Monday, June 23, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 286



প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-৪৪+৪৫

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৪৪
,
সমুদ্রের যাওয়ার দুইদিন পেরিয়ে গেছে। এই দুইদিনে একটা বারও কোনো রকম যোগাযোগ হয়নি। মূলত ওখানে যাওয়ার পর থেকেই সব যোগাযোগ যেনো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সকাল থেকে বেশ করেকবার বমি হয়েছে। এই অবস্থায় এমন বমি খাবারে অনিয়ম করলে মা এবং বাচ্চা দুজন এরই ক্ষতি। জানালার পাশে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে শশী। সমুদ্র যাওয়ার পরদিন থেকেই ওদের বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে একটা কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। প্রথমে ওতোটা খেয়াল না করলেও এই দুইদিন বেশ চোখে পড়ছে। শশী ভাবলো হয়ত সমুদ্র ওদের পাহাড়ার জন্য কাউকে রেখে গেছে এই জন্য বেশী মাথা ঘামালো নাহ। পেটের নিচের দিকটাই বেশ বেথ্যা করছে। এই জন্য নরম বালিশটা রেখে তাতে ভর দিয়ে বসে আছে। এবার একটু কম লাগছে। হাতের ফোনটায় চোখ বুলিয়ে পুনরায় সমুদ্রের নাম্বারে কল দিলো। প্রতিবারের মতো এবারেও বন্ধ আসছে। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ও যদি ভেঙে পড়ে তাহলে বাচ্চাটার ও ক্ষতি হবে সাথে শাহানারা কেউ সামলানো যাবে নাহ। চিন্তায় চিন্তায় অসুস্থ শরীর টা যেনো বিছানার সাথে মিলিয়ে গিয়েছে। শশীর ভাবনার মাঝেই দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ হল। শশী ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার ওপাশে থাকা লোকটাকে ভিতরে আসতে বলতেই রোদ্র হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে ভিতরে আসলো। রোদ্রের হাতে খাবারের প্লেট দেখতেই শশী নাক সিটকে বলল।

“রোদ্র ভাইয়া প্লিজ এটা নিয়ে চলে যান। আমি খাবো নাহ৷ এসবের গন্ধ নাকে লাগলেই কেমন বমি পাচ্ছে।

শশীর কথায় রোদ্র গেলো নাহ। বরং মুচকি হেসে প্লেটটা টেবিলে রেখে শশীর থেকে বেশ দুরত্ব নিয়ে বসে বলল।

” না না এমন করলে তো চলবে নাহ। দেখো তুমি এটা ভেবো নাহ যে আমি তোমাকে খাওয়াতে এসেছি। আমিতো আমাদের ওই যে কী বলে যেনো হ্যাঁ বংশের বাতি। আমিতো আমাদের বংশের বাতির জন্য খাবারটা এনেছি। এখন তুমি যদি না খাও তাহলে তারও খাওয়া হবে নাহ। আর আমি থাকতে এমনটা কখনোই হতে দেবো নাহ।

কথাটা বলে রোদ্র হাসি মুখে শশীর দিকে তাকালো। শশী করুণ চোখে রোদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো এমন তাকানোই রোদ্রের একটু মায়া হয় আর ওকেও খাবারটা খেতে না হয়। শশীর এভাবে তাকানো দেখে রোদ্র শশীকে বোঝানোর স্বরে বলল।

“দেখো শশী তুমিতো সবটাই বুঝতেছো তারপরেও এমন করলে চলবে? এখানে তুৃমি খাচ্ছো নাহ৷ ওদিকে মাও খাচ্ছে নাহ৷ আমি একা কয়দিকটা সামলাবো বলো? আবার তোমাদের এমন বিষণ্ণ দেখে জয়টাও মনমরা হয়ে বসে আছে। লুকিয়ে লুকিয়ে কান্নাও করছে৷ হয়েছে তো একদম ভাইয়ার মতো কাউকে কিছু বলবে নাহ৷ একা একা কষ্ট পাবে।

রোদ্রের থেকে জয়ের কথাটা শুনতেই শশীর মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এই কয়দিনের জয়ের কথাটা বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলো। সমুদ্র ওকে যে দায়িত্ব দিয়ে গেছে সেটার কিছুই পালন করতে পারছে নাহ। না জানি ছোট ছেলেটা কোথায় গিয়ে বসে আছে। মাও অসুস্থ ওকে তো আমি ছাড়া দেখার ও কেউ নেই। আর সেই আমি কিনা। এসব ভেবে শশী তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নামতে গেলে রোদ্র থামিয়ে দিয়ে বলল।

” একি এভাবে কোথায় যাচ্ছো?

“জয়ের কাছে। ও খেয়েছে কিনা তাওতো জানি নাহ৷ বড় ভুল হয়ে গেলো। আপনি প্লিজ সরে যান ভাইয়া আমি গিয়ে দেখি ও কোথায় আছে।

” কোথাও যেতে হবে নাহ তোমায়। আগে খাবারটা শেষ করো৷ আর আমি জয়কে খাইয়ে দিয়েছি ও ওর ঘরে ঘুমিয়ে আছে। তুৃমি এখন কথা না বলে খেয়ে নাও তো।

শশীও আর কথা বাড়ালো নাহ। চুপচাপ হাতটা ধুয়ে টেবিলের উপর থেকে প্লেটটা নিয়ে খাওয়া শুরু করলো৷ রোদ্র অপলকভাবে শশীর দিকে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণেই কিছু একটা মনে আসতেই মাথা ঝাঁকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে নিজের মনে বিরবির করে বলল।

“না না এভাবে ওর দিকে তাকানো অন্যায়। কোনো অনুভূতি নেই আমার মনে ওর জন্য৷ আমি শুধু ভাইয়ার দেওয়া দায়িত্ব পালন করছি আর কিছু নাহ।

কথাগুলো বলতেই ভিতর থেকে অন্য একটা সত্তা যেনো বলে উঠল। সত্যি কি তাই? কোনো অনুভূতি নেই? এটাও সম্ভব?
,,,,,,,,,,,

পরপর দুটোরাত না ঘুমানোর দরুন চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। পেশী বহুল লম্বা চওড়া শরীরে জংলী ছাপার পোশাকটা বেশ আঁটোসাটো হয়ে চেপে গাঁয়ের সাথে মিশে আছে। ছোপ ছোপ কাঁদায় মোড়ানো পুরো শরীর। নিচু হয়ে নিঃশব্দে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে। শুকনো পাতার উপর পা পড়তেই মড়মড় শব্দে নিস্তব্ধতা ভেঙে আওয়াজ করে উঠতেই পিছনে ঘুরে আঙুলের সাহায্যে চুপ থাকতে বলল। রাত তখন কত সেটাও জানা নেই ঘন জঙ্গলের গাছ পাতার ফাঁক গলে চাঁদের আলো মাটিতে স্পর্শ করতে অক্ষম। দলনেতার পিছনে পিছনে সর্তক চোখে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে সৈনিকেরা। চলতে চলতে হঠাৎ থেমে গিয়ে সমুদ্র পিছনে ফিরে চোখের ইশারায় মাটির দিকে তাকিয়ে যথেষ্ট নিচু স্বরে বলল।

” এটার থেকে সাবধান।

কথাটা বলে মাটিতে পুঁতে রাখা জিনিটা এড়িয়ে সামনের দিকে গেলো। কারো জানা নেই আরো কোথায় কোথায় এগুলো রাখা আছে। সামনের অন্ধকার ভেদ করে আগুনের ফুলকি দেখা যাচ্ছে সমুদ্র হাতের ইশারায় সবাইকে থামতে বলল। সবাই থেমে যেতেই পিছন থেকে কাঁপা স্বরে কেউ ডেকে উঠল।

“স্যার।

সমুদ্র পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখলো তাদের মাঝে একজন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো নড়াচড়া নেই। সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে নিচের দিকে তাকাতেই সর্তক কন্ঠে বলে উঠল।

“নড়ো নাহ। একদম নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকো।

কথাটা বলতে দেরি কিন্তু ছেলেটি সেটা শোনতে দেরি করলো নাহ। ভয়ে সমুদ্রের কথা না শুনেই পা উঠিয়ে পিছাতে গেলেই বিকট শব্দে আগুন জ্বলে উঠল। ছেলেটির পাশে যারা ছিলো তারাও ছিটকে কিছুটা দূরে পড়ে গেলো। সমুদ্র সেদিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনের দিকে ফিরলো। সামনের তাবু গেরে ওসমান তার ঘাটি বসিয়েছিলো। সেখান থেকে বেশ গোরগোল আসছে। সমুদ্র পুনরায় পিছনে ফিরে বলে উঠল।

” ওহ শিট। সবাই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ো ফাস্ট। হাতে সময় খুবি কম, গো।

কথা অনুযায়ী সবাই যার যার মতো নিজের জায়গা প্রস্হান করলো। কিন্তু সেখানে পড়ে রইলো দুটো পুড়ে যাওয়া সৈনিক এর নিথর প্রাণহীন দেহ।
,,,,,,,,,,,,

ডয়িং রুমের সোফায় মননরা হয়ে বসে আছে শশী। সারাদিন রুমের মধ্যে থাকতে থাকতে কেমন দমবন্ধ লাগছে। শাহানারা নিজের রুমে ঘুমিয়ে আছে। বাড়িতে আপাতত কেউ নেই। জয় রোদ্রের সাথে বাইরে গিয়েছে। একা একা ভালো লাগছে নাহ। তাই জন্য শশী ঘরের সদর দরজা খুলে বাইরে গেলো। হাঁটাচলা করতে খুব বেশিই কষ্ট হয়। তবুও একটু আধটু না হাঁটলে পা ফুলে যায়। যদিও সমুদ্র বাইরে যেতে নিষেধ করেছিলো। কিন্তু ওতো বেশিদূর যাবে নাহ। বাড়ি আঙ্গিনায় একটু হাঁটবে গেটের বাইরে যাবে নাহ। ঘর থেকে বেরিয়ে তিনটা সিঁড়ি পাড় করে বাইরে আসলো শশী। সামনে তাকিয়ে দেখে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দারোয়ান ঝিমুচ্ছে। শশীর আসার শব্দ পেয়ে সেদিকে তাকাতেই সেই ঝিমুনি ভাবটা কেটে গিয়ে সটান করে দাঁড়িয়ে রইলো। শশী সেদিক থেকে নিজের চোখ সরিয়ে বাড়ির পিছন দিকটায় গেলো। প্রাচীরটা বেশ উঁচু করে দেওয়া যার দরুন বাইরের কিছু দেখা যাচ্ছে নাহ। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে শশী পুনরায় সামনের গেটের দিকটায় গেলো। রেলিং এর ফাঁক দিয়ে রাস্তার দিকে তাকালো। হ্যাঁ ওইতো সেই কালো গাড়িটা দেখা যাচ্ছে। সমুদ্র যাওয়ার পর থেকে গাড়িটা এখানে দাঁড়ানো । কিছু একটা মনে হতেই শশী গেটের কাছে চলে গেলো। শশীকে দেখে দারোয়ান নম্র ভাবে জিগাস করলো।

“ম্যাম কিছু লাগবে?

” না কিছু নাহ।

কেনো জানি নিজের সন্দেহের কথাটা দারোয়ানকে বলল নাহ। খানিকক্ষণ সেদিকে চেয়ে থেকে যখন ফিরে আসতে যাবে তখনি চোখে কিছু একটা পড়লো। সেই কালো গাড়িটার ডিকি খুলে সেটার মধ্যে প্রবেশ করছে জয়। নিজেকে ডিকির মধ্যে সেট করা হতেই আস্তে করে সেটা বন্ধ করে দিলো। শশী বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। আশেপাশে কোথাও রোদ্র নেই। কিন্তু জয়তো রোদ্রের সাথেই ছিলো তাহলে রোদ্র কোথায় গেলো। আর জয়ই বা কেনো গাড়িতে উঠে গেলো। অস্থির হয়ে শশী গেট দিয়ে বের হতে গেলে দারোয়ান আটকে দিলো।

“ম্যাম আপনি কোথায় যাচ্ছেন? বড় স্যার কড়া ভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন আপনাকে যেনো বাইরে যেতে না দিই।

” আরে তুমি দেখোনি জয়। ওই গাড়িতে জয় আছে তুমি যাও আর ওকে বের করো ওখান থেকে।

শশীর কথায় দারোয়ান আশে পাশে দেখলো ততক্ষণে শশী বেশ করেক বার রোদ্রকে ফোন দিয়েছে কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ ফোনটা রিসিভ করেনি। শশী উপায় না পেয়ে ইমরান কে কল দিলো। ইমরান আসছি বলে কলটা কেটে দিলো৷ শশী দারোয়ানকে পুনরায় তাড়া দিতেই দারোয়ান গাড়িটার দিকে গেলো। কিন্তু ততক্ষণে গাড়ি চলতে শুরু করেছে। শশী দ্রুত পা চালিয়ে গেটের বাইরে এসে রাস্তায় দাঁড়ালো। এর মধ্যেই শরীর ঘেমে একাকার। এইটুকু আসতেই হাঁপিয়ে গেছে। গাড়িটা এখন আর দেখা যাচ্ছে নাহ বেশ খানিকটা দূর চলে গেছে। দারোয়ান হাঁপাতে হাঁপাতে শশীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল।

“ম্যাম একটুর জন্য গাড়িটা ধরতে পারিনি। আপনি প্লিজ বাসার মধ্যে যান।

কিন্তু শশী কোনো কথা শুনলো নাহ। বার-বার রোদ্রের নাম্বারে ডায়াল করছে। এতোক্ষণ ফোন গেলেও এবার বন্ধ আসছে৷ শশী অস্হির হয়ে এদিক ওদিক দেখছে। কিছুক্ষণ পর ওর সামনে ইমরান গাড়ি নিয়ে এসে থামালো। ইমরান গাড়ি থেকে নামতে গেলে শশী ওকে থাকিয়ে দিয়ে বলল।

” আপনি নামবেন নাহ ইমরান ভাইয়া জলদি গাড়ি স্টার্ট করুন। ওই গাড়িটা এদিকে গিয়েছে। এতোক্ষণে হয়ত অনেকটা দূর চলে গিয়েছে৷ প্লিজ আপনি গাড়িটার পিছু করুন।

কথাটা বলে শশী গাড়িতে উঠে বসলো। ইমরান পিছনে তাকিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে বলল।

“কিন্তু আপনি কোথায় যাচ্ছেন। আপনি বাসায় যান আমি দেখছি।

” আমিতো বললাম আমি যাবো আপনি গাড়ি স্টার্ট করুন ইমরান ভাইয়া।

“কিন্তু ম্যাম। স্যার?

” সেটা আমি বুঝে নেবো আপনাকে যেটা বললাম সেটা করুন এটা আমার আদেশ। প্লিজ জলদি গাড়ি স্টার্ট দিন নয়ত আমরা ওই গাড়িটা আর ধরতে পারবো নাহ।

শশীর গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে ইমরান আর না করতে পারলো নাহ। চুপচাপ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামনের দিকে গেলো। শশী বারবার রোদ্রের নাম্বারে কল দিচ্ছে কিন্তু বারবারই বন্ধ আসছে। শশীর মাথায় একটা কথায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। গাড়িটা কার? গাড়িতে কে এমন ছিলো যার জন্য জয় এভাবে নিজে থেকে গাড়িতে উঠে বসল। যদি চেনা কেউই থাকবে তাহলে ও ডিকিতে লুকালো কেনো? আর রোদ্রই বা কোথায়? ওনার ফোন কেনো বন্ধ?

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৪৫
,
সকাল সকাল রৌদ্রের মধ্যমা আঙুল ধরে সাদা স্কুল ড্রেসটা পরে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো জয়। সদর দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে যখনি গাড়িতে উঠতে যাবে তখনি জয় বায়না ধরলো আইসক্রিম খাওয়ার।

“এখন নয় তোদের স্কুলের সামনে থেকে কিনে দিবো। এখন দেরি হয়ে যাবে জলদি গাড়িতে গিয়ে বস।

” না না মেজো ভাইয়া তুমি এখনি কিনে দিবে। যদি না দেও তাহলে আমি এখানে বাবু হয়ে বসে পড়বো তখন তো আরো দেরি হয়ে যাবে তখন কি করবে?

জয়ের কথাশুনে রৌদ্র কমরে হাত রেখে জয় এর দিকে তাকালো৷ কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে অগত্যা রাজি হয়ে গেলো। জয় কে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে নিজে আইসক্রিম আনতে গেলো। কিন্তু জয় তো নাছোড়বান্দা সেও যাবে। জয় এর পিছু পিছু সেও গেলো। রাস্তা পাড় হয়ে দোকান থেকে আইসক্রিম কিনে জয়ের হাতে দিতেই জয় খুলে খাওয়া শুরু করলো। রোদ্র তার মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে যখনি দিতে যাবে তখনি রোদ্রের পাশে আরেকটা হাত দেখতে পেলো। সেও একশো টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দিয়ে বলল।

“আইসক্রিম এর টাকাটা এখান থেকে রাখুন।

পরিচিত কন্ঠ পেয়ে রৌদ্র ঘাড় ঘুড়িয়ে পাশে তাকিয়ে জোসেফ কে দেখে অনেকটাই অবাক হয়ে গেলো। জোসেফ মুচকি হেসে বাকি টাকাটা নিয়ে পকেটে রেখে বলল।

” কিরে ওমন হ্যাঁ করে আছিস কেনো?

“তুই এখন এখানে?

রৌদ্র অবাক হয়ে কথাটা বলতেই জোসেফ হেসে ফেলল। জয়ের দিকে তাকিয়ে হাই দিয়ে পুনরায় রোদ্রের দিকে তাকালো।

“কেনো এখানে থাকলে কি কোনো সম্যসা? আরে হঠাৎ করে বাবা অসুস্থ হয়ে গেলো। তাই আমাকেও তড়িঘড়ি করে চলে আসতে হলো৷ এই কয়দিন এতো ব্যাস্ত ছিলাম যে তোর সাথে যোগাযোগ এর সময়ই পায়নি। আজকে এই দিকটায় একটা কাজ ছিলো এই জন্য আসছিলাম। আর দেখ তোর সাথে দেখাও হয়ে গেলো। তা তোর বাসা কি এখানেই?

” হ্যাঁ ওইতো আমার বাসা চল তোকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো৷

“কার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবি তোর প্রিয় মানুষটার সাথে? আচ্ছা তুই কি দিয়ে তৈরি বলতো? চোখের সামনে তাকে দেখেও এতোটা শক্ত কীভাবে আছিস?

জোসেফ এর কথায় রৌদ্রের হাসি মুখটা কিছুক্ষণের জন্য মলিন হয়ে গেলো৷ কিন্তু পরক্ষণেই আবার একটা হাসি দিয়ে বলল।

” ওসব বাদদে চল তোকে সবার সাথে পরিচয় করায়ে দিই।

“নাহ আজকে নয় অন্যদিন। তবে তুই এখন আমার সাথে যাবি। না আমি কোনো কথা শুনবো নাহ।

” আরে কিন্তু এখন কীভাবে। আমিতো জয়কে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিলাম।

“একদিন স্কুলে না গেলে কিছু হবে নাহ। আর বন্ধু হই তোর আমি আমার জন্য একটাদিন বার করতে পারবি নাহ? এই তোর বন্ধুত্ব?

জোসেফ এর চতুর কথায় রৌদ্র দমে গেলো। মুচকি হেসে সায় জানিয়ে জোসেফ এর দিকে তাকালো। রৌদ্র কে কথাটা বলে জোসেফ জয় এর দিকে তাকালো। ততক্ষণে জয় এর আইসক্রিম খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। আর ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে ওদের কথা শুনছে। জোসেফ জয় এর দিকে তাকিয়ে বলল।

” যাও আজকে তোমার ছুটি আজকে আর স্কুলে যাওয়া লাগবে নাহ৷ বাসায় যাও।

জয় খুবি তীক্ষ্ণ চোখে জোসেফ এর দিকে তাকিয়ে আছে৷ কেনো জানি ওর খুব চেনা চেনা লাগছে লোকটাকে। মনে হচ্ছে সামনে দাঁড়ালো লোকটাকে সে আগেও দেখেছে৷ কিন্তু কোথায়? ছোট্ট মাথায় একটু চাপ দিতেই মনে পড়ল হ্যাঁ অনেকদিন আগে এই লোকটিকে সে শশীর সাথে কথা বলতে দেখেছিলো৷ কিন্তু এই লোক মেজো ভাইয়াই বন্ধু হলো কীভাবে? কথাটা ভেবে যখনি রৌদ্রকে বলতে যাবে দেখলো জোসেফ ততক্ষণে রৌদ্রকে টেনে গাড়িতে বসিয়ে দিয়েছে। রৌদ্র বার বার নিষেধ করা সত্বেও শুনলো নাহ৷ জয় বাইরে থেকে ডাকলেও ভিতরে শোনা যায়নি। গাড়িও ততক্ষণে স্টার্ট দিয়ে দিয়েছে। জয় আর কিছু না ভেবে গাড়ির পিছনের ডিকিতে উঠে বসল। যে করেই হোক মেজো ভাইয়াকে জানানো লাগবে যে এই লোকটাকে সে চেনে।

“ওই যে সামনের ওই কালো গাড়িটাই। ইমরান ভাইয়া আপনি আর একটু জোরে চালান।

শশীর কথাটা শুনতেই ইমরান গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দিলো। গাড়িটা বেশ দূরে আছে। মাঝে আরো গাড়ি। একটু এদিক সেদিক হলেই গাড়িটা হারিয়ে যেতে পারে। পেটের বাম পাশটায় বেশ খানিকটা বেথ্যা করছে। তবে সেদিকে ওতোটা গুরুত্ব দিচ্ছে নাহ শশী৷ দাঁতে দাঁত চেপে সয্য করে নিচ্ছে। ইমরান গাড়ির গতি বাড়িয়ে বেশ খানিকটা কাছে নিয়ে আসলো। সামনের আয়নায় শশীকে একবার দেখে নিয়ে শশীর উদ্দেশ্য বলল।

” ম্যাম আপনার আসা মোটেও উচিত হয়নি। আমি এতোবার নিষেধ করলাম আপনি শুনলেন নাহ। এখন যদি কিছু হয়ে যায় আমি স্যারকে কি জবাব দেবো।

ইমরান এর কথা শুনে শশী সোজা হয়ে বসলো। বাম হাতে বেথ্যা করা জায়গাটায় চেপে ধরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলল।

“এতো বেশি কথা বলেন কেনো ভাইয়া। আপনি গাড়িটার দিকে নজর রাখেন। আমি ঠিক আছি। গাড়িটাকে কিছুতেই আড়াল করা যাবে নাহ৷

কথাটা বলে শশী পুনরায় রোদ্রের নাম্বারে কল দিলো কিন্তু ফোন বরাবরের মতোই বন্ধ। এতোবার কল দেওয়ার পর বন্ধ পাওয়ায় রেগে হাতের ফোনটা নিচে আছাড় মারলো শশী। সাথে সাথে ফোনের স্কিনটা ফেঁটে লম্বা আঁড়াআঁড়িভাবে একটা দাগ পড়ে গেলো।
,,,,,,,,,,,,,

মাথাটা কালো কাপড়ে মোড়ানো। হাতদুটো মোটা দড়ি দিয়ে বেশ শক্ত ভাবে বেঁধে টানতে টানতে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওসমান কে। কপালের কোন থেকে তাড়া রক্ত গড়িয়ে পড়তে পড়তে শুকিয়ে গাড়ো খয়েরি আকার ধারণ করেছে। দুই দলের মধ্যে বেশ বড়সর একটা গুলাগুলি হয়েছে। বেশ কয়েকজন সৈনিক নিহত, আহত হয়েছে। আর সকালেই বেশ আঘাত পেয়েছে। তবে শেষ মেষ ওসমান কে ধরতে পেরেছে এটাই বড় কথা। সমুদ্রের পায়ে গুলি লেগেছে বিধায় হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। তবুও হেঁটে সামনের দিকে যাচ্ছে। জঙ্গল পাড় হলেই বর্ডারের কাছে ওদের হেড অফিসের সবাই আছে। যোগাযোগের কোনো মাধ্যম না থাকায় কাউকে ইনফরম করতে পারছে নাহ। দিনের আলো ফুঁটে গিয়েছে তবুও জঙ্গলের মধ্যে কেমন একটা গুমোট ভাব। ওসমান ও বেশ আঘাত পেয়েছে। সামনের সৈনিক দড়ি ধরে হেঁচকা টানতেই নিচে পড়ে গেলো। সমুদ্র চোখের ইশারায় ওসমান কে তুলতে বলল৷ অন্য একজন পিছন থেকে জামার কলার ধরে টেনে দাঁড় করায়ে দিলো। বেশ খানিক দূর যাওয়ার পর আচমকায় সমুদ্র থেমে গেলো। কেমন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দলনেতা কে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে সকলেই দাঁড়িয়ে পড়লো। পিছনে তাকিয়ে সমুদ্রের পায়ের দিকে সকলে আতংকিত চোখে তাকালো। বাম পায়ের নিচে যেনো সাক্ষাৎ মরণ। সমুদ্র কেমন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যে প্রথম থেকে সবাইকে সর্তক করছিলো এটার থেকে সাবধান থাকতে শেষে কিনা সেই বিপদে পড়লো। সামনে থেকে একজন নরম কন্ঠে বলল।

“স্যার এটা?

সমুদ্র শক্ত কাটকাট গলায় বলে উঠল।

” কিচ্ছু হয়নি তোমরা সামনে এগিয়ে যাও। ওকে সাবধানে স্যার এর হাতে তুলে দিবে। তারপর বাংলাদেশ আর্মি ওকে পাকিস্তান পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবে। মনে রেখো এটা তোমাদের দায়িত্ব। আর হ্যাঁ আমার চিন্তা করো নাহ দেশ থেকে এমন জংজাল দূর করতে কিছু প্রাণের আহুতি দিতেই হয়।

“কিন্তু স্যার আপনি?

” বললাম তো আমার কিচ্ছু হয়নি তোমরা এগিয়ে যাও। তোমাদের দায়িত্ব পালন করো।

“ইয়েস স্যার।

সকলে সমুদ্র কে স্যালুট দিয়ে ওসমানকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। চোখে পানি টলটল করলেও উপরে সেটা প্রকাশ করলো নাহ। সমুদ্র ওদের দিকে তাকিয়ে একটা প্রাপ্তির হাসি দিয়ে ওদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিলো। ওসমান কে নিয়ে সকলে সামনের দিকে চলে গেলো। শুধু দাঁড়িয়ে থাকলো এক সমুদ্র। কেননা ওখান থেকে একচুল নড়লেও মৃত্যু অবধারিত। নিস্তব্ধ এই ঘন জঙ্গলে পশুপাখি আর কিছু মৃত্যু দেহ ছাড়া কেউ নেই। এতোক্ষণে হয়ত কিছু ক্ষত বিক্ষত দেহ গুলো কারো খাবারে পরিনত হয়েছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নিলো সমুদ্র। চোখটা বন্ধ করে মাথাটা নিচু করে নিলো৷ চোখের কোণে পানি জমেছে তবে এটা মৃত্যু ভয়ে নয়। কাউকে দেওয়া কথা না রাখতে পারার ভয়৷ কারো থেকে ক্ষমা না পাওয়ার ভয়। নিজেকে ভীষণ রকম অসহায় লাগছে। বীর সাহসী একজন সৈনিক ও নিজেকে অসহায় ভাবছে। হ্যাঁ আজকে সমুদ্র অসহায় ভীষণ রকম অসহায়। অপারগ সে, আশা ভরা চোখে সামনের দিকে তাকালো শুধু মাত্র একটা প্রাণের আশায়। কিন্তু না কেউ নেই সবটা শূন্য। চোখটা বন্ধ রেখেই বিরবির করে বলল।

” আমায় ক্ষমা করো নাহ শশী। আমি তোমায় দেওয়া কথা রাখতে পারলাম নাহ। কথা দিয়েছিলাম মৃত্যু কে হারিয়ে ঠিক তোমার কাছে ফিরে আসব। কিন্তু মৃত্যু কে হারানো যে বড়ই কঠিন৷ মৃত্যু এক অপ্রিয় সত্যি যেটা মেনে নিতেই হবে৷ অপেক্ষা করো নাহ৷ নিজেকে সামলে নিও।

কথাগুলো বলেই আস্তে করেই পা টা সরিয়ে নিলো সমুদ্র। বিকট শব্দে জঙ্গলটা যেনো কেঁপে উঠল। জঙ্গলের মাঝ থেকে সাদা কালো ধোঁয়ায় চারিদিকে ছেঁয়ে গেলো। সাথে বিদঘুটে গন্ধ।
,,,,,,,,,,,,

বিধস্ত অবস্থায় হসপিটালের চেয়ারে বসে আছে শশী। হাতের কনুই থেকে তাজা রক্ত বেঁয়ে পড়ছে। কপালের কোণে কাঁটা জায়গা থেকে রক্ত ঝড়তে ঝড়তে শুকিয়ে গেছে। ফোলা পেটটার মধ্যে থাকা ছোট্ট প্রাণটাও বোধহয় মায়ের বেথ্যা সয্য করতে না পেরে তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে ফেলেছে। এতো এতো যন্ত্রণার মাঝেও শক্ত হয়ে নড়াচড়া বিহীন স্তব্ধ হয়ে বসে আছে৷ যেনো কোনো বেথ্যায় তাকে কাবু করতে পারছে নাহ। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তেও যেনো তার কাছে অনুমতি চাইছে। ঠিক তখনি হসপিটালে লাগানো মাঝারি সাইজের টিভির মধ্যে চলতে থাকা খবরের চ্যালেনের মেয়েটা সমস্ত নিরবতা ভেঙে বলে উঠল।

“পাকিস্তান এর পলাতক টেরোরিস্ট ওসমান বাংলাদেশ বর্ডারের কাছ থেকে আর্মিদের কাছে ধরা পড়েছে। এতে অনেক সৈনিক নিহত এবং আহত হয়েছে। এইমাত্র পাওয়া খবরে জানা গেছে উচ্চ পদস্থ অফিসার এবং এই মিশনের লিডার সমুদ্র বোমা হামলায় নিহত হয়েছে। তার পুড়ে যাওয়া ক্ষত বিক্ষত বডি আর্মিরা উদ্ধার করেছে।

এইটুকুই কানে গেলো। মেয়েটা হয়ত আরো কিছু বলল তবে সেগুলোর কিছুই শশীর কানে গেলো নাহ। মাথার মধ্যে বন বন করে ঘুরছে। কানের মধ্যে কেমন শোঁ শোঁ আওয়াজ করছে। পেটের বেথ্যাটাও এবার সয্যের সীমানা পাড় করে ফেলল। তবে একটুও শব্দ করলো নাহ। ক্লান্ত চোখের পাতাটা ফেলতেই একফোঁটা পানি গড়িয়ে গাল বেঁয়ে নিচে পড়ল। উফ এতো যন্ত্রণা সয্য করতে যে দম বন্ধ হয়ে আসছে। চোখটা বন্ধ করে বিরবির করে একটা ব্যাক্য আওড়াল শশী।

” আপনি আমায় কথা দিয়েছেন সমুদ্র। ক্ষমা করবো নাহ আপনাকে।

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-৪২+৪৩

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৪২
,
রাত্রি তখন গভীর। আর এই গভীর অন্ধকারে ডুবে থাকা রাতটাই যেনো কিছু কিছু মানুষের সব থেকে বড় অস্ত্র। আকাশে কালো মেঘ জমেছে। হয়ত ঝড় উঠবে। একরাশ কালো মেঘ এসে গোলাকার চাঁদটাকে ঢেকে রাখায় অন্ধকার এর রাজত্বটা যেনো বেড়েই চলেছে। দূরে কয়েকটা টর্চ লাইটের আবছা আলো দেখা যাচ্ছে। সাথে ফিসফাস করে কথা বলার আওয়াজ। গামছা দিয়ে মুখ আর মাথা বেশ ভালো মতো পেঁচিয়ে রাখায় চোখ দুটো ছাড়া সব কিছুই অস্পষ্ট। মাটিতে বেশ বড়সর গর্ত করা হয়েছে। আর সেখান থেকেই উঠানো হচ্ছে বেশ দামী ব্রান্ডের অস্ত্র সাথে আরো ক্ষতিকর জিনিসপত্র। চেয়ারম্যান সবাইকে বেশ তাড়া দিচ্ছে। রাতের মধ্যেই কাজটা শেষ করার জন্য। একপাশে দাঁড়িয়ে সবাইকে নির্দেশনা দিচ্ছে কীভাবে কি করতে হবে। তখনি পিছন থেকে কেউ চেয়্যারমান এর উদ্দেশ্য বলল।

“কী চেয়ারম্যান সাহেব। আপনার কাজ হলো চাউল চুরি করা। টিপসই নিয়ে মানুষের জমিজমা দখল করা। তা না করে আপনি এইসব বড় বড় কাজ করছেন কেনো। অকালে মারা পড়বেন তো।

কথাগুলো শুনে চেয়ারম্যান চমকে পিছনে তাকালো। ততক্ষনে সবার কাজ থেমে গেছে। অন্ধকার বিধায় পিছনে কে আছে সেটাও বোঝা যাচ্ছে নাহ। এই জন্য হাতের টর্চটার আলো পিছনে মারতেই ইমরান মুখের উপর হাত নিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল।

” আরে করছেনটা কি এভাবে কেউ আলো ধরে নাকি। কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি নাহ।

“তুমি কে? আর এখানে কি করছো?

” আমি কে এখানে কি করছি সবটা বলবো। তার আগে মুখের সামনে থেকে আলোটা সরান। আরে আমার এখনো বিয়ে হয়নি এভাবে আলো মেরে চোখ নষ্ট করার মতলব করছেন নাকি।

ইমরান এর কথা শুনে চেয়ারম্যান আলোটা সরিয়ে নিলো। ভয়ে মুখের বেশ কিছু অংশ ঘেমে গেছে। গামছাটা মুখে আরো খানিকটা আঁটোসাটো করে নিয়ে। পিছনে কাজ করতে থাকা লোকদের উদ্দেশ্য বলল।

“এই এটাকে ধর আর এখানেই পুঁতে ফেল। না থাকবে বাঁশ আর না বাজবে বাঁশি।

চেয়ারম্যান এর কথা শুনতেই ইমরান বেশ ঘাবড়ে গেলো। সমুদ্র ওকে বলেছিলো আড়ালে থেকে ওদের কাজ কর্মের উপর নজর রাখতে যতক্ষণ না পুলিশ আসছে। কিন্তু ভুলক্রমে সামনে আসায় এখন বিপদে পড়তে হলো। লোকগুলো মাটির নিচে থেকে উঠানো একটা কাঠের বাক্স খুললো। সেখানে কাগজে মোড়ানো কিছু রয়েছে। সেখান থেকে একটা তুলে নিয়ে কাগজ খুলতেই বেরিয়ে আসলো তরবারী মত ধারালো অস্ত্র। যেটা রাতের আঁধারেও সামান্য আলো পড়ায় চকচক করছে। দুজন হাতে তরবারী টা নিয়ে ইমরান এর দিকে ধেয়ে গেলো। এমন পরিস্থিতি তে ভয়ে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে ইমরান। এমনও অবস্থায় নিজের প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে হবে এটাও যেনো ভুলে বসে আছে। কিন্তু যতক্ষণে কথাটা মনে আসলো ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। লোকগুলো অনেকটাই কাছে চলে এসেছে। তবুও প্রাণ রক্ষার্থে যেইনা পিছন ঘুরে দৌড় দিতে যাবে। মাটিতে থাকা শুকনো ডালে বেঁধে হুমরি খেয়ে নিচে পড়ে গেলো। ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। গলাটাও শুকিয়ে কাট হয়ে গেছে। শুধু বার বার একি কথা মনে আসছে৷ কেনো স্যার এর কথামতো লুকিয়ে না থেকে সামনে আসলাম৷ আমিতো জানি এরা ভয়ংকর তবুও কেনো? ইমরান এর ভাবনার মাঝেই প্রথম লোকটা এগিয়ে এসে পেট বরাবর তরবারী টা মারতেই ইমরান হাত দিয়ে সেটা ধরে ফেলল। ধারালো অস্ত্র ধরায় হাত কেটে টপটপ করে তাজা রক্ত পেটের উপর পরছে। কিন্তু আর কতক্ষণ? নিজের সবটা দিয়েও শেষে হাল ছেড়ে দিলো। হাতটা একটু ঢিলে হতেই লোকটি নিজের শক্তি প্রয়োগ করে তরবারী টা পেটে ঢুকাতে চাইলো। কিন্তু তার পরেও ব্যার্থ হলো। কেউ যেনো আবারও শক্ত করে ধরে ফেলেছে। ইমরান মাথা উঁচু করে তাকাতেই দেখলো সমুদ্র নিজের হাত দিয়ে অস্ত্র টা ধরে রেখেছে। ধারালো বিধায় সমুদ্রের হাত ও কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। সমুদ্র ইমরান কে চোখের ইশারা করতেই ইমরান পা দিয়ে আঘাত করতে আসা লোকটার বুক বরাবর লাত্থি মারলো। লোকটা অস্ত্র রেখেই কিছুটা দূরে গিয়ে ছিটকে পড়লো। দ্বিতীয় লোকটা আসতেই সমুদ্র ওটাকেও লাত্থি মারতেই দূরে গিয়ে পড়লো। বাম হাতে ইমরান কে নিচে থেকে তুলতেই ইমরান মাথা নিচু করে বলল।

“সরি স্যার।

কিন্তু সমুদ্র কোনো কথা বলল নাহ। ততক্ষণে ওদের সামনে আরো কিছু লোক চলে এসেছে। চেয়ারম্যান ও তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্র কে এই সময়ে এখানে দেখে ভয় পেলেও সেটা প্রকাশ করলো নাহ। উল্টো লোকগুলোকে বলল ওদের দুজনকেই শেষ করে দেও। সমুদ্র বুঝলো এতোজনের সাথে ওরা দুজনে মোকাবিলা করতে পারবে নাহ। কিছু একটা করতে হবে। লোকগুলো সামনে আসতেই সমুদ্র পাশ কেটে চেয়ারম্যান এর কাছে চলে গেলো। নিচে থেকে একটা অস্ত্র তুলে চেয়ারম্যান এর মাথা বরাবর ধরে সবাইকে বলল।

” একদম কেউ সামনে আগাবে নাহ। যে যার যার জায়গায় দাঁড়িয়ে থাক।

সমুদ্রের কথাশুনে চেয়ারম্যান বাঁকা হেসে বলল।

“তুই কি ভেবেছিস আমাকে এভাবে ধরিয়ে দিবি? তাতে কি আর এমন হবে। পুলিশ আসবে আমায় ধরে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমি ঠিক বেরিয়ে আসবো। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তোর কোনো ধারনায় নাই। আমার হাত অনেক লম্বা। তাই বলছি আমায় ছেড়ে দিয়ে নিজের কাজ কর।

কথাগুলো শুনে সমুদ্র হাসলো। অতঃপর চেয়ারম্যান এর কানে ফিসফিস করে বলল।

“এবার তো তুই শেষ চেয়ারম্যান। এতোদিন যার ইশারায় নেচেছিস। যার নির্দেশ মতো কাজ করেছিস এখন দেখ সে আদেও তোকে বাঁচাতে আসে কি নাহ। আর হ্যাঁ তোর হাত লম্বা হলেও আইনের হাত তার থেকেও বেশি লম্বা।

চেয়ারম্যান সমুদ্রের কথাশুনে ওর দিকে তাকাতেই সমুদ্র বাঁকা হেসে বলল।

” এখনো বুঝিসনি? কার কথা বলছি? তোর একমাত্র আদরের বউ মালবিকা মির্জা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওখানেই পুলিশ চলে আসলো। আর অব অস্ত্রসহ চেয়ারম্যান আর বাকি লোকদের ধরে নিয়ে গাড়িতে তুলল।
,,,,,,,,,,,,

“সরি স্যার।

ইমরান অপরাধীর ন্যায় আবার কথাটা বলল। তবে সমুদ্র কিছু বলল নাহ। গাড়িতে বসে হাতের কাটা জায়গা পরিষ্কার করতে ব্যাস্ত। ইমরান এর হাতে আগেই ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। ইমরান আবারও একি কথা বলতেই সমুদ্র বলল।

” কি সেই কখন থেকে কানের কাছে এক কথা বলে যাচ্ছো। তোমাকে এতোবার করে নিষেধ করার পরেও ওখানে গেলে কেনো? একটা কথা মনে রাখবে। আমরা কাউকে আঘাত করতে গেলেও দশবার ভাবি। কিন্তু ওরা তা ভাবে নাহ। ওরা অনায়াসে যে কাউকে শেষ করে দিতে পারে। তোমাকে বলেছিলাম পুলিশ আসা অবধি ওদের উপর নজর রাখো কিন্তু তুমি কি করলে?

“সরি স্যার। আমার ভুল হয়ে গেছে। আসলে তখন কি যে হয়ে গেলো। কেনো যে কাজটা করলাম নিজেও জানি নাহ। কিন্তু স্যার এখন কি হবে?

ইমরান এর কথা শুনে সমুদ্র বাঁকা হেসে। কাঁটা জায়গা মলম দিতে দিতে বলল।

” এবার যা করা ওরা ওরাই করবে। সাথে উষ্কে দেওয়ার জন্য তো মিডিয়ার লোক আছেই।

“তাহলে এখন আমরা কি করবো স্যার?

” কি আর করবো। চলো তাহলে এই রাতে বাড়ি না গিয়ে বনে জঙ্গলে তোমার জন্য মেয়ে খুঁজে বেড়ায়। গাড়ি স্টার্ট করো।

সমুদ্র ধমকে কথাটা বলতেই ইমরান তড়িঘড়ি করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চালানো শুরু করলো।
,,,,,,,,,,,

“হিজলতলীর রানিং চেয়ারম্যান অবৈধ অস্ত্র সমেত গতরাতে পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে। জানা গেছে সেখানে প্রায় কোটি টাকার অবৈধ অস্ত্রসহ আরো নেশা জাতীয় দ্রব্য ছিলো। বিদেশ থেকে কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশে এসেছে জিনিসগুলো। কিন্তু এর পিছনে কে আছে? শুধুই কি চেয়ারম্যান নাকি আরো বড় কোনো চক্রের হাত। জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন। ফিরে আসছি ছোট্ট একটা বিরতির পর।

খবরটা দেখার পর শশী হা করে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। পাশেই সমুদ্র বাম হাতে প্লেট ধরে ব্যান্ডেজ করা হাতে শশীকে খাইয়ে দিচ্ছে। একবার টিভির দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো। চামচ এর ভাত তুলে শশীর মুখের সামনে ধরে বলল।

“টিভি গিলে না খেয়ে হা করো।

“খবরটা দেখেছেন আপনি? কী সাংঘাতিক। আমরাতো কল্পনাও করতে পারিনি আমাদের গ্রামে এসবও হয়। কী খারাপ চেয়ারম্যান।

শশীর কথা বলার মাঝেই সমুদ্র মুখের মধ্যে ভাত দিয়ে দিলো। মুখ ভর্তি ভাত নিয়েও শশী কথা বলছে তবে কি বলছে সেটা অস্পষ্ট। কাল ভোরের দিকে বাড়ি ফিরেছে সমুদ্র। ঘরে এসে ঘুমন্ত শশীর কপালে চুমু দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে এসে শশীর পাশে শুয়ে পড়লো। প্রায় ছয় মাস চলছে শশীর। পেটটাও বেশ উঁচু হয়েছে। হাঁটা চলা করতেও অসুবিধা হয়। সমুদ্র সেবার শশীর পেগনেন্ট হওয়ার কথা জানার পর সপ্তাহ খানিক থেকে চলে গিয়েছিলো। এই কয়দিন শশী হিজলতলী তেই ছিলো। কেননা এখানে দেখাশোনা করার তেমন কেউ নেই৷ শাহানারা নিজেই অসুস্থ। এই জন্য শশী হিজলতলী তেই ছিলো। কয়েকদিন আগেই সমুদ্র এসেছে। আসার পরে শশীকে এখানে এনেছে। এবার বেশ কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে এসেছে। ঘুম ভেঙ্গে সমুদ্রের হাতে ব্যান্ডেজ দেখে বড়সর একটা কান্ডও ঘটে গিয়েছে। বিকেলে ভালো মানুষ বেরিয়ে যদি এভাবে কাঁটা হাত নিয়ে বাড়ি ফেরে চিন্তা তো হবেই। তবুও কোনোমতে শাহানারা আর শশীকে বুঝ দিয়েছে। বিরতি শেষ হতেই আবার ও খবর পড়তে শুরু করলো। তবে এবারের খবরটা শুনে শশীর চোখ বড়বড় হয়ে গেছে। আর সমুদ্রের মুখে বাঁকা হাসি।

” ফিরে এলাম বিরতির পর। তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। চেয়ারম্যান কে জিগ্যাসাবাদ করার পর ওনি বলেছেন ওনার সাথে নাকি আরো অনেকেই জড়িত। ওনার ভাষ্যমতে এই অনৈতিক কাজের সাথে মন্ত্রী সাহেব এর বোন মালবিকা মির্জা ও জড়িত। কিন্তু কথা হলো এটা কতটুকু সত্য। নাকি ওনি নিজে বাঁচতে মির্জা বাড়িকে এসবে জড়াচ্ছে। নাকি সত্যিই মন্ত্রী আশফাক মির্জার ও এতে হাত রয়েছে। কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা। সব কিছুই যেনো গোলকধাঁধার মতো। সত্যি কি ওনারা এসবের সাথে জড়িত? নাকি এর পিছনেও আছে বড় কোনো ষড়যন্ত্র। নাকি আরো বড় কারো হাত আছে। কোনো জঙ্গি? এসব প্রশ্নের কোনোটার উত্তরই আমাদের জানা নেই। আপনারা দেখছেন আমরা এখন মির্জা বাড়ির সামনে আছি। আসলে সত্যিটা কি সেটা মালবিকা মির্জার মুখ থেকেই শুনতে চাই। কিন্তু ওনি বাইরে আসবেন না বলেছে৷ মিডিয়ার সামনে মুখ খুলবে নাহ। কেনো ওনি এভাবে মুখ লুকিয়ে বসে আছে। তাহলে চেয়ারম্যান যেটা বলেছে সেটা সত্যি?

খবরটা শুনে শশী হা করে সমুদ্রের দিকে তাকালো। কিছু বলতে যাবে ওমনি সমুদ্র মুখের মধ্যে ভাত দিয়ে বলল।

“কোনো কথা নয়। আগে খাওয়া শেষ করো নয়ত মাইর দিবো।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী মুখ বাঁকিয়ে নিলো। ভাত চিবতে চিবতে কিছু একটা ভাবতে লাগলো। মনে মনে কিছু ভাবতেই টি-টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে মুখের ভাতগুলো গিলে নিয়ে সমুদ্রের দিকে বড়বড় চোখ করে বলল।

“এই আপনি আবার কিছু করেননি তো? আমার কেমন সন্দেহ হচ্ছে। আপনার এভাবে হঠাৎ বেরিয়ে যাওয়া সারারাত বাড়ির বাইরে থাকা। আবার ভোররাতে কাঁটা হাত নিয়ে বাড়ি ফেরা। সত্যি করে বলেন কি করেছেন আপনি?

শশীর কথাশুনে সমুদ্র ভাতের প্লেট টা নিচে রেখে বাম হাতে শশীর মাথায় একটা চাটি মেরে বলল।

“তুমিই প্রথম বউ যে কিনা চোরাকারবারি লোকের জন্য নিজের স্বামী কে সন্দেহ করছো। আরে আমার কি কোনো কাজ নেই আমি এসব করতে যাবো। আর তাছাড়া এগুলো পুলিশের কাজ। ওনারা হয়ত রাতের বেলায় দেখেছে তাই ধরেছে। আমি ছুটিতে আছি বর্তমানে। খামখা এসব করতে যাবো কেনো।

“তবুও আমার কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে।

“তাই তাহলে যাও গিয়ে আমার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে পড়ো। হা করো।

সমুদ্র ধমক দিয়ে কথাটা বলতেই শশী গোমড়া মুখে হা করে ভাত নিয়ে চিবতে লাগলো।

“কেবল তো শুরু এভাবেই আস্তে আস্তে তোমাকে একদম শেষ করে দেবো মালবিকা মির্জা। যতটা অপমান কষ্ট দিয়ে আমার বাবা আর চাচ্চুকে মেরেছো তার থেকেও বেশি যন্ত্রণা দিয়ে।
,,,,,,,,,,,,,,

“এসব কি মালবিকা? তোর নামে মিডিয়া এসব কি বলছে? তোর জন্য পার্টির কাছে আমায় জবাবদিহি করতে হচ্ছে। এতদিন তুই যা ইচ্ছে করেছিস। আমি চুপ করে থেকেছি কিছু বলেনি। কিন্তু এখন মিডিয়া যে ভাবে কাঁদা ছুঁড়ছে এখন তো তোর জন্য আমার নাম খারাপ হচ্ছে । একটা কথা শুনে রাখ পার্টির কাছে যদি আমার নাম কোনোভাবে একটুও খারাপ হয় তাহলে আমি কাউকে ছাড়বো নাহ।

চেয়ারে বসে হাতে পেপারওয়েট নিয়ে ঘুরাচ্ছে মালবিকা। ও খুব বুঝতে পারছে এর পিছনে কোনো না কোনো ভাবে সমুদ্রের হাত আছে। কেননা কালকে রাতে ওর ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছিল তাতে লেখা ছিলো।

” ইউ আর ফিনিস মালবিকা মির্জা।

তখন অতটা গুরুত্ব না দিলেও এখন বুঝতে পারছে আসলে কী বোকামি টাই না করেছে। ধপ করে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে গেলো।

“তুমি চিন্তা করো না ভাইজান। আমার জন্য তোমার কোনো ক্ষতি হবে নাহ।

” তাই যেনো হয়। যতদ্রুত সম্ভব এটা শেষ করো।

কথাটা বলে ওনি চলে গেলেন। ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মালবিকা দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

“সময় এসেছে তোমাকে পাল্টা জবাব দেওয়ার। অনেক ছাড় দিয়েছি তোমায়। অনেক বার বেড়েছো তুমি। তুমি যেই খেলাটা শুরু করেছো সেটা আমিই শেষ করবো সমুদ্র। এবার তোমার অস্ত্রে তোমাকেই বদ করবো। নয়ত আমার নামও মালবিকা মির্জা নয়।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৪৩
,
মির্জা বাড়ির সামনে তখন অনেক লোকের সমাগম। নিউজ চ্যালেন এর লোকেরা অধীর অপেক্ষায় আছে। টিভিতে দেখানো হচ্ছে বিভিন্ন মশলা মাখানো খবর। যেটা ঘটেছে তার সাথে মনগড়া আরো কিছু লাগিয়ে দিয়ে বেশ রসিয়ে রসিয়ে ছড়াচ্ছে। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মালবিকা মির্জা বাইরে বেরিয়ে আসলো। ওনি আসতেই সকলে যেনো আরো বেশি ওনার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল। পুলিশ অনেক কষ্টে সেগুলো সামাল দিচ্ছে। ক্যামেরার সামনে এসে বেশ আরাম করে দাঁড়ালো মালবিকা। শাড়ির আঁচলটা কমরের নিচে থেকে ঘুরিয়ে সামনে এনে হালকা হাসি দিয়ে মিডিয়ার লোকের উদ্দেশ্য বলল।

“বলুন কি জানতে চান আপনারা।

“হিজলতলী গ্রামের চেয়ারম্যান মকবুল আলী অবৈধ অস্ত্রসহ আরো বেশ কিছু নেশা জাতীয় দ্রব সমেত ধরা পড়েছে। তদন্তে আপনার নাম ও উঠে এসেছে। আমরা জানতে চাই চেয়ারম্যান যা বলেছে সেটা কি সত্যি? নাকি এর পিছনে আরো কোনো কারণ আছে। আর তাছাড়া ওনি এতো মানুষ থাকতে আপনার নাম টাই কেনো নিলো? ওনি নিজেকে বাঁচাতে এমনটা করেছে। নাকি ঘটনা কিঞ্চিৎ হলেও সত্যি?

সবার এমন প্রশ্নে মালবিকা মোটেও বিরক্ত বোধ করলো নাহ। বরং আরো উল্টো মুচকি হাসি দিয়ে বলল।

“দেখুন বাংলায় না একটা প্রবাদ ব্যাক্য আছে। একজন বলল এই তোর কান চিলে নিয়ে গেছে। তো সে আগে কানে না হাত দিয়ে চিলের পিছে দৌড়ায়৷ আপনাদের অবস্থাও ঠিক সেই রকম। কে কী বলেছে আপনারা সেটা নিয়ে আরো রংচং মিশিয়ে প্রকাশ করছেন। আপনাদের কাছে না আছে কোনো প্রমাণ না আছে এই কথায় কোনো সত্যতা।

” আমাদের কাছে আরো একটা খবর এসেছে। ওই চেয়ারম্যান এর সাথে নাকি আপনারা গভীর কোনো সম্পর্ক আছে। মানে আমি বলতে চাইছি যে আপনারা নাকি লুকিয়ে বিয়েও করেছেন। এই কথাটার সত্যতা কতটুকু?

এমন একটা কথা শোনার পরেও মালবিকার মুখে কোনো বিচলিত ভাব দেখা গেলো নাহ। বরং হালকা হেসে বলা শুরু করলো।

“আচ্ছা আপনারা এসব কথা কোথায় পান বলুন তো? মানে কারো সম্পর্কে একটু কিছু শুনলেই সেটাকে তিল থেকে তাল বানানোই আপনাদের কাজ। আচ্ছা আমায় একটা কথা বলুন তো শুনেছি চেয়ারম্যান কে হাতে নাতে ধরতে কেউ একজন সাহায্য করেছে। এখন আপনারা আমায় বলুন সে ওতোরাতে ওখানে কি করছিলো। আর আমার সাথে যে হিজলতলী গ্রামের চেয়ারম্যান এর বৈবাহিক সম্পর্ক আছে এটার প্রমাণ কি? শুনুন কখনো কখনো আমরা খালি চোখে যা দেখি সেটা সত্যি হয় নাহ। অদেখাও কিছু থেকে যায়। আমার জানামতে আমার কারো সাথে কোনো প্রকার শত্রুতা নেই। কেউ হয়ত আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। যাই হোক আশা করি আপনারা আপনাদের
সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন।

কথাগুলো বলো মালবিকা উঠে চলে গেলো। তবে যাওয়ার আগে ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসিটা কেউ খেয়াল করলো নাহ।
,,,,,,,,,

হাতের ভারী ট্রলি ব্যাগটা টেনে এয়ারপোর্টের বাইরে আসলো রোদ্র। আশে পাশটা দেখে নিয়ে সামনের দিকে হেঁটে গেলো। আপাতত ওখানের কাজ শেষ মাসখানেক পর একজনের সাথে দেখা করা লাগবে। যার হয়ে কাজ করবে সে এখন অন্য দেশে গিয়েছে। মাসখানেক পর ফিরবে। এই কয়দিন শুধু শুধু ওখানে বসে থাকার কোনো মানেই হয় নাহ৷ এই জন্য দেশে আসতে না মন চাইলেও আসতেই হলো। যদিও লিজা বলেছিলো এই কয়দিন ওর বাসায় থাকতে। কিন্তু রোদ্র থাকেনি, তাছাড়াও বাসা থেকে অনেকদিন দূরে আছে এই জন্য। এভাবে হুট করে চলে আসায় কাউকে জানানো হয়নি। এয়ারপোর্টের বাইরে এসে গাড়ি বুক করেছিলো। কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই গাড়ি চলে আসলো। গাড়িতে উঠে সিটে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখটা বন্ধ করে বিরবির করে বলল।

“না চাইতেও আবার তোমার মুখটা দেখতে হবে। সারাক্ষণ তুমি আশেপাশে ঘুরে বেড়াবে। ইশ এই যন্ত্রণা আমি সইবো কি করে। এটা যে বড়ই পীড়াদায়ক।
,,,,,,,,,,

বিছানায় বসে চোখ ভর্তি পানি নিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে শশী। ওর সামনেই তৈরি হচ্ছে সমুদ্র। তৈরি হওয়ার ফাঁকে একবার শশীকে দেখে নিয়ে পুনরায় আয়নার দিকে তাকালো। সকাল থেকে মেয়েটাকে বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত ও। এতো করে বোঝানোর পরেও এখনো বসে বসে কান্না করছে। সমুদ্র কে চুপ থাকতে দেখে শশী আবার বলা শুরু করল।

” আপনি মিথ্যুক। আমাকে মিথ্যা বলেছেন। যখন থাকবেনই নাহ তখন শুধু শুধু বলেছিলেন কেনো? এভাবে কাউকে মিথ্যা আশা দিতে হয় নাহ। আমি এমন জেনেও আপনি কীভাবে আমায় মিথ্যা আশা দিলেন। বলে কিনা এবার আর তোমাকে ছেড়ে যাবো নাহ। কথা দিচ্ছি বাবুর মুখটা দুজনে একসাথেই দেখবো। তাহলে এখন কি হলো এটা? কথা রাখতে না পারলে দেন কেনো?

কথাগুলো বলে নাক টেনে দুহাতে চোখের পানি মুছলো শশী। সমুদ্র রেডি হয়ে হতাশ চোখে শশীর দিকে তাকালো। মেয়েটা বাবু আশার পর থেকে যেনো একটু বেশিই অবুঝ হয়ে গেছে। এতো করে বোঝানোর পরেও বুঝতে চাইছে নাহ। তবে আমারও কেমন যেনো একটা খটকা লাগছে। এখন যে অবস্থা এই সময় বাড়িতে থাকা খুবি প্রয়োজন। চারিদিকের অবস্থা বেশ একটা ভালো নয়৷ ওই মহিলা অনেক বেশিই রেগে আছে। একটা সুযোগও হাত ছাড়া করবে নাহ। আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমার পরিবারের উপর হামলা করবে। সবতো ঠিকি ছিলো তাহলে হঠাৎ পাকিস্তান এর টেরোরিস্ট ওসমান বর্ডার এর এত গড়া সিকিউরিটি ভেদ করে বাংলাদেশে ঢুকলো কীভাবে? নাকি এর পিছনেও অন্যকোনো উপর মহলের হাত রয়েছে? কথাগুলো ভেবে একটা লম্বা শ্বাস নিলো সমুদ্র। শশীর কাছে গিয়ে ওর পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসল। শশীর হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় পুড়ে সেখানে বেশ সময় নিয়ে চুমু খেলো। মাথাটা ওর কোলের মধ্যে রেখে ফুলে যাওয়া পেটটাতে চুমু দিয়ে বলল।

“তোমাকে রাতে কি বোঝালাম শশী। এখন ওখানে আমাকে দরকার। ওই টেরোরিস্ট খুবি বিপদজনক। অনেক এর প্রাণ সংশয় রয়েছে। কে জানি কোথায় কোথায় বোম ফিট করে রেখেছে। এটা আমার দায়িত্ব শশী। আর আমি একজন অফিসার হয়ে কীভাবে নিজের দায়িত্ব কে এভাবে অবহেলা করি।

” আর আমি? আমি কি? ওখানে তো আরো অনেকেই রয়েছে। তারপরেও আপনাকে দরকার। আর আমার কাছে তো কেউই নেই আপনি ছাড়া। আপনাকে যে আমার আরো বেশি দরকার সমুদ্র। আপনি তো ছুটিতে ছিলেন তাহলে কীভাবে আপনাকে এভাবে ডাকে ওনারা৷ এতোবড় টেরোরিস্ট, যদি আপনার কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার কি হবে? আর যে আসছে তারই বা কি হবে বলুন? আপনি তো আমায় কথা দিয়েছিলেন যে আমরা একসাথে বাবুকে দেখবো তাহলে?

শশীর কথা শোনার পর সমুদ্র মুচকি হেসে শশীর কপালে চুমু দিলো। শশীর পাশে বসে ওর মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলল।

“তুমিতো আমার শক্তি। আমার ভালোবাসা। কিন্তু আমার দায়িত্ব টাও পালন করতে হবে। এতোগুলো মানুষের জীবন হুমকিতে ফেলে আমি কীভাবে ছুটি কাটাতে পারি শশী। তুমিই তো আমাকে বুঝবে আমাকে উৎসাহ দিবে। সেই তুমিই যদি এভাবে কান্না করো তাহলে আমি ওদের সাথে লড়বে পারবো? একেতে মা অসুস্থ এখন যদি তুমিও এভাবে ভেঙ্গে পড়ো তাহলে ওদের সামলাবে কে? আমার অবর্তমানে তুমিই তো ওদের দেখবে শশী। কখনো ভেঙ্গে পড়বে নাহ৷ সবসময় একটা কথা মনে রাখবে তুমি একজন আর্মি অফিসার এর স্ত্রী। তোমার স্বামী দেশের জন্য লড়াই করে। তার অর্ধাঙ্গীনি হয়ে তোমার এতোটা দুর্বল হওয়া কী মানায়?

“আমি কিছুই জানি নাহ। আমি কি আমার স্বামী কি এই সবকিছু আমি জানতে চাই নাহ। আমি শুধু জানি আপনি আমার কাছে থাকবেন। খুব সাধারণ হয়ে কোনো দায়িত্ব কর্তব্য থাকবে নাহ। সবার চিন্তা আপনার মাথায় শুধু আমাদের বাদে। আমি এতোটা বুঝদার হতে চাই নাহ সমুদ্র। যতোটা বুঝদার হলে আপনার থেকে দূরে থাকতে হয়। আমার শুধু আপনাকে চাই।

এতোবার বোঝানোর পরেও যখন শশী বুঝলো নাহ। তখন সমুদ্র হাল ছেড়ে দিলো। এবার ওকে কঠিন হতেই হবে৷ এভাবে হবে নাহ। অনেকটা দেরি হয়ে গেছে এবার বেড়োতেই হবে। উঠে দাঁড়িয়ে গেলো সমুদ্র। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুলো সব দেখে নিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল।

” নিজের খেয়াল রেখো। যাওয়ার পর হয়ত যোগাযোগ করতে পারবো নাহ। এদিকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে নাহ। আমি ইমরান কে সবটা বুঝিয়ে দিয়েছি। অকারণে বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। আর এই অবস্থায় বেশি হাঁটাহাটি করো নাহ। আসছি আমি।

কথাগুলো বলে সমুদ্র দরজার দিকে যেতে গেলে শশী পিছন থেকে ডেকে উঠল। ভারী পেট নিয়ে অনেক কষ্টে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। সমুদ্রের পিছনে দাঁড়িয়ে বলল।

“আপনি অনেক নিষ্ঠুর সমুুদ্র। আপনার সবার চিন্তা আছে শুধু নিজের ছাড়া। জানি আপনি শুনবেন নাহ। কারন আপনার কাছে সবার থেকে নিজের দায়িত্ব টাই আগে। শেষ বারের মতো একটা আবদার। যাওয়ার আগে আমাকে একটাবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরবেন প্লিজ? অনেক কষ্ট হচ্ছে। জড়িয়ে ধরলে একটু শান্তি লাগতো।

শশীর কথায় সমুদ্র কিছু বলল নাহ। হাতের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে পিছন ঘুরে তাকালো। শক্ত মুখেই শশীর দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। সমুদ্রের বুকে মুখ গুঁজে হাউমাউ করে কাঁদছে শশী। তবে সমুদ্র একবারের জন্যও ওকে থামালো নাহ। শশীর ঘাড়ে মুখ গুঁজে বেশ সময় নিয়ে চুমু খেলো। বেশ কিছুক্ষন পরে শশীকে ছেড়ে দিয়ে যেতে গেলে শশী সমুদ্রের হাত চেপে ধরে বলল।

” আমিও যাবো মানে নিচে অবধি। প্লিজ।

শশীর এই আবদারে সমুদ্র নিষেধ করলো নাহ। পিছন থেকে ওর কাঁধ জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে ওকে নিচে নামিয়ে আনলো। সেখানে শাহানারা আর জয় বসে ছিলো। শাহানারাও বেশ অসুস্থ তিনি চেয়েও ছেলেকে বাঁধা দিতে পারছে নাহ। তিনি চান না শশীর জীবন টাও ওনার নতো একাকী কাটুক। এমনি এক মিশনে গিয়েছিলো ইকবাল। তারপর কত অপেক্ষা কিন্তু তিনি ফিরে আসেনি। এসেছিলো তার নিথর হয়ে যাওয়া প্রাণহীন দেহটা। তখনো শশীর মতো সেও সন্তান সম্ভাবা ছিলো। এ যেনো চোখের সামনে নিজের অতীতটা দেখছে শাহানারা। পুনরায় সেই একি ঘটনার পুনরাবৃত্ত। শাহানারা চোখের পানি ফেলে অসুস্থ গলায় বলে উঠল।

“এই মিশনটাতে তোর না গেলে হয় নাহ?

শশীকে নিজের মায়ের পাশে বসালো সমুদ্র। মায়ের মুখ থেকে এমন কথা শোনার পর সমুদ্র নিজের মায়ের হাতটা ধরে গম্ভীর স্বরে বলল।

” একজন দায়িত্ববান অফিসার এর স্ত্রী হয়ে এমন কথা কীভাবে বলতে পারো মা? তুমি জানো আমি কোথায় যাচ্ছি কেনো যাচ্ছি তারপরেও একথা কীভাবে বলছো। শশী নাহয় অবুঝ কিন্তু তুমিতো অবুঝ নয় মা তাহলে কেনো এমন বুঝে না বোঝার মতো করছো।

“কি বলতো বাবা ঘড় পোড়া গরু তো সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পাই। জীবনে এক ভয়াবহ অধ্যায় পাড় করেছি তো তাই অল্পতেই ভয় পেয়ে যাই। জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি আর হারাতে চাই নাহ।

” বিশ্বাস রাখো মা আমি ফিরে আসবো ।

সমুদ্রের কথাটা শুনতেই শাহানা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। সমুদ্র মাকে সান্ত্বনা দিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা কান্না করতে করতে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। করুন চোখ ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। সমুদ্র দুর্বল হলো নাহ। মাকে ছাড়িয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে মেইন দরজা খুলতেই দেখলো ওপাশে রোদ্র দাঁড়িয়ে আছে। রোদ্র কেবলি কলিং বেল চাপ দিবে তখনি এভাবে আচমকা দরজা খুলে যাওয়াই বেশ অবাক হলো। সমুদ্রকে এভাবে ইউনিফর্ম এ দেখে অবাক হয়ে বলল।

“ভাইয়া?
,,,,,,,,,,,,

ডয়িং রুমে বেশ গুমোট ভাব। সমুদ্র এই পরিস্থিতি তে রোদ্রকে এখানে মোটেও আশা করেনি। মালবিকা নিজের কাজ হাসিল করতে ওকে না ব্যাবহার করে। তবে সমুদ্র জানে ওর ভাই এতোটাও বোকা নয় ঠিক সবটা সামলে নেবে। আর ওর অবর্তমানে এখানে কারো প্রয়োজন ছিলো। রোদ্র আশায় ভালোয় হয়েছে৷ এখন একটু নিশ্চিত থাকা যাবে। রোদ্রকে সবটা বলে ওর থেকে বিদায় নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়াতে পিছন থেকে শশী বলে উঠল।

” আপনি কিন্তু আমায় কথা দিয়েছেন। আমরা একসাথে বাবুর মুখ দেখবো। আশা করি আপনার দেওয়া কথাটা রাখবেন। নয়ত কখনো আপনাকে ক্ষমা করবো নাহ সমুদ্র।

শশীর কথাটা শুনার পরেও সমুদ্র পিছন ফিরে তাকালো নাহ। একটু থেমে পুনরায় বেরিয়ে গেলো। বাইরে ইমরান গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। সমুদ্র গাড়িতে বসে ইমরান কে বলল।

“চলো।

সমুদ্রের আদেশ পেতেই ইমরান গাড়ি স্টার্ট দিলো। রোদ্র করুন চোখে শশীর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা কান্না করতে করতে কেমন নেতিয়ে পরেছে। শাহানারা নিজের ঘরে চলে গিয়েছে। রোদ্র শশীর দিকে এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে বলল।

” চলো তোমাকে ঘরে দিয়ে আসি। এভাবে কান্না করো নাহ। শরীর খারাপ করবে।

শশী কিছু বলল নাহ৷ করুন চোখে রোদ্রের দিকে তাকালো। রোদ্র শশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর হাতটা ধরে আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেঁয়ে উপরে উঠে ওকে ওর রুমে দিয়ে আসলো। বিছানায় বসায়ে বলল।

“একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো তাহলে ভালো লাগবে।

কথাটা বলে রোদ্র রুম থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে শশী পিছন থেকে বলল।

” ওনি ফিরে আসবে তাইনা ভাইয়া? ওনিতো এক কথার মানুষ নিশ্চয়ই আমাকে দেওয়া কথাটা রাখবে।

শশীর এমন কথা শুনে রোদ্র কিছু বলতে পারলো নাহ। কোথাও বুকের বাঁম পাশটায় বেশ বেথ্যা করছে। বেথ্যাটা বেশ পুরানো। নতুন করে বেথ্যাটা জেগে উঠেছে। কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো রোদ্র।

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-৪০+৪১

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৪০
,
“আপনার সাহস তো কম নাহ। আপনি একজন সিনিয়র আর্মি অফিসার এর বউয়ের শরীরে হাত দেন। আপনাকে তো পুলিশ এ দেওয়া উচিত।

শশীর কথা শুনে সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো। নিজের হাতটা শশীর হাতের মুঠো থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে। একটু নিচু হয়ে শশীর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে উঠে দাঁড়িয়ে শার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে বলল।

” আচ্ছা তাই নাকি। জেলে যখন যেতেই হবে তখন আরো কিছু করে তারপর যাওয়া উচিত নয় কি?

সমুদ্রের কথাশুনে শশী কিছু বলল নাহ। বিছানা থেকে নেমে সমুদ্রের থেকে শার্টটা নিয়ে রেখে দিলো। সমুদ্রের পিছনে দাঁড়িয়ে বলল।

“আসলেন কেনো না আসলেই পারতেন। আপনি তো বোধহয় ভুলেই গিয়েছিলেন যে আপনার জন্যও কেউ পথ চেয়ে বসে আছে। আর ভুলে তো যাবেনই নিষ্ঠুর মনের মানুষ তো এই জন্য।

” হুম বুঝলাম অভিমান হয়েছে আমার বউ এর। তবে আমি খুবি দুঃখিত এই মুহূর্তে তোমার অভিমান ভাঙাতে পারছি নাহ। রাত পযন্ত অপেক্ষা করো সোনা। এখন ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর লম্বা একটা ঘুম। আসলে রাতে জাগতে হবে তো এই জন্য।

কথাটা বলে সমুদ্র শশীর হাত থেকে টাওয়াল টা নিয়ে ওর মাথায় একটা চাটি মেরে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মাথা ডলতে ডলতে সমুদ্রের যাওয়ার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে শশী।

“হুম আইসেন রাতে একদম চৈত্র মাসের ঠাঁডা পড়া তপ্ত সূর্য দেখিয়ে দেবো।
,,,,,,,,,,

“তুমি আমার হাতে কাঁমড় দিলে কেনো এখন আমাকে চৌদ্দটা ইনজেকশন নিতে হবে।

হাত ডলতে ডলতে কথাটা বলল জয়। জোনাকি প্রতিশোধ নিতে পেরে মনে মনে ভীষণ খুশি। আগের বার জয় নাকের উপর কাঁমড়ে দিয়েছিলো। কথাটা সবাইকে বললেও কেউ তেমন রাগ করেনি ওকে শুধু শাহানারা আন্টি ব্যাথিত। কাঁমড়ের কথাটা মনে মনেই রেখে ছিলো। আজকে সুযোগ বুঝে জয় এর হাতে বেশ জোরে সোরেই কাঁমড়টা দিয়েছে। কিন্তু ইনজেকশন কেনো নেওয়া লাগবে সেটাই বুঝতে পারছে নাহ। জয়ের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলল।

” কেনো কেনো ইনজেকশন কেনো নিতে হবে। আমার কি সাপের মতো বিষ আছে নাকি যে ইনজেকশন নিতে হবে। তুমিও তো আমায় কাঁমড় দিয়েছিলে কই আমিতো ইনজেকশন নেইনি।

“আরে আমি কাঁমড়ালে ইনজেকশন নিতে হবে কেনো আমিতো মানুষ। আর তুমিতো জঙ্গলি। বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াও। বলা যায় বিষ থাকলেও থাকতে পারে।

জয়ের কথাশুনে জোনাকি বেজায় রেগে গেলো। দুইহাতে জয়ের চুল ধরে টানতে টানতে বলল।

” তুমি আমায় জঙ্গলি বললে কেনো আমি আন্টিকে বলে দেবো। আমিতো আর থাকবোই নাহ। এক্ষুনি বাড়ি চলে যাবো।

“আরে পঁচা মেয়ে আমার চুল ছাড়ো বলছি৷ একটু আগেই ভাইয়ার ঘর থেকে জেল মেখেছি চুলে সবতো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছাড়ো আমার চুল।

” আমি চুল ছাড়বোই নাহ। আজকে তোমায় টাক বানায় দেবো। আমাকে জঙ্গলি বলা।

“কি ভেবেছো আমি ছেড়ে দেবো? হাত আমারও আছে।

কথাটা বলেই জয়ও জোনাকির ঝুঁটি করে রাখা চুল ধরে টানতে লাগলো। দুজনে দুজনের চুল টানছে আর কাঁদছে। শশী সমুদ্রের উপর রাগ করে রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। খাবার গরম করতে হবে। সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নামতেই ডয়িং রুমে দেখলো জয় আর জোনাকি মারামারি করছে। দুজনেরই বেহাল দশা। জোনাকির চুল খুলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জয়েরও স্টাইল করে রাখা চুলগুলোর অবস্থা পুরাই কাহিল। কাঁধ দিয়ে গেঞ্জি খুলে পড়বে পড়বে ভাব। শশী দৌড়ে গিয়ে দুজনকে থামালো। দুজনেই হাঁপাচ্ছে। শশী জয়কে জিগাস করলো।

“এসব কি? এভাবে মারামারি করছো কেনো দুজনে?

জয় কান্না করতে করতে বাম হাতে চোখ মুছে। গেঞ্জি টেনে কাঁধের উপর উঠায়ে বলল।

” ও আমার হাতে কাঁমড় মারলো কেনো?

“আর তুমি যে আমায় জংলী বললে তার বেলায়?

জোনাকি কাঁদছে আর নাক মুছতেছে। কথাটা বলে আবার শশীর দিকে তাকিয়ে বলল।

” ও আগে আমায় কামড় মেরেছে। সেই জন্যই তো আমিও ওকে কাঁমড় দিয়েছি। আবার আমাকে জংলী ও বলেছে। আমি থাকবোই না। আব্বাকে কল দে আপা আমি চলেই যাবো।

নাক টানছে আর কথা বলছে জোনাকি৷ জয় এর কান্না থেমে গেছে তবে কান্না করার দরুন নাক চোখ লাল হয়ে আছে। শশী পড়েছে বিপাকে কাকে কি বলবে সেটাই খুঁজে পাচ্ছে নাহ। কিছুক্ষণ পর জোনাকির দিকে তাকিয়ে শাসন এর সূরে বলল।

“তো তুই ওর হাতে কাঁমড় দিলি কেনো? সব সময় শুধু অকাজ করা। এক জায়গায় এসে যে একটু স্থির হয়ে থাকতে মন চাই নাহ?

শশীর বকা শুনে জোনাকি আবার কান্না শুরু করে দিলো। সমুদ্র টিশার্ট পড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল।

” কি হয়েছে?

সমুদ্রের কথাশুনে কেউ কিছু বলল নাহ৷ জোনাকির কান্নাও বন্ধ হয়ে গেলো৷ শুধু থেকে থেকে হেঁচকি তুলছে৷ সমুদ্র কে দেখে শশী একবার তাকিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো। সমুদ্র শশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার জয় আর জোনাকির দিকে তাকালো। দুজনের হাত ধরে সোফায় বসে জিগাস করলো।

“এবার বলো কি হয়েছে?
,,,,,,,,,,
আকাশে তখন বিশাল বড় চাঁদ উঠেছে৷ বেশ ভালো ঠন্ডা বাতাসও বইছে। চাঁদের আলোয় চারপাশটা আলোকিত। শশী ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গ্রীল এর ফাঁক দিয়ে চাঁদ দেখছে। সমুদ্র বাড়িতে নেই বিকালে এসে ঘুমানোর কথা বললেও ঘুমায়নি। কোথায় গেছে কে জানে৷ এতোরাত হয়ে গেলো তবুও তার কোনো পাত্তা নেই। শশী মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল।

” তুইও একা আর আমিও। তোর আজকে মন ভালো হলেও আমার আজকে মোটেও মন ভাল নেই। কি জানি কি খায়ে ওই গম্ভীর পাষাণ লোকটাকে ভালোবেসে ছিলাম। আমার তো মনে হয় ওনি আমায় ভালোইবাসে নাহ।

“এটা তোমার মনের সম্যসা। তোমার মন সব সময় ভুলভাল কথা বলে। এই জন্যই তো তোমার এসব মনে হয়।

কথাটা শুনতেই শশী ঘাড় বাঁকিয়ে পিছনে দেখতে গেলো। কিন্তু পারলো নাহ। কারণ ওর পিছনে শক্ত বুকের প্রাচীর। সমুদ্র পিছন থেকে শশীর কমর জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। শশী পুনরায় সামনের দিকে তাকিয়ে বলল।

” আমার মন সব সময় সঠিক কথায় বলে। আর এখনোও সঠিক কথায় বলছে।

“আমার তো মনে হয় তোমার মন ডাহা মিথ্যা কথা বলছে।

” কীভাবে?

“ওই যে তোমার মন বলছে আমি তোমায় ভালোবাসি নাহ। এটা মিথ্যা নয়?

” ঠিকি তো আপনি আমায় ভালোবাসেন নাকি?

শশীর কথাশুনে সমুদ্র শশীকে নিজের দিকে ফিরায়ে। ওর দুইকাঁধে হাত দিয়ে একটু ঝুঁকে শশীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল।

“তোমরা মেয়েরাও নাহ। সব জানো অথচ তোমাদের মুখ থেকে শুনতেই হবে।

কথাটা বলে সমুদ্র শশীকে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের শক্ত বুকের সাথে শশীর নরম শরীরটাকে মিলিয়ে নিলো অতঃপর ফিসফিস করে শশীর কানে বলল।

“শুনেছি মানুষ নাকি হাসির প্রেমে পড়ে কিন্তু আমিতো তোমার অশ্রু ভেজা ওই টলটলে দুটো মায়াবী চোখের প্রেমে পড়েছিলাম।

সমুদ্রের কথা শশী বুঝতে না পেরে বলল। মানে?

শশীর কথা শুনে সমুদ্র নিজের মাথা দিয়ে শশীর মাথায় হালকা গুঁতা দিয়ে বলল।

“বোকা মেয়ে কিছুই বোঝে নাহ। মনে আছে তোমার তুমি পেয়ারা হাতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পেয়ারা খাচ্ছিলে। ছোটখাটো গড়নের পিচ্চি একটা মেয়ে। চুরি করছে আবার অন্যকে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে কীভাবে চুরি করতে হয়। আমি তোমাকে ভালো ভাবে জিগাস করলাম জামশেদ মাস্টার এর বাড়ি কোনটা আর তুমি বললেও নাহ। অথচ তোমার বাপের বাড়িটাই আমি খুঁজতে ছিলাম।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী নাক উঁচিয়ে বলল। তো ভালো করে জিগাস করতেন তাহলে অবশ্যই বলতাম। কীভাবে গুন্ডার মতো ফাঁটা বাঁশের কন্ঠে কথা বলছিলেন। একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলতে হয়?

শশীর কথায় সমুদ্র মুচকি হেসে ওর নাকটা টেনে দিয়ে বলল।

“তাহলে কি প্রথম দেখায় কোনো মেয়ের সাথে গম্ভীর কন্ঠে কথা বলবো নাতো লুতুপুতু কন্ঠে কথা বলবো?

সমুদ্রের কথায় শশী আর কিছু বলল নাহ। পরক্ষণেই সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল।

” তাহলে ওইদিন সালিশে আমায় বিয়ে করতে বললে বিয়ে করলেন না কেনো? যদি শাহিন এর সাথে বিয়ে হয়ে যেতো তখন?

“ওতোই সোজা? তখন পরিস্থিতি খারাপ ছিলো। আমার কারণে তোমরা বিপদে পড়তে। তখন তোমায় বিয়ে করলে মালবিকা তোমাদের পরিবারের পিছনে লাগত। আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। এই জন্য তোমার বাপকে বলেছিলাম। তোমায় যেনো দেখে রাখে আমি সময় সুযোগ বুঝে তারপর বিয়ে করবো৷ আর তখন তো তোমায় ভালোও বাসতাম নাহ এই জন্য তোমার বাপকে ভুংভাং বুঝ দিয়ে ছিলাম।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী রেগে সমুদ্রের বুকে কিল ঘুষি দিতে দিতে বলল।

” ভালোবাসেন না তাহলে বিয়ে করলেন কেনো বদ লোক একটা।

“আরে করছো কি মেরে ফেলবে নাকি। এই জন্যই বলে মেয়ে মানুষের বুদ্ধি কম আরে পুরো কথাটা তো শেষ করতে দিবা। তোমায় ভালোবাসতাম না ঠিক কিন্তু একটু একটু পছন্দ করতাম। কি সুন্দর ছোট খাটো নাদুসনুদুস একটা বাচ্চা।

সমুদ্রের এমন কথাশুনে শশী চোখ পাঁকিয়ে তাকাতেই সমুদ্র সিরিয়াস মুখ করে বলল।

” আচ্ছা আর মজা করছি নাহ। তোমায় নিয়ে যেদিন প্রথম আমাদের বাড়ি আসছিলাম। ওইদিন তুমি গাড়িতে বসে কাঁদছিলে। ব্যাস ওইদিন তোমার কন্দনরত মুখের দিকে তাকিয়েই আমার সর্বনাশটা হলো।

কথাটা বলেই সমুদ্র শশীর কপালে চুমু দিলো। শশীও লজ্জা মাখা মুখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে নিলো। কিছুক্ষণ পর সমুদ্র কিছু একটা মনে পড়ার ভঙ্গিতে বলল।

“আরে আমার তো মনেই ছিলো নাহ। ইস কীভাবে যে ভুলে গেলাম।

সমুদ্রের কথা শুনে শশী চিন্তিত মুখে বলল।

” কী হয়েছে?

“আরো রাত তো বেড়েই যাচ্ছে অথচ আমার বউকে আদর করার কথা মনেই ছিলো নাহ। কেমন বেমালুম ভুলে বসে আছি৷ কেমন ধারা স্বামী আমি তোমার বলতো?

সমুদ্রের কথা শুনতেই শশী লজ্জায় মুখ ঢেকে বলল।

” ছিঃ কীসব ভুলভাল কথা বলেন ছাড়ুনতো আমায়।

সমুদ্র শশীকে কোলে তুলতে তুলতে বলল।

“কিসের ছাড়াছাড়ি এখন শুধু ধরাধরি হবে।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৪১
,
“ভালোবেসেছি বলেই যে তাকে পেতে হবে এটা কোথায় লেখা আছে? বরং আমি তাকে ভালোবাসতে পেরেছি এটাই আমার কাছে অনেক। সব ভালোবাসাই যে পূর্ণতা পেতে হবে এমনটা তো নয়। কিছু কিছু ভালোবাসা দূর থেকেও সুন্দর। আর আমি সেই ভালোবাসাটা নিয়েই ভালো থাকতে চাই।
আমি তাকে তার অনুমতি বিহীন ভালোবেসেছি। তাই তার অজানায় আস্তে আস্তে হারিয়ে যাবো। তাকে পাওয়ার জন্য তো আর তাকে ভালোবাসিনি। সে আমার ভাগ্যে নেই। ও শুধু আমার হৃদয়ে থাকবে আর অন্যকারো ভাগ্যে। এই জন্য আমিও আর তাকে পাওয়ার আশা করি নাহ। এখন আর এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই জোসেফ।

রোদ্রের কথা শুনে জোসেফ এর ভীষণ রাগ হলো। এতো চেষ্টা করেও কিছু হচ্ছে নাহ। এই ছেলেটা তো আমার কোনো কথায় বুঝতে পারছে নাহ। দেবদাস এর মতো বড় বড় কথা বলতে পারে শুধু। ফুপি তুমি আমায় এ কেমন কাজ দিলে। না না হারলে চলবে নাহ। যে করেই হোক কাজটা আমায় করতেই হবে। মনে মনে কথাগুলো বলে পুনরায় রোদ্রের উদ্দেশ্য বলল জোসেফ।

” কি সব বুড়ো লোকদের মতো কথা বলে যাচ্ছিস। এসব কথাশুধু শুনতেই ভালো লাগে। আর আমি তো একবারও বলছি নাহ যে তুই ওকে বিয়ে কর। তোর ভাইয়ের সংসার ভাঙ্গ। আরে আমিতো শুধু এটাই বলছি যে তোর উচিত তাকে সবটা জানানো। তারও তো অধিকার আছে কথাটা জানার। তুই একবার জানিয়ে তো দেখ।

“তারপর?

” মানে?

“মানে আমি ওকে জানালাম তারপর কি? এখন ওকে এসব কথা ঘটা করে জানানো কি আছে আমি এটাই বুঝতে পারছি নাহ জোসেফ। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। ভাইয়া আর শশী ভালো আছে। আমি কেনো এখন ওদের মাঝে কাঁটা হয়ে যাবো। তুই বুঝতে পারছিস নাহ তাই এমন বলছিস। ঠান্ডা মাথায় ভাব তাহলেই বুঝতেই পারবি।

কথাগুলো বলে রোদ্র জোসেফ এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো। জোসেফ রোদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর ভাবে বলল।

” একে তো বোকা ভেবে ছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি ততোটাও বোকা নয়। হুম অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে দেখছি। কিন্তু যে করেই হোক সমুদ্রের বিরুদ্ধে রোদ্রকে উষ্কে দিতেই হবে। কিন্তু কীভাবে? এই রোদ্র তো আমার আর কোনো কথায়ই কান দিচ্ছে নাহ। হুম ফুপিকে সবটা জানাতে হবে।
,,,,,,,,,,,,,,

“তুমি আমায় সত্যি করে বলোত হয়েছে টা কি? সেদিন ফোনে আমায় শশীকে এখানে নিয়ে আসতে বললে কেনো? আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে। সত্যি সত্যি বলে কি হয়েছে? আর আমি কিন্তু তোমাকে আগেও বলেছি আমার মেয়ের কিছু হলে তোমাকে আমি ছাড়বো নাহ৷ তোমার জন্য ওর চোখে একটু পানি আসলে আমি কিন্তু ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।

“এই লোকটা কথায় কথায় এভাবে আমার বউকে নিয়ে টানাটানি কেনো করে বুঝলাম নাহ। যেদিন নিজের বউ চলে যাবে সেদিন বুঝবে বউয়ের থেকে দূরে থাকার কী জ্বালা।

মনে মনে কথাগুলো বলে সমুদ্র ওর শশুরের দিকে তাকালো। কালকে রাতেই ওরা হিজলতলী এসেছে। সাথে জয় আর জোনাকিও এসেছে। সকাল হতেই জামশেদ মাস্টার সমুদ্র কে ডেকে তার ঘরে নিয়ে গিয়ে কথাগুলো বলছিলো। সমুদ্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল।

” আপনার কি মনে হয় আমি খারাপ লোক? বউকে দিনরাত মারধর করাই আমার কাজ? আরে ভাই

সমুদ্র কথাটা বলতেই ওর শশুর ওর দিকে তাকাতেই থেমে গেলো। গলা ঝেঁড়ে একটু কেঁশে বলল।

“না মানে আমি বলতে চাইছি যে ওহ আমার অর্ধাঙ্গীনি। ওর অর্ধেক আর আমার অর্ধেক জুড়েই আমরা এক। ওর উপর কোনো বিপদ আসার আগে আমার সাথে তাকে লড়াই করতে হবে।

সমুদ্রের কথাশুনো মনে মনে বেশ খুশি হলো জামশেদ। তবে মুখে সেটা প্রকাশ করলো নাহ৷ খানিকক্ষণ পর যখনি ওনি সমুদ্র কে কিছু বলতে যাবেন তখনি বাইরে থেকে পারভিন এর গলার আওয়াজ শোনা গেলো। তিনি আতংকিত গলায় বলছে।

“তোমরা তারাতাড়ি সবাই এসো। আমার শশী অঙ্গান হয়ে গেছে।

পারভিন এর চিৎকার শুনে সমুদ্ররা দুজনেই উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। জামশেদ সমুদ্রের হাত ধরে বড় বড় চোখে তাকিয়ে বলল।

” কি করেছো তুমি আমার মেয়ের সত্যি করে বলো?

শশুরের কথায় সমুদ্রের এবার বেজায় রাগ হলো। তবুও কোনোমতে নিজেকে ঠিক রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

“আপনিও যেখানে আমিও সেখানেই। আমার নিশ্চয়ই কোনো অলৌকিক শক্তি নাই যেটার মাধ্যমে আমি এখানে বসে কিছু করবো। এবার দয়া করে আপনার সন্দেহ টা রেখে আমার সাথে চলুন। না জানি আমার বউটার আবার কি হলো।
,,,,,,,,,,,,

চশমাটা নাকের মধ্যভাগে রেখে খুবি মনোযোগ দিয়ে শশীকে পরিক্ষা করছে বিধান ডাক্তার। তার মুখটা এই মুহুর্তে খুবি সিরিয়াস। শশীর পাশেই চিন্তিত মুখে বসে আছে পারভিন। খাটের পাশে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সবার মুখেই চিন্তার ছাপ। সমুদ্র ওর শশুরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে শশুর শাশুড়ীসহ বাড়ির গুরুজনেরা আছে বিধায় বউ এর কাছে যেতে পারছে নাহ। বেশ কিছুক্ষণ শশীকে দেখার পরে ডাক্তার নিজের জিনিসপত্র ব্যাগে রাখতে রাখতে বলল।

” ভাবছি তোমার সাথে এখন আমার আদেও কথা বলা উচিত হবে কিনা মাস্টার।

বাবার বয়সী ডাক্তারের মুখ থেকে এমন কথাশুনে জামশেদ মাস্টার খুবি চিন্তিত হলো। সমুদ্রের দিকে একবার গরম চোখে তাকিয়ে পুনরায় ডাক্তারের দিকে তাকালো। অতঃপর নরম কন্ঠে জবাব দিলো।

“জি কাকা আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম নাহ। কি হয়েছে আমার মেয়ের? ও এভাবে অঙ্গান হয়ে গেলো কেনো? সিরিয়াস কিছু হলে বলুন আমি এখনি সদরে নেওয়ার ব্যাবস্হা করছি।

” হয়েছেই তো অনেক বেশি সিরিয়াস কিছু হয়েছে। তুমি নানা হতে চলেছো আর আমি কিনা সুধোমুখে এই খবরটা দিচ্ছি। এখন বলো এরপরেও কী তোমার সাথে কথা বলা ঠিক?

ডাক্তারের কথা বুঝতে সবারই বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগলো। যখনি সবাই বুঝতে পারলো সাথে সাথে সব হইহই করে উঠলো। পারভিন নিচু হয়ে শশীর কপালে চুমু দিয়ে আদর করে দিলো। জামশেদ মাস্টার খুশিতে হাসতে হাসতে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল।

“আমি আপনাকে বাজারের সেরা মিষ্টি খাওয়াবো কাকা।

কথাটা শুনে আবারও সবাই হেসে উঠলো। জামশেদ হাসতে হাসতে পাশে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। সমুদ্রের এভাবে তাকানো দেখে ওনি ঘাবড়ে গিয়ে বলল।

” কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? তুমি বাবা হচ্ছো এটা শুনে খুশি হওনি?

“হবো নাহ কেনো। তবে একটা কথা বলার আছে আপনাকে।

” কিহ?

“তখন নাহ বললেন আমি আপনার মেয়েকে কি করেছি। এভাবে অঙ্গান হয়ে গেলো কেনো? এবার তাহলে বলি আপনার মেয়েকে কি করেছি। কিসের জন্য এভাবে অঙ্গান হয়ে গেলো।

সমুদ্রের এমন ধারা কথাশুনে জামশেদ মাস্টার এর কান গরম হয়ে গেলো। বড় বড় চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো।তিনি ভাবতেও পারেননি ছেলেটার এতো মুখ পাতলা। দেখে অন্তত সেটা মনে হয় নাহ। তিনি কাশতে কাশতে সবাইকে বলল মিষ্টি আনতে যাচ্ছে এটা বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। পারভিন একবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে এবার সবাইকে নিয়ে আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। সবাই যেতেই সমুদ্র খাঁটের পাশে এসে দাঁড়ালো। শশী টুকুর টুকুর চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র শশীর দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। শশী কিছু বলার আগেই সমুদ্র বলল।

” এটা কী হলো? আমি তোমাকে নিষেধ করেছিলাম নাহ? বার বার করে বললাম তুমি আর একটু বড় হও তারপর না হয় এসব ব্যাপারে ভেবে দেখবো। কিন্তু তুমি আমার কথা শুনলে না কেনো?

সমুদ্রের কথা শুনে শশী ঠোঁট উল্টে বলল।

“আসলে এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে। আমার কি দোষ আমি বড় হতে হতে তো আপনি বুড়ো হয়ে যাবেন। তখন বেবি নিলে দেখা যাবে বেবি আপনাকে বাবা না ডেকে দাদু ডাকছে। তাই আপনার কথা ভেবেই তো এটা করলাম। আর আপনি এখন আমায় বকা দিচ্ছেন।

শশীর এমন কথাশুনে সমুদ্রের বেশ হাসি পেলো। তবে হাসলো নাহ। শশীর কাছে বসে নিচু হয়ে ওর কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো। অতঃপর শশীর বুকের উপর মাথা রেখে বলল।

” আমার ছোট্ট ভালোবাসাটা আরেকটা ছোট্ট প্রাণকে আনার জন্য তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসা। আমি অনেক খুশি হয়েছি। অনেক ভালোবাসি তোমায়। তুমি নিজেই এখনো ছোটো সেই জন্যই তো আমি এটার কথা ভাবতে গিয়েও ভাবিনি।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী ভীষণ খুশি হলো। লোকটা বিয়ের এতোদিন পরে আজকে মুখ ফুঁটে ভালোবাসি বলল। সত্যিই ছেলেরা বাবা হওয়ার কথা শুনলে এতোটা খুশি হয়? শশী সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল।

“তাহলে আমায় কোলে নেন।

সমুদ্র মাথায় উঠিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল। শশী এবার লজ্জা পেয়ে দুইহাতে নিজের মুখ ঢেকে বলল।

” হুট আমি আর কিছু বলবোই নাহ। আপনি শুধু আমায় লজ্জা দেন।

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-৩৮+৩৯

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩৮
,

কলেজ থেকে এসে গোসল শেষ করে। ব্যালকনিতে বসে বই পড়ছিলাম। তখনি পিছন থেকে কেউ কথাটা বলল। শশী ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে জয় দাঁড়িয়ে আছে। বইটা বন্ধ করে জয়ের দিকে ঘুরে বসে মিষ্টি হেসে শশী বলল।

“সত্যিতো বড় ভুল হয়ে গেলো। বাড়িতে এমন জোয়ান শক্ত সার্মথ্য একটা ছেলে থাকতে ওনার মতো আধবুড়ো লোককে বিয়ে করা আমার মোটেও ঠিক হয়নি। সত্যিই এখন আফসোস হচ্ছে আমার।

শশীর কথায় জয় বেশ আনন্দিত হলো। ভিতরে ভিতরে ভাব বেড়ে গেলো। বাম হাত সামনে থেকে ছোটো করে কাটা চুলের উপর দিয়ে নিয়ে পিছনে টানলো। অতঃপর ভাব নিয়ে বলল।

” কিন্তু কি আর করা যাবে বলো। বিয়ে তো হয়েই গেছে। এখন তুমি ভাইয়ার বউ হয়ে গেছো। সত্যি আমাকে পেয়েও হারালে। তবে বড় ভাইয়াও অনেক হ্যান্ডসাম যদিও আমার থেকে একটু কম তবে বডি আমার থেকেও বেশি। ভাবছি বড় হলে বড় ভাইয়ার মতো বডি বানাবো। আর মেজো ভাইয়ার মতো ছঁবি আঁকা শিখবো।

“আরেহ বাবা এতোকিছু? তাহলে তো অনেক মেহনত করতে হবে সাথে পড়াশোনা টাও করতে হবে।

শশীর এই কথায় জয় বেশ বিরক্ত হলো। রুমের ভিতর গিয়ে বিছানায় বসে বলল।

” উফফ ভাইয়ার মতো তুমিও শুধু পড়ার কথা বলো। আমি আরো আসলাম তোমার সাথে গল্প করতে।

শশী উঠে দাঁড়িয়ে রুমের মধ্যে গেলো। বইটা টেবিলে রেখে জয়ের পাশে বসে কিছু বলবে তখনি নিচে থেকে শাহানারা শশীকে ডাকলো।
,,,,,,,,,,,,,
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে সন্ধ্যার আগেই বেরিয়ে পড়ল সমুদ্র। বাড়িতে কাউকে কিছুই জানাইনি শুধু শাহানারাকে ফোন করে বলেছিলো ফিরতে রাত হতে পারে। মাঝ রাস্তায় গিয়ে ইমরান কেউ সাথে নিয়েছিলো। শহরের ইট সিমেন্ট এর দালান পেরিয়ে গ্রামের ভাঙা ভাঙা রাস্তায় আসতেই রাত হয়ে গেলো। রাস্তার একপাশে গাড়ি থামিয়ে ইমরান কে বলল গাড়িতে বসে থাকতে। কথামত ইমরান ও চোখ কান খোলা রেখে গাড়িতে বসে থাকল। সমুদ্র শশীকে ফোন করে বলে দেওয়ার পরে কথামত ক্লাবঘরের দিকে গেলো। তবে গ্রামে ঢুকেই ওরা আগে শাহীন এর খোঁজ নিয়েছে তবে শাহীন কে পাইনি। তারপর সমুদ্র ভাবলো এসেছে যখন শশীর সাথে দেখা করেই যাক। এই মনোভাব নিয়ে ক্লাবঘরের ওখানে যেতেই ভিতর থেকে কারো কথপোকথন শুনতে পেলো। সমুদ্র নিঃশব্দে বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শুনতে লাগলো ভিতরে কারা কথা বলছে আর কি কথা বলছে।

“আব্বা তুমি এখানে আসছো কেনো এখন?

ছেলের কথায় বেশ বিরক্ত হলো চেয়ারম্যান। রাগ চেপে থেকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

” তো আসবো নাহ। তুই জানিস সমুদ্র তোকে খুঁজতে এখানে এসেছে। আমার লোক ওর গাড়ি মোড়ের মাথায় দেখেছে। আর তুই এখানে বসে আছিস। মালবিকা আমাদের বলেছে সাবধানে থাকতে আর সমুদ্র যদি একবার জানতে পারে মালবিকার সাথে আমরাও জড়িত তাহলে কি হবে বুঝতে পারছিস?

“আরে আব্বা তুমি চিন্তা করো নাতো। আম্মা আমায় বলেছে এখানে লুকাতে তাইতো আমি এখানে এসেছে। আর তুমি এখন বাড়িত যাও আম্মা যদি জানে তাহলে রেগে যাবে।

” তুই আর তোর ওই আম্মা কি করছিস বলতো। আমারই ভুল হয়েছে ওই মালবিকা কে বিয়ে করে এখন প্রতিটা মিনিটে ভয়ে থাকতে হয়। না জানি কখন পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যাই। এখন তো আবার ওই সমুদ্র ও সাথে যোগ হয়েছে। আচ্ছা শোন তুই সাবধানে থাকিস। আমি এখন যাচ্ছি। মালবিকা ফোন দিয়ে বলল গ্রামের রাস্তা দিয়ে নাকি নতুন মাল আসবে। শহরে ঢোকার মুখে পুলিশ পাহারায় এই জন্য আমাকে যেতে হবে। গ্রাম থেকে গাড়ি বের করতে হবে। তুই থাক।

কথাটা শেষ করে গামছাটা মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে গেলো চেয়ারম্যান। ওনার বেরোনোর আভাস পেয়ে সমুদ্র পাশে সরে গেলো। দরজা তখন হালকা ফাঁকা। ফাঁক দিয়ে সাবধানে উঁকি দিতেই সমুদ্র শাহীন কে দেখলো। শাহীন ফোন বের করে কাউকে কল দিলো।

“হ্যাঁ আম্মা সব আপনার কথামতোই হচ্ছে ।

” কি করতে হবে সেটা মনে আছে তো?

“একদম সব মনে আছে আম্মা। সমুদ্রের কাছে আমায় ইচ্ছে করে ধরা দিতে হবে। তারপর সমুদ্র যখন আমায় ধরবে আমি তখন না জানার অভিনয় করবো। আর সমুদ্র আমাকে ছেড়ে দেওয়ার পর আমি আমার মতো নিজের কাজ করবো। আর ও নিশ্চয়ই আমার উপর নজর রাখার জন্য কাউকে বলবে। আমি সমুদ্রের পুরো ধ্যান আমার উপর রাখবো আর আপনি সেই ফাঁকে আপনার কাজ করবেন। তাইতো আম্মা নাকি কোনো ভুল আছে।

” হুম সবি ঠিক আছে। আর তোমাকে এতো কথা কে বলতে বলল জানো না দেওয়াল এর ও কান আছে।

“আরে আম্মা চিন্তা নাই এখন এখানে কেউ আসবে নাহ। আর শুনলাম সমুদ্র নাকি আমারে খোঁজার জন্য গ্রামে আসছে। মোড়ের মাথায় ওর গাড়ি দাঁড় করানো।

” আচ্ছা ঠিক আছে আমি রাখছি।

কথাশেষ করে শাহীন ফোন কেটে দিলো। পুরো কথা শোনার পর সমুদ্র ক্লাবঘর থেকে সরে এলো। ঠোঁটের কোণে তখন বাঁকা হাসি। ঘাড় কাঁত করে বা হাতে ঘাড় ডলতে ডলতে সমুদ্র বলল

“তো এই ব্যাপার আচ্ছা ঠিক আছে। তোমরা তোমাদের কাজ করো আমি যেমন অজানা ছিলাম তেমনি থাকি।

কথাটা বলে সমুদ্র পকেট থেকে নিজের ফোন বের করে ইমরান কে কল দিলো। ধুপধাপ পা ফেলে সামনে যেতে যেতে বেশ জোরে জোরেই বলল।

” হ্যাঁ ইমরান শোনো তুমি চোখ কান খোলা রেখো যে করেই হোক ওই শাহীন কে ধরতে হবে। ওকে ধরলেই ওই মহিলার পরবর্তী প্লানটা কি সেটা জানতে পারবো। আমি শশীর সাথে দেখা করেই আসছি ওকে।

কথা শেষ করে সমুদ্র ফোন কেটে পকেটে রাখল।ও জানে শাহীন ওর সবকথা শুনেছে। শাহীন সমুদ্রের গলার আওয়াজ পেয়ে প্লান মতো ঘরের মধ্যে থেকে কাশির আওয়াজ করে। সমুদ্র ও না জানার অভিনয় করে কে ওখানে। কথাটা বলে ক্লাবঘরের দরজা খোলে ভিতরে যাই তারপর ওখানে শাহীন কে হঠাৎ দেখার মতো চমকানোর ভাব করে ওকে ধরে। শাহীন ও ভয় পাওয়ার অভিনয় করলে সমুদ্র ওকে ওখানেই বেঁধে শশীর সাথে দেখা করতে যায়।

এতোক্ষণ বসে বসে সবটা ভাবছিলো সমুদ্র। খানিক সময় পর নিজে নিজেই বলল।

“ইমরান এর কথা অনুযায়ী ওই মহিলা এখন বাংলাদেশ এ নেই। তাহলে ওনি কোথায় যেতে পারে? আর ওনার পরবর্তী প্ল্যানটাই বা কী? হুম সাবধান থাকতে হবে।

কথাগুলো ভেবে সমুদ্র নিজের ছোট ফোনটা বের করলো অতঃপর কাউকে কল দিয়ে বলল।

” হ্যাঁ আপনাকে একটা কাজ করতে হবে। কালকের মধ্যেই।

,,,,,,,,,,,

“ওসমান ভাই। পাকিস্তান এর সবচেয়ে বড় টেরোরিস্ট। যাকে পুলিশের পুরো টিম আর্মি সবাই খুঁজছে। আর আমি কিনা তারই সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুব লাকী মনে হচ্ছে

মালবিকার কথাশুনে সামনের লোকটা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। বাঁকা চোখে মালবিকা কে একবার পরোক্ষ করে নিলো। তারপর মালবিকার উদ্দেশ্য বলল।

” বাংলাদেশের মালবিকা মির্জা হঠাৎ আমার আস্তানায়। কি এমন দরকার পড়লো শুনি?

“এতোদিন ফোনেই সবকিছু হচ্ছিল। ভাবলাম এবার সামনাসামনি কিছু কথা বলি। কিন্তু আপনার এখানে আসা তো অনেক কঠিন।

মালবিকার কথাশুনে বিকট শব্দে হাসতে লাগলো ওসমান। পিছনে সরে গিয়ে টেবিলের উপর থেকে একটা ছোট বতল হাতে নিয়ে ডপারে করে তরল জাতীয় কিছু তুলল। অতঃপর বাম চোখের উপর থেকে কালো পট্টিটা সরায়ে গুনে গুনে তিন ফোঁটা ঔষধ সেখানে নিয়ে পুনরায় আগের জায়গায় বতলটা রাখতে রাখতে বলল।

” কি মনে হয় ওসমান এর সন্ধান পাওয়া এতোই সোজা? এই যে আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি চেয়েছি বলেই আপনি এখানে আসতে পেরেছেন।

চোখের উপর থেকে কালো পট্টি টা সরাতেই কাটা চোখটা বেরিয়ে আসলো। সেটা দেখেই গায়ের মধ্যে কেমন একটা করে উঠল মালবিকার তবে সেটা পাত্তা না দিয়ে বলল।

“তাহলে কাজের কথায় আসা যাক?

” হ্যাঁ চলুন তাহলে বসে কথা বলি।

,,,,,,,,,,,,,,,,,

গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে শশী। সমুদ্রের সাথে কথা হয়নি আজকেও মনটা ভীষণই খারাপ তখনি জামশেদ আসলো বলল শশীকে অনেকদিন দেখেনি এই জন্য ওকে নিয়ে যাবে। আর সমুদ্র ও এখানে নেই তাই কয়েকদিন গ্রামে থেকে আসলে ভালো লাগত। কিন্তু শশীর যাওয়ার একদম ইচ্ছে নেই। এখানে সমুদ্র না থাকলেও ওর সৃতি আছে যা সমুদ্রের অভাব পূরণ না করতে পারলেও কিছুটা শান্তি দেয়। আর ওখানে সেটাও নেই। আবার সমুদ্র কে না বলে কীভাবে যাবে ও। কিন্তু বাবা আর শাশুড়ির কথার উপর কোনো কথা বলতে পারলো নাহ। অগত্যা ব্যাগ গুছিয়ে যেতেই হলো। তবে জয় এর পরিক্ষা শেষ হলে শাহানারাও যাবে গিয়ে কয়দিন থেকে শশীকে নিয়ে আবার ফিরে আসবে। এসব ভাবতে ভাবতে শশী ফোন বের করে ওয়েল পেপারে থাকা সমুদ্রের ছবির দিকে তাকিয়ে বলল।

“আপনি কোথায় সমুদ্র। কবে আসবেন। আর কতদিন। এতো দূরত্ব সয্য করা সত্যি বড় কঠিন।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩৯
,
“আসলে তুমি করতে চাইছো টা কী? তোমার প্ল্যানটা কি?

“খুব সহজ। একটা নিবিড় পরিকল্পনা। অতঃপর ভূম।

কথাট বলে মালবিকা বাঁকা হাসলো। সাথে ওসমান ও। হাতের মদের গ্লাসটা টি টেবিলের উপর রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল ওসমান।

“এতো পরিকল্পনা কেনো ওর বাপ চাচার মতো ওকেও উড়িয়ে দেও কাহিনি খতম।

“না ওকে এতোটা হালকা করে নিও নাহ। আসলে বাঘের বাচ্চা তো তাই বাপ কাকার থেকেও একটু বেশিই চালাক হয়েছে। চতুর বুদ্ধি ওর আমাদের একটা ভুল পদক্ষেপ পুরো খেলাটা ঘুরিয়ে দিতে পারে।

” হুম তাহলে তুমি আমাকে কী করতে বলছো?

“বলবো সব বলবো তবে এখন নয় সঠিক সময়ে। তোমাকে শুধু সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।

” সে না হয় থকলাম। কিন্তু বিনিময়ে আমি কি পাবো?

ওসমান এর কথায় মালবিকা বাঁকা হেসে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। চেয়ারের হাতলে দুহাত রেখে কিছুটা ঝুঁকে ওসমান এর দিকে তাকিয়ে বলল।

“তোমার যেটা চাই সেটা তুমি কাজ শেষে ঠিক পেয়ে যাবে।

কথাটা বলে মালবিকা ওসমান এর দিকে তাকালো। ও ঝুঁকে থাকায় ওর বুঁকের খাঁজটা দূশ্যমান। আর সেখানেই তাকিয়ে আছে ওসমান। মালবিকা সেই দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজেও তাকালো অতঃপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল।

” তবে টাকার সাথে সাথে তোমার জন্য আমি আরো একটি স্পেশাল জিনিস রেখেছি।

“কিহ সেটা?

মালবিকা টি টেবিল এর উপর থেকে নিজের ফোনটা তুলে নিলো। কিছুক্ষণ ফোনে কিছু একটা করে পুনরায় ফোনটা টি টেবিলে রেখে ওসমান এর দিকে সরিয়ে দিয়ে বলল।

” এটা তোমার।

ওসমান মালবিকার ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে চোখের সামনে ধরতেই চোখমুখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আছে। বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে ফোনের স্কিনটা আলতো করে স্পর্শ করল।সেদিকে তাকিয়ে থেকে মালবিকা কে বলল।

“তোমার ডিল পাক্কা। কিন্তু এটাকে আমার চাই। ফোনেই যদি এতোটা মহনীয় হয় তাহলে সামনাসামনি কতটা সুন্দর।

ওসমান এর হাত থেকে এক টানে ফোনটা নিজের কাছে নিলো মালবিকা। অতঃপর সেও ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল।

” শশী সমুদ্রের একমাত্র দুর্বলতা। ওর স্ত্রী। কিন্তু এটাকে পেতে হলে তোমায় আগে সমুদ্র পাড় করতে হবে। আকাশের চাঁদ এর সংস্পর্শ পেতে হলে যেমন তোমাকে হাজার হাজার মাইল, আলোকবর্ষ পাড় করতে হবে। তেমনি এই চাঁদকে পেতেও তোমায় বিশাল এক সমুদ্র পাড় করতে হবে। তরপরেও যদি হয় সমুদ্র টা ভীষণ উত্তাল।

মালবিকার কথাশুনে ওসমান বাঁকা হেসে বলল।

“গোলাপ ছিঁড়তে হলে তো কাঁটাকে আগে উপ্রে ফেলতে হয়। মিষ্টি জিনিস পেতে একটু না হয় ঝাল এর সম্মুখীন হলাম। আর তাছাড়া অনায়াসে কোনো কিছু পেতে আমারও ভালো লাগে নাহ। সমুদ্র যতই উত্তাল আর গহীন হোক না কেনো। সেটা পেরিয়ে এই চাঁদ কে আমি কলুষিত করবোই। কারণ চাঁদ কলংকিত না হলে মানায় নাহ।
,,,,,,,,,,,,,

নিজের কাজ শেষ করে অনেক আগেই রুমে চলে এসেছে রোদ্র। রুমে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে ভিতরে গেলো। সামনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে পাতলা কাপড় টা সরিয়ে দিতেই ভিতর থেকে শশীর ছবিটা বেরিয়ে আসলো। যেটা রোদ্র অনেক ভালোবেসে এঁকেছিলো। বাঁমহাত টা বাড়িয়ে ছবিটা ছুঁতে গিয়ে হাত মুটো করে আবার ফিরিয়ে নিলো। শশীর হাস্যোজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে বলল।

“তোমাকে ছোঁয়ার অধিকার এখন আর আমার নেই। তুমি কত নিষ্ঠুর গো। আমার ভিতরটা জ্বালিয়ে কি সুন্দর করে হাসতেছো। এই তোমার একটুও কষ্ট হয় নাহ? এভাবে আমাকে পুড়িয়ে কি সুখ পাচ্ছো তুমি মেয়ে। সত্যিই মেয়ে তুমি নির্দয়, হৃদয়হীনা।

“এক পাক্ষিক ভালোবাসায় কষ্ট ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় নাহ। এতো কষ্ট না পেয়ে কেনো ভুলে যাচ্ছো নাহ তাকে। কেনো এভাবে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করছো।

কারো কথার আওয়াজ শুনে রোদ্র পিছনে তাকালো। লিজা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। রোদ্র বৃদ্ধা আঙুলে নিজের অবাধ্য চোখের পানিটা মুছে নিষ্প্রাণ হাসি দিয়ে লিজার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল।

” আরে তুমি এই সময় কি মনে করে?

“কেনো বন্ধুর বাসায় আসতে পারি না বুঝি?

” পারবে না কেনো অবশ্যই পারো। আর এখানে আসার সবচেয়ে বেশি তোমার অধিকার আছে। প্রথম যখন এখানে এই অচেনা শহরে এসেছিলাম। তখন তো তুমিই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমায় তোমার চোখে এই অচেনা শহরের সাথে পরিচয় করিয়েছো।

রোদ্রের কথাশুনে লিজা দরজা ছেড়ে ভিতরে এসে বেডে বসে বলল।

“ওহ প্লিজ এইসব কথা বলো নাহ তো। এসব শুনতে ভালো লাগে নাহ আমার।

” আচ্ছা ঠিক আছে বলবো নাহ। এখন বলো কি খাবে।

“কিচ্ছু খাবো নাহ আমি। এটা বলো জোসেফ এর সাথে তোমার কথা হয়েছে?

লিজার কথায় রোদ্র লিজার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। আগের ন্যায় শশীর ছবিটায় পাতলা কাপড়টা দিতে দিতে ভাবলো। ও জানে লিজা জোসেফ কে পছন্দ করে। প্রথম যেদিন জোসেফ এর সাথে লিজাকে পরিচয় করায়ে দিয়েছে সেদিনই লিজার চোখে জোসেফ এর জন্য কিছু একটা দেখেছিলো ও। প্রেমিক তো তাই অন্য কারো মনের কথা চোখের দ্বারা পড়ে ফেলতে পারে। কিন্তু জোসেফ? ওর মনে লিজার জন্য তেমন কিছুই দেখেনি। শুধু সাধারণ আর সবার মতোই নিয়েছে লিজাকে। হয়ত লিজার অবস্থা ও খুব শীঘ্রই তার মতোই হবে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো এটাই যে রোদ্র চেয়েও কিছু করতে পারবে নাহ। ও কীভাবে লিজাকে বলবে। লিজা তুমি জোসেফ কে ভালোবাসা বন্ধ করে দেও।
,,,,,,,,,,,
বিছানার উপর শশীর ফোনটা সমানে বেজে চলেছে। কিন্তু ধরার নামগন্ধ নেই। বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে গেলে পুনরায় আবার বেজে উঠছে। জোনাকি কোনো একটা কাজে রুমে এসেছিলো শশীর ফোনটা এভাবে বাজতে দেখে হাতে নিয়ে দৌড়ে নিচে নেমে গেলো। শশী তখন উঠানে পেতে রাখা বাঁশের চড়াট এর উপর বসে পিঠা খেতে ব্যাস্ত। শীতের সকাল। সকাল বললে ভুল হবে বেশ বেলা হয়েছে কিন্তু কুয়াশার কারণে সূর্যের টিকিটাও দেখা যাচ্ছে নাহ। এই জন্য আপাতত রোদের ও কোনো হদিস নাই। রান্নাঘরে পারভীন শাহানারাসহ সবাই গল্প করছে আর পিঠা বানাচ্ছে। শশী নিজের সোয়েটার আরো একটু টেনে গলা ঢেকে সামনে বসা জয় এর টুপিটা টেনে কান ঢাকতে ঢাকতে বলল।

“আরে এভাবে কান বের করে রেখেছো কেনো জয়৷ ঠান্ডা লাগবে তো।

শশীর কথায় জয় এর তেমন হেলদোল দেখা গেলো নাহ। সে এখন পিঠা খেতে ব্যাস্ত। বাঁ হাতে লাল হওয়া ডাকটা ডলে আবার খেতে শুরু করলো। দুইদিন আগেই ও শাহানারার সাথে এখানে এসেছে।শহরের তুলনায় গ্রামে একটু বেশিই শীত এই জন্য আসতে না আসতেই ঠান্ডা লেগে গেছে। শশী জয়ের থেকে সরে একটা পিঠা নিয়ে কাঁমড় দিতেই জোনাকি দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল।

” এই আপা তোর ফোন বাজতেছে সেই কখন থেকে আমি না গেলে তো ঠিকিই পেতাম নাহ।

জোনাকির কথাশুনে শশী তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সমুদ্র কল দিয়েছে। শশী হাতের পিঠাটা রেখে ফোনটা রিসিভ করে কানে চেপে বলল।

“একটু দাঁড়ান।

কথাটা বলে চড়াট থেকে নেমে স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে নিজের রুমের দিকেই চলে গেলো। জোনাকি শশীর জায়গায় বসতে বসতে জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল।

” এই তোমার নাক এতো লাল কেনো? কেউ ঘুষি মেরেছে বুঝি?

“তুমি সত্যিই বোকা৷ আরে কারো সাহস আছে নাকি আমাকে মারার। আসলে আমার ঠান্ডা লেগেছে তো তাই এমন লাল হয়েছে।

জয়ের কথায় জোনাকি নিজের নাকে হাত রেখে আবার জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল।

” ঠান্ডাতো আমারও লাগে কই আমার নাকতো এমন লাল হয় নাহ।

“তোমার নাক লাল হবে কেনো। আসলে তুমি কালো তো এই জন্য তোমার নাক লাল হয় নাহ। আর আমি ফর্সা তো এই জন্য একটু ধরলেই আমার নাক লাল হয়ে যায়।

জয়ের কথায় জোনাকির ভীষণ রাগ হলো। ছেলেটা ওকে কালো বলেছে এই জন্য৷ কই আর সবাইতো ওকে কালো বলে নাহ৷ ওর মাও তো বলে শশী লাল ফর্সা আর জোনাকি উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। শশীর থেকে সুন্দর৷ শুধু ফর্সা হলেই সুন্দর হয় নাকি। জয় জোনাকির দিকে তাকিয়ে দেখে জোনাকি রাগ করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। জয় এর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো জোনাকির দিকে তাকিয়ে বলল।

” তবে যদি তুমি চাও তাহলে আমি তোমার নাক লাল করে দিতে পারি।

“সত্যি? কিন্তু কীভাবে?

” ম্যাজিক করে।

জয়ের কথায় এবার জোনাকি মুখ বাঁকিয়ে বললো।

“আমাকে বোঁকা পেয়েছো? তুমি বলবে আর আমি বিশ্বাস করে নেবো? ওসব জাদু ফাদু কিছু নাহ। আব্বা আমায় বলেছে ওসব জাদু সত্যি হয় নাহ৷ আসলে ওসব আমাদের চোখের ভুল।

” আমি সত্যি বলছি। আচ্ছা আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে নাতো তোমার? ঠিক আছে আমার দিকে সরে আসো এখনি তেমার নাক লাল করে দিচ্ছি।

জয়ের কথায় জোনাকি সরল মনে জয়ের দিকে গেলো। তবে ও জানে এসব জাদু করে কখনোই নাক লাল করা যায় নাহ। তবুও জয় কি ম্যাজিক দেখাতে চাই সেটা দেখার জন্য গেলো। জোনাকি সরে আসতেই জয় ওকে চোখ বন্ধ করতে বলল। জয়ের কথামত জোনাকি চোখ বন্ধ করতেই। জয় জোনাকি নাকের মাথায় জোরে সরে একটা কাঁমড় দিয়ে পিঠার বাসন নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো৷ কাঁমড় দেওয়ার সাথে সাথে জোনাকি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে নাক ধরে বলল।

“ওমা গো আব্বাগো আমার নাকে কাঁমড় দিয়ে রক্ত বার করে দিলো। জ্বলে গেলো গো।
,,,,,,,,,,,,

” কোথায় থাকো ফোন রেখে? কতবার কল দিয়েছি?

লেপটা পায়ের উপরে টেনে নিয়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বেশ আরাম করে বসল শশী।

“মা পিঠা বানাচ্ছে বাইরে বসে ওটাই খাচ্ছিলাম।

“কোনো সম্যসা হচ্ছে নাতো?

” নাহ।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে শশী সমুদ্রের উদ্দেশ্য বলল।

“আপনি কবে আসবেন?

শশীর কথায় সমুদ্রের ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। দুষ্টুমি ভরা কন্ঠে বলল।

“কেনো রাতে কি শীত বেশি লাগছে?

সমুদ্রের কথার মানে বুঝে পেরে শশীর গাল লাল হয়ে গেলো। লজ্জায় বেশি কিছু বলল নাহ আর। লোকটার মুখ সত্যি বড়ই অবাধ্য। মুখ খুললেই যেনো কথা নয় এক একটা বোম বের হয়।
,,,,,,,,,,
চলে গেছে আরো কয়েকটা মাস। সমুদ্রের যাওয়ার পর অনেক গুলো মাস পেরিয়ে গেছে। এই কয়মাসে খুব কমই কথা হয়েছে ওদের। মাঝে মাঝে তো কথাও হতো নাহ। সমুদ্র এক এক সময় এক এক জায়গায় থাকতো। যার দরুন নেটওয়ার্ক এর সম্যসায় পড়তে হতো। এর জন্য শশীর সমুদ্রের উপর ভীষণ অভিমান জমেছে। আজ প্রায় পাঁচদিন মতো কথা হয় নাহ। শীত পেরিয়ে গেছে। দিনের বেলায় গরম লাগলেও রাতের বেলা হালকা ঠান্ডার রেশ এখনো যেনো রয়ে গেছে। জোনাকির স্কুল বন্ধ তাই ছুটি কাটাতে শশীর কাছে এসেছে। বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে আছে শশী। চোখে হালকা ঘুম ঘুম ভাব। হঠাৎ দরজা বন্ধের শব্দে হালকা ঘুম ভাব টাও কেটে গেলো। ওভাবে থেকেই ঘুম জড়ানো গলায় বলল।

“জোনাকি নিচে গিয়ে জয়ের সাথে খেলাকর। আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে বিরক্ত করিস নাহ।

কথাটা বলেই পুনরায় চোখ বন্ধ করে নিলো। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর কমরে শক্ত হাতের নরম ছোঁয়া পেতেই শশীর ঘুম উড়ে গেলো। চমকে হাতটাকে ধরে ধরফরিয়ে উঠে বসে পিছনে তাকালো।

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-৩৬+৩৭

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩৬
,
“রাগ করেছো?
” নাতো
“তাহলে অভিমান হয়েছে?
” হুম
“কতটা?
” এক সমুদ্র।

শশীর শেষের কথাটা শুনে নিঃশব্দে হেসে উঠল সমুদ্র। বিছানা নামক মাটিতে বিছিয়ে রাখা শক্ত তক্তার উপর পাতলা চাদর পাতা। সেখানে গাঁ এলিয়ে দিয়ে মাথার নিচে নিজের বাম হাত রেখে ফোনের ওপাশে হাজারো অভিমান নিয়ে বসে থাকা নিজের অর্ধাঙ্গীনির উদ্দেশ্য বলল।

“তাহলে তো আমাতে এসেই শেষ হবে। যেহেতু অভিমান এক সমুদ্র সেহেতু চাঁদ থেকে সমুদ্র অবধি এসেই থেমে যাবে। তা এই অধম কি করলে আপনার অভিমান কমবে যদি বলতেন।

“এই চারদিন কোথায় ছিলেন আপনি? আর ফোন দিননি কেনো? জানেন কতটা চিন্তায় ছিলাম। একদিন দুদিন না পরপর টানা চারদিন আপনি নিখোঁজ। এভাবে আমায় কষ্ট দিতে আপনার খুব ভালো লাগে?

” ম্যাডাম মিসেস সমুদ্র আপনার বর একজন আর্মি অফিসার। সে এসি রুমে বসে কম্পিউটার চালানোর কাজ করে নাহ। রোদে পুড়ে বৃষ্টির মধ্যে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে দেশ থেকে মানুষ নামক কিছু আবর্জনা গুলোকে ছাফ করে। এই জন্য মাঝে মাঝে তাকে নেটওয়ার্ক এর বাইরেও যেতে হয়। এখন থেকে অভ্যাস করে নাও। এটা তো কিছুই নাহ কখনো কখনো এই সময়টা আরো বাড়তে পারে তখন কী করবে।

“মরেই যাবো আমি।

” এটা কি ধরনের কথা শশী। তোমাকে আসার আগে আমি কি বলে এসেছিলাম? তোমার উপর এখন অনেক দায়িত্ব এভাবে বাচ্চাদের মতো কথা বললে হবে?

“আমি কোনো দায়িত্ব কাঁধে নিতে চাই নাহ। আমি সব দায়িত্ব সব চিন্তা আপনার উপর সঁপে দিয়ে। আপনার বুকের মধ্যে লুকাতে চাই। আবার সেই উত্তাল সমুদ্রে ডুবে যেতে চাই।

” আমার বউ মনে হচ্ছে বড় হয়ে গেছে। কতবড় বড় বড় কথা বলতে শিখে গেছে। কাছে থাকলে তো লজ্জায় নিজের মুখটাই দেখাতে চাও নাহ৷ আর এখন দূরে আছি বলে এভাবে আমায় পোড়াবে?

সমুদ্রের কথাশুনে শশীর হুঁশ ফিরলো। খানিক পূর্ব নিজের বলা কথাগুলো মনে উঠতেই লজ্জায় রক্তিম হয়ে গেলো। আর কোনো কথা বড়ালো নাহ। চুপ করে ফোনটা কানে ধরে সমুদ্রের কথা বলার অপেক্ষায় থাকলো। খানিক সময় পর সমুদ্র নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বলল।

“কেউ এসেছিলো?

সমুদ্রের কথাটা শুনতেই শশীর মনে পড়ল। চারদিন পূর্বে মালবিকার বলা কথাগুলো। ওপাশে সমুদ্র কথাটা বলে শশীর জবাবের আশায় চুপ করে আছে। শশী বাম কান থেকে ফোনটা ডান কানে নিয়ে সমুদ্রের বালিশে শরীর টা এলিয়ে দিয়ে বলল।

” আসলেই বা কি আমি পরের কথায় কান দিই নাহ। আমি আমার ঘরের মানুষ কে বিশ্বাস করি। যদি আমার বিশ্বাস এতোই ঠুনকো হয় তাহলে আমি কীভাবে তার অর্ধাঙ্গীনি হলাম। বাইরের কেউ এসে কয়েকটা বাজে কথা বলে যাবে আর আমি চোখ বন্ধ করে সেটা বিশ্বাস করে নেবো এতোটাও বোকা আমি নই।

শশীর কথায় সমুদ্রের ঠোঁটের কোনায় হালকা হাসির রেশ দেখা গেলো। ফোনটা কানে চেপে পুনরায় শশীর উদ্দেশ্য দুষ্টুমীর কন্ঠে বলে উঠল।

“বাহ আমার বউতো দেখি মানুষ চিনতেও শিখে গেছে। এই জন্য তোমাকে কিছু দিতে হবে দেখছি। তবে ফোনের মধ্যে সেটা দিতে পারছি নাহ। প্রথম বার আমার কাজে ফিরে এসে আফসোস হচ্ছে কেনো এলাম। এখন যদি তুমি কাছে থাকতে না তাহলে তোমার ওই নরম নরম ঠোঁট জোড়াকে একদম লাল করে দিতাম। সাথে গলায় থাকা কালো তিলটাও। আর সবশেষে বুকের,,,

সমুদ্রের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই শশী থামিয়ে দিয়ে বলল।

” কি করছেন?

সমুদ্র বেশ বুঝতে পারলো ওর কথায় শশী লজ্জা পেয়েছে। শশীকে আরো বেশি লজ্জায় ফেলতে সমুদ্র পুনরায় বলল।

“এই কথা পাল্টালে কেনো থাকতে পারছো নাহ বুঝি।

” ছিঃ আপনার কথার কী ধরণ। দিনদিন কথার এতো অধঃপতন হচ্ছে কেনো?

“কি করবো বলো বিয়ের পরেই তো এই অধঃপতনটা শুরু হয়েছে।

” কবে আসবেন?

“এখনি এই কথা বললে হবে? কেবল তো আসলাম আবার কবে যাবো সেটার ঠিক নেই। আচ্ছা শোনো এখন আর সময় নেই পরে সময় পেলে কথা বলব। আর ফোন বন্ধ পেলে চিন্তা করো নাহ। সময় হলে আমি নিজেই কল করে নেবো। মায়ের সাথে আমার কথা হয়েছে। সবার খেয়াল রেখো আর সাথে তোমার শরীলে থাকা আমার জিনিসগুলোর ও।

কথাগুলো বলে সমুদ্র ফোন কেটে দিলো। শশী ফোনটা বুকের সাথে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে রইল কিছুক্ষণ। সেদিন ওই মহিলার কথাশুনে কষ্ট হয়েছিলো। মনের মধ্যে প্রশ্নেরাও হানা দিয়েছিলো। কিন্তু পরক্ষনেই মনে আসলো বাইরের অচেনা অজানা কারোর কথায় সে তার ভালোবাসার উপর প্রশ্ন তুলতে পারে নাহ। কে কি বলল তাতে কান না দিয়ে ঠান্ডা মাথায় সমুদ্রের থেকে শুনলেই তো হয়।
,,,,,,,,,,,,,

“হ্যাঁ স্যার আমি আপনার কথামত শাহীন এর পিছু নিয়েছিলাম। আর তার থেকে যেটা জানতে পেরেছি সেটা যদি আপনি জানেন তাহলে আপনর মাথায় ঘুরে যাবে স্যার।

” ইমরান আমার সময় কম যেটা বলার যলদি বলো।

“স্যার শাহীন হলো মালবিকার ছেলে। মানে সতীনের ছেলে। মালবিকা নিজের সার্থের জন্য টাকার লোভ দেখিয়ে ওই চেয়ারম্যান কে বিয়ে করে। যেনো হিজলতলী গ্রামে সবার অগোচরে ওর কাজ সাড়তে পারে। তবে সবাই কানাঘুষা জানে যে চেয়ারম্যান এর দ্বিতীয় বউ আছে তবে সেটা কে এটা কেউ জানে নাহ। আর গ্রামের যারা গরীব পরিবার আছে তাদের টাকার লোভ দেখিয়ে মেয়েদের চাকরির কথা বলে শহরে এনে অন্য দেশে পাঁচার করে। আর সেটাও ওই চেয়ারম্যান এর সাহায্য। ওই গ্রামের পুলিশ ও এর সাথে জড়িত। মানে ওই মহিলার কোথায় কোথায় যে এমন জাল বিছানো আছে কে জানে। খুবি ভয়ংকর মেয়ে মানুষ।

শাহীন এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলো। তার নিজেকে অনেক বড়কিছু মনে হচ্ছে। কতগুলো সংবাদ সে সংগ্রহ করেছে। তারতো সাংবাদিক হওয়া উচিত ছিলো। শাহীনের এসব ভাবনার মাঝেই সমুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল।

” এইসব কিছু আমি জানি নতুন কিছু বলো শাহীন।

সমুদ্রের এই কথাটা শুনতেই শাহীন এর মুখটা চুপসে গেলো৷ মানে ওনি যদি সবটা জানেই তাহলে আমাকে এসব করতে কোনো বলল? খামোখা কত খাটনি করে এই তথ্যগুলো যোগাড় করা লাগল।

“শাহীন তোমাকে এক কথা কতবার বলতে হয়।বললাম তো আমার সময় কম যা বলার যলদি বলো।

” ওহ হ্যাঁ। আর একটা কথা গত চারদিন আগে ওই মহিলা আপনার বাসায় গিয়েছিলো। তবে সেখানে গিয়ে কি করেছ সেটা জানি নাহ। ওনি বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে আমিও গিয়েছিলাম। আন্টির থেকে শুনলাম ওনি নাকি শশী ম্যামের সাথে একা কথা বলেছে। তবে কি বলেছে সেটাও জানি নাহ। মহিলাটা যাওয়ার পর আমি সেখানে অনেকক্ষন ছিলাম। কিন্তু ম্যাম তার ঘর থেকে আর বের হয়নি।

“আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাকে যেই কাজটা দিয়ে এসেছি সেটা করো। রাখছি এখন।

” স্যার আমার একটা প্রশ্ন ছিলো।

“বলো।

” কথা হচ্ছে আপনি জানতেন যে শাহীন আপনার গায়ে হলুদের রাতে ইচ্ছে করে ক্লাবঘরে ছিলো যেনো আপনি ওকে ধরতে পারেন। ও জানতো যে আমরা ওর খোঁজেই গিয়েছি।

“হুম।

” আর আপনি এটাও জানতেন যে শাহীন চাইছে যে আমি ওকে ফলো করি এই জন্য আপনি ওকে ছেড়ে দিয়েছিলেন?

“হুম।

“তারমানে এটা দাঁড়ালো যে আপনি বুঝে গিয়েছিলেন যে শাহিন জানে যে আপনি আমাকে বলেছেন যে ওকে যেনো ফলো করি?

” হুম।

“তারমানে আপনি চেয়েছিলেন মালবিকা আর শাহীন মিলে যে প্লান করছে সেটা ওরা করবে আর আপনি সব জানা সত্বেও না জানার ভান করে ওদের ফাঁদে পা দিয়েছেন। এতে ওরা ভাবছে আপনি কিছুই জানেন নাহ। অথচ আপনি সবই জানেন। আর শাহীন ও ভেবেছ আপনি কিছুই জানেন নাহ। এই জন্যও নিজের মতো সবটা করেছে আর আমি ওকে ফলো করছি সেটা ও জানতো। মানে আপনি সব জেনে বুঝে এসব করেছেন। আর শাহীন কেও ছেড়ে দিয়েছেন অথচ ওরা ভাবছে আপনি কিছুই জানেন নাহ। যেমনটা আমি ভাবছিলাম যে আপনি কিছু জানেন নাহ।

” হ্যাঁ। তোমার আর কোনো প্রশ্ন আছে? আর থাকলেও আর এই মুহুর্তে উত্তর দেবো না আমার সময় নেই।

কথাটা বলে সমুদ্র ফোন রেখে দিলো। এদিকে ইমরান হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আপাতত তার মাথা ঘুরছে। কী একটা অবস্থা এতো কিছু হয়ে গেলো আর ও ভাবছে সমুদ্র কিছু না জেনেই বোকার মতো শাহীনকে ছেড়ে দিয়েছে। অথচ তার স্যার সব জানে। মানে ওনি চোরকে বলেছে চুরি করতে আবার এদিকে বাড়ি ওয়ালাকে বলেছে সজাগ থাকতে। ওরে বাপরে মাথা ঘুরছে আমার কেউ পানি ঢালো।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩৭
,
“ম্যাডাম এখান থেকে বাকি পথটুকু আপনাকে হেঁটেই যেতে হবে।

হেলিকপ্টার থেকে নেমে এসি গাড়িতে বেশ আরামেই এসেছিলো মালবিকা। হঠাৎ গাড়ি থেকে নামার পর এমন কথা শুনে বেশ বিরক্ত হলো। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে বাজার মতো কিছু একটা। দুপাশে সবজি থেকে শুরু করে মাছ, কাপড় সবকিছুর দোকান আছে। দুপাশে দোকান মাঝখান দিয়ে ছোট রাস্তা। তবে সেখানেও মানুষের ভিড়। বিকেল পরে গেছে এই জন্য সবাই বাড়ির জন্য আনাজ কিনতে ব্যাস্ত। মালবিকা কে দেখে সবাই কেমন আড় চোখে তাকাচ্ছে। কেননা ওখানে থাকা প্রায় সব মহিলাই বোরকা পড়া। আবার কেউ কেউ শুধু হেজাব করা। আর সেখানে মালবিকা পাতলা একটা শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। এভাবে সবার তাকানো দেখে মালবিকার তেমন কিছুই যায় আসলো নাহ। বরং এতো মানুষের ভিড়ে সবার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে এটা ভাবতেই বিরক্ত আর রাগ দুটোই লাগছে।

” ভালো করে দেখো আর কোনো রাস্তা আছে কিনা। আমি এই পথ দিয়ে কখনোই যাবো নাহ। নোংরা পরিবেশ।

লোকটা বেশ নম্রভাবে মাথা নিচু করে বলল।

“ম্যাম আমি সব খোঁজ নিয়েই বলছি। এখান থেকে সামনে গেলে একটা মাজার পড়বে। ওটার পিছনেই আর কিছুদূর গেলেই আমাদের গন্তব্য। আর সেখানে যাওয়ার জন্য আমাদের এই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে ম্যাডাম অন্য রাস্তা সেভ নাহ।

মালবিকার যেনো বিরক্তের সীমা রইল নাহ। ডান হাতে শাড়ির কুঁচি ধরে ধুপধাপ পা ফেলে সামনে যেতে লাগলো। পাশ থেকে একজন রাস্তাতে পানি ফেলতেই। পানিটা গড়িয়ে মালবিকার পায়ের নিচে দিয়ে গেলো। রাগী চোখে সেদিকে তাকাতেই বৃদ্ধা লোকটি অনুতপ্ত হয়ে মাথা নিচু করে বলল।

“মাফ করবেন আমি দেখতে পায়নি।

” হ্যাঁ হ্যাঁ হয়েছে এরপর থেকে দেখেশুনে কাজ করবে নয়ত বিপদে পড়ে যাবে। আপনি চলুন ম্যাম।

মালবিকা আর কিছু বলল নাহ। খানিকক্ষণ যাওয়ার পর সামনেই পড়লো সেই মাজারটা। মাজারের সামনের পুরোটা জুড়ে হরেক রকমের ছোট্ট ছোট্ট দোকান। এখানে মানুষের আনাগোনা বেশ বেশি। মালবিকা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে গেলো। মাজার পেড়িয়ে বেশ কিছুদূর যাওয়ার পরেই সামনে জঙ্গলের মাঝ দিয়ে ছোট রাস্তা। মালবিকা হাঁটা থামিয়ে পাশে তাকাতেই বডিগার্ড কারো কাছে ফোন দিলো। বেশকিছু সময় কথা বলার পর মালবিকার উদ্দেশ্য বলল।

“ম্যাম এখান থেকেই রাস্তা শুরু। আমরা প্রায় চলে এসেছি।

মালবিকা কুঁচি ধরে রাখা হাতটা ছেড়ে দিয়ে বাঁকা হেসে অন্য হাতে থাকা সানগ্লাস টা চোখে পড়ে নিলো। অতঃপর সাথে থাকা বডিগার্ড কে সেখানে দাঁড়াতে বলে ও সামনের দিকে চলে গেলো।
,,,,,,,,,,,,,,,

” আমার মতে দুইটা জায়গায় কখনোই নিজের অধিকার ক্ষমতা ছেড়ে চলে আসা উচিত নয়।

জোসেফ এর কথাশুনে ছবি আঁকতে থাকা রোদ্রের হাতটা থেমে গেলো। ঘাড় বাঁকিয়ে জোফেস এর দিকে তাকিয়ে বলল।

“আমি ঠিক তোর কথাটা বুঝতে পারলাম নাহ।

” না বোঝার কি আছে মেরি দোস্ত। শোন যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিজের শত্রু পক্ষ কে আর ভালোবাসার মানুষ কে কখনোই ছাড়া উচিত নয়।

জোসেফ এর কথাশুনে রোদ্র মুচকি হেসে পুনরায় নিজের কাজে মন দিলো। জোসেফ এবার রোদ্রের কাছে গিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে বসে বলল।

“আরে আমি কি কোনো হাসির কথা বললাম যে তুই এভাবে হাসতেছিস। মানলাম যে ভালোবাসায় ত্যাগ করা যায় কিন্তু সেই ত্যাগটা কেনো এক পক্ষ করবে অপরপক্ষ ও তো করতে পারে।

জোসেফ এর কথায় রোদ্র তেমন পাত্তা না দিলেও এবার রোদ্রের হাতটা থেমে গেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে জোসেফ এর দিকে তাকিয়ে বলল।

” কি?

ঘা টা জায়গা মত দিতে পেরে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুঁটে উঠল জোসেফ এর। মালবিকার কাছ থেকে পুরো কাহিনি টা শুনে তারপর নিজের প্লানটা সাজিয়েছে। রোদ্রের কথায় পুনরায় বলা শুরু করলো।

“হ্যাঁ আমিতো ঠিকি বলেছি। ভাই আমি কখনো নিজের ভালোবাসা ছাড়বো নাহ।

” যাকে ভালোবাসবি সে যদি তোকে না ভালোবেসে অন্য কাউকে ভালোবাসে তখন কি করবি?

রোদ্রের কথা শুনে জোসেফ সঙ্গে সঙ্গে কিছু বলল নাহ। মনের মধ্যে পরপর কথাগুলো সাজিয়ে নিয়ে বলা শুরু করলো।

“ওতোকথা জানি নাহ। আমি যে তাকে ভালোবাসি এই কথাটা আগে তাকে জানাবো তারপর দেখবো সে কি বলে। কেননা আমি কিছু না জেনেশুনে নিজে নিজে এতো বুঝতে যাবো কেনো? ভালো বেসেছি কোনো পাপ তো করিনি। এই জন্য আগে নিজের ভালোবাসার কথা তাকে জানাবো এরপর বাকি কথা। আরে আমি যদি তাকে আমার মনের কথা নাই বলি তাহলে সে জানবে কীভাবে?

জোসেফ এর কথাশুনে রোদ্র ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেলো। নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করলো। সত্যিতো আমিতো কখনো শশীকে নিজের মনের কথা জানায়নি তাহলে ও জানবে কীভাবে? রোদ্রকে ভাবতে দেখে জোসেফ বাঁকা হেসে রোদ্রের কাঁধে হাত রেখে বলল।

” তবে তুই কিন্তু আমাকে তোর লাভ স্টোরিটা এখনো বলিসনি। যদি বলতি তাহলে হয়ত বলতে পারতাম আসলে ত্যাগ টা কার করা উচিত ছিলো।

জোসেফ এর কথাশুনে রোদ্র ওর থেকে একটু সরে এসে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। বাইরে থেকে ঠান্ডা বাতাস গাঁয়ে লাগতেই আরাম অনুভব করলো। লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে সবটা বলতে শুরু করলো। শশীকে প্রথম দেখা থেকে সমুদ্রের সাথে বিয়ে হয়ে যাওয়া সবটা। সবটা শুনতেই জোসেফ হা হয়ে গেলো। এতো কিছু হয়ে গেছে আর ওরা একটুও টের পায়নি। তবে যেটা ও করতে পারেনি সেটা রোদ্র কে দিয়ে ঠিক করিয়ে নেবে। কথাগুলো ভেবে নিজেই নিজেকে বাহবা দিলো। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রোদ্রের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল।

“হুম বুঝলাম। তবে সবটা শুনে আমার এটাই মনে হচ্ছে যে তুই আসলেই একটা গাধা। নয়ত এমন বোকামী কেউ করে?

” মানে?

“মানে হলো তুই কখনো তোর মনের কথা তাকে বলেছিস?

” নাহ। কীভাবে বলবো ওতো আমাকে সেই নজরে দেখতোই নাহ।

“আরে দেখবে কীভাবে তুই জানালেই নাহ তোকে ভালোবাসার নজরে দেখবে।

” কিন্তু ওতো ভাইয়াকে ভালোবাসে।

“বাসবেই তো এখানে তার কী দোষ। তুই যদি তখনি বিয়েটা করে নিতি তাহলে তো এতো কিছু হতোই নাহ। বিয়েটা করে বিদেশে আসলে এতো সম্যসাই হতো নাহ। আর তুই বলছিস তোর ভাই ওই মেয়েটাকে পছন্দ করতো নাহ। মেয়েটাও তোর ভাইকে পছন্দ করতো নাহ। মেয়েটা কিন্তু আগে তোকে পছন্দ করেছে। তারপর তুই ওদের দুজনকে একা ছেড়ে এখানে চলে আসলি। আরে দুজন কাছাকাছি পাশাপাশি থাকলে তো তাদের মধ্যে কিছু একটা তৈরি হবেই। তবে এটা দেখতে হবে যে সেটা আদেও ভালোবাসা নাকি মোহ।

” কিসব কথা বলছিস তুই আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে নাহ।

“আচ্ছা ঠিক আছে। একবার তুই নিজেই ভাব তুই যদি শশী মানে মেয়েটার কাছে থাকতি এখানে না এসে আর তোর ভাই যদি না থাকতো। মানে তোর ভাই জবে চলে যেতো তাহলে কি তাদের মাঝে কিছু হতো?

জোসেফ এর কথাশুনে রোদ্র এবার ভাবতে শুরু করলো। সত্যিই যদি ভাইয়ার জায়গায় আমি থাকতাম তাহলে শশীর সাথে কী ভাইয়ার সম্পর্ক হতো? নিশ্চয়ই হতো না কারণ ভাইয়া তো ওকে পছন্দই করে নাহ। কিন্তু পরক্ষণেই আবার ভাবলো না না এসব আমি কী ভাবছি এখন তো দুজন দুজনকে ভালোবাসে বিয়েও হয়ে গেছে এখন এসব ভেবে কী লাভ। কথাগুলো ভেবে রোদ্র বলল।

” কিন্তু এখন আর এসব ভেবে কী লাভ যা হবার তাতো হয়েই গেছে। ওদের বিয়ে হয়ে গেছে আর ওরা সুখেও আছে।

“আদেও সুখে আছে তো?

” মানে?

“মানে হলো ক্ষনিকের দেখায় যেটা হয় সেটা ভালোবাসা নয় মোহ,আবেগ।

“তাহলে তুই আমাকে কি করতে বলছিস এখন?

” আমি শুধু এটাই বলতে চাইছি যে তুই তোর মনের কথা ওকে বলে দে।

“পাগল হলেছিস তুই? ওর বিয়ে হয়ে গেছে। আমার ভাই এর সাথে মানে ও এখন সম্পর্কে আমার ভাবি হয়।

“তো? আমিতো আর তোকে বলছি না যে ওকে তুলে নিয়ে আয়। আমি শুধু এটাই বলছি তোর মনের কথা ওকে জানা। ওর ও তো জানার প্রয়োজন কেউ ওকে কতবেশি ভালোবাসে।

“এটা অসম্ভব।

” ভালোবাসায় সবি সম্ভব বন্ধু অসম্ভব বলে কিছুই হয় নাহ। আচ্ছা তাহলে থাক তুই আমি এখন যাই আবার পরে কথা হবে।

কথাগুলো বলে জোসেফ চলে গেলে। তবে যাওয়ার আগে রোদ্রকে ধাঁধার মধ্যে রেখে গেলো। এখন যা করার ওই করবে।
,,,,,,,,,,

“আচ্ছা আমার মধ্যে কি কমতি ছিলো। তুমি আমাকে বিয়ে না করে ভাইয়া কে বিয়ে করলে কেনো?

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-৩৪+৩৫

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩৪
,
যদিও নেশাটা এখন আর আগের মতো নেই তবুও কেমন একটা মাথার মধ্যে ঝিমঝিম করছে। কপাল চেপে ধরে সোফায় বসে আছে রোদ্র। প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। তখনি ভিতর থেকে কেউ একজন এসে রোদ্রের সামনে গ্লাসে কিছু একটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল।

“এটা খেয়ে নাও দেখবে মাথা যন্ত্রণা থেকে অনেকটাই আরাম পাবে।

বিদেশের মাটিতে বাঙালি পেলে মনটা হঠাৎই কেমন ভালো হয়ে যায়। রোদ্র উপরে থাকিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গ্লাসটা নিয়ে খেয়ে নিলো। ফাঁকা গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে কৃতজ্ঞতা সহিত বলল।

” আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য। আজকে আপনি না থাকলে হয়তো এতোক্ষণে হসপিটালের বেডে পড়ে থাকতাম।

রোদ্রের কথাশুনে সামনের যুবকটা কিছুটা হেসে গ্লাসটা পাশে রেখে রোদ্রের মুখোমুখি বসে বলল।

“প্লিজ আমাকে আপনি আঙ্গে করোনা। আমরা তো সেইম বয়সীই হয়ত দুই এক বছরের ছোট বড় হবো।

“আপনি আমার বড় ভাইয়ার বয়সীই হবেন।

” তুমি আবারও আমাকে আপনি বলছো? তখন নাহ তোমাকে বললাম আমরা বন্ধু আর আমার জানামতে বন্ধু কে কেউ আপনি করে বলে নাহ।

ছেলেটার কথাশুনে রোদ্র হেসে ফেলল। সত্যি ছেলেটা একদম অন্য রকম। অজানা অচেনা আমাকে কত সুন্দর আপন ভেবে সাবলীলভাবে কথা বলছে। যেনো আমি তার কত চেনা। কথাগুলো ভেবে রোদ্র বলল।

“আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে তুমি করেই বলবো। খুব বুঝে গেছি তোমার সাথে আমি কথায় পারবো নাহ। ওহ হ্যাঁ তুমি বললে নাতো তুমি এখানে কী জন্য এসেছো।

” আসলে কি বলোত আমি একদম ভবঘুরে যাকে বলে অগোছালো ঠিক তেমন। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। অবশ্য আমার ছোট আরেকটা বোনও আছে। বাবার বিশাল বিজনেস। আমাকে বলে বিজনেস এ মন দিতে কিন্তু আমি ভাই ওসবে নাই। তাই বাবাকে বলে দিয়েছি আমি এখন ওসব সামলাতে পারবো নাহ। তুমিই বলো আমার কি এখন বিজনেস সামলানোর বয়স? আমার তো এখন খোলা আকাশে ডানা মেলে উড়ার বয়স। আমি ভ্রমণ প্রিয় মানুষ। এদেশ থেকে ওদেশ চষে বেড়ানোই আমার কাজ এই জন্যই এখানে আসা। আর তুমি?

“তোমার যেমন ভ্রমণ প্রিয় আমারও তেমন ছবি আঁকা প্রিয়। সেই জন্যই এখানে আসা। আমার পরিবারে মা বড় ভাইয়া, ছোট্ট একটা ভাই আর।

এইটুকু বলে থেমে গেলো রোদ্র। সামনে তাকিয়ে দেখে ছেলেটা প্রশ্নবোধক চাহনিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ্র মুচকি হেসে বলল।

” আর ভাইয়ার জীবন সঙ্গীনি।

মাঝে অনেক কথাবার্তা হলো এক পর্যায়ে ছেলেটা রোদ্রের নাম জিগাস করলে রোদ্র নিজের নাম বলে। পরে রোদ্র যখন ছেলেটাকে তার নাম জিগাস করে তখন ছেলেটা মুচকি হেসে জবাব দেয়।

“জোসেফ মি, একটু থেমে আবার বলে চৌধুরী ।
,,,,,,,,,,,,,,

রাত তখন বেশ গভীর। শহরের সব কোলাহল থেমে গিয়েছে সেই অনেক আগে। রাতজাগা পাখীরাও তাদের নীড়ে ফিরে ঘুমিয়ে গিয়েছে। সমুদ্রের খালি বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে শশী। দুজনের উপর পাতলা চাদর দেওয়া। খানিক পূর্বেই ভালোবাসার উত্তাল সমুদ্রে ডুবে ছিলো দুজনে। রুমের মধ্যে মিটিমিটি আলো জ্বলছে। মাথার নিচে দুহাত দিয়ে কিছু একটা ভাবনায় মগ্ন সমুদ্র। মালবিকার পরের চালটা ঠিক কি হতে পারে এটা নিয়েই চিন্তিত ও। ওনার এতো ক্ষতি হওয়ার পরেও এভাবে চুপ কীভাবে আছে। নাকি চুপ থাকা কোনো বড় ঝড়ের লক্ষন। সমুদ্রের এসব ভাবনার মাঝেই বুঝতে পারলো তার বুকে তরল জাতীয় কিছু একটা ফোঁটা ফোঁটা পরছে। সমুদ্র মাথার নিচে থেকে হাত সরিয়ে দুহাতে শশীর মুখ ধরে উপরে তুলল দেখলো শশী কান্না করছে। সমুদ্র বৃদ্ধা আঙুলের সাহায্যে শশীর চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল।

” কি হয়েছে? কান্না করছো কেনো? পেট বেথ্যা করছে?

সমুদ্রের কথার পিঠে শশী মুখে কিছু বলল নাহ। শুধু মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো তার মোটেও পেট বেথ্যা করছে নাহ। সমুদ্র পুনরায় একি কথা জিগাস করলো তবে এবারেও শশী কোনো জবাব দিলো নাহ। আগের ন্যায় কান্না করতে ব্যাস্ত সে। এবার সমুদ্র রাগী সুরে বেশ গড়া গলায় বলল।

“তাহলে এভাবে কান্না করছো কেনো? আরে তুমি না বললে আমি বুঝবো কীভাবে?

এবার শশীর কান্নার বেগ একটু থামলো। নাক টেনে আবারও সমুদ্রের বুকে মুখ গুঁজে ফিসফিস করে বলল।

” কালকে আপনার না গেলে হয় নাহ? আমি জানি আপনি একবার গেলে আবার আসতে অনেক দেরি হবে। আগের বার তো প্রায় আটমাস পরে এসেছিলেন। এবার না জানি কবে আসবেন। আমি একা কীভাবে থাকবো? আপনাকে ছাড়া একটা দিনও যেখানে কাটানো অসম্ভব সেখানে এতোগুলো দিন থাকতে আমার ভীষণ কষ্ট হবে সমুদ্র। আমার কেনো জানি অনেক ভয় করছে মনে হচ্ছে আপনাকে আমি হারিয়ে ফেলবো। প্লিজ আপনি যাবেন নাহ।

কথাগুলো বলে খুব শক্ত করে সমুদ্র কে আঁকড়ে ধরল শশী। এতোক্ষণে শশীর কান্নার কারণ বুঝতে পারলো সমুদ্র । শশীর এমন কথাশুনে হালকা হেসে দুহাতে আরো শক্ত করে নিজের বক্ষমাঝে শশীকে মিশিয়ে নিলো। শশীর মাথায় নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে শশীর মতোই ফিসফিস করে বলল।

“পাগলী এর জন্য কেউ এভাবে কান্না করে নাকি। তুমি বেশি ভাবছো এই জন্য তোমার এমন মনে হচ্ছে । আর আমিতো এসেছি অনেকদিন হলো এবার তো আমাকে ফিরে যেতেই হবে সোনা। তবে কথা দিচ্ছি খুব শীঘ্রই আবার তোমার কাছে ফিরে আসবো। আর একটা কথা। শোনো এভাবে আর কখনো কাঁদবে নাহ। একটা কথা মনে রাখবা তুমি একজন সৈনিক এর স্ত্রী। তোমার স্বামী দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য লড়ে। তার অর্ধাঙ্গীনি হয়ে তোমার কি এতো নরম হলে চলে? আমার অবর্তমানে মা কে জয়কে তো তোমাকেই দেখে রাখতে হবে। শক্ত হাতে সবাইকে সামলাতে হবে। বাইরের খারাপ মানুষের থেকে নিজের প্রিয় জনদের সামলে রাখতে হবে। যেনো কোনো ভাবেই তাদের কু দৃষ্টি তোমার কাছের মানুষের উপর না পড়ে।

সমুদ্রের সব কথা শশী মন দিয়ে শুনে অতঃপর দুষ্টুমী ভরা কন্ঠে সমুদ্রের খালি বুকে নিজের আঙুল দিয়ে আঁকিবুঁকি দাগ কাটতে কাটতে বলল।

” কিন্তু আমিতো ছোটো বলেন। আপনার একমাত্র বাচ্চা বউ তাহলে আমি কীভাবে এতো বড় দায়িত্ব একা সামলাবো।

সমুদ্র শশীর কথাশুনে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো। সমুদ্র নিজেও বুঝতে পেরেছে শশী দুষ্টমী করে কথাটা বলেছে। অতঃপর সমুদ্র ও শশীর কথা বোঝার ভান করে মুখটা যতটা সম্ভব গম্ভীর করে নিজেদের উপরের চাদরটা খানিক সরিয়ে ভিতরে উঁকি দিয়ে অতঃপর শশীর দিকে তাকিয়ে বলল।

“হুম সবি ঠিক আছে। তবে চাদরের নিচের দিকে তাকালে তোমাকে কোনো অংশে বাচ্চা মনে হয় নাহ।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী চোখ বড় বড় করে সমুদ্রের দিকে একবার তাকিয়ে আবার ও ওর বুকে মুখ গুঁজে বলল।

” ছিঃ আপনি কত খারাপ কীসব নির্লজ্জ মার্কা কথা বলেন।

কথাটা বলেই শশী সমুদ্রের বুকে বেশ জোরে সরে একটা কাঁমর বসালো। সমুদ্র তড়িৎ গড়িতে শশীকে পাশে ফেলে ওর উপর নিজের ভর ছেড়ে বাঁ হাতে কাঁমড় দেওয়া জায়গায় ডলতে ডলতে বলল।

“এইটুকুনি শরীলে এতো জোড় কোথা থেকে আসে। একদম দাগ বসায়ে দিয়েছো। তবে কেউ একজন বলেছিলো কেউ কোনোকিছু দিলে তাকে সেটা দ্বিগুন ফেরত দেওয়া উচিত। এখন তুমি যে আমাকে একটা কাঁমড় দিলে আমার ও উচিত তোমাকে এটা দ্বিগুন ফেরত দেওয়া। দেখি চাদরটা সরাও তুমি আমায় ঠিক যেখানে কাঁমড়টা দিয়েছো আমিও ঠিক সেখানে গুনে গুনে তোমায় দুটো কাঁমড় দেবো। তাহলেই না সব শোধবোধ হবে।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩৫
,
সময় নদীর মতনই বহমান। কীভাবে যে পাড় হয়ে যায় বোঝাই যায় নাহ। সমুদ্রের যাওয়ার আজ দশদিন পূর্ণ হলো। এই জন্যই হয়ত লোকে বলে সুখের সময় খুব বেশিদিন স্হায়ী হয় নাহ। সমুদ্রের সাথে কাটানো প্রতিটা ভালোবাসাময় মুহুর্ত এখনো চোখের সামনে ভাসে। মনে হয় এইতো সেদিন ওনার ঘরে গিয়েছিলাম বলে কীভাবে ভয় দেখালো। কথাগুলো মনে হতেই আনমনে হেসে উঠল শশী। কিন্তু সেই হাসিটাও বেশিক্ষণ স্হায়ী হলো নাহ। মুহুর্তেই হাসি মুখে নেমে এলো কালো মেঘের ছায়া। আজ দুদিন সমুদ্রের সাথে কথা হয় নাহ। দুদিন আগে একটু কথা বলার পর সেই যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলো এরপর আর কথা হয়নি। বিছানার এক কোনায় বসে খোলা জানালার দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে। বাইরে টা কেমন মেঘলা মেঘলা রোদটাও কেমন মরা মরা কোনো তেজ নেই। শীতের মৌসুম পড়ে গেছে এই জন্যই হয়ত এমন অবস্থা। লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে পাশে পড়ে থাকা ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে সেদিক পানে চেয়ে বলল।

“এই বিচ্ছেদ বড়ই যন্ত্রণা দায়ক। কবে আপনার ব্যাস্ততা শেষ হবে সমুদ্র। আপনি বিহীন ভীষণ একা লাগে মনে হয় খুব প্রিয় কিছু হারিয়ে ফেলছি। আপনি নিষ্ঠুর মনের মানুষ আমার কষ্টতেই আপনার সুখ।

শশীর ভাবনার মাঝেই বাইরে থেকে কথার আওয়াজ আসলো। বাড়িতে এই সময় মা আর জয় ছাড়া তো তেমন কেউ নেই তাহলে এই গলার স্বরটা কার? শাড়ির কুঁচিটা ধরে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো শশী। অতঃপর আঁচল টা টেনে কাঁধ, পিঠসহ মাথাটা ঢেকে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।

” কতদিন পর আমার কাছে আসলে মালা। আমার কথাতো তুমি ভুলেই গিয়েছো। আর ভুলবেই বা না কেনো যার জন্য সম্পর্ক সেই তো আর নেই তাহলে আমার কথা মনে রাখবেই বা কেনো।

কথাটা বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল শাহানারা। মালবিকা একবার পুরো বাড়িতে চোখ বুলিয়ে পুনরায় শাহানারার দিকে তাকিয়ে বলল।

“তেমন কিছু নাহ। আসলে একটু ব্যাস্ত ছিলাম এই জন্য আসা হয়নি। পরশো দেশের বাইরে যাচ্ছি এই জন্য ভাবলাম একবার দেখা করে যায়।

” হ্যাঁ সেটাই তো। তুমি ভাই ব্যাস্ত মানুষ একদিন এখানে তো আরেকদিন ওখানে। সমুদ্রের বিয়েতেও তো আসলে নাহ। তোমাকে এতোবার করে বললাম তবুও আসলে নাহ।

কথাগুলো বলে শাহানারা মালবিকার হাতের উপর হাত রেখে পুনরায় বলল।

“তুমি কি আমার উপর রেগে আছো? তোমার কথা রাখিনি বলে। কিন্তু কি করবো বলো সমুদ্রের জেদ তো তুমি জানোই ও এক কথার মানুষ। শশীকে বিয়ে করার জন্য কেমন তাড়াহুড়ো বাঁধিয়ে দিলো। সেখানে আমি কি করবো বলো। এক ছেলেকে খুশি করতে গিয়ে আমি আরেক ছেলেকে কাঁদিয়ে দিলাম।

মালবিকার এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য হলো শশীর সাথে দেখা করা। কিন্তু এভাবে সরাসরি এসে দেখা করে কথা বললে ব্যাপারটা কেমন দেখায় এই জন্য শাহানারার সাথে কথা বলছিলো। তবে শাহানারার কথায় মালবিকা ভীষণ বিরক্ত। তবে সেটা বাইরে প্রকাশ করছে নাহ। মহিলাটা খুবি বেশি কথা বলে আর একটু বেশিই ইমোশনাল। কিন্তু শাহানারার শেষের কথাটা শুনে মালবিকার হুশ আসলো। শাহানারার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় প্রশ্ন করল।

” মানে? তোমার কথাটা ঠিক বুঝলাম নাহ। এক ছেলের খুশির জন্য অন্য ছেলেকে কাঁদিয়েছো এর মানে কি?

“তোমাকে আর কি বলবো। এই একটা কথায় আমার গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে। না পারছি গিলতে না পারছি ফেলতে। কাউকেই কিছু বলতে পারছি নাহ। তুমি কাছের মানুষ তাই তোমাকেই বলছি। তুমিতো সবি জানো। তোমাকে বলেছিলাম হিজলতলী গিয়ে কি হয়েছিলো। রোদ্র শশীকে পছন্দ করতো ছেলেটা বিদেশ যাওয়ার আগে আমার কাছে শশীকে আমানত হিসাবে রেখে গিয়েছিলো। কিন্তু সমুদ্র শশী একে অপরকে ভালোবাসে। সেখানে আমি কী করে রোদ্রের কথা বলি বলো। পরে রোদ্র আসলে ও আমাকে কাউকে কিছু জানাতে নিষেধ করে এমনকি সমুদ্র কেও নাহ। কিন্তু আমিতো জানি আমার ছেলেটা ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখানে শশী আছে বলেই হয়ত এভাবে চলে গেলো।

কথাগুলো বলে শাহানারা কান্নায় ভেঙে পড়লেন। সবটা শুনে মালবিকার ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি। যেনো না চাইতেই অনেক বড় কিছু পেয়ে গেছে। ডান হাতে নিজের সিল্কি চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে কিছু একটা ভাবলো। অতঃপর নিজেকে সামলে শাহানারার হাতের উপর হাত রেখে ওনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল।

” চিন্তা করো নাহ যেটা হয় ভালোর জন্যই হয়। আর যেটা সামনে হবে সেটা মোটেও ভালো হবে নাহ।

শেষের কথাটা আস্তে আস্তে বলল। শাহানারা মাথা উঠিয়ে মালবিকার দিকে তাকিয়ে বলল।

“হ্যাঁ কিছু বললে?

” বলছি যে সমুদ্রের বউ কোথায়? ওকে তো দেখা হয়নি আর কিছু দেওয়াও হয়নি। আমার হাতে সময় কম আমি ওর সাথে দেখা করে আসি?

শাহানারা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতেই মালবিকা উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। অতঃপর সিঁড়ি বেঁয়ে উপরের দিকে চলে গেলো।
,,,,,,,,,,,,

মালবিকাকে দেখেই শশী নিজের রুমে ফিরে এসেছিলো।

“কেনো জানি ওই মহিলাটাকে ভীষণ ভয় হয়। ওনার তাকানো কথা বলার ধরন দেখলেই বুকের মধ্যে কেমন করে। যেনো মনে হয় কিছু একটা ছিনিয়ে নিতে এসেছ। কোনো একটা অজানা কারণে সমুদ্র ও ওনার থেকে দূরে থাকতে বলেছে কিন্তু কেনো?

শশীর ভাবনার মাঝেই দরজায় দাঁড়িয়ে কেউ একজন বলল।

“ভিতরে আসতে পারি?

কারো গলার স্বর শুনে শশী পিছনে ফিরে দেখে মালবিকা দাঁড়িয়ে আছে। পরনে পাতলা সিল্ক শাড়ি। সোনালী রঙের চুলগুলো ঘাড়ের পাশে পড়ে আছে। দুহাতে মোটা সর্ণের বালা। গলায় সোনার চেইন। কেউ ওনাকে দেখলে বলবেই নাহ ওনার বয়স ত্রিশ পার হয়ে গেছে। প্রথম দেখায় যেকেউ ভাববে ওনি ছাব্বিশ বছরের যুবতী। শশী মাথা নাড়িয়ে মালবিকা কে ভিতরে আসতে বলল। বাঁকা হেসে মালবিকা ভিতরে এসে পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে বিছানায় গিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে শশীকে বলল।

” তাহলে শেষ অবধি সমুদ্র কে নিজের জ্বালে ফাঁসিয়ে বিয়েটা করেই নিলে।

“জ্বি আমি আপনার কথা কিছু বুঝতে পারলাম নাহ।

শশীর চিকন গলায় কথাটা শুনেই বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো মালবিকা। শশীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজের হাত থেকে বালা দুটো খুলে খুবি শক্ত ভাবে শশীর নরম হাতে পড়াতে পড়াতে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

” বিয়েতে তো আসতে পারিনি তাই এটা মুখ দেখে দিলাম। জীবনে তো এতো দামী গহনা চোখে দেখোনি। সাবধানে রেখে গোপনে আবার বাবার বাড়িতে পাঁচার করে দিও নাহ।

বালাটা পড়ানো শেষ করে মালবিকা ব্যালকনির দরজা খুলে ব্যালকনিতে গেলো। শশী নিজের হাত ডলতে ডলতে হাতের দিকে তাকালো। হাত দুটো লাল হয়ে গেছে। ফর্সা হাতে আরো বেশি বোঝা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে টোকা দিলে এখনি রক্ত বেরিয়ে আসবে। প্রচন্ড জ্বালা করছে হাতে। টলমল চোখে শশী মালবিকার দিকে তাকালো। নিজের জায়গা থেকে এক চুলও নড়েনি। কিছুক্ষণ পর মালবিকা ব্যালকনি থেকে বেরিয়ে এসে শশীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল।

“তুমি কত বোকা মেয়ে। কাউকে না জেনে তার সম্পর্কে কোনো খোঁজ খবর না নিয়েই তাকে ভালোবেসে ফেললে। আবার বিয়েও করে নিলে। কতটুকু জানো তুমি সমুদ্র সম্পর্কে। ওকে তুমি এখনো চিনে উঠতে পারোনি মেয়ে। তবে খুব শীঘ্রই ওকে চিনে যাবে আর পরে আফসোস করে কুল পাবে নাহ। তোমার অবস্থা ও আর সব মেয়েদের মতো হবে যাদের সমুদ্র ছেড়ে দিয়েছে। আচ্ছা আমায় একটা কথা বলো। সমুদ্র কি কখনো তোমায় বলেছে যে ও তোমায় ভালোবাসে?

মালবিকার এতোক্ষণে বলা কথা চুপচাপ শুনলেও এবার শশী মাথা উঁচু করে তাকালো। সত্যি তো সমুদ্র কখনো তো ওকে বলেনি যে সমুদ্র ওকে ভালোবাসে। তাহলে কী এই মহিলার বলা কথাগুলো সব সত্যি? শশীর এমন চুপ থাকা দেখে মালবিকা মনে মনে হাসলো। তার অন্ধকারে ছোঁড়া তীরটা একদম ঠিক জায়গাতেই লেগেছে। শশীকে আরো ঘাবড়ে দিতে মালবিকা আবার বলা শুরু করলো।

” আচ্ছা তোমার মাথায় এটা কখনো আসেনি গ্রামে সুযোগ থাকা সত্বেও সমুদ্র তোমাকে বিয়ে করলো নাহ কেনো? তোমাদের এতো অপমানের পরেও ও বিয়ে করলো নাহ। বরং বিয়ে না করে তোমার বাবাকে আরো অসম্মান করার জন্য উল্টো নিজের বাড়িতে এনে রাখল। তারপর কী এমন হলো যে সমুদ্র হঠাৎ তোমাকে বিয়ে করে নিলো। তুমি খুবি বোকা তাই সমুদ্রের চালটা বোঝোনি। সমুদ্র তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেনি। ওর কোনো একটা উদ্দেশ্য সফল করার জন্যই তোমায় বিয়ে করেছে। তুমি ওর খেলার একটা গুঁটি মাত্র। একটা কথা মনে রেখে সমুদ্র কোনো কারণ ছাড়া কিছু করে নাহ। তেমনি তোমাকে বিয়ে করার পিছনে কোনো কারণ আছে। আর ওর উদ্দেশ্য সফল হয়ে গেলে তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে মিলিয়ে নিও আমার কথা। আচ্ছা থাকো আমার কাজ আছে।

কথাগুলো বলে মালবিকা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে একবার পিছনে ফিরে দেখলো শশীর বিছানায় বসে পড়েছে। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। মালবিকা বাঁকা হেসে বেরিয়ে যেতে যেতে নিজে নিজেই বলল।

“তুমি আমার যতোটা ক্ষতি করেছো সেই প্রতিটা ক্ষতির মূল্য তোমায় সুদসহ চোকাতে হবে সমুদ্র।
,,,,,,,,,,
সময়ের সাথে সাথে রোদ্র জোসেফ এর মাঝেও একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। দুজন দুজনের আরো কাছে চলে এসেছে। আস্তে আস্তে সম্পর্কটা তুমি থেকে তুইতে নেমে এসেছে। তবে রোদ্রের এমন সারাক্ষণ মন মরা থাকাটা জোসেফ এর চোখে ভীষণ ভাবে লেগেছে। কৌতূহল বসত জোসেফ রোদ্রকে জিগাস করেই ফেলল।

“আচ্ছা এই যে আমরা দুজন দুজনের কত ভালো বন্ধু হয়ে গেছি। অন্তত আমি এটা ভাবি যে আমরা বন্ধু। কিন্তু আমার মনে হয় নাহ তুইও এটা মনে করিস।

“এটা কেমন কথা জোসেফ। আমি তোকে এই ধরনের কথা বলতে নিষেধ করেনি?

” ওহ আচ্ছা তাহলে তুই ও আমায় নিজের বন্ধু মনে করিস?

“এখানে না করার কী আছে।

” না যদি আমায় বন্ধুই ভাবতি তাহলে অবশ্যই তোর এই হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা কষ্টের কারণ টা আমার সাথে শেয়ার করতি। বল না তোর কিসের এতো কষ্ট? কেনো সব সময় এভাবে মনমরা হয়ে থাকিস। বন্ধু হিসেবে কি এটা জানার অধিকার আমার নেই?

জোসেফ এর কথা শুনতেই রোদ্রের মুখের হাসিটা মুছে গেলো। জোসেফ এর থেকে সরে গিয়ে রাস্তার পাশে বসার জায়গাটায় গিয়ে বসে পড়ল। জোসেফ ও রোদ্রের পাশে গিয়ে বসল। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পরেও যখন রোদ্র কিছু বলল নাহ। তখন জোসেফ নিজে থেকেই বলা শুরু করল।

“আচ্ছা ঠিক আছে তোকে বলতে হবে নাহ। হয়ত আমিই এখনো তোর বিশ্বাস যোগ্য হয়ে উঠতে পারিনি তাই।

জোসেফ এর কথা শেষ হওয়ার আগেই রোদ্র বলা শুরু করল। একট ঝড়। প্রবল আকারে আসলো অতঃপর ভালোবাসা নামক যন্ত্রণার মধ্যে আমাকে ভাসিয়ে দিয়ে আবার নিঃশব্দে চলে গেলো। সেতো চলে গেলো কিন্তু ওই যে আমাকে যন্ত্রণার সাগরে রেখে গেলো। ওটাই আমার সবথেকে বড় কাল হয়ে দাঁড়ালো ।

” এরমানে কি রোদ্র কাউকে ভালোবাসতো? কিন্তু কাকে? ফুপিতো আমাকে এসব বলেনি। হুমম আরো জানতে হবে। সেই মেয়েটা কে আর কীভাবে রোদ্রের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলো সবটা জানতে হবে।

কথাগুলো ভেবে জোসেফ রোদ্রের দিকে তাকালো। রোদ্র চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। জোসেফ ও আর বেশি ঘাটালো নাহ ওকে। কেননা পুরো কাহিনী না জেনো কিছু বলা যাবে নাহ। কেননা ওর একটা ভুল পদক্ষেপে পুরো খেলাটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-৩৩

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩৩
,
পেরিয়ে গেছে আরো এক সপ্তাহ। রোদ্র নিজের শেষ শার্টটা ব্যাগে রেখে পাশে তাকালো। সেখানে শাহানারা বসে কান্না করছে। রোদ্র মুচকি হেসে মায়ের পাশে বসে কাঁধে মাথা রেখে বলল। আর কত কাঁদবে আবার আসবো তো আমি। এমন ভাবে কান্না করছো যেনো আমি সারাজীবন এর জন্য চলে যাচ্ছি।

তুই তো এভাবেই বলিস আগে বাবা হ তারপর বুঝবি সন্তান কাছে নাহ থাকলে কেমন লাগে।

সেটা কি আর কখনো সম্ভব মা?

এটা কী ধরনের কথা রোদ্র আর কখনো এমন কথা বলবি নাহ। এই বার যা তবে খুব শীঘ্রই ফিরে আসবি আমি সুন্দর একটা মেয়ে দেখে তোর বউ করে আনবো।

মায়ের কথায় বেশ শব্দ করে হাসলো রোদ্র। তুমি যে কি বলো না মা। তোমার কী সত্যিই মনে হয় আমি আবার নতুন করে কোনো সম্পর্কে জড়াতে পারবো। ভালো তো একজন কেই বাসা যায়। এক মনে আর কয়জন কে জায়গা দিতে বলো তুমি মা। আর তাছাড়া যাকে ভালোই বাসি না তাকে বিয়ে কেনো করবো। মনে একজন কে রেখে আরেকজন এর সাথে কি আদেও সংসার করা যায়? এতে তো তাকে ঠকানো হবে।

তাহলে কি তুই সারা জীবন এভাবেই একা পাড় করে দেওয়ার চিন্তা করছিস?

এখন তো আপাতত এটাই ঠিক করেছি। তবে সামনে কি হবে সেটা বলতে পারছি নাহ।
,,,,,,,,,,,,,,
আচ্ছা আমায় একটা কথা বলুন তো হঠাৎ করে রোদ্র ভাইয়ার কি হলো?

বিছানায় বসে কথাটা বলল শশী। সমুদ্র আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্ট পড়তে পড়তে শশীর কথা শুনে বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল। হঠাৎ এমন মনে হওয়ার কারণ?

না এমনিতেই। প্রথম যেদিন ওনার সাথে আমার পরিচয় হলো সেদিন থেকে আজ পযন্ত ওনার সাথে কোনো মিল পাচ্ছি নাহ। কেমন যেনো আমাকে এড়িয়ে চলে আগের মতো হাসায় নাহ। কথা কম বলে। আবার আজকে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই চলে যাচ্ছে। আচ্ছা ওনার কী হয়েছে আপনি কি কিছু জানেন?

চুলটা আঁচড়িয়ে নিজেকে আবার দেখে নিয়ে শশীর দিকে এগিয়ে গিয়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলল। ওর কি হয়েছে সেটা ওই জানে। আর তোমাকে এতো ভাবতে হবে নাহ এসব নিয়ে। এই কদিন এ একদম কলেজে যাওনি। পড়াশোনা নিয়ে ফাঁকি আমি একদম পছন্দ করি নাহ।

কথাটা বলেই সমুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে যাবে তখনি শশী বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের পিছে পিছে হাঁটতে হাঁটতে বলল। কোথায় যাচ্ছেন? আর কখন আসবেন?

কথাগুলো বলছিলো আর সমুদ্রের পিছনে হাঁটছিলো। সমুদ্র দরজার সামনে গিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়তেই শশী ওর পিঠের সাথে ধাক্কা খেলো। সমুদ্র পিছনে তাকিয়ে দেখে শশী নিজের নাকে হাত দিয়ে ডলতেছে। এমন অবস্থায় সমুদ্রের কাছে শশীকে বেশ লাগছে। ছোট খাটো গড়নের চিকন শরীলে শাড়ি পেঁচানো। লম্বা চুলগুলো খোঁপায় মুড়িয়ে রাখা। ছোটো ছোটো কিছু চুল আবার কপাল ছেঁয়ে গাল বেয়ে নেমে গেছে। শশী নাক ডলতে ডলতে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে খানিক রাগী সুরে বলল। এভাবে কেউ পিছনে ঘোরে? উফ আমার নাকটা একদম শেষ করে দিছে।

শশীর কথায় সমুদ্র পাত্তা না দিয়ে। এক পা এগিয়ে নিজেদের মাঝে থাকা সামান্য দুরত্ব ঘুচিয়ে বাঁ হাতে শশীর কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে ফিসফিস করে বলল। তাহলে থেকে যাই?

শশী প্রথমে চোখ বড়বড় করে তাকালেও সমুদ্রের কাজে আর কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো। সমুদ্র ডান হাত শশীর থুতনিতে রেখে মাথা উঁচু করে মুখে ফুঁ দিলো। ঠান্ডা বাসাত লাগতেই চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো শশী। চুলগুলোও মুখের থেকে সরে একপাশে পড়ে রইলো। সমুদ্র নিজের মুখটা শশীর মুখের আরো নিকটে নিয়ে গিয়ে কপালে নিজের ঠোঁট জোড়া ছোঁয়ালো। অতঃপর বন্ধ চোখের পাতায়। দুগালে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে লাল হয়ে যাওয়া নাকের মাথার উপরের ঠোঁট ছোঁয়ালো। তারপর আস্তে করে মাথাটা নিচে নামিয়ে শশীর নরম ঠোঁটের মধ্যে নিজের শুষ্ক ঠোঁট জোড়া আস্তে করে চালান করে দিলো। খানিক সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সমুদ্র শশীকে ছেড়ে দিলো। বৃদ্ধা আঙুলে নিজের ঠোঁট জোড়া মুছে শশীর দিকে তাকালো৷ শশী তখনো মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সমুদ্র শশীর থেকে চোখ সরিয়ে হালকা কেশে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল।

রোদ্রকে এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিয়ে একটা কাজে যাবো আসতে রাত হতে পারে। সাবধানে থেকো আর জয়ের কথাশুনে ওর সাথে বাইরে বেরিয়ে যেও না।

কথাগুলো বলে সমুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। সমুদ্র বেরিয়ে যেতেই শশী সেদিকে তাকিয়ে দৌড়ে রুমের ভিতরে চলে গেলো।
,,,,,,,,,,,,
সামনের দিকে তাকিয়ে একমনে গাড়ি চালাচ্ছে সমুদ্র। রোদ্র বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলেনি। বেশ কিছুক্ষণ পর সমুদ্র সামনে তাকিয়েই বলল। কোনোকিছু নিয়ে চিন্তত থাকলে বলতে পারিস। আমি বলবো নাহ তাকে ভুলে যেতে কারণ ভুলে যাওয়া অনেক কঠিন। কিন্তু সেই একটা মানুষের জন্য আর সবাইকে কষ্ট দেওয়া মানায় নাহ। একজন মানুষের জন্য নিজের জীবনকে থামিয়ে রাখা নিতান্তই বোকামো। আশা করছি ওখানে গিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিবি।

সমুদ্রের কথাশুনে রোদ্র পাশে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। অতঃপর আগের ন্যায় বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল। ভালো থাকার জন্যই তো যাচ্ছি ভাইয়া। এখানে থাকলে আমি কখনোই ভালো থাকতে পারবো নাহ। সেই একটা মানুষ আমাকে কখনোই ভালো থাকতে দেবে নাহ। তাই জন্য তার থেকে অনেক অনেক দূরে চলে যাচ্ছি যেনো তাকে ভুলে থাকতে পারি।

রোদ্রর কথা শেষ হতেই আবার নিশ্চুপ হয়ে গেলো। তাত্ক্ষণিক আর কেউ কোনো কথা বলল নাহ। আবার ও নিরবতা ভেঙ্গে সমুদ্র রোদ্রকে প্রশ্ন করলো। সেই একটা মানুষ টা কে সেটা জানতে পারি?

সমুদ্রের প্রশ্নে রোদ্র কোনো কথা বলল নাহ। ঘাড় ফিরিয়ে তাকালোও নাহ নিশ্চুপ রইলো। সমুদ্র ও আর কিছু বলল নাহ। গাড়ি কাঙ্ক্ষিত জায়গায় এসে থামতেই রোদ্র গাড়ি থেকে নামার আগে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল। কিছু কিছু জিনিস না জানায় ভালো ভাইয়া। জানলে কষ্টই পাওয়া যায় শুধু। ভালো থেকো আর মায়ের খেয়াল রেখো। আমি জানি তোমাকে না বললেও এটা তুমি করবে তবুও বলছি তোমার ভালোবাসার ভালোথাকার যত্ন নিও, আসি।

কথাগুলো বলে রোদ্র গাড়ি থেকে নেমে গেলো। সমুদ্র কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
,,,,,,,,,,

অন্ধকার রুমের মধ্যে চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে শাহীন। মাথাটা নিচু হয়ে ঝুলে আছে। তবে গায়ের কোনো জায়গায় কোনো আঘাতের চিন্হ নেই। হাঠাৎ গায়ের মধ্যে ঠান্ডা পানি পড়তেই চমকে উঠলো শাহীন। মাথা উঁচু করে সামনে তাকাতেই দেখলো সমুদ্র ওর সামনের চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। সমুদ্র কে দেখে হাসি দিয়ে বাঙ্গ করে বলে উঠল শাহীন।

কি অফিসার এতোকিছু রেখে হঠাৎ আমার পিছনে পড়লেন কেনো? আপনার সম্যসা তো ম্যাডাম মালবিকার সঙ্গে তাহলে আমাকে ধরলেন কেনো?

সেদিন ইচ্ছে করে আমার কাছে ধরা দিলে কেনো?

আরেহ বাহ আমিতো ভেবেছি নতুন বিয়ে করে আপনার এসব কিছু মনেই নেই। কিন্তু এখন তো দেখছি পুরোই উল্টা আপনার তো দেখছি হেব্বি বুদ্ধি।

বাজে কথা রেখে এটা বলো সেদিন আমার কাছে ধরা দিলে কেনো? আর আমিতো তোমাকে মালবিকার কথা বলেনি তাহলে তুমি কীভাবে জানো এতোকিছু কীভাবে চিনো ওনাকে? কি সম্পর্ক তোমাদের?

সমুদ্রের কথায় শাহীন বেশ মজা পেলো মনে হলো। হাসতে হাসতে মাথা তুলে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল। কী স্যার এতোবড় মানুষের সাথে আমার আর কী সম্পর্ক থাকতে পারে। আমি ভাই গ্রামের পোলা অশিক্ষিত আমার সাথে আর কী সম্পর্ক থাকবে। আপনিও না এতো বড় মানুষ হয়ে কি বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন করেন।

শাহীনের কথাশুনে সমুদ্র কিছু বলল নাহ৷ তবে কিছু একটা ভাবতে ব্যাস্ত। শাহীনের কথাশুনে ইমরান পাশ থেকে রেগে বলল। স্যার ওর কথা বিশ্বাস করবেন নাহ। ও মিথ্যা বলছে কয়েক ঘা পড়লে ঠিকি সত্যি কথা বলবে। একবার শুধু অনুমতি দেন ওরে আমি।

ইমরান পুরো কথাটা শেষ করার আগেই সমুদ্র হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিলো। শাহীন তখনো বিশ্রিভাবে হাসছে। সমুদ্র কিছু একটা ভেবে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো ইমরান কে ইশারা করলো শাহীনের হাতের বাঁধন খুলে দেওয়ার।

স্যার এটা আপনি কি বলছেন। ওকে ছাড়বেন নাহ। কয়েক ঘা দিলেই আপনা আপনি মুখ খুলবে।

এতো কথা বাড়িও নাহ ইমরান ওকে ছেড়ে দাও।

সমুদ্রের কথায় ইমরান বাধ্য হয়ে রাগে রাগে শাহীনের হাতের বাঁধন খুলে দিলো। খোলা পেতেই শাহীন হাত ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। হাত ডলতে ডলতে সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে হাসি দিয়ে বলল। আগেই বলেছিলাম আমাকে ধরে কোনো লাভ নাই। আপনিও না স্যার এতোবড় অফিসার হয়ে কেমন মূর্খের মতো কাজ করেন।

কথাটা বলে শাহীন সমুদ্র কে সালাম দিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে বেরিয়ে গেলো৷ তবে যাওয়ার আগে ইমরান এর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে চোখ মেরে গেলো। ইমরান রাগে হাত মুট করে আছে। শুধুমাত্র সমুদ্রের জন্য কিছু বলতে পারলো নাহ।

ওর উপর নজর রাখো ইমরান। ও কি করছে কোথায় যাচ্ছে কার সাথে কথা বলছে সব কিছুর ইনফরমেশন আমার চাই।

ওকে স্যার।

শাহীন বাইরে এসে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার ও পিছনের দিকে তাকালো অতঃপর বাঁকা হেসে নিজে নিজেই বলল। আমি জানি অফিসার তুমি আমাকে কেনো ছেড়ে দিলে। আমিও চাই তুমি আমার উপর নজর রাখো। কথাটা বলে ফোন বের করে মালবিকা কে কল দিলো। ফোনটা রিসিভ করতেই বলল।

আম্মা কাজ শেষ সবকিছু আমাদের প্লান মতোই হচ্ছে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।
,,,,,,,,,,,,,

আধুনিক শহরের পরিষ্কার রাস্তা দিয়ে হেলেদুলে হেঁটে যাচ্ছে রোদ্র। রাস্তায় থাকা ল্যাম্পপোস্টের আলোর সবকিছুই দিনের মতো পরিষ্কার। রাত ঠিক আনুমানিক কয়টা বাজে সেটাও খেয়াল নেই। প্রথম বার ড্রিংক করায় নিজেকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। চোখ খোলা রাখায় দায়। তবুও অনেক কষ্টে হেঁটে সামনের দিকে যাচ্ছে। আর কিছুটা গেলেই ওর থাকার ঘর। রাস্তায় মানুষ খুবি কম খানিকক্ষণ পরপর এক দুইটা গাড়ি সাঁই সাঁই করে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। রোদ্রের মনে হলো ওর পিছনে আরো কয়েক জোড়া পা হেঁটে আসছে। তবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে নাহ। বেশ কিছুক্ষণ পর কয়েকটা ছেলে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। হাতে একটা চা*কু। চিকন গড়নের ছেলেগুলো গায়ের রঙ বেশ ফর্সা এক কথায় সাদা বলা যেতে পারে। রোদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে চা*কুটা গলার সামনে ধরে ইংরেজি ভাষায় কিছু একটা বলল। তবে রোদ্র নেশা করায় ওর কাছে সেটা অস্পষ্ট। শুধু একটা কথা কানে এলো ওখানে থাকা কেউ একজন ইংরেজি তে বলল। তোমার কাছে যা আছে সবকিছু আমাদের দিয়ে দাও। এটা শুনতেই রোদ্র হাসতে হাসতে মাতাল সুরে বলল।

এই যে দেখছো আমার শরীর এটার মধ্যে কিছুই নাই। আমার সবকিছু বাংলাদেশে রেখে এসেছি। তোমাদের আর কি দেবো আমি নিজেই আমার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা অন্যজনকে দিয়ে এসেছি। এখন তোমাদের কে দেওয়ার মতো আমার কাছে কিছুই নেই। আমি শূন্য।

রোদ্রের কথা ওখানে থাকা কেউই বুঝতে পারলো নাহ৷ ওরা পুনরায় একি কথা বলতে লাগলো। তবে রোদ্র মাতাল সুরে আবুল তাবুল কথা বলছে। ওদের মধ্যে একজন চা*কু দিয়ে রোদ্রকে আঘাত করতে নিলেই হঠাৎই ওদের দুজনের মাঝে বাইক নিয়ে কেউ একজন এসে দাঁড়ালো। মাথায় হেলমেট থাকায় কেউই ওই ব্যাক্তির মুখ দেখতে পারলো নাহ।

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-৩১+৩২

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩১
,
ঘড়ির কাঁটা তখন একটার ঘর পেরিয়ে দুটোর ঘর ছুঁবো ছুঁবো ফাঁকা রাস্তা পেয়ে বেশ ভালো গতিতেই চার চাকার গাড়িটা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইমরান গাড়ি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে মাথা বাঁকিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকাচ্ছে। সমুদ্র সিটে হেলান দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর সমুদ্র সেদিকে তাকিয়েই গম্ভীর স্বরে বলল। কিছু বলার থাকলে বলে ফেলো ইমরান। তবুও বার বার আমার দিকে এভাবে তাকিও নাহ। এক্সিডেন্ট হতে পারে ভুলে যেও নাহ সকালে আমার বিয়ে।

সমুদ্রের কথাশুনে ইমরান থতমত খেয়ে গেলো মাথা ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে শক্ত হাতে স্টিয়ারিং ধরল। স্যার অনুমতি দিলে একটা কথা বলি? আসলে কথাটা বেশ কিছুক্ষণ ধরেই পেটের মধ্যে গুড়গুড় করছে না বললে পেট খারাপ করবে।

আমি বলতে নিষেধ করলেও তুমি বলবে তাই বেশি কথা না বারিয়ে কি বলবে বলে ফেলো।

বলছি যে স্যার আমরা তো এখানে আসছিলাম মালবিকা মির্জার সাথে এই গ্রামের চেয়ারম্যান এর কি সম্পর্ক সেটার খোঁজ নিতে। কিন্তু সেটার তো কিছুই হলো নাহ উল্টো ভাবির সাথে আপনার দেখা হয়ে গেলো। সাথে জামাই আদরও পেয়ে গেলেন।

যেটা জানার সেটা বলো ইমরান এতো বেশি কথা বলো কেনো।

ইয়ে মানে বলছি যে স্যার আপনি কি কিছু জানতে পেরেছেন? মানে ওই মালবিকা মির্জার সাথে চেয়ারম্যান এর সম্পর্ক টা কী।

ইমরান এর কথাশুনে সমুদ্র একটা শ্বাস ফেলে বৃদ্ধ আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িয়ে পূর্ণ থুতনিতে ঘষে বলল, ওই মহিলাটা ভীষণ চালাক ইমরান। আমারই আগে থেকে আরো বেশি সজাগ হওয়া উচিত ছিলো৷ ওনি কোনো ভাবে আমার গতিবিধির উপর নজর রাখছে। এই যে আমি এখানে এসেছি ওনি সেটা আগে থেকেই জানে এই জন্যই সবকিছু আড়াল করে নিয়েছে। শাহীন কেও সরিয়ে ফেলেছে কিন্তু অপরাধী নিজেও জানে নাহ যে সে যখন অপরাধ করে তখন নিজের অজান্তেই কোনো না কোনো ক্লু সে রেখে যায়।

তারমানে স্যার আপনি কিছু পেয়েছেন কিন্তু সেটা কি?

সময় হলেই জানতে পারবে এখন আর বেশি কথা না বলে মন দিয়ে গাড়ি চালাও। সকালের আগে বসায় পৌঁছাতে হবে মাথাটা ভীষণ ধরেছে।
,,,,,,,,,,,,,,
সমুদ্র নিজেকে ভীষণ চালাক ভাবো তুমি কিন্তু আমার কাছে তুমি নিতান্তই বাচ্চা। তোমার কতবড় সাহস তুমি আমার সম্পর্কে জানতে পুরানো কাসন্দি ঘাটতে গিছিলে। কিন্তু লাভ হলো কি কিছুই নাহ। এভাবেই তুমি প্রতিটা পদে পদে আমার কাছে হেরে যাবে।

কথাগুলো বলে মালবিকা বাঁকা হেসে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো অতঃপর ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে কল দিলো৷ প্রথমবার কেউ না ধরলেও পরেরবার রিং বাজতেই ওপাশ থেকে কেউ রিসিভ করলো।

হ্যাঁ শাহীন ফোনটা রেখে কোথায় থাকো তুমি রিসিভ করতে এতো সময় লাগে কেনো? আচ্ছা শোনো তোমাকে যা বলেছি করেছো তো? আগামী একমাস সমুদ্রের সামনে পড়বে নাহ। কিছুই করবে নাহ আপাতত ওকে ওর বিয়েটা এনজয় করতে দাও কারণ সুখের পরেই তো দুঃখ আসবে। আচ্ছা আমি রাখছি আর তোমার ফোন সুইচ অফ করে রাখো।

ফোনটা কেটে দিয়ে সামনের দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে মালবিকা বলে উঠল। আনন্দ করে নাও সমুদ্র যতটা পারো পরিবার কে সময় দাও৷ বলা তো যায় না কখন আবার কী হয়ে যায় কারণ নিঃশ্বাস এর তো আবার বিশ্বাস নাই।

কথাটা বলেই জোরে জোরে হাসতে লাগল। হাসির আওয়াজ বন্ধ রুমের দেওয়ালে দেওয়ালে লেগে বিকট শব্দে প্রতিধ্বনি হচ্ছে।
,,,,,,,,,,
শশীকে বিছানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। দেখতে একদম পুতুলের মতো লাগছে৷ এই সাজ সজ্জা সবি সমুদ্রের জন্য। শশী লজ্জায় মাথা নুইয়ে রেখেছে পাশে ওর সব বোনরা বসে ওকে আরো বেশি লজ্জায় ফেলছে। সমুদ্ররা চলে এসেছে হয়ত একটু পরেই বিয়েটাও পরানো হয়ে যাবে। ওনাকে পাঞ্জাবি তে ঠিক কেমন লাগছে হয়ত অনেক বেশিই সুন্দর লাগছে। এইসব কল্পনা করছিলো শশী। অতি আবেগে ওর এক বোনকে জিগাসা করেছিলো সমুদ্র কে কেমন দেখতে লাগছে। ব্যাস সেই থেকে সবগুলো মিলে শশীকে লজ্জা দিয়ে যাচ্ছে। আর শশীর মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে সেই যে মাথা নিচু করেছে আর উঠানোর নামগন্ধ নেই। যেনো আজকে পণ করেছে ঘাড় বেঁকিয়ে গেলেও ও মাথা তুলে তাকাবে নাহ। দূরে দরজায় দাঁড়িয়ে শশীর লজ্জা মাথা মুখের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে রোদ্র। এখানে আসার পর থেকে শশীকে একটা নজর দেখার জন্য মনটা ছটফট করছিলো। তাই জন্যই তো এসেই এখানে চলে এসেছে জানি এটা ঠিক নয়। সম্পর্কে শশী বড় ভাইয়ের বউ তবুও মন মানে নাহ৷ এই জন্য দূর থেকে দাঁড়িয়ে ওকে দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।

শশী, তুমি চাঁদ! রাতের আকাশে তোমার আধিপত্য।পুরো পৃথিবীর তুমি সবখানেই আছো শুধু আমার ভাগ্যেই নেই।

শশীর দিকে তাকিয়ে বিরবির করে কথাটা বলল রোদ্র। চোখে পানি টলমল করছে কিন্তু এক ফোঁটা পানিও গাল বেঁয়ে গড়িয়ে পরেনি। রোদ্রের ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে পিছন থেকে কেউ ওর কাঁধে হাত রাখল। রোদ্র চমকে কোনো রকমে নিজেকে ঠিক করে হাসি হাসি মুখে পিছন ফিরলো।

এই যে বেয়াই সাহেব এমন ভাবে দরজায় দাড়িয়ে আছেন যেনো আমাদের ভিতরে যেতেই দিবেন নাহ। বলি একটু পরতো ওকে নিয়েই যাবেন তখন নাহয় মন ভরে দেখিয়েন এখন আমাদের যেতে দেন।

সত্যই যদি কাউকে ওর কাছে না যেতে দেওয়ার আমার ক্ষমতা থাকতো। সবার থেকে ওকে আড়াল করার ক্ষমতা আমার থাকতো। যদি বুকের মধ্যে সত্যি কাউকে আটকে রাখা যেতো তাহলে ওকে আমার বুকের মধ্যে রেখে দিতাম। কেউ দেখতে পেতো নাহ কেউ আমার কাছ থেকে ওকে নিয়ে যেতো নাহ৷ শুধু মাঝে মাঝে ওকে একটু খানি বের করে কপালে ভালোবাসা দিয়ে আবার বুকের মধ্যে রেখে দিতাম।

আরে কোথায় হারিয়ে গেলেন।

রোদ্রের ভাবনার মাঝেই শশীর মামাতো বোনের কথাটা শুনে রোদ্র হালকা হেসে দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো। তারপর ওরা সবাই ভিতরে চলে গেলে রোদ্র আবার একবার শশীর দিকে তাকালো। কত খুশী আর তৃপ্ত দেখাচ্ছে শশীকে আর দেখাবেই না কেনো নিজের কাছের মানুষ ভালোবাসার মানুষ কে সারাজীবন এর জন্য পেতে যাচ্ছে খুশি তো দেখাবেই। কেনো জানি হঠাৎ করে রোদ্রর খুবি বেশি সার্থপর হতে মন চাইছে। শশীকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যেতে মন চাইছে। যেখানে কোনো চেনা মানুষ থাকবে নাহ। কেউ ওকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবে নাহ৷ আচ্ছা এমন কোনো জায়গা কি সত্যিই এই পৃথিবীতে আছে? রোদ্রের এমন ভাবনায় রোদ্র নিজেই হাসলো কি সব ভাবছে সে। বাঁ হাতে চোখের পানিটা মুছে নিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।
,,,,,,,,,,,,,,
চেনা সেই ঘরটায় বধু বেশে লম্বা একটা ঘোমটা টেনে বসে আছে শশী৷ বসে আছে বললে ভুল হবে। দুই পা ভেঙ্গে একটুও না নড়ে থাকা কে বলে বসে থাকা তবে শশী আপাতত সেটা করছে না। গায়ের ব্লাউজ টা খুব বেশিই টাইট হয়েছে এই জন্য কাঁধের কাছটাই বেশ বেথ্যা লাগছে। ভারি কাজ করা শাড়িটা পিঠে কমরে বেশ বিঁধছে। সব মিলিয়ে ভিতর থেকে কেমন দম বন্ধ লাগছে এই জন্য বসে থাকা দায়। সমুদ্র এখনো রুমে আসেনি কখন আসবে সেটাও শশীর অজানা বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আর সয্য হলো নাহ শশীর। মাথার উড়নাটা খুলে পাশে রাখলো। হাত পিছনে মুড়িয়ে ব্লাউজ এর ফিতা আর হুকটা খুলে দিতেই পিঠ আলগা হয়ে গেলো। এবার বেশ আরাম লাগছে শশীর লম্বা একটা শ্বাস নিলো। এতোক্ষণ যেনো দমবন্ধ লাগছিলো। তবে ওনি আসার আগেই আবার হুকটা লাগিয়ে ফেলতে হবে নয়ত ওনার সামনে আবার লজ্জায় পড়তে হবে।
,,,,,,,,,
সমুদ্র হাত টা পেতে দিতেই ইমরান হা করে সমুদ্রের হাতে চাবিটা দিয়ে দিলো। সমুদ্র হাত মুঠো করে ইমরান এর থুতনিতে নিজের আঙুল রেখে চাপ দিয়ে ওর মুখ বন্ধ করতে করতে বলল। মুখটা বন্ধ রাখো ইমরান নয়ত বিয়ে বাড়ির সব মশা মাছি তোমার মুখের মধ্যে যাবে।

কথাটা বলে সমুদ্র চাবিটা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রুমে ঢুকতে যাবে তখনি পিছন থেকে ইমরান ডেকে উঠল।

স্যার শেষ বারের মতো আরো একটা প্রশ্ন করি?

কি ইমরান তুমি আমাকে বাসর করতে দেবে নাহ? আচ্ছা যাও সারাদিনে অসংখ্য প্রশ্ন করেছো আর একটা না হয় করো। তবে যা করার যলদি করো রাত শেষের পথে তোমার ম্যাডাম রেগে যাবে।

বলছি যে স্যার কালকে আমি গায়ে হলুদের পর থেকে সারাক্ষণ আপনার সাথেই ছিলাম। এক সাথে দুজনে হিজলতলী গেলাম। আবার ফিরেও আসলাম তাহলে আপনি শাহীনকে ধরলেন কখন?

ইমরান এর কথাশুনে সমুদ্র বাঁকা হেসে এগিয়ে এসে ইমরান এর কাঁধে হাত রেখে বলল। রাতে ঘুমানোর আগে বিছানায় শুয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকো উত্তর পেয়ে যাবে।

কথাটা বলে সমুদ্র চলে গেলো। ইমরান এখনো হা করে ওখানে দাঁড়িয়ে থেকেই মাথা চুলকে নিজে নিজেই বলল। ওইটুকু সময়ের মধ্যে স্যার শশী ম্যাডামের সাথে দেখা করলো কখন আর শাহীনকেই বা ধরলো কখন। কিছুই তো মাথায় ঢুকছে নাহ।
,,,,,,,,,,,,,,
তোমার কাজগুলো দেখে মনে হয় না তুমি ছোটো। বরং তুমি অনেক আডভান্স সবাই তোমাকে ছোটো ভাবে।

রুমের লাইট বন্ধ হালকা নীল আলো রুমে জ্বলছে৷ সাথে ব্যালকনি দিয়ে আসা বাইরের অল্প আলোতে রুমের পরিবেশ টা বেশ রোমাঞ্চকর হয়ে উঠেছে। শশী অনেক্ক্ষণ বসে থাকায় কমর লেগে গিছিলো এই জন্য উঠে রুমের মধ্যে হাঁটা হাঁটি করছিলো।(লেখিকা-সুমাইয়া সুলতানা সুমী) তখনি বাইরে কারো পায়ের শব্দ শুনে ভাবলো সমুদ্র আসছে এই জন্য তড়িঘড়ি করে ওমনেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্লাউজ এর হুক লাগাচ্ছিলো। তখনি সমুদ্র রুমে এসে দরজা বন্ধ করে শশীর খোলা পিঠের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল।

মানে?

মানে এই যে আমি যেনো এসেই শুরু করতে পারি এই জন্য সবকিছ খুলে রাখছো।

কথাটা বলতে বলতে সমুদ্র পকেট থেকে ফোন আর চাবিটা পাশের ওয়ারড্রব এর উপর রেখে শশীর দিকে এগিয়ে গেলো। সমুদ্রের কথায় শশী লজ্জা পেয়ে পিছন ঘুরে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে সমুদ্র তড়িৎ গতিতে এসে দুহাতে শশীর কমর জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। আচমকা এমন হওয়াই শশী বড়বড় চোখ করে সমুদ্রের দিকে তাকাতেই সমুদ্র বাঁ হাত শশীর চোখের উপর রেখে চোখ বন্ধ করে দিলো। শশী কাঁপা হাতে সমুদ্রের পিঠের কাছের পাঞ্জাবি মুঠো করে চেপে ধরতেই সমুদ্র যেনো আরো উত্তাল হয়ে উঠল। দু হাতে আরো বেশি শক্ত করে শশীর নরম শরীলটা নিজের সাথে চেপে ধরল। শশীও এক হাতে সমুদ্রের পিঠের কাছের পাঞ্জাবি আর আরেক হাতে ওর চুল মুঠো করে ধরল। সমুদ্র পাগলের মতো শশীর ঠোঁটে চুমু খেয়ে যাচ্ছে যেনো আজকে সে শশীতে মেতে গেছে। খানিকক্ষণ পর শশীর ঠোঁট ছেড়ে দাঁড়াতেই শশী জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল। সমুদ্রও জোরে শ্বাস নিতে নিতে মাতাল চোখে শশীর দিকে তাকালো। শশী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্র এগিয়ে গিয়ে শশীর মুখটা উপরে তুলে ওর কপালে চুমু দিয়ে কোলে তুলে নিলো। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে শশীর নরম শরীলের উপর নিজের শক্ত সামর্থ্য শরীলের সম্পন্ন ভার দিয়ে। শশীর গলায় মুখ ডুবাতেই শশী বেথ্যাতুর শব্দ করে উঠল। সমুদ্র মুখ তুলে শশীর দিকে তাকাতেই দেখলো শশী ঘাড়ে হাত দিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।

এমন ভাবে শব্দ টা করলে যেনো মনে হচ্ছে আমি তোমাকে কত কষ্ট দিয়েই না আদর করছি।

সমুদ্রের এমন লাগাম ছাড়া কথাশুনে শশী লজ্জায় চোখ নামিয়ে ঘাড়ে ডলতে ডলতে বলল। আপনার দাঁড়িতে লাগছে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আমার কাঁধে ফুঁটছে এই জন্যই তো বেথ্যা লাগছে।

এমন আরো অনেক বেথ্যা লাগবে তোমাকে সেটাও সয্য করতে হবে। কারণ বেথ্যার সাথে আমার ভালোবাসাটাও আছে।

কথাটা বলে সমুদ্র আবারও শশীর কাঁধে মুখ ডুবালো। শশীর বেথ্যা লাগলেও তা প্রকাশ করলো নাহ। কারণ ও আজ সমুদ্রের গহীনে ডুবতে চাই। সমুদ্রের বড়বড় ঢেউ এর মুখোমুখি হতে চাই। সমুদ্র পরম আদরে নিজের প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি কে নিজের করে নিচ্ছে। সবটা উজার করে ভালোবাসার চিন্হ এঁকে দিচ্ছে শশীর শরীলের প্রতিটি ভাজে ভাজে।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩২
,
কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে শিউলি ফুল কুঁড়ানো জোনাকির বিছানায় আর পিট ঠেকলো নাহ। বাড়িতে বড় মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙলেও এখানে কাকের কা কা কর্কশ ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো। কালকে শশীর সাথেই এখানে এসেছে ও। ঘুম ভাঙতেই পাশে শাহানারা কে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলো। শাহানারা কে পাড় করে খাট থেকে নেমে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। বাইরে তখন সূর্য উঠেছে সবে মাত্র। বাড়িতে এতোক্ষণে সবাই উঠে পড়লেও এখানে কারো উঠার নামগন্ধ নেই। গুটিগুটি পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। পুরো বাড়িতে কাউকেই দেখতে পেলো নাহ৷ হয়ত এখনো কেউ ঘুম থেকে উঠেনি। চোখ ডলতে ডলতে হেঁটে সামনের দিকে গিয়ে সিঁড়ির সামনে যেতেই দেখলো জয় হাতে কিছু একটা নিয়ে খেতে খেতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে। জোনাকি এক পাশে সরে দাঁড়ালো। জয় তখনো শশীকে দেখেনি। শেষের সিঁড়ি পাড় করে কেবলি উপরে উঠবে তখনি জোনাকি পা দিয়ে জয়কে ল্যাং মারলো। তবে জয় নিজেকে পড়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারলেও হাতের আইসক্রিম এর বাটিটা বাঁচাতে পারলো নাহ। সিঁড়ি বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নিচে গিয়ে ঝনঝন শব্দ করে থেমে গেলো। রেলিং ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উপরে উঠে কমরে হাত দিয়ে রাগী চোখে জোনাকির দিকে তাকিয়ে জয় বলল।

‘তুমি এমন করলে কেনো? আমি যদি এই সিঁড়ি থেকে নিচে পরে ধুপ করে মরে যেতাম তখন কি হতো?

‘কি আবার হতো ভালোই হতো। আর তাছাড়া দিনে দিনে খেয়ে খেয়ে নিজের যে অবস্থা বানিয়েছো কবে দেখা যাবে ফটাস করে ফেঁটে ঠাস করে মরে গিয়েছো।

‘জোনাকির কথায় জয়ের রাগ তড়তড় করে আরো খানিকটা বেড়ে গেলো। কীহ তোমার এতোবড় সাহস তুমি আমাকে মরার কথা বলছো। এখন যদি আমি সত্যি মরে যাই তখন কি হবে বলো?

‘জয়ের রেগে যাওয়া দেখে জোনাকি মোটেও বিচলিত হলো নাহ। উল্টো জয়কে বোঝানোর স্বরে বলল। আরে তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেনো। আমিতো তোমার আরো ভালো করলাম।

‘কাউকে মরার কথা বললে সেখানে ভালো কোথায় থাকে শুনি।

‘আরে তুমি জানো না বুঝি যে কাউকে মরার কথা বললে উল্টো তার আয়ু বেড়ে দ্বিগুন হয়ে যায়। তো তোমাদের বাড়িতে এসে থাকছি। তোমরা এতো আদর যত্ন করছো তাই আমিও ভাবলাম তোমাদের ও কিছু দেওয়া দরকার। এই জন্য তোমার আয়ুটা একটু বাড়িয়ে দিলাম। ধন্যবাদ দিতে হবে নাহ। আমি এমনি সবার উপকার করে বেড়ায়। স্কুলেও কতজনকে এমন উপকার করেছি।

‘কথাটা বলে জোনাকি নিজের ফ্রগটা দুপাশে ধরে দুলাতে দুলাতে চলে গেলো। জয় এখনো সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে। সত্যি কি কাউকে মরার কথা বললে তার আয়ু বেড়ে যায়? কই স্কুলে তো কখনো এটা তাকে শিখাই নাই।
‘,,,,,,,,,,
আপনি দেশ রক্ষক হিসাবে ভালো হলেও বর হিসাবে খুবি খারাপ। প্রথম দিনই ফেল করে গেছেন।

‘সকাল সকাল নিজের নব বধূর থেকে এমন সার্টিফিকেট পেয়ে সমুদ্র অবাক হয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে বলল। কি বলছো তাহলে কী আমি আদর কম করে ফেললাম? আচ্ছা কোনো ব্যাপার না তুমি চাইলে এখন আবার পুরো দমে শুরু করতে পারি।

‘ছিঃ কথার কি ধরন। আমি আপনাকে মোটেও এই বিষয়ে কোনো কথা বলেনি।

‘তাহলে কোন বিষয়ে বলেছো শুনি। কিন্তু তার আগে তুমি আমায় এটা বলো যে তুমি এভাবে কাঁথায় মুখ ঢেকে আমার সাথে কথা বলছো কেনো। বুক থেকে মাথাটা তোলো আমিও একটু দু-চোখ ভরে আমার নব বধূকে দেখি।

‘কথাটা বলে সমুদ্র শশীর মুখ থেকে কাঁথা টান দিতে গেলে শশী আরো নিজেকে কাঁথায় আবৃত করে শাসানোর ভঙ্গিতে বলল। খবরদার কাঁথা টান দিবেন নাহ। আমি এভাবেই কথা বলবো।

‘কিন্তু কেনো?

‘কারণ আমার লজ্জা লাগছে তাই। আর এ ছাড়া-ও আরো একটি কারণ আছে সেটা বলা যাবে নাহ।

‘এবার মনে হচ্ছে তুমি কথাটা ঠিকি বলেছো। স্বামী হিসাবে আমি সত্যই ফেল করে গেলাম। নয়ত এতো কসরত করেও বউয়ের লজ্জা ভাঙতে পারলাম নাহ। তাহলে আর কেমন স্বামী আমি।

‘শশী বুঝলো ও যদি আরো কথা বাড়ায় তাহলে এই ঠোঁটকাটা লোকটা এর থেকেও লজ্জা জনক কথা বলে ওকে আরো বেশি লজ্জায় ফেলবে এই জন্য শশী কথা ঘুরিয়ে বলল। আপনি উঠুন তো আর আমাকে ছারুন আমি ফ্রেশ হবো।

‘বললেই তো হয় গোসল করবা এতো লজ্জা পাওয়ার কী আছে। আচ্ছা ঠিক আছে চলো একসাথে গোসল করি। তখন যদি বউয়ের লজ্জা ভাঙ্গতে পারি।

‘এই না না একদম নাহ।

‘হ্যাঁ হ্যাঁ একদম হ্যাঁ চুপ থাকো।

‘কথাটা বলে সমুদ্র এক লাফে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো। উদম শরীলে টাওজার এর রাবারটা নাভির নিচে নামানো। নিচু হয়ে এক টানে শশীর উপর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে ফেলল। সমুদ্রের এমন কাজে শশী লজ্জা নিবারণ এর জন্য দু হাতে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল। শশীর পরনে তখন সমুদ্রের গায়ের বিয়ের পাঞ্জাবি টা। একদম পা পযন্ত নেমে গেছে। চিকন শরীলে পাঞ্জাবি টা পরিমাণের তুলনায় বেশ ঢোলা হয়েছে। গলার দিকে কাঁধ গলিয়ে অনেকটাই নেমে এসে শশীর ফর্সা কাঁধটা বেরিয়ে আছে। আর ফর্সা কাঁধে রাতে সমুদ্রের দেওয়া ভালোবাসার চিন্হটা লাল হয়ে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সমুদ্র সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে শশীর উপর উবু হলো। হাতের উপর চুমু দিয়ে মুখ থেকে শশীর হাত টা সরিয়ে দিলো। শশী তখনো চোখ বন্ধ করে আছে। সমুদ্র একে একে শশীর বন্ধ চোখের পাতায় কপালে দু গালে থুতনিতে চুমু দিয়ে নাকের ডগায় কুট করে একটা কামড় বসালো। বেথ্যা পেয়ে চোখ খুলে রাগী চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে শশী বলে উঠল।

‘কালকে রাতে এতো কাঁমড়িয়েও সাধ মেটেনি? রাক্ষস কোথাকার।

‘না মেটেনি আমার বউকে আদর করবো দরকার হলে কাঁমড়িয়ে খেয়ে ফেলবো তাতে তোমার কি? এখন বেশি কথা না বলে চলো।

‘কথাটা বলেই শশীকে পাজাকোলা করে কোলে তুলে নিয়ে বাথরুমের দিকে চলল সমুদ্র।
,,,,,,,,,,,,,

‘কি হয়েছে এতো সকালে ফোন করেছো কেনো?

‘এতো কিছু হয়ে গেছে আর তুমি এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছো? আবার আমায় বলছো কেনো ফোন দিয়েছি। তুৃমি জানো সমুদ্র শাহীন কে তুলে নিয়ে গেছে। আমার ছেলেটা আদেও বেঁচে আছে কীনা কে জানে। আর বেঁচে থাকলেও ওই সমুদ্র ওকে কোথায় রেখেছে কী অবস্থায় রেখেছে তাও জানি নাহ। তোমার কথামত সবকিছু করেছি। এখন আমার ছেলেকে বিপদে ফেলে তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছো মালবিকা।

‘সকাল সকাল এমন তাজা খবর শুনার পরেও ওনার মাঝে কোনো হেলেদুল দেখা গেলো নাহ। হাঁটু অবধি উঠে আসা নাইটির লেনটা নিচে নামিয়ে ঠিক করে দিয়ে বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে শান্ত গলায় বলল। এতে এতো উত্তেজিত হওয়ার কি আছে আমি বুঝলাম নাহ।

‘মালবিকার এমন গা ছাড়া কথাশুনে খেপে গেলেন চেয়ারম্যান। রাগে মুখ থেকে প্রায় বেরিয়ে আসা গা*লি টা গিলে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল। তোমার কি মনে হয় এই খবর শোনার পরে আমি বিছানায় শুয়ে আরাম করবো? আরে তুমি বুঝতে পারছো নাহ। আমার ছেলেকে ওই সমুদ্র ধরে নিয়ে গেছে এখন যদি সমুদ্র টর্চার করে আর শাহীন বলে দেয় তোমার আমার মধ্যে কি সম্পর্ক তখন? শোনো মালবিকা একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো ফাঁসলে কিন্তু আমি একা ফাঁসবো না তোমাকে নিয়েই ফাঁসবো। তোমার সব অপরাধের সাক্ষী আমি।

‘চেয়ারম্যান এর কথায় এবার বেশ রেগে গেলো মালবিকা রাগে বাজে একটা গা,লি দিয়ে বলল। এই চেয়ারম্যান ভুলে যাসনা তোকে ওই গ্রামের চেয়ারম্যান কিন্তু আমিই বানিয়েছি। আর চাইলেই তোকে ওই চেয়ার থেকে টেনে ছুঁরে ফেলে দিতে পারি। আর কি বললি তুই শাহীন আমাদের সম্পর্কের কথা সমুদ্র কে বলে দেবে। আচ্ছা দিক ওকে নিষেধ করেছে কে।

‘মানে?

‘আরে বোকা চেয়ারম্যান আমি তোর মতো এতো বোকা নয়।তোর সাহস কি করে হলো আমার সাথে এভাবে কথা বলার। আর রইলো বাকী ওই হাঁটুর বয়সী সমুদ্র আমার কিছুই করতে পারবে নাহ। আর আমি চেয়েছি বলেই ওই সমুদ্র শাহীন কে ধরতে পেরেছে। আর শাহীন ও জানে ওকে ঠিক কি করতে হবে। জাল পেতেছি আমি সমুদ্রের চারপাশে আর অবস্থা বুঝে আস্তে আস্তে জালটা গুটিয়ে নেবো। সমুদ্র ও নিজের অজান্তেই সেই জালে আটকে পরবে।

‘মালবিকার এমন কথা শুনে চেয়ারম্যান ভয় পেয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলল। তুমি আসলে করতে কি চাইছো মালবিকা।

‘সেটা তোর না জানলেও চলবে। এই মালবিকা মির্জা এতোটাও কাঁচা খেলোয়াড় নয় কথাটা মনে রাখিস।

‘আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলবে তুমি? ওই সমুদ্রের সাথে তোমার ঠিক কিসের এতো শত্রুতা। আর ওতো তোমার থেকে অনেক ছোট তাহলে তুমি ওর এতো ক্ষতি কেনো করতে চাও?

‘আমি চাই না তো। আমি তো ওর সাথে আগে শত্রুতা করতে যায়নি। আমিতো চেয়েছিলাম আমাদের মাঝে সুন্দর একটা সম্পর্ক হোক। কিন্তু ও সেটা চাইলো না। বাবা আর কাকার মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ী করে। অনেক ক্ষতি করেছে আমার ও এবার ওর পালা। আর আমি তোমাকে এতো কিছু কেনো বলছি। শোনো চেয়ারম্যান মুখ বন্ধ রাখো যা হচ্ছে হোক বেশি কিছু করতে যেও না তাহলে অকালে প্রাণটা হারাবে।
,,,,,,,,,,,,

খাবার টেবিলে বসে আছে সমুদ্র সহ সবাই। শশী মাথায় লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে সবইকে খাবার পরিবেশন করছে। জয় বেশ বিচক্ষণ চোখে শশীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। এতো লম্বা ঘোমটা দেওয়ার কারণ সে খুঁজে পাচ্ছে নাহ। সমুদ্রের মুখোমুখি বসেছে রোদ্র প্লেটে শুধু ভাত নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে আঙুল দিয়ে নাড়ানাড়ি করছে। শশী পিছন থেকে চামচে করে একটু ডাল প্লেটে দিতেই রোদ্র মাথা উঁচু করে শশীর দিকে তাকালো। রোদ্রের তাকানো দেখে শশী সৌজন্যে মূলক একটা হাসি দিলো। কিন্তু রোদ্র মোটেও সে হাসিতে মোহিত হলো নাহ। সেতো এখন শশীর ঠোঁটের কোনে লাল হয়ে যাওয়া দাগ টার দিকে তাকিয়ে। এই দাগের কারণ তার সামনে বসা সমুদ্র। রোদ্র মাথা ঘুরিয়ে একবার সমুদ্রের দিকে তাকালো যে কিনা এই মুহুর্তে খাবার খেতে ব্যাস্ত। রোদ্রের এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো ঝুড়ি থেকে ফল কাঁটার ছুড়িটা নিয়ে হয় সমুদ্রের বুকে বিঁধিয়ে দিতে নয়ত নিজের বুকে বিঁধিয়ে এই যন্ত্রণার শেষ করে দিতে। কালকে রাতে সমুদ্র শশীকে ছুঁয়েছে ওকে ভালোবেসেছে এটাই সয্য করতে পারছে নাহ রোদ্র। দুজনের মধ্যে কেউ একজন মরে গেলে শান্তি লাগত। কেননা এই বেথ্যা অসহনীয়। ধ্যান ফিরতেই প্রচন্ড অনুশোচনা ভুগতে লাগলো রোদ্র কিছুক্ষণ আগে সে কি ভাবছিলো এটা মনে হতেই নিজের উপর ঘৃণা হতে লাগলো। সে কী ভাবছিলো নিজের বড় ভাইকে মারার কথা ভাবছিলো সে। একদিকে ভালোবাসা অন্যদিকে নিজের বড়ভাই। মন আর মস্তিষ্কের খেলায় সত্যি এবার নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে। খাবার ছেড়ে হঠাৎই উঠে দাঁড়ালো রোদ্র।

‘কিরে দাঁড়িয়ে পড়লি যে কিছুই তো খেলি নাহ।

‘আমার খাওয়া হয়ে গেছে মা আমি উপরে যাচ্ছি।

‘কথাটা বলে একটুও দাঁড়ালো না রোদ্র সোজা সিঁড়ি বেঁয়ে উপরে চলে গেলো। চেয়ারে বসে সবটাই দেখলো সমুদ্র কিন্তু কিছুই বলল নাহ। শশী রোদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে মনে মনে এটাই ভাবছে৷ প্রথম যেদিন দেখা হলো সেই রোদ্র ভাইয়া আর আজকের রোদ্র ভাইয়ার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত। হঠাৎ কি এমন হলো যে ওনি এতোটা বদলে গেলেন।

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-২৯+৩০

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২৯
,
মানে?

মানে আবার কি আসলে ভাইয়া তুই না সবসময় জ*ঙ্গি, গুন্ডা এদের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে এখন সবাইকেই সন্দেহের চোখে দেখা শুরু করেছিস। আরে ভাই কালবাদে পরশো তোর বিয়ে এখন অন্তত এসব ভাবা বাদ দিয়ে নিজের বিয়ের কথা ভাব নয়ত দেখা যাবে বিয়ের দুইদিন পরেই তোর বউ পালিয়েছে। আর আমার কিছুই হয়নি তোকে তো বললামই আমি আমার একটা জিনিস হারিয়ে ফেলেছি তাই সেদিন ওমন ব্যাবহার করে ফেলেছিলাম। আর জিনিসটা তো প্রথমবার হিজলতলী তেই দেখেছিলাম এই জন্যই ওখানে গিয়ে ছিলাম খুঁজতে, কিন্তু পায়নি আমিই অনেক দেরি করে ফেলেছি। আমার যাওয়ার আগেই ওটা হারিয়ে গেছে তবে ওটা হারিয়ে যাওয়াই আমার আর এখন কোনো আফসোস নাই। কারণ জিনিসটা একজন সঠিক মানুষই পেয়েছে।

শেষের কথাগুলো রোদ্র শুকনো হেসে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল। শাহানারা রোদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। সে যা ভেবেছিলো রোদ্র তা করেনি ভাই ভাইয়ের সাথে বিরোধীতা করেনি। আজকে তার ভিতরটা শান্ত হয়ে গেছে, নাহ সে তার সন্তানদের সঠিক শিক্ষা দিতে পেরেছে। রোদ্র কথা বলতে বলতে সমুদ্রের কাছে চলে আসলো। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলল, দেখবি ভাইয়া তোর বিয়েতে আমিই সবচেয়ে বেশি আনন্দ করবো আমি অনেক খুশি হয়েছি। আরে এখনো কত কাজ বাকি জয় কোথায়? ওকেও কাজে লাগিয়ে দেবো আর মা দেখি কি কি লিস্ট বানিয়েছো।

কথাগুলো বলে রোদ্র শাহানারার দিকে যেতে গেলে পিছন থেকে সমুদ্র গম্ভীর কন্ঠে বলল। কথা ঘুরাছিস কেনো? আমার সাথে একদম মিথ্যা বলতে আসবি নাহ। সত্যি করে বল তুই হিজলতলী কেনো গিয়েছিলি? কথাটা বলে সমুদ্র একটা ঢোক গিলে আস্তে করে বলল, তুই কি শশী কে।

হ্যাঁ শশীর কাছেই তো প্রথমে জিগাস করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পরে ভাবলাম ও চিনবে কিনা এই জন্যই তো কিছু না বলে চলে আসলাম৷ আসলে হয়েছে কি ভাইয়া আমি যেদিন প্রথম হিজলতলী তে যায় সেদিন একটা মেয়েকে দেখে ছিলাম। অঞ্চলা হরিণীর মতো ছুটে চলছিলো৷ যেনো রঙীন রঙ তুলি দিয়ে সদ্য আঁকা জীবন্ত ছবি। কথাটা বলতেই রোদ্র আনমনে সেদিনের প্রথম দেখা শশীর মুখটা ভাবতে লাগলো। অতঃপর নিজের ভাবনা থেকে ফিরে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। তাই দেখে রোদ্র হেসে বলল, তারপর মেয়ে টাকে আমার পছন্দ হয়ে গেলো ভাবলাম তোর বিয়ের পরেই বিয়েটা সেরে ফেলবো। কিন্তু তুই তো বিয়ে করলি নাহ আর আমাকেও চলে যেতে হলো আমিও আর ওটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামালাম না। ভাবলাম দেশে ফিরেই একবারে বিয়েটা করে ফেলবো। কিন্তু ততদিনে দেরি হয়ে গেলো যা হওয়ার সেটাই হলো মেয়েটার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এই হলো মোট কথা আর তুই কি না কি ভাবছিস।

তুই সত্যি বলছিস তো? আর মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়েছে বিয়ে হয়ে তো যায়নি। তুই চল আমার সাথে আমি ওই মেয়ের বাবার সাথে কথা বলবো আমার ভাই কোন দিক থেকে কম শুনি। এখনি চল আমিও দেখতে চাই মেয়ের বাবার কেমন ছেলে পছন্দ।

সমুদ্রের কথায় রোদ্র হেসে মনে মনে বলল, মেয়েটা কে জানলে তুই এই কথাগুলো কখনোই বলতে পারতি না ভাইয়া। তুই সয্য করতেও পারতি নাহ তার চেয়ে বরং তোর না জানায় থাক। কথাগুলো বলে সমুদ্র কে বলল, কি দরকার ভাইয়া আর তার চেয়েও বড় কথা মেয়েটা জানেই না যে আমি তাকে ভালোবাসি। তাহলে এখানে মেয়েটার কি দোষ, আর দেশে কি মেয়ের অভাব আছে নাকি। আচ্ছা এসব বাদ এখন সবকিছুর আয়োজন করতে হবে তো আমার ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা।

রোদ্র কথাগুলো বলে শাহানারার দিকে চলে গেলো অতঃপর মায়ের সাথে আলোচনা করতে লাগলো কি কি করতে হবে। সমুদ্র দু হাত বুকের সাথে গুঁজে রোদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো সব কিছুর পরেও একটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। রোদ্র যদি মেয়েটাকেই খুঁজতে যাবে তাহলে শশীদের বাড়িতে গিয়ে ওরকম টা করার মানে কি। মেয়েটা আসলে কে?
,,,,,,,,,,,,
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে আযান ও বোধহয় হয়ে গেছে এই সময়টাতে পারভিন যদি দেখে শশী এভাবে বিছানায় শুয়ে আছে তাহলে বাড়ি মাথায় তুলবে। তবুও আজকে শশী শুয়ে আছে মা দেখলে যা খুশি বলুক গিয়ে। সকাল থেকে এটা ওটা করতে করতে শরীল আর চলছে নাহ। বিকেলের দিকেই অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। বাড়ি ভর্তি মেহমান উঠানে ছোট ছোট বাচ্চারা চেঁচামেচি করছে দৌড়াদৌড়ি করছে। কারেন্ট চলে গেছে এই জন্য বাকিরা কেউ কেউ চেয়ার পেতে গল্প করছে আবার কেউ পিয়াজ রসুন কাটছে। কাজের বাড়িতে এই সময় কারেন্ট যাওয়াই সবাই বিরক্ত। তবে সবাই মিলে আলো আধাঁরিতে হারিকেন জ্বালিয়ে গল্প করতে করতে কাজ করছে এটাও উপভোগ করছে। কারেন্ট নেই এই জন্য গরমের মধ্যে কেউ রুমেও নেই সবাই বাইরে। নিজের রুম খালি পেয়ে শশী বিছানায় নিজের শরীলটা এলিয়ে দিয়েছে। হলুদ শাড়ির আঁচল টা বুক থেকে নামিয়ে পাশেই রেখে দিয়েছে। কারেন্ট না থাকায় ফ্যান ও চলছে নাহ আর শাড়ি পড়ায় গরম যেনো বেশি লাগছে এই জন্যই মূলত এটা করা। জ্বানালা দিয়ে হালকা ঠান্ডা বাতাস আসছে এতেই চোখে ঘুম নেমে এসেছে। কেবলি চোখটা বন্ধ করেছে ওমনি ফোনটা ভূঁ ভূঁ শব্দ করে বেজে উঠল। শশী বিরক্ত হয়ে যে কল দিয়েছে তাকে বেশ কয়েকটা গা*লি দিয়ে বসল। অতঃপর হাতড়ে ফোনটা সামনে এনে দেখলো স্কিনে সমুদ্রের নামটা জ্বল জ্বল করছে৷ যলদি উঠে বসে জিব্বাহতে কাঁমড় দিয়ে একটু আগের বকাটা ফিরিয়ে নিলো৷ ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে সমুদ্র বলল।

সারাদিন কি করছিলে ফোন ধরোনি কেনো?

সমুদ্রের কথায় শশীর মনে পড়ে গেলো সকাল থেকে তার ফোনটা তার কাছে ছিলোই নাহ। ওর চাচাতো মামাতো ফুপাতো মিলে অনেক গুলা ভাইবোন এসেছে৷ প্রায় সবাই ওর থেকে বড় কেবল চাচাতো ভাইবোনদের মধ্যে থেকেই শশী বড়। সকালে যখন সমুদ্র কল দিয়েছিলো ও ফোনটা ধরতেই যাবে তখনি ওর ফুপাতো বোন লিমা এসে ফোনটা কেঁড়ে নিয়ে বলল।

বাবাহ এতো প্রেম কালকেই তো বউ নিয়ে চলে যাবে তাহলে আজকে এতো কিসের কথা শুনি। শুনেছিলাম আর্মিরা নাকি রোমান্টিক কম গম্ভীর হয় বেশি কিন্তু সমুদ্র তো দেখছি হেব্বি রোমান্টিক।

আপু ফোন দাও ওনি ভীষণ রেগে যাবে।

যাক রেগে কালকে তো বাসর রাত কালকেই না হয় আদর সোহাগ দিয়ে রাগ ভাঙ্গিয়ে দিবি।

লিমার কথা শুনে শশী লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলল, তুমি আমার থেকে বড় আবার সম্মানের দিক থেকেও ওনার চেয়ে বড় তাহলে এসব বলো কেনো।

এই শোন যার আগে বিয়ে হবে সেই বড় তাই আপাতত তুই বয়সে আমাদের ছোট হলেও যেহেতু আমাদের আগে তোর বিয়ে হচ্ছে এই জন্য তুই আমাদের সবার বড়। আর ফোন টা আমার কাছে থাকলো আগে সব অনুষ্ঠান শেষ হোক তারপর রাতে ফোন পাবি।

এরপর সারাদিনই ফোন আমার কাছে ছিলোই নাহ তাহলে ওনার সাথে কথা বলবো কি করে? কিন্তু এই কথাগুলো ওনাকে কে বোঝাবে। শশীর চুপ থাকা দেখে সমুদ্র ধমকে বলল, এখন চুপ করে আছো কেনো আমি কি ফোন দিয়েছি তোমার শ্বাস শোনার জন্য? শোনো যেহেতু ভুল করেছো তাই তোমার এখন শাস্তি পেতে হবে।

কিহ? সামান্য ফোন না ধরার জন্য এখন আমায় শাস্তি পেতে হবে?

হ্যাঁ হবে এখন কথা না বলে আমি যা বলছি শোনো, এখন থেকে ঠিক দুই ঘন্টা পর তোমাদের ক্লাবঘরের আগে যে বাগানটা আছে ওখানে আসবে।

এখন? এই রাতের বেলা?কিন্তু কেনো? আর মা বলেছে বিয়ের আগে বাইরে যেতে হয় না। হলুদের গন্ধে নাকি বউয়ের ঘাড়ে জ্বিন আসে। আর আপনি আমায় সোজা বাগানে যেতে বলছেন তাও এই বৃহস্পতিবার এর রাতে যদি আমার ঘাড়ে জ্বিন আসে তখন?

শশীর কথায় সমুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল আর যদি তুমি না আসো তাহলে আমি নিজ দায়িত্বে তোমাকে জ্বিনের বাড়িতে পাঠাবো। শোনো দুই ঘন্টার মধ্যে যদি তোমাকে ওখানে না পাই তাহলে সোজা তোমার বাড়িতে চলে যাবো আর তোমার আব্বাকে বলবো তুমি আমায় ফোন করে আসতে বলেছো। আমি নিষেধ করলে তুমি কান্নাকাটি করেছিলে এই জন্য আসছি৷

কথাটা বলেই সমুদ্র ফোন কেটে দিলো কান থেকে ফোন নামিয়ে শশী চিন্তায় হাতের নখ কাঁমড়াতে লাগলো। কি মুসিবত এখন এতো মানুষের মধ্যে বাগানে যাবো কীভাবে? আর লিমা আপুরা যদি একবার জানতে পারে তাহলে তো আমাকে লজ্জা দিবে। আবার না গেলেও ওনি বলেছে বাড়ি চলে আসবে, ওনি তো এক কথার মানুষ চলেও আসতে পারে। তখন তো বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে আরো লজ্জায় পড়তে হবে। এতো দেখি জলে কুমির ডাঙায় বাঘ কোনদিকে যাবো আমি?

এসব ভাবছে আর হাতের নখ কামড়াচ্ছে শশী তখনি জোনাকি ফোনের আলো নিয়ে ঘরে এসে বলল। এই আপা তুই এখানে শুয়ে শুয়ে কি করছিস নিচে চল লিমা আপারা তোকে ডাকছে।

শশী জোনাকির কথাশুনে নখ কামড়ানো বাদ দিয়ে ওর দিকে তাকালো। মাথায় একটা বুদ্ধি আসতেই জলদি করে কাপড়ের আঁচল টা বুকের উপর নিয়ে বিছানা থেকে নেমে জোনাকি কে বলল। শোননা তুই যদি আমাকে একটা কাজ করে দিস তাহলে তোকে আমার ফোনটা দেবো গেইম খেলার জন্য। আবার একশো টাকাও দেবো তুই কি নাকি কিনবি তখন আমার কাছে টাকা চাইলি। ওটা কিনিস সাথে চকলেট ও দেবো তুইতো আমার আপন বোন বল এখন তুই আমার দুঃখ না বুঝলে আর কে বুঝবে বল।

শশীর এমন পাম দেওয়া কথাশুনে জোনাকি সন্দেহের চোখে শশীর দিকে তাকালো। বিকেল বেলা ও শশীর কাছে একশো টাকা চেয়েছিলো খেলনা সাপ কেনার জন্য কালকে জয় আসলে ওকে ভয় দেখাবে তাই৷ কিন্তু শশী টাকা দেয়নি উল্টো মাকে বলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাড়ায় দিছে আর এখন নিজেই সেধে টাকা দিতে চাইছে তাই জন্য জোনাকি অনেকটা সমুদ্রের মতো গলার স্বর গম্ভীর করে বলল।

কিন্তু কাজটা কি?
,,,,,,,,,,,,

জোনাকি ওর আব্বার বাটন ফোনটাতে আলো জ্বালিয়ে হাঁটছে আর শশীও পাশে ভয় ভয় নিয়ে হাঁটছে। এই আপা মা তো কইছিলো বিয়ের কথা হইলে আর হলুদ গায়ে লাগলে রাতে বার হতে হয় না জ্বিনে ধরে। তুইতো তাও হইলি ওহন যদি তোরে জ্বিনে ধরে তখন কি হবে?

এই তুই আমাকে সাবধান করছিস নাকি ভয় দেখাচ্ছিস কোনটা? আর সাবধানে আলোটা সামনে ফেল নয়ত হুঁচট খাবো তো। তাছাড়া আমার কি মনে করিস এই দেখ মাথায় হলুদ নিয়ে আসছি এখন আর কোনো চিন্তা নাই। তুই নিসনাই তাই জ্বিন আমারে রেখে তোরে ধরবে।

শশীর মুখে কথাটা শুনতেই জোনাকি থেমে গেলো তারপর ফোনের আলোটা সামনের দিকে ফেলতেই দেখলো লম্বা মতো সাদা সাদা কি একটা দূরে ওটা দেখতেই আলোটা শশীর মুখের দিকে ফেলে চোখ বড় বড় করে শশীর দিকে তাকালো। শশী জোনাকির তাকানো দেখে জোনাকিকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল।

আরে ওটাতো শহীদ কাকাদের আমগাছ অন্ধকারে ওমন দেখাচ্ছে তুই চল।

কিন্তু মলিতো কইছিলো শহীদ কাকার যে ছেলে পানিতে ডুবে মারা গিছিলো ওরে নাকি ওখানে কবর দিছিলো। আর রাতের বেলার নাকি ও ওদের বাড়িতে আইসা টিনের উপরে থাপ্পড় দেয়। মলি নাকি ওদের বাড়ি থেকেও শুনেছে।

জোনাকির কথাশুনে শশী ঢোক গিয়ে ভয়ে ভয়ে বলল, আরে ধুর ওরা তোকে ভয় দেখানোর জন্য বলছে ওসব কিছু নাহ চল আমরা যাই এখান থেকে ওই টুকু এক দৌড়ে চলে যাবো।

শশীর বিয়ের জন্য ছোট ছেলে মেয়েরা বাজি এনেছে ফাঁটানোর জন্য। হয়ত তারা ওটা ফাটাচ্ছে আগুন ধরিয়ে ছাড়তেই ফটাস করে শব্দ হয়ে উপরে উঠে গেলো৷ জোনাকি এমনিতেই ভয় পেয়ে ছিলো ওই শব্দ শুনতেই চমকে, ওরে বাবা ভূত। কথাটা বলেই দৌড়ে বাড়ির দিকে চলে গেলো। শশী যেহেতু কাপড় পড়া ছিলো আবার জোনাকি আচমকা দৌড় দিবে ও ভাবিইনি তাই ভয় পেয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে কাঁপতে লাগল।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩০
,
কারেন্ট চলে এসেছে প্রায় বেশ কিছুক্ষণ আগে। তবে বাগানের দিকটাই তেমন কোনো আলো আসে নাই। বাগান থেকে দূরে শশীদের বাড়িতে জ্বলতে থাকা আলোর রশ্মি দেখা যাচ্ছে। জোনাকি চলে যাওয়ার পর শশী আর ওই জায়গা থেকে এক চুলও নড়ে নাই। ভয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। না পাড়ছে পিছনে যেতে না পাড়ছে সামনে যেতে। অন্ধকারে পরনে থাকা হলুদ শাড়িটা হালকা জোছনার আলোতে বেশ চোখে লাগছে, ফোনটাও ঘরেই ফেলে এসেছে । শরীল টাও কেমন ভারি ভারি লাগছে যেনো শরীলে কোনো কিছু ভর করেছে। দূরের গাছগুলোও কেমন ভূতুড়ে লাগছে। যেনো মনে হচ্ছে এই এসে পিছন থেকে ঘাড় মটকে দেবে। চোখ বন্ধ করে মনে মনে দোয়া দরুদপাঠ করছে। সমুদ্র তো বলেছিলো ২ ঘন্টার মধ্যে চলে আসবে তাহলে এখনো আসছে না কেনো? নাকি ওনি আসবে নাহ৷ শশীর ভাবনার মাঝেই পিছন থেকে একটা ঠান্ডা ভারী হাত ওর কাঁধে পড়ল। সারা শরীলে কেমন একটা শিহরন বয়ে গেলো। চোখ দুটো বড় বড় করে পিছনে তাকাতেই ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে গেলো।

জোনাকি এক দৌড়ে বাড়ি এসে উঠানে বসে পড়ল। জোড়ে জোড়ে হাঁপাচ্ছে, বাড়িতে মানুষের সমাগম সবাই কাজে ব্যাস্ত। হঠাৎ জোনাকি কে এভাবে দৌড়ে উঠানে পড়ে যেতে দেখে সবাই ওর কাছে আসলো। জামশেদ মেয়ের কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে আতংকিত গলায় জিগাস করল।

কি হয়ছে আম্মা আপনি এভাবে বসে পড়লেন কেনো ভয় পাইছেন?

বাবার গলা পেয়ে জোনাকি বাবার গলা জড়ায়ে ধরে ভয় ভয় গলায় বলল, আব্বা পানি খাবো।

পারভিন যলদি গ্লাসে পানি এনে জোনাকিকে দিতেই ঢকঢক করে পুরোটা পানি শেষ করলো। লিমা পাশে বসে জোনাকির দিকে তাকিয়ে বলল, তোকে তো শশীকে ডাকতে পাঠালাম তুই বাইরে থেকে আসলি কীভাবে? কোথায় গিয়েছিলি আর শশী কোথায়?

লিমার কথায় এবার জোনাকির হুশ ফিরলো ভয়ের জন্য শশীকে তো ওখানেই ছেড়ে এসেছে। জোনাকি শশীর কথা ভেবে কান্না করে দিলো অতঃপর কান্না করতে করতে বলল, আব্বা আপারে মনে হয় জ্বীনে নিয়া গেছে এতোক্ষণে।

মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে জামশেদ কিছুই বুঝতে পারলো নাহ। ভালো করে জিগাস করতেই জোনাকি বলা শুরু করল। আপা আমারে কইলো বাগানের দিকে যাবে ওখানে নাকি কি একটা কাজ আছে। তয় কাউরে বলা যাবে নাহ। শুধু গিয়েই চলে আসবে, তাই আমিও আপার সাথে গিছিলাম কিন্তু তখনি শহীদ চাচাদের আম গাছে জ্বীন দেখে আমি দৌড়ে চলে আসছি। আর আপা ওখানেই আছে এতোক্ষণে মনে হয় আপারে জ্বীনে নিয়া গেছে।

মেয়ের মুখে এমন কথাশুনে জামশেদ মাস্টার হাসবে নাকি মেয়েকে শাসন করবে এটাই ওনি ভেবে পাচ্ছে নাহ। পারভিন রেগে জোনাকির মাথায় একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল, ওইটারে কতবার বললাম রাতে কোথাও না যেতে কিন্তু আমার কথা শুনলে তো সেই বেরিয়ে গেলো। যাক আমি আর কিছুই বলবো নাহ। আপনার মেয়েরা আমার একটা কথাও শোনে না যা ইচ্ছে করুক গিয়ে পরে ভালো খারাপ কিছু একটা হয়ে গেলে আমাকে বলতে আসবেন নাহ।

কথাগুলো বলে পারভিন রেগে চলে গেলো। জামশেদ মেয়ের থেকে মোবাইল টা নিয়ে বাকি আরো কয়েকজন কে নিয়ে শশীকে খুঁজতে গেলো৷ কেননা দিনকাল ভালো নাহ তারপর গ্রামে তো খারাপ মানুষের অভাব নেই। কিছু একটা হয়ে গেলে তখন আর কিছু করার থাকবে নাহ।
,,,,,,,,,,,,,

শশী জ্ঞান হারিয়ে সমুদ্রের বাহুতে পড়ে আছে। সমুদ্র হতভম্ব চোখে শশীর মুখের দিকে তাকিয়ে আবার আশেপাশে তাকালো না কেউ আসছে নাহ। গাড়িটা মেইন রাস্তার একপাশে দাঁড় করিয়ে ইমরান কে বসিয়ে রেখে এসেছে। সমুদ্রের বলা জায়গায় শশীকে না পেয়ে সমুদ্রর প্রথমে বেশ রাগ হয়েছিলো। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও যখন শশী আসলো নাহ তখন ফোন দিলো কিন্তু ফোনটাও কেউ ধরলো নাহ৷ এবার সমুদ্র ঠিক করলো সত্যি সত্যিই শশীদের ওখানে যাবে। মেয়েটাকে একটা শিক্ষা না দিলেই নয় এই মনোভাব নিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছিলো। ক্লাবঘর পাড় হয়ে একটু যেতেই দেখলো হলুদ শাড়ি পড়া কেউ দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্র ভালো করে দেখল এটা শশী। আমি ওকে থাকতে বলেছি কোথায় আর মেয়েটা আছে কোথায়৷ কথাটা বলেই সমুদ্র পিছন থেকে এসে শশীর কাঁধে হাত রাখতেই শশী জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতে নিলে সমুদ্র দুইহাতে শশীকে আগলে নিলো।

এই মেয়ে চোখ খোলো শশী।

শশীর গালে হাত রেখে কয়েকবার থাবা দিলো সমুদ্র। শশী আস্তে করে এক চোখ খুলে দেখলো কোনো শক্তপোক্ত হাত ওর কমর জড়িয়ে আছে। জোছনার হালকা আলোয় শশী সমুদ্র কে দেখতেই দুহাতে শক্ত করে সমুদ্র কে জড়িয়ে ধরল।

আপনি? আমি আরো ভাবলাম সত্যিই জ্বীন। আরো আগে আসতে পারলেন নাহ আর একটু হলে তো ভয়েই মরেই যেতাম আমি।

আচ্ছা এখন ছাড়ো এখন তো আমি চলে এসেছি ভয় নেই। এমন ভাবে ধরেছো যেনো পারলে আমার বুকের মধ্যে চলে যাবে।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী ওকে ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো ব্যাপারটা সমুদ্রের মোটেও পছন্দ হলো নাহ। শশীর পিছনের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলল, আরে লম্বা মতন ওটা কী?

কথাটা শুনতেই শশী দ্রুত দুজনের মাঝের দূরত্ব ঘুচিয়ে সমুদ্রের গায়ের সাথে লেগে দাঁড়ালো। কই কি? আমি তো কিছু দেখতে পাচ্ছি নাহ।

হয়ত চলে গেছে। কথাটা বলে সমুদ্র শশীর দিকে তাকালো এই প্রথমবার শশীকে শাড়ি পড়া দেখছে। ছোটোখাটো নরম শরীলে কাঁচা হলুদ শাড়িটা বেশ মানিয়েছে। একদম পুতুল পুতুল লাগছে। সমুদ্র এভাবে শশীর দিকে তাকিয়ে থাকা দেখে শশী লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে সরে যেতে গেলে সমুদ্র বাঁ হাতে শশীর কমর চেপে নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে দাঁড় করিয়ে বলল।

দূরে যেও নাহ এভাবেই থাকো নয়ত বলা যায় না সত্যি সতিই জ্বীন এসে তোমাকে নিয়ে যাবে তখন কিন্তু আর চাইলেও ফিরে আসতে পারবে নাহ।

শশী সমুদ্রের বুক থেকে বিড়ালের মতো মুখ বের করে সমুদ্রের দিকে তাকালো। ও বেশ ভালোই বুঝতে পারছে সমুদ্র ওর সাথে মজা করছে। শশী কিছু বলতে যেতেই দেখলো দূরে বেশ কিছু আলো ওদের দিকেই আসছে। সমুদ্র আস্তে করে শশীকে ছেড়ে দিয়ে ওর হাত ধরে পাশাপাশি দাঁড়ালো। সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ ওদিকে তাকালো বেগতিক দেখলেই ব্যাবস্হা নিতে হবে। কেবলি পকেট থেকে ফোনটা বের করবে তখনি দেখলো শশীর বাবা কাকা আর কয়েকজন ওদের দিকেই আসছে সাথে জোনাকিও আছে। সমুদ্র রেগে দাঁতে দাঁত চেপে শশীর দিকে তাকিয়ে বলল।

তোমাদের বাড়িতে আর কেউ ছিলো নাহ? শুধু এই কয়জন আসলো কেনো পুরো হিজলতলীর সবাই কে নিয়ে আসলেই তো ভালো হতো। আসতে বলেছি একা আর গাধী গুষ্টিশুদ্ধ সবাইকে নিয়ে আসছে।

শশী সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে মুখ নামিয়ে জোনাকির দিকে রাগী চোখে তাকালো।এতোক্ষণে সবাই ওদের কাছে চলে এসেছে। জোনাকি সমুদ্র কে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। জামশেদ সমুদ্র কে এভাবে দেখে বেশ বিব্রত হলো তবুও সৌজন্যে রক্ষাতে বলল, একি তুমি এখানে? না মানে এই সময়।

সমুদ্রের এবার রাগের থেকে বেশি বিরক্ত লাগছে। বিয়ের আগের দিন রাতে এভাবে হুবু বউয়ের সাথে দেখা করতে এসে শশুরের কাছে ধরা পড়া বেশ লজ্জা জনক। তবুও নিজেকে ঠিক রেখে বলল, এইদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম শশী বলল দেখা করে যেতে এই জন্যই আর কী।

সমুদ্রের কথা শুনে শশী চোখ বড় বড় করে সমুদ্রের দিকে তাকালো। কি মিথ্যাবাদী রে রাত দুপুরে ডাহা মিথ্যা কথা বলছে। নিজেই আমাকে আসতে বলে এখন বলে কিনা আমি বলেছি। কথাগুলো মনে মনে বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল শশী। মেয়ের দিকে বেশ কড়া চোখে তাকালেন ওনি তবে কিছু বলল নাহ৷ পিছন থেকে শশীর কাকা হাসি মুখে এগিয়ে এসে সমুদ্রের সাথে কথা বলল।

আরে বোকা মেয়ে এটা বাড়িতে বলে আসলেই তো হতো আমরা শুধু শুধু চিন্তা করছিলাম। আর সমুদ্র এতোটা যখন এসেই গেছো তখন আর একটু কষ্ট করে বাড়ি উপর চলো বাবা।

না না আংকেল এখন আর যাবো নাহ ঢাকায় ফিরতে বেশি রাত হয়ে যাবে।

আরে বেশি সমস্যা হলে না হয় আজকে থেকেই গেলে আর কোনো কথা নয় এসোতো।

কথাগুলো বলে সমুদ্রের হাত টেনে নিয়ে সামনের দিকে চলে গেলো।সমুদ্র যাওয়ার আগে শশীর দিকে গরম চোখে তাকিয়ে চলে গেলো।

এসো।

গম্ভীর কন্ঠে কথাটা বলে হাঁটতে লাগল জামশেদ। শশী জোনাকির মাথায় থাপ্পড় দিতে দিতে বলল, তোরে করতে বলেছি কি আর তুই করলি কি।

আরে আমায় মারছিস কেনো আমি কি জানতাম নাকি যে সমুদ্র ভাইয়া আসবে। আমিতো আরো ভয়ে ছিলাম যে জ্বীন বোধহয় তোকে নিয়েই গেছে।

জোনাকির কথা শুনে শশী আবারো ওর মাথায় থাপ্পড় দিতে দিতে হাঁটতে লাগল এখন বাড়ি গেলে সবাই ওকে লজ্জা দিবে৷ যেটার ভয় ছিলো ঠিক সেটাই হলো।
,,,,,,,,,,,
এই তাহলে জোনাকির বলা জ্বীন, বাহ বেশ দেখতে তো হায়, জ্বীন যদি এতো সুন্দর হয় তাহলে আমি রাতের বেলা চুল ছেড়ে বাগানে যেতে রাজি।

সমুদ্র কে দেখে লিমাসহ শশীর আরো কয়েকটা বোন কথাগুলো বলল। শশী লজ্জায় কিছু বলতে পারলো নাহ দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। এদিকে সমুদ্র পড়েছে বিপাকে সবাই মিলে বসিয়ে বিয়ের আগেই জামাই আদর শুরু করে দিয়েছে। খাওয়া দাওয়া শেষে একটু বিশ্রাম এর জন্য সমুদ্র কে একটা রুমে বসতে দেওয়া হলো। রুমে ঢুকেই লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বিছানায় বসে পড়ল সমুদ্র। চোখ বন্ধ করে খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে তখনি শশীর বোনরা সবাই মিলে শশীকে ধরে রুমের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো। ওপাশ থেকে তো কেউ একজন বলেই বসল,

বিয়ের আগেই হাফ বাসর করে নেন দুলাভাই এমন সুযোগ কিন্তু সবাই পাই নাহ। বেশি নাহ বিশ মিনিট সময় পাবেন এর মধ্যে যা করার করেন তারপর কিন্তু আমরা দরজা খুলে ভিতরে চলে আসবো।

শশী লজ্জায় কয়েকবার দরজায় ধাক্কা দিলো তবে কেউ খুললো নাহ। সমুদ্র ততক্ষণে চোখ খুলে শশীর দিকে তাকিয়েছে। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরনের শার্টটা টেনে সোজা করে শশীর দিকে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো দু হাত বুকে গুঁজে বলল।

তাহলে এই ছিলো তোমার মনে।

সমুদ্রের কথা শশী বুঝতে না পেরে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, মানে?

মানে এই যে হাফ বাসর। আমি তোমাকে দেখা করার জন্য ডাকলাম আর তুমি কি না সরাসরি হাফ বাসর করার প্লান করে ফেললে? কি সাংঘাতিক মেয়ে তুমি৷ বাসর করার জন্য দেখি তর সইছে নাহ। চলো তাহলে শুরু করি?

কথাটা বলে সমুদ্র বাঁকা হেসে শশীর দিকে এগিয়ে আসলো শশী পিছিয়ে গিয়ে দরজার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে বলল, দেখুন আমি কিছু করিনি সত্যি বলছি।

শশীর কথা কে শোনে সমুদ্র একদম শশীর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বাঁ হাতে ওর কমর জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। অতঃপর ডান হাতে শশীর কপাল থেকে চুল সরিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে মুখে বাড়িয়ে শশীর কপালে গাড়ো করে চুমু খেলো। শশী চোখ বন্ধ করে সমুদ্রের বুকের কাছের শার্ট মুটো করে ধরে আছে। নরম গোলাপি ঠোঁট দুটো কাঁপছে। সমুদ্র করুণ চোখে সেদিকে তাকালো যেনো ওগুলো ওকেই ডাকছে। সমুদ্র নিজের মুখটা শশীর মুখের আরো নিকটে নিয়ে গেলো নাকের সাথে নাক লেগে আছে। শশী সমানে কাঁপছে সমুদ্র আরো শক্ত করে শশীর কমড়টা চেপে ধরলো। যেনো সত্যি নিজের বুকের সাথে শশীকে পিশে ফেলবে,তারপর নিজের শুষ্ক ঠোঁট টা শশীর নরম ঠোঁটের সাথে আলতো করে মিলিয়ে দিয়ে চুমু খেয়ে শশীর কানে ফিসফিস করে বলল।

বাকিটা না হয় কালকে রাতেই হবে আমি কিন্তু কোনো বাঁধা মানবো নাহ।

কথাটা বলে শশীকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে এলো শশী এখনো দরজার সাথে লেগে চোখ বন্ধ করে বড়বড় শ্বাস নিচ্ছে। এই মুহুর্তে চোখ খুলে সমুদ্রের চোখে চোখ মিলানোর মতো সাহস নেই ওর। সমুদ্র দূরে দাঁড়িয়ে শশীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তখনি দরজা খুলে গেলো শশী যেহেতু দরজার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে ছিলো এই জন্য দরজা খুলতেই পড়ে যেতে নিলো। ওমনি বাইরে যারা ছিলো তারা শশীকে ধরে ফেলল। শশী তখনো চোখ বন্ধ করে আছে শরীলের সব ভর ওদের হাতের উপর ছেড়ে দেওয়া। লিমা অবাক হয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে জিগাস করলো একিরে তোর এই অবস্থা কেনো? কি হয়েছে?

শশী চোখ বন্ধ করেই মুচকি হেসে বলল, আমি শেষ আপু।

#চলবে?

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-২৭+২৮

0

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২৭
,
তীব্র গতিতে কনক্রিটের রাস্তা দিয়ে ছুটি চলছে চার চাকার গাড়িটি, এতো দ্রুতো যাওয়ার জন্য যে কোনো সময় এক্সিডেন্ট ও হতে পারে তবে গাড়িটি যে চালাচ্ছে তার সেদিকে হুশ থাকলে তো। রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে চলা পথচারীও গাড়িটির দিকে তাকিয়ে বেশ কিছু কথা শুনিয়ে দিতেও ছাড়ছে নাহ। কিন্তু তারা যদি জানতো গাড়িটি যে যুবক চালাচ্ছে তার ভিতরে এখন কী চলছে। চোখ দুটো ভীষণ জ্বালা করছে কিন্তু কেনো জানি এক ফোঁটা পানিও বের হয়নি, লাল হয়ে আছে চোখের আশপাশটা টলমল করছে পানি কিন্তু সেটা গড়িয়ে পড়ছে নাহ, হয়ত এই জন্যই এমন জ্বালা করছে। করুক জ্বালা তবুও এক ফোঁটা পানিও গড়িতে পড়তে দেবে না রোদ্র, কেনো দেবে সে কাঁদবে কেনো কিসের জন্য কাঁদবে তার তো কোনো দুঃখ নেই। শাহানারার থেকে কথাটা শোনার পরে এক মুহুর্ত সেখানে আর থাকেনি ছুটে বেরিয়ে এসেছে। তার মনে হচ্ছে শশীকে তার থেকে কেঁড়ে নেওয়া হচ্ছে, কেনো কেঁড়ে নেওয়া হচ্ছে এই প্রশ্নটা সমুদ্রের কাছে করতে চেয়েছিলো কিন্তু না আগে শশীর থেকে সবটা জানতে হবে। হয়ত ওকে জোড় করা হয়েছে এই জন্যই বিয়েটা করছে নয়ত শশী ভাইয়াকে কেনো বিয়ে করবে আর ভাইয়া তো শশীকে পছন্দ করে না তাহলে দুদিকের দুটো মানুষের বিয়ে কীভাবে হয়। শাহানারা অনেক চেষ্টা করেছে রোদ্রকে আটকানোর কিন্তু পারেনি তবে চলে আসার আগে পিছন ফিরে শাহানারাকে একটা কথায় বলেছে।

তুমি আমার দেওয়া আমানতের এভাবে খেয়ানত করলে মা? আমি অন্তত তোমার থেকে এটা আশা করেনি।

ছেলের মুখে কথাটা শুনতেই ধপ করে সোফায় বসে পড়ল শাহানারা কান্না করছে তবে সেটা নীরব কান্না। কেননা সেতো মা তার এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে নাহ তাকে তো নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও তার সন্তানের ভালো খারাপের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিজেকে সামলে আবারও রোদ্রকে আটকানোর জন্য ডাকতে যেতেই দেখলো রোদ্র বেরিয়ে গেছে। এবার আর সামনে পা বাড়ালেন না ওনি যাক রোদ্র সব প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেলে এমনেই নীরব হয়ে যাবে তখন না হয় মমতার আঁচলে আগলে নেবো। সমুদ্র বাসায় নেই সকাল হতেই কোনো একটা কাজে বাইরে গিয়েছে তবে বাসায় না থেকে ভালোই হয়েছে থাকলে হয়ত এর থেকেও বড় ঝামেলার সৃষ্টি হতো।
,,,,,,,,,,,,
দুপুরের তপ্ত সূর্যটা একদম মাথায় উপর এসে থেমেছে, তার প্রখর তাপে কপাল বেঁয়ে ঘাম গড়িয়ে এসে গালের সাথে মিইয়ে যাচ্ছে। মাস্টার বাড়ির গেটের সামনে এসে থেমে গেলো রোদ্র আজকে কেনো জানি ভিতরে যেতে মন সায় দিচ্ছে নাহ৷ পুরো শরীলের মধ্যে কাঁপছে মনে হচ্ছে এখানেই পড়ে যাবে, তবুও কোনো রকমে নিজেকে সামলে ভিতরের দিকে পা বাড়ালো। যেহেতু গ্রাম তাই দুপুরে সবাই ঘুমিয়ে বা কাজে ব্যাস্ত থাকে, রোদ্র উঠানে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকালো মনে হচ্ছে বাড়িতে কেউ নাই। রোদ্র কি করবে ভেবে পাচ্ছে নাহ আশেপাশে তাকালো তেমন কাউকেই দেখতে পাচ্ছে নাহ। একবার ভাবলো চলে যাবে এই জন্য পিছন ঘুরতেই পারভিন রোদ্রকে ডেকে উঠল। কেবলি গোসল সেরে হাতে ধোয়া কাপড় নিয়ে কলঘর থেকে বেরিয়েছে৷ মাথায় গামছা পেঁচানো, রোদ্রকে দেখে মাথার কাপড়টা একটু টেনে হাতের ভিজা কাপড়গুলো ওমনিই আড়ে রেখে তড়িঘড়ি করে রোদ্রের কাছে গেলো।

আরে বাবা তুমি এই সময় কখন আসলে? দেখোত দেখি ছেলেটা সেই কখন এসে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এসো এসো ভিতরে এসো, এই মেজো গোয়াল ঘর থেকে বেরিয়ে এদিকে আয় দেখ কে এসেছে। কথাটা বলে পারভিন রোদ্রকে নিয়ে বসার ঘরে বসালো, রোদ্র কোনো কথা বলেনি শুধু আশেপাশে তাকিয়ে শশীকে খুঁজে চলেছে কিন্তু তাকে পেলে তো। গোয়াল ঘর থেকে মাস্টার বাড়ির মেজো বউ পারুল ছোট বালতি ভর্তি দুধ নিয়ে বেরিয়ে আসলো। মাথার কাপড় টেনে রোদ্রের সাথে একটু কথা বলে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো, রোদ্র আশেপাশে তাকিয়ে শশীকে না পেয়ে পারভিনের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল।

আন্টি শশী কোথায়?

ওতো ওর ঘরে বোধহয় ঘুমিয়ে আছে তুমি একটু বসো আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি।

পারভিন কে থামিয়ে দিয়ে রোদ্র উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমিই যাচ্ছি আন্টি আপনাকে কষ্ট করতে হবে নাহ।

কথাটা বলেই রোদ্র উঠে চলে গেলো, পারভিন রোদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে কেনো যেনো ছেলেটার ব্যাবহার ঠিক লাগছে নাহ। কেমন অগোছালো দেখাচ্ছে ঠিকমতো কথাও বলছে নাহ কিছুতো একটা হয়েছে কিন্তু হয়েছে টা কি?

রোদ্র তড়িঘড়ি করে শশীর রুমের দিকে গেলো, হালকা ভিড়িয়ে রাখা দরজাটা খুলে ভিতরে যেতেই দেখলো শশী ঘুমিয়ে আছে। খাটের একদম কিনারায় ঘুমানোর দরুন লম্বা চুলগুলো মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রোদ্র ঘুমন্ত শশীর মুখের দিকে চেয়ে সামনে এগিয়ে গেলো, আস্তে করে মেঝেতে বসে শশীর মুখের দিকে চেয়ে রইল। কি নিষ্পাপ পবিত্র একটা মুখ, এতো কোমল একটা প্রাণ কে কেউ কীভাবে জোর করতে পারে। আর কেউ তোমাকে জোড় করে কিছু করাতে পারবে নাহ আমি চলে এসেছি, আজ এখন আমার ভিতরের সবটা তোমাকে বলবো তারপর তোমাকে একদম নিজের করে নেবো।

বিরবির করে কথাগুলো বলে শশীর মুখের দিকে ঝুঁকে গেলো রোদ্র, ওই নরম কপালে ওর শুষ্ক ঠোঁটের স্পর্শ দেওয়ার জন্য। রোদ্রের ঠোঁট শশীর কপাল ছুঁই ছুঁই তখনি পাশে পড়ে থাকা শশীর ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠল। রোদ্র মাথা ঘুরিয়ে আলো জ্বলতে থাকা ফোনের দিকে চাইলো, আলগোছে ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে তাতে চোখ বুলাতেই বুকের ভিতরটা কেমন হাসফাস করা শুরু হলো। ফোনে যেহেতু লক দেওয়া নেই এই জন্য কাঁপা হাতে মেসেজটা সিন করতেই চোখের সামনে একে একে শশী আর সমুদ্রের কথপোকথন ভেসে উঠল। শ্বাসটা কেমন আটকে আটকে আসছে তবুও আরো কিছুটা স্কল করতেই দেখতে পেলো দুজনের ভালোবাসাময় কথার আদান প্রদান, ব্যাস আর কিছু দেখার সাহস হলো না রোদ্রের কাঁপতে থাকা হাত থেকে ফোনটা মেঝেতে পড়ে গেলো। ফোন পড়ার শব্দে শশীর ঘুম ভেঙ্গে গেলো চোখ খুলতেই দেখলো রোদ্র মেঝেতে বসে স্তব্ধ হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ্রকে দেখেই তড়িঘড়ি করে উঠে বসে নিজেকে ঠিক করে বলল, কি হয়েছে রোদ্র ভাইয়া? আপনি এখানে কখন আসলেন? আর আমার ফোন, কথাটা বলে বিছানা থেকে নেমে ফোনটা হাতে তুলে নিলো। রোদ্র একদৃষ্টিতে শশীর দিকে তাকিয়ে আছে, হাজার চেষ্টা করেও একটা শব্দও কেনো জানি মুখ থেকে বের হচ্ছে না। তবুও কাঁপা কাঁপা গলায় রোদ্র শশীকে জিগাস করলো,

শশী ওই ভাইয়া আসলে,

কি হয়েছে ওনার? অস্থির হয়ে কথাটা জিগাস করলো শশী। রোদ্র অবাক চাহনিতে শশীর দিকে তাকিয়ে আছে, নাহ সে ঠিকি দেখছে শশীর চোখে তার জন্য কোনো ভালোবাসা নেই কিন্তু সমুদ্রের জন্য হাজারও অনুভূতি, ভালোবাসা, ভালোলাগা,অস্থিরতা এ যেনো এক সমুদ্র ভালোবাসা। রোদ্র আর কিছুই বলতে পারলো নাহ তার যেটা জানার সেটা তো জেনেই গেছে, বহু কষ্টে দেওয়াল ধরে উঠে দাঁড়ালো অতঃপর কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। শশী অবাক হয়ে রোদ্রের যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল,ওনি এখানে কেনো এসেছিলো? আর এভাবে চলেই বা গেলো কেনো। কথাটা বলেই শশী নিজের ফোনটা থেকে কাউকে কল দিলো।

শশীর রুম থেকে বেরিয়েই সোজা হাঁটতে লাগলো রোদ্র কিন্তু পা যেনো চলছে নাহ, এতোক্ষণে আটকে রাখা পানিটা আর কোনো বাঁধা না পেয়েই অঝরে গড়িয়ে পারছে। কারো আসার আওয়াজ পেয়ে রোদ্র নিজেকে সামলে চোখের পানিটা মুছে নিলো, পারভিন নাস্তা রেডি করে রোদ্রকে ডাকার জন্য শশীর ঘরের দিকেই যাচ্ছিলো কিন্তু পথেমধ্যে রোদ্রকে পেয়ে মুচকি হেসে বলল, আর বাবা তুমি এখানে আমিতো তোমাকেই ডাকতে যাচ্ছিলাম এসো।

না আন্টি আমি চলে যাচ্ছি আসলে শশীর সাথে কিছু কথাছিলো আর কিছু জানারও ছিলো সেটার জন্যই আসা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না আসলেই ভালো হতো শেষের কথাটা আনমনে বলে শুকনো একটা হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেলো। এবার যেনো পারভিন এর সন্দেহ টা আরো পাক্তাপোক্ত হলো এবার তিনি নিশ্চিত কিছুতো একটা হয়েছেই।
,,,,,,,,,,,,
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমে এসেছে কিন্তু রোদ্র এখনো বাড়ি ফেরেনি, সেই সকালে বেরিয়ে এখনো না আসায় চিন্তায় অস্থির হয়ে পায়চারি করছে শাহানারা। সমুদ্র এখনো বাড়ি আসেনি রোদ্রের আগে যদি সমুদ্র চলে আসে অতঃপর রোদ্র কোথায় জিগাস করে তাহলে কি বলবেন তিনি এসব ভেবেই আরো চিন্তিত হয়ে পড়ছেন। ওনার ভাবনার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠল শাহানারা তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে দিলো ভাবলো এই বুঝি রোদ্র এসেছে, কিন্তু নাহ তার ভাবনা ভুল দেখলো সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। যেই ভয়টা পেয়েছি সেটাই হলো এখন সমুদ্র জিগাস করলে কি বলবো?

শাহানারা কে পাশ কাটিয়ে ভিতরে আসলো সমুদ্র, শাহানারাও দরজা বন্ধ করে সমুদ্রের পিছনে গেলো,ওনি আগ বাড়িয়ে অন্যকিছু বলতে যাওয়ার আগেই শাহানারার সমস্ত চিন্তাকে পাল্টে দিয়ে সমুদ্র গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করলো, রোদ্র হিজলতলী শশীদের ওখানে কেনো গিয়েছিলো মা?

সমুদ্রের কথাশুনে শাহানারা চমকে সমুদ্রের দিকে তাকালো, যা ভয় পেয়েছিলো সেটাই হলো সমুদ্র তাহলে জেনো গেছে যে রোদ্র শশীদের ওখানে গিয়েছে। এখন আমি কি বলবো কীভাবে সমুদ্র কে সত্যিটা জানাবো, কিন্তু সমুদ্র কে না বললে তো ও ঠিকি কোনো না কোনোভাবে জেনে যাবে তখন কি হবে? না না অন্যকারো থেকে জানার চেয়ে আমিই বলে দিই, ওকে বোঝায়ে বললে ও ঠিক বুঝবে।
,,,,,,,,,,,,
খোলা একটা অন্ধকার মাঠে দাঁড়িয়ে আছে রোদ্র, চারপাশে ঝিঁঝি পোকার ডাক নির্জন মাঠে আশেপাশে কোনো মানুষ নেই। আকাশে মেঘ করেছে কালো মেঘ এসে চাঁদ টাকে আড়াল করে ফেলেছে। চাঁদের আলো আর ধরনীতে এসে পড়ছে নাহ এই জন্যই চারপাশটা এতো অন্ধকার, রোদ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে কান্না করতে লাগলো কিন্তু আফসোস ওর কান্না দেখা বা শোনার মতো এখানে কেউ নেই। হাঁটু ভেঙ্গে নিচে বসে পড়ল মাথা নিচু করে কান্না করে আবার ওই অবস্থায় আকাশের দিকে তাকালো।

শশী আমার ব্যাক্তিগত আকাশের একমাত্র মেঘে ঢাকা চাঁদ। আমি যদি কখনো বলতে পারতাম আমি তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি। এতটুকু বলে এবার শরীলের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করে বলল, আমি ভালোবাসি তোমায় শুনতে পাচ্ছো তুমি? আমি আমার দুই চোখ বন্ধ করলে তোমাকে দেখতে পাই, অনুভব করি তোমায়। রাতে ঘুমাতে পারি নাহ বুকের বাঁ পাশটায় তীব্র ব্যাথা করে, বন্ধ চোখের পাতা যখন খুলি তখনো তোমাকেই দেখতে চাই। জানি তুমি আমার নয় আমার কাছেও নেই কিন্তু আমি তবুও তোমাকে আমার আশেপাশে অনুভব করি। আমি রাতের আকাশে অজস্র তারার মাঝে এক তোমাকে খুঁজি, ভালোতো সবাই বাসে শশী কিন্তু আমার মতো ভালো কেউ বাসতে পারবে নাহ, কারণ আমার কাছে আমার চাঁদ আছে যা আর কারো কাছে নেই। আমি তোমাকে ভুলতে চাই না শশী আসলে আমি তোমাকে কখনোই ভুলতেই চাই নাহ, কারণ তুমি আমার শুধুই আমার। আমি তোমাকে সারাজীবন ভালোবেসে যাবো আর মৃত্যুর আগ পযন্ত ও ভালোবেসে যাব আজকের পর থেকে।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২৮
,
ডয়িং রুমের সোফায় গম্ভীর মুখে বসে আছে সমুদ্র, যেনো কোনোকিছু ভাবছে সে। শাহানারা রোদ্রের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে রাতে ডাক্তার এসে ঔষধ দিয়ে গেছে এই জন্যই এতো বেলা অবধি ঘুমাচ্ছে। কলিং বেল বাজতেই কাজের লোকটা গিয়ে দরজা খুলে দিলো, রোদ্র আস্তেধীরে ভিতরে প্রবেশ করলো। চোখদুটো লাল হয়ে ফুলে আছে, মাথার চুলগুলোও বেশ উষ্কখুষ্ক, গায়ের টিশার্ট টাও নোংরা হয়ে আছে ঢুলুঢুলু পায়ে সোজা হেঁটে সিঁড়ির দিকে চলে গেলো। সমুদ্র সোফায় বসে সবটাই দেখলো তবে কিছু বলল নাহ, রোদ্র যখন সিঁড়ি তে পা রাখবে তখনি পিছন থেকে সমুদ্র ওকে ডেকে বলে উঠল।

সারারাত কোথায় ছিলি? আর এই অবস্থা কেনো তোর কি হয়েছে?

সমুদ্রের ডাকে থেমে গেলো রোদ্র পিছন ফিরে সমুদ্রের দিকে তাকালো, সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে রোদ্রকে দেখে বোঝার চেষ্টা করছে। বেশকিছু সময় রোদ্র সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে গিয়ে আচমকা সমুদ্র কে জড়িয়ে ধরলো। সমুদ্র প্রথমে চমকে গেলেও পরক্ষণেই নিজেও দুহাত রোদ্রের পিঠে রেখে পুনরায় জিগাস করল, কি হয়েছে তোর আমাকে বল।

রোদ্র সমুদ্রের কথাশুনে এবার কান্না করে দিলো, সমুদ্রের কাঁধে নিজের থুতনি রেখে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, আমি আমার নিজের হাতে আঁকা অনেক প্রিয় একটা ছবি হারিয়ে ফেলেছি রে ভাইয়া। আমার অনেক শখের ছবি খুব কাছের খুব ভালোবেসে ছবিটা এঁকেছিলাম, সেটা খুঁজতেই তো হিজলতলী গিয়েছিলাম কিন্তু ওখানে গিয়ে বুঝলাম আমি আর কখনোই সেই ছবিটা আর পাবো নাহ। ওটা একেবারের জন্য হারিয়ে গেছে, এই জন্য অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে আসলে ছবিটাকে অনেক আগলে আগলে রেখেছিলাম কিন্তু তবুও কীভাবে যেনো হারিয়ে গেলো আসলে অনেক শখ করে এঁকেছিলাম তো। তবে ওটা যে পেয়েছে আমি জানি সে ছবিটাকে অনেক ভালো রাখবে যত্নে রাখবে তাই এটা ভেবেই শান্তি লাগছে। কিন্তু আরো বেশি কষ্ট লাগছে এটা ভেবে যে আমি আর কখনোই সেই ছবিটাকে আঁকতে পারবো নাহ। কারণ আমিতো আঁকতেই ভুলে গেছি, ভাইয়ারে বিশ্বাস কর আমি অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই সেই ছবিটার মতো আঁকতে পারলাম নাহ। ছবিটা হারিয়ে গিয়ে আমার সবকিছু সে সাথে করে নিয়ে গেছে, দম বন্ধ লাগছে আমার একটু একা থাকতে চাই।

কথাগুলো বলে রোদ্র সমুদ্র কে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো, সমুদ্র এখনো ওখানে সেভাবেই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাঁধের কাছটাই ভেজা ও জানে রোদ্র কথাগুলো বলার সময় কান্না করছিলো, কিন্তু কেনো? কি এমন হারিয়েছে ওর যে ও সেটার জন্য এতো কষ্ট পাচ্ছে। না না আমাকে জানতেই হবে আমার ভাই ঠিক তার কোন আঁকা ছবিটার জন্য কষ্ট পাচ্ছে।
,,,,,,,,,

রোদ্রের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শাহানারা যখনি শুনেছে রোদ্র বাড়ি ফিরেছে আর এক মুহুর্ত দেরি করেনি। তবে ভিতরে যেতে ভয় লাগছে ছেলের সামনে কীভাবে দাঁড়াবে কী বলে শান্তনা দিবে সেটা ভেবে৷ তবুও অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে ভিড়িয়ে রাখা দরজাটা খুলে ভিতরে গেলো। রোদ্র উপর হয়ে বিছানার মাঝখানে শুয়ে আছে। পরনের জামা খুলেনি পায়ের জুতোটা পযন্ত ওভাবেই আছে। শাহানারা আস্তে আস্তে রোদ্রের মাথার কাছে গিয়ে বসলো, কাঁপা কাঁপা হাতটা রোদ্রের উষ্কখুষ্ক চুলে বুলাতেই মাথা তুলে তাকালো রোদ্র। রোদ্রের মুখটা দেখতেই বুকের মধ্যে কেঁপে উঠল একি হাল হয়েছে আমার ছেলের সবদোষ আমার আমি যদি সমুদ্র কে আগেই কথাটা বলে দিতাম তাহলে এতসব কিছুই হতো নাহ। এখনো সময় আছে আমি এখনি গিয়ে সমুদ্র কে সবটা বলে দেবো তারপর যা হবার হবে তোর এই অবস্থা আমার সয্য হচ্ছে না।

কথাটা বলেই শাহানারা বিছানা থেকে উঠতে গেলে রোদ্র শাহানারার হাত ধরে পুনরায় বিছানায় বসিয়ে দিলো। অতঃপর হালকা হেসে মায়ের কোলে নিজের মাথা রেখে বলল, তারপর ভাইয়া যখন আমার থেকেও বেশি কষ্ট পাবে সেটা সয্য করতে পারবে?

রোদ্রের কথার পিঠে শাহানারা কিছুই বলতে পারলো নাহ। সত্যিতো এক ছেলের কষ্টই সয্য হচ্ছে না তখন বড়টার কষ্ট কীভাবে সয্য হবে। তাছাড়া সমুদ্র কষ্ট পেলেও সেটা প্রকাশ করবে নাহ নিজের মধ্যে চেপে রেখে ভিতরে ভিতরে গোমরে মরবে। শাহানারার ভাবনার মাঝেই রোদ্র বলে উঠল, কি বলোত মা দোষটা তোমার নয়। আসলে এখানে দোষ কারোও নয় দোষী হলাম আমি, শশী তো জানে না যে আমি ওকে ভালোবাসি তাহলে ও কেনো আমার জন্য অপেক্ষা করবে। মাগো তুমি বিশ্বাস করো আজকে যদি শুধু ভাইয়া শশীকে ভালোবাসতো তাহলে আমি ভাইয়ার কাছে শশীকে চেয়ে নিতাম আমি জানি ভাইয়ার কষ্ট হলেও আমার ভাই আমাকে খালি হাতে ফেরাতো নাহ। কিন্তু শশী নিজে ভাইয়াকে ভালোবাসে অনেক বেশিই ভালোবাসে। সেখানে আমি নিজের ভালোবাসার মানুষের থেকে তার ভালোবাসা কীভাবে কেড়ে নিই বলো। আমিতো শশীকে কখনোই নিজের মনের কথা বলেনি তাহলে ও কেনো আমাকে বুঝবে আমার জন্য অন্য কিছু ভাববে৷ ওতো আমাকে শুধুই একজন ভালো বন্ধু বড়ভাই হিসেবে দেখেছে মা। ও কীভাবে বুঝবে ওর জন্য কারো মনে বিশাল ভালোবাসার পাহাড় জমে আছে। ও মা জানো আমার না ভীষণ কষ্ট হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে আসছে কেমন জানি ভিতরে ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আমি কেনো বিদেশ গেলাম মা কেনো ওকে সেই সময় তোমার কথামত বিয়ে করে নিলাম না মা এখন যে আমার ভীষণ আফসোস হচ্ছে মা। আমি শ্বাস নিতে পারছি না আমি একটু প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে চাই মা। একটু শুদ্ধ বাতাস প্রয়োজন ভিতরে কেমন জ্বলছে আচ্ছা মা আমি কি মারা যাচ্ছি?

রোদ্রের এমন কথা আর সয্য হলো না শাহানারার রোদ্রের মাথাটা বুকে চেপে ধরে কান্না করতে করতে বলল, একটু চুপ কর বাবা কিচ্ছু হয়নি এই যে মা আছে তো আর কষ্ট হবে নাহ চোখটা একটু বন্ধ করে একটু ঘুমা দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছ।

আমিও ঘুমাতে চাই মা কিন্তু ঘুম তো আসছে না আমার ঘুমটাও শশীর মতো ছেড়ে চলে গেছে। আমি কীভাবে বাঁচবো মা আমার যে অনেক কষ্ট হচ্ছে সয্য করতে পারছি নাহ মা। আমি কেনো গেলাম তখন কেনো তোমার কথা শুনলাম না মা কেনো।

রোদ্র ছোট বাচ্চার মতো হাউমাও করে মায়ের কোলে মাথা রেখে কাঁদছে আর নিজে নিজেই এসব কথা বলছে। শাহানারা আস্তে আস্তে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে একটা সময় কান্না করতে করতে রোদ্র ঘুমিয়ে গেলো। শাহানারা আস্তে করে রোদ্রের মাথাটা বালিশে রেখে ওর মুখের দিকে তাকালো, একটা রাতের মধ্যে ছেলেটার কি হাল হয়েছে। পায়ের কাছ থেকে কথাটা নিয়ে গায়ের উপর দিয়ে বেরিয়ে গেলো।
,,,,,,,,,,,
সমুদ্র শশীর থেকে সবটা শুনেছে তবে এটা বুঝতে পারছে নাহ রোদ্রের হয়েছেটা কি। এসে থেকে তো সব ঠিকি ছিলো তাহলে হঠাৎ কি এমন হলো যে ও কাউকে কিছু না বলে হিজলতলী গেলো। আর ওখানেও কেমন আনমনা ছিলো কারো সাথে তেমন কথাও বলেনি। আবার হঠাৎ করেই চলে আসছে তবে সেদিন আর ঘরে ফেরেনি তাহলে রাতে ও কোথায় ছিলো? এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলো কেনো? আগে তো কখনো এমন করেনি তাহলে হঠাৎ কি এমন হলো যে ও এমন বদলে গেলো। সেদিনের পর থেকে কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে, রুমের বাইরে বের হয় নাহ কথাও বলে নাহ কারো সাথে। ডয়িং রুমের সোফায় বসে সমুদ্র এসব ভাবছিলো তখনি শাহানারা হাতে একটা লিস্ট নিয়ে সমুদ্রের পাশে বসে ওটা ওকে দেখাতে দেখাতে বলল।

দেখতো বাবা এটা ঠিক আছে কিনা এখান থেকে কাকে কাকে বাদ দিতে হবে আর কে কে বাকি আছে।

সমুদ্র মায়ের দিকে তাকিয়ে হাতের লিস্ট টা নিচে নামিয়ে গম্ভীর কন্ঠে জিগাস করলো, রোদ্রের কি হয়েছ মা?

সমুদ্রের এহেন কথা শুনে শাহানারা ভয় পেয়ে গেলো, আমতা আমতা করে কিছু একটা বলতে যেতেই সমুদ্র থামিয়ে দিয়ে বলল, যেটা জিগাস করেছি সেটারই উত্তর দাও মা। ও এমন চুপচাপ হয়ে গেলো কেনো? সেদিন কী এমন হলো যে এভাবে কাউকে না জানিয়ে হিজলতলী চলে গেলো।তারপর ওখানে গিয়েও কেমন অদ্ভুত ব্যাবহার করছে, সেদিন রাতে ঘরেও ফেরেনি পরদিন এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কি সব ভুলভাল বকছিলো আর কান্না করছিলো। তারপর থেকেই এমন চুপচাপ হয়ে গেছে, মূলত ওর হয়েছে টা কি মা?

সমুদ্রের কথার জবাবে শাহানারা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে নাহ। চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে সমুদ্র আরো কিছু বলতে যাবে তখনি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে রোদ্র বলল, তোর সব প্রশ্নের উত্তর আমি দিচ্ছি ভাইয়া। আজকে তোকে সব বলবো কেনো আমি সেদিন হিজলতলী গিয়ে ছিলাম সবটা তবে শোনার পর সয্য করতে পারবি তো?

রোদ্রের কথাশুনে শাহানারা ভয়ে রোদ্রের দিকে তাকালো সত্যি কি রোদ্র সমুদ্র কে সবটা বলে দেবে? তারপর, তারপর কি হবে?

#চলবে?