Saturday, July 5, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 321



তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-১৪+১৫

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১৪
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তনন বললো,
-“তো? আমি কিছু দিলে কি সেইটা নেওয়া যায় না? নাকি কম দামি হয়? আর্থিক অবস্থা তোমার মতো তো আমার না, এটা তোমাকে বুঝতে হবে!”

তাহসী রাগান্বিত হলেও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো। বলে উঠলো,
-“আমি বলেছি এমন কখনো?”

তখন দু’জনেই বের হয়ে এসেছে দোকান থেকে। তনন উত্তর দিল না। পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট, সেখানে তাহসীকে নিয়ে যেয়ে বসলো। বললো,
-“কি খাবে? অর্ডার দাও।”

তাহসী কোনো কথা বললো না। তনন পুনরায় বললো,
-“মোটামুটি সব শেষ। স্কার্ফ কিনবো তোমাদের। আর তনুর চুরি। ভেবেছিলাম বেশ সময় লাগবে। তা তো লাগলো না। চেইন তো খুলনা যেয়ে নিতে বললে। নাও এখন নাস্তা করো।”

তাহসী কিছু না বলে হাতে থাকা শপিং ব্যাগ তননের কাছে রেখে চলে যেতে লাগলো। তনন প্রথমে ভেবেছে ওয়াশরুমে যাবে। যখন দেখলো তাহসী রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যাচ্ছে তখন দাঁড়িয়ে পড়লো। শপিং ব্যাগগুলো গুছিয়ে নিয়ে সেও রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলো। তাড়াতাড়ি হেঁটে তাহসীর কাছে আসলো। তাহসী তখন রিকশার জন্য রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে।

তনন তাহসীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,
-“কি হয়েছে? এইভাবে চলে আসার মানে?”

-“কিছুই না।”
কাঁপা কাঁপা গলায় বলল তাহসী। তার এখন কান্না পাচ্ছে। সাথে খুব রাগ হচ্ছে। মূলত রাগের কারণেই চোখে অশ্রু এসে ভিড় করেছে।

-“কেন? আমার সাথে থাকতে আর ভালো লাগছে না? নাকি এসব রেস্টুরেন্টে বসে খাস না তুই? কোনটা”

তাহসী নিজেকে ছাড়িয়ে নিল তননের থেকে। নিজের রাগ না চেপে বললো,
-“তোমার মতো নিম্ন মানসিকতার মানুষের সাথে মিশি না আমি। আসছি।”

রিকশা পেয়ে উঠে বসলো তাহসী।
-“তাহসী নামো।”

তাহসী শুনলো না। চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে গেল। তনন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তাহসী চোখের দৃষ্টি সীমার বাইরে যাওয়ার পর বুঝলো তাহসীর সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে সে। তনন ফোন বের করে তাহসীর ফোনে কল দিল। যা ভেবেছিল তাই,তাহসী ফোন ধরলো না। তনন ‘স্যরি’ লিখে এসএমএস দিল।
তনন-ও একটা রিকশা নিয়ে তাহসীর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কিন্তু তাহসীর বাসা পর্যন্ত যেতে হলো না। জ্যামের কারণে তাহসী আটকা পড়েছে। তনন এই রাস্তা টুকুর ভাড়া মিটিয়ে রিকশা থেকে নেমে গেল। তাহসীর রিকশার কাছে যেয়ে শিওর হলো তাহসী কিনা। এরপর তাহসীর পাশে উঠে বসলো। তাহসী চমকিত দৃষ্টিতে তাকালো।

তনন জড়িয়ে নিল তাহসীকে।
-“স্যরি।”

-“ছাড়ো দেখবে সবাই।”

তনন ছেড়ে দিল। কি অবস্থা মানুষ বিয়ে না করে কত কি করে। আর সে সামান্য জড়িয়ে ধরতেই পারছে না। হুড উঠিয়ে রিকশায় চড়া তাহসীর পছন্দ না।
-“স্যরি, তাহসী। আসলে আমি ওইভাবে বলতে চাইনি।”

-“থাক তনন। আর কিছু বলতে হবে না।”

-“আই এম এক্সট্রিমলি স্যরি। আমার আজ মেজাজ খারাপ ছিল। তোমার উপর রাগ দেখাতে চাইনি, তবুও কিভাবে..।‌ যাইহোক এমন আর হবে না। আমি জানি তুমি আমার থেকে কিছু নিতে চাও না এমনিতেই। এভাবে বলার জন্য স্যরি তাহসী।”

-“হয়েছে।”
অন্যদিকে তাকিয়ে থেকে উত্তর দিল তাহসী।

তনন কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর বললো,
-“রিকশা ঘোরাতে বলি?”

-“কি কেনার আছে কিনে নাও। ওগুলো কিনতে আশা করি আমাকে লাগবে না। শুধু শুধু এখানে এসে সময় নষ্ট করছো।”

-“তাহসী!”

তাহসী কিছুই বললো না। তনন বললো,
-“যেখানে আমি একবার স্যরি বলি না, সেখানে কয়েকবার বলে ফেলেছি। আমারই ভুল হয়েছে এইভাবে আসা। তুমি থাকো।”

তনন নামতে যেয়ে নামলো না। পুনরায় বললো,
-“শপিং ব্যাগগুলো নাও। পৌঁছে দিও আমার বাসায়। তুমি তো আগে যাচ্ছো।”
পরক্ষণেই বললো,
-“না,থাক। তোমাকে লাগবে না।”

জ্যাম তখনই ছাড়লো। তনন নামতে গেলে তাহসী হাত ধরে আটকালো।
-“এখনই পড়ে যাচ্ছিল আর বড় বড় কথা!”
অন্যদিকে তাকিয়ে ভেঙচি দিয়ে বললো তাহসী।

তনন কিছু না বলে বসে থাকলো। তাহসী নিজ থেকেই কথা বললো এবার।
-“ভাবীকে চেইন না দিয়ে একটা ব্রেসলেট দিই। তুমি হাফ দিবে,আমি হাফ!”

-“সিরিয়াসলি?”

তাহসী কিছু বললো না, গাল ফুলালো। কিছু কিছু কথা সে বারবার বলতে পছন্দ করে না। একে তো তনন রাজি হয় কিনা সেইটা নিয়ে ভাবছে। রাজি না হলেই তো তাহসীর অপমান। আর তনন মজা করছে!

তনন তাহসীর গাল টেনে বললো,
-“ওকে,গাল ফুলানো লাগবে না।”

তাহসী গালে হাত দিল। ব্যথা লেগেছে একটু। তনন তাহসীর হাত সরিয়ে নিয়ে গালে চুমু খেল নিঃশব্দে। তাহসী চোখ বড় বড় করে তাকালো। আজ বলেই বসলো,
-“অসভ্য।”

-“সভ্য ছিলাম কবে?”

তাহসীর ফ্ল্যাটের সামনে পৌঁছালে তাহসী তননকে একটু দাঁড়াতে বললো। তনন জানতে চাইলে কিছু বললো না। কিছুক্ষণ বাদে তাহসী আসলো। নিজের হাতে থাকা টিফিন বক্স তননের হাতে দিল। তনন জিজ্ঞেস করলো,
-“কি আছে এতে?”

-“ওরা রান্না করলো, তাই ভাবলাম নিয়ে আসি।”
তাহসী উত্তর দিয়ে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না। লাজুক হেসে চলে গেল। তননের মন চাইলো লজ্জায় রাঙা গাল ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু সে সুযোগ আর পেল না।
তনন প্রচুর খুশি হলো। তাহসী তবে স্বাভাবিক হচ্ছে। দুপুরে খাইনি আজ। হোস্টেলের রান্না থেকে নিশ্চয়ই তাহসীর রান্না ভালো হবে।

🍁🍁🍁
পরেরদিন,
তাহসী সারাদিন হীনমন্যতায় ভুগেছে তননকে কল দিবে কি দিবে না। তনন বলেছিল আজ ফ্রি না। আবার সকালে একবার কল দিয়ে সারাদিন আর কথা হয়নি।
বিকেলবেলা তাহসী নিজেই কল দিল তননকে। তখনও আছরের আযান হয়নি।
দুইবারের সময় তনন রিসিভ করলো। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,
-“বলো।”

সাধারণত তনন এভাবে ডিরেক্ট কথা শুরু করে না। তাই তাহসী অবাক হলো। আবার ঘুমিয়ে ছিল,এটা‌ বুঝলো তাহসী। তনন তো এই সময়ে ঘুমায় না!
উৎকন্ঠা নিয়ে তাহসী বললো,
-“ঘুমিয়ে ছিলে এই সময়? আবার জ্বর এসেছে নাকি?”

-“না, একটু টায়ার্ড ছিলাম। এখন বেশ আছি।”

-“যাবে বাইরে?”

-“এখন নাকি নামাজ পড়ে? আচ্ছা যাবো। কালকের বাকিগুলো তো কেনা হয়নি।”

-“আমি এখনই ফরজ নামাজ পড়ে নিচ্ছি। তুমি এসো। আযান দিলে মসজিদ দেখে পড়ে নিও।”

-“ওকে।”

-“তুমি একবারে শপিংমলে আসো। বারবার এখানে আসা ঝামেলা।”
কল কেটে তাহসী লোকেশন বলে দিল মেসেজে।

___________

তননের দেখা পেতেই তাহসী এগিয়ে গেল। তাহসীও এখানে এসে দাঁড়িয়েছে সবে দুই তিন মিনিট।
কুশল বিনিময় করে তনন বললো,
-“অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছিস নাকি?”

-“না।”

তননকে আজ অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে। অন্যান্য দিনের মতো উৎফুল্লতা নেই। তাহসী এই ব্যাপারে কিছু বললো না। তনন তাহসীর হাত ধরে শপিং মলের ভিতরে ঢুকলো।
তাহসী নিজের ড্রেস দেখতে শুরু করলো। দুইটা শপিংমল দেখার পর তনন বললো,
-“কাল তো খুব তাড়াতাড়ি চয়েস করলে। আর আজ? ওহ আল্লাহ!”
থেমে পুনরায় বললো,
-“তার মানে কি কাল কোনোরকমে চয়েস করেছো?”

-“না, তুমি দিলে তোমার পছন্দের। আর তনুর টা ভালো লেগেছিল। আমার অনেক টাইম লাগে। সন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে।”

-“আজান হচ্ছে। আমি নামাজ পড়ে আসবো?”

-“নিউ মার্কেট যাবো। ওখানে যেয়ে নামাজ পড়ো। চলো।”

-“আজ আমাকে পাগল না বানিয়ে দাও।”

-“আজ ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমাকে।”

তনন কিছু বললো না। রিকশায় উঠে তাহসী বললো,
-“কাল থেকে একটা বিষয় চেপে যাচ্ছো। ভাবলাম বলবো না, হয়তো ব্যক্তিগত। এখন মনে হচ্ছে গুরুতর!”

-“আম্মু কে বলো না আবার। আমি আজ মেসে উঠেছি।”

তাহসী বিস্ময় নিয়ে বললো,
-“কেন?”

-“রুমে নতুন ছেলে আসছে। ঝামেলা হয়েছে। রুমে এসে সিগারেট ধরায় কিছু বলিনি। কিন্তু আমার মনে হলো নেশাজাতীয় কিছু খায়। তাই আমিই সরে আসলাম। হলের হেডকে জানিয়ে লাভ হয়নি। তাই ভাবলাম ঝামেলা মুক্ত থাকি।”

-“আগে থেকে বলতে রিহান ভাইয়া ছিল যে।”

-“রিহান স্যার? প্রয়োজন নেই। কেন তুমি বলে দিতে?”

-“উহু। উনি কিন্তু বাবার বন্ধুর ছেলের পাশাপাশি ভাইয়ার বন্ধুও হন। ভাইয়াকে বললেই হয়ে যেত।”

-“ওহ্। এটা সেদিন বলোনি। উনি তোমাকে পছন্দ করতো না?”

তাহসী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
-“তোমাকে বলেছে উল্টাপাল্টা কিছু?”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১৫
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তাহসী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
-“তোমাকে বলেছে উল্টাপাল্টা কিছু?”

-“না, সেইদিন দেখেই মনে হচ্ছিল।”

-“হ্যা, করতো।”
তনন আর কিছু বললো না।
তাহসী পুনরায় বললো,
-“আজ মেসে উঠার জন্যই ব্যস্ত ছিলে তাহলে?”

-“হ্যা। আর কাল এই জন্যই মেজাজ খারাপ ছিল।”

পৌঁছানোর পর তনন প্রথমে নামাজ পড়ে নিল। তাহসী কসমেটিকস এর দোকান ঘুরে দেখতে লাগলো।
তনন আসলে দুই তিন দোকান দেখার পর তাহসীর একটা রেডিমেড থ্রিপিচ পছন্দ হলো। তনন বললো,
-“তুমি থ্রিপিচ পড়ো না, কাল বললে! আর কখনো পড়তেও দেখিনি।”

-“আরে জামাটা তো গোল। আর থ্রিপিস কিনেছি এর আগে। বাট বোঝা যায় না। কারণ আমি থ্রিপিসের পায়জামা পড়ি না, ওইটা ফেলে দিয়ে এর সাথে লেগিন্স পড়ি।”

-“তাহলে কিনে লাভ কি হলো?”

-“এখন একটাও টপস পছন্দ হয়নি। আর বাবা পোশাক কেনার সময় একটা জিনিস দেখে সেইটা সুতি কাপড়ের কিনা। এটাও তো সুতি কাপড়ের। আর জামাটা তো পছন্দ হয়েছে। আমি লেগিন্স পড়ি যেহেতু তাই গোল জামা পড়ি।”

তনন আর কিছু বললো না। মাঝে মাঝে মনে হয় তাহসীকে সারাজীবন ধরেও বুঝবে না। তাহসী লেডিস প্যান্টের দিকে গেল। তনন ছুটলো পিছু পিছু।
তাহসী দুইটা প্যান্ট হাতে নিতেই বললো,
-“আচ্ছা। তুমি নাকি লেগিন্স পড়ো শুধু। অথচ জিন্স পড়তে দেখেছি বিয়ের আগেও আর এখন তো হাতেই দেখা যাচ্ছে।”

-“জিন্স না এইটা। লেগিন্স কিন্তু একটু মোটা আর নেভিব্লু কালার।”

-“তুমি পারোও বটে।”

তাহসী এরপর স্কার্ফ কিনে চুড়ি, ব্রেসলেট সহ আরো কিছু কিনলো। তনন বাকিগুলো কিনলো।
এগুলো কেনা শেষে তনন ঘড়ি দেখে নিয়ে বললো,
-“আলহামদুলিল্লাহ। অবশেষে হলো। মাগরিবের আজান দিতে চল্লিশ, পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাকি। সন্ধ্যার আগেই হলো।”

-“কে বললো হয়েছে? আমি এখনো আরেকটা ড্রেস কিনবো। আর জুতা কিনবো। ঘড়িও কিনতে হবে। ওহ্ আরেকটা কথা তো ভুলেই গেছি। ব্যাংকে যেতে হবে।”

-“এখনও এতকিছু? ব্যাংকে কেন?”

-“টাকা তুলবো। ভাবীর গিফটের জন্য।”

-“জমানো টাকা তোলার মানে কি? তোর বাবার দেওয়ায় তো হচ্ছে।”

-“আরে বাবার টাকা না। আমার টিউশন করে জমানো টাকা।”

তনন হতবাক হয়ে গেল।
-“কিহ? কিসের টিউশন?”

-“আমি টিউশন করায় তো দুইটা। লাগে না টাকা, হাতখরচ রেখে, কিছু পথশিশুদের দিয়ে বাকিটুকু ব্যাংকে রেখে দিই।”

-“আমাকে তো বলিস নি।”

-“আল্লাহ আর আমি ছাড়া কেউ জানেনা। আর ফ্ল্যাটের গুলো জানে। সব কাজ সবাইকে জানিয়ে করতে ভালো লাগে না, মনে শান্তি লাগে না।”

-“কিন্তু আমরা বিয়ের রাতে দুইজন দুইজনকে কথা দিয়েছিলাম তাহসী, যে আমাদের মাঝে অজানা কিছু থাকবে না।”

-“তোর মনে হয় তুই আমাকে সব বলিস? আর নতুন করে কিছু করলে তো সেইটা জানিস। আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে আমার ভালো লাগে না। দ্রুত চল এসব বাদ দিয়ে। সময় চলে যাচ্ছে। রাত করে ব্যাংকে যাওয়া রিস্ক।”

-“আমাকে জিজ্ঞেস করিসনি আমিও বলিনি। আগ বাড়িয়ে বলতে আমি নিজেও পছন্দ করি না। তা আমার না জানা আর কি কি‌ আছে? ”

-“জানতে চাইলে প্রশ্ন করতে হবে।‌ এখন চল।”
তনন কিছু না বলে তাহসীর সাথে অন্য দোকানে ঢুকলো।
যেতে যেতে তনন বললো,
-“আমার কেনা ড্রেস কি পরবি না? এতগুলো কিনছিস যে!”

-“আরে ওইটা আর এইটা দিয়ে দুইটা হয়েছে। আরো একটা কিনেছি ভাইয়ার সাথে এসেছিলাম। তোকে বলা হয়নি। তিনটা হলো। আর একটা নিলে চারটা। চারটা চারদিন।”

-“ওহ্। কিন্তু তিনদিন না?”

-“না, আপনি যেন বিয়ের পরদিনই ফুরুত! বিয়ের আগের দিন, বিয়ের দিন, পরের দিন আর তার পরের দিন ভাবীকে আনতে যাবো একবারের মতো।”

-“ওহ্, আচ্ছা!”
তননের মন খারাপ হলো কিছুটা। সে তো শুধু একটাই কিনলো তনুর জন্য! মায়ের জন্যেও তো একটা শাড়ি কিনেছে। ভালো ড্রেস আছে ওদের তাও তো দুইদিন হবে। আর একদিন!

ইতিমধ্যে তাহসী ড্রেস দেখতে শুরু করে দিয়েছে। তাহসী তননের দিকে তাকিয়ে দুইটা ড্রেস দেখিয়ে বললো,
-“ওয়াও! কেন যে তনুর জন্য তখন ওইটা নিয়েছি। এইটা বেশি সুন্দর হতো।”

তনন আলতো হাসলো। বললো,
-“কি আর করার। ভাগ্যে আছে ওইটা!”

তাহসী তননের কথা পাত্তা না দিয়ে দুইটাই হাতে নিল। দুইটার টাকা দিয়ে বের হয়ে আসার সময় তনন বললো,
-“পাঁচটা হয়ে গেল যে!”

-“হু। ওতো বোঝা লাগছে না।”

তাহসী ছেলেদের পোশাকের দোকানে ঢুকলে তনন বিস্ময় নিয়ে বললো,
-“ছেলেদের দোকানে কি?”

-“কাজ আছে। ভাইয়ার জন্য শার্ট নিবো ভাবছি। ঘড়ি ও কিনতে হবে। ভালো কথা! টাকা আছে না তোমার কাছে? ধার দাও। ব্যাংকে যেয়ে দিয়ে দিবো। আবার টাকা দিতে চেও না, তাহলে তো আর আমার নিজে কিনে গিফট দেওয়া হবে না।”

-“আচ্ছা। কিন্তু তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমি আজ অনেক টায়ার্ড।”

তাহসী সব শপিং ব্যাগ তননের হাতে দিয়ে দোকানদারের কাছ থেকে ফিতা নিল বলে। ফিতা তননের কাঁধে রেখে শার্টের মাপ নিতে গেলে তনন বললো,
-“আরে আমাকে মাপ কেন?”

-“আমি জেনে বসে আছি ভাইয়ার মাপ? তোমার মতোই তো ভাইয়া লম্বা। দুইজন তো প্রায় সমান মনে হয়। আর ভাইয়া তোমার মতোই, না?”

-“হুম।”

তাহসী তননের প্যান্টের মাপ ও নিল। এরপর দুইটা শার্ট আর দুইটা প্যান্ট কিনলো। তননের একটু খারাপ লাগলো মনে মনে তাহসী তো তাকে একবার বলতে পারতো দেওয়ার কথা। দিক আর না দিক।

দোকানে ছেলেদের সব কিছুই আছে। তাহসী সুন্দর দেখে কাপল ওয়াচ নিল। এরপর নাঈমের জন্য একটা ওয়াচ কিনলো।
পরক্ষণেই কিছু একটা মনে পড়তেই চুড়ির দোকানে গেল। একসেট চুড়ি কিনতেই তনন বললো,
-“জীবনেও তো চুড়ি পরো না। দুই দিনের জন্য টাকা নষ্ট।”

-“বেশি বোঝা লাগছে না। নূপুর জোড়াও খুব সুন্দর। কিন্তু থাক। চুড়ি আমি বাসার মধ্যে মাঝে মাঝে কিন্তু নূপুর পরি না। থাক এটা।”

দুইজনে বের হয়ে মেইনরোডে আসলো। তনন বললো,
-“হয়েছে সব?”

-“আপাতত মনে পড়ছে না। আর মনে পড়লে কিনে নিবো। বাড়ি যেয়েও পারবোনে, খুলনা শহর বেশি দূরে না। আর যাচ্ছিই তো পরে।”

তনন তাহসীকে দাঁড়াতে বলে পুনরায় মলের ভিতরে ঢুকলো। কিছুক্ষণ পর ফিরে আসলে তাহসী জিজ্ঞেস করলে তনন বললো না। শুধু বললো এমনিই। তাহসী ও আর ঘাটালো না।

তনন রিকশা ডাকতে গেলেই তাহসী তননের হাত ধরে টান দিল। তনন প্রশ্নসূচক চাহনিতে তাকাতেই তাহসী বললো,
-“মেইন জিনিস ভুলে গেছি! বাবা আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে।”

-“এইসব কি কথা!”

তাহসী কিছু বললো না। এসব কথা সে বলে না। কিন্তু মুখে এসে গেছে। এমন একটা ভুল করেছে। তাহসী শার্ট কেনা দোকানেই গেল। ওখানে যেয়ে একটা নেভি ব্লু কালারের ব্লেজার পছন্দ করে তনন কে জিজ্ঞেস করলো,
-“কেমন লাগছে এইটা?”

তনন মন থেকেই উত্তর দিল,
-“খুব সুন্দর! কিন্তু মনে হচ্ছে তুমি কনেপক্ষের দায়িত্ব পালন করছো! ছেলের জিনিস তো কনেপক্ষ থেকে আসে।”

-“হ্যা। এবার এর সাথে মিলিয়ে শার্ট কোনটা দেখো।”

-“আরেকটা শার্ট?”

-“হ্যা। তাড়াতাড়ি।”

তনন মিলিয়ে নিয়ে শার্ট টা তাহসীর হাতে দিল।
-“পারফেক্ট ম্যাচ, নাও।”

তাহসী দরদাম করে টাকা দিল। একদরের দোকান বলাতেই তাহসী বললো,
-“একটু আগেই তো এতকিছু নিয়ে গেলাম। আবার এসেছি অন্য টা তে না যেয়ে। হলে দেন, না হলে থাক।”

অগত্যা সেলারকে দিতে হলো। তাহসী নেভি ব্লু কালারের একটা ঘড়ি আর একটা জুতাও নিল তননের মাপের। তনন বললো,
-“ফাজলামি পাইছো? পা ও কি সেইম হবে!”

-“হলে হলো, না হলে নাই। আমি কি এখন ভাইয়াকে ডাকতে যাবো!”

তনন কিছু বললো না। ব্লেজারের টাকা বের করে দিল আর বাকিগুলোর টাকা তননের থেকে নিল।

তনন বললো,
-“এই টাকা আসলো কোথা থেকে এখন?”

-“ব্লেজারের কথাও মনে ছিল না, টাকার কথাও না।”
যুক্তি দেখালো তাহসী। তনন মেনে নিল।

তাহসী এবার মেয়েদের জুতার দোকানে ঢুকে একটা গোলাপী,সাদা মেশানো জুতা কিনলো।
তনন বললো,
-“হয়েছে?”

-“হুম। চলো।”

দুজনে মিলে ব্যাংকে গেল এবার। তাহসী তননকে বাকি টাকা বুঝিয়ে দিল।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-১২+১৩

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১২
অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ

নাহিদ বললো ,
-“আমার কথা বলেছো?”

-“আমি কিভাবে বলি?”
আমতা আমতা করে জবাব দিল মিথিলা।

-“তাহলে আমাকেই জানাতে হয়। ছেলে কি ঠিক করে ফেলেছে?”

নাহিদের স্বাভাবিক কন্ঠস্বর শুনে মিথিলা সাহস করে বললো,
-“না,একটা ছেলে আসার কথা পরশু। আমাকে কাল বাড়ি যেতে বলেছে।”

-“তাহলে যাচ্ছো কাল?”
মিথিলার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নাহিদ বললো।

মিথিলা ভড়কে গেল।
-“বুঝতে পারছি না।”

-“যেয়ে দেখো। আমি ইনশাআল্লাহ আজ আম্মুর সাথে কথা বলবো।”

মিথিলা মাথা নাড়ালো। দুজনে আরেকটু ঘোরাঘুরি করলো। যাওয়ার সময় মিথিলা বললো,
-“যাবো? ভয় লাগছে।”

-“তোমার ইচ্ছে।”
নাহিদ উত্তর দিল। এরপর মিথিলা কে রিকশা তে উঠিয়ে দিয়ে নিজেও অন্য একটা রিকশাতে উঠলো।

🍁🍁🍁
তনন আজ তাহসীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছে। সবুজ ঘাস ঘাস জায়গা দেখে তার উপর যেয়ে বসলো তনন। তাহসীকে পাশে বসার জন্য ইশারা করলো। তাহসী ইতস্তত করলো প্রথমে।
তনন পাশের জায়গা হাত দিয়ে একটু ঝেড়ে দিয়ে মুচকি হেসে বলল,
-“বসো। নোংরা নেই।”

তাহসী বসলো। সেদিনের পর এক সপ্তাহ কেটে গেছে। তনন এখন পরিপূর্ণ সুস্থ। এখানে আসতে আসতে দু’জনের মধ্যে শুধু কুশল বিনিময় হয়েছে। তনন তাহসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“এখানে কেমন লাগছে?”

-“ভালো।”

-“আর আমাকে?”
মিষ্টি হেসে প্রশ্ন করলো তনন।

তাহসীর শরীরে অজানা শিহরণ বয়ে গেল। আসতে আসতে বেশ কয়েক বার আড়চোখে তননের দিকে তাকানো হয়েছে। বরাবরের মতই তনন শার্ট পড়েছে, সাথে জিন্স এর প্যান্ট। সামনের দিকে তাকিয়ে তাহসী উত্তর দিল,
-“ভালো।”

তনন তাহসীর বাম হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিল। তাহসী কেঁপে একবার তননের দিকে তাকালো। তাহসীর লাজুকতার মাত্রা আগের তুলনায় বাড়লো। তাহসীর হাত নিয়ে খেলতে তনন বলে,
-“কিছু প্রশ্ন জমে আছে তোর মনে, তাই না? আজ সেগুলোর জবাব ই দিবো।”

তাহসী কোনো উত্তর দিল না। তার শুধু মনে হচ্ছে সময় এখানেই থেমে যাক। তনন পুনরায় বলে,
-“আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতাম তাহসী। ভেবেছিলাম পড়াশোনা শেষ হলেই একবারে জানাবো। এতটুকু শিওর ছিলাম তুমি পড়াশোনা শেষ না করে বিয়ে করবে না। আর বিয়ে ব্যতীত অন্য কোনো সম্পর্কে জড়াবে না। তাই নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু তোমার বিয়ের কথা ওঠার পর কি যে হলো!”

তাহসী লজ্জা নিয়েই জিজ্ঞেস করলো,
-“কবে থেকে?”

তনন শরীর দুলিয়ে হেসে উঠলো। তাহসী আরো লজ্জা পেল। তনন কিছু বললো না। তার হাসির শব্দে আশেপাশের কেউ কেউ এদিকে তাকিয়েছে। তনন উঠে দাঁড়িয়ে তাহসী কেও তুললো। ধুলো ঝেড়ে বললো,
-“চলো হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।”

তনন তাহসীর হাত ছাড়লো না।
-“ক্লাস নাইন অর টেন ধরো।”

তাহসী তননের দিকে না তাকিয়েই মুখ ফোলালো। এটা কোনো সদুত্তর হলো নাকি! তননের ঠিক ই মনে আছে।
তনন তাহসীর গাল টেনে দিল। হেসে বলল,
-“গাল ফোলাতে হবে না। ক্লাস এইট থেকে পছন্দ করি।”

তাহসী কে কিছু না বলতে দেখে তনন পুনরায় বললো,
-“পছন্দ, বিয়ে করে নিয়েছি। আশা করি আর কোনো প্রশ্ন নেই। এখন কোথায় যাবে বলো।”

-“এখানে কি হলো?”

-“বেশি মানুষ! কোলাহল বেশি। তোমার এখানে ভালো লাগছে? তাহলে বসি চলো আবার।”

-“ভালো ও লাগছে না, খারাপ ও লাগছে না।”

-“তো নেক্সট বাড়ি যাচ্ছো কবে?”

-“সামনের উইকে। ভাইয়া যাবে। ভাইয়ার সাথেই যাবো।”

-“আমার বাসায় কবে যাচ্ছো?”

-“আমি কি জানি!”

-“তো কে জানে? আচ্ছা বাদ দাও। ফুসকা খাবে? সামনে চলো।”

তাহসী সামনে তাকিয়ে দেখলো কিছু দূরেই ফুসকার স্টল। তনন বলার পর সে আর না করলো না। দুই প্লেট ফুসকা শেষ করে পুনরায় হাঁটতে শুরু করলো ওরা। তনন শুধু দুইটা মুখে নিয়েছে।

তনন হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো। সাথে তাহসী ও দাঁড়ালো। তাহসী দেখলো ওদের সামনে একটা কাপল দাঁড়িয়ে।
ছেলেটি পাশের মেয়েটির উদ্দেশ্যে বললো,
-“বুয়েটের বড় ভাই।”
এরপর তননকে উদ্দেশ্য করে দাঁত বের করে বললো,
-“আসসালামু আলাইকুম ভাই। এটা ভাবী নাকি?”

তনন বললো,
-“হ্যা।”

ছেলেটি লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
-“এটাও আপনার ভাবী।”
পাশে থাকা মেয়েটা কে বললো,
-“চিনেছো? গত সপ্তাহে আমাদের ধমক দিল না আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে!”

তনন হাসিমুখেই বললো,
-“তাহলে এটা সত্যিই ভাবী?”

-“হ্যা ভাই।”
ছেলেটির ভাবভঙ্গির পরিবর্তন হলো না।
মেয়েটি বলে উঠলো,
-“গত সপ্তাহে আমাদের জ্ঞান দিলেন যেন এইসব সম্পর্কে না থাকি। আর আজ আপনিই! হাহা।”

তাহসী কিছুই বুঝছিল না। এই কথা বলার পর সবটা পরিস্কার হলো তার কাছে।
তনন একটু সরে যেয়ে কাউকে ফোন দিয়ে কথা বললো। তারপর ওদের কাছে এসে বললো,
-“তাহলে তোমাদের চলো রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়।”

দুজনে রাজি হয়ে গেল। পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট। ওখানে যাওয়ার জন্য সেদিকে যাচ্ছিল ছেলে আর মেয়েটা। তনন বললো,
-“ওখানে না। আমার পরিচিত আছে আলাদা। ওখানে চলো।”

দুইটা রিকশা তননের বলা ঠিকানায় চলতে লাগলো। ওরা আলাদা হতেই তনন তাহসীর উদ্দেশ্যে বললো,
-“বুয়েটেই পড়ে। আমার দুই ব্যাচ জুনিয়র। খুব ফাজিল।”

-“বুঝেছি কথা শুনেই।”

-“হু। গত সপ্তাহে দেখে নিষেধ করছি তাই শোধ তোলার চেষ্টা করছে।”

-“হু, আর খুব ভালো করেই বুঝছি মোটেও রেস্টুরেন্টে যাচ্ছি না আমরা।”

-“রাইট। কাজী অফিসে যাচ্ছি। বাকিটা যেয়ে দেখবে।”

কিছুক্ষণ পরেই রিকশা দুইটা কাজী অফিসের সামনে যেয়ে থামলো। এটার পাশেও একটা রেস্টুরেন্ট আছে। রিকশা দুইটা ওদের নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। তননের বন্ধুরা এগিয়ে আসলো।

ছেলেটি বললো,
-“আপনারাও দেখি আছেন। তনন ভাই কি ট্রিট দিবেন সবাইকে?”

তননের এক ফ্রেন্ড বললো,
-“তনন কেন ট্রিট দিবে? বিয়ে তোর,ট্রিট তুই দিবি।”

-“মানে?”
ছেলেটি ঘামতে শুরু করলো। কাজী অফিস সেও দেখেছে।
তননের দুই বন্ধু এসে ওদের সামনে আগাতে নির্দেশ দিল।

ছেলেটি ভয়ে ভয়ে উচ্চারণ করলো,
-“ভাই আমাদের কোথায় নিয়ে আসলেন?”

-“তুই ই তো বললি এটা আমাদের ভাবী! ভয় নেই। তোদের কাবিননামা দেখা ছেড়ে দিচ্ছি, নাহলে বিয়ে করেনে।”

মেয়েটি সাহস করে বললো,
-“আপনি আগে করেন।”

-“আমি কয়েক মাস আগেই করেছি। তোমাদের হারাম সম্পর্কে থাকার দরকার নেই। বিয়ে করে নাও। তারপর পরিবারকে জানিয়ে করো।”

তননের বন্ধুরা বললো,
-“তনন তুই যা। একে আমরা দেখে নিবো।”

তনন সায় দিয়ে তাহসীকে নিয়ে সরে আসলো। তাহসী বললো,
-“বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?”

-“ওসব নিয়ে মাথা ঘামিও না। একটু ভয় দেখানো। দুমিনিট বাদেই ছেড়ে দিবে। তুমি বরং এটা ভাবো আমার সাথে কিভাবে ইজি হবে।”

তাহসী মুখ ঘুরিয়ে নিল। তনন বলল,
-“নীলক্ষেত যাবে? তোমার আবার বই পড়ার শখ।”

-“না, বই আছে কিছু না পড়া। দেড়মাস পড়ে সেমিস্টার ফাইনাল। এখন আপাতত বাদ।”

-“আচ্ছা তাহলে কোথায় যাওয়া যায়!”

তাহসী ঘড়ি দেখে নিয়ে বললো,
-“মাগরিবের আজান হবে আধা ঘন্টা পর। আজ কোথাও যেয়ে কাজ নেই।”

-“কেন? আমি সাথে থাকলেও ভয় লাগবে?”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১৩
অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ

তাহসী ঘড়ি দেখে নিয়ে বললো,
-“মাগরিবের আজান হবে আধা ঘন্টা পর। আজ কোথাও যেয়ে কাজ নেই।”

-“কেন? আমি সাথে থাকলেও ভয় লাগবে?”

-“এমন কিছু নয়। আমি অন্যভা…..”

তনন হাঁটা থামিয়ে দাঁড়ালো। বললো,
-“বুঝেছি।”
একটা রিকশা সামনে পড়তেই তনন রিকশা ডেকে উঠে বসলো। রিকশাওয়ালাকে গন্তব্য বলে তাহসীর দিকে তাকালো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি তে যেতে বলেছে তনন। তাহসী মুচকি হেসে বলল,
-“নামাজ কালাম নেই?”

তনন মাথা চুলকে হাসলো। বললো,
-“আছে। নামাজের সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাবো।”

-“আজ মনে হচ্ছে স্টাডির চাপ কম!”

-“তা আছে। তবে এখন….”

তাহসী ভ্রু উঁচিয়ে পরবর্তী অংশ জানতে চাইলো। তনন কিছু না বলে চারিদিকে দেখে নিয়ে রিকশাওয়ালা কে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে তাহসীর দিকে তাকালো। তাহসী তখনও প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য তাকিয়ে আছে। তনন নিঃশব্দে প্রায় তড়িৎগতিতে তাহসীর ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে পুনরায় চলে আসল নিজের অবস্থানে।
এদিকে তাহসী হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে তননের দিকে। তনন তা দেখে হাসলো।
তাহসী বুঝে উঠতেই অন্যদিকে তাকালো। এই ছেলের কি লাজ লজ্জা নেই? না হলে হুড তোলা রিকশায়! মনে মনে ভাবছে তাহসী।

কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছাতেই ওরা রিকশা থেকে নামলো। তনন ভাড়া মিটিয়ে হাঁটতে শুরু করলে তাহসী তার পিছন পিছন যেতে লাগলো। তনন ফিসফিস করে বললো,
-“রাগ করেছো?”

তাহসী মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। তনন ঝালমুড়ি কিনে নিয়ে তাহসীর হাতে দিল। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটলো ওরা। স্বাভাবিক কথাবার্তা হলো। মাগরিবের আজান শুরু হতেই তনন রিকশা ডাকলো।
তাহসীর ফ্ল্যাট এখান থেকে কাছেই। তাই বেশি সময় লাগল না ওদের পৌঁছাতে।
বিদায় নেওয়ার সময় তনন বললো,
-“আজ বিকাল কেমন কাটলো?”

তাহসী লাজুক হেসে বলল,
-“আলহামদুলিল্লাহ।”

-“আর কি’স?”
তাহসীর কানের কাছে মুখ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো তনন।

তাহসী তনন কে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেল। তনন মাথা চুলকে হেসে চলে গেল।
তাহসী উপরে এসে হাঁপাতে লাগলো। লজ্জা লজ্জা ভাব লক্ষ্য করে আঁখি বললো,
-“কি রে তনন কি করেছে? এত লজ্জা পাচ্ছিস?”

তাহসী চোখ পাকিয়ে তাকালো। আঁখি কে সরিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বললো,
-“কিছু না। সামনে থেকে সর, নামাজের সময় চলে যাবে।”

আঁখি হাসতে হাসতে চলে গেল রুম থেকে।

🍁🍁🍁
সময় নিজ গতিতে এগিয়ে চলে। তাকে থামানো সম্ভব নয়। এমনি দেখতে দেখতে কোনদিক দিয়ে যে দুইমাস চলে গেল তাহসী বুঝতেই পারলো না। সে অবশ্য ব্যস্ত ছিল। তৃতীয় বর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল ছিল। এতো দিন বইয়ে মুখ গুজেই থেকেছে। তননের সাথে কথা হয়েছে কম। এই দুইমাসে মাত্র তিনদিন তননের সাথে দেখা হয়ে সময় কাটিয়েছে ভাবতেই মনমরা হয়ে গেল তাহসী।
তবে আজ তনন দেখা করতে চেয়েছে। আজকেই তাহসীর পরীক্ষা শেষ হলো। আছরের নামাজ পড়ে তাহসী তৈরি হয়ে নিল। তৈরি হওয়ার পাঁচ মিনিট বাদেই তননের কল আসলো। তাহসী ফোন-ই দেখছিল। ইচ্ছা করেই দেরি করে ফোন রিসিভ করলো। সাথে সাথে ধরলো না, শেষে আবার তনন বলে বসে সে ফোন নিয়েই বসে ছিল কিনা। এই ছেলের মুখে কিছু আটকায় না।

তনন তাহসী কে নিচে নামতে বললে তাহসীও বিসমিল্লাহ বলে বের হলো। বাসার গেট খুলে বের হতেই তননের দেখা পেল। রাস্তার বিপরীত পাশে রিকশা তে বসে আছে। তাহসী রাস্তা পার হয়ে রিকশা তে উঠলো।

-“কেমন আছো?”
প্রতিবারের মতো তনন প্রথমে কথা বলে উঠলো।

-“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?”

-“আলহামদুলিল্লাহ।”

-“একবারে রিকশা নিয়ে তৈরি হয়ে আছো আজ!”

ততক্ষণে রিকশা চলতে শুরু করেছে।
-“হু। তোমার ভাবীর জন্য একটা চেইন নিতে হবে। আম্মু বলেছে বিয়েতে ওইটা দিতে।”

নাহিদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তাহসীর পরীক্ষার জন্যেও দেরি করা।
তাহসী প্রশ্ন করলো,
-“গোল্ড এর?”

-“তো?”

-“না, কিছু না।”

-“কেন? এটা ভালো হবে না?”

-“এমন কিছু না। আমি ভেবেছিলাম অন্য কিছু কিনবো।”

-“কি? তোমার আমার কি আলাদা দিতে চাচ্ছো?”

-“কেন একসাথে দেওয়ার কথা?”

-“না, এমন না। তোমার কথা শুনে বলছি। তোমার যা ইচ্ছা দাও। আম্মু আমাকে এটাই বললো।”

তাহসী চুপ থাকলো কিছুক্ষণ। একসাথে দেওয়া উচিত কি উচিত না সে নিজেই বুঝতে পারছে না। আলাদা দিলে কেমন দেখাবে? মনে প্রশ্ন না চেপে করেই বসলো,
-“আলাদা দিলে কেমন দেখাবে?”

-“আমি এতশত সম্পর্ক বুঝিনা। আম্মু টাকা পাঠালো তাই কিনতে যাচ্ছি।”

তনন দোকানে যেয়ে চেইন দেখাতে বললো। তাহসীর চোখ গেল এক দুলের দিকে। তৎক্ষণাৎ কিছু একটা ভেবে তননের কাছে সরে যেয়ে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,
-“বাজেট কত?”

তননও তাহসীর মতো নিম্ন স্বরে উত্তর দিল। তাহসী চেইনের সাথে সাথে কিছু দুল ও দেখলো। পরে দোকানদারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তননকে টেনে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলো।
তনন বললো,
-“কি হলো? এতগুলর মধ্যে একটাও পছন্দ হলো না? আরো শপিং আছে। কালকেই তো চলে যাবে। আজকের মধ্যে সব কমপ্লিট করতে হবে।”

-“আমিও ভেবেছিলাম গোল্ডের মধ্যে একটা ছোটখাটো রিং নিবো। তো আম্মুর থেকে আইডিয়া নিয়েছি প্রাইজের ব্যাপারে। এখানে মনে হলো একটু বেশি বেশি।”

-“হ্যা, আইডিয়া নিয়ে সব বুঝে বসে আছে! কোন শপে কমে দেবে শুনি? সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে।”

-“এখান থেকে নেওয়ার দরকার নেই। খুলনা থেকে নিতে হবে। ওখানে পরিচিত এক শপ আছে। পরিচিত বলতে ওখান থেকেই আমার ফ্যামিলির সবাই নেয়। আর সবচেয়ে বড় কথা যদি ঠকিয়ে দেয়?”

-“ওকে, হয়েছে। এবার চলুন।”

-“কোথায় এখন?”

-“ড্রেস।”

তনন প্রথমেই মেয়েদের পোশাক এর দিকে গেল। তাহসী অবাক হয়ে বললো,
-“মেয়েদের পোশাক যে? তনুর?”

-“হ্যা, আর তোমারও।”

-“আমার কেন?”

-“তুমি কিনবে না? তোমার-ই তো ভাইয়ের বিয়ে!”

-“আমি তো কাল কিনতে চেয়েছি। এখন তনুর টাই দেখো।”

তনন দাঁড়িয়ে পড়লো। বললো,
-“কাল মানে? কাল না তোমার বাস!”

-“না, পরশু টিকেট কেটে রেখেছে ভাইয়া। কাল শপিং করবো ভেবেছি। ভেবেছি আজ বলবো তোমাকে।”

-“ওহ্। আচ্ছা এসো।”
বলে তনন দরজা খুলে দোকানের ভিতরে ঢুকলো।

তাহসীকে দায়িত্ব দিয়ে তনন চুপ করে থাকলো। তাহসী খুঁজে খুঁজে একটা ড্রেস দেখালো। তননের ভালো লাগলো। তাহসী চেয়েছিল তনুর কাছে ছবি পাঠাবে। তারপর তনুর যেইটা পছন্দ হয়। তনন বলতে দিল না। তাহলে আর সারপ্রাইজ থাকবে না।
তনুর পোশাক পছন্দ শেষে তনন বললো,
-“এবার তুমি দেখো।‌ এরপর শাড়ির দিকে যেয়ে আম্মুর শাড়ি দেখবো। এই তুমিও শাড়ি পড়বে?”

-“নো ওয়ে। শাড়ি পড়ে দিনটা মাটি করতে পারবো না। খুব ঝামেলা!”

-“ওকে। টপস, থ্রিপিস যা খুশি দেখো।”

-“থ্রিপিস পড়িনা আমি। আর বললাম না কাল…”

-“কাল আমার সময় নেই। এখন দেখো।”

-“সময় নেই মানে? কাল না ক্লাস অফ।”

-“তো? আমি ফ্রি?”
তননের কথাটা কেমন রাগ মিশ্রিত শোনালো।
তাহসীর মন খারাপ হলো। বুঝতে না দিয়ে বলল,
-“ওহ্, ওকে।”

তনন নিজেই একটা টপস বের করলো। বললো,
-“এটা মনে হয় তোমার পছন্দ হবে আর মানাবেও। তুমি তো এই ধরণের ড্রেস পড়ো। আর খুব সিম্পল না, বিয়ের মধ্যে যেকোনো দিন পড়তে পারবে।”

তাহসী ইতিবাচক মাথা নাড়ালো। সে শুধু তননের ব্যবহার নিয়ে ভেবে যাচ্ছে। তননের এমন ব্যবহার আগেও দেখেছে,তবে বিয়ের পর এই প্রথম।
তনন আরেকটা লেগিংস নিল তাহসীর জন্য। ড্রেস এর সাথে মিল রেখে।
এবার শাড়ির দিকে গেল তনন। পিছু পিছু তাহসীও গেল। তনন যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। তাহসী বুঝতে পেরে বললো,
-“আমি শাড়ির কিছুই বুঝিনা। পছন্দ ও হয় না। আর যে শাড়ি পছন্দ করবো,মামুনি পড়তে পারবে না।”

তনন দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছু দেখলো। একদম আন্দাজের উপর একটা নিয়ে নিল।
এরপর কাউন্টারে গিয়ে তনন টাকা দিল। তাহসী বললো,
-“আরে আমারটাও দিবে নাকি?”

-“তো? আমি কিছু দিলে কি সেইটা নেওয়া যায় না? নাকি কম দামি হয়? আর্থিক অবস্থা তোমার মতো তো আমার না, এটা তোমাকে বুঝতে হবে!”

তাহসী রাগান্বিত হলেও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো। বলে উঠলো,
-”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-১০+১১

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১০

একমাস এভাবেই চলে গেছে। তনন অভিমান করে আর পরীক্ষার ব্যস্ততার কারণে যোগাযোগ করেনি তাহসীর সাথে। আর তনন একটা ফোন দেয়নি বলে তাহসী নিজ থেকে ফোন দেয়নি। দুজনেই দুজনের মতো ভেবে নিয়েছে। আর অভিমান করে দূরে থেকেছে।
দু’জনের মান অভিমানের পালা ভাঙ্গলো তননের পরীক্ষা শেষে। সত্যিই সত্যিই তননের পরীক্ষা শেষে নাতাশা রহমান নিজের ভাই বোন কে দাওয়াত করে নিয়ে আসলেন। তাহসী, তনন কেও যেতে হলো। তনন অবশ্য গ্রামেই ছিল। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে এসেছিল। তাহসী-ও ঢাকা থেকে এসেছিল।
দু’জনের দেখা হলে তনন-ই কথা বলে উঠেছিল।

ফ্ল্যাশব্যাক ইন্ড~~~~~~~~~~~~~~~~

🍂🍂🍂
তনন তাহসীর বিয়ের এখন চারমাস চলছে।

তাহসীর জড়তা নিয়ে তনন আজ বিরক্ত। তাহসীর বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে তনন। তাহসীর নাম্বারে কল দিলে তাহসী রিসিভ করলো।
কুশল বিনিময় না করেই তনন সরাসরি বললো,
-“রেডি হয়ে নিচে আসো। ওয়েট করছি।”

-“মেঘ করেছে না! চলে যাও। আমি যেতে পারব না আজ।”

-“তো? খুব দ্রুত আসো।”

-“প্লিজ আমি আজ যেতে পারবো না। চলে যাও।”
অনুনয় করে বললো তাহসী।

তননের রাগ হয়ে গেল। সবসময় নিজ থেকে তাহসী কে নিয়ে বের হতে, নিজ থেকে ফোন দিতে ভালো লাগে না। এখন তার প্রস্তাব নাকচ করায় রাগ হয়ে গেল তননের। তার উপর এতক্ষণ হেঁটে এসেছে সে।
-“তুই আসবি না তাই তো?”

তননের রাগান্বিত কন্ঠ শুনে তাহসী অবাক হলো। সে তো আজ অসুস্থ। যেতে পারবে না একেবারেই। তনন তো কোনোকিছু তে জোর করে না।
-“স্যরি। না বলে এসেছো কেন? আর্জেন্ট কিছু?”

-“ওকে। বাই।”
তনন কল কেটে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটতে শুরু করলো।
তাহসী হতভম্ব হয়ে তননের নামের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তাড়াহুড়ো করে কোনোরকমে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ালো। তনন চলে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। তাহসী কল দিল তননের নাম্বারে। তনন ফোন ধরলো না। পকেট থেকে ফোন‌ পর্যন্ত বের করলো না। তনন তাহসীর দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গেলেও তাহসী দুই তিনবার ফোন দিল। তনন ধরলো না। তখন বেশ ভালোই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাহসীর চিন্তা হলো একটু; বৃষ্টিতে ভিজলে তননের জ্বর আসে। তনন ফোন ধরলে তাও উপরে আসতে বলতে পারতো।

______________
রাতের বেলা ফোন দিয়ে সেলিনা শেখ তাহসী কে কথা শোনালেন। তাহসী চুপ থাকা ছাড়া কোনো কিছু বলতে পারলো না। যদিও সে ছেড়ে দেওয়ার মানুষ নয়। দোষ করলে কথা শুনবে এটা সমস্যা নেই। কিন্তু বিনা দোষে সেই দোষ কেউ নিজের ঘাড়ে নিবে কেন। তাহসী কি হয়েছে জানতে চাইলেই তিনি এটা নিয়েও কথা শুনিয়েছেন। তাহসীর নাকি কোনো দিকে মন নেই। নিজের মতো শুনিয়ে সেলিনা শেখ ফোন কেটে দিলেন। তাহসী মনে মনে রেগে গেল। সাথে কষ্ট ও পেল। সেলিনা শেখ এর কাছ থেকে এমন ব্যবহার মানতে পারিনি সে। ভাবনা তেও ছিল না উনি এমন ব্যবহার করতে পারেন। তাহসী ভাবলো তনন নিশ্চয় তার নামে অনেককিছু বলেছে। এইজন্যই উনি এমন ব্যবহার করলেন।

🍁🍁🍁
পরদিন সকালবেলা তাহসী নিজের ভার্সিটি বাদ দিয়ে আঁখি কে নিয়ে হাজির হলো বুয়েটে। তার প্রশ্নের জবাব চাই। তননকে কল দিলে রিসিভ করলো না। আঁখি কে দিয়ে কল দেওয়ালো তাহসী। তবুও কোনো রেসপন্স করলো না তনন। কিছুক্ষণ আঁখিকে নিয়ে ঘোরাঘুরি করলো তাহসী। হঠাৎ করেই আঁখি বলে উঠলো,
-“এই ওইদিকে তাকা। তনন না?”

তাহসী গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
-“হ্যা।”

অন্যসময় হলে তাহসী তননের দিকে চোখ তুলেই তাকায়না। আজ সেসব ভুলে তননের সামনে যেয়ে দাঁড়ালো তাহসী।
তনন ঘোলা ঘোলা চোখে তাহসীর দিকে তাকালো। মৃদু হাসি ফুটে উঠলো তার ঠোঁটে।
পরক্ষণেই সেই হাসি মিলিয়ে গেল। পুনরায় চোখ কচলে তাকালো সামনে। পাশে বন্ধুরা আছে। কেউ যদি টের পায় সে দিনের বেলাতেও ভুলভাল দেখছে তাহলে সবাই মিলে হাসাহাসি করবে।

এদিকে তাহসী চুপ মেরে গেছে। যেভাবে কথা সাজিয়ে এনেছিল সব গোলমেলে হয়ে গেছে তননের সামনে এসে। আমতা আমতা করে কিছু বলবে তার আগেই একজন বললো,
-“এই এটা কে রে তনন? তোর গার্লফ্রেন্ড নাকি?”

একজন হাসতে হাসতে বললো,
-“তননের গার্লফ্রেন্ড আছে এটাও সম্ভব?”

তনন ভাবলো তাহলে কি সে অন্য মেয়েকে তাহসী ভাবছে নাকি এটা সত্যিই তাহসী! আর কিছু না ভেবে বললো,
-“তাহসী, আমার গার্ল..ফ্রেন্ড ই তবে বৈ..ধ।”

তাহসী লজ্জা পেল। তবে তননের কথা কেমন জড়ানো লাগলো তাহসীর কাছে। দ্বিতীয় ছেলেটা তননের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
-“কি ভুলভাল বকছিস? তোর বোন নাকি? আর তোর কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। রুমে যা। স্যার কে বলে দিবো তুই অসুস্থ।”

তাহসী অবাক হয়ে কিছু একটা আন্দাজ করে তননের হাত ছুঁলো প্রথমবারের মতো। যা ভেবেছে তাই ঠিক। তনন তাহসীর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বললো,
-“পরে বলবো। আসছি।”

তাহসীর হাত ধরে ক্যান্টিন এর দিকে নিয়ে গেল তনন। আঁখি তনন কে দেখিয়ে চলে গেছে ভার্সিটি তে। তাহসীর একা একা আসতে আনইজি লাগছিল তাই এসেছিল সে। এখন তননকে তো পেয়েই গেল।

-“জ্বর আসলো কিভাবে?”
তাহসী প্রথমে বলে উঠলো।

তনন ওকে চেয়ারে বসিয়ে বললো,
-“তুমি এখানে এসেছো কেন?”

-“মামুনি কে কি বলেছো? আমাকে রাগ করলো কেন ফোন দিয়ে? আমার কল রিসিভ করছো না কেন?”

-“জানিনা রাতে আম্মুকে কি বলছি।”
কথা বলতে বলতে তনন প্যান্টের পকেটে হাত দিল। এরপর বললো,
-“ফোন মনে হয় হোস্টে..লের রু.মে। কি বলেছে আ..ম্মু ?”

-“কথা জড়িয়ে যাচ্ছে তোর। গায়ে তো বেশ জ্বর মনে হচ্ছে। রুম থেকে বাইরে এসেছিস কেন?”

তনন উঠে দাঁড়ালো। বললো,
-“তাতে কি তোর? ম..রে যাই আ..মি!”

তননের মাথা ঘুরে উঠলো। তাহসী এগিয়ে যেয়ে ধরলো। এক অদ্ভুত ভালো লাগা ছেয়ে গেল তাহসীর মনে। আশেপাশের দু একজন তাকিয়েছে তাদের দিকে।
-“বাজে কথা না বলে রুমে যা। কাল সমস্যা ছিল আমার। তুই বৃষ্টিতে ভিজেছিস কেন?”

তনন নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। তাহসী অভিমান করে বললো,
-“বাড়াবাড়ি করছিস তুই!”
অন্য সময় হলে তাহসী অপমানিত হয়ে রাগ করে চলে যেত। এখন তেমন কিছু মনে হচ্ছে না ভেবে নিজেই অবাক হলো।

তনন কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসলো। জ্বর আসলেই শরীরের বেহাল অবস্থা হয় তার। আবার এদিকে ক্লাস মিস দিতে মন চায় না। ক্লাসের কথা মনে পড়তেই হাতঘড়ির দিকে তাকালো। নিজেকে ধাতস্থ করে উঠে দাড়ালো। তাহসীর উদ্দেশ্যে বললো,
-“পরে কথা বলে। মূল্যবান সময় ফেলে এখানে আসার জন্য ধন্যবাদ। আমার ক্লাস শুরু হয়ে গেছে অলরেডি। আসছি।”

তাহসী মনে মনে অপমানিত বোধ হলেও বললো,
-“কিসের ক্লাস? এখন বাড়ি ফিরবি তুই।”

-“অধিকার দেখা..চ্ছিস? এতো দিন পর? আমি অসুস্থ বলে কা..রো দয়া লাগ..বে না আ…মার।”

তনন নিজে নিজেই চেয়ারে বসে পড়লো। উপর থেকে শক্ত থাকলেও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। তাহসী তননের পাশে যেয়ে দাঁড়ালো। খুবই নিম্নস্বরে বললো,
-“আমার পি’রি’য়’ড চলছে কাল থেকে। আমি কিভাবে কাল ঘুরতে যেতাম?”

তনন মাথা তুলে তাকালো তাহসীর দিকে।
-“স্যরি। আজ তো আসলি!”

-“আসা লেগেছে। প্রথম তিনদিন আমি বের হয়না কোথাও। মামুনি এমন ভাবে বললো……”

-“স্যরি তার জন্য। মামুনির সাথে কথা বলবো। কিন্তু এই ক্লাস মিস দিতে পারবো না আমি। চলে যাও। অপমান করছি না। যাও।”

পিছন থেকে কেউ একজন তনন বলে ডাকলো। তাহসী তাকে দেখে অবাক হলো অনেকটা।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১১

পিছন থেকে কেউ একজন তনন বলে ডাকলো। তাহসী তাকে দেখে অবাক হলো অনেকটা। তনন উঠে দাঁড়ালো।
-“আসসালামু আলাইকুম স্যার।”

-“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। তুমি নাকি অসুস্থ?”

তাহসী বিড়বিড় করে বললো,
-“আরে এ তো…”

-“আমার স্যার। এই স্যারের ক্লাস ছিল এখন। তুমি যাও। স্যার কি ভাববে!”
তনন আস্তে করেই বললো।

তনন এবার স্যারের উদ্দেশ্যে বললো,
-“জি স্যার। একটু জ্বর আসছে। আমি ক্লাসে যাচ্ছি।”

-“তাই তো বলি ক্লাসের সবথেকে রেগুলার স্টুডেন্ট ক্লাসে নেই কেন! আর আমার ক্লাস আজ ছুটি দিয়ে দিছি। আম্মু অসুস্থ ফোন দিচ্ছে। তাই এখন চলে যাবো।”
তনন এর বিপরীতে বসা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললেন স্যার। স্যার এখনো তাহসীর মুখ দেখতে পারিনি। তাহসীর পিঠ দেখা যাচ্ছে।

তাহসী এবার বললো,
-“দেখতেই পারছেন অসুস্থ। ছুটি দিয়ে দেন কয়েকদিন।”

তনন বড় বড় চোখে তাকালো তাহসীর দিকে। ধমক দিয়ে কিছু বলবে তার আগেই স্যার বললেন,
-“তাহসী!”

-“ইয়েস।”
তাহসী মুখ ঘুরিয়ে তাকালো।

-“তুমি এখানে কি করো? তনন কে চিনো নাকি?”

-“হুম। এবার ছুটি দেন ওকে কিছুদিন।”

তনন তাহসীর দিকে প্রশ্নসূচক চাহনিতে তাকালো। তাহসী আশ্বস্ত করলো পরে বলছে।
স্যার চেয়ার টেনে ওদের পাশে বসলেন। তনন কেও বসতে বললেন। তাহসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ফ্রেন্ডস নাকি তোমরা?”

-“ছিল। বিয়ের কথা শুনেননি?”

-“তোমার বিয়ে হয়ে গেছে?”
বিস্ময় নিয়ে বললেন স্যার।

-“হুম। আপনার বাবা আসছিল তো। আপনি পিএইচডি করতে অ্যাবোর্ডে ছিলেন না? তাই হয়তো শুনেননি।”

-“ওহ্। বাবা কিছু বলেনি।”

-“এবার কিছুদিন ছুটি দেন একে। মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে তবুও ক্লাসের ভূত নামছে না।”

-“ওকে, একটা এপ্লিকেশন জমা দিও তনন। সাইন করে দিবো।”
স্যার পুনরায় নিজেই বললেন,
-“ওহ্ আমিই তো চলে যাচ্ছি। সাদা কাগজ থাকলে দাও, আমি সাইন করে দিচ্ছি। দেন এপ্লিকেশন লিখে জমা দিও।”

তননের কাছে ব্যাগ ছিল। খাতা বের করে একটা পেইজ ছিঁড়ে স্যারের কাছে দিল। তার একটুও ইচ্ছা নেই, তাহসীর জোরাজুরিতে নিতে হচ্ছে। আর এদিকে স্যার নিজে থেকেই বলছে, এখন অমান্য করতে পারবে না।

স্যার বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। তনন বললো,
-“কে হয় তোমার?”

-“বাবার বন্ধুর ছেলে। একটা নাপা খেয়ে বাসের উদ্দেশ্যে রওনা দাও। বাসে উঠে টিকিট কেটে নিও।”

-“ফাও ফাও ছুটি! আমি একদিন লিখবো এখানে। একটা ক্লাস মিস মানে অনেক কিছু।”

-“থাক তুই। তোর মা আমাকে এই জন্য কথা শোনায় আর তুই! পঁচে মর।”
তাহসী উঠে দাঁড়ালো।

গেটের কাছে যেয়ে রিকশা ডাকতেই তনন এসে তাহসীকে নিজের দিকে ঘোরালো।
-“সত্যিই জানিনা আম্মু কে কি বলেছি। স্যরি তার জন্য। তুই কখনো নিজে থেকে যোগাযোগ করিস না, এইজন্য রাগ লাগছিল। আবার কাল বাসার সামনে গেলাম। আসলি না! আমি তো জানতাম না তোর…”

তাহসী লজ্জা পেল। রিকশা পেতেই উঠে বসলো। তনন কে বাড়ি ফিরতে বলে চলে গেল। পেট ব্যথা করছে তার,‌ এখানে থাকা আর সম্ভব না।

🍁🍁🍁
তনন আম্মু বলে ডাক দিতেই সেলিনা শেখ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন। এখন‌ বিকাল; রাতের রান্না করছেন তিনি। বিস্ময় নিয়ে বললেন,
-“তুই? কাল তোর ক্লাস নেই? চলে আসলি?”

তনু রুম থেকে বের হলো মায়ের কথা শুনে। এতক্ষণ টিভি দেখছিল সে। তনন কে দেখে গ্রিল খুলে বাইরে আসতে গেলেই তখন তনন ভিতরে ঢুকলো। তনু আর বাইরে আসলো না। বলে উঠলো,
-“তোমার কি ছুটি দিয়েছে ভাইয়া?”

তনন আস্তে করে বললো,
-“না, ছুটি নিয়েছি।”

তনন রুমে গেলে পিছু পিছু সেলিনা শেখ ও গেলেন চুলা বন্ধ করে। তনন মাকে বসতে বলে ওয়াশরুম থেকে পোশাক পরিবর্তন করে আসলো।
তনন বের হতেই সেলিনা শেখ প্রশ্ন করলেন,
-“হঠাৎ ছুটি নিয়েছিস যে? অসুস্থ বেশি?”

তনন মায়ের কোলের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
-“বলতে পারো।”

তনু বলে উঠলো,
-“তা এই সুবুদ্ধি কবে উদয় হলো তোমার? এর আগে তো কত জ্বর আসে, আম্মু আসতে বলে বাসায়, আসোই না!”

সেলিনা শেখ তননের কপাল স্পর্শ করে বললেন,
-“এত গরম! তনু ট্যাপ এর নিচে বালতি রাখ তো। তননের মাথায় পানি দিতে হবে।”

-“এভাবে বসে থাকো তো আম্মু। ভালো লাগছে। আর তাহসী ছুটির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।”

সেলিনা শেখ বিস্ময় নিয়ে বললেন,
-“ও কিভাবে?”

-“আমাদের একজন নিউ টিচার আসছে, উনি নাকি তাহসীর বাবার বন্ধুর ছেলে। তাহসীর পরিচিত ছিল, হঠাৎ দেখা হওয়ায় তাহসী বলে ছুটি নিয়ে দিয়েছে।”
বাকি কথাও তনন খুলে বললো মাকে।

সেলিনা শেখ বললেন,
-“রাতে তুই যখন বললি তাহসী নিজ থেকে তোর খোঁজ নেয় না; তোর প্রতি ওর কোনো মনোযোগ নেই; তুই খোঁজ নিলে কথা বলে, না নিলে না; তুই ওর বাসার সামনে যেয়ে ফিরে আছিস দেখা করে না; একেবারেই নির্লিপ্ত এসব শুনে আমার রাগ হয়েছিল। তোকে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই তো বিয়ের সময় কেন বলেনি অনেক কথায় শুনিয়েছে। এসব শুনে মাথা ঠিক ছিল না।”

বালতিতে পানি ভরে গেলে তনু ট্যাপ বন্ধ করলো। ওদের কাছে এগিয়ে এসে বললো,
-“আমি আগেই বলেছিলাম ভাবী এমন না।”

সেলিনা শেখ তনু কে রান্না দেখতে বললেন একটু। তনু বললো,
-“আমি ভাইয়ার মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছি। কিন্তু রান্না ঘরে যেতে পারবো না।”

তনন বললো,
-“অসুস্থ ছিল তাহসী এটা জানতাম না। আর জ্বরের ঘোরে কি বলেছি তোমাকে মনে নাই। তোমার কথাতে মন খারাপ করেই আমার ওখানে গিয়েছিল।”

-“সকালের দিকে ফোন দিয়েছিলাম ওকে। রাতে ওভাবে বলে আমারও খারাপ লাগছিল। তবে একবারও বললো না যে তুই আসছিস। শুধু বললো কি সারপ্রাইজ আছে। শুধু শুধু মেয়েটাকে না বুঝে কথা শুনিয়েছি।”

তনন আর কিছু বললো না। সেলিনা শেখ পানি দেওয়ার জন্য সব ঠিক করে রান্নাঘরে চলে গেলেন। তনু তননের মাথায় পানি ঢেলে দিতে শুরু করলো।
-“ভাইয়া ভাবী কবে আসবে আবার?”

তনন কাঁথায় নিজেকে ঢেকে নিল। বললো,
-“জানিনা।”

-“ওহ্। আমাকে কল দিয়েছিল জানো।”

তনন কৌতুহল নিয়ে বললো,
-“কেন?”

-“তুমি পৌঁছায়ছো নাকি তাই।”

-“কখন?”

-“এইতো আধা ঘন্টা আগে। তখনই জানলাম তুমি আসছো!”

তনন আর কিছু বললো না। এবার জ্বরে কাহিল হয়ে পড়েছে সে। এমনিতেও জ্বর বেশি আসে তার।

🍁🍁🍁
নাহিদ মিথিলা কে নিয়ে একটা পার্কে এসেছে। মিথিলা কিছু বলার জন্য উশখুশ করছে। কিন্তু কিছু বলছে না। নাহিদ বিরক্তি নিয়ে বললো,
-“কি বলতে চাও বলবে?”

মিথিলা সেদিনের পর থেকে নাহিদ কে ভালোয় ভয় পায়। সেবার অনেক কষ্টে নাহিদের রাগ ভাঙ্গিয়েছে। নাহিদের ওমন রূপের সাথে পরিচিত ছিল না সে। মিথিলা কিছুক্ষণ পর আমতা আমতা করে বলল,
-“না মানে বাড়ি থেকে আমার বিয়ের কথা……”
এইটুকু বলেই আড়চোখে নাহিদের দিকে।

নাহিদ বললো,
-“আমার কথা বলেছো?”

চলবে।

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-০৯

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৯

তাহসী তননের দিকে এগিয়ে যেতেই তনন বললো,
-“সবাই কি রেগে আছে নাকি? এইভাবে চলে যাচ্ছি।”

-“না, এমন কোনো বিষয় না।”

তনন ব্যাগের চেইন আটকে তাহসীর পাশে বিছানায় বসলো। তাহসী তার আগেই বসেছে। তাহসীর হাতজোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
-“আর তুই?”

তাহসী নড়েচড়ে বসল। তার শরীর কম্পন যেন তনন টের না পায় তাই প্রাণপণে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কোনোরকমে বললো,
-“আমি কেন রেগে যাবো?”

-“তো কে রাগবে? আমি জানি তোর মনে অনেক প্রশ্ন। এইযে হুট করে বিয়ে! ইনশাআল্লাহ সময় নিয়ে একদিন সব প্রশ্নের উত্তর দিবো।”

তাহসী কিছু বললো না। হাত ছাড়িয়ে নিতেও পারছে না, আবার হাত ধরে আছে এটাতেও অস্বস্তি লাগছে।
তনন তাহসীর হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ব্যাগ থেকে টিশার্ট আর জিন্স নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। রেডি হয়ে এসে আগে পরা ড্রেস ভাঁজ করে ব্যাগে ঢোকাতে লাগলো।
তাহসীকে প্রশ্ন করলো,
-“ঢাকা কবে যাবে?”

-“ইনশাআল্লাহ কালকে।”

পুনরায় নীরবতা বিরাজ করলো দু’জনের মধ্যে। নীরবতা কাটানোর জন্য তাহসী ইতস্তত করে প্রশ্ন করলো,
-“এক্সাম কবে শেষ?”

তননের ব্যাগ এর চেইন আটকে তাহসীর কাছে গেল। তবে আগের বারের মতো আর বসলো না, দাঁড়িয়ে থাকলো। নিঃশব্দে হেসে বলল,
-“কেন? আমার সাথে ঘুরে বেড়াবে নাকি?”

তাহসীর মুখ চুপসে গেল। সে এবার কি উত্তর দিবে? নীরবতা কাটানোর জন্যই তো সে কিছু না পেয়ে এই কথাটা তুলেছে।
-“এমন কিছুই না। শুধু জিজ্ঞেস করলাম। আম্মু জিজ্ঞেস করেছিল একবার।”
সত্যিই একবার নাতাশা রহমান জিজ্ঞেস করেছিলেন। তবে সেটা বিয়ের আগে। তাহসী বলেছিল জানেনা।

-“পুরোপুরি এক মাস পরে। আচ্ছা শোন আমি কিন্তু এই একমাস তোকে কোনো সময় দিতে পারবো না। রাগ করবি?”

তাহসী মাথা নাড়ালো। যার অর্থ রাগ করবে না।‌ তনন তাহসীর আরো কাছে এগিয়ে আসলো। এতক্ষণ তাহসী ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল। তনন তাহসীর থুতনি ধরে মুখ উঁচু করলো। তাহসীর চোখের দিকে তাকালো। তাহসী চোখ সরিয়ে নিতে পারলো না।
তনন গভীরভাবে তাহসীর ঠোঁট স্পর্শ করলো। কয়েক মিনিট পর তাহসীর কপালে কপাল ঠেকিয়ে তনন চোখ বুজে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললো,
-“ভালোবাসি।”

তনন চোখ মেলে তাকালো তাহসীর দিকে। তাহসী তার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে। তাহসী লজ্জায় কিছু বলতে পারলো না; তার মনে যে অনেক প্রশ্ন। তনন তাহসীর কাছ থেকে সরে আসলো কিছুটা। এরপর তাহসীর গাল টেনে দিয়ে তনন বললো,
-“এত লজ্জা পেতে হবে না। এক মাস পর যেন দেখি আমাদের সাথে কথা বলতে কোনো জড়তা নেই।”

তাহসী মৌন রইলো। নিচ থেকে নাহিদের ডাক শুনতে পাওয়া গেল। তনন কে বেরিয়ে পড়তে বলছে। সময় হয়ে গেছে। তনন ঘড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে নিল। নয়টা বেজে দশ মিনিট।
তনন তাহসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আসি। ভালো থেকো। ইনশাআল্লাহ ঢাকায় দেখা হবে।”

তনন ব্যাগ নিয়ে বের হতে যেতেই তাহসী তাড়াহুড়ো করে আলমারি থেকে একটা বক্স বের করে হাতে দিল।
তনন বললো,
-“সেই গিফট?”

-“হু।”

তনন পুনরায় তাহসীর ঠোঁটে চুমু খেল। ভালো থেকো বলে তাহসীর রুম থেকে বের হলো। তাহসী মুচকি হেসে ঠোঁট মুছে তননের পিছু পিছু আসলো।
কথা হয়েছে নাহিদ বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত পৌছে দিবে তননকে। এটা জানালো তাহসী।

নিচে নামতেই নাতাশা রহমান তননকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিলেন। তনন কৌতুহল নিয়ে বললো,
-“কি এটা?”

তৌহিদ হোসেন বললেন,
-“তেমন কিছু না। একটু খাবার দিয়েছে। কাল গরম করে নিয়ে খেয়ে ফেলো।”

তনন অবাক হলো। সাথে মনে মনে খুশি হলো। তার প্রতিবার ঢাকায় ফেরার সময় সেলিনা শেখ রান্না করে পাঠিয়ে দেয়। প্রথম দুইদিন বাড়ির খাবার গরম করে নিয়ে খায় তনন।

নাহিদের যাওয়ার কথা থাকলেও বাইক নিয়ে তৌহিদ হোসেন তননকে নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে গেল। যাওয়ার সময় তনন সবার থেকে বিদায় নিয়ে সবশেষে তাহসীর কাছ থেকে বিদায় নিল।

তৌহিদ হোসেন যখন তননকে নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছালেন তখনও বাস আসেনি। পনেরো মিনিট সময় বাকি দশটা বাজতে। আর বাস তো সঠিক সময়ে আসবেও না এটা ভালোই জানে তনন। তাহসীর বাড়ি থেকে বাস স্ট্যান্ডে আসতে বাইকে করে পনেরো থেকে বিশ মিনিট সময় লাগে।
বাস আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন তৌহিদ হোসেন। তননকে অনেক কথা বললেন।
-“এই কয়দিন আর কিছু তে মন দিও না। মন শুধু পড়াশোনাতেই সীমাবদ্ধ রেখো।”

তনন মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। তৌহিদ হোসেন পুনরায় বললেন,
-“আসলে তোমার পরীক্ষার মধ্যে বিয়ের ডেইট ফেলা উচিত হয়নি। আর কি করবো! ভাবলাম চেয়ারম্যান এসে যদি ঝামেলা করে! অবশ্য করেনি এমন না। যাক এসব বাদ দাও। আমার উপর রাগ রেখ না। পরীক্ষার মধ্যে তোমার এত এত চাপ যাচ্ছে।”

তনন হেসে বলল,
-“এইভাবে বলবেন না প্লিজ। আমার সমস্যা নেই। বৃহস্পতিবারে পরীক্ষা দিয়ে এসেছি। আবার এখন চলে যাচ্ছি। তবে শনিবারে মানে আজ পরীক্ষা থাকলে সমস্যা হতো। কিন্তু না থাকার জন্য সুবিধা হয়েছে। আমাকে এইভাবে বলবেন না প্লিজ।”

-“বলবো না যদি তুমি আমাকে বাবা বলে সম্বোধন করো। এমন করে সম্বোধন ব্যতীত কথা বললে আমিও এইভাবেই ব্যবহার করবো।”

-“আচ্ছা,বাবা-ই বলবো।”

ওনাদের কথা বলার মধ্যে বাস চলে আসলো। তৌহিদ হোসেন বললেন,
-“খাবার তোমাকে দেওয়ার জন্য আগে আগে ঠাণ্ডা করে ফ্রিজে রেখেছিল। তবুও তেমন বরফ হয়নি। তুমি হোস্টেলে পৌঁছে আগে ফ্রিজে রাখবে। আর এই কয়দিন মন দিয়ে পড়াশোনা করো। দিন হলে তাহসীকেও তোমার সাথে পাঠিয়ে দিতাম। ক্লাস মিস যাচ্ছে ওর।”
তৌহিদ হোসেন আরো কিছু উপদেশ মূলক কথা বললেন। তনন তাকে বিদায় জানিয়ে বাসে উঠলো। বাস ছেড়ে দিতেই তিনিও বাড়ির পথে রওনা দিলেন।

____________
তাহসী ঘুমাতে গেল বেশ রাত করে। অনেকদিন পর সকল কাজিন এক জায়গায় হয়েছিল। তননের কথা মনে হয়ে ভাবলো একবার ফোন দিবে কিনা। পরক্ষণেই এত লজ্জা এসে ভর করলো যে সেই ভাবনা নাকচ করে দিল। তনন যদি আবার লজ্জাজনক কথা বলে!
তাহসী চোখ বন্ধ করলেই শুধু তননের মুখ ভেসে উঠলো। বারবার কানে বাজতে লাগলো তননের বলা ভালোবাসি শব্দটা। তাহসী তো এতদিন এইটার জন্যই অপেক্ষা করেছিল। এতো সহজে সব হয়ে গেল তাহসী ভাবতে পারছে না। তাও আবার বৈধ ভাবে। তনন নামক মানুষটি এখন তার শুধু আপনই নয় বরং একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ। তনন এই রুম থেকে চলে যাওয়ার সময় এক বুক ভালোবাসা নিয়ে তাকিয়ে ছিল তার দিকে। কাল রাতেও তননের চোখে এই দৃষ্টি দেখেছে তাহসী। তাহলে তনন কি তাকে সম্পূর্ণরূপে পেতে চেয়েছিল? এটা ভাবতেই ছটফটিয়ে উঠে বসলো তাহসী। আর কিছু না ভেবে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করার জন্য উঠে বসলো। ওয়াশরুম থেকে ওযু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়তে শুরু করলো।

তনন বাসে বসে পড়া‌ দেখতে দেখতে যাচ্ছে। তবে বই থেকে মন বেশি তাহসীর কাছে চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে সেলিনা শেখ দুইবার আর নাতাশা রহমান একবার ফোন দিয়েছিলেন। তনন সেলিনা শেখ কে রাগ করে বলেছে ঘুমিয়ে পড়তে। না হলে না ঘুমিয়ে একটু পরপর ফোন দিত। এদিকে তাহসী একবারও ফোন দিল না ভেবে তাহসীর উপর অভিমান হলো। বই বন্ধ করে চোখ বুজলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-০৮

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৮

নিয়ম অনুযায়ী বিয়ের পরেরদিন তনন আর তাহসী তাহসীর বাড়িতে গেল। তাহসীর পরিবারের লোকেরা এসেছিল ওদের নিতে। গ্রামে ছেলেমেয়েদের মায়ের যাওয়া আসার প্রচলন না থাকলেও নাতাশা রহমান এসেছিলেন। দেখে গেলেন তার মেয়ে কেমন পরিবেশে থাকছে।
তননের বাস রাত দশটার সময়। সন্ধ্যার দিকে একটু ঘুমিয়ে নিল তনন। এখন একটু না ঘুমালে সারারাত জার্নি‌ করে সকালে ক্লান্তিতে পরীক্ষায় দিতে পারবে না।

তাহসীর বাড়িতে তার নানু বাড়ির প্রায় সবাই এসেছে। দোতলা বাড়িটা আগে ফাঁকা ফাঁকা লাগলেও এখন পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে। তাহসীর নানুবাড়ির লোক এসে ভরে গেছে। তাহসীর নানা-নানু, দুই মামা আর এক খালার পরিবার।
এই পুরো বাড়িটা তাহসীর বাবার। তাহসীর চাচাদের আলাদা বাড়ি। তবে দূরে নয়। তৌহিদ হোসেন এর বাড়ির সামনে তৌফিক হোসেন এর বাড়ি। তৌফিক হোসেন এর বাড়ির পাশে তাহসীর ছোট চাচা মনির এর বাড়ি। তিনজনের বাড়ির একটাই উঠান। এক কথায় বলতে গেলে গোল বৃত্তের চারিদিকে ওনাদের বাড়ি। বাড়ি তিনটা হলেও বাইরের একটা রান্নাঘরেই সবার রান্নার আয়োজন একসাথে করা হয়। সবাই একসাথেই খাওয়া দাওয়া করে। এই রান্নাঘর তাহসীর দাদার করা। আলাদা রান্নাঘর, আলাদা বাড়ি থাকলেও একসাথে থাকার এই শর্ত তাহসীর দাদার করা। তাহসীর দাদার এক কথা আলাদা বাড়ি বানাও বা না বানাও, সবাইকে একসাথে থাকতে হবে।

রাত আটটার সময় ছাদে বসে কাজিন দের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল তাহসী। নাঈম নিচেই ছিল। ছাদে উঠে এসে তাহসী কে বললো আম্মু ডাকছে।

তাহসী নিচতলায় নাতাশা রহমান এর কাছে আসলো। ডাইনিং রুমে নাতাশা রহমান কে দেখে তাহসী সেদিকে এগিয়ে গেল। কাছে যেয়ে বললো,
-“ডেকেছো?”

-“ছাদে যেয়ে বসে আছিস যে বরং। তনন কে উঠিয়ে নিয়ে আয়। দশটায় না‌ বাস! আমি খাবার রেডি করছি।”

-“আচ্ছা।”

তাহসী রুমে যেয়ে তনন বলে দুইবার ডাকলো। তনন নড়েচড়ে পুনরায় চুপ হয়ে গেল। তিনবারের সময় বেশ জোরে ডাকতেই তনন চোখ মেলে তাকালো। তাহসী কে দেখে উঠে বসলো। আড়মোড়া ভেঙ্গে বলল,
-“ক’টা বাজে?”

-“আটটা বেজে নয় মিনিট। আম্মু খাবার রেডি করেছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।”

-“ওকে।”

তাহসী তননের ফ্রেশ হয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করলো। তনন আসতেই তাহসী রুম থেকে বের হলো।
তনন ডাইনিং টেবিলে বসতেই নাতাশা রহমান তনন কে সব এগিয়ে দিলেন। তনন মনে মনে ঢোক গিলল। সে বাসে ওঠার আগে তেমন ভারী খাবার খায় না। বমি হয় না, তবুও তনন নিজ ইচ্ছাতেই খায় না।
তনন ইতস্তত করে বললো,
-“এত খেতে পারবো না।”

-“তা বললে তো চলবে না। সব কিছুই একটু একটু করে টেস্ট করে দেখো।”
এরপর তাহসী কে উদ্দেশ্য করে নাতাশা রহমান বললেন,
-“তুই ও তননের পাশে বসে পড়। আর সবাই কোথায় গেল? একটু এগিয়ে যেয়ে দেখ তো।”

নাতাশা রহমান বলতে বলতেই তাহসীর সব কাজিন হইহই করতে করতে ছাদ থেকে নেমে আসলো। তাহসী দের ডুপ্লেক্স বাড়ি। তাই ছাদে ওঠার জন্য আলাদা সিঁড়ি। এটা বাড়ির মূল গেটের পাশেই। তবে এটা দিয়ে দোতলায় যাওয়া যায় না, সরাসরি ছাদে।

তাহসীর বাড়িতে সবাই তিনবেলার খাবার খায়। যার ফলে তাদের ডাইনিং টেবিল বড় আর টেবিল দুইটা।যদিও তাহসীর মেজো চাচির এতে দ্বিরুক্তি রয়েছে তবুও তাহসীর দাদার কথার উপরে কিছু বলতে পারবে না।

সবাই এসে বেসিনে হাত ধুয়ে টেবিলে বসলো। অগত্যা তাহসী কেও বসতে হলো। নাতাশা রহমান সবাইকে খাবার এগিয়ে দিলেন। সবাই খাওয়া থেকে কথা বললো বেশি। প্রথমে তাহসীর মামাতো বোন সামিয়া কথা বলে উঠলো,
-“ভাইয়া কে তো পাওয়ায় যাচ্ছে না! কোথায় একটু শালিকাদের টাইম দিবেন, তা না!”

তনন খাবার চিবানো বন্ধ করে যেদিক থেকে কথা হচ্ছে সেদিকে তাকালো। তনন তো এদের কাউকে ভালো করে চিনেই না, তার উত্তর কি দিবে!

নাঈম তননের অবস্থা আন্দাজ করে বললো,
-“ভাইয়া তোমাদের চিনেই না আপু। হা হা হা!”

তাহসীর খালাতো বোন স্বর্ণালী জবাব দিল,
-“এটা কি ঠিক তাহসী আপু?”

নাতাশা রহমান সবাইকে তননের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তনন মাথা নাড়ালো। নাহিদ কথা বলে উঠলো,
-“এই চুপচাপ খা সবাই। তননের সাথে পরে কথা হবে।”

সামিয়া হেসে বললো,
-“তোমার তো সব কিছুতেই নিষেধ। ভদ্র ভাই আমাদের অথচ ডুবেডুবে জল খায়!”

সামিয়ার কথা শুনে দুই টেবিলের সবাই হেসে উঠলো। তৌহিদ হোসেন এর উপস্থিতি বুঝেই পেরেই সবাই আবার থেমে গেল।
তনন হাসি থামিয়ে নাতাশা রহমান কে উদ্দেশ্য করে আস্তে করে বললো,
-“আমি আর খাবো না।”

তৌহিদ হোসেন এর সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এসে হাজির হয়েছেন। তারা ড্রয়িং রুমে বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছিলেন।‌ ছেলেমেয়েদের কথা শুনে এখানে এসেছেন।
তাহসীর খালা এগিয়ে এসে তননের প্লেটে মাংস তুলে দিতে দিতে বললেন,
-“জামাই আদর করার আগেই তো তুমি পালাচ্ছো দেখছি। এখন আবার বলছো খাবে না। এসব চলবে না। এগুলো শেষ করো। আরো আছে। দেখি আপা ইলিশের বাটিটা এদিকে দাও।”
শেষ কথাটা নাতাশা রহমান কে উদ্দেশ্য করে‌ বললেন।

তনন অসহায় চোখে তাহসীর দিকে তাকালো। তাহসী নিজ খাওয়ায় ব্যস্ত। তনন লক্ষ্য করে দেখলো মিটিমিটি হাসছে তাহসী। তাহসী তননের দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হলো। টেবিলের দুই একজন খেয়াল করলেও বড়’রা আছে বলে কেউ কিছু বললো না।

তনন আগের মতো করেই বললো,
-“আমি বাসে ওঠার আগে তেমন কিছু খাই না। খারাপ লাগে একটু।”
এতো মানুষের সামনে কথা বলতে তার লজ্জা লাগছে।

নাতাশা রহমান বললেন,
-“তননের এক্সাম শেষ হলে তোরা এসে জামাই আদর করিস। আজ ছেড়ে দে। তনন যাও তৈরি হয়ে নাও।”

তনন ইতস্তত করলো প্লেটের খাবার রেখে উঠতে। নাতাশা রহমান বললেন,
-“আরে উঠে পড়ো না পারলে। সমস্যা নেই।”

তনন এবার উঠে পড়লো। বেসিন থেকে হাত ধুয়ে তাহসীর রুমে চলে গেল।
শিরিন তাহসী কে ঠেস দিয়ে বললেন,
-“আরে তাহসী খেয়েই যাচ্ছো! তনন উঠে গেল আর তুমি বসে আছো!”

-“কেন আমার উঠে যাওয়ার কথা ছিল নাকি?”
তাহসী খেতে খেতে উত্তর দিল।

শিরিন কিছু বলতে যেতেই তাহসীর দাদি নিষেধ করলো ইশারায়। শিরিন তাহসীর দিকে তাকিয়ে মুখ বাকালো।

তাহসীর খাওয়া শেষ হলো দশ মিনিট বাদে। খাওয়া শেষে সে-ও রুমে চলে গেল। তাহসীর ইচ্ছা ছিল না, নাতাশা রহমান এর ইশারা দেখে যেতে হলো।

তনন ততক্ষণে তার ব্যাগ ঠিক গুছিয়ে নিয়েছে। গোছানো-ই ছিল, তবুও দেখলো সব ঠিকঠাক আছে কি-না। এতকিছুর মাঝেও সেলিনা শেখ শুকনো কেক বানিয়ে দিয়েছেন।
তাহসী দরজার সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। তননের সাথে কবে যে সহজ হতে পারবে যে সে!

চলবে না;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-০৭

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৭

তনন কথা বলে উঠলো,
-“তো বলো বাসর রাত নিয়ে তোমার স্বপ্ন কি ছিল? ছাদে উঠে চাঁদ দেখা নাকি অন্য কিছু…!”

তনন অন্য কিছু শব্দ দুইটা এমন ভাবে টেনে বললো যে তাহসী সহজেই এইটার মানে বুঝতে পারলো। লজ্জায় জমে গেল তাহসী। কথাটাকে অন্যদিকে ঘুরানোর জন্য কিছু পেল না। এখন যদি সে বলে সাইন্সের স্টুডেন্ট হয়ে চাঁদ দেখার কথা বলছে তাহলে তনন বলে বসতে পারে তাহলে কি সে অন্যকিছু চাচ্ছে?
তাহসী মৃদু স্বরে বললো,
-“কিছুই না। আপাতত ঘুমাতে চাই।”

তাহসী আর কিছু না বলে বিছানার কাছে এগিয়ে গেল। বিছানায় যেয়ে সোজা শুয়ে পড়লো তাহসী। তনন যা খুশি ভাবুক।
তনন মুচকি হেসে আলমারি খুলে কিছু বের করলো। লাইট অফ করে বিছানায় চলে আসলো। তাহসী কিছু একটা ভেবে মনে মনে আঁতকে উঠলো।

তাহসীর ভাবনা কে ভুল প্রমাণিত করে তাহসীর হাতে পাঁচ পিসের একসেট ব্রেসলেট পরিয়ে দিল তনন। তাহসী হাতে ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে উঠলো। তনন মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে তাহসীর হাতের উপর ধরে বললো,
-“পছন্দ হয়েছে?”

তাহসী উঠে বসলো। মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
-“আরে এটা তো….”
এই সেট টা অনলাইনে দেখেছিল তাহসী। কিন্তু স্টক আউট হওয়ায় কিনতে পারিনি। পরে অফলাইনে দোকান দোকান জিজ্ঞেস করেও পায়নি তাহসী। এটা সম্পর্কে আগেই জানতো তনন। তবে তনন এটা কোথায় পেল তাহসী বুঝতে পারলো না।
অভ্যাস বসত প্রশ্ন করে বসলো,
-“কোথায় পেয়েছিস এটা?”

-“তুই? এতকিছুর পরে তুই?”
ভ্রু কুঁচকে পাল্টা প্রশ্ন করলো তনন।

তাহসী আমতা আমতা করে বলল,
-“কোথায় পেয়ে..ছো?”

-“সেদিন যেখান থেকে কসমেটিকস কিনলাম সেই শপে ছিল।”

-“কখন কিন..”

-“এতকিছু বলা যাবে না।”

তাহসীর কথা শেষ হওয়ার আগেই তনন উত্তর দিল।তাহসী বুঝলো কেনাকাটা শেষে তনন তাকে‌ বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে ওই শপে আবার ঢুকেছিল তখনই হয়তো কিনেছে এইগুলো।

-“অনেক অনেক ধন্যবাদ।”

তনন তাহসীর খুশি হওয়া দেখে খুশি হলো। আলতো হেসে বলল,
-“আদেও মন থেকে বিয়ে করেছো তুমি?”

-“কেন?”
চমকে উত্তর দিল তাহসী।

-“এইযে এমন ব্যবহার! বারবার চমকে উঠছো। জড়তা নিয়ে কথা বলছো।”

তাহসী উত্তর দিল না। তনন কি তাকে বুঝে নিতে পারে না? তনন পুনরায় বললো,
-“একটু অস্বস্তি কাটানোর চেষ্টা তো করবে! আমার গিফটাও পাইনি। এটা থেকে বোঝা যায়…”
তননের ইচ্ছে ছিল না চেয়ে নেওয়ার। কিন্তু তাহসী কে চেক করে নিতে চায় সে।
তননকে থামিয়ে দিয়ে তাহসী বললো,
-“আমি আসলে ভুলে গেছি। যখন মনে হয়েছে তখন লাগেজে ঢোকানোর সুযোগ পাইনি। স্যরি! ইনশাআল্লাহ কালকে তো ওই বাড়ি যাচ্ছিই। ইনশাআল্লাহ কাল রাতে দিবো।”

তনন শুয়ে পড়তে পড়তে বললো,
-“তাহলে আর হচ্ছে না মিসেস! আমি কাল থাকছি না।”

-“মানে?”
অবাক হয়ে প্রশ্ন করল তাহসী।

-“রবিবারে পরীক্ষা আছে। কাল তো রওনা দেওয়ায় লাগবে। পরীক্ষার মধ্যে কেউ বিয়ে করে!”

তাহসী‌ কিছু বললো না। হাত থেকে ব্রেসলেট খুলে বিছানার পাশে থাকা ছোট টেবিলে রাখলো। এরপর তননের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়লো। তাহসী তননের বিপরীত পাশ হয়ে চোখ বুজতেই তননের ছোঁয়া পেল। সারাদিনের ক্লান্তিতে তাহসীর যেটুকু ঘুম ঘুম ভাব এসেছিল, এই ছোঁয়াতে তা পুরোপুরি কেটে গেল।
তননের স্পর্শ হালকা থেকে গাঢ় হলো। তাহসীর কোমর জড়িয়ে কাছে নিয়ে আসলো। তাহসীর শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুততর হলো। তনন তাহসীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে তাহসীর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তাহসী আবেশে চোখ বুজে নিল।
এরপর তনন তাহসীর দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। তননের স্পর্শ না পেয়ে তাহসী আস্তে আস্তে চোখ খুললো। তার শরীর তখনো মৃদু কাঁপছে। তনন তাহসীর ঠোঁটের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল। তাহসী তননের স্পর্শের এই অনুভূতি সহ্য করতে পারছে না আবার এড়িয়ে যেতেও পারছে না। তনন তাহসীর ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। তাহসী তননের শার্ট মুঠো করে আকড়ে ধরলো। তাহসীর শ্বাস প্রশ্বাসের গতি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেল। কেঁপে উঠলো বার কয়েক। তনন কিছুক্ষণ বাদেই তাহসী কে ছেড়ে দিল। তাহসীর দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে মলিন হাসি দিয়ে বলল,
-“শুভ রাত্রি।”

তনন তাহসীর উল্টো পাশ হয়ে ঘুরে যেতেই তাহসী ঘনঘন শ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। তননের কাছে আসলেই যে কি হয় তার! তননের মলিন হাসি তাহসীর চোখ এড়ালো না। কয়েক মিনিট পেরোতেই তাহসী নিজেকে সামলে নিল। প্রায় আধা ঘন্টা পর ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করলো তাহসী।

🍁🍁🍁
পরদিন তাহসীর যখন ঘুম ভেঙ্গে গেল তখন সকাল সাতটা বাজে। এই সময়ের আগেই সাধারণত ঘুম থেকে উঠে তাহসী। উঠে ফজরের নামাজ পড়ে, হয়তো কাল বেশি ক্লান্ত থাকার জন্যই ঘুম দেরিতে ভাঙ্গলো। ঘুম ভেঙ্গে পাশে তনন কে চোখে পড়লো তাহসীর। তনন তখনো ঘুমে, তাহসীর দিকে মুখ করেই ঘুমিয়ে আছে। তননের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাই তুলতে তুলতে তাহসী ওয়াশরুমে গেল। সাথে সাথে আবার বের হয়ে আসলো। লাগেজ থেকে ব্রাশ বের করতে ভুলে গেছে।

সকাল সাড়ে আটটার দিকে সেলিনা শেখ হাতে নাস্তার প্লেট নিয়ে রুম আসলেন। তাহসী তখন ফোন ঘাটছে। তনন রুমে নেই। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে চলে গেছে। তার আর দেখা পায়নি তাহসী। তাহসী রুমে বসে থেকেই ফোন ঘাটছে সেই তখন থেকে।
সেলিনা শেখের হাতে থাকা প্লেটে খিচুড়ি দেখে তাহসী চোখ মুখ কুঁচকালো। সাধারণত সকালে খিচুড়ি খায় না সে। গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা থাকায় সব ধরণের খাবার সকালে খায় না, ইচ্ছা অনুযায়ী না খেলে বমি পায়।

সেলিনা শেখ প্লেট নিয়ে বিছানায় যেয়ে বসলেন। ভাত মাখতে মাখতে বললেন,
-“দ্রুত খেয়ে নাও তো। ঘুম কেমন হয়েছে? নতুন জায়গা!”

-“ভালো। কোলবালিশ, কাঁথা ছাড়া আমার ঘুম আসে না। এইগুলো ছিল বলে সমস্যা হয়নি।”
অকপটে স্বীকার করলো তাহসী। এইটার যে অন্য কি মানে হবে, সেসব সে খেয়ালই করলো না। সেলিনা শেখ ও কিছু বললেন না।
মুখে ভাত নিয়ে কোনোরকমে চিবাতে শুরু করলো তাহসী। মাংস দিয়ে খেতে মোটামুটি ভালোই লাগছে। এখন তার বমি না পেলেই হয়। তাহসী সিদ্ধান্ত নিল খাওয়ার পরেই একটা এন্টাসিড এর ট্যাবলেট খেয়ে নিবে। লেডিস সাইড ব্যাগে আছে।

সেলিনা শেখ খাওয়াতে খাওয়াতে বললেন,
-“তুমি কি বিরক্ত হচ্ছো তাহসী? তোমাকে আমি খাইয়ে দিচ্ছি। তোমার হয়তো বাবা,মা নিজের পরিবার ছেড়ে এসে থাকতে ভালো লাগছে না, খেতে মন চাইবে না। তাই খাইয়ে দিচ্ছি।”

মুখের খাবার শেষ করে তাহসী বললো,
-“না না, আন্টি। আমার আরো ভালো লাগছে। মিথ্যা বলবো না আমি আসলে একটু অলস। খাইয়ে দিচ্ছেন, আমার অনেক ভালো লাগছে। বাসায় থাকলে আম্মু ও দেয়। আমার অনেক ভালো লাগছে আপনি কাজ ফেলে রেখে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন।”

-“তাহলে আমাকেও আম্মু ডাকা শুরু করতে হবে। নাহলে এসব কিছুই পাবে না।”
এই কথা বলে সেলিনা শেখ হেসে উঠলেন। তাহসীও হাসলো। একটু ভেবে লজ্জা নিয়ে তাহসী বললো,
-“তাহলে আমি মামুনি ডাকবো।”
সেলিনা মাথা নাড়ালেন।

কিছুক্ষণ পর একটু খাওয়ার পরেই তাহসী বললো আর সে খাবে না। সেলিনা শেখ বললেন,
-“এতো অল্প কেন? আবার কখন কি হয় না হয়। আজ তো বউভাত। এখন খেয়ে নাও, দুপুরে কখন খাবার পাবে ঠিক নেই।”

-“আমি সকালে এমনিতেই কম খাই। আপনি ব্যস্ত হবেন না।”

-“আর একটু নাও।”

-“না, প্লিজ আন্টি স্যরি মামুনি। আমি সকালে তেমন খাই না। আর খিচুড়ি একদমই না।”

-“তো তুমি আগে বললে না কেন? রুটি খাও সকালে?”

-“না, রুটি ও খাই না। সমস্যা নেই। একদিনই তো।”

-“সাদা ভাত না করতে পারি তনন কে বললেই পরাটা এনে দিত।”

-“সমস্যা নেই মামুনি। আমি আর খাবো না এখন।”

-“এমন করে নাকি পাগল মেয়ে? এতো ছেড়ে দিতে নেই বুঝেছো? এইযে তোমাকে রাতে,সকালে খাইয়ে দিচ্ছি। বাইরে মানুষে কথা বলছে! বউ কে মাথায় তুলে পরে নাকি আমি পস্তাবো! কিন্তু আমার সামনে কেন বলছে না জানো? ওতো সাহস নেই। আমার এমন শক্ত অবস্থান এমনি এমনি তৈরি হইনি। আমি খারাপ ব্যবহার করিনি কিন্তু আমি ছেড়েও দিইনি। বুঝেছো এত ছাড় দিতে নেই!”

তাহসী বড় বড় চোখ করে সেলিনা শেখ এর কথা শুনলো। এত ভালো শাশুড়ি পাবে এটা তো কখনোই ভাবেনি। তননের আম্মু ভালো এটা জানে তাহসী কিন্তু শাশুড়ি হিসেবে এত ভালো কখনোই ভাবেনি।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-০৬

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৬

আল্লাহর রহমতে তাহসী ও তননের বিয়ে ভালোভাবে সম্পন্ন হলো। বিদায়ের সময় নাতাশা রহমান কান্না চেপে হাসিমুখে অনেক কিছু বললেন দুজনকে দাড় করিয়ে। তখন তৌহিদ হোসেন পাশে দাঁড়িয়ে। নাঈম ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কোথা থেকে যেন নাহিদ এসে তাহসীকে জড়িয়ে ধরলো। এরপর তাহসীর কপালে চুমু দিয়ে বললো,
-“সেদিনের ব্যবহারের জন্য খুবই দুঃখিত। আর কখনো হবে না।”
সেই ঘটনার পরে তাহসী নাহিদের সাথে একদিনও ভালো করে কথা বলেনি। তাহসী নিঃশব্দে হাসলো। কিন্তু নাহিদ তাতে মলিনতা ছাড়া কিছু খুঁজে পেল না। তাহসীর দিক থেকে চোখ সরিয়ে তননকে বললো,
-“আমাদের বিশ্বাসের মর্যাদা রেখো।”
তনন ঘাড় কাত করে সায় দিল।

গাড়ির কাছে তাহসী ও তনন কে এগিয়ে নিয়ে গেল নাহিদ। তনন উঠে বসলে তারপর তাহসীও উঠলো। তাহসীর সাথে যাবে তাহসীর ফুফাতো দুই বোন সারা ও সুমাইয়া। সবাই উঠে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করলো। তাহসী চেষ্টা করলো সবার অগোচরে বাম হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখের পানি মুছতে। কিন্তু তনন দেখে ফেললো। তবে কিছু বললো না।
তাহসী খুবই চাপা স্বভাবের। নিজের কান্না দেখাতে চায় না সে। তৌহিদ হোসেন বলেন মায়ের মতো স্বভাব পেয়েছে। যেমন আজ নাতাশা রহমান ও কাঁদলেন না সবার সামনে।

অল্প সময়ের মধ্যেই তারা তননের বাড়িতে পৌঁছে গেল। তখন মাত্র আছরের আযান পড়েছে। সেলিনা শেখ তাহসীকে নিয়ে গেস্ট রুমে বসালেন, যেহেতু অনেকেই এখন বউ দেখতে আসবে। তাহসী এতে ইতস্তত করলো। সেলিনা শেখ বুঝতে পেরে নিচু স্বরে জানতে চাইলেন কোনো সমস্যা হয়েছে কি-না। তাহসী বিনা দ্বিধায় নিজের সমস্যার কথা জানিয়ে দিল। সে এখানে বসতে চাচ্ছে না। মূলত সবাই এসে তাকে এটা সেটা প্রশ্ন করুক, তাকে নিয়ে মন্তব্য করুক এটা সে চায় না। বিশেষ করে ছেলেরা যেন এখানে না আসে। মুরব্বি হলেই যে তার সামনে যেতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।
তননের চাচি পাশ থেকে এসব শুনে মুখ বাকালো। তাহসী খেয়াল করলেও ভ্রুক্ষেপ করলো না। আশেপাশের মানুষের চিন্তা করে না সে। তার চিন্তা হচ্ছে সেলিনা শেখ কি উত্তর দিবেন।
সেলিনা শেখ হাসিমুখে তাহসীর কথায় সায় দিলেন। তবে তাহসীকে সবার সাথে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হবে এই ব্যাপারে কিছু করার নেই ওনার। তাহসী ও ওনার সমস্যা বুঝলো। কি আর করার! নিজের বাড়িতে এখন নেই বলে মুখের উপর উত্তর দিতেও পারবে না। তবে সেলিনা শেখ তাকে আশ্বস্ত করে তনু কে তার কাছে রেখে গেলেন। সারা আর সুমাইয়া তার পাশেই বসে আছে।

রাত সাড়ে দশটা নাগাদ তাহসী কে তননের রুমে দিয়ে আসলো তননের কাজিন মহল। তাহসীর তখন থেকেই উশখুশ শুরু হলো। তনন রুমে আসলে কথা বলবে কি বলবে না; কোন দিকে তাকিয়ে থাকবে কি থাকবে না; নিজে থেকেই প্রথমে সালাম দিবে কি-না; সেলিনা শেখ দুধের গ্লাস দিয়ে গেছেন সেই দুধের গ্লাস তননকে কিভাবে দিবে, তাহসীর হাত কাঁপাকাঁপি তে বোধহয় পড়েই যাবে; এইসব নানা জল্পনা কল্পনা করতে লাগলো তাহসী। রুমের আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। রুমের সাথে এটাচড ওয়াশরুম আছে, তাহসীর কাছে এটাই বড় স্বস্তির। তাহসীর ভাবনার অবসান ঘটিয়ে প্রায় আধাঘণ্টা পর তনন রুমে আসলো।

তাহসী অল্পতেই নার্ভাস হয়ে যায় তননের সামনে। বিয়ের কথা উঠার পর থেকেই কমার পরিবর্তে বরং বেড়েছে এইটা। তননও সময় দিতে পারিনি এই কয়েকদিন পরীক্ষার জন্য। তাহসী সালাম দিবে কি না ভাবতে ভাবতেই তনন মুচকি হেসে সালাম দিল। তাহসী চমকে আস্তে করে সালামের উত্তর দিল।

তনন যতোটা তাহসীর দিকে এগোতে লাগলো, তাহসীর হৃৎস্পন্দন যেন তেমন গতিতে বাড়তে লাগলো। তনন তাহসীর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“এত ঘামছো যে? ভালোই তো ঠান্ডা আজ। ফ্যান এর পাওয়ার বাড়িয়ে দিবো?”

তাহসী কেঁপে উঠলো কিছুটা। ঘোমটার আড়ালে থেকেও তনন তাকে দেখতে পাচ্ছে! তারপর কি বললো? তুমি! এই প্রথম তনন তাকে তুমি বলে সম্বোধন করলো।
-“না-হ।”

তনন বুঝলো তাহসীর অস্বস্তি। বললো,
-“শাড়ি চেঞ্জ করে ওযু করে এসো।”

তাহসী তাড়াহুড়ো করে নামতে যেয়ে নিজেই নিজের শাড়ির সাথে বেঁধে গেল। তনন সরে যেয়ে দাঁড়ালো। তাহসী আস্তে আস্তে নামলো। টেবিলের উপর রাখা দুধের গ্লাস নিয়ে তননকে দিয়েই এক ছুটে ওয়াশরুমে চলে গেল। তনন আলতো হাসলো। তাহসীর হাত দিয়ে ধরা জায়গায় নিজের হাত স্থাপন করলো।

তাহসী মেকআপ উঠিয়ে একে একে চুড়ি, নূপুর খুলে বেসিনের সামনে থাকা তাঁকে রাখলো। তাও ভালো হালকা মেকআপ দিয়েছিল তার মামাতো বোন। এইসব মেকআপ নেওয়ার অভ্যাস নেই তাহসীর। এরপর ওযু করে অলংকার গুলো হাতে তুলে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো।
তনন তখন বিছানার এক কোণায় বসে আছে। তাহসী ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলো,
-“এইগুলো কোথায় রাখবো? আমি ওয়াশরুমে শাড়ি চেঞ্জ করতে পারছি না। একটু বাইরে গেলে…..”

তনন মাথা নাড়িয়ে বললো,
-“আমি বাইরে না বরং ওয়াশরুমে যাচ্ছি। তাহলে আমিও চেঞ্জ করে নিতে পারবো। আর আলমারি তে রেখে দাও সব। অথবা খুলে রাখো আমি জায়গা দেখিয়ে দিবো।”

তনন শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যেতেই তাহসী এইপাশ থেকে নিঃশব্দে ছিটকিনি আটকে দিল। এরপর একটানে শাড়ি খুলে ফেলে সাথে আনা টপস আর লেগিংস পড়ে নিল। একে তো একটা ছেলের সাথে ঘুমাতে হবে। রাতে ঘুম আসবে কিনা জানেনা তাহসী। তারপর যদি সে আবার শাড়ি পরে ঘুমাতে যায় সব উলোট পালট হয়ে যাবে। আবার আজ তার বাসর রাত! এইটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলো তাহসী। কিন্তু চাইলেই কি আর মাথা থেকে এটা বের করা যায়!
আর তাহসী ভাবলো সে যখন সুযোগ পেয়েছে তাহলে সেইটা কাজে লাগাবেই বা না কেন?

তাহসীর ড্রেস চেঞ্জ করা হয়ে যেতেই তাহসী পুনরায় নিঃশব্দে ছিটকিনি খুলে দিল। ইতিমধ্যে তনন একবার বলেছে হয়েছে কিনা শাড়ি পরা। তাহসী একটু সরে এসে বললো,
-“হয়েছে।”

তনন এসে তাহসীর দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। তাহসী তখন আলমারিতে সব গুছিয়ে রাখতে ব্যস্ত। বিশেষ করে গহনা গুলো। শাড়ি লাগেজে রাখবে বলে ঠিক করলো। তাহসীর নিজের রাখার ইচ্ছা ছিল না, কিভাবে কোথায় রাখবে। কিন্তু কাজের মধ্যে থাকলে নিজের অস্বস্তি ভাব থাকবে না এইজন্যই এই কাজ করা। তনন তাহসীর কাছে এগিয়ে গেল। তনন কে দেখে তাহসী একটু সরে দাঁড়ালো। তনন দেখিয়ে দিল কোথায় রাখবে। এরপর আরেক ড্রয়ার খুলে তনন সাদা খাম বের করলো। তাহসীর হাতে দিয়ে বললো,
-“দেনমোহর এর টাকা। তখন নিয়ে যাইনি কারণ হারিয়ে যেতে বা চুরি হতে পারতো।”

তাহসী মিনমিন করে জবাব দিল,
-“এখানেই থাক। এত মানুষ! আনা নেওয়া ঝামেলা।”

তনন কিছুক্ষণ চুপ থেকে সায় দিল। আগের ড্রয়ারে রাখতে যেয়ে আবার তাহসীর হাতে দিল।
-“অন্তত ছুঁয়ে রাখো। শেষে যদি আবার হালাল না হয় বিয়ে?”
তাহসী নিজেই রেখে দিল ড্রয়ারে। তাদের বিয়েতে লোক দেখানো কোনো দেনমোহর ধরা হয়নি। এই বিষয়ে তাহসী আগেই কথা বলে নিয়েছিল নাহিদের সাথে। এমন টাকার পরিমাণ যেন ঠিক করা হয় যেইটা তনন বিয়ের দিনই দিতে পারে। দেনমোহর পরিশোধ না করলে তাহসী যাবে না তননের বাড়ি।এতে অবশ্য উভয় পক্ষের সায় ছিল। তবে তনন বিয়ের সময় নিয়ে যায়নি যদি চুরি করে নেয় কেউ। এটা তার বাবার গোছানো টাকা থেকে তোলা।

তনন তাহসীর হাতে জায়নামাজ ধরিয়ে দিল। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দুজনে সালাত আদায় করে নিল। তবে পুরোপুরি পাশাপাশি দাঁড়ালো না, কারণ নিয়ম নেই। তাহসী একটু পিছনের দিকে সরে দাঁড়ালো।

নামাজ শেষে তাহসী জায়নামাজ তুলে তননের হাতে দিল। তাহসী বুঝতে পারছে না তার করণীয় কি এখন। বিছানায় যেয়ে শুয়ে পড়বে নাকি বিছানায় যেয়ে বসে পড়বে।
তনন কথা বলে উঠলো,
-“তো বলো বাসর রাত নিয়ে তোমার স্বপ্ন কি ছিল? ছাদে উঠে চাঁদ দেখা নাকি অন্য কিছু…!”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-০৫

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৫

তনন প্রশ্ন করলো তাহসীকে,
-“ঢাকা থেকে কখনো শপিং করেছিস? মানে জানতে চাইছি পরিচিত ভালো শপ আছে? তাহলে সেখানেই যায়।”

তাহসী মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। তনন নিজের মতো ভেবে তাহসী কে নিয়ে সামনে হাঁটতে লাগলো। তনন এক শপিংমলের কাছেই বসেছিল রেস্টুরেন্টে। তাহসী আসার আগে এক কাপ কফি নিয়ে খাচ্ছিল আর বই দেখছিল। মিনিট দুয়েক হাঁটার পরেই তারা একটা শপিং মলে পৌঁছে গেল। দোতলায় যেয়ে তনন শাড়ি দেখতে শুরু করলো। তাহসী কে বললো,
-“পছন্দ কর নিজ ইচ্ছানুযায়ী।”

তাহসীর সাথে সকালেই সেলিনা শেখের কথা হয়েছে। উনি ভালোভাবে বলে দিয়েছেন তাহসীর ইচ্ছে মতো শপিং করতে। এই একটা দিন মেয়েদের জীবনে একবারই আসে। সেই দিন যদি পছন্দ মতো সাজতেই না পারলো তাহলে আর কবে সাজবে।

তননের কথায় তাহসী উত্তর দিল না। মৌন রইলো। তনন দাঁতে দাঁত চেপে উঠে পড়লো দোকান থেকে। দোকানিকে দেখি বলে বের হলো। তাহসীও পিছু পিছু আসলো। দোকানের বাইরে আসতেই তনন হাঁটতে হাঁটতে নিচু স্বরে বললো,
-“তোকে কি কেউ চেপে ধরে বিয়ে দিচ্ছে? আমাকে বল, ভেঙ্গে দিই বিয়ে। খারাপ বলে, অপমান করে করুক।”

তাহসী চমকালো। কিছু বলতে উদ্যত হলেই তনন পুনরায় বললো,
-“কাউকে লাভ করিস? আমার জানামতে তো কেউ ছিল না। এখন মনে হচ্ছে আছে হয়তো। নির্ভয়ে বলতে পারিস।”

তাহসী মৃদু স্বরে বললো,
-“এমন কিছুই না।”

-“তাহলে? সেই তখন থেকে দেখছি বোবার মতো পরে আছিস। অসুস্থ তুই? তাহলে আসলি কেন? কাল আসতাম।”

-“অসুস্থ না।”

-“তাহলে এমন ব্যবহারের মানে? কাল আমার পরীক্ষা আছে। এমন সময় নষ্ট তো করতে পারবো না। আমি ভেবেছিলাম আম্মু যশোর থেকেই কিনবে। কিন্তু আম্মু জোর দিয়ে বলেছে এখান থেকে কিনে নিয়ে যেতে। আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা রে ভাই! একটু তো বোঝ!”
তনন,তাহসীর বাড়ি যশোরের শহরের কাছাকাছি এক গ্রামে।

তাহসী এবার বুঝলো। এইজন্যই বই হাতে নিয়ে ঘুরছে! তাহসীর যে লজ্জা করছে সাথে অস্বস্তি লাগছে এখন সেইটা কিভাবে বুঝাবে। তননও বোধ হয় বুঝলো কিছুটা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আস্তে করে বললো,
-“সামনের শপে যায়। প্লিজ এইটুকু ইজি হ।”

তনন দোকানিকে শাড়ি দেখাতে বললে দোকানি অনেকগুলো শাড়ি মেলে ধরলো। তনন তাহসীর দিকে তাকালো। তাহসী ইশারায় দুটো শাড়ি দেখালো। তননেরও কিছুটা ভালো লাগলো। মৃদু স্বরে বললো,
-“কোনটা দুইটার মধ্যে?”

-“ইচ্ছা।”

-“তাহলে তোকে নিয়ে আসছি কেন?”

-“দুটোই ভালো।”
তনন খেয়াল করে দেখলো তাহসী দুটো লালরঙা শাড়ি দেখালেও তাহসীর চোখ একটি গোলাপি সাদা শাড়ির দিকে। তনন সবটা বুঝে গেল। দোকানির কাছে তিনটা শাড়ির দাম জানতে চাইলো তনন।
সাদা শাড়িটার দাম জানতে চাওয়ায় তাহসী অবাক হলো। তননের সাথে তার চোখাচোখি ও হলো।

দোকানি দাম বললে চোখ কপালে উঠে গেল তননের। এত দাম! সাদাটার দাম তুলনামূলক বেশি। সে কখনো এর আগে কিছু কিনেনি। সবসময় বাবা অথবা মা-ই কিনতো। বাবা যাওয়ার পর থেকে তননের জীবন থেকে সব আভিজাত্য ও চলে গেছে। বাবার কথা মনে পড়েই তননের মন খারাপ হলো। তনন তাহসীকে বললো মন থেকে যেইটা সে চায় সেইটা নিতে। তাহসী মুচকি হেসে সাদাটা দেখালো।
তনন কিছু বলার আগেই তাহসী একটা দাম বললো দোকানিকে। তননের চোখ কপালে উঠে গেল। অপমান হতে হবে নাকি।

দোকানির মধ্যে একটা ছেলে বললো,
-“আপু বারো হাজার টাকার শাড়ি আপনাকে পাঁচ হাজার টাকায় কে দিবে? একটা মানসম্মত দাম বলুন।”

-“আমার যেইটা মনে হয়েছে বলেছি। দেখুন কি‌ করবেন।”
তাহসী তনন কে ইশারায় চুপ থাকতে বললো।

বাক-বিতণ্ডা শেষে শাড়িটা আট হাজার দিয়ে কিনলো। দোকান থেকে বেরিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি দিল তাহসী। তনন অবাক হয়ে বললো,
-“দিয়ে দিল! হাউ! আমি তো দশ হাজার বলবো ভেবেছিলাম। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না!”

তাহসী কিছুই বললো না। শুধু লাজুক হাসলো। তনন পুনরায় বললো,
-“ভালোই শপিং করার অভিজ্ঞতা আছে তোর দেখছি। ভবিষ্যতে অনেকগুলো টাকায় বেঁচে যাবে মনে হচ্ছে।”

তাহসী মৃদু স্বরে বললো,
-“এই শাড়ি আমি দেখেছি যশোরে। দাম চাইছিল আট হাজার টাকা। আর বাবাকে দেখেছি প্রতিটি জিনিসের দাম করতে। সেখান থেকেই শেখা।”

তনন তাহসীকে নিয়ে বাদবাকি জিনিস ও কিনে ফেললো। সেলিনা শেখ কিছু টাকা পাঠিয়ে ছিল। কিছু টাকা তননের টিউশনি করে জমানো টাকা থেকে এনেছিল তনন‌। এখন মনে হচ্ছে কোনো বন্ধু কে সাথে আনার থেকে তাহসী এনেই লাভ হয়েছে। কিছু টাকা বেঁচে গেছে। শপিং করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। তনন তাহসীকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কথা বললে তাহসী গেল না। তনন অবশ্য মন থেকে বলেনি, কাল তার পরীক্ষা। আবার এইসব রেস্টুরেন্টে যাওয়া সে ছেড়েছে এক বছরের বেশি হয়ে গেল।

তনন ফুটপাতে ঝালমুড়ি দেখতে পেয়ে তাহসীকে এনে দিল এক ঠোঙা। তাহসী ইতস্তত করে তননের দিকে বাড়িয়ে দিলে তনন নিল না। হঠাৎ তাহসীর চোখ পড়লো রাস্তার ওইপাশে থাকা এক ছেলের দিকে। তাহসী রাস্তা পার হওয়ার জন্য উদ্যত হতেই তনন উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
-“কোথায় যাচ্ছিস? এইপাশ থেকেই রিকশা নিবো।”

-“আরে সামনে ভাইয়া।”

তনন সামনে তাকিয়ে দেখে নাহিদ দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ের সাথে। তার একটু দূরেই একটা ফুসকার স্টল। তনন বুঝলো ব্যাপারটা।

তাহসী ফোন বের করে ফটো তুললো। রাস্তার ওইপাশে যেয়ে নাহিদের পিছন থেকে শার্টের কলার টেনে ধরলো।

নাহিদ চমকে পিছনে ঘুরতেই দেখলো তনন আর তাহসী। ধমক দিয়ে বললো,
-“এইভাবে কেউ আসে?”

-“ইশ্! তখন না বললে বিকালে আমার সাথে আসতে পারবে না। এখন তোমার কত ইম্পর্ট্যান্ট কাজ দেখতে পাচ্ছি। ফেইক আইডি দিয়ে বাবার কাছে পাঠিয়ে দিই পিক?”

-“চুপচাপ এখান থেকে যা তুই।”

নাহিদের কর্কশ কন্ঠে তাহসীর মন খারাপ হলো সাথে রাগ ও হলো। মিথিলা মেয়েটাও আছে এখানে। আবার তননও আছে এখানে। নাহিদ কখনোই তার সাথে এমন ব্যবহার করেনি। আজ পাবলিক প্লেসে এই দুইজনের সামনে এমন ব্যবহার করছে।
তাহসী হাসিমুখে নাহিদের কাছে আরেকটু এগিয়ে যেয়ে বললো,
-“উহু, এভাবে যাওয়া যাবে না। পরিচয় করিয়েই তো দিচ্ছ না।”

নাহিদ নিজেকে সামলে কোনোরকমে বললো,
-“পাবলিক প্লেসে থাপ্পড় না খেতে চাইলে সর সামনে থেকে।”

তাহসীর মন খারাপ হয়ে গেল। তবুও কান্না আটকে বললো,
-“এমন ব্যবহার কেন করছো তুমি?”

নাহিদ কিছু না বলে তাহসীর সামনে থেকে সরে গেল। রিকশা পেতেই চলে গেল নাহিদ।
তনন মিথিলার দিকে এগিয়ে যেয়ে বললো,
-“হয়তো পার্সোনাল। তবুও বলবেন প্লিজ কি হয়েছে?”

মিথিলা চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললো,
-“আপনারা কারা?”

-“ওইটা নাহিদ ভাইয়ার বোন। আর আমি তার ফ্রেন্ড।”
সংকোচ নিয়ে উত্তর দিল তনন।
তাহসী তখনও ভাইয়ের যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।

মিথিলা পুনরায় বললো,
-“আমার বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। এইটা বলতেই রেগে গেল। আমি কেন বলিনি এটা নিয়েই ধমকালো আমাকে। এখন চলে গেল।”

-“ভাইয়ার কথা ঠিক আছে। আপনি বাড়িতে জানান।”
তনন কে কথা বলতে দেখে তাহসী এগিয়ে আসলো।

-“আসলে এটা সত্য নয়। বান্ধবীরা ডেয়ার দিয়েছিল আমাকে। আর বিয়ের কথাটা বলার পরে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বকাবকি করে চলে গেল। শুনলোই না।”

তাহসী রেগে গেল ডেয়ারের কথা শুনে। এই খেলা তার কাছে জঘন্য লাগে। আর এই জন্যই ঝামেলা হয়েছে শুনে রাগ বেড়ে গেল। তাহসী দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“আপনাকে ডেয়ার দিলাম যদি আপনার সাথে আমার ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয় তাহলে আপনি সেইদিন পালাবেন। এটা মানতে না পারলে আমাদের বাড়িতে ঢুকতে দিবো না।”

তাহসী তননকে ইশারায় ডেকে চলে গেল। তননও চলে গেল। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো মিথিলা। কি বলে গেল মেয়েটা! পালিয়ে গেলে তো এমনিতেই বাড়িতে ঢুকতে দিবে না। তাহলে? নাহ, এবার মনে হচ্ছে সে পাগল-ই হয়ে যাবে। এইসব ভাবছে মিথিলা। ভাইয়ের থেকে বোনও কম যায় না। না জানি এদের পুরো পরিবার কেমন।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-০৪

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৪

তৌহিদ হোসেন পুনরায় মায়ের উদ্দেশ্যে বললেন,
-“আমার মেয়ে ইনশাআল্লাহ ভালো থাকবে মা। ছেলে খারাপ না। এক বয়সী, বুঝবে ভালো। যারা বলে একই বয়সী হলে ঝগড়া হয়, বোঝে কম; তারা আসলে ভুল বলে। একই বয়সী বোঝাপড়াও ভালো হবে। ঝগড়া করবে, ভালো ও বাসবে। আর ছেলের কাজ দেখেছো! ফাইনাল পরীক্ষা, সে সব বাদ দিয়ে বিয়ের কথা শুনে ছুটে এসেছে। চোখের অবস্থা দেখেছো! সারারাত নির্ঘুম।”

-“তোর মেয়ে প্রেম করে কিনা দেখিস! ওই ছেলেও ঢাকা থাকে। তোর মেয়ে ঢাকা যেয়ে… ”

-“দেখো আম্মা আমার মেয়ে নিয়ে বাজে কথা বলবে না। প্রেম করে তোমার আদরের নাতি ছেলে নাহিদ। সেদিকে খোঁজ নাই, আমার মেয়ের পিছনে লাগতে আসছে। তুমি তো বিয়ে করছিলে এক বুড়া, তোমার থেকে কত বয়স বেশী! আমার মেয়ে জামাই কমবয়সী, সহ্য হচ্ছে না। আর তোমার ওই নাতনি রেবা আর তোমার মেজো বৌমা যদি নজর দিছে আমার জামাইয়ের দিকে, তো খবর আছে!”

নাতাশা রহমান এর সাথে মোহিনী বেগম এর সম্পর্ক ভালো। নাতাশা রহমান ওনাকে এভাবে খুচিয়েই কথা বলেন। মোহিনী বেগম কিছু না বলে হাসতেন প্রথম থেকেই। নাতাশা রহমান ও ব্যবহার পরিবর্তন করেননি। মোহিনী বেগম বিস্ময় নিয়ে বললেন,
-“কি নাহিদ প্রেম করে! ওকে আমি দেখে নিচ্ছি। তুই কিছু বলিসনি কেন? গেল ছেলেটা গেল! তুই নষ্ট করে ফেললি।”
মোহিনী বেগম উঠে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলেন।

নাতাশা রহমান হাসতে হাসতে বললেন,
-“এখন নাহিদ কে ঘুম থেকে উঠাবে না।”

তৌহিদ হোসেন ও অবাক হয়েছেন। বললেন,
-“মজা করে বলছো নাকি সত্যি? কোন মেয়ে?”

-“আমিও জানতাম না। তাহসী দেখিয়েছে। এই প্রায় এক মাস জেনেছি। তাহসী কিভাবে যেন দেখে ফেলেছে নাহিদের থেকে।”

-“কোন মেয়ে? আমাদের তো বলতে পারতো। আর হারাম সম্পর্কে থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে কি হচ্ছে!”

-“আরে ওর বন্ধুর বিয়ে খেতে গেল না তিন চার মাস আগে। সেখানে দেখেছে। ওর বন্ধু তাজের খালাতো না মামাতো বোন হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, তাহসীর এক ব্যাচ সিনিয়র। নাম মিথিলা। তেমন সম্পর্ক নেই।”

-“আমাকে বলোনি কেন?”

-“তুমি জিজ্ঞেস করেছো? আমি আর তাহসী শুধু জানি।”

-“জিজ্ঞেস না করলে বলবে না?”

-“না।”
তৌহিদ হোসেন ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। নাতাশা রহমান হেসে দিলেন। তৌহিদ হোসেন ও হাসলেন।

🍁🍁🍁
পরদিন সকাল সকাল তাহসী লাগেজ গুছিয়ে রেডি হয়ে নিল। নাঈম সেইটা দেখে বললো,
-“আপু ঢাকায় যাচ্ছো নাকি? এই কয়দিন থাকবে না?”

-“আমার পড়াশোনা বসে থাকবে, তাই না।”

-“ভাবলাম একবারে বিদায় দিবো তোমাকে! এখন তো দেখছি আগেই চলে যাচ্ছো। নিশ্চয় বিয়ের আগে এক সপ্তাহ প্রেম করবে।”

-“থাপ্পড় দিবো একটা। কলেজে উঠে বেয়াদব হয়েছো, না?”

নাহিদ আসলো। আয়েস করে তাহসীর বিছানায় বসলো। নাঈমের কান টেনে ধরে বললো,
-“বেয়াদবি না? সত্যি কথা কখনো মুখের সামনে বলতে হয়? মানুষ জ্বলে উঠে জানিস না!”

-“ভাইয়া তুমিও। তোমার কথা যদি বাবাকে না বলেছি! আমার টা মিথ্যা বাট তোমার টা তো সত্যি!”

-“বাবাকে বললেই বিশ্বাস করবে যত! এখন বের হ দ্রুত। নাহলে বাস মিস করবো।”
ঢাকাতেই চাকরি করে নাহিদ। গত বৃহস্পতিবার নাহিদ আর তাহসী এসেছিল। আজ শনিবার, ফিরে যাচ্ছে। আজকের ক্লাস মিস গেল তাহসীর। নাহিদ কৃষি অফিসার পদে সদ্য জয়েন করেছে। শুক্রবার ও শনিবার দুইদিন ছুটি তার।

তৌহিদ হোসেন রুমের বাইরে থেকে সবটাই শুনলেন। তবে কিছু বললেন না এই ব্যাপারে। নাহিদের উদ্দেশ্যে বললেন,
-“নাহিদ আপাতত এক সপ্তাহের ছুটি নাও। আজ থেকে ছুটি হলেই ভালো হতো অবশ্য। আজ তাহসীর সাথে ঢাকা যাচ্ছো যাও, তাহসী কে নিয়ে ফিরে আসবে মঙ্গলবারে।”

-“বাবা বুধবারে আসি।”

-“অবশ্যই না। তবে তুমি চাইলে বিশেষ কাউকে দাওয়াত দিতে পারো।”
তৌহিদ হোসেন বের হয়ে গেলেন।

নাহিদ ঘামতে ঘামতে বললো,
-“কাউকে মানে? বাবা কি বলে গেল।”

নাঈম হাসতে হাসতে তাহসীর বিছানার উপর শুয়ে পড়লো।
-“এই সাহস নিয়ে প্রেম করো? ঘাম ছুটে যাচ্ছে তোমার! হা হা হা! বাড়ির ছোট বড় এমনকি শাফিম ও জানে তুমি প্রেম করো।”

-“এ্যা?”

-“হ্যা। দাদির থেকে শুনলাম ভোরে উঠে। বাবা তোমাকে নামাজ পড়তে যেতে নিষেধ করেছে। হারাম কাজ করে মসজিদে যেয়ে কেবল মসজিদের অপমান।”

-“দাদি জানছে কিভাবে? তাহসী তুই!”

-“না। আম্মু।”

🍁🍁🍁
দুই দিন কেটে গেছে। এই দুই দিন আশায় আশায় বসে ছিল তাহসী। তনন হয়তো যোগাযোগ করবে তার সাথে। কিন্তু তনন যোগাযোগ করেনি। তননের সাথে প্রায় দুই মাস কোনো কথা নেই। দুইজনের প্রতিষ্ঠান আলাদা হওয়ার পর থেকে যোগাযোগ কমে গেছে। এখন দরকার ব্যতীত বা হঠাৎ হঠাৎ ছাড়া কথা হয়না। তনন কে অনলাইনেও ইনএক্টিভ দেখাচ্ছে। তাহসী মনে মনে রাগ করলো। তাহসীর মনের মধ্যে প্রশ্ন জমেছে কতকগুলো। তবুও নিজ থেকে যোগাযোগ করলো না সে। যা হয় হয়ে যাক।

তাহসী ঢাকাতে এসে আঁখির থেকে শুনেছে তনন তাহসীর কথা তোলায় আঁখি ও বলে দিছে। তাহসী কিছুই বুঝতে পারছে না। এখনো সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে তাহসীর কাছে। বলা নেই কওয়া নেই বিয়ে!

তাহসীর এইসব ভাবনার মাঝেই কল আসলো। আননোন নাম্বার দেখে তাহসী ধরলো না। দ্বিতীয় বার‌ কল আসতেই তাহসী চোখ মুখ কুঁচকে তাকালো। তবুও রিসিভ করলো না। তৃতীয় বার বাজতেই রিসিভ করে সালাম দিল।
সালামের উত্তরের পরেই ওপাশ হতে ভেসে আসলো,
-“কল ধরতে এতক্ষণ লাগে!”

ওপাশে তনন কথা বলছে বুঝতে পেরেই তাহসী অবাক হলো। তাহসী প্রথমে কিছুই বললো না; রুমের মধ্য থেকে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। তনন পুনরায় বললো,
-“কাল বিকেলে রেডি থাকবি, আম্মু এখান থেকেই সব কিনতে বলেছে।”

-“কি কিনতে বলেছে? আমি কেন রেডি থাকবো?”

-“বিয়ের বেনারসী। তুই না থাকতে চাইলে কে থাকবে তাকে পাঠিয়ে দিস। রাখছি।”

তনন কল কেটে দিল। তাহসী রাগান্বিত হয়ে ফোন কান থেকে সরিয়ে সামনে আনলো। তাহসী বিড়বিড় করে বললো,
-“যত ত্যাড়া ত্যাড়া কথা! এইজন্যই ভালো লাগে না একে! কোন ব্যস্ত মানুষ উনি! ফোন দিয়ে আবার নিজ থেকেই কেটে দিল। ধুর! আমার প্রশ্নগুলোও করা হলো না।”
তাহসী কল দিল না নিজ থেকে। নাম্বার সেইভ করতে যেয়েও করলো না।

🍁🍁🍁
পরেরদিন বিকেলবেলা তাহসী ভার্সিটি থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে তননের দেওয়া লোকেশনে যায়। তনন একটা রেস্টুরেন্টের লোকেশন দিয়েছে। তাহসী রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করতেই তার চোখে পড়লো তনন কে। টেবিলের উপর বই রেখে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। তাহসী মুখ বাকালো। তাহসীর মনে হয় এই ছেলে অতিরিক্ত পড়ে। অবশ্য এমনি এমনি তো আর বুয়েটে চান্স পাইনি। তাহসী ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সেদিকে। আঁখি কে এতবার বললো আসতে ওই মেয়ে আসলোই না। নাহিদ কে বললে সেও আসেনি।

তাহসী তননের সামনের চেয়ার টেনে বসলো। শব্দ শুনে তনন সামনে তাকালো। বই বন্ধ করে রেখে তাহসীর দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। তাহসী সবসময়ই বড় হাতার গোল লং জামা পড়ে তার সাথে জিন্স প্যান্ট বা লেগিন্স আর মাথায় স্কার্ফ। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তনন চোখ সরিয়ে নিল। প্রতিদিনের তুলনায় আজ যেন একটু বেশিই ভালো লাগছে তাহসী কে। তাহসীর অস্বস্তি তননের চোখ এড়ালো না। তনন ওয়েটার কে ডেকে দুই কাপ কফি দিতে বললে তাহসী মিন মিন করে বললো,
-“আমি কফি খাই না।”

তনন কিছু দিতে নিষেধ করলো। ওয়েটার তাহসীর কথা শোনায় কিছু বললো না। তনন উঠে দাঁড়িয়ে তাহসী ইশারায় তার সাথে আসতে বললো। তাহসী নিঃশব্দে উঠে আসলো।
তনন প্রশ্ন করলো,
-“কেমন আছিস?”

-“আলহামদুলিল্লাহ।”

-“ঢাকা থেকে কখনো শপিং করেছিস? মানে জানতে চাইছি পরিচিত ভালো শপ আছে? তাহলে সেখানেই যায়।”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-০৩

0

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩

তৌহিদ হোসেন ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললেন,
-“তৌফিক ওকে চুপ থাকতে বল।”

এই কথা শুনেও থামলেন না শিরিন । সেলিনা শেখ এর উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
-“তাহসী তো বিয়ে করবে না এখন। আমার মেয়ে তাহসীর থেকেও ফর্সা আপা। তননের সাথে খুব ভালো মানা….।”
তৌফিক হোসেন শিরিন কে থামিয়ে দিয়ে এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেন। শিরিন পুনরায় কিছু বলতেই লাগলেই সেলিনা শেখ হাসিমুখে স্পষ্ট স্বরে বললেন,
-“এখন ছেলের বিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম না। তাহসীর জন্যেই এসেছি। তাহসী ব্যতীত কেউ লাগবে না। আর ফর্সা দেখলে তো যেকোনো মেয়েই পাওয়া যাবে।”

তনন বিড়বিড় করে বললো,
-“ফর্সা ধুয়ে পানি খাবো!”
কেউ না শুনলেও সেলিনা শেখ শুনলেন এই কথা। তননকে চোখ রাঙালেন তিনি।

মুখের উপর অপমান করা দেখে শিরিন চুপ করে গেল।
তৌহিদ হোসেন পুনরায় বললেন,
-“কি হলো বলো তাহসী? বিয়ে করতে চাও?”

এতক্ষণ তাহসী উত্তর ভেবেই রেখেছে। উত্তর পাল্টাবে না, মন চাইলেও। একেই হয়তো বলে ভাগ্যে না থাকলে পাওয়া যায় না।
-“না, বাবা।”
তাহসী এমনিতেও জানে বিয়ে দিবে না। তার বাবা তাকে পরীক্ষা করার জন্য বলেছে। তার তননকে দেখে সে এখন হ্যা বলে দিতে পারে না।

তননের মুখ চুপসে গেল। এমন হবে সে আগেই ভেবেছিল। তবে বড্ড আসা নিয়ে এসেছিল সে।

তৌহিদ হোসেন পুনরায় বললেন,
-“এখন বিয়ে করতে চাও না নাকি তননকে বিয়ে করতে চাও না?”

তাহসীর হাঁসফাঁস অবস্থা। তননের সাথে স্বাভাবিক যোগাযোগ ছিল এবার বুঝি তাও থাকবে না। কিন্তু তননের কথা শুনে হ্যা বলা মানে তননের সাথে সম্পর্ক আছে এমনটা স্বীকার করা। এদিকে না বলতেও অনেক কষ্ট লাগছে। এত সহজে পেয়েও পাবে না! সুযোগ নিজে এসে ধার দিচ্ছে অথচ তাকে গ্রহণ করতে পারবে না; এমন কষ্ট সহনীয় নয়।
তাহসী কাঁপাকাঁপা স্বরে বলল,
-“দুইটাই চাই না।”

তৌহিদ হোসেন তাহসীকে পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে তননের দিকে তাকালেন। তাহসী আর দাঁড়ালো না। দ্রুত হেঁটে স্থান ত্যাগ করল।

তৌহিদ হোসেন সেলিনা শেখ এর উদ্দেশ্যে বললেন,
-“সব তো শুনলেন।”

তনন মাকে ইশারা করলো ওঠার জন্য। তননের রাগ হচ্ছে এখন। এর জন্য সে আজ ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস মিস দিয়ে অপমান হতে আসলো!
সেলিনা শেখ মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে বললেন,
-“কি আর করা যাবে? মেয়ে তো রাজি না। সমস্যা নেই। আচ্ছা আমরা উঠি আজকে।”

তনন আগে আগে বসা থেকে উঠে পড়লো। চোখ আরও লাল হচ্ছে। রাগের সাথে দুঃখ ও লাগছে।

তৌহিদ হোসেন সবাইকে অবাক করে দিয়ে বললেন,
-“বাড়ির নতুন বড় জামাই কে ভিতরে নিয়ে যাও নাতাশা।”

নাতাশা রহমান তাহসীর মায়ের নাম। তাহসীর কোনো বোন নেই, দুইটা ভাই তার; একটা তাহসীর ছোট, নাম নাইম , আরেকটা তাহসীর বড় তার নাম নাহিদ। তাহসীর বাবা সবার বড়। তাহসীর মেজো চাচুর দুই মেয়ে রেবা আর রিমি। ছোট চাচুর এক মেয়ে শশী আর দুই বছরের ছেলে শাফিম। সবার বড় নাহিদ, তারপরেই তাহসী।

সবাই অবাক হয়ে তাকালো। তনন অবাক হয়ে ধপ করে পুনরায় বসে পড়লো। সেলিনা শেখের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। বলে উঠলেন,
-“আলহামদুলিল্লাহ।”

নাতাশা রহমান ওনাদের কে নিয়ে দোতলার ঘরের নিচ তলার গেস্ট রুমে বসালেন। তৌহিদ হোসেন হাসি মুখে রান্নার ব্যবস্থা করতে বললেন। তনন মাকে ইশারা করলো কিছু বলার জন্য।
সেলিনা শেখ বললেন,
-“আমরা এখন উঠি ভাইজান। পরে আবার আলোচনা করতে আসবো। আসলে….”

নাতাশা রহমান এগিয়ে আসলেন। হাসিমুখে বললেন,
-“না খাইয়ে ছাড়ছি না আপনাদের। কাজ থাকলে পরে হবে।”

-“ভাবী আসলে তনন চলে যাবে। বারোটায় বাস। এখন তো সাড়ে দশটার বেশি বাজে!”

এর মধ্যে তাহসীর ছোট চাচী শিমুল রহমান নাস্তা নিয়ে আসলেন।
তৌহিদ হোসেন বললেন,
-“এটা কেমন কথা! এখন নাস্তা করেন। দুপুরে খেয়ে না হয় যাবেন। কিন্তু তননের আবার বাস! এটা বাদ যাক। আমি তৌফিক কে বলে বিকালের বাসের টিকিটের ব্যবস্থা করে দিবো।”

তনন মুখ খুললো।
-“এটা আর্জেন্ট আঙ্কেল। কাল থেকে আমার তৃতীয় বর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। আমি কাল রাতে নাইটে এসেছি। ঢাকায় যেয়ে একটু না ঘুমাতে পারলে সকালে যেয়ে পরীক্ষা দিতে পারবো না।”

তৌহিদ হোসেন অনেকটা অবাক হলেন। পরীক্ষা, পড়াশোনা ফেলে এই ছেলে ছুটে এসেছে। মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন,
-“তাহলে তুমি যাও। তোমার আম্মু আর বোন পরে যাবে। কথা যেহেতু উঠেছেই এভাবে ফেলে রাখতে চাইছি না।”

তনন মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। আফসোস হলো তাহসীর সাথে আলাদা কথা বলতে না পারার। তবুও পরক্ষণেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো মনে মনে। বিয়ে হয়ে গেলেই তাহসী সম্পূর্ণ তার। নাহিদ তাকে বাইকে করে বাড়ি পৌঁছে দিল। যেতে যেতে দু’জনের মধ্যে দুই একটা কথাও হলো।

এদিকে তাহসী রুমে এসে দুফোঁটা চোখের পানি ফেললো। দোতলার এক রুমে সে থাকে। নিচের হইচই কানে আসতেই চোখ মুছে নিল। পাছে কেউ রুমে এসে দেখে ফেলে। নিচে কি হচ্ছে সেইটা সে জানতে পারল না।

________________
তাহসী আর তননের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে এক সপ্তাহ পরেই। সেলিনা শেখ তখন অবাক হয়ে জানতে চাইলেন এটার কারণ যেখানে তিনি প্রথমে মেনেই নিচ্ছিলেন না। তৌহিদ হোসেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
-“শহরে আগে বসবাস করলেও এখন গ্রামে থাকি। রিটায়ার্ড করেছি চাকরি থেকে। আমি এড়িয়ে চললেও আমার ভাই, বাবা এড়িয়ে চলতে পারে না সমাজের মানুষ কে। চেয়ারম্যান এর ছেলে আর চেয়ারম্যান অনেকটাই ঝামেলা করছে। আমি তাহসী কে ঝামেলায় ফেলতে চাইনা। আর তনন জানাশোনা ছেলে। চোখের সামনেই বড় হতে দেখেছি। তাহসী না বললেও বুঝি তাহসীর তেমন বারণ নেই। তবে একটা শর্ত মেয়ের পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনার বাড়ি দিচ্ছি না। তবে যাওয়া আসা করবে।”
সেলিনা শেখ সন্তুষ্ট হয়েছেন তার কথায় এবং সায় জানিয়েছেন।

রাতের বেলা ঘুমানোর সময় নাতাশা রহমান তৌহিদ হোসেন কে প্রশ্ন করলেন,
-“এত তাড়াতাড়ি তাহসীর বিয়ে কেন ঠিক করলে আমি বুঝলাম না।”

-“কেন তনন কে পছন্দ নয়?”

-“তনন জানাশোনা ছেলে। তাহসীর সাথে মানাবে ভালো। কিন্তু তাহসী এখন বিয়ে করতে চাই না। বিয়ের কথা শুনে মন খারাপ করলো।”

-“মন খারাপের অভিনয় করলো নাকি সত্যিই মন খারাপ করেছে? সকালে তো ওখান থেকে চোখ মুখ অন্ধকার করে চলে আসলো।”

-“সে যাই বলো। চেয়ারম্যান এর ভয় আমি পাই না। তুমি বেশি বেশি করছো। তাই বলে এক সপ্তাহ! আর নাহিদের এখনো বিয়ে হলো না। তাহসী এটা নিয়ে রাগারাগী করছে।”

-“বেশি বেশি করছি না। তুমি বুঝবে না। আর নাহিদের বিয়ের কথাও তুলবো। তুমি ওর থেকে জেনে নিও পছন্দ আছে কিনা।”

তাহসীর দাদি বাইরে থেকে ছেলের নাম ধরে ডাকলে তৌহিদ হোসেন ভিতরে আসতে বললেন মাকে। তারাও শোয়া থেকে উঠে বসলো।
তাহসীর দাদি মোহিনী বেগম বললেন,
-“এই ছেলের সাথে বিয়ে কিভাবে ঠিক করলি তুই?”

-“কেন মা? ছেলে কি খারাপ? স্বভাব চরিত্র তো ভালো যতদূর জানি।”

-“ছেলের বাবা নেই। এখনো পড়াশুনা করে। কোনো চাকরি নেই। না জানি কিভাবে চলে সবাই; কিভাবে মা, মেয়ে গ্রামে থাকে। আর ছেলে ঢাকায় পড়াশুনা করে, টাকা আসে কোথা থেকে।”

-“টিউশনি করে। আর ওর বাবা নেই এক বছর। গ্রামের কলেজের প্রিন্সিপাল ছিল। এখন না হয় বাবা নেই, আগে ভালো অবস্থা ছিল। আর গ্রামে জমি জমা আছে, তাই থেকে যা আসে তাই দিয়ে মা মেয়ে থাকে। জমানো টাকা আছে হয়তো। আর এইসব আমি দেখছি না মা। আমি দেখছি ছেলেকে। স্বভাব চরিত্র ভালো। ছেলের পরিবার ভালো। আর বড় কথা, ওরা সুখে আছে। অল্পতেই সন্তুষ্ট।”

-“তবুও এক সাথে পড়ে। একই বয়সী হলে বিয়ে নাও টিকতে পারে। ভেবে সিন্ধান্ত নে। চেয়ারম্যান এর ছেলে তাও একটা চাকরি করে।”

নাতাশা রহমান ভেঙচি কেটে বললেন,
-“চাকরি করে সাথে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। তোমার মেয়ে জামাই তো ওমন, তাই তুমি আমার ভালো দেখতে পারতেছো না।”

-“তুই থাম। আমার মেয়ে জামাই এখন আর ওমন নেই। ব্যবহার খারাপ, কিন্তু ওমন নেই আর।”

চলবে ইনশাআল্লাহ;