সতীনের_সংসার পর্ব_১১

0
3411

সতীনের_সংসার
Writer: তানজিন সুইটি
#পর্ব_১১

কথায় আছে না…যত হাসি তত কান্না।আনিকার জীবনেও সেটাই অপেক্ষা করছে।দিন শেষ হবার আগেই তার প্রমাণ পাবে।

দুপুর পার হতে চললো।রায়হানের কোনো খবর নেই বলে সবাইকে খাবার দিয়ে দিলো টেবিলে ঠিকিই
কিন্তু দরজার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকে বার বার?

আশরাফ সাহেব এটা লক্ষ্য করে মিসেস সালেহা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে।

-জীবনেও মানুষ হবে না তোমার ছেলে।

মিসেস সালেহা বেগম বুঝতে পেরে মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বিষম খেয়ে বসে।পাশ থেকে আনিকা পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় আর বলে।

-আম্মু একটু ধীরে খাও না।আর আব্বু তুমিও না সব সময় এতো দোষারোপ করো না তো।

-দোষারোপ করছি না রে মা।সময় হলে বুঝতে পারবি ঠিকই কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে দেখিস মা?

আশরাফ সাহেবের বলতে দেরি অন্যপাশে আনিকার ফোন ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠে।

সবাইকে খেতে বলে ফোনটা রিসিভ করে একটু পাশে গিয়ে রিসিভ করে।কিছুখন অতিক্রম হওয়ার পর একটা জোরে চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেয়ে।
আশরাফ সাহেব আর মিসেস সালেহা বেগম এক প্রকার খাবার রেখে দৌড়ে আসে আনিকার কাছে।

এসে দেখে ফ্লোরে বসে কান্না করছে।মিসেস সালেহা বেগম আনিকাকে পাজর কোলে উঠিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে কুলসুমের মাকে এক গ্লাস পানি দিতে বলে।পানি খেয়ে একটু স্থির হয়ে বসতে বলে।তারপর বলতে বলে কে কল করেছিলো?

আনিকার আবারও কান্না পায়।আশরাফ সাহেবকে ধরে কান্না জরিত কণ্ঠে রায়হানের কথা বলেই যায়।

-রায়হানের কি হয়েছে বলবি তো?না বললে বুঝবো কি করে বল?

মিসেস সালেহা বেগমেরও ছেলের কথা শুনে মুখখানা মলিন হয়ে যায় ভয়ে।

-আব্বু ওকে ছাড়িয়ে আনো।কারা যেনো ওকে আটকিয়ে রেখেছে টাকার বিনিময়ে।আর বলেছে যদি টাকা না দেই তাহলে জোড় করে অন্য কারো সাথে বিয়ে করিয়ে দিবে।

এমন কথাতে ইতি মধ্যে আশরাফ সাহেব অবাক হলো এক প্রকার।এতোকাল শুনে এসেছে,কিডন্যাপ হলে টাকা না পেলে মেরে ফেলে কিন্তু আজ এই প্রথম শুনলো উল্টো কথা?

-তোকে কে কল করেছিলো?

-আপনার ছেলে নিজেই।

-ও কিভাবে কথা বললো তোর সাথে?

-জানি না।এতো কথা বাদ, তুমি টাকা দিবা কিনা বলো?
নাকি আমাকে সতীনের ভাত খাওয়াতে চাও।

এমন কথায় আশরাফ সাহেব আর কোনো কথা না বারিয়ে চুপ চাপ টাকা পাঠিয়ে দেয়।তারপর আশরাফ সাহেব একটা কথায় বলে।

-মা রে তোর মনটা অনেক নরম আর ভালো। তার জন্য সবাই তোকে কষ্ট দেয়।দেখিস হিতে বিপরীত না হয়।
দোয়া করি তবুও যেনো সুখি হোস।বলে চলে গেলো আশরাফ সাহেব।

টাকা পাঠানোর পরও এক-দু দিন কেটে যায়।তবুও রায়হানের কোনো খবর না পেয়ে।ওর ফ্রেন্ড জীতুর বাড়িতে যায়।এই প্রথম রায়হানের কোনো ফ্রেন্ডদের বাড়িতে যায় আনিকা, মিসেস সালেহা বেগমকে সাথে করে।

আনিকাকে দেখে জীতুর মা অবাক হয়ে বলে।গরীবের বাড়ি হাতির পা কি ভাবে পরলো রে। এ কথাতে আনিকা কিছুটা লজ্জা পেলেও,যে কাজের জন্য এসেছে, সেটা তো সফল হতে হবে।

-আন্টি জীতু ভাইয়া বাসায় আছে?

জীতুর মা কিছুটা বুঝতে পেরেছে মুখ দেখে তাই আর কথা না বারিয়ে জীতুর রুমে নিয়ে যায়।জীতুও একটু অবাক হয়েছে বটে।

-বসো আনিকা। মা উনাদের জন্য খাবার নিয়ে এসো।
বসেন আপনারা বলে জীতুর মা যেই পা বারাতে যায় তখনই আনিকা…

-আন্টি আপনি এখানে বসেন।কিছু লাগবে না।
কয়েকটা কথা আসছি।আপনিও বসেন পাশে।

আসলে হয়েছে কি ভাইয়া?আজ কয়েকদিন ধরে রায়হান বাসায় নেই।গতকাল হঠাৎ কল আসে।
তারপর সব খুলে বলতে থাকে…লাস্টের যে একটা কথা বললো তখন জীতু বলে

-তুমি যে ঠিকানার কথা বলেছো।ঐখানে আমার মামাতো বোনের শ্বশুর বাড়ি। দুলাভাই থাকতে চিন্তা কি আর?

জীতু ওদের সামনেই ওর দুলাভাইকে কল করে সব কিছু ভেঙে বলে।তারপর সে বলে কোনো চিন্তা না করে। সে সব খোজ খবর নিয়ে দেখবে আর যেনো ক্ষতি না করে সেই ভরসা দেয়।

জীতুর দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলা শেষ করতে না করতে রায়হান কল করে আনিকার কাছে।তার এখন কোথায় আছে কি করবে খুলে বলে সব?

চলবে…..

(ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে