প্রিয় “প্রাক্তন”- Sadia Noor Rahman

0
1109

গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

প্রিয় “প্রাক্তন”
জিজ্ঞেস করবো না তুমি কেমন আছো, জিজ্ঞেস করবো না তোমার দিনকাল আমায় বিনে কীভাবে যাচ্ছে, জিজ্ঞেস করবো না আজও কী আমায় নিয়ে টুকটাক লিখালিখি করো ডাইরিতে?
উঁহু কিছুই জিজ্ঞেস করবো না। অথচ এর পরিবর্তে বলব, ভালো করেছো প্রিয় আমায় শিক্ষা দেওয়ার জন্য হাতটা মাঝ পথেই ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য, আমার রাতে জেগে থাকার কারণ হয়ে সেই কারণটাই মুছে চলে যাওয়ার জন্য।

বুকে এক আকাশ কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকার মর্মটাই না আলাদা, চোখে এক সাগর পানি নিয়ে ঠোঁটে আলগা হাসি ফুটিয়ে কথা বলার মর্মটাই কীনা আলাদা। নিশ্বাস যখন আস্তে আস্তে দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয় তার সাথে চোখের পানিগুলোও পড়বে বলে জানান দেয় কী বিচ্ছিরি এক অবস্থা হয় তখন।
তাও বেঁচে আছি প্রিয়, তাও বেঁচে আছি।

আমাদের প্রথম দেখা এক অচেনা মাঝরাস্তার ঠিক পশ্চিম পাশের দিকটায়, আমি তাড়াহুড়োতে হাটছিলাম আর তুমি মাথা ঝুঁকে। কোনো মুভির মত নয় একদম সাধারণ একটি ধাক্কা, আর আমার দুঃখিত বলে চেঁচানো। আর চলে গেলে তুমি। আমিও চলে গেলাম। কিন্তু আমার স্কার্ফে আজও তোমার সাথে সেই ধাক্কার গন্ধটা লেগে আছে। আমি আজও সেটা ধুয়ে দিতে পারিনি।
এরপর না চাইতেও সেই রাস্তায় তোমার সাথে দেখা হতো কিন্তু, কথা হতো না।
হাল যখন ছেড়ে দিবো তুমি হাত ধরেছিলে। ইশ, কি যে লজ্জা পেয়েছিলাম। ওদিন কথাই বলতে পারিনি, তুমি কতটা করে আমায় নরমাল করিয়েছিলে আজও মনে আছে।

আমি চঞ্চল ছিলাম,
অবুঝ ছিলাম,
বাচ্চামি ছিলো,
সব ছিলো আমার মধ্যে যা তোমার মধ্যে ছিলো না। তাও আমায় আগলে রেখেছিলে, জগৎ চিনিয়েছিলে।
চঞ্চলতা কমিয়ে মেয়ের মত মেয়ে বানালে, লজ্জাবতী বানিয়ে দিলে, অবুঝ কমিয়ে দিয়ে মানুষ চেনালে, বাচ্চামি কমিয়ে দিয়ে ম্যাচুরিটি ঢুকিয়ে দিলে।
তাও কি কমতি ছিলো আমার মধ্যে? নাকি আমি যা ভাবছি তার পুরোটাই উল্টো ছিলো আমাদের কাহিনী?

দেখ, যা যা শিখিয়েছ সব করছি। যেই মেয়ে একটু ব্যথাতে পুরো ঘর তুলে ফেলে, আজ সেই মেয়ে হৃদয় ভাঙার পরও টু শব্দ করতে পারেনি। যেই মেয়ে এত আবদার করে, সে মুখ ফুটে বলতে পারছে না আমার ভালোবাসা আমায় ছেড়ে চলে গেছে তাকে কেউ ধরে নিয়ে এসো। যেই মেয়ে চঞ্চলতায় পুরো ঘর মাতিয়ে রাখতো, আজ সে ঘর বন্দী এক কোনায় বসে স্মৃতির পাতায় চোখ বুলিয়ে বুলিয়ে নিজেকে শেষ করছে।
যেই মেয়ে অবুঝ হয়ে সবার মনে এক নিমিষে জায়গা করে ফেলে, আজ সেই মেয়েকে যতই সম্মন্ধ আসুক মুখ দেখেই চলে যায়৷

ভাবছ কেন মুখ দেখে চলে যায়?
প্রিয়, তোমার তৃণমঞ্জুরী আজ আর সেই তৃণমঞ্জুরী নেই!! আজ সেই তৃণমঞ্জুরীর চোখে নিচে এক গাদা কালো দাগ, চোখ লাল, মুখ ফ্যাকাসে আর স্বাস্থ্য সেটা তো না-ই বললে চলে।
আমায় শিক্ষা দিতে গিয়ে তো মাঝপথে ছেড়ে গেলে কিন্তু নিজে খুশি আছো তো? আমায় শিক্ষা দিতে গিয়ে নিজে রোজ রাতে ঘুমাতে পারো তো? আমায় শিক্ষা দিয়ে তোমার লেখালিখি জারি আছে তো?
না-কি আমি যা ভাবছি তাই হয়েই আমাদের সম্পর্কটার সাথে জীবনটাও নষ্ট হয়ে গেলো, শুধু স্মৃতিটাই সুন্দর!!

আমার কেমন একলা ব্যাকুল মন,
ব্যাথার ভারে শিউরে উঠে আমারই অঙ্গন
ব্যাথা কেনো হয় না মেঘের দল,
বৃষ্টির মতো ঝরুক না হয় চোখ থেকে অনর্গল।

ইতি
তোমার তৃণমঞ্জুরী

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে