Thursday, August 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2000



ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল পর্ব_২৯

0

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
পর্ব_২৯
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

নারী পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক । একজন পুরুষের যেমন একজন নারীকে প্রয়োজন পড়ে , তেমনি একজন নারীরও একজন পুরুষকে প্রয়োজন পড়ে । কেউ কখনো একা থাকতে পারে না । জীবনে চলার পথটা বড় কঠিন । এই কঠিন রাস্তায় চলাটা বড্ড কঠিন । এখানে একজন সাথীর খুব প্রয়োজন । তবে প্রয়োজন নয় প্রিয়জন হয়ে প্রিয় মানুষের হাতটা ধরাই উত্তম । তাই এইখানে একটা ভরসার হাতের খুব দরকার । আর সেই ভরসার হাতটা অত্যন্ত আপন কারো হওয়ার-ই উচিত । এটাই হয়তো হয়েছে বেলী আর ইরফানের সাথে । দুজন ভালোবাসার মানুষ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর একত্রিত হতে পেরেছে । যাদের ভেতরের মান অভিমান সব কিছু ধুয়ে মুছে গেছে ।

এভাবেই কেটে যায় একটি সপ্তাহ । ভালোবাসার মুহুর্ত গুলো অনায়াসেই অতিবাহিত হয়ে যায় । এই একটা সপ্তাহে বেলী তার না পাওয়া সুখ গুলোকে নিজের করে নিয়েছে । ভালোবাসা নামক সোনার হরিণ আজ বেলীর হাতের মুঠোয় । ইরফান যেন তার ভালোবাসার সব টুকু খনি ঢেলে দিয়েছে বেলীর আঁচলে । আজ বেলীর আঁচল সম্পূর্ণ কাণায় কাণায় ভর্তি ভালোবাসায় ।

রাতের খাবার খেয়ে ইরফান তখন বিছানায় শুয়ে আছে । বেলী তখন রুম গোছাচ্ছে । এরই মাঝে ইরফানের ফোনে ফোন আসে । রুবির নামটা দেখে একটু ভড়কে যায় ইরফান । সামনে বেলী আছে , যদিও বেলীর এইসবের দিকে খেয়াল নেই বললেই চলে যেখানে তার নিজের মোবাইল কোথায় থাকে তাই সে জানে না , ফোন আসলে শুধু রিসিভ করে এর বেশী আর কিছুই জানে না সে । এইসব জিনিসে তার আগ্রহ নেই বললেই চলে । বেলীর সামনে ফোনটা রিসিভ করা ঠিক হবে না বলেই ইরফান ফোন নিয়ে উঠে অন্য রুমে চলে যায় ।

– হ্যালো ,
– হ্যালো মিষ্টার ইরফান , কেমন আছেন আপনি ?
– ভালো আছি , তুমি ?
– আমি ভিষণ ভালো আছি , আপনি তো ভালো থাকবেনই , নতুন শরীরের গন্ধ গেছে নাকে তাই খুব ভালো আছেন তাই না ?
– মানে ?
– তা রাতে কয়বার হয় ?

রুবির কুরুচিপূর্ণ নোংরা কথা গুলো ইরফানের মেজাজ সহজেই খারাপ করে দেয় । ইরফানকে ইদানীং রাগতে দেখা যায় না খুব একটা । বাঘ যখন শান্ত থাকার পরে হিংস্র হয়ে ওঠে তখন সে আরও ভয়ংকর হয়ে যায় । তখন ইরফানেরও সেই অবস্থা হয়েছে । ইরফান দেয়ালে নিজের হাতটা দিয়ে সজোরে একটা ঘুষি মারে ।

– ওই তুমি কি বলতে চাও ?
– বলতে চাচ্ছি যে , এক বউ তো সরে গেছে এখন অন্য মেয়ে মানুষের শরীর কেমন লাগে আর কয়বার হয় রাতে নাকি রাত দিন বিকাল সব সময় লাগে ।
– shut up you bus,,,,,,,,,,,,,,,
– হা হা হা , আমাকে এখন গালিগালাজও করা হয় ।
– ওই তুই কি বলতে চাস ? হ্যাঁ , কি বলতে চাস । আমি কি পাড়ার মেয়ে নিয়ে রঙ তামাশা করি ? নাকি পাড়ার মেয়ে মানুষ নিয়ে শুয়ে থাকি ? নাকি আমার শরীরে এনার্জি ভরা থাকে যে সকাল বিকাল রাত শুয়ে থাকবো । তোকে নিয়েও কি শুয়ে থাকতাম নাকি ?
– খবরদার আমায় ওর সাথে কম্পেয়ার করবা না ।
– তুই কোথাকার প্রাইম মিনিষ্টার । শুন আমার কাছে ওর দাম যতটা আছে তোর দাম ওর থেকে এক আনাও নাই । হায়রে মেয়ে মানুষ , ওই মেয়ে আরও আমায় প্রতিদিন বলে তোকে ফিরিয়ে আনতে , আর তুই রাতের বেলা ফোন দিয়ে এত নোংরা ভাষায় ওর সম্পর্কেই কথা বলছিস , ছিহ ! তুই কি আসলেই মানুষ ?
– নাহ আমি অমানুষ , হয়েছে ? যাই হোক আমার প্রয়োজনে ফোন দিছিলাম আমি ।
– নাহ , কই তুই প্রয়োজনে ফোন দিছিস , তুই ফোন দিছিস জানতে আমি রাতে কয়বার করি , নিজেকে পরিষ্কার কর আগে । আমার তো নিজের কপালকে জুতা দিয়ে মারতে ইচ্ছা করে কোন কু-ক্ষনে তোর সাথে আমার জীবন আমি জড়িয়েছি ।
– খবরদার তুই তুকারী করবা না একদম !
– ভালো কথা কয়টা বলছিস তুই , রিসিভ করার পর নোংরা ভাষায় কথা বলছিস ।
– আমি ডির্ভোস ফাইল করে দিছি , এখন যখন আমার উকিল তোমাকে ফোন দিবে কোর্টে চলে আসবা ।
– বাহ চমৎকার , অসাধারণ ।
– অবশ্যই , আমি বলেছিলাম না হয় ও নয় আমি , ও-কে না ছাড়লে আমি তোমাকেই ছেড়ে দিবো । তুমি থাকো একটা থার্ড ক্লাস গাইয়া মেয়েকে নিয়ে ,
– ভালো থাক ,

ইরফান ফোন টা কেটে দিয়ে ফোন একদম বন্ধ করে দেয় । মেজাজ তার অনেক খারাপ হয়ে যায় । রুবি এত বাজে ভাবে কথা বলবে পারে আদৌ বুঝতে পারে নি সে । সে ভেবেছিল হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফোন দিয়েছে এখন দেখছে এইসবের সম্পূর্ণ উলটা । এক দিক থেকে ভালো হয়েছে । ডির্ভোস হয়ে যাওয়াটাই উত্তম । রোজ রোজ অশান্তির থেকে ডির্ভোসই উত্তম । যে নারী নিজের স্বামীকে হোক সে বিবাহিত হোক তার আরেক স্ত্রী আছে তাকে এত নোংরা কথা বলতে পারে সে নারী যে সেই স্বামীকে ঘুমের মধ্যে জবাই করে দিবে না তার কি গ্যারান্টি আছে ? ইরফান মেজাজ কন্ট্রোল করে রুমে যায় । বেলী তখন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে । ইরফান রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে । দরজা লাগানোর শব্দটা বেশ জোরেই হওয়ায় একটু ঘাবড়ে যায় বেলী । ইরফানের মেজাজ যে ভালো নেই তা বেলীর বুঝতে বাকি নেই । ইরফান বেলীর সাথে কথাও বলছে না তাই অনেক ভেবে নিয়ে ইরফানের সাথে নিজেই কথা বলে ,

– ঘুমাবেন এখন ?
– হ্যাঁ ,
– ওহ ,,,,,,,,,
-,,,,,,,,,,,,,,,,
– কে ফোন দিছিলো , ওই রুমে গেলেন দেখলাম ?
– রুবি ফোন দিছে ,

রুবির নামটা শুনে কলিজায় এক কামড় পড়ে বেলীর । বেলীর মন তখন সাথে সাথে এটাই বলে যে হয়তো এইজন্যই সে তার সাথে কথা বলতেছে না । বেলী আবারও জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকায় ,

– তাহলে কি সে আবারও আমার থেকে দূরে সরে যাবে ? আমায় আর ভালোবাসবে না , আমায় আর তার বুকে নিবে না ? রুবি আপুকি তবে আবার ফিরে আসবে ? আমার কপালে কি তার থেকে পাওনা সুখ এইটুকুই ছিল ?

এইসব কথা গুলো ভাবতে গিয়ে বেলীর গলা ধরে যায় । বুক ফেটে কান্না আসে তার । নিজেকে শক্ত করে নিয়ে সাহস করে আবার ইরফানকে জিজ্ঞেস করে ,

– কি বললেন তিনি ?
– ডির্ভোস ফাইল করছে , যেতে হবে ।

ডির্ভোসের কথা শুনে অনেকটাই অবাক সে । এত সহজেই কি ডির্ভোস দিয়ে দেয়া যায় ।

– আপনি যাবেন ?
– যেতে তো হবেই ,
– এইসবের কি খুব প্রয়োজন ?
– কোন সবের ?
– এইযে ডির্ভোস , আপনারা তো একে অপরকে ভালোবাসতেন , তাহলে এইসব কেন ?
– ভালোবাসাটাই যেখানে নেই সেখানে সম্পর্ক থেকে লাভ কি ?
– আমি বলি কি ? আপনি রুবি আপুর সাথে বসে কথা বলে নিন , তাহলে সব ঠিক হয়ে যেতেও পারে ।

বেলীর কথা শুনে এইবার ইরফান আরও রেগে যায় । চেঁচিয়ে এক ধমক দেয় সে বেলীকে ।

– টেনে এক থাপ্পড় মারবো তোমাকে আমি , চিনো তুমি আমাকে ? অতীত ভুলে গেছো নাকি তুমি , নাকি আবারও মনে করিয়ে দিতে হবে ?

ইরফানের এমন ধমকে বেলীর আত্মাটা কেঁপে ওঠে ।

– জনদরদি হয়েছো নাকি , সতীন বিদায় হলে অন্যরা খুশি হয় তোমার দেখি কলিজা পুড়ে যাচ্ছে । কার সাথে বসে কথা বলবো আমি , হ্যাঁ , কার সাথে ? যার জন্যে তোমার কলিজা পুড়ে সে তোমাকে নিচে নামানোর কোন সুযোগই হাত ছাড়া করে না , এটা কি জানো তুমি ?
-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
– কি , মায়া বেড়ে গেছে নাকি তোমার ? বলো তো বিয়ে আরেকটা করি । আরেক সতীন এনে দেই তোমার সংসারে । তার কলিজা ফেটে যায় একেবারে ।
-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
– এই , নিচে কি দেখো ? আমার দিকে তাকাও , তুমি জানো রুবি ফোন দিয়ে কি নোংরা কথা গুলো বলেছে আমাকে আর তোমাকে নিয়ে ? ওর কথা অনুযায়ী তুমি পাড়ার মেয়ে আর আমি সেই পুরুষ যে পাড়ার মেয়ে নিয়ে শুয়ে আছি , আমি রাতে তোমার সাথে কয়বার করি , দিনে করি নাকি দুপুরে করি এইসব জানতে চায় সে ,
– থামুন ,,,,,,,,
– কেন এখন কেন থামুন বলো , আরেকটু শুনো । তোমার তো কলিজা ফেটে যায় । শুনো তার নোংরা ভাষা যা তোমায় নিয়ে করে সে । শুনো বেলী , ভালো হওয়া ভালো এতটা ভালো হওয়া ভালো না যে ভালো তোমার সর্বনাশ হয়ে দাঁড়ায় । কথাটা মনে রাখবা ।
– শুনেন না ?
– নাহ , আর কিছু শুনতে চাই না । আমার মাথা গরম আছে এখন , কিছু শুনলেই মাথা নষ্ট হবে , হয়তো হাত উঠে যাবে । ঘুমাও তুমি আর না পারলে সতীন বিদায়ের জন্যে কেঁদে কেটে বুক ভাসাও আমার দেখার প্রয়োজন নেই । তবে যা করবা রুমের বাহিরে গিয়ে । রুমে যদি কিছু শুনি , খোদার কসম লাথাতে লাথাতে নিচে ফেলবো । আমার ভালো এবং খারাপ দুই রুপ-ই তোমার জানা । এখন আর কোন কথাই বলবা না তুমি ।

এই বলে ইরফান শুয়ে যায় লাইট অফ করে । বেলী জানালার দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলে ,

– সময় জিনিসটা বড্ড বেশি স্বার্থপর । নিজের মন মতই ঘুরছে সে । কাল অবদি যেই আমি রুবির জায়গায় ছিলাম আর আজ আমার জায়গায় রুবি দাঁড়িয়ে আছে । আল্লাহ পাকের লীলাখেলা কেউ বুঝে আবার কেউ বুঝে না । ভালোবেসে কি লাভ হলো রুবি যখন মানুষটাকেই আর নিজের করে রাখতে পারলেন না ।

.
.

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল পর্ব_২৮

0

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
পর্ব_২৮
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

বন্ধ ঘরে , দুটো শরীর , দুটো আত্মা , দুটো মনের মাঝে খেলা অবিরত । ইরফান বেলীর দিকে তাকিয়ে আছে । বেলীর নজর তখন আকাশের চাঁদের দিকে ।

– একটা কথা বলি ?
– হু , বল
– আকাশের অনেক দয়া মায়া তাই না ?
– মানে ?
– হ্যাঁ , সে তার বুকে হাজারো তারাকে আশ্রয় দেয় , একই বুকে চাঁদকে ঠাই দেয় আবার এই একই বুকে সূর্য হেসে উঠে । আবার কখনো মন খারাপে সে অশ্রু ঝরায় বৃষ্টিরুপে ।
– হ্যাঁ , হয়তো বা
– ওই চাঁদটাকে ঘিরে কত তারাদের ছুটোছুটি ।
– হু ,
– তবে চাঁদের গায়েতেও কলঙ্ক আছে ।
– তুই তো অনেক ভালো বলিস ,
– কলেজে পড়ার সময় বাংলা স্যার পড়াতেন । সেইখান থেকেই শিখা ।
– বেলী,,,,,,,,,,,?
– হু ,
-,,,,,,,,,,,,,,,,,
– কি হলো , নাম ধরে ডেকে চুপ করে গেলেন যে ?
– কিছু না ,
– রুবি আপু আর ফোন দিয়েছিল ?
– নাহ ,
– মানুষটা রাগ করছে অনেক । ফিরিয়ে আনুন তাকে , প্রয়োজনে আমি চলে যাবো ।

বেলীর কথাটা আর সহ্য করতে পারে নি ইরফান । ঝট করেই বেলীর হাত ধরে হ্যাচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে ইরফান । ইরফানের নজর বেলীর দৃষ্টিতে আর বেলী তার শান্ত দৃষ্টি দিয়ে ঘায়েল করছে ইরফানকে ।

– ভুলে গেছিস সে রাতের কথা ?
– কোন রাত ?
– বাহ ভুলে গেলি ?
– মনে পড়ে না ,

” আপনি যখন আমাকে মারবেন আমি কাঁদবো না , একদম কাঁদবো না , শুধু ছাড়তে বলবেন না , সহ্য করতে পারবো না ”
– মনে পড়ে এই কথাটা ?

কথাটা শুনে সেরাতের প্রতিটা কথাই মনে পড়ে যায় বেলীর । সেরাতে বেলীই ইরফানকে বলেছিল না ছাড়তে আর আজ সে বেলীই নিজ থেকে বলে দিল প্রয়োজনে সে চলে যাবে । এখানেই জিদ উঠে ইরফানের ।

– মনে পড়ছে নিশ্চয়ই ,
-,,,,,,,,,,,,,,,,,,
– তোকে ছাড়া আমার পক্ষে সম্ভব না ।
– তাহলে রুবি ,
– জানি না আমি কিচ্ছু জানি না শুধু চাই তুই আমার কাছেই থাকবি । আমার বুকে আমার মনে , সব জায়গাতেই তুই থাকবি ব্যাস ।

এই বলে ইরফানে বেলীকে তার বুকের মাঝে জড়িয়ে নেয় । একদম শক্ত করে যেন চলে যেতে না পারে । ইরফানের শরীরের উষ্ণতায় বেলীর শরীর যেন আরাম খুজে পায় । বেলীরও ইচ্ছা হয় একটু জড়িয়ে নিতে তার বরকে । কিন্ত লজ্জা নামক জিনিসটা কেন জানি তাকে আটকে রাখে । যেতে দেয় না তাইএ ইরফানের কাছে ।

ইরফান বেলীর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । হাত বুলাতে বুলাতে বেলীর কানের কাছে মুখ এনে আস্তে করে কথা বলে ইরফান ,

– বেলী,,,,,,,,,,,?
– হু ,,
– একটা কথা বলি ?
– হু ,,
– একটু সুখের মিলন হলে , খুব বেশি কি ক্ষতি হবে বেলী ?
-,,,,,,,,,,,,,,,,,
– কি হলো বল , খুব বেশিই কি ক্ষতি হবে ?
-,,,,,,,,,,,,,,,,,,
– এই অন্তরটা তোকে খুব ভালোবাসতে চায় রে বেলীফুল । খুব ভালোবাসতে চায়

ইরফানের মুখ থেকে বেলীফুল ডাকটা শুনে বেলীর মনে হয় কে যেন তার কলিজায় পানি ঢেলে দিয়েছে । তার পুড়ে যাওয়া ক্ষতস্থানটা হঠাৎ করেই কেন জানি ভালো হয়ে গেল । ইরফান আবারও বলে ,

– বল না একবার , খুব বেশিই ক্ষতি হবে কি একটু সুখের মিলনে ।
– জানা নাই ,
– জানা নেই , সত্যিই কি জানা নেই ?
-,,,,,,,,,,,,,,,,,
– অনেক জায়গায় বলতে শুনেছি নীরবতা সম্মতির লক্ষণ । আমি কি এই নিরবতাকেই তোর সম্মতি ভেবে নিবো ?

ঠিক তখনই বেলী তার দু’হাতে ইরফানের পিঠটা মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় । নিজেই নিজের হাতের ভাজে চেপে ধরে ইরফানের টি-শার্টটা । ইরফান তখন কিছুই বলেনি । শুধু এক গাল হেসে পরম ভালোবাসায় নিজের মাঝে বেলীকে আঁকড়ে ধরে । আর তার কিছুক্ষণ পরেই ইরফান বেলীকে কোলে তুলে নেয় । বেলীর মুখ যেন লজ্জায় আবৃত এক রাঙা বধূর মুখ লাগছিল । বিছানার কাছে নিয়ে গিয়ে আলতো ভাবেই বেলীকে শুইয়ে দেয় ইরফান । আজ ভালোবাসার সপ্তম আকাশে পদার্পণ করলে ক্ষতি হবে না হয়তো । বেলীর লজ্জা রাঙা মুখ তখন ইরফানকে কাছে চাইছে , খুব করেই কাছে চাইছে । আর ইরফান যেন পলক বিহীন চোখে তাকিয়ে দেখছে তার বেলীফুলকে । আজ দুটো হৃদস্পন্দন না হয় এক হলো । এতে হয়তো ক্ষতি কিছুই হবে না । বড় জোড় নতুন আরেকটা হৃদস্পন্দনের আবির্ভাব ঘটবে । ইরফান বেলীর দিকে অনেকটাই ঝুঁকে যায় । ইরফানের এই ঝুঁকে যাওয়াটাই হয়তো বেলীর সুখের সর্বনাশ ।

অন্ধকার বন্ধ ঘরে দুটো মনের সুখের মিলন ঘটে এই রাতে । আজ রাতে পূর্নিমার চাঁদটাও লজ্জায় তার চোখ জোড়া বন্ধ করে দেয় । দূরে ডাকতে থাকা ডাহুক পাখিটাও আজ একদম চুপচাপ । হয়তো তার মনেও জানান দিয়েছে যে আজ কিছু অপ্রকাশিত ভালোবাসার পূর্ণতা ঘটবে ।

বাহিরে হিম শীতল বাতাস বইছে । পরিবেশটা একদম নিস্তব্ধ । আজ না আছে বেলীর মুখে কথা না আছে ইরফানের মুখে কথা । শুধু আছে ঘন ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ আর কিছু সুখের আর্তনাদ । দু’জোড়া হাত যেন আজ মিলেমিশে একাকার । এ যেন এক স্বর্গীয় সুখ ।

পরদিন ,

ভোরের দিকে বেলীর ঘুম ভেঙে যায় । নিজেকে ইরফানের সঙ্গে লেপ্টানো অবস্থস্য আবিষ্কার তার । কাল রাতে ঘটে যাওয়া সুখের মিলনটাই হয়তো আজকে ভোরের লেপ্টে থাকার স্বাক্ষী । ইরফানের শরীরের সাথে নিজের শরীরটা এইভাবে দেখে লজ্জার শ্রেষ্ঠ চূড়ায় অবস্থান করছে বেলীর মন । অবশেষে তাহলে সুখের মিলনটা তাহলে হয়েই গেল । অপ্রকাশিত ভালোবাসাটা অবশেষে প্রকাশিত ভালোবাসার পবিত্রতার ডোরে বাঁধা পড়েই গেল ।
বেলী আস্তে করে ইরফানের পাশ থেকে উঠে যায় । ওয়াসরুমে গিয়ে নিজেকে আয়নায় পর্যবেক্ষণ করে বেলী । শরীরের কিছু কিছু অংশে যেমন ঘাড়ে , হাতে লাল হয়ে আছে । হঠাৎ করেই বাম হাতের কব্জায় নজর দেয় বেলী । সেখানে পুরো ৪ টা আঙুলের ছাপ পড়ে আছে । লাল হয়ে আছে হাতের কব্জিটা । হাতটা দেখে অনায়াসেই হেসে দেয় বেলী । চোখের পানি গুলো টপ টপ করে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে । চোখের এই পানি গুলো হয়তো বেলীর সমস্ত কষ্টের সমাপ্তির স্বাক্ষী হয়েছে আজ ।
ঝরনা ছেড়ে নিজেকে ধুয়ে নেয় বেলী । প্রায় এক ঘন্টা সময় নিয়ে শাওয়ার নেয় বেলী । ওযু করে একেবারেই বের হয়ে যায় বেলী । ইরফান তখনও ঘুমে কাতর । বেলী পশ্চিম-মুখী হয়ে জায়নামাজে দাঁড়ায় । ফজর নামাজ আদায় করে আজ কোরআন কালীম নিয়ে বসে । ইরফানের ঘুমের যাতে ক্ষতি না হয় তাই গুন গুন করে আস্তে আস্তে কোরআন কালীমের পুরো এক পারা এক বসায় শেষ করে মোনাজাত ধরে বেলী ।

– রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আযাবান্নার – হে মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বোত্তম কল্যাণ দান করো এবং আগুনের আযাব হতে আমাদের রক্ষা করো । আল্লাহ পাক তুমিই একমাত্র বুঝো আমার অন্তরে কি চলে । মানুষটাকে আমি ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি । তাকে ছেড়ে যেতে পারব না । তার দূরত্বটা আমায় বার বার কষ্ট দেয় । আমি চাইনা আর এই দূরত্বটা বাড়ুক । আমি এটাও চাই না যে রুবি আপু কষ্ট পাক । কারণ আমি কারো অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে পারবো না । তাই তুমি এমন কিছু করো যাতে সেও কষ্ট না পায় । আল্লাহ পাক তুমি সবাইকে ভালো রাখো সাথে আমাকেও ভালো রাখো । আমার তুমি ছাড়া কেউ নেই আল্লাহ ।

মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজ ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় বেলী । ওড়নার ভাজ খুলে ভেজা চুল গুলো খুলে দেয় বেলী । চারদিকে ফর্সা হয়ে গেছে । আলো ফুটে গেছে । প্রকৃতি আবার আরেকটি নতুন সকাল উপহার দিল মানবজাতিকে । জানালার পাশে দাঁড়িয়ে উপরে আকাশে নজর দেয় বেলী । আজ বেলী বুঝেছে ভেজা চুলে কতটা ভালোবাসা জড়ানো থাকে ।

আজ ইরফানের অফিস আছে । নিজের হাতে সব নাস্তা বানিয়ে টেবিল সাজিয়ে দেয় বেলী । মিনু রান্নাঘরের বাকি কাজ গুলো করছে । ইরফান রুম থেকে বেলীকে ডাকতে থাকে ,

– বেলী ,,,,, এই বেলী,,,,,,?

ইরফানের ডাক শুনে বেলী হাতের কাজ ফেলেই রুমে দৌড়ে যায় বেলী ।

– জ্বি ,
– কই থাকো ?
– টেবিলে নাস্তা দিলাম ।
– এইদিকে আসো আমার সামনে ।

ইরফানের কথায় বেলী তার সামনে দাঁড়ায় । বেলীর নজর নিচের দিকে । ইরফান কিছুক্ষন বেলীর দিকে তাকিয়ে থাকে । তারপর কি যেন ভেবে বেলীর ওড়নার নিচে তার দু’হাত ঢুকিয়ে দেয় । আচমকা এইভাবে হাত দেয়ায় বেলী একটু ঘাবড়ে যায় । পরক্ষনেই বুঝতে পারে ইরফান তার গলায় কিছু একটা পরাচ্ছে । তখনই বেলী ওড়নার ভাজ খুলে দেয় । তারপর যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারে নি সে । তার গলায় ততক্ষণে একটা স্বর্নের চেইন উঠে গেছে । বেলী ইরফানের দিকে অবাক নয়নে তাকায় । তখন ইরফান বেলীর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে ,

– এটা আমার পক্ষ থেকে তোমাকে দেয়া প্রথম স্বর্ন ।
– এইসবের কি প্রয়োজন ছিল ?
– সব কিছুতে প্রয়োজন খুজতে নেই । কিছুটা ভালোবাসাও থাকে । বুঝলেন ম্যাডাম ,
– হু ,
– দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার । খেতে দেও , আমি অফিসে যাবো ।
– দেয়া আছে সব আপনি আসুন ।

সুখের মুহুর্ত গুলো কেন যেন খুব দ্রুতই পাড় হয়ে যায় । হয়তো দুঃখের সময় গুলোই পাড় হতে চায় না । এ যেন সুখ দুঃখের এক অসাধারণ মেলবন্ধন । বেলী যেন তার সুখ গুলোকে দু’হাতে কুড়িয়ে নিচ্ছে আর ইরফান যেন তার ভাগের সুখ গুলো বেলীর মাঝে বিলীন করে দিচ্ছে । এই সুখটুকু খুব করে পেতে চায় । যাতে পরে হারিয়ে গেলেও আর আফসোস না থেকে যায় ।

.
.

চলবে……………………

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল পর্ব_২৭

0

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
পর্ব_২৭
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

সন্ধ্যার পর রাত প্রায় ৮ টা নাগাদ ইরফান আর বেলী বাসায় ফিরে । মিনু তখন স্টার জলসা নিয়ে বসে আছে । মিনু তাদের দেখে কথা বলা শুরু করে দেয় ।

– আইয়া ফরছেন ?
– হু ,
– এত তাড়াতাড়ি ?
– কি করবো তাহলে , ঘুরাঘুরি শেষ আর থেকে কি করবো ?
– খাইয়া আইতেন ?
– তোমার ভাই খাবার নিয়ে আসছে , আমরা এক সাথেই খাবো ।
– ওহ আইচ্ছা ,

ইরফান আগেই রুমে চলে গেছে । বেলী মিনুর সাথে কথা বলার পরেই রুমে যায় । বেলী রুমে গিয়ে দেখে ইরফান শার্টের বোতাম খুলছে । এটা দেখে বেলী বের হয়ে যেতে নেয় ওমনি ইরফান ডেকে দাড় করায় বেলীকে ,

– বেলী দাড়াও ,
– হু ,
– কি হয়েছে চলে যাচ্ছো যে ,
– নাহ আসলে এসেছিলাম কাপড় বদলাতে এখন দেখলাম আপনি বদলাচ্ছেন ।
– তাতে কি হয়েছে , আমি কাপড় বদলাবো বলে তুমি চলে যাবা ?
– নাহ ঠিক আছে , সমস্যা নাই ।
– আচ্ছা শুনো একটু ,
– হু ,
– শাড়িটা পরে থাকো ,
– রাতের বেলাতেও ?
– হ্যাঁ , আজ তোমার গলায় গান শুনবো ।
-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
– কিছু বললে না যে ,
-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
– আচ্ছা বাদ দেও , তা বলো কেমন লাগলো আজকে ঘুরতে বেরিয়ে ।
– ভালো ,
– তুমি যে এত ঝাল দিয়ে ফুচকা খাও , আগে তো বলো নাই ।
– আমি ফুচকায় ঝাল একটু বেশিই খাই ?
– তাই ?
– হু ,
– আমার তো নাকে পানি চলে আসছে ।
– ওহ , আচ্ছা আমি একটু রান্না ঘরে যাই , কেমন ?
– হু ,

বেলী চলে যাওয়ার পর আয়নায় নিজেকে দেখতে থাকে ইরফান । কিছুক্ষণ ভালো করে তাকায় নিজের দিকে সে । তারপর ভাবতে থাকে কিছু কথা ।

– কতটা পরিবর্তিত আমি , এই আমি নিজেকে এখন অনেকটাই অচেনা লাগে । কি আমি কি হয়ে গেলাম আর আগেই বা কি ছিলাম । বেলী যে কিনা অসহায় অবস্থায় আমার জীবনে এসেছিল আর আমি তাকে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দিয়েছি । মুখ ফুটে কখনো কিছুই বলেনি মেয়েটা । শুধু সহ্য করে গেছে আমার অত্যাচার গুলো । আজ নিজের কাছে নিজেকে অনেকটা নড়পশুর মত মনে হয় । জীবনটাকে নিজের হাতে ধরে দু’মুখো করে দিলাম । আজ বেলী আমার সাথে ঠিকমত কথা বলে না হয়তো আমায় দেখলে তার সেই অসহ্য মুহুর্ত গুলোর স্মৃতি মনে পড়ে যায় । একটা মানুষের পক্ষে কতটা সম্ভব এইভাবে সব কিছু সহ্য করে পড়ে থাকাটা । কেন জানি মনে হয় বেলী একটাই হয় যে ফুল হয়ে ফোঁটে অন্যকে সুবাস ছড়িয়ে দিতে ।

কথা গুলো অনুধাবন করতে থাকা ইরফানের চোখ দিয়ে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে যায় । জীবনটা আসলেই বৈচিত্র্যময় , এখানে জীবন ক্ষনে ক্ষনে রূপ বদলায় । এরই মাঝে বেলীর ডাকে ধ্যান ভেঙে যায় ইরফানের ।

– হু , কিছু বলবে ?
– ৫ বার ডাক দিলাম , যেইভাবে দেখে গেছিলাম এখন ২৫ মিনিট পর সেইভাবেই দেখছি আপনাকে । কি করছেন এখানে দাঁড়িয়ে ?

বাহ বাহ ২৫ মিনিট হয়ে গেছে , অথচ ইরফানের খেয়ালই ছিল না । বেলীর দিকে তাকিয়ে আছে ইরফান । বেলীর শান্ত চোখের দৃষ্টি ইরফানের মনে ঝড় তুলে দেয় । মুচকি হেসে দিয়ে হাতের ইশারায় বেলীকে নিজের কাছে ডাকে ইরফান । বেলীও ধীর পায়ে ইরফানের দিকে এগিয়ে যায় । আলতো করে বেলীর হাতটা ধরে ইরফান । নিজের একদম কাছে নিয়ে যায় সে বেলীকে । জানালার পাশে নিয়ে গিয়ে দাড় করায় ।
বেলীকে জানালার সামনে দাড় করিয়ে নিজের বুকে বেলীর পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায় ইরফান । ইরফানের স্পর্শে ভেতরটা ভেঙে চূড়ে যাচ্ছিল বেলীর । এ যেনো এক স্বর্গীয় সুখ । যেখানে প্রিয় মানুষটার স্পর্শ পাওয়া যায় । ভালোলাগা হয়তো এটাই , আর এটাকেই হয়তো ভালোবাসা বলে ।
বেলীর কোমড়ের দু’পাশ দিয়ে নিজের হাত রাখে ইরফান । ছোয়া গুলো মায়াবী হলেও নোংরামি ছিল না কিছুতেই । এ যেনো এক প্রকার স্পর্শকাতর ভালোবাসা । বেলীর ঘাড়ে নিজের থুতনি লাগিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ইরফান ।

– বেলী ,
– হু ,
– এত চুপ থাকিস কেন ?

প্রায় বেশ কিছুদিন পর ইরফানের মুখ থেকে তুই শব্দটা শুনে বুকের মাঝে ঝট করেই কামড় দিয়ে উঠে বেলীর । সাথে এক রকম শান্তিও আসে মনে । আত্মাটা তার শুকিয়ে ছিল সেই তৃষ্ণার্ত আত্মায় কে যেন পানি ঢেলে দিয়েছে মনে হলো । পরম অনুভবে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয় বেলী ।

– আমায় একটা কথার উত্তর দিবি ?
-,,,,,,,,,,,,,,,,
– কিরে বল না , দিবি ?
– হু ,
– তুই এমন কেন বেলী ? কেন তুই পাল্টাতে পারিস না ? ঘেন্না লাগে না আমার প্রতি ।
– বেলী কখনো পালটায় না । আর ঘেন্না করবো কাকে ? আপনাকে ? তাহলে তো আমি নিজেকেই ঘেন্না করতে পারি ।
– তোকে কেন জানি বুঝতে পারি না আমি ?
– কেন জানি আপনাকে চিনতে পারি না আমি ?
– কেন জানি তুই আমার হৃদয়ে মিশে গেছিস ?
– কেন জানি আপনি আমার অন্তরে আটকে গেছেন ?
– অনেক কষ্ট দিয়েছি তোকে তাই না রে ?
– হয়তো ভাগ্যে ছিল ,
– আমায় ছেড়ে কোথাও যাবি না তো ?
– জানা নেই , তবে মৃত্যু এলে আটকাতে পারবো না ।
– রাগটা দেখাস না ঠিকই কিন্তু অভিমানটা ঠিকই রয়ে গেছে ।
– না আছে রাগ , না আছে অভিমান , যদি কিছু থাকে তাহলে তা হচ্ছে নিরবতা ,
– আর সেই নিরবতায় কে বিরাজমান ?
– যে আমার সব চেয়ে কাছে , যার মাঝে আমার অস্তিত্বের জানান হয় ।

বেলীর কথায় ইরফানের অশান্ত মনটা শান্ত হয় নিমিষেই । বেলীর কোমড়ে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে ইরফান ।

– চলেন , খাবেন না ?
– পালিয়ে যেতে চাইছিস ?
– পালাবো কেন , আমি তো এখানেই আছি , আসুন খাবেন আসুন ।

বেলী একটু নড়েচড়ে উঠে , ইরফান বেশ বুঝতে পারে যে তার কাছে থাকতে বেলী আন-কমফোর্ট ফিল করছে । তাই ইরফানও বেলীকে ছেড়ে দেয় ইরফান ।

খাওয়া দাওয়ার পর ইরফান রুমে এসে বসে বসে মোবাইল টিপছে । রুবিকে অনলাইনে দেখে মনটা কড়া নেড়ে ওঠে ইরফানের । একবার নক করবে কি করবে না ভাবছে সে । রুবিও হয়তো ইরফানকে অনলাইনে দেখেছে কিন্তু কোন ম্যাসেজ করে নি ।

– আফসোস লাগে নিজের প্রতি , কেন যেনো এলোমেলো হয়ে গেছে আমার জীবনটা । এখনও জানা নেই রুবির ডিসিশন কি হবে । তবে যাই হোক বেলীকে আমি ছাড়তে পারবো না । বেলীতে মত্ত্ব আমি , সে আমার হৃদয় মন্দিরে আটকে আছে । ভালোবাসি তাকে ভিষণ ।

এরই মাঝে বেলীর প্রবেশ ঘটে রুমে । বেলী ইরফানকে খাটে আধো শোয়া অবস্থায় থাকতে দেখে দরজা লাগিয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় । কিছুক্ষণ জানালা দিয়ে আকাশে ওঠা চাঁদের পাণে নজর রাখে বেলী ।
ইরফান মোবাইল টিপতে টিপতে হঠাৎ করেই তার কানে আসে ,

তুই ফেলে এসেছিস কারে মন ,
মন মন রে আমার ,
তাই জনম গেলো শান্তি পেলি না রে
মন মন রে আমার ,

ইরফান শোয়া থেকে উঠে বসে যায় । বেলীর কন্ঠে এই প্রথম ইরফান গান শুনছে । অসাধারণ কন্ঠে গান গাইছে বেলী । ইরফান হেটে গিয়ে বেলীর পাশে দাঁড়ায় । বেলী তখনও জানালার গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে গান গাইছে ।

যে পথ ধরে এসেছিলি ,
সে পথ এখন গেলি ভুলে ,
কেমন করে ফিরবি তাহার দ্বারে মন ,
মন মন রে আমার

ইরফান মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে বেলীর মুখের দিকে । বেলীর কন্ঠে তখন গান আর চোখের কোণে তখন অশ্রুর ঢল । গাইতে গাইতেচেক সময় শেষ হয়ে যায় গানটা । ইরফানের তখন হুশ হয় যে গান শেষ ।

– অনেক সুন্দর গাইলি ,
– মন বড়ই অবুঝ , বুঝেও বুঝে না । ফেলে আসা মানুষটা আজও বুঝলো না , মন তো মন-ই । এক অস্পর্শনীয় অনুভূতি।।

.
.

চলবে…………….

[ আসসালামু আলাইকুম , জানি ছোট হয়ে গেছে । কাল বড় করে দিবো । আর দুঃখিত দেরি হয়ে গেলো ]

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল পর্ব_২৬

0

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
পর্ব_২৬
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

সকাল বেলা বেলীর ঘুম ভেঙে যায় ইরফানের আগেই । কেন জানি বেলীর কানে ফজর নামাজের আযান পৌঁছে যায় প্রায় প্রতিদিনই । আর আযান কানে যাওয়া মাত্র সে আর ঘুমাতে পারে না , না পারে শুয়ে থাকতে । তখন তাকে উঠতেই হবে আর নামাজও পড়তেই হবে ।

চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে গতকাল রাতে ইরফান তাকে যেইভাবে শুইয়ে দিয়েছিল সেইভাবেই ঘুমিয়েছিল সে । ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকায় বেলী । তখন দেখে ইরফানও তার দিকে ফিরেই কাত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে । ইরফানের মাথাটা তার হাতের উপর , বালিশেও নেই মাথাটা আর ডান হাতটা বেলীর পেটে দেয়া । বেলীকে বাচ্চাদের মত আগলে ধরে ঘুমিয়ে আছে সে । ওর যতটুকু মনে আছে গতকাল রাতে লাষ্ট যখন ওদের কথা হয় তখন বেলীর মন বলছিল ,

” সময়টা থেমে থাক , মুহুর্তটা থমকে যাক । আমার আর তার মাঝে ভালোবাসার বাঁধনটা এভাবেই আটকে থাক ”

হয়তো ওই ভাবনার মাঝেই বেলীর চোখ লেগে যায় । বেলী তাকিয়ে আছে ইরফানের দিকে । অনেকটা ছোট মানুষের মত লাগছিল তার বরটাকে । হয়তো তার ঘুমিয়ে যাওয়াটা খুব ভালো ভাবেই পর্যবেক্ষণ করেছে । আর তার ঘুমিয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে সেও হয়তো ঘুমিয়ে গেছে ওইভাবেই । বেলীর নিজের শরীরকে অনেকটা হালকা লাগছিল । তারমানে ইরফান এমন কিছুই করে নি যা সে ভাবছে । একটা হালকা নিঃশ্বাস ফেলে আবারও ইরফানের দিকে তাকায় সে । নিজের হাতটা ইরফানের মাথার কাছে নেয় বেলী । অনেকটা সংকোচ নিয়েই হাতটা এগিয়ে নেয় সে তার বরের মাথার দিকে । গতকাল রাতে তার কপালে একে দেরা ইরফানের ভালোবাসার পরশগুলো বার বার সিউরে দিচ্ছিলো বেলীর শরীরটাকে । বেলী হয়তো এত ভালোবাসা এই প্রথম পেলো ইরফানের কাছ থেকে ।
ইরফানকে এখন অচেনা লাগে তার , একদম অচেনা লাগে । হয়তো মেয়েরা এইরকম স্বামীই আশা করে । যে এইভাবে শরীরকে নয় মনকে ভালোবাসে । ইরফানের মাথার চুলগুলো বেশ ভারী অনেকটা তার মত । নিজের হাতটা দিয়ে হালকা করে আলতোভাবে ছুইয়ে দেয় ইরফানের চুলগুলো । তারপর কি যেনো ভেবে হালকা মুচকি হাসি দেয় ইরফানের দিকে তাকায় বেলী । ইরফানের হাতটা নিজের পেটের উপর থেকে সরিয়ে নেয় বেলী । তারপর আস্তে করে উঠে যায় বেলী ।
ওযু করে নামাজ শেষ করে কতক্ষণ জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে সে । আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফুটে উঠছে চারদিকে । কয়েক জোড়া পাখি আকাশে ডানা ঝাপটা দিয়ে উড়ে যাচ্ছে । প্রকৃতি কত সুন্দর করে তার সু-নিপূন হাতে একটা দৃশ্য একে দিয়েছে । আজকে শরীরটা তার অনেক হালকা লাগছে । কিসের জন্য এমন লাগছে সে বলতে পারছে না । তবে ভার নেই শরীরে । জানালার দিক থেকে ঘাড় ফিরিয়ে ইরফানের দিকে নজর দেয় বেলী । ইরফান তখনও ঠিক সেই ভাবেই ঘুমাচ্ছিল ।

– ঘুমন্ত মানুষটাকে খুব একটা খারাপ লাগে না । আবার জাগ্রত মানুষটার মাঝে হুশ থাকে না । উনিই জানি কেমন ধরনের পুরুষ ।

ইদানিং বেলীর চিন্তা চেতনায় তার মনের মানুষটার পদচারনা রীতিমতো অনেকটা বেড়ে গেছে । জানালার পাশ থেকে সরে গিয়ে খাটে শুয়ে যায় সে । মুখ তার ইরফানের দিকে ।

– মানুষটা কেন জানি আমায় তার আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে ধিরে ধিরে । তার উঠা বসা আগের থেকেই এমন কিন্তু তার চোখে তাকানোর দৃষ্টিভঙ্গিতে অনেক পরিবর্তন । যা আমায় শেষ করে দিতে বাধ্য ।

বিছানায় শুয়ে বেলী ইরাফানের দিকে তাকিয়ে এইসব চিন্তা করতে করতে তার চোখে ঘুমের ঢল নামতে শুরু করে । আজ শুক্রবার তারও অফডে । তাই রান্নার বাড়তি এত চাপ নেই । মিনুটাও হয়তো এখনও ঘুমাচ্ছে । তাই বেলীও এই সুযোগে একটু ঘুমিয়ে নিলে পারে । সব কিছু ভেবেই ঘুমিয়ে যায় সে ।

দুপুরের দিকে খাওয়া দাওয়ার পর পরই ইরফান বেলীর কাছে আসে । আজ দুইদিন যাবত বেলীর রুমেই থাকে ইরফান । বেলী তখন নিজের একটা জামা গোছাচ্ছিল । ইরফান তখনই আসে রুমে ।
গতকাল রাতের পর ইরফানের সামনে থাকাটা বেলীর কাছে রীতিমত যুদ্ধের মত মনে হয় । মুহুর্তগুলো বার বার বেলীর মনকে নাড়িয়ে দেয় । বেলীর শরীরে লাগা ইরফানের এক একটা ছোয়া বেলীর অন্তরকে শীতল করে দেয় । সেই শীতলতার মাঝে বেলীর স্নিগ্ধ অঙ্গ দহনের ন্যায় জ্বলে ওঠে অবিরত । ইরফানকে আড় চোখে দেখে বেলী । ইরফান তখন বেলীর একটু কাছে এসে বেলীকে বলে ,

– বেলী,,,,,,,,,,,,,,,?
– জ্বি ,
– আমরা আরেকটু পরেই বের হবো , কেমন ?
– কিন্তু যাবো কোথায় ?
– আমি যেখানে নিয়ে যাবো , সেখানেই যাবে ।
– আচ্ছা ,
– বোরখা পরবে না , শাড়িটা পরো । আর আজ হিজাব পরো না খোঁপা করো ।
– কিন্তু এইভাবে আমি বের হওয়াটা পছন্দ করি না ।
– একটা দিন , এরপর আর বলবো না ।
– আচ্ছা পরবো ।
– আমি বের হচ্ছি একটু , তুমি আস্তে আস্তে রেডি হও কেমন ।
– হু ,

ইরফান ওয়ালেট নিয়ে বেরিয়ে যায় । বেলী এইদিক দিয়ে সব গুছিয়ে নিয়ে হাত মুখ ধুয়ে হালকা ফ্রেশ হয়ে নেয় । ড্রয়ার থেকে ইরফানের দেয়া শাড়ির প্যাকেটটা বের করে সে । প্যাকেট থেকে শাড়িটা বের করে বেলী । শাড়িটা বের করে বেলী অনেক্ষন তাকিয়ে থাকে শাড়িটার দিকে । শাড়িটা একদম সাদা । পুরো সাদা , সাদা শাড়ির জমিনে সাদা সুতোর হালকা কাজ করা । এত সুন্দর শাড়ি এর আগে বেলী দেখে নি । হ্যাঁ লাষ্ট বার দেখেছিল ওদের কলেজে ।

– অর্নাসের আপুদের নবীনবরণের সময় একটা আপুকে এমন একটা শাড়ি পরে আসতে দেখছিলাম । কিন্তু এখন আমার শাড়িটা তার শাড়ির থেকেও অনেক সুন্দর । অনেক বেশিই সুন্দর । কত শখ ছিল এমন একটা শাড়ির ।

তার মনে মনে খুব শখ ছিল এমন একটা শাড়ি পরবে সে । আজ মনের আশাটাও পূরণ হলো । খুব খুশি সে আজ । কিন্তু সমস্যা ছিল সে শাড়ি ততটা ভালো মত পরতে পারে না আর মিনুও পারে না শাড়ি পরাতে । তাই নিজে নিজেই চেষ্টা করবে শাড়ি পরার । ইরফান বাসায় নেই এই সুযোগে জামা পালটে ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে নেয় সে । শাড়ি সাদা বলে ব্লাউজ কালো রঙের পরে বেলী । কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর অতি কষ্টে শাড়িতে প্রথম পেচ দেয় বেলী । তারপর আঁচল বের করে । এইবার পালা কুচির , মিনুকে কয়েকবার ডাকার পরেও মিনুর সাড়া পায়নি বেলী । ভেবেছে হয়তো মিনু খেয়ে দেয়ে ঘুম দিয়েছে । বেলী নিজে নিজে চেষ্টা করে কুচি ধরার , ধরেও ফেলে কিন্তু শাড়ির নিচের দিকের কুচিটা ধরবে কে ?

এরই মাঝে ইরফানও চলে আসে । বেলীকে সাদা শাড়িতে মাশা-আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছিল । বেলী কিন্তু ততটা সুন্দর না আবার ততটা দেখতেও খারাপ না । সুন্দর না বলতে বেলী একদম ফর্সা নয় তবে বেলীর মনটা অনেক ফর্সা । ইরফান দেখছিল বেলী শাড়ি ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিচের কুচি ঠিক করছে । নিচু হয়ে ঝুকে একবার ঠিক হলে বারবার বিগড়ে যাচ্ছে তার শাড়ি । তাই ইরফান সামনে গিয়ে দাঁড়ায় বেলীর ।

– আমি ধরি ?
– আপনি কি পারেন ধরতে ?
– তুমি তো কতই পারলা , পারতে পারতে উল্টে দিছো । দেখলাম তো ৫ মিনিট যাবত ।

ইরফানের এমন কথায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে বেলী । তারপর ইরফান নিচে বসে বেলীর শাড়ির কুচিগুলো ঠিক করে দেয় । প্রায় ১০ মিনিট পর বেলী শাড়িটাকে ঠিকঠাক মত পরে । তখন ইরফান বেলীর হাতে আরেকটা প্যাকেট ধরিয়ে দেয় ।

– এটা নেও ,
– কি এটা ?
– তোমার বেলীফুলের মালা ।
– আনছেন ?
– হু ,

প্যাকেট খুলে আগে বেলী বেলীফুলের ঘ্রাণ নেয় । বেলীফুলের ঘ্রাণটা বেলীকে অনেকটা মাতাল করে দিচ্ছিল । কারণ তার সব ফুলের মাঝে সব থেকে বেশী এই বেলীফুলকেই বেশি ভালো লাগে । নাকের কাছে নিয়ে বার বার ঘ্রাণ নিতে থাকে বেলী । দুচোখ বন্ধ করে বেলীফুলের ঘ্রাণ নিচ্ছিল বেলী আর ঠিক তখনই ইরফান বলে ওঠে ,

– নাকের কাছে নিয়ে এইভাবে ঘ্রাণ নিতে থাকলে ফুল শুকিয়ে যাবে ।
– হ্যাঁ , আপনারে তো বলছে ।
– খোঁপায় দেয়ার জন্যে দুই লেয়ার করে মালা এনেছি । গোল করে পরো

বেলী প্যাকেটে আরও কিছু জিনিস দেখতে পায় । সেখানে ৪ ডজন সাদা চুড়ি আছে । বেলী চুড়িগুলো দেখে আরও অবাক হয়ে যায় । তবে এমনিতেও বেলীর চুড়ি খুব পছন্দের । বিশেষ করে কাচের রেশমি চুড়ি । আর আজ ইরফান তার জন্যে চুড়িও নিয়ে এসেছে । ইরফান বেলীর মুখ দেখেই বুঝে গেছে বেলী খুব খুশি হয়েছে ।

– পছন্দ হয়েছে ?
– হু , অনেক সুন্দর ।
– আচ্ছা তাড়াতাড়ি করো , বের হতে হবে তো ।

বেলী তখন চুলগুলোকে সুন্দর করে গুছিয়ে নিয়ে খোঁপা করে নেয় । খোঁপার উপর বেলীফুলের মালাটা টাইট করে বেঁধে দেয় বেলী । তারপর হাতে চুড়ি গুলোও পরে নেয় । বেলী তেমন আহামরি সাজগোজ করে না । সাজ বলতে সে বুঝে হালকা স্নো পাউডার আর চোখে কালো কাজল দেয়া এবং ঠোঁটে হালকা লিপষ্টিক । ব্যাস এতেই তার সাজ সম্পন্ন হয়ে আর এই সাজেই সে থাকতে বেশী পছন্দ করে ।
বেলী আয়নায় নিজের দেখছে । বেলীর পুরো সাজ যেন আরও অধিক সুন্দর লাগছিল তার খোঁপার জন্যে । আর খোঁপায় থাকা ওই সাদা পবিত্র বেলীফুলের মালাটা যেন তার সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ করে তুলেছে । অন্যদিকে ইরফান খাটে বসে থেকে বেলীকে আয়নায় দেখছিল । শাড়িটা একদম তার শরীরের সাথে লেগে আছে । আর সব মিলিয়ে বেলীকে যেন সদ্য কুড়ি থেকে ফোঁটা এক স্বচ্ছ সাদা বেলীফুল লাগছিল ।

ইরাফকেও আজ অনেক ভালো লাগছিল দেখতে । কালো জিন্স সাদা শার্ট তাও ইন করে পরেছে সে । অনেকটা বেলীর সাথে মেচিং করে । বেলী মুগ্ধ নয়নে ইরফানকে দেখতে থাকে । ইরফানও রেডি , ইরফানকে দেখতেও সেই রকম হ্যান্ডসাম লাগছিল ফুল হাতা শার্ট কিন্তু হাতা ফোল্ড করা । ইরফান বরাবরই এইভাবে শার্ট পরে । রেডি হতে হতে প্রায় ৪ টা ২০ বেজে গেছে ।

– বেলী এখন না বের হলে কিন্তু দেরি হয়ে যাবে ।
– আমি তো রেডি ।
– তাহলে চলো ,
– মিনুকে বলে যাবো না ?
– জাগাও তাকে ।

বেলী মিনুর কাছে গিয়ে মিনুকে ডেকে উঠায় । মিনু চোখ ডলতে ডলতে বেলীর দিকে তাকিয়ে থাকে । বেলীকে এইভাবে দেখে সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় ।

– কি গো আইজ্জা এমন শাড়ি ফরছেন কিত্তে ।
– উঠো একটু ,
– খাড়ান , মাতার ভিত্রে কি দিছেন , ও মাগো ফুল লাগাইছেন মনে অয় ।
– হু ,
– ভাইয়ে আনছে ?
– হু ,
– তা এইরাম কইরা সাইজা গুইজা যাইতাছেন কই ?
– একটু ওনার সাথে বের হবো , তুমি উঠো দরজা লাগাও ।
– হ হ , এহন তো সময় । বেক্কেই ঘুত্তে যায় ,
– তুমিও যেতে চাও ? তাহলে চলো ।
– থাউক থাউক আমার এমন খুশিতে ঠেলায় ঘোত্তে মন ছায় না ।
– কিসব যে বলো তুমি , তুমি জানো আর তোমার আল্লাহ জানে । আসো দরজা লাগাও ।
– হ চলেন ,

ইরফান আর বেলীকে বিদায় দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় মিনু ।

– আল্লাহ পাক বহুত কষ্ট দিছেন আপনে ভাবীরে । সেতির মত মাইয়া খুব কমই আছে আল্লাহ পাক । তারে আর কষ্ট দিয়েন না । তার ভাগের সবখান সুখ তারে দেন আল্লাহ পাক ।

বেলীকে নিয়ে রিক্সায় উঠে ইরফান । বেলীর রিক্সায় চড়ে নাকি ঘুরতে অনেক ভালো লাগে । সেইদিন মিনুকে বলছিল আর পিছন থেকে ইরফান শুনে নেয় । হঠাৎ করেই রুবির কথা মনে পড়ে যায় তার । রুবি যতবারই তার সাথে বের হয়েছিল ততবারই তাকে কথা শুনাতো । রুবি রিক্সায় চড়তে পারে না । তার ভালো লাগে না । ইরফান কেন গাড়ি কিনে না । এইসব বলে বলে ইরফানকে ছোট করতো সব সময় সে । কিন্তু এখানে পরিস্থিতি বিপরীত ।

– ওই এক নারী আর এই আরেক নারী । কত পার্থক্য এদের মাঝে ।

ইরফানের মন তখন এই কথাটাই বলছিল । তারপর সে বেলীকে জিজ্ঞেস করে ,

– কোথায় যেতে চাও বেলী ?
– আমি তো এইখানের কিছুই চিনি না ।
– এখানে অনেক বড় বড় শপিং সেন্টার আছে , মুভি হল আছে । ভালো ভালো অর্নামেন্টের দোকান আছে । বলো কোথায় যেতে চাও ?
– এখানে কোথাও নিরিবিলি জায়গা নেই যেখানে বসে শান্ত মনে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকা যায় ।

ইরফান ইচ্ছে করেই ওইসব জায়গার নাম বলেছে বেলীকে কারণ সে দেখতে চেয়েছিল বেলী কি বলে । কারণ এর আগে যখনই রুবিকে নিয়ে বের হতো তখনই রুবি হয় যমুনা ফিউচার পার্ক নয়তো বসুন্ধরা সিটিতেই যেতো । দামী দামী গয়নার দোকান কিংবা রেস্টুরেন্ট না হলে ওর চলতো না । কিন্তু এখানে সম্পূর্ণ উল্টো , এখানে বেলীর যাওয়ার জায়গাটা একদম অন্যরকম । ইরফান রিক্সায় বসা অবস্থাতেও বেলীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে । তখন বেলী বলে ,

– আছে এমন জায়গা , সেখানে দু’দন্ড বসলে মনে শান্তি আসবে ।
– যেতে চাও সেখানে ?
– হ্যাঁ ,

ইরফান বেলীর কথায় রিক্সাওয়ালাকে একটা জায়গার নাম বলে দেয় । আর রিক্সাওয়ালাও ইরফানের বলা সেই গন্তব্যের দিকে চলে যায় । প্রায় ২০ মিনিট পর ইরফান বেলীকে নিয়ে সেখানে পৌঁছায় । বেলী চারপাশের পরিবেশটা দেখছে । দেখে মনে হচ্ছে একটা পার্ক । এক পাশে একটা ঝিল আছে । জায়গায় জায়গায় বসার বেঞ্চ রাখা হয়েছে । ইরফান বেলীকে নিয়ে ঝিলের পাশে একটা বেঞ্চের কাছে যায়।

– বসো এখানে ,
– হু ,
– জায়গাটা অনেকটা শান্ত আর নিরিবিলি জায়গা ।
– হু ,
– অনেক ভালো লাগে আমার কাছে এই জায়গাটা ।
– ওহ ,
– লাষ্ট কবে এসেছিলাম মনে নেই , আর আজ তোমায় নিয়ে এলাম ।
– ওহ ,
– মন খারাপ ?
– নাহ তো ,
– তাহলে ওহ ওহ তে উত্তর দিচ্ছ যে ,
-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

বেলী সামনে থাকা ঝিলের দিকে তাকিয়ে এক মনে কি যেনো ভেবে যাচ্ছিল । ইরফান সেই থেকে বেলীর দিকে তাকিয়ে আছে । বেলীর খোঁপা থেকে বেলীফুলের ঘ্রাণ আসছিল । ইরফান তখন বেলীর ডান হাতটায় আলতো করে হাত রাখে । আচমকা ধরায় একটু নড়ে উঠে বেলী ।

– কিছু বলবেন ?
– কি খাবা ?
– কিছু না ,
– বুট খাবা ? নাকি বাদাম
– আশেপাশে আছে ?
– ওইযে দেখা যাচ্ছে ,
– তাহলে বুট খাই ।
– আচ্ছা ,

ইরফান বেলীকে বসিয়ে রেখে বুট আনতে যায় । ইরফানের হাটার ঢংটা অনেক সুন্দর । সচরাচর সব পুরুষরা এইভাবে হাটে না । ইরফানই যেন কিভাবে হাটে । ইরফান বুট নিয়ে চলেও আসে । বেলীর হাতে বুটের ঠোঙাটা দেয় ইরফান । তারপর আবার সেই নিরবতা । নিরবতা ভেঙে ইরফান বলে ওঠে ,

– গান পারো তুমি ?
– একটু আধটু ,
– রবীন্দ্র সংগীত পারো ।
– আমারও পরাণ যাহা চায় ,
– শুনাবা আমায় ?
– এখানে না ,
– আচ্ছা বাসায় গিয়ে শুনাবে , কেমন ?
– হুম ।
– আর কোন গান পারো ?
– তুই ফেলে এসেছিস কারে মন , মন রে আমার ।
– পারো এটা ?
– হু ,
– এটাও শুনাবা আমায় ,
– আচ্ছা ।

বেলী আবার চুপচাপ হয়ে যায় । ইরফান আবারও বলে ,

– কিছু বলো ,
– কি বলবো ,
– যা মনে আছে ,
– মনের কিছু কথা মনেই থাক , মনের ঘরে আজকাল তাকাই না ।
– তাই ?
-,,,,,,,,,,,,,,,
– আচ্ছা ভালো কোন রেস্টুরেন্টে খেয়ে যাবো কেমন ?
– নাহ , বাসায় মিনুটা একা । আমরা খেয়ে যাবো , ও বেচারি কি দোষ করেছে আর তাছাড়া ও-কে ছেড়ে আমার খাওয়া গলা দিয়ে নামবে না । তার চেয়ে বরং বাসায় গিয়েই খাবো ।

বেলীর কথায় অত্যন্ত অবাক ইরফান । মিনুর জন্যে এত টান তার ।

– মিনুর জন্যে এত টান তোমার ?
– মেয়েটা অনেক ভালো ।
– হ্যাঁ ,
– হোক না সে কাজের মেয়ে , কিন্তু ওর সব থেকে বড় পরিচয় ও মানুষ ।

বেলীর চিন্তাভাবনা দেখে ইরফান সত্যিই আশ্চর্য হয়ে যায় । একটা মানুষ যে কিনা বাসার কাজের মেয়ের জন্যে এইরকম চিন্তাভাবনা নিজের মাঝে রাখে সে কোন সাধারণ মানুষ না । তখন ইরফান বেলীর হাতে হালকা চাপ দিয়ে বলে ,

– বেলী তুমি সত্যিই অসাধারণ ,
– আমি অতি সাধারণ , সাধারণের মাঝে একটুকু সুখ আঁকড়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে আশা করা এক অতি সাধারণ নারী ।

.
.

চলবে…………………………

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল পর্ব_২৫

0

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
পর্ব_২৫
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

রাতের খাওয়ার পর ইরফান ড্রইংরুমে বসে কাজ করছিল ল্যাপটপে । বেলী সব গুছিয়ে নিজের রুমে যায় । আজকে বাহিরের আবহাওয়াটা বেশ সুন্দর । চারপাশে ঝিঝি পোকা ডাকছে । রাত বাড়ার সাথে সাথে পরিবেশটা অনেক শান্ত হয়ে যায় । এই শান্ত পরিবেশের মাঝে বিলীন করেও শান্তি পাওয়া যায় । জানালার পাশে এসে বেলী শান্ত আকাশে নিজের দৃষ্টি রেখেছে । এরই মাঝে মিনু রুমে আসে ,

– ভাবী ,,,,,,,
– হু ,
– আইয়েন লুড্ডু খেলি ,
– এখন ?
– হ , আইয়েন ।
– কোথায় পাইলা এইটা ?
– বাইত্তে নিয়া আইছি হিহি , আইজ্জা বাইর করছি আইয়েন খেলি ।
– চলো ,
– হুনেন আগেই কই , আমার গুডি খাইবেন না , মনে করেন আপনেত কানা ফড়লো , কিন্তু কানায় আমার গুটি যাইবো , খাইয়েন না কইলাম ।
– গুটি না কাটলে মজা লাগবে না তো ,
– যা হইয়া যাক , আপনে আমার গুডি খাইবেন না ,
– আচ্ছা ,

মিনুর এই দুষ্টুমিপণা গুলো বেলীকে বেশ আনন্দ দেয় । দুজনে বসে যায় লুডুর ঘর নিয়ে । মিনুর ঘেনর ঘেনর এখনও চলছে ,

– ভাবী আমার গুডি খাইবেন না কইয়া দিলাম ।
– আচ্ছা , শুরু করো ।

দুজনে মিলে প্রায় অনেক্ষন যাবত লুডু খেলেছে । এক পর্যায়ে ইরফানের ডাকে তাদের হুশ আসে । ইরফান তাদের লুডু খেলা দেখছিল অনেক্ষণ যাবত । খেলার শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ইরফান বেলীকে আর মিনুকে ডাক দেয় ।

– মিনু,,,,,,,,,,,,,,,,?
– জ্বে ,
– খেলা হয়েছে ?
– হ ভাই , যা ঘুমাতে যা ,
– আইচ্ছা
– এই দাঁড়া , এটা রেখে যা ।
– আপনেও কি খেলবেন নি ভাই ,
– তুই রেখে যা ।
– আইচ্ছা ।

মিনু চলে গেলে ইরফান দরজা লাগিয়ে দেয় । বতারপর বেলীর সামনে এসে বসে সে । তাকিয়ে থাকে বেলীর দিকে । বেলী তখন চুপ করে নিচে তাকিয়ে আছে ।

– তুমি লুডুও খেলতে পারো ?
– না পারার কি আছে , পারি তো ।
– তাহলে আমার সাথে এক গেইম খেলো ,
– আচ্ছা ,
– আগে ডিল ফাইনাল হোক ,
– কিসের ডিল ?
– আমি যদি জিতে যাই তুমি কি কি করবা আর তুমি জিতে গেলে আমি কি কি করবো ।
– এইগুলা সব ভাওতাবাজি ,
– কিহহহ !!!
– নাহ মানে এইসব করার কি দরকার ?
– আছে বলেই বলছি ,
– আচ্ছা বলেন তাহলে ,
– ওকে , যদি আমি জিতে যাই তাহলে তুমি গুনে গুনে ১৫ টা চুমা দিবা আমাকে ।

ইরফানের মুখ থেকে এই কথা শুনে বেলীর প্রাণ যায় যায় অবস্থা । এইটা সে কি বললো ? এইসব কি আদৌ সম্ভব ।

– কি সব বলেন আন্দাজে ?
– হ্যাঁ ,
– আমি খেলবো না ,
– আমি কিন্তু না-ও জিততে পারি ।

পরে দিয়ে বেলী আবার ভাবে , হ্যাঁ সে তো না-ও জিততে পারে । সে একাই যে জিতবে এর কি গ্যারান্টি আছে ? বেলীর ভাবনার মাঝে ইরফান আবারও ডাক দেয় তাকে ,

– এইযে ,,,,,,,?
– হু ,
– কি ভাবেন ?
– কিছু না ,
– তো রাজি কিনা তাই বলো ,
– আচ্ছা রাজি , আর আমি জিতলে ,
– তোমায় জিততে দিলে তো (গুনগুন করে)
– কি বলেন , কাচুমাচু করে ,
– নাহ মানে তুমি জিতলে আমায় ভালোবেসে জড়িয়ে ধরবা । ব্যাস
– একই তো হলো ,
– কি ,
– এইযে , জিতলেও আপনার লাভ আর আমি জিতলেও আমার লস ,
– এটায় লস পাইলা কই ?
– শুরু করেন ।

ইরফান আর বেলী খেলতে বসে যায় । কেন জানি প্রথম শুরুতেই ইরফানের দুই ছক্কা পড়ে । আর তার পর পর ছক্কার উপর ছক্কা তার উপর ছক্কা তার উপর ছক্কা । আর ইরফান ইচ্ছে করে বেলী বেচারির সব গুটি কেটে দিচ্ছে । বহু কষ্ট করে পুরো ঘর ঘুরে যেই পাকাবে তখনই কেটে দেয় । রাগে দুঃখে বেলীর চোখে পানি এসে গেছে । বার বার গুটি কেটে দিচ্ছে । আর সহ্য করতে পারে নি সে ।
ধুম করে এক ধমক দিয়ে ওঠে ইরফানকে ,

– খেলবো নায়ায়ায়া ,
– কেন ?
– আপনার সাথে আমার কোন জন্মের শত্রুতা , এইভাবে গুটি গুলা কাটতেছেন ।
– তো সামনে পড়লে কাটবো না ?
– তাই বলে এইভাবে ? আপনি তিন টা গুটি পাকিয়ে ফেলছেন , আর আমার এখনও দুইটা গুটি কাচা । এইসব কি ?
– তো তোমার ছক্কা না পড়লে আমি কি করবো ?
– খেলবো না আমি ,
– আরে কি আজব , আচ্ছা আর কাটবো না , কথা দিলাম ।
– এখন আর কথা দিয়া কি হবে , সব গুলা গুটি কেটে রেখে দিছেন ।
– বাপ্রে বাপ নিমজ্জিত বেলীফুল হঠাৎ ফাল মেরে উঠলো কেন ?

ইরফানের কথায় বেলী আবার চুপ হয়ে যায় । মাথা নিচু করে বেলী মনে মনেই বলা শুরু করে দেয় ,

– রাগের চোটে ওনার সাথে এইভাবে চেঁচিয়ে ওঠার মানে কি হলো ? ইসসসস , কি ভাববে উনি ।

তারপর কিছুক্ষণ নিরবতার মাঝেই খেলা চলতে থাকে । আর তারপর , খেলার সমাপ্তি হয়ে যায় । বেচারি বেলীটা তিন গুটিয়ে গেইম হেরে যায় ইরফানের সাথে । ইরফান জিতে গিয়ে রাজ্য জয় করা হাসি দেয় । আর বেলীর ভেতরটা রাগে ফেটে যাচ্ছে । বেলী উঠে যেতে নিলে ইরফান তার হাতটা ধরে ফেলে । তারপর টান মেরে নিজের কাছে বসিয়ে নেয় ।

– কিছু বলবেন ?
– হু ,
– বলেন ,
– আমার ১৫ টা চুমা বাকি রয়ে গেছে তো ,
– আপনি ইচ্ছা করে এইভাবে আমার গুটি গুলা কেটেছেন ।
– খেলার কথা বাদ । খেলার আগে যেই ডিল হয়েছে তা পূরণ করার ব্যবস্থা করো ।
– আপনি দুই নাম্বারি করেছেন , মিনু আপনার থেকে অনেক ভালো খেলে ।
– তো এখন কি চুমা মিনুকে দিবা ?
– ধুর , ছাড়েন ।
– আমার ১৫ টা চুমা দিয়ে দেও । আমিও ছেড়ে দেই ।

বেলী কি করবে না করবে বুঝে উঠতে পারছে না । এইদিক দিয়ে ইরফানের ডিলেও সে রাজি হয়েছিল । এখন কথা যখন দিয়েছে রাখতে তো হবেই । কিন্তু বেলীর চোখে মুখে সংকোচনের আভা দেখা দিয়েছে । ইরফান বেলীকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছে । লজ্জায় মেয়েটা তাকাতে পারছে না । ইরফান বার বার বেলীর চোখ মুখের দিকে তাকাচ্ছে ।

এইবার ইরফান বেলীর একদম কাছে চলে যায় । বেলীর মাথা থেকে দুই পেচ এর ওড়নাটা খুলে দেয় সে । ইরফান তার ওড়না খোলার সময় ভেতরে তার ঝড় বয়ে যাচ্ছিল । গলা থেকে কলিজা অবদি তার সবটা শুকিয়ে যাচ্ছে বেলীর । কিছুই বলে নাই সে । ইরফান বেলীর শরীর থেকে পুরো ওড়নাটা সরিয়ে নেয় । ইরফান তখন আরও কাছে চলে আসে বেলীর । বেলীর চুলের খোঁপার কাটা টা ইরফান খুলে দেয় । লম্বা চুলগুলো তখন খাটে গিয়ে পড়ে । ইরফান যেন ঘোরে আছে , আর তার ঘোরের মাঝেই আটকাতে চাচ্ছে বেলীর ঘোরের বাঁধন । বেলীর বাম গালে তার ডান হাত রেখে বেলীর মুখ নিজের মুখ বরাবর রাখে ইরফান ।

– আমার দিকে তাকাও ,
-,,,,,,,,,,,,,
– আমার চোখের দিকে তাকাও ,
-,,,,,,,,,,,,,,,
– তাকাবা না ?

তখন বেলী বন্ধ মুখে শান্ত নয়নে ইরফানের দৃষ্টিতে তার দৃষ্টি রাখে । ইরফানের চোখ জোড়া কেমন যেনো লাল হয়ে আছে আর চোখের মাঝ বরাবর হাল্কা পানি চিল চিক করছে । ইরফান বেলীর কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলতে শুরু করে ,

– শুরু করো ,
-,,,,,,,,,,,
– কি হলো , এই প্রথম কিছু চেয়েছি তোমার কাছে আমি , দিবে না ?

এমতাবস্থায় বেলী কি করবে না করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না । ইরফানের চাওয়ার মাঝে নোংরামিপণাটা ছিল না । সহ বধ রেখেই সে তার চাওয়া জিনিসটা উপস্থাপন করেছে । এখন শুধু বেলীর এক ধাপ এগুনোর পালা । বেলী তখন সমস্ত লাজ-লজ্জা বিসর্জন দিয়ে ইরফানের কাছে এগিয়ে যায় । বেলী আর ইরফানের চোখের দিকে তাকাতে পারে নি । নিজের চোখ বন্ধ করে প্রথম চুমুটা ইরফানের কপালে বসায় বেলী । বেলীর ঠোঁটের আলতো স্পর্শে ইরফানের পুরো শরীর নড়ে ওঠে । কপাল থেকে বেলীর ঠোঁট তখন ইরফানের গাল বরাবর । ইরফানের ডান গালে আরেকটা চুমু দেয় সে । আর পারেনি সে , লজ্জায় আর এগুতে পারে নি সামনে । বেলী হুরমুড়িয়ে উঠে যেতে নেয় নিলে ইরফান এইবার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বেলীকে । ইরফানের এরকম এক ঝটকায় উঠে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরায় সে অনেকটা ফ্রিজড হয়ে যায় । ইরফান বেলীর মাঝে এক চিলতে ফারাকও ছিল না তখন । বেলীর কাঁধে নিজের থুতনি লাগিয়ে বেলীর কানে কানে বলে ,

– আরও ১৩ টা বাকি কিন্তু ,
– রাত অনেক হয়েছে ঘুমিয়ে যান ।
– হুসসসস , আগে আমাকে দেয়া কথার মান রাখো ।
– এমন কেন করতেছেন ।
– বললাম আমায় দেয়া কথাটা রাখো ।

বেলীর তখন পুরো শরীরটা অসার হয়ে যাচ্ছিল । আর পারছিল না সে । ইরফান ঠিকই বলেছিল সকাল বেলা ।

– আপনি ঠিকই বলেছেন , এর যন্ত্রণা মা’রের যন্ত্রণা থেকেও বেশি ।

ইরফান তখন আরও শক্ত করে ধরে বেলীকে । আর কোন কথা হয় নি তাদের মাঝে । ইরফান বেলীকে তার দিকে ফিরিয়ে নেয় । তারপর কোলে তুলে নেয় , ইরফানের কোলে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার চড়লো সে ।

– আপ,,,,,,,,
– হুসসসস , চুপ কিছু বলো না ।
-,,,,,,,,,,,,,

ইরফান বেলীকে বিছানায় শুইয়ে দেয় । বিছানায় থাকা লুডুর ঘর সমেত গুটি গুলো নিচে ফেলে দেয় ইরফান । লাইট অফ করে দেয় সে । বেলী তখনও নিশ্চুপ দৃষ্টিতে দেখতে থাকে ইরফানকে । ইরফানও বেলীর পাশে শুয়ে এক হাত দিয়ে নিজের মাথা ঠেকিয়ে বেলীকে দেখতে থাকে । বেলীর গাল গুলোকে আলতো করে ছুয়ে দেয় সে । ইরফানের ছোয়ায় বেলীর পুরো শরীরটা শীতল হয়ে যায় । শরীরের লোমগুলো শির শির করছে বেলীর । বেলী তখন হুট করেই ইরফানকে প্রশ্ন করে বসে ,

– পুরুষের ছোয়া কি এমনই হয় ?

বেলীর এমন প্রশ্নে ইরফানের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি আসে ।

– এ ছোয়া অনেক মারাত্মক , এই ছোয়া একদম সোজা কলিজায় গিয়ে আঘাত করে ।
– আমার নিঃশ্বাসটা বন্ধ হয়ে যাবে হয়তো ।
– বন্ধ হওয়া এত সহজ না ,
– আমায় ছুয়েন না ,
– তাহলে ভালো থাকবে তো ?
– জানি না ।
– তাহলে আরেকটু ছুয়ে দেই ,

ইরফান তার হাতটা বেলীর গাল থেকে নামিয়ে বেলীর গলায় নেয় । তখনই বেলীর চোখের কোণ দিয়ে এক ফোঁটা পানি পড়ে যায় । ইরফান সেই পানি দেখে বেলীর একদম কাছে এসে বেলীর কপালে আলতো করে এক চুমু দিয়ে দেয় । ইরফান বেলীর নাকের মাঝ বরাবর আরেকটা চুমু দেয় । ইরফান তখন বেলীর হাতের আঙুলের ভাজে নিজের আঙুলগুলো দিয়ে আঁকড়ে ধরে বেলীকে । বেলীর মন তখন একটা কথাই বলছিল ,

– সময়টা থেমে থাক , মুহুর্তটা থমকে যাক । আমার আর তার মাঝে ভালোবাসার বাঁধনটা এভাবেই আটকে থাক ।

.
.

চলবে…………………

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল পর্ব_২৪

0

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
পর্ব_২৪
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

বেলীর চাওয়া জিনিস গুলো বড় অদ্ভুত লাগছিল ইরফানের কাছে । ইরফান ভেবেই পাচ্ছিলো না বেলী কেন এইসব চেয়ে বসলো । আবার পরে ভাবে দেখে সবারই তো পছন্দের রঙ আছে । হয়তো বেলীরও পছন্দের রঙ সাদা । আর নিজের নাম বেলী তাই হয়তো ফুলের মাঝে বেলীফুলটাই তার বেশি পছন্দের । কিন্তু পরক্ষনেই তার আবার মন অন্য কিছু ভাবতে থাকে । বেলীর কাছে যাওয়াটা , বেলীকে খুব কাছ থেকে ছোয়া , বেলীর চুপচাপ থাকাটা বড্ড বেশি তাকে টানে । এ যেনো এক ধরনের অন্যরকম টান । বেলীর মায়াভরা চাহনিটা তাকে বার বার ঘায়েল করে দিচ্ছে । মন চায় বেলীকে ঘিরেই থাকতে সারাক্ষণ । ইরফানের সারারাত কেটে যায় বেলীকে ভেবে ভেবে ।

সকালের দিকে ইরফান অফিস যাওয়ার আগে বেলীর সাথে দেখা করার জন্যে তার রুমে যায় । বেলী তখন জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে । আকাশের বুকে হাজারো সাদা মেঘের ছোটাছুটি দেখে নিজের ঠোঁটের কোণায় এক টুকরো মিষ্টি হাসি আসে তার । মাঝে মাঝে এই অকারণের হাসি গুলোও তার ভালো লাগে অনেক । ইরফান পিছন থেকে বেলীর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকাটা দেখছিল । বেলী বড্ড উদাসীন থাকে । ইরফান নিজের মনে মনে ভাবে , কাল তো শুক্রবার অফডে । বেলীকে নিয়ে বের হবে কাল সে । এতে বেলীর মন মানষিকতাও ঠিক হবে কিছুটা । তারপর কি যেনো ভেবে বেলীকে কিছু না বলেই চলে গেলো সে । বেলীর রুম থেকে বেরিয়ে অফিস চলে যায় সে ।

অন্যদিকে , বেলী আকাশের দিকে তাকিয়ে আকাশের রঙ বদল দেখছিল । সবার থেকে হয়তো ওই আকাশটাই ভালো আছে । আকাশ সবার জন্যে ভাবে । আকাশের মনটা বড্ড বেশি বিশাল । সে তার এক বক্ষে কত কিছু ধারণ করে রেখেছে । এক বুকেই সূর্য , এক বুকে চন্দ্র , আবার এক গ্রুপেই গ্রহ নক্ষত্র । আর যখন মন খারাপ থাকে তখন নিজে কেঁদে অন্যদের সুখ দেয় । সব মিলিয়ে দিন শেষে আকাশটাই হয়তো অনেক বেশি ভালো থাকে । হঠাৎ করেই চারপাশ থেকে একটা ঘ্রাণ আসতে থাকে । ঘ্রাণটা বেলীর নাকে আসতেই এক অন্যরকম অনুভূতি জাগে তার মনে । বেলী চারপাশে খুজেও ঘ্রাণের সন্ধ্যান পায় না । ঘ্রানটার পরিধি এতই প্রখর ছিল যে নাক থেকে সরছেই না । বেলী ড্রইংরুমে এসে দেখে ড্রইংরুমেও ঘ্রাণটা । পুরো বাসা মনে হচ্ছিলো ঘ্রাণে মম করছে । সে মিনুকে ডেকে দেয় ,

– মিনু,,,,,,,,,,,,?
– জ্বে ভাবী ,
– মিনু , ঘ্রাণ পাচ্ছো ?
– কই , কিয়ের ঘেরান আবার ?
– হ্যাঁ , একটা ঘ্রাণ আসছে , আমি পাচ্ছি তো ।
– কি জানি ভাবী আমি তো পাই না , তয় আমার আবার নাক বন্ধ , এল্লাই মনে হয় আমি পাই না ।
– তোমার ভাই কি চলে গেছে ?
– হ , গেছে গা । ভাবী দুফুরে কি রানবেন কইয়া দেন , আমি ব্যবস্থা করি ।
– আমিই আসতেছি তুমি বরং প্লেটবাটি ধুয়ে দাও ।
– আইচ্ছা ভাবী ,
– হু ,

মিনু চলে যাওয়ার পর বেলী একবার ইরফানের রুমে যায় । ঘ্রাণটা সেইখান থেকেই আসছিল । রুমের মধ্যে ঢুকে এদিক ওদিক তাকায় বেলী । ইরফানের রুমের ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা পারফিউম এর বোতলের দিকে বেলীর নজর যায় । বেলী তখন পারফিউম এর বোতল থেকে নিজের হাতে একটু পারফিউম মেখে নাকের কাছে নেয় । হ্যাঁ এটা সেই ঘ্রাণটা যা এতক্ষন বেলীর নাকে লাগছিল । তার মানে এটা ইরফান দিয়ে গেছে ।
তার পর পরই তার মাথায় আসে এই ঘ্রাণ তাহলে তার রুমে গেল কিভাবে । বেলী নিজে নিজেই বলতে থাকে ,

– তার মানে কি তিনি আমার রুমে গেছিলেন ? গিয়ে থাকলে কথা বললেন না কেন ? আর কখন গেল আমি যে দেখলাম না ?

এইসব ভেবে ভেবে বেলীর মনটা উদ্বিগ্ন হয়ে যায় । তার মনটা এখন এই মুহুর্তে ইরফানের সাথে কথা বলতে চাইছে । ইরফানের গলার স্বরটা একবার নিজ কানে শুনতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে তার । তার অন্তরটা একবার হলেও এই মুহুর্তে ইরফানের সাথে কথা বলতে চাইছে । কিন্তু কথা কিভাবে বলবে তার কাছে তো ফোন নেই । আর ইরফানের নাম্বারও তো জানা নেই তার । কিন্তু সব কিছুর কথা বাদ দিয়েও তার এখন ইরফানের সাথে কথা বলতে মন চাইছে ।

হঠাৎ করেই কোথাও থেকে একটা মোবাইলের আওয়াজ বেলীর কানে আসতে থাকে । রুমের এদিক সেদিক বেলী তার নজর ঘুরায় । কিন্তু কোথাও মোবাইল দেখতে পায় না সে । তাই মোবাইল খুজতে ড্রইংরুমে যায় সে । বেলী চারদিকে চোখ ঘুরাচ্ছে কিন্তু কিছুই দেখতে পাচ্ছে না । মিনুও মোবাইলের আওয়াজ পেয়ে রান্নাঘর থেকে চলে আসে ।

– ভাবী , মোবাইলের আওয়াজ আইয়ে কইত্তে ?
– বুঝতেছিনা তো ,
– ভাইয়ে কি মোবাইল রাইখা গেছে নাকি ?
– কি জানি হতেও পারে কিন্তু মোবাইলটাই তো দেখছি না ।
– ও ভাবী ,
– হু বলো ,
– মোবাইলের আওয়াজ দেহি আপনের রুমেরতে আইয়ে ।
– কি বলছো ?
– হ ভাবী , কান পাতেন , তাইলেই বুঝবার পারবেন ।

মিনুর কথায় কিছুক্ষন চুপ থাকার পর বেলী বুঝতে পারে মোবাইলের আওয়াজ তার ঘর থেকেই আসছে । তাড়াতাড়ি দৌড়ে নিজের ঘরে যায় সে , মিনুও তার পিছন পিছন যায় । সেখানে আশেপাশে তাকানোর পর ড্রেসিং টেবিলের এক কোণায় সাদা কাগজে মোড়া একটা ছোট প্যাকেট দেখতে পায় তারা ।

– ভাবী এইডার থিকাই আওয়াজ আইতাছে , খুইলা দেহেন তো ।

বেলী তখন কাগজে মোড়ানো প্যাকেট টা খুলে । আর খুলেই চরমভাবে অবাক হয় সে , সাথে মিনুও । একটা মোবাইল আর যার ফোন বাজছে তার নাম টাও সেভ করা আছে । বেলী মোবাইলের স্ক্রিনে ইরফান নামটা অতি সহজেই ধরে ফেলে ।

– ও মাগো মা , ভাইয়ের মোবাইল এইদিকে নি থুইয়া গেছে ।

কিন্তু বেলী জানে যে এটা ইরফানের মোবাইল না । সে ইরফানের মোবাইল দেখেছে আর এই মোবাইলটা ইরফানের মোবাইল না । এটা একদম নতুন , বেলী মিনুকে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দেয় । তখন দরজাটা হালকা টেনে দিয়ে সে মোবাইলটা রিসিভ করে । বেলীর পড়াশোনা যদিও কম কিন্তু সে একেবারেই মূর্খ নয় যে ফোন রিসিভ করতে পারবে না । আর ইংলিশ মোটামুটি যা পারে তা যথেষ্ট তার জন্যে । তাই ইরফানের নামটা ধরতে তার সময় বেশি লাগে নি । মোবাইলে তখনও রিং হচ্ছে । বেলী ফোন রিসিভ করে নেয় ।

– আসসালামু আলাইকুম ,
– ওয়ালাইকুম আসসালাম , অবশেষে খুজে পেয়েছো ?
– হু ,
– এইজন্যই আমি বার বার ফোন দিচ্ছিলাম যাতে আওয়াজ পেয়ে অন্তত খুজে পাও ফোনটা ।
– হু পাইছি , কিন্তু এইটা কার ফোন আর এই রুমে এইভাবে রেখে গেছেন যে ?
– ফোনটা তোমার জন্যে , গতকাল রাতেই কিনেছিলাম আজ দিলাম । সব কিছু সেভ করা আছে । এখন যখন ইচ্ছে তোমার মায়ের সাথে কথা বলতে পারবে ।
– এইটা আমার ফোন ?
– হু ,
– আমার রুমে এসে আমার সাথে দেখা না করে চলে গেলেন সে ?
– ওইটা তো তোমার রুম যেদিন থেকে ওইটা আমাদের রুম হবে সেইদিন থেকে আমি তোমার সামনে থেকেই বিদায় নিবো ।

ইরফানের কথার ধাচ বুঝতে বেলীর সময় লাগে নি । সে বুঝে যায় ইরফান কি বোঝাতে চেয়েছে তাকে । তবে বেলী আর সেই কথা না বাড়িয়ে ইরফানকে আবারও সাদা শাড়ি আর বেলীফুলের মালার কথা মনে করিয়ে দেয় ।

– আজকে আসার সময় নিয়ে আসবেন তো ?
– কি ?
– সাদা শাড়ি আর বেলীফুলের মালা ।
– আচ্ছা নিয়ে আসবো ।
– কি করেন এখন ?
– এইতো কেবিনেই বসে আছি ।
– ওহ ,
– আমায় এত ভালোবাসো অথচ কাছে আসতে দেও না কেন বেলী ?

ইরফানের কথায় বেলী একদম চুপ হয়ে যায় । কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে লাইন কেটে দেয় । ইরফান বুঝে যায় তার কথার জন্যে বেলী লাইন কেটে দিছে । ইরফান আবারও ফোন দেয় । এইবারও ফোন রিসিভ করে সে ।

– ফোন কেটে দিয়ে কি হলো ?
– কিছু না ,
– বেলীফুলকে ভালোবাসার মাঝে আলাদা মজা আছে । এর কারণ কি জানো ?
– কি ?
বেলীর ঘ্রাণে মাতাল হয়ে গিয়ে
সেই মাতালের মাঝে নিজেকে
বিলীন করে তোমায় আঁকড়ে ধরে
নিজের শরীরের ছাপ ফেলে দিবো

এর মাঝে অন্যরকম মজা আছে কিন্তু । এইবার বেলীর লজ্জা আরও দ্বিগুণ বেড়ে যায় ।

– এইসব কঠিন শব্দ আমি বুঝি না আল্লাহ হাফেজ ।

এটা বলেই লাইন কেটে দেয় বেলী । ইরফানের রোমান্টিক কথাগুলো তার উপর প্রভাব ফেলে দিচ্ছিল তাই সে লাইন কেটে দেয় ।
আর অন্যদিকে বেলীর কথা ভেবেই ইরফান মুচকি হাসি দেয় ।

সারাদিন পরে সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর ইরফান বাসায় আসে । এখনও সে আলাদা রুমেই থাকে । বেলীর কাছে যেতে অনেক ইচ্ছে করে তার কিন্তু বেলী রেসপন্স করে না তাই আর যেতে ততটা ভালো লাগে না । অফিস থেকে আসার সময় বেলীর জন্যে সাদা শাড়ি কিনে আনে ইরফান । সেই শাড়িটা দিতেই কেবল বেলীর রুমে যায় সে ।

– বেলী,,,,,,,,,,,,?
– জ্বি ,
– এই নাও তোমার শাড়ি ,
– আর মালা ?
– সেটা কাল এনে দিবো ,
– ওহ ,

বেলী ইরফানের সামনেই শাড়ির প্যাকেটটা ড্রয়ারে দেখে দেয় ।

– খুলে দেখলে না ?
– উহু , তার দরকার পড়বে না ।
– তোমার না-ও পছন্দ হতে পারে ।
– আপনি এনেছেন তো , শাড়িটা বেশ সুন্দরই হবে ।
– কাল শাড়িটা পরবে ?
– কাল ?
– হু , কাল বিকেলে তোমায় নিয়ে বের হবো ।

কিন্তু বেলী যে ভেবেছিল শাড়িটা আজকে পরবে সে । আর এখন ইরফান চাইছে কাল পরতে । বেলীও না ভেবে বলে দিয়েছে ,

– আচ্ছা কাল পরবো ।
– বের হওয়ার আগে তোমার বেলীফুলের মালা পেয়ে যাবে তুমি ।
– আচ্ছা ।

ইরফান বের হতে নিলে বেলী আবার ডেকে দেয় তাকে ,

– কোথায় যান ?
– রুমে , চেঞ্জ করবো ।
– এখানেই করে নেন ?
– জামা কাপড় ওই রুমে ,
– জামা কাপড় সব এখানেই রাখা আছে ,
– মানে ?
– মানে আজ থেকে এটা আমাদের রুম ।

এটা বলে বেলী রুম থেকে বের হতে নেয় আর ওমনি ইরফান বেলীর হাতটা ধরে নেয় । তারপর একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে সে বেলীকে । নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে বেলীকে ইরফান । বেলীকে তখন অনেকটা পুতুলের মত লাগছিল । মাথায় ওড়নাটা দুই পেচ করে পরা তার ।

– এইদিকে তাকাও আমার দিকে ,,,

ইরফানের কথায় মাথা তুলে তাকায় বেলী । ইরফানকে বেশ সুন্দর লাগছিল । একদম সুদর্শন পুরুষের মত । বেলীর চোখে ঘোর লেগে যায় । বেলীর চোখের ভাষার মাঝে হারিয়ে যায় ইরফানের দৃষ্টি ।
নিরবতা ভেঙে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বেলীকে প্রশ্ন করে সে ,

– আমাদের রুম মানে ?
– হ্যাঁ , এটা আজ থেকে আমাদের রুম । এই রুমে আজ থেকে আমি আর আপনি এক সাথে থাকবো ।
– ভেবে বলছো তো ?
– হু ,
– সহ্য করতে পারবে তো ?
– কি ?
– আমার ভালোবাসার যন্ত্রণা গুলো সহ্য করতে পারবে ?
– আপনার মা’রের যন্ত্রণা গুলো সহ্য করে গেলাম তো , এখন না হয় এই যন্ত্রণাটাও সহ্য করে দেখি ।
– এই যন্ত্রণার ব্যাথা আরও প্রখর , ভেবে দেখো আরেকবার ।
– ভাবা শেষ , এখন শুধু,,,,,,,,,,
– কি ?
– ধরা দেবার পালা ।

বেলীর কথায় ইরফানের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় মনে হচ্ছিল । ইরফানের মাথায় তখন অন্য কিছুই আসে নি । বেলীর দু’গালে ইরফান তার দু’হাত দিয়ে ধরে বেলীর আরও কাছে চলে যায় । ঠিক তখনই বেলী আবার সেই ঘ্রাণটা পায় । যা ইরফানের শার্ট থেকে আসছিল । ঘ্রাণটার মাদকতা এতই তীব্র ছিল যে , বেলীর ভেতরের সব কিছু নড়বড়ে করে দিচ্ছে । বেলীর চিকন ঠোঁট জোড়ার দিকে এগিয়ে যাওয়া ইরফান তখন যেন সব কিছু ভুলে গেছে । দু’জোড়া ঠোঁটের মাঝে হয়তো সর্বোচ্চ এক ইঞ্চি ফারাক ছিল । আর ঠিক তখনই ,

– ভাবীইইইই , ও ভাবীইইইই , আইজ্জা কি রুমের ভিত্রেই থাকবেন নি । মাগো মা , ভাইয়ের লাই কফি বানাইতেন না ?

মিনুর এমন চিল্লানিতে বেলী আর ইরফান উভয়েরই হুশ আসে । বেলী তখনই ইরফান থেকে একটু সরে আসে ,

– আপনি হাত মুখ ধুয়ে নেন , আমি কফি বানিয়ে আনছি ।
– ভয়ে দূরে সরে যাচ্ছো ?
– উহু ভালোবাসার মাঝে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরার জন্য এই সরে যাওয়া । আর হ্যাঁ পারফিউমের ঘ্রাণটা অনেক সুন্দর , অনেক বেশিই সুন্দর ।

বেলী এইটা বলেই রুম থেকে বের হয়ে যায় । এর ইরফান তখন সেখানেই দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে দেয় ।

– ভিষণ প্রেম প্রেম পাচ্ছে রে বেলী ,
ভিষণ প্রেম প্রেম পাচ্ছে আমার । প্রেম করতে ইচ্ছে হয় তোর সাথে । বেলীফুলের সাথে নতুন প্রেমের অধ্যায় টা এইবার না হয়ে যাক

.
.

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল পর্ব_২৩

0

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
পর্ব_২৩
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

আজ ইরফান সন্ধ্যার পর পরই বাসায় চলে আসছে । এসেই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নেয় । আজ আর কফির কথা বলেনি সে , তবুও বেলী নিজ থেকেই কফি করে আনে । বেলীর হাতে কফি দেখে ইরফান বেশ অবাক হয় ।

– আমি তো কফি চাই নাই ,
– আমিই বানালাম ,
– ওহ ,
– আজ এত তাড়াতাড়ি চলে আসলেন , শরীর খারাপ নাকি ?
– নাহ , একটু কাজ আছে , তাই ।
– ওহ ,
– কয়েকজন লোক আসবে একটু পর ।
– কে , রান্না করা লাগবে নাকি ?
– নাহ নাহ , তেমন কিছু না , তুমি এই রুমেই থাকো ।
– নাহ , এখানে না আমি আমার রুমেই যাই ,
– ওই রুমেই কাজ আছে , এক কাজ করো গেস্ট রুমে চলে যাও ,
– আচ্ছা ।

বেলী সাধারণত বাহিরের লোকদের সামনে যায় না । এইসব ব্যাপারে সে একটু সচেতন । যার তার সামনে যেতে অনিচ্ছা তার । তাই ইরফানও জোর করে না । কিছুক্ষণ পরই দরজায় কলিংবেল পড়ে , আর বেলীও তাড়াতাড়ি ভেতরে চলে যায় । ইরফান নিজেই গিয়ে দরজা খুলে ।

আসলে আসার সময় ইরফান ফার্নিচার এর দোকান থেকে কিছু ফার্নিচার কিনে রেখেছিল , তারাই এসেছে সেট করার জন্যে । বেলীর রুমটা বরাবরই খালি ছিল । বেলীর জন্যে ইরফান তেমন ভাবে কিছুই করেনি কখনো । তাই আজ সব কিনে এনেছে । লোকদের সাথে ইরফানও সাহায্য করেছে সাথে মিনুও ছিল । ইরফান মিনুর অনেক কাছের মানুষ এখন । একদম নিজের বোনের মতই কথা বলে মিনুর সাথে সে । মিনুও যথেষ্ট সম্মান দেয় তবে বকাঝকা করে ইরফানের আড়ালে । প্রায় ঘন্টাখানেক বাদে লোকজন চলে যায় । মিনু তখন ইরফানকে বলে ,

– ভাই এক্কেরে ভালা কাম করছেন । এহন ঘরডা পুরা পুরা লাগে ।
– সুন্দর হয়েছে ?
– হ হ অনেক ফছন্দ হইছে আমার ।
– বেলীর হবে কিনা জানি না ?
– হেতির কি-ই বা বালা লাগে , হেতির আবার ফছন্দ ।
– কেন , কি হয়েছে ?
– আইজ্জাও কতক্ষন ছোড ভাবীর লাই আফসোস করছে , আমি বুঝি না সতীনের লাই এত কইলজা পুড়ে কিত্তে সেতির । ওইডা তো একছার বদমাইশ মাতারি , ওইডার লাই অন্তর পুড়াইয়া লাভ আছে কোন ?

মিনুর মুখে আসলেই লাগাম নেই কার সামনে দাঁড়িয়ে কি যে বলে তার ঠিক নেই । ইরফান মিনুর মুখের দিকে চেয়েই আছে , আর অথচ মিনু বলেই যাচ্ছে তো বলেই যাচ্ছে ।

– খবিশ মাতারি একডা , শয়তাইন্না বেডি । এক ওয়াক্ত নামাজ কালাম তো পড়েই না , শয়তানের মত চলাফেরা করে এইডার লাই কিসের মায়া মহব্বত , উষ্টা ১০০ টা মারলে কি অয় এইডারে ।।

মিনুর কথা গুলো চুপচাপ শুনার পর ইরফান গলা ঝাড়া দেয় ।

– উহুম উহুম , মিনু ?
– জ্বে ভাই ,
– আমি তো তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি , তুই কার সামনে দাঁড়িয়ে কি সব বলিস ।

এই এতক্ষণে মিনুর হুশ আসে সে কার সামনে কি বলতেছিল । পিছন দিকে ফিরে জিহবায় কামড় দিয়ে নিজেকে ১০০ গালাগাল দেয় সে । পরে চুপ করে থাকে ।
ইরফানও বুঝতে পারে যে রুবিকে মিনুর একদম পছন্দ না । তাই আবারও মিনুকে ডেকে বলে ,

– রুবিকে যেহেতু তোর এত অপছন্দ তাহলে তো তুই আমাকেও দেখতে পারিস না , তাই না ?
– হ ভাই হ , আপনেও খবিশ কম আছিলেন না , এহন কেমতে কেমতে ভালা হইছেন আল্লাহ পাকই জানে । আপনে আমার বেলী ভাবীরে কম ফিডান নাই , আপনেও ওই শয়তানের লগে থাইকা শয়তান হয়ে গেছিলেন ।

ইরফান চোখ বড় বড় করে মিনুর দিকে তাকিয়ে আছে । মিনু সত্যিটাই বলেছে আর তা সবার সামনই । কিন্তু বেচারি এক্সাইটমেন্টে সব গুলিয়ে ফেলছে । তাই ইরফানের সামনে ইরফানকেই যা তা বলে দিছে ।

ইরফান মিনুর কথা কানে নেয় নি । পরে কথা ঘুরিয়ে দিয়েছে । এছাড়া আর কম করার । তার বিরুদ্ধে মিনুর বলা কথা গুলো তেতো হলেও সত্যিই ছিল । যার জন্যে সে আর বেশি কিছু বলেনি ।

– মিনু বেলীকে পাঠিয়ে দে , যাহ
– আইচ্ছা ভাই ,

কিছুক্ষণ পর বেলী নিজের রুমে আসে । সে নিজের রুমকে চিনতেই যেন পারে না । ওই রুম থেকে বোঝা যাচ্ছিলো যে বাসায় কিছু একটা আনা হয়েছে । কিন্তু লোক থাকায় দেখতে পারেনি সে । এখন বুঝতে পারছে যে এইসব আনা হয়েছে । হা করে তাকিয়ে নিজের রুম দেখছিল বেলী । বেশ খানিকটা সিম্পল এর মাঝে অনেক সুন্দর একটা খাট সাথে অন্যান্য ফার্নিচার তার রুমে । এরপর ইরফানের দিকে তাকায় বেলী ।

– এত কিছু কিসের জন্যে ?
– আমার বউয়ের জন্যে , কেন কোন সমস্যা ?

ইরফানের মুখ থেকে বউ শব্দটা বেলীর বুকের ঠিক মাঝে গিয়ে লাগে । বউ ডাকটা এত সুন্দর লাগলো শুনতে যে বার বার শুনতে মন চাইছিল বেলীর । কিন্তু নিজেকে দমিয়ে রেখে আবার বলা শুরু করে সে ,

– এত টাকা খরচ করার কি দরকার ছিল , এই রুমে যা ছিল তাতেই হতো আমার ।
– হ্যাঁ , কত হতো বুঝা গেছে৷, একটা খাট আর একটা আলনায় অনেক কিছুই হয় ।
– এত দামী জিনিস দিয়ে কি করবো যদি মানুষটাই আমার না হয় ??

কথাটা আচমকাই বেলীর মুখ থেকে বেরিয়ে যায় । যা ইরফানও শুনে নেয় , তখন হালকা হাসি দিয়ে বেলীর সামনে এসে দাঁড়ায় । বেলীর বাম গালে নিজের ডান হাতের আলতো পরশ দিয়ে বলে ,

– মানুষটা তোমার কাছেই কাছে । খুজে দেখতে হবে শুধু ।

ইরফানের হাতের ছোয়াটা বড্ড বেশি আদরের ছিল । মায়া ভরা দু’নয়নে তাকিয়ে আছে বেলী ইরফানের দিকে ।

– এইভাবে দেখো না , প্রেমে পড়ে যাবে তো ?

ইরফানের এমন কথায় লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয় বেলী । তখন ইরফান তার এক জোড়া হাত বেলীর ঘাড়ের পেছনে নিয়ে নেয় । বেলীকে আরেকটু কাছে নিয়ে আসে সে ।

– এইভাবে চোখ সরালে আমার বুকের ভেতরটা কিন্তু বেলীফুলকে আরও কাছে চাইবে , তখন আমি কি করবো ? আমায় থামাবে কে তখন , হু ?

বেলী আর সেখানে থাকতে পারে নি , ইরফানের কাছ থেকে ছুটে দৌড়ে বাহিরের রুমে চলে যায় সে । আর ইরফান সেখানেই দাড়িয়েই থাকে । একটা জিনিস হঠাৎ তার মাইন্ডে আসে । কিছুর একটা স্মেল নাকে আসছে তার । অনেক গাঢ় একটা স্মেল । পরক্ষনেই ইরফান নিজের হাত দুটো তার নাকের কাছে নেয় । হ্যাঁ , ইরফানের হাত থেকেই আসছে স্মেলটা । কিন্তু এতক্ষন তো এই স্মেলটা ছিলোই না হঠাৎ কিভাবে এলো ? ভাবতে ভাবতে মাথায় আসে সে শুধু বেলীর কাধেই তার দু’হাত রেখেছে । তাহলে কি স্মেলটা বেলীর শরীর থেকেই এসেছে ?

নিজের রুমে যায় ইরফান । সোফায় বসে কিছুক্ষণ চিন্তা করে সে । বেলীর কাছে যাওয়ার পর থেকে কেমন জানি লাগছে তার । এ যেন এক অন্য রকম অনুভূতি । রুবির কাছে বহুবার গিয়েছে সে , কিন্তু এমন অনুভূতি তার হয়নি । এ যেন অন্য রকম ভালো লাগা তার । বেলী যেন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে । ভালোবাসার এ যেন এক নতুন অধ্যায় । যা ইরফানকে আঁকড়ে ধরেছে শক্ত করে । ইরফানের মনটা বড্ড বেশি বিচলিত । বার বার বেলীর দিকে ধাবিত হচ্ছে । রুবির সাথে তার সম্পর্ক স্বামী স্ত্রী হলেও কোথাও যেন এক অসম্পূর্ণতা ছিল । আর যেই বেলীকে সে এত অবহেলা এত অবজ্ঞা করতো সেই বেলীর মাঝেই সে সম্পূর্ণতা খুজে পায় । যদিও দূরত্ব অনেক তাদের মাঝে ।

ভাবনার মাঝেই মিনুর ডাক ,

– ভাই তাত্তারি খাইতেন আইয়েন , কতক্ষন বইয়া থাকুম ?
– আসতেছি যা তুই ।

মিনু খুব চঞ্চল । সব কিছুতেই তার তাড়াহুড়ো । সে যেন তাড়াহুড়ো না করলে কিছুই পারে না । ইরফান ঘড়িতে চেয়ে দেখে প্রায় সাড়ে ১০ টা বাজতে চললো , হয়তো বেলী সব কিছু সার্ভ করেই মিনুকে পাঠিয়েছে । ইরফান আর দেরি না করে ডাইনিংয়ে চলে যায় ।

বেশ কয়েকদিন পর ইরফান বেলী এক টেবিলে আবার । মিনু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাতের প্লেটে হাত দেয় । এইদিকে বেলী তাকে ইশারায় বার বার বসতে বলছিল কিন্তু মিনুর সেইদিকে খেয়াল নেই । অথচ ইরফান দাঁড়িয়ে খাওয়া পছন্দ করে না । তারপর সুযোগ বুঝে বেলী মিনুকে নাড়া দিয়ে ইশারায় বসে খেতে বলে । বেলীর ইশারায় মিনুও নিচে বসে যায় ভাতের প্লেট নিয়ে । যা এইবার ইরফানের চোখে লাগে ।

– মিনু,,,,,,,,,,,?
– জ্বে ভাই ,
– ভাই ডাকিস আবার ভাইয়েরই বাদায় নিচে বসে খাচ্ছিস ?
– বুঝবার পারলাম না ভাই
– টেবিলে আয় , টেবিলে বসে খা ।
– আমি কামের মানুষ , আমি টেবিলে কেমনে খাইতাম ।
– কাজের মেয়ে শুধু বেলীর সাথে বসেই খেতে পারে আমার সাথে পারে না তাই না ?

এইবার বেলী বুঝতে পারে যে ইরফান কোন ভাবে বুঝতে পেরেছে যে মিনু বেলীর সাথে বসে খেয়েছিল । সেটার কথাই এখানে তুলে দিয়েছে । পরে ইরফান আবারও বলে ,

– নাকি তুই-ও তোর বেলী ভাবীর মত আমায় খারাপ ভাবিস , যে আমার সাথে এক টেবিলে বসে খাওয়া যায় না , কোনটা রে ?

ইরফানের এমন কথায় বেলী আরও চুপ হয়ে যায় সাথে মিনুও । তাই মিনুও তাড়াতাড়ি উঠে এসে টেবিলে বসে যায় ওদের সাথে । এমনিতেই আজকে অনেক ভালো মন্দ বলে ফেলেছে সে ইরফানকে । এখানে অন্য কেউ হলে সোজা বের করে দিতো বাসা থেকে । তবে যেখানে ইরফান দোষী তাই সে চুপ করে যায় । খাওয়ার টেবিলে কেউ আর কোন কথা-ই বলে নি । বেলীও একদম অল্প কিছু খাবার খেয়ে উঠে যায় । ইরফান চলে যাওয়ার পর মিনু বেলীর কাছে আসে ।

– ভাবী ,,,,, ও ভাবী !!
– হু ,
– ভাইয়ের জানি কি হইছে ?
– কি ?
– এইযে , কেমন জানি চুপচাপ হইয়া গেছে , কথাও কম কয় । তয় ভাবী আমি একটা কাম কইরা ফালাইছি ।
– কি করলা আবার ?
– খুশির ঠ্যালায় রুবি শয়তানির নামে বদনাম করতাম গিয়া ভাইয়ের নামেও কইয়া ফালাইছি তাও ভাইয়েরই সামনে ।
– হায়রে মিনু তোমায় কত বার বললে তুমি ঠিক মত কাজ করবে ?
– কিচ্চি আমি ,
– কি দরকার অন্যের সমালোচনা করা , যে আমাদের সামনেই নেই তাকে নিয়ে সমালোচনা করা গীবত গাওয়া এক মিনু , এইসব আর করো না ।
– আইচ্ছা ।
– যাও শুয়ে পড়ো ,
– হুমু ডা কই ?
– কোথায় শুবে মানে ?
– মেহমান রুমে হুইতাম ?
– আমি নিজেও জানি না ।
– আপনের লাই ভাইয়ে কত কিছু আনছে । আপনেরে এহন ভাইয়ে অনেক ভালাবাসে গো ভাবী ।
– জানি না মিনু , আমার কপালে তো আবার বেশি সুখ সয় না ।
– সইবে ভাবী সইবে , ভাইয়ে জানি কেমনেই আপনের দিকে চায় । আপনের এই ভালা ব্যবহার খানা-ই ভাইয়েরে পাল্টাইয়া দিছে ভাবী ।
-……………
– আল্লাহ পাক কইছে ধৈর্য ধরতে , আপনেও ধরছেন , ফলও পাইতাছেন ভাবী । আমি দোয়া করি আপনি যেন এইভাবেই ভালা থাকেন ভাবী ।
– গেষ্ট রুমেই ঘুমাও তুমি , কেমন ?
– আইচ্ছা ,

মিনুকে গেষ্ট রুমে শুতে বলার হয়তো কারণ ছিল । সে জানতো হয়তো ইরফান আসবে । কারণ ইরফান জানে বেলী ওই রুমে যাবে না । তাই ইরফান নিজেই বেলীর রুমে আসে । হয়তো আজকেও আসবে । এইসব ভেবেই মিনুকে সেখানে শুতে বলেছে বেলী ।

সব কাজ শেষ করে নিজের রুমে যায় বেলী । দরজাটা পুরো না লাগিয়ে আলগা করে রাখে সে । রুমের ফার্নিচার গুলো দেখছে সে । যেই রুমটা আজ সকালেও খালি ছিল সেই রুমটা এখন ভরাট করে দেয়া হয়েছে । বার বার ইরফানের কথা মনে হচ্ছিল বেলীর । ইরফান কেন তাকে এত মায়ায় ফেলে দিচ্ছে । সে যে এমনিতেই ইরফানের প্রতি দুর্বল । ইরফান এমন করে তাকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে ।

– মানুষটার মনের মধ্যে যে কি চলে তা কেবল মানুষটাই জানে । আমায় এইভাবে মায়ায় কেন যে জড়াচ্ছে সে-ই ভালো জানে ।

বেলীর একা একা কথা বলাটা ইদানীং অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে । যখন একা থাকে তখনই একা একা কথা বলে তাও শুধু ইরফানকে নিয়ে ।

– মানুষটার মনের মধ্যে একজনের চলাচল চলে । আর মানুষটা তোমাকে মায়ায় জড়ায় নাই তুমিই মানুষটাকে জড়িয়ে নিয়েছো তোমায় মায়ার মাঝে ।

ইরফানের কন্ঠস্বর শুনে বেলী পিছনে তাকায় । ইরফান সেদিনের মত আবারও রুমে দাঁড়িয়ে আছে । আর আজও বেলীর কথা গুলো শুনে নেয় । বেলীর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকা ইরফানকে দেখে বেলীর ভিষণ লজ্জা লাগছিল । বেলীর মন তখন একটা কথাই বলছে ,

– এমন টা কেন হয় , যখন আমি একা কথা বলি আর উনিই এসে শুনে নেয় । আমি আর কখনও একা একা কিছু বলবো না ।

ইরফান তখন বেলীর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় । বেলীর হাত ধরে বেলীকে বিছানায় বসায় সে । তাকিয়ে আছে বেলীর দিকে এক দৃষ্টিতে । বেলীও চুপচাপ , তেমন কিছুই বলে নি সে । তখন ইরফানই বেলীর বাম হাত টা ধরে নেয় ।

– বেলী,,,,,,,,?
– আর কিছু চাই তোমার ?
– উহু ,
– কিছুই চাই না ?
– উহু ,
– আমাকেও চাই না তোমার ?

ইরফানের মুখ থেকে ঠান্ডা আমেজে বেরিয়ে যাওয়া কথাটা বেলীর ভেতরটাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয় । মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকায় সে । মন অনেক জোরে জোরে বলছে তাকে ,

– বেলী বলে দেও , হ্যাঁ আমার তোমাকে চাই ।

বেলীর মুখ থেকে যেনো কথা আসে না । গলা অবদি কথা এসে আটকে আছে তার । সে কি বলবে কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না । অন্যদিকে বেলীর নিরবতাতে ইরফান তার দোষের প্রমাণ খুজে পায় । ইরফান বেলীকে ঘুমিয়ে পড়ো বলে উঠে চলে যেতে নিলে বেলী ডেকে দেয় তাকে ,

– শুনেন ,,,,,,,?

বেলীর মুখের শুনেন শব্দটা ইরফানকে আটকে দেয় ।

– হ্যাঁ বলো ,

বেলী তখন মাথা নিচু করেই বলে ,

– আমার দুইটা জিনিস চাই ।
– কি জিনিস বলো ?
– একটা সাদা শাড়ি আর একটা ফুলের মালা , মালাটা হতে হবে বেলীফুলের । সেই মালাটা খোঁপায় দিবো

বেলীর চাওয়া জিনিসগুলো অনেকটা স্বস্তা মনে হচ্ছিল । কারণ একটা সাদা শাড়ি সর্বোচ্চ হাজার টাকা , আর মালাটার দাম সর্বোচ্চ ৫০ কি ১০০ টাকা । বেলীর চাওয়া জিনিস গুলোর নাম শুনে অবাক নয়নে বেলীর দিকে তাকিয়ে থাকে ইরফান ।

– সাদা শাড়িই লাগবে ?
– হ্যাঁ , সাদা রঙটা অনেক ভালো লাগে ।
– তাই ?

বেলী উঠে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ায় , আর ইরফানের প্রশ্নের উত্তর দেয় ।

– হু , সাদা মানেই স্নিগ্ধতা । সাদা মানেই পবিত্রতা । সাদা মানে কাফনের কাপড় যাতে মানুষ শেষ শায়িত হয় ।
– মানে ?
– মানে সাদা পরতে মন চায় । আপনি আমার জন্যে সাদা শাড়ি আর মালা আনবেন । আর কিছু চাই না ।
-………………..
– আমি স্বর্ণ গয়না চাই না , এইসবের প্রতি লোভ কিংবা মোহ নেই । শুধু ওইটুকুনই চাই । দিবেন না বেলীফুলকে একটা সাদা শাড়ি আর একটা বেলীফুলের মালা । রক্তে মাংসে গড়া এই বেলীফুল যে শুধু ওইটুকুনই চায় ।

বেলীর এমনভাবে চাওয়ার দিকে ইরফান একটু হলেও ভড়কে যায় । এমন না যে সে এনে দিবে না । কিন্তু বেলীর চাওয়া জিনিস গুলো একদম অদ্ভুত লাগছিল তার কাছে । কেমন যেনো হচ্ছিলো তার ভেতরে । বেলী কি বোঝাতে চাইছে কিংবা কি করতে চাইছে তার কিছুই সে এই মুহুর্তে বুঝতে পারছে না । এরই মাঝে বেলী তখন দূর আকাশে পূর্নিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে আবারও বলে ওঠে ,

– বেলী একটা সাদা শাড়ি আর একটা বেলীফুলের মালা চায় । দিবেন না আমায় ?

.
.

চলবে………………..

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল পর্ব_২২

0

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
পর্ব_২২
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

সকাল থেকে বিকেল অবদি বেলী আর মিনু একা বাসায় । আজ ইরফান একটু তাড়াতাড়িই বেরিয়ে গেছে । বেলী ঘুম থেকে উঠে ইরফানকে দেখতে পারে নাই । শরীর দুর্বল হওয়ার কারণে ঘুম আসলে আর সজাগ হতে পারে না সে । আজ দুই দিন ধরে নামাজ বাদ পড়ছে বলে আক্ষেপের শেষ নেই তার । আজ শরীরটা ভালো লাগায় নিজেই আস্তে আস্তে মিনুর সাথে মিলে সব কাজ করেছে । বিকেলের দিকে আসর নামাজ পড়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে গতকাল রাতের কথা মনে করে বেলী ।

– গতকাল রাতে কি একটু বেশিই বলছিলান তাকে ? জানি না কেন জানি নিজের কাছেই লজ্জা লাগতেছে এখন । মানুষটা যেমনই করুক এখন তো আর খারাপ আচরণ করে না আমার সাথে । আমার যথেষ্ট খেয়াল রাখে সে , তাহলে কিভাবে এত কিছু বললাম আমি । আজ দেখাও করে গেলো না আমার সাথে ।

নিজেই একা একা এইসব বলছে আ আফসোস করছে । এমন সময় ,

– দেখা কইরা যায় নাই তো কি হইছে ? কইয়া তো গেছে ।

মিনুর কথায় বেলী পিছনে ফিরে তাকায় । দেখে মিনু দাঁড়িয়ে আছে মাজায় হাত দিয়ে । মিনু মেয়েটা অতি ভালো , তবে চঞ্চল । মুখে সারাদিন হাসিই থাকে , মানুষের বাসায় কাজ করে খায় তবুও নিজের উপর পুরো আস্থা আর বিশ্বাস আছে তার । মিনুকে দেখে বেলীর মনে একটা কথা-ই আসে , ” মিনু না থাকলে আমি হয়তো কবেই শেষ হয়ে যেতাম ”
মিনু লাফিয়ে লাফিয়ে বেলীর কাছে আসে ,

– আহহহ মিনু !
– কিচ্ছে ?
– এইভাবে লাফাও কেন , নিচের ভাড়াটিয়াদের সমস্যা হবে তো ?
– হেতেগো সমিস্যা হইলে আমার কি আসে যায় । বাদ দে তো হেগো কতা । কার কতা আপনে এইহানে খাড়াইয়া খাড়াইয়া ?
– কই ?
– উহু , আমি তো হুনছি ।
– আমি যে কেন আজ দেরি করে উঠলাম ?
– তয় কি অইছে ?
– উনি কি নাস্তা করে গেছে ?
– হ এক পিচ বেরেড আর এক গেলাস পানি খাইছে ।
– ব্যাস এইটুকুই ?
– হ
– ইদানীং সে তেমন কিছুই খায় না ?
– আপনে মনে হয় কত খান ?
– কিছু বলে গেছিলো ?
– কইছিল বেলীর দিকে খেয়াল রাখিস । ভাইয়ে ভালাবাসে আপনারে ।
– জানি নাগো ।
– দেইখেন , তার মন আপনারেই চায় ।
– কিন্তু রুবি আপু ?
– হেই অসিভ্য মাতারি গুল্লি মারা খাউক ।
– ছিহ কি সব বলো মানুষ সম্পর্কে ?
– কম তো জ্বালায় নাই আপনারে ।
– সে করছে বলে তো আর আমি করতে পারবো না তাই না ।
– তয় যান , গিয়া আদর কইরা সতীন লইয়া আসেন । হুনেন ভাবী , আপনে বাঁচলে বাপের নাম বুজ্জেন । আমি যদি না বাঁচি বাপরে লইয়া ভাবুম কোন সময় ।
বহুত অইছে , এহন নিজের কতা ভাবেন ।
– ভাবতেই চাই কিন্তু পারি না যে ?
– অন্তরডার মইধ্যে অনেক কষ্ট , কেন ?
– যন্ত্রণায় বুকটা ব্যাথা করে , কলিজাটা ফেটে যায় । একবার যদি তাকে আপন করে পেতাম ।
– পাইবেন ভাবী , পাইবেন ৷ আল্লাহ পাক আপনের জন্যে অনেক ভালা কিছু রাখছে , পাইবেন আপনে ।

মিনুর কথায় একটু হলেও সাহস পায় বেলী । জীবনের গল্পটা হয়তো এক এক সময় এক এক রকম মোড় নেয় । নতুন মোড়ে গিয়ে জীবন নতুন কিছু শিখতে পারে ।

অন্যদিকে অফিসে কাজের ফাঁকে ইরফান একবার রুবিকে ফোন করে । ভেবেছিল রুবির সাথে কথা বলা প্রয়োজন । তাই ফোন দিয়েছি রুবিকে । দুই থেকে তিনবার ফোন যাওয়ার পর রুবি ফোন রিসিভ করে ।

– কি হয়েছে ?
– ফোনটা রিসিভ করে সালাম দিতে হয় রুবি ?
– ধুর , এত সালাম দেয়ার সময় নাই আমার , হয়েছে কি তাই বলো ।
– বাড়ি ফিরবে না ?
– কেন , তোমার সো কলড বড় বউয়ের সেবা যত্ন করতে হবে নাকি ?
– এইভাবে কেন কথা বলো রুবি ?
– এই শুনো শুনো আমার সাথে একদম নাটক করবা না , ওকে ? হয় ওই মেয়েকে তাড়াও নয়তো আমি এখানেই থাকবো ।
– আমরা স্বামী স্ত্রী রুবি ।
– তো কি হয়েছে এখন ? স্বামী স্ত্রী বলে কি আমি তোমার ওই বউয়ের সাথে থাকবো নাকি ? এটা তো একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার ।
– আগে কিভাবে ছিলা ?
– আগের সিচুয়েশান অন্য ছিল আর এখনকারটা অন্য ।
– উহু , সিচুয়েশান একই আছে । তুমি পালটে গেছো । আগে বেলীকে মারধর করতাম বলে আমি ভালো ছিলাম । রোজ আমায় নিয়ে ও-কে দেখিয়ে দেখিয়ে অনেক কথা বলতে পারছো তাই ভালো লাগছে এখন আমি তাকে মারধর করি না আর তার কাছে আমায় নিয়ে বাড়তি কিছু বলতেও পারো না তাই এখন আমি খারাপ সিচুয়েশানটাও অন্য রকম হয়ে গেছে । তাই না রুবি ?
– অনেকটা সেই রকমই , হয় বেলী নয় রুবি । বাকিটা তোমার ডিসিশন ।
– আমি যদি বলি বেলীকে ছাড়া সম্ভব না তখন কি করবা তুমি ?
– হা হা আমি তোমায় ছেড়ে দিবো ।
– রুবি,,,,,,,,,?
– কি হলো , অবাক হলা নাকি ?
– অবাক না , শিহরিত হলাম সাথে উল্লাসিতও ।
– হওয়া ভালো ।
– এই ভালোবাসলা আমায় , জানো তো রুবি , বেলী কিন্তু তুমি থাকার পরেও আমায় ছেড়ে যায় নি ।
– ওইটা দেখে অশিক্ষিত বর্বর গাইয়া ভূত , আমি কি ওর মত নাকি , আজ রাস্তায় দাড়ালে হাজার ছেলের লাইন লাগবে , আমার বাবার অঢেল আছে । তখন কেউ দেখবে না আমার বিয়ে একটা হয়েছিল নাকি দশটা হয়েছিল ।
– ছিহ রুবি ? এইভাবে বলতে পারলা তুমি ?
– পারলামই তো , আগেই তো বললাম হয় আমি নয় ওই মেয়েটা ।
– আমি তোমাকে ফোন করেছিলাম অন্যকিছু ভেবে , কিন্তু তুমি যা বললা তাতে আমি খুব খুশি হলাম ।
– বেশ , ডিসিশন জানিয়ে দিও । আমি ওইভাবেই আগাবো ,
– কিভাবে ?
– আইনিভাবে , রাখছি ।

রুবি লাইনটা কেটে দেয় । আইনিভাবে এগুবে তার মানে ও ডির্ভোসের দিকে যাবে । ভাবতেই হালকা হাসি দেয় ইরফান । আজ নিজেকে পৃথিবীর সেরা গর্দভ মনে হচ্ছে তার । এ কাকে বিয়ে করেছিল সে , যে নিজের স্বার্থ ছাড়া এক পা নড়ে না ।

– জীবনে মাকে দেখি নি । তবে নারী দেখলান , দু’রকমের নারী । এক রকম নারী হয় যারা নিজেকে উজাড় করে দেয় অন্যের ভালোবাসার কাছে । অন্যকে ভালোবেসে নিজের সব দিয়ে দেয় । অন্যের কাছ থেকে কিছু না আশা করেই বিলীন করে দেয় নিজেকে । আর আরেক নারী দেখলাম , যে শুধু নিজেরটাই বুঝে । নিজের ভালো থাকা নিজের মন্দ থাকা নিজের সৌখিনতা সবটাই বুঝবে । যে নিজের ইগো’র জন্য আমায় ছাড়তে রাজি , সে কি আদৌ আমার স্ত্রী ? আজ মুক্ত কন্ঠে বলতে ইচ্ছে করে হ্যাঁ , আসলেই আমি একজন খারাপ মানুষ । যে কিনা এক মহীয়সী নারীকে দিনের পর দিন কষ্ট দিয়েছি । আল্লাহ পাক হয়তো এর শাস্তি আমায় রুবিকে দিয়ে দেখালেন । আর বেলীর নিরবতা আমার বন্ধ চোখকে খুলে দিয়েছে ।

নিজের কেবিনে বসে ভুল গুলো স্মৃতিচারণ করে নেয় ইরফান । আসলেই তার হয়তো এইবার চোখ খুলে গেছে । ডেস্ক থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে গ্যালারিতে যায় সে । সেখানে গ্রামের বাড়িতে বেলীর কিছু ছবি ছিল । ছবিতে নিজের নজর রাখে সে ।

– তুই বেলী একটাই রে । আমি ধন্য তোকে পেয়ে । তুই-ই সেই নারী যে কিনা আমায় নিয়ে বেহেস্ত পর্যন্ত যেতে পারবি । তুই বেলী হাজারে একটাই হোস । ভালোবাসিরে অনেক ভালোবাসি । তোকে যতটা না ভালোবাসি ততটাই নিজেকে ঘেন্না করি না । ছোট হয়ে গেলাম নিজের কাছে নিজে ।

চোখ জোড়া মুছে নেয় ইরফান । আজ কেন যেন নিজের চোখ দিয়ে ক্রমশ পানি বের হচ্ছে তার । কিসের জন্যে বুঝতে পারছে না । তবে এই পানি হয়তো দুঃখের নয়তো সুখের । হয়তো রুবির করা স্বার্থপরতা অথবা বেইমানির জন্যে নয়তো বেলীর উজাড় করা ভালোবাসার জন্যে ।

সময় এসে গেছে সব ঠিক করার । এরপর হয়তো আর সময় নাও থাকতে পারে । ভুল গুলো শুধরে নিতে হবে । না হয় যে

” সময় গেলে আর সাধন হবে না ”

.
.

চলবে…………………

[ বিঃদ্রঃ রুবির বলা কথা গুলো সেইসব পর্যায়ের যে পর্যায়ে মানুষ একদম স্বার্থপর হয়ে যায় । হ্যাঁ , একজন নারীর একাধিক রুপ হয় । যখন সে ভালো তো ভালো , যখন সে খারাপ তো খুব খারাপ । তবে রুবির মত এমন অনেকেই আছেন আমাদের সমাজে আর আমার চোখের দেখাতেও যে কিনা অন্য মেয়ের সুখ সহ্য করতে পারে না । নিজের নিজের নিজের সব সময় নিজের জন্যই ভাবা । হ্যাঁ , নিজের জন্য ভাবা ভালো তবে সব কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে নয় । কখনো কখনো সেক্রিফাইজ জিনিসটাও প্রয়োজন । সেক্রিফাইজ করতে পারে হয়তো বেলীর মত মেয়েরা । একটা পয়সার দুটো দিক তেমনি সমাজের সব নারী আবার সব পুরুষ এক নয় । ভালো খারাপ মিলিয়েই মানুষ হয় । রুবিকে দেখেই বোঝা যায় নারীজাত কেমন হয় আবার অন্যদিকে বেলীকে দেখেও বোঝা যায় নারীজাত কতটা নরম হয় । যে কিনা সারাজীবন মুক্ত হস্তে নিজের সুখ শান্তি বিলীন করে দিয়ে সবাইকে ভালোই রেখে যায় । হয়তো কোন এক সময় পারি দেয় পরপারে ]

আসসালামু আলাইকুম ,

জানি ছোট হয়ে গেছে , আর দেরিও হয়ে গেছে , তবে কিছুই করার নাই । বহু কষ্টে এইটুকুন লিখতে পারছি । আমি এখনও বাহিরে । তবুও লিখে গল্প পোস্ট করলাম । আশা করি বুঝবেন সবাই । ইনশাআল্লাহ পরবর্তী পর্ব বড় করে দিবো । আর হ্যাঁ পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলি , আমায় কেউ প্রেশার ক্রিয়েট করবেন না গল্পের সমাপ্তি নিয়ে । কারণ আমি আপনাদের সবার কথা শুনতে শুনতে নিজেই এখন কনফিউজড যে আমি কি সমাপ্তি দিবো এটার । এ যাবত আমি ৫ টা সমাপ্তি করেছি । কোনটা দেই ঠিক নাই । তবে যেটা দিবো ইনশাআল্লাহ ভালো করে দেয়ার চেষ্টা করবো । হয়তো আপনারা হাসবেন নয়তো কাঁদবেন । দুইটাতেই আমার স্বার্থকতা হবে । আর হ্যাঁ নাম অনুযায়ী থিম সাজানো । আশা করি বুঝবেন সকলে । আল্লাহ হাফেজ ।

আসসালামু আলাইকুম ।

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল পর্ব_২১

0

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
পর্ব_২১
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

বুকের মধ্যে নিমিষেই এক তুফান শুরু হয়ে যায় বেলীর । আসলেই কি সুখের মিলন হতে দেয়া যায় ? অসলেই কি একটু সুখের মিলন হলে খুব বেশি ক্ষতি হবে ? তবুও কেন যেন কোথাও একটা বাঁধা কাজ করে বেলীর মাঝে । আবার নাও করতে পারে না , যতই হোক স্বামী তো তার । বিয়ের পর বাবা মায়ের পর স্ত্রীর উপর তার স্বামীর অধিকার থাকে বেশি । কিন্তু বেলীর ভেতরটা হু হু করে কেঁদে ওঠে তখন যখন ইরফানের করা সমস্ত খারাপ আচরণ গুলো মনে পড়ে যায় । যখন মারধরের দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে । বেলী তখন নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না ।
আজও ব্যাতিক্রম কিছু ঘটে নি তার সাথে । সুখের মিলনের সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সেইসব বিষাদের দিন গুলো মনে পড়ে যায় বেলীর । ইরফানের হাতের স্পর্শ পাওয়ার সাথে সাথে অন্তরখানা পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে তার । নিজের ভেতরে উথালপাতাল শুরু হয়ে গেছে বেলীর । কেন যেনো মানতে পারে না সেও । এতটা কষ্ট কি তার পাওনা ছিল ? নিজের কাছে এইসব জিনিস গুলো লজ্জাজনক লাগে বেলীর কাছে ।
বেলী আর সহ্য করতে পারেনি । পিছন ফিরেই ঝাপটে ধরে ইরফানকে । বেলীর এইভাবে ঝাপটে ধরা দেখে একটু হতভম্ব হয়ে যায় ইরফান । বেলী শব্দ করেই কেঁদে দেয় ইরফানের বুকে । দুইহাতে নিজের মুখ ঢেকে ইরফানের বুকে হাতে আবদ্ধ সেই মুখটি লুকিয়ে রেখে কেঁদে ওঠে বেলী । এক সময় ইরফান বেলীর পিঠটা নিজের হাত দিয়ে আগলে ধরতে যাবে তখনই বেলী ধুপ করে কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়ে । একে তো শরীর খারাপ তার উপর এইভাবে কান্না করাটা তার শরীরের পক্ষে খারাপ হতে পারে । মুহুর্তের মাঝে ইরফান চমকে যায় , বেলীর কান্না আরেকটু জোর শব্দে পরিণত হয় । ফ্লোরে বসে মুখ চেপে কাঁদতে থাকে মেয়েটা । ইরফান হাটু গেড়ে নিচে বসে পড়ে বেলীর কাছে । হাতটা দিয়ে বেলীর মাথায় রাখে ।

– কি হলো ? এইভাবে কাঁদছো কেন ?
-…………….
– এই বেলী এইভাবে কাঁদছো কেন ?
-………………

কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে মেয়েটার । ইরফান বেলীর কান্না থামানোর জন্যে গ্লাসে এনে পানি দেয় তাকে খাওয়ার জন্যে । কিন্তু বেলী খায়নি । তারপর কেন জানি নিজ থেকেই ইরফানের হাতটা টেনে নিজের কাছে বসায় সে । কাঁদতে কাঁদতে বলতে শুরু করে দেয় বেলী ।

– আপনি আমায় অনেক মারছেন । আপনি জানেন আমি কত ব্যাথা পাইতাম তখন ? আমার অনেক ব্যাথা লাগতো আমি তবুও কিছু বলতাম না আপনাকে । আরে ভালো না বাসতেন তাই বলে এইভাবে মারবেন ? আপনার এক একটা লাথি এক একটা ঘুষি অনেক ব্যাথা দিত আমার এই শরীরটাকে । আপনি জানতেন না আমি কত রাত ব্যাথার যন্ত্রণায় ঘুমাইতে পারি নাই । সেইবার শলার ঝাড়ু দিয়ে পর্যন্ত মারছেন । এমন ভাবে মারছেন যে শলা পর্যন্ত ঢুকে গেছে শরীরে । এইভাবে বুঝি কেউ কাউকে মারে , হ্যাঁ ।
এই দেখেন৷, এইদিকে দেখেন , আমার এই শরীরটা যখন স্বামীর ছোয়া পেতো তখন এই শরীরটা স্বামীর মাইর পাইছে । এই ইরফান সাহেব , আমাকে এত মারছেন কেন ? আমাকে বললেই হইতো আমি চলে যেতাম । বা ভাতের সাথে বিষ দিয়ে দিতেন খেয়ে মরে যেতাম । তবুও না মারতেন । এইদিকে দেখেন , এই যে দেখেন আমার পিঠটায় কত দাগ এখনও আছে । সেইবার বেল্ট দিয়ে মারছেন । আচ্ছা একটুও মায়া হয় নাই , তাই না ? বেলীকে যে এইভাবে মারি ওর শরীরটা কি এত মাইর নিতে পারে ? একবার জানতে চান নাই , তাই না ? ওইদিন চা দিতে একটু
দেরি হয়ে গেছিলো বলে এইভাবে মারছিলেন । আপনি আমায় মেরে কেন ফেলান নাই ? হ্যাঁ , কেন মেরে ফেলান নাই আমাকে আপনি ? শুনেন না , এইদিকে তাকান আমার দিকে , আমি কিন্তু অনেক ব্যাথা পাইতাম যখন মারতেন , কিন্তু শব্দ করতাম না । বলেন করতাম কিনা , বলেন না , আমি কি মারার সময় কোন শব্দ করতাম ?

বেলী নিজের মাঝে তখন ছিল না , সে অনেকটা উন্মাদ হয়ে গেছে মনে হচ্ছিলো । চোখের পানি নাকের পানি এমনকি লালা চলে আসছে মুখ দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে । হয় অনেক সময় এমন । মানুষ যখন অতি শোকে পাথর থাকে তারপর সেই পাথর গলে গেলে তখন যেই পতিক্রিয়া হয় এখম সেই প্রতিক্রিয়াটা হচ্ছে বেলীর । ইরফানের ভেতরের কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে বেলীর এমন পাগলামি দেখে । সে একদম নিশ্চুপ হয়ে ফ্লোরে বেলীর সামনে বসে আছে । বেলী হাত ধরে জোড়াজুড়ি করছিল উত্তর জানার জন্যে । তখন বাধ্য হয়েই ইরফান জবাব দেয় ৷

– উহু কোন শব্দ করতে না ।

তখন বেলী আবারও কেঁদে দেয় । এইবার ইরফানের দুই হাত ধরে নিজের কাছে আনে বেলী । তারপর আবার বলা শুরু করে সে ,

– যখন দেখতেন আমি শব্দ করতাম না তখনও কি মায়া হতো না আমার উপরে । খালি মেরেই গেছেন মেরেই গেছেন । আমি কি ব্যাথা পাই না বলেন ? আমিও ব্যাথা পাই ।
– হু , আমি তো অমানুষ , আমি বুঝতেই পারি নাই এটা যে একটা ফুল । যেই ফুলটা একদম নিষ্পাপ , সেই ফুলটাকেই এত অবহেলা করে বসলাম ।
– আমি কি করছিলাম হ্যাঁ , কি করছিলাম , আপনি আমায় একটুও দেখতে পারেন নাই , বলেন । আমি কি বলছিলাম যে আমাকে বিয়ে করেন , তখন তো আমার বাবা আর আপনার বাবা বললেন আমি কি করতাম । বাপ আমার মরে গেল , তখনও আপনার বাবা বিয়ের কথা বলে গেছে আমার মাকে । আমার কি অপরাধ ছিল । আমি একদিন নামাজ পড়তেছিলাম সাড়া দিতে পারি নাই বলে জুতা নিয়ে আসছেন আমাকে মারার জন্যে । আমার তখন কি অন্যায় ছিল , বলেন তো ?
– অন্যায় তোমার না , অন্যায় ছিল আমার । আমিই খারাপ মানুষ , আমিই কষ্ট দিলাম তোমাকে ।
– আমার বাপ মা আমায় মারে নাই , আমি তাদের কাছে ফুল ছিলাম তাদের শখের বেলীফুল , আর সেই ফুলটারেই আপনি ছিড়ে ফেললেন এইভাবে ? এর থেকে ভালো ছিল আমায় বিষ দিয়ে মেরে দিতে । আমি টু-শব্দটাও করতাম না ।

ইরফানের আর সহ্য হয়নি । এক টানে বেলীকে নিজের বুকে এনে ফালায় সে । তারপর বসা অবস্থাতেই শক্ত করে ধরে রাখে বেলীকে । ইরফান আজ কাঁদছে , ছেলেরা কম কষ্টে কাঁদে না । তাদের তেমন কষ্ট হলেই তারা কাঁদে । ইরফান আজ নিরবে কাঁদছে । বেলীকে নিজের কলিজায় ঢুকিয়ে রাখতে ইচ্ছা করছে তার । এইটুকুন একটা মেয়ে সে অথচ এই বয়সে সে কি কি সহ্য করে গেছে , তবুও মুখ খুলে নি । বেলী তখন ইরফানের বুকে থেকেই বলতে শুরু করে ,

– বুঝবেন বুঝবেন একদিন ঠিক বুঝবেন , আমি যেদিন থাকবো না সেদিন খুব করে বুঝবেন । আমি তখন আকাশের তারা হয়ে যাবো , আমি আর আমার বাবা তখন উপর থেকে দেখবো আপনি কিভাবে কান্না করেন । হারিয়ে যাবো আমি আপনার জীবন থেকে , তখন বুঝবেন , হ্যাঁ , দেইখেন তখন বুঝবেন ।

বেলীর কথা শুনে ইরফান বেলীকে আরও শক্ত করে ধরে রাখে আর বলে ,

– চুপ , একদম চুপ । তোকে হারাতে দিলে তো হারাবি ।
– বেলীফুল ঝরে যাবে ।
– কখনো না ,
– হ্যাঁ , দেইখেন আপনি বেলীফুল ঝরে যাবে । সেইদিন বেলীফুলের কবরের পাশে বসে শুধু চেয়ে দেখবেন আপনি আর বেলীফুল তখন মিশে থাকবে মাটির সাথে ।

বেলীর কথা শুনে ইরফান আবারও ধমক দিয়ে থামায় বেলীকে ।

– থামবি তুই , না হয় আবার মারবো কিন্তু ,
– মারেন , আরও মারেন ।
– হ্যাঁ মারবোই তো এইবার সত্যি সত্যি মারবো ।
– মারেন ,
– এখন কিন্তু মার খাবি বলে দিলাম ,
– হ্যাঁ মারেন , মেরেই ফেলেন আমাকে ।

ইরফান এইবার বেলীকে ছেড়ে দেয় । নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয় বেলীকে । তারপর উঠে দাঁড়ায় সেইস্থান থেকে । বেলী তখনও বসা অবস্থাতেই আছে । ইরফান বেলীকে সেইভাবেই কোলে তুলে নেয় । কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয় বেলীকে । অঅন্ধকার রুমে ড্রীম লাইটের আলোয় যতটুকু দেখা যায় তাই-ই অনেক । পাশে থাকা টাওয়ালটা দিয়ে বেলীর চোখের পানি নাকের পানি সব মুছে মুখটা পরিষ্কার করে দেয় ইরফান
। তখন বেলী চুপ করে থাকে আর ইরফানের দিকে চেয়ে থাকে । ইরফান বেলীর মাথায় হাত রাখে ,

– ঘুমাও , আর একটা কথা না । কাল সব শুনবো আমি ।
-………………
– আর হ্যাঁ আমি আসলেই খারাপ মানুষ , কি করার আল্লাহ পাক তোমার ভাগ্যে এই খারাপ মানুষটাকে রাখছে । তাই কিছুই করার নাই । কাঁদবা না একদম , চুপচাপ ঘুমাবা ।

বেলী একদম চুপ করে শুয়ে আছে । চোখে তার ঘুমের নেশা । চোখ গুলো টিপ টিপ করছে আর বুজে আসছে । ইরফানের বেলীর মাথায় হাত বুলানোটা কাজে এসেছে । ইরফানের ডান হাতটা ধরে আছে বেলী । তারপর একটা সময় বেলী আস্তে করে ঘুমের রাজ্যে চলে যায় ।
বেলীর ঘুমন্ত চেহারার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ইরফান । বেলীর আজকের কথাগুলো ইরফানের ভেতরটাকে নাড়িয়ে দিয়েছে । বেলী ঘুমানোর পর ইরফান বেলীকে রেখে নিজের রুমে যায় ।

ইরফান কখনো বাসায় স্মোক করে না । তবে আজ সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে স্মোক করছে । ঘড়িতে প্রায় ২ টা বাজে । রাত গুলো হয়তো এমনভাবেই কাটবে তার । এমন নির্ঘুম আর নিস্ত নিস্তব্ধ । বেলীর কথাগুলো বার বার কানে বাজতে থাকে ইরফানের , বেলীর কষ্ট গুলো বার বার বেলীকে মনে করিয়ে দেয় তার প্রতি ইরফানের করা পৈশাচিকতা গুলো । যা সে ভুলতে ভুলতেও ভুলে নি । হয়তো ভুলতেও পারবে না ।

একদিকে রুবি অন্যদিকে বেলী । রুবিকে সে ছাড়তে পারবে না যদি না রুবি চায় আর বেলী চাইলেও বেলীকে সে ছাড়তে পারবে না । এক সাথে দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা যায় না । তেমনি দুই বউ নিয়ে চলা যায় না । হয়তো চলা যায় তবে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । সেইজন্যেই হয়তো বলে সবাই ,

” ভাবিয়া করিও কাজ , করিয়া ভাবিও না ”

হাতে থাকা সিগারেটটায় শেষ টান দিয়ে আগুন নিভিয়ে নিচে ফেলে দেয় ইরফান । বেলীর সাথে করা সমস্ত অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে তাকে । অনেক সময় লস হয়ে গেছে । আর সময় নষ্ট করা যাবে না । পর মুহুর্তে বেলীর বলা কথাটা মনে পড়ে যায় ইরফানের ,

” দেইখেন আপনি বেলীফুল ঝরে যাবে । সেইদিন বেলীফুলের কবরের পাশে বসে শুধু চেয়ে দেখবেন আপনি আর বেলীফুল তখন মিশে থাকবে মাটির সাথে ”

বেলীর কথাটা অন্তরে দাগ কেটে গেছে । সে বেলীকে এইভাবে ঝরে যেতে দেবে না । আগলে রাখবে নিজের বুকের সাথে অতি যতনে ।

– বেলী আমি তোকে চলে যেতে দিবো না । মন পিঞ্জরে যতন করে আটকে রাখবো তোকে । তুই দেখে নিস এই ইরফান তোকে সেই সব খুশি দিবে যা তোর প্রাপ্য । আমার মনের মধ্যে রাখা পুরো জমিনেই তোর রাজত্য চলবে । দেখে নিস তুই ।

বিছানায় শুয়ে এইসব ভাবতে কখন যেনো ঘুম চলে আসে তার চোখে । মনের ভুলে বেলীর রুমেও যেতে ভুলে গেছে সে । নিজের রুমেই ঘুমিয়ে যায় সে নতুন এক ভোরের আশায় সেই সাথে নতুন করে সব ঠিক করার আশায় । যা আদৌ সম্ভব কিনা জানা নেই কারো ।

.
.

চলবে……………………..

[ ভেবেছিলাম দিবো না , পোস্টও দিয়ে দিছিলাম , কিন্তু পরে কেন জানি লিখতে ইচ্ছা হলো । অনেকে নক করে বললেন আপু অপেক্ষায় ছিলাম , তাদের জন্যে আর বাকি সবার জন্যে আবার লিখতে বসলাম মাগরিবের পরেই ]

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল পর্ব_২০

0

ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
পর্ব_২০
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

বেলীর কথা গুলোর মাঝে লুকায়িত কষ্টটা খুব সহজেই ইরফানের চোখে লাগে । তার চলে যাওয়ার পর রুবি যে এমন কিছুই করবে সেটা তার জানা ছিল । তবে এতে বেলীর না আছে কোন অভিযোগ না আছে কোন অনুযোগ । বেলী সবটাই মেনে নিয়েছে । ইরফান কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না । তবুও একটু চেষ্টা সেও করবে । বেলীকে জোর করে শোয়া থেকে তুলে সে । তারপর ইরফান তার সামনে সরাসরি বসায় বেলীকে । খুব শান্ত নজরে তাকিয়ে আছে সে বেলীর দিকে । আর বেলী তাকিয়ে আছে নিচের দিকে । চোখ মুখ ফুলে একাকার । মনে হচ্ছে কেঁদেছে অনেক্ষণ যাবত । নিরবতা ভেঙে ইরফানই বলে ওঠে ,

– এত কষ্ট কিসের , বলা যাবে আমায় ?
-…………….
– দেখি আমি অধম কষ্ট কমাতে পারি কিনা ?
-…………….
– কি হলো ? কথা বলবা না ?
– একটা প্রশ্ন ছিলো ।
– হ্যাঁ করো ?
– আমি হঠাৎ এত ভালো হলাম কেন আপনার কাছে ? আর রুবি আপু-ই বা কেন খারাপ হলো আপনার কাছে ?

বেলীর প্রশ্নের সঠিক উত্তরটা ইরফানের কাছে নেই । পরিস্থিতিটাই একদম অন্যরকম এখন । চাইলেও সব কিছু ঠিক করা যাবে না । আর গেলেও সময় লাগবে । আপাতত বেলীর প্রশ্নের উত্তর কি দিবে সেটাই ভাবছে ইরফান ।

– বেলী,,,,,,,,,,,,?
– হু ,
– সারাদিন খাও নি কেন ?
– আমি প্রশ্নটা করছি কি তার উত্তর দেন ।

বেলীর কথায় ইরফান বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় । বেলীর রুমে একটা জানালা আছে । সেই জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় ইরফান । হাতে ধোঁয়া উঠা কফির মগ , পরনে কালো টাউজার আর ব্রাউন কালারের টি-শার্ট । বেশ হ্যান্ডসাম লাগছিল ইরফানকে তখন । বেলী এক ধ্যানে তার বরকে দেখছে ।

– উত্তর দেন আমার প্রশ্নের ।

বেলীর এমন কথায় ইরফান মুচকি হেসে কফির মগে চুমুক দেয় । তারপর বলতে শুরু করে ।

– আমি ছোটবেলা থেকে বরাবরই একা থেকেছি । একা একা স্কুলে যাওয়া কলেজে যাওয়া , কি করার ছিল , আমাকে জন্ম দেয়ার পরেই নাকি মা মারা গেছেন । সেই থেকেই আমি একা একা বড় হয়েছি । মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি সম্পর্কে ততটা জ্ঞান নেই আমার । ভার্সিটিতে মেয়েদের চাল-চলনই ছিল এমন যে ভেবেছি হয়তো এটাই মেয়েদের আচরণ । হুট করেই বাবা বিয়ে করতে বললো , তাও গ্রামের একজন মেয়েকে । যেখানে ৫ বছরে আমি ঢাকার মেয়েদের চলাফেরা পোশাক-আশাক এ নিজেকে মানিয়ে নিয়ে ছিলাম । আমি সব সময় চাইতাম আমার বউ হবে হাই এডুকেটেড , চলাফেরা হবে স্ট্যান্ডার্ড , অনেকটা রুবির মতই । বাবার প্রতি অনেক মেজাজ খারাপ হয়েছে আমার , আমার অমতে আমাকে বিয়ে করতে বললো তাও তোমাকে । বার বার বলেছিলাম বিয়ে করবো না ও-কে আমার আব্বাজান শুনলেনই না আমার কথা । যাই হোক , বাবার সাথে জিদ করেই বিয়ে করলাম তোমাকে , কিন্তু মন থেকে মানতে পারতাম না । ওই জিদের জন্যেই তোমার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করতাম সাথে মারধরও করতাম । অন্যদিকে রুবি আমার লাইফে এসেছে তুমি আসার পরে । ওর চলাফেরা কথাবার্তা স্ট্যান্ডার্ড সাথে ও অনেক মর্ডান ছিল যা দেখে মোহে পড়ে গেছিলাম । বিয়ে অবদি যাবো ভাবি নি । কিন্তু রুবি অনেকটাই বাধ্য করলো বিয়েটা করতে , ভাবলাম ভালোই থাকবো কিন্তু মন জিনিসটার উপর কারো হাত থাকে না । রুবি ব্যস্ত তার ফেসবুক , স্ট্যাটাস , বন্ধু-বান্ধব , ঘুরাঘুরি , শপিং এইসব নিয়ে । আমি নিজেও জানি না কেন এমন হচ্ছে , আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি , তার মানে এই নয় যে আমার কাছে রুবি খারাপ হয়ে গেছে । রুবি এই জিনিসটাই মানতে পারছে না যে , আমি তোমার কাছে থাকছি । ভুল আমার একটাই , দ্বিতীয় বিয়ে করা , আর গর্দভের মত দুই বউকে একই বাসায় রাখা । এই সিচুয়েশানটা আমি চাইলেও হয়তো ঠিক করতে পারবো না ।

ইরফানের কথা শুনতে শুনতে বেলীর চোখ থেকে নিজের অজান্তেই পানি পড়ে যাচ্ছে । বেলীও চুপ করে সব শুনলো । তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দেয় , আর তারপর সে বলে ,

– তাহলে কাজ করেন ,
– বলো কি ?
– আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দেন , আর রুবিকে নিয়ে ভালো থাকুন ।
– হা হা , এটা তো কখনই সম্ভব না । কারণ তুমি সেই নারী যাকে আমার বাবা পছন্দ করে এনেছে । তোমাকে ছাড়া সম্ভব না ।
– বাবার পছন্দকে যখন সম্মানই করেন নি এখন আর বলে কি হবে ?
– শুনো বেলী , আমি তো রুবিকে বলি নি যে আমি ওর সাথে থাকবো না বা কিছু । আমি বলেছি আমি বেলীকেও সেই সম্মানটা দিবো যেটা ওর পাওনা ।
– কিন্তু সে তো এটা চায় না ।
– এটাই তো পয়েন্ট , বুঝো না কেন তুমি এটাই তো মেইন পয়েন্ট । সে চায় আমি শুধু তাকে নিয়েই মেতে থাকি । তো আমি ছিলাম তো মেতে তাকে নিয়ে , ফায়দা কি হলো , আমি যখন তোমাকে মারধর কর‍তাম আমি তখন ওর চোখে পৃথিবীর সেরা স্বামী । যখন সে দেখলো তার স্বামী তার সতীনকে প্রায়োরিটি দিচ্ছে তখনই আমি দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ খারাপ স্বামী ।
– কোন মেয়েই পারে না স্বামীর ভাগ দিতে ।
– তাহলে তো বলতে হয় , তুমিও তো মেয়ে , তুমিও তো স্বামীর ভাগ দিয়েছিলে , উহু তুমি তো পুরো স্বামীটাকেই দিয়ে দিছো ।
– আমি তো পরিস্থিতির স্বীকার মাত্র ।
– আমি জানি না কি করা উচিত আমার , তবে এতটুকু সিউর থাকো যে আমি তোমাকে ছাড়ছি না , কখনো না ।
– তাহলে রুবি আপু ?
– আমি তো রুবিকে বলিনি যে আমি রুবিকে ছেড়ে দিবো , সে চলে গেছে আবার তার বাপের বাড়ি । এখানে আমার কি করার আছে ।
– ফিরিয়ে নিয়ে আসেন ,
– এই থামো থামো , এটা মিনুর দেখা স্টার জলসার কোন সিরিয়াল না যে ন্যাকামি হবে এখানে । এটা বাস্তবতা , এখানে সব হয় শুধু ড্রামা হয় না । যেই মানুষকে ভালোবাসা যায় তাকে ছাড়া যায় না । তুমি ছাড়তে পারছো আমায় ? এত মারধরের পরেও কেন পড়েছিলে এখানে । যেখানে সে বার বার বাপের বাড়ি দৌড় দেয় । আর তুমি কাকে ফিরিয়ে আনতে বলো , যে তোমাকে ভাতের খোটা দেয় তাকে । এইসব আমায় বলো না বেলী ।
– কাউকে কষ্ট দিয়ে যে আমি ভালো থাকবো না । তার অভিশাপ লাগবে আমার উপর ।
– শকুনের দোয়ায় গরু মরে না । এইসব বাদ দাও ।

মানুষের তার স্বীয় কর্মের উপর হাত থাকে না । ভুল কৃতকর্মের জন্য সারাজীবন পস্তাতে হয় । আর সেই ভুল কৃতকর্মের মাশুল দিতে গিয়ে হয়তো সারাটা জীবন পার হয়ে যায় । ভিন্ন ভিন্ন সময়ে মন ভিন্ন ভিন্ন আবেগ পালে , কিন্তু একটা সময় আসে যখন সব আবেগ বিবেকের কাছে ধুয়ে মুছে যায় । তখন মানুষ শক্ত হয়ে যায় । ইরফানেরও একই অবস্থা । আগে সত্যিটাকে মানতে পারেনি , আর এখন মেনেছে তবে আরেকটা ভুল করার পর মেনেছে । যেই ভুলটা হয়তো ঠিক করা যাবে না আবার হয়তো যতদিন বাঁচবে ততদিন এই ভুলটাকে মেনে নিয়েই বাঁচাতে হবে । নিয়তির উপর কারো হাত থাকে না । ভাগ্য বড় স্বার্থপর একটা জিনিস । সে তার মত করেই সব নিয়ন্ত্রণ করে । মনের দিকটা বিবেচনা করার সময় এবং সুযোগ কোনটাই তার কাছেও থাকে না ।

বেলী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে । তারপর উঠে গিয়ে ইরফানের কাছে এসে তার পাশে দাঁড়ায় । ইরফানের দিকে চেয়ে আছে সে । আর ইরফান জানালার দিকে । দুচোখে ঘোর লাগানোর মত চেহারা ইরফানের । যেই চাহনির প্রেমে পড়তে বাধ্য যে কোন নারী । ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি টা বরাবরই মানায় ইরফানকে । বেলী কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ইরফানকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলে উঠে ।

– ভালোবাসা এবং ভালোলাগা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস । আপনার হয়তো আমায় ভালো লাগে । ভালোবাসা টা আপনার পক্ষ থেকে আমার জন্যে না ইরফান সাহেব ।

বেলীর কথা শুনে ইরফান ঘাড় ঘুরিয়ে বেলীর দিকে তাকায় । তারপর মুচকি হেসে কফির মগে চুমুক দেয় ।

– তুমি এই কয়েকদিনে অনেক ম্যাচুয়ার হয়ে গেছো বেলী । বড়দের মত কথা বলতে শিখে গেছো ।
– চাইলেও তো ছোট হয়ে থাকতে পারবো না । তবে আপনার আমাকে তুমি করে বলাটা কেমন জানি লাগে আজকাল । আপনি আমায় তুই করেই বলেন । ওইটাই আপনার মুখে বেশি মানায় ।
– তুই শব্দটা তোমার সাথে বেমানান যদিও আমিই তুই তুকারী করতাম বেশি , তবে কেন জানি এখন আর এইসব ভালো লাগে না ।
– অনেক কাছের আর আপন মানুষকেই মানুষ তুই করে বলে ।
– আচ্ছা বেশ , একটা কথার জবাব দেও , এই যে বললে ভালোবাসা আর ভালোলাগা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস এটা কি তুমি ভেবে বললে ?
– হু ,
– ওকে , ভালোলাগা থেকেই কিন্তু ভালোবাসার জন্ম হয় । আমার কাছে তোমার সব কিছুই ভালো লাগে । এমনকি আমার কাছে গোটা তুমিটাকেই ভালো লাগে । তাই হয়তো ভালোবাসাটাও জন্ম নিয়ে নিয়েছে ।
– কি জানি , এত কঠিন ভাষা বুঝি না আমি ।
– এর থেকে বেশি বুঝেন আপনি , এখন খেতে আসেন । খাওয়ার পর মেডিসিন নিবেন । তারপর আবারও ঠিকঠাক মত একটা মাইর দিবো ।

এমন কথা শুনে বেলীর মনটা নিমিষেই কালো আঁধারে ছেয়ে যায় । ইরফান বেলীর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে বেলী হঠাৎ এমন হয়ে গেলো কেন । তারপর বেলীর হাতের আঙুলের ফাঁকে নিজের হাতের আঙুলগুলো রেখে শক্ত করে বেলীর হাতটা ধরে নেয় ইরফান । তারপর বেলীর দিকে চেয়ে বলে ,

– সারাদিন খান নাই কেন ? এর শাস্তি তো পেতেই হবে । আমি বলে গিয়েছিলাম যে ঠিকমত খেতে হবে এবং মেডিসিন নিতে হবে । কিন্তু আপনি কি করছেন ?
– রুবি আপু এমন ভাবে কথা বললো যে আর খাওয়া পেটে যায় নি ।
– রুবির কাজই এমন , কিন্তু তোমার খেয়াল রাখা উচিত ছিল । ডাইনিংয়ে চলো , আমি মিনুর সামনে একটু চিংগারি ফেলবো ওমনি মিনু জ্বলে উঠবে ।
– মিনু তো মিনুই ,
– মিনুর ভাষায় তুমি খবিশ মাতারি । আজ সকালে না বললো । আচ্ছা ওয়েট খবিশ মানে তো খারাপ কিন্তু মাতারি মানে কি ?

এইবার বেলী হাসতে বাধ্য হয় । খিল খিল করে হেসে দেয় । ইরফানের লক্ষ্য ছিল বেলীকে হাসানে । আর বেলী হেসেছে , এটাই অনেক তার কাছে । বেলীর দিক থেকে নজর সরিয়ে ইরফান এইবার রুমের দিকে নজর দেয় । বেলীর রুমটা সে সাজিয়ে দিবে । নিজের করা কিছু ভুল কিছুটা হলেও ঠিক করবে সে ।

– কি হলো , দাঁড়িয়ে গেলেন যে ?
– হু,,,,, বলো ,
– কি বলতাম ?
– নাহ , চলো ।

রাতে খাবার খেয়ে বেলী তার রুমে শুয়ে আছে । ভাবছে কিছু কথা । জীবন তাকে কোথায় এনে দাড় করিয়ে দিয়েছে । কি আছে তার জীবনে ? ইরফান কতদিন রুবিকে বুঝিয়ে যাবে ? আর রুবিকি এইভাবে চুপচাপ বসে থাকবে ? সব কিছু ঘুরেফিরে তার দিকেই আসবে । সে এখন নিরুপায় হয়ে গেছে । মনটা বার বার ইরফানকে চাইছে । সে সব ভুলে যেতে চায় । সে ভুলে যেতে যায় ইরফানের করা সব ভুলকে । সে ভুলে যেতে চায় ওইসব খারাপ দিন গুলোকে । তার ভেতরের আত্মাটা কেন জানি বার বার ইরফানকে খুজে । বেলী ভালোবাসে ইরফানকে , হ্যাঁ অনেক ভালোবাসে । এতটাই ভালোবাসে যে যার প্রতিক্রিয়া হয় না । ইরফান অনেক বদলে গেছে ইদানীং । এতটা বদলে যাবে আশা করেনি বেলী । হয়তো আল্লাহ পাক এটাই চেয়েছেন । আল্লাহ পাক নাকি পরীক্ষা নেন , তাহলে কি এটাই ছিল সেই পরীক্ষা । আল্লাহ পাক বলেছেন ধৈর্য ধারণ করো , অপেক্ষা করো । সেই অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয় । তাহলে কি এটাই ছিল সেই অপেক্ষার মিষ্টি ফল ।

এরই মাঝে রাজুর চিন্তা মাথায় চলে আসে বেলীর ।

– রাজু ভাই কি অন্যায় করেছিল ? রাজু ভাইয়ের তো কোন দোষ ছিল না ? সে তো ভালোবাসতো আমায় । তাহলে আল্লাহ পাক কেন আমায় ওনার সাথে জুড়ে দিলেন ?

মনে মনে ঘুরপাক খেতে থাকা প্রশ্ন গুলো বড্ড বেশিই জ্বালাচ্ছে বেলীকে ।

– নাহ , আমি রাজু ভাইকে নিয়ে ভাববো না । এইসব ভাবাও পাপ আমার জন্যে । আমি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে কি হবে যদি স্বামী ব্যাতিত অন্য কাউকে মনে ধারণ করি । রাজু ভাই আমার অতীত । আর সে আমার বর্তমান । সে যেমনই হোক সে আমার বর্তমান । এটা পাপ হয়ে যাবে ।

আবার নিজেকেই নিজে শান্তনা দেয় এইসব বলে । হঠাৎই বুকটা দুইপাশ থেকে চাপ দিয়ে নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসে বেলীর । উঠে তাড়াতাড়ি পানি খেয়ে নেয় সে । তারপর কিছুক্ষণ দম ধরে বসে থাকে বিছানার উপর । ইরফান হয়তো নিজের রুমে । খাবার সময়ই বলেছিল অফিসের কিছু কাজ আছে , বেলী যাতে চুপ করে ঘুমিয়ে যায় । ইরফান কাজ শেষ করেই আসবে । মিনুও গেষ্ট রুমে শুয়েছে । যদি মিনু বেলীর কাছে শোয় তাহলে তো ইরফান আসতে পারবে না তাই মিনু বেচারি গেষ্ট রুমেই ঘুমায় । ব্যাথাটা কমার পর বেলী উঠে জানালার পাশে এসে দাঁড়ায় । হঠাৎই নিজের মুখ থেকে বের হয়ে যায় ,

– আমি ওনাকে ভালোবাসি এটা আমার অপরাধ না । উনিও এখন আমায় চায় এটাও অপরাধ না । আমি বেলী কোথায় যাবো এখন , আমি যে তাকে মনে ধরেছি , মনের মাঝে বদ্ধ থাকা পুরো জায়গাতেই তার নাম । আমার তাকে চাই , একবার হলেও চাই ।

বেলী একবার হলেও চায় তাকে
একটু ভালোবেসে পেতে কাছে

বেলী চেয়ে আছে তার পানে
দৃষ্টি তাহার ওই দূরে

এক লহমার জন্যই হোক
তবুও বেলী একবার চায় সুখের মিলন হোক

বেলীর মুখ থেকে হঠাৎ করেই এইসব বের হয়ে যায় । তখনও দৃষ্টি তার রাতের আকাশে তারার দিকে । এমন সময় ,

” হোক না একবার সুখের মিলন , খুব বেশি কি ক্ষতি হবে ? ”

পিছন থেকে এমন কথা শুনে দ্রুত পিছনে তাকায় বেলী । টাউজারের দুই পকেটে হাত দিয়ে দরজা থেকে একটু ভেতরে এসে দাঁড়িয়ে আছে ইরফান । তার মানে ইরফান সবটা শুনে নিয়েছে । বেলী আর ইরফানের দিকে তাকানোর সাহস পায় নি । তাই আবার এক ঝটকায় জানালার দিকে ফিরে যায় সে । ইরফান আস্তে আস্তে হেটে বেলীর পিছনে এসে দাঁড়ায় । তারপর বেলীর কাঁধে হাত রেখে বলে ওঠে ,

– একটু সুখের মিলন হলে , খুব বেশি কি ক্ষতি হবে বেলী ?

.
.

চলবে…………………….