তোমাতে বিলীন হবো পর্ব-২৪+২৫

0
237

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_২৪
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

তাহসী শশী কে বললো,
-” মেয়েদের অভিভাবক অনুপস্থিত থাকলে সেই বিয়ে হয় না। আবার মেয়েদের মত না থাকলে সেই বিয়ে দেওয়ারও কোনো নিয়ম নেই। রাসুল (সঃ) বাতিল বলেছেন সেই বিয়ে। এই হিসেবে তো তোদের বিয়েই বৈধ নেই সেখানে বাচ্চা!..”

তাহসী দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় বলে উঠলো,
-“আল্লাহ তায়ালার কাছে নামাজ পড়ে ক্ষমা চেয়ে দেখ। এছাড়া কিছু দেখিনা আমি।”

_________
সকালে ফজরের নামাজ পড়ে পাশাপাশি শুয়ে আছে তাহসী আর তনন। তনন তাহসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“সব কেমন সহজে হয়ে যাচ্ছে না?”

-“কেমন?”

-“এইযে নাঈম,শশী কে তেমন কিছু বললো না। তবে হ্যা একটা ব্যাপার ভীষণ ভালো লেগেছে। কেউ চিল্লাচিল্লি করলো না। নাহলে সবাই বুঝে ফেলতো।”

-“হু। তবে এইজন্যই সবাই চুপ। এতো সহজে ছেড়ে দেওয়ার কথা না। তবে আল্লাহ ক্ষমা করলেই হলো।”

-“হুম।”

🍁🍁🍁
নাহিদের বিয়ের আজ তৃতীয় দিন চলে। বউভাতের দিন নাহিদ আর মিথিলা, মিথিলার বাড়িতে গিয়েছিল। আজ বাড়ির কয়েকজন যেয়ে ওদের নিয়ে এসেছে। দূরের আত্মীয় স্বজন কাল বিদায় নিয়েছিল। আজ বিকালে তাহসী নানু বাড়ির পরিবার চলে যাবে।
সেই হিসেবে নাহিদ দের বাড়ি নিয়ে আসার পর তারা চলে হবেন। কিন্তু তৌহিদ হোসেন ঘোষণা দিলেন তাদের আজ যাওয়া হবে না। সবাই কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন এটা সন্ধ্যায় বলবেন। তৌহিদ হোসেন এর সিরিয়াসনেস দেখে সবাই থেকে গেল।

তনন আজকেই চলে যেতে চেয়েছিল ঢাকা। কিন্তু আজ ঢাকা যাওয়ার সম্ভাবনা একদম নেই বললেই চলে। তাহসী তো হেসে খেলে বেড়াচ্ছে। তননের মনে হলো এই বাড়িতে এতদিন থেকে তাহসী কে নতুন করে চিনলো সে। আগে তাহসী কে একটু চঞ্চল ধরণের মনে হলেও,আজ তননের কাছে মনে হচ্ছে সে একটু বেশিই চঞ্চল। এইসব ইং ভেবে চলেছে তনন রুমে বসে।

তাহসী রুমে আসতেই‌ তনন প্রশ্ন করলো,
-“তাহলে তুমি আজ ও যাবেনা! আচ্ছা বেশ। কিন্তু আমাকে যেতে দাও।”

-“আমি কি ধরে রেখেছি?”
মিনমিন করে বললো তাহসী। জোরে বলার জন্য মুখ খুলতে যেতেই তনন তা হতে দিল না। তাহসীর কাছে এগিয়ে যেয়ে তাহসী কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“ধরে রাখ নি বলছো?”

-“কোথায়?”

-“আচ্ছা তাই। এইযে ছাড়ছো না!”

-“যুক্তিহীন মজা করবে না। ছাড়ো।”

তনন ছেড়ে দিয়ে তাহসী কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
-“সত্যি করে বলো তো কবে যাবে?”

-“ইনশাআল্লাহ কাল। কাল দুপুর বারোটার টিকেট কাটা হয়েছে।”

-“কে কাটলো? দুইটা না একটা?”

-“কেন? শশুড়বাড়ি ছেড়ে যেতে মন চাইছে না? দুইটা!”

-“এটা না। বারবার আমাকে ছোট করো কেন বলবে!”

-“কি করেছি?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো তাহসী।

-“আমি কি গরিব ফকির? শার্ট ,প্যান্ট,টিকেট এর টাকা নাই। সব শশুড়ের!”

-“এইভাবে ভাবার কি আছে? দান করেছে না ছেলে হিসেবে দিয়েছে?”

-“তবুও আমার এটা ভালো লাগে না। গায়ের শার্ট টাও….!!”

তননের পরনে কফি রঙের শার্ট টা। তাহসী আস্তে করে বললো,
-“ব্লেজার বাদে সব আমার কেনা। কাল যেও না আমার সাথে। এত গায়ে লাগলে স্যরি।”

তাহসী রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই তনন হাত টেনে ধরলো। তাহসীর কাঁধে থুতনি রেখে বললো,
-“এইভাবে বলতে চাইনি। তবে আমার নিতে ভালো লাগে না এটা জানো।”

-“ভাইয়া জিজ্ঞেস করছিল আমরা কবে যাবো, টিকেট কাটছি কিনা। তো বললাম এখনো কাটা হয়নি। কিছুক্ষণ পর বলছে ট্রেনের টিকিট কেটে দিছে। কাল যেন তৈরি হয়ে যায়। আমি নিজে থেকে বলেনি। ভেবেছিলাম আজ রাতে এটা নিয়ে আলোচনা করবো।”

-“আজ কি হবে?”

-“সম্ভবত নাঈম আর শশীকে নিয়ে কথা হবে।”

-“ওহ্।”

তনন তাহসীকে পুনরায় নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে তাহসীর ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল। এমতাবস্থায় তাদের দরজায় নক করার শব্দ হতেই তনন তাহসীর থেকে সরে গেল। দরজা অর্ধেক খোলা রয়েছে। তনন মাথা চুলকে তাহসীর দিকে তাকালো। ভাগ্যিস ওরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে দরজা থেকে দেখা যায়না তেমন। আর দরজায় পর্দা দেওয়া তাহসী এগিয়ে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“দরজা খোলায় আছে।”

সামিয়া এসেছে। বললো,
-“নিচে চলো তোমরা। আঙ্কেল সবাইকে নিচে থাকতে বলেছেন।”

তাহসী সামিয়ার সাথে বেরিয়ে আসলে তনন ও বেরিয়ে আসলো। সামিয়া যেতে যেতে বললো ,
-“আচ্ছা আপু তুমি কিছু জানো এই ব্যাপারে?”

-“কোন ব্যাপার?”

-“উফ! বুঝোনা? আঙ্কেল কী বলবে এখন?”

-“কি জানি। নিচে যেয়েই শুনতে পারবি বাবা কি বলে। এতোক্ষণ কৌতুহল ধরে রেখেছিস,এখন আর দুই তিন মিনিটের ব্যবধান!”

পুরো ফ্যামিলি জড়ো হতেই তৌহিদ হোসেন মনির হাসান কে নিজের পাশে দাঁড় করিয়ে ভাবলেন,
-“আমি ভেবেছি শশী আর নাঈমের বিয়ে পড়িয়ে রাখবো। যেহেতু মনির চাচ্ছে শশীকে এখনই বিয়ে দিতে তাই এই সিদ্ধান্ত।”

সেদিন নাঈমের রুমে থাকা মানুষ আর তাহসীর দাদা দাদি বাদে সবাই অবাক হয়ে গেল। তাহসীর মামা বললেন,
-“ব্যাপার কি! সব ছেলে মেয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। নাহিদের টা বুঝলাম। তাহসীর টাও না হয় মানলাম। কিন্তু নাঈম কলেজে পড়ে সবে। কয়মাস পরেই তো এইচএসসি পরীক্ষা।”

-“শশীর বিয়ে…”

তৌফিক হোসেন বললেন,
-“শশীর না ওর খালাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা।”

তাহসীর খালু মনির হাসান কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“তা ভাই শশী তো এখনো বেশ ছোট। এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাচ্ছেন যে।”

মনির হাসান মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললেন,
-“আসলে ওর মা তার বোনের ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছিল। সেসব শুনে ভাইয়া এই কথা বলায় আমি আর না করিনি।”

এর মাঝে শিরীন ফোড়ন কেটে বললেন,
-“নাকি অন্য কোনো ঘট…”

নাতাশা রহমান শিরীন রহমানের কথা ধামা চাপা দেওয়ার জন্যে হেসে বলে উঠলেন,
-“এখন সবাই চুপ করে মিষ্টি মুখ করেন। বাকি কথা পরে হবে। আর শশী,নাঈম দুজনে নিজেদের মতো আলাদা আলাদা পড়াশোনা করবে। শুধু বিয়েটা দিয়ে রাখা। আর সেইটা সামনে শুক্রবারেই।”

তনন তাহসীর পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। বিড়বিড় করে বললো,
-“আর আমাদের পড়াশোনা চান্দে! এই মাস এখানেই থাকি।”

তাহসী তননের হাতে আস্তে করে চিমটি কাটলো। ইশারায় বোঝালো চুপ থাকতে।

তৌহিদ হোসেন বললেন,
-“ততোদিন সবাই এখানেই থেকে যান।”

কিন্তু কেউ রাজি হলো না। যেহেতু ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হবে তারা শুক্রবারে আসবেন বলে জানালেন।
তাহসীর নানা নানু বাদে পরেরদিন সবাই চলে গেল।

🍁🍁🍁
পরেরদিন ট্রেন জার্নি তে তাহসী তননকে পাশে পেল। তননের সাথে নতুন নতুন পরিবেশ উপভোগ করতে বেশ ভালো লাগছে তাহসীর। তবে তার সাথে লজ্জাও লাগে মাঝে মাঝে এটা ভাবতেই যে একসময় স্বপ্ন দেখা ছেলেটা এখন তার নিজের ব্যক্তিগত মানুষ। বিশেষ করে তনন যখন তার দিকে তাকিয়ে থাকে তখন আরো বেশি লজ্জা লাগে।

ঝালমুড়ি ওয়ালা হাঁক ছাড়তেই সেদিকে তাকালো তাহসী। এতোক্ষণ জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখছিল। তাহসীর হাব ভাব বুঝে তনন বললো,
-“এখানকার ঝালমুড়ি খেতে হবে না। ঢাকা যেয়ে খেও। এখানের টা বাসি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”

-“হু।”
বলে ঠিক হয়ে বসলো তাহসী। তনন চিপসের প্যাকেট কিনে তাহসীর হাতে দিল। তাহসী তখন আবারও বাইরে দেখতে ব্যস্ত। তননের ছোঁয়া পেয়ে তননের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কি?”

তনন চিপসের প্যাকেট এগিয়ে দিল। তাহসী নাকচ করে দিয়ে বললো,
-“চিপস খাই না আমি বেশি। এখন খেতে মন চাচ্ছে না।”

-“শুধু শুধু নিলাম।”

-“আমি বলছি নিতে?”

তনন মুখ বাঁকিয়ে বললো,
-“এমন করার কি আছে? ঝালমুড়ির সাথে আমার কিসের শত্রুতা?”

-“আমি বলেছি ঝালমুড়ির কথা বলেছি একবারও? আমি সত্যি বলেছি চিপস ওতো ভালো লাগে না।”

তাহসী ট্রেনের বাম পাশে বসেছে। ডান পাশে বসে থাকা একটা বাচ্চা কে একটু পর পর চিপসের দিকে তাকাতে দেখে তনন বাচ্চাটাকে চিপস দিয়ে দিল। বাচ্চার পাশে থাকা বাচ্চার মায়ের উদ্দেশ্যে তাহসী কে দেখিয়ে বললো,
-“এর জন্য কিনেছিলাম। খাবে না। বরং ও খাক।”

বাচ্চার মা বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতেই বাচ্চা টা তননের হাত থেকে চিপস টা নিল।

তনন মাথা ঘুরিয়ে তাহসীর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
-“আমার এমন একটা সুইট বেবি কবে থাকবে? এখন একটা বেবি থাকলে চিপস তাকে দিতাম!”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

#তোমাতে_বিলীন_হবো
#Tahsina_Arini
#পর্ব_২৫
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)

একদিন অতিবাহিত হয়েছে। তনন,তাহসী দু’জনের আজ দেখা করার কথা। তনন আজ তাহসী কে নিতে আসেনি। তাহসী তননের পাঠানো লোকেশন মতো যেয়ে দেখে তনন বসে আছে এক বেঞ্চের উপর। গায়ে জড়ানো নেভি ব্লু রঙের শার্ট টা। তনন কে মানিয়েছে দারুন।
তনন তাহসীকে প্রথমে খেয়াল করিনি। তাহসী যেয়ে আস্তে করে সালাম দিয়ে তননের পাশে বসলো। তনন চমকে মুখ তুলে তাকালো তাহসীর দিকে। সালামের উত্তর দিয়ে বললো,
-“কেমন আছো?”

-“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?”

-“ভালো।”

এরপর কেউ কিছু বললো না। সবসময় তনন ই কথা বলে। তাহসী হু হা করে আর মাঝে মধ্যে দুই একটা কথা বলে। তার বলার থেকে তননের কথা শুনতে ভালো লাগে।‌ আজ তনন নিজ থেকে কিছু না বলায় দু’জনেই চুপ থাকলো। কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙ্গে তাহসী নিজেই মুখ খুললো।
-“কি হয়েছে?”

তনন দূরের একটা গাছের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কিছু না।”

তাহসী নিজের সংকোচ দূরে ঠেলে তননের হাতের উপর হাত রেখে বললো,
-“সত্যি টা জানতে চাই।”

তনন তাহসীর দিকে ঘুরে তাকালো। একবার হাতের দিকে তাকিয়ে তাহসীর হাত মুঠোয় নিয়ে বললো,
-“টিউশন করাতে গেছিলাম কাল বিকালে। বাদ দিয়ে দিল সে। তোমাদের বাড়ি থাকতে বলছিলাম না ঝামেলা করতে পারে এতো দিন অফ দেওয়ার কারণে, তাই করলো!”

তাহসী থমকে গেল। ক’দিন বা বাদ গিয়েছে? এখন তার মনে হচ্ছে আগেই তননের আসার ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত ছিল।
তাহসী অসহায় ভঙ্গিতে বললো,
-“স্যরি। আমার উচিত……”

তনন তাহসীকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
-“চলো সামনে হাঁটি।”

-“না।”

তনন ইশারায় জানতে চাইলো কেন। তাহসী কিছু বললো না। তননের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। তনন দুষ্টু হেসে বলল,
-“আরে এমনিতেই নিজের বিয়ের পরদিন চলে এসেছি। এরপর যদি শ্যালকের বিয়ে থেকে চলে আসি, কথা উঠবে না? আর আম্মু ও আসতে নিষেধ করেছিল। তোমার খারাপ লাগার দরকার নেই। তবে হ্যা যদি এটার জন্য খারাপ লাগে তাহলে একটা কাজ করে এর থেকে মুক্তি পেতে পারো।”

-“কি?”
তাহসী উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো।

তনন তাহসীর প্রায় কানের কাছে মুখ নিয়ে যেয়ে মুচকি হেসে বলল,
-“কি*স করো একটা এখন।”

তাহসী লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিল। একটু সরে যেয়ে বিড়বিড় করে বললো,
-“অ*সভ্য পাইছি একটা।”

-“এ্যাহ উনি জানতো না আমার স্বভাব।”

তনন শুনে ফেলাতে তাহসী আরো লজ্জা পেল। স্কুল, কলেজে তনন একটা দুষ্টু ছেলে ছিল এটা বেশ জানে তাহসী। এখনও হয়তো আছে, তাহসী তো আর বুয়েটে যেয়ে দেখে আসে না। তবে দুষ্টু হলেও মেয়েদের সাথে এসব বিষয়ে ফাজলামি করতো না। সেদিক থেকে বেশ ভদ্র সে।

তাহসী পাল্টা প্রশ্ন করলো,
-“আমি কিভাবে জানতাম?”

-“তাই তো! এখন জানাতে হচ্ছে তাহলে।”

তাহসী হাত ছাড়িয়ে উঠে সামনে হাঁটতে লাগলো। তনন উঠে এসে হাসতে হাসতে বললো,
-” এখন পালাও কেন? সব তো করেই ফেলছি। লজ্জা কোথা থেকে আসলো এখন?”

তাহসী দাঁড়িয়ে পড়লো। এই ফাজিল কে কিভাবে থামাবে সে! তনন বললো,
-“দাঁড়িয়ে পড়লা যে?”

-“আমি চলে যাবো।”
মুখ বাঁকিয়ে বললো তাহসী।

-“ওহ্ আসো। চলো রিকশা ডেকে দিই।”

তনন হাঁটতে শুরু করলো। পিছনে ঘুরে তাহসী কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
-“কি ব্যাপার? নিজেই তো যেতে চাইলা। এখন দাঁড়িয়ে আছো যে? থাকতে মন চাইছে বুঝি?”

তাহসী ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তাকে পচানো হচ্ছে। বললো,
-“কোন দুঃখে? রিকশা ডাকলেই চলে যাবো। এখানেই দাঁড়িয়ে আছি।”

তনন আশেপাশে তাকিয়ে তাহসীকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো। আশেপাশে সব কাপল। তাহসী কাঁধ উঁচু করে ছাড়িয়ে নিতে গেলে তনন আরো শক্ত করে ধরে থাকলো। তনন বললো,
-“দুই পর ছোট ভাইয়ের বিয়ে। কি দিবা?”

-“কিচ্ছু না। ছাড়ো প্লিজ।”

-“তাকাবে কেউ ম্যাডাম। আচ্ছা চলো এখান থেকে বের হয়। শশীর জন্য কিছু কেনা দরকার। আফটার অল আমার বোনের বান্ধবী।”

-“কি কিনবে?”

-“রিং?”

-“ওসব পড়ে দেওয়া যাবে।”

-“টাকা আছে সমস্যা নেই। চলো।”

-“মাসের ও ২৫ টা দিন আছে!”

তাহসীর হাতে চুমু খেয়ে তনন বললো,
-“বাহ! বেশ বুঝতে শিখেছো।”

তাহসী মুখে কিছু বললো না। মনে মনে বললো, ‘এসব তো ঠিক ই বুঝি তনন। কিন্তু তুমি লজ্জা পাবে ভেবে বলি না।’ তনন তাহসীর হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহসীর হাতে তননের দেওয়া সেই আংটি।
-“তোমার হ তে সুন্দর লাগছে। পরে থেকো।

-“হু।”

🍁🍁🍁
সময় নিজের নিয়মে চলমান। সেদিনের পর এক মাস কেটে গেছে।
নাহিদ আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে মিথিলা কে নিয়ে থাকার জন্য। আগে একটা ফ্ল্যাটে ব্যাচেলর থাকতো কয়েকটি ছেলের সাথে। এখন মিথিলার সাথেই আছে। বিয়ের এক সপ্তাহ পর ছুটি শেষ হয়ে গেলে নাহিদ মিথিলা কে নিয়ে চলে এসেছিল ঢাকা। মিথিলা হোস্টেলে ছিল কিছুদিন। এরপর নাহিদ বাসা খুঁজে পেলে মিথিলা কে নিয়ে সেই বাসায় উঠেছে।

একটা কথা কিছুদিন ধরে ভাবছে তাহসী। তনন কে কিভাবে বলা যায় বুঝতে পারছে না। তনন তো মনে হয় কখনো রাজী হবে না। তাহসী একটা চিন্তা ভাবনা করে নাহিদ কে ফোন দিয়ে সব বললো। সাথে বিকালে দেখা করতে চাইলো। নাহিদ বললো তার বাসায় যাওয়ার কথা। তাহসী আচ্ছা বলে রেখে দিল।

তার একটু পরেই তননের নাম্বার থেকে কল আসলো। তনন জানালো আজ বিকালে দেখা করার কথা। প্রায় এক সপ্তাহ দু’জনের দেখা হয় না। পড়াশোনা তে দুজনেই ব্যস্ত। তাহসী আমতা আমতা করে বললো,
-“কাল মিট করি? আজ একটু বিজি আছি!”

-“ওহ্, নো প্রবলেম‌। আমারও একটা টিউশন আছে আজ বিকালে। কাল তো নেই।”

-“তো দেখা করতে চাইলে? তাহলে বলো আসি।”

-“না,থাক। বিকালে বলতে দুপুরের আগে। টিউশন শেষ করে সময় থাকতো তাই।”

আর দুই একটা কথা বলে ফোন রেখে দিল। তাহসী গোসল করে তৈরি হয়ে নিল। দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বই এ চোখ বুলিয়ে তাহসী রওনা দিল নাহিদের বাসার উদ্দেশ্যে। খাওয়ার সময় মিথিলার সাথে কথা বলে নিয়েছে। মিথিলা আজ বাসায় থাকবে তখন। আগে আগে যাচ্ছে কারণ মিথিলার সাথে গল্প করা যাবে।

….

অফিস থেকে নাহিদ বাসায় ফিরলে আলোচনা হলো তাহসীর সাথে। মিথিলা রান্নাঘর থেকে শরবত বানিয়ে নিয়ে এসে নাহিদের হাতে দিয়ে বললো,
-“তা কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে?”

-“তননের বাইক কেনা নিয়ে।”
নাহিদ উত্তর দিল।

-“ফ্রেশ হয়ে চলো।”
তাহসী বললো।

-“কোথায় যাবো?”
অবাক হয়ে বললো নাহিদ।

তাহসী ও দ্বিগুন অবাক হয়ে বললো,
-“কোথায় আবার! বাইক কিনতে। ভুলে গেলে?”

-“কাল তনন কে নিয়ে যাবো। বলবো আমার জন্য চয়েজ করতে। আমার ফ্রেন্ড রা আপাতত নেই। তাই নিয়ে যাচ্ছি। তনন পছন্দ করলে পেমেন্ট করে তননের হাতে চাবি দিয়ে বলবো তাহসীর গিফট। তনন কে হতভম্ব অবস্থায় ফেলে চলে আসবো, ওকে? কেমন আইডিয়া দিলাম?”

-“কেন তাহসী জানিয়ে দিবে না?”
প্রশ্ন করলো মিথিলা।

-“না। তার লজ্জা লাগে!”

নাহিদের হাতে খামচে দিয়ে তাহসী বললো,
-“ফালতু কথা বলবা না একদম।”

নাহিদ শেষ শরবত টুকু শেষ করে মিথিলার হাতে গ্লাস দিয়ে বললো,
-“মাংস উঠিয়ে নিল সব।”

-“আমার সাথে মিথ্যা বললে এমন ই হবে।”

-“থামো তোমরা দুইজন।”
মিথিলা বলে উঠলো।

তাহসী বললো,
-“আমাকে আসতে বললে কেন? এত প্লান থাকতে!”

-“এমনি বললে তো আসবি না। শেষে বাড়ি যেয়ে বলবি ভাইয়া বাসা নিল, আমাকে দেখালো না। দাওয়াত দিই নাই। তাই দেখিয়ে নিলাম।”

-“তুমি থাকো তোমার বুদ্ধি নিয়ে যত্তসব। আমি চললাম।”

তাহসী সোফা থেকে উঠে হাঁটা দিল। মিথিলা এগিয়ে যেয়ে তাহসী কে ধরে বললো,
-“এই না। রাতে খেয়ে যাবা। তোমার ভাইয়া‌ দিয়ে আসবে।”

-“উহু। শেষে বলবে তনন কে না নিয়ে একা যেয়ে খেয়ে আসছি। আম্মু আমাকে বকা দিবে।”

মিথিলা তাকে রুমে নিয়ে যেতে যেতে বললো,
-“তোমার ভাইয়ের ফালতু কথায় কান দিও না। আমার সাথেও এমন করে।”

তাহসী উৎসুক হয়ে বললো,
-“তোমাকে বকা দেয়? আমাকে সব বলো। আমি তোমার জাস্টিস পাইয়ে দিবো।”

মিথিলা কিছু বলার আগেই নাহিদ ওদের কাছে এগিয়ে এসে বললো,
-“ক্ষমা চাই তোর কাছে। খুশি?”

-“না। স্যরি বলতে হবে।”

নাহিদ রাগতে রাগতে চলে গেলে তাহসী হাসতে শুরু করলো। মিথিলাও হেসে দিয়ে বললো,
-“তোমরা পারোও বটে!”

চলবে ইনশাআল্লাহ;

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে