Wednesday, July 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 320



তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-৩৪+৩৫

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩৪
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তনন কিছু বললো না। ফোন দিয়ে ডায়াল করলো তাহসীর নাম্বারে।

তাহসী তখন ক্যান্টিনে বসে বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিছে আর দুপুরের নাস্তা করছে। তননের কল পেয়ে সালাম দিয়ে ফোন নিয়ে একটু দূরে উঠে গেল। তননের থমথমে কন্ঠে সালামের উত্তর পেয়ে তাহসী শুধালো,
-“কি হয়েছে?”

-“কি করছো?”

-“লান্স করছি। তুমি করেছো?”

-“কুইকলি বাসায় আসো। কথা আছে। অন্তত আজ ক্লাস মিস দাও। প্লিজ এসো।”

-“কি হয়েছে?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো তাহসী।

-“বাসায় এসে জানতে পারবে। এসো।”

কিছুক্ষণ থেমে তনন পুনরায় বললো,
-“টেনশনের কিছু নেই। সাবধানে এসো।”

তাহসী কে টেনশন দিতে চাই না তনন। দেখা গেল তাড়াহুড়ো করে বাসায় আসতে যেয়ে কোন বিপদে পড়লো।

তাহসী ভ্রু কুঁচকালো। কি হয়েছে ভেবে পেল না। মনে আশংকা জন্মালো ভাবীর বোন, দুলাভাই এর সাথে কথা কাটাকাটি হয়নি তো। পরক্ষণেই ভাবলো ওনারা তো তননের সামনে কিছু বলে না। দেখা গেল ভাবী এসে কিছু বলছে তখন খোঁচা মেরে কথা বলে। আর তনন তো ওদের সাথে লাগতে যাবে না। তাহসী বাকি খাবার দ্রুত খেয়ে ওদের বাই বলে রওনা দিল।

ফোন কাটতেই নাহিদ গম্ভীর কন্ঠে বললো,
-“মিথিলা কান্না থামিয়ে বলো কি হয়েছে?”

মিথিলা ভয়ে ভয়ে এক এক করে খুলে বললো। নাহিদ মিথিলা কে রেখেই চলে গেল রুমে। এটা দেখে মিথিলার আরো ভয় পেয়ে গেল। তননের দিকে একপলক তাকিয়ে নাহিদের পিছে পিছে গেল সে।

_____________
তাহসী কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে রেখে তননের কাছে এগিয়ে গেল।
-“কি হয়েছে?”

তনন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আমার তো কাল বাদে পরশু ব্যান্ডেজ খোলা হবে। তাহলে আমি বরং আজ মেসে চলে যায়। আশা করি এখন সব নিজেই করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।”

-“কি হয়েছে কি? দরজা খুলছে ভাবী। মনে হলো কান্না করেছে। ঘটনা কি?”

-“সেসব শুনে নাওআ। আমাকে মেসে দিয়ে আসার ব্যবস্থা করো।”

-“কেন? এইটা নিয়ে কাল ও তোমার সাথে কথা হয়েছে তনন।”
চোখ মুখ কুঁচকে বললো তাহসী।

তনন দাঁতে দাঁত চেপে চাপা স্বরে বললো,
-“প*ঙ্গু কে কতদিন বইবে? আমি থাকবো না এখানে!”

-“তনন!”
হতভম্ব হয়ে কথা বললো তাহসী।

-“আমি যাবো মানে যাবো। ওকে,ফাইন। তুমি দিয়ে আসবে না, আমি আমার বন্ধুর কাছে ফোন দিচ্ছি।”

তননের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিল তাহসী।
-“বাচ্চাদের মতো বিহেভ কেন করছো? আমাকে বলবে তো কি হয়েছে!”

-“তুমি কোন সাহসে আমার ফোন কেড়ে নিচ্ছো? স্পিক আউট!”

তননের এসব কথা শুনে তাহসী ও রেগে গেল।
-“ওহ আচ্ছা! এই নাও ফোন। যা খুশি করো। আমার অনুমতি লাগবে এখন ফোন ধরার!”
তননের পাশে ফোন ছুড়ে দিল তাহসী।

তনন আচমকা তাহসী কে কাছে টেনে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল নিজেকে শান্ত করার জন্য। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে তাহসী কে জড়িয়ে ধরে এক এক করে সব বললো।
তাহসী তননের কাঁধের উপর মাথা রেখে বললো,
-“ওদের সাথে না পেরে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছো!”

-“স্যরি। আমি থাকবো না এখানে।”

কাঁধের উপর থেকে মাথা তুলে তননের পাশে বসে বললো,
-“ভাইয়ার কি দোষ? ভাইয়া কি বলবো আমি? যা বলার নিজে বলো। আমি বুঝতে পারছি না এখন কি করা ঠিক হবে।”

-“ডিসিশন ফাইনাল তাহসী। আমি যাচ্ছি।”

নাহিদ নক করে আসলো ওদের রুমে। অনেক কথা বলার পর তনন বললো,
-“ভাইয়া ক্ষমা করবেন। আমি থাকতে পারবো না।”

-“আচ্ছা! যারা বাজে কথা বলেছে‌ , তারা তো চলে গেছে না? এখন যদি ওই কথা ধরে তুমি চলে যাও তাহলে তো ওরা জিতে গেল তাই না?”

-“ভাইয়া প্লিজ। জোর করবেন না। আর আমার তো ব্যান্ডেজ খোলা হয়ে যাচ্ছে। এখানে তিন মাস থাকা তো হতো না এমনিতেও।‌”

-“তুমি কি ভাবছো ব্যান্ডেজ খুলতে পারলেই সব হলো? হাঁটার অভ্যেস করতে হবে, আরো অনেক কাজ আছে।”

-“হয়ে যাবে…..”

-“বলা সহজ। আচ্ছা বলো তুমি ঠিক কোন কারণে যেতে চাচ্ছো?”

তনন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“এমনিতেও তো যেতাম। আর আমি কতদিন থাকবো এখানে? মেসে থাকলে স্টাডি ভালো হয়। আর ভাবীর বাড়িতে কি কিছু বলেনি ওনার বোন? আমি চাইছি না ঝামেলা বাড়ুক।”

-“তুমি এই লেইম এক্সিউজ নিয়ে পড়ে আছো? তোমার ভাবীর বাড়িতে কি হবে এটা ভেবে তোমার কি কাজ?”

তনন মৌন রইলো। নাহিদ মুচকি হেসে মিথিলা কে উদ্দেশ্য করে‌ বললো,
-“দেখেছো তোমার বোন, দুলাভাই এর কাজ?”

মিথিলা ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল। নাহিদ তার সাথে ভালো ভাবে কথায় বলছে না।

-“আর কি বলবো আমি! আমি শেষ পর্যন্ত বলবো থেকে যেতে। আমার বাসায় যদি তোমার একটুও সহ্য না হয় তাহলে যাও।”
নাহিদ বলে উঠলো। এরপর রুম থেকে বের হওয়ার পথ ধরলো।
তাহসী এগিয়ে যেয়ে বললো,
-“ভাবীর সাথে খারাপ ব্যবহার করো না। সে ভালো মানুষ। ভাবী তো কিছু করেনি।”

________
দুপুরে খাওয়ার পর তনন বিছানায় শুয়ে আছে। তার বুকের উপর মাথা দিয়ে তাহসী শুয়ে আছে।
-“তাহসী?”

-“হু।”

-“আমাদের এক রুমের বাসা নিলে হয় না? এতেও মাইন্ড করবে? আমি সত্যিই এক ফোঁটা ইচ্ছা নেই থাকার। বুঝো প্লিজ।”

তাহসী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“এক মাসের জন্য? অনেক ঝামেলা না? অনেক কিছু লাগবে!”

-“আমরা চাইলে এক মাস নয়। এখন থেকেই এক সাথে থাকা শুরু করতে পারি। আস্তে আস্তে সব হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের ফাইনাল এক্সাম এর আর ধরো এক বছর মতো বাকি। অবশ্য সেশন পিছিয়ে দিলে সমস্যা! তারপর একটা চাকরি পেয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ।”

-“রান্না, ঘর পরিষ্কার, বাজার করা, আরো অনেক কিছু। পড়ালেখা টা একটু টাফ হয়ে যায়।”

-“এটা অবশ্য ঠিক।”

তাহসী বালিশে মাথা রাখলো। তনন পাশে তাকালো জিজ্ঞাসা সূচক চাহনিতে।
তাহসী হাই তুলে উত্তর করলো,
-“ঘুম পাচ্ছে।”

তনন কিছু বললো না। মুচকি হেসে সায় জানালো।

______________
-“ওই ছেলের মধ্যে কি পেয়েছো তুমি যে তোমার ওকেই চাই!”
মেয়ের কথায় বিরক্ত হয়ে বলে উঠলেন ভাইস প্রিন্সিপাল সেলিম চৌধুরী।

রিচি নাছোড়বান্দা।
-“বাবা আমি ওকেই চাই। ওই মেয়ের মধ্যে কি এমন আছে!”

-“সেইটা কথা না, কথা হচ্ছে ওই ছেলের মধ্যে কি এমন আছে যে তোমার ওকেই চাই? আমি কোনো ঝামেলা চাই না। সাথে ওই ছেলের নাম ও শুনতে চাই না এরপর কখনো!”

-“কেন বাবা!”

-“কারণ তার কি আছে? তার উপর ম্যারিড। আমার মেয়েকে নিশ্চয় ওসব লেভেলের ফ্যামিলি তে আমি বিয়ে দিতে পারি না। তোমার জেদ বাদ দাও। অতি দ্রুত আমি তোমার বিয়ে ঠিক করবো। এসব মাথা থেকে নেমে যাবে।”

রিচি রাগতে রাগতে বাবার রুম থেকে বের হয়ে গেল।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩৫
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তননের ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে। ডাক্তার দুই মাস রেস্টে থাকতে বলেছেন। এখনই হাঁটতে পারবে না। অল্প অল্প করে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।
তনন ক্লাস করতে পারবে কি-না জিজ্ঞেস করায় জানিয়েছেন সপ্তাহে তিন চারদিন এক দুইটা করে করতে পারে।

রাতে তননের বুকের সাথে মাথা ঠেকিয়ে বই পড়ছে‌ তাহসী। তনন বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। তননের এক হাত তাহসী কে ধরে আছে,আরেক হাত দিয়ে মোবাইল স্ক্রল করছে।
-“কাল আমার সাথে এক জায়গায় যাবে?”
হঠাৎ তনন বলে উঠলো।

তাহসী পড়া থামিয়ে অবাক হয়ে বললো,
-“এক জায়গায় যাবো মানে? আর আজ মাত্র ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে, কাল কোথাও যাওয়া হবে না।”

-“আরে যাবো আর আসবো। তুমি তো থাকবা।”

-“কাল ভার্সিটি আছে। তুমি বাসায় থাকবা। অন্তত এক সপ্তাহ পর থেকে ক্লাসে যেও।”

-“কাল একটা কাজ আছে। ঘন্টা দুয়েক এর মধ্যেই কমপ্লিট হয়ে যাবে আশা করি। আমরা যাচ্ছি এইটাই ফাইনাল।”
বিরক্তি নিয়ে বললো তনন।

তাহসী সোজা হয়ে বসে পুনরায় পড়া শুরু করলো। তনন তাহসীর হাত থেকে বই পাশে রেখে দিয়ে তাকে নিজের কাছে টেনে নিল।
-“আমি দুইবার বলার পর সেইটা নিয়ে ঝামেলা পাকাবা না প্লিজ! কাজ আছে, আমার নিজেরও ইচ্ছা নেই কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে বাইরে বের হওয়ার। এতদিন ডাক্তারের কাছে গিয়েছে। ক্লাসে বন্ধুদের উপর নির্ভরশীল হতে হবে। কিছুদিন যাক,তারপর যাবো।”

-“ইচ্ছে।”
মৃদু স্বরে উত্তর করলো তাহসী।

তাহসী মুখে দুই হাত রেখে তাহসীর মুখ উঁচু করে নিজে মুখ নামিয়ে আনলো তনন। ঠোঁটে শব্দ করে চুম্বন করে বললো,
-“রেডি থেকো বিকেলে। ভার্সিটির কিছু হবে না।”

তাহসী কিছু বললো না। তনন এক এক ধাপ করে এগিয়ে গেল। বহুদিনের তৃষ্ণা মেটানোর পালা যেন আজ।

🍁🍁🍁
পরদিন বিকেলে তনন তাহসীকে নিয়ে হাজির হলো ভার্সিটির কাছাকাছি এক বাড়িতে। তাহসী অবাক হয়ে বললো,
-“এখানে কে থাকে?”

তনন তাহসীর চোখে চোখ রেখে বলল,
-“আল্লাহ ভাগ্যে রাখলে আমরা থাকবো ইনশাআল্লাহ।”

বিস্ময়ে তাহসী হতবাক হয়ে গেল। কিছুক্ষণ বাদ বললো,
-“সিরায়াসলি!”

-“হু।”

-“তোমার এই ডিসিশনের মানে কি?”

-“বাসায় যেয়ে কথা বলবো এই ব্যাপারে।”

তাহসী পুরোটা সময় চুপ করে থাকলো। বাড়িওয়ালার সাথে তননের বিস্তারিত কথা হলো। তননের এক বন্ধু এই বাড়ির খোঁজ দিয়েছে। এক রুম ভাড়া দিবে। এক রুমের ছোট ফ্ল্যাট দেখে তননের ভালোই লাগলো। একটা বেডরুম, একটা রান্নাঘর, একটা ওয়াশরুম আর একটা ছোট ডাইনিং রুম।কেউ আসলে ওখানে থাকার মতো ব্যবস্থা করা যাবে। দশ হাজার টাকাতে তনন রাজি হয়ে গেছে। বারো হাজার টাকার জায়গায় তননের বন্ধুর ফুফু হওয়ায় দুই হাজার টাকা কম। তাহসীর কাছে তনন জিজ্ঞেস করলো,
-“পছন্দ হয়েছে?”
তাহসী কাটকাট জবাব দিল,
-“ভালো।”
তনন আগেই কথা বলে রেখেছে তাহসী ভালোই বুঝলো।

পাকাপাকি কথা বলে তনন এডভান্সড দিয়ে দিল। মাসের আজ দুই তারিখ। তনন বললো দুই তিন এর মধ্যেই উঠে পড়বে। তাহসী রাগে একটা কথাও বললো না।

বাসায় আসতেই তনন জিজ্ঞেস করলো,
-“কেমন লাগলো?”

-“আমাকে বলার প্রয়োজন বোধ করলে না? আমার ভাই ভাবীর দোষ টা কোথায়?”

-“তাদের দোষ দিচ্ছি না আমি তাহসী। এভাবে আর কতদিন?”

-“থাক,আর কিছু বলতে হবে না।”

-“বললে এমন চিল্লাচিল্লি করতা বলেই বলিনি,এখন সেই কাজ ই করতেছো!”

তাহসী কিছু না বলে চেঞ্জ করতে চলে গেল।
তননের অনেক খুশি লাগছে। অবশেষে নিজেদের মতো থাকতে পারবে। যদিও কষ্ট হবে অনেকটা।‌ তার গোছানো টাকা থেকে আজ টাকা দিয়ে আসলো। কিন্তু অন্যান্য খরচ তো রয়েছে। এখন সব টিউশনি অফ। এইটা যে ভাবেনি তা নয়, আগেই ভেবেছে। তবে বাসা তো নিতেই হতো, এভাবে আর কতদিন। আর পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত মেসে থাকলে যে আবার অসুস্থ হয়ে পড়বে। এটা ভালো করেই জানে তনন। তবে দুই মাস একটু কষ্ট করতে পারলেই হলো।
তনন ভাবলো একটা টিউশন করানোর কথা। সাথে ভাবলো কাল সবার কাছে ফোন করে খোঁজ নিবে তাকে আর রাখবে কিনা ওনারা। না হলে আবার টিউশন খুঁজতে হবে।

রাতে তননের পায়ের ব্যথা বাড়লো। না পারছে তাহসী কে বলতে,না পারছে সহ্য করতে। বিকালে তখন জোর করে হাঁটার চেষ্টা করেছিল। মানুষ দেখলে খোড়া ভাববে এটা সে চাইনি। তাহসী অনেক বার বারণ করেছে, কিন্তু তনন শুনেনি।

তাহসী পড়া শেষ করে বই গুছিয়ে রাখলো। তনন সেইটা লক্ষ্য করে চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
-“এইদিকে আসো তো একটু।”

তাহসী কাজ শেষে তননের কাছে এসে তার দিকে জিজ্ঞাসা সূচক চাহনিতে তাকালো। তনন শ্বাস ফেলে বললো,
-“পা ব্যথা করছে!”

-“কি করবো? গরম পানিতে চুবাবো?”

-“সিরিয়াসলি ব্যথা করে।”

-“তাহলে মামুনির কাছে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করি কি করতে হবে।”

-“মজা নাও!”

তাহসী বিছানার উপর বসে বললো,
-“কি করবো বলো? আমি কিছু জানিনা। ব্যথার ওষুধ দিবো? কে বলেছিল বাসা নিতে?”

-“উফ, কিছু করো। ডাক্তারের থেকে না শুনে কিভাবে ওষুধ খাবো? আচ্ছা আম্মু কে ফোন দিই।”

তনন সেলিনা শেখ কে সব খুলে বললো। উনি রাগ করলেন তননের এমন কাজের জন্য। তনন বাসার কথাটা এড়িয়ে গেল। তনন ফোন রেখে বললো,
-“তেল মালিশ করে দেখতে বললো। ডাক্তার ও তো বলছিল নিয়মিত এটা করার কথা!”

-“হ্যা,জানি।”

-“যাও আনো।”

তাহসী হাই তুলতে তুলতে উঠে দাঁড়ালো। পা মালিশ করে দিবে ভাবতেই কেমন লজ্জা লাগছে তার।

তাহসী তেল, রসুন হালকা গরম করে নিয়ে আসলো। তননের পরনে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। এক্সিডেন্ট এর পর থেকে এই প্যান্ট ই পরছে। আজ শুধু জিন্স এর ফুল প্যান্ট পরে বাইরে গিয়েছিল।

তাহসী লজ্জা নিয়ে তননের পায়ে হাত রাখলো। তনন ফোন দেখছিল। খেয়াল করে বললো,
-“পারবে?”

-“তাহলে নিজে করো।”

তনন তাহসীর কোমর জড়িয়ে ধরে কাধের উপর থুতনি রেখে বললো,
-“হু, দেখিয়ে দিচ্ছি করো। নিজে চাপ দিবো কিভাবে?”

-“সরো তো।”

-“উহু।”

তাহসীর পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয় এভাবে। সে বিরক্তি দেখালে তনন ছেড়ে দিবে এটা ভেবে তাহসী বিরক্তি নিয়ে বললো,
-“আমি পারবো না এভাবে।”

তনন ছেড়ে দিয়ে বললো,
-“করাই লাগবে না। ওষুধ দাও।”

তাহসী কুসুম গরম তেল হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে ডলে দিতে লাগলো। তনন কিছু বললো না। মুখ গোমড়া করে রাখলো।

-“কমেছে?”

তননের উত্তর না পেয়ে তাহসী পিছনে ঘুরে তাকালো। একমনে ফোনে ব্যস্ত, সম্ভবত মেসেঞ্জারে। কারণ অনেকক্ষণ ধরে টুংটাং আওয়াজ শুনতে পারছে তাহসী।
-“আমি কাজ করছি আর তুমি চ্যাট করতেছো!”

-“তো?”

-“কমেছে ব্যথা?”

-“একটু।”

তেল ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় তাহসী উঠে গেল। তেলের বাটি রেখে এসে হ্যান্ডওয়াস দিয়ে হাত ধুয়ে আসলো। লাইট অফ করে তননের পাশে এসে শুয়ে পড়লো।
-“ভাইয়া কে বলেছো বাসার কথা?”
তনন তাহসীর দিকে ঘুরে প্রশ্ন করলো।

-“আমি কিছু বলতে পারবো না কাউকে। তুমি বলো!”

তনন উত্তর করলো না কোনো। এদিকে টাকার চিন্তা মাথা থেকে যাচ্ছে, ওদিকে রিচি মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে। ভাইস প্রিন্সিপাল এর মেয়ে না পারছে কিছু বলতে, না পারছে কিছু সহ্য করতে।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-৩২+৩৩

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩২
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তনন কে নাহিদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। তনন মুখ গোমড়া করে রেখেছে। কার ভালো লাগবে অসুস্থ হয়ে আরেক জনের বাসায় পড়ে থাকতে। এছাড়া আর উপায় ও নেই। সেলিনা শেখ তননকে বললে তনন মেনে নিয়েছে শেষ পর্যন্ত। এখানে থাকলে যা একটু পড়াশোনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে গ্রামে গেলে তা হবে না। বন্ধুরা এসে নোট দিয়ে যাচ্ছে,সাথে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছে একটু। গ্রামে গেলে‌ যে নিঃসঙ্গ তা থাকতো, এখানে আর তা নেই। তাহসীকে সবসময় কাছে পাওয়া যাচ্ছে।

সেলিনা শেখ দুই রাত থেকে চলে গেলেন। নাতাশা রহমান, তৌহিদ হোসেন ও চলে গেলেন। সেলিনা শেখ যেদিন চলে গেলেন তাহসী সেদিন নাহিদের বাসায় এসে উঠলো প্রয়োজনীয় সব জিনিস নিয়ে। নাহিদ তিন রুমের বাসা নিয়ে থাকে। রুম বুক হয়ে যাওয়ায় তাহসী তাই ছিল না এই দুইদিন। তৌহিদ হোসেন তননের সাথে থাকতেন। তনু, নাতাশা রহমান, সেলিনা শেখ ওনারা এক রুমে থাকতেন।

তাহসী তননের খেয়াল রাখতে যেয়ে প্রথমে সব তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। তননের খাবার আনে তো পানি আনতে ভুলে যায়, পানি আনে তো হাত ধোঁয়ার জিনিস আনতে ভুলে যায়। তনন তাহসীর কাণ্ড দেখে হেসে ফেললো। বললো,
-“আস্তে ধীরে কর এক এক করে। তাড়াহুড়ো নেই কোনো। তোমার অভ্যাস নেই আমি জানি।”

তাহসী বিছানার উপর বসলো। তনন বললো,
-“খেয়েছো?”

-“না, একটু পরে খাবো।”

-“আমার জন্য অপেক্ষা করছো নাকি? এত ভালোবাসা!”

-“জি না, এইসব কাজ আমার মোটেও পছন্দ না। হাজব্যান্ড এর জন্য ক্ষুধা পেটে হা করে বসে থাকবো, ওইসব একদম ফালতু বিষয়। আরে হাজব্যান্ড, ওয়াইফ এক প্লেটে ভাত খাবে এটা সুন্নত। কিন্তু না খেয়ে বসে থাকা এটা কি! নিজেরা না খেয়ে বসে থাকবে, আর হাজব্যান্ড বাইরে থেকে খেয়ে এলে ফ্যাস ফ্যাস করে কেঁদে নিজে ভাত খাবো না, না ওমন ন্যাকা হতে পারবো না। আমি ভাবীদের সাথে খাবো তাই খাইনি এখনো।”

তনন চুপ করে শুনলো। তাহসীর মনমতো একটা কথা না হলেই মাথা গরম হয়ে যায়। এইযে এখন এতো কথা বললো। এমনিতে তো এতো কথা বলবে না, পছন্দসই না হলেই বলবে। তনন কিছু একটা ভেবে নিয়ে ভাত মাখাতে মাখাতে বললো,
-“আমার পাশে বসো ততক্ষণ তাহলে।”

তাহসী উঠে যেয়ে বসলো। কৌতুহল নিয়ে আওড়ালো,
-“কেন?”

তনন তাহসীর মুখে প্রথম লোকমা তুলে দিল। তাহসী বুঝে না উঠেই মুখে নিয়ে নিল। পরক্ষণেই তাড়াতাড়ি করে চিবাতে শুরু করলো কথা বলার উদ্দেশ্যে।
তনন নিজ থেকেই বললো,
-“একসাথে খেলে সওয়াব হবে। সেইটা মিস দিবো কেন?”

তাহসীর মন খুশিতে ভরে উঠল। মুগ্ধময় দৃষ্টিতে তাকালো তননের দিকে। পরক্ষণেই আবার চোখ সরিয়ে নিল। তাহসী আর নিতে না চাইলেও তনন দিল জোর করে। তাহসী ভালো লাগায়, লজ্জায় মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

তনন তিন চার লোকমা তাহসীকে দেওয়ার পর বলে উঠলো,
-“আম্মু আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিল এতোদিন। এখন আম্মু চলে যেয়ে উল্টা আরেকজন কে খাওয়াতে হচ্ছে আমার।”

তাহসী উঠে পড়লো। হাত ধুয়ে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে তননের মুখে তুলে দিল। তননের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে এটাই চাইছিল। তাহসী আর নিজে না খেয়ে পুরোটা তননকে খাওয়ালো। এরপর তাহসী খেতে চলে গেল। ইতিমধ্যে মিথিলা একবার ডেকেছে খাওয়ার জন্য।

দিনকাল মোটামুটি ভালোই চলছে। তনন বন্ধুদের কাছ থেকে প্রতিদিন নোট নিয়ে পড়াশোনা করছে। মাঝে মাঝে তাহসীর কাঁধে ভর দিয়ে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ায়। সবসময় বিছানায় শুয়ে থেকে হাঁপিয়ে উঠে।

আজ তননের দুই বান্ধবী দেখা করতে এসেছে। তননের রুমেই বসতে দিয়েছে তাহসী। তাহসী ভাবীর থেকে নাস্তা নিয়ে রুমে গেল ওদের দেওয়ার উদ্দেশ্যে।
তননের এক ফ্রেন্ড রোশনি বললো,
-“তোদের এত বড় বাসা থাকতে তুই হোস্টেলে থাকতিস! তোর ভাবী,বোন সমস্যা করে?”

তাহসী ভ্রু কুঁচকে তাকালো তননের দিকে। তনন কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তখনই আরেক টা মেয়ে, রিচি বললো,
-“তনন তোমার এক্সিডেন্ট এর কথা আমাকে জানাওনি কেন? কাল শুনেছি। জানো কত ভয় পেয়েছিলাম! আমি তো আপুর বাসায় সিলেট ছিলাম। তুমি আমাকে কেন জানাওনি?”

-“আলাদা করে জানানোর কিছু দেখছি না তো। আর এমনিতেই জানার কথা। তাছাড়া তোর কথা খেয়াল ছিল না।”

-“তনন বলছি না আমাকে তুমি করে বলবা।”

তনন মনে মনে বিরক্ত হচ্ছে। কিন্তু বলতে পারছে না। ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার এর মেয়ে বলে কথা।

রোশনি তাহসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আপু বসুন না! দাঁড়িয়ে আছেন যে।”

তাহসী হাসিমুখে বললো,
-“আমাকে তাহসী বলো। আমি তোমাদের বয়সী। আপু বলতে কেমন শোনায়!”

রিচি প্রায় লাফিয়ে উঠে বলে উঠলো,
-“ওয়াও তনন তোমার টুইন আছে। তোমার তো দেখছি কিছুই জানি না!”

তনন বিরক্তি নিয়ে বললো,
-“ও আমার টুইন না। আমার ফ্রেন্ড। আমার ওয়াইফ।”

-“মজা করবে না এসব নিয়ে একদম!”

তনন বলে উঠলো,
-“মজা না! এইটা আমার শ্যালকের বাসা। তাহসীর ভাইয়ের বাসা। সি ইজ মাই ওয়াইফ।”

রোশনি ও অবাক হয়ে গেছে। সিনক্রিয়েট হবে দেখে দাঁড়িয়ে গেল ও। রিচির হাত টেনে ধরে বললো,
-“চল এখন যাই।”

রিচি আঙ্গুল উঁচিয়ে বললো,
-“আমার সাথে তুমি এমন করতে পারো না!”

রোশনি রিচির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে। তনন বললো,
-“রোশনি দুই মিনিট দাঁড়া। আর রিচি আমি কি করেছি তোর সাথে? তোর সাথে আমার কথা দেওয়া নেওয়া ছিল? না, তো।”

-“তোমাকে দেখে নিবো।”
তাহসীর দিকে তাকিয়ে এই কথা বলে রিচি রোশনি কে নিয়ে চলে গেল। রোশনি তাহসীর দিকে তাকিয়ে ইশারায় স্যরি জানালো। তাহসী মাথা নাড়িয়ে তননের দিকে তাকালো। তনন বললো,
-“ওরা চলে গেছে। ফ্ল্যাটের দরজা দিয়ে আমার কাছে এসো।”

তাহসী দরজা দিতে যেতেই মিথিলার সামনে পড়লো। মিথিলা বলে উঠলো,
-“তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম। আমি এখন বাইরে যাচ্ছি। ফ্রেন্ড দের সাথে মিট করবো‌ তোমার ভাইকে জানিয়েছি। আমার আসতে দেরি হলে একটু কষ্ট করে ডাইনিং থেকে খাবার নিয়ে খেয়ে নিল।”

তাহসী বললো,
-“কোনো কষ্ট হবে না ভাবী। তোমার যতক্ষণ ইচ্ছা আড্ডা দিয়ে এসো।”

তাহসী দরজা আটকে তননের কাছে আসতেই তনন তার পাশে বসতে বলল।তাহসীর বসার পর তনন বললো,
-“আমার সাথে পড়ে। অন্য ডিপার্টমেন্ট। ভাইস প্রিন্সিপাল এর মেয়ে।”

-“ওহ।”

তাহসীর স্বাভাবিক ভাব ভঙ্গি দেখে তনন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,
-“ওমা জেলাসি ফিল হয় না?”

-“না, বিশ্বাস আছে। তবে মেয়েটাকে পছন্দ হয়নি।”

তননের মন ভরে গেল এই কথায়। তবুও দুষ্টুমি করার উদ্দেশ্যে বললো,
-“পছন্দ হলে কি বিয়ে করিয়ে দিতে নাকি?”

তাহসী‌ ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“তোমার তো তাই করতে মন চাচ্ছে,তাই না? আসলেই অতিরিক্ত বিশ্বাস করা ভালো না।”

তনন মুখ বাকাতেই তাহসী হেসে ফেললো। তনন ও বুঝলো তাহসীও মজা করেছে। তনন এক হাত দিয়ে তাহসীকে নিজের খুব কাছে নিয়ে আসলো। তাহসী সরিয়ে দেওয়ার জন্য তননের বুকে হাত রাখতেই সেই হাত তনন আরেক হাত দিয়ে ধরে ফেললো। তাহসী ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল তনন।

তাহসী ছাড়া পেতেই তননের জন্য বড় বাটিতে পানি আর টাওয়েল নিয়ে আসলো। শরীর মুছিয়ে দিতে হবে। গোসল তো করতে পারছে না। তনন অস্বস্তি নিয়ে বললো,
-“মাথায় শ্যাম্পু নেওয়ার দরকার। চুলে চুলকাচ্ছে।”

-“কিভাবে দিবো?”

-“ওয়াশরুমে একটা চেয়ার দাও।”

-“অবশ্যই নয়। পানি একদম লাগানো যাবে না।”

-“আমি আর থাকতে পারছি না এইভাবে।”

তাহসী একটু চুপ থেকে বললো,
-“জ্বর আসলে মাথায় পানি ঢালে সেইভাবে শুয়ে পড়ো। যেটুকু শ্যাম্পু করা যায়, সেটুকু হবে। কিন্তু পলি কাগজ কোথায় পাবো? ভাবী ও তো নেই।”

তাহসী এদিক ওদিক খুঁজে রান্নাঘরে ফ্রেশ পলিথিন পেয়ে তিন চারটা নিয়ে আসলো। এগুলো ফ্রিজে মাস, মাংস রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩৩
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

বিশদিন পেরিয়েছে। আল্লাহ তায়ালার রহমতে তননের উন্নতি হচ্ছে। তাহসী পড়াশোনা মিলিয়ে সব গুছিয়ে উঠতে পারছে না। ভার্সিটি, টিউশন মিলিয়ে তননকে তেমন সময় ই দিতে পারছে না। তবুও যতক্ষণ বাসায় থাকে তননের খেয়াল রাখার চেষ্টা করে।

বিকালে তনন ফেসবুক স্ক্রল করছে। তাহসী‌ তখন ভার্সিটি শেষ করে একটা টিউশন করিয়ে ফিরলো। তাহসী ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই তনন বললো,
-“এদিকে এসো।”

তননের পাশে এসে ধপ করে বসে পড়লো তাহসী। ক্লান্ত কন্ঠে জানতে চাইলো,
-“বলো।”

-“তোমাকে অনেক ঝামেলায় ফেলে দিয়েছি না? টিউশন ছেড়ে দিতে পারতা! ভাইয়াও তো রাগ করে।”

-“টিউশন কি আমি তোমার জন্য করি? ভাইয়া জানে আমি আমার ডিসিশন পাল্টাইনা অকারণে। আর এটা আমার ভালো লাগে করি।”

-“আমার ওষুধের টাকা কে দেয়!”

-“ওহ্ আচ্ছা আচ্ছা! এইবার বুঝেছি। ওকে, মামুনি কে বলো টাকা পাঠাতে।”

-“আমার কাছে আছে টাকা।”

-“ভালো। আমি আমার টাকা দিয়ে কাল বই কিনে নিয়ে আসবো।”

-“এসো। নিষেধ করেছি? ওই টাকা দিয়ে ওষুধ খাওয়ার জন্য মরে যাচ্ছি।”

তাহসী কিছু বলার আগেই মিথিলা দরজার সামনে এসে বললো,
-“ঝগড়া না করে খেতে এসো তাহসী। পরে ঝগড়া করো।”
এটা বলেই হেসে মিথিলা চলে গেল।

তাহসী উঠে দাঁড়ালো। তনন অবাক হয়ে বললো,
-“দুপুরে খাওনি?”

তাহসী উত্তর না দিয়েই মুখ ফুলিয়ে চলে গেল। তনন পারলো না উঠে তাহসী কে ধরতে মনে মনে বেশ রাগ হলো তার।

🍁🍁🍁
দিন পনেরো অতিবাহিত হয়েছে। তননের পায়ের ব্যান্ডেজ খোলা হবে আর দিন তিনেক বাদে। মনে মনে প্রচুর এক্সাইটেড তনন। মনে মনে আল্লাহ তায়ালা কে ডেকে যাচ্ছে। বিছানায় শুয়েই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে সে।

মিথিলার বড় বোন, দুলাভাই ঘুরতে এসেছেন বাসায়। তাহসী,তনন কে দেখে বিরক্ত। তাহসী ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আজকাল রুমেই বেশি থাকে। তাহসী যতটুকু পারে মিথিলা কে সাহায্য করে প্রথম থেকেই। রান্না টা মিথিলায় করে। তাও যেন তাহসীর ভুল ধরা লাগবে‌।

তাহসী তনন কে নিয়ে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়িয়েছে। তনন তাহসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“মুখ ভার কেন? এইজন্যই বলেছিলাম এখানে না আসি।”

তননের কথার মানে বুঝতে পেরে তাহসী বললো,
-“আমার ভাই, ভাবী কিছু বলেছে?”

-“না,তা না।”

-“তাহলে?”

-“কিছু না, বাদ দাও।”

-“আচ্ছা ব্যাণ্ডেজ খোলার পর আমি মেসে চলে যাই! তুমি আর জোর করো না।”

তাহসী চোখ বড় বড় করার অভিনয় করে বললো,
-“লাইক সিরিয়াসলি! আমার জোর কথাতে তুমি আছো? আমার জোর করাতে কারো কিছু আসে যায়?”

তনন হেসে বারান্দার গ্রিলে হেলান দিয়ে তাহসীর কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিল।‌ বললো,
-“আসে যায়।”

তাহসী অন্য দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললো,
-“জানতাম না।”

ঠোঁটে শব্দ করে চুম্বন করে তনন বললো,
-“জেনে নাও।”

🍂🍂🍂
পরেরদিন তনন কে খাইয়ে দিয়ে তাহসী ভার্সিটি গেল। তনন নিজেই খায় কিন্তু মাঝে মাঝে তাহসী কে বলে।
তাহসী বের হতেই তননের ফোনে সেলিনা শেখের কল আসলো। ওনাদের কুশল বিনিময় শেষ হতেই সেলিনা শেখ বললেন,
-“আমি কি আসবো ঢাকা তে? তোর ব্যান্ডেজ খোলা হবে।”

তনন চুপ থাকলো কয়েক সেকেন্ড। তারপর ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললো,
-“আম্মু তুমি আবার কষ্ট করে আসবা! তনুর ও স্কুল।”

-“ও সমস্যা হবে না। তোর টাই আসল এখন।”

-“আম্মু ভাবীর বোনেরা এসেছে।”

-“ওহ্ আচ্ছা। তাহলে পরে যেয়ে না হয় দেখে আসবো।”

তনন মন খারাপ করে‌ বললো,
-“হুম। ইনশাআল্লাহ।”

বই পড়েই ঘন্টা দুয়েক কেটে গেল তননের। পানি পিপাসা লাগাতে পাশে তাকালো পানির উদ্দেশ্যে। বেড সাইড ছোট টেবিলে সবসময় পানি রেখে দেয় তাহসী। যেন তনন সহজে পানি নিয়ে খেতে পারে। কিন্তু আজ পানির জগ খালি। তনন বুঝলো তাড়াহুড়ো তে পানি রাখতে ভুলে গেছে।
উপায় না পেয়ে মিথিলা কে ডাক দিল,
-“ভাবী! ভাবী একটু পানি দিয়ে যাবেন?”

এমনিতে মিথিলা আর তননের কথা হয় না তেমন। কাজের কথাতেই কথা হয়। মিথিলা বললো,
-“আসছি।”

মিথিলা জগ নিয়ে চলে যেয়ে পানি ভরে নিয়ে আসলো। পানির জগ রেখে জিজ্ঞেস করলো,
-“তোমাকে কি আর কিছু দিবো?”

মিথিলার পিছু পিছু মিথিলার দুলাভাই ও এসেছেন দেখলো তনন। উনি হাসি দিয়ে বলে উঠলেন,
-“আর কি দিবে শালিকা? তাহসী চলে গেলে তুমিই কি প্রতিদিন পানি দাও?”

দুলাভাই কি ইঙ্গিত করলেন বুঝতে এতটুকু ও কষ্ট হলো না তননের। তনন রাগে দাঁতে দাঁত চেপে তাকালো ওনার দিকে।
মিথিলা লজ্জা তে কথায় বলতে পারছে না। তাকে কথা বলতে হবে দেখে মিথিলা বললো,
-“মুখ সামলে কথা বলবেন দুলাভাই! তাহসী সম্ভবত ভুলে গেছে পানি দিতে।”

মিথিলার বড় বোন ও আসলো। বললেন,
-“কি হয়েছে রে?”

দুলাভাই আপুকে সব বললেন। আপু চোখ রাঙিয়ে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“সত্যি কথা শুনলে নাকি মানুষ রেগে যায়! তোর দুলাভাই তো মজায় করছে। এখন ননদের দরদ বেশি হয়ে গেল!”

-“আপু বাজে কথা বলবে না একদম। প্লিজ চুপ থাকো‌।”

-“তাই নাকি মিথিলা! আমরা বাজে কথা বলছি? এতদিন ভাইয়ের বাসায় পড়ে থাকে কোন মেয়ে? প্রেমের বিয়ে তাই না! সমবয়সী না?”
দুলাভাই বলে উঠলেন।

তনন আর চুপ থাকতে পারলো না। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“আপনি বয়সে আমার বড় না হলে ফালতু কথা বলার সময় জন্য…”

তননের কথা শেষ করতে না দিয়েই মিথিলার দুলাভাই বললেন,
-“কি করবি রে তুই? পড়ে আছিস তো বিছানায় প*ঙ্গু হয়ে। বিছানা থেকে এক পা ফেলতে পারবি?”

তনন ক্ষেপে গেল। বিছানা থেকে নামতে নিলে মিথিলা ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তনন প্লিজ এদের কথাতে কান দিও না। তুমি নেমো না।”

-“আহা! দরদ উঠলে উঠছে।”

-“আপু আমার বাসা থেকে চলে যাও। তোমার মন মানসিকতা এত নিচে নেমে গেছে!”

-“তুই বের করে দিচ্ছিস আমাকে?”

-“দিচ্ছি!”
অজানা ভয়ে, লজ্জায় কাঁপছে মিথিলা। তনন তো প্রথম থেকেই থাকতে চাইনি কারো বাসায়। এখন নিশ্চিত ঝামেলা বাধবে! নাহিদ জানলে তো বকা দিবে।

দুলাভাই বলে উঠলেন,
-“বুঝো না! আমার না থাকলে সুবিধা হবে যে।”

-“থাপ্পড় না খেতে চাইলে বের হন আমার বাসা থেকে।”
হুংকার দিয়ে বলে উঠলো মিথিলা।

সেই সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। মিথিলা কেঁপে উঠলো শব্দ শুনে। দুলাভাই মনের মধ্যে কথা সাজিয়ে নিয়ে দরজা খুলতে গেলেন। যেয়ে দেখেন নাহিদ দাড়িয়ে।
নাহিদ ওনাকে সরিয়ে তাড়াহুড়ো করে বাসার মধ্যে ঢুকলো। গলা উঁচিয়ে বললো,
-“কি হয়েছে মিথিলা? তোমার গলার আওয়াজ শুনলাম।”

নিজেদের রুমে যেতে তাহসীর রুম পরে আগে। সেখানে মিথিলা কে দেখে নাহিদ ওখানে গেল।

দুলাভাই আগে আগে বলে উঠলেন,
-“তোমার বোনের হাজব্যান্ড এর সাথে তোমার বউয়ের কি সম্পর্ক জানো কিছু?”

-“একদম বাজে কথা বলবেন না। প্রথম থেকেই দেখছি আমার বোনের সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন, খোঁচা দিয়ে বাজে কথাও বলছেন! আমার বোনের সাথে ফ্লার্ট করতে না পেরে এই কাহিনী শুরু করেছেন? মিথিলার জন্য আমি কিছু বলিনি। এখন ভালো ভাবে বলছি বের হয়ে চলে যান। ওরা কি সম্পর্ক আমি জানি।”

উনি পুনরায় কিছু বলতে গেলে নাহিদ হাত উঁচু করে থামিয়ে দিল। ততক্ষণে মিথিলার বড় বোন ব্যাগ গুছিয়ে ফেলেছে। আরো দুয়েক কথা বলে উনারা বের হয়ে গেলেন।

মিথিলা নাহিদ কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। নাহিদ ওকে আগলে নিয়ে বললো,
-“তনন কি হয়েছে বলবে! এ তো কাঁদতে শুরু করলো।”

তনন কিছু বললো না। ফোন দিয়ে ডায়াল করলো তাহসীর নাম্বারে।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-৩০+৩১

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩০
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

শনিবারের দিন সকালবেলা তাহসী আর তনন রওনা দিল ঢাকার উদ্দেশ্যে।
ট্রেনে উঠে তাহসীর শুকনো মুখ দেখে তনন বললো,
-“কি হয়েছে?”

তাহসী অন্যমনস্ক হয়ে ছিল। তননের কথায় সম্বিত ফিরে পেয়ে বললো,
-“কিছু না।”

-“অবশ্যই কিছু! বলো।”

তননের হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে তাহসী একটু পানি খেয়ে বললো,
-“বাড়িতে কি শান্তি। আম্মু সব করে দিবে। আর ঢাকায় যেয়ে সব নিজে! তাছাড়াও একা একা ভালো লাগে না ওখানে থাকতে। এটাই। বাদ দাও।”

-“পড়াশোনা শেষে গ্রামে থাকতে চাও নাকি?”

-“এমন কোনো প্লান নেই। আর দূরে থাকলে একটা আলাদা টান থাকে। কাছে থাকলে তা বোঝা যায় না।”

তনন সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
-“আমরা কবে একসাথে থাকবো বলোতো?”

একটু চুপ থেকে তাহসী উত্তর দিল,
-“আল্লাহ যেদিন ভাগ্যে রেখেছেন।”

তনন তাহসীর হাত নিজের মুঠোয় নিল। স্লাইড করতে করতে বললো,
-“আনুমানিক?”

-“তুমিই বলো।”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে তনন তাহসীর দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-“আমরা চাইলে এখন থেকেই থাকতে পারি।”

তাহসী তননের দৃষ্টি দেখে অন্যদিকে তাকালো। বললো,
-“কিভাবে শুনি? বাসা ভাড়া জানো?”

তনন তাহসীর হাত ছেড়ে দিল।
-“তুমি কি আমাকে অপমান করতেছো?”

তাহসী হকচকিয়ে উঠে বললো,
-“আরে না না। আমি তো এমনিতেই সাধারণ কথা বলেছি।”

-“এক রুম খুঁজলে পাওয়া যেতেই পারে। তবে আমাদের পড়াশোনার ই ক্ষতি।”

তাহসী কোনো উত্তর করলো না। তনন পুনরায় বললো,
-“তুমি কি থাকতে চাও না?”

-“এমন বিষয় না। তবে পড়াশোনার ক্ষতি এটা ঠিক। রান্না,বাজার করা, ফ্রিজ আরো কত কি!”

-“ওয়েট এ সেকেন্ড! আমি মাত্র বললাম আর তুমি এত সব ভেবে ফেলেছো? নাকি আগেই ভেবেছিলে?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো তনন।

তাহসী থতমত খেয়ে গেল। এভাবে ধরা পরে যাবে ভাবতে পারিনি। এগুলো সে কবেই ভেবে রেখেছে‌। দু’জনের সংসার হলে কি কি করবে, কি হবে। তননের কথায় কি উত্তর দিবে বুঝতে পারলো না। কোনোরকমে বললো,
-“এত সব ভেবে ফেলেছি মানে? আমি তো সাধারণ কথায় বললাম।”

তনন আর কথা বাড়ালো না। তাহসী তননের কাঁধের উপর মাথা রাখলে তনন তাহসীকে নিজের সাথে ভালো করে জড়িয়ে নিল।
-“ইনশাআল্লাহ শিঘ্রই একসাথে থাকতে পারবো‌। তবে হ্যা এমন ভালোই লাগে। প্রেম করছি আরকি।”
হাসতে হাসতে বলল তনন।

তাহসী ফিসফিস করে বললো,
-“বৈধ প্রেম।”

🍁🍁🍁
সেদিনের পর দুই মাস কেটে গেছে। তাহসী,তনন দুজনের পড়ার ব্যস্ত তায় বেড়েছে। দুইজনেই এখন ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। যার ফলে পড়ার চাপ তুলনামূলক বেশি।

তাহসী আজ সকাল এগারোটা থেকে কল দিয়ে দিয়ে তনন কে পাচ্ছে না। যার ফলে তাহসীর মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। তাই বলে কি মানুষ একবারও ফোন চেক করে না! এসব ভেবে আরো রাগ হচ্ছে তাহসীর। অপমানিত লাগছে। এদিকে দুপুরের রান্না করা বিরিয়ানী ও ঠান্ডার পথে।
দুপুর দুইটা নাগাদ ফোন আসলো তাহসীর ফোনে। ভার্সিটি অফ হওয়ায় তাহসী আজ বাসাতেই। সাধারণত এই সময়ে কল দিবে না। তননের কল ভেবেই তাহসী ফোন হাতে নিল।

তননের দুইটা ফোন। ভালো ফোন টা সে মেসে রেখে দেয়। আর একটা কম দামী ফোন সেইটা নিজের কাছে রাখে বাইরে থাকলে। যেন চুরি হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে বেশি টাকা নষ্ট না হয়। তাহসী ও অবশ্য এই কাজ করে। তাহসী দুই নাম্বারেই ফোন দিয়েছিল। একটিতেও পায়নি। এখন ফোন হাতে নিয়ে দেখে তননের বাইরের জন্য ফোনে রাখা নাম্বার থেকেই কল এসেছে।
তাহসী নিজের মনে কথা সাজিয়ে নিয়ে কল রিসিভ করলো। তনন নিশ্চয় ফোন ধরেই বলতে শুরু করবে তাহসী তাকে ছাড়া একটুও থাকতে পারে না।

তাহসী সালাম দিতেই অন্য একটা কন্ঠ আসলো। তাহসী ভ্রু কুঁচকালো। ফোন চুরি টুরি হয়ে গেল নাকি!

তাহসী কে অবাক করে দিয়ে ওপাশের মানুষ টি তাকে হাসপাতালে যেতে বললো। সাথে হাসপাতালের ঠিকানা ও দিল। তাহসীর বুক কেঁপে উঠলো। এক্সিডেন্ট হয়েছে!
আঁখি আজ বাসায় নেই যে তাকে নিয়ে যাবে। সে বাড়িতে বেড়াতে গেছে। তাহসীর মাথা কাজ করলো না হঠাৎ। পরক্ষণেই তাড়াহুড়ো করে তাহসী রেডি হয়ে নিল। রিকশা তে উঠে মেসেঞ্জারে গেল। তননের বেস্ট ফ্রেন্ড এর সাথে তার এড আছে। কখনো কথা হয়নি অনলাইনে। এমনিতেই শুধু এড আছে।
তাহসী দেখলো সে এক্টিভ আছে। সে আর কিছু না ভেবে রিয়ান কে নক দিল। ঘটনা জানানোর পর অনলাইন থেকে বের হয়ে নাহিদ কে কল দিল। যা ভেবেছিল তাই নাহিদ কল ধরলো না। এইজন্যই রিয়ান কে জানানো।

__________
এক সিএনজির সাথে বাইক নিয়ে এক্সিডেন্ট করেছে তনন। দোষ সিএনজি চালকের। বিশ মিনিট মতো হয়েছে তনন হাসপাতালে। পুলিশের ঝামেলায় ডাক্তার রা চিকিৎসা শুরু করেননি এখনো। তাহসী পৌঁছানোর আগেই রিয়ান এসে পৌঁছেছে।

তাহসী চার তলায় যেতেই রিয়ানের দেখা পেল। রিয়ান এর সাথে তননের আরো দুই বন্ধু রয়েছে। তাহসী কে দেখে রিয়ান একটু এগিয়ে গেল।

তাহসী তননের কথা জিজ্ঞেস করলো রিয়ান বললো,
-“চিন্তা করো না। ওটি তে নিয়ে গেছে। পায়ে ভালোই আঘাত পেয়েছে। ডাক্তার ট্রিটমেন্ট করাতে চাচ্ছিল না। পুলিশের ঝামেলা সিহান সামলে নিয়েছে। ওর বাবা এখানকার এসআই।”
পাশের একটি ছেলেকে দেখিয়ে বললো রিয়ান।

সিহান নামক ছেলেটির দিকে তাকিয়ে তাহসী বললো,
-“ধন্যবাদ।”

-“ধন্যবাদের কিছু নেই। তনন আমার ফ্রেন্ড। কিন্তু তোমাকে চিনলাম না। ডোন্ট মাইন্ড তুমি আমার ছোট হবে আই থিংক তাই তুমি বললাম।”

তাহসী কিছু বলার আগেই রিয়ান বললো,
-“পরে শুনিস। বাদ দে এখন এসব। তননের জন্য দোয়া কর।”

তাহসী সিহান কে এর আগে দেখেনি। হয়তো সামনে পড়েনি। তাহসী এদিকে খেয়াল না করে রিয়ান কে বললো,
-“টাকা কত লেগেছে? দিলো কে? টাকা না নিয়ে ডাক্তার অপারেশন শুরু করবে না নিশ্চয়ই!”

-“সিহান কোনোরকমে মেনেজ করেছে। যত তাড়াতাড়ি দিয়ে দেওয়ার কথা।”

রিয়ান তাহসীর হাতে সিম কার্ড দিয়ে বললো,
-“তননের ফোন ভেঙ্গে গেছে। ওখানকার মানুষ রা ফোন থেকে সিম নিয়ে কল দিয়েছিল তোমার নাম্বারে।”

রিয়ান তাহসী কে খরচ বুঝিয়ে দিল। তাহসীর এখন মনে হচ্ছে তননের কথা গুলো। এভাবে মনের ইচ্ছা মতো টাকা খরচ করা উচিত নয়। কখন কোন কাজে লাগে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তাহসী পুনরায় নাহিদের নাম্বারে ফোন দিল। এবার নাহিদ কল ধরলো।

ফোন ধরেই বললো,
-“কেমন আছিস? মিটিং এ ছিলাম।”

-“তনন এক্সিডেন্ট করেছে।”
একে একে সব খুলে বললো তাহসী। নাহিদ আশ্বস্ত করলো সে এখনো আসছে।

নাহিদ আসতেই তাহসী হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এখনো সেলিনা শেখ কে বলার সাহস পায়নি তাহসী। এখান থেকে কত দূরে সে। মা হয়ে কিভাবে সহ্য করবে। নাহিদ আসতেই বললো এই কথা।
নাহিদ তাহসীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
-“বলে ফেল। মায়ের দোয়া বেশি কাজে লাগে। আন্টিকে কান্নাকাটি না করে দোয়া করতে বল।”

তাহসী কল দিয়ে নাহিদের কাছে ফোন দিয়ে বললো,
-“তুমি কথা বলো। আমি পারবো না বলতে। আমার দ্বারা পসিবল না।”

নাহিদ জানাতেই সেলিনা শেখ কান্না করে উঠলেন। নাহিদ তাকে বললো দোয়া করতে আর তার বাবা কে জানাচ্ছে, সেলিনা শেখ ওনাদের সাথে ঢাকা আস্তে পারবেন।

ঘন্টা দুয়েক পর ডাক্তার বের হলো। তাহসী এগিয়ে গেল। জিজ্ঞেস করতেই ডাক্তার জানালেন ভয়ের কিছু নেই। প্রথমে ওনারা আশংকা করেছিলেন কেটে ফেলা লাগে কি-না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তেমন গুরুতর কিছু হয়নি। প্লাস্টার করে দিছেন। ফুল বেড রেস্টে থাকতে হবে পুরো তিন মাস।

তাহসী আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া জানালো। এরপর ফোন করে সেলিনা শেখ কে জানিয়ে দিল।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩১
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তননকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। তাহসী একবার যেয়ে দেখে আসছে। তননের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে আছে।

নাহিদ রায়ান,সিহান এর সাথে এক্সিডেন্ট স্পট এ যেয়ে বাইক নিয়ে নাহিদের বাসার গ্যারেজে রেখে দিয়েছে। পুলিশের ঝামেলা সিহান ই সব সামলেছে বাবাকে বলে।

ঘন্টা পেরোতেই তননের জ্ঞান ফিরলো। তাহসী দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে তননের দিকে তাকাচ্ছে আর নাহিদের সাথে কথা বলছে। ডাক্তার এর সাথে কথা বলতে নাহিদ আর তাহসী গিয়েছিল।

তনন কে নড়তে দেখে তাহসী কথা থামিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো। দরজা অল্প খোলা ছিল, সেই ফাঁক দিয়েই তননের উপর নজর রাখছিল তাহসী।

তনন চোখ খুলেই তাহসী কে তার দিকে আসতে দেখলো। এঁকে এঁকে সব ঘটনা মনে পড়তে লাগলো। পায়ের দিকে তাকাতেই দেখলো ডান পা হাঁটুর খানিক নিচ থেকে ব্যান্ডেজ করা।

তাহসী কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-” কেমন ফিল করছো?”

তনন তখন পা নাড়াতে চাচ্ছিল। পা নড়ছে না দেখে অস্থির অস্থির লাগছে তার। তাহসী তননের কাঁধে হাত রাখতেই তনন আহ শব্দ করে উঠলো। তাহসী তৎক্ষণাৎ হাত সরিয়ে নিল।

ততক্ষণে নাহিদ ডাক্তার ডেকে এনেছে। ডাক্তার এসে দেখে বললো,
-“ভালো, জ্ঞান ফিরেছে। পা ছাড়াও বুকে, কাঁধে চোট পেয়েছে, ওগুলো ব্যথার ওষুধ খেলে সেরে যাবে।”

ডাক্তার আরো কিছু বলে বেরিয়ে গেলেন। নাহিদ ও ডাক্তার এর পিছু পিছু চলে গেল।

তাহসী তননের দিকে তাকালো। কথা বলার মতোন কোনো কথা পেল না। তনন দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাহসীর দিকে তাকালো। উষ্ক শুষ্ক চেহারা তার।
-“তিন মাস! অনেকটা সময় তাই না তাহসী!”
তাহসীর দিক থেকে চোখ সরিয়ে তনন জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো।

-“ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা রাখো।”

-“রাখি।”

তনন তাহসীর দিকে তাকিয়ে পুনরায় বললো,
-“আমাকে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিতে পারবে?”

-“হু।”

তাহসী তননকে ধরে বালিশ বেডের সাথে লম্বা করে রেখে তননকে ঠিক করে বসিয়ে দিল। তনন তাহসীর হাত জড়িয়ে ধরে চুপ করে থাকলো কিছুক্ষণ। প্রচন্ড পরিমানে খারাপ লাগছে তার।
-“তিন মাস আমি স্বাভাবিক ভাবে থাকতে পারবো না তাহসী। চলাফেরা করতে পারবো না। আরো কত কত সমস্যা। ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসতেছে। ফাইনাল ইয়ার! কয়মাস বাদে সেমিস্টার ফাইনাল!”

তাহসী তননের মাথায় আরেক হাত দিয়ে বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
-“এত ভেবো না। ধৈর্য রাখো।”

-“আমি…. আমি একটুও বুঝতে পারিনি। সিএনজি টা সামনে চলে আসলো। কিভাবে যে কি হলো!… আচ্ছা বাইকের কি অবস্থা?”

-“ভাইয়া বাসার গ্যারেজে রেখে আসছে। এসব বাদ দাও। একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো। এসব মনে আসবে না।”

তননের বন্ধুরা ভিতরে ঢুকতেই তাহসী একটু সরে গেল। তনন তাহসীর হাত ছাড়লো না।

রায়ান অবস্থা জিজ্ঞেস করতেই বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে জোর করে হাসি টেনে তনন বললো,
-“ভালো।”

-“টেনশন নিস না। ঠিক হয়ে যাবে।”

তনন কিছু বললো না। মিথ্যা আশা দেখানো কথা ভালো লাগে না তার। তিন মাস তার পড়াশোনার ক্ষতি। পাশাপাশি আরও অনেক ক্ষতি। তিন মাস পরে কি হবে তাও জানে না সে। আল্লাহ তায়ালা যদি তাকে সুস্থ করে দেয় ও দৌড়াতে তো আর পারবে না।

তননের বন্ধুরা বিদায় নিয়ে চলে গেল। আবার পরে আসবে। ওরা বের হতেই তাহসী বললো,
-“আকাশ কুসুম চিন্তা বাদ দিয়ে শুয়ে পড়ো। এরপর ঘুমানোর চেষ্টা করো।”

-“তুমি বুঝতে পারছো না!”

-“খুব বুঝেছি। কি চিন্তা করছো তাও বুঝতে পারছি। ক্লাস করতে যেতে পারবে না, টিউশন যেতে পারবে না, নিজের কাজ সব নিজে করতে পারবে না, চিকিৎসার খরচ, থাকবে কোথায় ইত্যাদি ইত্যাদি।”

-“ওয়েট এ সেকেন্ড! চিকিৎসার খরচ তো মাথাতেই ছিল না। টাকা দিল কে? আম্মু কোথায়? আসেনি?”

-“সবাই পথে। টাকা আমি দিয়েছে। আর এটা নিয়ে আমি একটা কথাও শুনতে পারবো না। আগে সুস্থতা তারপর সব।”

তনন কিছু বলতে নিলে তাহসী নিজের হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“শুনবো না মানে না! ভাইয়া অফিস থেকে আসছে একবারে। ভাইয়াকে বলি এখন বাসায় যেতে আবার সবার সাথে আসবে। তুমি থাকো।”

-“তুমি যাবে?”

-“না, আমি এখানেই আছি। আসছি দাঁড়াও।”

নাহিদ যেতে না চাইলেও বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাহসী পাঠালো। তননের আছে এসে দেখলো তনন গভীর চিন্তায় মগ্ন।

-“এত না ভেবে ঘুমাও। ব্রেন কে রিল্যাক্স দাও।”

-“তুমি কি বুঝো হাঁটতে না পারার কষ্ট?”
তননের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।

তাহসী আচমকা তননের চোখের নিচে হাত রাখলো। তাহসী নিজেই নিজের কাজে চমকে গেল। হাত সরিয়ে নিয়ে বললো,
-“আমি এভাবে বুঝাইনি!”

তনন কিছু বললো না। তাহসী তননকে শুইয়ে দিল। তনন চোখ বুজে বললো,
-“ঘুম আসবে না। ভালো লাগছে না। তুমি ভাইয়ার সাথে যেয়ে রেস্ট নিতে।”

-“কেন?”

-“কেন‌ আবার! শুধু শুধু হসপিটালে থাকা।”

-“ওহ্ আচ্ছা। মানে তুমি বোঝাচ্ছো আমি অসুস্থ হলে তুমি এটাই করতে, মানে আমি যদি কখনো অসুস্থ হই তাহলে তোমার যেন হসপিটালে থাকা না লাগে। মানে আমি বলতে পারবো না তোমার সম। আমি ছিলাম।”

চোখ খুলে তাহসীর দিকে তাকিয়ে তনন বললো,
-“কথা পেচাচ্ছো!”
তাহসী যে এইভাবে কথা ঘুরিয়ে দিবে সে ভাবতেই পারিনি।

তাহসী ঠোঁট চেপে হাসছে। তনন পুনরায় চোখ বুজে বললো,
-“চুল টেনে দাও।”

তাহসী হাসি থামিয়ে তননের মাথায় হাত রাখলো। তাহসীর ও অনেক কষ্ট লাগছে তনন কে এইভাবে দেখে। কিন্তু প্রকাশ করতে চায় না তাহসী। তননের এই অবস্থায় যদি তাহসী তার হ্যা তে হ্যা মেলায় তননের কষ্ট বাড়বে বৈ কমবে না।

______________
তননকে দুইদিন হসপিটালে থাকা লাগলো। তননের পাশে একদিন রাতে তাহসী আর সেলিনা শেখ ছিল। কিন্তু পরেরদিন রাতে তাহসী কে জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছিল তনন। হসপিটালে থেকে তাহসী অসুস্থ হয়ে গেলে ঝামেলা বাড়বে,এইসব বুঝিয়ে তাহসী কে পাঠিয়ে দিয়েছিল। পরে তার নিজেরই খারাপ লাগছিল। তাহসী আশেপাশে থাকলে ভালোই লাগে তার। নাতাশা রহমান, তৌহিদ হোসেন, তনু নাহিদের বাসাতে ছিল।

আজকে দুপুরে তননকে ছেড়ে দেওয়ার কথা। সবার মাঝে কথা হচ্ছিলো তনন কে এখন কোথায় রাখা হবে তাই নিয়ে।
তনন ফিসফিস করে তাহসী কে বললো,
-“আমি কিন্তু নাহিদ ভাইয়ার বাসায় থাকতে পারবো না তাহসী। তিন মাস কারো বাসায় এইভাবে থাকা যায় না! আবার আমি অসুস্থ।”

-“অসুস্থ বলেই তো। এখন প্লিজ ইগো কে ইগনোর কর।”

-“ইগোর বিষয় না তাহসী। তুই মেনেজ কর। আমি গ্রামে চলে যাই। এখানে থাকা পসিবল না। বোঝার চেষ্টা কর। ওখানে আম্মু খেয়াল রাখতে পারবে। এখানে বাসা নিয়ে থাক পসিবল না। তার উপর আমার টিউশন বাদ, তনুর স্কুল।”

সেলিনা শেখ ও চাইছেন তনন কে নিয়ে গ্রামে যেতে। তাহসীর বাবা,মা, ভাই এটা মানতে নারাজ। শেষ চেকআপ এর সময় ডাক্তার বলে গেলেন এখানে থাকার জায়গা থাকলে এখানেই থেকে যাওয়ার কথা। পনেরো থেকে বিশ দিন পর চেকআপ করাতে হবে আবার। সবার কথা মেনে তননকে নাহিদের বাসাতেই যেতে হলো।

-“এমন ঝামেলার মানে হয়!”
তনন বললো।

তাহসী শুনেও কিছু বললো না। একটু আগেই তারা নাহিদের বাসায় এসে পৌঁছেছে।

-“ইসলামে যে স্বামীর কথা শুনে চলতে হয়, এটা জানো তাহসী? আমি বলেছিলাম তোমাকে মেনেজ করতে।”

-“জানি। আমি বলেছিলাম একবার। সবাই কথা বলেই এনেছে। মামুনি কে বলবো এই ব্যাপারে তোমার সাথে কথা বলতে।”

-“একবার বলছিলে কিভাবে জানিনা আমি! সে তো আমার সামনেই। কোনোরকম বলছিলে। আর আমি বলছি মেনেজ করতে।”

-“একটু চিন্তা করো এখানে থাকলে স্টাডি ভালোভাবে করতে পারবে। তোমার ফ্রেন্ড দের বলবে নোট পাঠাতে।”

-“যতই ভালো হোক তাহসী। এইভাবে একজনের বাসায় থাকা যায় না। যাই হোক তোমার তো নিজের ভাইয়ের বাসা, তাই কিছু মনে হবে না।”

-“তোমার বোনকে যদি আমি বোনের চোখে দেখতে পারি। আমার ভাইকে তুমি ভাইয়ের চোখে দেখতে পারবে না?”

-“বিষয় টা এমন নয়।”

-“আচ্ছা বাদ দাও। তোমার সব ফ্রেন্ড আমার ব্যাপারে জানে না, রাইট?”

-“হুম। রায়ান জানে শুধু। আর হাসপাতালে যারা এসেছিল তারা দুই একজন জেনেছে। আসলে আমি ইচ্ছা করে জানাইনি। মাইন্ড করেছেন নাকি ম্যাম?”

-“না, এমনিতেই ইন্টারেস্ট হলো!”

-“আচ্ছা!”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-২৮+২৯

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_২৮
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তনন, তাহসী ওরা কথা বলার মাঝেই হঠাৎ ওদের উপর কিছু পড়তে থাকলো। দুজনে খেয়াল করে দেখলো পার্টি স্প্রে। তাহসী চেপে গেল তননের দিকে। তননের সব বন্ধুরা রয়েছে, সাত-আটজন। সবাই একসাথে তননের বার্থডে উইশ করলো। তনন সবাইকে ধন্যবাদ জানালো হাসি মুখে। তাহসী তখন একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে।
তননের এক বন্ধু বলল,
-“ভাবী ও আছেন দেখছি।”

তাহসী মৃদু হাসলো। এত ছেলের মাঝে তার অস্বস্তি লাগছে। তনন তাহসীর দিকে এক পলক দেখে বললো,
-“তোরা থাক। আমি ওকে দিয়ে আসছি।”

-“কেন? ভাবী ও থাক। তুই তো ভাবীর সাথে ভালো করে পরিচয় করিয়ে দিলি না!”

অগত্যা সবার জন্য তাহসী কে ভিতরে যেতে হলো। তাহসী তনন‌ কে খুঁচিয়ে যাচ্ছে এখানে থাকবে না জন্য। তনন অসহায় চাহনিতে তাকাচ্ছে। একসময় তাহসী ফিসফিস করে বললো,
-“তুই না বললে ওরা এমনিতেই জানছে তুই এখানে?”

-“আরে মিট করার কথা ছিল আমার। এটা আমার এক ফ্রেন্ড মানে ওইযে রায়ান, ওর বাবার রেস্টুরেন্ট। তো ওরা এখানেই মিট করতে চাইলো। আমি ভেবেছি আমি তোমাকে দিয়ে আসবো এর মধ্যে। কিন্তু ওরা আগেই এসে গেছে।”

কেকের কথা উঠতেই তাহসী সবার মাঝে কথা বলবে কিনা বুঝে উঠতে পারলো না। এমনিতেও এতক্ষণ ধরে সে চুপ করেই আছে। রিয়ান ওয়েটার কে কেক আনতে বললেই তাহসী তননকে খুঁচিয়ে বললো,
-“কেক কাটবে নাকি এখন! এটা তো ইসলাম বহির্ভূত তনন।”

তননের এক বন্ধু মাহিন ওদেরকে লক্ষ করে বললো,
-“ভাবী আস্তে করে কি বলছেন? আমাদের সবার সামনেই বলেন যেহেতু আমরাও আছি।”

সবাই হেসে উঠল। তাহসী তননের দিকে তাকালে তনন আশ্বস্ত করলো। তাহসী গলা ঝেড়ে বললো,
-“কেক কাটা তো ইসলাম ধর্মে নেই। এটা তো খ্রিষ্টান ধর্মের রীতি। তো আমাদের কেক কাটা উচিত নয়?”

সবাই একটু চুপ থাকলো। রিয়ান বললো,
-“তো কাটবো না! আমরা তো খ্রিষ্টান ধর্মের রীতি অনুযায়ী কাটি না। বার্থডে উপলক্ষে করা হয়!খুশির জন্য।”

-“কিন্তু বার্থডে আসা মানে জীবন থেকে একটা বছর চলে যাওয়া। আমাদের জীবন মৃত্যু নির্ধারিত আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে। এটা তো আপনারা সবাই জানেন তাই না? আশা করি মানেন ও। আর আমার নির্ধারিত সময় থেকে একটা বছর চলে যাচ্ছে,এটা কি সুখের হলো? তো বলা যায় এটা দুঃখের তবে যদি কেউ আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধ অনুযায়ী না চলে। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) উনার বার্থডে তে রোজা রাখতেন। আমরা বরং কেক না কেটে এটা করতে পারি। কেক, পার্টি না করে সেই টাকাই যারা খেতে পায় না,তাদের খাওয়াতে পারি।”

দুই একজন চোখ মুখ কুঁচকে তাকালো। তাহসী ঠিক ই বুঝলো এদের পছন্দ হয়নি কথা গুলো। তবে বাকিগুলো সায় জানালো।
শেষ পর্যন্ত কেক কাটা হলো না। বন্ধুরা মিলে তননকে গিফট দিলো। তনন সবাইকে বিরিয়ানি খাওয়ালো। কিন্তু রিয়ান কোনোভাবেই তননকে পেইমেন্ট দিতে দিল না।
মাহিন বললো,
-“তো তনন ভাবী তোকে কি গিফট দিলো?”

তনন তাহসীর দিকে এক পলক তাকিয়ে দেখে বললো,
-“বাইক!”

তননের আরেক বন্ধু বললো,
-“ভাবী তো ফা’টি’য়ে দিছেন।”

তনন বললো,
-“আচ্ছা তোরা থাক। আমি এবার তাহসী কে নিয়ে যাই। অনেকটা রাত হয়ে গেছে।”

-“সব নয়টা বাজে। এটা অনেকটা রাত?”

-“তোদের কাছে না। তোদের কাছে তো রাত বারোটাও ম্যাটার না। আচ্ছা তোরা থাক। আমি ওকে দিয়ে আসছি।”

রিয়ান বললো,
-“না,আসা লাগবে না তোর। আমারও আজ একটা কাজ আছে।”

তনন সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল তাহসী কে নিয়ে। তাহসী বাইক থেকে নেমে তননের সামনে দাঁড়ালো। তনন জিজ্ঞাসা সূচক চাহনিতে তাকালো। তাহসী মুচকি হেসে লজ্জা নিয়ে বললো,
-“এত সুন্দর মুহূর্ত আমাকে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।”

তননের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
-“তবে তুমি তো আমাকে দাওনি। ওটা বাইক থেকেও দামী ছিল।”

তাহসী মন খারাপ করে জানতে চাইলো কি। তনন তাহসীর কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে বললো,
-“কি’স! তবে হ্যা কাল সব উসুল করে নিবো।”

তাহসী তননকে আলতো ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বাসার মধ্যে ঢুকে গেল। তনন হাসতে হাসতে বাইক নিয়ে চলে গেল।

🍁🍁🍁
পরদিন তাহসী যেয়ে হাজির হলো বুয়েটের ক্যাম্পাসে। তননকে ফোন দিলে তনন ধরলো না। তাহসী তননকে এসএমএস দিয়ে ক্যান্টিনে যেয়ে বসলো। তনন সম্ভবত ক্লাসে এ রয়েছে এখনো। কাল রাতে এটাই ঠিক হয়েছিল দু’জনের মধ্যে যে তাহসী এখানে আসবে। এখান থেকে একবারে দুজন বাস স্ট্যান্ডে যাবে।

কিছুক্ষণ বাদে তনন আসলো। তননকে দেখে তাহসী উঠে দাঁড়ালো। তনন বললো,
-“বসো । এখনো এক ঘন্টা সময় বাকি। নাস্তা করে যাই।”
তননের কথাতে তাহসী আবার বসলো। তনন বার্গার আর জুস অর্ডার করলো। খেতে খেতে বললো,
-“বাইক নিয়ে চিন্তায় আছি। মেসে ফেলে যাওয়া কেমন দেখায়!”

তাহসী বললো,
-” হুম আসলেই।”

খানিক থেমে তাহসী বললো,
-“ভাইয়া যে বাসাতে ওখানে রেখেই তো যাওয়া যায় তাই না? এবার বলো না যে এটাও তোমার ইগোতে লাগবে!”

তনন কিছুক্ষণ পর সম্মতি জানিয়ে বললো,
-“রিস্ক নেওয়ার থেকে এটাই ভালো।”

তাহসী বললো,
-“তাহলে বসে আছো কেন? বাইক নিয়ে ভাইয়ার ওখানে রেখে আসো। সময়-ও তো নেই।”

তনন বলে উঠলো,
-“সময় পাবো? জ্যাম লাগলে তো শেষ!”

তাহসী বললো,
-” দাঁড়াও ভাইয়াকে ফোন দিই।”

তাহসী একটু কথা বলে ফোন তননের দিকে এগিয়ে দিয়ে ইশারায় কথা বলতে বললো। তনন কথা শেষ করে তাহসীকে ফোন ফিরিয়ে দিয়ে বললো,
-“এটা ঠিক হলো না। ভাইয়া বলছে আমাদের চলে যেতে। ভাইয়া অফিস থেকে যাওয়ার পথে নিয়ে যাবে।”

-“ব্যাপারটা কেমন ই তবে ভালো হবে।”

-“একটা চান্স নিবো?”

-“এখান থেকে মেস, মেস থেকে ভাইয়ার বাসা, সেখান থেকে বাস স্ট্যান্ড! আর ভাইয়া নেই, বাসায়। তো বললেই তো আর দারোয়ান গ্যারেজে বাইক রাখতে দিবে না!”

-“হুম। ভাইয়াকে কষ্ট দেওয়া।”

-“খাওয়া শেষ।”

-“হুম। চলো।”

_________
সেলিনা শেখ তনন, তাহসী দুজনকে দেখে অবাক হলেন। সেলিনা শেখ রাগ দেখিয়ে বললেন,
-“তনন তুই নাকি আসতে পারবি না!”

-“মেনেজ করে আসতে হলো। দেখো তোমার বউমা কেউ নিয়ে আসছি।”

-” দুইজন ফ্রেশ হও রুমে যেয়ে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ;
#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_২৯
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

রাত এগারোটা বাজে তখন। তাহসী তননের রুমের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বাইরে দেখছে।

তনন রুমে এসে তাহসী কে জানালার কাছে দেখে এগিয়ে গেল। কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“কি দেখছো এই জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে? জানালা খুলেছো কেন? তোমার রুমের মতো আমার রুম এতো সুন্দর না!”

তননের রুমের এই দিককার জানালাটা রাস্তার দিকে। রাস্তা দিয়ে এখনও মানুষ যাচ্ছে আসছে এটাই দেখছিল তাহসী। আর আশেপাশে একটু ঝোপ ঝাড় রয়েছে। তাহসী পিছু ঘুরে উত্তর দিল,
-“জঙ্গল কোথায়? রাস্তা তো। ঠাণ্ডা বাতাস আসছে তাই খুলেছি।”

-“ওহ বন্ধ করে দিয়ে ঘুমাতে এসো।”

-“তুমি এতো তাড়াতাড়ি ঘুমাও? রাত জেগে পড়তে যে!”

-“পড়ি তো। আজ তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চাচ্ছি। একটা বই এনেছি। ওটা এখন পড়তে মন চাচ্ছে না।”
বলতে বলতে এগিয়ে আসলো তনন।

তাহসী জানালার পাল্লায় হাত দিয়ে সেগুলো টেনে আনলো। এরপর ছিটকিনি দিতে নিলে তনন পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরলো। তাহসী কেঁপে উঠে ছিটকিনি লাগাতে গেলে আঙ্গুলে ব্যথা পেল। উহ শব্দ করে উঠতেই তনন তাহসীকে ছেড়ে দিয়ে তাকে সামনে নিয়ে আসলো।
-“কি হলো?”

-“ওই একটু ব্যথা লেগেছে।”

-“আমি একটু ছুঁলেই সমস্যা!”

তাহসী ইতস্তত করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেলিনা শেখ এর কন্ঠ ভেসে আসলো। তাহসী এগিয়ে যেয়ে দরজা খুললো। তনন যেয়ে বিছানার উপর বসলো।
সেলিনা শেখ বললেন,
-“তোরা কাল আছিস নাকি চলে যাবি?”

তাহসী তননের দিকে তাকালো। তাহসীর কালকে নিজের বাড়িতে একবার যাওয়ার ইচ্ছা। এখনো এটা নিয়ে তননের সাথে কথা বলা হয়নি। সে এবার কিছু ভেবে আসেনি। তনন বলেছে আর চলে এসেছে। কোন যেন এবার কোনো প্লান করতে ইচ্ছা করেনি।

তনন বললো,
-“পরশুদিন সকালে যাবো ইনশাআল্লাহ। এমনিতে কাল রাতে যেতাম। কিন্তু তাহসী আছে,তাই পরশুদিন ইনশাআল্লাহ।”

-“আচ্ছা। দরজা লাগিয়ে দাও তাহসী।”
এটা বলে সেলিনা শেখ চলে গেলেন।

মা চলে যেতেই তনন উঠে এলো। তাহসীর দরজা লাগানো হতেই তনন তাকে কোলে তুলে নিল।
-“নাহ, বেশি ভর না। তোলা যায় দেখছি।”

ঘটনার আকস্মিকতায় তাহসী হতভম্ব হয়ে গেছে। তননের টিশার্ট মুঠো করে ধরে বললো,
-“এটা কোনো মুভি না। আল্লাহ বাঁচাও। আমাকে না আবার ফেলে দেয়!”

-“কি বললি তুই? তাহলে আমার হাত না লাগা পর্যন্ত নামাচ্ছি না!”

তনন এক পা ফেলতেই তাহসী তাকে শক্ত করে ধরলো।
-“মজা করবি না একদম।”

-“ছি ছি ছি! হাজব্যান্ড কে তুই তুকারি।”

-“কে আগে করে? আমাকে নামা তুই!”

তনন তাহসীকে বিছানার উপর আলতো করে ছেড়ে দিল। বিছানা থেকে কম দূরত্বে ছেড়ে দেওয়ায় তাহসীর ব্যথা লাগেনি। তাহসী হাফ ছেড়ে বললো,
-“জান টাই যাচ্ছিল!”

-“এই যে আমি তোমার জান এখানে। কোথায় যাচ্ছিলাম আমি? আর আমি মাঝে মাঝে ভুলে বলে ফেলি। কিন্তু আপনি আমাকে ফলো করে ইচ্ছা করে তুই বলেন।”
তাহসীর দিকে ঝুঁকে বললো তনন।
তনন পুনরায় বললো,
-“আমার শরীরে ভালো শক্তি আছে। এবার ফার্স্ট বার বলে মাফ করা হলো। নেক্সট বার এত নড়াচড়া করলে ফেলে দেওয়া হবে।”

-“এ্যাহ, আসছে। মাফ চাইছে কে শুনি?”

-“সবসময় মাফ চাওয়া লাগে না। পাওনা হয়ে যায়। এটা তোমার পাওনা ছিল।”

তনন তাহসীর পাশে শুয়ে পড়লো। তাহসী বললো,
-“আমার পাওনা নয়। লাইট অফ করে এসো।”

-“কেন?”

-“নিজেই তো বললে ঘুমাবে।”

তনন তাহসীর একদম কাছাকাছি সরে গেল। তাহসীর ঠোঁটে আচমকা চুমু খেয়ে বললো,
-“অন্য কারণে ডেকেছি। বুঝো না নাকি বুঝেও…..”

তাহসী অন্য দিকে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। আগে না বুঝলেও এখন বেশ বুঝতে পারছে। তনন বললো,
-“তোমার বাড়ি যেতে চাও না? কিছু বলছো না দেখছি।”

-“তো চাইবো না? এক রাত থাকতে পারলে ভালো হতো।”

-“ছুটি পেলে এসে থেকো। কাল এখানেই থাকো প্লিজ। বরং দুপুর, বিকেলে থেকে আসতে পারো কয়েক ঘন্টা।”

-“কেন রাত থাকলে কি?”

তনন তাহসীর হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে তার উপর চুমু খেয়ে বললো,
-“প্লিজ এটা বলো না বা আবদার করো না। আমার মন চাচ্ছে না কেন জানি। দুইটা রাত আমার সাথেই থাকো। আমি মায়ের সাথে থাকি এই দুইটা রাত। তুমি যদি সমান সমান থাকতে চাও পরে এসে দুইদিন বেশি থাকবো না হয় তোমার বাড়ি।”

এরপর তাহসী নাকোচ করার কিছু পেল না। তাই তাহসী বললো,
-“ওকে। সমস্যা নেই। কাল দুপুরে ওখানে যেয়ে বিকালে আসবো।”

-“আচ্ছা।”

দু’জনেই কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো। তাহসী উঠতে নিলেই তনন বললো,
-“আরে উঠছো কেন?”

-“ফোন নিতাম।”

-“হোয়াই? কাল বলো তোমার আম্মুকে।”

তাহসী পুনরায় বালিশে মাথা রাখতে গেলে তনন টান দিতেই তাহসী তননের দিকে ঝুঁকে পড়ল।
-“অস’ভ্য।”

-“জানি।”
তনন কিছু না বলে তাহসী কে ছেড়ে দিল। তাহসী আবার ভাবলো রগ করলো কি-না। কিন্তু তাহসী কে ভুল প্রমাণিত করে তনন তাহসীর উপরে উঠে গেল। গভীর ভাবে চুমু খেয়ে ঠোঁটে ঠোঁট রেখেই বললো,
-“কবে থেকে একসাথে থাকতে পারবো‌ বলোতো?”

তাহসী তখন ঘন ঘন শ্বাস ফেলতে ব্যস্ত। তনন গাঢ় স্বরে বললো,
-“কাটে কি বলছি? উনি তো এখন একটা কথারও উত্তর দিবে না। থাক কাল আলোচনা করবো।”

তনন তাহসীর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। তাহসী তননের পিঠে হাত রেখে বললো,
-“লাইট অফ করো।”

-“উঁহু।”
গলা থেকে মুখ তুলে বললো তনন।

-“প্লিজ।”

-“চুপ। তোমাতে বিলীন হতে চাই তাহসী। এর আগে কখনো অনুমতি নিইনি তোমার। আজ নিচ্ছি। দিবে না?”

-“লা..ইট অ..ফ করো।”

-“দিবে না অনুমতি, তাই তো?”

তাহসী চুপ করে গেল। একে কিছু বলে লাভ আছে! আর না এখন তর্ক করতে পারবে। তননের স্পর্শ গাঢ় থেকে গাঢ় হলো। তাহসীর মুখ দিয়ে আর কথা বের হলো না।

🍁🍁🍁
সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তননের ঘুম ভেঙ্গে গেল। তনন ঘুম ভাঙ্গতেই নিজের কাঁধের কাছে তাহসী কে আবিষ্কার করলো। তাহসীর চুলের পানিতে তার বালিশের একপাশ ভিজে গেছে। তাহসীকে স্পর্শ করলে তার ঘুম ভেঙ্গে যায় দেখে তনন কখনো জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর আবদার করেনি। দুজন দুপাশেই ঘুমায়। এখন দু’জন দু’জনের কাছে দেখে তননের মুখে হাসি ফুটে উঠল। তাহসীর কোমর থেকে নিজের হাত সরিয়ে তনন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আস্তে করে তাহসী কে ডাকতে লাগলো।
দুই মিনিট বাদেই তাহসীর ঘুম ভাঙ্গল। চোখ ডলে আশেপাশে তাকালো। মনে পড়লো সে এখন তননের বাড়িতে। আস্তে আস্তে রাতের কথাও মনে পড়লো।
তাহসী আড়চোখে তননের দিকে তাকিয়ে উঠে বসলো। বালিশের পাশে থেকে ওড়না নিয়ে গায়ে জড়িয়ে বিছানা থেকে নামলো। কাপড়ের ব্যাগের সাইড থেকে ব্রাশ নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগালো তাহসী। প্রথম দিনের মতোই তননের সামনে লজ্জা লাগছে আজ তার।

তাহসী ফ্রেশ হয়ে বের হতেই তনন গেল ওয়াশরুমে। তাহসী ব্রাশ ব্যাগে রেখে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। চুল চিরুনি করে নতুন করে চুল বেঁধে মুখের দিকে তাকাতেই চোখ গেল গলার দিকে। গলার একটু নিচে বাম সাইডে তিলটা বেশ ভালোই লাল হয়ে আছে। তাহসী আঙ্গুল দিয়ে ছোঁয়ার আগেই তনন স্পর্শ করলো সেখানে। তাহসী আস্তে করে শব্দ করে উঠলো। তননের পানি ওয়ালা হাত পড়ায় জ্বলে উঠেছে।

তনন ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ভ্যাসলিন নিয়ে ওখানে লাগিয়ে দিল।
-“স্যরি।”

তাহসী কিছু না বলে মুখ নামিয়ে নিয়ে সরে গেল। তার খুবই লজ্জা লাগছে। তননকে তার দিকে এগিয়ে আসা দেখে তাহসীর আরো লজ্জা লাগছে।
তনন তার হাতে একটা ক্রিম দিয়ে বললো,
-“পিঠে লাগায় দাও তো। তোমার থেকে আমার বেশি জ্বলছে।”

তাহসী কাঁপা কাঁপা হাতে আলতো করে ক্রিম লাগিয়ে গেল। পিঠের মাঝখান টাই আঁচড়ের দাগ। তাহসী লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তনন সেদিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-২৬+২৭

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_২৬
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

পরদিন বিকেলে নাহিদ তননকে নিয়ে বাইক এর শো রুমে গেল। নিজের প্ল্যান মতো নাহিদ সব করে দোকানের বাইরে এসে তননের হাতে বাইকের চাবি দিয়ে সে তৎক্ষণাৎ রিকশা ডেকে উঠে বসলো। তননের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে নাহিদ বললো,
-“গিফট ফ্রম তাহসী। আল্লাহ হাফেজ। সাবধানে যেও।”

তনন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। দুই ভাইবোন তাকে বোকা বানানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে কি! অবশ্য সেদিন শার্ট- প্যান্ট কেনার সময় তার প্যান্টের মাপ নেওয়া আর তাহসীর কাজ দেখে একবার মনে হয়েছিল এসব তার জন্যই। আবার পরক্ষণেই সেই ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে ছিল। কিন্তু আজ! আজ তো ঘূণাক্ষরেও তনন ভাবেনি এটা তার নিজের। নাহিদের রিকশা খোঁজা দেখে সে ভেবেছে তার জন্যই খুঁজছে। তাকে রিকশা তে উঠিয়ে দিয়ে নাহিদ ভাই বাইক নিয়ে চলে যাবে। ওহ, আচ্ছা এইজন্যই বুঝি ইনিয়ে বিনিয়ে তার পছন্দ জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল। এইগুলোই একমনে ভেবে চলছে তনন।

তননের কাছে বাইক নিজের সাথে নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই এখন। ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হলেও বাইক নিয়ে যেতে হবে, এখানে তো আর ফেলে রেখে যেতে পারে না। তনন বাইকের গায়ে হাত ছোঁয়ালো আস্তে করে। এমন একটা বাইক তার ও ছিল। মনে পরে গেল তার বাইকের কথা। তননের বাবা তখন সদ্য মারা গিয়েছে। তনন তখন হৈ হুল্লোড় করে বেড়ানো আর পড়াশোনা নিয়ে মেতে থাকা স্টুডেন্ট। জীবনে কখনো টিউশনি করাইনি ভালো স্টুডেন্ট হওয়া সত্ত্বেও। যখন টিউশনি শুরু করলো প্রথমে তেমন টিউশনি পেত না,আবার পেলেও ভালো করে পড়াতে পারতো না। কেউ কেউ তিনদিনের দিন বাদ দিয়ে দিত। তখন সেমিস্টার ফিস দিতে বাইক বিক্রি করে দিয়েছিল। মায়ের থেকে আর নিতে চাইছিল না সে।

তনন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে তাহসীর নাম্বারে কল দিল।

নাহিদ রিকশায় উঠে তাহসী কে জানিয়ে দিয়েছিল তার কাজ শেষ। যার ফলে এখন তননের কল দেখে তাহসী সহজেই বুঝে গেল তনন কি কারণে কল দিয়েছে। প্রথমবার কল রিসিভ করলো না তাহসী। তনন জিজ্ঞেস করলে কি কারণ দেখাবে বুঝতে পারছে না। কিন্তু দ্বিতীয় বার তনন কল করায় কল টা রিসিভ করতেই হলো।

কুশল বিনিময় করে তনন বললো,
-“ফ্রি আছো?”

-“হুম।”
মৃদু স্বরে উত্তর দিল তাহসী।

-“নিচে নামো। স্কার্ফ পরে আসবে। আসছি।”

তাহসী কিছু বলার আগেই তনন কল কেটে দিল। তাহসী কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেল না। আজ কোনো দ্বিরুক্তি না করেই তননের কথা মতো নিচে নামলো। মেইন গেটের কাছে রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রল করতে থাকলো।

কিছুক্ষণ বাদেই নিজের পাশে বাইকের আওয়াজ পেয়ে মাথা তুলে তাকালো তাহসী। মাথা থেকে হেলমেট নামিয়ে তনন বললো,
-“উঠে এসো।”

তাহসী বিনা বাক্য ব্যয়ে উঠে বসলো বাইকে। তনন কিছুক্ষণ বাইক চালানোর পর বললো,
-“ধরে বসা যায় না? নাকি নিজে থেকে আমাকে ছুঁলে হাত পঁচে যাবে?”

তাহসী‌ ঘনিষ্ঠ হয়ে তননের সাথে চেপে বসলো। তনন রাস্তার সাইড এ যেয়ে ব্রেক কসলো। তনন পিছনে ঘুরে বললো,
-“প্রায় এক বছর বাইক চালায় না! একে তো অভ্যেস নেই। তার উপর এমন করার কারণ কি?”

তাহসী মুখ বাকালো।
-“নিজেই বলছে!”

-“আমি তো ধরেই বসতে বলছি নাকি? আর তুমি!”

পুনরায় বাইক স্টার্ট দিয়ে তনন বললো,
-“খুব কাছে আসার ইচ্ছা না-আআ?”

-“অ’সভ্য!”

-“হ্যা তো। আমি অস’ভ্য আর উনি! মানে বাইক এ উঠেও দুষ্টুমি করা লাগবে? একটা কিছু বললেই শুরু হয়ে যায়। একটা কথা শোনা যায় না?”

-“না।”

-“বাচ্চা একটা।”

-“শি’শু নি’র্যা’তনের মা’ম’লা ঠু’কে দিবো।”

-“আচ্ছা তাই?”

কথা বলতে বলতে তনন টিএসসির সামনে বাইক থামালো। পাশে বাইক রেখে তাহসীর হাত ধরে ফুসকা স্টলের সামনে যেয়ে দাঁড়ালো।

তাহসী তননের কাজ দেখে অবাক হচ্ছে। সে ভেবেছিল চিল্লাচিল্লি করবে তনন। অথচ দেখো আরো ভালো ব্যবহার। তাহসী আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,
-“এখানে কি?”

-“ফুসকা।”

তাহসী ভ্রু কুঁচকে তাকালো।তনন প্রশ্নের মানে বুঝেও হেঁয়ালি করছে।
-“একদম হেঁয়ালি করবে না। হেয়ালি করা একটুও ভালো লাগে না।”

-“আমারও কারো থেকে কোনো জিনিস নিতেও ভালো লাগে না।”

তাহসীর রাগ হয়ে গেল। হেয়ালি করা আর বাইক দেওয়া এক‌ হলো!
-“বেশ! চাবি দাও। আমার থেকে কিচ্ছু নিতে হবে না। গায়ের শার্ট খুলে দাও। সব ফেলে দিই। বাইক ভাইয়া কে বলি ফেরত দিয়ে আসতে।”

তাহসী নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়ালো। তনন পুনরায় হাত চেপে ধরে বললো,
-“সিনক্রিয়েট করবে না। অর্ডার দিয়ে ফেলছি।”

তাহসী রাগে দুঃখে কিছু বললো না। বলতে মন চাইলেও মুখ খুললো না। ফুসকা দিলে তিন চারটা মুখে দিয়ে চুপ করে বসে থাকলো। তনন খেয়াল করে কিছু বললো না। তার তেমন ভালো লাগেনা ফুসকা, এইজন্য এক বাটি চটপটি নিয়েছে। তাহসী কে না সেঁধে ফুসকা গুলো ভেঙ্গে নিজের চটপটি তো মিশিয়ে নিয়ে পুরোটা শেষ করলো। তনন টাকা দিয়ে বাইকের কাছে যেয়ে দাঁড়ালো। তাহসী তননের হাত থেকে চাবি নিয়ে বললো,
-“চলে যেতে পারো। ভাইয়া কে বলবো….”

তাহসী কে কিছু না বলতে দিয়ে তনন তাহসীর ঠোঁট চেপে ধরলো। কিছুক্ষণ পর তনন তাহসীকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
-“আমি কি এমন বলেছি এত রাগ দেখাতে হবে? কে বলেছে বাইক কিনতে?”

পার্কিং লট হওয়ায় এদিকে কেউ নেই। অবশ্য তনন এমন ভাবে দাঁড়িয়েছে ওইদিক থেকে কিছু দেখা যাবে না। তাহসী তননের কাছ থেকে সরে এসে আজ বলেই দিল,
-“পাব্লিক প্লেসে কখনো আমাকে ছুঁবে না।”

-“কেন? আমরা ম্যারিড। মানুষ বিয়ে না করেই কতকিছু করছে! আর আমি তো জাস্ট…”

-“তবুও প্লিজ। এদিকে তেমন কারো চোখ পড়ে না। তবে পড়তে কতক্ষণ ?”

-“ওকে।”

-“আর বাইক কেনার কথা হঠাৎ করেই মাথায় আসলো। ভাবলাম দেনমোহর এর টাকা তো পরেই আছে। তাই”

-“তুমি দেনমোহর এর টাকা দিয়ে এমন করেছো? সিরিয়াসলি তাহসী?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো তনন।

তাহসী কিছু বললো না। তনন বাইক সরাতে সরাতে বললো,
-“এদিকে দেনমোহর এর টাকা আমি একটু একটু করে আম্মু কে শোধ দিচ্ছি। আমি তো আর চাকরি করি না যে একবারে দিতে পারতাম। আর উনি এই টাকা দিয়ে আমাকেই বাইক কিনে দিচ্ছে! টাকা আমাকে শোধ দিলি তুই?”

-“না।”

-“এখন মন মতো উড়িয়ে ফেল টাকা। কাজের সময় দেখবি এক পয়সাও নেই।”

তাহসী কিছু বললো না। তনন বাইকে উঠতে বলে তারপর বললো,
-“এখানে আনলাম মন ভালো করতে, যেন ঝামেলা না হয়। সেইটাই হলো। তো চল আমার মেসে যেয়ে শার্ট চেঞ্জ করে শার্ট তোকে দিচ্ছি। আর আমি তো চিনি বাইক এর শপ। ওখানে বাইক ফেরত দিয়ে আসবো। ডান?”

তাহসী হতভম্ব হয়ে গেল। তখন রাগের মাথায় কি বলে ফেলেছে সে! শার্ট খোলার কথা বলা মোটেও উচিত হয়নি। তাহসী যদি এখন তার বউ না হতো নিশ্চয় এখানেই শার্ট খুলে মুখের উপর ছুড়ে দিয়ে চলে যেত। তনন একবারও তার মুখের উপর রাগ দেখায়নি। তার উচিত হয়নি অতিরিক্ত রাগ দেখানো। এখন কি করবে সে? কাউকে তেলানো তার একদম পছন্দ নয়। কিন্তু কি বলবে তাও বুঝতে পারছে না। অবশেষে কথা অন্য দিকে ঘোরানোর উদ্দেশ্যে গলা ঝেড়ে বললো,
-“আমার দিয়েছি বলে ফেলে দিতে হবে। আমার কিছু নেওয়া যায় না।”

জ্যামে আটকে গেল তনন। তাহসীর উদ্দেশ্যে বললো,
-”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_২৭
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তনন তাহসীর উদ্দেশ্যে বললো,
-“যায় না।”

এই কথার পিঠে তাহসী কি বলবে ভেবে পেল না। তার কথার ঝুলিতে কথা শেষ। বাইকের আয়নায় তাহসীর শুকনো হয়ে যাওয়া মুখ দেখে তনন থমকে গেল। ভাবলো একে আর কষ্ট দেওয়া ঠিক হবে না। তাই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নিল। জ্যাম ছাড়তেই ওরা পুনরায় চলতে শুরু করল। তাহসী তাকিয়ে দেখে তনন একটা মসজিদের সামনে বাইক থামিয়েছে। ততক্ষণে মাগরিবের আজান শুরু হয়েছে। তাহসীকে নামতে বলে তননও বাইক থেকে নামলো।
-“এখানে কেন থামানো হলো? তুই না হয় এখানে নামাজ পড়ে নিতে পারবি আর আমি! তোর মেস কত দূর?”

-“উপরে ভালো করে তাকিয়ে দেখ মেয়েদের নামাজ পড়ার জায়গা আছে,এইটা লেখাই আছে। নামাজ শেষে যাবো।”

নামাজ শেষে তাহসী তননের জন্য অপেক্ষা করলো বাইকের কাছে দাঁড়িয়ে। দোতলায় মেয়েদের জন্য নামাজের জায়গা, আর ছেলেদের জন্য নিচ তালায়।

তনন একটা ক্যাফের সামনে বাইক থামালো। তাহসী নেমে বললো,
-“এখানে কেন?”

তনন বাইকের চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে ক্যাফের ভিতরে যেতে যেতে উত্তর দিল,
-“ভাবলাম একজন আমার বার্থডে উপলক্ষে এত বড় একটা গিফট দিল, তাকেও কিছু দেওয়া দরকার। তার মন খারাপ দেখা যাচ্ছে না আর, বরং আমি তাকে কিছু সুন্দর মূহুর্ত উপহার দিই।”

তাহসী মনে মনে হাসলো। তাহলে তাকে খেয়াল করেছে তনন। এটা ভাবতেই মনটা ভালো লাগায় ছেয়ে গেল।
তনন যেয়ে একটা প্রাই*ভেট টেবিলে বসলো। তাহসীর জন্য কোল্ড কফি আর নিজের জন্য ব্ল্যাক কফি অর্ডার করলো।
তাহসী বলে উঠলো,
-“তখন ওভাবে বলার জন্য স্যরি।”

-“ইট’স ওকে।”

-“হ্যাপি বার্থডে।”

-“থ্যাঙ্কস! বাট এত বড় গিফটের কোনো দরকার ছিল না।”

তাহসী কিছু বললো না। এভাবে সামনাসামনি বসে নিরিবিলি পরিবেশে কখনো তননের সাথে সময় কাটানো হয়নি। ওয়েটার কফি দিয়ে গেলে তনন কফি তে চুমুক দিয়ে হেসে বললো,
-“আমাকে এতো বড় গিফট দেওয়ার জন্য থ্যাঙ্কস। তুমি যে আমাকে এতো বুঝতে শিখেছো কবে কবে বলোতো?”

তাহসী লাজুক হাসলো। লাল লাল হালকা আভা গালে ছড়িয়ে পড়েছে। তনন পুনরায় বললো,
-“এতো লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু বলিনি।”

কিছু মনে হতেই তনন না থেমেই বললো,
-“আচ্ছা একটা কথা তুমিই দিয়েছো তো? মানে তোমার বাবা বা ভাই না তো? উনারা দিলে নিতে পারবো না। কিন্তু তুমি দিলে নিতে পারি।”

তাহসী ভ্রু কুঁচকে তাকালো তননের দিকে।
-“মিথ্যা বলি না।”

-“সেইটা তো জানি। দেখা গেল নাহিদ ভাইয়া কিনে তোমার নাম করেছে। আমি নিতে চাই না কিছু এটা তুমি বলতেই পারো।”

-“আমার দেনমোহর এর টাকা ছিল। দেড় লক্ষ। লেগেছে কত?”

-“সবমিলিয়ে এক লাখ ছাপ্পান্ন হাজার। দুইটা হেলমেট দিয়ে।”

-“ভাইয়া কে দিয়ে দিবো বাকিটা। কিন্তু হেলমেট দুইটা কেন?”

-“আমি তো সিঙ্গেল তাই!”

-“ত্যা*ড়া!”
বিড়বিড় করে বললো তাহসী।

-“আমি কখনো তোমার কাছে ভালো ছিলাম আদেও?”

তাহসী কিছু বললো না। তনন রেগেমেগে বললো,
-“আজ তুমি বলবে,আমি শুনবো। শুরু করো।”

-“মানে কি?”
থতমত খেয়ে বললো তাহসী।

-“মানে হচ্ছে এত চুপ থাকো। আমি কথা বলি। আমার মনে হয় জোর করে কথা বলাচ্ছি। হ্যা তুমি কম কথা বলো,শুনতে বেশি ভালো লাগে তোমার। কিন্তু আমার কথা ফুরিয়ে গেলে আমি কি বলতাম? তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু দেখবো?”

-“আসার পর থেকে এটা না ওটা। এবার চুপ থাকো একটু।”
চুমুক দিয়ে বললো তাহসী।

-“হুম,যেই বলেছি কথা বলার কথা। ওহ,ওয়েট! কি বোঝাচ্ছো আমি বেশি কথা বলি?”

তনন,তাহসী কথা বলাতে পাশের জন দের সম্ভবত সমস্যা হচ্ছিল। এই টেবিল গুলো আলাদা আলাদা করা মানে একপাশে দেয়াল, দুই পাশে বোর্ড দেওয়া আর সামনের দিকটা কাপড় দিয়ে ঘিরে দেওয়া। মোট কথায় কেউ ভিতরে থাকা মানুষ কে দেখতে পাবে না। পাশের টেবিল থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,
-“আপনারা ঝগড়া করবেন তো বাইরে যেয়ে করেন না! ঝগড়া করার জন্য প্রাই*ভেট বুক করে কেউ?”

তনন, তাহসী আস্তে করেই কথা বলছিল। কিন্তু এমন কথাতে আরো চুপ হয়ে গেল। তনন তাহসীর দিকে ঝুঁকে এসে ফিসফিস করে বললো,
-“প্রাই*ভেট টেবিল যেহেতু বুক করেছি, তাহলে আমাদের প্রাই*ভেট কাজ ই করা উচিত তাই না?”

তাহসী মাথা নিচু করে কফির দিকে মনোযোগ দেওয়ার মতো করে বলল,
-“মাথায় সব সময় এসবই ঘোরে না?”

-“উহু। তাহসী ম্যাডাম সামনে থাকলে ঘোরে!”

তনন উঠে এসে তাহসীর পাশে বসলো।
-“কি?”

-“বেশি কিছুই নয়। অনলি একটা কি’স!”

-“সরো তো।”

-“তা হবে‌ না। এত বড় গিফট চাই না। কি’স না দিলে বাইক নিচ্ছি না।”

-“স্ট্রেঞ্জ! কিসের সাথে কি মেলাচ্ছো?”

-“আস্তে কথা বলো,বেবি। একটা কি’স ই তো।”

তাহসী মনে মনে ভাবছে,এতো জিজ্ঞেস করার কি আছে বুঝালাম না। পাবলিক প্লেসে চেপে ধারে আর এখন অনুমতি চাচ্ছে! ওরে ভদ্র ছেলে।

তাহসী মনে চেপে না রেখে বলেই দিল ইনিয়ে বিনিয়ে। তনন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো,
-“একা অনুমতি না তো। তোমাকে কি’স করতে বলেছি। তুমি নিজ থেকে করবে।”

-“অবশ্যই না। আমাকে সুন্দর মুহূর্ত উপহার দিবে। আহা আহা কি সুন্দর! আসার পর থেকে তর্ক করে যাচ্ছে!”

-“আচ্ছা তাই? আমি তর্ক করছি?”

তাহসী উত্তর না দিয়ে বসে থাকলো। তনন নিজেই তাহসীর ঠোঁট চেপে ধরলো ঠোঁট দিয়ে। হঠাৎ আক্রমণে তাহসী নিজের কোমড়ে রাখা তননের হাত আঁকড়ে ধরলো। এক হাত চলে গেল তননের চুলে। কয়েক মিনিট পর তনন তাহসীকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বিল পেমেন্ট করে তাহসী কে নিয়ে বের হলো ক্যাফে থেকে।

বাসার রাস্তায় না যেতে দেখে তাহসী বললো,
-“স্যরি তো বলছিই। এখন কি মেসে যেয়ে শার্ট ফিরিয়ে দিবি?”

-“মেসে যাচ্ছি না,ম্যাডাম। এইদিকে একটা রেস্টুরেন্ট আছে ভালো।”

-“তো? এখন ওখানে যাবো নাকি? রাতে বাইরে থাকবো?”

-“বেশি রাত না। ডিনার করেই চলে যাবো। আজ না হয় একটু তাড়াতাড়ি ডিনার করা হবে!”

-“এতকিছুর কোনো দরকার পড়ছে না। বাসায় চল।”

-“নো, দরকার আছে।”
ততক্ষণে তনন কাঙ্ক্ষিত রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেছে। তাহসীর পছন্দের বিরিয়ানী অর্ডার দিয়ে দুজনে আবার কথা শুরু করলো। তবে এখন পড়াশোনা নিয়ে কথা হলো।

ডিনার শেষে তনন বাইকে উঠতে যেয়ে বললো,
-“ফ্রি আছো দুইদিন?”

-“কেন? কাল তো বৃহস্পতিবার। তারপরে শুক্রবার। এসাইনমেন্ট এর কাজ আছে। তাছাড়া ফ্রি।”

-” আমার সাথে বাড়ি যাবে? আমার প্ল্যান ছিল না কিন্তু বার্থ ডে থাকাতে আম্মু বলছে যেতে।”

তাহসী এক মুহুর্ত ভাবলো।
-“আচ্ছা।”

-“ডিস্টার্ব করলাম?”

-“না, এসাইনমেন্ট এর সব নিয়ে যাবো। কালকে যাবে?”

-“হুম। নাইটে! সমস্যা আছে?”

-“ভয় লাগে !”

-“আমি আছি।”

-“গলায় একটা ছু’রি ধরতেই আমি তুমি বেরিয়ে যাবে!”

তনন ফিক করে হেসে দিল।
-“এত হাসাতে পারো! ওকে ক্লাস মিস দিবো। কাল তিনটার বাস এ যাবো।”

-“আচ্ছা।”

-“টিকিট কিন্তু আমিই কাটবো।”

-“বাইক কিনে দিছি বলে এতকিছু!”

তনন, তাহসী ওরা কথা বলার মাঝেই হঠাৎ ওদের উপর কিছু পড়তে থাকলো। দুজনে খেয়াল করে দেখলো পার্টি স্প্রে।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-২৪+২৫

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_২৪
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তাহসী শশী কে বললো,
-” মেয়েদের অভিভাবক অনুপস্থিত থাকলে সেই বিয়ে হয় না। আবার মেয়েদের মত না থাকলে সেই বিয়ে দেওয়ারও কোনো নিয়ম নেই। রাসুল (সঃ) বাতিল বলেছেন সেই বিয়ে। এই হিসেবে তো তোদের বিয়েই বৈধ নেই সেখানে বাচ্চা!..”

তাহসী দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় বলে উঠলো,
-“আল্লাহ তায়ালার কাছে নামাজ পড়ে ক্ষমা চেয়ে দেখ। এছাড়া কিছু দেখিনা আমি।”

_________
সকালে ফজরের নামাজ পড়ে পাশাপাশি শুয়ে আছে তাহসী আর তনন। তনন তাহসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“সব কেমন সহজে হয়ে যাচ্ছে না?”

-“কেমন?”

-“এইযে নাঈম,শশী কে তেমন কিছু বললো না। তবে হ্যা একটা ব্যাপার ভীষণ ভালো লেগেছে। কেউ চিল্লাচিল্লি করলো না। নাহলে সবাই বুঝে ফেলতো।”

-“হু। তবে এইজন্যই সবাই চুপ। এতো সহজে ছেড়ে দেওয়ার কথা না। তবে আল্লাহ ক্ষমা করলেই হলো।”

-“হুম।”

🍁🍁🍁
নাহিদের বিয়ের আজ তৃতীয় দিন চলে। বউভাতের দিন নাহিদ আর মিথিলা, মিথিলার বাড়িতে গিয়েছিল। আজ বাড়ির কয়েকজন যেয়ে ওদের নিয়ে এসেছে। দূরের আত্মীয় স্বজন কাল বিদায় নিয়েছিল। আজ বিকালে তাহসী নানু বাড়ির পরিবার চলে যাবে।
সেই হিসেবে নাহিদ দের বাড়ি নিয়ে আসার পর তারা চলে হবেন। কিন্তু তৌহিদ হোসেন ঘোষণা দিলেন তাদের আজ যাওয়া হবে না। সবাই কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন এটা সন্ধ্যায় বলবেন। তৌহিদ হোসেন এর সিরিয়াসনেস দেখে সবাই থেকে গেল।

তনন আজকেই চলে যেতে চেয়েছিল ঢাকা। কিন্তু আজ ঢাকা যাওয়ার সম্ভাবনা একদম নেই বললেই চলে। তাহসী তো হেসে খেলে বেড়াচ্ছে। তননের মনে হলো এই বাড়িতে এতদিন থেকে তাহসী কে নতুন করে চিনলো সে। আগে তাহসী কে একটু চঞ্চল ধরণের মনে হলেও,আজ তননের কাছে মনে হচ্ছে সে একটু বেশিই চঞ্চল। এইসব ইং ভেবে চলেছে তনন রুমে বসে।

তাহসী রুমে আসতেই‌ তনন প্রশ্ন করলো,
-“তাহলে তুমি আজ ও যাবেনা! আচ্ছা বেশ। কিন্তু আমাকে যেতে দাও।”

-“আমি কি ধরে রেখেছি?”
মিনমিন করে বললো তাহসী। জোরে বলার জন্য মুখ খুলতে যেতেই তনন তা হতে দিল না। তাহসীর কাছে এগিয়ে যেয়ে তাহসী কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“ধরে রাখ নি বলছো?”

-“কোথায়?”

-“আচ্ছা তাই। এইযে ছাড়ছো না!”

-“যুক্তিহীন মজা করবে না। ছাড়ো।”

তনন ছেড়ে দিয়ে তাহসী কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
-“সত্যি করে বলো তো কবে যাবে?”

-“ইনশাআল্লাহ কাল। কাল দুপুর বারোটার টিকেট কাটা হয়েছে।”

-“কে কাটলো? দুইটা না একটা?”

-“কেন? শশুড়বাড়ি ছেড়ে যেতে মন চাইছে না? দুইটা!”

-“এটা না। বারবার আমাকে ছোট করো কেন বলবে!”

-“কি করেছি?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো তাহসী।

-“আমি কি গরিব ফকির? শার্ট ,প্যান্ট,টিকেট এর টাকা নাই। সব শশুড়ের!”

-“এইভাবে ভাবার কি আছে? দান করেছে না ছেলে হিসেবে দিয়েছে?”

-“তবুও আমার এটা ভালো লাগে না। গায়ের শার্ট টাও….!!”

তননের পরনে কফি রঙের শার্ট টা। তাহসী আস্তে করে বললো,
-“ব্লেজার বাদে সব আমার কেনা। কাল যেও না আমার সাথে। এত গায়ে লাগলে স্যরি।”

তাহসী রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই তনন হাত টেনে ধরলো। তাহসীর কাঁধে থুতনি রেখে বললো,
-“এইভাবে বলতে চাইনি। তবে আমার নিতে ভালো লাগে না এটা জানো।”

-“ভাইয়া জিজ্ঞেস করছিল আমরা কবে যাবো, টিকেট কাটছি কিনা। তো বললাম এখনো কাটা হয়নি। কিছুক্ষণ পর বলছে ট্রেনের টিকিট কেটে দিছে। কাল যেন তৈরি হয়ে যায়। আমি নিজে থেকে বলেনি। ভেবেছিলাম আজ রাতে এটা নিয়ে আলোচনা করবো।”

-“আজ কি হবে?”

-“সম্ভবত নাঈম আর শশীকে নিয়ে কথা হবে।”

-“ওহ্।”

তনন তাহসীকে পুনরায় নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে তাহসীর ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল। এমতাবস্থায় তাদের দরজায় নক করার শব্দ হতেই তনন তাহসীর থেকে সরে গেল। দরজা অর্ধেক খোলা রয়েছে। তনন মাথা চুলকে তাহসীর দিকে তাকালো। ভাগ্যিস ওরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে দরজা থেকে দেখা যায়না তেমন। আর দরজায় পর্দা দেওয়া তাহসী এগিয়ে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“দরজা খোলায় আছে।”

সামিয়া এসেছে। বললো,
-“নিচে চলো তোমরা। আঙ্কেল সবাইকে নিচে থাকতে বলেছেন।”

তাহসী সামিয়ার সাথে বেরিয়ে আসলে তনন ও বেরিয়ে আসলো। সামিয়া যেতে যেতে বললো ,
-“আচ্ছা আপু তুমি কিছু জানো এই ব্যাপারে?”

-“কোন ব্যাপার?”

-“উফ! বুঝোনা? আঙ্কেল কী বলবে এখন?”

-“কি জানি। নিচে যেয়েই শুনতে পারবি বাবা কি বলে। এতোক্ষণ কৌতুহল ধরে রেখেছিস,এখন আর দুই তিন মিনিটের ব্যবধান!”

পুরো ফ্যামিলি জড়ো হতেই তৌহিদ হোসেন মনির হাসান কে নিজের পাশে দাঁড় করিয়ে ভাবলেন,
-“আমি ভেবেছি শশী আর নাঈমের বিয়ে পড়িয়ে রাখবো। যেহেতু মনির চাচ্ছে শশীকে এখনই বিয়ে দিতে তাই এই সিদ্ধান্ত।”

সেদিন নাঈমের রুমে থাকা মানুষ আর তাহসীর দাদা দাদি বাদে সবাই অবাক হয়ে গেল। তাহসীর মামা বললেন,
-“ব্যাপার কি! সব ছেলে মেয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। নাহিদের টা বুঝলাম। তাহসীর টাও না হয় মানলাম। কিন্তু নাঈম কলেজে পড়ে সবে। কয়মাস পরেই তো এইচএসসি পরীক্ষা।”

-“শশীর বিয়ে…”

তৌফিক হোসেন বললেন,
-“শশীর না ওর খালাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা।”

তাহসীর খালু মনির হাসান কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“তা ভাই শশী তো এখনো বেশ ছোট। এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাচ্ছেন যে।”

মনির হাসান মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললেন,
-“আসলে ওর মা তার বোনের ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছিল। সেসব শুনে ভাইয়া এই কথা বলায় আমি আর না করিনি।”

এর মাঝে শিরীন ফোড়ন কেটে বললেন,
-“নাকি অন্য কোনো ঘট…”

নাতাশা রহমান শিরীন রহমানের কথা ধামা চাপা দেওয়ার জন্যে হেসে বলে উঠলেন,
-“এখন সবাই চুপ করে মিষ্টি মুখ করেন। বাকি কথা পরে হবে। আর শশী,নাঈম দুজনে নিজেদের মতো আলাদা আলাদা পড়াশোনা করবে। শুধু বিয়েটা দিয়ে রাখা। আর সেইটা সামনে শুক্রবারেই।”

তনন তাহসীর পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। বিড়বিড় করে বললো,
-“আর আমাদের পড়াশোনা চান্দে! এই মাস এখানেই থাকি।”

তাহসী তননের হাতে আস্তে করে চিমটি কাটলো। ইশারায় বোঝালো চুপ থাকতে।

তৌহিদ হোসেন বললেন,
-“ততোদিন সবাই এখানেই থেকে যান।”

কিন্তু কেউ রাজি হলো না। যেহেতু ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হবে তারা শুক্রবারে আসবেন বলে জানালেন।
তাহসীর নানা নানু বাদে পরেরদিন সবাই চলে গেল।

🍁🍁🍁
পরেরদিন ট্রেন জার্নি তে তাহসী তননকে পাশে পেল। তননের সাথে নতুন নতুন পরিবেশ উপভোগ করতে বেশ ভালো লাগছে তাহসীর। তবে তার সাথে লজ্জাও লাগে মাঝে মাঝে এটা ভাবতেই যে একসময় স্বপ্ন দেখা ছেলেটা এখন তার নিজের ব্যক্তিগত মানুষ। বিশেষ করে তনন যখন তার দিকে তাকিয়ে থাকে তখন আরো বেশি লজ্জা লাগে।

ঝালমুড়ি ওয়ালা হাঁক ছাড়তেই সেদিকে তাকালো তাহসী। এতোক্ষণ জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখছিল। তাহসীর হাব ভাব বুঝে তনন বললো,
-“এখানকার ঝালমুড়ি খেতে হবে না। ঢাকা যেয়ে খেও। এখানের টা বাসি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”

-“হু।”
বলে ঠিক হয়ে বসলো তাহসী। তনন চিপসের প্যাকেট কিনে তাহসীর হাতে দিল। তাহসী তখন আবারও বাইরে দেখতে ব্যস্ত। তননের ছোঁয়া পেয়ে তননের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কি?”

তনন চিপসের প্যাকেট এগিয়ে দিল। তাহসী নাকচ করে দিয়ে বললো,
-“চিপস খাই না আমি বেশি। এখন খেতে মন চাচ্ছে না।”

-“শুধু শুধু নিলাম।”

-“আমি বলছি নিতে?”

তনন মুখ বাঁকিয়ে বললো,
-“এমন করার কি আছে? ঝালমুড়ির সাথে আমার কিসের শত্রুতা?”

-“আমি বলেছি ঝালমুড়ির কথা বলেছি একবারও? আমি সত্যি বলেছি চিপস ওতো ভালো লাগে না।”

তাহসী ট্রেনের বাম পাশে বসেছে। ডান পাশে বসে থাকা একটা বাচ্চা কে একটু পর পর চিপসের দিকে তাকাতে দেখে তনন বাচ্চাটাকে চিপস দিয়ে দিল। বাচ্চার পাশে থাকা বাচ্চার মায়ের উদ্দেশ্যে তাহসী কে দেখিয়ে বললো,
-“এর জন্য কিনেছিলাম। খাবে না। বরং ও খাক।”

বাচ্চার মা বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতেই বাচ্চা টা তননের হাত থেকে চিপস টা নিল।

তনন মাথা ঘুরিয়ে তাহসীর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
-“আমার এমন একটা সুইট বেবি কবে থাকবে? এখন একটা বেবি থাকলে চিপস তাকে দিতাম!”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_২৫
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

একদিন অতিবাহিত হয়েছে। তনন,তাহসী দু’জনের আজ দেখা করার কথা। তনন আজ তাহসী কে নিতে আসেনি। তাহসী তননের পাঠানো লোকেশন মতো যেয়ে দেখে তনন বসে আছে এক বেঞ্চের উপর। গায়ে জড়ানো নেভি ব্লু রঙের শার্ট টা। তনন কে মানিয়েছে দারুন।
তনন তাহসীকে প্রথমে খেয়াল করিনি। তাহসী যেয়ে আস্তে করে সালাম দিয়ে তননের পাশে বসলো। তনন চমকে মুখ তুলে তাকালো তাহসীর দিকে। সালামের উত্তর দিয়ে বললো,
-“কেমন আছো?”

-“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?”

-“ভালো।”

এরপর কেউ কিছু বললো না। সবসময় তনন ই কথা বলে। তাহসী হু হা করে আর মাঝে মধ্যে দুই একটা কথা বলে। তার বলার থেকে তননের কথা শুনতে ভালো লাগে।‌ আজ তনন নিজ থেকে কিছু না বলায় দু’জনেই চুপ থাকলো। কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙ্গে তাহসী নিজেই মুখ খুললো।
-“কি হয়েছে?”

তনন দূরের একটা গাছের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কিছু না।”

তাহসী নিজের সংকোচ দূরে ঠেলে তননের হাতের উপর হাত রেখে বললো,
-“সত্যি টা জানতে চাই।”

তনন তাহসীর দিকে ঘুরে তাকালো। একবার হাতের দিকে তাকিয়ে তাহসীর হাত মুঠোয় নিয়ে বললো,
-“টিউশন করাতে গেছিলাম কাল বিকালে। বাদ দিয়ে দিল সে। তোমাদের বাড়ি থাকতে বলছিলাম না ঝামেলা করতে পারে এতো দিন অফ দেওয়ার কারণে, তাই করলো!”

তাহসী থমকে গেল। ক’দিন বা বাদ গিয়েছে? এখন তার মনে হচ্ছে আগেই তননের আসার ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত ছিল।
তাহসী অসহায় ভঙ্গিতে বললো,
-“স্যরি। আমার উচিত……”

তনন তাহসীকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
-“চলো সামনে হাঁটি।”

-“না।”

তনন ইশারায় জানতে চাইলো কেন। তাহসী কিছু বললো না। তননের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। তনন দুষ্টু হেসে বলল,
-“আরে এমনিতেই নিজের বিয়ের পরদিন চলে এসেছি। এরপর যদি শ্যালকের বিয়ে থেকে চলে আসি, কথা উঠবে না? আর আম্মু ও আসতে নিষেধ করেছিল। তোমার খারাপ লাগার দরকার নেই। তবে হ্যা যদি এটার জন্য খারাপ লাগে তাহলে একটা কাজ করে এর থেকে মুক্তি পেতে পারো।”

-“কি?”
তাহসী উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো।

তনন তাহসীর প্রায় কানের কাছে মুখ নিয়ে যেয়ে মুচকি হেসে বলল,
-“কি*স করো একটা এখন।”

তাহসী লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিল। একটু সরে যেয়ে বিড়বিড় করে বললো,
-“অ*সভ্য পাইছি একটা।”

-“এ্যাহ উনি জানতো না আমার স্বভাব।”

তনন শুনে ফেলাতে তাহসী আরো লজ্জা পেল। স্কুল, কলেজে তনন একটা দুষ্টু ছেলে ছিল এটা বেশ জানে তাহসী। এখনও হয়তো আছে, তাহসী তো আর বুয়েটে যেয়ে দেখে আসে না। তবে দুষ্টু হলেও মেয়েদের সাথে এসব বিষয়ে ফাজলামি করতো না। সেদিক থেকে বেশ ভদ্র সে।

তাহসী পাল্টা প্রশ্ন করলো,
-“আমি কিভাবে জানতাম?”

-“তাই তো! এখন জানাতে হচ্ছে তাহলে।”

তাহসী হাত ছাড়িয়ে উঠে সামনে হাঁটতে লাগলো। তনন উঠে এসে হাসতে হাসতে বললো,
-” এখন পালাও কেন? সব তো করেই ফেলছি। লজ্জা কোথা থেকে আসলো এখন?”

তাহসী দাঁড়িয়ে পড়লো। এই ফাজিল কে কিভাবে থামাবে সে! তনন বললো,
-“দাঁড়িয়ে পড়লা যে?”

-“আমি চলে যাবো।”
মুখ বাঁকিয়ে বললো তাহসী।

-“ওহ্ আসো। চলো রিকশা ডেকে দিই।”

তনন হাঁটতে শুরু করলো। পিছনে ঘুরে তাহসী কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
-“কি ব্যাপার? নিজেই তো যেতে চাইলা। এখন দাঁড়িয়ে আছো যে? থাকতে মন চাইছে বুঝি?”

তাহসী ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তাকে পচানো হচ্ছে। বললো,
-“কোন দুঃখে? রিকশা ডাকলেই চলে যাবো। এখানেই দাঁড়িয়ে আছি।”

তনন আশেপাশে তাকিয়ে তাহসীকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো। আশেপাশে সব কাপল। তাহসী কাঁধ উঁচু করে ছাড়িয়ে নিতে গেলে তনন আরো শক্ত করে ধরে থাকলো। তনন বললো,
-“দুই পর ছোট ভাইয়ের বিয়ে। কি দিবা?”

-“কিচ্ছু না। ছাড়ো প্লিজ।”

-“তাকাবে কেউ ম্যাডাম। আচ্ছা চলো এখান থেকে বের হয়। শশীর জন্য কিছু কেনা দরকার। আফটার অল আমার বোনের বান্ধবী।”

-“কি কিনবে?”

-“রিং?”

-“ওসব পড়ে দেওয়া যাবে।”

-“টাকা আছে সমস্যা নেই। চলো।”

-“মাসের ও ২৫ টা দিন আছে!”

তাহসীর হাতে চুমু খেয়ে তনন বললো,
-“বাহ! বেশ বুঝতে শিখেছো।”

তাহসী মুখে কিছু বললো না। মনে মনে বললো, ‘এসব তো ঠিক ই বুঝি তনন। কিন্তু তুমি লজ্জা পাবে ভেবে বলি না।’ তনন তাহসীর হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহসীর হাতে তননের দেওয়া সেই আংটি।
-“তোমার হ তে সুন্দর লাগছে। পরে থেকো।

-“হু।”

🍁🍁🍁
সময় নিজের নিয়মে চলমান। সেদিনের পর এক মাস কেটে গেছে।
নাহিদ আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে মিথিলা কে নিয়ে থাকার জন্য। আগে একটা ফ্ল্যাটে ব্যাচেলর থাকতো কয়েকটি ছেলের সাথে। এখন মিথিলার সাথেই আছে। বিয়ের এক সপ্তাহ পর ছুটি শেষ হয়ে গেলে নাহিদ মিথিলা কে নিয়ে চলে এসেছিল ঢাকা। মিথিলা হোস্টেলে ছিল কিছুদিন। এরপর নাহিদ বাসা খুঁজে পেলে মিথিলা কে নিয়ে সেই বাসায় উঠেছে।

একটা কথা কিছুদিন ধরে ভাবছে তাহসী। তনন কে কিভাবে বলা যায় বুঝতে পারছে না। তনন তো মনে হয় কখনো রাজী হবে না। তাহসী একটা চিন্তা ভাবনা করে নাহিদ কে ফোন দিয়ে সব বললো। সাথে বিকালে দেখা করতে চাইলো। নাহিদ বললো তার বাসায় যাওয়ার কথা। তাহসী আচ্ছা বলে রেখে দিল।

তার একটু পরেই তননের নাম্বার থেকে কল আসলো। তনন জানালো আজ বিকালে দেখা করার কথা। প্রায় এক সপ্তাহ দু’জনের দেখা হয় না। পড়াশোনা তে দুজনেই ব্যস্ত। তাহসী আমতা আমতা করে বললো,
-“কাল মিট করি? আজ একটু বিজি আছি!”

-“ওহ্, নো প্রবলেম‌। আমারও একটা টিউশন আছে আজ বিকালে। কাল তো নেই।”

-“তো দেখা করতে চাইলে? তাহলে বলো আসি।”

-“না,থাক। বিকালে বলতে দুপুরের আগে। টিউশন শেষ করে সময় থাকতো তাই।”

আর দুই একটা কথা বলে ফোন রেখে দিল। তাহসী গোসল করে তৈরি হয়ে নিল। দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বই এ চোখ বুলিয়ে তাহসী রওনা দিল নাহিদের বাসার উদ্দেশ্যে। খাওয়ার সময় মিথিলার সাথে কথা বলে নিয়েছে। মিথিলা আজ বাসায় থাকবে তখন। আগে আগে যাচ্ছে কারণ মিথিলার সাথে গল্প করা যাবে।

….

অফিস থেকে নাহিদ বাসায় ফিরলে আলোচনা হলো তাহসীর সাথে। মিথিলা রান্নাঘর থেকে শরবত বানিয়ে নিয়ে এসে নাহিদের হাতে দিয়ে বললো,
-“তা কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে?”

-“তননের বাইক কেনা নিয়ে।”
নাহিদ উত্তর দিল।

-“ফ্রেশ হয়ে চলো।”
তাহসী বললো।

-“কোথায় যাবো?”
অবাক হয়ে বললো নাহিদ।

তাহসী ও দ্বিগুন অবাক হয়ে বললো,
-“কোথায় আবার! বাইক কিনতে। ভুলে গেলে?”

-“কাল তনন কে নিয়ে যাবো। বলবো আমার জন্য চয়েজ করতে। আমার ফ্রেন্ড রা আপাতত নেই। তাই নিয়ে যাচ্ছি। তনন পছন্দ করলে পেমেন্ট করে তননের হাতে চাবি দিয়ে বলবো তাহসীর গিফট। তনন কে হতভম্ব অবস্থায় ফেলে চলে আসবো, ওকে? কেমন আইডিয়া দিলাম?”

-“কেন তাহসী জানিয়ে দিবে না?”
প্রশ্ন করলো মিথিলা।

-“না। তার লজ্জা লাগে!”

নাহিদের হাতে খামচে দিয়ে তাহসী বললো,
-“ফালতু কথা বলবা না একদম।”

নাহিদ শেষ শরবত টুকু শেষ করে মিথিলার হাতে গ্লাস দিয়ে বললো,
-“মাংস উঠিয়ে নিল সব।”

-“আমার সাথে মিথ্যা বললে এমন ই হবে।”

-“থামো তোমরা দুইজন।”
মিথিলা বলে উঠলো।

তাহসী বললো,
-“আমাকে আসতে বললে কেন? এত প্লান থাকতে!”

-“এমনি বললে তো আসবি না। শেষে বাড়ি যেয়ে বলবি ভাইয়া বাসা নিল, আমাকে দেখালো না। দাওয়াত দিই নাই। তাই দেখিয়ে নিলাম।”

-“তুমি থাকো তোমার বুদ্ধি নিয়ে যত্তসব। আমি চললাম।”

তাহসী সোফা থেকে উঠে হাঁটা দিল। মিথিলা এগিয়ে যেয়ে তাহসী কে ধরে বললো,
-“এই না। রাতে খেয়ে যাবা। তোমার ভাইয়া‌ দিয়ে আসবে।”

-“উহু। শেষে বলবে তনন কে না নিয়ে একা যেয়ে খেয়ে আসছি। আম্মু আমাকে বকা দিবে।”

মিথিলা তাকে রুমে নিয়ে যেতে যেতে বললো,
-“তোমার ভাইয়ের ফালতু কথায় কান দিও না। আমার সাথেও এমন করে।”

তাহসী উৎসুক হয়ে বললো,
-“তোমাকে বকা দেয়? আমাকে সব বলো। আমি তোমার জাস্টিস পাইয়ে দিবো।”

মিথিলা কিছু বলার আগেই নাহিদ ওদের কাছে এগিয়ে এসে বললো,
-“ক্ষমা চাই তোর কাছে। খুশি?”

-“না। স্যরি বলতে হবে।”

নাহিদ রাগতে রাগতে চলে গেলে তাহসী হাসতে শুরু করলো। মিথিলাও হেসে দিয়ে বললো,
-“তোমরা পারোও বটে!”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-২২+২৩

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_২২
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

বর পক্ষের ছেলেরা যোহরের নামাজ পড়ে আসতেই‌ বিয়ে‌ পরানো শুরু হলো। দেনমোহর এর টাকা উল্লেখ করতে যেতেই মেয়ে পক্ষ কিছুটা ঝামেলা শুরু করলো। তৌহিদ হোসেন বলেছেন তিন লক্ষ টাকার কথা। কিন্তু মিথিলার চাচা সায় না জানিয়ে বলেই বসলেন,
-“এত কম কেন! যদি ছেড়ে দেয়।”

ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনেই নাহিদের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। মিথিলা কে দেখতে আসলে তখনও ইনি ঝামেলা করছিল।
নাহিদের ছোট চাচা মনির হাসান বললেন,
-“ছেড়ে দেওয়ার কথা আসছে কেন?”

-“তো? এত কম টাকা দেনমোহর দেয় কেউ? যৌতুকের সময় তো ঠিক ই আছেন!”
মিথিলার খালু বলে উঠলেন।

-“যৌতুক নিয়েছি কে বললো আপনাকে?”
তাহসীর এক কাজিন বলে উঠলো।

তাহসীর বাবা তাকে ইশারায় থামতে বললো। এখানে এই পরিস্থিতি দেখে একজন মিথিলার বাবা কে খবর দিয়েছে। তিনি বাড়ির ভিতরে ছিলেন। এসব শুনে ঘটনা স্থলে আসলেন। সবাইকে থামতে বলে তাহসীর বাবার সাথে উনি কথা বললেন।

মিথিলার বাবা কনে পক্ষের উদ্দেশ্যে বললেন,
-“প্রথমেই একটা বিষয় ক্লিয়ার করি উনারা কোনো যৌতুক নেন নি। আর ইসলামে বলা আছে যত কম দেনমোহর করা যায়,তত কম করার কথা। এতেই ভালো। এই নিয়ে আর কেউ কথা বলবেন না।”

মিথিলার খালু ঠেস দিয়ে বললেন,
-“বিয়ের পর সেই তো সব নিবে খাট পালঙ্ক!”

-“আপনি কিন্তু আমাদের অপমান করছেন।”
তৌফিক হোসেন বললেন।

মিথিলার বাবা তৌহিদ হোসেন এর কাছে ক্ষমা চেয়ে ওনাকে নিয়ে চলে গেলেন। এরপর আল্লাহর রহমতে বিয়ে ভালোভাবে সম্পন্ন হলো।

🍁🍁🍁
মিথিলা কে নিয়ে সবাই যখন বাড়ি ফিরলো তখন বিকাল পাঁচটা বাজে প্রায়। নাতাশা রহমান মিথিলার হাত ধরে বাড়ির মধ্যে নিয়ে আসলেন। তিনি বাড়িতেই ছিলেন।
মিথিলা কে নিচ তলার এক গেস্ট রুমে বসানো হলো। মিথিলার সাথে এসেছে মিথিলার ভাবী আর ছোট বোন। ওনারা এই রুমেই থাকবেন বলে জানালেন নাতাশা রহমান। মিথিলা কে নাহিদের রুমে নেওয়া হবে রাতে, তার পূর্ব পর্যন্ত সে এখানেই থাকবে।
মিথিলার ভাবী মারিয়া প্রশ্ন করলেন,
-“আপনারা বরণ করলেন না তো। আমার সময় তো করেছিল।”

-“ইসলামে বরণ করার কথা বলা নেই। এটা তো অন্য ধর্মের রীতি। আমরা যতটুকু পারি ততটুকু ইসলাম মেনে চলার চেষ্টা করি।”
তাহসীর ফুফু উত্তর দিলেন।

তাহসী তার কাজিন দের সাথে নিয়ে বাসর ঘর সাজালো। ফুলগুলো একটা গামলা তে করে একটু পানি ছিটিয়ে ঠান্ডা মেঝের উপর রেখে দিয়েছিল যার ফলে ফুল আগের মতোই আছে।

রাত এগারোটার দিকে মিথিলা কে দোতলায় নাহিদের ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো। বোন ভাইদের দাবি মিটিয়ে রুমে প্রবেশ করলো নাহিদ।

🍁🍁🍁
সবাই নিজ নিজ রুমে চলে গেল। তাহসী নিজেও রুমে প্রবেশ করলো। ভেবেছিল রুমে ঢুকে তনন কে দেখবে, কিন্তু তননের দেখা নেই। বারান্দায় আছে ভেবে তাহসী ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসলো।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েও তনন কে দেখল না। তাহসী কয়েক পা এগিয়ে বারান্দায় যেতেই তননের দেখা পেল। বারান্দায় থাকা চেয়ারে বসে সামনে তাকিয়ে আছে সে। তাহসী তননের অগোচরে মুচকি হাসলো।

কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তনন পাশে তাকালো। তনন কিছু না বলে তাহসী কে টান মেরে নিজের কোলের উপর বসালো। তাহসী হতভম্ব হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে তননের এমন কাজ আশা করেনি। সে তো রুমের মধ্যেই ফিরে যাচ্ছিল। এখন উদ্দেশ্য ড্রেস চেঞ্জ করে ঘুম দেওয়া। ভালোই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে আজকাল। যার ফলে রাতে খুব ঘুম পায় তাহসীর। ভার্সিটি তে দৌড়াদৌড়ি করলেও এত ঘুম পায়না।

-“কি করছো?”
মৃদু স্বরে বললো তাহসী।

-“হুশ!”
তাহসী কে চুপ করিয়ে দিল তনন।

তাহসীর কাঁধে গলার কাছে তনন ঠোঁট ছোঁয়াতেই তাহসী কেঁপে উঠলো। তননের দিকে তাকানোর সাহস পেল না লজ্জায়। তনন তাহসীর টপস এর নিচে হাত গলিয়ে দিল। তাহসী সম্পূর্ণ ভর তননের উপর ছেড়ে দিল।
তনন তাহসীকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে আসলো। বিছানায় আলতো করে শুইয়ে দিয়ে তাহসীর উপর ঝুঁকে গেল। এক মুহুর্ত সময় ব্যয় না করে তাহসীর ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল। তাহসী তননের কাঁধের শার্ট মুঠো করে ধরলো।

তৎক্ষণাৎ কিছু শ্রবণ গত হতেই তাহসী তনন কে হালকা ধাক্কা দিল। তনন উঠে ভ্রু কুঁচকে তাকালো তাহসীর দিকে। আজ তৃতীয় বারের মতো তাহসীর সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছে সে, আজ কেন তাহসী বাধা দিচ্ছে বুঝতে পারলো না। তাহসী কয়েক বার ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
-“কান্নার শব্দ না?”

তননের সেদিকে হুস নেই। তাহসীর কাছে পুনরায় এগিয়ে যাবে কিন্তু সেই মুহূর্তে সে নিজেও কান্নার চাপা শব্দ শুনতে পেল। তনন বার কয়েক ঘন ঘন শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। পরে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়াতেই শব্দ টা একটু গাঢ় হলো। তনন স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
-“এখানে আসো। কান্নার শব্দ বেশি!”

তাহসী উঠে বসলো।
-“ভাই..য়ার রুম থে.. কে নাকি?”

-“উহু। মনে হচ্ছে নাঈমের রুম থেকে।”

তাহসী উৎকন্ঠা নিয়ে বললো,
-“কি বলো? মেয়ের কন্ঠ!”

বারান্দায় যেয়ে তাহসীর ও মনে হলো নাঈমের রুম থেকেই। তাহসী ভাবছে নাহিদ কে জানাবে কিনা। পরে ভাবলো জানাবে না। এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা হজম হচ্ছে না আবার নাহিদ কে এখন ডাকাও যায় না। তননকে নিয়ে যাবে ভেবে তাহসী এগিয়ে এসে দরজা খুলল। দরজা খুলে পাশে তাকিয়ে দেখল নাহিদ ও রুম থেকে বের হয়েছে।

তাহসী কিছু বলার আগেই নাহিদ বললো,
-“তুই কাঁদছিস নাকি?”

-“কোন দুঃখে?”

-“তো কান্নার শব্দ পেলাম যে! কি শুনলাম তাহলে? আল্লাহ রক্ষা করো।”

-“তুমিও পেয়েছো? আমার মনে হলো নাঈমের রুম থেকে।”

-“তনন তোমার বউ মনে হয় পাগল হয়ে গেছে! ওয়েট ওয়েট, আমার মনে হচ্ছে এটা তোদের কোনো ট্র্যাপ আমাকে জ্বালানোর!”

-“পাগল তুমি। ওদের কাজ নেই এটা করতে যাবে। দুইজনের ফটো দেখতে ব্যস্ত সবাই।”

তাহসী নিজেই যেয়ে নাঈমের দরজায় নক করলো। আচমকা কান্নার শব্দ থেমে গেল। শুধু ফোপানোর শব্দ পেল তাহসী। রুমের মধ্যে কথা বলার আওয়াজ মনে হলো। তিনজন মোটামুটি শিওর হলো রুমের মধ্যে অবশ্যই একটা মেয়ে আছে। ঘটনা ধারণা করে নিল তিনজন।

নাহিদ নিম্ন স্বরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“নাঈম পুরো পরিবার কে জাগাতে না চাইলে ভালোই ভালোই দরজা খুলবি!”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_২৩
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

নাহিদ নিম্ন স্বরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“নাঈম পুরো পরিবার কে জাগাতে না চাইলে ভালোই ভালোই দরজা খুলবি!”

কিছুক্ষণ বাদেই দরজা খুলে গেল। দরজার বাইরে থাকা তিন জনেই অনেকটা চমকালো। তাহসী ভিতরে ঢুকে মেয়েটির সামনে দাঁড়িয়ে বিস্ময় নিয়ে বললো,
-“শশী তুই!”

শশীর চোখ বেয়ে তখনও পানি পড়ছে। নাহিদ শশীকে একবার দেখে নিয়ে দরজার পাশে দাঁড়ানো নাঈমের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কি হয়েছে সবটা খুলে বলবি!”

নাঈম আমতা আমতা করতে লাগলো। নাহিদ পুনরায় বললো,
-“ভয় নেই।‌ বল। আমরা কেউ পুরো ফ্যামিলি জানাতে চাচ্ছি না।”
এই কথা বলে নাহিদ তাহসী আর তননের দিকে তাকালো। এই মুহূর্তে এদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা জরুরী। তাহসী, তনন দুজনেই ইশারায় সায় জানালো। এখন পুরো বাড়ি জানিয়ে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। যারা মিথ্যা গুজব ছড়াতে পারে,তাদের জানানো বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। তাদের থেকে সমাধান তো দূর খবর গোপন রেখে পাশা থাকানোও আশা করা যায় না। তার চেয়ে বরঞ্চ নিজেরা জেনে সমাধান করা যাক। এরপর বাবা মা কে জানাতে হবে। এমনটাই ভাবলো তাহসী।

তাহসী শশী কে নিয়ে নাঈমের বিছানায় বসালো। শশীর হাতে এক গ্লাস পানি দিয়ে তাহসী নরম সুরে বললো,
-“এই রুমে কেন তুই? সবটা খুলে বল।”

-“আ…..মি, আমি প্রেগ….ন্যান্ট আপু।”

-“কি-হ!”
নাহিদ আর তাহসী সমস্বরে বলে উঠলো। তনন এক্ষেত্রে নিশ্চুপ থাকায় ভালো মনে করলো।

নাহিদ নাঈমের কলার টেনে ধরলো।
-“এতো খারাপ তুই। ছিঃ!”

শশী ভয়ে ভয়ে বললো,
-“আম..রা আগেই বিয়ে করেছি ভাই…য়া।”

তাহসী নিজেকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলে উঠলো,
-“তোদের কি কে*টে ফেলে দিত? বাড়িতে কেন জানালি না তোরা?”

তখন নাতাশা রহমান দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি পানি নিতে এসেছিলেন ডাইনিং রুমে। উপরের দিকে চোখ যেতেই দেখেন তাহসী আর নাঈমের রুমের দরজা খোলা আর লাইট জ্বলছে। সাথে একজনের অবয়ব দেখা যাচ্ছে নাঈমের দরজার সামনে। তাই দেখে তিনি এগিয়ে এসেছেন। দোতলায় এসে দেখলেন তনন রুমের ভিতরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। অর্থাৎ অবয়ব টা তননের। নাতাশা রহমান কে দেখে তনন দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো।

নাতাশা রহমান প্রথমে কিছু বুঝে উঠতে পারলেন না। তবে শশীর ফোপানো দেখে আর নাঈমের দিকে রেগে তাকিয়ে থাকা নাহিদ কে দেখে কিছুটা আন্দাজ করে নিলেন। তননকে ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা চাপিয়ে থমথমে কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,
-“কি হয়েছে?”

তনন ঘটে যাওয়া ঘটনা টুকু বললো। ঘটনার আকস্মিকতায় নাতাশা রহমান হতভম্ব হয়ে গেলেন।
-“তোরা কি মজা করছিস?”

কেউ কোনো কথা বললো না। নাতাশা রহমান ভেবে পাচ্ছেন না কি বলবেন। ওদের তিনজনেরও একই অবস্থা।
শেষ পর্যন্ত নাতাশা রহমান মুখ খুললেন,
-“বাড়িতে না জানিয়ে এত বড় সিদ্ধান্ত কিভাবে নিয়েছিস তোরা? জানিস মেয়েদের অভিভাবক অনুপস্থিত থাকলে বিয়ে হয় না?”

শশী আরো শব্দ করে কেঁদে উঠলো। নাতাশা রহমান বললেন,
-“তাহসী তোর বাবা,চাচাকে ফোন দিয়ে এই রুমে আসতে বল। বাড়ির বাকি কেউ যেন না জানতে পারে।”

তাহসী নাহিদ আর তননের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো। বাবাকে এই কথা বলার সাহস নেই তার। আর এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়লে ঘুম ভাঙিয়ে বকা শোনার ইচ্ছা নেই। আর দোতলা থেকে ফোন দিয়ে চিন্তিত করার কি দরকার!
নাহিদ খেয়াল না করলেও তনন তাহসীর দৃষ্টি খেয়াল করলো। তনন আশ্বস্ত করলো তাহসী কে। এরপর সোজা নিচে নেমে গেল। আপাতত তৌহিদ হোসেন কে ডেকে আনবে সে।

তৌহিদ হোসেন উপরে উঠতে উঠতে এরমধ্যে কয়েকবার প্রশ্ন করেছেন তনন কে। তনন প্রতিবার জানিয়েছে উপরে যেয়ে বলবে। তৌহিদ হোসেন আসলে নাতাশা রহমান খুলে বললেন সব। মনির হাসান কে ফোন দেওয়া হলো। তৌহিদ হোসেন বললেন তিনি আর তার ওয়াইফ যেন এখন এই বাড়িতে আসে কাউকে না জানিয়ে।

তাহসীর ছোট চাচা-চাচি আসলে তৌহিদ হোসেন ওনাদের সব জানালেন। তাহসীর ছোট চাচী শিমুল রহমান দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই বসে পড়লেন। তার কোলে শাফিন, ওনাদের কথা বলায় ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। যার ফলে শিমুল রহমান তাকে নিয়ে এসেছেন, আবার কাউকে না বলে আসা; বাচ্চা কে একা রেখে আসা যায় না।

মনির হাসান এমনিতে ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষ। তৌহিদ হোসেন যতটা রাগী,তিনি ততটাই শান্ত। কিন্তু এই কথা শুনে আর স্বাভাবিক থাকতে পারলেন না। সোজা শশীর কাছে যেয়ে দুই গালে দুই থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। এরপর পিছনে ঘুরে নাইম কেও একটা থাপ্পড় মারলেন। শশী উচ্চস্বরে কাঁদতেই তাহসী আস্তে করে বললো,
-“চুপ, আস্তে। বাইরের মানুষ যেন না জানে। বুঝতে পারছিস কি হবে?হয়তো সমাজ দিয়ে আমার তোর যায় আসে না তবে এটা মোটেও বাইরে জানানোর বিষয় নয়। মেইন কথা আল্লাহ সব তো সব দেখছেন। ওনার কাছে কি জবাব দিবি তোরা?”

শশী হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে শুধু ফোপাতে লাগল। মনির হাসান দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
-“আমি ভাবতেই পারছি না যে তোরা! আবার নাহিদের বিয়ের দিনে জানাচ্ছিস, বাড়িভর্তি মানুষ!”

কিছুক্ষণ সবাই নিরবতা পালন করলো। তৌহিদ হোসেন বলে উঠলেন,
-“এটা নিয়ে পরে কথা হবে। যে যার রুমে যাও। নাহিদের বিয়ের কাজ সব শেষ হলে ইনশাআল্লাহ সোমবার রাতে এটা নিয়ে আলোচনায় বসা যাবে।”

শিমুল রহমান এবার প্রথম কথা বললেন। নাক টেনে উচ্চারণ করলেন,
-“তোরা এমন কেন করলি? শশী তুই জানতিস যে তোর বড় খালার ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করে রেখেছি। তাহলে? আমি বড় আপাকে কি বলবো!”

-“এইজন্যই চাচি আমরা বিয়ে করে নিয়েছি।”
ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল নাঈম।

মনির হাসান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
-“একবার শশীর থেকে মতামত নিলে তো এইদিন দেখতে হতো না। যাইহোক এখন তো আর কিছু করার দেখি না।”

তৌহিদ হোসেন, নাতাশা নিজ রুমে চলে গেলেন। তাদের পিছু পিছু শিমুল রহমান ও গেলেন। মনির হাসান শশীর কাছে এগিয়ে যেয়ে বললেন,
-“এমনটা না করলেও পারতি। সব শেষ করে দিলি। এগুলো আমাকে বলতে পারতিস। আমি তো আর জোর করতাম না! ছোট থেকে যা চেয়েছিস তাই তো দিয়েছি। তাহসী রা কেউ চাওয়ার সাথে সাথে পায়নি, কিন্তু তুই পেয়েছিস। আমি তোর বিয়ের ব্যাপারে তোর মায়ের কথায় হ্যা ও বলিনি, না ও বলিনি। এমনটা না করলেও পারতিস।”

মনির হাসান চলে গেলেন। শুধু রইল তারা পাঁচজন। তাহসী শশী কে দাঁড় করিয়ে বললো,
-“এখানে আমার কাজিন দের সাথে থাকবি নাকি বাড়িতে চলে যাবি?”

-“বা..ড়িতে।”

তাহসী শশী কে নিয়ে নাঈমের ওয়াশরুমের সামনে দাঁড় করালো। বললো ফ্রেশ হয়ে আসতে। শশী চোখ মুখে পানি দিয়ে একটু স্বাভাবিক হলো। তাহসী নাহিদ কে বললো নিজের রুমে চলে যেতে। তাহসী শশী কে এগিয়ে দিয়ে আসলো। যেতে যেতে তাহসী শশী কে বললো,
-”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-২০+২১

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_২০
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

বিকালে নিজের বাড়িতে পৌঁছালো তাহসী। তার সাথে তনন ও এসেছে। তাহসী,তনন বাড়িতে ঢুকতেই উৎসবের আমেজ পেল। বাড়ি সাজানো হচ্ছে। নাতাশা রহমান ই প্রথমে ওদের দেখলেন। দু’জনের সাথে কুশল বিনিময় করে ওদেরকে নাঈমের ঘরে নিয়ে গেলেন।
নাতাশা রহমান তননকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“আপাতত এই রুমে রেস্ট নাও তনন। তাহসীর রুম এতদিন বন্ধ আছে। পরিষ্কার করে দিতে বলছি আমি।”

তাহসী লাগেজ রেখে স্কার্ফ খুলে ব্রুজ সহ এক জায়গা জড় করে রাখলো।
নাঈম বারান্দায় ছিল। ওদের দেখে রুমের ভিতরে আসলো।
-“কেমন আছো, তোমরা?”

-“আলহামদুলিল্লাহ।”
মুচকি হেসে উত্তর দিল তনন।

তাহসী স্কার্ফ কাঁধের উপর রেখে ওড়নার মতো করে সামনে নিয়ে আসলো। তারপর নিজের রুমে চলে গেল।
নাঈম বললো,
-“ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে নিয়ে আপাতত এখানে রেস্ট নাও। আপুর রুমে যেতে দেরি আছে।”

তনন ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলো,
-“তাহসীর রুমে কি হয়েছে? তাহসীর তো কাল আসার কথা ছিল। তাহলে তো আগেই…..”

-“আরে জানো না? আপুর রুম তো লক করা। একটা চাবি আপুর কাছে। আর একটা বাবার কাছে থাকে। আপু কে না বলে আপুর রুম খোলা নিষেধ।”

কৌতুহল নিয়ে তনন জিজ্ঞেস করলো,
-“কেন?”

-“আপু পছন্দ করে না তার রুমে যেয়ে কেউ এটা ওটা হাত দিবে, প্রশ্ন করবে। আর আপু না থাকলে আমরা কেউ যাই না। অবশ্য আমরাও এটা পছন্দ করিনা।”

-“তাই বলে পরিষ্কার করতেও দেয় না?”
অবাক হয়ে বললো তনন।

-“না, আর রুমের সব আপুর একদম মুখস্থ বলতে পারো। আমি যদি আপুর টেবিলে কিছু এলোমেলো করি বুঝে যাবে কেউ হাত দিয়েছিল।”

-“কেন?”

নাঈম ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“ধরো তুমি নেই বাড়িতে। তোমার রুমে যেয়ে তোমার পছন্দের জিনিস নিয়ে কেউ ব্যবহার করলো, তুমি কিছু বলবে না?”

-“কে আর করবে! তনু বা আম্মু। ওরা করলে সমস্যা নেই।”

-“কিন্তু আপু কিছু শেয়ার করে না। আপুর রুমে দেখেছো সব? সব মিনিয়েচার শো-পিচ। এগুলো আপুর অনেক পছন্দের। বাচ্চারা যদি কেউ দেখে কি অবস্থা বুঝেছো! শাফিন আর ফুফির মেয়ে ওইযে লিখি এই দুইটার ঢোকা একদম নিষিদ্ধ! আর কারো জিনিস না বলে ধরা বা নেওয়া আপু পছন্দ করে না। নিজের জিনিস কেউ নিবে সেটাও সহ্য করবে না। আমরাও করিনা এসব। যাদের ভদ্রতা নেই, তাদের কাজ এসব। এখন আপুর রুম পরিস্কার করছে সার্ভেন্ট,তাই আপু চলে গেল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করবে।”

তাহসী নাঈমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তোর ভাষণ দেওয়া শেষ হলে দুজনে এই রুমে আসতে পারিস!”

নাঈম দাঁত বের করে হেসে দিল। তাহসী চোখ গরম করে বললো,
-“কতদিন বলেছি দাঁত বের করে না হাসতে। এটা গুনাহ! মুচকি হাসবে সবসময়।”

-“স্যরি।”
নাঈম মনে মনে ভাবলো,’ এর থেকে আরো বড় কিছু করে বসে আছি, এইটা আর কি সেই তুলনায়!’

তাহসী ভিতরে এসে লাগেজ টেনে নিয়ে গেল। তনন গেল পিছু পিছু।

নাতাশা রহমান এসে নাস্তা দিলেন। তাহসী লেবুর শরবতে এক চুমুক দিয়ে বললো,
-“বাবা কোথায়?”

-“মাংসের অর্ডার দিতে গেছে।”

-“ভাইয়া?”

-“ঘুমাচ্ছে।”

নাতাশা রহমান চলে গেলেন। নাঈম এসে ওদের সাথে জয়েন করলো।

🍁🍁🍁
এই দুইদিন খুব ব্যস্ত সময় কাটালো তাহসী। আজ হলুদের অনুষ্ঠান করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। মূলত আশপাশের মানুষ আর আত্মীয় স্বজন রা বলছিল হলুদের অনুষ্ঠান করার কথা। কিন্তু তৌহিদ হোসেন পাত্তা দেননি। হলুদের অনুষ্ঠান করার কথা ইসলামে নেই। তাহসীর বিয়ের সময় ও করা হয়নি। তাহসী তো আগে থেকেই বলে দিয়েছিল এসব ফালতু কাজ সে করতে পারবে না। কি সব নিয়ম! অন্য মহিলারা এসে তাকে গোসল করাবে। তাহসী শুনেই রেগে ছিল।
নাহিদের সময় ও হলো না। তনন এসব দেখে অবাক হয়ে বললো,
-“তোমাদের হলুদের অনুষ্ঠান করে না নাকি?”

-“ইসলামে নেই এসব; জানতে না?”

-“না, আমার তো দিয়েছিল। অবশ্য বিয়ের দিন সকালে একটু ছুঁয়ে ছিল। আমি তো এসেছিলাম ই রাতে! কোনো মানুষে আমার মতো বিয়ে করে?”

তাহসী ভ্রু কুঁচকে তাকালো তননের দিকে। তারপর সরে গেল ওর পাশ থেকে। শশী পাঁচ- ছয়টা মেহেদী নিয়ে এসেছে। তাহসী সেদিকে এগিয়ে গেল।
-“এই তোর কাছে মেহেদী কেন?”

আমতা আমতা করে‌ শশী উত্তর দিল,
-“নাঈম ভাইয়ার সাথে বাইরে দেখা। তো দিয়ে গেল আমার কাছে। বললো তোমাকে দিতে।”

-“ওহ্। কোথায় গেল এই বিকালে? একটু পরেই সন্ধ্যা হবে।”

-“জানিনা তো।”

তাহসীর খালাতো বোন মেহেদী দিতে পারে ভালো। আবার রুবি ও পারে। ওরা দুজন বসল মেহেদী দিতে। তনন তাহসীর কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তুমি পারো না মেহেদী দিতে?”

-“নাহ।”

-“ওহ্।”

তাহসী বসলো ওদের সাথে। তনন চলে গেল ড্রয়িং রুমের দিকে। ওখানে তাহসীর ছেলে কাজিন রা রয়েছে। আর এখানে আস্তে আস্তে মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে।

_________
তাহসী আর তনন দুজনের দেখা হলো একেবারে রাতে খাবার টেবিলে। নাতাশা রহমান, তাহসীর খালামনি আর শিরিন সবাইকে খাবার এগিয়ে দিলেন।
খাওয়া দাওয়া শেষে ওদের আড্ডা বসলো ছাদে। এখানে তাহসীর সব কাজিন বসে আছে ছেলেমেয়ে সহ। বাইরের বলতে শুধু তনন। নাহিদ নেই এখানে; ও নিজের রুমে বন্ধুদের সাথে বসেছে।

স্বর্ণালী বললো,
-“তাহলে ট্রুথ ডেয়ার খেলা‌ যাক।”

প্রায় সবাই তাহসীর দিকে তাকালো। তাহসী তননের পাশে সবার সামনে বসে থাকায় অস্বস্তি অনুভব করছে।সবার তাকানো দেখে বললো,
-“কি?”

-“ট্রুথ ডেয়ার?”

-“তোরা খেল। আমি নাই।”

রুবি তাচ্ছিল্যের সাথে বলে উঠলো,
-“কেন? আমরা ট্রুথ দিলে তোমাদের রিলেশনের ব্যাপারে জেনে যাবো তাই?”

তাহসীর রাগ হয়ে গেল।
-“ফালতু কথা বলবি না!”

-“তো?”
আগের ভঙ্গিতেই বলে উঠলো রুবি।

শশী বললো,
-“তাহসী আপু কিন্তু আগের থেকেই খেলে না রুবি! ফাজলামি বাদ দে এখন।”

-“বুঝি বুঝি! সেইজন্যেই আগে খেলতো না!”

তাহসী ধমকে উঠলো। শাসিয়ে বললো,
-“অনেক বেশি বাড়াবাড়ি করছিস তুই! তুই খুব ভালো করে জানিস এই ফালতু গেইম আমার পছন্দ না।”

তনন তাহসীর হাত চেপে ধরে ইশারায় শান্ত হতে বলল। তাহসী হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। তাহসীর ছোট মামার ছেলে ঈশান বললো,
-“আপু বসো তো। বাদ দাও। আমরা গানের কলি খেলি।”

তাহসী বসলো না। ছোট শাফিন তাহসীর হাত ধরে বসিয়ে দিল। সে তাহসীর আরেক পাশে বসে ছিল। শাফিনের টানাটানিতে না বসে থাকতে পারলো না তাহসী। তাহসী বসতেই তাহসীর কোলের উপর বসলো শাফিন। তাহসী উঠে যেতেও পারলো না। কাল বিয়ে, এই রুবির জন্য এই রাতের মজা মাটি করবে না সে।
রুবি মনে মনে হাসছে। নাঈম রুবি কে ধমকে বললো,
-“রুবি স্যরি বল।”

-“কেন?আমি মিথ্যা বলেছি?”

তনন ও বিরক্ত হলো। তার আর তাহসীর কখনোই রিলেশন ছিল না। ইভেন তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব ও ছিল না। শুধু পড়ালেখার ব্যাপারে কথা হলো স্কুল, কলেজ এ। এডমিশন এর পর তাও বন্ধ। আর পাঁচটা ছেলে বন্ধুর মতোই তাদের সম্পর্ক ছিল। তাহসী অবশ্য ক্লাসমেটদের মধ্যে তিন চারটা ছেলের সাথেই কথা বলতো।

সামিয়া বললো,
-“তুমি তাহসী আপু কে হিংসে করো কেন বলতো? তাহসী আপুর রিলেশন এর বিয়ে না আমরা সবাই জানি। তুমি কেন শুধু শুধু পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছো?”

রুবি মুখ বাকালো। স্বর্ণালী বললো,
-“এবার এইসব বাদ দাও। আমরা গানের কলি ই খেলি। ছেলেরা এক দল, মেয়েরা এক দল।”

শশী বললো,
-“না আপু। ছেলে মেয়ে না। তনন ভাইয়া তো গান করে।”

তনন ঢোক গিলল। এখন সবাই চেপে না ধরে গান গাওয়ার জন্য। তৎক্ষণাৎ আমতা আমতা করে বললো,
-”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_২১
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তনন ঢোক গিলল। এখন সবাই চেপে না ধরে গান গাওয়ার জন্য। তৎক্ষণাৎ আমতা আমতা করে বললো,
-“গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছি আমি। এখন পারিনা।”

শশী বললো,
-“মানবো না ভাইয়া। স্কুলে থাকতে প্রাইজ সব নিজের বাসায় নিয়ে যেতেন আপনি। এখন ভুলে গেছেন এটা মানা যায় না। তাহসী আপু বলো এটা মিথ্যা না?”

নাঈম বলে উঠলো,
-“ভাইয়া গান পারুক আর না পারুক তাতে তোর কি হচ্ছে?”

-“ইশ্! আসছে। ছেলেরা জিতে যাবে, আমরা বসে বসে দেখবো?”
গলা চড়িয়ে বলে উঠলো শশী।

সামিয়া হাত উঁচিয়ে বললো,
-“সবাই থামো। শশী আমরা কম পারি না হু। আমরা জিতে দেখিয়ে দিবো।”

ওদের আড্ডা শেষ হতে হতে রাত সাড়ে এগারোটা বেজে গেল। শেষ পর্যন্ত কোনো দল ই জিতিনি। দুই দল ই সমান সমান। তনন কে শেষ পর্যন্ত একটা গান গেয়ে শোনাতে হয়েছে। তননের গানের মাধ্যমেই আড্ডার সমাপ্তি ঘটেছে।
এরপর সবাই ছাদ থেকে নেমে গেল; নিজ নিজ রুমে ঘুমাতে চলে গেল। তাহসীর চাচাতো বোন,ফুফাতো ভাই বোন এখানেই থাকলো। ছোট বাচ্চাদের আগেই বাবা মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সবার শেষে ছাদের দরজায় তালা লাগিয়ে বের হলো তনন আর তাহসী।

তনন রুমে যেয়ে বিছানায় বসে বসলো,
-“তোমাদের কাজিন দের মধ্যে বন্ডিং টা অনেক ভালো, তাই না?”

-“হ্যা, আলহামদুলিল্লাহ। কেন তোমাদের নেই?”

-“না, এমন নেই; মোটামুটি সম্পর্ক। নানি বাড়ি কতদিন যায় তারই হিসাব নেই!”

-“ওহ্,আমি শেষ গিয়েছি মাস দুয়েক আগে।”

-“পড়াশোনা বাদ দিয়ে অনেক সময় ব্যবহার করো তুমি।”

-“তা করি বটে। কিন্তু আমার কাছে মানসিক শান্তি টাই আসল।”

-“আচ্ছা রুবির সাথে ওমন ব্যবহার করলে কেন? একটু বেশিই রুড। কি হতো ট্রুথ ডেয়ার খেললে?”

-“এই গেইম টা একদম বাজে লাগে আমার কাছে। আর রুবির ব্যবহার খারাপ, মিথ্যা ও বলে। আগে ভালো ব্যবহার করতাম, বানিয়ে বানিয়ে চাচির কাছে যেয়ে মিথ্যা বলতো। এখন এমন ব্যবহার দেখে সাহস পায় না। যে যেমন তার সাথে তেমন ব্যবহার করা উচিত নয় অবশ্য, কিছু কিছু ক্ষেত্রে না করেও পারা যায় না!”
তনন আর কিছু বললো না।

তাহসী ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লো। তনন গেল এরপর। তনন বের হয়ে লাইট ওফ করে তাহসীর পাশে শুয়ে পড়লো। তাহসী তখন ঘুমের দোয়া, আয়াতুল কুরসি পড়তে ব্যস্ত।

তনন কিছু বললো না। তাহসীর সব পড়া শেষ হতে সে চোখ খুলে তাকালো। তনন তখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাহসী ইশারায় জানতে চাইলো কি। তনন মুচকি হেসে বলল,
-“কিছু না।”

তাহসীর ঠোঁটে গভীর ভাবে চুমু খেল তনন। এরপর তাহসীর থেকে সরে গেল। তাহসী লাজুক হেসে উল্টো ঘুরে চোখ বুজলো। কিছুক্ষণ বাদেই দুইজনের চোখে ঘুম নেমে আসলো। তাহসীর কেউ স্পর্শ করলে ঘুম আসে না, ঘুমাতে অসুবিধা হয় এটা জানার পরে তনন আর তাকে জড়িয়ে ধরতে চাইনা। অবশ্য তননের ও তেমন ইচ্ছা নেই। রাত টাই শুধু ঘুমানোর জন্য; অবশ্যই স্বস্তিতে ঘুমানোর দরকার।

🍁🍁🍁
সকাল থেকে বিয়ের তোড়জোড় শুরু হলো। দেখে মনে হলো আসলেই এটা বিয়ে বাড়ি। অবশ্য রাতে বেশি বোঝা যায় বাড়ির সৌন্দর্য। পুরো বাড়ির চারদিকে মরিচ বাতিসহ নানা ধরনের আলোক বস্তু।

সকালবেলা খিচুড়ি দেখেই তাহসীর মেজাজ গরম হয়ে গেল। চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
-“আম্মু আমার এখন খিচুড়ি খাওয়া লাগবে?”

-“না, সাদা ভাত দিচ্ছি। তননের খাবার টা রেডি করে দিই আগে।”

-“আচ্ছা।”

তনন বললো,
-“আমি একাই নিতে পারবো আম্মা। আপনি ওকে দিন।”

নাতাশা রহমান বললেন,
-“ওকে দেখে শেখ একটু!”

তাহসী মুখ বাকালো। নাহিদ ও ওদের সাথে জয়েন করলো। আর সবাই একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছে। ছাদ থেকে আসলেও সব গল্প করেছে। পড়াশোনার জন্য একসাথে হতে পারে না সবাই অনেকদিন। তাহসীর নানু বাড়ি আর দাদু বাড়ি মিলে সবার বড় নাহিদ। তারপর তাহসীর মামাতো ভাই রাতুল। এরপরেই তাহসী। সেই হিসেবে তাহসীর বিয়ে প্রথম আর দ্বিতীয় নাহিদের।

খাওয়া শেষে সব কাজে তৌহিদ হোসেন কে সাহায্য করলো তনন। এখানে আসার পর থেকেই নিজের যথাসাধ্য মতো করার চেষ্টা করে তনন। যেন তৌহিদ হোসেন এর পরেই তার দায়িত্ব। তাহসীর খালা,মামি’রা পরিবার সহ চলে আসলেও তাহসীর খালু,মামা,ফুফা’রা এখনও কেউ আসেনি।

তাহসী নাঈম কে দিয়ে বাসর ঘরের জন্য ফুল আনিয়ে রাখলো শহর থেকে।
নাঈমকে পাঠিয়ে দিয়ে তাহসী গোসল করে তৈরি হয়ে নিল। গোসল করতেই আজ প্রায় এক ঘন্টা লাগলো তাহসীর। যেখানে পনেরো থেকে বিশ মিনিটেই তার গোসল হয়ে যায়। স্কার্ফ বাঁধার সময় তনন রুমে আসলো। তাহসীকে কিছু না বলে সে-ও গোসল করে আসলো। আয়নার দিকে তাকিয়ে তনন বললো,
-“সুন্দর লাগছে।”

-“তাহলে কি চেঞ্জ করতে হবে? বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি সেখানে সুন্দর দেখা মানায় না।”

তনন তাহসীকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বললো,
-“সুন্দর তবে আকর্ষণীয় না। পারফেক্ট আছে, যেতেই পারো।”

ঠোঁটে লিপ বাম লাগিয়ে তাহসী বললো,
-“আমি তৈরি।”

-“আমিও।”

তাহসী এবার তননের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। আয়নাতে সম্পূর্ণ দেখা যাচ্ছিল না। ভ্রু কুঁচকে তাহসী বললো,
-“এটা কোন শার্ট? নেভিব্লু টা কোথায়?”

-“নেভিব্লু শার্ট আমার কবে দেখলে?”

তাহসী আলমারি খুলে সেইদিন কেনা শার্ট তিনটা বের করলো। নেভিব্লু শার্ট টা এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“এক্সট্রিমলি স্যরি। বলতে ভুলে গেছি। চেঞ্জ করে এটা পরে নাও। আর ব্লেজার।”

-“দেখো তাহসী আমি পারবো না। তার মানে এইসব তুমি আমার জন্য কিনেছিলে? তুমি বুঝো কিছু? আমার কি কিছু নেই যে এখন এই ব্লেজার পরতে হবে?”

তখন তৌহিদ হোসেন তাহসীর রুমের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন। নক করতে যেয়ে তননের কথা শুনে সরাসরি রুমে ঢুকে পড়লেন। তাহসী কিছু বলার আগেই তিনি বললেন,
-“তনন তুমি হয়তো ভাবছো তোমার নেই এটা ভেবে দিয়েছি। আসলে তা না। আমি তাহসী,নাঈম,নাহিদ সবার জন্যেই টাকা পাঠিয়ে ছিলাম। পরে ভাবলাম তুমি কেন বাদ যাবে, তাই তোমার জন্যে পাঠালাম। তোমাকে নিজের ছেলের মতোই ভেবেছি। এখন তুমি যদি আমাকে….”

তনন অস্বস্তি বোধ করলো। তৌহিদ হোসেন কে দু’জনের একজন ও খেয়াল করিনি। তৌহিদ হোসেন এর কথা বুঝতে পেরে তনন বললো,
-“স্যরি বাবা।”

তৌহিদ হোসেন পুনরায় বললেন,
-“তৈরি হয়ে নিচে এসো। তোমার মা বোন এসেছে। আর সবাই তৈরি। নাঈম গোসলে গেছে। ও তৈরি হলেই আমরা রওনা দিবো।”

তৌহিদ হোসেন চলে গেলেন। তনন ঝটপট তৈরি হয়ে নিল।

নাঈম নিচে নামতেই বরযাত্রী রা বের হলো।

কনে বাড়িতে পৌঁছালে ওনারা সব ফর্মালিটিজ পূরণ করে বরযাত্রীদের ঢুকতে দিল।
নাহিদ ফিতা কেটে গেট থেকে একটু আগাতেই মেয়েরা শরবত, মিষ্টি এগিয়ে দিল। রাতুল বললো,
-“একটা ডিল হয়ে যাক। বর যদি সঠিক শরবত খেতে পারে তাহলে টাকা দিবো না। না পারলে দিবো।”

মেয়েরা সব হইহই করে উঠলো,
-“না, এমন হবে না!”

-“বললেই তো হলো না। লজিক দিয়ে কথা বলতে হবে। ঝালের শরবত ও খাবে, টাকাও দিবো তা তো হচ্ছে না!”

-“এমন নিয়ম নাই।”

-“ওইযে বললাম লজিক দিয়ে কথা বলতে হবে। এই যুগে এসে ওসব বললে তো চলবে না।”

তাহসীর খালাতো ভাই শায়ন বললো,
-“তার চেয়ে আমরা বরং সমঝোতায় আসি। আট হাজার নয় চার হাজার টাকা দিয়ে দিই।”

মেয়েরা কিছু বলার আগেই পিছন থেকে গম্ভীর কন্ঠ ভেসে আসলো,
-“যা করার তাড়াতাড়ি করো সবাই। এতো দেরি হচ্ছে কেন?”

মেয়েরা সবাই চুপ হয়ে গেল। একজন মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো সায়ন এর কথায়। তনন টাকা বের করে সায়নের হাতে দিলে সায়ন তনন কে ফিসফিস করে বললো,
-“কত দিলেন ভাইয়া?”

-“সাত। আসার সময় বাবা তো এটাই দিছে।”

-“আচ্ছা।”

সায়ন সামনে থাকা টেবিলের উপর টাকার খাম রেখে বললো,
-“সাত হাজার আছে। হাত ধোয়ার টাকা সহ।”

কেউ তেমন কিছু বললো না। নাহিদ শরবত, মিষ্টি খাওয়ার পর টেবিল সরিয়ে ভিতরে ঢুকতে দিল। তাহসী দেখিয়ে দিয়েছে শরবত যার ফলে ভালো টাই পেয়েছে নাহিদ। কিন্তু মিষ্টি মুখে নিতেই ঝাল অনুভব করেছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-১৮+১৯

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১৮
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

সেলিনা শেখ বললেন,
-“এত কিছু কেনার কি দরকার ছিল?”

-“আপনি তো আমাকে পছন্দ করেন না। এখন এইসব ও ভালো লাগছে না।”
মুখ ফুলিয়ে বললো তাহসী।

সেলিনা হোসেন বিস্ময় নিয়ে তাকালেন তাহসীর এমন কথার ধরণ শুনে। পরক্ষণেই তাহসীর দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন। তাহসীর গাল টেনে দিয়ে বললেন,
-“ভালোই লাগে না তো। ভালো লাগবে কেন শুনি?”

তাহসী গালে হাত দিল। ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“আমার ব্যথা লাগে না!”

-“তাই? আরেকটু টানি!”

তাহসী মাথা পিছিয়ে নিল। সেলিনা শেখ হেসে দিলেন। তনু বললো,
-“ভাবী তুমি আমার থেকেও আপন আম্মুর কাছে। একটু জিজ্ঞেস করো তো এইভাবে আমার সাথে কখনো কথা বলেছে নাকি! তোমার সাথে হাসছে, আর আমার সাথে?”

-“ওইযে বললাম আমাকে পছন্দ করে না!”
এটা বলে তাহসী হেসে দিল।

সেলিনা শেখ বললেন,
-“তোর মতো লাফিয়ে বেড়ায় না ও। আর তাহসী খেতে চলো। ক্ষুধা লেগে গেছে তাই না? দুপুরে তো ভাত ছিল না তেমন, একজনের ভাত ছিল। আমি তো তোমার আসার কথা জানতাম না।”

-“এশার নামাজ পড়ে খাবো। আমার ক্ষুধা লাগেনি। তখন খাওয়ার চেয়ে ঘুম টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তননের মনে হয় লেগে গেছে।”
শেষের কথাটা মন খারাপ করে বললো তাহসী।

-“ও চলে আসবে। মন খারাপ করো না।”

তনু বললো,
-“তোমার ড্রেস দেখাও ভাবী।”

তাহসী একে একে সব বের করে দেখালো। তনু এক একটা হাতে নিয়ে বললো,
-“তোমার চয়েস খুব সুন্দর ভাবী। জাস্ট ওয়াও।”

-“ওই একটু আধটু।”

-“ভাইয়া কিনে দেইনি তোমাকে কিছু?”

তাহসী আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখালো। সেলিনা শেখ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
-“তননের বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে তনন খুব মেপে মেপে চলে। আগে সব ব্র্যান্ড দেখে কিনতো, প্রায়ই বন্ধুদের সাথে রেস্টুরেন্টে যেতো আর এখন কিছু কিনতে বললেই ওর নাকি আছে সেইটা!”

তাহসী কিছু না বলে শপিং ব্যাগ থেকে শার্ট, প্যান্ট বের করে বললো,
-“তননের জন্য এগুলো কিনেছি। তবে ওকে বলিনি।”

-“সুন্দর। তবে তনন এসে আবার ঝামেলা করবে দেখো। নিজের জন্য কিছুই কিনতে চাই না।”

তাহসী কিছু বললো না। সেলিনা শেখ সব গুছিয়ে নিতে বললেন। এশার আজান দিচ্ছে। তাহসী যেন নামাজ পড়ে সেলিনা শেখ কে ডাক দেয়, উনি খাবার দিবেন। এই বলে সেলিনা শেখ চলে গেলেন।
তাহসী তননের শার্ট, প্যান্ট আলমারি তে তুলে রাখতে যেয়ে বললো,
-“মামুনি আসল জিনিস তো দেখানো হয়নি।”

সেলিনা শেখ দরজা থেকে পুনরায় ফিরে আসলেন।
-“কি?”

-“এইযে এই ব্রেসলেট কিনেছি।”

সেলিনা শেখ হাতে নিয়ে বললেন,
-“সুন্দর হয়েছে। আর দুজন মিলে দিচ্ছো, বিষয় টা ভালো। সারাজীবন এভাবেই থেকো আর আমার ছেলেটা কে গুছিয়ে নিও।”
সেলিনা শেখ তাহসীর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল।

তাহসী লাজুক হাসলো। তনু বললো,
-“ভাবী ওই প্যাকেটে কি?”

-“রিং। আমার জন্য কিনেছে তোমার ভাইয়া। মামুনি তো দেখানোর আগেই চলে গেল।”

-“ওয়াও। এত সুন্দর। তোমাকে মানাবে ভালো। দাঁড়াও আম্মু কে দেখিয়ে আসি।”

-“আচ্ছা। বিছানায় রেখে দিও। আমি নামাজ পড়তে বসলাম।”

-“ওকে।”

________
তনুর সাথে গল্প করতে করতে রাত এগারোটা বেজে গেল তাহসীর। তাহসীর ভাবতেই লজ্জা লাগছে তননের রুমে গিয়ে ঘুমাতে। তননের সাথে সন্ধ্যার পর আর কথা হয়নি। এইজন্যই বসে বসে তনুর বকবক শুনছে। তনুর হাই তোলা দেখে তাহসীর মনে হচ্ছে এইবার যেতেই হবে। শাশুড়ি না থাকলে এখানেই শুয়ে পড়তো তাহসী। সেলিনা শেখ একটু আগে এসেও দুজনকে ঘুমাতে বলে গেছেন।
তনু স্কুলের গল্প করছিল এতক্ষণ। গল্প শেষ করে হাই তুললো। তাহসী বুঝতে পারছে এখন আর এখানে থাকা মানায় না। তাহসী উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“আচ্ছা এখন না হয় ঘুমিয়ে পড়ো। আমিও যাই।”

-“না, ভাবী বসো। সমস্যা নেই।”

-“ঘুমাও। তোমার চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে আর থাকতে পারছো না। আরেক দিন আড্ডা দিবো।”
হেসে বললো তাহসী।

-“তোমরা কি কাল চলে যাবে না আর একদিন থাকবে?”

-“কাল যাবো ইনশাআল্লাহ।”

তনুর রুমের লাইট বন্ধ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিল তাহসী। এবার পা বাড়ালো পাশের রুমে। রুমে ঢুকতেই দেখলো তনন বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফোন টিপছে। এক হাত মাথার নিচে দেওয়া। আর এক হাতে ফোন বুকের উপর ধরা। পরনে কফি কালারের টিশার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট।
তাহসী ওয়াশরুমে যেয়ে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিয়ে ব্রাশ করে আসলো।
ড্রিম লাইট জ্বালাতে মন চাইলেও তাহসী কিছু বললো না। তোয়ালে তে মুখ মুছে ইতস্তত করে তননের পাশে শুয়ে পড়লো।

তনন আড়চোখে একবার তাহসীর দিকে তাকালো। তাহসী ওর বিপরীত দিক হয়ে শুয়েছে দেখে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে নিল। চোখের সামনে তার প্রেয়সী শুয়ে আছে, যার সাথে তার বৈধ সম্পর্ক! এটা ভাবতেই তননের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। শব্দ দুইটা পুনরায় আওরালো তনন। এতক্ষণ ফ্রেন্ডস গ্রুপে কথা বলছিল , বন্ধুদের বাই বলে ফোনের নেট অফ করলো। ফোন পাশে রেখে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসলো। লাইট ঠিক করে তাহসীর পাশে এসে শুয়ে পড়লো। আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,
-“ঘুমিয়ে পড়েছো?”

-“না।”
মৃদু স্বরে জবাব দিল তাহসী।

তনন তাহসীকে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘোরালো। তাহসী মুখ মুছলেও চুলের সাথে ফোঁটা ফোঁটা পানি লেগে আছে। তাহসী চোখ বন্ধ করে নিল। বললো,
-“তখনকার ব্যবহারের জন্য স্যরি। আসলে ওইভাবে বলতে চাইনি…”

-“ইট’স ওকে। আমি এমনিতেও বাইরে যেতাম নামাজ পড়তে। বাবা চলে যাওয়ার পর কেউ কিছু দিলে ভালো লাগে না। মনে হয় দয়া দেখাতে দিয়েছে!”

-“আমার টাও এমন মনে হয়?”
তননের স্বাভাবিক কথা বলায় সহজ হয়ে উঠছে তাহসী। আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো সে।

-“আর হবে না।”
তাহসীর গাল টেনে বললো তনন।

তনন তাহসীর হাত টেনে হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল।
-“গাল টানলে ব্যথা লাগলেও তোমার গাল টানার অধিকার দিতে হবে আমাকে। এত সফট!”

তাহসী লজ্জায় মুখ নিচু করলো। যার ফলে তননের বুকের সাথে তাহসীর মাথা লেগে গেল। তনন ফিসফিস করে বলল,
-“আমার মনে হয় শুধু তোমার গা’ল নয়, তুমি পুরোটাই অনেক স’ফ’ট। তুমি কি বলো?”

তাহসীর থুতনি ধরে মুখ উঁচু করালো তনন। তাহসী চোখ বুজে রেখেছে। ঠোঁটে চির পরিচিত লাজুক হাসি। তনন মিষ্টি হেসে তাহসীর ঠোঁট হাত দিয়ে স্লাইড করতে শুরু করলো। তাহসী অজানা অনুভূতি তে কেঁপে উঠলো।
তনন মুখ নিচু করে তাহসীর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দিল। তাহসী এক হাত দিয়ে তননের টিশার্টের কাঁধের অংশটুকু মুঠো করে ধরলো। আর এক হাত তননের গলার নিচ দিয়ে তননের চুলে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর তনন তাহসীর ঠোঁট ছেড়ে দিল। তাহসী আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো তননের দিকে। তনন তাহসীর উপরে উঠে তাহসীর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল। তাহসী তননের চুল আঁকড়ে ধরলো।
তাহসী আজ কোনো বাঁধা দিল না। কোনো বাঁধা না পেয়ে তনন আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল। তাহসী মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপে উঠলো অজানা শিহরণে।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১৯
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে হাচ্চি শুরু হলো তাহসীর। ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে তনন তাকে জড়িয়ে রেখেছে সন্তর্পণে। তাহসী নিজেকে ছাড়ানোর আগেই হাচ্চি দিল দুইবার। ততক্ষণে তননের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। তাহসী তননের বাহু সরিয়ে উঠে বসলো। পুনরায় হাচ্চি হলো তার। তনন ও হাই তুলে উঠে বসলো। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,
-“কিহ! সাড়ে সাতটা বেজে গেছে।”

তাহসী মুখ বাকালো। রাতের বেলা মোটেও গোসল করতে চায়নি সে। এখন যে ঠান্ডা লেগে যাবে! ভাইয়ের বিয়ের মধ্যে ঠাণ্ডা লাগা মানে মজাই করতে পারবে না।
তনন পুনরায় বললো,
-“ফজরের নামাজ ও তো পড়তে পারিনি!”

নামাজের কথা মনে আসতেই তাহসী তাড়াতাড়ি করে ওযু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়তে শুরু করলো। ঘটনার আকস্মিকতায় তনন প্রশ্ন করার সময় পেল না। তাহসী নামাজ শেষ করে উঠতেই তনন প্রশ্ন করলো,
-“এখন নামাজ পড়া যায়? কাজা পড়লে?”

তাহসী তননের দিকে তাকালো না, অন্য দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল,
-“যায়। তবে প্রতিদিন না। বাণীটা মনে নাই। আর এখন পড়লে পাপ তো আর হচ্ছে না। আমি কাজা পড়ি না।”

তাহসী বের হয়ে রান্নাঘরের দিকে গেল। তনন ও উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিল।

রান্নাঘরে সেলিনা শেখ আর তননের চাচি বসে আসেন। তাহসী কে দেখেই তননের চাচি বলে উঠলো,
-“এ কি সেলিনা তোমার ছেলের বউ দেখি এত বেলা করে উঠে। তা বউ এসব কি পরেছো? শাড়ি পরতে হয় জানো না?”

তাহসীর কোনো কালেই এসব মানুষকে পছন্দ না। তাই বিরক্ত হলো এসব কথায়। মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বললো,
-“এই পোশাকে খারাপ কি আছে আন্টি? শাড়িতে তো দেখছি আপনার পেট দেখা যাচ্ছে। ওমা পিঠ ও দেখা যাচ্ছে! আমাকে দেখুন সব ঢাকা।”

চাচি মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
-“সেলিনা তুমি যেমন, বউ ও দেখছি তেমন পেয়েছো। বড় দের মুখে মুখে কথা বলে এসব কি! তোমার শাশুড়ি তো তাও চুপ থাকতো। আর তুমি?”

-“সত্য কথা বলতে ভয় নেই। আগে বলুন তো মিথ্যা বলেছি কিনা। আপনি বললেন তাই বলেছি। বরং মিথ্যা দেখেও চুপ করে থাকা সেইটা খারাপ।”

তননের চাচি চুপ করে গেলেন। কয়েক সেকেন্ড বাদে বললেন,
-“তা শাশুড়ি কে দিয়ে রান্না করাচ্ছো এইটা ভালো বুঝি?”

তাহসী প্রথমেই উত্তর দিল না, সেলিনা শেখ এর উত্তরের আশায়। সেলিনা শেখ তখন চুলা থেকে ভাঁতের পাতিল নামাচ্ছেন। তাহসী বললো,
-“আমাকে বললে আমি রান্না করে দিবো। আমাকে বলে করাতে……”

সেলিনা শেখ তাহসী কে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
-“আমার ছেলের বউ আমি বুঝে নিবো ভাবী। আপনার নাতনি টাকে আপনি যদি এখন কাছে নিয়ে রাখতেন তাহলে আপনা্য ছেলের বউ ভালো করে রান্না করতে পারে। সাত মাসের বাচ্চা নিয়ে মেয়েটা যে কষ্ট করে, তা যদি একটু বুঝতেন।”

তননের চাচি বসা থেকে উঠতে উঠতে বললেন,
-“ভালোই কথা শিখেছো দেখছি। ভালো ভালো! বউ যখন পায়ের উপর পা তুলে বসে খাবে, আর তোমাকে দিয়ে সব কাজ করাবে তখন বুঝো।”

তনন তখন রুম থেকে বের হচ্ছে। তননকে দেখে তননের চাচী বললো,
-“বউকে সামলে রাখিস তনন। তোর মায়ের তো যত ঢং। এখন মাথায় তুলছে, পরে বুঝবে।”

তননের চাচী চলে গেলে তনন এগিয়ে আসলো। তনন বললো,
-“কি হয়েছে আম্মু?”

-“তোর চাচির কথা ধরছিস? মানুষের বাড়িতে ঝামেলা বাঁধানো যার কাজ!”

-“তাহসী কিছু বলেছো?”

তাহসী কিছু বললো না। সেলিনা শেখ বললেন,
-“উচিত জবাব দিছে তাই সহ্য হয়নি। বাদ দে।”

-“বাদ বললেই তো দেওয়া যায় না আম্মু। তুমি, তনু একা একা থাকো এখানে।”

-“তাহসী ওকে নিয়ে ঘরে যাও তো। রান্না প্রায় শেষ। আমি খাবার নিয়ে আসছি।”

তনন ভাঁতের পাতিল নিয়ে ঘরের দিকে গেল। তাহসী ইতস্তত করলো। মনে মনে ভাবলো এটা তো তারই কাজ ছিল। কিন্তু এসব তো তার কোনো আইডিয়া ই নেই। কিভাবে কি করতে হবে!

সেলিনা শেখ প্রেসার কুকার খুলতে খুলতে বললেন,
-“ইতস্তত করছো কেন তাহসী? তুমি যখন সংসার সামলাবে, তুমিও এসব এমনি এমনিই বুঝে যাবে। তননের এসব অভ্যাস আছে। তুমি আপাতত আমার ছেলেকে সামলাও। আর তনু কে যেয়ে ওঠাও তো। এখনো ঘুম থেকে উঠলো না।”

তাহসী লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে সরে গেল। বারান্দায় উঠতেই তনন বললো,
-“লজ্জা পাচ্ছো কেন? আমি কি কিছু বলেছি?”

তাহসী তননকে এড়িয়ে চলে যেতে লাগলে তনন হাত ধরে থামালো। সকাল থেকে তননের সাথে কথা বলতে লজ্জা লাগছে তাহসীর। হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে তনন ছাড়লো না।
-“কি হয়েছে? চাচী ওসব বললো কেন?”

-“আমি কেন এই পোশাক পরে আছি আর ঘুম থেকে কেন এতো বেলা করে উঠেছি তাই।”

-“তুমি কি বলেছো?”

-“কেন?”

-“চাচী ওইভাবে বলে গেল তাই জানতে চাচ্ছি।”

সেলিনা শেখ দুই হাতে মাংসের পাতিল ধরে গ্রিলের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
-“গ্রিল খোল। তোর এত জানা লাগছে না। তাহসী কে জেরা করতে শুরু করেছিস এখানে এসে।”

তনন তাহসীর হাত ছেড়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে গ্রিল খুলে দিল। তাহসী তনুর রুমে ঢুকে গেল। দরজার ছিটকিনি আটকিয়ে ঘুমালেও ফজরের সময় উঠে দরজার ছিটকিনি খুলে রাখে তনু। তনন বাড়িতে না থাকলে তনু আর সেলিনা শেখ এক রুমেই ঘুমায়।

সকাল বেলার নাস্তা শেষ হলো সাড়ে আটটার দিকে। সেলিনা শেখ খাওয়া শেষে তাহসীর জন্য লেবুর শরবত করে দিল। তাহসীর হাতে গ্লাস দিয়ে বললো,
-“গরম যেয়ে শীত আসি আসি করছে। সকালবেলায় বেশ ঠাণ্ডা পড়ে। জানালা খুলে রাখতে নেই এই সময়। ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকে রুমের মধ্যে। তোমার তো অলরেডি ঠাণ্ডা লেগে‌ গেছে! এখন লেবুর শরবত খেয়ে নাও। এর পর থেকে জানালা খুলে রাখবে না।”

তাহসী সায় জানিয়ে খেয়ে নিল। মনে মনে বেশ লজ্জা পেল সে। রাত সাড়ে বারোটার দিকে বারান্দার জানালা খুলে দিয়েছিল। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশ থাকলে ঘুম ভালো আসে। তাহসী হঠাৎ বললো,
-“আপনার রান্না সুন্দর।”

-“সত্যিই নাকি? তুমি তো বেশি খেলেই না!”

-“সত্যি। আমি এমনি এমনি কিছু বলি না। গরুর মাংস টা সুন্দর হয়েছে। আমি তো সকালে বেশি‌ খাই না।”

সেলিনা শেখ মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। তাহসী মিষ্টি হাসলো।
-“আমার আজ একটু তেল বেশি পড়ে গেছে। তোমার আম্মু এমন রাঁধে বুঝি?”

-“হ্যা, তেল বেশি দিয়ে। এমন ভাসা ভাসা তেল থাকে।”

-“মাছ কি এইজন্যই নিলে না? তেল কম?”

-“তা নয়। মাংস পেলে আর কিছু লাগে না।”

তনু বলল,
-“ভাবী তুমি ডায়েট করো? সকালে বেশি খাও না কেন?”

-“গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা আছে। আর ঘুম থেকে উঠে বেশি খেতে ভালো লাগে না। খারাপ লাগে।”

-“ওহ্।”

সেলিনা শেখ বললেন,
-“আজকেই চলো যাবে নাকি?”

-“আপনি কি বলেন?”
আমতা আমতা করে প্রশ্ন করলো তাহসী।

-“আমার কিছু বলার নেই। শুধু বলবো দুপুরে খেয়ে বিকালে যেও।”

-“আচ্ছা। ধন্যবাদ।”

-“ধন্যবাদ এর কিছু নেই। আমাকে নিজের মা ভেবে সহজভাবে কথা বললেই খুশি হবো। তুমি ইন্ট্রোভার্ট তাই না?”

তাহসী অবাক হলো মনে মনে। তার শাশুড়ি তো তাহলে বেশ শিক্ষিত। আস্তে করে বললো,
-“হুম।”

-“এইটাই তো সমস্যা বুঝলে। তুমি ইন্ট্রোভার্ট আর আমার ছেলের ইগো বেশি।”

তাহসী কিছু বললো না। তনন উঠে চলে গেল হাত ধোয়ার নাম করে। সেলিনা শেখ অন্য কথায় চলে গেলেন। অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন করতে লাগলেন।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-১৬+১৭

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১৬
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তনন, তাহসী দুজনে মিলে ব্যাংকে গেল এবার। তাহসী তননকে বাকি টাকা বুঝিয়ে দিল। তাহসী বললো,
-“আশা করি এই টাকা দিয়ে একটা সুন্দর ব্রেসলেট হয়ে যাবে। আর বাকি টাকা নিলাম আমার জন্য।”

-“এই টাকা বলতে?”

-“আমি বিশ হাজার দিবো,তুমি দিবে বিশ হাজার। চল্লিশ হাজারের খুব ভালো মতোই একটা ব্রেসলেট হবে‌। ভালো হতো অর্ডার দিয়ে বানালে। সময় তো নেই।”

তনন অন্যমনস্ক হয়ে গেল। তার টাকা তো বেঁচে যাচ্ছে। আগে থেকে জানলে মায়ের জন্য আরো একটা শাড়ি কিনতে পারতো। আর তার নিজের পোশাক তো রয়েছেই। পরক্ষণেই ভাবলো কাল না হয় কিনবে একটা শাড়ি। তাহসী ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলো কি হয়েছে। তনন মাথা নাড়িয়ে কিছু না বোঝালো। তাহসী যাওয়ার পথে একটা জামাকাপড়ের ব্যাগ কিনলো। হাতে থাকা সব শপিং ব্যাগ ঢুকিয়ে দিল তার মধ্যে। তননের গুলো হাতে রাখলো তনন।

তাহসীকে ফ্ল্যাটের সামনে নামিয়ে চলে যাওয়ার সময় তনন বললো,
-“কালকের বিরিয়ানি খুব ভালো লেগেছে খেতে।”

-“হুম, ওরা খুব সুন্দর করে রান্না করে।”

-“ওরা মানে এটা তোমার হাতের না?”

-“আমি তো রান্নাই জানিনা। আমি শুধু কেটে কুটে দিয়ে ওদের হেল্প করি। মাসে যে মহিলা ঘর মুছে দেয়, তার টাকা আমি দিই। তাই ওরা রান্না নিয়ে ঝামেলা করে না। যত ভালো বান্ধবীই হোক, এমনি এমনি তো কেউ কিছু দিবে না।”

-“হ্যা। থাকো তাহলে। কাল সাবধানে যেও। আজ সোমবার, আমি বুধবার নাইটে যাবো ইনশাআল্লাহ। দেখা হচ্ছে।”

-“ইনশাআল্লাহ।”

তাহসী গেট খুলে বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেলে তনন পুনরায় ডেকে উঠলো। তাহসী এগিয়ে এসে জানতে চাইলো কি। তনন বললো,
-“আমার বাড়িতে থাকবে না?”

তাহসী লাজুক হেসে বলল,
-“সেইটা কি আমার জানার কথা?”
আর কিছু না বলে তাহসী চলে গেল।

তনন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হাসলো। তাকেই তো নিয়ে যেতে হবে।

_________
ঘন্টা দুয়েক বাদেই তাহসী তননকে ফোন দিল। তনন রিসিভ করে হাসতে হাসতে বললো,
-“আজ সূর্য উঠেছে কোন দিকে? আমাকে নিজ থেকে ফোন দিচ্ছে একজন!”

-“আল্লাহর নির্দেশে সূর্য পূর্ব দিকে থেকে উদিত হয়, পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। মজা করেও এইসব বলা উচিত নয়।”

-“মনে রাখবো।”
মনে মনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে তওবা করলো তনন।

-“ব্যাগ প্যাক করে তৈরি হয়ে যাও। কাল সাড়ে সাতটায় বাস। চলে এসো। ওহ্ না না, আমাকে নিয়ে যেও।”

-“মানে? ওকে সকালে তোমাকে পৌঁছে দিবো। যদিও আমার টিউশন আছে একটা। তোমাকে পৌঁছে দিয়ে যাবো না হয়। কিন্তু আমি প্যাক করবো কেন?”
নাকচ করতে পারলো না তনন। এই প্রথম তাহসী তার কাছে কিছু চেয়েছে। আস্তে আস্তে তাহসী তার সাথে ফ্রি হচ্ছে এটা বেশ বুঝতে পারছে তনন। তাহসী নিজ থেকে চাওয়ার মেয়ে না। চাওয়ার পরে সেইটা যদি না পায়,তাহলে এটা অপমান লাগে তাহসীর কাছে। তাই সে তেমন চায় না। এমনটা একদিন শুনেছিল তনন তাহসীর কাছে, বিয়ের আগে অবশ্য।

-“ভাইয়া পরশু যাবে। আমি একা গেলে ট্রেনে যায়। কিন্তু বাসের দুইটা টিকিট কাটা হয়ে গেছে। বাসে একা যেতে আমার ভালো লাগে না। ভাইয়া বলছে তোমাকে যেতে। ভাইয়া মনে হয় ফোন দিবে তোমাকে।”

-“কিন্তু…”
বলতে বলতেই নাহিদের কল আসলো। তনন তাহসীকে বলে কল কেটে দিয়ে নাহিদের কল রিসিভ করলো। সালাম দিয়ে দুজনে কুশল বিনিময় করলো। নাহিদ বললো তাহসীর সাথে যাওয়ার কথা। তনন নাকচ করতে পারলো না। হ্যা বলে দিয়ে তাহসী কে কল দিল।

তাহসী তননের অপেক্ষাতেই ছিল। আজ সাথে সাথেই রিসিভ করলো। তনন উদ্যিগ্ন নিয়ে বললো,
-“কি ঝামেলায় ফেললে বলোতো, তাহসী! আমার টিউশন থাকবে এতো দিন বাদ দিলে?”

-“না চাইলে এসো না।”

স্পষ্ট উত্তরে তনন কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। বিয়ের আগে হলে মুখের উপর কল কেটে দিত। কিন্তু এখন তা পারবে না। ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। বিরক্ত নিয়ে বললো,
-“আসবো।”

-“থাক, লাগবে না। ভাইয়া কে বলে দিচ্ছি।”

-“বললাম ই তো যাচ্ছি! ক্লাস মিস, টিউশন মিস! তুমি এসব কি বুঝবে! বাড়ি যেয়ে হাওয়া খাবো।”

-“না, আমি তো কিছু বুঝিনা এসব।”
তাহসীর মন চাচ্ছে কল কেটে দিতে। সাথে কথা বলতেও মন চাচ্ছে। কিন্তু এখন কল কেটে দিলে তনন ও রাগ দেখাবে। তার রাগ ভাঙানোর জন্য আবার কল বা মেসেজ কিছুই দিবে না। উল্টো তনন নিজেই ইগো দেখাবে। ভালো করেই অবগত তাহসী।

তনন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আজ সোমবার। ধরো তিন, চার দিন পড়াতে পারবো না কাল গেলে। মাসের মধ্যে চৌদ্দ, পনেরোদিন পড়ানো হয়। তাহলে বলো বেতন দিতে চাইবে? অলরেডি আজ আমি যাইনি মেসের ঝামেলায়।”

তাহসী কোনো উত্তর দিল না। তনন কোনো উত্তর না পেয়ে পুনরায় বললো,
-“বাই। ফোন করে ছুটি নিই। গোছাতেও হবে। ভাবছিলাম মায়ের আর একটা শাড়ি কিনবো। হলো না।”

তনন কল কেটে দিয়ে স্টুডেন্ট এর কাছে ফোন দিল। বর্তমানে চারটা স্টুডেন্ট পড়ায় সে। সকালে আর বিকালে। তিনটা বাচ্চার মায়েরা হাসিমুখে মেনে নিলেও একজনের মা থমথমে কন্ঠে কিছু কথা শুনিয়ে দিল তননকে। তনন কিছু বলতে পারলো না। একটা টিউশনি হাতছাড়া হয়ে গেলে আরেকটা পেতে বেশ সময় লাগে। যতই সে ভালো পড়াক, বুয়েটে পড়ুক, তার মতো কম স্টুডেন্ট নেই এই ঢাকায়।

🍁🍁🍁
সকাল বেলা তনন তাহসীকে নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে গেল। তাহসীর ঘুমে মাঝে মাঝেই চোখ ডলছে। ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমানোর অভ্যাস তার। রাত জেগে পড়ে, এদিকে এসে উঠতে পারে না।

তনন কাছ থাকা পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“চোখ মুখ ধুয়ে নাও।”

তাহসী চশমা খুলে পানির ঝাপটা দিল। বাস আসতেই নির্দিষ্ট সিটে উঠে বসলো দুজনে। বামদিকের তিন নাম্বার সিট। সবসময় এই সিট নেওয়ার চেষ্টা করে তাহসী। তাহসী জানালার পাশের সিটে বসে পড়লো। তনন পাশে বসলো। তাহসীর লাগেজ,ব্যাগ উপরে রাখতে চাইলে তাহসী দিল না। পায়ের সামনে রেখে দিল। তনন বললো,
-“তোমার পা রাখতে অসুবিধা হবে না? উপরে তুলে দিই লাগেজ।”

-“না, এখানেই থাক।”

তনন আর কিছু বললো না। দশ মিনিট বাদেই বাস চলতে শুরু করলো। তাহসী ঘুমিয়ে পড়লো এক পর্যায়ে। তনন তাহসীর পিঠে হাত রেখে নিজের সাথে জড়াতে গেলে তাহসী পিটপিট করে তননের দিকে চাইলো। পরে বুঝতে পেরে কিছু না বলে চোখ বুজলো। কেউ তাকে স্পর্শ করলে ঘুম ভেঙ্গে যায়। তননের কাঁধে মাথা রেখে আরামই লাগছে। তাই নিষেধ করলো না।

দেড় ঘণ্টার মতো ঘুমালো তাহসী। হাই তুলতে তুলতে ঠিক হয়ে বসলো। তনন পড়ছে। তাহসী বললো,
-“খাবার পাওয়া যাবে নাকি! থামাবে না কোথাও।”

-“খাও নি কিছু সকালে?”
বইয়ের থেকে চোখ সরিয়ে প্রশ্ন করলো তনন।

-“না। ওতো সকালে খেলে বমি বমি লাগে।”

-“চা, বিস্কিট ও না? কফি?”

-“চা,কফি খাইনা আমি। জাস্ট কোল্ড কফি খাই‌। শুধু পানি খেয়েছি। সকালে ভাত খাওয়ার আগে পানি ছাড়া কিছু খাইনা।”

-“যেতেও সময় লাগবে। খালি পেটে এতক্ষণ কিভাবে থাকবে?”

-“পাউরুটি,কেক হলেই চলবে। আমার কিনতে মনে ছিল না কাল। আর ভাইয়া নিয়ে আসতো। সমস্যা নেই।”

-“থামালে এনে দিবো।”
বলেই তনন পড়াতে মনোযোগ দিল।

তাহসী জানালা দিয়ে বাইরে দেখতে লাগল।

___________
দুপুরের দিকে কাঙ্ক্ষিত বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছালো তনন আর তাহসী। তাহসী কে নিতে তৌহিদ হোসেন আসবেন। তাহসী একাই যেতে পারতো কিন্তু তৌহিদ হোসেন বলেছেন বাইক নিয়ে আসবেন। তননের ইচ্ছা হলো নিজের সাথে তাহসীকে নিয়ে যেতে। কিন্তু তৌহিদ হোসেন আসবেন নিতে এটা ভেবে কিছু বলতে পারছে না। তৌহিদ হোসেন এসে শুধু শুধু ফিরে যাবেন, সময় নষ্ট হবে তার।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তৌহিদ হোসেন আসলেন। তনন সালাম জানালো। তৌহিদ হোসেন কুশল বিনিময় করে বললেন,
-“আজকেই চলো তনন। বেশিদিন বাকি নেই তো।”

-“না,বাবা পরশু যাবো।”

-“আচ্ছা। তোমাদের বাড়ি যেয়ে বলে এসেছি বিয়ের মধ্যে এসে থাকতে। কিন্তু ভাবী রাজি হলেন না। আজ যেয়ে বলো আবারও বলেছি।”

তনন মৃদু হেসে বলল,
-“একা বাড়ি তো।”

-“হ্যা। এটাই।”

একপর্যায়ে তনন ইতস্তত করে বললো,
-“তাহসী কে আজ আমার সাথে নিয়ে যায়? বিয়ে শেষে তো একবারে ঢাকাতেই যাবে ও। আমাদের বাড়িতে…….”

তৌহিদ হোসেন তননের কথা বলা থামিয়ে দিয়ে বললেন,
-”

চলবে ইনশাআল্লাহ

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১৭
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

একপর্যায়ে তনন ইতস্তত করে বললো,
-“তাহসী কে আজ আমার সাথে নিয়ে যায়? বিয়ে শেষে তো একবারে ঢাকাতেই যাবে ও। আমাদের বাড়িতে…….”

তৌহিদ হোসেন তননের কথা বলা থামিয়ে দিয়ে বললেন,
-“এত ইতস্তত করার কি আছে এতে তনন? তাহসী চাইলে যেতেই পারে। কিন্তু এটা আগে থেকে বললে কি হতো!”

তনন মৌন রইলো। তাহসী অবাক হলো তননের কথায়। বাবার সামনে লজ্জা পেল।

তৌহিদ হোসেন পুনরায় বললেন,
-“এবার তো এর মূল্য দিতে হবে।”
কথাটা বলেই তৌহিদ হোসেন কোথাও চলে গেলেন।

তননের কাছে চেপে এসে তাহসী বললো,
-“লজ্জা নাই!”

-“কিসের লজ্জা শুনি?”
বলেই তাহসীর দিকে তাকিয়ে চোখ‌ টিপ দিল তনন।

তাহসী চোখ সরিয়ে নিল। মজা করতে ছাড়বে না এই ছেলে। মনে কোনো জড়তা নেই।

তৌহিদ হোসেন তননের হাতে তিনটা মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দিতে দিতে বললেন,
-“এইগুলো নিয়ে যেতে হবে তোমাকে।”

-“এতো! কিন্তু বাবা….”

-“উহু। না হলে তাহসী আমার সাথেই যাচ্ছে।”

তনন বাম দিয়ে মাথা চুলকে ডান হাতে মিষ্টির প্যাকেট ধরলো। তাহসী হঠাৎ বললো,
-“বাবা ভাবীর জন্য একটা ব্রেসলেট নিতে চেয়েছিলাম। এখন নিয়ে আসি চলো। আবার আসা লাগবে; তার চেয়ে এখন নিই।”

তৌহিদ হোসেন তননকে বললেন,
-“ওর কথা শুনো না। তনন ওকে নিয়ে বাড়ি যাও। জার্নি করে এসেছে। কোথায় বাড়ি যেয়ে রেস্ট নিবে তা না।”

-“তো আবার আসা লাগলে সেইটা ভালো?”

-“আচ্ছা চল।”

ওরা এক অটোতে চড়ে অলংকারের দোকানে গেল। তাহসী আর তনন মিলে একটা ব্রেসলেট পছন্দ করলো। তৌহিদ হোসেন মূল্য ঠিক করে টাকা দিতে বললেন। তাহসী যা ভেবেছিল তার তুলনায় কম লাগলো। তননের বেঁচে গেল আরো।
তৌহিদ হোসেন বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। তননকে বলে গেছেন মা বোনকে নিয়ে তাহসীর সাথে কাল আসতে।

তননের চোখে একটা রিং পড়লো। দোকানদার ওদের ব্রেসলেট প্যাকেট করে দিচ্ছে তখন। তনন রিং এর দাম জিজ্ঞেস করলো। তাহসী কারণ জিজ্ঞেস করলে তনন কিছু বললো না। বরং দোকানদার কে বের করতে বললো।
তনন তাহসীর হাত টেনে তাহসীর এক আঙ্গুলে পড়িয়ে দিল।
তাহসী চাপা স্বরে বললো,
-“আমি নিবো না।”

-“আমার ওয়াইফ আছে একটা তাকে দিতে চাচ্ছি। তোর থেকে কিছু শুনতে চাই না বান্ধবী।”

তাহসী মুখ ফুলালো।
-“যতসব ন্যাকামো।”

তাহসীর সেই আঙুলে হলো না। তনন এবার অপর হাতে চেষ্টা করতেই হয়ে গেল। তনন বললো এটা প্যাকেট করতে।
-“তনন মজা না। গোল্ডের জিনিস আমার ভালো লাগে না। হারানোর ভয়ে থাকা ভালো লাগে না আমার। দেখলে না সাদা রং দেখে একটা নেকলেস কিনলাম। কেনা জিনিস আমার পছন্দ। নষ্ট হবে আমার কিনবো।”

তনন শুনলো না। দামের মধ্যে হয়ে যাচ্ছে তার। তাহসী না পেরে মুখ ফুলিয়ে থাকলো। কথা বললো না তননের সাথে।
তাহসীর লাগেজে ঢুকিয়ে দোকান থেকে বের হলো ওরা।
সামনে শাড়ির কয়েকটা দোকান দেখে তনন সেদিকে গেল। একটা শাড়ি কিনে নিল পছন্দ মতো। আধা ঘন্টা লেগে গেল শাড়ির দোকানে। তাহসী তননের সাথে একবারও কথা বলেনি এর মধ্যে।

তনন একটা অটো ঠিক করে বাড়িতে গেল। তনন বাড়ি যেয়ে আম্মু বলে ডাক দিতেই সেলিনা শেখ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে হাসিমুখে গ্রিল খুলে দিলেন। তননের পিছু পিছু তাহসীও ঢুকলো। সালাম জানালো সেলিনা শেখ কে।
তাহসীকে জড়িয়ে নিয়ে সেলিনা শেখ বললেন,
-“অনেক খুশি হয়েছি তাহসী। আমিও ভেবেছিলাম আসতে বলবো কিন্তু তোমার ভাইয়ের বিয়ে, তার জন্য এসে আবার এখানে আসবে তাই বলিনি।”

তাহসী হাসিমুখে তাকালো। সেলিনা শেখ গোসল করে আসতে বললেন ওদের। উনি খাবার দিচ্ছেন।

তাড়াতাড়ি করে গোসল সেরে নামাজ পড়ে এসে তাহসী ডাইনিং টেবিলে বসলো। সকালে শুধু পাউরুটি আর কেক খেয়েছে। ক্ষুধা লেগেছে অনেক। তননও এসে বসলো তাহসীর পাশের চেয়ারে।
সেলিনা শেখ দুইজনকে খাবার বেড়ে দিলেন। তাহসী তনুর কথা জিজ্ঞেস করতেই সেলিনা শেখ জানালেন ও স্কুলে।

খাওয়া শেষে তনুর রুমে যেয়ে শুয়ে পড়লো তাহসী। তননের রুমে যেতে খুব লজ্জা লাগছে তার। এই দুইমাসে অনেকটাই কাছাকাছি এসেছে দুজন। তাহসী নিসংকোচে তননের সাথে মিশেছে। কিন্তু এখন একসাথে রুমে থাকার কথা ভাবতেই লজ্জা লাগছে।

তনন নিজের রুমে পেল না তাহসী কে। তনুর রুমে উঁকি দিতেই তাহসী কে দেখতে পেল। তনন কিছু না বলে নিজের বিছানায় শুয়ে পড়লো। রাতে নিশ্চয় তাহসী এখানে আসবে।

মাগরিবের নামাজ পড়ে শপিং ব্যাগ নিয়ে বসলো তাহসী। তনন ও মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে এসেছে। তনু অনেক এক্সাইটেড হয়ে আছে এতো শপিং ব্যাগ দেখে। এর মধ্যে তনন নিজের আলমারি খুলে টাকা বের করে সেলিনা শেখ এর হাতে দিয়ে বলল,
-“পাঁচ হাজার টাকা বেঁচে গেছে। তাহসীর সাথে কিনেছি।”

-“তোর কাছে রেখে দে।”

-“না, আম্মু। আমার আছে।”
তনন নিল না সেই টাকা।

তাহসী একে একে বের করে সব রাখলো। ব্লেজার তননের হাতে দিয়ে বললো,
-“আলমারির মধ্যে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখো। নাহলে ভাঁজ পড়ে যাবে।”

-“মানে?”

-“বাবা টাকা পাঠিয়ে ছিল তোমার জন্যেই। আমার তখন ইচ্ছা হয়নি বলিনি।”

-“আমি নিবো না। আমার আছে?”

-“কেন? আমি কিছু দিতে গেলে বাঁধে! তাহলে আমি তোমার থেকে কিছু নিবো কেন? আমার কম আছে?”

দু’জনের ঝগড়া বেধে যাওয়ার ভাব দেখে তনু বললো,
-“আমার ড্রেস দেখাও।”

সেলিনা শেখ দুজনকে চুপ থাকতে বললেন। তনন মায়ের দিকে তাকিয়ে ব্লেজার উঠিয়ে রাখলো। আগের ব্লেজার ছোট হয়ে গেছে। যেইটা তননের বাবা বানিয়ে দিয়েছিলেন। তননের মন খারাপ হলো আবার।

তাহসী খুঁজে খুঁজে তনুর জিনিস আর সেলিনা শেখ এর শাড়ি বের করলো। সেলিনা শেখ কপট রাগ দেখিয়ে বললেন,
-“তোকে একটা শাড়ি আনতে বলেছিলাম তনন।”

-“টাকা বেঁচে গেল তাই……”

-“তাই আনতে হবে? আমি শাড়ি কতদিন পরি তুই বল? ভালো শাড়ি এখনো আলমারি ভরে আছে। তুই নিজের জন্যে কি কিনেছিস?”

তনন আমতা আমতা করে উত্তর দিল,
-“আমার তো আছেই।”

-“তোর কোথায় আছে?”

তনন কিছু বলার আগেই তনু নিজের সব বের করে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তনু কথা বলে ওঠায় তনন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তাহসীর সামনে এই পরিস্থিতিতে পড়তে চাচ্ছে না সে।
তনু একটা পোশাক গায়ে ধরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“ভাবী এটা খুব সুন্দর।”

-“এটা তো তাহসীর!”
হঠাৎ বলে উঠল তনন।

তাহসী ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“বড্ড বেশি কথা বলো। আপাতত চুপ থাকো কিছুক্ষণ। এটা তনুর জন্যেই কিনেছি।”

-“এটার টাকা তো তুমি দিয়েছো!”
বলে উঠে দাড়ালো তনন।

তাহসী তনুর বাকি ব্যাগ নিজের হাতে নিয়ে বললো,
-“তোমার ভাইয়া কে এখান থেকে যেতে বলো, না হলে এগুলো পাচ্ছো না!”

সেলিনা শেখ বললেন,
-“দুইটা মিলে কি শুরু করলে?”

-“আমি কি তনুকে কিছু দিতে পারবো না?”
অভিযোগ করে বললো তাহসী।

-“তনন একটু চুপ থাকবি!”

মায়ের কথার পিঠে তনন কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল। গ্রিল খুলতে খুলতে বললো,
-“তালা মেরে দাও। আমি একবারে নামাজ পড়ে ফিরবো।”

তাহসীর খারাপ লাগলো। সে তো মজা করে বলেছে। সেলিনা শেখ এর দিকে তাকালে তিনি কিছু বললেন না। তনন চলে গেলে তালা মেরে এসে বসলেন।

তনু আরেকটা পোশাক নিয়ে দেখলো। বললো,
-“ওইটাই বেশি সুন্দর ভাবী।”

-“ওইটা পরে কিনছি। পছন্দ হলো কিনে নিলাম।”
তনু একে একে হিজাব, কসমেটিকস বের করে দেখলো।

তাহসী বললো,
-“হিজাব আর চুড়ি তনন কিনেছে। বাকি সব আমার কেনা। আমার সাথে মিলিয়ে কিনেছি। তবে তোমার স্যান্ডেল কিনেনি গো, মাপ তো জানতাম না!”

সেলিনা শেখ বললেন,
-“এত কিছু কেনার কি দরকার ছিল?”

-“আপনি তো আমাকে পছন্দ করেন না। এখন এইসব ও ভালো লাগছে না।”
মুখ ফুলিয়ে বললো তাহসী।

চলবে ইনশাআল্লাহ;