সতীনের_সংসার পর্ব_১৫

0
3161

সতীনের_সংসার পর্ব_১৫
Writer: তানজিন সুইটি
রিয়ারও কোনো খবর নেই এ কয়েকদিনে?কেমন মেয়ে আল্লাহ মাহমুদ জানে।আল্লাহুর কালাম পড়ে বিয়ে করেছে রায়হানকে।তবুও একটু টান নেই তার প্রতি তিল পরিমাণে।হয় তো চিকিৎসার বহন নিতে হবে বলে।দূরে সরে আছে কোনো খোজ খবর নিচ্ছে না কারো কাছে।সময় হলে বের হয়ে যাবে মনসার মতো করে।

হয় তো বিষটা বেশি হবে মনসার ছবলের বিষের থেকেও খারাপ হবে তার আবির্ভাবে।তার জন্য হতে পারে সংসার ভাঙনের নতুন প্রভাব।


রায়হানের সুস্থ্যতার জন্য সব রকমের সেবাযত্ন করে যাচ্ছে আনিকা।দিনের পর দিন,রাতের পর রাত জেগে কাটিয়েছে নিঃস্বার্থভাবে তার প্রাণ প্রিয় স্বামীকে সুস্থ্য করার জন্যে।তবুও কি সেই ফল পাবে।আল্লাহ হয় তো তার জীবনে সেইটুকু সুখ লেখেও রাখে নি অভাগি বলে।দুদিন পার হতে না হতেই তার প্রমাণ পেয়ে যাবে।

ঘুম ঘুম চোখে হেলান দিয়ে বসে আছে খাটের এক কোণে রায়হানের মাথার পাশে।হঠাৎ করে এমন করবে আনিকাও বুঝতে পারে নি একবারের জন্যে।আচমকা
হ্যাচকা টান দিয়ে যাপ্টে ধরে ফেলে দিয়ে তার উপরে উঠে পুরুষত্ব প্রকাশ করবে।শত চেষ্টা করার পরেও, পেরে উঠতে পারছে না রায়হানের সাথে।দু চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরছে বেরি বাধ ভেঙে যাওয়ার মতো করে।জোরে চিৎকারও দিতে পারছে না আবার সহ্যও করতে পারছে না।কি করবে সে?অবশেষে হাল ছেরে দেয়,না পেরে।তার মতো সে পুরুষত্বের পরিচয় দিয়েই যাচ্ছে তো যাচ্ছে।তাকে দেখে যে কোনো মানুষই বলবে কতোদিনের খুদার্থ সে?তাই তো সে শকুনের মতো ছিরে ছিরে মনের সুখে খেয়ে চলেছে তাকে।

অনেকখন পর কেটে গেলে,ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পরে।
আনিকা পাশ থেকে সরে গিয়ে নেমে পরে ফ্লোরে।
শূণ্য শরীরে ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে আনিকার।
এই কি সেই রায়হান?যে কিনা পাওয়ার জন্য কত বছর কাটিয়ে দিয়েছে একই বিছানায় এক কোণায় শুয়ে, মাঝে বালিশেরও প্রয়োজন পরে নেই তাদের মাঝে।আর এখন কি সে ছিঃ ছিঃ ঘৃণায় জ্বলে যাচ্ছে?????

কান্না করারও শক্তি হচ্ছে না আনিকার।কিভাবে করবে কান্না?তার যে সব শক্তিও হ্রাস হয়েছে রায়হানকে দিনরাত সেবাযত্নে সুস্থ করে ফেলাতে।নিজের শরীরই দুর্বল হয়ে গেছে তার জন্য এমন জঘন্য কাজ করে ফেলতে পেরেছে।

নিথুন দেহ নিয়ে আস্তে আস্তে চলে গেলো ওয়াশরুমে।
গোসলটা সেরে নিলো অনেক কষ্টে ধীরে ধীরে।সর্ব শরীর যে তার আমা-বর্শা চাঁদের মতো ঘীরে রেখেছে।
বের হয়ে আস্তে করে শুয়ে পরে সোফাতে।চোখটা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে চলেছে আল্লাহ আল্লাহর নাম নিয়ে।এমন করতে করতে কখন যে ঘুমের রাজ্যে পারি দিয়েছে সেটার হুসই নেই নিথুন দেহ নিয়ে।

হঠাৎ ই চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসে আনিকার কানে।
এমন ভাবে চিল্লাচ্ছে।মনে হয় কোনো মূল্যবান রতন ডাকাতি হয়ে গেছে?কোনো রকম চোখ খোলার চেষ্টা করে চলেছে।তবুও পারছে না চোখ মেলে তাকিয়ে চারিদিকে দেখতে।আসলে মেয়েটার শরীর অনেক দুর্বল হয়ে গেছে।তার উপরে মানসিক ও শারিরীক টর্চার করেছে।সেই অনুযায়ী চোখও খোলা সম্ভব হবে নাকি আল্লাহ মাবুদ জানে।

কোনো রকম চোখটা কচলাতে কচলাতে নামতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে।হঠাৎ ই কণ্ঠের সরটা খুব চেনা চেনা লাগলো আনিকার কাছে?ভালো করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখতেই বুকের ভিতরে চিন করে উঠে।পাশ থেকে রায়হান তার আগে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে দ্রুত গতিতে।

-কি ব্যপার রিয়া তুমি এভাবে চিল্লাচ্ছো কেনো এখানে?

-তো কি করবো নাচবো?আজ এতো দিন হলো তোর খোঁজ খবর নাই কেন?বিয়ে করছোস কি আমারে রেখে বড় বউকে নিয়ে শুয়ে থাকতে?

এমন কথাতে আনিকা অবাক হয়ে যায়।এটা কোন ধরনের কথাবার্তা ছিঃ।(মনে মনে ভাবে)

-তুমি কি চুপ করবে?সবাই চলে আসবে তো।

এমন সময় আশেপাশের সবাই চলে আসে।তখন মিসেস সালেহা বেগম বলে উঠে।

-আনিকা ভিতরে নিয়ে যা তো রিয়াকে?

আনিকা অসহায়ের মতো করে মিসেস সালেহা বেগমের দিকে তাকিয়ে থাকে।আনিকার তাকিয়ে থাকতে দেখে
মিসেস সালেহা বেগম চোখ বড় বড় করে রাগ রাগ ভাব দেখিয়ে উঠে।আনিকা আর কোনো দিশে না পেয়ে নিয়ে যায় তার রুমে রিয়াকে।ভিতরে ভেঙে যাচ্ছে তবুও শান্ত ভাবে চলছে।অন্যদিকে রিয়ার ভাব ই অন্যরকম।
আনিকার হাত সরিয়ে দেয়।মনে হয় ওর জামাইকে কেরে নিয়েছে আগে ওর থেকে।

রিয়াকে বসিয়ে দিয়ে চলে এলো নিচে।রান্না ঘরে ঢুকে আর কান্না থামিয়ে রাখতে পারলো না।ভিতরে জমে থাকা জলগুলো পরতে শুরু করে দিলো।পাশ থেকে মিসেস সালেহা বেগম বলে উঠে।

-এমন কান্না কাটি বাদ দিয়ে।রিয়ার আর রায়হানের জন্য কিছু নাস্তা বানিয়ে দিয়ে আস।আর সবার সামনে যেনো এমন ভাব না দেখি।যা হয়ে গেছে তো হয়েই গেছে।কত মানুষ সতীনের ভাত খায়।তাদের তো সমস্যা হয় না।আর রায়হান তো তোকে ভাত কাপড় সবই দিবে তাহলে তোর সমস্যা কোথায় বুঝি না বাপুরে।এখনকার যুগে এবেল এবেল দুটা তিনটা বিয়ে করে ছেলেরা।আর তো রায়হান ভুল করে ফেলছে।তবুও তোকে অনেক ভালোবাসে।তো এসব মেনে নিয়ে খা ভালোই হবে তোদের।

আনিকা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুনেই চলেছে।

-আরেকটা কথা।তোর শ্বশুর বিদেশে গেছে একটা কাজের উদ্দেশ্যে।আসতে আসতে কোরবানির ঈদ পার হয়ে যাবে,তো এসব ব্যপার তার কাছে যেনো তিল পরিমাণে কানে যায় না যেনো কোনো মতে।যদিও এসে দেখে আর শুনে তো তুই উনাকে বুঝিয়ে শুঝিয়ে সব ঠিক করে ফেলবি।কারণ,তোর কথা অমান্য করবে না কোনো দিনও উনি।

পরে মিসেস সালেহা বেগম চলে গেলো নানান ধরনের জ্ঞান জ্ঞুয়েন দিয়ে।

আনিকা কাঁদবে কি আর?তার চোখ তো এখন বন্ধ হওয়ার পালা।অপেক্ষা শুধু মরার।

চুপচাপ নাস্তা বানিয়ে নিয়ে গেলো রায়হানের রুমে।ততখনে রুম পুরো ভরে গেছে এলাকার মানুষ দিয়ে।
সবাই নতুন বউ দেখতে এসেছে।ভালোই বলছে কেউ কেউ চেহারার প্রসংশা হিসেবে।আবার কেউ কেউ বলছে,শুধু চেহারা থাকলেই হবে নাকি?চরিত্রটা কি দেখবা না একটিবারের জন্যে?এমন অসভ্য মেয়ে আর কোথাও আছে।যে বউ বাচ্চা দেখেও আসে সংসার ভাঙতে নিজের স্বাদ আল্লাদ পূরন করতে।

এসব কথা ফুসফাস করে বলতে থাকে সবাই। এমন সময় আনিকা রুমে প্রবেশ করতেই সবাই চুপ হয়ে যায়।
ওকে দেখে হাই হুতাস বলে চলে গেলো যার যার বাড়িতে।

আনিকা ওদের দুজনকে খাইয়ে দাইয়ে নিচে চলে এলো পরের সব কাজ সম্পূর্ণ করতে।রিয়া আর রায়হান পটের বিবির মতো রুমে খাটের উপরে গল্প সালাপ করতে থাকে।মনে হয় তারা কত বছর ধরে কথাবার্তা বলে না দুজন দুজনের সাথে।

আনিকার সারাদিন কেটে যায় কাজ কর্মের মাধ্যমে।
সমস্যা হচ্ছে রাত কিভাবে পার করবে?রাত অনেক হয়ে গেছে,এখন তো ঘুমানোর জন্য সবাই ব্যস্ত হয়ে গেছে।মিসেস সালেহা বেগমও বলে গেছে তাড়াতাড়ি গিয়ে ঘুমে পড়তে।আনিকা কি করবে ভাবতে থাকে।
অবশেষে উপরে চলে যায় নিজ রুমে।আনিকাকে দেখে
রায়হান বলে উঠে।

-এতোখন লাগে তোমার কাজ শেষ করতে।এখন আসো ঘুমাবে।

আনিকা বড় বড় করে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে রায়হানের দিকে।এমনটা দেখে রিয়া বলে উঠে।

-হ্যাঁ আনিকা আসো আমরা তিনজন একসাথেই শুয়ে পড়ি।(আসলে রিয়া এই কথাটা বলেছে দাঁতে দাঁত চেপে)

-আমি সোফায় শুয়ে পরি।তোমরা খাটে শুয়ে পরো।

এটা শুনে রায়হান চিল্লেয়ে উঠে।

-কি বলছি কান দিয়ে যায় না তোমার?

এমন দেখে আনিকা আর কথা না বারিয়ে খাটের এক কোণে বালিশ নিয়ে শুয়ে পরে।মাঝে রায়হান আর তার ঐপাশে রিয়া।

আনিকার কি আর সারা রাত ঘুম হবে এটা দেখে?শুধু মনে হবে এই বুঝি পাশে শুয়ে ওরা দুজন কিছু করে বসবে।আর সেটা ওর পাশ থেকে অনুভব করতে হবে।

এটা ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে আসলো আনিকার।
হঠাৎ কারো পায়ের ছোয়া পেলো।আস্তে করে চোখ মেলে,ডিম লাইটের আলোতে দেখার চেষ্টা করে চলেছে কি হচ্ছে……..?????????

চলবে…

(ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে