Monday, July 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1935



প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_২৮

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_২৮
#Writer_Afnan_Lara
?
আপনি আমাকে মারবেন??
.
হ্যাঁ সে জন্যই তো আসলাম
.
আহানা ভয়ে কেঁদেই দিলো,শান্তর চোখে মুখের আগুন দেখে সে ভয় পেতে বাধ্য হয়েছে,শান্তকে দেখে সিরিয়াস মনে হচ্ছে
শান্ত স্টিকটা উপর করে এত জোরে এক বাড়ি দিলো!
আহানা মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে
শান্ত গাছের পাশে থাকা একটা সিমেন্টের পিলারে বাড়ি দিয়েছিল,আহানা ভেবেছে তাকে মেরেছে
আহানা কেঁদেই চলেছে
শান্ত আহানার কান্না দেখে হাত থেকে হকিস্টিকটা ফেলে দিলো
.
আহানা?আমি তোমাকে মারতে যাব কেন
.
শান্ত আহানার পাশে গিয়ে বসলো
.
তোমাকে মেরে আমার তো লাভ হবে না কোনো,জাস্ট তোমাকে এটা বুঝাতে এসেছি আমি তোমাকে যেটা দিব সেটা আমাকে ফেরত দিবা না কখনও,নিজের কাছে রাখবা,আমি জানি এটা তোমার আত্নসম্মান বাট তার পরেও আমি যা দিই তা আলাদা,আমার গুলা রাখতে তুমি এত আত্নসম্মান দেখাইও না,বুঝছো?
শান্ত পকেট থেকে রুমাল নিয়ে আহানার দিকে বাড়িয়ে ধরলো
আহানা ওড়না দিয়ে চোখ মুছতেসে
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আমি তো ভাবিনি তুমি সামান্য এতেই এত ভয় পেয়ে যাবে,কান্না ও করে দিবে
ভেরি ফানি,মুখে বড়বড় কথা বলে এখন সামান্য স্টিক দেখে এত ভয় পেলে?
আজ যদি আমার জায়গায় অন্য কেউ হতো?এভাবেই কান্না করতে?নিজেকে নিজে সেভ করার টেকনিক শিখো বুঝছো!
তুমি এই টেকনিকটা ঠিক পারো না,টিউশনিতে যাওয়ার সময়ও কতগুলো ছেলের সাথে তুমি লড়তে পারোনি,পালিয়ে এসেছো
.
তার মানে আপনি ওদের বলেছেন আমার জন্য প্রতিদিন রিকসা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য?
.
শান্ত মাথা চুলকিয়ে হেসে বললো তো কি করবো,তোমার ও তো একটা সেফটি দরকার
.
এতদিন চলছি আমি,কারোর সেফটি লাগবে না আমার
.
জেদ বেশি তোমার,এই জেদের বসে নিজেকে সেফ করতেই পারবা না কোনোদিন,জেদ কমাও আহানা
.
আপনাকে জ্ঞান দিতে হবে না,যান এখান থেকে
.
এটা তোমার জায়গা?দলিল করা নাকি তোমার নামে?
.
আহানা উঠে চলে যেতে নিতেই শান্ত ওর হাত ধরে আবার বসিয়ে দিলো
আমি কথা বলতেসি না?চুপ করে বসে আমার কথা শুনো
নাও তোমার ২হাজার টাকা,রাখো লাগবে না আমার
মায়ের হাতের রান্না খেয়েছি ১০বছর আগে,মা মারা যাওয়ার দিন সকালে উঠে আমাদের সবার মানার সত্ত্বেও লুকিয়ে যখন আমি আর বাবা ঘুমে মগ্ন ছিলাম তখন তিনি আমার পছন্দের চিকন কারী,রুটি,ভাজি,ডিম সব তৈরি করেছিলেন,আমি খাওয়ার সময় খুব বকেছিলাম তাকে
আফসোস!সেদিন বিকালেই মাকে হারিয়ে ফেলসিলাম
খাবারগুলো আমি চেটে চেটে খেয়েছিলাম সেদিন,একটুও ফেলতে দেইনি,আজও সকালের নাস্তা হাতে নিলে মায়ের মুখটা ভেসে উঠে,বুয়া বা অন্য কেউ কি আর মায়ের হাতের রান্নার মত করে রাঁধতে পারে?
কিন্তু আমি তোমার হাতের রান্নায় পুরোটা না হলেও কিছুটা মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ পেয়েছি,জাস্ট কাল মনটা মায়ের হাতের রান্না খাওয়ার জন্য আকুপাকু করসিলো,বুয়াও সিক ছিল তাই তোমাকে বলেছি,সরি এটার জন্য
তোমার টিউশনি তো ৩টা থেকে সবে ১:৩০বাজে,এতক্ষণ কি করবে? লাঞ্চ করবা না?
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহানা শান্তর কথায় ইমোশনাল হয়ে গেছে,নিজেকে কনট্রোল করে বললো নাহ আমি কখনও লাঞ্চ করি না
.
কেন?লাঞ্চের সাথে কোনো পূর্বশত্রুতামি আছে নাকি?
.
লাঞ্চ করলে ডিনারে ভাত জুটবে না
.
শান্ত কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো,নিচ থেকে একটা কঙ্কর নিয়ে পানিতে ছুঁড়ে মারলো
.
যে টিউশনি করাতে গিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায় সেটা বাদ দিয়ে দাও,আমি তোমাকে একটা জব দিব,এমনি এমনি তো টাকা নিবে না
.
ইহহহ,কি জব শুনি
.
আমাদের ডেইলি একজন স্যারের ক্লাস করতে হয়,মোঃ সাইফুদ্দিন স্যার,তার ক্লাস এত বোরিং বোরিং যে কিভাবে বুঝাবো তোমাকে
তো আমি কখনও তার ক্লাস এটেন্ড করি না,একদিন এটেন্ড করে স্বাদ মিটে গেছে,তার পর থেকে উনি আসার আগেই আমি ক্যামপাসে চলে যাই,তিনি যা যা বলেন সব নোট করে রাখতে হয়,এক্সামে উনার কথাগুলোয় আসে,তমাল নোট করে আমি তার থেকে কপি নিই,কপি বলতে স্যার যা যা বলে তা পরেরদিন ছুটির সময় এক এক করে সবার থেকে নোট চেক করে,তাই আমি চেয়েও ছাপিয়ে নিতে পারি না,নিজের হাতেই লিখতে হয়,উনার এটা খেয়াল থাকে না আমি ক্লাসে আছি নাকি নাই উনার কথা হলো নোটটা লিখা অত্যাবশ্যকীয়!
প্রতিদিন এই নোট তুলার কাজটা করতে হয় আমাকে,যা বিরক্তিকর! অসহ্যকর!!
তুমি প্রতিদিন আমার ঐ নোটটা তুলে দিবে খাতায় তমালের নোট থেকে দেখে দেখে,মিষ্টিকে পড়াতে আসার সময় নোটটা নিয়ে এসে আমাকে দিবে,আমি তোমাকে ৩হাজার টাকা দিব,আকাশের মা তোমাকে যত দেয় আমি তোমাকে ততই দিব,বলো রাজি?
.
মানে আমার আর কাজ নাই?আপনি আপনার কাজ করার জন্য আর লোক পান না??সবসময় আমাকে ধরেন কাজের জন্য
.
শুনো মেয়ে আমার সাথে তর্কে যাবা না,তোমাকে ছেলেগুলো থেকে বাঁচাতে পারলে আবার ছেলেগুলো দিয়ে আ্যাটাক ও আমিই করাতে পারি,সো আমার কথা শুনে চলবা,অবশ্য তোমাকে টাইট দিতে আমি নিজেই এনাফ
.
আপনি একটা!!
.
আমি আজ তোমার সাথে সাথে থাকবো,আকাশের আম্মুকে তুমি নিজে বলবে আর পড়াতে পারবে না,ওকে?
.
না আমি পারবো না উনাকে বলতে
.
ওকে আমি বলবো তাহলে
.
খবরদার না,যান এখান থেকে
.
যাব না,তুমি যাবে,চলো
.
আরেহ আমার হাত ছাড়ুন,কোথাই নিয়ে যাচ্ছেন
.
লাঞ্চ করবো রেস্টুরেন্টে,আমার তো খুধা লাগছে,তুমিও খাবে
.
আমি খাব না,হাত ছাড়ুন
.
বসে বসে দেখো,আমি খাবো
.
শান্ত আহানাকে টেনে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসলো,আহানা রোডে ২/৩বার বসেও গেছে তাও শান্ত হাত ছাড়েনি,মানুষ কেমন করে তাকায় ছিল বলে আহানা আর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেনি
রেস্টুরেন্টে এসে শান্ত নিজে নিজে অর্ডার করে ফোন নিয়ে বসে গেমস খেলা শুরু করে দিলো
আহানা চুপ করে ওর দিকে চেয়ে আছে,এত এত মানুষ এখানে
সবাই খাচ্ছে,দুনিয়ায় মনে হয় আমি একমাত্র যে দুপুরে খাই না,সবাই কি সুন্দর করে খেয়ে যাচ্ছে
খাবার এসে গেছে,শান্ত খাওয়াও শুরু করে দিসে,আহানা মুখ বাঁকিয়ে আরেকদিকে ফিরে বসে আছে
.
কি হলো?খাও না কেন
.
আমি বলসি না আমি দুপুরে কিছু খাই না
.
তো এখন খাবা,খাও নয়তো তোমার খবর আছে,তুমি চড় মেরেছিলে আমাকে এবার আমি তোমাকে মারবো
.
শান্ত আহানার প্লেটে সব নিয়ে ওর দিকে বাড়িয়ে ধরলো
.
আহানা বিরক্তি নিয়ে প্লেটটা ধরে বসে আছে,এরকম দয়া ওর একদম ভালো লাগে না,এই ছেলেটা এমন কেন করছে কে জানে,এলিনার সাথেও আবার আমার সাথেও!
আহানা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে
.
উফ আজ এই ছেলেটা পিছুই ছাড়ছে না কেন বুঝতেসি না
পিউদের বাসায় ঢুকে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো আহানা,যাক বাঁচলাম মনে হয়
পড়ানো শেষে আহানা বাসা থেকে বের হতেই দেখলো শান্ত বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
আপনি এখনও যান নি?
.
না যাইনি,আমি তো তোমাকে বলসি তোমার সাথে সারাদিন থাকবো
.
আপনার ফোন দিন
.
কেন?
.
এলিনা আপুকে কল করে বলবো তার বিএফ কি কি করে ইদানিং
.
হ্যাঁ করো,আর তোমাকে বলসি না ও আমার জিএফ না
.
আহানা সত্যি সত্যি এলিনাকে কল করলো শান্তর ফোন নিয়ে
.
হ্যালো বেবি,তোমার শরীর ঠিক আছে তো?জীবনে প্রথম নিজ থেকে আমাকে কল করলে,হোয়াট এ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ!!
.
আপু,আমি আহানা
.
আহানা!!তুমি?ইউ স্টুপিড গার্ল,তুমি শান্তর ফোন পেলে কই,শান্ত কোথায়?
.
আপু ওসব বাদ দাও তুমি জানো তোমার শান্ত বফ তোমাকে ধোকা দিচ্ছে??
.
হোয়াট!কি বললে?শান্ত কোথায় সেটা বলো
.
আচ্ছা আসেন,সামনা সামনি কথা হবে,জে.কে রোডে আছি আমি আর আপনার বফ
.
ফাইন আমি ২০মিনিটে আসতেসি
.
কি হলে তো তোমার শান্তি?ভেজালকে ডেকে আনতেসো শান্তি তো তোমার হওয়ারই কথা,তুমি তো ভেজাল ছাড়া কিছুই জানো না
.
শুনুন,আপনি আপনার জিএফ থাকা কালীন বেশির ভাগ সময় আমার সাথে সাথে থাকেন,এটা এলিনা আপুর জানা উচিত
.
ভেরি ফানি,তুমি এলিনার সাথে নিজেকে মিলাচ্ছো??কোথায় এলিনা আর কোথায় তুমি,এলিনা তো তাও আমার ফ্রেন্ড তুমি তো সেটাও না
.
ওহ তাহলে আমার পিছনে পিছনে ঘুরার মানে কি?
.
excuse me,পিছনে ঘুরা মানে?আরিফ আঙ্কেল বলেছিল মা তোমার খেয়াল রাখতে বলে গেছে সবাইকে,তার ছেলে হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব
আমার মায়ের সব ইচ্ছা আমি পূরন করতেসি
.
এলিনা আপু আসলেই দেখা যাবে কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক
.
হেই???তোমরা ঝগড়া করতেসো কেন কি হয়েছে?
শান্ত?আমাকে বলো কি হয়েছে
.
শুনো এলিনা হইসে কি আসলে!
.
চুপ,আমি বলতেসি,এলিনা আপু তোমার এই বিএফ সারাদিন আমাকে ডিস্টার্ব করে,আমাকে irritate করে শান্তি পায় উনি,সবসময় আমার পিছে লেগে থাকে,আর তুমিও কেমন জিএফ উনার দিকে নজর রাখতে পারো না?
.
ওয়েট ওয়েট কি বললে তুমি?শান্ত তোমার পিছে ঘুরছে?কেউ গলা কেটে বললেও আমি বিশ্বাস করবো না,শান্ত শুধু আমাকে লাভ করে
.
এক মিনিট এলিনা,কে বলসে আমি তোমাকে লাভ করি,আমি তোমাকে লাভ করি না,উয়ি আর জাস্ট ফ্রেন্ডস
.
আপনাদের মামলা আপনারা চুকান,আমি যাই আমার টিউশনি আছে,আর প্লিস আপু আপনার বফকে সামলান ওকে?
আহানা চলে গেলো কথাটা বলে
.
কি শান্ত??এসব কি?এই থার্ড ক্লাস মেয়েটার পিছনে লেগে আছো কেন,এখন হলো তো কত কথা শুনাইলো,শান্তি হইসে তোমার?আর আমি জানি তুমি আমাকে লাভ করো
.
এনাফ ইজ এনাফ এলিনা,আমি তোমাকে লাভ করি না করি না করি না,বুঝছো???
.
আহানাকে করো?
.
শান্ত কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বাইকে বসতে বসতে বললো তোমার মাথা কি গেছে এলিনা??
শাহরিয়ার শান্ত এরকম ধানি লঙ্কা মেয়েকে লাভ করবে??যে নিজে তোমাকে ডেকে এনে আমাকে কথা শুনায় তাকে আমি লাভ করবো?আজীবন কুমার থেকে যাব তাও ওরে লাভ/বিয়ে করবো না,মাথায় ঢুকিয়ে নাও,বাই
.
শান্ত দাঁড়াও
.
কি?
.
তাহলে আহানার সাথে সবসময় তোমাকেই কেন দেখতে পাই আমি?
.
তোমার চোখের ভুল,আমার পাশে নওশাদ,সূ্র্য,রিয়াজ আর তমালও তো থাকে
.
গুড
.
শান্ত বাইকে করে চলে গেলো,এলিনাকে তো বুঝানো হয়েছে বাট তারপরেও সে যাচ্ছে আহানার কাছে
.
আহানা আকাশকে পড়াচ্ছে
কলিং বেল বেজে উঠলো
.
আসসালামু আলাইকুম আন্টি
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম,কে আপনি?ঠিক চিনলাম না
.
আমি শাহরিয়ার শান্ত,আহানার হাসবেন্ড
.
ওহহহহ তুমি আহানার স্বামী?আহানা বিয়েও করেছে?আমাকে বললো না,বসো বসো,আমি চা নাস্তা আনতেসি
.
আরে না আন্টি,ওয়েট,আমি একটা কথা বলতে এসেছিলাম,আমার অনেক কাজ আছে চলে যেতে হবে
.
কি হইসে?
.
আমি চাই আহানা যেন আর কোনো টিউশনি না করে তাই ওকে বলসি টিউশনি ছেড়ে দিতে,বাট ও আপনাকে লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না,আমি তাই বলতে আসলাম
.
ওহ সমস্যা না,,বিয়ের পর বেশির ভাগ হাসবেন্ডই চায় না তার ওয়াইফ বাইরে জব করুক,আর আহানা তো নিজের খরচ চালাতে টিউশনি করতো এতদিন,ঠিক করেছো ওকে কাজ করতে মানা করে,বেচারি অনেক কষ্ট করে টিউশনি করে
ভালো থেকো তোমরা দোয়া করি,আমি আহানাকে এই মাসের যতদিন পড়িয়েছে তার বেতন দিয়ে বলে দিব ব্যাপারটা,ডোন্ট ওয়ারি
.
ওকে আন্টি,থ্যাংকস,আজ আসি তাহলে
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে সানগ্লাস পরে চলে গেলো বাইকে উঠে

আহানা?তুমি বিয়ে করলে আর আমাকে জানালে না এটা কিন্তু ঠিক না আহানা
.
মানে!!!!
.
হইসে আর লুকাতে হবে না এসব,নাও এই মাসের বেতন পুরোটাই দিসি,জামাইকে নিয়ে সুখী হও
.
আহানা চোখ কপালে তুলে চেয়ে আছে আকাশের মায়ের দিকে
.
আরে বোকা মেয়ে টিউশনি করাতে পারবে না এটা বলতে এত লজ্জা পেয়েছিলে কেন??কিছুক্ষন আগে তোমার হাসবেন্ড শান্ত এসেছিল ব্যাপারটা বলতে,তুমি এত লজ্জা পাও এটা বলতে আহারে,সে এসব বলে চলে গেসে
.
কিহ,কুত্তাটা আবার এসেছে,সব গন্ডগোল করে চলেও গেছে,আমি তো জানতাম ও না কিছুক্ষন আগে সোফার রুমে শয়তানটা ছিল
আহানা বাসা থেকে বেরিয়ে দেখলো সেই ছেলেগুলো রিকসা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
আহানা রিকসায় উঠে ভাবতেসে এলিনা আপুকে ডাকলাম তারপরেও আমার পিছু ছাড়লো না,আজব তো,এই ছেলেটা এরকম করে কেন আমি বুঝি না
সয়ং এলিনাকে নিয়ে আসলাম ব্যাপারটা ঠিক করার জন্য আর সে কিনা ঘুরেফিরে আবার শুরু করলো,একেবারে আমার স্বামীর হয়েই কথা বলে চলে গেলো,ছাড়বো না বেয়াদবটাকে
আহানা বাসায় ফিরে টাকাগুলোর দিকে চেয়ে বসে আছে
কাল এগুলা শান্তকে ফেরত দিব,আমার থেকে উনি এখনও পাক্কা ৬হাজার টাকা পান,যতবার দি ততবার ফেরত দেয় আমাকে,উফ কি ঝামেলা
আলু ভেজে ভাত নিয়ে বসে আহানা ভাবতেসে শান্তকে কিভাবে কথা শুনাবে,কারণ শান্ত আসলেই কি চায় তা জানাটা জরুরি,এভাবে তো আর চলে না,জিএফ থাকতে সবসময় আমার পিছে ঘুরঘুর করে,আমাকে ঠিকমত চলতে ফিরতেও দেয় না,আজ তো লিমিট ক্রসই করে ফেলসে বেয়াদবটা,টিউশনি অফ করে দিলো আমার!সাথে আমাকে বিবাহিত প্রমান করে দিলো!
পরেরদিন সকাল সকাল আহানা টাকা আর এক বস্তা রাগ নিয়ে বের হয়েছে বাসা থেকে,আজ ঐ শান্তকে ঠাস করে চড় মারি তার পরে বাসায় ফিরবো আমি
লিফটে ঢুকার সময় দেখলো শান্ত সেখানে
আহানা ঢুকে এগিয়ে গিয়ে শুরু করলো ঝগড়া
.
এই কি সমস্যা আপনার?আমাকে এত জ্বালান কেন,আপনার সাহস হয় কি করে আমার স্বামী সেজে আকাশদের বাসায় যাওয়ার??বেয়াদব ছেলে কোথাকার!
.
শান্ত চুপ করে ফোনে গেমস খেলছে
.
আপনাকে বলতেসি আমি,কথা কানে যায় না আপনার?
আহানা টাকা নিয়ে শান্তর হাতে ধরিয়ে লিফট থেকে বেরিয়ে চলে গেলো
.
শান্ত টাকাগুলোর দিকে চেয়ে সেও পিছন পিছন গেলো
.
আহানা থেমে ওর দিকে চেয়ে বললো আপনার কি সমস্যা এত??
উফ!!আপনাকে আমি কিভাবে বুঝাবো,আমার আগের লাইফই ভালো ছিল,আপনি কেন আমাকে সাহায্য করার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছেন
.
আহানা সাবধানে!!
.
শান্ত কাছে আসতে যেতেই আহানা আরও সরে গেলো
.
আহানা কেয়ারফুল!!!
.
শান্ত হাত দিয়ে আহানাকে টেনে কাছে নিয়ে আসলো,কারণ পিছনেই সিঁড়ি,আর সে ৫তলার উপরে
আহানা কথা বলতে বলতে সিঁড়ি পর্যন্ত চলে এসেছিল
.
আহানা ধাক্কা দিয়ে ওকে সরিয়ে ফেললো
.
আপনি আমার থেকে দূরে থাকুন বুঝছেন!!
.
শান্তর এবার মেজাজ বিগড়ে গেছে,এই মেয়েটা এত কিসের অহংকার করছে?
এই কি আছে তোমার??কাকে অহংকার দেখাচ্ছো তুমি??ভাত নুন খেতে ভালো লাগে তোমার??আমি চিকেনের দাম দিচ্ছি বলে সেটা ভালো লাগছে না
.
আহানার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো,হাত দিয়ে চোখ মুছে হেসে দিয়ে বললো ভাত নুন তো কি হয়েছে??সেটা আমার নিজের উপার্জনের টাকার খাবার,আমার আত্নসম্মান আছে বলে আমি অন্যের টাকা নিতে চাই না,এটাকে আপনি অহংকার ভাবলে ভাবতেও পারেন,আর কোনোদিন আমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করবেন না,আমি একদিন আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে চিকেন ও খাবো,বাই
আহানা মিষ্টিদের বাসায় চলে গেলো
.
শান্ত নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে ফেললো,বাবাকে কল করলো সোজা
.
কিরে শান্ত??তুই ঠিক আছিস তো?এত সকাল সকাল ফোন করলি?কি হয়েছে?
.
বাবা!!তুমি আর আমার জন্য কোনো টাকা পাঠাবে না,আমি নিজে উপার্জন করে নিজের খরচ চালাবো
.
মানে?তুই তো জব পেতে আর কয়েকটা মাস বাকি,তোর মাস্টার্স শেষ হলেই আমি তোকে আমার অফিসে বসিয়ে দিব,তাহলে এখন কিসের উপার্জন করবি তুই?সকাল সকাল মদ খেয়েছিস নাকি?
.
না বাবা,আমি মাস্টার্স শেষ হওয়া পর্যন্ত একটা পার্টটাইম জব করবো,তুমি আর আমাকে কোনো টাকা দিবে না,Now বাই
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_২৭

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_২৭
#Writer_Afnan_Lara
?
তো দেখোনি তো এখন দেখে নাও,হুহ!!
কথাটা বলে শান্ত সামনের দিকে হাঁটা ধরলো
আহানা মুখ বাঁকিয়ে আরেক দিকে ফিরে হেঁটে চলে গেলো
.
শান্ত এদিকে আয় খাবার অর্ডার দিসি,এসে গেছে
.
আসতেসি ওয়েট
.
আহানা কই?
.
মহারানী ঐদিকে গেছে
.
যা নিয়ে আয়,ডাক দিসি শুনে না মনে হয় অনেকদূর চলে গেছে
.
আমি?ইমপসিবল,ও ঠিক করে কোনো কথাই বলতে পারে না
আমি হাত নাড়লেও বললে ওর সমস্যা,তাহলে ভাব কতটা পাগল হলে এমন করতে পারে
.
হইসে যা নিয়ে আয় না
.
শান্ত আবার সেদিকে গেলো
আহানা রোডের কিনারায় বসে বন ছিঁড়তেসে আর দূরে থাকা একটা কদমফুল গাছের দিকে চেয়ে আছে
.
এই যে মহারানী আসুন,রুপা নওশাদ ডাকতেসে আপনাকে
.
?বেয়াদব
.
মহারাণী বলায় বেয়াদব বললে,তাহলে তুমিও বেয়াদব!?
শান্ত চলে গেলো রাগ করে
আহানা ভেংচি কেটে সেও পিছন পিছন গেলো
ব্রু কুঁচকে শান্তর দিকে চেয়ে পিছে পিছে আসতেসে সে
এত এত এত বাতাস যে আহানা সহ উড়ে যাবে এমন অবস্থা
আহানা শান্তর দিকে চেয়ে হাঁটতেসিলো হঠাৎ এক বাতাসেই ওর গায়ের ওড়না উধাও
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আরেহহহ!
.
শান্ত থেমে গিয়ে পিছন ফিরে তাকালো
আহানা শান্তকে ওর দিকে তাকাতে দেখে তাড়াতাড়ি চুল টেনে সামনে নিয়ে আসলো
.
হাহাহাহা,ধর্মের কল বাতাসে নড়ে
.
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে বনের ভেতর চলে গেলো ওড়নার জন্য
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে মজা করে বললো আহানা?সুন্দরবনের একটা বাঘ চলে এসেছে মনে হয়,হলুদ হলুদ দেখা যাচ্ছে
আহানা ভয় পেয়ে সামনে তাকালো,সত্যি তো হলুদ কালারের কি যেন দেখা যাচ্ছে,আশেপাশের জঙ্গল দেখে হয়ত এখানে চলে এসেছে
আহানা চিৎকার করে ওড়না নিয়ে এক দৌড় মারলো,শান্তর পিছনে এসে ওর জ্যাকেট ধরে দাঁড়িয়ে পড়লো সে
.
আসলে ওটা ছিল কাকতাড়ুয়া,নিচে টমেটো গাছ অনেকগুলো বনের ভেতর,পাখি নষ্ট করতে পারে বলেই তাই হয়ত কৃষক কাকতাড়ুয়াটা বসিয়েছিল কিন্তু এত বাতাসের জোরে সেটা পড়ে গেছে তাই কিছুটা বাঘ বাঘ লাগতেসে,লাগারই কথা,কাকতাড়ুয়ার পরনে বাংলালিংক সিম কোম্পানির জামা,ডোরাকাটা
.
ভয়ে আহানার কলিজা কাঁপতেসে
শান্ত হেসে দিয়ে বললো তোমাকে বোকা বানানো ২মিনিটের ব্যাপার আমার কাছে বুঝলা!
.
মানে??
.
ওটা কাকতাড়ুয়া ?
.
আহানা রেগে শান্তর চুল টেনে দিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে
শান্ত থ হয়ে আহানার চলে যাওয়া দেখছে,এই মেয়েটা মাঝে মাঝে এমন এমন কাজ করে আমি কিছু বলার বা করার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি,আমার চুলই টেনে দিলো শেষমেষ?
রাগ না হয়ে ভালো লাগা কাজ করতেসে কেন,আমার তো রাগ হওয়ার কথা
শান্ত এগিয়ে গিয়ে আহানার হাত টেনে ধরলো
.
এই মেয়ে!
.
কি?
.
তুমি আমার চুল টানছো কেন?
.
আপনি আমাকে বাঘের ভয় দেখিয়েছেন তাই,আরও টানবো নাকি?
.
চুপ!
শান্ত আহানার কান টেনে ধরলো
.
আহহ ছাড়ুন আমার লাগতেসে ছাড়ুন
.
আর আমার চুল টানবা তুমি?
.
না না টানব না,ছাড়ুন
.
শান্ত আহানার কান ছেড়ে দিয়ে নওশাদের কাছে চলে গেলো
আহানা কান ডলতে ডলতে আসতেসে
.
কিরে শান্ত এমন বিশ্বজয়ের হাসি দিচ্ছিস কেন??
.
মানুষের কান টানতে জাস্ট জোস লাগে
.
রুপা কানে হাত দিয়ে বসে গেলো, নওশাদ এগিয়ে গেলো টানার জন্য
.
না প্লিস নওশাদ শয়তানি করবা না,শান্ত ভাইয়া!!এসব কি শিখান ওরে
.
হাহা,আরে যাই বলো শান্তর মত রাগ আমার নাই,আই লাভ ইউ সো মাচ রুপু
.
লাভ ইউ টু!!
.
খাওয়া দাওয়া করে রুপা আর আহানা রিকসায় করে আবার ফিরে গেলো,আহানা গেলো টিউশনির দিকে আর শান্ত,নওশাদ বাসায় ফিরে গেলো
আহানা বাসায় ফেরার সময় একটা ফেরিওয়ালার কাছে একটা আয়না দেখলো
এদিক ওদিক তাকিয়ে সেটা হাতে নিলো,খুব সুন্দর এটা
.
দাম কত?
.
৫০টাকা
.
ওহ,৫০টাকা তো বেশি,না থাক
আহানা আয়নাটা রেখে হেঁটে চলে আসলো বাসায়
রান্না করতে করতে আয়নাটার কথা ভাবতে লাগলো সে
আজ পর্যন্ত শখ করে কত কি পছন্দ হয়েছিল তার কোনো কিছুই কেনা হয়নি,আজকের আয়নাটা খুব পছন্দ হয়েছে,আমার কাছে ৫০টাকা ছিল,শান্তর দেওয়া,কিন্তু ওগুলা দিয়ে মাস চালাতে হবে তাই কিনি নাই,এভাবে আর তো জীবন চলে না,একটা চাকরির জন্য এপ্লাই করবো,১০হাজার বেতন হলে আমার ভালো মতই জীবন কেটে যাবে
এসব ভাবতে ভাবতে আহানা খাওয়া শেষ করে নিলো,সব গুছিয়ে রেখে বই নিয়ে বসলো,পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে গেলো সে
সকাল সকাল নামাজ পড়ে রেডি হয়ে আবারও হাঁটা ধরলো,একটা পিলারে পোস্টার দেখে থেমে গেলো সে
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি,একটা খাতা বের করে নাম্বার আর ঠিকানা লিখে নিলো,ব্যাস সময় করে একদিন গিয়ে দেখে আসবো,লাস্ট ডেট ২৩তারিখ
মিষ্টিদের বাসায় ঢুকার সময় নজর পড়লো শান্তর উপর,বারান্দায় দাঁড়িয়ে গুন্ডাদের মত চেয়ে আছে ওর দিকে
যাক বাবা বাঁচলাম তাহলে আজ লিফটে জ্বালাবে না আমাকে
আহানা ৫তলায় এসে মিষ্টিদের বাসায় চলে গেলো চুপচাপ,তাহলে কালকের কথা মাথায় ঢুকেছে,আমি যে বলছিলাম কম কথা বলতে আমার সাথে?
পড়ানো শেষ করে বের হয়ে এদিক ওদিক চেয়ে আহানা ভাবতে লাগলো সামান্য আমার কথায় এত গুরুত্ব দিবে??আজ ডিস্টার্ব করতেই আসলো না,Strange!হুমমমমম
আহানা শান্তর বাসার দরজার দিকে তাকাতে তাকাতে চলে যাচ্ছে গিয়ে একজনের বুকের সাথে ধাক্কা লেগে গেলো তার
চোখ বড় করে চেয়ে দেখলো শান্ত একটা ভাব নিয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে
আহানা শান্তর থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো
.
আআআআপনি!
.
হুম,চলো
.
কোথায়?
.
আমার বেডরুমে
শান্ত আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে
.
এই এই আপনার মাথা ঠিক আছে তো,হাত ছাড়ুন বলতেসি,বাঁচাও বাঁচাও কে আছো
.
শান্ত আহানার মুখ চেপে টেনে বাসার ভিতর নিয়ে গেলো
.
এই মেয়ে তোমাকে একদিন বলসি না তোমার প্রতি আমার interest নেই তাহলে এরকম করো কেন,এত চিল্লাও কেন?
.
interest না থাকলে আমাকে এখন এখানে আনার মানে টা কি?
.
শুনো,আমি তোমাকে ২হাজার টাকা দিসি রাইট?
.
তো?টিউশনির টাকা পেলে ফেরত দিব সেটা
.
শুনো আমি ঐ টাকা নিব না,তাহলে বলো কি করবে
.
কি করবো জোর করে আবার দিয়ে যাব
.
নো,তুমি এমনটা করলে তোমাকে আমি লিফটে আটকায় রাখবো গোটা ২ঘন্টা
.
তো আপনি কি চান!!!
.
আমি চাই তুমি রোজ সকালবেলা আমার জন্য নাস্তা বানাও
.
ইহহহহ মগেরমুলুক পাইসে,ইমপসিবল,আমার খেয়ে কাজ নাই আমি আপনাকে রেঁধে খাওয়াবো,আমি কি বুয়া নাকি
.
আমি তো বলিনি তুমি বুয়া,আচ্ছা রান্না করতে না পারলে আমাকে এই মূহুর্তে ২হাজার টাকা ফেরত দাও
.
আপনি খুব খারাপ একটা লোক,টাকা দিয়েছিলেন এসব করার জন্য??
.
নাহ,তোমার তো উচিত নিজ থেকে আমাকে রেঁধে খাওয়ানোর,আমি তোমাকে টাকা দিয়ে হেল্প করেছিলাম
.
আপনার তো বাসায় বুয়া আছেই তাহলে আমি কেন রাঁধবো?
.
৪দিন রাঁধবা বেশি না,শুধু সকালে,বুয়া সিক ?নাহলে আমার কাজ নাই তোমাকে জোর করার
.
তো আমি নাহয় সকালে রেঁধে দিব,বাকি বেলা?
.
হোটেলে খাব,অর্ডার করবো
.
তাহলে সকালের টাও অর্ডার করে নেন,আমি আপনাকে আপনার টাকা কাল ফেরত দিব রুপার থেকে নিয়ে
.
শান্ত এবার খুব রেগে গেছে,সামান্য সকালের রান্না দিয়ে এত কথার পেঁচ লাগাতে হবে সে জানত না
আহানার হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে এসে বললো কি সমস্যা তোমার??
রেঁধে দিলে মরে যাবে তুমি??
.
না মরবো না,কিন্তু আপনার আর আরও কয়েকটা ছেলের সাথে এক বাসায় থেকে রান্না করবো না আমি কখনও
এখন হাত ছাড়ুন আমার,বাসায় ফিরতে হবে আমাকে
.
ছাড়বো না বাসায় গিয়ে দেখাও তো
.
বাঁচাও বাঁচাও
.
শান্ত আহানার হাত ধরে টেনে সোফায় দুম করে ফেললো
.
চেঁচাও!আরও জোরে
.
শান্ত তার শার্টে হাত দিতেই আহানা চোখ ইয়া বড় করে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
আআআআপপনি বলছিলেন না আমার প্রতি আপনার interest নেই,তাহলে এখন এসব কি?
.
ঠিক বলসো,interest নেই,আমার গরম লাগছে তাই জামা খুলতেসি,তুমি কি যেন বলতেসিলা?
.
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে দরজা খুলতে যেতেই শান্ত ওর সামনে এসে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
বুয়া নেই তো ভাঁড়া বুয়া আনেন না,আমার পিছে লাগছেন কেন
.
শান্ত রেগে আহানার কাঁধ চেপে ধরে ঝাঁকিয়ে বললো তোমার রান্না আমার ভালো লাগে,আমি তোমার হাতের রান্নাই খাব,বুঝেছো?
.
আহানা চুপ করে থেকে বললো ঠিক আছে,আজ সকাল শুধু,কাল আমি আপনার টাকা ফেরত দিয়ে দিব,হাত ছাড়ুন এখন
শান্ত হাত ছেড়ে দিলো আহানার
আহানা রান্নাঘরে গিয়ে রান্না করতেসে
আর শান্ত একটা বল নিয়ে দেয়ালে মারতেছে,সেটা ব্যাক করে ওর কাছেই ফিরে আসতেসে আবার
এই মেয়েটা এত এত এটিটিউড নিয়ে ঘুমায় কি করে,আমি শাহরিয়ার শান্ত ওকে চান্স দিতে চাইলে সবসময় ফেলে দেয়,এত সাহস!!
আর আমিও কম না আমি ওকে পাত্তা কেন দিচ্ছি,হুম বেশি পাত্তা দেওয়ায় এমন করতেসে,ভাবসি টাকা দেওয়ার ভয়ে রেঁধে দিবে কিন্তু না এগেইন এটিটিউড,আমারই দোষ প্রথম যেদিন চড় মেরেছিল সেদিনই বুঝা উচিত ছিল যে এ কোন টাইপের মেয়ে,এর হাসবেন্ড যে হবে তার জীবন ত্যানাত্যানা করে দিবে
আহানা রান্না শেষ করে হাত ধুয়ে পিছন ফিরতেই দেখলো শান্ত মুখ ফুলিয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে
.
রান্না শেষ
.
গুড
শান্ত আহানার হাত টেনে নিয়ে চলে গেলো তারপর দরজা খুলে বাসা থেকে বের করে দিলো,ওর ব্যাগটা ওর হাতে দিতে দিতে বললো নাও তোমার ব্যাগ আর বের হও এখান থেকে,তোমার টাকা লাগবে না আমার,তোমার ভাব তোমার কাছেই রাখো
.
আহানা হা করে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে আছে,কি বলছে ছেলেটা,এত সুন্দর করে নাস্তা বানাই দিলাম একটা থ্যাংকস তো দিলোই না উল্টো আমাকে বাসা থেকে বের করে দিলো
জানেন আপনি খুব খারাপ একটা লোক,খুব খারাপ!
আহানা শান্তকে বকতে বকতে চলে গেলো
.
শান্ত ঠাস করে দরজা লাগিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো
রুটি, ভাজি আর ডিম অমলেট বানিয়ে রেখে গেছে আহানা
শান্ত মুচকি হেসে এক প্লেটে রুটি ভাজি আর ডিম নিয়ে ডাইনিং এ গেলো,আহানাকে ইচ্ছে করে রাগ দেখিয়েছে যাতে ও এটিটিউড কম দেখাতে পারে
তৃপ্তি করে নাস্তা করতেসে সে,নওশাদ আর রিয়াজ ব্রাশ নিয়ে শান্তর পিছনে এসে শান্তর হাবভাব লক্ষ করছে
.
ছেলেটার হলোটা কি??এমন করছে কেন
যে ছেলে সকাল ১১টা ছাড়া ঘুম থেকে উঠতো না সে ভোর ৬টায় উঠে!
আবার যে ছেলে চিকেন ছাড়া সকালের নাস্তা করতো না সে জাস্ট রুটি আর ডিম,ভাজি দিয়ে নাস্তা করছে
.
রিয়াজ একটা চিমটি দে তো,আমি কি স্বপ্ন দেখতেসি নাকি!!
.
আউচচচচচ,এত জোরে চিমটি দিলি কেন
.
চিমটি তো চিমটিই হয় নওশাদ!
.
কিরে তোরা এমন দল বেঁধে এখানে দাঁড়িয়ে কি করিস??
.
নাহ কিছু না,সূর্যের চারপাশে গ্রহের ঘুরাফিরা দেখি এই আর কি,তুই এটা বল বুয়া তো সিক তাহলে এত রান্না করলো কে?
.
আ,,,,
.
কে?
.
মিষ্টির আম্মু দিয়ে গেছে
.
ওহহ

কতটা বেয়াদব হলে এমন কাজ করতে পারে মানুষ,আমার রাজি হওয়াই ঠিক হয়নি,শুধু শুধু সময় নষ্ট আমার!
আহানা ভাত রেঁধে আলু ভেজে সেটা দিয়ে খেলো,তারপর চুল আঁচড়িয়ে বেরিয়ে পড়লো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে,কাল তো শুক্রবার,টিউশনি আছে ভার্সিটি নাই,শান্তি
শান্তি বলতে গিয়ে মনে হলো ঐ অশান্তের কথা,এখন থেকে ওরে অশান্ত ডাকবো,হুমমমম!!
ভার্সিটিতে এসে আহানা দেখলো শান্ত তমালের সাথে কি নিয়ে হাসাহাসি করতেসে ওকে দেখে হাসি থামিয়ে সানগ্লাসটা পরে আরেকদিকে ফিরে বসলো
.
ছেলেটা এত স্বার্থপর!!?আবার ভাব ও দেখাচ্ছে আমাকে
.
আহানা রেগেমেগে ক্লাসে গিয়ে ধুপ করে বেঞ্চে বসে পড়লো,রুপা ফোনে কথা বলতে বলতে আসতেসে এদিকে
আহানা ওর হাত ধরে ওকে বসিয়ে বললো ২হাজার টাকা দিতে পারবি আমাকে??আমার খুব দরকার
.
আচ্ছা,নে আমার কাছে এখনই আছে,জামা কিনার জন্য আনছিলাম,জামা পরেও কিনতে পারবো,তুই এখন রাখ এটা
আহানা টাকা নিয়ে সোজা হেঁটে গেলো শান্তর কাছে
.
নিন আপনার টাকা,এরপর থেকে আমাকে কোনোদিন টাকা দিয়ে সাহায্য করতে আসবেন না,এটাকে সাহায্য বলে না,আপনি যেটা করেছেন সেটা আপনারই ফায়দার জন্য করেছেন তা আজ প্রমান হয়ে গেছে,সো নিন,আর কখনও আমার সাথে লাগতে আসবেন না,বুঝছেন মিঃ অশান্ত?
আহানা টাকা গুলো শান্তর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো
শান্ত টাকা মুঠো করে ফেলে দিলো নিচে,রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে,এই মেয়েটা এত এত ভাব কাকে দেখায়,আমাকে কি চিনে না!!
.
শান্ত ভাই আর কত সহ্য করবা??দেখলে না ডেইলি তোমাকে ইনসাল্ট করে তারপরেও তুমি চুপ করে আছো কি জন্যে সেটাই মাথায় ঢুকে না
.
শান্ত বাইকে বসে চলে গেলো ভার্সিটি থেকে
.
এর আবার কি হলো,করতে বললাম আহানার টাইট
আর সে চলে গেলো বিনা ফাইটেই??আজব তো
.
তুই থাম তো রিয়াজ,শান্ত ওর ভালো নিজে বুঝে,জাস্ট নিজেকে কনট্রোল করতে চলে গেছে সে,মুড ঠিক হলে আবার আসবে
.
ভার্সিটি তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিলো,আহানা রুপাকে বাই বলে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে এসে কয়েকটা ফুল কুড়ালো তারপর বসে বসে মালা বানালো সেগুলো দিয়ে
নিজের মত করে মাথায় হাতে ফুলের ornaments বানিয়ে লাগালো,এসব শান্তি নিয়ে করার একটাই কারণ সেটা হলো আহানা শান্তকে ভার্সিটি থেকে চলে যেতে দেখেছে তাই আরামসে সে সময় কাটাচ্ছে একা একা
টিউশনি ৩টা থেকে,এখন বাজে ১টা,তাই মন মত কাজ করে যাচ্ছে সে,আজ আর শয়তানটা জ্বালাতেও আসবে না,আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে
আহানা গাছ ধরে চরকার মত ঘুরে যাচ্ছে,মাথার উপর লাল ফুল তার সাথে সবুজ পাতা,পাখির কলরব,কি শান্তিটাই লাগতেসে বলে বুঝানো যাবে না,ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছি মনে হচ্ছে
আহানা ঘুরতে ঘুরতে কারোর পা দেখে থেমে গেলো,এতক্ষণ ঘুরতে ঘুরতে মাথা ঘুরাচ্ছে তার,মাথা ধরে ঠিক করে দাঁড়িয়ে পা থেকে চোখ তুলে মাথার দিকে তাকালো,শান্ত দাঁড়িয়ে আছে হাতে হকিস্টিক নিয়ে
আহানা মাথা ধরে দাঁড়াতে পারছে না,ভূতে ধরছিল বলে বাচ্চাদের মত গাছ ধরে এতক্ষণ ঘুরছিল,এখন ঠিকমত দাঁড়াতেও পারছে না সে,ধুপ করে নিচে মাটিতে বসে গেলো
শান্ত এগিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়ালো
আহানা মাথা ধরে ওর দিকে চেয়ে বললো কি?আপনি?এখানে কেন?
.
শান্ত হকিস্টিকটা আহানার হাতের সাথে লাগিয়ে বললো কাউকে হসপিটালে ভর্তি করাতে এসেছি
.
আহানা ঢোক গিলে একটু পিছিয়ে গেলো,তারপর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো আমি কি করসি?আপনিই তো টাকা ফেরত চেয়েছিলেন!!
.
শান্ত হকি স্টিকটা দিয়ে একটু চাপ দিলো আহানার হাতে
আহানা হাত সরিয়ে এদিক ওদিক তাকালো,জনমানবশূন্য এরিয়া,হওয়ারই কথা,ভার্সিটি তো ছুটি হয়ে গেছে
.
আহানা একটু পিছিয়ে গেলো
শান্ত নিচু হয়ে আহানার সামনে ওর মুখ নিয়ে স্টিকটা দিয়ে আহানার মাথার থেকে ফুলের ক্রাউনটা ফেলে দিতে দিতে ফিসফিসিয়ে বললো মেরে ভূত বানাই দিব,কেউ জানতেও পারবে না
.
আহানা চোখ তুলে তাকিয়ে বললো সরি,আপনাকে আমি সকালে রেঁধে দিব সত্যি
.
লাগবে না
.
তাহলে কি লাগবে?
.
তোমার ভাঙ্গা হাড্ডি
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_২৬

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_২৬
#Writer_Afnan_Lara
?
শান্ত তার হাতের ব্যাগটা আহানার হাতে দিয়ে চললো বাজার করতে,নিজেকে আজ সদ্য বিবাহিত মনে হচ্ছে,নতুন বউ বললো এই যে শুনুন বাজার করে আনুন
হাহাহা!!
.
আহানা ব্যাগ এনে বিছানার উপর রেখে চায়ের পানি বসালো চুলায়
চুলে খোঁপা করে এক গ্লাস পানি নিয়ে খেলো,শান্ত যে বিসকিট কিনে দিয়েছিল সেটা বাটিতে করে টেবিলে এনে রাখলো সে,দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো শান্ত এসে গেছে
.
নাও ধরো
.
আহানা কিছু না বলে সেগুলো নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো
শান্ত একটা বিসকিট খেতে খেতে খাটে বসে ফোন নিয়ে নওশাদকে কল করে বললো বাইক নিয়ে আসতে,রিকসা নাই এদিকে
আহানা চা নিয়ে এসেছে,শান্ত চায়ের কাপটা নিয়ে হেসে আহানার দিকে তাকিয়ে বললো তোমার সাথে চা খেতে খেতে কফির স্বাদই ভুলে গেছি আমি
ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমি একটু শুতে পারি এখানে?আমার মাথার ভেতর টনটন করতেসে
.
ঠিক আছে
.
শান্ত দুম করে বিছানায় শুয়ে পড়লো সোজা হয়ে হাত পা ছড়িয়ে
.
আহানা সব গুছিয়ে নিয়ে ভাত বসালো,আলু ভেজে খাবে সেটা দিয়ে
.
শান্ত গভীর ঘুমে
.
আহানা একবার এসে দেখে গেসে ওকে,আবার দেখতে এসে চলে যাওয়ার সময় দেখলো শান্ত ঘুমের মধ্যে মাথার চুল টানছে
আহানা একটু একটু করে কাছে গিয়ে দেখলো শান্ত এত জোরে টানছে মনে হয় মাথা ছুটিয়ে ফেললো বুঝি এখনই
আহানা হাত দিয়ে শান্তর মাথায় রাখতেই শান্ত নিজের হাতটা সরিয়ে নিলো
.
মাথাটা টিপে দাও না,খুব ব্যাথা করছে
শান্ত ঘুমের ঘোরে বললো কথাটা
আহানা হাত নিয়ে শান্তর মাথায় রেখে আস্তে আস্তে চুল টানতেসে,বেশ সুন্দর করে মাথাটা টেনে দিলো সে,কেন দিলো সে নিজেও জানে না,তবে শান্তর জন্য কেন জানি মায়া হচ্ছিলো
শান্ত আহানার হাত মুঠো করে ধরে ঘুমাচ্ছে
আহানা হাত ছুটাতে পারছে না দেখে একটু নিচু হয়ে হাত সরাতে যেতেই শান্ত চোখ জোড়া খুলে তাকালো ওর দিকে
আহানার কলিজা মনে হয় বের হয়ে আসবে,ভয়ে চোখ বড় করে চেয়ে আছে সে শান্তর দিকে
শান্ত আহানাকে এত কাছে দেখে কিছুটা চমকে পিছিয়ে গেলো
আহানাও সরে দাঁড়ালো
.
আহানা দরজা খুলো!!আমি নওশাদ
.
আসতেসি ভাইয়া!

আহানা গিয়ে দরজা খুললো নওশাদ পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁত কেলিয়ে উঁকি দিলো রুমের ভেতরের দিকে
.
কিরে শান্ত?এখানেই থাকবি মনে হয় আজীবন,আমি যাই তাহলে
.
আরে না থাক,আসতেসি
.
শান্ত উঠে ব্যাগ হাতে নিয়ে নওশাদের সাথে বেরিয়ে গেলো,বাইকে বসে নওশাদের পিঠে মাথা রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করছে সে,ঘুমের নেশাটা ভালো করে ধরেছে তাকে
.
আহানা ভাত খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লো
পরেরদিন ভোরবেলায় উঠে নামাজটা পড়ে নিয়ে বের হলো বাসা থেকে
মিষ্টিদের বাসায় এসে লিফটটা ভালো করে দেখে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো আহানা,শান্তি লাগতেসে এই ভেবে যে শান্ত লিফটের ভিতরে নেই
৫তলায় এসে ঢোক গিলে লিফট থেকে বের হলো সে,ওমা এখানেও নেই,নিশ্চয় মিষ্টিদের বাসার ভেতরে,হুমমমম
আহানা মিষ্টিদের বাসার দরজার সামনে এসে নক করতেই মিষ্টির আম্মু এসে দরজা খুলে আহানাকে দেখে অবাক হলেন
.
আরে আহানা?এত জলদি?
.
মানে!আপনি তো বলেছিলেন মিষ্টির পরীক্ষা,জলদি করে পড়াতে আসতে
.
কবে কখন বললাম?মিষ্টির তো পরীক্ষা আরও দেরিতে হবে
.
ওহ,(শান্ত কুত্তা আমাকে মিথ্যা কথা বলে আনাইছে!ওরে আমি ছাড়মু না!)
.
সমস্যা নাই আহানা আসো,এসেছো যখন মিষ্টিকে পড়িয়ে যাও,ভালো হয়েছে আজ এসেছো
.
আহানা মনে মনে শান্তকে বকতে বকতে ভিতরে গেলো
পড়ানো শেষ করে বের হয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে যেতে নিতেই শান্ত সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো,হাতে তার ব্রাশ,তোয়ালে আর চুলগুলো ভিজা,সেটা থেকে পানি গড়িয়ে পুরো মুখ ভিজিয়ে দিয়েছে
.
আহানা ব্রু কুঁচকে চেয়ে থেকে বললো কি সমস্যা??
.
সরি সরি,আমি আজ তোমাকে লিফট থেকে জ্বালাতে পারিনি,ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছিলো
.
তোহহহ??
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
তোহহ কি আর,চলো তোমাকে গ্র্যান্ড ফ্লোর পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি
.
নো থ্যাংকস!এমনিতেও আপনার সাথে আমার আর কোনো কথা নেই,আপনি আমাকে মিথ্যা বলে আনাইছেন,মিষ্টির মা তো কোনো কলই করে নাই,হুদাই আমি এত তাড়াতাড়ি মোহনগঞ্জ থেকে ফিরে আসছি
.
হেহেহে!!মিষ্টির আম্মু গাঁজা খাইসে,সত্যি বলতেসি উনি আমাকে কল করে বলসে তোমাকে আসতে বলতে
.
আর একটা মিথ্যা কথা বললে চুল ছিঁড়ে ফেলবো আপনার!বেয়াদব ছেলে
.
আহানা হনহনিয়ে চলে গেলো
.
বাপরে বাপ আজ দেখি উনার মেজাজ গরম হয়ে আছে অনেক?
.
আহানা বাসায় ফিরে শান্তকে বকতে বকতে সব কাজ করতেসে

কিরে ভাই এরকম টেনসড হয়ে আছিস কেন কি হয়েছে তোর?
.
নাহ কিছু না,আচ্ছা একটা কথা বল মেয়েরা রাগ করলে কি দিয়ে রাগ ভাঙ্গাতে হয়?
.
এলিনা রাগ করসে নাকি?
.
উফ নওশাদ! বল না কি করে ভাঙ্গায়?
.
রুপা রাগ করলে ওকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হয়,দামি দামি খাবার খাওয়াতে হয়,এলিনাও সেমই হবে
.
ওহহহ (এসব তো আহানা একদম পছন্দ করবে না,ওর পছন্দই আনকমন,উফ নওশাদরে কি করে বলবো যে এলিনা না আহানা আমার উপর রাগ করেছে!)
.
এলিনাকে নিয়ে আজ ঘুরতে যাবি নাকি?
.
নাহ,চল নাস্তা করি,নাহলে দেরি হয়ে যাবে ভার্সিটিতে যেতে যেতে

আহানা ভার্সিটিতে এসে মুখ গোমড়া করে বসে আছে
হুদাই আনাইসে আমাকে,আশ্রমে থাকলে একটু রেস্ট নিতে পারতাম,সবার সাথে আরেকটু সময় কাটাতে পারতাম,বেয়াদবটা মিথ্যা বলে আমাকে নিয়ে আনলো,অসভ্য ছেলে একটা
.
কিরে চোখ বড় বড় করে কি এত ভাবস?
.
কিছু না,তোর কি খবর?
.
ভালো না,নওশাদকে কোথাও দেখেছিস?আজ মনে হয় আসে নাই,ফোন ধরতেসে না আমার
তুই একটু শান্ত ভাইয়াকে বলবি ওকে বলতে আমার ফোন ধরতে,আমি কাল ওর সাথে ঝগড়া করেছিলাম,এখন নিজেই অনুতপ্ত হয়ে ওকে কল করে যাচ্ছি,আর ও ধরতেছেই না
.
পারবো না,তুই গিয়ে বল যা,ঐ বেয়াদবটার সাথে আমি আর কোনো কথা বলবো না?
কথাটা বলে আহানা ক্যানটিনের দিকে চলে গেলো
.
এদের আবার কি হলো??সারাদিন ঝগড়া কেমনে করে এরা,আমি ২মাস পর একবার ঝগড়া করি নওশাদের সাথে তাও আমার কলিজা ফেটে যায় আর এরা কিনা দিনে ৩২বার ঝগড়া করে,আর আমি কিনা ভাবলাম শান্ত ভাই আহানাকে লাইক করে,জীবনেও না,শান্ত ভাই আর আহানা কেরোসিন আর আগুনের মত,একসাথ হলেই ঠুস করে বোমা ফেটে যায়,এদের মিল ইমপসিবল
.
আহানা পানির বোতল নিয়ে ফিল্টার থেকে পানি ভর্তি করে পিছন ফিরতেই দেখলো শান্ত অসহায়ের মত চেয়ে আছে ওর দিকে
.
কি?আমার হাতে আরেকটা চড় খেতে না চাইলে পথ থেকে সরুন
.
শান্ত জ্যাকেট ঠিক করে এদিক ওদিক তাকালো,সবাই না হলেও অনেকজনেই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে
শান্ত মুচকি হেসে আহানার দিকে এগিয়ে আসলো
.
হ্যাঁ মারো আমাকে,দেখি তোমার কত সাহস,এতে করে তোমার রাগ গেলে তো ভালই
.
আহানা রেগে গিয়ে হাত উঠিয়ে শান্তকে এক ধাক্কা মেরে দিলো
.
শান্ত একটু দূরে পিছিয়ে গেলো ধাক্কা খেয়ে
.
চড় মারবে না?
.
গো টু হেল!!
.
আহানা সেখান থেকে চলে গেলো,গিয়ে একদম এলিনার সামনে গিয়ে থামলো,এলিনার চোখে মুখে রাগ দেখে বোঝাই যাচ্ছে সে কি জন্য রেগে আছে,শান্তকে ধাক্কা দেওয়াটা সে মোটেও ভালো চোখে দেখেনি
.
কিছু বলবেন এলিনা আপু?
.
তোমার সাহস হয় কি করে আমার শান্তকে ভরা ক্যামপাসের সামনে ধাক্কা দেওয়ার,টাচ করার!!
.
আপনি না বুঝে কথা বলবেন না,উনি আমাকে!
.
চুপ!
এলিনা এগিয়ে এসে আহানার হাত টেনে নিয়ে গেলো ভার্সিটির বাইরের দিকে
.
ছাড়ুন,এলিনা আপু আপনি এমন করতেসেন কেন?
.
আমাদের ভার্সিটির প্রিন্সিপাল আর স্যার ম্যাডাম কড়া নাহলে তোমাকে ওখানেই ১২টা বাজাইতাম,তাদের সম্মান করি বলে তোমাকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছি
দূর থেকে শান্ত আসতেসে,সে দেখেছে এলিনা আহানার হাত ধরে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে
.
এলিনা আহানাকে এক ধাক্কা দিয়ে রোডের উপর ফেলে দিলো
.
কি হলো?কেমন লাগতেসে তোমার??ভরা ক্যামপাসের সামনে আমার শান্তকে ধাক্কা দিয়েছো আর আমি মানুষ ভরা রোডে তোমাকে ফালাইসি,সমান সমান
.
আহানা কুনুইতে ব্যাথা পেয়েছে,চুপ করে চেয়ে আছে এলিনার দিকে
শান্ত এসে দেখলো আহানা রোডে বসে এলিনা আর ওর দিকে চেয়ে আছে
.
শান্ত?তুমি এই ছেঁসড়া মেয়েটার সাথে কথা বলো কেন?আমি বুঝি না,দেখলে তো তোমাকে আবারও অপমান করলো,একবার চড়!একবার ধাক্কা,আর কিছু বাকি রেখেছে?
আহানা? তুমি ভুলে যাও কেন শান্ত তোমাকে রাঙামাটিতে পানি থেকে তুলে বাঁচিয়েছিলো!
শান্ত চলো এখান থেকে,আর কখনও ওর সাথে কথা বলবা না
.
শান্ত চুপ করে আহানার দিকে চেয়ে আছে
.
আহানা উঠে দাঁড়িয়ে চলে গেলো শান্তর পাশ দিয়ে
.
এলিনা?তুমি এই মেয়েটার পিছনে এত লাগো কেন?কি দরকার ছিল এত সিনক্রিয়েট করার??কাঁটা দিয়ে সবসময় কাঁটা তুলতে হয় না,আর কখনও এমন কাজ করবা না তুমি,আমি বলি নাই তোমাকে আমার হয়ে তদারকি করো,একবার এক ঝামেলা করো তুমি
.
শান্ত তুমি আমাকে লাভ করে না?
.
না করি না,শুনছো?আর কতবার বললে বিশ্বাস করবা?
কথা শেষ করে শান্ত চলে আসলো সেখান থেকে
তারপর ভার্সিটিতে ঢুকে ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসের দিকে গেলো,আহানাকে কোথাও দেখছে না সে
রুপা এসে বললো আহানা চলে গেছে
.
আহানা চোখ মুছতে মুছতে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচ দিয়ে চলে যাচ্ছে টিউশনিতে
.
আহানা দাঁড়াও প্লিস আহানা!
শান্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে এসে আহানার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো
.
আহানা মাফ করে দাও আমাকে
.
কিসের মাফ?আপনি এবার আপনার জিএফকেও লাগাইসেন আমাকে কথা শুনানোর জন্য?
আমার থেকে দূরে থাকুন প্লিস!তাহলেই আপনার জিএফ আর আমাকে কথা শুনানোর কোনো পথ পাবে না,এসব সহ্য করতে করতে আমি তিক্ত,আর না,আমার সাথে আর কখনও কথা বলবেন না
আহানা চলে গেলো কথাগুলো বলে
শান্ত আর কিছু বলতে পারলো না
পরেরদিন ভোরে আহানা মিষ্টিদের বাসায় ঢুকে লিফটে উঠার সময় দেখলো শান্ত সেখানে দাঁড়িয়ে আছে
আহানা সেখান থেকে চলে গিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো
.
আহানা প্লিস আমার কথা শুনো,আই এম সরি আহানা,এলিনার হয়ে আমি মাফ চাচ্ছি
.
আহানা থেমে গিয়ে বললো এলিনা আপুর দোষ নেই,না আপনি আমার সামনে আসতেন না এত কিছু হতো,এলিনা আপু তার জায়গায় ঠিক আছে,কোনো জিএফই চাইবে না তার বিএফ আরেকজনের সামনে অপমানিত হোক,সো আপনি আর আমার আাশেপাশে কোথাও আসবেন না,নাহলে অপমান করতে বাধ্য হবো
আহানা আরেক সিঁড়িতে পা বাড়াতেই শান্ত টান দিয়ে নামিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো ওকে
.
হ্যাঁ করো অপমান,আমি দেখি কতটা পারো
.
আমি চিৎকার করবো,সামনে থেকে সরুন বলতেসি,আপনি বেশি বেশি করতেসেন আজকাল!
.
শান্ত আরেকটু এগিয়ে গিয়ে হাত আহানার পাশে দেয়ালের উপর রাখলো
.
এলিনা আপু!!
.
কই?কই?
.
আহানা এক দৌড় দিলো
.
আহানা?এটা ঠিক করলে না তুমি,দাঁড়াও বলতেসি
.
শান্ত দৌড়াচ্ছে আর আহানাও,আহানা মিষ্টিদের বাসায় ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো
.
কি হলো মিস??বাইরে থেকে কে আসতেসে?ভূত আসতেসে?মাম্মামকে ডাকি?
.
নাহ,বসো পড়াবো তোমাকে
.
শান্ত ওর বাসার দরজায় হেলান দিয়ে সিগারেট ধরিয়ে খাচ্ছে আর আহানার অপেক্ষা করছে
আহানা পড়ানো শেষে বের হতেই দেখলো শান্ত বাইরের দিকে চেয়ে সিগারেট খাচ্ছে,ওকে এখনও দেখেনি
আহানা এই সুযোগে পা টিপে টিপে বের হয়ে এক দৌড় মারলো
.
আহানা!!
শান্ত সিগারেট ফেলে দৌড়ে গেলো আহানাকে ধরতে
.
আহানা টাইলসের উপর দিয়ে দৌড়াতে গিয়ে স্লিপ খেয়ে দুম করে পড়ে গেলো নিচে
.
হেহে!!আরও পালাও,আমার সাথে দৌড়ে পারবা না কোনোদিন বুঝলা??
.
আপনি!!
.
নাও উঠো,আমার হাত ধরো
.
আহানা শান্তর হাত না ধরেই উঠে গেলো,তারপর আবার হাঁটা ধরতেই শান্ত ওর হাত ধরে টেনে ওর দিকে ফিরালো
সে আহানাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই উপরের তলা থেকে রামিমা আন্টির ফ্ল্যাটের বুয়া এসে পড়লো
বুয়াকে দেখে শান্ত আহানার হাত ছেড়ে দিলো সাথে সাথে
আহানা সুযোগ বুঝে বুয়ার সাথে লিফটে ঢুকে গেছে ততক্ষণে
.
সমস্যা না,ভার্সিটিতে তো আসবা,তখন দেখা যাবে
.
আহানা বাসায় ফিরে ঘর পরিষ্কার করে,ভাত রেঁধে খাওয়া শেষ করে নিলো,তারপর রেডি হয়ে ভার্সিটির জন্য রওনা হলো
আজ এত কাঠ ফাটা রোদ বলে বুঝানো যাবে না,মাথা মনে হয় গলেই যাবে,গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখলো শান্ত রিয়াজ আর সূর্যকে নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে বটতলায়
আহানা মুখ ফিরিয়ে হেঁটে চলে গেলো
.
শান্ত ভাই তোমার শত্রু যাচ্ছে তোমার সামনে দিয়া
.
রিয়াজের কথা শুনে শান্ত আহানার দিকে তাকালো,আহানা আরেকদিকে মুখ নিয়ে হেঁটে ক্লাসের ভেতর ঢুকে গেলো
.
দেখলে তো?এই মেয়ের এত ভাব!!শান্ত ভাই তুমি শুধু অর্ডার করো,ভালো করে টাইট দিয়ে দিব ওকে
.
কোনো দরকার নেই,তোরা তোদের কাজ কর
.
আহানা জানালার পাশে বসে দূরের কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে চেয়ে আছে
মানুষ বড়ই অদ্ভুত,সে কি চায় সে নিজেও জানে না,যেমন আমি
এখন কোন পাল্লায় এসে পড়েছি সেটা আমি জানি না,বলতে পারি না,দিন চলছে তো চলছে,এই মাসের টাকা তো তারেক আঙ্কেল নিবে না,শান্ত দিয়ে দিয়েছে,আমি টিউশনির টাকা পেয়ে উনাকে সেটা ফেরত দিয়ে দিব,কারোর ধার ধারি না আমি
একটা জিনিস বুঝি না!! শান্তর জিএফ আছে,তার সাথে চুইংগামের মত লেগে থাকে সারাদিন তাহলে আমাকে এত ডিস্টার্ব করে কি পায় কে জানে!
চড় একটা দিসিলাম সেটার ঝাঁঝ মনে হয় আদৌ যায়নি,নাহলে একটা চড় মানুষ এতদিন মনে রাখে??
সেদিন কার মুখ দেখে উঠেছিলাম কে জানে,শয়তানটা আজ আবার কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে এসে আমাকে ডিস্টার্ব করবে কি একটা জ্বালাতন,আমার যদি কোনো বড় ভাই থাকতো আচ্ছা করে পিটুনি দিতাম
এলিনাকে নিয়ে নাই বলি,এলিনার সাথে আমার কোনো শত্রুতামি নেই,আপুটা না বুঝেই আমাকে কষ্ট দেয়,সে তো জানে না তার বিএফের চরিত্র কেমন,জানলে আমি তো এক চড় মেরেছিলাম উনি হলে ২০টাই মারতেন
আজ বেশি বাড়াবাড়ি করলে আরেকটা চড় মেরে দিবো শয়তানটার গালে,অতিরিক্ত কোনো কিছুই আমার পছন্দ নাহ
.
এই আহানা!
.
হুম বল
.
তুই সারাদিন কি এত ভাবিস?
.
বাদ দে আমার কথা,তোর আর নওশাদ ভাইয়ার ঝগড়া মিটমাট হয়েছে তো?
.
আরে সেটাই তো তোর সাথে ডিসকাস করতে এলাম,আমি নওশাদের সাথে একটা জায়গায় যাব
.
তো যা
.
না সেটা না,কথা হলো গিয়ে রিকসায় আমাকে আর নওশাদকে একসাথে কেউ দেখে ফেললে মহা বিপদ,বাবা দেখে ফেললে তো আমি শেষ
তুই আমার সাথে চল না প্লিস,নওশাদ বাইক নিয়ে আসবে
.
আমি গিয়ে কি করবো,তোদের মাঝে গিয়ে কাবাবে হাড্ডি হবো কেন?
.
চল না প্লিস প্লিস
.
ঐ বেয়াদবটা যাবে না তো?
.
নাহ শান্ত ভাই কোথায় যেন গেছে একটা কাজে
.
তাহলে চল
আহানা খুশি খুশি রুপার সাথে সেই জায়গায় গেলো
বেশ ঠাণ্ডা পরিবেশ,দুপাশে ঘাস,বন আর মাঝখান দিয়ে চিকন রাস্তা,এখানে আগে কোনোদিন আসেনি আহানা,তাই হেঁটে হেঁটে সবটা দেখছে সে
দূরে একটা কুটিরে রুপা আর নওশাদ একা টাইম স্পেন্ড করছে
আহানা এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে শান্তর সামনে গিয়ে থেমে গেলো
এই বেয়াদবটা এখানেও!রুপা মিথ্যা বললো আমাকে!!
.
হাই!!
.
বাই
.
আহানা হাঁটা ধরলো,যেই ভাবা সেই কাজ,শান্ত ও পাশে পাশে আসতেসে
আহানা বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
আপনার কি সমস্যা??এলিনাকে নিয়ে আসতে পারতেন,একা এসেছেন কেন??আমাকে এত ডিস্টার্ব করেন কেন বলেন তো?
.
সবসময় এলিনা এলিনা করো কেন?এলিনা আমার কিছু না,অনলি ফ্রেন্ড,কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও
.
যাই হোক,ফ্রেন্ড তো!ও যদি আবার আমার সাথে আপনাকে দেখে খুন করবে হয় আমাকে নয় আপনাকে,সো দূরে থাকুন
.
আমি কোথায় যাব কি যাব না সেটা আমার ব্যাপার,তোমার পাশ দিয়ে হাঁটবো কি হাঁটবো না সেটাও আমার ব্যাপার,আর তুমি আমার দিকে না তাকালে তুমি জানো কি করে আমি তোমার পাশ দিয়ে হাঁটছি?
.
আজব তো!!সত্যি আপনার মত ভেজাইল্লা ছেলে আমি আর ২টো দেখিনি বিশ্বাস করেন!!
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_২৫

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_২৫
#Writer_Afnan_Lara
?
জামাটা চেঞ্জ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে আহানা
এত ভিজেছে সে এখন মনে হয় মাথাটা ছিঁড়ে হাতে চলে আসবে,পাশে থাকা একটা কঙ্কর নিয়ে জোরে সোরে সামনে নিক্ষেপ করলো মাথা ব্যাথার চোটে
.
আউচচ!
.
আহানা মাথা থেকে হাত সরিয়ে মুখ তুলে তাকালো
শান্ত হাত ডলতে ডলতে এগিয়ে আসতেসে
.
কি?আবার ভিজাবেন?একবারে শান্তি হয়নি?
.
নাহ তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় যাব চলো
.
যাব না আমি,যান এখান থেকে!
.
শান্ত নিচু হয়ে আহানার হাত মুঠো করে নিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে
.
আহানা বলতেছে হাত ছাড়তে শান্ত সেদিকে মন না দিয়ে ঝাউ গাছগুলোর অপরুপ দৃশ্য পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে
.
কি হলো?কথা কানে যায় না আপনার?এই যে শুনুন,আমার হাত ছাড়ুন,আমার মাথা ব্যাথা করতেসে,প্লিস ছাড়ুন
.
অনেকটা দূরে শান্ত আহানাকে নিয়ে চলে এসেছে,একটা চায়ের দোকান,আশেপাশে মানুষ নেই বললেই চলে
শান্ত টুলটা সামনে এনে আহানাকে বসতে বলে চায়ের দোকানদারকে দুকাপ দুধ চা দিতে বলে নিজেও বসে পড়লো
.
কি হলো?বসো,চা খাওয়াতে এনেছি তোমাকে,বলসিলাম না একসাথে চা খাবো
.
আহানা ব্রু কুঁচকে টুল টেনে বসলো
শান্ত বিসকুট নিয়ে আহানাকে এক প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে নিজেও গাপুসগুপুস করে খেয়ে যাচ্ছে
আহানা প্যাকেট খুলে একটা বিসকিট খেয়ে বাকি বিসকিট লুকিয়ে ফেললো,ঢাকায় ফিরে সেটা খেয়ে ভার্সিটিতে যাওয়া যাবে,ভাত বেঁচে যাবে এই ভেবে লুকালো
.
শান্ত হাত থেকে বিসকিটের গুড়ো ঝাড়তে ঝাড়তে বললো আরেক প্যাকেট কিনে দিবো,আপাতত এই প্যাকেট খাও,আমি জানি তোমার খিধা পেয়েছে
.
আহানা একটা ভাব ধরে লুকিয়ে রাখা বিসকিটের প্যাকেটটা বের করে খাওয়া ধরলো
শান্তর বুক ফেটে হাসি পাচ্ছে,অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে চায়ের কাপ নিতে গেলো
আহানা তো চা পেয়ে মহা খুশি,মনে হয় আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে,গরম গরম পুরো এক কাপ চা ৩সেকেন্ডে শেষ করে ফেললো সে
শান্ত থ হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,তারপর তার কাপে এক চুমুক দিয়ে দোকানদারের দিকে তাকিয়ে বললো মামা আরও দুকাপ চা দেন
আহানা চমকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
আরও দুকাপ কেন?কার জন্য
.
আমার আর তোমার জন্য,এই এক কাপে আমার মাথা ব্যাথা গেলেও তোমার যাবে না তাই বললাম আরও ২কাপ,যেভাবে গরম গরম চা শেষ দিসো বাপরে বাপ!
.
?
.
দোকানদার চা বানাচ্ছে,আহানা টুল থেকে উঠে একটু দূরে হাঁটতে গেলো
দুপাশে পুকুর,সম্ভবত কারো মাছ চাষ করার পুকুর,আহানা কিনারায় গিয়ে পুকুরের দিকে এক নজর চেয়ে রইলো,মাছ আর মাছ,তাহলে ঠিক ধরেছিলাম এই পুকুরগুলোয় মাছ চাষ করা হয়
.
বিকাল না হয়ে যদি সকাল হতো আমি এই পুকুরে নেমে মাছ ধরতাম
.
হ্যাঁ,আর মালিক এসে কান ধরে টানতো
.
জি না,মালিক হলেন মানিক হক,উনি আমার বাবার বন্ধু,উনি আমাকে কোলে করে পুকুরে নামাবে বুঝছো?
.
হুহ,মগেরমুলুক!
.
পরেরবার আসলে প্রমান দিয়ে দিব তোমাকে,এখন চলো চা বানানো হয়ে গেছে মনে হয়
আহানা ফিরে এসে চায়ের কাপ নিয়ে টুলে বসে বারবার একটা গাছের দিকে তাকাচ্ছে,একটা বরই গাছ,পাতা যতগুলো বরই ঠিক ততগুলো
আহানা এই নিয়ে ৪৯বার তাকিয়েছে
শান্ত বিষয়টা খেয়াল করে সেও তাকালো,ও মাই গড! এত বরই!!এগুলা তো চুরি করতে হবে আজই,এখনই
.
আপনার জন্য আমি দৌড়ানি খেতে চাই না
.
তোমাকে বেশি কিছু করতে হবে না,আমি গাছ নাড়া দিব তুমি ওড়না ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে
.
হ্যাঁ গাছ নাড়ানো এত সোজা আর কি
.
কি বলো,আমি ডেইলি জিমে যাই,আমার কাছে এসব কিছু না,আমার বডি দেখছো?মনে হয় দেখো নাই,একদিন দেখাবো
.
শাট আপ!আপনার বডি এলিনাকে দেখান,আমার এত শখ নাই
.
কথা হলো গিয়ে বরই গাছটার মালিক হলেন গিয়ে আক্কাস মিয়া,উনি অনেক সম্মানীয় একজন মানুষ,তার রাগ কপালে থাকে
.
কপালে মানে?আমি তো জানতাম রাগ মানুষের মাথায় থাকে
.
আরে কপালে মানে হলো উনি রেগে গেলে উনার কপাল ৬ভাগে ভাগ হয়ে যায়,আই মিন সাগরের ঢেউয়ের মতন,অদ্ভুত লাগে তখন,তুমি দেখলে নির্ঘাত জ্ঞান হারাবে
.
আচ্ছা তো?
.
তো মানে,শুনো আমি বলতেসি,তুমি ওড়না ধরে দাঁড়াবা,উনার পেয়াদারা আসা ধরলে আমরা দুজনে পশ্চিম দিকে দৌড় মারবো ওকে?
.
কিন্তু আমরা তো এসেছি উত্তর দিক থেকে
.
আরে গাধি!পশ্চিম দিক দিয়ে শর্টকাট রোড আছে,আশ্রমে ৫মিনিটেই যেতে পারবো
.
আচ্ছা তাহলে চলুন,বরই খাবো?
.
?এক শর্তে
.
কি?
.
আমার সাথে আজ ঢাকায় ফিরে যেতে হবে তোমাকে
.
পারবো না,আমার শরীর ঠিক লাগতেসে না,আমি কাল যাবো
.
ওহহ শিট!!একটা কথা তো তোমাকে বলতে ভুলেই গেছিলাম আমি!
মিষ্টির আম্মু নাকি তোমাকে কল করেছিলো,ধরো নাই কেন?
.
কই কখন কল করেছে?ফোন তো বাজলো না
.
আমাকে তো বললো
.
কি বললো?
.
বললো মিষ্টির কদিন বাদেই পরীক্ষা শুরু,তুমি যেন কাল সকাল থেকে টিউশনি শুরু করো
.
সত্যি বলছেন নাকি মিথ্যা?
.
মিথ্যা বলে আমার কি লাভ,থাক যেও না,আর একদিন মিস দিলে মিষ্টির মা তোমার টিউশনি অফ করে দিবে,আমার কি হুহ!
.
আরে না,ঠিক আছে আমি যাব আপনার সাথে
.
আচ্ছা তাহলে চলো বরই নিব
শান্ত বরই গাছের নিচে এসে আহানাকে বললো ওড়না খুলো হাতে ধরতে
আহানা ব্রু কু্চকে চেয়ে আছে ওর দিকে
.
কি?তোমার চুল আছে না?তুমিই তো বলছিলে ওড়না না থাকলে সেফটি হিসেবে কাজ করে চুল,তো এখন এমন করে চেয়ে আছো কেন?
.
আহানা ওড়না খুলে চুল সামনে এনে ওড়না লম্বা করে ধরলো
শান্ত হাত লাগিয়ে একটু ঠেলা দিতেই বরইয়ের বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো,আহানা ইয়া বড় হা করে তাকিয়ে আছে
.
হেহে!দেখেছো??এটা কে বলে ছেলেদের পাওয়ার,তোমরা মেয়েরা এই গাছের পাতাও নাড়াতে পারবে না বুঝলা
.
ঢং কম করেন,গাছ নাড়ানো বড় কোনো ব্যাপার নাহ
.
তো তুমি নাড়িয়ে দেখাও তাহলে
.
আমি কি বলসি আমিও পারি?হুহ,আমি বলসি অন্য ছেলেরাও পারবে
.
কে রে?কে ওখানে?চোর চোর চোর!!
.
আহানা দৌড়াও!!!
.
আহানা ওড়নাতে গিট্টু দিয়ে দৌড়ানো শুরু করে দিলো
আহানার স্পিড ছিল শান্তর চেয়েও কম
শান্ত থেমে ওর হাত ধরে দৌড় দিলো,দুজনে দৌড়াচ্ছে তো দৌড়াচ্ছে
আশ্রমের একটু কাছে এসে থামলো,শান্ত হাঁপাতে হাঁপাতে একটা গাছের সাথে লেগে গেলো
আহানা ও হাঁপিয়ে গেছে,দুজনে হেসে দিলো একসাথে
শান্ত হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পড়লো
আহানার হাত ধরে ওকেও বসিয়ে দিলো
.
নাও ভাগ করো,তোমার ৪০% আমার ৬০%
.
মানে কি?
আমার ৫০% আপনার ও ৫০%
.
ইস শখ কত!আমি গাছ না নাড়লে তুমি বরই পেতে না
.
আমি ওড়না না ধরলে সব মাটিতে পড়তো আর আপনি বরই কুড়ানোর সময় পেতেন না,পেয়াদা এসে কেলানি দিতো ততক্ষণে
.
আচ্ছা,তোমার ৪৮% আমার ৫২%
.
না হবে না,৫০/৫০
.
আমার বোন মিতুকে দিতে হবে,বাচ্চা মেয়ে ও,তাকে কম দিলে হয়?
.
আমাকেও তো আশ্রমের কত বাচ্চাকে দিতে হবে
.
আচ্ছা ফাইন,৫০/৫০ যাও
.
ভাগ করা শেষে আহানা উঠে পড়লো
.
যাও সন্ধ্যায় রেডি হয়ে থেকো,মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ৬টা ১০মিনিটে ফ্ল্যাটফর্মে আসবে,আমরা সেখান থেকে উঠবো
.
ঠিক আছে,বাই
আহানা চলে গেলো আশ্রমের দিকে
শান্ত ও তার বাসার দিকে ফিরে গেলো

সন্ধ্যায় আহানা সবার থেকে বিদায় নিয়ে গেটের বাইরে পা রাখতেই শান্ত এসে দাঁড়ালো ওর সামনে
.
আপনি এখানেই ছিলেন?
.
হ্যাঁ মায়ের কবরটা দেখতে গেছিলাম
.
ওহ!
.
চলো যাই
শান্ত আহানার হাত ধরে হাঁটা ধরলো
.
এই হাত ছাড়ুন,সবসময় আমার হাত ধরেন কেন আপনি?
.
হুহ,ফাইন,পিছন থেকে কোনো বখাটে টান মারলে বলিও শান্ত প্লিস হেল্প মি,সেভ মি প্লিস!
.
অলক্ষুনে কথা বলেন কেন এত??
.
হইসে থামো,আর ক্ষেতে নামো,লেট হয়ে যাবে তোমার সাথে ঝগড়া করতে গেলে
ক্ষেতে নেমে আহানা চুপচাপ হেঁটে চলেছে,শান্ত এতক্ষণ চুপচাপ ছিল হঠাৎ থেমে গিয়ে পকেট থেকে সিগারেট একটা নিয়ে ধরালো
.
এখন দেরি হয় না?
.
চুপ!আমি সব পারবো,তুমি কিছু পারবে না বুঝছো তুমি?এখন চলো!
ফ্ল্যাটফর্মে পা রাখতেই ট্রেন এসে গেলো,শান্ত আহানাকে নিয়ে ট্রেনের কেবিনে ঢুকলো,একটা ছেলে জানালার সিটে বসে আছে
.
এই যে ভাই??ওটা আমাদের সিট,সরে বসো
.
আমি জানালার সিটে বসবো প্লিস
.
আমার পাশে যে এই মেয়েটা আছে না?ওর বমি করার অভ্যাস,এখন তুমি কি চাও ও ট্রেনের ভেতরে বমি করুক?
.
ছেলেটা শান্তর কথা শুনে চোখ কপালে তুলে তড়িগড়ি করে তার নিজের সিটে ফিরে গেলো
.
এই মিথ্যা বললেন কেন আপনি?আমি বুঝি বমি করি?
.
তো?এটা না বলে কি বলতাম আমি?জানালার সিট খোয়ানো যায় না কোনো মতেই,তুমি না বসলে বলো আমি জানালার পাশে বসবো
.
নাহহহ,আমি বসবো
.
বসো যাও,এই নাও ধরো সিগারেটটা হাতে রাখো আমি দোকান থেকে পানি কিনে আনতেসি
.
এটা ফেলে দেন,আমাকে দিচ্ছেন কেন
.
এই সিগারেটের দাম জানো তুমি?হাতে নিয়ে বসে থাকো চুপচাপ!
শান্ত ব্যাগটা তার সিটের উপর রেখে পানির জন্য চলে গেলো
আহানা সিগারেটটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে,এদিক ওদিক একবার চোখ বুলিয়ে নিলো,পাশের ছেলেটা ফোনে গেমস খেলছে,আর সামনে ২টা মেয়ে একটা ছেলে তারা ব্যাগ রেখে কোথায় যেন গেছে মাত্র
আহানা সুযোগ বুঝে সিগারেটটা আবারও দেখতে লাগলো,এটা মানুষ কেন খায়,এটার ধোঁয়া মুখের ভেতর নিলে কেমন ফিলিং হয়?এটা জানার খুব শখ আহানার,আর এখন মোক্ষম সুযোগ,এই সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না
টুপ করে মুখে নিয়ে নিলো সে সিগারেট টা
শান্তর মতো করে এক টান দিয়ে আবার বের করলো
কিন্তু না,যতটা সহজ মনে করেছিল ততটা সহজ না বিষয়টা
মুখের ভিতরে মনে হয় আগুন লেগেছে,দম বন্ধ হয়ে আসতেসে সাথে মনে হয় সব পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে
মুখ থেকে ধোঁয়া সব বের করে কাশতে কাশতে আহানার নাকের পানি চোখের পানি একসাথ হয়ে গেলো
পাশে থাকা ছেলেটা ফোন থেকে চোখ তুলে চেয়ে আছে ওর দিকে
মেয়ে মানুষ সিগারেট খায় তা লাইভ দেখে নিলো,এমন জানলে সে আগেই একটা ছবি তুলে নিতো,আর ফেসবুকে পোস্ট করতো
“”সব মেয়েরা এক,আমার এক্স সিগারেট খেতো আর আজ এই আপুটাও সিগারেট খাচ্ছে””
ইস কেন যে পিক তুললাম না,এই জন্য হয়ত মা বলে সবসময় ফোনের ভেতর ডুবে থাকিস না,মাঝে মাঝে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিস,পেলেও পেতে পারিস ফেসবুকে দেওয়ার মতন পোস্ট!
শান্ত পানির বোতল আর চিপস চকলেট নিয়ে এসে আহানার অবস্থা দেখে তাড়াহুড়ো করে সব হাত থেকে সিটের উপর রেখে আহানার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো কি হয়েছে,এমন কাশতেসো কেন??পানি খাবে?
.
আপনার জিএফ আপনার অবশিষ্ট সিগারেটটা খেয়ে নিয়েছে
.
কথাটা শুনে শান্ত চোখ কপালের সাথে লাগিয়ে আহানার হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে পানির বোতল নিয়ে ওকে পানি খাওয়ালো,পকেট থেকে টিসু নিয়ে দিলো ওকে
.
ভাই ও আমার গার্লফ্রেন্ড নাহ ওকে?
আহানা!তোমারে কি মাঝে মাঝে ভূতে ধরে?আর ইউ ম্যাড? মেয়ে হয়ে সিগারেট টেস্ট করার ইচ্ছা জাগছে তোমার?এখন হলো তো, মেয়েদের এসব সুট করে না জানো না তুমি?
.
আহানা মুখ মুছে শান্তর দিকে মুখ তুলে তাকালো,চোখমুখ রেড ভেলবেট কেকের মত হয়ে গেছে
.
শান্ত ফিক করে হেসে দিয়ে বললো আমি দিনে ৬/৭টা খেলেও আমার এমন অবস্থা হয় না আর তুমি কিনা একটার অর্ধেক খেয়ে চোখ মুখের এই অবস্থা করলে?
আর খাবা?
.
জীবনেও না
.
গুড?
.
ভাই?
.
হ্যাঁ বলো ভাই
.
পাবজি খেলবা আমার সাথে?
.
তাই নাকি,তাহলে তো ভালোই হয়,চলো খেলি
শান্ত আর ছেলেটা পাবজি খেলে যাচ্ছে তো যাচ্ছে
আহানা মুখ গোমড়া করে একবার ওদের দেখছে আবার সামনে থাকা মেয়েগুলোকে দেখছে আবার বাইরে তাকাচ্ছে
অন্ধকারে বাইরে তাকিয়ে লাভ নেই কোনো,কিছুই দেখা যায় না,আহানা বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো
.
এই যে ভাইয়া
.
হ্যাঁ বলো আপু
.
আপনার গার্লফ্রেন্ড ঘুমিয়ে পড়েছে,মাথা জানালার বাইরে চলে গেছে টেনে কাছে নিয়ে আনেন নাহলে বিপদ হতে পারে
শান্ত সাথে সাথে পাশে তাকিয়ে দেখলো তাই তো
ওকে টেনে কাছে নিয়ে আসলো,আহানা ঘুমের ঘোরে শান্তর কাঁধে মাথা রেখে হাত নিয়ে ওর বুকের উপর রাখলো
মেয়েগুলো মুচকি হেসে তাদের কাজে মন দিলো
শান্ত লজ্জা পেয়ে ওর হাতটা নিয়ে ওর হাঁটুর উপর রাখলো তারপর আবার গেমস খেলায় মন দিলো
ঢাকা ফিরতে ফিরতে রাত ৯টার উপর বেজে গেলো
.
বিড়াল যেমন সাউন্ড করে খাবার খায় ঠিক তেমন করে কে যেন খাবার খাচ্ছে,ঘুমের মধ্যে বেশ ভালোই টের পাচ্ছি আমি
আহানা চোখ খুলে পাশে তাকালো,শান্ত চিপস খাচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে ভাতের লোকমা ধরে খাচ্ছে,পেটুক কোথাকার!
আহানা আরেকটু ভালো করে চেয়ে দেখলো তার মাথা শান্তর কাঁধে
বাতাসের গতিতে ছিঁটকে সরে গেলো সে
শান্ত খাওয়া বন্ধ করে ওর দিকে তাকিয়ে এমন একটা ভাব নিলো যে যত্তসব ঢং বুঝালো
আহানা ব্র‍ু কুঁচকে বললো আমাকে কি বললেন?
.
তুমি যেটা ভাবলে সেটাই বললাম,ধরো
.
আমি চিপস খাবো না
.
তোমাকে আমি খেতে দিই নাই,প্যাকেটটা তোমার ব্যাগে রাখো ফ্ল্যাটফর্মে আসলো ময়লার ঝুড়িতে ফেলবা
.
ইহরে এত কষ্ট আমি কেন করবো?খেয়েছেন আপনি,ফেলবেন ও আপনি
.
শান্ত গাল ফুলিয়ে প্যাকেটটা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নিলো
সামনের মেয়েগুলো হাসতেসে ওদের ঝগড়া দেখে
.
চলো!
.
কোথায়?
.
আপনার শ্বশুরবাড়ি এসে গেছে
.
মানে?
.
ঢাকা!!চলেন,ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশন এসে গেছে,নেমে আমাকে ধন্য করুন আহানা ম্যাডাম
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে শান্তর পিছন পিছন গেলো
.
মামা যাবেন?৩০০টাকা? কিন্তু আমি তো ২০০দিয়ে আসছি,ওকে সমস্যা নাই
আহানা চলো
দুজনে একসাথে সিএনজিতে উঠে পড়লো
আহানা ফিসফিস করে বললো এই শুনুন,আপনার বাসা তো আমার বাসা থেকেও দূরে তাহলে তো ৩০০টাকাই ভাড়া হবে,আপনি এমন ভাব করলেন কেন যে ২০০টাকা ভাড়া?
.
আরেহহ আমি তোমাকে তোমার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে সেখান থেকে রিকসা নিয়ে বাড়ি যাব,সোজা আমার বাসায় সিএনজি যাবে না,ভিআইপি এরিয়া তো
.
আপনি বুঝি ভিআইপি?
.
ভিআইপি ২কারণে বুঝানো হয়
১.নেতা হলে
২.টাকার জোর থাকলে
.
আপনার কোনটা?
.
২নাম্বারটা
.
ইহহহহহহহহ
.
চুপ!
সিএনজি থেকে নেমে শান্ত পকেটে হাত দিতেই আহানা ২০০টাকা লোকটাকে দিয়ে এক দৌড় দিলো
.
আরে আহানা,আমি দিতাম,তুমি দিসো কেন?
.
আপনার ২হাজার টাকা তো শোধ করতে হবে তাই না?
আহানা মুচকি হেসে চলে গেলো
.
শান্ত ও হাসলো,আমার টাকা আমাকেই ফেরত দিয়ে আমারই ঋণ শোধ করছে?বোকা মেয়ে
শান্ত রিকসার খোঁজে হাঁটা ধরলো
.
এই যে শুনুন!
.
শান্ত থেমে গিয়ে পিছন ফিরে আহানার দিকে তাকালো
.
তোমাকে বলসি না আমাকে এমন করে ডাকবা না?তুমি কি আমার বউ?
.
?চা খাবেন?
.
সেটা হলে তো ভালো হয়,তোমার মত জঙ্গলিকে এতদূর সহ্য করে নিজের কাঁধে ঘুমাতে দিয়ে এনেছি,শুধু চা না সাথে বিসকিট ও খাওয়াতে পারো
.
আসেন
.
শান্ত ছুটতেই আহানা আবার থামিয়ে দিলো ওকে
.
আবার কি?
.
যান দুধের গুড়ি,আর চা পাতা আনেন,বাসায় নেই,এই নেন ১০০টাকা,মিনি প্যাক গুলো আনবেন
.
তুমি এমন করে আমার টাকা ফেরত দিচ্ছো?
.
হুম?
চলবে♥
(একটা কাজে ব্যস্ত থাকবো সারাদিন,,তাই এখন গল্প দিয়ে দিলাম)

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_২৪

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_২৪
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানা নিজেকে সামলাও
আহানা কান্না থামিয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে গিয়েও পারলো না,পড়ে যাচ্ছে বারবার
শান্ত আহানার হাত ছাড়েনি এখনও,পিঠের উপর দিয়ে হাত নিয়ে ওকে শক্ত করে ধরলো
আহানা আর শান্ত চুপচাপ হেঁটে চলেছে,দুজনের একজনের মুখেও কোনো কথা নেই
আশ্রমে এসে শান্ত আহানাকে সেই রুমে নিয়ে আসলো,টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি এনে আহানার দিকে বাড়িয়ে ধরলো
আহানা পানির গ্লাসটা নিয়ে চুপ করে বসে আছে
শান্ত রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে আশ্রমের রান্নাঘর থেকে এক প্লেট খাবার নিয়ে আসলো
আহানা পানি খেয়ে এখনও কাঁদছে
শান্ত চেয়ার টেনে ওর সামনে বরাবর বসলো,ভাতের লোকমা বানাতে বানাতে বললো যখন আমি কাঁদতাম কিছু খেতে চাইতাম না তখন আমার মা আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিতো
তুমি বলেছিলা তোমাকে কেউ নিজের হাতে খাইয়ে দেয়নি,চলো আজ আমি খাইয়ে দিব তোমাকে
শান্ত আহানার মুখের সামনে লোকমা ধরলো
আহানা চোখ মুছে বললো নাহ,দরকার নেই,আমি নিজে খেতে পারবো
.
তুমি নিজের হাতে খেতে গেলে কম খাবা,আমি তোমাকে বেশি করে খাইয়ে দিব
শান্ত আহানার মুখে লোকমাটা দিয়ে দিলো
.
আরিফ আঙ্কেল দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে,শান্ত একেবারে ওর মায়ের মত হয়েছে,ওর মায়ের ও অন্যের কষ্ট সহ্য হতো না,সবাইকে এমনভাবে ভালোবাসতেন যেন সবাই তার আপন
.
আপনার জ্যাকেটটা!
.
রেখে দাও,ঢাকায় ফিরলে দিও না হয়,আর তোমার ওড়না তো আমি ছিঁড়ে ফেলসিলাম
.
আমার কাছে আরেকটা জামা আছে,তার ওড়না পরবো আপাতত
.
ঠিক আছে
শান্ত আহানাকে পুরো খাবার খাইয়ে ঔষুধ খাইয়ে ওকে ঘুমাতে বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো
অনেক অনেক কান্না করার ফলে আহানা বালিশে মাথা রাখতেই ঘুম এসে গেলো তার
শান্ত আস্তে করে আবার রুমে এসে লাইটটা অফ করে চলে গেলো
.
আঙ্কেল আমি আসি,কাল তো ঈদ,কাল আবার দেখা হবে নামাজের সময়
.
আচ্ছা বাবা
.
শান্ত চলে গেলো বাসার দিকে,বাসায় ফিরে দেখলো সায়ন ডাইনিং এ বসে খাচ্ছে
বাবা টিভি দেখতেছেন,শান্তকে দেখে ওকে টেনে এনে ডাইনিং এ বসালো
মুরগির লেগ পিসটা শান্তর খুব প্রিয় আর শান্তর বাবারও
শান্তর মা সবসময় একটা মুরগী রাঁধলে লেগ পিস ২টো শান্ত আর তার বাবাকে দিতেন
শান্ত চোখ বন্ধ করে স্মৃতি মনে করে মুচকি হেসে চোখ খুলে দেখলো ওর পাতে মুরগীর অন্য একটা পিস,লেগ পিস বাবার পাতে আর আরেকটা সায়নের পাতে
বাবার এদিকে খেয়ালই নেই,তিনি আশ্রমের কথা বলতেছেন আর খাচ্ছেন
শান্ত চুপচাপ খেয়ে নিজের রুমে আসলো,খালা কফি দিয়ে গেছেন,শান্ত কফিটা নিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে বসে আহানার কথা ভাবতে লাগলো
না জেনে ওকে এতদিন অনেক কষ্ট দিয়েছি,এখন তো মনে হয় আমি ছাড়া ওর পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ নেই,আমার উচিত ওকে আগলে রাখা
কফি শেষ করে সিগারেট নিতেই দরজায় নক হলো
বাবা কোমড়ে হাত দিয়ে এসে শান্তর হাত থেকে সিগারেট নিয়ে নিলেন
.
তোকে মানা করি নাই খাবি না এসব
.
বাবা খেতে দাও না,এটা খেলে শরীর ভালো থাকে আমার
.
শান্ত?এটা কেনো ঔষুধ না ওকে?আমাকে বুঝাতে হবে না,রাত হয়েছে,শুয়ে পড়ো,কাল সকাল থেকে অনেক কাজ
বাবার কথা রক্ষার্থে শান্ত চাদর টেনে শুয়ে পড়লো
পরেরদিন সকাল সকাল পাঞ্জাবি পরে বাবার সাথে গেলো ঈদের নামাজ পড়তে
আহানা একটা ছোট বাচ্চার সাথে ছোটাছুটি করছে
দৌড়াতে দৌড়াতে একদম শান্তর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো
শান্ত আশ্রমে এসে এতক্ষণ আহানার দুষ্টুমি দেখতেছিলো
পরনে তার সাদা পাঞ্জাবি,মাথায় টুপি,ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি,হাতে জায়নামাজ
আহানা অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে চোখ নামিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত দাঁড়াতে বললো
.
কি?
.
সালাম দিবে না?
.
আসসালামু আলাইকুম
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম
নাও তোমার ঈদ সালামি
.
লাগবে না
.
আরে রাখো রাখো
শান্ত আহানার হাত টেনে ধরে ৫হাজার টাকা ওর হাতের ভিতর ঢুকিয়ে দিলো
আহানা শান্তর দিকে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে হাতে থাকা টাকা গুলোর দিকে তাকালো
.
এত টাকা দিলেন কেন??লাগবে না
.
দিয়ে ফেলেছি কিছু করার নাই,বাই বাই
শান্ত নিমিষেই উধাও,আহানা টাকা গুলোর দিকে চেয়ে মুখ গোমড়া করে চলে গেলো
শান্ত পাঞ্জাবি চেঞ্জ করে হাফ প্যান্ট আর টি শার্ট পরে নিয়ে দূরের মাঠটায় গোস্ত কাটতে বসে গেলো
.
আহানা আপু চলো না দেখবো
.
না আমার ভয় করে এসব দেখতে,তন্নি তুমি যাও
.
না তোমাকে নিয়েই যাব
তন্নি আহানার হাত টেনে মাঠের দিকে নিয়ে গেলো
এতসব মানুষের ভিড়ে আহানার চোখ পড়লো শান্তর উপর
শান্ত দাঁত কেলিয়ে গোস্ত কেটে যাচ্ছে হঠাৎ দক্ষিনা হাওয়ায় বুকটা কেঁপে উঠতেই সামনে তাকালো সে
আহানা চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে,হাসবে কি কাঁদবে বুঝতেসে না,হাফ প্যান্টে শান্তকে যা লাগছে না!!
শান্ত লজ্জায় লাল হয়ে আরেকদিকে ফিরে বসে পড়লো
আহানা ফিক করে হেসে দিয়ে চলে আসলো ওখান থেকে
.
বিকালের দিকে ছাদে এসে বসে আছে শান্ত,এখানে ভালো লাগতেছে না,এত এত সমস্যা এই বাড়িতে
এখন মনে হচ্ছে জব নিতেই হবে তাড়াতাড়ি করে,যাওয়ার সময় আহানাকে সাথে নিয়ে যাব,একা যেতে দিব না
নওশাদ ফোন দিয়ে বকাবকি শুরু করে দিসে শান্ত কেন সকাল থেকে একবারও ফোন করেনি,জানের দোস্ত না ছাই এসব বলে যাচ্ছে সে
শান্ত অনেক করে convince করলো ওকে এটাও বললো যে ঢাকায় ফিরে ওকে নিয়ে ঘুরতে যাবে
আহানা তার সালেহা মায়ের কবরটা ভালো করে পরিষ্কার করে দিচ্ছে,কাল মৃত্যুবার্ষিকী উনার,আহানা নিজের হাতে রান্না করবে
সবাই প্লেট নিয়ে বসে গেছে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য
শান্ত পকেটে হাত ঢুকিয়ে এদিক ওদিক দেখে সব তদারকি করে যাচ্ছে
আহানার প্লেটটা ওর রুমে রাখা,সে গেছে হাত ধুতে
শান্ত উঁকি দিয়ে দেখলো প্লেটে অল্প গরুর গোস্ত আর আলু আর কিছু নেই
রহিমা খালাকে ডেকে আরেকবাটি গোশত এনে রাখলো পাশে তারপর চলে গেলো
আহানা হাত ধুয়ে এসে বললো ওমা এত গোস্ত আসলো কই থেকে
রহিমা খালা বলে গেছেন উপর পক্ষের কড়া আদেশে বেশি গোস্ত দেওয়া হয়েছে ওকে
.
উপর পক্ষ মানে?
.
রহিমা খালা মুচকি হেসে চলে গেলেন কিছু বললেন না
.
ওমা! এদের সবার হলো টা কি বুঝি না আমি!
.
আহানা বিকালের দিকে হাঁটতে হাঁটতে সেই ডোবাটার কাছে আসলো
এটা এখন আর ডোবা নেই,পরিষ্কার হয়ে গেছে সব,ঘাট ও লাগানো হয়েছে
আহানা নিচে নেমে ঘাটে বসে ডোবাটার দিকে তাকিয়ে রইলো
.
কেউ যদি বলে তাকে আমি এই ডোবায় আবার ফেলতে পারি!?
.
আহানা চমকে পিছনে তাকালো
শান্ত দাঁত কেলিয়ে ওর পাশে এসে বসলো
.
তো কি খবর ম্যাডাম?কি ভাবেন?
.
আপনি এখানে কি করেন?
.
আমার ইচ্ছা,তোমার কি?এটা তোমার ডোবা?
.
আপনি কি ঠিক করে কোনো কথাই বলতে পারেন না!
.
নাহ,যেমন তুমিও পারো না,কাল রেডি হয়ে থেকো,একসাথে ঢাকায় ফিরবো
.
আপনার মাথা ঠিক আছে?কাল সালেহা মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী, আমি কাল যেতে পারবো না
.
সেটা তো আমিও জানি,সারাদিন থেকে রাতে রওনা দিবো কেমন?
.
আমি?আপনার সাথে?ইমপসিবল
.
কেন?
শান্ত জ্যাকেট টেনে চোখ মেরে বললো আমাকে কি তোমার ভাল্লাগে না,অবশ্য রতনে রতন চিনে,তুমি আমাকে দেখে ক্রাশিত হবেই বা কেন
.
হুহ!!যান আপনি,আমি একা যেতে পারবো,এসেছিও একা
.
ওহ তাই?তোমার টিকেট আছে তো?ফিরতি টিকেট?
.
আহানা চোখ বড় করে ভাবলো সত্যি তো,আমার কাছে তো ফিরতি টিকেট নেই,আমি তো আসার সময় রিকুয়েস্ট করে একটা সিট পেয়েছিলান
.
কেউ যদি বলে তাকে আমি একটা টিকেটের ব্যবস্থা করে দিতে পারি
.
নো থ্যাংকস!
কথাটা বলে আহানা উঠে চলে গেলো
.
আরে দাঁড়াও,কিভাবে ঢাকা ফিরবে সেটা তো বলো
.
আপনার জানার দরকার নেই
.
উফ!এই মেয়েটা এত নাছোড়বান্দা!!
শান্ত পকেটে হাত ঢুকাতেই চমকে গেলো,পকেট থেকে বের করে দেখলো ৫হাজার টাকা,এগুলো তো আমি আহানাকে দিয়েছিলাম,আবার ফেরত দিলো?টাকা নিলে কি হয় আমি বুঝি না,সবসময় ফেরত দেয়,আর আমার পকেটে টাকা রাখলো কখন আমি তো টেরই পেলাম না
.
পরেরদিন ছোটখাটো আয়োজন শুরু হয়ে গেলো,আহানা নিজের হাতে রান্না করছে,শান্ত আশ্রমের বাচ্চাদের সাথে মজা করতেসে
আহানাকে সাহায্য করার জন্য রহিমা খালাও আছেন
শান্ত মাঝে মাঝে রান্নাঘরের দিকে এক পলক তাকায়
আহানা ওড়না কোমড়ে বেঁধে রাঁধতেসে মন দিয়ে,প্রতিবছর সালেহা বেগমের মৃত্যুবার্ষিকীতে আল্লাহর ওয়াস্তে আশ্রমের সবার জন্য রান্না করা হয়,এবছর আহানা আছে বলে সে রাঁধতেসে
শান্ত মায়ের কবরটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বসে আছে হঠাৎ মনে হলো মা হাসতেসে ওর দিকে তাকিয়ে
শান্ত লুকিয়ে কিছু করলে মা যেমন করে হাসতো এখন তেমন করেই হাসলো
শান্ত চমকে এদিক ওদিক তাকালো মাকে আর দেখতে পেলো না,মাঝে মাঝে এরকম চোখের সামনে মাকে দেখতে পায় সে,মনের ভ্রম!
মা এমন করে হাসলো কেন,আমি তো কিছুু লুকায় নাই
নাকি আহানাকে নিয়ে আমার সাথে মজা করলো
উফ মা তুমিও না,তুমি তো জানো আহানা আমার টাইপের না,আমার মাথায় ও রাগ চেপে থাকে আর ওর মাথায় ও, ওর সাথে কি আমাকে মানাবে,হুদাই হাসলা আর আমাকেও লজ্জায় ফেললা
.
রান্না শেষে সবাই বসে পড়লো খাওয়ার জন্য
শান্ত একটা প্লেট নিয়ে বাচ্চাদের পাশে বসে গেলো
আহানা নিজের হাতে সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে
শান্তর সামনে এসে এক চামচ দিতেই ও বললো ঝাল বেশি দাওনি তো?
.
বাচ্চাদের জন্য আলাদা করে কম ঝাল দিয়ে বানানো হয়েছে
আহানা কথাটা বলে চলে গেলো
শান্ত ভাবনায় পড়ে গেলো,আহানা এটা কি বললো?আমি বাচ্চা?ও নিজেই তো বাচ্চা,আমি তো ওর থেকে ৫/৬বছরের বড় আর ও আমাকে বলে আমি বাচ্চা,দেখাবো মজা,আজ পুকুরে চুবাই ওর কটু কথার জেদ উঠাবো আমি
আহানা নিজেও খেতে বসলো সবাইকে খেতে দিয়ে
খাওয়া শেষে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো,দুপুরের ঘুম
বাইরে কড়া রোদ!
আহানা মগে করে পানি নিয়ে বের হলো মুখ ধোয়ার জন্য,রান্না করার সময় ধোঁয়া চোখে মুখে ঢুকে এখন চোখ খচখচ করছে
মুখে পানি দেওয়ার আগেই শান্ত এসে দাঁড়ালো ওর সামনে
.
কি?
.
আমি বাচ্চা?
.
কে বললো?তাই নাকি?
.
চুপ!তোমাকে বলসি না আমাকে নিয়ে মজা করবা না,ঐবার তো ছাদ থেকে ফেলবো বলসিলাম এবার পুকুরে ফেলে দিবো
শান্ত আহানার হাত মুঠো করে ধরতেই আহানা ভয়ে হাতের মগের সব পানি শান্তর গায়ে মেরে দিলো
শান্ত চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে আহানার হাত ছেড়ে দিয়ে হাত দিয়ে মুখ মুছতেছে
আহানা এক দৌড়ে পালালো
.
আজ তোমাকে কে বাঁচাবে আহানা!
.
শান্ত ও দৌড় দিলো আহানা দৌড়াতে দৌড়াতে অনেক দূর চলে এসেছে,আশ্রমের বাইরে
আশেপাশে শান্তকে দেখা যাচ্ছে না,উফ বাঁচলাম!
আহানা একটু এগিয়ে দেখতে যেতেই কেউ একজন পিছন থেকে হাত টেনে ওকে কাছে নিয়ে আসলো
.
আআপপপপনি এখানে?
.
হুম,আমি,তুমি আমাকে পানি দিয়ে ভিজাইসো না,আমিও ভিজাবো
শান্ত ক্ষেতের কাছে আহানাকে টেনে নিয়ে গেলো
.
এই প্লিস হাত ছাড়ুন,আর কখনও এমন করবো না সত্যি
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে ক্ষেতে থাকা মটর চালু করে দিল
.
আহানা নিজেকে ছাড়ানোর সব চেষ্টা করতেসে
শান্ত এত শক্ত করে আহানাকে ধরেছে যে নিজেকে ছাড়ানো টা তার সাধ্যে নেই
শান্ত আহানাকে টেনে মটরের সামনে দুম করে ফেললো
আহানা হাত দিয়ে মাথা ঢেকে বসে আছে,পানিতে ভিজে অবস্থা টইটুম্বুর
.
প্লিস পানি বন্ধ করেন,আর আপনাকে ভিজাবো না সরি
.
নাহ,আমার রাগ যাওয়ার পর্যন্ত ভিজো
শান্ত ক্ষেতে নেমে একটা খুঁটির সাথে খড়কুটো দিয়ে আহানার হাত বেঁধে দিয়ে আবার উঠে গেলো
.
পাশের একটা আমগাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে
আহানা ব্রু কুঁচকে ওর দিকে চেয়ে হাত খোলার চেষ্টা করছে খুঁটিটা থেকে
.
চড়ের শোধ ও নেওয়া হয়ে যাবে আজ?
.
আপনি খুব খারাপ একটা লোক!!খুব খারাপ,আপনাকে আমি ভালো মনে করেছিলাম
.
হ্যাঁ তাই তো আমাকে মগের পানি দিয়ে ভিজাই দিসিলা??
.
আপনি বলছিলেন পুকুরে চুবাবেন তাই
.
তো?সত্যি কি পুকুরে চুবাইতাম?আমি তো জানি তুমি সাঁতার জানো না
.
বেশি বক বক না করে পানি বন্ধ করেন,আমার মাথা ধরছে
.
একসাথে চা খাবো,মাথা ব্যাথা চলে যাবে
.
শেষে উপায় না পেয়ে আহানা বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি শুরু করে দিসে হাত পা ছড়িয়ে কাদায় ছড়াছড়ি করে ফেলতেসে
.
শান্তর এবার দয়া হলো উঠে এসে পানি বন্ধ করে আহানার দিকে হাত বাড়িয়ে ধরলো
.
নাও উঠো,তোমার শাস্তি শেষ
.
আহানা চোখ রাঙিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মুচকি হেসে দিয়ে শান্তর হাত ধরে টান দিয়ে নিচে ফেললো ওকে,আহানার হাতের বাঁধনও খুলে গেছে ততক্ষণে

আল্লাহ! আমার নাক
.
হিহি?
.
বেয়াদব মেয়ে কোথাকার,নাক মনে হয় ফেটে গেছে আমার,উহু!!!!
.
আহানা নিচের থেকে হাত দিয়ে কাদা নিয়ে শান্তর সারা মুখে মাখিয়ে দিলো হাসতে হাসতে
.
ছিঃ,এই এসব কি করতেসো,থামো,ইয়াক!
.
আর ভিজাবেন আমাকে?
.
আহানা উঠে গিয়ে মটর আবার চালু করো দিলো,তারপর এক দৌড়ে পালাতে যেতে নিতেই শান্ত উঠে এসে আবার ওর হাত মুঠো করে ধরে ফেললো
.
আমাকে কাদা লাগাইসো,আমি তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিব?
.
শান্ত আহানার হাত দুটো চেপে ধরে ওকে দুম করে কাদার সাথে লাগিয়ে ধরলো
.
কি হলো মিস আহানা,চিৎকার করবেন না
.
আহানা শান্তর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে,শান্তর সাথে পেরে উঠছে না,কি বলবে সেটাও জানে না
.
শেষে শান্ত হেসে দিয়ে হাত ছেড়ে দিলো ওর,দুজনে কাদায় পড়ে ভূত হয়ে গেছে,পানিতে আবার সব কাদা চলে গেছে গায়ের থেকে
.
হইসে আজকের জন্য ফাইট অফ,যাও জামা চেঞ্জ করে আসো, আমিও যাই
শান্ত চুল ঝাড়তে ঝাড়তে চলে গেলো
আহানার মন চাচ্ছে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদা শুরু করে দিতে,এই ছেলেটা এত বেয়াদব কেন!
সে আশ্রমে ফিরে আসতেই দেখলো তন্নি সহ আরও অনেকে কোমড়ে হাত দিয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে
.
আহানা হালকা কেশে বললো ঐ আসলে পুকুরে পড়ে গেসিলাম
.
তাই নাকি?তা কে বাঁচালো তোমাকে?তুমি তো সাঁতার জানো না
.
নাহ,কিনারায় পড়ে গেসিলাম তো তাই নিজেই উঠতে পেরেছি
আহানা তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ফেললো
ওদের কথার জবাব দেওয়ার মুড নাই,মাথা রাগে চড়গ গাছ হয়ে আছে তার উপর এত মিথ্যা কথা সরাসরি বলা টাফ ব্যাপার
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_২৩

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_২৩
#Writer_Afnan_Lara
?
ইনজেকশান দেওয়া শেষে ডাক্তার হাসতে হাসতে চলে গেলেন শান্তর অবস্থা দেখে
শান্ত আহানাকে ঝাঁকালো তাও ও চোখ খুলছে না দেখে আরিফ আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে বললো ওকে বিছানায় শোয়াতে হবে
ওর বাসার এড্রেস জানেন আপনি?আমি তাহলে ওকে ওর বাসায় দিয়ে আসবো
আরিফ আঙ্কেল শান্তর কথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন তারপর বললেন ওর তো বাসা এটাই
.
এটাই মানে?আরে আমি বললাম ওর মা বাবার বাসার কথা,সেটা কোথায় জানেন আপনি?
.
বাবা আমি তো এটাও জানি না ওর মা বাবা কে,আমি শুধু এটা জানি আহানা এই আশ্রমের অনাথ বাচ্চাদের মধ্যে একজন ছিল,যাকে সালেহা আপা খুব আদর করতেন অন্য অনাথদের মতো করে
আহানাকেও তিনি পড়িয়েছিলেন,তারপর আপার মৃত্যুর পর আহানা এখান থেকে চলে যায়,চলে যায় বলতে যেতে বাধ্য হয় আর কি,তুমি তো জানোই ১৮বছর পূর্ণ হলে এখানে থাকা যায় না
শান্ত বিস্মিত হয়ে আরিফ উদ্দিনের দিকে চেয়ে আছে
তার মানে আহানা!আর আমি ওকে বললাম ও বুঝবে না বাবা মা না থাকার কষ্ট
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে চুপ করে ওকে কোলে তুলে দাঁড়ালো
আশ্রমের একটা ভালো রুমে নিয়ে ওকে বিছানায় রেখে বেরিয়ে আসলো
হাত দিয়ে চুল টেনে চোখ বন্ধ করে নিজেকে কনট্রোল করার চেষ্টা করছে সে
আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল,যার বাবা মা থাকে সে একা কেন চাকরি করে ভাত নুন খেয়ে জীবন চালাবে
এখন সব স্পষ্ট হয়ে গেছে
.
বাবা তুমি আহানাকে চিনো?
.
হুম,শুনুন ওর ঠিকমত খেয়াল রাখবেন,আমি যে রুমে রেখেছি ও যেন সে রুমেই থাকে,অন্য কমন রুমে যেতে বলবেন না,আর আপনি যেটা খান সেটা ওকেও খাওয়াবেন,আমি এখন যাই,ডাক্তার ওকে যে ঔষধ দিয়েছে সেটা কিনতে যাচ্ছি,৮টা ৯টার দিকে এসে একবার দেখে যাবো,রহিমা খালাকে বলবেন ওর খেয়াল রাখতে,আর হ্যাঁ বাচ্চাদের আপাতত ঐ পুকুরে যেতে মানা করবেন,আমি কাল লোক এনে পুকুরের আগাছা পরিষ্কার করাবো
.
আচ্ছা বাবা
.
শান্ত আহানার মুখের দিকে একবার চেয়ে চলে গেলো
.
বাসায় ফিরতেই বাবা বললেন কিরে তুই কই ছিলি?আশ্রমে নাকি কাকে সাপে কামড় দিয়েছে?
.
হুম,এখন ঠিক আছে,সাপটা বিষাক্ত ছিল না
.
মিতুর বাবা!আপনি কেন এখনও হুদাই আশ্রমটা চালাচ্ছেন আমি বুঝতেসি না,ওটা বিক্রি করে জমিটাতে চাষাবাদ করলেও ভালো টাকা উপার্জন হবে
.
কি বলতেসো তুমি?? অনাথ বাচ্চাগুলোর কি হবে?
.
যেখান থেকে এসেছে সেখানে চলে যাবে
.
ব্যাস মা!এটা তোমার ব্যাক্তিগত সম্পত্তি না! এটা আমার মায়ের নিজের,আমার মায়ের এটা,কেউ চোখ তুলেও তাকাবে না,আমার মায়ের বেলায় আমি কারোর কোনো কথা সহ্য করবো না!অন্য সব নিয়ে যা খুশি তাই করো তোমরা
কিন্তু আমার মায়ের সাথে সংযুক্ত কোনো কিছুতেই কেউ নজর দিবা না,বিক্রি তো দূরে থাক
কথা শেষ করে শান্ত নিজের রুমে চলে গেলো
.
দেখলে তো?একেই বলে পেটের ছেলে আর পরের ছেলের তফাৎ,তুমি কিছুই বললে না??আমাকে এত কথা শুনিয়ে গেলো
কি এমন মহাপাপের কথা বলেছি আমি?যেটাতে কোনো লাভ হয় না সেটা রেখে পালন করে কি লাভ?অনাথ এদের রেখে ফ্রিতে খাইয়ে দাইয়ে কি লাভ??
তাও তো আশ্রমটা ভেঙ্গে ফেললে সেই জমিতে লোক ধরিয়ে চাষাবাদ করিয়ে অনেক টাকা পাওয়া যাবে,টাকাটা তো আমাদেরই কাজে লাগবে
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
রেণু!চুপ করো,আশ্রমটা শান্তির নামে দলিল করা,শান্তির অবর্তমানে এটা এখন শান্তর নামে হয়ে গেছে যেদিন শান্তর ১৮বছর পূর্ন হয়েছে সেদিনই
শান্তর অনুমতি ছাড়া কিছু করলে পুলিশ ধরবে তোমাকে, আর শান্ত যখন না করে দিয়েছে তুমি নাক গলাচ্ছো কেন?
তোমার আর মিতুর নামে কি আমি সম্পত্তি কম লিখে দিয়েছি??
.
তো?আমার সায়ন?ও কি তোমার ছেলে না?
.
না আমার ছেলে না,ওর সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক নেই তাও তো ওকে আমি মিতুর পরিমান সম্পত্তি লিখিত ভাবে দিয়েছি তোমার আকুতিতে
.
খোঁচা দিচ্ছো?

রোজ রোজ এসব করে,এসবের ভয়ে আমি ঢাকা থেকে আসতে চাই না এখানে
উফ!!
শান্ত আলমারি থেকে আরেকটা জ্যাকেট হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে
আহানার জ্ঞান ফিরতেই লাফ দিয়ে উঠে বসলো,পায়ের দিকে তাকালো,লাল হয়ে আছে,সব মনে পড়তেই কেঁপে উঠলো ভয়ে
কপালের ঘাম মুছে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওড়না নেই,শান্তর জ্যাকেট
এটা তো!আমার ওড়না কই
আহানা হাঁটুর উপর থেকে পাজামা টেনে দেখলো ওড়নার ছেঁড়া টুকরা দিয়ে পা বাঁধা
উফ এই লোকটাও না,আমরা নতুন জামার ওড়না ছিঁড়ে ফেললো,এবার আমি কি পরবো জামার সাথে,বেয়াদব কোথাকার!
আহানা বিছানা থেকে নামতেই দেখলো আরিফ উদ্দিন সালেহা বেগমের কবরের উপর থেকে পাতা সরাচ্ছেন
আহানা এগিয়ে গেলো সেদিকে
.
আরে আহানা?তোমার শরীর কেমন এখন?
.
ভালো
আরিফ উদ্দিন আবার নিজের কাজে মন দিলেন
.
একটা প্রশ্ন করবো?
.
হুম বলো
.
আমাকে এই আশ্রমে কে রেখে গিয়েছিল বলবেন?
.
কথাটা শুনে আরিফ উদ্দিন মুখটা ফ্যাকাসে করে ফেললেন তারপর আবারও কাজে মন দিলেন
.
বলুন না,আমি জানতে চাই,আমার মা বাবা কে ছিল?
.
মা রে,আমি চাই না তুই কষ্ট পা,আমাকে জিজ্ঞেস করিস না
.
প্লিস বলুন না,আমি শুনতে চাই,আমি কষ্ট পাবো না,যার জীবনে কষ্টের সাগর আছে তাকে আর নদী পরিমান কষ্টের কি ভয় দেখান
.
আরিফ উদ্দিন পাতা হাত থেকে ফেলে চশমাটা খুলে গায়ের শার্ট দিয়ে মুছতে মুছতে গিয়ে উঠানে থাকা একটা চেয়ারে বসলেন
.
সেদিন আমি আশ্রমের ময়লা ফেলতে গিয়েছিলাম দূরের ডোবাটায়,ময়লা ফেলে ২কদম হাঁটতেই কান্নার আওয়াজে থেমে গিয়েছিলাম,সেখানে গিয়ে পাগলের মত ময়লা হাতাতে হাতাতে একটা পলিথিন পেলাম,ভিতরে রক্ত মাখা একটা শিশু,মেয়ে শিশু,কেঁদেই যাচ্ছে,দেখে মনে হয়েছে সে এই দুনিয়াতে এসেছে ১কি ২ঘন্টা হয়েছে মাত্র,তার মধ্যেই তাকে দুনিয়ার নিষ্ঠুরতম পরিস্থিতিতে ফেলে গেছে তার মা নয়ত বাবা
হয়ত অবৈধ আর নয়ত অন্য কোনো কারণ
আমি বাচ্চাটাকে নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে আশ্রমে ফিরে গিয়েছিলাম তখন আশ্রমে শান্তি মা এসেছিল বাচ্চাদের দেখতে উনি আমার হাতে বাচ্চাটাকে দেখে চমকে উঠলেন আমি কিছু বলার আগেই আমার হাত থেকে তাকে নিয়ে উনি ভিতরে চলে গেলেন,চিৎকার করে বললেন গরম পানি আনতে,বাচ্চাদের কেবিন থেকে দুধের ফিডার এনে তিনি সর্বপ্রথম বাচ্চাটার মুখে খাবার তুলেছিলেন,সেই বাচ্চাটা হলে তুমি
শান্তি মা ডাক্তার কবিরাজ দিয়ে তোমাকে সুস্থ করে ফেলছিলো, কারন সেদিন ময়লা ডোবায় থেকে তোমার অবস্থা অনেক জটিল ছিল,নাকে মুখে পানি ঢুকেছিল
শান্তি মা তোমার নাম দিয়েছিল আহানা ইয়াসমিন
তারা কয়েক বছরের জন্য সিলেটে চলে গেছিলো,শান্তর বাবার চাকরি ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ার কারণে
শান্তি মা একজন ম্যানেজার আনলেন,তোমার সালেহা মা
উনাকে বলে গেছিলেন তোমাকে যেন আলাদা ভাবে আদর করে সবসময়,কারণ তোমার মুখটা ছিল চাঁদের টুকরো যেই দেখতো সেই মাশাল্লাহ বলে উঠতো
এমনকি সালেহাকে তোমার পড়াশুনার সব খরচের একটা মোটা অঙ্কের চেক দিয়ে গেছিলেন শান্তি মা
আহারে উনি যদি আজ তোমাকে দেখতো খুব খুশি হতো
সেবার তিনি শেষ বারের মতন তোমাকে দেখেছিল কারণ তোমার যখন ৮বছর তখনই তিনি সিলেট থেকে ফেরেন এবং শয্যাশায়ী রোগী হয়ে,ক্যানসার ধরা পড়ে তার
আগে তিনি প্রতিদিন বিকালে আশ্রম দেখতে আসতেন কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর থেকে একদিনও আসতে পারতেন না
এরপর মাত্র ১/২বছরই এই মরণব্যাধির সাথে লড়াই করে তিনি মারা যান,তোমার তখন মনে হয় ১০বছর ছিল
এখন উনি মারা যাওয়ার ১০টা বছর হয়ে গেছে
আহানা চোখ মুছতে মুছতে আশ্রম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো কাঁদতে কাঁদতে কিছুটা দ্রুতগতিতে হেঁটে যাচ্ছে সে,আরিফ আঙ্কেলের আর কোনো কথা শোনার ক্ষমতা নেই তার
.
তার মা বাবা তাকে এই পৃথিবীতে এনে ভুল করেছিল তাই তাকে ময়লা ফেলার ডোবায় ফেলে চলে গিয়েছিল
সেদিন মরে গেলে আজ এত কিছু হতো না, কেন মরলাম না আমি,কেন!!
আহানা হাঁটতে হাঁটতে শান্তর সাথে ধাক্কা খেলো
শান্ত ফোনের টর্চটা সামনে ধরতেই দেখলো আহানা
চোখের পানিতে সারা মুখ ভিজে আছে ওর
আহানা শান্তকে দেখে আবেগে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো
শান্ত কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না
আহানা চিৎকার করে কাঁদতেসে
.
আমমমাকে আমমমমমাকে আমমমমার!! মা বাবা ডোবায় ফেলে চলে গিয়েছিল,আমি তাদের জন্য দূর্ভাগ্য বয়ে এনেছিলাম
আমাকে ডোবায় ফেলে চলে গেছে তারা
পৃথিবীর আলো দেখার সাথে সাথে ফেলে গেছে আমাকে
আমি সেদিন মরি নি কেন শান্ত!কেন মরিনি,আল্লাহ আমাকে কেন এত কষ্ট দেখানোর জন্য বাঁচিয়ে রেখেছে,আমি আর কষ্ট নিতে পারছি না শান্ত,আমার দম বন্ধ হয়ে আসে
কেন আমি অনাথ! আমার মা বাবা থেকেও কেন নেই শান্ত?
আহানা কেঁপে কেঁপে কথা বলতেসে
শান্ত হাত উঠিয়ে আহানার পিঠের উপর রাখলো
সে কি বলবে,তার কিছু বলার নেই
আহানার চেখের পানিতে শান্তর জ্যাকেটের ভেতরের টি- শার্ট ভিজে গেছে
খালি মাটির রাস্তা,দুপাশে ঝাউ গাছ,ঘুটঘুটে অন্ধকার,শান্ত চুপ করে আছে, আহানা শান্তর জ্যাকেট টেনে ধরে আবারও কেঁদে দিলো এটা বলতে বলতে যে
আমি আপনার চেয়ে বেশি বুঝি মা বাবা হারার কষ্ট,আপনি তো মা হারিয়েছেন,আর আমি তো কোনোদিন তাদের চোখেই দেখিনি
আপনাকে তো আপনার মা নিজের হাতে খাইয়েও দিয়েছে
আর আমি?আমাকে কেউ কখনও নিজের হাতে খাইয়ে দেয়নি,হামাগুড়ি দিয়ে মাটিতে থেকেও খাবার নিয়ে খেয়েছি আমি! আরিফ আঙ্কেল বলেছে আমাকে
জানেন!আমাকে রক্ত মাখা শরীরে ফেলে গেছে,আমি এতটা খারাপ,আমি অবৈধ সন্তান
আহানা শান্তর জ্যাকেট ছেড়ে মাটিতে বসে পড়লো
হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললো
২দিন ধরে ডাক্তার দিয়ে আমার প্রান বাঁচানো হয়েছিল,সেদিন মরে গেলে হতো না?সব চুকে যেতো না?
আহানা জোরে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে,আর কথা বলতে পারছে না সে
শান্ত দাঁড়িয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে
.
মানুষের দেখাশুনার জন্য মা থাকে,বাবা থাকে,ভাইবোন থাকে,খালা খালু,ফুফু ফুফা,মামা মামি আরও কত কে থাকে আর আমার জন্য কাউকে রাখেন নি আল্লাহ, আমাকে একা ঠেলে দিয়ে লাগিয়ে দিলো নিজের জন্য পরিশ্রম করে জীবন কাটাতে
অনাথদের যে আশ্রমেও সারাজীবন ঠাঁই হয় না,১৮বছর হতে না হতেই বাধ্য হয়েছি এখান থেকে চলে যেতে,সেদিন আমার হাতে ছিল ১০০টাকার একটা নোট
আমি সেই ১০০টাকা দিয়ে অর্ধেক হেঁটে আর অর্ধেক ট্রেনে করে ঢাকায় গিয়েছিলাম,সবাই বলেছিল ঢাকায় গেলে সব পাবো
সব তো পেয়েছি কিন্তু সব তো টাকা ছাড়া পাওয়া যায় না,এটা তো কেউ বলেনি আমাকে
তারেক রহমানের বাসায় বাসা ভাড়া নিয়েছিলাম আশ্রম থেকে বের হওয়ার ২দিন পর,এই ২দিন আমি ফুটপাতে ছিলাম,ফুটপাতের মানুষদের দেখেছিলাম,এক বেলা খেলে আরেক বেলায় পানির ঘটি নিয়ে বসে থাকতো তারা
আর আমি?আমি তো সেই ২দিন এক বেলাও খাবার পাইনি,তাদের থেকে পানি নিয়ে খেয়েছিলাম আমি
বাসা ভাড়া নিয়ে তারেক আঙ্কেলের পরিচিত একজনের মেয়েকে টিউশনি করানো শুরু করছিলাম
এর জন্য আমি তারেক রহমানের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো
তাই তার সমস্ত খোঁটা দেওয়া কথা আমি আজও মুখ বুজে সহ্য করি
advance টাকা নিয়ে তার হাতে তুলে দিয়েছিলাম সেখান থেকে ১০০টাকা বাঁচিয়ে
ঐ ১০০টাকা দিয়ে আমি শুধু চাল আর নুন কিনেছিলাম
মীম আর কনিকা আপুর পাতিলে রান্না করে ভাত আর নুন দিয়েই আমার জীবন শুরু হয়েছে ২বছর আগে
ঢাকায় পা রেখে সেদিন নিজেকে আমার অনাথের চেয়েও অসহায় মনে হয়েছিল কারন আমার পাশে সেদিন আমার ছায়াও ছিল না,অন্ধকারে কার ছায়া তার সাথে থাকে?
আমি আসলেই বুঝি না,আমি কি দোষ করেছিলাম?আমার মা বাবার কি ক্ষতি হতো সেদিন আমাকে ডোবায় না ফেললে?আমি কি এতই জঘন্য কারণ নিয়ে জন্মেছিলাম?জন্ম হওয়ার সাথে সাথে একটা সন্তানের কাছে সব চেয়ে সুরক্ষিত স্থান হয় তার মায়ের কোল,তাহলে আমার বেলায় উল্টা হলো কেন?
আমার জন্য ডোবা ছিল কেন?ঠিক আছে ফেলে দিয়েছে কি দরকার ছিল আমাকে বাঁচিয়ে রাখার?এসব দেখানোর জন্য বাঁচিয়ে রেখেছে আমাকে?
একটা সন্তানের কাছে মা বাবা কি তারা নিজেরাও জানেন না,জানলে এভাবে ডোবায় ফেলতেন না
আমার অনেক নাম,আহানা,অপয়া,অভাগী,অলক্ষী
আর আজ আরেকটা নাম পেলাম “অবৈধ”
আত্নহত্যা মহাপাপ না হলে আমি এই জীবনের মায়া আরও আগেই ত্যাগ করতাম
আমি আর পারছি না এত এত কিছু সহ্য করতে,আমিও তো মানুষ!
আমার সাথেই কেন এমন হতে গেলো?
শান্ত হাতের পিঠ দিয়ে মুখটা মুছে নিচু হয়ে আহানার হাত টেনে ওকে মাটি থেকে উঠালো
চলবে♥
(টিসু সব শেষ,আজ এই পার্ট লিখতে গিয়ে কেঁদেছি অনেক)

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_২২

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_২২
#Writer_Afnan_Lara
?
মোহনগঞ্জ এসে ট্রেন থামলো,আহানা বাবুটাকে টাটা দিয়ে ট্রেন থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে,পাক্কা ২বছর পর সে আবার মোহনগঞ্জে এসেছে
.
জ্বি দাদি ফোন নাম্বার সেভ করেছি,অবশ্যই কল করবেন আমাকে,আমিও করবো
.
কার গলা এটা,ঐ বাঁদরটার?
আহানা পিছন ফিরে তাকালো,এত এত মানুষের ভীড়ে শান্তকে দেখতে পেলো না সে
মনে হলো শান্তর গলা শুনলাম,ও এখানে কেন আসবে,আমিও না!
আহানা একটা রিকসার খোঁজে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে
শান্ত কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো,গান চলতেসে আর সে এদিক ওদিক তাকিয়ে রিকসা খুঁজতেসে
ওমা একটা রিকসাও নেই,আমাকে কি হেঁটে যেতে হবে নাকি?
.
আহানা হাঁটা ধরলো রিকসা না পেয়ে
শান্ত ও অবশেষে রিকসা না পেয়ে হেঁটে চললো
কাঁধে একটা ব্যাগ আর হাতে ট্রলি ব্যাগ নিয়ে
মোহনগঞ্জের ফ্ল্যাটফর্ম থেকে বাম পাশে যে রোড গেছে তা থেকে ক্ষেতে নামতে হয় সেখান দিয়ে একটা ক্ষেত পার হলেই মেইন রোড
আহানা তার হাতের ব্যাগটা মুঠো করে ধরে নামলো ক্ষেতে
শান্ত রিকসার খোঁজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে সেও ক্ষেতে নামলো,আশেপাশে কেউ নেই,শুধু সামনে দিয়ে একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে
আহানা নতুন জামা পরে এসেছিলো আজ তাই শান্ত ওকে ঠিক চিনতে পারলো না তবে চুল দেখে শান্তর কেমন জানি মনে হলো এটা আহানা,আর হাত ঝুলিয়ে হাঁটার স্টাইল দেখেও আহানা মনে হচ্ছে
শেষে কনফিউশন দূরে করতে শান্ত চিৎকার দিয়ে বললো আহানা!!!
.
আহানা চমকে দাঁড়িয়ে পড়লো,পিছন ফিরে তাকালো শান্তর দিকে
শান্ত ও চমকে গেলো আহানাকে দেখে
.
আপনি!!
.
তুমি??এখানে?
.
আপনি এখানে কি করতেসেন?আমাকে ফলো করতে করতে এতদূর চলে এসেছেন?
.
আজব তো!তোমাকে ফলো করবো কেন আমি?আমি আমার বাসায় যাচ্ছি ঈদের ছুটি পেয়ে
.
তো?আমিও তো যাচ্ছি ঈদের ছুটি পেয়ে
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে আহানার পাশে এসে দাঁড়ালো
.
ইয়া আল্লাহ!!
এই বাঁদরটাকে তুমি সবসময় আমার সাথেই কেন রাখো!
মেইন রোডে উঠে আহানা শান্তর দিকে ব্রু কুঁচকে তাকালো
শান্ত সানগ্লাসটা পরে জ্যাকেট টেনে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিলো
তারপর একটা ভাব নিয়ে বুক ফুলিয়ে ডান পাশের রোডের দিকে চললো
.
হুহহহ,বেয়াদবটার ঢং দেখলে গা জ্বলে যায় আমার
আহানা চোখ রাঙিয়ে বাম পাশের রোডটার দিকে চলে গেলো

বাবা?সেই সকাল থেকে বাগানে বসে আছো,বাসায় আসো নাস্তা করে যাও
.
মিতু জোর করিস না,আজ কতটা দিন পর শান্ত আসতেসে আমি ওর জন্য বাইরেও অপেক্ষা করতে পারবো না?কি বলিস তুই
.
থাকো তাহলে,মা বকলে আমি বলবো তুমি আসতে চাও না
কথাটা বলে মিতু চলে গেলো বাসার ভেতরে
শান্ত বাসার গেট খুলে ভিতরে পা রাখতেই কেউ একজন এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওকে
গায়ের গন্ধ পেয়ে শান্ত চোখটা বন্ধ করে ফেললো,বাবা♥
.
কেমন আছিস
.
ভালো,তুমি কেমন আছো সেটা বলো
.
তোকে দেখে খুব ভালো আছি আমি
আয় ভেতরে আয়
বাবা শান্তর হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলেন
.
মা,মিতু আর সায়ন কোথায়?
.
সায়ন ঘুমাচ্ছে,মিতু আর ওর মা বাসায়,চল নাস্তা করবো তোর সাথে
.
এখনও খাও নাই কেন?সকাল ১০টা বাজে
.
না আমি আমার ছেলের সাথে খাবো,চল
.
শান্ত মুচকি হেসে বাসার ভিতরে ঢুকতেই মুখো মুখি হলো তার সৎ মা রেণুর সাথে
উনি শান্তকে দেখে মোটেও খুশি হোন নি,তারমুখে বিরক্তি ছিল এতক্ষণ,তাও মুখে মিথ্যা হাসি দিয়ে বললেন এসেছো তাহলে!
শান্ত হাতের ব্যাগটা সোফায় রেখে কাছে এসে সালাম দিলো
উনি সালাম নিয়ে চুপ করে থেকে বললেন রাসেল?রাসেল!!গরুকে ঠিকমত ঘাস দিচ্ছো তো?
উনি ব্যস্ততার দোহায় দিয়ে চলে গেলেন সামনে থেকে
শান্ত মুখটা ছোট করে ভাবলো পাশে বাবা দাঁড়িয়ে আছে বাবার কথা ভেবে হেসে দিয়ে বাবার হাত ধরে ডাইনিং এ গিয়ে বসালো
খালা!খালা,খাবার দিয়া যাও,আমি আর আমার বাবা খাবো,জলদি দাও
.
কে এরকম ছাগলের মত চিৎকার করে এত সকাল সকাল!
.
শান্ত থেমে গিয়ে সিঁড়ির দিকে তাকালো,সায়ন নামতেসে বিরক্তি নিয়ে,শান্তকে দেখে ব্রু কুঁচকে হেসে দিয়ে বললো ওহহহ তুমি?আমি ভাবলাম ছাগল ডাকতেসে
.
সায়ন!!!
.
সায়ন বাবার ধমকে মুখটা বাঁকিয়ে আবার উপরে চলে গেলো
সায়ন মিসেস রেণুর আগের সংসারের ছেলে,মিতু এই সংসারের,মানে শান্তর বোন
.
মিতু রুটি নিয়ে এসে ডাইনিং এ রেখে বললো শান্ত ভাইয়া!
.
শান্ত সিঁড়ির থেকে চোখ নামিয়ে মিতুর দিকে তাকিয়ে হাসলো,মিতু!কেমন আছো?
.
ভালো,তুমি?
.
ভালো!
খালা রান্না করতেসে তাই আমি নিয়ে আসলাম
.
বাবার সাথে বসে খাওয়ার সময় এসব ভুলে গেলো শান্ত,হেসে হেসে খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে ফিরে আসলো
সারাটা রুম জুড়ে শুধু মায়ের ছবি
ছবিগুলোতে হাত বুলাতে গিয়ে শান্তর চোখ দিয়ে পানি বেয়ে বেয়ে পড়তে লাগলো
মা চলে যাওয়ার ১০টা বছর কেটে গেছে,মায়ের মৃত্যুর পরপরই একটা কেলেঙ্কারির জেরে বাবা রেণু আন্টিকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়,তারপর তাদের কোল জুড়ে মিতু আসে,মিতুর বয়স এখন ৭বছর
মিতু আমাকে দেখতে পারে তবে একজন বোনের তুলনায় কম,সে তার মায়ের মত
শান্ত মায়ের একটা ছবি নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো
.
আসবো?
.
হুম বাবা আসো,বলতে হয় নাকি আবার
.
কি করিস?
হুমমম জানতাম,আসলেই মায়ের ছবি নিয়ে বসবি
.
কি আর করবো বাবা,আমার লাইফে তোমরা দুজন ছাড়া আর কে আছে
.
বিকালের দিকে তোর মায়ের কবর দেখে আসিস
.
হুম
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
বাবা শান্তর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন
.
শান্ত মায়ের ছবিটা আবারও ওয়ালে টাঙিয়ে রুম থেকে বের হলো,সায়ন উচ্চস্বরে গান শুনতেসে
মাথা ধরে আছে,কফিও খাইনি
শান্ত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো,হঠাৎ খালা দৌড়ে এসে শান্তর হাত জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন
উনাকে শান্ত খালা বলে ডাকেন,কারন মা যেদিন এই বাড়িতে প্রথম এসেছিল সেদিন সাথে করে উনাকে এনেছিলেন,উনি মাকে কাজে সাহায্য করতেন,আজ এতটা বছর ধরে উনি এখানে,মালির বউ,আমাদের বাগানের যে মালি আছে টুটুল মিয়ার বউ তিনি,শান্তকে খালা অনেক ভালোবাসেন
ছলছল চোখে শান্তর হাত ধরে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি
শান্ত মুচকি হেসে উনাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো
.
খালা কেঁদো না তো,আমাকে এত ইমোশনাল করবা না বলে দিচ্ছি
.
হ বাবা,তুমি আইছো,আমি অনেক খুশি হয়েছি বাবা
শান্ত হেসে দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই উনি বললেন বাবা সোফায় গিয়ে বসো আমি তোমার কফি আনতেসি
উনি রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন এক দৌড়ে
শান্ত একটা ম্যাগাজিন নিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো
মিতু সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওর দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো
মিতু মেয়েটা অনেক ভদ্র,বেশি মিশতে চায় না,আর ওর মা ওকে যা বলে তাই করে,হয়ত উনি মানা করেছেন আমার সাথে যেন কথা না বলে
খালা কফি এনে শান্তর সামনে রেখে চলে গেলেন রান্নার কাজে
শান্ত কফির মগটা নিয়ে বাগানের দিকে গেলো,আগে যেসব ফুল ছিল সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই এখন নেই,হয়ত মরে গেছে,নতুন ও আনা হয়েছে
রেণু মায়ের ফুলের খুব শখ তাই হয়ত তার নাম রেণু,ফুলের রেণু
কফি শেষ করে একটা ফুল ছিঁড়তে যেতেই রেণু ছাদে থেকে বললেন শান্ত!ফুলে হাত দিও না,ওটা আমার শখের গাছ
শান্ত হাত ছেড়ে দিয়ে বললো সরি

আহানা ব্যাগ হাতে নিয়ে আশ্রমের গেটের দিকে চেয়ে আছে,কতদিন পর এসেছে সে
গেট খুলে ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে এগিয়ে গেলো
কতটা বদলে গেছে সব,চেনাই যাচ্ছে না
আশ্রমের ভিতরে আসতেই আহানার থেকে ২/৩বছরের ছোট হবে এমন কয়েকটা মেয়ে এসে আহানার হাত টেনে ধরলো
সবার চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠে আছে
আহানাও খুব খুশি হলো তাদের দেখে,এদের সাথে কত খেলেছে সে
সবাইকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো আহানা
সবাই খুশিতে আটখানা হয়ে গেছে ওকে পেয়ে
দূর থেকে একজন আহানা বলে এগিয়ে আসলেন
আরিফ উদ্দিন,উনি সালেহা বেগমের গত হওয়ার পরই ম্যানজারের পদ পেয়েছেন
উনি আহানাকে চিনতে পেরে আহানার মাথায় হাত রেখে বললেন কেমন আছো?
.
ভালো আছি স্যার?,আপনি কেমন আছেন?
.
ভালো আছি কোনোরকম, ভালো করেছো এখানে এসে,অনেকদিন তোমাকে দেখি না
আহানা হেসে দিয়ে মেয়েগুলোকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো
.
দুপুরের খাবার খেয়ে শান্ত হাঁটতে বের হয়েছে
এখানের একটা আশ্রম আছে নাম “শান্তি নিবাস”
শান্তর মায়ের নামের আশ্রমটা,উনার নাম ছিল শান্তি রহমান
উনার অনাথ বাচ্চাদের প্রতি দূর্বলতা কাজ করত অনেক,তাই তার কথাতেই শান্তর বাবা এই আশ্রমটা বানান,আশ্রমটা বানানোর পরই শান্তর মায়ের নামে লিখে দেন
এরপর থেকে শান্তর মা নিজের হাতে এই আশ্রমের প্রতিটা কোণা সাজিয়েছেন
উনি মারা যাওয়ার আগে বলে গেছিলেন উনার কবর যেন আশ্রমের ভেতরে দেওয়া হয়
শান্ত আশ্রমটার ভিতরে ঢুকতেই বুকটা কেঁপে উঠলো তার,কতটাদিন পর মায়ের সাথে দেখা করবে সে
হাতে গোলাপি চুড়ি আর রজনীগন্ধা নিয়ে আশ্রমের আমগাছটার পিছনের দিকে গেলো শান্ত
মায়ের কবরের চারপাশ দিয়ে টাইলস করা বাউন্ডারি
গেটটাতে তালা দেওয়া
আরিফ উদ্দিন শান্তকে দেখে দৌড়ে এসে গেটের তালা খুলে দিলেন,শান্তকে সালাম দিলেন
শান্ত ব্রু কুঁচকে তাকালো উনার দিকে
উনি জিহ্বা কামড় দিয়ে বললেন অভ্যাস কি করবো বাবা তারপর চলে গেলেন চেয়ার আনার জন্য
শান্ত বাউন্ডারির ভিতরে ঢুকে কবরটার কাছে গিয়ে মাটিতে বসে গেলো
গোলাপি চুড়িগুলো কবরের উপরে রাখলো সে,তারপর রজনীগন্ধা ফুল কবরের পাশে রেখে দিলো
কয়েকটা শুকনো মেহগনি গাছের পাতা পড়ে আছে সেগুলো হাত দিয়ে ফেলে দিলো
কবরটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিৎকার করে কেঁদে দিলো শান্ত
মা,ফিরে আসো না আমার কাছে,আমি যে তোমাকে ছাড়া গোটা দুনিয়া অন্ধকার দেখি মা,শুনতে পাচ্ছো?মা কথা বলো না কেন!
কেন চলে গেলো আমাকে রেখে,আমাকেও নিয়ে যেতে,কেন আমাকে এই নিষ্ঠুর দুনিয়ায় একা রেখে গেলো বলো,কি দোষ করেছিলাম আমি মা!মাগো একবার তোমার শান্তর মাথায় হাত বুলাতে ফিরে আসো না মা!
.
আহানা পুকুরে নেমেছিল মুখ ধোয়ার জন্য
কান্নার আওয়াজ পেয়ে তাড়াতাড়ি মুখটা ভালো করে মুছে পুকুর ঘাট থেকে উঠে এসে কবরস্থানের দিকে এগিয়ে গেলো
আরে এটা তো শান্ত,উনি এখানে কি করে?
আহানা আরেকটু কাছে গিয়ে দাঁড়ালো
শান্ত কবর থেকে মাটি নিয়ে হাতে ঘষে লাগাতে লাগাতে কাঁদতেছে
আহানা কবরের দিকে চেয়ে দেখলো কবরের উপর গোলাপি চুড়ি আর রজনীগন্ধা
এই কবরটা তো যতদূর জানি এই আশ্রমের মালিকের কবর,তার নাম শান্তি রহমান,উনার সাথে শান্তর কি সম্পর্ক??
.
শান্ত কবরে হাত রেখে নিচু হয়ে সেখানে মাথা রাখলো আর কাঁদতে কাঁদতে বললো মা দেখো তোমার ছেলে কাঁদতেসে মা,দেখো না,আমার চোখ মুছতে আসবে না?
.
মা?তার মানে উনার ছেলে শান্ত?শান্তর মা মারা গেছেন!আমি তো জানতাম ও না,এর আগে তো শান্তকে আশ্রমে দেখলাম না,হয়তবা দেখেছি মনে নেই,আমি তো এই কবরের দিকে বেশি আসতাম না কখনও,আমার ভয় করতো এখানে জঙ্গল বলে তাই হয়ত শান্তকে এর আগে এই আশ্রমে দেখিনি
আহানা শুকনো পাতার উপর দাঁড়িয়েছে তাই খসখস শব্দ হচ্ছে
শব্দ পেয়ে শান্ত পিছন ফিরে তাকালো
আহানাকে দেখে চোখ মুছে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো শান্ত
.
আহানা চুপ করে থেকে বললো সরি ডিস্টার্ব করার জন্য
.
দাঁড়াও
.
কি?
.
তুমি এখানে কি করতেসো?
.
আমি তো!এমনি
.
ওহ
.
আপনার মা উনি?
.
হুম
.
আপনাকে কখনও কষ্ট দিয়ে থাকলে সরি,আমি বুঝি মা হারানোর কষ্ট,মা হারা কাউকে কষ্ট দিয়ে গুনাহ করতে চাই না
.
নাহ,যাদের মা বাবা আছে তারা বুঝে না মা /বাবা হারানোর কষ্ট,কোনোদিন ও বুঝে না,কিভাবে বুঝবে?যেটা তাদের আছে সেটার অনুপস্থিতিতে কেমন লাগে সেটা তারা বুঝবে না,আমাকে মিথ্যা সান্ত্বনা দেওয়ার দরকার নেই,যাও এখান থেকে,আমাকে একা থাকতে দাও!
.
আহানা চুপ করে থেকে চলে গেলো
.
শান্ত মায়ের কবরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে,সন্ধ্যা হয়ে গেছে
অন্ধকার ও নেমে এসেছে
.
শান্ত বাবা?বাসায় যাবা না?সাঁঝবেলা এখানে থাকা ঠিক না বাবা
.
যাচ্ছি
.
আরিফ উদ্দিনের কথায় শান্ত চোখ মুছে বেরিয়ে গেলো
তারপর আশ্রমের ম্যানেজারের রুমে এসে কাগজ পত্র দেখতেসে সে
বাবা বলেছে আসার সময় এসব দেখে আসতে
আরিফ উদ্দিনের সাথে কথা বলে নিয়ে আশ্রমটা ঘুরতে ভিতরে গেলো সে
আহানা আনমনে পুকুরঘাটে বসে চোখের পানি ফেলতেছে,এখন না সেই তখন থেকে যখন শান্ত বলেছে যাদের আছে তারা জানে না”” না থাকার কষ্ট!””
সে তো জানেই না আমার কেউই নেই আমি তো আপনার চেয়েও ভালো বুঝি আপনজন কেউ না থাকার কি ব্যাথা,যন্ত্রনা!
অন্ধকার হয়ে গেছে অনেক,এই পুকুরঘাটটা আগের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে গেছে,গাছগাছালিতে ভূতুরে বানিয়ে দিয়েছে কেমন!
আহানা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আওয়াজ
পায়ের কাছে নরম কিছু লাগলো আহানার কাছে,দেখতে যাওয়ার আগেই সেটা কামড় বসিয়ে দিলো তার পায়ে
আহানা এক চিৎকার দিয়ে পা ধরে ২/৩টা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসলো
আশ্রমের লাইটের আলোয় একটু একটু দেখতে পেলো এক হাত লম্বার চেয়েও বেশি বড় একটা সাপ চলে যাচ্ছে,পুকুরের উপরের ঘাটে কিভাবে উঠলো এটা??
.
শান্ত আহানার চিৎকার শুনতে পেয়ে আশ্রম থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকালো
অন্ধকারে কিছু বোঝা যাচ্ছে না
.
আহানা?
এত অন্ধকারে ও কোথায়,চিৎকার দিলো কেন,কেনো বিপদ হয়নি তো!!
.
আহানা ব্যাথায় মনে হয় মরে যাবে
.
শান্ত আশ্রমের গেটের সামনে এসে পুরো আশ্রমের যতগুলো বাতি আছে মোট ১৪টা বাতি সে জ্বালিয়ে দিলো
আহানার আর আওয়াজ শুনা যাচ্ছে না
আহানা!!আহানা??কোথায় তুমি?
.
কি হলো বাবা?আহানাকে খুঁজছো কেন?কি হয়েছে?
.
ওকে দেখেছেন কোথাও?
.
ওকে তো মনে হয় পুকুরঘাটে দেখেছিলাম তাও বিকালবেলায়,এখনও থাকার তো কথা না
.
শান্ত এক দৌড়ে পুকুরঘাটের দিকে গেলো
আহানা পা চেপে ধরে উঠার চেষ্টা করতেসে
শান্ত তড়িগড়ি করে নিচে নেমে আহানার দিকে তাকিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়লো
.
কি হয়েছে আহানা?পায়ে কি হয়েছে তোমার
.
আহানার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না,বলার চেষ্টা করতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো
শান্ত চিৎকার দিয়ে বললো ডাক্তার ডাকতে
আহানাকে কোলে তুলে নিয়ে পুকুর ঘাটের উপরে নিয়ে আসলো
ওকে মাটিতে রেখে বাতির আলোতে আহানার পায়ের দিকে তাকালো,বাতি ছিল লাল রঙের,ঠিকমত দেখতেছে না শান্ত
চিন্তায় তার সারা গা ঘেমে গেছে
জ্যাকেট খুলে ফেললো তারপর সেটা থেকে ফোন বের করে নিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে শান্ত আহানার পায়ের উপর ধরলো,সাপের কামড়ের দাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে
শান্ত আহানার গায়ের থেকে ওড়না টান দিয়ে ছিঁড়ে হাঁটুর নিচে বেঁধে ফেললো যাতে বিষ বেশিদূর যেতে না পারে
বিষাক্ত কিনা কে জানে,আহানার মুখ দিয়ে ফ্যানা তো বের হচ্ছে না তাও ভয় করছে শান্তর
ডাক্তার আসতেসে সাথে আরিফ আঙ্কেল ও
শান্ত নিজের জ্যাকেটটা আহানাকে পরিয়ে দিলো কারণ ওর ওড়না ছিঁড়ে পা বেঁধেছে সে
ডাক্তার দেখে বললেন না বিষাক্ত সাপ নয় তবে ব্যাথা পেয়েছে সাথে ভয় ও পেয়েছে আর তাই জ্ঞান হারিয়েছে,বিষাক্ত হলে নীল হয়ে যেতো আর নানা লক্ষণ দেখা দিতো,আমি বরং ব্যাথার একটা ইনজেকশান দিয়ে দিচ্ছি জ্ঞান ফিরলে ঔষুধ খাইয়ে দিবেন
শান্ত মাথার ঘাম মুছে আহানাকে কোলে টেনে বসলো সিঁড়ির উপর
ডাক্তার ইনজেকশান বের করলেন
শান্তর মনে হচ্ছে ওকে ইনজেকশান দিবে,ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে তার
আহানার হাতে ইনজেকশান দেওয়ার সময় শান্ত আহানাকে টেনে সরিয়ে নিলো
না ধরবেন না ওকে,দেওয়ার দরকার নেই এটা
.
শান্ত বাবা?এটা দিলে আহানার ব্যাথা কমবে,তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে
.
শান্ত আহানার হাত চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো
আরিফ উদ্দিন হেসে বললেন কি বাবা ভয় করছে নাকি?ইনজেকশন তো আহানা মাকে দেওয়া হচ্ছে আর তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার শরীরে দিচ্ছে
.
জানি না,ভয় করছে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_২১

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_২১
#Writer_Afnan_Lara
?
তোরা আড্ডা দে আমি আসতেসি
.
কই যাস?
.
একটু কাজ আছে,আসতেসি ৫মিনিট
.
শান্ত উঠে এসে আহানার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,আহানা রাগে ফুসতেসে
.
তো??কি খবর,ভালো আছো?
.
আপনি একটা!!!
.
কি আমি?
.
বেয়াদব!
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো,শান্ত হাসতেসে কারণ সে এশাকে দিয়ে আহানার ওড়নায় গিট্টু দিয়ে ২হাজার টাকা রেখেছিল
ভার্সিটিতে ছুটি হয়ে গেছে আহানা অন্য রোড দিয়ে টিউশনিতে যাচ্ছে,শান্ত রোডটার পাশেই বাইকে বসে আরামসে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে,আহানাকে দেখে ফু দিয়ে ধোঁয়া ওর মুখের দিকে দিলো
আহানা দাঁড়িয়ে চোখ বড় করে শান্তর হাত থেকে টেনে সিগারেটটা নিয়ে ফেলে দিলো নিচে
.
এটা কি করলে?
.
একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি,সিগারেটের ধোঁয়া আমার মুখের সামনে দিলেন কেন?
.
আমার ইচ্ছা
.
তাহলে এটাও আমার ইচ্ছা
আহানা শান্তর দিকে ভেঁংচি কাটতে কাটতে যাচ্ছে আর দুম করে নিচে পড়ে গেলো
শান্ত রাক্ষসের মত জোরে হাসতে হাসতে বাইক নিয়ে চলে যাচ্ছে
আহানা নিচে মাটিতে বসে বকতেছে ওকে
বাসায় ফিরে টাকা গুলো নিয়ে বসে আছে সে,আর বাড়াবাড়ি করা যাবে না,পরে কি করতে না কি করে ফেলবে শয়তানটা!
আমি বরং এক কাজ করি,টাকা গুলো দিয়ে বাজার করি,চাল আর ডাল কিনবো আরও কত কি কিনা বাকি
আহানা ২হাজার টাকা থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে আলমারিতে রেখে দিলো
বাকি এক হাজার টাকা নিয়ে কাগজ কলম সহ খাটের উপরে গিয়ে বসলো লিস্ট করার জন্য
একটা নতুন জামা-৫০০টাকা
চাল এক কেজি ১০টাকা করে ২০কেজি- ২০০টাকা
খোলা মসুর ডাল এক কেজি ১২০করে ২কেজি-২৪০টাকা
আর থাকে ৬০টাকা
পেঁয়াজ আর আলু কিনবো সেটা দিয়ে,কম কম করে কিনবো তাহলে ৬০টাকায় হয়ে যাবে,ব্যাস,কাল ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় বাজার করে আনবো
আলমারিতে ধোয়া জামাটা রাখতে গিয়ে আশ্রমের মায়ের শাড়ীটা পড়ে যেতে নিলো,আহানা সেটা ধরে জড়িয়ে ধরে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো
আমার মায়ের শাড়ী,আরেহ আজ মাসের কয় তারিখ! ঈদের পরেরদিনই তো আমার সালেহা মায়ের মৃত্যু বার্ষিকি
ইস যদি এবার আশ্রমটাতে যেতে পারতাম তাহলে কত ভালো হতো,মায়ের কবরটা দেখা হতো আর আশ্রমের বাচ্চাদের সাথেও দেখা হয়ে যেতো
এক মিনিট! আমার কাছে তো ১হাজার টাকা আছে,সেটা দিয়ে তো আমি আশ্রমে গিয়ে আবার ফেরত ও আসতে পারি,আরে হ্যাঁ তাই তো,ট্রেনে করে গেলে ভাড়াও কম যাবে,তাহলে আমি ঈদের কদিন আগে যাবো আশ্রমে,টিউশনিও থাকবে না তখন
আহানা খুশিতে লাফিয়ে উঠলো
পরেরদিন ভোরে উঠে রেডি হয়ে নিয়ে মিষ্টি বাসায় গেলো
শান্তর বাসার দরজা বন্ধ,উফ যাক বাবা বাঁচলাম,শয়তানটা আজ আর তাহলে জ্বালাবে না
আহানা নেচে নেচে মিষ্টিদের বাসার দরজায় নক করলো
শান্ত এসে দরজা খুললো
শান্তকে দেখে আহানা ভূত দেখার মত ভয় পেয়ে এক দৌড় দিলো
পরে আবার কিসব ভেবে ফেরত আসলো
.
আসেন ম্যাডাম ভিতরে আসেন, এভাবে পালালে কি হয়!!
.
আপনি এখানে?
.
ওমা,আমার মিষ্টির বাসায় আমি থাকতে পারি না?
.
?
.
আহানা কিছু না বলে গিয়ে সোফায় বসলো,শান্ত ওর সামনে বরাবর বসলো পায়ের উপর পা তুলে
আহানা বিরক্তি নিয়ে মিষ্টিকে পড়িয়ে যাচ্ছে
শান্ত দাঁত কেলিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে ঢুলতেসে শুধু
আহানার দম বন্ধ হয়ে আসতেসে,কেউ এমন করে তাকিয়ে থাকলে কার ভালো লাগবে?উফ!!
শান্ত ৭টা বাজার ১০মিনিট আগে উঠে চলে গেলো
আহানা বড় একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো,যাক বাবা বাঁচলাম!
মিষ্টিকে আরও ১০মিনিট পড়িয়ে আহানা বাসা থেকে বের হলো,শান্তর বাসার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর লিফটের দিকে তাকালো,শান্ত লিফটের ভেতরে দাঁত কেলিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে
আহানা চোখ বড় করে সিঁড়ির দিকে চলে যেতে নিতেই শান্ত ওর হাত টেনে ধরে লিফটের ভিতরে নিয়ে আসলো
.
এই!
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
চুপ!
.
আহানা চুপ করে তাকিয়ে আছে
শান্ত পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার নিলো,লিফট থেকে বের হলে ধরাবে
নিচ তলা আসতেই আহানা শান্তর হাত ছাড়িয়ে এক দৌড় দিলো
শান্ত ও দৌড়ে ওর সামনে এসে পড়লো
.
উফ!কি সমস্যা আপনার?
.
তুমি আমার থেকে এত পালাও কেন বলোতো?
.
আপনার কি তাতে?ইস!
.
আমার কি?
শান্ত এগিয়ে গেলো আহানার দিকে
.
আবার বলো তো
.
আহানা ঢোক গিলে পিছনে থাকা একটা কারের সাথে লেগে গেলো
.
সরি মুখ ফসকে বলে ফেলছি,প্লিস আমাকে ছাদ থেকে ফেলবেন না
.
শান্ত সিগারেট ধরিয়ে আহানার এক পাশে হাত নিয়ে কারের উপর রেখে মন দিয়ে সিগারেট খাচ্ছে,আহানার দিকে ধোঁয়া ছাড়তেই আহানা চোখ বন্ধ করে কাশি শুরু করে দিলো
.
আপনি খুব খারাপ, হাত সরান আমি বাসায় যাব
.
রোজ রোজ বুয়ার হাতের রান্না ভালো লাগে না,আজ সকালের নাস্তা বানিয়ে দাও না প্লিস
.
কিহ?আপনার মাথা ঠিক আছে?হাত সরান আমি আমার বাসায় যাব
.
তাহলে আমিও তোমার সাথে যাব
.
আমি মালিকের কাছে বিচার দিব
.
তারেক মিয়া আমার সেক্রেটারি,ওরে যদি বলি আমি আহানার সাথে এক বাসায় থাকবো সে কিছু বলবে না
.
হাত সরান বলতেসি,আমি বাসায় যাবো
.
যেকোনো একটা চুজ করো
.
আপনি এমন করেন কেন আমার সাথে?
.
বারবার এক কথা ভালো লাগে না আহানা,চুপচাপ আমার বাসায় চলো নয়ত আমাকে তোমার বাসায় নিয়ে যাও
.
আমি এতগুলো ছেলের মাঝে যাবো না আপনার বাসায়
.
তাহলে চলো তোমার বাসায় যাই
.
আহানা শান্তর হাত ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে হেঁটে চলে গেলো
অনেকদূর এসে দম ফেলে তারপর পিছনে তাকালো,শান্তকে দেখা যাচ্ছে না,মুচকি হেসে স্বস্তি নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো শান্ত ও আহানার সাথে সাথে ওদিকে চেয়ে আছে
.
কাউকে খুঁজতেসিলা বুঝি?
.
আপনি একটা অসভ্য লোক!
.
আহানা বাসায় এসে দরজা আটকাতে যেতেই শান্ত হাত দিয়ে দরজা ধরে ফেললো
.
আরে এমন করো কেন,মেহমানকে কেউ এভাবে অপমান করে?
.
আহানা চোখ রাঙিয়ে টেবিলের উপর ঠাস করে ব্যাগ রেখে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো
শান্ত আহানার বিছানায় বসে গেমস খেলতেসে
আহানা ভাত রাঁধলো পরে ভাবলো বাঁদরটা তো আমার মত খালি বেগুন ভাজা দিয়ে ভাত খেতে পারবে না,কি করি!!
আলু কেটে বেগুন দিয়ে তরকারি রেঁধে নিলো আহানা,মাছ তো নেই
শান্তর সামনে বাটি আর প্লেট এনে রাখলো
শান্ত ফোন রেখে হাত ধুয়ে বসে গেলো খাওয়ার জন্য
আহানা অবাক হচ্ছে,শান্ত এত ছোটখাটো খাবার খুব মজা করে খেয়ে যাচ্ছে
.
অনেক মজা হয়েছে
.
কথাটা শুনে আহানার মনে হলো যেন রান্না করাটা সফল হয়েছে তার
.
খাওয়া শেষে শান্ত গেলো হাত ধুতে
আহানা বিছানার থেকে বাটি আর প্লেট নিচ্ছে রান্নাঘরে রাখার জন্য
শান্ত হাত ধুয়ে এসে আহানার ওড়না টেনে মুখ মুছতে লাগলো
আহানা অবাক হয়ে গেছে শান্তর এমন কাজে
শান্তর ও খেয়াল নেই সে কি করতেছে,মায়ের আঁচল দিয়ে মুখ মুছতো সবসময়
মায়ের মৃত্যুর পর থেকে অভ্যাসটা কয়েকবছর ধরে বন্ধ ছিল আজ হঠাৎ করে এসে যাবে সে ভাবতে পারেনি,,শান্তর হুস আসতেই ইতস্তত বোধ নিয়ে বললো সরি আহানা,আমি আসলে….
.
ইটস ওকে
.
আহানা ওড়না ঠিক করে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো
শান্ত ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে বললো থ্যাংকস
.
মেনশন নট!??
.
বাই,এমন করে মাঝে মাঝে জ্বালাবো?
.
বাহির হোন বলতেসি,ঢং যত্তসব
আহানা দরজা লাগিয়ে দিলো শান্তর মুখের উপর,আজ খাইয়েছি এটাই অনেক আবার বলে মাঝে মাঝে,ব্যাটার শখ কত!
.
বেয়াদ্দপ মাইয়া!!

কিরে কোথায় ছিলি তুই?
.
আসলে রিয়াজ একটু জগিং করতে গেসিলাম
.
বুয়া নাস্তা বানিয়েছে,চল একসাথে খাই
.
নাহ,আমার খিধে নেই,পরে খাবো,তোরা খা
কথাটা বলে শান্ত নিজের রুমে ফিরে গেলো
রিয়াজ হা করে চেয়ে আছে,অন্য সময়ে সঠিক টাইমে নাস্তা না পেলে চিল্লাই বাসা উল্টায় ফেলে আর আজ বলে খাবে না?আজব তো!
.
আহানা বাকি খাবার খেয়ে সব গুছিয়ে নিয়ে রেডি হয়ে ভার্সিটিতে আসলো,আজ ঈদের ছুটি দিয়ে দিবে
আহানা খুব খুশি,সে তার ছোটবেলা কাটানো সেই আশ্রমে যাবে
আর শান্ত খুশি সে তার মায়ের কবর আর বাবাকে দেখতে যাবে
কাল ভোরেই রওনা হবে,কয়েকদিন বাদেই ঈদ
.
কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে এসে আহানা ২৩তম কদম ফেলতেই শান্ত পিছন থেকে ডাক দিলো
আহানা পিছন ফিরে তাকালো ওর দিকে
.
ঈদে দেশের বাড়ি যাবে না?মা বাবার কাছে
.
আহানা চুপ করে থেকে বললো হুম যাবো
.
আমিও যাব,বাই তাহলে,একে বারে ঈদের পরে দেখা হবে
.
বাই?
.
শান্ত বাইকে উঠে আহানার দিকে এক নজর তাকিয়ে চলে গেলো
আহানা টিউশনি শেষ করে নিউমার্কেটে গিয়ে একটা জামা কিনেছে
৫০০টাকার মধ্যেই ভালো জামা পেয়ে গেলো,তারপর চাল ডাল পেঁয়াজ আলু কিনে বাসায় ফিরলো
শান্ত মার্কেটে এসে মায়ের জন্য গোলাপি চুড়ি কিনলো তারপর ফুলের দোকান থেকে রজনীগন্ধা কিনলো,বাবার জন্য পাঞ্জাবিও কিনেছে সে
আর তার সৎ মা,ভাই বোনের জন্য ও জামা কাপড় নিয়েছে
ব্যাগ গুছিয়ে ফেললো,সব রেডি কাল ট্রেন ধরতে হবে,আহানাকে জ্বালাতে জ্বালাতে একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে,এ কটা দিন না জ্বালিয়ে থাকলে আবার আগের মতন হয়ে যাবে সব,হুম!
পরেরদিন সকাল ৬টায় আহানা কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে হাজির,মানুষের সমাগম বেশি,যাক, খালি থাকলে একা একা লাগতো,ভয় ও করতো
ঈদ তো তাই এত ভিড়!
কথা হলো গিয়ে আমি তো অগ্রিম টিকেট কাটিনি?
অনেক রিকুয়েস্ট করে একটা টিকেট জোগাড় করলো আহানা তাও একটা বাচ্চা ছেলের সিট,ছেলের মাকে রিকুয়েস্ট করে ওরে কোলে রাখবে কথা দিয়ে টিকেটটা নিয়েছে সে
কিছু করার নেই,ঈদের ২দিন আগে টিকেট কিনতে আসলে জীবনেও সরাসরি টিকেট পাওয়া যায় না,অগ্রিম কেটে রাখতে হয়,আহানা ভুলেই গেসিলো সেটা,মনে রাখবে কি করে ২হাজার টাকা নিয়ে এ কদিন ধরে শান্তর সাথে যে লঙ্কা কান্ড চলছিলো,বাপরে বাপ!
অবশেষে টিকেট পেয়ে খুশি হয়ে আহানা দাঁড়িয়ে পড়লো ট্রেনের অপেক্ষায়
হাওর এক্সপ্রেস আসতেসে,,ঢাকা টু মোহনগঞ্জ
কমলাপুর আসতে আমার ২০০টাকা শেষ হয়ে গেলো,হেঁটে তো এতদূর আসা যায় না তা নাহলে হেঁটেই আসতাম,ট্রেন আসতেই আহানা তড়িগড়ি করে উঠে পড়লো
.
শান্ত ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দৌড়াচ্ছে হাতে ট্রলি ব্যাগ,দেরি হয়ে গেলো ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে,সে জানেও না এই ট্রেনে তার জ্বালানোর পার্টনার আহানাও আছে
দৌড়ে এক লাফ দিয়ে উঠে গেলো,উফ বাঁচলাম,একটুর জন্য মিস করতাম আমি
এসব ট্রেন ট্রুনে চলতে ভাল্লাগে একদম!না পারতে উঠসি
বাসের টিকেট পাইনি বলে এখানে আসতে হলো আমাকে!!
শান্ত জানালার পাশের সিটে গিয়ে বসলো
তার ঠিক পিছনের কেবিনে আহানাও জানালার সিটে বসেছে
আহানার কোলে বাবুটা,৫বছরের হবে,ওর মা ওকে কোলে নিতে পারবে না কারন উনি গর্ভবতী তাই বাবুর জন্য আলাদা টিকেট কিনেছেন তিনি,আহানা তার টিকেট নিয়েই তাকে কোলে নিয়ে বসে আছে,বাবুটা কোল থেকে নেমে তার বাবার কাছে চলে গেলো,তার বাবার কোলে ২/৩বছরের একটা বাবু,হয়ত তাই তার জন্য আলাদা সিট নেওয়া হয়েছিল
আহানা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে,ট্রেনে সে আরও একবার উঠেছিল,আশ্রম থেকে ফেরার সময়,গাছ পালা চলছে?নাকি ট্রেন চলছে?অদ্ভুত রহস্য
ক্ষেতের পাশ দিয়ে যাচ্ছে ট্রেন,ছোট মেয়ে একটা গরুর বাচ্চাকে নিয়ে ক্ষেত পেরিয়ে চলেছে,তার হাতে আবার একটা ছাগলও বাঁধা
সবুজ ক্ষেত,আর নীল আকাশ,যেন আকাশে আর্জেন্টিনা আর নিচে ব্রাজিলের পতাকা,আহানা এই দুই পক্ষের পতাকার রঙ জানে শুধু,তাদের দলে কে কে আছে,কে কয়বার জিতলো তা জানে না,জানতেও চায় না
বাবুটা তার বাবার কাছ থেকে এসে আহানার কোলে উঠে বসলো
শান্তর পাশে একজন বয়স্ক মহিলা বসেছেন,উনি শুধু দোয়াদরুদ পড়তেসেন,শান্ত এই নিয়ে ৬বার কানে ইয়ারফোন গুজেছে উনি ততবারই টান মেরে শান্তর কান থেকে সেটা ছুটিয়েছেন
উনার একটাই কথা এসব শুনা হারাম আর তাও উনি যখন দোয়াদরুদ পড়তেসেন তখন তো গান শুনলে চ্যালচ্যালাইয়া জাহান্নামে যাবে শান্ত
শান্ত ব্রু কুঁচকে ইয়ারফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেললো
খুব ছোটবেলায় নানি দাদিকে হারিয়েছে সে,তাই তাদের আদর পায়নি কখনও,এই মহিলাকে দেখে যেন নতুন করে হারানো নানি দাদিকে একসাথে পেয়ে গেলো সে
দোয়াদরুদ শেষ করে উনি তার হাতের লেডিস ব্যাগটা খুললেন,শান্তকে বললেন হাত পাততে
শান্ত হাত পেতে জানালার দিকে নজর দিলো
একটা পুকুর নজরে আসলো,জামা কাপড় ছাড়া ছোট ছোট ছেলে কতগুলো ঝাঁপ দিচ্ছে পুকুরটাতে
শান্ত তাদের দিকে চেয়ে হেসে দিয়ে তার হাতের দিকে তাকালো
গোটা এক আলমারির জিনিস পত্র তার হাতে কিন্তু মহিলাটি এখনও বের করেই যাচ্ছেন তার ব্যাগ থেকে আর সব নিয়ে শান্তর হাতে রাখতেছেন
মানুষ এত জিনিস নিয়েও বুঝি হাঁটে?ওহ মাই গড!!
মহিলাটি একটা বক্স খুঁজে পেলেন অবশেষে,এতক্ষণ এটাই খুঁজতেছিলেন,তারপর শান্তকে বললেন তার হাতের সব জিনিস আবার এই ব্যাগে ঢুকাতে
.
দাদি আমার মনে হয় না এসব এই ব্যাগে ঢুকবে
.
আরে কি বলো নাতি,আমি এসব কিছু তো এই ব্যাগ থেকেই বের করেছি
.
ওহ!
.
শান্ত এক এক করে সব ব্যাগে ঢুকাচ্ছে,টিসু এক বক্স,রুমাল ৫টা,সলা ৬টা,কাগজ পত্র আলা একটা প্যাকেট,আয়না,পানের বাটুয়া,ফোন,চিরুনি,নতুন জুতা,জামা এক সুট
শান্ত অবাক হচ্ছে আর ব্যাগে সব ঢুকাচ্ছে,কারন ছোট মিনি সাইজের এই ব্যাগটায় যে এক আলমারির সমান জিনিস ঢুকবে তা জানা ছিল না তার
.
দেখেছো?আমি বলসি না সব এটাতে আঁটবে
.
জি দাদি,বুঝলাম
শান্ত কাজ সেরে আবার জানালার দিকে ফিরে বসলো
.
এই ছেলে
.
জি দাদি?
.
নাও খাও
.
মহিলাটি একটা বক্স খুলে শান্তর দিকে বাড়িয়ে ধরলেন,ভিতরে পিঠা
নাও খাও,আমার বানানো
.
শান্ত একটা নিলো,কিন্তু না উনি জোর করে আরও ২টা খাওয়ালো শান্তকে,শান্তর কান্না পাচ্ছে,এমন করে মা চলে যাওয়ার পর থেকে কেউ আদর করে নাই তাকে
চোখের পানি মুছতেই মহিলাটি মাথা মুছে বললেন কি হয়েছে রে?
.
আমাকে এমন করে মায়ের পরে আর কেউ আদর করে নিই
.
থাক আমি করলাম তো!মায়ের কাছে যাচ্ছিস বুঝি?
.
হুম
.
সেখানে গেলে দেখবি সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে,মায়ের কোলে মাথা রাখলেই
কথাটা শুনে শান্ত কেঁদে দিলো এবার
ছেলেরা হুটহাট করে কাঁদে না তবে প্রিয় মানুষের মৃত্যুতে তারা কান্না থামাতে পারে না কখনও,কেঁদেই ফেলে
.
কিরে এমন করে কাঁদিস কেন
.
আমি আর কখনও আমার মায়ের কোলে মাথা রাখতে পারবো না গো দাদি
.
কেন?
.
আমার মা আমাকে ছেড়ে আল্লাহর কাছে চলে গেছে অনেক দূরে
.
মহিলাটি মুখটা ফ্যাকাসে করে শান্তর হাত চেপে বললেন থাক কাঁদিস না,শান্তকে কাঁদতে মানা করে উনি নিজেই হিজাবের ওড়না দিয়ে তার চোখ মুছলেন,তার ছেলে নেই,একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছে,এখন তিনি যাচ্ছেন তার ছোট মেয়ের বাসায়,,এই কথা শান্তকে বললেন না কারন শান্ত এমনিতেও কাঁদতেসে আর কষ্ট দেওয়া উচিত না
.
তা তোর মায়ের কি হয়েছিল রে?
.
ক্যানসার
.
ওহ?

বাবুটাকে তার মা খাইয়ে দিচ্ছে আহানা সেটা দেখে ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো,তাকে কেউ কখনও এমন করে খাইয়ে দেয়নি,যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই নিজের হাতে খেতো সে,হয়ত এর আগে নিচে যা পেতো তাই খেতো,আশ্রমের সব বাচ্চাকে তো আর হাতে ধরিয়ে খাইয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না,একজন আসতেন,থালায় থালায় খাবার সামনে দিয়ে চলে যেতেন,কিভাবে খেতে হয় তা কেউ বলে দেয়নি,একজন আরেকজনকে দেখে খাওয়া শিখতে হতো,আর সালেহা মা আসার পর আহানার মত অনেক বাচ্চাকেই ভালোবাসতেন,তিনি এসেছিলেন যখন আহানার ৬বছর সে সময়ে
.
বাবুটা আহানার দিকে তাকিয়ে মুখটা ছোট করে বললো কাঁদো কেন?
.
আহানা চোখ মুছে বললো কই না তো
.
দুপাশে দুজন কাঁদতেসে,একজন মা হারিয়ে আরেকজন মা বাবা দুজনকে হারিয়ে
বাবুটা তার হাতের বিসকুটের প্যাকেট আহানার হাতে দিয়ে বললো খাও,কেঁদো না
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_২০

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_২০
#Writer_Afnan_Lara
?
ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে নামাজটা শেষ করে নিয়ে আহানা বেরিয়ে পড়লো তার প্রতিদিনের কাজে,গন্তব্য মিষ্টিদের বাসা
দিনটা ভালোই,ভোরবেলার পরিবেশটাই অন্যরকম,ব্যস্ত নগরীকে চেনা দায়,হুট করে অন্য জেলা থেকে আসা মানুষ বলবেই না এটা বাংলাদেশের সব চাইতে ব্যস্ত শহর ঢাকা,কারণ ভোরের ঢাকার পরিবেশটাই এমন,আমার তো ঢাকার এই চিত্রটাই বেশ লাগে,আমি আর পাখিরা মিলে পথ চলছি,আমি রোড বেয়ে আর পাখিরা আকাশ বেয়ে,আর দু একজন আছে তারা রোড পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করায় ব্যস্ত
জ্বর কিছুটা কমেছে,ভালো লাগতেসে এখন,পেটের দায়ে কাজ করাই যায়,কথা হলো গিয়ে শান্ত বেয়াদবটা আজ কি করবে কে জানে
যেভাবে হুমকি দামকি দিলো আমাকে
যাই হোক আমি এসবে ভয় পাই না,বেশি বাড়াবাড়ি করতে আসলে নাকে দিয়ে দিব এক ঘুষি
সাদা নাকটা তার গোলাপি বর্ণ ধারন করবে তখন,কি সুন্দর লাগবে দেখতে
ভাবতে ভাবতে সে এসে পড়লো মিষ্টিদের বাসার সামনে
পা বাড়িয়ে ভিতরে ঢুকলো এদিক ওদিক ভালো করে পর্যবেক্ষন করে,নাহ তাহলে মনে হয় ভার্সিটিতে গেলেই জ্বালাবে যা বুঝলাম,আমি তো ভেবেছি এখানে পাকড়াও করবে আমাকে
সব জায়গা ভালো করে পরোক করে নিলেও মেইন লিফটের ভেতরটা তার দেখা হলো না,সেদিকে তার নজরই নেই,মাথায় একদমই ছিল না যে শান্ত ঠিক কোন জায়গায় তার শিকারের অপেক্ষায় আছে
লিফটে ঢুকে ৫তম বাটনে টিপ দিয়ে পাশে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে গেলো আহানার,কলিজা বের হওয়ার উপক্রম প্রায়ই
বড় বড় নিশ্বাস ফেলে লিফটের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে পড়লো আহানা
পাশেই শান্ত আরামসে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে গেমস খেলতেসে
সম্ভবত পাবজি খেলতেসে,কারণ পাবজিই একমাত্র গেম যেটা খেলার সময় আশেপাশে কি চলে সেদিকে খবর থাকে না গেমারদের
আহানা নিজেকে ঠিক করে নরমাল হয়ে দাঁড়ালো
শান্ত যেন খেয়ালই করছে না আহানা যে ভয়ার্ত চোখে বারবার ওকে দেখছে
৫তলা এসে গেছে আহানা পা টিপে বের হতে নিতেই একটা হাত ওর পাশ দিয়ে এসে লিফট অফ হওয়ার বাটনে ক্লিক করে দিলো
.
একি!এটা কি করলেন আপনি?আমি মিষ্টিকে পড়াবো তার জন্য বের হচ্ছিলাম আপনি লিফট অফ করলেন কেন?
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
শান্ত আহানার কথায় কান না দিয়ে ১০তলার বাটনে টিপ দিয়ে আবারও গেমস খেলায় মন দিলো
আহানা চোখ রাঙিয়ে সামনে গিয়ে ৫তলার বাটনে টিপ দিতে যেতেই শান্ত ওর হাতের কুনুই ধরে টেনে কাছে নিয়ে আসলো
ভয়ে আহানার গলা শুকিয়ে গেছে,লিফটের ভেতর চিৎকার দিয়েও কাউকে পাবে না,শান্ত এমন করে ধরেছে কেন,কি করবে এখন?
.
শান্ত এক হাত দিয়ে আহানাকে ধরে আরেক হাত দিয়ে ফোনটা পকেটে ঢুকাচ্ছে
তার মুখে চুইংগাম,সেন্টারফ্রুট,সেটা ফুলিয়ে বাবল বানিয়ে ঠুস করে ফুটিয়ে আবারও চিবাচ্ছে,গুন্ডা তো নয় যেন মহাগুন্ডা!!
আহানা হাত মুচড়াতে মুচড়াতে বললো এসব কি হ্যাঁ??হাত ছাড়ুন আমার,মিষ্টিকে পড়াতে হবে,১দিন পড়াই নাই আমি
.
১০মিনিট বাকি এখনও
.
মানে?কি করবেন আপনি?১০তলায় নিয়ে যাচ্ছেন কেন আমাকে?আমার হাত ছাড়ুন বলে দিচ্ছি খুব খারাপ হয়ে যাবে
.
কেন?চড় মারবে?মারো
.
শান্ত গাল এগিয়ে নিতেই আহানা পিছিয়ে গেলো
১০তলা এসে গেছে শান্ত লিফট থেকে বেরিয়ে আহানাকে টেনে ছাদে নিয়ে গেলো
.
হাত ছাড়ুন!বাঁচাও বাঁচাও কেউ আছো!
.
তোমাকে আমি ১০তলা থেকে ফেলে দিব এখন
.
আহানা চোখ বড় করে ভাবলো মজা করার জায়গা পায় না নাকি
শান্ত আহানাকে টেনে ছাদের শেষ সীমানায় নিয়ে এসেছে,এবার আহানার সত্যি সত্যি ভয় করছে খুব
না জানি ফেলে দেয় আমাকে
.
হুম কাল রাতে কি বলছিলা যেন?রিপিট করো তো
.
না কই,কিছু বলিনি তো
.
তাই?
শান্ত আহানার দুকাঁধ ধরে ওকে ছাদের থেকে বাইরে শূন্যে নিয়ে গেলো ওর অর্ধেক বডি
আহানা চিৎকার দিয়ে বললো আর জীবনেও বলবো না “আপনার কি”,এটা বলবো না সত্যি,ছেড়ে দেন
.
ছেড়ে দিব?
.
না না,আই মিন ফালাইয়েন না আমাকে
.
সরি বলো
.
আচ্ছা সরি
.
আবার!
.
আহানা বিরক্তি নিয়ে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে
শান্ত একটু ঝাঁকাতেই আহানা ভয়ে শান্তর টি -শার্ট খাঁমছে ধরে এগিয়ে কাছে চলে আসলো
চোখ বন্ধ করে বললো সরি সরি আর বলবো না,মাফ করে দেন আমাকে?
শান্ত অবাক হয়ে আছে,আহানা এভাবে কাছে চলে আসবে তাও শার্ট খাঁমছে ধরে এটা সে ভাবেনি,আহানার এই কাজে মূহুর্তেই শান্তর মুখের রাগ ক্রোধ কমে গিয়ে কেমন একটা অনূভুতির প্রস্ফুটন ঘটলো
আহানা চোখ খুলে দেখলো শান্ত ওর দিকে কেমন করে যেন চেয়ে আছে
আহানা টি -শার্ট ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেলো,তারপর দেরি না করে চলে আসলো ওখান থেকে
শান্ত রোবটের মত এখনও সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে,এটা কেমন অনুভূতি হচ্ছে,শরীরের শিরায় শিরায় কাঁপা কাঁপি,বুকটা ধরফর ধরফর করে যাচ্ছে,মেয়ে মানুষের ছোঁয়ায় এত শক্তি থাকে যে রাগ ও কমিয়ে দিতে পারে?
এতদিন কথাটা বিশ্বাস করতাম না এখন করতে বাধ্য,কারন এটা আমার সাথেই ঘটেছে তাও কিছুক্ষন আগে
আহানা তো আল্লাহর নাম দিয়ে লিফটে না উঠেই সিঁড়ি দিয়ে দৌড় দিলো মিষ্টিদের বাসায়
শান্ত রোবটের মত হেঁটে হেঁটে রুমে ঢুকে ধপ করে খাটের মাঝখানে বসে পড়লো
বিছানা হাতিয়ে সিগারেট একটা খুঁজে নিলো তারপর পকেট থেকে লাইটার নিয়ে সেটা দিয়ে সিগারেটটা ধরিয়ে মুখে দিলো
টিক টিক টিক ৭টা বাজে
শান্ত এই এক ঘন্টায় ৪টা সিগারেট খেয়েছে,৫তম টা মুখে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো সে
আহানা এখন লিফটে নিশ্চয় নাকি সিঁড়িতে,মনে হয় না আজ আর লিফটে উঠবে
আহানা বিল্ডিং থেকে বের হতেই একটু থেমে উপরের দিকে তাকালো,শান্ত সিগারেট খাচ্ছে আর ওর দিকে গুন্ডা লুক নিয়ে চেয়ে আছে
আহানা মনে মনে বললো বেয়াদব,ইতর,খাডাস,অসভ্য
.
শান্তর আর বুঝতে বাকি নেই আহানা তাকে গালি দিচ্ছে,চোখ মুখের expression দেখেই বোঝা যায় যে সে গালি দিচ্ছে
তাও যেনো তেনো না!! হাই লেভেলের চিপ গালি
সিগারেটটা শেষ ততক্ষণে,শান্ত হাত বাড়িয়ে নিচে ফেলে দিলো সেটা
আহানা চোখ বড় করে সরে দাঁড়ালো,সিগারেট এসে একদম ওর সামনে পড়লো
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে চলে গেলো ওখান থেকে,ইচ্ছে করতেসিলো পা দিয়ে মাড়াই দিই,কিন্তু না পরে আবার আমাকে একা পেলে ছাদ থেকে ফেলে দিবে,এরকম সাইকোর সাথে না লাগাই ভালো হবে আমার জন্য
.
বাসায় ফিরে ব্যাগটা রেখে রান্নাঘরে গেলো আহানা
কালকের বেগুন ৪টার মতন আছে,আলু আছে,চাল আছে
কি খুশি আহানা,ভাবতে লাগলো কতদিনে শেষ দিবে
বেগুন তাড়াতাড়ি নষ্ট হবে,পোকায় ধরবে তাই সে একটা বেগুন কেটে রাখলো ভাজি করবে সেটা দিয়ে খাবে আজ
১টা বেগুনকে ৫টুকরা করলো,২টুকরা দিয়ে এখন খাবে ভাত দিয়ে
বাকি ৩টুকরা রাতে খাবে,তাহলে বাকি আর যে ৩টা বেগুন আছে সেগুলো কাল,পরশু আর তার পরেরদিন ও যাবে
ব্যাস আগামী ৩দিনের মেনু ডান
এরপরে আলু ভেজে কদিন খাবো,তারপর পেঁয়াজ দিয়ে চালাবো,এক মাসের বাজার করে দিসে বান্দরটা
আমি এগুলাও নিতাম না কথা হলো এগুলো তো ফিরিয়ে দেওয়া যায় না,টাকা হলে ফিরাই দিতাম
বেগুন ভেজে ভাত রেঁধে খেয়ে নিলো তারপর রেডি হয়ে বের হয়ে হাঁটা ধরলো ভার্সিটির দিকে
গেইট দিয়ে ঢুকতেই সবার আগে চোখে পড়লো শান্তকে
বটগাছটার নিচে বসে আছে দলবল নিয়ে,তার চোখ আহানার দিকে
উফ!গন্ডার একটা,ছাদের কথা মনে আসলেই এখনও ভয়ে গা শিউরে উঠে আমার
আহানা চোখ নামিয়ে ক্লাসরুমে চলে গেলো
.
কি ভাই শান্ত,সামথিং সামথিং?
.
নাথিং!সূর্য!
.
একজন বোরিং স্যার ক্লাস করতেসে,কেউ ফোন টিপছে লুকিয়ে, কেউ গসিপ করছে,শুধু আহানা মনোযোগ দিয়ে শুনতেসে স্যারের কথা,পড়ালেখা নিয়ে আহানা বেশ সিরিয়াস
.
স্যার অবশেষে পড়িয়ে গেলেন,ব্রেক টাইম শুরু
.
আহানা চল ফুচকা খাবো
.
তুই যা আমি খাব না
.
আরেহ চল,নওশাদ খাওয়াবে
রুপা আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো ভার্সিটির বাইরে,রোডের পাশে ফুচকা আলা
রুপা আহানাকে নিয়ে টুল টেনে বসলো,রুপার পাশে নওশাদ এসে বসেছে,আহানা ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে খেয়াল করলো ওর পাশেও কেউ বসেছে,ঢোক গিলে পাশে তাকিয়ে দেখলো শান্ত ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে
আহানা মুখ বাঁকিয়ে একটু সরে বসলো
সবার হাতে হাতে ফুচকাআলা ফুচকার প্লেট দিয়ে দিলেন
আহানা একটা মুখে দিয়ে শান্তর দিকে তাকালো
সে কিছুটা রহস্যময় চেহারায় চেয়ে আছে ফুচকা গুলোর দিকে,আগে কোনোদিন ফুচকা খায়নি সে,নওশাদ বললো আহানা আর রুপাকে ফুচকা খাওয়াবে আহানার কথা শুনে সে এসেছে,কথা হলো গিয়ে ফুচকার প্রতি তার interest নেই আর খেতে কেমন কে জানে
আহানা শয়তানি হাসি দিয়ে ফুচকা খাচ্ছে
.
আহানা!
.
কি?
.
এই মটকার ভিতরে ওগুলা কি?আই মিন টেস্ট কেমন?ঝাল হবে?নাকি মিষ্টি
.
আহানা দুষ্টুমি করে বললো খুব মিষ্টি,গোলাপজামের মতো একদম
শান্ত হেসে দিয়ে গপাগপ একসাথে দুইটাই মুখে দিলো
ঝালের চোট যখন ধরলো চোখ বড়করে আহানার দিকে তাকালো সে,চোখ টুকটুকে লাল রঙ ধারন করেছে,চুপচাপ আহানার দিকে তাকিয়ে বসে আছে সে
শান্তর এমন অবস্থা দেখে আহানা তার হাত থেকে প্লেটটাই রেখে দিলো
শান্তর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে যাচ্ছে অনবরত,আহানার দিকে তাকিয়ে বাকি ফুচকা গুলো খেয়ে যাচ্ছে সে
শেষেরটা খেতে যেতেই নওশাদ হাত থেকে নিয়ে নিলো
.
শান্ত এটা কি করতেছিস তুই??তোরে বলসি না জাস্ট একটা খাবি,তোর ঝালে এলার্জি
নওশাদ পানির বোতল এনে শান্তর পিঠ ডলে পানি খাইয়ে দিলো
শান্ত নাক মুখ খিঁচে চোখ মুছতে মুছতে পানি খেলো
আহানা অসহায় হয়ে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে
সে জানতো না শান্তর ঝাল খেলে সমস্যা হয়
শান্ত পানি সব শেষ করলো তাও ঝাল যাচ্ছে না তার,বড় বড় করে শ্বাস নিচ্ছে
আহানা চিন্তিত হয়ে উঠে গিয়ে ফুচকা আলার টক বানানোর চিনি এক চামচ এনে শান্তর গাল টিপে মুখে ঢুকিয়ে দিলো
শান্তর মুখের ঝাল এবার একটু কমে এসেছে
আহানা ব্রু কুঁচকে ব্যাগ নিতে নিতে বললো ঝাল খেতে জানে না আবার ঝাল খেতে আসে,ঢং
কথাটা বলে আহানা চলে গেলো সেখান থেকে
শান্ত পকেট থেকে রুমাল নিয়ে মুখ মুছতেসে বাচ্চাদের মত,ছোট বেলা থেকেই ঝাল খেতে পারে না সে,ঝাল একদম কম খায়,বেশি খেলেই দম বন্ধ হয়ে চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরে তার
২টার দিকে ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেলো
আহানা কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে শান্তকে খুঁজতেসে
.
আমাকে খুঁজতেসো?
.
আহানা চমকে পিছনে তাকালো,তারপর বললো হুম
.
কেন?
.
সরি,আমি জানতাম না আপনি ঝাল খেতে পারেন না,জানলে বলতাম না এটা মিষ্টি
.
ইটস ওকে
.
শান্তর ইটস ওকে শুনে নিজেকে নির্দোষ মনে করে আহানা চুপচাপ হেঁটে চলে গেলো সেখান থেকে
.
সব টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরে ঘর পরিষ্কার করছে সে
হঠাৎ বিছানার তোষকের নিচে সেই ২হাজার টাকা পেলো যেটা সে শান্তকে দিয়ে চলে এসেছিল
ফোনে তো টাকাও নেই,কল করবো কি করে,আচ্ছা ইমারজেন্সি ব্যালেন্স নিই,তাহলেই তো হয়
ইমারজেন্সি ব্যালেন্স নিয়ে শান্তকে ফোন করলো সে
.
শান্ত ঘুমাচ্ছিলো তখন,সন্ধ্যা ৭টা বাজে
.
হহহহহহুমমমম,কে?
.
আমি
.
আমি কে?
.
আহানা!
.
ওহ তুমি?কি হয়েছে?
শান্ত চাদর সরিয়ে উঠে বসে লাইট জ্বালালো রুমের
.
আমাকে ২হাজার টাকা ফেরত দিলেন কেন?আপনি আমার বাসা ভাড়ার ৬হাজার টাকা শোধ করে দিসেন,আমি ২হাজার টাকা দিলাম,বাকি ৪হাজারও দিয়ে দিব,আপনি আবার ২হাজার ফেরত দিতে গেলেন কেন?
.
শুনো!!তুমি আমাকে যতবার টাকাটা দিয়ে যাবা ততবার আমি ফেরত দিয়ে আসব,এই টাকা আমি নিব না মানে নিব না,আর হ্যাঁ আর একদিন ফেরত দিতে আসলে ছাদ থেকে সত্যি সত্যি ফেলে দিব তোমাকে
.
আপনি খুব খারাপ একটা লোক,খুব খারাপ!
আহানা লাইন কেটে ফোন বিছানার উপর ছুঁড়ে মারলো,এই টাকা আমি কিছুতেই নিব না
পরেরদিন ভোরবেলায় আবার বের হলো মিষ্টিদের বাসার উদ্দেশ্যে,টাকাগুলো ও সাথে নিলো,আজ সেগুলো ফেরত দিবে সে
শান্ত দরজা খুললো জগিং করতে যাবে,দরজা খুলে হাতে তাকিয়ে দেখলো ঘড়ি নেই,নিজের রুমে গিয়ে খুঁজলো তাও পেলো না,নওশাদ সূর্যর রুমে গেলো খুঁজতে
আহানা দরজা খোলা পেয়ে উঁকি দিলো ভেতরে
এটাই সুযোগ,বেয়াদবটা আমাকে দেখার আগে টাকাটা রেখে পালাবো
ওটা মনে হয় উনার রুম,সেখানেই রেখে আসি বরং!
আহানা পা টিপে টিপে শান্তর রুমে ঢুকলো
ইয়া বড় একটা রুম
তার বাসার সব রুম মিলালেও এই একটা রুমের সমান হবে না
রুমের মাঝখানে বিছানা,সেটা দেখেই মন ভালো হয়ে যাবে এত সুন্দর,আর সবচেয়ে বড় কথা হলো পুরো রুমটা কমলা রঙের উপর করা,দেয়াল কমলা রঙের,বেডশিট থেকে শুরু করে কার্পেট ও কমলা রঙের
আহানা দেখতে দেখতে রুমটার মাঝখানে চলে আসলো
শান্ত ঘড়ি পরতে পরতে বের হয়ে যেতে নিতে থেমে গেলো,এটা কে আমার রুমে?
এগিয়ে এসে দেখলো আহানা শান্তর রুমটা ড্যাবড্যাব করে দেখে যাচ্ছে
তারপর টাকাটা বালিশের তলায় রাখলো সে
রেখে পিছন ফিরতেই হঠৎ করে শান্তকে দেখে পিছিয়ে গিয়ে দুম করে খাটে বসে গেলো ভয়ে
শান্ত কোমড়ে হাত দিয়ে বললো তোমাকে মানা করি নাই এই টাকা ফেরত দিতে আসবা না!!
.
তো?আপনার টাকা আমি মুফতে কেন নিব?
.
তোমাকে আল্লাহ কি মাটি দিয়ে বানিয়েছে??আজব মেয়ে তুমি
খালি ভাত আর নুন খেয়ে খেয়ে মাথা গেছে তোমার!সেধে টাকা দিয়ে হেল্প করতে চাচ্ছি আর তুমি কিনা বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছো!মুফতে নিবা না তো?ঠিক আছে
শান্ত আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো বাথরুমের দিকে
.
এই এই কি করতেসেন আপনি,হাত ছাড়ুন আমার,বাঁচাও বাঁচাও
শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে বললো চুপ করো
তারপরও যখন আহানা চুপ হচ্ছে না তখন আহানার মুখ চেপে ধরলো সে
.
চুপ!একদম চুপ,আমি কি তোমাকে রেপ করবো নাকি?হাত ধরলেই এত চেঁচাও কেন সবসময়?
.
তো কি করবেন?বাথরুমে নেন কেন?
.
শান্ত দরজা খুলে এক পাহাড় ময়লা জামা দেখালো,এগুলা ধুয়ে দাও,বিনিময়ে ২হাজার টাকা নাও
.
আমাকে কি আপনার বুয়া মনে হয়?আমি বুয়াগিরি করে টাকা নিব না
আহানা চলে যেতে নিতেই শান্ত হাত টেনে ধরে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ধরলো ওকে
.
আহানা চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে পুরো মুখ ঢেকে রেখেছে,সিনেমায় দেখেছিল নায়করা এমন করে কিস করে নায়িকাকে,তা ভেবে আহানার ভয় করছে
.
শান্ত মুখ বাঁকিয়ে ব্রু জোড়া নাচিয়ে বললো তোমার আসলে কি মনে হয়?
তোমার মত বোকা,শয়তান বেয়াদব মেয়েকে আমি কিস করবো?আমি?শাহরিয়ার শান্ত?ভেরি ফানি,হয় কাজ করে টাকা নাও নয়ত এমনি এমনি নাও,আমার কোনো কিছুতেই সমস্যা নেই,কিন্তু তোমায় টাকা নিতেই হবে
.
আহানা মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো আমি টাকা নিব না,বাই
কথা শেষ করে আহানা হনহনিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো রুম থেকে
শান্তর মেজাজ গেলো গরম হয়ে,উফ এই মেয়েটা এমন কেন!!!
আহানা হাঁপাতে হাঁপাতে মিষ্টিদের বাসায় ঢুকলো,যাক বাবা টাকাটা রাখতে পেরেছি এটাই অনেক!
.
হ্যাঁ বাবা,পরের সপ্তাহে ইনশাল্লাহ আমি তোমার কাছে থাকবো,ঈদের আগের দিনই রওনা হবো,ওকে বাই,নাহ বেশিদিন থাকবো না,পরের মাস থেকে আবার পরীক্ষা,হুম আচ্ছা
শান্ত কথা বলতে বলতে বাইকে উঠে ভার্সিটির দিকে চলে গেলো
আহানা বাসায় ফিরে রান্নাবান্না সেরে খেয়ে নিয়ে ভার্সিটিতে আসলো
.
আহানা!
.
কি এশা?আমাকে ডাকলে?
.
তোমার ওড়নায় এটা কি গিট্টু দিয়ে রাখসো?
.
আহানা চমকে ওড়না হাতে নিয়ে গিট্টু দেখে অবাক হলো,কিসের গিট্টু এটা,আমি তো দেই নাই
ভাবতে ভাবতে গিট্টুটা খুললো সে,ভিতরে ২হাজার টাকা
উফ!!
এই বান্দরটা আমার নাগাল পেলো কই,আসার পর থেকে তো দেখলাম না একবারও
আবার আমার ওড়নায় গিট্টু বাঁধলো কখন!
শান্ত বাইকে বসে দাঁত কেলিয়ে আছে ওর দিকে তাকিয়ে
এটা দেখে আহানার গা জ্বলে যাচ্ছে,ইচ্ছে করছে গিয়ে চুল ছিঁড়ে দিই বেয়াদবটার
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_১৯

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_১৯
#Writer_Afnan_Lara
?
শান্ত চোখ বন্ধ করে আছে
হাত মুঠো করে নিজেকে কনট্রোল করে নিলো
আহানা বাসায় এসে মুখ গোমড়া করে বসে আছে,আজ ভার্সিটি প্রাইভেট কোনোটাতেই যাব না,মেজাজ বিগড়ে গেছে পুরা
শান্ত সেই কখন থেকে ভার্সিটির গেটের দিকে চেয়ে বসে আছে
.
রুপা আমাকে বললো আহানা আজ আসবে না
.
নওশাদের কথা শুনে শান্ত চুপ করে জ্যাকেটটা হাত থেকে পরে নিয়ে কৃষ্ণচূড়া ফুলের গাছটার নিচে এসে বসলো
বিকাল ৪টা পর্যন্ত বসে ছিল ভাবলো আহানা হয়ত টিউশনি করাতে যাবে এখান দিয়ে,কিন্তু না সে আজ টিউশনি করাতেও আসেনি
শান্তর রাগ খুব বেড়ে গেলো বাসায় ফিরে এসে দরজা বন্ধ করে বসে আছে চুপচাপ
আহানা জানালার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে শুয়ে আছে,কাল রাতে যে পানি আর বিসকুট খেয়েছিল এখন পর্যন্ত কিছুই খায়নি সে
আকাশ দেখে যাচ্ছে চুপচাপ
মীম রান্না করে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে আবার ঘুম থেকে উঠে কাজে চলে গেছে
আহানা খেয়েছে কি খায় নাই সেদিকে তার বিন্দু মাত্র নজর নেই
রাত ৮টা বাজে,আহানাকে এবার খিধা ভালো করে ধরলো উঠে গিয়ে পানি আর বিসকিট একটা নিয়ে এসে বসলো খাটের উপর
বাইরে থেমে থেমে মেঘ গর্জন দিচ্ছে,যে কোনো সময় বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে
শান্ত ছাদে এসে বসে আছে
আহানাও উঠানে দাঁড়িয়ে নির্ভয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে
বৃষ্টি ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে,আহানা চোখ বন্ধ করে ভিজতেসে
শান্ত ছাদে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে ভিজতেসে,মনে হচ্ছে সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যাচ্ছে
বৃষ্টির পানি আহানার মুখ ছুঁইয়ে নিচে পড়ছে আর শান্ত নিচের দিকে মুখ করে থাকায় সোজা তার পিঠের উপর পড়তেসে
♥”খুব অদূরে রাত্রি ভোরে
ইচ্ছে গুলো হচ্ছে নিখোঁজ”
“জানাশোনা তোর বায়না
আনমনা হই আমি অবুঝ♥
একটু নয় অনেক বেশি!না বাসি না,আমি আহানাকে ঘৃনা করি ঘৃনা!!
শান্ত পা দিয়ে ফুলের টব একটা ফেলে দিলো নিচে থাকা একটা ডোবায়
আহানার গা কেঁপে উঠলো হঠাৎ চোখ মেলতেই দেখলো আকাশে তার কাঁটার মত কি যেন,বজ্রপাত,এগুলো সে ছোটবেলায় দেখলে ভয় পেতো অনেক,আবার নিজে নিজে সাহসের সাথে এসবের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে শক্ত করতো
শরীর কাঁপতেসে হঠাৎ করে আর থাকা যাবে না এখানে
আহানা তার রুমে ফিরে গেলো
শান্ত চুলের থেকে পানি ঝাড়তে ঝাড়তে নিচে নেমে আসলো
আহানা রুমে ফিরে গামছা দিয়ে গা মুছতেসে,মুছা শেষ করে শুয়ে পড়লো
.
সকাল ৬টা বাজে!শান্ত ১০০বার লিফটের দিকে তাকিয়েছে,২০০বার রোডের দিকে তাকিয়েছে,কিন্তু আহানা আসতেসে না,কি হয়েছে ওর!
১০টার দিকে রেডি হয়ে ভার্সিটিতে আসলো শান্ত
নাহহ আজও সে আসেনি,কি হয়েছে যে ভার্সিটিতেও আসতেসে না
শান্ত বাইক নিয়ে বের হতে যেতেই এলিনা এসে পথ আটকালো
.
বেব চলো আজ ঘুরতে যাই দূরে কোথাও
.
নাহ,আমার জরুরি একটা কাজ আছে,বাই!
.
শান্ত বাইক স্টার্ট দিয়ে সোজা আহানার বাসার সামনে আসলো,জানালা বন্ধ বাসার
শান্ত দরজার সামনে এসে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে সাহস করে নক করতে যেতেই দরজাটা খুলে গেলো,দরজা আগে থেকেই খোলা ছিল,জাস্ট দরজা একটু লাগানো ছিল,ফাঁক ছিল না বলে বাইরে থেকে বোঝা দায় যে এটা বন্ধ নাকি খোলা
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
শান্ত অবাক হয়ে এক পা এক পা করে ভিতরে ঢুকলো
রুমটা অন্ধকার হয়ে আছে,হালকা আলো তা দিয়ে বিছানা স্পষ্ট দেখা যায়
কোণার বিছানাটায় আহানা চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে,বাকি বিছানাগুলো খালি,বাসায় তো আহানা ছাড়া আর কেউ নেই মনে হয়
শান্ত একটু এগিয়ে এসে আহানার বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো
আহানার শুকনো মুখটা দেখা যাচ্ছে বাকিটা চাদরে ঢাকা
শরীর খারাপ নাকি ওর,বেলা ১২টা বেজে আসছে এখনও শুয়ে আছে
শান্ত হাতটা নিয়ে আহানার কপালে রাখতেই চমকে উঠলো,এত জ্বর!!
শান্ত তাড়াতাড়ি করে রান্নাঘরে গিয়ে একটা মগে করে পানি নিয়ে এনে আহানার পাশে বসলো,কথা হলো কি দিয়ে মাথায় পোটি দিবে
আহানার মাথার পাশে ওর গায়ের ওড়না রাখা
শান্ত সেটা নিয়ে ভিজিয়ে আহানার কপালের উপর রাখলো তারপর দেরি না করে বাসার বাইরে গিয়ে নওশাদকে ফোন দিয়ে বললো রুপাকে নিয়ে জলদি আহানার বাসায় আসতে
দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে আহানা ভাবলো তার রুমমেট মীম এসেছে,সে এসময়ে আসে,তাই আহানা দরজা আটকায়নি
একটু কেশে আহানা বললো
মীম আপু এসেছো?আমার জন্য সহ একটু রাঁধবে আজকে?
আমার শরীর ভালো না,রাঁধতে পারিনি,কাল থকে ভাত খাইনি,আমি ভাত দিয়ে নুন দিয়ে খেতে পারবো,এক বাটি ভাত দিলেই হবে
শান্ত রোবটের মত দাঁড়িয়ে আহানার কথা শুনতেসে,চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো তার
শান্ত গিয়ে আহানার বেডের পাশের আলমারিটা খুললো,তেমন আহামরি কিছু নেই,একটা জামা ভাঁজ করা আছে,পুরনো,মনে হয় বাসায় পরার জামা এটা,আর নিচের তাকে ২টা বোয়াম,তাও খালি পড়ে আছে
বাকিদের আলমারি লক করা
কিচেনে গিয়ে দেখলো সেখানে কিছুই নেই বাড়তি খাবার বলতে
শান্তর বুকটা ফেটে যাচ্ছে এসব দেখে

শান্ত এসে ওড়না আবার ভিজিয়ে আহানার মাথায় দিলো,বাসার দরজা লাগিয়ে বের হয়ে গেলো,পথেই রুপা আর নওশাদের সাথে দেখা হলো ওর
.
রুপা! আহানার অনেক জ্বর,তুমি গিয়ে ওকে একটু দেখো আমি ঔষুধ আনতেসি
রুপা চলে গেলো আহানার বাসার দিকে
নওশাদ শান্তর সাথে গেলো ঔষুধ আনতে
.
রুপা আহানার মাথায় পোটি দিতে থাকলো,ইস গায়ে এত জ্বর একবার ফোন করেও বলে নাই,আমার ফোন ও ধরে নাই
.
শান্ত ঔষুধ কিনে একটা রেস্টুরেন্টে গেলো
.
কিরে কি করবি?
.
আরে ওর বাসায় কোনো খাবার নাই,কিছু খেয়ে তো ঔষধ খাবে
.
বাইরের খাবার খেয়ে পাক্কা আরও অসুস্থ হয়ে যাবে,তুই এক কাজ কর,বাজার কর,রুপা রান্না করবে
.
হুম ভালো বুদ্ধি
শান্ত তরকারি, চাল আর মাছ কিনে আহানার বাসায় ফিরে গেলো নওশাদকে নিয়ে
রুপা চোখ বড় করে চেয়ে বললো আমি তো রান্না করতে পারি না!
নওশাদ ব্রু কুঁচকে বললো তুমি না বিরিয়ানি রাঁধতে পারো?
.
আরেহহ সেটা তো এমনি বলছিলাম?সত্যি সত্যি বাপি আমাকে কখনও কিচেনে যেতে দেয়নি
.
ওকে চল নওশাদ আমি আর তুই রাঁধি
.
আর ইউ ম্যাড শান্ত!!রুপা মেয়ে হয়ে রান্না পারে না আর আমি আর তুই ছেলে হয়ে পারবো?
.
একটু মগজ লাগায় কাজ কর,ইউটিউব থাকলে রানী ভিক্টোরিয়ার নাতনিও রান্না পারবে
.
শান্ত রান্নাঘরে গিয়ে হাতে আলু পেঁয়াজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
শান্ত বল কি লিখে সার্চ করবো?
.
হাউ টু মেক তরকারি
.
শুন,কতগুলো ভিডিও এসেছে কিন্তু কথা হলো ইউটিউব চ্যানেলের কিছু আপু ভাইয়ারা তরকারিতেও দই ইউস করে,দই ছাড়া কিছু বুঝে না,দই পাবো কই?
.
নওশাদ!মাথা খারাপ করিস না
.
হ্যাঁ আমি বলতেসি প্রথমে তেল দিয়ে পেঁয়াজ দে
.
এক মিনিট,পেঁয়াজ কাটে কেমনে?
.
ওহ তাই তো দাঁড়া সার্চ করতেসি
.
একটা থাবড় দিমু,ইউটিউবে পেঁয়াজ কাটা দেখাবে?
.
আরে দেখাবে,আমি একবার দেখসিলাম দরজা কিভাবে খোলে?
.
দেখ এমন করে কাটে
.
ওকে!
শান্ত ছুরি নিয়ে পেঁয়াজ কাটতেসে আর কেঁদে যাচ্ছে
নওশাদ দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে
.
আম্মু!!?ভাগ্যিস মাছ কাটিয়ে আনছিলাম বাজার থেকে
.
ভাই কি দরকার তোর আহানার জন্য এত কষ্ট করার!
.
আমি বলেছিলাম তোকে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনবো,তুই শুনিস নিই আমার কথা,তোর সো কলড গফ নাকি রান্না পারবে,এখন হলো তো!!
.
আমি কি জানি রুপা রান্না পারে না
.
ডান,পেঁয়াজ কাটা শেষ
.
ওকে এবার পাতিলে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি দে,তারপর রসুন,আদা বাটা দে
.
এক মিনিট রসুন আদা বাটা কই পাবো?
.
আরে আগুন কমা,তেল পুড়ে যাবে,আগে বলবি তো বাটা মসলা নাই,এক কাজ কর গোটা দিয়ে দে,বাটা বাটি তো পারি না আমরা
.
ওকে
.
পাঁচমেশালি করে অবশেষে ইলিশ মাছ দিয়ে বেগুন আলু দিয়ে তরকারি রাঁধলো দ্যা গ্রেট শাহরিয়ার শান্ত আর সহযোগিতায় ছিলেন নওশাদ রহমান
.
রুপা আহানাকে উঠিয়ে বসালো
আহানা রুপাকে দেখে চমকে বললো তুই?এখানে?আমি ভাবলাম মীম আপু
.
তোর জ্বর হয়েছে একবারও বলিস নি কেন?
.
তুই বাসায় আসলি কি করে আমি তো দরজা লাগিয়েছিলাম,ওহ নাহ মনে হয় লাগাই নিই,মীম আপু আসার কথা ছিল তাই দরজা লাগাই নি
.
আহানা টেবিলের উপর তাকিয়ে দেখলো একবাটিতে তরকারি আরেক বাটিতে ভাত
.
এগুলা?
.
রুপাকে শান্ত বলেছে যাতে ওর নাম না নেয়
.
আমি রেঁধেছি,তোর তো ঔষধ খেতে হবে তাই রান্না করেছি
.
এমন সাদা সাদা কেন?
.
শান্ত নওশাদের মাথায় ঘুষি দিয়ে বললো কিরে সাদা কেন?
.
তোরে কইসি হলুদ দিতে তুই দেস নাই?
.
শান্ত আর নওশাদ রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে কথা বলতেসে
.
কখন বলেছিস?
.
রান্না শেষ হওয়ার পর নামানোর আগেই তো বলসি হলুদ দে
.
আহানা ভাত নিয়ে তরকারি এক চামচ নিলো,তারপর মাখিয়ে এক লোকমা মুখে দিতেই মাথা ঘুরিয়ে বমি আসতেসে তার
এত বিশ্রি খাবার,হলুদ নাই,নুন বেশি,ঝাল তো নাই একদম তার ওপর বাটা মসলার জায়গায় গোটা দিসে সব
আহানা বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে গেলো বমি করতে
.
শান্ত রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে চোরের মত তাকিয়ে আছে সেদিকে
কি হলো?বমি করতেসে কেন?
.
রুপা বুঝতেসে না,তাই সে এক চামচ নিয়ে মুখে দিয়ে চোখ মুখ খিঁচিয়ে বললো এই অখাদ্য কে রেঁধেছে?
ওয়াক,রোগীকে এটা খাইয়ে মারতে চাও তোমরা?
আহানা কেঁপে কেঁপে বাথরুম থেকে বেরিয়ে বাইরে পা রাখতেই পড়ে যেতে নিলো শান্ত সাথে সাথে ধরে ফেললো ওকে
আহানা মুখ তুলে তাকিয়ে দেখলো শান্ত ওকে ধরে আছে
তাড়াতাড়ি হাত ছাড়িয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে
.
আপনি?আমার বাসায়?
.
ইয়ে আসলে সরি
.
আহানা ব্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে গিয়ে বিছানায় বসলো
.
তোর আইডিয়াতে আমি বাসায় রান্না করার জন্য হ্যাঁ বলেছিলাম,দেখলি তো এখন!
এখন যা বাইরের একটা ভালো মানের রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার প্যাক করে আন
.
শান্ত একটা চেয়ার টেনে একটু দূরে গিয়ে বসলো
.
আহানা রান্না করা খাবার গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে
এক গ্লাস পানি নিয়ে খেয়ে বললো এটা?তুই রেঁধেছিস রুপা?
.
না?আমি কি রান্না পারি নাকি,এটা শান্ত ভাইয়া রাঁধছে
.
শান্ত এমন অখাদ্য রেঁধেছে শুনে আহানা ফিক করে হেসে দিলো,শান্তর মুখেও হাসি ফুটলো আহানার হাসি দেখে,রুপাও হেসে দিলো
.
এতসবের দরকার ছিল না
আহানা ভাত আলাদা করে নিয়ে পানি ঢেলে খেয়ে নিলো ২মিনিটেই
রুপা আর শান্ত অবাক হয়ে চেয়ে আছে
.
নওশাদ খাবার আনতে গেছে,তুই শুধু ভাত খেতে গেলি কেন?
.
সমস্যা নেই
.
আহানা ঔষুধ একটা নিয়ে পানি দিয়ে খেলো
নওশাদ খাবার নিয়ে এসে গেছে
আহানা বললো সবাইকে খেয়ে নিতে
রুপা আর নওশাদ রাক্ষসের মত খাচ্ছে,মনে হয় কয়েকবছর ধরে খাবার খায়নি,শান্ত আহানার মত করে খালি ভাতে পানি দিয়ে লুকিয়ে খেলো
.
কিরে চিকেন নেস না কেন?তুই তো চিকেন ছাড়া খেতে পারিস না
.
না খাওয়া হয়ে গেছে আমার
.
আহানা ঘুমিয়ে পড়েছে,জেগে থাকার চেষ্টা করেছে এতক্ষণ তাও ঘুম এসে গেলো চোখে
.
বিকাল হয়ে গেছে,শান্ত বললো আরেকটু থাকবে কিন্তু নওশাদ টেনে নিয়ে গেলো ওকে
রুপা বললো আহানা ঘুম থেকে উঠলে তারপর সে যাবে
আহানা ৬টটার দিকে উঠলো,রুপা ওকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বাই বলে সেও চলে গেলো বাসা থেকে
আহানা দরজা লাগিয়ে রান্নাঘরে আসলো,কেয়ামত বানিয়ে রাখছে রান্নাঘরকে,আল্লাহ!!
অবশিষ্ট বেগুন,আলু,চাল কতগুলো রয়ে গেছে
শান্ত ইচ্ছে করে বেশি বেশি কিনেছে যেন আহানা পরেও রান্না করে খেতে পারে
আহানা তাকের উপর দেখলো প্যাক করা খাবার রেস্টুরেন্টের
শান্ত আলাদা এক প্যাকেট রেখে গেছে
উপরে ছিল একটা চিঠি
তাতে লেখা ছিল-
এগুলা খেয়ে ঔষুধ খাবা
ইতি রুপা
.
আমি জানি এটা শান্ত লিখেছে,নিজের নাম লিখে নাই কারন ভেবেছে নিজের নাম লিখলে হয়ত আমি খাব না
আহানা সব গুছিয়ে খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে টেবিলে রেখে বিছানায় এসে বসলো
.
সাড়ে ৮টা বাজে,আহানা জানালায় মাথা ঠেকিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে,২টা দিন টিউশনি করাতে পারিনি,কি জানি চাকরি থাকবে কি থাকবে না
ফোন বাজতেসে,আহানা হাতে নিয়ে দেখলো unknown নাম্বার,এটা আবার কার নাম্বার?
রিসিভ করে হ্যালো বললো সে
ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ আসতেসে না শুধু হালকা করে শ্বাস নিশ্বাসের আওয়াজ ভেসে আসতেসে
.
কে?হ্যালো?
.
তোমার শরীর কেমন এখন?
.
আপনি কে?

শশশশশাননননন্ত
.
ওহ,আপনি আমার নাম্বার পেলেন কই?
.
রুপার কাছ থেকে নিয়েছি,তোমার শরীর কেমন এখন সেটা বলো,তোমার সাথে ফালতু কথা বলার সময় নেই আমার
.
আহানা রেগে বললো ভালো আছি,মরি নাই
শান্ত ও রেগে গেলো মরার কথা শুনে
কেটে দিলো লাইন
আহানা চোখ বড় করে ফোন রেখে দিয়ে আবারও বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকলো
এই ছেলেটা সুন্দর করে কথাই বলতে জানে না,বেয়াদব কোথাকার!
খাবার খেয়ে ঔষুধের কথাই ভুলে গেলো আহানা,শুয়ে পড়লো সে
রাজ্যের ঘুম চোখে এসে গেসে তার
হঠাৎ ফোনটা আবার বেজে উঠলো,আহানা ঘুম ঘুম চোখে রিসিভ করলো
.
হ্যালো!কে?
.
আমি
.
আমি কে?

শান্ত
.
কি হয়েছে?নাম্বার পেয়ে মনে হয় হাতে আকাশের চাঁদ পেয়েছেন,আমাকে এত ডিস্টার্ব করেন কেন,একদম ব্লক মেরে দিব
.
শুনো তোমাকে ডিস্টার্ব করার ইচ্ছা নাই আমার,জাস্ট জানতে কল করেছিলাম ঔষুধ খেয়েছো কিনা
.
ইস ভুলে গেসিলাম,এইতো খাচ্ছি
.
কিহ!ভুলে গেসো মানে?ঔষুধের কথাও মানুষ ভুলে যায়?তুমি আসলেই একটা বেয়াদব মেয়ে
.
এই ঠিক করে কথা বলেন,আমি ঔষুধ না খেলে আপনার কি?
.
কাল ভার্সিটিতে আসিও,বুঝাবো আমার কি!
শান্ত লাইন কেটে দিলো কথাটা বলে
.
কচু করবে আমার?
চলবে♥