#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
পোস্ট নং-০৩
প্রিয় মা,
আমার চোখের অশ্রুগুলি আজ শুকিয়ে গেছে,কিন্তু সেই অশ্রুসিক্ত চোখ মুছে দেয়ার জন্য তোমার স্নেহের স্পর্শ নেই,নেই তোমার আঁচলের মায়া।মা তোমার মনে পড়ে?আমার ছোটবেলায় বাবার পায়ের শব্দ শুনলে ভয় পেতাম আমি, ভয়ের তীব্র স্রোত আমাকে গ্রাস করতো,তাই তো সেই অবাধ্য ভয়ের সঙ্গে যুঝতে না পেরে ক্লান্তিতে চোখ বুজতাম।মা তুমি চলে যাবার পর আমার উপর অত্যাচারের খড়ঙ্গ যেন নেমে এলো আরও তীব্র ভাবে।আমার অপরাধ আমি বংশ এগিয়ে নেবার সেই ছেলে সন্তান নই।তোমার মৃত্যুর ১৭ দিনের মাথায় বাবা নতুন স্ত্রী এনেছিলো,আমার মা নয়।সেই স্ত্রী তাই মা হবার কষ্ট বা চেষ্টা যাই বলি তা পরিণত হয় নি।আমার তাতে দুঃখ ছিলো না, যদি মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার নূন্যতম সম্মানটুকু পেতাম জীবন নিয়ে এত ক্লান্তি আসতো না।মা জীবনের এ দূর্বিষহ ঘানি টানা যে আজ আমার জন্য বিবিমিষা।এই ক্লান্তি আর দিনভর কাজের চাপে আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত।
ছোটবেলায় মনে পড়ে,সিন্ডারেলার সেই গল্পের মতো আজ আমি সব থেকেও ঘুটেকুড়ানি।সিন্ডারেলার সেই স্বপ্নের রাজকুমারের মতো আমি ও অপেক্ষা করে আছি আমার রাজপুত্রের।সুন্দর এক সোনালী দিনের আশায় আজকের এ চিঠি শেষ করছি।
ইতি তোমার
অভাগিনী মেয়ে।
প্রিয় মা – Faiza habib nebula
প্রিয়তমেষু – Md Nazmul Hasan
#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগীতা_২০২০
প্রিয়তমেষু,
অাশাকরি সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতের ছাঁয়ায় অাবদ্ধ থেকে তুমি খুব ভালো অাছো।এবং অামিও তাঁর পরম কৃপায় বেশ ভালো অাছি।প্রথমে দীর্ঘদিন তোমাকে চিঠি না লিখার জন্য অান্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।অামাকে ক্ষমা করতে অাশাকরি তুমি কিঞ্চিৎ পরিমান কার্পন্য মনের মধ্যে রাখবেনা।অামার চিরকুট তোমার নিকট কতোটা পছন্দ তা অামি জানি,তাই তোমাকে প্রতিনিয়ত লিখতে না পারলেও মনের মাঝে তোমাকে কি লিখবো তা অামার শত ব্যাস্ততার মাঝেও ভাবি।তোমাকে লিখতে কিংবা তোমাকে নিয়ে ভাবতে অামার একটুও ক্লান্তি অাসেনা কখনো।মনের সব কথা গুলো চিরকুটের সংকুচিত পাতায় ও স্থান দিতে পারিনা।অামি যে বেশি কথা বলি,স্বল্প কথায় সব কথা বুঝাতে অক্ষম!কি করবো বলো!তাই তোমার বিস্তীর্ণ অন্দরমহলে শুধু তোমাকেই খুঁজতে থাকি।তোমাতেই মত্ত থাকি,তোমার মায়ায় অাটকে থেকে অন্যসব ভাবনাদের হারিয়ে ফেলি।তোমার মনে অাছে!তোমার শেষ চিঠিতে অামাকে বলেছিলে, অামি যেনো তোমার সন্তানদের খুব স্বযত্নে বাবার মতো অাগলে রাখি।যাদেরকে তুমি রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে তোমার বিস্তীর্ণ অন্দরমহলে ঠাই দিয়েছিলে,লালন করেছো নিজ সন্তানের মতো। তখন অামি ছিলাম তোমার দু’চোখে বিষবৃক্ষের ছাঁয়া।দেখলেই যেনো রাগে গা জ্বলে উঠতো! সেই বিষধর মানুষটি অাবার কি করে যে তোমার নিকট এতোটা প্রিয় হয়ে গেলাম যাকে তুমি তোমার সন্তানদের দায়িত্ব দিয়েছো।সে উত্তর অামি অাজো খুঁজি। তুমি জেনে অনেক খুশি হবে যে, অামি তোমার মতো তাদেরকে ভালোবেসে অাগলে রাখছি নিজ সন্তানের মতো।তাদেরকে এখন কষ্ট করে হাসতে হয়না।নিয়মিত পড়াশুনা করছে।খাবারের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়না।তাদের হাসি সুন্দর।বড্ড অমায়ীক।যেনো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। তাদের এই হাসিতে যেনো তোমাকে খুঁজে পাই।তারাও যেনো তোমার মতোই মহানূভুতীর মানুষ। একজন কষ্ট পেলে অন্যজন কষ্ট পায়।মান অভিমান কিভাবে করতে হয় তা যেনো তোমার কাছ থেকেই শিখা।তুমি যেমন অামার সাথে অভিমান করলে কখনোই বলতেনা।উচ্চস্বরে অাওয়াজ করতেনা।রাগ, অভিমান সবকিছুতে অামাকে জরিয়ে ধরে রাখতে,তারাও ঠিক এমন।সুখ,দুঃখ,মান-অভিমান সব অামাকে ঘিরে হলেও বুকের সাথে মিশে গিয়ে তাদের সবকথা প্রকাশ করে নিশ্চুপ থেকে।
জানো! এই বর্ষায় সবজায়গায় বিগত বছরের চেয়েও বেশি পানি উঠেছে।সকলেই নৌকো করে ঘুরতে বের হয় প্রিয় মানুষটিকে সঙ্গে করে। প্রিয়তমার ভেজা চুলের ঘ্রাণ নেয়।অামাদের বাড়ির পাশে নদীটিতে বিকেল হলে সোনামণিদের থেকে শুরু করে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠদের দেখতে পাই।সকলে অনেক মজা করে।নদীর গভীর জলে কেউ হারায়না,বরং ভালোবাসার মানুষের অতল গভীরে হারিয়ে যায়।এই চিরকুটের শব্দগুলো যখন লিখছি, অামার ভাবনায় তুমি অাটকে অাছো।তোমাকে নিয়ে ভাবছি।ভাবছি তোমাকে নিয়ে কূলহীন নদীতে হারিয়ে বেড়াবো।যদি সমুদ্রে এতদূর যাওয়া যেতো মন্দ হতো না।তোমাতে বিভোর হবো।সম্ভব হলে খুব শিগ্রই এসো।অামি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।অাসলে দু’জন একসঙ্গে নিখোঁজ হবো।অাচ্ছা অামার এ ভাবনাগুলো কি পূর্ণতা পাবে!না, পাবেনা।যেহেতু তুমি সেই কবেই পার্থিব অালো ছেড়ে কালো অন্ধকারে নিখোঁজ হয়ে অাছো।অার অামি!
ইতিঃ-
তোমার অভ্র
কলমেঃ- নাজমুল হাসান।
প্রিয় ভালোবাসা – Tajrin sorna
#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি_নং:০১
লেখা:তাজরীন_স্বর্ণা
প্রিয়,
ভালোবাসা
কখনো তোমার জন্য আলাদা করে চিঠি লেখা হয় নি প্রিয়,তবে আমার ছোট্র ডায়েরির প্রতিটি পাতা তুমি ময়। কেমন আছো জানতে চাইবো না, আমাকে ছেড়ে গেছো ভালো থাকার জন্য,তাই ভালোই আছো।তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে এক মুহূর্তের জন্য ও আমাকে ছেড়ে যাবে না। তবে কেনো আজ হারিয়ে গেলে, আমাকে মাঝ নদীতে একা পেলে। যার জন্য চলে গেছো সে কি তোমাকে আমার থেকে বেশি ভালোবেসেছিলো। তোমার জন্য আগে প্রতি রাতে বালিশ ভিজতো এখন চোখের জল আমাকে বলে কার জন্য এমন করিস সে তো তোর নয়। এখন আর কষ্ট হয় না তবে ঐ যে দীর্ঘশ্বাস সে এমনি চলে আসে।আজো আমার প্রতিটা গল্প, কবিতায়,উপন্যাস তোমাকে নিয়ে।কি করে ভুলবো বলো?আমি ত সার্থপর নয়। ভালোবেসেছি তবে নিজের করে রাখতে পারিনি।কতশত স্বপ্ন ছিলো তোমাকে নিয়ে প্রিয়।মনে আছে তোমাকে বলতাম যে, তোমার হাত ধরে রাস্তার পাশে দুজনে হাতে হাত রেখে হাঁটবো।সেটা আর হয়ে উঠে নি তবে জানোতো আজ আমি নিজেই একা একা হাঁটতে শিখে গেছি। তোমাকে কারণে অকারণে বড্ড বিরক্ত করতাম মাঝে মাঝে বকা দিতে এমন কেনো করি তোমার এসব পচন্দ নাহ।একটু অভিমান হতো, কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের জন্য।তোমাকে মেসেজ নাহ দিয়ে,তোমার সাথে কথা না বলে একদমই থাকতে পারতাম না। আমার অনলাইনে আসার কারণ ছিলে তুমি। ততটাই ভালোবেসে ছিলাম যতটা আমি আমাকে ও ভালোবাসিনি।তুমি জানোই নাহ তোমায় নিয়ে স্বপ্নের একটা ছোট্র সংসার শুরু করেছিলাম। তবু ও আগলে রাখতে পারিনি। আমি তোমার সেই চিরকালের বিরক্তই রয়ে গেলাম। যার জন্য তোমার ভেতরে একটু ও ভালোবাসা জন্মায়নি, রাতে যখন চাঁদের সাথে হাজারটা তারারা খেলা করে ওদের সাথে তোমার কথা বলি। ওরা বলে তুমি নাকি আমার পাশেই আছো।মুহূর্তে আমার ও মনে হয় এই বুঝি তুমি এসে একটু জড়িয়ে ধরে বলবে তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য স্যরি, কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠে না।তুমি ত অন্য কারো ভালোবাসার নেশায় হারিয়ে গেছো।আচ্ছা তোমার একটু ও মনে পড়ে না আমাকে?
ভালো থাকো আমার ভালোবাসা।খুব যত্ন করে বুকের মাঝে মৃত্যু পর্যন্ত আগলে রাখবো ভালোবাসায়,বিশ্বাসে আর ভরসায়।
ইতি
তোমার বিরক্তির কারণ
প্রিয় স্বপ্নচারী-Nafeesah Effat
#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
#চিঠি_নং_২
কলমে- #নাফীছাহ_ইফফাত
_____________
প্রিয় স্বপ্নচারী,
আমি তোমার মতো নই। তুমি যেমন আমাকে না ভেবে থাকতে পারো আমি তেমনটা পারি না। তুমি ভোরে উঠেই মোবাইল হাতে গেইমসে ব্যস্ত হয়ে পড়ো।
অথচ আমাকে দেখো, ভোরবেলা ওঠে প্রথম সূর্যের আলো চোখে পড়তেই মনে পড়ে এটা নিশ্চয়ই তোমার গায়েও এসে পড়ছে। ইস! আমি যদি তোমার পাশে থাকতাম তাহলে নিশ্চয়ই তোমার সামনে পর্দা হয়ে দাঁড়াতাম। যাতে তোমার গায়ে রোদের তাপ না লাগে।
তুমি যখন ব্রেকফাস্ট টেবিলে ফ্যামিলির সাথে আড্ডা দিতে দিতে খাওয়া-দাওয়ায় ব্যস্ত, তখন আমিও ফ্যামিলির সাথে ব্রেকফাস্ট টেবিলে থাকি। কিন্তু আমার মন পড়ে থাকে তোমার কাছে। আমি ভাবি, এখন যদি আমি তোমার পাশে থাকতাম তাহলে সবার চোখের আড়ালে কিছু খাবার সরিয়ে রেখে পরে তোমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতাম।
এরপর তুমি যখন খেলার মাঠে প্র্যাকটিসে মশগুল থাকো, তখন আমি ক্লাসে বসে আনমনে তোমার কথা ভাবি। তুমি যখন দুপুরে নিউজফিড, চ্যাটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকো তখন আমি রান্না শেখায় ব্যস্ত। পরে তোমাকে নিজ হাতে রান্না করে খাইয়ে দিতে হবে যে।
দুপুরবেলা যখন তুমি শাওয়ার নিচ্ছো আর গুনগুন করে গান গেয়ে অন্যজগতে হারিয়ে যাচ্ছো, তখন আমিও শাওয়ার নিচ্ছি। আর হারিয়ে যাচ্ছি তোমার সাথে কল্পনার এক জগতে।
তুমি যখন দিব্যি হাসিমুখে লাঞ্চ করছো, তখন আমার গলা দিয়ে খাবার নামে না। দলা পাকিয়ে খাবারগুলো গলায় আটকে থাকে। বারবার মনে হয় তুমি খেয়েছো তো? কিন্তু জিজ্ঞেস করার উপায় নেই। কারণ তুমি ব্যস্ত।
তুমি যখন ভরদুপুরে ফটোগ্রাফিতে ব্যস্ত তখন আমি উত্তপ্ত রোদে দাঁড়িয়ে নিজেকে শাস্তি দিতে ব্যস্ত। কারণ তোমাকে কারণে অকারণে বারবার বাইরে বাইরে ঘুরতে হয়। রোদের তাপ সহ্য করতে হয়।
তুমি যখন বিকেলবেলা বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মশগুল, তখন আমি ছাদে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তোমার ভাবনায় মশগুল। আমার শুধু মনে হয়, এই আকাশ, বাতাস, চাঁদ, তারা, বৃষ্টি, মেঘ সবই তো আমরা দেখি, তবে আলাদা কেন? কবে আমরা একসাথে এসব দেখবো?
তুমি যখন রাতে ফোনকল আর চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত, তখনও আমি তোমায় নিয়ে স্বপ্ন সাজাতে ব্যস্ত৷ তোমার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ক্লান্ত। না, না তোমার জন্য অপেক্ষা করতে আমার ভালোই লাগে। আমি কখনো ক্লান্ত হই না। তোমায় যে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।
সবশেষে, যখন নিজেকে শান্ত করে ঘুমিয়ে পড়ি ঠিক তখনই এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার। রাত তিনটায় যে এলার্ম দেয়া আছে। এটা আমার শাস্তি, তোমার জন্য অপেক্ষা করার শাস্তি। তিনটায় উঠে আমি নামাজে মশগুল হই, আর মোনাজাতে বারবার তোমাকে চাই। নিজের জন্য একটু সময় চাই। আমার রব চাইলে নিশ্চয়ই আমি তোমাকে পাবো। আর কেউ না জানুক আমার রব জানে, আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।
ইতি
তোমার কাল্পনিক পাগলীটা।
প্রিয় আমি-Dipty Debnath
#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
প্রিয় আমি,
জীবনটা কত আজব, তাই না? কত সূক্ষ্ম কৌশলে নির্মমভাবে আমার নিজেকে ভুলিয়ে রাখে। যে আমি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাবত দুনিয়ার সকলকিছু নিয়ে মেতে থাকি, দিনশেষে কি একবারও সেই নিজেকে নিয়ে ভাবি আদৌ?
ক্যাম্পাস থেকে বাসায় এসেছি সেই মার্চে! যে দিপ্তী দিনে একবার বাইরের হাওয়া গায়ে না লাগালে অস্থির হয়ে উঠতো, সেই দিপ্তী কিভাবে আজ ১৩০ দিন চার দেয়ালের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে! এতগুলো দিন বন্দী থেকে থেকে কেমন জানি ডিপ্রেসড হয়ে যাচ্ছি, তাইনা?
ক্যাম্পাসটাকে, ক্যাম্পাসের মানুষগুলোকেও খুব মনে পড়ে! নওরীন আপুর সাথে কারণে-অকারণে ঝগড়া-হাসাহাসি করা, কোনো এক মন খারাপের রাতে লামির সাথে রিকশায় ঘোরা, অসময়ে মুনা-হাফসার সাথে পানিপুরি খাওয়া, অনেক রাতে বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে এম.এইচ. হলের রাস্তাটায় হাঁটতে হাঁটতে গলা-ফাটানো গান গাওয়া, বঙ্গমাতা হলের ৩০৮ নম্বর রুমের রাতভর আড্ডাগুলো- সবকিছু বড্ড মিস করি!
প্রিয় মানুষটার চেহারা দেখি না আজ কতদিন! টারজানের সামনের পিচ ঢালা রাস্তাটা দিয়ে কোনো এক বৃষ্টিস্নাত দিনে তার উষ্ণ হাতটি ধরে না হাঁটার অতৃপ্তি যেন কত কালের!
শান্ত-নিরিবিলি সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মেঘের রাজ্যে নিজেকে বিলীন করা হয় না কতদিন! কতদিন আকাশ ভরা জোছনার নিচে ফেনীল সমুদ্রের গর্জনে নিজের আত্মাকে সপিনা!
একই শহরে আছি, তবুও অদিতি, তিথি, তমা, প্রমা, মৌ এর সাথে দেখা হয়না আজ কতদিন!
রাজ্যের স্বপ্ন নিয়ে বাঁচা এই চোখ দুটোতে যেন আজ ছানি পড়ে এসেছে। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে আসা এই কন্ঠ আজ যেন বাকরুদ্ধ!
কিন্তু এতটা ভেঙ্গে পড়লে চলবে কিভাবে শুনি? ভয়ার্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের পরই তো আসে নতুন দিনের আভা! আর তো মাত্র ক’টা দিন! পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠলেই আবার সবার সাথে দেখা হবে, বহুদূরে কোথাও ট্যুরে যাওয়া হবে। আবার মেতে উঠা হবে এই নিষ্ঠুর জীবনকে কাঁচকলা দেখিয়ে। আর ততদিন পর্যন্ত এযাত্রায় সপরিবারে বেঁচে থাকার যুদ্ধুটাকে তো চালিয়ে যেতে হবে, তাইনা?
ইতি,
আমার আমি।
প্রিয় মা – ইফফাত আরা ঐশী
#গল্প_পোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
#চিঠি_নং_০২
কলমে: ইফফাত আরা ঐশী
________________
প্রিয় মা,
আমার ভালবাসার অনুভূতি গ্রহণ করো। ভালোবাসার প্রকাশ যদি করতে হয়, কখনো হয়তো মনের অভিব্যক্তি বুঝাতে পারবো না। স্মৃতি বিজড়িত কয়েকটি অধ্যায় তোমার ভালোবাসার যে মহিমা ছিল, তা হয়তো আমার অজান্তেই থেকে যাবে। আমার যে ভালোবাসা প্রকাশ করার ক্ষমতা হয়তো নেই। জানো মা তোমার ভালোবাসার পরশ পেয়ে আমার সকালের সূচনা হতো। মাঝে মাঝে বড্ড ভাবায় তুমি তো সেই অর্ধাঙ্গিনী নারী যে কি না সুখের উৎস ত্যাগ করে আমার বর্তমান এর কথা ভেবেছো। আমি যখন না খেয়ে ঘুমিয়ে যেতাম তুমি আমাকে জাগিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে। তোমার হাতের খাবার যেন অমৃত।কখনো হয়তো মায়ের হাতের রান্না ছাড়া পরিতৃপ্তি নেই। মা তোমার চোখে জন্য অশ্রু দেখি তখন নিজেকে মনে হয় এ পৃথিবীর এক অভাগী কন্যা। কখনো মনে হয়েছে তুমি না থাকলে আমার জীবন টা তীর ভাঙা নদীর মতো ডুবে যেত। তোমার কষ্টের পরিসীমা কখনো বুঝতে দাও নাই। তোমার শাসনের মাঝে আমি তোমার ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছি। তোমার রাগের মাঝে আমি আমার অস্তিত্ব কে খুঁজে পেয়েছি। বেখেয়ালি ভাবে যখন কোনো ভুলের মাঝে ছিলাম,তখন তুমি বুঝিয়েছো এটা অন্যায়। ভুল করে শিক্ষা অর্জন করার প্রেষণা পেয়েছি তোমার থেকে। আমি কান্নায় যখন ভেঙে পড়েছি,তখন তুমি বুঝিয়েছো ভেঙে পড়লে কী চলবে,নিজেকে কঠোর হতে হবে। তুমি আমাকে বলেছো অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে সমান অপরাধী। আমি যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি,তখন তুমি সারা রাত্রি আমার সেবা করেছো। মায়ের ঋণ কখনো শোধরানো যায় না। তোমার কাছে হয়তো এখনো বড় হই নি ।এখনো পিচ্চি রয়ে গেছি।আমার কাছে যদি আলাদিনের চেরাগ বাতি থাকতো,তাহলে আমার একটাই চাওয়া তুমি যেন সব সময় ভালো থাকো। তোমার চরণে দিও একটু ঠাঁই, ভালোবাসে যাবো আমার অস্তিত্ব যতদিন এই ভূমি তে থাকবে ততদিন ভালোবেসে যাবো। আমার কবিতার পান্ডুলিপি তে তোমাকে নিয়ে হাজারো অনুভূতি প্রকাশ করার ইচ্ছা জ্ঞাপন করি।মা তুমি যে শ্রেষ্ঠ উপহার আমার জীবনে। হাসির মাঝেই তুমি আছো। দুঃখের মাঝে তুমি আছো। আমি কি কখনো পারবো তোমার মতোন আদর্শবাদী নারী হতে? আমি কি কখনো পারবো তোমার মতোন করে সবকিছু বুঝতে? আমি কি কখনো পারবো সংসার নামক জীবনকে গুছিয়ে নিতে? তুমি তো আমায় শিখিয়েছো সত্যের পথে থাকতে। তুমি তো আমায় শিখিয়েছো কিভাবে কষ্টকে বরণ করে নিতে । তুমি তো আমায় শিখিয়েছো ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করে নিতে। তোমার মেয়ে তো আজ সেই ছোট্ট পিচ্চি টি আর নেই। এখন সে বড় হয়ে গেছে, তবুও তোমার আঁচলে সব সময় ঠাঁই নিতে চায়। আজ বড্ড ইচ্ছে করছে তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমের রাজ্যে পারি জমাতে। আমি যখন মনমরা থাকি,তখন তুমি সবকিছু অচিরেই বুঝে যাও। তোমার কাছে যে শান্তি টুকু পাই তা হয়তো অন্য কোথাও নেই। আমার স্মৃতিতে, আমার অনুভবে, আমার উপমাতে, আমার হৃদয়পটে তোমার অস্তিত্ব বহমান। না বলা কথা গুলো হয়তো কখনো বলা হবে না, তবুও তুমি যেন থাকো আমার পাশে।
ইতি
‘তোমারই’ ঐশী
প্রিয় অরণ্য – Samannita Ghosh
#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
#চিঠি_নং_০১ (শব্দসংখ্যা-৫৫২)
প্রিয় অরণ্য,
জানো, বড় ইচ্ছে করছে তোমার বুকে মাথা গুঁজে দুহাতে শক্ত করে তোমাকে ধরে রাখি আর আমার চোখের জলগুলো আশ্রয় পাক তোমার শার্ট মাখামাখি হয়ে ঐ বুকে । মন চাইছে তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শুতে আর তুমি আমার চুলে বিলি কেটে ঘুম পাড়িয়ে দেবে। তোমার উপর অভিমান করতেও সাধ হচ্ছে যাতে তুমি এসে একটু কেয়ার নিয়ে বলো,”কি হয়েছে তোমার? রাগ করেছ কোনো কারণে? ওগো আমার অভিমানী কষ্ট পেয়েছ বুঝি?আচ্ছা কান ধরছি আমি আর নীরব থাকব না কখনো তোমার কথার উত্তরে। এবার তো হাসো। ”
এই দেখেছ আমি তো বিস্মৃতই হয়েছিলাম , আমি তো তোমার মনের মানুষই না যে এইসব অন্যায় আবদার বা অনধিকার ভাবনা করছি। আর আমি এও ভুলে গিয়েছিলাম যে তুমি জানবে কিভাবে যে আমি তোমাকে….
তবে সবচেয়ে বড় ভুল আমার কি জানো ? এই যে আজ তোমার জীবনের এত সুন্দর একটি বিশেষ দিন তোমার বিয়ের দিনে আমি পাগলের প্রলাপ বকছি ;কি করব বলো আমি তো তোমারই পাগলিসোনা।এই যে ভাববেননা যে আজ আপনার আর সাথে আমারো অপরিচিত একজনের সাথে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছেন। আমি যেমনটা শেষ দুপুরে প্রিন্সেপ ঘাটে বসে আর মন চাইতেই ফোন করে বকবক করে তোমার কান ঝালাপালা করে দিতাম তেমনটাই করব। তবে এবারে সেটা মনের অন্তরালে, কল্পনা আর ভাবনার গহীনে।
এই , তুমি কি জানো কোন না কোন বরের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে ? আচ্ছা বলোতো অরণ্য ,আমি তাকে ভালোবাসব কিভাবে ? আমি তো শুধু তোমার ময়ূরপঙ্খী ;আর কারো না। বলো না গো ,আমি কি এতই পচা যে আমাকে একটু ভালোবাসা যায়না ? এই দেখেছ এবারে সত্যিই মনে হচ্ছে আমাকে মাথার ডাক্তার দেখাতে হবে কেননা তুমি তো আর মনপাখি না যে মনের খবর জানবে আর আমার মতো একটা পাগল,জেদী,
আজব,অকামের অসুন্দরী মানুষকে ভালোবাসতে তোমার বয়েই গিয়েছে।
সেদিন তুমি একটা কথা ঠিক বলেছিলে ,আমি তোমার কিছুদিনের পরিচিতা ছাড়া আর কেউ নই যে এত অধিকার ,আবদার , অভিমান দেখাচ্ছি।
আসলে আমার মন বারম্বার বলে ওরে তুই ভালোবেসে ফেলেছিস রে তোর অরণ্যকে; সময়ের হিসেবে কি আর ভালোবাসা হয়? তা কখন ,কার সাথে কীভাবে মনকে মিলিয়ে দেয় তা কেবল সেই জানে।
জানো তো আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে , কলম চলতেই চাইছে না আর চোখ ভেঙে জল আসছে তবু আজ হয়তো না বললে কোনোদিনো বলা হবেনা…অরণ্য আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি কিনা জানিনা কিন্তু আমার মন জুড়ে, ভাবনা জুড়ে যদি কেউ থাকে প্রতিক্ষণে , যার হাসিতে হাজার তারার মেলা বসে আমার চারপাশে আর যার বিরহযাতনায় মেঘ জমে মনের ঈশানকোণে, যার সাথে একটা দিনও কথা না বললে অভিমানী বৃষ্টির মিছিল বসে আঁখির কোলে আর যার প্রতিটি কথা আমার মনের খাতায় লেখা হয়ে থাকে–সে আর কেউ নও তুমি অরণ্য। তোমার কাছে যদি এটা ইনফ্যাচুয়েশন বা আবেগে ভেসে যাওয়া হয় তবে তা-ই। আর কেউ না জানুক বা মানুক আমার মন তো জানে আমার কাছে তুমি ঠিক কি…
এই দেখেছ এই দুটা বছর ধরে কি বোকামিটাই না করে চলেছি আমি ? তুমি আদৌ কোনোদিন পাবে বা পেলেও পড়বে কি আমার চিঠিগুলো? তবু লিখে চলেছি।
আর আমার জীবনের শেষ দুটো ইচ্ছে কি জানো ?
এক : তুমি যেন পারিবারিক,মানসিক সুখশান্তি লাভ করো,শরীরী সুস্থতা বজায় থাকুক।
দুই: আমার মা-বাবা বা স্বামী যেন আমার মৃত্যুর পর তোমাকে এই চিঠির ডায়েরিটা দিয়ে আসেন। ইচ্ছা হলে পড়বে আর না হলেও একটু স্থান দিওগো তোমার ধুলোমাখা স্মৃতিমাঝে,ঘরের কোণে।
বিবাহিত জীবনের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল। ভালো থেকো। চিন্তা কোরোনা,আমিও ভালো থাকব গো ;আরে এই ডায়েরির প্রতি পৃষ্ঠায় ভালোবাসা হয়ে রন্ধ্রে রন্ধ্রে জেগে থাকা অরণ্যকে নিয়ে ঠিক কাটিয়ে দেব আমার বাকি জীবনটা।
ইতি,
তোমার অভিমানী ময়ূরপঙ্খী ..শুধু তোমার…
প্রিয় “প্রাক্তন”- Sadia Noor Rahman
গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
প্রিয় “প্রাক্তন”
জিজ্ঞেস করবো না তুমি কেমন আছো, জিজ্ঞেস করবো না তোমার দিনকাল আমায় বিনে কীভাবে যাচ্ছে, জিজ্ঞেস করবো না আজও কী আমায় নিয়ে টুকটাক লিখালিখি করো ডাইরিতে?
উঁহু কিছুই জিজ্ঞেস করবো না। অথচ এর পরিবর্তে বলব, ভালো করেছো প্রিয় আমায় শিক্ষা দেওয়ার জন্য হাতটা মাঝ পথেই ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য, আমার রাতে জেগে থাকার কারণ হয়ে সেই কারণটাই মুছে চলে যাওয়ার জন্য।
বুকে এক আকাশ কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকার মর্মটাই না আলাদা, চোখে এক সাগর পানি নিয়ে ঠোঁটে আলগা হাসি ফুটিয়ে কথা বলার মর্মটাই কীনা আলাদা। নিশ্বাস যখন আস্তে আস্তে দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয় তার সাথে চোখের পানিগুলোও পড়বে বলে জানান দেয় কী বিচ্ছিরি এক অবস্থা হয় তখন।
তাও বেঁচে আছি প্রিয়, তাও বেঁচে আছি।
আমাদের প্রথম দেখা এক অচেনা মাঝরাস্তার ঠিক পশ্চিম পাশের দিকটায়, আমি তাড়াহুড়োতে হাটছিলাম আর তুমি মাথা ঝুঁকে। কোনো মুভির মত নয় একদম সাধারণ একটি ধাক্কা, আর আমার দুঃখিত বলে চেঁচানো। আর চলে গেলে তুমি। আমিও চলে গেলাম। কিন্তু আমার স্কার্ফে আজও তোমার সাথে সেই ধাক্কার গন্ধটা লেগে আছে। আমি আজও সেটা ধুয়ে দিতে পারিনি।
এরপর না চাইতেও সেই রাস্তায় তোমার সাথে দেখা হতো কিন্তু, কথা হতো না।
হাল যখন ছেড়ে দিবো তুমি হাত ধরেছিলে। ইশ, কি যে লজ্জা পেয়েছিলাম। ওদিন কথাই বলতে পারিনি, তুমি কতটা করে আমায় নরমাল করিয়েছিলে আজও মনে আছে।
আমি চঞ্চল ছিলাম,
অবুঝ ছিলাম,
বাচ্চামি ছিলো,
সব ছিলো আমার মধ্যে যা তোমার মধ্যে ছিলো না। তাও আমায় আগলে রেখেছিলে, জগৎ চিনিয়েছিলে।
চঞ্চলতা কমিয়ে মেয়ের মত মেয়ে বানালে, লজ্জাবতী বানিয়ে দিলে, অবুঝ কমিয়ে দিয়ে মানুষ চেনালে, বাচ্চামি কমিয়ে দিয়ে ম্যাচুরিটি ঢুকিয়ে দিলে।
তাও কি কমতি ছিলো আমার মধ্যে? নাকি আমি যা ভাবছি তার পুরোটাই উল্টো ছিলো আমাদের কাহিনী?
দেখ, যা যা শিখিয়েছ সব করছি। যেই মেয়ে একটু ব্যথাতে পুরো ঘর তুলে ফেলে, আজ সেই মেয়ে হৃদয় ভাঙার পরও টু শব্দ করতে পারেনি। যেই মেয়ে এত আবদার করে, সে মুখ ফুটে বলতে পারছে না আমার ভালোবাসা আমায় ছেড়ে চলে গেছে তাকে কেউ ধরে নিয়ে এসো। যেই মেয়ে চঞ্চলতায় পুরো ঘর মাতিয়ে রাখতো, আজ সে ঘর বন্দী এক কোনায় বসে স্মৃতির পাতায় চোখ বুলিয়ে বুলিয়ে নিজেকে শেষ করছে।
যেই মেয়ে অবুঝ হয়ে সবার মনে এক নিমিষে জায়গা করে ফেলে, আজ সেই মেয়েকে যতই সম্মন্ধ আসুক মুখ দেখেই চলে যায়৷
ভাবছ কেন মুখ দেখে চলে যায়?
প্রিয়, তোমার তৃণমঞ্জুরী আজ আর সেই তৃণমঞ্জুরী নেই!! আজ সেই তৃণমঞ্জুরীর চোখে নিচে এক গাদা কালো দাগ, চোখ লাল, মুখ ফ্যাকাসে আর স্বাস্থ্য সেটা তো না-ই বললে চলে।
আমায় শিক্ষা দিতে গিয়ে তো মাঝপথে ছেড়ে গেলে কিন্তু নিজে খুশি আছো তো? আমায় শিক্ষা দিতে গিয়ে নিজে রোজ রাতে ঘুমাতে পারো তো? আমায় শিক্ষা দিয়ে তোমার লেখালিখি জারি আছে তো?
না-কি আমি যা ভাবছি তাই হয়েই আমাদের সম্পর্কটার সাথে জীবনটাও নষ্ট হয়ে গেলো, শুধু স্মৃতিটাই সুন্দর!!
আমার কেমন একলা ব্যাকুল মন,
ব্যাথার ভারে শিউরে উঠে আমারই অঙ্গন
ব্যাথা কেনো হয় না মেঘের দল,
বৃষ্টির মতো ঝরুক না হয় চোখ থেকে অনর্গল।
ইতি
তোমার তৃণমঞ্জুরী
তোকে চাই❤ ……. (সিজন-২)part: শেষ পর্ব
তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)part: শেষ পর্ব
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
?
সারাদিন হৈ-হুল্লোড় করে খেতে বসেছে সবাই। জেনি খাওয়ার থেকে এদিক-ওদিকই তাকাচ্ছে বেশি। দ্বিতীয় সারির এক কোণায় বসে আছে অসম্ভব মিষ্টি একটি মেয়ে। তারপাশে বসে আছে পাঁচ / ছয় বছরের একটি ছেলে। জেনি অবাক হয়ে খেয়াল করলো ছেলেটি খুব যত্ন করে মেয়েটির মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। ছেলের কান্ড দেখে মেয়েটি হাসছে তারসাথে চোখদুটোতে টলমল করছে স্বচ্ছ জল। মুখে হাসি, চোখে জল কি অদ্ভুত সৌন্দর্য! জেনি চোখ ঘুরিয়ে শুভ্রর দিকে তাকালো। শুভ্র শেরওয়ানির হাতা কনুই পর্যন্ত গোটিয়ে নিজে খাচ্ছে সাথে সাথে মেয়েকেও খাওয়াচ্ছে। রোদ খাওয়া ছেড়ে পাশে বসে একদৃষ্টিতে বরের দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র এক-দুইবার আড়চোখে তাকাচ্ছে পরমুহূর্তেই নিজের কাজে মন দিচ্ছে। তাদের পাশেই বসেছে সাহেল, নাবিলা আর সাদাফ। বাবা-মার মাঝখানে বসে নিজের মতো করে চুপচাপ খাচ্ছে সাদাফ। যদিও টেবিল পর্যন্ত পৌঁছোতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাকে। নাবিলার পাশে বসেছে রুহি,অভ্র আর আদ্র-রোদ্র। জেনি বেশ খেয়াল করে দেখেছে আদ্র-রোদ্র হাজার দুষ্টামি করলেও কখনোই একজন আরেকজনের বিপক্ষে কথা বলে না। তাদের কাজ, কথা সব একদিকে। মাথায় হালকা কুকরানো চুলের ছেলেটা হলো রোদ্র। আদ্র থেকে কয়েক ধাপ বেশিই দুষ্টু সে। সারাদিন উল্টোপাল্টা কাজ করতেই বেশি পছন্দ তার। আদ্র ঠিক তার উল্টো। সবসময় ভাইয়ের সাথে সাথে থাকলেও বেশ ঠান্ডা মেজাজের ছেলে সে। ভাইকে বকার হাত থেকে বাঁচানোই তার প্রধান কাজ। জেনির ডানপাশে বসেছে চিত্রা, শিশির। চিত্রা খাওয়া ছেড়ে বসে আছে। ক্ষুধা পেলেও খেতে পারছে না সে, কেমন একটা গা গুলাচ্ছে। শিশির স্ত্রীর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে এটা ওটা জিগ্যেস করছে। জেনিদের পাশের টেবিলে বসেছে সাকিব,রাতুল,শ্রেয়া, শ্রেয়ার হাজবেন্ড,আহান,রুহোন,সাব্বির সহ তাদের বউ । সবার ছোট্ট ছোট্ট বিষয়গুলোও খেয়াল করে দেখছে জেনি যেন ইউএস চলে যাওয়ার পর এই মিষ্টি স্মৃতি আর খুঁনসুটিগুলো লেগে থাকে তার মনের কোণায়। খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে গিয়ে বাঁধলো এক বিপত্তি। একটা বাচ্চার হাতের আইসক্রিমে মাখামাখি হলো শুভ্রর শেরওয়ানি। বাচ্চাটি ভয়ে মুখ কালো করে বলে,
— সরি স্যার। আমি বুঝতে পারি নি।
জেনি খেয়াল করে দেখে, এটাই সেই ছেলে যে ছেলেটা খাবার সাইডে মায়ের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছিলো। শুভ্র বাচ্চাটির মাথায় হাত রেখে চুলগুলো হালকা ঝাঁকিয়ে দিয়ে বলে উঠে,
— ব্যাপার না চ্যাম্প। বিয়ে বাড়িতে এমন একটু আধটু হয়। কিন্তু তোমার আইসক্রিমটা যে নষ্ট হয়ে গেলো…..
ছেলেটি চোখ তুলে তাকায়। শুভ্রর স্নেহভরা কন্ঠে ভয়টা অনেকটাই কেটে গেছে তার। শুভ্র হাসিমুখে জিগ্যেস করে,
— নাম কি বাবু?
— শুভ্রব আহমেদ।
শুভ্র চমকে উঠে বললো,
— আরে, তোমার নামটা তো দেখি আমার নামের জমজ ভাই।
শুভ্রব উৎসাহ নিয়ে বলে,
— আপনার নাম কি, স্যার?
— আমার নাম শুভ্র। আর স্যার বলছো কেন?আমি কি গণিতের রাগী টিচার? স্যার শুনতে একদমই ভালো লাগছে না। তুমি বরং আমাকে চাচ্চু বলতে পারো।
ছেলেটি হাসিমুখে বলে,
— আমার বাবার নামও শুভ্র। শুভ্র আহমেদ।
শুভ্র কিছু বলবে তার আগেই হন্তদন্ত হয়ে অনেকটাই ছুঁটে আসে একটি মেয়ে। ছেলের হাত ধরে শুভ্রর শেরওয়ানির দিকে তাকিয়ে অপরাধী গলায় বলে,
— আই এক্সট্রেমলি সরি ভাইয়া। ও হয়তো বেখেয়ালিতে এমনটা করেছে। সরি…
শুভ্র হেসে বলে,
— ইট’স ওকে। বাচ্চায় তো। আপনাকে কোথাও যেনো দেখেছি আমি। কিন্তু কোথায় দেখেছি তা এই মুহূর্তে ঠিক মনে পড়ছে না।
শুভ্রর পেছন থেকে হুট করেই বলে উঠে জেনি,
— নীরা? শুভ্র আহমেদের স্ত্রী নীরা আহমেদ আপনি?
নীরা বেশ অবাক হয়। বিস্ময় নিয়ে বলে,
— হ্যাঁ কিন্তু আপনি কিভাবে…
জেনি হাসে। শুভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— শুভ্র সাহেব? আপনি আর রোদ উনাকে হসপিটালে দেখেছিলেন। বিয়ের কিছুদিন পর যখন আপনার এক্সিডেন্ট হয় তখন। মনে পড়েছে?
শুভ্র অবাক হয়ে জেনির দিকে তাকায়। পরমুহূর্তেই হেসে উঠে বলে,
— হ্যাঁ মনে পড়েছে। আমাদের থেকে আমাদের লাইফের ঘটনাগুলো আপনারই বেশি মনে আছে দেখছি। এনিওয়ে, মিসেস নীরা, আমি আবরার আহমেদ শুভ্র। আপনার হাজবেন্ড আর আমার একইদিনে এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। আমার ভাগ্য ভালো ছিলো তাই হয়তো আমি বেঁচে গিয়েছি। তখন হয়তো চ্যাম্প পৃথিবীতে আসে নি। মাত্র দু’মাসের ছিলো। তাই না?
স্বামীর কথা মনে পড়তেই চোখ ভিজে এলো নীরার। তবে কারো চোখে পড়ার আগেই নিজেকে সামলে নিয়ে হাসি ফুটালো মুখে। এই হাসিটা নিয়েই তো বেঁচে আছে সে। শুভ্রর মৃত্যুর পর কতো ঝড়ঝাপটায় না গিয়েছে তার উপর। একদিকে বিয়ের চাপ অন্যদিকে এভোরশন করার চাপ। সবার এক কথা বাপ ছাড়া বাচ্চা পালা এতো সহজ নয়। তার থেকে
বাচ্চাটা ফেলে দিয়ে নতুন করে জীবন সাজাও। সারাজীবন কি বাপের বাড়ি বা শশুড়বাড়ির বোঝ হয়ে থাকবে? নীরা বোঝ হয়ে থাকে নি। বাচ্চাও নষ্ট করে নি তবে বাবা-মা, আত্মীয় সবাইকে ছেড়ে দিয়েছে। ফ্রেন্ডের সাহায্যে প্রাইভেট ফার্মে জব নিয়ে একা চলতে শিখেছে। তার শুভ্রর চিন্হকে বুকে আগলে কষ্টের মাঝেও হাসতে শিখেছে। আজ শুভ্রবের দিকে তাকালে শুভ্রর প্রতিচ্ছবিই দেখতে পায় সে। মায়ের প্রতিটি দুঃখের সঙ্গী হয়েছে সে। এই ছোট্ট বয়সেই বুঝে নিয়েছে তাদের কেউ নেই। সে ছাড়া তার মার আর কেউ নেই। কেউ না। নীরা মুচকি হেসে ছেলের মাথায় চুমু দিয়ে বলে,
— সরি! আসলে, আমি সেদিন খেয়াল করি নি আপনাদের।
— আপনি যে পরিস্থিতিতে ছিলেন তাতে খেয়াল না করাটাই স্বাভাবিক। বাদ দিন সেসব কথা। তো চ্যাম্প? কোন ক্লাসে পড়ো?
— ক্লাস ওয়ান।
— গুড। আমার জন্য যে তোমার আইসক্রিমটা নষ্ট হলো তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে আমি কি তোমায় একটা আইসক্রিম কিনে দিতে পারি?
শুভ্রর কথার মাঝেই দৌঁড়ে আসে শুভ্রতা। তার পিছু পিছু রোদ। শুভ্রতা বাবার শেরওয়ানির কোণা ধরে টেনে নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়। শুভ্র হেসে শুভ্রতাকে কোলে তোলে নিয়ে শুভ্রবকে ইশারা করে বলে,
— আম্মু? ওটা তোমার ভাইয়া হয়।
শুভ্রতা অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,
— আলেকতা ভাইয়া?
— হু। আরেকটা ভাইয়া।
— ভায়ো ভাইয়া না পঁতা ভাইয়া?
— অনেক ভালো ভাইয়া। ওর নাম শুভ্রব। ভাইয়াকে হ্যালো বলো।
শুভ্রতা শুভ্রবের দিকে তাকিয়ে হাসে। হাসিমুখে বলে,
— হ্যায়ো ভাইয়া। আমি শুভ্ভতা।
নীরা হাসে। দু’পা এগিয়ে শুভ্রতার সামনে এসে দাঁড়ায়। ডান গালটা টেনে দিয়ে বলে,
— অনেক কিউট তো। একদম আপনার মতো হয়েছে।
শুভ্র হেসে বলে,
— সবাই তাই বলে তবে আমার মনে হয় ও ওর মায়ের মতো হয়েছে।
নীরা হেসে শুভ্রতাকে জিগ্যেস করে,
— মামনি? তোমার কয়টা ভাইয়া?
শুভ্রতা কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
— এতুগুলা।
— আচ্ছা? নাম কি তোমার ভাইদের?
— অাদ্দ ভাইয়া,রোদ্দ ভাইয়া, সাতাপ ভাইয়া আর এই নুতুন ভাইয়া।
নীরা হেসে আবারও গাল টানে। শুভ্র পাশে তাকিয়ে রোদকে ইশারা করে বলে,
— মিট মাই ওয়াইফ, রোদেলা।
ইরা রোদের সাথে কুশল বিনিময় করে হাসিমুখে বলে,
— কি মুশকিল! বাচ্চার মাকে দেখলে মনে হয় বাচ্চা তার মার মতো হয়েছে আবার বাবাকে দেখলে মনে হয় বাচ্চা তার বাবার মতো হয়েছে…. আসলে কার মতো হয়েছে বলুন তো?
নীরার কথায় শব্দ করে হেসে উঠে সবাই। নীরাকে বাড়িতে আসার নিমন্ত্রণ জানিয়ে বউ নিয়ে বিদায় নেয় তারা। বাসায় ফিরে বউকে ড্রয়িং রুমে বসানো হলে বেশ কয়েকটা ছবি তোলে নেয় জেনি। বউয়ের নাম আফসানা রূপ। বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সে। শান্ত মেজাজের গোলগাল মিষ্টি একটি মেয়ে। রাত ১২ টার দিকে বাসর ঘরের দরজায় ভীর জমায় সবাই। দরজায় উঁকিঝুঁকিতে মেতে উঠে রোদ-রুহিসহ রাতুল- সাকিবও। হ্যারিও দু’একবার কান পেতেছে। রোদরা যে উদ্দেশ্যে কান পেতেছে সেজন্য নয় ছেলে-মেয়েরা কি শোনার চেষ্টা করছে তা বোঝার জন্যই কান পেতেছে সে। কিন্তু আফসোস! কিছুই কানে আসে নি তার। অভ্র,শুভ্র, শিশির আর সাহেল কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। শালার বিয়ে হলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করা গেলেও রাহাতের বিয়েতে তা সম্ভব নয়। রাহাত সম্পর্কে ওদের দু’জনেরই বড়। বউয়ের বড় ভাই বলে কথা! শিশির সবসময়ই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ, তাই এসব বিষয় থেকে দূরে থাকাটাই বেশি পছন্দ করে সে। তার বউ দরজার সামনে কান পেতে দাঁড়িয়ে আছে বলেই এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তাকে। শুভ্র,অভ্র এগোয়নি বলে সাহেলও আর যায় নি সেদিকে। ঘুমন্ত ছেলেকে কোলে নিয়ে চুপচাপ নাবিলার জন্য অপেক্ষা করছে সে।
?
রাত একটার দিকে রুমে ঢুকে শুভ্র। রোদ জানালার গ্রিল ধরে তাকিয়ে ছিলো আকাশে। শুভ্র পা টিপে রোদের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। দু’হাতে কোমর জড়িয়ে ঘাড়ে মুখ লুকায় । সাথে সাথেই কেঁপে উঠে রোদ৷ শুভ্র ধীর গলায় বলে,
— কাহিনী কি রোদপাখি? আজ সারাদিন চুপিচুপি দেখছিলে আমায়। নতুন করে প্রেমে পড়ছো নাকি?
রোদ ঘুরে দাঁড়ায়। শুভ্রর গলা জড়িয়ে ধরে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়। টলমলে চোখে বলে,
— ছেলেদের এতো বেশি সুন্দর মানায় না শুভ্র সাহেব। সৌন্দর্য মেয়েদের জন্য… প্রকৃতি কিন্তু এই অবিচার মানবে না জাহাপনা।
শুভ্র হাসে। কোমরের বাঁধন আরো শক্ত করে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,
— না মানলে নেই। সুন্দরী বউয়ের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য একটু আধটু অবিচারে ক্ষতি নেই বেগম সাহেবা। কিন্তু মহারাণীর গাল বেয়ে পানি গড়ালেই মহারাজের ক্ষতি হয়ে যাবে খুব।
রোদ হাসে। সাথে সাথেই গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল। শুভ্র বিরক্ত হয়ে বলে,
— কাঁদছো কেন? এটা কাঁদার মতো কিছু হলো?
— আপনি আমায় এতো ভালো কেন বাসেন মাস্টারমশাই? একটু কম ভালোবাসতে পারেন না? ভয় লাগে খুব৷ মার ঘরের পাশ থেকে আসার সময় শুনলাম আমি কোমায় থাকতে খুব রাগারাগি করেছিলেন ওদের সাথে।
শুভ্র রোদকে ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। বিছানায় বসে গম্ভীর মুখে বলে,
— রাগারাগি কিছুই করিনি। শুধু বলেছি আমার বউ-বাচ্চা থেকে দূরে থাকুন। তাদের জন্য আমি একাই যথেষ্ট।
রোদ শুভ্রর পাশে বসে কাঁধে মাথা রাখে। ডানহাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
— আমি খুব করে চাই শুভ্রতা আপনার মতো হোক। কঠিন পরিস্থিতিতে শক্ত হতে শিখুক।আপনার জায়গায় আমি থাকলে ভেঙে পড়তাম। কেঁদে কেটেই শেষ হয়ে যেতাম।
শুভ্র রোদের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হাসে। বলে,
— একদম না। তুমি আরো বেশি পারতে রোদু। কারণ মেয়েদের সহ্য শক্তি ছেলেদের থেকে ঢের বেশি। কঠিন পরিস্থিতিতে দুর্বল মেয়েটাও হুট করেই কঠিন হয়ে ওঠে। আমি শক্ত ছিলাম না রোদপাখি, তোমাতে সিক্ত ছিলাম মাত্র। শুভ্রতাকে ঘুম পাড়িয়ে রাতে তোমার ঘুমন্ত মুখটা দেখলেই ঠান্ডা হয়ে যেতো বুক৷ তবুও মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে উঠতাম। তোমার কন্ঠ শোনার জন্য পাগল হয়ে উঠতাম। তখন নিজেকে খুব অসহায় লাগতো। খুব বেশি অসহায়। তখন তোমার বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকতাম। তোমার হৃদস্পন্দনের তালে তালে যেন তোমার কন্ঠ ভেসে বেড়াতো। হাজারও কথা বলতো কানে কানে।
এটুকু বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুভ্র। রোদকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে কাঁপা গলায় বলে,
— তোমার হৃদস্পন্দন সবসময় একটা ধ্বনিই করতো “তোকে চাই” “তোকে চাই” এবং “তোকেই চাই”। আমিও শুধু তোকেই চাই রোদপাখি। জীবনের শেষ মুহূর্তেও তোমার হৃদস্পন্দনের তালে এই শব্দটাই শুনতে চাই।
রোদের চোখ জলে ভেসে উঠে। সাথে সাথেই করাঘাত পড়ে দরজায়। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে দরজা খুলতে পা বাড়ায় রোদ। শুভ্রতাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রোদর মা। রোদকে দেখে ইতস্তত গলায় বলেন,
— হঠাৎ জেগে ওঠে বলে, আম্মু যাবো। কিছুতেই রাখতে পারছিলাম না রে…
রোদ হেসে মায়ের কোল থেকে শুভ্রতাকে নিয়ে বলে,
— আগেই বলেছিলাম,থাকবে না। শুনলে না তো।
মাকে বিদায় দিয়ে দরজা লাগিয়ে মেয়েকে নিয়ে বিছানায় আসে রোদ। নানুকে এতো জ্বালিয়ে মায়ের কোলে আসা মাত্রই ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটা।মেয়েকে শুইয়ে পাশে শুতেই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলে উঠে শুভ্র,
— আমারও ঘুম পাচ্ছে। আমাকেও ঘুম পাড়াও রোদপাখি।
রোদ হেসে ওঠে। শুভ্রও মুচকি হেসে মুখ ডুবায় তার ঘাড়ে।
রাত প্রায় তিনটা৷ ঘড়ির আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় রোদেলার। দু’পাশ থেকে দুজন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে তাকে। মেয়ের হাত সহজে ছাড়ানো গেলেও মেয়ের বাপের হাত ছাড়ানো মহামুশকিল। অনেক কৌশলে হাত ছাড়িয়ে উঠে বসে রোদেলা। জানালার হালকা গোলাপী পর্দাটা সরিয়ে দেয় সে। বাইরের ঝিরিঝিরি বাতাস এসে লাগছে মুখে-চোখে। জানালার পাশে থাকা টেবিলে চেয়ার টেনে বসে রোদেলা। প্রাণভরে শ্বাস টেনে নিয়ে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দেয়। ব্যাগ থেকে ডায়েরীটা বের করে আবারও লিখতে বসে সে। হাজারও জল্পনা-কল্পনা আর অনুভূতিগুলো সাজাতে থাকে সাদা কাগজে। হয়তো অনেক অনেক বছর পর এই অনুভূতিগুলোই হয়ে উঠবে ভালোবাসাময় কিছু স্মৃতি। মনে করিয়ে দিবে যৌবনের হাজারও বাসনা আর লাজুক ভালোবাসাকে। ছোট্ট ছোট্ট খুনশুটি, আবেগের তাড়নায় ভাসা ফোঁটা ফোঁটা কান্না।
_______________সমাপ্ত ________________
(এতোটা ধৈর্য ধরে পাশে থাকার জন্য প্রত্যেকটা পাঠককে লেখিকার সুপ্ত ভালোবাসা। কল্পনা,জল্পনা আর ভালোবাসাময় এই গল্পের অনেককিছুই অনেকের মনকে ছুঁয়ে দিতে পারে নি। কারো কাছে মনে হয়েছে এটা নিছকই একটা সিরিয়াল। তাদেরকেও অসংখ্য ভালোবাসা পাশে থাকার জন্য। বাস্তব জীবনটা আসলেই এতোটা সুন্দর হয় না তবে আমরা চেষ্টা করলে জীবনটা একটু হলেও নিজের মতো করে, ভালোবাসায় পূর্ণ করে সাজিয়ে তুলতে পারি। সবার সাথে হাসিতে মেতে ওঠে কষ্টগুলোকে দূরে ঠেলে দিতে পারি। আপনার অন্যকে বোঝার একটু চেষ্টাও এনে দিতে পারে অনেক প্রশান্তি। “তোকে চাই” অনেকটাই রূপকথার মতো। রূপকথার আদলে লেখা ভালোবাসার গল্প। সবাই ভালো থাকবেন। ভালোবাসাময় এই জীবনটাকে ভালোবেসে সবটা উপভোগ করবেন। এই আশায় বিদায় নিচ্ছি। ধন্যবাদ❤)
তোকে চাই❤ ……. (সিজন-২)part: 74
তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)part: 74
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
?
রাদিব সাহেবের বাড়িতে আজ খুশির আমেজ। একমাত্র ছেলের বিয়ে উপলক্ষে দুই মেয়ে আর নাতি-নাতনীরা এসে পাল্টে দিয়েছে বাড়ির পরিবেশ। ফাঁকা বাড়ি আজ বাচ্চাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে ভরপুর। রাদিব সাহেব নাতি-নাতনীদের দেখছেন আর অবাক হচ্ছেন তার কাছে মনে হচ্ছে এইতো সেদিন, ছোট্ট ছোট্ট রোদ-রুহি সারা বাড়ি ছুটে ছুটে খেলতো, উনি অফিস থেকে ফিরলেই উনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো,একটু বকলেই কান্না করে চোখ ফুলাতো।কিন্তু আজ তাদেরই ছেলেমেয়েরা গুটি গুটি পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘরের আনাচে কানাচে। ছোট ছোট হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরছে। মেয়েরা যে কেন এতো তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায়, কে জানে? রাদিব আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাঞ্জাবির কোণা দিয়ে চশমা পরিষ্কার করেন। চশমাটা চোখে পড়ে নিয়ে ড্রয়িংরুমে খেলারত বাচ্চাদের ডাকেন,
— নানুভাই? এইযে, নানুভাই? এদিকে আসো..
বাচ্চারা তাকায়। নানার ডাকে একছুটে এসে দাঁড়ায় উনার সামনে। রাদিব সাহেবের চোখে- মুখে সুখের হাসি। এই বাচ্চা তিনটির মাঝেই যেন মেয়ে দুটোর প্রতিচ্ছবি দেখতে পান তিনি। দুর্বল হাতে পাঞ্জাবির পকেট থেকে চকলেট বের করে তিনজনের হাতেই দুটো করে চকলেট দেন। বাচ্চারা চকলেট পেয়েই রাদিব সাহেবের গালে চুমু দিয়ে দৌঁড় লাগায়। রাদিব সাহেব হেসে খানিকটা দূরে চেয়ার টেনে বসেন। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বাচ্চাদের খেলা দেখেন। আজ থেকে ২০ বছর আগে এভাবেই ছুটে ছুটে খেলা করতো রোদ,রুহি আর রাহাত। চকলেট পেয়ে নিজের ভাগের থেকে অর্ধেকটা ছোট বোনের দিকে এগিয়ে দিতো দুজনেই। এটা বোনের প্রতি ভালোবাসা বুঝানোর এক অদ্ভুত পদ্ধতি ছিলো তাদের। একের পর এক চেয়ার সাজিয়ে গাড়ি গাড়ি খেলছে বাচ্চারা। খেলার মাঝেই নিজেদের চকলেট থেকে একটা চকলেট শুভ্রতার দিকে এগিয়ে দেয় আদ্র-রোদ্র। এমনটা করতে কেউ শিখিয়ে দেয় নি তাদের তবু কাজটি প্রায়ই করে তারা। হাতে কিছু পেলে তার অর্ধেকটা বোনকে দেওয়া যেন এক অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। রাদিব সাহেব চমকে উঠেন। পৃথিবীটা ভারি অদ্ভুত! ঘটনার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে মানুষকে চমকে দেওয়াটা যেন এক খেলা। চমকে দেওয়ার খেলা। শুভ্রতার প্রতি বরাবরই খুব দুর্বল রাদিব সাহেব। রোদ যখন ডাক্তারদের হতাশা নিয়ে বিছানায় পড়ে ছিলো তখন রাতের পর রাত এই বাচ্চাটার কথায় ভেবেছেন উনি। মা ছাড়া দু’দিনের এই বাচ্চাটা থাকবে কিভাবে? বাবা হাজার আদর দিলেও কি মায়ের আদর পূরণ হয়? এই চিন্তা থেকেই রোদের মায়ের সাথে শুভ্রর আবার বিয়ে করা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন উনি। বাচ্চাটার জন্য হলেও শুভ্রকে আবার বিয়ে করা উচিত। মেয়ের যে ভরসা নেই। কে জানে প্রাণ ফিরে পাবে কিনা? নাতনীর ভবিষ্যৎটাও তো দেখতে হবে তাদের। এই কথাটাই কিভাবে যে শুভ্রর কানে গিয়েছিলো কে জানে? এই নিয়ে শুভ্রর কি রাগ। শুভ্রতার আশেপাশেও ঘেঁষতে দেয় নি তাদের। মেয়ের জন্য কাউকে চায় না শুভ্র না চায় রোদের জন্য। সে বেঁচে থাকতে এই দুটো মানুষকে কারো দয়ার প্রয়োজন নেই আর না হবে। শুভ্রর রাগ ভাঙতে দু দুটো মাস লেগেছিলো রাদিব সাহেবের। সেদিন তিনি কেঁদেছিলেন। কষ্টে নয় মেয়ের স্বামী ভাগ্য দেখে খুশিতে কেঁদেছিলেন উনি। কিছুক্ষণের মাঝেই রোদদের বাড়িতে এসে পৌঁছালো সাহেল-নাবিলা। সাথে আছে একমাত্র ছেলে সাদাফ। জেনি আর হ্যারিও এসে পৌঁছেছে সেই ভোরে। চিত্রা দু’দিন আগে চলে এলেও শিশির আসে নি। সে আসবে বিয়ের আগের দিন রাতে। রুহুন-সাব্বিরও বিকেলের দিকে পৌঁছে যাবে।
অফিস থেকে ছুটি নিতে গিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছে তাদের। দু’জনেই এখন বিবাহিত, বউরাও সাথে আসছে তাদের। রাতুল-সাকিব তো আছেই সাথে আছে ভার্সিটি ক্রাশ শ্রেয়া এবং হারের ডাক্তার আহান। শ্রেয়া এখন বিবাহিত। তার স্বামী ডিফেন্সে আছে। ডাক্তার আহানও দু’মাস আগে বিয়ের পিড়িতে বসেছেন। পরশো তার হানিমুনে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু রোদের রিকুয়েষ্ট আর দাওয়াত পেয়ে হানিমুনে যাওয়ার ডেটটাই পিছিয়ে দিয়েছে বেচারা।
?
বিকেল ৪ টা। মেয়েরা হলুদ শাড়ি আর ছেলেরা লুঙ্গি আর সেন্টো গেঞ্জি পড়েছে। লুঙ্গি পড়া নিয়ে সে কি হাঙ্গামা। শুভ্র কিছুতেই লুঙ্গি পড়বে না। সেন্টো গেঞ্জি পড়ে মেয়েদের সামনে ঘুরে বেড়ানোটাই বিশ্রী লাগছে তার। তারওপর লুঙ্গি, ইম্পসিবল! সাহেল, সাব্বিররা অনেক দস্তাদস্তি করেই শুভ্রকে লুঙ্গি পড়তে রাজি করিয়েছে। কিন্তু ফেসাদে পড়েছে বেচারা হ্যারি। জীবনেও লুঙ্গি পড়ে নি সে৷ লুঙ্গি নামে কোনো পোশাক আছে তা এই বাংলাদেশে এসেই জেনেছে সে। তার কাছে ভারি অদ্ভুত একটি পোশাক হলো লুঙ্গি। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা। সাহেল আর রুহুন মিলে খুব কৌশলে লুঙ্গি পড়িয়েছে হ্যারিকে। লুঙ্গি পড়ার পর থেকেই কোমর চেপে ধরে চেয়ারে বসে আছে হ্যারি। তার ধারনা, দাঁড়ালেই খুলে পড়ে যাবে এই পোশাক। আদ্র-রোদ্রও ছোট ছোট লুঙ্গি পড়েছে। দু’পা এগুতেই লুঙ্গি খুলে পড়ছে নয়তো লুঙ্গিতে পা বেজে নিজেরাই উল্টে পড়ছে। সাদাফ হলুদ ফতুয়া আর সাদা হাফপ্যান্ট পড়ে এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করছে। শুভ্রতা হলুদ ফ্রক পড়ে ভাইদের সাথে পানি ছুঁড়াছুড়িতে মেতে উঠেছে। কিছুক্ষণ পর পর পায়ে ঝুমঝুম শব্দ করা নুপুরের দিকে তাকাচ্ছে। এ বাড়িতে আসার সময় দিদা পড়িয়ে দিয়েছে এই নুপুর। জিনিসটার নাম না জানলেও এর ঝুমঝুম শব্দটা খুব পছন্দ হয়েছে শুভ্রতার। চিত্রা হলুদ শাড়ি পড়ে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগেই শিশিরের সাথে তুমুল কথা-কাটাকাটি হয়েছে তার। কথা-কাটাকাটির মূল কারণ “শিশিরের না আসা”। যদিও যা বলার চিত্রাই বলেছে শিশির শুধু চুপচাপ শুনে গিয়েছে তবুও চিত্রার মন মানছে না। হলুদে সবাই রোমান্স করবে আর তার হাজবেন্ট বাসায় বসে ল্যাপটপে কাজ করবে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে।ছেলেরা ইতোমধ্যে গান ছেড়ে দিয়ে নিজেদের ক্রিয়েটিভিটি দেখানো শুরু করে দিয়েছে আর মেয়েরা হলুদের বাকিসব রীতি পালনের আয়োজন করছে। শুভ্রর গায়ে সাদা- সবুজ চেইকের লুঙ্গি আর সাদা সেন্টো গেঞ্জি। গলায় ঝুলছে লাল গামছা। সিল্কি চুলগুলো কপালের অর্ধেকটাই ঢেকে রেখেছে। ভ্রু দুটো কুঁচকে এদিক সেদিক তাকিয়ে রোদকে খুঁজছে সে। বাগানের এককোনায় শুভ্রতাকে পানি দিয়ে খেলতে দেখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে তার মুখে। মেয়ের মাকে খুঁজে না পেলেও মেয়েকে তো খুঁজে পাওয়া গেছে তাতেই রক্ষে। শুভ্র কিছুটা এগিয়ে গিয়ে শুভ্রতাকে ডাকে,
— প্রিন্সেস? বাবা ডাকে, এদিকে এসো। ফাস্ট…
শুভ্রতা বাবাকে দেখে দৌঁড়ে আসে। সারা শরীর ভিজে চুপচুপে তার। মেয়ে সামনে এসে দাঁড়াতেই ভ্রু কুঁচকে তাকায় শুভ্র,
— জামা ভেজা কেন, মা? ঠান্ডা লাগবে তো তোমার আম্মু কোথায়?
শুভ্রতা ভারি পল্লব ঝাঁকিয়ে পিটপিট করে বাবার দিকে তাকায়,
— আম্মু খেয়ছে।
শুভ্র ভ্রু কুঁচকায়। রোদের কেয়ারলেসে খুবই বিরক্ত সে। নিজের কথা নাহয় বাদই দিলো মেয়েটার দিকে খেয়াল রাখার সময়টাও কি নেই তার?শুভ্র মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে জিগ্যেস করে,
— কোথায় খেলছে তোমার আম্মু?
শুভ্রতা একহাতে বাবার গলা জড়িয়ে অন্যহাতে স্টেজের দিকে ইশারা করে বলে,
— ওইতে..
শুভ্র মেয়েকে নিয়ে স্টেজের দিকে এগিয়ে যায়। চারপাশে তাকিয়ে রোদকে খুঁজে। রোদ স্টেজের এক কোণে কিছু একটা করছিলো। শুভ্রর ডাক কান পর্যন্ত পৌঁছায় না তার। এতো গান বাজনায় না শোনারই কথা। স্টেজে মেয়েদের ভীর থাকায় সেদিন আর পা বাড়ায় না শুভ্র। মেয়েকে নামিয়ে দিয়ে আম্মুকে ডেকে আনতে বলে সে। শুভ্রতা বাবার কথা মতো এগিয়ে যায়। কিন্তু প্রতি পা এগুতেই থামতে হয় তাকে। যার পাশ দিয়েই যায় সে-ই দাঁড় করিয়ে গালে-কপালে চুমু দিয়ে দেয় নয়তো গাল ধরে টানে। শুভ্রতা ঠোঁট উল্টে একবার বাবার দিকে তাকায়। এদের এতো এতো আদরে মেয়ে বিরক্ত আর মেয়ের বাপ মহাবিরক্ত। আদর নামক অত্যাচার সহ্য করে মায়ের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় শুভ্রতা৷ মায়ের আঁচল টেনে ডাকে,
— আম্মু? আম্মু?
রোদ ফিরে তাকায়। মেয়ের ভেজা শরীর দেখেই চমকে ওঠে, না জানি কতক্ষণ যাবৎ ভেজা শরীরে ঘুরে বেড়াচ্ছে মেয়েটা। মেয়ের গালে কপালে হাত দিয়ে গায়ের তাপ পরিক্ষা করে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে দ্রুত বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। শুভ্রতা মায়ের চুল নিয়ে খেলতে খেলতে মৃদু স্বরে বলে,
— জয় নেই তো। বাবা দাকে তোমায়….ওইতে..
রোদ কপালে চুমু এঁকে দিয়ে শুভ্রর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। শুভ্র রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। মেয়ের প্রতি বেখেয়ালিপনা একদমই সহ্য করে না সে। রোদ ইনোসেন্ট মুখে ঠোঁটের ইশারায় সরি বলে শুভ্রতাকে নিয়ে ঝটপট বাসার ভেতরে ঢুকে যায়। শুভ্রও মাথা চুলকাতে চুলকাতে রোদের পিছু নেয়। ওদের সবকিছুই খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করে জেনি। নিজেও ওঠে যায় ওদের পিছু পিছু। রোদ মেয়ের শরীর মুছে দিয়ে কাপড় পাল্টে দেয়। চুল আঁচড়ে কপালে চুমু দিয়ে আদুরে গলায় বলে,
— আম্মু? গায়ে পানি লাগাবে না আর। তাহলে কিন্তু ঠান্ডা লেগে যাবে। ভাইয়াদের সাথে লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে খেলবে। একদম দুষ্টুমি করবে না। তুমি না বাবার প্রিন্সেস? প্রিন্সেসরা সব কথা শুনে। কি মনে থাকবে?
শুভ্রতা মাথা দুলিয়ে মায়ের গালে টুপ করে একটি চুমু দিয়েই দৌড়ে পালায়। শুভ্র এতোক্ষণ দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। শুভ্রতা বেরিয়ে যেতেই খপ করে রোদের কোমর চেপে ধরে সে। দুষ্টু হাসি দিয়ে হাতের মুঠোয় থাকা লাল রঙে রাঙিয়ে দেয় ফর্সা পেটের অনেকটায়। রোদ নড়ে উঠতেই ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলে,
— নো নড়াচড়া। চুপচাপ দাঁড়াও । পুরো দু’ঘন্টা ধরে খুঁজেও দেখা পাওয়া যায় না আপনার। এতো কেন বিজি আপনি?
— ভাইয়ের বিয়েতে বিজি থাকবো না?
— না থাকবেন না। আর এতো সুন্দর করে সেজেছেন কেন? আপনার এই সাজে কেউ যদি হার্ট অ্যাটাক করে তার দায়ভার কে নিবে শুনি? আমার কিন্তু অলরেডি বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। এখন আমার চিকিৎসার প্রয়োজন। আর এই চিকিৎসার একমাত্র ঔষধ হলো “রোদপাখি”।
— বাইরে বেশ ভালো রোদ আছে। সেখানে বসে বসে পাখি তাড়ান। তাহলেই হয়ে যাবে রোদ+পাখি= রোদপাখি। এবার আমায় ছাড়ুন। সবাই খুঁজছে হয়তো।
— খুঁজুক। খুঁজতে খুঁজতে শহীদ হয়ে যাক। আগে হার্ট অ্যাটাক থেরাপি নিবো তারপর ছাড়াছাড়ি৷ সিরিয়াসলি রোদপাখি, তোমায় কিন্তু ব্যাপক লাগছে। প্রচুর হটটট….
— অসভ্য!
— অসভ্যই তো হতে চাই। মেয়ে নেই আশেপাশে, অসভ্য হওয়ার এটাই তো সুযোগ রোদপাখি….
কথাটা বলেই চোখ টিপে শুভ্র। রোদ অসহায় চোখে তাকায়। জেনি মুচকি হেসে জানালার পাশ থেকে সরে দাঁড়ায়। আবারও হাঁটা দেয় বাগানে। ডায়েরির প্রতিটি পাতায় লেখা শব্দগুলোকে জীবন্ত দেখতে চায় সে। সেই ভালোবাসা, সেই রাগ,সেই কোমলতা আর সেই মিষ্টি সম্পর্কগুলো.. সব দেখতে চায় সে সব।
?
আজ রাহাতের বিয়ে। সবাই সাজুগুজু করে হুলস্থুল। জেনিও সেজেছে আজ। সবসময় শার্ট,প্যান্ট পড়া মেয়েটা রোদের রিকুয়েষ্টে লেহেঙ্গা পড়েছে আজ। লেমন কালারের লেহেঙ্গায় একটু বেশিই সুন্দর লাগছে তাকে। হ্যারির গায়েও লেমন কালারের শেরওয়ানি। সোনালি চুলগুলো সুন্দর করে গোছানো। দৃষ্টি অস্থির। বাংলাদেশ আসার পর থেকেই জেনিকে নব নব রূপে দেখছে সে। কখনো শাড়ি আবার কখনো লেহেঙ্গায় মাতাল করা সৌন্দর্যে পাগল হচ্ছে হ্যারি। যতবার তাকাচ্ছে ততবারই বুকে হালকা পাতলা ব্যাথা করে উঠছে তার। কি অদ্ভুত সেই ব্যাথা! সবাই তৈরি হয়ে নিয়ে দুপুর ২ টো নাগাদ বেরিয়ে পড়লো কনের বাড়ির উদ্দেশ্যে। বিয়ে বাড়িতে পৌঁছে যে যার মতো আনন্দে মেতে উঠলো। হ্যারি মেতে উঠলো ছবি তোলায় আর জেনি চারপাশটা দেখায়। বিয়ে বাড়ির মাঝ বরাবর ফাঁকা জায়গায় রোদ-শুভ্র, নাবিলা-সাহেলসহ সকলেই আড্ডায় মেতে উঠেছে। ওদের থেকে কিছুটা দূরে ডেকোরেশনের ফুল ধরে টানাটানি করছে আদ্র-রোদ্র। গেইটের কাছে সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রতা আর সাদাফ। শুভ্রতা আজ লাল লেহেঙ্গা পড়েছে। ছোট্ট শুভ্রতার জন্য লেহেঙ্গা সামলানোটা কঠিন হলেও মায়ের মতো ড্রেস পড়তে পেরে ভীষন খুশি সে। সাদাফের গায়ে লাল শেরওয়ানি। সাদা ধবধবে শরীরে লাল রঙটা নজরকাড়ছে সবার। স্ট্রেট চুলগুলো সমান হয়ে পড়ে আছে কপালে। জেনি আরেকটু এগিয়ে যেতেই খেয়াল করলো সাদাফ শুভ্রতার ওড়না ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর ভ্রু কুঁচকে অন্যান্য মেয়েদের দিকে তাকাচ্ছে। জেনি বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকালো, সাদাফের এভাবে মেয়েদের দিকে তাকানোর কারণটা ধরতে চেষ্টা করছে সে। সাদাফ কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা খেয়াল করে হাতে থাকা ওড়নাটির দিকে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে আবারও মেয়েদেরকে দেখে নিয়ে ওড়নাটা শুভ্রতার গলায় জড়িয়ে লম্বা অংশটুকু পেছনদিক থেকে ঘুরিয়ে এনে ধরিয়ে দিলো শুভ্রতার বামহাতে। ওড়না সমস্যা সমাধান হওয়ায় সাদাফের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো শুভ্রতা। সাদাফ শুভ্রতার হাসিকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বিরক্তি ভাব নিয়ে পাশে রাখা সোফায় গিয়ে বসলো। জেনি সাদাফকে যতোবারই দেখছে ততবারই অবাক হচ্ছে। এই বয়সেই সবকিছুই এতোটা ম্যাচিউরিটির সাথে কিভাবে করে সে, বুঝে উঠে না জেনি। শুভ্রতা এদিক ওদিক তাকায়।হয়তো বাবা-মাকে খুঁজছে সে। কিছুক্ষণ অনুসন্ধান চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে সাদাফের পাশে গিয়ে বসে। সাদাফ গম্ভীর মুখে তাকাতেই শুভ্রতা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
— আম্মু যাবো।
সাদাফ ভ্রু কুঁচকায়। বিরক্তি নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজে সে।সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে শুভ্রতার হাত ধরে শুভ্রদের দিকে এগিয়ে যায়। জেনি নিজের মনেই হেসে ওঠে বিরবির করে বলে, “ফিউচার লাভ বার্ডস্”
#চলবে…