প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-২২

0
263

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২২
,
এভাবে আমার ঘরে উঁকি মারছো কেনো?

এইরে ধরা পড়ে গেলাম এই জন্যই হয়ত বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। ওনাকে এই সময়ই আসতে হলো, সেই বিকেলের পর থেকে আর ওনার সামনে পড়িনি ওই ঘটনার পর থেকে কোন মুখে ওনার সামনে দাঁড়াবো। ওনি যতদিন বাড়ি থাকতো নাহ দিনের বেশিরভাগ সময়ই ওনার ঘরে শুয়ে বসে কাটাতাম। সেই সময়ই হয়ত ভুল করে আমার বইটা ফেলে রেখে গেছি সেটা নেওয়ার জন্যই আসা। তবে ওনি রুমে আছে কিনা সেটা জানি নাহ এই জন্য কেবলি একটু উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলাম আর তখনি ওনি এভাবে চলে আসবে ভাবিনি এখন কি বলবো ওনাকে? থাক কোনো ভাবেই নাভার্স হওয়া যাবে নাহ শশী ওনাকে বুঝতে দিবি নাহ যে তুই ওনাকে দেখে ভয়ে লজ্জায় মরে যাচ্ছিস। যত ভয় লজ্জা সব ভিতরে চেপেচুপে রাখ আপাতত এখন একটু উপর উপর দেখা যে তুই ভীষণ সাহসী। মনে মনে কথাগুলো বলে একবুক সাহস নিয়ে পিছন ঘুরে ওনার দিকে তাকালাম, ব্যাস বহু কষ্টে জমানো সাহসগুলো ফুঁস করে উড়ে গেল এখন কি হবে? সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে শশীর দিকে তাকিয়ে আছে, পেশী বহুল হাত দুটো পিছনে রাখা।শশীকে এভাবে চোরের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কয়েক পা এগিয়ে আসলো ততক্ষণে শশী দরজার সাথে গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে।

এই মেয়ে মতলব কি তোমার এভাবে আমার রুমের বাইরে কি করছো?

আমার আবার কি মতলব থাকবে আমিতো শুধু আমার বইটা নিতে আসছিলাম। আপনি রুমে আছেন কিনা সেটাই দেখছিলাম। আমতা আমতা করে এক নাগাড়ে কথাগুলো বলল শশী, বলা শেষে একবার চোখ তুলে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে পুনরায় চোখ ফিরিয়ে নিলো। সমুদ্র বেশ কিছুক্ষণ শশীর দিকে তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। সাথে সাথে শশী নিজের বুকে হাত রেখে লম্বা একটা শ্বাস নিলো, এইসব পুলিশ আর্মিদের সামনে পরলে নিজেকে কেমন চোর চোর মনে হয়। আর ওনিও বা কেমন এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো যেনো আমি বিশাল বড় টেরোরিস্ট আর ওনার ঘরে বোমা ফিট করতে আসছি,আজব লোক কখনো কি একটু নরমাল ভাবে তাকানো যায় নাহ।

দরজার বাইরে একা একা বকবক না করে ভিতরে এসে কি নেওয়ার সেটা নিয়ে জলদি বের হও আমি ঘুমাবো।

ভিতর থেকে সমুদ্রের গলার আওয়াজ পেয়ে খানিক কেঁপে উঠল শশী, পরক্ষণেই বুকে থুথু দিয়ে যেই রুমে ঢুকতে যাবে তখনি ভাবলো এভাবে এতোরাতে একটা ছেলের রুমে যাবে বিষয় টা কেমন দেখায় নাহ? তারচেয়ে বরং বইটা কাল সকালেই নিয়ে যাবো হ্যাঁ তাই ভালো হবে এখন মানে মানে কেটে পড়ি। কথাটা ভেবেই শশী কোনো কথা না বলে আস্তে করে নিজের রুমে চলে গেলো। সমুদ্র বেশ কিছুক্ষণ শশীর কোনো সাড়া না পেয়ে দরজার কাছে এসে দেখলো শশী নেই বাইরে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে দরজা বন্ধ করে দিল। কেবলি বিছানায় উঠে শরীলটা এলিয়ে দিয়েছে, বেশিরভাগ সময় বনে জঙ্গলে শক্ত মাটির উপর শুয়ে শুয়ে নরম বিছানা পেয়ে দু-চোখে খুব সহজেই ঘুম চলে এসেছে। চোখদুটো কেবলি এক করেছে তখনি বিছানা কাঁপিয়ে ফোনটা বেজে উঠল ওমনি সটান করে চোখ খুলে গেলো। হাজার অনিচ্ছা সত্বেও পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে সামনে ধরতেই রাগে পুরো মুখ লাল হয়ে গেলো, তবুও কোনো রকমে নিজেকে কন্ট্রোল করে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ বিদ্রুপ করে বলল,

তুমি যে এতোটা ভিতু সেটাতো আমি জানতাম না সমুদ্র, ওই ছোট্ট একটা মেয়ের জন্য এতোবড় একটা কান্ড ঘটালে? শেষে কিনা গুন্ডামী শুরু করলে, কিন্তু তারপরেও তো লুকিয়ে রাখতে পারলে না ঠিক জেনে গেলাম। কত চালাক তুমি সমুদ্র নিজে বিয়ে করবে না বলে এতো কান্ড করে ওখান থেকে মেয়েটাকে কৌশলে বের করে আনলে এখন তো ঠিকি বিয়ে করছো।

হ্যাঁ খুব শীঘ্রই কার্ড পেয়ে যাবেন আপনাদের সপরিবারে নিমন্ত্রণ।

সমুদ্রের কথাশুনে ও পাশের ব্যাক্তি বাঁকা হেসে বলল, সে আর বলতে যতই হোক আমাদের কত কাছের সম্পর্ক। আচ্ছা বাদ দাও তা মেয়েটাকে কি সত্যিই বিয়ে করবে নাকি এর পিছনেও তোমার অন্য কোনো প্লান আছে৷ কি বলোতো তুমি বিয়ে করছো এটা ঠিক হজম হচ্ছে না, শুধু শুধু নিজের জীবনের সাথে মেয়েটাকে জড়ায়ে মেয়েটাকে বিপদে ফেলতে চাইছো কেনো?

ভুলেও ওদিকে নজর দেওয়ার চেষ্টাও করবেন নাহ, আপনি খুব ভালো করেই জানেন সমুদ্র হুমকি দেয় নাহ সোজা কাজ করে দেখায় তাই বলছি নিজের ভাইয়ের ছেলেকে সাবধান করুন নয়ত অকালে প্রাণটা হারাবে।

কথাটা বলেই সমুদ্র ফোন কেটে দিলো, এভাবে মুখের উপর ফোন কেটে দেওয়াই মালবিকা রেগে হাতের ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, অনেক হয়েছে আর নাহ এবার তোমাকে দেখাবো এই মালবিকা মির্জা কি জিনিস।

ফোনটা কপালে ঠেকিয়ে ভাবনায় মগ্ন ছিলো সমুদ্র, সবটা কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে যতই চেষ্টা করছি সবটা ঠিক করার কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে সবটা ঘেটে যাচ্ছে। এরপর থেকে প্রতিটা পদক্ষেপ ভেবে চিন্তে ফেলতে হবে, এসব ভাবনার মাঝেই হাতের ফোনটা আবার বেজে উঠল সমুদ্র ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে ঠিক করে ফোন রিসিভ করে কানে ধরল।

স্যার এটাকে কি করবো বলে তো দিলেন নাহ।

তোমার সাথে তোমার বাসায় নিয়ে যাও। কথাটা বলে সমুদ্র ফোন কেটে দিলো অতঃপর সোজা বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল, এখন একটা লম্বা ঘুম ভীষণ প্রয়োজন। এদিকে ইমরান পড়েছে বিবাকে কান থেকে ফোনটা সরিয়ে পিছনে ঘুরে শাহিন এর দিকে তাকালো। ঙ্গান হারিয়ে নিচে পড়ে আছে কয়েকটা ঘুষিতেই যে এভাবে অঙ্গান হয়ে যাবে ভাবিনি এখনো তো হাত পা কিছুই ভাঙ্গা হলো নাহ, স্যারতো বলেছিলো হাত আর পা ভেঙ্গে বসায় রাখতে কিন্তু এটাতো পুরাই হ্যাংলা আমার হাতের মার খেয়েই এই অবস্থা না জানি স্যারের হাতে খাইলে কি হতো। বেচারার কপাল ভালো স্যার নিজে না এসে আমাকে পাঠিয়েছে।
,,,,,,,,,
মাথা ধরে সোফায় চুপচাপ বসে আছে শাহানারা, সারাটা রাত ঘুম হয়নি মাথা বেথ্যায় ফেঁটে যাচ্ছে এই বয়সে এতো চিন্তা আর নিতে পারছে নাহ। সমুদ্র এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি শশী রান্নাঘরে শাহানারার জন্য চা বানাচ্ছ। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ডয়িং রুমের দিকে আসতেই শাহানারা শশীর দিকে তাকালো এই মিষ্টি মুখের দিকে তাকালে কি রাগ করা যায়? সমুদ্র যদি প্রথমেই রাজি হয়ে যেতো তাহলে এখন এই অবস্থায় পড়তে হতো নাহ, তখন এতো করে বললাম কিছুতেই রাজি হলো নাহ। এমন সময় রাজি হলো যখন আমি রোদ্রকে কথা দিয়ে ফেলেছি, না না আমাকেই কিছু একটা ভাবতে হবে। শশী চায়ের কাপটা শাহানারার হাতে দিয়ে যেই চলে যাবে ওমনি শাহানারা শশীর ডান হাতটা চেপে ধরে বলল।

আমার পাশে একটু বসতো তোর সাথে কথা আছে।

শশী মুচকি হেসে শাহানারার পাশে গিয়ে বসলো, ওনি চায়ের কাপটা টি টেবিলে রেখে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে দুহাতের মুঠোয় শশীর হাতটা রেখে বলল, আমায় সত্যি করে একটা কথা বলবি আজকে?

কি কথা আন্টি।

তুই রোদ্রকে পছন্দ করিস?

হ্যাঁ করবো না কেনো আমি ওনাকে অনেক পছন্দ করি।

বেশ ভয়ে ভয়েই কথাটা জিগাস করেছিলো শাহানারা পাছে শশী যদি না বলে তখন তো তার ছেলেটার মন ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু শশীর মুখ থেকে কাঙ্খিত উত্তরটা পেয়ে মনে মনে বেশ শান্তি পেলো।তবে সেই শান্তিটাও বেশিক্ষণ স্হায়ী হলো নাহ শশীর পরের কথাগুলো শুনে। রোদ্র ভাইয়া অনেক ভালো ওনি আমাকে অনেক হাসায়, একদম বন্ধুর মতো। আমার যখন মন খারাপ থাকে আমি ওনার সাথে কথা বলি আর এক নিমেষে আমার মন ভালো হয়ে যায়৷ আমরা অনেক ভালো বন্ধু আন্টি যদিও ওনি আমার থেকে বয়সে অনেক বড় তাতে কি হয়েছে বন্ধুত্বে কোনো বড় ছোটো নেই এটা ওনিই আমাকে বলেছে।

শশীর সরল মনের কথাগুলো শুনে ভিতরে ভিতরে অনেকটাই দমে গেলেন শাহানারা। আমার ছেলেটা যেই সম্পর্কের নাম দিয়েছে ভালোবাসা মেয়েটা তো সেই সম্পর্কটাকে বন্ধুত্বের বাঁধনে বেঁধে ফেলেছে। শাহানারা বেশ বিচক্ষণ মহিলা ওনি ভিতরে ভিতরে ঘাবড়ে গেলেও মুখে তা প্রকাশ করলেন নাহ। শুকনো একটা হাসি দিয়ে শশীর মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁপা গলায় বলল, সমুদ্র কে ভালোবাসিস?

শাহানারার মুখ থেকে এমন কথা শশী মোটেও আশা করেনি, কথাটা শুনতেই লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো এখন ও কীভাবে বলবে, আপনার ওই রাগী কঠোর ছেলেটাকে ভিতরে ভিতরে মন দিয়ে বসে আছি। ভয় থেকেও যে ভালোবাসা হয় সেটা ওনার সাথে পরিচয় না হলে বুঝতেই পারতাম নাহ। শশীর লজ্জমাখা মুখ দেখেই বুঝে গেলেন শাহনারা জল বেশ অনেকটাই গড়িয়ে গিয়েছে এখন তার একটাই কাজ আর সেটা হলো রোদ্রকে বোঝানো নয়ত ছেলেটা অনেক বেশি কষ্ট পাবে।
,,,,,,,,,,
ঘড়ির কাঁটা নয়টার ঘরে গিয়ে থেমেছে শশী রেডি হয়ে ক্লাসের জন্য বের হবে কিন্তু বইতো সমুদ্রের ঘরে। এখন মনে হচ্ছে রাতের বেলা গিয়ে বইটা আনলেই ভালো হতো কে জানতো যে ওনি এতো বেলা অবধি পড়ে পড়ে ঘুমাবে। সমুদ্রের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে শশী বেশ কয়েকবার নক করেছে তবে কোনো সাড়া শব্দ নেই। শাহানারা কে যে বলবে সেও জয়কে নিয়ে স্কুলে গিয়েছে আজকে ওর স্কুলে কি একটা কাজ আছে এই জন্য যেতে হয়েছে। জোরে জোরে তিনবার শ্বাস নিয়ে জোরে দরজায় হাত দিয়ে থাবা দিলো, বেশ কিছুক্ষন পর খট করে ভিতর থেকে দরজা খুলে গেলো। শশী এখনো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এখনো সমুদ্র বাইরে আসেনি হয়ত সিটকেনি টা খুলে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। শশী আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো কিন্তু নাহ কেউ আসলো নাহ ওদিকে ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। আর না পেরে শশী আলতো হাতে দরজা খুলে ভিতরে গেলো, ভিতরে যেতেই এসির ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগতেই ভিতরে কেমন শিরশির করে উঠল। বন্ধ জানালার উপর পর্দা ফেলা তবুও যা সূর্যের আলো আসছে এতে রুমের ভিতরের সবকিছু বেশ ভালো মতোই দেখা যাচ্ছে। এক পা দু পা করে ভিতরে গিয়ে খাটের দিকে চোখ পড়তেই শশী দেখলো সমুদ্র উদম শরীলে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে, কমড় অবধি কাঁথা নেওয়া। বেশিক্ষণ সেদিকে না তাকিয়ে চটপট করে টেবিলের উপর থেকে বইটা নিয়ে ঘুরে আসতেই সমুদ্রের পিঠের দিকে চোখ পড়ল। কাঁধের নিচে পিঠের এক পাশে একটা দাগ বেশ গভীর মনে হচ্ছে যেনো ঘা টা বেশ কয়েকদিন আগেই শুকিয়েছে। পুরো পিট জুড়ে এমন হালকা পাতলা ছোটো খাটো আরো বেশ দাগ আছে তবে এটা চোখে লাগার মতো। শশী যাবে না যাবে না করেও একপা একপা করে এগিয়ে গেলো কেবলি একটু ঝুঁকে দাগটা কিসের এটা দেখবে ওমনি সমুদ্র ঘুরে চিৎ হয়ে গেলো, আচমকা সমুদ্রের এহেন কাজে শশী ভয় পেয়ে পিছনে সরতে গিয়ে উল্টে পায়ে পা বেঁধে সমুদ্রের বুকের উপর হুরমুর করে পড়ে গেলো।
শশীর লম্বা বেণীর শেষ মাথার অল্প করে ছেড়ে রাখা চুলসহ পুরো বেণীটাই সমুদ্রের মুখের উপর পড়ল বাঁ হাতে বেণীটা মুখ থেকে সরিয়ে শশীর বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

ইমরান এর কাছে বউ বলে পরিচয় দিয়ে এখন সোজা বাসর করতে চলে আসলে? এতোটুকুও বাচ্চা একটা মেয়ে বাসর করার এতো ইচ্ছে? তা আমাকে সামলাতে পারবে তো নাকি শুরু করার আগেই অঙ্গান হয়ে যাবে।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে