Monday, July 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1933



প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৪৯

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৪৯
#Writer_Afnan_Lara
?
“নাহ,নার্স একটা ফালতু স্যুপ দিয়ে গেছিলো আমি সেটা খাইনি”
.
“আচ্ছা আপনি থাকেন,আমি বাসা থেকে খাবার বানাই আনতেছি”
.
“না দাঁড়াও,আমি সহ যাবো তোমার সাথে,ডাক্তার বলসে এখন যেতে পারবো”
.
“আচ্ছা তাহলে চলুন”
.
“এক মিনিট!”
.
“কি?”
.
শান্ত আহানার হাত খপ করে ধরে উল্টো করলো
“তোমার হাতে কি হয়েছে,এরকম দাগ কেন,এত খারাপভাবে কাটা গেছে কি করে?”
.
“ও কিছু না,আসলে আয়নাটা ভেঙ্গে গেসিলো তো সেটা পরিষ্কার করতে গিয়ে হয়েছে,এটা কিছু না”
.
“কিছু না মানে কি বুঝাতে চাও,হাতের তো একটু জায়গাও খালি নাই যেখানে কাটা দাগ নেই,আমার তো মনে হয় ইচ্ছে করে কেটেছো!”
.
“না ইচ্ছা করে কেন করবো,এত কথা বলেন কেন,চলুন বাসায় যাই”
.
“আহানা আমাকে বোকা বানানো এত সহজ না,চুপচাপ বলো কি হয়েছে?”
.
প্রশ্নের জবাব না দিয়েই আহানা শান্তর হাত ধরে আরেক হাত ওর পিঠে রাখলো ওকে উঠানোর জন্য
শান্ত নামার জন্য সিট থেকে ফ্লোরে পা রাখতেই চোখ মুখ খিঁচিয়ে ফেললো ব্যাথায়,পায়ের চোটটা বেশি
আহানা শক্ত করে ওকে ধরে ফেলেছে
দেরি না করে সে নওশাদ আর রিয়াজকে ডাক দিলো তাড়াতাড়ি
নওশাদ এসে শান্তকে ধরলো আর রিয়াজকে বললো হসপিটালের ফর্মালিটিস পূরন করে আসতে
২টো রিকসা নিয়েছে রিয়াজ,একটাতে নওশাদ আর সে
আরেকটাতে আহানা আর শান্ত
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে গাল ফুলিয়ে আছে
আর শান্তর চোখ আহানার হাতের দিকে
সোজা শান্তর বাসায় এসেছে সবাই
শান্তকে রিয়াজ ধরে রুমে ঢুকাচ্ছিলো,নওশাদ বললো সে সিলিন্ডারের আগামাথা বুঝতেসে না জলদি আসতে
রিয়াজ আহানার হাতে শান্তর হাত দিয়ে দৌড় দিলো রান্নাঘরের দিকে
আহানা শান্তকে কোনোরকম ধরে হাঁটতে গিয়ে নিজেই স্লিপ খেয়ে পড়তে গেলো শেষে শান্তই ওকে ধরে ফেললো
মুচকি হেসে বললো “পা তোমার ভেঙ্গেছে নাকি আমার?”
.
“আসলে টাইলসে আমি বেশি স্লিপ খাই”
.
শান্ত আহানার হাত মুঠো করে ধরে আগাতে চেষ্টা করলো কিন্তু মনে হচ্ছে পায়ের ওজন তার শরীরেরও চেয়ে বেশি
হুমড়ি খেয়ে বিছানায় গিয়ে পড়লো আর সাথে আহানাকেও টান দিলো
আহানা গিয়ে ওর গায়ের উপর পড়লো
.
“আউচচচ”
.
“কি হয়েছে হাতে লেগেছে?”
আহানা তাড়াতাড়ি উঠে গেলো শান্তর বুকের উপর থেকে
শান্তকে ধরে উঠে বসালো সে
আহানা ব্যস্ত হয়ে শান্তর হাত দেখতেসে
অপরাধী লুক নিয়ে বললো “আমি আর আপনাকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতে যাবো না,শুধু শুধু আপনি ব্যাথা পেলেন”
.
“ইটস ওকে,৫৩কেজির মেয়ে হয়ে ৭৬কেজির ছেলেকে টেনে ধরা তোমার কাম্য নয়”
.
“আপনি আমার ওজন জানেন কি করে?”
.
“বিরাট কাহিনী”
.
“শুনি”
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
“তো শুনো!আলু আর চাল মিলে ৫৩কেজি ছিল সেদিন বাবা আসার সময় এনেছিলো মোহনগঞ্জ থেকে,আমাদের তো নিজস্ব ক্ষেত আছে,বাবা মাসকাবার করে দিয়েছে,আমি রিকসা থেকে তুলে গার্ডের হাতে দিসিলাম,তো সেই ওজন আর তোমার ওজন সেম লাগলো,আন্দাজ করে নিলাম,তোমাকে তো সেদিন ফ্লোর থেকে তুলে বিছানায় এনেছিলাম”
.
“ওহ,বাপরে আপনার আন্দাজ তো দারুন,যাই হোক বসুন,আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসতেসি”
শান্ত আহানার হাত টেনে ধরলো
আহানা থেমে পিছন ফিরে তাকালো শান্তর দিকে,শান্ত গম্ভীরভাবে বললো ওয়ারড্রবের সেকেন্ড ড্রয়ার খুলো”
.
“কেন?”
.
“একটা বক্স দেখতে পাবা সেটা দাও আমাকে”
.
আহানা গিয়ে ড্রয়ার খুলে বক্স নিয়ে শান্তর দিকে বাড়িয়ে ধরলো শান্ত বক্সটার সাথে সাথে আহানাকেও টান দিয়ে বসিয়ে দিলো
.
“কি হয়েছে”?
.
“তোমার মন্ডু হয়েছে,বেয়াদব মেয়ে একটা,সবসময় উনার হেলথ আর কেয়ার নিতে হয় আমাকে,ইচ্ছে করে এমন করসো যেন কাল সকালে নাস্তা বানাতে না হয় তাই না?”
.
“এই যে শুনুন উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না একদম আমি তো এলিনা!!!!!
না আসলে আমার হাতের সাথে লেগে আয়না ভেঙ্গে গেছিলো”
.
“এলিনা কি?ও তোমাকে কিছু বলেছে?”
.
“না,এলিনা আপু ভালো অনেক,উনি কেন আমাকে কিছু বলবে”
.
শান্ত ব্রু নাচিয়ে আহানার হাত নিয়ে ওর মাথায় রাখলো
“এবার বলো,এরকম তুমি ইচ্ছে করে করেছো নাকি অনিচ্ছাকৃত? ”
আহানা এবার কি বলবে,হা করে শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সে,হাত সরাতেও পারতেসে না,শান্ত যেন আঠার মত লাগিয়ে ফেলেছে ওর হাতকে তার মাথার উপর
.
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে থেকে আস্তে করে বললো”রাগ উঠেছিল বলে ইচ্ছে করে এমন করেছি,আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন না প্লিস!”
কথাটা বলে আহানা উঠে দূরে চলে গেলো
বারান্দার গ্লাস দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে সে,কিছুক্ষন পর একটা হাত ওর পাশ দিয়ে গিয়ে গ্লাস ছুঁলো
আহানা চমকে পিছনে তাকালো শান্ত ওর দিকে না তাকিয়ে ওর হাত ধরে একটা মলম লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে
.
“আপনি বেড থেকে উঠতে গেছেন কেন?আমার খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়ে দিতে চান?এমন করে তো আমি বাঁচবো না,বরং মরে যাব”
.
শান্ত মলম লাগানো থামিয়ে চোখ তুলে আহানার দিকে তাকালো একবার তারপর আবারও মলম লাগাতে লাগাতে বললো”আমার জীবন না থাকলে তুমি মরে যাবা কেন আহানা?”
.
আহানা স্তম্ভিত হয়ে মুখ আরেকদিকে ফিরিয়ে নিলো,রাগের মাথায় মুখ দিয়ে উল্টা পাল্টা বের হচ্ছে তার
মলম লাগানো হতেই চলে গেলো সে
বুয়াও এসেছে ততক্ষণে,আহানা বুয়ার হেল্পে সবার জন্য নাস্তা বানাচ্ছে
.
“আপা একটা কথা কমু?”
.
আহানা চুলায় মুরগীর মাংস নাড়তে নাড়তে বললো”হ্যাঁ বলুন”
.
“আপনি শান্ত বাবার কি হোন?”
.
আহানা অনেক ভেবেচিন্তে বললো” ভালো বান্ধুবী”

শান্ত মুচকি হাসতেসে বসে বসে আর আহানার পাগলামো গুলো মনে করে দাঁত কেলাচ্ছে
আহানা টেবিলে খাবার আনতে আনতে বললো এই যে শুনুন!
শান্তর বুকে যেন কেউ দুম করে বাড়ি দিয়ে দিয়েছে,এভাবে আহানার ডাকটা একদম বুকের ভেতরে গিয়ে লাগে,বুকে হাত দিয়ে ডাইনিংয়ের দিকে চেয়ে বললো “জি বলুন আহানা ম্যাডাম”
.
“খাবার রেডি আমি নওশাদ ভাইয়া আর রিয়াজ ভাইয়াকে ডাকতেসি,আপনি কি ওখানে খাবেন নাকি এখানে এসে খাবেন”
.
“(আহানার হাতে)নাহ মানে আসতেসি
.
আহানা ওড়নায় হাত মুছে এগিয়ে আসলো,শান্ত ওয়াল ধরে চোখ মুখ বাঁকিয়ে আস্তে আস্তে আসতেসে
আহানা গিয়ে ওর হাতটা ধরলো
.
“শুধু শুধু ধরতেসো,তুমি আমাকে সামলাতে পারবা না”
.
“নওশাদ ভাইয়া মনে হয় বাথরুমে আর রিয়াজ ভাইয়া ফোনে কথা বলতেসেন,তাই আমি এলাম”
শান্ত চেয়ারে বসে হা করে চেয়ে বললো”এসব তুমি রেঁধেছো?”
.
“হুম,বুয়ার থেকে জেনে নিয়েছি আপনার কি কি প্রিয়,নিন খাওয়া শুরু করেন
বুয়া রান্নাঘরের দিকে যেতেই শান্ত আহানার হাত টেনে ওকেও চেয়ারে বসিয়ে দিলো
“তুমি কিছু খাওনি জানি আমি,আমার সাথে খাও এখন”
.
“নাহ,আমার বাসায় রান্না করা আছে,আমি সেটা খাবো”
.
“চুপ!এখন আমার সাথে খাবা,বেশি কথা নয়”
.
আহানা আলাদা একটা প্লেটে খাবার নিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে প্লেটটা বুয়ার হাতে দিয়ে আবার ফেরত এসে নিজের জন্য প্লেটে খাবার নিতে থাকলো
শান্ত অবাক হয়ে বললো “কি ব্যাপার?ঐ প্লেট নিয়ে কই গেসিলা?”
.
আহানা তার প্লেটে খাবার নিতে নিতে বললো” বা রে বুয়া ও তো কিছু খায়নি,উনি খাবেন তো,উনাকে না দিয়ে আমি কি করে খাই?”
.
“কিন্তু আমি তো সবসময় সকালে উনাকে জিজ্ঞেস করলে উনি বলেন বাসায় রান্না করা আছে সেটা খাবেন”
.
“এটা মিথ্যা!কিছু কিছু কথা শুনলেই বুঝা যায় সেটা মিথ্যা,আর যদি সত্যিও হয় তো হোক না,আপনার দায়িত্ব আপনি পালন করবেন,বাসার যারা কাজ করে তাদের রেখে কিছু খাওয়া মোটেও ভালো কথা নয়”
.
“এত নলেজ বাপরে বাপ! তার মানে তুমি যে বললা বাসায় গিয়ে রান্না করা খাবার খাবে সেটাও মিথ্যা?”
.
আহানা হেসে দিয়ে বললো”হুম”
খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার কাজে চলে গেলো,কিন্তু আহানা গেলো না,শান্ত একা কি করে থাকবে এই ভেবে রয়ে গেলো
শান্ত বারবার তার হাত, পা, গলা চুলকাচ্ছে,গোসল করা জরুরি,তবে হাত পায়ের যে অবস্থা একজন হেল্পিং হ্যান্ডের খুব প্রয়োজন
আহানাকে বলা যাবে না আর বলতেও চাই না
কারণ বললে সে মুখের উপর না করে দিবে আর আমার ও তো লজ্জা শরম আছে নাকি
আহানা শান্তর রুমের বারান্দার পর্দা সরাচ্ছে বারান্দা দিয়ে আলো বাতাস আসার জন্য
শান্ত হালকা কেশে বাধ্য হয়ে বলেই দিলো “শাওয়ার নেওয়া জরুরি”
কথাটা বলেই কাঁথা মুড়িয়ে মুখ লুকিয়ে ফেললো সে
আহানা পর্দা সরানো শেষে বারান্দার গাছগুলোতে পানি দিতে দিতে বললো “তো করেন”
গাছগুলো মনে হয় নতুন এনেছে,এর আগে এই ফুল সে এই বারান্দায় দেখেনি,অবশ্য এই বারান্দায় তেমন আসাও হয়নি তার
.
শান্ত মুখ থেকে কাঁথা সরিয়ে বললো “মানে?নিজে নিজে শাওয়ার নেওয়া পসিবল না?”
কথাটা শুনে আহানা চোখ তুলে ওর দিকে তাকালো
“সত্যি তো!এখন কি করবো!
আচ্ছা চলুন আমি হেল্প করবো”
.
কিহহহহ?তুমি? তুমি আমাকে হেল্প করবে?
.
হ্যাঁ কেন?কি হয়েছে?
.
পরে কথা শুনাতে পারবা না কিন্তু!
.
শুনাবো না

দুজনে বাথরুমে,শান্ত বামপাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর আহানা ডান পাশের দিকে
কি দিয়ে শুরু করবে সেটাই ভাবতেসে দুজনে
শেষে আহানা শান্তর টিশার্টটা ধরে খুললো,চোখ একবার বন্ধ করতেছে আবার খুলতেসে
“হইসে তুমি যাও,আমি ঝর্না অন করবো এখন”
.
আচ্ছা,কিছু লাগলে বলবেন
.
শান্ত চুপ করে ঝর্নার নিচে দাঁড়িয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে,দরজা দিয়ে রুমে আহানাকে দেখা যাচ্ছে,বিছানা গুছিয়ে যাচ্ছে সে
ঝর্না অফ করে নিজে নিজে বের হওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না,আহানাকে ডাক দিলো না পেরে
আহানা তোয়ালে নিয়ে এসে আগে ওর মাথার চুল মুছে দিলো ভালো করে
তারপর হাত ধরে বের করলো ওকে,বিছানায় বসিয়ে আলমারি খুলে একটা টিশার্ট নিয়ে শান্তকে পরিয়ে দিলো সে
তারপর তোয়ালে দিয়ে আবারও চুল মুছে দিচ্ছে শান্তর
শান্ত অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,ঠিক সেভাবে যত্ন নিচ্ছে আহানা যেমন করে তার মা যত্ন নিতো,মা যত্ন নিতে নিতে বলতো “তোর বউ ও তোর এমন করে যত্ন নিবে”
আর আজ সেটা সত্যি হয়ে গেলো
.
আহানা তোয়ালে সরিয়ে ব্রু কুঁচকিয়ে বললো “কি ব্যাপার?এরকম মিটমিট করে হাসতেসেন কেন?”
.
“এমনি”
.
“আজ অফিসে যেতে হবে না আপনার,আমি রাফি স্যারকে বলে দিব কল করে”
.
“তুমি আমার ফোন এনে দাও,ঐ তো টেবিলের উপর রাখা”
.
আহানা গিয়ে ফোনটা শান্তর হাতে দিয়ে শান্তর জামা ধুতে চলে গেলো
শান্ত রাফিকে কল করে জানালো তার এক্সিডেন্টের কথা
রাফি চিন্তিত হয়ে বললো বেডরেস্ট নিতে
শান্ত বুদ্ধি খাটিয়ে বললো সে বাসায় একা এখন আহানাকে দরকার তাই আহানাও আসতে পারবে না,এক বলাতেই রাফি রাজি হয়ে গেলো,ডান বলে দিলো সাথে সাথে
আহানা জামাকাপড় বারান্দায় দিয়ে এসে দেখলো শান্ত খিলখিল করে হাসতেসে
.
“কি হইসে আবার?এরকম হাসতেসেন কেন?রাফি স্যার ছুটি দেয়নি বলে মাথা কি গেছে আপনার?”
.
“নাহ,আমি তো ছুটি পেয়েছি সাথে তোমার ও ছুটি নিয়ে” নিসি
.
“কিহ!!স্যার আমাকেও ছুটি দিয়েছেন?”
.
“হুম”
.
“আচ্ছা তাহলে আপনি বসুন আমি রাঁধতে যাই”

শান্ত টিভি অন করে ফোনে গেমস খেলতেসে এক হাত দিয়ে
এটা তার অভ্যাস,টিভি অন করে গেমস খেলা
কেন যে টিভি অন করে সে নিজেও জানে না,তবে টিভি অন না করলে ফোন দেখাতে মজা নেই
আহানা রান্নাবান্না শেষ করে এসে দেখলো শান্ত মাথা বিছানার নিচে ঝুলিয়ে ফ্লোরে ফোন রেখে গেমস খেলতেসে
“ওমা এটা আবার কেমন স্টাইলে গেমস খেলা?”
.
“আমি আরও অনেক স্টাইলে গেমস খেলতে পারি,রান্না শেষ হইছে কিনা বলো,খেয়ে ঘুমাবো,ঘুম আসতেসে অনেক”
.
“হুম শেষ”
.
“বুয়া আছে?”
.
“না আমাকে হেল্প করে চলে গেছে”
.
“তাহলে ভেরি গুড,যাও খাবার এনে আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দাও”
.
“?হাত পা ভেঙ্গে এখন আমাকে দিয়ে কামলা খাটাচ্ছে,স্টুপিড!”
.
“কিছু বললে?”
.
“না,আনতেসি”
.
আহানা খাবার এনে শান্তকে নিজের হাতে খাওয়াই দিলো তারপর ঔষুধ
শান্ত গেমসে মন দিয়ে কখন যে এক প্লেট খাবার শেষ করলো বুঝতেই পারলো না,ঔষুধ খেয়ে বিছানায় মাথা এলাতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো সে
এত তাড়াতাড়ি মানুষ কিভাবে ঘুমাতে পারে তাই ভাবতেসে আহানা
খেতে মন চাচ্ছে না তার,এদিকে শান্ত বাসায় একা তাকে ফেলে রেখেও যাওয়া যাচ্ছে না,নওশাদ,সূর্য আর রিয়াজ ভাইয়া ৩জনেই কি কাজ করতে গেছে,তাকেও বলেনি আর শান্তকেও বলেনি,কি এমন কাজ যেটা শান্তর চেয়েও জরুরি?
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে শান্তর জন্যই কাজ করতে গেছে তারা,কারণ শান্ত তো উনাদের কলিজা,এভাবে উনার দুঃসময়ে আমার সাথে একা রেখে যেতে পারে না তারা কিন্তু তার পরেও গেলো,কিছু তো একটা আছে
ভাবতে ভাবতে আহানা পানির গ্লাসটা নিয়ে বেড থেকে উঠে দাঁড়াতেই দেখলো শান্ত ওর ওড়না মুঠো করে ধরে ঘুমাচ্ছে
কি জ্বালা,আমার ওড়না ধরলো কখন আবার!
আহানা ওড়না টানতেসে আস্তে আস্তে যেন শান্ত জেগে না যায় ওমা তার পরেও ছুটতেসে না শেষে ওড়না রেখেই চলে গেলো সে
কিছুক্ষন পর এসে দেখলো পুরো ওড়না শান্ত তার গায়ে পেঁচিয়ে হাত পা ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে ঘুমাচ্ছে,আহানা হেসে দিয়ে বারান্দার পর্দা টেনে দিলো,আলোর কারণে ঘুমের ঘোরে মুখ বাকাচ্ছে শান্ত তাই
তারপর মনে হলো এভাবে বোরিং সময় না কাটানোর চেয়ে কিছু কাজ করলে কেমন হয়,শান্তর আলমারির ভেতর কেমন কেয়ামত হয়ে আছে,আমি বরং গুছিয়ে দিই
আহানা শান্তর আলমারিটা ভালো করে গুছিয়ে দিলো
শেষে নিচের তাকের জামাগুলে হাতে নিতেই কিসের যেন শব্দ হলো
নিচু হয়ে দেখলো ফ্লোরে একটা কাঁচের চুড়ি যেটা ভেঙ্গে ২টুকরো হয়ে গেছে
এটা কার?ভাবতে ভাবতে সেটা রেখে দিয়ে আলমারির দরজা আটকালো সে
শান্ত চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকালো,বিকাল ৫টা বাজে তখন
একটু মাথা উঠিয়ে হেলান দিয়ে বসলো সে
দূরের চেয়ারে আহানা বসে আছে চোখ বন্ধ করে
শান্ত ওর দিকে তাকিয়ে নিজের দিকে তাকালো,গায়ে ওর ওড়না,হেসে দিয়ে গায়ের থেকে সেটা খুলে নিলো সে
নিজে নিজে উঠার চেষ্টা করলো,এখন কিছুটা ঠিক লাগতেসে,পায়ে ব্যাথা হালকা হালকা অনুভূত হয়,বেশি না
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৪৮

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৪৮
#Writer_Afnan_Lara
?
আচ্ছা,আমি বুঝিয়ে বলবো ওদের
একটা কথা বল তুই আহানাকে এই বাসায় রেখেছিস কেন?ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলেই পারোস
.
আহানা যেতে চায় না,আর বললাম তো বিয়েটা আপাতত সবার থেকে অজানা আছে একটা কারণে
.
বাবা শান্তর মাথায় হাত রেখে ওর চুলগুলো এলিয়ে দিয়ে হেসে চলে গেলেন বাসা থেকে
.
আহানা শান্তর বাবার চলে যাওয়া দেখতেসে,শান্ত দুষ্টুমি করে এক ধাক্কা মেরে বললো জানো?? মা তো আমাদের আগে থেকেই বিয়ে ঠিক করে রেখেছিল,বাবা মাত্র বললো আমাকে
.
মিথ্যা বলেন কেন?হুহ!
.
সত্যি বলতেসি,যাই হোক,এখন বাই!
আমি বাবার সাথে যাচ্ছি
কথাটা বলে শান্ত ও চলে গেলো,আহানা চুপচাপ এসে ব্যাগ গুছানোয় মন দিলো,ভার্সিটিতে যেতে হবে
শরীর তেমন ভালো না কিন্তু এভাবে ক্লাস তো মিস করা যায় না
শান্ত বাবার সাথে বাসায় ফিরেছে,বাবা একটু কাশ দিয়ে সোফায় বসে নম্রভাবে বললেন এই বিয়ে সম্ভব না
.
এলিনার বাবা বিস্মিত হয়ে বললেন কি কারণ?
.
আসলে আমি জানতাম না শান্ত এলিনাকে লাভ করে না,আমি তো ভাবসি করে তাই আমি আপনাদের নিয়ে এসেছি,কিন্তু ও আমাকে সত্যিটা জানালো,আমি তো আর আমার ছেলেকে জোর করতে পারি না তাই না?
.
এলিনার বাবা এলিনার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললেন শান্ত তোমাকে লাভ করে না এটা তুমি জানতে না?
.
বাবা আমি মনে করেছি ও ফান করে বলতেসে
.
লাভ নিয়ে ফান কেন করবে মানুষ?শুধু শুধু সময় নষ্ট করেছো আমার,এখন কি আর করার!
আমরা আজ আসি তাহলে
এলিনার বাবা সোফা থেকে উঠে এলিনার হাত ধরে হনহনিয়ে চলে গেলেন
.
শান্ত দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে চুপ করে,বাবা কাছে এসে বললেন আমি যাই
অল দ্যা বেস্ট,কোনো কিছুর দরকার হলে জাস্ট কল করে দিবি
আর হ্যাঁ যখন মনে হবে বিয়েটা পাবলিক করা উচিত তখন আমাকে জানাবি,আমি ধুমধাম করে আমার পুত্রবধূকে বরণ করে আনবো
.
শান্ত বাবাকে জড়িয়ে ধরলো,বাবা ওর পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন আমার ছেলের কোনো কিছুতে আমি কমতি রাখিনি আর রাখবো ও না কোনোদিন,আল্লাহ হাফেজ

আহানা ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে পড়েছে,রোদের মধ্যে আস্তে আস্তে কেঁপে কেঁপে হেঁটে চলেছে সে,শরীর খারাপ বলে মাথা ঘুরাচ্ছে বারবার
এখনও অনেকটা পথ বাকি
হঠাৎ শান্ত বাইক নিয়ে এসে ওর সামনে থামলো,চোখ রাঙিয়ে বললো তোমার সাহস তো কম না,অসুখের ভেতর তুমি ভার্সিটিতে যাচ্ছো!তাও হেঁটে হেঁটে!একদম চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলবে,একটা চুলও মাথায় অবশিষ্ট রাখবো না,বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!
.
আপনার কি?
.
আমার কি?তোমার জ্বর না থাকলে পানিতে চুবিয়ে বুঝাইতাম আমার কি,নাও উঠো বাইকে
.
না
.
তুমি উঠবে না তোমার ঘাড় উঠবে
শান্ত আহানার হাত টেনে বাইকে উঠিয়ে নিলো,এখনও ওর হাত ছাড়তেসে না
আহানা মুখটা গম্ভীর করে বললো আপনার বাবা হঠাৎ আজ সকালে আপনাকে ডাকলো কেন?আর এলিনা আপু আসলো কই থেকে?
.
এলিনা ওর ফ্যামিলি নিয়ে বাসায় হাজির হয়েছিল আমার আর ওর বিয়ের কথা পাকা করতে
.
কিহহহ
.
হুম,এখন সব গেছে,বাবা বুঝাই দিসে ভালো করে

এলিনা তার ক্লাসরুমে দাঁড়িয়ে ভার্সিটির গেটের দিকে চেয়ে আছে
শান্ত আহানাকে নিয়ে এসে ভার্সিটির সামনে বাইক থামালো
আহানা আর শান্ত সেখানে কথা বলতেসে,কথা বলতে বলতে একটা সময় শান্ত আহানার চুল ধরে টেনে ওকে কাছে নিয়েও এসেছিলো,এরপর দুজনে একসাথে ভার্সিটিতে ঢুকেছে
এলিনা সব দেখতেসে গাল ফুলিয়ে
এলিনার আর বুঝতে বাকি নেই যে শান্ত ওকে কেন ভালোবাসে না কারন হলো শান্ত তো আহানাকে ভালোবাসে
এলিনার রাগে মাথা খারাপ হয়ে গেছে কি করবে সেটাই ভাবতেসে সে
আহানা তার ক্লাস রুমের দিকে চলে গেলো
শান্ত ও তার ক্লাসের দিকে গেসে
আহানা রুপার সাথে কথা বলতে বলতে দেখলো এলিনা এসেছে ওদের ক্লাসরুমে
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
এলিনা রুপাকে বললো আহানার সাথে তার কিছু পার্সোনাল কথা আছে
রুপা ঠিক আছে বলে সরে গেলো
এলিনা আহানার পাশে বসে আহানার হাত ধরলো,তারপর বললো আমি জানি আহানা তুমি শান্তকে লাভ করো আর হয়ত শান্ত ও
বাট!
তুমি এটা ভাবোনি যে তুমি শান্তর যোগ্য না??কোথায় শান্ত আর কোথায় তুমি,স্টেটাস ও তো মিলে না,এক বিন্দু না!
শুনলাম তুমি অনাথ,তোমার কেউ নেই,২বেলা ভাত নুন খাও আরও কত কি!!
তুমি জানো?এসব শান্তর বাসার বুয়াও খায় না
আর তুমি কিনা সেই লেভেলের হয়ে শান্তর পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখো?নিজের দিকে তাকিয়েছো কখনও?
কোন দিক দিয়ে তুমি নিজেকে ওর যোগ্য ভাবো? আচ্ছা আমি না বললে কি তুমি এসব ভাবতে না?
আমার দিকে তাকাও,আমি তো তোমার থেকে কতটা উপরের লেভেলের তার পরেও শান্ত আমাকে একসেপ্ট করলো না,কেন বলোতো?কারণ ওর পছন্দ আরও উচ্চ!
তোমার কি লজ্জা শরম নাই??সারাদিন সবখানে শান্তর আশেপাশে ঘুরঘুর করো!
অবশ্য তোমাকে এসব কেন বলতেসি,তোমার মত রাস্তার সরি অনাথ আশ্রমের মেয়েরা এসব ম্যানারস জানলে তো হতোই
একবার ভেবো কেমন?নেক্সট টাইম শান্ত আশেপাশে আসার আগে,বাই
.
আহানা কিছু বললো না,কারণ এলিনা যা বলেছে তার সব ঠিক
আমি এটা ভুলে গোছিলাম আমি কে,আমি সে যার কোনো পরিচয় নেই,অবৈধ সন্তান আমি
আমার তো কোনো যোগ্যতাই নেই শান্তর পাশে দাঁড়ানোর আর সেখানে আমি কিনা!
আহানা নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করতেসে
রুপা নওশাদকে বাই বলে আহানার কাছে ফিরে আসলো
.
কিরে আহানা ঐ ডাইনিটা কি বললো তোকে?
.
কিছু সত্যি
.
কি সত্যি?
.
কিছু না,আমার বাসায় অনেক কাজ আছে,আমি আসি
কথাটা বলে আহানা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো
শান্ত ক্লাস সেরে বটতলায় এসে বসেছে,বারবার আহানার ক্লাসরুমের দিকে তাকাচ্ছে,আহানাকে একবারও দেখলো না
এদিকে নওশাদ এসে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে তার সাথে মার্কেটে যেতে,কাবিনে পরার জন্য শেরওয়ানি কিনবে
.
শেষে বাধ্য হয়ে সে নওশাদের সাথে বেরিয়ে গেলো
.
আহানা বাসায় ফিরে আয়নাটা নিয়ে বসে আছে
তার নিজের প্রতি আজ এই প্রথম এত ঘৃনা হচ্ছে
কেন আমার জীবনটা এমন হলো,কেন আমার মা বাবা নেই??
আমি কি দোষ করেছিলাম,কেন আমি ঐ আশ্রমেই ঠাঁই পেলাম
আমার কোনো পরিচয় নেই কেন!আমি আর একটা রাস্তার মেয়ের তফাৎ নেই কেন!!!
আহানা আয়নাটা ভেঙ্গে গুড়োগুড়ো করে ফেললো,আয়নার ভাঙ্গা প্রতিটা খন্ডে আহানা নিজেকে দেখতে পাচ্ছে,এতে করে রাগ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে তার
খুব রাগ হচ্ছে,আয়নার সব টুকরো হাত দিয়ে আরও টুকরো টুকরো করতে লাগলো সে
এতটা রাগ তার নিজেকে নিয়ে যে তার হাত কেটে যাবে এই চিন্তা তার মাথায় ছিল না,যতক্ষন না কাঁচ গুড়ো হয়েছে ততক্ষণ হাত দিয়ে সেগুলোকে সে ভেঙ্গেছে,সবগুলো ফ্লোরের সাথে মিশিয়ে শান্ত হলো সে
.
নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো,ব্যাথায়,মনের কষ্টে যন্ত্রনায় চিৎকার করলো সে,দম বন্ধ হয়ে আসতেসে তার
কেঁপে কেঁপে ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ালো
বাথরুমে গিয়ে ভেসিনে হাত ধুয়ে রক্ত পরিষ্কার করলো,পুরোনো কাপড়ের টুকরা হাতে বেঁধে নিয়ে বসে থাকলো আবার
তারপর কিসব ভেবে ঝাড়ু নিয়ে আয়নার সব ভাঙ্গা টুকরো ফেলে দিলো ময়লার ঝুড়িতে
অফিসের সময় হয়ে গেছে,তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হতে নিতেই থেমে গেলো সে
শান্ত হাতে কাপড়ের টুকরো বাঁধা দেখলো সব ওলটপালট করে ফেলবে,আর যদি হাতে কোনো কাপড়ের টুকরো না থাকে তাহলে সহজে শান্তর চোখেও পড়বে না এত কিছু
.
ইস কেন রাগের বসে এসব করতে গেলাম আমি,এখন এসব লুকাতে কাঠ খড় পোড়াতে হচ্ছে আমাকে!
আহানা কাপড়ের টুকরাটা ফেলে দিলো,হাতের তালুতে তার কাঁটার মত লাল দাগ হয়ে আছে,হাতের তালুতে বিন্দু মাত্র জায়গা খালি নেই যেখানে দাগ নেই,ভিতরটা টনটন করতেসে অসহ্যকর যন্ত্রনায়,মন চাচ্ছে হাতটা কেটে ফেলে দিলে এই ব্যাথা কমতো
আহানা হেঁটে চলেছে,মাঝে মাঝে ওড়না দিয়ে হাত লুকানোর প্র্যাকটিস করতেছে
কিছুতেই শান্তকে এটা বুঝতে দেওয়া যাবে না,আর হ্যাঁ শান্ত থেকে আমাকে এখন দূরুত্ব বজায় রাখতে হবে,এলিনা আপু যা বলেছে সব ঠিক বলেছে,আমাকে আমার লেভেলেই থাকা উচিত
শান্তর সাথে সারাদিন থাকলে কেমন দেখায় আমি একদমই এসব ভাবিনি আগে,ভাবলে এতদিন এতদূর কথা গড়াতো না!

সব কাজ সেরে শান্ত ১টার দিকে সোজা অফিসে আসলো,আহানা আগে থেকেই সেখানে
আহানাকে দেখে মনে হলো মনটা শান্তি পেয়েছে,মুচকি হেসে আহানার পাশে গিয়ে বসলো সে
আহানা চুপচাপ বসে ফাইলে কিসব চেক করতেসে
.
কখন আসলে তুমি?ভার্সিটিতে তোমাকে দেখলাম না,অবশ্য আমিও ছিলাম না,নওশাদকে নিয়ে মার্কেটে গেছিলাম ওর বিয়ের শেরওয়ানি কিনতে,কি হলো?কথা বলতেসো না কেন?
.
নিজের কাজ করেন,অনেক কাজ পড়ে আছে!
আহানা আর একটা কথাও বলেনি
শান্ত গাল ফুলিয়ে তার কাজ করে যাচ্ছে
ব্রেক টাইমে আহানা এক গাদা ফাইল নিয়ে বসলো যাতে শান্ত ওকে ক্যানটিনে না নিতে পারে
শান্ত ও রাগতে রাগতে শেষ,গাল ফুলিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে টেবিলের উপর বসে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে,খাওয়া শেষ হলেই সেটা আহানার গায়ের দিকে মারতেসে
এই নিয়ে ৮টা খাওয়া শেষ
আহানা এখন যদি ওকে না আটকায় তাহলে মনে হয় ২০টা পার করে দিবে,কাশি উঠে গেছে তার এক নাগাড়ে এতগুলো খেতে খেতে
আহানা উপায় না পেয়ে কাজ রেখে উঠে এসে প্যাকেটটা নিয়ে নিলো ওর থেকে
.
কি সমস্যা আপনার?মরতে চান?
.
তুমি আমাকে ইগনোর করতেসো কেন সেই কারন জানতে চাই আমি
.
আহানা উত্তরে আর কিছু বললো না,নিজের কেবিনে এসে বসে পড়লো,ব্রেক টাইম ও শেষ
শান্ত কাশতে কাশতে ওর কেবিনে বসে পানি খেয়ে কাজে মন দিলো
আজ অফিস ছুটি হতেই আহানা এক মিনিট ও দাঁড়ালো না,হাঁটা ধরলো
শান্ত বাইক নিয়ে এসে দেখলো আহানা কোথাও নেই,চিন্তিত হয়ে আহানাকে কল করলো সে
আহানা ততক্ষণে বাসার কাছে চলে এসেছে,ফোন ধরে বললো বাসায় পৌঁছে গেছি
.
পৌঁছে গেছি মানে?তুমি আমার জন্য ওয়েট করলে না কেন?একা একা চলে গেলে কেন?বেয়াদব!
শান্ত ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো আহানা কল কেটে দিয়েছে ততক্ষণে, রেগে বাইকের স্পিড বাড়িয়ে যাচ্ছে সে আহানার বাসার দিকে

বাসায় ফিরে আহানা কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়লো,শান্তকে এড়িয়ে চলা খুব কঠিন,নিশ্চয় এখন হনহনিয়ে এদিকে আসতেসে!একদম কড়া করে দুচারেক কথা শুনিয়ে দিব যেন আর আমার কাছে না আসে,ভাবতে ভাবতে দরজার দিকে চেয়ে ঘুমিয়ে গেলো সে
পরেরদিন সকালে আহানা উঠে পড়ে সবার আগে দরজার দিকে তাকালো,দরজা যেভাবে বন্ধ রেখেছিল ঠিক সেরকমই আছে,শান্ত আসেনি,যাক একদিনের ইগনোর কাজে লেগেছে তাহলে
বাসা থেকে বেরিয়ে মিষ্টিকে পড়াতে আসলো সে,মিষ্টি কান্না করতে করতে অংক করতেসে খাতায়
আহানা চমকে বললো কি হয়েছে মিষ্টি?কাঁদতেসো কেন?কি হয়েছে তোমার?
.
মিষ্টি আহানাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বললো” আমার santur এক্সিডেন্ট হয়েছে”
আহানা সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো,হাত পা কাঁপতেসে তার,কেঁপে কেঁপে বললো কি হয়েছে উনার,উনি কোথায়!
.
হসপিটালে?
.
কথাটা শুনে আহানা মাথায় হাত দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো,শান্তর বাসার দরজায় নক করতে লাগলো বারবার
রিয়াজ শান্তর জন্য বারতি পোশাক নিতে এসেছিল,সে দরজা খুলতেই আহানাকে দেখে চমকে বললো তুমি?
.
প্লিস ভাইয়া বলুন না শান্ত কোথায়,কোন হসপিটালে?
.
শান্ত ওয়েলকেয়ার হসপিটালে,আমি যাচ্ছি,আমার সাথে চলো
আহানা চোখের পানি আটকাতে পারতেসে না
জীবনে আপন বলতে কেউ ছিল না তার
শান্তকে সবচেয়ে আপন মনে হতো আর সেই শান্তর এক্সিডেন্ট হয়েছে সেটা সে এখন জানলো
হসপিটালে এসেই দৌড় দিলো সে,কেবিন নাম্বার জেনে নিয়ে পাগলের মত খুঁজতে লাগলো শান্তকে
অবশেষে সেই কেবিনে এসে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখলো শান্ত নওশাদের সাথে কথা বলতেসে,আহানাকে দেখে কথা থামিয়ে ওর দিকে তাকালো সে
আহানা দৌড়ে এসে শান্তর হাত ধরে ওর পুরো শরীর পরোক করে নিলো
কাঁদতে কাঁদতে বললো আপনি ঠিক আছেন তো,আপনার কিছু হয়নি তো?কখন এক্সিডেন্ট হয়েছে?আমাকে জানান নি কেন?কি হলো কথা বলতেসেন না কেন আপনি?
শান্ত চুপ করে থেকে আহানার পাগলামো দেখতেসে
আহানা শান্তর কথার উত্তর না পেয়ে নওশাদকে ধরলো,নওশাদ বললো আহানা বসো এখানে আমি বলতেসি,ঠাণ্ডা হও,বেশি কিছু হয়নি
বাইক অন্য একটা বাইকের সাথে সংঘর্ষে দুটো বাইকই উল্টে গেছিলো,আল্লাহ মাফ করেছে বেশি কিছু হয়নি,জাস্ট পায়ে আর হাতের কুনুইতে চোট পেয়েছে শান্ত
.
তাহলে বেডে ভর্তি কেন উনি?
.
পায়ে ব্যান্ডেজ করেছে আর হাতে, ডাক্তার বলেছেন একদিন হাত পা নাড়ানো যাবে না তাই এখানেই রুম বুক করিয়েছি আমরা,এখন ঠিক আছে,চিন্তা করিও না
.
নওশাদ মুচকি হেসে রিয়াজকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে
আহানা চোখের পানি মুছে শান্তর পাশে বসে ঠাস করে চড় মেরে দিলো ওর গালে
শান্ত কিছু বলতে যাবে তার আগেই চড় খেয়ে হতভম্ব হয়ে গেছে সে
গালে হাত দিয়ে চোখ বড় করে বললো এখন মারলে কেন?
.
আপনি এত জোরে বাইক চালাতে গেছেন কেন?আর আমাকে খবর দেওয়া জরুরি ছিল না?আমি আপনার স্ত্রী! আপনার এক্সিডেন্ট হয়েছে সেটার জানার অধিকার নেই আমার?নওশাদ,রিয়াজ ভাইয়াকে জানাতে পেরেছেন আমাকে জানালে কি হতো?বেয়াদব কোথাকার,দেখি আমি দেখবো কিরকম চোট পেয়েছেন
আহানা উঠে শান্তর গায়ের টি-শার্ট খুলে নিলো
.
আরে আহানা কি করতেসো!
.
আহানা শান্তর হাত উল্টিয়ে দেখলো কুনুইতে ব্যান্ডেজ করা,পিঠে কোনো চোট নেই
ব্রু কুঁচকে আবারও টিশার্টটা পরিয়ে দিলো ওকে
.
তুমি জানলে কি করে যে আমার এক্সিডেন্ট হয়েছে??
.
মিষ্টি বলেছে,নাহলে তো জানতামই না,আমি ভাবতাম আমি শুধু এই বিয়ে মানি না আপনি মানেন,কিন্তু আজ সিউর হলাম আপনিও এই বিয়ে মানেন না
মানলে,আমাকে স্ত্রী মেনে থাকলে আমাকে একটিবার জানাতেন,আমাকে এরকম পাগলের মত ছুটতে হতো না,আপনি খুব খারাপ একটা লোক
.
শুনো,আমার ফোনে এমনিতেও চার্জ ছিল না,৩%ছিলো যখন আমি রোডে বসে নওশাদকে কল করতেসিলাম,তারপর ফোন অফ হয়ে গেছে,নওশাদকে বলতে গেসিলাম তোমাকে জানাতে তখন রাত ১০টা বাজে,তাই আর বলিনি,সামান্য একটা ব্যাপার,তুমি যেভাবে কাঁদতেসো যেন আমার হাড় ভেঙ্গেছে আর হাঁটতে পারবো না কোনোদিন
.
চুপ!এসব আনাব সানাব কে বলতে বলছে আপনাকে?? একটু চুপ থাকুন এখন
এবার বলেন কিছু খেয়েছেন?
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৪৭

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৪৭
#Writer_Afnan_Lara
?
শান্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে
মন খারাপ করে বললো মা??দেখতেসো তো?
তুমি বলে দাও কি করবো আমি,এই মেয়েটা আমার টাইপের না তাও কেন ওর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না,কেন ওকে না দেখলে আমার বুকটা পুড়ে যায়,আমি ওকে ভালোবাসি না মা,বাসি না কিন্তু।।।
ভাবতে ভাবতে ঔষুধ নিয়ে বাসায় ফিরে আসলো সে
দরজায় নক করলো ৩/৪বার কিন্তু আহানা দরজা খুলতেসে না,বাধ্য হয়ে চাবি দিয়েই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো সে
বেডরুমে খাটের পাশে ফ্লোরে বসে আছে আহানা,দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে সে
শান্ত হাঁটু ভেঙ্গে নিচে বসে আহানার কপালে হাত দিলো তারপর গলায়,জ্বর তো জ্বরের জায়গাতেই আছে
ওকে ছেড়ে যাওয়ার শক্তি/মনোবল দুটোই আসতেসে না তাও যেতে হবে
.
শান্ত আহানাকে নাড়িয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললো
আহানা চোখ ডলতে ডলতে বললো ঔষুধ রেখে যান আমি খেয়ে নিব
.
না,তুমি খাবে না আমি জানি,আর নিচে বসেছো কেন?জানো না ফ্লোর অনেক ঠাণ্ডা? বিছানায় এসে বসো
.
না,আমি আমার টাকার কেনা বিছানায় শুবো,অন্য কারোর না
.
মেজাজ গরম করবা না একদম!!
.
শান্ত আহানার হাত টেনে বিছানায় এনে বসালো,রান্নাঘর থেকে ভাত তরকারি প্লেটে নিয়ে আহানার পাশে বসে লোকমা তুলে ওর মুখের সামনে ধরলো
আহানা বাধ্য হয়ে খাচ্ছে কারণ সে জানে শান্ত ওর কথা শুনার মতো ছেলে না
না খেলে শান্ত ও এখান থেকে নড়বে না
ঔষুধ খাওয়া শেষে শান্ত বাই বলে চলে গেলো
আহানা দরজা লাগিয়ে ছিটকিনিও লাগিয়ে নিলো,শান্তকে বিশ্বাস নাই,পরে যদি আবার আসে
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
শান্ত তার বাসায় ফিরে বারান্দাতে দাঁড়িয়ে আহানার বাসার দিকে চেয়ে আছে সেই কখন থেকে
চোখে এক বিন্দু ঘুম ও নেই তার,বারবার একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক করতেসে যে আহানা ঠিক আছে তো?
ওর কিছু দরকার হয়নি তো!
সিগারেট আজ ১২টার জায়গায় ১৫টা খাওয়া হয়ে গেছে
নাহ আর এভাবে থাকা সম্ভব না
শান্ত বিছানা থেকে টিশার্টটা নিয়ে পরে নিলো তারপর জ্যাকেটটা পরতে পরতে বেরিয়ে পড়লো বাসা থেকে
নওশাদ আর বাকি সবাই ঘুমাচ্ছে নাক ডেকে
.
শান্ত আহানাদের বাসার দোতলায় এসে লকে চাবি ঢুকিয়ে ঘুরালো তাও দরজা খুললো না,বুঝতে বাকি নেই যে আহানা ছিটকিনিও লাগিয়েছে
মন খারাপ করে শান্ত বাসা থেকে বেরিয়ে চলে যাওয়ার সময় বারান্দার দিকে চোখ পড়লো তার
সেই মইটা খুঁজে এনে বারান্দায় উঠে আসলো সে,এখন কথা হলো গিয়ে বারান্দার দরজাও লক
কি একটা ঝামেলা!
.
পরে শান্তর মনে পড়লো তার কাছে বাসার যে চাবিটা আছে তাতে বারান্দার এক্সট্রা চাবিও আছে
তাড়াতাড়ি পকেট থেকে চাবিটা নিয়ে বারান্দার দরজা ও খুললো সে,এটাতে আর ছিটকিনি লাগায়নি আহানা
ভিতরে এসে বেডরুমের দিকে গিয়ে দেখলো আহানা নিচে ফ্লোরে গুটিশুটি দিয়ে ঘুমাচ্ছে
এই মেয়েটা এত নাছোড়বান্দা!বিছানায় শুলে যেন টাকা দিতে হবে আমাকে
.
শান্ত কাছে এসে নিচে বসলো
আহানার কপালে হাত দিয়ে জ্বর চেক করলো,আগের থেকে একটু বেড়েছে,বাড়বেই তো
আহানা এরকম ঠাণ্ডা ফ্লোরে শুয়ে আছে,জ্বর তো কত জোরে বাড়বে!
.
শান্ত আহানাকে আস্তে করে কোলে তুলে নিলো
আহানা ঘুমের ঘোরে ওর জ্যাকেট মুঠো করে ধরে বললো শান্ত এসেছো!ভালো করেছো,আর যেও না কোনোদিন
.
শান্ত আহানাকে বিছানায় নিয়ে গেলো,চাদরটা টান দিয়ে ওর গায়ে জড়িয়ে দিলো
আহানা শান্তর হাত মুঠো করে ধরে ঘুমাচ্ছে,আর বিড়বিড় করে কিসব বলে যাচ্ছে
শান্ত আহানার পাশে বসে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো
কপালে পোটি দেওয়া উচিত,তবে পোটি দিতে গেলে ও জেগে যাবে আর গোটা মহল্লা মাথায় করবে,আমাকে তো বাসা থেকে বেরই করে দিবে
রাত ২:৩০বেজে গেছে
শান্ত কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে,চোখ খুলে দেখলো তার মাথা আহানার মাথার সাথে লেগে আছে আর আহানার হাতটা ওর বুকের উপর
ঘুমের ঘোরে আহানা ওকে কতটা কাছে টেনে নিয়েছে
শান্ত সাথে সাথে সরে গেছে
আহানা নড়ে উঠে আরেকদিকে ফিরে গেলো
চাদরটা ভালো করে ওর গায়ে টেনে দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে চলে গেলো শান্ত তার বাসার দিকে
আর রিস্ক নেওয়া ঠিক হবে না,আহানা কাঁচা গিলেই ফেলবে আমাকে এখন এসময়ে এখানে দেখলে
বারান্দা দিয়ে বেরিয়ে মই দিয়ে নিচে নেমে চলে গেলো সে
বাসায় ফিরে এপাশ ওপাশ করে ১/২ঘন্টা ঘুমালো এর বেশি না
ভোরে ঘুম থেকে উঠে আহানার বাসায় যাওয়ার সময় পড়লো সূর্যর সামনে
ওকে মর্নিং ওয়াকের বাহানা দিয়ে কোনোমতে আহানার বাসায় চলে আসলো সে
এবারও সেই বারান্দা দিয়েই বাসায় ঢুকলো
৬টা বাজে তখন,আহানা এখনও ঘুমাচ্ছে,শান্ত আসার সময় মিষ্টির মাকে বলে দিয়েছে আহানার শরীর খারাপ সে আজ আসতে পারবে না
রুমে এসে আহানার পাশে বসলো সে,আহানাকে দেখে যেন মনে শান্তি পেলো
জানালা দিয়ে বাইরের সিগ্ধ আলো আহানার সারা গায়ে এসে পড়েছে,এটাকে বলে ভোর বেলার আলো,রোদের আলো নয়
এই আলোয় একটা মিষ্টি ভালো লাগা কাজ করে তাই হয়ত মানুষ এসময়টায় হাঁটতে বের হয়
আহানা হাত পা ছড়িয়ে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন, তার সামনে বসে কেউ একজন ওকে খুব নিখুঁত ভাবে দেখে যাচ্ছে তা তার অজানা
শান্ত আহানার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে,লিপস্টিক নেই,নির্জীব ঠোঁটজোড়া,উসকো খুসকো
তাও শান্তর কাছে এই ঠোঁটটাই সবচাইতে বেশি সুন্দর লাগতেছে
আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁটটা স্পর্শ করলো সে
হাত কাঁপতেসে অনবরত,কিসব ভেবে এক ঝটকায় হাত সরিয়ে ফেললো সে
উঠে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো
.
৭টার দিকে আহানা চোখ খুলে নিজেকে বিছানায় পেয়ে লাফ দিয়ে উঠে পড়লো
আমি তো ফ্লোরে শুয়েছিলাম তাহলে এখানে এলাম কি করে?
বিছানা থেকে নেমে গিয়ে মেইন দরজার কাছে আসলো সে
মেইন দরজা ও তো বন্ধ,তার মানে শান্ত আসেনি
আহানা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বারান্দার দিকে তাকালো একবার,বারান্দার দরজা খোলা
দৌড়ে বারান্দায় এসে নিচে তাকিয়ে দেখলো একটা মই,তার মানে শান্ত?
.
আহানা?এত খুঁজতে হবে না আমি রান্নাঘরে
.
আপনি?এখানে এলেন কি করে আমি তো বারান্দার দরজা লক করেছিলাম
.
আমার কাছে বারান্দার চাবি ও ছিলো
.
আর আমি তো ফ্লোরে শুয়েছিলাম,আপনি আমাকে বিছানায় এনেছেন?
.
না তো,তুমি বিছানায় শুয়ে ছিলে?
.
মিথ্যা বলেন কেন?
.
মিথ্যা কেন বলবো,তোমাকে টাচ করার চেয়েও আমার কাছে আরও অনেক ভালো কাজ আছে বুঝছো
.
আহানা রান্নাঘরে এসে দেখলো শান্ত রুটি বানাচ্ছে
.
শান্ত আটা নিতে নিতে বললো আমি মিষ্টির আম্মুর সাথে কথা বলে নিয়েছি,আজ পড়াতে হবে না,আজ তুমি রেস্ট নাও
.
এরকম পানি দিসেন কেন?এত পাতলা দিয়ে তো কাই হবে না
আরও আটা দিন
.
না,আমি এটা ইউটিউব দেখে শিখেছি,তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো
.
আবার ইউটিউব?আমার আর খেতে হবে না তাহলে
আপনি যান আমি বানাবো, সরুন!
.
নাহ,ডিল ইজ ডিল,কাল তুমি নাস্তা বানিয়েছো আজ আমি
যাও এখন
আহানা বিরক্ত হয়ে চলে গেলো
শান্ত ঐ পাতলা আবরণটা তাওয়ায় ঢেলে দিলো
বাহ সিম্পল রুটি রেডি,বেলতেও হয়নি, গোল ও হয়ে গেসে,শান্ত ইউ আর গ্রেট!?

আহানা ফ্লোরে বসে রান্নাঘরের দিকে চেয়ে আছে
শান্ত নাস্তা বানিয়ে বাইরে এসে দেখলো আহানা নিচে বসে আছে
রেগে এক ধমক দিয়ে বললো তোমাকে যে বারবার বলি ঠাণ্ডা ফ্লোরে বসিও না কথা কানে যায় না তোমার?
.
আমি আপনার বিছানায় বসবো না,শুবো ও না
.
শান্ত খাবার বিছানায় নিয়ে রেখে ওর দিকেই আসতেসে জ্যাকেট খুলতে খুলতে
.
আহানা যেতে যেতে দেয়ালের সাথে লেগে গেলো
শান্ত জ্যাকেট খুলে আহানার গায়ে দিয়ে ওকে নিচ থেকে কোলে তুলে নিলো
.
এই আপনার সাহস তো কম না,ছাড়ুন আমায়,এটা কিরকম অসভ্যতামি,আপনি বলছেন আমাকে টাচ করবেন না কখনও
.
শান্ত যেন আহানার কোনো কথায় শুনতেসে না ওকে বিছানায় এনে নামালো
.
আমি বসবো না মানে বসবো না
.
আহানা বেড থেকে নিচে নেমে যেতে নিতেই শান্ত এবার ওর হাত টেনে হিঁছড়ে বেডের সাথে চেপে ধরলো
.
আপনি এমন করতেসেন কেন,আমি কান্না করবো এখন
.
শান্ত হাত চেপে ধরতে ধরতে বললো করো কান্না,আই ডোন্ট কেয়ার!
কথাটা বলে আহানার গায়ের ওড়নাটা টেনে নিয়ে নিলো সে,এরপর সেটা দিয়ে হাত বেঁধে দিলো খাটের পায়ার সাথে

আহানা চুপ করে শান্তর দিকে চেয়ে আছে
শান্ত খাবার নিয়ে ওর পাশে বসলো
শান্ত থেকে চোখ নামিয়ে রুটির দিকে তাকালো আহানা
রুটি দেখে ওর তো চোখ কপালে,যেমন গোল তেমনই সুন্দর
.
এভাবে তাকাতে হবে না হুহ!ইউটিউব দেখে যেমন সব উৎপাত করা যায় তেমনি মাঝে মাঝে পারফেক্ট ও করা যায়,নাও হা করো
.
খাবো না আমি,আমার হাতের বাঁধন খুলেন বলতেসি
.
খুলবো না,তুমি আমার একটা কথাও শুনতে চাও না,বাঁধবো না তো কি করবো আমি?চুপচাপ খাও তাহলে হাতের বাঁধন খুলে দিব
.
খাব না আমি!
আহানা নিজের দাঁত দিয়ে হাতের গিট্টু খুলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে
হঠাৎ বুকের ভেতর কেমন যেন করতেছে,সাথে সাথে ওড়না থেকে দাঁত উঠিয়ে মুখটা ঘুরালো সে,শান্ত ওর খুব কাছে এসে গেছে ততক্ষণে,এতটা কাছে এর আগে কখনও আসেনি
আহানা হতভম্ব হয়ে গেছে এমনটা দেখে
শান্ত ফিসফিস করে বললো খেয়ে নাও নাহলে কিছু বাকি রাখবো না যেটা বাঁধা থাকবে না
.
আহানা বললো ঠিক আছে,কিন্তু সে নিজের হাতে খাবে
শান্ত তাই হাতের বাঁধন খুলে দিলো
আহানা ব্রু কুঁচকে একটা রুটির অর্ধেক খেলো,আর পারবে না গিলতে,আর এক টুকরা খেলেই বমি হয়ে যাবে
আহানা ঔষুধ খেয়ে দুম করে শুয়ে পড়লো আবার
শান্ত রান্নাঘরে এসে চা বানাচ্ছে
ইউটিউব দেখে বানাচ্ছিলো হঠাৎ কল আসলো বাবার
বাবা নাকি একটা কাজে ঢাকায় এসেছে এখন শান্তর ফ্ল্যাটের দিকে আসতেসে,বারবার করে বলে দিয়েছে শান্ত যেন সময় করে আসে
শান্ত ঠিক আছে বলে ফোন পকেটে ঢুকালো
কি ব্যাপার বাবা কেন ডাকলো,কি এমন জরুরি কাজ! যে আমাকে সময় নিয়ে যেতে হবে?
চা নিয়ে এসে আহানাকে দিয়ে সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লো বাসা থেকে
আহানা বুঝে উঠতে পারলো না শান্ত হুট করে এভাবে চলে গেলো কেন

শান্ত বাসায় ফিরে বুয়াকে দিয়ে পুরো ফ্ল্যাট গুছিয়ে নিলো
বাবা ৩০মিনিটের ভিতরেই বাসায় এসে পড়লো,তবে একা না সাথে এলিনা আর তার বাবা মা ও আসছে
শান্ত ওদের দিকে তাকিয়ে আন্দাজ করলো যে কি ঘটতে চলেছে
বাবা চায়ে চুমুক দিয়ে পুরো বাসাটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন,হেসে বললেন কতদিন পর এসেছি এখানে
চা খেতে খেতে বললেন এলিনা আমাকে সব বলেছে ও যে তোকে ভালোবাসে,এবং তার বাবা মাও রাজি তবে এক শর্তে
সেটা হলো তোর একটা ভালো জব হওয়া লাগবে,তাই আমি তোকে আমার অফিসে বসিয়ে দিব তুই তোর temporary জবটা ছেড়ে দিস এখন
বিয়ে কদিনেই সম্পূর্ন হয়ে যাবে,ব্যস হয়ে গেলো
.
শান্ত চুপ করে থেকে বাবার হাত ধরে সবাইকে এক্সিউজ মি বলে বেরিয়ে আসলো করিডোরের দিকে
.
কি ব্যাপার?আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিস কেন?তোর কি বিয়েতে মত নেই?
.
না নেই,আমার মত থাকলে তো হতোই,তুমি উনাদের ডাকার আগে আমার সাথে একবার কথা বলে নিতে পারতা
.
এলিনা তোর ভালো বান্ধুবী,তাহলে কি সমস্যা? তুই কি অন্য কাউকে পছন্দ করিস নাকি?
.
বাবা চলো আমার সাথে
শান্ত বাবাকে নিয়ে সোজা আহানার বাসার সামনে আসলো
আহানাকে কল করে নিচে আসতে বললো
আহানা শান্তর বাবার কথা শুনে মাথায় ঘোমটা দিয়ে তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে আসলো
.
আসসালামু আলাইকুম
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম
.
সালাম নিয়ে বাবা শান্তর দিকে তাকালেন
এই মেয়েটা কে??আর তুই আমাকে এখানে এনেছিস কেন?
.
বাবা ও হচ্ছে আহানা,আহানা ইয়াসমিন,মনে আছে তোমার?
.
বাবা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মনে করার চেষ্টা করলো তারপর চোখ বড় করে বললেন আহানা?তোমার মা যার ভরণপোষনের দায়িত্ব নিয়েছিল?
.
হ্যাঁ,এটাই সেই আহানা
.
বাবা চমকে আহানার দিকে তাকিয়ে আছেন
এরপর শান্ত যা বললো তার জন্য তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না
শান্ত বললো আহানা ওর স্ত্রী
.
এসব কি বলতেছিস তুই শান্ত?
তোর স্ত্রী মানে?বিয়ে হলো কবে? আর কিভাবে?তুই আহানাকে পেলিই বা কোথায়?বিয়ে কেন করলি তাও আমাকে না জানিয়ে
.
শান্ত নিচের দিকে তাকিয়ে আছে
.
বাবা শান্তকে আপাতত আর কিছু বলবেন না ভেবে নিলেন কারণ বিয়ে হয়ে গেছে এখন চিল্লাইলেও লাভ নাই
এসব ভেবে তিনি আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতেসেন
পরনে তার হালকা গোলাপি রঙের সুতির জামা,চোখে মুখে অসুস্থতা ফুটে উঠেছে
আহানাকে দেখলে রুপের ফুলকি না পড়লেও মায়ার ঠেলাঠেলিতে চোখ ফেরানো যায় না,মায়া জিনিসটা সৌন্দর্যকেও হারিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে
মুচকি হেসে হাত নিয়ে আহানার মাথায় রাখলেন তিনি
তারপর বললেন মা গিয়ে চা বানাও তো
দেখি আমার পুত্রবধূর হাতের চা কেমন
.
আহানা খুশি হয়ে চলে গেলো
.
শান্ত ভূত দেখার মতন বাবার দিকে তাকিয়ে আছে,মনে মনে ভাবতেসে মূহুর্তেই বাবা এমন বদলে গেলো কি করে
.
বাবা শান্তর কাঁধে হাত দিয়ে হাঁটা ধরলেন
তা দেনমোহর কত দিয়েছিলি?
.
দদদদদশশ হহহাজাররর?
.
এরকম বেকুবি তোরে করতে কইসে কে?মাত্র ১০হাজার?আমাকে একবার কল করলে কি হতো তোর?তোর মাকে আমি ২০লাখ নগদে দেনমোহর দিয়েছিলাম
আর তুই কিনা তার ৫০%ও দিলি না
মানসম্মান কিছু রাখলি না আমার!
.
আমার কাছে এত টাকা ছিল না বাবা
.
আমি ছিলাম না?একটা কল করলেই ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করে দিতাম আমি,আমাকে বিশ্বাস করতে তোর এত ভাবা লাগে?মনে রাখিস তোর মা চলে যাওয়ার পর একা হাতে আমি তোকে বড় করেছি, তোর লালন পালনে রেণু কোনো ভূমিকা পালন করেনি,আর তুই কিনা এতবড় একটা ঘটনার কথা আমার থেকে লুকালি?আজ এলিনার পরিবারকে নিয়ে না আসলে হয়ত আমি এটা জানতাম ও না
.
বাবা তুমি বিয়েটা মানতেসো?
.
শুন শান্ত!এটা আমার সিদ্ধান্ত না,এটা তোর মায়ের সিদ্ধান্ত
তোর মা চেয়েছিলো আহানাই যেন ভবিষ্যতে তোর বউ হয়,আমাকে বলেও গেছিলো,আমার একদম মনে ছিল না এই কথাটা
আর এখন আহানাকে দেখে স্পষ্ট সব মনে পড়ে গেলো আমার
আমার উচিত ছিল আহানাকে খুঁজে বের করার আর সেখানে তুই খুঁজে বের করেছিস আই এম সো প্রাউড অফ ইউ মাই বয়
একেই বলে মেড ফর ইচ আদার,তোর মায়ের ইচ্ছা এভাবে পূরন হবে আমি ভাবতেই পারিনি
.
শান্ত হা করে বাবার দিকে তাকিয়ে থেকে হাঁটা ধরলো,তার মানে আমি যা করেছি তা ঠিক করেছি?
.
হুম,আমাকে আরও আগে জানালে ধুমধাম করে বিয়ে দিতাম তোদের,যাই হোক,আমার একটা মাত্র ছেলের বিয়ে এমন নরমাল ভাবে হতে দিব না আমি
ধুমধাম সব হবে
.
কথা বলতে বলতে শান্ত বাবাকে নিয়ে আহানার বাসায় ঢুকলো
আহানা চা আর বিসকুট এনে রেখেছে বিছানার উপর
শান্ত মাথা চুলকাচ্ছে লজ্জায়,কারন বাসায় একটা বেড ছাড়া একটা চেয়ারও নেয় যে বাবা বসবে
.
বাবা বেডরুমের বেডটার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন এটা তুই কিনছিস তাই না?তোর চয়েস চিনি আমি,যাই হোক চা টা অনেক ভালো হয়েছে আহানা মা
এখন তুমি রেস্ট নাও তোমার তো মনে হয় শরীর খারাপ
.
শান্ত বললো হুম,জ্বর ওর
.
আচ্ছা আমি তাহলে যে আগুন লাগাইসি সেটা নিভিয়ে আসি
.
বাবা তুমি প্লিস এলিনাকে বলিও না আমি যে বিয়ে করেছি,আমি ব্যাপারটা আপাতত চাপা রাখতে চাই
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৪৬

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৪৬
#Writer_Afnan_Lara
?
কেন লজ্জা করবে?তুমি এখন আমার বউ,এখন তো লজ্জা লাগারই কথা না,অবশ্য তখনও বউ ছিলে,পাতানো বউ,তখন সাহস দেখাতে পেরেছি আর এখন তো!!
.
এই খবরদার,একদম ঠোঁট কেটে কুচিকুচি করে মরিচখোলা দিয়ে দিব আমি
.
তোমার চিন্তাধারা এতটা উপরে কেন বলোতো?আমি?
আমি শাহরিয়ার শান্ত কিনা তোমায় কিস করবো??
ঠোঁট দেখছো তোমার?আমি যারে কিস করবো তার ঠোঁটে এক গাদা লিপস্টিক থাকবে
তোমার ঠোঁটে তো লিপস্টিক নাই,জীবনে দাও ও নাই,হুদাই ন্যাচারাল পিংকিস একটা রঙ,এটা দেখে আমার কিস করার ইচ্ছাও জাগবে না বুঝলা??
.
হইসে,কিস করবেন না ঠিক আছে তাই বলে এত কথা শুনানোর কোনো মানে হয় না,আর আমিও আপনাকে কিস করতে কেনোই বা যাবো?আপনার ঠোঁট দেখছেন?সারাদিন সিগারেট আর সেন্টার ফ্রেশ খেয়ে খেয়ে কি অবস্থা বানাই রাখসেন
.
আমার ঠোঁট একদম ঠিক আছে,আমি ভার্সিটির ক্যামপাসে দাঁড়িয়ে ঠোঁটে হাত বুলালে মৌমাছির মত ১০/১৩টা মেয়ে এসে সামনে দাঁড়াবে জানো তুমি?
.
হ্যাঁ,শুধু দাঁড়াবে,আর কিছু না,ঐ ঠোঁট ছোঁয়ার ইচ্ছা কারোর জাগবে না
.
নিচতলা এসে গেছে আহানা বেরিয়ে চলে গেলো লিফট থেকে
গ্যারেজ থেকে শান্ত বাইক নিয়ে আসলো রোডের কাছে
আহানা চুপচাপ উঠে বসলো
.
আহানা?
.
কি?
.
তোমাকে আমি ছাড়া আর কেউ কিস করেছে কখনও?
.
না,?কেন বলুনতো
.
এমনি
.
আপনি তো এলিনাকে করেছেন আমি ১০০% সিউর,আমাকে দলিল দেখালেও বিশ্বাস করবো না
.
তুমি তো বললে আমার যে ঠোঁট আমাকে কেউ কিস করবে না তাহলে?
.
তোহহ?আপনি তো বললেন আপনি এমন কোনো মেয়েকে কিস করবেন যার ঠোঁটে এক গাদা লিপস্টিক থাকবে,আর এলিনা তো ২গাদা লিপস্টিক দিয়ে আসে রোজ,তার মানে ওরে করছেন নিশ্চয়
.
তোমার সাথে মাঝে মাঝে কথায় পারি না আমি,আওলায় যাওলাই যাই,এত কথার প্যাঁচ কেমনে দিতে পারো
.
কিস টপিক বাদ,আমিও না কোথাকার কোন ছেলের সাথে কিস নিয়ে আলোচনায় মেতেছি
.
হুহ ভেরি ফানি,কোথাকার কোন ছেলে মানে?আমি তোমার পাতানো বর ছিলাম ওকে?আর এখন রিয়েল বর
এমনকি আমি তোমাকে কিস ও করেছি ছোটবেলায়,ওকে?
সো আজ আমি কোথাকার কেউ না,এখন আমি তোমার লিগালি হাসবেন্ড,আর একদিন কোথাকার বললে পানিতে চুবাবো

চা নিয়ে দুজনে বসে আছে দূরের এক গাছতলায়,মানে সেই লেকটাতে যেটাতে কদিন আগেই এসেছিলো যখন তারা দুজনেই অবিবাহিত ছিল!
তবে আজ আর পানিতে পা চুবাইনি
কারণটা হলো আহানার গা গরম,মানে হালকা জ্বর,শান্ত ওর হাত ধরতেই টের পেয়েছে তাই আর পানিতে পা চুবায়নি,এমনি একটা গাছের নিচে ফাঁকা রোডে বসে আছে দুজনে,হাতে চায়ের কাপ,কাপ থেকে ধোঁয়া উঠতেসে
আহানা বড় রোডটার দিকে তাকিয়ে আছে,সে রোড দিয়ে বড় বড় গাড়ী যাচ্ছে,একবার ট্রাক,একবার বাস,একবার প্রাইভেট কার
শান্ত হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেছে
আহানা চারিদিক চোখ বুলিয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে ব্রুটা কুঁচকিয়ে বললো কি হয়েছে আপনার?
.
কিছু না,আমি ঔষুধ কিনে দিয়ে যাব,খাবার খেয়ে ওটা খেয়ে নিবা,আমি কিন্তু পরে এসে ঔষুধের পাতা চেক করবো,না খেলে তোমার খবর আছে,তুমি তো আবার ঔষুধ খেতে ভুলে যাও
.
আপনার কি ধারনা?সামান্য এই জ্বরের জন্য আমি ঔষুধ খাবো?আর কাজ নাই আমার
.
তুমি খাবে না তোমার স্বামী খাবে,তুমি নিজের একটুও যত্ন নাও না
.
ঢং করতে হবে না,আপনি তো নিজের খুব যত্ন নেন তাই না?তাই তো ডেইলি ১২টা করে সিগারেট খান
.
১২টা খেলে কিছু হয় না,আর আজ ১১টা খাইসি
.
শোয়ার আগে আরেকটা খাবেন,জানি আমি
.
তো কি হয়েছে,কিছু তো হয় না এটাতে,বরং তোমার জ্বর হলে তুমি দূর্বল হয়ে যাবা,অফিস আসতে পারবা না,তারপর তোমাকে অফিস থেকে বের করে দিবে
.
হুম,ঠিক আছে খাবো
.
শীত লাগতেসে?আমার জ্যাকেটটা নাও
.
আহানা চোখটা বড় করে বললো এত কেয়ার?
.
কিসের কেয়ার?আমার গরম লাগতেসে বলে তোমাকে দিচ্ছি,বাসায় গিয়ে দিয়ে দিবা,এখন জ্যাকেট খুলে হাতে রাখাটাও ঝামেলা তাই তোমাকে দিতেছি,অন্য কোনো কারণ নেই
.
লাগবে না,আপনার জ্যাকেট আপনি আপনার কাছে রাখেন
.
আহানা চলো আজ সারারাত আমরা ঢাকার রাস্তায় কাটাই,শুধু হাঁটবো,ক্লান্ত হলে গাছের নিচে বসবো
.
পারবো না,আমার শরীর খারাপ লাগতেসে আমি বাসায় যাবো
.
?ওকে
.
বাসায় ফিরে শান্ত বাইক নিয়ে চলে যেতে নিতেই দাদা ডাক দিলেন
.
আল্লাহ জানে আবার কেন ডাকতেসে
আসসালামু আলাইকুম দাদা!
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম,তা শান্ত কই যাও তুমি?
.
আমি আসলে, ইয়ে আসলে ডিম আনতে যাই
.
আরে ডিম তো আমাদের বাসায় ও আছে,তুমি যাও বাসায় আমি অলিকে দিয়ে পাঠাচ্ছি
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
না লাগবে না,ঐ তো দোকান!
.
আরে না যাও
দাদা ঠেলে শান্তকে দোতলায় পাঠিয়ে দিলেন
.
আহানা নিজের রুমে এসে জামা চেঞ্জ করতেসে
.
শান্ত দরজার সামনে এসে দাঁত কেলিয়ে একবার এক দিকে তাকাচ্ছে
দাদা কোমড়ে হাত দিয়ে বললেন কি হলো?তোমার কাছে তো এক্সট্রা চাবি আছে তাহলে বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
.
না চাবি লাগবে না,আমি নক করতেসি
.
কিসের নক,তোমার ওয়াইফ অন্য কেউ তো না,চাবি দিয়ে খুলে ভিতরে যাও
অলি অলি?এদিকে আয় তো মামণি
শান্ত তাও দুবার নক করলো দরজায়,আহানা শুনতে পেলো না কারণ সে বেডরুমের শেষ কোণায় আর শান্তর টোকাটা ছিল আস্তে,দাদার ভয়ে জোরে দিতে পারলো না,শেষে বাধ্য হয়ে চাবি নিয়ে দরজা খুলে ওদিকে তাকাতে তাকাতে ভিতরে চলে আসলো সে
কিসের একটা শব্দ পেয়ে আহানা রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই শান্তকে দেখে ওর চোখ কপালে
সাথে সাথে এক চিৎকার দিলো সে
শান্ত চোখ বন্ধ করে আরেকদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
সরি সরি,আগে থেকে মাফ চাইতেসি
.
আপনি একটা স্টুপিড! একটা মেয়ের বাসায় কেউ নক না করে ঢুকে?আপনার কাছে এক্সট্রা চাবি আছে বলে যা খুশি তাই করবেন?
বেয়াদব,অসভ্য কোথাকার!
আহানা জামা ঠিক করে পরে তারপর ওড়না পরে নিয়ে শান্তর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,চোখ রাঙিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবার দরজায় নক হলো
আহানা গিয়ে দরজা খুলে দেখলো দাদা,অলি আর তার ১৪গুষ্টি সবাই দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপারে
আহানা ওড়না মাথায় দিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো আপনারা?আসেন ভিতরে আসেন
.
আরে কথা সেটা না কথা হলো গিয়ে তুমি এত জোরে চিৎকার করলে কেন,আমরা ভাবলাম চোর ডাকাত পড়লো কিনা
.
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে হাসার ভান করে বললে না আসলে ও নক না করে ঢুকেছে তো তাই আচমকা ভয় পেয়ে গেসিলাম
.
ওহ আচ্ছা,তাই বলে এত জোরে চিল্লাইলা আমাদের তো কলিজা বের হয়ে আসতেছিল আর একটুর জন্য
অলি ডিম ২টা আহানার হাতে ধরিয়ে চলে গেলো সাথে সবাই চলে গেলো
আহানা দরজা লাগিয়ে শান্তর কাছে গিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে রান্নাঘরের দিকে গেলো
.
সরি আহানা!দাদা আমাকে জোর করে বাসায় ঢুকাইছে,নক করতেও দেয় নি,তাও আমি দুবার নক করেছিলাম,তুমি হয়ত শুনতে পাওনি
.
এখন থেকে মনে হচ্ছে ছিটকিনিও লাগাতে হবে,এই আপনার চাবিটা আমাকে দিয়ে দিন বলতেসি,অসভ্য একটা!
.
?সরি তো,আর এমন হবে না,পরে দাদা যদি বলে তোমার চাবি কই তাহলে কি বলবো?
.
যান এখন!
.
আহানা?
.
কিইইইইই?
আহানা চুলায় পাতিল বসিয়ে পিছন ফিরতেই শান্তকে এত কাছে দেখে পিছিয়ে তাকের সাথে লেগে গেলো
ব্রু কুঁচকে রাগী চোখে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বললো কি ব্যাপার?এখানে আমার এত কাছে কি?কাগজটা দেখাবো নাকি?
.
দেখাতে হবে না?শুধু বলতে এসেছি যে আমি তোমায় কিস করবো না কোনোদিন
.
করিয়েন না,যান এখন
আহানা শান্তকে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দিলো
.
শান্ত হেসে দিয়ে পিছন ফিরতেই দেখলো দাদা দাঁড়িয়ে আছে কোমড়ে হাত দিয়ে
ভয়ে ঢোক গিলে আবারও দরজায় নক করলো সে
.
আহানা এবার প্রচণ্ড রেগে গেছে দরজা খুলে কটমট করতে করতে শান্তকে এক কিল বসিয়ে দিলো
শান্ত ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে নিচে বসে পড়লো
.
কি হইসে আপনার?মদ গাঁজা খেয়েছেন?আজ আমার বাসা থেকে নড়তেসেন না কেন আপনি?
.
শুনো আমার এত শখ নাই তোমার এখানে থাকার,দাদা বাইরে পাহারা দিচ্ছে বলেই যেতে পারতেসি না আমি
.
আহানা দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখলো দাদা চেয়ার নিয়ে বসে আছে,কোলের মধ্যে রেডিও
ওয়াজ মাহফিল শুনতেসেন
আহানা আবার দরজা লাগিয়ে মুখ গোমড়া করে শান্তর পাশে বসে গেলো
.
কি?
.
কি?
.
কিছু খাওয়াবা না?খুব খিধা লাগসে আমার
.
ভাত বসাইসি আর ডিম আছে,আর কিছু নাই
.
ডিম দিয়ে খালি ভাত কেমনে খায়,আমি পারবো না হুহ!
.
আহানা একটা ব্যাগ খুঁজে এনে শান্তর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো আলু আনতে
.
আমি?এত রাতে আলু আনতে যাবো?
.
বেশি কথা বললে শুধু নুন দিয়ে ভাত খেতে দিব
.
ফাইন!যাচ্ছি!
শান্ত জ্যাকেট খুলে আহানার গায়ে ছুঁড়ে মেরে বের হলো
.
কই যাও শান্ত?
.
দাদা আলু আনতে যাই
.
ওহ ভালো ভালো যাও
.
শান্ত এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বাজারের দিকে গেলো

শুন রিয়াজ আমি তোকে বলতেসি শান্তর কি যেন হইসে,সে ইদানিং বাসায় কম থাকে
.
আমি কি করবো,আচ্ছা একটা কাজ করলে হয় না?ওরে ফলো করলে হয় তো
.
আগে বাসায় আসুক,কাল ওরে ফলো করবো,কিছু তো একটা লুকাচ্ছে নিশ্চয়!
.
নওশাদ কথা কম বল!!তাড়াতাড়ি তরকারি কিন,বুয়া রেঁধে চলে যাবে তাড়াতাড়ি কর,তোর দ্বারা জীবনে ঠিকমত বাজার হয় না
.
মামা ২কেজি আলু দিন তো
.
নওশাদ আর রিয়াজ চোখ বড় করে পাশে তাকালো,শান্তর গলা শুনে
শান্ত এই অসময়ে আলু কিনতে এসেছে?ও মাই গড!!
.
শান্ত ওদের দেখেনি,আলু কিনে হাঁটা ধরলো
.
আজ এটাই মোক্ষম সুযোগ,চল ওরে ফলো করি
.
শান্ত হেঁটে চলেছে তার পিছু পিছু নওশাদ আর রিয়াজ আসতেসে
শান্ত টের পেয়েছে যে তার পিছু পিছু কেউ আসতেসে,সে এমন রোড দিয়ে যাচ্ছে যেখানে প্রতি ১০মিনিটে একটা লোকের দেখা পাওয়া যায়
আর তাই ব্যাপারটা বুঝার জন্য শান্ত থেমে গেলো
ওমা তার পিছনে যারা আসতেসিলো তারাও থেমে গেলো,পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না আর!
শান্ত ইচ্ছে করে পিছনে তাকালো না
ব্যাপারটা সে বুঝে গেছে
.
আহানা বারান্দায় এসে শান্তর অপেক্ষা করে যাচ্ছে,শান্তকে দেখতে পেয়ে হেসে দিলো কিন্তু একি!শান্ত রোড দিয়ে সোজা হেঁটে ঐদিকে চলে যাচ্ছে কেন!
এই যে শুনুন?এটা আমাদের বাসা,আপনি ঐদিকে কোনদিকে যাচ্ছেন.?আজব তো এই!!দাঁড়ান!!ঐ!
আহানা বোকা বনে গেলো,শান্ত এমন ভাব ধরে গেলো যেন সে আমাকে চিনেই না
আহানা এবার আবারও রোডের দিকে তাকিয়ে দেখলো নওশাদ আর রিয়াজ ও যাচ্ছে শান্তর পিছু পিছু
আহানা জিভে কামড় দিয়ে লুকিয়ে পড়লো সাথে সাথে
রিয়াজ থেমে গিয়ে উপরে তাকালো
.
নওশাদ?আমার মনে হলো আহানার ভয়েস শুনলাম
.
হুম এই বাসায় তো আহানা থাকে,তাহলে শান্ত ঐদিকে কোনদিকে গেলো,আমি তো ভাবলাম আহানার কাছে আসবে আলু নিয়ে,কিন্তু ও তো আলু নিয়ে ঐদিকে চলে গেলো,এখন কোনদিকে গেলো সেটাই তো বুঝতেসি না,এত গলি,কোন গলিতে ঢুকেছে কে জানে
.
খুঁজে না পেয়ে দুজনে আবার বাড়ি ফিরে গেলো

আহানা লুকিয়ে ওদের চলে যাওয়া দেখছে,স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেলে আহানা পাশে তাকিয়ে দেখলো শান্ত একটা মই দিয়ে উপরে আসতেসে
.
আহানা প্রথমে চোর বলে চিল্লাবে ভাবলো পরে টিশার্ট দেখে বুঝলা এটা শান্ত
শান্ত উপরে উঠে ফ্লোরে বসে ফিসফিস করে বললো আমাকে কারা যেন ফলো করতেসিলো,অনেক কষ্টে বাঁচলাম
.
নওশাদ আর রিয়াজ ভাইয়া ফলো করতেসিলো আপনাকে
আমি দেখছি
.
ঐ শয়তানগুলো হাত ধুয়ে আমার পিছে লাগছে,ওরা আজ নয়ত কাল বের করেই ছাড়বে আমার আর তোমার বিয়ে হয়েছে
.
হুমম
.
এখন নাও রান্না করো,আমার পেটের ভেতর সাপ বেজির খেলা শুরু হয়ে গেছে
.
আহানা রান্নাঘরে এসে ডিম দুটো সিদ্ধ করতে দিলো
এরপর আলু কেটে নিলো,ডিম সিদ্ধ হতেই সেটা দিয়ে আলুর তরকারি রেঁধে নিলো,ব্যস হয়ে গেছে
শান্ত ফ্লোরে বসে গেমস খেলতেসে
আহানা এক এক করে খাবার এনে বিছানার উপর রাখতেসে
নিন খাওয়া শুরু করেন
.
হুমম,আসতেসি
শান্ত বিছানায় গোল হয়ে বসে খাওয়া শুরু করে দিলো,আহানা ওর খাওয়া দেখতেসে
.
কি হলো তুমি খাও না কেন,?
.
আমার খিধা নেই
.
শান্ত খাওয়া বন্ধ করে হাত নিয়ে আহানার কপালে রাখলো,জ্বর কম ও না বেশিও না,তবে যে জ্বর আছে তাতে ঔষুধ খেতেই হবে
আমি একদম ভুলে গেসিলাম ঔষুধের কথা এই নওশাদ রিয়াজের চক্করে পড়ে
.
শুনুন,আমি ঔষুধ খাব না,আমার ভাল্লাগতেসে না,একটু ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবো
.
না,আমি তো শুনবো না.তুমি এক কাজ করো তোমার প্লেট এনে দাও আমি তোমাকে খাইয়ে দিব
.
না প্লিস,আমার খিধা নেই,আপনি যান,বললাম না কাল সকালে ঠিক হয়ে যাবে
.
শান্ত যেন আহানার কথাটা শুনলোই না,নিজের খাবার শেষ করে হাত ধুয়ে উঠে চলে গেলো
.
আবার আসবে নাকি আসবে না
আহানা দরজার কাছে এসে বললো আর আসবেন?আমি ছিটকিনি লাগাবো?
.
শান্ত তখন ৭/৮টা সিঁড়ি নেমে গেছে উপরের দিকে চেয়ে বললো আমার জ্যাকেট কোথায়?
.
আহানা বেডরুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো বিছানার উপর
.
ওটাতো বিছানার উপর
.
হুম তাহলে বুঝো আসবো কি আসবো না?
.
শান্ত নিচে নেমে ঔষধের জন্য যাচ্ছিলো পিছন থেকে আবারও দাদা ডাক দিলেন
.
কি দাদা?
.
তুমি না সবে আলুর জন্য গেসিলে?
.
হুম
.
তাহলে আবার এসেছো কখন?আমি তো এখানেই ছিলাম তোমাকে তো যেতে দেখলাম না আর এখন আবার কই যাচ্ছো?
.
আসলে আহানার গায়ে হালকা জ্বর তাই ঔষুধ কিনতে যাচ্ছি
.
ওহ,বেশি শরীর খারাপ কি?আমি তোমার দাদিকে পাঠাবো?
.
না তার দরকার নেই,আমি আছি না
.
ঠিক আছে যাও
.
শান্ত ঔষুধ হাতে নিয়ে আহানার বাসার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
আমি তো আছিই,তবে!একটু দূরে,যেখান থেকে ওর যত্ন নিতে পারবো না,সারারাত একা একা কি করবে,যদি জ্বর বেড়ে যায় ওর?যদি আমাকে দরকার হয়?বাসায় না ফিরলে নওশাদ সূর্য আর রিয়াজ জোঁকের মত ধরবে,কোনদিকে যাবো
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৪৫

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৪৫
#Writer_Afnan_Lara
?
রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটা ধরলো সে
পথেই দেখা হয়ে গেলো শান্তর সাথে
শান্ত দাঁত কেলিয়ে বাইক স্টার্ট দিতেছে আর আহানার দিকে তাকিয়ে হাসতেসে
আহানা ওকে না দেখার ভান করে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে
.
কেউ চাইলে বাইকে উঠতে পারে,সিট কিন্তু খালি!
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো
ভার্সিটিতে আহানার আগেই শান্ত এসে পড়লো,এসে বটতলায় গিয়ে বসলো
.
আহানা গেট দিয়ে ঢুকার সময় দেখলো এলিনা দৌড়ে শান্তর দিকে যাচ্ছে
আহানা তাকিয়ে থেকে দেখতে লাগলো এলিনা কি করে
এলিনা দৌড়ে এসে শান্তকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো
আহানার বুকটা সাথে সাথে কেঁপে উঠলো,ভেতরটা হুট করে খুব জ্বলতেসে,না জানা এক ব্যাথায় আহানার হাত কেঁপে উঠলো
শান্ত এলিনাকে ছাড়িয়ে আহানার দিকে তাকাতেই আহানা চলে গেলো ক্লাসের দিকে
.
শান্ত জানো আমি কি করেছি?
.
কি?
.
আমি বাবাকে তোমার কথা বলেছি,বাবা বলেছে তুমি ভালো জব পেলে আমাদের বিয়ে পাক্কা করে দিবে
.
এখন গিয়ে ক্যানচেল করে দাও!!
.
কেন?কি সমস্যা?
.
আমি তোমাকে লাভ করি না,আর বিয়েও করতে চাই না,এরপর থেকে জীবনে আর আমাকে এসব লাভ- বিয়ে নিয়ে ধরবা না প্লিস!
.
এলিনা চুপ করে থেকে আহানাদের ক্লাসের দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো
আহানা ক্লাসে বসে জানালা দিয়ে শান্তর দিকে চেয়ে আছে
শান্ত তমাল আর সূর্যর সাথে হাসি মজা করতেসে বটতলায় বসে
আহানা নিজের অজান্তেই মুচকি হেসে দিলো ওর দিকে চেয়ে
.
জানিস আহানা আজ নাকি এলিনা শান্ত ভাইয়াকে বিয়ের প্রোপোজাল দিয়েছে,সে নাকি তার বাবাকে রাজিও করিয়েছে
কথাটা শুনে মূহুর্তেই আহানার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো,রুপার দিকে তাকিয়ে বললো তোহ?উনি উত্তরে কি বলেছেন?
.
সেটা তো জানি না,বাট শুনলাম এলিনা নাকি খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেছে,তার মানে নিশ্চয় শান্ত ভাইয়া রাজি হয়েছে!
সবার বিয়ে হয়ে যাবে তার পর তোরেও বিয়া করাই দিবো
.
রুপার কথায় কান না দিয়ে আহানা ব্যাগ নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে চলে গেলো

কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে ফুল কুড়িয়ে সেগুলো ফেলতেসে আবার কুড়াচ্ছে
কিছুক্ষন পর সেগুলো রেখে মাটি থেকে কঙ্কর নিয়ে পানিতে ফেলতে লাগলো এক এক করে
কঙ্কর ফেলা বন্ধ করে ব্যাগ থেকে শান্তর সই করা কাগজটা নিয়ে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন তারপর ছুঁড়ে মারলো দূরে
কাগজটা শান্তর পায়ের কাছে গিয়ে পড়লো,সে নিচ থেকে নিয়ে দেখলো এটা সেই কাগজ যেটাতে সে সই করেছিলো,আর আহানা কাঁদতেসে কেন?
শান্ত এগিয়ে আসতে গিয়েও আসলো না,দাঁড়িয়ে থাকলো
আহানা নিঃশব্দে কাঁদতেসে,শুধু চোখের পানি পড়তেসে,কেন পড়তেসে তা সে জানে না
খালি মনে হচ্ছে বুকের ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে কোনো এক আঘাতে!
শান্ত ওর পাশে এসে বসলো
আহানা শান্তকে দেখে একটু সরে বসলো
.
কি হয়েছে আবার?যতদূর বুঝলাম আমার সম্পর্কিত কিছু হয়েছে নাহলে এই মূল্যবান কাগজ রাস্তায় ফেলতে না
তবে আমি তো কিছু করিনি তাহলে এরকম কাঁদতেসো কেন
.
আপনার জানতে হবে না
আহানা কাগজটা ফেলে রেখেই চলে গেলো একটি বারের জন্য ও থামলো না
শান্ত কিছু বুঝে উঠে পারতেসে না দেখে সোজা রুপার কাছে গেলো রুপা তখন নওশাদের সাথে ক্যামপাসে ঘুরতেসিলো
শান্ত এগিয়ে এসে বললো আহানার কি হয়েছে?তুমি জানো?
.
কই কি হয়েছে?
.
তুমি ওরে কিছু বলছিলা?
.
আমি তো!!ওহহ হ্যাঁ,আমি বলছিলাম এলিনা আপনাকে বিয়ের প্রোপোজাল দিসে,আর আপনি রাজি হয়েছেন,এটা বলছিলাম জাস্ট!
.
কিন্তু আমি রাজি হইনি!
.
এলিনা তো সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে যে আপনি রাজি হয়েছেন
.
মিথ্যাবাদি একটা!
শান্ত বাইকে উঠে সোজা অফিসে গেলো,ভাবলো আহানা সেখানে হতে পারে
কিন্তু অফিস তো বন্ধ,কারণ এখন সকাল ১১টা বাজে,আর অফিস খুলবে দুপুর ১২:৩০এ
তারমানে আহানা বাড়ি ফিরে গেছে
শান্ত এবার সোজা আহানার বাসার দিকে গেলো
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহানা বাসায় ফিরে বেডরুমের এক কোণায় ফ্লোরে বসে বেডের দিকে তাকিয়ে আছে
আমি তো এটাই চাইতাম,উনার থেকে মুক্তি তাহলে এরকম কেন লাগতেসে উফ!
আহানা উঠে গিয়ে বাথরুমের দিকে গেলো,ঝর্না ছেড়ে নিচে বসে রইলো,মাথা ঘুরতেসে
আহানা ডাকটা কানের কাছে এসে বাজতেসে,এটা শান্তর গলা,তবে ওর ডাকটা স্পষ্ট আসতেসে,আমি তো দরজা লাগিয়েছিলাম,তাহলে?
আহানা উঠে ঝর্না অফ করে তোয়ালেটা ভেজা জামার উপর জড়িয়ে বেরিয়ে দেখলো শান্ত ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে
.
আপনি এখানে আসলেন কি করে,আমি তো দরজা!
.
দাদি আমাকে এক্সট্রা চাবিটা দিয়ে দিসিলো ঐদিন,তোমাকে ডাকলাম শুনতেসো না দেখে ঢুকছি
পরে রুমে এসে বুঝলাম তুমি শাওয়ার নিচ্ছো
.
যান এখান থেকে,কেন এসেছেন?
.
কথা বাদ দিয়ে চেঞ্জ করে আসো না হলে ঠাণ্ডা লাগবে তোমার,আমি বারান্দায় আছি
কথাটা বলে শান্ত নিচের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো
.
আহানা ২মিনিট চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে শুকনো জামা একটা নিয়ে পরে বাইরে আসলো
শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলো,আহানাকে দেখতে পেয়ে ভিতরে ফিরে আসলো,নাও ধরো
.
কি?
.
তোমার কাগজ,দরকার পড়বে তোমার
.
কিসের দরকার?আপনার এলিনার সাথে বিয়ে হবে তো এটা আমার আর কিসের দরকার হতে পারে?
.
বিয়ের পরেও যদি তোমাকে টাচ করতে আসি?
.
আহানা মুখটা ছোট করে ভিতরের রুমের দিকে চলে যেতে নিতেই শান্ত ওর হাতের কব্জি ধরে টান দিয়ে বুকে নিয়ে আনলো
শক্ত করে জড়িয়ে রাখলো ওকে,ওর সারা গা ঠাণ্ডা বরফ হয়ে আছে,চুলগুলোর থেকে এক ফোটা পানিও ঝরায়নি মনে হয়
শান্তর বুকে এসে আহানার মনে হচ্ছে সে সকল ক্রোধ, অভিমান ভুলে গেছে
চুপ করে থেকে রুপার কথাগুলো মনে পড়তেই শান্তর জ্যাকেট এক হাত দিয়ে ধরে কেঁদে দিলো,খুব কষ্ট হচ্ছে
.
কেন কাঁদতেসো আহানা?
.
কাঁদতে কাঁদতে আহানা শান্তর প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলো,ছেড়ে দিলো ওর জ্যাকেট
দূরে সরে গেলো তার থেকে
জিভ দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে শক্ত হয়ে বললো কই কাঁদতেসি না আমি
আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন কেন?চলে যান এখান থেকে
কথাটা বলে আহানা নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো
শান্ত ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে একটা কলম খুঁজে ফ্লোরে বসলো কাগজটা নিয়ে
আহানা যে শর্ত লিখেছিলো তার নিচে একটা লাইনের মত খালি জায়গা বাকি আছে,শান্ত সেখানে আরেকটা শর্ত যোগ করে দিলো,কাগজটা রান্নাঘরের চালের বালতির ভিতরে রেখে দরজা লাগিয়ে চলে গেলো
দুপুর ১২টা বাজে
আহানা এবার উঠে দরজা খুলে বের হলো রুম থেকে
রান্নাঘরের দিকে গিয়ে জানালা দিয়ে শান্তর বারান্দার দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষন
এরপর একটা পাতিলে পানি দিয়ে চুলায় বসালো তারপর চালের বালতির ঢাকনা খুললো চাল নেওয়ার জন্য,সেখানে ঐ কাগজটা দেখতে পেলো
আহানা সেটা নিয়ে ফেলতে যেতেই কি মনে করে ফেললো না
তাকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কাগজটা ভাঁজ থেকে খুললো
ভিতরে সব শর্তর সাথে আজ একটা নতুন শর্ত দেখতে পেলো আহানা
শর্তটা হলো-আমি শাহরিয়ার শান্ত আহানাকে রেখে কখনও দ্বিতীয় বিয়ে করবো না
আহানা সেটা দেখে হেসে দিলো,চোখ থেকে পানি পড়তেসে তবে এটা কষ্টের না,নাম না জানা এক ভালো লাগার অশ্রু
কাগজটা ভাঁজ করে আবার কোমড়ে ঢুকিয়ে নিলো সে
এতক্ষণ ধরে শুধু কেঁদেছিল আর এখন শুধু হাসতেসে
ভাত খেয়ে অফিসের জন্য রওনা হলো এবার
অফিসে এসে রুমের ভিতরে পা রাখতেই নিহাল এসে সামনে দাঁড়ালো
.
আহানা?আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই প্লিস না করিও না প্লিস,আমি তোমায় সুখে রাখবো অনেক,আই লাভ ইউ সো মাচ
.
এই নেপাল!!থুক্কু নিহাল!
.
নিহাল পিছন ফিরে তাকালো,শান্ত কম্পিউটারে আর্টিকেল টাইপ করতে করতে বললো সি ইজ ম্যারিড
.
হোয়াট?!বোকা বানাচ্ছো কেন আমাকে?
.
মিসেস আহানা ওখানে না দাঁড়িয়ে থেকে এখানে এসে বসুন,কাজের অভাব নাই,আজ যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে কাজ কমপ্লিট না করলে
.
আহানা সোজা এসে চেয়ারে বসে ফাইলে হাত দিতেই নিহাল ওর হাত ধরে ফেললো
এসব কি আহানা?তুমি কিছু বলতেসো না কেন?এসব কি সত্যি?
শান্ত আহানার হাত থেকে নিহালের হাত সরিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললো খবরদার ওকে ধরবা না
.
তুমি এমন ভাব করতেসো যেন তোমারই ওয়াইফ?
.
সরি টু সে দ্যাট আহানা সত্যি সত্যি আমারই ওয়াইফ
.
কথাটা শুনে নিহাল হা করে চেয়ে শান্তর থেকে চোখ সরিয়ে আহানার দিকে তাকালো,আহানার নিরবতা শান্তর উক্তির হ্যাঁ সূচক বর্ননা দেয়
নিহাল টেবিলে ঠাস করে এক বাড়ি দিয়ে চলে গেলো তার কেবিনের দিকে
.
হাহা,আর কোনোদিন তোমার দিকে চোখ তুলেও তাকাবে না দেখিও
.
আহানা চুপ করে ফাইল সেভ করতেসে কম্পিউটারে,শান্তর দিকে তাকাচ্ছে না
.
শান্ত বকবক করেই যাচ্ছে,শেষে আহানার কোনো রিয়েকশান না পেয়ে ওর চেয়ার টেনে এক ঝাঁকুনি দিলো
.
শুনুন,অফিস এটা,বাসা নয়,এরকম করেন কেন?
.
কি করছি?তুমি আমার সাথে কথা বলতেসো না কেন?
.
আমি কি করবো না করবো সেটাও আপানকে জিজ্ঞেস করতে হবে?
.
শান্তর চোখ লাল হয়ে আসলো,খুব রাগ আসতেসে,এলিনাকে বিয়ে করবো না জেনেও এমন কেন করতেসে,ও কি কাগজটা দেখেনি নাকি বুঝেনি
হাত নিয়ে আহানার ওড়না টান দিয়ে গিট্টু দিতে দিতে সে ভাবতেসে চুপ করে
আহানা বিরক্ত হয়ে ওড়না এক টান দিয়ে শান্তর হাত থেকে নিয়ে নিলো
শান্তর তো আরও রাগ বেড়ে গেলো
সে পুরো ওড়নাটাই টেনে নিয়ে নিলো আহানার গায়ের থেকে,হাত নিয়ে আহানার খোঁপা খুলে দিয়ে আরেকদিকে ফিরে বসলো
.
আমার ওড়না দিন,ফালতু মজা করার সময় নেই আমার!
.
কেন?তোমার তো চুল আছে,ওড়না দিব না আমি
.
বাচ্চামি করতেসেন কেন বলুনতো?
.
কিসের বাচ্চামি,তুমি হুদাই আমার সাথে রাগ করে আছো ওড়না দিয়ে কি আমি আগে গিট্টু বানাতাম না?নাকি আজ নতুন দেখছো?
.
আপনার সাথে সিধা কথা বললেও আমার দোষ হয়ে যায়
.
ব্রেক টাইম শুরু
আহানা শান্তকে পুরো অফিসে দৌড়ানি দিচ্ছে,শান্ত ওড়না দিবেই না,কারণ হলো আহানা কোন সাহসে ওর থেকে ওড়না টান দিয়ে নিয়ে গেছে,আহানার ওড়নায় আহানার ৪০% ভাগ আর শান্তর ৬০% ভাগ
.
দিবেন না তো?
.
না দিব না
শান্ত হাত উঠিয়ে উপর করে রাখছে,আহানা যাতে ওড়নার নাগাল না পায়
.
ঠিক আছে,দিয়েন না
.
আহানা এগিয়ে এসে শান্তর জ্যাকেটের চেইন টান দিয়ে জ্যাকেট খুলে নিয়ে গেলো,এখন ওর গায়ে একটা টি শার্ট মাত্র!
শান্ত ইয়া বড় হা করে চেয়ে চেয়ে আহানার চলে যাওয়া দেখছে
কি সাহস এই মেয়েটার,আমার জ্যাকেট দিয়ে কি করবে ও?
শান্ত কেবিনে ফ্লোরে ঢুকে দেখলো আহানা জ্যাকেট পরে চেইন টানতেসে লাগাতে পারছে না
.
শান্ত আহানার ওড়না গলায় পেঁচিয়ে এগিয়ে আসলো,আহানা শান্তর এগিয়ে আসা দেখে একটু পিছিয়ে দাঁড়ালো
শান্ত মুখটা রাগিয়ে তুললো,যাতে আহানা ভয় পায়
কিন্তু মনের ভেতর যে দুষ্টুমি খেলা করছে তা আহানা জানে না
শান্ত খুব কাছে এসে জ্যাকেটের চেইনে হাত দিয়ে টান দিয়ে উপরে উঠিয়ে দিলো
আহানার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো
Now you look like Mrs. Shahriar!!!
.
আহানা চমকে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে,শান্ত তার গলা থেকে আহানার ওড়না নিয়ে আহানার মাথায় ঘোমটা করে দিলো
তারপর নিজের টি-শার্টের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আহানার হাত ধরে ক্যানটিনের দিকে চললো
.
এই আমাকে কই নিয়ে যাচ্ছেন?
.
বিকালের নাস্তা করবো
.
না আমি খাব না
.
তুমি খাবে না আশ্রমের সব বাচ্চারা খাবে

কথা বলতে বলতে ক্যানটিনে পা রাখতেই বাকি কলিগেরা আহানা আর শান্তর দিকে ভূত দেখার মত চেয়ে রইলো,কারণ শান্তর জ্যাকেট আহানার গায়ে দেখে এমন অবাক হওয়ারই কথা
নিহাল জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে,এই প্রথম কোনো বাজি সে হেরে গেলো,রেগেমেগে উঠে চলে গেলো সে
আহানা চেয়ারে বসে জ্যাকেটটা খুলে শান্তকে দিয়ে দিলো,কারণ সবাই এতক্ষণ তো তাকিয়েছিল সেটা সমস্যা ছিল না কিন্তু তারা এখন গসিপ শুরু করে দিসে ওদেরকে নিয়ে তাই আহানা জ্যাকেটটা খুলতে বাধ্য হয়েছে
.
স্যান্ডুইচ খাবা?
.
সেটা কি?
.
ওকে বুঝলাম,মামা ২টা স্যান্ডুইচ আর ২টা চা
.
না
.
কি?
.
চা টংয়ের থেকে খাবো বাড়ি ফিরার সময়
.
কিহহহ?মানে সিরিয়াসলি? তুমি আমার সাথে বাড়ি ফিরবে?
.
?কেন?
.
না কদিন তো আমার সাথে জেদ করে একা হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন তো তাই বললাম
.
হুহ!

ব্রেক টাইম শেষে যে যার কাজে ফিরে গেলো,আহানা শান্তর দিকে চেয়ে আছে শান্ত কম্পিউটারে ফাইল এডিট করতে করতে সেন্টার ফ্রেশ চিবাচ্ছে
আহানা মনে মনে ভাবলো এভাবে দিনে ১০/১২টা সিগারেট আবার ৪/৫টা সেন্টার ফ্রেশ খায়,ওয়াক,এরে কে কিস করবে,সেন্টার ফ্রেশের ঘ্রান শুঁকলেও আমার বমি পায়
আর আমারে তো নাকি ছোটবেলায় এই বান্দরটা কিস ও করেছে,অবশ্য তখন তো এসব খেতো না নিশ্চয়!
আচ্ছা আপনি কি ছোট থেকেই সেন্টার ফ্রেশ খান?
.
হ্যাঁ,আমার অনেক ফেভারিট এটা
.
শান্তর মুখে এমন কথা শুনে আহানার কাশি উঠে গেলো
বোতল নিয়ে পানি খেয়ে কপালের ঘাম মুছে নিজের কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে সে
শান্তর মাথায় উপর দিয়ে গেলো পুরো ব্যাপারটা,হুট করে আমার ছোটবেলার কথা জিগাইলো কেন?
ওহহহহ আচ্ছা আচ্ছা!!ছোটবেলায় তো ওর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল,আমার পাতানো বউ ছিল সে,তাহলে সেন্টার ফ্রেশ খাওয়ার কথা কেন জিজ্ঞেস করলো?
কিস!!!!!
.
কিহহহ?এত চেঁচান কেন?কি হইসে,কে কারে কিস করছে?
.
শান্ত মুখটা বাঁকিয়ে হেসে দিয়ে বললো আমি তোমাকে করেছি
.
আহানা ঢোক গিলে আরেকদিকে চোখ ফিরিয়ে নিলো এত তাড়াতাড়ি মনের কথা কি করে বুঝতে পারে কে জানে,ইস কি লজ্জা!
.
এই যে ম্যাডাম?অফিস ছুটি,চলুন বাসায় ফিরি
.
আহানা ব্যাগ হাতে নিয়ে শান্তর পিছু পিছু আসতেসে আর লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে যাচ্ছে
শান্ত লিফটের বাটনে টিপ দিয়ে হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে বললো যখন আমি তোমাকে কিস করেছিলাম তখন সেন্টার ফ্রেশের সাথে সিগারেট ও খাইতাম
Beginner ছিলাম?
.
আহানা রেগে দুম করে কিল বসিয়ে দিলো শান্তর পিঠে

আপনি একটা অসভ্য লোক!আপনি!!
আপনার সাহস হলো কি করে তখন একটা ছোট্ট মেয়েকে কিস করার,লজ্জা করে না এখন আবার এসব বলতেসেন?
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৪৪

1

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৪৪
#Writer_Afnan_Lara
?
ইন্টারেস্ট নেই তো এখনও এখানে কি করতেসেন?বের হোন বলতেসি,অসভ্য লোক একটা!
মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো আহানা
দরজা দিয়েই হেসে দিলো
শান্ত দরজার ওপারে থেকে হেসে দিলো
হাসতে হাসতে বাসা থেকে নামতে গিয়ে দেখলো দাদা কুলি করতেসে বাইরে দাঁড়িয়ে
ইস কি ঝামেলা,এবার বাড়ি ফিরবো কি করে ধুর!
.
দাদা কুলি করে উপরের দিকে তাকিয়ে দোয়া পড়তে যাবেন তখনই দেখলেন শান্ত দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে উনার দিকে
হাতের মগটা ঝুলিয়ে এগিয়ে এসে মাথা বাঁকা করে উপরের তলার দিকে তাকালেন,দরজা দেখি বন্ধ
শান্ত?তুমি এখানে কি করো?এত রাতে কই যাও?
.
না মানে আসলে!
.
আসলে কি?যাও বউয়ের কাছে যাও,বউরে একা রেখে কই যাও এই অবেলায়?
.
শান্ত একটু কেশে নিলো
কিছু বলার উপায় পাচ্ছে না সে,এদিক ওদিক তাকিয়ে কোনো ছুঁতো বের করার চেষ্টা করতেসে
শেষে দাদা চোখ রাঙিয়ে বললেন আহানা তোমারে কিছু কইসে?চলো তো দেখি,ওরে বুঝানো উচিত যে তোমাদের বিয়ে হয়ে গেছে
.
না না আহানা আমাকে কিছু বলেনি,এমনি নিচে নেমেছিলাম
যাচ্ছি যাচ্ছি!!
শান্ত আবার ফিরে এসে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো দাদা ৩সিঁড়ি উঠে ব্রু কুঁচকে বললেন কি ব্যাপার?ভিতরে যাচ্ছো না কেন?
.
শান্ত মাথা নাড়িয়ে দরজায় টোকা দিলো
.
আহানা বিছানা করতেসিলো তখন
ভাবলো এই অসময়ে আবার কে?
উঠে এসে দরজা খুলে দেখলো শান্ত দাঁড়িয়ে আছে,একি আপনি?এখানে?আবার?
.
shhhhh!চুপ
.
আহানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই শান্ত ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো
.
এই এসব কি হ্যাঁ??আপনি কিন্তু কাগজে সই করেছেন,আমাকে টাচ করতে পারবেন না,আমার কাছে কাগজটা আছে দাঁড়ান দেখাচ্ছি
.
দেখাতে হবে না!দাদা দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে বাধ্য হয়ে আসছি,তোমার সাথে এক রুমে থাকার কোনো ইচ্ছা নাই আমার
.
তো কতক্ষণ এমন থাকবেন,খবরদার আমি আপনাকে আমার সাথে আমার বাসায় এক রাতও কাটাতে দিব না!
.
দিও না,আমি থাকবো ও না,দাদা চলে গেলে আমিও চলে যাব
.
শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে উঁকি দিতেছে
আর আহানা তার বিছানার উপর বসে চুপ করে চেয়ে আছে শান্তর দিকে
.
শান্ত ফিরে এসে ধপ করে ফ্লোরে বসে গেলো
.
কি হয়েছে?গেছে দাদা?
.
জি না,উল্টো দাদিকে নিয়ে বাসার সামনে চেয়ারে বসে চা খাচ্ছে
.
কিহহ!
.
তুমি টেনসন নিও না,রাত ১টা বাজলেও আমি চলে যাব
এর ভিতরে নওশাদ ফোন দিসে এখন কি বলবো ওরে!
.
হ্যালো নওশাদ
.
হারামি তুই কই??ডিনার করবি না?
.
না করসি,আমি তমালের বাসায় একটা কাজে আসছি তোরা ডিনার করে নে
.
ওহ,তাড়াতাড়ি ফিরিস
.
ঠিক আছে!
শান্ত ফোন পকেটে ঢুকিয়ে দেখলো আহানা ওর দিকে চেয়ে আছে
.
কি এমন করে চেয়ে আছো কেন?কাগজের শর্ত বদলানোর কোনো ইঙ্গিত দিতেসো নাকি?
.
চুপ!এমনি তাকাইসি,কাগজের শর্ত আমি দিসি,আমি কেন বদলাবো,আপনার দিকে কি তাকাতেও পারবো না?
.
হুম পারো,সব পারো,এখন তো তুমি আমার পাতানো বউ থেকে রিয়েল বৈধ বউ হয়ে গেসো!

আহানা গুটিশুটি মেরে রুমের এক কোণায় ফ্লোরে বসে আছে
.
শান্ত সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললো এখানে শোও?
.
হুম
.
আমি যে দেনমোহরের টাকা দিসি সেটা দিয়ে একটা ভালো খাট কিনবা,না পারলে আমি কিনে দিব
.
লাগবে না,এই বিয়েটা কোনো বিয়ে নয়,আপনার টাকা আপনি নিয়ে যান
.
এটা তোমার টাকা বরং আমি নিলে আমার গুনাহ হবে,তুমি এটা দিয়ে যা খুশি করো,শোও ফ্লোরে!আমার কি?
.
আহানা প্রচুর ক্লান্ত হয়ে গেছে কোণায় হাত পা মুড়িয়ে ঘুমিয়ে গেছে সে ততক্ষণে
শান্ত ২টা সিগারেট শেষ করেছে সবে
বারান্দায় এসে দাদা দাদিকে লক্ষ করে দেখতেসে তারা চলে গেছে কিনা
বরাবর ১২টা ১০মিনিটে তারা চেয়ার নিয়ে চলে গেলেন,শান্ত স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেলে পকেটে হাত ঢুকিয়ে চলে যেতে যেতে বললো আহানা দরজা লাগাও!!
আহানার সারাশব্দ না পেয়ে পিছন ফিরে চেয়ে দেখলো আহানা গভীর ঘুমে
দরজা তো এভাবে খোলা রেখেও যাওয়া যাবে না
ওরে ঘুম থেকে জাগাবো?সারাদিনে ওর কত দখল গেছে আর আমার এভাবে দাঁড়িয়ে থাকাও তো পসিবল নাহ
শান্ত এগিয়ে এসে আহানা বলে ২বার ডাক দিলো,আহানা কাঁথা টেনে মুখ ঢেকে ঘুমাচ্ছে
.
শান্ত কাঁথাটা জোরে টান দিতেই আহানার ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো,চোখ মেলে দেখলো শান্ত ওর দিকে চেয়ে বসে আছে
আহানা উঠে দূরে সরে গেলো,কোমড় থেকে কাগজ বের করিয়ে শান্তর দিকে বাড়িয়ে ধরলো
.
এই শুনো!তোমার সবসময় কেন মনে হয় আমি তোমাকে টাচ করতে এসেছি?বলদা গার্ডেন একটা!
আমি যাচ্ছি দরজা লাগাও
শান্ত ব্রু কুঁচকে উঠে চলে গেলো
আহানা দরজা লাগিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে শান্তর চলে যাওয়া দেখছে,শান্ত একবারও তাকায় নি,ফোনে কিসব করতেসে সে,তখনই আহানার ফোনে টুংটাং করে একটা সাউন্ড হলো
আহানা ফোনটা এনে দেখলো শান্তর মেসেজ
লিখা আছে-এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে হবে না,নতুন বরকে তো নিজের বাসায় জায়গা দাওনি,এখন চলে যাচ্ছি তো তোমার কেন জ্বলেরে বন্ধু?তোমার কেন জ্বলে?
.
উফ অসভ্য একটা লোক,৩০রকমের কথা বলবে!
ফোন রেখে আহানা শুয়ে পড়লো
.
শান্ত বাসায় ঢুকতেই দেখলো নওশাদ,রিয়াজ আর সূর্য সোফায় পায়ের উপর পা তুলে ওর দিকে চেয়ে আছে
শান্ত হালকা কাশ দিয়ে পাঞ্জাবির হাতা নামাতে নামাতে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে আর বলতেসে তোরা এত রাতে ড্রয়িং রুমে কি করিস?
.
“শুভ বিবাহ” ছবিটা দেখতেসি এই আর কি?তুই দেখবি নাকি?
.
শান্ত তার রুমের দরজায় হাত দিতেই নওশাদের কথায় থেমে গিয়ে মাথা বাঁকিয়ে ওদের দিকে তাকালো
.
হ্যাঁরে নওশাদ জানিস,আজ নাকি ঐ ইমামের বাড়িতে কার যেন বিয়ে হয়েছে,সেখানে বরের নাম ও নাকি শান্ত ছিল!
.
তাই নাকি রিয়াজ??কিরে শান্ত তুই শুনেছিস এই কথা?
.
শান্ত ডাইনিং টেবিল থেকে পানি নিয়ে খেতে খেতে চলে গেলো
কিছু বললো না,কারন সে জানে কিছু বললেই ওরা এনাকোন্ডার মত পেঁচিয়ে ধরবে তাকে
রুমে এসে পাঞ্জাবি খুলতেই রিয়াজ আর নওশাদ ছোঁ মেরে ওর পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে নিলো
.
কি সমস্যা তোদের?
.
এই রিয়াজ ভালো করে শুঁকে দেখ তো মেয়েদের গায়ের গন্ধ আসে কিনা
.
আজব তো,আমি কি বাসর করে এসেছি নাকি,এটা কেমন কাজকর্ম,মদ কি বেশি খেয়েছিস তোরা?
.
নাহ রে নওশাদ ওর পাঞ্জাবি থেকে শুধু ওরই পারফিউমের ঘ্রান আসতেসে
.
ওহ আচ্ছা
দুজনে ব্রু কুঁচকে পাঞ্জাবি রেখে চলে গেলো
.
এদের মত ডিটেক্টিভ বন্ধু আমার কপালেই জুটতে গেছে
.
ফ্রেশ হয়ে এসে দুম করে খাটের উপর শুতেই রাজ্যের ঘুম এসে গেলো শান্তর

পরেরদিন সকালবেলায় আহানা মিষ্টিকে পড়িয়ে শান্তর বাসার দিকে একবার তাকালো,দরজা বন্ধ
চুপচাপ লিফটের বাটনে টিপ দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,তারপর লিফট খুলতেই ভিতরে এসে চুপচাপ নিচতলার বাটনে টিপ দিয়ে পাশে তাকাতেই শিউরে উঠলো ভয় পেয়ে
শান্ত বিরক্তি নিয়ে বললো কি?আমাকে চিনো না?নাকি নতুন দেখতেসো?
.
এমন করেন কেন,এমন ভিজা বিড়ালের মত দাঁড়িয়ে থাকলে ভয় পাওয়ারই কথা
.
তুমি লিফটে ডুকার সময় দেখে ঢুকলেই হয় তাহলে আর ভূত দেখার মত ভয় পেতে না
.
কই যাচ্ছেন এখন?
.
Now আই এম ম্যারিড,আমার বিয়ে করা নতুন বউ আছে,সে আমাকে সকালের নাস্তা বানিয়ে খাওয়াবে
.
মঘেরমুলক আর কি!আমি পারবো না
.
কেন পারবে না?কেস করবো তোমার নামে,বলবো আমার বিয়ে করা বউ আমাকে নাস্তা বানিয়ে খাওয়ায় না
.
এসবের জন্য জোর করে বিয়ে করেছেন তাই না?
.
জি না,নিহাল থেকে তোমাকে বাঁচাতে বিয়ে করেছি
.
নিহাল অন্তত সকালের নাস্তার জন্য আমাকে ফোর্স করতো না
.
হ্যাঁ করতো না,শুধু নাস্তা কেন,তোমাকে দিয়ে ঘর ও মুছাইতো,যেটা আমি করাচ্ছি না,চুপচাপ আমাকে নাস্তা বানায় খাওয়াবা,সাথে চা
.
দুধের গুড়ি নাই ওকে?চিনিও নাই,চা পাতাও নাই
.
তুমি বাসায় গিয়ে চা বসাও আমি ওগুলা আনতেসি,পানি ফুটার আগেই আমি পৌঁছে যাব
.
হুহ!
আহানা হনহনিয়ে বাসার ভেতর চলে গেলো আর শান্ত দোকানের দিকে যাচ্ছে
তখনই আহানার মনে পড়লো শান্ত তো ভাত নুন দিয়ে এখন খেতে পারবে না ওর মতন
রুটি বানাতে হবে,আহানা দৌড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো,এই যে শুনুন!
.
শান্ত থেমে গিয়ে উপরে তাকালো,হেসে দিয়ে বললো হ্যাঁ বলো বউ,এখন থেকে এই “যে শুনুন” ডাকতে পারো,আমি তোমাকে বাধা দিব না
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো আটা আনতে আর ডিম ২টা,পেঁয়াজ আধা কেজি
.
আচ্ছা ফাইন
.
১০মিনিট পর সব নিয়ে শান্ত হাজির
আহানা আটার প্যাকেট দাঁত দিয়ে খুলতেসে
খুলতেসে না দেখে দাঁত লাগিয়ে জোরে এক টান দিতেই কিছু আটা গিয়ে শান্তর মুখে পড়লো শান্ত তখন তাক থেকে বিসকিটের বোয়াম নিচ্ছিলো
হাত দিয়ে গাল মুছতে মুছতে বললো ইচ্ছে করে করেছো তাই না?তোমার বিসকিট ধরতেসি বলে?
.
ইচ্ছে করে কেন করবো,হাত দিয়ে খুলতেসে না বলেই তো দাঁত দিয়ে খুলতে গেলাম,এভাবে উড়ে গিয়ে আপনার মুখে পড়বে আমি কি জানি
.
তুমি ইচ্ছে করেই করেছো
.
আমি ইচ্ছে করে করিনি ওকে?সকাল সকাল ঝগড়া করবেন না একদম
.
আমি ঝগড়া করতেসি??
কথাটা বলে শান্ত এগিয়ে এসে আহানার দুপাশে হাত নিয়ে তাকের উপর রাখলো
ভয়ে আহানার কলিজা নড়ে উঠতেসে
হাত নিয়ে কোমড় থেকে কাগজটা বের করতে যাবে তার আগেই শান্ত এক হাত দিয়ে আহানার হাত ধরে ফেললো
মাথা নিচু করে তার গালের আটা আহানার কপালে লাগিয়ে দিয়ে বিসকিটের বোয়াম নিয়ে চলে গেলো রান্নাঘর থেকে
.
আহানা থ মেরে দাঁড়িয়ে থেকে দাঁতে দাঁত চেপে বললো আপনি বলছেন টাচ করবেন না!
.
হ্যাঁ,টাচ করিনি,কাগজে লিখা নাই তুমি ইচ্ছে করে আমাকে রাগালে আমি তোমাকে টাচ করতে পারবো না
.
আপনি একটা বেয়াদব!
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
বকরবকর না করে নাস্তা বানাও,ভার্সিটিতে যেতে হবে জানো না?
.
হুম!
আহানা আটা বোয়ামে ঢেলে রুটি ৫টা বানালো,তারপর পেঁয়াজ কেটে লবণ মরিচের গুড়ো দিয়ে ডিম ফেটিয়ে ভেজে নিলো,শান্তর প্লেটে ৩টা রুটি একটা ডিম,আর আহানার প্লেটে রুটি ২টা আর একটা ডিম
.
একি?আমাকে ৩টা দিসো কেন?
.
(আপনি খাওয়াল ,পেটুক,বস্তি,খাটাশ তাই!)
.
কি বললে তুমি?
.
কিছু না,আপনি কত পরিশ্রম করেন তাই একটা বারতি দিলাম
.
ওহ??
.
আহানা একটা রুটি খেয়ে উঠে গিয়ে চা দেখে আসলো
আচ্ছা?আপনি এত দুধের গুড়ি,চা পাতা,চিনি এনেছেন কেন?
.
কারণ প্রতিদিন আমি এখানে এসে নাস্তা করবো
.
?পারবো না নাস্তা বানাতে
.
ওকে একদিন তুমি একদিন আমি
.
আপনার রান্না একদিন খেয়ে রান্নার উপর থেকে আমার ইচ্ছা মরে কবরে চলে গেছে,আর দয়া করে আমাকে আপনার রান্না টেস্ট করাবেন না প্লিস!
.
আরেহ শুনো এটা তো ইজি রান্না,আমি ইউটিউব না দেখেই বানাতে পারবো
.
আহানা এগিয়ে এসে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো বলেন তো রুটি কেমনে বানায়?
.
ওকে এটা একটা ইজি প্রশ্ন!
প্রথমে একটা বাটিতে পানি দিয়ে চামচ দিয়ে আটা আর পানি গুলতে হবে
.
তারপর?
.
তারপর ছোট ছোট করে নিয়ে বেলে নিতে হবে
.
বাহ বাহ বাহ,কত্ত সহজ
.
হ্যাঁ আমি তো তাই বললাম,রুটি বানানো অনেক সহজ
.
আহানা চা এনে রাখলো,শান্ত দাঁত কেলিয়ে চায়ের কাপটা নিলো
.
কি?
.
তোমার কপালে আটা লেগে আছে?
.
আপনার গালেও আটা লেগে আছে হুহ!
.
শান্ত আহানার ওড়না টেনে গাল মুছে নিলো
.
আহানা রেগে শান্তর টিশার্ট টেনে কপাল মুছলো
.
দুজনেই একসাথে হেসে দিলো
.
আচ্ছা আমি যাই,রেডি হয়ে থেকো আমার সাথে ভার্সিটিতে যাবা
.
কেন?আপনার সাথে কেন যাবো আমি?
.
কারণ আমি তোমার হাসবেন্ড!আমার কথা শুনতে তুমি বাধ্য!
.
এই বিয়ে মানি না আমি,আপনি বলছেন আমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবেন না
.
হেঁটে হেঁটে ভার্সিটিতে যাওয়া স্বাধীনতা?
.
হ্যাঁ
.
ফাইন!
.
কে যেন দরজা নক করলো,শান্ত ফ্লোর থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুললো
আরেহহহ আপনারা আসেন আসেন,ভিতরে আসেন
.
আহানা উঁকি দিয়ে দেখলো ৪জন লোক কাঁধে করে কাঠ জাতীয় কিছু নিয়ে ঢুকতেসে এক এক করে
.
এরা কারা?
.
ওয়েট করো দেখতে পাবা!
.
লোকগুলো নিমিষেই তাদের কাজ শেষ করলো,খাট এনে সেটা সেট আপ করে দিয়ে চলে গেলো তারা
আহানা রেগে বললো আপনাকে বললাম না আমি আমার বেতনের টাকা দিয়ে কিনবো?
.
এটা কি আমি তোমার জন্য কিনেছি নাকি?
আমি যে মাঝেমাঝে আসি,ফ্লোরে বসতে আমার কষ্ট হয় তাই বেড আনাইসি
.
চেয়ার আনলেই হতো,বেডের দরকার ছিল না
.
আমি বেডে বসবো,তোমার কোনো সমস্যা?
.
আনছেন ভালো কথা,বেডরুমে কেন?সোফার রুমে রাখলেই হতো যেহেতু আপনি আসলে বেডে বসবেন
.
না হতো না,সোফার রুমে সোফা থাকবে
.
আমার বেতনের টাকায় সোফা কেনা সম্ভব হবে না কোনোদিন
.
আমার বেতনে তো হবে?
.
এটা আমার বাসা
.
এটা আমারও বাসা,চুপ থাকো তুমি,ইদানিং বেশি কথা বলতেসো
.
আহানা মুখ ঘুরিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো,শান্ত দরজা খুলে চলে গেলো
ফোনে তোষকের দোকানদারের সাথে কথা বলতে বলতে বাসার দিকে গেলো সে,তোষক সন্ধ্যায় চলে আসবে
.
আহানা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে বেডরুমে গিয়ে খাটের দিকে চেয়ে আছে,ইয়া বড় এক খাট আনিয়েছে শান্ত,টাকা খরচ করতে পিছু পা হয় না,আমি ১টাকার জন্য যুদ্ধ করি আর উনি ১হাজার টাকা হারিয়ে ফেললেও চিন্তা করেন না
আকাশ পাতাল তফাৎ আমাদের
এর মাঝে আমরা স্বামী স্ত্রী ও হয়ে গেলাম,হোয়াট এ ভাগ্য!
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৪৩

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৪৩
#Writer_Afnan_Lara
?
শুনো!নিহাল তোমাকে নিয়ে গেমস খেলতেসে,বাজি ধরেছে সে তোমাকে বিয়ে করবে,আমি চাই না তুমি ওর বাজির স্বীকার হও
.
ওহহ নিশ্চয় আপনিও বাজি ধরেছেন?
.
শান্ত রেগে আহানার দুকাঁধ ধরে টেনে কাছে নিয়ে এসে বললো বিয়েতে কবুল বলবা,দিস ইজ মাই অর্ডার!!
না কে কিভাবে হ্যাঁতে পরিণত করতে হয় তা আমার জানা আছে!
.
আমি কবুল বলবো না,কি করবেন মারবেন?
.
শান্ত কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আহানার হাত ধরে টেনে সবার সামনে নিয়ে গেলো
চেঁচিয়ে বললো এই মেয়েটা চায় তার সাথে আমি অবৈধভাবে থাকি,সে বিয়ে করতে চায় না
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
সোফার রুমে উপস্থিত সব মুরব্বিরা মুখ হাত দিয়ে বললেন আস্তাগফেরুল্লাহ!!!
.
আহানা চোখ বড় করে শান্তর দিকে চেয়ে বললো এসব কি বলতেসেন কি আপনি?
.
কাজী সাহেবের সাথে বসে ছিলেন একজন ভদ্র বয়স্ক হুজুর,তিনি হালকা কেশে ঠিকঠাক হয়ে বললেন-
শুনো মা এসব হারাম কাজ,বিয়ে করে হালাল করলে তোমার পরকালে সুখ হইবো,কবরের আজাব থেইকা মুক্তি পাইবা
.
আপনি এসব কি!শুনুন এটা ঠিক করতেসেন না,তাড়াতাড়ি বলেন যে আপনি আমার নামে মিথ্যা বলেছেন সবাইকে
.
আমি?কেন বলোতো?আমি ছেলে হয়ে তোমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছি আর তুমি মেয়ে হয়ে সম্পর্কটাকে অবৈধভাবে রাখতে চাও??
.
আহানা এগিয়ে এসে শান্তর পাঞ্জাবি খিঁচে টান দিয়ে বললো চুপ!একদম চুপ
এসব মিথ্যা অফ করবি না আমি চলে যাব এখান থেকে??তুই থাক তোর বিয়া নিয়ে
.
শান্ত কলার ঠিক করে সোফার রুমে থাকা সকলের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো
তারপর মুখটা কালো করে বললো আমি কি করবো?আপনারা বরং আমার মাথায় বাড়ি দেন,ও চায় চলে যাবে এখান থেকে তাও বিয়ে করবে না
.
আহানা?এসব কি??
তুমি মুসলিম মেয়ে হয়ে এসব কি আনাব সানাব বলতেসো,তাড়াতাড়ি শান্তর পাশে বসো যাও!কথাটা বলে দাদি পর্দার আড়াল থেকে চলে গেলেন
আহানা হনহনিয়ে বেরিয়ে দোতলার দিকে চলে গেলো
.
আপনারা ১০মিনিট বসুন,আমি ওকে নিয়ে আসতেসি
শান্ত ও পিছু পিছু গেলো
আহানা বেড রুমের এক কোণায় বসে চুপ করে আছে
রুম অন্ধকারাচ্ছন্ন
শান্ত লাইট জ্বালালো না,আহানার হাতের চুড়ির ঝুনঝুন আওয়াজ আসতেসে,সেটার আওয়াজ উপলব্ধি করেই শান্ত হেঁটে সেই কোণায় এসে বসলো আহানার পাশে
তারপর কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো সরি
.
আমাকে বুঝার চেষ্টা করো আহানা,নিহাল আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছে সে তোমাকে বিয়ে করবে,বাজি ধরে বিয়ে করা মানে বিয়ের পরে ও তোমাকে ছেড়ে দিবে
আর তা আমি হতে দিতে পারি না,সেই জন্যে আমি চাই তুমি ঐ নিহালের ওয়াইফ না হয়ে আমার ওয়াইফ হও,আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত আমি তোমার পাশ থেকে কোনোদিন যাব না
আমি নিহাল না এটা জানো তুমি,আমি যে বাজিও ধরিনি এটাও জানো তুমি
আমি জাস্ট এটা চাই তুমি একটা ভালো মানুষের ওয়াইফ হও
.
ওহ আপনি ভালো মানুষ বুঝি?
.
হ্যাঁ,কোনো সন্দেহ আছে নাকি?
তোমার ভাগ্য এমনিতেও খারাপ আর খারাপ আমি হতে দিতে পারি না
তুমি তোমার মতো এই বাসায় থেকো আর আমি আমার বাসায়,মাঝে মাঝে ডিস্টার্ব করতে আসবো যেমন নাস্তা করতে,চা খেতে আর কিছু না
আর তুমি চাইলে আমার ফ্ল্যাটে যেতে পারো,২৪ঘন্টা তোমার জন্য আমার ফ্ল্যাট উন্মুক্ত
রইলো কথা স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক,আমি তোমাকে টাচ করবো না,তুমি তো জানো তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই সেই প্রথম থেকেই
.
তাহলে বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন কেন এত?নিহাল আমাকে বিয়ে করতে চাইলেই আমি বিয়ে করবো ওকে?এত সহজ?
.
শুনো ও কাল অফিসে যা করেছে ও চাইলে তোমাকে উঠায় নিয়েও বিয়ে করার ক্ষমতা রাখে,আমি এটা জেনেশুনে হতে দিতে পারি না,তোমার সাথে নো কম্প্রোমাইজ!
.
আমাকে নিয়ে আপনার এত ভাবতে হবে না,যান সবাইকে বলেন আমি বিয়ে করবো না কারণ আমি আপনাকে পছন্দ করি না
.
শুনো!আমিও তোমাকে পছন্দ করি না
.
তাহলে বিয়েটা বন্ধ করেন
.
ফাইন!আমি যাচ্ছি,বিয়ে ক্যানচেল করছি,এর পরে কি হবে জানো?
নিহাল তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে,একদিন একরাত পর তোমাকে রোডে নামিয়ে চলে যাবে,এমন রোডে নামাবে যেই রোডে শান্ত কোনোদিন বাইক নিয়ে যায় না,বুঝো তো কোন রোড?নিষিদ্ধ পল্লি চিনো?
আচ্ছা নাহয় ঢাকার কোনে রোডে ছাড়লো কিন্তু এরপর?তুমি কোনো বাসা ভাড়া পাবে??সবাই তোমাকে যাতা বলবে,তখন?ভাত নুন খাওয়ার টাকাও পাবা না
.
চুপ একদম চুপ
.
কেন চুপ?যেটা সত্যি সেটাই,তারপর যখন প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবা তখন?আরেক ঝামেলা!পুলিশে কেস ও করতে পারবা না,একা একটা মেয়ের কথায় কে কান দিবে??বলো?
.
আমি বিয়ে করবো না প্লিস
আহানা কেঁদে দিলো
.
শান্ত ফোনের ফ্ল্যাশ অন করতে গিয়ে করলো না,অন্ধকারেই আন্দাজ করে ওর মুখ মুছে দিলো,এত নিখুঁত করে মুছে দিলো যেন সত্যি সত্যি ও আহানাকে এত ঘুটঘুটে অন্ধকারেও দিব্যি দেখতে পাচ্ছে
আহানার পিঠের পিছন দিয়ে হাত নিয়ে ওকে হালকাভাবে জড়িয়ে রাখলো
.
আমি তোমাকে কখনও খারাপভাবে টাচ করেছি??
করিনি!!!আমি তোমায় সম্মান করি,তোমার ফিলিংসের দাম আছে আমার কাছে
যাই হোক শুনো মেয়ে!
তুমি এখন এই বিয়ে না করলে আমি বলবো তোমার পেটে বাবু ও আছে,তাও আমার!৩মাসের
.
আহানা শান্তর হাত খাঁমছে বললো চুপ করতে
.
আপনি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতেসেন!
.
এতক্ষণ ধরে এই বুঝাইসি আমি তোমাকে?
.
এক মিনিট!
.
আহানা উঠে গিয়ে লাইট জ্বালালো রুমের
তারপর একটা খাতা আর একটা কলম নিয়ে ফ্লোরে বসে গেলো,৫মিনিট ধরে কিসব লিখলো তারপর শান্তকে দেখিয়ে বললো সই করে দিতে
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখলো লিখা আছে-
আমি শাহরিয়ার শান্ত আজ আগস্ট ৬তারিখ,২০২০সাল এ আহানা ইয়াসমিনকে বিয়ে করতেসি,এরপর থেকে আমি ওর লাইফে দখল দিব না,স্বামীর অধিকার ফলাবো না,ওকে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে দিব,এই বিয়ে শুধু নামেই বিয়ে হবে
———–
সাইন
.
শান্ত মুচকি হেসে সাইন করে দিলো
.
আহানা কাগজটা কোমড়ে গুজে নিয়ে নিচতলার দিকে হেঁটে চললো
অন্ধকারে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বেসালাম হয়ে সিঁড়ি থেকে পড়েই যাচ্ছিলো সে
শান্ত সাথেসাথে ধরে ফেললো ওকে
.
ছাড়ুন,ঢং করতে হবে না
.
না ছাড়ব না,ছাড়লে আমার বউ পড়ে গিয়ে কোমড় ভাঙ্গবে,বরং শক্ত করে ধরবো
.
আহানা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে গেলো
শান্ত পিছন পিছন আসতেসে
সবাই ওদের মুখের দিকে চেয়ে বসে আছে
শেষে আহানা মাথা নাড়িয়ে সাঁই দিলো
তারপর শান্ত গিয়ে দাদার পাশে বসলো আর আহানা একটু দূরে একটা চেয়ারে বসলো
.
কাজী সাহেব কাগজকলম নিয়ে সব লিখে ব্রু কুঁচকে বললেন কিন্তু মা তোমার মা বাবার নাম?তাদের নাম তো জানা হলো না
.
আহানা চুপ করে থেকে বলতে যাবে তার আগেই শান্ত উত্তরটা দিতে চাইলো
সে বললো কাজী সাহেব ওর মা বাবা নেই,কে ছিল সে জানে না,সুতরাং তাদের নাম বলা সম্ভব না তবে ওকে আশ্রমের ম্যানেজার সালেহা বেগম এবং তার স্বামী সালাউদ্দিনের মেয়ে হিসেবে স্কুল কলেজের সার্টিফিকেটে পরিচয় দেওয়া হয়েছে
.
ওকে কি দত্তক নেওয়া হয়েছিল?
.
নাহ,উনারা আহানাকে দত্তক নেননি, আমার মায়ের রিকুয়েস্টে আহানার স্কুল কলেজের সকল কার্যকলাপে তাদের নাম তারা লিখে দিয়েছে,আহানার ঠাঁই আশ্রমেই হয়েছিলো
উনারা নামেই পিতামাতা ছিলেন,আর এখন সালেহা বেগম জীবিত নেই আর উনার স্বামীও জীবিত নেই
.
আচ্ছা বুঝলাম,ঠিক আছে,আমি উনাদের নাম লিখতেসি(মৃত),আর উনাদের অবর্তমানে আমি ওর বাবা হয়ে দায়িত্ব পালন করবো আজকে
.
আহানার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে ওর হাতের উপর পড়লো,তার এই অশ্রু কেউ না দেখলেও শান্ত ঠিকই দেখেছে এবং সে জানে আহানা কেন কাঁদছে,তার মা বাবা থাকলে হয়ত আজ তাকে এত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো না
.
কাজী সাহেব খোতবা পড়লেন
তারপর শান্তর ডানহাত ধরে বললেন-জনাব সালাউদ্দিনের কন্যা আহানা ইয়াসমিনকে ১০হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে আমি কন্যাকে আপনার নিকাহে সোফিত করলাম
.
আমি কবুল করলাম,কবুল কবুল কবুল
.
আলহামদুলিল্লাহ
এবার মা আহানা তুমি বলো
.
আহানা চোখ বন্ধ করে একটা নিশ্বাস ফেলে সেও কবুল বললো ৩বার
.
সকলে আলহামদুলিল্লাহ পড়লেন,,
শান্ত দেনমোহর শোধ করলো,আরও বেশি দেনমোহর রাখতো কিন্তু তার কাছে এখন এত টাকা নেই,বাবাকে বললে হাজারটা প্রশ্ন করতেন উনি
সবাই মিষ্টিমুখ করে চলে যাচ্ছেন,শান্ত সোফার এক কোণে বসে বারবার ভিতরের রুমের দিকে তাকাচ্ছে,নীল রঙের পর্দার ওপারে আহানা বসে আছে
তাকে দেখা যাচ্ছে না,শান্তর মনে হচ্ছে সে তার কাছের একটা জিনিসকে আজীবনের জন্য নিজের করে নিয়েছে
এই ভেবেই ভালোলাগা কাজ করতেসে হুট করেই
.
আহানা থ হয়ে বসে আছে,এতদিন ভাবতাম কেউ বিয়ে করবে না আমাকে আর আজ!সেই ছেলেটা আমাকে বিয়ে করলো যাকে আমি দেখতে পারি না,যাকে চড় মেরেছিলাম
সেই চড় নিয়েই গল্পটা শুরু হয়েছিল আর আজ বিয়েতে পরিণত হয়েছে,এভাবে আজ এই দিনে আমার বিয়ে হবে জীবনেও ভাবিনি আমি,কোথা থেকে কি হয়ে গেলো,না আমি উনাকে ভালোবাসি না উনি আমাকে ভালোবাসেন
বিয়েটা হয়েছে নামেই
এই সেই বিয়ে যেটাতে ভালোবাসার কোনো চিহ্ন রইবে নাহ
আহানা মাথায় হাত দিয়ে উঠে দাঁড়ালো,ভালো লাগতেসে না কিছুই
চুপচাপ বেরিয়ে সবার সামনে নিয়ে দোতলার দিকে চলে গেলো সে
শান্ত নওশাদের সাথে কথা বলতে বলতে বাসা থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছিলো হঠাৎ থেমে পিছন ফিরে তাকালো
আহানা বারান্দা থেকে লুকিয়ে পড়েছে ততক্ষণে
শান্তর প্রতি একটা অধিকার কাজ করতেসে আজ,কিন্তু না!
শান্ত আহানাকে না দেখলেও ল্যাম্পপোস্টের আলোয় বারান্দার কোণায় ওর শাড়ীর খানিকটা দেখতে পাচ্ছে সে
শান্ত হেসে দিয়ে চলে গেলো বাসার দিকে
দুজনেরই আজ বিয়ে হয়েছে,বৈধ বিয়ে,তাও দুজন দুই বাড়িতে,পৃথিবীতে ওরাই হয়ত এমন কাপল যারা বিয়ের পর দুজন দুবাড়িতে থাকবে,একরুমে কেউ সোফায় কেউ বিছানায় হলেও এক কথা ছিল কিন্তু এটা যে আলাদা বাড়িতেই!
আহানা মুখ ধুয়ে শাড়ীটা পাল্টাচ্ছে আর তখনই মনে পড়লো চুলায় চা বসিয়েছে সে
দৌড়ে গিয়ে চুলা বন্ধ করে চা নামাচ্ছে সে
তখনই ফোনটা বেজে উঠলো
শান্তর ফোন,১০মিনিট হলো গিয়েছে আবার ফোন করছে কেন?
.
আহানা চা ঢেলে ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানে লাগাতেই ওপাশ থেকে শান্ত বললো রান্নাঘরে এমন বেশে আসার কারণ কি?কেউ যদি দেখে ফেলে?যাও ভিতরে গিয়ে ঠিক হয়ে আসো
আহানার চোখ কপালে
তাড়াতাড়ি জানালা থেকে সরে রান্নাঘরের চিপায় গিয়ে দাঁড়ালো,ধুকধুক করতেসে বুকের ভেতর
বড়বড় শ্বাস নিতে নিতে বললো আপনি এসব দেখেন?
.
নতুন বিয়ে করা বউকে একা ফেলে এসেছি একটু তো খবর নেওয়া আমার দায়িত্ব, পরে দেখলাম তোমার রান্নাঘরে বাতি জ্বলে,দূরবীন হাতে নিতেই দেখলাম এই কান্ড!
.
আপনি একটা বেয়াদব!
.
চা বানাচ্ছো?
.
না,মানে হ্যাঁ
এক কাপ বানাইসি শুধু, আমি খাবো সেটা
.
আমি তোমার থেকে ভাগ নিব না ওকে?আমার হাতেও কফির মগ
আঁচল ঠিক করে জানালায় আসো
আহানা আঁচল ঠিক করে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে চোখ ছোট করে দেখার চেষ্টা করতেসে,শান্তকে লাল পিপড়ার সমান দেখা যাচ্ছে
.
চলো একসাথে খাই চা আর কফি
আহানা তাকের উপর উঠে জানালার সাথে লেগে বসলো গুটিশুটি দিয়ে
.
আহানা তাকালেও শান্তকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না তবে যতদূর বুঝা যায় শান্ত গ্রিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
আর শান্ত আহানাকে ঠিক করে দেখতে পাচ্ছে কারন ওর হাতে দূরবীন
আহানা কানে ফোন ধরে চা খাচ্ছে
.
চা খেয়ে জিরিয়ে ডিনার করে নিবা,আমি এখানে খেয়ে নিবো
.
আপনি কাউকে বলবেন না যে আমাদের বিয়ে হয়েছে
.
নিহালকে বলবো,ওর জন্যই এতসব করা
.
হুম,রুপা নওশাদ কেউ যেন না জানে
.
জানবে না,বাই দ্যা ওয়ে শাড়ীটাতে তোমাকে বেশ মানিয়েছে
.
নীল ব্লাউজ কি জন্য দিলেন সেটাই বুঝলাম না
.
আমার নীল পাঞ্জাবি তাই
মিলতে হবে তো
.
দুটোই লাল কিংবা নীল কেনা যেতো না?
.
আমার সাথে নওশাদ ছিল,ও ঠিক সন্দেহ করতো তাই এমন করসি
.
ওহ,ঠিক আছে বাই
.
বাই
.
আহানা ফোন রেখে শাড়ী চেঞ্জ করে আসলো
.
দাদি অলিকে দিয়ে খাবার পাঠিয়েছে,শান্তর জন্যেও পাঠিয়েছে
উনি তো আর জানেন না শান্ত চলে গেছে
.
আহানা কিছুক্ষন ভাবনা চিন্তা করে ফোন নিয়ে শান্তকে কল দিলো
বারান্দায় দাঁড়িয়ে শান্ত সিগারেট খাচ্ছে,ফোন টেবিলের উপর সাইলেন্ট করে রাখা
আহানা ওকে কখনও কল করে না বলে ওর জানা ছিল না আজই আহানা ফোন দিতে পারে
আহানা রান্নাঘরের জানালায় এসে হাত নাড়াচ্ছে শান্ত দেখতেসেও না
সে নিচে রোডের দিকে তাকিয়ে মন দিল লাগিয়ে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে
শেষে সিগারেট শেষ দিয়ে রুমে আসার সময় আহানার বাসার রান্নাঘরের দিকে একবার তাকালো,তাকিয়ে থেমে গেলো
আহানা হাত নাড়িয়েই যাচ্ছে,আগামাথা কিছুই বুঝতেসে সে,পরে ফোন খুঁজে দেখলো ২মিসডকল
কলব্যাক করতেই আহানা এক বালতি গালি ছুঁড়ে মারলো
.
বেয়াদব অসভ্য!!এত কল করি চোখে পড়ে না?বারান্দায় দাঁড়িয়ে কি করেন?এলিনা নাকি বেবিকে দেখেন,আর জীবনে কল দিব না আপনাকে,?
আমার ঠ্যাকা পড়ে নাই আপনাকে কল করার,দাদি আপনার জন্যও খাবার পাঠিয়েছে তাই কল করেছি এসে খেয়ে যান,নাহলে দাদিকে কি জবাব দিব আমি!
.
বাপরে কানের পর্দা ফুটা হয়ে গেছে আমার,আসতেসি,দাঁড়াও,এমন ভাবপ বলতেসে যেন ২০০বার কল দিসে
.
আহানা গিয়ে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলো
শান্তর আসার খবর নাই,শেষে নিজেই খেতে বসে পড়লো,আসার পর থেকে চা ছাড়া কিছু খায়নি,খিধায় মনে হয় অজ্ঞান হয়ে যাবে
এক লোকমা মুখে দিতেই শান্ত এসে হাজির
.
ওমা নতুন বউ হয়ে স্বামীর আগেই খেয়ে নিলে?
.
এক মিনিট!আমার খিধা লাগছিল,আপনি দেরি করে আসছেন তো আমি কি করবো?
.
ফাইন কিছু করতে হবে না,চেয়ার নাই?
.
না নাই,থাকলে তো দিতামই,বেতন পেলে সব কিনবো
.
খাওয়া শেষ!আমি যাই,ঘুমিয়ে পড়ো তুমি
.
আহানা দরজা লাগাতে যেতেই শান্ত হাত ধরে আটকালো
.
কি?আবার?
.
তোমার একা বাসায় ভয় করে না?
.
না করে না,যান এখন!
.
করলে বলিও কেমন?
.
যান বলতেসি
.
আরেহ আমি তো থাকবো না,আমি অলিকে বলবো তোমার সাথে এসে ঘুমাতে
শুনো মেয়ে তোমার প্রতি আমার একটু ইন্টারেস্ট ও নেই ওকে??
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৪২

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৪২
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানা শান্তর সামনে গিয়ে রাগে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে
.
হাই??কি খবর
.
আপনি!!
আপনি তারেক আঙ্কেলকে কি বলেছেন?আপনাকে বলসি আমি আমার হয়ে তদারকি করেন?
.
না বলো নি,আর আমি কি করবো না করবো সেটাও তোমার এত ভাবতে হবে না
তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি আমি,আর কেনইবা এতসব তোমাকে কৈফিয়ত দিচ্ছি আমি?
চোখ রাঙিয়ে শান্ত মুখে সেন্টার ফ্রেশ ঢুকিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো
আহানা ওর দিকে চেয়ে রেগে সামনে পা রাখতেই নিহাল এসে দাঁড়ালো
.
কি?আবার কি?
.
দেখো আহানা আমি অনেক ভেবেছি,আমার মনে হয় আমি ভুল ছিলাম,সেদিন তোমার অনাথ হওয়ার কথা শুনেও আমার বিয়েতে হ্যাঁ করা উচিত ছিল বাট আমি করিনি,তুমি প্লিস আমাকে ক্ষমা করে কাছে টেনে নাও
.
আপনি এসব কি বলতেসেন,দেখুন আমি আপনাকে ভালোবাসি না,ওকে?বাই,আমাকে এত ডিস্টার্ব করবেন না
.
আহানা গিয়ে তার কেবিনে বসলো
.
নিহাল আহানার দিকে চেয়ে বললো তোমাকে তো আমিও লাভ করি না,কিন্তু কথা হলো গিয়ে শান্তর সাথের বাজির
ওর ধারনা তোমাকে আমি পটাতে পারবো না,কিন্তু এই বাজি তো আমিই জিতব,তুমি যে অনাথ,তোমাকে বিয়ে করে পরেরদিনই লাথি মেরে বের করা আমার বাঁ হাতের খেল!
সবকিছুতে ছাড় দিতে পারি কিন্তু বাজিতে না
শান্ত জাস্ট ওয়েট এন্ড সি
.
আহানা রাফি স্যারকে ফাইল দেখিয়ে কেবিনে এসে দেখলো একটা ছোট্ট বক্স,ঝকমকে কাগজে মোড়ানো আর উপর দিয়ে লাল ফিতা বাঁধা
সে বক্সটা খুলে দেখলো একটা রিং

আহানা রেগে বক্সটা শান্তর গায়ে মেরে দিলো
কি সমস্যা আপনার,এটা কি দিসেন?মজা করার ও একটা লিমিট থাকে
.
মানে?আমি কেন দিতে যাব আজব!
.
আপনি দেননি?
.
এটা আমি দিয়েছি আহানা!
নিহাল কাছে এসে আহানার হাত ধরে টেনে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো will you marry me?
.
শান্তর চোখ লাল টুকটুকে হয়ে গেছে,বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেছে সে
.
আহানা হাত ছাড়াতে নিতেই নিহাল আরও শক্ত করে ধরে আকুতি মিনতি করতে লাগলো
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
নিহাল ছাড়ুন,আমার লাগতেসে!
.
শান্ত এক ধাক্কা দিয়ে নিহালকে সরিয়ে দিলো
.
ও বলছে না ওর লাগছে?কথা কানে যায় না তোর??
.
মাইন্ড ইউর language শান্ত!!
.
ইউ জাস্ট শাট আপ!!আহানার গায়ে একটাও টোকা দিবি তো তোর হাত ভেঙে তোর মাথায় হ্যান্ড ক্রাউন বানিয়ে সাজিয়ে দিব!
.
নিহাল শার্টের কলার ঠিক করে চলে গেলো
.
আহানা চুপ করে চেয়ারে গিয়ে বসেছে
.
শান্ত ঢকঢক করে পানি খেয়েই যাচ্ছে
তারপর সিগারেট একটা ধরিয়ে নিচের দিকে গেলো,বাইরে দাঁড়িয়ে অফিসের দিকে চেয়ে দেখতেসে আর সিগারেটে টান দিচ্ছে
নিহাল কোথা থেকে এসে শান্তর সিগারেটটা নিয়ে নিলো
তারপর হেসে দিয়ে বললো এত কষ্ট এই টুকুতেই?
আরে সামনে তো আরও কত কিছু দেখতে হবে তোমাকে!
আমি যখন আহানাকে বিয়ে করে নিয়ে যাব তোমার সামনে রোমান্স করবো!
.
চুপ!!এসব করার যোগ্যতা তোমার নাই
.
তাই তো আমি আহানাকে বিয়ে করে সেটা প্রুভ করে দিব শান্ত,আমার সাথে বাজি ধরতে আসিও না,আমি বাজিগর!তুমি তোমার ওভার একটিং নিয়ে থাকো আমি আহানাকে বিয়ে করে হানিমুনেও চলে যাব ততদিনে
.
শান্ত নিহালের কলার টেনে বললো আমি তোরে ছাড়বো না,আহানার থেকে দূরে থাকবি,গট ইট?
কথাটা বলে শান্ত চলে গেলো

আজ বিকালেই সব কাজ শেষ করে আহানা বাসায় ফিরেছে,শান্তর যে কি হলো,আমার সাথে একটা কথাও বলেনি সে
বাসায় ফিরে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে যেতেই দাদি ডাক দিলেন
আহানা সবে একটা সিঁড়িতে পা রেখেছে,নিচে নেমে সেদিকে গেলো দাদির ডাকে
দাদি মুচকি হেসে আহানার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে আসলেন
সোফায় দাদা আর কে যেন বসে আছে
আহানার বুকের ভিতর কেমন যেন করছে,না এটা হতে পারে না, এটা শান্ত হতে পারে না, শান্ত যেন টের না পায় সেজন্য তো আমি অন্য রোড দিয়ে এসেছি তাহলে ও এখানে কেন আসবে,কিন্তু নাহহহ এটাই শান্ত
আহানা ঢোক গিলে তাকিয়ে আছে ওর দিকে,আর সে দাদার সাথে দাবা খেলায় মগ্ন
দাদা এমনভাবে ওর সাথে কথা বলতেসে যেন দূর দুরান্তের সম্পর্ক তাদের
.
কিরে চিনোস তো এরে?
.
আহানা থতমত খেয়ে বললো হুম চিনি
.
তুই আমাদের শান্তকে চিনস আগে বলবি না??তাহলেই তো হতো
.
আপনি এখানে কেন?
.
শান্ত দাবায় চাল দিয়ে আহানার দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বললো এই প্রশ্ন তো আমার করা উচিত,তুমি এখানে কেন?কারণ তোমার আগে আমি উনাদের চিনি
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো দাদি আমি আসি
.
আরে থাক থাক এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে?চা খাওয়ার জন্য ডাকছি তোরে
.
লজ্জা,?কিসের লজ্জা!
.
হইসে না জানার ভান করতে হবে না,আমরা সব জানি
.
আহানা মনে মনে ভাবতেসে এরা কি জানে,বেয়াদবটা কি বলেছে এদের!
.
দাদি হেসে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন
দাদা চাল দিতে দিতে বললো শান্ত আমার নাতির মত,এমন কোনো দিন বাকি নেই ও আমার খবর নেয় না,বড্ড ভালো ছেলে
.
কেমন ভালো সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না
চা না খেয়েই আহানা বাসা থেকে বেরিয়ে দোতলার দিকে গেলো
দরজা লাগাতে যেতেই শান্ত হাত দিয়ে দরজা ধরে ফেলে ভিতরে ঢুকে গেলো
.
এই আপনি এখানে কি করেন?এখন কি আমাকে এই বাসা থেকেও বের করে দিবেন?কি সমস্যা আপনার? যান বলতেসি!
.
এটা আমারও বাসা
.
বললেই হলো আর কি,বের হোন বলতেসি আমি চিৎকার করবো,দাদা!!!! দাদি!!
.
শান্ত আহানার মুখ চেপে ধরে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ধরলো
শুনো একটা কথা বলি..মন দিয়ে শুনবা ওকে?
.
না
.
তাহলে কামড়ে দিব,চুপচাপ আমার কথা শুনো
আমি এই বাসা আমার ও বাসা বানিয়ে নিব
কালকের জন্য তৈরি থেকো,ওকে?
কথাগুলো বলে শান্ত মুচকি হেসে চলে গেলো
.
আহানা থ হয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে,এটা কি বলে গেলো শান্ত?কালকের জন্য তৈরি থাকবো মানে?
আমাকে কি এই বাসা থেকেও তাড়াবে নাকি?আজব তো!
আর কি বললো উনার বাসা বানাবে?নিজের বাপের এত বড় ফ্ল্যাট রেখে কিনা এবার আমার এই বাসায় থাকবে?থাকাচ্ছি আমি!!
কাল খবর করে দিব আমাকে এই বাসা থেকে বের করতে চাইলে!
আহানা ঠাস করে দরজা লাগিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলো দুটো প্যাকেট ফ্লোরে
আহানা গিয়ে প্যাকেটগুলো হাতে নিয়ে ভাবলো এগুলা কে রাখলো আমি তো দরজা লক করে গেসিলাম,তাহলে চাবি পেলো কই?
আহানা প্যাকেটটা না খুলেই হনহনিয়ে নিচ তলায় আসলো দাদি গাছে পানি দিচ্ছেন আর সূরা ফাতিহা পড়তেসেন
আহানা গিয়ে বললো দাদি আমি যাওয়ার পর কি কেউ আমার বাসায় এসেছিল?
.
সূরা পড়া শেষ করে উনি বললেন হ্যাঁ,একটা মেয়ে,নাম রুপা বললো তোমার বান্ধুবী
আমি বারতি চাবি দিতাম না কিন্তু সে বললো সে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চায়,আর বললো প্যাকেটটা রেখেই চলে যাবে
তাই চাবি দিলাম,অলিকেও সাথে দিসিলাম কারণ আবার কি করে না করে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না
অলি বললো শুধু ব্যাগ রেখে চলে এসেছে
.
ওহ!
আহানা দোতলায় উঠতে উঠতে ভাবলো রুপা আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো?
তাহলে এখনও কল করেনি কেন?
ভাবতে ভাবতে আহানা প্যাকেট খুলে দেখলো একটা লাল শাড়ী,সুতোর শাড়ী
নীল ব্লাউজ,লাল শাড়ীর সাথে নীল ব্লাউজ কেন?রুপা কি গাঁজা খাইয়া শপিং করসে নাকি
আরেকটা প্যাকেটে একটা হালকা পাতলা গলার হার, কানের দুল,টিকলি আর এক মুঠো চুড়ি
রুপা এসব কেন কিনলো,আর চয়েস এত সুন্দর!রুপার চয়েস তো এত ভালো না,আমার কেন জানি মনে হচ্ছে শান্ত কিনেছে এসব!
আহানা ফোন নিয়ে সোজা রুপাকে কল করলো
.
রুপা গন্ডারের মত ঘুমাচ্ছে পড়ে পড়ে,ফোন বাজতেই লাফ দিয়ে উঠে রিসিভ করে আহানা কিছু বলার আগেই বললো ঐ প্যাকেটের সব আমি কিনছি
.
তোকে তো এখনও জিজ্ঞেসই করিনি তাহলে?
.
না তুই হয়ত ভাববি অন্য কেউ দিসে কিন্তু না আমি দিয়েছি,সত্যি বিশ্বাস কর,সত্যি আমার পিগি ব্যাংকের কসম
.
হইসে চুপ কর,বিশ্বাস করসি,কিন্তু একটা কথা,লাল শাড়ীর সাথে নীল ব্লাউজ দিছস কেন?মদ আবার খেয়েছিস?
.
ওটাতে শাড়ী ছিল?
.
কিহহহহ?তুই কি বললি?
.
না মানে ইয়ে মানে ওটাতে নীল ব্লাউজ ছিল?আমি তো লাল কিনেছিলাম,ওরা ভুলে নীল দিয়া দিসে
.
ওহ,আচ্ছা থ্যাংক ইউ সো মাচ!!
.
রুপা ততক্ষণে লাইন কেটে ২গ্লাস পানি খেয়ে শান্তকে কল করতেসে
.
হ্যাঁ রুপা বলো
.
ভাইয়া ঐ প্যাকেটে শাড়ী ছিল আমাকে বলেননি কেন,আর একটুর জন্য ধরা খাইতাম আমি
.
আহানার সাথে আমি মিথ্যা বলতে পারি না বলেই তোমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম,সরি ফর দ্যাট,মনে ছিল না শাড়ীর কথা তোমাকে যে বলিনি
.
হুম!
.
আহানা প্যাকেট গুলো রেখে চুপচাপ রান্নাঘরে গেলো,ভাত বসিয়ে ভাবলো রুপা কি সত্যিই এগুলো কিনেছে?আচ্ছা কাল টেস্ট করবো,কে কিনেছে
.
পরেরদিন আহানা মিষ্টিকে পড়িয়ে শান্তর বাসার দিকে তাকাতে তাকাতে চলে যাচ্ছে,কি ব্যাপার!এই শান্তর কি হলো!আমাকে জ্বালাতে আসলে না!
আজ শুক্রবার বলে ভার্সিটি নেই,মিষ্টিকে পড়িয়ে আহানা বাসায় ফিরে বাসার সব কাজ সেরে ভাত বসাতে যেতেই দরজায় নক হলো,অলির কথা শুনা যাচ্ছে
আহানা গিয়ে দরজা খুলতেই অলি বললো আজ রান্না করতে হবে না,দাদির বাসায় দাওয়াত
.
হঠাৎ কেন?
.
সেটা তো জানি না!
.
আহানা গিয়ে চালের বাটি থেকে চাল বালতিতে ঢেলে ছাদে গেলো
আজ সকাল থেকে এত বাতাস,আহানার ভালোই লাগছে,এই প্রথম সে এই বাসার ছাদে এসেছে
অলি একটা দড়ি নিয়ে এসে বললো তার সাথে দড়ি লাফ খেলতে
আহানা মানা করেছে কিন্তু সে শুনছে না
আহানা বললো সে বেশি লাফাতে পারে না
কম লাফ দিবে,তাতেই অলি রাজি হলো
অলি ৫০বার লাফ দিয়ে এবার আহানার হাতে দড়িটা দিলো
আহানা দড়ি নিয়ে ৩/৪বার লাফ মারতেই দেখলো দূরের ছাদে কাউকে দেখা যাচ্ছে,এটা তো শান্ত
এতক্ষণ এদিকেই চেয়ে ছিলো,আহানা থেমে গিয়ে ওড়না ঠিক করতে যেতেই শান্ত আরেকদিকে মুখ করে চলে গেলো
.
হুহ!ঢং দেখায় আমাকে,আরে আমি তো ভুলেই গেসিলাম আমাকে বলছে না আজ এই বাড়ি থেকে আমাকে তাড়াবে,আমিও যাব না হুহ?
আহানা শাড়ীটা পরে গলার সেটটা,চুড়ি,টিকলিও পরে নিলো,আয়নায় নিজেকে দেখে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো অফিসের উদ্দেশ্যে
শান্ত যদি মুচকি হাসে এর মানে দাঁড়াবে সে দিসে এগুলো,হুমমমমম,ওর মুখের দিকে খেয়াল রাখতে হবে
অফিসে পা রাখতেই আহানা দেখলো শান্ত ফোনে কথা বলতেসে
আহানার দিকে একবার তাকিয়ে কম্পিউটারে একটা ফাইল কমপ্লিট করায় ব্যস্ত হয়ে গেলো
আহানা ব্রু কুঁচকে ভাবলো কি ব্যাপার কোনো রিয়েকশান নাই কেন উনার,আজিব তো!
শান্তর পাশে বসে আহানা কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো আমাকে কেমন লাগছে?
.
ভালো
.
শুধু ভালো?
.
হুম,তোমাকে তো শুধু ভালোই লাগে
.
হ্যাঁ আমাকে তো শুধু ভালোটায় লাগে,আর বেশি ভালো লাগে না
.
ওয়াও আহানা,তোমাকে কি জোস লাগতেসে,বাই দ্যা হয়ে লাল শাড়ীর সাথে নীল ব্লাউজ পড়সো কেন?
.
আহানা ইতস্তত বোধ নিয়ে লিজার কথায় হেসে বললো লাল ব্লাউজ খুঁজে পাচ্ছিলাম না
.
শান্ত আজ রাফি স্যারকে বলে তাড়াতাড়ি চলে গেছে অফিস থেকে,আহানার তো কলিজা কাঁপতেসে,না জানি দাদা দাদিকে কি আজব সাজব বানিয়ে বলতেসে,আমাকে যদি ওরা বের করে দেয় আমি কোথায় যাব!!
আহানা অনেক কষ্টে কাজ সারতে সারতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো তার
ভয়ে ভয়ে হেঁটেই বাসায় ফিরলো গতি বাড়িয়ে,সব দেখি চুপচাপ!
আহানা পা টিপে টিপে বাসার ভেতর ঢুকলো,দাদা দাদির বাসা থেকে সোরগোল শোনা যাচ্ছে,কি হচ্ছে কে জানে
আহানা দোতলায় উঠতে যেতেই দাদার ডাক শুনতে পেলো
থেমে গিয়ে জ্বী বলে বাসার ভেতর ঢুকলো সে
দাদা বললেন ভিতরের রুমে যেতে,সেখানে দাদি আছেন
আহানা ভিতরের রুমে যেতে যেতে সোফার দিকে তাকালো
২জন হুজুুর বসে আছেন,তার মধ্যে একজন চশমা পড়া হুজুরের মতন লম্বা দাঁড়ি আলা তিনি কাগজ কলম নিয়ে কিসব লিখে যাচ্ছেন আর দাদার সাথে কথা বলতেসেন
শান্তকে তো দেখা যাচ্ছে না
আহানা ভিতরের রুমে এসে যা দেখলো তা দেখে তার চোখ কপালে,রুম ভর্তি সব মহিলা
সবাই আহানার দিকে চেয়ে মুচকি হেসে আছে
দাদি আহানাকে ধরে খাটে বসিয়ে ওর থুতনি ধরে টেনে উনার হাত মুখে নিয়ে চুমু খেলেন আর বললেন সোনার টুকরো মেয়ে
.
আহানা কিছু বুঝতেসে না
শেষে হা করলো কথা বলার জন্য তার আগেই পিছন থেকে একজন মহিলা ধাক্কা দিয়ে বললেন
তা মেয়ে এতদিন ধরে প্রেম করছো বিয়ের কথা মুখে আনলেই এমন করো কেন?সম্পর্ককে বৈধ রুপ দিয়ে থাকাটা হালাল কাজ,মুসলিম মেয়ে হয়ে এসব জানো না?
.
মানেহহহহ!কি?
.
শান্ত এসে গেছে গো,তোমরা আহানাকে রেডি করো
.
একজনের মুখে কথাটা শুনে আহানা বলতেসে কি হয়েছে,কি হবে,কেন হবে??
কেউ তার কথায় কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না,একজন তো আহানার শাড়ীর আঁচল টেনে ওর মাথার উপর দিয়ে দিলো
আরেকজন আহানার হাত ধরে ওকে দাঁড়ই করিয়ে দিলো
.
এক মিনিট কি হচ্ছে এসব?
.
আরে মেয়ে না জানার ভান করো কেন,তুমি নিজেই লাল শাড়ী পরে তৈরি হয়ে এসেছো আর বলতেসো কি হচ্ছে?তোমার বিয়ে হচ্ছে,বিয়ে!!!
.
আহানা চোখ তুলে বললো কি বললেন?কার সাথে?
.
রুমের সবাই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে
আহানা বিরক্ত হয়ে সোফার রুমের দিকে চলে গেলো
সোফার রুমে আসতেই দেখলো যিনি চশমা পরে ছিলেন তিনি শান্তকে কিসব জিজ্ঞেস করতেসেন,সম্ভবত নাম জিজ্ঞেস করেছেন
শান্ত নাম বললো-শাহরিয়ার শান্ত!
তারপর আহানার দিকে তাকালো
আহানা ওর দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে,ও নীল পাঞ্জাবি পরে এসেছে এখানে
সোফায় ভদ্রভাবে বসে আছে,মাথায় সাদা টুপি,নিজের নাম বলে আহানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো সে
আহানা ঘোমটা খুলে শান্তর হাত ধরে টেনে বাসার বাইরে নিয়ে গেলো
কি সমস্যা আপনার?এসব কি হচ্ছে?
.
আমার আর তোমার বিয়ে হচ্ছে
.
আমি আপনাকে বিয়ে করবো না,ওকে?এরকম ফাইজলামো করার আগের আমার সাথে কথা বলা উচিত ছিল আপনার
ওহহহ তাহলে শাড়ীর প্যাকেট আপনিই দিসিলেন
.
হ্যাঁ আমি দিয়েছি,আর আজ এই মূহুর্তে আমি তোমাকে বিয়ে করবো
.
বললেই হয় না,আমি আপনাকে বিয়ে করবো না,এখন গিয়ে বলেন উনাদের চলে যেতে
.
কাজী সাহেব আমার সব নাম পরিচয় সব লিখে নিসে এবার তোমার পালা,তুমি তোমার পরিচয় নাম দিয়ে বসো কবুল বলতে বললে কবুল বলবা
.
সম্ভব না!
আমি এই বিয়ে কিছুতেই করবো না
বলা নেই কওয়া নেই আপনি এত বড় একটা ডিসিশান আমাকে না জানিয়েই নিয়ে নিলেন?
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৪১

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৪১
#Writer_Afnan_Lara
?
কেন?কারণ জানতে চান আপনি??
আপনি জানেন আপনার কারণে আজ আমায় এত কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে,কি দরকার ছিল আমার বাসায় কারণে অকারণে আসার?
আপনার এত আমার বাসায় আসা যাওয়া তারেক আঙ্কেল ঠিকভাবে নেয়নি,আমাকে বাসা ছাড়তে বলছিলো একদিনের ভিতরে
তাই আমি একটা নতুন বাসা নিয়েছি
.
শান্ত চুপ করে থেকে আহানার দিকে চেয়ে আছে
ঐ তারেক বলদরে পিটাইয়া পিঠের ছাল তুলে সেটা দিয়ে চামড়ার দোকান একটা খুলে ব্যবসা লাটে উঠাবো আমি নাহলে আমি আহানার মিঃ অশান্ত নাহ!!!
.
শুনুন আপনাকে আমি সাফ সাফ একটা কথা বলে দিচ্ছি আর কখনও আমার আশেপাশে আসবেন না দূরে থাকুন বলতেসি!
.
?তোমার নতুন বাসার এড্রেস দাও
.
দিব না,আপনার লজ্জা করে না?এত কিছুর পরও আমার বাসার ঠিকানা চাচ্ছেন?এবার আমাকে রাস্তায় নামাবেন নাকি?
.
তুমি বলতে হবে না,তোমার বাসার ঠিকানা বের করা আমার কাছে ২মিনিটের ব্যাপার বুঝছো?আর রইলো কথা তোমার এই বাসাও যাবে না আমার কারণে,দেখে নিও
.
দেখার দরকার নাই আমার,আপনি প্লিস আমাকে আমার মত চলতে দিন,প্লিস!!
.
শান্ত কম্পিউটারে মনোযোগ দিলো
আহানা কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে এখন ফাইলগুলো বের করতেসে
সারাদিনে দুজনে দুজনের সাথে একটা কথাও বলেনি
সন্ধ্যায় অফিস ছুটি হতেই আহানা হাঁটা ধরলো,আজ আর শান্তর বাইকের জন্য দাঁড়ায় নিই
শান্তকে আগেই থামিয়ে দিলে তারেক আঙ্কেলের বাসা ছাড়তে হতো না আমাকে!
শান্ত বাইক নিয়ে এসে দেখলো আহানা অনেকদূর চলে গেছে তাও ওকে দেখা যাচ্ছে,কারন ফাঁকা রোড বলে
আহানা বারবার পিছনে তাকাচ্ছে,শুধু মনে হচ্ছে কেউ ওকে ফলো করছে কিন্তু কাউকে তো সে দেখছে না,শেষে হাঁটার গতি বাড়িয়ে রাত হওয়ার আগেই সন্ধ্যা থাকতে থাকতে বাসার সামনে এসে পড়লো সে
উফ বাঁচলাম,পা মনে হয় ভেঙ্গে যাবে,এতদূর কি আর হেঁটে আসা যায়!
বাসায় দরজার তালা খুলে ভিতরে পা রাখতেই গলা শুকিয়ে গেলো আহানার
পুরো রুম অন্ধকার,একা একটা বাসা,ভয় লাগারই কথা,কাঁপা কাঁপা হাতে লাইটের সুইচ টিপ দিয়ে বাতি জ্বালালো সে
নিচে বিছানো চাদরটার উপর ব্যাগ রেখে রান্নাঘরের দিকে গেলো আহানা
চাল ধোয়ার জন্য নিতেই দরজায় কে যেন নক করলো,কলিংবেল নেই,যারা আসবে তারা দরজায় টোকা দিবে
আহানা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে দরজা খুললো,একটা ছোট বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে
সে আহানার দিকে চেয়ে হেসে দিয়ে বললো নানুমণি তোমাকে ডাকে
.
তুমি কে?
.
আমি অলি,অলি আহমেদ,ঐ যে পাশের বাসা আছে না
নীল রঙের টিনের বাড়ি ওটাতে আমি থাকি,আমি আমার আম্মু আমার আব্বু, আমার ছোট ভাই
আর তার পাশে যে সবুজ রঙের টিনের ঘরটা আছে ওটাতে আমার চাচ্চু আর চাচি,আমার চাচাতো বোন থাকে
আর তার পাশে যে ছাই রঙের টিনের ঘর আছে না ওটাতে আমার দাদা দাদি থাকে
আর আমার চাচাতো বোনের নাম তন্নি
আর আমার ভাইয়ের নাম অমি,আমার মায়ের নাম সায়মা খাতুন,বাবার নাম তকির আহমেদ
আমি ক্লাস ২তে পড়ি,আর….
.
ওকে ওকে ওকে বুঝছি সব,আসো ভিতরে আসো
.
নাহ,নানুমণি বলসে তোমাকে নিয়ে যেতে,আর আমি এখন থেকে তোমার খানাপিনাপিয়ন
.
ডাকপিয়ন শুনছি,খানাপিনাপিয়ন শুনি নাই কোনোদিন
.
মানে নানুমণি তোমাকে খেতে ডাকলে আমাকে দিয়ে ডাকাবে
.
ওহ,আচ্ছা চলো!
আহানা নিচতলায় এসে মেয়েটার সাথে ভেতরে গেলো বাসার
সালমা বেগম ডাইনিং এ খাবার সাজাচ্ছেন,আহানার দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বললেন প্রথমদিন তো তাই তোমাকে আর রাঁধতে দিব না
আমি খাওয়াবো
তা দুপুরবেলায় কই ছিলে?আমি অলিকে দিয়ে ডাকাইসি তুমি নাকি ছিলে না
.
দাদি আমি অফিসে ছিলাম
.
ওহ,অফিসে খেয়েছো তো,আচ্ছা কথা না বাড়িয়ে এখন খেতে বসো
.
দাদি আমি রান্না করে খেতে পারবো,কি দরকার ছিল এত কষ্ট করার
.
আরে বোকা মেয়ে এতসব তোমাকে ভাবতে হবে না,আসো বসো
.
আহানা চেয়ার টেনে বসলো,অলি টিভি চালু করে মটু পাতলু দেখতেসে আর খিলখিল করে হাসতেসে
.
আমার পায়ের ব্যাথার জন্য সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে পারি না,তাই অলিকে দিয়ে তোমাকে ডাকালাম,ও তো এতক্ষণে ওর ১৪গুষ্টির পরিচয় তোমাকে দিয়ে দিছে নিশ্চয়?
.
আহানা হেসে বললো হুমমম!

শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট মুখে দিলো,তারপর গ্রিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আহানার নতুন বাসার দিকে চেয়ে রইলো
আহানা ম্যাডাম বললাম না আমার কাছে ২মিনিটের ব্যাপার আপনার নতুন বাসার ঠিকানা বের করার,আর তোমার নতুন বাসা তো একদম আমার বাসার পাশেই
ডেইলি জ্বালানোটার ধরন এবার জোস হবে!তোমার বাসার বারান্দা না দেখা গেলেও রান্নাঘরটা দেখা যায়,স্পষ্ট না তাও হালকা পাতলা দেখা যায়
শান্ত হেসে পকেট থেকে দূরবীন বের করলো আর বললো এটা দিয়ে তোমাকে স্পষ্ট দেখা যাবে ম্যাডাম আহানা!
হাহা,মজা হবে শুধু মজা
.
কিরে কিসের মজা হবে?
.
তোর বিয়ে তো তাই,জবের কি খবর?প্রেগন্যান্ট বউরে কতদিন বাপের বাড়ি রাখবি?
.
আরে ধুর, রুপা তো প্রেগন্যান্ট নাহ,বাট একটা বাসাও তো নিতে হবে,রিয়াজ সূর্য তুই সব দামড়া ছেলে
তোদের মাঝে তো এখানে সে uncomportable ফিল করবে
.
হ্যাঁ সেটা অবশ্যই,আচ্ছা এক কাজ করলেই হয়,তোদের বাসা তো গ্রামে,সেখানে নিয়ে যা
.
রুপা আমাকে কাঁচা গিলে খাবে,ওর গ্রাম ভালো লাগে না
.
বাপরে বাপ,এখন থেকে বউকে ভয় পাস তুই
.
তুই পাস না?তোরে তো প্রথমদিনেই চড় মাইরা দিসিলো
.
হুর!আহানা কি আমার বউ নাকি,নাকি হবু?কিছুই না,তাহলে ওর সাথে মিলাস কেন?
.
তো কার সাথে মিলাবো?যেখানে তাকাই তোদের দুজনকে একসাথে দেখি,তবে প্রেমপিরিতি করস না এটা ঠিক বাট সারাদিন ঝগড়া করস
এলিনা,বেবি ছিল ওদের সাথে মিলাই নাই কারণ ওদের প্রতি তোর কোনোদিনই ইন্টারেস্ট ছিল না,বাট আহানার প্রতি তোর ইন্টারেস্টের অভাব হয় না
.
তো?এখন কি একসাথে দেখছিস আমাকে আর আহানাকে?
.
নাহ তবে তোর হাতে দূরবীন কেন?অফিস,ভার্সিটি ছেড়ে এখন কি ডিটেক্টিভ হয়েছিস নাকি?
.
আরে না,ঐ যে ইমামের বাড়ি আছে না?
.
হুম তো?ওখানে কি ফলো করবি তুই যে দূরবীনই আনতে হলো,উনি তো উনার বউরে নিয়ে একা থাকেন
.
না একা না,দোতলা ভাড়া দিয়েছে
.
আহানাকে ছেড়ে এবার আরেকটা ধরছোস?বিশ্বাস কর যত মেয়েই লাইফে আনোস না কেন,আহানার মত পার্টনার পাবি না,সে তোকে মেরে আবার মলম লাগিয়ে দেওয়ার মত মেয়ে
.
আরে আমাকে বলতে তো দিবি,দোতলা আহানা ভাড়া নিসে
.
হোয়াট??
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
তোদের দূরত্ব কি কম ছিল যে এবার এত কাছে চলে আসলো?
আমি শেষ,সাম বডি সেভ মি,এবার ঝগড়ার আকার টাইটানিকের চেয়েও বিরাট আকার ধারণ করবে
.
চুপ!
যা এখান থেকে,বেয়াদব!
.
শান্ত দূরবীন দিয়ে আহানার রান্নাঘরের দিকে তাকালো,জানালা বন্ধ,ঘুমাতে গেছে মনে হয়
.
আহানা তার রুমে এসে দরজা লাগিয়ে নিচে শুয়ে পড়েছে,পিঠে ব্যাথা করতেসে,ফ্লোরে শোয়ার অভ্যাস নেই,বেতনটা কবে পাবো,কত কিছু কেনা বাকি!
তোষক,খাট,আলমারি!
অনেক কষ্টে এপাশ ওপাশ করে ঘুমিয়ে গেলো সে,সকাল সকাল উঠে নামাজ সেরে বসে রইলো,দু কদম হাঁটলেই মিষ্টিদের বাসা,আগে তো কতদূর থেকে হেঁটে আসতে হতো
আসলেই আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে
আহানা ওড়নাটা পরে ব্যাগ নিয়ে বের হলো,শান্তদের বাসার সামনে এসে থেমে গেলো সে,মুখ তুলে উপরে তাকিয়ে দেখলো শান্ত সিগারেট খাচ্ছে আর ওর দিকে চেয়ে আছে এক দৃষ্টিতে
আল্লাহ জানে আমাকে ওদিক থেকে আসার সময় দেখছে কিনা
আহানা ভয়ে ভয়ে লিফটে উঠলো,লিফট থেকে বেরিয়ে বড় একটা দম নিয়ে হাঁটা ধরেছে সে
শান্ত ওর বাসার দরজার পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে
.
আহানা না তাকিয়েই মিষ্টিদের বাসার কলিংবেলে চাপ দিতে যাওয়ার আগেই শান্ত একটান দিয়ে ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো
দাঁতে দাঁত চেপে বললো আমার দিকে তাকালে কি হয় তোমার?
.
বললাম না দূরে থাকুন,আপনার কারণে এ কদিন ধরে কত কষ্ট করতেসি আমি আর কত কষ্ট দিবেন?বাকি রাখছেন কিছু?
.
আমি চাই তুমি আমার আশেপাশে থাকো,আমি তোমাকে.!
.
কি?আপনার আশেপাশে কেন থাকবো আমি?
আহানা শান্তর বুকে হাত দিয়ে ওকে সরাতে যেতেই শান্ত আরও খিঁচিয়ে চেপে ধরলো ওকে
.
তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো না আহানা!
.
আর আপনি পারেন?আপনার কারণে একবার এক ঝামেলায় পড়তে হয় আমাকে,আপনি প্লিস আমার থেকে দূরে থাকুন,নিন আপনার নোটস
আহানা শান্তর হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো
.
শান্তর মেজাজ বিগড়ে আছে,সোফা থেকে জ্যাকেটটা নিয়ে সোজা গেলো তারেক রহমানের বাসার দিকে

ওগো শুনছো??
.
কি?
.
দেখো না এএএএএরররররা ককককাররা
.
তারেক রহমান দরজার সামনে গিয়ে ভয়ে চোখ বড় করে ১মিনিট চেয়ে রইলেন
দরজার ওপাশে ১০/১২টা ছেলে দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে
আর সবার পিছনে পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে দেখা যাচ্ছে,আর সে হলো শান্ত
শান্ত চুইংগাম চিবাতে চিবাতে কাছে এসে তারেক রহমানের গাল টিপে বললো কি ব্যাপার গলুমলু আঙ্কেল?
আপনাকে তো আমি ভালো মনে করেছিলাম কিন্তু আপনি এটা কি করলেন?আপনি আহানাকে বাসা থেকে বেরই করে দিলেন,আপনার এত বড় সাহস??
আমাকে কি ভয় লাগে না?
লোকে কি বললো না বললো তা ধরে আপনি আহানাকে বের করে দিলেন?আমাকে আর আহানাকে এক বিছানায় দেখেছেন?নাকি আহানার সাথে আপনার অন্য কোনো শত্রুতামি আছে?
আহানাকে আমি অফিস থেকে বাসায় বাইকে করে পৌঁছায় দি বলে আপনার এত জ্বলে?
আহানাকে তো আমি মানবতার খাতিরে হেল্প করসি আর আপনি কিনা মানবাধিকার লঙ্গনই করে দিসেন!
হেসে দিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে সোফায় বসে শান্ত বললো
.
রিসাদ!তুই টিভি ভাঙ্গবি,আর অর্ক তুই ডাইনিং ভাঙ্গবি
আর বাকিরা বাসার অন্যসব ভাঙ্গো
আর আমি তারেক আঙ্কেলের হাড্ডি ভাঙ্গবো
.
ফতুয়া দিয়ে ঘাম মুছে তারেক রহমান বললেন আমি পুলিশে ফোন দিবো,তোমরা এসব কি বলতেসো
.
আরে দেন দেন,আমরাও বলবো আপনি আপনার ভাড়াটিয়াদের অত্যাচার করে বের করে দেন টাকার লোভে
তাদের টাকার জন্য কথা শুনান,ব্যস এই দুলাইনেই আপনার জেলে থাকা হয়ে যাবে
.
আমি এখনই পুলিশে ফোন করতেসি
.
শান্ত টিভি অন করে টম এন্ড জেরি দেখতেসে
পুলিশের গাড়ীর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে
তারেক রহমান দাঁত কেলিয়ে শান্তর দিকে তাকালো,শান্ত দাঁত কেলিয়ে ছেলেগুলোর দিকে তাকালো
ছেলেগুলো পকেট থেকে ভাঁজ করা বড় কাগজ বের করে ভাঁজ খুলে নিলো
কাগজে লেখা-ভাড়াটিয়ার অধিকার দিতেই হবে,দিতেই হবে!!!!
তারপর কাগজ উপরে তুলে সবাই বলা শুরু করলো
মানি না মানবো না!!নারী অত্যাচার মারবো না!মানি না মানবো না!!ভাড়াটিয়াদের অত্যাচার মানবো না
.
ওদের মূহুর্তেই এমন বদল দেখে তারেক রহমানের চোখ কপালে উঠে গেছে,আসলো মারধর করতে আর এখন কিনা আন্দোলন শুরু করছে
পুলিশ এসে বললেন কই কারা আপনার বাসার জিনিসপত্র ভাঙ্গতে এসেছে?
.
তারেক রহমান ঢোক গিলে বললেন এরা
.
কিন্তু এরা তো দেখি আন্দোলন করতেসে,কি সমস্যা?
.
শান্ত সোফা থেকে উঠে এসে বললো এই আঙ্কেলটা ভাড়াটিয়াদের অত্যাচার করে বের করে দেয়,টাকার জন্য যা তা বলে,তাই আমরা অধিকার চাইতে এসেছি
.
পুলিশ এবার মুখ ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললেন ফাজলামি করেন?আমি তো ভাঙ্গচুরের কোনো নিশানায় পেলাম না,সামান্য একটা ঘটনার জন্য আপনি আমাদের সময় নষ্ট করলেন,আর এখন নিজেকে বাঁচাতে আপনি মিথ্যা বলতেসেন?এরা আপনাকে মারতে এসেছিল?কই?
.
কথাগুলো বলে পুলিশ চলে গেলো
.
শান্ত টেবিল থেকে একটা আপেল নিয়ে যেতে যেতে বললো- গিয়ে আহানাকে বলেন ফেরত আসতে
বহুত কষ্ট দিসেন ওকে,আর সহ্য করতে দিব না আমি!মাইন্ড ইট
আমাকে চেনেন না আপনি??অলিগলির কয়েকটা ছেলে মেয়েকে বলিয়েন শান্ত ভাই কে?কি তার পরিচয়?
তাইলে বায়োডাটা পেয়ে যাবেন,আর কোনোদিন আমার সাথে লাগতে আসার সাহস আসবে না আপনার
আপনার বয়সের কদর করি বলে ফুলের টোকাও দিলাম না আমি,এই নিন কাগজ,এটাতে আহানার নতুন বাসার ঠিকানা আছে
সম্মান দিয়া কথা বলছি,সো যা বলছি তাই করেন নাহলে সত্যি সত্যি আপনার ঐ শখের ডাইনিং আর টিভি ভাঙ্গবো আপনার ফতুয়ার কসম!
বাই
সবাই বাইকে বসে চলে গেলো,বাইক ১০টার মতন,হইচই লেগে গেছে পুরো কলোনিতে
তারেক রহমানের কলিজা এখনও কাঁপতেসে
ফতুয়া পাল্টিয়ে একটা পাঞ্জাবি পরে বউকে নিয়ে বের হলেন আহানার বাসার দিকে

আহানা ভাত বসিয়ে দিয়ে হাঁড়ি পাতিল সব এক এক করে তাকের উপর সাজিয়ে রাখছে,দরজায় নক হতেই ওড়না পরতে পরতে গেলো সে দরজা খুলতে
দরজা খুলে দেখলো তারেক রহমান আর তার স্ত্রী দাঁড়িয়ে আছেন,চোখে মুখে তাদের অসহায়ত্বের ছাপ
আহানা সালাম দিয়ে ব্যস্ত হয়ে উনাদের ভেতরে আসতে বললো
কিছু নেই যে বসতে দিবে এই ভেবে সে মাফ চাইলো
.
না মা,চেয়ার লাগবে না আমরা ঠিক আছি,তুমি ফেরত চলো
.
আহানা উনার কথা শুনে চুপ করে থেকে বললো কিন্তু কেন?
.
এমনি, তোমাকে ছাড়া আমাদের একা একা লাগে,তোমাকে তো ভালোবাসতাম অনেক,তাই
.
আহানা হেসে দিয়ে বললো না আঙ্কেল আমি আর যাব না,,সরি,আমি এখানে আমার দাদা দাদি পেয়েছি,তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে,আপনারাও বাসেন,তবে এনাদের একা ছেড়ে যেতে পারবো না
.
তারেক রহমান ঢোক গিলে বললেন তাহলে কথাটা শান্তকে বুঝিয়ে বলিও কেমন?সে নাহয় আবার আমাকে ধরবে
.
আহানা ব্রু নাচিয়ে বললো উনি কি করেছেন?
.
নাহহহহহ কিছু করে নাই,এমনি বললাম,আসি কেমন
.
দুজনে তড়িগড়ি করে চলে গেলেন
আহানা নিচে ধপ করে বসে চেয়ে আছে দরজার দিকে
এই ছেলেটাকে নিয়ে আমি আর পারবো না,ওকে বাসা পাল্টানোর কথা শুনানোই ঠিক হয়নি!
আহানা তাড়াতাড়ি ভাত খেয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হলো,শান্তদের বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলো শান্ত বাইক নিয়ে বের হচ্ছে
ওকে দেখে তড়িগড়ি করে একটা পিলারের পিছনে লুকিয়ে পড়লো আহানা
.
শান্ত হেলমেট পরে হেসে দিয়ে বললো একটা পিলার কি আর মোটা হাতিকে লুকাতে পারে?
.
আহানা রেগে তাকিয়ে বললো কি বললেন আমি হাতি?আপনার কথাবার্তার কোনো লাগাম নেই না?
.
শান্ত বাইক স্টার্ট দিয়ে যেতে যেতে বললো
“”””আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না””””
.
আহানা স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেলে ভাবলো যাক বাবা সন্দেহ করে নাই যে আমি এই রোড দিয়ে যাচ্ছি কেন,বাঁচলাম!
তারপর সে ভার্সিটিতে এসে সোজা বটতলায় গেলো
.
তমাল ভাইয়া?শান্ত ভাইয়া কোথায়?
.
শান্ত তো একটা কাজে বাজারে গেছে,কেন কি হইসে?
.
কিছু না
.
আহানা ক্লাসে ফিরে এসে বসলো,রুপা তার বিয়ের খুশিতে আত্নহারা হয়ে গুনগুন করে গান গাইছে
আহানা এক ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলো ওকে
.
কিরে?কি হইসে তোর?
.
কিছু না
.
তাহলে আমার উপর দিয়ে রাগ ঝাড়স কেন?
.
বলসি না কিছু না??
.
ভার্সিটির ছুটি হয়ে গেছে কিন্তু শান্তর খবর নাই,আহানা ওকে বকতে বকতে অফিসের দিকে হেঁটে যাচ্ছে
এভাবে আর কত পালাবেন আমার থেকে?
অফিসে আসতেই দেখলো শান্ত রাফি স্যারের সাথে কথা বলতেছে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৪০

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৪০
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানার মুখে এমন কথা শুনে শান্তর মুখের ভঙ্গি বদলে গেলো
এসব কি বলছে ও,একবার রুপা এখন আবার সে নিজে??
রুপারটা না হয় মানলাম তাই বলে তারও
.
জিভ দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে শান্ত বললো আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড!
.
নাহ বলি সমস্যা নাই তো আপনার!
.
কথা শেষ করে আহানা হাঁটা ধরলো
শান্ত তার চুলগুলো ঠিক করে পিছু পিছু আসতেসে
আহানা এসে রুম ভর্তি মানুষের সামনে দাঁড়ালো
শান্ত আহানার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে গিয়ে সোফায় বসলো
আহানা হেসে রুপার রুমের দিকে চলো গেলো
স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেললো শান্ত
শরবতের গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা খেয়ে নিলো,টেনসন ফ্রি!
আহানা রুপাকে নিয়ে আবার ফেরত এসে ওকে সোফায় বসিয়ে নিজেও বসলো
.
বড়রা কথা বলতেসে আর এর মাঝে রুপা নওশাদ মনে মনে প্রেম নিবেদন করছে
তার মাঝে আহানা শান্ত চোখ দিয়ে একজন আরেকজনকে গিলে খাচ্ছে,অবশেষে বড়দের আলাপ আলোচনায় এই ঠিক হলো যে ২সপ্তাহ পর কাবিন হবে যেহেতু রুপা গর্ভবতী ব্যাপারটা তাড়াতাড়ি চুকাতে হবে
নওশাদ জব নেওয়া পর্যন্ত রুপা তার বাবার বাসায় থাকবে
এবার সবাই মিষ্টিমুখ করতেছে,আহানা ট্রে নিয়ে রুপার মা বাবা, নওশাদের মা বাবাকে মিষ্টি দিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো
করিডোরে কেউ একজন হাত বাড়িয়ে ওকে দেয়ালের সাথে আটকিয়ে ধরলো
.
কি সমস্যা?
.
মিষ্টি খাব দাও,তোমার এত বড় সাহস বরের বড় ভাইকে মিষ্টি খাওয়াও না,বিয়ে ক্যানচেল করে দিব চিনো আমাকে?
.
আহানা মুচকি হেসে বললো আপনার এত বড় সাহস বরের বড় ভাবীকে ধমকান? একদম বিয়ে ক্যানচেল করে দিব
দুজনে হেসে দিলো একসাথে,তারপর আহানা মিষ্টি একটা শান্তর হাতে দিতেই দূর থেকে সেই এক দল মেয়েরা দাঁত কেলিয়ে বললো এই মিষ্টিতে কি আর দুলাভাইয়ের পেট ভরবে?
শান্ত কাশতে কাশতে আহানার হাতের ট্রে থেকে পানি নিয়ে খেয়ে চলো গেলো
আহানা মেয়েগুলোর দিকে না তাকিয়েই পালালো,মেয়েগুলো কথায় কথায় লজ্জা দেয়!
বিয়ে না হয়েও লজ্জার সাগরে ডুব দিতে হচ্ছে
.
শান্ত গিয়ে সোফায় বসতেই নওশাদের বোন তমা তার বাবুরে শান্তর কোলে দিয়ে দিলো
শান্ত বাবুটাকে কোলে নিয়ে মুখটা ফুলিয়ে বসে আছে,কারণ বাবু তার কোলে স্থির নেই,সে শান্তর মাথায় উঠে বসে ওর চুল টানতেসে,গাল টানতেসে
আহানা ট্রে রেখে সোফার রুমে ফেরত এসে এমন কান্ড দেখে ফিক করে হেসে দিলো
.
শান্ত গালটা বাঁকিয়ে উঠে এসে আহানার কোলে বাবুটাকে রেখে চলে গেলো
ফেরত এসে দেখলো বাবুটা আহানার কোলে শান্তভাবে ঘুমাচ্ছে
.
ওমা!শয়তান মেয়ে কোথাকার,আমার কাছে থেকে আমাকে ইচ্ছামত জ্বালিয়েছে আর আহানার কোলে গিয়ে উনি কি শান্তশিষ্ট! বাচ্চাদের বোঝা দায়!
সন্ধ্যা হয়ে গেছে যে যার বাসার দিকে রওনা হয়েছে,আহানা শান্তর বাইকে উঠে বসে হাতের চুড়িগুলো দেখছে আবার বাসার দিকে তাকাচ্ছে,শান্ত কার সাথে যেন কথা বলতেসে,আসতেছেই না
শেষে পাক্কা ১০মিনিট পর এসে বাইকে বসলো সে
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
এত দেরি হলো কেন?কার সাথে কথা বলতেছিলেন?
.
একটা মেয়েকে ভালো লাগছে,জোস একদম জোস,তার সাথেই কথা বলতেছিলাম
.
আহানা শান্তর কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিলো
.
শান্ত মাথায় হেলমেট পরতে পরতে বললো কাঁধে হাত রাখো নাহলে পড়ে যাবে
.
আপনার কি?ঐ মেয়েটাকে গিয়ে ড্রপ করে আসেন,আমি হেঁটে যেতে পারবো
.
ও আজ রুপাদের বাসায় থাকবে
.
আহানা রেগে ঘুরে বসলো
শান্ত বাইক স্টার্ট দিয়ে পিছন ফিরে আহানার হাত টেনে সামনে এনে একহাতে আহানার হাত ধরে রাখলো আরেক হাতে বাইক ধরলো
.
ছাড়ুন,এত দরদ দেখাতে হবে না
.
কোথা থেকে কারখানা পোড়া পোড়া গন্ধ আসতেসে
.
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে বললো এলিনা,বেবির পরে কেউ আসলেও আমার কিছু যায় আসবো না হুহ
.
আমি তো তোমার জ্বলার কথা বলি নাই,সত্যি দেখো দূরে একটা কারখানায় আগুন ধরছে
আহানা চোখ বড়করে চেয়ে ভাবলো সত্যি তো,ধুর!
.
শান্ত হাসতে হাসতে বাইক চালাচ্ছে
.
আহানা এক রাশ অভিমান নিয়ে বললো খাবো
.
সাথে সাথে শান্ত একটা টংয়ের সামনে বাইক থামিয়ে নেমে সেদিকে গেলো
খাবো বলায় বুঝে গেছে আহানা কি খাবে
চা এনে দিয়ে আহানার গম্ভীর ভাব দেখে তার মায়া হলো
হেসে শান্ত বললো আরেহহ ববির সাথে দুদিন কথা বলে আমার শখ মিটে গেছে
তোমার কি মনে হয় আমি আরেকটা মেয়ের সাথে লাইন মারবো?ইমপসিবল!
.
আমাকে বলছেন কেন?
.
তোমাকে তো বলিনি,ঐ যে একটা সিমেন্টের পিলার দেখছো সেটারে বলসি
.
আহানা আর কিছু বললো না,যাই বলে শান্ত কথা ঘুরিয়েই ছাড়ে,কথা মাটিতে পড়তে দেয় না
বাসায় এসে আহানা দেখলো তার বাসার সামনে ২টা মেয়ে দাঁড়িয়ে তারেক রহমানের সাথে কথা বলতেছে
আহানা সেখানে যেতেই তারেক রহমান আহানার দিকে চেয়ে মেয়েগুলোকে যেতে বললো,মেয়েগুলো আহানার বাসার ভেতর চলে গেলো
.
কি ব্যাপার আঙ্কেল?ওরা কারা?আর বাসায় ঢুকলো যে?!
.
তুমি আর আমার বাসায় ভাড়া থাকতে পারবে না,একটা ছেলে প্রতিদিন আসা যাওয়া করে,তোমার সাথে মেশামিশি!! ছিঃ!
মানুষ এখন আমাকেই দোষ দিচ্ছে,আজ তো ২জন এসে কথাই শুনিয়ে গেলো
আমি এদের ভাড়া দিব,তুমি তোমার জিনিসপত্র গুছিয়ে চলে যাও
.
কিন্তু আঙ্কেল আমি এই সন্ধ্যাবেলায় কই যাবো??আমাকে ১টা দিন সময় দিন আমি বাসা খুঁজে চলে যাবো
.
এখন মীম কণিকা নেই বাসায়,তুমি থাকতে পারো,তবে জাস্ট ১টা দিন সময় দিলাম,চলে যেও
আহানা বাসায় ঢুকে চুপ করে বিছানায় বসে রইলো,বাসা খোঁজা তো এত সহজ না,কি করবো কোথায় যাব,রুপার বাসায় ও তো যেতে পারবো না,ওর পুরো পরিবার জানে আমি শান্তর ওয়াইফ!
.
আহানা তার ব্যাগে সব গুছিয়ে নিতে লাগলো,সব বলতে জামা কয়েকটা,শাড়ী,বিছানার চাদর বালিশ,আর একটা মাঝারি সাইজের ব্যাগে হাড়ি পাতিল নিচ্ছে
এসব তো রইলো,বাসা কই পাবো এখন!
আমি জানতাম শান্তর এমন আসা যাওয়া তারেক আঙ্কেল আর আশেপাশের মানুষ ঠিকভাবে নিবে না,আর সেটাই হলো এখন!
পরেরদিন সকালে আর মুখে খাবার দিলো না সে,চুপ করে বসে আছে,সারারাত ঘুমাতে পারেনি,৬টা বাজতে ৩০মিনিট বাকি
ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে আবারও হাঁটা ধরলো সে,মিষ্টিকে পড়িয়ে বাসায় আসার সময় কিছু বাসা খুঁজবো থাকার জন্য
.
আহানা মিষ্টিকে পড়িয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক দেখতেসে,সব বহুতল ভবন,এসবে তো মাসে ২০/৩০হাজারের বেশি ভাড়া,ছোটখাটো বাসা পাবো কই
.
শান্ত ঘুমাচ্ছে,আজ আর আহানাকে জ্বালাতে জলদি উঠে নাই,কালকের জার্নিতে ক্লান্ত হয়ে গেছে সে
.
আহানা হাঁটতে হাঁটতে থেমে গেলো,একটা পুরান বাড়ি দেখে
২তলা বিল্ডিং
বিল্ডিংটার রঙ উঠে ছাই রঙ ধারণ করেছে
দালানের নিচতলায় সামনের বারান্দাকে স্টোর রুম বানানো হয়েছে মনে হয়
দুনিয়ার সব জিনিস ঠেসে ঠেসে রাখা,আর দোতলার বারান্দাটা একদম পরিষ্কার,শান্তদের বাসা থেকে এক কিলোমিটারের চেয়ে একটু কম দূরে হবে বাসাটা,এখানে দাঁড়িয়ে শান্তদের বাসা দেখা যায়
আশেপাশে বস্তির মত
আহানা বাড়িটার সামনে গিয়ে দেখলো “ভাড়া দেওয়া হবে” লিখা একটা সাইনবোর্ড
আহানা খুশি হয়ে ভিতরে গেলো
নিচতলার বাসার দরজায় নক করতেই একজন বয়স্ক লোক এসে দরজা খুললেন
আহানা উনাকে সালাম দিলো
লোকটা সালাম নিয়ে আহানার দিকে চেয়ে আছে
তার মুখে সব পাকা দাঁড়ি,এমনকি ব্রু ও পেকে গেছে
লোকটা কাশির জন্য কথা বলতে পারছেন না
আহানাকে ভিতরে আসতে বলে উনি চলে গেলেন
আহানা গিয়ে সোফায় বসলো,সোফা লাল রঙের তবে মনে হয় না এটা কেনার পর আর কেনোদিন এটা পরিষ্কার করা হয়েছে,ময়লা হয়ে আছে
সোফার রুমের পাশেই ডাইনিং টেবিল,রান্নাঘর থেকে রান্না করার আওয়াজ আসতেসে
লোকটা সারা বাসায় চশমা খুঁজতেসে আর একটাই কথা বলতেসেন সালমা!সালমা আমার চশমা কই?
রান্নাঘর থেকে আওয়াজ আসলো তোমার মাথায় দেখো
.
আহানা হেসে দিলো,কারণ আসলেই উনার চশমাটা উনার মাথায়
উনি ও হাসলেন আর আহানার দিকে তাকিয়ে বললেন বয়স তো কম হয়নি,এতদিক কি আর মনে থাকে?
চশমাটা পরতে পরতে সোফায় এসে বসলেন তিনি
.
কি দরকার?
.
আসলে আঙ্কেল আমি বাসা ভাড়া নিতে চাই
.
তুমি একা?
.
হুম
.
তোমার মা বাবা কি গ্রামে থাকে?
.
না আসলে আমার মা বাবা নেই,আমি অনাথ,এখানে চাকরি করি,সেই সূত্রে বাসা ভাড়া নিব
.
লোকটা চশমা খুলে তাকালেন তারপর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন তাহলে তো তোমাকে আশ্রয় দেওয়া আমার কর্তব্য
.
আমার খুব দরকার আঙ্কেল,আমি আজই আসি?
.
হ্যাঁ আসতে পারো,উপরের তলা খালি পড়ে আছে,১বছর ধরে,আগে যারা থাকতো তারা নতুন বাড়ি পেয়েছে,এই পুরান বাড়িতে কে থাকতে চাইবে,সাইনবোর্ডটায় ও জংয়ে ধরে গেছে
আর কটাদিন হলে পেরেক নড়ে নিচে খুলেই পড়তো সাইনবোর্ডটা
.
ভাড়া?
.
৭হাজার দিতে হবে
.
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে তাকিয়ে রইলো
.
আহানার মুখটা ফ্যাকাসে দেখে লোকটা বাইরের জানালার দিকে তাকিয়ে বললেন আমরা ভাড়ার টাকায় সংসার চালাইতাম
এই এক বছরে আমি মোটামুটি সংসার টেনেছি,মসজিদের ইমামতি করে,ঐ যে দূরে একটা ছোটখাটো মসজিদ আছে না ওটাতে,এখন আর হাত পা চলে না,বসে খাওয়ার বয়স,পোলাপাইন গা ঝেড়ে চলে গেছে দূরে,দেখতেও আসে না
.
আহানা রাজি হয়ে গেলো
.
উঠতে যেতেই রান্নাঘর থেকে একজন বয়স্ক ভদ্র মহিলা আসলেন,হাতে ট্রে,চায়ের কাপ ৩টা
মুখে হাসি,আর পরনে ম্যাক্সি,মাথায় ওড়না পেঁচানো,হিজাবের মত করে,ইমামের বউ তো
আহানা মেয়ে বলে সামনে আসলেন,সাদা রুক্ষ চুল তার হিজাবের বাইরে একটু একটু দেখা যাচ্ছে
হেসে দিয়ে এসে চায়ের কাপের ট্রেটা টেবিলে রাখলেন তিনি
আহানা উনাকেও সালাম দিলো
উনি আহানার পাশে বসে বললেন যাক আমার কথা বলার সাথী পেলাম তাহলে,কেউ কথা বলে না বুড়োবুড়ির সাথে,তুমি তো বলবে?
.
আহানা মাথা নাড়িয়ে সাঁই দিলো
২টা কাপে দুধ চা আর একটাতে রঙ চা,রঙ চা মহিলাটি খান আর দুধ চা লোকটা,আহানা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে উনাদের কথায় মনোযোগ দিলেন
মনে হচ্ছে সত্যিকারের তার দাদাদাদি
.
লোকটা চা খেতে খেতে বললেন আঙ্কেল ডাকিও না,আমার তো বয়স আঙ্কেলের মতন না,দাদার মত,দাদা ডাকিও কেমন?
.
আহানা ঠিক আছে বললো
মহিলাটি এবার উনি আজ কি রাঁধবেন সেই গল্প শুরু করে দিলেন,কাঁঠাল গাছ একটা বাসার পিছনের জায়গায় উঠেছিল কয়েকবছর আগে
সেটার কাঁঠাল কাল নিয়ে বিচি গুলো রোদে শুকিয়েছে,আজ রাঁধবে ইলিশ দিয়ে,এসব বলে যাচ্ছেন
অনেকদিন কারোর সাথে কথা না বললে মনে হয় কত কথা জমে আছে উনার ও তাই,আহানাকে পেয়ে বলেই যাচ্ছেন
অবশেষে কথার ঝুড়ি খালি করে উনি আহানাকে ছাড়লেন,আহানা আজ আর ভার্সিটিতে যাবে না,জিনিসপাতি সব নিয়ে এই বাসায় উঠবে,আগে ঐ বাসায় ভাড়া ৪হাজার ছিল আর এটায় ৭হাজার,তাও খারাপ না,বেতনের ১০হাজার থেকে ৭হাজার ভাড়া দিলে আর ৩হাজার থাকবে,মিষ্টির মা ২হাজার দিবেন,শান্তর নোটসের জন্য সে ৩হাজার দিবে,ভালোই হবে সমস্যা নাই
আহানা সোজা বাসায় ফিরে গেলো
সবকিছু নতুন বাসায় নেওয়ার জন্য একটা রিকসা ধরিয়ে নিলে সুবিধা হতো আমার
কিন্তু ১০০টাকা ভাড়া লাগবে,আর আমার কাছে তো ১টাকাও নেই

আঙ্কেল আমি যাচ্ছি
.
যাও,ভালো থেকো
.
আঙ্কেল আমাকে ১০০টাকা দিতে পারবেন?আমি আপনাকে বেতন পেলে দিয়ে দিব
.
কেন?
.
রিকসা দিয়ে জিনিসগুলো নিতে লাগবে
.
তারেক রহমান পকেট থেকে ১০০টাকা দিতে দিতে বললেন যার জন্য এই বাসা তোমাকে ছাড়তে হচ্ছে সে বুঝি তোমাকে এক টাকাও দেয়নি?
আহানা চুপ করে থেকে ১০০টাকার নোটটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো
রিকসায় সব উঠিয়ে দেখলো আর বিন্দু মাত্র জায়গাও নেই
রিকসাআলা যেতে যেতে বললো আপা আরেকটা রিকসা ধরে আসেন
.
আহানা উনাকে থামতে বলে বললো ভাই আপনি ভাড়াটা রাখেন,জিনিসগুলো ঠিকানাটার বাসার সামনে চিকন সরু রোডটায় রেখে দিয়ে আপনি চলে যাইয়েন,আমি আসতেসি
আহানা হাঁটা ধরলো,যত দ্রুত সম্ভব পোঁছাতে হবে

শান্ত ভার্সিটিতে এসে বটতলায় বসে আছে সেই কখন থেকে
গেটের দিকে তাকাচ্ছে আবার ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসের দিকে তাকাচ্ছে
আহানার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না
তমাল ওয়ান টাইম গ্লাসে কফি নিয়ে এসে শান্তর হাতে দিয়ে ওর পাশে বসলো
তারপর কফিতে চুমুক দিয়ে বললো আহানা ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসে নেই,আমি ক্যানটিন থেকে আসার সময় দেখলাম
.
নওশাদ ফোন টিপতে টিপতে বললো হয়ত কোনো কাজে আটকে পড়েছে,রুপাও আসেনি,নয়ত খবর নিতে পারতাম
.
শান্ত ফোন নিয়ে আহানাকে কল দিলো
আহানা তখন শান্তর বাসার সামনে দিয়ে যাচ্ছে,ফোন রিসিভ করতেই শান্ত বলে উঠলো কি হইসে তোমার?ভার্সিটিতে আসতেসো না কেন?
.
আহানা থেমে বললো কাজে ব্যস্ত আছি
তারপর সে লাইন কেটে দিয়ে সাইলেন্ট করে আবার হাঁটা ধরলো
শান্ত বুঝতেসে না কি হয়েছে!
আহানা তার নতুন বাসায় এসে রোড থেকে সব জিনিসপাতি টেনে টেনে দোতলায় তুললো
.
বাড়িওয়ালারা তো আর বিছানা দিবে না,আগেরটাতে তো হোস্টেলের মত ছিল বলে খাট ছিল কিন্তু এটাতে তো খাট নেই
আহানা সালমা দাদি থেকে ঝাড়ু এনে দোতলা পরিষ্কার করলো ভালো করে
১২টা বেজে গেছে তাড়াতাড়ি কাজ সেরে অফিসের জন্য বের হতে হবে
ফ্লোরে বিছানার চাদর বিছিয়ে বালিশ রেখে বসলো সে
পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে খেয়ে ৫মিনিট জিরিয়ে আবার উঠে রান্নাঘরে গেলো,পাতিলগুলো সেখানে রেখে চালের বালতিটা তাকে রাখলো,এই মাসের আর ১০দিন আছে,তার পরেই আমি বেতন পাবো
চাল যা আছে তাতে মনে হয় না ১০দিন যাবে,কিছু একটা করতে হবে
তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধরে দরজায় তালা লাগিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেলো সে
হেঁটে হেঁটে চলছে
.
শান্ত কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে আহানার অপেক্ষা করেছে,কিন্তু আহানা আসলো না
২৬বার কল করেছে তাও সে রিসিভ করেনি,আহানা তো ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে তার এতদিকে খেয়াল নেই
অফিসে আসতেই দেখলো শান্ত গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে
১টা বাজতে ৭মিনিট বাকি,সব কর্মচারী আসেনি,আর যারা এসেছে তারা ক্যানটিনে
.
আহানা চেয়ার টেনে বসতেই শান্ত রেগে ওর চুলের মুঠি ধরলো তারপর পা দিয়ে চেয়ার টেনে চেয়ারসহ আহানাকে কাছে নিয়ে আসলো
.
কি সমস্যা তোমার??কতবার কল করেছি?কিছু না বলে লাইন কেটে রেখে দিসো কেন তুমি?তোমার এত সাহস আসে কোথা থেকে?
.
আমি বাসা চেঞ্জ করসি তাই রিসিভ করতে পারিনি,ব্যস্ত ছিলাম
.
হঠাৎ!!কিন্তু কেন?
চলবে♥