আত্মজা – কলমে প্রমা মজুমদার

0
568

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগষ্ট_২০২০
আত্মজা
কলমে প্রমা মজুমদার

অর্না আর শান্তর বিয়ের আজ ৮ বছর পুর্ণ হলো। শান্ত ভুলে গেছে,
সকালে বেরিয়ে গেছে এখনো ফেরেনি, অর্না ওর প্রিয় খাবার রান্না করেছে। শান্ত অনেক বড়ো চাকরি করে, সারাদিনই অনেক ব্যস্ত।এখন বাজে রাত দশটা, এমন সময় শান্তর গাড়ির শব্দ পাওয়া গেল ও বাসায় ঢুকে সরাসরি শোয়ার ঘরে চলে গেল আর বলল,আমি খেয়ে এসেছি।
অর্না ওর অপেক্ষা করছিলো ও আসলে এক সাথে খাবার খাবে,কিন্তু শান্ত বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে শুনে অর্নারও আর একা একা খেতে ইচ্ছা করছেনা।বুয়াকে সব উঠিয়ে রাখতে বলে নিজেও শোয়ার ঘরে চলে যায়।
আজকাল শান্ত ওর ঘরে ঘুমায় না, পাশের ঘরে থাকে। ওর ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। অর্নার খুব ইচ্ছে করছে শান্তর কাছে যেতে ওকে জরিয়ে ধরে বলতে “শুভ বিবাহ বার্ষিকী ” কিন্তু ওদের মধ্যে যে দেয়াল তৈরি হয়েছে এখন আর তা সম্ভব না।
শান্ত বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে অর্না নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পেয়েছে হয়তো খায়নি,ওর জন্য অপেক্ষা করছিলো হয়তো, আজকের দিনটা ইচ্ছে করেই সে ভুলে যাওয়ার অভিনয় করেছে, শান্ত চায় না অর্না আবার কোনো স্বপ্ন দেখে আবার তাদের সম্পর্কটা ঠিক হয়ে যায়।
শান্ত এগুলো ইচ্ছা করেই এড়িয়ে যায়।

অর্না ঘুমের ঔষধ খেয়ে শুতে গেল।নাহলে সারারাত হয়তো না ঘুমিয়ে কাটাতে হবে একটা ভুল সিদ্ধান্ত আজ ওকে ওর সবচেয়ে কাছের মানুষটার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
অর্না ঘুমের মধ্যে একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখলো সে আর শান্ত একটা নদীর সামনে দাড়িয়ে আছে আর তাদের দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে ছোট একটা মেয়ে।কি সুন্দর দেখতে মেয়েটা ওর আর শান্তর হাত ধরে আছে।অর্নার খুব ইচ্ছে হচ্ছে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আদর করতে ওকে শক্ত করে ধরে থাকতে যেন কোথাও না যেতে পারে। কিন্তু হঠাৎ একটা দমকা হাওয়ায় মেয়েটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল আর শান্ত আস্তে আস্তে ওর থেকে দুরে চলে যাচ্ছে। ঘুমের মধ্যেই অর্নার চোখ থেকে পানি পরতে শুরু করলো।
শান্ত অনেক সকালে ঘুম থেকে ওঠে, ওর বরাবরের অভ্যাস।অর্নার ঘরের দরজা খোলা ও এখনো ঘুমাচ্ছে। শান্ত ওর ঘরে ঢুকলো অর্নাকে ঘুমের মধ্যে এখনো আগের মতোই সুন্দর লাগে,সে অর্নার বিছানার পাশে গিয়ে দাড়ালো, কিন্তু হটাৎ ওর চোখ পরলো অর্নার মাথার বালিশটা ভেজা। হয়তো কেঁদেছে!

ওরা বড়ো একটা বাড়িতে থাকে, সারা বাড়িতে লোক বলতে সে, অর্না আর একজন কাজের লোক। চারটি বেডরুম, শুধু তারা দুজন থাকে বাকি গুলো খালি।
ও নিজের রুমে চলে গেল অফিসের জন্য তৈরি হতে হবে।

অর্না ঘুম থেকে ওঠে কিছুক্ষণ বিছানার উপর বসে রইল। ওর সারাদিন করার মতো তেমন কিছু নেই।চাকরিটাও ছেড়ে দিয়েছে অনেক আগেই। শান্ত হয়তো বেরিয়ে গেছে,একটা সময় ছিলো শান্তর অফিসে যাওয়ার সময় অর্নাকে ওর সামনে থাকতে হতো ওর প্রয়োজনীয় সব ওকেই দিতে হতো এখন আর শান্তর ওকে দরকার হয় না।

সকালের পর থেকে টুকটাক ঘরের কাজ করে অর্না সময় কাটায়।সারাদিন ঘরে থেকে ওর দম বন্ধ হয়ে আসে কিন্তু ওর কিছুই করার নেই।শান্ত ওকে এড়িয়ে চলে, এটা সে বুঝতে পারে। বাবার বাড়িতেও যেতে ইচ্ছে করেনা একা একা বসে শুধু অতীতের কথা ভাবে।

একটা সময় ছিলো যখন শান্ত ওকে পাগলের মতো ভালোবাসতো,আর ও শান্ত ছাড়া চোখে অন্ধকার দেখতো, সেই সম্পর্ক আজ একটা বোঝা হয়ে ওঠেছে ওদের দুজনের জীবনে।

নিজেরা পছন্দ করে বিয়ে করেছিলো,
পরিবারও মেনে নিয়েছিলো।
শান্ত অনেক ছোট বেলায় মা-বাবাকে হারায়, কাকার পরিবারে মানুষ নিজের যোগ্যতায় পড়াশোনা শেষ করে একটা ভালো চাকরি পেয়েছিলো।অর্না পরিবারের একমাত্র মেয়ে তার পছন্দই সবাই মেনে নেয়।
খুব ধুমধাম করে ওদের বিয়ে হয়। শান্ত নতুন একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় আর অর্না নিজের মনের মতো করে সেটা সাজায়।শান্তর খুব ইচ্ছা
বাচ্চা নিয়ে নেয়ার কিন্তু অর্না আরও কিছুদিন সময় নিতে চায়,আসলে
অর্নার বরাবরই সখ চাকরি করবে,নিজের একটা পরিচয় তৈরি করবে তাই সে তাড়াতাড়ি মা হতে চায় না। সে পত্রিকা দেখে বিভিন্ন যায়গায় আবেদনও করতো, ইন্টারভিউ দিয়েছে কয়েকটা এর মধ্যে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে তার চাকরি হয়ে যায়।

শান্তর খুব একটা ইচ্ছা ছিলো না,কিন্তু অর্নার মুখের দিকে তাকিয়ে না করতে পারলো না। তবে একটা শর্ত দিলো, ও খুব তাড়াতাড়ি বাবা হতে চায় তখন কিন্তু কোন অজুহাত দেওয়া যাবে না।

প্রথম একবছর বেশ ভালোই যায়।
অর্না খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো করতে শুরু করেছে, ওর বসেরা ওর খুব প্রশংসা করে,শুনে শান্তও খুশি হয় অর্না তো এটাই চেয়েছিলো।

কয়েকদিন ধরে অর্নার শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে, কিছুই খেতে পারছে না, খুব দুর্বল লাগে আবার বমিও হচ্ছে, সেদিন অফিস থেকে ফেরার পথে শান্তকে বললে শান্ত সাথে সাথে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।
ডাক্তার শান্তর বন্ধু তাই বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি তিনি অর্নাকে পরীক্ষা করে বললেন, “শান্ত তুমি বাবা হতে যাচ্ছ।” ডাক্তারের কথা শুনে শান্তর চোখে পানি চলে আসে ডাক্তারকে বললো, এতো দিন সে এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো আজ তার মতো খুশি আর কেউ নেই। অর্না খুব লজ্জা পেয়ে যায় শান্তর পাগলামি দেখে। ডাক্তার আরও কিছু টেস্ট করতে দিলো শান্ত সঙ্গে সঙ্গে সব টেস্ট করালো,বাসায় ফেরার সময় বাইরে থাকেই খাবার নিয়ে এলো অর্নাকে যেন আর রান্না করতে না হয়।

শান্ত বললো এখন খুব সাবধানে থাকতে হবে পারলে কয়েকদিনের জন্য ছুটি নাও।অর্না কথাটার কোন গুরুত্ব দিলো না বললো, পরে অনেক দিন ছুটি নিতে হবে এখন নিবো না।

রাতে বিছানায় শুয়ে শান্ত ভাবছে, ওর জীবনে বাবা-মার অভাবটা সবসময়ই ছিলো কিন্তু তার সন্তানকে সে সেই অভাব কোনদিন বুঝতে দিবে না খুব ভালোবাসা দিয়ে বড়ো করবে তার সন্তানকে।

অর্নার সামনে একটা ট্রেনিং-এর কথা চলছে এই ট্রেনিং টা করতে পারলে ওর প্রমোশন নিশ্চিত। কিন্তু ট্রেনিংটা হবে সিলেটে কিভাবে শান্তকে বুঝাবে সেটাই ভাবছে, ও বাচ্চার ব্যাপারে এখনি যে পাগলামি শুরু করেছে।অর্না চাইছিলো আর কিছুদিন পর বাচ্চা নিতে কিন্তু এখন যখন হয়ে গেছে মেনে নিতেই হবে
আর শান্তর খুশিতেই ওর খুশি।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে অর্না দেখলো শান্ত সকালের নাশতা সব করে ফেলেছে আর তার জন্য বিভিন্ন রকমের খাবার আলাদা ভাবে রান্না করেছে। অর্নার এসব দেখে খুব ভালো লাগছে একটা নতুন শান্তকে সে দেখতে পাচ্ছে।
অফিসেও তিনবার ফোন করেছে খাবার খেয়েছে কিনা,শরীর ঠিক আছে কিনা এসব জানার জন্য, অর্না কাজের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস বারবার ফোন ধরতে ওর বিরক্ত লাগছে।

অর্নার রিপোর্ট নেয়ার জন্য শান্ত ডাক্তারের কাছে যায়,সব দেখে ডাক্তার বললো অর্নার প্রেগন্যান্সিতে একটা সমস্যা আছে ওকে খুব সাবধানে থাকতে হবে। আর নিয়মিত ঔষধ খেতে হবে। তিনি আরও বললো, ভাবনার কিছু নেই প্রথম কয়েকমাস একটু সাবধানে থাকলেই হবে।
বাসায় ফিরে শান্ত দেখলো অর্না শুয়ে আছে ওর বুকটা কেপে উঠলো কিছু হয়নি তো?
অর্না বললো, আরে না কিছু হয়নি এমনিই রেস্ট নিচ্ছিলাম তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি চা নিয়ে আসছি।
শান্ত ওকে বিছানা থেকেই উঠতে দিলো না নিজেই চা করলো এমনকি অর্নাকে জিজ্ঞেস করে করে রাতের রান্নাটাও করলো। অর্নার নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে সে এমন একজন স্বামী পেয়েছে তার জন্য।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
এভাবেই কাটলো ছয় মাস,শান্ত প্রতিটা দিন ওর পাশে আছে ওদের সন্তানের বেড়ে ওঠাটা অনুভব করছে, ওকে ছুয়ে ওর স্পন্দন বুঝতে পারছে।

অর্নার ট্রেনিংয়ে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে শান্ত কিছুতেই রাজি না এই অবস্থায় ওকে দুরে কোথাও পাঠাতে।
অর্না জেদ করছে খুব, ও এই ট্রেনিংটা করবেই! এটা তার ক্যারিয়ারের জন্য খুব ভালো একটা সুযোগ। আর তাছাড়া তার কোন সমস্যা হচ্ছে না একসপ্তাহ ওকে সিলেট থাকতে হবে সেখানেই ট্রেনিং সেন্টার। অনেক কষ্টে শান্তকে রাজি করিয়েছে আর কথা দিয়েছে সেখান থেকে ফিরে আর অফিসে যাবেনা অনেক দিনের জন্য ছুটি নিয়ে নেবে।

অর্নার জেদের কাছে শান্তকে হার মানতেই হলো। সে নিজে অর্নার ব্যাগ গুছিয়ে দিলো বারবার বললো ঔষধগুলো ঠিক সময়মতো খেয়ে নিতে। সে নিজেই অর্নাকে অফিসের সামনে দিতে গেলো আরও কয়েকজন আছে সবাই একসাথেই যাবে।
অর্না গেছে আজ চারদিন, প্রতিদিনই শান্তর সাথে ওর কথা হচ্ছে কিন্তু আজ একবারও ফোন করেনি অর্না বলেছে সে-ই ফোন করবে শান্ত যেন যখন তখন ফোন না করে। শান্ত অফিসেই আছে কিন্তু অর্নার সাথে কথা হয়নি বলে মনটা খুব ছটফট করছে।শান্ত দুইবার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু ফোন বন্ধ।

রাতে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে শান্তর মোবাইলে ফোন আসে,শান্ত কলটা ধরার পর শুধু একটা কথাই বুঝতে পারে, “অর্না হাসপাতালে ভর্তি তাড়াতাড়ি চলে আসো।”
শান্ত এক মুহূর্তও দেরি করে না অফিসের গাড়ি নিয়ে সাথে সাথেই রওনা হয় সিলেটের উদ্দেশ্যে।ওর
কাছে প্রতিটা মিনিট এক ঘন্টার মতো মনে হচ্ছিল নানা রকম অজানা ভয় ওকে ঘিরে ধরেছে। একদিকে অর্নার জন্য চিন্তা অন্যদিকে অনাগত সন্তানের জন্য ভাবনায় ওর পাগল প্রায় অবস্থা।

যখন সে হাসপাতালে পৌছালো অর্নার তখন সেন্স নেই ওকে কেবিনে রাখা হয়েছে অবস্থা খুব খারাপ, শান্ত ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলো আমার সন্তান?
ডাক্তার বললো, “আমরা ওকে বাঁচাতে পারিনি মায়ের পেটেই সে মারা গেছে “। শান্তর পৃথিবীটা এক মুহূর্তের মধ্যেই উলট পালট হয়ে গেল। ওর এতো দিনের আশা,স্বপ্ন সব শেষ হয়ে গেলো।ডাক্তার বললো, ওর একটা মেয়ে হয়েছিলো, শান্তকে তার মেয়ের কাছে নিয়ে গেল একটা কাঁচের বাক্সে মেয়েটাকে রাখা হয়েছে।শান্ত মেয়েটার কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পরলো অর্নার কলিগরা বাইরে থাকে এই দৃশ্য দেখছিলো কেউই চোখের জল আটকে রাখতে পারলো না।

পরদিন অর্নার জ্ঞান ফিরলো সে কিছু বুঝতে পারার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে।
ডাক্তার শান্তকে তার জীবনের সবচেয়ে নির্মম সত্যিটা বললো, অর্না আর কখনো মা হতে পারবে না ওর জরায়ু কেটে ফেলতে হয়েছে।
শান্ত কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইল,অর্নার এক কলিগ শান্তর পাশে বসলো তার হাতটা ধরে বললো, আমাদের ক্ষমা করবেন আমরা কিছু করতে পারলাম না। তার কাছেই শান্ত জানতে চায় কিভাবে এটা হলো?
তখন সে বললো, কাল সকাল থেকেই অর্না খুব ব্যাস্ত ছিলো, সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকেই কাজ করেছে দুপুরের ঔষধটাও নাকি খেতে ভুলে গেছে, সন্ধ্যার পর যখন তারা রুমে ফিরলো তখনই ওর শরীর খারাপ হতে থাকে, প্রচন্ড ব্যাথা আর একপর্যায়ে ব্লিডিং শুরু হয় তখনই তারা তাকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসে।
ডাক্তার ওকে দেখেই বলে এখনি অপারেশন করতে হবে নাহলে ওকে বাঁচানো যাবে না।

যে সন্তান ছিলো ওদের ভালোবাসার প্রতীক যার জন্য সে এতো দিন ধরে অপেক্ষা করছে আজ অর্নার ভুলের কারণে সেই সন্তানকে হারিয়েছে এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।
আবার অর্নাকেও সে অনেক ভালোবাসে ওকেও কিছু বলতে পারছে না কি করবে সে?একটা অদ্ভুত পরিবর্তন হয়ে যায় শান্তর মধ্যে।

সে অর্নার সাথে দেখা করতে গেলো অর্না ওকে দেখেই কেঁদে দেয় কিন্তু এই কান্নার কোন মুল্য শান্তর কাছে নেই।যে তার সন্তানের মৃত্যুর জন্য দায়ী তাকে সে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবে না।
অর্নার কাছে চাকরিটা সন্তানের চেয়ে বেশি মুল্যবান ছিলো আর তার জন্যই আজ এই পরিস্থিতি। শান্ত ওর সাথে বেশি কথা বলেনি পরদিন ওকে নিয়ে চলে আসে।

অর্নার মা খবর পেয়ে ওদের বাসায় আসেন শান্ত অর্নাকে তার সঙ্গে নিয়ে যেতে বলেন।
অর্না বুঝতে পারে শান্ত খুব কষ্ট পেয়েছে কিন্তু সে-ও তো অনেক কষ্ট পাচ্ছে আর এই সময় ওকে ছেড়ে যেতে অর্নার একটুও ইচ্ছা করছে না।

আস্তে আস্তে শান্তর মধ্যে পরিবর্তন হতে লাগলো ও যেন নতুন মানুষ, দরকার ছাড়া অর্নার সাথে কোন কথাই বলে না সারাদিন বাইরে থাকে রাত করে বাসায় ফিরে।
যেই সময়টায় শান্তকে অর্নার সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো সেই সময়ই শান্ত ওর থেকে দূরে সরে গেলো।

একটা দুর্ঘটনা ওদের আলাদা করে দিয়েছে,ওদের সন্তানের সাথে সাথে ভালোবাসাটাকেও নিয়ে গেছে।

আজ এতোগুলা বছর ওরা একই ছাদের নিচে আছে কিন্তু ওদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। একাকিত্ব অর্নাকে গ্রাস করেছে।তারপরও আছে যদি কোনদিন শান্ত আবার কোনদিন তাকে ভালোবাসে কাছে টেনে নিতে চায়।

শান্ত মাঝে মাঝে একটা অনাথ আশ্রমে যায় সেখানের কয়েকটা মেয়ের সব খরচ সে দেয়। ওখানে সে কিছুটা সময় কাটায় হয়তো ওদের মধ্যেই নিজের আত্মজাকে খোঁজে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে