Tuesday, June 24, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 287



প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-২৫+২৬

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২৫
,
বন্ধ দরজার সামনে সমানে পায়চারী করে যাচ্ছে শশী। পারভিন বলেছিলো সমুদ্রের জন্য নাস্তা রেডি করে রুমে রেখে আসতে, কিন্তু সেটা করার মতো কোনো মন মানসিকতা শশীর আপাতত নেই টেনশনে ঠিক মতো এক জায়গায় বসতে অবধি পারছে নাহ। এসে পরনের জামা পযন্ত এখনো পাল্টায়নি, একবার বন্ধ দরজায় কান পাতছে তো আবার ঘন ঘন পায়চারী করছে। আব্বার সাথে কি এমন কথা থাকতে পারে ওনার যে এসেই এভাবে দরজা বন্ধ করে আলোচনা শুরু করছে। কোনো ভাবে কি ওনি কালকে রাতের কথাটা আব্বাকে বলছে? হায় হায় তাহলে তো সর্বনাশ আমি আব্বার সামনে মুখ দেখাবো কীভাবে, কি জন্য যে ওমন লোকের প্রেমে পড়তে গেলাম। আর পড়েছি তো কি হয়েছে এতো ঘটা করে ওনাকে জানানোর কি ছিলো, ভালোত দূর থেকেও বাসা যায়। ধ্যাত কেনো যে ওনাকে কথাগুলো বলেছিলাম না বললেই ভালো হতো, এই জন্যই লোকে বলে চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে।

তাহলে তুমি সত্যি বিয়েটা করবে?

জামশেদ মাস্টার এর গম্ভীর কন্ঠে কথাটা শুনে সমুদ্র এবার বিরক্তি নিয়ে গা-ছাড়া ভাব নিয়ে বলল, যদি মিথ্যা বিয়ে করা যায় তাহলে ওটাও করতে পারি।

সমুদ্রের কথায় এবার ওনিও নড়েচড়ে বসে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি কিন্তু সিরিয়াস কথা বলছি, তোমার আর শশীর বয়সের দিক টাও একটু ভাবো। ওর জন্য তোমার বয়সটা একটু নয় বরং বেশিই মনে হচ্ছে আমার কাছে, আর তাছাড়া ও এখনো অনেক ছোট।

সমুদ্রের এবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো এসব কথাতো ওনার সাথে আরো আগেই হয়ে গিছিলো তাহলে এখন এসব কথার মানে কি? আর ওনি যে এভাবে সবার আড়ালে ডেকে যে এসব কথা বলবে সেটা সমুদ্রের আগে থেকেই মনে হয়েছিলো। তাই এবার তেড়্যাভাবে জবাব দিলো, কেনো আপনার মেয়েকে কি দুধের শিশুর সাথে বিয়ে দিবেন? যদি জানতেন আপনার মেয়ে ভিতরে ভিতরে কত বড় হয়ে গেছে তহলে এখনি আমার কোলে তুলে দিতেন। শেষের কথাটা আস্তে করে বলে কিছু একটা মনে হতেই সমুদ্র চেয়ারে হেলান দিয়ে বেশ আয়েশ করে বসে একটু কথার খোঁচা দিয়ে বলল, শুনেছি আপনি নাকি যে বাড়িতে লজিং থেকে মাস্টারি করতেন ওই বাড়িই মেয়েকেই ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছেন। নিজেতো ঠিকি প্রেম করে বিয়ে করেছেন তখন নাকি আপনার বয়সও অনেক ছিলো আর আন্টি নিতান্তই ছোট ছিলো। নিজে বুড়ো হয়ে একটা দুধের শিশুকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে করতে পারেন আর এখন আমার বেলায় এতো এতো জ্ঞান কোথা থেকে আসছে? বা বা নিজের বেলায় ষোলো আনা আর আমার বেলায় চারা-না নো নো এটা তো আমি মেনে নিবো না মাস্টার মশাই।

সমুদ্রের কথা শুনে জামশেদ মাস্টার বড় বড় চোখ করে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে কাশতে লাগল। অতঃপর গলা পরিষ্কার করে বলল, আমি মোটেও ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করিনি নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারপর পারভিন কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ছিলাম।

তো তাহলে কি আমি বেকার? এমন ভাবে বলছেন যেনো আমি বেকার লাফাঙ্গা ছেলে কাজ কাম কিছু করি নাহ বাবার হোটেলে বসে খাই এই জন্য মেয়ে দিতে ভয় পাচ্ছেন, শুনুন মাস্টার মশাই মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে না দিলে কিন্তু তুলে নিয়ে যাবো। তখন বসে বসে মাথায় হাত দিয়ে হায় হায় করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে নাহ।

সমুদ্রের কথা শুনে একের পর এক ঝটকা খাচ্ছে জামশেদ মাস্টার তার জানামতে সমুদ্র মোটেও এমন নয়, কথা কম বলা গম্ভীর একটা ছেলে প্রথমে দেখে তো সেটাই মনে হয়েছিলো কিন্তু আজকের সমুদ্রের সাথে আগের সমুদ্রের কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছে নাহ। ওনার ভাবনার মাঝেই সমুদ্র নিজের মুখটা একটু ওনার দিকে এগিয়ে নিয়ে এসে আস্তে আস্তে বলল, আমার কেমন জানি একটা ডাউট হচ্ছে মাস্টার মশাই।

সমুদ্রের এমন করা দেখে এবার ওনিও বেশ সিরিয়াস হয়ে নিজের মাথাটা সমুদ্রের দিকে এগিয়ে নিয়ে মাথার সাথে মাথা ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলল, কি বলোত?

সত্যি কি আপনারা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন? নাকি আন্টিকে কোনো জাদুটোনা করে বিয়ে করেছেন। না দেখুন আপনার মাথার সবগুলো চুল কেমন পেঁকে গেছে আবার ভূড়িটাও কেমন বেড়ে গেছে আর ওদিকে আন্টি এখনো কত সুন্দরী যেনো সাজিয়ে গুজিয়ে আবারও বিয়ে দেওয়া যাবে। সত্যি করে বলেন তো মাস্টার মশাই কাহিনী কি?

এবার বোধহয় হয় স্কুলের সবচেয়ে রাগী আর গম্ভীর জামশেদ মাস্টার হার্ট অ্যাটাক করেই ফেলবে। সমুদ্রের কথা শুনে তাড়াক করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে এক নিশ্বাসে পুরো পানিটা সাবাড় করে দিলো। না না এই ছেলেকে এতো হালকা করে নেওয়া মোটেও ঠিক হবে নাহ, এটা ছেলে নাকি পুরো একটা তুফান বাপরে বাপ বুকের ভিতর এখনো ধুপধাপ করছে৷ কথাগুলো ভেবে পিছন ফিরে সমুদ্রের দিকে তাকালো দেখলো সমুদ্র গা-ছাড়া একটা ভাব নিয়ে চেয়ারে বসে আছে। ওকে দেখলে কেউ বলবে যে ও একটু আগে কত নিলর্জ্জ মার্কা কথা বলেছে, ওনি নিজেকে ঠিক করে হালকা কাশি দিয়ে বলল, আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও চা নাস্তা খাও আমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলবো।

সমুদ্র চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গায়ের শার্টটা ঝেড়ে টানতে টানতে বলল, একটু জলদি কথাটা বলিয়েন আমার হাতে সময় কম।

তোমার কি লজ্জা সরম নেই নিজের বিয়ের কথা এভাবে নিজে এসে বলছো তাও আবার আমার কাছেই।

আজব এখানে লজ্জার কি আছে, বিয়ে করবো আমি সংসার করবো আমি মেহনত করে আপনাকে নানা বানাবো আমি তাহলে এখানে আমার লজ্জা পাওয়ার কি আছে। আর আমি লজ্জা পেলে আপনি নানা হতে পারবেন বলুন?

না না এই ছেলের সাথে আর একটা কথাও বাড়ানো যাবে না মুখ খুললেই কথা নয় যেনো এক একটা বোমা বের হচ্ছে। মনে মনে কথাটা বলে মুখে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এখন বসার ঘরে যাও তোমার আন্টি তোমায় ডেকেছে।

সমুদ্র একবার হুবু শশুরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে টেবিল এর উপর থেকে নিজের ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো। সমুদ্র চলে যেতেই ধপ করে খাটে বসে পড়লেন ওনি বুকে হাত দিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে নিজে নিজেই বলল, বাঁচা গেলো এই ছেলের সাথে কথা বলতে গেলে দেখছি বুঝেশুনে মেপে মেপে বলতে হবে। কথাটা বলতে বলতেই রুমের মধ্যে থাকা বড় আয়নার দিকে চোখ গেলো ওনার উঠে দাঁড়িয়ে আয়নার দিকে এগিয়ে গেলো। নিজের অবয়ব এর দিকে তাকিয়ে নিজে নিজেই বলল, সত্যিতো মাথার চুলগুলো সব পাঁকতে বসেছে আবার ভূড়িটাও দিনকে দিন বেড়েই চলেছে থামার কোনো নামগন্ধ নেই। শ্বাস বন্ধ করে পেটটা একটু ভিতরের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করলো তখনি পারভিন আঁচলের সাথে হাত মুছতে মুছতে রুমে এসে বলল।

একি সমুদ্র কোথায় গেলো আপনার সাথেই তো ছিলো, আমি আরো সবকিছু এখানেই আনতে বললাম অথচ সমুদ্রই এখানে নেই।

বাইরেই কোথাও আছে হয়ত এইমাত্রই বেড়িয়ে গেলো। কথাটা বলেই আবার আয়নার দিকে তাকালো, পারভিন তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ওনি পিছন থেকে ডেকে বলল, আচ্ছা বড় বউ আমি কি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি? পেটটাও কেমন বেড়ে যাচ্ছে তবে তুমি যদি অনুমতি দাও তাহলে চুলে কলপ করতে পারি কি বলো নইলে তো দেখছি তোমার পাশে আমায় মানাবেই নাহ। শেষে একসাথে কোথাও গেলে লোকে তোমাকে ভাবি আর আমাকে চাচা বলবে।

স্বামীর মুখে এমন কথাশুনে পারভিন অবাক হয়ে স্বামীর দিকে তাকালো অতঃপর রেগে বলল, বুড়ো বয়সে ভীমরতি বলি দিন দিন বয়স কমে যাচ্ছে নাকি যে জোয়ান হবে। মাঝে মাঝে আপনার কি যে হয় আমি গেলাম হাতে অনেক কাজ আছে, ছোটো আর মেজো হেঁসেলে কি করছে কে জানে।
,,,,,,,,,,,,,
ছোটোমা ডেকেছিলো এইজন্য শশী রান্নাঘরের দিকে গিয়েছিলো কাজটা শেষ হতেই আবার তড়িঘড়ি করে বাবার রুমের দিকে যাচ্ছে। এতোক্ষণে লোকটা আব্বাকে না জানি উল্টো পাল্টা কি কি কথা বলেছে, এই মুখ কীভাবে আব্বাকে দেখাবো। ওনি যদি আব্বাকে বলে যে আমি ওনাকে প্রেমের প্রস্তাব দিছি তাহলে তো যেটুকু মান ইজ্জত আছে তাও আর থাকবে নাহ। এগুলো বিরবির করতে করতে করতে শশী ওর আব্বার রুমের দিকে যাচ্ছিলো তখনি সমুদ্রের সাথে ধাক্কা খেলো। সমুদ্রের বুকের সাথে ধাক্কা লাগতেই নাকে বেশ বেথ্যা পেলো ডান হাতে নাক ডলতে ডলতে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি আব্বা কে কি বললেন এতো সময় ধরে? আর আব্বা কি বলল? এতো সময় লাগলো কেনো? কি কথা হয়েছে আমাকে বলুন।

শশীর কথাশুনে সমুদ্র প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে শশীর দিকে একটু ঝুঁকে মুখটা ওর কানের কাছে নামিয়ে এনে ক্ষীণ স্বরে বলল, তোমার আব্বা বলেছে ওনার মেয়েকে বেশি বেশি ভালোবাসতে আর অনেক অনেক চুমু দিতে।

কথাটা বলেই সমুদ্র সোজা শশীকে পাড় করে শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেলো, শশী এখনো হা করে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আব্বা ওনাকে এই কথা বলেছে? নিজে নিজেই কথাটা ভেবে পরক্ষণেই আবার বলল, আমিও না ওনার কথা বিশ্বাস করে কি সব কথা ভাবছি আব্বা কেনো ওনাকে এই কথা বলবে।
,,,,,,,,,,,

সবাই এতো এতো অনুরোধ করেও সমুদ্র কে থামাতে পারেনি। রাতেই বেরিয়ে পড়েছে রাতে রাস্তা ফাঁকা থাকবে তাই কোনো সম্যসা হবে নাহ এই বলে। আপাতত রাস্তায় তেমন কোনো গাড়ি নেই ফুরফুরে মেজাজে গাড়ি টেনে চলেছে সমুদ্র, শশীর মুখটা চোখের সামনে ভাসতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুৃঁটে উঠল। বিকেলে জামশেদ মাস্টার এর সাথে হওয়া কথপোকথন মনে হতেই বেশ উচ্চ স্বরে হেসে উঠল সমুদ্র, এখন যদি শশী ওকে দেখতো তাহলে মেয়েটা বেশ চমকে যেতো। সামনে বড় আলো দেখতেই গাড়ির স্পিড খানিক কমায়ে দিলো সমুদ্র, সামনে ঠিক কি গাড়ি আর গাড়িটা কতবড় সেটা আন্দাজ করা যাচ্ছে নাহ প্রখর আলোতে পিছনের অংশ অদৃশ্যের মতন। এবার বেশ ধীর গতীতে গাড়ি চলাচ্ছে সামনে যেতেই চোখের সামনে সারি সারি দাঁড় করিয়ে রাখা ট্রাক দেখে সমুদ্র গাড়ি থামিয়ে দিলো। সামনের রাস্তা পুরোটাই বন্ধ, কিছু একটা মনে হতেই সমুদ্র তড়িঘড়ি করে সিট বেল খুললো যখনি গাড়ির দরজা খুলতে যাবে ওমনি পিছন থেকে একটা গাড়ি এসে সমুদ্রের জিপটাতে জোরে ধাক্কা মারল। সিট বেল না থাকায় সামনে খানিকটা ঝুঁকে সামনের গ্লাসের সাথে মাথায় আঘাত লাগল। পিছনের গাড়িটা হয়ত বেশ কিছুক্ষণ ধরেই ফলো করছিলো কিন্তু অন্যমনষ্ক থাকায় সমুদ্র সেটা বুঝতে পারেনি। সোজা হয়ে বসে কপালে হাত দিতেই বুঝতে পারলো রক্ত, কপালের কোনায় কেঁটে গেছে। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখলো দশ চাকার বেশ বড়সড় একটা মালবাহী ট্রাক সেটাই ওর গাড়িটিকে ধাক্কা দিয়েছে। ট্রাকটা এখন পিছনের দিকে যাচ্ছে হয়ত আবারও ধাক্কা দেওয়ার প্লান আছে।

ওহ শিট।

কথাটা বলেই সমুদ্র তড়িঘড়ি করে ফোনটা বের করলো পিছনে তাকিয়ে থেকেই কাউকে কল দিলো। ফোন রিসিভ হতেই সমুদ্র বলা শুরু করলো, ইমরান তোমাকে একটা লোকেশন পাঠিয়েছি যলদি গাড়ি নিয়ে সেখানে চলে এসো সময় অনেক কম হারিআপ৷ আর হ্যাঁ আসার আগে কি করতে হবে মনে আছে তো?

অবশ্যই স্যার আপনি শুধু কয়েক মিনিট ওদিকটা সামাল দেন আমি যত দ্রুত সম্ভব আসছি।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২৬
,
বিছানার উপর থাকা ফোনটা অনবরত বেজেই চলেছে, ওয়াশরুমের দরজা খুলে টাওয়াল দিয়ে শরীল মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো সমুদ্র। বিছানা থেকে ফোনটা তুলে পুনরায় কল আসার আগেই সমুদ্র ফিরতি কল দিলো।

আপনি ঠিক আছেন? আন্টি বলল মাথায় আঘাত পেয়েছেন। ক্ষতটা কি অনেক গভীর? নিশ্চয়ই জ্বালা করছে আর আপনিও সেখানে ঔষধ লাগাননি৷ আমিতো চিনি আপনাকে কেমন ধরনের লোক আপনি, ঔষধ লাগাবেন কেনো আপনি তো বীর বাহাদুর তাই নাহ? বলছি আমি কি আসবো?

ফোনের ওপাশে চিকন কন্ঠে উৎকন্ঠা নিয়ে এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামল শশী, গলার টাওয়াল টা বেডের এককোণে ছুঁড়ে ফেলে সটান শুয়ে পড়ল সমুদ্র । শাসন করছো আমায়? তোমার তো ভারি সাহস মেয়ে এতোটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে হয়ে আমাকে শাসন করছো। আর তুমি এসে কি করবে তুমি কি ডাক্তার নাকি?

সমুদ্রের কথাশুনে মিইয়ে গেলো শশী, কথার পিঠে আর কোনো জবাব দিলো নাহ। তখন সমুদ্রের চিন্তায় কথাগুলো বলেছে তবে এখন আর কোনো কিছু বলার সাহস হচ্ছে নাহ। শশীকে চুপ থাকতে দেখে সমুদ্র কান থেকে ফোনটা সরিয়ে সামনে এনে স্কিনের উপর চোখ বুলিয়ে হালকা হেসে নরম কন্ঠে ছোট্ট করে বলল,

ঠিক আছি আমি।

এই এতোটুক কথায় শশীর সাহস বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিলো, এবার বেশ আগ্রহ নিয়ে বলে উঠল, এসব হলো কি করে? মা কাকি সবাই কত করে বলল থাকতে তাদের কথা না শুনেতো বেড়িয়ে গেলেন, এখন বুঝতেছেন তো বড়দের কথা না শুনলে কি হয়।

হুম খুব বুঝতেছি তুমি ভারী চালাক মেয়ে দেখছি নিজের লাভের জন্য আন্টিদের দিয়ে আমাকে থাকতে বলিয়েছ।

সমুদ্রের কথায় শশী বেশ অবাক হলো বিষ্ময় নিয়ে বলল, এখানে লাভের কি আছে আর আপনি থাকলে আমার কি লাভ?

হুম এখনতো সব বুঝেও না বোঝার অভিনয় করছো, তুমি বেশ ভালো করেই জানো যে তোমার কাছাকাছি থাকলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো নাহ। আর তুমি সেটার সুযোগ নিয়ে আমাকে দিয়ে ফ্রিতে আদর করিয়ে নিবা কি ভেবেছো আমি কিছু বুঝি নাহ।

সমুদ্রের কথায় শশীর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো, ছিঃ ছিঃ এসব তো আমার ভাবনারও বাহিরে আর এই লোকটা কিসের সাথে কি মিলিয়ে কতকিছু ভেবে ফেলেছে। সত্যি ওনার লজ্জা শরমের বালাই নেই দেখছি, শশী লজ্জায় বাঁ হাতে নিজের মুখ ঢাকার চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যার্থ হলো এই জন্য কথা ঘুরাতে ফের সমুদ্র কে প্রশ্ন করল, বলুন না এসব কীভাবে হলো?

আরে ওসব কিছু নাহ কিছু কুকুর পিছে লেগেছিলো কিন্তু কাঁমড়াতে না পেরে আহত হয়ে ফিরে গেছে৷ দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলল সমুদ্র, কথাটা বলার সময় রাগে হাত মুঠো করে সামনের দেওয়াল এর দিকে তাকিয়ে ছিলো। সমুদ্রের কথা শশী বুঝতে না পেরে ফিরতি আবার প্রশ্ন করে বসল, কিন্তু আপনি তো গাড়ির মধ্যে ছিলেন তাহলে আঘাত পেলেন কীভাবে?

ও তুমি বুঝবে নাহ এটা চার পা ওয়ালা কুকুর নয় মানুষ রুপি দুই পা ওয়ালা কুকুর। এখন এতো বেশি কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়ো ছোট মাথায় এতো চাপ নেওয়া মোটেও ঠিক হবে নাহ। আর এভাবে রাত জেগে শরীল নষ্ট না করে শরীলের যত্ন নাও কারণ কিছুদিন পরে তোমার ওই নরম শরীলের উপর দিয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় বইবে।

কথাটা বলেই সমুদ্র খট করে ফোন কেটে দিলো, শশী হা করে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে সমুদ্রের কথার মাথা মুন্ডু তৎক্ষনাৎ ও কিছুই বুঝতে পারেনি তবে কিছুক্ষণ ভাবার পর যখন সমুদ্রের কথার মানেটা বুঝতে পারলো লজ্জায় ফর্সা মুখটা লাল হয়ে উঠল৷ পাশ থেকে কাথাটা নিয়ে নিজের পুরো শরীল টা আবৃত করে নিলো, এখন আর কিছুতেই ও সমুদ্রের সাথে কথা বলবে নাহ লোকটা বড়ই বেহায়া ঠোঁটকাটা, যখন যা মুখে আসে সেটাই বলে দেয়।
,,,,,,,,,,,
তোর কি বুদ্ধি সুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে? তোকে এতোবার করে নিষেধ করার পরেও কেনো সমুদ্রের উপর আক্রমণ করিয়েছিস?

তো কি করতাম আমি ফুপি বসে বসে নিজের ধ্বংসের জন্য অপেক্ষা করতাম? ওই সমুদ্র একের পর এক আমার ক্ষতি করে যাচ্ছে আর আমি কিছু না করে কাপুরুষের মতো হাত গুটিয়ে বসে থাকবো?

জোসেফ রেগে কথাটা বলেই টেবিলের উপর থেকে কাঁচের গ্লাসটা ফেলে দিলো, মালবিকা চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটাকে সংবরণ করছে। বিরবির করে বলল, একদম নিজের বাপের মতো ধৈর্যহীন একটা গাঁধা তৈরি হয়েছে। বোনটাকেও নিজের মতোই বানিয়েছে দিনরাত শুধু সমুদ্রের নাম যপে ওটাকে তো সামলে লন্ডনে পাঠিয়েছি এবার এটাকে সামলাতে হবে৷ ঠোঁট গোল করে আস্তে করে একটা শ্বাস ছেড়ে মালবিকা জোসেফ এর কাছে গেলো ওর কাঁধে হাত রেখে শান্ত করার জন্য বলল।

আচ্ছা ঠিক আছে আমি মানছি তুই যেটা করেছিস একদম ঠিক করেছিস সমুদ্রের এইটুকু আঘাত দেওয়ার দরকার ছিলো৷ কিন্তু তোকেও তো বাঁচতে হবে এখন তুই যদি না থাকিস তাহলে সমুদ্র কে নিঃশেষ করবি কীভাবে?

ফুপির কথা বুঝতে না পেরে জোসেফ মালবিকার দিকে তাকিয়ে বলল, মানে?

মানে হলো তোকে কয়দিন এর জন্য দেশের বাইরে যেতে হবে।

ওহ তারমানে তুমি আমাকে পালাতে বলছো তাইতো? তুমি এটা ভাবলেও কীভাবে ফুপি যে আমি ওই সমুদ্রের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালাবো। ভুলে যেও না ক্ষমতায় আমি ওর থেকেও উপরে, আমি চাইলেই ক্ষমতার জোড়ে ওকে আমার বাড়ির চাকর বানিয়ে রাখতে পারি।

জোসেফ এর কথায় মালবিকার রাগ হলেও সেটা গিলে নিয়ে নরম কন্ঠে বোঝানোর স্বরে বলল, আচ্ছা আমি মানছি যে তুই যেটা বলছিস সেটা সঠিক, কিন্তু এটাও তোকে মানতে হবে যে সমুদ্রের ও কিন্তু ক্ষমতা কম নয়। আর সামনে ইলেকশন এখন যদি তোর উপর কোনো দোষ পড়ে তাহলে আর সামনে আগাতে পারবি? শোন রাজনীতি হলো সাদা কাপড়ের মতো যার ভিতরে অসংখ্য দাগ থাকলেও সাধারণ জনগণ এর কাছে সেটাকে ধবধবে সাদা দেখাতে হয় ওখানে এক ফোঁটা দাগ লাগলেও সেটা সবার আগে চোখে পড়ে। তাই আমি যেটা বলছি সেটা কর, আর তোকে কে বলল যে তোকে সমুদ্রের ভয়ে বাইরে পাঠাচ্ছি তোকে ওখানে গিয়ে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।

কেমন কাজ?

সেটা সময় হলেই বুঝতে পারবি, আমি সব রেডি করে দিচ্ছি আজকে রাতের মধ্যেই তুই রওনা দিবি আর তোকে একজন এর সাথে দেখা করে কথাও বলতে হবে।
,,,,,,,,,,,
এই দিয়ে পঞ্চম বারের মতো কল দিলো শশীর ফোনে কিন্তু প্রথম বারের মতোই ওপাশ থেকে চিকন মেয়েলি স্বরে ফের বলে উঠল, আপনি যাকে কল দিয়েছেন সে এই মুহুর্তে ব্যাস্ত আছে। এইটুকু শুনেই ফোন কেটে পাশে ছুড়ে ফেলল রোদ্র, এতো কিসের ব্যাস্ত তুমি শশী সত্যি তুমি আমাকে অনেক বেশি পোড়াচ্ছো একটা বার তোমায় নিজের করে নিই তারপর সবটা সুদে আসলে মিটিয়ে নেবো। কথাটা বলেই নিজের মনে হেসে উঠল রোদ্র।

দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পুরোটাই দেখলো শাহানারা বুকের ভিতরটা বড্ড জ্বলছে, এক ছেলের খুশির জন্য এখন তাকে অন্য ছেলের মুখের হাসি কেড়ে নিতে হবে। মনকে শক্ত করে ঘরের ভিতরে পা বাড়ালো, হাতে থাকা জিনিসগুলো বিছানার উপর রেখে রোদ্রের পাশে বসল। মাকে হঠাৎ গহনাপত্র নিয়ে নিজের রুমে দেখে অবাক বনে গেলো রোদ্র তবুও কৌতূহল চেপে রেখে মুচকি হেসে মাকে সুধালো।

এগুলো কার মা?

শশীর জন্য আরো আগেই বানিয়ে রেখেছিলাম যেদিন কথাহলো তারপর থেকে বানাতে দিয়েছিলাম। সমুদ্র কে তো এসব বলে লাভ নেই ও এসবের কিছুই বুঝবে না তুই একটু আমার হাতে হাতে সাহায্য করে দে তো এখনো কত কাজ বাকি।

মায়ের কথাগুলো পুরোটাই মাথার উপর দিয়ে গেলো রোদ্রের, কিছু বুঝতে না পারায় শাহানারাকে প্রশ্ন করলো, আমি তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি নাহ মা। গয়নাগুলো শশীর জন্য বানিয়েছো ঠিক আছে বিয়েতে তো ওকে গয়না দেওয়া লাগবে কিন্তু তার পরের কথাগুলো বুঝতে পারেনি।

ছেলের কথায় এবার শাহানারা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কথা ঘুরানোর জন্য হাতের ফোনটা রোদ্রের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এটা হলো তোর বাবার বন্ধু শফিক ভাইকে মনে আছে? ওনার মেয়ে, দেখতে মাশাল্লাহ আবার নাকি ডাক্তারি পরছে তোর বাকিটা বলার আগেই রোদ্র শাহানারার থেকে ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে স্কিনে থাকা মেয়েটার ছবির দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, বাহ বেশ দেখতে তো একেতো ভাইয়ার সাথে বেশ মানাবে, তাহলে কি ভাইয়া বিয়ে করতে রাজি হয়েছে? কিন্তু তুমিতো আমাকে কিছু বললে নাহ।

সমুদ্রের জন্য নয় একে আমি তোর জন্য পছন্দ করেছি, আমি চাইছি সমুদ্রের বিয়ের পরপরই তোর বিয়েটাও দিয়ে দিতে।

মায়ের কথায় রোদ্রের হাসি মাখা মুখটা কালো হয়ে গেলো, কিন্তু পরক্ষণেই আবার হেসে বলল, ধূর আমি কেনো একে বিয়ে করতে যাবো, তুমিও না মা এমন এমন মজা করো আমাকে পুরো ভয় পাইয়ে দাও। আর তাছাড়া আমিতো তোমাকে বলেই রেখেছি যে আমি শশীকে বিয়ে, বাকিটা বলার আগেই শাহানারা রোদ্রকে থামিয়ে দিয়ে শক্ত করে রোদ্রের হাতটা চেপে ধরে বলল।

শশীর সঙ্গে সমুদ্রের বিয়ে সামনের সপ্তাহে।

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-২৩+২৪

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২৩
,
উঠতে ইচ্ছে করছে নাহ? এভাবে থাকার ইচ্ছে আছে নাকি? যদি থাকে তাহলে থাকতে পারো আমার কোনো সমস্যা নেই।

কথাটা বলে সমুদ্র দুইহাতে শশীকে জড়িয়ে ধরতে গেলে শশী লাফ দিয়ে সমুদ্রের বুক থেকে উঠে পড়ে অতঃপর কোনো দিকে না তাকিয়ে ওখান থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে। রুমের বাইরে আসতেই বুকে হাত দিয়ে দেওয়াল ঘেঁষে বসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। যেনো এতোক্ষণ শ্বাস আটকে রেখেছিলো এখন ছাড়া পেতেই হা করে সব বাতাস নিজের মধ্যে টেনে নিচ্ছে। শশী চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে সেই দৃশ্য টা ভেসে উঠলো ওমনি চট করে চোখ খুলে ফেলল ওমা চোখ বন্ধ করলেও তো ওনাকে দেখতে পাচ্ছি। এখন তাহলে আমার কি হবে আমি রাতে ঘুমাবো কীভাবে? সব দোষ ওনার, রাতে আমার বইটা দিয়ে দিলেই তো হয়ে যেতো তাহলে এমনটা হতো নাহ, এখন আমার কী হবে? আচ্ছা কোনো ভাবে কি চোখ খুলে রেখে ঘুমানো যাই নাকি।

চেষ্টা করে দেখতে পারো কারণ মাছেরা নাকি চোখ খোলা রেখেই ঘুমায় তুমিও একবার চেষ্টা করতে পারো। তবে এটা করার জন্য অবশ্যই তোমাকে পানিতে নামতে হবে, এখন তুমি যদি আমার এতোবড় বাড়ি রেখে পানিতে গিয়ে ঘুমাও আর সেটা যদি তোমার আব্বা জানতে পারে তাহলে কী জামশেদ মাস্টার আমায় ছেড়ে কথা বলবে?

পাশ থেকে কথার আওয়াজ পেতেই শশী মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র দরজার সামনে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে দুহাত বুকে গুঁজে রেখেছে৷ এতোক্ষণে সে তার উদম শরীলটা কালো টির্শাট দ্বারা ঢেকে ফেলেছে। সমুদ্র কে দেখতেই শশী দুহাতে নিজের মুখ ঢেকে ইস কি লজ্জা কেউ আমারে বাঁচাও কথাটা বলেই পড়িমরি করে দৌড়ে ওখান থেকে নিজের রুমে চলে গেলো। শশীর এহেন কান্ডে সমুদ্র শশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,

এতো লজ্জা হলে তো আমার বাসর করাই হবে নাহ৷ দেখা যাবে রাতে বাসর করলাম সকালে বউ লজ্জায় আর আমার সামনেই আসলো নাহ বাকি জীবনটা তার ঘোমটা দেওয়া মুখটাই দেখা লাগলো, এই জন্যই ছোটো মেয়ের প্রেমে পড়তে হয় নাহ কিন্তু কি আর করার যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে। এই জন্যই বোধহয় গুরুজনেরা বলে গিয়েছেন, ভাবিয়া করিও কাজ করিয় ভাবিও নাহ।
,,,,,,,,,,

আজকে কেনো জানি ক্লাসেও মন বসতে নাহ সামনে স্যার দাঁড়িয়ে লেকচার দিচ্ছে এদিকে শশী গালে হাত দিয়ে সকালের ঘটে যাওয়া কাহিনীটা ভাবছে। পাশ থেকে মিলি কনুই দিয়ে শশীকে ধাক্কা দিয়ে বলল, কিরে তোর মন কোথায়? সেই কখন থেকে দেখছি গালে হাত দিয়ে কি একটা ভেবেই যাচ্ছিস। স্যার যদি একবার দেখে নাহ তাহলে এতোক্ষণ কি পড়ালো সবটা তোকে জিগাস করবে তখন বলতে পারবি?

মিলির কথাশুনে শশী গাল থেকে হাত সরিয়ে মিলির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, দেখ আমার চোখের দিকে তাকা দেখেছিস কেমন লাজুক লাজুক ভাব, আর আমার গাল দুটো কেমন ফুলে ফুলকো লুচির মতো হয়ে গেছে, আর আমার ঠোঁট স্টোব্রেরির মতো কেমন লাল লাল হয়ে গেছে৷ এই মিলি আমি এই মুখ নিয়ে বাড়ি যাবো কীভাবে? আজকের দিনটা তোর বাড়িতে থাকতে দিবি আমায়? কাল হতে হতে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।

শশীর এমন অদ্ভুত কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারলো নাহ মিলি উল্টো চোখ বড় বড় করে শশীর দিকে তাকালো যেনো সে শশীর কথা অনুযায়ী সবটা মিলাচ্ছে৷ সত্যি কি কারো গাল ফুলে ফুলকো লুচির মতো হয়? মিলি যখন এসব ভাবতে ব্যাস্ত শশী তখন আবারও নিজের ভাবনায় মত্ত। ও কীভাবে মিলিকে বোঝাবে সদ্য যৌবনে পা দেওয়া মেয়েটা যে খুব গভীরভাবে কোনো এক পুরুষের প্রেমে পড়েছে। হঠাৎ তার অতি অল্প ছোঁয়ায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, ভালোবাসার মানুষের একটু ছোঁয়ায় ও যে ভিতরটা এভাবে উল্টো পাল্টা করে দেওয়া যায় সেটাতো ভাবনারও বাইরে ছিলো। এই ছোঁয়ায় যেনো ভিতরে অগ্নি কান্ড ঘটিয়ে দিয়েছে কিন্তু কি আশ্চর্য ভিতরে আগুনে দগ্ধ হলেও বাইরের শরীলটা বরফের মতো ঠান্ডা। যেনো মনে হচ্ছে যেই পুরুষের এই সামান্য ছোঁয়ায় এমন হতে পারে তাহলে সে যদি আরো গভীর করে ছুঁয়ে দেয় তাহলে কি হবে? কথাটা মনে হতেই শশী দুহাতে মুখ ঢেকে বলল,

হায়হায় তাহলে তো আমি মরেই যাবো।

আচমকা শশীর এমন কথায় মিলি এবার বেশ জোরে সরে শশীকে ধাক্কা দিয়ে বলল, আর একটু পড়ে মরিস বোইন স্যার ক্লাস টা শেষ করে বের হোক তারপর আমি নিজ দায়িত্বে তোকে কলেজের বিল্ডিং এর ছাঁদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবো তখন না হয় আরামসে মরিস। এখন অন্তত আমাকে ক্লাসটা করতে দে আর তুই নিজেও কর এভাবে নতুন বউ এর মতো লজ্জা পাওয়া বন্ধ কর।

মিলির কথা শুনে শশী নিজেকে ঠিক করে চুপচাপ ভালো হয়ে বসলো, নিজেকে মনে মনে বেশ কয়েকটা কঠিন কথা শুনালো যেনো পরবর্তী তে এমন ভুলভাল কাজ সে না করে। ক্লাস শেষ হতেই সবাই বেরিয়ে গেলো শশী বের হতেই মিলি ওর পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল, এখন বল কাহিনী কি তখন ওভাবে নতুন বউয়ের মতো লজ্জা পাচ্ছিলি কেনো? আর কি সব উল্টো পাল্টা কথা বলছিলি গাল ফুলে গেছ ঠোঁট স্টোব্রেরি হয়ে গেছে এসব কি?

মিলির কথাশুনে শশী কিছু বললো নাহ বা হাতে নিজের মুখটা ভালো করে মুছে নিয়ে বলল, সত্যিই কি এমন কিছু হয়েছে? আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে সত্যি করে বলতো।

তুই সত্যি পাগল হয়ে গেছিস এবার সত্যি সত্যিই কিন্তু তোকে এই দোতলার বারান্দা থেকে ফেলে দেবো। মিলির কথায় আর কোনো জবার দিলো নাহ শশী, দুজনে সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নেমে মাঠ পেরিয়ে কলেজের গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো। কলেজ ছুটি হয়ে গেছে বিধায় একে একে সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে, শশী আর মিলি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো, তখনি ওদের সামনে কালো জীপ এসে থামলো শশী মাথা উঠিয়ে দেখে সমুদ্র। সমুদ্র কে দেখতেই মিলির পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো কেননা এই মুখ সে সমুদ্র কে কীভাবে দেখাবে, সমুদ্র গাড়ি থেকে নেমে সানগ্লাস টা বুকের সাথে রেখে মিলির সামনে এসে দাঁড়ালো। মিলি হা করে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে, একদম সামনে এসে দাঁড়ানোই মিলি সমুদ্রের টানটান বুকটাই দেখতে পাচ্ছে। গাড়িতে থাকাকালীন তো পুরোটাই দেখা যাচ্ছিলো এখন সামনে এসে দাঁড়ানোই মাথা উঁচু করে দেখা লাগছে। সমুদ্র শশীকে উদ্দেশ্য করে বলল,

চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।

যেহেতু শশী মিলির পিছনে তাই সমুদ্রের কথাশুনে মিলি ভাবলো কথাটা ওকে বলেছে তাই থতমত খেয়ে বলল, হ্যাঁ যাবোতো কিন্তু কোথায়? আর আপনি কে?

মিলির কথাশুনে সমুদ্র এবার মিলির দিকে তাকালো পরক্ষণেই আবার শশীর দিকে তাকিয়ে বলল, কি হলো শুনতে পাওনি? যলদি চলো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

মিলি এবার ব্যাপারটা বুঝতে পারলো আসলে লোকটা কথাটা ওকে নয় বরং ওর পিছনে থাকা শশীকে বলেছে। কিন্তু লোকটা কে আর শশীকে কীভাবে চেনে? কথাগুলো ভেবে মিলি পাশে একটু সরে গিয়ে শশীর দিকে তাকালো দেখলো শশী ব্যাগ দিয়ে ওর মুখ ঢেকে রেখেছে। মিলি শশীর এহেন কাজে বড়ই বিরক্ত হলো ওর মুখের থেকে টান দিয়ে ব্যাগটা নিয়ে বলল, এখানে এভাবে লুকিয়ে আছিস কেনো ওনি তোকে ডাকছে শুনতে পাচ্ছিস নাহ?

শশী দুহাতে নিজের মুখ ঢেকে ফিসফিস করে মিলিকে বলল, আমার সামনে থেকে সরিস নাহ মিলি ওনি আমার এই মুখ দেখে ফেলবে তো।

মিলি বোকার মতো একবার শশীর দিকে তো আবার সমুদ্রের দিকে তাকালো, সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে শশীর দিকে তাকালো শশী তখনো মুখ ঢেকে আছে সমুদ্র মিলির দিকে তাকাতেই মিলি সরে গেলো। সমুদ্র শশীর কাছে গিয়ে বাম হাত ধরে মিলির থেকে ব্যাগটা নিয়ে গাড়ির দিকে গেলো। পাশের সিটে শশীকে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো, ওদিকে মিলি এখনো হা করে শশী আর সমুদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

কি ব্যাপার ওইদিকে মুখ করে আছো কেনো?

গাড়ি চালাতে চালাতে কথাটা বলল সমুদ্র, শশী বাইরের দিকে তাকিয়েই বলল, এমনি বাইরের দৃশ্য দেখছিলাম।

জীবনে কখনো দেখনি? আমার দিকে তাকাও।

সমুদ্রের গম্ভীরকন্ঠে কথাটা শুনতেই শশী আস্তে আস্তে সমুদ্রের দিকে তাকাতেই সমুদ্র মজার সূরে বলল, কি ব্যাপার তোমার গালগুলো ওমন ফুলে আছে কেনো যেনো লাল টমেটো।

ব্যাস সমুদ্রের কথা শুনতেই লজ্জায় আবার মুখ ফিরিয়ে নিলো, সমুদ্র হালকা হেসে গাড়ি চালানোই মন দিলো। মাঝে মধ্যে মেয়েটাকে লজ্জায় ফেললে মন্দ হবে নাহ এমন ফুলো ফুলো লাল লাল লজ্জায় রাঙা মুখ দেখা যাবে।
,,,,,,,,,,

বিছানায় আধসোয়া হয়ে একমনে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে শাহানারা, কালকে রোদ্র আসবে এতো চেষ্টা করেও ছেলেটাকে বলতে পারেনি। ভেবেছে ফোনে বলার থেকে কাছে বসায়ে বোঝালেই রোদ্র বুঝবে। তবে কিছুতেই ভাইয়ে ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ লাগতে দেবো নাহ অন্তত আমি বেঁচে থাকতে। শাহানারার এমন ভাবনার মাঝেই সমুদ্র দরজায় নক দিলো। অনুমতি পেয়ে সমুদ্র রুমে এসে মায়ের পায়ের কাছে বসে বলল,

কালকে রোদ্র আসবে আমার সাথে তুমিও যাবে তো এয়ারপোর্টে?

শাহানারা সমুদ্রের দিকে তাকালো ছেলেটা কার মতো হয়েছে সে এটা ভেবেই চিন্তিত, তবে কিছুটা বাবার ধাতও পেয়েছে। সেই ছোটো বেলা থেকেই নিজেকেই নিজের বন্ধু বানিয়েছে রোদ্রকে জয় কে শাসন করেছে ঠিকই তবে তার আড়ালে ভালোবাসা দিতে কার্পণ্য করেনি। সমুদ্র যদি কোনো ভাবে জানতেও পারে রোদ্র শশীকে চাই তাহলে বিনা প্রশ্নে নিজের ভাইয়ের হাতে ওর ভালোবাসাকে তুলে দেবে কিন্তু শশী? মেয়েটা যে সমুদ্রকে বড্ড চাই ও কখনোই রোদ্রের সাথে ভালো থাকবে নাহ। নাহ আমাকে শক্ত হতে হবে রোদ্রকে বোঝাতে হবে আমি জানি আমার রোদ্র বুঝবে।

কি হলো মা কোথায় হারিয়ে গেলে।

হ্যাঁ শুনেছি, তুই আর জয় যাস আমি আর যাবো নাহ শরীলটা ভালো লাগছে নাহ।

আরো কিছুক্ষণ মায়ের সাথে কথা বলে উঠে দাঁড়ালো, বেরিয়ে যাওয়ার আগে পিছন ফিরে শাহানারার দিকে তাকিয়ে বলল, তাহলে রোদ্র আসলেই কথাটা বলো আমি আর বেশি দেরি করতে চাই নাহ।

,,,,,,,,,,,,

কি হলো রোদ্র ভাইয়া আপনি আমাকে এখন ছাঁদে নিয়ে আসলেন কেনো? আপনার ভাই যদি জানতে পারে তাহলে আমাদের দুটোকেই এই ছাঁদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে।

শশীর কথাশুনে রোদ্র হাসলো তবে কিছু বলল নাহ,রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে আছে। শশী রোদ্রের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল, আরে কোথায় হারিয়ে গেলেন আর আপনি এতোদূর থেকে জার্নি করে এসেছেন চলুন নিচে যায়।

একটু চুপ করে দাঁড়াও তো এতো ছটপফ করো কেনো? তোমাকে আমার একটা কথা বলার আছে। এতোদিন অপেক্ষা করেছি আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি নাহ, কথাটা তোমাকে না বলা অবধি মোটেও শান্তি পাচ্ছি নাহ। শেষের কথাটা আস্তে আস্তে বলল।

কি বলবেন বলেন তারপর আমিও তো বলবো।

রোদ্র শশীর সামনে এসে দাঁড়ালো হাতের মুঠোয় কিছু রাখা আছে। কেবলি রোদ্র কিছু বলবে তখনি শশী সামনে থেকে সরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বেশ উচ্ছাসিত গলায় বলল, রোদ্র ভাইয়া ওই দেখুন তারা ছুটছে শুনেছি এই সময় কিছু চাইলে নাকি তার সেই চাওয়া আল্লাহ পূরণ করে। আসুন আসুন আমার সাথে চোখ বন্ধ করে নিজের জন্য কিছু চেয়ে নিন।

চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২৪
,
তোরা দুজনে এই সময় ছাঁদে কি করছিস?

শশী আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিজের মনে বিরবির করছিলো। আর রোদ্র শশীর পিছনে দাঁড়িয়ে ওকেই দেখছিলো ভেবেছে শশী পিছনে ফিরলেই হাঁটু গেঁরে বসে ওকে মনের সব জমানো কথাগুলো বলবে। কিন্তু তার আগেই ছাঁদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সমুদ্র কথাটা বলল। সমুদ্রের গলা শুনে রোদ্র সোজা হয়ে দাঁড়ালো শশীও চমকে পিছনে ফিরে তাকিয়ে সমুদ্র কে দেখে ভয়ে গুটিশুটি হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে দুজনকে দেখছে, তবে মনে মনে কি ভাবছে সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে নাহ। ওটা সমুদ্রই ভালো জানে, এই সময়ে সমুদ্র কে ছাঁদে দেখে রোদ্র বেশ বিরক্ত হলো বিরবির করে বলল, ধূর এই ভাইয়া টাও না আসার আর সময় পেলো নাহ। নিজে বিয়েতো দূর প্রেমতো করলোই নাহ এখন আমার প্রেমের মাঝে এসেও বাঁধা দিচ্ছে।

কি ব্যাপার কথা বলছিস না কেনো?

আসলে ভাইয়া হয়েছে কি এতোদিন পর বাড়িতে আসলাম শশীর সাথে দেখা হলো তাই এমনি কথা বলার জন্য এখানে আসা এই আর কি আমরা তো নিচেই নেমে যাচ্ছিলাম কিন্তু শশী আকাশে কি তারা নাকি দৌড়াতে মানে ছুটতে দেখেছে তাই কিসব করছে। আমরা এই নিচে নেমে যাবো, এই শশী যাও নিচে যাও এতো রাতে ছাঁদে কি হ্যাঁ? জানো নাহ ছাঁদে জ্বীন ভূত থাকে মেয়েদের দেখলে তুলে নিয়ে যায়। এইতো ভাইয়া আমি ওকে বকে দিয়েছি ও এখনি চলে যাবে।

রোদ্র এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে কেবলা হেসে সমুদ্রের দিকে তাকালো, ওদিকে শশী চোখ বড় বড় করে রোদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। একি মিথ্যাবাদী রে নিজেই আমাকে কি যেনো বলবে এটা বলে ছাঁদে নিয়ে এলো আর এখন নিজের ভাইয়ের সামনে পুরাই পাল্টি খেয়ে গেলো। মনে মনে কথাগুলো বলে রেগে রোদ্রের দিকে তাকালো, দেখলো রোদ্র করুন মুখ করে আগে থেকেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

রোদ্র নিচে যা তুই মা ডাকছে।

আচ্ছা ঠিক আছে, শশী চলো।

না তুই যা আমার শশীর সাথে কথা আছে।

সমুদ্র কথাটা বলতেই শশী ভয়ে একবার রোদ্রের দিকে তাকিয়ে আবার সমুদ্রের দিকে তাকালো। রোদ্রও শশীর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকালো কিন্তু বড় ভাই এর কথার পিঠে আর কিছু বলতে পারলো নাহ। অগত্যা মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে নিচে চলে গেলো। রোদ্র যাওয়ার পর সমুদ্র হেঁটে রেলিং এর কাছে গেলো, অতঃপর আকাশের চাঁদের দিকে একবার তাকিয়ে আবার শশীর দিকে তাকালো শশী এখনো সেই এক জায়গায় খাম্বার মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আমার কাছে এসো।

গম্ভীর স্বরে কথাটা বলে আবারও সামনের দিকে তাকালো, সমুদ্রের কথা শুনে কিছুটা সময় নিয়েই শশী এক পা দু পা করে আস্তে আস্তে সমুদ্রের পাশে গিয়ে দাড়ালো। তবে তাত্ক্ষণিক কেউ কোনো কথা বলল নাহ বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সমুদ্র সামনের দিকে তাকিয়েই বলল, তা কি চাইলে?

খুব করে চাওয়া জিনিস কাউকে বলতে হয় নাহ তাহলে সেটা আর পাওয়া যায় নাহ।

তাই নাকি এসব উদ্ভট কথা কোথা থেকে শিখেছো? এসব সত্যি নাহ এখন বলো কি চাইলে।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী পাশ ফিরে সমুদ্রের দিকে তাকালো তারপর মুচকি হেসে হাঁটু মুড়ে বসে সমুদ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আপনার ওই শক্তপোক্ত শুকনো খাঁ খাঁ করা মরুভূমির মতো বুকে এক পশলা শান্তির বৃষ্টি হতে চেয়েছি, আপনার মনের আকাশের চাঁদ হয়ে জ্বলজ্বল করতে চেয়েছি। সমুদ্রের মতো উত্তাল অশান্ত নিয়ন্ত্রণহীন আপনার একমাত্র শান্তির কারণ হতে চেয়েছি। আপনার বুকের বাঁ পাশের শক্ত চামড়া ভেদ করে ভিতরে যে এক টুকরো নরম হৃদপিণ্ড আছে সেখানের একমাত্র মালিক হতে চেয়েছি। অতঃপর সব শেষে সত্যিসত্যিই যদি পূর্ণজন্ম বলে কোনো কিছু থেকে থাকে তাহলে আমি সেই জন্মেও আপনার অর্ধাঙ্গীনি রূপে এই ধরনীতে আসতে চেয়েছি আপনি কি অনুমতি দিবেন?

শশীর কথাশুনে সমুদ্র অবাক হয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে আছে। অতঃপর শশীর হাত ধরে ওকে তুলে দাঁড় করিয়ে সমুদ্র বুকে নিজের দু হাত গুঁজে বলল, কাল সকালে তৈরি থেকো রোদ্র তোমাকে হিজলতলী দিয়ে আসবে। আর এখন নিচে যাও রাত অনেক হয়েছে এতো রাত করে বাইরে থাকা ঠিক নয়।

সমুদ্রের কথা শুনে শশী পুরাই ভেবাচেকা খেয়ে গেলো ও বলল কি আর সমুদ্র করছে কি। তবে সমুদ্রের এহেন কাজে ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেলো তাহলে কি সমুদ্র ওকে চাই নাহ? এই জন্যই কি সমুদ্র ওকে পাঠিয়ে দিতে চাইছে। শশী কিছু বলতে চাইছে কিন্তু সমুদ্র হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে বলল, আর কোনো কথা শুনতে চাইছি নাহ চুপচাপ নিচে যাও।

কাজল বিহীন টানা টানা দুটো আঁখি বেঁয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ল তবে সেটা সমুদ্রের চোখে পড়েছে কিনা জানা নেই শশীর কারণ সেতো মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। শশী বেশ কিছুক্ষণ সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে চলে গেলো। যাওয়ার আগে নিজে নিজেকে বলল আর কখনো ভালোবাসার দাবী নিয়ে এই পাষাণ লোকের সামনে আসবে নাহ। ওনি আসলে ভালোবাসা কি সেটা জানে নাহ কাউকে ভালোবাসতেও ওনি জানেনা শুধু কষ্ট দিতে জানে। ওনার থেকে কিছু আশা করাটাই বোকামী আসলে আমিই পাগল, সিঁড়িতে পা দেওয়ার আগে শশী শেষ বারের মতো ঘুরে পিছনে তাকালো কিন্তু না সেই হৃদয়হীন লোকটা আগের মতোই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। এক বারের জন্যও পিছন ঘুরে তাকায়নি, অতঃপর সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নেমে গেলো। শশী অদৃশ্য হতেই সমুদ্র ঘুরে তাকালো রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দু হাত বুকে গুঁজে শশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

যতটা ভেবেছিলাম তুমিতো দেখি তার থেকেও এগিয়ে আমিই দেখছি ছোটো বলে পিছিয়ে যাচ্ছিলাম। তুমিতো দেখি বেশ বড় হয়ে গেছো একদম বাসর করার মতো।
,,,,,,,,,,,
ডয়িং রুমে ব্যাগ হাতে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে শশী, এখন শুধু রোদ্র রেডি হয়ে নামলেই ওরা হিজলতলীর উদ্দেশ্যে রওনা হবে৷ শশী একবার মাথা উঁচু করে উপরের দিকে তাকালো কিন্তু সমুদ্রের কোনো নামগন্ধ ও নেই পরে শাহানারার থেকে জানতে পারলো সমুদ্র সকাল সকাল কোথাও একটা গিয়েছে। অগত্যা একরাশ হতাশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো, শাহানারা পাশ থেকে নানা রকম কথা বলছে কিন্তু শশীর সেদিকে কোনো মন নেই ও শুধু রাতের কথা ভাবছে তাহলে কি সমুদ্র ওকে চাই নাহ? ওকে পছন্দ করে নাহ এই জন্যই কি এভাবে ফিরিয়ে দিলো। শশীর ভাবনার মাঝেই রোদ্র নিচে নেমে এসে শশীর পাশে দাঁড়িয়ে বলল, তাহলে যাওয়া যাক?

রোদ্রের কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো শশীর সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা বেরিয়ে পড়ল। রোদ্র একমনে গাড়ি চালাচ্ছে ওর পাশে শশী চুপ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর কিছু একটা মনে হতেই রোদ্র আড়চোখে শশীর দিকে তাকায়ে বলল, তুমি না আমাকে কিছু বলতে চেয়েছিলে।

তাতো চেয়েছিলাম কিন্তু রাতে আপনার ভাই যেটা করলো এরপর তো তার থেকে কিছু আশা করাটাই বোকামী। কথাটা মনে মনে বলল শশী, এভাবে চুপ থাকায় রোদ্র আবারও শশীকে কথাটা বলল এবার শশী অন্যদিকে মুখ করেই বলল, নাহ কিছু নাহ এমনি।

শশীর মনের মধ্যে ঠিক কি চলছে সেটা জানার জন্য রোদ্র কথায় কথায় শশীকে বলল, আচ্ছা শশী তুমি কি কাউকে পছন্দ করো? না মানে আমি বলতে চাইছি যে তোমার কি কাউকে ভালো লাগে? যেহেতু আমরা বন্ধু সেহেতু আমাকে বলতেই পারো এইটুকু অধিকার অন্তত আমার আছে নাকি?

রোদ্রের কথায় শশী তাত্ক্ষণিকভাবে কিছু বলল না রাতের ঘটনায় এমনিতেই মনটা খারাপ তার উপর রোদ্র এভাবে প্রশ্ন করায় ভিতরে ভিতরে বেশ বিরক্ত হলো শশী। তবে মুখে সেটা প্রকাশ করলো নাহ, বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলল, একজন কে অনেক ভালো লাগে কিন্তু আমার মনে হয় সে আমাকে পছন্দ করে নাহ। আমার এটা মনে হয় তবে তার মনে কি চলছে সেটা ওনিই জানেন। বিরবির করে কথাটা বলল শশী রোদ্র শশীর এমন কথা শুনতেই আচমকা গাড়ি ব্রেক করে অবাক হয়ে শশীর দিকে তাকালো, এভাবে ব্রেক করায় শশী সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে গেলো আতংকিত চোখে রোদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, কি হয়েছে?

হুম, না মানে সামনে ভাইয়া।

কথাটা শুনতেই শশী সামনের দিকে তাকালো দেখলো সমুদ্র তার কালো জীপটার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেনো কোনো সিনেমার হিরো এদিকে আমার নরম মনটা ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে ওনি সেজেগুজে ঘুরে বেড়াচ্ছে নিষ্ঠুর লোক একটা। শশী মনে মনে কথাটা বলতেই রোদ্র সিট বেল খুলে শশীকে বসতে বলে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। তবে রোদ্র আর সমুদ্রের মাঝে কি কথা হলো সেটা শশীর অজানা, খানিকক্ষণ পর রোদ্র সমুদ্রের জীপটাতে চড়ে বসল অতঃপর গাড়িটা নিয়ে বাড়ির দিকে চলে গেলো। রোদ্র চলে যেতেই সমুদ্র এসে শশীর পাশে বসে পড়লো, তবে শশীর মনে হাজার খানিক প্রশ্ন থাকলেও সেদিকে পাত্তা দিলো নাহ। সমুদ্র কে পুরোপুরি এড়িয়ে গেলো, সমুদ্র শশীর দিকে তাকিয়ে নিজের সিট বেল পড়ে নিলো কিন্তু তবুও শশী সমুদ্রের দিকে তাকালো নাহ মুখ ঘুরিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। সমুদ্র বেশকিছু সময় শশীর দিকে তাকিয়ে থেকে চটাস করে শশীর ডান গালে টাইট একটা চুমু বসায়ে দিলো। নরম গালে সমুদ্রের ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই শশী তড়িৎ গতিতে সমুদ্রের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো, কিন্তু সমুদ্রের কোনো হেলেদুল নেই সে তারমতো গাড়ি স্টার্ট দিতে ব্যাস্ত। শশী রেগে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, এটা কি হলো?

গাড়ি চালানোর ফাঁকে সমুদ্র শশীর দিকে তাকিয়ে বলল, কোনটা কি হলো?

একটু আগে আপনি ওটা কি করলেন?

একটু আগে আমিতো অনেক কিছুই করেছি তবে তুমি কোনটার কথা জিগাস করছো বুঝতে পারছি নাহ বোঝায় বলো।

কি ইতর লোক সব কিছু বোঝেও এখন না বোঝার ভান করে নাদান বাচ্চা সাজতেছে৷ মনে মনে কথাটা বলে শশী দাঁতে দাঁত চেপে বলল, আপনি আমার গালে ইয়ে খেলেন কেনো?

ইয়ে আবার কি? ওহ আচ্ছা তুমি চুমু খাওয়ার কথা বলছো? কিন্তু এখানে আমার দোষ কোথায় তুমিই তো চুমু খেতে বললে।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী অবাক হয়ে সমুদ্রের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল, আমি বলেছি? কি মিথ্যা কথা আমি আবার কখন আপনাকে এটা করতে বললাম। গাড়িতে উঠর পর থেকে তো আমি আপনার সাথে কথায় বলেনি তাহলে।

ওইতো কথা বলোনি কিন্তু ঠিকি আমাকে চুমু খাওয়ার ইশারা দিয়েছো। আমিতো গাড়িতে উঠে দেখলাম আমার দিকে তোমার ডান গাল বাড়িয়ে দিয়ে আছো, তো আমিও ভাবলাম ছোটো মানুষ হয়ত মুখে বলতে পারছো নাহ লজ্জা পাচ্ছো তাই ইশারা করছো এই জন্যই তো আমি চুমুটা খেলাম। আমি আবার বড্ড পরোপকারী, মায়ের থেকে শোনোনি? এই জন্য কেউ কিছু চাইলে তাকে ফেরাতে পারিনা।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী আকাশ থেকে পড়ল এই লোকটাকে ও যতটা ভালো ভেবেছিলো এ তার এক কোণাও নাহ। উপরে ভদ্রলোক সেজে থাকে অথচ ভিতরে ভিতরে মহা খারাপ, আবার কিছু বললেও উল্টো পাল্টা যুক্তি দিয়ে বুঝায়ে দেয়। কথাগুলো ভেবে শশী রাগে রাগে আড়চোখে সমুদ্রের দিকে তাকালো তবে এবার আর জানালার দিকে মুখ দিয়ে রাখেনি একদম সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে, আর বার বার শুধু সমুদ্রের দিকে তাকাচ্ছে লোকটাকে কোনো বিশ্বাস নেই একবার গালে চুমু খায়ে কিসব যুক্তি দেখালো। না জানি আবার খপ করে ঠোঁটে চুমু দিয়ে আবার কি যুক্তি দেখায় এই জন্য সাবধান থাকায় ভালো।
,,,,,,,,,,,,,,

আম্মা আমিতো আপনার কথামতোই কাজ করলাম তারপরেও ওই সমুদ্র আমারে লোক দিয়া এমনে পিটালো আর আপনি এখনো ওকে কিছু করলেন নাহ।

ও গ্রামে না গিয়েই তোমার হাত পা ভেঙ্গেছে আর আজকে তো ওনিজেই গ্রামেই যাচ্ছে তাহলে ভাবো তোমার কি হতে পারে। নিজের জীবন প্রিয় হলে যলদি লুকিয়ে পড়ো আমি না বলা পযন্ত ওর সামনে পড়ো নাহ।

কন কি আম্মা ওই সমুদ্র আজকে আমাদের গ্রামে আসতেছে? হায় হায় আমারে আগে বলবেন নাহ। কথাটা বলেই শাহিন ফোনটা কেটে দিয়ে বাঁ হাতে নিজের লুঙ্গিটা ধরে খোঁড়াতে খোঁড়াতে নিজের বাড়ির দিকে চলে গেলো, আপাতত আজকে আর বাড়ি থেকে বেরোনো যাবে নাহ খবর নিয়ে দেখতে হবে সমুদ্র কতদিন হিজলতলী থাকে সেই কয়দিন মোটেও বাইরে বার হওয়া যাবে নাহ।

ফুপি তুমি এখনো চুপ করে থাকবে ওই সমুদ্র একের পর এক আমাদের ক্ষতি করেই চলছে আর তুমি চুপ করে বসে আছো। কিছু বললেই বলো সময় আসুক আরে আর কবে সময় আসবে তুমি কিসের জন্য অপেক্ষা করছো বলোত? খাগড়াছড়ি তে আমাদের লোকগুলো কে কুকুরের মতো মারলো সাথে ওতোটাকার মালগুলো সব আটক করলো আবার এখানে এসেও একের পর এক ক্ষতি করেই চলেছে এর পরেও তুমি এভাবে হাত পা গুঁটিয়ে বসে থাকবে?

সমুদ কে কতদিন ধরে চিনো তুমি? কতটুকু জানো ওকে? ছোটো বেলা থেকে চিনি আমি ওকে ও কোনো কাজ এমনি এমনি করে নাহ ওর প্রতিটা কাজের পিছনে কোনো না কোনো কারণ থাকে। তুমিতো নিজেই তার প্রমাণ পেলে আমাকে না জানিয়ে ওই মেয়েটার পিছনে লেগেছিলে, তোমার বাবাকে যেতে না দিয়ে নিজে গেটস হয়ে গেলে ওর কলেজে। কি ভেবেছো সমুদ্র এসব কিছুই জানে নাহ? আর আজকে বোকার মতো কি করতে যাচ্ছিলে রোদ্রকে আক্রমণ করে শশীর কাছে ভালো হতে চেয়েছিলে কিন্তু পেরেছো তা? ঠিকিতো মাঝ রাস্তায় সমুদ্র রোদ্রকে পাঠিয়ে নিজে গেলো, ও চুপ করে আছে বলে এটা ওর দুবর্লতা ভেবো নাহ। পনেরো বছরের একটা ছেলে নিজের জীবন বাজি রেখে যখন তার কাছের মানুষ কে বাঁচিয়েছিলো আমি তখনি জানি ওকে হালকা ভাবে নেওয়া মোটেও ভালো হবে নাহ। ও জানতো যে আমি অভীক এর ক্ষতি করবো সেই জন্য আমাকে পছন্দ করতো নাহ, মিশতে দিতো নাহ আমার সাথে অভীককে কিন্তু অভীক তো বোকা ছিলো সেই জন্যই বেঘোরে প্রাণটা হারালো। ভাবো ছোটো বেলাতেই যেই ছেলেটা এতোটা সাহসী ছিলো তাহলে এখন সে কি হয়েছে। তোমার বয়স অল্প রক্ত গরম অল্পতেই ধৈর্য হারা হয়ে পড়ো এই জন্য সামনে আগাতে পারো নাহ। বুদ্ধি খাটিয়ে ধৈর্য ধরে ছিলাম বলেই আজকে এই পযন্ত এসেও এখনো টিকে আছি। ধৈর্য ধরো সঠিক সময় সঠিক চালটা ঠিক দেবো বরাবরের মতো জিতটা আমারি হবে শুধু অপেক্ষা করো। আর হ্যাঁ আমাকে না জানিয়ে আর কিছুই করবে নাহ তুমি, এসব ভুলভাল কাজ না করে নিজের কাজে মনযোগী হও।

কথাগুলো বলে মালবিকা নিজের ফোনটা বের করে কাউকে কল দিতে দিতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। জোসেফ রেগে একটা লাত্থি দিয়ে পাশের চেয়ারটা ফেলে দিলো অতঃপর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল, জোসেফ মির্জা এতো অপেক্ষা করতে পারবে নাহ ওই সমুদ্র কে তো আমি দেখে নেবো ও আমার অনেক ক্ষতি করেছ এবার ওর পালা। সুস্থ শরীলে তো হিজলতলী গিয়েছে তবে সুস্থ ভাবেই ফিরে আসতে পারে কিনা এটাই দেখার বিষয়।

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-২২

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২২
,
এভাবে আমার ঘরে উঁকি মারছো কেনো?

এইরে ধরা পড়ে গেলাম এই জন্যই হয়ত বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। ওনাকে এই সময়ই আসতে হলো, সেই বিকেলের পর থেকে আর ওনার সামনে পড়িনি ওই ঘটনার পর থেকে কোন মুখে ওনার সামনে দাঁড়াবো। ওনি যতদিন বাড়ি থাকতো নাহ দিনের বেশিরভাগ সময়ই ওনার ঘরে শুয়ে বসে কাটাতাম। সেই সময়ই হয়ত ভুল করে আমার বইটা ফেলে রেখে গেছি সেটা নেওয়ার জন্যই আসা। তবে ওনি রুমে আছে কিনা সেটা জানি নাহ এই জন্য কেবলি একটু উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলাম আর তখনি ওনি এভাবে চলে আসবে ভাবিনি এখন কি বলবো ওনাকে? থাক কোনো ভাবেই নাভার্স হওয়া যাবে নাহ শশী ওনাকে বুঝতে দিবি নাহ যে তুই ওনাকে দেখে ভয়ে লজ্জায় মরে যাচ্ছিস। যত ভয় লজ্জা সব ভিতরে চেপেচুপে রাখ আপাতত এখন একটু উপর উপর দেখা যে তুই ভীষণ সাহসী। মনে মনে কথাগুলো বলে একবুক সাহস নিয়ে পিছন ঘুরে ওনার দিকে তাকালাম, ব্যাস বহু কষ্টে জমানো সাহসগুলো ফুঁস করে উড়ে গেল এখন কি হবে? সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে শশীর দিকে তাকিয়ে আছে, পেশী বহুল হাত দুটো পিছনে রাখা।শশীকে এভাবে চোরের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কয়েক পা এগিয়ে আসলো ততক্ষণে শশী দরজার সাথে গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে।

এই মেয়ে মতলব কি তোমার এভাবে আমার রুমের বাইরে কি করছো?

আমার আবার কি মতলব থাকবে আমিতো শুধু আমার বইটা নিতে আসছিলাম। আপনি রুমে আছেন কিনা সেটাই দেখছিলাম। আমতা আমতা করে এক নাগাড়ে কথাগুলো বলল শশী, বলা শেষে একবার চোখ তুলে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে পুনরায় চোখ ফিরিয়ে নিলো। সমুদ্র বেশ কিছুক্ষণ শশীর দিকে তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। সাথে সাথে শশী নিজের বুকে হাত রেখে লম্বা একটা শ্বাস নিলো, এইসব পুলিশ আর্মিদের সামনে পরলে নিজেকে কেমন চোর চোর মনে হয়। আর ওনিও বা কেমন এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো যেনো আমি বিশাল বড় টেরোরিস্ট আর ওনার ঘরে বোমা ফিট করতে আসছি,আজব লোক কখনো কি একটু নরমাল ভাবে তাকানো যায় নাহ।

দরজার বাইরে একা একা বকবক না করে ভিতরে এসে কি নেওয়ার সেটা নিয়ে জলদি বের হও আমি ঘুমাবো।

ভিতর থেকে সমুদ্রের গলার আওয়াজ পেয়ে খানিক কেঁপে উঠল শশী, পরক্ষণেই বুকে থুথু দিয়ে যেই রুমে ঢুকতে যাবে তখনি ভাবলো এভাবে এতোরাতে একটা ছেলের রুমে যাবে বিষয় টা কেমন দেখায় নাহ? তারচেয়ে বরং বইটা কাল সকালেই নিয়ে যাবো হ্যাঁ তাই ভালো হবে এখন মানে মানে কেটে পড়ি। কথাটা ভেবেই শশী কোনো কথা না বলে আস্তে করে নিজের রুমে চলে গেলো। সমুদ্র বেশ কিছুক্ষণ শশীর কোনো সাড়া না পেয়ে দরজার কাছে এসে দেখলো শশী নেই বাইরে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে দরজা বন্ধ করে দিল। কেবলি বিছানায় উঠে শরীলটা এলিয়ে দিয়েছে, বেশিরভাগ সময় বনে জঙ্গলে শক্ত মাটির উপর শুয়ে শুয়ে নরম বিছানা পেয়ে দু-চোখে খুব সহজেই ঘুম চলে এসেছে। চোখদুটো কেবলি এক করেছে তখনি বিছানা কাঁপিয়ে ফোনটা বেজে উঠল ওমনি সটান করে চোখ খুলে গেলো। হাজার অনিচ্ছা সত্বেও পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে সামনে ধরতেই রাগে পুরো মুখ লাল হয়ে গেলো, তবুও কোনো রকমে নিজেকে কন্ট্রোল করে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ বিদ্রুপ করে বলল,

তুমি যে এতোটা ভিতু সেটাতো আমি জানতাম না সমুদ্র, ওই ছোট্ট একটা মেয়ের জন্য এতোবড় একটা কান্ড ঘটালে? শেষে কিনা গুন্ডামী শুরু করলে, কিন্তু তারপরেও তো লুকিয়ে রাখতে পারলে না ঠিক জেনে গেলাম। কত চালাক তুমি সমুদ্র নিজে বিয়ে করবে না বলে এতো কান্ড করে ওখান থেকে মেয়েটাকে কৌশলে বের করে আনলে এখন তো ঠিকি বিয়ে করছো।

হ্যাঁ খুব শীঘ্রই কার্ড পেয়ে যাবেন আপনাদের সপরিবারে নিমন্ত্রণ।

সমুদ্রের কথাশুনে ও পাশের ব্যাক্তি বাঁকা হেসে বলল, সে আর বলতে যতই হোক আমাদের কত কাছের সম্পর্ক। আচ্ছা বাদ দাও তা মেয়েটাকে কি সত্যিই বিয়ে করবে নাকি এর পিছনেও তোমার অন্য কোনো প্লান আছে৷ কি বলোতো তুমি বিয়ে করছো এটা ঠিক হজম হচ্ছে না, শুধু শুধু নিজের জীবনের সাথে মেয়েটাকে জড়ায়ে মেয়েটাকে বিপদে ফেলতে চাইছো কেনো?

ভুলেও ওদিকে নজর দেওয়ার চেষ্টাও করবেন নাহ, আপনি খুব ভালো করেই জানেন সমুদ্র হুমকি দেয় নাহ সোজা কাজ করে দেখায় তাই বলছি নিজের ভাইয়ের ছেলেকে সাবধান করুন নয়ত অকালে প্রাণটা হারাবে।

কথাটা বলেই সমুদ্র ফোন কেটে দিলো, এভাবে মুখের উপর ফোন কেটে দেওয়াই মালবিকা রেগে হাতের ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, অনেক হয়েছে আর নাহ এবার তোমাকে দেখাবো এই মালবিকা মির্জা কি জিনিস।

ফোনটা কপালে ঠেকিয়ে ভাবনায় মগ্ন ছিলো সমুদ্র, সবটা কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে যতই চেষ্টা করছি সবটা ঠিক করার কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে সবটা ঘেটে যাচ্ছে। এরপর থেকে প্রতিটা পদক্ষেপ ভেবে চিন্তে ফেলতে হবে, এসব ভাবনার মাঝেই হাতের ফোনটা আবার বেজে উঠল সমুদ্র ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে ঠিক করে ফোন রিসিভ করে কানে ধরল।

স্যার এটাকে কি করবো বলে তো দিলেন নাহ।

তোমার সাথে তোমার বাসায় নিয়ে যাও। কথাটা বলে সমুদ্র ফোন কেটে দিলো অতঃপর সোজা বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল, এখন একটা লম্বা ঘুম ভীষণ প্রয়োজন। এদিকে ইমরান পড়েছে বিবাকে কান থেকে ফোনটা সরিয়ে পিছনে ঘুরে শাহিন এর দিকে তাকালো। ঙ্গান হারিয়ে নিচে পড়ে আছে কয়েকটা ঘুষিতেই যে এভাবে অঙ্গান হয়ে যাবে ভাবিনি এখনো তো হাত পা কিছুই ভাঙ্গা হলো নাহ, স্যারতো বলেছিলো হাত আর পা ভেঙ্গে বসায় রাখতে কিন্তু এটাতো পুরাই হ্যাংলা আমার হাতের মার খেয়েই এই অবস্থা না জানি স্যারের হাতে খাইলে কি হতো। বেচারার কপাল ভালো স্যার নিজে না এসে আমাকে পাঠিয়েছে।
,,,,,,,,,
মাথা ধরে সোফায় চুপচাপ বসে আছে শাহানারা, সারাটা রাত ঘুম হয়নি মাথা বেথ্যায় ফেঁটে যাচ্ছে এই বয়সে এতো চিন্তা আর নিতে পারছে নাহ। সমুদ্র এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি শশী রান্নাঘরে শাহানারার জন্য চা বানাচ্ছ। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ডয়িং রুমের দিকে আসতেই শাহানারা শশীর দিকে তাকালো এই মিষ্টি মুখের দিকে তাকালে কি রাগ করা যায়? সমুদ্র যদি প্রথমেই রাজি হয়ে যেতো তাহলে এখন এই অবস্থায় পড়তে হতো নাহ, তখন এতো করে বললাম কিছুতেই রাজি হলো নাহ। এমন সময় রাজি হলো যখন আমি রোদ্রকে কথা দিয়ে ফেলেছি, না না আমাকেই কিছু একটা ভাবতে হবে। শশী চায়ের কাপটা শাহানারার হাতে দিয়ে যেই চলে যাবে ওমনি শাহানারা শশীর ডান হাতটা চেপে ধরে বলল।

আমার পাশে একটু বসতো তোর সাথে কথা আছে।

শশী মুচকি হেসে শাহানারার পাশে গিয়ে বসলো, ওনি চায়ের কাপটা টি টেবিলে রেখে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে দুহাতের মুঠোয় শশীর হাতটা রেখে বলল, আমায় সত্যি করে একটা কথা বলবি আজকে?

কি কথা আন্টি।

তুই রোদ্রকে পছন্দ করিস?

হ্যাঁ করবো না কেনো আমি ওনাকে অনেক পছন্দ করি।

বেশ ভয়ে ভয়েই কথাটা জিগাস করেছিলো শাহানারা পাছে শশী যদি না বলে তখন তো তার ছেলেটার মন ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু শশীর মুখ থেকে কাঙ্খিত উত্তরটা পেয়ে মনে মনে বেশ শান্তি পেলো।তবে সেই শান্তিটাও বেশিক্ষণ স্হায়ী হলো নাহ শশীর পরের কথাগুলো শুনে। রোদ্র ভাইয়া অনেক ভালো ওনি আমাকে অনেক হাসায়, একদম বন্ধুর মতো। আমার যখন মন খারাপ থাকে আমি ওনার সাথে কথা বলি আর এক নিমেষে আমার মন ভালো হয়ে যায়৷ আমরা অনেক ভালো বন্ধু আন্টি যদিও ওনি আমার থেকে বয়সে অনেক বড় তাতে কি হয়েছে বন্ধুত্বে কোনো বড় ছোটো নেই এটা ওনিই আমাকে বলেছে।

শশীর সরল মনের কথাগুলো শুনে ভিতরে ভিতরে অনেকটাই দমে গেলেন শাহানারা। আমার ছেলেটা যেই সম্পর্কের নাম দিয়েছে ভালোবাসা মেয়েটা তো সেই সম্পর্কটাকে বন্ধুত্বের বাঁধনে বেঁধে ফেলেছে। শাহানারা বেশ বিচক্ষণ মহিলা ওনি ভিতরে ভিতরে ঘাবড়ে গেলেও মুখে তা প্রকাশ করলেন নাহ। শুকনো একটা হাসি দিয়ে শশীর মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁপা গলায় বলল, সমুদ্র কে ভালোবাসিস?

শাহানারার মুখ থেকে এমন কথা শশী মোটেও আশা করেনি, কথাটা শুনতেই লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো এখন ও কীভাবে বলবে, আপনার ওই রাগী কঠোর ছেলেটাকে ভিতরে ভিতরে মন দিয়ে বসে আছি। ভয় থেকেও যে ভালোবাসা হয় সেটা ওনার সাথে পরিচয় না হলে বুঝতেই পারতাম নাহ। শশীর লজ্জমাখা মুখ দেখেই বুঝে গেলেন শাহনারা জল বেশ অনেকটাই গড়িয়ে গিয়েছে এখন তার একটাই কাজ আর সেটা হলো রোদ্রকে বোঝানো নয়ত ছেলেটা অনেক বেশি কষ্ট পাবে।
,,,,,,,,,,
ঘড়ির কাঁটা নয়টার ঘরে গিয়ে থেমেছে শশী রেডি হয়ে ক্লাসের জন্য বের হবে কিন্তু বইতো সমুদ্রের ঘরে। এখন মনে হচ্ছে রাতের বেলা গিয়ে বইটা আনলেই ভালো হতো কে জানতো যে ওনি এতো বেলা অবধি পড়ে পড়ে ঘুমাবে। সমুদ্রের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে শশী বেশ কয়েকবার নক করেছে তবে কোনো সাড়া শব্দ নেই। শাহানারা কে যে বলবে সেও জয়কে নিয়ে স্কুলে গিয়েছে আজকে ওর স্কুলে কি একটা কাজ আছে এই জন্য যেতে হয়েছে। জোরে জোরে তিনবার শ্বাস নিয়ে জোরে দরজায় হাত দিয়ে থাবা দিলো, বেশ কিছুক্ষন পর খট করে ভিতর থেকে দরজা খুলে গেলো। শশী এখনো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এখনো সমুদ্র বাইরে আসেনি হয়ত সিটকেনি টা খুলে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। শশী আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো কিন্তু নাহ কেউ আসলো নাহ ওদিকে ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। আর না পেরে শশী আলতো হাতে দরজা খুলে ভিতরে গেলো, ভিতরে যেতেই এসির ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগতেই ভিতরে কেমন শিরশির করে উঠল। বন্ধ জানালার উপর পর্দা ফেলা তবুও যা সূর্যের আলো আসছে এতে রুমের ভিতরের সবকিছু বেশ ভালো মতোই দেখা যাচ্ছে। এক পা দু পা করে ভিতরে গিয়ে খাটের দিকে চোখ পড়তেই শশী দেখলো সমুদ্র উদম শরীলে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে, কমড় অবধি কাঁথা নেওয়া। বেশিক্ষণ সেদিকে না তাকিয়ে চটপট করে টেবিলের উপর থেকে বইটা নিয়ে ঘুরে আসতেই সমুদ্রের পিঠের দিকে চোখ পড়ল। কাঁধের নিচে পিঠের এক পাশে একটা দাগ বেশ গভীর মনে হচ্ছে যেনো ঘা টা বেশ কয়েকদিন আগেই শুকিয়েছে। পুরো পিট জুড়ে এমন হালকা পাতলা ছোটো খাটো আরো বেশ দাগ আছে তবে এটা চোখে লাগার মতো। শশী যাবে না যাবে না করেও একপা একপা করে এগিয়ে গেলো কেবলি একটু ঝুঁকে দাগটা কিসের এটা দেখবে ওমনি সমুদ্র ঘুরে চিৎ হয়ে গেলো, আচমকা সমুদ্রের এহেন কাজে শশী ভয় পেয়ে পিছনে সরতে গিয়ে উল্টে পায়ে পা বেঁধে সমুদ্রের বুকের উপর হুরমুর করে পড়ে গেলো।
শশীর লম্বা বেণীর শেষ মাথার অল্প করে ছেড়ে রাখা চুলসহ পুরো বেণীটাই সমুদ্রের মুখের উপর পড়ল বাঁ হাতে বেণীটা মুখ থেকে সরিয়ে শশীর বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

ইমরান এর কাছে বউ বলে পরিচয় দিয়ে এখন সোজা বাসর করতে চলে আসলে? এতোটুকুও বাচ্চা একটা মেয়ে বাসর করার এতো ইচ্ছে? তা আমাকে সামলাতে পারবে তো নাকি শুরু করার আগেই অঙ্গান হয়ে যাবে।

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-২০+২১

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২০
,
অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে কিন্তু এখনো কারো বাড়ি যাওয়ার যেনো কোনো তাড়া নেই। কী সুন্দর মাঠের মাঝে গোল হয়ে বসে গল্প জুড়ে দিয়েছে, অথচ আর কিছুক্ষণ পরেই মাগরিবের আযান দিবে৷ মিলি বেশ করে ধরেছিলো ওদের সাথে আরো কিছুক্ষণ সময় কাটানোর জন্য তবে আমি না করে দিয়েছি। বর্তমানে কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, বাড়ির গাড়ি একটু পরেই চলে আসবে। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অধৈর্য হয়ে কখন যে ডান হতের আঙুল গুলো মুখের ভিতর চলে গেছে বুঝতেই পারিনি।

আপনাকে না তখন বললাম নখ কাঁমড়ানো ব্যাড ম্যার্নাস তবুও আপনি এভাবে বাচ্চাদের মতো নখ কাঁমড়াচ্ছেন? শরীল খারাপ করবে কিন্তু।

পিছন থেকে কথাগুলো বলতে বলতে লোকটি শশীর সামনে এসে দাঁড়ালো। শশী মুখ থেকে হাত নামিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে যে লোকটি কথাটা বলেছে সে আর কেউ না তাদের কলেজে আসা স্পেশাল গেস্ট। কিন্তু এই লোকটার ওর সাথে কি কাজ? এসব ভাবনার মাঝেই লোকটা আবার বলে উঠল, অনেকক্ষণ থেকেই দেখছি আপনি এখানে একা দাঁড়িয়ে আছেন কোনো সম্যসা? নাকি গাড়ি পাচ্ছেন নাহ। কিছু মনে না করলে আমি আপনাকে ড্রপ করে দিই?

লোকটার কথাশুনে শশী একটু হাসার চেষ্টা করে খুবি নম্র স্বরে বলল, না না তার কোনো প্রয়োজন নেই আমার গাড়ি এখনি চলে আসবে। আসলে আমিই আজকে একটু তাড়াতাড়ি কলেজ থেকে বের হয়ে গেছি এই জন্য। কথাগুলো বলে শশী পুনরায় তার বলা কথাগুলো মনে করল ও বোঝার চেষ্টা করছে লোকটির সাথে কোনো খারাপ ব্যাবহার সে করে ফেললো কি না। কারণ তিনি একজন মন্ত্রীর ছেলে তার সাথে কোনো রূপ খারাপ আচরণ করলে আমাকেই বিপদে পড়তে হবে। আর আমার বাবার এতো টাকা নেই যে এদের সাথে লড়বে আর তাছাড়া সমুদ্রের পরিবারের একটা সম্মান আছে আমি চাই নাহ আমার জন্য তাদের কোনো অসম্মান হয়। কথাগুলো ভেবে শশী আবার সামনের দিকে তাকালো নাহ তার গাড়ি এখনো আসছে নাহ, আজকে এতো দেরি কেনো হচ্ছে কে জানে। শশী কথা বলতে না চাইলেও তার পাশে দাঁড়ানো লোকটা বোধহয় ঠিক করেই নিয়েছে আজকে সে শশীর সাথে পরিচিত হয়েই ছাড়বে এই জন্য সে মিষ্টি হেসে বলল।

আচ্ছা আপনি যখন সাহায্য নিবেনই না তখন তো আর কিছু করার নেই। কি বলুন তো নেতা মানুষ তো এই জন্য সাধারণ জনগণ বিপদে পড়লে সেটা সবার আগে চোখে পড়ে৷ এই দেখুন এতোটা সময় ধরে আপনার সাথে কথা বলছি অথচ আপনাকে আমার পরিচয় টাই দিইনি, আমি জোসেফ মির্জা আপনি?

নামটা অচেনা লাগলেও শেষের পদবিটা ভীষণ রকম চেনা লাগল শশীর যেনো এই পদবী আরো একজনের সাথে মিলে যাচ্ছে। কিন্তু তার সাথে এর সম্পর্ক কি? আদেও কি তার সাথে এর কোনো সম্পর্ক আছে নাকি নিতান্তই মনের ভুল। হতে পারে তবে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সব কিছুই কি মনের ভুল? কথাগুলো বলে শশী নিজের নাম বলল।জোসেফ আরো কিছু জিগাস করার আগেই শশীর গাড়ি এসে গেলো তাই আর কিছু জিগাস করার সুযোগ পেলো নাহ। শশী গাড়িতে উঠতেই ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে চলে গেলো চলন্ত গাড়ির দিকে চেয়ে জোসেফ বাঁকা হেসে বলল,

তুমি ঠিকি বলেছিলে ফুপি শক্তি আর বুদ্ধির সাথে না পারলে দুর্বল জায়গায় আঘাত করতে আর আমি আপাতত সেটাই করছি। বাকিটা সময় হলেই বোঝা যাবে

কথাগুলো বলে হাতে থাকা সানগ্লাস টা চোখে পড়ে নিজের গাড়িতে গিয়ে উঠে বসল জোসেফ।
,,,,,,,,,
খুবি চিন্তিত মুখে নিজের বিছানায় বসে আছে জামশেদ মাস্টার আজকে তার বাড়ির ইজ্জত তার মেয়েকে নিয়ে সালিশ বসেছে এটা একজন বাবার জন্য অনেকটা লজ্জা আর খুবি কষ্টকর। সময় নিয়েছেন ওনি যা বলার বিকেলে বলবে কিন্তু বিকেলে তিনি কি বলবেন? এর কোনো উত্তর তার কাছে নেই। আর তিনি বেঁচে থাকতে কোনোদিনই ওই শাহিন এর সাথে মেয়ে বিয়ে দিবেন নাহ প্রয়োজনে মেয়েকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেবো তবুও নয়। এসব ভাবনার মাঝেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো এতে যেনো তিনি খুবি বিরক্ত হলেন চোখ বন্ধ অবস্থায় বিরক্তিকর গলায় বললেন, তোমাকে বলেছি নাহ বড় বউ আমাকে একটু একা থাকতে দেও। যাও তুমি আমি ঠিক আছি প্রয়োজন হলে তোমাকে ডেকে নিবো।

নিজের মতো কথাটা বলেই ওনি খাটের সাথে মাথাটা এলিয়ে দিলেন। তবে তার পঞ্চইন্দ্রিয় বলছে ঘরে প্রবেশ করা মানুষ টা মোটেও বাইরে যায়নি বরং সে ধপাধপ পা ফেলে আরো ভিতরে এসে তার পাশে দাঁড়িয়েছে। এবার জামশেদ মাস্টার বরই বিরক্ত হলেন কপাল থেকে হাত সরিয়ে চোখটা খুলে কিছু বলতে যাবে তখনি সামনে তাকিয়ে দেখেন তার সম্মুখে আসলে সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে।

তুমি?

আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো। খুবি শান্ত আর গম্ভীর স্বরে কথাটা বলল সমুদ্র। জামশেদ মাস্টার সমুদ্রের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচের দিকে তাকালো এই সময়ে ছেলেটা তাকে কি বলবে আজকে এই ছেলেটার জন্যই তো তার বাড়িতে প্রথম বারের মতো সালিশ বসেছে তাও আবার তারই মেয়েকে নিয়ে, এই কথাটা ভাবলেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার। একজন শিক্ষক এর জন্য এটা খুবি অপমান জনক,তবুও তিনি ভেঙে না পড়ে কন্ঠে কঠোরতা এনে বললেন, বলো?

আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।

সমুদ্রের কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে জামশেদ মাস্টার অবাক চোখে সমুদ্রের দিকে তাকালো। এবার তিনি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো রাগী গলায় সমুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল, তুমি কি আমার সাথে মশকরা করতে এসেছো? ভরা সালিশে আমার মেয়েকে বিয়ে করবে না বলে আবার এখানে এসে বলছো বিয়ে করবে। খেলা পেয়েছো তুমি? আর একটা কথা শুনে রাখো আজকে এই সব যা হচ্ছে সবটা তোমার জন্য এবং আমি কখনোই তোমার সাথে আমার মেয়েকে বিয়ে দেবো নাহ। যার নিজের জীবনের প্রতি কোনো মায়া নেই যে মরণ নিয়ে খেলা করে জেনেশুনে একজন পিতা হয়ে কীভাবে মেয়েকে তার হাতে তুলে দেবো, যার নিজের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই সে আমার মেয়েকে কীভাবে ভালো রাখবে।

সমুদ্র কোনো কথা বললো নাহ সবটা শোনার পর সোজা হেঁটে জামশেদ মাস্টার এর সামনে বুক টানটান করে দাঁড়িয়ে বলল, দেখুন এখন যেই পরিস্থিতি হয়েছে আপনার মেয়েকে যে কারো সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য আপনি বাধ্য আর আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন নাহ শাহিন এর সাথে ওর বিয়ে হোক তাই আমার কথা মেনে নেওয়া ছাড়া আপনার আর কোনো উপায় নেই।

সমুদ্রের কথা শুনে শশীর বাবা কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, তাহলে তুমি কি চাইছো? বাইরে ভরা বৈঠকে বললে বিয়ে করবে নাহ আর এখন বলছো বিয়ে করবে আসলে তুমি করতে কি চাইছো?

আমাদের জীবনে আপনাদের অবদান অনেক, দাদুকে খুব বেশিদিন কাছে পাইনি তবে যে কটাদিন পেয়েছি তার মুখে আপনাদের কথায় বেশি শুনেছি। আপনারা বাবা দাদুর অনেক ভালো বন্ধু ছিলো এমনকি তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে দাদুকে বাঁচিয়ে ছিলো। দাদু বলেছিলো জীবনে যদি একবার ও আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ আসে আমি যেনো আমার সবটা দিয়ে আপনাদের পাশে থাকি। আমি শশী কে এই জন্য বিয়ে করবো কারণ ওকে আমার পছন্দ হয়ত কখনো ভালোও বেসে ফেলবো সেটা নিতান্তই সময়ের ব্যাপার, তবে আমি যদি ওকে এখন বিয়ে করি তখন আপনারসহ বাকিদের মনে হবে আমি আপনাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছি, করুণা করছি। এই জন্য আমি চাই শশীকে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে ওর কোনো রকম অসুবিধা হবে হবে নাহ। কিন্তু যখন আমি ওর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখবো তখন আপনার হাজার নিষেধ থাকা সত্বেও ওকে আমি বিয়ে করবো।

সমুদ্রের কথা বলার এই পর্যায়ে জামশেদ মাস্টার উঠে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের মুখোমুখি হয়ে বলল, তবে যদি কখনো কোনো সময় তোমার জন্য আমার মেয়ের চোখে এক ফোঁটাও পানি আসে আমি ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবো হোক সে তোমার বিয়ে করা স্ত্রী তবুও। একটা কথা মনে রেখো আমি কোনোভাবেই আমার মেয়ের কষ্ট মেনে নেবো নাহ।

ঠিক আছে আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আমার জীবন থাকা অবধি কোনো বিপদ শশী অবধি পৌঁছাতে পারবে নাহ তাকে আগে সমুদ্রের মুখোমুখি হতে হবে।

ঠিক আছে নিয়ে যাও শশীকে তবে মনে রেখো আমার মেয়ে যেনো ভালো থাকে।

আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, আর একটা কথা আমি চাইনা আমাদের মাঝে এই কথাগুলো অন্যকেউ জানুক এমনকি আমার মাও নয়।

কেউ জানবে নাহ।

বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে অতীতের কথাগুলো ভাবছিলো সমুদ্র হঠাৎ কিছু মনে হতেই চোখ খুলে উঠে বসলো। পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে কাউকে কল দিলো, ফোনের ওপাশের ব্যাক্তিটা বোধহয় ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিলো। কল দেওয়ার সাথে সাথে ফোনটা রিসিভ করলো, সমুদ্র গম্ভীর স্বরে ফোনের ওপাশের ব্যাক্তিকে বলল, কালকে সকালে গাড়ি নিয়ে আমার কোয়াটারের সামনে থাকবে দরকার আছে।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২১
,
কমরে উড়না পেঁচিয়ে হাতে ঝাড়ু নিয়ে খুবি মনযোগ দিয়ে ডয়িং রুম পরিষ্কার করতে ব্যাস্ত শশী। শাহানারার হাজার বারণ সত্বেও শশী কোনো কথা শুনেনি। শাহানারা আর না পেরে নিজের রুমে চলে গেছে, সে ভালোই বুঝে গেছে এই মেয়ে তার কথা শুনবে নাহ। আজকে শুক্রবার বিধায় শশী বাড়িতে কলেজ বন্ধ তাই সকাল সকাল কাজে লেগে গেছে, এর মধ্যে কলিং বেল বেজে উঠল যেহেতু ডয়িং রুমে শশী ছাড়া কেউ নেই তাই শশী দরজা খুলতে গেলো। জয় অনেক্ক্ষণ হলো বাইরে খেলতে গিয়েছে তো শশী ভেবেছে জয়ই এসেছে এই জন্য ঝাড়ু হাতে নিয়ে ওমনিই দরজা খুলতে গেলো।

এতোটা সময় কেউ বাইরে থাকে? আন্টি সেই কখন থেকে তোমাকে ডাকছে।

কথাগুলো বলতে বলতে দরজা খুলতেই শশী হা হয়ে গেলো কারণ তার সামনে জয় নয় সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। শশী হা করে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে পরনে ডোরাকাটা আর্মি শার্টটা বেশ আঁটোসাঁটো হয়েই গায়ের সাথে সেঁটে আছে। সমুদ্র শশীকে এভাবে দেখে চোখ থেকে চশমা খুলে বুকের সাথে ঝুলিয়ে ফের একবার শশীর দিকে তাকালো। চিকন গড়নের ছোটখাটো মেয়েটা উড়না কমরে গুঁজে হাতে ঝাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার লম্বা চুলগুলো খোঁপায় মুড়িয়ে রাখা, সমুদ্র এবার একটু নিচু হয়ে শশীর মুখ বরাবর মুখ এনে আস্তে করে বলল,

ভিতরে যাবো?

সমুদ্রের এহেন কাজে শশী থতমত খেয়ে মাথা পিছনের দিকে নিয়ে পিছিয়ে গেলো। সমুদ্র বাঁকা হেসে ভিতরে চলে গেলো, শশী এখনো ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে ভাবল ও বোধহয় সমুদ্র কে হাসতে দেখলো, শশী যখন ঝাড়ুর গোড়া গালে ঠেকিয়ে ভাবতে ব্যাস্ত তখনি একটা লোক ব্যাগ হাতে শশীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ঝাড়ুটা কোথায় রাখবো?

লোকটার কথাশুনে শশী তড়িঘড়ি করে গাল থেকে ঝাড়ু সরিয়ে বলল, কিহ?

না মানে স্যারের ব্যাগটা কোথায় রাখবো?

কোথায় আবার এই যে আমার এতোবড় মাথাটা আছে কি জন্য ওনার ব্যাগটা এখানেই রাখুন।

শশীর এমন কথাশুনে লোকটা থতমত খেয়ে গেলো, বোকার মতো শশীর দিতে তাকিয়ে আবার হাতের ব্যাগটার দিকে তাকালো, অতঃপর খুবি সরল চাহনি দিয়ে বলল, এতোবড় ব্যাগ আপনার ওই ছোট্ট মাথায় আঁটবে ম্যাডাম? আর আঁটটেও পারে যেহেতু আপনি বলেছেন সেহেতু এঁটে যাওয়ার তো কথা, আচ্ছা আপনি নিচু হোন আমি ব্যাগটা রাখছি।

শশীর যেনো রাগে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে তবুও নিজেকে ঠিক রেখে দাঁতে দাঁত কিড়মিড় করে বলল, বলি সামনে যে এতো জায়গা সেটা আপনার চোখে পড়ছে নাহ? দয়া করে আপনার বকবকানি টা থামিয়ে ব্যাগটা রেখে বিদায় হন, দাঁড়ান দাঁড়ান তার আগে এটা বলুন আপনি কে?

লোকটা ব্যাগটা শশীর পায়ের কাছে রেখে সোজা দাঁড়িয়ে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলল, জি এই অধম হলো সমুদ্র স্যারের একমাত্র কাছের গাড়ির একমাত্র ড্রাইভার। তবে এখানে এসে আমি মনে বড়ই দুঃখ পেয়েছি ভিতরে ভিতরে অভিমানের পাহাড় জমা হয়েছে।

লোকটার কথা বুঝতে না পেড়ে শশী বলল, মানে?

মানে আমার চিরকুমার থাকবে বলে পণ করা স্যারটা এভাবে কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলবে আমি স্বপ্নে কেনো জেগে জেগেও ভাবিনি। অন্তত আমাকে বলতে পারতো, স্যার শুধু মুখেই বলে আমায় ভালোবাসে অথচ তার বিয়েতে আমাকে জানালোই নাহ, কেনো আমি একটু বেশি খাই এইজন্য?

লোকটির কথাশুনে শশী অবাক হয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে, ও আসলে বুঝতে চাইছে সমুদ্র বিয়ে করলো কবে আর কাকে? কিছুক্ষণ ভাবার পর ওর মাথায় এলো লোকটা আসলে ওকে সমুদ্রের বউ ভাবছে। কথাটা মাথায় আসতেই লজ্জায় নুইয়ে গেলো, শশী ফের কিছু বলতে যাবে তখনি পিছন থেকে সমুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল, একি ইমরান তুমি এখনো যাওনি কেনো?

সমুদ্রের কথাশুনে শশী আর ইমরান দুজনেই সমুদ্রের দিকে তাকালো, শশী সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলেও ইমরান মাথা নিচু করে বলল, আপনিতো ম্যাডাম এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন নাহ তাই আমি নিজে নিজেই পরিচিত হচ্ছি। কিন্তু স্যার আপনি এটা আমার সাথে করতে পারলেন? আমাকে একটা বারও জানালেন নাহ?

সমুদ্র ইমরান এর কথাশুনে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল, বাজে কথা বন্ধ করে কি বলতে চাচ্ছো সেটা বলে নিজের কাজে যাও।

স্যার আপনি এখনো বুঝতে পারছেন না আমি কি বলছি! আচ্ছা আমিই বলে দিচ্ছি, আপনি যে এভাবে চুপিচুপি বিয়ে করে নিলেন সেটা এখানে এসে ম্যাডাম কে না দেখলে তো জানতেই পারতাম নাহ। তবে যাই হোক ম্যাডাম কিন্তু সুন্দরী আছে, অতঃপর ইমরান মুচকি হাসি দিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে বলল, ম্যাডাম আপনি আমায় ইমরান বলে ডাকতে পারেন স্যারও এভাবেই ডাকে আচ্ছা তাহলে আমি যাই এখন।

কথাগুলো বলে ইমরান গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো, সমুদ্র তখনো ওখানে দাঁড়িয়ে শশী দৌড়ে ভিতরে যেতেই পিছন থেকে সমুদ্র ওকে ডেকে বলল, দাঁড়াও, তুমি ইমরান কে বলেছো তুমি আমার বউ?

শশী কি বলবে বুঝতে পারছে নাহ, ওই লোকটা এতো কথা বলে আর যা বলে সবি ভুলভাল কথা বলে। এখন ওনাকে কি বলবো? ছিঃ ওনার সামনেই এগুলো হতে হলো এতো লজ্জা লাগছে, আচ্ছা ওনি কি আমার দিকে তাকিয়ে আছে? মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলো আর মেঝেতে নখ খুঁটছিলো কেননা পিছনে তাকিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকানোর মতো সাহস ওর নেই। সমুদ্র হেঁটে শশীর পিছনে এসে দাঁড়ালো, বুক সমান শশী ঠিকি তার খোলা কাঁধে সমুদ্রের নিঃশ্বাস টের পাচ্ছে আর এতেই ওর ভিতরে তোলপাড় চলছে। সমুদ্র বিষয় টা বুঝতে পেরে বাঁকা হেসে একটু নিচু হয়ে মুখটা শশীর কানের কাছে এনে ফিসফিস করে বলল,

আমার বউ হওয়ার এতো সখ?

ব্যাস সমুদ্রের এই কথাটা শশীর কানে যেতেই শশী চোখ বন্ধ করে ডানহাতে জামা চেপে ধরল, সমুদ্র কথাটা শেষ করে শশীর কানে ফুঁ দিতেই শশী দৌড়ে ওখান থেকে চলে গেলো। শশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সমুদ্র সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের মনে বলল, খুব শীঘ্রই তোমার এই ইচ্ছে টাও পূরণ হয়ে যাবে।
,,,,,,,,,,
খাটে বসে দেওয়ালে টাঙ্গানো ইকবাল এর ছবির দিকে তাকিয়ে ছিলেন শাহানারা। কেবলি রোদ্রের সাথে কথা বলা শেষ করল ছেলেটা ভীষণ খুশি সামনের সপ্তাহে আসবে। আাসার কথা ছিলো আরো একমাস পর তবে কাজ আগে আগে শেষ হয়ে যাওয়াই চলে আসছে এখানে মাসখানিক থেকে আবার চলে যাবে। ফোন দিলেই আগে শশীর কথা বলে, এবার রোদ্র আসলে শশীর বাবার সাথে কথা বলবো সমুদ্র যখন বিয়ে করবে না বলে ঠিক করেই রেখেছে তখন রোদ্রের বিয়েটা আগে দিয়ে দেবো। বসে বসে এসবি ভাবছিলো শাহানারা তখনি বাইরে থেকে সমুদ্র দরজায় নক করে বলল, আসবো মা?

সমুদ্রের ডাকে ধ্যান ভাঙ্গলো শাহানারার নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, আয় ভিতরে আয়।

সমুদ্র ভিতরে এসে মায়ের পাশে বসল, শাহানারা সমুদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, কতদিন পর আসলি এবার কিন্তু সহজে যেতে দেবো নাহ। সামনের সপ্তাহে রোদ্রও আসছে দুটোকে কতদিন একসাথে নিজের হাতে খাওয়াই নাহ। এবার তোকে যেতে দেবোই নাহ অনেকটা দিন আমার কাছে রেখে দেবো, রোদ্রটাকে যাওবা পাই তোকে তো পাওয়াই যায় নাহ। কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন শাহানারা, সমুদ্র মায়ের কথাশুনে হালকা হেসে বলল, তোমার ছেলেকে এভাবে বাড়িতে বেঁধে রাখলে দেশকে রক্ষা করবে কে?

কেনো আর কেউ নাই বুঝি দেশ রক্ষা করার দায়িত্ব সবার, সব দায়িত্ব কি তুই একা নিয়ে বসে আছিস?

আচ্ছা ঠিক আছে তোমার যতদিন ইচ্ছে ছেলেকে কাছে রেখো।

সমুদ্রের কথাশুনে শাহানারা অভিমানী কন্ঠে বলল, হ্যাঁ সেই এটাতো শুধু কথার কথা আমার একটা কথাও তুই রেখেছিস যে এই কথাটা রাখবি। কত করে বললাম বিয়েটা কর এতোবড় একটা বাড়িতে একা একা থাকি ভালো লাগে বল? এখন শশী আছে তাও একটু ভালো লাগে জয় আর শশী মিলে বাড়িটাকে একদম মাতিয়ে রাখে এখন একটু বাড়িটাকে জীবন্ত মনে হয়।

তো শশীকে একদম পারমানেন্ট ভাবে বাড়িতে রাখার ব্যাবস্হা করো, তাহলে আর তোমার একা লাগবে নাহ আবার বাড়িটাকেও মৃত মনে হবে নাহ।

শাহানারা ভাবলো সমুদ্র হয়ত জানে রোদ্র শশীকে পছন্দ করে তাই এই কথা বলছে। হয়ত শশীকে রোদ্রের বউ করে আনার কথা বলছে, এটা মনে মনে ভেবে শাহানারা হাসি মুখে বলল, হ্যাঁ আমিও তো সেটা ভাবছি এবার তুই যাই বলিস না কেনো শশীকে এই বাড়ির বউ করেই আনবো, আমি রোদ্রর সাথে কথাও বলেছি ও

আমি শশীকে বিয়ে করতে রাজি মা তুমি শশীর বাবার সাথে কথা বলো, আমি আর দেরি করতে চাই নাহ।

শাহানার কথার মাঝেই সমুদ্র কথাটা বলল আচমকা বড়ছেলের মুখে এমন কথা শুনতেই মুহুর্তের মধ্যে শাহানারা হাসি মুখটা কালো হয়ে গেলো। ভিতরে ভিতরে আসন্ন সময়ের কথা ভেবে কেঁপে উঠল শেষে ভাই এ ভাই এ বিবাদ না বাঁধে। ছোটো বেলা থেকেই রোদ্রটা চুপচাপ হলেও যখন যা দরকার নিজে মুখে চেয়ে নিয়েছে যেমন শশীকেও ওর কাছে চেয়েছে আর আমিও হাসি মুখে ওকে দেবো বলে কথা দিয়েছি৷ কিন্তু সমুদ্র, বরাবরই জেদি একগুয়ে সব সময় কথা মুখের মধ্যে রেখেছে কখনো চায়নি তবে যেটা প্রয়োজন ঠিকি সেটা নিজে নিয়ে নিয়েছে আর পছন্দের জিনিস না পেলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলেছে তাহলে এখন কি হবে? শাহানারা যখন এসব ভাবছিলো তখন সমুদ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, অনেক রাত হয়েছে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো সকালে কথা হবে।

কথাগুলো বলে সমুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে গেলো কিন্তু পিছনে রেখে গেলো আসন্ন বিশাল এক ঝড় যেটা কি আকার ধারণ করতে পারে এটা ভাবতেই কেঁপে উঠছে শাহানারা। সমুদ্র যে ওকে ঘুমাতে বলল কিন্তু আজকের পর থেকে ঘুম কি ওর চোখে আদেও ধরা দিবে?

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-১৮+১৯

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১৮
,
ওয়াও অনেক সুন্দর কেউ এতোটা সুন্দর কীভাবে হতে পারে? আসলে আমিও বোকা যে ছবিটা এঁকেছে তার হাতে জাদু আছে এই জন্য সামান্য কিছুও অনেক অসামান্য হয়ে উঠে।

পিছন থেকে আসা চিকন মেয়েলি গলার স্বর শুনে রোদ্র পিছনে তাকালো, তারপর হাতের তুলিটা পাশের টেবিলে রেখে মুচকি হেসে আর্ট বোর্ডের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি ভুল বললে লিজা ছবির মানুষ টাই এতো সুন্দর যে আমিই তার সৌন্দর্য তুলে ধরতে পারেনি। তুমি তাকে সামনাসামনি দেখলে চোখ ফেরাতে পারবে নাহ, সে চঞ্চলা হরিণীর মতো, মুক্ত পাখির ন্যায় তার দুই ডানা মেলে নীল আকাশে উড়ে বেড়ায় যেনো মনে হয় তার ওই দুটো চোখের দিকে তাকিয়ে আমি এক জীবন পাড় করে দিতে পারবো।

আচ্ছা তাহলে এনিই বুঝি তিনি যার জন্য আমার এই বন্ধুটা তার মহা মূল্যবান মনটা সেই সুদূর বাংলাদেশে রেখে এসেছে।

লিজার কথাশুনে রোদ্র আনমনে হাসলো শশীর ছবির দিকে তাকিয়ে বলল, আমিতো সেই কবেই মন হারিয়েছি। সেই রোদ্র উজ্জ্বল দুপুরে একটা মেয়ে দূরন্ত পায়ে ছুটে চলছিলো মাটির রাস্তা দিয়ে। আমি মুগ্ধ হয়ে সেদিকে চেয়েছিলাম হঠাৎই সে চোখের পলকে হারিয়ে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে অনেক খুঁজেছি কিন্তু তাকে আর কোথাও পায়নি।

রোদ্র এতো হেয়ালি না করে পুরো কাহিনী টা খুলে বলো নাহ, আমার ভীষণ শুনতে ইচ্ছে করছে।

রোদ্র চোখ বন্ধ করে সেইদিন টার কথা মনে করল যেদিন শশীকে প্রথমবার দেখেছিলো। জয় আর মায়ের সাথে শহর থেকে অনেক দূরে হিজলতলী গ্রামে যাচ্ছিল। শহরের ইট পাথরের দালান ছেড়ে গ্রামের ধূলো মাখা মাটির রাস্তা ধরে এঁকেবেঁকে গাড়ি চলছিলো। তখনি পিছনে বসে থাকা মায়ের দিকে তাকিয়ে রোদ্র বলল, এখান থেকে কোন দিকে যাবো তুমি ঠিক করে চেনো তো?

ছেলের কথায় শাহানারা গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে আশেপাশে তাকিয়ে আবার রোদ্রের দিকে চেয়ে বলল, আমিও ঠিক বুঝতে পারছি নাহ, কতদিন হলো গ্রামে আসি নাহ বাড়ি ঘর রাস্তা ঘাট কত বদলে গেছে ওদের বাড়িটা ঠিক কোন দিকে সেটাই তো বুঝতে পারছি নাহ।

মায়ের কথায় রোদ্র কিছু না বলে গাড়ি চালানোই মন দিলো। খানিক দূর গিয়ে এক পাশে গাড়ি থামিয়ে নিজে গাড়ি থেকে নামল কারো কাছ থেকে জামশেদ মাস্টার এর বাড়ি কোনটা জিগাস করার জন্য। রোদ্র কিছুটা হাঁটতেই দেখলো রাস্তার পাশে ক্ষেতের জমিতে কিছু কৃষক কাজ করছে রোদ্র ওনাদের কাছে গেলো তারপর ওনাদের কাছে জিগাস করতেই একজন রাস্তা চিনিয়ে দিলো। রোদ্র ওনাদের ধন্যবাদ জানিয়ে কেবলি রাস্তায় উঠতে যাবে তখনি পাশ থেকে মেয়েদের হাসাহাসির শব্দ শুনে সেদিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেল। লম্বা চুলের ছোট্ট একটা মেয়ে ক্ষেতের মাঝ দিয়ে আইল ধরে দৌড়ে সামনের দিকে যাচ্ছে তার পিছন পিছন আরো অনেকগুলো মেয়ে। তাদের মধ্যে থেকেই একটা মেয়ে সামনের মেয়েটাকে বলল, আস্তে দৌড়া শশী নয়ত পড়ে যাবি আর আমরাও তো যাবো নাকি।

শশী নামটা শুনতেই রোদ্র মুখ ফুঁটে উচ্চারণ করল চাঁদ, তাহলে ওই এলোকেশীর নামটা বুঝি চাঁদ? তখনি সামনে থেকে জবাব দিলো মেয়েটা, মালেক কাকারা জমিতে পানি দেওয়ার জন্য নতুন মেশিন বসাইছে কি সুন্দর পরিষ্কার পানি একদম কাঁচের মতো। তাই জন্যই তো আমি আগে যাচ্ছি তোরা পানি নষ্ট করার আগেই আমি পানিতে ভিজবো।

রোদ্র মোহিত হলো সেই কন্ঠে একটু খানি অন্যমনষ্ক হতেই চোখের পলকে হারিয়ে গেলো তার দিনের বেলা পাওয়া চাঁদ। রোদ্র যখন অধীর চোখে আশেপাশে তাকিয়ে শশীকে খুঁজতে ব্যাস্ত তখনি রাস্তার উপর থেকে জয় রোদ্রকে ডাকলো। রোদ্র আরো কয়েকবার দেখে চলে গেলো, গাড়িতে উঠার আগে আরো একবার ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল, রাতের আকাশের চাঁদ দিনের বেলায় ধরতে গেলে বুঝি এমন ভাবেই মুখ থুবরে পড়তে হয়।

যাহ তারমানে তুমি মেয়েটাকে হারিয়ে ফেললে? তাহলে তোমার ভালোবাসাতো অসমাপ্ত রয়ে গেলো এখন কি হবে?

লিজার বোকা বোকা কথাশুনে রোদ্র হেসে বলল, আমিও প্রথমে এটাই ভেবে ছিলাম কিন্তু পরে কি হলো জানো? আমরা যেই জামশেদ মাস্টার এর বাড়িতে গিয়েছিলাম শশী আসলে ওনারই মেয়ে।

বলো কি এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।

হুম সেইতো আমিতো ওকে ওখানে দেখে পুরাই অবাক বনে গিছিলাম। কিন্তু ভিতরে ভিতরে অনেক খুশি লাগছিলো।

তারপর?

ওমমম আজকে আর নাহ বাকি কথা অন্য কোনো একদিন বলবো ঠিক আছে?
,,,,,,,
আর কত হাঁটবো আমার পা বেথ্যা করছে।

কথাটা বলেই শশী বসে পড়ল, সমুদ্র হাঁটা থামিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল, সামনে রাস্তায় উঠে তারপর গাড়ি নিবো। জলদি আসো তোমাকে নিয়ে ঘুরার সময় নেই আমার আর এখানে থাকা অনেক রিস্ক। কথাটা বলেই সমুদ্র হাঁটা শুরু করলো শশী এখনো মুখ গোমড়া করে বসে আছে আর বিরবির করে বলল, কি নিষ্ঠুর মানুষ ওনি জানেন আমার পায়ে ব্যাথা তবুও আমাকে হাঁটাচ্ছে আমি জানি ওনি ইচ্ছে করে এমনটা করছে। একা একা বকবক করে শশী আবার আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু করলো। কালকের বৃষ্টিতে পুরোটা কাঁদা হয়ে আছে তার উপর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে উঁচু নিচু পথ হাঁটতেও ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে। শশী সামনে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র ততক্ষণে বেশ খানি দূর চলে গেছে। শশী খোঁড়াতে খোঁড়াতে সামনের দিকে যেতে লাগল, বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর শশী পানির কলকল শব্দ শুনতে পেলো হয়ত সামনেই কোথাও ঝড়না আছে। ইস যদি ওনার সাথে ঝড়নাটা দেখতে পারতাম তাহলে কত সুন্দর হতো, এসব ভাবতে ভাবতে আনমনে হেঁটে যেতেই ঠাস করে কিছু একটর সাথে ধাক্কা খেলো। শশী কপাল ঘষতে ঘষতে সামনে তাকিয়ে দেখে ও আসোলে সমুদ্রের পিঠের সাথে ধাক্কা খেয়েছে। হঠাৎ করে এভাবে এখানে সমুদ্র কে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে শশী সমুদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে বলল, কি ব্যাপার এখানে দাঁড়িয়ে পড়লেন যে ঝড়না দেখছেন বুঝি?

মুখটা বন্ধ করে চুপ করে দাঁড়াও।

কথাটা বলে সমুদ্র পকেট থেকে ওর ফোনটা বের করে কাউকে ফোন দিলো, কিন্তু ওপাশ থেকে বোধ-হয় সে ফোন রিসিভ করলো নাহ এই জন্য টপাটপ চপটপে হাতে মেসেজ টাইপ করে ফোনটা পকেটে রেখে সামনে তাকিয়েই ডান হাত দিয়ে শশীকে নিজের পিছনে নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালো। হাত বাড়িয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি দেখলো শশী ওর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সমুদ্র শশীর এভাবে তাকানো দেখে নিজের হাতের দিকে তাকালো দেখলো ওর হাত ঠিক শশীর বুক বরাবর আর একটু পিছালে সমুদ্রের হাতটা শশীর শরীলের লজ্জাষ্কর স্থানে লাগবে। বিষয়টা সমুদ্র বুঝতে পেরে দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, আমার পিছনে সরিয়ে যাও।

শশী ব্যাপারটা ঠিক বুঝলো নাহ তবে সমুদ্রের কথামতো একপাশে সরে গেলো। ওদের পাশেই একটা ছোট্ট ঝড়না আর ওরা ছোটো খাটো একটা খাঁরা পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্র তীক্ষ্ণ চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে যেনো কোনো কিছুর অপেক্ষা করছে। কিছু একটা ভেবে সমুদ্র শশীর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি সাঁতার জানো?

হ্যাঁ কেনো বলুন তো? কথাটা বলে শশী একবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে পাশের ঝড়নার দিকে চেয়ে আতংকিত চোখে বলল, এই আপনি কি আমায় এখানে ফেলে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন?

চিন্তা করছি না তোমাকে এখানেই ফেলে দেবো। কথাটা বলেই সমুদ্র শশীকে ধাক্কা দিয়ে পাশের পানির স্রোত বয়ে যাওয়া কাঁদা মাখা ছোট একটা খালমতো জায়গায় ফেলে দিলো। শশী অবাকের চমর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে রাগে পুরো শরীল টগবগ করছে, সারা শরীল পানিতে ভিজে একাকার পায়েও বেশ খানিকটা বেথ্যা পেয়েছে। কাঁটা জায়গায় নতুন করে আবার বেথ্যা পাওয়াই ভীষণ রকম জ্বলছে। প্রায় হাঁটু অবধি কাঁদার মধ্যে অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ায়ে সামনে তাকাতেই দেখলো সমুদ্র ওখানে নেই। শশী আশেপাশে তাকালো কিন্তু কোথাও সমুদ্র কে দেখতে পেলো নাহ ঠিক তখনি সামনের দিক থেকে বিকট একটা শব্দে শশী কান চেপে ধরে বসে পড়ল। এটা কীসের আওয়াজ ও জানে নাহ তবে মুভিতে দেখেছে গুলির আওয়াজ ঠিক এমনটাই। তাহলে এটা কি কোনো গুলির শব্দ? কিন্তু সমুদ্র কোথায় গেলো কোনো ভাবে গুলিটা ওনার লাগেনি তো? কিন্তু ওনাকে কে গুলি করবে ওনার কি কারো সাথে শুত্রুতা আছে?

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১৯
,
এখানেই থাকার ইচ্ছে আছে নাকি? যদি থাকে তাহলে বলতে পারো আমি সেই ব্যাবস্হা করে দিতে পারি।

কাঁদার মধ্যে দাঁড়িয়ে নিচে থেকে পা ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম তখনি কেউ পিছন থেকে কথাটা বলল। আমি কাঙ্খিত কন্ঠটি পেয়ে তড়িত গতিতে পিছন ফিরে সমুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বললাম, আপনি? কোথায় ছিলেন এতোক্ষণ? আর ওটা কিসের শব্দ ছিলো?

আমি এখানেই ছিলাম তোমার চোখে সম্যসা তাই দেখতে পাওনি। এখন ওখান থেকে উঠবে নাকি এভাবেই থাকবে।

উঠতেই তো পারছি নাহ।

কথাটা বলে শশী ঠোঁট উল্টে সমুদ্রের দিকে তাকালো, দেখলো সমুদ্র ওর দিকেই তাকিয়ে আছে৷ সাথে সাথে শশী চোখ নামিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে পুনরায় উঠার চেষ্টা করলো তবে বরাবরের মতোই ব্যার্থ হলো। পায়ের কাঁটা জায়গাতেও জ্বলছে, লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে কেবলি সমুদ্র কে বলতে যাবে এখান থেকে উঠতে সাহায্য করার জন্য। তখনি হাতে টান অনুভব করল, সমুদ্র এক টানে শশীকে নিজের কোলে তুলে নিলো। হাঁটু অবধি কাঁদায় মাখামাখি কমর অবধি ভেজা। শশী পড়ে যাওয়ার ভয়ে সমুদ্রের গলা জড়িয়ে ধরলো, সমুদ্র শশীকে ঘুরিয়ে ঝড়নার দিকে করলো, ঝড়নার পরিষ্কার পানিতে শশীর পায়ের কাঁদা আস্তে আস্তে ধুয়ে যাচ্ছে। শশী আড় চোখে বারবার শুধু সমুদ্র কে দেখছে তবে সরাসরি তাকানোর সাহস নাই। সমুদ্র একবারও শশীর দিকে তাকালো নাহ সে আপাতত নিজের কাজে মগ্ন, পা ধোয়া হয়ে গেলে সমুদ্র আশেপাশে তাকিয়ে তারপর শশীকে কোলে নিয়েই হাঁটতে লাগল।

তোমরা তো চাষী নিজেদের ক্ষেত আছে।

হুম কেনো বলেন তো?

নিজেদের ক্ষেতের ভেজাল ছাড়া ধানের চাউলের ভাত খাও তাও এতো পাতলা কেনো তুমি? মনে হচ্ছে একটা আট বছরের বাচ্চা কে কোলে নিয়ে হাঁটছি।

সমুদ্রের কথা শুনে শশী মুখ অভিমানে অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখল, এই লোকটা সব সময় এভাবে খোঁচা দিয়ে কথা বলে সবাইকে নিজের মতো পালোয়ান মনে করে নাকি, নিজেকে তো পাঁচজন মিলেও উঠাতে পারবে কিনা সন্দেহ আবার আমাকে বলতে আসে। সমুদ্র নিজের মতো হেঁটে জঙ্গল ছেড়ে রাস্তায় উঠল, সেখানে কালো রঙের জীপ দাঁড় করানো। সমুদ্র কে আসতে দেখে ড্রাইভার চাবিটা দিয়ে চলে গেলো, সমুদ্র শশীকে সিটে বসায়ে পা ধরে উঁচু করলো। তারপর কাঁটা জায়গাটা পরিষ্কার করে সেখানে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো। পায়ের জুতোটা সেই কাঁদার মধ্যেই রয়ে গেছে, শশী পুরোটা সময় সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলো এই লোকটাকে ও ঠিক বুঝতে পারে নাহ৷ কখনো কষ্ট দেয় খোঁচা দিয়ে কথা বলে আবার নিজেই সেইখানে মলম লাগিয়ে দেয়। সমুদ্র গাড়ি স্টার্ট করল পেশি বহুল দুটো হাত দিয়ে এক মনে গাড়ি চালাচ্ছে, চোখ দুটি কালো দুটো গ্লাসের আড়ালে ঢাকা। শশী আড় চোখে বারবার সমুদ্র কে দেখছে, এতোকিছু হওয়ার পরেও তার মনে হচ্ছে এই ট্রিপটা তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর একটা ট্রিপ। ইস যদি আরো কিছুটা সময় এভাবে ওনার সাথে থাকা যেতো, কিন্তু সেটাতো সম্ভব নয় ওনি এখানে ওনার কাজের জন্য আছে আর কাজ ফেলে রেখে ওনি নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে ঢ্যাংঢ্যাং করে পুরো খাগড়াছড়ি ঘুরবে নাহ। শশীর এসব ভাবনার মাঝেই গাড়ি তার গন্তব্যে এসে থেমে গেলো, সমুদ্র গাড়ি থেকে নেমে শশীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

আগেই গাড়ি থেকে নামবে নাহ আমি ভিতর থেকে আসবো তারপর।

শশীও বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। সমুদ্র রিসোর্টের ভিতরে যেতে গেলে শশী পিছন থেকে জেরে চিল্লিয়ে বলল, আবার কবে আপনার সাথে দেখা হবে?

সমুদ্র পিছন ঘুরে শশীর দিকে তাকিয়ে তার চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে টির্শাট এর সামনে বুকের সাথে ঝুলিয়ে রেখে বলল, আমার যখন ইচ্ছে হবে তখন। এখন এতো কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকো আমি না আসা অবধি নামবে নাহ।

কথাগুলো বলে সমুদ্র ভিতরে চলে গেলো এদিকে শশী বসে বসে ভাবছে। ওনি কি বলে গেলো ওনার ইচ্ছে হলে তবেই আবার দেখা হবে? আচ্ছা তাহলে এই যে আমি এখানে আসলাম ঝড়ের কবলে পড়লাম তারপর ওনার সাথে দেখা হলো এগুলোও কি ওনার ইচ্ছে হয়েছে বলে হয়েছে? ধ্যাত আমিও কি যা তা ভাবছি, এখানে ওনার সাথে দেখা হওয়াটা পুরোটাই একটা এক্সিডেন্ট, আচ্ছা আমি যে পুরো একটা রাত আবার দিনের এতোটা সময় ধরে মিসিং তবুও কেউ আমার খোঁজ করলো নাহ কেনো? আন্টিতো স্যারকে বলে দিয়েছিলো আমার খেয়াল রাখতে তাহলে আমি এতোটা সময় ধরে এখানে নাই স্যার একটা বারও আমার খোঁজ নিলো নাহ? এতোটা দায়িত্ব ঙ্গানহীন তো স্যার নয় তাহলে আসলে কাহিনি টা কি? শশীর এতোসব ভাবনার মাঝেই দেখলো ওর দুই বান্ধবী ওর দিকে আসছে আর পিছনে সমুদ্র ওর স্যারদের সাথে কথা বলছে। মিলি এসে শশীর হাত ধরে বলল,

তুই ঠিক আছিস? আচ্ছা আস্তে আস্তে নেমে আয় আমরা কত টেনশনে ছিলাম জানিস? ভাগ্যিস তোকে আর্মিরা পেয়েছিলো নয়ত কি হতো এই অচেনা জায়গায়।

শশী দুজনের হাত ধরে নিচে নেমে এসে ওদের কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, তোরা জানলি কীভাবে যে আমি কোথায় আছি?

আরে ওই যে সমুদ্র স্যার ওনিই তো, বাকিটা বলার আগেই ওখানে সমুদ্র চলে আসলো তারপর শশীকে উদ্দেশ্য করে বলল, ভিতরে গিয়ে রেস্ট নাও কালকে সকালেই সবাই ফিরে যাবে আজকে আর কোথাও বের হওয়ার দরকার নাই। আর তোমরা ওকে ধরে ভিতরে নিয়ে যাও।

কথাগুলো বলে সমুদ্র বুকের সাথে ঝুলানো সানগ্লাস টা খুলে চোখে পড়ে গাড়িতে উঠে বসল, অতঃপর সোজা ওখান থেকে বেরিয়ে গেলো। যতদূর অবধি গাড়িটা দেখা যায় শশী তাকিয়ে ছিলো কিন্তু সমুদ্র সেতো নিষ্ঠুর, পাষান তার হৃদয় একটা বারের জন্যও ফিরে তাকায়নি।
,,,,,,,,,,,,,
বাড়ি ফিরে আসার দুইদিন হয়ে গেছে পায়ের কাঁটাটা আগের থেকে অনেক টাই কমেছে। শশী নিজের ঘরে বসে বসে বই পড়ছিলো তখনি পাশে রাখা ফোনটা বেজে উঠল, কোলের উপর রাখা বইটা বন্ধ করে বা হাতে ফোনটা তুলতেই দেখলো রোদ্র কল দিয়েছে। শশী মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে রোদ্র চিন্তিত আর রাগমিশ্রিত গলায় বলল, এই মেয়ে তোমার ফোন কই থাকে হ্যাঁ? এতোবার ফোন দেওয়ার পরেও কোনো খোঁজ খবর নাই। বলি ফোনটা দেওয়া হয়েছে কিসের জন্য নিশ্চয়ই সকাল সন্ধ্যা ধুয়ে মুছে সৌকেছে সাজিয়ে রাখার জন্য নাহ। আর মায়ের থেকে শুনলাম তুমি নাকি পিকনিকে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলে ভাগ্যিস ভাই তোমাকে পেয়েছিলো নয়ত কি হতো হ্যাঁ? এই জন্যই আমি তোমার ওতোদূরে যাওয়ার কথাশুনে রাজি ছিলাম নাহ কিন্তু ভাই বলল সে ওখানে আছে তাই নয়ত কখনোই যেতে দিতাম নাহ।

সমুদ্রের কথা শুনতেই শশীর বুকের মধ্যে উথাল পাথাল ঢেউ বইতে শুরু হলো। যে সে সত্যি সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়েছে এবার আর তার রেহায় নাই৷ শশী যখন সমুদ্রের ভাবনায় মত্ত ফোনের ওপাশে রোদ্র তখন অধীর কন্ঠে হ্যালো বলতে ব্যাস্ত। আরে কথা বলছো নাহ কেনো ঘুমিয়ে পড়লে নাকি।

এটা কি ধরনের কথা রোদ্র ভাইয়া এই দিনে দুপুরে কথা বলতে বলতে কেউ ঘুমায় নাকি।

শশীর কথাশুনে রোদ্র মুচকি হাসলো, মাথাটা নরম বালিয়ে রেখে চোখ বন্ধ করে বলল, হতেও পারে বাচ্চা মানুষের বলে আবার বিশ্বাস নাই।

আমি মোটেও বাচ্চা নই ওকে।

হুম তুমিতো পাকা বুড়ি আচ্ছা শোনো আমি আর দুইমাস পর বাড়ি আসছি আর তোমার জন্যও বিশাল বড়সড় একটা সারপ্রাইজ ও আনছি।

শশী রোদ্রের কথাশুনে লজ্জা মিশ্রিত হেসে বলল, হুম আমিও তো আপনার অপেক্ষায় আছি আপনার জন্যও একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। কথাটা বলে শশী মনে মনে বলল, একমাত্র রোদ্র ভাইয়ার সাথেই আমি সমুদ্রের ব্যাপারটা শেয়ার করতে পারবো। ওনি ছাড়া আমাকে কেউ সাহায্য করতে পারবে নাহ, আর সমুদ্র যে রাগী বাবা যদি একবার শুনে আমি ওনাকে পছন্দ করি তাহলে হয়ত বলবে, এতো ছোট্ট মাথায় এসব ভুলভাল চিন্তা তোমার আসে কীভাবে?
,,,,,,,,,,,
আজকে কলেজে অনুষ্ঠান এই জন্য সকাল সকাল আসা লাগলো। গাড়ি থেকে কলেজের গেটে নেমে দাঁড়াতেই গাড়ি চলে গেলো, শশী গাড়ি যাওয়ার আগে গাড়ির মধ্যে থাকা ইউনিফর্ম পড়া জয়কে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো। আজকে কলেজে প্রবীনদের বিদায় জানানো হবে সেই উপলক্ষে বিশেষ অতিথি হিসাবে মন্ত্রী সাহেব এর আসার কথা ছিলো। তবে শেষ মুহুর্তে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার বদলে তার ছেলে আসবে। শশী আর আরো কিছু মেয়ে মিলে গেটের পাশ থেকে সারি সারি হয়ে ফুল ভর্তি ডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কাঙ্ক্ষিত মানুষ টা এলেই তার উপর ফুলের বর্ষণ করা হবে। লম্বা বেণীটা পিছন থেকে এনে সামনের একপাশে রেখে দিয়েছে শশী, ফুলের ডালাটা কমরের সাথে ঠেকিয়ে রেখে এক হাতে ধরে রেখেছে। আর অন্য হাতের নখ কামড়াচ্ছে তখনি স্বরগোল শুনে শশী দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়ালো ততক্ষণে বিশেষ অতিথির আগমন হয়ে গেছে। সবাই তার উপর ফুলের বর্ষণ করতে ব্যাস্ত লোকটা ধীর গতিতে সামনের দিকে এগোচ্ছো। শশীও তার উপর ফুল দিচ্ছে লোকটা শশী পযন্ত এসে থেমে গেলো চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে শশীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

হাতের নখ কাঁমড়ানো ব্যাড মার্নাস ম্যাডাম৷

কথাটা বলেই হাসি মুখেই লোকটা সামনে দিকে চলে গেলো, আর এদিকে শশী লোকটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে এই লোকটাকে ভীষণ রকম চেনা চেনা লাগছে যেনো এর আগেও কোথাও দেখেছে কিন্তু কোথায়?

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-১৬+১৭

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১৬
,
গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের রাস্তায় চলা গাড়ির দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে শশী। গাড়ি তার নিজ গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। একটা মানুষ যে কিনা তার থেকে অনেক অনেক দূরে তবুও কত সহজ ভাবে একটুও বিচলিত নাহ হয়ে আমাকে বোঝালো। এই সাহস টা ওর প্রয়োজন ছিলো এমন একটা মানুষ প্রয়োজন ছিলো যে কিনা সব সময় ছায়া হয়ে পাশে থাকবে। কাছে না থেকেও অনুভব করাবে তুমি এগিয়ে যাও আমি তোমার পাশেই আছি। এতোসব ভাবনার মাঝেই গাড়ি গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। শশী শাহানারার হাত ধরে আস্তে আস্তে ভিতরে নিয়ে গেলো। রাত তখন প্রায় শেষের দিকে, এতো সব কিছু হওয়ার পরে ওখানে থাকার কোনো মানেই হয় নাহ এই জন্য রাতেই বেরিয়ে পড়েছে। সমুদ্র আর ফোন দেয়নি শাহানারা কয়েকবার ফোন দিয়েছিলো কিন্তু অপর পাশ থেকে বন্ধ আসছে। এমনটা যে এই প্রথম তা নয় শাহানারা একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ফোন কেটে সেই রাতেই শশী আর জয় কে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। বাসায় ঢুকে শশী শাহানারাকে তার রুমে দিয়ে এসে নিজেও রুমে চলে গেলো। মাথাটা ভীষণ বেথ্যা করছে।

সকালে নিচে কথার আওয়াজ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেলো শশীর। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, সিঁড়ির উপর থেকেই দেখলো শাহানারা কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। শশী সেই পযন্ত যাওয়ার আগেই কথা শেষ হয়ে গেলো। শাহানারা ফোন রেখে শশীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, রোদ্র ফোন দিয়েছিলো তোর কথা জিগাস করলো কিন্তু তুই ঘুমিয়ে ছিলি বিধায় ডাকতে নিষেধ করলো ও। আয় এখানে এসে আমার কাছে বসতো। শশী গিয়ে শাহানারার পাশে বসতেই ওনি শশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন শশী কিছু একটা ভেবে শাহানারাকে জিগাস করলেন।

আচ্ছা আন্টি ওই যে সেদিন যে মহিলাটা এসেছিলো ওনি কে?

শশীর কথায় শাহানারার মুখটা মলিন হয়ে গেলো তিনিও শুকনো হেসে বলল, সে অনেক কথা তোকে একদিন সময় করে বলবো না হয় এখন হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি দেখি রান্নাঘরে যাই।
,,,,,,,,,,,,,,,,
তুমি কি আমার সাথে এক জায়গায় যেতে পারবে?

বইঘরে বসে শশী একটা বই পড়ছিলো তখনি জয় এসে কথাটা বলল শশী মাথা উঁচু করে জয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জিগাস করল, কোথায়?

এইতো সামনেই আমার একটা বন্ধুর বাসায় ও ফোন দিয়ে বলল ওর বাসায় যেতে ওর কাছে আমার একটা জিনিস আছে সেটাই আনতে যাবো তুমি যাবে?

হ্যাঁ যাবো চলো।

শশী জয়ের হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে শাহানারাকে জানিয়ে দুজনে চলে গেলো। যেহেতু বাড়িটা পাশেই তাই ওরা আর গাড়ি নেয়নি। গেট পেরিয়ে মেইন রাস্তায় উঠতেই জয় শশীর হাত ছেড়ে বলল, এই তুমি আইসক্রিম খাবে? দাঁড়াও এখানে আমি তোমার জন্য আনছি।

শশী ভয় পেয়ে জয়ের হাত চেপে ধরে বলল, এই না না তুমি রাস্তা পাড় হয়ে ওদিকে যেও না। দেখছো না কত গাড়ি চলছে তুমি এতো লাফালাফি না করে চলো তোমার বন্ধুর বাড়ি যায়।

তুমি এতো ভয় পাও কেনো বলোত আর আমি হলাম জয় যেকিনা বড় হয়ে বড় ভাইয়ার মতো অনেক বড় অফিসার হবো তাই এসব ছোটোখাটো বিষয়ে ভয় পেলে চলবে নাহ৷ আর বড় ভাইয়া আমাকে বলেছে বাড়িতে এখন কেউ নেই শুধু আমি আছি তাই আমাকেই সবটা দেখে রাখতে হবে। তুমি ভয় পেয়ো না দেখবে আমি এই যাবো আর এই আসবো।

জয়ের কথা শুনে শশী মুচকি হাসলো জয় শশীর হাত ছেড়ে দিয়ে আইসক্রিম আনতে চলে গিয়েছে আর যাওয়ার আগে বড়দের মতো গম্ভীর স্বরে বলেও গিয়েছে যেনো এখানেই চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে ভুলেও যেনো রাস্তায় না উঠে। শশীও বাধ্য বাচ্চার মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়েছে। শশী দূরে জয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে তখনি ওর পায়ের কাছ ঘেঁষে একটা কার এসে থামলো। শশী ভয়ে খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো কার থেকে সাদা পাঞ্জাবি পড়া একটা সুদর্শন যুবক নেমে আসছে। শশী চোখ ফিরিয়ে আবার জয়ের দিকে তাকালো জয় ততক্ষণে ওখানে দাঁড়িয়েই খাওয়া শুরু করেছে।

আম সরি আমি দেখতে পাইনি আপনার কোথাও লাগেনি তো?

অপরিচিত কন্ঠ শুনে শশী তাকালো দেখলো সেই গাড়ি থেকে নামা লোকটাই। না না আমি ঠিক আছি সম্যসা নেই।

সামনে থাকা লোকটা কিছু বলার পূর্বেই জয় দৌড়ে এসে শশীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, কিছু হয়েছে? যা জিগাস করার আমাকে করুন। আর তুমি তোমাকে না বলেছি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলবা নাহ এই নাও তোমার আইসক্রিম আর চলো আমার সাথে।

ডানহাতে আইসক্রিম আর বামহাতে শশীর হাত ধরে চলে গেলো জয়। আগত ব্যাক্তি তার চোখ থেকে চশমাটা খুলে সেদিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবার চেষ্টা করলো। যেনো সে অনেক বড় কিছু ভুলে যাচ্ছে কিন্তু সেটা কী?
,,,,,,,,,,,,
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে আরো তিনটে মাস এর মধ্যে সমুদ্র আর আসেনি। রোদ্রেও সাথেও প্রতিদিন কথা হয় আর সমুদ্রের সাথে মাঝে মধ্যে। শশী হাজার কথা বলতে চাইলেও সমুদ্রের গম্ভীর স্বরে হ্যালো শুনলেই সবটা কেমন এলোমেলো হয়ে যায় কথাগুলো সব হারিয়ে যায়। পরিক্ষার রেজাল্ট দিয়ে দিয়েছে আরো মাস দুয়েক আগে, এর মধ্যে গ্রামেও বেশ কয়েকবার গিয়েছে শশী। শাহানারা এখানকার একটা কলেজে শশীকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। আর আজকে কলেজ থেকে পিকনিকে যাওয়ার দিন, শশী ভেবেছিলো যাবে নাহ কিন্তু শাহানারা বলল যেতে তাহলে সবটা দেখাও হবে আবার ভালোও লাগবে। শাহানারা অবশ্য অনুমতি দেওয়ার আগে সমুদ্রের কাছে শুনেছিলো, সবটা শোনার পর সমুদ্র কিছু বলেনি শুধু জিগাস করেছিলো কোথায় যাবে? প্রতিউত্তরে শাহানারা বলেছিলো খাগড়াছড়ি। ব্যাস এরপর শুধু সমুদ্র একটা কথায় বলেছিলো সেটা ছিলো আচ্ছা ঠিক আছে। শশী বাসের জানালার কাছে বসে বাইরে মুখ দিয়ে বসে আছে। এখনো বাস ছাড়েনি একটু পরেই ছাড়বে। ধপ করে পাশে কারো বসার শব্দে শশীর হুশ ফিরলো তাকিয়ে দেখে ওর ক্লাসমেট। শশী আবার জানালার বাইরে তাকালো তার এসব মোটেও ভালো লাগছে নাহ। বাস ছেড়ে দিয়েছে বেশ
কিছুক্ষণ আগে বাইরে থেকে শো শো করে বাতাস এসে চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে। পাশে বসে থাকা মেয়েটার নাম মিলি এতোক্ষণ বকবক করে এখন হা করে ঘুমাচ্ছে। শশী একবার সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে শাহানারা কে কল দিলো।

হ্যাঁ কতদূর রে তোরা?

এই তো আন্টি প্রায় চলে এসেছি সামনে থেকে হয়ত গাড়ি চেঞ্জ করবে পাহাড়ি রাস্তায় এসব বাস উঠবে নাহ। তাই জন্য হয়ত অন্য গাড়ি নিবে সেটাই তো বলল আমি ওতোকিছু জানি নাহ ওরা বলল তাই আর কি।

আচ্ছা সাবধানে থাকিস। ও তোকে তো বলতে ভুলেই গেছি সমুদ্র সপ্তাহ খানিক আগে ফোনে বলেছিলো ওনাকি খাগড়াছড়ি তে আছে। এখনো আছে কিনা জানি নাহ থাকলে ভালোই হতো আমার চিন্তাটা একটু কমতো।

সমুদ্রের কথা শুনতেই বুকের মধ্যে কেমন ধক করে উঠলো, কথা শেষ করে ফোন রেখে শশী মনে মনে ভাবছে সত্যিই সমুদ্র এখনো ওখানে আছে? আর থাকলেই বা কি ওর সাথে দেখা হবে নাকি। পরক্ষণেই আবার মনে মনে বলল ইস যদি দেখা হতো কতদিন লোকটাকে দেখে নাহ। নিজের এমন নিলজ্জ ভাবনায় নিজেরই কেমন রাগ হলো। এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই দুচোখে ঘুম নেমে আসলো, তবে কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি নাহ মিলির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম থেকে উঠে দেখি বাসের প্রায় সবাই নেমে গেছে এখান থেকে গাড়ি চেঞ্জ করতে হবে। শশীও তড়িঘড়ি করে নিজের ব্যাগটা নিয়ে নেমে গেলো। তারপর ছাঁদ খোলা ছোট ছোট গাড়িতে করে তাদের নাকি যেতে হবে, এই গাড়ি শশী কখনো দেখেনি তাই নামও জানে নাহ। মিলির হাত ধরে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসল, দ্রুত বেগে গাড়ি সামনের দিকে চলতে শুরু করলো। ছেলে মেয়েরা বেশ উচ্ছাসিত তাদের সাথে কারো কারো বাবা মা কিংবা ভাই বোনরাও এসেছে। তবে শশী একায় এসেছে শাহানারা এতোদূরে জার্নি করতে পারবে নাহ আবার জয়ের পরিক্ষা চলছে। তবে তিনি কলেজে সকল স্যার ম্যামকে বলে দিয়েছেন শশীর খেয়াল রাখতে। শশী অবাক হয়ে আশে পাশের দৃশ্য দেখতে লাগলো, এক মুহুর্তের জন্য যেনো মনে হলো ও ওদের হিজলতলী চলে এসেছে। দুপাশে কত গাছ জন জঙ্গল আর উঁচু উঁচু পাহাড়ের গাঁয়ে ছোটো ছোটো ঘর। বেশ খানিকক্ষণ চলার পর গাড়ি থেমে গেলো শশী চিন্তিত মুখ করে সামনে তাকাতেই মিলি বলল, এখান থেকে বাকি পথ আর্মিরা দিয়ে আসবে। সামনেই ওদের ক্যাম্প, হয়ত কোনো সম্যসা এই জন্য ওনারা দিয়ে আসবে। আর্মির কথা শুনতেই শশীর হাঁসফাস লাগতে শুরু করল। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই দেখলো ওদের মতো আরো অনেকেই গাড়ি থামিয়ে হাঁটাহাটি করছে। শশী একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলো আর্মির পোশাক পড়া কয়েকজন সামনে থেকে গাড়ির ড্রাইভারদের সাথে কথা বলছে। শশীর অবাধ্য চোখ দুটো সমুদ্র কেই খুঁজতেছে কিন্তু সে কোথায়? যতটা সময় শশীরা ওখানে ছিলো শশী আশে পাশে দেখার নাম করে শুধু সমুদ্র কেই খুঁজেছে কিন্তু পায়নি৷ হয়ত ওনি এখান থেকে চলে গেছে, হতাশ হয়ে শশী আবার গাড়িতে গিয়ে বসল কে জানে আবার কখন কোথায় সেই গম্ভীর লোকটার সাথে দেখা হবে।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১৭
,
খুবি আতংক নিয়ে শশী তার জন্য বরাদ্দ রুমটাতে বসে আছে। স্যার সবাইকে রুম থেকে বের হতে নিষেধ করেছে। খাগড়াছড়ি আসার পরেরদিনই যে এমন অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে ওরা ভাবেনি। পহাড়ি অঞ্চল গুলোতে বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে। বড় রকমের ঝড় আসার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস, যদিও ঝড়ের খবর আরো আগেই দেওয়া হয়েছিলো কিন্তু এটা যে এমন রূপ ধারণ করবে সেটা সবারই অজানা ছিলো। যেহেতু পাহাড়ি অঞ্চল তাই ঝুঁকিও বেশি। এই রুমটাতে ওরা তিনজন থাকে, মিলি আর সাথে আরো একটি মেয়ে। বাইরে মেঘের গুড়ুম গুড়ুম শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে শশী। বাতাস শুরু হয়েছে সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, ঘড়িতে সময় দেখেই বুঝতে পারলো মাগরিবের আযান খানিক পূর্বেই হয়েছে। রুমের মাঝে টিপটিপ করে মোমবাতির অল্প আলো জ্বলছে, কিন্তু এখনো মিলির কোনো খোঁজ নেই। সেই বিকেলে বের হয়েছে মেয়েটা এখনো ফিরে আসেনি। অনেক ভেবে চিন্তে শশী সিদ্ধান্ত নিলো এবার ব্যাপারটা স্যারকে জানাতেই হবে। আরো আগেই জানানো উচিত ছিলো কিন্তু মিলি বারবার করে নিষেধ করায় বলেনি। শশী রুমের মেয়েরটার সাথে আস্তে করে বাইরে বের হলো, পুরো করিডর অন্ধকারে নিমজ্জিত হাতে টিপটিপ করে জ্বলতে থাকা মোমবাতিটা নিয়ে সামনের দিকে এগোলো। দায়িত্বে থাকা ওদের স্যারের রুমের সামনে গিয়ে নক করতেই ওনি ভিতর থেকে দরজা খুলে বাইরে আসলো। সবটা শোনার পর ওনি ভীষণ রেগে গেলেন কথাটা ওনাকে আরো আগে জানানো হলো না কেনো। কিন্তু এখন তো আর কিছুই করার নেই ঝড় থামা অবধি অপেক্ষা করা ছাড়া। দুজনের জন্য তো আর এখন এতোগুলো জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারবেন নাহ। দুজনের কথাশুনে শশী চমকে গেলো কিন্তু পরে জানতে পারলো যে মিলি ওদেরই ক্লাসের একটা ছেলের সাথে বেরিয়েছে।
,,,,,,,,,,,,
ঝড় থামলেও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি এখনো থামেনি রিসোর্ট এর লোকসহ আরো কয়েকজন মিলে মিলিকে খুঁজতে বেরিয়েছে। শশীও তাদের সাথে গিয়েছে যদিও স্যার নিষেধ করেছিলো কিন্তু ও শোনেনি বলল কাছে কোথাও খুঁজে ও ফিরে আসবে। রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে প্রায় অনেকটা সামনে গেলো কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলো নাহ। আর সামনে যাওয়া যাবে নাহ, গাছ পড়ে রাস্তা ব্লক হয়ে আছে। উপায় না পেয়ে সবাই রিসোর্টের দিকে ফিরে আসতে লাগলো, কাছাকাছি আসতেই দেখলো মিলি আর সাথের ছেলেটা ভিজে কাপড় নিয়ে রিসোর্টের দিকেই আসছে। ওদের দেখে সবার ওদের দিকে এগিয়ে গেলো, প্রথমে স্যার রাগ করলেও পরে ওরা সুস্থ আছে দেখে আর কিছু বললো নাহ পরে ওনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,

সবাই তাহলে এখানেই আছে এখন সবাই ভিতরে চলো আর আমাকে না জানিয়ে কেউ বাইরে যাবে নাহ ঠিক আছে?

তখনি ওদের মধ্যে থেকে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে বলল, স্যার এখানে তো কোথাও শশীকে দেখতে পাচ্ছি নাহ ও কোথায় গেলো? আমাদের সাথেই তো ছিলো।

ওহ শিট, কি বলছো ভালো করে খুঁজেছো সব জায়গায়? হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলো। এখন আবার ওকে কোথায় খুঁজবো?
,,,,,,,,,,,,
কেটে যাওয়া পা চেপে ধরে রাস্তার মধ্যে বসে আছে শশী, তখন অন্ধকারে কিছু একটার সাথে বেঁধে পা কেটে গিয়েছে। পিছন থেকে ওদের ডাকলেও কেউ শোনেনি ক্রমশ বৃষ্টির বেগ বেড়েই যাচ্ছে। শশী ভিজা কাপড়ে কোনো মতে উঠে দাঁড়ালো চারপাশে অন্ধকার মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় যা একটু দেখা যাচ্ছে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে সামনের দিকে এগোতে লাগলো আর সাথের সবাইকে ডাকছে কিন্তু কোথাও কেউ নেই। দুপাশে জঙ্গল আর মাঝের রাস্তা দিয়ে হাঁটছে শশী। এখান থেকে রিসোর্ট কতদূরে সেটাও জানে না, আগে কখনো আসা হয়নি তাই রাস্তাটাও অচেনা। একটু সামনে এগোতেই হঠাৎ পাশ থেকে একটা গাছ ভেঙ্গে শশীর সামনে পড়লো। শশী ভয়ে চিৎকার করে কয়েক পা পিছনে সরে গেলো, মূলত ভারী বৃষ্টির কারণে গাছের গোড়ায় মাটি সরে গাছটা পড়ে গিয়েছে। প্রায় কিছুক্ষণ ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো শশী তারপর কোনো রকমে কাঁপা কাঁপা গায়ে গাছটা এড়িয়ে সামনের দিকে গেলো। হাঁটতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে অন্ধকারে পায়ের জুতোজোড়া কোথায় পড়েছে সেটাও অজানা, হাঁটতে গেলে কাঁটা জায়গায় চাপ লাগছে সাথে মাটি কাঁদা ডুকছে এর জন্য বেথ্যাটা অসহনীয়।তবুও কোনো রকমে সামনের দিকে যেতেই দেখলো রাস্তার পাশেই ছোট খুপড়ি মতো একটা ঘড় তবে ঝড়ের কারণে সেটার উপরের চালটা উড়ে গিয়েছে। শশী কোনো রকমে ওই খুপড়ির কাছে গেলো পেতে রাখা বাঁশের বেঞ্চ এ বসে কাঁপতে লাগল। অনেকক্ষণ ভিজার কারণে প্রচন্ড মাথা বেথ্যা করছে, পায়েও জ্বালা করছে। অন্ধকারে নির্জন একটা রাস্তার পাশে বসে আছে। এখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে কখন থামবে কে জানে, তখনি শশী দেখলো দূর থেকে একটা আলো এদিকেই আসছে। হয়ত কেউ গাড়ি নিয়ে আসছে শশী কোনো রকমে তড়িঘড়ি করে রাস্তায় গিয়ে হাত নাড়ালো। গলা দিয়ে কোনো স্বর বের হচ্ছে না। গাড়িটা যত কাছে আসছে ততই মনে হচ্ছে আশে পাশের সবকিছু ঘুরছে। ঝাপ্সা চোখে শশী দেখল গাড়িটা ওর থেকে কিছুটা দূরে এসে থেমেছে গাড়ি থেকে দুইজন লোক বেরিয়ে ওর দিকেই আসছে। ব্যাস আর কিছু চোখে পড়লো নাহ, চারপাশটা অন্ধকার থেকে আরো বেশি অন্ধকার হয়ে আসলো। ফল স্বরূপ কংক্রিটের রাস্তার উপর আঁচড়ে পড়ল।

পাহাড়ি ঢল নেমে গাছ পড়ে রাস্তা ব্লক হয়ে আছে। এতে সাধারণ মানুষ এর যাতায়াত এর অনেক সম্যসা হয়,আবার ঝড়ে পাহাড়িদের ছোট ছোট ঘর বাড়ি ভেঙ্গে পড়ে বিপদজনক অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। তাদের রেসকিউ করার জন্যই মূলত আর্মিদের এই ঝড় বৃষ্টির রাতেও বের হতে হয়েছে। রাস্তায় গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে সেই খবর পেতেই সমুদ্র ওর টিম নিয়ে সেদিকেই যাচ্ছিলো তখনি দেখলো দূরে রাস্তার মাঝে কেউ একজন দাঁড়িয়ে হাত নাড়াচ্ছে। হয়ত কোনো বিপদে পড়েছে এই জন্য সমুদ্র ড্রাইভারকে বলল গাড়ি থামাতে। গাড়ি থামতেই এক লাফে নিচে নেমে এলো সমুদ্র সাথে আরো দুজনও নামলো। একটু কাছে যেতেই বুঝলো কোনো মেয়ে, কিন্তু সমুদ্র কাছে যাওয়ার আগেই মেয়েটা রাস্তার উপর পড়ে গেলো। টানা পায়ে সমুদ্র কাছে গিয়ে বসে গাড়ির আলোয় দেখলো মেয়েটা আর কেউ নাহ তার খুবি চেনা একটা মুখ। শশীকে এই অবস্থায় এখানে দেখে সমুদ্র অবাক হয়ে সাদা হয়ে যাওয়া শশীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

স্যার মনে হচ্ছে মেয়েটা রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে হয়ত অনেক্ক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজেছে এই জন্য কেমন ফ্যাকাসে লাগছে।

পিছন থেকে আসা কথার আওয়াজে সমুদ্রের ধ্যান ফিরলো তড়িঘড়ি করে শশীকে কোলে তুলে নিলো। গাড়িতে উঠতেই এক পাশের বেঞ্চ থেকে তিনজন উঠে অন্যপাশে বসল। সমুদ্র শশীকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেই বসল, শশীর গায়ের উড়না দিয়ে শশীর পুরো শরীলটা ভালো করে ঢেকে দিলো। পুরো শরীল বরফের মতো ঠান্ডা, বাকিরা শশীর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে সমুদ্র পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বাকিদের বলল, গাড়ি ঘুরিয়ে ক্যাম্প এর দিকে চলো ওকে ওখানে রেখে তারপর সামনে যাবো।

ঠিক আছে স্যার।

চোখে হাজারো প্রশ্ন মনের মধ্যে অনেক কৌতুহল থাকলেও কেউ কোনো প্রশ্ন করলো নাহ। সমুদ্র শশীকে ভালো করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো যেনো নিজের শরীলের তাপ দিয়ে শশীর ছোট্ট ঠান্ডা শরীলটা উষ্ণতা পায়।
,,,,,,,,,,
বিকট মেঘের গর্জনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আধো আধো চোখটা খুলতেই প্রথমে নজরে আসলো মাথার উপর কাপড় জাতীয় কিছু ঝুলছে। রাতের কথা মনে হতেই চট করে উঠে বসে পড়লাম, তাতেই মাথার মধ্যে ঘুরে উঠল। বেশ কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে রেখে আশে পাশে তাকাতেই বুঝতে পারলাম আমি কারো তাবুর ভেতর আছি। পাশেই দড়িতে আর্মিদের পোশাক ঝুলছে, বাইরে বোধহয় এখনো বৃষ্টি হচ্ছে টিপটপ শব্দ আসছে। কিন্তু এখন রাত নাকি দিন আর আমিই বা কোথায়? এতো এতো প্রশ্ন কিন্তু কোনো উত্তর নেই। পা নাড়াতেই বুঝলাম ব্যাথাটা আগের থেকে কমেছে, পায়ে সাদা কিছু দিয়ে বাঁধা। কিছু একটা মনে হচ্ছেই তড়িঘড়ি করে নিজের দিকে তাকালাম, নাহ কালকে রাতের জামাটাই গায়ে তবে অর্ধেক ভেজা উড়নাটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিলাম। মাথাটা এখনো বেথ্যা করছে হয়ত ভিজার কারণে জ্বর এসেছে। যেহেতু বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তাই আর বাইরে গেলাম নাহ অপেক্ষা করছি যদি কেউ আসে। বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেলো কিন্তু কারো আসার নামগন্ধ নেই আর না পেরে ভাবলাম এবার আমিই বাইরে যায়। কেবলি উঠতে যাবো তখনি কারো আসার আভাস পেয়ে আর উঠলাম নাহ। উড়না ঠিকঠাক ভাবে আছে কিনা সেটা একবার দেখে সামনে তাকালাম, তখনি তাবুর কাপড়টা সরিয়ে মাথা নিচু করে কেউ একজন ভিতরে ঢুকলো। পরনে আর্মি প্যান্ট আর গায়ে সাদা গেন্জি কখনো ভাবিনি এভাবে ওনাকে দেখবো। ওনাকে এখানে দেখে ভিতর থেকে কান্নাগুলো বেরিয়ে আসতে চাইছে। মন চাইছে দৌড়ে গিয়ে ওনাকে জাপ্টে ধরে ওনার বিশাল বুকের মধ্যে আমার ছোট্ট দেহটা লুকিয়ে ফেলি তারপর বাচ্চাদের মতো কান্না করে মনটাকে হালকা করি।

এটা খেয়ে এই ঔষধ টা খেয়ে নাও তাহলে আরাম পাবে।

ঠোঁট কাঁমড়ে কান্না আঁকানোর চেষ্টা করছি, মুখের মধ্যে গরম তরল জাতীয় কিছু অনুভব করলাম হয়ত দাঁত দিয়ে চেপে ধরার জন্য ঠোঁট কেটে গেছে। তবে এতো চেষ্টা করেও কান্না আটকাতে পারলাম নাহ। ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমার কান্না দেখেও ওনার কোনো হেলেদুল হলো নাহ, ওনি কয়েক পা এগিয়ে এসে হাতের জিনিসটা আমার সামনে রেখে একটু দূরে গিয়ে বসল। হাত দিয়ে মাথায় থাকা পানিটা ঝেঁড়ে শশীর দিকে তাকিয়ে বলল, এখন কান্না করছো কেনো? এতোকিছু ঘটনানোর সময় মনে ছিলো নাহ?

ওনার কথা শুনে আমি আর কিছু বললাম নাহ মাথা নিচু করে বসে থাকলাম, ভীষণ অভিমান হচ্ছে ওনার উপর কোথায় ওনি জিগাস করবে আমি কেমন আছি পায়ে ব্যাথা করছে কিনা তা না উল্টো সব কিছুর জন্য আমাকেই দায়ী করছে। আমি কি এসব ইচ্ছে করে করেছি নাকি? কিন্তু এই কথাটা ওনাকে বোঝাবে কে। আমি এখানে আসলাম কীভাবে? আর এটা কোন জায়গা? এখন কয়টা বাজে?

শশীর এতো এতো প্রশ্ন শুনেও সমুদ্রের মধ্যে কোনো ভাবাবেগ দেখা গেলো নাহ, যেনো মনে হচ্ছে শশীর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো ইচ্ছেই সমুদ্রের নেই। নিজেই তো রাস্তার মাঝে অঙ্গান হয়ে পড়ে ছিলে আর আমাকে জিগাস করছো এখানে কীভাবে আসলে।

তারমানে ওটা আপনাদের গাড়ি ছিলো?

সেটাই তো মনে হচ্ছে। কথাটা বলে সমুদ্র উঠে দাঁড়িয়ে বলল, এটা খেয়ে ঔষধ খেয়ে তৈরি হয়ে থাকো আমি তোমাকে রিসোর্টে দিয়ে আসবো।

আমি যাবো নাহ।

শশীর এমন কথা শুনে সমুদ্র বেরিয়ে যেতে গিয়েও থেমে গিয়ে পিছন ফিরে ভ্রু কুঁচকে শশীর দিকে তাকালো। শশী ততক্ষণে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে মুখ ফসকে নিজের বলা কথায় এখন মনে হচ্ছে মাটি ফাঁক করে মাটির নিচে চলে যায়। সমুদ্র কিছু বলল নাহ কিছুক্ষণ শশীর দিকে তাকিয়ে থেকে বাইরে বেরিয়ে গেলো।

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-১৪+১৫

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১৪
,
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে আরো দুটো মাস, সেদিন ইমেইল পাওয়ার পরেরদিনই সমুদ্র চলে গেছে তার কাজের জায়গায়। বাড়িতে শুধু শশী শাহানারা এবং জয়। শশীর পরিক্ষা চলছে এই জন্য শশীও গ্রামে চলে গেছে। আজকে শশীর শেষ পরিক্ষা আর দুইদিন থেকেই আবার শহরে ফিরে যাওয়া লাগবে। ফাইল হাতে গাড়ি থেকে নেমে মাটির রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ির দিকে যাচ্ছে। চাইলে মেইন রাস্তা থেকে ভ্যানে একেবারে বাড়ির সামনে নামা যায় তবে শশী সেটা করেনি। অনেকদিন নিজের বাড়ি থেকে গ্রাম থেকে দূরে থাকায় যেনো মায়াটা আরো বেশি পড়ে গেছে। দুইদিন পরতো আবার চলে যাওয়া লাগবে এইজন্য পরিবেশটা উপভোগ করার জন্য এইটা করলো। শশী হাঁটতে হাঁটতে সেই পেয়ারা গাছের নিচে এসে থেমে গেলো আজ থেকে কয়েকমাস আগে ঠিক এই জায়গাটায় সমুদ্রের সাথে ওর প্রথম দেখা হয়েছিলো। একটা উঁচু পাহাড়ের মতো লোক গম্ভীর স্বরে শশীকে জিগাস করেছিলো, এই মেয়ে জামশেদ মাস্টার এর বাড়ি কোনটা চিনো? শশী সমুদ্রের মতো বলার চেষ্টা করে নিজে নিজেই হেসে ফেললো। তখন ওই লোকটাকে একদম পছন্দ হয়নি কিন্তু এই কয়েকটা মাসে ওই লোকটার সম্মন্ধে যতটা জেনেছি যেনো ততই ওই লোকটার প্রেমে পড়ে গিয়েছি। আসলেই লোকটার নামের মতো সেও অনেক গহীন ওনার গভীরে যেতে গেলে ডুবে যেতে হবে। সমুদ্র যাওয়ার পর শশীই ওই ঘরটাকে পরিষ্কার রাখতো কেনো জানি বেশ টানতো ঘরটা। প্রথমে অবুঝ মন কিছু বুঝতে না পারলেও আস্তে আস্তে ঠিক বুঝে গেছে আসলে টানটা কিসের জন্য ছিলো। হাতের ছোট্ট ঘড়ির দিকে তাকাতেই শশীর টনক নড়ল ভাবতে ভাবতে এখানেই বেশ খানিকটা সময় কাটিয়ে দিয়েছে। তড়িঘড়ি করে সামনে এগোতেই দেখলো শাহিন তার দুজন সাঙ্গদের নিয়ে ওর দিকেই আসছে। শশী দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটাতে গেলে শাহিন সামনে দাঁড়িয়ে বলল।

কিরে শহরে গিয়াতো দেহি আরো বেশি সুন্দর হইয়া গেছোস। তা ওই সমুদ্র বুঝি বেশ আদর করে? আচ্ছা আমার একটা প্রশ্ন তোদের কি আদেও বিয়েটা হইছে? নাকি এমনে এমনেই ওরে মজা দিতাছোস।

দেখ শাহিন তোর সাথে এসব ফালতু কথা বলার সময় আমার নাই রাস্তা ছাড় দেরি হচ্ছে আমার।

হ রাস্তাতো ছাড়বোই তবে আমি কিন্তু একটা গোপন কথা জানি যেইটা গ্রামের কেউ জানে নাহ। ওই সমুদ্রের লগে তোর বিয়া হইনাই তুই আর তোর বাপ গ্রামের সবাইরে বোকা বানাতে পারলেও আমারে পারবি নাহ। তা বিয়া ছাড়াইতো তুই ওরে সব দিচ্ছিস বলি আমারেও একটু ছিটেফোঁটা দে আমরাও খুশি থাকি কি বলিস তোরা। কথাগুলো বলেই শাহিনসহ সবাই হাসাহাসি শুরু করল। ওদের কথায় শশীর রাগে লজ্জায় চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে গাল বেঁয়ে পড়ল। কথাটা তো সত্যিই বিয়ে ছাড়া এভাবে আরেকজন এর বাড়িতে থাকলে মানুষ তো আজেবাজে কথা বলবেই। শশী কিছু না বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেলো শাহিন শশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হেসে কমর থেকে ফোনটা বের করে কারো কাছে ফোন দিলো।

হ আম্মা আপনার কাজ শ্যাষ এখন দেখি ওই শশী কেমনে আমারে ছাইড়া সমুদ্রের কাছে যায়। আপনার কথা মতোই সব হচ্ছে তবে দিন শেষে কিন্তু শশীকে আমার চাই।

ওপাশ থেকে কি বলল সেটা বোঝা গেলো নাহ তবে শাহিনের মুখে হাসি ফুঁটে উঠল। হয়ত ওপাশের থাকা ব্যাক্তি শাহিনের মন মতোই উত্তর দিয়েছে।
,,,,,,,,,,
মাস্টার বাড়ির সামনেই সাদা রঙের গাড়িটা এসে থামল জয় গাড়ি থেকে নিচে নেমে একবার বাড়িটার দিকে তাকালো। তারপর আবার ভিতরে গিয়ে মায়ের হাত ধরে সাবধানে মাকে নিচে নামিয়ে আনলো। তার বরাবরই ইচ্ছে ও ওর বড় ভাইয়ার মতো হবে। সেই জন্যই তো ওর বড় ভাইয়া যাওয়ার সময় ওকে দুটো দায়িত্ব দিয়ে গেছে সেই দায়িত্বই ও এখন পালন করছে। গাড়ির দরজা বন্ধ করে মাকে নিয়ে গেট দিয়ে ভিতরে গেলো, এক হাতে মাকে ধরে রাখলেও তার দু চোখ অন্য কাউকে খুঁজতে ব্যাস্ত। কারণ সব খবর যদি ঠিকঠাক ভাবে তার বড় ভাইয়াকে না দিতে পারে তাহলে সে কীভাবে একজন বড় অফিসার হবে। বাড়ির মধ্যে থেকে একে একে সবাই বেরিয়ে আসলো, শশী এসে শাহানারা কে জড়িয়ে ধরতেই শাহানারা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

কি হয়েছে তোর এতো করে ফোন করে বললাম জামশেদ ভাই এর সাথে চলে আয় কিন্তু মেয়ের সেই এক কথা যাবো নাহ। তাইতো বাধ্য হয়ে আমাকেই আসতে হলো এখন বল কি হয়েছে যাবি না কেনো?

শশী কিছু বললো নাহ চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল, আমি আর ওবাড়ি যাবো নাহ।

ওদিকে জয় শশীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে সব নোট করছে। বাড়ি আসার এক মাসের মধ্যে আগের থেকে একটু চিকন হয়েছে, আগের মতো আর দুষ্টুমি করে নাহ। বেশ খানিকটা ফর্সা হয়েছে আর আরো বেশি সুন্দরী হয়ে গেছে। এই কথাগুলো মনের খাতায় নোট করে রাখল। পারভীন এগিয়ে এসে শাহানারার পাশে দাঁড়িয়ে বলল।

আরে আপা এসব কথা পরে হবে আপনি আগে ভিতরে চলেন তো। এতো দূর থেকে এসেছেন আপনি তো অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

সবাই ভিতরে চলে গেলো জয় পিছন পিছন যেতে গিয়েও থেমে গেলো সামনে তাকিয়ে দেখে জোনাকি দুহাত পিছনে দিয়ে জয়ের দিকে তাকিয়ে ঢুলছে আর মিটমিট করে হাসছে। জয় সমুদ্রের মতো ভাব নিয়ে ওর মতো হাঁটা চেষ্টা করে হেলেদুলে জোনাকির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, তুমি এভাবে আমাকে দেখে হাসতেছো কেনো?

জোনাকি কিছু বলল না হাসতে হাসতে দৌড়ে বাড়ির মধ্যে চলে গেলো। জয় কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে নিজেই নিজেকে বলল, এই মেয়ের থেকে সাবধানে থাকতে হবে মেয়েটা খুবি বিপদজনক।
,,,,,,,,,
ধান কাটা হয়েছে উঠান জুড়ে যেনো ধানের মেলা বইছে। বাড়ির মহিলারা একসাথে কাজে মগ্ন শশী উঠানের এক পাশে পেতে রাখা চড়াটের উপর বসে বসে পা দুলাচ্চে। তখনি দেখলো গেট দিয়ে শাহিনসহ গ্রামের আরো কিছু বয়স্ক লোক ওদের বাড়ির দিকেই আসছে। শশী উড়নাটা মাথায় দিয়ে দৌড়ে ঘরের ভিতর চলে গেলো, এই ভর দুপুরে এভাবে বাড়ির উপর ওনাদের আসতে দেখে জামশেদ মাস্টার বড়ই চিন্তিত মুখে সেদিকে এগিয়ে গেলো। চেয়ারম্যান বেশ ব্যাঙ্গ করেই বলল, কি মাস্টার তুমি গ্রামের মধ্যে এসব কি শুরু করেছো। নিজে মাস্টার হয়ে বাড়ির মেয়েদের দিয়ে এসব আকাম কুকাম করালে স্কুলের ছেলেমেয়ে তোমার কাছ থেকে কি শিখব?

সারাজীবন সবার সামনে মাথা উঁচু করে সম্মানের সহিত চলা জামশেদ মাস্টার হঠাৎ এই কথাটা শুনে বেশ ঘাবড়ে গেলেন। তিনি মনে মনে এতোদিন ধরে যেই ভয়টা পাচ্ছিলেন তাহলে কি শেষ পযন্ত সেটাই হলো? এবার ওনি কি করবেন একটা মিথ্যা ঢাকতে গিয়ে এতোগুলো মিথ্যা বলেও কোনো কাজ হলো নাহ। এই জন্যই হয়ত বলে সত্য কখনো চাপা থাকে নাহ, তবুও ভিতরে ভিতরে নিজেকে যথা সম্ভব ঠিক রেখে বেশ গম্ভীর স্বরে বললেন।

মুখে লাগাম দিন চেয়ারম্যান সাহেব কোথায় দাঁড়িয়ে কি কথা বলছেন সেটা একবার ভেবে দেখুন। আপনি কিসের ভিত্তিতে আমার বাড়ির উপর এসে এভাবে আমার মেয়েকে আজেবাজে কথা বলছেন।

চোরের মায়ের বড় গলা শোনো মাস্টার আমরা সব জানি তুমি যে কত বড় চালবাজ সেটা আমরা ঠিক বুঝে গেছি। খুবতো আমাদের বোকা বানিয়ে নিজের অবিবাহিত মেয়েকে শহরে পাঠিয়ে দিয়েছিলে তাও আবার সেই বাড়িতে যেখানে কিনা দুটো জোয়ান জোয়ান ছেলে থাকে। ছিঃ ছিঃ মাস্টার আমরা অন্তত তোমার থেকে এমনটা আশা করেনি।

জীবনে এই শেষ বয়সটায় এসে এভাবে সবার সামনে অপমানিত হতে হবে কখনো কল্পনাও করেননি জামশেদ মাস্টার। হঠাৎই বুকের মধ্যে কেমন চিনচিনে ব্যথা অনুভব হলো। ক্রমে ক্রমে ব্যাথাটা বেড়েই চলেছে, স্বামীর আসন্ন পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ধূলো মাথা হাতেই পারভিন তাকে ধরল। ততক্ষণে মাস্টার নিচে মাটিতে বসে পড়েছে নিশ্বাস নিতে খুবি কষ্ট হচ্ছে৷ মনে হচ্ছে এই বার শ্বাস ছাড়লে বুঝি আর পরের শ্বাসটা নিতে পারবে নাহ। হাতের মুটোই থাকা ফোনের স্কিনে জামশেদ মাস্টার এর এহেন অবস্থা দেখে ইজি চেয়ারে দুলতে দুলতে মুখ দিয়ে চুঁ চুঁ শব্দ করে বাঁকা হেসে বেশ আফসোসের স্বরেই মালবিকা বলল।

আজ শুধু মাত্র তোমার জন্য একটা পরিবারের উপর এতোটা বিপদ নেমে আসলো সমুদ্র। এবার তুমি কি করবে? চাইলেও তুমি ওখানে যেতে পারবে নাহ আর বাঁচানো তো দূরে থাক। ঠিক এভাবেই তোমার কাছের মানুষগুলো কে আস্তে আস্তে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দেবো। আমি তোমার ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি সমুদ্র তোমারও শেষ পরিনতি ওমনি হবে যেমনটা অভিক এর হয়েছিলো।
,,,,,,,,,
মাথায় তেল পানি বসায়ে বুকেও খানিক তেল ডলে দিলো পারভিন। খুব কমল স্বরে স্বামীকে জিগাস করলো, এখনো কি আপনার বুকের মধ্যে বেথ্যা করছে?

প্রতিউত্তরে কোনো জবাব দিলেন নাহ জামশেদ মাস্টার, শাহানারা পাশে বসে অপরাধী স্বরে বললেন, আজকে এসব আমার জন্যই হচ্ছে আমি যদি সেদিন শশীকে না নিয়ে যেতাম তাহলে এমনটা হতো নাহ।

আপা আপনি কেনো নিজেকে এভাবে বলছেন আসলে কি বলুন তো কিছু মানুষের কাজই এমন যারা শুধু একটু সুযোগ খুঁজে কীভাবে অন্যকে হেনস্তা করা যায়। জন্মেছি তো এই গ্রামে তাই প্রতিটা মানুষ কে খুব ভালো করে চিনি কে কি রকম। আপনি চিন্তা করবেন নাহ আমিও এর শেষ দেখে ছাড়বো দেখি ওনারা কি করতে পারে।
,,,,,,,,,
ছোট্ট টেবিলের উপর অযন্তে ফেলে রাখা ফোনটা এই নিয়ে বিশবার বেজে বন্ধ হয়ে গেলো। ফোনের মালিক ফোনের কাছে না থাকায় ফোনটা এভাবে অবহেলায় পড়ে আছে। কিন্তু ওপাশ থেকে যে কল দিচ্ছে সে হয়ত বড়ই ধৈর্যশীল নয়ত বিশ বারের মাথায় কল না ধরলে পুনরায় পুরো দমে আবার সে একুশ বারের মতো কল দিতো নাহ। ক্লান্ত শরীলে তাবুর মধ্যে প্রবেশ করলো সমুদ্র ওরা একটা মিশনে আছে যার জন্য আপাতত গহীন জঙ্গলেই দিনরাত্রী যাপন করা লাগছে। পায়ের জুতোটা খুলে মোজাটা খুলতেই পায়ে ঠান্ডা বাতাস লাগতেই বেশ আরাম অনুভব করলো। আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ঘা হয়ে গেছে টানা ঘন্টার পর ঘন্টা পানিতে পা ভিজিয়ে রাখা কাঁদার মধ্যে দৌড়ানো নিজের অযন্তের ফলেই এই অবস্থা। গাঁ থেকে ইউনিফর্ম টা খুলে পাশের দড়িতে ঝুলিয়ে রাখলো। পড়নে আর্মি প্যান্ট আর সাদা সেন্টু গেঞ্জি, দুহাতের কব্জিতে লম্বা লম্বা কাঁটাদাগ এগুলো জঙ্গলের মধ্যে দৌঁড়ানোর সময় লেগেছে। মাটিতে পেতে রাখা নাম মাত্র বিছানায় নিজের শরীলটা এলিয়ে দিলো। তখনি শুনতে পেলো তার সাইলেন্ট করে রাখা ছোট্ট ফোনটা বেজে চলেছে। হাত টানা করে ফোনটা সামনৈ ধরতেই কলটা কেটে গেলো, পুনরায় কল আসার আগেই সমুদ্র নিজেই কল দিলো।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১৫
,
মাস্টার বাড়ির উঠানে আবার ও বিচার সভা বসেছে, আশেপাশের অনেক মানুষই সেখানে উপস্থিত। মূলত তারা মজা নিতে এসেছে কালকের চায়ের দোকানের গল্পের মূল মাথা এটা করার জন্য।একটা চেয়ারে জামশেদ মাস্টার ও বসে আছে বাড়ির মেয়ে বউয়েরা ঘরের সামনে মাথায় কাপড় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা কাশি দিয়ে চেয়ারম্যান বলতে শুরু করলো, আমি আর কি বলবো আপনারা তো নিজের চোখেই সব দেখছেন। এই মাস্টার আমাদের সবাইকে ঠিক কীভাবে বোকাটাই না বানালো। ছিঃছিঃ গ্রামের এই প্রথম কোনো মাইয়া শহরে গিয়ে এমন আকাম কুকাম করলো। এখন আপনারাই বলেন এর কি বিচার করা যায়।

চেয়ারম্যান এর কথার সাথে সম্মতি দিলো আশেপাশের মানুষ কানাঘুষা করছে ছিঃ ছিঃ করছে। কেউ কেউ বলছে নিজে মাস্টার হয়ে বাড়ির মেয়েকে ভালো শিক্ষা দিতে পারেনি। এসব কথা জামশেদ মাস্টার চোখ বন্ধ করে হজম করছে তিনি কোনো কথাই বলছে নাহ। তখন শাহিন ভিড়ের মধ্যে থেকে একটু সামনে এগিয়ে এসে বলল, আমি একটা কথা বলতে চাই। আমি এর আগেও বলেছি আমি শশীকে বিয়ে করতে চাই কিন্তু আগের বার তো ওনারা আমাদের বোকা বানিয়ে মেয়েকে শহরে পাঠায় দিলো। কিন্তু আমার তবুও কোনো আপত্তি নাই আমি বিনা দ্বিধায় শশীরে বিয়ে করতে রাজি এখন বাকিটা আপনারা যা ভালো বোঝেন।

ছেলের কথাশুনে চেয়ারম্যান বুক ফুলিয়ে একটা হাসি দিয়ে ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলল, বাহ এই হলো চেয়ারম্যান এর পোলা। আমার পরে এই পদে একমাত্র তুই বসার যোগ্য। দেখো মাস্টার দেখো এতোকিছুর পরেও আমার ছেলে তোমার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি। এমন জামাই এই হিজলতলী খুঁজলেও একটা পাবা না তো আমার শেষ কথা হলো হয় মেয়েকে বিয়ে দেও নয়ত তোমাদের একঘরে করা হবে। কি কন আপনারা?

চেয়ারম্যান এর কথায় ওখানে থাকা সবাই সায় দিয়ে বলল, হ হ চেয়ারম্যান সাহেব একেবারে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন যদি শশীকে বিয়ে দেওয়া না হয় তাহলে ওর দেখাদেখি গ্রামের আরো সবাই সাহস পাবে এই কাজ করতে। শাহিন বাঁকা হেসে নিজের বাপের দিকে তাকালো চেয়ারম্যান ও হাসি দিয়ে বেশ আয়েশ করে চেয়ারে বসে বলল, তাহলে এই কথাই থাকলো আজকে রাতের মধ্যে বিয়া তাহলে চলেন আমরা সবাই এখন উঠি। মাস্টার তোমার তো কপাল খুলে গেলো তুমি আমার বিয়াই হতে যাচ্ছো।

এই বিয়ে হবে নাহ আপনারা যা করার করেন।

চিকন মেয়েলি গলায় এই কথাশুনে সবাই সেদিকে তাকালো, চেয়ারম্যান চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দেখলো শশী উঠানের মাঝে দাঁড়িয়ে কথাটা বলেছে। কথাটা বলে শশী পিছনে থাকা তার আব্বার দিকে তাকালো মেয়ের তাকানো দেখে জামশেদ মাস্টার চোখের পাতা ফেলে মাথা নাড়িয়ে মেয়েকে ভরসা দিলো যেনো চোখের ভাষায় বলে দিচ্ছে মা তুই আজকে বল সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দে। বুঝিয়ে দে সবাইকে জামশেদ মাস্টার তার মেয়েদের সঠিক শিক্ষায় দিয়েছে। বাবার থেকে চোখ ফিরিয়ে মাথার উড়নাটা ঠিক ভাবে টেনে নিলো। চেয়ারম্যান রেগে বলে উঠল, এটা কেমন ব্যাবহার, মাস্টার তোমার মেয়েকে বলো এখান থেকে যেতে তুমি বলোনি তোমার মেয়েকে বিচার সভায় মহিলাদের এভাবে আসা সঠিক নয়।

আমার আব্বা আমাকে সঠিক শিক্ষায় দিয়েছে আমি শুধু এখানে কয়েকটা কথা বলার জন্য এসেছি বলা হয়ে গেলে চলে যাবো।

মেয়েদের এতো বেশি কথা বলা ঠিক নয়। ওখানে থাকা একজন এই কথাটা বলতেই শশী তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, হ্যাঁ ঠিকি বলেছেন মেয়েদের বেশি কথা বলা উচিত নাহ। কারণ তারা যদি মাথা তুলে উচিত কথা বলা শুরু করে তখন আপনারা তাদের উপর আধিপত্য দেখাতে পারবেন নাহ। আর চেয়ারম্যান কাকা আপনি কি বললেন আমি শহরে গিয়ে আকাম কুকাম করে বেড়াচ্ছি আচ্ছা আপনি কি আমাকে ওইসব আকাম কুকাম করার সময় দেখেছেন? নাকি হাতেনাতে ধরেছেন কোনটা? না দেখে না জেনে নিজের মতো করে বানিয়ে দিলেন একটা কথা বাহ। মানে একজনের বাড়িতে কোনো ছেলে থাকলে সেই বাড়িতে যাওয়া মানে আকাম কুকাম করা? তাহলে আপনার বাড়িতেও তো আপনার ছেলে আছে তাহলে কি আপনার বোনের মেয়ে আপনার বাড়িতে আসে নাহ? এখানে সবার বাড়িতেই তো ছেলে আছে তো আপনাদের বাড়িতে কোনো মেয়ে আসে নাহ? আর আপনি কি বললেন আমার চরিত্রের ঠিক নাই কারণ ওইদিন ক্লাবঘরে আমাকে সমুদ্রের সাথে দেখেছেন তাই। তো এখানে আমার একটা প্রশ্ন আপনারা কেউ কি আমাকে আর ওনাকে খারাপ অবস্থায় পেয়েছিলেন? শাহিন গিয়ে আপনাদের বলল আর আপনারা সেই কথা অনুযায়ী কোনো কিছু না দেখেশুনে চলে আসলেন বিচার করতে। আচ্ছা মানলাম আমি সমুদ্রের সাথে খারাপ কিছু করার উদ্দেশ্য ওই ঘরে গিয়েছিলাম আর শাহিন তা দেখেছে তাহলে শাহিন তখনি আপনাদের ডেকে আনলো না কেনো? ওতো জানতো আমার পরিবারের লোকজন আমায় খুঁজতেছে তাহলে সে তখন গিয়ে বললো না কেনো? এখানে থাকা প্রতিটা মানুষই এসেছেন মজা নিতে কেউ সঠিক বিচার করতে আসেননি।

এইটুকু বলে শশী ওর চোখের পানি মুছে বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিলো এইটুকু বলতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে। বিচার করতে আসা সবাই একে অন্যের মুখ চাওয়া চাওয়ী করছে চারপাশে শুধুই ফিসফাস কথার আওয়াজ। লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে শশী আবার বলতে শুরু করলো, আমি এখন এই রাতেই শহরে যাবো এবং ওই বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করবো আপনাদের যা করার আছে আপনারা করেন। কি করবেন আমাদের একঘরে করে দিবেন তো ঠিক আছে করে দিন একঘরে, দরকার নাই এমন প্রতিবেশী যারা চোখ থাকতেও অন্ধ ঙ্গান থাকতেও নির্বোধ।

নিজের মন মতো সবটা বলা শেষে শশী দৌড়ে ওখান থেকে চলে গেলো। শাহানারা কানে ফোন রেখেই মুচকি হেসে ওপাশে থাকা সমুদ্র কে বলল, আমি আজকে সত্যিই অনেক খুশি তুই এই চাকরিতে যাওয়ার পর থেকেই সব সময় ভয়ে থাকতাম তোর উপর ভীষণ অভিমান হতো। তোকে হারানোর ভয় হতো, তোর বাবাকে হারিয়েছি অভিককে হারিয়েছি আমি অনেক ক্লান্ত তোর কিছু হলে সেটা সয্য করতে পারতাম নাহ। তবে তুই আজকে যেটা করলি এখন আর কোনো অভিমান নেই তোর উপর এটা দরকার ছিলো কিছু মানুষের ভুল তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার দরকার ছিলো যেটা শশী করেছে।

আমি চাই না আমার কারণে কোনো পরিবার এভাবে হেনস্তা হোক। এখানে আমার ও ভুল ছিলো মা তাই আমার যেটা ভালো মনে হয়েছে সেটাই করেছি। এখন তাহলে রাখছি অনেক ক্লান্ত লাগছে একটু ঘুম প্রয়োজন রাতে সময় পেলে কথা বলবো।

কথাশেষ করে সমুদ্র কান থেকে ফোন নামিয়ে পাশে রেখে দুইহাত মাথার নিচে দিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ আগের কথাগুলো ভাবতে লাগলো। একটু আগে যখন সমুদ্র ফোন হাতে নেয় দেখে ওর মায়ের নাম্বার থেকে অনেকগুলো ফোন এসেছে। সমুদ্র কল ব্যাক করতেই জয় ফোন ধরলো, এতোক্ষণ জয়ই কল দিচ্ছিলো। সমুদ্র জিগাস করতেই জয় হরবর করে সবটা বলল সব শুনে সমুদ্র মোটেও বিচলিত না হয়ে জয়কে বলল ফোনটা নিয়ে মাকে দিতে। জয় সেই মতো ফোনটা শাহানারার কাছে দিতেই সমুদ্র কিছু না বলে শুধু বলল ফোন নিয়ে সোজা শশীর কাছে যেতে। ছেলের কথামত শাহানারাও ফোন নিয়ে শশীর কাছে গেলো। শশী তখন নিজের ঘরে বসে কান্না করতে ব্যাস্ত আব্বার এতো অপমান হচ্ছে এই সবকিছুর জন্য নিজেকেই দায়ী করছে। আর যখনি মনে হচ্ছে এই সব কিছুই জন্য ও দায়ী তখনি নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। শাহানারা শশীর পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল।

সমুদ্র তোর সাথে কথা বলবে।

শশী অবাক হয়ে শাহানারার দিকে তাকালো তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা নিজের কানে ধরতেই ওপাশ থেকে সমুদ্র বেশ গম্ভীর স্বরে বলল, তোমাকে শুধু কয়েকটা কথা বলবো তারপর তুমি সিদ্ধান্ত নেবে যে তুমি কি করবে। এই যে তুমি এখন ঘরে বসে কোনো দোষ না করেও মুখ লুকিয়ে কান্না করছো এটা তোমার দুর্বলতা। আর কিছু মানুষ তোমার এই দুর্বলতা কেই কাজে লাগাচ্ছে। কারণ তারা জানে কাওকে ভেঙ্গে দিতে চাইলে তার দুর্বল জায়গায় আঘাত করতে হয়। আজকে তোমার জন্যই তোমার বাবাকে এতোটা অপমানিত হতে হচ্ছে।

এই কথাটা শোনার সাথে সাথে শশী কান্না করে ফেলল সমুদ্র ধমক দিয়ে বলল, এই মেয়ে কথায় কথায় এমন কান্না করো কেনো? তোমার জন্যই তো এসব হচ্ছে। তুমি চুপ করে আছো বলেই এসব হচ্ছে। তুমি চুপ করে আছো বলেই তারা তোমার বাবাকে অপমান করতে পারছে। এখন তোমার বাবার হয়ত আফসোস হতে পারে যে তার কোনো ছেলে নেই কেনো ছেলে থাকলে আজকে এই দিনে সে তার পাশে দাঁড়াতো। তুমি কিন্তু চাইলেই তোমার বাবাকে এই অপমান থেকে মুক্তি দিতে পারো, এর জন্য কি দরকার জানোত একটু সাহস কিন্তু সেটা তোমার নেই। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি তুনি জেনে বুঝে তোমার বাবাকে অপমানিত হতে দেখছো। মানুষ কি বলবে সেই ভয়ে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছো। পরিশেষে একটা কথায় বলবো নিজের দুর্বলতাকে হাতিয়ার বানাও যেনো কেউ তোমার দুর্বল জায়গায় আঘাত না করতে পারে মাকে ফোনটা দাও।

শশী ফোনটা শাহানারার কাছে দিয়ে দিলো। মা তুমি রুম থেকে চলে যাও এবার যা করার ও নিজেই করবে।

তুই এসব কি বলছিস ওইটুকু একটা মেয়ে একা কি করবে?

জীবনে সামনে এগোতে হলে একাই এগোতে হয় মা সেটা তুমি ভালো করেই জানো। ও যদি এখন প্রতিবাদ না করে তাহলে সারাজীবন এটা ভেবে আফসোস করবে যে সেদিন কেনো প্রতিবাদ করলাম নাহ আর আমি চাইনা ও এই আফসোস টা করুক।

বর্তমান,

দেখলেন তো আপনারা ওইটুকু একটা পুচকি মেয়ে কত বড় বড় কথা বলে গেলো শহরে গিয়ে পাখা গজিয়েছে ওর এই পাখা যদি আমি না কাটতে পারি তো আমিও এই গ্রামের চেয়ারম্যান নাহ। ওদের এখনি একঘরে করা হোক একেতো কুকাম করবে তার উপর আবার বড় বড় কথা।

চেয়ারম্যান এর কথা শুনে এখানে থাকা সবাই দাঁড়িয়ে গেলো তারা বলল, কেনো শশী তো ঠিক কথায় বলেছে আমরা কোনো কিছু না দেখে শুধু শুধু এসব কথা বলতে পারি নাহ। আর শাহিন ওইদিন রাতে শশীকে ক্লাবঘরে দেখলে আমাদের সবাইকে তখনি না ডেকে সকালে ডাকলো কেনো? আর মাস্টার কে তো আমরা চিনি তিনি কেমন মানুষ শশীও এই গ্রামের মেয়ে ছোট বেলা থেকে চোখের সামনে ওকে বড় হতে দেখেছি। না না চেয়ারম্যান সাহেব কোনো প্রমাণ ছাড়াই আপনি এমন বলতে পারেন নাহ আমরা মানতে পারছি নাহ।

ওখানে থাকা সবাই একসাথে কথাটার সমর্থন করলো। চেয়ারম্যান আর শাহিন পড়ে গেলো বিপাকে পরিস্থিতি খারাপ দেখে ছেলেকে নিয়ে ওখান থেকে আলগোছে কেটে পড়ল। সাথে ওখানে বিচার করতে আসা সবাই জামশেদ মাস্টার এর কাছে ক্ষমা চেয়ে চলে গেলো। জামশেদ মাস্টার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, সবাই শুনলে তো এই জামশেদ মাস্টার তার মেয়েকে সঠিক শিক্ষায় দিয়েছে।

#চলবে??

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-১২+১৩

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১২
,
তাহলে তো বলতে হয় তোমাদের বংশই খারাপ। যে বংশের ছেলেরা বিয়ের আগেই কোনো মেয়েকে পেগনেন্ট করে দেয় সেই বংশের ছেলে হয়ে এতো বড় বড় কথা কীভাবে বলো তুমি।

কি বলুন তো যে যেমন সে সবাইকেই তার মতোই ভাবে।

সমুদ্রের কথায় মালবিকা রাগলো নাহ বরং একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, এতো যে বংশের বড়াই করছো তাহলে বিয়ের আগেই একটা যুবতি মেয়েকে কীভাবে ঘরে রাখো? এতোবড় একজন অফিসার এর কি এহেন কাজ মানায়? ভাবছি কথাটা বাইরে লিক হলে তোমার এই সম্মান বংশ ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। বড্ড আফসোস হচ্ছে তোমাকে এভাবে দেখে যতই হোক তোমার সাথে আমার কোন সময় তো একটা সম্পর্ক ছিলো মায়া তো লাগবেই।

মালবিকার কথাশুনে সমুদ্র রেগে দাঁড়িয়ে গেলো তবে রাগের প্রকাশ করলো নাহ। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বাঁকা হেসে বলল, বাংলায় একটা প্রবাদ আছে জানেন তো পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। আপনার ভাইয়ের ছেলেকেও একি কথা বলেছি। তাই সাবধান লিমিট ক্রস করবেন নাহ তাহলে কিন্তু আমি ভুলে যাবো আপনি আমার কি হন।

কথাটা বলে সমুদ্র বেরিয়ে গেলো মালবিকা সমুদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে টেবিল থেকে নিজের ফোনটা তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
,,,,,,,,,,
সমুদ্রের আসতে বেশ দেরি হয়ে গেলো নিজের কাছে থাকা অন্য চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো। ডয়িং রুমের আলো না জ্বালিয়ে সোজা সিঁড়ি বেঁয়ে বইঘরের দিকে চলে গেলো। দরজাটা খোলায় ছিলো ওঘরে তখনো আলো জ্বলছে হয়ত কারো বন্ধ করতে মনে ছিলো নাহ। দেওয়ালের সাথে টাঙ্গানো বড় একটা ছবির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সমুদ্র যেখানে ওর বাবার সাথে একজন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে ছবিতে থাকা মানুষগুলোকে গভীর নয়নে দেখলো তারপর হাতটা বাড়িয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে একটা শব্দ উচ্চারণ করলো।

সরি।

ব্যাস তারপর পুরো ঘরজুড়ে নিস্তব্ধতা এই একটা শব্দের মধ্যে যেনো লুকিয়ে আছে কষ্ট অভিমান ব্যার্থতা। হঠাৎ পিছন থেকে আসা শব্দে সমুদ্রের ধ্যান ভাঙ্গলো ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ শব্দটা শুনে বোঝার চেষ্টা করলো আসলে শব্দটা কীসের। পিছন ফিরে আশে পাশে তাকালো কিন্তু কিছুই দেখতে পেলো নাহ। বইয়ের তাঁক পাড় হয়ে সামনের দিকে যেতেই দেখলো কোনায় রাখা চেয়ারে বসে টেবিলের উপর দুইহাত ভাঁজ করে তাতে মাথা দিয়ে শশী ঘুমিয়ে আছে। সামনে হাঁট করে খুলে রাখা বই সমুদ্র শশীর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালো। ছোট করে কেটে রাখা এক গোঁছা চুল একপাশে পড়ে বন্ধ চোখ আর ঠোঁট টাকে আংশিক ঢেকে রেখেছে। সমুদ্র বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শশীকে দেখছে যেনো সে চাইলেও চোখ ফেরাতে পারছে নাহ। নিজের এমন কাজে নিজেই অবাক হচ্ছে, মাথা নাড়িয়ে যথা সম্ভব গলার স্বরটাকে কঠিন করে শশীকে ডাকলো।

এই মেয়ে এখানে ঘুমাচ্ছো কেনো? উঠো আর সোজা নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাও।

সমুদ্রের কথায় শশীর কিছুই হলো নাহ শুধু একটু নড়েচড়ে আবার আগের মতো ঘুমিয়ে গেলো। সমুদ্র বেশ কয়েকবার ডাকলো কিন্তু শশী তবুও উঠলো নাহ। শেষে সমুদ্র উপায় না পেয়ে ওর এক আঙুল শশীর মাথায় ঠেকিয়ে ধাক্কা দিলো এবার শশী মাথা না তুলেই ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল, আব্বা আমি রাতে খাইছি এখন আর খাবো নাহ এখন ঘুমাবো।

শশীর কথাশুনে সমুদ্র অবাক হয়ে শশীর দিকে তাকালো। মেয়েটা কি পাগল আমাকে ওর আব্বা ভাবছে কথাটা ভাবতেই সমুদ্রের মুখটা তেঁতো হয়ে গেলো। এবার বেশ জোরেই শশীকে ডাক দিতে শশী চমকে উঠে বসলো, কাঁচা ঘুম ভাঙ্গায় মাথাটা ঝিমঝিম করছে অনেক্ক্ষণ যাবত হাত মাথার নিচে থাকায় হাতটাও কেমন বেথ্যা হয়ে আছে। শশী ঘুম ঘুম চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। সমুদ্র শশীর তাকানো দেখে ধমকে বলল, এভাবে এখানে ঘুমাচ্ছো কেনো? যাও রুমে যাও।

শশী ঢুলুঢুলু চোখে উঠে দাঁড়ালো কিন্তু ওমনেই আবার চেয়ারে বসে পড়লো। এতো ঘুম নিয়ে কি এভাবে হাঁটা যায় নাকি এই লোকটার উপর বেশ বিরক্ত লাগছে মন চাইছে মাথায় এক বালতি পানি ঢেলে দিই তাহলে যদি মাথাটা ঠান্ডা হয়। শশী কোনো রকমে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সমুদ্র সেদিকে একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেও বেরিয়ে গেলো।
,,,,,,,,,,,
হাতে একটা খাম নিয়ে শশী সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। বাড়িতে আপাতত সে ছাড়া কেউ নেই রোদ্র আজকে চলে যাচ্ছে এই জন্য সবাই এয়ারপোর্টে গেছে। শশীকেও যেতে বলেছিলো কিন্তু শশী যায়নি, রোদ্র যাওয়ার আগে শশীর হাতে এই কাগজটা দিয়ে বলেছে ও চলে যাওয়ার পর এটা পড়তে। শশী বিছানায় বসে কাগজটা মিলে ধরতেই দেখলো ওখানে অল্প কয়েকটা শব্দ লেখা শশী পড়তে শুরু করলো। আজ থেকে আগামী এক বছর আমি আমার খুব ভালো বন্ধুর থেকে দূরে থাকবো। তবে আমি সব সময় তোমাকে অনুভব করবো, নিজের খেয়াল রাখবে আর মন দিয়ে পড়াশোনা করবে। আমি আসতে আসতে তো তুমি অনেকখানি বড় হয়ে যাবে আর তখন আমি তোমাকে একটা কথা বলবো। যেই কথা আজ পযন্ত কাউকে বলিনি আমি জানি কথাটা শোনার পর তুমি অবশ্যই অবাক হবে আর তখন তোমার মুখটা দেখতে যা লাগবে নাহ। সেই সময়টর জন্য আমাকে এখন একটা বছর অপেক্ষা করতে হবে, আচ্ছা যাই হোক অনেক অনেক ভালো থেকে আর নিজের যত্ন নিও।
পুরো চিঠিটা পড়ে শশী ভাজ করে পাশের ছোট টেবিলটাই রেখে দিলো। ও ভেবেই পাচ্ছে নাহ এই কথাগুলো তো সামনাসামনি বলা যেতো তাহলে এতো ঘটা করে চিঠি লেখার কি দরকার। শশী বসে বসে কথাগুলো ভাবছিলো তখনি কলিং বেল বেজে উঠল। শশী উঠে বসে ভাবছে খুলবে কি না কারণ এখন বাড়িতে কেউ নাই আর সমুদ্ররা একটু আগে বেরিয়েছে তাহলে এই সময় কে আসতে পারে আর দরজা খোলা কি ঠিক হবে? এতোক্ষণে বেশ কয়েকবার কলিং বেলটা বেজেছে এবার না খুললে হয়ত নষ্টই হয়ে যাবে। শশী উড়নাটা মাথায় দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো, সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নেমে আস্তে করে দরজাটা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই শশী দেখলো ওপাশে একটা মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। বেশ সুন্দর কালার করা চুলগুলো কাঁধ ছাড়িয়ে পিঠ ছুঁই ছুঁই শশী ওনাকে দেখে কিছু বলবে তার আগেই মহিলাটা শশীকে বলল,

আচ্ছা তাহলে তুমিই সেই মেয়ে হুম সমুদ্রের পছন্দ আছে বলতে হবে। সামনে থেকে সরো আমাকে ভিতরে যেতে দেও।

কিন্তু বাড়িতে তো কেউ নেই আর আমি আপনাকে চিনিও নাহ আন্টি আসুক তারপর না হয়।

এই মেয়ে তুমি আমাকে এসব বলার কে তুমি জানো আমি কে? এসব কথা তুমি আমায় বলো কোন অধিকারে সমুদ্র আসলে ওকে জিগাস করে নিও আমি কে আর এই বাড়ির সাথে আমার কি সম্পর্ক এখন সামনে থেকে সরে দাঁড়াও।

কথাগুলো বলে মালবিকা শশীকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে গেলো। শশী দরজাটা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো ওর জীবনে এমন মেয়ে মানুষ কখনো দেখেনি , মালবিকা সোজা গিয়ে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসলো তারপর হাতের আঙুল দিয়ে শশীকে ডাকলো। শশী গুটি গুটি পায়ে মালবিকার সামনে এসে দাঁড়ালো, শশীকে পা থেকে মাথা অবধি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে ভ্রু কুঁচকে মালবিকা বাঁকা হেসে বলল, তুমি তো দেখছি ফুটন্ত কড়ি এখনো ফুল হতে অনেক দেরি। বুঝলাম না সমুদ্রের মতো দায়িত্ববান ছেলে এমন গোলাপের কড়িতে মজলো কীভাবে। তোমাকে তো সমুদ্র ছুঁতেই তুমি মূর্ছা যাবে আচ্ছা যাকগে এখন যাও আমার জন্য এককাপ কফি বানিয়ে আনো।

শশী ঠিক কি করবে বুঝতে পারছে নাহ একে তো এই মহিলাকে চেনে নাহ তার উপর এভাবে একা বাড়িতে কি সব কথা বলছে। হয়ত ওনাদের কোনো আত্মীয় হবে এই জন্য শশী কিছু বললো নাহ সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১৩
,
শাহানারা মালবিকার পাশে কান্না করছে, এই একটা মানুষ কে দেখলে তার আরেকটা প্রিয় মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠে। অভিক, শাহানারা যখন বিয়ে হয়ে প্রথম শশুর বাড়ি আসে তখন অভিককে পেয়েছিলো জয় এর বয়সী। তাদের তখন এই বাড়ি ছিলো নাহ তারা তখন গ্রামে শশুরের ভিটের উপর বিশাল বাড়িতে ছিলো, গোলা ভরা ধান ছিলো, গোয়াল ভরা গরু ছিলো যাকে বলে গেরস্তোর সংসার। ইকবালরা ছিলো দুই ভাই অভিক ছিলো ছোট। বিয়ের এক মাসের মাথায় ইকবাল চলে গেলো তার কাজের জায়গায় একা বড়িতে শশুর শাশুড়ি আর ছোট অভিককে নিয়েই তার সংসার। অভিক ছিলো শাহানারার নেওটা সারাটাদিন ভাবির পিছে পিছে বেড়াতো যেনো ভাবিই তার দ্বিতীয় মা। সময় গড়ালো ছোট্ট অভিক বড় হলো আর শাহানার কোল জুড়ে আসলো সমুদ্র। সমুদ্রের বয়স যখন আটমাস তখন ওর শশুর মারা যায়, তারপর পুরো সংসার এর দায়িত্ব পরে ইকবাল এর উপর। অভিক যেমন শাহানারার নেওটা ছিলো তেমনি সমুদ্র অভিক বলতে পাগল ছিলো। বয়সের ব্যাবধান হলেও দুজনের মাঝে ভালোবাসার কমতি ছিলো নাহ। একদম বন্ধুর মতোই গলায় গলায় ভাব, ইকবাল এর ইচ্ছে ছিলো তার ভাইকেও আর্মিতে নেবে সেই অনুযায়ী অভিক যখন ট্রেনিং এর জন্য চলে গেলো সমুদ্র তখন পুরো একা। হাসিখুশি ছেলেটা সারাদিন মনমরা হয়ে থাকতো, সমুদ্র সব সময় বলতো সে বড় হয়ে অভিক এর মতো হবে। মাস বছর চলে গেলো সেই সাথে সমুদ্র বড় হতে লাগল সময়ের সাথে সাথে যেনো অভিক আর সমুদ্রের বন্ধন আরো মজবুত হচ্ছিল। একদিন অভিক বেশ খুশি মনে শাহানারারা কে বলল, এবার ছুটিতে বাড়ি আসলে তাকে একজনের সাথে পরিচয় করায়ে দেবে। ছেলেটা বেশ খুশি ছিলো তবে অভিক এর জীবনে মালবিকা আসার পর সমুদ্রের সাথে দুরত্ব বাড়লো। কেনো এই দুরত্ব সেটা শাহানারার অজানা সমুদ্র মালবিকাকে মোটেও পছন্দ করতো নাহ। কেনো করতো নাহ সেটা সমুদ্র ভালো জানে। সেদিন ছিলো শুক্রবার অভিক বাড়িতে আসার সাতদিন হয়েছিলো, ওইদিন অভিক চলে যাবে বিধায় বাড়িতে বেশ আয়োজন করা হলো। অভিক আর সমুদ্রের মাঝে তখনো মনমালিন্য, ঠিক কি কারণে এই মনমালিন্য সেটাও শাহানারার অজানা। তবে সেদিন শাহানারা অভিক এর চোখে ভয় দেখেছিলো কিছু হারানোর ভয় প্রিয় কারো থেকে ঠকে যাওয়ার ভয়। অভিক যাওয়ার আগে শাহানারার হাত ধরে শেষ বারের মতো একটা কথা বলেছিলো।

ভাবি সমুদ্র কে দেখে রাখবে ওকে আমার এই পথে কখনোই পা বাড়াতে দেবে নাহ। এই পৃথিবী বড়ই নিষ্ঠুর আর তার থেকেও অনেক নিকৃষ্ট পৃথিবী তে থাকা কিছু মানুষ নামের পশু। যারা ওকে ভালো থাকতে দেবে নাহ, শেষ করে দেবে ওকে তাই আমার কথাশোনো ওকে ডাক্তার নয়ত ইন্জিনিয়ার বানিও। জানিনা আবার দেখা হবে কিনা তবে একটা কথা আমি তোমাদের অনেক ভালোবাসি। আর মালবিকা কেও।

এই ছিলো অভিকের শেষ কথা তারপর ছেলেটা চলে গেলো ঠিক তার দুইদিন পর মরা খবর আসে। জানা যায় রাতে ঘুমিয়ে ছিলো হঠাৎই মুখ দিয়ে ফেনা উঠে গোঙাতে থাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার আগেই মারা যায়। রোদ্র তখন শাহানারার কোলে বৃদ্ধা শাশুড়ী ছোটো ছেলের এমন অকাল মৃত্যুর কথা শুনে ভেঙে পড়েন। সমুদ্র ও কেমন একগুঁয়ে বদরাগী বেপরোয়া হয়ে উঠে। পাখির মতো উড়ে বেড়ানো ছেলেটা অভিকের মৃত্যুর পর হঠাৎই কেমন বদলে যায়। অভিকের মৃত্যুর আট মাসের মাথায় শাহানারার শাশুড়ী মারা যায়, পুরো সংসার টা কেমন হঠাৎই এলোমেলো হয়ে যায়। তবে মালবিকা শাহানারার সাথে যোগাযোগ রেখেছিলো, শাহানারা জানতো অভিক যখন মারা যায় মালবিকা তখন দুই মাসের পেগনেন্ট ছিলো। মেয়েটা চেয়েছিলো বাচ্চাটা রাখতে কিন্তু অবিবাহিত মেয়ে এভাবে একা কি করে সবার বিরুদ্ধে নিজেকে আর নিজের মধ্যে থাকা ছোট্ট প্রাণটাকে রক্ষা করতো। এই জন্য অভিকের শেষ চিন্হটুকু মুছে ফেলতে হয়েছিলো।

কথাগুলো মনে পড়লেই বুকের মধ্যে কেমন চিনচিনে বেথ্যা হয়। শশী একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলো এই মহিলাটাকে একদম পছন্দ নাহ ওর তখন কফি দেওয়ার সময় ইচ্ছে করে ওর হাতে ফেলে দিয়েছে। হাতের উপরটায় কেমন লাল হয়ে আছে, সমুদ্র এখনো বাসায় ফেরনি শাহানারা আর জয় একায় ফিরেছে। মালবিকা সোফা থেকে উঠে বাঁকা চোখে শশীকে দেখে নিয়ে শাহানারাকে বলল,

ভাবি তাহলে যেটা বললাম মনে থাকে যেনো আশা করি আপনি আমার কথাটা রাখবেন। আমি চাই জারার সাথে সমুদ্রের বিয়েটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিয়ে দিতে।

মালবিকার কথা শুনে শশী চমকে সামনে তাকালো সমুদ্রের বিয়ে? এই মহিলা তাহলে এই জন্যই এখানে এসেছিলো। কিন্তু ওই রাগী গম্ভীর লোকটাকে বিয়ে করবে এমন সাহস কার? মেয়েটাকে দেখার বড্ড লোভ জাগলো শশীর। মালবিকার কথা শুনে শাহানারা হতাশ গলায় বলল, আমিতো সমুদ্র কে বলেছি কিন্তু ও না করে দিয়েছে তুমি তো জানোই সমুদ্র কেমন আমি কি করবো বলো।

এখন বিয়ের জন্য না করছে আর মিলামেশা করার সময় মনে ছিলো নাহ? জারা তো নিজে ইচ্ছাই সমুদ্রের কাছে যায়নি তোমার ওই ধূর্ত ছেলে আমার ভাইয়ের মেয়ের কাছে এসেছিলো। এখন ইউজ করা শেষ হয়ে গেছে বলে ফেলে দিতে চাইছে। তোমাদের বংশের সব ছেলেরায় কি এমন? একজন তো পেগনেন্ট করে ভয়ে পালিয়ে যায় আর এখন তোমার ছেলেও সেই একি পথে হাঁটছে। ওকে সাবধান করে দিও আমি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে তোমাকে পাঠিয়ে দেবো নিজের ছেলেকে ভালো করে বোঝাও।

কথাগুলো বলে মালবিকা শশীর দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেলো। শাহানারা চিন্তিত হয়ে পড়লেন, নরম মনের মানুষ ওনি এসব ঘোর প্যাঁচ তার মথায় কমই ঢোকে। অভিক বলেছিলো সমুদ্র কে এসব থেকে দূরে রাখতে কিন্তু সে পারলো কোথায় সমুদ্রের জেদের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হলো। অভিক যে পথে হেঁটেছিলো সমুদ্র ঠিক সেই একি পথে হাঁটছে তাহলে কি অভিকের মতো শেষে সমুদ্র কেউ? কথাটা ভাবতেই বুকের মধ্যে কেমন ব্যাথা করে উঠল। বুকে হাত দিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিলো শশী দৌড়ে শাহানারার কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে পানি খাইয়ে আস্তে আস্তে ওনার রুমে দিয়ে আসলো।
,,,,,,,,,
একদম চিন্তা করিস নাহ আমি তোর বিয়ে সমুদ্রের সাথেই দেবো। ওই সমুদ্র কে আমি কিছুতেই ছাড়বো নাহ, ও ভেবেছে তোর সর্বনাশ করে ও পাড় পেয়ে যাবে এটা আমি থাকতে কখনোই সম্ভব নয়।

মালবিকার কথাশুনে জারা শোয়া থেকে উঠে বসে চোখের পানি মুছে মালবিকার কমর জড়িয়ে ধরে বলল, ফুপি তুমি সমুদ্র কে শুধু এনে দাও আমি আর কিছু চাই নাহ।

ধৈর্য ধর সব হবে শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা গুটি সাজিয়েছি এখন শুধু সময় বুঝে চাল দেওয়ার পালা। আগেও আমার জিত হয়েছে এখনো আমারই জিত হবে, অভিক এর মতো সমুদ্র ও আস্তে করে রাস্তা থেকে সরে যাবে।
,,,,,,,,,,
সত্যি করে বলো মা অসুস্থ হলো কীভাবে, বাড়িতে কেউ এসেছিলো? কে এসেছিলো? আর কি কথা বলেছে মায়ের সাথে? সবটা আমায় বলবে, একটা কথাও যদি বাদ পড়ে তাহলে তোমার গাল আর আমার হাত।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী ভয়ে ঢোক গিললো, পিছাতে পিছাতে সে দেওয়ালের সাথে একদম লেগে দাঁড়িয়ে আছে। আর ওর সামনে সমুদ্র ঠান্ডা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। একটু আগে সমুদ্র বাড়ি আসতেই দেখলো ওর মা ঘুমিয়ে আছে, সমুদ্র প্রথমে ভেবেছিলো এমনিতেই কিন্তু পরক্ষণেই ওদের পারিবারিক ডাক্তার সমুদ্র কে ফোন দিয়ে বলল, এই অবস্থায় যেনো ওনি এতো বেশি দুশ্চিন্তা না করেন তাহলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। সমুদ্রের কাছে ব্যাপারটা সন্দেহজনক লাগলে জয় এসে বলে তারা আসার পর নাকি দেখে বাড়িতে একজন মহিলা এসেছিলো আর সে মাকে কি কি বলল আর মা এমন অসুস্থ হয়ে পড়ল। ছোটো মানুষ সবটা গুছিয়ে বলতে না পারলেও যেটুকু বলেছে ওতেই সমুদ্রের যা বোঝার বুঝে গেছে। এই জন্য সোজা শশীর রুমে এসে শশীকে প্রশ্ন করেছে, শশী ভয়ে ভয়ে মালবিকার আসার কথা বলল আর বলল সমুদ্রের সাথে জারার বিয়ের কথা বলার পরই শাহানারা এমন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সবটা শোনার পর সমুদ্র কোনো রকম রিয়েক্ট করলো নাহ, ভ্রু কুঁচকে কিছু একটা ভাবলো তারপর ঘর থেকে বের হবে তখনি শশী ভয়ে ভয়ে বলল,

আচ্ছা আপনি কি সত্যিই করেছেন?

সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল, কি?

ওই মেয়ের সর্বনাশ।

শশীর কথাশুনে সমুদ্র প্রথমে রেগে গেলেও কিছু একটা ভেবে বাঁকা হেসে শশীর দিকে এগিয়ে এসে ঠান্ডা সূরে ফিসফিস করে বলল, আর একটা বেশি কথা বললে এই মুহুর্তে তোমার সর্বনাশ হবে। তাও সেটা আমার দ্বারা তখন বুঝবে সর্বনাশ কি কত প্রকার।

কথাটা বলেই সমুদ্র বেরিয়ে গেলো, শশী সমুদ্রের যাওয়া দেখে দৌড়ে এসে টেবিলে রাখা জগ থেকে ঢকঢক করে পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিলো। তড়িঘড়ি তে জামার গলার কিছু অংশ ভিজিয়েও ফেলেছে। জগটা টেবিলে রেখে ডানহাতে মুখ মুছে বলল, কি সাংঘাতিক লোক রে বাবা দিনে দুপুরে সর্বনাশ করার হুমকি দেয়।
,,,,,,,,,
সমুদ্র রুমে এসে নিজের ফোনটা খাটে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, গায়ের থেকে শার্টটা খুলে বিছানায় ফেলে উদাম শরীলে বাথরুমে চলে গেলো। শাওয়ার অন করে শাওয়ার এর নিচে দাঁড়িয়ে থাকলো,যতক্ষণ না মাথা ঠান্ডা হচ্ছে। বুক পিঠ বেঁয়ে পানির স্রোত নিচে পড়ছে, প্রায় অনেকটা সময় এভাবে থাকার পর শাওয়ার বন্ধ করে বেরিয়ে আসলো। পরনে টাওয়াল জড়ানো মাথা আর শরীল না মুছার কারণে এখনো চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে। ফর্সা দাগযুক্ত শরীলে পানির বিন্দু গুলো চিকচিক করছে। সমুদ্র সেভাবেই নিজের ফোনটা হাতে তুলে নিলো, ইমেইল চেক করতেই দেখলো সেখানে বেশ কয়েকটা ইমেইল এসে জমা হয়ে আছে। একটায় ক্লিক করতেই ওটা ওপেন হয়ে গেলো।

“সমুদ্র সময় হয়েছে তোমার ফিরে আসার, অসমাপ্ত কাজ গুলো সমাপ্ত করার। আশা করছি খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে ”

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-১০+১১

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১০
,
রাতে এতোটা জার্নি করে এসে ওভাবেই গাড়ি থেকে নেমে এক রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। এখন ঠিক কয়টা বাজে সেটা শশীর অজানা তবে জানালার ফাঁক গলে আসা তীব্র সূর্যের আলোয় বলে দিচ্ছে সকাল অনেক আগেই হয়ে গেছে। কোনো রকমে শোয়া থেকে উঠে বসতেই মাথাটা ঘুরে উঠল। অতিরিক্ত কান্নার করার ফলে প্রচন্ড মাথা বেথ্যা করছে। হাঁটু সমান চুলগুলো বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। হাতে বেথ্যার জন্য সেগুলোকে খোঁপায় বাঁধতেও পারছে নাহ৷ তখনি দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ হলো। শশী বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে দরজা খুলে দিলো। ওমনি জয় ভিতরে ঢুকে শশীকে পা থেকে মাথা অবধি দেখে নিয়ে বলল,

যদিও তুমি একটু দুষ্টু তবুও আমি মানিয়ে নিতাম। কালকে যখন আম্মু বড় ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়ের কথা বলল তখন তো বড় ভাইয়া না করে দিলো তবে আমাকে বললে আমি না করতাম নাহ। তুমি দেখতে সুন্দরী আর আমিও দেখতে সুন্দর যদিও তোমার বোন আমায় ছোটো হাতি বলে তবে আমি কিছু মনে করিনি ছোটো মানুষ বলতেই পারে। তবে তুমি কোনো চিন্তা করো নাহ তোমাকে বিয়ে আমিই করবো শুধু একটু অপেক্ষা করো।

জয়ের পাঁকা পাঁকা কথাশুনে শশী অবাক হয়ে তাকালো তবে হাসলো নাহ। জয়ের মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। জয় হাত দিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলল, বোকা মেয়ে আমার স্টাইল করা চুল গুলো এলোমেলো করে দিলো এখন আবার আয়নার সামনে গিয়ে ঠিক করতে হবে। উফফ আমার হয়েছে যত জ্বালা সত্যি মেয়েদের মন পাওয়া খুবি শক্ত কাজ।
,,,,,,,
সিঁড়ি বেঁয়ে গুঁটি গুঁটি পায়ে নামছে আর চারপাশে চোখ বোলাচ্ছে শশী। বাড়িটা বড় ঠিকি কিন্তু মানুষ কম। এই বদ্ধ বাড়িতে থাকবে কীভাবে ও যে মেয়ে মুক্ত পাখির মতো খোলা আকাশে ডানা মেলে উড়াল দেওয়ার অভ্যাস। মন খারাপ থাকলে পুকুর পাড়ে বসে গাছ পাখি ফুলদের কাছে মনের সব জমানো কথা বলার অভ্যাস সে কীভাবে এই চার দেওয়ালের মাঝে থাকবে। আদেও মানিয়ে নিতে পারবে কি এই ইট পাথুরে যান্ত্রিক শহরে। শেষ সিঁড়িতে পা দিয়ে সামনে তাকাতেই দেখল সমুদ্র সোফায় বসে কফি খাচ্ছে আর খবরের কাগজ পড়ছে৷ চোখ মুখ ভীষণ রকমের গম্ভীর যেনো খবরের কাগজের পাতায় থাকা খবরগুলো তার মনের মতো হয়নি। শশী বেশ কিছুক্ষণ তার সামনে থাকা সুঠাম দেহের গম্ভীর সুদর্শন পুরুষটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। কালকে সে সময়মত না আসলে আজকে সত্যি ওর গলায় কলসি বেঁধে পুকুরে ডুব দেওয়া লাগতো৷ শশী সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে সামনে যেতে যেতে ডাইনিং টেবিলের সাথে ধাক্কা খেলো। যার দরুন টেবিলে থাকা কাঁচের গ্লাসটা মেঝেতে পড়ে শব্দ করে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেলো। শশী চমকে উঠে ভয়ে ভয়ে ভাঙ্গা গ্লাসটার দিকে তাকালো। শব্দ পেয়ে সমুদ্র বিরক্ত নিয়ে সামনে তাকালো হঠাৎ শশীকে দেখে ভ্রু কুঁচকে শশীর দিকে তাকিয়ে থাকলো৷ যেনো সে মনে করার চেষ্টা করছে এই মেয়েটা এখানে কীভাবে আসলো মাথায় খানিক চাপ প্রয়োগ করতেই মনে পড়ল কালকের কথা। চোখ নামিয়ে নিয়ে আবার কাগজের পাতায় মনযোগ দিলো। রান্নাঘর থেকে শাহানারা দ্রুত বেরিয়ে বলতে বলতে আসলেন।

আবার কি ভাঙলি জয় এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারি নাহ সব সময় কিছুনা কিছু খেতে থাকবে আর সাথে জিনিসও ভাঙ্গতে থাকবে।

কথাগুলো বলতে বলতে ডয়িং রুমে এসে শশীকে দেখতেই মুচকি হেসে কিছু বলবে তার আগেই শশী আমতা আমতা করে ভাঙা গলায় বলল, জয় নয় ওই আমি আসলে বুঝতে পারিনি কিভাবে।

আরে মা তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো আমার বাড়িতে এসব ভাঙাচোরা নিত্যদিনের ব্যাপার। বড় ছেলে রাগ উঠলে ভাঙ্গে আর ছোটো ছেলে খেতে গিয়ে ভাঙে তবে রোদ্রটা আবার এমন না ও আমার মতো ঠান্ডা মেজাজের। আচ্ছা তুই হাতমুখ ধুয়ে নে অনেক বেলা হয়েছে খেতে হবে তো।

আমি আব্বার সাথে কথা বলবো।

ওহ হ্যাঁ জামশেদ ভাই সকালে ফোন করেছিলো তুই ঘুমিয়ে ছিলি বিধায় তোকে ডাকা হয়নি তুই বস আমি রুম থেকে ফোনটা নিয়ে আসছি।

কথাটা বলে শাহানারার উপরে চলে গেলো শশী সেদিকে তাকিয়ে গুঁটি গুঁটি পায়ে সিঁড়ির কাছে এসে দাঁড়ালো। মাথার চুলগুলো দু ভাগ হয়ে একভাগ সামনে আরেক ভাগ পিছনে পড়ে আছে। শশী মাথা বাঁকিয়ে আবার সমুদ্রের দিকে তাকালো এই লোকটাকে ওর কেমন জানি ভয় লাগে৷ ঠিক বুঝে উঠতে পারে নাহ, সেদিন কেমন গলা চেপে ধরেছিলো। কথাটা মনে হতেই হাত আপনা আপনি গলায় চলে গেলো। সমুদ্র সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গায়ে থাকা টির্শাট টা নিচের দিকে একটু টেনে সিঁড়ির দিকে গেলো। শশীকে এমন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,

এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো বাড়িতে কি বসার কোনো জিনিস নাই?

সমুদ্রের কথায় শশী কি বলবে ভেবে পাচ্ছে নাহ তাই চুপ করে আছে। সমুদ্র শশীর চুপ থাকা দেখে একটু ধমকে বলল, এই মেয়ে কথা বলতে পারো নাহ? গ্রামে তো দেখলাম সব সময় মুখ চলতেই থাকে এখন চুপ কেন?

রোদ্র ভাইয়া কোথায়?

তোমাকে জিগাস করলাম কি আর তুমি বলছো কি বড়ই বিয়াদপ মেয়ে তুমি। আর চুলগুলো এমন করে রেখেছো কেনো? দেখো মেয়ে আমি অপরিষ্কার কিছু পছন্দ করি নাহ। তাই আমার বাড়িতে থাকতে হলে পরিষ্কার পরিছন্ন হয়ে থাকবে আর সরো সামনে থেকে।

কথাগুলো বলে সমুদ্র গটগট করে উপরে চলে গেলো৷ শাহানারা ফোন কানে নিয়ে কথা বলতে বলতে এসে ফোনটা শশীর কাছে দিতেই শশী ফোনটা কানে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

আব্বা আমাকে নিয়ে যান আমি এখানে থাকবো নাহ। এখানে আমার একটুও ভালো লাগছে নাহ কেমন দম বন্ধ বন্ধ লাগছে।
,,,,,,,,,,,,
দুপুরে বেলা সবাই খাওয়া শেষ করে ভাতঘুম দিয়েছে। শাহানারা শশীর চুল গুলো আঁচড়ে বেণী করে দিয়েছে। রোদ্রের সাথে তেমন একটা কথা হয়নি শুধু একবার একটু কথা হয়েছিলো। রোদ্র অনেক তাড়ায় আছে একটু ও বসার সময়ও নেই ওর। জানালার গ্রিল ধরে একমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে শশী। কিছুই ভালো লাগছে নাহ এভাবে একটা রুমে বসে থাকা যায় নাকি। শশী ভাবলো একবার পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখা যাক তাহলে সময়টা যদি একটু কাটে। যেই ভাবা সেই কাজ শশী আস্তে করে রুম থেকে বেরিয়ে ডান দিকে গেলো। কোনটা কার রুম সেটা এখনো জানা হয়নি তাই কোনো রুমে ঢোকাও ঠিক হবে নাহ। শশী হাঁটতে হাঁটতে সামনের দিকে গেলো একদম এক কোণায় একটা আধখোলা রুম দেখতে পেলো। বাইরে থেকেই রুমের মধ্যে বইয়ের তাক দেখা যাচ্ছে। তাহলে এটা হয়ত কারো রুম নয় কোনো লাইব্রেরি হবে হয়ত। শশী আস্তে আস্তে রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে গেলো। বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখলো আর্মি পোশাক পড়া একজন ব্যাক্তি খুবি সম্মানের সহিত আরেকজন এর হাত থেকে পুরুষ্কার নিচ্ছে। লোকটাকে শশী চিনতে পারলো নাহ ঘরে লোকটার আরো অনেক গুলো ছবি টাঙ্গানো ছিলো। হয়ত এই ঘরটা ওই ছবিতে থাকা লোকটার শশী তাঁক থেকে একটা বই বের করে হাতে নিতেই দরজায় শব্দ হলো। শশী দরজার দিকে তাকিয়ে ভয়ে হরবরিয়ে পিছনের দিকে যেতে গেলে বইয়ের তাঁকে বেঁধে গেলো। ওমনি উপর থেকে কয়েকটা বই শশীর মাথার উপর টুপ করে পড়লো। শশী বেথ্যায় মাথায় হাত দিয়ে ডলতে লাগল। সমুদ্র এই সময় শশীকে এখানে দেখে বেশ অবাক হলো। বাবার এই ছোট্ট লাইব্রেরি তে কেউ তেমন আসে না। মাঝেমধ্যে রোদ্র আসে সমুদ্র তেমন একটা আসে নাহ তবে যখন বাবাকে খুব বেশি মনে পড়ে তখন বাবার রেখে যাওয়া এই ঘরটাতে এসে কিছু একান্ত সময় কাটায়। সমুদ্র শশীর দিকে এদিকে গেলো শশী মাথা ডলা বাদ দিয়ে আবার পিছাতে গেলে সমুদ্র ধমকে বলল,

এই মেয়ে আমাকে দেখলে এতো ভয় পাও কেনো আমি কি তোমাকে খেয়ে ফেলবো নাকি। চুপচাপ এখানে দাঁড়াও কথা আছে আমার তোমার সাথে।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১১
,
তুমি শাহিন কে ছোটো বেলা থেকে চেনো তাই তো? ওর আর ওর বাবা সম্পর্কে যা যা জানো আমাকে সবটা বলো।

সমুদ্রের কথা শুনে শশী হা করে তাকিয়ে আছে। মানে সমুদ্র ওকে এমন ভাবে প্রশ্ন করছে যেনো শাহিন কোনো অপরাধ করেছে আর শশী তার একমাত্র সাক্ষী। শশী একবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নিচে নামিয়ে নিয়ে ভাবতে লাগলো। আসলে সে কি বলবে শাহিন কে চিনলেও তেমন ভাবেও ওর সম্পর্কে কিছু জানে নাহ। ওকে বিরক্ত করতো তাই আব্বাকে বলার পর আব্বা বলেছিলো ওর থেকে দূরে থাকতে ও নাকি অনেক খারাপ ছেলে। আর ওর আব্বাও তেমন একটা ভালো নয় সেটা গ্রামের সবাই জানে কিন্তু চেয়ারম্যান বলে কেউ কিছু বলার সাহস পায় নাহ। এখন শশী ঠিক কি বলবে সেইটাই বুঝতে পারছে নাহ এই জন্য নিচের দিকে তাকিয়ে বলল।

কি বলবো?

শশীর কথা শুনে সমুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল, কি বলবে মানে আমি কি তোমার সাথে অন্য কোনো ভাষায় কথা বলছি? বাংলায়ই তো কথা বলছি যেটা জিগাস করেছি শুধু সেটাই বলবে। সময় কম জলদি বলো শাহিন কেমন ছেলে আর ওর বাবা কেমন।

আব্বার থেকে শুনেছি শাহিন নাকি ছেলেটা ভালো নয় নেশা করে আর মেয়েদের বিরক্ত করে। আর চেয়ারম্যান চাচাও তেমন ভালো নয় শাহিন ওনার বড় বউয়ের ছেলে। চেয়ারম্যান হওয়ার পর নাকি চুপিচুপি আবার বিয়ে করেছিলো তবে সেই বউকে বাড়ি আনতে পারেনি। আমি তেমন জানি না সেই বউকে কেউ কখনো দেখেনি তবে শুনেছি ওনি নাকি শহরের কোনো একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে। আর ওনার শহরেও বেশ ভালো যাতায়াত।

শশীর কথাশুনে সমুদ্র কিছু একটা ভাবলো তারপর কিছু বলল নাহ। শশীর দিকে তাকিয়ে বলল, এখানে কোনো কাজ আছে?

শশী মাথা নাড়িয়ে না বলতেই সমুদ্র বলল, তাহলে এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো যাও এখান থেকে। শশী কিছু না বলে চলে যেতে গেলে ওর চুলের বেণী বইয়ের তাকের সাথে একটা কাটার সাথে আটকে গেলো। চুলে টান পেয়ে পিছন ঘুরে দেখে চুল আটকে গেছে ওটা ছাড়াতে গেলে টান লেগে উপর থেকে আরো কয়েকটা বই নিচে পড়ে গেলো। শশী হতবুদ্ধি হয়ে একবার সমুদ্রের দিকে তাকালো সমুদ্র বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলল,

শুধু গাছে চড়ে বেড়ানো আর লোকজন কে বিরক্ত করা ছাড়া আর কিছু পারো নাহ? থাক তোমাকে আর যাওয়া লাগবে নাহ আমিই চলে যাচ্ছি।

কথাটা বলে সমুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে গেলো শশী নিচে পড়ে যাওয়া বইয়ের দিকে তাকিয়ে তার মাথায় পড়ে থাকা বইটা হাতে নিয়ে তাকে রাখে আবার চুল ছাড়ানোই মন দিলো। প্রথমবার তার লম্বা চুল হওয়াই বেশ আফসোস হলো আজকে যদি ওর চুল এতো লম্বা না হতো তাহলে এখানে আটকাতো নাহ আর ওই লোকটর সামনে এভাবে লজ্জায় পড়তে হতো নাহ। ওনি বলেছে অগোছালো কিছু পছন্দ করে নাহ আর বারবার শুধু ওনার সামনেই আমি সবকিছু অগোছালো করে ফেলি কি কপাল আমার।
,,,,,,,
কাউকে পরাস্ত করতে হলে যদি তার শক্তির সাথে না পারো তাহলে বুদ্ধি দিয়ে তাকে হারাও। বুদ্ধি দিয়েও যদি তাকে হারাতে না পারো তাহলে তার দুর্বলতা কে কাজে লাগাও। তার দুর্বল জায়গায় আঘাত করো তাহলে তাকে একদম শেষ করে দেওয়া সম্ভব। ওফ ফুপি তুমি সত্যি একটা জিনিস তোমার মাথা থেকে যে কীভাবে এমন ক্রিমিনালি বুদ্ধি বের হয় আমি বুঝি নাহ।

ভাইয়ের ছেলের কথাশুনে মালবিকা বাঁকা হেসে চেয়ারে বসতে বসতে বলল, আমার জায়গায় আসতে হলে তোকে আরো চারবার জন্ম নেওয়া লাগবে। আচ্ছা এবার কাজের কথায় আসি তোকে বলেছিলাম আমাদের নেটওয়ার্ক পুরো বাংলাদেশ এর প্রতিটি জেলায় যেনো ছড়ানো থাকে তার কী অবস্থা?

জোসেফ তার ফুপির কথা শুনে সামনে থাকা সোফায় বসে বলল, সেটা আর হতে দিচ্ছে কোথায় ওই সমুদ্র। তবে এখন ও চুপ আছে ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে একদম চুপসে গেছে ভাবে ওর জন্যই ওর বাবা মারা গেছে। তবে তুমি চিন্তা করো না সব ব্যাবস্হা হয়ে যাবে, আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি প্রতিটা ইয়াং জেনারেশন এর কাছে আমাদের ড্রাগস পৌঁছে যাবে। কেউ কিছুই করতে পারবে নাহ আমি মাঁকড়সা জালের মতো সবটা বিছিয়েছি সমুদ্র কিছু করতে আসলেও সেই জ্বালে আটকা পরবে।

এই না হলে ছেলের মতো কথা শোন তোর বাপকে এই পজিশনে এনেছি নিজেদের সুবিধার জন্য। তোর বাপের পাওয়ার কে কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যাবি। আর, মালবিকার কথা শেষ হওয়ার আগেই হাতে থাকা মুঠোফোন টা বেজে উঠল। সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফোনটা কানে ধরে বলল, কী খবর কমিশনার সাহেব এতোদিনে মনে পড়লো তবে।

জোসেফ আর কিছু বলল না আলগোছে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। তার এখন অনেক কাজ বাইরের দেশ থেকে কিছু স্পেশাল আর্মস আসবে সেগুলো কে সাবধানে রিসিভ করতে হবে।
,,,,,,,,,,,
ডয়িং রুমের আলোটা জ্বালিয়ে দিয়েই সোফায় বসে পড়ল শশী। পুরো বাসায় আলো জ্বালিয়েছে ও মা বলতো মাগরিবের আযান হওয়ার সাথে সাথে নাকি ঘরে সন্ধ্যা দিতে হয়। এতোবড় বাড়িতে সিঁড়ি বেঁয়ে উঠে নেমে আলো দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। আপাতত বাড়িতে শাহানারা জয় আর শশী বাদে কেউই নেয়। রোদ্র পরশো চলে যাবে এই জন্য আজকে সব বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়েছে। আর সমুদ্র কোথায় গিয়েছে সেটা অজানা যাওয়ার আগে শাহানারাকে বলে গিয়েছে রাতে ফিরবো। শাহানারা নিচে নামতে নামতে শশী কে দেখে মুচকি হেসে বলল।

ঘরে সব আলো জ্বালিয়ে দিয়েছিস?

হ্যাঁ আন্টি আমি সব আলো জ্বালিয়ে দিয়েছি।

আচ্ছা এখন জয় এর কাছে গিয়ে দুজনে পড়তে বস আমি তোদের জন্য কিছু বানিয়ে আনছি।

না না আন্টি আপনাকে কষ্ট করে এখন আর কিছু বানাতে হবে নাহ আমি কিছু খাবো নাহ।

এটা আমার রোজকার অভ্যাস আর তোকে যা বললাম কর।

শশী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে উপরে চলে গেলো। জয় এর রুমে ঢুকতে যাবে তখনি চোখ পড়ল সমুদ্রের অন্ধকার রুমের দিকে। বাড়ির সব রুমে আলো জ্বালালেও এই রুমটাই আলো জ্বালানোর সাহস হয়নি। শশী একবার ভাবলো গিয়ে আলোটা জ্বালিয়ে দিয়ে আসবে। যেহেতু সমুদ্র এখন বাড়িতে নেই তাই ভয়ের ও কোনো কারণ নেই। যেই ভাবা সেই কাজ শশী গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে দরজা খুলে ভিতরে চলে গেলো। ব্যালকণির দরজাটা খোলা সেইটা দিয়েই বাইরের বিল্ডিং এর আলো রুমে এসে পড়ছে। শশী সেই আলোয় হাতড়ে সুইচ টা জ্বালালো এই বাড়িতে ও আসছে আজ তিনদিন হতে চললো এতোদিনেও এই রুমটায় আসা হয়নি। শশী পুরো রুমটায় একবার চোখ বুলালো সমুদ্র বাড়ি এসে বেশি দিন থাকে নাহ। তাই শাহানারা প্রতিদিন রুমটা যত্নে গুছিয়ে রাখে। এইবার সমুদ্র অসুস্থ হওয়াই এতোদিন থাকা পড়ছে তবুও রুমটা কতটা গোছানো। শশী বিছানায় দিকে এগিয়ে গেলো খাটের মাথার দিকে সমুদ্রের বড় একটা ছবি টাঙানো। যেখানে সমুদ্রের গায়ে আর্মি পোশাক পড়া হয়ত কোনো ক্যাম্পে গিয়ে ছবিটা তোলা। পিছনে তাবু গাঁড়া সামনে ছোট পাথরের উপর বসে হাতের বড় রাইফেল টা পরিষ্কার করছে। শশী ছবিটার দিকে তাকিয়ে সমুদ্র কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। এমন আরো কয়েকটা ছবি দেওয়ালে টাঙানো। আরেকটা ছবি দেখলো যেটাতে সমুদ্র বেশ গর্বের সাথে পুরুষ্কার নিচ্ছে তবে তখনো মুখে হাসি নেই। শশী নিজে নিজেই বলল,

এই লোকটা হাসে না কেনো হাসলে কি কেউ ওনাকে জরিমানা করবে?

শশীর হঠাৎ মনে হলো সমুদ্রের এই ছবির সাথে লাইব্রেরি তে থাকা লোকটার ছবির বেশ মিল আছে। দুজনেই দেখতে একি রকম যেনো জমজ ভাই ওটা ওনার বাবা তো হবে নাহ কারণ ওনার বাবার ছবি শশী দেখেছে তাহলে কে হতে পারে। শশী নিজের মনে অনেকক্ষণ ভাবলো তবে কিছুই বের করতে পারলো নাহ। হঠাৎ করে তার মাথায় আসলো সে এই রুমে শুধু আলো জ্বালাতে এসেছিলো তবে এখন ওর হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে যেনো ও এ রুমে থাকতে এসেছে। তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেরোতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো শশী ভয়ে ভয়ে মাথা উঁচু করলো কেননা ও শিওর এটা সমুদ্র। আমাদের বাড়িতেই ওনার রুমে গিয়েছিলাম বলে মারার হুমকি দিয়েছিলো আর আজকে তো ওনাদের বাড়ি আজকে বোধহয় আর কোনো হুমকি নয় সোটা স্যুট করে দিবে। শশী কাঁদো কাঁদো মুখ করে সামনে তাকিয়ে দেখে রোদ্র ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ্রকে দেখে যেনো প্রাণ ফিরে পেলো জোরে শ্বাস নিয়ে বলল।

আরে আপনি তো আমায় ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলেন একটুর জন্য হার্টফেল করিনি।

তুমি ভাইয়ার রুমে কি করছিলে?

এইতো আলো জ্বালাতে এসেছিলাম।

ওহ তাই বলো আচ্ছা এসো আমার সাথে এতোদিন তোমাকে সময় দিতে পারিনি পরশোদিন তো চলেই যাবো। তাই ভেবেছি আজকের রাতটা তোমার জন্য বরাদ্দ দুজনে জোছনা বিলাস করবো।

রোদ্রের কথাশুনে শশী মুচকি হেসে রোদ্রের সাথে সাথে চলল, কিছু একটা মনে পড়ায় শশী থেমে গিয়ে বলল, আচ্ছা তাহলে আন্টিকেও ডেকে নিই কি বলেন তিনজনে গল্প করা যাবে।

বাহ তাহলে তো আরো ভালো হয়। তুমি বরং মা কে ডেকে আনো আমি ছাঁদের দিকে যাচ্ছি।

শশী মাথা নাড়ি হ্যাঁ বলে শাহানারা কে ডাকার উদ্দেশ্য গেলো তবে আবার ফিরে এসে রোদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, আপনাকে একটা কথা জিগাস করতে পারি?

হ্যাঁ বলো।

আচ্ছা আপনাদের যেই ঘরে বই রাখা ওইঘরে দেওয়ালে একজনের ছবি দেখলাম। আমি ঠিক চিনতে পারিনি ওনাকে আপনার বাবার ছবি আমি আন্টির রুমে দেখেছি কিন্তু ওই ছবিতে থাকা লোকটা কে আমি চিনতে পারলাম নাহ। যদি কোনো সম্যসা না থাকে তাহলে আমাকে বলবেন ওনি কে।

শশীর কথাশুনে রোদ্রের মুখের হাসিটা যেনো ধপ করে নিভে গেলো। দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে শুকনো একটা হাসি দিয়ে বলল, ছবিতে যাকে দেখেছো ওনি হলেন ক্যাপ্টেন অভিক ইকবাল।
,,,,,,,,,,,
দেওয়াল ঘড়ির ঠিক ঠিক শব্দটা বলে দিচ্ছে ঘড়ির কাটা রাত আটটার ঘরে পৌঁছালো। আভিজাত্যপূর্ণ একটা রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে সমুদ্র আর মালবিকা মির্জা। নীরবতা কাটিয়ে সমুদ্র তার গম্ভীর স্বরে বলল, হঠাৎ আমার সাথে দেখা করার কারণ টা কি।

সমুদ্রের কথায় মাঝ বয়সী নারীটি সমুদ্রের দিকে গভীর নয়নে তাকালো। বয়স বাড়লেও বয়সের ছাপ যেনো ওনাকে ছুঁতে পারেনি এখনো নিজের রূপটা বেশ শক্ত করেই ধরে রেখেছে। টেবিলে ফোনটা রেখে পিছনে হেলান দিয়ে বেশ আয়েশ করে বসে বলল, কেনো আমার কথা শুনছো না সমুদ্র। তোমাকে আগেও সাবধান করেছিলাম কিন্তু তুমি শুনলে নাহ তারপর কি হলো তোমার বাবাকে হারালে। তাই আমার কথা মানো এসবে না জড়িয়ে শান্তিতে জবটা করো আর ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে সংসার করো।

মালবিকা যেনো ঠান্ডা সূরে সমুদ্র কে হুমকি দিলো। কিন্তু সমুদ্রের কোনো হেলদুল নেই ও বেশ আরাম করে বসে বাঁকা হেসে বলল, সাবধান করার জন্য ধন্যবাদ। আর রইল আমার পিছিয়ে যাওয়ার কথা সেটা আপনি ভুলে যান সমুদ্র যে পথে পা বাড়ায় সে পথ থেকে আগাছা গোড়া থেকে নিমূল করেই বের হয়।

সমুদ্রের এহেন কথায় মালবিকা রেগে টেবিলে হাত মুঠো করে বাড়ি মেরে বলল, কথাশোনো ছেলে নয়তো তোমার ভালো হবে নাহ। তোমাকে ভালোভাবে বললাম শুনলে তোমারি ভালো আর না শুনলে আমাকে অন্য ভাষায় কথা বলতে হবে। নিজের আপনজনদের অবশ্যই হারাতে চাও নাহ। তাই বলছি সবাইকে নিয়ে ভালো থাকো আর আমার রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াও।

পরিবার এর কথা ভালো থাকার কথা আপনার মত মহিলার মুখে মানায় না যে কিনা পরিবার এর মানেটাই বোঝে নাহ। আর তাছাড়া আপনার থেকে ঙ্গান চাইছে কে যে কিনা নিজেই বিয়ের আগে পেগনেন্ট হয়ে যায়।

সমুদ্রের এমন অপমান সূচক কথাশুনে মালবিকা মোটেও রাগলো না উল্টো ব্যাঙ্গ করে হেসে বলল, পেগনেন্ট যে হয়েছিলাম আমার পেটে যে ছিলো সেও কিন্তু তোমাদের বংশেরই রক্ত ছিলো।

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-০৯

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৯
,
দুই ছেলের কাছে এমন উত্তর পেয়ে শাহানার এবার ভীষণ রাগ হলো। তার বড় ছেলে তো সরাসরি না করে দিলো তিনি এতে কিছুই মনে করেননি। কারণ সে তার বড় ছেলেকে চেনে ওর কাছ থেকে কোনো আশা করাটাই বৃথা। কিন্তু মেজো ছেলের থেকেও যে একই জবাব আসবে তিনি ভাবতেও পারেনি। কিছুক্ষণ আগে যখন তিনি শশীকে বিয়ে করার কথা বলল তখন রোদ্র রাজি হলেও রোদ্রের পরে কথাটা শুনে পুরাই অবাক বনে গেছে।

মা তুমি যেটা চাইছো সেটাই হবে আমি বিয়েটা করবো তবে এখন নয় এক বছর পর। তুমিই বলো আমি এখন ওর দায়িত্ব কীভাবে নিবো আমি এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তোমাকে বলেছিলাম এখানে আশার আগে আমি আমার আঁকা কিছু ছবি বাইরের দেশের একটা প্রতিষ্ঠানে মেইল করেছিলাম। ওরা কালকে তার জবাব দিয়েছে এই জন্যই কালকে সারাদিন আমি বাইরে ছিলাম। ওখানে অনেক বড় একটা প্রদর্শনই হবে সেখানে আমি আমার আঁকা ছবিগুলো প্রদর্শন করার সুযোগ পেয়েছি। আমি কালকেই ভাইয়ার সাথে ঢাকা চলে যেতাম কিন্তু এই সম্যসার জন্য যেতে পারিনি। তবে আজকে কিংবা কালকে চলে যাবো এই সপ্তাহের মধ্যেই আমাকে চলে যেতে হবে। সামনের সপ্তাহে ওখানে অনুষ্ঠান।

কথাগুলো বলে রোদ্র একটু থামলো তারপর ওর মায়ের হাতদুটো শক্ত করে ধরে অনুনয় করে বলল, জানোত মা আমি প্রথম দেখাতেই শশীর পুরো ছবি মনের ক্যানভাসে এঁকে ফেলেছি। আমার বলতে কোনো দ্বিধা নেই আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু আমি এখন ওর যোগ্য নয় আমি এখনো ওর দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্য নয়। আমি প্রতিষ্ঠিত হবো তারজন্য আমার সময় চাই। মাগো আমি তোমার কাছে শশীকে চাইছি তুমি আমায় কথা দাও তুমি এই একটা বছর ওকে আগলে রাখবে। আমি যে ওকে ভালোবাসি সেটা ও জানেনা ও আমাকে ওর অনেক ভালো বন্ধু ভাবে। তুমি ওকে কখনোই জানাবে না আমি এসে নিজে মুখে ওকে জানাবো তুমি শুধু আমায় কথা দাও এই একটা বছর ওকে দেখে রাখবে।

ছেলের কথা শুনে প্রথমে যতটা রাগ হয়েছিলো এখন রোদ্রের পুরো কথাশুনে সেই রাগটা আর নেই। সত্যিতো একজন বাবা কখনোই বেকার কোনো ছেলের হাতে তার মেয়েকে তুলে দিবে নাহ। যত কিছু হোকনা কেনো সেখানে শশীতো ফুলের মতো পবিত্র। শাহানারা ভেবেছিলো তার বড় ছেলের বউ করে সবার সামনে দিয়ে মাথা উঁচু করে শশীকে নিয়ে যাবে কিন্তু সেটা তো আর হলো নাহ। কিন্তু সে তার মেজো ছেলেকে কথা দিবে নিশ্চয়ই শশীকে সে ছেলের বউ করবে তবে বড় ছেলের নয় মেজো ছেলের। শাহানারা মুচকি হেসে রোদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

অবশ্যই আমি আমার ছেলের আমানত এর কোনো খেয়ানত করবো নাহ। তুই নিশ্চিন্তে থাক আর মন দিয়ে সবটা করবি। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবি বাবা ভাইয়ের মতো দশ জন এর একজন হবি তবেই কিন্তু শশীকে পাবি নয়ত আমি আমার মেয়েকে তোর সাথে দেবো নাহ।

মায়ের কথা শুনে রোদ্র হেসে মায়ের হাতের উপর চুমু খেয়ে বলল, আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো মা।
,,,,,,,,,,
শশীর শরীল খুবি দুর্বল দুই হাতের ছিলে যাওয়া স্থানে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। এতোক্ষণ বিছানায় শুয়ে ছিলো জোনাকির কাছে সালিশের সবটা শুনে শোয়া থেকে উঠে বসল। দুর্বল শরীলে ঘর থেকে বেরিয়ে আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলো। পুরো দোতলা ফাঁকা কেউ কোথাও নেই কি আশ্চর্য বাড়ির সবাই গেলো কই। সিঁড়ি বেয়ে নেমে নিচে আসতেই দেখলো সবাই বসার ঘরে। শশী দেখলো ওর আব্বা চৌকির উপর মাথা নিচু করে বসে আছে। মেঝেতে ওর মা আর কাকীরা ছোটো কাকা আর মেজো কাকা আব্বার থেকে একটু দূরে চেয়ার পেতে বসে আছে। শশী আস্তে আস্তে ওর আব্বার দিকে এগিয়ে গেলো তারপর ওর আব্বার পায়ের কাছে বসে মুখের দিকে তাকিয়ে ওর আব্বার হাতের উপর হাত রেখে বলল,

আব্বা বিশ্বাস করেন সমুদ্র ভাইয়া কিছুই করেননি ওনিতো আমায় বাঁচিয়েছে। ওইদিন আমি বই নিয়ে আসার সময় ওই শাহিন আমার মুখ চেপে ধরে ওই ক্লাবঘরে নিয়ে যায়। তারপর আমার হাত মুখ বেঁধে বলে ও নাকি আপনার সম্মান নষ্ট করে দেবে। আমাকে সারারাত এই ঘরে বন্ধ করে রাখবে তারপর সবার কাছে বলবে আমি খারাপ। আব্বা বিশ্বাস করেন আমি আপনার সম্মান নষ্ট হবে এমন কোনো কাজ করি নাই।

মেয়ের কথাশুনে জামশেদ মাস্টার মাথা তুলে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, কৈফত দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নাই আম্মা আমি আপনারে বিশ্বাস করি।

বাবার মুখে কথাটা শুনতেই শশী ছোট বাচ্চার মতো বাবার হাত জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। তখনি শাহানা ঘরের মধ্যে এসে বলল, জামশেদ ভাই আমার একটা আবদার আছে আপনার কাছে।

কি আবদার আপা।

আমি শশীকে আমার সাথে নিয়ে যেতে চাই আমার মেয়ের পরিচয়ে। আমার অনেক সাধ ছিলো আমার একটা মেয়ে হবে যাকে আমি পুতুলের মতো সাজিয়ে রাখবো। কিন্তু সেটাতো আর হলো নাহ তাই আমার অনুরোধ শশীকে আমায় দিয়ে দিন। নয়ত এই গ্রামের মানুষ ওর জীবনটা শেষ করে দেবে ওই খারাপ ছেলেটার সাথে ওর বিয়ে দিয়ে দিবে। আমি শশীকে নিয়ে যাবো পরিক্ষার সময় ও এসে পরিক্ষা দিয়ে যাবে। শহরের নাম করা কলেজে আমি ওকে ভর্তি করাবো ওকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবো ও নিজের পরিচয়ে বাঁচবে। আজকে ও মুখ লুকিয়ে এই গ্রাম থেকে যাচ্ছে কিন্তু একদিন সেই ওই মাথা উঁচু করে এই গ্রামে পা রাখবে কথা দিচ্ছি আপনাকে।

কিন্তু আপা আমি কোন পরিচয়ে আপনার সাথে ওকে পাঠাবো। গ্রামের মানুষ এসব বুঝবে নাহ আপনার ঘরে জোয়ান দুটো ছেলে এভাবে কেউই মানবে না আপা।

শশী মাথা তুলে বলল, আমি কোথাও যাবো নাহ আমি এখানেই থাকবো। এই গ্রামের বাইরে কিছুতেই যাবো নাহ।

শাহানারা এগিয়ে এসে শশীর মাথায় হাত রেখে ওকে বোঝানোর সূরে বলল, মারে বড় কিছু পেতে হলে এমন ছোট ছোট অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়। আমিতো তোর মায়ের মতোই কথা দিচ্ছি আমার কাছে তুই কষ্টে থাকবি নাহ।

তারপর জামশেদ মাস্টার এর দিকে তাকিয়ে বলল, বিকেলে আপনি সবাইকে বলে দিবেন শশী আমার বড় ছেলের বউ এর পরিচয়ে আমার বাড়ি যাচ্ছে।

কিন্তু আপা সমুদ্র?

ওর কথা ভাববেন নাহ আমি সবটা দেখে নেবো।

শাহানারার কথায় সবাই রাজি হলো কেননা মেয়েকে বাঁচাতে তাদের এটা করতেই হবে। নয়ত গ্রামের মানুষ শশীকে শাহিন এর সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে আর বাবা হিসাবে এটা কিছুতেই সয্য করবেন নাহ।
,,,,,,,,,,,
বিকেলের সালিশে এই কথাই জামশেদ মাস্টার সবাইকে বলে দিলো। শাহিন এর মুখটা রেগে লাল হয়ে আছে। তার করা প্ল্যান যে এভাবে নষ্ট হবে ও ভাবতেও পারেনি। সন্ধ্যার একটু আগেই বৈঠক ভেঙেছে। রাতেই সমুদ্ররা রওনা হবে। শশী কান্না করতে করতে দুইবার অঙ্গান হয়েছে। ও শুধু একটা কথায় বলছে ও কোথাও যাবে নাহ। জোনাকিও বোনকে জড়িয়ে ধরে হাওমাও করে কান্না করছে। শশীর ছোট কাকি ব্যাগ গুছিয়ে গাড়িতে রেখেছে সমুদ্র হাজারও বিরক্তি নিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে আছে। আর বার বার শুধু ঘড়ি দেখছে একটু পরেই মাগরিবের আযান দিবে এখনো কেউ বাড়ির মধ্যে থেকে বের হয়নি। প্রায় অনেকটা সময় পর সবাই শশীকে ধরাধরি করে আনলো আগে শাহানারা গাড়িতে উঠলো তারপর শশীকে পাশে বসায়ে বুকের মধ্যে আগলে নিলো। জোনাকি গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে কান্না করছিলো জয় ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলল।

তুমি চাইলেই আমাদের ওখানে যেতে পারবে শুধু শুধু কান্না করো নাহ। যদিও তুমি আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছো তবুও আমি সবটা ভুলে গিয়েছি। যদিওবা তুমি আমাকে সরি বলোনি তবে ব্যাপার না। তোমার যখন তোমার আপুকে দেখতে ইচ্ছে করবে আমাকে বলো আমি গাড়ি নিয়ে এসে তোমায় নিয়ে যাবো।

জোনাকি কিছু বললো নাহ শুধু ছলছল চোখে জয় এর দিকে তাকিয়ে ওর কথা শুনলো। জয় কথাগুলো বলে গাড়ির দরজা খুলে মায়ের অন্যপাশে বসে পড়ল। রোদ্র সমুদ্রের পাশের সিটে বসে পড়ল। সমুদ্র চোখে সানগ্লাস পড়ে গাড়ি স্টার্ট করতে গেলে রোদ্র থামিয়ে দিয়ে বলল।

ভাই দাঁড়াও এখনো হয়নি আর একটু।

সমুদ্র বিরক্তি নিয়ে সামনে থাকা আয়নার দিকে তাকালো যেখানে শশীর কান্না ভেজা মুখটা ফুঁটে উঠেছে। সমুদ্র বেশ কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থাকলো কেনো জানি মেয়েটাকে এই অবস্থায় অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। কী আজব ব্যাপার কান্না করলেও কাউকে এমন সুন্দর লাগে?

#চলবে?