Wednesday, September 3, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2325



নষ্ট গলি পর্ব-৬

0

নষ্ট গলি পর্ব-৬

লেখা-মিম

বিকেল হয়েছে। পশ্চিম অাকাশে সূর্যের তেজ কমে গিয়েছে অনেকটাই। সাদা মেঘে কমলা রঙের অালো ছড়িয়ে পড়ছে। মায়া ফুল গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে। সন্ধ্যামালতিগুলো ফুটতে শুরু করেছে। অাজ সকালে সোহান ওর হাতে একটা ফোন দিয়েছে। ফোনটা সোহানের অালমারিতে পড়ে ছিলো। দুপুরের দিকে ড্রাইভারকে দিয়ে সিম কার্ড পাঠিয়েছে। মায়ের সাথে অনেকক্ষন কথা বলেছে ও। মা খুব খুশি। এবার বুঝি তার মেয়ে এই নরক থেকে মুক্তি পেলো। সোহানকে প্রানভরে দোয়া দিয়েছেন তিনি। সোহান বলেছে ঘরটাকে নিজের সংসার হিসেবে অাগলে রাখতে। অাচ্ছা সংসার কিভাবে অাগলে রাখে? মা কে তো কখনো দেখেনি সংসার করতে। মেয়ে মানুষ তো মায়ের কাছ থেকেই সংসার করা শিখে। এখন কি হবে? ওর তো খালা মামিও নেই বা কোনো বড় বোন নেই সংসার করা শিখাবে। তবে কি সংসার সামলানোর ক্ষেত্রে জিরো মার্কস পাবে? না না, জিরো পেলে কি চলবে নাকি? একজন লোক শখ করে ওকে সংসারের দায়িত্ব দিয়েছে। তার শখটা তো পূরন করতেই হবে। কিভাবে সংসার শুরু করা যায়? রান্না করে নাকি ঘর পরিষ্কার করে? অাজ শুরুটা নাহয় রান্না দিয়েই হোক। সোহানকে ফোন করে জিজেস করা দরকার সে কি খেতে চায়? সোহানের নাম্বারে ডায়াল করলো মায়া।
-” হুম মায়া।”
-” ইয়ে বলছিলাম মানে রাতে রান্না করবো। কি রান্না করবো?”
-” তুমি না অসুস্থ?”
-” এখন একটু ভালো অাছি।”
-” এখন রান্না করার দরকার নেই। সুস্থ হও এরপর রান্না করো।”
-” করি না একটু।”
-” কি খেতে ইচ্ছে করছে বলো অামি অাসার সময় নিয়ে অাসবো।”
-” না অামার জন্য না। অাপনার জন্য রান্না করতে চাই। অাপনার প্রিয় কিছু।”
-” অামার জন্য?”
-” হুম।”
-” কিছু করতে হবে না। তুমি এই অসুস্থ শরীরে অামার জন্য কিছু করতে চেয়েছো এতেই অামি খুশি। খুব বেশিই খুশি হয়েছি।”
-” বেশি কিছু করবো না। শুধু একটা পদের কথা বলেন। অামি তাই করবো”
-” এসব জোরাজোরি অামি একদম পছন্দ করি না মায়া। কাজ করছি। অাজাইরা প্যাচাল বন্ধ করো। যত্তসব …..”
রাগ করে ফোনটা কেটে দিলো সোহান। কি হলো কিছুই বুঝলো না মায়া। পুরো ব্যাপারটা মাথার উপর দিয়ে গেলো তার। মাত্রই না বললো খুব খুশি হয়েছে। তাহলে এমন রাগ দেখালো কেনো? একটু কষ্ট পেলো মায়া। তার কি দোষ? লোকটাই তো বললো এটাকেনিজের সংসার ভাবতে। হতে পারে ব্যস্ত। তাই হয়তো এমনটা করলো।
জোনাকির মুখোমুখি বসে অাছে মায়ার মা বিউটি। জোনাকি পান চাবাচ্ছে অার বিউটির সাথে কথা বলছে।
-” তোর মাইয়্যার তো কপাল খুইল্লা গেছে রে বিউটি।”
-” হ বুবু।”
-” বেডার হাব ভাবে তো লাগতাছে তোর মাইয়্যারে এক্কেবারে তার কাছে রাইখা দিবো। বিয়া-শাদি করবো নাকি? জানোস কিছু?”
-” না তেমন কিছু তো কইলো না।”
-” কেন জানি মনে হইতাছে তুই জানোস। জাইনাও না জানার ভান করতাছোস।”
-” ছিঃ বুবু। কি কন? সত্যিই জানি না অামি।”
-” বুবু…….।”
-” কিরে কুসুম? এমনে হাঁপাইতাছোস ক্যান?”
-” কাজলের ব্যাথা উঠছে। ডাক্তার লাগবো।”
-” এহ্ ডাক্তার লাগবো। ডাক্তার খরচা দিবো কেডা? তোর বাপে? অাজকা সাতমাস ধইরা কাজলের ইনকাম বন্ধ। ওরে উল্টা খাওয়াইতে হইতাছে। ঐ বিউটি যা তো কাজলের কাছে। অার কুসুম তুই ফখরুলরে গিয়া কইবি দাইরে খবর দিতে। অার বিউটি শোন, যদি মাইয়্যা হয় সোজা অামার কাছে নিয়া অাইবি অারযদি পোলা হয় এতিমখানায় দিয়া অাইসা পড়বি। ”
-” বুবু মাস দুয়েক মার কাছে থাকতে দেন। দুধের বাচ্চাটা মা ছাড়া কেমনে থাকবো?”
-” ইশশ, পীড়িত কত্ত! এত পীড়িত কই পাস বিউটি? বাচ্চা একটা লগে ঝুলায়া রাখলে কি বেডারা ওর কাছে যাইবো নাকি? মাইয়্যা হইলে না হয় ছাড় দেওন যায়। পোলা হইলে এক চুলও ছাড় দিমু না অামি। ওর পোলার লাইগা কি অামি অামার ধান্দা লাটে উঠামু? বেহুদা কথা বাড়াইস না তো। যা, কাজলের কাছে যা।”
বিউটি দৌড়েগেলো কাজলের রুমে। ব্যাথায় কোঁকাচ্ছে সে। বিউটি পাশে বসতেই হাত চেপে ধরলো কাজল।
-” বুবু শোনো।”
-” কি রে বইন?”
-” অামার যদি মাইয়্যা হয় তুমি যেমনে পারো অামার মাইয়্যাডারে এইখান থেইকা সরায়া ফালাইবা। ওরা কেউ জানার অাগেই কামডা সারতে হইবো।
-” কেমনে সরামু? ফখরুলরে দেখোস না কারো বাচ্চা হইতে নিলে দরজার বাইরে কেমনে খাড়ায়া থাকে। ”
-” তাইলে বুবু বাচ্চারে লবন খাওয়াইয়া মাইরা ফালাইও। অামি চাই না অামার মাইয়্যাডা এইখানে পইচা মরুক। এখানে পইচা মরার চেয়ে একবারে মইরা যাওয়া ভালো।”
-” কি কস পাগল ছাগলের মতো?”
-” ঠিক কইতাছি বইন। নিজে এতকাল পইচা মরছো। তুমি বুঝো না পইচা মরার কষ্ট কি?”
-” অাইচ্ছা দেখি কি করা যায়। তুই অাল্লাহ রে ডাকতে থাক কাজল। কালেমা পড় বেশি কইরা।”
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কাজশেষ করে অফিস থেকে বেরিয়েছে সোহান। গাড়িতে উঠে হুঁশ হলো মায়ার কথা। ব্যবহারটা কি বেশিই খারাপ হয়ে গেলো? ভালো কথাই জানতে চেয়েছিলো মেয়েটা। রাগ না দেখালেও চলতো। এত রাগ সোহানের অাসে কোথ্থেকে সেটা সে নিজেও বুঝে না।
বাসায় এসে পৌঁছেছে সোহান। ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছে মায়া। ঘরে ঢুকেই মায়ার কপালে হাত দিয়ে দেখলো কপালে জ্বর অাছে কিনা। নাহ, টেম্পারেচার তেমন নেই। হালকা অাছে। সম্ভবত ১০০ ডিগ্রি হবে।
-” মায়া…”
-” জ্বি।”
-” যাও চুল বেঁধে অাসো। অামি ফ্রেশ অাসছি একসাথে রান্না করবো।”
-” অাপনি রান্না করবেন?”
-” অামি একটামেয়ে মানুষের চেয়ে ভালো রাঁধতে পারি। এখন যাও। ভালোমতো চুলটা খোপা করবে। রান্নায় যাতে চুল না পড়ে। খাবার চুল দেখলে অামার মেজাজ বিগড়ে যায়।”
-” জ্বি যাচ্ছি।”
মায়ার খুশি খুশি লাগছে। খুব দ্রুত চুলটা অাটসাট করে বেঁধে কিচেনে চলে এসেছে সে। লোকটা রাগি হতে পারে। কিন্তু ভালো। অনেক ভালো। খুব পছন্দ হয়েছে লোকটাকে মায়ার। এমন মানুষকে মনের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসা যায়। কিন্তু মায়ার ভালোবাসতে বারন। সে যে নষ্ট গলির মেয়ে। ঐ পাড়ার মেয়েদের শুধু ব্যবসা করাই মানায়, ভালোবাসা ব্যাপারটা তাদের সাথে যায় না।
-” চলে এসেছো?”
-” জ্বি।”
-” কি রান্না করতে চাও? ”
-” অাপনার কি পছন্দ?”
-” অামার তো কত কিছুই পছন্দ। তুমি কোনটা ভালো রাঁধতে পারো সেটা বলো।”
-” অামি ডাল ভুনা করতে পারি, অালুভর্তা, ডিমভাজি, অার মাছভুনা করতে পারি।”
-” ব্যস এতটুকুই?”
-” হুম। অার কিছু পারি না।”
-” যাস্ট এই কয়টা মেনু পারো। অার তুমি অামাকে জিজ্ঞেস করছো কি খেতে চাই অামি? যদি বলতাম অামি মোরগ পোলাও খাবো তখন তুমি কি করতে?”
-” শামীম ভাইয়ের কাছ থেকে শিখে নিতাম।”
-” ওর মোরগ পোলাও জঘন্য হয়। অাল্লাহ বাঁচিয়েছে অামি তোমাকে তখন রাঁধতে না করেছি। অার নয়তো ঐ মোরগ পোলাও অামাকে গিলতে হতো।”
-” তাহলে এখন কি করবো?”
-” কি অাবার করবে? অামি তোমাকে শিখাবো। যাও ডিপ থেকে মুরগি নিয়ে অাসো। মুরগি নরম হতে হতে পেঁয়াজ কেটে, চাল ধুয়ে রেডি করি।”
মাথার বা পাশটা চিনচিন ব্যাথা করছে মায়ার। মাথাব্যাথাটা বোধহয় শুরু হচ্ছে। কিন্তু সেদিকে পাত্তা দেয়ার তিল পরিমান শখ নেই মায়ার। সে রান্না শিখতে চায় সোহানের কাছ থেকে ।ভালো একটা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন সময় কাটাতে চায়। ভালোবাসতে বারন, কিন্তু পাশে দাঁড়াতে তো বারন নেই। পেঁয়াজ কাটছে সোহান। পাশে দাঁড়িয়ে মায়া শসা ছিলছে।
-” অাচ্ছা কখনো কাউকে ভালো লাগেনি তোমার?”
-” নাহ। সবাই এক ধাচের ছিলো। কিন্তু হুট করে একজনকে ভালো লাগতে শুরু করেছে।”
-” অামাকে?”
-” মনে হয়।”
-” ভালো লাগার মানুষটা নিঃসন্দেহে অামি। সেটা তোমার মুখ দেখেই বুঝা যায়। এবং সেটা অামি গতরাতেই টের পেয়েছি যখন তুমি অামাকে বলেছো অামার হাত ধরে তুমি ঘুমাতে চাও ।কারও হাত ধরে ঘুমানোর অর্থ জানো? অর্থটা হচ্ছে পাশের মানুষের মধ্যে তুমি নির্ভরতা খুঁজে পাচ্ছো।
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-৫

0

“”নষ্ট গলি'” পর্ব-৫

লেখা-মিম

সোহানের দিকে এগিয়ে এসে বসলো মায়া। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বলেই ফেললো,
-” অামি অাপনার হাতটা একটু ধরি?”
সোহান মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে মায়ার হাতটা ধরলো। হাত প্রচন্ড রকমে গরম ছিলো মায়ার। সোহান টের পাচ্ছে মায়ার জ্বরটা অাবার বেড়েছে। কপালে হাত রেখে দেখলো সত্যিই জ্বর বেড়ে গেছে।
-” মায়া তোমার তো জ্বর অাবার বাড়ছে। তুমি শুয়ে পড়ো। অার রাত জেগো না।”
-” অাপনি অামার হাতটা একটু ধরে রাখবেন প্লিজ? অামি ঘুমিয়ে গেলে অাপনি হাতটা ছেড়ে দিয়েন। অাপনাকে সারারাত এখানে বসতে হবে না।”
-” ঠিকাছে। অামি অাছি। তোমার হাত ছাড়বো না তুমি ঘুমাও।”
-” না না সারারাত ধরে রাখতে হবে না। অামি ঘুমান…….”
-” হয়েছে থামো। অামি বুঝেছি। এখন চোখ বন্ধ করো তো।”
সোহান একহাতে মায়ার হাত ধরে রেখেছে। অারেকহাতে ফেইসবুকিং করছে। মায়ার দুচোখে প্রচন্ড রকমে ঘুম ভর করছে। বহুবছর এমন চোখ জুড়ানো ঘুম পাচ্ছে তার। এই ব্যবসায় নামার পর থেকে এভাবে কখনো ঘুম ভর করেনি ওর চোখে। মিনিট দশেকের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো মায়া। মায়া ঘুমিয়ে গেছে টের পেয়ে খুব সাবধানে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো সে। নিজের রুমে এসে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অাছে। ড্রেসিং টেবিলের উপর থাকা সিগারেটটা মুখে নিয়ে জ্বালালো। অন্ধকারে ধোয়াগুলো দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু পুরো রুমে বিশ্রি গন্ধ ছড়াচ্ছে ঠিকই। সিগারেট বেশি একটা খাওয়া হয়না সোহানের। খুব বেশি মন খারাপের মূহূর্তগুলোতে সে একটা দুটা সিগারেট ধরায়। মনটা অাজও তার খারাপ। অাজ তার ত্রিশতম জন্মদিন ছিলো। কেউ তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়নি। শুধুমাত্র সালমান ছাড়া। যারা জন্ম দিয়েছে তাদেরও বড় ছেলের জন্মদিন মনে নেই। ফেইসবুকে তার অাসল জন্মতারিখটা দেয়া নেই। যেটা অাছে সেটা হচ্ছে ভুয়া। অাত্মীয় বন্ধুরা নোটিফিকেশন পেয়ে সেইমিথ্যা দিনেই তাকে শুভেচ্ছা জানায় খুব অান্তরিকতার সাথে। সব মিথ্যা। অাত্মীয়-বন্ধুরা মিথ্যা। জন্মদিনটা মিথ্যা। তাদের অান্তরিকতাগুলোও মিথ্যা। সবাই সোহানের সত্যিকারের জন্মদিন ভুলে গেছে। কেউ মনে রাখেনি। মনে রাখার প্রয়োজনটা বোধ করে না। গভীর ভালো সম্পর্ক কার সাথে অাছে তার? মনে পড়ছে না কারো নাম। প্রানপন চেষ্টা চালাচ্ছে সোহান। কে অাছে তার এমন প্রানের বান্ধব যে তাকে মন থেকে পছন্দ করে। সালমান ছাড়া অাপাতত খুঁজে পাচ্ছে না। অন্য দশটা মানুষের মতো তারও খুব ইচ্ছে হয় কেউ রাত বারোটা এক মিনিটে অনেকগুলো ফুল চকলেট হাতে নিয়ে ওর দরজার কলিংবেল চাপুক। এরপর সে এসে দরজা খুলে দেখবে কেউ একজন হাসিমুখে ফুল চকলেটগুলো ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলবে,
-” হ্যাপি বার্থডে সোহান। মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে।”
এরপর সে চোখে মুখে একরাশ খুশি এবং বিস্ময় নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে থ্যাংকস জানাবে। এই স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে গেছে তার। অাজ অব্দি বাস্তবায়ন হয়নি। তিনজন প্রেমিকার একজনও কখনোই বারোটা একমিনিটে তাকে উইশ করে নি। বরাবরই তারা দশ পনেরো মিনিট লেইট ছিলো। এটা নিয়ে সোহানের ক্ষোভের শেষ ছিলো না। এই ক্ষোভে সে কোনো প্রেমিকার সাথেই তার জন্মদিনে দেখা করতো না। অাজ সেঁধে সেঁধে একজনের কাছ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা নিতে ইচ্ছে হচ্ছে। মানুষটা হচ্ছে মায়া। জন্মদিনটা এখনও শেষ হয়নি। এখনও অাধাঘন্টা সময় অাছে। সোহানের মনে হচ্ছে ইচ্ছেটা পুরন করা উচিত। হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে দিয়ে মায়ার রুমে গেলো সোহান। বেঘোর ঘুম ঘুমাচ্ছে মায়া। সবুজ রঙের ডিমলাইটে ওর মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দেখে মনেহচ্ছে বহুবছর ধরে জমানো ঘুমটা অাজ ঘুমাচ্ছে মায়া। এত অারামের ঘুমটা ভেঙে দেয়া কি ঠিক হবে? ডাকতে যেয়েও অার ডেকে তুলেনি সোহান। রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। নাহ্ অার ভেবে কাজ নেই। জন্মদিন তো চলেই গেছে। কে উইশ করলো অার কে উইশ করলো না সেসব ঘেটে লাভ নেই। শুধুশুধু মন খারাপ হবে। যেখানে নিজের বাবা মায়েরই মন থাকেনা সেখানে অন্যের কাছে অাশা করাটা বোকামি। সবার ভাগ্যে সব থাকে না। ওর ভাগ্যে অান্তরিকতা,টান এসব নেই। এসব ভাবতে ভাবতে পাশে থাকা কোলবালিশটা জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে গেলো সোহান। প্রতিবছর সে এভাবেই নিজের মনকে স্বান্ত্বনা দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন সকালে উঠে অাগের দিনের শুভেচ্ছা না পাওয়ার কষ্টটা সে ভুলে যায়। কাল সকালেও হয়তো তাইই হবে।

ভোরের অালো ফুটতে শুরু করেছে । মায়ার জানালা ভেদ করে অালো ওর মুখে এসে লাগছে। ঘুমটা ভেঙে যাচ্ছে একটু একটু করে। অাধাখোলা চোখে অাশপাশের দেয়ালগুলো দেখছে মায়া। দেয়ালগুলো অপরিচিত। এটা কোথায়? চোখজোড়া কঁচলে নিয়ে ভালো করে চোখ মেলে তাকালো মায়া। এতক্ষনে দেয়ালটা পরিচিত লাগছে। এটা সোহানের বাসা। এত বছর একটা রুমকে ঘুম থেকে উঠে দেখেছে সে। অাজ রুমটা ভিন্ন। তাই ঘুম থেকে উঠেই অভ্যাসবশত সেই রুমটা দেখতে চেয়েছিলো মায়া। হুট করে নতুন বাসাটা চিনতে পারেনি সে। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো মায়া। গতরাতে বেলকনিতে থাকা ছোটছোট গাছগুলো চোখে পড়ে নি মায়ার। গাছে তাজা ফুল ফুটেছে। সকাল সকাল চোখের সামনে তাজা ফুল দেখলে মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। বেলকনিতে যেয়ে ফুলগুলো ঘেটে ঘেটে দেখছে মায়া। এর অাগে ওর পাড়াতে দুবার ফুলগাছ কিনে এনেছিলো মায়া। দুবারই গাছ মরে গেছে। ওর মা বলেছিলো এটা নষ্ট গলি। এখানে ভালো জিনিস টিকে না। এরপর অার গাছ কিনেনি ও। পিছন থেকে সোহানের গলার অাওয়াজ পেয়ে চমকে গেলো মায়া।
-” কি ব্যাপার? এভাবে লাফিয়ে উঠলে কেনো?”
-” নাহ্। হঠাৎ ডাকলেন তো তাই।”
-” চা পছন্দ নাকি কফি?”
-” কফি তো কখনো খেয়ে দেখিনি। খেলে বলতে পারবো কোনটা বেশি ভালো।”
” ফ্রেশ হয়েছো?”
-” না।”
-” যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। অামি কফি দিতে বলছি।”
মায়া ওয়াশরুমে চলে গেলো অার সোহান গেলো কিচেনে কফির ফরমায়েশ দিতে। কফি হতে হতে সোহান নিজেও ফ্রেশ হয়ে এলো। দুই মগ কফি নিয়ে মায়ার রুমে এসে দেখে মায়া মুখ মুছছে। সোহানকে দেখে মায়া বললো,
-” বারান্দায় বসি?”
-” বসো। এই রতন দুইটা চেয়ার দিয়ে যাও তো এখানে।”
বেলকনিতে বসে ধোঁয়া উঠা গরম কফির মগে চুমুক দিচ্ছে ওরা দুজন।
-” কি? কফির টেস্ট কেমন?”
-” হুম খুব ভালো।”
-” তো এখন বলো? কোনটা প্রিয়?”
-” লাল চা বেশি প্রিয়”
-” ঠিকাছে কাল থেকে তোমার জন্য লাল চা বানানো হবে।”
-” মাঝে মাঝে কফিও খাবো।”
-” ঠিকাছে। এখন শোনো, অামি চাচ্ছিলাম তোমাকে উন্মুক্ত স্কুলে ভর্তি করাবো। অামি চাচ্ছি পড়াশোনাটা অাবার কন্টিনিউ করো তুমি। বাসায় তোমার জন্য টিচার রেখে দিবো। তোমাকে এসে পড়াবে। অার ইংলিশ শিখানোর জন্য অালাদা টিচার রাখবো। সে তোমাকে ইংলিশে কথা বলা শিখাবে।”
মায়ার মনে হচ্ছে সে অাকাশ ভেঙে নিচে পড়ে যাবে। পড়ালেখা? আবার? ঠিক শুনছে তো?

-” অাপনি অামাকে পড়াবেন?”
-” হুম। কেনো পড়তে চাও না?”
-” সত্যিই পড়াবেন?”
-” মিথ্যামিথ্যি পড়ানো যায় নাকি?”
-” কেনো যেনো মনে হচ্ছে অাপনি অালাদিনের জ্বীন”
-” অামি মানুষ। কোনো জ্বীন টীন না।”
-” এখানে তো তাহলে অামাকে পার্মানেন্টলি থাকতে হবে।”
-” থাকবে। সমস্যা কোথায়?”
-” জোনাকি বুবু মানবে?”
-” সর্বক্ষন জোনাকি জোনাকি করো কেনো? কি করবে এই মহিলা তোমাকে? খেয়ে ফেলবে? ও মানবে না ওর বাপসহ মানবে। ”
-” রেগে যাচ্ছেন কেনো?”
-” কানের কাছে বারবার জোনাকির কথা বলো না তো। ভালো লাগেনা এই মহিলাকে অামার। কেমন যেনো চাড়াল টাইপ। অাস্ত একটা জাদরেল। ওকে দেখলেই অামার সেকেন্ড গার্লফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ে যায়।”
মায়া শব্দ করে হাসছে সোহানের কথায়।
-” তুমি হাসছো কেনো?”
-” দ্বিতীয় প্রেমিকা অাপনাকে খুব জ্বালিয়েছে তাই না?”
-” অনেক বেশিই।”
-” অাপনার মুখ দেখলেই বুঝা যায়। ওর কথা বলার সময় অাপনার মুখটা দেখার মতো হয়।”
-” মজা লাগছে খুব তাই না?”
-” খুব বেশিই।”
-” তোমাকে নিয়ে স্টুডিওতে যাবো অাজকে। তোমার পাসপোর্ট অার স্ট্যাম্প সাইজ ছবি তুলতে হবে।”
-” কেনো?”
-” তোমার স্কুল ভর্তি অার পাসপোর্ট বানানোর জন্য লাগবে।”
-” অামার পাসপোর্ট?”
-” হুম।”
-” কেনো?
-” অামি বছরে দুই তিনবার দেশের বাহিরে যাই। তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো এজন্য।”
এই মূহূর্তে সত্যি সত্যিই সোহানকে অালাদিনের জ্বীন মনে হচ্ছে মায়ার। মনে হচ্ছে এটা একটা স্বপ্ন। কিছুক্ষন পরই বোধহয় স্বপ্নটা ভেঙে যাবে।
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-৪

0

নষ্ট গলি পর্ব-৪

লেখা-মিম

সোহানের বাসার ড্রইংরুমে বসে অাছে মায়া। পাশেই দশ বারোটা শপিং ব্যাগ। এসবগুলো শপিং মায়ার জন্য করেছে সোহান। রেস্টুরেন্ট থেকে ফেরার পথে মার্কেট হয়ে এসেছে দুজন। নিজেকে বেশ সুস্থ মনে হচ্ছে মায়ার। মন ভালো থাকলে শরীরটাও ভালো লাগে সেটা আবারও প্রমানিত হলো। বাসার কাজের লোক দুটো মায়াকে আড়চোখে দেখছে। এর অাগেও তারা এই বাসায় একজন মেয়েকে প্রায়ই আসতে দেখতো। মেয়ে অাসতো, রাতে থাকতো, পরদিন সকালে চলে যেতো। অাবার কখনো দু তিনদিন এখানে থেকে যেতো। সোহান এতক্ষন ফোনে কথা বলছিলো। কলটা কেটেই চলে এলো মায়ার মুখোমুখি।
-” কি ব্যাপার? বসে অাছো যে? এখনো ফ্রেশ হচ্ছো না?’
-” বাথরুমটা কোন দিকে?”
-” ওহ অামার সাথে এসো।”
বাসায় পড়ার জন্য কিছু প্লাজো, গেন্জি অার স্কার্ট কিনে দিয়েছে সোহান ওকে। ব্যাগ থেকে একটা গেন্জি অার স্কার্ট হাতে নিয়ে সোহানের পিছু পিছু যাচ্ছে মায়া। একটা রুমে এসে লাইট জ্বালালো সোহান। সুন্দর সাজানো গোছানো একটা রুম। রুমে এসে অাঙুল দিয়ে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে সোহান বললো,
-” ওটা ওয়াশরুম। ফেসওয়াশ সাবান সব রাখা অাছে। গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো যাও। অামি এই রুমেই অাছি। কিছু লাগলে অামাকে বলো।”
মায়া কিছু না বলেই ওয়াশরুমে চলে গেলো। জাহিদের নাম্বারে ডায়াল করলো সোহান।
-” জোনাকিকে বলেছো মায়া যে অামার এখানে থাকবে তিন চারদিন?”
-” জ্বি স্যার।”
-” ঝামেলা করেনি তো?”
-” না স্যার।”
-” রাতে খেয়েছো?”
-” জ্বি না স্যার।”
-” তোমার ফ্যামিলিতে কে কে যেনো অাছে?”
-” মা বাবা, ছোট দুই বোন।”
-” যাও ওদের নিয়ে বাহির থেকে খেয়ে এসো। অাজকে তোমার টাকা দিয়ে বিল পে করো। কাল অামি তোমাকে টাকা দিয়ে দিবো।”
-” লাগবে না স্যার। বাসায় রান্না হচ্ছে।”
-” যাও তো। কথা বাড়িওনা ।”
-” স্যার কাল যাই। অার নয়তো অাজকের রান্নাটা ওয়েস্ট হবে।”
-” কি রান্নাকরেছে অাজ ঘরে।”
-” চিংড়ি দিয়ে কচুশাক, বেগুন-ডিমের তরকারি অার ডাল।”
-” ওহ তোমার প্রিয় খাবার রান্না হয়েছে অাজ ।”
” অাপনি জানেন এগুলো অামার প্রিয় খাবার?”
-” অামি সবই খেয়াল করি জাহিদ। তুমি অামার সাথে প্রতিদিন আট নয় ঘন্টা কাটাও। তোমার পছন্দ অপছন্দ লক্ষ্য করাটাই স্বাভাবিক।”
-” জ্বি স্যার।”
-‘ অাচ্ছা কালই যেও। এখন রাখি।”
-” জ্বি স্যার।”
ফোনটা রেখে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে অাছে সোহান। মিনিট দশেক পর বেরিয়ে এলো মায়া। ওকে খুব ফ্রেশ দেখাচ্ছে। এর অাগে স্কার্ট সে কখনো পড়েনি। অাজই প্রথম নিজের কাছে উদ্ভট লাগছে নিজেকে। মনে হচ্ছে লুঙ্গি পড়েছে।
-” জ্বর টা কি এখন অাছে মায়া?”
-” নাহ তেমন নেই। সহ্য করার মতো।”
-” এই শামীম, ড্রইং রুম থেকে মেডিসিনের প্যাকেটটা দিয়ে যাও তো। মায়া, তুমি বসো এখানে।”
খাটের একপাশে জানালার দিকে পিঠ ঠেকিয়ে বসলো মায়া। বাহির থেকে বাতাস এসে ওর ঘাড়ে পিঠে লাগছে। পিছনের চুলগুলো বাতাসে উড়ে বার সামনের দিকে এলোমেলো হয়ে অাসছে। কাজের লোক শামীম এসে মেডিসিনের প্যাকেটটা দিয়ে গেলো। সেইসাথে এক বোতল পানি। প্রেসক্রিপশন দেখে ট্যাবলেট বের করে দিচ্ছে সোহান। মায়ার দিকে মেডিসিন অার পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো
-” খাও।”
মেডিসিন খেয়ে পানির বোতলটা সোহানের দিকে এগিয়ে দিলো মায়া। চুলগুলো খোপা করতে যাচ্ছিলো ঠিক সে সময় সোহান বললো,
-” উড়তে দাও মায়া। দেখতে ভালো লাগছে।”
-” অাপনাকে যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি। খুব রহস্যময় লাগছে অাপনাকে। এতটা যত্ন পাওয়ার অধিকার অামার নেই। তবু দিচ্ছেন। কেনো বলুন তো?”
-” অাসো পুরো ব্যাপারটা ক্লিয়ার করি। চাইলে অামি অন্য দশটা কাস্টমারের মতো ব্যবহার তোমার সাথে করতে পারতাম। সেটা হতো শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য। মানসিক চাহিদা মিটতো না।সারাদিন নানান কাজে ব্যস্ত থাকি। আমার ইচ্ছে হয় ব্যস্ততার মাঝেও কারো সাথে মন খুলে দুমিনিট কথা বলি। কেউ অামাকে ফোন করে খোঁজ খবর নিক। অামি ভালো অাছি কি না, অামার মনটা ভালো অাছে কিনা সেসব খোঁজ করুক। অামার খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয়গুলো খেয়াল করুক। দিনশেষে কারও সাথে কথা বলে অামার সারাদিনের মানসিক ক্লান্তিটা মিটাই। শরীরের চাহিদা টাকা দিলেই মিটে,মনের খোড়াক টাকায় মিলে না। এবার অাসি তোমাকে কেনো সিলেক্ট করলাম সে প্রসঙ্গে। প্রথমটা ফিন্যান্সিয়ালি আমার স্ট্যাটাসের ছিলো। একদম খাপে খাপ মিলে। কিন্তু প্রেম করে বিশেষ শান্তি পাইনি। মনের খোড়াক মিটে নি। দ্বিতীয়টা ছিলো মিডেল ক্লাস। অাস্ত একটা জাদরেল ছিলো ঐটা। সেখানে শান্তি পাওয়ার কোনো প্রশ্নই অাসে না। অার তিন নম্বরটা অামাকে বুঝতো না। বলতাম একটা বুঝতো অারেকটা।সেটা ছিলো নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের। সেখানেও শান্তি পাইনি। সব ক্লাসের মেয়েদের সাথে প্রেম করে দেখেছি। সুবিধা করতে পারিনি। শেষমেষ তোমাদের পাড়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেনো জানো? তোমাদের মেন্টালিটি একটু অন্যরকম। তোমরা সহজে কঠিন ব্যাপার হজম করতে পারো। তোমাদের কাছে প্রতিদিন কমপক্ষে সাত অাটটা কাস্টমার অাসে। একেক কাস্টমার একেক রকম। কাউকে তোমাদের পছন্দ হয় অার কাউকে হয়না। তবু তাদের শুয়ে পড়ো তোমরা। ব্যাপারটা যথেষ্ট ধৈর্য্যের। চাইলেই যার তার সাথে শুয়ে পড়া যায় না। যাকে ভালো লাগে না তার সাথে ইন্টিমেট হওয়াটা খুবই পীড়াদায়ক কাজ। তোমরা কাজটা বেশ হাসিমুখে সামাল দাও। তাছাড়া প্রতিদিন সাত অাটজনের সাথে ইন্টিমেট হওয়াটা কোনো মুখের কথা না। যথেষ্ট কষ্টের কাজ।তবু তোমরা করো। যে মেয়ে হাসিমুখে এই কঠিন ব্যাপারগুলো সামাল দিতে জানে সে অারও অনেক কিছুই সামাল দিতে পারবে। একজন পুরুষের মনের খোড়াক হাসিমুখে মিটানো তাদের পক্ষে কোনো ব্যাপার না। তুমি যেমন ভালোবাসার কাঙাল তেমনি অামিও। তুমি এখানে একদম অামার বউয়ের মতো করে থাকবে। ধরে নাও এটা তোমার সংসার। তুমি যাস্ট অামার ছোট বড় সমস্ত ব্যাপারগুলো, ভালো লাগা-মন্দ লাগাগুলোকে দেখবে। অার প্লিজ কখনো কোনো বিষয় নিয়ে প্যানপ্যান করতে পারবে না। অামি হাজার বকা দিলেও কখনো অামার সাথে রাগ করতে পারবে না। তুমি কি রাজি?”
মায়ার কাছে কথাগুলো এলোমেলো লাগছে। শুরুর দিকে সব ঠিকই লাগছিলো। যখন শুনলো তুমি অামার বউয়ের মতো থাকবে, এটা তোমার সংসার এরপর থেকে সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। এতটাও কি পাওয়ার যোগ্যতা সে রাখে। হতে পারে সে মিথ্যে বউ, মিথ্যে সংসার তবুও অনুভুতিটা সত্যিকারের মনে হচ্ছে। শুধুমাত্র মনের খোড়াক মিটানোর বিনিময়ে এতকিছু করছে লোকটা? মনের খোড়াকের এত মূল্য? কান্না পাচ্ছে মায়ার। কেনো পাচ্ছে সেটা সে জানে না। জ্বরটা অাবার বাড়ছে। বোধহয় খুশিতে জ্বর বেড়ে যাচ্ছে। মানুষটাকে একবার ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।
বড্ড দ্বিধা দ্বন্দে ভুগছে মায়া। সে কি একটাবার মানুষটার হাত ধরার অাবদার ধরবে? একটাবার চোখে মুখে অালতো করে ছুঁয়ে দেখতে চাইবে?
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-৩

0

নষ্ট গলি পর্ব-৩

লেখা-মিম

রেস্টুরেন্টের ভিতরে মুখোমুখি বসে অাছে দুজন। কিছুক্ষন অাগেই ওয়েটার খাবার দিয়ে গেছে। সোহান লক্ষ্য করছে মায়া কাঁটা চামচ ছুরি দিয়ে ঠিকভাবে খেতে পারছে না। ওপাশ থেকে চেয়ার ছেড়ে এপাশের চেয়ারে এসে বসলো সোহান। মায়ার হাত থেকে চামচ নিজের হাতে নিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে মায়াকে। কখনো এভাবে যত্নআত্তি পায়নি সে। এই প্রথমবার এতটা যত্নঅাত্তি পাচ্ছে। অাবেগটা একটু অাধটু উঁকি দিচ্ছে। যদিওবা মাত্র কয়েকঘন্টার পরিচয় এমন আবেগ উঁকি দেয়ার কথা না। তবু দিচ্ছে। মানুষটাকে জানতে ইচ্ছে হচ্ছে। নিজের মনের সমস্ত অপ্রকাশিত কথাগুলো, ইচ্ছেগুলো জানাতে ইচ্ছে হচ্ছে।
-” এভাবে তাকিয়ে অাছো কেনো? কিছু বলতে চাও?”
-” হুম।”
-” বলো কি বলবে?”
-” আমি কে সেটা তো আপনি ভালো করেই জানেন। তাহলে এত যত্ন নিচ্ছেন কেনো?”
-” তোমার পছন্দ হচ্ছে না?”
-” সেটা বলিনি। পছন্দ অবশ্যই হচ্ছে।”
-” যেহেতু পছন্দ হচ্ছে সেহেতু চুপচাপ যত্ন উপভোগ করো। এত কেনো কেনো করছো কেনো?”
-” আপনার রাগ বেশি তাই না?”
-” না আমি যথেষ্ট ঠান্ডা মানুষ।”
-” তাহলে আমার সামান্য প্রশ্নে রেগে গেলেন কেনো?”
-” আমি এমনই।”
-” তারমানে আপনি রাগী।”
-” তুমি অনেক কথা বলো।”
-” না। কিন্তু আজকে আপনার সাথে কথাা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে।”
-” তাই? পছন্দ হয়েছে আমাকে?”
-” হুম পছন্দ হয়েছে। অাপনার রাগটাকেও ভীষন ভালো লেগেছে। ”
-” বাহ্ তাহলে তো সোনায় সোহাগা। হাজার ধমকালেও পালাবে না। জানো জাহিদকেও অনেক বকা দেই। বেচারা একটা টু শব্দও করে না।”
-” জাহিদ কে?”
-” ঐ যে একটা ছেলেকে দেখলে না আমার সাথে?”
-” হুম।”
-” ঐটাই জাহিদ।”
-” আপনার বয়স কত?”
-” ৩০।”
-” অাপনার তো বিয়ের বয়স হয়েছে। বিয়ে না করে আমার মত মেয়ের পিছনে কেনো ছুটছেন?”
-” বিয়ে করলে বুঝি পুরুষ মানুষরা তোমাদের পিছে ছুটে না?”
-” ছুটে তবে বিয়ের পাঁচ ছয় বছর পর। সংসার করতে করতে তিতা হয়ে যায়। তখন অামাদের কাছে অাসে।আর কতগুলা থাকে জাত লুচ্চা। ওগুলা বিয়ের পরদিনই চলে অাসে অামাদের কাছে।”
-” আমি জাত লুচ্চা না। একজনকে নিয়ে থাকতেই পছন্দ করি। আর সংসার করে মনটাকে বিষিয়ে তুলতে চাই না। তাই তোমার কাছে আসা।”
-” সবাই তো খারাপ হয় না।”
-” ম্যাক্সিমাম মেয়ে মানুষই এমন ত্যানা প্যাচানো টাইপ হয়। তিনজনের সাথে প্রেম করেছি। তিনোটাই একই স্বভাবের ছিলো। অহেতুক ঘ্যানর ঘ্যানর করতো। কিছু থেকে কিছু হলেই ব্রেকঅাপ করবো, সুইসাইড করবো, হাত কাটবো। উফফ! কি যে পেইন দিতো মেয়েগুলা।”
-” আপনি না একটু আগে বললেন একজনকে নিয়েই থাকতে পছন্দ করেন। তাহলে তিনজন আসলো কেমন করে?”
-” একসাথে তো তিনজনের সাথে প্রেম করিনি। যখন যার সাথে প্রেম করেছি তখন তাকে নিয়েই পড়ে থেকেছি। অন্য কোথাও নজরদেইনি। আমি যথেষ্ট লয়্যাল পারসন। প্রতিটা প্রেমের ইতি টানার পর নতুন প্রেমে জড়ানোর আগে ছয়মাস করে সময় নিয়েছি।”
-” সময় কেনো নিয়েছেন?”
-” ওদেরকে পুরোপুরি ভুলার জন্য।”
ঠিক এই মূহূর্তে সোহানের কথায় মায়ার মনে হচ্ছে একটা মানুষ জীবনে কয়টা প্রেমকরতে পারে? যেহেতু একেকজনকে ভুলার জন্য ছয়মাস সময় লেগেছে তারমানে প্রেম গভীর ছিলো। যেহেতু গভীর ছিলো তাহলে ছেড়ে দিলো কেনো? নাকি মেয়েগুলোই ছেড়ে চলে গেছে?
-” সম্পর্ক কে ভেঙেছিলো?”
-” প্রথম দুটো আমি ভেঙেছি। সারাদিন লাগাতার প্যানপ্যানানি,অভিযোগ চলতেই থাকতো এই দুইটার আর শেষেরটা আমার রাগ হজম করতে পারেনি। যখনই বকতাম তখনই কাঁদতো আর কি কি জানি বলতো। ওর কান্নার জন্য কথাগুলো স্পষ্ট বুঝতাম না। তখন আরও বকা দিতাম। শেষমেষ ইচ্ছেমতো অভিশাপ দিয়ে ব্রেকআপ করে ফেলেছে।”
-” আপনি কি গালিও দেন?”
-” হ্যা দেই। সবচেয়ে বেশি গালি খায় জাহিদ আর আমার ম্যানেজার। আর ওদের চেয়েও বেশি গালি খেয়েছে আমার প্রথম প্রেমিকা। গালি দেয়ার টাইমে কিন্তু কখনো প্রতিবাদ করেনি। অামি ঠান্ডা হওয়ার পর আমাকে ধোলাই দিতো । তখন আমি ফোন কান থেকে রিয়ে রাখতাম। এরপর উল্টো অামাকেই সরি বলতো। মাঝে মাঝে অতিষ্ঠ হয়ে বলতো আমি মরে যাবো। একবার এক ক্লাইন্টের উপর মেজাজ খারাপ হয়েছিলো খুব। ক্লাইন্টের ঝাল ওর উপর ঝেড়েছি। সেদিন রাতে এই মেয়ে বিষ খেলো। ওর বাবা আমার উপর মামলা দিলো। এরপর আর কি ব্রেকআপ করে দিলাম।”
-” আপনি জেলও খেটেছেন?”
-” নাহ্। টাকা দিয়ে মামলা তুলেছি।”
-” এরপর ঐ মেয়ে যোগাযোগ করতে চায়নি?”
-” হুম করেছে। আমি পাত্তা দেইনি। কয়দিন পর বাপ মা বিয়ে দিয়ে দিলো ওকে। এখন দুই বাচ্চার মা। বেশ ভালোই আছে। এইবার আসি সেকেন্ড গার্লফ্রেন্ড প্রসঙ্গে। এইটা তো একদম গালির উপর পি এইচ ডি করা ছিলো। আমি একটা দিলে ও দিতো পাঁচটা। সবচেয়ে বেশি জ্বালিয়েছে এই মেয়েটা। মারাত্মক প্যানপ্যানানি স্বভাবের ছিলো। সারাক্ষন এটা করোনি কেনো? ওটা করনি কেনো? ফোন দিতে লেট করলে কেনো এগুলো চলতেই থাকতো। প্রতিটাদিন এই মেয়ের সাথে ঝগড়া হতো। শেষমেষ এটাকে বাদ দিলাম। ঠান্ডা, ঝামেলা ছাড়া মেয়ে মানুষ আমার খুব পছন্দ।”
-‘ আপনি কি অামাকেও গালি দিবেন?”
-” সেটা পরিস্থিতি নির্ভর।”
-” জোনাকি বুবুর সাথে কতদিনের চুক্তি করেছেন?”
-” সময় ফিক্স করিনি।”
-” আপনার ঘরে কে কে আছে?’
-” ঢাকার বাসায় আমি একা থাকি। দুইজন সার্ভেন্ট আছে। ফ্যামিলি চিটাগাং থাকে। ওখানে মা বাবা আর ছোট ভাই আছে। বাবা ওখানকার অফিস দেখে আর আমি এখানকার।”
-” আপনার পরিবার যদি জানে আপনি আমার মতো মেয়ের কাছে আসবেন উনারা বকবেনা?”
-” ফ্যামিলিটা আমার পছন্দ না। আসলে এটা ফ্যামিলি না। সবাই সবার প্রয়োজনের তাগিদে সবাইকে ব্যবহার করছি। ছোট থেকেই দেখে আসছি মা বাবা কুকুর বিড়ালের মতো ঝগড়া লেগে থাকে। দুজনেরই পরকিয়া চলছে বহুবছর আগে থেকে। কয়েকবার এদের দুজনকে বলেছি তোমরা ডিভোর্স নিয়ে নাও। এভাবে আমাকে আর সালমানকে টর্চার করো না। উনারা ডিভোর্স নিবে না। এভাবেই চলবে। অামরা দুইভাই আয়ার হাতে বড় হয়েছি। বাবা মা কে খুব কমই কাছে পেয়েছি। বাবার সাথে ব্যবসায়িক কথা ছাড়া কোনো কথা হয় না। মায়ের সাথে লাস্ট কথা হয়েছে পনেরোদিন আগে। বেশিরভাগ কথা হয় ছোটটার সাথে। ও বেশিরভাগ ফোন করে। মাঝে মাঝে অামার এখানে এসে থাকে। আমি তেমন একটা যাই না ওখানে। শান্তি লাগে না। ঐ বাড়িতে ঢুকা মাত্রই অশান্তি শুরু হয়ে যায় আমার।”
মায়া খুব মন দিয়ে সোহানের কথাগুলো শুনছে। লোকটার বাপ মা থেকেও নেই আর ওর বাবা কে সেটা ওর জানা নেই। কি অদ্ভুদ দুনিয়া! কেউ পায় না আর কারো কারো থেকেও নেই।
-” অাচ্ছা মায়া ঐটা কি তোমার মা ছিলো? ঐ যে চুল আঁচড়ে দিচ্ছিলো যে?”
-” হুম।”
-” উনিও কি তোমার মতই?”
-” হ্যা। অামি জন্মসূত্রে পতিতা। অামার মা পনেরো বছর বয়সে অামাকে জন্ম দেয়। চেয়েছিলো ওখান থেকে অামাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে পারেনি। অাম্মার ডিমান্ড ছিলো বেশি। অাম্মাকে উনারা ছাড়েনি। ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছি। এরপর অামাকেও এই কাজে নামিয়ে দিলো আম্মা বলতো অামাকে পালিয়ে যেতে। দুবার ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছিলামও। ঘন্টাখানেক বাদে ফিরে এসেছি মায়ের কথা ভেবে। মা তো একা হয়ে যাবে।অামিই বা যাবো কোথায়? রাস্তার লোকেরাও তো কেমন করে যেনো তাকায়। ভেবে দেখলাম বাহিরে যেয়েও লাভ নেই এরচেয়ে ভালো মায়ের কাছে যাই। ”
-” জীবন কেমন যেনো! খুব এলোমেলো। খুব ছন্নছাড়া। যাই হোক সেসব বাদ দাও। পেট ভরেছে তোমার? অারো কিছু খাবে?”
-” না।”
-” চলো অামার বাসায় যাবে?
-” অামার তো শরীরটা ভালো না অাজই?”
-” অামি সেসব কিছু করবো না। তুমি তোমার মত থাকবে। শোনো সুস্থ হওয়ার জন্য ভালো একটা পরিবেশ দরকার। ওটা তোমার ওখানে নেই। সুস্থ হলে তুমি চলে যেও। আবার অামার এখানেও থাকতে পারো। যাবে আমার সাথে?”
-” ………………”
-” অামাকে বিশ্বাস করতে পারো।”
-” হুম যাবো।”
(চলবে)

নষ্ট গলি পর্ব-২

0

নষ্ট গলি পর্ব-২

লেখা-মিম

গাড়িতে বসে অাছে সোহান। তার পাশে মায়া। হসপিটাল যাচ্ছে ওরা দুজন। জাহিদকে বসিয়ে এসেছে জোনাকির ওখানে। অফিসের একজন কর্মচারী টাকা নিয়ে অাসবে সেখানে। জোনাকিকে টাকা বুঝিয়ে দিয়ে এরপর সেখান থেকে আসবে। এখন পর্যন্ত কোনো কথা হয়নি তাদের মধ্যে। মায়াকে খুব অস্থির দেখাচ্ছে। একবার হেলান দিয়ে বসছে অারেকবার সোজা বসছে। ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো সোহান।
-” তোমার কি বেশি খারাপ লাগছে?”
-” বমি করবো।”
-” ওয়েট ওয়েট। গাড়িতে করো না প্লিজ।”
কোনোমতে গাড়িটা একদিকে পার্ক করলো সোহান। গাড়ি থেকে বেরিয়েই গড়গড় করে বমি করতে শুরু করলো মায়া। সামনের দোকান থেকে দৌঁড়ে একবোতল পানি কিনে অানলো সে। মায়ার দিকে পানির বোতলটা এগিয়ে দিলো। কুলি করে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিলো মায়া।
– ” গাড়িতে বসবে এখন? নাকি অারও কিছুক্ষন এখানে দাঁড়াবে?”
-” না, এখন ঠিক আছি। গাড়িতে বসবো।”
গাড়িতে এসে বসলো দুজন। বেশিদূর আর বাকি নেই। খুবজোর পাঁচ থেকে সাত মিনিট সময় লাগবে।
-” তুমি কি গাড়িতে উঠলে বমি করো?”
-” না। জ্বর এসেছে তো। তাই গতকাল থেকে বমি হচ্ছে।”
-” দুদিন হয়ে গেছে এখনও ডক্টর দেখানো হয়নি কেনো?”
-” ডক্টরের কাছে যেতে ভালো লাগে না।”
-” অসুস্থ শরীর নিয়ে পড়ে থাকতে ভালো লাগে?”
-” হুম ভালোই লাগে। কাজ থেকে তিন চারদিন অবসরে থাকা যায়। নিজের মতো করে কয়টা দিন কাটানো যায়। আর নয়তো সারাবছর অন্যের পুতুল হয়ে বসে থাকতে হয়।”
মায়ার কন্ঠে কিছুটা অভিযোগের অাভাস পাচ্ছে সোহান। মায়ার দিকে একবার তাকলো সে।

ডক্টরের চেম্বারে বসে অাছে দুজন। চোখে চশমা লাগিয়ে সামনে বসে আছে ডাক্তার।
-” নাম কি তোমার মামনি?”
-” মায়া।”
-” সুন্দর নাম। বয়স কত?”
-” ১৮ বছর তিন মাস।”
-” এই ভদ্রলোক কি হোন তোমার?”
-” জ্বি উনি…..”
-” ও আমার ওয়াইফ।”
থতমত খেয়ে গেলো মায়া। এটা কি বললো লোকটা? বউ? ডক্টর মাথা তুলে একবার সোহানকে দেখছে আরেকবার মায়াকে দেখছে। লোকটাকে দেখে তো মনে হচ্ছে ভালোই পয়সাওয়ালা, কিন্তু বউটা? সেরকম তো কিছু মনে ক্ষচ্ছে না। ড্রেস আপ দেখে তো মনে হচ্ছে নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের। লোকটা কয়েক সেকেন্ড সেসব ভেবে নিজের মনকে বুঝ দিলো এটা বলে, যার যার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। আমি অত ঘেটে কি করবো?
-” তা কি সমস্যা আম্মু?”
-” জ্বর, মাথাব্যাথা। গতরাত থেকে বমি করেছি চারবার।”
-” মাথাব্যাথা কি সর্বক্ষন থাকে?”
-” না। রাতের দিকে বেশি হয়।”
মায়ার প্রেশার চেক করে ডক্টর বলল
-” প্রেশার তো অনেক লো। শ্বশুড়বাড়িতে কি খাবার দাবার ঠিকমতো দেয় না নাকি?”
-” নতুন বিয়ে তো। খাওয়া দাওয়া টা ঠিকমতো করতে চায় না। লজ্জা পায় বোধহয়।”
-” তুমি কি করো? জোর করে খাওয়াতে পারো না?”
-” জ্বি খাওয়াবো।”
মায়া মাথা নিচু করে সোহানের মিথ্যা কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনছে। বউ? শব্দটা কেমন যেনো? কথাগুলো মিথ্যা। কিন্তু শুনতে ভালো লাগছে। বিশেষ করে বৌ শব্দটা। একদম হৃদয় গহীনে কাঁপন ধরানোর মতো। প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে ফার্মেসি থেকে মেডিসিন কিনছে সোহান। পা থেকে মাথা পর্যন্ত গাড়িতে বসে তাকে দেখছে মায়া। কখনো কোনো পুরুষকে এতটা খুঁটে খুঁটে দেখা হয়নি তার। আজ কেনো যেনো ইচ্ছে হচ্ছে লোকটাকে দেখতে। হয়তোবা আজ পর্যন্ত কোনো পুরুষ ওর কপালে হাত রেখে জ্বর মাপে নি তাই। হয়তোবা ওকে কেউ আজ পর্যন্ত বউ ডাকেনি তাই। গাড়িতে এসে বসেছে সোহান। সন্ধ্যা হতে চলেছে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সে বলতে শুরু করলো,
-” কি খাবে বলো? ”
-” কিছু না। খেতে ভালো লাগে না। তিতা লাগে সবকিছু।”
-” সেটা তো একটু লাগবেই। তাই বলে তো আর খাওয়া অফ করলে চলবেনা। জোর করেহলেও খেতে হবে।”
-” আপনার যেখানে ভালো লাগে সেখানেই চলেন।”
-” তুমি কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার নামটা জানতে চাও নি”
-” আমরা কাস্টমারের নাম জিজ্ঞেস করি না।”
-” কেনো?”
-” প্রতিদিন কমপক্ষে ছয় সাতটা কাস্টমার আসে। কতজনের নাম মনে রাখবো? তাই আর জিজ্ঞেস করি না।”
-” পুরোনো নিয়ম বাদ।এখন থেকে এত কাস্টমার তোমার কাছে যাবে না।শুধুমাত্র আমি যাবো। জোনাকির সাথে আমার ডিল হয়েছে। তাছাড়া সম্পর্কটা কিন্তু শুধুমাত্র ব্যবসার মধ্যে আবদ্ধ রাখতে চাচ্ছি না। আমি চাচ্ছি সম্পর্কটা গভীরভাবে তৈরীকরতে। সেটা তোমাকে পরে ডিটেইল বুঝিয়ে বলবো। ”
-” ঠিকাছে।”
-” তুমি এখন পর্যন্ত আমার নামটা জানতে চাচ্ছো না।”
মায়া মুচকি হাসলো।
-” কি নাম আপনার?”
-” সোহান। তুমি কিন্তু বেশ শুদ্ধ করে কথা বলো। তোমার ওখানে এত শুদ্ধ করে কেউ কথা বলে না। তুমি কোথ্থেকে শিখলে?”
-” পূর্নিমার কাছ থেকে।”
-” পূর্নিমা কে?”
-” বাংলা ছবির নায়িকা।”
অট্টহাসি হাসছে সোহান। এভাবে অহেতুক হাসার কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছে না মায়া। মুখটা কালো হয়ে যাচ্ছে তার। পূর্নিমা তার খুব প্রিয়। প্রিয় লোককে নিয়ে কেউ হাসাহাসি করলে মায়ার কষ্ট হয়। এখনো হচ্ছে। মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেললো ও।
-” কি ব্যাপার মুড অফ করে ফেললে যে?”
-” এমনি।”
-” তোমার পূর্নিমাকে নিয়ে হেসেছি বলে?”
-” হুম। ও অামার পছন্দের মানুষ। খুব পছন্দের।”
-” ওকে সরি। অার কখনো বলবো না। ঠিকাছে?”
-” হুম।”
রেস্টুরেন্টের বাহিরে গাড়ি থেমেছে। মায়াকে গাড়ি থেকে নামতে বললো সোহান। গাড়ি থেকে নেমে আশপাশে তাকাচ্ছে মায়া। মেয়েগুলো কত্ত স্মার্ট। ওর সাথে এই মেয়েগুলো কোনোদিক দিয়েই যাচ্ছে না। খুব সাদাসিধে জামা পড়ে অাছে ও। একটুও সাজগোজ নেই। বড্ড বেমানান লাগছে ওকে।
-” কি হলো দাঁড়িয়ে অাছো কেনো?”
ও ভেতরে যাবে কিনা বুঝে পাচ্ছে না। সোহান ওর মুখ দেখে বুঝে গেছে ওর ভিতরে কি চলছে।
-” তুমি অনেক বেশি সুন্দর। এখন চলো ভিতরে।”
(চলবে)

নষ্ট_গলি পর্ব-১

0

নষ্ট গলি পর্ব-১

লেখা-মিম

-” স্যার, সব ধরনের মাইয়্যার কালেকশন আছে আমার কাছে। কেমন পিস চান বলেন। সামনে এক্ষুনি হাজির করমু।”
-” বয়স বেশি হওয়া যাবে না। ১৭-১৮ হলে বেস্ট। হাইট, ফিগার একদম পারফেক্ট হতে হবে। চেহারা নরমাল হতে হবে। আপনাদের মতো হলে হবে না।”
-” আমাগো মতো মানে?”
-” আপনাদের চেহারায় স্পষ্ট ভেসে উঠে আপনারা প্রস্টিটিউট।”
কথাটা শোনা মাত্রই এতক্ষনের হাসিমাখা মুখটাতে কালো ছায়া পড়ে গেলো জোনাকি আক্তারের। কথাটা তার মোটেইপছন্দ হয়নি। মনে মনে গালি দিচ্ছে সে সোহানকে। শালা হারামি একটা। বেশ্যার শরীর মজা লাগে আর চেহারা মজা লাগে না। ভ্রু কুঁচকে তার চামচা ফখরুলকে বললো,
-” ঐ, চুমকি আর মায়ারে ধইরা আন। ”
-” চুমকি তো সার্ভিসে আছে।”
-” মায়া কই?
-” ওর আইজ শরীর ভালানা

সোহানের দিকে ঘুরে জোনাকি বললো,

-” চুমকিরে দেখতে হইলে বসা লাগবো আর মায়ার জন্য আরেকদিন আসতে হইবো।
-” চুমকিকে না হয় অল্প সময়ের জন্য ডেকে দাও।
-” না স্যার আমগো ধান্দা বেইমানির হইলেও তা আমরা ঈমান দিয়া করি। রুটিরুজি আমগো। বেইমানি কেমনে করি কন? তবে আপনে এত শর্ত দিসেন কেন তা জানা যাইবো?
-” এত জেনে তুমি কি করবা? মায়াকে কি একটু দেখার ব্যবস্থা করা যায়?
-” স্যার সবাই মনে করে আমগো খালি শরীর আছে মন নাই। কিন্তুু আমগো ও মন আছ। ওরা আমার দায়িত্বে এখানে থাকে। তাই ওগো ভালোমন্দ দেখার দায় ও আমার। ”
-” অার কেউ নেই?”
-” না অাপনে যেমন মাল চাইতাছেন এইরকম মাল অার নাই।”
-” দেখো অন্যান্য কাস্টমারের চেয়ে আমি বেশি টাকা দিবো।”
-” না স্যার, পারমু না।”
মেজাজ খারাপ হচ্ছে সোহানের। এটা কেমন ফাজলামি। এত ব্যস্ত মানুষ সে। কাজ ফেলে এখানে এসেছে অথচ ওকে এভাবে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে? খুবই অপমানজনক ব্যাপার। এই মহল্লায় ওর অাসাই ঠিক হয়নি। দেশে এত জায়গা থাকতে এখানে কেনো এসেছিলো মরতে?
-” শোনো মহিলা, এই যে এত ভাব নিচ্ছো না? এতটা ভাব নেয়ার কিছু নেই। তুমি যাস্ট একটা প্রস্টিটিউট। রাজ্যের কাজ ফেলে এসেছি এখানে। অার তুমি এভাবে ইনসাল্ট করছো আমাকে? তোমরা একটা কাস্টমারের কাছে কত পাও? উর্ধে ১৫০০। এর বেশি তো কখনোই পাও না।অামি তোমাকে পার মান্থ ফিফটি থাউজেন্ড পে করতাম। ফিফটি থাউজেন্ড বুঝো? পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রতি মাসে। আর তোমার মেয়ের খরচ সব অামি আলাদা বহন করতাম।”
-” দেখেন স্যার, আপনের এইখানে ভাল্লাগলে আবার আইসেন আর যদি আমাগোর চেহারা আর এই মহল্লা পছন্দ না হয় তাইলে আর আইসেন না।”
রাগে ফুঁসছে সোহান। মেজাজ আসমানের চূড়ায় উঠছে। বেশ্যাটা এমন ভাব নিচ্ছে মনে হচ্ছে যেনো প্রতি কাস্টমারের কাছ থেকে ও প্রতিমাসে পঞ্চাশ ষাট হাজার টাকা পায়। যত্তসব বেশ্যার দল।
সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে। ফোনে কাউকে বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে,
-” কোথায় পাঠিয়েছো আমাকে? একটা মেয়েকেও দেখায় নি এরা। তুমি জানো সময় ব্যাপারটা আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ন। এত কাজ ফেলে আসছি আমি। আজাইরা টাইম ওেস্ট করলাম এখানে। অন্য কোথাও খোঁজ নাও। আজই মেয়ে চাই আমার।”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে শেষ করলো সোহান। বেশ চেঁচাচ্ছিলো সে। ওপাশ থেকে তার বিজনেস ম্যানেজার কি বলছে সেগুলো পাত্তা না দিয়েই একনাগারে বলে শেষ করলো কথাগুলো। সোহানের চেঁচামেচিতে আশপাশের রুমগুলো থেকে উঁকি দিচ্ছে কিছু পতিতা। খুব দ্রুতগতিতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে সোহান। পিছন পিছন যাচ্ছে তার পি,এস, জাহিদ। সে একজন নির্বাক দর্শক। প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও সে বলে না। সোহান যত চেঁচামেচি করুক,রাগ করুক তার মাঝে কখনোই কোনো বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। সোহানের রাগ উঠলে বেশিরভাগ তুফান জাহিদের উপর দিয়েই যায়। কিন্তু সে একদম স্বাভাবিকথাকে। তার চেহারা দেখলে মনে হয় কোথাও কিছু হয়নি। পরিস্থিতি অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং শান্ত আছে। নিচে নেমেই সোহানের চোখ গেলো সরু গলির উল্টো দিকের জরাজীর্ন দোতলা বিল্ডিংটা তে। জানালার পাশে একটা মুখ দেখা যাচ্ছে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে। চোখ আটকে গেছে সেখানে। মনে হচ্ছে আশপাশের সবকিছু থমকে গেছে। সে নিজেও থমকে আছে। মেয়েটা এতক্ষন ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো। সোহানের ঘোর কাটলো জানালার পাশ থেকে মেয়েটার সরে যাওয়ার পরপরই। ভীষন ভাবে মনে ধরেছে মেয়েটাকে। এমন একটা মুখই সে খুঁজছিলো। সোহানের সিক্সথ সেন্স বলছে এটাই মায়া। নামটার সাথে এই মুখটাই মানায়।

-” জাহিদ।”
-” জ্বি স্যার?”
-” এক্ষুনি উপরে যাও। জোনাকিকে যেয়ে এই মেয়েটার কথা বলো। অামার ওকে পছন্দ হয়েছে। কত টাকা লাগবে জিজ্ঞেস করো যেয়ে?”
-” ওকে স্যার।”
জাহিদ গেছে জোনাকির সাথে কথা বলার উদ্দেশ্যে।

আর সোহান যাচ্ছে সেই মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে। দোতলায় উঠে সেই রুমে যেয়ে দেখে মেয়েটি সেখানে নেই। রুম থেকে বেরিয়ে বাহিরের করিডোরে আশপাশে চোখ বুলাচ্ছে। কোথ্থাও নেই। কতক্ষনের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেলো নাকি। লম্বা করিডোর ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে। একটা রুমের দরজার পর্দা উড়ছিলো। পর্দার ফাঁক দিয়ে মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে। কেউ একজন তার চুল আঁচড়ে দিচ্ছে। রুমে ঢুকে পড়লো সোহান। চমকে উঠলো রুমে থাকা দুজন মানুষ। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে মেয়েটাকে সে। এমন মেয়েই সে খুঁজছিলো।
-” আচ্ছা তুমিই কি মায়া?”
কোনো উত্তর দিচ্ছে না সে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সোহানের মুখের দিকে। পাশে থাকা মহিলা এগিয়ে এসে বললো,
-” আপনেরে কি জোনাকি বুবু পাঠাইছে? স্যার আমার মাইয়্যাডা অসুস্থ। আজকা সার্ভিস দিতে পারবো না।”
-” যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দাও। এটাই কি মায়া?”
-” হ স্যার।”
-” কি হয়েছে ওর?”
-” দুইদিন ধইরা তুমুল জ্বর আইছে স্যার।”

কাছে এগিয়ে এসে মায়ার কপালে হাত রাখলো সোহান। টেম্পারেচার সত্যিই অনেক বেশি।
-” ডক্টর দেখিয়েছো ওকে?”
-” না স্যার আজকা যামু সামনের ফার্মেসিতে। ঐখানে একটা ডাক্তার বসে। উনারে দেখামু।”
কিছু না বলেই বেরিয়ে এলো সে। বাহিরে আসা মাত্রই জাহিদের মুখোমুখি হলো সোহান।
-” স্যার উনি আপনাকে উপরে যেতে বলেছেন।”
উপরে জোনাকির রুমে এলো সোহান। মহিলা পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে আছে। মহিলার সামনাসামনি চেয়ার টেনে বসলো সোহান।
-” কত চাও?”
-” যা কইছেন তাইই থাকবো।”
-” আমার কিছু শর্ত আছে।”

-” কি?”
-” ওকে অন্য কেউ ইউজ করতে পারবে না। শুধুমাত্র অামাকে সার্ভিস দিবে। আমি যখন যেখানে ডাকবো সেখানেই ওকে পাঠাতে হবে। ঢাকার বাহিরে আমি প্রায়ই যাই। দেশের বাহিরেও যাই। আমি যেখানে যাবো সেখানে ওকেও নিয়ে যাবো। ওর যাবতীয় খরচ আমি চালাবো।আর তোমার টাকা আলাদা দিবো। এখন যাও ওকে রেডি হতে বলো। ওকে নিয়ে বাহিরে যাবো।
-” স্যার আজকা মাইয়্যাডারে সার্ভিসে দিমু না। ছেমড়ি অসুস্থ। সুস্থ হইলে যা খুশি কইরেন।”
-” ওকে ডক্টর দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি। আর আমি টাকা দিচ্ছি। অতএব মুখ বন্ধ রাখো। আমি যা খুশি তা করবো এখানে তোমার কিছু বলার নেই।”
-” টাকাটা তো এখনও পাই নাই।”
-” জাহিদ ওকে আজকেই টাকা দেয়ার ব্যবস্থা করো। অফিসে কাউকে ফোন দিয়ে বলো টাকা নিয়ে আসতে।আর তুমি মায়ার কাছে খবর পাঠাও। ওকে বলো রেডি হতে।”
(চলবে)

সতীনের_সংসার পর্ব_২০_শেষ

6

সতীনের_সংসার পর্ব_২০_শেষ

Writer: তানজিন সুইটি
কিন্তু আজ এমন একটা কাজের জন্য নিকৃষ্ট লাগছে তোমাদের দুজনকে?বেশি লাগছে রিয়াকে।কোনো ভালো ঘরের মেয়ে বউ সন্তান দেখে এমন কাজ করবে না।আমার তো রিয়ার জন্ম নিয়ে সন্দেহ আছে।

এই কথাতে রিয়া ফুস ফুস করে উঠে সাপের মতো করে।

অন্যপাশে জীতুর মা আনিকাকে জ্ঞান ফিরানোর জন্য চোখে মুখে পানি দিয়েই চলেছে নিজের কোলে শুইয়ে।

অনেকখন পর আনিকার জ্ঞান ফিরে।জ্ঞান ফিরেই বুক ফাটা কান্না জড়িত চিৎকার করে বলতে থাকে…

-হে আল্লাহ কি দোষ করেছিলাম আমি যে এমন ফাটা কপাল দিয়েছো আমারে?এতোটাই নিকৃষ্ট ছিলাম তোমার কাছে গর্ভবতী হয়ে স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে হয়।যে স্বামীকে মন প্রাণ সবই দিলাম সব হারিয়ে।এখন কেনো সে ই অবহেলা অপমান করে
চলে সবার সামনে।ঘৃণা হচ্ছে নিজের প্রতি।ওর প্রতি তো করুনা হচ্ছে।সময় থাকতে বুঝছে না আমায়।
চলে গেলে পাগলের মতো খুজবে।

পাশ থেকে রিয়ার মুখটা একটু বাকিয়ে আস্তে করে বলে উঠে..

-ভাবের কান্না আর জীবনেও শেষ হবে না ওর।যা দেখলে গা জ্বলে উঠে!!!!?

সেটা আবার জীতুর বোন শুনে ফেলে…

-ভাব আনিকা দেখায় না বুঝলা।ভাব তো তুমি দেখাও।
আমার তো মনে হয়,এমন ভাব তোমার পরিবারও প্রশিক্ষণ দিয়ে রয়।তোমার মতো রাস্তার মেইয়াদের
যে কিনা টাকার বিনিময়ে সব কিছু করতে পারে।

এমন কথাতে রিয়া তো ৪২০ডিগ্রী ভোল্টে জ্বলে উঠলো
পাশে রায়হানকে ঝাকিয়ে বলতে লাগলো…

-ঐ বেজন্মা..তোর সামনে, তোর বউরে এসব কথা বলে আর তুই সেটা মনের সুখে গিলে গিলে খেয়ে যাস রে।

এতোখন রায়হান চুপ করে ছিলো।এখন মনসার কথায় তেরে উঠলো….

-মিতু(জীতুর বোন)তুই চুপ করবি বোন?

এখন তো জীতুর বোন রেগে গিয়ে বলে..

-মাইগা মানুষ দেখছি কিন্তু তোমার মতো আমার বয়সে দেখি নি একজনও।

আহা রিয়া রায়হানের কোলার ধরে বলে..

-এইটুকু বলেই তোর কথা শেষ আর কিছু বলার নেই তোর…

-আর কি বলবো?

-আর কি বলবি মানে??ভাত কি ওরা খাওয়ায় না তুই খাওয়াস সয়া**বাচ্চা?

জীতুর বোন বড় বড় করে হাত তালি দিয়ে বলে??
এই সব মেয়ে যেনো আর এক মূহুর্ত এবাড়িতে না দেখি। এখনই বেড়িয়ে গেলে দুজনের জন্যেই ভালো হবে।না হলে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেবো পতিতার মানুষ হিসেবে।?

এসব কথা সবাই ঠিকই শুনছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না মিতুকে?কারণ,ওকে এখন কিছু বললে আরও রেগে লাঠি দিয়ে পিটাতে পারে, যেই ঠেকাতে আসবে।

পাশ থেকে রায়হান মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
আর রিয়া ফুস ফুস করতেই আছে।কিছুখন পর রায়হান বলে উঠে…

-রিয়া সব গুছিয়ে বের হও।

এটা বলে চলে গেলো রায়হান।আর আনিকাকে ধরে নিয়ে গেলো জীতুদের বাসায়।একটু সুস্থ হওয়ার পর
আনিকাও চলে গেলো বাসায়।

রায়হান আর রিয়াও চলে যায় জীতুদের বাসা থেকে।
কোথায় গেছে এখনও সঠিক ভাবে কেউ জানে না।
সুখের দরিয়া রেখে,অকুল সমুদ্রে সাঁতার কেটে মরার জন্য এমন কাজ করে চলেছে রায়হান।
মানুষ যেনো সেই সুখের স্থানটা ঠিকই বুঝে।যখন সে সব হারিয়ে পথে পথে ঘুরে।রায়হানেরও ভাগ্যে সেটাই অপেক্ষা করছে।

কয়েকদিন অতিক্রম হয়ে গেলো আনিকার মাঝে।
শরীরটাও আগের মতো নেই চলাফেরার জন্যে। একে তো প্রেগনেন্ট দ্বিতীয়ত যা মার খেয়েছে,সেটার জন্য
মেয়েটা বিছানায় পরে গেছে।আরিয়াকে আর আগের মতো কাছে আসতে দেয় না তার শ্বাশুড়ী মিসেস সালেহা বেগম।আনিকার দোষ সে কেনো আগ বাড়িয়ে গিয়ে ঝগড়া করে মার খেয়ে এলো এমন অবস্থাতে।
যদি তার বংশের কোনো ক্ষতি করতে হতো।

সবাই সবার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত।শুধু পরে রয় এক কোণায় আনিকা।তারও যে একটা মন আছে।মনের ভিতরে হাজারও ইচ্ছা আছে।সেটা দেখার মতো কেউ নেই এখন তার পাশে।অনেক কান্না করেছে।তাই সে আর কান্না করতে রাজি নয়।আরিয়ানকে তো দেখার সবাই আছে।এখন আনিকা না থাকলেও তার অপূর্ণতা হবে না তিল পরিমাণে।তাই সে ডিসিশন নিয়ে ফেলে।সকাল হলে অজানা পথে পারি দিবে।

রাতের তারা মিটি মিটি করে জ্বলে উঠে দূর পর্বতে।
আনিকার হৃদয় জমিনে প্রদীপ জ্বালোর মতো কেউ
নেই সেটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে ।ঘুম ঘুম চোখের পাতাতে দেখে দেখে বলে..

-একদিন ঐ আকাশের তারা হবো।তখন শত চেষ্টা করলেও তারা ছোয়ার সাহস হবে না তোমার।শুধু কাঁদবে আর বলবে…আনু অনেক মিস করছি গো তোমায়। চিৎকার করে বলবে…একবার বুকের পাজরে এসে লুঠিয়ে পরো তৃপ্তি মিটাই। শত চাইলেও পারবে না,যদি আনুর অস্থিত না পাও কোথাও।যদি বেঁচে থাকি তো তোমার হৃদয় জমিনে চাইলে পাবে সব কিছু আগের মতো করে। অন্য কাউকে তখন দিবো না তিল পরিমাণে ঠায় করে।একা রাজত্ব করতে চাই তোমার মন জমিনে।তখন কি দিবে তোমার আনুকে সেই স্থানটা করে দিতে?

এসব কথা বলে চলে গেলো ঘুমের রাজ্যে।ভোর হওয়ার সাথে সাথে নামাজ পড়ে চলে গেলো অজানা পথে। যাওয়ার আগে জীতুর ফোনে কল করে বলে গেলো।

-ভাইয়া দেখে রাখবেন সবাইকে।আর পারলাম না থাকতে।তাই চলে যাচ্ছি অজানাতে।যদি বেঁচে থাকি তো দেখা হবে কোনো একদিন আমাদের।পারলে মাফ করে দিবেন যদি কখনো ভুল করে থাকি আপনাদের কাছে।

জীতুকে বলার কোনো চান্স ই দিলো না।তার আগেই কথা শেষ করে, রেখে দিলো আস্তে করে কলটা।

জীতুও অবাক হয়ে যায়।কি করবে বুঝতে না পেরে রায়হানকে কল করে সব কিছু খুলে বলে?

রায়হানও ছুটে যায় বাসাতে।যতখনে যায়, তখন কি আর লাভ হয় গিয়ে?হারিয়ে ফেলেছে আনিকাকে কোনো এক দিগন্তের আঙিনায়।পুরো বাড়ি হাহা
করছে আনিকার বিহনে।এখন কাঁদলে কি কাজ হবে?
.
.
.
দিন চলে যায়,সপ্তাহ চলে যায়,মাস চলে যায় আনিকার খোজ খবর পাচ্ছে না কোথাও।

অন্য পাশে রিয়ার চরিত্র আরও ফুটে উঠেছে সবার সামনে।জীতুদের বাসা থেকে চলে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পার হতেও দেয় নি রিয়া।তার আগেই যেনো
ধরা খেয়েছে পরকীয়া করতে গিয়ে।সমাজের মান্য
গন্য মানুষজন এটা নিয়ে বিচার পর্যন্ত বসিয়েছে।এতে রায়হান আর ওর মা মিসেস সালেহার মরার মতো পথ তৈরি করে দিয়েছে।ভাগ্যিস ভালো রায়হানের আব্বু বিদেশ থেকে এসে স্ট্রোক করে মারা গিয়েছে।আনিকার শোকে।কিন্তু সে যে মরে গেছে অপর পাশে রায়হান আর মিসেস সালেহা বেগমকে ফকির করে দিয়ে গেছে।
সব সম্পত্তি যে আরিয়ান আর আনিকার নামে লেখে দিয়ে গেছে।এটা শুনার পর থেকে রায়হান আর মিসেস সালেহা বেগম হায় হায় করে মাথা ফাটিয়ে ফেলে।
অন্য দিকে রিয়াকে অপয়া অলক্ষী বলতেই থাকে।

এখন শুধু আনিকার অপেক্ষা করে রয়।কবে আসবে তাদের জীবনে ফিরে সেটা কি মিসেস সালেহা বেগম দেখে যেতে পারবে।কারণ তার পাপের বোঝা অনেক মনে করছে।তাই মরার আগে ক্ষমা চেয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে চায়।

#সমাপ্ত…..

(বিঃদ্রঃ সব সতীনের সংসার এক হয় না।তার জন্য আনিকার সংসারটাও সুখের হলো না।যদি কখনো ফিরে আসা হয় আনিকার।তাহলে হয় তো সতীনের সংসার শেষ হবে তার।কারণ,সবাই এখন অপেক্ষা করে চলেছে রিয়ার শাস্তি চায় আনিকার সার্পোট অনুযায়।তাই আনিকার আসাতে #সিজন_২ লেখবো।সেই পর্যন্ত কষ্ট করে অপেক্ষা করে যান। জানি না কার কেমন মন রক্ষা করতে পারলাম তবুও বলছি যদি কারো মনের মতো না হয় তো,তাহলে ক্ষমা করে দিবেন বোন হিসেবে।ধন্যবাদ সবাইকে এতোদিন ধর্য্য সহকারে
পড়ার জন্যে।ভালো থাকবেন আর পরবর্তী গল্পের জন্য অপেক্ষা করবেন।?)

 সতীনের_সংসার পর্ব_১৯

0

 সতীনের_সংসার পর্ব_১৯

Writer: তানজিন সুইটি
 

আর কিছু না বলে আনিকা ঘুমিয়ে পরে।রায়হানও আর দেরি না করে ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়।

আল্লাহ আজ তাদের ঘুম কতোটুকু ভাগ্যে লেখে রেখেছে ঘন্টাখানেক পর প্রমাণ পেয়ে যায়। যখন আবার কলের উপরে কল আসতে রয়।

এতো আওয়াজ হলে কি ঘুম হয়?কলের উপরে কল বাজতেই আছে।অবশেষে রিসিভ করেই বসে আনিকা।

-আসসালামু ওয়ালাইকুম।কে বলছেন?

-ওয়ালাইকুম আসসালাম।ভাবী আমি জীতু..

-ওও হ্যাঁ বলুন ভাইয়া.. এতো রাতে কি করতে কল করেছেন?

-ভাবী রিয়া সুইসাইড করার জন্য দরজা বন্ধ করে থাপ্পাস থাপ্পাস কিসের যেনো আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।

-কি বলছেন?আর কেনো বা রিয়া সুইসাইড করতে যাবে হঠাৎ করে।

-উফফ ভাবী আপনিও না..একদম বোকা,কিছুই বুঝেন না।

-বোকার কি করবলাম ভাইয়া??

-আপনার কাছে কি রিয়া কলই করে নি?আর এমন তেমন ব্যবহারও প্রয়োগ করে নি আপনার সাথে।

এখন আনিকা মন খারাপ করে চুপ করে থাকে।

-কি হলো ভাবী..কথা বলছেন না কেনো?

জীতুর সারা পেয়ে ভাবনার জগত ভেদ করে..

-হুমম..বলেন ভাইয়া।কি আর বলবো তাকে?ভাগ্যের লেখা কেউ খন্ডাতে পারে।

-খন্ডাতে পারে না মানে,,,কে বলেছে আপনাকে?
জানেন রিয়া কি কি করেছে?

-কি???

-জানি না আপনারা যাদু টোনা বিশ্বাস করেন কিনা?
কিন্তু আমার বোন আর আম্মু বলেছে?রিয়া যেনো রায়হানকে তাবিজ কবজ করে বেধে রেখেছে।

-ধ্যাতত কি যে বলেন না?বর্তমানে কি এসব বিশ্বাস যোগ্য হয় আপনার কাছে?

-কে বলেছে হয় না?আর বিশ্বাস করা আর না করা আপনার ব্যপার..তবুও বললাম যেটা সেটার প্রমাণ পাচ্ছেন।তাও নাকজ করছেন। থাক আর কোনো কথা বাড়াবো না।এখন রায়হানকে একটু দেন।

-কিভাবে দেই ভাইয়া ওকে।ছেলেটা যে আজ বায়না ধরেছে বাবার বুকে ঘুমাবে।

-দেখেন ভাবী..সবই বুঝি তবুও ওকে দিতে হবে।কারণ
রিয়াকে আমার ছোট বোন আর আম্মু এক মূহুর্ত রাখবে না সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

পাশ থেকে রায়হানের ঘুম ভেঙে গেলে বলে উঠে..

-কি ব্যপার আনু??এতো রাতে কার সাথে বক বক করছো এতোখন ধরে।

-ইয়ে মানে…. (রায়হানকে ফোন দিতে চাচ্ছে না।কারণ, দিলেই চলে যাবে রিয়ার কাছে তাই।)

-ইয়ে মানে কি?কে কল করেছে বলবে কি?

-ইইইয়ে.. জীতু ভাইয়া..

-তো এতো তোতলানোর কি আছে?দাও আমার কাছে।

ফোন ধরে আর বেশি দেরি করলো না এতো রাতে।
চলে গেলো সেই মনসার কাছে।বিষকে মনে করছে মধু।
সেটা যে কত মধু হবে..সময় হলেই টের পাবে।

রায়হান চলে গেলো।পিছু ফিরে তাকিয়ে দেখলো না
আনিকার মুখের অবস্থা।বেচারির ভিতরে কুরে কুরে খাচ্ছে রাত শেষ হচ্ছে না বলে।কখন রাত পোহাবে আর কখন জীতু ভাইয়ের বাসাতে গিয়ে দেখবে রিয়ার কি হয়েছে?

রাত গেলো কোনো রকম কেঁদে আর ফোনের উপরে ফোন দিয়ে।অন্য পাশ থেকে বার বার কল কেটে দেওয়া রায়হানের বাহানা। তবুও লেইলা কুত্তার মতো সারা রাত কল করা বন্ধ হচ্ছে না আনিকার।লাস্ট সময়ে রিসিভ করেছে তবুও শুনতে হয়েছে চু**মা***, খা**মা**বে***
ইত্যাদি বিচ্ছিরি বকা।যেটা শুনলে যেকোনো মানুষই বমি করবে।

হায়রে লিলাখেলা,,,সব দুঃখই কি লিখে রেখেছিলো আনিকার একার কপাল পোড়ার?এই কপাল পোড়া
হয় তো বেড়ে যাবে ভোর হওয়ার সাথে সাথেই।

কোনো রকম ঘুমের জগত পার করলো।তারপর সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলো জীতুদের বাড়িতে।বাসায়
প্রবেশ করার পর পরই দেখতে পেলো এখানে সেখানে জিনিস পত্র ভেঙে চুরে একাকার।দরজাও ভেঙে ফেলা হয়েছে।আনিকা বুঝতে পারে গতকাল রাতে বড় সর একটা ব্যাপার ঘটে গেছে।এখন শুধু সেটার আসল তথ্য জানার জন্য জিঙ্গাসা করে।

-কি হয়েছে কাল রাতে?

-সেটা কি তোর কাছে বলতে হবে?

-আমার কাছে বলতে হবে না তো কার কাছে বলতে চাও।

-তোর মতো নষ্টা মেইয়ার কোনো কৈফিয়ত করতে চাই না।আর তুই এ বাসায় আইছোস কেন?বিগার উঠছে নাকি রায়হানকে কাছে পাওয়ার।

এমন কথাতে এবার আনিকা নিজেকে আর ধরে রাখতে না পারে..

-ঐ চুপ কর বলছি…অনেক সহ্য করেছি প্রায় এক বছর ধরে তোকে।কাকে কি বলছিস এসব বাজে কথা?
তোর মতো রাস্তার মেয়ে আবার আমারে বলে বিগারের কথা।আরে আমার যদি বিগারই থাকতো তাহলে নিজের জামাইরে তোর কাছে শুইতে পাঠাইতাম না।
আর তাবিজ কবজ করে বেধে রাখতাম না।
বিগার তো তোর বেশি।তাই তো বিয়ের আগেই আমার জামাইর সাথে এক বিছানায় শুইতেও তোর ঘৃণা প্রীত্তি হলো না।তবুও স্বাদ মেটে নাই তোর।যাদু টোনা করে নিজের এলাকাতে নিয়ে মানুষ জনের সামনে ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছিস প্রেগনেন্ট বলে।তার উপরে যে তোর অনেক লোভ রে। ওর সম্পত্তির উপরে।তাই তো আর দেরি না করে,এ এলাকাতে এসে আগে চাকরিতে জয়েন্ট করে ভাড়া নিলি আমাদের বাড়ির পাশে।যেনো পেট ভরে ভাত কাপড় পাস দেওয়ানা বানিয়ে।

-ঐ…??

-চুপ তোর ঐ ঐ..ভাতার ভাতার করোস খালি।আরে আমি তোরে ভিক্ষা হিসেবে দান করেছিলাম।আমি সব জানতাম তোর ফ্যামিলির অবস্থা।তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখে রায়হানকে বলেছিলাম রিয়াকে মেনে নিয়েছি কিন্তু ওর সংসার ও নিজেই গুছিয়ে যেনো নেয় আর আমার সংসারে নাক যেনো না গলায়।

ইত্যাদি কথা বলতে বলতে রায়হান বাহির থেকে চলে আসে।আর রিয়াও রায়হানকে দেখে ন্যাকা কান্না জুড়ে বসে আর বানিয়ে বানিয়ে এক গাদা কথা বলে আনিকার নামে।তার উপরে আরও বলে আনিকা এসেই মারধর করেছে, এমন কি মেরে ফেলার হুমকিও দেয় এতোখন ভরে?এসব শুনে রায়হানের মাথা়র রক্ত টকবগিয়ে উঠে.! আর কিছু বুঝতে না দিয়ে,আনিকার চুলের মুঠা খপ করে ধরে আর বলে..

-তোরে বার বার বলছি না,রিয়ার সাথে কথা বলবি না এমন তেমন করে।তার উপরে কে বলেছে তোকে এবাড়িতে আসতে?

অন্যদিকে আনিকাকে কিছুই বলার চান্স দিচ্ছে না একবারের জন্যে।কথা বলবে কি করে?যে পরিমানে চুলের মুঠো ধরে রেখেছে প্যাচিয়ে প্যাচিয়ে হাতের মধ্যে।তার সাথে কিছুখন পর পর ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে
এপাশ ওপাশ করে চলেছে চুল সহ আনিকাকে।

আনিকাও সহ্য করতে না পেলে বকা দিয়ে ফেলে।

-জানোয়ার ছার বলছি।যত পারোস আমার সাথেই খালি।আর রিয়া কি তোর…?

বলার আগেই হাতের কাছে একটা বাটাম পেয়ে আনিকাকে ফেলে ইচ্ছা মতো পিটাতে থাকে।আনিকার চিৎকার শুনে দৌড়িয়ে আসে জীতুর মা বোন আর অন্য ভাড়াটিয়ারা।

যতখনে সবাই দৌড়ে আসলো।ততখনে মাটিতে নিথুন দেহ নিয়ে লেপ্টে রয়লো আনিকা।জায়গায় জায়গায় ফুলে গেছে বেচারির।রক্তও জমাট বেঁধে গেছে।এখানে সেখানে চুল পরে পরে রয়েছে।অন্যপাশে রিয়ার মনে হয় তো তৃপ্তি মিটেছে। তাই তো ন্যাকা কান্না বন্ধ করে পিটানোর উপভোগ করছে,ঠেকানোর বদলে।

জীতুর মা আর বোন এবার রেগে গেলো রায়হানের উপরে।বলে উঠে…

-ছিঃ রায়হান…তোর কাছ থেকে এসব কখনোই আশা করি নি ।বিয়ে করেছিস ভালো কথা।তাই বলে কি তোদের খোপ ঝারবি বেচারির আনিকার উপরে?
আর এটাও ভুলে গেলি আনিকা গর্ভবতী এখন যে।

জীতুর মা কথাগুলা শেষ করার আগেই পাশ থেকে জীতুর ছোট বোন এবার বলে উঠে..

-ছিঃ ভাইয়া…এতো বছর ভেবে আসছি,আমার ভাই দুটা।এক জীতু আরেকজন রায়হান।কিন্তু এখন আমার ঘৃণা হচ্ছে এমন একজনকে ভাইয়ের স্থান দিলাম বলে?
আরে ভাই যদি তোমার এতোই মেয়েলি স্বভাব ছিলো তো তাহলে একটা কাজ করতে..এখন দেশে ওলি গলিতে পতিতালয় খোলা আছে,সেখানে গিয়েই নিজের ইচ্ছা পূরণ করে আসতে।আর এই যে রিয়া..ওকে আমি প্রথম দিন ই বলেছি…

বিয়ে যখন হয়েছে তখন একটা কাজ করো plzzz..
আনিকা অনেক ভালো মেয়ে।তাই তো তোমাদের মেনে নিয়েছে।যদি তুমি মিলে মিশে খাও তো সারাজীবন খেতে পারবে।কিন্তু একটা কথা মনে রেখো সব সময় ?
তোমার কাছে যদি রায়হান ভাইয়া দুদিন থাকে তাহলে আনিকা ভাবীর কাছে তিনদিন থাকার অধিকার আছে।
কারণ সে বড় বউ বলে।তো হিংসা বাদ দিয়ে ছোট বোন হিসেবে থাকো।দেখবে তোমাকে বড় বোন হিসেবে জীবন দিয়েও সব উজার করে দিবে যে কোনো সময়ে।

কিন্তু আজ এমন একটা কাজের জন্য নিকৃষ্ট লাগছে তোমাদের দুজনকে?বেশি লাগছে রিয়াকে।কোনো ভালো ঘরের মেয়ে বউ সন্তান দেখে এমন কাজ করবে না।আমার তো রিয়ার জন্ম নিয়ে সন্দেহ আছে।

এই কথাতে রিয়া ফুস ফুস করে উঠে সাপের মতো করে।

অন্যপাশে জীতুর মা আনিকাকে জ্ঞান ফিরানোর জন্য চোখে মুখে পানি দিয়েই চলেছে নিজের কোলে শুইয়ে।

চলবে….

(বিঃদ্রঃ বিচ্ছিরি ভাষা প্রয়োগ করার জন্য plzzz কেউ
বাজে মন্তব্য করবেন না।আসলে লেখার দৃষ্টান্ত তুলে ধরার জন্যই এমন লেখা প্রয়োগ করেছি আর কিছু নয়।
ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ সবাইকে)

 সতীনের_সংসার পর্ব_১৮

0

 সতীনের_সংসার পর্ব_১৮

Writer: তানজিন সুইটি
এক সময় ছিলো আনিকার জন্য পাগলামিনি করে যেতো আর এখন…..বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে শুয়ে পরে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে।


রাতের তারা মিট মিট করছে।দিনের আলোর জন্যে। নতুন সূর্য কালও আসবে না আনিকার জীবনে।?

আসবে তো ফণী মনসা।যে কিনা ছবল দিয়ে যাবে
তার বিষাক্ত বিষে।প্রাণ হানিও হতে পারে যেকোনো সময়ে,সেই ছবলে।

ভোর হলো।নতুন সূর্য, নতুন দিন,বছরে এলো খুশির দিন।সেটা হলো ঈদের দিন।ঈদ মানেই ছিলো আনিকার জীবনে রায়হান আর ওর পরিবার।আর এখন শুধু তার একমাত্র সন্তান আরিয়ান।

ঘুম থেকে উঠে সম্পূর্ণ কাজ সেরে ফেলে আরিয়ান ঘুম থেকে ওঠার আগে।তা না হলে যে, ছেলেটা পাগল হয়ে যাবে ঈদ ঈদ করে।

এসব কথা একটু উচ্চ সরেই বলে বলে কাজ করে যাচ্ছে।এমন সময় পিছন থেকে কে যেনো বলে উঠলো?

-পাবনা থেকে ফেরত এলে কবে?

কণ্ঠটা চেনা লাগছে বলে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে রিয়া……

মুচকি হেসে বলে..

-হুমম?কিন্তু তোমার থেকে পরে ফেরত?

এটুকু কথাতেই তেলে বেগুনে ছেদ করে উঠলো রিয়া।
আর কোনো কথা না বারিয়ে চলে গেলো ড্রয়িং রুমে।
বাংলার পাঁচ করে রেখেছে চেহারাটাকে।সোফায় বসে বসে কি এমন ভাবছে যে,আশেপাশে বাড়ির আন্টিগন এসেছে,তাদের দিকে একবারও দেখছে না সে।

তার উপরে আনিকা কাজের উপর কাজ করে চলেছে আর সে নবাব নন্দিনী হয়ে সোফায় পা তুলে গভীর চিন্তায় চিন্তি হয়ে বসে আছে।

আন্টিগনরা বলে উঠে..

-কি গো নতুন বউ?কোনো মুরব্বী আসলে যে তাকে সালাম করতে হয়,সেটা শিখিয়ে দেয় নি তোমার বাবা মা।

এমন কথাতে রিয়ার ইগোতে তীরের মতো লেগেছে।তাই আর এক মূহুর্ত থাকলো না সেখানে বসে।সবার সামনে থেকে হন হনিয়ে চলে গেলো রায়হানের রুমে।

এটা দেখে আন্টিগনরা নানান জনে নানান রকমের কথা বলে যাচ্ছে মিসেস সালেহা বেগমকে।কিন্তু মিসেস সালেহা বেগমও হয়েছে তেমন?তাদের কথা কানে না নিয়ে চলে গেলেন রান্না ঘরে আনিকার কাছে সবাইকে নাস্তা দিতে বলে।তারা নাস্তা খেয়ে আনিকাকে দোয়া করে যায়।যেনো আল্লাহ দুঃখ-কষ্ট না দেয়।

অন্যথায়,রিয়া ফুস ফুস করতে থাকে সারাদিন।রাতে চলে যায়,তার বাসায়।আর পরে রয় একা রুমের কোণায় আনিকা।

দিন চলে যায়।রায়হান আবারও আসা বন্ধ করে দেয় আনিকার বাসায়।আনিকারও শরীরটা কেমন কেমন হয়ে গেছে।ঠিক মতো কিছু খায় না।কিছু মুখেও যেনো দিতে পারে না।মুখে দিলেই যেনো পেট থেকে আপনা
আপনিই বের হয়ে যায়।কার কাছে কি বলবে?কেউ
তো নেই এখন তার পাশে।এরই মধ্যে আরিয়ানেরও অনেক জ্বর এসেছে।আব্বু আব্বু করে প্রলেপ বকছে।
মিসেস সালেহা বেগমও কম আদর যত্ন করে না নাতনী নাতনী করে তবুও বাবার আদর সেটা কি পূরণ করতে পারে কেউ?তাই হয় তো আরিয়ানের জ্বর কমছে না কোনো মতেই।

এবার কল করেই বসে রায়হানকে আনিকা।কয়েকবার দেওয়ার পর রিসিভ করলে আসতে বলে আরিয়ানের অবস্থা বেশি ভালো না।সেটা শুনে এক মূহুর্ত দেরি না করে চলে আসে রকেটের মতো করে।

আরিয়ানকে সঙ্গে করে চলে যায় ডাঃ এর কাছে রায়হান।চেকআপ করে মেডিসিন নিয়ে চলে আসে।
বাসায় এসে ড্রয়িং রুমে বসে রেস্ট নিতে থাকে এমন সময় পানির গ্লাস নিয়ে রায়হানকে দিয়ে চলে যেতে নিলে,মাথা ঘুরিয়ে ফ্লোরে পরে যায় ধাপ্পাস হয়ে।
রায়হান পানির গ্লাসটা হাত থেকে তাড়াতাড়ি রেখে আনিকাকে পাজর কোলে তুলে নিয়ে যায় রুমে।
তারপর ডাঃ ওয়াজেদকে কল করে অতিদ্রুত বাসায় আসতে।

আনিকার এমন অবস্থা দেখে এতোটা ভয়ে আত্মা যায় যায় বলে।এমন সময় ডাঃ ওয়াজেদ চলে আসে।
সব কিছু চেকআপ করে আনিকার কাছ থেকে কিছু তথ্য নিয়ে অনুমান করে বলে রায়হান আবারও বাবা হতে চলেছে।বাকিটুকু সিউর হবে টেস্টগুলো হাতে পেলে।এসব বলে চলে যায় ডাঃ ওয়াজেদ।

পাশে বসে পরে আনিকার।মাথায় হাত রেখে আনিকার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে আর বলতে থাকে

-কেনো বলো নি আমায় আগে,তোমার এ অবস্থা?

আনিকা নিজেই অবাক।আর রায়হানকে কি বলবে?
চোখ বেয়ে পানি পরে চলেছে বেবি আসার কথা শুনে।
ভাবছে,,নিজেরই কোনো খবর নেই আর তো আরেকটা বেবি।একটা নিয়েই জীবন শেষ এখন কিভাবে তাকে
ফেলে দেবে।যদি হারিয়ে যায় তো,তখনএই বাচ্চা রেখে কি হবে?তার থেকে এ বাচ্চা পৃথিবীতে আসার আগে শেষ করে ফেলতে হবে।নয় তো….

-কি হলো,কথা বলছো না যে?

ভাবনার জগত ভেদ করে রায়হানের ডাকে।

-কোথায় কিছু না তো? আমার ভালো লাগছে না।আমাকে একা থাকতে দিবে একটু।

-আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও। আমি আম্মুকে বলছি কিছু দিয়ে যেতে।

এটা বলে চলে গেলো বাহিরে।কিছুখন পর আবার এলো নিজেই মিসেস সালেহা বেগমের সাথে।মিসেস সালেহা বেগমও কিছুটা খুশি হয়েছে।কারণ তার বংশধর আবার পৃথিবীতে আসছে।আনিকাকে বলছে

-এবার কিন্তু একটা মেয়ে চাইরে আনিকা তোর কাছ থেকে?

এমন কথাতে আনিকার ভিতরে ফেটে যাচ্ছে।মেয়ে চায়
বউকে মেয়ের মতো কখনো দেখেছে যে আবার মেয়ে চায়।যদি দেখতো তাহলে আজ এমন হতো না তার।

সেই রাতে ধর্ষণ হয়েছে।কোনো ভালোবাসার ফলন নয় তার পেটে।শুধু স্বামী-স্ত্রী নামে হলেই হয় না।ভালোবাসার মাধ্যমে মিলন হলেই সেটা সুদ্ধ ফলন হয়।
অবৈধভাবে জোড়পূর্বক করে মিলন করলেই তাকে বৈধ বলে না সন্তানকে।ধর্ষণের মতো অত্যাচার করে গেছে সেদিন রাত।

চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বলতে চাচ্ছে।এই বেবি চাই না আর।ঘৃণা করছে শুনে এটা কি করে পৃথিবীর মুখ দেখায়?হঠাৎ পাশ থেকে কলের আওয়াজে ভাবনা শেষ তার।তাকিয়ে দেখে রায়হানের ফোন বেজে চলেছে একটার পর একটা।যখন রায়হান রিসিভ করছে না।তখনই বুঝে গেলো আনিকা।এটা আর কেউ না?এটা রিয়া…তার সুখের ঘরে আগুন লাগানোর একমাত্র দিয়াশলাই।

মুখ ঘুরিয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে দেখে কিছুখন।
আনিকার তাকানো দেখে রায়হান বাহিরে চলে যায় ফোন হাতে করে।অনেকখন পর রুমে এসে আনিকার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় রিয়ার বাসায়।

আনিকাও কোনো রকম ঠেকানোর চেষ্টা করে না আর।
কাকে ধরে রাখবে সে এখন আর।যে আগেই পারলো না ধরে রাখতে আর তো এখন।চলে গেলো মিসেস সালেহা বেগমও।যাওয়ার আগে বলে গেলো।

-আজ থেকে তোর কোনো কাজ করতে হবে না।তুই শুধু নিজের আর বেবির খেয়াল রাখবি।এটাই হলো তোর বড় কাজ।

আনিকা হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।আজ বেবি হবে বলে কতো আদর যত্ন তাদের মধ্যে।কিন্তু রায়হান মুখে খুশি হলেও কি ভিতরে খুশি হয়েছে?

এটা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো।সন্ধ্যার সময় ঘুম ভেঙে গেলো আরিয়ানের আম্মু আম্মু ডাক শুনায়।
চোখটা মেলে দেখে আরিয়ান পাশে শুয়ে জ্বরে সারা গা পুরে যায়।হাতে ফোনটা নিয়েই রায়হানকে আবারও কল করে আসতে বলে আরিয়ানের জ্বর বেরে গেছে বলে।

রায়হান এসে ডাঃ এর কাছে নিয়ে যায়।ভালো করে চেকআপ করে মেডিসিন দেওয়ার পরে রাত অনেক হয়ে যায়।বাসায় ফিরে আসে তিনজনের মিলে।আরিয়ান বায়না ধরে তার কাছে রাতে থেকে যায় যেনো।রায়হানও আর মানা করে না।কারণ,রাতে যদি জ্বর আরও বেড়ে যায় তখন কি করবে আনিকা গর্ভাবস্থায়।

সবাই মিলে ডিনার সেরে চলে যায়,যার যার রুমে।
রাত প্রায় সাড়ে ১১টা।এমন সময় আবারও কল আসে রায়হানের ফোনে।রায়হান তো মরার মতো ঘুমে পরে আছে।তাই আনিকাই রিসিভ করে রিয়ার নাম সেভ দেখেই।

রিসিভ করার পর পরই।আনিকা হ্যালো বলতেই রিয়ার মাথায় রক্ত গরম হয়ে যায় টগবগিয়ে।

-তোর হাতে ফোন কেন?রায়হান কয়?ওর কাছে শুইতে মন চায় তোর অনেক তাই না।ভাতার কাছে পাইলে আর ছারতে মন চায় না।তাই তো পেটে আরেকটা
বাজায় ফেলাইছোস।

এমন কথা শুনে আনিকা আসমান থেকে পরে।ছিঃ এগুলা কি সব বলে রিয়া?এগুলা তো রিয়ার মুখে মানায় না।এটা তো নিজের বলা উচিত।তবুও তার দিয়েছি বলে সে আজ এমন কথাগুলো বলতে
পারলো ছিঃ।

হঠাৎ কান থেকে ফোন নিয়ে যায় রায়হান।রিয়াকে বলে কাল আসবে।এটা শুনে রিয়ার মাথা আরও খারাপ হয়ে যায় এক মূহুর্তে।

ফোনের ওপাশ থেকে কি কি বলে?সেটা আনিকা একটুও শুনতে পায় নি বলে।বার বার জিঙ্গাসা করে রায়হানকে কি হয়েছে তাদের মধ্যে আজ?রায়হান চুপ করে ঘুমিয়ে থাকতে বলে আনিকার শরীর খারাপ হবে বেশি টেনশন করলে।

আর কিছু না বলে আনিকা ঘুমিয়ে পরে।রায়হানও আর দেরি না করে ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়।

আল্লাহ আজ তাদের ঘুম কতোটুকু ভাগ্যে লেখে রেখেছে ঘন্টাখানেক পর প্রমাণ পেয়ে যায়। যখন আবার কলের উপরে কল আসতে রয়।

চলবে….

(বিঃদ্রঃ কিছু কিছু ভাষা শৃঙ্খলার মধ্যে নয়,তো মাফ করে দিবেন সবাই।আসলে যেভাবে ভাষা ব্যবহার করেছে সেটাই তুলা ধরা।ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ সবাইকে)

সতীনের_সংসার  পর্ব_১৭

0

 সতীনের_সংসার  পর্ব_১৭

Writer: তানজিন সুইটি

আজ তার কাছে বড় শত্রু মনে হচ্ছে ভাগ্য। ভাগ্যের জন্যেই আজ তার কপালটা পুরা।?কেন যে সেই ভাগ্য হলো না তার বাবা মার কাছে চলে যাওয়ার।তাহলে হয় তো এতো কষ্ট পেতে হতো না আজ তার।????

জীবনের শুরুটা ভালো হলেই যে,শেষটা ভালো হবে এমন কথা কোথাও লেখা নেই আনিকা এখন মনে করে।তার ভাগ্য এখন অকুল দরিয়ায় ভেসে গেছে সেই কবে সেটাও সে বুঝে গেছে।ভিতরে হৃদয় বলতে কিছুই নেই এখন তার মাঝে।সবই পাথরের ন্যায় হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন।

দূর আকাশের পানে চেয়ে দেখছে আর ভাবছে।এটাই কি জীবন?নাকি এর পরে আরও কিছু লিখে রেখেছে উপরওয়ালা তার ভাগ্যে।যদি তাই ই হয় তো,তাহলে যেনো অতিদ্রুত তার পথ বেছে নিতে হবে,সেই সিন্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

বেলকনি থেকে বের হয়ে শুয়ে পরে,একমাত্র ছেলে আরিয়ানকে বুকে নিয়ে।বুকে নিয়ে চোখ বন্ধ করতেই ভয়ে চিৎকার করে উঠে।হাপাতে হাপাতে পাশের
টি-টেবলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে।স্বপ্নটা দুঃস্বপ্ন থাকলেও কেমন যেনো বাস্তব বাস্তব মনে হচ্ছে তার কাছে।

আরিয়ানের মুখের দিকে অনেকখন তাকিয়ে থেকে টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পরতে থাকে।আনিকা ভাবছে,
যদি আরিয়ান না থাকতো তার জীবনে,কবে সে চলে যেতো এই নরক থেকে,দু চোখ যেদিকে যায় সেদিকে।
কিন্তু এখন কিভাবে যাবে সে?শত হলেও ছোট বাচ্চা,
এমন করে কোনো মাই পারবে না নিঃস্বার্থভাবে ফেলে অন্যথায় চলে যেতে।

এমনটা ভাবতে ভাবতে কখন যে আবারও ঘুমের রাজ্যে পারি জমিয়েছে সেটা বুঝতোই না যদি মিসেস সালেহা বেগম ডাকতে ডাকতে দরজা ভেঙে ফেলার মতো করতো।

ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় ৯টা বেজে গেছে।এর জন্যেই হয় তো মিসেস সালেহা বেগমের এমন রাগ রাগ ভাব।

তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলে দিয়ে বলে…

-আসলে আম্মু কয়েকদিন যাবত শরীরটা অনেক দুর্বল দুর্বল লাগে তার উপরে মাথাটাও উঠাতে পারি না।
তাই হয় তো এমন হয়েছে।

মিসেস সালেহা বেগম কিছু না বলে,রুমে প্রবেশ করে
আরিয়ানকে কোলে নিয়ে চলে গেলো নিচে আর যাওয়ার আগে বলে গেলো…

-ফ্রেস হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আয় অনেক বেলা হয়েছে
খেয়ে নিবি তারপর তো ইফতারের ব্যবস্থা করতে হবে।

আনিকা গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে রয় মিসেস সালেহা বেগমের দিকে অনেকখন।তারপর আর দেরি না করে ফ্রেস হয়ে চলে যায়।

সেহরীতে মিসেস সালেহা বেগম ডেকেছিলো আনিকাকে কিন্তু শরীরের কন্ডিশন যে পরিমাণে খারাপ তার জন্য হয় তো উঠতে পারে নি।তাই মিসেস সালেহা বেগম সব বুঝতে পেরে ঐরকম ব্যবহার করে গেলো।
যাক তবুও ভালো,অনেকদিন পর এমন ব্যবহার করলো
সেটাতেও অনেক খুশি আনিকা।


দেখতে দেখতে দিন পার হতে থাকে।অন্যদিকে রায়হানের আসার নাম নিচ্ছে না সেই চিন্তায় আনিকা আরও শুকিয়ে যাচ্ছে।দু দিন পর ঈদ আজও আসার কোনো নাম গন্ধ নাই।তাই ভাবছে কল দিবে আবারও।
এর ই মধ্যে আরিয়ান চিল্লিয়ে উঠে…

-আব্বু এসেছে আব্বু এসেছে।

এটা শুনে আনিকা এক প্রকার দৌড়িয়ে এসে দেখে ড্রয়িং রুমে সত্যিই রায়হান এসেছে।মুখটা কেমন যেনো শুকনো শুকনো লাগছে।হয় তো যার্নি করে আসছে এর জন্যে।আর কোনো ভাবনা না ভেবে কাছে গিয়ে জিঙ্গাসা করে…

-তুমি কি রোজা আছো?

-না..থাকতে পারি নি।

আনিকা আর কিছু জিঙ্গাসা না করে চলে গেলো রান্না ঘরে খাবার রেডি করতে।টেবিলে খাবার সাজিয়ে রায়হানকে খাওয়ার জন্য ডাক দেয় ফ্রেস হয়ে খেতে আসতে।

কিছুখন পরই চলে আসে খেতে।খাওয়া দাওয়া করে রুমে চলে যায় রেস্ট নিতে।আরিয়ানকেও সঙ্গে নিয়ে যায় কোলে করে।আনিকা আর মিসেস সালেহা বেগম ইফতার সেরে এক সাথে নামাজ আদায় করে চলে যায় যার যার রুমে।রুমে প্রবেশ করার পর আনিকাকে কাছে টেনে নিয়ে বসিয়ে দেয় রায়হান।মুখে আলতো করে হাত রেখে…

-কি হয়েছে তোমার? এমন লাগছে কেনো তোমার চোখ মুখের অবস্থা।

আনিকা কিছু যে বলবে,সেটাও পারছে না।যেটা সযত্নে ভিতরে গুছিয়ে রেখেছে অনেক দিন আগে একটু একটু করে।

-আচ্ছা বলতে হবে না।যাও রেডি হয়ে নাও শপিং এ বের হবো।

এমন কথাতে আনিকা একটু হলেও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটেছে।কারণ,ছেলেটা রোজা শুরু হওয়ার পর থেকেই নতুন জামা-কাপড় করতে করতে মাথা খেয়ে ফেলেছে।
আজ ছেলেটার আশা পূরণ করতে যাবে।তাই খুশি হওয়া স্বাভাবিক।নিজের জন্য কখনো মেয়েটা হাসি ফুটে না।শুধু অন্য অন্য বলতে বলতে নিজের জীবন দিয়ে দিতেও পারবে আর তো তার নাড়ি ছেরা ধন।

আর দেরি না করে অতিদ্রুত রেডি হয়ে চলে গেলো শপিং এ।সেখানে গিয়েও আনিকার দয়ালুর শেষ হয় না তিল পরিমাণে।শ্বশুর,শ্বাশুড়ী,ননদ, ননদের বর, ননদের সন্তান,নিজের সন্তানসহ সবার জন্য শপিং করে।
অবশেষে ওর জন্য কিছু নিতে বললে বলে…

-রিয়ার জন্য শপিং করেছো কি?

-না.. পরে করে দিবো।

-কবে করবে?পরশু ঈদ,যদি আজ না করো আর যদি শুনে এবাসার সবার শপিং করা শেষ তো অনেক কষ্ট পাবে।তাই বলছি কি?ওর আর আমার একই ড্রেস কিনো তাতেই অনেক ভালো হবে।

পরে রায়হান মুচকি হেসে,আনিকার কথা মতো সব কিছু শপিং করে ফেলে।তারপর চলে যায় বাসার উদ্দেশ্যে।

বাসায় গিয়ে রুমে প্রবেশ করে ফ্রেস হয়ে শুয়ে পরে।
এমন সময় রায়হানের ফোনে কল আসে আর অনেকখন ধরে কি যেনো কথা কাটাকাটি হয় কার সাথে?তারপর ফোনটা রেখে শুয়ে পরে আনিকার পাশে।বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আরিয়ানকে অনেক মাস পর।এতোটাই নিঃস্বার্থ হয়ে গেছে যে,এক মাত্র ছেলেকেও বুকে নেওয়ার সময় পায় না।আজ তার অনেক ভালো লাগছে, তাদের সেই আগের পরিবার এক সাথে একই খাটে শুয়ে বিলি কেটে দিচ্ছে আরিয়ানের মাথাতে।
এই ভালো লাগার সময় কতখন থাকবে একমাত্র আল্লাহ স্বয়ং জানে।

চোখ বুজে ঘুমের রাজ্যে পারি দেই দেই ভাব এমন সময় কল আসে।রিসিভ করতে পারে না ঘুম ঘুম চোখে একটু বেশিই বলে।লাস্টবার রিসিভ করতেই আরেক মুহুর্ত থাকলো না সেখানে। কোনো রকম রেডিয়ে হয়ে বেরিয়ে গেলো ফোন কলের সেই মানুষটির উদ্দেশ্যে…

শুধু যাওয়ার সময় আনিকা বলে উঠলো

-এতোদিন পর এলে তাও একটি রাত থাকবে না নিজের মানিক রতন ছেলেকে বুকে নিয়ে।কতদিন ধরে শুধু বায়না ধরে আব্বু যাবো আর আব্বুর কাছে ঘুমাবো।
তবুও আম্মু(মিসেস সালেহা বেগম)ছিলো বলে তাই সব কিছু সামলিয়ে নিয়েছে কিন্তু……..

আর কোনো কথা বলার সময় দিলো না?তার আগে চলে গেলো বলতে বলতে,,

-এসে শুনবো,এখন দেরি হলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে রিয়ার যে….

এটা শুনে আনিকা কেঁদেই দিলো।ছেলের থেকে এখন রিয়াল সব হয়ে গেলো। যে একটা রাত তাকে একা রাখতে ভয় পায়।হায় আল্লাহ কেমন হয়ে গেছে এই মানুষটা।



রাত কেটে গেলো কোনো রকম করে।সারাদিন পারও হয়ে গেলো কিন্তু রায়হানের আসার নামই নেই আর?
আজকের দিন পার হলেই ভোরের সূর্যতে ফুটে উঠবে ঈদের আমেজে।”ও মোর রমজানেরি রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ “এই খুশিটা সবার মাঝে হলেও
নেই শুধু আনিকার ভিতরে।কল করেও পাচ্ছে না রায়হানকে। পরে আর থাকতে না পেরে কল করে রায়হানের বন্ধু জীতুর কাছে..

-(কয়েকবার কল করার পর রিসিভ করে) হ্যালো,,,আসসালামু ওয়ালাইকুম ভাইয়া।

-ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাবী।কেমন আছেন?

-আমর কথা বাদ দেন।আপনি কেমন আছেন সেটা বলেন ভাইয়া?আর বাসার সবাই কেমন আছে?

-আমরা সবাই ভালোই আছি।কিন্তু??

-কিন্তু কি ভাইয়া??

-আজ রায়হান আর রিয়া আমাদের বাসার পাশের ইউনিটে উঠেছে।গতকাল রিয়া অনেক পাগলামিনী করেছিলো যেনো রাতে।তাই বাড়িওয়ালা বাসা থেকে চলে যেতে বলেছে।পরে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা পাচ্ছে না তাই আমাকে কল করে বলে যে আমাদের পাশের ইউনিটে উঠবে।আর ভাড়াও দিবে।
কিন্তু এখানে সমস্যা হচ্ছে একটাই?

-কি সমস্যা?

-আমার ছোট বোন অন্য রকম।এমন তেমন অন্যায় দেখলে ঘার থাক্কা দিয়ে বের করে দিবে।দেখবে না সে কার কি হয় সম্পর্কে।হোক সে আমার বন্ধু বান্ধব।
তাই সেটাই রায়হানকে খুলে বলার পর সব স্বর্থে রাজি আছে।তো আর না করতে পারি নি এখানে থাকতে।

এসব কথা শুনে আনিকা বিদায় নিয়ে আলগ্রস্থে রেখে দিলো।

এক সময় ছিলো আনিকার জন্য পাগলামিনি করে যেতো আর এখন…..বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে শুয়ে পরে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে।


রাতের তারা মিট মিট করছে।দিনের আলোর জন্যে। নতুন সূর্য কালও আসবে না আনিকার জীবনে।?

চলবে….

(বিঃদ্রঃ আমার ফোনের কীবোর্ডটা এতো স্লো যে টাইপিং করতে গেলে অনেক দেরি দেরি লাগে লেখতে তার উপরে বার বার কীবোর্ডটা সেটিং করতে হয় হ্যাংক হওয়ার কারণে?অনেকটা কষ্ট হয় লেখতে
যদি ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।??
ধন্যবাদ সবাইকে)