Monday, July 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1934



প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৩৯

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৩৯
#Writer_Afnan_Lara
?
ওয়াও আহানা তোমার মাথার ফুলগুলো তো অনেক সুন্দর,কই থেকে নিলে?
.
আমার মাথার ফুল??মানে?
আহানা মাথায় হাত দিয়ে দেখলো ৫/৬টা ফুল হবে পুরো মাথা জুড়ে,পিছনে ফিরে শান্তর দিকে তাকাতেই সে আরেকদিকে তাকিয়ে গেলো,যেন সে এই কাজটা করে নাই
আহানা হেসে দিয়ে সবার সাথে ব্লু ওয়াটার পার্কের জন্য রওনা হলো,হাঁটতেসে সবাই,শান্ত আহানাকে ডিস্টার্ব করতেসে বারবার
একবার চুল টানছে আবার ওড়না,নয়ত গাল নয়ত কান
.
শেষে আহানা বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো
কি সমস্যা আপনার,ঠিকমত হাঁটতেও দিবেন না নাকি?এরকম করেন কেন?
.
শান্ত কাছে এসে বললো আমার পাতানো বউ আমি ডিস্টার্ব করবো না তো কে করবে?
.
শুনুন আমি আপনার পাতানো বউ না ওকে,এ নামে আমাকে আর ডাকবেন না নাহলে আমি
.
কি?
.
ভাইয়া বলে ডাকবো
.
খবরদার!
.
শান্ত ভাইয়া?
.
শান্ত আহানাকে এক দৌড়ানি দিলো,আহানা তো ছুটে যাচ্ছে প্রাণপণে,তাও শান্ত ধরেই ফেললো শেষমেষ
শান্ত ওকে ধরে ফেলায় ভয়ে আহানা কেঁদেই দিলো,চোখ দিয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো তার
ভয় পেলো কেন সে নিজেও জানে না আর চোখের পানি কেন পড়লো সেটাও সে জানে না
শান্ত মুখটা গম্ভীর করে এগিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো
.
ডান পাশে একটা বিরাট পাহাড়,কিছু দর্শনার্থী সেখান দিয়ে যাচ্ছে আর কেউ কেউ নিচ দিয়ে যাচ্ছে,শান্ত আর আহানা ঝগড়া করতেসিলো বলে সবার পিছনে রয়ে গেছে,নির্জন একটা এলাকা
শান্ত আর আহানা দুজনেই চুপ করে আছে,শেষে আহানা নিজেই নিজেকে শান্তর কাছ থেকে সরিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো
আমাকে জড়িয়ে ধরলেন কেন?
.
তুমি ভয় পেয়েছো তাই,আমার তোমার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই ওকে??সো জড়িয়ে ধরায় আকাশে উড়িয়ে না
শান্ত হেঁটে চললো তারপর আহানা কিসব ভাবতে ভাবতে ওর পিছু পিছু আসতে লাগলো
শান্ত পাশে তাকিয়ে আহানার দিকে চেয়ে তার প্রিয় গান ধরলো

যদি তুমি ভালোবাসো, ভালো করে ভেবে এসো
খেলে ধরা কোনো খানে, রবে না
আমি ছুঁয়ে দিলে পরে, অকালেই যাবে ঝরে
গলে যাবে যে বরফ, গলে না.
আমি গলা বেচে খাবো,কানের আশেপাশে রবো
ঠোঁটে ঠোঁটে রেখে কথা হবে না.
কারো একদিন হবো, কারো একরাত হবো,
এর বেশি কারো রুচি, হবে না.
|| আমার এই বাজে স্বভাব, কোনোদিন যাবে না ||
.
আহানা শান্তর দিকে চেয়ে হেসে বললো এই গানটা আপনার খুব পছন্দ বুঝি?
.
হুম,অনেক!
.
আপনার বাজে স্বভাব টাকি শুনি?
.
দেখি তুমি বলোতো
.
সিগারেট খাওয়া,চিকেন বেশি খাওয়া,আর
.
আর?
.
আহানা হেসে দিয়ে বললো আর আমাকে ২৪ঘন্টা জ্বালানো!
.
তোমাকে তো আমি ১২ঘন্টা জ্বালাই,তাহলে ভালো একটা আইডিয়া দিসো,ফ্রম Now আমি তোমাকে রাতেও জ্বালাবো
.
দরজায় তালা দিয়ে রাখবো?
.
তোমার কাছে আসতে তালা আমার কাছে কিছু না
.
এসে কি করবেন?
.
দেখা যাবে
.
এসে গেছে পার্ক,সবাই ভিতরে ঢুকে পার্কটা ঘুরে দেখছে,বেশ সুন্দর,তবে ম্যাজিক প্যারাডাইস বেশি সুন্দর ছিল!
পার্কে ঘুরাঘুরি শেষে সবাই হোটেলে ফিরে আসলো,আহানা রুমের দরজা ভালো করে আটকালো,শান্তকে বিশ্বাস নাই,সত্যি সত্যি যদি এসে যায়
.
আহানা পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হেসে দিলো দরজার দিকে তাকিয়ে,কারণ দরজা বন্ধ,তার মানে শান্ত আসেনি,আমি জিতেছি?
খুশি হয়ে সে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে তার হাতের মুঠোয় কিছু একটা দেখতে পেলো,একটা আংটি,প্লেইন ডিজাইনের সিলভার একটা হালকা পাতলা রিং,এটা তোহহহ! এটা তো শান্তর
সবসময় শান্তর আঙ্গুলে এটা থাকে,,তার মানে ও কাল রাতে এসেছিল!!উফ কখন এসেছিল,আমি টের পাইনি কেন?
আহানা গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো,বেশ ভালো একটা ভিউ আসে এখান থেকে,দূরদূরান্তে শুধু সবুজ গাছগাছালি
আহানা হেসে দিয়ে বারান্দা থেকে চলে আসতে গিয়ে থেমে গেলো,বারান্দায় একটা রড খাড়া করা ছিল সেটায় আহানার ওড়না গিট্টু দেওয়া,আহানা নিজের গায়ের দিকে চেয়ে দেখলো ওড়না নেই,এটা শান্তর কাজ!বেয়াদব,আমাকে বোকা বানালো,অসভ্য একটা!
আহানা ওড়নাটা খুলে গায়ে পরে চলে গেলো ফ্রেশ হতে,ফ্রেশ হয়ে হনহনিয়ে হোটেলের রুম থেকে বের হতেই শান্তর সাথে এক ধাক্কা খেলো যেন সে এখানেই দাঁড়িয়ে ছিল
আহানা কোমড়ে হাত দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শান্ত আহানার হাত টেনে হাতের মুঠোয় ওর রিং চেক করলো, কিন্তু পেলো না
ব্রু কুঁচকে বললো আমার রিং দাও
.
কেন দিব?ওটা এখন থেকে আমার
.
ছেলেদের রিং পরবে তুমি?
.
তো কি হইসে,একটা স্টোন বসায় দিলে মেয়েদের মনে হবে
.
আমি কাল তোমার রুমে এসেছি সেটা বিশ্বাস করাতেই রিং রেখে গেসিলাম
.
শিয়ালের কাছে মুরগী বানা রাখলে এমনই হবে,ঐ রিংয়ের কথা ভুলে যান মিঃ অশান্ত!
.
আহানা হেলেদুলে রুমে চলে গেলো
শান্ত করিডোরটা ভালো করে দেখে নিজেও আহানার পিছন পিছন রুমের ভেতর গেলো,রুমে কেউ নেই,বেবি আর লিজা নিচে গেছে খাবার খেতে
আহানা ব্যাগ হাতে নিয়ে দেখলো শান্ত দরজা লাগাচ্ছে,চোখ কপালে তুলে আহানা রুমের শেষ প্রান্তে গিয়ে বললো আমার কাছে আসবেন না,নিন আপনার রিং
.
ওমা দরজা লাগাতেই এত ভয় পেলে?স্ট্রেঞ্জ!এইটুকুতেই এত ভয়?
শান্ত রিংটা নিয়ে চলে গেলো
আহানা ব্যাগ নিয়ে ওর পিছন পিছন আসতেসে
নিচে খাবারের হোটেলে শান্ত টেনে আহানাকে তার পাশে বসালো
দুজনে ভাগাভাগি করে নাস্তা করছে,আহানা চিকেন কম খায় বলে সে শান্তকে দিয়ে দিসে,আর শান্ত ভাজি কম পছন্দ করে বলে সেটা আহানাকে দিয়ে দিসে
মাঝে মাঝে শান্ত হাঁড় থেকে চিকেন আলাদা করে আহানার পাতেও চিকেন দিচ্ছে
আহানাও ভাজি এক দু চামচ শান্তকে দিচ্ছে
রাফি স্যার মুগ্ধ হয়ে ওদের দেখছে,ওদের বন্ডিংটা বেস্ট,তাকিয়ে থাকার মতো
মাইক্রোতে উঠে দুজনে আবার একসাথে বসলো,২/৩ধাপে ঝগড়া করা হয়ে গেছে অলরেডি
.
আহানা শুনো
.
কি?
.
নওশাদের কল আসছিলো,আজকে ওর ফ্যামিলি রুপাদের বাসায় যাবে,আমাদের তো অবশ্যই যেতে হবে
তুমি বাসায় ফিরে রেডি হয়ে থেকো,আমি তোমাকে নিয়ে ওদের বাসায় যাবো
.
কেন?আপনার সাথে কেন যেতে হবে আমাকে?আমি একাই যেতে পারবো
.
হেঁটে?
.
তো কি হয়েছে?
.
কি হয়েছে মানে?রুপার বাবা জানে আমি নওশাদের বড় ভাই,আর তুমি আমার ওয়াইফ,উনি বলবেন ছেলের পুরো পরিবার তো এসেছে,বড় ভাইয়ের বউ আসলো না কেন,তখন কি করবে তুমি?
.
ওহ,তার মানে আজ আবার এক গাদা মিথ্যা কথা বলতে হবে আমাকে?
.
ফাইন! তুমি চুপ করে থেকো যা বলার আমি বলবো,আর আমার মনে হয় না আজ আমাদের কোনো ডায়ালগ মারতে হবে,যা বলবে নওশাদের বড় আপু আর ওর মা বাবাই বলবে
.
আচ্ছা
ঢাকায় ফিরে আহানা বাসার জন্য রওনা হলো
.
শান্ত বললো দাঁড়াতে
.
কি?
.
তোমার বাসার ঐদিকের একটা মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনবো,তাহলে চলো আমার সাথে,তোমাকে বাসার সামনে নামাই দিব
.
শান্তর কথাটা আহানার ঠিক হজম হলো না,কারণ ওদের বাসার ঐদিকে যে মিষ্টির দোকান আছে ওগুলা ছোটখাটো,আর শান্ত যা কিনে যা খায় তার সব হাই কোয়ালিটির
তাও আহানা শান্তর সাথে রিকসায় উঠলো
বাসায় ফিরে শান্ত চলে যাওয়ার সময় বললো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে থাকতে,বিকালে এসে একসাথে যাবে রুপাদের বাসায়
আহানা রুমে ঢুকে ব্যাগটা বিছানায় রাখতেই রুপার কল আসলো,রুপা আহানার বাসায় আসতেসে
এখানে একটা কাজে এসেছিল,ওকে আহানা সাজিয়ে দিতে হবে তাই কাজ সেরে আহানার বাসায় আসতেসে সে
আহানা বললো ঠিক আছে
রুপা প্রায়ই ১০মিনিটেই এসে পড়লো
.
সে একটা নীল শাড়ী পরেছে,ব্লাউজ ৩/৪টা এনেছে,শাড়ীর সাথে ম্যাচিং করে পরেছে একটা,আহানা ওর চুলে খোঁপা করে দিলো ভালো করে,১ঘন্টায় ওকে সাজানো হয়ে গেছে
.
কিরে তুই রেডি হবি না?
.
এই তো এই জামাটা পরেই আসবো
.
শান্ত ভাইয়া যে শাড়ীটা দিয়েছিল ওটা পর না
.
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো ব্লাউজ তো ম্যাচ হয় না কি করবো
.
আমি তো আজ ব্লাউজ আনছি কতগুলো,একটা মিলিয়ে পর
.
আহানা মুচকি হেসে একটা বেছে নিলো
রুপা বাই বলে চলে গেছে
আহানা শাড়ীটা পরে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,রুপার মত সেও চুলে খোঁপা করেছে পরে শান্তর কথা মনে পড়লো,হুম চুল খুলবো না,বেয়াদবটাকে জ্বালাবো আজ,নীল চুড়িগুলো পরে নিলো
তারপর ব্যাগ হাতে নিয়ে ফোনটা ঢুকালো,এরপর রান্নাঘরে গেলো
রান্নাঘরের জানালাটা লাগিয়ে ফিরে আসতে গিয়ে দেখলো একটা বাটিতে বিট কাটার খোসা আর বিটের এক/দুইটা ছোট টুকরা পড়ে আছে
আহানা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো,নিশ্চয় মীম আপু আজ বিট রেঁধেছিল
আহানা বাটিটা নিয়ে আয়নার সামনে এসে আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁটে বিটের রস লাগালো,ফু দিয়ে দিয়ে সেটা শুকিয়ে নিলো
ঘাড়ো গোলাপি হয়ে গোছে তার ঠোঁট
রুপার মেকআপ বক্সটা রয়ে গেছে,আহানা সব বের করলো বক্স থেকে
সব বাদ রেখে কাজল নিলো,কাজল দিলো চোখে তারপর সেই কাজল দিয়ে কপালে ছোট্ট করে একটা টিপ বানালো
ব্যস কমপ্লিট! আর কিছু চাই না
বক্সটা গুছিয়ে আহানা নিজের ব্যাগে নিয়ে নিলো রুপাকে দিয়ে দিবে
তারপর রুমের জানালা আটকাতে গিয়ে দেখলো শান্ত বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলতেসে
আহানা তাড়াতাড়ি জানালা আটকিয়ে দরজা লক করে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসলো
শান্তকে সামনে থেকে দেখে তো আহানা চমকে থেমে গেলো,একটা সাদা পাঞ্জাবি পরেছে সে,আর একটা কালো সানগ্লাস ,জোস লাগতেসে ওকে
আহানা হা করে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে গেলো
শান্ত আহানাকে দেখে ওর কান থেকে ফোনটাই পড়ে যাচ্ছিলো,হাত দিয়ে ফোন ধরে চোখ থেকে চশমাটা খুললো,চশমাটা খুলতেই আহানার ঠোঁটের রঙটা উজ্জ্বল রঙ ধারণ করলো ওর চোখে
আহানাকে এমন সাজে এই প্রথম দেখলো সে
চুল খোঁপা দেখে ব্রু কুঁচকে এগিয়ে গেলো আহানার দিকে
আহানা বললো চলুন যাই,দেরি হয়ে যাবে
.
তোমাকে বললাম না চুলে খোঁপা করবা না?
কথাটা বলে শান্ত এক টান দিয়ে খোঁপার কাঠিটা খুলে নিলো,কাঠিটা পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকিয়ে বললো Now পারফেক্ট?
একটা কথা বলোতো!
.
কি?
.
ঠোঁটে এটা কি লাগাইসো,চিক চিক করতেসে না কেন?মেয়েরা তো লিপস্টিক লাগাইলে চিকচিক করে
.
এটা আসলে
.
কি?
.
বিটের রস?
.
হোয়াট!!ও আমি তো ভুলেই গেসিলাম তুমি লিপস্টিক ইউজ করো না
যাক ন্যাচারাল টা ইউজ করসো এর জন্য আমি তোমাকে চা খাওয়াবো,চলো এখন
আহানা গিয়ে বাইকে উঠে বসলো
শান্ত বাইকে উঠে সানগ্লাস পরতে যেয়ে দেখলো দোতলা থেকে তারেক রহমান উঁকি দিয়ে তাকিয়ে আছে
.
শান্ত চশমাটা পাঞ্জাবির কলারে আটকিয়ে হেসে দিলো
উম্মাহহহহহ!
.
তারেক আঙ্কেল চোখ বড় করে বললেন আস্তাগফেরুল্লাহ!!নাউযুবিল্লাহ!!এই পোলা আমাকে চুম্মাহ পাঠায়!
.
আপনাকে না আঙ্কেল!!
.
মানে? তো কাকে?
তারেক রহমান কথাটা বলে পিছনে তাকিয়ে দেখলো তার বউ তার পিছনে দাঁড়িয়ে শান্তর দিকে চেয়ে আছে,আর লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে ঢুলতে ঢুলতে আকাশে উড়তেসেন,শান্ত উনাকে ফ্লাইং কিস দিসে,ও মাই গড!
.
এখনকার পোলাপাইন আমাগোরে এক মার্কেটে বিক্রি করে আরেক মার্কেট থেকে কিনেও নিতে পারবে বুঝলা আসমা??এখন যাও রঙ চা বানাও
.
এই আপনি কাকে চুমু দিলেন?
.
তোমার বাসার বলদ মার্কা মালিকের বউরে?
আহানা হেসে বললো উনার সাথে মজা করিয়েন না শেষে আপনার এখানে আসা অফ করে দিবে
শান্ত কথাটা কানেই নিলো না!
বাইক স্টার্ট দিয়ে আহানাকে নিয়ে রুপাদের বাসার সামনে এসে পড়লো
বাসার ভেতর মানুষে ঠেললে ঠেলা যাবে না,মনে হয় উতলায় পড়বে,আজ যে আমরা মেয়ে দেখতে এসেছি তা বুঝায় যাবে না যেন আজই বিয়ে
শান্ত বাইক থেকে নেমে চশমা পরে হাঁটা ধরলো,বাসার ভেতর পা রাখতেই
এক দল মেয়ে দূর থেকে হেসে হেসে বললো এইটা বুঝি বর??ওমা রুপা আপু কত লাকি,এত কিউট একখান বর পেয়েছে,ভাইয়া আপনার কোনো ছোট ভাইটাই আছে নাকি?
শান্ত চশমা খুলে ওদের দিকে তাকিয়ে বললো
বউ!!!ওওওও বউ,তাড়াতাড়ি আসো তো
আহানা শাড়ী ধরে ভিতরে ঢুকলো,মেয়েগুলো মুখ ছোট করে বলাবলি করতেসে ওমা এর বিয়ে হয়ে গেছে? তার মানে বর আরেকজন!!
.
শান্ত সোফায় বসে মেয়েগুলোর দিকে চেয়ে বললো আমার ছোট ভাই তো তোমাগো রুপা বোনের হবু বর,আমার আর ছোটভাই নাই,সরি ফর দ্যাট
.
আহানা ভিতরের রুমের দিকে গেলো রুপাকে দেখতে
ততক্ষণে নওশাদের বাবা মা,বড় আপু আর নওশাদ ও এসে গেছে
নওশাদ ও পাঞ্জাবি পরেছে,নীল পাঞ্জাবি,শান্তর পাশে বসেছে সে,কেউ বলবে না তারা একই মায়ের পেটের সন্তান না,দুজনকেই ভাই মনে হচ্ছে
একটা মেয়ে আহানাকে একশো প্রশ্ন করতেসে,শেষে তো বলেই দিলো বিয়ের কত মাস চলে?
.
আহানা ঢোক গিলে বললো ৪মাস,রুপা মুচকি মুচকি হাসতেসে
.
মেয়েগুলো এবার গেলো শান্তর কাছে
.
তো ভাইয়া বিয়ের সবে ৪মাস হয়েছে এখনই ছোট ভাইকে বিয়ে করাচ্ছেন?
.
কি করবো আপু?নওশাদকে তো আরও পরে করাইতাম বাট রুপার আব্বু তো চান জলদি করাতে,আমরা আর কি করাতে পারি বলো?
(আহানা শুধু ৪মাস কেন বললো!)
আহানা কোথায়?
.
ছাদে গেছে,আপুর জন্য ফুল আনতে
.
ওকে নওশাদ তুই বস আমি আসতেসি
.
শান্ত ছাদের দিকে গেলো,আহানা গাঁদা ফুল ৫টা নিয়েছে,এগুলো দিয়ে গাজরা বানাবে তারপর রুপার মাথায় লাগিয়ে দিবে
এসব ভেবে পিছন ফিরতেই দেখলো শান্ত গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে
.
কি?
.
এই তোমার কমন সেন্স নাই?আমাদের বিয়ের ৪মাস হইসে?আরেকটু বাড়াই বলতে পারো নাই?এত কম বললে কেন?
.
এই জন্য মানুষের ভালো করতে নেই,আমি ভালোই ভালোই এত মিথ্যা বলতেসি আর এখন আপনি আমাকেই কথা শুনাচ্ছেন?
.
এসব কি আমার জন্য করতেসো?নাকি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডের জন্য?
.
ফাইন,আমি গিয়ে বলতেসি আমার বিয়ের ১বছর হইসে,আমি ৩মাসের গর্ভবতী,ওকে??
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৩৮

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৩৮
#Writer_Afnan_Lara
?
টুকটাক ঘুরাফিরা করে সবাই হোটেলে ফিরে আসলো
আহানা লিজা আর বেবির সাথে এক রুমে আর শান্ত আর অন্য ২টো ছেলে এক রুমে,বাকিরাও আলাদা আলাদা রুম নিয়েছে
আহানা ফ্রেশ হয়ে এসে একটু শুতেই ওর ঘুম এসে গেলো
রাত ৯টায় সবাই বের হয়ে যাচ্ছে ডিনার করার জন্য,নিচে খাবারের হোটেল
আহানা গভীর ঘুমে,বেবি আর লিজা ওকে রেখেই চলে গেছে
সবাই টেবিলে বসতেই শান্ত এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো আহানাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে নাহ,কি ব্যাপার!কই গেলো মেয়েটা?
.
রাফি স্যার খেতে খেতে বললেন আহানা আসেনি কেন?লিজা?
.
স্যার ও ঘুমায়,তাই আর জাগাইনি
.
তাই বলে ও সারা রাত না খেয়ে থাকবে?ডিনারের জন্য তুললে না তোমরা?
.
কি করবো?
.
স্যার আমি আহানাকে নিয়ে আসতেসি
.
ওকে
.
শান্ত আহানাদের রুমে এসে দরজায় ২বার নক করে ভিতরে ঢুকলো,আহানা চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে
.
আহানা?উঠো,চলো ডিনার করবে
.
শান্তর কথা শুনে আহানা লাফ দিয়ে উঠে বসলো
তাড়াহুড়ো করে ওড়না খুঁজে পরে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো ওর দিকে
আপনি এখানে?
.
তুমি ডিনারের জন্য আসো নি কেন?চলো খেতে চলো
.
লিজা আপু,বেবি আপু ওরা কোথায়
.
ওরা তোমাকে রেখেই চলে গেছে,এখন চলো
শান্ত আহানার হাত ধরে নিয়ে গেলো,শান্তর পাশে নিহাল বসেছে,আর এখন নিহালের পাশের সিট খালি,শান্ত রাগী চোখে নিহালের দিকে চেয়ে আছে,ইচ্ছে করে ও এমন করসে তা জানতে আর বাকি নেই
আহানা গিয়ে নিহালের পাশে বসলো
আহানা এটা খাবা,ওটা খাবা,এটা একটু দিই,ওটা একটু দিই
শান্তর মেজাজ গরম হয়ে গেছে আহানার প্রতি নিহালের এমন পিরিতি দেখে
ঠাস করে উঠে দাঁড়িয়ে রুমের দিকে চলে গেলো
সবাই খাওয়া শেষ করে এবার চা খাচ্ছে
আহানা শান্তর প্লেটটা নিয়ে শান্তর রুমে আসলো,দরজায় নক করতেই শান্ত চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে বললো আসো পিয়াস,দরজা খোলা
.
আহানা ভিতরে এসে চেয়ার টেনে বিছানার পাশে বসলো
.
আহানার গায়ের একটা আলাদা গন্ধ আছে,শান্তর নাকে সেটা আসতেই ও মুখ থেকে চাদরটা সরিয়ে ফেললো
আহানা প্লেট এগিয়ে ধরে বললো নিন,খেয়ে নিন,আমি জানি আপনার পেট ভরেনি
.
খাবো না
.
আহানা গ্লাস নিয়ে হাত ধুয়ে এসে বসে লোকমা বানাচ্ছে
শান্তর মনে মনে খুশিতে হার্ট লাফাচ্ছে,তড়িগড়ি করে উঠে বসো গেলো,যেন এটার জন্যই যে অপেক্ষা করতেসিলো এতক্ষণ
আহানা শান্তকে খাইয়ে দিচ্ছে,শান্ত খেতে খেতে বললো তুমি ঐ নিহাল থেকে দূরে থাকবা,ওকে আমার একটুও সহ্য হয় না
.
কেন হয় না?কি করসে ও?
.
না কিছু করে নাই,তাও ওকে সহ্য হয় না আমার,তুমি জাস্ট ওর সাথে মিশবা না,তুমি কারোর সাথেই মিশবা না,তুমি শুধু আমার সাথে কথা বলবা,ঝগড়াও আমার সাথেই করবা
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহানা হেসে দিয়ে বললো আপনার সাথেও না,চড়ের কথা ভুলে গেছেন নাকি?
ভাত শেষ, আহানা উঠে গেলো হাত ধুতে
হাত ধুয়ে বের হতেই শান্তর মুখোমুখি হলো
শান্ত চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে ওর ওড়না টেনে মুখ মুছতে মুছতে বললো আরেকটা চড় দিলেও সমস্যা নাই
.
কি বললেন?আজ কি সূর্য উঠেছিলো?নাকি উঠলেও ডুবে নাই মনে হয়,মিঃ অশান্ত এসব কি বলছে!!
.
মজা নিও না তো!
.
আহানা চলে যাচ্ছিলো তখনই রুম সার্ভিসের লোক এসে এক কাপ চা দিয়ে গেলো
.
আহানা দাঁড়াও
.
কি?
.
চা খাবে আমার সাথে?
.
আহানা ব্রু কুঁচকে শান্তর হাতের দিকে তাকালো
.
শান্ত হেসে বললো উপায় আছে,আসো
আহানা এসে সোফায় বসলো,শান্ত তার ব্যাগ থেকে একটা ওয়ান টাইম গ্লাস বের করে কাপের অর্ধেক চা সেটাতে ঢেলে আহানাকে দিলো
চা খাওয়া শেষ করে আহানা শান্তর রুমের দিকে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে
.
আচ্ছা যাও এবার,ঘুমাও
.
আহানা চলে যেতে নিতেই শান্ত বললো পাতানো বউ?
.
আহানা থেমে চোখ বড় করে একবার ওর দিকে তাকিয়ে চলে গেলো
.
শান্ত হাসলো,আহানাকে এভাবে জ্বালাতে বেশ লাগে
পরেরদিন সকাল সকাল সবাই আবার কাজে ফিরে গেলো
.
আহানা??কফি খাবে?
.
না,ও কফি খায় না
.
আহানা তুমি বলো,আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করি নাই শান্ত
.
আমি কফি খাই না
.
ওহহ
.
আহানা নকশা বানাচ্ছে পেপারে
শান্ত ও তার নকশা বানানোয় ব্যস্ত, পাশে কারোর উপস্থিতি পেয়ে চেয়ে দেখলো নিহাল দাঁড়িয়ে আছে,পকেটে হাত ঢুকিয়ে মুচকি হাসতেসে
.
কিছু বলবে?
.
ভাই বুঝো না কেন তুমি যে আমি আহানাকে পছন্দ করি?একটু তো আমাদের কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে দিতে পারো,সবসময় মাঝখান দিয়ে এসে পড়ো কেন বলোতো?
নিহাল শান্তর কাঁধে হাত রেখে হেসে দিলো
.
কি ভাই?বুঝছো তো??
.
শান্ত নকশা কমপ্লিট করে নিহালের দিকে চেয়ে কান থেকে ইয়ারফোন বের করে বললো কিছু বললে নিহাল?আমি তো গান শুনতেছিলাম
Shape of you!!
.
হোয়াট!তুমি কিছু শুনো নি?
.
শান্ত ফাইল সব সেট করতেসে,একটা পাতা নিচে পড়ে গেলো, সেটা নিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিয়ে নিহালের দিকে তাকালো সে,তারপর নিহালের কাঁধে হাত রেখে বললো
তুমি ওর কলিগ রাইট?
.
ইয়াহ
.
আর আমি ওরর পাতানো বর,বর বুঝো তো?যার সাথে বিয়ে হয়
.
মানে?পাতানো মানে কি?
.
মানেটা সহজ,ছোটবেলায় আমি আর আহানা বর বউ ছিলাম
.
তো, এখন তো না তাহলে?
.
আরেহ হতে কতদিন,হয়ে যাবো রিয়েল লাইফের বর বউ,তোমার আপত্তি আছে নাকি?
.
আমার তো মনে হয় না আহানা তোমাকে লাইক করে
.
আমিও আহানাকে লাইক করি না,ওর প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই বাট কি করবো বলো আমার পাতানো বউ তো,বউকে তো আর অস্বীকার করা যায় না
.
শুনো শান্ত,একটা কথা জেনে রাখো আমি কাল আহানাকে প্রোপোজ করবো
.
কাল কেন?আজ কেন নয়?
.
ফাইন!
.
নিহাল শার্টের বোতাম লাগিয়ে ঠিকঠাক হয়ে এগিয়ে গেলো
আহানা রাফি স্যারের সাথে কথা বলে পিছনে তাকাতেই দেখলো নিহাল দাঁড়িয়ে আছে
.
কিছু বলবেন?
.
নিহাল নিচে বসে গেলো হাঁটু গেড়ে
আই লাভ ইউ আহানা
.
কিছুক্ষন আগে বলতেসিলো লাইক করে,আর এখন ৫মিনিটে লাইক লাভে পরিণত হইসে,ভাবা যায় এসব!!
শান্ত হেসে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিতেসে
আহানা চোখ বড় করে চেয়ে বললো এসব কি বলতেসেন আপনি?
.
সবাই হাততালি দেওয়া শুরু করে দিয়েছে
.
আপনি আমাকে কতদিন চিনেন যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন??আপনার মাথা ঠিক আছে?
.
শান্ত হাসতেসে মুখে হাত দিয়ে
.
আহানা উইল ইউ বি মাই ওয়াইফ?
.
এক মিনিট,থামুন,আর একটা কথাও বলবেন না,আপনি ভালোবাসলেই তো হলো না,আমি আপনাকে ভালোবাসি না,দু একটা কথা হয়েছে বলে এই নয় যে আপনাকে বিয়ে করবো আমি,আমার সম্পর্কে আপনি কতটা জানেন??আমার মা বাবা নাই,একা কামাই করে একার সংসার চালাই জানেন আপনি? আমি অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছি এসব জানেন?
নিহাল ব্রু কুঁচকে বললো কিহহহ!
ভাবছিলো শশুরমশাই থেকে যৌতুক হিসেবে একটা কার চাইবে আর এখন দেখি উল্টা আমাকেই কার কিনে দিতে হবে
.
শান্ত এবার এগিয়ে আসতেসে,আহানা নিহাল থেকে চোখ সরিয়ে ওর পিছনে শান্তর দিকে তাকালো
নিহাল বোতাম সব লাগিয়ে ঠিক হয়ে আহানাকে প্রোপোজ করতে আসছিলো আর শান্ত বোতাম ২/৩টা খুলে আসতেসে
এক তলা ভর্তি কর্মচারী আর পি.এ রাফি স্যারের সামনে শান্ত এগিয়ে এসে আহানার মুখোমুখি দাঁড়ালো,এক হাত আহানার পাশের দেয়ালে রেখে,টাই টানতে টানতে বললো উইল ইউ বি মাই পাতানো বউ টু রিয়েল বউ??
.
আহানা হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতেসে না,এরকম প্রোপোজের কথা জীবনে না শুনেছে না দেখেছে,সবসময় সবাই হাঁটু গেড়ে প্রোপোজ করে আর শান্ত কিনা কি একটা লুক নিয়ে শার্টের কয়েকটা বোতাম খুলে দেয়ালে হাত রেখে প্রোপোজ করলো,সে কি সিরিয়াস?
আপনার মাথা ঠিক আছে?অসহ্য,সবাই পাগল হয়ে গেছে!
.
আহানা ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো
দুটো ছেলে প্রোপোজ করে দুজনেই রিজেক্ট হলো
শান্ত হাসতোসে কারন সে জানে আহানা এটাই বলবে
.
কি নিহাল ব্রো??ওর ডিটেইলস শুনে চুপ হয়ে গেলা যে,মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না কেন তোমার?
শান্ত এক্সকিউজ মি বলে চলে গেলো
আহানা একটা নির্জন রোডের পাশে যে পর্বত ছিল সেখানে বসে আছে,সবাই খালি মজা করে আমার সাথে,শয়তানটাও বাদ রাখলো না আজ
.
আহানা?
.
কি?আবার কোন মজা মিতে এসেছেন এখানে?যান তো
.
আরেহহ,আমি সিরিয়াস,তোমাকে বউ বানিয়ে ডেইলি ঝগড়া করতে জোস লাগবে
.
যান এখান থেকে,আমি মজা করার মুডে নাই,আর আপনি তো বলেন আমার প্রতি আপনার কোনো ইন্টারেস্ট নেই,তাহলে কিছুক্ষন আগে এটা কি ছিল??হুম?
.
মন চাইলো প্রোপোজ করলাম,মন চাইলে বিয়েটাও সেরে ফেলবো!
.
কিহহহ?আমি আপনাকে বিয়ে?ইমপসিবল,জীবনেও না,আমার জীবন এমনিতেও তেজপাতা এবার করলা বানাতে চাই না
শান্ত আহানার ওড়না টেনে হাতে নিয়ে সেটায় গিট্টু দিচ্ছে আবার খুলছে
আহানা দূরের একটা টিনের ঘরের দিকে চেয়ে আছে আর শান্তকে যা পারছে তাই বলে যাচ্ছে
.
রাফি স্যার ওদের দেখে হেসে বললো দেখসো নিহাল?ওদের দেখলে মনে হয় মেড ফর ইচ আদার,আহানা কিছুক্ষন আগে শান্তর প্রোপোজাল রিজেক্ট করেছে তাও শান্ত ওর পাশে বসে কথা বলছে
আর আহানা শান্তকে রিজেক্ট করার পরেও ওর সাথে দিব্যি কথা বলতেসে,মানে ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে তবে বলতে আর মানতে রাজি না,হাহাহা,নাইস না?আর তুমি তো ২/৩দিন হলো আহানাকে চিনো এরই মাঝে ওকে ভালোবেসে ফেললা?২দিনে ভালোবাসা হয় না নিহাল!
সেটার প্রুভ কি জানো?তুমি আহানার ফ্যামিলির কথা শুনে পাল্টা বলতে পারো নাই যে সবকিছুর পরেও আমি তোমাকেই বিয়ে করবো আহানা,কিন্তু শান্ত এরপরেও বলসে বিয়ে করবে
বাদ দাও,এরকম অটুট সম্পর্কে যাদের মাঝে বিরাজমান তাদের মাঝে জীবনেও ৩য় ব্যাক্তি ঢুকতে পারবে না

ছাড়ুন আমার ওড়না,আপনার আর কাজ নাই?
.
না নাই,আমিও নকশা কমপ্লিট করসি?
.
ভালো করসেন
আহানা হেসে দিয়ে শান্তর গাল টিপে দিলো আর বললো আপনি একটা পাগল!!
.
শান্ত আহানার দিকে চেয়ে হালকা হাসলো,তারপর ওর চুলের মুঠি ধরে এক টান দিলো আর বললো কেউ তোমাকে প্রোপোজ করলেও আমার বদদোয়ার কারণে সে তোমাকে পাবে না
.
আপনি নিজেও পাবেন না
.
শুনো মেয়ে!! তোমার প্রতি আমার ইন্টারেস্ট নেই একটুও
.
আপনি পাগল না একটা ছাগল আপনি
.
তুমি শাঁকচুন্নি
.
আহানা শান্তর শার্ট টেনে এলোমেলো করে দিয়ে উঠে এক দৌড় দিলো
.
আহানা তোমাকে বলসি না আমার শার্টে হাত দিবা না,দিলা তো,তোমাকে ছাড়বো না বলে দিচ্ছি!
আহানা হাসতে হাসতে দৌড়ে যাচ্ছে
শান্ত আহানার হাতের কব্জি ধরে ফেলে এক টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসলো
.
কি ব্যাপার পাতানো বউ তোমাকে বলসি না আমার জ্যাকেট বা শার্টে হাত দিবা না?
.
কি করবেন শুনি?
.
কি করবো?
.
হুম
.
যেটা বলসিলাম সেটাই করবো তোমার ওড়না তোমার গায়ে থাকবে না
শান্ত আহানার ওড়না টান দিয়ে নিজের গলায় পেঁচিয়ে হাঁটা ধরলো
.
এই আমার ওড়না দিন বলছি
.
দিব না,কি করবা শুনি?
.
আপনার শার্ট ছিঁড়ে ফেলবো
.
ব্র্যান্ডেড শার্ট,তোমার ঐ ছোট ছোট নখে ছিঁড়বে না
.
নখ নেই তো কি হয়েছে,দাঁত তো আছে
আহানা দাঁত দিয়ে শান্তর শার্ট কামড়াতে লাগলো
.
এই আহানা ছাড়ো
.
না ছিঁড়ে ফেলবো
.
আচ্ছা নাও তোমার ওড়না
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে ওড়নাটা নিয়ে চলে গেলো
.
উফ,ডেঞ্জারাস একটা মেয়ে,বাপরে বাপ

দুপুরের পরেই সব কাজ শেষ হয়ে গেলো,সবাই এবার ব্লু ওয়াটার পার্ক যাবে,আহানা চুল আঁছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই কখন থেকে,বেবি আর লিজা সেজেই যাচ্ছে
আহানা রুম থেকে বেরিয়ে করিডোরে এসে সবগুলো রুমের নাম্বার পড়তে পড়তে হাঁটতেসে,৪০১/৪০২/৪০৩
এমন করে করে শান্তর সামনে গিয়ে পড়লো
শান্ত একটা ব্রাউন জ্যাকেট পরেছে,যা লাগছে না!
চুল ও ব্রাউন আর জ্যাকেট ও
.
তুমি এত দেরি করলে কেন আসতে?
.
বেবি আপু আর লিজা আপু রেডি হচ্ছে তাই
.
তুমি রেডি তো?
.
আমি আবার কিসের রেডি,জাস্ট জামা চেঞ্জ করে চুল আঁছড়িয়ে নিসি
.
তাহলে চলো একজায়গায় যাই
.
কই?আর সবাই তো ব্লু ওয়াটার পার্ক যাবে এখন
.
আরে ব্লু ওয়াটার পার্কের পাশেই স্বর্ণমন্দির চলো আমরা সেখানে যাবো
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহানা রাজি হয়ে গেলো,শান্তর সাথে সাথে চললো,দূর থেকে দেখলে মনে হয় এক দু কদম পার হলেই মন্দিরটা ছোঁয়া যাবে অথচ হাঁটতে হাঁটতে মন্দিরটা ছোঁয়া তো দূরে থাক সামনেই আসতে পারছে না তারা,দূর আছে বৈকি
অবশেষে মন্দিরের কাছে এসে দাঁড়ালো দুজনে,টিকেট কাটতে হবে
শান্ত টিকেট কেটে আহানাকে নিয়ে জুতা খুলে ঢুকলো,শান্ত সোজা হেঁটে যাচ্ছে আহানা ভিতরে পা রেখে ডান পাশে তাকিয়ে দেখলো কতগুলো বাচ্চা মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে গাছ লাগাচ্ছে,পরনে কমলা রঙের পেঁচানো কাপড়,তার মানে তারা বৌদ্ধ,একসাথে এতগুলো বাচ্চা!স্কুলের ট্রিপে এসেছে নাকি
.
নাহ!এটা এই মন্দিরের অনাথ আশ্রম,এরা সবাই অনাথ
.
আহানার মনে হলো তার সাথী এরা,কাছে গিয়ে একটা বাচ্চার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো,সে বললো গাছ লাগাবেন?
আহানা মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে সাঁই দিলো,তারপর একটা চারা গাছ লাগিয়ে দিলো,উঠে পাশে তাকাতেই দেখলো শান্ত ও গাছ লাগাচ্ছে
হাত ধুয়ে এবার তারা মন্দিরের ভিতরে গেলো,এত সুন্দর এটা!রোদ পড়ে চিকচিক করতেসে,ফুলের বাগানে ভর্তি চারপাশটা
শান্ত একটা ফুল নেওয়ার জন্য ১০বার ট্রাই করেছে তাও পারতেসে না
সব খানে বড়বড় করে লিখা আছে
বাগানের একটা ফুলেও হাত দিবেন না
কোথাও গেলে এমন সাইনবোর্ড দেখলে শান্তর আগ্রহ আরও বেড়ে যায়
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৩৭

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৩৭
#Writer_Afnan_Lara
?
দুজনে আবার রিকসা নিয়ে অফিসে ফেরত আসলো,অফিসের সামনে মাইক্রো ২টা দাঁড়িয়ে আছে,কর্মচারীরা আর পি.এ রাফি স্যার মিলে যাবে
আহানা হাঁটতে গিয়ে শান্তর সাথে এক ধাক্কা খেলো,ব্যস লেগে গেলো মারামারি, ঝগড়া
পরে দুজনে চেয়ে দেখলো দুটো মাইক্রো ভর্তি হয়ে গেছে,শেষের ২টো সিট খালি আছে শুধু,সামনের সিটগুলো ভর্তি
দুজন মিলে একজন আরেকজনকে গালি দিতে দিতে সেখানে গিয়ে বসলো
ওয়ে টু কুমিল্লা!!!
সবাই গান শুরু করে দিলো
১৭জন কর্মচারী আর পি.এ রাফি স্যার যাচ্ছে কুমিল্লায়
সবার আগে বিল্ডিংটায় যাবে,আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ হবে,তারপর সবাই সন্ধ্যাই ম্যাজিক প্যারাডাইস যাবে,সেটা ঘুরে সবাই হোটেলে ফেরত আসবে
.
আহানার হাতে শান্তর জ্যাকেটের চেইন বার বার লেগে ওর অস্বস্তি লাগতেসে
.
কি সমস্যা? চেইন লাগাতে পারেন না?এমনিতেও চিকন দুটো সিট,তার উপর আপনি জ্যাকেটের চেইন খুলে বসে আছেন,আজব তো!গরম ও তো নেই তাহলে এমন চেইন খুলে রেখেছেন কেন?এখানে তো মেয়েরা সব সামনে আপনার দিকে তাকাতেও পারবে না
.
শুনো!গরম লাগছে না কে বললো তোমায়?আমার কপালের দিকে তাকাও,কত সোয়িটিং হচ্ছে চোখে দেখো না তুমি?ওকে দেখাচ্ছি
শান্ত আহানার ওড়না টান দিয়ে সেটা দিয়ে কপাল মুছে নিলো
See!কত ঘাম দেখসো.?
.
আপনি একটা বেয়াদব,আপনি আমার ওড়না দিয়ে মুখ মুছেসেন কেন??
.
তুমি বললা কেন যে গরম নেই?
শান্ত ব্যাগ থেকে ফাইল নিয়ে সেটা থেকে একটা শক্ত পেপার ছিঁড়ে আহানার হাতে ধরিয়ে দিলো
.
নাও বাতাস করো আমাকে
.
ইহহহ শখ কত!
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
তাহলে আমি যতবার ঘামবো ততবার তোমার ওড়না দিয়ে মুখ মুছবো
.
?কেন যে এই বান্দর টার সাথে সিট খালি পেলাম!
আহানা পেপারটা নিয়ে বাতাস করতে থাকলো
শান্ত পকেট থেকে সেন্টার ফ্রেশ একটা নিয়ে মুখে দিয়ে চিবাচ্ছে
শেষে হাত ব্যাথা হয়ে যাওয়ায় আহানা পেপারটা শান্তর গায়ে ছুঁড়ে মেরে আরেকদিকে ফিরে বসে গেলো
.
২মিনিট না বাতাস করেই হাত ব্যাথা হয়ে গেলো তোমার?
.
আপনি ১০সেকেন্ড বাতাস করে দেখুন না তাহলে বুঝবেন
.
শান্ত আহানার দিকে চেয়ে একটু ভেঁংচি কেটে বাতাস করতে লাগলো এত জোরে বাতাস করতেসে মনে হয় মাইক্রো উল্টায় ফেলবে
.
উফ, আপনি কি বাতাস করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন?
.
হুহ,দেখলে?পুরো ১১সেকেন্ড বাতাস করলাম আমি?
.
উদ্ধার করসেন আমাকে,আমি ধন্য!
.
শান্ত চুইংগাম মুখ থেকে নিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে
.
হাহাহাহাহহাহাহা?এবার চুইংগাম কোথায় ফেলবেন মিঃ অশান্ত?
.
শান্ত মুচকি হেসে পকেট থেকে ঐ চুইংগামের খোসাটা নিয়ে খোসার ভেতরে চুইংগাম রেখে ফেললো
আর বললো দেখো আর শিখো!এমনি এমনি চুইংগাম ফেলি নাই,খোসার ভিতরে করে ফেলেছি,এতে করে কারোর পায়ে লাগলে আটকাবে না
.
হুহ
.
ইটস কলড জিনিয়াস?
.
এখন বাতাস তো করবা না তাহলে জানালা খুলেতেসি, সরো!!
শান্ত এগিয়ে জানালা খুলে দিলো,তারপর ফোন বের করে গেমস খেলায় মনোযোগ দিলো
.
আহানা বাইরের দিকে চেয়ে আছে,বাতাসে আবারও তার চুল গিয়ে শান্তর নাকে মুখের উপর পড়া শুরু হয়ে গেলো
শান্ত এই নিয়ে দুবার গেমে হেরেছে তাও আহানার চুলের কারণে
রেগে আহানার চুলের মুঠি ধরে এক টান দিলো
.
আহানা ভয়ে চোখ বড় করে চেয়ে আছে
.
মাথায় ঘোমটা দাও,তোমার চুলের জ্বালায় গেমস খেলতে পারি না আমি
.
আহানা চুপচাপ ঘোমটা দিয়ে বসলো
প্রায়ই ২ঘন্টা ৩০মিনিট পর কুমিল্লায় এসে পড়লো সবাই
তখন সকাল ১১টা বাজে,বিল্ডিংটার সামনে এসে মাইক্রো থেমেছে,সবাই খাতা নিয়ে একজন এক তলার দিকে যাচ্ছে
১৬তলার বিল্ডিং
একজন ইঞ্জিনিয়ার দালানটি বানানোর নকশা সম্পর্কে বলে যাচ্ছে ফটরফটর করে
.
বিরক্তিকর একটা কাজ,কবে একটু ফ্রেশ হবো,গরমে সিদ্ধ হয়ে গেছি আমি
.
তো আজকের জন্য কাজ স্থগিত, সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে আবার এখানে আসবে,সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করা শেষে তারপর হোটেলে ফিরবে
শান্ত খাবারের হোটেলে এসে গাল ফুলিয়ে বসে আছে
আহানা খাবার মুখে দিয়ে শান্তর দিকে তাকালো
.
শান্ত খাচ্ছে না দেখে বললো কি হইসে আপনার?
.
শান্ত মুখ গোমড়া করে বললো গরম লাগে,দেখো না কি রোদ,অসহ্য লাগতেসে
.
খাওয়া শেষে সবাই একটু এদিক ওদিক হাঁটতেসে
আহানা শান্তকে খোঁচা দিলো
.
শান্ত বিরক্তি নিয়ে বললো কি হয়েছে?
.
এই যে পুকুর একটা দেখেন,এখানে গোসল করবেন?
.
কিহ?এখন,?সম্ভব নাহ
.
আরে সম্ভব,গোসল করলে দেখবেন সব ক্লান্তি চলে গেছে করুন
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো তোমার মনে কোনো শয়তানি নেই তো?
.
এই জন্য মানুষের ভালো করতে নেই,থাক গোসল করিয়েন না আপনি,হাইহুতাশ করতে থাকেন,বাই
.
আচ্ছা আচ্ছা করবো,ধরো আমার ব্যাগ রাখো আমি এক ডুব দিয়ে আসি
শান্ত পুকুরে নেমে গেলো,আহানা শান্তর ব্যাগ থেকে তোয়ালে বের করে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,পাশে একটা বাউন্ডারি দেওয়া,ওপারে বিরাট এক দালান,সম্ভবত কোনো হোস্টেল হবে,কি যেন নাম দেখা যাচ্ছে না,আহানা মাথা উঁচু করে দেখার চেষ্টা চালাচ্ছে
.
আহানা??
.
আহানা চমকে পাশে তাকালো,নিহাল দাঁড়িয়ে আছে
.
জানো এখানে নাকি একটা স্বর্নমন্দির আছে,বৌদ্ধদের,অনেক সুন্দর,দেখতে যাবা নাকি?
.
শান্ত ডুব দিয়ে মাথা তুলে দেখলো আহানা নিহালের সাথে কথা বলতেসে
মাথার চুল থেকে পানি টেনে ফেলে উঠে আসলো শান্ত
নিহাল আর আহানার মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে আহানার থেকে তোয়ালে নিয়ে মাথা মুছতে লাগলো সে
.
আরে শান্ত?এখন গোসল করলে?
.
হ্যাঁ শরীর খারাপ লাগতেসিলো
.
এখন তো তুমি চেঞ্জ করবে,তাহলে চলো আহানা আমরা ঐদিকটায় হেঁটে আসি
.
আরে চলো চলো আমিও যাই,হাঁটতে হাঁটতে চেঞ্জ করার অভ্যাস আছে আমার
নিহাল বিরক্ত হয়ে বললো আমার একটা কল করতে হবে আমি আসি
.
নিহাল চলে গেলো,শান্ত সেদিকে তাকিয়ে গা মুছতে মুছতে আহানার দিকে তাকালো তারপর ব্রু নাচিয়ে বললো কি সমস্যা তোমার,এত কিসের কথা ওর সাথে?
.
আমি কি বলসি,উনিই তো আসি বলা শুরু করে দেয়,আর আপনার কি?
.
কি?আবার বললে আমার কি?তোমাকে আমি!!
.
আহানা একটু পিছিয়ে গেলো ভয়ে
.
শান্ত গায়ের জামা খুলে আহানার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ব্যাগ থেকে একটা টি-শার্ট নিয়ে পরে নিলো,তারপর তোয়ালে কোমড়ে পেঁচিয়ে প্যান্ট একটা নিলো পরার জন্য,প্যান্ট পরে হাতের তোয়ালের দিকে তাকিয়ে মনে শয়তানি আসলো তার
আহানা আরেকদিকে মুখ করে ফিরে আছে
.
এই আহানা!
.
কি?
.
আমার দিকে ফিরো তো
.
কেন?
.
তাকাও না
.
আহানা তাকাতেই শান্ত তোয়ালেটা আহানার মুখে মারলো
আহানা রেগে শান্তকে মারতে আসতেই ভিজা মাটিতে পা লেগে পিছলিয়ে শান্তর বুকে গিয়ে পড়লো সোজা
.
শান্ত আহানা যাতে পড়ে না যায় ওকে শক্ত করে ধরে ফেললো
.
দুজনেই চুপ,পরে আহানাই সরে গেলো,বাকিরা যেখানে রেস্ট নিচ্ছে সেখানে চলে গেলো সে
শান্ত ভিজা জামা কাপড় গুলো পলিথিনে মুড়িয়ে ব্যাগে নিয়ে নিলো,হোটেলে গিয়ে শুকাবে,গোসল করায় একটু শান্তি লাগতেসে এখন
.
ওকে সবাই গিয়ে আবার মাইক্রোতে উঠো আমরা কাজে ফিরবো এবার
.
আহানা গিয়ে একটা মেয়ের পাশে বসে গেলো,আহহহ শান্তি,মনে হয় বিশ্ব জয় করা হয়ে গেছে,বেয়াদবটার সাথে বসতে হবে না ভাবতেই মনে মনে লাড্ডু ফুটছে তার ?
.
দুইটা হাত পিছন থেকে এসে আহানার দুপাশে এলিয়ে গেলো,আহানা ভয় পেয়ে হাতের দিকে দেখে বুঝার চেষ্টা করলো এটা কার হাত,হাতে নীল ঘড়ি,ওহহ এটা তো শয়তানটার,আহানা রেগে হাত উঠিয়ে চিমটি কেটে দিলো,ওমা কোনো চিৎকার চেঁচামেচি করলো না,আহানা এবার আরও জোরো চিমটি কাটলো,এবারও নো রিয়েকশান!
আহানা এবার মাথা ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো শান্ত ড্যাবড্যাব করে ওর দিকে চেয়ে আছে,যেন কিছুই ঘটেনি
.
আপনাকে যে চিমটি কাটছি ফিল হচ্ছে না আপনার?
.
হচ্ছে তো,তবে চিৎকার করা জরুরি মনে করছি না আমি,গুনে গুনে এর শোধ আমি তুলবো পরে,আরও দাও
.
আহানা মুখ ফিরিয়ে নিলো,পুরো রাস্তায় শান্ত আহানার দুপাশে তার হাত দিয়ে রেখেছে,তার পাশে না বসার শাস্তি দিচ্ছে আহানাকে
সবাই আবার বিল্ডিং টায় ফিরে কাজ শুরু করে দিলো
আহানা ওয়াসরুমের পাশে এসে নকশাটা নোট করতেসে
দুম করে দরজা লাগানোর আওয়াজে চমকে পিছনে তাকালো সে
.
পিছনে তাকিয়ে দেখলো শান্ত আসতেসে,ওর দিকে না তাকিয়ে ভেসিনে গিয়ে কল অন করতেসে আবার অফ করতেসে
আহানা সেদিকে খেয়াল না করে আবারও নকশা নোট করতে লাগলো
.
আহানা নকশা শেষ করে ভেসিনের দিকে চেয়ে দেখলো শান্ত নেই,স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেলে চলে যেতে নিতেই কেউ একজন ওর হাত চেপে ওকে কাছে নিয়ে আসলো
.
আহানা শান্তকে দেখে চুপ করে আছে,সে জানে শান্তর এমন রাগের কারন কি,একে তো ওর সাথে বসেনি আরেক তো হাতে চিমটি দিয়ে দিয়ে লাল করে ফেলেছে
.
কি এমন করে চেয়ে আছেন ককককককেন?আর আমাকে এভাবে ধরররররসেন কেন?
.
কেন জানো না?তুমি তখন আমার পাশে বসো নাই কেন?
.
কেন আপনার সাথে বসবো আমি?আমি আপনার কি হই যে আপনার সাথে বসতেই হবে
.
শান্ত আহানার হাতে একটা চিমটি দিলো,আহানার মনে হলো কেউ কারেন্টের শক দিয়েছে
.
হাত নাড়িয়ে বললো লাগতেসে
আমার ১০টা চিমটির কাছে আপনার একটা চিমটি জঘন্য,হাত ছাড়ুন,ঠিক আছে আপনার সাথেই বসব সবসময়
.
হুমমমমম,চলো
শান্ত আহানাকে টেনে নিয়ে বেরিয়ে আসলো
নিহাল হেসে বললো আহানা কাজ তো শেষ,চলো স্বর্নমন্দির ঘুরে আসি
.
চলো আমিও যাব
.
শান্ত তোমার না কাজ আছে,নকশা তো কমপ্লিট করো নাই এখনও
.
শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহানা বলে উঠলো আমি যাব না
.
শান্ত তো মনে হয় আকাশ থেকে পড়েছে ইয়া বড় হা করে ওর দিকে চেয়ে আছে,নিহাল ঠিক আছে বলে চলে গেলো
.
কি ব্যাপার হঠাৎ মিঃ অশান্তের কথা শুনলেন?
.
আমি কোনো ছেলের কথায় তালে তাল মিলাই না,সেটা হোক আপনি বা নিহাল!
.
গুড!?
.
রাফি স্যার বললেন কাজ শেষ এবার সবাই বিকালের নাস্তা করে নাও তারপর আমরা ম্যাজিক প্যারাডাইসে যাবো

আরে আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন,হাত ছাড়ুন
.
শুনো আমি নিহাল না যে তুমি না বললে আমিও বলবো ইটস ওকে,আমি তোমাকে যেখানে নিতে চাইবো তোমাকে সেখানে যেতে হবেই হবে!!
শান্ত আহানাকে নিয়ে একটা মিষ্টির দোকানে আসলো মাতৃভান্ডারে
আমরা এখন রসমালাই খাব!
.
সেটা কি?
.
এই তুমি রসমালাই খাওনি কোনোদিন?
.
না
.
?ওহ,তাহলে এখন খাবা চলো,কুমিল্লার রসমালাই অনেক বিখ্যাত,জাস্ট ওয়াও খেতে
.
রসমালাই মুখে দিয়ে আহানা তো আর থেমে থাকলো না টপাটপ খেয়েই যাচ্ছে,শান্ত আহানার খাওয়া দেখে আরও অর্ডার করলো
আহানা বললো এটা সত্যি অনেক মজার,ধন্যবাদ আমাকে এটা খাওয়ানোর জন্য
.
হুহ,তাও তো কমু আমি তো ভালা না ভালা লইয়া থাইকো
.
চলুন,দেরি হয়ে যাবে তা নাহলে

সবাই এবার ম্যাজিক প্যারাডাইসে আসলো,বিকাল ৫টা বাজে তখন
যে যার পছন্দমত রাইডে উঠতেসে,আহানা উপরের দিকে চেয়ে আছে
একটা নাগরদোলা,এত সুন্দর!!
.
শান্ত হেসে বললো উচ্চতা ১১০ফুট,উঠবা নাকি?
.
নাহহ আমার ভয় করে
.
আমি থাকলে কাকে ভয় পাবা আমাকে নাকি উচ্চতাকে?
.
না দরকার নাই,ভয় লাগে
.
আরে চলো না,বেশ লাগবে দেখিও,দাঁড়াও আমি টিকেট আনতেসি
শান্ত জ্যাকেট পরতে পরতে গেলো টিকেট আনতে,আহানা ঢোক গিলে নাগরদোলার দিকে চেয়ে আছে
শান্ত টিকেট নিয়ে হাজির,সিঁড়ি বেয়ে নাগরদোলায় যেখানে বসতে হয় সেখানে উঠলো দুজন
টিকেট কালেক্টর টিকেট নিয়ে বললো তাড়াতাড়ি বসে যান এটা চলমান
আহানা ভয়ে চোখ বড় করে চেয়ে আছে,বসার সাহস যোগাতে পারছে না
শান্ত বসে গিয়ে আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো,লোকটা ভিতরে এসে জানালা একটা খুলে বেরিয়ে গেলেন
আহানার বুকের ভেতর টিকটিক করতেসে
শান্ত জানালা দিয়ে বাইরে দেখছে আর ইনজয় করতেসে
আহানা জানালার দিকে তাকাচ্ছেই না
না তাকালে ভয় করে না,মনেই হয় না যে নাগরদোলা চলছে
শান্ত জোর করে ধরে ওকে জানালার পাশে আনলো,বললো দেখতে
আহানা আল্লাহর নাম দিয়ে নিচে তাকালো,মানুষগুলোকে পিঁপড়ার সমান লাগতেসে,তার মানে আমরা এখন অনেক উপরে,আহানা ভয়ে শান্তর জ্যাকেট টেনে ওকে জড়িয়ে ধরে ফেললো
আপনাকে বলসিলাম উঠবো না ভয় করে,কেন জোর করলেন,আমি বাসায় যাব,আমার ভয় করতেসে,আমি মরে যাব?
.
আহানা?বাচ্চামি করো কেন,এটা অনেক স্ট্রং ভাবে বানানো,একেকটা পার্ট অনেক মজবুত,আমরা পড়লেও এটা পড়বে না বুঝছো
ফাইন আমি জানালা অফ করে দিয়েছি,এবার ঠিক আছে?
.
না ঠিক নাই,আমার মনে হয় বাঁচবো না,আমি বাসায় যাব,প্লিস উনাদের বলেন আমাকে নামাতে?
.
শান্ত হেসে দিয়ে চুপ করে আছে
আহানা ওর জ্যাকেটের ভিতর মুখ লুকিয়ে বসে রইলো
পাক্কা ১৫মিনিট ঘুরানোর পর নাগরদোলা থেকে নামলো সবাই,আহানা রোবটের মত দূরে বসে আছে,এখনও কলিজা কাঁপতেসে তার,ভেবে পাচ্ছে না সে আদৌ বেঁচে আছে কিনা
আহানার এমন হাল দেখে শান্ত হাসতে হাসতে শেষ
.
সব আপনার কারণে হয়েছে,আপনি আমাকে জোর করে উঠালেন,আমার এখনও কলিজা কাঁপতেসে?
.
আরে ডাইনাসোর ওয়াল্ডেও তো যাওয়া বাকি, কলিজা ঠিক করো,কাজে লাগবে সেখানে গেলে
.
কককককেন?
.
ডাইনাসোর তোমাকে চিবাই খাবে
.
আহানা পা উঠিয়ে বসে বললো না আমি যাব না
.
নিহাল এসে বললো শান্ত ওকে ভয় দেখাচ্ছো কেন?
আহানা শুনো ওগুলো পুতুলের মত,জাস্ট নড়বে আর সাউন্ড করবে
.
এই শুনো আহানাকে আমি ভয় দেখাচ্ছিলাম না
ওকে??আমি ওর সাথে মজা করছিলাম
.
শান্ত আহানার এপাশে আর ওপাশে নিহাল
বিরাট একটা কৃত্রিম ডাইনাসোর চোখ নাড়লো এটা দেখে আহানা ভয়ে শান্তর হাত চেপে ধরলো
নিহাল ব্রু কুঁচকে ওদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত মুচকি হেসে নিহালের দিকে চেয়ে বিশ্বজয়ের হাসি হাসলো
!!কে আপন কে পররররররররররর!
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৩৬

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৩৬
#Writer_Afnan_Lara
?
ভাত চুলায় বসিয়ে আহানা টেবিলে বসে নোট কমপ্লিট করায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো
একেবারে ১২টার দিকে উঠে খাওয়া দাওয়া শেষ করে রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হলো সে
এরই মাঝে ঘটে গেলো দূর্ঘটনা আর সেটা হলো স্লিপ খেয়ে পড়ে গিয়ে জুতা ছিঁড়ে গেছে
হাতে এক টাকাও নেই যে জুতাটা সেলাই করবে, আবার অফিস যেতেও দেরি হয়ে যাবে
জুতা বাসায় রেখে চুপ করে বসে রইলো কিছুক্ষন
বাসায় আহানা খালি পায়ে থাকে,সেন্ডেল কেনার টাকা তার হাতেই থাকে না কোনোদিন
যেখানে ৫০/৭০টাকায় চাল পাওয়া যাবে এক মাসের সেখানে সেই টাকা দিয়ে সেন্ডেল কেনার কি দরকার,খালি পায়ে থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গেছে এখন,তাই কোনো উপায় না পেয়ে খালি পায়েই হাঁটা ধরলো সে
প্লাজো টেনে একটু নিচে নামালো যাতে পা দেখা না যায়
.
হেঁটে হেঁটে অফিসে আসলো সে,শান্ত কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করতেসে
আহানা কেবিনে এসে বসতেই খেয়াল করলো বেবি আর আরও কয়েকজন মেয়ে হাসাহাসি করতেসে তার দিকে তাকিয়ে,এই হাসির কারন হলো আহানা খালি পায়ে এসেছে
একজন তো বলেই দিলো যে আহানা! আজ তুমি ভুলে জুতা ছাড়াই আসছো,হুস আছে তোমার?
আহানা চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে রইলো
.
শান্ত কাজ করতে করতে বললো জুতা ভুলে রেখে আসার মত জিনিস না,কি হয়েছে সেটা বলো
.
নাহ সত্যি ভুলে গেছি
.
তো তাহলে চলো নতুন জুতা কিনবে
.
নাহ
.
শান্ত কিছু না বলেই আহানার ব্যাগটা ছোঁ মেরে নিয়ে নিলো
.
এই আপনি আমার ব্যাগ নিলেন কেন,দিন বলছি
.
ব্যাগে একটা রুমাল,এক বোতল পানি আর ৫০পয়সার একটা সিকি
.
শান্ত হেসে দিয়ে বললো ব্যাগে তো আহামরি কিছু নেই তুমি যেভাবে রনচন্ডী রুপ ধারণ করলা তাতে তো ভাবলাম সোনা রুপা লুকানো
আর এই ৫০পয়সার সিকি রাখসো কেন?
.
কোনোদিন যদি ৫০পয়সার আরেকটা সিকি পাই তাহলে এটা আর ওটা মিলে তো ১টাকা হবে তাই না?
.
হাহাহা!তোমার ধৈর্য্য আছে বলতে হবে আহানা,ও মাই গড!!
চলো জুতা কিনবা
.
টাকা নেই আর আমি আপনার থেকে টাকা নিব না
.
যখন বেতন পাবে তখন নাহয় দিয়ে দিও,এখন তো তোমার জুতা দরকার তাই না?
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহানা ভাবতে লাগলো, বেতন পেলে তো দিয়ে দিতে পারবো টাকা
ততদিন তো আর খালি পায়ে থাকা যায় না,হুম,আচ্ছা চলুন
অফিস শুরু হতে আর ৩০মিনিট বাকি,শান্ত আহানাকে নিয়ে বাটার একটা দোকানে আসলো,আহানার পায়ে হাত দিয়েই কর্মচারী চমকে বললো স্যার ম্যামের তো পা কাটা গেছে অনেকটা
.
না কাটা যায়নি,ইটের কণা ঢুকসিলো,ওটা ইটের কণার গুড়ো তাই রক্ত মনে হচ্ছে
শান্ত ছেলেদের জুতো দেখতেসিলো কর্মচারীর কথা শুনে কাছে এসে নিচে বসে আহানার পা ধরতে যেতেই ও পা সরিয়ে ফেললো
.
বললাম না ঠিক আছে,এই জুতাটা পছন্দ হইসে আমার,এটাই নিব,চলুন যাই
.
এই জন্যই তো ভাবি তুমি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতেসিলা কি জন্যে!!
আমাকে বললে কি কেউ তোমাকে বকতো?আজব মেয়ে তো তুমি!
পা কেটে পায়ের ভিতরের মাংস দেখা যাচ্ছে আর উনি বলে ইটের গুড়ো,বোকা পাইসো আমাকে?
আচ্ছা ভাই আপনাদের কাছে ফার্স্ট এইড বক্স আছে?
.
নাহ,বাট এনে দিতে পারবো আপনি একটু বসেন
কর্মচারী চলে গেলো ফার্স্ট এইড বক্স আনতে
শান্ত আহানার দিকে এমন করে তাকালো মনে হয় এখনই কাঁচা গিলে খেয়ে ফেলবে
আহানা বিরক্তি নিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,জীবনে হাত পা কাটলে সে মলম লাগায় নাই এদিকে নজর ও দেয় নাই,এমনি এমনি ঠিক হয়ে যেতো আর এই লোকটা একটু কাটা গেলেই মলম নিয়ে হাজির হয়
শান্ত আহানাকে বকতে বকতে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো পায়ে
নতুন জুতা বলে পায়ে দিয়ে হাঁটতে আহানার আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে তাও চুপচাপ হাঁটছে
.
তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকো আমি বাইক আনতেছি অফিসের গ্যারেজ থেকে
.
একটু গেলেই তো অফিস,আবার বাইক লাগবে না,ঐ যে অফিস দেখা যাচ্ছে
.
তো তুমি কি চাও পা আরও কাটাতে??নাকি আমি তোমাকে কোলে নিতাম?সব আমার কোলে উঠার ধান্ধা! বুঝি বুঝি,সব বুঝি
.
শুনুন!উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না একদম, ঠিক আছে বাইকে করেই যাব,যান এখন বাইক নিয়ে আসেন
.
শান্ত বাইকের চাবি হাতে নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে হেঁটে চললো অফিসের দিকে
তারপর বাইক নিয়ে এসে আহানাকে নিয়ে অফিসে ফিরলো
.
ওকে গাইজ সবাই কাল তৈরি হয়ে থাকবে
আমরা সকাল ৮টায় কুমিল্লার জন্য রওনা হবো,সবাই ২দিনের জামাকাপড় নিয়ে বের হবা,ওকে?আর অবশ্যই ফাইল গুলো সাথে নিবা
.
ওকে জিসান স্যার!

আহানা?
.
কি?
.
শান্ত বললো কাল তুমি মিষ্টিকে পড়িয়ে আমার সাথে অফিসে যেও,তারপর সেখান থেকে আমরা অফিসের গাড়ীতে উঠবো,তুমি তো হাঁটতে পারতেসো না তাই
.
আপনি বাইক নিয়ে অফিসে যাবেন?তো আপনার বাইকের কি হবে?কুমিল্লা তো অফিসের গাড়ীতে যেতে হবে
.
আরে আমি আর তুমি রিকসা দিয়ে যাবো
.
ওকে
.
এই নাও ৫০টাকা
.
কেন?
.
মিষ্টিকে পড়াতে আসার সময় রিকসা নিও
.
আমি টাকা নিব না,হেঁটে আসতে পারবো
.
পরে টাকাটা দিয়ে দিও,তাহলেই তো হয়
.
?ওকে,ধার কত টাকা হলো তাহলে?
.
জুতা ১০০,এখন ৫০,তুমি ১০০দিও
.
এক মিনিট!আমাকে বোকা পাইসেন?জুতা ১হাজার ৫০টাকা,আর এখন ৫০,তাহলে মোট হয় ১১০০ টাকা,আপনি মাত্র ১৫০পেলেন কই?
.
আরে আহানা ডিসকাউন্টে জুতা নিসি
.
তাই বলে ১০৫০টাকার জুতা ১০০তে দিয়ে দিবে?
.
তুমি জুতা কবে কিনসো মনে আছ তোমার?দোকানে ৯৯% ডিসকাউন্ট দিসিলো,সাইনবোর্ড দেখো নাই?
.
৯৯%ডিসকাউন্ট কেউ দেয়না,হয় ৫০% নাহয় ৪০% ,আপনি এত মিথ্যা কিভাবে বলেন?
.
আমি দেখসি সত্যি
আর তুমি আমাকে বেশি টাকা কেন দিতে চাচ্ছো,যত নিসে ততই দাও না
.
শুনুন,আমি দেখসি জুতার দাম ১০৫০,আর আপনিও এক হাজার টাকার নোট বের করসিলেন,সেটাও দেখসি আমি
.
তোহহহ?আমি তো জানতাম না ৯৯% ডিসকাউন্ট চলে,পরে ওরা আমাকে টাকা ফেরত দিয়া দিসে?
.
আপনি একটা পাগল,আমাকেও পাগল বানাবেন!!
.
ব্রেক টাইমে আহানা তার কেবিনে বসে শান্তর দিকে চেয়ে আছে,শান্ত রিয়াজের সাথে কথা বলতে বলতে একবার এক জায়গায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে
আহানা শান্তকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে,শান্ত আজ সাদা একটা শার্টের সাথে ব্লেক টাই পরেছে,কথা বলার মাঝে মাঝে চুলগুলো মাথা থেকে সরিয়ে এপাশ ওপাশ করছে,কত সুন্দর লাগতেসে,শান্তর ওয়াইফ অনেক লাকি হবে,তবে আবার কিসমত ও তার একটু খারাপ হবে কারন শান্ত অনেক ঝগড়ুটে,মাথা খাওয়ার মত ঝগড়া করে বেড়ায় সারাদিন,মাগো মা,আমি পাগল হয়ে যাই আর উনার ওয়াইফ তো মনে হয় ডেইলে ২বার জ্ঞান হারাবে ঝগড়া সহ্য করতে করতে
.
হাই!!!!
.
আহানা চমকে শান্তর থেকে চোখ সরিয়ে যে হাই বললো তার দিকে তাকালো,কোণার কেবিনের নিহাল এসেছে,নিহাল হাই বললো
.
আহানা আজ পর্যন্ত তার সাথে কোনো কথা বলেনি,এভাবে হঠাৎ হাই শুনে সে চমকে গেলো,ইতস্তত হয়ে বললো হ্যালো
.
কি খবর,অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছো যে?এনিথিং রং?
.
নাহ,কিছু না
.
শান্ত কথা বলতে বলতে আহানার দিকেও নজর রাখতেসিলো,নিহালকে আহানার পাশে দেখে ফোনে কথা বলা অফ করে এগিয়ে এসে আহানার পাশে ওর কেবিনে বসে গেলো
.
নিহাল শান্তকে হাই বলে,আবার আহানার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো
.
রিয়াজ!!কি সমস্যা তোর??বুক করা জিনিসে মাছির মত ভাগ বসাতে আসিস কেন?
কি সমস্যা তোর? তোর জন্য কি মেয়ের অভাব পড়সিলো?বেয়াদব!
দুম করে ফোন কেটে শান্ত ফোনটা রেখে সামনে তাকিয়ে দেখলো নিহাল চলে গেছে
আহানা মুচকি হেসে পানির বোতল নিয়ে পানি খাচ্ছে
শান্ত ব্রু কুঁচকে নিহালের চলে যাও দেখছে,কোথা থেকে এসব বিনা দাওয়াতে চলে আসে কে জানে!
.
কোথা থেকে কি যেন পোড়া পোড়া গন্ধ আসতেসে
.
?কই আমি তো পাচ্ছি না
.
সর্দি লাগছে মেবি
.
হুম হতে পারে
.
অফিস ছুটির পর আহানা শান্তর বাইকে উঠতেই নিহাল বললো শান্ত তোমার কাজ থাকলে বলিও আমি আহানাকে ড্রফ করে দিয়ে আসবো
.
শান্ত হেলমেট পরতে পরতে বললো আমার কাজ তো শেষ আহানার যখন শেষ হয়েছে ঠিক তখন,সো ইউ ডোন্ট ওয়ারি
.
নিহাল মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো
.
আহানা মুখে হাত দিয়ে হাসতেসে
.
এই যে ম্যাডাম এত না হেসে আমাকে শক্ত করে ধরুন,নাহলে পড়ে যাবেন
.
আহানা হাত নিয়ে শান্তর কাঁধে রাখতে গিয়ে আগে হাত পড়লো শান্তর গলায়
.
শান্ত সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে হেসে বললো আহানা গলার উপরের পাশে একটু চেপে দাও তো,সকাল থেকে ব্যাথা করতেসে
.
আচ্ছা
আহানা সুন্দর করে মালিশ করে দিলো
.
থ্যাংকস এর জন্য আজ তোমাকে বাদাম খাওয়াবো
.
নাহ আমি বাসায় যাববো,হাঁটতে পারবো না আর
.
তোমার বাইক থেকে নামতেও হবে না,আর হ্যাঁ তোমাকে খাওয়ানোর এত শখ নাই আমার,আমি জাস্ট নিজে খাবো তো তাই বললাম তোমাকেও খাওয়াবো
না খেলে খেও না,আমি খাব,চা ও খাব তুমি চেয়ে চেয়ে দেখিও
শান্ত বাইক থামিয়ে গেলো বাদাম আনতে,বাদাম হাতে নিয়ে চায়ের দোকানে গিয়ে বললো চা বানাতে
বাদাম খাচ্ছে আর আহানার দিকে ফিরে বাদামে ফু দিচ্ছে
আহানা মুখ বাঁকিয়ে এদিক ওদিক দেখে যাচ্ছে
.
নাও বাদামের খোসা ছাড়িয়েছি,খাও এবার
আমার মা আমি রাগ করলে আমাকে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিতো কারণ আমার বাদাম অনেক প্রিয়
খাবা নাকি নাক টিপে খাওয়াইতাম
.
আহানা শান্তর হাত থেকে বাদাম নিয়ে মুখে দিলো,পাশ দিয়ে একটা কাপল হেঁটে যাচ্ছিলো ফুটপাতের উপর দিয়ে
মেয়েটা ছেলেটাকে বললো দেখো মানুষের বিএফরা তাদের জিএফকে বাদামের খোসা পর্যন্ত ছিলে দেয় আর তুমি কিনা আমাকে আজ পর্যন্ত বাদাম ও খাওয়ালে না
.
ছেলেটা থতমত খেয়ে বললো আজই খাওয়াবো,এমনকি এখনই,ওয়েট বাবু
ছেলেটা বাদাম নিয়ে এসে তার জিএফকে বাদাম ছিলে দিতে লাগলো
.
আহানা হাসতেসে ওদের দিকে চেয়ে
.
শান্ত এবার গেলো চা আনতে,চা নিয়ে এসে আহানার পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো
.
দুজনেই চায়ে চুমুক দিয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো
.
আমার চায়ে চিনি বেশি দিসে,আর তোমার?
.
আমার চায়ে চিমি কম দিসে
.
দাঁড়াও,আমি ঠিক করে দিচ্ছি
শান্ত তার চায়ের কাপের অর্ধেক চা আহানার চায়ের কাপে ঢেলে কাপটা ভর্তি করলো,আবার সেই কাপের চা আবার তার কাপে ঢেলে ঠিক করে নিলো
হুম এবার পারফেক্ট?
.
চা খাওয়া শেষে দুজনে বাসায় ফিরে আসলো
আহানা জুতাটা খুলে খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে ভাত বসালো,খাওয়া শেষ করেই ঘুমিয়ে পড়লো সে,আজ খুব ঘুম পাচ্ছে,পায়ের ব্যাথার কারণে হয়তবা
সকালে অনেক কষ্টে উঠলো সে,ব্যাগে তার বাকি জামা,পানির বোতল,ফাইল,রুমাল আর ফোন নিলো
বাসা থেকে বের হতেই দেখলো রিকসা একটা দাঁড়িয়ে আছে
.
আহানা বললো যাবেন?
.
উনি বললো যাবে
.
আহানা চুপচাপ রিকসায় উঠে ভাবতে লাগলো তাদের এলাকায় সহজে রিকসা পাওয়া যায় না আর আজ কিনা ভোরবেলায় রিকসা পেয়ে গেলো
মিষ্টিদের বাসার সামনে এসে রিকসাআলাকে ৫০টাকা নিয়ে নামলো সে
তারপর এক ঘন্টা মিষ্টিকে পড়িয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে দেখলো শান্ত ব্যাগ নিয়ে বের হচ্ছে,ব্লু জ্যাকেট আর ব্লেক জিন্স পরেছে,চোখে সানগ্লাস,ব্যাগ বের করে আহানার দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো সে
বাসা থেকে নেমে শান্ত একটা রিকসা নিলো,আহানা আগে উঠলো তারপর শান্ত,শান্ত উঠতেই আহানার মাথার সাথে দুম করে এক বাড়ি খেলো
.
আহহ মাগো,মাথা শেষ আমার!
.
একটু চেপে বসতে পারো না তুমি?
.
আর কত চাপবো??আপনার হাতের ফুলা ফুলা এগুলার কারণেই তো সরতে পারি না
.
ইউ মিন mussel?হাহা,তাহলে আহানা স্বীকার করতেসে যে আমার বডি আছে
.
এত কথা বলেন কেন আপনি?
.
মামা সোজা গিয়ে বাম পাশের গলি ক্রস করলে যে রেস্টুরেন্ট পড়ে,স্টার হোটেল,পপুলার হসপিটালের রাস্তার opposite পাশে ওটার সামনে দাঁড়াইও
.
রেস্টুরেন্ট কেন?
.
ওমা সকালের নাস্তা করবো না?
.
?আমি কিছু খাব না
.
পরে টাকা দিয়ে দিও
.
আপনি খাবারের খরচ যদি ৫০০পড়ে আপনি পরে বলবেন ৫০টাকা,আপনাকে চিনি আমি
.
আচ্ছা ৫০০ই বলবো ওকে?
.
রেস্টুরেন্ট এ এসে শান্ত পরোটা,ভাজি আর চা অর্ডার করলো
.
খাওয়া শেষে আহানা বললো তাহলে আপনি আমার থেকে ১০৫০+৫০+৩০০(নাস্তার খরচ)=১৪০০টাকা পাবেন
.
শান্ত টিসু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো কিসের টাকা,কোথাকার টাকা?
.
ঐ যে জুতা,রিকসা ভাড়া আর এখন নাস্তার দাম
.
তো?
.
তো মানে কি,আমি বেতন পেলে দিয়ে দিব
.
আহানা তুমি কিসের টাকার কথা বলতেসো,আমি তো কোনো টাকাই দিই নাই তোমাকে
কাল তো তুমি তোমার টাকা দিয়ে জুতা কিনসো?
.
আজব তো,আপনি এত মিথ্যা কথা বলেন কেন?
.
ভাত আর নুন খেয়ে খেয়ে তোমাকে ইয়াবার নেশা ধরছে,ডাক্তার দেখাতে হবে
.
আপনি একটা বেয়াদব,মিথ্যাবাদি লোক আপনি
.
শান্ত বিল পে করে,ধনিয়া এক চিমটি মুখে দিয়ে ব্যাগ নিতে নিতে বললো আহানা আমি তোমার থেকে কোনো টাকা পাই না,তোমার স্মৃতি শক্তি লোপ পাইসে,তোমাকে মধু গরম পানিতে গুলিয়ে খাওয়াতে হবে,এখন চলো অফিসে যাই,গাড়ীতে বসে ঝগড়া করিও কেমন??
.
আহানা রাগে গজগজ করতে করতে পিছন পিছন গেলো শান্তর
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৩৫

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৩৫
#Writer_Afnan_Lara
?
এসব কি বলতেসে বাবা??মানে টা কি
আর বাবা এভাবে চলে গেলেন কেন??
তোমরা কি বলেছো বাবাকে?
.
শান্ত কিসব ভাবতে ভাবতে সোফায় বসে পড়লো
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে বললো আমি তোর বাবাকে বলে দিসি তুই প্রেগন্যান্ট ?
.
হোয়াট!!তোর মাথা ঠিক আছে তো?কি বলিস এসব
.
এমন করিস কেন, আজ নাহয় কাল তো প্রেগন্যান্ট হবিই তাহলে এত টেনসন কিসের আর তুই এ তো বলছিস রুমডেট করছস তাহলে তো প্রেগন্যান্ট হয়ে যাওয়ার চান্স আছে
.
মানে টা কি,এটা বলার আগে একবারও আমাকে জিগাইছোস তুই?
নওশাদ আমাকে ৭২ঘন্টার ইমারজেন্সি একটা পিল এনে দিসিলো,ওটা খাইসি আমি,আমি প্রেগন্যান্ট হবো না
.
আহানা চোখ বড় করে শান্তর পাশে বসে গেলো
.
হলো তো?হুদাই এত বড় মিথ্যা বললে তুমি
.
তোরে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে আমাকে বলিস নি কেন?
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কি করে বলবো,বাবা আমার ফোন নিয়ে গেছে
পরে মায়ের ফোন থেকে লুকিয়ে নওশাদকে বলেছি আমি
.
শান্ত আহানার কাঁধ ঝাঁকিয়ে ব্রু কুঁচকে বললো এখন কি করবা?
.
প্রেগন্যান্ট হয়নি তো হয়ে যাবে
.
মানেহহহহ!
.
মানে আবার রুমডেট কর তোরা তাহলেই হবে,আপাতত আমি তুই নওশাদ আর শান্ত ভাইয়া সত্যিটা জানবো আর কেউ না,সবাই জানবে তুই প্রেগন্যান্ট
.
এক মিনিট আমি তোমার ভাইয়া না ওকে?
.
তো কি?
.
পাতানো বর
.
মানে?পাতানো কি আবার?তোরা কি বলিস এসব??
.
আমাকে আর কোনোদিন ভাইয়া ডাকবা না,নাহলে তোমার চুল ছিঁড়ে ফেলবো আমি
.
আপনি আমাকে পাতানো বউ ডাকবেন না একদম নাহলে আপনার গাল টেনে ছিঁড়ে আপনার হাতে ধরাই দিব আমি
.
কি বললে!!
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার চুল এলোমেলো করে দিলো
আহানা রেগে শান্তর গাল ধরে টেনে ওকে বাঁকিয়ে ফেলে সোফার সাথে লাগিয়ে ধরলো
.
শুরু হলো মারামারি হানাহানি
.
রুপা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বক্সিং শো দেখতেসে,শেষে মাথায় হাত দিয়ে সোফায় ধপ করে বসে পড়লো,ল্যান্ডলাইন থেকে নওশাদকে কল দিলো
.
হ্যালো রুপা?শান্ত সব সামলিয়েছে তো?
.
তুমি আর কাউকে পেলে না আমার বাসায় পাঠানোর জন্য?শুধু শান্ত ভাইয়া হলেও এক কথা ছিল,সাথে আহানাও আসছে এখন দুজন মিলে মারামারি করতেসে,আমার বিয়ে কি আটকাবে তাদের ঝগড়া কেমনে আটকাবো আমি সেটাই ভাবতেসি এখন
.
দাঁড়াও আমি আসতেসি,তুমি ওদের দুজনকে একটা রুমে লক করে রাখো নাহলে আমাদের আর এ জীবনে বিয়ে করা হবে না
.
আচ্ছা
.
আহানা!!শান্ত ভাইয়া!!
.
কি?
.
তোমরা চলো আমার রুমে কথা আছে
.
রুপা দুজনকে টেনে হিঁচড়ে ধাক্কা মেরে রুমে ঢুকিয়ে দরজা লক করে দিলো
.
এই রুপা তুই দরজা আটকাইছিস কেন বেয়াদব!!দরজা খোল,রুপা!!
.
রুপা??তুমি দরজা লাগাইসো কেন?
.
সরি শান্ত ভাইয়া,নওশাদ বলসে আপনাদের খাঁচায় বন্দি রাখতে নাহলে দুজন একসাথে একজন আরেকজনকে মারতে মারতে আশেপাশের জনগণরেও ধরি পিটাবেন
.
আহানা!সব তোমার কারণে হইসে
.
আজব তো আমি কি করসি,আপনিই তো আগে আমার চুল টেনে দিসেন,নাহলে কি আমি দিতাম?
.
চুল টানছি তো কি হয়েছে,তোমার সাহস হয় কেমনে আমাকে ভাইয়া বলার
.
তো আপনি ভাইয়া নয়ত কি,চাচা জেঠা??
.
এই খবরদার আমাকে চাচা ডাকবা না
.
আপনি আমার চুল না টানলে এত কিছু হতো না
.
চুল টানসি বলে তুমি পাল্টা আমার গাল টানছো কেন?

নওশাদ প্লিস তাড়াতাড়ি আসো,ওরা আমার রুমকে উল্টায় ফেলতেসে,মারামারি করতে করতে সব ধুমধাম করতেসে.জলদি চলে আসো প্লিস
.
আমি আসতেসি,তুমি এক কাজ করো ঐ রুমের লাইট অফ করে দাও,অন্ধকারে তো আর মারামারি করবে না
.
রাইট!বাট লাইট অফ করতে হলে তো রুমের ভিতরে ঢুকতে হবে,এখন কি করবো?
.
তুমি বাসার কারেন্টের মেইন লাইট অফ করে দাও তাহলেই হবে
.
আচ্ছা ভালো বুদ্ধি
রুপা গিয়ে মেইন সুইচ অফ করে দিলো
আহানা শান্তর চুল টানতেছিলো আর শান্ত আহানার কান টানতেছিলো কারেন্ট চলে যাওয়ায় দুজনে ২০সেকেন্ড চুপ করে থাকলো
.
যাক বাবা দুজনে ঝগড়া থামিয়েছে,বাঁচলাম!!
.
সব আপনার কারণে হচ্ছে
না আপনি আমাকে এখানে আনতেন না এত কিছু হতো
.
এই শুনো,সব তোমার বেস্টুকে বাঁচাতে করতে হচ্ছে
.
নওশাদ ভাইয়া আপনার বেস্টু না?
.
তো,আগে তোমার বেস্টু রুপা
.
না আগে নওশাদ ভাইয়া
.
খোদা!!!অন্ধকারেও মানুষ কেমনে ঝগড়া করতে পারে!!নওশাদটা কখন আসবে,আমার তো মনে হচ্ছে এটম বোম ব্লাস্ট হতে আর বেশি দেরি নাই
.
বাসার পাশ দিয়ে দুটো বিড়াল হেঁটে যাচ্ছিলো,আহানা শান্তর মত তারাও একে অপরের সাথে ঝগড়া করতেসে
তাদের চেঁচামেচিতে আহানা ভয় পেয়ে শান্তর চুল টানা রেখে ওরে চেপে ধরলো
.
হিহি,আহানা ম্যাডাম আপনার ভয় লাগছে বুঝি?
.
ওটা কিসের আওয়াজ?
.
আহানা আর শান্তর বিড়াল ভার্সন?
.
ওহহ?
.
আহানা পা টা একটু পিছতেই নিচে থাকা একটা কার্পেটে তার পা লাগলো,এমনিতেও মনের মধ্যে ভয় কাজ করতেসিলো বিড়ালের চিৎকার চেঁচামেচিতে
হঠাৎ পায়ে কার্পেট লাগায় ভয় পেয়ে পড়ে যাওয়ার সময় আহানা শান্তর জ্যাকেট টেনে ধরলো
.
শান্ত অন্ধকারে কিছু বুঝে উঠতে পারলো না,দুম করে আহানাকে নিয়ে বেডের উপর গিয়ে পড়লো
.
আহানা যখন বুঝতে পারলো শান্ত তার গায়ের উপর তখনই চিৎকার করতে যেতেই শান্ত ওর মুখ চেপে ধরলো
.
শুনো,তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই ওকে?তুমি পড়ে যাওয়ার সময় আমাকে ধরতে গেসো কেন,পড়লে তো আর মরে যেতে না
.
কি বললেন?আপনাকে ধরসি আপনি আমাকে সেভ না করে উল্টা আমার গায়ে পড়লেন,আপনার মনে মনে শয়তানি জানি আমি!
.
কি বললে তুমি,নিজে আমাকে নিয়ে বেডে পড়ে এখন আমাকেই দোষ দিচ্ছো?
.
আহানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই লাইট জ্বলে উঠলো
দুজনে দুজনকে এমন অবস্থায় দেখে শান্ত স্বাভাবিক ভাবে রিয়েক্ট করলেও আহানা ইয়া বড় এক চিৎকার দিলো
.
শান্ত সাথে সাথে কানে হাত দিয়ে উঠে গেলো বিছানা থেকে
.
আহানা চোখ বড় করে চেয়ে আছে ওর দিকে
.
এত চেঁচাও কেন তুমি?
.
আপনার লজ্জা করে না এতক্ষন এই অবস্থায় থাকার পরেও?
.
কেন লজ্জা করবে,আমি কি তোমাকে টাচ করসি?একবারও?
.
দরজা খুলে নওশাদ আর রুপা ঢুকলো তখনই
.
কিরে শান্ত তুই কি বাচ্চা?এমন ঝগড়ুটে তো তুই ছিলি না,এখন এত ঝগড়া তোর আসে কই থেকে?
আহানা নাহয় ছোট তাই ঝগড়া করে আর তুই?তোর ঝগড়া করা খাটে না
রুপা পাগল হয়ে তোদের রুমে বন্ধ করসে,এমন করিস কেন?তোকে এ জন্যে পাঠিয়েছি আমি?
.
শুন,আমি সুন্দর করে হ্যান্ডেল করসিলাম ব্যাপারটা আহানা মাঝখানে দিয়ে বলে দিলো রুপা প্রেগন্যান্ট!
.
যা বলসে ভালো বলসে,এতে করে আঙ্কেল কোনো উপায় না পেয়ে রাজি হবেই
আহানা থ্যাংকস
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে বললো হুহহহ সবাই তো সব কিছু পারে না,এসব শিখার জন্য ম্যাচুরিটি থাকা লাগে,কিছু কিছু বুইড়া খাটাশ এসব পারে নাহ
.
কি বললে?আমি বুইড়া খাটাশ??
শান্ত এগিয়ে গেলো আহানার চুল টানতে নওশাদ ওরে সামলিয়ে বাইরের দিকে টেনে নিয়ে গেলো
.
আহানা তোমারে ছাড়বো না আমি
.
ছাড়িয়েন না
.
এই আহানা চুপ কর,এত বড় একটা ছেলের সাথে সারাদিন ঝগড়া করতে তোর শরম করে না,ভয় করে না?
.
বাদ দে,উনি হুদাই এমন করে সবসময়,আমি কিছু করি না
.
জানি আপনি কি করেন আর না করেন,এখন চলেন

আচ্ছা আঙ্কেল আপনি নওশাদকে ১টা মাস টাইম দেন,নওশাদ একটা ভালো জব পেয়েই রুপাকে বিয়ে করে নিবে
.
রুপার বাবা চুপ করে থেকে বললেন পরের সপ্তাহে নওশাদ যেন তার ফ্যামিলিকে নিয়ে আসে
.
নওশাদ তো খুব খুশি,হ্যাঁ বলে দিলো
.
বাসা থেকে বেরিয়ে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো সে
.
থ্যাংকস ভাই,বোন তোমাদের কারণে আমি রুপাকে আমার করে পাবো,থ্যাংকস এ লট
.
আহানা সেই কখন থেকে বাইকে উঠে বসে আছে,শান্ত নওশাদের সাথে কথা বলতেসে দূরে দাঁড়িয়ে
রুপাদের বাসাটা সুন্দর,রুপার বাবা রুপাকে কত ভালোবাসে,ওদের ভালোবাসাটা মেনে নিয়েছে,বিয়েও দিবে বলসে
ওদের এখন বিয়ে হবে,কত খুশি রুপা
আহানা আকাশের দিকে তাকালো,আমার বিয়ে হবে কিনা আমি সেটাই জানি না,বিয়ে দিতেও তো একটা পরিবার লাগে,বাবা মা ভাইবোন লাগে,আর আমার তো!
তার মানে আমার বিয়ে হবে না কোনোদিন,,হবে না কি বলছি আমাকে কে বিয়ে করবে??একটা অনাথ মেয়েকে
যার না আছে রুপ না আছে টাকা পয়সা না আছে যোগ্যতা,অবশ্য বিয়ে ছাড়াও জীবন কাটানো যায়,আমি নাহয় আজীবন কুমারি থেকে যাবো
একটা দিনের কথা মনে পড়ে গেলো,মীম আপুদের বাসার সকল বাজার,সব কাজ করে একটা ছেলে,নাম রাকিব,তার সাথে আমার বিয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল মীম আপু,তার মতে আমার আর সেই ছেলেটার পারফেক্ট ম্যাচ হবে
দুনিয়ায় যত ভালো ভালো পরিবার আছে তারা ভালো পরিবারের মেয়ের সাথেই তাদের ছেলের বিয়ে দেয়,তাই আমার জন্য মীম আপু সেই ছেলেটাকেই ভালো মনে করেছিল হয়ত,আমিও গরীব,সেও গরীব
মাঝে মাঝে হাসি পায় এই ভেবে যে মানুষ আমার জন্য কত ভাবে,তাদের ভাবনা শুনে হাসি পায়,কি দরকার এত ভাবার,আমি তো ভালো আছি,বিয়ে ছাড়াও একা জীবনে ভালো থাকা যায়
এবার বেতন পেলে তারেক আঙ্কেলকে মাসের বেতন দিব আর একটা পাঞ্জাবি কিনে দিব,আমার প্রথম সেলারি,অনেক খুশি হবেন,মীম আপু আর কনিকা আপুকে তো জামা কিনে দেওয়ার সাধ্য নেই,তাদের ছোটখাটো কিছু গিফট কিনে দিব,মাসের সদাই করতে হবে,আর ২টা জামা আর একটা শাড়ী কিনবো,রুপার বিয়েতে পরার জন্য,তার পরেও কিছু সঞ্চয় থেকে যাবে,ওগুলা জমা রেখে দিব,একদিন জমাতে জমাতে অনেক টাকা হবে,আমি একটা নিজের বাড়ি বানাবো,টিনের হলেও চলবে সেটা শুধু আমার বাড়ি হবে,২টো রুম থাকবে,একটায় আমি ঘুমাবো আরেকটায় রান্না করবো,একটা টিভি ও কিনবো,আমার টিভি দেখার শখ অনেক,বাজারের দোকানগুলোতে টিভি দেখলে মন চায় একটু গিয়ে দেখি কিন্তু!
থাক একদিন আমিও টিভি কিনবো

ওকে তুই বাসায় যা আমি আহানাকে ওর বাসায় দিয়ে এসে বাসায় ফিরবো
.
ঠিক আছে,বাই
.
শান্ত নওশাদকে বিদায় দিয়ে পকেট থেকে বাইকের চাবি নিয়ে আসতে আসতে দেখলো আহানা আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ মুছতেসে
.
শান্ত থেমে গেলো,এসময়ে কাঁদতেসে কেন মেয়েটা,আমি তো কিছু বলি নাই,আগেও তেমন কিছু বলিনি তাহলে কাঁদে কেন!
এখন জিজ্ঞেস করলে কিছু বলবেও না,থাক অজানাই থাক
শান্ত বাইকে বসতেই আহানা চমকে কল্পনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে ঠিক হয়ে বসলো
.
শান্ত চুপচাপ বাইক চালাচ্ছে,কিছু বলছে না,আহানাও বলছে না
বাইকের আয়নায় দেখা যাচ্ছে আহানা আকাশের দিকে চেয়ে আছে
.
আহানা জানো?
.
কি?
.
আমি আগে ভাবতাম আমি হাঁটলে আকাশের তারা চাঁদ ও হাঁটে আমার সাথে আর আমি থেমে গেলে তারাও থেমে যায়
.
আমিও সেটাই ভাবতাম
.
আমি এখনও ভাবি,ছোটবেলার কিছু কিছু ভুলধারনা ভুলেই থাকতে ভালো লাগে
আবার জানো আমি ভাবতাম টিভিতে যে শো দেখাতো সেখানের নায়ক নায়িকারা একটা জামার ভিতরে আরেকটা জামা পরে থাকতো,৫সেকেন্ডে তারা যেন জামা বদলাতে পারে,আমি বোকা জানতামই না যে ভিডিও কাট করা যায় ওরা জামা চেঞ্জ করার সময়টা কাট করে ভিডিও এডিট করা হতো
.
আহানা হেসে দিলো
.
শান্ত ও মুচকি হাসলো,আহানাকে সে হাসাতে পেরেছে
আহানাকে সব কিছুতে মানায় কিন্তু কান্নায় মানায় না,আহানাকে কাঁদতে দেখলে শান্তর বুকের ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়,সে সহ্য করতে পারে না আহানার চোখের পানি
সেদিন মোহনগঞ্জে রাতের বেলায় আহানার কান্নায় শান্ত নিজেকে অনেক কষ্টে সামলিয়েছিল শুধুমাত্র আহানাকে সামলানোর জন্য,কারণ সে নিজেও কাঁদলে আহানাকে সামলানো যেতো না
.
তোমার বাসা এসে গেছে
.
আহানা বাইক থেকে নেমে শান্তকে বাই বলে হেসে দিয়ে চলে গেলো বাসার ভেতর
.
কান্নার পরেও যে এমন হাসতে পারে তার মত কঠিন মানুষ আর নেই
আমি কান্নার পর হাসতে জানি না আর এই মেয়েটা জানে,একদিন শিখে নিব,ওর থেকে শেখার অনেক কিছু আছে
কিভাবে হাতে টাকা না থাকলেও গায়ের অলংকার বেচে চাল কেনা যায়,কিভাবে শুধু ভাত নুন খেয়ে মাস কাটানো যায়,কিভাবে ২টো জামা দিয়ে বছর কাটানো যায়,একটা ধুয়ে আরেকটা পরে
আয়না না কিনে লেকের পানিতে নিজেকে দেখার বুদ্ধি
মেকআপ না করেও মুখে হাসি নিয়ে নিজেকে সুন্দর রাখা যায়
মা বাবা ছাড়া নিজেকে নিজেই আঁকড়ে ধরে কিভাবে বাঁচা যায়
আমি তো মাকে ছাড়া অচল আর এই মেয়েটা কিনা মা বাবা ছাড়া দিন অতিবাহিত করছে হয়ত তাই সে কান্নার পরেও হেসে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে
শান্ত জ্যামে বসে এসবই ভাবতেছে,আহানা extraordinary একটা মেয়ে!!
একটা ফেরিওয়ালা পাশ দিয়ে যাচ্ছে,তার কাছে হরেক রকমের আয়না
শান্ত লোকটাকে থামতে বলে একটা আয়না পছন্দ করে কিনলো
এটা আহানাকে দিব,কিন্তু ও তো এমনি দিলে জীবনেও নিবে না,কি করা যায়!
.
পরেরদিন সকালে আহানা মিষ্টিকে পড়াচ্ছে,মিষ্টি বললো মিস আমি তোমাকে একটা জিনিস দিব তুমি নিবা?
.
আহানা হেসে বললো কি?
.
মিষ্টি তার পিছন থেকে লুকানো একটা আয়না বের করে আহানাকে দিলো
.
আহানা চমকে তাকিয়ে আছে আয়নার দিকে,এটা তো সেই আয়না যেটা সে ঐদিন পছন্দ করেছিল,টাকার জন্য কিনতে পারে নাই
.
তুমি এটা পেলে কই,আর আমাকে কেন দিচ্ছো?
.
মিস প্লিস এটা নাও,আমার তরফ থেকে গিফট
.
কিন্তু এটা

নাও না প্লিস,নাহলে আমি কেঁদে দিব কিন্তু
.
আহানা মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে আয়নাটা নিলো
.
মিষ্টি মুচকি হেসে চেয়ে আছে,শান্ত ওকে যা যা বলতে বলেছে ও ঠিক তেমন করেই বলেছে
.
আহানা বাসা থেকে বের হতেই শান্ত লুকিয়ে আহানার হাতের দিকে তাকালো,হাতে আয়না দেখতে পেয়ে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো সে
আহানা আওয়াজ পেয়ে পিছনে তাকালো,শান্তর বাসার দরজা খোলা
.
শান্ত দরজার পিছনে লুকিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
আহানা কাউকে দেখতে না পেয়ে চলে গেলো বাসা থেকে,আজ ভার্সিটি অফ,শুক্রবার বলে
কিন্তু অফিস তো খোলা,১টা থেকে
.
আহানা বাসায় ফিরে সব পরিষ্কার করে নিলো,হাঁড়ি পাতিল মেজে রুমে আসলো হাত মোছার জন্য
তখনই আয়নার দিকে চোখ গেলো তার,এই প্রথম তার নিজের একটা আয়না হলো,নিজেকে আয়নার কাছে এসে দেখতেসে সে
কপালে পাতিলের কালি লেগে আছে,হাত দিয়ে মুছতে মুছতে ভাবলো পাতিল মাজার সময় লেগেছে হয়ত!
খুশি হয়ে আয়নাটা টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখলো,কি ভালো লাগতেসে আহানার,মিষ্টি খুব ভালো একটা মেয়ে,আমাকে গিফট করেছে তাও আমার পছন্দের একটা জিনিস,যেটার খুব দরকার ছিল আমার
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৩৪

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৩৪
#Writer_Afnan_Lara
?
তুমি আমাকে ববি থেকে সেভ করবা না?
.
নাহ,আমার ঠ্যাকা পড়ে নাই!
.
তাহলে আজ তোমাকে আমি মাঝপথে নামাই দিব
.
দিয়েন
.
ভয় করছে না তোমার?
.
নাহ তো
.
শান্ত রেগে পানির বোতল নিয়ে পানি খেয়ে চেয়ার টেনে ধুপ করে বসে পড়লো
হাত দিয়ে তার খয়েরী সিল্কি চুল গুলো কপাল থেকে সরিয়ে পিছনের দিকে নিয়ে গেলো,আহানার দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে একটা সেন্টার ফ্রেশ নিলো
.
আহানা!!
.
আহানা শান্তর দিকে তাকালো,শান্তর চোখেমুখে শয়তানি হাসি
কিছু একটা করবে,কিন্তু কি করবে সেটা বুঝতেসি না আমি,কি করবে?
.
শান্ত হেসে দিয়ে বললো আরেহহ আহানা তোমার ওড়না পড়ে গেছে
.
আহানা হা করে নিজের দিকে তাকালো,সাথে সাথে শান্তর ওর মুখের ভেতর সেন্টার ফ্রেশ ঢুকিয়ে দিলো
আহানা মুখ বাঁকিয়ে ফেলতে গিয়ে দেখলো ক্লিনার রুম ক্লিন করতেসে,অফিসের এই লোকটা পরিষ্কার করে সবসময় কাউকে কিছু ফেলতে দেখলে চোখ এত বড় করে মনে হয় খুন খারাবি হয়ে যাবে,রক্তা রক্তি হয়ে যাবে
আহানা তাকে দেখে তর মুখ থেকে চুইংগাম ফেললো না কিছু
উঠতে গেলো শান্ত ওর হাত মুঠো করে চেপে ধরে ফেলেছে,উঠতেও পারতেসে না সে
.
হুহাহাহাহাহহুহাহহাহা!
.
স্টুপিড! হাত ছাড়ুন বলতেসি,আমার বমি আসতেসে,আমি এই চুইংগামটা ফেলবো
.
ফেলো না,আমি কি মানা করসি?
.
?
.
আহানা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,মাথা ঘুরাচ্ছে,শরীর খারাপ করছে
.
শান্ত যখন দেখলো আহানা আর হাত ছাড়ানোর জন্য মুছড়াচ্ছে না তখন তার দয়া হলো,হাত ছেড়ে দিলো
সাথে সাথে আহানা দৌড় দিলো বাথরুমের দিকে
.
অফিসে ফিরে রাগে গজগজ করতে করতে সিটে এসে বসলো আহানা
শান্ত কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছে আর কাজ করতেছে
.
শান্ত!!
.
শান্ত চমকে ইয়ারফোন খুলে ফেললো
পাশেই বেবি হেলেদুলে কথা বলতেসে
.
শান্ত বিরক্তি নিয়ে বললো কি??
.
তুমি আমাকে avoid কেন করতেসো??
.
শুনো ববি,একটা সত্য তোমার জানা উচিত
.
ববি না বেবি
.
আচ্ছা বেবি,আমি বিবাহিত,আমার ওয়াইফ আছে
কথাটা আহানার দিকে চেয়ে বললো শান্ত
.
আহানা চোখ তুলে ওদের দিকে চেয়ে আছে,ডাহা মিথ্যা বললো,তাও এই মেয়েটাকে সরানোর জন্য
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কিহহ কি বললে তুমি?
.
ইয়াহ এটাই সত্যি,এমনকি আমার ২বছরের একটা ছেলেও আছে
.
হোয়াট!না আমি বিশ্বাস করি না,তুমি তো ভার্সিটিতে পড়ো তুমি কিভাবে বিবাহিত হতে পারো,এটা মিথ্যা
.
আরে না, পালিয়ে বিয়ে করসিলাম তো তাই এত আর্লি হয়ে গেসে
.
ওহ?তার মানে তুমি সেকেন্ড হ্যান্ড!!!
.
বেবি হনহনিয়ে চলে গেলো,আহানা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে,হাহাহা,মিঃ অশান্তর নিউ একটা নাম হইসে,সেকেন্ড হ্যান্ড!?
.
আহানা চুপ করো,তাহলে তুমিও সেকেন্ড হ্যান্ড!
.
কেন কেন,আমি কেন,আমি তো বিবাহিত না
.
বিয়ে হলেই সেকেন্ড হ্যান্ড হয় তার আগে না এই ভুল তথ্য কে দিলো তোমায়?
.
মানে!
.
শান্ত মুচকি হেসে জিভ দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিলো
ইয়ারফোন কানে গুজতে গুজতে বললো কিস করলেই সেকেন্ড হ্যান্ড হয়ে যায় বুঝছো আমার পাতানো বউ
.
আহানা চোখ বড় করে রেগে গিয়ে শান্তর গায়ে দুম করে কিল বসিয়ে দিলো
বেয়াদ্দপ কোথাকার!
.
শান্ত আহানার চুল টেনে দিলো
.
আহানা এবার শান্তর জ্যাকেট টেনে এলোমেলো করে দিলো
.
শান্ত হাত নিয়ে আহানার ওড়না ধরতে যেতেই হাত সরিয়ে ফেললো
আহানা গায়ে হাত দিয়ে চুপ করে তাকিয়ে থেকে রেগে রেগে বললো তো এখন আপনি আমার গায়ে হাত দিবেন?
.
তুমি প্রথমে আমার গায়ে হাত দিসো
.
তো তাই বলে আপনি এভাবে আমার ওড়না ধরতে আসবেন?
.
আমি ভুলে গেসিলাম তুমি মেয়ে, ওকে ফাইন সরি
.
হুহ
.
শান্ত কম্পিউটারে একটা ফাইল ওকে করে আহানার দিকে চেয়ে বললো যদি আর একদিন জ্যাকেটে হাত দিসো তো তোমার গায়ে তোমার ওড়না থাকবে না
.
আহানা চোখ তুলে বললো কিহহহহ,আপনার এত বড় সাহস আপনি….
.
চুপ!যখন ওড়না ছিনিয়ে নিব তখন এসব বলিও, ওকে?
.
বেয়াদব একটা!
.
তুমিও বেয়াদব
.
আপনি বেয়াদব
.
শান্ত রেগে আহানার চুল ধরে টেনে দিলো,আহানা শান্তর হাতে তার নখ ঢুকিয়ে দিলো
.
আউচচচ
.
শান্ত এবার আহানার মাথার চুল থেকে হাত নামিয়ে আহানার হাত ধরে করচচচচ করে এক কামড় বসিয়ে দিলো
.
আউউউউউউউউ
.
রাফি স্যার দৌড়ে আসলো তার কেবিন থেকে
কি হলো?আহানা?এমন চিৎকার দিলে কেন?কি হয়েছে?
.
আহানা ওড়না দিয়ে হাত লুকিয়ে বললো তেলাপোকা দেখসি তাই
.
ওহ,আমি তো ভাবলাম তোমারে তেলাপোকা কামড় দিসে
কথাটা বলে রাফি হেসে দিয়ে চলে গেলো
.
হিহি,মিঃ অশান্ত একটা তেলাপোকা
.
তুমি তেলাপোকি??
.
জলহস্তিনী ঠিক ছিল,তেলাপোকি মানে কি আবার!
.
ও তুমি বুঝবে না,আমাকে যাই বলো না কেন তোমাকে বলার সময় (ই-কার বসিয়ে দিব)
.
ব্রেক টাইম শুরু হয়ে গেছে,আহানা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে চেয়ে আছে
.
হঠাৎ কেউ একজন পিছন থেকে হাত মুঠো করে ধরে টান দিলো
আহানা চমকে তাকালো সেদিকে
শান্ত হালকা করে হেসে বললো কি গো পাতানো বউ চলো ক্যানটিন যাই খাইতে
.
আমি যাব না,আর আপনাকে বলসি না আমাকে পাতানো বউ বলবেন না!
.
ওকে পাতানো বউ,চলো এখন
শান্ত আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো ক্যানটিনের দিকে
তোমাকে ছাড়া কিছু খাওয়ার সময় মন বসে না আমার,কি খাবা বলো?
.
কিছু না
.
ওকে,ভাইয়া ২৯৯এর যে প্যাকেজ আছে সেগুলোর ২টা প্যাকেজ এই টেবিলে দিয়ে যান
.
আমি বলসি না খাব না
.
খেও না,বাসায় নিয়ে যাইও
.
শান্ত জ্যাকেটের চেইন খুলে গায়ে ফু দিতে দিতে বললো আজ এত গরম!
.
আহানা পিছনে চেয়ে দেখলো বেবি পায়ের উপর পা তুলে লিপস্টিক লাগাচ্ছে
আপনি অসভ্য একটা লোক,কিছুক্ষন আগে ওর থেকে ছাড়া পেতে বলেছেন আপনি বিবাহিত আর এখন ওরে দেখে বলেন আজ গরম!
.
শুনো অলওয়েজ এত নেগেটিভলি সব নিবা না,আমার সত্যি গরম লাগতেসে,ক্যানটিনের এসি নষ্ট দেখো না??আর আমি তো ববিকে দেখিও নাই
কথাটা বলে শান্ত ঠাস করে টেবিলে এক বাড়ি দিয়ে আরেকদিকে মুখ করে বসলো
.
ইহহ মিঃ অশান্ত রাগ করেছে!
.
তোমার সাথে কথা বলবো না যাও,খাবার এসে গেছে, খেয়ে যাও এখান থেকে
.
আমি না খেয়েই যাবো
আহানা উঠে চলে গেলো কথা শেষ করে
.
১০-১৫মিনিট হয়ে গেছে আহানা তমালের নোট কমপ্লিট করতেসে কেবিনে বসে বসে
শান্ত খাবার নিয়ে এসে আহানার সামনে চেয়ার টেনে বসলো
.
আমি বলসি না খাব না”
.
তুমি খাবে না তোমার ১৪গুষ্টি খাবে
শান্ত আহানার গাল টিপে ধরে এক লোকমা মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিলো
আহানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর নাক টিপে ধরলো শান্ত,দম বন্ধ হয়ে আসতেসে তার,না চিবিয়েই গিলে ফেললো
.
শান্ত মুচকি হেসে ওর নাক থেকে হাত সরিয়ে ফেললো,আরেকটা লোকমা বানাতে বানাতে বললো আমি যখন মোহনগঞ্জে থাকতাম আমার এখনকার মা আমার বোন মিতুকে এমন করে খাওয়াতো,ও একদম খাবার খেতে চাইতো না,তাই নাক টিপে ধরতো ওর সাথে সাথে ও খাবার গিলে ফেলতো
.
তাই বলে আমাকেও এমন করে খাওয়াবেন?
.
তুমি নিজে খেলে তো আর আমার এত কষ্ট করতে হতো না
.
আচ্ছা দিন
.
আহানা খাবার হাতে নিতেই শান্ত উঠে দূরে জানালার পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো,পকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ধরালো,এই ফ্লোরে এখন আহানা ছাড়া কেউ নেই তাই নিশ্চিন্তে সিগারেট খাওয়া যায়
.
আহানা খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে এসেছে
শান্ত সিগারেট হাতে রেখে সূর্যের সাথে ফোনে কথা বলতেসে,হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে
.
আহানা এই নিয়ে ৩বার তাকালো,ঐদিন সিগারেট খেয়ে অবস্থা খিঁচুড়ি হয়ে গেলেও টেস্টটা ভালই লেগেছে,আরও একবার খেতে পারলে মন্দ হতো না
আহানা এগিয়ে কাছে এসে দাঁড়ালো,এদিক ওদিক তাকালো,কেউ নেই,আর ৫/৬মিনিট পর সবাই ফিরে আসবো কেবিনে,এর ভিতরই যা করার করে ফেলতে হবে
.
আহানা ছোঁ মেরে সিগারেটটা নিয়ে নিলো,,শান্ত সূর্যর সাথে কথা বলায় ব্যস্ত থাকায় টেরই পেলো না যে তার হাতের সিগারেট গায়েব হয়ে গেছে
আহানা সিগারেটটা মুখে দিয়ে পরপর ২টান দিলো তারপর হা করে ধুঁয়া বের করে হাসতে হাসতে আরেকবার মুখে দিলো এবার মনে হচ্ছে মুখের সাথে সাথে চোখ ও জ্বলে যাচ্ছে
আহানা সিগারেটটা ফেলে কাশতে কাশতে চেয়ারে বসে পানির বোতল খুঁজতেসে
.
শান্ত ফোন রেখে হাতে চেয়ে দেখলো সিগারেট গায়েব,ফ্লোরে পড়ে আছে বাকি অংশ আর আহানা হাত দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে কি যেন খুঁজতেসে
.
আহানা?তুমি আমার সিগারেট নিসো কেন?মুখে দিসো আবার?
আহানা পানি খুঁজেই পাচ্ছে না,এক বোতল পানি ছিল,খাবার খেয়ে সব শেষ করে ফেলসে
.
শেষে শান্ত ক্যানটিন থেকে পানি নিয়ে ফিরে আসলো
ওর হাতে দিয়ে ওর মুখের দিকে চেয়ে দেখলো চোখ মুখ লাল অজগর হয়ে আছে
নাকের নিচে লাল লাল কি যেন দেখা যাচ্ছে,শান্ত আহানার মুখ টিপে উল্টিয়ে ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে দেখলো রক্ত,আর কিছুক্ষন হলেই গড়িয়ে পড়বে
শান্ত মহা চিন্তায় পড়ে গেলো,আহানাকে বকবে কি নাকি মারবে তা সব একপাশে রেখে ড্রয়ার থেকে টিসুর
বক্স নিয়ে আহানার মুখ টিপে রক্ত গুলো মুছে নিলো তারপর ব্রু কুঁচকে আহানার গালে চড় মারার জন্য হাত উঠালো,আহানা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে ভয়ে
.
তোমার কি মাথা গেছে?ঐবার সিগারেট খেয়ে কি হয়েছিল তোমার মনে নেই?আজ আবার সেই ভুল করলে,হলো তো এবার? রক্ত বের হচ্ছে নাক দিয়ে,শান্তি হইসে তোমার?কেমন করে খেয়েছো সিগারেট যে নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসে গেছে
.
আমি আসলে ধোঁয়া নাক দিয়ে বের করতে চাইসিলাম,অনেকেই নাক দিয়ে বের করে তো তাই,experience নেওয়ার জন্য এমন করসি
.
তাই?তাই বলে তুমি ছেলেদের মতো করতে চাইবা?বারবার ভুলে যাও কেন যে তুমি মেয়ে,তোমাকে এসব স্যুট করবে না,বুঝো না কেন,নাকি বুঝার চেষ্টা করো না তুমি!বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!
আহানা চোখ মুছে কম্পিউটার অন করলো,সবাই এক এক করে আসতেসে অফিসে,যে যার কেবিনে বসতেসে
শান্ত শক্ত হয়ে তার কাজ করে যাচ্ছে
আহানা হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে কাজ করতেসে
.
বোকা মেয়ে একটা,একটু জ্ঞান বুদ্ধি যদি থাকত তো দ্বিতীয় বার সিগারেট খাওয়ার সাহস করত না
.
অফিস ছুটি হওয়ার পর আহানা গুটিগুটি পায়ে নিচে নেমে রোডের সামনে দাঁড়িয়ে শান্তর জন্য অপেক্ষা করছে
.
শান্ত বাইক নিয়ে এসে বললো তোমার কি খিধা পেয়েছে?
.
নাহ কেন?
.
তাহলে চলো এক জায়গায় যাব
.
কোথায়?
.
গেলেই দেখবে
.
আহানা চুপ করে বাইকে উঠে বসলো
.
কিছুক্ষন নিরবতা পালন করে বললো আমরা কই যাচ্ছি?
.
তোমার বেস্টুর বাসায়
.
রুপা?কিন্তু কেন?
.
আজ ওকে দেখতে আসবে ছেলে পক্ষ
.
কিহহহহ!ও আমাকে বলেনি কেন,আর নওশাদ ভাইয়া?
.
আরে তোমাকে কি বলবে?নওশাদ খবরটা মাত্রই জানছে,সে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে রুপার ফ্যামিলিকে বুঝানোর জন্য
.
তো আমরা কি এখন তাদের মানাতে যাচ্ছি?
.
হুমম,আমি তোমাকে নিতেছি কারন তুমি রুপাকে চিনো,সব কিছু জানো
.
আরে উনারা আমাদের কথা কেন শুনতে যাবে.?
.
চুপ করো তো এত প্রশ্ন করে মাথা খাইও না আমার
.
আহানা তো ভেবে যাচ্ছে রুপা ওরে এতবড় কথা জানালো না কেন!
রুপাদের বাসায় এসে আহানা ঢুকতে যেতেই শান্ত ওর হাত ধরে থামিয়ে দিলো
.
আহানার ওড়না টেনে ওর মাথায় ঘোমটা দিয়ে দিলো
.
শুনো তুমি বলবা আমি তোমার স্বামী,ওকে?
.
কিহ,কিন্তু কেন?
.
আরে নাহলে অবিবাহিত ছেলে মেয়েদের বাংলাদেশি পরিবারের লোকেরা বাচ্চা ভাবে,বুঝছো??বিবাহিত শুনলে আমাদের কথায় গুরুত্ব দিবে
.
?তাই বলে এত বড় মিথ্যা?
.
ওকে আমি রুপাকে বলতেসি তুমি ওকে হেল্প করতে চাও না
.
আহানা শেষে রাজি হলো,কলিংবেলে চাপ দিলো শান্ত,একজন ভদ্রলোক এসে দরজা খুলেন
সম্ভবত রুপার বাবা হবেন
.
আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম,তোমরা কারা ঠিক চিনলাম না
.
আমি নওশাদের বড় ভাই শাহরিয়ার শান্ত আর এ আমার ওয়াইফ আহানা ইয়াসমিন
নওশাদ কথা শুনেই উনার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো,ব্রু কুঁচকে ভিতরো চলে গেলেন
.
এই হলো তো?মিথ্যা বলায় এখন হলো তো?বাসায় ও ঢুকতে দেয়নি
.
শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে আহানার চুল টেনে বললো চুপ থাকতে পারো না তুমি?
.
লোকটা আবার ফেরত আসলেন সাথে একজন বয়স্ক মহিলা আনলেন,রুপার দাদি মনে হয় উনি,লোকটা শান্ত আর আহানাকে ভিতরে আসতে বলে নিজে সোফায় বসলেন
শান্ত আর আহানা বয়স্ক মহিলাকে সালাম দিয়ে সোফায় বসলো
.
আমরা নওশাদের ব্যাপারে জানি,তো তোমরা এখন কি বলতে এসেছো?
.
আমি বলতে এসেছি নওশাদ আমার ছোট ভাই,ওরে আমি চিনি,ও রুপাকে অনেক ভালোবাসে,রুপাও ভালোবাসে তাহলে আপনি কেন এখন রুপাকে আরেকটা ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন?
.
নওশাদ কোনো চাকরি করে??বলো
.
করে না তো করবে,নওশাদের পড়ালেখা অনেক ভালো,ও অনেক ভালো একটা চাকরি পাবে
.
পরেরটা পরে,এখন তো করে না,আর আমি আমার মেয়েকে এখনই বিয়ে দিব,ছেলে পক্ষ কিছুক্ষন পর আসবে,আপনারা আসতে পারেন এখন!
.
শান্ত আহানাকে এক খোঁচা দিলো,কিছু বলার জন্য
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে বললো কিন্তু আঙ্কেল রুপা তো প্রেগন্যান্ট,নওশাদের বাচ্চার মা হতে চলেছে
.
শান্ত চোখ কপালে তুলে আহনাার দিকে তাকালো
রুপার বাবা সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন
.
কি বললে?এটা মিথ্যা কথা
.
এটাই সত্যি আঙ্কেল
.
শান্ত ফিস ফিস করে বললো এসব কি আজগুবি কথা বলে যাচ্ছো মাথা গেছে তোমার?
.
আরে ওরা ঐদিন রুমডেট করসে বলছেন না,তো এতদিনে তো প্রেগন্যান্ট হয়ে যাওয়ারই কথা তাই না,আর এটা বলায় উনি বিয়ে দিতে বাধ্য হবেন!
.
রুপা!!রুপা!!এদিকে আয়
.
রুপা একটা মেরুন রঙের শাড়ী পরে রেডি হয়ে রুমে বসে ছিলো বাবার চিৎকারে দৌড়ে এসে আহানা আর শান্তকে দেখে চমকে উঠলো
.
রুপার বাবা হাত উঠালেন রুপাকে মারার জন্য
.
আরে আরে আঙ্কেল!!গর্ভবতী নারীর গায়ে হাত তুলে গুনাহর ভাগীদার হবেন না
.
আহানার কথায় বাবা হাত থামিয়ে হনহনিয়ে বাসার ভেতর চলে গেলেন,বয়স্ক মহিলাটি মনে হয় কানে শুনে না,একবার আহানার দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার শান্তর দিকে,আবার রুপার দিকে তাকাচ্ছে,মাঝে মাঝে তাকানো বাদ দিয়ে তফসি পড়তেসেন,কোনো রিয়েক্ট করতেসেন না,তার মানে উনি কিছুই শুনেন নাই
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৩৩

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৩৩
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে শান্তর দিকে ব্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো
.
শান্ত বাইকে হেলান দিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে বললো ববি আমাকে খুব জ্বালাচ্ছে,জাস্ট এমনি ফ্রেন্ডলি কথা বললাম আর ও তো আমাকে প্রোপোজই করে বসলো
.
আহানা ফিক করে হেসে দিলো কথাটা শুনে
তাহলে বিয়ে করে নেন
.
আহানা?তোমার মাথা ঠিক আছে? ওরে বিয়ে করলে আমার জীবন যৌবন সব যাবে
.
তাহলে কি করতে চান?
.
তুমি প্লিস হেল্প করো,ওর থেকে আমাকে বাঁচাও
.
আমার ঠ্যাকা পড়ে নাই
.
পড়সে আমার কথা না শুনলে মাঝপথে তোমাকে রেখে চলে যাবো আমি
.
আহানা চোখ বড় করে বললো ঠিক আছে ঠিক আছে
দেখি কি করা যায়,কিন্তু এখানে আপনার ও দোষ আছে
.
আমি কি করলাম?
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আপনি ওর সাথে সাথে তাল মিলান,ওকে কাছে আসতে দেন সবসময়,লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছেন,এখন নামাতেও পারতেসেন না
.
আমি তোমাকে জ্বালানোর জন্য!
.
মানে?আমাকে জ্বালানোর জন্য??আমি জ্বলবো কেন?
.
নাহ কিছু না,চা খাওয়া শেষ?
.
হুম
.
দাও কাপ দাও,আমি রেখে আসি
.
শান্ত কাপ নিয়ে দোকানদারকে দিয়ে ফেরত এসে বাইকে বসে স্টার্ট দিতেই একটা ছেলে বলে উঠলো অল দ্যা বেস্ট ভাইয়া
শান্ত মুচকি হেসে চলে গেলো
.
আচ্ছা আপনাকে ওরা অল দ্যা বেস্ট বললো কেন?
.
এমনি তুমি বুঝবে না
.
একটা কথা বলেন,তখন বেবিকে নিয়ে কই গেছিলেন?
.
ববি আমাকে বললো ও ওর বাবা মায়ের বিবাহবার্ষিকীতে কি যেন গিফট করবে,আমি যেন চুজ করে দিই,আমি অনেক মানা করেছি তাও জোর করে নিয়ে গেছে
.
??
.
হাতে ব্যাথা করে?
.
নাহ
.
গুড
.
আপনার?
.
শান্ত হেসে দিয়ে বললো নাহ তখনও করেনি এখন তো করেই না
.
আপনার বাবার বাসায় কে কে আছে?
.
বাবা,সৎ মা,সৎ বোন আর সুপার সৎ ভাই
.
সুপার সৎ ভাই মানে?
.
আমার এখন যে মা আছে উনার আগের সংসারের ছেলে
.
হাহা,তাই বুঝি সে সুপার সৎ ভাই?
.
হ্যাঁ
.
আপনার ভাগ্য ভালো,এক মা গেছে আরেক মা এসেছে
.
শান্ত কথাটা শুনে বাইক থামিয়ে ফেললো
.
আহানা ভয় পেয়ে ঢোক গিলে চুপ করে আছে
.
যে মা গেছে তার মতন কেউ হতে পারবে না,পারার চেষ্টাও করে না
.
ওহ,সরি জিজ্ঞেস করার জন্য
.
তোমাকে আর কি বলবো,আমার তাও সৎ আছে তোমার তো সেটাও নেই
.
আহানা চুপ করে থেকে সামনের দিকে তাকালো
.
শান্ত হুঠাৎ করে আবারও বাইক থামিয়ে নিলো
.
কি হয়েছে?
.
আইসক্রিম খাবে?
.
মাত্রই তো চা খেলাম
.
তো কি হয়েছে,আমি তো চা দিয়ে সিগারেট ও খাই
.
আহানা শান্তর কথায় হেসে দিলো
দুজনে আইসক্রিমের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে
শান্ত ভিতরে আইসক্রিম কিনতে গেছে
Za n Zee এর কোণ কিনলো,চকলেট ফ্লেভারের
আহানার দিকে তাকিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা পিছলিয়ে দুম করে নিচে পড়ে গেলো শান্ত
আহানা ধরে ফেললো কোনোরকম করে,এতবড় ছেলেকে কি আর একটা মেয়ে ধরতে পারে
আহানা পিছিয়ে গেলো তাও একরকম করে ধরলো ওকে
শান্ত তার আইসক্রিমটা খুলে ফেলছিলো বলে আইসক্রিমটা অনেকখানি আহানার মুখে লেগে গেছিলো
আহানা ওড়না নিয়ে মুছতেসে শান্তর দিকে ব্রু কুঁচকে চেয়ে
.
শান্ত হেসে দিয়ে বললো ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেলো আমার,যেদিন তুমি তোমার সারা মুখে চকলেট মেখেছিলা
.
আহানা লজ্জা পেয়ে আরেকদিকে ফিরে গেলো
.
অবশ্য কেউ চাইলে সেটা ফেরত দিতে পারে
.
হুহ,আপনার এলিনা আর বেবিতে হয় না এবার আমার পিছে লাগছেন?
.
এক মিনিট!তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই,ওকে?
.
হুহ
.
আইসক্রিম খাওয়া শেষে আবার বাইকে এসে বসলো দুজনে,বাসায় ফিরে আহানা ভাবতে থাকলো আজকের শান্তর সাথে আগের দিনের শান্তর অনেক তফাৎ ছিল
.
শান্ত বারান্দায় বসে সিগারেট হাতে নিয়ে ব্যস্ত নগরী দেখতেসে,আজ যদি এলিনার হাতে সিগারেটের ছ্যাঁকা লাগতো সে পুরো বাংলাদেশ উল্টো করে ফেলতো চিৎকার করে
শান্ত কিসব ভেবে সিগারেট নিয়ে নিজের হাতে লাগিয়ে ধরলো
আমিও আহানার মত হয়ে গেলাম নাকি
হাত পুড়লো চিৎকার করলাম না,জাস্ট ব্রুটা কুঁচকেছে ব্যাথায়
শান্ত ফ্রিজ থেকে আইস কিউব নিয়ে হাতে লাগিয়ে বসে ভাবতে লাগলো অবশ্য আমি ব্যাথা পেলে চেঁচাই না
আগে জানতাম মেয়েরা চেঁচায়,কিন্তু আহানা সেটা ভুল প্রমান করলো আজ
রুমের বাইরে থেকে ফিসফিস শুনা যাচ্ছে,শান্ত কান খাড়া করে শুনার চেষ্টা করলো
.
হ্যাঁ বিশ্বাস কর,সে প্রেমে পড়েছে
.
তুই এমন করে আমাকে বিশ্বাস করাতে চাস কেন,আমিও তো জানি ও প্রেমে পড়সে,আমি স্বাক্ষী
.
নওশাদ তোর কাছে প্রুভ আছে?
.
রিয়াজ কি বলিস তুই,নিজের চোখে দেখছি আহানাকে নিয়ে বাইকে করে ঘুরতেসে
.
ওকে চল রুমের ভিতর আজ ওর একদিন কি আমাদের যতদিন লাগে
.
দুজনে পা টিপে টিপে রুমের ভিতরে ঢুকতেই দেখেলো শান্ত কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
তোরা যদি এখন বলিস আমি প্রেম করি তাও আহানার সাথে এটা ডাহা মিছা কথা
.
তুই আমাদের মিথ্যাবাদী প্রমান করাতে চাস?তাহলে বাইকে করে ওকে নিয়ে ঘুরানোর মানে টা কি?
.
রাত করে একা একটা মেয়েকে একা একা বাসায় আসতে দিই কি করে?তোরা হলে কি করতি?
.
ফাইন,তুই এখন আহানাকে ফোন করবি,লাউড স্পিকার দিবি,আহানা কি বলে আমরা শুনবো
.
তোরা আমাকে বিশ্বাস করোস না?নওশাদ??তুই আমার পিছে লাগছোস কেন?
.
তুই কল দিবি কিনা বল
.
ফাইন,নে কল দিলাম
.
লাউড স্পিকার দে
.
হ্যালো আহানা!
.
কি?
.
আমার নোটগুলো কমপ্লিট করসো?
.
এত বার জিগাইয়া মাথা খান কেন?প্রতিদিন তো আসার সময় নোট কমপ্লিট করেই আনি,অসহ্য!
.
শান্তর কান মনে হয় ফেটে গেছে,আহানা এত চেঁচায় বললো কথাগুলো
নওশাদ আর রিয়াজ ফোনে কান লাগিয়ে ছিল,তাদের ও মনে হয় কানের পর্দা ফেটে গেছে
.
ওকে বাই,এত গন্ডারের মত চিল্লাইতে হবে না আর!
.
কিহহহ আমি গন্ডার?তাহলে আপনি পেঙ্গুইন,সোজা হয়ে ঢুলি ঢুলি হাঁটেন?
.
কি বললে?আমি পেঙ্গুইনের মত হাঁটি?তাহলে তুমিও হরিণের মত লাফায় লাফায় হাঁটো
.
আপনি তো ভাল্লুকের মত গাপুসগুপুস করে খান
.
এই তোরা থাম,উফ মাথা খাবে আমাদের দুজনের তোরা দুজন মিলে,ফোন কাট
.
শান্ত বিরক্তি নিয়ে ফোন রেখে দিলো
এবার বিশ্বাস হইসে তো যে আমরা প্রেম করতেসি না?
.
হ্যাঁ বিশ্বাস হইসে সাথে এটাও বুঝলাম তোদের জীবনে প্রেম হবে না,আজীবন আচারে পাঁচফোড়ন দিতেই থাকবি তোরা,আচার টেস্ট করা আর হবে না
.
শান্ত মুখ বাঁকিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো
.
আহানা ফোন রেখে জামায় সাবান দিতে দিতে ভাবতে লাগলো শান্ত কি ঝগড়া করার জন্য নক করেছিল নাকি,কে জানে,এই লোকটা কখন কি করে তা বোঝা দায়
.
পরেরদিন সকালে আহানা হেঁটে যাচ্ছে সাথে কেঁদে যাচ্ছে,চোখের পানি মুছতে গিয়ে ওড়না ভিজে শেষ,কাঁদতে কাঁদতে নাক গোলাপি রঙ হয়ে গেছে
ভয়ে ভয়ে শান্তর বাসার সামনে এসে দেখলো তার বাসার দরজা বন্ধ,ঢোক গিলে মিষ্টিকে পড়াতে চলে গেলো
প্রতিদিনকার মত পড়ানো শেষে বেরিয়ে দেখলো শান্ত দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছে
আমার নোটস কমপ্লিট করসো?
.
আসলে!
.
কি?
.
আমি আসলে!
কথা বলতে গিয়ে আহানা কেঁদেই দিলো
.
শান্ত চমকে এগিয়ে এসে বললো কি হয়েছে আহানা?
কেউ তোমাকে কিছু বলছে??
.
আমাকে মাফ করে দিয়েন আমি আসলে
.
কান্না থামাও
.
শান্ত যখন দেখলো আহানাকে সামলানো যাচ্ছে না সে বাচ্চাদের মতো কেঁদেই চলেছে শেষে ওর হাত ধরে বাসায় নিয়ে গেলো,সোফায় বসিয়ে পানি এক গ্লাস এনে দিলো ওর হাতে
আহানা পানি খেয়ে কিছুক্ষন চুপ করে কথা বলা শুরু করলো
.
আমি আপনার নোটস কমপ্লিট করতেছিলাম,নোট রেখে জামাকাপড় ধুইছি,এক বালতি সাবানের পানি ছিল রুমে,আমি টেবিল মুছতে গিয়ে ভুলে হাতের সাথে লেগে নোটটা বালতির ভিতরে পড়ে গেছিলো ,তাও তমাল ভাইয়ারটা?
.
শান্ত চোখ বড় করে ফেললো আহানার কথা শুনে,আহানা আবারও কান্না শুরু করে দিলো ভয়ে,এতদিন বড় বড় কথা বলতো আর আজ নিজেকে বিড়াল মনে হচ্ছে
.
শান্ত হাসবে নাকি কাঁদবে সেটা বুঝতেসে না,শেষে নিজেও এক গ্লাস পানি খেলো,তমালের ঐ নোটবুকটাই এতদিনের সব কপি ছিল,পানিতে ধুয়ে সব শেষ,তমাল ওর মুখের উপর কিছু বলবে না বাট এটাতে তমালের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে,শান্ত ভাবনায় পড়ে গেলো সে কি করবে
.
আচ্ছা কান্না থামাও,আমি এক কাজ করবো,আমার কাছে সব নোটস আছে,তুমি অর্ধেক নাও আর আমি অর্ধেক,তারপর আমরা ২দিনেই আগের সব নোটস তুলে ফেলবো নিউ নোট খাতায়,আমি নওশাদ আর রিয়াজের ও হেল্প নিব,তাহলে ২দিনেই হবে যাবে
.
আহানার মনে হলো কাঁধ থেকে বোঝা হালকা হয়ে গেছে খুশি হয়ে লাফিয়ে উঠলো সে
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো খুব তো বড় বড় কথা বলতে,আর এখন??সব সাবান দিয়ে ধুয়ে দিলে!
.
?
.
যাও বাসায়,পরেরটা পরে দেখা যাবে,আমি তমালকে সামলিয়ে নিব
.
আহানা বাসায় ফিরে ১০টা পর্যন্ত নোট কিছুটা লিখে নিলো,তাও ভয় কাটলো না
না জানি তমাল ভাইয়া কি বলবে আমাকে!!
ভয়ে ভয়ে ভার্সিটির দিকে রওনা হলো আহানা
ক্লাসে বসে কিছু নোটস লিখলো
.
কিরে আহানা?এটা কিসের নোটস লিখতেছিস??এটা তো আমাদের ক্লাসের মনে হচ্ছে না
.
এটা মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের
.
কিহহহহহ!তুই মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের নোট লিখস কেন,তোর শরীর ঠিক আছে তো?
.
হুম,এটা আমার চাকরি,শান্ত ভাইয়া দিসে?
.
ওহ হো,ভিতরে ভিতরে টেম্ফু চালাও?আর আমরা ধরলে কও হরতাল
.
চুপ,যা এখান থেকে,শয়তান!
.
আহানা ব্রেক টাইমে ক্যামপাসে এসে শান্তকে খুঁজতেসে এদিক ওদিক তাকিয়ে
হঠাৎ কেউ পিছন থেকে ডাক দিলো
আহানা বুঝতে পারলো এটা তমালের কন্ঠ
ভয়ে পিছন ফিরে তাকালো
.
সরি ভাইয়া আসলে আমি
.
কিছু বলতে হবে না,শান্ত আমাকে বলেছে,তুমি নাকি বাচ্চাদের মত কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলে?তখন নাকি তোমাকে নাককাঁদুনি লাগতেছিলো,তাই নাকি?
আমি তোমাকে এটা বলতে আসলাম যে কেঁদো না,ইটস ওকে
.
আহানা রেগে বললো আমি বাচ্চাদের মত কাঁদতেসিলাম?আমি নাককাঁদুনি??শান্ত ভাইয়া কই?
.
ও মনে হয় বটতলায়
.
আহানা হনহনিয়ে সেদিকে গেলো
গান শুনা যাচ্ছে বটতলা থেকে
.
♪♪♪কথা হবে দেখা হবে, প্রেমে প্রেমে মেলা হবে,
কাছে আসা আসি, আর হবে না.
চোখে চোখে কথা হবে, ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে,
ভালবাসা-বাসি, আর হবে না.
শত রাত জাগা হবে, থালে ভাত জমা রবে,
খাওয়া দাওয়া, কিছু মজা হবে না.
হুট করে ফিরে এসে, লুট করে নিয়ে যাবে,
এই মন ভেঙে যাবে, জানো না.
|| আমার এই বাজে স্বভাব, কোনোদিন যাবেনা ||
.
আহানা এগিয়ে এসে শান্তর সামনে দাঁড়ালো
শান্ত গান অফ করে দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে
.
এই আমি নাককাঁদুনি?
.
হ্যাঁ,যেভাবে কাঁদতেসিলে সেটাই মনে হচ্ছিলো
.
তাহলে শুনে রাখুন আপনি আস্ত একটা জলহস্তী!!
আহানা কথাটা বলে চলে গেলো
.
হ্যাঁ রে শান্ত তোরে এত বড় কথা বলে গেলো তোর কোনো রিয়েকশান নাই কেন?
.
শান্ত জ্যাকেট ঠিক করে সানগ্লাস পরে নিয়ে আহানার পিছন পিছন এগিয়ে গেলো
.
আহানা দাঁড়াও
.
কি?
.
আমি জলহস্তী হলে তুমি কি জানো?তুমি জলহস্তিনী!!!
শান্ত ভেঁংচি কেটে চলে গেলো
.
আহানা ভাবতেসে জলহস্তী শুনেছি,জলহস্তিনী শুনি নি
.
কিরে আহানা তোরে পুরো ক্যামপাসে খুঁজলাম আর তুই এখানে?কি ভাবস এত?
.
আচ্ছা জলহস্তিনী মানে কি?
.
হাহা,এটাও জানস না?
রুপা চকলেটের প্যাকেট খুলতে খুলতে বললো জলহস্তীর ওয়াইফকে জলহস্তিনী বলে?
.
আহানা চোখ বড় করে তাকালো বটতলার দিকে
.
আহানার রাগী লুক দেখে শান্ত মুচকি হেসে সবার সাথে গানে মন দিলো
.
♪♪♪♪ভুলভাল ভালবাসি, কান্নায় কাছে আসি,
ঘৃণা হয়ে চলে যাই, থাকি না.
কথা বলি একাএকা, সেধে এসে খেয়ে ছ্যাঁকা,
কেনো গাল দাও আবার, বুঝি না.♪♪♪♪
.
আহানা হাত নাড়িয়ে বললো আপনার বউ হতে আমার ভয়েই গেছে,উগান্ডার বউ হয়ে উগান্ডিনি হতে চাই না আমি
.
রুপা চকলেট মুখে দিয়ে বললো কিরে আহানা? উগান্ডার বউ বুঝি উগান্ডিনি হয়
.
হুম?মিলাই নিলাম আর কি
.
ভার্সিটিতে ছুটি হতেই আহানা হাঁটা শুরু করে দিলো জলদি অফিসে তাড়াতাড়ি পৌঁছানোর জন্য,অনেকদূর এসে হাঁপিয়ে গেলো,আর হাঁটতে পারতেসে না সে
শান্ত বাইক নিয়ে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো,পথে দেখলো আহানা থেমে আছে,কোমড়ে হাত দিয়ে হাঁপাচ্ছে
.
কি হলো আহানা ম্যাডাম?কম বয়সে কোমড়ে ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো নাকি আপনার?
.
চুপ!জোরে জোরে হেঁটে আসায় হাঁপিয়ে গেছি
.
আমার জন্য ওয়েট করতে পারো না?
.
কেন ওয়েট করবো?আপনার তো কত কাজ থাকে
.
কি মিন করতেসো এটা বলে?আমি তোমার লেখা নোট তমালকে দিতে গেছিলাম তাই লেট হইসে আর কিছু না
.
হুহ!
.
নাও উঠো বাইকে,এখান থেকে অফিস দূরে আছে
.
আহানা শান্তর পাশে উঠে বসলো
.
কাঁধ ধরার জন্য কি আপনার কাছে এপ্লিকেশন এপ্লাই করতে হবে?
.
ধরতেসি ধরতেসি!ওড়না ঠিক করতেসিলাম
.
ফাইন
.
অফিসে আসতেই বেবি শান্তর হাত ধরে দূরে নিয়ে গেলো,এমন ভাবে কথা বলছে যেন ওর বিএফ
.
শান্ত কাঁচুমাচু করতে করতে আহানার দিকে চেয়ে হেল্প চাইলো ইশারা করে
.
আহানা দুষ্টুমি করে নিজের কাজে মন দিলো,এমন ভাব করলো যেন শান্তকে সে দেখতেই পেলো না
.
ববি ঠিক হয়ে দাঁড়াও
.
কেন?আমার ছোঁয়া কি তোমার ভাল্লাগতেছে না?
.
না আসলে এমন করিও না,আমরা তো কলিগ ছাড়া কিছুই না তাই না?
.
কাম অন শান্ত,কাউকে ভয় পাচ্ছো?নাকি রিলেশনে যেতে ভয় পাচ্ছো?কোনটা?
.
শান্ত বারবার আহানার দিকে তাকাচ্ছে আহানা হেসে হেসে কম্পিউটারে কাজ করছে,শান্তকে এমন অসহায় দেখে এত ভালো লাগতেসে বলে বুঝানোর মত না,হিহিহি
.
শান্ত বেবিকে সরিয়ে এগিয়ে আসলো আহানার দিকে
এই আহানা তোমাকে ডাকতেসি শুনো না?
.
ওহহ তাই?ডাকতেছিলেন বুঝি?
.
আহানা আজ তোমার মাথার চুল একটাও তোমার মাথায় থাকবে না বলে দিচ্ছি
.
ইহহহ রে আমি ভয় পাই গেসি?
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৩২

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৩২
#Writer_Afnan_Lara
?
শান্ত আরেকদিকে ফিরে চলে গেলো
আহানাও দাঁত কেলিয়ে লিফট থেকে বেরিয়ে আসলো
দুজনের একজনেও মিষ্টির কথার জবাব দিলো না
.
আমার ব্যাগ এনে দিন আমি আর আপনার বাসায় যাব না
.
ইহহহ!তোমার দরকার হলে তুমি গিয়ে আনো,আমি পারবো না আনতে,হুহ
.
আহানা শান্তকে বকতে বকতে শান্তর বাসায় গিয়ে ব্যাগ নিয়ে সোজা চলে গেলো তার বাসার দিকে
.
বাসায় ফিরে পান্তা ভাত খেয়ে জামা চেঞ্জ করার জন্য ওড়না খুলতে গিয়ে মনে হলো শান্ত আশেপাশেই আছে,শান্তর গায়ের গন্ধটা একদম তীব্র ভাবে নাকের কাছে আসতেসে,মনে হয় যেন ও পাশেই দাঁড়িয়ে আছে
এদিক ওদিক তাকিয়ে পরে আহানার খেয়াল হলো ওড়না থেকে শান্তর গায়ের গন্ধ আসতেসে,শান্ত মুখ মুছেছিল কয়েকবার তাই হয়ত
তারপর হেসে দিয়ে জামা আরেকটা পরে আহানা বের হলো বাসা থেকে
ভার্সিটিতে এসে ক্লাসে ঢুকেই দেখলো সবাই জানালার ধারে গিয়ে উঁকি মেরে কি যেন দেখছে আর একজন আরেকজনকে ধরে মুচকি মুচকি হাসতেসে
আহানা এতক্ষণ ওদের এমন ভাব দেখেছে,কি দেখতেসে সেটাই বুঝার চেষ্টা করতেসে সে,কয়েকজনের তো মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেছে
শেষে আর থাকতে না পেরে আহানা নিজেই দেখতে গেলো রহস্য উদঘাটন করতে
ভিড়ের সবাইকে ঠেলেঠুলে মাঝখান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে,বড় একটা বিশ্বজয়ের হাসি দিলো
তারপর জানালায় উঁকি দিতেই আহানার চোখ কপালে
মাঠ ভর্তি ছেলে,ভার্সিটির পাশের বাউন্ডারির বাহিরের একটা মাঠে ফুটবল খেলতেসে সবাই
তার মধ্যে শান্তকে দেখা যাচ্ছে,সাথে নওশাদ,রিয়াজ আর সূর্য ভাইয়াও আছে,তমাল দূরে একটা চেয়ারে বসে আছে
এতগুলো ছেলের মাঝে শান্ত যেন সন্ধাতারার মত জ্বলে আছে
তুমুল ভাবে খেলা শুরু হয়েছে,টানটান উত্তেজনা,মেয়েরা সব ছেলে রেখে শান্তকে নিয়েই কথা বলছে
কিউট,মিউট,টিউট কোনো কথায় ছাড়তেসে না তারা প্রশংসায় পঞ্চমুখ!
আর আমি কিনা আজ পর্যন্ত এই গাধাটার মধ্যে কোনো ভালো গুন খুঁজে পেলাম না,আফসোস
আহানা মুখ বাঁকিয়ে ফিরে যেতে লাগলো হঠাৎ সব মেয়েরা এক চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠলো
আহানা ভয় পেয়ে আবার দৌড়ে আসলো দেখার জন্যে
কি হলো এমন যে সবাই এমন উত্তেজিত হয়ে উঠলো
নিচে তাকিয়ে দেখে আহানার চোখ আবারও কপালে উঠে গেলো,শান্ত ম্যাচ জিতে খুশিতে তার জামা খুলে ফেলেছে খেলতে খেলতে
আহানা ভেঁংচি দিয়ে আবার বেঞ্চে এসে বসলো,আজ শয়তানটা অফিসে যাবে না নাকি,ইচ্ছে করে এমন করেছে আমি জানি,মেয়েদের নিজের বডি দেখানোর জন্য,আমি বুঝি না এমন বডি তো অন্য ছেলের ও আছে তাহলে ওরা সব ছেলে রেখে শান্তর উপর এমন ক্রাশিত কেন কে জানে,বিরক্তিকর,ওর সব আমার বিরক্তিকর লাগে
একটা দুইটা ক্লাস হয়েছে
মেয়েরা স্যারের কথায় কোনো কান না দিয়ে মাঠের দিকে তাকিয়ে ম্যাচ দেখায় মন দিয়েছে সব চাইতে বেশি,এক ম্যাচ শেষ হয়ে আরেক ম্যাচ শুরু হয়েছে মনে হয়,হইহুল্লড় শুনা যাচ্ছে
.
ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে,তখন বাজে বেলা ১২টা
আহানা একা একা কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে এসে বসে আছে
সময় কাটানোর জন্য নিচ থেকে কঙ্কর নিয়ে পানিতে মেরে যাচ্ছে
অফিস এক ঘন্টা বাদে খুলবে,আহানা তাই এখানে বসে সময় অতিবাহিত করতেসে,ভার্সিটির ক্লাসেই বসে থাকতো কিন্তু ভার্সিটির গেট লক করে ফেলেছে দারোয়ান
দূর থেকে কাকে যেন দেখা যাচ্ছে,পোশাক দেখেই বুঝা গেলো এটা শান্ত,খেলা শেষ করে দৌড়ে আসতেসে,হুহ আজ মিঃ শান্ত অফিসে যেতে লেট করে ফেলবে,এখন বাজে ১২টা,অফিস শুরু ১টা থেকে,কাদায় মাখামাখি হয়ে গেছে পুরা,হিহি,খুব বকা খাওয়াবো আজ রাফি স্যারকে দিয়ে
শান্ত কাছে এসে দেখলো আহানা বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে,দাঁত কেলিয়েও হাসতেসে মাঝে মাঝে
.
কি এমন হেসে চেয়ে আছো কেন?অন্য মেয়েদের মত তুমিও ক্রাশ খেলে নাকি?
.
আমার আর কাজ নেই,এমন কাদায় মাখানো ভূতকে দেখে ক্রাশ খাবো!
.
বডি দেখসো??নাকি না দেখেই কথাটা বললে
.
ওমা তাই,আমার তো আপনার বডি নজরেই পড়ে নাই,কিছু কিছু ছেলের বডি চোখ বড় করে খুঁজে দেখতে হয় আপনার ও তেমন
.
মিথ্যা কথা বলো কেন?মেয়েরা আগে আমার বডির দিকে তাকিয়েছে আর তুমি বলো তুমি মাত্র দেখলে?
.
তোহহহ?
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে ঝুঁকে আহানার দিকে এগিয়ে গেলো
আহানা গাছের সাথে লেগে ভয়ে চোখ বন্ধ করে বললো এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি,সরুন বলতেসি,আপনার সারা গায়ে কাদা লেগে আছে,আমার গায়ে লেগে যাবে
.
শান্ত মুচকি হেসে আহানার আরও কাছে এসে ওর গালে নিজের গাল থেকে কাদা লাগিয়ে দিলো
আহানা চোখ শক্ত করে বন্ধ করে ফেলেছে
.
কি বলছিলে?আমাকে কাদামাখা ভূত লাগে?তোমাকেও এমন ভূত বানাবো এখন
.
শান্ত আহানার হাত টেনে ধরে নিজের বুকের উপর রেখে ঘষে নিলো
আহানা নড়াচড়া করতেও পারছে না শান্ত ওকে গোল করে আটকে রেখেছে
কাদা লাগানো শেষে উঠে গেলো শান্ত
.
বলো আমাকে ভূত লাগছে?নাকি তোমাকে ভূত লাগছে?
.
আহানা শান্তকে বকতে বকতে লেকের পাশে গিয়ে পানি নিয়ে মুখ ধোয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো,হঠাৎ দুম করে শব্দ হলো,শান্ত পানিতে ঝাঁপ দিসে গোসল করার জন্য
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহানা ব্যাগ থেকে তোয়ালেটা দাও তো
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে শান্তর ব্যাগ থেকে তোয়ালে নিয়ে গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
না দিলে কি করবেন মিঃ অশান্ত?
.
আহানা মজা করিও না,তোয়ালে দাও আমি মাথা মুছবো,আমি কিন্তু লেক থেকে উঠলে তোমার খবর আছে
.
আহানা কথাটা না শুনার ভান করে হেঁটে চললো তোয়ালে হাতে নিয়ে
শান্ত রেগে পানি থেকে উঠে আসলো,হাত দিয়ে চুলের পানি ঝাড়তে ঝাড়তে এগিয়ে আসতেসে সে
আহানা হেলেদুলে হেঁটে যাচ্ছে,হঠাৎ কারোর জোরে হেঁটে আসার শব্দ পেয়ে পিছনে তাকালো সে,শান্তকে দেখে কলিজা বের হওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেলো তার,দৌড়ে পালাতে যেতেই শান্ত এগিয়ে এসে আহানার চুলের মুঠে ধরে টান দিলো
.
আহহ!
সরি সরি নিন আপনার তোয়ালে
.
তখন দাও নাই কেন,বেয়াদব মাইয়া!
.
শান্ত আহানার থেকে ছোঁ মেরে তোয়ালেটা নিয়ে নিলো,আহানা ভেগে যেতেই শান্ত ওকে ধরে এক টান দিয়ে গাছের সাথে লাগিয়ে ধরলো
.
সরি আর এমন মজা করবো না,সত্যি
.
শান্ত হেসে দিয়ে মাথা আহানার মুখের কাছে নিয়ে ঝাড়লো কতক্ষণ,আহানা চোখ বন্ধ করে আরেকদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে
.
শান্ত যখন দেখলো চুল থেকে আর পানি পড়ছে না চুল ঝাড়া অফ করে দিলো সে
আহানা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে নড়তে যেতেই শান্ত যা করলো তার জন্য সে একদমই তৈরি ছিল না
শান্ত ওর মাথা আহানার গলায় নিয়ে ঘষেছে
আহানার পুরো শরীর শিউরে উঠলো তখন,চোখ বন্ধ করে শান্তর হাত চেপে ধরলো সে,তারপর হুস আসতেই শান্তকে সরিয়ে ফেলে সোজা চলে গেলো ওখান থেকে
শান্ত কিছুক্ষন আগে কি করলো সেটা ভেবে সে নিজেই বিস্মিত হয়ে গেছে
এমনটা কেন করলাম আমি!
.
আহানা অফিসে এসে ধুপ করে চেয়ারে বসে পড়লো,গা এখনও কেঁপে যাচ্ছে.শান্ত হঠাৎ করে এমন কেন করলো সেটাই বুঝতেছি না
শান্ত ১০মিনিটেই অফিসে এসে পৌঁছে গেলো,সিটে বসে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে সে,লেট যাতে না হয় তাই তাড়াতাড়ি এসে পড়েছে
.
ওহ মাই গড শান্ত,তুমি তো আমাকে পাগল করে দিবে এমন একটা লুক দিয়ে
.
আহানা কেমন করে যেন বেবির দিকে চেয়ে আছে
শান্ত বুঝতে পেরে বেবির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো,বেবি শান্তর টাই টেনে কাছে এগিয়ে এসে বাকি শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে কথা বলে যাচ্ছে
.
চুল কম মুছতে তাহলে এখন সেই পানি পড়া আমি দেখতে পারতাম,কত যে ভাল্লাগতো
.
বেবির কথা শুনে শান্ত মুচকি হেসে আহানার দিকে তাকালো
.
সরি বেবি,কি করবো চুল যে আরেক জায়গায় ঝেড়ে এসেছি
.
কি হলো আহানা?তুমি এমন করে চেয়ে আছো কেন?তোমার কি আমাদের দুজনকে ভালো লাগে না?
.
আপু তোমাকে আমার খুব ভাল্লাগে,তবে ঐ অশান্তকে ভালো লাগে না
.
অশান্ত??কে?
.
তোমার পাশের এই যে একটা লম্বা খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে তার নাম অশান্ত
.
শান্ত রাগে ফুলতে ফুলতে বেবির হাত ধরে বাইরে চলে গেলো
.
যাক বাচঁলাম,দুটো চোখের সামনে থাকলে মেজাজ খারাপ থাকে আমার
.
কি হলো শান্ত,রাগে একরম ফুসতেসো কেন,আমি কি কিছু করেছি?
.
নাহ,কিছু করোনি(আহানা করেছে সব)
.
আহানা ফাইল রাখতেসে ড্রয়ারে,রেখে পিছন ফিরতেই এক ধাক্কা খেলো শান্তর সাথে
শান্ত পকেটে হাত ঢুকিয়ে সেন্টার ফ্রেশ খাচ্ছে,আহানাকে দেখে ফু দিলো ওর মুখে
আহানা ওয়াক ওয়াক করতে করতে চলে গেলো
বেয়াদব একটা,এই ধরনের চুইংগাম আমার একদম ভালো লাগে না,বমি আসে,ঔষুধের মত মনে হয়,গন্ধ তো জঘন্য
অসভ্য কোথাকার!
.
Attention everyone!
এদিকে আসো সবাই
.
আহানা সেদিকে গেলো,শান্ত ও এসে পড়লো,বাকি কর্মচারীরাও তাকিয়ে আছে রাফির দিকে
.
তো শুনো সবাই,পরের সপ্তাহে তোমাদের সবাইকে কুমিল্লা ট্যুরে যেতে হবে
.
সবাই খুশিতে ইয়াহু বলে উঠলো
.
থামো থামো,এমনি এমনি যাবা না তোমরা,কুমিল্লায় একটা বিল্ডিং বানানো হচ্ছে যেটার নকশার কপি আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে
জিসান স্যার ঐ নকশা দেখে অনেক খুশি হয়েছে উনি তার ক্লায়েন্টকে উক্ত নকশা অনুযায়ী বিল্ডিং বানানোর ডিল করবে
বাট কথা হলো গিয়ে ছবির দ্বারা পুরো বিল্ডিং কেমন তা বোঝা যায় না,তোমরা সবাই বিল্ডিংয়ের কোণায় কোণায় লক্ষ করে উনাদের পাঠানো নকশার যে ত্রুটি রয়েছে আই মিন নকশাতে যা ফুটে উঠেনি তোমরা সেটা ফুটিয়ে এনে আমাদের হাতে দিবে
বিল্ডিংয়ের মালিকের সাথে আমাদের কথা হয়েছে,তোমরা সবাই একসাথে রওনা হবে,আমাদের অফিসের আলাদা মাইক্রো নিয়ে,আমি যাব তোমাদের সাথে,ওকে?
.
ওকে!!
.
আহানা ভাবনায় পড়ে গেলো, মিষ্টিকে তো তাহলে আবার একদিন পড়াতে পারবে না,ধুর ধুর,ট্যুরের কি প্রয়োজন সেটাই বুঝতেসি না আমি!!
.
ওহ মাই গড আমার তো তাহলে শপিংয়ে যেতে হবে,কুমিল্লায় অনেক কিছু দেখার আছে,আমি সব জায়গায় যাব,নিউ ড্রেস নিতে হবে জলদি,লিপস্টিক ও নিউ কিনব,জোস একটা ফিলিংস!!সেই মজা হবে
.
এই মাইয়া সাজা ছাড়া কিছু জানে না,পুরা এলিনা টাইপ!
.
ব্রেক টাইমে সবাই ক্যানটিনে চলে গেছে আহানা গালে হাত দিয়ে বসে আছে,আজ কোনো কাজ নাই তার
ফাইল সব দেখা শেষ
শান্ত বেবির ভয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে হাঁটাহাঁটি করতেসে
.
আহানা!
.
হুম বলো আপু
.
তুমি একটু শান্তকে বলবে এদিকে আসার জন্য,আমি ডাকছি ও আসতেসে না,তুমি বললে আসবে,প্লিস প্লিস
.
না আমি বলতে পারবো না,আর উনি কখনও আমার কথা শুনেন না,৩০মিনিট পরেই তো আবার সবাই কাজে ফিরে আসবে তখন না হয় কথা বলিও
.
আরে তোমরা তো খালি ঝগড়া করো,তো এখনও ঝগড়া শুরু করে দাও তাহলে ও নিচ থেকে চলে আসবে,প্লিস ওকে এখানে নিয়ে আসো,কাজের সময় তো আর কথা বলতে পারবো না
.
আচ্ছা ফাইন
.
আহানা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখলো শান্ত অফিসের গেটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে
.
এই যে মিঃ অশান্ত!
.
শান্ত চমকে উপরে তাকালো
.
মিঃ অশান্ত আপনি জানেন আপনাকে বাঁদরের মত দেখতে??
.
আহানা?তোমার মাথা ঠিক আছে?
.
না বাঁদর না গাধা!!
.
আহানা!!মেজাজ গরম করবা না একদম,মাইর খাবা
.
আচ্ছা!!বাঁদর গাধা দুটোই আপনি
.
শান্ত সিগারেট টা নিয়ে হনহনিয়ে আসতেসে
.
এই বেবি আপু আসতেসে আসতেসে
.
দাঁড়াও!আমার একটা কল আসছে আমি কথা বলে আসি তুমি ততক্ষণ ওকে একটু সামলাও,আর হ্যাঁ বলিও আমার ওর সাথে important কথা আছে
.
আরে আরে,আমাকে বাঘের মুখে রেখে চলে গেলো!ধুর!
.
আহানা পিছন ফিরতেই দেখলো শান্ত আসতেসে ক্ষিপ্র গতিতে
.
আহানা ভয়ে পিছিয়ে গেলো
শান্ত এগিয়ে এসে ওর চুলের মুঠি ধরে টেনে ধরলো ওকে
.
সরি আমি আসলে আপনাকে বেবির..
.
চুপ,আমার রাগ উঠাতে তোমার ভালো লাগে তাই না?
.
না লাগে না,আমি তো বেবি আপুর কথায়.,,
.
কোথায় বেবি,মিথ্যা বলার জায়গা পাও না?
.
শান্ত আহানাকে টেনে ধরলো আরও,কি বলতেছিলে?আমি গাধা?বাঁদর??
.
না আপনি কোনোটাই না,আপনি খুব ভালো
.
শান্ত আহানার হাত চেপে বললো আর কোনোদিন বিনাকারণে আমার রাগ উঠাবা না বুঝছো??
.
হাত ছাড়ুন
.
শান্তর এক হাতে ছিল সিগারেট,সেই হাত দিয়ে আহানার আরেক হাত টেনে ধরলো সে
.
আহানার হাতে সিগারেটের ছ্যাঁকা লাগতেই সে কেঁপে উঠলো
শব্দ করলো না,শান্তর মুখ থেকে চোখ সরিয়ে হাতের দিকে চেয়ে রইলো
কিসের জন্য ব্যাথা পেলো সেটাই ভেবে যাচ্ছে সে
শান্তর হাতেও এবার সিগারেটের ছ্যাঁকা লাগলো
সাথে সাথে সে হাত সরিয়ে দেখলো আহানার হাতে দাগ হয়ে গেছে,নিজেরও যে পুড়েছে সেদিকে খেয়াল নেই তার,তাড়াতাড়ি আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিলো ওকে
দৌড়ে রাফির কাছে গিয়ে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ একটা নিয়ে আবার ফেরত আসলো,আহানা থ হয়ে বসে আছে
চিৎকার করবে নাকি রাগে শান্তকে কয়েকটা ঘুষি মেরে দিবে সেটাই ভাবতেসে সে,কিন্তু শান্তর এমন কেয়ার দেখে সে কি করবে সেটা ভাবার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে
শান্তর চোখেমুখে ভয় আর অপরাধ বোধ কাজ করছে,আহানাকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার ইনটেনশান তার ছিল না,তার হাতে যে জ্বলন্ত সিগারেট ছিল তা মনেই ছিল না তার
আহানা চুপ করে শান্তর দিকে চেয়ে বসে আছে
শান্ত হাঁটু গেড়ে বসে আহানার হাত পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে আর কোথাও পুড়ছে কিনা সেটাই দেখতেসে সে
.
তুমি ব্যাথা পেলে বললে না কেন?
তখন বললে আমি হাত ছেড়ে দিতাম,আমি তো টেরই পাইনি পরে আমার হাতে ছ্যাঁকা লাগতেই টের পেলাম
আহানা চোখ বড় করে শান্তর হাতের দিকে তাকালো
শান্ত হেসে বললো তোমার ক্ষতের চেয়েও সামান্য,ছেলেদের এত ব্যান্ডেজ লাগে না
শান্ত উঠে দাঁড়াতেই বেবি এসে গেলো,শান্তর হাত ধরে বাইরে নিয়ে গেলো,আহানা পিছন ফিরে ওদের চলে যাওয়া দেখছে
.
এই মানুষটা আমার কেয়ার করতে পিছুপা হয়না আবার ঝগড়া করতেও পিছুপা হয়না,কেমন মানুষ মাঝে মাঝে বুঝতে পারি না আমি
.
অফিসের কাজ শেষ,সবাই এক এক করে চলে যাচ্ছে,আহানা চোরের মত বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছে,শান্তকে কোথাও দেখলো না
হ্যাঁ দেখেছিল ৪৫মিনিট আগে,রাফি স্যারকে বলে বেবির সাথে কোথায় যেন গেছিলো
আহানা আর উপায় না পেয়ে অন্ধকারেই হাঁটা ধরেছে
অফিস এমন একটা জায়গায় অবস্থিত যেখানে গাড়ী কম,মানুষ কম,নির্জন একটা এরিয়া
আহানা দোয়াদরুদ পড়তে পড়তে হেঁটে যাচ্ছে,পিছন থেকে আলো জ্বালানো কি যেন আসতেসে,বাইকের শব্দ
আহানা হেসে দিয়ে পিছনে তাকালো,নাহ বাইকে তো অন্য কেউ,শান্ত না
আবারও মুখ গোমড়া করে হেঁটে চললো সে,একটা টংয়ে ৭/৮টা ছেলে বসে আড্ডা দিচ্ছে,আহানা ভয় ভয় চোখে সেদিকে তাকিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে চলে যাচ্ছে
তার চেয়ে জোর গতিতে একটা বাইক এসে পাশে থামলো
আহানা ভাবলো অন্য কেউ হবে সে হেঁটে চলে যাচ্ছে ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে
কেউ যদি উঠে আসে ওকে ধরতে তাহলে এক দৌড় দিবে সে এই ভেবে তাদের দিকে তাকাতে তাকাতে চলে যাচ্ছে
.
এভাবে ছেলেদের দিকে চেয়ে থাকলো ওরা নির্ঘাত তোমাকে ধরতে আসবে
.
কথাটা শুনে আহানা থেমে গেলো,পিছন ফিরে দেখলো শান্ত বাইক থেকে নেমে টংয়ের দিকে যাচ্ছে
.
মুখে এক রাশি হাসি ফুটে উঠলো আহানার,মনে হলো সুরক্ষা পেয়েছে সে,আর কেউ তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না,হেসে দিয়ে এসে নিজে নিজে শান্তর বাইকে উঠে বসে পড়লো
.
শান্ত চায়ের কথা বলে আহানার দিকে তাকিয়ে হাসলো
.
একটা ছেলে বললো কি ভাই??গফকে একা রেখে কই গেছিলেন?
.
শান্ত সিগারেট একটা ধরাতে ধরাতে আহানার দিকে চেয়ে বললো গফের দোষ,আমার জন্য অপেক্ষা না করেই হাঁটা শুরু করে দিসিলো
ঢাকা শহরে রাতের বেলায় ২মিনিটেই যে কেলেঙ্কারি হয়ে যেতে পারে তা সে জানে না,হয়ত জানে রাগ করেই অপেক্ষা না করেই হাঁটা শুরু করে দিয়েছিলো
.
তাহলে বড় কোনো রেস্টুরেন্টে নিয়ে যান
.
শান্ত সিগারেটে শেষ টান দিয়ে ছেলেটার দিকে চেয়ে হাসলো,তারপর চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চলে যেতে যেতে বললো ওর যে টংয়েরই চা পছন্দ!!
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৩০

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৩০
#Writer_Afnan_Lara
?
আবার না??উফ!
শুনো!!তোমাকে আমার আম্মু কোলে নিসিলো ওকে?সো সেই খাতিরে আমার সাথে একটু ঠিক হয়ে চলো
.
ওহ হ্যাঁ আরিফ আঙ্কেল বলেছিল আপনি নাকি আমাকে একবার কচু পাতা খাইয়েছিলেন,তাও কাঁচা,আপনার এত বড় সাহস!!আমার তখন বুঝাশুনার জ্ঞান ও হয়নি আর আপনি কিনা আমাকে কাঁচা কচু পাতা খাইয়ে দিছিলেন
.
ওয়েট ওয়েট!কচু পাতা,কাঁচা?
ওহহ আচ্ছা আচ্ছা এবার মনে পড়লো,তাহলে তুমি আমার সেই পাতানো বউ??যাকে আমি কচুপাতা রেঁধে খাওয়াই ছিলাম
.
রেঁধে না,কাঁচা
এক মিনিট বউ মানে?আমার তো কিছু মনে আসতেসে না
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে খাটের উপর গিয়ে বসলো
.
তাহলে তো তোমার সাথে আমার আগেই দেখা হয়েছিল even আমি তোমার সাথে যা যা করসি সব আমার মনে আছে
.
যা যা মানে?কি বলতে চান আপনি
.
থাক আহানা শুনলে তোমার খারাপ লাগবে,নাই বলি
.
ককককককি আপনি কি বলতে চান এসব!
.
হেহে!তোমার ৩বছর হওয়া পর্যন্ত আমরা মোহনগঞ্জেই ছিলাম
মা তোমাকে দেখতে আসত রোজ,সাথে আমিও আসতাম,তুমি তো আমার কোল থেকে নামতেই না,আমার একদম মনে ছিল না সেই পাতানো বোকা বউ আমার এখন কিনা ধানি লঙ্কা হয়ে গেছে
.
এই এসব কি বলতেসেন আপনি,আন্দাজে মিথ্যা হাবিজাবি বললেই আমি বিশ্বাস করে নিব?
.
তুমি এখন একটা কথা শুনলে লজ্জায় আর মুখ দেখাতে পারবে না আমাকে
.
কককককি?!!!
.
আগে এটা বলো তোমার কি কোনো বিএফ আছে?নাকি ছিল?
.
নেই?আমার মতো অনাথ মেয়েকে কে ভালোবাসবে?
.
তাহলে শুনো,তুমি আর আমি একদিন চড়ুই ভাতি খেলতেসিলাম,আমি চকলেট খাচ্ছিলাম তো তুমি ড্যাবড্যাব করে চেয়েছিলে বলে আমি তখন তোমাকেও একটুখানি দিসিলাম চকলেট
তুমি সারা গালে মেখেছিলে,আমার চকলেট শেষ হয়ে গেছিলো,আর তোমার দিকে চেয়ে দেখলাম তুমি একটুও খাওনি সব মুখে মাখাইসো,আমি তখন আমার জিভ দিয়ে….
.
এই!!!!আর একটা কথাও না,আপনি এত মিথ্যা কি করে বলতে পারেন,ছিঃ ছিঃ
.
শুনো না আমি তো তোমার গাল চুষতে গেসিলাম বাট তুমি তো তুমিই,তুমি ফিক করে হেসে দিয়ে গাল হেলিয়ে দুলিয়ে ফেললে আর আমার জিভ গিয়ে তোমার ঠোঁটে….
.
স্টপ ইট!!আপনার লজ্জা করে না এসব বলতে!!
.
আহানা এগিয়ে এসে শান্তর জ্যাকেট ধরে ঝাঁকিয়ে বললো বাচ্চা একটা মেয়ের সাথে এসব করলেন আপনি?
.
জিভ লেগেছিল আর কিছু না!
.
জিভ লাগাতে গেছেন কেন আপনি, অসভ্য কোথাকার!
.
আহানা ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে উঠান দিকে চলে গেলো
শান্ত অবাক চোখে আহানার লজ্জা পাওয়া দেখছে,যা যা বললো সব সত্যি
অনেকগুলো বছর কেটে যাওয়ায় সব ভুলে গিয়েছিল সে,আহানা একদম ছোট থাকতে শান্ত আর তার পুরো পরিবার সিলেট চলে গিয়েছিল,পরে অনেকবছর পর ফেরত এসেছিল তারা তাও তখন মায়ের অসুখ নিয়েই প্রতিটা দিন কাটত,আহানাকে মনে থাকার কথা না ,মায়ের মৃত্যুর পর এসব একদমই মাথায় ছিল না তার,সেই ছোট্ট বউটা আমার কোথায় হারিয়ে গেলো আমি খোঁজই নিলাম না,এভাবে ফেরত আসবে ভাবতেই পারিনি
আহানা চোখ বন্ধ করে উঠানে দাঁড়িয়ে আছে,মনে করার চেষ্টা করতেসে
কিন্তু শান্ত নামক ছেলেটিকে এর আগে সে দেখেছে কিনা তার মনে নেই,থাকবে কি করে তখন যে সে ছোট্ট বাবু ছিল
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
শান্ত হেসে দিয়ে নোটস নিতে নিতে আহানার দিকে চেয়ে বললো যাই আমার পাতানো বউ,টাটা
.
আহানা রেগে গিয়ে শান্তকে ধাক্কা মেরে বাসা থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে ফেললো
গা কেঁপে যাচ্ছে,এ কেমন অনুভূতি,সত্যি কি তাই ঘটেছিল,না এটা হতে পারে না
কিস তো করে নাই,হ্যাঁ করে নাই তাহলে ঠিক আছে নাকি করেছে,নাহ না এটা হতে পারে না,একবার জিজ্ঞেস করবো?না থাক লজ্জা করে,নাহ জিজ্ঞেস করার দরকার নাই,হুমমম
পরেরদিন সকাল সকাল আহানা মিষ্টিকে পড়াতে বের হলো,কাল সারারাত ঘুমাতে পারেনি সে,মাথায় শুধু এটা ঘুরেছে শান্ত আর কিছু করেনি তো,একটা ছবি দেখেছিল মীম আপুর ফোনে,সেখানে নায়িকার ছোটবেলার খেলার সাথী তার সাথে উল্টা পাল্টা কাজ করেছিল,না না এটা হতে পারে না

টিং টং
.
নওশাদ!!
.
টিং টং
.
উফ রিয়াজ??তোরা মরে গেছিস?তখন থেকে কলিংবেল বাজতেছে,,দরজা খুলতে পারোস না?আজব!
শান্ত উদম গায়ে ছিল,খাট থেকে থেকে জামা নিয়ে পরতে পরতে দরজার দিকে গেলো সে,দরজা খুলতেই ঝাটকা লাগার মত অবস্থা,আহানা দাঁড়িয়ে আছে সামনে
.
আহানা?আজ কি সূর্য উঠেছে?উঠলেও কোন দিক দিয়ে উঠেছে,সয়ং আহানা ইয়াসমিন আমার বাসার দরজায় নক করলো?
তা কি মনে করে?
.
আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে
.
হ্যাঁ বলো
.
আহানা পাশে তাকিয়ে দেখলো অন্য ফ্ল্যাটের বুয়া করিডোর পরিষ্কার করতেছে
এখানে না বলি?
.
আচ্ছা ভিতরে আসো
.
আহানা সাথে সাথে ভিতরে চলে গেলো
.
শান্ত পানির বোতল নিয়ে নিজের রুমের দিকে গেলো,আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে সেও গেলো
শান্ত ফ্লোর থেকে জামাকাপড় উঠাচ্ছে
আহানা ফ্লোরে মেয়েদের একটা জামা দেখতে পেলো,চোখ ইয়া বড় করে সেটাই দেখে যাচ্ছে সে,ছোট একটা পার্টি ড্রেস,আহানার গা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে,এই লোকটা এত খারাপ!!
.
এই যে মিস আহানা এত ড্যাবড্যাব করে দেখার কিছু নেই,কাল আমি এখানে ছিলাম না,তোমার সো কলড বেস্টু রুপা আর নওশাদ মেবি আমার রুমে রুমডেট করসে
.
কিহহহহ!
.
চুপ,আস্তে,এত জোরে চেঁচাও কেন বলোতো,নওশাদ বেচারা কিছুক্ষন আগে ঘুমিয়েছে
.
আহানা ঢোক গিলে এদিক ওদিক দেখছে
.
রুপা কে খোঁজো?তাকে তো নওশাদ বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসেছে ভোর ৪টায়
.
ওর মা বাবা!??
.
আরে রুপার মা বাবা রুপার দাদার বাড়ি গেছে এই সুযোগটাই রুপা নিসে বুঝছো,কি বলবে বলো,আমার ঘুম পাচ্ছে,কাল আমি আমার এক ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টিতে গেছিলাম,তাই বাসায় আসতে আসতে লেট হয়ে গেছিলো
.
আমি আসলে বলতে এসেছিলাম আপনি কি আমাকে
.
কি?
.
আমাকে কককককিসস করেছিলেন?
.
শান্ত হেসে দিয়ে পানি খেতে খেতে বেডের উপর গিয়ে বসলো
তারপর আহানার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললো আরে আমি তখন জানতাম না এটাকে কিস বলে,আমি জাস্ট আমার চকলেট চেটে খেয়েছি,ব্যাস!
.
আহানা কাঁপা কাঁপা আওয়াজে বললো আর কিছু করেননি তো??
.
শান্ত হাসতেসে,হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে,তারপর পানির বোতল টেবিলে রেখে আহানার দিকে তাকালো
আহানার পিছনে ড্রেসিং টেবিল,সেটার আয়নায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আহানার পিঠে একটা কুচকুচে কালো তিল ঠিক জামার গলা যেখান দিয়ে শুরু সেখানে,আহানা নড়াচড়া করতেসে বলে সেটা একবার দেখা যাচ্ছে আরেকবার দেখা যাচ্ছে না
.
তোমার পিঠের উপরে জামার গলা বরাবর একটা তিল আছে রাইট?
.
কথাটা শুনে আহানা সিউর যে শান্ত সেই ছবির ছেলেটার মত কাজ করেছে
আহানার চোখ দিয়ে পানি টপটপ করে পড়তেছে
সে কাঁদতে কাঁদতে দেয়ালের সাথে লেগে গেলো
.
আপনি আমার সাথে এমনটা কেন করলেন,কি দোষ করেছিলাম
.
শান্ত একদমই প্রস্তুত ছিলো না এটার জন্যে,আহানা এভাবে কাঁদতেসে কেন,কথাগুলো সিরিয়াস নিয়ে নিলো নাকি!
শান্ত আহানার দিকে এগিয়ে গেলো
.
খবরদার আমার কাছে আসবেন না আপনি,আপনি খুব খারাপ!
.
আহানা থামো,আমি মজা করছিলাম,আমি তোমার সাথে কিছু করিনি
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার হাত ধরলো
আমি মজা করসি,এটাকে সিরিয়াসলি নিও না প্লিস
.
আপনি তাহলে জানেন কি করে আমার পিঠে কোন জায়গায় তিল আছে
.
আমি মাত্র আয়নায় দেখলাম তাই বলসি,জাস্ট ফান আর কিছু না,আহানা কান্না থামাও
শান্ত হাত দিয়ে আহানার চোখ মুছে দিলো
আহানা এবার শান্তকে বিশ্বাস করলো,কান্না থামালো
শান্ত আহানার হাত ধরে খাটে বসিয়ে পানি এক গ্লাস এনে ওকে দিলো
আহানা ওড়না দিয়ে মুখ মুছে পানি খাচ্ছে
তারপর নিজেকে ঠিক করে উঠে দাঁড়াতেই শান্ত সিগারেট মুখে দিতে দিতে বললো আহানা সেটাকে কিস ও বলতে পারো!
আহানা চোখ বড় করে শান্তর দিকে তাকালো,শান্ত হাসতে হাসতে বারান্দার দিকে চলে গেছে
.
বেয়াদব একটা!!
.
বাসায় এসে আহানা গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো হুদাই কাল সারারাত এত চিন্তা করসি,আসলেই তো কিছু হয়নি,শুধু কিস!!বেয়াদব কোথাকার!!আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম
.
আহানা ভাত রেঁধে খেয়ে রেডি হয়ে বের হলো,আজ ভার্সিটি থেকে অফিসের দিকে যাবে
ভার্সিটিতে এসে ক্লাসরুমে ঢুকে বেঞ্চে বসতেই দেখলো রুপা মুখ লুকিয়ে কাঁদছে
.
কিরে রুপা কি হয়েছে তোর?কিরে?
.
আমি না একটা ভুল করে ফেলেছি
.
কি?
.
আমি নওশাদের সাথে রুমডেট করসি
.
জানি
.
কিহ!!কেমনে!
.
শান্ত ভাইয়া বলসে আমাকে
.
এ্যা?আস্তে আস্তে সবাই জেনে যাবে
.
নাহ শুধু আমি আর উনি জানি আর কেউ জানে না জানবেও না,রুমডেট তো নিজের ইচ্ছায় করেছিলি তাহলে এখন কাঁদতেছিস কেন?
.
না নিজের ইচ্ছায় না,আমি তো জাস্ট নওশাদের সাথে মিট করতে শান্ত ভাইয়ার বাসায় গিয়েছিলাম,সেখানে আমরা দুজনেই মদ খেয়ে উন্মাদ হয়ে গেছিলাম কি করসি তাই মনে নাই,পরে হুস আসতে সব মনে পড়লো,আমি এখন কি করবো রে আহানা,যদি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাই??
.
আরে চিন্তা করিস না,নওশাদ ভাইয়া ভালো,তোকে চিট করবে না
.
সেটা জানি,কিন্তু ও তো কোনো চাকরি ও করে না,কি হবে কোথায় যাব!
.
এতসব ভাবিস না তো,কিছু হবে না(আমি মরি আমার জ্বালায়,নতুন আরেকটা ঝামেলা)
.
ক্লাস ছুটি হতেই আহানা অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা হলো,শান্ত বাইক নিয়ে আহানার সামনে এসে ব্রেক করলো
.
কি মিস আহানা?? যাবেন নাকি একসাথে?
.
নো থ্যাংকস
.
ফাইন!
শান্ত অফিসের দিকে চলে গেলো,আহানা আস্তে আস্তে আসতেসে অফিসের দিকে
.
হ্যালো everyone,তোমরা মোট ২০জন employee,তাহলে আর একজন মিসিং কেন?
.
স্যার স্যার আসছি!
.
প্রথমদিনেই লেট?নেক্সট যেন এমন না হয়
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে বললো স্যার আমিও একই ভার্সিটি থেকেই এসেছি,ওকে বলসি বাইকে উঠতে ও উঠে নাই,এখন হেঁটে এসে দেরি করলো
.
আহানা?দেরি ইচ্ছে করে করলে এর শাস্তি তোমায় পেতে হবে,হয় রিকসায় নয় শান্তর সাথে আসবে ওকে?
.
ওকে
.
সবাই সবার কেবিন বুঝে নাও,নাম লিখা আছে,ফাইল রাখা আছে,কাজ শুরু করে দাও,কোনো প্রবলেম হলে রাফিকে ডাক দিবে,Alll the best
.
আহানা তার কেবিনে বসে খুব খুশি হলো,কি সুন্দর তার ছোট্ট কেবিন,আহানা মুচকি হেসে পাশে তাকাতেই মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো তার
শান্ত দাঁত কেলিয়ে টাই ঠিক করতেছে
.
আপনি আমার পাশে?
.
হুম তো??তোমার কি,আমি রাফিরে বলসি আমাকে এই কেবিন দিতে,এসির হাওয়া আসে ঠিকমত
.
আহানা ফাইল খুলে দেখতেসে
.
হাই!!হ্যান্ডসাম!!
.
হাই ববি!
.
ববি না বেবি
.
ওহ আচ্ছা,বেবি,কি খবর??
.
আই এম ফাইন মিঃশান্ত!!ইউ লুক সো কিউট!!
.
ওহ থ্যাংক ইউ
.
আহানা বিরক্তি নিয়ে তাকালো সেদিকে,এই মেয়ে এবার শান্তর গলা জড়িয়ে থাকবে অলওয়েজ,এই ছেলেটার মাঝে কি আছে যে সুন্দর সুন্দর মেয়েরা চিপকুর মত লেগে থাকে
.
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে টাই ঢিলা করে কয়েকটা বোতাম খুলে ফেললো শার্টের তারপর বেবির সাথে কথা বলা শুরু করে দিলো
বেবি হেলেদুলে শান্তর চেয়ারে গা এলিয়ে দাঁড়িয়ে শান্তর সাথে কথা বলে যাচ্ছে,আহানা ফাইল একটা কমপ্লিট করে ফেলেছে ততক্ষণে
সেটা নিয়ে উঠে গেলো রাফিকে দিতে
শান্ত আহানার দিকে চেয়ে আছে,বেবি শান্তর মুখে হাত দিয়ে নিজের দিকে ফিরালো
.
ওদিকে কি দেখো শান্ত,আমাকে দেখো না
.
ববি এখন যাও,আমার কাজ আছে
.
ববি না বেবি
.
হুম বেবি
.
বাই!!

ভেরি গুড আহানা,প্রথমদিনেই খুব ভালো কাজ করেছো,আশা করি এমন করেই কাজে মন দিবে
.
রাফি স্যার একট কথা বলার ছিলো
.
হ্যাঁ বলো
.
স্যার আমার কেবিনটা যদি চেঞ্জ করে দিতেন তাহলে খুশি হতাম
.
না সেটা করা যাবে না,তা হলে সবাই বলবে তাদের টাও চেঞ্জ করতে
.
ওহ,ঠিক আছে
আহানা মুখ গোমড়া করে আবার কেবিনে এসে বসলো
.
শান্ত ফাইল রেডি করে সেও দেখাতে চলে গেলো
.
আহানা চুপচাপ আরেকটা ফাইল দেখতেসে
শান্ত ফিরে এসে পাশে বসে ঢুলতেসে আর চুইংগাম খাচ্ছে
.
উফ এরকম কেবিন নাড়তেসেন কেন??আমার ডিস্টার্ব হচ্ছে
.
তাই?তাহলে তো আরও জোরে নাড়াতে হয়
.
আপনার কি সমস্যা!!
.
তুমি
.
মানে
.
কিছু না,নিজের কাজ করো এত ফটরফটর করো কেন
.
আপনি নাড়ানো অফ দিবেন নাকি আমি রাফি স্যারকে ডাক দিব
.
ডাকো না মানা করসি আমি?অফিস থেকে বের হলে কিভাবে ঠিকমত বাসায় ফিরো সেটাও আমি দেখে নিব
.
আহানা ব্রু নাড়িয়ে নিজের কাজে মন দিলো,থ্রেট ছাড়া আর কিছু দিতে পারে না বেয়াদবটা
.
আউচচচ!এটা কি
আহানার গায়ে একটা কাগজের দলা এসে পড়লো,নিচ থেকে তুলে খুলে দেখলো লিপ্সটিক লাগানো চুমু?
আহানা চোখ কপালে তুলে সামনে তাকিয়ে দেখলো বেবি ইশারা করতেসে এটা শান্তকে দিতে
.
উফ কি ঝামেলা,এই নেন ধরেন
.
কি এটা?
.
শান্ত খুলে দেখলো এটা “?”
চোখ বড় করে আহানার দিকে চেয়ে বললো তুমি আমাকে কিস পাঠালে?
.
আজব তো আমি আপনাকে কিস পাঠাতে যাব কেন,এটা আপনার বেবি পাঠিয়েছে,ঐ যে!
আর আমি তো লিপ্সটিক লাগাই না আপনার এটা কেন মনে হলো যে আমি দিসি?আমার আর কাজ নাই?
.
শান্ত বিরক্তি নিয়ে বেবির দিকে তাকালো,বেবি ওর দিকে ফ্লাইং কিস পাঠাচ্ছে,একদিনেই এত বাপরে বাপ!!
.
শান্ত কাগজটা নিচে ফেলে দিয়ে নিজের কাজে মন দিলো
আহানা মিটমিট করে হাসতেসে,যাক আমাকে খুব জ্বালান তাই না,এবার এই বেবি আপনাকে জ্বালাবে,হুহ!
.
বিকাল ৪টায় ব্রেক টাইম,সবাই অফিসের ক্যানটিনে চলে গেছে
আহানা একা বসে ফাইল দেখতেছে,টাকা নেই খাবার ও নেই,আর আমি তো এসময়ে কিছু খাই না,সমস্যা নেই,এই ফাঁকে কাজ করে ফেলি
.
শান্ত মাথা ধরে বসে আছে আর বেবি বকবক করেই যাচ্ছে,এই মেয়েটা এত জোঁক কেন,এর বকবক থেকে তো আহানার বকবক ভালো লাগে,আহানার সাথে ঝগড়া করতে ভালো লাগে
আর এ মেয়েটা কবে আই লাইনার কিনসে কোথা থেকে কিনছে,কোন ব্র্যান্ডের কিনছে সেটা নিয়েই আছে,আল্লাহ বাঁচাও আমাকে!
.
আচ্ছা ববি আমি আসতেসি আমার একটা কাজ করা বাকি
.
ববি না বেবি,কি কাজ শুনি?
.
বেবির কথার উত্তর না দিয়েই শান্ত ক্যানটিন থেকে পালিয়ে আসলো কেবিনের দিকে
শুধু আহানা আছে কেবিনে,বসে বসে কম্পিউটার নিয়ে কিসব করছে আর এদিক ওদিক তাকিয়ে কাকে যেন খুঁজছে
.
কি হলো মিস আহানা?আমাকে খুঁজছেন?
.
না?
.
তাহলে এদিক ওদিক তাকিয়ে কি দেখতেসো আর কম্পিউটার কি করসো,ইয়া আল্লাহ!!কি করসো এটা তুমি??ভাইরাস ধরসে কম্পিউটারে
শান্ত আহানার কাছে এসে কম্পিউটার ঠিক করার চেষ্টা করছে
.
আহানা ভয়ে শেষ,জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে
.
শান্ত হাসতে হাসতে টাইপ করছে,আহানা ম্যাডাম ভাইরাস পেলেন কই?
.
আপনি সরুন বলতেসি
.
ওমা আমি হেল্প করতে আসছি আর তুমি আমাকে সরতে বলছো?
.
আপনি আমার এত কাছে ঝুঁকে কাজ করতেসেন কেন,আমি সরতেসি দাঁড়ান
.
তুমিও না!!
শান্ত চেয়ারে বসে ভাইরাস দূর করার কাজ করে যাচ্ছে
আহানা ভয়ে শেষ,কম্পিউটার চালাতে এতটা দক্ষ না সে
ভুলে কি থেকে কি টিপ দিয়ে দিসে এখন না জানি কি হয়ে যাবে!
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_২৯

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_২৯
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানা বাসায় ফিরে বিছানার চাদর,বালিশের কভার,সব ধুয়ে দিলো,কালকে পরার জামাটাও ধুয়ে দিলো
তারপর ঘর মুছলো,সব শেষ করে গেলো রান্না করতে,আজ শুক্রবার তাই সব কাজ সারতেছে সে
একটু পড়ে,ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে গেলো,আবার দুপুর ২টায় উঠে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো পিউদের বাসার উদ্দেশ্যে,উফ আকাশকে তো আর পড়াতে পারবো না,সবসময় আমার কাজে দখল দিয়ে ১২টা বাজিয়ে দেয়,বেয়াদব একটা
আহানা শান্তকে বকতে বকতে পিউদের বাসার দিকে যাচ্ছে হঠাৎ সামনে শান্ত বাইক এনে থামালো
আহানা ব্রু কুঁচকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শান্ত নোটবুক ২টা ওর হাতে ধরিয়ে দিলো
.
নাও,আজ থেকে তোমার চাকরি শুরু,এই নোটগুলো আরেকটা নোটখাতায় তুলে দিবে,পরের মাসের এই দিনে আমি তোমাকে ৩হাজার টাকা দিবো,বাই
হেলমেট পরে শান্ত বাইক নিয়ে চলে গেলো,আহানাকে কিছু বলতেই দিলো না
.
আহানা হা করে চেয়ে আছে,থাক বকতেও পারবো না,এটাও তো কাজ,নোট উঠানো তো আর সহজ কোনো কথা না,উফ কি ঝামেলা
আহানা পিউকে পড়িয়ে বের হয়ে হেঁটে ফিরছে বাসার দিকে
তখন ৪টা ১০কি ১৫বাজে মনে হয়
যে পথ দিয়ে আহানা যাচ্ছে সেখানে ফুচকাআলা,ঝালমুড়ি আলা সব,মানুষ খেয়ে যাচ্ছে,শুক্রবার বলে কথা,ছুটির দিন,এই দিনেই মানুষ ঘুরতে বের হয় বেশি,ঢাকার মানুষ তো আরও আগে বের হয়
কাপল আছে কেউ,কেউবা পরিবার নিয়ে এসেছে,আবার অনেকেই দল বেঁধে এসেছে,সম্ভবত বন্ধুবান্ধব হবে তারা
গান গাইছে,আড্ডা দিচ্ছে হাসিঠাট্টা করছে,বেশ কিউট একটা পরিবেশ
.
আহানা সবাইকে দেখতে দেখতে হেঁটে যাচ্ছে,পাশে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে থেমে গেলো সে,পাশে ফিরতেই দেখলো শান্ত হাতে ঝালমুড়ি নিয়ে খাচ্ছে,এমন ভাবে খাচ্ছে যেন পাশে আহানা তার জানা নেই
আহানা ব্রু কুঁচকে হাঁটা ধরলো,ওমা শান্ত ও পাশে পাশে আসতেসে
.
সূর্য তুই ক্যাফে আয় আমি সেখানে আসতেসি,তমালকেও নিয়ে আসিস,নওশাদ আসতে পারবে না ও ঘুমাচ্ছে
.
আহানা হাঁটার গতি বাড়িয়ে চলে যাচ্ছে
.
এক মিনিট দাঁড়াও আহানা
.
কি?
.
শান্ত ফোনে কথা বলতে বলতে ওর হাতের বারতি ঝালমুড়িটা আহানার হাতে দিতে দিতে বললো রাখো আমি কথা বলে আসতেসি
.
আমি কেন রাখব আজব!!আরে আরে কই যান আপনি?
.
শান্ত পূর্ব দিকে চলে গেলো ফোনে কথা বলতে বলতে
আহানা ঝালমুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,৫মিনিট হইসে এখনও আসতেসে না
আহানা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে হাতে ঝালমুড়ি নিয়ে,হঠাৎ সামনে একটা বাইক এসে থামলো
শান্ত হেলমেটের গ্লাস উঠিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো আমার লেট হচ্ছে বাই
বাইক উধাও!!সাথে শান্ত ও
.
ওমা গেলো কই,ঝালমুড়ি কি করবো আমি,আজব লোক!!
.
আহানা ঝালমুড়ির দিকে চেয়ে থেকে কোনো উপায় না পেয়ে খেতে খেতে হাঁটা শুরু করলো,এই লোকটা এমন কেন,সকালে এতগুলো কথা শুনাইলাম তাও আবার সেই আমাকে জ্বালাতে চলে আসলো
আহানা বাসায় ফিরে উঠান থেকে সব জামাকাপড় নিয়ে আসলো রুমে
আরে কাল তো ২৩ তারিখ,চাকরিটার interview দিতে যাবো,কে জানে কি হবে,এইচএসসির সার্টিফিকেট দিয়ে কি আর ভালো চাকরি পাওয়া যায়!
শুক্রবার কেটে গেলো,পরেরদিন শনিবার,সকাল সকাল সব কাজ সেরে আহানা মিষ্টিদের বাসায় গেলো,আজ শান্ত কোথাও নেই
হুহ একদম ঠিক হয়েছে উনার থেকে যত দূরে থাকবো ততই ভালো
মিষ্টিকে পড়িয়ে বাসা থেকে চলে যাওয়ার সময় আহানা বার বার পিছন ফিরে তাকিয়েছে,এতদিন ধরে জ্বালাতো
আর এখন জ্বালাচ্ছে না বলে কেমন যেন লাগছে তার কাছে
আহানা বাসায় ফিরে পানি খেয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো interview দিতে
সকাল ৮টা ৩০মিনিটে interview আজ
ব্যাপারটা বুঝলাম না ঠিক,এত সকাল সকাল কেন সেটাই মাথায় ঢুকছে না
.
এই যে ভাইয়া এটা কি এস.পি কোম্পানি?
.
জি,আপনি কি ইন্টার্ভিউ দিতে এসেছেন?
.
হুম
.
তাহলে ৩য় তলায় যান
.
ওকে ধন্যবাদ
.
আহানা ৩য় তলায় আসলো
আল্লাহ গো এত ভিড়,আমি তো টিকবো না মনে হয়,ছেলে যতগুলো মেয়ে ততগুলো,আর আমি ভাবসিলাম অল্প কয়েকটা হবে,এদের সাথে টিকা অসম্ভব
.
একজন লোক আসলেন,এসে সবার মাঝখানে দাঁড়ালেন,দেখতে ভদ্র টাইপ তবে এই অফিসের বস মনে হয় না,নরমাল মনে হয়,নরমাল শার্ট পরা
উনি বললেন সার্টিফিকেট অনুযায়ী সবাই আলাদা হয়ে যেতে
আমি এইচএসসির দলে দাঁড়ালাম,কয়েকটা মেয়ে এসেছে
এত সেজেছে মাগো মা,সাজারই কথা,কর্মচারী তো আর আমার মত ক্ষেতরে নিবে না,আমি তো চেয়েও সাজতে পারিনি,কিছু নাই সাজার
.
তাও ওড়না জামা টেনেটুনে ঠিক করে নিলো আহানা
আয়রন করার উপায় নাই,বাসায় আয়রন করার মেশিন নেই,কাল জামাকাপড় ধুয়ে শুকিয়ে ভাঁজ করে বালিশের তলায় রেখে দিয়েছিলাম তাই দেখে মনে হচ্ছে আয়রন করা,হিহি গরীবের আয়রন মেশিন হলো বালিশ
.
শুনেন সবাই ২জন ২জন করে যাবেন,ভাগ্য হলে ২জনই সিলেক্ট হবেন,ভাগ্য ভালো না হলে ১জন হবেন,আবার দুজনের একজন ও না হতে পারেন
স্যার খুব রাগী,ঠিক করে কথা বলবেন,আমি লিস্ট দেখে ডাকবো এক এক করে যাবেন আপনারা,ঠিক আছে??সবার আগে রুশা রহমান আর টুম্পা চৌধুরী আসেন
.
আহানা বসে বসে আল্লাহকে ডাকতেসে,১০হাজার বেতন হলে বেশ ভালো যাবে তার,আল্লাহ যেন টিকে যাই আমি
এর আগেও আহানা ইন্টারভিউ দিয়েছিল অনেক চাকরির আশায় কিন্তু একটাতেও সফল হয়নি,তাই এখন ভয় করছে,ক্লাস ৯এ থাকতে আমাদের স্কুলের একজন বাংলা ম্যাডাম ছিলেন,ফেরদৌসি ম্যাডাম,উনি আমাকে বলেছেন ইন্টারভিউ কোনো বড় কিছু না,তবে এটাকে বড় ভাবতে হবে,ভয় থাকলে টিকবে না কোনোমতেই
ভয় এক পাশে রেখে আত্নবিশ্বাস নিয়ে কথা বললে জিতা ৯৯% সিউর
তাই আজ আমি আমার আত্নবিশ্বাস জারি রাখবো,ইনশাল্লাহ আমি সফল হবো
.
১২/১৩জনকে ডাকার পর এবার আহানাকে ডাকলো,সাথে যাকে ডাকলো তার নাম শুনে আহানার চোখ কপালে,শাহরিয়ার শান্ত!!!!কিহহহ ও এখানে কি করে
আহানা চারিদিকে তাকাতে তাকাতে ভিতরে চলে গেলো,কিন্তু শান্তকে দেখলো না
.
শান্ত দৌড়ে আসলো কারন আজ তার আসতে আসতে দেরি হয়ে গেছে,ঘুম থেকে উঠতে পারেনি
আহানা ভিতরে এসে চেয়ারে বসলো,শান্ত ও এসে চেয়ারে বসতে গিয়ে আহানাকে দেখে সে চমকে উঠলো
.
আহানা ব্রু কুঁচকে ওর থেকে চোখ সরিয়ে বসের দিকে তাকালো
.
হাই আই এম জাকির হোসেন,নাইস টু মিট ইউ!
তো বেশি কথা না বাড়াই আরও অনেকজন ওয়েটিংয়ে আছে আপনারা আপনাদের সার্টিফিকেট এবং ম্যানেজিং স্কিল প্রুভের পেপার দিন আমাকে
.
আহানা আর শান্ত একসাথে দিলো,উনি সার্টিফিকেট দেখতেসে
শান্ত আর আহানা একজন আরেকজনকে দেখতেসে মনে মনে একজন আরেকজনকে গিলে খাচ্ছে
.
Why do you want to be a part of our business Mr.Santo? (তুমি কেন আমাদের ব্যবসার অংশ হতে চাও?)
.
Because I’m a good candidate for this job and I’m
Sure I will be able to handle all the work
(কারণ আমি জানি আমি এই চাকরির জন্য একজন ভালো কর্ম প্রার্থী এবং আমি নিশ্চিত আমি সব কাজ সামলাতে পারবো)
.
And what about you Ms. Ahana?
.
আমার চাকরিটা প্রয়োজন
.
ইংরেজীতে কথা বলুন
.
সরি স্যার,আমি ইংরেজীতে নিখুঁত না
.
ওকে সমস্যা না,আপনি বলুন আপনার চাকরিটা কেন প্রয়োজন?দেশে আরও এমন অনেক চাকরি আছে যেটা আপনি করতে পারবেন আপনার প্রয়োজন মিটানোর জন্য তাহলে এই চাকরিটাই কেন?
.
এই ব্যাবসার মূল উপাদান হচ্ছে বিল্ডিং তৈরির নকশা নিয়ে,আর আমার সেই সম্পর্কে ধারনা আছে বলেই আমি শত চাকরির মাঝে এটা বেছে নিয়েছি,আশা করি আমি নির্ভুল ভাবে কাজটা করতে পারবো
.
ওকে দ্যাটস গুড,আই এম ইমপ্রেসড
শান্ত মুচকি হেসে বসের দিকে চেয়ে আছে,শুধু বস না শান্তরও আহানার কথাটা ভালো লেগেছে,আহানার এই জোস কথায় সে পাক্কা আজকে টিকে যাবে
.
তোহহ মিঃ শান্ত এবং মিস আহানা আপনাদের দুজনের কথাই আমার বেশ লেগেছে,কংগ্রেচুলেশনস!আপনারা দুজনেই সিলেক্টেড
.
থ্যাংক ইউ সো মাচ স্যার
.
আমার পি.এ মিঃ রাফি তোমাদের বেতনের সম্পর্কে সবটা জানিয়ে দিবে,সো ফর নাও গুড বাই
.
শান্ত পকেটে হাত ঢুকিয়ে রাফির কাছে চলে গেলো
আহানা খুশিতে আটকানা হয়ে দিশেহারা হয়ে গেছে মাথা ধরে নিজেকে সামলিয়ে শান্তর পিছে পিছে গেলো
.
তো শুনুন আপনারা,মাসে একদিন ও ছুটি নাই,পুরা মাস চাকরি থাকবে,দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত,মাঝে মাঝে ওভারটাইম ও হবে
মিঃ শান্ত আপনার বেতন ২৫হাজার,আর মিস আহানা আপনার বেতন ১০হাজার,কাল থেকে জয়েন করবেন,আল্লাহ হাফেজ
কথাটা বলে উনি চলে গেলেন
.
আহানা চোখ বড় করে বললো আমার এত কম কেন,আজব তো,আমি কি দোষ করসি
.
মিস আহানা আপনি এখনও পিচ্চি মাইয়া,একে তো ইংরেজী পারেন না,আরেক তো অনার্সের ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট,১০হাজার দিবে এটাতেই আমি শকড!!বাই দ্যা ওয়ে হিংসা হয়?আমার মতো হতে চাও তাহলে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়ে তার পর আসো বুঝছো বাবু?
.
আমি বাবু না ওকে?
আর আপনার না বাবার লাখ লাখ টাকা,তো আপনি ২৫হাজার টাকার চাকরি করতে আসছেন কেন?
.
none of your business!,নিজের কাম করো
যাও নিজের চরকায় তেল দাও
.
হুহ!!
আহানা চলে গেলো ভার্সিটির দিকে
শান্ত দাঁত কেলিয়ে টাই ঠিক করতে করতে বাইকে উঠলো,যাক ভালোই হয়েছে,ডেইলি ওরে জ্বালাতে পারবো?
আহানা আজ অনেক খুশি,অনেক অনেক,এভাবে টিকে যাবে সে একদমই ভাবতে পারেনি,কাল থেকে নো টিউশনি,ইয়ে?
শান্ত বটতলায় বসে নওশাদের সাথে কথা বলতেসে
আহানা ক্লাসে বসে উঁকি দিয়ে শান্তকে দেখছে,সবসময় আল্লাহ আমার সাথে ওরেই কেন রাখে বুঝি না,চড় মারার পর থেকে এমন কোনো দিন যায়নি যেদিন এর চেহারা দেখতে হয়নি আমার,উফ!
ব্রেক টাইমে ক্যামপাসে আসতেই ২সেকেন্ড ও হয়নি শান্ত সামনে এসে হাজির
.
কি?
.
আমার নোটবুক দাও
.
দাঁড়ান আনতেসি,আহানা গিয়ে ব্যাগ থেকে নোটবুক এনে শান্তকে দিলো
.
হুম গুড জব,আর এই নাও আজকের নোটস
.
আহানা নোটস হাতে নিয়ে মুখ বাঁকিয়ে চলে যেতে লাগলো
.
এই মিস আহানা!
.
আহানা থেমে পিছনে তাকিয়ে বললো কি?
.
তুমি কি জানো তুমি এখন থেকে আমার সহকারী কর্মচারী
.
কে বলসে?
.
জাকির বস বলসে,আর বিশ্বাস নাহলে তোমাকে যে কাগজ দিসে আজকে সেটায় চেক করিও,আমার কথা মতো চলবা ঠিক আছে?আমি তোমার বস,আর আমার বস জাকির স্যার
.
হুহ,বয়ে গেছে আমার,যান এখান থেকে,বসের গুষ্টি কিলাইতাম!!
আহানা চলে গেলো ক্লাসের দিকে
শান্ত কোমড়ে হাত দিয়ে ভাবতেসে এই মেয়েটার এত তেজ কেন বুঝি না
ঠিক আছে! কাল থেকে তেজ বুঝাবো!
.
আহানা নাচতে নাচতে পিউদের বাসায় গিয়ে বললো যে আর পড়াতে পারবে না
আহা কি মজা,মিষ্টির আম্মুকে মানা করবো না,ভোরে আমার কোনো কাজ থাকে না,এটা পড়ালে বারতি ইনকাম হবে
শয়তান শান্ত ৩হাজার দিবে,মাস শেষে বেতন হবে ১৫হাজার টাকা,বেতন পেয়ে ভালো করে বাজার করবো
.
আহানা খুশিতে আজ আলুর ভর্তা বানালো,আহা আমার সুদিন আসতেসে☺মজা করে ভাত খেয়ে নিলো
তারপর নামাজ পড়ে নিয়ে বই নিয়ে বসলো,পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে গেলো,শান্তর নোট লিখতেই ভুলে গেলো
পরেরদিন ভোরে মিষ্টিদের বাসায় ঢুকার সময় শান্ত পিছন থেকে ডাক দিলো
.
তুমি আমার নোটস কমপ্লিট করেছো?আজকে স্যার বলসে সবার আগে আমার নোটস চেক করবে
.
ইসসস আমি ভুলে গেছি কাল ক্লাসের পড়া পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছিলাম হুস ছিল না একদম
.
কিহ?তুমি এখনও লিখো নাই!!আজ যদি স্যার আমাকে কথা শুনায় তোমার হাড্ডি আমি সত্যি সত্যি ভাঙ্গবো
.
এই কথায় কথায় মারার হুমকি দেন কেন এতো?আমি ভার্সিটিতে আসার আগে পুরোটা কমপ্লিট করে নিয়ে আসবো
.
আসলেই ভালো
.
আহানা ভয়ে মিষ্টিদের বাসায় ঢুকে গেলো,ওকে পড়িয়ে এক দৌড় দিলো বাসার দিকে,বাসায় ফিরে হাত থকে ব্যাগ রেখেই টেবিলে বসে গেলো নোট লিখার জন্য,৩ঘন্টা ধরে খাটনি খেটে অবশেষে নোট কমপ্লিট করলো,২/৩লাইন বাকি ক্লাসে গিয়ে লিখবো,বাপরে বাপ,খাওয়া দাওয়া কিছু হয়নি আমার
.
ক্রিং ক্রিং
ফোন বাজতেসে
কার কল আবার সেই শয়তানটার!কল করে করে মাথা খাবে আমার,এই নিয়ে ৫বার কল করেছে
.
হ্যালো কি সমস্যা আপনার?বলসি না আমি সব কমপ্লিট করে আনবো,অসহ্য
.
এই আমাকে ভাব দেখাবা না,আমি তোমার বস
.
কচুর বস আপনি!মানি না আমি,ফকিন্নি বস একটা!
.
কি?আমি ফকিন্নি বস??তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে এটা বলার,আজ দেখিও অফিসে তোমার কি হাল করি আমি
.
কচু করবেন আমার,আপনার মন্ডু করবেন,ছাতার মাথা করবেন
.
এই চুপ,আবোলতাবোল এসব কি বলে যাচ্ছো,মগজ কি গুলে গেছে তোমার?
.
না গুলে নাই,আপনার গুলে স্যুপ হয়ে গেছে
.
কিহহহহ,কথা সামলিয়ে বলো আহানা
.
আপনি কি সামলায় বলতেসেন যে আমি সামলিয়ে বলবো?মিঃ অশান্ত
.
এই আমাকে অশান্ত ডাকবা না একদম,আমার নাম শাহরিয়ার শান্ত,ওকে?গট ইট?
.
নো,আপনার নাম অশান্ত
.
দরজা খুলো
.
মানে?
.
খুলো বলতেসি
.
আহানা চোখ কপালে তুলে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলতেই শান্ত ভিতরে চলে আসলো
কানে ফোন,দরজা লাগিয়ে এগিয়ে গেলো সে আহানার দিকে
আহানা ঢোক গিলে কানের থেকে ফোন রেখে দিলো
.
কি বলছিলে তুমি?আমার মগজ গুলে স্যুপ হয়ে গেছে?আমি অশান্ত?
.
আআআআআপপপপপনি এখানে কি করে?
.
বাইকে বসলাম এক টানে চলে এলাম হাই স্পিড দিয়ে,ভাবসিলাম তোমাকে অফিসে টাইট দিব বাট সব বসই তো তাদের পিএ কে অফিসে টাইট দেয় আমি নাহয় ইউনিক কিছু করি
.
আহানা পিছোতে পিছোতে দুম করে খাটে বসে গেলো
.
শান্ত টেবিল থেকে নোটবুক নিয়ে চেক করতেসে
আহানা এই সুযোগে পালাতে যেতেই শান্ত ওর হাত ধরে ফেললো
.
আরে থামো থামো,কই যাও তুমি?এখনও তো কিছু করলাম না,ডেইলি আমার সাথে ঝগড়া করার শাস্তি তোমায় আজ পেতে হবে
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
চা খাবেন?
.
শান্ত মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো আরও
চা??না তোমাকে খাব!
.
আহানা চোখ কপালে তুলে পিছোতে পিছোতে বললো বাঁচাও বাঁচাও
.
শান্ত কাছে এসে আহানার মুখ চেপে ধরে বললো চুপ!!
তোমাকে বলসি না তোমার প্রতি আমার interest নেই,ওরকম কিছু করবো না ওকে?
.
তাহলে কি করবেন?
.
দাঁড়াও ভাবতে দাও
.
শান্ত আহানার পাশে বসে গেলো,গালে হাত দিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলো সে আহানার সাথে কি করবে
আহানা আবার পালিয়ে যেতে নিতেই ওর হাত ধরে ফেললো সে
.
প্লিস ছাড়ুন!
.
কি বলছিলে যেন?
.
না না কিছু না,আর কখনও বলবো না সত্যি!
.
যাও চা বানাই আনো,চা খেতে খেতে ভাববো তোমাকে কি শাস্তি দিব এখন
আহানা হাত ছাড়িয়ে রান্নাঘরে গেলো,এই ছেলেটা জোঁক টাইপের,উফ,একেবারে বাসায় চলে আসলো,তারেক আঙ্কেল জানলে নির্ঘাত আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে
আহানা চা নিয়ে এসে দেখলো শান্ত নোট বাকিগুলো লিখতেসে
.
নিন আপনার চা
.
হুম,তোমার জন্য বানাও নি?
.
দুধের গুড়ি শেষ
.
আরেকটা কাপ আনো
.
কেন?
.
আনতে বলসি আনো
.
নিন
.
শান্ত এক কাপের চা দুকাপ করলো,অর্ধেক অর্ধেক,নাও খাও
.
খাব না আমি
.
খাও বলতেসি,সবসময় না ছাড়া কিছু বলতে জানো না??
খালি না না না,আমার সাথে সবসময় হ্যাঁ হ্যাঁ বলবা,ওকে?
.
না?
চলবে ♥