Monday, July 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1949



মায়াবী প্রজাপতি’ – লেখনীতে: সানজিদা তাসনীম রিতু

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০

গল্পের নাম: ‘মায়াবী প্রজাপতি’
লেখনীতে: সানজিদা তাসনীম রিতু

মূল গল্প:

একটি দোতলা পুরোনো ধাঁচের বাড়ি। বাড়িটি বেশ বড় আর গাছপালা বেষ্টিত। বাড়িটি শুভ্রাদের। শুভ্রার বয়স আঠারো হবো হবো করছে। একহারা গড়নের, দীঘল কালো মেঘের মত ফোলা ফোলা চুলের বেশ মিষ্টি দেখতে শ্যাম বর্ণের মেয়ে শুভ্রা। শুভ্রা রোজ বিকালে তাদের বাড়ির ছাদে উঠে তার ছাদ বাগানের পরিচর্যা করে। মাঝে মাঝে গুনগুন করে গান গায়, বই পড়ে, ছবি আঁকে। গাছ শুভ্রার খুব প্রিয়, সে গাছের ছবি আঁকতে খুবই পছন্দ করে। মাঝে মাঝে সে একা একা তার প্রিয় ফুল গাছগুলোর সাথে গল্প করে আর পাতায় হাত বুলিয়ে আদর করে। হঠাৎ বৃষ্টি আসলে সে মুঠো ভরে বেলি বা বকুল ফুল নিয়ে একটু পর পর গন্ধ নেয় ফুলের আর ছাদময় প্রজাপতির মতো ছুটে বেরিয়ে বৃষ্টিবিলাস করে।

শুভ্রাদের বাড়ি থেকে দেড়শো গজ মতো দূরে একটি তিনতলা আধুনিক আলিশান বাড়ি। বাড়িটির দিকে তাকালে যে কেউ দ্বিতীয়বার তাকাতে বাধ্য এতই তার বিশালতা আর সৌন্দর্য। এই বাড়িটির তৃতীয় তলা থেকে প্রায় সময়ই শুভ্রাদের বাড়ির ছাদের দিকে মুখ করে তার ঘরের বিশাল খোলা ঝুল বারান্দায় বসে থাকে শায়র। শায়রের বয়স পঁচিশ হবে হয়তো। সুঠাম গঠনের ফর্সা, মাথা ভরা রেশমি চুল, বুদ্ধিদীপ্ত চকচকে চোখ আর পুরুষালী কণ্ঠ, যেন নজরকাড়া সৌন্দর্যের প্রতীক কিন্তু গত দশ বছর ধরে তার জীবন হুইল চেয়ারে বন্দি। ওই এলাকার এক নামকরা জমিদার ও প্রতাপশালী ব্যবসায়ীর ছেলে হচ্ছে শায়র। দশ বছর আগে একটা একসিডেন্টে তার ডান পায়ে মারাত্মক ক্ষত হয়েছিল। শায়রের বাবা-মা তাকে বিদেশের নামকরা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও লাভ হয়নি। ক্ষত থেকে মারাত্মক গ্যাংগ্রিনের কবলে পড়ে তার ডান পা। জীবন বাঁচাতেই হাঁটুর উপর থেকে কেঁটে ফেলা হয়েছিল তার ডান পা। তাতেও থেমে ছিল না, কিছুদিনের মধ্যে বিষাক্ত গ্যাংগ্রিনে তার বাম পা’টাও একইভাবে হারাতে হয়েছিল তাকে। তারপর থেকে সে তার প্রাচুর্য পূর্ণ বিশাল ঘরে বন্দি। প্রচণ্ড জেদি আর একরোখা ছেলে শায়র। দশ বছরে অনেক চেষ্টা করেও তাকে কেউ বাইরে নিয়ে যেতে পারেনি। কলেজের গন্ডিতে পা পড়েনি শায়রের আর স্কুলের বন্ধুদের সাথেও ওই ঘটনার পর আর যোগাযোগ রাখেনি তাই একাই থাকে সে। বিশাল ঘর আর হরেক রকম দেশি-বিদেশি গাছ দিয়ে সাজানো সুন্দর পরিপাটি বারান্দার মাঝেই সীমাবদ্ধ তার বিচরণ।

গত তিন বছর যাবৎ শায়র এই নাম না জানা মেয়েটিকে দেখছে। তার বারান্দা থেকে শুভ্রার চেহারা স্পষ্ট বোঝা না গেলেও তার কর্মকাণ্ড ঠিকই বোঝা যায়। খুব অবাক হয় শায়র। ভাবে, মেয়েটা একদম প্রজাপতির মতো চঞ্চল। কী সুন্দর ছটফট করে উড়ে বেড়ায়! যেন সারা বাড়িময় প্রজাপতির মতই রঙ ছড়িয়ে বেড়ায়। শায়রের খুব ভালো লাগে মেয়েটাকে দেখতে, অন্যরকম আনন্দ পায় সে নিজের মধ্যে বা বলা যায় বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পায়। তিন বছরে শায়র ভালোভাবেই জানে যে মেয়েটা কখন ছাদে আসে কিন্তু তবুও সে সারাদিন তার বারান্দায় বসে থাকে এই অপেক্ষায় যদি মেয়েটি আরেকবার আসে, ভুল করে হলেও কিন্তু মেয়েটি আসে না। শায়র প্রায় রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবে, ‘সে কি মেয়েটির প্রেমে পড়েছে? কেন বারবার দেখতে ইচ্ছা করে তাকে? কেন ইচ্ছা করে তার ছড়ানো রঙে নিজেকে রাঙাতে?’

একদিন শায়র তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায়। এক ঝুম বৃষ্টির বিকেলে শুভ্রা একটি সাদা লেস পাড়ের আকাশি নীল শাড়ি পরে বৃষ্টিবিলাস করছিল। বয়সের হিসাবে কিছুটা লাজুক, কিছুটা চঞ্চলতা আর কিছুটা পরিপক্কতার মিশেলে পরিপূর্ণ বৃষ্টিভেজা এক নীলপরীর মতোই লেগেছিল তাকে শায়রের কাছে। শায়র বুঝে গিয়েছিল এই অপূর্ব মায়াবিনীর প্রেমের শিকলে বাঁধা পড়েছে সে কিন্তু প্রেমের সংজ্ঞা তো তার জানা ছিল না! অজস্র কবিতা আর গল্পের বইয়ের মাঝে ডুবে থাকা ভাবুক আর অনিন্দ্য সুন্দর ছেলেটি খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। আসলেই তো! কী এই প্রেম! কতগুলো দিন যে প্রেমের কবিতার ছন্দে ভেসেছিলো, অনুরাগের গল্প দিয়ে গেঁথেছিল এক দারুণ বন্ধনের মালা। কল্পনার আবেশে মিশে তার প্রণয়নার নাম দিয়েছিল ‘মায়াবী প্রজাপতি’ কিন্তু হঠাৎ করেই মিইয়ে গিয়েছিল নিজের দিকে তাকিয়ে। তার কী এসব সাজে!

দুঃখ, কষ্ট, অভিমান আর রাগের মিশেলে নিজের মনের ঝড় ছড়িয়ে দিয়েছিল ঘরময়। চিৎকার আর ভাঙচুরের শব্দে যখন শায়রের মা ঘরে ঢোকে, তাকে দেখেই চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো শায়র। পঞ্চাশোর্ধ বয়সেও বেশ সুন্দরী, অহংকার মুক্ত, অসম্ভব ভালো আর মায়াবতী নাবিলা চৌধুরী যেন আদর্শ মায়ের প্রতিরূপ। তিনি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরেছিলেন শায়রকে। শায়র নিশ্চুপে মায়ের বুক ভিজিয়েছিলো অশ্রুতে। ছেলের এরূপ অবস্থায় কাতর হয়ে জানতে চান তিনি,
-“কী হয়েছে বাবা?”
–“মা, আমার জীবনটাই কেন এমন হতে হলো। কীসের কমতি আছে আমার? অথচ আমি অথর্ব, পঙ্গু।”
-“এভাবে বলে না বাবা। দৈহিক পঙ্গুত্বই কী আসল পঙ্গুত্ব? তোমার উদার মনে যে বিশাল পৃথিবী আছে সেটা কজনের থাকে বলো?”
–“কী হবে এই একলা পৃথিবী দিয়ে মা? আমার মনের বিশাল পৃথিবীর রুক্ষতার মাঝে আমি ছাড়া আর কেউ তো বিচরণ করতে পারবে না।”
-“কী চাও তুমি বাবা? আমাকে খুলে বলো কী হয়েছে? তোমার জন্য আমি সব করতে পারবো। পুরো পৃথিবী তোমার কাছে এনে দিবো বাবা।”
–“সমুদ্র তীরের বালিতে বসে টুকরো টুকরো ঢেউয়ের লোনাজলের ফেনায় পা ভেজানোর আনন্দ দিতে পারবে আমাকে? বিশাল পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে মায়ামাখা চাঁদের জোৎস্নায় স্নান করার আনন্দ দিতে পারবে আমাকে? খোলা মাঠের সবুজ ঘাস মাড়িয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় শিশিরের শিহরিত স্পর্শের অনুভূতি দিতে পারবে আমাকে? বলো পারবে দিতে? চুপ করে আছো কেন?”
ছেলের আবদার শুনে নাবিলা চৌধুরী ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন। ধপ করে শায়রের পায়ের কাছে বসে পড়েন তারপর শায়রের কোলে নিজের মাথা রেখে দুহাতে ছেলেকে জড়িয়ে অনর্গল অশ্রু ঝড়াতে থাকেন। তার কাছে যে ছেলের প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।

দুইদিন শুভ্রা ছাদে আসেনি। তার খুব শরীর খারাপ। বুকে ভীষণ ব্যথা করে তার। অজানা কোনো রোগ হয়তো বাসা বেঁধেছে। শায়র এই দুদিন চোখের পাতা এক করতে পারেনি। ছটফট করে গিয়েছে নিজের মধ্যেই আর ভেবেছে, ‘হলো কী মেয়েটার! কেন আসে না?’ অজানা অভিমানে মুখ ভার করে থাকে সে।

তিনদিনের দিন শুভ্রা ছাদে আসে। শায়রের চোখে দারুণ আবেগ আর আনন্দের মিশেলের এক অদ্ভুত অনুভূতির আলো দেখা দেয় কিন্তু একটু পরেই মিইয়ে যায় শায়র। নিজেকেই প্রশ্ন করতে থাকে, ‘মায়াবী প্রজাপতি আজ ছুটে বেড়াচ্ছে না কেন? চুপচাপ কেন বসে আছে! ওর কী মন খারাপ!’ শায়র তীক্ষ্ণ ভাবে দূর থেকে চেষ্টা করতে থাকে শুভ্রার মুখ দেখার কিন্তু সফল হয় না। একটুপরেই ক্লান্ত ভঙ্গিতে শুভ্রা উঠে দাঁড়ায়। শায়র অস্থির হয়ে বলতে থাকে, ‘প্লিজ যেও না। মাত্রই তো এলে। আরেকটু থেকে যাও, আরেকটু দেখতে দাও তোমায় মায়াবী প্রজাপতি।’ শুভ্রা হঠাৎই থমকে যায়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবে তারপর ধীর পায়ে ছাদের আরেকদিকে হেঁটে যেতে থাকে যেদিকে শায়রদের বাড়ি কিন্তু মাঝ পথেই হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যায় শুভ্রা। চিৎকার দিয়ে ছটফট করে ওঠে শায়র। তার চিৎকার শুনে ছুটে আসেন শায়রের বাবা-মা।

আজ শুভ্রার অপারেশন। তার হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করা হবে। শুভ্রার বাবা নেই, নেই বড় ভাইও। তাদের বাড়ির নিচতলা ভাড়া দিয়ে কোনোমতে সংসার চালায় তার মা। তার মায়ের সামর্থ্য নেই শুভ্রার চিকিৎসা করানোর, এ যে অনেক খরচের ব্যাপার! শুভ্রা জানে না কে বা কারা তার চিকিৎসা করাচ্ছে। সে এটাও জানে না কোথা থেকে পাওয়া গেলো দামি হৃদপিণ্ড।

ওইদিন শায়রের ছটফটানি দেখে আর তার শুভ্রাদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকা দেখেই যা বোঝার বুঝে নিয়েছিলেন শায়রের মা নাবিলা চৌধুরী। শায়র পাগলের মতো বলেছিল, -“ওর কী হয়েছে! প্লিজ মা খোঁজ নাও। আমি জানতে চাই, আমি এক্ষুনি জানতে চাই।” শায়রের কথা শুনে তার বাবা-মা দুজনই ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলেছিলেন, “শান্ত হও বাবা, আমরা দেখছি।”
নাবিলা চৌধুরী খোঁজ নিয়ে জেনেছিলেন যে শুভ্রার হৃদপিণ্ড অক্ষম হয়ে পড়ছে দ্রুত। ট্রান্সপ্লান্ট না করা গেলে তাকে বাঁচানো সম্ভব না। শায়রকে জানাতেই শায়র বলেছিল, “যেখান থেকে পারো, যেভাবে পারো ওর চিকিৎসা করাও। আমি ওকে সুস্থ দেখতে চাই। ওকে দেখে আমি বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পাই, ওর কিছু হলে আমি বাঁচতে পারবো না।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
হাতে খুবই কম সময় ছিল। এতো দ্রুত শুভ্রাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না আর হৃদপিণ্ডও পাওয়া যাচ্ছিল না। শায়রের চোখের ঘুম হারিয়ে গিয়েছিল, খাওয়া-দাওয়া করতে পারতো না। রাত-দিন ছটফট করতো, সে বুঝে উঠতে পারছিল না তার কী করা উচিত। একদিন বারান্দায় বসে থাকা অবস্থায় মাকে ডেকে বলেছিল,
-“মা, আমি আমার হৃদয় দিয়ে ওকে বাঁচাতে চাই।
–“এটা কীভাবে সম্ভব বাবা! তুমি চলে গেলে… আমরা বাঁচবো কীভাবে তাহলে?”
-“মা, আমার বেঁচে থাকাটাকে তো বেঁচে থাকা বলা যায় না। কী লাভ এই জীবনের? ওই মেয়েটার চঞ্চলতা আর উচ্ছলতা তুমি দেখোনি। ওর সব কিছুতে আলাদা আলাদা প্রাণের বিচরণ আছে। আমি ওর মধ্যে বেঁচে থেকে সব সুখের স্বাদ নিতে চাই মা। প্লিজ মা, রাজি হয়ে যাও।”
–“আমি পারবো না বাবা।” বলে উনি উঠে শায়রের ঘরে গিয়ে ঘর গোছাচ্ছিলেন।

শায়র তার হুইল চেয়ারের হুইল ঘুরিয়ে রেলিংয়ের কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ থেমেছিল। একবার শুভ্রাদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে নিজেকে শক্ত করেছিল তারপর রেলিং ধরে হাচড়ে-পাঁচড়ে নিজের শরীরটাকে টেনে তুলেছিল রেলিংয়ের উপর তারপর…

বেশ জোরে ধুপ করে শব্দ শুনে নাবিলা চৌধুরী ছুটে এসে দেখেছিলেন শায়রের হুইল চেয়ার খালি। কাঁপা কাঁপা পায়ে রেলিংয়ের কাছে গিয়ে নিচে তাকিয়েই উনি চিৎকার দিয়ে বারান্দার মেঝেতে বসে পড়েছিলেন।

কোমায় যাওয়ার আগে একবার চোখ খুলেছিল শায়র। মায়ের হাত ধরে অনুনয়ের চোখে তাকিয়ে নীরবে অশ্রু ঝড়িয়েছিল শুধু।

প্রতি মাসেই শুভ্রার নামে মানিগ্রামে বেশ কিছু টাকা আসে। শুভ্রা জানে না কে দেয় তাকে এই টাকা। সে ফেরত দিতে চাইলেও পিয়ন টাকা ফেরত নেয় না আবার কোনো তথ্যও দিতে পারে না তাই শুভ্রা টাকাগুলো খুব যত্নে জমিয়ে রাখে, যদি প্রেরকের খোঁজ পাওয়া যায়। একবার টাকার সাথে বেনামি একটা চিঠি আসে। চিঠিতে খুব যত্ন করে লেখা ছিল,

প্রিয় শুভ্রা,
নিজের খেয়াল রেখো। খেয়াল রেখো তার জন্য যে তোমার মধ্যে বেঁচে আছে। তার খুব শখ ছিল সমুদ্রের লোনা জলে পা ভেজানোর, শখ ছিল পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে জোৎস্না মাখার। শখ ছিল সবুজ ঘাস মাড়িয়ে হেঁটে শিশিরের স্পর্শ নেওয়ার। জানতে চেয়ো না আমি কে। শুধু এটুকু জেনে রাখো, কোনো একজন তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবেসে বেঁচে থাকতে চাইতো তাই তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিজেকে ত্যাগ করে গিয়েছে। যদি পারো তার ইচ্ছেগুলো পূরণ করে দিও।
ইতি এক অভাগী মা।

শুভ্রা সুযোগ পেলেই ঘুরতে যায় পাহাড়ে, প্রাণভরে ভিজে আসে সমুদ্র থেকে। শীতের দিনগুলোতে ভোরে উঠে বাড়ির সামনের মাঠে হেঁটে বেড়ায় খালি পায়ে। বাড়িতে থাকলে রোজ কয়েকবার ছাদে যায় শুভ্রা। তার মনের মধ্যে ছটফট করে, শুধু মনে হয় কেউ যেন তাকে ডাকছে। একদিন ঝুম বৃষ্টিতে সে যখন ছাদে বৃষ্টিবিলাস করছিল তখন হঠাৎই তার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। খুব জোরে শব্দ করছিল তার হৃদপিণ্ড। ঝুম বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে শুভ্রা তার হৃদপিণ্ডের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলো যেন। শুভ্রা ভয় পেয়ে যায়, সে আস্তে করে চোখ বুজে বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরতেই যেন স্পষ্ট শুনতে পেল, “আমার মায়াবী প্রজাপতি, ভালোবাসি, বড্ড ভালোবাসি তোমায়।”

আড়ালে অন্যজন – সাদমান রাতুল

0

#গল্পপোকা_ছোটোগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০

গল্প: আড়ালে অন্যজন

সাদমান রাতুল

মেজাজ আজ সপ্তমে উঠে এসেছে। সবকিছুই খিটখিটে লাগছে। কেনো যে সেদিন শয়তানের পাল্লায় পড়তে গেলো? কে জানে! একটু আগেই রমিজের উপর সব জীদ ঝারলো ফারহান। তবুও যেনো মেজাজটা কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না। অফিসে এসি থাকা সত্ত্বেও শরীর থেকে অনবরত ঘাম বের হচ্ছে ফারহানের। কপালে চিন্তার রেশ পড়েছে। কিভাবে ব্যাপারটা ঠিক করা যায় কিছুতেই কিছু মেলাতে পারছে না। মুখে একটু কফি গুজলে হয়তো কিছু একটা সমাধান পেতো। ওদিকে রমিজ যে সেই কখন কফি আনতে গেলো এখোনো ফেরেনি। টেবিলে রাখা মোবাইলটি অনবরত বেজেই চলছে। এ পর্যন্ত পনেরোটা কল অলরেডি এসে পড়েছে। ষোল নাম্বার কল আসতে না আসতেই রিসিভ করে ফোন কানে ঠেকালো ফারহান।

-” কি হয়েছে তোমার বলোতো? সেই কখন থেকে কল করছি। রিসিভ করছো না কেনো? ”

-” কি বলবে সোজাসুজি বলো। এমনিতেই আজ ভাল লাগছে না। এটা আমার অফিস।কল রিসিভ সেন্টার না। তোমার কল রিসিভের জন্য তো আমি ফোন নিয়ে বসে থাকি না। ”

-” যাষ্ট চিল ফারহান। বুঝেছি তোমার কি হয়েছে। আমার কাছে আজ একটা চিঠি এসেছে। ”

শেষ উক্তি শুনে ফারহান কিছুতেই স্থির থাকতে পারছে না। চারদিকটায় ঘোলাটে ঘোলাটে লাগছে। বিগত একমাস ধরে ফারহানের কাছে কিছু চিঠি আসছে। শুধু চিঠি বলাটা ঠিক হবে না ব্লাকমেইল চিঠি বলতে হবে। প্রতিটি চিঠির সাথে জুড়ে দেওয়া একটি করে ছবি। ছবিগুলো কে কখন কিভাবে তুললো তা এখনো রহস্যের পৃষ্ঠায় আকা আছে। আজও সেই একই চিঠি এসেছে। ছবি যুক্ত সেই চিঠিতে চেয়েছে দশ লক্ষ টাকা। কোথায় কিভাবে টাকাটা দিতে হবে তা পরবর্তী চিঠিতে জানিয়ে দেওয়া হবে। প্রতিদিন পিয়ন নাকি রমিজের হাতেই চিঠিটা দিয়ে যায়।

-” কি জানতে চাইবে না কি লেখা আছে তাতে? ”

নিগারের কথায় হুশ ফিরলো ফারহানের।

-” কি…. কি লেখা আছে?? ”

-” আমার কাছে দশ লাখ টাকা চেয়েছে। সময়মত টাকা না দিলে ছবিগুলো তোমার বউ আই মিন মাইশার কাছে পৌছে দিবে বলেছে। এরপর এগুলো নাকি মিডিয়াতে আপলোড করবে। ”

-” তারপর! ”

-” তারপর মানে! আমি এতো কিছু বুঝি না। এসব ঝামেলা সব তোমার উপর ছেড়ে দিলাম। কখন কি কিভাবে করবে সব তুমি জানো। ”

-” বাহ! কি সুন্দর কথা। সব তোমার উপর ছেড়ে দিলাম। শোনো এই সম্পর্কটা প্রথমে তুমি শুরু করেছিলে। আমি না। তোমার জন্য আজ আমার এই অবস্থা। ”

-” এক হাতে তালি বাজে না! হাতে তালি দিতে হলে দুটো হাত ই প্রয়োজন হয়। সো এসব ফালতু কথা বাদ দিয়ে আসল কাজ করো। তুমি না চাইলে কিছুই হতো না। ”

=========================

পূর্ব হতে সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ছে। এই সন্ধ্যা হয়ে এলো বলে। অফিসে আজ ফারহানের জরুরি মিটিং ছিল। মিটিং করার পুরো এনার্জি আজ সকালেই দুমড়ে মুচড়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে।তাই অফিসে সময় নষ্ট না করে ছুটি নিয়ে আজ একটু জলদিই বাড়ি ফিরলো ফারহান। বাড়ি বসে ঠান্ডা মাথায় কিছু একটা ভাবা যাবে। কিছু একটা সলিউশন তো বের করতেই হবে। এসময় ফারহানের মাইশাকে পুরো দমে প্রয়োজন ছিল। কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে মাইশার বিরুদ্ধে যে পাপ করেছে ফারহান।এখন কোন মুখে তার অপকর্মের কথা মাইশার কাছে বলবে। তবে আজ মাইশার নিয়মমাফিক রুটিনের কাজ সম্পূর্ণ উলোট পালোট হয়ে গেছে। সকালে ফারহানের নাস্তা তৈরীর পর পরই খুব দ্রুত ঘরের কাজ গুলো শেষ করে ফেলে মাইশা। দুপুরে সাওয়ার নিয়ে কিছু একটা খেয়ে বিছানায় নেতিয়ে পড়ে। মাইশার দুপুরে খাবারের ঝামেলা নেই বললেই চলে। সকালে খাওয়ার পর যা বাচে তাই খেয়ে নেয় দুপুরে। ফারহান দুপুরের খাবার তার অফিসেই সেড়ে নেয়। তাই রান্না বান্নার ঝামেলা একেবারে রাতেই সারতে হয়। দুপুরে একটু মোবাইল গুতিয়ে টলিয়ে পড়ে ঘুমের রাজ্যে। কিন্তু আজ ফারহান জলদি বাড়ি ফেরায় ঘুমের পাশাপাশি সব কিছুরই ব্যঘাত ঘটেছে।
ফারহান ফ্রেস হয়ে কেবল মাত্র বিছানায় হেলান দিয়েছে।মাইশা ঠিক ফারহানের সামনেই দাড়িয়ে আছে।

-” কিছু বলবে? ”

-” তুমি কিভাবে বুঝলে? আমি কিছু বলতে এসেছি। ”

-” যেভাবে দাড়িয়ে আছো।তা যে কেউই বুঝবে।কিছু বলতে এসেছ। ”

-” চলো না কোথাও ঘুরতে যাই। বাড়িতে আর ভালো লাগছেনা। ”

একটু আহ্লাদি কন্ঠে বলল মাইশা । ফারহান একটু গম্ভীর কন্ঠে বলল,

-” সরি কাল একটা মিটিং আছে। ”

-” উফ্। বাদ দাও তো এই মিটিং ফিটিং। এসব করতে করতে তুমি আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছো। একটু বিনোদনেরো তো ব্যপার আছে। বিয়ের তিন বছর প্রায় এগিয়ে এলো। আজ পর্যন্ত কোথাও নিয়ে যাও নি। ”

-” আচ্ছা। তাহলে কাল মিটিং শেষ করে রাতেই কোথাও রওনা দেব। একেবারে তিনদিনের ট্যুরে। ”

মাইশা একেবারে খারাপ কিছু বলেননি। একটু বিনোদনের ও ব্যাপার আছে। এমনিতেই ফারহান অনেক ডিপ্রেশনে আছে। কোথাও ঘুরে এলে হয়তো একটু ভালো লাগবে। তাই সবদিক থেকে ভেবে চিনতে মাইশার কথা রাখতে হলো ফারহানের। ফারহানের ভাবনায় ছেদ ঘটালো ঐ হতোচ্ছারা মোবাইলটা। কারণে অকারণে শুধু বাজতেই থাকে।যদি মোবাইলটা একেবারের জন্য ফেলে দেওয়া যেতো। মনে আছে এই মোবাইলের যন্ত্রনায় একদিন জিদ করে মোবাইল সুইচ অফ করে রেখেছিল। সেদিনই নাকি অফিসের বস পচিশটা মিসকল দিয়েছিল। তারপরের দিনই অফিসে বসের ঝারি খেতে হয়েছিল। সেদিনই ফারহান প্রতিজ্ঞা করেছিল। যত যাইহোক কখনো মোবাইল সুইচ অফ করবে না। সবচেয়ে বড় কথা এই মোবাইলের মাধ্যমে ফেসবুকে পরিচয় হয়েছিল নিগারের সাথে। সম্পকটা প্রথমে ভাই বোনের হলেও কখন যে বোন থেকে বউয়ের স্থান দখল করছে নিগার তা আজও অজানা। প্রথমে ফেসবুকে চ্যাটিং। কিছুদিন চ্যাটিং করার পর নিগারের প্রতি কখন যে ইমপ্রেস হয়েছিল বলতে পারবে না ফারহান। এরপর চ্যাটিং প্লাস অডিও ভিডিও কল। আর এ সবকিছুই হয়েছিল মাইশাকে না জানিয়ে। নিগার আর ফারহানের সম্পর্কটা আরো মজবুতের জন্য সেদিন প্রথমবারের মতো তারা ঘুরতে বেরিয়েছিল রমনা পার্কে। এবং ওটাই তাদের সরাসরি শেষ দেখা। সেদিন কোন হারামজাদা তাদের ছবি তুলে রেখেছিল। নানা ঝামেলায় পরর্বতীতে মোবাইল ছাড়া নিগারের সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

-” কি হলো? কই হাড়িয়ে গেলা? বুঝছি নিশ্চয়ই তুমি ঘুরাঘুরির জন্য প্লানিং করছো? ওদিকে তোমার ফোন যে বেজেই চলছে সেদিকে খেয়াল আছে? ”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মাইশার কথায় ফারহান একটু হতবত খেলো বটে। কিছু সামলাতে না পেরে ফারহান বলল,

-” খুব মাথা ব্যথা করছে! একটু চা দেবে প্লিজ। ”

মাইশা চলে যেতে নিলেই ফারহান সাথে সাথে মোবাইলটা কানে ঠেকালো,

-” এসময় কেনো ফোন করেছ? যানোনা এসময় আমি বাড়িতে থাকি। শোনো আগামী তিনদিন আমাকে ফোন করবে না। আমি আর মাইশা তিনদিনের ট্যুরে যাচ্ছি। ”

-” এতো চেচাচ্ছো কেনো? মাইশা দেখে ফেলেছে নাকি? ”

-” মাইশা দেখলেও বুজবে না। আমি তোমার নাম্বার নিগার থেকে নাফিস নামে সেভ করে রেখেছি। ”

কথাটা বলা মাত্রই ফারহান চুপসে গেলো। তাৎক্ষণিক মুখটা মলিন হয়ে গেছে। চোখে মুখে ধরা পরা ধরা পরা ভাব।হাত থেকে ফোনটা ধপাশ করে পরে গেছে। ফারহানের সামনেই মাইশা চা হাতে দাড়িয়ে আছে।

==============

স্বভাবজাতই মানুষ ভ্রমণ করতে ভালোভাবে। অগাত জলরাশি দেখার জন্য মানুষ সমুদ্রের দিকে ছোটে, নদী ভ্রমণে যায়।তেমনি মাইশা ফারহান ও ছুটে চলছে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে।

শুভ্র নির্মল সচ্ছ সকাল। আলতো সিন্ধ বাতাস।পূর্ব আকাশে সূর্য লালিমা ছড়িয়ে উদয়নে প্রস্তুত। কোনো এক অদৃশ্যের অনুমতি পেলেই নির্মল আলো ছড়িয়ে দেবে বিশ্ব বাতায়নে।জানালার পাশে বাসে বসে হেলে দুলে ঘুমাচ্ছে মাইশা। সূর্যের লালিমা জানালার পাশে বয়ে এসে মাইশা সম্পূর্ণ মুখশ্রী ছড়িয়ে পড়লো।সঙ্গে সঙ্গে মাইশার তন্দ্রা কেটে গেল। কাল সারারাত দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি ফারহান। দুটো কারণে খুব টেনশন হচ্ছিলো। এক ঐ চিঠি। দুই সেদিন রাতে নিগারের সাথে কথা বলার সময় মাইশা এসে পড়েছিল। মাইশা হাব ভাবে যা বুঝা যায় সে হয়তো কিছুই শোনেনি। পরবর্তীতে ব্যাপারটাকে খুব সহজেই সামলে নিতে পেরেছে ফারহান। ফারহানের একটা অসাধারণ প্রতিভা আছে যে কোনো জিনিস খুব সহজেই সামলে নিতে পারে সে।সারারাত না ঘুমালে কি হবে। এখন চোখ জোড়ায় তন্দ্রা এসে ভর করেছে। চোখে জল দিয়ে তন্দ্রা কাটানোই স্নেয় মনে করল ফারহান।

~~~~~~~~~~~~~~~~
~~~~~~~~~~~~~~~~

-” স্যার আইজকাও ঐ ব্যাট্যা আফনেরে চিডি দিয়া গেছে। ”

রমিজ ফারহানের হাতে চিঠিটা দিয়েই দ্রুত কেটে পড়লো। রমিজ একটা বিষয় খুব ভালো ভাবে খেয়াল করেছে। ফারহানের কাছে যেদিনই কোনো চিঠি আসে সেদিনই ফারহান রমিজের সাথে কারণে অকারণে রুক্ষ আচরণ করে।

ফারহান তড়িঘড়ি করে চিঠিটা খুলল। আজ পর্যন্ত ফারহান চিঠি খোলায় এতোটা আগ্রহ দেখায়নি । চিঠির খামের উপরে বড় করে একটি ব্রেকিং নিউজ দেওয়া আছে। ‘এটাই শেষ। কথা মত কাজ করলে এরপর আর কোনো চিঠি আসবে না। ‘ সেজন্যই চিঠি খোলায় এতোটা আগ্রহ।

খুব কষ্টে অল্প অল্প করে কিছু টাকা সঞ্চয় করছে ফারহান। ভেবেছিলো আরো কিছু টাকা লোন নিয়ে একটি ফ্লাট কিনবে।ভাড়া বাসায় থাকতে গেলে বেতনের নব্বই ভাগ টাকাই বাড়ি ওয়ালাকে দিতে হয়। কিন্তু এই অসভ্য চিঠি তার সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিলো। কতটা কষ্ট করে এই টাকা গুলো সঞ্চয় করেছে এটা শুধুমাত্র ফারহানই জানে। দুপুরে যেখানে তার পেট ভরে ভাত খাওয়ার কথা সেখানে ফারহান একটা কলা আর রুটি দিয়ে কাজ চালিয়েছে। এখন টাকাগুলো তার দোষ ঢাকার জন্য দিয়ে দিতে হবে এ ভেবে বুক চিরে কান্না পাচ্ছে ফারহানের। যার যায় সে বোঝে। যদি চিৎকার করে কাদতে পারতো তাহলে হয়তো কিছুটা সস্তি পেতো। এছাড়া তো কোনো অপশন ও খোজে পাওয়া যাচ্ছে না।থানা পুলিশ করতে গেলে সবাই জানবে। বাড়বে নতুন আরেক কেলেঙ্কারি। বিষয়টা যেহেতু গোপন, গোপনই থাক। টাকা গেলে যাবে। টাকার সাথে সাথে নিগারের সাথেও ইতি টানতে হবে।

প্রায় দিন দু’এক পরের কথা,,,,,,

ঘুম ভাঙে এলার্মের ডাকে। পাশে মাইশা নেই। বোধয় ওয়াশরুমে গেছে। কিন্তু সবসময় ফারহান ই মাইশাকে ডেকে তুলে। ওদিকে ওয়াশরুমের দরজাটাও বাইরে থেকে লক করা। কোথায় গেলো মাইশা। বেড সাইডের পাশে এক কাপ চা রাখা। পাশে একটা চিরকুট।

‘চলে যাচ্ছি একেবারের জন্য। আর ফিরবো না। চিন্তা করোনা,,খুব শীঘ্রই ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবে।আর কতদিন এভাবে লুকিয়ে রাখবে আমার কাছ থেকে। ডিভোর্স হওয়ার পর নিগারকে বিয়ে করে নিয়। ও হ্যাঁ আরেকটা কথা! এরপর তো আর আমাদের দেখা হবে না। শেষ দেখা করতে চাইলে নিচের ঠিকানায় চলে এসো। ‘

==================

-” এই নিন আপনার পারিশ্রমিক। এডভান্স দিলাম। বাকি অংশটুকু নাটকের পরে পাবেন। ফারহান খুব শীঘ্রই এসে পড়বে। ও আসার পর আপনি কিছুক্ষণের জন্য আমার বয়ফ্রেন্ড সাজবেন। ফারহানের সামনেই আমার হাত ধরে বাসে উঠবেন। সামনের স্টপেই আপনি নেমে যাবেন। সেখানেই আপনার আমার কাহিনী খতম। ”

খুব শান্ত ভাবে শীতল কন্ঠে কথাগুলো বলল মাইশা।

-” কিন্তু আপনি কই যাবেন। ”

-” বাপের বাড়ি। মা’র কাছে চলে যাবো। জানি যাওয়ার পর অনেক কেলেঙ্কারি হবে। বাট আমি এখানে আর থাকতে চাই না। ”

সূর্যটা ঠিক মাথার উপর। ঠা ঠা রোদে পুড়ে ফারহান পাগলের মতো মাইশাকে খুজে বেড়াচ্ছে। প্রচুর ঘামছে সে। ঘামে ফারহানের শার্ট ভিজে একাকার। চারিদিকে ভলোই ভীর জমেছে। ভীরের মধ্যে মাইশাকে খুজতে ফারহানের বেশ একটা অসুবিধায় পড়ে । ফারহান খুব হাপাচ্ছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সম্ভবত ভীরের কারনেই। হাপাতে হাপাতেই ফারহান মাইশাকে বলতে লাগলো,

-” পি… প্লিজ বাড়ি চলো। জানিনা কখন কি কিভাবে জেনেছো । বিষয়টা সত্যিই। কিন্তু কালই সব শেষে হয়ে গেছে। প্লিজ বাড়ি চলো। ”

-” কি চলো! এখুনি বাস ছেড়ে দেবে। ”

ফারহানের কথার মঝে হঠাৎই বলে উঠলো সামির।
ফারহান আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক। সামিরের কথায় কিছুটা চমকে মাইশাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়লো ফারহান।

-” ইনি কে? ”

-” মিট মাই বয়ফ্রেন্ড। ও সামির। ”

মাইশা সম্পূর্ণ চেষ্টা করল ফারহানের সামনে হাসি ধরে রাখতে।মাইশা বোঝাতে চায় প্রিয় মানুষের সাথে অন‍্য কাউকে পাশে দেখলে কেমন ফিল হয়।মাইশার কথায় ফারহানের পায়ের রক্ত মাথায় উঠেছে। কিছুতেই কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না।

-” মিথ্যা। ”

-” না মিথ্যা না। সামির আমার বয়ফ্রেন্ড। যেমনটা নিগার তোমার। ”

ফারহানের মুখ থেকে কিছুই বেরুচ্ছে না।

-” আমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলাম। তাই না ফারহান। কেন করেছিলাম তাও তো জানো। আমাদের চিন্তা ভাবনা এক আচার আচরণ এক। এটলিস্ট বলতে গেলে আমাদের সবকিছুই একই রকম।আমরা একে অপরের ফিলিংস খুব সহজেই বুজতে পারতাম। তুমি তো এটাও বলতে’ আমাদের মন এক। সৃষ্টিকর্তা আমাদের মনকে দুভাগে ভাগ করেছে। ‘ যদিও এটা সত্য না। কারণ আল্লাহ আমাদের সবার রুহুকে আগেই তৈরি করে রেখেছে। সবদিকে এক হলে চরিত্রের দিক দিয়ে আমি কেনো পিছিয়ে থাকবো? ……. ”

-” তাই বলে…………. ”

-” হ্যাঁ। তাই বলে আমিও তোমার পথ ধরেছি। ”

-” এতো কিছু বুঝি না। তুমি এখন আমার সাথে বাড়ি যাবে। এটাই ফাইনাল। ”

-” কেন? ”

-” কারণ বিয়ের প্রথম রাতে তুমি বলেছিলে আমাদের মাঝে যত যাই হোক না কেনো দুজন দুজনকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। ”

-” সেই রাতে তুমিও তো বলেছিলে আমাদের মাঝে কোনো কিছুই গোপন থাকবে না। কি রাখতে পেরেছো সেই কথা? ”

মাইশা ফারহানের দিকে শীতল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। চোখ জোড়া ফারহানের উত্তরের অপেক্ষায় স্থির। ফারহান একেবারেই স্তব্ধ হয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না সে। বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে।মাইশা ফারহানকে উদ্দেশ্য করে সামিরের হাত নিজের হাতের সঙ্গে জড়িয়ে ধরল। না সামিরের হাত ধরাটা অতিরিক্ত হয়ে যায়।ফারহান তো মাইশার সামনে এমনটা করেনি। তাই হাত ছেড়ে দিল। মাইশা ফারহান দুজন দুজনের মুখমুখি।

-” তোমাকে একটা গোপন কথা বলার ছিল। ওই টাকাগুলো আমিই নিয়েছি। প্রথমে টাকা নেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। ভেবেছিলাম চিঠি পেয়ে সব আমাকে বলে দিয়ে মিটমাট করে ফেলবে। পরে সেরকম কোনো আভাস পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে কাজটা করলাম। ভালো থেকো। ”

শেষ কথাটা খুব কষ্টে বলল মাইশা। চোখ বন্ধ করে বুক চিরে নিঃশ্বাস ছাড়লো।ফারহানকে ছাড়তে একেবারেই ইচ্ছে করছে না। ফারহান চুপ। খুব কষ্টে মুখ হতে একটা কথাই বেরুল,

-” খুব ভালো করেছো।যে টাকাটা নিয়েছো সেটা তোমার দেনমোহর। ”

কি আর বলবে ফারহান যখন মাইশাই চায় না তার সাথে যেতে। তাহলে জোর করে লাভ কি।মাইশাকে তাই মুক্ত করে দেওয়াই স্নেয়।

মাইশা একথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল।ভেবেছিল ফারহান তাকে আবারও জড়াজড়ি করবে বাড়ি নেওয়ার জন্য।কিন্তু না।তার মানে ফারহান মাইশাকে সত্যিই চায় না।তাহলে মাইশাও ফারহানকে চায় না।সে একাই সাড়া জিবন কাটিয়ে দেবে।যেভাবে আগে মা’র কাছে ছিল।সামির তো শুধু ভাড়া করা লোক মাত্র।কিছুক্ষণ পরেই তো সে চলে যাবে।আর মাইশা যাবে তার মা’র কাছে।কিন্তু ফারহানকে সেটা বুঝাতে হবে যে মাইশাও তাকে ছাড়া থাকতে পারে।মাইশা ফারহানের সামনে শক্ত চেহারায় তাকিয়ে আছে।যতটা সম্ভব ফারহানকে বুঝাতে চাচ্ছে এতে মাইশার কোনো দুঃখ নেই।মাইশা চোখ ফারহানের চোখের উপর স্থির।মুখ থেকে শুধু এটুকুই বের করল,

-” জানো ফারহান আমি না একদম তোমারই মতন। প্রকাশ্যে একজন আড়ালে অন্যজন । ”

সমাপ্ত❤

মাতৃত্ব – নিষাদ আহমেদ

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
মাতৃত্ব
নিষাদ আহমেদ

ভালোবেসে বিয়ে হয়েছিল নিশু আর নিষাদের। দু বছর চুটিয়ে প্রেম করেছে তারা।তারপর বাসায় জানালে দু-পরিবারের সবাই মেনে নেয়। লাভ ম্যারেজ নিয়ে নিশুর বাসায় কোন সমস্যা কোন সময়ই ছিলো না।
অনেক বেশি ভালবাসতো নিশু নিষাদ কে। নিষাদ কম ভালোবাসতো তা নয়। নিষাদের পুরো দুনিয়া জুড়ে তো ছিলো নিশু।
হ্যাঁ,ছিলো ! কিন্তু এখন তার জীবনের অলিগলিতে এখন নিশুর আনাগোনা নিষিদ্ধ।
বিয়ের তিন বছর পরেও নিশুর বাচ্চা হচ্ছিলো না। কিন্তু নিশু আর নিষাদ নিজেদের পরিবার বড় করতে চাইছিলো। নিষাদের বাচ্চার অনেক শখ। ও নিজের বড় ভাইয়ের ছেলে মেয়েদের অনেক আদর করতো। সে মানুষটার যখন নিজের বাচ্চা হবে না জানি কত আদর করবে খুশিতে পাগল হয়ে যাবে সে। নিশুর নিজেরও বাচ্চা অনেক পছন্দ, তাই তিন বছরেও বাচ্চা না হওয়ায় ভয় পাচ্ছিলো। খুব বেশি ভয় পাচ্ছিলো নিশু।
সেদিন যখন নিষাদ বললো, দেখো আমার পক্ষে তোমার সাথে থাকা সম্ভব নয়।তখন নিশু অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো অনেক্ষণ। তখন নিষাদ কে কেবল একটা প্রশ্নই করেছিল নিশু।
– কারণটা কি শুধু বাচ্চা?
নিষাদ বলল, হ্যাঁ,
নিষাদের মুখে হ্যাঁ শব্দটা শুনে যেনো নিশুর মরে যেতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু তা পারেনি নিশু।
নিশু ওকে আর কিছুই বলতে পারেনি কারণ নিশুর মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হচ্ছিল না।
শুধু দু-চোখ বেয়ে শ্রাবনের বারিধারা ঝরছিল।
পরের দিন সকালে কাউকে কিছু না বলেই বাবার বাসায় চলে এলো নিশু।
এমনকি নিষাদকেও কিছু বলেনি। ভেবেছিলো সারা দিন গেলে রাতেই অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার সময় ও নিশুকে সাথে করে নিয়ে যাবে। কিন্তু না,নিষাদ এলো না এমনকি ওর একটা কলও এলো না
নিশু বার বার ফোনের পানে তাকিয়ে রইলো। নিষাদের একটা কলের আশায় ,কিন্তু তা আর এল না।
রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছিল তার অতিতের কথা।
কতই না ভালোবাসতো নিষাদ তাকে।যেদিন হঠাৎ প্রচন্ড পেটে ব্যথায় মাঝ রাতে চিৎকার শুরু করেছিলো নিশু। নিশুর মনে হচ্ছিলো এখনই বুঝি তার প্রাণটা বের হয়ে যাবে।
মৃত্যু যন্ত্রণা কেমন হয় তা নিশু জানিনা। কিন্তু সেই রাতের যন্ত্রণাটা তার কাছে মৃত্যু যন্ত্রণার চাইতে কোন অংশে কম ছিলো না।
নিশুকে ওভাবে চিৎকার করতে দেখে নিষাদ কেঁদেই দিয়েছিল।বলতে গেলে প্রায় পাগল হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছিল নিষাদের।
মাঝরাতে নিশুকে নিয়ে হসপিটালে ছুটে গেলো নিষাদ।
নানা রকম টেস্ট করে যখন ডাক্তার রিপোর্ট নিয়ে এসে ছিল বলতে গেলে এমন রিপোর্ট আসবে ভাবতেও পারেনি নিশু আর নিষাদ। রিপোর্ট শুনার পর জীবনের সব সুখ, আনন্দ, রঙ এলোমেলো হয়ে গেছে।
পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গিয়েছিল।
ডাক্তার যখন নিশু কে বলল ”
আপনি আর কখনও মা হতে পারবেন না” এ কথা শুনার পর নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছিলো না নিশুর। তাই আবার টেস্ট করালো। অন্য ডাক্তার দেখালো। সেও একি কথাই বলল,
নিশু নাকি কখনও মা হতে পারবে না। মা ডাকটা শুনতে পারবে না। নিশু কখনো মা হতে পারবে না।
প্রায় দু’দিন কারো সাথে কোন কথা বলেনি নিশু,এমনকি নিষাদের সাথেও নয়।
নিষাদও তেমন কিছু বলেনি তখন নিশুকে। সেদিন কষ্টটা এত প্রচণ্ড ছিল তবুও কাঁদেনি নিশু।
সেদিন মনকে শক্ত করে বলেছিল,
বাচ্চা হবে না তো কি হয়েছে ,নিশুর নিষাদ তো আছে।
নিশু নিষাদ কে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকবে।
কিন্তু নিশুর কপালে যে সে সুখটাও জুটলো না।
নিষাদও আর নিশুর রইল না।
নিশু মা হতে পারবে না এই খবরটা পাওয়ার পর থেকে নিষাদ মুখে কিছু না বললেও ওর মাঝে আশ্চর্য রকম কিছু পরিবর্তন দেখতে পেলো নিশু।
ওর মনে হচ্ছিল আগের সেই নিষাদকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলতে লাগলো।
আগের মত নিশুর সাথে কথা বলে না। নিশুর মাথায় ভালোবাসার পরশ নিয়ে হাত রাখে না।
কেমন যেন ওকে এড়িয়ে যেতে লাগলো।
নিশুকে আগের মত ভালবাসে না। অন্য রকম এক পরিবর্তন দেখতে পেলো নিশু তার মাঝে।
নিশু মা হতে পারবে না,
এই কথাটা শুনার পর এতটা কষ্ট পাইনি।
যত টা নিষাদ যখন বলল
তার সাথে থাকতে পারবে না ।
এই কথাটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না নিশু। নিষাদতো কখনই এমন ছিল না।কত ভালোবাসতো নিশু কে।
এখন কি ভালবাসার চাইতে বাচ্চাটা বড় হয়ে গেল?
বাচ্চা না হতে পারার কষ্টটা কি আমার চাইতে নিষাদের বেশি??
একজন মেয়ের জন্য মা হতে না পারার কষ্টটা কি তা কেউ বুঝবে না। কখনই বুঝবে না। এটা বুঝার ক্ষমতা আল্লাহ তায়ালা কাউকে দেয়নি।
পৃথিবীর সব কষ্ট সবাই উপলব্ধি করতে পারলেও এই কষ্ট কেউ বুঝবে না। কেউ না।এ কথাগুলো নিশু শুয়ে শুয়ে ভাবছিল।
আজ সাতদিন পার হলো নিশু চলে এসেছে।
নিশু চলে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিষাদ একটা বারও নিশুর খবর নেই নি।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

৭ দিন পর নিশুর নামে একটা চিঠি এলো। কি হতে পারে ভেবে চিঠিটা খুলতেই নিশুর দুনিয়াটা যেনো থমকে গেলো।
নিষাদ ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছে।
নিশু যেনো কান্না করাটাও ভুলে গিয়েছে আজ।
এতদিন বাসায় কাউকে কিছু জানাইনি নিশু
আর এখন তো না জানানোর কোনো কারণই নেই। তাই বাবা মা জিজ্ঞেস করার সাথে সাথেই বলে দিলো নিশু।
আমি কখনো মা হতে পারব না। নিষাদ কখনো সন্তানের সুখ দিতে পারবো না। তাই নিষাদ আমার সাথে থাকবে না। তার বাচ্চা চাই বউ বা ভালবাসা নয়।
নিশু এসব মা-বাবাকে বলার সময় মনকে অনেক শক্ত করে ফেলে।যাতে চোখে পানি না আসে। নিশু নিজের দোষ মেনে নিয়ে চুপচাপ স্বাক্ষর করে দিলো।
মুহূর্তের মাঝেই বিবাহিত থেকে ডিভোর্সি হয়ে গেলো নিশু।
এরপর নিশু আর নিষাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করেনি।
কারণ যে নিশুকেই চায় না তার কাছে আর কিছুই চাওয়ার নেই নিশুর।
নিশু এখন নিজেকে স্বাভাবিক করার বা রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে যাই।
বাড়ির পাশে একটা স্কুলে জয়েন করে নিশু।
সারাদিন ক্লাস করে সময় থাকে না অতীতের কথা মনে করার। দিব্যি ভালোই যাচ্ছিলো নিশুর দিনকাল।
সারাদিন পরীক্ষা নিয়ে আজ অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে নিশু।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরেই নিশু একটা বড়সড় ধাক্কা খাই।
এই মানুষটাকে এতোদিন পর দেখব তা ভাবতেই পারেনি নিশু,
ওকে দেখে কেমন যেন চমকে গেছে।
– কেমন আছিস?
– ভালো আছি তুই কেমন আছিস?
– দিলি তো পর করে?
– আমি? কি করলাম?
– নিজের কষ্টগুলো নিজের কাছেই রেখে দিলি। আমাকে ভাগ দেয়া গেলো না?
নিশু ওর মুখের পানে তাকিয়ে রইলো ।ওকে বলার মতো কিছুই নেই নিশুর কাছে।
বাবা-মা আর নিষাদের পর যদি পৃথিবীতে কেউ নিশুকে ভালো চিনে বা বুঝে তা হলো এই নিশান।
যার সাথে এতক্ষণ নিশু কথা বলছিল।
নিশান নিশুর ছোটবেলার বন্ধু। ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। নিশুর সুখ দুঃখের সাথী ছিল নিশান। নিষাদ নিশুর জীবনে আসার আগে একমাত্র নিশান ছিল নিশুর সুখ দুঃখের সাথী।যার সাথে সব শেয়ার করত।নিষাদ যখন নিশুর জীবনে আসে তাপর থেকে কেনো যেনো নিশান দূরে সরে গিয়েছিল ।
.
যেদিন নিষাদ আর নিশুর এঙ্গেজমেন্ট !
সেদিন নিশু শুনতে পায়,
হুট করেই নাকি নিশান অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে আর কখনো আসবে না।
খুব কষ্ট পেয়েছিলো নিশু সেদিন। ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ওকে না বলেই চলে গেলো। পর করে দিলো নিশুকে। যাওয়ার আগে একবার দেখা করা তো দুরের কথা একবার বলেও যায়নি নিশু কে।
এমনকি আর যোগাযোগও করেনি নিশুর সাথে।
এমন সময় ওকে পাবে নিশু ভাবতেই পারেনি।
.
এখন ইদানিং প্রায় প্রতিদিনই নিষাদের সাথে দেখা হচ্ছে নিশুর। নিশু যদি বলে সময় নেই আজ দেখা করতে পারবে না,
তাহলে নিশান নিশুকে স্কুল থেকে পিক করতে চলে যায়।
এতো বারণ করে নিশু তাও নিশান বলে এই বাহানায় তোকে তো অন্তত একবার দেখতে পারি ।

এখন নিশুর দিব্যি ভালোই যাচ্ছে দিনগুলো।
একদিন ভরা সন্ধ্যায় নিশান নিশুদের বাসায় আসে,
নিশু: কিরে তুই এ সময়?
নিশান:কেন আসতে পারি না?
নিশু: আরে না তা নয় এমনি বলছি। আয় বস।
নিশান: আজ বসতে আসিনি তোকে নিতে এসেছি।
নিশু: আমাকে? কোথায়?
নিশান: তুই জানিস তোর বিয়ে ঠিক হওয়ার পর কেন তোকে কিছু না বলেই হুট করে চলে গিয়েছিলাম ?
নিশু:হ্যাঁ, তুই তো আমাকে কিছু বলিসনি। না বলেই চলে গেয়েছিলি।
নিশান: বলিনি বলে তুই কখনো জানতেও চাসনি। আর জানার চেষ্টাও করিস নি।
নিশু: আসলে…
নিশান:তুই কখনোই বুঝতে পারিসনি আমি সত্যি তোকে কতটা ভালবাসি।
নিশানের মুখে ভালোবাসি” এমন কথা শুনবে নিশু কখনো আশা করেনি। নিশুকে অবাক হতে দেখে নিশান বলে, অবাক হচ্ছিস?
অবাক হওয়ারই কথা। কখনো তো বলিনি যে তোকে ভালোবাসি। তবে ভেবেছিলাম তুই বুঝবি কিন্তু বুঝলি না।আর কখনো বোঝার চেস্টাও করিসনি।
ভেবেছিলাম তোকে আমার পাওয়া হবে না কিন্তু দেখ ভাগ্যের লিখন তুই যে আমার ভাগ্যেই লিখা। বিধাতা তোকে আমার করে সৃষ্টি করেছেন। শুধু আমার করে।
এসব বলতে বলতে নিশান, নিশুর সামনে হাঁটু হাঁটু গেড়ে বসে পরলো,
আরো বলতে লাগলো,
নিশু,আমি তোকে বিয়ে করতে চাই। হবি আমার বউ ? করবি আমায় পূর্ণ ? আয় না প্লিজ আমার জীবনে শুধু আমার হয়ে।
ওর কথার কোনো জবাব দিতে পারলনা নিশু।
নিশু মনে মনে ভাবছে, হয়তো ও সব টা জানেনা বলেই এমন বলছে। যদি জানতে পারে আমি কখনো মা হতে পারব না। ওকে সন্তানের সুখ দিতে পারবো না তাহলে ওর সব ভালোবাসা ফুরিয়ে যাবে। আর থাকবে না নিশুর প্রতি ওর ভালোবাসা।
নিশু ওর কথার কোনো জবাব না দিয়ে বলল,
– আমি একটু একা থাকতে চাই প্লিজ তুই চলে যা।
জবাবে নিশান বলল,
আমি আজ তোকে নিয়ে যাবো।
নিশু: প্লিজ যা বলছি।একটু একা থাকতে দে আমাকে।
এটা বলেই নিশু ভাবনার জগতে চলে গেল।
বাবা অনেকদিন ধরেই আমাকে বলছে আবার বিয়ে করার কথা কিন্তু আমি জানি আমার মত অসম্পূর্ণ মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না আর আমি জেনে শুনে তো কারো জীবন নষ্ট করতে পারিনা। এসব ভাবতে লাগলো নিশু।
নিশুকে ভাবনায় বিভোর দেখে নিশান বলে,
– কি ভাবছিস এতো ? ভাবছিস আমি না জেনেই তোকে বিয়ে করতে চাইছি,
এইতো?
আমি কি আমার নিশু কে চিনি না।যার সাথে আমার শৈশব-কৈশব কেটেছে।যে ছিল আমার একমাত্র সুখ-দুঃখের সাথী।
নিশু একা থাকতে কি আমি নিশান অসম্পূর্ণ থাকতে পারি বল ? চাই না আমার কোনো সন্তান। আমি চাই শুধু তোর একটু ভালোবাসা।একটু তোর মনের মধ্যে জায়গা।
একটা সন্তান যদি ভালোবাসার পথে বাধা হয়। তাহলে চাইনা আমার সেই সন্তান। আমি তোকে চাই যে কোন কিছুর বিনিময়ে তোর ভালোবাসা চাই। তোকে আঁকড়ে বাঁচতে চাই। বলনা বাঁচবি আমার সাথে ? আমার হয়ে?
নিশান এ কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে গেল।আর ওর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।
নিশানের এ অবস্থা দেখে নিশু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা। এতদিনের জমানো কান্না গুলোকে আর আটকাতে পারলো না নিশু।নিশানের বুকে মাথা রেখে কেঁদে দিলো। ডুকরে ডুকরে অঝোরে কাঁদতে লাগলো নিশু। সাথে আকুতি করতে লাগলো নিশানের কাছে,
ননিশু: আমি মা হতে চাই….
নিশান:সত্যি!! হবি তো তুই আমার সন্তানের মা, হবি? পৃথিবীতে কত সন্তান আছে যাদের বাবা-মা নেই তাদের থেকে একজনকে না হয় আমাদের বাবা-মা বানাবে। আমাদের সন্তানের সুখ দিবে।আমাদের সন্তানের অভাব মুছে দেবে।চল না অন্তত একজনকে বাবা মার সুখ দেই। অন্তত একজনকে বাবা মার আদর থেকে বঞ্চিত না করি।অন্তত একজন মা-বাবাহীন সন্তানের মুখে হাসি ফোটায়।নিশুকে বুকের সাথে আকড়ে ধরে এই কথাগুলো বলতে লাগলো নিশান।
নিশুও নিজেকে নিশানের বুকে ঢেলে দিয়ে হাউমাউ করে কান্না করছে।এতদিনের চাপা কান্না যেন আজ বুক দুমড়ে-মুছড়ে বেরিয়ে আসতেছে।
নিশান: পাগলিটা আমার। তৈরী হয়ে নে। তোর জন্য একটা লাল টুকটুকে বেনারসি এনেছি। আমাদের সন্তান অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
নিশান,নিশুকে যোগ্য সম্মান দিয়ে ওর বউ করে নিয়ে গেলো নিজের ঘরে।
নিশু ভাবছে, একজনকে ভালোবেসে বিয়ে করে তো দেখলামই। এখন না হয় যে আমাকে ভালবাসে তার হয়ে যাই।দেখি সে আমাকে কি দেই,আর আমি তাকে কি দিতে পারি।
নিশানের পাগলামি যেনো দিন দিন বেড়েই চলেছে ।
প্রথম যেদিন নিশুকে নিয়ে গেলো সেদিন সে নিশুকে বলল,
নিশান: শুন বিয়ে হয়ে গেছে তাই বলে আপনি বা তুমি করে বলতে হবে না। তুই করে বলতি তুই করেই বলবি। আমি তোর তুইটাকেই ভালবাসি।আর এই তোর তুই টাকে আমি হৃদয়ে গেতে রেখেছি।
.এভাবে কাটছে নিশু আর নিশানের দিনগুলো।খুব সুখেই কাটছে।
একদিন সকাল সকাল নিশান ,শায়ানকে নিয়ে নিশুকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো।
বিয়ের এই তিন মাসে নিশান কখনো নিশু কে না বলে বের হয়নি।
আজ নিশান এভাবে হুট করে নিশুকে না বলে যাওয়াতে নিশুর প্রচন্ড ভয় লাগছে। সকাল থেকে অস্থির আর ব্যাকুল হয়ে আছে। না পারছে কিছু খেতে, না পারছে নিজেকে শান্ত করতে। অতিতের সব চিন্তা যেন মাথায় ভর করেছে আজ।
না জানে নিশু,নাকি আবার কোন বিপদ আসতে চলেছে তার জীবনে।
নিশানকে বার বার ফোন দিচ্ছিলো নিশু।কিন্তু না নিশান ফোন উঠাচ্ছে না।
মনের ভিতর ব্যাকুলতা আর হাজার চিন্তা নিয়ে ছটপট করতেছে নিশু। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল,এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না নিশু। এবার কেঁদেই দিলো। নিশুর কান্না দেখে নিশানের বাবা মা অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। ওনারা নিশু কেকে এত করে বুঝাচ্ছেন যে ও চলে আসবে, কিন্তু নিশু কিছুতেই নিজের মনকে বুঝাতে পারছে না। কান্না করতে করতে চোখ মুখ ফুলিয়ে একাকার অবস্থা করে ফেলেছে ও। কান্না যেন থামছেই না।
সন্ধ্যার পরপরই কলিং বেলের শব্দে শুনে দৌড়ে যাই নিশু। দরজা খুলে শায়ানকে দেখেই নিশু যেনো থমকে যাই। নিশুকে দেখেই শায়ান বলল,
বাব্বাহ! একদিন তোমাকে ছাড়া আমরা বাপ-ছেলে ঘুরতে বেরিয়েছি এতেই এতো কান্নাকাটি। যাও তোমাকে ছাড়া আর কোথাও যাব না। আমাদের ছেলেটাও তোমার মতো হয়েছে শুধু কাঁদে।
নিশু ওকে দেখছে আর অবাক হচ্ছে। ও কি মানুষ ? না ও মানুষ নয়। ও নিশুর জন্য ফেরেশতা। নিশুর জন্য হয়তো ফেরেশতা। ওর কোলে ফুটফুটে সদ্য জন্ম নেওয়া আমাদের সন্তান। নিশান সকাল থেকে নিশুর জন্য সুখ আনতে গিয়েছিলো। মাতৃত্বের সুখ। নিশান কখন এতো কিছু করলো নিশু কিছু টেরই পেলো না। নিশুকে মূর্তির মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিশান বলল,
– নাও নাও তোমার ছেলেকে কোলে নাও।
এই বলে নিশান ছেলেকে নিশুর কোলে দিয়ে চলে যেতে নিলেই নিশু ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।এটা কোন দুঃখের কান্না নয়।এটা সুখের কান্না। মা হওয়ার কান্না। মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার কান্না।নিশুর কোল জুড়ে কেউ আসবে। নিশুকে মা বলে ডাকবে ভাবতেই পারেনি ও কখনো।
নিশান আজ নিশুকে মা বানালো। নিশুও মা হলো। আজ নিশু বুঝতে পারছে মাতৃত্বের সুখ।
নিশান আর নিশুর ছেলে, নিশু ওর নাম রাখলো
শায়ান।
.
.
.
আজ শায়ানের পাঁচ বছর হয়েছে। নিশুর মাতৃত্বকে পূর্ণ করেছে তার শায়ান। প্রথম যেদিন শায়ান নিশুকে মা বলে ডাকে নিশুর মনে হয়েছিল নিশু যেনো পৃথিবীর সব সুখ পেয়ে গেছে।
কলিংবেল বাজতেই নিশু এতক্ষণ অতিতের ভাবা স্মৃতি থেকে ফিরে আসলো।এতক্ষণ ধরে নিশু ভাবছিল তার সাথে ঘটে যাওয়া অতিতের কথা।
দরজা খুলতেই গুটিগুটি পায়ে শায়ান দৌড়ে নিশুর কাছে যায়।
নিশান,শায়ান কে বলে,
– বাবা আস্তে মা ব্যথা পাবে যে।
নিশু শায়ান কে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
– আমার বাবা তার বাবার সাথে নামাজ পড়েছে?
শায়ান:মা!বাবা আর আমি সামনে নামাজ পড়েছি।
নিশু: ওরে আমার বাবাটা।
শায়ান দৌড় দিতেই নিশু ওর পিছনে ছুটতে নিলে নিশান নিশুকে আঁকড়ে ধরে বলে,
এই যে ম্যাডাম একটু ধীরে এই অবস্থায় এতো ছোটাছুটি করে কেউ ?
নিশু: সরি….
শায়ান: দেখি আমার আম্মাজান কি করে?
নিশান নিশুর পেটে হাত বুলিয়ে আদর করতে থাকে। আল্লাহ নিশানের দোয়া কবুল করেছে ও বলেছিল নিশুকে, নিশু ওর সন্তানের মা হবো। আল্লাহ তাই করলেন নিশু এখন নিশানের সন্তানের অন্তঃসত্ত্বা। আর মাত্র তিন মাস তারপরে নিশান আর নিশুর ঘর আলো করে আসবে তাদের দুজনের প্রথম সন্তান ।
ইনশাআল্লাহ।
নিশান আম্মাজান বলায় নিশু ওকে জিজ্ঞেস করলো,
নিশু: তুমি কিভাবে জানলে মেয়ে হবে ?
নিশান: আমি জানি কারণ আল্লাহ তো আমাদের ছেলে দিয়েছেনই তাই এখন ইনশাল্লাহ একটা মেয়ে দিয়ে আমাদের পরিবার পূর্ণ করে দিবেন।
নিশু: আমিন।
মনে মনে নিশু বললো, আল্লাহ তোমার সব দোয়া কবুল করুক।
.
শায়ান ওদের দিকে দৌড়ো এলো। এখন শায়ান কে ঘিরেই তাদের দুজনের সুখের পৃথিবী।
শায়ান আমার সন্তান। আমাদের সন্তান। আমাকে মা বানিয়েছে আমাদের শায়ান। আমার মাতৃত্বকে পূর্ণ করেছে আমাদের শায়ান। আমাকে মাতৃত্বের সুখ দিয়েছে শায়ান।
শায়ান কে জড়িয়ে এসব ভাবতে লাগলো নিশু ।
.
.
সমাপ্তি।
.
.
(আল্লাহ তা’আলা চাইলে সবই পারেন। তিনি সর্ব শক্তির উৎস। সেজন্য আমাদের ধৈর্য রাখা উচিত। কখনোই নিরাশ হওয়া ঠিক নয়। সন্তান আল্লাহ তা’আলার দেয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামত।মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করার জন্য কত সন্তান আছে যাদের মা-বাবা নাই।অনেকে জন্ম থেকে মা-বাবার আদর পায় নি।তাদের একজন কে নিয়ে যদি আমরা মা-বাবার স্বাদ দিই।আর থাকবে না কোন পথশিশু।)

ইচ্ছে ঘুড়িতে উড়ব আমি – লেখিকা খাদিজাতুল কোবরা

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট2020
ইচ্ছে_ঘুড়িতে_উড়ব_আমি
লেখিকা_খাদিজাতুল_কোবরা
#ছোটগল্প

গরিব ঘরে জন্ম আমার তাই বলে কী আমার স্বপ্নগুলো ডানা মেলবে না ।

রংয়ের বাহারে সব কিছু রঙিন করতে খুব ভালো লাগে আমার ।যেখানে যেই রং পায় সেইটা দিয়েই
মনের আবেগ ফুটিয়ে তুলি ।
রংগুলোকে আকড়ে ধরে থাকি সারাক্ষণ । সামনে যা পায় তারই সৌন্দর্য আমি আমার আর্টকলার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলি ।

সবার কাছে প্রশংসা পেলেও বাবার কাছে তা কোন দিনও পায়নি।আর ভাই আমার ছোট তাই ভাইকেই খুব ভালবাসাতেন।সব কিছুই দেখত মা তবুও নিশ্চুপ হয়ে আমাকে আগলে রাখত।

সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো আমি কথা বলতে পারিনা ।
আর আমার বাবা এসব পছন্দই করেন না ।আমি এত সুন্দর করে ছবি আঁকি তবু দেখতেও চাই না ।শুধু অপমান করার চেষ্টা করত।

কিন্তু মা আর রিধীমা আপু পাশে ছিল বলেই হয়ত এক টুকরো আশায় বুক বেঁধে ছিলাম । আমি নেহা,,ইচ্ছে বহু দূরের ছিল এবং পথটাও অনেক কঠিন ছিল ।তবুও ভয় কাটিয়ে জয় হাসিল করেছিলাম।

আমি বাবার কাছে যেন বোঝাসরূপ ছিলাম ।তবে মা সব সময় আমার স্বপ্নগুলো পূরণে পথ দেখিয়েছে ।আমার ঢাল হয়ে মা আমার পাশে ছিল।
ছবি অঙ্কনের সফরটা আমার অনেক দিনের।

¤¤¤ মা বাবা দুজনেই কাজ করতেন ।মা অন্যের বাড়িতে রান্নাবান্নার কাজ করত।
সেই সময় মাঝে মাঝে আমাকে সাথে নিয়ে যেত
সেই বাড়িতে।
আমি ওখানে গিয়েও থেমে থাকতাম না ।রিধীমা আপুর ঘরে গিয়ে ছবি অঙ্কন করতাম।
ওনার কাছে পড়ালেখা শিখতাম। আপু অনেক প্রশংসা করতো আমার ছবিগুলোর।

আর বলতো নেহা তুই অনেক দূর এগিয়ে যাবি।তোর ছবির অনেক সুনাম হবে একদিন ।অনেক
সুন্দর করে তুই তোর মনোভাব এই ছবিতে
তুলে ধরিস।তোর এই ছোট বয়সে অসম্ভব সুন্দর
ছবি আঁকিস তুই।
দেখলে মনে হয় একজন অভিজ্ঞ আর্টিস্ট ছবিগুলো এঁকেছে ।

আপুর কাছে আমি অণুপ্রেরনা পেতাম।আর আপুর কথা শুনেই মা অতি কষ্টে আমাকে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে ছিল।কিন্তু বাবা রাজি ছিলেন না ।
তবুও মা একটু জোর করেই ভর্তি করেছিল ।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকাআঁকি নিয়েই নতুন পথচলা শুরু হয় ।স্কুলের প্রধান থেকে শুরু করে সবাই আমার আর্টের প্রশংসা করতেন।
সময়ের পরিবর্তনে এই ভাবে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকি ।আর প্রতিদিন বাবার অঢেল
অপমানের শিকার হতে থাকি।তবুও আমি হাল ছেড়ে দিইনি ।

নিজের প্রতিভা রং তুলির আঁচড়ে প্রকাশিত করতেই থাকি।নিজের স্বপ্নগুলোকে মুক্ত প্রজাপতির হরেক রকম রঙে সাজাতে থাকি।

যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন আমাদের স্কুলে কোন একটা উপলক্ষে বাইরের অনেক শিক্ষক আসেন ।
তারা সবাই আমার আর্টের প্রশংসা করতে থাকেন এবং আশ্চর্য হয়ে যান এত সুন্দর আর্ট দেখে।কিন্তু তারা সবাই আমার প্রতিবন্ধকতার কথা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন।

তাদের মধ্যে কিছু শিক্ষক এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। আর আমার ছবিগুলোর স্যাম্পল নিয়ে যান।
কিছুদিন পরেই খবর পাঠান দেশীয় চিএকলা অনুষ্ঠানে আমার নাম নির্বাচন করা হয়েছে।

ওখানে যে বিষয়ে ছবি আঁকতে দিবে তা সুন্দর করে করতে পারলে এবং বিজয়ী হতে পারলে বাইরের দেশেও প্রতিযোগিতার জন্য নিয়ে যাবে।এই কথা শুনে আনন্দের শেষ নেই।
মা মিষ্টি কিনে সবাইকে বিলিয়ে ছিল ।কিন্তু বাবা রাগে একাকার অবস্থা আমাকে যেতে দিবেন না ।মা অনেক জোরাজুরি করে দিয়ে পাঠান।

নতুন এক গন্তব্যে যাবার পর অনেক ভয়ে ছিলাম ।তবুও সেই ভয়কে জয় করে আমি বিজয়ী হয়ে সবার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠেছিলাম।আর বিদেশে প্রতিযোগিতার জন্য আমাকে সেরা আর্টকলা হিসেবে নির্বাচিত কর হয়েছিল ।

স্কুলে আমাকে নিয়ে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ।তারা সবাই আমাকে নিয়ে গর্বিত।আমার ছবিগুলো চার্ট বোর্ডে তুলে সাজিয়ে রাখাছিল ।

বাবা এবার একটু নরম হয়ে গিয়েছিল । আর কাজের জায়গায় গিয়ে সবাইকে বলে বেড়াতো ।
এইটা শুনার পর আমি আর মা আনন্দে কান্না করতে শুরু করেছিলাম ।

এরপর বিদেশে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে সক্ষম হই।প্রথম বিজয়ীতা হওয়ার জন্য স্বর্ণপদক লাভ করি।

আর বাবা দোকানে বসে টিভিতে প্রোগ্রাম দেখে খুশিতে আটখানা ।মা আর পাড়ার সবাই রিধীমা আপুর বাড়িতে টিভিতে আমাকে দেখে
হাত তালি দিতে ব্যস্ত ।শিক্ষকরা সবাই আমার সফলতা দেখে খুশি ।

কথা বলতে না পারলেও রং তুলির টানে আজ নিজের মনোজগতের যত কথা যত আবেগ সবটা
প্রকাশ করেছি।

আজ আমার আনন্দের জুড়ি মেলা ভার। নিজের স্বপ্ন পূরণের স্বর্ণচূড়ায় রঙিন ঘুড়ি হয়ে গেছি।
আমার স্বপ্নগুলো আজ ডানা মেলছে মুক্ত
প্রান্তরে।অসহায়ের মতো প্রতিবন্ধকতার রেস কাটিয়ে জোরে জোরে বলতে মন চাইছে

“”ইচ্ছে ঘুড়িতে উড়ব আমি””

ভাল লাগলে অবশ্যই জানাবেন প্লিজ

একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা – সাইমা ইসলাম তামান্না

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০

একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা
সাইমা ইসলাম তামান্না

“তুমি কি শুনতে পাচ্ছো পাখির কলরব? বাতাসের স্নিগ্ধতার গন্ধ? হেঁটেছো কাদাময় মাটিতে কখনো? পেয়েছো কি মাটির সুভাস? পাও নি, পাবে না। তুমিতো বসবাস করো কংক্রিটময় দালান কোঠায়।”

এই কথাগুলো মনে হয় তাকেই তাচ্ছিল্য করে বলছে তার নিজ সত্তা। এরকমটা মনে হলো নবনীতার।

আচ্ছা, সে-কি কখনো গ্রামে যেতে পারবে না? কাদামাটিতে হাঁটা হবে না? এই কংক্রিটের মধ্যে থাকতে থাকতে তার নিজেকে কেমন জানি রোবট রোবট লাগে। মনে হয় তার অনুভূতিগুলো সব জমা পড়ে আছে এই ঘরটিতে। ঘরটিতে কি নেই? সবই আছে, সময় কাটানোর জন্য। কিন্তু মনের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য এই সকল ইলেকট্রনিক ডিভাইস সবই মূল্যহীন তার কাছে।

“হোয়ার ইজ মাই চাইল্ড? হোয়াট আর ইউ ডুইং স্টেনিং বাইদা উইন্ডো?” (আমার বাচ্চাটা কই? কি করছো তুমি জানালার ধারে বসে?)

একটা ভাসা ভাসা কন্ঠ শুনে নবনীতা তার ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এসেছে। ভাসা ভাসা কন্ঠের উৎসের দিকে তাকিয়ে রইলো। দেখতে পেলো জুরিন তার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। এই মহিলাকে তার একদম ভালো লাগে না। সব সময়ই অসহ্য আর বিরক্ত লাগে।

তারপর জিজ্ঞেস করলো,
“হয়্যার আর ইউ টেল মি সামথিং?” (তুমি কি আমায় কিছু বলছিলে?)

জুরিন তার দিকে হতাশ হয়ে তাকিয়ে বললো “নাথিং, কাম ইট। (কিছু না, খেতে আসো।)

যাওয়ার সময় জুরিন মনে মনে ভাবলো, এই মেয়েটা তাকে এই পাঁচ বছরেরও একবারের জন্য আপন করতে পারে নি। এটা কি তার নিজের ব্যর্থতা? না-কি মেয়েটাই চায় না তাকে আপন হিসেবে গ্রহণ করতে?
.
.
.
বাসার সামনের পার্কটা আসছে নবনীতা। মন খারাপ থাকলে এই একটা জায়গায় আসে সে। আজ তার মন খারাপ হয়েছে জুরিনের জন্য। জুরিনের সাথে যেতে হবে পার্টিতে, এতো বার না করা শর্তেও জোর করছে। তাই নবনীতা কিছু না বলে চলে এসেছে এখানে।
.
সামনে কতো কপোত-কপোতীরা ঘোরাঘুরি করছে। অনেকের সাথে রয়েছে ছোট ছোট বাচ্চা। এক বয়স্ক দম্পতিদের দেখে চোখ আটকে যায় নবনীতার। তারা দুইজন দুইজনের দিকে কতোটা আবেগ নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। যে কেউ দেখলেই বুঝবে। তাদের চামড়ার বয়স হলেও মনের বয়স হয় নি একদম। হঠাৎ নবনীতার বুকটা ধুকধুক করে উঠলো। কিন্তু কিসের জন্য সে বুঝলো না।
.
“আরে,নবুতা। কেমন আছো? আজকাল তো তোমার দেখা পাই না।”

এই ছেলেটার উচ্চারণ আর ঠিক হবে না। কতবার বলছি নবুতা না নবনীতা। তারপরও নবনী বললেও হতো। এই ছেলে কেনো? তার সাথে যারা পড়ে প্রায় সবাই কখনো নবিতাও বলে ফেলে।

স্মিত হেসে নবনীতা বললো,
“এই তো ভালোই আছি এলেক। তুমি কেমন আছো?”

এলেক মুখে হাসি রেখে বললো,
“ভালো আছি। আচ্ছা, তোমার সাথে পরে কথা হবে। আমার এখন তাড়া আছে।”
এলেক চলে গেল তার গন্তব্যে।

নবনীতা মাঝে মাঝে ভাবে, এলেকের জীবনটা কতটা মর্মান্তিক। তারপরও ছেলেটাকে দেখে কেউ এতটুকু আঁচ করতে পারবে না। হাসিখুশি দেখানোর চেষ্টা করে সকলকে। যখন এলেক এর বয়স তিন বছর তখনই এলেক এর মা তাকে ছেড়ে চলে গেছে আরেক পুরুষের কাছে। তার সাথে না-কি তার মায়ের অনেক আগে থেকেই সম্পর্ক ছিলো। তাই তার বাবাকে ছেড়ে চলে গেলো। আর এলেক বাবা বছর ছয়েক আগে গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেছে।

নবনীতার চোখ পড়লো লেকের পানিতে গিরিয়া হাঁস দেখতে পেলো। হাঁসটির বৈজ্ঞানিক নাম: Anas querquedula। পৃথিবীর সকল কিছুরই বৈজ্ঞানিক নাম আছে বর্তমানে। এই তো মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম Homo sapiens (হোমো স্যাপিয়েন্স)।
আর ঘন্টাখানিক বসে থেকে নবনীতা তার বাসার দিকে গেল।
.
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
.
দেখতে পেলো বাসা লক করা। ব্যাগ থেকে চাবি বের করে লকটা খুললো। নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরের দিকে গেল। ফ্রিজ থেকে বার্গার বের করে ওভেনে গরম করে নিলো। অর্ধেক খেয়ে বাকিটা ফেলে দিলো। কিছুই ভালো লাগছে না তার।
তার মনে আছে আমেরিকায় এসেছিলো পাঁচ বছর বয়সে। আর এখন বয়স পনোরো। তার মা ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ফলে তার বাবা তাকে নিয়ে ভীনদেশে পাড়ি জমায়। তার বাবা তার মা’কে ভীষণ ভালোবাসতো সে দেখেছে। কিন্তু এদেশে এসে কীভাবে ভুলে গেলে তার মা’কে? সেই সাথে তাকেও। তার খোঁজ নেওয়ার সময় হয় না এখন।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে থাকতো নবনীতারা। তার বাবা শহরে থাকলেও তার মায়ের টান ছিলো গ্রামের সবুজ শ্যামলা পরিবেশের দিকে। তারও ঠিক তার মায়ের মতো এই দিকে ঝোঁক আছে। তার বাবা তাকে এই কথা প্রয়াই বলে। আর সে-ও মানে। তার গ্রাম ভালোলাগে। যেখানে থাকবে কাদাময় রাস্তা আর সে হাঁটবে আর দৌড়াবে। সকালে ঘুম ভাঙ্গবে শালিক,ঘুঘু,কোকিল এর কলরবে। খোলা মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে শ্বাস নিবে স্নিগ্ধ শীতল বাতাসের। পুকুরের পানিতে পা নামিয়ে বসে থাকবে।
.
.
“মামণি, মামণি।”

কারো ডাকে নবনীতার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। দরজার দিকে তাকালো,দরজার অপর পাশ থেকে পুরুষালীর কন্ঠ আসছে। নবনীতা সব সময় দরজা আটকিয়ে থাকতে পছন্দ করে না। দরজার খুলে দিয়ে দেখলো তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে।
“কখন আসলে বাবা?”
নবনীতা হাসার চেষ্টা করছে। কিন্তু তবুও কেনো ঠোঁটে কোণে হাসি ফুটছে না সে নিজেও বুঝতে পারছে না।

“অনেকক্ষণ হলো আসছি। তা তুমি কি বাংলাদেশে সত্যিই যেতে চাচ্ছো?”

“হ্যাঁ, কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসতে চাচ্ছি। আর আমার স্কুল তো বন্ধ।” অকপটে বলে দিলো নবনীতা।

“আচ্ছা, তৈরি হয়ে নাও বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য । নেক্সট উইক ফ্লাইট তোমার।”

বাবার কথাটা শুনে খুব খুশি হলো নবনীতা। লাস্ট তিন বছর ধরে কম বলে নি সে। আজ তাহলে তার যাওয়া হবে বাংলাদেশে।

“আর শোনো, এটা কিন্তু তোমার মমের জন্য। সে না বললে আমি রাজি হতাম না। তাকে থ্যাংকস দিও। আর তাঁর সাথে একটু ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করলো।”
বলে চলে গেলেন নবনীতার বাবা।
নবনীতা কিছু বললো না।
.
.
.
প্লেনের জানালার দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে নবনীতা। সাদা মেঘের আনাগোনা দেখছে চারদিকে। মনে হচ্ছে একটু হাত দিলে ছুঁতে পারবে মেঘগুলোকে।
বাংলাদেশে মামার কাছে থাকবে সে। তার বাবা মামার সাথে কথা বলে নিয়েছে আগেই। সে তার মামাকে বলছে সরাসরি তাকে গ্রামে নিয়ে যেতে হবে। শহরে থাকবে না একদিনও। নবনীতার মামা ঢাকা শহরে একটি ফ্ল্যাট কিনে থাকে।

আসার সময় তার দ্বিতীয় মা অনেক কান্নাকাটি করছে। আর সাবধানে থাকতে বলছে। সে বুঝছে তাকে ভালোবাসে। তারপরও ও-ই মহিলাকে সে একদমই পছন্দ করে না।
.
.
ফ্লাইট অবতরণ করার পর সব কাজ মিটিয়ে স্যুটকেস হাতে নিয়ে বাহিরে এলো নবনীতা। বাহিরে এসে সে এদিক ওদিক তাকিয়ে মামাকে খুঁজতে লাগলো। মামার সাথে ভিডিও কলে কথা হয়েছে অনেকবার। হঠাৎ দেখতে পেলো রোগা পাতলা একটা লোক এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর তার সাথে রয়েছে আর তিনেক ছেলেমেয়ে।
তারপর মামার দিকে যাওয়ার পরই মামা ডাক দিলো,
“নবনীতা? আরে আমার ভাগনি নবনীতা। মা এদিকে আয়।”

নবনীতা কুশল বিনিময় করে বললো,
“জি মামা, আপনি ভালো আছেন তো।”

“এমা, তোর বাংলা বলার শ্রী এরকম কেন? সমস্যা নাই। যতদিন থাকবি ততদিন আমি তোকে পুরাপুরি বাংলা ভাষা রপ্ত করাবো। ও হ্যাঁ, এখন বেশ আছি। তোকে দেখার পর।”

পাশে দাঁড়িয়ে আছে দুইটা মেয়ে আর একটা ছেলে।
ছেলেটা তার মামাকে বললো,
“আব্বু এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলবে না-কি বাসায় যাবে আপুকে নিয়ে?”

বাসার কথাটা শুনে নবনীতা তার মামার দিকে তাকালো জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে। মামা বুঝতে পেরে বললো,
“আচ্ছা তুই বাংলাদেশে এসেছিস কেন?”

নবনীতা অকপটে বললো,
“গ্রাম ঘুরতে, বৃষ্টিতে ভিজতে আরও অনেক কিছু করার জন্য। যা শুধু গ্রামেই সম্ভব।”

মামা বললো,
“তাহলে আমরা এখন বাসায় যাবো। দুপুরে খেয়ে রওয়ানা দিবো। কারণ আমাদের গ্রামে বেশিরভাগ সময়ে সন্ধ্যায় বৃষ্টি হয়। ভাগ্য ভালো হলে আজই হতে পারে।”

নবনীতা বললো,
“সন্ধ্যায় বৃষ্টি হয়! বৃষ্টি কি মামা তোমায় বলছে যে সন্ধ্যায় আসবে?”

ছেলেটি বললো,
“আপু, আব্বু সত্যি বলছে। জানো একবার শ্রাবণ মাসে গ্রামে গেছি এক সপ্তাহের জন্য। ৭ দিনের মধ্যে ৪ দিন বৃষ্টি হয়েছে। তারমধ্যে ৩ দিনই সন্ধ্যায় আর একদিন সকালে হয়েছে। আর তুমি তো শ্রাবণ মাসেই এলে।”

এরমধ্যে মামা বললো,
“তোর সাথে তো পরিচয়ই করাই নি তোর ভাইবোনের সাথে। তুই তো ওদের চিনিস না।”

ছোট মেয়েটা হাসি দিয়ে বললো,
“আমি কিন্তু আপুকে চিনি। আপুর ছবি দেখছি অনেক।”

নবনীতা বললো,
“তাই না-কি!

মেয়েটা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।

মামা ছেলেটাকে দেখিয়ে বলে, ওর নাম রাজু। আর বড় মেয়েটার নাম এশা আর এই পিচ্চিটার নাম রিমি।

” বাহ! সুন্দর সুন্দর নাম তো।”
নবনীতা আগে কখনো ওদের দেখি নি।

তখনই গাড়ি থেকে এক মাহিলা ডাক দিলো,
“তোমরা কি আজ বাড়ি যাবে না? না-কি রাস্তায় সব কথা বলবা।”

মামা সবাইকে তাড়া দিলো আর নবনীতাকে বললো,
“দেখছিস, তোর মামি বেজায় রেগে গেছে। তাড়াতাড়ি চল মা।”

নবনীতা বুঝতে পারলো, তার মামা আমিকে বড্ড ভয় পায়।
গাড়িতে উঠে আর বোঝার অপেক্ষায় রইলো না যে, মামা প্রচন্ড কথা বলতে ভালোবাসে।
.
.
.
আজকের খাবারটা ভালো হয়েছে। নবনীতার মনে হলো খাবার গুলো কখনো খায় নি। এমন স্বাদ যা জিহ্বা লেগে আছে। খেলেও জুরিন কখনো এরকম রান্না করতে পারে নি। আজ রান্না হয়েছে গরুর মাংস, ইলিশ মাস, মুরগির গোশত আর পাঁচমিশালি তরকারি।

পৌঁছানোর ঘন্টাখানিকের পরই নবনীতার বাবা কল দিয়ে নবনীতার কথা জানছে। আর নবনীতাকে বলছে, তার মা কাঁদছে তার জন্য। তাকে অনেক মিস করছে এই জন্য। নবনীতা আর এটা নিয়ে ভাবলো না।
.
.
অনেক রেস্ট নেওয়া হয়েছে। সবাই তৈরি হয়ে নাও। গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য।
আর নবনীতাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“আশা করি আজ তোর ‘একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা’ কাটানোর সুযোগ হবে।”

গাড়িতে ওঠার পর আরেক বিপত্তি রিমি পিছনে বসবে। কিন্তু পিছনে জায়গায় নাই। সে তার আব্বুর কোলো বসবে না। ওদিকে মামি সামান্য অসুস্থ কোলে নিতে পারবে না। অনেক বুঝানোর পর সে শান্ত হয়েছে।

গাড়িটা কিছুক্ষণ চলার পরই অবিরাম বৃষ্টি পড়ছে। থামছে না, একইভাবে অশান্ত বর্ষণ। মেঘের কালো ঝাঁপির মধ্যে হারিয়ে গেছে বিকেলের সূর্য। মেঘের কালো ছায়ায়, বৃষ্টিতে, ঝড়ো হাওয়ায়, ঘনঘন মেঘের গুর গুর ডাকে মায়াবী পরিবেশ। গাছের ডালের পাতায় ঝড়োহাওয়া আর বৃষ্টির ফোঁটার চলছিলো অবিরাম মাতামাতি।

এরমধ্যে মামা বললো, তার একটি রবীন্দ্রসংগীত গাইতে ইচ্ছে করছে এই বৃষ্টি দেখে। নবনীতা মাঝে মাঝে রবীন্দ্রনাথের গান শুনতো। তার কাছে রবীন্দ্রনাথের গানগুলো বেশ লাগে। সে খুশি হলো শুনে যে মামা গাইবে।

মামা সুর ধরলো,

“মন মোর মেঘের সঙ্গী
উড়ে চলে দিক-দিগন্তের পানে
নিঃসীম শূন্যে
শ্রাবণ-বরষণ সঙ্গীতে।”

মামার গান শুনতে শুনতে তারা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে গেলো।

গাড়ি থেকে নামার আগেই,
রাজু, এশা আর রিমি বলে দিলো তারা আজ বৃষ্টিতে ভিজবে।

মামা নবনীতাকে বললো, “ওদের সাথে ভিজো।”

ওরা সবাই বাড়ির সামনের উঠানে ভিজছে। নবনীতার বেশ ভালো লাগছে বৃষ্টিতে ভিজতে। সে তার জীবনে দেখেছে বৃষ্টি মানেই টিপটিপে ঠান্ডা মন খারাপ করা একটা ব্যাপার। কিন্তু এই বৃষ্টি জীবন্ত লাগছে তাঁর কাছে। সারা শরীরে এক ভালো লাগা কাজ করছে। সাথে কাদায় লাফালাফি। উফ, কী আনন্দ!

অনেকক্ষণ ভেজার পর তাদের বাড়িতে ঢুকতে বলা হয়েছে। সবাই কাপড় পাল্টে সামনের বারান্দায় এসেছে। আর তখনই উপরের টিনের বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে আর শব্দ হচ্ছে। আর জানালার ধারে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ।

নবনীতা মনে মনে বললো, তার ‘একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা’ কাটানো হলো।

সমাপ্ত

গল্প তেলাজীবন।-লেখা~মাইসারা মেঘ।

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
গল্প তেলাজীবন।
লেখা~মাইসারা মেঘ।

— এই যে পিংক কালারের তেলাপোকাটি দেখতে পাচ্ছেন এটা মূলত তেলাপোকা নয়,
এটা আমার বান্ধবী পিংকি,ভাগ্য দোষে সে তেলাপোকা হয়ে গেছে।
বেশ কিছুদিন যাবত তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,তাই একটি মিসিং ডায়েরি লেখাতে এসেছি,
আমি সূচনা রহমান।

— মানে কী? পাগল হয়েছেন? তেলাপোকা মিসিং ডায়েরী লেখাতে আপনি থানায় এসেছেন?
আবার বলছেন সে কিনা আপনার বান্ধুবী হয়?

দেখুন মিস সূচনা রহমান!
এটা কোনো পাগলা গারদ নয় যে এখানে আপনার পাগলামি এলাউ করা হবে।
আপনার বরং কোনো মানসিক হসপিটালে এডমিট হওয়া উচিত।

কিছুটা কড়া মেজাজেই কথা গুলি বললেন ওসি সিমরান মাহমুদ স্মরণ।
মেয়েটার উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তাঁর, এটা কোন ধরণের পাগলামি!

— দেখুন স্যার আমি মোটেই পাগলামি করছি না, আমি স্বজ্ঞানেই বলছি, আপনি পুরো ব্যাপারটা তো শুনুন আগে।

— কী শুনবো হ্যাঁ?আপনার বানানো যতসব থার্ডক্লাস অদ্ভুত রচনা?

— ভালোয় ভালো বলছি পুরো ঘটনাটি শুনুন, নয়তো এই যে আমার হাতে কৌটোটি দেখতে পাচ্ছেন এটাতে প্রায় ৫৪টি তেলাপোকা রয়েছে, সবকটি আপনার গায়ে ছেড়ে দেবো এখন।

— হোয়াট? কি যা তা বলছেন? তেলাপোকা ছেড়ে দেবেন মানে?

— জ্বি হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন।
চুপচাপ আমার পুরো কথা শুনুন।

এই যে এই পিংক কালারের তেলাপোকাটি মানে পিংকি ও খুব তেলাপোকা প্রেমী মেয়ে ছিলো, তেলাপোকা ভীষণ ভালোবাসতো।
একদিন সে বারান্দায় বসে চকলেট বিরিয়ানি খাচ্ছিলো হঠাৎ সেখানে একটি হলুদ তেলাপোকার আগমন ঘটেছে, হলুদ তেলাপোকাটি উড়ে এসে পিংকির বিরিয়ানির প্লেটের পাশে বসেছে, পিংকি তো তাঁকে দেখে পুরাই ফিদা, এত কিউট তেলাপোকা হয় ওর জানা ছিলো না, হলুদের উপর ঝাপসা ঝাপসা নীলছে সাদা রঙটা ওর সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
পিংকি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুধু,
আর সেই ফাঁকে পিংকির বিরিয়ানিগুলো কুট কুট করে খেয়ে নিচ্ছিলো সে, খাওয়া শেষে সে পিংকির হাতে এসে বসলো, পিংকির অবাক হওয়ার আর শেষ রইলো না।

হঠাৎ পিংকি খেয়াল করলো তাঁর হাতে একটি মশা কামড়াচ্ছে আর অমনি তেলাপোকাটি গিয়ে খপ করে ওই মশাটি খেয়ে ফেলেছে, আবেগে পিংকির চোখে জল এসে গেলো, ওই ভয়ঙ্কর মশার হাত থেকে তেলাপোকাটি তাকে রক্ষা করেছে।

সেই থেকে তেলাপোকাটির সাথে পিংকির বেশ ভাব জমে যায়, পিংকি যখন পড়তে বসে তেলাপোকাটি তাঁর পড়ার টেবিলের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়, তাঁর বই এর ভাঝে লুকিয়ে লুকোচুরি খেলে, পিংকির হাতে এসে বসে।
পিংকি তেলাপোকাটির রঙের সাথে মিলিয়ে নাম দিয়েছিল নীতেলা।
দেখতে দেখতে পিংকি নীতেলার প্রেমে পড়ে যায়।
আর সেই প্রেমে পড়াটাই তাঁর জীবনে কাল হয়ে দাড়ায়, বলেই থামলো সূচনা…..

এই দিকে ওসি স্মরণ সাহেব গ্লাসের পর গ্লাস পানি খাচ্ছেন।
এ কেমন অদ্ভুদ কাহিনী শুনছেন তিনি, মানুষ তেলপোকার প্রেমে পড়ে?
ছিঃ কী জঘণ্য ব্যাপার!

— জ্বি তারপর কি হলো?

— আপনি হয়তো ভাবছেন মানুষ হয়ে পিংকি কেন একটা তেলাপোকার প্রেমে পড়তে গেল তাই তো!আসলে এখানে পিংকির কোনো দোষ ছিলো না, তেলাপোকাটি পিংকি কে বশ করে ফেলেছিলো, যার ফলে পিংকি ভাবতে বাধ্য হয়েছিলো সেও পূর্বজন্মে কোনো তেলাবংসে জন্মেছিল, যেকারণে নীতেলার প্রতি তাঁর এমন দুর্বলতা তৈরি হয়েছে।

— আচ্ছা আচ্ছা! অদ্ভুত রহস্য বটে। তারপর কি হলো?

— তারপর আর কী! যা হবার নয় তাই হলো, পিংকি নীতেলার প্রতি এতটাই দূর্বল হয়ে পড়েছে যে নাওয়া খাওয়া ভুলে কেবল নীতেলার সাথেই সময় কাটাতো, ধীরে ধীরে সে তেলাপোকার রূপ নেবার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে, আর যাই করুক সে আর মানুষ হয়ে থাকতে চায় না, তেলাপোকা হয়ে সে নীতেলাকে বিয়ে করে সংসারী হতে চায়।
দেরী না করে সে নীতেলাকে পুরো ব্যাপার টা জানায়, নীতেলাও তাঁর প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করে।
এখন ব্যাপার হচ্ছে পিংকিকে কি করে তেলাপোকা বানানো যায়! অনেক ভেবে নীতেলা ওদের বংশের সাতেলা নামক এক সাধুবাবার সাহায্য নেয়। সাধুবাবা সাতেলা অনেক যজ্ঞ সাধনা করে একটা উপায় বের করেছে পিংকিকে তেলাপোকার রুপ দেবার জন্য।উপায়টি হচ্ছে পিংকি যদি নীতেলার ডিম দিয়ে শরবত বানিয়ে তিনবেলা পান করে এবং মাঝরাতে ওই শরবতে গলা সমান সাতদিন ডুবে থাকে তবেই পিংকি তেলাপোকার রূপ নিতে পারবে।
সব শুনে পিংকি নিজের কষ্টের তোয়াক্কা না করে সাধুবাবা সাতেলার দেওয়া নিয়ম গুলো পালন করতে থাকে, কারণ একটাই, নীতেলাকে সে কিছুতেই হারাতে পারবে না। আস্তে আস্তে সাতদিন হয়ে যায়। সাতদিন পর পিংকির কোনো সাড়া না পেয়ে পিংকির মা পেয়ারা বেগম পিংকির রুমে গিয়ে দেখলেন গলা সমান ডুবে থাকা শরবতে একটি তেলাপোকার খোলস পড়ে রয়েছে কেবল। পিংকি সেখানে নেই, সারা বাড়ি খুঁজেও পিংকির কোনো খোঁজ মিললো না। অতঃপর পিংকির মা পেয়ারা বেগম সব ঘটনা আমাকে জানায়।
আমার মনে হচ্ছে এখানে নিশ্চয়ই নীতেলার হাত রয়েছে,কেননা সেদিনের পর থেকে নীতেলাকে আর কোথাও দেখা যায়নি।

— আচ্ছা সব কিছু বিবেচনা করে আপনার এটা মনে হয়নি যে পিংকি হয়তো নীতেলার সঙ্গে পালিয়ে গেছে!!

— বলছেন?তবে যদি পালিয়েই যাবে আমায় কেনো জানালো না?

— কাউকে জানিয়ে পালালে তো পালানোর আনন্দ টা ঠিক উপলব্ধি করা যায় না, তাই জন্যে হয়তো আপনাকে জানায়নি।

— আচ্ছা! তবে চলুন তাহলে আমরাও পালাই।

— মানে? কী যা তা বলছেন! পালাবো মানে? তাও আপনার সাথে?

— অবশ্যই আমার সাথে, কারণ এই মূহুর্তে আমি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি। পালাবেন নাকি গায়ে তেলাপোকা ছেড়ে দেবো??

— এটা কিন্তু ঠিক নয়, এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে আমার দেহ পাবেন কিন্তু মন পাবেন না।

–হা হা হা, কোনো ব্যাপার না, দেহর মধ্যে তেলাপোকা ছেড়ে দিলেই দেহের ভেতর থেকে মন গড়গড় করে বেরিয়ে আসবে।

অতঃপর সূচনা স্মরণকে নিয়ে পালালো, অনেকদূর যাওয়ার পর সূচনা হঠাৎ দাড়িয়ে পড়লো, এমন আচমকা দাড়িয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলো স্মরণ__

— মনে হলো কানের বাম পাশ দিয়ে কিছু একটা উড়ে গেছে, আর আমাদের থামতে বলছে বারবার।

— হ্যাঁ হ্যাঁ ওই যে দুটো তেলাপোকা উড়তে দেখা যাচ্ছে।এরা আবার আপনার পিংকি আর নীতেলা নয় তো?

–দাড়ান দাড়ান দেখছি!

তেলাপোকা দুটি উড়তে উড়তে এসে একটি সূচনার ঘাড়ের উপর বসলো, তারপর ফিসফিস করে বললো “আমি পিংকিরে সূচনা! তেলাপোকার রূপ পেয়ে সেদিন খুশির ঠ্যালায় কাউকে কিছু না জানিয়ে নীতেলাকে নিয়ে পালিয়েছি। কিন্তু তোর সাথে হঠাৎ এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি, যাই হোক তোর সাথে এই ভদ্রলোক কে?

— আর বলিস না পিংকি! তোকে খুঁজতে গিয়ে আমিও ওনাকে নিয়ে পালিয়েছি। উনি ওসি সিমরান মাহমুদ স্মরণ।
আর এই যে স্মরণ সাহেব! আপনি শুনুন, এই হচ্ছে আমার বান্ধুবী তেলাপিংকি, সাথে ওর বর নীতেলা।
চলুন এবার আমরাও বিয়ে করি, সাক্ষী হিসেবে ওরা দুজন তো রয়েছেই। আর কোনো টেনশন নেই।

এদিকে স্মরণের আর অবাক হওয়ার শেষ রইলো না, মনে হচ্ছে সে একটি তেলামানুর জগতে রয়েছে, যেখানে মানুষ আর তেলাপোকার মধ্যে অদ্ভুত সম্পর্ক গড়ে ওঠে খুব সহজে।
সবচাইতে আকস্মিক বিষয় হলো তেলাপোকার ভয়ে এমন অবস্থায় বিয়ে করতে হবে আর সেই বিয়ের সাক্ষী হিসেবে কিনা দুটো তেলাপোকাকে মিনে নিতে হবে, এসবের মধ্যে থেকে স্মরণের নিজেকে তেলা তেলা মনে হচ্ছে। আবেগে নিজের নাম দিতে ইচ্ছে করছে তেলা স্মরণ।

অতঃপর তাঁদের বিয়ে হলো, দুজনের ছোট্ট সুন্দর সংসার। মাঝে মাঝে তেলাপিংকি আর নীতেলাও বেড়াতে আসে তাদের সংসারে।
স্মরণ কোনো কারণে সূচনার ওপর রেগে গেলে তেলাপিংকি আর নীতেলা তাঁকে ভয় দেখায়। ওদের ভয়ে স্মরণ কিচ্ছুটি বলতে পারে না। একজন পুলিশ অফিসার হয়েও তাকে দিনদিন তেলাপোকার ভয়ে কুঁকড়ে থাকতে হচ্ছে। বিষয়টি মেনে নিতে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও মুখফুটে কিছু বলতে পারে না স্মরণ। নিরবে নিঃশব্দে সহ্য করে যায় এই তেলাজীবন।
মানুষ হয়ে বাঁচার ইচ্ছেটাই দিন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে, মন চায় নিজেও তেলাপোকা হয়ে যাক। তবে আর যাই হোক সূচনা মেয়েটা খুব ভালোবাসে তাঁকে। এইটুকু ভরসা নিয়েই নিজেকে অর্ধতেলা ভাবে স্মরণ, স্বার্থক ভাবে সে এই তেলাময় জীবন।

কাঙাল – আসরিফা মেহনাজ চিত্রা

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
কাঙাল
আসরিফা মেহনাজ চিত্রা

-“আপনার কাছে এক্সট্রা খাবার হবে মিস্টার? আমি আপনাকে খাবারের টাকা দিয়ে দিবো। বিনিময়ে খাওয়ার কিছু দিতে পারবেন?”

রাতের আঁধারে ট্রেনের ঝকঝক শব্দ ভেদ করে ফায়াজের কানে মধুর মতো মিষ্টি একটা আকুতি ভরা কন্ঠ ঠেকলো। শব্দের উৎস খুঁজে বের করতে হাতে থাকা টিফিন ক্যারিয়ার থেকে মুখ উঠিয়ে সামনের দিকে তাকালো। ছোট্ট বগির হলদে ম্লান আলোয় একটি মেয়ের মুখশ্রী ভেসে উঠছে। মেয়েটাকে দেখেই খানিকটা চমকালো ফায়াজ।

আরেহ! এটা তো সেই মেয়েটা যার সাথে সে একই বাসে করে রেলস্টেশনে আসলো। যাকে দেখে ফায়াজ একমুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিলো। বাসের জানালার ফাঁক গলে রোদের তেজে লাল হওয়া মেয়েটির মিষ্টি চেহারা, কপালের সাথে লেপ্টে থাকা এলোমেলো চুল, নাকে জমে থাকা হীরের টুকরোর মতো ঘাম, সব যেন ফায়াজকে খুব টানছিলো। মেয়েটির পরনে ছিলো ছেলেদের মতো শার্ট প্যান্ট আর মাথায় ছাই রঙা ক্যাপ। কিছুক্ষণ পরপরই আকাশী রঙা শার্টের হাতা দিয়ে নাকের ঘাম মুছছিলো যার কারনে পুরো নাকটাই লাল হয়ে গেছে। উজ্জ্বল শ্যামলা রঙের আদুরে চেহারায় বিরক্তি স্পষ্ট। সেই মুহুর্তে ফায়াজের মনে হয়েছিলো এর চেয়ে সুন্দর মেয়ে দুনিয়াতে আর একটাও নেই। একটাও না। বাস থেকে নেমে কতই না খুঁজে ছিলো মেয়েটিকে! আর সেই মেয়েটি এখন তার সামনের আসনে? তার চোখের সামনে!

-“হ্যালো মিস্টার! শুনছেন? আরে কি দেখছেন এভাবে? আমার কথা বুঝতে পারছেন? কালা নাকি! এই যে, এই! ও ভাই?”

ভাই ডাকায় মুহুর্তেই ফায়াজের ফর্সা বদনখানায় ব্ল্যাকহোলের মতো কালো ছায়া নামলো যেন। কি সুন্দর করে এতক্ষণ মিষ্টি মেয়েটার মিষ্টি কন্ঠ উপভোগ করছিলো সে। আর সেই উপভোগটাতে পানি ফেলে নিমিষেই নষ্ট করে দিলো মেয়েটি। ইশ্…
ফায়াজ আপনমনে বিড়বিড় করে বললো,

-“তোমার মুখে পৃথিবীর সকল শব্দ মানায় একমাত্র ভাই ছাড়া। দিলে তো হার্টে হাতুড়ি চালিয়ে?”

পরক্ষণেই বিড়বিড় বন্ধ করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,

-“জি বলুন। কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”

-“শুনেননি কি বললাম এতক্ষণ?”

ফায়াজ না শোনার ভঙ্গিতে মাথা নাড়ালো। যদিও সে শুনেছে তবুও তার ইচ্ছা জাগলো মেয়েটির সেই মিষ্টি কন্ঠ আবার শোনা।

-“আপনার কাছে কোনো এক্সট্রা খাবার থাকলে দিন প্লিজ। যেকোনো খাবার হলেই চলবে। আমি আপনাকে খাবারের বিল দিয়ে দিবো। আই এ্যাম ভেরি হাংরি নাও।”

ফায়াজের মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো। বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা করতে লাগলো। শরীর যেন এক্ষুনি অবশ হয়ে পড়বে এমন অবস্থা। মেয়েটার কন্ঠটা এতো মিষ্টি কেন? ইচ্ছে করে কন্ঠটাকে ধরে টুপ করে গিলে ফেলতে। এই মিষ্টিটা খেলে পেট ব্যাথা করবে নাতো? ডায়বেটিস হবে নাতো? কথা বলার সময় গোলাপী ঠোঁটযুগল একবার উপর-নিচ করে, আরেকবার দুটো ঠোঁট একসাথে চেপে ধরে। এতো সুন্দর দৃশ্য দেখে ফায়াজের মাথা সিক্সটি ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে ঘুরান্টি দিতে লাগলো। বুকের বাঁ পাশটা ধুপধাপ শব্দে বলে উঠলো যেন ‘ফায়াজ, এই মিষ্টিটা কিন্তু একমাত্র তোরই। অন্য কেউ এই মিষ্টিটাকে নিয়ে যাওয়ার আগে তুই একে নিজের করে নে।’

-“আশ্চর্য! আপনি কিছুক্ষণ বাদে বাদে কোথায় হারিয়ে যান বলুন তো?”

-“জি..জি..না মানে, আপনি কেমন খাবার খেতে চান এখন।”

-“বললাম তো, যেকোনো খাবার হলেই চলবে। আপাতত পেটের ইঁদুরগুলোকে থামাতে চাই।”

ফায়াজ তার নিজের টিফিন বাক্সটি খুলে কেক খেতে দিলো মেয়েটিকে। টিফিন বক্সটি মেয়েটির দিকে এগিয়ে দেওয়ার সময় তার হাত থরথর করে কাঁপছিলো। বাম হাত দিয়ে ডান হাত চেপে ধরেও হাতের কাঁপুনি বন্ধ করতে পারছিলো না। টিফিন বক্সটি পড়ে যাবে সেই সময় মেয়েটি খপ করে ধরে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচালো। কপাল কুঁচকে বললো,

-“আপনি কি মৃগী রোগী? এমন কাঁপছেন কেন?”

ফায়াজ দ্রুত মাথা এদিক ওদিক নাড়ালো। যার মানে না। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না তার। মেয়েটি তার বাম হাত দিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে ফায়াজের কপালে হাত রাখলো। মুহুর্তেই যেন শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল ফায়াজের। মেয়েটার নরম হাতের গরম স্পর্শ ফায়াজের সারা শরীর কাঁপিয়ে দিলো। এখন শুধু হাত না, পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে তার। হাত সরিয়ে মেয়েটি কপালে চিন্তার রেখা ফুটিয়ে তুললো।

-“আপনার তো জ্বরও নেই, তাহলে এতো কাঁপছেন কেন? এনিথিং রং?”

-“ই-ইয়েস। আ-আই মিন নো, নো। এভ্রিথিং ই-ইজ ওকে। ওকে।”

ফায়াজ দ্রুত ব্যাগ থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে পানি পান করতে লাগলো। পানি খেতে গিয়ে শার্ট ভিজিয়ে ফেলল। পকেট থেকে টিস্যু বের করে কপাল আর গলার ঘাম মুছে ফেললো। অস্থির চোখদুটো স্থির করতে জানালার পাশ ঘেঁষে বসে বাহিরে তাকালো।

-“আপনি কিছু খাবেন না? মানে আমাকে তো সব দিয়ে দিলেন? আপনার জন্য কিছুই তো নেই?”

জানালার থেকে চোখ না সরিয়েই ফায়াজ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দিলো,

-“আপনি খেয়ে নিন আমার খিদে নেই।”

-“ওকে। বাই দ্যা ওয়ে, আমি মুন। ইপ্সিতা আকসার মুন। আপনি?”

হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো মেয়েটি তার কোমল হাত বাড়িয়ে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে ফায়াজের দিকে। ‘মুন, চাঁদ, আমার চাঁদ’ বিড়বিড় করতে করতে হাত বাড়িয়ে দিলো ফায়াজ। এই নামটি, ডাগর ডাগর চোখের অধিকারিণী মেয়েটি তো তার খুব চেনা। খুউউব। বাসে তো প্রথমে চিনতে পারেনি সে। কিছুক্ষণ আগেই চিনতে পেরেছে। সেই চিনতে পারার পর থেকেই ফায়াজের মনের দরজায় অস্থির ভাবনা-চিন্তা কড়া নাড়ছিলো। মুন কি তাকে চিনতে পেরেছে?

-“আমি ফ-ফায়াজ। ফায়াজ আহসান।”

-“কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”

-“বাড়িতে। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে কিছুদিনের জন্য বাড়িতে যাচ্ছি। ছোট বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই আর কি। আপনি?”

-“চাচ্চুর ননদের বাসায় যাবো। বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছি আজকে। কেউ জানেনা একমাত্র ছোট চাচ্চু ছাড়া। ছোট চাচ্চুই আমাকে বাসে উঠিয়ে দিয়েছিলো। আর বলেছে বাস থেকে নেমে ট্রেনে করে চলে যেতে চাচ্চুর ননদের বাসায়। সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে আমার।”

বোয়াল মাছের মতো মুখ হা হয়ে গেল ফায়াজের। এই মেয়েকে দেখে কেউ ঠাওর করতে পারবে না এই মেয়ে বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছে। তাও আবার বিয়ের পোশাক ছাড়া। মেয়েরা তো বিয়ের আসর থেকে শাড়ি গয়না পরেই বিয়ে থেকে পালায়। আর এই মেয়েটি কিনা কালো জিন্স, ছেলেদের মতো হাতা ভাঁজ করে শার্ট পরা, মাথায় ক্যাপ, পায়ে কেডস, হাতে সিলভার কালারের চমৎকার একটি ঘড়ি, পিঠে একটি বড় ব্যাগ ক্যারি করে বিয়ে থেকে পালিয়েছে। যে কেউ দেখলে বলবে মেয়েটি ভ্রমণে বেড়িয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই সে মুখ স্বাভাবিক করে বলে উঠলো,

-“তো মিস মুন। আমি কি জানতে পারি আপনি কেন বিয়ে থেকে পালিয়েছেন? ব্যক্তিগত হলে বলার দরকার নেই। ইটস ওকে।”

-“ততোটাও ব্যক্তিগত না। বাবাকে বলেছিলাম পড়াশোনা শেষ করবো তারপর বিয়ে কিন্তু বাবা সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে, বিয়ে ঠিক হয়েছিলো খালাতো ভাইয়ের সাথে। এই ছেলেটাকে প্রথম থেকেই আমার পছন্দ না। শেষে না পেরে বলেছিলাম আমি একজনকে ভালোবাসি। তাকে ছাড়া কাউকেই বিয়ে করতে পারবো না। সেটা শুনে বাবা বিয়ে আজকেই ঠিক করে দিলেন। তাই ছোট চাচ্চুর সাহায্যে পালিয়ে এসেছি।”

অন্যকাউকে ভালোবাসার কথা শুনতেই ফায়াজের মুখ অমাবস্যার নিকষ কালো আঁধারের মতো ছেয়ে যায়। মুন ফায়াজের দিকে তাকালো। খোঁচা খোঁচা দাড়িভর্তি ফর্সা চেহারার ছেলেটার মুখে শোকের ছায়া, তার মধ্যে বাদামী রঙের চোখের মনি দুটি কেমন চঞ্চল। কালো টিশার্টের গলার কাছ দিয়ে ঘামে ভিজে একাকার, জিভ দিয়ে নিচের ঠোঁটটাকে বারবার ভিজিয়ে নিচ্ছে, হাত একটির সাথে অপরটি বারবার ঘষে নিচ্ছে। মুন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
-“জানেন? যাকে আমি ভালোবাসি সে আমাকে ভালোবাসে কিনা সেটা আমি আজও সিউর নই। তার কাছ থেকে কতবার ভালোবাসা চাইলাম। বলেছিলাম পুরোটা চাই না, একটু…শুধু একটুখানি ভালোবাসা দিলেই যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু সে আমাকে বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছিলো। আমি নাকি তার মনের মতো ছিলাম না। কলেজের সামনে একবার দেখেছিলাম, তারপর থেকেই তাকে প্রায় এক বছর ফলো করি। তার অজান্তে। শেষে একবার বান্ধবী দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম, না করে দিয়েছিল। কাঠফাটা রোদে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলাম ‌শুধুমাত্র তাকে একপলক দেখার জন্য। সে ফিরেও তাকাতো না। বহু কষ্টে ফোন নাম্বার যোগার করে কথা বলতে চেয়েছিলাম, ব্লক করেছিল। বিভিন্ন মোবাইল থেকে ফোন দিতাম সে বিরক্ত হয়ে বোধহয় সিমটাই বন্ধ করে দিয়েছে কারণ অচেনা নাম্বার থেকেও ফোন করলেও নাম্বার বন্ধ দেখাতো। ততক্ষণে আমি পাগলপ্রায়। তাকে দেখার জন্য ছুটে গিয়েছিলাম তার বাড়ি। সেখানে গিয়ে জানতে পারি সে বাড়ি ছেড়েছে প্রায় সপ্তাহ খানেক। মাঝে একবার আমার বান্ধবী তার খোঁজ দিয়েছিল। সে নাকি কোনো রিলেশনে গেছে। আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। খেতে পারতাম না, ঘুমাতে পারতাম না, সবসময় অস্থিরতা কাজ করত। সারাক্ষণ তার ছবির দিকে তাকিয়ে কাঁদতাম। টেস্টে ফেল করেছিলাম, বাবা তার জন্য মেরেও ছিল। তার অপেক্ষায় থেকে থেকে নিজেকে তৈরি করলাম। আমি জানি না কেন সে আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিল। আজ পাঁচ বছর পরও জানতে পারলাম না। হতে পারে তখন আমি সুন্দর ছিলাম না তাই…”

ম্লান হাসলো মুন। ফায়াজ এতক্ষণ ধরে মাথা নিচু করেছিল। কী বলবে সে? বলার মতো আর কিছু আছে কি? মুনকে এতবছর পর দেখে সে প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে চিনেছে। সেই ছেলেটা তো ফায়াজ-ই ছিল। একটা মেয়ে তার পেছনে কুকুরের মতো ঘুরেছিল তাও সে পাত্তা দেয়নি। মুনকে যখন দেখেছে তখন মুন মাত্র ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ত। তাকে দেখে ফায়াজের একদমই পছন্দ হয়নি। তখন মুন দেখতে কিছুটা শ্যামলা ছিল, ব্যাকডেটেড, আর একটু বেশিই স্বাস্থ্যবতী ছিল। আর মেয়েটি নাকি মধ্যবিত্ত। এমন একটা মেয়ের সাথে রিলেশনে গেলে তো কলেজে তার প্রেস্টিজের পাংচার হয়ে যাবে। কলেজের ক্রাশ বয়ের গার্লফ্রেন্ড কিনা শ্যামলা থাকবে? মোটা থাকবে? ক্ষ্যাত থাকবে? অসম্ভব! অথচ মেয়েটা কিছুতেই পিছু ছাড়ছিল না। ফোন করে করে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদত। তার বড্ড বিরক্ত লাগছিল এসব। মেয়েটির জ্বালায় সে সিম ভেঙে ফেলেছিল, শহর ছেড়েছিল। নতুন শহরে গিয়ে নতুন কলেজের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের প্রেমে পড়েছিল। প্রেম চলাকালীন সময়ে তার মনে হয়েছিল কিছু একটা নেই। কিন্তু কী সেটা? মুহুর্তেই তার মনে হয়েছে ভালোবাসা নেই। সুন্দরী গার্লফ্রেন্ডকে রোজ গিফট দিতে হয়, এই ডে, সেই ডে, করে রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে হয়, মেকআপ, মোবাইল ইত্যাদি কিনে দিতে হয়। প্রথম প্রথম এসব তার কাছে ভালো লাগলেও পরে মনে হয়েছে এই প্রেমে শুধুমাত্র চাহিদা ছাড়া কিছুই নেই। সে নিজেও তখন একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল। কিন্ত সেই প্রেমটাতো ভালোবাসা না। প্রেম চলল ছয় মাস। সুন্দরী মেয়েটি নিজেই ছেড়ে দিয়েছে তাকে। সে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল। একটু ভালোবাসার জন্য। মুনের কথা মনে পড়লেও তখন ইগোর কারণে ফিরে যেতে পারেনি। রাস্তায় তাকে একটিবার দেখার জন্য রোদে দাঁড়িয়ে তীর্থের কাকের মতো চেয়ে থাকা, ফোনে বারবার ভালোবাসি বলা, মুনের ক্রন্দনরত ভেজা আওয়াজ সবকিছুই ফায়াজকে একটুর জন্য হলেও টানছিল। তবে পরক্ষণেই মনে হয়েছিল, মেয়েটি মোটা, ব্যাকডেটেড। তার ভালোবাসা চাই তবে এই মেয়েটির থেকে না। এভাবেই সে ভালোবাসার কাঙাল হয়েছিল সেই থেকে আজ পর্যন্ত। আর যেই মেয়েটিকে কিনা ব্যাকডেটেড, মোটা থাকায় রিজেক্ট করে দিয়েছিল সেই মেয়েটি অপরূপ রুপের অধিকারীণি আজ, আধুনিক চলাফেরা তার। যাকে দেখে চোখ ফেরানো দায়।

ট্রেন হুইসেল দিয়ে থেমে গিয়েছে। ভোরের আলো তখন ফুটবে প্রায়। এখন আর সেই ম্লান অন্ধকার নেই। হালকা শীত শীত করছে। বাহিরটা ঘন কুয়াশার চাদরে আবৃত। আর কিছুদিন পরেই তো শীত নামবে। মুন নিজের ব্যাগ গোছাচ্ছে। তার এই স্টেশনেই নামতে হবে। ফায়াজ কিছুক্ষণ ইতস্তত করতে লাগল। ততক্ষণে মুন হাঁটা ধরেছে ট্রেন থেকে নামতে। ফায়াজ দৌড়ে গেল। এখন যদি তাকে না আটকায় তাহলে তো সারাজীবনের জন্য মুনকে হারাবে সে। সে হারাতে চায় না। একটু ভালোবাসা চায় যেটা একমাত্র মুন দিতে পারবে।

-“শেষবারের মতো সুযোগ দেয়া যায় না? ফিরে আসা যায় না আমার কাছে।”

থমকে দাঁড়ালো মুন। বুকের মাঝখানটা এখনো দ্রিমদ্রিম শব্দে বাজছে। ফায়াজের দিকে ফিরলো সে। মুখটা মলিন। চোখে মুখে তাকে পাওয়ার আকুতি। চোখ দুটি এখনো চঞ্চল।
হঠাৎই কেউ একজন পেছন থেকে মুনের ব্যাগ নিজের কাছে নিয়ে নিলো। ফায়াজ আর মুন দুজনেই দেখলো একটা সুদর্শন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ফায়াজের সমবয়সী। চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। যেন এতক্ষণ বহু অপেক্ষা করে তার কাঙ্খিত জিনিস পেয়েছে সে। চোখে মুখে ক্লান্তির ভাব থাকলেও এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে খুশির কণা। মুন তাকে দেখে মিষ্টি হাসলো। এটা দেখে ফায়াজের যেন খানিকটা রাগ হলো। বিনিময়ে ছেলেটিও হাসলো, তবে ছেলেটির ঠোঁট কাঁপছিল প্রচুর। মুন ঠোঁটে হাসি বজায় রেখেই ছেলেটির উদ্দেশ্যে বলল,

-“কেমন আছো আরাভ?”

ছেলেটি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
-“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, তুমি?”

-“আমিও। তুমি ব্যাগ নিয়ে সামনে আগাও আমি আসছি।”

আরাভ তড়িঘড়ি করে ব্যাগ নামাতে লাগল। মুন ফায়াজের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

-“বড্ড দেরী করে ফেলেছেন আপনি। আপনাকে সুযোগ দেওয়ার আর কোনো সুযোগই নেই। ওই যে, ওই ছেলেটিকে দেখছেন না? আরাভ। আমার হবু বর। পালিয়ে এসে এখন ওকেই বিয়ে করবো। সকলের সম্মতি আছে তবে বাবা এখনো এই ব্যাপারে জানেন না। আরাভ আমাকে ভালোবাসে, কলেজে থাকাকালীন সময় থেকেই। তখন আমার চেহারা এসব কিছুই সুন্দর ছিলো না। কিন্তু সে ভালোবেসেছে। আরাভ আপনার মতো সৌন্দর্যের পূজারী নয়। মন থেকেই ভালোবেসেছে আমায়। যখন জানতে পারল আমি কাউকে ভালোবাসি তখন সে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কারণ তার ভালোবাসা অন্য একজনকে ভালোবাসে এটা সে সহ্য করতে পারছিল না। পরে যখন জানলো আমি কোনো কারণে পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলাম তখন আরাভ বিদেশে না গিয়ে ফিরে এলো আমার কাছে। বন্ধুর মতো মিশে সব বোঝাতো। তবে জানেন, আমার কষ্ট হবে ভেবে আমাকে কখনো বলেনি সে ভালোবাসে। কিছুদিন আগে বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা শুনে সে বলে ফেলেছিল কথাটা। ভালোবাসার কথা শুনে তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেই। আমার সাথে বহুবার দেখা করতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। তার দুইদিন পর আপনার সাথে করা কাজগুলো মনে পড়ে গেল। আমিও তো এমন পাগল ছিলাম। আপনার জন্য। তেমনটা আমার জন্য ছিলো আরাভ। তখন মনে হলো আমি যদি আরাভের ভালোবাসায় সাড়া না দেই তাহলে আপনার আর আমার মধ্যে পার্থক্য কি? আমার মতোই তো ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে আরাভকে। কিন্তু আমি চাই না আরাভ আমার মতো ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হোক। ভালোবাসা না পাওয়ার বেদনা আমি বুঝি। তাহলে তো আরাভও সেই বেদনায় ভুগবে। প্রত্যেকেই চায় তাকে কেউ একজন পাগলের মতো ভালোবাসুক। আমিও চাই। আরাভ সেই পাগল। যে আমাকে সবসময় ভালোবাসবে। যাই হোক মিস্টার ফায়াজ। আপনার আগামী জীবনের জন্য বেস্ট অফ লাক। আশা করি সৌন্দর্যের পূজারী না হয়ে কাউকে মন থেকে ভালোবাসবেন।”

মুন চলে যেতে লাগল। আরাভ তাকে বলল,
-“ছেলেটিকে চিনো? এমন অসহায় মুখ করে আছে কেন?”

মুন ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরে তাকাল ফায়াজের দিকে।
-“ছেলেটি কাউকে চিরজীবনের জন্য হারিয়েছে।”

ফায়াজের চোখ ছলছল করে উঠল। মুন ছাড়া যে আর কেউ তাকে ভালোবাসতে পারবে না। তার যে এখন অনুতপ্ত হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আজীবন হয়তো কাঙাল হয়ে বেঁচে থাকতে হবে, ভালোবাসার কাঙাল। সে দেখল পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে। ছেলেটির এক হাতে ব্যাগ আর অপর হাতটি মেয়েটির সাথে বারবার বারি খাচ্ছিল। ছেলেটি যেন মেয়েটির হাত একটিবারের জন্য ধরতে চাইছে। তবে পারছে না। অসম্ভব রকমের হাত কাঁপছে তার। হঠাৎই মেয়েটি ছেলেটির হাত নিজের মুঠোয় পুরে নিল। ছেলেটিও শক্ত করে ধরল। যেন কোনোদিন ছাড়বে না এই পণ নিয়েছে। তারপর ছেলেটি নিজের গায়ের চাদর দিয়ে জড়িয়ে ধরল মেয়েটিকে। যেন শীত না লাগে। একই চাদর জড়িয়ে পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে একজোড়া কপোত কপোতী।

সূর্যের কিরণ ছড়িয়ে পড়েছে দিগ্বিদিক। ঘাসে জমে আছে শিশির। কুয়াশা চুইয়ে চুইয়ে মাটিতে পড়ছে। সেই সাথে কারো ভালোবাসা না পাওয়ার ব্যর্থতায় চোখের কার্ণিশ বেয়ে একফোটা স্বচ্ছ নোনাজল বুঝি পড়ল!

মরেও বাঁচার আর্তনাদ!- Mizanur Rahman

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগতা_আগষ্ট_২০২০
মরেও বাঁচার আর্তনাদ!

1/

সপ্তাহ খানেক হলো চাকুরীতে যোগ দিয়েছে রাফিন। সদ্য প্রায়ত প্রিয় মাকে হারিয়ে পুরা পরিবার শোকসন্তপ্ত। বাবা বয়োবৃদ্ধ ও কর্মে অক্ষম হওয়ায় পরিবারের আয়ের উৎস একমাত্র রাফিন।
এখনো স্মৃতিপটে ভেসে আসে মায়ের বেদনাবিধুর অসহায়ত্বের মৃত্যু।
রাফিনের মা কোনদিন কোন প্রার্থিত ব্যক্তিকে খালি হাতে ফেরত দেননি।
সমস্ত এলাকা জুড়ে চলছে শোকের মাতম।
আর বাবা ও এখন মৃত্যুশয্যায় কবর অভিযাত্রী । দান বাদন্যতায় প্রশংসা ছিল তুখোড়। মানবিকতার পরিচয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দান সদকা করতেন নিমিষেই । কিন্তু আজ জীবনইতির দ্বারপ্রান্তে চিকিৎসাহীন। সাজানো গোছানো পরিপাটি পরিবার এখন নিমেষেই বিধ্বস্ত প্রায়।

তাই রফিন পেট ও বাবার উন্নত চিকিৎসার তাগিতে বেশি রোজগারে মড়িয়া।
স্বল্প বেতনের চাকুরীতে পরিবার নড়বড়ে ও দুর্দশাগ্রস্ত। পাশের গ্রামের এক বন্ধু দেশে ফিরেছে এক আকস্মিক দুর্ঘটনায় ।ইতালির ফাইব স্টার হোটেলে কর্মরত ছিল দীর্ঘদিন। প্রাণঘাতী ‘ করোনার’ প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে প্রাচ্যের দেশে দেশে। তাই বাধ্য হয়ে সকল ভিনদেশী শ্রমিকের ধরতে হলো বাড়ির পথ।
সাথে সাথে মৃত্যুর মিছিল ও হচ্ছে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর ।
বন্ধুর কাছ থেকে কিছু সাহায্য পাওয়ার আশাটাও নিষ্ফলা হলো।

কালবিলম্ব না করে মাফস্বল ছেড়ে উঠতে হবে ইটপাথরের নন্দিত শহরে ।জীবিকার টানে সব বিলিয়ে টাকা আয় করতে হবে। বিদেশ ফেরত বন্ধু শহরে আসতে বাধা দিলেও কর্ণপাত করেনি রাফিন।
ভয়াল রূপ ধারণ করা মহামারী একদিন এশিয়ায়ও হানা দিয়ে নগর, বন্দর, আবদ্ধ করবে। সারা দেশ হবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।

এসব তথ্য জানানো হলেও বাবার জীবন-মরনের সন্ধিক্ষণে চিকিৎসা টাকা উপার্জনের কথা ফেরাতে পারেনি শহরে আসা থেকে।

2/
যেমন কথা তেমন কাজ। চারদিন কাজ করতে না করতেই শুনতে হলো আশানুরূপ দুঃসংবাদ। ইতিমধ্যে ‘ করোনা ‘ ছো মেরেছে মাতৃভূমিকেও। প্রতিটি নিঃশ্বাসে জেগে ওঠে নতুন জীবনের গল্প ।অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে শুনতে হচ্ছে নাম-না-জানা ভয়ঙ্কর শব্দগুচ্ছ। অসহায়ত্বের নগ্ন হামলার মহড়া চলছে মানব সামানিয়ায়।
যে যাকে পারে -তাকে ভুলে পালাচ্ছে।
স্থির ও আপন গতিতে গন্ডিয়মান বিশ্বকে মুহূর্তেই মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে মহামারী করোনা।অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মক্ষেত্রও বন্ধ ঘোষণা হলো ।মানতে বড় কষ্ট হচ্ছে! কিন্তু কি আর করার?
পিচ ঢালা এই সড়কে এখন গাড়িশূন্য। গ্রামে গিয়ে বাবার শুশ্রূষা করা অসম্ভব ।
মুহূর্তেই আমানিশা রাতের রূপ নিয়েছে পৃথিবীজুড়ে। সৌন্দর্য ও ভালবাসার প্রতীক মুসাফাতেও নিষেধাজ্ঞা । শরীর থেকে উপসর্গ বের হবে বলে দৌড়ে পালাচ্ছে সবাই।
যেন মানুষ সভ্যতায় মানুষত্বই দূর হয়ে যাচ্ছে। মেসে এক বেলা খেয়ে দুই বেলা অন্নহীন। সাহায্য ও মানবতার হাত বাড়ানোর বদলে পালাচ্ছে প্রাণের ভয়ে।
অন্যদিকে বাবার অবস্থা অবনতির দিকে। লকডাউনে মানবসভ্যতার ঢাকা শহর মৃত্যু প্রায়। তারপরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একবার রাস্তায় বের হয়েছিল কাজের তালাশে ।কাজ তো বাদ, বরং প্রশাসনের মুগুর পড়লো পিঠ পেচিয়ে।

কোনমতে বাসায় হাজির ।বাড়ি থেকে ফোনে জানতে পারলো বাবাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। শত মাইল দূরে বাবার মৃত্যুরপীড়ায় রাফিন অস্থির। পাশে থাকলে হয়তো কিছুটা কষ্ট লাঘব হতো।
বড় পেরেশানি আর বে-কারারের মধ্যে রাত কাটছে।

ভোর রাতে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো ।বুঝতে বাকি রইল না যে সংবাদটা বেদনার।
হ্যালো রাফিন!
তোর ইমারজেন্সি বাড়িতে আসতে হবে !
দেশের এমন লকডাউনে দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ। নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখে মাক্স লাগিয়ে শুরু হলো যাত্রা। ঘাটে ঘাটে পুলিশের জবাবদিহি আর শত বাধা পেরিয়ে এই পথ চলা। একপর্যায়ে ঢাকার বাহির দ্বারে আবদ্ধ রাফিন । পা জোড় আর ক্রন্দনে সিক্ত নয়নযুগল ।বাবার এমন খবর জানালেন মন গলেনি তাদের।

3/
আহ!
নিয়তির কি নির্মম পরিহাস!
বাবাকে পাশে রেখে চির বিদায় দিতে পারলো না। এখন কি কাফন-দাফন থেকে মাহরুম হবে? বাবার কথা ভাবতেই অন্তরে বিয়োগের স্রোত বয়ে যাচ্ছে।
সকাল গড়িয়ে এখন দুপুর ।সাত ঘণ্টা যাবত একই স্থানে (পরাধীন) সাময়িক আটক। শেষতক পা জড়িয়ে বাবার নামে আবদার তুলল রাফিন ।ওর অপরাধ শুধু এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় স্থানান্তর।
করোনা থেকে বাঁচার আশায় আজ মানুষত্ব প্রায় বিলীন। হারকিসিমের
শর্তজুড়ে অবশেষে এলো মুক্তির পয়গাম ।কিন্তু রাফিন এখনো মানব সভ্যতায় অসহায়ত্ব কিঞ্চিৎ পরিমাণও পরিলক্ষিত করেনি ।
ওর বিপদে আশেপাশের চির চেনা মুখগুলো এভাবে মুখছিটকানো
সারা জীবন কাঁদাবে । করোনার এই মত্ত তান্ডব একদিন বিদায় নিবে- মাগার হেতু ভয়ানক সেই আচারণ আর কুদৃষ্টি সর্বদাই বরিত ললাটে ঝুলতে থাকবে।
রাফিন এখন মৃত্যু বাবার সামনে দাঁড়িনো!

শোকের সাগরে নোনা জলগুলো জমাট বেঁধে ক্ষোভের আকার ধারণ করেছে ।মারা গেছে প্রায় বার ঘণ্টা, এখনও গোসল হয়নি ।এলাকা জুড়ে চলছে গুজব রাফিনের বাবা মজিদ মিয়া নাকি করোনা ভাইরাসে ভাইরাসে মারা গেছে ।

একসময়ের দানবীয় ও সৎ মানুষকে দেখতে পর্যন্ত কেউ আসছে না ।মজিদ মিয়ার শুভাকাঙ্ক্ষীরাও কেটে যাচ্ছে ছলচাতুরি দেখিয়ে ।
কে গোসল ,কাফন- দাফন ও জানাজার আঞ্জাম দিবে?

অন্যদিকে স্থানীয়দের হুমকি-ধমকিতে জিগার শুকিয়ে চৌচির। হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মজিদ মিয়া শরিরে করোনার কোনো উপসর্গই ছিলনা ।তারপর সমাজের একশ্রেনীর মানুষের এমন বৈষম্য রাফিনকে আধা মরা করে ছেড়েছে।

মহল্লার ছোট মসজিদের ইমাম মজিদ মিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিল ।তাই তাকে অবহিত করা দরকার। কিন্তু রফিনকে তো বাড়ি থেকে বের হতে কঠিন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে । চার দেওয়ালে চলছে 144 ধারার লকডাউন।
কোনমতে ইমামকে খবর দিয়ে খুব সতর্কে বাবার গোসল শেষ। এভাবে এক স্তরের পর অন্য স্তরে পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় ভোগ।
গগনপানে হাতজোড় করে জানতে চায় এর ব্যাখ্যা বর্ণনা !
মসজিদের খাটও দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিল এলাকাবাসী।
ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে সব বাড়ির ভিতরে করতে হবে।

4/
রাফিনরাফিন ভেবেছিল জানাজায়
কিছু আত্মীয় ও শুভাকাঙ্খীরা উপস্থিত হবে। কিন্তু এখানেও ভাগ্যের থাবা পর্যবসিত হলো।

কি আর করার মাত্র চার জনকে নিয়ে জানাজা পড়তে হলো।
রাফিনের মগজে ঘুরপাক খাচ্ছে সভ্য সমাজের এমন মানবতাবিরোধী বিষয়টি ।মানুষ কী এমন হতে পারে?
এমনভাবে ত্বরান্বিত করে দাফন দিয়ে প্রিয় বাবাকে চিরবিদায় জানালো। স্বল্প সময়ে বাবা-মা হারানো আর ইনসানের এমন অনৈতিকতার আচরণে রাফিন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
তার বিপদে পাশে দাঁড়ানোর কেউ ছিলনা ।
এই মজিদ মিয়াই কিছুকাল আগে সমাজে মানবতার বীজ বুনিয়েছে।
এলাকাবাসীর মুখে মুখে ছিল মজিদ মিয়ার কৃপার গল্প।

রাতারাতি ভুলে গেলে সব কিচ্ছা কাহিনী। কিন্তু মজিদ মিয়ার তো কোন দোষ নেই।
তারপরও বাবার প্রতি সমাজের এমন কুদৃষ্টি সারা জীবন বেদনা হয়ে থাকবে রাফিনের হৃদয়ে।

ততক্ষণে বাড়ির ছাদে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে লাল বিপদ সংকেত ‘পতাকা’।
টানা চৌদ্দ দিন তাকে পড়ে থাকতে হবে এই আঙ্গিনায় ।গুনিয়ে নিতে হবে দুনিয়ার আলো বাতাস থেকে।

অথচ পেটের ক্ষুধায় চুপসে যাওয়া রাফিনের খাবার – দাবারের খরচ নিয়ে কারো মাথাব্যাথা নেই ।বরং ওকে রেখে দূরত্ব অবলম্বন করাটাই এখন বড় কাজ। এ যেন শোকের মাতামে লবন ছিটানোর নামান্তর।

5/
অনেকে কথা বলতেও সাহস করছে না ।তবে ও জানে ,এই আত্মঘাতী করোনা একদিন বিদায় নিবে ।কিন্তু রাফিন ও মজিদ মিয়ার ব্যাপারে এমন ক্ষুদ্ধ আচরণ বাকী হারাতে পীড়া দিবে।

রাফিনের বুকে কলিজা ছিড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে এই সর্বপ্লাবী ব্যথায়।
অবিশ্বাস্য তোলপাড় মনে হচ্ছিল ‘মহাপ্রলয় ‘হয়ে ঢুকে যাচ্ছে শরীর মস্তিষ্ক জুড়ে। বুকের পাঁজর ভেদ করে ঢুকে যাচ্ছিল এক অবর্ণনীয় অসহনীয় যন্ত্রণা ।মুহূর্তেই সবকিছু ভেঙেচুরে একাকার করে সমূলে উপরে নিয়ে যাচ্ছে রাফিনকে এক অসীম শূন্যতা ।

সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে যাওয়া করোনার বিদায়ে পৃথিবী একদিন সবুজ বসন্তে সাজবে। কিন্তু রাফিন আর পারবে না প্রিয় বাবাকে আদর যত্নে শেষ বিদায় জানাতে ।
কারণ এখন সে এখন ওপার জগতের অধিবাসী। আর রাফিনকে ভুলানো যাবে কী অসহায়ত্বের মালায় গাঁথা সমাজের মানুষের অস্তিত্ব গিলে অবর্ণনীয় ব্যবহার আর জীবন সংহারী আঘাতে বেচে যাওয়ার গল্প?

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

নিরন্তর অপরাজিত – সবুজ আহমেদ মিজান

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
নিরন্তর_অপরাজিত
সবুজ_আহমেদ_মিজান
.
গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে কেরানির চাকরি পাওয়ার পর এমন করে কখনো ভেঙে পড়িনি আমি। আজকের সকালটা বুকের গভীরখাদে ডুবে যাওয়া স্মৃতিটাকে খুঁড়ে বের করে আমাকে যেন স্মৃতিভুক করে রেখেছে। আজ সকালে রনু চাচার মতো একজনকে স্কুলে দেখে হঠাৎ মোচড় দিয়ে উঠল বুকটা। অবিকল রনু চাচার মতোই দেখতে একজন মানুষ। যার আঙুলে নির্ভার আরেকটি ছেলের মুষ্টিযোগ দেখে আমি সেই ম্রিয়মাণ, নিষ্প্রাণ দিনগুলোতে কেমন করে যেন ডুব দিলাম! চোখের সামনে ভাসাভাসা হয়ে উঠল সেই উত্তাল অতীতগুলো।
.
রনু চাচা আমার নিজের চাচা নন। একই গ্রামে ছিল আমাদের আবাস। আমার বয়স যখন নয় বছর, তখন থেকেই রনু চাচার সাথে আমার মানিকজোড় সম্পর্ক। আমি যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। দুরন্ত বয়সের সেই স্মৃতির আখ্যানে আমি প্রতিদিন রনু চাচার আঙুল ধরে একসাথে স্কুলে যেতাম। স্কুল যাবার আগে কখনো তিনি আমাদের বাড়িতে আসতেন, কখনো আমি তাঁদের বাড়িতে যেতাম। আর স্কুল ছুটির সময়গুলোতে কখনো আমি তাঁর জন্য অপেক্ষা করতাম, কখনো তিনি আমার জন্য। স্কুল ছুটির পর আমরা প্রায় প্রতিদিনই মাঠে খেলতে যেতাম। আবার মাঝেমধ্যে যেতাম না। তখন খেলাঘর খেলাঘর খেলায় নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। রুবিনা, আরিফা, মীনা, সোহাগসহ আমার অন্যান্য বন্ধু, বান্ধবীর সাথে রনু চাচাও ছিলেন। রনু চাচা আমাদের থেকে বয়সে বড় হলেও সুন্দরভাবে মিশে যেতেন আমাদের মাঝে। আমাদের খেলা দেখতে এসে নিজেও যোগ দিতেন খেলায়। পুতুল বিয়ে ছিল আমাদের ভীষণ প্রিয় খেলা। একজনের পুতুলের সাথে আরেকজনের পুতুলের বিয়ের আয়োজনে কখনোসখনো পিকনিকের আয়োজনও করতাম। যেখানে গীত হতো, নাচ হতো, হলুদবরণ, বধূবরণও হতো। তবে পুতুল বিয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে কখন যেন বর বউ খেলায় মশগুল হয়ে গেলাম সবাই। সেই খেলায় আরিফা হতো সোহাগের বউ আর মীনা হতো রনু চাচার বউ। রুবিনা সবাইকে বিয়ের সাজে সাজিয়ে দিত। মীনাকে বউ সাজিয়ে রনু চাচার পাশে বসিয়ে রাখত। রনু চাচা মীনার চোখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে তাকে বউ বউ বলে ডাকত আর মীনা লজ্জার মৌতাতে ওড়না দিয়ে মুখ ডেকে রাখতো। ‘বউ হতে হলে লজ্জাবতী হতে হয়।’ এমনটা রুবিনা বলত আমাদের। রুবিনার কথা অনুযায়ী মীনাও লজ্জালু চোখে রনু চাচার দিকে চোখ ঠিকরিয়ে রাখতো আর লাজুক হাসি দিত। রনু চাচার চোখেমুখে তখন কী যে ভালোবাসার নেশা উঁকি দিত মীনার জন্য! আমার ছোট্ট মনে তার বিশালতা ধরা পড়ত না। অবুঝ মনটা খেলার নিয়মমাফিকে সবকিছু এড়িয়ে যেত। মেতে থাকত অপরিণত জীবনের সংসার সংসার খেলায়। উত্তীর্ণ সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা চলতো খেলাঘর নামে ডাকা এই বর বউ খেলা।
.
এক ঘন কুয়াশার শীত রাতের কথা আমার ভীষণ মনে পড়ে। তখন আমাদের গ্রামে বিদ্যুতের আলো প্রবেশ করেনি। সন্ধ্যার পর প্রতিটি বাড়িতে হারিকেন কিংবা কুপির টিমটিমে আলো জ্বলে উঠত।
ডিসেম্বর মাস। বার্ষিক পরীক্ষার পর লেখাপড়াহীন শীতকালীন অবকাশ চলছিল সেই সময়। সন্ধ্যার পর সবেমাত্র আকাশকে ধূসর ছাউনিতে ঢেকে কুয়াশা পতনের শব্দ শুরু হয়েছে। শত্রুর তাড়া খাওয়া ভয়ার্ত শাবকের মতো শেয়ালগুলো পাশের ফসলি জমি থেকে হাঁক দিতে শুরু করেছে। জলের টলটলে আয়নায় অর্ধ চাঁদ দুলতে শুরু করেছে অবিশ্রান্ত সরোবরে। ঠিক সে সময়ে রনু চাচা কোথা থেকে ছুটে এসেছিল আমাদের ঘরে! তাঁকে উপস্থিত দেখে বললাম,
“চাচা তুমি এ বেলায়?”
“হ, যাইবি আমার লগে?”
“কই যামু?”
“গান হুনতে?”
“কিহের গান?”
“পাশের গাঁয়ে গানের আসর বইছে, এলাকার হগলে যাইতাছে… চল আমরাও যাই।”
“খাড়াও মা’রে কই।”
“আইচ্ছা কইয়া দ্যাখ।”
.
মায়ের অনুমতি নিয়ে রনু চাচার হাত ধরে কুয়াশার দীর্ঘ সারি পাড়ি দিয়ে আমি ছুটছিলাম গানবাড়িতে। গানবাড়িতে গিয়ে লোকসমাগমের এককোণায় আমরাও বসে পরলাম। রনু চাচা আমার হাত শক্ত করে ধরে সামনে তাকিয়ে আছে। সেখানে একেক পর এক পালাগান হচ্ছে। আয়নাবিবির পালাগান, রূপবানের পালাগান। পালাগান শুনতে শুনতে রাত গভীর হয়ে গেল। একটু পরেই পুঁতিপাঠের আসর শুরু হবে। কিন্তু আমার প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছিল। সেখানেই ঢুলুঢুলু চোখে স্বপ্ন দেখছিলাম। দেখছিলাম, ‘রনু চাচার আঙুল ধরে গ্রামের পথ দিয়ে গানবাড়ির গান শুনতে যাচ্ছি। মীনাও যাচ্ছে আমাদের সাথে।’
রনু চাচার স্পর্শে চমকে উঠলাম। ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে জড়তাযুক্ত কণ্ঠে বললাম, “কী অইছে চাচা?”
“অনেক রাইত অইছে, চল বাইত যাই।”
“আইচ্ছা চলো।”
.
নির্ভীক রনু চাচার হাত ধরে গ্রামের সাদা কুয়াশার ধোঁয়াময় পথ পেরিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটছি। কোথাও কেউ নেই। শিশিরস্নাত চাঁদকে তখন ছোট্ট শিশুর মতো ফুটফুটে লাগছিল। ধূধূ করা মাঠে ধূসর-সাদা শাড়ি পড়ে একটু একটু করে ঝরতেছিল কুয়াশারা। নিশিপোকা ঝিঁঝিঁ’র ডাকে অন্ধকারের কোলে রাত যেন ঘুমিয়ে পড়েছে নীরব ভাষায়।
শীতকালে এত রাতে আমি কখনো বাইরে থাকিনি, সেটাই প্রথম। রনু চাচা আমার হাত ঝাঁকিয়ে বললেন, “তোর ডর লাগতাছেনা সাজু?”
তাঁর কথা শুনে চট করে উত্তর দিলাম, “তুমি আছ না!”
“তর কি ঘুম পায়?”
“তখন পাইছিল, অহন আর নাই।”
“ঐ বাঁশঝাড়টা দ্যাখছোস?”
“হু…”
“যাইবি ঐহানে?”
“ঐহানে ডর লাগবো, যামু না।”
“ধুর পাগল, আমি আছি না, ডর কিহের, কাছে গিয়াই তোরে জাদু দেখামু!”
“হাচা! কী জাদু?”
কৌতুহলী মনে তাঁকে শুধাই আমি। একটু পরেই বাঁশঝাড়ের কাছে পৌঁছাই দুজনে। সেখানে ঝাঁকবাঁধা জোনাকির জ্বলা-নেভার লুকোচুরি খেলা চলছে। কোনোটা জ্বলতে জ্বলতে নিভে যাচ্ছে, কোনোটা জ্বলতে জ্বলতে বাঁশঝাড় থেকে বেড়িয়ে পড়ছে আবার কোনোটা বাঁশপাতায় আলো বিছিয়ে দিয়ে শুয়ে আছে।
রনু চাচা আমাকে ঝাড়ের আরো ভেতরে নিয়ে গেলেন। চারদিকে গহীন অন্ধকার। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। শুধু দুজন মানুষের নিঃশ্বাস টিপটিপ করে জ্বলছে জোনাকি পোকার মতো। আর কথা বলার সময় শীত শীত ধোঁয়া বের হচ্ছে মুখ থেকে। রনু চাচা আমার কানে ফিসফাস করে বললেন, “ডর লাগে তর?”
“না চাচা, তুমি আছ না লগে!”
“জোনাকি পোকা লইবি?”
“হুম দাও, বতলে ভইরা রাখুম।”
আমাকে কথা দিয়ে রনু চাচা জোনাকি ধরতে লাগলেন। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল, এত রাতে আমার জন্য তিনি জোনাকি শিকার করতে বের হয়েছেন। কিছুক্ষণ পর আমার হাতে একটা জোনাকি ধরিয়ে দিয়ে বললেন, “হাত মুঠো কর… আস্তে আস্তে… উইড়া যাইবো।”
আমি হাতের মুঠোয় নিতে নিতে ফাঁক পেয়ে ফাঁকি দিয়ে জ্বলতে-নিভতে জোনাকিটি উড়ে গেল। জোনাকি উড়ে যেতে দেখে রনু চাচা আফসোস করে বললেন, “তুই কিচুই পারস না! খাঁড়া আরেকটা ধইরা দেই।”
আমি নাখোশ ভাব দেখিয়ে বললাম, “লাগবো না রনু চাচা”
“আইচ্ছা থাইক। বাইত চল।”
.
বন্ধুত্বের ছক থেকেও রনু চাচা ছিল আমার পরমপ্রিয় বন্ধু। শুধু সম্পর্ক সূচক ডাকটাই ছিল আমাদের দূরত্ব। তদুপরি আমরা ছিলাম দুজন দুজনার অতি আপনজন। স্কুল চলাকালীন এক টিফিনের দুপুরে একজন সহপাঠীর সাথে আমার খুব মারামারি হয়েছিল। সে আমার শার্টের বোতাম টেনে ছিঁড়ে দিয়েছিল। সেই আক্ষেপে আমি খুব কেঁদেছিলাম। কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ শোনাতে গিয়েছিলাম রনু চাচার কাছে। আমার কান্নামাখা চোখ দেখে তিনি তড়িৎ গতিতে ছুটে এসে সেই ছেলেকে ভীষণ পিটিয়েছিলেন। ঠোঁট ফাটিয়ে পর্যন্ত দিয়েছিলেন। গলগল করে রক্ত পড়তে শুরু হয়েছিল ঐ ছেলের ঠোঁট থেকে। তখন রনু চাচা আমার বইগুলো কাঁধে নিয়ে আমার হাত ধরে ভোঁ-দৌড় দিয়ে স্কুল থেকে পালিয়ে বলেছিলেন, “জোরে দৌড়া সাজু।” দম বন্ধ করা দৌড়ের ওপর আমরা বাড়িতে পৌঁছেছিলাম ঐদিন। তবে পরেরদিন এই অপরাধে রনু চাচাকে কঠিন শাস্তি পেতে হয়েছিল।
.
সোনার খাঁচার বন্দি করে রাখার মতো সুখের চাদর গায়ে জড়িয়ে অতিবাহিত হতে লাগল শৈশবের নিষ্পাপ দিনগুলো। রনু চাচাকে ছাড়া আমার প্রতিটি ক্ষণ যেন কল্পনার বাইরে মনে হতে লাগল সবসময়। কিন্তু আচমকা একদিন আমাদের সুখী গ্রামে যুদ্ধের সোরগোল পড়ে গেল। সবার মুখেমুখে কেবল যুদ্ধের সংবাদে, সংলাপে তোলপাড় হতে লাগল সারা গ্রাম। ভয়ে, শঙ্কায় সবাই কোণঠাসা পড়ে পড়ল। অনেকে নিজ গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে লাগল অন্য গ্রামে। মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে জোরেজোরে কাঁদতে শুরু করল। বাবাও লাঙল আর গরু দুটোর গায়ে হাত বুলিয়ে নীরবে অশ্রু ঝরাতে লাগলেন। আমার মনে তখন অনেক অজানা প্রশ্নের উত্থানপতন চলছিল। যুদ্ধ কী, কেন যুদ্ধ হয়, কারা যুদ্ধ করে?… এমন অসীম প্রশ্নের আঘাতে আঘাতে মায়ের নির্জীব মুখটা দেখে আমিও কাঁদতে লাগলাম। দুদিন ধরে রুনু চাচাও বাড়িতে নেই। বেড়াতে গেছেন। রনু চাচার কাছে ছুটে গিয়ে তাঁকে যুদ্ধের কথা জানাতে ইচ্ছে হচ্ছিল খুব। যুদ্ধ নিয়ে সাতসতের ভাবনায় রাতে ঘুম হলো না আমার।
পরদিন সকালে দ্রুত নিঃশ্বাস নিতে নিতে রনু চাচাই ছুটে এলেন আমাদের বাড়িতে। মুখখানি ফ্যাকাসে করে বলতে লাগলেন, “আমাদের গাঁয়ে যুদ্ধ শুরু হইবো রে সাজু… আমি শুইনা আইলাম। পাকিস্তানিরা আমাদের দ্যাশটা কাইড়া নিতে আইবো রে। সাবদানে থাকিছ।”
আমি বুঝতে পারি না যুদ্ধ কী; তবুও ভীষণ ভয়ে আরও কাতর হয়ে গেলাম। যুদ্ধের কথা বলেই রনু চাচা আর বিলম্ব করলেন না। দৌড় দিতে লাগলেন তাঁদের বাড়ির দিকে। তাঁর ছুটে চলা পিঠ দেখে আমার দুচোখ জলে উতলে উঠল। চোখ মুছতে মুছতে আমি আমাদের খেলাঘরটার দিকে পা বাড়ালাম। পুতুল বিয়ে খেলার কথা ভেবে কাঁদতে লাগলাম অঝোরে। মা’ও চুলোয় জ্বাল দিতে দিতে আঁচলে মুখ ঢেকে গুমড়ে কাঁদতে লাগল।
সন্ধ্যা শুরুর আগে হাঁড়ি কড়াইয়ের আওয়াজে যে গ্রামটা মুখর ছিল প্রতিদিন। প্রদীপের আলোয় আলোয় যে গ্রামের প্রতিটি আঙিনা জ্বলজ্বল করে জ্বলত। সেদিন থেকে সেই গ্রামটা কেমন যেন কবরস্থানের মতো নিস্তব্ধ হয়ে গেল। কেউ আর কুপির আলো জ্বালিয়ে রাখে না ভয়ে। সন্ধ্যা অতিক্রান্ত হতেই সবাই আলো নিভিয়ে ঘরেঘরে জীবনের চিন্তায় মূর্ছা যেতে লাগল।
.
তারপর সত্যি সত্যি পাকিস্তানিরা একদিন গভীর রাতে আমাদের গ্রামে ঢুকে পড়লো। চারদিক চিৎকার, মানুষের দিক্বিদিক ছোটাছুটির আওয়াজ আর আগুনের কুণ্ডলীতে উত্তাল হয়ে গেল নীরব গ্রামটি। বাবা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে গরুগুলোকে গোয়াল থেকে ছেড়ে দিতে গেলেন। আমাকে বুকে আষ্টে মা ঢুকে পড়লো চৌকির তলে আর একনাগাড়ে কলেমা পড়তে লাগল। সাথে আমিও। কিছুক্ষণ পর আমাদের বাড়ির আঙিনায় একটা বিকট শব্দ হলো। শব্দটা কানে পড়তেই আমাকে চৌকির তলে রেখে মা ঘর থেকে বেরিয়েই “আল্লাহ গো…” বলে চিৎকার করে উঠল। তারপর আর কোনো কথা শোনা গেল না। আমার বুকটা দ্রুত বেগে দুরুদুরু করতে লাগল। ভীত মনে চৌকির তল থেকে বেরিয়ে আঙিনায় নজর পড়তেই আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। বাবার বুক ভেদী রক্তের উপর মাথা রেখে মা উপুড় হয়ে পড়ে আছে। আমি “মা আ আ আ…” বলে ডাক দিয়ে মায়ের পিঠের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। মা’র শরীরটা ঝাঁকিয়ে কাঁদতে লাগলাম হাউমাউ করে। মা আর একটা কথাও বলল না। বাবার চোখদুটো খোলা। বুক থেকে তখনও ঝরঝর করে ঝরতেছিল তাজা রক্ত। আমি সেই রক্ত আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলাম আর নিঃশ্বাস ছেড়েছেড়ে কাঁদতে লাগলাম। আশেপাশের কোথাও তখন পাকিস্তানিদের বুট জুতার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। বাবা-মাকে আঙিনায় ফেলে রেখে আমি প্রাণপণে দৌড় দিতে শুরু করলাম। দৌড়ের মধ্যেই ভোর হয়ে গেল। হঠাৎ একটা গাছের নিচে গিয়ে প্রচণ্ড ভয়ে আঁতকে উঠলাম। সেখানে মীনার নগ্ন দেহ পড়ে আছে। উরুর নিচ থেকে রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছিল আর সে পানি পানি বলে কাতরাচ্ছিল। আমি ওর কাছে গিয়ে মীনা মীনা বলে ডাকতে লাগলাম। কিন্তু সে কোনো জবাব দিলো না। শুধু পানি পানি বলেই কাতরাতে কাতরাতে নিঃশ্বাসের কাছে হার মেনে নিলো। বেঁচে থাকার তাগিদে ওরও লাশ ফেলে আবারও দৌড় দিলাম আমি। মনেমনে রনু চাচাকেও খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু কোথাও নেই রনু চাচা। প্রিয় গ্রামটির চেনাজানা রূপ একরাতেই রক্ত আর লাশের ভার কাঁধে নিয়ে যেন পাল্টে গেছে। আস্তানা হয়েছে পাষণ্ড পাকিস্তানিদের।
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহার-অনাহারে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে ছুটতে ছুটতে চোখের সামনে গড়ানো অনেকগুলো মৃত্যু আমাকে শূন্য মানুষ বানিয়ে দিলো। মৃত্যু আর মৃত্যুর যুদ্ধ শেষে একদিন স্বাধীন হলো আমাদের প্রিয় দেশ। আমার ঠাঁই হলো বহুদূরের গ্রামের একটি বাড়িতে। সন্তানহারা সেই মা বাবা আমাকে পরম মমতায় কোলে তুলে নিলেন। আমার নিজ ঠিকানার খবর জানতে চাইলেন। কিন্তু আমার ছলছল চোখদুটো তাঁদের নিরাশ করল, যখন তাঁরা জানলেন, পাকিস্তানিরা আমার বাবা-মার জীবন ছিনিয়ে নিয়েছে। তারপর তাঁদেরই কাছে নিজ সন্তানের মতো স্নেহে আমি যাপন করতে লাগলাম নতুন আরেক জীবন। যুদ্ধের কিছুদিন পর আমি নতুন বাবাকে নিয়ে আমার নিজ গ্রামে গেলাম। গ্রামটা কেমন অদ্ভুত, অপরিচিত হয়ে গেছে। আমাকে গ্রামে দেখে যুদ্ধের পর বেঁচে থাকা মুখগুলো হুমড়ি খেয়ে ছুটে এলো আমার কাছে। অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে একেকজন একেকটা প্রশ্ন করতে লাগল। আমি কোনো উত্তর দিতে পারলাম না। একছুটে গেলাম আমাদের ভিটেমাটিতে। ভিটেবাড়ির আঙিনাটা কেমন খাঁখাঁ করছে। ঘরগুলোর বেড়া খসে পড়ে আছে। আমার অতিপ্রিয় খেলাঘরটা এখনো ঠায় দাঁড়ানো। হুহু করে কেঁদে ওঠা মনটা নিয়ে সেটাতে একবার হাত বুলিয়ে বাবা মার লাশ দুটো আঙিনার যেখানে পড়ে ছিল সেই মাটি আঁকড়ে ধরে “ও মা ও বাবা” বলে চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম। সঙ্গেসঙ্গে বাবা মাটি থেকে তুলে আমাকে বুকে জড়িয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন। আমি পেছন ফিরে ফিরে দেখতে লাগলাম আঙিনাটাকে। পরে রনু চাচার খোঁজ করতে গেলাম তাঁদের বাড়িতে। কিন্তু তাঁর কোনো খোঁজ মিলল না।
.
গ্রাম থেকে ফেরার কদিন পর বাবা আমাকে একটি দিয়াশলাইয়ের ফ্যাক্টরিতে কাজ জুটিয়ে দিলেন। সেখানে দিনে ২ টাকা করে দিতো আমাকে। দুপুরে ১ টাকা দিয়ে এক থালা ভাত খেয়ে রাতে আমার নতুন মাকে বাকী ১ টাকা দিতাম আমি। মা ফ্যাক্টরিতে কাজের পাশাপাশি আমাকে একদিন একটি নৈশ বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন। আরেক মায়ের কোলে নতুন জীবনের জায়গা পেয়ে আমি ভুলে গেলাম আমার সমস্ত বিভীষিকাময় অতীত। ভুলে গেলাম প্রাণপ্রিয় মা, বাবা, রনুচাচা আর সেই খেলাঘরকে।
সময়ের পথ ধরে কেটে গেল অনেকগুলো বছর। আমার বিয়ে হলো। সন্তান হলো। সেই সাথে প্রাইমারি বিদ্যালয়ের ছোট্ট পদের কেরানির চাকরি। আমার নতুন জীবন দানকারী বাবা মারা গিয়েছেন প্রায় ৫ বছর হয়েছে। মা এখন শয্যাশায়ী। হাঁটা চলা করতে পারেন না। নিভুনিভু নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে আছেন পৃথিবীর বুকে। মায়ের মুখের দিকে চেয়ে থাকলে করুণ সেই দিনগুলো আমাকে ব্যথায় জর্জরিত করতে পারে না। আমি নিমিষেই ভুলে যাই আমার আরেক জীবনের কথা। ভুলে যাই, যে জীবন হারিয়েছে প্রিয় মা-বাবাকে। যে জীবন হারিয়েছে রনু চাচার মুষ্টিবদ্ধ আঙুল। যে জীবন হারিয়েছে রক্তনদীতে ভেসে যাওয়া নিষ্পাপ মনের খেলাঘর।
বেঁচে থাকার নির্মম আঘাতে জীবন কখনোই থেমে যায় না, হেরে যায় না। একমুঠো স্বপ্ন নিয়ে জীবনের দিকে তাকিয়েই জীবনটা বেঁচে থাকে সর্বদা। জীবনের চিরন্তন সংজ্ঞায় এই জীবনটা যেন নদীর মতোই প্রবহমান, নিরন্তর অপরাজিত।

প্রতারক last_part

0

প্রতারক last_part
#Roja_islam

রাহুল মাথা নুইয়ে চুপ করে আছে কিছু বলছেনা। হীর ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো!!
.
— কি হলো বলছেন না কেনো??
— রাহুল মুচকি হাসলো তারপর মাথা তুলে বললো। আমি তোমায় ছাদে ফার্স্ট দেখিনি হীর!!
— হীর অবাক হয়ে বললো তো কবে দেখেছেন??
— পূর্ণি পিক দিয়েছিলো যখন আমি লন্ডন ছিলাম তখন পূর্ণি আমায় হিরা আর তার কথা জানায়। আর আমি হিরাকে দেখতে চাই তখন হিরা আর তোমার আলাদা দুইটা পিক দেয় পিকটায় ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলে তুমি!! একটা কুসুন জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিলে পরনে ব্ল্যাক টি শার্ট ছিলো!! উফফ ঘুমের মধ্যে একদম ইনোসেন্ট লাগছিলো!! পুড়াই আইসক্রিম মন চাইছিলো…. ইয়ে মানে খেয়ে ফেলি!! আর হ্যাঁ ঐ পিক দেখেই মনে হয়েছে আমার যে তুমি ঘুম কাতুরে! না হলে এতো আরাম করে কেউ ঘুমোতে পাড়ে??তাই স্লিপিংকুইন ডাকি!
— হীর স্তব্ধ হয়ে চেয়ে আছে রাহুলের দিকে!! মাথায় কিছু প্রশ্ন ও ঘুরপাক খাচ্ছে! তাই জিজ্ঞেস করেই বসলো! রাহুল তুমি আমায় ঐ পিক দেখেই ভালোবাসতে শুরু করেছিলে তাই না???
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


রাহুল হীরের কথার উত্তর দিলোনা। হীর তার উত্তর পেয়ে গেলো চট করে। এটাও বুঝলো কি লুকিয়েছে রাহুল। ঠোঁটে হাসি ফুটলো হীরের।রাহুল হীর ওভাবে ই দাঁড়িয়ে রইলো পাশাপাশি বেশ কিছুক্ষণ। সন্ধে হয়ে গেছে আশপাশ অন্ধকার ছেয়ে গেছে নিরিবিলি পরিবেশ কিছুক্ষণ পড় পড় ধমকা বাতাশ গা ছুঁয়ে দিচ্ছে দু জনের। রাহুল হীর উপর থেকে নিচ টা দেখে উপভোগ করছে।পাহারের উপর থেকে নিচ টা বরাবরি আরো বেশী সুন্দর। দূরে দূরে আলো দেখা যাচ্ছে যেটা নিভু নিভু করে জ্বলছে। আর রাস্তার পাশের টঙ দোকান্টায় আড্ডা বসেছে। মুরুব্বিরা চা – পান খেতে ব্যস্ত। এসব দেখার মাঝেও দু জনের মনে অনেক কিছু চলছে। যা ধরা ছোঁয়া যায় না বুঝা যায় না!! চেষ্টা করলে সামনের ব্যক্তি বুঝতে পারে!! কিন্তু তার জন্যেও গভীর ভালোবাসার প্রয়জোন। হীর মনে মনে অনেক কথা আউরাচ্ছে!! কিছুক্ষণ বাদে হীর বলে উঠলো!
.
— রাহুল!!!
— রাহুল মুচকি হেসে বললো। জানি কি বলবে তুমি!!
— রাহুলের এই কথায় হীর শক খেলো! নিজেকে সামলে বললো! তাও আমি বলতে চাই!!
— রাহুল হীরকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো তারপর বললো। বল শুনছি!!
— হীর ঢোগ গিলে বললো। আমার মনে পড়ে শিহাবকে!! ঐ টাকে মিস করা বলে নাকি অন্য কিছু জানিনা কিন্তু মনে পড়ে আমার তার কথা!! না চাইলেও মাঝেমধ্যে বুঝিনা কেনো তার কথা আমার মনে পড়ে! এমন কেনো হয় রাহুল! আমি দুঃখিত আমি……!
— হীর আবার??? আমায় জবাব কেনো দিবে তুমি হোয়ায়??কেনো দুঃখিত বলছো?? আমি হতে পাড়ি তোমার হবু বর বাট। তুমি কাকে মিস করবে বা করবেনা সেটা সম্পূর্ণ তোমার ব্যাপার তোমার পাস্ট থাকতেই পারে তাই না??আমারো ছিলো হয় ত তার জন্য এভাবে বলার মানে হয়না ? কিন্তু হ্যাঁ তুমি যদি জিজ্ঞেস করো আমায় কেনো তোমার শিহাবের কথা মনে পড়ে? তাহলে আমি বলবো এটা স্বাভাবিক হীর!! কারণ যেমনি ছিলো এক্টা সম্পর্ক ছিলো তোমার শিহাবের সাথে! শিহাবের ভালোবাসায় খাদ থাকলেও তোমার ভালোবাসায় খাদ ছিলোনা। তুমি সত্যি শিহাব কে ভালোবেসে ছিলে! আর শিহাব তোমার প্রথম প্রেম ছিলো। প্রথম প্রেম, আবেগ মিশ্রিত থাকে সহজে ভুলা যায় না বুঝেছ?? তাই তোমার শিহাব কে মনে পড়া মিস করা স্বাভাবিক হীর। ডোন্ট সরি ফর দ্যাট!!
— হু ঠিক বলেছ!!
— হু বলে হীরকে জরিয়ে ধরে পিছন থেকে রাহুল!!
— আচ্ছা রাহুল তুমি আমায় এখনো বললেনা!! লনি কই??
— হস্পিটাল সে কমায় ছিলো ৮ মাস। ভালো হলে বাড়ী পাঠিয়ে দেই। ঐ ফাজিল টাকে মেরে ফেলতে পারলে ভালো লাগতো
— হীর মুচকি হেসে বললো। হু!! আচ্ছা তোমার ভয় হয় না আমি যদি শিহাবের কাছে আবার চলে যাই তো???
.
রাহুলের মুড মুহূর্তেই বিগ্রে গেলো এক ঝটকায় হীরে ছেড়ে দাঁড়ালো। হীর দ্রুত রাহুলের দিকে তাকালো! তাকিয়্রেই ঢোগ গিললো! কারণ রাহুল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে হীরকে গিলে খাচ্ছে!! রাহুল হীরের আর এক্টু কাছে গিয়ে হিসহিসিয়ে বললো।
.
— তাহলে মেরে ফেলবো তোমায়! আমি এতো ভালো ও নই যতো টা তুমি বা সবাই ভাবে!! মাইন্ড ইট!!
.
বলেই রাহুল তরতর করে পাহাড় থেকে নিচে নামতে লাগলো! হীরকে ফেলে রেখেই! হীর বুকে একটা ফু দিয়ে চেঁচিয়ে বললো!
.
— আরে আমায় নিয়ে তো যাও!! ভূত নিয়ে যাবে আমায়!! উফফ এতো রাগ কেনো? আল্লাহ জানে বাকি জীবন কি আছে কপালে!!
.
হীর এসব বলতে বলতে রাহুলের পিছে দৌড়ে নামছে। রাহুলের কোনো দিকে পাত্তা নেই। শিহাব এর কথা লনির কথা রাহুল মেনে নিলেও। হীর শিহাবের কাছে চলে যাবে এই কথা এক্টু ও পছন্দ হয়নি রাহুলের। নিচে নেমে রিকশা না পেয়ে সেই রাতে দুজনের হেটে বাড়ী ফিরতে হয়! আর সারা রাস্তা রাহুল গাল ফুলিয়ে ছিলো!! হীর অনেক চেষ্টা করেও রাগ ভাঙাতে পারেনি রাহুলের!!
রাহুল হীরকে বাড়ী পৌঁছে দিয়ে সোজা নিজের বাসায় রৌনা দেয় কোনো কথা বলার সুযোগ দেয় না হীরকে!! হীর নিজের মাথায় চাপড় মারে কেনো সে ঐ কথা বলতে গেলো!!এখন ঠেলা বুঝো!
.
.
.
শিহাব জব লেটার হাতে বসে আছে! চোখে হাল্কা পানি চিকচিক করছে শিহাবের! হাতের লেটার টা শুধু একটা কাগজ নয় অনেক কিছু তার জন্য!! তিন্টে বছর কষ্টের ফল তার!!
.
তিন বছর আগে শিহাব বাসা থেকে বেরিয়ে নিতুর বাসায় যায়। অখানে ২ সাপ্তাহ থেকে নিতুকে সুস্থ করে নিয়ে নিজে ভাড়া বাসায় উঠে।বন্ধুর সাহায্যে পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব আর টিউশন নিয়ে সে তার পড়াশোনা কমপ্লিট করে!! এবং সংসার চালায়!! অনেক কষ্ট গিয়েছে প্রথম বছর তার!! মাস্টারস কমপ্লিট করে ২ বছর একটা জব এর জন্য ট্রায় করতে থাকে শিহাব। কিন্তু হচ্ছিলো না কোনো জব!! তাতে কোনো প্রবলেম ছিলোনা শিহাবের সে ভালোই চলছিলো টিউশন আর ঐ ছোট খাটো জব টা নিয়ে।
.
এই তিন বছর শিহাব তার মার সাথে কথা বলেছে শুধু কিন্তু একবারের জন্যেও দেখা করে নি তাদের সাথে! তার মা ফোন দিলেই শুধু কাঁদে। বাবাও বলে তাকে ফিরে যেতে তাও শিহাব ধৈর্য ধরছিলো!! আর আজ সে সফল ও হয়েছে অনেকটা। আজ রাতে বাসায় এলেই নিতু লেটার টা দেয় তাকে। শিহাবের খুশী দেখে কে!! শিহাব কিচেনে গেলো লেটার হাতে!!
নিতু চা করছে শিহাবের জন্য!! শিহাব পিছনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো নিতুকে!!
.
— তুমি খুশী হোও নি????
— নিতু মলিন হেসে বললো। আমি অনেক খুশী শিহাব তোমার জন্য!!
— তোমার জন্য মানে বলো আমাদের জন্য!
— হু!!
— তুমি এতো কম কথা এখন কিভাবে বলো?? তুমি কি পুড়নো সব ভুলবে না কোন দিন???
— চাইলেই সব পাড়া যায় না শিহাব!!
— তিন বছর অনেক বুঝিয়েছি তোমায় এবার আমি ক্লান্ত নিতু!! প্লিজ সব ভুলে যাও!!
— হু নাও চা খাও!!
.
শিহাব আর কিছু বললোনা। নিতুর দেওয়া চা নিয়ে সে চলে গেলো মন খারাপ করে!! এখনের নিতু আর আগের নিতুর মধ্যে আকাশ পাথাল ডিফারেন্স!! নিতুর মধ্যে আগের কোন সভাব নেই!! আগেও যে নিতু কোনদিন ঐ রকম হিংসুটে ছিলো কেউ এখন নিতুকে দেখে বিশ্বাস ও করবেনা সেটা! ! নিতু ঐ সুইসাইড করার দিন থেকে একদম চুপচাপ হয়ে গেছে ২ সাপ্তাহ শিহাব যখন নিতুর বাড়ী ছিলো প্রতিদিন শিহাবের কাছে ক্ষমা চাইতো নিতু!! শিহাব অনেক বুঝায় নিতুকে যে সে ক্ষমা করে দিয়েছে তাকে!! কিন্তু তাও নিতু আস্তে আস্তে আরো চুপচাপ হতে শুরু করে!! প্রায় টাইম রাতে ঘুম থেকে উঠে কান্নাকাটি করে শিহাবের কাছে ক্ষমা চাইতো!! নিতুর এই ক্ষমা চাওয়া নিয়ে শিহাব প্রায় বিরক্ত হয়েগিয়েছিলো!! কিন্তু নিতুর কোন পরিবর্তন নেই সে দিনদিন আরো অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে!! একা থাকতেই ভালোবাসে সে!! শিহাবের সাথেও প্রয়জোন ছাড়া কথা বলেনা! মাঝেমধ্যে নামাজে বসে একা একা কাঁদে!! রাতে নিতু শিহাব খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে!! সকালে ঘুম ভাঙে দরজা ধাক্কানোর শব্দে! শিহাব উঠে দরজা খুলতে যায়! নিতু হুরমুরিয়ে উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে!!সে এখন বাইরের মানুষের সামনে যায়না!!
শিহাব দরজা খুলে দেখে রাহুল দাঁড়িয়ে আছে পকেটে দু হাত ভরে!! শিহাব রাহুল কে দেখে চমকে যায় প্রথম তার পর বলে উঠে??
.
— তুমি??
— রাহুল হাল্কা হেসে বলে উঠে। কেনো আসতে মানা আছে আমার???
— না না আসো ভিতরে এসো!!
.
শিহাব ভিতরে ঢুকে রাহুল কে ভিতরে ঢুকতে জায়গা করে দেয়। রাহুল ঢুকে শিহাবের ঘর টায় চোখ বুলায়! ছোট একটা ঘর পাশেই বারান্দার মত ওখানেই কিচেন ওয়াশরুম বুঝা যাচ্ছে!! ঘরে তেমন কিছু বলার মতন নেই! কোন রকম যা দরকার তাই আছে! শিহাব মলিন স্বরে বলে উঠে!!
.
— দুঃখিত তেমন কিছুই নেই গরিবের ঘরে নাও এই ভাঙা চেয়ার টাতেই বসো!! বলেই একটা চেয়ার এগিয়ে দেয় শিহাব!
— রাহুল চেয়ারে বসে বলে উঠে!! তুমি গরিব নও মজা করোনা!!
— শিহাব হাল্কা হাসে। হ্যাঁ গরিব নই কিন্তু নিজেকে গরছি এই আর কি!!
— নিজেকে গড়ার প্রয়জোন আছে শিহাব!!তুমি যা করছ ভালো করছ!! কষ্ট হলেও ভালো কিছু পাবে আশা করি!!
— শিহাব মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে!! কিছু কথা বলা হয়নি ঐদিন। তোমাকে ধন্যবাদ রাহুল ঐ ক্রিমিনাল টাকে ধরতে সাহায্য করার জন্য!! তোমার সাহায্য ছাড়া নিতুকে বাঁচাতে পাড়তাম না হয়ত ছেলেটাকে ধরা কঠিন ছিলো!!
— ধন্যবাদ দিয়ে ছোট কর না!ঐটা আমার কর্তব্য ছিলো মানুষ হিসেবে তোমার পাশে দাঁড়ানো আমি তাই করেছি!!
— ঠিক আছে তা হঠাৎ আমার কাছে কি মনে করে এলে?? হীর ভালো আছে??
— রাহুল হাল্কা হাসলো!! আমার কাছে আছে তো ভালোই থাকবে!!
— তা ঠিক তুমি মানুষ টাই ভালো!!
— আচ্ছা বাদ দাও!! ইনভাইটেশন কার্ড দিতে এসেছি তোমাকে আমার আর হীরের বিয়ের!!
— শিহাব উচ্ছাসিত মুখে বললো। এ তো ভালো কথা!! কবে করছ এই শুভ কাজ??
— রাহুল তার পিছনের পকেট থেকে একটা ইনভেনশনস কার্ড শিহাবের হাতে দিলো। ৪ দিন পড়!! শুধু আমাদের না হিরা আর পূর্ণি আমার বোনের ও বিয়ে আমরা এক সাথে বিয়ে করছি!!
— এতো বিশাল ব্যাপার কিন্তু আমি আর নিতু যেতে পাড়বো না হয়ত রাহুল!!
— রাহুল ভ্রু কুচকে বললো!! কেনো??
— হীর ওর সামনে কোনদিন যেতে আমায় নিষেধ করেছিলো!! ওর বিয়ে তে কি করে যাই??
— আমি ওর হবু বর আমি বলছি তুমি যেও ও খুশী হবে!! যেও না তুমি যাবে কথা দাও আমায় ??
— শিহাব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো। আচ্ছা আমি যাবো নিতুকে নিয়ে!!
— রাহুল এবার হেসে বললো!! আমি খুশী হলাম আজ তাহলে আশি!!
— চা ত খেয়ে যাও আমি খুশী হব!!
— রাহুল না করলোনা। ঠিক আছে!!
.
শিহাব এর বাসায় চা করে বিদায় নিলো রাহুল। রাহুল অবাক হলো নিতু তার সামনে আসেনি একবারের জন্য ও না!! মানুষ কত বদলে যায় রাহুল এই মেয়েটাকে কত নোংরা ভাবেও দেখেছে অথচ আজ তার কি পরিবর্তন। শিহাবের ব্যাবহার এ ও রাহুল অবাক!! শিহাব যখন নিতুর ঐ বয় ফ্রেন্ড কে হন্য হয়েও খুঁজে ও পাচ্ছিলো না কিন্তু ছেলেটার ডিস্টার্ব এ নিতু পাগল হয়ে যাচ্ছিলো তখন রাহুল তাকে হেল্প করে!! খুঁজে বের করতে এবং সেই ছেলে এখন জেলে আছে!!
.
.
.
আজ রাহুল হীর পূর্ণি হিরার বিয়ে!! কাল রাতে দুই বাড়ীতেই হৈ হলৌ ওর সাথে গায়ে হলুদ হয়েছে! হিরার বাসায় সবাই হিরা আর হীর কে হলুদ ছুঁইয়েছে আর রাহুলের বাসায় রাহুল আর পূর্ণিকে!! ভাই বোন এর এভাবে হলুদ করায় সবাই আনন্দ ধীগুন নিয়েছে। ব্যাপার টা নতুন ছিলো সবার জন্য ! আজ বিয়ে!! বিয়ে সেন্টার এ হবে চার জনের এক সাথে!!
.
সারা রাত সবাই হলুদে নাচ গান করেছে!! আবার ৬ টাই বিয়ের আয়জন এ দৌড়া দৌড়ি শুরু। হীর তার ঘরে বসে কাঁদছে তার ফোন কানে!!
.
— এই কান্না বন্ধ কর তুমি!!
— হীর কেঁদে কেঁদে বললো!! তুমি কি আমাদের বিয়ের দিনের রাগ করে থাকবে!! কি এমন বলেছি আমি!!
— রাহুল রেগেই বললো!! সেটা তুমিই জানো!!
— এ্যায়ায়ায়ায়ায়া ঐটা ৬ দিন আগে বলেছি এখনো মনে রাখতে হয়?? সরি তো বলছি আমি তাইনা!!
— সরি বললে হবে না আমার কিছু চাই???
— কি চাই বলেই নাক টানলো হীর!! দেখো যা চাই দেবো ৬ দিন ধরে কষ্ট পাচ্ছি!! নিজের হলুদেও কেঁদেছি একটু ও মজা করতে পারিনি!! আর আজ বিদায়ে এমনি কাঁদবো!! এখন এক্টু শান্তি চাই বুঝেছ???
— একটা ফ্লাইং কিস দাও
— এ্যায়ায়া নিষ্ঠুর ছেলে এটা আগে বললে কি হত আমি দেখিস বিয়ের পড় তোকে ঝালাবো!!
— বেবি আমার রোমেন্টিক টর্চার এর থেকে তুমি বাঁচলে তো আমায় জ্বালাবে!! তিন বছর ধরে ওয়েট করছি আচ্ছা বেবি কখন রাত হবে বলো তো আমি আর ওয়েট করতে পারছিনা ??
— ছিঃ লুচু আমি রাখছি লাগবে না ক্ষমা!!
.
বলেই হীর ফোন কেটে করে দেয়!! রাহুল হেসে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে!!
.
— ফোন কেটে কই পালাবা বেবি আসতে আমারি কাছে হবে!!
.
.
দুপুর ১টায় হীর, পূর্ণি পার্লার থেকে সেন্টার পৌঁছে যায়!! হীর শুধু সেন্টার টায় এক বার চোখ বুলায় তারপর হাল্কা হেসে ভিতরে ঢুকে পূর্ণির হাত ধরে পূর্ণি তো মহা খুশী। আজ তার সপ্নের দিন আজ পুরোপুরি হিরা কে নিজের করে পাবে সে ভাবা যায়!! দু জনকে নিয়ে তাদের কাজিন ফ্রেন্ডসরা ষ্টেজ এ বসায়!! বসাতেই একে একে সবাই বৌদের সাথে ছবি তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে!! হীর পূর্ণি দুজনি তাদের হবু বরকে খুঁজছে!! কিন্তু তাদের দেখতে পাচ্ছে না!!পূর্ণি হীরকে বললো!!
.
— ভাইয়ারা কই দেখছিনা কেনো????
— আমি নিজেও খুজছি!!
— ভালোলাগেনা!! যার জন্য সং সেজে বসে আছি তারি খবর নাই।
— হাহা কি কথা!!
— তুই কি বুঝবি দুুঃখ!!
.
একটু পড় পূর্ণি দেখল!! রাহুল, হিরা আর নিতু শিহাব অদের দিকেই আসছে একসাথে!! পূর্ণির মুখের হাসি শিহাব নিতুকে দেখে চলে গেলো।পূর্ণি চট করে হীরের দিকে তাকালো পূর্ণি বিস্মিত হলো হীরের দিকে তাকিয়ে কারণ হীর শিহাব আর নিতুর দিকে তাকিয়েই আছে হেসে!! পূর্ণি এটা মোটেই আসা করেনি সে ভেবেছিলো হীর হয়ত মন খারাপ করবে কিন্তু হীরকে পূর্ণির খুশীই দেখাচ্ছে। যাইহোক পূর্ণি স্বস্তি পেলো!! বিয়ের দিন মন মানিল্য হোক পূর্ণি চায়না!!
.
রাহুল হিরা তাদের হবু বৌ দের বিস্মিত চোখে দেখছে!! হীর পূর্ণিকে দুই টা পরির মত লাগছে!! রাহুলের পছন্দের লেহেঙ্গায়!! হ্যাঁ রাহুল হীরের চাওয়াই পূর্ণ করেছে। ভারী লেহেঙ্গা আর চমৎকার সাজে এ এক অন্য হীরকে দেখছে রাহুল। হিরার ও সেম অবস্থা!
রাহুল হিরা স্টেজ এ উঠে হীর পূর্ণির পাশে দাঁড়ায়!! রাহুল হীরের কানের কাছে গিয়ে বলে উঠে!!
.
— পাগল হয়ে যাবো আমি পাগল হয়ে যাবো!!
— অসভ্য গুণ্ডা!!
— তোমারি!! গর্জিয়াছ লাগছে মাই স্লিপিংকুইন!!
— তোমাকেও!!
.
— পূর্ণি হিরার কে ফিসফিস করে বললো! হট লাগছে শেরওয়ানীতে।
— হিরা বিস্মিত চেয়ে বললো। কিহহ??
— চুপ আস্তে!!
.
হিরা রাহুল সেইম শেরওয়ানী পরেছে ব্ল্যাক কালার দুজনেই ব্ল্যাফকে দারুণ লাগছে!!সাথে মেচিং ঘড়ি, জুতো! শিহাব অনেক টা খুশী মুখেই স্টেযে যায় হীরের সাথে কথা বলতে। কিন্তু নিতু লজ্জায় মাথাই তুলে তাকাতে পারছেনা হীরের দিকে!! নিতু এখানে আসতেই চায় নি। শিহাব রাহুলকে কথা দিয়েছে তাই জোড় করেই নিতুকে নিয়ে এসেছে। শিহাব নিতু হাত ধরেই হীরের কাছে গিয়ে বলে উঠে!
.
— কংগ্রেস হীর!!
— ধন্যবাদ শিহাব ভালো আছো?
— দেখতেই পাচ্ছো!!
— হীর এবার নিতুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে। নিতু আমার সাথে কথা বলবিনা!!
.
নিতু এবার সবার সামনেই ঝরঝর করে কেঁদে দেয় হীরের হাত ধরে!! একদিন এই সেন্টারই!! হীর ও সবার সামনে কেঁদে দিয়েছিলো!! হ্যাঁ এটা সেই সেন্টার যেখানে নিতু আর শিহাবের বিয়ে হয়েছিলো। সে দিন হীর কেঁদেছিলো আজ নিতু কাদছে।যেই মেয়েটা হীরের কাঁদার কারণ!! ঐদিন হীরের পাশে কেউ ছিলোনা ইভেন তার ভালোবাসার মানুষটাও না। কিন্তু আজ নিতুর কাধে হীর হাত রেখে নিতুর পাশে দাঁড়ায়।নিতুকে আরো বুঝতে পারে নিতু কত বড় অন্যায় করেছে হীরের সাথে। হীর কান্না করা নিতুর হাত ধরে একটা ফাঁকা রুমে নিয়ে যায়!!
.
শিহাব অবাক হয়ে তাকিয়ে রয় তাদের যাওয়ার দিকে শিহাব ভাবেনি হীর এমন কিছু করবে এতকিছুর পড়েও!! রাহুল পূর্ণি মুচকি হাসে তবে হিরার মুখটা একটু কালো!! রাহুল শিহাব কে কানেকানে বললো।
.
— হিরার কাছে সরি বলতে পারো!!
— শিহাব আকাশ থেকে পড়ার মতন ভাবে বললো। তুমি আমাদের এতো হেল্প কেনো করছ???
— কারণ তোমাদের জন্যই আমি হীরকে পেয়েছি চাই না তোমরা খারাপ থাকো সব ভুলরি ক্ষমা আছে!!
— শিহাব হেসে বললো। হীর সত্যি ভাগ্যবতী! তোমাকে পেয়ে!!
.
রাহুল হাসলো শিহাব হিরার কাছে ক্ষমা চাইলো তার বোন কে কষ্ট দেওয়ায়।পূর্ণি চোখের ইশারায় বুঝায় ক্ষমা করে দিতে সেও ভাবে। হীরই অদের ক্ষমা করে দিলো সে আর ক্ষমা না করে কি করবে সেও ক্ষমা করে দিলো। এদিকে হীর রেস্ট রুমে আসতেই নিতু হীরের পা ধরে বসে পড়ে মাথা নুইয়ে!!
.
— হীর। আমায় ক্ষমা কর প্লিজ আমার জন্য তোকে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। বিশ্বাস কর এই তিন বছর আমি তার শাস্তি পেয়েছি। আমি একদিন ও ঘুমুতে পারিনি তোর কাছে ক্ষমা না চেয়ে!!
— হীর প্রায় চিৎকার করে বললো। নিতু উঠ দাড়া তুই!! বলে নিজেই টেনে উঠায় নিতুকে তারপর নিতুর হাত ধরে বলে উঠে। দেখ আমি তোকে সেই কবেই ক্ষমা করে দিয়েছি!!যেখানে শিহাবকে ক্ষমা করেছি তোকে করবোনা??
— তুই সত্যি বলছিস হীর?? আমায় ক্ষমা করেছিস তুই??
— হ্যাঁ নিতু আমি ক্ষমা করেছি সেই কবেই কাদিস না প্লিজ!!
— তুই ওতো ভালো কেনো হীর কেনো??
— কান্না বন্ধ কর। তোর জন্যই একটা সঠিক মানুষ আমি আমার জীবনে পেয়েছি। না হলে হারিয়ে ফেলতাম তাকে!!
— আমি দোয়া করি হীর তুই অনেক ভালো থাক। তুই জানিস না তুই আমায় ক্ষ্মা করেছিস শুনে আমার মন থেকে কত বড় পাথর নেমেছে আজ।
— আমি সব ভুলে গিয়েছি আজকে পড় আমি আর ভুলেও কিছু মনে করতে চাইনা আমার অতীত। তুই ও ভুলে যা শিহাব ভালো ছেলে তুই ভালো থাকবি!!
.
.
নিতু মাথা নাড়ায়! অনেক হাসি মজা খাওয়া দাওয়া মেহমান সেল্ফির মাঝেই বাকি সময় টা পাড় হয়ে যায়!! বিয়ে পড়ানো সময় চলে আসে!! চার জনকে এক সাথে বসানো হয়। মাঝ খানে পর্দা দিয়ে এক পাশে ছেলে এক পাশে মেয়ে! বিয়ে পড়ানো শুরু হয়। প্রথমে রাহুলের হীরের বিয়ে পড়ানো হয়। কাজী রাহুল কে কবুল বলতে বললে। রাহুল এক নিশ্বাস এ বলে দেয়।
.
— কবুল, কবুল, কবুল!!
— আস্তে দস্ত কাজী পালাচ্ছেনা !! নিহাদ বলে উঠে!!
.
সবাই হেসে দেয় নিহাদের কথায়। রাহুলের তাতে কোন রিয়্যাকশন বুঝা গেলো না সে তার মতন বসে রইলো হীর লজ্জা পেলো রাহুলের কাজে। তারপর হীর কে কাজী কবুল বলতে বললে সে ধীরেসুস্থে বলে দেয়। অদের টা শেষ হলে হিরা আর পূর্ণির বিয়ে পড়ানো হয় হিরা কবুল ধীরেসুস্থেই বলে কিন্তু পূর্ণি ভাইয়ের মতন গরগর করে বলে ফেলে। এই বার হাসির রোল পড়ে যায়!! সবাই এই বলে হেসে উঠে ভাই বোন বিয়ের পাগল। রাহুল নিজেই হেসে ফেলে বোনের কাজে!! নিহাদ গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। হীর হিরাও হাসছে। পূর্ণি লজ্জায় শেষ নিজের বোকামি তে। নিতু এসব দেখে না হেসে পারেনা। শিহাব মুদ্ধ হয়েই আড়ালে থেকে দেখে নিতুর হাসি। কারণ এভাবে লাস্ট অদের বিয়ের আগেই নিতুকে হাসতে দেখেছিলো শিহাব।
.
অবশেষে বিদায়ের পালা আসে বিদায় টা অদের কষ্টের হয়। কারন হীর যাবে রাহুলের বাড়ী। আর পূর্ণি যাবে হিরার। তাই কষ্ট টা দুই পরিবারের। দুই ঘরি একদিকে খালি হবে একদিকে ভরবে!! পূর্ণি ভাইকে মাকে ধরে কেদে দেয়। হীর ও হিরা তার মাকে ধরে কাদছে। বোনের বিদায়ে দুই ভাইয়ের চোখেই পানি!! এই প্রথম বিয়েতে বোধহয় বর রাও কাঁদছে যদিও কান্নার কারণ টা বোন হারানোর জন্য!!
গাড়ীতে উঠার আগে। হিরা জরিয়ে ধরে রাহুলকে বলে উঠে।
.
— পূর্ণি ভালো থাকবে আমার কাছে ভাইয়া হীরকে দেখেন!!
— তুমি সব জানো!!
— হ্যাঁ জানি হীর অনেক ভালো থাকবে আপনার কাছে !! আশি??
.
অবশেষ এ দুই পরিবারি মন খারাপ করে গাড়ীতে উঠে। উদ্দেশ্য বাড়ী!! দুই গাড়ী দুই পথে যাবে!! হীর কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে গাড়ীতে। ঐ দিকে পূর্ণির ও একি অবস্থা!হিরা পূর্ণিকে জরিয়ে ধরে শান্তনা দেয়!
.
— পূর্ণি কেঁদো না প্লিজ আমি মা আছি তো রাহুল ভাইয়া রোজ আসবে বাসায়!!
— পূর্ণি নাক টেনে বললো। সত্যি আসবে?? আমি কি করে থাকবো ভাইয়াকে ছাড়া??
— বলছিতো আমি মা আছি তো আর ভাইয়া রোজ আসবে!! কেঁদো না!!
— আচ্ছা!!
.
.
.
হীরকে রাহুল কোলে করে গাড়ী থেকে নামায়!!মেয়েটা সেন্সলেস হয়ে গেছে অতিরিক্ত কান্না করায়!! রাহুল কোলে করেই নিজের রুমে নিয়ে শুইয়ে দেয় হীরকে ফুলে মৌ মৌ করা রুমে!! রাহুল বাইরে আসে তার মাকে দেখতে!!
.
পূর্ণি কে হিরার কাজিনরা হিরার ঘরে বসিয়ে রেখে গেছে। রাত বাজে ১ টা। পূর্ণি ঘোমটা টেনে বসে আছে। এভাবে সিনেমেটিক ভাবে বসে থাকতে তার নিজেরি হাসি পাচ্ছে কিন্তু সে এভাবেই বসে থাকবে হিরা এতো লেট করছে আসতে তার শাস্তিও দিবে!! ভেবেই পৈশাচীক হাসি দিলো পূর্ণি!!!
.
এদিকে ঘুম টা হাল্কা হওয়ায়!! নাকে কড়া ফুলের গন্ধে যাওয়ায় ঘুম ভেঙে গেলো হীরের!! হঠাৎ ই ধুপ করে উঠে বসলো সে!! আশেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে!! কই আছে সে?? রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো গলাপ ফুলে ঘরটা ভর্তি প্রায়!! এটা দেখেই সব মনে পড়ে গেলো হীরের!! উঠে দাঁড়ালো হীর খুঁজতে লাগলো রাহুল কে!! বারান্দায় গিয়ে দেখলো রাহুল বসে আছে ব্যাতের সোফায়!! হীর বুঝলো রাহুলের মন খারাপ বোনের জন্য। হীর রাহুল কে টেনে রুমে এনে বললো নামাজ পরবো অজু করে আসুন। রাহুল মাথা নারলো!! ফ্রেস হয়ে নামাজ পরে নিলো দুজন। রাহুল বারান্দায় গেলো হীরকে চেঞ্জ করতে বলে। হীর চেঞ্জ করে একটা কালো শাড়ী পড়ে বারান্দায় গেলো রাহুল আগের মত মন খারাপ করে বসে আছে সোফায়।
হীর গিয়ে ধপ করে রাহুলের কোলে বসে পড়লো!! রাহুল চমকে গিয়ে বললো।
.
— হয়ে গেছে চেঞ্জ চলো ঘুমাই? তোমায় টায়ার্ড লাগছে?
— বাসর ঘরে ঘুমাবো সারারাত পড়ে পড়ে???
— রাহুল দুষ্টু হেসে বললো!! তো কি করবে??
— আদর নিবো হিহি!!
— রাহুল ভ্রু কুঁচকে বললো!! এতো ভূতের মুখে রামনাম হইছে কি তোমার কিছু খাও নি তো তুমি??
— কি খাবো ছাড়ুন এসব কথা আমি আদর চাই! এখুনি???
— কিহহ?? সত্যি তুমি বোধহয় ভাই আর মাকে ছেড়ে আসার শোক এ পাগল হয়ে গেছো হীর চলো ঘুমাবে!!
— চুপ আমি পাগল হই নি!!
— তাহলে…….
.
রাহুল আর কিছু বলার আগে হীর নিজেই রাহুলের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে রাহুল ভীষণ শক খায় প্রথম সে ভাবে নি হীর এটা করবে!! কিন্তু বেশীক্ষণ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা রাহুল নিজেও হীরের ঘাড়ে এক হাত অন্য হাত হীরের কমোরে রেখে পাগলে মতন কিস করতে থাকে হীরকে।রাহুল তৃষ্ণার্তর মতো আদর করছে তার বৌকে। অদের বিবাহিত জীবনের শুরুটা এভাবেই হয়ে যায়!
.
.
এদিকে হিরা রুমে এসে পূর্ণি ঘোমটা তুলতেই পূর্ণি ঝাড়ি দিয়ে উঠে!!
.
— এই কই ছিলে তুমি এতো লেইট কেনো??
— আসলে ….
— চুপ একদম চুপ চাপ দাড়াও!!
.
হিরা চুপ চাপ দাঁড়ায়! পূর্ণি মাথা নুইয়ে হিরার পা ধরে সালাম করে! তারপর বলে উঠে।
.
— যাও খাবার এনে দাও। খিদে পাইছে!!
— হিরা চোখ বড় বড় করে বলে উঠে!! তুমি বাসর রাতেও খাবা??
— আজব তো না খেলে বাঁচবো কেমনে?? যাও খাবার আনো বাসর ঘরে খেতে মানা নেই!!
— হিরা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে!! ওয়েট!!
— পূর্ণি ঠোঁট চেপে হেসে বলে। আচ্ছা!!
.
পূর্ণি খাচ্ছে মন প্রান দিয়েই খাচ্ছে। হিরা অসহায় চোখে পূর্ণির খাওয়া দেখছে। তার বাসর ঘরের সপ্নে এই মেয়ে খাবার ঢেলে দিছে। ঐদিকে পূর্ণি মনে মনে বলছে। বাসর ঘরে ভালোবাসা? ৫ বছর ঘুরছি পাত্তা দেস নি এখন বোঝ কেমন লাগে। সুধে আসলে আমাকে ঘুরানোর কষ্ট দেওয়ার বিচার করে তারপর বাসর। বেচারা হিরা শেষ। পূর্ণি খাওয়া সেরে। হিরাকে ঝাড়িঝুড়ি দিয়ে নামায় আদায় করে দু রাকাত নফল। তারপর গিয়ে শুইয়ে পড়ে সে। হিরা ভোতা মুখে চেয়ে থাকে পূর্ণির দিকে পূর্ণি লুকিয়ে হেসেই যাচ্ছে!!
.
.
শিহাব নিতু তাদের ছোট বারান্দায় বসে আছে চা হাতে!! সত্যি বলতে তারা রাহুল হীরের জন্য খুশী আশ্চর্য হলো হীরের সাথে কথা বলার পড় থেকে আগের মতন হাসি খুশী নিতুকে দেখতে পারছে শিহাব।কিন্তু আগের মতন হিংসা টা আর মনে হয় নেই নিতুর মধ্যে এতুটুকুই হবে। শিহাবের আর কিছু চায় না সে!! নিতু আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে শিহাব নিতুর কে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বলে উঠে।
.
— নিতু??
— হুম!!
— আমরাও একদিন খুব ভালো থাকবো দেখো মা বাবা ও তোমায় মেনে নিবে!!
— হয়ত!! শিহাব??
— বলো??
— তোমার হীরের কথা মনে পড়ে না তুমি তো ভালোবাসতে হীরকে আমি জানি সেটা!!
— ভালোবাসতাম এখন আমার সব তুমি!! হ্যাঁ হীরকে আমি ভালোবাসতাম। কিন্তু এখন সেটা একটা অতীত আর কিছু নয়। এখন আমি আমার স্ত্রী কে ভালোবাসতে চাই। আর কিছু নয়। আর যাকে আমি ভালোবাসতাম অতীতে। আমি তার কাছে একটা প্রতারক ছাড়া আর কিছু নয়।
.
নিতু কেঁদে জরিয়ে ধরে শিহাবকে! শুরু হয় তাদের ও আরেক নতুন জীবন! মানুষ মাত্রাই ভুল আর ভুল থেকে অনেক অনেক শিক্ষা আমরা পাই বাকি জীবন টা সুন্দর করে সাজাতে সঠিক মানুষটাকে চিনতে। হীর তার অতীতের করা ভুল থেকে শিক্ষা পেয়েছে! মা বাবা ভাইকে কষ্ট দিয়ে ভালোবেসে সুখী হওয়া কষ্ট তাদের থেকে কেউ বড় নয় আমাদের জীবনে।শিহাব হীরকে ভালোবাসতো ৫ বছর ৬ বছর ১০ বছর কিন্তু বাবা মা ভাই তার জন্ম হওয়ার পড় থেকে তাকে ভালোবাসে। তাদের না জানিয়ে শিহাবের সাথে সম্পর্ক করলেও হীর। ২য় বার হীর ভুল করেনি। সে তার ভাইয়ার কথা শুনেছে শীহাবের জীবনে পা বাড়ায়নি! এতে শিহাব ও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। নিতু তার ভুলে মাসুল দিয়েছে!! আর সব কিছুর মাঝে হীর তার জীবনে সঠিক মানুষটিকে পেয়েছে!! ভুল থেকে আমাদের প্রতেকের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ একি ভুল বার বার করলে জীবন অন্ধকার হয়ে যাবে!! আর ভুল গুলোকে শিক্ষা ভাবলে শিহাবের মত প্রতারক এর শিকার হয়েও রাহুলের মতন মানুষের সাথে সুখী হওয়া যায়!! যেটা হীর হয়েছে!!
.
সমাপ্ত………… ♥
[অনেক রাগ আমার উপর আপনাদের তা জানি আমি। বাট আমার কিছু বলার ভাষা নেই!! শুধু এই টুকুই বলবো প্রবলেম এ ছিলাম। ক্ষমা করবেন আমায়। আমি অতিরিক্ত খারাপ মানুষ তার উপর রাগ বেশী। বুঝিনা কে সে যার সাথে রেগে যাই। তাই আমার কথায় কেউ হার্ড হলে আমায় ক্ষমা করবেন দোয়া করে!! আমি সত্যি দুঃখিত! আর কাল থেকে এক পার্ট অনুভূতি রোজ পাবেন! আর হ্যাঁ প্রতারক লাস্ট পার্ট কেমন হলো জানাবেন যদিও জানি সাধাসিধেই লিখছি হয় তো বলার মতন কিছুই নেই। তাও জানাবেন কেমন হলো!! ধন্যবাদ এতো এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য আমাকে আমার গল্প কে!!]
Roja Islam