Wednesday, September 3, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2326



 সতীনের_সংসার  পর্ব_১৬

0

 সতীনের_সংসার  পর্ব_১৬

Writer: তানজিন সুইটি

এটা ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে আসলো আনিকার।
হঠাৎ কারো পায়ের ছোয়া পেলো।আস্তে করে চোখ মেলে,ডিম লাইটের আলোতে দেখার চেষ্টা করে চলেছে কি হচ্ছে……..?????????

ওপাশ থেকে রায়হানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে রিয়া।
তার জন্য একটু ছোয়া লেগে গেছে আনিকার।সেটা দেখার পর সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে গিয়ে সোফাতে মুখ গুজে শুয়ে পরে।কান্না যে করবে,সেটাও হ্রাস পেয়েছে।খাটের প্রাণে একবারের জন্যে দেখে দেখেওনি
জ্বলে পুরে ছারখার হয়ে যায় যদি ভিতরে।

রাতও বেঈমান হয়ে গেছে এখন তার কাছে।শেষ হওয়ার নামও নিচ্ছে না কোনো মতে।হয় তো সবাই ঠিকই বলে।দুঃখে কষ্টের রাত পার হয় না কারো জীবনেই।সেটাই হয়েছে আনিকারও আজ।

দূর পর্বতের আজানের ধ্বনি শুনতে পেয়ে।তাড়াতাড়ি করে উঠে পরে ফজরের নামাজ আদায় করবে বলে।
চলে যায় পাশের রুমে।যাওয়ার সময় একবারের জন্যে ঐদিকে ফিরে তাকিয়ে দেখেনি তারা এখন কোন পরিস্থিতিতে আছে?

অযু করে জায়নামাজ বিছিয়ে,নামাজের পর্ব শেষ করে দুহাত মোনাজাত তুলে আল্লাহর কাছে দুঃখ কষ্টের কথা তার কাছে শেয়ার করবে বলে। আসলে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া, কেউ নেই এই দুনিয়াতে,যে তাকে ভালোবাসার বাধনে আগলে রেখে বেধে রাখবে সারাটা জীবন ভরে।যাই হোক আল্লাহই পারে তার মনের সব কিছু বুঝতে তাই কেঁদে কেঁদে ভিজিয়ে ফেলছে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করার দু হাত আর জায়নামাজের কিছু অংশ।মোনাজাত শেষ করে। চলে গেলো ছাদে কিছুখন প্রকৃতির আবহাওয়া অনুভব করতে।

ভোরের সূর্যটা নতুন নয়।তবুও আনিকার কাছে আজ অন্যরকম মনে হয়।সুন্দর বললে ভুল হবে।কষ্টের ছাপটাই বেশি ফুটে উঠেছে চারিদিকে।হঠাৎই কাঁধে কারো হাতে স্পর্শে ভয়ে পাওয়ার মতো দাড়িয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে।পরক্ষণেই বুঝতে পারলো..
এই ছোয়া তার অনেক দিনের চেনা।সে এখন যতই পর হোক না কেনো?তবুও কি এই ছোয়া ভুলা সম্ভব?

কিছু না বলে চুপ করে সামনের দিকেই চেয়ে আছে।
এমন চুপচাপ থাকতে দেখে।পাশ থেকে বলে উঠে।

-কি ব্যপার এতো ভোরে,তাও আবার ছাদে একা একা দাড়িয়ে?

আনিকা কোনো কথার উত্তর না দিয়ে পাশ ঘেষে চলে যেতে নিলে হ্যাচকা টান দিয়ে বুকের সাথে জাপটে ধরে
মুখো মুখি হয়ে…

-রাগ করেছো আমার উপরে।

এখনও কোনো উত্তর নেই?নিশ্চুপ…

-কি হলো?কথা বলবে না আমার সাথে।আমি কি খুবই খারাপ?নাকি গতকাল রাতের জন্য মন খারাপ।আমি জানতাম না রিয়া এখানে এভাবে চলে আসবে।আগে যদি জানতাম তাহলে….

এবার আর মুখ আটকে রাখতে পারলো না আনিকা।

-আমি কি তোমাকে সেই ব্যপারে কিছু বলেছি বা কোনো রাগ দেখিয়েছি।এখন তোমার ব্যপার।তোমার বউ কোথায় যাবে না যাবে,সেটা তোমার বউয়ের ব্যপার।

বলে চলে যেতে লাগে রায়হানের বাহু ডোরের থেকে।দু এক পা গিয়ে আবার ফিরে আসে।

-আরেকটা কথা,কোনো মেয়ে তার স্বামীর ভাগ দিতে চায় না।তবুও বলছি তোমাকে..রিয়াকে দিলাম স্বামীর ভাগ কিন্তু কয়েকটি কথা আছে?কখনো হিংসা করতে না করবে।আর পারলে নিজের সংসার জীবন সুন্দর করে সাজানোর চেষ্টা করতে বলবে।সেটাতে আমার কোনো আপত্তি নেই?কিন্তু আমার রুমে এক দিনের জন্য আর যেনো না দেখি ওরে।

বলে চলে গেলো দ্রুত গতিতে।মুখে বলতে সহজ হলেও
ভিতরে ভেঙে চুরে নিচ্ছিলো ওর।আসলে আনিকার মতো মেয়ে হয় তো পৃথিবীতে ২-১জন হাতে গুনা পাওয়া যাবে ভাগ্যক্রমে।তাও সন্দেহ আছে।এমন মেয়ে খুজে পেতে।

অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে আনিকার দিকে।
তারপর নিজের রুমে এসে রিয়াকে ঘুম থেকে উঠালো ফ্রেস হওয়ার জন্যে।

-কি হয়েছে তোমার?এভাবে উঠাচ্ছো কেনো আমাকে?

-ফ্রেস হয়ে নাও,বাসায় যাবো।

-কোন বাসায় যাবো?

-কোন বাসায় ছিলে?সেই বাসায় যাবো এখন নাস্তা করে।

-কেন???এটা কি বাসা না? আর এখানে থাকলে কি হবে আমার?

-তোমার কিছু হবে না।এখানে দুজন এক সাথে রাখবো না।তো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।

-দু জনে এক সাথে মানে…

কথা আর বলতে দিলো না রিয়াকে।তার আগেই থামিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে যেতে বললো রিয়াকে।
রিয়াও ওয়াশরুমে ডুকে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো দেখে নিবে।

ফ্রেস হয়ে নাস্তা খেয়ে শ্বাশুড়ীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতে লাগলে।বলে উঠে মিসেস সালেহা বেগম

-মা মাঝে মধ্যে এসো বেড়াতে।ভালোই লাগবে সবার, তোমার আসাতে।

এমন কথাতে রিয়া তো মাথার উপরে উঠে গেলো লাফ দিয়ে।মাথা নিচু করে ৩২টা দাঁত কেল্লিয়ে বলে

-আচ্ছা আম্মা আসবো চিন্তা করবে না। আর আপনার শরীরের প্রতি খেয়াল করবেন কেমন।

পাশ থেকে আনিকার চোখ টল টল করছে। তবুও কোনো মতে আটকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

চলে গেলো ঠিকই তারা।সপ্তাহ পার হয়ে যায় কিন্তু
বাসার মুখে আসার নাম নেয় না রায়হান আর?

চিন্তা করতে থাকে,পরক্ষণেই মনে পরে যায়,এখন তো আর সে একা নয়,সে তো আরেকজনের সাথে।তাকে ডিস্টার্ব করাটা এখন কি আর ঠিক হবে?

প্রায় এক মাস অতিক্রম হতে চলেছে। তবুও রায়হানের কোনো খবরই পায় না কারো কাছে?সামনে ঈদ
বাসায় না আসলে ছেলেটার শপিং কে করবে?তাই বাধ্য হয়ে রায়হানকে ফোন করে…

অনেকবার কল করার পরেও রিসিভ করার নামই নিচ্ছি না ওপাশ থেকে।পরে আর দেয় না কল।
মন খারাপ করে রেখে দিয়ে চলে যায় ইফতার করতে।

ইফতার সেরে যখন রুমে প্রবেশ করে তখন শুনতে পায় ফোন বাজছে।সেটা হয় তো ওর কাছে অনেকটা ভালো লাগার মতো কাজ করে বুকের ভিতরে।তাই দৌড়িয়ে গিয়ে রিসিভ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে।

অপরপাশ থেকে…

-কি ব্যপার???এভাবে হাপাচ্ছো কেনো?আম্মুর কিছু হয়েছে কি?

রায়হানের কথায় অবাক হলেও,চুপ করে রয়।কারণ,এতোদিন পর নিজের থেকে কল করে খোঁজ নেওয়াও হয় তো ভুল হয়ে গেছে।তাই তো এতো কিছু জিঙ্গাসা করলো কিন্তু একটিবারের জন্য আমার কথা জিঙ্গাসা করলো না কেমন আছি?

আগের কথা আনিকার অনেক মনে পড়চ্ছে।যখন সেকেন্ডে সেকেন্ডে কল করে জ্বালাতন করতো।তখন শত বারন করার পরেও বলতো তোমার খোঁজ খবর না নিলে দম আটকে আসে।

আর এখন দিনের পর দিন কেটে যায় খোঁজ নেওয়া কি দূরে থাক?আগে তার মার কিছু হলো কিনা সেটা জিঙ্গাসা করে যায়?ফোনের অপরপ্রান্তে ভেসে আসে

-কি হলো কথা বলছো না যে?

কিছুটা নরেচরে উঠে কণ্ঠে পেয়ে..

-হুমম বলো শুনছি তো।

-শুনছো তো ভালো কথা।কিন্তু কথা বলছো না কেনো?
আর কিসের জন্য কল করেছো?

-ইয়ে মানে.. আজ কতো দিন হলো তোমার কোনো খোজ নেই।তার উপরে কিছু দিন পর ঈদ।আরিয়ানও অনেক খিজি করছে তোমার জন্য, কবে এসে শপিং করবে।

-এর জন্য কল করেছো।আরে আমি তো এমনিতেই দুদিন পর আসছি বাড়িতে।

-দুদিন পরে মানে??এখন তুমি কোথায়?

-আরে গ্রামের বাড়িতে আসছি রিয়ার সাথে।ওর আত্মীয় স্বজন আসতে দিতে চাচ্ছে না।তার উপরে রিয়ার ছোট বোন বলছে ঈদ এখানেই করে যেতে।
তবুও অনেক বুঝানোর পর আসতে পারবো দুদিন পর বাড়িতে।

এসব কথা শুনে আনিকার চোখ থেকে পানি টপ টপ পরতে থাকে গড়িয়ে গড়িয়ে।???নিজের পেটের সন্তান এখন তার কাছে পর হয়ে গেছে শালিকে আপন ভেবে।হায়রে দুনিয়া রে..

-আর চিন্তা করো না।আমার আসতে দেরি হলেও আম্মু শপিং করে দিবে,বলে দিয়েছে আম্মু আমাকে?

তার মানে মা ছেলের ঠিকই কথাবার্তা হয় আর মাঝখান থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়।
বাহ বাহ?মনে মনে ভাবে আনিকা এসব কথা।

-আচ্ছা চিন্তা করো না।আমি ভালো আছি আর তাড়াতাড়ি চলে আসার ব্যবস্থা করছি।এখন রাখি আল্লাহ হাফেজ।

নিজের মতো নিজে কথা বলে রেখে দিলো। এপাশ থেকে কানের কাছে ফোন এখনও ধরে ঠাই দাড়িয়ে রয়লো।মানুষটা শুধু চেঞ্জ হয় নি।ভুলেও গেছে অনেক কিছু বুঝতে পেরে গেছে আনিকা।

কান থেকে ফোনটা সরিয়ে খাটে ধপ্পাস হয়ে শুয়ে পরে বালিশ নিয়ে।জীবনে বড় ভুল করে ফেলেছে, সেটা যে এখন সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

বাবা মার ভালোবাসা পেলো না জন্মের পরে। বোনের আদর সোহাগে বড় হয়েও কোনো লাভ হলো না,তার দাম না দিয়ে অন্য জনের মুখের হাসি ফুটাতে গিয়ে
মায়ের মতো বোনকে হারালো আনিকা।

আজ তার কাছে বড় শত্রু মনে হচ্ছে ভাগ্য। ভাগ্যের জন্যেই আজ তার কপালটা পুরা।?কেন যে সেই ভাগ্য হলো না তার বাবা মার কাছে চলে যাওয়ার।তাহলে হয় তো এতো কষ্ট পেতে হতো না আজ তার।????

চলবে……….

(বিঃদ্রঃ এই গল্পটা অনেক গ্রুপে যায় সেটা আমি দেখি।
আর যারা যার কমেন্ট করেন সেখানে, সেটাও দেখি।
এখন কথা হলো এটা বলছি কেনো???আসলে
প্রিয় পাঠক-পাঠকেরা আমার…আমি কোথাও হারিয়ে যায় নি গো আর আমার মেমোরিও লস হয় নি যে গল্প লেখা বন্ধ করে দিবো।আসলে কি জানেন…কখনো কোনো লেখককে বুঝার চেষ্টা করে দেখেন নি।তাই নানান কথা বলতে মুখে আটকে না আপনাদের।
আমার কি সমস্যা হয়েছিলো সেটা জানলে কি সমাধান করে দিবেন আপনারা।তাহলে বলি শুনুন…১ম সমস্যা আমার পড়াশোনার চাপ অনেক। ২য় সমস্যা আমার পারিবারিক নিয়ে।৩য় সমস্যা আমার আইডি সমস্যা হয়েছিলো সেটা অনেক কষ্টে ফিরে পেয়েছি।তবুও যদি আপনারা আনন্দ পান নানান ধরনের কথাবার্তা বলে তো ধন্যবাদ আপনাদেরকে।?ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে কষ্ট করে পড়ার জন্যে)

সতীনের_সংসার পর্ব_১৫

0

সতীনের_সংসার পর্ব_১৫
Writer: তানজিন সুইটি
রিয়ারও কোনো খবর নেই এ কয়েকদিনে?কেমন মেয়ে আল্লাহ মাহমুদ জানে।আল্লাহুর কালাম পড়ে বিয়ে করেছে রায়হানকে।তবুও একটু টান নেই তার প্রতি তিল পরিমাণে।হয় তো চিকিৎসার বহন নিতে হবে বলে।দূরে সরে আছে কোনো খোজ খবর নিচ্ছে না কারো কাছে।সময় হলে বের হয়ে যাবে মনসার মতো করে।

হয় তো বিষটা বেশি হবে মনসার ছবলের বিষের থেকেও খারাপ হবে তার আবির্ভাবে।তার জন্য হতে পারে সংসার ভাঙনের নতুন প্রভাব।


রায়হানের সুস্থ্যতার জন্য সব রকমের সেবাযত্ন করে যাচ্ছে আনিকা।দিনের পর দিন,রাতের পর রাত জেগে কাটিয়েছে নিঃস্বার্থভাবে তার প্রাণ প্রিয় স্বামীকে সুস্থ্য করার জন্যে।তবুও কি সেই ফল পাবে।আল্লাহ হয় তো তার জীবনে সেইটুকু সুখ লেখেও রাখে নি অভাগি বলে।দুদিন পার হতে না হতেই তার প্রমাণ পেয়ে যাবে।

ঘুম ঘুম চোখে হেলান দিয়ে বসে আছে খাটের এক কোণে রায়হানের মাথার পাশে।হঠাৎ করে এমন করবে আনিকাও বুঝতে পারে নি একবারের জন্যে।আচমকা
হ্যাচকা টান দিয়ে যাপ্টে ধরে ফেলে দিয়ে তার উপরে উঠে পুরুষত্ব প্রকাশ করবে।শত চেষ্টা করার পরেও, পেরে উঠতে পারছে না রায়হানের সাথে।দু চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরছে বেরি বাধ ভেঙে যাওয়ার মতো করে।জোরে চিৎকারও দিতে পারছে না আবার সহ্যও করতে পারছে না।কি করবে সে?অবশেষে হাল ছেরে দেয়,না পেরে।তার মতো সে পুরুষত্বের পরিচয় দিয়েই যাচ্ছে তো যাচ্ছে।তাকে দেখে যে কোনো মানুষই বলবে কতোদিনের খুদার্থ সে?তাই তো সে শকুনের মতো ছিরে ছিরে মনের সুখে খেয়ে চলেছে তাকে।

অনেকখন পর কেটে গেলে,ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পরে।
আনিকা পাশ থেকে সরে গিয়ে নেমে পরে ফ্লোরে।
শূণ্য শরীরে ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে আনিকার।
এই কি সেই রায়হান?যে কিনা পাওয়ার জন্য কত বছর কাটিয়ে দিয়েছে একই বিছানায় এক কোণায় শুয়ে, মাঝে বালিশেরও প্রয়োজন পরে নেই তাদের মাঝে।আর এখন কি সে ছিঃ ছিঃ ঘৃণায় জ্বলে যাচ্ছে?????

কান্না করারও শক্তি হচ্ছে না আনিকার।কিভাবে করবে কান্না?তার যে সব শক্তিও হ্রাস হয়েছে রায়হানকে দিনরাত সেবাযত্নে সুস্থ করে ফেলাতে।নিজের শরীরই দুর্বল হয়ে গেছে তার জন্য এমন জঘন্য কাজ করে ফেলতে পেরেছে।

নিথুন দেহ নিয়ে আস্তে আস্তে চলে গেলো ওয়াশরুমে।
গোসলটা সেরে নিলো অনেক কষ্টে ধীরে ধীরে।সর্ব শরীর যে তার আমা-বর্শা চাঁদের মতো ঘীরে রেখেছে।
বের হয়ে আস্তে করে শুয়ে পরে সোফাতে।চোখটা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে চলেছে আল্লাহ আল্লাহর নাম নিয়ে।এমন করতে করতে কখন যে ঘুমের রাজ্যে পারি দিয়েছে সেটার হুসই নেই নিথুন দেহ নিয়ে।

হঠাৎ ই চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসে আনিকার কানে।
এমন ভাবে চিল্লাচ্ছে।মনে হয় কোনো মূল্যবান রতন ডাকাতি হয়ে গেছে?কোনো রকম চোখ খোলার চেষ্টা করে চলেছে।তবুও পারছে না চোখ মেলে তাকিয়ে চারিদিকে দেখতে।আসলে মেয়েটার শরীর অনেক দুর্বল হয়ে গেছে।তার উপরে মানসিক ও শারিরীক টর্চার করেছে।সেই অনুযায়ী চোখও খোলা সম্ভব হবে নাকি আল্লাহ মাবুদ জানে।

কোনো রকম চোখটা কচলাতে কচলাতে নামতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে।হঠাৎ ই কণ্ঠের সরটা খুব চেনা চেনা লাগলো আনিকার কাছে?ভালো করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখতেই বুকের ভিতরে চিন করে উঠে।পাশ থেকে রায়হান তার আগে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে দ্রুত গতিতে।

-কি ব্যপার রিয়া তুমি এভাবে চিল্লাচ্ছো কেনো এখানে?

-তো কি করবো নাচবো?আজ এতো দিন হলো তোর খোঁজ খবর নাই কেন?বিয়ে করছোস কি আমারে রেখে বড় বউকে নিয়ে শুয়ে থাকতে?

এমন কথাতে আনিকা অবাক হয়ে যায়।এটা কোন ধরনের কথাবার্তা ছিঃ।(মনে মনে ভাবে)

-তুমি কি চুপ করবে?সবাই চলে আসবে তো।

এমন সময় আশেপাশের সবাই চলে আসে।তখন মিসেস সালেহা বেগম বলে উঠে।

-আনিকা ভিতরে নিয়ে যা তো রিয়াকে?

আনিকা অসহায়ের মতো করে মিসেস সালেহা বেগমের দিকে তাকিয়ে থাকে।আনিকার তাকিয়ে থাকতে দেখে
মিসেস সালেহা বেগম চোখ বড় বড় করে রাগ রাগ ভাব দেখিয়ে উঠে।আনিকা আর কোনো দিশে না পেয়ে নিয়ে যায় তার রুমে রিয়াকে।ভিতরে ভেঙে যাচ্ছে তবুও শান্ত ভাবে চলছে।অন্যদিকে রিয়ার ভাব ই অন্যরকম।
আনিকার হাত সরিয়ে দেয়।মনে হয় ওর জামাইকে কেরে নিয়েছে আগে ওর থেকে।

রিয়াকে বসিয়ে দিয়ে চলে এলো নিচে।রান্না ঘরে ঢুকে আর কান্না থামিয়ে রাখতে পারলো না।ভিতরে জমে থাকা জলগুলো পরতে শুরু করে দিলো।পাশ থেকে মিসেস সালেহা বেগম বলে উঠে।

-এমন কান্না কাটি বাদ দিয়ে।রিয়ার আর রায়হানের জন্য কিছু নাস্তা বানিয়ে দিয়ে আস।আর সবার সামনে যেনো এমন ভাব না দেখি।যা হয়ে গেছে তো হয়েই গেছে।কত মানুষ সতীনের ভাত খায়।তাদের তো সমস্যা হয় না।আর রায়হান তো তোকে ভাত কাপড় সবই দিবে তাহলে তোর সমস্যা কোথায় বুঝি না বাপুরে।এখনকার যুগে এবেল এবেল দুটা তিনটা বিয়ে করে ছেলেরা।আর তো রায়হান ভুল করে ফেলছে।তবুও তোকে অনেক ভালোবাসে।তো এসব মেনে নিয়ে খা ভালোই হবে তোদের।

আনিকা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুনেই চলেছে।

-আরেকটা কথা।তোর শ্বশুর বিদেশে গেছে একটা কাজের উদ্দেশ্যে।আসতে আসতে কোরবানির ঈদ পার হয়ে যাবে,তো এসব ব্যপার তার কাছে যেনো তিল পরিমাণে কানে যায় না যেনো কোনো মতে।যদিও এসে দেখে আর শুনে তো তুই উনাকে বুঝিয়ে শুঝিয়ে সব ঠিক করে ফেলবি।কারণ,তোর কথা অমান্য করবে না কোনো দিনও উনি।

পরে মিসেস সালেহা বেগম চলে গেলো নানান ধরনের জ্ঞান জ্ঞুয়েন দিয়ে।

আনিকা কাঁদবে কি আর?তার চোখ তো এখন বন্ধ হওয়ার পালা।অপেক্ষা শুধু মরার।

চুপচাপ নাস্তা বানিয়ে নিয়ে গেলো রায়হানের রুমে।ততখনে রুম পুরো ভরে গেছে এলাকার মানুষ দিয়ে।
সবাই নতুন বউ দেখতে এসেছে।ভালোই বলছে কেউ কেউ চেহারার প্রসংশা হিসেবে।আবার কেউ কেউ বলছে,শুধু চেহারা থাকলেই হবে নাকি?চরিত্রটা কি দেখবা না একটিবারের জন্যে?এমন অসভ্য মেয়ে আর কোথাও আছে।যে বউ বাচ্চা দেখেও আসে সংসার ভাঙতে নিজের স্বাদ আল্লাদ পূরন করতে।

এসব কথা ফুসফাস করে বলতে থাকে সবাই। এমন সময় আনিকা রুমে প্রবেশ করতেই সবাই চুপ হয়ে যায়।
ওকে দেখে হাই হুতাস বলে চলে গেলো যার যার বাড়িতে।

আনিকা ওদের দুজনকে খাইয়ে দাইয়ে নিচে চলে এলো পরের সব কাজ সম্পূর্ণ করতে।রিয়া আর রায়হান পটের বিবির মতো রুমে খাটের উপরে গল্প সালাপ করতে থাকে।মনে হয় তারা কত বছর ধরে কথাবার্তা বলে না দুজন দুজনের সাথে।

আনিকার সারাদিন কেটে যায় কাজ কর্মের মাধ্যমে।
সমস্যা হচ্ছে রাত কিভাবে পার করবে?রাত অনেক হয়ে গেছে,এখন তো ঘুমানোর জন্য সবাই ব্যস্ত হয়ে গেছে।মিসেস সালেহা বেগমও বলে গেছে তাড়াতাড়ি গিয়ে ঘুমে পড়তে।আনিকা কি করবে ভাবতে থাকে।
অবশেষে উপরে চলে যায় নিজ রুমে।আনিকাকে দেখে
রায়হান বলে উঠে।

-এতোখন লাগে তোমার কাজ শেষ করতে।এখন আসো ঘুমাবে।

আনিকা বড় বড় করে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে রায়হানের দিকে।এমনটা দেখে রিয়া বলে উঠে।

-হ্যাঁ আনিকা আসো আমরা তিনজন একসাথেই শুয়ে পড়ি।(আসলে রিয়া এই কথাটা বলেছে দাঁতে দাঁত চেপে)

-আমি সোফায় শুয়ে পরি।তোমরা খাটে শুয়ে পরো।

এটা শুনে রায়হান চিল্লেয়ে উঠে।

-কি বলছি কান দিয়ে যায় না তোমার?

এমন দেখে আনিকা আর কথা না বারিয়ে খাটের এক কোণে বালিশ নিয়ে শুয়ে পরে।মাঝে রায়হান আর তার ঐপাশে রিয়া।

আনিকার কি আর সারা রাত ঘুম হবে এটা দেখে?শুধু মনে হবে এই বুঝি পাশে শুয়ে ওরা দুজন কিছু করে বসবে।আর সেটা ওর পাশ থেকে অনুভব করতে হবে।

এটা ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে আসলো আনিকার।
হঠাৎ কারো পায়ের ছোয়া পেলো।আস্তে করে চোখ মেলে,ডিম লাইটের আলোতে দেখার চেষ্টা করে চলেছে কি হচ্ছে……..?????????

চলবে…

(ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে)

সতীনের_সংসার পর্ব_১৪

0

সতীনের_সংসার
Writer: তানজিন সুইটি
#পর্ব_১৪

সম্পূর্ণ কথা শেষ করে আনিকার দিকে বার বার দেখে অসহায়ের দৃষ্টিতে।আনিকাও বুঝতে পেরে আর অপেক্ষা না করে আশরাফ সাহেবকে নিয়ে চলে গেলো বাসার উদ্দেশ্যে।

সদর দরজা দিয়ে প্রবেশের সময়,মিসেস সালেহা বেগম এক গাদা কথা বলে উঠে…

-কি গো তোমরা এসেছো?ঐখানে গিয়ে তো মনে হয় কিছুই পেলে না।তবুও ছেলেটার পিছে লেগেছো দুজন।অযথা মিথ্যে অপবাদ দিয়েছো আমার ছেলেটার মাথায় উপর।মাঝে মাঝে মনে হয় সৎছেলে তোমার।একটা কথা শুনো।কখনো কারো কথায় কান দিয়ে নিজের ছেলের উপর রাগ করে থাকবে না।ছেলেটার উপর এমনিতেই কার কু নজর পরলো বুঝতে পেরেছি এখন।

আনিকার দিকে ব্রু কুচকিয়ে?

আনিকাও বুঝতে পারলো কাকে উদ্দেশ্য করে বলছে?
কষ্টে বুকটা ফেটে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।ভিতরে এমনিতেই কষ্টের জোয়ার,তার উপরে দিলো আধখান বাঁশ।

পাশ থেকে আশরাফ সাহেব..

কে কেমন সেটা জানি?এখন চুপচাপ ঘরে যাও,না হলে….

এমন কথাতে মিসেস সালেহা বেগম আর একটা কথাও বললো না।চুপ করে চলে গেলো।পরে আশরাফ সাহেব
এডভোকেটকে কল করলো।কিছু খনের মধ্যে চলে আসলো এডভোকেট,এসে কি কি কাগজপত্র বের করে আশরাফ সাহেবের সামনে এগিয়ে দিলো?ধাপ ধাপ করে সিগনেচার করে দিলো।বাসস সে চলে গেলো।

পরে আনিকাকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলো নিজের রুমে। আর বললো যেনো কোনো চিন্তা না করে।

এটা বলে আশরাফ সাহেব চলে গেলো।আনিকাও নিজ রুমের উদ্দেশ্যে পা বারালো।দু মিনিটের পথ,তার কাছে মনে হচ্ছে রাত পাড় হয়ে যাবে।

রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।এতো বছরের সংসারে,তার কাছে আজ মনে হচ্ছে নারী হয়ে জন্মিয়ে অনেক ভুল হওয়াতে।
রাত হয় তো শেষ হবে না তার কোনোভাবেই।পুরো রুমটাও ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আজ।কার কাছে তার কষ্টের কথা শেয়ার করবে।যাকে একটু একটু করে জায়গা করে দিয়েছিলো মনে।সেই তো আজ দিলো ক্ষতবিক্ষত করে।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরে ঘুমের রাজ্যে।

ভোরের আলো ছড়াতে শুরু করলো সমগ্রতে।
চোখ মেলে একটু একটু করে চেয়ে দেখে চারিদিকে।
আনিকা কি করবে ভাবতে থাকে?ছেরে চলে যাবে নাকি… এমন সময় কল আসলো আনিকার ফোনে।
রিসিভ করে কথা বলার পর পরই শ্বশুরের রুমে সামনে দৌড়িয়ে গিয়ে দরজার কাছে দাড়ায় একটু তারপর জোড়ে জোড়ে হাপাতে থাকে সেটা দেখে মিসেস সালেহা বেগম বলে,বাঘ তারা করেছে নাকি তার পিছে।

আসলেই মহিলাটা কেমন যেনো হয়ে গেছে।কষ্ট লাগছে তবুও সেটা চেপে রেখে বলে…

-আম্মু রায়হান এক্সিডেন্ট করেছে।

মিসেস সালেহা বেগম চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে।
কোথায় আছে জিঙ্গাসা করে দ্রুত চলে যায় সেখানে?
আনিকাও পিছন পিছন দৌড়াতে থাকে।

যেমনই হোক না কেনো?স্বামী তো হয় ওর। স্বামীর এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে কোনো স্ত্রী ঘরে বসে থাকতে পারে।ওর কাছে মনে হয় না। তাই তো ছুটে যায় হাসপাতালে।

হস্পিটালে পৌছে দেখে রায়হানের ক্ষতবিক্ষত দেহ পরে আছে।এটা দেখে তো আনিকা বসে পরে।আর মিসেস সালেহা কেমন ছেলের শোকে কান্নায় ভেঙে পরে।

একটুপর আশরাফ সাহেবও আসে হস্পিটালে।আরিয়ানকে কাজের মহিলার কাছে রেখে আসে।
তারও খারাপ লাগছে কিন্তু মূখ ফুটে বলতে পারেছে না? তবুও শক্ত করে রাখে নিজেকে।হঠাৎ করে পাশ থেকে মিসেস সালেহা বেগম বলতে থাকে…

-এই তোমার জন্য আজ আমার কলিজার টুকরারে হারাতে বসেছি।কি এমন দোষ করেছে সে,যে সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলে?বিয়েই না হয় করেছে আরেকটা।তো কি হয়েছে,সেটা আমি শুনেছি অনেক আগেই?তবুও বলি নি,যদি এই কান্ডটা করে বসো ওর সাথে।যেমনই হোক না কেনো?কেনো বুঝো না ওও তোমার ছেলে,তাই বলে এমন করবে ওর সাথে।আমার মনে হয় সব আনিকার কার সাজি।তার জন্য আমার ছেলে এক্সিডেন্ট করেছে।ওর মতো মেয়েকে…..

-চুপ বজ্জাত মহিলা। তোর স্বভাবটাই পেয়েছে।
তবুও উঁচু গলায় কথা বলে যাস।

এমন কথায় আনিকা অবাক হয়ে যায়। এতো বছর ধরে সংসার করছে।কখনো আশরাফ সাহেবকে তুই করে বকা দিতে দেখেনি।এই প্রথম শুনলো এমন।আর কি স্বভাব?স্বভাবের কথায় উঠলো কেনো এখন?

-রায়হানের আব্বু বেশি বকে ফেলছো কিন্তু?তুমি কি?সেটা আগে ভাবো।তারপর অন্যের দিকে আঙুল তুলো,লজ্জা করে না বুঝি।

আনিকা আগা মাথা কিছুই পাচ্ছে না।শুধু হা হয়ে চেয়ে চেয়ে শুনে যাচ্ছে তাদের ঝগড়া।

-লজ্জা হা হা হা… সত্যিই আমার লজ্জা নেই।যদি একটুও লজ্জা থাকতোই,তাহলে তোর মতো নারীর সঙ্গে কিভাবে সংসার করেছি এতো বছর যাবত ভেবে দেখ। যে নারী অন্যের সংসার ভেঙে নিজে সুখী হবার জন্যে,সব ব্যবস্থা করে নিয়েছে অনেক বছর আগে।আবার লজ্জার কথা তুলে।এখন আমি ভাবি আসলেই আমি একটা অভাগা?না হলে এমন হতো আশরাফ চৌধুরীর সাথে বল একবার।মনে করেছিলাম আনিকার জীবন যেনো এমন না হয়,তবুও হয়ে গেলো মাত্র তোর কারণে সালেহা। এখন একটু ভাব তো,যদি তোর মেয়ের কপালেও এমন হয়। তখন কি করবি বল?

মিসেস সালেহা বেগম এখন চুপ হয়ে গেলো। কারণ, তার মেয়ের প্রসংগে তুললো বলে।

আশরাফ সাহেব হু হু করে কেঁদে উঠে।আল্লাহ আমার পাপের শাস্তি এমনভাবে দিবে বুঝি নি রে।তোর মতো নারীকে কেন সেদিন জুতা দিয়ে পিটালাম না রে।তাহলে আজ এমন দৃশ্য দেখতে হতো না চোখে সামনে।

পাশ থেকে আনিকা..

-আব্বু please যা ঝগড়া করার বাসায় গিয়ে করবে।
এটা পাবলিক প্লেস বুঝো না কেন?সংসারের খবর বাহিরের লোক জানবে কেনো?আগে রায়হান সুস্থ হোক তারপর ওকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যা ব্যবস্থা করবে।
এখন চুপচাপ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যাও।

একটা কথা মনে রাখবেন আব্বু,ভালো নিয়ে সবাই সংসার করে।খারাপ নিয়ে কয়জন সংসার করতে।
তো ভাবো তোমার লাইফেও তেমনটা হয়েছে।এখন হয় তো আমার কপালে এমনটা হবে।বলে কাঁদতে থাকে শ্বশুর বউমা মিলে।

অন্য দিকে রায়হানের চিকিৎসা সম্পূর্ণ হয়।১সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ্যও হয়ে যায়।পরে ওকে নিয়ে বাসায় ফিরে রায়হানের মা।আশরাফ সাহেব আর কোনো কথাও বলে না।আনিকাও আগের মতো কথা বলে না রায়হানের সাথে কিন্তু সেবাযত্নের কোনো ত্রুটি রাখে না?

রায়হানও অনেক বার আনিকার সাথে কথা বলতে চেষ্টা করেছে কিন্তু সে কাজের বাহানা দেখিয়ে দ্রুত প্রস্থান করে সেখান থেকে প্রতিবার?

রিয়ারও কোনো খবর নেই এ কয়েকদিনে?কেমন মেয়ে আল্লাহ মাহমুদ জানে।আল্লাহুর কালাম পড়ে বিয়ে করেছে রায়হানকে।তবুও একটু টান নেই তার প্রতি তিন পরিমাণ।হয় তো চিকিৎসার বহন নিতে হবে বলে।দূরে সরে আছে কোনো খোজ খবর নিচ্ছে না কারো কাছে।
সময় হলে বের হয়ে যাবে মনসার মতো করে।

(হয় তো আপনারা ভাবছেন এই মনসা আবার কেডা?
আরে চিনলেন না..সাপ গো সাপ ?।সময় হলে গর্তে থেকে বের হবে।দেখবেন পরেরবার)

চলবে…….

(ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে)

সতীনের_ সংসার পর্ব_১৩

0

সতীনের_ সংসার
Writer: তানজিন সুইটি
#পর্ব_১৩

আনিকার কাছে মনে হচ্ছে।সবাই ঠিকই বলেছিলো সুখি হবো না কোনো দিনও।তাহলে কি এটাই তাদের অভিশাপ মূল ছিলো?

আনিকা ভাবছে,জীবনে কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করে নি,প্রতারণা-ঠকায়ও নি।তবুও কেনো নিজের জীবন হলো এমন।

কারো ভালো করতে গিয়ে,নিজের কাছের মানুষদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।তাদের অভিশাপের ভাগিদার হয়ে নিজেকে শক্ত করে তৈরি করতে চেয়েছে।কিন্তু তার মূল্য এমনভাবে পাবে,কখনোই ভাবে নি সে?

আনিকার কান্নার শব্দ শুনে পাশের রুম থেকে মিসেস সালেহা বেগম ছুটে আসে,সঙ্গে আশরাফ সাহেবও আসে।আনিকার চোখের পানির থেকে বংশধরের চোখের পানির মূল্য বেশি মনে হলো মিসেস সালেহা বেগমের কাছে।

নাতিকে কোলে নিয়ে আনিকাকে ধমকের সরে বলে উঠে…

-তোর কি দুদিন পর পর ভূতে ধরে?মাঝে মাঝে তোর এমন আচরণে মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়।তোকে বার বার বলেছি, যদি কান্না আসে তো আরিয়ানের সামনে কখনো কান্না করবি না।ওর মস্তিষ্কে বিঘ্ন ঘটে অনেক।

এমন কথাতে আনিকা অসহায়ের মতো মিসেস সালেহা বেগমের দিকে তাকিয়ে দেখে।হয় তো এটাই ভাবে।
হায় রে মানুষ।পরিবর্তন হতে সময় নেয় না রাতের প্রহালে।

পাশ থেকে আশরাফ সাহেব বলে উঠে…

-রায়হানের মা একটু বেশিই বকে ফেলছো কিন্তু? মানুষ এতো তাড়াতাড়ি চেঞ্জ হয়, তোমাকে দেখেই শিখবে।
মুখ খুলাবে না এখন কিন্তু?চুপ করে নাতিকে নিয়ে দারিয়ে আছো।থাকো দাড়িয়ে।অযথা মাথা খারাপ করবে না আমার।

এমন কথা বলে,আনিকার কাছে এগিয়ে গিয়ে পাশে বসে পরে।মাথায় হাত রেখে জিঙ্গাসা করে?

-কি হয়েছে রে মা?বলবি আমাকে।

আনিকার কান্না বাধ ভেঙে গেলো শ্বশুরের ভালোবাসার পরশে।থাকতে না পেরে,আশরাফ সাহেবের কাধে মাথা রেখে হু হু করে কেঁদে উঠে।মনে হয় কালো মেঘ জমে ছিলো বুকের ভিতরে।হালকা আভাস পেতেই বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরছে অঝরে দু’নয়ন ভরে।

-আ..আ..আব্বু..

-কি হয়ছে???

-আব্বু রায়হান বিয়ে করেছে।

এটা শুনে মিসেস সালেহা বেগমের মুখ কালো হয়ে গেলো।কথা বলার মুখ নেই তার।অন্যের মেয়েকে যতই বলুক না কেনো মেয়ে হিসেবে আগলে রাখবে?সেটা কি কোনো শ্বাশুড়ী গ্যারান্টি দিতে পারে?নিজের পেটের মেয়ের বেলা ১৬ আনা।কিন্তু অন্যের বেলার খালি ন্যাকা কান্না মনে হয় মিসেস সালেহা বেগমের কাছে।
সেটা তার ব্যবহারেই প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছে ইদানীং।

আশরাফ সাহেবের মাথায় চোখে মুখে আগুন জ্বলে উঠে।হয় তো এখন রায়হানকে হাতের কাছে পেলে কুপিয়ে মেরেই ফেলবে।বার বার মিসেস সালেহা বেগমের দিকে রাগান্বিত চোখে তাকায়।মনে হয় এখনই কয়েকটা কিলঘুষি দিয়ে ফেলবে চোখ মুখ বুজে।

-এই তোমার জন্য এমন হয়েছে।বার বার বলেছিলাম ছেলেকে একটু শাসনে রাখো।কিন্তু তখন কান দিয়ে নাও নি তিল পরিমাণে, আরও আমাকে বলেছো ইয়াং বয়সে একটুআকটু এমন করবেই। পরে বয়স হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।এখন তো দেখলে কি করে ফেললো অন্যের মেয়ের কপাল পুরিয়ে ? ওকে আমি আজ এই মুহূর্তে….

কথাটা শেষ কথার আগেই থামিয়ে দিলো মিসেস সালেহা বেগম আশরাফ সাহেবকে।

-আচ্ছা এখন এটা না বলে ওকে খুঁজে এনে দু তিনটা বাটাম দিয়ে বারি দিলেই হয়ে গেলো তো আর কে কি বললো সেটা আগে একটু ভালো ভাবে খোজ নিতে তো হবে।পরে না হয় ঐ মেয়েকে বাদ দিয়ে দিবে।

মিসেস সালেহা বেগম কতোটা যে চালাক কেউ তার সাথে না মিশলে বুঝবে না।ত্যাজ্যপুত্র করবে বলে
কথার ধরনটা চেঞ্জ করে দিলো অন্য দিকে। আসলে উনার মতো মহিলা অনেক কম আছে এ পৃথিবীতে।
সেটা আনিকা হারে হারে টের পাচ্ছে।

আনিকাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায় আশরাফ সাহেব,সেই বন্ধুর বাড়িতে,যার কাছ থেকে রায়হানের খবর পেয়েছে।

সেখানে গিয়ে আসলেই সব সত্য জানতে পারে।আর প্রমাণ হিসেবে ফোনে তুলা ছবিগুলো পাল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখিয়েছে।

একজন স্ত্রীর কাছে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো তার স্বামী।কিন্তু স্বামীর এমন দৃশ্য দেখলে,কোন স্ত্রী সুস্থ থাকবে জানা নেই কোনো নারীর?

যে মেয়েটার ছবি দেখালো।তাকে দেখে আনিকা থ হয়ে দাড়িয়ে রয়লো।যাকে কয়েক মাস আগে দেখেছিলো তারই বেড রুমে রায়হানের সাথে অন্তরঙ্গভাবে।সেই হলো তার সতীন।বুক ফেটে চুরমার হয়ে যাচ্ছে আনিকার ??কি অভাব ছিলো তার মধ্যে?যে অন্য নারীর দরকার ছিলো তার।

চুপ হয়ে বসে রয়লো।আর পাশ থেকে আশরাফ সাহেব রায়হানের বন্ধুকে সব জিঙ্গাসা করতে লাগলো এক এক করে।কে এই মেয়ে?কোথায় থাকে?কোথায় দেখা হয়েছিলো আর কিভাবে বিয়ে হলো? তখন বলতে শুরু করলো সব…

-আংকেল আপনি তো অসুস্থতার কারণে অফিসে আসেন না ঠিক মতো করে।রায়হানের উপর সব দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তায় ঘরে বসে আছেন।আর অন্য দিক দিয়ে আপনার ছেলে অফিসে নতুন পিএ রেখেছে। ওর নাম রিয়া। এ শহরে নতুন এসেছে।ওর পরিবারসহ আপনাদের বাড়ির পাশে ভাড়া নিয়েছে।আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়।ওর বাবা মা দুজনই কাজ করে ছোটখাটো ফ্যাক্টরিতে।ছোট একটা বোন আছে।এবার হয় তো ৪-৫ম শ্রেনীতে উঠেছে।

রিয়া যেদিন অফিসে জয়েন্ট করেছে। সেদিন থেকেই রায়হানের সঙ্গ দিতেই থাকে। মেয়েটার রুচিশীলতাও ভালো নয় মোটে শুধু চেহারাটাই সুন্দর আর স্মার্ট কিন্তু নোংরা টাইপের মেয়ে?রায়হান বিবাহিত,বাচ্চা আছে জেনেও রায়হানকে সঙ্গ দিতে কতবার আপনাদের বাসায় গিয়েছে,তার কোনো ঠিক নেই আপনারা বাসায় না থাকলে।

এই কথাতে আশরাফ সাহেবের রাগ তিনগুণ বেরে গেলো।অন্যদিকে আনিকা মাটির দিকে তাকিয়ে কেঁদে চলেছে।কারণ, সেই দৃশ্য তার দেখা হয়ে গেছে কবেই। তবুও তাকে মাফ করে দিয়েছে ভুল হয়ে গেছে বলে।

আবার বলতে থাকে…

-রিয়া সপ্তাহখানেক আগে রায়হানকে চাপ দেয় বিয়ের জন্যে।সেটা আবার রায়হান নাকজ করে দিলে রিয়া রেগে মরার ডিসিশন নিয়ে ফেলে আর বলে কয়েক মাস ধরে ধর্ষণ করেছে সেটার প্রমাণ রেখে যাবে।তারপর বিয়ে করে ফেলে হারানো ও মান-সম্মানের ভয়ে।পরে রিয়ার পরিবার আপনাদের এলাকা থেকে ভয়ে চলে যায়,যদি লোকজন শুনে তো রামপেদানি পেদাবে।তাদের যাওয়ার দুদিন পরে, রায়হানকে সঙ্গে করে নিয়ে যায় রিয়াদের গ্রামে।তাদের সপরিবারে বলে আনিকাকে ছেরে রিয়াকে নিয়ে সংসার করতে।

এমন কথা শুনে আনিকার বুকের বাম পাশে চিন করে উঠে।

-পরে সেখানে যে কয়েক দিন ছিলো তাদেরকে টাকা পয়সা ভেঙে ভেঙে খাইয়ে শেষ করে ফেলেছে সব।
পরে ফোন আর বাইকটা পর্যন্ত বিক্রি করে খাইয়েছে।
তারপর যখন বাসায় আসার কথা ছিলো তখন রিয়ার পরিবার রিয়াকে সঙ্গে করে নিয়ে ফিরতে বলেছে।
তখন চিন্তায় পরে যায় রায়হান কি করা যায় কি করা যায়?হঠাৎ মাথায় বাসার কথা আসে।তখন আপনাদের কাছে টাকা চায় মিথ্যা বলে।যেনো ঐটাকা দিয়ে রিয়াকে আলাদা ফ্লাট ভাড়া করিয়ে থাকতে পারে।
কারণ আপনারা ওকে ঘরে তুলবেন না কখনো এটা শুনলে।এখন বর্তমানে রিয়াকে নিয়ে আপনাদের অফিসে থেকে দূরে বাসা নিয়েছে যেনো অফিস থেকে যাতায়াত সহজ হয় ওর সেই ভেবে।

একথা শুনে আশরাফ সাহেব রাগে দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করতে থাকে।নিজের ছেলেকে চিনতেও এতো বছর পার করতে হলো তার।সে ভাবছে,তারও তো একটা মেয়ে আছে।যদি তার সাথেও এমন হয়ে যায় যেকোনো সময়ে।

সম্পূর্ণ কথা শেষ করে আনিকার দিকে বার বার দেখে অসহায়ের দৃষ্টিতে।আনিকাও বুঝতে পেরে আর অপেক্ষা না করে আশরাফ সাহেবকে নিয়ে চলে গেলো বাসার উদ্দেশ্যে।

চলবে…..

(ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে)

সতীনের_সংসার পর্ব_১২

0

#সতীনের_সংসার
Writer: তানজিন সুইটি
#পর্ব_১২

জীতুর দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলা শেষ করতে না করতে রায়হান কল করে আনিকার কাছে।

সবার সামনেই রিসিভ করে কথা বলে আনিকা।রায়হানকে বলে জীতুর দুলাভাইয়ের কথা।ভয় যেনো না পায় সেই আচ্ছ্বাস দেয় আর বলে দুলাভাইয়ের কাছে সব বলেছে,তো সে বলেছে কোনো চিন্তা করো না শুধু ভালো করে ঠিকানা বলো কোথায় আছে।দুলাভাই কি করবে না করবে খুলে বলে সব রায়হানের কাছে?

অবাক কান্ড হলো___কারণ,এই সব কথা বলার পর পরই রায়হান ফোনের লাইন কেটে দিলো টুস করে অপাশ থেকে।

আনিকা চুপচাপ কিছুখন বসে থেকে।মাথা উঁচু করে সবার সাথে চোখ মিলাতে পারছে না যদি প্রশ্ন করে বসে।তাই আর দেরি না করে আরিয়ানকে কোলে নিয়ে বিদায় জানিয়ে চলে যায় সেখান থেকে মিসেস সালেহা বেগমকে সঙ্গে করে।

জীতু আর ওর পরিবার অনেক কথা আলোচনা করে রায়হান আর আনিকাকে নিয়ে।আনিকার কপাল পুরার কথায় বললো জীতু।কারণ রায়হানের হাবভাব যেনো ভালো দেখছে না অনেক দিন ধরে।

বেচারা আনিকা সারা রাস্তা শেষ করেছে ঠিকই কিন্তু রুমে ডুকার সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে ফেলে দরজা বন্ধ করে?
আরিয়ানকে মিসেস সালেহা বেগমের কাছে দিয়ে এসেছে।না হলে ঐ ছোট্টো শিশুটি প্রশ্ন করে বসতো অনেক যে?

বিকাল গরিয়ে সন্ধ্যা,সন্ধ্যা থেকে রাত হয়ে গেলো।আনিকার বুকের ভিতরে কালবৈশাখীর মতো কালো হয়ে উঠতে শুরু করলো।তার জীবনে কি হতে চলেছে?আসলেই কি তার জীবন তছনছ হয়ে যাবে কোনো এক ঝড়ে?

খাটে থেকে নেমে,বেলকুনিতে গিয়ে,গ্রীল ধরে দাড়িয়ে দূর দূরান্তে দেখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে নিজের কষ্ট বিলিন করার জন্যে।

চোখ থেকে ঝরনার মতো পরে চলছে পানি।শত চেষ্টা করেও পারছে না থামাতে।হঠাৎ করেই দরজায় নক পরে,কোনো রকম পানি মুছে,দরজার কাছে এগিয়ে যায়।দরজা খুলেই অবাক হয়ে যায়।কাকে দেখছে
আর কি অবস্থা করে ফেলেছে চেহারাতে?পুরো শরীরটা অবস হয়ে গেছে তাকে দেখে।মুখ দিয়ে যে কথা বলবে সেটাও হারিয়ে ফেলেছে।অনেকখন অতিক্রম হওয়ার পর চিৎকার দিয়ে উঠলে পাশের রুম থেকে সবাই দৌড়ে এসে দেখে রায়হান এসেছে।

পায়ে জুতা নেই।নেই কোনো মুখে হাসি।মুখটা শুকিয়ে গেছে।শরীরের এখানে সেখানে মারের দাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে শার্ট প্যান্টের ফাকে ফাকে।এমন অবস্থা দেখলে যে কোনো মানুষেরই বুকের ভিতরে হু হু করে উঠবে।

রায়হানকে বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে দুহাত দিয়ে আনিকা।ওর কান্না দেখে মিসেস সালেহা বেগমও পাশ থেকে কান্না করে দেয়।আশরাফ সাহেব কান্না করছে ঠিকই কিন্তু চোখ থেকে পানি পরছে না?বুক ফেটে চুরমার হয়ে যাচ্ছে তাকে দেখে।

রায়হানকে রুমে এনে বসিয়ে সবার প্রশ্নের পাহাড় জুড়ে ফেলে?রায়হান হঠাৎ করে বলে উঠলো..

-তোমরা আমাকে না খাইয়ে মেরে ফেলো নানান প্রশ্ন করে?

এমন কথাতে কেউ আর কোনো প্রশ্ন করলো না?
রায়হানকে গোসল করিয়ে।খাইয়ে দাইয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখে সবার সামনে।আশেপাশের অনেক মানুষও এই রাত বেরাতে দেখতে এসেছে রায়হানের আশার খবর শুনে। অনেকে হায় হুতাশ করে চলে যায়।

রাত পার হয়ে যায় আনিকার বুকের উপর ঘুমিয়ে। আনিকারও কষ্ট হয় একভাবে শুয়ে থাকতে। তবুও যাকে ভিশন ভালোবেসে ফেলেছে তাকে বালিশে রাখে কি ভাবে?

সকাল হয়ে যায়..
রায়হানকে এমনভাবে আদর যত্ন করে অনেক দিন
পার করিয়ে দেয়।

কিন্তু রায়হানের হাবভাব আগের মতো নেই?আনিকাকে ভালোবাসলেও কল আসলে আড়ালে চলে যায় ফোন নিয়ে।

আনিকার এসবের কোনো গুরুত্ব নেই?কারণ তার জীবন সশরীরে তো বাড়ি ফিরে এসেছে?কিন্তু এটাই তার বড় ভুল?কাউকে এতোটাও বিশ্বাস করাটা। হোক সে ভালোবাসার মানুষটা।

১সপ্তাহ পার হতে না হতেই আনিকাকে কল করে রায়হানের এক বন্ধু।তার কাছ থেকে এমন একটা কথা শুনতে পাবে জীবনেও ভাবে নি।

পুরো পৃথিবীটা ঘুরতে শুরু করে।মনে হয় এই বুঝি ভেঙে পরবে তার মাথায়।ফ্লোরে বসে পরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।এমন সময় আরিয়ান রুমে এসে দেখে তার এই অবস্থা।ছোট্টো শিশু তার মায়ের এমন অবস্থা দেখে প্রশ্ন করে বসে?

-ও মা তুমি কাঁদছো কেনো?কথা বলো না কেনো?
কি হয়েছে তোমার মা,বলো না বলো বলো.?
অনেকটা ঝাকি দিয়ে আনিকার শরীরটা।

ছোট্টো এই ছেলেকে কি করে বলবে আনিকা?তার কথার কোনো উত্তর নেই যে আজ।কিভাবে বলবে যে তার বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে?তার কপাল যে পুরেছে।পুরো পৃথিবী যে তার কাছে এখন নিঃসঙ্গ লাগছে। কার কাছে বলবে তার কষ্টের কথা????

হয় তো বাবা-মার সাথে আমাকেও নিয়ে গেলে ভালো হতো,এসব ভাবছে আনিকা।কেঁদে কেঁদে তার ৬বছরের ছেলে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে।???????

আনিকার কাছে মনে হচ্ছে।সবাই ঠিকই বলেছিলো সুখি হবো না কোনো দিনও।তাহলে কি এটাই তাদের অভিশাপ মূল ছিলো?

চলবে…………

সতীনের_সংসার পর্ব_১১

0

সতীনের_সংসার
Writer: তানজিন সুইটি
#পর্ব_১১

কথায় আছে না…যত হাসি তত কান্না।আনিকার জীবনেও সেটাই অপেক্ষা করছে।দিন শেষ হবার আগেই তার প্রমাণ পাবে।

দুপুর পার হতে চললো।রায়হানের কোনো খবর নেই বলে সবাইকে খাবার দিয়ে দিলো টেবিলে ঠিকিই
কিন্তু দরজার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকে বার বার?

আশরাফ সাহেব এটা লক্ষ্য করে মিসেস সালেহা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে।

-জীবনেও মানুষ হবে না তোমার ছেলে।

মিসেস সালেহা বেগম বুঝতে পেরে মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বিষম খেয়ে বসে।পাশ থেকে আনিকা পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় আর বলে।

-আম্মু একটু ধীরে খাও না।আর আব্বু তুমিও না সব সময় এতো দোষারোপ করো না তো।

-দোষারোপ করছি না রে মা।সময় হলে বুঝতে পারবি ঠিকই কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে দেখিস মা?

আশরাফ সাহেবের বলতে দেরি অন্যপাশে আনিকার ফোন ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠে।

সবাইকে খেতে বলে ফোনটা রিসিভ করে একটু পাশে গিয়ে রিসিভ করে।কিছুখন অতিক্রম হওয়ার পর একটা জোরে চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেয়ে।
আশরাফ সাহেব আর মিসেস সালেহা বেগম এক প্রকার খাবার রেখে দৌড়ে আসে আনিকার কাছে।

এসে দেখে ফ্লোরে বসে কান্না করছে।মিসেস সালেহা বেগম আনিকাকে পাজর কোলে উঠিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে কুলসুমের মাকে এক গ্লাস পানি দিতে বলে।পানি খেয়ে একটু স্থির হয়ে বসতে বলে।তারপর বলতে বলে কে কল করেছিলো?

আনিকার আবারও কান্না পায়।আশরাফ সাহেবকে ধরে কান্না জরিত কণ্ঠে রায়হানের কথা বলেই যায়।

-রায়হানের কি হয়েছে বলবি তো?না বললে বুঝবো কি করে বল?

মিসেস সালেহা বেগমেরও ছেলের কথা শুনে মুখখানা মলিন হয়ে যায় ভয়ে।

-আব্বু ওকে ছাড়িয়ে আনো।কারা যেনো ওকে আটকিয়ে রেখেছে টাকার বিনিময়ে।আর বলেছে যদি টাকা না দেই তাহলে জোড় করে অন্য কারো সাথে বিয়ে করিয়ে দিবে।

এমন কথাতে ইতি মধ্যে আশরাফ সাহেব অবাক হলো এক প্রকার।এতোকাল শুনে এসেছে,কিডন্যাপ হলে টাকা না পেলে মেরে ফেলে কিন্তু আজ এই প্রথম শুনলো উল্টো কথা?

-তোকে কে কল করেছিলো?

-আপনার ছেলে নিজেই।

-ও কিভাবে কথা বললো তোর সাথে?

-জানি না।এতো কথা বাদ, তুমি টাকা দিবা কিনা বলো?
নাকি আমাকে সতীনের ভাত খাওয়াতে চাও।

এমন কথায় আশরাফ সাহেব আর কোনো কথা না বারিয়ে চুপ চাপ টাকা পাঠিয়ে দেয়।তারপর আশরাফ সাহেব একটা কথায় বলে।

-মা রে তোর মনটা অনেক নরম আর ভালো। তার জন্য সবাই তোকে কষ্ট দেয়।দেখিস হিতে বিপরীত না হয়।
দোয়া করি তবুও যেনো সুখি হোস।বলে চলে গেলো আশরাফ সাহেব।

টাকা পাঠানোর পরও এক-দু দিন কেটে যায়।তবুও রায়হানের কোনো খবর না পেয়ে।ওর ফ্রেন্ড জীতুর বাড়িতে যায়।এই প্রথম রায়হানের কোনো ফ্রেন্ডদের বাড়িতে যায় আনিকা, মিসেস সালেহা বেগমকে সাথে করে।

আনিকাকে দেখে জীতুর মা অবাক হয়ে বলে।গরীবের বাড়ি হাতির পা কি ভাবে পরলো রে। এ কথাতে আনিকা কিছুটা লজ্জা পেলেও,যে কাজের জন্য এসেছে, সেটা তো সফল হতে হবে।

-আন্টি জীতু ভাইয়া বাসায় আছে?

জীতুর মা কিছুটা বুঝতে পেরেছে মুখ দেখে তাই আর কথা না বারিয়ে জীতুর রুমে নিয়ে যায়।জীতুও একটু অবাক হয়েছে বটে।

-বসো আনিকা। মা উনাদের জন্য খাবার নিয়ে এসো।
বসেন আপনারা বলে জীতুর মা যেই পা বারাতে যায় তখনই আনিকা…

-আন্টি আপনি এখানে বসেন।কিছু লাগবে না।
কয়েকটা কথা আসছি।আপনিও বসেন পাশে।

আসলে হয়েছে কি ভাইয়া?আজ কয়েকদিন ধরে রায়হান বাসায় নেই।গতকাল হঠাৎ কল আসে।
তারপর সব খুলে বলতে থাকে…লাস্টের যে একটা কথা বললো তখন জীতু বলে

-তুমি যে ঠিকানার কথা বলেছো।ঐখানে আমার মামাতো বোনের শ্বশুর বাড়ি। দুলাভাই থাকতে চিন্তা কি আর?

জীতু ওদের সামনেই ওর দুলাভাইকে কল করে সব কিছু ভেঙে বলে।তারপর সে বলে কোনো চিন্তা না করে। সে সব খোজ খবর নিয়ে দেখবে আর যেনো ক্ষতি না করে সেই ভরসা দেয়।

জীতুর দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলা শেষ করতে না করতে রায়হান কল করে আনিকার কাছে।তার এখন কোথায় আছে কি করবে খুলে বলে সব?

চলবে…..

(ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে)

সতীনের_সংসার  পর্ব_১০

0

#সতীনের_সংসার 
Writer: তানজিন সুইটি
#পর্ব_১০

এখন তো আর সে ঠেকাতে পারবে না।স্বামীর অধিকার আছে ওর সম্পূর্ণ।তাই আর বাঁধা না দিয়ে তালে তাল মিলিয়ে অতুল সমুদ্রে পারি জমায় দুজনে।যেখানে আছে দুটি প্রাণের ভালোবাসার মিলন।পূর্ণতা পেয়েই গেলো আনিকা রায়হানের বিবাহ জীবনের পথ চলার জন্য।


দিনকাল ভালোই কাটছিলো।হঠাৎ একদিন রায়হান বললো রাজের বেবিটা নষ্ট হয়ে গেছে।সেটা শুনে কষ্টে ফেটে যায় আনিকা বুকটা।সে ভাবে আল্লাহ কেনো রাজের হাসি খুশি জীবনটা বার বার ভেঙে দিয়ে যায়।

যার জন্য অকুল দরিয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছিলো জীবনটা কিন্তু তার জীবন যে হবে এমনটা,ভাবে নি আনিকা?

চোখ দিয়ে বেয়ে বেয়ে পানি পড়তে থাকে।সেটা দেখে রায়হান প্রশ্ন করে?

-কি হলো আনু?কাঁদছো কেনো?

রায়হানের প্রশ্ন করা দেখে আনিকা নিজেকে স্থির করে বলে ফেলে?

-কোথায়??চোখে পোকা পড়েছিলো তো,তাই পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়ছে চোখ দিয়ে।(মিথ্যা কথা না বললে অনেক কথার সম্মুখে হতে হতো আজ ওকে)

এ কথা বলে চলে যেতে লাগে।তখনিই মাথা ঘুরে পরে জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পরে যায়।সঙ্গে সঙ্গে রায়হান চিৎকার করে উঠে আনিকাআআআ বলে।ওর কণ্ঠ শুনে সবাই দৌড়িয়ে রুমে প্রবেশ করে। আনিকাকে নিয়ে খাটে শুইয়ে দিয়ে পারিবারিক ডাঃ কে কল করে তাড়াতাড়ি আসতে বলে।

এদিকে ডাঃ আসতে দেরি দেখে রায়হান একবার রুমের এমাথায় যায় তো ঐমাথায় যায়।আর মাথার চুলগুলো টেনে টেনে প্রায় ছিরেই ফেলছে।এটা দেখে মিসেস সালেহা বেগম বলে।

-বাবু ভয় পাস না তো,ওর কিছুই হবে না।যে এতো ভালোবাসে বউকে।তার কিছু হতে পারে বল।এখন পাগলামি বাদ দিয়ে চুপ করে ওর পাশে বয়।

রায়হান এ কথা শুনে চুপ করে আনিকার মাথার কাছে বসে।এক নজরে চেয়ে রয়।আর মনে মনে আল্লাহুকে বলছে ওর যেনো কিছু না হয়। এমন সময় ডাঃ চলে আসে।

-ডাঃ ওয়াজেদ আনিকাকে দেখে রায়হানকে বলে এটা কি করে হলো?আমার দোস্তোকে খবর দেন ভাবী তাড়াতাড়ি।

এমন কথা শুনে রায়হানের ভিতরে তুফান শুরু হয়ে যায়।চোখ থেকে পানি পরবে পরবে এমন ভাব।অসহায়ের মতো ডাঃ ওয়াজেদের মুখে চেয়ে রয়।
মিসেস সালেহা বেগমেরও একই হাল।তখনই ডাঃ ওয়াজেদ বলে উঠে

-আরে বেটা তুই বাবা হতে চলেছিস।যাহ তাড়াতাড়ি মিষ্টি মুখ করাবি তো সবাইকে।

রায়হানের এতোখন চোখ টলমল করছিলো।এমন কথায় টপ টপ করে ঝরে পরে।হয় তো এটা তার আনন্দের পানি।মুখে কথা বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
কি বলবে সেটা না পেয়ে জোড়ে করে বলে ফেলে?

-আমি বাবা হবো আমি আমি….?????

এমন কথাতে সবাই হেসে ফেলে বলে।তাহলে কি অন্য কেউ হচ্ছে?এটা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে মিষ্টির দোকান তুলে নিয়ে বাড়ি ফিরে।
পুরো বাড়িটা এখন খুশির জোয়ারে ভাসছে।


দেখতে দেখতে পার হলো ১০মাস।নতুন অথিতি পৃথিবীতে এসে মুখরিত করে দিলো চারপাশ।
সবাই অনেক অনেক খুশি।আর এতো খুশিই হবে না কেন?বংশের প্রদীপ বলে কথা যার।

নাম করনও করে ফেলে,আনিকা আর রায়হানের নামের সাথে মিল করে আরিয়ান চৌধুরী।?


অন্যদিকে রাজেরও বেবি হয়,আনিকার বেবির এক বছর হওয়ার পর। দুপাশ থেকে আলাদা আলাদা মানুষ দুটা অনেকটা সুখে জীবন জাপন করে দিনগুলো পার করে যায়।


কিন্তু এই খুশি কতোটা যে সেটার সরুপ দেখতে পারছে বর্তমানে আনিকা?

১০বছর আগের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে আনিকা ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেছে সেটার খেয়াল নেই আর।

বাস্তবের জগতে ফিরে আসে..

পূর্ব আকাশে সূর্যের আলো ঝলমল করে হেসে উঠাতে। জানালা ভেদ করে আনিকার মুখের উপরে।রোদে চাইতে না পেরে, চোখ বন্ধ অবস্থায় পাশে হাত দিয়ে খুঁজে চলে তার ভালোবাসার মানুষটাকে।

যখন পাশে খুঁজে পায় না।চোখ আস্তে করে খুলে পুরো রুমে খুঁজতে থাকে কোথায় গেলো সে।পরখনেই মনে পরে গেলো, গতকাল তো সে বাসায় আসে নি যে।

ছেলেকে বুক থেকে নামিয়ে।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে চলে যায় রান্না ঘরে।প্রিয়জনের জন্য রান্না করতে থাকে মন ভরে।

আনিকা ভাবে গতকাল আসে নি হয় তো অভিমান করে।কিন্তু আজ তো সে আসবেই ভালোবাসার টানে?
এখন যে সে একা নয়।ঘরে যে তার বউ বাচ্চা দুজনি রয়।

হয় তো যা দেখেছে,সেটা জোড়পূর্বক হয়।তাহলে সেখানে রায়হানের কোনো দোষই নয়।

রায়হান তো কিছু বলতে চেয়েছিলো।কেনো যে তখন শুনলো না এমন কথা বার বার মনে করে রান্নার কাজ
শেষ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

পিছন থেকে আশরাফ সাহেব বলে উঠে…

-কি রে মা তুই রান্না ঘরে?তোর না শরীর খারাপ। তবুও কেন রান্না করতে আসছিস?

এমন কথায় আনিকা মিষ্টি হেসে আশরাফ সাহেবকে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বলে।

-বাবা তোমার মেয়ে এখন অনেকটা ভালো বুঝলা।
চা টা খেয়ে বলো কেমন হলো…আজকেরটা।

আশরাফ সাহেবের মন ঘুরানো এক মাত্র আনিকাই ভালো জানে। তাই তো কথা না বাড়িয়ে,চায়ের কাপটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।?


যে মেয়েটা বাড়ির সকলের এতো খেয়াল রাখে।ভালোবাসা বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে।তার জীবনে
কি হতে পারে নিজেই জানে না এখন পর্যন্ত যে?

কথায় আছে না…যত হাসি তত কান্না।আনিকার জীবনেও সেটাই অপেক্ষা করছে।দিন শেষ হবার আগেই তার প্রমাণ পাবে।

চলবে…..

সতীনের_সংসার পর্ব_৯

0

 সতীনের_সংসার পর্ব_৯
Writer: তানজিন সুইটি
#পর্ব_৯

রাজ একের পর এক প্রশ্ন করেই চলছে?তাই আর থাকতে না পেরে মিসেস সালেহা বেগম বলেই ফেলে।আনিকা এখন থেকে এ বাড়িতে মিসেস রায়হান চৌধুরী হয়।


রাজ এ কথাটা শুনার সাথে সাথে মাথায় বাধ ভেঙে পরে আকাশ থেকে বর্জ্য পাতের মতো করে।চিৎকার করে বলে উঠতেও পারছে না আনিকাকে, এটা তুমি কি করলে আমাকে ঠকিয়ে?মাথা নিচু করে থ হয়ে দাড়িয়ে রয়লো একই জায়গাতে।

মিসেস সালেহা বেগম রাজকে বসতে বলে চলে যায় উপরে।যেখান থেকে আশরাফ সাহেব বার বার ডাক দিচ্ছে মিসেস সালেহা বেগমকে।তাই আর দেরি না করে উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ানোর আগে,আনিকাকে বলে যায় রাজকে চা নাস্তা দিতে। আর রায়হানের সাথে কথাবার্তা বলিয়ে দিতে।আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না সে,বার বার তার ডাক পরছে উপর তলা থেকে।তাই সে দূরুত্ব প্রস্থান করলো খনিকেই।

মিসেস সালেহা বেগম চলে গেলো ঠিকই কিন্তু রেখে গেলো একা বেচারি আনিকাকে?

আনিকা বুঝে গেছে রাজের মুখ দেখেই।আজ হয় তো ওর শেষ দিন হবে।কি বলবে বুঝি উঠতে পারছে না সে?
তবুও মুখ থেকে করুন সুরে বলতে গেলে রাজ থামিয়ে দেয় সঙ্গে সঙ্গে।

দাঁতে দাঁত চেপে মাটিতে চেয়ে থাকে।ওর ভিতরে যে ভেঙেচুরে যাচ্ছে আনিকাকে এমন অবস্থা দেখে।মনে হচ্ছে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।চোখ দুটো লাভার লাল বর্ণের মতো ধারণ হয়েছে।যে কোনো সময় জ্বালিয়ে ছারকার করে দিবে।

-কেনো করলে আমার সাথে এমন?

???(ওর এমন অবস্থা দেখে ভয়ে কথা বলার সাহসও হারিয়ে ফেলেছে।শুধু কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে ফুপিয়ে ফুপিয়ে)

– কি আর বলবে?মুখ থাকলে তো বলবে?নাকি আমি রায়হানের মতো টাকাওয়ালা নয়।প্রভাবশালীও নয়।সুখে রাখতে পারবো না ইত্যাদি ইত্যাদি ঠিক না বলো আনিকা।তাই আমার ভালোবাসার মূল্য না দিয়েই ওর কাছে চলে গেলে।

-please ??একবার তো আমার কথা শোনো আগে।

???কি কি যে বলবে সেটা তো আগেই বলে দিলাম তোমাকে?okkk একটা কথা বলার চান্স দিলাম বলো বলো তাড়াতাড়ি করে।

-বিশ্বাস করো এই বিয়েতে আমার মতে হয় নি।

-হা হা হা?? বাহ প্রশংসার কথা তুলে ধরলে।
কোনো মানুষের মতের বিরুদ্ধে কিছু করানো যায় সেটা তোমাকে না দেখলে বুঝতামি না যে।
দাড়াও একটু হেসে নেই।???

এমন কথা বলেই রাজ অট্টোলিকার হাসি দিতে লাগলো।আনিকারও বুঝতে বাকি রয়লো না।এটা যে ওর কষ্টে হাসি।ভিতরে যে ওর জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে সবই।দু বছর ধরে দেখে আসছে ওকে।
এটুকু তো চিনতে পেরেছে এ দু বছরে। কিন্তু পাগলটাকে কিভাবে বুঝাবে এখন যে,সে কোনো দোষ করে নি।ওকে ঠকায় নি।ঠকেছে তো নিজেই।

এসব কথা ভাবতে ভাবতে রাজকে ধরে বসে পরলো পায়ের কাছে।

-সব কিছু সহ্য করবো please অবিশ্বাস করো না।

-বিশ্বাসই ছিলো কবে আমাদের মাঝে।আর তো অবিশ্বাস। দেখো আনিকা,ওহো সিট..মিসেস রায়হান হবে তো..ভুলেই গেছি।

অবিশ্বাস তাকেই করা যায় যে বিশ্বাসের মর্যাদা রেখে যায়।কিন্তু আপনি তো কোনোটারই যোগ্য নন।

আমার সাথে এ কয়েক বছর ছিলেন কিন্তু একবারের জন্যেও রায়হানের কথা বললেন না বাহহহ ?প্রশংসার যোগ্য।?

আমি এতোটাই পর হয়ে গেছিলাম যে, আমার সাথে চললেন ফিরলেন তবুও বলার প্রয়োজন করলেন না রায়হানের সাথে এফেয়ারের কথা।

আনিকার কথা বলার সুযোগই দিচ্ছে না রাজ,এমন কি ওর কোনো কথাই বিশ্বাস করছে না? ফ্লোরে বসে বসে কেঁদেই চলছে অবিরত। ?

-দেখেন এমন ন্যাকা কান্না বন্ধ করবেন।আপনাকে দেখে যেকোনো মানুষই ধোকা খাবে আর তো রাজ।?

যাক ম্যাডাম দোয়া করি।সুখে থাকেন।কিন্তু একটা কথা বলার ছিলো?

আনিকার এবার চোখ মুছে হা করে তাকিয়ে রয় রাজের দিকে।ও ভাবে এই তো রাজ হয় তো বলবে আনিকা আমি তোমার অনেক ভালোবাসি। কিন্তু হলো উল্টো কিছু?

-দেখেন ম্যাডাম আমি গরীব হতে পারি কিন্তু অভিশাপের সময় বড়লোক গরীব দেখেনা আল্লাহ মালিক?তাই আপনাকে আজ একটা কথা বলে যাচ্ছি ।এই রাজের কষ্টে ফল ফেরত পাবেন কঠিনতর।তখন হয় তো বার বার আমার কথা মনে করেন।কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যাবে?

পরে রাজ আর কিছু বললো না।অতিদ্রুত স্থান ত্যাগ করলো সেখান থেকে।না হলে যে আনিকাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেও ফেলতে পারে। এটা যে ভালো হবে না সমাজের চোখে।বাজে কথা শুনাবে পরকীয়া ভেবে।

আনিকা ফ্লোরে আবারও বসে পরলো। আল্লাহর কাছে বলতে লাগলো।

-কি দোষ করেছি?বার বার প্রিয় মানুষ হারানো আমার ভাগ্যেই লিখে রেখেছো বুঝি????
হারানোর ব্যথা আর সহ্য হচ্ছে না আমার।মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে আল্লাহ।আমাকে নিয়ে যাও তোমার কাছে। না হলে যে সবার অভিশাপ ফলে যাবে আমার কপালে।

হঠাৎ খেয়াল করে,উপরের সিঁড়ি বেয়ে কেউ নেমে আসছে।তাই তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে ফেলে।
ফ্লোর থেকে উঠে কিচেন রুমে দৌড়ে যায় চোখে মুখে পানি দিতে।

চোখে মুখে পানি দিয়ে যখনই ঘুরে দাড়ালো সামনে রায়হান।আনিকা কিছুটা আমতা আমতা করে বলতে লাগলো।

-আপনি এখানে?কিছু লাগবে।আমাকে বললেই হতো নিয়ে যেতাম উপরে।কষ্ট করে নিচে না নামলেই ভালো হতো আপনার শরীরের জন্যে।

-আরে নাহ..এখন আমি সুস্থ আছি।শুনলাম রাজ এসেছে তাই দেখা করতে আসলাম আর কি?কিন্তু তুমি এখানে কেনো?আর রাজ কোথায় দেখছি না তো ওকে?

আনিকা কি বলবে বুঝতে পারছে না?তাই একটা বানিয়ে কথা বলে ফেলে।

-উনার কি যেনো জরুরি ফোন আসলো আর চলে গেলো?বললো পরে আসবে।

-ওও….হয় তো আমাদের কোম্পানির কাজ ঠাজ হবে। অনেকটা কষ্ট করে আমার দোস্তোটা,আমার হয়ে। তাই চিন্তা করছি সুস্থ হলেই রেগুলার অফিসে যাবো। আর সব কাজ বুঝে নিয়ে এখন থেকে মন দিয়ে করবো।
তুমি কি বলো আনু?

আনিকা কোনো কথা বললো না,উপরে উপরে দেখালো মুচকি হেসে রায়হানকে, হ্যাঁ মন দেন কাজে।এটা বুঝিয়ে দিলো।




এভাবেই কেটে যাচ্ছে আনিকার দিনকাল মাস বছর।
রায়হানও অফিসে যায় নিয়মিত।আবার সময় মতো বাড়িও ফিরে আসে লক্ষী ছেলের মতো।রায়হানের মুখ থেকে শুনেছে রাজ যেনো চাকরি ছেরে দিয়েছে। অন্য জায়গায় চাকরিও নিয়েছে।এমন কি কিছু দিন আগে আদিরাকে বিয়েও করে নিয়েছে?

এমন কথা শুনে কষ্ট পাওয়ার থেকে খুশিই হয় অনেকটা।কারণ,রাজকে ভালো ভাবে বুঝে আনিকা আর আদিরা।মন থেকে দোয়া করে সব সময়।ওরা যেনো অনেক সুখি হতে পারে। আল্লাহ সেই ইচ্ছাটা পূরণ করেছিলো তাদের।যখন কয়েক মাস পার হয়ে গেছে শুনতে পায় রাজ বাবা হবে।সেটা শুনে যে আনিকা খুশি হয়েছিলো বলে বুঝাতে পারবে সে।

ও যতোটা খুশি হয়েছিলো,মনে হয় নিজেরই বেবি হবে।ঐ প্রথম রায়হানকে জড়িয়ে ধরে রাজের বাবা হওয়ার কথা শুনিয়েছিলো বলে।

এই কান্ড দেখে রায়হান অনেকটা অবাক হলেও
পরখনেই কি ভেবে আনিকার সাথে তাল মিলিয়ে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে?কিছুটা উঁচু করে নেয় বুকের ভিতরে।দুজনেরই এক অজানা ভালো লাগা কাজ করছে।আস্তে আস্তে রায়হান সুযোগের সৎব্যবহার করেই ফেললো এই দু বছরে।আনিকার কোমড়ে আলতো করে হাত রেখে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে দিলো
হঠাৎ করে।

আনিকাও বুঝে উঠতে পারে নি এমন হবে।কি করবে?
বাঁধা দিবে নাকি যা হচ্ছে হতে দিবে? শত হলেও রায়হান তার স্বামী।এই দু বছরে এতো ভালোবাসা কেয়ার করেছে বলে শেষ করা যাবে না।কখনো
জোরও করে নি।শুধু বলেছিলো.. যেদিন স ইচ্ছায় কাছে আসবে, সেদিনই স্বামীর অধিকার ফলাবে।

এখন তো আর সে ঠেকাতে পারবে না।স্বামীর অধিকার আছে ওর সম্পূর্ণ।তাই আর বাঁধা না দিয়ে তালে তাল মিলিয়ে অতুল সমুদ্রে পারি জমায় দুজনে।যেখানে আছে দুটি প্রাণের ভালোবাসার মিলন।পূর্ণতা পেয়েই গেলো আনিকা রায়হানের বিবাহ জীবনের পথ চলার জন্য।

চলবে….

(ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে?)

 সতীনের_সংসার পর্ব_৮

0

 সতীনের_সংসার পর্ব_৮

Writer: তানজিন সুইটি
 

আনিকাও বালিশে মুখ চেপে শুয়ে পরে।

ভোরের সূর্য আনিকার জন্য কি অপেক্ষা করছে?সেটা হয় তো নিজেও জানে না যে।কালো অন্ধকারের মতো আটকেও ধরতে পারে তার জীবনের প্রথম দিনটাতে।

সুদূরে সুরেলা কণ্ঠে আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে।
আনিকার ঘুম ভেঙে গেলো তারই আওয়াজ শুনে।
বিছানায় আর শুয়ে না থেকে উঠে পড়লো তাড়াহুড়ো করে নামাজের উদ্দেশ্যে।

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে অজু করে বের হলো।
এই প্রথম কোনো অজানা অচেনা জায়গায় রাত কাটালো আনিকা।রাতে তো ঘুমও হয় নি তার ভালো করে। সে যে অপরাধ করে ফেলেছে,তার ক্ষমা আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।যেনো সবাই তাকে ভুল না বুঝে। আল্লাহ কাছে সেই দোয়া করবে।নামাজ আদায় করে
আল্লাহর কাছে বলতে লাগলো…

আল্লাহ তুমি তো সব জানো।তুমি তো সবই দেখেছো।
আমার কোনো দোষ নেই। আমি কারো মনে কষ্টও দেই নি।তবুও আমার সাথে এমন হলো কেনো?এখন তো সবাই আমাকে ভুল বুঝবে।আপু, দুলাভাই, রাজ সবাই।
ওরা যদি ভুল বুঝে, আমি কোথায় গিয়ে দাড়াবো।

আল্লাহ তুমি এমন কিছু করো। যাতে ওরা আমাকে ক্ষমা করে দেয়।ওদের ছাড়া যে পঙ্গুত হবে আমার জীবন।চলতে পারবো ঠিকই কিন্তু বাঁচতে হয় তো কষ্ট হবে পঙ্গুত্বের মতোরই জীবন??

তুমি পরম দয়ালু।করুণাময়। তুমি চাইলে সব হয়।
আমার বেলাতেও সেই রকম চমৎকার দেখাও আল্লাহ একবার।???

বলে কাঁদতে থাকলো চিৎকার করে।রুমে যে রায়হান ছিলো ভুলেই গেছে সে।আনিকার চিৎকার শুনে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে পরে।খনিকটা ভয়ের মতো কাজ করে তার বুকে।চোখটা হালকা ডলতে ডলতে আনিকার সামনে গিয়ে বসে।

আনিকার জায়নামাজ থেকে সরে যখনই উঠতে যাবে
রায়হানের সাথে ধাক্কা লাগে।অবাকের থেকে ভয়টাই বেশি পায় সে। কিছুখন চেয়ে থেকে, চুপ করে মাথা নিচু করে সরে যায় রায়হানের কাছ থেকে।

রায়হান চুপ করে ঐ একই জায়গায় থ হয়ে বসে থাকে।
কিছু বুঝার চেষ্টা করতে থাকে।সকাল সকাল এমন কি হলো যে আনিকার জায়নামাজে বসে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।

আর কিছু চিন্তা করতে পারছে না সে।আনিকার কষ্ট যে তার সহ্য হয় না।তাই তো উঠে তার কাছে এগিয়ে যায়
কি হয়েছে জিঙ্গাসার উছিলায়।

-কি হয়েছে বলা যাবে একটু?

আনিকা কিছু বললো না।অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে পরলো।কারণ এখনও আলোর হয়নি বাহিরে?চারিদিকে অন্ধকার রয়ে গেছে অনেকটা।

রায়হানও আর কিছু জিঙ্গাসা না করে।পুনরায় শুয়ে পরলো সোফাতে।

দুজন দু জায়গাতে,এক আলাদা অনুভূতি কাজ করছে।
কারো পাওয়ার অনুভূতি।আর কারো হারানোর অনুভূতি।

কিছুখন আগে চোখ বন্ধ করলো।আনিকার কাছে মনে হলো,বাহিরে একটু হইচইয়ের শব্দ।ঘুম ঘুম চোখে ওয়ালের সাথে দেওয়াল ঘড়ি আটকানো তার দিকে তাকিয়ে থ হয়ে যায় কিছুখনের জন্যে।প্রায় ১২টাআআ

এতো বেলা পর্যন্ত কখনো আনিকা ঘুমাইয়ো নি।
কিন্তু আজ…..?তার উপরে এ বাসার কেউ ডাকলো না কেনো এখনও আনিকাকে?

সেটা ভেবে রুম থেকে বের হয়ে নামতে থাকে সিঁড়ি দিয়ে এক পা এক পা করে, কারা যেনো চিল্লাচ্ছে,
সেই উদ্দেশ্য দেখার জন্যে।

সিঁড়ির শেষ প্রান্তে যখন এসে হাজির আনিকা।তখন তো অবাক হয়ে গেছে ড্রয়িং রুমে যারা চিল্লাচিল্লি করছে তাদের দেখে।

কথা বলার সাহসও হারিয়ে ফেলেছে সে।ভিতরে ভুমিকম্পের মতো নরে উঠলো মুহূর্তে।ভয়ে তো শব্দও বের হচ্ছে না একটাও যে।বড় বড় চোখ করে,শুকনা গলায় ঢোক গিলে কষ্ট করে বলে উঠে…আপুউউ

আনিয়াও চিল্লানো বন্ধ করে আনিকার কাছে হুরমরিয়ে এগিয়ে যায়। শক্ত করে দু হাতের ডানা ধরে ঝাকিয়ে বলতে শুরু করে….

-তোর মনে এই ছিলো আনিকা।তাহলে আগেই বলতি আমাদের।আমরা কি তোর এতোটাই পর হয়ে গেলাম এক বেলাতেই?এতো বড়লোক ছেলেকে ফাঁদে ফেলে হাত করে নিয়েছিস যে, সে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেও প্রস্তুত হয়ে গেছে তোর ভালোবাসার পাবার পাগলে।
এর জন্য তুই এতোদিন ভারে ভারে রেখেছিস আমাদের,
বিয়ে করবি না বলে।আরে তোর দুলাভাই আর আমি গতকাল পাগলের মতো খুঁজেছি এখানে সেখানে।
আর তুই এখানে বিয়ে করে বাসর রাত সেরে ফেললি আমাদের একবার না বলে।বাহ বাহ..তোকে বাব্বাহ দিলেও কম হবে।

এই কারণে মা তোকে আমার হাতে তুলে দিয়ে গেছে। শুধু এই দিনটি দেখার জন্যে।আগে জানলে তোকে গলা টিপে মেরে ফেলতাম রে।তোর মতো বোন কোনো ঘরে থাকার চেয়ে মেরে ফেলাটা অনেকটা ভালো রে।

আনিকা যে কোনো কথা বলবে সেটাও পারলো না
ওর বোনের ভুল বুঝা দেখে।শুধু অঝরে কেঁদে চলছে মাটির দিকে মাথা নিচু করে।?

-please তোর ন্যাকা কান্না বন্ধ কর।তোর জন্য আজ আমাদের পুরো বংশের মুখে আচ পরলো।আমরা গরিব হতে পারি কিন্তু সম্মানটা ধরে রাখতে চেষ্টা করেছি এবছরে?কিন্তু তোর কারণে আজ সেটা মাটিতে মিশে গেলো আর তুই মাটিতে চেয়ে চেয়ে রঙ্গো দেখছি।

যাক তোর মুখ দেখেই বুঝা হয়ে গেছে সব। আর কিছু বলার নেই।শুধু একটা কথায় বলবো। যার জন্য আজ এমন কান্ড করলি বংশের মুখে কালি মেখে।একদিন পঁচকাবি বলে রাখলাম এই আমি তোকে।

বলে চলে যেতে লাগলো আনিয়া মিরাজের হাত ধরে।
কি মনে করে ফিরে আসলো পা ঘুরিয়ে।

আনিকার মুখোমুখি হয়ে…তোর জন্য আমাদের দরজা চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো শুনতে পেরেছিস কান দিয়ে।মানে তুই আজ থেকে আমাদের কাছে মৃত…..

বলাটা যতটুকু, স্থান ত্যাগ করতে সেকেন্ডও লাগেনি ওদের বের হয়ে যেতে।

এমন কথা শুনে আনিকা ফ্লোরে বসে পরে।
কেঁদে ফেলে জোরে জোরে করে।

মিসেস সালেহা বেগম দৌড়িয়ে এসে আনিকাকে জড়িয়ে ধরে।মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে শান্ত হতে বলে।কারণ ঘরে যে দু দুজন রোগী আছে।

আবারও মায়ের ভালোবাসা আর অসুস্থতা রোগীদের নিয়ে ব্লাকমেইল করে বলে…

-মা রে তুই কিন্তু কথা দিয়েছিস আমাকে।মায়ের দেওয়া কথা ভুলে গেলি এক রাতেই।

বাসস হয়ে গেলো ঠিক জায়গায় তীরটা মেরে।শান্ত করতে চেষ্টা করছে একটু একটু করে ফ্লোরে বসে।

হঠাৎ দরজা ভেদ করে প্রবেশ করলো অতি প্রিয় মানুষটা যে, এতো তাড়াতাড়ি ফেস করতে হবে আনিকার ভাবতেও পারে নি একবারের জন্যে।

প্রবেশ করতে করতে রায়হান বলে চিৎকার করছে।
হঠাৎ করে মেঝেতে বসে থাকতে দেখে আনিকাকে।
অবাক হয়ে যায় সে।

-আনিকা তুমি এ বাড়িতে।

আনিকার মুখ দিয়ে এবারও কথা বের হচ্ছে না।
হয় তো এবারও বোবা হয়ে গেছে।বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে।এক অনু সূচনা কাজ করছে আনিকার মধ্যে। কি বলবে তাকে?তার কাছে যে কোনো প্রশ্নের উত্তরই নেই আজ যে? তাই তো অসহায়দের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে কেঁদে চলছে।

-কি হলো কথা বলছো না যে?

এবার মিসেস সালেহা বেগম মুখ খুললো। আরে রাজ তুই… কথা ঘুরানোর চেষ্টা করলো মিসেস সালেহা বেগম কিন্তু কোনো কাজ হয় নি?

রাজ একের পর এক প্রশ্ন করেই চলছে?তাই আর থাকতে না পেরে মিসেস সালেহা বেগম বলেই ফেলে।আনিকা মিসেস রায়হান চৌধুরী হয় এখন এবাড়িতে।

চলবে……

 

সতীনের_সংসার পর্ব_৭

0

সতীনের_সংসার পর্ব_৭
Writer: তানজিন সুইটি
আনিকাও আর এক মূহুর্ত উপরে বসে না থেকে। বসে পরে সঙ্গে সঙ্গে তার সাথে তাল মিলিয়ে ফ্লোরে।
তারপর পৃথিবীর আর কিছু চিন্তা ভাবনা না করে
হ্যাঁ বলে দেয় রায়হানকে বিয়ে করবে বলে।

বাসস হয়ে গেলো সব ব্যবস্থা খনিকের মধ্যে।

সব কিছু ব্যবস্থা করতে করতে রায়হানের আর আশরাফ চৌধুরীও জ্ঞান ফিরে আসছে।

অন্য দিকে সারাদিন কল করেই চলেছে রাজ ও আনিকার বোন দুলাভাই মিলে। এক প্রকার পাগল হয়ে গেছে ওর জন্যে।

আনিকারও হাত পা বাধা।কি করবে? কিছুই তো করার নেই এখন তার যে।কথা দিয়ে ফেলেছে।অন্যদিকে ওর আপু দুলাভাইয়ের কথা অনেক মনে পরছে।ভয়ে কলও রিসিভ করতে পারছে না তাদের।রাজের কথা বাদই দিলো না হয়।কিন্তু তাদের সামনের যাওয়ার মুখটুকুও রাখলো না আর?বেচারি মুখ চেপে কেঁদেই চলেছে।

রেজিস্টার অফিসার ও একজন মাওলানাও এসেছে সঙ্গে।হাসপাতালেই তাদের বিয়ে পড়ানো হবে।নেই কোনো সাজসজ্জা,নেই কোনো আয়োজন।শুধু কলমের খোচা আর মুখে আল্লাহর কালেমা পড়লেই হয়ে যাবে বিবাহিত সম্পর্কে আবদ্ধ।

বিবাহের কাজ সম্পূর্ণ করে।আনিকাকে সঙ্গে করে বাসায় নিয়ে যাওয়ার আগে,আশরাফ সাহেবের কাছে নিয়ে গেলো দুজনকে।একসাথে সালাম করার সাথে সাথে আশরাফ সাহেব বলে উঠলো রায়হানের উদ্দেশ্য।

– আগে যা যা করেছিস ভালো কথা কিন্তু এখন যেনো ঐসব না শুনি?আর পাগলমিটাও কমিয়ে দিবি।তোর চিন্তায় কবে যেনো মরে যাই।

রায়হানও মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রয়লো কোনো কথা না বলে।পাশ থেকে মিসেস সালেহা বেগম বলে উঠে।

-ঐ বজ্জাত এখন কথা বলছিস না কেনো?কিছু একটা তো বলবি।না হলে সব হারাবি।

এমন কথা শুনে রায়হান সঙ্গে সঙ্গে নিচু সরে বলে উঠলো।

-হুমম আব্বু।

আর কিছু বলার সাহস হলো না মনে হয় রায়হানের।
ওর মনে যে কি আছে, একমাত্র আল্লাহ তাআলায় জানে?এর জন্যেই এমন হুমম বলে কাটিয়ে দিলো কোনো মতে।

আর কোনো কথা না বারিয়ে ডাঃ ওয়াজেদের সাথে কথাবার্তা শেষ করে আনিকাকে নিয়ে চলে গেলো রায়হানের বাড়িতে।রাতটাও প্রায় মাঝ বরাবর হবে।
বাড়িটা একদম ফাকা।কেউ নেই বোধহয় এ কয়েকজন ছাড়া।আনিকাকে নিয়ে গেলো রায়হানের রুমে মিসেস সালেহা বেগম নিজেই।কি করবে সে?তার একটা মাত্র মেয়ে।তাও তাঁর বিয়ে দিয়ে দিয়েছে গতমাসে।আর এতো তাড়াতাড়ি বিয়েটা দিয়ে দিয়েছে তাদের,কাউকে বলার সুযোগও হলো না।মিসেস সালেহা বেগম আর আশরাফ সাহেব বলে দিয়েছে পরে বড় করে আয়োজন করা হবে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানটা।

আনিকাকে দিয়ে গেলো রায়হানের রুমে খাটের উপরে বসিয়ে।চুপ করে বসে রয়লো। মাথা নিচু করে, হাটুর মধ্যে দিয়ে কেঁদে চলেছে। বার বার রাজের কথা ভাবছে।

-ওর কি দোষ?ওকে তো ভালোই বেসেছিলাম
শুধু বলতে পারলাম না একটি বারের জন্যে, হ্যাঁ হ্যাঁ ভালোবাসি তোমাকে অনেক যে।কেনো বললাম না ফোনে?কেনো অপেক্ষা করিয়ে রাখলাম তারে।

অন্যদিকে বোন দুলাভাইয়ের কথা মনে করে জোরে জোরে কেঁদে ফেললো খনিকের মধ্যে।তারা হয় তো মাফ করবে না এ জনমে।

মিসেস সালেহা বেগম বলেছে।সকাল হলে নিজে গিয়ে আনিয়া ও মিরাজকে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে বুঝিয়ে।
কিন্তু রাজের সাথে কি এ জনমে মুখ নিয়ে দাড়াতে পারবে।

আনিকা আর কিছুই ভাবতে পারছে না।তার কাছে পুরো পৃথিবীটা শূন্য শূন্য লাগছে।এরই মধ্যে দরজায়
নক পরলো।রুমে প্রবেশ হওয়ার শব্দ শুনতে পারছে কারো।এক অজানা ভয়ে বরফে জমে যাচ্ছে।কান্না থামিয়ে,নিজেকে সাহস দিতে লাগলো নিজে নিজেই।

দুহাত দিয়ে ওড়নাটা শক্ত করে চেপে ধরে, দম আটকিয়ে বসে রয়লো খাটের মাঝে।

রায়হান যখনই খাটের পাশে এসে আস্তে করে বসে আনিকার কাছে আসার চেষ্টা করলো তখনই চিৎকার দিয়ে উঠলো ।

-please কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। মনের বিরুদ্ধে বিয়েটা হয়েছে তাই বলে শরীরের জোর খাটাতে আসবেন না।না হলে…..

-না হলে কি??? বলো…

-নিজেকে শেষ করে দিবো।

এমন কথা শুনে রায়হানের মুখটা মলিন হয়ে যায়।চুপ করে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরে।

আনিকাও বালিশে মুখ চেপে শুয়ে পরে।

ভোরের সূর্য আনিকার জন্য কি অপেক্ষা করছে?সেটা হয় তো নিজেও জানে না যে।কালো অন্ধকারের মতো আটকেও ধরতে পারে তার জীবনের প্রথম দিনটাতে।

চলবে…..

(ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে)