তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-০৩

0
265

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_৩

তৌহিদ হোসেন ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললেন,
-“তৌফিক ওকে চুপ থাকতে বল।”

এই কথা শুনেও থামলেন না শিরিন । সেলিনা শেখ এর উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
-“তাহসী তো বিয়ে করবে না এখন। আমার মেয়ে তাহসীর থেকেও ফর্সা আপা। তননের সাথে খুব ভালো মানা….।”
তৌফিক হোসেন শিরিন কে থামিয়ে দিয়ে এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেন। শিরিন পুনরায় কিছু বলতেই লাগলেই সেলিনা শেখ হাসিমুখে স্পষ্ট স্বরে বললেন,
-“এখন ছেলের বিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম না। তাহসীর জন্যেই এসেছি। তাহসী ব্যতীত কেউ লাগবে না। আর ফর্সা দেখলে তো যেকোনো মেয়েই পাওয়া যাবে।”

তনন বিড়বিড় করে বললো,
-“ফর্সা ধুয়ে পানি খাবো!”
কেউ না শুনলেও সেলিনা শেখ শুনলেন এই কথা। তননকে চোখ রাঙালেন তিনি।

মুখের উপর অপমান করা দেখে শিরিন চুপ করে গেল।
তৌহিদ হোসেন পুনরায় বললেন,
-“কি হলো বলো তাহসী? বিয়ে করতে চাও?”

এতক্ষণ তাহসী উত্তর ভেবেই রেখেছে। উত্তর পাল্টাবে না, মন চাইলেও। একেই হয়তো বলে ভাগ্যে না থাকলে পাওয়া যায় না।
-“না, বাবা।”
তাহসী এমনিতেও জানে বিয়ে দিবে না। তার বাবা তাকে পরীক্ষা করার জন্য বলেছে। তার তননকে দেখে সে এখন হ্যা বলে দিতে পারে না।

তননের মুখ চুপসে গেল। এমন হবে সে আগেই ভেবেছিল। তবে বড্ড আসা নিয়ে এসেছিল সে।

তৌহিদ হোসেন পুনরায় বললেন,
-“এখন বিয়ে করতে চাও না নাকি তননকে বিয়ে করতে চাও না?”

তাহসীর হাঁসফাঁস অবস্থা। তননের সাথে স্বাভাবিক যোগাযোগ ছিল এবার বুঝি তাও থাকবে না। কিন্তু তননের কথা শুনে হ্যা বলা মানে তননের সাথে সম্পর্ক আছে এমনটা স্বীকার করা। এদিকে না বলতেও অনেক কষ্ট লাগছে। এত সহজে পেয়েও পাবে না! সুযোগ নিজে এসে ধার দিচ্ছে অথচ তাকে গ্রহণ করতে পারবে না; এমন কষ্ট সহনীয় নয়।
তাহসী কাঁপাকাঁপা স্বরে বলল,
-“দুইটাই চাই না।”

তৌহিদ হোসেন তাহসীকে পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে তননের দিকে তাকালেন। তাহসী আর দাঁড়ালো না। দ্রুত হেঁটে স্থান ত্যাগ করল।

তৌহিদ হোসেন সেলিনা শেখ এর উদ্দেশ্যে বললেন,
-“সব তো শুনলেন।”

তনন মাকে ইশারা করলো ওঠার জন্য। তননের রাগ হচ্ছে এখন। এর জন্য সে আজ ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস মিস দিয়ে অপমান হতে আসলো!
সেলিনা শেখ মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে বললেন,
-“কি আর করা যাবে? মেয়ে তো রাজি না। সমস্যা নেই। আচ্ছা আমরা উঠি আজকে।”

তনন আগে আগে বসা থেকে উঠে পড়লো। চোখ আরও লাল হচ্ছে। রাগের সাথে দুঃখ ও লাগছে।

তৌহিদ হোসেন সবাইকে অবাক করে দিয়ে বললেন,
-“বাড়ির নতুন বড় জামাই কে ভিতরে নিয়ে যাও নাতাশা।”

নাতাশা রহমান তাহসীর মায়ের নাম। তাহসীর কোনো বোন নেই, দুইটা ভাই তার; একটা তাহসীর ছোট, নাম নাইম , আরেকটা তাহসীর বড় তার নাম নাহিদ। তাহসীর বাবা সবার বড়। তাহসীর মেজো চাচুর দুই মেয়ে রেবা আর রিমি। ছোট চাচুর এক মেয়ে শশী আর দুই বছরের ছেলে শাফিম। সবার বড় নাহিদ, তারপরেই তাহসী।

সবাই অবাক হয়ে তাকালো। তনন অবাক হয়ে ধপ করে পুনরায় বসে পড়লো। সেলিনা শেখের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। বলে উঠলেন,
-“আলহামদুলিল্লাহ।”

নাতাশা রহমান ওনাদের কে নিয়ে দোতলার ঘরের নিচ তলার গেস্ট রুমে বসালেন। তৌহিদ হোসেন হাসি মুখে রান্নার ব্যবস্থা করতে বললেন। তনন মাকে ইশারা করলো কিছু বলার জন্য।
সেলিনা শেখ বললেন,
-“আমরা এখন উঠি ভাইজান। পরে আবার আলোচনা করতে আসবো। আসলে….”

নাতাশা রহমান এগিয়ে আসলেন। হাসিমুখে বললেন,
-“না খাইয়ে ছাড়ছি না আপনাদের। কাজ থাকলে পরে হবে।”

-“ভাবী আসলে তনন চলে যাবে। বারোটায় বাস। এখন তো সাড়ে দশটার বেশি বাজে!”

এর মধ্যে তাহসীর ছোট চাচী শিমুল রহমান নাস্তা নিয়ে আসলেন।
তৌহিদ হোসেন বললেন,
-“এটা কেমন কথা! এখন নাস্তা করেন। দুপুরে খেয়ে না হয় যাবেন। কিন্তু তননের আবার বাস! এটা বাদ যাক। আমি তৌফিক কে বলে বিকালের বাসের টিকিটের ব্যবস্থা করে দিবো।”

তনন মুখ খুললো।
-“এটা আর্জেন্ট আঙ্কেল। কাল থেকে আমার তৃতীয় বর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। আমি কাল রাতে নাইটে এসেছি। ঢাকায় যেয়ে একটু না ঘুমাতে পারলে সকালে যেয়ে পরীক্ষা দিতে পারবো না।”

তৌহিদ হোসেন অনেকটা অবাক হলেন। পরীক্ষা, পড়াশোনা ফেলে এই ছেলে ছুটে এসেছে। মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন,
-“তাহলে তুমি যাও। তোমার আম্মু আর বোন পরে যাবে। কথা যেহেতু উঠেছেই এভাবে ফেলে রাখতে চাইছি না।”

তনন মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। আফসোস হলো তাহসীর সাথে আলাদা কথা বলতে না পারার। তবুও পরক্ষণেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো মনে মনে। বিয়ে হয়ে গেলেই তাহসী সম্পূর্ণ তার। নাহিদ তাকে বাইকে করে বাড়ি পৌঁছে দিল। যেতে যেতে দু’জনের মধ্যে দুই একটা কথাও হলো।

এদিকে তাহসী রুমে এসে দুফোঁটা চোখের পানি ফেললো। দোতলার এক রুমে সে থাকে। নিচের হইচই কানে আসতেই চোখ মুছে নিল। পাছে কেউ রুমে এসে দেখে ফেলে। নিচে কি হচ্ছে সেইটা সে জানতে পারল না।

________________
তাহসী আর তননের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে এক সপ্তাহ পরেই। সেলিনা শেখ তখন অবাক হয়ে জানতে চাইলেন এটার কারণ যেখানে তিনি প্রথমে মেনেই নিচ্ছিলেন না। তৌহিদ হোসেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
-“শহরে আগে বসবাস করলেও এখন গ্রামে থাকি। রিটায়ার্ড করেছি চাকরি থেকে। আমি এড়িয়ে চললেও আমার ভাই, বাবা এড়িয়ে চলতে পারে না সমাজের মানুষ কে। চেয়ারম্যান এর ছেলে আর চেয়ারম্যান অনেকটাই ঝামেলা করছে। আমি তাহসী কে ঝামেলায় ফেলতে চাইনা। আর তনন জানাশোনা ছেলে। চোখের সামনেই বড় হতে দেখেছি। তাহসী না বললেও বুঝি তাহসীর তেমন বারণ নেই। তবে একটা শর্ত মেয়ের পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনার বাড়ি দিচ্ছি না। তবে যাওয়া আসা করবে।”
সেলিনা শেখ সন্তুষ্ট হয়েছেন তার কথায় এবং সায় জানিয়েছেন।

রাতের বেলা ঘুমানোর সময় নাতাশা রহমান তৌহিদ হোসেন কে প্রশ্ন করলেন,
-“এত তাড়াতাড়ি তাহসীর বিয়ে কেন ঠিক করলে আমি বুঝলাম না।”

-“কেন তনন কে পছন্দ নয়?”

-“তনন জানাশোনা ছেলে। তাহসীর সাথে মানাবে ভালো। কিন্তু তাহসী এখন বিয়ে করতে চাই না। বিয়ের কথা শুনে মন খারাপ করলো।”

-“মন খারাপের অভিনয় করলো নাকি সত্যিই মন খারাপ করেছে? সকালে তো ওখান থেকে চোখ মুখ অন্ধকার করে চলে আসলো।”

-“সে যাই বলো। চেয়ারম্যান এর ভয় আমি পাই না। তুমি বেশি বেশি করছো। তাই বলে এক সপ্তাহ! আর নাহিদের এখনো বিয়ে হলো না। তাহসী এটা নিয়ে রাগারাগী করছে।”

-“বেশি বেশি করছি না। তুমি বুঝবে না। আর নাহিদের বিয়ের কথাও তুলবো। তুমি ওর থেকে জেনে নিও পছন্দ আছে কিনা।”

তাহসীর দাদি বাইরে থেকে ছেলের নাম ধরে ডাকলে তৌহিদ হোসেন ভিতরে আসতে বললেন মাকে। তারাও শোয়া থেকে উঠে বসলো।
তাহসীর দাদি মোহিনী বেগম বললেন,
-“এই ছেলের সাথে বিয়ে কিভাবে ঠিক করলি তুই?”

-“কেন মা? ছেলে কি খারাপ? স্বভাব চরিত্র তো ভালো যতদূর জানি।”

-“ছেলের বাবা নেই। এখনো পড়াশুনা করে। কোনো চাকরি নেই। না জানি কিভাবে চলে সবাই; কিভাবে মা, মেয়ে গ্রামে থাকে। আর ছেলে ঢাকায় পড়াশুনা করে, টাকা আসে কোথা থেকে।”

-“টিউশনি করে। আর ওর বাবা নেই এক বছর। গ্রামের কলেজের প্রিন্সিপাল ছিল। এখন না হয় বাবা নেই, আগে ভালো অবস্থা ছিল। আর গ্রামে জমি জমা আছে, তাই থেকে যা আসে তাই দিয়ে মা মেয়ে থাকে। জমানো টাকা আছে হয়তো। আর এইসব আমি দেখছি না মা। আমি দেখছি ছেলেকে। স্বভাব চরিত্র ভালো। ছেলের পরিবার ভালো। আর বড় কথা, ওরা সুখে আছে। অল্পতেই সন্তুষ্ট।”

-“তবুও এক সাথে পড়ে। একই বয়সী হলে বিয়ে নাও টিকতে পারে। ভেবে সিন্ধান্ত নে। চেয়ারম্যান এর ছেলে তাও একটা চাকরি করে।”

নাতাশা রহমান ভেঙচি কেটে বললেন,
-“চাকরি করে সাথে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। তোমার মেয়ে জামাই তো ওমন, তাই তুমি আমার ভালো দেখতে পারতেছো না।”

-“তুই থাম। আমার মেয়ে জামাই এখন আর ওমন নেই। ব্যবহার খারাপ, কিন্তু ওমন নেই আর।”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে