো বেবি নিব না সৌধ প্লিজ। ‘

মাথায় যেন বজ্রপাত ঘটল। আচমকা ওর মুখে তর্জনী চেপে ধরল সৌধ। চোখ রাঙিয়ে শীতল একটি ধমক দিয়ে বলল,

‘ হুঁশশ, আর কক্ষনো যেন এমন কথা বলতে না শুনি। ‘

চলবে!
® জান্নাতুল নাঈমা

Revenge of love Part-15 & last part

0

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Last_Part

নতুন দিনের সূচনা। চারিদিকে সূর্যের সোনালি আভা ছড়িয়ে পড়েছে। পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ শুনে নন্দিতার ঘুম ভাঙ্গে। আধবোজা চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে নিজের অবস্থা। যখন বুঝতে পারলো নন্দিতা বেডে শুয়ে আছে তখনেই তড়িঘড়ি করে নিজের গায়ের উপরে থাকা কম্বলটা সরিয়ে শুয়া থেকে‌ উঠে বসে মনে মনে ভাবে।

“বেডে,বেডে কি করে আসলাম আমি? আর রাফি.. ও কোথায়?”

কথাটা ভেবে যখন বেড থেকে নামতে নিবে এমন সময় রাফি ওয়াশরুম থেকে বের হয় চুল মুছতে মুছতে। নন্দিতা রাফির দিকে তাকিয়ে শুকনো একটা ঢোক গিলে। নন্দিতা ভেবে নিয়েছে রাফি ওকে একটা জোরে ধমক দেবেই দেবে। কিন্তু রাফি নন্দিতার ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে মজার ছলে বলে।

“কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমার বুঝি শরম লাগে না।”

রাফির মুখে এমন ধরনের কথা শুনে নন্দিতার চোখের আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় বড় হয়ে যায়। দু তিন বার চোখের পাতা ঝাপটে আমতা আমতা করে বলে।

“না মানে আমি আসলে, আমি সত্যি জানি না বেডে কি করে আসলাম? আমি এক্ষুনি বেড থেকে নেমে যাচ্ছি।”

নন্দিতা তাড়াহুড়ো করে বেড থেকে নামতে গিয়ে মাথা ঘুরে যায় আর সাথে সাথে বেডে বসে পড়ে। রাফি দ্রুতে পায়ে নন্দিতার কাছে গিয়ে নন্দিতাকে ধরে চিন্তিত হয়ে বলে।

“কি হয়েছে শরীর খারাপ লাগছে।”

“না আসলে মাথাটা হঠাৎ করে ঘুরে গেছে। ঠিক আছি এখন আমি।”

রাফি কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “ঠিক নেই তুমি তোমার চোখ মুখ বলে দিচ্ছে সেটা, যে তুমি ঠিক নেই।”

রাফির কথা শুনার পরেও নন্দিতা জোর কাটিয়ে উঠতে চায় কিন্তু রাফি ধমক দিয়ে বলে, “উঠছো কেন?”

“ওয়াশরুমে যাবো।”

“চলো আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।”

নন্দিতা অবাক হয়ে বলে, “মানে।”

রাফি হুট করেই নন্দিতাকে কোলে তুলে নেয়। হঠাৎ করে এমন হওয়াতে নন্দিতা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে রাফির পানে। রাফি নন্দিতার চাওনি উপেক্ষা করে বলে।

“এভাবে চলো।”

রাফি নন্দিতাকে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে, “নাও এবার ফ্রেশ হও।”

নন্দিতা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে, “তোমার সামনে ফ্রেশ হবো?”

“তাতে প্রবলেম কি?”

নন্দিতা চোখ বড় বড় করে তাকায় রাফির দিকে। নন্দিতার তাকানো দেখে রাফি বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে তুমি ফ্রেশ হও আমি বাইরে আছি।”

কথাটা বলে রাফি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে আর নন্দিতা ওয়াশরুমে দরজা আটকিয়ে ভাবতে থাকে।

“হলোটা কি? ও এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন? আবার নেশাটেশা করলো নাকি।”

রাফির কন্ঠ ভেসে আসে, “কি হলো তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হও।”

“হে হচ্ছি।”

নন্দিতা আর কিছু না ভেবে ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলে বের হতে নিবে তখনই দেখে রাফি দাঁড়িয়ে আছে। রাফি নন্দিতাকে দেখার সাথে সাথে নন্দিতাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দেয় আর নন্দিতা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রাফির কান্ডগুলা দেখছে।

রাফি বলে, “এখান বসে থাকো চুপচাপ আমি আসছি।”

রাফি চলে যেতেই নন্দিতা বলে উঠে, “কি হচ্ছে এসব? গত কাল সকালেও তো আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলো আর আজকে এমন করছে কেন?”

একটু পর রাফি এক প্লেট খাবার নিয়ে এসে নন্দিতার পাশে বসে। নন্দিতা বোকার মতো বলে, “এসব কি?”

“দেখতে পারছো না কি এগুলা! কালকে রাতে তো কিছু খাও নি তার উপর জ্বর বাধিয়ে বসে আছো নাও এবার হা করো।”

নন্দিতা হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলে, “আমি নিজে খেতে পারবো তো।”

রাফি চোখ রাঙিয়ে বলে, “হা করতে বলছি তো নাকি!”

নন্দিতা চুপচাপ খাবারটা খেয়ে নেয় আর মনে মনে বলে, “কি হচ্ছে এগুলা? আমি কি স্বপ্ন দেখছি না যা হচ্ছে সব বাস্তব।”

“খাবারটা শেষ করো পরে বুঝতে পারবে স্বপ্ন নাকি বাস্তব।”

নন্দিতা আজকে অবাকের শেষ চূড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। মাথা কেমন জানি ভনভন করছে। এ যেন আগের রাফির প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে এখনকার রাফির মাঝে।

রাফি নন্দিতাকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে অফিসে চলে যায় আর যাওয়ার আগে নন্দিতাকে আরো অবাক করে দিয়ে কপালে চুমু এঁকে দিয়ে জলদি চলে আসব বলে চলে যায়।

_______

নন্দিতা সারাদিন শুয়ে বসে কাটিয়েছে। যখন সবাই জানতে পেরেছে নন্দিতার জ্বর এসেছিল তখন থেকে নন্দিতার সব ধরনের কাজ করা বারণ। সারাদিনে রাফি অনেক বার কল করে নন্দিতার খোঁজখবর নিয়েছে। রাফির হঠাৎ এমন আচরণ নন্দিতাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে।

সন্ধ্যায় রাফি বাড়িতে এসেই নন্দিতাকে আরও একদফা অবাক করে দিয়ে বলে, “নন্দিতা রেডি হয়ে নাও, নয় টায় ফ্লাইট ধরতে হবে।”

নন্দিতা ভ্রু কুচকে বলে, “মানে কোথায় যাবো?”

রাফি সরল গলায় বলে, “কেন হানিমুনে ভুলে গেছো নাকি?”

নন্দিতা হতভম্ব হয়ে বলে, “হানিমুন! কিন্তু তুমি তো?”

রাফি কন্ঠে গম্ভীরতা এনে বলে, “তুমি কি রেডি হবে নাকি আমি রেডি করিয়ে দিবো তোমাকে।”

নন্দিতা ভয় পেয়ে দ্রুত গলায় বলে, “না না আমি রেডি হচ্ছি কিন্তু।”

রাফি গম্ভীর গলায় বলে, “আবার কি?”

“না না কিছু না।”

কথাটা বলেই নন্দিতা চুপচাপ আলমারি থেকে কালো রঙের একটা জামদানি শাড়ি নিয়ে চেইন্জ করতে‌ চলে যায় ওয়াশরুমে। নন্দিতা চেইন্জ করে বের হয়ে দেখে রাফি নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগে ঢুকাছে। রাফি নন্দিতার দিকে চোখ তুলে তাকায়। জ্বরের কারণে নন্দিতার চোখ মুখে ফুলে আছে আর সেই ফুলোফুলো মায়াবী মুখটা রাফিকে একটু বেশিই টানছে ইদানিং। রাফি আস্তে আস্তে করে নন্দিতার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর নন্দিতা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফি নন্দিতার কানের কাছে মুখটা নিয়ে মৃদু গলায় বলে।

“খুব অবাক হচ্ছো তাই না আমি কেন হঠাৎ এমন করছি, একবার হানিমুনে চলো তারপর বুঝতে পারবে।”

নন্দিতা রাফির কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। রাফি পুনরায় বলে।

“তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসো ডিনার করে বের হবো।”

রাফি রুম থেকে বের হয়ে যায়। নন্দিতা বিড়বিড়িয়ে বলে, “হানিমুনে গিয়ে কি হবে আবার?”

নন্দিতা রেডি হয়ে নিচে নেমে ডিনার করে সময় মতো বেরিয়ে যায় হানিমুনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ফ্লাইটে বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল নন্দিতা ঠিক মনে নেই। সকালে নন্দিতার ঘুম ভাঙ্গে, চোখ খুলে নিজেকে নরম তুলতুল বেডের উপরে অবিষ্কার করে। নন্দিতা উঠে বসে ঘরের চারদিকটা ভালো করে পর্যবেক্ষন করে দেখে অচেনা একটা ঘরে সে।‌ নন্দিতা ভয়ে ঢোক গিলে মনে মনে বলে।

“আমি এখানে এলাম কি করে? আমি তো ফ্লাইটে ছিলাম। রাফি কোথায় ও কি আমাকে এখানে একা রেখে চলে গেছে।”

এসব চিন্তা করে নন্দিতা শব্দ করে কেঁদে দেয়।‌ রাফি নন্দিতার কান্নার আওয়াজ শুনে দ্রুত পায়ে বেলকনি থেকে এসে নন্দিতার মুখটা ধরে বলে।

“কি হয়েছে জান এভাবে কান্না করছো কেন?”

কান্না করেই যাচ্ছে নন্দিতা। অনেক চেষ্টা করছে কান্না থামনোর জন্য কিন্তু কান্না থামাতেই পারছো না। রাফি অস্থির গলায় বলে।

“আরে তুমি কান্না করছো কেন? বলবে তো আমায় কি হয়েছে? আর আমি তো এখানেই ছিলাম।”

নন্দিতার কান্না থামছে না দেখে রাফি নন্দিতার কান্নারত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে। হাসিও পাচ্ছে আবার খারাপও লাগছে নন্দিতার কান্না দেখে। এত বড় একটা মেয়ে এভাবে কান্না করছে যে কিনা চাইলেই বাচ্চা জন্ম দিতে পারবে। তবে রাফি এটা বুঝতে পারছে না নন্দিতা কান্না করছে কেন? খারাপ‌ স্বপ্ন টপ্ন দেখেছে নাকি আবার। রাফির নজর যায় নন্দিতার শুষ্ক লাল রাঙা ঠোঁট জোড়ার দিকে। রাফি ঢোক গিলে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু না পেরে রাফি নন্দিতার শুষ্ক ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। হুট করে নিজের সাথে এমন হওয়াতে নন্দিতা বড় বড় চোখ করে তাকায়। নন্দিতা রাফির‌ থেকে দূরে সরে যেতে চাইলে রাফি নন্দিতার কোমড় ধরে নিজের আরো কাছে টেনে নেয়।

কিছুক্ষন পর রাফি নিজে থেকেই নন্দিতাকে ছেড়ে দেয়। নন্দিতা লজ্জায় তাকাতে পারছে না রাফির দিকে। রাফি মুচকি হেসে নন্দিতার ঠোঁটে নিজের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে কোমল গলায় বলে।

“এবার বলো কান্না করছিলে কেন?”

কিন্তু নন্দিতা তারপরও নাক টানছে। নন্দিতার নাক টানা দেখে রাফি কপট রাগ দেখিয়ে বলে।

“আবার কান্না করলে কিন্তু এবার আর চুমু খাবো না অন্য কিছু করবো। তখন কিন্তু আমাকে দোষারুপ করতে পারবে না। যা হবে সব কিন্তু তোমার দোষের জন্য হবে।”

নন্দিতা চোখ তুলে রাফি দিকে তাকায় আবাক হয়ে। রাফি তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে নন্দিতার ডান হাতটা ধরে নরম গলায় বলে।

“কি হয়েছে বলো কান্না করছিলে কেন? না বললে বুঝবো কি করে যে আমার একমাত্র বউটা কেন কান্না করছিলো।”

নন্দিতা ধরা গলায় বলে, “আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো তাই ভয়ে কান্না করে দিয়েছিলাম।”

রাফি নন্দিতার কথা শুনে স্বশব্দে হেসে বলে, “এটার জন্য কান্না করছিলে আমি ভেবেছিলাম কি না নাকি?”

কথাটা বলে নন্দিতা কপালে পড়ে থাকা চুল‌ গুলা কানে গুজে দিয়ে বলে, “আর তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা কোথা থেকে আসছে? একবার তো ছেড়ে দিয়েছিলাম তাহলে ফিরে এলে কেন আবার? আর এক বার যখন ফিরে এসছো তাহলে আর ছাড়বো না কোনো দিন তোমাকে। বেঁধে রাখব সারা জীবন তোমাকে‌ নিজের হৃদয়ের গহিনে।”

নন্দিতা নিচু স্বরে বলে, “তুমি এমন করছো কেন রাফি আমার সাথে? আমি এসব নিতে পারছি না প্লিজ এভাবে স্বপ্ন দেখাবা না আমাকে।”

রাফি মুচকি হেসে নন্দিতাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলে, “এটা স্বপ্ন না, এটা বাস্তব। তুমি কি ভেবেছিলে কিচ্ছু জানতে পারবো না আমি। আমি সব জানতে পেরেছি কেন বা কার জন্য এসব করেছিলে সব?”

“মানে।”

রাফি নন্দিতাকে ছেড়ে বল, “মানেটা এখন না জানলেও হবে‌ তোমার। শুধু রাতটার জন্য অপেক্ষা করো তখন জানতে পারবা। এবার উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও নাস্তা করতে হবে।”

“রাতে কি হবে?”

“সারপ্রাইজ ম্যাডাম। সারপ্রাইজ বলে দিলে কি এটা আর‌ সারপ্রাইজ থাকে তাই না জানলেও চলবে আপনার। আর রাতের জন্য নিজেকে তৈরি রেখো।”

রাফি কথাটা বলে নন্দিতার কপালে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে চলে যায়। নন্দিতা চিন্তিত হয়ে বলে।

“কি জেনেছে রাফি? ও কি সবকিছু জেনে গেলো নাকি তার জন্য এমন করছে আমার সাথে। কিন্তু কার কাছ থেকে জেনেছে?”

রাাফির চিৎকার শুনে নন্দিতা তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। নিচে নেমে নন্দিতা আরো এক দফা অবাক হয়। এত বড় বাড়ি চারিদিকে এত দামি আর সুন্দর সুন্দর জিনিস গুলা। নন্দিতা সব কিছু খুব ভালো করে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। রাফি নন্দিতার হাত ধরে ডায়নিং টেবিলে বসিয়ে দিয়ে বলে।

“খাওয়া শুরু করো।”

“কোথায় এসেছি আমরা?”

“পাহাড়ে।”

“পাহাড়ে কেন এসেছি?”

রাফি মজার ছলে বলে, “কারন তোমাকে পাহাড় থেকে টুস করে ফেলে দিব‌ তাই পাহাড়ে এসেছি।”

“কিহ?”

“আর একটা কথা বললে তোমাকে কিন্তু সত্যি সত্যি পাহাড় থেকে ফেলে দিবো।”

নন্দিতা ভয়ে আর কিচ্ছু না বলে চুপচাপ খাওয়া শুরু করে দেয়। আর রাফি ফোনে কারো সাথে কিছু একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছে।

নন্দিতা খাওয়া দাওয়া শেষ করে বেলকনিতে এসে দাঁড়াতে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়‌ সমানে থাকা মনোরম দৃশ্যটা দেখে। বড় বড় পাহাড় চারদিকে সবুজে ঘেরা।‌‌ পাহাড়ের উপর সাদা মেঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে‌ যে গুলা বাতাসের সাথে ভেসে যাচ্ছে।

এর কিছুক্ষন পরে রাফি নন্দিতাকে‌ এসে বলে যায় সে একটা ইম্পর্টেন্ট কাজে বাইরে যাচ্ছে ফিরতে নাকি সন্ধ্যা হবে। আর সাথে এটাও বলে গেছে নন্দিতা যেন খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করে নেয়। নন্দিতার আর কি করার একা একা সারাটা দিন কটাতে হলো। এটা নাকি তাদের হানিমুন একা একা হানিমুন কাটাতে হচ্ছে নন্দিতাকে।

সারা দিন রাফির দেখা মিললো না। হঠাৎ করেই গৌধুলী বেলায় নন্দিতার রুমে তিনজন প্রবেশ করলো। তা দেখে নন্দিতা কিছুটা চমকে বলে।

“কারা আপনার?”

“ম্যাম রাফি স্যার আমাদের পাঠিয়েছেন আমাকে রেডি করে দেওয়ার জন্য।”

“রেডি করাতে মানে কিসের জন্য?”

“এটা তো জানি না আপনাকে শুধু সাজিয়ে দিতে হবে এটা আমাদের বলা হয়েছে।”

নন্দিতা মনে মনে বলে, “রাফি করতে কি চাইছে?”

নন্দিতা আর কিছু বলে না। ওরা নন্দিতাকে সাজাতে শুরু করে।এক ঘন্টা পর নন্দিতার সাজ কমপ্লিট হলো। কালো শাড়িতে নন্দিতাকে অসাধারণ লাগছে।

“ম্যাম এবার চলুন।”

“কোথায় যাবো?”

“আপনি চলুন দেখতে পাবেন।”

নন্দিতাও ওদের কথামতো নিচে যায়। নিচে যাওয়ার সাথে সাথে রাফির মেসেজ আসে।

❝গাড়িতে উঠে পড়ো আর ভয় পাওয়ার কিছু হয় নি। ওদেরকে আমি পাঠিয়েছি।❞

নন্দিতা মেসেজটা পড়ে গাড়িতে উঠে বসে। প্রায় আধ ঘন্টা পর গাড়ি থামে তার নিজের গন্তব্য স্থানে। নন্দিতা গাড়ি থেকে নেমে ভীষণ অবাক হয় রিসোর্ট টা দেখে। রিসোর্টের চারিদিকে ছোট ছোট বাহারি রঙের লাইট জ্বলছে। নন্দিতার ফোনে আবারো মেসেজ আসে।

❝গেইট খুলে ভিতের আসো।❞

নন্দিতা রাফির কথামতো ভেতরে প্রবেশ করে। আবার রাফি মেসেজ করে।

❝এবার সিড়ি বেয়ে সোজা ছাদে আসো।❞

নন্দিতা মেসেজটা পড়ে চারিপাশে তাকিয়ে রাফিকে খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু রাফির কোনো চিহ্ন দেখতে পায় না। আবার নন্দিতার ফোনে মেসেজ আসার শব্দ হয়।

❝কি হলো? দাঁড়িয় আছো কেন? জলদি আসো অপেক্ষায় আছি তো তোমার!❞

নন্দিতা রাফির‌ পাঠানো মেসেজ পড়ে মুচকি হেসে এক পা এক পা করে ভেতরে এগিয়ে যায়। যত এগিয়ে যাচ্ছে নন্দিতা ছাদের দিকে তত হার্টবিটের গতি বেড়ে যাচ্ছে। এমনটা কেন হচ্ছে তা নন্দিতা বুঝতে পারছে না। ছাদের দরজার কাছে এসে নন্দিতা জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করে দরজা খুলে ছাদে প্রবেশ করে তো পুরাই শকড। চারিদিকে লাইটিং করা, ছাদের মেঝে জুড়ে হার্ট শেপের লাল বেলুন। ছাদের ঠিক মাঝ বরাবর একটা টেবিল আর দুইটা চেয়ার রাখা। হঠাৎ করেই নন্দিতার উপরে গোলাপ ফুলের পাপড়ি পড়তে থাকে তাতে তো নন্দিতা মহাখুশি আর দু হাত মেলে ঘুরতে থাকে। একপর্যায়ে ঘুরতে ঘুরতে রাফিকে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নন্দিতা থেমে যায়। ছাদের রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দু হাত বুকে গুজে রাফি নন্দিতার দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে আর মিটিমিটি হাসছে। নন্দিতা রাফিকে দেখে ভরকে যায় কারন রাফি তো এতক্ষণ এখানে ছিলো না হঠাৎ করেই উদয় হলো কোথা থেক? রাফির চাওনিতে নন্দিতা ভীষন লজ্জা পায়। কিন্তু নন্দিতা রাফির দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে না। রাফিও আজ কালো পড়েছে, কালোতে রাফি একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে। কিন্তু নন্দিতা তো লজ্জায় তাকাতেই পারছে না তাই নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে। রাফি কিছুক্ষণ নন্দিতার দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করে এক পা এক পা করে নন্দিতার দিকে এগিয়ে আসে। রাফি নন্দিতার কাছে যত এগিয়ে আসছে তত হার্টবিট এর গতি বেড়ে আসচ্ছে। রাফি নন্দিতার কাছে এসে দাঁড়ায় কিন্তু তখনও নন্দিতা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

রাফির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নন্দিতাই মুখ তুলে উপরের তুলে রাফির দিকে তাকায়। কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে রাফি নন্দিতার দিকে। নন্দিতা পুনরায় মুখটা নিচের দিকে করতেই রাফি ফিচেল স্বরে বলে।

“প্লিজ নন্দিতা এভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে থেকো না আমার দিকে তাকাও।”

নন্দিতা নিচের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমরা এখানে কেন এসেছি।”

রাফি নন্দিতার দিকে কিছুটা ঝুঁকে নন্দিতার কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিস করে বলে।

“হানিমুন করতে। কেন তুমি জানো না? জানো আজকে না তোমাকে অনেক আকর্ষণীয় লাগছে কালো শাড়িতে।”

নন্দিতা ঘাড় বাঁকিয়ে রাফির দিকে ফিরে তাকায়। নন্দিতার গায়ের শাড়িটা কিছুটা পাতলা হওয়ার কারনে নন্দিতার সাদা পেটটা দেখা যাচ্ছে সুস্পষ্ট ভাবে। রাফি সহসা নন্দিতার কোমড়ে হাত রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়‌।‌ নন্দিতা তো আজকে বার বার শকড হচ্ছো রাফির কান্ডে। রাফি আবারও ফিসফিসিয়ে বলে।

“কি ভেবেছো আমি কিচ্ছু জানতে পারবো না। আমি সবটা জানতে পেরে গেছি। সুমন সব বলেছে আমায়।”

নন্দিতা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে,”সুমন।”

“হুমম সুমন! যা যা হয়েছে সব বলেছো ও আমায়। ওই দিন যদি আমার ফোনটা বন্ধ না থাকতো তাহলে না তোমাকে কষ্ট পেতে হতো না আমাকে। আচ্ছা আমি খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমাকে তাই না। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি কিন্তু তোমার করা অবহেলা গুলা খুব কষ্ট দিতো আমাকে। আচ্ছা আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না। আমার ভেতরটা না ছারখার হয়ে যাচ্ছে এই ভালোবাসা নামক যন্ত্রণার কাছে।

নন্দিতা কিচ্ছু বলে না। নন্দিতার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। রাফি বুঝতে পারে নন্দিতা কান্না করছে। নন্দিতার কোমড় ছেড়ে নন্দিতার চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বলে।

“একদম কান্না করবা না।”

“সরি আমি জানি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে কিন্তু আমি যে তখন নিরুপায় ছিলাম। তাই মা বাবার ভালো জন্য নিজের ভালোবাসাকে কোরবানি দিতে হলো। কিন্তু দেখো ভ্যাগের কি লিলা সেই ভালোবাসা আবারও ফিরে এলো আমার কাছে।”

রাফি নন্দিতার চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বলে, “হয়েছে তোমার কান্না এবার চলো ডিনার করি।”

রাফি আর নন্দিতা ডিনার করে ছাদের এক কোণে বসে আছে। রাফি নন্দিতাকে‌ পেছন থেকে শক্ত করে জাড়িয়ে ধরে নন্দিতার চুলের ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত। হঠাৎ করেই নন্দিতা বলে উঠে।

“দিয়া কোথায় আছে এখন?”

রাফি নন্দিতার কথায় বিরক্ত হয়ে বলে, “জানি না আর ওর কথা শুনতেও চাই না আমি। তাই ওর কথা শুনতে চাই না আমাদের মাঝে।”

নন্দিতা পেছন ফিরে বলে, “কিন্তু।”

রাফি নন্দিতার ওষ্টদ্বয়ের উপরে তর্জনী রেখে বলে, “কোনো কিন্তু না চুপচাপ থাকো।”

নন্দিতা আর কথা বাড়ায় না। অনেক রাত পর্যন্ত রাফি আর নন্দিতা এভাবে বসে রইলে।‌ কিন্তু হঠাৎ করেই রাফি নন্দিতাকে কোলে তুলে নিয়ে ছাদের চিলেকোঠার ঘরটার দিকে হাটা ধরে। আকস্মিক ঘটনায় মৃদু চিৎকার করে নন্দিতা রাফির গলা জাপটে ধরে। ভয়ে ভয়ে নন্দিতা রাফি পানে তাকালো রাফির চোখে মুখে অন্য কিছুর আভাস পাচ্ছে নন্দিতা, যেটা মেয়ে হয়ে ঠিকেই বুঝতে পারছে।

রাফি নন্দিতাকে কোলে করে এনে চিলেকোঠার ঘরটাতে নামায়। নন্দিতা ঘরের চারদিকটা দেখে অবাক হয়। চারিদিকে লাল গোলাপ, বেলিফুল আরো নাম না জানা ফুল দিয়ে সাজানো সারা ঘরটা। ছোট ছোট মোমবাতির আলোতে ঘরটা আলোকিত হয়ে আছে। রাফি দরজাটা শব্দ করে লাগিয়ে দেয়। দরজা লাগানোর শব্দ শুনে ইষৎ কেপে উঠে। রাফি নন্দিতাকে আলতো হাতে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে।

“কেমন হয়েছে ঘর সাজানোটা?”

নন্দিতা নিচু গলায় বলে, “সুন্দর হয়েছে।”

রাফি নন্দিতাকে নিজের দিকে ঘুরায়। নন্দিতা মাথাটা নুয়ে রেখেছে। রাফি দু হাত দ্বারা নন্দিতার মুখ আবদ্ধ করে মুখ উপরে তুলে নন্দিতার কপালে গভীরভাবে ভালোবাসার‌ পরশ এঁকে দেয়। নন্দিতা রাফি ভালোবাসার পরশটা চোখ বন্ধ করে অনুভব করে। রাফি নন্দিতার বন্ধ করে রাখা চোখে চুমু দিয়ে নন্দিতার কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।

“আজকে যদি তোমাকে নিজের করে পেতে চাই তাহলে কি তুমি বাধা দিবে নন্দিতা। আমি না নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করে রেখেছি প্রতিনিয়ত। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আর পারবো না সত্যি বলছি। যদি আজকে বাধা দাও তাহলে সত্যি আমি পাগল হয়ে যাবো। তাই প্লিজ বাধা দিও না। খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে তোমাকে এক্কেবারে গভীর ভাবে। যে ভালোবাসার গভীরতা মাপা যায় না শুধু অনুভব করা যায়।”

নন্দিতা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না, নিজের দু চোখের পাতা খুলে রাফির চোখের দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। রাফি শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে নন্দিতার দিকে। কিন্তু রাফির চোখের ভাষা সম্পূর্ণ ভিন্ন, বড্ড ছন্নছাড়া লাগছে দেখতে, ঘন ঘন ভারি নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর ছাড়ছে। নন্দিতা সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে ঢোক গিলে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিয়ে রাফির বুকে ধীরে ধীরে মাথা রেখে এক হাত দিয়ে রাফির পিঠ জড়িয়ে ধরো।রাফি মুচকি হাসি দিয়ে নন্দিতাকে কোলে তুলে নেয়। নন্দিতা চোখ বন্ধ করে আছে। লজ্জায় নন্দিতা চোখ মেলা তাকিয়ে থাকতে পারছে না। রাফি নন্দিতাকে বেড শুইয়ে দিয়ে নিজেও আধ শুয়া হয়ে নন্দিতার পাশে শুয়ে পড়ে। নন্দিতার বন্ধ দু চোখের পাতায় পুনরায় চুমু এঁকে দেয়। নন্দিতা রাফির শার্টের কলার শক্ত করে মুঠো বন্ধ করে নেয়। রাঈির পুরুষালী হাতের ছোঁয়া গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। আস্তে আস্তে দুজনে মাঝে সব আবরণ একে একে সরে যায়। নন্দিতার দু চোখ বেয়ে দু ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। নন্দিতার এ‌ই চোখের জল কষ্টের না বরং সুখের। আজকের চাঁদটাও লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রেখেছে নন্দিতা আর রাফির ভালোবাসা দেখে। এত দিনের, এত বছরের ভালোবাসা আজ দুজনের মিলনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ হল।

মাাঝ রাত, রাফির উনমুক্ত লোমশ বুকে নন্দিতা মাথা রেখে শুয়ে আছে। নন্দিতা লজ্জায় রাফির দিকে তাকাতে পারছে না। কিয়ৎক্ষণ আগে দুজনের মাঝে যা ঘটেছে তা বার বার চোখ ভাসছে নন্দিতার। রাফির প্রত্যেকটা ছোঁয়া নন্দিতার শরীরের বয়ে গেছে যা কোনো দিনেই ভুলার মতো না।

চারিদিক এখনও অন্ধকার হয়ে আছে। মোমবাতি গুলো নিভে গেছে। তবে জানলা দিয়ে চাঁদের আবছা আলো আসছে। রাফি নন্দিতার হাতের আঙ্গুলের মাঝে নিজের আঙ্গুল ঢুকিয়ে নন্দিতার হাতের পাতায় চুমু দিয়ে বলে,

“যন্ত্রণা হচ্ছে নন্দিতা। ব্যথা কিংবা আনকম্ফোর্টেবল।”

রাফির কথা শুনে নন্দিতার ইচ্ছে করছে মাটির নিচে চলে যেতে। এসব প্রশ্ন না করলেই কি নয়। নন্দিতাকে চুপ মেরে থাকতে দেখে রাফি পুনরায় বলে।

“কি হলো, কিছু জিঙ্গেস করছি তো?”

নন্দিতা নিচু গলায় বলে, “ঠিক আছি আমি।”

রাফি নন্দিতাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলে।

“ধন্যবাদ জান। নিজেকে আমার কাছে এতটা গভীর ভাবে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য।”

নন্দিতা কিছু না বলে নিজেকে আরো গুটিয়ে নেয় রাফির বাহুডোরে। রাফি মুচকি হেসে নন্দিতার চুলের ভাঁজে হাত বুলাতে বুলাতে বলে।

“ঘুমাও। নিশ্চিন্তে ঘুমাও।”

________

চার বছর পর নন্দিতা ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ের পেছন পেছন দৌঁড়াচ্ছো আর ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটি তার ছোট ছোট পা দুটো ফেলে তার বাবার কাছে গিয়ে বাবার কোলে উঠে গলা জড়িয়ে ধরে বলে।

“পাপা তুমি মাম্মাম কে বলো আমি এখন খাবো না।”

রাফি মুচকি হেসে বল, “কেন আম্মু খাবে না কেন?

“আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।

“তা বললে কি করে হবে! না খেলে তুমি বড় হবে কি করে?”

“খাবার খেলে কি তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাবো।”

“হে তো। আমার নুফা খাবার খেলে জলদি বড় হয়ে যাবে।”

“ঠিক আছে তাহলে আমি খাবো।”

রাফি তার মেয়ে নুফাকে আদর দিয়ে দেয়। ঠিক সেই সময় নন্দিতা রুমে এসে রাগী গলায় বলে।

“রাফি তোমার এই পাজি মেয়েকে বোঝাও যাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়। আমি প্রতিদিন ওর পিছনে এমন ঘোড়ার মতো দৌঁড়াতে পারবো না বুঝলে।”

“আরে এভাবে বলছো কেন?”

“তো কিভাবে বলবো? সারা দিন ওর পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে জীবন শেষ আর তুমি বসে বসে বসে বলছো, এভাবে বলছো কেন?”

রাফি নুফাকে বলে, “নুফা আম্মু তুমি তোমার দাদুমনির কাছে যাও।তোমার মাম্মামকে একটু ঠান্ডা করি।”

নুফা চলে যেতেই রাফি নন্দিতার হাত ধরে নিজের কোলে বসিয়ে দিয়ে বলে, “খুব জ্বালায় না আমার দুষ্টু মেয়েটা।”

“ওর থেকে তুমি বেশি জ্বালাও আমাকে।”

“যাহ বাবা আমি আবার কখন জ্বালালাম তোমাকে?”

“এই ছাড়ো তো আমাকে আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।”

“আগেই তো অনেক ভালো ছিলে, এখন এমন মেজাজটা এমন খিটখিটে করে রাখো কেন? আগে আমাকে ভয় পেতে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমাকে তোমায় ভয় পেতে হবে।”

“আগের দিন বাঘে খাইছে মশাই। এখন আপনাকে আর আমি ভয় পাই না।”

রাফি নন্দিতাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, “সত্যি ভয় পাও না?”

“না পাই না। এই ছাড়ো তো আমার কাজ আছে।”

রাফি আচকমকাই তোমার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দেয়। নন্দিতা ব্যথায় কঁকুড়ে ওঠে। গলায় তেজ এনে বলে।

“এটা কি করলে তুমি?”

রাফি কৌতুকের স্বরে বলে, “ভয় পাও না তাই ভয় দেখানোর চেষ্টা করলাম এই আর কি।”

“হয়েছে তোমার ভয় দেখানো এবার ছাড়ো।”

রাফি নন্দিতাকে না ছেড়ে নন্দিতার ডান হাতের আঙ্গুলের মাঝে নিজের আঙ্গুল গুলো ঢুকিয়ে ফিসফিস করে বলে।

“অনেক দিন রোমান্স করি না চলো না একটু রোমান্স করি।”

নন্দিতা রাফি বুকে ধাক্কা দিয়ে বলে, “শখ কত? এক বাচ্চার বাপ হয়ে গেছে এখনও রোমন্স করতে চায়।”

রাফি বুক ফুলিয়ে বলে, “তো কি হয়েছে? এখন রোমান্স করে না হয় দু বাচ্চার বাপ হয়ে যাবো।”

“এই একদম না হে, একজনকে নিয়ে আমি খুব জ্বালায় আছি। আরেক জন আসলে আমি তাকে সামলাতে পারব না।”

“তোমাকে পারতে হবে।”

কথাটা বলে কোলে তুলে নন্দিতাকে বিছানায় রেখে দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে নন্দিতাকে বুকে সাথে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার জগতে ডুব দেয়। এভাবেই হাসি খুশিতে চলতে থাকে নন্দিতা আর রাফি সংসার জীবন।

______সমাপ্ত______

Revenge of love Part-14

0

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_14

নন্দিতা ছাদের কড়া রোদের মাঝে দোলনাতে বসে আছে নজর তার দূর আকাশের দিকে। নন্দিতার এখনও মনে পড়ে সেই ভয়ংকর দিনটার কথা যে দিনটাতে রাফি‌কে তার জীবন থেকে সরিয়ে দিয়ে ছিল। মাঝে মাঝে নন্দিতার মনে হয় এমন একটা দিন না আসলেও পারত তার জীবনে। এই দিনটা এসে তার জীবনটা এক্কেবারে তছনছ করে দিয়েছে। নন্দিতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। ভেসে ওঠে সেই বিভীষিকাময় ঘটনাটা।

“রাফি ভাইয়াকে এখানে আসতে বললি কেন হঠাৎ?”

সুহার কথা শুনে নন্দিতা নিচু গলায় বলে, “দরকার আছে।”

“তাহলে আমি চলে যাই।”

“না তুই থাক।”

নন্দিতার মলিন মুখখানার দিকে নজর ফেলে বলে, “কি হয়েছে নন্দিতা? তোকে এমন দেখাছে কেন?”

“কিছু হয় নি আমার।”

“তাহলে এমন দেখাছে কেন তোকে? কিছু তো একটা হয়েছে?”

নন্দিতা কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “বললাম তো কিছু হয় নি তারপরও এক কথা বার বার জিঙ্গেস করছিস কেন?”

নন্দিতার এভাবে রেগে যাওয়াতে বড্ড অবাক হয় সুহা। কিছু তো একটা হয়েছে নন্দিতার এটা বুঝতে পারছে সুহা কিন্তু কি হয়েছে এটা বুঝতে পারছে না। সুহা আর কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

কিছুক্ষণ পরেই রাফি আসে বাইকে করে। বাইকটা পাশে স্ট্যান্ড করে নন্দিতার কাছে এসে হাসি হাসি মুখ করে বলে।

“কি ব্যাপার ম্যাডাম এত জরুরি তলব? আর এই দুদিন কি এমন রাজকার্য করছিলেন যে আমাকে একটু টাইম পর্যন্ত দিতে পারেন নি।”

নন্দিতা কোনো কথা না বলে অসহায় মুখ করে রাফি দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। মন চাইছে রাফির বুকে মাথা রেখে একটু শান্তিতে কান্না করতে কিন্তু নন্দিতা এটা হয়ত চাইলেও পারবে না। তাই ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। রাফি নন্দিতার এমন চাওনি দেখে কোমল গলায় বলে।

“কি হয়েছে নন্দিতা? তোমাকে এমন লাগছে কেন? কত রাত ঘুমাও নি তুমি? চোখে মুখের এই অবস্থা কেন?”

রাফি নন্দিতাকে হাত বাড়িয়ে ছুঁতে যাবে সাথে সাথে নন্দিতা দু কদম পিছিয়ে যায়। রাফি নন্দিতার এমন করা দেখে বড্ড অবাক হয় সাথে সুহা কিছু অবাক হয়। কিন্তু পরক্ষণে রাফি বুঝতে পারলো পাবলিক প্লেস তাই হয়তো নন্দিতা পিছিয়ে গেছে। কিন্তু রাফির ভাবনা ভুল প্রমাণিত করে নন্দিতা বলে।

“আপনার সাথে আমি আর সম্পর্কটা কন্টিনিউ করতে পারবো না রাফি।”

নন্দিতার বলা কথাটা যেন রাফির কানে ঢুকলো না। মনে হচ্ছে যেন কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে। এমনটা তার নন্দিতা কোনো দিন বলতেই পারে‌ না। রাফি হেসে হেসে মাথা দুলিয়ে বলে।

“মজা করছো আমার সাথে তাই না তুমি নন্দিতা আর তুমি আমাকে আপনি করে কেন বলছো? তুমি তো আমায় তুমি বলে ডাকো।”

নন্দিতা গলার স্বর কঠিন করে বলে, “আমি কোনো মজা করছি না আপনার সাথে যা বলছি সত্যি বলছি।”

সুহা নন্দিতার বাহু ধরে বলে, “তোর মাথা ঠিক আছে নন্দিতা। কি যা তা বলছিস।”

নন্দিতা সুহার হাতটা নিজের বাহু থেকে সরাতে সরাতে বলে, “আমার মাথা একদম ঠিক আছে আর আমি যা বলছি সবটা সজ্ঞানে বলছি।”

রাফি শক্ত গলায় বলে, “তাহলে এত দিন যা ছিলো সবটাই কি অভিনয় ছিল তোমার।”

নন্দিতা ঢোক গিলে বলে, “ঠিক তাই সবটাই আমার অভিনয় ছিল।”

“স্রেফ অভিনয় ছিল আর কিছু ছিল না তোমার মনে আমার জন্য।”

“না আর কিছু ছিল না।”

রাফি মাথা ঘুরিয়ে চারপাশটায় নজর বুলিয়ে নিজেকে শান্ত রেখে বলে, “ঠিক আছে মানলাম তুমি অভিনয় করেছো আমার সাথে। কিন্তু কেন করলে এমনটা আমার সাথে? আমার মন নিয়ে খেলা করে তুমি কি পেলে। আনসার মি?”

শেষের কথাটা জোরে বলে উঠে রাফি। নন্দিতা চোখ বন্ধ করে নিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে, “এটা একটা বাজি ছিল।”

রাফি হতভম্ব হয়ে বলে, “বাজি। আমার সাথে তুমি বাজি ধরে সম্পর্ক তৈরি করেছো।”

নন্দিতা নিচু গলায় বলে, “হুম।”

রাফি এবার রেগে বলে, “আমার দিকে ফিরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে যে এটা বাজি ছিল আর কার সাথে তুমি বাজি ধরেছো?”

নন্দিতা সাথে সাথে রাফি দিকে ফিরে চোখে চোখ রেখে বলে, “হুম এটা একটা বাজি ছিল আর আমি সেই বাজিতে জিতেছি। তাই আমার মনে হয় আপনার সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক না রাখাই ভালো।”

রাফি দু কদম পিছিয়ে যায়। পা দুটো ভেঙ্গে আসছে রাফির। নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাফি নন্দিতার দিকে। নন্দিতা রাফি দিক থেকে নজর সরিয়ে বলে।

“এবার বিশ্বাস হয়েছে তো আমার কথা। এবার আমি আসি আমার অনেক কাজ আছে।”

নন্দিতা চলে যেতে নিলে রাফি নন্দিতার হাত চেপে ধরে বলে গম্ভীর গলায় বলে, “এত সহজে তোমাকে ছেড়ে দিব ভাবলে কি করে?”

“হাতটা ছাড়ুন প্লিজ।”

“কার সাথে তুমি বাজি ধরেছো ওর নামটা বলো?”

কথাটা বলে আরো শক্ত করে ধরলো নন্দিতার হাত। নন্দিতা কোনো কথা বলছে না ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রাফির দেওয়া ব্যথাটা‌ গ্রহণ করছে। নন্দিতাকে চুপ থাকতে দেখে রাফি কন্ঠে ক্রোধ এনে বলে।

“আনসার মি।”

নন্দিতা কিঞ্চিত কেপে উঠে। কিন্তু তারপরও নিজেকে শক্ত করে বলে, “হাতটা ছাড়ুন না হলে কিন্তু আমি চিৎকার করতে বাধ্য হব।”

নন্দিতার কথা শুনে সাথে সাথে হাত ছেড়ে দেয় রাফি। রাফির সত্যি কিছু বলার শক্তি‌‌ পাচ্ছে না। নন্দিতা তাকে এভাবে ঠকাবে কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি।

নন্দিতা বলে, “ভুল যান আমাকে আর যা কিছু‌ হয়েছে আমাদের মাঝে সেটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যান।”

রাফি অধৈর্য গলায় বলে, “ঠিক আছে এত দিন যা কিছু হয়েছে সেটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাবো। চলো আমরা আবার নতুন করে না হয় সবটা শুরু করি।‌‌ প্লিজ নন্দিতা আমি সত্যি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।”

নন্দিতা চোখ‌ দুটো বন্ধ করে বলে, “সরি আমার পক্ষে‌ সম্ভব নয়।”

রাফি পাগলের মতো বলে, “কেন সম্ভব নয়? তুমি চাইলে সব কিছু সম্ভব। আমি ভুল যাবো‌ যে তুমি বাজি ধরে আমার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলে।”

নন্দিতা এবার কি বলবে বুঝতে পারছে না কিন্তু যে করেই হোক রাফির মন থেকে তার নামটা মুছে দিতে হবে। নন্দিতা অন্য দিকে ফিরে বলে।

“আমার সাথে অন্য আরেক জনের সম্পর্ক আছে আর আমি তাকে খুব ভালোবাসি। তাই অন্য কোনো পুরুষকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

রাফি একের পর এক শক খাচ্ছে নন্দিতার কাছ থেকে। রাফি দুর্বল গলায় বলে।

“কে সে? নাম কি তার?”

নন্দিতা নাম কি বলবে বুঝতে পারছে না। তখনেই নজর পড়ে একটা পোস্টারে সোহান লেখে আর সাথে সাথে বলে, “সোহান, সোহান তার নাম।”

সুহা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নন্দিতার দিকে। বিশ্বাসেই হচ্ছে না এটা যে নন্দিতা। নন্দিতা যে এত বড় মাপের খেলোয়ার এটা আজকে বুঝতে পারল নন্দিতার কার্যকলাপ দেখে। রাফি ধরা গলায় বলে।

“তুমি কি এক বারের জন্যও আমাকে ভালোবাসো নি নন্দিতা।”

“না বাসি নি।”

“আমায় কেন ভালবাসলে না তুমি নন্দিতা? কি ভুল ছিলো আমার? এতটা পীড়া দিও না আমাকে, আমি যে সইতে পারবো না। খুব যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের ভেতর।”

“ভুলে যান আমাকে এতে আমাদের দুজনেরই মঙ্গল।”

কথাটা বলেই নন্দিতা দৌঁড়ে চলে যায়। রাফি নন্দিতার যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অজান্তেই দু ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে।

“ভাবি তোমাকে মা ডাকছে।”

রাফার কন্ঠ কানে ভেসে আসতেই চোখ মেলে বর্তমানে ফিরে এসে রাফার দিকে তাকিয়ে নন্দিতা বলে।

“হুম।”

“তোমাকে মা ডাকছে।”

নন্দিতা ঢোক গিলে বলে, “তুমি যাও আমি আসছি।”

“ঠিক আছে।”

নন্দিতা আর কিছুক্ষণ ছাদে থেকে নিচে চলে যায়।

_______

অতিতের সব কথা শুনে নিজেকে এখন দোষারুপ করছে রাফি। যদি ওর ফোন ওই দিন বন্ধ না থাকতো তাহলে হয়তো এমন‌ একটা দিনটা দেখতে হতো না। রাফি অসহায় ভাবে চেয়ারে বসে আছে।

সুমন বলে, “ভাইয়া নন্দিতা ওই দিন ভেঙ্গে পড়েছিলো, ও ওর বাবা মা’র চিন্তা করেই এমনটা করেছে। হয়তো এর জন্য তুমিও অনেক কষ্ট পেয়েছো কিন্তু নন্দিতা এর থেকেও দ্বিগুন কষ্ট পেয়েছে। প্লিজ ভাইয়া ওকে আর কষ্ট পেতে দিও না। তোমার কাছে এত টুকু চাওয়া আমার।”

রাফি নরম গলায় বলে, “তাহলে ওই সোহান নামের ছেলেটা কে ছিলো?”

“সোহান নামক মানুষটা সম্পূর্ণ মিথ্যে ছিলো। নন্দিতার জীবনে তুমি ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ ছিলো না। তোমার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য জাস্ট ওই নামটা আর বাজি ধরার কথাটা ব্যবহার করেছে এর বেশি আর কিছু না।”

রাফি নিচু গলায় বলে, “ওওও।”

“আচ্ছা ভাইয়া ওই দিয়া কি করেছে এর পর? মানে নন্দিতা চলে যাওয়ার পরে ও নিশ্চয়ই কিছু তো একটা করেছে।”

“নন্দিতা চলে যাওয়ার পরে আমার জীবনে কোনো মেয়ে আসে নি সুমন। আর দিয়া মেয়েটা ভাবলো কি করে নন্দিতা চলে গেলেই ওকে আমি আমার জীবনে ঠাই দেবো। ওর সাবজেক্ট আমি অনেক আগেই ক্লোজ করে দিয়েছে। এখন ও কোথায় আছে আমি সেটাও জানি না। যদি কোনো দিন জানি ও কোথায় আছে তাহলে এর মাশুল ওকে দিতে হবে। আমার জীবনের পাঁচটা বছর নষ্ট করে দিয়েছে ও এর শাস্তি তো ওকে পেতেই হবে।”

সুমন কিছু বলতে যাবে সাথে সাথে রাফি বলে, “তুমি এখন যাও সুমন। আমাকে একটু একা থাকতে দাও আর তোমার চাকরি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না চাকরিটা তোমার হবে।”

সুমন আর কিছু না বলেই চলে যায়।‌ রাফি নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু শত চেষ্টা করেও পারছে না। রাগে, দুঃখে রাফি টেবিলের উপর যা ছিলো সব কিছু ছুড়ে ফেলে দেয় ফ্লোরে আর জোরে চিৎকার করে উঠে। সাউন্ড প্রুভ থাকার কারনে অফিসের কেউ কিছু শুনতে পায় নি। রাফি দু হাত দিয়ে মাথার চুল আঁকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নয়। নিজেকে স্বাভাবিক করে কেবিন থেকে বের হয়। যাওয়ার আগে ম্যানেজারকে বলে যায় কেবিনটা ঠিক করার জন্য। রাফির ইচ্ছে করছে জুটে নন্দিতার কাছে গিয়ে নন্দিতাকে শক্ত জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু আপাতত রাফি তা করতে পারবে না কারন রাফির অনেক গুলা ইম্পর্টেন্ট মিটিং আছে যেগুলাতে রাফির নিজেকেই থাকতেই হবে না হলে কোম্পানির বড়সড় লস হয়ে যেতে পারে। তারপরও রাফি অনেক তাড়াতাড়ি মিটিং গুলা শেষ করে সাড়ে নয়টার ভেতরে বাড়িতে আসে তা দেখে বাড়ির লোক কিছুটা অবাক হয় কারন রাফি অফিস থেকে এগারোটা বারটার আগে আসে না। রাফি বাড়িতে এসেই বলে।

“মা নন্দিতা কোথায়?”

হেনা বেগম অবাক হওয়ার ভান ধরে বলেন, “কি রে আজকে তুই এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলি যে?”

রাফি অধৈর্য হয়ে বলে, “নন্দিতা কোথায় এটা আগে বলো? ”

“কোথায় আবার ঘরেই আছে, আসলে ওর নাকি মাথাটা ব্যথা করছে তাই…”

রাফি মায়ের কথা পুরোটা না শুনেই ঘরের দিকে দৌঁড় দিলো। রাফিকে এভাবে চলে যেতে‌ দেখে হেনা বেগম বলেন।

“আরে কথাটা শুন, ছেলের আমার হলো টা কি আবার হঠাৎ করে? ”

রাফি রুমে ঢুকে দেখে নন্দিতা ফ্লোরে বিছানা করে শুয়ে আছে। এই ক দিন নন্দিতা ফ্লোরে আর রাফি বেডে থেকে আসছে। রাফি নন্দিতাকে দু‌‌ এক বার ডাকে কিন্তু নন্দিতা সাড়া দেয় নি বলে আর ডাকে নি। রাফি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। নন্দিতা এখনও জেগেই আছে কিন্তু ইচ্ছে করেই রাফির ডাকে সাড়া দেয় নি। মূলত নন্দিতার কথা বলতে একদম ভালো লাগছে না শরীর খুব দুর্বল লাগছে আর এক সময় নন্দিতা ঘুমিয়েও পড়ে। রাফি ফ্রেশ হয়ে নিজেই কফি নিয়ে আসে নিচ থেকে। রাফি ডিনার করেই এসেছে মিটিং করার সময়। রাফি নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না কোনোমতে। নন্দিতার কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে তাই নিজেকে স্থির রাখার জন্য কিছু ফাইল নিয়ে বসে কাজের মাঝে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে। রাফি এক সময় কাজ করতে করতে সোফায় মাথাটা হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।

গভীর রাতে কারো আর্তনাদ শুনে রাফির ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাফি আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কিসের শব্দ। রাফির নজর নন্দিতার দিকে যেতেই দেখে নন্দিতা শীতে কাপছে। রাফি তাড়াতাড়ি করে নন্দিতার কাছে এসে বলে।

“নন্দিতা কি হয়েছে তোমার?”

রাফি নন্দিতার গায়ে মাথায় হাত দিয়ে বলে, “একি ওর সারা শরীর তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।”

রাফি তাড়াতাড়ি করে‌ নন্দিতাকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়েই দেয় আর নন্দিতার উপরে একটা ভারী কম্বল দিয়ে দেয়। রাফি কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দুটো বাজে আর এখন বাড়ির সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রাফি ফাস্ট এইড বক্স থেকে ঔষধ নিয়ে নন্দিতা কাছে এসে বলে।

“নন্দিতা একটু সাড়া দাও তোমার ঔষধ খাওয়া দরকার। প্লিজ জান একটু সাড়া দাও।”

নন্দিতা পিটপিট চোখে রাফির দিকে তাকিয়ে বলে,”তু… তুমি এসেছো রাফি?”

রাফি মুচকি হেসে বলে, “হু।”

“খুব ক,, ষ্ট হচ্ছে আমার।”

“কোথায় কষ্ট হচ্ছে জান?”

নন্দিতা নিজের হাতটা বুকের বা পাশে রেখে বলে, “এখানে খুব কষ্ট হচ্ছে।”

রাফি সাথে সাথে নন্দিতার হাতের উপরে হাত রেখে বলে, “সরি জান আ.. ম রিয়েলি সরি। খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমাকে আর কষ্ট দিবো না প্রমিজ।”

রাফি নন্দিতাকে খুব কষ্ট করে ঔষধটা খাইয়ে দেয়। নন্দিতাকে ঔষধ খাইয়ে দেওয়ার পরও রাফি নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না। বার বার নন্দিতার কপালে হাত রেখে জ্বর কমছে কি না তা চেক করছে। এক সময় রাফি ধৈর্য হারা হয়ে ওয়াশরুম থেকে মগ দিয়ে পানি নিয়ে আসে আর রুমাল ভিজিয়ে নন্দিতার কপালে জলপট্টি দেওয়া শুরু করে। রাফি চিন্তিত হয়ে বলে।

“এতটা জ্বর আসলো কি করে ওর?”

রাফি টেবিল ল্যাম্পের আলোতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে নন্দিতার গালটা এখনো হালকা লালচে হয়ে আছে। রাফি নন্দিতার গালে নিজের হাতটা রাখতেই অনুভব করে গলাটা আগুনের মতো গরম হয়ে আছে নন্দিতার।

“সরি জান আর আঘাত করবো না তোমাকে।”

রাফি কথাটা বলে নন্দিতার গালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে চলে আসার সময় চোখ থেকে নিজের আজান্তেই দু ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ে সেই নোনা জল গিয়ে পড়ে নন্দিতার চোখে। চোখের উপর জল পড়তেই নন্দিতা চোখ মেলে তাকিয়ে অস্পষ্ট গলায় বলে।

“পানি,, পানি খাবো।”

“কি হয়েছে নন্দিতা? পানি খাবে দাঁড়াও দিছি।

রাফি নন্দিতাকে আধ শুয়া করে পানি খাইয়ে দিয়ে বলে।

“ক্ষিধে পেয়েছে কিছু খাবে।”

“নাহ খাবো না কিচ্ছু একটা কথা রাখবে আমার।”

“কি কথা বলো?”

“একটু জড়িয়ে ধরবে আমাকে শক্ত করে প্লিজ।”

রাফি সাথে সাথে নন্দিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কোমল স্বরে বলে।

“খুব কষ্ট হচ্ছে জান তাই না।”

“উহু! কষ্ট হচ্ছে না আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না।”

রাফি নন্দিতার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে, “ঘুমিয়ে পড়ো।”

জ্বরের ঘোরেও নন্দিতা কয়েকটা কথা বলে রাফির বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

#চলবে_____

Revenge of love Part-13

0

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_13

রাফি অফিসে নিজের কেবিনে বসে আছে আর এক এক করে ইন্টারভিউ নিচ্ছে। এমন সময় একজন কেবিনে আসে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য। রাফি আগের জনের অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম গুলো আরেক বার চেক করতে করতে বলে।

“বসুন আর আপনার পেপার গুলা দেন।”

রাফি মাথা তুলে উপরের দিকে তাকিয়ে যাকে দেখে তাতে কিছুটা অবাক হয়ে বলে।

“তুমি! তুমি এখানে?”

রাফির সামনে বসে থাকা ছেলেটা বলতে শুরু করে, “রাফি ভাইয়া তুমি এখানে! তুমি জানো তোমাকে আমার কত কিছু বলার আছে।”

রাফি ভ্রু কুচকে বলে, “কত কিছু বলার আছে মানে? কি বলার আছে তোমার সুমন।”

“নন্দিতার বিষয়ে।”

“নন্দিতার বিষয়ে মানে! ওর বিষয়ে কি বলার আছে তোমার?”

“অনেক কিছু বলার আছে। আর তার আগে এটা বলো নন্দিতা কোথায় আছে সেটা কি তুমি জানো?”

রাফি তাচ্ছিল্য হেসে বলে, “আর কোথায় সব সময় আমার চোখের সামনেই থাকে। যাকে মনে প্রাণে চাইতাম তাকে পেয়েও আমি আজ তাকে পাই নি। ছেড়ে তো দিয়েছিলাম আমি নন্দিতাকে তাহলে ও কেন আবার আমার লাইফে ফিরে এলো আর ওই ছেলেটা ওকে ছেড়ে দিলো কেন? ও তো বলেছে ও‌ আমাকে না ওই ছেলেটাকে ভালোবাসে তাহলে ওরা আলাদা হলো কেন?”

সুমন হতভম্ব হয়ে বলে, “মানে নন্দিতা তোমার চোখের সামনে থাকে মানে ঠিক বুঝলাম না। আর আমি এটাও বুঝতে পারছি না নন্দিতা তোমার লাইফে আবার এসেছে মানে ও এখন কোথায় আছে? ওর সাথে আমি অনেক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু আমি প্রতিবারেই ব্যর্থ হয়েছি।”

রাফি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।”

“হোয়াট? কিভাবে মানে কিভাবে হলো এটা? তাহলে কি তোমাদের মাঝে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে গেছে। তোমাকে কি সবটা সত্যি বলে দিয়েছে নন্দিতা।”

রাফি অবাক হয়ে বলে, “সত্যি! কোন সত্যির কথা বলছো তুমি সুমন?”

“যে সত্যিটা জানলে হয়তো তোমার আর নন্দিতার মাঝে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে যাবে।”

“যা বলার ক্লিয়ার করে বল সুমন।”

“তোমার জীবন থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে নন্দিতা।”

“বাধ্য হয়েছে মানে, কার জন্য বাধ্য হয়েছে?”

“দিয়া! দিয়াই বাধ্য করেছে এমনটা করতে। কিন্তু নন্দিতারও হাত পা সব দিক থেকে বাঁধা ছিলো তাই ও বাধ্য হয়ে দিয়ার সব শর্ত মেনে নিয়েছে।”

রাফি কপালে দুশ্চিন্তা বলিরেখা ফেলে বলে,”দিয়া বাধ্য করেছে মানে? দিয়া কি এমন করেছে যে ও ওর ভালোবাসাকে এভাবে বলি দিতে বাধ্য হলো।”

“সব বলবো ভাইয়া আমি আজকে তোমাকে। তোমাকে এই কথা গুলা আমি অনেক বার বলতে চেয়েছি কিন্তু তোমার আর নন্দিতার ভয়ে বলতে পারি নি। কিন্তু আজ যখন সুযোগ পেয়েছি সব বলবো তোমাকে। হয়তো এই সত্যিটা জানার পরে তোমাদের মাঝে দূরত্বটা কমে যাবে সারা জীবনের জন্য।

রাফি অধৈর্য গলায় বলে, “এত কথা না বলে মেইন কথায় আসো সুমন।”

রাফি সুমনের কথা শুনার জন্য ইন্টারভিউটা আপতত অন্য এক কেবিনে শিফট করার অর্ডার দেয় আর ম্যানেজার সেই ইন্টারভিউটা নিছেন।

সুমন বলা শুরু কর, “ওই দিন আমি হাসপাতালে যাই আমার কিছু টেস্ট করার জন্য। আর টেস্ট করে যখনেই হাসপাতাল থেকে বের হতে নিবো তখনেই দেখি নন্দিতা ওর বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছে। নন্দিতার কান্না করা চেহারাটা আমার চোখের সামনে এখনও ভাসে। আমি আবারো ফিরে যাই হাসপাতালে জানার জন্য কি হয়েছে। আর তখন নন্দিতা আমাকে দেখে আমার কাছে এসে বলে।

অতিত……

“দেখো না সুমন বাবার কি হয়ে গেলো একটু আগেই ভালো ছিলো হঠাৎ করেই।”

কথাটা বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে উঠে নন্দিতা। সুমন নরম গলায় বলে।

“তুমি চিন্তা করো না আঙ্গেল ঠিক হয়ে যাবেন,ডক্টর কি বলেছেন?”

“চেক করছে বাবাকে।”

“তুমি যদি এভাবে ভেঙ্গে পড়ো‌ তাহলে আন্টিকে কে সামলাবে বলো তোমাকে শক্ত থাকতে হবে তো।”

“গতকালকে বাবা কতটা স্ট্রং ছিলো। গ্রাম থেকে আমার জন্য কত কিছু নিয়ে এসেছে একা হাতে করে আর এখন আমার স্ট্রং বাবা’টা বেডে শুয়ে যন্ত্রণা ভোগ করছে। এখানে আসাটাই বাবার একদম উচিত হয় নি। বাবা যদি আজ এখানে না আসতো আমার সাথে দেখা করতে তাহলে হয়তো এমন কিছুই হত না। সব দোষ আমার, আমার জন্যই বাবার আজ এই অবস্থা।”

“তুমি শুধু শুধু কেন নিজেকে দোষারুপ করছো নন্দিতা? আর দেখো আঙ্গেল যদি গ্রামে থাকাকালিন এই দুর্ঘটনাটা হত তাহলে গ্রাম থেকে হাসপাতালে আসতে অনেকটা সময় লেগে যেত। যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে এখন আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।”

কিছুক্ষন পরেই ডাক্তার বেরিয়ে আসেম কেবিন থেকে। ডাক্তারকে দেখে নন্দিতা ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলে।

“বাবা কেমন আছেন স্যার? ওনার খারাপ কিছু হয় নি তো।”

“আপনার বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে তাই যত সম্ভব তাড়াতাড়ি সার্জারি করতে হবে। আর এই সার্জারি করার জন্য প্রায় এক লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা তো লাগবেই মাস্ট।”

নন্দিতা কাঁপাকাঁপা গলায় বলে, “কি বলছেন এত টাকা?”

“প্লিজ তাড়াতাড়ি টাকার ব্যবস্থা করুন পেশেন্টের অবস্থা ভালো না।”

কথাটা বলেই ডাক্তার চলে যান। নন্দিতা কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। পা দুটি ভেঙ্গে আসছে, ধপ করে করিডোরে রাখা বেঞ্চে বসে পড়ে। এত তাড়াতাড়ি এত গুলা টাকা কোথা থেকে করবে। অন্য দিকে নন্দিতা মায়ের জমেলা বেগমের অবস্থাও খারাপ হচ্ছে স্বামীর এমন অবস্থা দেখে। তাই ওনাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে যেন বেশি টেনশন না করতে পারে। সুমন নন্দিতার পাশে দাঁড়িয়ে বলে।

“কি করবে এখন? রাফি ভাইয়াকে কল দাও এক মাত্র ভাইয়া যদি পারে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করতে।”

রাফিকে অনেক বার কল দেওয়া হয়েছে কিন্তু ফোন বন্ধ। নন্দিতা চিন্তিত হয়ে বলে।

“কি করবো এখন আমি? এত গুলা টাকা কোথায় পাবো আমি?”

হঠাৎ করেই‌ একটা মেয়েলি কন্ঠে ভেসে আসে, “টাকা লাগবে তোমার নন্দিতা।”

নন্দিতা কথাটা শুনে মানুষটার দিকে তাকিয়ে দেখে দিয়া দাঁড়িয়ে আছে বাকা হেসে। দিয়া পুনরায় বলে।

“কি নন্দিতা বাবাকে সুস্থ করতে চাও!”

নন্দিতা বসা থেকে উঠে বলে, “তুমি!”

“হুম আমি! সবটা শুনেছি আমি দাঁড়িয়ে থেকে তোমার এখন টাকার প্রয়োজন তোমার বাবাকে সুস্থ করে তুলতে তাই তো। তুমি যদি চাও সেই টাকাটা আমি তোমাকে দিতে পারি।”

নন্দিতা দিয়ার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “তুমি কেন টাকা দিবে আমাকে?”

দিয়া দু কদম এগিয়ে এসে দু হাত ভাঁজ করে বলে, “তুমি নিশ্চয়ই জানো নিজের স্বার্থ ছাড়া কেউ কিছু করে না। এখন আমি যেহেতু তোমাকে এত গুলা টাকা দিতে চাইছি তার মানে এর পেছনে নিশ্চয়ই একটা স্বার্থ লুকিয়ে আছে আমার।”

“আমার সুস্থ করার পেছনে তোমার কি স্বার্থ আছে?”

দিয়া বাকা হেসে বলে, “রাফি! ও আমার স্বার্থ।”

নন্দিতা ভ্রু কুচকে বলে, “মানে।”

“তোমার বাবার সব ট্রিটমেন্টের টাকা আমি দিবো বিনিময়ে রাফিকে ছেড়ে দিতে হবে তোমায়।”

নন্দিতা দিয়ার এমন কথা শুনে শক্ত গলায় বলে, “কি বলছো কি তুমি এসব? ওকে আমি কোনো দিন হারাতে পারবো না।”

“ওকে ফাইন! তাহলে বাবা আর মাকে হারাতে প্রস্তুত হয়ে থাকো। ভেবে দেখো নন্দিতা তোমার বাবা মারা গেলে তোমার মায়ের কি হবে। ওনি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবেন। তখন তুমি তোমার মায়ের কষ্টটা সহ্য করতে পারবে তো মেয়ে হয়ে হয়তো পারবে না কষ্ট টা সহ্য করতে তাই না।”

নন্দিতা মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে সাথে সাথে দেয়াল ধরে ফেলে। দিয়ার প্রত্যেকটা কথা চোখের সামনে বাস্তব চিত্র হয়ে ভেসে উঠছে। সত্যি তো বাবার যদি কিছু হয়ে যায় মায়ের কি হবে? মাকে কি করে নন্দিতা সান্ত্বনা দিবে যেখানে নন্দিতা নিজেকে শক্ত রাখতে পারবে না। জন্মদাতা বাবা মায়ের কথা চিন্তা করে না হয় নিজের কয়েক মাসের ভালোবাসাকে বলি দান দিলো। নিজেই না হয় একা কষ্ট ভোগ করলো তবুও তো চোখের সামনে বাবা মাকে কষ্ট পেতে দেখতে হবে না। কিন্তু রাফি রাফির কি হবে? হয়তো কয়েকদিন কষ্ট ভোগ করবে তারপর সময়ের সাথে নন্দিতাকে নিজের স্মৃতি থেকে মুছে ফেলে দিবে।

নন্দিতা দু চোখের নোনা জল মুছে বলে, “আমি রাজি তোমার সব শর্তে। কিন্তু তার বিনিময়ে আমার বাবার সার্জারি করার সকল ব্যবস্থা করে দিবে। কিন্তু এই টাকাটা আমি ধার হিসেবে নিলাম সময় হলে সবটা ফিরিয়ে দিবো।”

দিয়া মুচকি হেসে বলে, “কাউকে দান করে দেওয়া জিনিস‌‌‌ আমি ফিরিয়ে নেই না।”

নন্দিতা বড্ড অপমানিতবোধ করলো কিন্তু নন্দিতাও দিয়াকে এই‌ কথার প্রেক্ষিতে বলে, “আমিও আমার ভালোবাসাকে দান করলাম তোমায়। জানি না সেই ভালোবাসা আদৌ তোমাকে মেনে নিবে কিনা। কিন্তু আমি চাইব আমার সমস্ত স্মৃতি তুমি যেন তার মস্তিষ্ক থেকে মুছে দিতে পারো।”

দিয়া বিরক্ত হয়ে বলে, “এটা তোমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।‌ তুমি বরং তোমার বাবা মায়ের চিন্তা করো।”

সুমন বলে, “নন্দিতা তুমি যা করতে যাচ্ছো ভেবে করছো তো।”

নন্দিতা ঢোক গিলে বলে, “মা বাবার জন্য এই টুকু করতে হবে আমাকে।”

এরপর নন্দিতা আর কিছু না ভেবে দিয়ার সব শর্তে রাজি হয়ে যায় শুধু বাবা মায়ের জন্য আর তার বিনিময়ে রাফিকে নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দিতে হয়। রাফির মন থেকে নিজেকে‌‌ সারা জীবনের জন্য মুছে দেওয়ার জন্য নন্দিতা খুব বাজে একটা নাটক করে বসে। যেই‌ নাটকে নন্দিতা সফলও হয়। এর এক মাস পরেই মজনু আহমেদ পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হতেই গ্রামে চলে যায় নন্দিতা এক্কেবারের জন্য। এর পরের বছর নন্দিতা ভার্সিটির ভর্তি বাতিল করে গ্রামের কলেজে অনার্স ফাস্ট ইয়ারে এডমিশন নিয়ে নেয়।

#চলবে_____

Revenge of love Part-12

0

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_12

জ্যামের মাঝে বসে আছে রাফি প্রায় পনেরো মিনিট ধরে। চোখে মুখে ফুটে আছে বিরক্তের ছাপ। মন চাইছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলার উপর দিয়ে নিজের গাড়ি চালিয়ে চলে যেতে। মনে মনে রাফি ইচ্ছে পোষণ করছে যদি নিজের কাছে কোনো পাওয়ার থাকতো তাহলে খুব ভালো হত এভাবে রোবটের মতো বসে থাকতে হত না। রাফি তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে স্টেয়ারিং ঘুরিয়ে গাড়িটা সামনে নিয়ে যায় ফাঁকা জায়গাটা পূরণ করার জন্য। চোখ বন্ধ করে সিটে মাথাটা হেলান দিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই একটা দৃশ্য দেখে ম্লান হেসে উঠলো।

রাফির গাড়ির পাশেই একটা রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে। আর রিক্সাতে বসে আছে দুজন কপোত কপোতী। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সদ্য বিবাহিত একটা দাম্পত্য। মেয়েটা লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে বসে আছে আর ছেলেটা তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ছেলেটি হাত বাড়িয়ে মেয়েটার খোপায় থাকা বেলি ফুলের মালাটা স্বযত্নে ঠিক করে দিলো। রাফি এই মনোরম দৃশ্যটা দেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। তার মস্তিষ্ক এমন একটা সুন্দর স্মৃতি রয়েছে। যে স্মৃতিটা চোখ বন্ধ করে মনে করার প্রচেষ্টা করে রাফি।

অতিত……

নন্দিতা আর সুহা মুখোমুখি হয়ে লাইব্রেরীতে বসে আছে। দুজনেরই সামনে বই আছে কিন্তু বই পড়াতে কোনো মনযোগ‌ নেই, মনযোগ আছে আড্ডা মারাতে। এর মাঝে সুহা হঠাৎ করে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। সুহাকে এমন করে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে নন্দিতা অবাক হয়ে বলে।

“কি হলো? এভাবে দাঁড়িয়ে পড়লি কেন? মনে হচ্ছে যেন কেউ তোর চেয়ারের নিচে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আর তুই সেটা সহ্য করতে না পেরে ঠাস করে দাঁড়িয়ে পরলি।”

সুহা মুচকি হেসে বলে, “আসলে কি বলত আমার না একটু ওয়াশরুমে যেতে হবে।”

নন্দিতা ভ্রু কুচকে বলে, “মাত্রই তো ওয়াশরুম থেকে আসলি।”

সুহা চাপা স্বরে চেঁচিয়ে বলে, “এত প্রশ্ন করছিস কেন তুই হুম? পুলিশও মনে হয় এত প্রশ্ন করে না আসামিদের‌ তুই যতটা করছিস।”

কথাটা বলেই সুহা কাঁধে ব্যাগ চাপিয়ে ড্যাং ড্যাং করে লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে যায়। নন্দিতা সুহার যাওয়ার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে বলে।

“মানেটা কি? কি এমন বললাম যে ও নিজেকে নিজেই আসামি বানিয়ে ফেলল। অদ্ভুত।”

“বান্ধবীকে যদি দেখা শেষ হয়ে থাকে তাহলে এবার পাশ ফিরে তাকান ম্যাডাম।”

হঠাৎ করে পুরুষালী কন্ঠ ভেসে আসাতে নন্দিতা পাশ ফিরে তাকাতেই চমকে যায় রাফিকে দেখে। হাস্যজ্জল চেহারা নিয়ে নন্দিতার দিকে তাকিয়ে আছে হাতে লাল টকটকে একটা কাঠ গোলাপ ফুল নিয়ে। নন্দিতা কিছুক্ষণ রাফির দিকে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলো সুহা কেন এভাবে চলে গেলো। নন্দিতা রাফির দিক থেকে নজর সরিয়ে নিয়ে লাইব্রেরীর চারপাশটা ভালো করে নজর বুলিয়ে নেয়। লাইব্রেরীতে বেশি স্টুডেন্ট নেই হাতেগোনা কয়েকজন স্টুডেন্ট হবে। নন্দিতা চাপা স্বরে বলে।

“আপনি এখানে কি করছেন?”

রাফি অভিমানী স্বরে বলে, “ফোন ধরো না কেন হুম? ইগনোর করা হচ্ছে বুঝি আমাকে।”

“ইগনোর করার কি আছে এখানে। ফোন সাইলেন্ট করা তাই বুঝতে পারে নি।”

“ওও আচ্ছা বুঝালম। এটা তোমার।”

রাফি কাঠ গোলাপ ফুলটা এগিয়ে দেয় নন্দিতার কাছে। নন্দিতা মুচকি হেসে ফুলটা নিতে যাবে সাথে সাথে রাফি ফুলটা সরিয়ে নেয়। নন্দিতা অবাক হয়ে বলে।

“কি হলো দিন?”

রাফি নিঃশব্দে হেসে হাত বাড়িয়ে নন্দিতার কানের সাইডে পড়ে থাকা চুল গুলা সরাতে থাকে। নন্দিতা রাফির কার্যক্রম দেখে চোখ বড় বড় করে বলে।

“কি… কি করছেন?”

রাফি চাপা স্বরে বলে, “চুপচাপ বসে থাকো।”

নন্দিতা ঢোক গিলে চুপচাপ বসে থাকে। রাফি স্বযত্নে নন্দিতার কানে কাঠ গোলাপ ফুলটা গুজে দিয়ে বলে।

“নাও পারফেক্ট আর দেখতেও খুব মিষ্টি লাগছে।”

নন্দিতা লাজুক হেসে মিহি গলায় বলে, “থ্যাঙ্ক ইউ।”

রাফি নন্দিতার লজ্জা পাওয়া দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে। মনে মনে দুষ্টু বুদ্ধি এঁটে গলা খাকারি দিয়ে বলে।

“নন্দিতা তুমি না দেখতে খুব মিষ্টি সেটা কি তুমি জানো?”

নন্দিতা পিটপিট চোখে তাকালো রাফির দিকে। হঠাৎ করে এমন ভাবে কথা বলছে কেন রাফি? নন্দিতার বিস্ময়কর চেহারা দেখে রাফি ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে নন্দিতা দিকে হালকা একটু ঝুঁকে‌ ফিচেল স্বরে বলে।

“ইচ্ছে করছে এই মিষ্টিটাকে এক্কেবারে খেয়ে ফেলতে।”

রাফি কথা শুনে চোখ বড় বড় করে‌ তাকালো নন্দিতা। মানে লোকটা কি সব বলছে এগুলা মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেলো‌ নাকি। নন্দিতার এখন মনে হচ্ছে এখানে বেশিক্ষণ থাকা যাবে থাকলেই এই‌ লোক উল্টা পাল্টা কথা বলে আর ওকে অস্বস্তিতে ফেলে দিবে। তাই নন্দিতা উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে উদ্যত হতে নিলে রাফি নন্দিতার হাত চেপে ধরে বলে।

“কোথায় যাচ্ছো?”

নন্দিতা চাঁপা গলায় বলে, “বাইরে যাচ্ছি।‌ আর হাতটা ছাড়ুন প্লিজ কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।”

রাফি কাঁধ নাচিয়ে বলে, “কে কি ভাবলো তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।”

“কিন্তু আমার যায় আ…… ”

নন্দিতা কথাটা সমাপ্ত করতে পারলো না তার আগেই রাফি হেচকা টান মেরে নন্দিতাকে পুনরায় চেয়ারে বসিয়ে দিলো। নন্দিতা কপট রাগ দেখিয়ে বলে।

“কি করছেন টা কি আপনি?”

রাফি এবার কিছুটা রেগে বলে উঠে, “এই তোমাকে বলেছিনা আমাকে আপনি করে ডাকবে না।”

রাফির রাগ দেখে নন্দিতা নরম গলায় বলে, “তাহলে কি বলে ডাকবো?”

রাফি দু ভ্রু উচু করে বলে, “তুমি করে বলবে।”

“পারবো না। এটা আমার দ্বারা সম্ভব হবে না আর আপনি আমার থেকে বয়সে অনেক বড়।”

রাফি হতাশ হওয়ার ভান ধরে বলে, “কিহ? এই মাত্র কি তুমি আমাকে বুড়ো বললে নন্দিতা।”

নন্দিতা হতভম্ব হয়ে বলে, “আমি আপনাকে কখন বুড়ো বললাম।”

“তুমি জানো আমার বয়স কত, মাত্র পঁচিশ হবে হয়তো। আর আমার বয়স এতটাও বেশি নয় যে তোমাকে আমায় আপনি করে বলতে হবে।”

নন্দিতার মাথা ভনভন করছে রাফির কথা শুনে। এই লোকের মাথায় নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে না হলে এমন কথাবার্তা বলে কেন? নন্দিতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে।

“তো আপনি চাইছেন আপনাকে তুমি করে বলি আমি।”

“আজ্ঞে ম্যাডাম।”

“আচ্ছা ডাকবো। এখন হাতটা ছাড়ুন আমাকে যেতে হবে।”

রাফি চেঁচিয়ে বলে ওঠে, “যাবে মানে আগে তুমি করে বলে যাও আমাকে।”

“আরে আস্তে কথা বলুন আমি বলছি তো‌ আপনাকে তুমি বলে।”

“ওকে বলো! আই‌ এম ওয়েটিং।”

রাফির কানে গাড়ির হর্নের আওয়াজ আসতেই নিজের সম্মতি ফিরে পায়। অতিতে স্মৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে জ্যাম প্রায় জুটে গেছে। রাফি গাড়ির স্টেয়ারিং ঘুরাতে নিবে এমন সময় পাশে দাঁড়ানো ট্রাকের চালক বলে উঠে।

“আরে ওই মিয়া ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া গাড়ি চালান নাকি হুম। কহন থেকে ডাকতাছি আপনারে কানে কি কথা ঢুহে না।”

রাফি কিছু বলতে গিয়েও কিছু বলল না। অযথা নিজের জবান নষ্ট না করাই ভালো। তাই গাড়ি চালিয়ে নিজের গন্তব্য স্থানে এসে পৌঁছায়। অফিসে ঢুকতেই রাফির পিএ বিপ্লব সাহেব এসে বলেন।

“স্যার আপনার সাথে সিয়াম স্যার দেখা করতে এসেছেন?”

রাফি ভ্রু কুচকে বলে, “এত সকালে ও হঠাৎ আমার সাথে দেখা কেন করতে আসলো?”

“তা তো জানি না ওনি আপনার কেবিনে আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।”

“আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান কাজ করুন গিয়ে।”

“ওকে স্যার।”

রাফি কেবিনের দরজা খুলে কেবিনে ঢুকে দেখে সিয়াম সোফায় পায়ের উপর পা তুলে পেপার পড়ছে। রাফির আসার শব্দ শুনে সিয়াম পেপারে নজর রেখেই বলে।

“এসেছি তাহলে তুই কতক্ষণ ধরে ওয়েট করছিলাম তোর।”

রাফি সোফায় বসতে বসতে বলে, “এত সকালে আমার অফিসে কি মনে করে?”

সিয়াম পেপার ভাঁজ করে টেবিলের উপরে রেখে বলে, “কেন তোর সাথে কি আমি দেখা করতে আসতে পারি না। নাকি এখন তোর সাথে দেখা করতে চাইলে আগে থেকে এপয়েন্টমেন্ট করে আসতে হবে।”

রাফি “চ” জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে বলে, “আমি এটা কখন বললাম তোকে। তুই একটু বেশিই বুঝে ফেলছিস না।”

“ঠিক যেমন তুইও একটু বেশি বুঝিস।”

রাফি ভ্রু কুচকে বলে, “আমি আবার কি বেশি বুঝে ফেললাম?”

সিয়াম তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে ঠান্ডা গলায় বলে, “দেখ রাফি অতিতে যা হওয়ার হয়ে গেছে এটা নিয়ে এখন পড়ে থাকলে হবে না। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাব।”

“তুই ঠিক কি বুঝাতে চাইছিস আমাকে একটু পরিষ্কার করে বলবি।”

“তোর আর নন্দিতার ব্যাপারটা। দেখ নন্দিতা এখন তোর বউ, তোর রেসপন্সিবিলিটি আগে যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন তোরা দুজনে চাইলে একটা সুন্দর সাবলীল জীবন কাটাতে পারিস।”

রাফি ক্ষীণ গলায় বলে, “এ ব্যাপারে কিছু না বললেই খুশি হব আমি সিয়াম।”

“তুই প্লিজ একবার ভেবে…… ”

রাফি সিয়ামকে থামিয়ে বলে, “প্লিজ সিয়াম এই বিষয়টা নিয়ে কথা না বলাটাই উত্তম। আমি চাই না তোর সাথে এসব বিষয় নিয়ে রাগারাগি করতে। আর আমার একটা ইন্টারভিউ নিতে হবে এগারোটায় তাই এই বিষয় ছাড়া অন্য কোনো কথা থাকলে বলে ফেল।”

সিয়াম তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “এই বিষয় ছাড়া আর কোনো কথা বলার নেই আমার।”

দুই বন্ধুই নিরব। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। শেষমেষ সিয়াম বলে, “আমি আসি রে”

রাফি নিচু গলায় বলে, “হুম।”

সিয়াম দাঁড়িয়ে বলে, “চেয়েছিলাম বন্ধুর পীড়া কমাতে। কিন্তু বন্ধু আমার এই পীড়া থেকে মুক্তি পেতে চায় না।”

কথাটা বলেই সিয়াম চলে যায়। সিয়াম চলে যেতেই রাফি গা হেলিয়ে দেয় সোফায়। আসলে সে‌ এক অদ্ভুত পীড়ার মধ্যে পড়ে গেছে যে পীড়া প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে। আগে তাও এই যন্ত্রণাদায়ক পীড়া সহ্য করতে পারত কিন্তু এখন আর সহ্য করতে পারছে না। চোখের সামনে যদি প্রতিনিয়ত ভালোবাসার মানুষটা থাকে আর সেই ভালোবাসার মানুষটাকে যদি কাছে না পায় সেই যন্ত্রণাটা সত্যি পীড়াদায়ক।

#চলবে________

Revenge of love Part-11

0

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_11

রাত এগারোটা চল্লিশ বাজে নন্দিতা তখন এসাইনমেন্ট করতে ব্যস্ত। এই রাফির কথা চিন্তা করতে করতে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো এসাইনমেন্টের কথা কিন্তু যখন সুহা ফোন দিয়ে ওকে আর রাফিকে নিয়ে মজা করছিলো তখন কথার মাঝে এই এসাইনমেন্টের কথাটা মনে পড়ল। নন্দিতা যখন এসাইনমেন্ট করতে ব্যস্ত তখন হঠাৎ করেই ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠে। নন্দিতা ভালো করে নাম্বারটা চেক না করে বা হাত দ্বারা কানে ফোন ধরে বলে।

“হ্যালো! কে বলছেন?”

“আমার এগারো সংখ্যার নাম্বারটা এখনো সেভ করো নি তুমি তোমার ফোনে? মনে বহুত কষ্ট পাইলাম নন্দিতা।”

নন্দিতা রাফি কন্ঠস্বরে শুনে সাথে সাথে লেখা থামিয়ে বলে, “আপনি।”

“হুম আমি। একটু বারান্দায় আসো।”

নন্দিতা ভ্রু কুচকে বলে, “বারান্দায় আসবো মানে?”

পরক্ষণে পেছনে ফিরে ঘুমন্ত মাকে দেখে ফিসফিস করে বলে, “বারান্দায় আসবো এখন কেন দুঃখে?”

রাফি গলার স্বর নরম করে বলে, “তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে নন্দিতা।”

নন্দিতা অবাক হয়ে বলে, “মানে ঠিক বুঝলাম না। আপনি ঠিক কোথায় আছেন এখন?”

“তোমার বাসার নিচে।”

“কিহ?”

উত্তেজনার বশে আবারো জোরে বলে উঠে কথাটা কিন্তু পরক্ষণে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

“এত রাতে আপনি এখানে কি করছেন হুম? মানুষজন দেখলে কি ভাববে?”

“এখানে মানুষজনের ভাবার কি আছে আজব। হুম মানুষজন তখনেই কিছু ভাবতো যখন আমি তোমাকে আমার কোলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে বসে থাকতাম কিন্তু আমি তো একাই বসে আছি তাই মানুষজনের এখানে ভাবার মতো কিছু হয় নি বুঝলে মিস নন্দিতা।”

নন্দিতা তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। এই লোক দিনকে দিন অসভ্য আর লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে। একে এখানেই থামাতে হবে না হলে নন্দিতার ঘাড়ে উঠে নাচবে আর কয় দিন পরে দেখা যাবে।

“আপনার এসব অসভ্য কথাবার্তা বন্ধ করে চুপচাপ এখান থেকে যান অনেক রাত হয়েছে।”

নন্দিতার কথার প্রত্যুত্তরে কিছু বলল না রাফি। বরং‌ ভেসে আসলো পুরুষালি ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ। নন্দিতাও আর কোনো কথা বলল না। দুজনে একে অন্যের ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে ব্যস্ত। কিছুটা সময় নিরব থাকার পরে ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে রাফি বলে উঠে।

“নন্দিতা।”

গভীর মাদকতাময় কন্ঠে ডেকে উঠলো রাফি। রাফির এমন কন্ঠ শুনে নন্দিতার কানে ধরে রাখা হাতটা খানিকটা কেপে উঠলো। শুকনো ঢোক গিলল। পেটের ভেতরে থাকা রঙিন প্রজাপতিরা পাক খেতে শুরু করলো। নন্দিতা আনমনেই নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো দাঁত দ্বারা। পুরুষ মানুষের কন্ঠে যে এতটা মাদকতা মিশে থাকতে পারে রাফির কন্ঠ না শুনলে বুঝতেই পারতো না নন্দিতা। নন্দিতার কোনো সাড়া না পেয়ে রাফি ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে আবার ডাকলো।

“নন্দিতা কথা বলো প্লিজ।”

নন্দিতা কিছুক্ষণ ঠোঁট চেপে ধরে রেখে ছোট করে উত্তর দেয়, “হু।”

“একটি বার বারান্দায় আসবে প্লিজ।”

নন্দিতা ধীরে ধীরে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। বারান্দার দরজার কাছে এসে পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে রাস্তার দিকে তাকালো আসলেই কি রাফি এসেছে কি না। কিন্তু না রাফি সত্যি এসেছে মুখটা দেখা যাচ্ছে শুধু। নন্দিতা গুটিগুটি পায়ে এসে বারান্দায় দাঁড়ালো। নিচেে দিকে তাকাতেই রাফিকে স্পষ্টভাবে দেখতে পেলো সাদা শার্ট পড়ে কানে ফোন রেখে বাইকের উপরে বসে আছে আর নজর বারান্দার দিকে। রাফি নন্দিতাকে দেখে কোমল গলায় বলে।

“বারান্দার লাইট ওন করো।”

কিন্তু পরক্ষণে রাফি আবার বলে, “না থাক লাইট ওন করতে হবে না তোমার ফোনের পাওয়ার বাটনে চাপ দাও। ফোনের সেই আলো দিয়ে না হয় তোমাকে দেখলাম।”

নন্দিতা মুচকি হাসে রাফি কথা শুনে। রাফির কথা অনুযায়ী নন্দিতা তাই করলো। রাফি নন্দিতার গালের এক সাইড হালকা একটু দেখতে পেলো। রাফি বারান্দার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে।

“আমার সাথে লং ড্রাইভে যাবে নন্দিতা।”

নন্দিতা হকচকিয়ে উঠলো। এই লোক বলে কি? একে তো রাত বিরাতে এখানে এসে তাকে বিরক্ত করছে এখন তাকে বলছে লং ড্রাইভে যাওয়ার জন্য। রাফি পুনরায় আবার বলা শুরু করে।

“জানো রাতে যখন বাইক নিয়ে বের হই‌ তখন কত গুলা কাপল চোখে পড়ে, কত সুন্দর করে মেয়েটি তার প্রেমিকের পিঠে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে‌ প্রেমিককে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখে। মনে হয় যেন এটাই তার জন্য সুখের স্থান। কিন্তু দেখো আমি যাকে আমার প্রেমিকা‌ ভেবে আসছি সে কি আদৌ আমাকে তার প্রেমিক হিসেবে মেনে নিয়েছে কিনা সেটাই আমি বুঝতে পারছি না।”

নন্দিতা শুকনো ঢোক গিলে বলে, “আপনি বাসায় যান অনেক রাত হয়েছে।”

রাফি নিঃশব্দে হেসে বলে, “তুমি কি বিরক্ত হচ্ছো নন্দিতা?”

নন্দিতা চুপসে গেলো এই কথাটা শুনে। সত্যিই তো তার তো এখন বিরক্ত হওয়ার কথা রাফির উপরে। কিন্তু তা না হয়ে বরং ভালো লাগছে রাফির সাথে কথা বলতে। রাফি আবার বলে।

“জানি বিরক্ত হচ্ছো না তুমি আমার উপরে। একজন প্রেমিকা কি কখন তার প্রেমিকের এমন পাগলামো দেখে বিরক্ত হতে পারে। বরং সেই প্রেমিকার আরো ভালো লাগে প্রেমিকের পাগলামো দেখে।”

নন্দিতা জড়ানো কন্ঠে বলে, “আপনি পাগল হয়ে গেছেন রাফি তাই এসব আবোল তাবোল বকছেন।”

“সত্যি আমি পাগল হয়ে গেছি তোমার প্রেমে পড়ে। আচ্ছা তুমি কবে স্বীকার করবে বলো‌ তো যে তুমি আমায় ভালোবাসো? শুনেছি মেয়েদের বুক ফাটে‌ তো মুখ ফোটে না। তবে কি ধরে নিবো তুমি আমাকে ভালোবাসো।”

নন্দিতা ক্ষীণ গলায় বলে, “আপনাকে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরেছি এর থেকেও যদি না বুঝতে পারেন আমার মনের কথা তাহলে আমার কিছু বলার নেই।”

কথাটা বলেই নন্দিতা ঠাস করে ফোন কেটে দিয়ে ঘরে চলে যায়। নন্দিতা চলে যেতেই স্বশব্দে হেসে উঠে রাফি। তাহলে নন্দিতা কিছুটা হলেও স্বীকার করলো যে তাকে ভালোবাসে। রাফি ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে নন্দিতার নাম্বার মেসেজ করে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।

মেসেজ আসার শব্দ শুনতে পেয়ে নন্দিতা জলদি করে মেসেজ অপশনে ঢুকে। এমন মনে হচ্ছে যেন নন্দিতা আগে দেখেই জানতো রাফি মেসেজ করবে।

❝বুঝতে তো পেরেছি সেই কবেই যে নন্দিতা নামের একটি মেয়ে আমার প্রেমে পড়েছে তাও গভীর ভাবে। কিন্তু মেয়েটি মুখে স্বীকার করতেই চায় না আসলে মেয়েটি ভাঙবে তবু মচকাবে না।‌ কিন্তু সেই মেয়েটিকে আমি খুব ভালোবাসি খুব আর এটাও জানি মেয়েটিও আমাকে ভালোবাসে।❞

নন্দিতা মেসেজটা পড়ে বুকের মাঝে ফোনটা চেপে ধরে বিড়বিড় করে বলে, “হুম মেয়েটিও আপনাকে খুব ভালোবাসে মিস্টার রাফি তাজওয়ার।”

এরপর থেকে শুরু হয় নন্দিতা আর রাফির প্রণয়ের সম্পর্ক। কিন্তু এই প্রণয়ের সম্পর্কটা দীর্ঘ ছিলো না। একটা কালো ছায়া এসে রাফির জীবন থেকে নন্দিতা সরে যেতে বাধ্য করলো। আর নন্দিতা হাসিমুখে সেটা গ্রহণ করে নিলো।

বর্তমান……….

সকালে নন্দিতা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায়। হেনা বেগম নন্দিতাকে দেখার সাথে সাথে নিজের কাছে আসতে বলেন।

“নন্দিতা তোমার সাথে তোমার কিছু কথা আছে।”

নন্দিতা টেনশনে পড়ে যায় শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে। গতকাল‌ রাতে যে রাফি ড্রিংক করে এসেছে সেটা জেনে যায় নি তো। নন্দিতা ভয়ে ভয়ে বলে।

“কি কথা মা?”

“তুমি‌ আর রাফি কি আগে থেকেই একে ওপরকে চিনো। তোমাদের হাবভাব দেখে আমি যতটুকু বুঝলাম তোমরা দুজন দুজনকে চিনো তাও আবার গভীর ভাবে।”

নন্দিতা আমতা আমতা করে বলে, “মা মানে আমি আসলে।”

“আমি তোমাকে জোর করছি না‌ নন্দিতা কিছু বলার জন্য। তবে আমি এটা চাই তোমার আর রাফির মাঝে যদি কোনো ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে মিটিয়ে নাও। আর একটা কথা তোমাদের জন্য আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা তোমাকে এখন বলবো না রাফি আসুক নিচে তারপর বলবো। আশা করবো তোমরা দুজনে আমার কথা রাখবে।

নন্দিতা ছোট করে জবাব দেয়, “জি মা।”

রাফির ঘুম ভাঙ্গার পর আস্তে আস্তে উঠে বসে মাথায় দু হাত চেপে ধরে। রাফি নাক মুখ কুচকে বলে।

“উফ মাথাটা প্রচুর ব্যথা করছে।”

রাফি চারিপাশটা ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিজের ঘরেই আছে। চোখ বন্ধ করে রাতে কি ঘটেছে তা মনে করার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুই মনে করতে পারছে না। রাফি চোখ খুলে বলে।

“এখানে কখন আসলাম? আমি তো,,, উফ আর চিন্তা করতে পারছি না আগে ফ্রেশ হওয়া দরকার।”

রাফি শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় টাওয়াল দিয়ে ভেজা চুল মুছতে মুছতে চিন্তিত হয়ে বলে।

“কালকে নেশার ঘোরে কিছু করে ফেলি নি তো নন্দিতা সাথে। কিছুই তো মনে নেই কিন্তু নন্দিতা কোথায়?”

রাফি দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। তাই এসব চিন্তা বাদ দিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে চলে যায়। নিচে যেতেই হেনা বেগম ছেলেকে দেখে বলে উঠেন।

“উঠেছিস আগে নাস্তা করে নে তোর সাথে জরুরী কথা আছে।”

“কি কথা মা?”

“আগে নাস্তা কর তারপর বলছি।”

নন্দিতা চুপচাপ টেবিলে নাস্তা পরিবেশন করছে। রাফি নন্দিতার দিকে একবার তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়। সকলে এক সাথে বসে নাস্তা করে নেয়।

রাফি বসে আছে মার সামনে। অনকেটা সময় পেরিয়ে গেছে কিন্তু মাকে কিছু বলতে না দেখে রাফি বিরক্ত হয়ে বলে।

“মা তাড়াতাড়ি বলো কি বলবে? আমার অফিসে লেইট হচ্ছে।”

“বলছি এত তাড়া কিসের তোর?”

রাফি তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “অফিসে একটা ইন্টারভিউ আছে তাই।”

“আচ্ছা বুঝলাম। শোন আমি একটা কথা বলবো কথাটা শুনে লাফ দিয়ে উঠবি না। বাবা মায়েরা যা করে সন্তানের মঙ্গলের জন্যই করে।”

রাফি কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “মা এত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে না বলে যা বলতে চাইছো সেটা সোজাসুজি ভাবে বলো।”

“শোন আগামীকালকে তুই আর নন্দিতা হানিমুনে যাচ্ছিস।”

হানিমুন যাওয়ার কথা শুনে তো নন্দিতার চোখ গুলা স্বাভাবিকের তুলনায় বড় বড় হয়ে যায়। অন্যদিকে রাফি ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠে।

“হোয়াট? মা তুমি কি বলছো এসব? কথা নাই বার্তা নাই হানিমুনে যাওয়ার কথা আসলো কোথা থেকে?”

হেনা বেগমও ছেলেকে রাগ দেখিয়ে বলেন, “সবকিছু যে তোকে বার্তা দিয়ে করতে হবে তার তো কোনো মানে নেই। তাই তোরা দুজন কালকে হানিমুনে যাবি এটাই আমার শেষ কথা।”

“মা এখন কিন্তু বেশি করছো তুমি। আমার অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে। এমনি বিয়ের সময়ের কাজগুলা পেন্ডিং হয়ে পড়ে আছে।

“অফিসে যদি সব কাজ তোকেই করতে হয় তাহলে এতগুলা কর্মচারী রেখেছিস কেন হুম? তোরা কাল হানিমুনে যাবি এটাই আমার শেষ কথা।”

হেনা বেগম আর কিছু না বলে এখান থেকে চলে যান। রাফি নন্দিতার দিকে রাগী চোখে তাকায় আর নন্দিতা বেচারি ড্রয়িংরুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে জড়সড় হয়ে। রাফি যে এবার সবটা রাগ তার উপরে তুলবে সেটা খুব ভালো করেই জানে। রাফি নিজের রাগটাকে আপাতত সামলিয়ে বলে।

“কথা আছে তোমার সাথে রুমে আসো।”

নন্দিতা রাফির পেছন পেছন ভদ্র মেয়ের মতো চলে যায়। রাফি বেড রুমে এসে সোফায় বসে রাগে ফুঁসছে। নন্দিতা রুমে আসার সাথে সাথে রাফি বলা শুরু করে।

“তুই বলেছিস তাই না মাকে হানিমুনের যাওয়ার কথা।”

“বিশ্বাস করো রাফি আমি এই বিষয়ে কিচ্ছু জানতাম না, আমি মাকে কিছু বলি নাই।”

রাফি উঠে নন্দিতার দু বাহু চেপে ধরে বলে, “তোকে আমি বিশ্বাস করবো সেটা ভাবলি কি করে তুই? তুই অনেক আগেই আমার বিশ্বাসের মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছিস। তবে এটা মনে রাখিস তোর সাথে আমি হানিমুনে জীবনেও যাবো না। তাই তোর এসব ফালতু হানিমুনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা বাদ দিয়ে দেয়।”

রাফি কথাটা বলেই ব্লেজার আর অফিসের ব্যাগটা নিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়। আর নন্দিতা রাফির যাওয়ার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে।

#চলবে_______

Revenge of love Part-10

0

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_10

এলোমেলো পায়ে নন্দিতা রিক্সা থেকে নেমে আমবাগানে এসে পৌঁছায়। শ্বাসের গতি স্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক ভাবে চলছে। রাফিকে নিয়ে প্রচুর ভ’য় হচ্ছে নন্দিতার সত্যি যদি কোনো কিছু হয়ে যায় রাফির তখন কি হবে? ভেবেই বুকের ভেতরটা মোচরে উঠছে। আমবাগানে এসে চারপাশটায় নজর বুলিয়ে দেখে রাফি নেই। হঠাৎ করেই নন্দিতার নজর পড়ে যেখানে জনমানব কম সেখানে রাফি দাঁড়িয়ে আছে আর ফোনে কথা বলছে চোখে মুখে বিরক্তিকরভাব নিয়ে। নন্দিতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে রাফির কিছুটা কাছে আসতেই নজর যায় রাফির হাতের দিকে একটা ছোট কাচের বোতল। নন্দিতার বুকটা ধ্বক করে উঠে তবে কি সত্যি রাফি সু’ই’সা’ই’ড করতে যাচ্ছে। নন্দিতা আর কিছু না ভেবে দ্রুত কদমে রাফির দিকে এগুতে থাকে।

এদিকে রাফি সিয়ামকে ফোনে করে বলছে, “কিরে? এখনো কেউ‌ আসছে না কেন? কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো আমি আর এই বোতলটাতে কিসের ঔষধ আছে? আর এটা তো তুই নিজেই দিতে পারতি।”

ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে সিয়াম বলে, “ভাই আমি একটু ব্যস্ত তাই তোকে দিয়ে পাঠালাম। একটু পরেই চলে আসবে আমার আত্মীয়টা তোর কাছে আর এসেই তোর হাত থেকে ঔষুধটা ছিনিয়ে নিবে দেখিস।”

“আরে এখানে ছিনিয়ে নেওয়ার কি আ……”

টাস করে ফোন কেটে দেয় সিয়াম রাফিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। রাফি মুখে একরাশ বিরক্ত নিয়ে ঘুরে সামনের দিকে তাকাতেই নন্দিতাকে এভাবে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখে হতবাক হয়ে বলে।

“আরে এটা তো নন্দিতা আর ওর এই বেহাল অবস্থা কেন?”

নন্দিতা রাফির কাছে এসেই রাফির হাত থেকে বোতলটা কেড়ে নিয়ে আম গাছের গোড়ায় টিল মারে আর সাথে সাথে বোতলটা ভেঙ্গে যায়। রাফি নন্দিতার এমন আচরণ দেখে হতভম্ব হয়ে বলে।

“আরে এটা কি করলে তুমি, ভেঙ্গে দিলে বোতলটা? এখন কি হবে?”

নন্দিতা নাক ফুলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “কি করতে যাচ্ছিলেন আপনি হুম? কি করতে যাচ্ছিলেন?

শেষের কথাটা উচ্চস্বরে বলে উঠে নন্দিতা। রাফি অবাক হয়ে বলে, “কি করতে যাচ্ছিলাম মানে? তার আগে তুমি এটা বলো বোতলটা এভাবে ছুড়ে ফেলে দিলে কেন?”

নন্দিতা চিৎকার করে বলে উঠে, “তো কি করবো আমি হুম? আপনাকে আমি সু ই সা ই ড করতে দিবো এটা আপনি ভাবলেন কি করে?”

নন্দিতার কথা শুনে বোকা বনে গেলো রাফি। সারা মুখে রাজ্যের বিস্ময় ফুটে উঠেছে। এই মেয়ে বলে কি? গ্রামের বাড়ি থেকে এসে কি মাথাটা পুরো খারাপ হয়ে গেছে নাকি এই মেয়ের। আর সেও বা কোন দুঃখে সু ই সা ই ড করতে যাবে।‌ সব কিছু কেমন যেম গুলিয়ে যাচ্ছে রাফির। মাথাটা কেমন ভনভন করছে রাফির। কিন্তু রাফিকে নন্দিতা আরো অবাক করে দিয়ে রাফিকে দু হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বলে।

“প্লিজ আপনি এমনটা করবেন না। আমি জানি আপনি আমার ব্যবহারে আঘাত পেয়েছেন তা বলে আপনি এমন একটা বাজে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন।”

রাফি কি বলবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে‌ না। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে পুরো নন্দিতার এমন আশ্চর্যজনক ব্যবহার দেখে। হঠাৎ করে মেয়েটার হলো কি? আর এভাবে! স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো রাফি। নন্দিতা আবারো বলা শুরু করে।

“আমি সত্যি জানি না আমি আপনাকে ভালোবাসি কি না! কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সত্যি আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবো না। ভার্সিটিতে যতক্ষণ ছিলাম ততক্ষণ আপনাকে এক নজর দেখার জন্য ছটফট করছিলাম কিন্তু আপনি এখানে এসে সু ই সা ই ড করার মতো একটা ফালতু কাজ করেছিলেন। কেন এটা করতে যাচ্ছিলেন আপনি এটা?”

রাফির এতক্ষণে টনক নড়লো। তাহলে কি এখানে নন্দিতার আসার কথাই বলেছিলো সিয়াম। কিন্তু তা বলে এভাবে। কতটা ভয় পেয়েছে মেয়েটা না জানি? এটা ভেবেই খারাপ লাগছে রাফির কিন্তু নন্দিতা যে তার জন্য এত চিন্তা করে এটা ভেবে ভালো লাগা কাজ করেছে রাফির মনে। রাফি মুচকি হেসে নন্দিতার দু বাহু ধরে নিজের বুক থেকে সরিয়ে নেয়। নন্দিতার চোখের জলে নাকের জলে এক্কেবারে নাজেহাল অবস্থা হয়ে গেছে চেহারার। এখন আর চোখ দিয়ে নোনা জল বের হচ্ছে না শুধু নাক টানছে। রাফি মুখটা পাশে ফিরিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে হেসে ঢোক গিলে নন্দিতার দিকে তাকায়। নন্দিতার চোখে মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে রাফির জন্য ব্যাকুলতা যেটা রাফি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। সামনে দাঁড়ানো মেয়েটা যে তার প্রেমে মারাত্মকভাবে পড়েছে সেটা খুব ভালো করেই টের পাচ্ছে। না হলে কোনো কিছু না ভেবে এভাবে ছুটে আসে। রাফি নন্দিতার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি ফেলে নন্দিতার নিচু মুখটা দু হাত দ্বারা আগলে নিয়ে উপরে তুলে মিহি গলায় বলে।

“আমি ঠিক আছি নন্দিতা এবার ফুপানো বন্ধ করো। ইস! কান্না করে চোখের কাজলটা একে বারে ছড়িয়ে ফেলেছো।”

কথাটা বলে রাফি নন্দিতার চোখের জল মুছে দেয় বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা। নন্দিতা রাফির হাতের স্পর্শ পেয়ে ঢোক গিলে রাফির দিক থেকে নজর সরিয়ে নিয়ে রাফির দু হাতের বাঁধন থেকে মুখ সরিয়ে নিতে চাইলে রাফি তা হতে দেয় না। রাফি এবার আবেগি স্বরে বলে।

“ভালোবাসো আমায়?”

নন্দিতার সমস্ত কায়া কেঁপে উঠে। কি বলবে এবার সে? উত্তেজনার বশে সব সত্যি কথা বলে দিয়েছে রাফিকে এবার তো রাফি আরো পাগল হয়ে উঠবে আগে ছিলো আধপাগল এখন পুরো পাগল হয়ে যাবে। নন্দিতাকে মৌন থাকতে দেখে রাফি পুনরায় বলে।

“আই এম ওয়েটিং নন্দিতা! উত্তরটা জানতে চাই আমি, ভালোবাসো কি আমায়?”

নন্দিতা ক্ষীণ গলায় বলে, “জানি না।”

রাফি নিঃশব্দে হেসে নন্দিতার ডান হাতটা ধরে বলে, “তোমাকে জানতে হবে না। তবে এত টুকু বুঝতে পেরেছি তুমি যে আমায় ভালোবাসো আর আমাকে চোখে হারাও আর এটা কিন্তু তুমি তোমার মুখে স্বীকার করেছো।”

নন্দিতার এবার নিজের উপরেই খুব রাগ লাগছে। এত কথা কেন বলতে গেলো শুধু শুধু? এত কথা বলার কি কোনো দরকার ছিলো? গেলি তো এখন ফেঁসে। আর একটু আগে রাফিকে এভাবে জড়িয়ে ধরাটা কি খুব প্রয়োজন ছিলো। আজ যে কার মুখ থেকে উঠেছে নন্দিতার দিনটা মাটি করে দিলো। রাফি দু ভ্রু নাচিয়ে বলে।

“কি হলো, কি ভাবছো?”

“কিছু না আমি বাসায় যাবে।”

“যাবে তো তার আগে এক জায়গাতে চলো।”

নন্দিতা অবাক হয়ে বলে, “কোথায় যাবো?”

“গেলেই দেখতে পাবে।”

রাফি নন্দিতাকে নিয়ে আমবাগানের পাশের একটা রেস্টুরেন্টে‌ আসে। নন্দিতাকে চেয়ারে বসিয়ে রাফি বলে।

“তুমি বসো আমি আসছি?”

নন্দিতা বসা থেকে উঠে উত্তেজিত হয়ে বলে, “কোথায় যাবেন আপনি?”

“তুমি বসো আমি আসছি তো।”

নন্দিতা সরল গলায় বলে উঠে, “আমিও যাবো আপনারা সাথে আপনি যদি আবারো সু ই সা ই ড করতে যান।”

নন্দিতার বোকাবোকা কথা শুনে রাফির উচ্চস্বরে হাসতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আপতত এখন হাসা যাবে না নিজেকে সংযত করে রাখতে হবে। তবে তার জন্য নন্দিতার এমন চিন্তা দেখে মানসিক ভাবে প্রশান্তি পাচ্ছে খুব রাফি। নন্দিতা মুখে যতই বলুক ভালোবাসি না কিন্তু মনে মনে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটা রাফিকে। না হলে এমন একটা ফালতু প্ল্যানের ফাঁদে কেউ পড়ে। রাফি ম্লান হেসে বলে।

“বোকা নন্দিতা কিচ্ছু বুঝে না।”

রাফির মুখে বোকা কথাটা শুনে নন্দিতা রেগে বলে, “কি আমি বোকা?”

“তা নয় তো কি?”

নন্দিতা দু হাত কোমড়ে রেখে বলে, “আমাকে কোন অ্যাঙ্গেল থেকে বোকা মনে হয় আপনার?”

রাফি নন্দিতাকে পুনরায় চেয়ারে বসিয়ে বলে, “তুমি এখানে বসে গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখো‌ তুমি কোন অ্যাঙ্গেল থেকে বোকা কেমন?”

কথাটা বলে রাফি ওয়াসরুমের দিকে চলে যায়। নন্দিতা হা হয়ে রাফির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আসলেই কি সে বোকা নাকি রাফি তার সাথে মজা করলো কোনটা?

______

রাফি ওয়াশরুমে ঢুকে সিয়ামকে কল করে। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পরেই সিয়াম কল পিক করে বলে উঠে।

“কি মামা খুব আনন্দে আছো না?”

রাফি ধমকের স্বরে বলে, “এই চুপ! তোকে কে বলেছে এমন একটা ফালতু কাজ করতে?”

সিয়াম অসহায় গলায় বলে, “যাহ বাবা! যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চুর। এই ছিলো আমার পাঁচ আঙ্গুলের কপালে। এই জন্য আমজনতা’রা বলে মানুষের ভালো করতে নেই।”

রাফি তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “দেখ এই কাজটা একদম ঠিক করিস নি সিয়াম। মেয়েটা ভীষণ ভ’য় পেয়েছে জানিস সেটা।”

“হুম জানি সেটা। যাকে ভালোবাসে তার ব্যাপারে যদি এমন একটা সংবাদ শুনে তাহলে ভ’য় পাওয়াটা স্বাভাবিক নয় নি।”

“তুই এমন একটা ফালতু মার্কা প্ল্যান করেছিস সেটা কি আমার জানানোর প্রয়োজন ছিলো না।”

“এটা আমার প্ল্যান ছিলো না সুহার প্ল্যান ছিলো।”

রাফি এই‌‌ কথাটা শুনে সিয়ামকে খোচা মেরে বলে, “তাই তো‌‌ বলি তোর‌ গোবর ভরা মাথায় এমন মাস্টারমাইন্ড প্ল্যান আসলো‌ কি করে? কিন্তু এখন‌ শুনি অন্য কাহিণী।”

সিয়াম উত্তেজিত হয়ে বলে, “ওই‌ কি বললি তুই আমার মাথায় গোবর ভরা? আর একটু আগে‌ তুই নিজেই বললি ফালতু একটা প্ল্যান আর এখন বলছিস মাস্টারমাইন্ড প্ল্যান শালা পল্টিবাজ একটা রাখ ফোন। তোর সাথে আমার পনেরো বছরের সম্পর্ক এখানেই শেষ দ্যা এন্ড।”

কথাটা বলেই সিয়াম ফোন কেটে দেয়। রাফি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কয়েক কদম পেরিয়ে এসে দেখে নন্দিতা নেই। রাফি তাড়াতাড়ি করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে দেখে নন্দিতার কোনো অস্তিত্বও নেই। মেয়েটা তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে তার দোষেই। রাফি নিজের উপরে রেগে ইটের একটা টুকরো লাথি মেরে বলে।

“ধ্যাত্! চলে গেলো পালিয়ে। মেয়েটা এত পালাই পালাই করে কেন?”

রাফি কিছুক্ষণ নিবর থেকে প্যান্টের দু পকেটে নিজের দু হাত গুজে বাকা হেসে বলে, “সমস্যা নেই এক বার যখন নিজ ইচ্ছায় এসে আমার নীড়ে বন্দি হয়েছো তখন ঠিকই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো‌ মিস নন্দিতা। কতক্ষণ পালিয়ে থাকবে একবার না একবার তোমাকে বন্দি হতেই হবে আমার নীড়ে।”

#চলবে______

Revenge of love Part-09

0

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_9

বন্ধ ঘরে তিন বান্ধবী বসে আছে। তিন বান্ধবীর মাঝে দুই বান্ধবীই রুমা আর শিফা চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে নন্দিতার দিকে। নন্দিতা দুই বান্ধবীর এমন দৃষ্টি দেখে দু কাঁধ নাচিয়ে বলে।

“কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? মনে হচ্ছে যেন আমার রুপ বেড়েছে।”

রুমা মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলে, “রুপ তো অবশ্যই বেড়েছে তোর! তা না হলে কি ওত দূর থেকে দুটো ছেলে তোর সাথে দেখা করার জন্য এই অহিদপুর চলে আসে।”

নন্দিতা তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখে মুখে বিরক্তিকর ভাবে রেখে বলে, “শোন যা হওয়ার তা হয়ে গেছে এসব এখন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে।”

শিফা জোরে বলে উঠে, “ঝেড়ে ফেলে দিবো মানে? কখনো না এর গোড়া অব্দি যাবো আমরা তারপর ঝেড়ে ফেলবো মাথা থেকে এর আগে নয়। এখন তুই ঝটপট উত্তর দে ওই ছেলে দুটো কে?”

নন্দিতা কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “উফ! তোরা দুজন তোদের বাড়ি যা তো রাত তো কম হলো না। আরো দেরিতে গেলে জঙ্গলের ভুত গুলা তোদের ঘাড়ে চেপে বসবে।”

রুমা বুড়ো আর মধ্যমা আঙ্গুল দ্বারা চুটকি বাজিয়ে বলে, “শোন এতো ভুতের ভয় দেখাবি না। ছোট বেলা থেকে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছি আর এখন তুই আমাকে এসব ফালতু ভুতের ভয় দেখাছিস। তাই এত কথা না বলে চুপচাপ বল এই দুটো ছেলে কে? কি সম্পর্ক ওই ছেলেটার সাথে তোর?”

নন্দিতা কিছু বলতে নিবে তার আগেই শিফা নন্দিতাকে থামিয়ে বলে, “একদম না! যা জানতে চাইছি সেটা বল। তাই উল্টাপাল্টা কথা বলার চেষ্টা করবি না।”

নন্দিতা জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ে। বুঝতে পেরেছে এই দুই মেয়ে তাকে কিছুতেই ছাড়বে না সত্যিটা না জানে। তাই বলে দেওয়াই ভালো না মাথা খেয়ে ফেলবে। নন্দিতা মাথা নিচু করে বলে।

“রাফি নামের ছেলেটা আমাকে ভালোবাসে।”

শিফা কন্ঠ শক্ত করে বলে, “আরে সেটা তো আগেই বুঝতে পেরেছি যে ছেলেটা তোকে ভালোবাসে। কিন্তু ছেলেটা এত দূর এই‌ কথাটা বলার জন্য নিশ্চয়ই আসে না। নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে যার জন্য এখানে এসেছে আর তোকে সরিও বলল‌ ওদিনের জন্য। ওদিন কি হয়েছে আর কিসের জন্য সরি বলল?”

নন্দিতা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা বলল। শিফা আর রুমা সবটা হা করে শুনে শিফা নরম গলায় বলে উঠলো।

“আহা! কি ভালোবাসা?”

রুমা বলে, “হুমম রে! আর ছেলে দুটো কি হ্যান্ডসাম রে ভাই।”

“ঠিক বলেছিস একদম চকলেট বয়।”

“আচ্ছা শোন একটা তো নন্দিতাকে ভালোবাসে তাই আমি ভাবছি আরেকটাকে নিজের প্রে‌মের জ্বালে ফাঁসিয়ে নিবো।”

শিফা রুমার কথাটা শুনে চাওড়া হয়ে বলে, “একদম না ওইডা আমার। ওইডার দিকে নজর দিবি না তুই।”

দুই বান্ধবী কথার কাটাকাটি শুরু হয়ে গেলো। নন্দিতা জাস্ট এই দুটোকে আর নিতে পারছে না। মেয়ে মানুষের একটা স্বভাব কিছু পেলেই তা নিয়ে নাচানাচি শুরু করে দেয়া। নন্দিতা আর সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে বলে উঠে।

“তোরা চুপ করবি। নাকি আমি তোদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো এই ঘর থেকে।”

নন্দিতার এমন চিৎকার শুনে শিফা আর রুমা হতভম্ব হয়ে নন্দিতার দিকে তাকিয়ে আছে। নন্দিতা আবারো বলা শুরু করে।

“কি সমস্যা তোদের হুম কি সমস্যা? কোথাকার কোন ছেলেকে নিয়ে তোরা এমন ফালতু বকবক করছিস কেন?”

রুমা আর শিফা কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে নন্দিতার দিকে তাকিয়ে হু হু করে হেসে দেয়। নন্দিতা জাস্ট স্তম্ভিত‌ হয়ে গেছে এই‌ দুটোর কান্ড দেখে। রুমা হাসতে হাসতে বলে।

“তোর কি জ্বলছে নন্দিতা আমরা তোর প্রেমিক আর তোর দেবরকে নিয়ে আলোচনা করছি দেখে।”

নন্দিতা ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠে, “প্রেমিক কিসের প্রেমিক, কার প্রেমিক? ওনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই আর হবেও না বুঝলি।”

শিফা এবার মুচকি হেসে সিরিয়াস হয়ে বলে, “দেখ নন্দিতা ছেলেটা তোকে সত্যি ভালোবাসে। না হলে কেউ এভাবে এতটা রাস্তা বাইক চালিয়ে চলে আসে। শুনেছি ঢাকা শহরে নাকি বাইকের এক্সিডেন্ট প্রচুর হয়। ছেলেটা এসব ভয় না করে তোর সাথে দেখা করার জন্য এতদূর ছুঁটে এসেছে। আর যা হয়েছে তাতে তো ওনার কোনো দোষ নেই। সব দোষ ওই দিয়া নামের মেয়েটার। আর ভাইয়া তো দিয়াকে পছন্দও করে তোর মুখ থেকেই বলা কথাটা।”

নন্দিতা শিফার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে, “ভাইয়া। কোন কালের ভাই তোর ওই লোকটা হুম?”

শিফা তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “দেখ ওনি বয়সে অনকেটাই বড় আমাদের থেকে তাই ভাইয়া বলেছি সম্মান দেখানোর জন্য। এর জন্য এতটা পেনিক হওয়ার কি আছে? আর আমার তো‌ মনে হচ্ছে তুইও ওনাকে ভালোবাসিস।”

নন্দিতা শিফার কথা শুনে ভ্রু কুচকে বলে, “কিহ? আমি ওনাকে ভালোবাসি জীবনেও না।”

শিফা মুচকি হেসে বলে, “ঠিক আছে সময় আসলে বোঝা যাবে।”

নন্দিতা কিছু বলতে যাবে এর মাঝেই মজনু আহমেদ মেয়েকে ডাকতে শুরু করেন। বাবার এমন হাক ডাক শুনে নন্দিতা তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হয় পেছন পেছন শিফা আর রুমাও বের হয়। নন্দিতা বাবার কাছে গিয়ে বলে।

“কি হয়েছে বাবা?”

মজনু আহমেদ শান্ত গলায় বলেন, “ছেলে দুটো কে আম্মা?”

নন্দিতা বাবার মুখে এমন কথা শুনে ধ্বক করে উঠে বুকটা। বাবা কি করে জানলো রাফি আর সিয়ামের কথা? যে ভয়টা পেয়েছিলো সেটাই হলো, এবার কি হবে? নিশ্চয়ই বাবার কানে এই‌ কথাটা তুলে দিয়েছে‌‌ কেউ। নন্দিতা নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। এদিকে রুমা আর শিফা একে অন্যের মুখের দিকে দু একবার তাকিয়েছে। তিন বান্ধবী যদি কিছু বলেও দেয় তাহলে তাদের কথার মিল পাবে না। তাই রুমা আর শিফা চুপ করে থাকলো। যা বলার নন্দিতাই বলবে। নন্দিতাকে চুপ থাকতে দেখে মজনু আহমেদ আবারো বলেন।

“কি হলো আম্মা বলো?”

নন্দিতা ঢোক গিলে শান্ত গলায় বলে, “আসলে বাবা ওনারা দুজনে একটা ঠিকানা জানতে চেয়েছিলো।”

মজনু আহমেদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন, “ও আচ্ছা! ঠিক আছে তুমি ঘরে যাও।”

নন্দিতা মাথা নাড়িয়ে দ্রুত কদমে নিজের ঘরে চলে যায়। রুমা আর শিফা নন্দিতার ঘরে যায় নি সোজা নিজেদের বাড়িতে চলে গেছে। এখানে থাকা মানে নিজের বিপদ ডেকে আনে। নন্দিতা ঘরে ঢুকেও দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে বাবা মার কথা শোনার জন্য। জমেলা বেগম বলেন।

“কি গো! হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলে কেন মেয়েটাকে? কিছু কি হয়েছে?”

“আর বলো না সুরেশ দূর থেকে দেখেছে নন্দিতার সাথে নাকি দুটো ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে। তাই নন্দিতাকে জিঙ্গেস করলাম ব্যাপারটা কি?”

বাবার কথাটা শুনে নন্দিতা হাফ ছেড়ে বাঁচে। বুকে হাত রেখে‌ জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে খাটে গিয়ে বসে বিড়বিড় করে বলে।

“এ যাত্রায় বেঁচে গেছি আল্লাহ। যদি সুরেশ কাকা কাছপিঠে থাকত তাহলে তো সব কথা শুনে নিতো।”

নন্দিতা টেবিলের উপরে রাখা পানির বোতলটা নিয়ে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে মনে মনে বলে।

“যত সম্ভব তাড়াতাড়ি করে আমাকে ঢাকা ফিরে যেতে হবে না হলে এই লোক আবারো গ্রামে আসবে আর একটা বেজাল বাঁধাবে। গ্রামের মানুষ যে কি রকম সেটা তো আমি খুব ভালো করে জানি। তালকে তিল বানিয়ে দিতে একটুও সময় নিবে। কিন্তু এই‌ লোক জানলো কি করে আমার গ্রামের বাড়ি কোথায়? সুহা তো জানে না তাহলে কি করে জানলো? উফ! আল্লাহ আমার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল হলো ঢাকাতে পড়াশোনা করতে যাওয়া। না জানি এখন ঢাকায় ফিরে গেলে এই লোক আবার কি করে? উফ অসহ্যকর!”

_________

পরের দিনেই বিকেল বেলা ঢাকাতে ফিরে আসে নন্দিতা আর জমেলা বেগম। এবারও মজনু আহমেদ জোর করে স্ত্রীকে মেয়ের সাথে পাঠিয়ে দিয়েছেন। নন্দিতার সারাটা রাত ভালো করে ঘুমাতে পারে নি এটা ভেবে ভার্সিটিতে গেলে কি হবে? রাফির মুখোমুখি হলে কি হবে? সুহাকেও ফোন করে জানাইনি ও যে ঢাকাতে এসেছে। কি করে জানাবে, সুহাকে না জানিয়ে বাড়িতে চলে গেছে আর সুহার প্রত্যেকটা কল ইগনোর করে গেছে এত দিন। এখন ফোন করে জানাতে গেলে এই মেয়ে ফোনের মাঝেই নন্দিতার গলা টিপে ধরবে নিশ্চিত। তাই একেবারে সামনাসামনি না হয় সুহার সাথে কথা বলে সবটা মিটমাট করে নিবে। যা হওয়ার সামানাসামনি হবে।

পরের দিন সকাল বেলা ঠিক সময় নন্দিতা ভার্সিটিতে আসে। মুখে মাস্ক আর মাথায় ওড়না দিয়ে এক হাত ঘোমটা টেনে আসে। নন্দিতা গুটিগুটি পায়ে নিজের ডিপার্টমেন্ট চলে যায়। ক্লাস রুমে ঢুকতেই চোখ যায় সুহার দিকে বসে বসে ফোন টিপছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। নন্দিতা শুকনো ঢোক গিলে আস্তে আস্তে করে সুহার পাশে বসে পড়ে। সুহা পাশে একবার তাকিয়ে আবারো ফোন টিপাতে মনযোগ দেয় কিন্তু পরক্ষণে ভ্রু কুচকে নিয়ে পাশে তাকিয়ে বলে।

“নন্দিতা তুই!”

নন্দিতা মাস্কটা খুলতে খুলতে ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বলে, “হুম আমি! ভালো আছিস?”

সুহা দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “সর এখান থেকে না হলে এমন একটা উষ্টা দিবো সোজা আবার তোর বাপের বাড়ি গিয়ে পড়বি।”

নন্দিতা সুহার কথা প্রত্যুত্তরে না করে উল্টে সুহাকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে, “সরি দোস্ত আর এমন করবো না প্রমিজ। এবারের মতো ক্ষমা করে দে। এই দেখ কান ধরছি।”

নন্দিতাকে কানে ধরতে দেখে সুহা মুখ বাঁকিয়ে বলে, “থাক এত ভাব ধরতে হবে না আমার সামনে।”

নন্দিতা কান থেকে হাত নামিয়ে আবারো সুহাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমি জানি তো আমার জানু আমার উপরে রেগে থাকতেই পারে না।”

সুহা মৃদু স্বরে বলে, “তবে তোর উপরে একজন খুব অভিমান করে আছে সেটা কি তুই জানিস?”

নন্দিতা সুহার কাছ থেকে সরে এসে ভ্রু কুচকে বলে, “কে?”

“রাফি ভাই।”

নন্দিতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সুহা বলে উঠে, “প্লিজ নন্দিতা আমার কথাটা আগে শোন তারপর কথা বলিস। আমি জানি তুইও ভাইয়ার উপরে অভিমান করে আছিস। কিন্তু ওই দিন যা কিছু হয়েছে এতে কি ভাইয়ার কোনো দোষ আছে তুই বল? ভাইয়া তোকে ভালোবাসে এটা কি তার দোষ? ভালোবাসা জিনিসটা বলে কয়ে আসে না আপনাআপনি হয়ে যায়। তুই তো জানিস দিয়া মেয়েটা কেমন? এখন এই ঘটনাটা হওয়ার পেছনে যদি ভাইয়াকে দোষী সাব্যস্ত করিস তাহলে ভুল করছিস। আমি বলছি না তুই ভাইয়ার সাথে রিলেশনশিপে যা। আমি জাস্ট এটা বলতে চাইছি ভাইয়াকে প্লিজ ইগনোর করিস না। ভাইয়া তোকে সত্যিই ভালোবাসে আর হয়তো তুই মনে মনে ভালোবাসিস কিন্তু স্বীকার করতে চাইছিস না কিংবা বুঝতে পারছিস না।”

নন্দিতা সুহার প্রত্যেকটা কথা মন দিয়ে শুনলো। সত্যিই তো এতে রাফির কোনো দোষ নেই। তাহলে কেন শুধু শুধু রাফিকে দোষারুপ‌ করছে। কিন্তু রাফির জন্যই তো এমন একটা ঘটনা হয়েছে। রাফি যদি তার জীবনে না আসতো তাহলে তো এমন কিছুই হতো না।‌ আর সুহার বলা শেষের কথাটা বার বার নন্দিতার কানে বাজছে, সত্যি কি সে রাফিকে ভালোবাসে প্রত্যেকে কেন এই কথাটা বার বার বলছে?

________

ক্লাস শেষে ভার্সিটির মাঠ দিয়ে আনমনে হেঁটে যাচ্ছে নন্দিতা। মাথায় এখনো সুহার বলা প্রত্যেকটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। আর ভার্সিটিতে আজকে রাফিকে আশা করেছিলো কিন্তু রাফি কোনো দেখা নেই এমন কি রাফির বন্ধুবান্ধবদেরও দেখা নেই। যে লোক এত দূরে চলে গিয়েছিলো তার সাথে দেখা করার জন্য আর আজকে কিনা এত কাছে সে মানুষটা এসেছে তারপরও দেখা করতে আসছে না। ব্যাপারটা বড্ড সন্দেহজনক লাগছে নন্দিতার কাছে। হঠাৎ করেই নন্দিতার ফোন বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে আননোন নাম্বার দেখে ভ্রু কুচকে বলে।

“এটা আবার কার নাম্বার?”

পাশ থেকে সুহা বলে উঠে, “ধরে দেখ কে?”

নন্দিতা ফোন পিক করে কানে নিতেই‌ ফোনের ওপর পাশ থেকে পুরুষালী একটা কন্ঠে ভেসে আসে, “নন্দিতা প্লিজ তুমিই একমাত্র পারো রাফিকে বাঁচাতে।”

নন্দিতা এমন একটা কথা শুনে হকচকিয়ে উঠে, “মানে কি বলছেন আপনি এসব?”

“প্লিজ নন্দিতা রাফি সু’ই’সা’ই’ড করতে যাচ্ছে। এখন একমাত্র তুমিই পারো ওকে বাঁচাতে।”

“কি বলছেন কি এসব আপনি? ওনি সু’ই’সা’ই’ড করতে যাচ্ছে আর আপনি না আটকিয়ে আমাকে ফোন করছেন।”

“না মনে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারছি না উল্টে আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। এখন তুমিই ভরসা ও তোমাকে ভালোবাসে আর ও তোমার কথা নিশ্চয়ই মানবে আমার ধারণা।”

“ওনি কোথায় আছে বলুন তাড়াতাড়ি?”

“আমবাগানে আছে।”

“ঠিক আছে আমি আসছি এক্ষুণি।”

সুহা বলে, “কিরে কি হয়েছে?”

নন্দিতা জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলে, “আমাকে… আমাকে এক্ষুণি যেতে হবে।”

কথাটা বলেই নন্দিতা দৌঁড়াতে শুরু করে। নন্দিতার দৌঁড়ানি দেখে সুহা বাঁকা হেসে বলে।

“প্ল্যান সাকসেসফুল। এবার শুধু মুখে স্বীকার করার পালা। তুই আটকে গেছিস নন্দিতা খুব বাজে ভাবে আটকে গেছিস। এখন এর থেকে শত চেষ্টা করলেও ছুটে আসতে পারবি না।”

নন্দিতা ভার্সিটি থেকে চলে যেতেই বিশাল আর সিয়াম আড়াল থেকে বের হয়ে সুহার পাশে এসে দাঁড়ায়।

সিয়াম বলে, “তোমার বুদ্ধিটা কি শেষ পর্যন্ত কাজে লাগবে সুহা?”

সুহা মুচকি হেসে বলে, “লাগবে লাগবে নিশ্চিয়ই লাগবে। নন্দিতা তো শকড হবেই সাথে রাফি ভাইয়াও। আমার তো সিনটার কথা ভেবেই হাসি পাচ্ছে। দুজনের মাঝে কেউ কিছুই জানে না সামনে তাদের সাথে কি হতে চলেছে?”

#চলবে_________

Revenge of love Part-08

0

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_8

দু দিন পেরিয়ে গেছে নন্দিতার কোনো খোঁজ খবর নেই। রাফি যত বার ফোন দিয়েছে তত বারই ফোন অফ আসে। আর ফোন যদি অনও থাকে তাহলেও কল ধরে না। সুহার কাছেও কোনো খবর নেই নন্দিতার। সুহার কলও‌ মেয়েটা ধরে না। এমন কি সুহা নন্দিতার গ্রামের বাড়ির নামটাও জানে না। তার জন্য রাফি আচ্ছা করে সুহাকে কথা শুনিয়ে দিয়েছে। বান্ধবী হয়ে বান্ধবীর গ্রামের নাম কেন জানে না তার জন্য? রাফি নন্দিতার বাসায় অনেক বার গিয়েছে কিন্তু সদর দরজায় মস্ত বড় একটা তালা ঝুলানো। কাউকে জিঙ্গেস করে নন্দিতার খবর নিবে এটারও সাহস পাচ্ছে না রাফি যদি কেউ কিছু মনে করে তার জন্য রাফি সুহার কাছে এসে বলে।

“সুহা চলো।”

সুহা ভ্রু কুঁচকে বলে, “কোথায়?”

“নন্দিতার বাসায়।”

“কিন্তু ভাইয়া আপনিই তো বললেন নন্দিতা বাসায়‌ নাকি তালা মারা।”

“তুমি ওদের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে না হলে ওদের বাড়িওয়ালার কাছ খবর নিবে ওরা কোথায় গেছে?”

সুহা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “ঠিক আছে চলুন।”

সুহা রাফির বাইকের পেছনে উঠে বসতেই রাফি বাইক স্টার্ট দেয়। রাফির পেছন পেছন সিয়ামও যায়। এই সবটা দূর থেকে দিয়া রাগী চোখে তাকিয়ে দেখেছে। এর মাঝে রাফি দিয়াকে বড়সড় একটা থ্রেট দিয়েছে “যদি নন্দিতার কিছু হয় তাহলে দিয়ার জন্য ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে।” এটার জন্য দিয়া রেগে ফায়ার হয়ে আছে আরো নন্দিতার উপরে।

______

রাফির বাইক এসে থামে নন্দিতার বাসার সামনে। সুহা‌ বাইক থেকে নামতেই রাফি বলে।

“আমরা এখানে অপেক্ষা করছি তুমি জেনে আসো।”

সুহা কিছু না বলে ভেতরে চলে যায়। কিন্তু রাফির ভেতরে ঝড় বইতে শুরু করেছে যদি তারা কিছু না জানে তাহলে। রাফি বাইক থেকে নেমে পায়চারি করা শুরু করে দেয়। রাফির অস্থিরতা বুঝতে পেরে সিয়াম বলে।

“ভাই তুই একটু শান্ত হয়ে বস।”

রাফি ক্রমাগত শ্বাস ফেলে বলে, “পারছি না শান্ত হয়ে বসে থাকতে সিয়াম। নন্দিতার চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার। মেয়েটা এভাবে কিছু না বলে চলে গেছে বুঝতে পারছিস কতটা কষ্ট পেলে এমনটা করে।”

সিয়াম রাফির কথার পক্ষান্তরে কিছু বলে না। কয়েক মুহূর্ত পরেই সুহা বেরিয়ে আসে। সুহাকে দেখেই রাফি সুহার কাছে এসে বলে।

“কোনো তথ্য পেয়েছো?”

“হুম!”

“কোথায় গেছে?”

“কিছু দিনের জন্য নাকি গ্রামের বাড়ি গিয়েছে।”

রাফি ভ্রু কুচকে বলে, “গ্রামের বাড়ি কোথায়?”

“অহিদপুর!” (কাল্পনিক নাম)

রাফি অস্পষ্ট স্বরে বলে, “অহিদপুর।”

সিয়াম রাফির মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে, “রাফি! তোর চোখ মুখ কিন্তু অন্য কথা বলছে।”

রাফি বাইকে বসে হেলমেট মাথায় পরতে পরতে বলে বলে, “চল।”

সিয়াম কপাল ভাঁজ করে বলে, “চল মানে! কোথায় যাবো?”

রাফি ঠান্ডা গলায় বলে, “অহিদপুর।”

“তোর কি মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে রাফি। অহিদপুর যাবি তুই এখন।”

“হুম যাবো।”

কথাটা বলে সুহার দিকে তাকিয়ে বলে, “সরি সুহা তোমাকে পৌঁছে দিতে পারলাম না তার জন্য সরি।”

সুহা মুচকি হেসে বলে, “না ভাইয়া ঠিক আছে। আমি রিক্সা করে চলে যেতে পারবো।”

সিয়াম দ্রুত গলায় বলে, “রাফি পাগলামি করিস না। নন্দিতা আসলে তখন না হয় কথা বলে নিস।”

রাফি কপালে দুশ্চিন্তার বলিরেখা রেখে বলে, “আমি পারবো না আর ওয়েট করতে।”

সিয়াম বোঝানোর স্বরে বলে, “দেখ পাগলামি করিস না রাফি।”

রাফি নিঃশব্দে হেসে বলে, “যাকে মন থেকে ভালোবেসেছি তার জন্য না হয় একটু পাগলামি করলাম আমি।”

“দেখ রাফি গ্রামে গেলেই যে তুই নন্দিতার দেখে পেয়ে যাবি এমনটা কিন্তু নয়। আর যেতে যেতে বিকেল হয়ে যেতে পারে।”

রাফি মুচকি হেসে বলে, “খুজে নিবো। পারলে সারা গ্রাম তোলপাড় করে ফেলবো ওকে খুঁজতে কিন্তু তারপরও ওর সাথে আমি আজেই দেখা‌ করবো।”

সিয়া‌ম বিরক্ত হয়ে মুখ দিয়ে “চ” জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে।

রাফি বাইকে চাবি ঢুকিয়ে বলে, “আসি।”

কথাটা বলেই এক টান মারে বাইক। সিয়ামের আর কি করার? বন্ধুকে তো আর একা ছেড়ে দিতে পারে না। তাই বাধ্য হয়েও নিজেও চলল বন্ধুর পেছন পেছন।

_______

এদিকে গ্রামে এসেও মুখ গোমরা করে বসে আছে নন্দিতা। ঘর বন্দি করে রেখেছে নিজেকে। যে মেয়ে গোধূলি বেলায় গ্রামের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতো সে মেয়ে আজ দুই দিন হলো বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না বের হলেও শুধু উঠোন পর্যন্ত। নন্দিতার বাবা মাও বুঝতে পারছে না মেয়েটার হঠাৎ হলোটা কি? জমেলা বেগম রান্না করে রান্না করছেন রাতের জন্য। মজনু আহমেদ ক্ষেতে পানি দিয়ে বাড়িতে এসে হাত মুখ ধুয়ে স্ত্রীর পাশে বসে চিন্তিত হয়ে বলেন।

“মেয়েটার হঠাৎ করে কি হলো গো?”

জমেলা বেগম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, “জানি না গো। হঠাৎ‌ করে মেয়েটার কি যে হলো? আমি শিফা আর রুমাকে খবর দিয়েছি আসার জন্য।”

“ভালো করেছো।”

এমন সময় উঠোন থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসছে। জমেলা বেগম মুচকি হেসে বলেন।

“ওই‌ তো ওরা চলে এসেছে মনে হয়।”

জমেলা বেগম রান্না ঘর থেকে বের হয়ে বলেন, “এসেছিস তোরা।”

শিফা চিৎকার করে বলে, “কোথায় সেই মহারাণী? এসেছে থেকে তো একবারও দেখা করলো না। তাই আমাদেরকেই আসতে হলো তার মুখখানা দেখতে।”

রুমা বলে, “আরে বুঝিস না ও তো এখন শহরে পড়াশোনা করে। আমাদের কি এখন মনে রাখবে নাকি।”

এমন অনেক কথাবার্তাই রুমা আর শিফা ইচ্ছে করে নন্দিতা শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে। নন্দিতা শুয়ে ছিলো যখনেই শিফা আর রুমার এসব কথাবার্তা শুনলো তখনেই‌ শুয়া থেকে উঠে বাইরে বেরিয়ে আসে। নন্দিতাকে দেখে সিফা বলে।

“এই তো আমাদের মহারাণীর দেখা মিললো।”

নন্দিতা মুচকি হেসে বলে, “কখন এসেছিস?”

“মাত্রই আসলাম।”

রুমা নন্দিতার হাত ধরে বলে, “চল আজ তিন বান্ধবী মিলে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়াবো। অনেক দিন হয়ে গেছে তিন বান্ধবী এক সাথে হয় নি। আজ হয়েছি তাই আগের মতো সারা গ্রাম ঘুরবো।”

নন্দিতা মুখ‌ শুকনো করে বলে, “আমি যাবো নারে। আমার ভালো লাগছে না।”

শিফা রেগে বলে, “একদম ভাব ধরবি না। শহরের হাওয়া গায়ে লাগতে না লাগতেই ভাব এসে গেছে না‌ আপনার অঙ্গে। একদম ভাব ছুটিয়ে দেবো।”

জমেলা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে‌ বলেন, “ঘুরে আয় ভালো লাগবে।”

রুমা নন্দিতার হাত টেনে ধরে বলে, “চল তো এতো ভাব না ধরে।”

রুমা, শিফা আর নন্দিতা বেরিয়ে পড়লো ঘুরতে।

______

এদিকে রাফি আর সিয়াম মাত্র এসে পৌঁছেছে অহিদপুরে। সূর্য পশ্চিম আকাশে তখন হেলে পড়েছে। চারিদিকে সূর্যের সোনালি আভা ছড়িয়ে পড়েছে।‌ গ্রামের ব্যস্ত মানুষরা তখন ঘরে ফিরতে ব্যস্ত। কেউ হাট থেকে সদাই করে ফিরছে, কেউ বা মাঠ থেকে গরু‌ নিয়ে নিজ নিজ গৃহে ফিরে যাচ্ছে।

মাটির রাস্তার দুপাশে সবুজ ধান ক্ষেত। সবুজ রঙের ধান গাছ গুলা শীতল বাতাসের সাথে নিজ মনে ধুলছে। এর মাঝ দিয়ে দুই মানব বাইক চালিয়ে চলছে নিজেদের গন্তব্যস্থলে। কিন্তু সেই গন্তব্যস্থলে কি আজও পৌঁছাতে পারবে। রাফি বাইক থামিয়ে একজন মধ্য বয়স্ক লোককে বলে।

“চাচা আপনি নন্দিতা নামে কাউকে চিনেন?”

লোকটা কিছুক্ষণ ভেবে বলেন, “না বাবা এমন নামে তো কাউকে চিনি না।”

“ও আচ্ছা।”

রাফির পাশে সিয়াম বাইক থামিয়ে বলে, “আরেকটু ভেতরে যেতে হবে হয়তো।”

________

এদিকে নন্দিতা চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছে গ্রামের মেঠোপথ ধরে। নন্দিতাকে এমন গুমড়ে থাকতে দেখে রুমা শিফাকে ইশারা করে নন্দিতাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে। শিফা মাথা নাড়িয়ে নন্দিতাকে বলে।

“কিরে নন্দিতা? তোর ব্যাপারটা কি বলতো? প্রেম করে ছ্যাঁকা টেকা খেয়েছিস নাকি হুম যে এমন শোক মেরে আছিস।”

মুহূর্তের মাঝে নন্দিতার পা দুটো থমকে যায়। কিছু একটা ভেবে কন্ঠে রূঢ়তা এনে বলে।

“কি যা তা বলছিস?”

“তাহলে এমন গুমড়ে আছিস কেন? কিছু তো একটা হয়েছে নিশ্চয়ই। বলনা কি হয়েছে আমাদের?”

নন্দিতা কর্কশ কন্ঠে বলে, “কিছু হয়নি আমার। আমি বাড়ি গেলাম।”

কথাটা বলেই বাড়ির পথে হাঁটা ধরে। রুমা নন্দিতার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে।

“ওর কিছু একটা তো হয়েছে আমি নিশ্চিত।”

“কিন্তু ও তো কিছু বলছে না।”

“কি আর করার না বললে। চল বাড়ি যাই এখন।”

গ্রামের মেঠোপথ ছেড়ে এখন বড় সড়কে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে নন্দিতা, রুমা আর শিফা। হঠাৎ করেই দুটো বাইক ক্রস করে যেতেই নন্দিতার পা জোড়া থেমে যায়। এই দুটো বাইক তার বড্ড চেনা।

অন্যদিকে রাফিও নন্দিতাকে দেখে কিছুটা দূরে যেতেই তৎক্ষণাৎ বাইক থামিয়ে ফেলে। নন্দিতাকে‌ যে এভাবে পেয়ে যাবে রাফি কল্পনাও করতে পারে নি। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। তার কষ্টটা তাহলে‌ বৃথা যায় নি।

নন্দিতা পেছন ফিরে তাকাতেই চমকে যায় রাফিকে আর সিয়ামকে। রাফি বাইকের উপরে হেলমেটটা রেখে নন্দিতার দিকে এগিয়ে আসছে। নন্দিতা অস্বস্তিতে পড়ে যায় রাফিকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে। হঠাৎ করে রাফি আর সিয়াম গ্রামে এসেছে কেন নন্দিতা ঠিক বুঝতে পারছে না? নন্দিতা কি এখন রাফিকে ইগনোর করে চলে যাবে নাকি রাফি কেন এসেছে সেটা জানবে? নন্দিতা রাফির এগিয়ে আসা দেখে উল্টো ঘুরে চলে যেতে নিবে তখনই রাফি উচ্চ স্বরে বলে।

“নন্দিতা প্লিজ দাঁড়াও আমার কথাটা তো একটু শোনে যাও।”

রাফি দৌঁড়ে এসে নন্দিতার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে, “নন্দিতা প্লিজ আমার কথাটা একটি বার শোনো।”

নন্দিতা রাফির দিকে না তাকিয়ে বলে, “আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই।”

রাফি ঠান্ডা গলায় বলে, “কিন্তু আমার আছে।”

“দেখুন এখানে সিনক্রিয়েট করবেন না এটা গ্রাম ঢাকা শহর নয়।”

রাফি অনুনয় হয়ে বলে, “প্লিজ নন্দিতা আমি জাস্ট কয়েকটা কথা বলবো।”

রুমা আর শিফা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। কি হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছে না? সড়ক দিয়ে যারা হেঁটে যাচ্ছে তারাও তাদের দিকে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত চোখে। শিফা মানুষ‌ জনের দৃষ্টি বুঝতে পেরে নন্দিতার কাছে এসে বলে।

“ছেলে দুটো কে নন্দিতা?”

এর মাঝে রাফি বলে, “প্লিজ নন্দিতা জাস্ট পাঁচ মিনিট সময় দাও আমাকে। আমি শুধু মাত্র তোমার সাথে দেখা করার জন্য এতটা রাস্তা বাইক চালিয়ে এসেছি।”

নন্দিতার বুকটা কেন যেন ধ্বক করে উঠে কথাটা শুনে। রাস্তায় যদি লোকটার কিছু হয়ে যেত তখন কি হতো? এতটা পাগলামি করার কি কোনো মানে আছে! এসব ভেবে নন্দিতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “ঠিক আছে বলুন কি বলবেন।”

রাফি মিহি স্বরে বলে, “তুমি এভাবে হঠাৎ করে গ্রামে চলে আসলে কেন?”

“আমি কখন গ্রামে আসবো না আসবো সেটা কি আপনাকে বলে আসতে হবে নাকি।”

“সরি! আমি জানি ওই দিন যা কিছু হয়েছে সবটা আমার জন্যই হয়েছে। তা বলে তুমি এভাবে চলে আসবে।”

নন্দিতা‌ এবার গলার স্বরে কঠিন করে বলে, “আশ্চর্য আমি কখন বললাম আমি আপনার জন্য চলে এসেছি।‌‌ আমার বাড়িতে আসতে ইচ্ছে হয়েছে তাই এসেছি এটার জন্য আপনি কেন নিজেকে দোষী মনে করছেন আমি ঠিক বুঝতে পারছি না?”

রাফি নিঃশব্দে হেসে কোমল গলায় বলে, “তোমার প্রত্যেকটা কথার মাঝে অভিমান লুকিয়ে আছে সেটা কি তুমি জানো নন্দিতা।”

নন্দিতা রাফির কথা শুনে ঢোক গিলে। রাফির মুখে এই নন্দিতা ডাকটা বড্ড অদ্ভুত লাগে নন্দিতার কাছে।‌ কিন্তু রাফি যে তাকে কথার জালে ফাঁসাতে চাইছে সেটা ভালো করে বুঝতে পারছে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে তাই নন্দিতা আর কিছু না বলে রাফির পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে রাফি বলে উঠে।

“তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবাসো না নন্দিতা। যদি উত্তরটা না দিয়ে যাও তাহলে বুঝে নিবো তুমি আমাকে ভালোবাসো।”

নন্দিতার না চাওয়া সত্বেও থেমে যায় রাফির কথা শুনে। নন্দিতার বোঝে আসছে না একটা লোক এতগুলা মানুষের সামনে রিজেক্ট হওয়ার পরেও আবার কি করে এই কথাটা বলছে। নন্দিতা রাফির দিকে ফিরে বলে।

“আপনার কি লজ্জাশরম বলতে কিচ্ছু নেই। ওই দিন এত গুলা মানুষের সামনে রিজেক্ট হয়েছেন তারপর আবারো রিজেক্ট হতে চলে এসেছেন এত দূরে।”

রাফি দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে, “ভালোবাসায় লজ্জাশরম নামক বস্তু থাকতে নেই বুঝলে প্রিয়।”

রাফির মুখে প্রিয় ডাকটা শুনে অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে নন্দিতার মনের মাঝে কিন্তু রাফির দাঁত কেলানো দেখে নন্দিতার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। একে তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে তার উপর রাফির এসব অসহ্য মার্কা কথাবার্তা। নন্দিতা সিরিয়াস মুডে বলে।

“শুনুন মিস্টার রাফি তাজওয়ার আমি আপনাকে ভালোবাসি না আর কোনো দিন বাসবোও না।”

কথাটা বলেই নন্দিতা দ্রুত পায়ে হেঁটে চইে যায়। রাফি নন্দিতার যাওয়ার পানে তাকিয়ে উচ্চ স্বরে বলে।

“বাসবে না কি ওলরেডি ভালোবেসে ফেলেছ। তোমার চোখে মুখে আমার জন্য ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। কিন্তু সেটা মুখে প্রকাশ করতে চাইছো না কিন্ত একদিন ঠিকই প্রকাশ করবে আর সেটা খুব জলদি।”

সিয়াম রাফির কাছে এসে বলে, “ভাই তুই চুপ কর। আশেপাশে লোক আছে সেটা অন্তত দেখ। আর‌ যদি‌ কিছু হয় সেটা নন্দিতার উপরে গিয়ে‌ পড়বে তোর‌ উপরে না‌।”

রাফি কিছু না বলে বাইকের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে, “চল।”

রাফি হাফ ছেড়ে বলে, “আমি আর বাইক চালাতে পারবো না রাফি।”

“চালাতে হবে না। তুই বরং আমার হবু বউয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠে পড়।”

“ফাজলামি করিস না রাফি। মেজাজ খুব গরম আছে আমার। আর কি লাভ হলো এখানে এসে তোর? লাভের লাভ তো কিছুই হলো না মাঝখান দিয়ে শুধু বাইকের তেল খরচ হলো।‌‌”

রাফি বাইকে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে, “লাভ হলো নাকি লোকসান হলো‌ সেটা নিয়ে তোর না ভাবলেও চলবে। এখন তাড়াতাড়ি বাইক স্টার্ট দে নয়টা কিংবা দশটার ভেতরে পৌঁছে যেতে পারবো ঢাকাতে।”

সিয়াম বেচারা পড়েছে এক মাইনকার চিপায়। মনে মনে দোয়া করে যাচ্ছে এমন বন্ধু যেন কারো কপালে না জুটে। এমন একটা বন্ধু জীবনে থাকলে জীবন একে বারে ত্যানাত্যানা করে তারপরেই ছাড়বে। সে বলেই এসব অ’ত্যা’চার সহ্য করছে অন্য কেউ হলে উষ্টা মেরে চলে যেতো।

#চলবে________