তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-১৬+১৭

0
256

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১৬
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তনন, তাহসী দুজনে মিলে ব্যাংকে গেল এবার। তাহসী তননকে বাকি টাকা বুঝিয়ে দিল। তাহসী বললো,
-“আশা করি এই টাকা দিয়ে একটা সুন্দর ব্রেসলেট হয়ে যাবে। আর বাকি টাকা নিলাম আমার জন্য।”

-“এই টাকা বলতে?”

-“আমি বিশ হাজার দিবো,তুমি দিবে বিশ হাজার। চল্লিশ হাজারের খুব ভালো মতোই একটা ব্রেসলেট হবে‌। ভালো হতো অর্ডার দিয়ে বানালে। সময় তো নেই।”

তনন অন্যমনস্ক হয়ে গেল। তার টাকা তো বেঁচে যাচ্ছে। আগে থেকে জানলে মায়ের জন্য আরো একটা শাড়ি কিনতে পারতো। আর তার নিজের পোশাক তো রয়েছেই। পরক্ষণেই ভাবলো কাল না হয় কিনবে একটা শাড়ি। তাহসী ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলো কি হয়েছে। তনন মাথা নাড়িয়ে কিছু না বোঝালো। তাহসী যাওয়ার পথে একটা জামাকাপড়ের ব্যাগ কিনলো। হাতে থাকা সব শপিং ব্যাগ ঢুকিয়ে দিল তার মধ্যে। তননের গুলো হাতে রাখলো তনন।

তাহসীকে ফ্ল্যাটের সামনে নামিয়ে চলে যাওয়ার সময় তনন বললো,
-“কালকের বিরিয়ানি খুব ভালো লেগেছে খেতে।”

-“হুম, ওরা খুব সুন্দর করে রান্না করে।”

-“ওরা মানে এটা তোমার হাতের না?”

-“আমি তো রান্নাই জানিনা। আমি শুধু কেটে কুটে দিয়ে ওদের হেল্প করি। মাসে যে মহিলা ঘর মুছে দেয়, তার টাকা আমি দিই। তাই ওরা রান্না নিয়ে ঝামেলা করে না। যত ভালো বান্ধবীই হোক, এমনি এমনি তো কেউ কিছু দিবে না।”

-“হ্যা। থাকো তাহলে। কাল সাবধানে যেও। আজ সোমবার, আমি বুধবার নাইটে যাবো ইনশাআল্লাহ। দেখা হচ্ছে।”

-“ইনশাআল্লাহ।”

তাহসী গেট খুলে বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেলে তনন পুনরায় ডেকে উঠলো। তাহসী এগিয়ে এসে জানতে চাইলো কি। তনন বললো,
-“আমার বাড়িতে থাকবে না?”

তাহসী লাজুক হেসে বলল,
-“সেইটা কি আমার জানার কথা?”
আর কিছু না বলে তাহসী চলে গেল।

তনন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হাসলো। তাকেই তো নিয়ে যেতে হবে।

_________
ঘন্টা দুয়েক বাদেই তাহসী তননকে ফোন দিল। তনন রিসিভ করে হাসতে হাসতে বললো,
-“আজ সূর্য উঠেছে কোন দিকে? আমাকে নিজ থেকে ফোন দিচ্ছে একজন!”

-“আল্লাহর নির্দেশে সূর্য পূর্ব দিকে থেকে উদিত হয়, পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। মজা করেও এইসব বলা উচিত নয়।”

-“মনে রাখবো।”
মনে মনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে তওবা করলো তনন।

-“ব্যাগ প্যাক করে তৈরি হয়ে যাও। কাল সাড়ে সাতটায় বাস। চলে এসো। ওহ্ না না, আমাকে নিয়ে যেও।”

-“মানে? ওকে সকালে তোমাকে পৌঁছে দিবো। যদিও আমার টিউশন আছে একটা। তোমাকে পৌঁছে দিয়ে যাবো না হয়। কিন্তু আমি প্যাক করবো কেন?”
নাকচ করতে পারলো না তনন। এই প্রথম তাহসী তার কাছে কিছু চেয়েছে। আস্তে আস্তে তাহসী তার সাথে ফ্রি হচ্ছে এটা বেশ বুঝতে পারছে তনন। তাহসী নিজ থেকে চাওয়ার মেয়ে না। চাওয়ার পরে সেইটা যদি না পায়,তাহলে এটা অপমান লাগে তাহসীর কাছে। তাই সে তেমন চায় না। এমনটা একদিন শুনেছিল তনন তাহসীর কাছে, বিয়ের আগে অবশ্য।

-“ভাইয়া পরশু যাবে। আমি একা গেলে ট্রেনে যায়। কিন্তু বাসের দুইটা টিকিট কাটা হয়ে গেছে। বাসে একা যেতে আমার ভালো লাগে না। ভাইয়া বলছে তোমাকে যেতে। ভাইয়া মনে হয় ফোন দিবে তোমাকে।”

-“কিন্তু…”
বলতে বলতেই নাহিদের কল আসলো। তনন তাহসীকে বলে কল কেটে দিয়ে নাহিদের কল রিসিভ করলো। সালাম দিয়ে দুজনে কুশল বিনিময় করলো। নাহিদ বললো তাহসীর সাথে যাওয়ার কথা। তনন নাকচ করতে পারলো না। হ্যা বলে দিয়ে তাহসী কে কল দিল।

তাহসী তননের অপেক্ষাতেই ছিল। আজ সাথে সাথেই রিসিভ করলো। তনন উদ্যিগ্ন নিয়ে বললো,
-“কি ঝামেলায় ফেললে বলোতো, তাহসী! আমার টিউশন থাকবে এতো দিন বাদ দিলে?”

-“না চাইলে এসো না।”

স্পষ্ট উত্তরে তনন কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। বিয়ের আগে হলে মুখের উপর কল কেটে দিত। কিন্তু এখন তা পারবে না। ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। বিরক্ত নিয়ে বললো,
-“আসবো।”

-“থাক, লাগবে না। ভাইয়া কে বলে দিচ্ছি।”

-“বললাম ই তো যাচ্ছি! ক্লাস মিস, টিউশন মিস! তুমি এসব কি বুঝবে! বাড়ি যেয়ে হাওয়া খাবো।”

-“না, আমি তো কিছু বুঝিনা এসব।”
তাহসীর মন চাচ্ছে কল কেটে দিতে। সাথে কথা বলতেও মন চাচ্ছে। কিন্তু এখন কল কেটে দিলে তনন ও রাগ দেখাবে। তার রাগ ভাঙানোর জন্য আবার কল বা মেসেজ কিছুই দিবে না। উল্টো তনন নিজেই ইগো দেখাবে। ভালো করেই অবগত তাহসী।

তনন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আজ সোমবার। ধরো তিন, চার দিন পড়াতে পারবো না কাল গেলে। মাসের মধ্যে চৌদ্দ, পনেরোদিন পড়ানো হয়। তাহলে বলো বেতন দিতে চাইবে? অলরেডি আজ আমি যাইনি মেসের ঝামেলায়।”

তাহসী কোনো উত্তর দিল না। তনন কোনো উত্তর না পেয়ে পুনরায় বললো,
-“বাই। ফোন করে ছুটি নিই। গোছাতেও হবে। ভাবছিলাম মায়ের আর একটা শাড়ি কিনবো। হলো না।”

তনন কল কেটে দিয়ে স্টুডেন্ট এর কাছে ফোন দিল। বর্তমানে চারটা স্টুডেন্ট পড়ায় সে। সকালে আর বিকালে। তিনটা বাচ্চার মায়েরা হাসিমুখে মেনে নিলেও একজনের মা থমথমে কন্ঠে কিছু কথা শুনিয়ে দিল তননকে। তনন কিছু বলতে পারলো না। একটা টিউশনি হাতছাড়া হয়ে গেলে আরেকটা পেতে বেশ সময় লাগে। যতই সে ভালো পড়াক, বুয়েটে পড়ুক, তার মতো কম স্টুডেন্ট নেই এই ঢাকায়।

🍁🍁🍁
সকাল বেলা তনন তাহসীকে নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে গেল। তাহসীর ঘুমে মাঝে মাঝেই চোখ ডলছে। ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমানোর অভ্যাস তার। রাত জেগে পড়ে, এদিকে এসে উঠতে পারে না।

তনন কাছ থাকা পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“চোখ মুখ ধুয়ে নাও।”

তাহসী চশমা খুলে পানির ঝাপটা দিল। বাস আসতেই নির্দিষ্ট সিটে উঠে বসলো দুজনে। বামদিকের তিন নাম্বার সিট। সবসময় এই সিট নেওয়ার চেষ্টা করে তাহসী। তাহসী জানালার পাশের সিটে বসে পড়লো। তনন পাশে বসলো। তাহসীর লাগেজ,ব্যাগ উপরে রাখতে চাইলে তাহসী দিল না। পায়ের সামনে রেখে দিল। তনন বললো,
-“তোমার পা রাখতে অসুবিধা হবে না? উপরে তুলে দিই লাগেজ।”

-“না, এখানেই থাক।”

তনন আর কিছু বললো না। দশ মিনিট বাদেই বাস চলতে শুরু করলো। তাহসী ঘুমিয়ে পড়লো এক পর্যায়ে। তনন তাহসীর পিঠে হাত রেখে নিজের সাথে জড়াতে গেলে তাহসী পিটপিট করে তননের দিকে চাইলো। পরে বুঝতে পেরে কিছু না বলে চোখ বুজলো। কেউ তাকে স্পর্শ করলে ঘুম ভেঙ্গে যায়। তননের কাঁধে মাথা রেখে আরামই লাগছে। তাই নিষেধ করলো না।

দেড় ঘণ্টার মতো ঘুমালো তাহসী। হাই তুলতে তুলতে ঠিক হয়ে বসলো। তনন পড়ছে। তাহসী বললো,
-“খাবার পাওয়া যাবে নাকি! থামাবে না কোথাও।”

-“খাও নি কিছু সকালে?”
বইয়ের থেকে চোখ সরিয়ে প্রশ্ন করলো তনন।

-“না। ওতো সকালে খেলে বমি বমি লাগে।”

-“চা, বিস্কিট ও না? কফি?”

-“চা,কফি খাইনা আমি। জাস্ট কোল্ড কফি খাই‌। শুধু পানি খেয়েছি। সকালে ভাত খাওয়ার আগে পানি ছাড়া কিছু খাইনা।”

-“যেতেও সময় লাগবে। খালি পেটে এতক্ষণ কিভাবে থাকবে?”

-“পাউরুটি,কেক হলেই চলবে। আমার কিনতে মনে ছিল না কাল। আর ভাইয়া নিয়ে আসতো। সমস্যা নেই।”

-“থামালে এনে দিবো।”
বলেই তনন পড়াতে মনোযোগ দিল।

তাহসী জানালা দিয়ে বাইরে দেখতে লাগল।

___________
দুপুরের দিকে কাঙ্ক্ষিত বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছালো তনন আর তাহসী। তাহসী কে নিতে তৌহিদ হোসেন আসবেন। তাহসী একাই যেতে পারতো কিন্তু তৌহিদ হোসেন বলেছেন বাইক নিয়ে আসবেন। তননের ইচ্ছা হলো নিজের সাথে তাহসীকে নিয়ে যেতে। কিন্তু তৌহিদ হোসেন আসবেন নিতে এটা ভেবে কিছু বলতে পারছে না। তৌহিদ হোসেন এসে শুধু শুধু ফিরে যাবেন, সময় নষ্ট হবে তার।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তৌহিদ হোসেন আসলেন। তনন সালাম জানালো। তৌহিদ হোসেন কুশল বিনিময় করে বললেন,
-“আজকেই চলো তনন। বেশিদিন বাকি নেই তো।”

-“না,বাবা পরশু যাবো।”

-“আচ্ছা। তোমাদের বাড়ি যেয়ে বলে এসেছি বিয়ের মধ্যে এসে থাকতে। কিন্তু ভাবী রাজি হলেন না। আজ যেয়ে বলো আবারও বলেছি।”

তনন মৃদু হেসে বলল,
-“একা বাড়ি তো।”

-“হ্যা। এটাই।”

একপর্যায়ে তনন ইতস্তত করে বললো,
-“তাহসী কে আজ আমার সাথে নিয়ে যায়? বিয়ে শেষে তো একবারে ঢাকাতেই যাবে ও। আমাদের বাড়িতে…….”

তৌহিদ হোসেন তননের কথা বলা থামিয়ে দিয়ে বললেন,
-”

চলবে ইনশাআল্লাহ

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১৭
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

একপর্যায়ে তনন ইতস্তত করে বললো,
-“তাহসী কে আজ আমার সাথে নিয়ে যায়? বিয়ে শেষে তো একবারে ঢাকাতেই যাবে ও। আমাদের বাড়িতে…….”

তৌহিদ হোসেন তননের কথা বলা থামিয়ে দিয়ে বললেন,
-“এত ইতস্তত করার কি আছে এতে তনন? তাহসী চাইলে যেতেই পারে। কিন্তু এটা আগে থেকে বললে কি হতো!”

তনন মৌন রইলো। তাহসী অবাক হলো তননের কথায়। বাবার সামনে লজ্জা পেল।

তৌহিদ হোসেন পুনরায় বললেন,
-“এবার তো এর মূল্য দিতে হবে।”
কথাটা বলেই তৌহিদ হোসেন কোথাও চলে গেলেন।

তননের কাছে চেপে এসে তাহসী বললো,
-“লজ্জা নাই!”

-“কিসের লজ্জা শুনি?”
বলেই তাহসীর দিকে তাকিয়ে চোখ‌ টিপ দিল তনন।

তাহসী চোখ সরিয়ে নিল। মজা করতে ছাড়বে না এই ছেলে। মনে কোনো জড়তা নেই।

তৌহিদ হোসেন তননের হাতে তিনটা মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দিতে দিতে বললেন,
-“এইগুলো নিয়ে যেতে হবে তোমাকে।”

-“এতো! কিন্তু বাবা….”

-“উহু। না হলে তাহসী আমার সাথেই যাচ্ছে।”

তনন বাম দিয়ে মাথা চুলকে ডান হাতে মিষ্টির প্যাকেট ধরলো। তাহসী হঠাৎ বললো,
-“বাবা ভাবীর জন্য একটা ব্রেসলেট নিতে চেয়েছিলাম। এখন নিয়ে আসি চলো। আবার আসা লাগবে; তার চেয়ে এখন নিই।”

তৌহিদ হোসেন তননকে বললেন,
-“ওর কথা শুনো না। তনন ওকে নিয়ে বাড়ি যাও। জার্নি করে এসেছে। কোথায় বাড়ি যেয়ে রেস্ট নিবে তা না।”

-“তো আবার আসা লাগলে সেইটা ভালো?”

-“আচ্ছা চল।”

ওরা এক অটোতে চড়ে অলংকারের দোকানে গেল। তাহসী আর তনন মিলে একটা ব্রেসলেট পছন্দ করলো। তৌহিদ হোসেন মূল্য ঠিক করে টাকা দিতে বললেন। তাহসী যা ভেবেছিল তার তুলনায় কম লাগলো। তননের বেঁচে গেল আরো।
তৌহিদ হোসেন বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। তননকে বলে গেছেন মা বোনকে নিয়ে তাহসীর সাথে কাল আসতে।

তননের চোখে একটা রিং পড়লো। দোকানদার ওদের ব্রেসলেট প্যাকেট করে দিচ্ছে তখন। তনন রিং এর দাম জিজ্ঞেস করলো। তাহসী কারণ জিজ্ঞেস করলে তনন কিছু বললো না। বরং দোকানদার কে বের করতে বললো।
তনন তাহসীর হাত টেনে তাহসীর এক আঙ্গুলে পড়িয়ে দিল।
তাহসী চাপা স্বরে বললো,
-“আমি নিবো না।”

-“আমার ওয়াইফ আছে একটা তাকে দিতে চাচ্ছি। তোর থেকে কিছু শুনতে চাই না বান্ধবী।”

তাহসী মুখ ফুলালো।
-“যতসব ন্যাকামো।”

তাহসীর সেই আঙুলে হলো না। তনন এবার অপর হাতে চেষ্টা করতেই হয়ে গেল। তনন বললো এটা প্যাকেট করতে।
-“তনন মজা না। গোল্ডের জিনিস আমার ভালো লাগে না। হারানোর ভয়ে থাকা ভালো লাগে না আমার। দেখলে না সাদা রং দেখে একটা নেকলেস কিনলাম। কেনা জিনিস আমার পছন্দ। নষ্ট হবে আমার কিনবো।”

তনন শুনলো না। দামের মধ্যে হয়ে যাচ্ছে তার। তাহসী না পেরে মুখ ফুলিয়ে থাকলো। কথা বললো না তননের সাথে।
তাহসীর লাগেজে ঢুকিয়ে দোকান থেকে বের হলো ওরা।
সামনে শাড়ির কয়েকটা দোকান দেখে তনন সেদিকে গেল। একটা শাড়ি কিনে নিল পছন্দ মতো। আধা ঘন্টা লেগে গেল শাড়ির দোকানে। তাহসী তননের সাথে একবারও কথা বলেনি এর মধ্যে।

তনন একটা অটো ঠিক করে বাড়িতে গেল। তনন বাড়ি যেয়ে আম্মু বলে ডাক দিতেই সেলিনা শেখ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে হাসিমুখে গ্রিল খুলে দিলেন। তননের পিছু পিছু তাহসীও ঢুকলো। সালাম জানালো সেলিনা শেখ কে।
তাহসীকে জড়িয়ে নিয়ে সেলিনা শেখ বললেন,
-“অনেক খুশি হয়েছি তাহসী। আমিও ভেবেছিলাম আসতে বলবো কিন্তু তোমার ভাইয়ের বিয়ে, তার জন্য এসে আবার এখানে আসবে তাই বলিনি।”

তাহসী হাসিমুখে তাকালো। সেলিনা শেখ গোসল করে আসতে বললেন ওদের। উনি খাবার দিচ্ছেন।

তাড়াতাড়ি করে গোসল সেরে নামাজ পড়ে এসে তাহসী ডাইনিং টেবিলে বসলো। সকালে শুধু পাউরুটি আর কেক খেয়েছে। ক্ষুধা লেগেছে অনেক। তননও এসে বসলো তাহসীর পাশের চেয়ারে।
সেলিনা শেখ দুইজনকে খাবার বেড়ে দিলেন। তাহসী তনুর কথা জিজ্ঞেস করতেই সেলিনা শেখ জানালেন ও স্কুলে।

খাওয়া শেষে তনুর রুমে যেয়ে শুয়ে পড়লো তাহসী। তননের রুমে যেতে খুব লজ্জা লাগছে তার। এই দুইমাসে অনেকটাই কাছাকাছি এসেছে দুজন। তাহসী নিসংকোচে তননের সাথে মিশেছে। কিন্তু এখন একসাথে রুমে থাকার কথা ভাবতেই লজ্জা লাগছে।

তনন নিজের রুমে পেল না তাহসী কে। তনুর রুমে উঁকি দিতেই তাহসী কে দেখতে পেল। তনন কিছু না বলে নিজের বিছানায় শুয়ে পড়লো। রাতে নিশ্চয় তাহসী এখানে আসবে।

মাগরিবের নামাজ পড়ে শপিং ব্যাগ নিয়ে বসলো তাহসী। তনন ও মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে এসেছে। তনু অনেক এক্সাইটেড হয়ে আছে এতো শপিং ব্যাগ দেখে। এর মধ্যে তনন নিজের আলমারি খুলে টাকা বের করে সেলিনা শেখ এর হাতে দিয়ে বলল,
-“পাঁচ হাজার টাকা বেঁচে গেছে। তাহসীর সাথে কিনেছি।”

-“তোর কাছে রেখে দে।”

-“না, আম্মু। আমার আছে।”
তনন নিল না সেই টাকা।

তাহসী একে একে বের করে সব রাখলো। ব্লেজার তননের হাতে দিয়ে বললো,
-“আলমারির মধ্যে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখো। নাহলে ভাঁজ পড়ে যাবে।”

-“মানে?”

-“বাবা টাকা পাঠিয়ে ছিল তোমার জন্যেই। আমার তখন ইচ্ছা হয়নি বলিনি।”

-“আমি নিবো না। আমার আছে?”

-“কেন? আমি কিছু দিতে গেলে বাঁধে! তাহলে আমি তোমার থেকে কিছু নিবো কেন? আমার কম আছে?”

দু’জনের ঝগড়া বেধে যাওয়ার ভাব দেখে তনু বললো,
-“আমার ড্রেস দেখাও।”

সেলিনা শেখ দুজনকে চুপ থাকতে বললেন। তনন মায়ের দিকে তাকিয়ে ব্লেজার উঠিয়ে রাখলো। আগের ব্লেজার ছোট হয়ে গেছে। যেইটা তননের বাবা বানিয়ে দিয়েছিলেন। তননের মন খারাপ হলো আবার।

তাহসী খুঁজে খুঁজে তনুর জিনিস আর সেলিনা শেখ এর শাড়ি বের করলো। সেলিনা শেখ কপট রাগ দেখিয়ে বললেন,
-“তোকে একটা শাড়ি আনতে বলেছিলাম তনন।”

-“টাকা বেঁচে গেল তাই……”

-“তাই আনতে হবে? আমি শাড়ি কতদিন পরি তুই বল? ভালো শাড়ি এখনো আলমারি ভরে আছে। তুই নিজের জন্যে কি কিনেছিস?”

তনন আমতা আমতা করে উত্তর দিল,
-“আমার তো আছেই।”

-“তোর কোথায় আছে?”

তনন কিছু বলার আগেই তনু নিজের সব বের করে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তনু কথা বলে ওঠায় তনন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তাহসীর সামনে এই পরিস্থিতিতে পড়তে চাচ্ছে না সে।
তনু একটা পোশাক গায়ে ধরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“ভাবী এটা খুব সুন্দর।”

-“এটা তো তাহসীর!”
হঠাৎ বলে উঠল তনন।

তাহসী ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“বড্ড বেশি কথা বলো। আপাতত চুপ থাকো কিছুক্ষণ। এটা তনুর জন্যেই কিনেছি।”

-“এটার টাকা তো তুমি দিয়েছো!”
বলে উঠে দাড়ালো তনন।

তাহসী তনুর বাকি ব্যাগ নিজের হাতে নিয়ে বললো,
-“তোমার ভাইয়া কে এখান থেকে যেতে বলো, না হলে এগুলো পাচ্ছো না!”

সেলিনা শেখ বললেন,
-“দুইটা মিলে কি শুরু করলে?”

-“আমি কি তনুকে কিছু দিতে পারবো না?”
অভিযোগ করে বললো তাহসী।

-“তনন একটু চুপ থাকবি!”

মায়ের কথার পিঠে তনন কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল। গ্রিল খুলতে খুলতে বললো,
-“তালা মেরে দাও। আমি একবারে নামাজ পড়ে ফিরবো।”

তাহসীর খারাপ লাগলো। সে তো মজা করে বলেছে। সেলিনা শেখ এর দিকে তাকালে তিনি কিছু বললেন না। তনন চলে গেলে তালা মেরে এসে বসলেন।

তনু আরেকটা পোশাক নিয়ে দেখলো। বললো,
-“ওইটাই বেশি সুন্দর ভাবী।”

-“ওইটা পরে কিনছি। পছন্দ হলো কিনে নিলাম।”
তনু একে একে হিজাব, কসমেটিকস বের করে দেখলো।

তাহসী বললো,
-“হিজাব আর চুড়ি তনন কিনেছে। বাকি সব আমার কেনা। আমার সাথে মিলিয়ে কিনেছি। তবে তোমার স্যান্ডেল কিনেনি গো, মাপ তো জানতাম না!”

সেলিনা শেখ বললেন,
-“এত কিছু কেনার কি দরকার ছিল?”

-“আপনি তো আমাকে পছন্দ করেন না। এখন এইসব ও ভালো লাগছে না।”
মুখ ফুলিয়ে বললো তাহসী।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে