সতীনের_সংসার  পর্ব_১০

0
3344

#সতীনের_সংসার 
Writer: তানজিন সুইটি
#পর্ব_১০

এখন তো আর সে ঠেকাতে পারবে না।স্বামীর অধিকার আছে ওর সম্পূর্ণ।তাই আর বাঁধা না দিয়ে তালে তাল মিলিয়ে অতুল সমুদ্রে পারি জমায় দুজনে।যেখানে আছে দুটি প্রাণের ভালোবাসার মিলন।পূর্ণতা পেয়েই গেলো আনিকা রায়হানের বিবাহ জীবনের পথ চলার জন্য।


দিনকাল ভালোই কাটছিলো।হঠাৎ একদিন রায়হান বললো রাজের বেবিটা নষ্ট হয়ে গেছে।সেটা শুনে কষ্টে ফেটে যায় আনিকা বুকটা।সে ভাবে আল্লাহ কেনো রাজের হাসি খুশি জীবনটা বার বার ভেঙে দিয়ে যায়।

যার জন্য অকুল দরিয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছিলো জীবনটা কিন্তু তার জীবন যে হবে এমনটা,ভাবে নি আনিকা?

চোখ দিয়ে বেয়ে বেয়ে পানি পড়তে থাকে।সেটা দেখে রায়হান প্রশ্ন করে?

-কি হলো আনু?কাঁদছো কেনো?

রায়হানের প্রশ্ন করা দেখে আনিকা নিজেকে স্থির করে বলে ফেলে?

-কোথায়??চোখে পোকা পড়েছিলো তো,তাই পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়ছে চোখ দিয়ে।(মিথ্যা কথা না বললে অনেক কথার সম্মুখে হতে হতো আজ ওকে)

এ কথা বলে চলে যেতে লাগে।তখনিই মাথা ঘুরে পরে জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পরে যায়।সঙ্গে সঙ্গে রায়হান চিৎকার করে উঠে আনিকাআআআ বলে।ওর কণ্ঠ শুনে সবাই দৌড়িয়ে রুমে প্রবেশ করে। আনিকাকে নিয়ে খাটে শুইয়ে দিয়ে পারিবারিক ডাঃ কে কল করে তাড়াতাড়ি আসতে বলে।

এদিকে ডাঃ আসতে দেরি দেখে রায়হান একবার রুমের এমাথায় যায় তো ঐমাথায় যায়।আর মাথার চুলগুলো টেনে টেনে প্রায় ছিরেই ফেলছে।এটা দেখে মিসেস সালেহা বেগম বলে।

-বাবু ভয় পাস না তো,ওর কিছুই হবে না।যে এতো ভালোবাসে বউকে।তার কিছু হতে পারে বল।এখন পাগলামি বাদ দিয়ে চুপ করে ওর পাশে বয়।

রায়হান এ কথা শুনে চুপ করে আনিকার মাথার কাছে বসে।এক নজরে চেয়ে রয়।আর মনে মনে আল্লাহুকে বলছে ওর যেনো কিছু না হয়। এমন সময় ডাঃ চলে আসে।

-ডাঃ ওয়াজেদ আনিকাকে দেখে রায়হানকে বলে এটা কি করে হলো?আমার দোস্তোকে খবর দেন ভাবী তাড়াতাড়ি।

এমন কথা শুনে রায়হানের ভিতরে তুফান শুরু হয়ে যায়।চোখ থেকে পানি পরবে পরবে এমন ভাব।অসহায়ের মতো ডাঃ ওয়াজেদের মুখে চেয়ে রয়।
মিসেস সালেহা বেগমেরও একই হাল।তখনই ডাঃ ওয়াজেদ বলে উঠে

-আরে বেটা তুই বাবা হতে চলেছিস।যাহ তাড়াতাড়ি মিষ্টি মুখ করাবি তো সবাইকে।

রায়হানের এতোখন চোখ টলমল করছিলো।এমন কথায় টপ টপ করে ঝরে পরে।হয় তো এটা তার আনন্দের পানি।মুখে কথা বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
কি বলবে সেটা না পেয়ে জোড়ে করে বলে ফেলে?

-আমি বাবা হবো আমি আমি….?????

এমন কথাতে সবাই হেসে ফেলে বলে।তাহলে কি অন্য কেউ হচ্ছে?এটা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে মিষ্টির দোকান তুলে নিয়ে বাড়ি ফিরে।
পুরো বাড়িটা এখন খুশির জোয়ারে ভাসছে।


দেখতে দেখতে পার হলো ১০মাস।নতুন অথিতি পৃথিবীতে এসে মুখরিত করে দিলো চারপাশ।
সবাই অনেক অনেক খুশি।আর এতো খুশিই হবে না কেন?বংশের প্রদীপ বলে কথা যার।

নাম করনও করে ফেলে,আনিকা আর রায়হানের নামের সাথে মিল করে আরিয়ান চৌধুরী।?


অন্যদিকে রাজেরও বেবি হয়,আনিকার বেবির এক বছর হওয়ার পর। দুপাশ থেকে আলাদা আলাদা মানুষ দুটা অনেকটা সুখে জীবন জাপন করে দিনগুলো পার করে যায়।


কিন্তু এই খুশি কতোটা যে সেটার সরুপ দেখতে পারছে বর্তমানে আনিকা?

১০বছর আগের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে আনিকা ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেছে সেটার খেয়াল নেই আর।

বাস্তবের জগতে ফিরে আসে..

পূর্ব আকাশে সূর্যের আলো ঝলমল করে হেসে উঠাতে। জানালা ভেদ করে আনিকার মুখের উপরে।রোদে চাইতে না পেরে, চোখ বন্ধ অবস্থায় পাশে হাত দিয়ে খুঁজে চলে তার ভালোবাসার মানুষটাকে।

যখন পাশে খুঁজে পায় না।চোখ আস্তে করে খুলে পুরো রুমে খুঁজতে থাকে কোথায় গেলো সে।পরখনেই মনে পরে গেলো, গতকাল তো সে বাসায় আসে নি যে।

ছেলেকে বুক থেকে নামিয়ে।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে চলে যায় রান্না ঘরে।প্রিয়জনের জন্য রান্না করতে থাকে মন ভরে।

আনিকা ভাবে গতকাল আসে নি হয় তো অভিমান করে।কিন্তু আজ তো সে আসবেই ভালোবাসার টানে?
এখন যে সে একা নয়।ঘরে যে তার বউ বাচ্চা দুজনি রয়।

হয় তো যা দেখেছে,সেটা জোড়পূর্বক হয়।তাহলে সেখানে রায়হানের কোনো দোষই নয়।

রায়হান তো কিছু বলতে চেয়েছিলো।কেনো যে তখন শুনলো না এমন কথা বার বার মনে করে রান্নার কাজ
শেষ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

পিছন থেকে আশরাফ সাহেব বলে উঠে…

-কি রে মা তুই রান্না ঘরে?তোর না শরীর খারাপ। তবুও কেন রান্না করতে আসছিস?

এমন কথায় আনিকা মিষ্টি হেসে আশরাফ সাহেবকে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বলে।

-বাবা তোমার মেয়ে এখন অনেকটা ভালো বুঝলা।
চা টা খেয়ে বলো কেমন হলো…আজকেরটা।

আশরাফ সাহেবের মন ঘুরানো এক মাত্র আনিকাই ভালো জানে। তাই তো কথা না বাড়িয়ে,চায়ের কাপটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।?


যে মেয়েটা বাড়ির সকলের এতো খেয়াল রাখে।ভালোবাসা বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে।তার জীবনে
কি হতে পারে নিজেই জানে না এখন পর্যন্ত যে?

কথায় আছে না…যত হাসি তত কান্না।আনিকার জীবনেও সেটাই অপেক্ষা করছে।দিন শেষ হবার আগেই তার প্রমাণ পাবে।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে