তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-১০+১১

0
235

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১০

একমাস এভাবেই চলে গেছে। তনন অভিমান করে আর পরীক্ষার ব্যস্ততার কারণে যোগাযোগ করেনি তাহসীর সাথে। আর তনন একটা ফোন দেয়নি বলে তাহসী নিজ থেকে ফোন দেয়নি। দুজনেই দুজনের মতো ভেবে নিয়েছে। আর অভিমান করে দূরে থেকেছে।
দু’জনের মান অভিমানের পালা ভাঙ্গলো তননের পরীক্ষা শেষে। সত্যিই সত্যিই তননের পরীক্ষা শেষে নাতাশা রহমান নিজের ভাই বোন কে দাওয়াত করে নিয়ে আসলেন। তাহসী, তনন কেও যেতে হলো। তনন অবশ্য গ্রামেই ছিল। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে এসেছিল। তাহসী-ও ঢাকা থেকে এসেছিল।
দু’জনের দেখা হলে তনন-ই কথা বলে উঠেছিল।

ফ্ল্যাশব্যাক ইন্ড~~~~~~~~~~~~~~~~

🍂🍂🍂
তনন তাহসীর বিয়ের এখন চারমাস চলছে।

তাহসীর জড়তা নিয়ে তনন আজ বিরক্ত। তাহসীর বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে তনন। তাহসীর নাম্বারে কল দিলে তাহসী রিসিভ করলো।
কুশল বিনিময় না করেই তনন সরাসরি বললো,
-“রেডি হয়ে নিচে আসো। ওয়েট করছি।”

-“মেঘ করেছে না! চলে যাও। আমি যেতে পারব না আজ।”

-“তো? খুব দ্রুত আসো।”

-“প্লিজ আমি আজ যেতে পারবো না। চলে যাও।”
অনুনয় করে বললো তাহসী।

তননের রাগ হয়ে গেল। সবসময় নিজ থেকে তাহসী কে নিয়ে বের হতে, নিজ থেকে ফোন দিতে ভালো লাগে না। এখন তার প্রস্তাব নাকচ করায় রাগ হয়ে গেল তননের। তার উপর এতক্ষণ হেঁটে এসেছে সে।
-“তুই আসবি না তাই তো?”

তননের রাগান্বিত কন্ঠ শুনে তাহসী অবাক হলো। সে তো আজ অসুস্থ। যেতে পারবে না একেবারেই। তনন তো কোনোকিছু তে জোর করে না।
-“স্যরি। না বলে এসেছো কেন? আর্জেন্ট কিছু?”

-“ওকে। বাই।”
তনন কল কেটে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটতে শুরু করলো।
তাহসী হতভম্ব হয়ে তননের নামের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তাড়াহুড়ো করে কোনোরকমে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ালো। তনন চলে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। তাহসী কল দিল তননের নাম্বারে। তনন ফোন ধরলো না। পকেট থেকে ফোন‌ পর্যন্ত বের করলো না। তনন তাহসীর দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গেলেও তাহসী দুই তিনবার ফোন দিল। তনন ধরলো না। তখন বেশ ভালোই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাহসীর চিন্তা হলো একটু; বৃষ্টিতে ভিজলে তননের জ্বর আসে। তনন ফোন ধরলে তাও উপরে আসতে বলতে পারতো।

______________
রাতের বেলা ফোন দিয়ে সেলিনা শেখ তাহসী কে কথা শোনালেন। তাহসী চুপ থাকা ছাড়া কোনো কিছু বলতে পারলো না। যদিও সে ছেড়ে দেওয়ার মানুষ নয়। দোষ করলে কথা শুনবে এটা সমস্যা নেই। কিন্তু বিনা দোষে সেই দোষ কেউ নিজের ঘাড়ে নিবে কেন। তাহসী কি হয়েছে জানতে চাইলেই তিনি এটা নিয়েও কথা শুনিয়েছেন। তাহসীর নাকি কোনো দিকে মন নেই। নিজের মতো শুনিয়ে সেলিনা শেখ ফোন কেটে দিলেন। তাহসী মনে মনে রেগে গেল। সাথে কষ্ট ও পেল। সেলিনা শেখ এর কাছ থেকে এমন ব্যবহার মানতে পারিনি সে। ভাবনা তেও ছিল না উনি এমন ব্যবহার করতে পারেন। তাহসী ভাবলো তনন নিশ্চয় তার নামে অনেককিছু বলেছে। এইজন্যই উনি এমন ব্যবহার করলেন।

🍁🍁🍁
পরদিন সকালবেলা তাহসী নিজের ভার্সিটি বাদ দিয়ে আঁখি কে নিয়ে হাজির হলো বুয়েটে। তার প্রশ্নের জবাব চাই। তননকে কল দিলে রিসিভ করলো না। আঁখি কে দিয়ে কল দেওয়ালো তাহসী। তবুও কোনো রেসপন্স করলো না তনন। কিছুক্ষণ আঁখিকে নিয়ে ঘোরাঘুরি করলো তাহসী। হঠাৎ করেই আঁখি বলে উঠলো,
-“এই ওইদিকে তাকা। তনন না?”

তাহসী গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
-“হ্যা।”

অন্যসময় হলে তাহসী তননের দিকে চোখ তুলেই তাকায়না। আজ সেসব ভুলে তননের সামনে যেয়ে দাঁড়ালো তাহসী।
তনন ঘোলা ঘোলা চোখে তাহসীর দিকে তাকালো। মৃদু হাসি ফুটে উঠলো তার ঠোঁটে।
পরক্ষণেই সেই হাসি মিলিয়ে গেল। পুনরায় চোখ কচলে তাকালো সামনে। পাশে বন্ধুরা আছে। কেউ যদি টের পায় সে দিনের বেলাতেও ভুলভাল দেখছে তাহলে সবাই মিলে হাসাহাসি করবে।

এদিকে তাহসী চুপ মেরে গেছে। যেভাবে কথা সাজিয়ে এনেছিল সব গোলমেলে হয়ে গেছে তননের সামনে এসে। আমতা আমতা করে কিছু বলবে তার আগেই একজন বললো,
-“এই এটা কে রে তনন? তোর গার্লফ্রেন্ড নাকি?”

একজন হাসতে হাসতে বললো,
-“তননের গার্লফ্রেন্ড আছে এটাও সম্ভব?”

তনন ভাবলো তাহলে কি সে অন্য মেয়েকে তাহসী ভাবছে নাকি এটা সত্যিই তাহসী! আর কিছু না ভেবে বললো,
-“তাহসী, আমার গার্ল..ফ্রেন্ড ই তবে বৈ..ধ।”

তাহসী লজ্জা পেল। তবে তননের কথা কেমন জড়ানো লাগলো তাহসীর কাছে। দ্বিতীয় ছেলেটা তননের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
-“কি ভুলভাল বকছিস? তোর বোন নাকি? আর তোর কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। রুমে যা। স্যার কে বলে দিবো তুই অসুস্থ।”

তাহসী অবাক হয়ে কিছু একটা আন্দাজ করে তননের হাত ছুঁলো প্রথমবারের মতো। যা ভেবেছে তাই ঠিক। তনন তাহসীর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বললো,
-“পরে বলবো। আসছি।”

তাহসীর হাত ধরে ক্যান্টিন এর দিকে নিয়ে গেল তনন। আঁখি তনন কে দেখিয়ে চলে গেছে ভার্সিটি তে। তাহসীর একা একা আসতে আনইজি লাগছিল তাই এসেছিল সে। এখন তননকে তো পেয়েই গেল।

-“জ্বর আসলো কিভাবে?”
তাহসী প্রথমে বলে উঠলো।

তনন ওকে চেয়ারে বসিয়ে বললো,
-“তুমি এখানে এসেছো কেন?”

-“মামুনি কে কি বলেছো? আমাকে রাগ করলো কেন ফোন দিয়ে? আমার কল রিসিভ করছো না কেন?”

-“জানিনা রাতে আম্মুকে কি বলছি।”
কথা বলতে বলতে তনন প্যান্টের পকেটে হাত দিল। এরপর বললো,
-“ফোন মনে হয় হোস্টে..লের রু.মে। কি বলেছে আ..ম্মু ?”

-“কথা জড়িয়ে যাচ্ছে তোর। গায়ে তো বেশ জ্বর মনে হচ্ছে। রুম থেকে বাইরে এসেছিস কেন?”

তনন উঠে দাঁড়ালো। বললো,
-“তাতে কি তোর? ম..রে যাই আ..মি!”

তননের মাথা ঘুরে উঠলো। তাহসী এগিয়ে যেয়ে ধরলো। এক অদ্ভুত ভালো লাগা ছেয়ে গেল তাহসীর মনে। আশেপাশের দু একজন তাকিয়েছে তাদের দিকে।
-“বাজে কথা না বলে রুমে যা। কাল সমস্যা ছিল আমার। তুই বৃষ্টিতে ভিজেছিস কেন?”

তনন নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। তাহসী অভিমান করে বললো,
-“বাড়াবাড়ি করছিস তুই!”
অন্য সময় হলে তাহসী অপমানিত হয়ে রাগ করে চলে যেত। এখন তেমন কিছু মনে হচ্ছে না ভেবে নিজেই অবাক হলো।

তনন কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসলো। জ্বর আসলেই শরীরের বেহাল অবস্থা হয় তার। আবার এদিকে ক্লাস মিস দিতে মন চায় না। ক্লাসের কথা মনে পড়তেই হাতঘড়ির দিকে তাকালো। নিজেকে ধাতস্থ করে উঠে দাড়ালো। তাহসীর উদ্দেশ্যে বললো,
-“পরে কথা বলে। মূল্যবান সময় ফেলে এখানে আসার জন্য ধন্যবাদ। আমার ক্লাস শুরু হয়ে গেছে অলরেডি। আসছি।”

তাহসী মনে মনে অপমানিত বোধ হলেও বললো,
-“কিসের ক্লাস? এখন বাড়ি ফিরবি তুই।”

-“অধিকার দেখা..চ্ছিস? এতো দিন পর? আমি অসুস্থ বলে কা..রো দয়া লাগ..বে না আ…মার।”

তনন নিজে নিজেই চেয়ারে বসে পড়লো। উপর থেকে শক্ত থাকলেও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। তাহসী তননের পাশে যেয়ে দাঁড়ালো। খুবই নিম্নস্বরে বললো,
-“আমার পি’রি’য়’ড চলছে কাল থেকে। আমি কিভাবে কাল ঘুরতে যেতাম?”

তনন মাথা তুলে তাকালো তাহসীর দিকে।
-“স্যরি। আজ তো আসলি!”

-“আসা লেগেছে। প্রথম তিনদিন আমি বের হয়না কোথাও। মামুনি এমন ভাবে বললো……”

-“স্যরি তার জন্য। মামুনির সাথে কথা বলবো। কিন্তু এই ক্লাস মিস দিতে পারবো না আমি। চলে যাও। অপমান করছি না। যাও।”

পিছন থেকে কেউ একজন তনন বলে ডাকলো। তাহসী তাকে দেখে অবাক হলো অনেকটা।

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_১১

পিছন থেকে কেউ একজন তনন বলে ডাকলো। তাহসী তাকে দেখে অবাক হলো অনেকটা। তনন উঠে দাঁড়ালো।
-“আসসালামু আলাইকুম স্যার।”

-“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। তুমি নাকি অসুস্থ?”

তাহসী বিড়বিড় করে বললো,
-“আরে এ তো…”

-“আমার স্যার। এই স্যারের ক্লাস ছিল এখন। তুমি যাও। স্যার কি ভাববে!”
তনন আস্তে করেই বললো।

তনন এবার স্যারের উদ্দেশ্যে বললো,
-“জি স্যার। একটু জ্বর আসছে। আমি ক্লাসে যাচ্ছি।”

-“তাই তো বলি ক্লাসের সবথেকে রেগুলার স্টুডেন্ট ক্লাসে নেই কেন! আর আমার ক্লাস আজ ছুটি দিয়ে দিছি। আম্মু অসুস্থ ফোন দিচ্ছে। তাই এখন চলে যাবো।”
তনন এর বিপরীতে বসা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললেন স্যার। স্যার এখনো তাহসীর মুখ দেখতে পারিনি। তাহসীর পিঠ দেখা যাচ্ছে।

তাহসী এবার বললো,
-“দেখতেই পারছেন অসুস্থ। ছুটি দিয়ে দেন কয়েকদিন।”

তনন বড় বড় চোখে তাকালো তাহসীর দিকে। ধমক দিয়ে কিছু বলবে তার আগেই স্যার বললেন,
-“তাহসী!”

-“ইয়েস।”
তাহসী মুখ ঘুরিয়ে তাকালো।

-“তুমি এখানে কি করো? তনন কে চিনো নাকি?”

-“হুম। এবার ছুটি দেন ওকে কিছুদিন।”

তনন তাহসীর দিকে প্রশ্নসূচক চাহনিতে তাকালো। তাহসী আশ্বস্ত করলো পরে বলছে।
স্যার চেয়ার টেনে ওদের পাশে বসলেন। তনন কেও বসতে বললেন। তাহসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ফ্রেন্ডস নাকি তোমরা?”

-“ছিল। বিয়ের কথা শুনেননি?”

-“তোমার বিয়ে হয়ে গেছে?”
বিস্ময় নিয়ে বললেন স্যার।

-“হুম। আপনার বাবা আসছিল তো। আপনি পিএইচডি করতে অ্যাবোর্ডে ছিলেন না? তাই হয়তো শুনেননি।”

-“ওহ্। বাবা কিছু বলেনি।”

-“এবার কিছুদিন ছুটি দেন একে। মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে তবুও ক্লাসের ভূত নামছে না।”

-“ওকে, একটা এপ্লিকেশন জমা দিও তনন। সাইন করে দিবো।”
স্যার পুনরায় নিজেই বললেন,
-“ওহ্ আমিই তো চলে যাচ্ছি। সাদা কাগজ থাকলে দাও, আমি সাইন করে দিচ্ছি। দেন এপ্লিকেশন লিখে জমা দিও।”

তননের কাছে ব্যাগ ছিল। খাতা বের করে একটা পেইজ ছিঁড়ে স্যারের কাছে দিল। তার একটুও ইচ্ছা নেই, তাহসীর জোরাজুরিতে নিতে হচ্ছে। আর এদিকে স্যার নিজে থেকেই বলছে, এখন অমান্য করতে পারবে না।

স্যার বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। তনন বললো,
-“কে হয় তোমার?”

-“বাবার বন্ধুর ছেলে। একটা নাপা খেয়ে বাসের উদ্দেশ্যে রওনা দাও। বাসে উঠে টিকিট কেটে নিও।”

-“ফাও ফাও ছুটি! আমি একদিন লিখবো এখানে। একটা ক্লাস মিস মানে অনেক কিছু।”

-“থাক তুই। তোর মা আমাকে এই জন্য কথা শোনায় আর তুই! পঁচে মর।”
তাহসী উঠে দাঁড়ালো।

গেটের কাছে যেয়ে রিকশা ডাকতেই তনন এসে তাহসীকে নিজের দিকে ঘোরালো।
-“সত্যিই জানিনা আম্মু কে কি বলেছি। স্যরি তার জন্য। তুই কখনো নিজে থেকে যোগাযোগ করিস না, এইজন্য রাগ লাগছিল। আবার কাল বাসার সামনে গেলাম। আসলি না! আমি তো জানতাম না তোর…”

তাহসী লজ্জা পেল। রিকশা পেতেই উঠে বসলো। তনন কে বাড়ি ফিরতে বলে চলে গেল। পেট ব্যথা করছে তার,‌ এখানে থাকা আর সম্ভব না।

🍁🍁🍁
তনন আম্মু বলে ডাক দিতেই সেলিনা শেখ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন। এখন‌ বিকাল; রাতের রান্না করছেন তিনি। বিস্ময় নিয়ে বললেন,
-“তুই? কাল তোর ক্লাস নেই? চলে আসলি?”

তনু রুম থেকে বের হলো মায়ের কথা শুনে। এতক্ষণ টিভি দেখছিল সে। তনন কে দেখে গ্রিল খুলে বাইরে আসতে গেলেই তখন তনন ভিতরে ঢুকলো। তনু আর বাইরে আসলো না। বলে উঠলো,
-“তোমার কি ছুটি দিয়েছে ভাইয়া?”

তনন আস্তে করে বললো,
-“না, ছুটি নিয়েছি।”

তনন রুমে গেলে পিছু পিছু সেলিনা শেখ ও গেলেন চুলা বন্ধ করে। তনন মাকে বসতে বলে ওয়াশরুম থেকে পোশাক পরিবর্তন করে আসলো।
তনন বের হতেই সেলিনা শেখ প্রশ্ন করলেন,
-“হঠাৎ ছুটি নিয়েছিস যে? অসুস্থ বেশি?”

তনন মায়ের কোলের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
-“বলতে পারো।”

তনু বলে উঠলো,
-“তা এই সুবুদ্ধি কবে উদয় হলো তোমার? এর আগে তো কত জ্বর আসে, আম্মু আসতে বলে বাসায়, আসোই না!”

সেলিনা শেখ তননের কপাল স্পর্শ করে বললেন,
-“এত গরম! তনু ট্যাপ এর নিচে বালতি রাখ তো। তননের মাথায় পানি দিতে হবে।”

-“এভাবে বসে থাকো তো আম্মু। ভালো লাগছে। আর তাহসী ছুটির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।”

সেলিনা শেখ বিস্ময় নিয়ে বললেন,
-“ও কিভাবে?”

-“আমাদের একজন নিউ টিচার আসছে, উনি নাকি তাহসীর বাবার বন্ধুর ছেলে। তাহসীর পরিচিত ছিল, হঠাৎ দেখা হওয়ায় তাহসী বলে ছুটি নিয়ে দিয়েছে।”
বাকি কথাও তনন খুলে বললো মাকে।

সেলিনা শেখ বললেন,
-“রাতে তুই যখন বললি তাহসী নিজ থেকে তোর খোঁজ নেয় না; তোর প্রতি ওর কোনো মনোযোগ নেই; তুই খোঁজ নিলে কথা বলে, না নিলে না; তুই ওর বাসার সামনে যেয়ে ফিরে আছিস দেখা করে না; একেবারেই নির্লিপ্ত এসব শুনে আমার রাগ হয়েছিল। তোকে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই তো বিয়ের সময় কেন বলেনি অনেক কথায় শুনিয়েছে। এসব শুনে মাথা ঠিক ছিল না।”

বালতিতে পানি ভরে গেলে তনু ট্যাপ বন্ধ করলো। ওদের কাছে এগিয়ে এসে বললো,
-“আমি আগেই বলেছিলাম ভাবী এমন না।”

সেলিনা শেখ তনু কে রান্না দেখতে বললেন একটু। তনু বললো,
-“আমি ভাইয়ার মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছি। কিন্তু রান্না ঘরে যেতে পারবো না।”

তনন বললো,
-“অসুস্থ ছিল তাহসী এটা জানতাম না। আর জ্বরের ঘোরে কি বলেছি তোমাকে মনে নাই। তোমার কথাতে মন খারাপ করেই আমার ওখানে গিয়েছিল।”

-“সকালের দিকে ফোন দিয়েছিলাম ওকে। রাতে ওভাবে বলে আমারও খারাপ লাগছিল। তবে একবারও বললো না যে তুই আসছিস। শুধু বললো কি সারপ্রাইজ আছে। শুধু শুধু মেয়েটাকে না বুঝে কথা শুনিয়েছি।”

তনন আর কিছু বললো না। সেলিনা শেখ পানি দেওয়ার জন্য সব ঠিক করে রান্নাঘরে চলে গেলেন। তনু তননের মাথায় পানি ঢেলে দিতে শুরু করলো।
-“ভাইয়া ভাবী কবে আসবে আবার?”

তনন কাঁথায় নিজেকে ঢেকে নিল। বললো,
-“জানিনা।”

-“ওহ্। আমাকে কল দিয়েছিল জানো।”

তনন কৌতুহল নিয়ে বললো,
-“কেন?”

-“তুমি পৌঁছায়ছো নাকি তাই।”

-“কখন?”

-“এইতো আধা ঘন্টা আগে। তখনই জানলাম তুমি আসছো!”

তনন আর কিছু বললো না। এবার জ্বরে কাহিল হয়ে পড়েছে সে। এমনিতেও জ্বর বেশি আসে তার।

🍁🍁🍁
নাহিদ মিথিলা কে নিয়ে একটা পার্কে এসেছে। মিথিলা কিছু বলার জন্য উশখুশ করছে। কিন্তু কিছু বলছে না। নাহিদ বিরক্তি নিয়ে বললো,
-“কি বলতে চাও বলবে?”

মিথিলা সেদিনের পর থেকে নাহিদ কে ভালোয় ভয় পায়। সেবার অনেক কষ্টে নাহিদের রাগ ভাঙ্গিয়েছে। নাহিদের ওমন রূপের সাথে পরিচিত ছিল না সে। মিথিলা কিছুক্ষণ পর আমতা আমতা করে বলল,
-“না মানে বাড়ি থেকে আমার বিয়ের কথা……”
এইটুকু বলেই আড়চোখে নাহিদের দিকে।

নাহিদ বললো,
-“আমার কথা বলেছো?”

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে