Monday, July 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1948



রহস্যময় ভালোবাসা – তানভীর রানা

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০

রহস্যময় ভালোবাসা
তানভীর রানা
.
রাতের খাবার শেষ করে বিছানার ওপর ল্যাপটপটা অন করলো নিলয়। ব্যস্ততার কারণে কয়েকদিন ফেসবুকে আসতে পারেনি সে। তাই আজ ফেসবুকে ঢুকে বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করছে। হঠাৎ ‘বদের হাড্ডি’ নামের একটা অপরিচিত আইডি থেকে নিলয়ের আইডিতে ম্যাসেজ আসলো, “হ্যালো রোমান্টিক বয়! কী করা হচ্ছে?”
নিলয় ম্যাসেজটা দেখে যতটা না অবাক হলো তার থেকে বেশি অবাক হলো আইডির নামটা দেখে। ‘বদের হাড্ডি’ কী অদ্ভুত একটা নাম। নিলয় যদিও অপরিচিত কারও ম্যাসেজের রিপ্লাই করে না তবুও সে কৌতূহলী হয়ে রিপ্লাই করলো,

– আচ্ছা, আপনি কী বদের হাড্ডি নাকি গরুর হাড্ডি?

– হোয়াট? একজন ভদ্র মেয়ের সাথে একজন ভদ্র ছেলে এভাবে কথা বলে না। আপনাকে ভালো মনে করেছিলাম কিন্তু…

– ওরে বাপরে বাপ! কী ভদ্র রে। আমি কী এমন খারাপ কাজ করলাম শুনি?

– আমাকে গরুর হাড্ডি বললেন কেন?

– বলেছি তো কী হয়েছে, মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে বুঝি?

– তা হবে কেন! একটু ভালোভাবেই বললেই তো পারতেন।

– ওহ রে, আমি জাস্ট একটু মজা করলাম। কষ্ট দিয়ে থাকলে স্যরি।

– ইটস্ ওকে, নো প্রব্লেম।

– আপনার নামটা কিন্তু সত্যিই দারুন! ‘বদের হাড্ডি’।

– ওটা জাস্ট আমার আইডি নেম, দুষ্টামি করে দেয়েছি।

– ওহ আচ্ছা, তা হঠাৎ আমার হাড্ডি খাওয়ার শখ হলো কেন?

– হাহাহা! না, আপনার নামের সাথে আমার নামের কিছুটা মিল আছে তো, তাই নক করলাম।

– তাই বুঝি! তা বদের হাড্ডির নামটা কি জানতে পারি?

– হুম অবশ্যই, নীলাদ্রি।

– ওয়াও! নাইচ নেম, দারুন মিল তো।

– হুম, একদম।

– কিন্তু আমি তো আপনার অপরিচিত, তাই না?

– দেখেন, সব পরিচিত মানুষই কিন্তু একদিন অপরিচিত ছিল।

– হুম, তা ঠিক। আপনি কিন্তু ভীষণ মজা করে কথা বলেন।

– আপনিও কম না!

এভাবেই বেশ কিছুদিন মেসেঞ্জারে কথা বলতে বলতে ওরা দুজন খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেল। কিন্তু একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, নীলাদ্রি নিলয়কে একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছে। শর্তটা হচ্ছে, যতদিন ওদের দেখা হবে না ততদিন পর্যন্ত তারা ফোনে কথা বলবে না। তাই কেউ কাউকে কোনো কন্টাক্ট নাম্বার দেয়নি।
.
বেগম রোকেয়া ভার্সিটিতে পড়ে নিলয়। দেখতে যেমন স্মার্ট পড়াশোনাতেও খুবই মেধাবী। প্রায় দুই সপ্তাহ পরে সে আজ ক্যাম্পাসে এসেছে। ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাসের বড় আমগাছটার নিচে বসে প্রিয় বন্ধু জিসান, সাজিদ, রূপালি এবং মেঘলার সাথে আড্ডা দিচ্ছে সে। তারা সবাই খুব ভালো বন্ধু কিন্তু নিলয়ের প্রতি মেঘলার কেনজানি অন্যরকম একটা টান। মেঘলা মনে মনে ভালোবাসে নিলয়কে কিন্তু নিলয় মেঘলাকে শুধুই ভালো বন্ধু হিসেবে জানে। বন্ধুত্বের বাঁধন ছিন্ন হওয়ার ভয়ে মেঘলা নিলয়কে তার মনের কথা সরাসরি বলার সাহস পায় না। মাঝেমধ্যে ঠাট্টা মশকরার ছলে নিলয়কে ভালোবাসার কথা বুঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু নিলয় সব দুষ্টামি ভেবে উড়িয়ে দেয়। আজও তাদের দুষ্টামি চলছে। বাদাম খেতে খেতে মেঘলা দুষ্টামি করে হঠাৎ নিলয়কে বললো,

– কীরে বাঁদর, তোর গালফ্রেন্ডের কী খবর?

– তুই তো আমার গালফ্রেন্ড।
হেসে হেসে বললো নিলয়।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
– চুপ কর হারামজাদা, এসব লোক দেখানো বয়ফ্রেন্ড দরকার নাই আমার।

– ওই হারামজাদী, তোকে আমার মতো ভালো কে বাসবে বল?

– হুম, কিন্তু তোর সবটাই তো মিথ্যে। সত্যি সত্যি ভালোবাসলেই তো পারিস।

– সত্যি ভালোবেসেও কোনো লাভ হবে না। তোর মতো ডাইনিকে মা কোনোদিনও বউ হিসেবে মেনে নিবে না, বুঝলি?

– আরে রাখ, তোর মতো বাঁদরকেও আমার বাবা কখনো মেনে নিবে না, বুঝলি?

– তাহলে বলিস কেন ভালোবাসতে, হুম?

– মন চায় যে ভালোবাসতে, আমার কী দোষ বল?

– হয়েছে থাক, তোর মন আরো কত কী যে চাইবে!

এভাবেই ওদের দুষ্টামি মাখা ভালোবাসা চলতেই থাকে প্রতিনিয়ত।
হঠাৎ কথার মাঝখানে রূপালির প্রবেশ।
-ওই তোদের মিথ্যে ভালোবাসার নাটক বন্ধ কর তো! দেরি হয়ে যাচ্ছে, এখন চল বাসায় যেতে হবে। সেদিনের মতো আড্ডা সমাপ্ত হয়ে যায়।
.
এদিকে প্রায় তিন মাস ফেসবুকে কথা বলতে বলতে নীলাদ্রি ও নিলয়ের সম্পর্কটা ভালোবাসায় রূপ নিলো। প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত ফেসবুকে চলতেই থাকে তাদের ভালোবাসা আর খুনসুটি।

রাত দুইটায় হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল নিলয়ের। কিছুতেই ঘুম আসছে না আর। তার মন বলছে নীলাদ্রির ব্যাপারে মেঘলাকে জানানো উচিত। টেবিলের ওপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে মেঘলাকে কল দিলো সে। এত রাতে নিলয়ের কল দেখে অবাক হয়ে গেল মেঘলা। বুকটা ধরপর করে উঠলো ওর। নিলয়ের কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা এ কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমের ঘোরে ফোনটা রিসিভ করলো মেঘলা…

– কী রে, এত রাতে ফোন! কোনো প্রব্লেম?
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল মেঘলা।

– আরে, নো প্রব্লেম। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল তাই দিলাম।

– হারামি, এত রাতে জ্বালানোর আর মানুষ পেলি না। আমাকেই লাগবে তোর, না?

– হুম, তুই ছাড়া আর কে আছে আমার, বল?

– এত রাতে তোর সুরের প্যাচাল বন্ধ কর হারামি। আমার ঘুম পাচ্ছে।

– এই শোন না, একটা কথা ছিল…

– কী কথা? তাড়াতাড়ি বল।

– আমি ভালোবেসে ফেলেছি।

– ওয়াও! নিশ্চয়ই আমাকে?

– আরে না, তোর মতো ডাইনিকে কে ভালোবাসবে?

– তাহলে কাকে, নাম কী?

– নীলাদ্রি, আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড।

– ওহ আচ্ছা, তাহলে তোর বউকে ফোন দে। আমাকে আর কখনো ফোন দিবি না? রাখছি, বাই।

তাৎক্ষণিকভাবে ফোনটা কেটে দিলো সে।

নিলয়ের কথা শুনে মেঘলার মন নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল। সে মন খারাপ করে ফোনটা অফ করে আবার শুয়ে পড়লো কিন্তু সারারাত ঘুমাতে পারলো না।

এদিকে মেঘলাকে অনেকবার ফোন দিলো নিলয় কিন্তু মেঘলার ফোন বরাবরই বন্ধ পেল। সে এখন কী করবে মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
.
পরেরদিন সকালে ভার্সিটিতে গিয়ে মেঘলার খোঁজ করতে লাগলো নিলয় কিন্তু কোথাও মেঘলাকে দেখতে পেল না। হঠাৎ রূপালী এসে নিলয়ের হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বললো, “মেঘলা দিয়েছে।”
নিলয় আমগাছের নিচে বসে খামটা খুলে চিরকুটটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো।

প্রিয় নিল,
তোর যে প্রেমের মায়ায় আমি পড়েছিলাম, সে মায়া এখনো কাটেনি আমার। হয়তো কাটবে না কখনও। তোর জন্য আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় প্রতিনিয়ত কিন্তু তুই সেটা কোনোদিনও বুঝবি না। আমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবি কি? তোর প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। চলে যাচ্ছি তোর মনের শহর থেকে।
যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস আমার ভালোবাসা।

ইতি,
‘মেঘ’

চিঠি পড়ে নিলয় স্তব্ধ হয়ে গেল। মেঘলা ওকে কতটা ভালোবাসে সে আজ ঠিক বুঝতে পারছে। মনের ভেতর কীসের যেন শুন্যতা অনুভব করছে। এটুকু সময়ের মধ্যে সে বুঝতে পারলো যে মেঘলাকে ছাড়া তার এক মুহূর্ত চলবে না। সে মনে মনে ভাবলো কাল নীলাদ্রির সাথে দেখা করে সবকিছু খুলে বলবে।
নিলয় রাতে ফেসবুকে নীলাদ্রিকে জানিয়ে দিলো যে, কাল বিকেল ৪ টায় ওরা কাশবনে দেখা করবে।

পরেরদিন বিকেল চারটার আগে উৎসুক হয়ে কাশবনে চলে গেল নীলাদ্রি। নীল শাড়ি আর নীল টিপে যেন নীল পরীর মতো লাগছে তাকে। সে অপেক্ষায় আছে কখন তার মনের মানুষ তার কাছে আসবে।

নিলয় ঠিক সোয়া চারটায় কাশবনে গিয়ে দূর থেকে দেখতে পেল একজন নীল পরী পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। নীলাদ্রিকে চিনতে সমস্যা হয়নি একটুকুও কারণ রাতেই সে নিলয়কে জানিয়েছে নীল শাড়ি পরে আসবে।

নীলাদ্রির কাছাকাছি চলে আসলো নিলয়। নীলাদ্রি লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিলয় দুরুদুরু বুকে বললো,

– তুমিই নীলাদ্রি?

– হুম
পেছন থেকেই মাথা নাড়ালো নীলাদ্রি।

– দেখো নীলাদ্রি, আমি শুধু সারাজীবন তোমার ভালো বন্ধু হয়ে থাকতে চাই। মেঘলাকে ছাড়া আমার চলবে না। আমি মেঘলাকে ভীষণ ভালোবাসি।

– সত্যি?
বলেই মুখটা নিলয়ের দিকে ঘুরালো নীলাদ্রি।
নিলয় মুখটা দেখে অবাক হয়ে গেল। এ কী! এ তো নীলাদ্রী নয়, মেঘলা।

– আরে মেঘলা হারামজাদি তুই?

– হুম, আমি।

– এসবের মানে কী ডাইনি? তুই তাহলে সেই বদের হাড্ডি?

– হুম, বন্ধুরা মিলে প্লান করে করেছি।

– কিন্তু কেন?

– ভালোবাসি যে তোকে, বুঝিস না?

– হুম, এখন বুঝলাম। আমিও তোকে ভীষণ ভালোবাসি পাগলি। আই লাভ ইউ লট।

– লাভ ইউ টু জান।

এরপর তারা দুজন ভালোবাসার জগতে হারিয়ে গেল।

=০=

“স্মৃতি” – কলমে: যারিন সুবাহ।

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০

ছোটগল্প: “স্মৃতি”
শব্দসংখ্যা: ৯৮৭
ক্যাটাগরি: ভৌতিক, রহস্যময়।

কলমে: যারিন সুবাহ।
______________________________________

“বাবাই আজ একটা গল্প শুনাও না আমায়?”
১৫ বছরের ছেলের মুখে এমন আবদার শুনে পেপার থেকে চোখ তুলে তাকান রহমান সাহেব। বিছানায় আধশোয়া হয়ে তিনি খবরের কাগজ পড়ছিলেন।
বাচ্চা মানুষ গল্প শোনার আবদার করলে মানায়, এই বয়সি ছেলেপুলেরা তো আবার আজকাল বাবা মায়ের সাথে ভালো মতো কথাই বলতে চায় না। সেখানে তার ছেলে গল্প শুনতে চাচ্ছে। মুচকি হেসে রহমান সাহেব ছেলে নিদুলকে বললেন,
__”তো কী গল্প শুনতে চাচ্ছেন আপনি?”
ছেলেও বাবার হাসির উত্তরে একফালি হাসি ঝুলিয়ে দেয় ঠোঁটে, উত্তরে বলে,
__”তোমার যেমন ইচ্ছে বাবাই।”
__”আচ্ছা তাহলে আজকে হঠাৎ বাবার কাছে গল্প শুনতে চাওয়ার কারণটা কী জানতে পারি আমি?”
বিছানার পাশে দাঁড়ানো নিদুল পাপোশে পা মুছে বিছানায় উঠে পড়ে, বাবার পাশে শুতে শুতে বলে,
__”বাবাই, সবাই বলে বেশী বেশী আব্বু আম্মুর সাথে থাকা উচিত, আম্মু তো…।”
চোখ ভিজে আসে রহমান সাহেবের। সুবোধ পুত্রের কথায় তিনি আবেগাপ্লুত হোন, ছেলেটা তার বড়ো বুঝের!
__”আচ্ছা, তাহলে আমার জীবনের একটি ঘটনা তোমাকে শুনাই। মনোযোগ দিয়ে শুনবে!”
নিদুল পাশ ফিরে বাবার পেটের উপর হাত রেখে বলে,
__”শুনতেই তো এলাম, মনোযোগ দিবো না কেন?”
রহমান সাহেব গলা ঝেড়ে কেশে তার গল্প শুরু করেন,
__”তখন আমার বয়স ছিল এই চব্বিশ কি পঁচিশ। বন্ধুরা মিলে ফন্দি আঁটলাম, আমরা কোনো ভুতুড়ে বাংলোতে গিয়ে রাত কাটাবো। যেই ভাবা সেই কাজ! আমাদের গ্রুপে একজন ছিল খুব ভীতু, ছেলেটার নাম ছিল হৃদ। আমাদের সময়ে এতো আধুনিক নাম কেউ রাখতো না কিন্তু ওর নামটা খুব আধুনিক এবং আমার কাছে খুব পছন্দের ছিল। ও আমাদের খুব মানা করে, “যাস না, যাস না” বলে খুব অনুরোধ করে কিন্তু আমরা ওকে ওর বাসায় রেখেই প্রস্তুতি নেই ভূতুড়ে বাংলোতে যাওয়ার। অমাবস্যার রাত ছিলো সেদিন, গ্রাম এলাকা বিধায় সন্ধ্যে সন্ধ্যে যেন মাঝরাত নেমে আসে। আমরা সবাই একসাথে পথ ধরি। কিছুদূর পেরিয়েই সেই বাংলো ছিল, আশে পাশের মানুষরা বলাবলি করতো যে ওখানে খারাপ কিছু আছে। আর সেটা কী আছে তা দেখার জন্যই আমরা সেদিন রাতে যাই। বাংলোটা ছিল জঙ্গলের কাছাকাছি, বাংলোর গেটটায় পর্যন্ত জঞ্জাল দিয়ে ভরা ছিল। বিশাল বড় গেট, আমরা ছিলাম পাঁচজন। আমাদের দলের প্রথমে দু’জন সাহসী ছেলেকে আমরা গাইড হিসেবে রাখি যাতে কোন সমস্যা না হয়। তারা ছিল, রফিক ও শফিক দুই ভাই। তারা দু’জনই প্রথমে গেটের কাছে এগিয়ে গিয়ে জঞ্জাল সরিয়ে গেট খুলে দেয়, সাথে সাথে ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজ যে কী! নিস্তব্ধ রাতে এই আওয়াজই আমাদের শরীরের পশম দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। আমরা পাঁচজন ভিতরে ঢুকে পড়ি, বাংলোটা ছিল খুব পুরোনো। দোতলা বাংলোর সদর দরজার সামনে গিয়ে আমরা দাঁড়াই। সদর দরজার পাশে দু’টো জানালায় কেমন আঁচর কাটা ছিল। আমিই টর্চের আলো জ্বালিয়ে তাদেরকে দেখাই সেটা, সাথে সাথে অনুভব করি কেউ আমার কানের কাছে কিছু একটা বলে গেল। আমি ঘাড় ঘুড়াতেই কাউকে দেখিনা, আবারও আমার মস্তিষ্ক আমাকে জানান দেয় আমার কনুইতে খুব জোরে কেউ খামচি দিল। কনুইয়ে তাকাতেই দেখি, কাঁচের উপর যেমন আঁচড় কাটা ঠিক তেমনটি আমার হাতে। প্রচণ্ড ভয় পাই আমি, পাশে জামালের শার্ট চেপে ধরে বলি, এখানে খারাপ কিছু আসলেই আছে। আমার হাতে দেখ! কিন্তু জামাল সঙ্গে সঙ্গে বলে, “ধুর কোথায় কী?”
এইতো এখানে বলেই নিজের কনুইয়ে চোখ রাখতেই আমি দেখি আঁচড় নেই, উধাও! আমি চুপ হয়ে যাই তৎক্ষণাৎ আর কিছু বলি না কাউকে। সবাই সদর দরজা রেখে জানালা ভেঙে ভিতরে ঢুকি, বিশাল বড় তালা খোলা আমাদের জন্য সহজ ছিল না বৈকি। আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম যে কখন না কী হয়ে যায়। ভিতরে ঢুকতেই আমরা একে একে পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকি। বলা বাহুল্য, যিনি এই বাড়ি বানিয়েছিলেন তার রুচি খুবই মার্জিত ছিলো। আমরা শুনেছিলাম, এ বাড়ির মালিকের মেয়ে বিদেশ থেকে এখানে আসে বেড়াতে। আসার পর থেকেই নাকি তার আচরণ সব অদ্ভুত দেখায়, ভিতরে বাহিরে রটনা রটতে থাকে যে, তাকে ধরেছে কিছু। মালিক পাত্তা দেয় না কিন্তু কিছুদিন পরেই বাড়ির পিছনের ঘাটে মেয়ের অর্ধ খাওয়া লাশ পাওয়া যায়, কেউ যেন খুবলে খুবলে খেয়েছে।
যাই হোক এর পর থেকে মালিক আর এখানে থাকেনি, আর এসব ঘটনার পর থেকে কেউ আর আসার সাহস ও পায়নি। অথচ মূলত মেয়েটার সাথে কী হয়েছিল কেন হয়েছিল কেউ জানার চেষ্টা করেনি। দোতলা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নেয় জামাল, পিছনে রফিক থাকে। পুরো অন্ধকার বাড়ি, হাতের টর্চের আলোয় কতটুকুই বা দেখা যায়। দোতলার সিঁড়িতে উঠার শেষ সিঁড়িতে পা দিতেই সদর দরজা খোলার আওয়াজ পাই সবাই। পিছন ফিরে জামাল আর রফিক। নিচে দাঁড়ানো আমি, শফিক আর কৃষ্ণ থমকে দাঁড়াই। কারণ আমাদের সামনে ছিল হৃদ! হঠাৎ করে হৃদ বলতে থাকে,
“এখনো সময় আছে চলে যা তোরা। এখনো অনেক সময় আছে।”
আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি হৃদের দিকে, বিশ্বাসযোগ্য ছিল না বিষয়টি যে হৃদ এখানে আসার সাহস করবে। আমার তখনো ভয় ছিল প্রচণ্ড, আমি সবাইকে বলি, “হ্যাঁ চল।আমরা চলে যাই। আমার সাথে খারাপ কিছু ঘটে গিয়েছে ইতিমধ্যে!”
কীভাবে যেন সবাই রাজি হয়ে যায় বের হতে অথচ সবাই একেবারে কসম কেটে বসেছিল কেউ ভুলেও বের হবে না বাংলো থেকে। আমরা সদর দরজা লাগিয়ে দেই, পিছনে ঘুরতেই হৃদ কে দেখতে পাই না আমরা। এই মুহূর্তে সবার ভিতরে ভয় কাজ করে। আমরা একজন আরেকজনের হাতে হাত ধরে পথ চলতে শুরু করি। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় ছিল, আমরা আসার সময় বেশ কিছু কুকুরের দেখা পাই আর কুকুরগুলো কেন যেন আমাকে দেখেই ভয় পাচ্ছিল। আমরা কেউ এটাকে তেমন না ঘেঁটে দ্রুত চলে আসি। পরেরদিন থেকে হৃদের দেখা কোথাও পাওয়া যায় না। আমরা পাঁচজনই শিউরে উঠি, হ্রদ ছিল আমার সবচেয়ে কাছের। কারণ ও মানুষটাই ছিল তেমন। ওর নামটা যেমন সুন্দর ছিল তেমন ছিল ওর ব্যবহার। ছোট ছোট দু’টো নীল চোখের অধিকারী ছিল সে আর ছিলো দুধে আলতা গায়ের রং!
__”এইটুকুই?”
রহমান সাহেব চুপ হয়ে ছিলেন এটুক বলে, তার কল্পনায় যেন হৃদের চেহারা ভাসছিল। ছেলের কথায় সম্বিৎ ফিরে পান তিনি, ছেলের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকান তিনি। হুম, ছেলেটা তার দুধে আলতা রঙের, ছোট ছোট দু’জোড়া নীল চোখ তার। পুরো মুখে তার হৃদের জীবন্ত অস্তিত্বের চাপ যেন! ঘন নিঃশ্বাস ফেলেন রহমান সাহেব।
__”বাবাই আমার নাম যদি হৃদ হতো?”
রহমান সাহেব উত্তর দেন না, ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
__”ঘুমিয়ে পড় বাবা। অনেক রাত হয়েছে।”
নিদুল কথা বাড়ায় না আর, চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে। রহমান সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়েন, চোখের পলকে তিনি যেন হৃদকে সামনে দেখতে পেলেন।
মনে মনে রহমান সাহেব বললেন, “সেদিন ভুল ছিল তোকে একা বাসায় রেখে যাওয়া। সত্যিটা তো আমরা পাঁচজন ছাড়া কেউ জানে না হৃদ, তোর অস্তিত্ব কীভাবে যেন আমি নিদুলের মাঝে পাই। এটা কি ভাগ্যক্রমে মিলে গেল নাকি তুই আছিস আমার আশে পাশেই?”

“সমাপ্ত”

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

পরিণামে পরিণয় – আফসানা মিমি

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
পরিণামে পরিণয়
আফসানা মিমি

কাজিনকে দেখতে আসা পাত্রপক্ষের মধ্যে পাত্র হিসেবে আদিভানকে দেখে পুরো দুনিয়া যেন চোখের সামনেই টলে উঠলো আরদ্রার। বিস্ময়ে চোখদুটো যেন কোটর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা হয়েছে ওর। অথচ আদিভান বেশ স্বাভাবিকভাবেই বসে আছে সবার মাঝে আরদ্রার সামনে। আরদ্রাকে দেখেও কোনো ভাবান্তর হতে না দেখে মনে মনে চরম অবাক হলো সে। আজ প্রায় তিন বছর পর তাকে স্বচক্ষে দেখছে আরদ্রা। তাদের দুজনার মধ্যকার সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পর কখনোই দেখা হয়নি একে অপরের সাথে। আজ এতদিন বাদে আদিভানকে এভাবে দেখে বুকের ভিতরটায় কেমন যেন জ্বলছে। এতদিনকার জমিয়ে রাখা কান্নার বাঁধ যেন ভেঙ্গে যেতে চায়ছে আরদ্রার। তাই দ্রুত পায়ে ড্রইংরুম থেকে মেইন ডোর পেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতে লাগলো দৌড়ে। ততক্ষণে চোখের পানির বাঁধ ভেঙ্গেছে। চিলেকোঠার ঘরের বিপরীত পাশে পানির টাংকির পিছনে দু’হাতে হাঁটু আঁকড়ে ধরে বসে পড়লো। অস্ফুটস্বরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। লোকলজ্জার ভয়ে চিৎকার করে কাঁদতেও পারছে না। চিৎকার করে কাঁদতে পারলে হয়তো ভিতরে গুমোট হয়ে থাকা মনটা কিছুটা হালকা হতো। হাঁটুতে মুখ গুঁজে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো। খুব সামান্য একটা ব্যাপারকে কেন্দ্র করে তাদের আড়াই বছরের প্রণয়ের ইতি টেনেছিল আরদ্রা। স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে কয়েক বছর আগেকার কয়েকটি ঘটনা।
.

যখন আরদ্রা ইন্টারমিডিয়েটে নতুন ভর্তি হয় তার কিছুদিন পর বেশ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আদিভানের সাথে ওর দেখা হয়। কলেজ থেকে ফিরতি পথে দেখতে পায় একটা লম্বা মতোন যুবক ছেলে বাইক এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছে। কিছু কিছু মানুষ তামাশা দেখছিল, আর কিছু মানুষ মোবাইলে এক্সিডেন্টের ভিডিও ধারণ করছিল। দ্রুত পায়ে ভীড় ঠেলে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে কয়েকজনকে বলে একটা সিএনজি ডেকে তাতে আহত ছেলেটাকে তুলে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল। ছেলেটাকে দেখেই হসপিটালের সব নার্সরা ছোটাছুটি করে হুলুস্থূল কাণ্ড শুরু করে দিয়েছিল। পরে একজনকে ধরে জানতে পারে ছেলেটা নাকি এই হসপিটালের প্রতিষ্ঠাতার একমাত্র ছেলে। তার বাবা মা এই হসপিটালেই ডাক্তারি করে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
ছেলেটাকে যে কেবিনে রাখা হয়েছিল, সে কেবিনের দরজার সামনে সংকুচিত হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে তার অবস্থা জানার জন্য। কী না জানি ভাবে সেই ভেবে ভিতরে যাওয়ার সাহস হয়নি। তখন ভিতরের দিকে উঁকি দিয়ে দেখতে পায় একটা সুন্দর মতোন আভিজাত্যপূর্ণ মহিলা ছেলেটিকে জুস খাওয়াচ্ছে। এটাই বোধহয় তার মা হবে। ঠিক তখনই ছেলেটার নজর পড়ে আরদ্রার ওপর। ছেলেটা একটা নার্সকে ডেকে কী একটা জিজ্ঞাসা করে যা আরদ্রা শুনতে পায় না। নার্স ওর দিকে তাকিয়ে পরে ছেলেটাকে কী যেন বলে। ছেলেটা একটা মুচকি হাসি দেয়। যে হাসি দেখেই জীবনে প্রথমবারের মতো আরদ্রার দম আঁটকে আসে অজানা ভালো লাগায়। টের পায় আচমকা হৃৎপিণ্ড লাফাতে থাকে। লজ্জা পেয়ে দ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে বাসায় চলে এসেছিল।

বেশ কয়েকদিন রাস্তাঘাটে চলার সময় ঘুরেফিরে বারংবার সেই ছেলেটার কথা-ই মনে পড়তো আরদ্রার। মাঝে মাঝে দেখতো রাস্তার পাশে ওর দিকে তাকিয়ে আছে অপলক। তবে তা হেলুসিনেশন ভেবে হাওয়ায় উড়িয়ে দিত। কিন্তু একদিন আচমকা ওর পথ আগলে দাঁড়ানোতে ভড়কে যায় আরদ্রা। মুহূর্তের মধ্যেই বুকের রক্ত ছলকে উঠে কেঁপে উঠে ও। হাসি হাসি মুখে একটা চিরকুট ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল ‘এটার উত্তরের আশায় আমি কলেজের ভিতরের পুকুরপাড়ের ঘাটে অপেক্ষা করবো আগামীকাল।’ ওকে অবাক করে দিয়ে আর কিছু না বলেই চলে গিয়েছিল।

বাসায় ফিরে কলেজ ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলে বিছানায় গড়িয়ে পড়েছিল চিরকুটটা হাতে নিয়ে। অস্থির হয়ে কাঁপাকাঁপা হাতে চিরকুটটা খোলার পর গুটি গুটি অক্ষরের কয়েকটা লাইন ওর চোখে পড়ে।

“যে আমাকে নতুন জীবন দান করেছিল, সে কী আসবে আমার ছন্নছাড়া জীবনে আশীর্বাদস্বরূপ হয়ে!?
আমার পুরো জীবনের দায়িত্ব নিয়ে এই অধমকে
ধন্য করবে কী!? আমার শূন্য জীবনে পূর্ণতা হয়ে এসে ধরা দেবে হে প্রণয়িনী?”

এক রাশ মুগ্ধতা যেন আরদ্রাকে ছুঁয়ে দিয়ে গিয়েছিল। লজ্জায় রাঙা হয়ে যায়। বারবার লাইনগুলো পড়তে থাকে। রাতে ঘুমানোর সময়ও চিরকুটটা বুকে জড়িয়ে ঘুমায়। পরদিন অস্থিরতায় ঘুম ভেঙ্গে যায় তাড়াতাড়ি। নিজের এমন অবস্থা দেখে খানিকটা অবাকই হয় আরদ্রা। তারপর ভাবে আজ যাবে না সে কলেজে। লজ্জায় হয়তো মরেই যাবে তার সামনে গেলে। এরপর দিন ছিল শুক্রবার। সারাটাদিন এমন অস্থিরতায়ই কাটে রাহার। এক মুহূর্তও যেন শান্তি পাচ্ছে না। এরপর দিন বেশ তাড়াতাড়িই চলে যায় কলেজে। মনটা ছটফট করছে নতুন অনুভূতির চক্করে পড়ে। সময় যেন কাটতেই চায়ছে না। সকাল থেকে সারাদিন বসে থাকে পুকুর ঘাটে। ক্লাস করতে যেতে মন সায় দেয়নি। যদি আবারও ফিরে যায় ওকে না পেয়ে! একসময় অপেক্ষা করতে করতে কান্না করে দেয় আরদ্রা। ওর সেদিন আসা উচিৎ ছিল। ভুল করেছে ও, ভুল করেছে। মুখ ঢেকে কান্না করতে থাকে অবিরত। ততক্ষণে গোধূলি লগ্ন চলে এসেছে। পাখির কিচিরমিচির চারপাশের নিস্তব্ধতাকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়। সেই মুহূর্তে আরদ্রার অপেক্ষারও অবসান হয়। মাথায় কারো হাতের ছোঁয়ায় চমকে তাকায়। লাল দুটি ফুলে যাওয়া অশ্রুসিক্ত আঁখি মেলে সামনের মানুষটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে বেশ কয়েকটা ক্ষণ। তারপর আর এক সেকেন্ডও বিলম্ব না করে ঝাপিয়ে পড়ে আকাঙ্ক্ষিত মানুষটার বুকে। তার শূন্য জীবনটা পূর্ণ করতে এই মানুষটাই যথেষ্ট।

তারপরের দিনগুলো কাটে স্বপ্নের মতো। নিজের একলা জীবনে আদিভানকে পেয়ে সকল অপূর্ণতারা বিদায় নিয়েছিল। দিনটা শুরু হতো আদিভানের দুষ্টুমিষ্টি কথার বানে; আর দিনটা শেষও হতো তার ভালবাসা মিশ্রিত অনুশাসনে। কিন্তু কথায় আছে না, সুখের দিন অতি দ্রুতই ফুরিয়ে যায়! তেমনি আরদ্রার সুখের দিনও ফুরিয়ে গিয়েছিল সেদিন, যেদিন ওদের দুজনকে একসাথে আদিভানের মা দেখে ফেলে। আরদ্রার উদ্দেশ্যে বলেছিল ‘আদিভানের সাথে বাসায় এসো একদিন।’ ওর ভিতরের ভয়টা আদিভান হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিল ‘আমার সুখেই উনার সুখ। দেখে নিও তোমাকেও মম মেনে নিবে।’ কিন্তু অজানা দুশ্চিন্তা আরদ্রার পিছু ছাড়েনি। বরংচ ছায়ার মতো লেপ্টে রইলো ওর সাথে।

সেদিনকার অনুভূতির কথা ব্যক্ত করতে পারবে না আরদ্রা। এক বুক আশা আর তার সমপরিমাণ ভয় নিয়ে আদিভানের পিছুপিছু এসিযুক্ত বড় রুমে প্রবেশ করে আরদ্রা। ওকে নিজের মায়ের সাথে বসিয়ে দিয়ে রুম ছেড়ে বের হয়ে গিয়েছিল আদিভান। যাওয়ার আগে আরদ্রাকে আশ্বস্ত করে যায় যাতে ভয় না পায়। কিন্তু আদিভানের মায়ের ঠান্ডা দৃষ্টি দেখে ভয় কমার বদলে বেড়ে গিয়েছিল বহুগুণ। আরদ্রার উদ্দেশ্যে উনার সর্বপ্রথম বাক্য ছিল

—“আমার ভোলাভালা ছেলেটাকে তোমার জ্বালে কীভাবে ফাঁসিয়েছো তা একটু এক্সপ্লেইন করবে?”

এমন কথা শুনে বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল আরদ্রা। ওকে আরেকটু বিস্মিত করতে উনি বলা শুরু করেছিলেন

—“ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন তো ভালোই দেখলে। তুমি ভাবলে কী করে যে তোমার মতো চালচুলোহীন একটা মেয়েকে আমি আমার ছেলের বউ বানাবো!? কী যোগ্যতা আছে আমার ছেলের পাশে দাঁড়ানোর? বাপ-মা নেই। খালার বাসায় আশ্রিতা হয়ে আছো। না আছে কোনো বংশপরিচয়, আর না আছে ধনদৌলত। আমার ছেলে নাহয় না বুঝে তোমার প্রেমে পড়ে গেছে। কিন্তু তুমিও লোভী মেয়ের মতো বড়লোকের ছেলে দেখে তার গলায় ঝুলে পড়লে! এটুকু সেন্স কি তোমার ছিল না যে সম্পর্ক হতে হয় সমানে সমানে!”

কথাগুলো শেলের মতোই বিঁধছিল আরদ্রার বুকে এবং সর্বাঙ্গে। শরীরের চামড়া যেন খসে খসে পড়ছিল এমনতর অপমানে। আরো কিছুক্ষণ এমন কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা শেষে আরদ্রা উঠে আসার আগে শুধু এটুকু বলেছিল

—“টাকা, পয়সা-ই কি জীবনের সব!? ভালবাসার কী তবে কোনো স্থানই নেই মানুষের জীবনে? মানুষের সুখ কি শুধু অর্থ সম্পদেই লুকিয়ে থাকে? তবে টাকা-ই যদি মানুষের সব হয়, তাহলে আপনার ছেলেকেও ধনবান, বিত্তশালী কোনো রাজার মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েন। সে সুখী না হলেও আশা করি আপনার মনোবাসনা পূরণ হবে। তবে মনে রাখবেন এই টাকা-ই একদিন আপনার কাল হয়ে দাঁড়াবে। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, টাকা দিয়ে সব কিনতে পারলেও ছেলের সুখ কিনতে পারবেন না। আজকের পর থেকে আমাকে আপনার ছেলের ত্রিসীমানায়ও দেখবেন না। ছেলেকে আঁচলের সাথে বেঁধে রাখবেন। বলা তো যায় না যদি আবারও লোভে পড়ে যাই!”

আদিভানের মা’কে বিস্মিত করে দিয়ে উনাকে কোনোকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসেছিল আরদ্রা। বের হওয়া মাত্রই আদিভানের মুখোমুখি হয়েছিল। ওর হাসিমুখটা দেখে বুকের ভিতরটা ভেঙ্গে খানখান হয়ে যাচ্ছিল আরদ্রার। এ মানুষটার সাথে বোধহয় এ জীবনে আর একসাথে চলার স্বপ্নটা পূরণ হবে না। রাস্তার পাশে আড়াই বছরের সম্পর্কের ইতি টেনেছিল সেদিন আরদ্রা। অনেক জোরাজুরি সত্ত্বেও সত্যিটা বলেনি সে। আদিভান পারে না সেদিন রাস্তায়ই কেঁদে দেয় আরদ্রার আচমকা এমন সিদ্ধান্তে। তবুও আরদ্রার মন একটুও গলেনি। নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে আদিভানকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। অথচ বিধাতা তো জানেন তার ভিতরে কী টর্নেডো বয়ে যাচ্ছিল আদিভানকে আশাহত করতে!

আদিভানের সামনে পড়ার ভয়ে খালার বাসা ছেড়ে মামার বাড়ি চলে যায়। কিন্তু আদিভানের স্মৃতিরা ওর পিছু ছাড়েনি। অসহনীয় যন্ত্রণায় দিনগুলো পার করছিল ঠিকই; কিন্তু একটা মুহূর্তের জন্যও তাকে ভুলে থাকতে পারেনি আরদ্রা। তার এতদিনকার সঙ্গী ছিল নীরব কান্না। আর আজ এতগুলো দিন বাদে আবারও অতীতের সম্মুখীন হতে হবে কল্পনাও করেনি। নিজের ভালবাসার মানুষটা কিনা অবশেষে তার বোনকে বিয়ে করবে! চোখের সামনে দুজনকে একসাথে দেখে সহ্য করতে পারবে তো সে!

আচমকা কারো কথার আওয়াজ আরদ্রার কানে আসে। কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করে। আদিভান আর তার কাজিন সুরভী কী নিয়ে যেন কথা বলে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। বুকের ভিতর ক্রমান্বয়ে আগুন জ্বলছে। পুড়ছে ভীষণভাবে। এর থেকে পরিত্রাণ পাবে কী করে সে!
.

পাত্রপক্ষের নাকি সুরভীকে বেশ পছন্দ হয়েছে। তাই সেদিনই বিয়ের পাকা কথা বলে গেছেন। দিন পনেরো পরে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হয়েছে। বাসায় বিয়ের ধুমধাম লেগে গেছে। এর মধ্যে আত্মীয় স্বজনরাও আসা শুরু করে দিয়েছে। সবাইই বেশ হাসিখুশি। কিন্তু শান্তি নেই আরদ্রার। এটা শোনার পর পুরোপুরিই মুষড়ে পড়েছে সে। সারাদিন বদ্ধ রুমের ভিতর কাটায়। সুরভী ডাকে ওকে সঙ্গ দিতে। কিন্তু সন্তোষজনক কোনো উত্তর পাওয়া যায় না আরদ্রার কাছ থেকে। রাতে খেয়ে যখন ঘুমাতে আসে তখন সুরভীর কথার ফুলঝুরি আরদ্রার কানে বিষের মতো লাগে। ইদানীং সুরভীর হাসিটাও আরদ্রার সহ্য হয় না।
.

এর মধ্যে একদিন ড্রেসিংটেবিলের উপর একটা খুব আকর্ষণীয় ডিজাইনের বিয়ের কার্ড দেখতে পায় আরদ্রা। তারও ইচ্ছে ছিল নিজের বিয়ের সময় এমন জমকালো ডিজাইনের কার্ড বানাতে দিতে। কিন্তু সবার সব ইচ্ছে কী আর পূরণ হয়! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কার্ডটা খুলে তাতে অলসভাবে চোখ বোলায়। সর্বপ্রথমে বরের নামের ওপর চোখ পড়ে। সেখানে আদিভানের নাম দেখেই চোখদুটো আঁটকে যায়। বুকে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। সুরভী তার কাজিন সিস্টার হলেও ওর নামটা আদিভানের পাশে দেখে সহ্য করতে পারবে না। তাই শুধু আদিভানের নামটা দেখার পরই কার্ডটা ছিঁড়ে তিন চারটা টুকরো করে ছুঁড়ে ফেলে দেয় ঘরের এক কোণে। চোখে পানি জমে গেছে। বাইরে কারোর পদশব্দে সচকিত হয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ফ্লোরে বসে হু হু করে কেঁদে দেয়। ওর অদৃষ্টে এটাই বোধহয় লেখা ছিল। তাই তো আজ এভাবে চোখের পানি ফেলতে হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে সেদিন আদিভানের সাথে দেখা না হলেই বরং ভালো হতো। অন্তত দিনের পর দিন এভাবে বিরহের অদৃশ্য অনলে পুড়তে হতো না।
.

অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ছিল আরদ্রা। তখন মাত্র সন্ধ্যা বিদায় জানিয়ে অন্ধকারের জাল সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছিল। ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোর দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে ছিল সে। সেই সাথে চোখের বর্ষণ তো আছেই। আচমকা মাথায় গাট্টা খেয়ে হুঁশ আসে আরদ্রার। দ্রুত হাতে চোখ মুছে ফিরে তাকিয়ে দেখে সুরভী বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ওর দিকে চেয়ে আছে। আরদ্রাকে কিছু বলতে না দেখে সুরভী আরেকটা গাট্টা মেরে বললো

—“তোর মতো এমন নিম্নস্তরের ভোম্বল আমি একটাও দেখিনি। খালা তো তোর মতোন এমন গাধী ছিল না। তাহলে তুই এমন হলি কী করে? আর আমার কাছ থেকে তুই কথা লুকাস কী করে? তোর ডায়েরি না পড়লে আমি সত্যিটা কখনও জানতেও পারতাম না; আর এটার সমাধানও করতে পারতাম না। তাহলে সারাজীবনই এভাবে চোখের পানি ফেলে যেতে হতো।”

সুরভীর কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না আরদ্রা। ওর ডায়েরি সুরভী কোথায় পেল!? নিশ্চয়ই সবকিছু পড়ে ফেলেছে! ওকে কোনোভাবে ভুল বুঝবে না তো! সুরভীকে পুরো ব্যাপারটা বোঝানোর আগেই ও আবারও বললো
—“আচ্ছা একটা কথা বলতো, বিয়ের কার্ডটা কি তুই দেখে ছিঁড়েছিস; নাকি না দেখেই?”

আরদ্রা তা না শোনার ভান করে বলার চেষ্টা করলো
—“শোন না, আমি আসলে… আদিভান….”

আরদ্রাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে সুরভী বলে
—“আমাকে আসলে নকলে বোঝাতে আসতে হবে না। যাকে বোঝানোর দরকার তাকেই বোঝা গিয়ে।”

সুরভী কথাটা বলতে না বলতেই ব্যালকনির দরজার মুখে আদিভানকে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল আরদ্রা। আদিভানকে চোখ টিপে ‘ট্রিটটা পাওনা রইলো দুলাভাই’ কথাটা বলে সেখান থেকে চলে গেল সুরভী। আর আরদ্রা দাঁড়িয়ে আছে নতমুখে। ঘটনা কোনদিক থেকে কোনদিকে মোড় নিচ্ছে তার বোধগম্য হচ্ছে না। ইঞ্চিখানেক দূরত্বে আদিভানের উষ্ণ নিঃশ্বাসের তোড়ে আরদ্রার চোখমুখ পুড়ে যেতে লাগলো। হাত পা কেঁপে কেঁপে নিঃশ্বাসের গতি ক্রমান্বয়ে ভারি হয়ে আসতে লাগলো। মনে হচ্ছে শরীর বরফের মতো শীতল হয়ে অসাড় হয়ে আসছে। হাঁটু ভেঙ্গে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো আচমকা। আদিভান চমকে গিয়ে আরদ্রার মুখোমুখি বসে তার মুখটা নিজের দু’হাতের আঁজলায় তুলে নিল। তারপর নরমসুরে হুকুম করলো

—“আমার চোখের দিকে তাকাও।”

আরদ্রা সম্মোহিতের মতো আদিভানের চোখে চোখ রাখে। আদিভান বলতে শুরু করে
—“কেন সেদিন সত্যিটা বললে না? তুমি জানতে না তোমাকে ছাড়া কতটা অচল ছিলাম আমি!? তাহলে কীভাবে পারলে আমাকে এভাবে মাঝরাস্তায় একা ফেলে চলে আসতে? আমার ভালবাসার চেয়ে উনার কথাগুলো-ই কি তোমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল? আরে, উনি তো আমার সৎ মা। আমি কিসে ভালো থাকবো না থাকবো উনি কী করে বুঝবেন?! নিজের মা হলে ঠিকই বুঝতো আমি কী চাই, কিসে সুখী হবো আমি! কিন্তু তুমিও আমাকে বুঝলে না!? যে পথ না চিনে হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু যে ইচ্ছে করে হারিয়ে যায়, ধরা না দেয় তাকে কী করে খুঁজে পাবে মানুষ? আমার শূন্য জীবনটা তোমাকে পেয়েই পূর্ণ হচ্ছিল। কেন হাতটা ছেড়ে দিয়েছিলে সেদিন, কেন?”

শেষ মুহূর্তে কপালে কপাল ঠেকিয়ে টলমল চোখে কথাগুলো বলে আদিভান। আরদ্রা কিছুই বলতে পারে না। চুপচাপ আদিভানের অভিযোগগুলো শুনে প্রাণ জুড়ায়।

রাজবাড়ীর প্রেতাত্মা – আঁখি আক্তার

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
রাজবাড়ীর প্রেতাত্মা
আঁখি আক্তার

দিঘিপুর গ্রামের পরিত্যক্ত রাজবাড়ীর দিঘির পাড়ে প্রতি অমাবস্যার রাতে একটি করে কুমারী মেয়ের লাশ পাওয়া যায় । যাদের প্রত্যেকের বয়স ষোল বছর। তাই এই গ্রামে ষোল বছরের আগেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। লাশগুলো এতোটাই ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় থাকে যে গ্রামের মানুষের ধারণা এটা কোনো প্রেতাত্মার কাজ। তাই সন্ধ্যার পর কেউ ঘরের বাইর হয় না।

খবরের কাগজে এই অলৌকিক মৃত্যু রহস্যের কাহিনী পড়ে নীল, আঁখি,আশরাফুল ও জান্নাত এই রহস্যের কিনারা খুঁজতে দিঘিপুর গ্রামের উদ্দ্যেশ্যে রওনা হয়। এরা প্রত্যেকেই রহস্যপ্রেমী। রহস্য ভেদ করা পেশা নয়, একরকম নেশা।

গ্রামে প্রবেশ করে ওরা চারজন গ্রামের চারিপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। আচমকা একটা পাগলের সাথে নীলের ধাক্কা লাগে। পাগলটা বিড়বিড় করে বলতে থাকে, “ওখানে যেও না, ও সবাইকে মেরে ফেলবে।”
কিছুক্ষণের জন্য যেন সবাই থমকে দাঁড়ায়। পাগলটা হি হি হি করে হাসতে হাসতে চলে যায়। ওরা বেশ কিছুক্ষণ পাগলটার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। জান্নাত নীলকে ধাক্কা দিয়ে বলে,”কিরে চল।”

সবাই আবার যার যার মতো গ্রামের সরু পথটা ধরে হাটতে থাকে। পথিমধ্যে ওদের সাথে একজন বয়স্ক লোকের দেখা হয়। আশরাফুল লোকটিকে রাজবাড়ীর কথা জিজ্ঞাসা করতেই লোকটা ভয়ে আতঁকে ওঠে। চোখে মুখে স্পষ্ট আতংকের ছাপ প্রতীয়মান। কিছু না বলেই তিনি দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়।
ওরা আবার আগের মতো চলতে থাকে। চলতে চলতে একটা বট গাছের নিচে বসে পড়ে।
কিছুক্ষণ পর ওদের ঘিরে গ্রামবাসীর ছোট খাট একটা ভিড় দেখা যায়। হয়তো ওদের রাজবাড়ী যাওয়ার খবর এতক্ষণে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। ভীর ঠেলে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। কথাবার্তায় বোঝা গেলো ইনি এ গ্রামের মাতব্বর। উনি বেশ বিনয়ী হয়ে বলে,”দেখো বাবারা,জেনে শুনে আগুনে ঝাঁপ দিও না। তোমাদের আগে যারা এসেছে তারা এক রাত পাড় হতেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। ওটা একটা অভিশপ্ত বাড়ি।”

–নীল কৌতূহলবশত জিজ্ঞাসা করে,” অভিশপ্ত মানে?”
মাতব্বর বলতে থাকে,”বহু বছর আগে এই বাড়িটা ছিল রাজা নারায়ন চন্দ্রের। উনি খুব অত্যাচারী শাসক ছিলেন। সর্বদা মহলে মেয়ে নিয়ে পড়ে থাকতো। এই ঘৃণ্য অপরাধ তার স্ত্রী মোহিনী দেবী সহ্য করতে পারেনি। তাই দিঘির জলে নিজের দেহ ত্যাগ করে। তারপর থেকে এই দিঘির পাড়ে কুমারী মেয়েদের লাশ পাওয়া যায়। হয়তো কুমারী মেয়েদের প্রতি ক্ষোপ থেকেই প্রতিশোধ নিচ্ছে। ”

আঁখি কাপা কাপা স্বরে বলে,”আপনারা এতো শিওর হয়ে কি করে বলছেন যে এটা মোহিনীর আত্মা!
কিছু গ্রামবাসী সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়, “আমরা নিজ চোখে দেখেছি।”

রাজ বাড়ীর কাহিনী শুনে আঁখি ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু নীল,জান্নাত আর আশরাফুল রহস্যের নতুন একটা টুইস্ট খুঁজে পায়। গ্রামবাসীর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ওরা রাজবাড়ীতে থাকার সিদ্ধান্ত দেয়। মাতব্বর সাহেব ওদের খাওয়া দাওয়ার দায়িত্ব নেন।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
গ্রামের লোক ভয়ে আতংকিত হয়ে যে যার মতো চলে যায়। আঁখি, নীল,আশরাফুল আর জান্নাত ধীরে ধীরে রাজবাড়ীর দিকে ধাবিত হয়। রাজবাড়ীর দরজা খুলতেই একটা বিকট আওয়াজ হয়। আঁখি চমকে ওঠে। এরপর ওরা ধীরে ধীরে ভেতরে প্রবেশ করে। লক্ষ্য করে বাড়ির দেয়ালগুলোতে শেওলা পড়ে গেছে। ইটগুলো যেন খসে পড়ছে। মেঝেতে এক গাদা ধূলোর আস্তরণ জমে আছে।
নীল একজন মহিলার পেন্টিং এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ভাবে সম্ভবত এটা মোহিনী দেবীর ছবি। আশরাফুল এগিয়ে এসে বলে, “কি মায়াময়ী চেহারা, ঠিক যেন স্বর্গের অপ্সরা। লোকে একেই ভুত বানিয়ে দিলো!”
জান্নাত হাসতে হাসতে বলে,”কিরে তুই কী এর প্রেমে পড়ে গেলি নাকি?
হঠাৎ ঘাড়ে কিছুর ঠান্ডা স্পর্শ পেতেই আঁখি চিৎকার করে ওঠে।
জান্নাত দৌড়ে আসে। বলে, “কী সমস্যা তোর?”

–আমার ঘাড়ে কিছু একটা আছে।

–“আরে ভীতু। কোনো ভুতপ্রেতে ভর করেনি তোর ঘাড়ে। পেছন ঘুড়ে দেখ লতাপাতা ঝুলছে।”
আঁখি পেছন ঘুড়ে ঝুলন্ত লতাপাতা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। নীল আর আশরাফ হাসতে হাসতে বলে,”আঁখি, তুই পারিসও বটে। ”

জান্নাত আঁখিকে ধাক্কা দিয়ে বলে,”কিরে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি আমাদের সাথে যাবি? এমনিতেও সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ভুত এলে কিন্তু আমরা দায়ী না।”
আঁখি আর কিছু না বলে ওদের পেছন পেছন যেতে থাকে। সবাই মিলে রাজবাড়ীর মাঝখানের মেঝেটা পরিস্কার করতে থাকে। পরিস্কার করার এক পর্যায়ে আঁখি একটা শ্বেত পাথরের টুকরা পায়। সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে,”আমি কিছু একটা পেয়েছি।”
–পেত্নীর বর পেয়ে গেছিস নাকি! (জান্নাত)
—আরে না,একটা পাথর পেয়েছি। (আঁখি)
—ওওও,এমন ভাব করছিস যেন মণি মুক্তা পেয়ে গেছিস।

নীল আঁখির হাতের পাথরটা খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। বলে ওঠে, “আরে এতো ডায়মন্ড।”
নীলের কথা শুনে সবাই চমকে ওঠে।
আশরাফুল পাথরটাকে পর্যবেক্ষণ করে বলে,”এ বাড়িতে কারো যাওয়া আসা নেই অথচ পাথরটা চকচক করছে! ধূলাবালিও লেগে নেই। আশ্চর্য তো!”

ঠিক তখনই বাইরে কারো ডাক শোনা যায়। সম্ভবত মাতব্বর সাহেব ওদের জন্য খাবার পাঠিয়েছে। আশরাফুল খাবারটা আনতে যায়। মাতব্বরের চাকর রহিম মিয়া বলে,”মাতব্বর সাহেব এই গ্রামে দেবতার মতো। হগলের ভালো মন্দ নিয়া চিন্তা করে। আপনারা তার কথা হুনেন,চইলা যান। এই বাড়ী ভালা না।” আশরাফুল কিছু না বলে শুধু একটা মুচকি হাসি দেয়।

সেদিন রাতে খাওয়া দাওয়া করে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই আঁখি ভয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে পড়ে। কাল রাতের স্বপ্নের কাহিনী বলতে থাকে। বলে,”মোহিনীর প্রেতাত্মা আমাদের এখান থেকে চলে যেতে বলছে।” আঁখির কথা শুনে সকলে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। আজব ব্যাপার হলো আঁখির মতো সবাই এই একই স্বপ্ন দেখেছে। কিন্তু এটা কী করে সম্ভব! নীল আর আশরাফুল কিছুটা ভাবনায় পড়ে যায়।

জান্নাত বলে ওঠে,”দেখ আমরা প্রত্যেকে সেম জিনিস নিয়ে ভাবছি তাই স্বপ্নটাও সেম দেখেছি, সিম্পল।” সবাই জান্নাতের কথায় সম্মত হলো। কিন্তু আঁখি অদূরে পড়ে থাকা একটা মৃত কাককে ইশারা করে বলে,”যদি স্বপ্নই হয়ে থাকে তাহলে এটা এখানে এলো কি করে?” আঁখির মতো সকলেই চমকে উঠলো। কাল রাতের স্বপ্নেও এই কাকটা ছিল। কাকের পাশের দেয়ালটাতে রক্ত দিয়ে লেখা,”চলে যাও।” আঁখি বেশ ভয় পেয়েছিল।

পরেরদিন সকালে ওরা সকলে মিলে রাজবাড়ী আর দিঘির পাড়ের প্রত্যেকটা জিনিস খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। সব কিছু স্বাভাবিক। এমন মনে হচ্ছে যেন এখানে কিছুই ঘটেনি। দিনটা ভালোই ভালোই কেটে যায়। রাতে যথারীতি খাবার খেয়ে চারজন ঘুমিয়ে আছে। ঠিক তখনি সাদা রঙের জামা পড়া একটা মেয়ে ওদের সামনে এসে হাজির হয়। ঠিক ছবিতে দেখা মোহিনীর মতো বেশভূষা। জামাটায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। ভয়ার্ত মেয়েলী কন্ঠে আবারো সকলকে উদ্দ্যেশ্য করে বলতে থাকে,”চলে যাও।”
তখনই নীল চোখ মেলে তাকায়। নীলকে জাগতে দেখে মেয়েটি দৌড়ে পালায়। নীল মেয়েটাকে ধরার চেষ্টা করে,পিছু নেয়। কিন্তু দিঘির পাড়ে এসেই মেয়েটি যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। নীল তড়িঘড়ি করে মহলে ফিরে আসে। জল ছিটিয়ে জান্নাত,আঁখি ও আশরাফুলের ঘুম ভাঙায়। আঁখি কাঁদোকাদো গলায় বলে,”আজো ওই স্বপ্নটা দেখেছি। চল না বাড়িতে চলে যায়।”

—স্বপ্ন নয়,এগুলো সত্যি।” নীলের কথা শুনে আঁখির মতো জান্নাত আর আশরাফুলও হতবাক হয়ে যায়।
পরেরদিন সকালে সবাই ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিজ শহরে যাওয়ার স্বিদ্ধান্ত নেয়। যাওয়ার আগে মাতব্বরকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে যায়। মাতব্বর ওদের সিদ্ধান্তে খুব খুশি হয়। ওদের জীবন বেঁচে যাবে এই ভেবেই আশ্বস্ত হয়।

–নীল মাতব্বরের সাথে হাত মেলাতে থাকে। হাতের আংটির দিকে নজর পড়তেই পকেট থেকে পাথরটা বের করে বলে,”এই পাথরটা সম্ভবত আপনার।”
চেয়ারম্যান হাসি হাসি মুখ করে বলে,” হ্যাঁ এটা আমার আংটির পাথর। হারিয়ে গেছিলো। কোথায় পেলে?”
আশরাফুল বলে ওঠে,রাজবাড়ীতে।
মূহুর্তেই মাতব্বরের মুখটা কালো হয়ে উঠলো।
তখন নীল বলে,”কিন্তু আপনি তো এই রাজবাড়ীর ধূলোও মারান না তাহলে রাজবাড়ীতে আপনার আংটির পাথর এলো কোত্থেকে ?”

গ্রামবাসীরা কি ঘটছে দেখার জন্য মাতব্বরের বাড়িতে ভিড় জমায়। ওদের কথা শুনে সকলেই অবাক হয়ে যায়।
আশরাফুল রহিম মিয়ার সামনে গিয়ে বলে,”অনেক সময় শয়তানও দেবতার রুপে আসে। আপনাদের এই রাজবাড়ীর প্রেতাত্মা মাতব্বর সাহেব সয়ং। তিনিই এতদিন যাবত এই হত্যাকান্ডগুলো ঘটিয়ে আসছেন।”
গ্রামবাসীর সাথে সাথে রহিম মিয়াও হতবাক হয়ে যায়। মূহুর্তেই গ্রামে একটা হৈ হুল্লোল শুরু হয়ে যায়। মাতব্বরের মুখটা শুকিয়ে যায়। তিনি আমতা আমতা করতে থাকে। পরক্ষণেই রাগত স্বরে বলে,” কি প্রমাণ আছে তোমাদের কাছে,এই পাথরটার ভিত্তিতে আমাকে খুনি প্রমাণ করতে পারো না। এটা আমার নাও হতে পারে।”

–ওয়েট ওয়েট মাতব্বর সাহেব, আরো প্রমাণ আছে। আমরা পুলিশকে খবর দিয়েছি,পুলিশ এলে আপনিই সব গড়গড় করে বলে নিবেন। (নীল)

-গ্রামবাসী কিছুতেই মাতব্বরকে খুনি মানতে চাইছে না। সকলে সুক্ষ্ম প্রমাণ চাইছে। মাতব্বরও তাদের সাথে সায় দিচ্ছে।

—নীল তখন মাতব্বরকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,”প্রমান তো অনেক কিছুই আছে। প্রথম দিন এই মহামূল্যবান পাথর পাওয়ার পর এটাই ভেবেছিলাম যে এই গ্রামে একমাত্র আপনার কাছেই এটা থাকা সম্ভব। আমাদের গ্রামে আসাতে সব থেকে বেশি অসন্তুষ্ট আপনিই হয়েছিলেন। আমাদেরকে খাবারের নাম করে খাবারের সাথে যে নেশা দ্রব্য মেশাতেন সেটা আমরা প্রথমদিনই টের পেয়েছিলাম। আর পরেরদিনতো বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে। পরেরদিন আমি আপনার দেওয়া খাবার খায়নি। যার ফলে বাকিদের থেকে আমার স্বপ্ন আর বাস্তবের কাহিনী আলাদা। ”

আশরাফুল এগিয়ে এসে বলে,”সেদিন রাতে ঘুম ভাঙার পর আমরা রাজবাড়ীর ছাদে যায়। আপনার বাড়ির দিকে নজর রাখতে গিয়েই দেখলাম,আপনার বাগাতে কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা চলছে। তখনি ঘটকা লেগেছিল। তাই আপনার জালেই আপনাকে ফাঁসালাম। আপনার ঘরে গিয়ে মেডিসিন মাখানো রুমাল আপনার নাকের কাছে ধরতেই আপনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলেন। তখন আমরা আপনার ঘর তল্লাশি করি। আপনার ঘরে শখানেক এর বেশি কালো জাদু আর অমরত্ব লাভের বই খুঁজে পেয়েছি। আর আপনার যেই লাল ডায়রি, তাতে মৃত সংখ্যা ও মৃতদের গ্রাম সম্পর্কে জেনেছি। বাগানের গুপ্তস্থানটা দেখার আগেই রহিম মিয়া জেগে যায়। তখন সেখান থেকে পালিয়ে আসি। এখন পুলিশ এসেই না হয় বাগান তল্লাশি করবে।”

মাতব্বর চেঁচাতে চেঁচাতে বললেন,”আমার সাধের বাগানে কেউ হাত দেবে না।”
ঠিক তখনই পুলিশ আসে। পুলিশ এসেই বাগান খুড়তে থাকে। বাগানের কর্নার থেকে একটা বাক্স উদ্ধার করে। বাক্স খুলতেই সেখানে একটা পুঁটলিতে রাখা সেই জামা,নকল চুল আর কিছু তন্ত্র সাধনার জিনিস উদ্ধার করে।

ভীর ঠেলে সেই পাগল এসে মাতব্বরের পাঞ্জাবী টেনে ছিড়ে ফেলে। বলতে থাকে,”তুই আমার মেয়েকে মেরেছিস, না?
মাতব্বর পাগলটাকে দূরে ছিটকে ফেলে দিয়ে বলে,”হ্যাঁ আমিই মেরেছি। আমি অমর হতে চেয়েছিলাম।”
পুলিশ মাতব্বরের হাতে হাতকড়া পড়াতে পড়াতে বলে, অমর হওয়ার তন্ত্রমন্ত্র এবার জেলে গিয়েই করবেন।

(সমাপ্ত)

গল্প:সংগ্রামী জীবন – কলমে:সিয়াম হোসেন

0

#গল্পপোকা_ছোটোগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
গল্প:সংগ্রামী জীবন
কলমে:সিয়াম হোসেন

মানুষ জন্মের পর থেকেই কখনো সুখী হয়ে জন্মাতে পারে না।একজন মানুষকে সুখী হতে হলে তাকে সংগ্রাম করতে হয়। আমি এমন একটি চরিত্র নিয়ে গল্পটি শুরু করবো।

একটি ছেলে নাম তার আকাশ। নামের মতো তার স্বপ্নটাও ছিলো আকাশের সমান। তার স্বপ্ন ছিলো সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়াশোনা করবে।কিন্তু মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা তাকে তার ভাগ্যের পরিনাম পরিবার থেকে শূন্যতা দিয়েছেন।তাদের গ্রামের মধ্যে আকাশ রাই ছিলো সবচেয়ে দরিদ্র। মানে তার পরিবারে তার বাবা মা ছাড়া আর কেউ ছিলো না। তাকে ঠিক মতো খাওয়া -দাওয়া,ভালো পোষাক পরার মতো সামর্থ্য ছিলো না তার পিতা-মাতার। ছেলেটি বাবাকে শুধু একটি কথাই বলেছেন, বাবা তুমি আমাকে এক বেলা না খেয়ে রাখলেও চলবে কিন্তু আমার পড়াশোনা টা চালিয়ে যেতে দিও। ওহ! আপনাদের কে তো বলাই হয় নি আকাশ কোন ক্লাসে পড়াশোনা করে?
আকাশ জে এস সি পরীক্ষা দিয়ে গোল্ডেন A+ পেয়ে এই বার নবম শ্রেণীতে পড়ে। তার পড়াশোনার প্রতি ছিলো গভীর নেশা। তারপর বাবার সাথে বিভিন্ন মানুষের কাজ করে তাদের সংসার চলে আর আকাশের পড়াশোনা। আকাশ সপ্তাহে ৩ দিন স্কুলে যেতে পারে আর বাকি দিন গুলো তাকে কাজ করে কাটাতে হয়। এভাবে চলতে চলতে আকাশ যখন এস এস সি পরীক্ষা দিবে তখন তার ফর্ম ক্লাবের টাকার প্রয়োজন।পরে আকাশ বাবাকে বললে বাবা টাকা জোগাড় করতে পারেন নাই। তখন স্কুলের শিক্ষক-গন তার বিষয় টা বিবেচনা করে তাকে ফর্ম-ক্লাব করিয়ে নেয়। তারপর আবার এস এস সি পরীক্ষায় আকাশ জেলাতে প্রথম হন। পিতা-মাতার মুখ উজ্বল হয়ে যায় সন্তানের সুসংবাদ পেয়ে। কষ্ট করে বাবার সাথে কাজ করে কলেজে ভর্তি হলেন আকাশ। প্রথম বছর পড়ার পর হঠাৎ করে তার বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে যান। ২/৩ দিন পরে তার পিতা মারা যান। তাদের পরিবারে আবার দুঃখের ছায়া পড়লো। বাবা মারা যাওয়ার কষ্ট কে বা সইতে পারে। একটি পরিবারের স্তম্ভ হলো পিতা। পিতার মৃত্যু মানে পরিবারে একটি স্তম্ভের পতন। আকাশ খুব চিন্তায় পরে গেলো তার মাকে নিয়ে কিভাবে সে তাদের সংসার সামলাবে। তার পড়াশোনা চালানো অনেক টা কষ্টের হয়ে গেলো। আকাশ এবার ভাবলেন তার পড়াশোনাটা ছেড়েই দিতে হবে এইবার।আকাশ তার মাকে নিয়ে শহরে গেলেন। তার মা বাসা-বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান আর আকাশ টিউশনি করে তার পড়াশোনা চালান। এভাবে এইচ এস সি পরীক্ষা টা শেষ করলো। এইচ এস সি পরীক্ষা টা তেও আকাশ GPA-5 পেলো। পরে আকাশ এডমিশন টেস্ট এর জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। দিনে টিউশনি করে এসে রাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতেন আকাশ। এভাবে তার কয়েক মাস কেটে গেলো। মাকে নিয়ে তার স্বপ্নটাও যে অনেক বড়। এডমিশন টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পরীক্ষা দেওয়ার সময় সে শুনতে পেলো তার মা মারা গেছেন। পরীক্ষা সম্পূর্ণ শেষ না করেই তিনি ছুটে চলে আসলেন মায়ের কাছে। তার জীবনের শেষ ভরসা টাও পৃথীবির বুক ছেড়ে চলে গেলো। তার স্বপ্ন টাও আজ থেকে শেষ হয়ে গেলো। শেষ পর্যন্তও মায়ের সাথে তার দেখা হলো না। মাকে ছাড়া আকাশ এখন শূন্য হয়ে গেছেন। তার স্বপ্নের সব পতন হয়ে গেলো। মাকে নিয়ে তার কত স্বপ্ন ছিলো।মাকে রাজরানি করে রাখবে যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়বেন।কিন্তু তার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো মা বিহীন। পরে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর যখন রেজাল্ট দেয় তখন আকাশ মেধাতালিকায় ২য় হয়েছে। কিন্তু আকাশ এর খুশির খবর দেওয়ার মতো এখন আর কেউ নেই। পিতা-মাতাকে হারানোর পর তার জীবন থেকে সব স্বপ্ন চলে গেছে। তার লক্ষে ঠিকি পৌঁছতে পারবে কিন্তু তার বাবা-মাকে নিয়ে নয়।
পরিশেষে বলতে চাই,একটা দরিদ্র মানুষের সংগ্রাম করে তার লক্ষে পৌঁছাতে হয়। সংগ্রামী জীবন মানে কষ্টের জীবন। বাব-মা ছাড়া পুরো পৃথীবিটা আমার কাছে অচল। কারণ,বাবা-মায়ের সাপোর্ট সব সময় লক্ষে পৌঁছাতে সাহায্য করে। পৃথীবির কোন মানুষই সংগ্রাম করা ছাড়া সফল হতে পারে নাই। তাই আমাদের সবাইকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সংগ্রাম করে যেতে হবে। তাই আমরা আমাদের লক্ষে পৌঁছাতে পারবো।

ধন্যবাদ সবাইকে

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

আত্মজা – কলমে প্রমা মজুমদার

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগষ্ট_২০২০
আত্মজা
কলমে প্রমা মজুমদার

অর্না আর শান্তর বিয়ের আজ ৮ বছর পুর্ণ হলো। শান্ত ভুলে গেছে,
সকালে বেরিয়ে গেছে এখনো ফেরেনি, অর্না ওর প্রিয় খাবার রান্না করেছে। শান্ত অনেক বড়ো চাকরি করে, সারাদিনই অনেক ব্যস্ত।এখন বাজে রাত দশটা, এমন সময় শান্তর গাড়ির শব্দ পাওয়া গেল ও বাসায় ঢুকে সরাসরি শোয়ার ঘরে চলে গেল আর বলল,আমি খেয়ে এসেছি।
অর্না ওর অপেক্ষা করছিলো ও আসলে এক সাথে খাবার খাবে,কিন্তু শান্ত বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে শুনে অর্নারও আর একা একা খেতে ইচ্ছা করছেনা।বুয়াকে সব উঠিয়ে রাখতে বলে নিজেও শোয়ার ঘরে চলে যায়।
আজকাল শান্ত ওর ঘরে ঘুমায় না, পাশের ঘরে থাকে। ওর ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। অর্নার খুব ইচ্ছে করছে শান্তর কাছে যেতে ওকে জরিয়ে ধরে বলতে “শুভ বিবাহ বার্ষিকী ” কিন্তু ওদের মধ্যে যে দেয়াল তৈরি হয়েছে এখন আর তা সম্ভব না।
শান্ত বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে অর্না নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পেয়েছে হয়তো খায়নি,ওর জন্য অপেক্ষা করছিলো হয়তো, আজকের দিনটা ইচ্ছে করেই সে ভুলে যাওয়ার অভিনয় করেছে, শান্ত চায় না অর্না আবার কোনো স্বপ্ন দেখে আবার তাদের সম্পর্কটা ঠিক হয়ে যায়।
শান্ত এগুলো ইচ্ছা করেই এড়িয়ে যায়।

অর্না ঘুমের ঔষধ খেয়ে শুতে গেল।নাহলে সারারাত হয়তো না ঘুমিয়ে কাটাতে হবে একটা ভুল সিদ্ধান্ত আজ ওকে ওর সবচেয়ে কাছের মানুষটার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
অর্না ঘুমের মধ্যে একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখলো সে আর শান্ত একটা নদীর সামনে দাড়িয়ে আছে আর তাদের দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে ছোট একটা মেয়ে।কি সুন্দর দেখতে মেয়েটা ওর আর শান্তর হাত ধরে আছে।অর্নার খুব ইচ্ছে হচ্ছে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আদর করতে ওকে শক্ত করে ধরে থাকতে যেন কোথাও না যেতে পারে। কিন্তু হঠাৎ একটা দমকা হাওয়ায় মেয়েটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল আর শান্ত আস্তে আস্তে ওর থেকে দুরে চলে যাচ্ছে। ঘুমের মধ্যেই অর্নার চোখ থেকে পানি পরতে শুরু করলো।
শান্ত অনেক সকালে ঘুম থেকে ওঠে, ওর বরাবরের অভ্যাস।অর্নার ঘরের দরজা খোলা ও এখনো ঘুমাচ্ছে। শান্ত ওর ঘরে ঢুকলো অর্নাকে ঘুমের মধ্যে এখনো আগের মতোই সুন্দর লাগে,সে অর্নার বিছানার পাশে গিয়ে দাড়ালো, কিন্তু হটাৎ ওর চোখ পরলো অর্নার মাথার বালিশটা ভেজা। হয়তো কেঁদেছে!

ওরা বড়ো একটা বাড়িতে থাকে, সারা বাড়িতে লোক বলতে সে, অর্না আর একজন কাজের লোক। চারটি বেডরুম, শুধু তারা দুজন থাকে বাকি গুলো খালি।
ও নিজের রুমে চলে গেল অফিসের জন্য তৈরি হতে হবে।

অর্না ঘুম থেকে ওঠে কিছুক্ষণ বিছানার উপর বসে রইল। ওর সারাদিন করার মতো তেমন কিছু নেই।চাকরিটাও ছেড়ে দিয়েছে অনেক আগেই। শান্ত হয়তো বেরিয়ে গেছে,একটা সময় ছিলো শান্তর অফিসে যাওয়ার সময় অর্নাকে ওর সামনে থাকতে হতো ওর প্রয়োজনীয় সব ওকেই দিতে হতো এখন আর শান্তর ওকে দরকার হয় না।

সকালের পর থেকে টুকটাক ঘরের কাজ করে অর্না সময় কাটায়।সারাদিন ঘরে থেকে ওর দম বন্ধ হয়ে আসে কিন্তু ওর কিছুই করার নেই।শান্ত ওকে এড়িয়ে চলে, এটা সে বুঝতে পারে। বাবার বাড়িতেও যেতে ইচ্ছে করেনা একা একা বসে শুধু অতীতের কথা ভাবে।

একটা সময় ছিলো যখন শান্ত ওকে পাগলের মতো ভালোবাসতো,আর ও শান্ত ছাড়া চোখে অন্ধকার দেখতো, সেই সম্পর্ক আজ একটা বোঝা হয়ে ওঠেছে ওদের দুজনের জীবনে।

নিজেরা পছন্দ করে বিয়ে করেছিলো,
পরিবারও মেনে নিয়েছিলো।
শান্ত অনেক ছোট বেলায় মা-বাবাকে হারায়, কাকার পরিবারে মানুষ নিজের যোগ্যতায় পড়াশোনা শেষ করে একটা ভালো চাকরি পেয়েছিলো।অর্না পরিবারের একমাত্র মেয়ে তার পছন্দই সবাই মেনে নেয়।
খুব ধুমধাম করে ওদের বিয়ে হয়। শান্ত নতুন একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় আর অর্না নিজের মনের মতো করে সেটা সাজায়।শান্তর খুব ইচ্ছা
বাচ্চা নিয়ে নেয়ার কিন্তু অর্না আরও কিছুদিন সময় নিতে চায়,আসলে
অর্নার বরাবরই সখ চাকরি করবে,নিজের একটা পরিচয় তৈরি করবে তাই সে তাড়াতাড়ি মা হতে চায় না। সে পত্রিকা দেখে বিভিন্ন যায়গায় আবেদনও করতো, ইন্টারভিউ দিয়েছে কয়েকটা এর মধ্যে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে তার চাকরি হয়ে যায়।

শান্তর খুব একটা ইচ্ছা ছিলো না,কিন্তু অর্নার মুখের দিকে তাকিয়ে না করতে পারলো না। তবে একটা শর্ত দিলো, ও খুব তাড়াতাড়ি বাবা হতে চায় তখন কিন্তু কোন অজুহাত দেওয়া যাবে না।

প্রথম একবছর বেশ ভালোই যায়।
অর্না খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো করতে শুরু করেছে, ওর বসেরা ওর খুব প্রশংসা করে,শুনে শান্তও খুশি হয় অর্না তো এটাই চেয়েছিলো।

কয়েকদিন ধরে অর্নার শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে, কিছুই খেতে পারছে না, খুব দুর্বল লাগে আবার বমিও হচ্ছে, সেদিন অফিস থেকে ফেরার পথে শান্তকে বললে শান্ত সাথে সাথে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।
ডাক্তার শান্তর বন্ধু তাই বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি তিনি অর্নাকে পরীক্ষা করে বললেন, “শান্ত তুমি বাবা হতে যাচ্ছ।” ডাক্তারের কথা শুনে শান্তর চোখে পানি চলে আসে ডাক্তারকে বললো, এতো দিন সে এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো আজ তার মতো খুশি আর কেউ নেই। অর্না খুব লজ্জা পেয়ে যায় শান্তর পাগলামি দেখে। ডাক্তার আরও কিছু টেস্ট করতে দিলো শান্ত সঙ্গে সঙ্গে সব টেস্ট করালো,বাসায় ফেরার সময় বাইরে থাকেই খাবার নিয়ে এলো অর্নাকে যেন আর রান্না করতে না হয়।

শান্ত বললো এখন খুব সাবধানে থাকতে হবে পারলে কয়েকদিনের জন্য ছুটি নাও।অর্না কথাটার কোন গুরুত্ব দিলো না বললো, পরে অনেক দিন ছুটি নিতে হবে এখন নিবো না।

রাতে বিছানায় শুয়ে শান্ত ভাবছে, ওর জীবনে বাবা-মার অভাবটা সবসময়ই ছিলো কিন্তু তার সন্তানকে সে সেই অভাব কোনদিন বুঝতে দিবে না খুব ভালোবাসা দিয়ে বড়ো করবে তার সন্তানকে।

অর্নার সামনে একটা ট্রেনিং-এর কথা চলছে এই ট্রেনিং টা করতে পারলে ওর প্রমোশন নিশ্চিত। কিন্তু ট্রেনিংটা হবে সিলেটে কিভাবে শান্তকে বুঝাবে সেটাই ভাবছে, ও বাচ্চার ব্যাপারে এখনি যে পাগলামি শুরু করেছে।অর্না চাইছিলো আর কিছুদিন পর বাচ্চা নিতে কিন্তু এখন যখন হয়ে গেছে মেনে নিতেই হবে
আর শান্তর খুশিতেই ওর খুশি।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে অর্না দেখলো শান্ত সকালের নাশতা সব করে ফেলেছে আর তার জন্য বিভিন্ন রকমের খাবার আলাদা ভাবে রান্না করেছে। অর্নার এসব দেখে খুব ভালো লাগছে একটা নতুন শান্তকে সে দেখতে পাচ্ছে।
অফিসেও তিনবার ফোন করেছে খাবার খেয়েছে কিনা,শরীর ঠিক আছে কিনা এসব জানার জন্য, অর্না কাজের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস বারবার ফোন ধরতে ওর বিরক্ত লাগছে।

অর্নার রিপোর্ট নেয়ার জন্য শান্ত ডাক্তারের কাছে যায়,সব দেখে ডাক্তার বললো অর্নার প্রেগন্যান্সিতে একটা সমস্যা আছে ওকে খুব সাবধানে থাকতে হবে। আর নিয়মিত ঔষধ খেতে হবে। তিনি আরও বললো, ভাবনার কিছু নেই প্রথম কয়েকমাস একটু সাবধানে থাকলেই হবে।
বাসায় ফিরে শান্ত দেখলো অর্না শুয়ে আছে ওর বুকটা কেপে উঠলো কিছু হয়নি তো?
অর্না বললো, আরে না কিছু হয়নি এমনিই রেস্ট নিচ্ছিলাম তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি চা নিয়ে আসছি।
শান্ত ওকে বিছানা থেকেই উঠতে দিলো না নিজেই চা করলো এমনকি অর্নাকে জিজ্ঞেস করে করে রাতের রান্নাটাও করলো। অর্নার নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে সে এমন একজন স্বামী পেয়েছে তার জন্য।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
এভাবেই কাটলো ছয় মাস,শান্ত প্রতিটা দিন ওর পাশে আছে ওদের সন্তানের বেড়ে ওঠাটা অনুভব করছে, ওকে ছুয়ে ওর স্পন্দন বুঝতে পারছে।

অর্নার ট্রেনিংয়ে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে শান্ত কিছুতেই রাজি না এই অবস্থায় ওকে দুরে কোথাও পাঠাতে।
অর্না জেদ করছে খুব, ও এই ট্রেনিংটা করবেই! এটা তার ক্যারিয়ারের জন্য খুব ভালো একটা সুযোগ। আর তাছাড়া তার কোন সমস্যা হচ্ছে না একসপ্তাহ ওকে সিলেট থাকতে হবে সেখানেই ট্রেনিং সেন্টার। অনেক কষ্টে শান্তকে রাজি করিয়েছে আর কথা দিয়েছে সেখান থেকে ফিরে আর অফিসে যাবেনা অনেক দিনের জন্য ছুটি নিয়ে নেবে।

অর্নার জেদের কাছে শান্তকে হার মানতেই হলো। সে নিজে অর্নার ব্যাগ গুছিয়ে দিলো বারবার বললো ঔষধগুলো ঠিক সময়মতো খেয়ে নিতে। সে নিজেই অর্নাকে অফিসের সামনে দিতে গেলো আরও কয়েকজন আছে সবাই একসাথেই যাবে।
অর্না গেছে আজ চারদিন, প্রতিদিনই শান্তর সাথে ওর কথা হচ্ছে কিন্তু আজ একবারও ফোন করেনি অর্না বলেছে সে-ই ফোন করবে শান্ত যেন যখন তখন ফোন না করে। শান্ত অফিসেই আছে কিন্তু অর্নার সাথে কথা হয়নি বলে মনটা খুব ছটফট করছে।শান্ত দুইবার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু ফোন বন্ধ।

রাতে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে শান্তর মোবাইলে ফোন আসে,শান্ত কলটা ধরার পর শুধু একটা কথাই বুঝতে পারে, “অর্না হাসপাতালে ভর্তি তাড়াতাড়ি চলে আসো।”
শান্ত এক মুহূর্তও দেরি করে না অফিসের গাড়ি নিয়ে সাথে সাথেই রওনা হয় সিলেটের উদ্দেশ্যে।ওর
কাছে প্রতিটা মিনিট এক ঘন্টার মতো মনে হচ্ছিল নানা রকম অজানা ভয় ওকে ঘিরে ধরেছে। একদিকে অর্নার জন্য চিন্তা অন্যদিকে অনাগত সন্তানের জন্য ভাবনায় ওর পাগল প্রায় অবস্থা।

যখন সে হাসপাতালে পৌছালো অর্নার তখন সেন্স নেই ওকে কেবিনে রাখা হয়েছে অবস্থা খুব খারাপ, শান্ত ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলো আমার সন্তান?
ডাক্তার বললো, “আমরা ওকে বাঁচাতে পারিনি মায়ের পেটেই সে মারা গেছে “। শান্তর পৃথিবীটা এক মুহূর্তের মধ্যেই উলট পালট হয়ে গেল। ওর এতো দিনের আশা,স্বপ্ন সব শেষ হয়ে গেলো।ডাক্তার বললো, ওর একটা মেয়ে হয়েছিলো, শান্তকে তার মেয়ের কাছে নিয়ে গেল একটা কাঁচের বাক্সে মেয়েটাকে রাখা হয়েছে।শান্ত মেয়েটার কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পরলো অর্নার কলিগরা বাইরে থাকে এই দৃশ্য দেখছিলো কেউই চোখের জল আটকে রাখতে পারলো না।

পরদিন অর্নার জ্ঞান ফিরলো সে কিছু বুঝতে পারার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে।
ডাক্তার শান্তকে তার জীবনের সবচেয়ে নির্মম সত্যিটা বললো, অর্না আর কখনো মা হতে পারবে না ওর জরায়ু কেটে ফেলতে হয়েছে।
শান্ত কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইল,অর্নার এক কলিগ শান্তর পাশে বসলো তার হাতটা ধরে বললো, আমাদের ক্ষমা করবেন আমরা কিছু করতে পারলাম না। তার কাছেই শান্ত জানতে চায় কিভাবে এটা হলো?
তখন সে বললো, কাল সকাল থেকেই অর্না খুব ব্যাস্ত ছিলো, সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকেই কাজ করেছে দুপুরের ঔষধটাও নাকি খেতে ভুলে গেছে, সন্ধ্যার পর যখন তারা রুমে ফিরলো তখনই ওর শরীর খারাপ হতে থাকে, প্রচন্ড ব্যাথা আর একপর্যায়ে ব্লিডিং শুরু হয় তখনই তারা তাকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসে।
ডাক্তার ওকে দেখেই বলে এখনি অপারেশন করতে হবে নাহলে ওকে বাঁচানো যাবে না।

যে সন্তান ছিলো ওদের ভালোবাসার প্রতীক যার জন্য সে এতো দিন ধরে অপেক্ষা করছে আজ অর্নার ভুলের কারণে সেই সন্তানকে হারিয়েছে এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।
আবার অর্নাকেও সে অনেক ভালোবাসে ওকেও কিছু বলতে পারছে না কি করবে সে?একটা অদ্ভুত পরিবর্তন হয়ে যায় শান্তর মধ্যে।

সে অর্নার সাথে দেখা করতে গেলো অর্না ওকে দেখেই কেঁদে দেয় কিন্তু এই কান্নার কোন মুল্য শান্তর কাছে নেই।যে তার সন্তানের মৃত্যুর জন্য দায়ী তাকে সে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবে না।
অর্নার কাছে চাকরিটা সন্তানের চেয়ে বেশি মুল্যবান ছিলো আর তার জন্যই আজ এই পরিস্থিতি। শান্ত ওর সাথে বেশি কথা বলেনি পরদিন ওকে নিয়ে চলে আসে।

অর্নার মা খবর পেয়ে ওদের বাসায় আসেন শান্ত অর্নাকে তার সঙ্গে নিয়ে যেতে বলেন।
অর্না বুঝতে পারে শান্ত খুব কষ্ট পেয়েছে কিন্তু সে-ও তো অনেক কষ্ট পাচ্ছে আর এই সময় ওকে ছেড়ে যেতে অর্নার একটুও ইচ্ছা করছে না।

আস্তে আস্তে শান্তর মধ্যে পরিবর্তন হতে লাগলো ও যেন নতুন মানুষ, দরকার ছাড়া অর্নার সাথে কোন কথাই বলে না সারাদিন বাইরে থাকে রাত করে বাসায় ফিরে।
যেই সময়টায় শান্তকে অর্নার সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো সেই সময়ই শান্ত ওর থেকে দূরে সরে গেলো।

একটা দুর্ঘটনা ওদের আলাদা করে দিয়েছে,ওদের সন্তানের সাথে সাথে ভালোবাসাটাকেও নিয়ে গেছে।

আজ এতোগুলা বছর ওরা একই ছাদের নিচে আছে কিন্তু ওদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। একাকিত্ব অর্নাকে গ্রাস করেছে।তারপরও আছে যদি কোনদিন শান্ত আবার কোনদিন তাকে ভালোবাসে কাছে টেনে নিতে চায়।

শান্ত মাঝে মাঝে একটা অনাথ আশ্রমে যায় সেখানের কয়েকটা মেয়ের সব খরচ সে দেয়। ওখানে সে কিছুটা সময় কাটায় হয়তো ওদের মধ্যেই নিজের আত্মজাকে খোঁজে।

আমার চুপকথা – লেখা সুমাইয়া আক্তার মনি

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
আমার চুপকথা
লেখা সুমাইয়া আক্তার মনি

মা মারা যাওয়ার দেড় মাস যেতে না যেতেই বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। আমার বয়স ছিল তখন ছয় মাসের মতো। তখন না পেয়েছি মায়ের ভালবাসা, না পেয়েছি বাবার। দাদী, ফুফু, চাচাদের কাছেই বড় হওয়া আমার।

সেই ছয়মাস থেকেই বাবার অবহেলায় বড় হয়েছি। বাবা যখন বাড়িতে আসতেন সৎ মা সারাক্ষণ বিচার নিয়ে বসে থাকতেন। কিছুক্ষণ দাদীর বিচার, কিছুক্ষণ ফুফুর, বাকিসময় আমার বিচার। বাবা অন্যকাউকে কিছু না বললেও আমাকে ভয়ংকরভাবে মারা শুরু করেন। পিঠে বাঁশের কঞ্চির দাগগুলো স্পষ্ট দেখা যেত। শব্দ করে কাঁদলেও হাত-পা একসাথে করে উঠোনে ছুড়ে মারতো। ছয় বছরের একটা ছেলেকে এভাবে ছুড়ে মারলেন নিজের বাবা। ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলেও ফিরে তাকাননি তিনি। সেদিন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরায় উঠোনের অবস্থাও নাজেহাল ছিল। উঠোনে রাখা ইটের কোণায় লেগে মাথা ফেটে যায়। সেদিন ফুফু ছুটে আসছিল আমার কাছে কিন্তু ফুফুকেও অনেক কথা শুনতে হয়। সে কেঁদে দিয়েছিলো সেদিন। মা না থাকলেও ফুফুর ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিল না। প্রতিদিন গোসল করানো, স্কুলে যাওয়ার সময়ে সবকিছু গুছিয়ে দেওয়া ফুফুর নিত্যদিনের কাজ ছিল।
বয়স ধীরেধীরে বাড়ছে। সবকিছু বুঝতে শিখেছি সাথে ফুফুকে হারানোর ভয়ও শিখেছি। মেয়ে হলে যে স্বামীর বাড়িতে যেতে হবে এই কথাটিও মাথায় এসেছে। এমনকি কিছুদিন যাবৎ ফুফুর জন্য একেরপর এক সম্বন্ধ আসছে । প্রতিবার দরজার আড়াল থেকে কেঁদে দিতাম। ফুফু চলে যাবে খুব শীঘ্রই, এই ভেবে।

অবশেষে আসলো সেই দিন। আজ শুক্রবার ফুফুর বিয়ে। মোল্লা বাড়ির মসজিদে কাকার হাত ধরে যাচ্ছি। সেখানেই বিয়ে হবে। সবার মনে হাসি-আনন্দের ছড়াছড়ি বয়ে যাচ্ছে; আর আমার মনে ফুফুকে হারানোর ভয় ঘিরে রয়েছে। অবশেষে বিয়েটা হয়েই গেল।

এক মাস পরে ফুফুকে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে গেল। সাথে সাথেই আমার কষ্টের দিন শুরু হল। এর আগে যে সুখ করেছি তেমন নয়; কিন্তু ফুফু ছায়ার মতো পাশে ছিল। বৃদ্ধ দাদী একা আর কতকিছু সামলাবে। আমার সৎ মা তো ঘরের কোনো কাজেই হাত লাগায়না। তাঁর এককথা ছিল স্বামীর টাকায় সংসার চলে; তাই ঘরের কাজকর্ম সে করবে কেন! বাবাও কিছু বলতেন না।

শ্বশুর বাড়ি থেকেও ফুফু প্রতি শুক্রবার আমাদের বাড়িতে আসতেন। শুধুমাত্র আমার জন্যই তাঁর এমন ছুটে আসা । এরজন্য শ্বশুর বাড়ি থেকেও তাঁর কথা শুনতে হয়; কিন্তু ফুফু সবকিছু শুনেও আমার কাছে ছুটে আসতেন। প্রতি শুক্রবার সে নিজ হাতে আমায় গোসল করিয়ে মসজিদে পাঠিয়েছেন। আমিও প্রতি শুক্রবার তাঁর অপেক্ষায় থাকতাম। রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতাম কখন ফুফু আসবে।
একসময়ে ফুফুর আসা-যাওয়া সীমিত হয়ে যায়। এভাবে হুটহাট করে আসতে দিতোনা তাহলে সংসারে অশান্তি লেগে যেত। তাই ফুফুও আসার মাত্রা কমিয়ে দেন।

যখন ক্লাস নাইনে পড়ি, তখন আমার সৎ মায়ের কথায় বাবা কাজে দিতে চাইছিলেন। সেদিন পায়ে ধরে বলেছিলাম, একটু পড়তে চাই। বড় চাকরি করতে চাই। কিন্তু আমার বাবা কোনো কথা শুনেননি। সেদিন কাকার জন্য বেঁচে গেলাম। সে বাবার থেকে ছোট হলেও সেদিন মুখের উপরে জবাব দিয়েছিলেন। দরকার হলে তাঁর রক্ত বেঁচে আমাকে পড়াবে। জবাবে কাকাকে কথা শুনালেও কাকা আমায় আগলে রাখেন। সেদিন মায়ের কবরের কাছে যেয়ে কান্না করি খুব। আমায় অসহায় করে সে শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। যে শান্তির ঘুম থেকে কখনো উঠবেনা।

যখন নতুন কাকী আসেন আস্তে আস্তে আমার ভরণপোষণের দায়িত্ব থেকে কাকাও দূরে সরে যান। কাকী ঢাকাতে কাকার কাছে থাকেন, এখন টাকাপয়সার ঘাটতিও দেখা দিচ্ছে। এখন লেখাপড়া মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ স্পষ্ট । তবুও মাঝপথে হাল ছাড়িনি আমি। বাড়ির আশেপাশে কোনো টিউশনি না পেলেও স্কুলের পাশে ঠিকই পাই। স্কুলের সম্পূর্ণ ক্লাস করে দুপুরে না খেয়ে পড়াতে যাই। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে হয়। শত কষ্টের মাঝেও একটাই লক্ষ্য। নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে হবে। মেয়ে হলে হয়তো এতদিনে বিয়ে দিয়ে দিতো। কিন্তু আমি একজন ছেলে; নিজের পরিচয় নিজেরই গড়তে হবে। এসব চিন্তাভাবনা করেই এত কষ্ট সহ্য করা আমার। মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে পদার্পণ করি। কোনোরকম টিউশন ছাড়াই পড়াগুলোকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিতে হয়। বিকেল থেকে রাত আট’টা অবধি টিউশনি করাই। তারপরে রাত জেগে পড়তে হয়। এভাবেই দিনগুলো চলে যাচ্ছে আমার। নিজেকে সম্পূর্ণভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা এখন থেকেই শুরু করে দেই। মনে মনে একটা প্রার্থনা’ই করি আমার সন্তানদের একজন ভাল বাবা হয়ে থাকবো।

দেখতে দেখতে পরীক্ষা নিকটে চলে এসেছে। টেস্ট পরীক্ষায় ডিপার্টমেন্টের প্রথম হয়েছি। ফরম পূরণ এর জন্য কারো টাকার’ই প্রয়োজন হয়নি। ইন্টারের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের টাকাতেই নিজে চলতে পেরেছি। তাহলে এখন আর ক’টা টাকাই বা লাগবে। পরীক্ষার সাতদিন আগে সবার কাছে দোয়া চাইতে যাই। সেদিন দাদী, ফুফু, কাকা সবাই প্রাণভরে দোয়া করে আমায়। বাবা ঘরের এক কোণে বসে ছিল। আমি সামনে যাওয়া মাত্রই সে পকেট থেকে হাজার টাকার নোট বের করে ; এই প্রথম আমার হাতে ধরিয়ে দেন। এই প্রথম বারের মতো সে আমায় ভালোবেসে মন থেকে বলেন, ভালোভাবে পরীক্ষা দিয়ো আব্বু। আশেপাশেও নজর রেখো, কেউ যেন নকল দিয়ে তোমার দোষ না দেয়। দোয়া করি, আমার ছেলে যেন একজন সম্মানিত মানুষ হয়। তাঁর বাবার মতোন যেন পাপিষ্ঠ না হয়। সেদিন বাবার চোখের কোণে পানির বিন্দু বিন্দু জল স্পষ্ট দেখা যায়। এতদিনের অভিমান জমিয়ে রেখে আমি ভাল-মন্দ কিছু বলিনি। মনে মনে ঠিকই কান্না করেছি, যে কান্না কারো অনুভব করারও সাধ্যি নেই।
এমনিতেই ছেলেরা তো কান্না করেনা। তাহলে আমি কেন করবো! আমিও করিনি কান্না।

এইচএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম দিকে থাকি। রেজাল্টের পরে বাবা বাড়িতে মিষ্টির বন্যা বসিয়ে দেন। আর সবার কাছে বলেন, তাঁর ছেলে ডাক্তার হবে। সব অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তুলবে।
আমিও বাবার কথা রাখি। সবাইকে সুস্থ করার দায়িত্ব ঠিকই নেই। তবে, নিজের বাবাকে সুস্থ করতে পারিনি। যখন মেডিকেলে প্রথম বর্ষে ছিলাম। তখন বাবা মারা যায়। তাঁর চিকিৎসা করতে পারিনি আমি। তবে এখন হাজার হাজার রোগীর ভিড়ে আমার বাবাকে খুঁজে বেড়াই।
আমার চুপকথা গুলোকে আমার মধ্যেই লুকিয়ে রেখে ছেলেমেয়েকে আষাঢ়ে গল্প শোনাই। যে গল্পে শুধুই বাবা-সন্তানের মধ্যে বন্ধুত্বের ছোঁয়া থাকে।

#সমাপ্ত

ঘন কুয়াশা – লিখাঃতামান্না ইসলাম শুচি

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
গল্প ঘন কুয়াশা

লিখাঃতামান্না ইসলাম শুচি

কুয়াশায় মোড়ানো সকাল।সকাল আটটা বেজে গেলেও কুয়াশা কমেনি।
কিছুই প্রায় দেখা যায়না।সেই কুয়াশা
মোড়ানো সকালের কুয়াশা ভেদ করে কেউ একজন রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে।
মাথাটা ঢাকা টুপি দিয়ে আর মুখে ওড়না চাপা দেয়া।সেই ওড়নার মাঝ দিয়ে হাসি দেখা যাচ্ছে।সে হাসি কিছু পাওয়ার।
প্রতিশোধ নেওয়ার।ওড়না সরিয়ে ঠোঁটে হাত বুলায় সে।শিউরে উঠে একাএকাই।তারপর চোখ বন্ধ করে মনে করতে থাকে গতরাতের ঘটনাটা।
সে এই রাস্তাটা দিয়েই যাচ্ছিলো
শুধু যাওয়ার রাস্তাটা উল্টো ছিল।
হাতে ছিল একটা কালো ব্যাগ।
হাটছিল সে হঠাৎ কেউ ডেকে উঠে

– শর্মিন!
মাথা ঘুরিয়ে দেখে শর্মিন।মুখে হাসি ফুটে।শর্মিনের নাম ধরে ডাকা মানুষটি এগিয়ে আসে।সে শর্মিনের হাত ধরে।
শর্মিন রেগে উঠলেও মুখে হাসি ফুটিয়ে
মানুষটির সাথে সাথে যেতে থাকে।
মানুষটি একটি বাড়িতে নিয়ে ঢুকে।বাড়িটা বিশাল বড়।বাড়ির ভিতর ঢুকতেই মানুষটি শর্মিনকে কোলে তুলে নেয়।শর্মিন আঁতকে উঠে বলে
– কি করছ অভি?

অভি দুষ্ট হেসে বলে
– যে কাজের জন্য এসেছি তার শুরুটা করলাম।

শর্মিন আর কিছু বলেনা।অভি শর্মিনকে
কোলে নিয়ে বেড রুমে পৌঁছে যায়।
শর্মিনকে বিছানায় রাখা প্যাকেটটা দিয়ে বলে
-পরে ফেলো আমি অনেকদিন অপেক্ষায় আছি সেই পোশাকে তোমায় দেখবো।পরবে তো?

শর্মিন কোনো জবাব না দিয়ে হাতের ব্যাগ রেখে অভির দিকে পিঠ দিয়ে পরে আসা পোশাকটা খুলে ফেললো।
অনুভব করছিল অভির তীক্ষ্ণ কামনায় ঘেরা চোখের দৃষ্টি। স্বচ্ছ চকচকে সাদা রঙের নাইটি পরা শর্মিনকে দেখে
অভির মাথা ঘুরে গেল।শর্মিনের রুপে ঝাপ দিতে গেল।শর্মিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অভি শর্মিনকে বলতে লাগল

– ইউ নো শর্মিন প্রথম যখন দেখেছি তোমায় তখুনি পাগল হয়ে গেছিলাম।
তোমার রুপ আমায় বশ করে ফেলেছিল।তোমায় ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছিলাম না।চারদিকে শুধু তোমায় দেখতে পাচ্ছিলাম।বিরক্ত হয়েছিলাম নিজের উপর। কি আছে তোমার মাঝে?
আমি চাই তোমার এ রুপে ডুব দিতে।
তোমায় চাই।এই পোশাকে কল্পনায় বহুবার দেখেছি।মন ভরেনি।তুমি আমার কল্পনার থেকে সুন্দর লাগছ।এত রুপ কেন তোমার?

শর্মিন হাসলো।অভি শর্মিনের বাধা চুল খুলে ফেললো।শর্মিনের উন্মুক্ত গলায় আর কাধে চুমু খাচ্ছে অভি।শর্মিন নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অভি পাগল হয়ে উঠে নিজের পোশাক খুলে ছুড়ে ফেলে শর্মিনের পোশাকটা টেনে ছিড়ে নিয়ে শর্মিনকে সহ বিছানায় পড়ল।শর্মিন দেয়ালে লাগানো ঘড়ির দিকে তাকায় এগোরোটা বেজে আটান্ন।
শর্মিন অভিকে দেখে নিজের শরীরে ঘুরে বেড়াতে।শর্মিন চোখটা বন্ধ করল।
ঘড়ির টিকটিক আওয়াজ আসছে।
বারোটার ঘন্টা বাজতেই শর্মিন অভিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে পড়লো।
অভি প্রথমে অবাক হয়ে গেল।তারপর রেগে বললো
– আর ইউ ম্যাড?
শর্মিন মিষ্টি হেসে বলে
– আজ তো তোমার জন্যই এসেছি। সারারাত পড়ে আছে তার আগে একটা গল্প বলি শুনবে?
– ওফ! কোনো গল্প শুনবোনা আমি।
আমি এখন শুধু তোমাকে চাই।

বলেই অভি শর্মিনকে জড়িয়ে ধরতে গেল।শর্মিন অভির হাতজোড়া সরিয়ে দিলো।
অভি চোখে চোখ রেখে বললো
– তোমার জন্য সারপ্রাইজ রেখেছি সেটার জন্য ও তুমি কি গল্পটা শুনবেনা?
প্লিজ বসো।
শর্মিনের স্বরে কি যেন ছিল অভি মন্ত্রমুগ্ধের বসে পড়ে বিছানায়।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
– গল্পটা কয়েকবছর আগের গল্প।
একটা পরিবার ছিল।সুখীই বলা চলে।
চারজনের পরিবার।মা,বাবা, ভাইয়া আর একটা মেয়ে। গল্পটা একটা মেয়ের
বাবা সরকারী চাকরি করত।কখনো দুঃখ তাদের পারতপক্ষে ছুতে পারেনি।
হাসি,মজায় কেটেছিল দিন।যতদিন না মেয়েটি কলেজে ভর্তি হয়।মেয়েটার বাবা রিটায়ার্ড হন।আর মেয়েটার ভাই বাবার চাকরিটা পেয়ে যায়।ভাই বিয়ে করে।এদিকে মেয়েটিও দ্বিতীয় বর্ষে উঠে যায়।তখুনি মেয়েটি নজরে পড়ে এলাকার এমপির ছেলের।
ছেলেটা মেয়েটাকে অনেক জ্বালাতে আরম্ভ করে।একটা সময় মেয়েটা রেগে চড় মেরে বসে।এই এক চড়ই মেয়েটার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।মেয়েটি জানতেও পারেনা কি বিপদ সে ডেকে এনেছি। চড় খাওয়ার পর ছেলেটা বেশ কিছুদিন জ্বালায় না মেয়েটাকে।
এরপর একদিন মেয়েটা কোচিং করে আসছিলো তখন দুপুর ছিল হঠাৎ এক মাইক্রোবাস এসে মেয়েটাকে টেনে নেয়…একি তুমি ঘামছ কেন?অভি?

অভি তখন ঘামছে।
তোতলাতে তোতলাতে প্রশ্ন করে
– তু তু মি কি করে ঘটনা…

কথা বলতে বলতেই অভির চোখে পড়ল শর্মিনের লাল চোখ।চমকে গিয়ে পিছিয়ে যায় অভি।

শর্মিন চিৎকার করে বলে
– পিছনে যাচ্ছিস কেন? সেদিন তো যাস নি।ঝাপিয়ে পড়েছিলি হায়েনার মতো ছিড়ে খেয়েছিলি এখন পিছনে যাচ্ছিস কেন? আয় আজকেও ছিড়ে খেয়ে নে সেই ইচ্ছেতেই তো এনেছিস আমায়!

অভি ভয়ে সিটিয়ে বলে উঠে
– কে তুমি?

– মনে কর সেই দিনটাকে।
সেই দুপুরকে সেই রাতকে।অমানুষ মনে কর
রাস্তা দিয়ে একটা মেয়ে যাচ্ছিলো তাকে তুই টেনে হিচড়ে গাড়িতে তুলে
হায়েনার মতো ছিড়ে খেয়ে রাস্তায় ছুড়ে ফেলেছিলি।অপরাধটা কি ছিল?
তোকে রিজেক্ট করা! এজন্য তুই একটা মেয়েকেই খুন করে দিলি!

-শারমিনকে তুমি চিনো?
কে তুমি?
-হ্যাঁ চিনি মানে আমিই তো শারমিন। চিনতে পারিসনি নাকি?
– এ হতেই পারেনা তুমি… তুমি….তুমি মারা গেছ গত বছর!
– হাহা আমি মৃত জীবিত তাতে তোর কি
আমি আর আমার পরিবার কোনো সুবিচার পায়নি।তোর এমপি বাপ সেখানে হাত দিয়েছে বলেছে।
ফলে কি জুটেছে জানিস? আমার পরিবারের অসম্মান আর আমার মৃত্যু।
ভাইয়ার চাকরি গেছে ভাবির সাথে ডিভোর্সই হয়ে যেত।আমার বাবা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে মা তিক্ত কথার অপমানে জর্জরিত হয়েছে। তারা এর সুবিচার পায়নি শুধুমাত্র তোর জন্য।
তোর সেই ভুল একটা পরিবারকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।তাই তোর সেই ভুলের হিসাব চুকাবো আমি আজকে।তোর এমপি বাপের জন্য সেদিন বেঁচে গেছিলি আজ বাঁচবিনা।
শর্মিন এগিয়ে এলো তবে হেটে নয়
শূন্যে ভেসে।অভি চিৎকার করে রুম থেকে বেরতে গিয়ে থেমে যায় কারণ শর্মিন পিছন থেকে ওর স্বরযন্ত্রে নখ বসিয়েছে।বিস্ময়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিজের সামনে শর্মিনের হাসি দেখতে পেল।হাসির ফলে
শর্মিনের দাঁতগুলো বেরিয়ে গেছে।দাঁতগুলো স্বাভাবিক নয় বরং স্বাভাবিকের চেয়ে বড় ও তীক্ষ্ণ।
অভি আর ও বিস্মিত হয়ে দেখতে পেল
শর্মিন ওর গলাতেই দাঁত বসাচ্ছে।অভির চোখদুটো খোলাই রয়ে গেল।
শর্মিন নিজের মতো লাশের ব্যবচ্ছেদ করল।অভির রক্তে গোসল করে ফেলে রাখা পোশাক পরে মাথায় টুপি আর মুখে ওড়না পেঁচিয়ে বের হলো।
অবশেষে ওর কাজ শেষ হলো।
এবার নিশ্চিতে ঘুমুতে পারবে শর্মিন।
তবে ঘুমানোর জন্য প্রয়োজন অনেক কুয়াশা।ঘন কুয়াশা।যে কুয়াশায় অন্যকে তো দূর নিজেকেই দেখতে পাওয়া যাবেনা।অদ্ভুত সেই ঘন কুয়াশা চাই শর্মিনের।
কুয়াশা আর ও ঘন হচ্ছে ঘন থেকে ঘনতর।

ভুলক্রমে – লেখনীতে-তানভীন শিলা

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগষ্ট_২০২০
ভুলক্রমে
লেখনীতে-তানভীন শিলা

“আমি পালিয়ে বিয়ে করতে চাই।”
“আমাদের বাড়ি থেকে তো মেনেই নিয়েছে, পালিয়ে কেন বিয়ে করতে যাবো?”
“নাহ্ আমি পালিয়েই বিয়ে করবো। তুমি করবে কিনা বল।”
“তোমার এইসব পাগলামী আমার মোটেই ভালোলাগেনা মুশু।”
“তা কেন লাগবে? এখন তো ভালোবাসোনা আমায়।”
“আচ্ছা ঠিক আছে, একটা ছোট ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বের হয়ে আয় বইন। আমি ১০মিনিটে পৌঁছে যাবো।”
“ইচ্ছে পূরণ করতে বলায় বইন হয়ে গেলাম? যাও লাগবেনা আসতে।”
মুশরিকার অভিমানি স্বরে বলা কথাটা তীরের মতো বিঁধে রাকিবের বুকে। মেয়েটা কষ্ট পেলে তারও যে বড্ড বেশিই কষ্ট হয়। ৫বছরের রিলেশন শেষ করে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে তারা। তবে মুশুর জন্য হয়তো সুষ্ঠুভাবে বিয়েটাও করতে পারবেনা রাকিব। যখন যা ইচ্ছা হয় তাই করতে চায় মুশু। মাত্র ১সপ্তাহ্ পর তাদের বিয়ে, আর আজ মুশুর একটা ইচ্ছা পূরণ করতে বাড়ি ছেড়ে পালাতে হবে তার।
মুশুর বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে রাকিব। মুশুকে দুইবার কল দিয়েও লাভ হয়নি। মেয়েটা যে বড্ড অভিমানিনি। হয়তো নিজের মত পাল্টে দিয়েছে। রাকিবকে ভুল প্রমাণিত করে ৩মিনিটের মধ্যে উপস্থিত হয় মুশু।
“ভেবেছিলাম আমার প্রাণপাখি অভিমানের গলিতে হারিয়ে গেছে।”
“আমি তো তোমার বোন লাগি। আমার সাথেও কেউ নাই, কাকে প্রাণপাখি বলতেছো?”
রাকিব মুশুকে কাছে টেনে নিয়ে গালে হাত রেখে বলে-
“তুই আমার বোন না বউ লাগিস। এখন চল নয়তো ধরা পরে যাবো।”
“হাউ রোম্যান্টিক। আরো কিছুক্ষণ থাকি প্লিজ? বাবা অথবা চাচ্চু বের হয়ে আমাদেরকে জোর করে নিয়ে বাড়িতে ঢুকবে। তারপর পালিয়ে যাওয়ার প্লান করায় বিয়ে দিয়ে দিবে। আমি কান্না করতে থাকবো আর তুমি…”মুশুকে বলতে না দিয়ে রাকিব বলে-
“বিয়ে না ডিরেক্ট শুট করে দিতো। তবে আমাদেরটা ভিন্ন, কেননা হবু বর তার হবু বউকেই নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। সবাই নিজেদের পেট ধরে ফ্লোরে শুয়ে নাগিন ড্যান্স দিয়ে হাসবে।”
রাকিবের কথা শুনে মুশু খিলখিল করে হেসে ওঠে। এই হাসিটা রাকিবের বড্ড পছন্দের।
“মুশু চল প্লিজ দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
“কোথায় যাওয়ার জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে? তুমি কি সব রেডি রেখেছো? আর বাইক কেন এনেছো?”
“পালিয়ে কোথায় যাবি? একটা সপ্তাহ্ পরেই তো বিয়ে মুশু। আমাদের শহর থেকে কিছুটা দূরে যে বাড়িটা আছে সেটায় থাকবো আমরা। বাইকে না গেলে কিভাবে যাবো? হেঁটে যেতে বুঝি?”
“তাহলে পালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি তো গন্তব্যহীন পথে পাড়ি দিতে চাই। হেঁটে নয় দৌড়িয়ে যেতাম। তুমি বড্ড আনরোম্যান্টিক, মুভি কেন দেখনা বলতো? আমরা দৌড়াতাম আর বাড়ির লোকেরা পিছু নিতো। আহ্ আমার তো ভাবতেই ভালোলাগতেছে।”
“আচ্ছা চলো তুমি, যেখানে যেতে চাইবে সেখানেই নিয়ে যাবো। তবে বাইক ছাড়া পসিবল না।”
“হুম চলো।”
মুশু আর রাকিব পাড়ি দেয় অজান পথে। গত ৫বছরে একবারের জন্যও মুশুর কোন কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়নি রাকিব, কিন্তু মাঝে মাঝে রেগে যেতো। মুশুর ইচ্ছেগুলোই যে অদ্ভুত রকমের। মাঝে মাঝে শুধুমাত্র একটু দেখবে বলে বায়না ধরতো।
জোড়ে ব্রেক কষে রাকিব।
“কি হলো রাকিব? আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছো।”
“সামনে দেখো মুশু।”
মুশু সামনে তাকাতেই আতঁকে উঠে। চোখ বন্ধ করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাকিবকে।
“রাকিব আমাকে কেন দেখালে? তুমি জানোনা আমার এইসব দেখতে ভয় লাগে?”
“নামো মুশু চেক করতে দাও আমায়। লোকটি যদি বেঁচে থাকে তাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”
“নাহ্ তুমি এখান থেকে চলো।”
“প্লিজ এখন পাগলামী করোনা। লোকটা যদি বেঁচে থাকে আর আমরা চলে যাই, তার মৃত্যুর জন্য আমরা দ্বায়ী হয়ে যাবো।”
মুশু কান্না করে দিয়ে বলে-
“এমন বিভৎস্যভাবে মরে পরে আছে আর তুমি বলছো বেঁচে আছে কিনা দেখবে? প্লিজ চলো এখান থেকে।”
“আচ্ছা তো পুলিশকে জানিয়ে দেই। নাহলে দেখা যাবে বনের হিংস্র্র পশুদের আহার হয়ে যাবে।”
“সেটা করতে পারো, কিন্তু এই খুনের দায়ভার যদি আমাদের উপরে পরে?”
“উফ্ তুমি সিনেমা একটু কম দেখবে বুঝলে? এটা রিল নয় রিয়েল লাইফ। আমরা অলরেডি জড়িয়ে গেছি এই লাশের সাথে, ইনকয়েরির জন্য বেশ কয়েকবার পুলিশ ষ্টেশনেও যেতে হতে পারে তবে আমরা দ্বায়ী নই সেটা প্রমাণ দিলেই হবে। আমরা তো জানিও না এই লোকটা কে। আমি বরং পুলিশকে কল দিয়ে জানিয়ে দেই।”
রাকিব পুলিশকে কল দিয়ে সব জানিয়ে লোকেশন ও দিয়ে দেয়। যেহেতু মুশু ভয় পাচ্ছে তাই সে মুশুকে নিয়ে তাদের শহর থেকে দূরে যে বাড়িটা আছে সেটাতে চলে আসে। পুলিশকে তাদের স্থান ত্যাগের কথাও জানিয়েই দিয়েছে। বাড়িতে পৌঁছানোর পরে রাকিব মুশুর জন্য সাথে করে নিয়ে আসা খাবার গরম করে খাইয়ে দেয়। প্রচন্ড ভয় পেয়েছে মেয়েটা তার চেহারায় সম্পূর্ণটাই দৃশ্যমান।
“রাকিব আমি একা থাকতে পারবোনা।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
রাকিব মুশুকে নিয়ে ড্রইংরুমের সোফায় বসে। মুশুকে বলে পা তুলে শুয়ে পরতে। মুশু রাকিবের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাকিবের কোমর। রাকিব মুচকি হেসে মুশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। কিছুক্ষণের মথ্যেই ঘুমিয়ে যায় মুশু। রাকিবের কোমর থেকে মুশুর হাত আলগা হতেই রাকিব নিজেও সোফায় শরীর এলিয়ে দেয়। প্রায় ১০মিনিট পরে রাকিবের ফোনে কল আসে।। কলের রিংটোন-এর কারণে মুশুও জেগে যায়, কেননা সে প্র্রচন্ড ভয় তাকে ঘুমের শহরে যেতে বাঁধা দিচ্ছিল। রাকিব ফোনে কথা বলে বেশ চিন্তায় পরে যায়। রাকিবকে চিন্তিত দেখে মুশু প্রশ্ন করে-
“কি হলো রাকিব, কে কল দিয়েছিল? তোমাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?”
“পুলিশ কল দিয়েছিল মুশু। আমাদের বলা লোকেশনে তারা কোন লাশ পায়নি। রক্তের ছিটেফোঁটাও নাকি ছিলনা সেখানে।”
“লাশ কোথায় গায়েব হয়ে গেলো রাকিব? আমার প্রচন্ড ভয় লাগতেছে রাকিব।”
মুশুকে কি বলে শান্তনা দিবে জানা নেই রাকিবের, কেননা সে নিজেও চিন্তিত। পুলিশ নাকি আশেপাশেও চেক করেছে, যদি কোন হিংস্র জন্তু টেনেও নিয়ে যেতো কোন না কোন ক্লু তো থাকতোই। যেহেতু পাওয়াই যায়নি নিশ্চই কেউ গায়েব করেছে নয়তো মরে নয় লোকটি জীবিত ছিল। রাকিবের ভাবনার মাঝে মুশু বলে-
“লোকটা মরে ভূত হয়ে আমাদের সাথে এসে পরেনি তো?”
মুশুর কথা শুনে রেগে যায় রাকিব, কিন্তু প্র্রকাশ করেনা। মেয়েটা শুধু সিনেমার জগতেই বিচরণ করে, বাস্তবতার ছিটেফোঁটার সাথে যেন তার কোন সম্পর্ক-ই নেই। যেহেতু ভয় পাচ্ছে তাকে অন্য কিছু বলে বেশি চিন্তায় ফেলে দিতে চায়না রাকিব। এভাবে কোন লাশ কিভাবে গায়েব হতে পারে সেটাও ভাবাচ্ছে রাকিবকে। কেন রক্তের ছিটেফোঁটার চিহ্নও থাকেব না? লাশের পেট দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পরেছিল রাস্তায় অনেকখানি আবার চেহারাও তো কতটা বিভৎস্যরূপে ছিল। কেউ কি প্ল্যানিং করে সব করেছে? অতিরিক্ত চিন্তা করায় রাকিবের মাথায় চিনচিন ব্যথার উৎপত্তি হতে শুরু করে। রাকিব ট্যাবলেট খেয়ে মুশুসহ একটা নির্ঘুম রাত কাটায়। মুশুকে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ঘুমের শহরে নিতে পারেনি রাকিব।
.
সকাল ৭:১২মিনিট
আধো আধো চোখ লেগে এসেছিল রাকিবের আর মুশু তো ৬টার পরেই ঘুমিয়েছে। ডোর বেলের টুংটাং আওয়াজে দুজনেরই ঘুম টুংটাং শব্দের সাথেই গায়েব হয়ে যায়। মুশু জাপটে ধরে রাকিবকে, কেননা তারা এখানে আছে কেউই তো জানেনা। আর বাড়ির লোকেরা হলেও তারা এতো সকালে আসবেনা। রাকিব মুশুকে সড়িয়ে উঠার জন্য মুশুর হাত ধরতেই অবাক হয়ে যায়। এতো সিনেমা দেখেও ভয় কাটাতে পারেনি মুশু, প্রচন্ডরূপে কম্পন অনুভব করতে পাচ্ছে রাকিব। রাকিব বাধ্য হয়েই মুশুকে বাম পাশের বাহুডোরে আবদ্ধ করে গেট খুলে দেয়। পুলিশকে দেখে মুশু সম্পূর্ণই রাকিবের সাথে মিশে যায়। রাকিবের প্রচন্ড রাগ লাগতেছে, একটু শান্ত থাকতে কেন পারতেছেনা মেয়েটা? এমন একটা সেন্সিটিভ বিষয়ে এতো ভয় পেলে চলবে না। বাধ্য হয়ে রাকিব মুশুকে তার বেডরুমে নিয়ে লক করে দেয়। কেননা পুলিশের সাথে কথা বলার সময় ভয় পেলে চলবে না, হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।
“মি. রাকিব আপনার ওয়াইফ কি মেন্টালি আনওয়েল?”
“গতরাতের পর থেকে অনেক বেশিই ভয় পেয়েছে অফিসার। আবার লাশ পাওয়া যায়নি শুনে তো ঘুমোতেই পারেনি। কোন ক্লু পেয়েছেন কি অফিসার?”
“নাহ্ কোন ক্লু পাইনি। একফোঁটা রক্তও পাওয়া যায়নি মি. রাকিব। আপনার বলা বিবরণের সাথে নাতো লাশ পেয়েছি আর না রক্ত।”
পুলিশের সাথে কথা বলার সময় রাকিব মুশুর চিৎকার শুনতে পায়। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় মুশুর কাছে। গেট খুলে মুশুর কাছে যেতেই রাকিবকে জাপটে ধরে মুশু শুধু লাশ লাশ বলতে থাকে। পুলিশ অফিসার মুশুর হাত অনুসরণ করে দেখতেই রাকিবের দিকে তাকায়। রাকিব পুলিশ অফিসারে দৃষ্টির অর্থ বুঝতে না পেরে নিজেই কিছুটা ঝুঁকে বেডের অপরপাশে চোখ বুলিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। গতরাতে দেখা লাশ তার বাড়িতে কিভাবে আসলো? রাকিবের ঘোর কাটে পুলিশ অফিসারের প্রশ্নের হুংকারে-
“মি. রাকিব! আপনি বাড়িতে লাশ রেখে আমাদেরকে মিথ্যা ইনফরমেশন দিয়ে নিজেকে নিদোর্ষ প্র্রমাণ করতে চেয়েছিলেন? আপনার কথা মতো সেই নিস্তব্ধ রাস্তায় আমরা ঠিকই গিয়েছিলাম, হয়তো আপনি এক্সপেক্ট করেননি যে আমরা আজকেই আপনার বাড়িতে চলে আসবো। জানলে হয়তো অন্য কোথাও গায়েব করে দিতেন।”

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

রাকিব নির্বাক। কেননা পুলিশ অফিসার মুহিনকে বলার মতো তার কাছে কিছুই নেই। যাই বলুক না কেন এইমুহুর্তে বিশ্বাস করাতে পারবে না। সে তো সত্যিই জানেনা এই লাশটা এখানে কিভাবে আসলো। আর বাড়িটা যেহেতু তার, এখানে একটা লাশ আনতেও নিশ্চই তার অনুমতির প্রয়োজন আছেই। মুহিনকে রাকিব বলে-
“অফিসার সত্যিই আমি জানিনা এই লাশটা কিভাবে এলো আমার বাড়িতে এবং আমারই শয়ন কক্ষে।”
রাকিবের কথা উপেক্ষা করে মুহিন তার দুজন কনে্সটেবলকে বলে লাশটাকে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যেতে। লাশ নিয়ে যেতেই অফিসার রাকিবকে তার সাথে নিতে চাইলে মুশু বাঁধা দিয়ে বলে-
“প্লিজ অফিসার রাকিবকে নিয়ে যাবেন না প্লিজ। আমরা কিছুই করিনি, আমরা তো জানিও না ঐ লাশটা কার। সে আমাদের পরিচিত কিনা সেটাও জানা নেই। প্লিজ রাকিবকে নিয়ে যাবেন না।”
“ঠিক আছে মি. রাকিবকে এখনই নিবোনা, কিন্তু আপনারা শহর ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেন না। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমি হাতে পেলেই যোগাযোগ করবো আপনাদের সাথে।”
পুলিশ চলে যেতেই জোড়েই কান্না করে মুশু। এমন একটা খুনের দ্বায়ে তারা ফেঁসে গেছে যেখানে তারা জানেই না মৃত ব্যক্তি কে। অনেক কষ্টে শান্ত করে রাকিব মুশুকে। বাড়িতে কল দিয়ে জানিয়ে দেয় তারা যেন চিন্তা না করে আর বিয়ের ডেট আরো একসপ্তাহ্ পিছাতেও বলে।
৭দিন পর-
কল রিসিভ করে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে রাকিবের। মুহিন জানিয়েছেন সে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ২দিন আগেই পেয়েছে। লাশের আইডেন্টিটিসহ তার হত্যাকারীদেরও পেয়েছেন। সবকিছু কিভাবে তারা করেছে সেটা জানানোর জন্য ডেকেছেন তিনি রাকিবকে।
রাকিব মুশুকে নিয়ে মুহিনের কেবিনে বসে আছে। মুশু কিছুটা নিশ্চিন্ত হলে পুরোপুরি হতে না পারায় কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে আছে। মুহিন তার কেবিনে প্রবেশ করলে রাকিব উঠে দাড়ালেও মুশু ছিল অন্যমনস্ক। রাকিবের সাথে হ্যান্ডশেক করে মুশুকে প্র্রশ্ন করতেই মুশু হন্তদন্ত হয়ে উঠে যায়। অফিসার বলেন—
“রিল্যাক্স মিস. মুশরিকা। ঘাবড়াবেন না প্লিজ। আমরা খুনিদের পেয়ে গেছি, তাই আপনি এতো চিন্তা না করে নিজের বিয়েতে কন্সন্ট্রেট করুন। আপনারা শুধু ভুলক্রমে সেই স্থানে গিয়েছিলেন।”
অফিসারের কথায় অবাক হয় রাকিব। কেননা সে তো বলেছিল মুশু আর রাকিব দুজনে বিবাহিত। অফিসার সত্যিটা জানলো কিভাবে? রাকিবকে অবাক হতে দেখে অফিসার বলেন-
“আপনার যেহেতু সাসপেক্ট ছিলেন তাই সব খোঁজ নিতে হয়েছে। আপনাদের কাছে এক্সপ্লেনেশন চাবো না। এখন যা বলবো শুধু সেগুলোই শুনুন।”
অফিসার সব বলতে শুরু করেন-
“মৃত ব্যক্তির নাম জোবাইদ চৌধুরী। পেশায় তিনি বিজনেসম্যান। তার দুটো ভার্সিটিও রয়েছে, অনেক মেহনতি মানুষ ছিলেন সে। শুরুতে তো কিছুই ছিল না তার, একাই করেছেন সবকিছু। সব করতে করতে বয়সটাও এুকটু বেশি হয়ে যায়। তার বয়স ৪৮বছর। ৪৪বছর বয়সে বিয়ে করেন তিনি। এমন একজন মানুষকে বিয়ে করলে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া যাবে, কোন মেয়ে-ই বা না চাইবে ওনাকে বিয়ে করতে? সব মেয়েদের কথা বলছি না। থাকে তো কিছু কিছু অর্থলোভী মেয়ে। ঠিক তেমন-ই তার স্ত্রী নয়নতারা রহমান। অর্থের লোভে তার স্বামী-ই তার দ্বিতীয় বিয়ে করান। দ্বিতীয় বিয়ে অর্থের কারণে হলেও প্রথমটা ছিল প্রেমের। নয়নতারার প্রথম স্বামী মোস্তাকিন, জোবাইদ চৌধুরীর ম্যানেজার ছিলেন। কারণে-অকারণে প্রেমের টানে ছুঁটে আসতেন মোস্তাকিন নয়নতারার কাছে। ৪বছর লুকিয়ে বিবাহিত প্র্রেম চালিয়েছেন তারা। ৭দিন আগে জোবাইদ চৌধুরী জরুরী মিটিংয়ে দুবাইয়ে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন কিন্তু মিটিংটা কোন কারণে ক্যান্সেল হয়ে যায়। বাড়িতে ফিরে এসে নিজের বেডরুমে তারই বউকে তার ম্যানেজারের সাথে গভীরভাবে-লিপ্ত পেয়ে মাথা ঘুড়ে পরে যান। আওয়াজ পেয়ে নয়নতারা আর মোস্তাকিন তাকাতেই দেখে জোবাইদ তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। জোবাইদ উঠে ঘর থেকে বের হবে এমন সময় মোস্তাকিন তাকে ঘাড় ধরে ঘরে টেনে নেয়। জোবাইদ নানান রোগে অসুস্থ হওয়ায় তাদের সাথে পেরে উঠেনি। প্র্রথমে ফ্লাওয়ার ভাস্ দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয় তার, তারপরে নয়নতারা নিজেই চাকু ঢুকিয়ে দেন তার পেটে। ঐ নিস্তব্ধ রাস্তায় নিজেদের গাড়ি লুকিয়ে রেখে লাশ বের করে জঙ্গলে ফেলে দেয়ার জন্য বের করে রাস্তায় রাখতেই আপনাদের বাইকের আওয়াজে নিজেরাও লুকিয়ে পরে। আপনারা আমাদের কল দেয়ায় রেগে যায় দুজনে। আপনারা স্থান ত্যাগ করতেই লাশটাকে আবারো গাড়িতে তোলা হয়। রাস্তায় পরে থাকা রক্ত সুন্দর করে ধুয়ে পানিটাকেউ শুকিয়ে দেয়। সবকিছু সাথে করেই নিয়ে গিয়েছিল। কতটা প্ল্যানিং সহকারে করেছে বুঝতে পেরেছেন নিশ্চই? আচ্ছা তারপর শুনুন। আপনাদের পিছু নেয় নয়নতারা আর মোস্তাকিন। আপনাদের গেটে থাকা দারোয়ানকে কিছু টাকা খাইয়ে গাড়ি নিয়ে বাড়িতে ঢুকে পরে। দারোয়ানের সাহায্যেই কাঁচের জানালা হওয়ার সুবাদে খুব সহজেই খুলতে সক্ষম হয়। দারোয়ানকে অবশ্য লাশ সম্পর্কে কিছু জানায়নি তখনও। মি. রাকিব আপনার বাড়ির দারোয়ানও কিন্তু এখন আমাদের স্পেশাল সেলে রয়েছে। দারোয়ান চলে যেতেই্ লাশ নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন তারা। লাশটাকে সুন্দর করে গুছিয়ে রেখে গাড়ি নিয়ে আপনাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।”
“তাদের ধরলেন কিভাবে?”
“সিসিটিভি ক্যামেরা। জোবাইদ চৌধুরীর বাড়িতে মোট ১৭টা সিসিটিভি ক্যামেরা পেয়েছি আমরা। সেগুলোর মধ্যে ৪টা ছিল হিডেন। ফুটেজ দেখে ধরতে সক্ষম হয়েছি। জানালায় লেগে যাওয়া রক্ত পরিষ্কার করতে ভুলে গিয়েছিল হয়তো। তাই আপনাদেরকে না জানিয়েই ইনফরমেশন কালেক্ট করে ফেলি।”
রাকিব আর মুশু মুহিনকে ধন্যবাদ দিয়ে বাড়িতে আসে। আজই তারা বিয়ে করবে জানালে কেউই আপত্তি না করে বিয়ে করিয়ে দেয় তাদের।
.
সমাপ্ত

সম্পর্ক – লেখিকা সাদিয়া ইসলাম

0

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
সম্পর্ক
লেখিকা_সাদিয়া_ইসলাম

কনফারেন্স হলের তৃতীয় সারিতে রিধিতাকে দেখলাম। তাকে দেখে আমি অবাক। আমার অবাক হওয়ার অবশ্য দুটি কারণ রয়েছে।
প্রথমত, আমাদের সমাজে ডিভোর্সি মেয়েদের ঘরে বসাই রাখা হয় না। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। আর দ্বিতীয়ত,,, রিধিতা আগের থেকে বেশি সুন্দরী হয়েছে।আজও চোখ ফেরাতে পারলাম না।

রিধিতাকে প্রথম দেখেছিলাম কোন এক স্নিগ্ধ বিকেলে। সব মেয়েদের মতো রিধিতাও ফুচকা পছন্দ করত। সেদিন রিধিতা বান্ধবীদের সাথে ফুচকা খাচ্ছিল। আমি আমার টিউশনি শেষ করে সেই পথ ধরে হাটছিলাম। ঠিক তখনি দেখলাম একটা মেয়ে ঝালে কেঁদে কেটে অস্থির। কবিরা বলেন, মেয়েরা কাঁদলে নাকি মেয়েদের চেহারা তখন খুব মায়াবী লাগে। এই কথাটার প্রমাণ আমি সেদিনই পেয়েছিলাম। তারপর বাসায় এসে মাকে বললাম, আমার একটা মেয়েকে খুব ভাল লেগেছে। বাবা- মার একমাত্র সন্তান হওয়ায় মা আমার কথা ফেলতে পারেনি। আমার বাবা মারা গিয়েছে ৩ বছর আগে। আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী করি আর বিকেলে কিছু স্টুডেন্ট পড়াই। মাকে বলার পর মা বলল,, ঠিকানা পাব কীভাবে? আমিও তাই ভাবছিলাম। তারপরের দিন বিকেলে এক স্টুডেন্টকে পড়াতে গেলাম। ঠিক তখনি রিধিতাকে দেখলাম। নাস্তা দিয়ে চলে গেল। আমি আমার স্টুডেন্টকে জিজ্ঞেস করলাম, এই মেয়েটা তোমার কি হয়? বলল,বোন।ব্যাস পেয়ে গেলাম ঠিকানা। সেদিন আর ওকে পড়াইনি। বাসায়য় এসে মাকে বলার পর মা রিধিতাদের বাসায় গিয়ে কথাবার্তা বলেন। এমনকি বিয়েও ঠিক করে ফেলেন। দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ে হয়। তারপর সবকিছু ভালই চলতে থাকে।

একদিন আমি অফিস থেকে রিধিতাকে ফোন দেই। আমি ফোন ওয়েটিং এ পেয়েছিলাম। বাসায় এসে জিজ্ঞাসাও করেছি,সে সব সত্যি বলেছিল। আমার কেন যেন সন্দেহ হত। সেদিন আমি ভুল ছিলাম। এভাবেই আমাদের সম্পর্কের বাধন ছিন্ন হয়। আমাদের ডিভোর্স হয়ে যায়।সম্পর্ক কখনো দূরত্বএ শেষ হয় না। সম্পর্ক শেষ হয় সন্দেহে, অপমানে আর বিশ্বাসঘাতকতায়।একজনের ডাকে ভাবনা থেকে ফিরে এলাম। সে আমার হাতে একটা চিরকুট দিল। সেখানে লিখা,, প্রিয়, তুমি কি জানো? আজ আমাদের পঞ্চম বিবাহবিচ্ছেদ বার্ষীকি। শুভেচ্ছা রইল।এতটুকু পড়ে আমার চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পরল।তাকিয়ে দেখলাম রিধিতা যেখানে ছিল সেখানে সে নেই। হয়তো চলে গেছে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন