প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_১৮
#Writer_Afnan_Lara
?
কাল আমাকে নওশাদ একটা শাড়ীও কিনে দেয়নি,ওকে নিয়ে গেছিলাম শাড়ী কিনতে
.
হয়ত হাতে টাকা ছিল না
.
হুম,নে রাখ ব্লাউজ,কাল তাড়াতাড়ি আসিস কেমন?তাড়াতাড়ি আসলে ফুলের শুভেচ্ছা পাওয়া যাবে
.
মানে??
.
ফুল আমাদের গায়ে ছু্ঁড়ে মেরে ওয়েলকাম জানাবে আর কি
আহানা রুপার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো
.
দুম!!!
.
উফ শান্ত তোরে কে কইসিলো রঙ চা খাইতে??কফি বাদ দিয়ে
এখন মাথা ব্যাথার শোধ আমার উপর দিয়া উঠাইতেছিস,এত জোরে কেউ ঘুষি মারে?যা বাসায় ফিরে রেস্ট নে আর কড়া করে কফি বানিয়ে খা যা
শান্ত অপেক্ষা করছে ছুটি হলে যাবে,আহানাকে একটু জ্বালিয়ে তারপর যাবে
.
আহানা ভাবলো কাল ঐ রোড দিয়ে যাওয়ায় ধরে ফেলছিল আমাকে,আজ কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচ দিয়ে যাব,তাহলে গোলায় যাবে,বুঝতে পারবে না আমি কোন রোড দিয়ে যাবো
আহানা কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছটার নিচ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে
.
দাঁড়াও!
.
আহানা চোখ বন্ধ করে নিজেকে বেকুব বলতে বলতে পিছনে তাকালো
আপনি?
.
হুম!
.
কি?
.
কিছু না,যাও
আহানা মাথা ঝাঁকিয়ে জোরে হেঁটে চলে গেলো,কিছুদূর গিয়ে থেমে গেলো,শান্তর চোখ মুখ এমন লাগতেসিলো কেন?
আহানা আবারও ফিরে এসে দেখলো শান্ত বাইকে হেলান দিয়ে মাথার চুল টানতেসে চোখ বন্ধ করে
আহানা একটু এগিয়ে এসে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো কি হয়েছে আপনার?
.
শান্ত চমকে মাথা তুলে তাকালো আহানার দিকে
তুমি যাও নি এখনও?
.
নাহ মানে আপনাকে এমন লাগতেসে কেন,কি হয়েছে?
শান্ত মাথার চুল টেনে ঠিক করে বললো মাথা ধরেছে,সকালে কফি খাইনি,কফি না খেলে আমার শরীর খারাপ করে
.
বাসায় চলে যান
.
হ্যাঁ
শান্ত বাইকে উঠে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো,শরীরে মনে হয় কোনো শক্তি নেই
আহানা দেখলো শান্ত জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে
আহানা তার ব্যাগটা গাছের শেকড়ের উপরের রেখে শান্তকে বললো ২০টাকা দিতে
.
শান্ত মাথার চুল জোরে টানতে টানতে পকেট থেকে মানিব্যাগ নিয়ে পুরো মানিব্যাগটাই আহানার হাতে ধরিয়ে দিলো
আহানা ২০টাকা নিয়ে মানিব্যাগটা শান্তর হাতে দিয়ে চলে গেলো
শান্ত আহানার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গাছের শেকড়ের দিকে তাকালো,ব্যাগ রেখে গেছে তার মানে আবার আসবে
আহানা এক কাপ কফি নিয়ে এসে শান্তর হাতে দিলো
শান্ত খুশি হয়ে সাথে সাথে পাগলের মত গরম গরম কফি খেয়ে নিলো
.
থ্যাংকস!
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
ওয়েলকাম
আহানা ব্যাগটা নিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত বললো দাঁড়াতে
.
কি?
.
বাইকে উঠো,আমি তোমাকে দিয়ে আসি
.
আহানা ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে বললো নাহ,ধন্যবাদ
ধন্যবাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলো সে ওখান থেকে
বুকের ভেতরটা কেঁপেই যাচ্ছে তার
শান্ত মুচকি হেসে হাতটা বাড়িয়ে ধরলো সামনে, কতগুলো ফুল পড়ে ভরে গেছে তার হাত
গাছটা মনে হয় আহানার মত আমাকেও চিনে গেছে তাই তো হাত বাড়াতেই এত ফুল এসে ভরে গেলো
পিউদের বাসা থেকে বেরিয়ে এবার যাব আকাশদের বাসায় কিন্তু একি!সেই ছেলেগুলো এখানেও রিকসা এনে হাজির করেছে,ওরা জানে কি করে আমি এখানেও প্রাইভেট পড়াই
আহানা বাধ্য হয়ে রিকসায় উঠলো,রিকসা আকাশদের বাসার সামনে এসে থামলো
আহানা আকাশকে পড়িয়ে বের হতেই আবার দেখলো সেই রিকসা দাঁড়িয়ে আছে সাথে ছেলেগুলাও
.
আসসালামু আলাইকুম,ভাবী,ভালো আছেন তো??
আহানা চোখ বড় করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো ভাবী?কার? কিসের?
.
ছেলেটা কাশ দিয়ে বললো কিছু না
যান বাসায় যান,আল্লাহ হাফেজ
ছেলেগুলো নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো সেখান থেকে
আহানা ভাবতে ভাবতে রিকসায় উঠলো,কিছু তো গড়বড় আছেই!!
.
বাসায় ফিরে ভাত বসিয়ে বই নিয়ে পড়তেসে আহানা
শান্তর কথা মনে পড়ে গেলো,মানুষ ঔষধ না খেলে অসুস্থ হয়ে যায় আর এই ছেলেটা কফি না খেলে অসুস্থ হয়ে যায়,আজব ব্যাপার!
কয়েকমাস আগে আহানা বাসার সামনের উঠানটাই মরিচের বিচি ফেলেছিল,সেখানে গাছ উঠেছে ৩টা,সেই গাছ ৩টার মধ্যে একটাতে মরিচ ধরেছে অনেকগুলো
আজকে উঠানের সেই মরিচগাছটার থেকে আহানা একটা মরিচ এনে ভাত নিয়ে খেতে বসলো,তার হাতে করা গাছের মরিচ,স্বাদই আলাদা,ঝাল নেই কিন্তু ঝাঁঝ আছে
খাওয়া শেষে সব গুছিয়ে শুয়ে পড়লো সে
.
পরেরদিন সকাল সকাল আবার বের হলো মিষ্টিকে পড়াতে
শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছিলো আহানাকে দেখে কফিটা তাড়াতাড়ি শেষ করলো
আহানা মিষ্টিদের বাসায় ঢুকার সময় শান্তর বাসার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতেসে তাও ওর দিকে তাকিয়ে
ডাহা মিছা এটা আমি জানি,ফোনে কথা বলার অভিনয় করতেছে?
আহানা কিছু না বলে চুপচাপ ভেতরে চলে গেলো
মিষ্টিকে পড়িয়ে বাসা থেকে বের হতেই আবার শান্ত সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলো
.
আপনার শরীর কেমন আছে?
.
ভালো
.
আচ্ছা
আহানা কি বলবে আর ভেবে না পেয়ে আরেকদিকে ফিরে চলে গেলো
শান্ত ও আর কিছু বললো না,আহানার সামনে আসলে মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হয় না তার
♣
নওশাদ,সূর্য,রিয়াজ আর শান্ত হলুদ পাঞ্জাবি পরেছে
ইয়েলো স্কোয়াড?
রোডে ৪জনে বের হতেই সবাই হা করে চেয়ে রইলো
নওশাদের বাইকে রিয়াজ উঠেছে আর শান্তর বাইকে সূর্য
৪জনে ভার্সিটিতে এসে কাজে লেগে গেলো
.
আহানা শাড়ীর কুচি ঠিক করতেসে রুপা এর মাঝে ২৪বার ফোন করেছে তাড়াতাড়ি আসতে নাহলে ফুলের শুভেচ্ছা পাবে না
আহানা তাড়াতাড়ি করে কুচি ঠিক করে চুল ছেড়ে দৌড় দিলো
না কোনো মেকআপ, না কোনো স্টাইল
সাদামাটা একটা মেয়ে,গায়ে নীল শাড়ী জড়িয়ে রোড দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে,আহামরি লাগছে না তাও রোডের সবাই ওর দিকেই চেয়ে আছে,কারন ঢাকায় এই বেশে কোনো মেয়েকে তেমন দেখা যায় না,শাড়ী পড়লে অন্তত লিপস্টিক হলেও ঠোঁটে থাকে তাদের কিন্তু আহানা সেরকম কোনো সাজই দেয়নি,তাই সবাই কিছুটা অবাক হয়েই চেয়ে আছে
চুলগুলো যেন ঝিকমিক করতেসে আহানার,কানের দুল গলার সেটটায় ভারী মানিয়েছে তাকে,একটা শপিং মলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো আহানা,একটু দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে নিলো গ্লাসে,একটু লিপস্টিক হলে কতই না ভালো লাগতো
মুখটা কালো করে আবারও হাঁটা ধরলো সে
.
দে শান্ত ঝুঁড়িটা আমাকে দে
.
তুই ফুলগুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাক,আমি ওকে বললে ঝুড়ির সব ফুল ঢেলে দিবি
.
কিন্তু কার উপর?
.
আরে প্রিন্সিপাল স্যারের উপর,আর কার,তোর রুপার?
।
যাহহহ কি বলিস!
.
শান্ত নওশাদকে ঝুঁড়িটা দিয়ে ভার্সিটির গেটের দিকে গেলো
আহানা আসতেসে
শান্ত এদিক ওদিক তাকিয়ে সামনে তাকাতেই চোখ আটকে গেলো তার
আহানা হেঁটে আসতেসে দূর থেকে,তাকে দেখা যাচ্ছে
গায়ে তার দেওয়া নীল শাড়ীটা,খোলা চুল,আর কিছু না
কোনো সাজ না,তাও শান্ত হা করে চেয়ে আছে তার দিকে
ওওওওওওয়াওও
.
এ্যা?কি?ওওও কি?ওকে?কি বলতেছিস শুনি না,ওকে বললি??
আহানা শান্তর দিকে একবার তাকিয়ে ভিতরে চলে গেলো
নওশাদ ভাবলো প্রিন্সিপাল স্যার আসছে
সে ফুলের ঝুঁড়ির সব ফুল আহানার গায়ে ঢেলে দিলো
আহানা থেমে গিয়ে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে উপরের দিকে তাকালো,ফুল পড়েই যাচ্ছে,থামাথামি নাই,এক ঝুঁড়ির ফুলের পাপড়ি তো কম না
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে রোবট হয়ে গেছে
নওশাদ চোখ ডলে দেখলো এটা আহানা,ইস! শান্ত!!এটা তোর প্রিন্সিপাল?
বেয়াদ্দপ!এক ঝুঁড়ি ফুল নষ্ট করলি!
শান্তর হুস আসলো এবার,এগিয়ে এসে বললো আমি কি ওকে বলসিলাম?তুই ঢেলেছিস কেন?
.
তুই ওওওওও বলে কি যেন বলছিলি,আমি ভাবলাম ওকে বলেছিস
.
তোর মাথা
.
আরেহ সব ফুল তোমরা নষ্ট করলা?নওশাদ!আমার গায়ে দেওয়ার জন্য কোনো ফুল রাখলে না তুমি
.
না বেবি,কে বললো
নওশাদ উপর থেকে নেমে আহানার সামনের থেকে ফুল কুড়িয়ে রুপার গায়ে মারলো
.
থ্যাংকু☺
.
এক মিনিট,আহানা??
এই শাড়ীটা তো আমি কাল মার্কেটে পছন্দ করেছিলাম,তোর খালা এটা পেলো কই
.
জানি না তো
.
যাই হোক,এরকম হয়ে এসেছিস কেন?একটু লিপস্টিকও দেস নাই,মরা মরা লাগতেসে এদিকে আয়
রুপা আহানার হাত ধরে নিয়ে গেলো
.
শান্ত এখনও ওদিকে তাকিয়ে আছে
নওশাদ ঝুঁড়িটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো আরেক ঝুড়ি ফুল আনতে
শান্ত ঝুড়িটা নিয়ে নওশাদকে বকতে বকতে চলে গেলো
.
রুপা খুব সুন্দর করে আহানার ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে দিয়েছে
ব্যাস এবার তোকে খুব সুন্দর লাগছে
.
শান্ত দোকানদারকে ফুলের ঝুড়ি দিয়ে বললো ফুলের পাপড়ি ভর্তি করে দিতে,পাশে তাকিয়ে দেখলো একটা ছোট্ট মেয়ে হাতে টিপ নিয়ে বিক্রি করতেসে
শান্ত মুচকি হেসে এক পাতা নীল টিপ কিনে নিলো তার থেকে,টিপ পকেটে ঢুকিয়ে আবারও ভার্সিটিতে ফিরে গেলো ঝুড়ি হাতে নিয়ে
.
আহানা আর রুপা ক্যামপাসে দাঁড়িয়ে ভার্সিটির ডেকোরেশন দেখতেসে
শান্ত দূরে দাঁড়িয়ে আহানাকে দেখে যাচ্ছে
.
কিরে ভাই তুই এত কাম চোর হলি কবে থেকে?
স্টেজটা ঠিক করার দায়িত্ব তোর ছিল না?এরকম ড্যাবড্যাব করে ঐদিকে কি দেখস তুই?
নওশাদ পিছন ফিরতে যেতেই শান্ত ওরে ঘুরিয়ে নিয়ে গেলো
চল স্টেজ ঠিক করি
.
আহানা তুই বাইরে থাক আমি ওয়াসরুম থেকে আসতেসি
.
ঠিক আছে
আহানা কি যেন ভেবে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে গেলো,কয়েকটা ফুল নিয়ে কানে গুজলো
লেকের কাছে গিয়ে পানিতে উঁকি দিয়ে নিজেকে দেখে হাসলো সে
হঠাৎ পানিতে শান্তর প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলো
ভয় পেয়ে পিছন ফিরে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো আহানা
.
একটা জিনিস বাকি রয়ে গেছে
.
কি?
.
শান্ত আঙ্গুল উঠিয়ে আহানার কপাল ছুঁয়ে দিলো
.
আহানা কপালে হাত দিয়ে লেকে দেখতে যেতেই শান্ত হাত ধরে আটকালো আহানাকে
তারপর নিজের হাতের ঘড়িটা আহানার সামনে নিয়ে হাত বাঁকিয়ে ধরলো
আহানা স্পষ্ট ভাবে নিজেকে শান্তর ঘড়ির কাঁচে দেখছে,একটা টিপ তার কপালে
.
এটারই কমতি ছিল
.
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো
.
শশী ম্যাম অবাক হয়ে বললেন আজ ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট আর মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্টদের দেখে মনে হচ্ছে হিমু আর রুপা,ছেলেরা হলুদ আর মেয়েরা নীল,বাহ কম্বিনেশনটা নাইসসস!!
.
শান্ত হেসে মাথা চুলকাচ্ছে,আইডিয়াটা তারই ছিল
.
কিরে আহানা টিপ পেলি কই?
.
ঐ আসলে
.
আচ্ছা বাদ দে,চল সিটে বসি,এখন অনুষ্ঠান শুরু হবে
.
আহানা সিটে বসতেই পাশে শান্ত এসে বসে গেলো
আহানা চোখ বড় করে উঠে গেলো সাথে সাথে রুপা আবার ওর হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিয়ে বললো কি করিস!আর জায়গা পাবি না,চুপচাপ বসে থাক
.
শান্ত ভাই তোমার সখিনা কই?
.
পার্লারে সাজতেসে
.
নওশাদ পানি খাচ্ছিলো,শান্তর কথা শুনে মুখ থেকে পানি সব ফেলে দিলো,ওর কাশি উঠে গেছে,রুপা ওর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললো শান্ত ভাই!
.
আরে আমি কি করবো?অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পথে আর ও এখনও সাজতেসে
.
ভাইরে ভাই যে হারে সাজতে গেছে মনে হয় আজ কারো বিয়া??
.
শান্ত আহানার দিকে একবার এক বাহানায় তাকাচ্ছে
আহানা রুপার সাথে কথা বলতেসে তার খেয়াল নেই তার পাশে একটা মানুষ তার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে সেই কখন থেকে
.
ওরে রে জরিনা আইসা পড়সে!!
শান্ত চোখ বড় করে পাশে তাকালো,এলিনা নায়িকাদের মত এন্ট্রি নিচ্ছে
সবাই হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে,মনে হয় সে ভার্সিটিতে নয় কোনো বিয়ে বাড়িতে এসেছে,হাতা কাটা ব্লাউজ,যে শাড়ী পরেছে মনে হয় এখনই খুলে যাবে,শান্তর পাশ থেকে রিয়াজকে উঠিয়ে সে বসে পড়লো
.
তোমার পাশে এই মেয়েটা কি করে?তোমার জন্য কি আর জায়গা ছিল না?
বাই দ্যা ওয়ে আমাকে কেমন লাগছে?
.
কিউট
.
আরে আহানা আজকে শাড়ী পরেছে দেখছি,তা তুমি কি ম্যাচিং করে কিছু পরতে জানো না?ব্লাউজ এর রঙ এত হালকা আর শাড়ীর রঙ ঘাড়ো,তোমাকে যে একটা ক্ষেত লাগতেসে জানো তুমি?কোথা থেকে এরা উঠে আসে!স্টাইল বলতে কিছু জানে না এরা!
.
আহানা এলিনার কথায় কষ্ট পেলো তাই চুপচাপ উঠে চলে গেলো ভার্সিটি থেকে
.
এলিনা!কথা সংযত রেখে বলো
.
তো.?এখন এই মেয়েটার জন্য তুমি আমাকে শিখাতে আসবে আমার কেমন করে কথা বলা উচিত?ভুলে যেও না এই মেয়েটা তোমাকে একদিন চড় মেরেছিল
.
আহানা চোখের পানি ধরে রাখার চেষ্টা করতে করতে চলে যাচ্ছে
.
শান্ত উঠে চলে গেলো সেদিকে
.
এলিনা?তুমি নিজেকে কি মনে করো?তুমি বিশ্বসুন্দরি?তোমাকে যে ফকিন্নির মত লাগতেছে তা আমরা কেউ বলেছি?
.
ওহ শাট আপ রুপা!পার্লারের সাজ তোমাদের মত ফকিররা কি করে চিনবে
।
ওহ রিয়েলি?তুমি এমন ভাব করতেসো যেন তুমি একাই পার্লারে সাজো,আমরা তো জানি না কিছু!
.
আহানা দাঁড়াও!
.
আহানা চোখ মুছে পিছন ফিরে তাকালো
.
কি?
.
সরি
.
কেন?
.
আসলে আমি তোমাকে শাড়ীটা দিয়েছিলাম,আর আমার এটা খেয়াল রাখা উচিত ছিল কাউকে শাড়ী দিলে তার সাথে শাড়ীর অন্য সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও দিতে হয়
.
মানে?আপনি এই শাড়ীটা দিয়েছেন?
.
হুম
.
কিন্তু কেন?আমাকে দয়া দেখাতে কে বলেছিল আপনাকে?কেন দয়া দেখালেন?আমি নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে পারি,কারোর কোনো দয়ার প্রয়োজন নেই আমার,শাড়ী পরতেই হবে এমন তো কোনো কথা ছিল না
আমার তো নীল জামা ছিল ওটা পরে আসতাম আমি
আপনাকে কে বলেছে এরকম দয়া দেখাতে!!
লাগবে না আমার কারো দয়া!যে দয়াতে আরও বেশি অপমানিত হতে হয় সে দয়া আমার লাগবে না
আহানা চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলো
.
শান্তর আজ নিজের উপর খুব রাগ উঠতেসে,কেন আমি শাড়ীর সাথে ম্যাচিং করে একটা রেডিমেট ব্লাউজ কিনে দিলাম না
.
আহানা সোজা বাসায় ফিরে আসলো,গলার সেটটা আর কানের দুল খুলে ছুঁড়ে মারলো ফ্লোরে,শাড়ীটাও খুলে ফেললো সে
আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল!যার এই দুনিয়াতে মা বাবা বলে কেউ নেই তার খালা আসবে কই থেকে
.
সূর্য?তুই শান্তকে দেখেছিস?
.
নাহ তো
.
শান্ত বাসায় ফিরে গেছে মনে হয়,এলিনা আহানাকে যা কথা শুনাইলো ওর গায়ে লাগছে
.
ওর গায়ে লাগছে কেন?নওশাদ?
.
শান্ত আহানাকে পছন্দ করে মেবি
.
হুম আমারও তাই মনে হচ্ছে
.
আহানা মুখ ধুয়ে রেডি হয়ে পিউদের বাসায় গেলো পড়াতে
রুপা কল করেই যাচ্ছে আহানা রিসিভ করে বললো পরে কথা হবে,আর কিছু বলার সুযোগ দেয়নি ওকে,লাইন কেটে ফোন ব্যাগে রেখে দিলো
বাসায় ফিরে চালের ছোট বালতিটার ঢাকনা খুলে দেখলো ২/৩টা চাল পড়ে আছে,ইস আমি তো একদমই ভুলে গেছিলাম চাল যে শেষ,এখন কি খাব,হাতে তো টাকাও নেই,অবশ্য কাল মিষ্টির মা বেতন দিবেন,কিন্তু সেই ২হাজার টাকা তো তারেক আঙ্কেলকে দিয়ে দিতে হবে,ধুর!!
পানি আর একটা বিসকিট খেয়ে শুয়ে পড়লো সে
পরেরদিন মিষ্টিদের বাসায় আসতেই দেখলো শান্ত আগে থেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে আছে
আহানা চোখ নামিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত গিয়ে পথ আটকালো
.
আহানা সরি,আমি তোমাকে দয়া দেখানোর জন্য শাড়ীটা দিই নাই,আমি জাস্ট চেয়েছিলাম।।।।।
আহানা শান্তকে আর কিছু বলতে দিলো না
মিষ্টিকে পড়াতে চলে গেলো
শান্ত হাত নিয়ে দেয়ালে ঘুষি মারলো একটা
রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফেললো,সিগারেট এক প্যাকেট নিয়ে ফ্লোরে বসে সিগারেট খাওয়া শুরু করলো একের পর এক
আহানাকে মিষ্টির মা ২হাজার টাকা দিলেন,সে বাসা থেকে বেরিয়ে হেঁটে বাসায় এসে ভাবলো তারেক আঙ্কেলকে ১৮০০দিব,বাকি ২০০টাকা দিয়ে চাল আর ডাল কিনবো,হুম নাহলে আজ না খেয়ে থাকতে হবে
আগে দেখি ১৮০০টাকা দেখে যদি তারেক আঙ্কেল চিল্লাচিল্লি করে তাহলে বাকি ২০০টাকা ও দিয়ে দিব
.
আহানা ১৮০০টাকা নিয়ে তারেক রহমানের বাসায় আসলো
কলিংবেল চাপতেই তারেক রহমান এসে দরজা খুলে দেখলেন আহানা টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
আঙ্কেল মাফ করবেন, আমার কাছে ১৮০০টাকা আছে,আমি বাকি ২০০টাকা কদিনের মধ্যেই দিয়ে দিব,এগুলা রাখেন এখন আপাতত
.
টাকা? কিসের টাকা,তোমার টাকা তো রফিকুর রহিম দিয়া দিসে,তোমার আর দিতে হবে না
.
মানে?রফিকুর রহিম কে?
.
না ইয়ে আসলে জানি না,আসি বললো তোমার রিলেটিভ
.
দেখুন,আমার কোনো রিলেটিভ নেই,আপনি জানেন আমি অনাথ,তাহলে টাকা কে দিসে?সত্যি করে বলবেন
.
শাহরিয়ার শান্ত নামে একটা ছেলে দিয়েছে
আহানা সাথে সাথে বেরিয়ে গেলো সেখান থেকে,সোজা শান্তর বাসার দিকে গেলো রাগে গজগজ করতে করতে
শান্ত ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিয়ে জুতার ফিতা লাগাচ্ছে সোফায় বসে
আহানা দরজায় নক করতেই বুয়া গিয়ে দরজা খুললো
আহানা বুয়াকে পাশ কাটিয়ে সোজা ভিতরে চলো গেলো
.
শান্ত সোফায় ছিল তখন,আহানাকে দেখে দাঁড়িয়ে বললো কি হয়েছে?
.
আপনাকে কে অধিকার দিয়েছে আমাকে দয়া দেখানোর?আমি বলেছি?আমি বলেছি আমাকে সাহায্য করুন?
একবার শাড়ী একবার বাসা ভাড়া!!
দান করতে হলে ফুটপাতের লোকদের করেন আমি মানা করসি নাকি?
আমাকে দয়া দেখান কেন?লাগবে না আপনার টাকা
আমাকে সবাই ফুটপাতের মনে করে,একজনে বলে বুয়ার কাজ করতে আরেকজনে আল্লাহর হস্তে টাকা,বস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে
আমি আজ পর্যন্ত নিজের ভার নিজে বহন করে এসেছি,কারোর থেকে কোনো টাকা দয়া হিসেবেও নি নাই
সো প্লিস আমাকে আর এসব দয়া দেখাবেন না
না খেয়ে মরে যাব তাও কারোর দয়া আমি নিব না
আহানা তার হাতের ২হাজার টাকা শান্তর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো
বুয়া হা করে তাকিয়ে আছে,শান্তর মত রাগী ছেলে এরকম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,মেয়েটা এত কথা শুনিয়ে গেলো তাও কিছু বললো না
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_১৮
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_১৭
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_১৭
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানা রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটা ধরলো,হঠাৎ পিছন থেকে তারেক রহমান ডাক দিলেন
.
জি আঙ্কেল বলুন
.
মা আজ আমাদের বাসায় দাওয়াত তোমার,রাতে এসে ডিনার করে যেও
.
আহানা অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে একটা কাশ দিয়ে বললো কি?আমি?
.
হ্যাঁ মা আসিও,ভাবলাম একা একা কি বা খাও,আজ আমাদের সাথে এসে একটু খেয়ে যেও,তোমার আন্টিও এতদিন ধরে কত বলছিল তোমাকে ডাকতে,আসিও কেমন?আমি তো যাচ্ছি বাজার করতে,টাটকা ইলিশ মাছ আর মুরগী আনতে
কথাগুলো বলে দাঁত কেলিয়ে চলে গেলেন তিনি
আহানা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,এই লোকটার হলোটা কি,কাল মুখের উপর দরজা দিয়ে চলে গেছিলো আর আজ আমাকে দাওয়াত দিচ্ছে?আজব তো!
আহানা ভার্সিটি ঢুকতেই দেখলো তাদের ক্লাসে শশী ম্যাম
.
ম্যাম আসবো?
.
হুম আসো
.
শুনো সবাই! আমি একটা নোটিশ পড়ে শোনাতে এসেছি,নতুনদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান হবে,এত প্রবলেম ছিল এতদিন,আমরা নবীনবরণ অনুষ্ঠানের দিকে খেয়ালই দিই নাই,এ বছর তাই দেরি হয়ে গেলো,নতুন যারা আছে তাদেরকে সিনিয়ররা মিলে বরণ করবে,সব ডেকোরেশনের দায়িত্ব তাদের,সবাই সময়মত আসতে হবে,অনুষ্ঠান হবে ৫তারিখে
বুঝেছো সবাই?
.
জি ম্যামমমম
আহানাদের ক্লাসের সব মেয়ে ঠিক করলো সেদিন হালকা বেগুনি রঙের শাড়ী পরে আসবে
শান্ত ড্রেসকোড লিখে কাগজ তমালের হাতে দিতে গিয়ে থেমে গেলো,তারপর বললো না থাক আমি যাচ্ছি,আমি সব ক্লাসে ড্রেসকোড বুঝিয়ে দিয়ে আসবো
.
আহানাদের ক্লাসে এসে শান্ত নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা তুলে বরাবর আহানার দিকে তাকালো,আহানা রুপার সাথে কথা বলতেসে আর হাসতেসে,আহানা আর রুপা বাদে সবাই শান্তর দিকে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছে,ইসস এই ছেলেটা এত সুদর্শন কেন!তার উপর একদিন এক রঙের জ্যাকেট পরে আসে,লাল/সবুজ/খয়েরী/কালো/হলুদ/বেগুনি/নীল,সব জ্যাকেটের কালেকশন মনে হয় ওর কাছেই আছে
যা মানায় না!!মেয়েরা রীতিমত লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে আছে
.
Attention everyone!!
.
আহানা চমকে সামনে তাকালো,শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে ব্রু কুঁচকে কথা বলা শুরু করলো
.
বিভিন্ন ইয়ারের ড্রেসকোড বিভিন্ন রঙের,ফার্স্ট ইয়ারের সব মেয়েরা ঘাড়ো নীল রঙের শাড়ী পরে আসবে,আর ছেলেরা সাদা পাঞ্জাবি পরে আসবে,ওকে?
.
সবাই বললো ওকে
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহানার দিকে তাকিয়ে থেকে শান্ত জ্যাকেট ধরে চেইন টানতে টানতে চলে গেলো
.
এই ছেলেটা আমার দিকে এমন করে তাকাই থাকে কেন!
.
ঐ তোর নীল শাড়ী আছে তো?
.
হাসাইলি,যার ২টা জামা তার আবার নীল শাড়ী থাকবে
.
আমার তো নীল শাড়ী একটাই,নাহলে তোকে একটা দিতাম
.
আমি বরং আমার নীল জামাটা পরে আসবো,তাহলেই হবে
.
হুম সেটা ঠিক আছে
.
আহানা রুপার সাথে ঘাসের উপর বসে পানির বোতল হাতে নিলো খাওয়ার জন্য হঠাৎ তমাল এসে রুপাকে আর ওকে ২প্যাকেট কি যেন দিয়ে চলে গেলো
.
কিরে আহানা এইডা কি?
রুপা নওশাদের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে জানতে চাইলো এটা কি?
।
নওশাদ শান্তর দিকে ইশারা করে দেখালো
.
এগুলা কি দিসে রুপা?
.
ভিতরে দেখি পেস্ট্রি ২পিস করে,শান্ত ভাই মনে হয় খাওয়াচ্ছে সবাইকে
.
কিন্তু কেন?
.
আমি কি জানি,খুশির ঠেলায় আর কি
.
আচ্ছা এটা কি কাল সকাল পর্যন্ত ভালো থাকবে?ফ্রিজে না রাখলেও?
.
কেন বলতো?
.
এমনি, বল না
.
হ্যাঁ থাকবে তো মনে হয়
.
আহানা মনে মনে খুশি হলো,সে এক পিস কাল সকালের জন্য রেখে দিবে,সেটা খেলে আর ভাত খেতে হবে না
আহানা এক পিস নিয়ে মুখে দিয়ে তো চোখ কপালে তুলে ফেললো,এটা কি রে?এত্ত মজা
.
ওমা তুই জানিস না এটা কি?পেস্ট্রি আর কি
.
কি দিয়ে বানায়?দাম কত?
.
এক পিস ৫৫/৬০টাকা,কেক ও বলা যায়
.
আহানা কেক ও চিনলো না,জীবনে কেক খায়নি সে চিনবে কি করে,তার মানে শান্ত এত টাকা খরচ করে সবাইকে খাওয়াচ্ছে?
শান্ত মনে মনে খুব খুশি হলো আহানার খাওয়া দেখে,সে এতদিনে এটা বুঝেছে যে আহানা ব্রেক টাইমে পানি ছাড়া আর কিছু খায় না, তাই সে স্পেশালি আহানার জন্য পেস্ট্রি অর্ডার করেছে,শুধু আহানাকে দিলে নওশাদ,সূর্য আর রিয়াজ গিলে খাবে ওকে তাই রুপা ও আরও কয়েকজনের জন্যও কিনেছে
আহানা বাকি পিসটা প্যাকেট সহ তার ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো
রুপা তার ২পিসই খেয়ে ফেলেছে ততক্ষণে
.
ছুটি হয়ে গেছে,আহানা আজ আর কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচ দিয়ে যায়নি,অন্য রোড দিয়ে যাচ্ছে,বারবার পিছন ফিরে তাকাচ্ছে সে
.
হঠাৎই সামনে শান্ত বাইক নিয়ে এসে থামলো
আহানা ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
আজ ঐ গাছটার নিচের রোড দিয়ে আসোনি কেন?
.
এমনি,আমার ইচ্ছা?
.
নীল শাড়ী আছে তো তোমার?
.
আপনি জেনে কি করবেন?
.
শুনো,যদি অন্য রঙ পরেছো তো ভার্সিটি থেকে বের করিয়ে দিব তোমাকে
.
আপনাকে ভয় পাই নাকি আমি?
.
আহানা পাশ কেটে চলে যেতে নিতেই শান্ত আহানার হাত টেনে আবারও আগের জায়গায় নিয়ে আনলো
.
হাত ছাড়ুন!?
.
আগে বলো শাড়ী আছে তো?
।
না নেই!জামা আছে,নীল,সেটা পরে আসবো আমি
.
শান্ত আহানার হাত ছেড়ে দিলো,যাও এবার
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো
শান্ত একটা শপিংমলে আসলো
শাড়ীর দোকানে ঢুকতেই নওশাদ আর রুপাকে দেখে আরেকদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে পড়লো
আরে এরা এখানো কি করে,উফ!এখন নওশাদ আমাকে দেখলে ১০০টা প্রশ্ন করবে,শিট!!
.
শান্ত পকেট থেকে মাস্ক নিয়ে পরে নিয়ে দোকানের এক কোণায় চলে গেলো
.
স্যার আপনার কিছু লাগবে?
.
হুম,নীল শাড়ী দেখান,ঘাড়ো নীল
এটা বলে তার খয়েরী চুলগুলো টেনে চোখের সামনে নিয়ে আনলো যাতে নওশাদ চিনতে না পারে
.
দোকানদার অনেকগুলো শাড়ী দেখাচ্ছে শান্তকে
শান্ত একটা শাড়ী দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো,সেটা ধরতে যেতেই রুপা ছোঁ মেরে নিয়ে বললো এটা আমি নিব নওশাদ,আমাকে কিনে দাও
.
শান্ত এক টান দিয়ে শাড়ীটা নিয়ে হেঁটে চলে গেলো
.
নওশাদ নিশ্বাস ফেলে মনে মনে বললো বাঁচলাম,আজ পকেটে টাকা নাই,রুপা আমাকে ফকির করে ছাড়বে
.
কি গো?তুমি লোকটাকে আটকালে না কেন?আমার পছন্দ করা শাড়ীটা নিয়ে চলে গেলো,যাও নিয়ে আসো
.
আরে বাদ দাওও,আরেকটা দেখো,ওটা তো মনে হয় উনি কিনে ফেলেছেন
রুপা মুখ ফুলিয়ে অন্য শাড়ী দেখতে লাগলো
শান্ত শাড়ীটা কিনে চলে যেতে নিতেই আবার কি মনে করে একটা চুড়ির দোকানে গেলো,নীল চুড়ি কিনলো,সাথে নীল গলার আর কানের সেট ও নিলো,হালকা হেসে এক প্যাকেট করলো সব গুলো মিলিয়ে
বাইক নিয়ে বসে আছে সেই কখন থেকে,আহানাকে বাসায় আসতে দেখলে গিয়ে প্যাকেটটা রেখে আসবে সে
আহানা সাড়ে ৬টার দিকে বাসায় ফিরলো,বাসায় ঢুকে জানালা খুলে দিয়ে উঠানে গেলো সকালের ধোয়া জামাটা আনতে
শান্ত চুপিচুপি জানালার সামনে গিয়ে প্যাকেটটা মুড়িয়ে জানালার গ্রিল দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে এক দৌড়ে পালালো
.
আহানা জামাটা এনে গুছিয়ে আলমারিতে রেখে রান্নাঘরে যাওয়া ধরতেই তার চোখ গেলো জানালার পাশে থাকা একটা চকচকে হলুদ প্যাকেটের দিকে
এদিক ওদিক তাকালো সে,মীম আপু নেই,কনিকা আপু ও নেই,তাহলে এটা কে দিলো,তাও আমার বিছানার উপর,যখন বাসায় ঢুকলাম তখন তো এটা ছিল না
আহানা আর দেরি না করে প্যাকেটটা খুললো,ওমা একটা নীল শাড়ী,চুড়ি আর গলার, কানের দুলের সেট,আহানা অবাক হয়ে ওগুলো হাতে নিয়ে বসে আছে,একটা চিঠিও আছে দেখছি!!
সেটাতে লিখা-
প্রিয় আহানা
আমি তোর ভোলার মধ্য চৌরাস্তার ৪র্থ গলির ৫ম বাড়ির ৬ষ্ঠ তম তলার খালাম্মা?
তোর জন্য একটা উপহার পাঠাইলাম,পরিস কেমন?
ভালা থাইস?
.
আমার খালা?কোথা থেকে আসলো, আমি তো আমার বাবা মায়ের নামই জানি না! খালা আসলো কই থেকে,আর আমার বাসা চিনলো কি করে,চিনলেও দেখা করলো না কেন
যাই হোক,এতসব ভেবে কাজ নেই
আহানা চট করে শাড়ীটা পরে ফেললো,কি সুন্দর পছন্দ আমার পাতানো খালার!!
আহানা সুন্দর করে গুছিয়ে আলমারিতে রেখে দিলো শাড়ীটা
আশ্রমের মায়ের শাড়ীটার সাথের পেটিকোট তো আছে কিন্তু সেটার ব্লাউজ তো লাল
নীল শাড়ীর সাথে তো মিলবে না,আমি এখন ব্লাউজ কই পাবো?
দেখি রুপাকে একটা ফোন করি
.
হ্যাঁ আহানা বল
.
তোর কাছে ২টা নীল ব্লাউজ হবে?আমাকে একটা দিতি
.
হ্যাঁ হবে,আচ্ছা কাল আনবো,তুই না বললি তোর নীল শাড়ী নেই?
.
ছিল না,আমার কোন খালা যেন পাঠিয়েছে
.
ওহ,আচ্ছা
.
আলমারি থেকে আবারও প্যাকেটটা নিয়ে আহানা বসে বসে শাড়ীটাই দেখতেসে কি সুন্দর,শাড়ীর সাথে একটা কাগজ ঝুলতেসে,দামের মনে হয়
আহানা এগিয়ে এসে কাগজটা হাতে নিয়ে দেখতেই চোখ কপালে উঠে গেলো তার
৩হাজার টাকা,আল্লাহ!এত দাম দিয়ে আমাকে শাড়ী না দিয়ে টাকা গুলো আমাকে দিলে আমি অনেক খুশি হতাম
আহানা শাড়ীটা আবার আলমারিতে রেখে দিয়ে তারেক রহমানের বাসায় গেলো
উনার স্ত্রী খুব আদর করলেন,অথচ এতদিন এক গ্লাস পানিও খাওয়ায় নি,আর আজ এত আদর
মুরগী,ইলিশ দিয়ে ১০০টা আইটেম করেছে,মুরগী মনে হয় ২টা এনেছে,মুরগীর কোর্মা,মুরগীর ভুনা,লেগ পিস ২টা আহানার পাতে দিয়েছেন তিনি
আহানা রীতিমত অবাক হচ্ছে আর খেয়ে যাচ্ছে
প্রতিদিন সাদা ভাত আর নুন খেতে খেতে এখন এই খাবার খেতে আহানার কেমন যেন লাগছে
খাওয়া শেষে নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লো সে
পরেরদিন মিষ্টিদের বাসায় গিয়ে লিফটের ভিতরের বাটনে ৫এ টিপ দিয়ে পাশে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলো আহানা
পাশে শান্ত দাঁড়িয়ে গেমস খেলতেসে
আহানা বুকে থুথু দিয়ে নিজেকে ঠিক করে রেগে বললো
.
কি??এমন চোরের মত দাঁড়িয়ে আছেন কেন?আমি তো খেয়ালই করি নাই আপনাকে!আর একটুর জন্য স্ট্রোক করতাম
.
শান্ত ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে বললো তুমি তো আমাকে জীবনেও খেয়াল করো না,নিচের দিকে তাকিয়ে লিফটে ঢুকলে কি করে লিফটের ভেতরের মানুষ দেখবা??
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে আরেকদিকে ফিরে গেলো
লিফট থেকে নামতে গিয়ে দুজনে মাথায় বাড়ি খেলো দুম করে
.
ইসসস!
.
তুমি ঠিক করে হাঁটতেও জানো না?
.
আপনি জানেন বুঝি?স্টুপিড!
আহানা চলে গেলো
.
ওমা আমি স্টুপিড? তুমি তাহলে বেয়াদব!!
আহানা মাথা ঘষতে ঘষতে মিষ্টির পাশে গিয়ে বসলো
.
কি হলো মিস তোমার মাথায়?
.
ঐ আসলে বাড়ি খাইসিলাম
.
কারোর সাথে?
.
হুম
.
তাহলে জলদি গিয়ে তার মাথার সাথে আরেকটা বাড়ি দিয়ে আসো নাহলে তোমার শিং উঠবে
.
আরে না এগুলা মিথ্যা কথা
.
না সত্যি বলতেসি আমি,পরশু আমার সাথে আমার ক্লাসমেট সিয়ামের মাথায় ধাক্কা লেগেছিল,এখন দেখো আমার মাথার এ পাশ দিয়ে ফুলে গেছে?শিং উঠতেসে
.
আহানা হেসে দিয়ে বললো আরে এসব কিছু না
.
তাই নাকি মিষ্টি? তাহলে তো আরেকটা বাড়ি দিতেই হয়!
.
আহানা চোখ বড় করে শান্তর দিকে চেয়ে আছে
.
হুম আমিও তো মিসকে সেটাই বলতেসি,মিস বিশ্বাসই করে না
.
করবে করবে,যখন শিং উঠবে তখন বিশ্বাস করবে
.
যান এখান থেকে!
.
তোমার বাসা এটা?আমার মিষ্টির বাসা এটা?
শান্ত গিয়ে সোফায় বসে পড়লো
আহানা গাল ফুলিয়ে মিষ্টিকে ১ঘন্টা ধরে পড়ালো,পুরোটা সময় শান্ত মিষ্টির পাশে বসে নিউজপেপার পড়েছে
আহানা মিষ্টিদের বাসা থেকে বের হয়ে কয়েক কদম হাঁটতেই শান্ত আহানার হাতের কব্জি ধরে এক টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসলো
.
আহানা ভয় পেয়ে গেলো কিছুটা
.
ফাঁকা করিডোর,ভোরবেলা যেমনটা থাকে আর কি
শান্তর ঠোঁটের কোণে হাসি উজ্জ্বল হয়ে আছে
আহানার আত্না কাঁপতেসে,হাত মুচড়াচ্ছে সে
শান্ত মাথা এগিয়ে এনে আহানার মাথায় এক বাড়ি দিয়ে হেসে আহানার হাত ছেড়ে দিলো
.
যাও,তোমার জন্য তো আর আমি শিং নিয়ে হাঁটাচলা করতে পারি না,পরে আমার বিয়েও হবে না, যাও এখন!
শান্ত আরেকদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে পড়লো
আহানা হা করে দাঁড়িয়ে আছে,কি বলবে,কি করবে কিছুই বুঝতেসে না সে,সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার
শান্ত দাঁড়িয়েই আছে তাকাচ্ছে না আহানার দিকে
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে পিছন ফিরতেই শান্ত এবার তাকালো
আহানা চলে যাচ্ছে,শান্ত মুচকি হাসতেসে ওর দিকে তাকিয়ে
.
বুয়া সকালের জন্য বুটের ডালের ভাজি,ডিম,চিকেন মাসালা আর রুটি বানিয়েছে,শান্ত সেগুলোর দিকে তাকিয়ে বসে আছে,আহানা তো এখন মনে হয় শুধু ভাত খাচ্ছে
বুয়া!
.
হ্যাঁ বাবা বলেন
.
আমাকে পান্তা ভাত দিন তো
.
কিহ!কিন্তু কেন,কি করবেন?
.
খাবো,কি করবো আর
.
না বাবা,এসব কি মজা হয়নি?অন্য কিছু বানাই দি??
.
না আমি পান্তা ভাত খাবো
.
বুয়া শান্তর জোরাজুরিতে পান্তা ভাত এক বাটি এনে শান্তর সামনে রাখলো,একটু নুন ছিঁটিয়ে দিলো
শান্ত আগ্রহের সাথে এক লোকমা মুখে দিয়ে আর গিলার সাধ্য হয়নি তার,কেশে অনেক কষ্টে গিললো
তারপর চোখ বন্ধ করে বসে রইলো কিছুক্ষন,আহানার খাওয়াটা স্পষ্ট ফিল করতেসে সে
সে তো খুব মজা করে খাচ্ছিলো তাহলে আমার কাছে এটা বিষ মনে হচ্ছে কেন!
বুয়া তুমি কি এই খাবার খাও?
.
হ বাবা,ভাত রয়ে গেলে তো আমি বাসায় লয় যাই,তারপর আমি আমার মাইয়া,আমার পোলা মিলে খাই
.
শান্তর চোখে পানি এসে গেলো,মানুষ কত ফাইট করে এই দুনিয়ায় প্রতিটা দিন কাটায়,আর আমরা উপর থেকে এসব দেখতেও পাই না
দেখার চেষ্টা ও করি না,আমাদের খাবারের ১০ভাগের এক ভাগ তাদের দিলেও তারা সুখে থাকতে পারতো
.
বাবা কি হলো?খাবেন না?আমি যা বানাইসি তা অন্তত খান
.
নাহ! আমার খিধে নেই,এক কাপ রঙ চা পাঠাও
.
রঙ চা?
বাবা আপনার শরীর ভালো তো?সর্দি হয়েছে?
.
কেন?সর্দি হলেই কি রঙ চা খায়?
.
না বাবা,আমরা তো সর্দি হলে খাই,তাই বললাম,কফি আছে তো সেটা বানাই?
.
না,আমি রঙ চা খাব
.
কিরে শান্ত?মদ কি বেশি খেয়েছিস নাকি?কি হয়েছে তোর?এসব কি উল্টা পাল্টা খাচ্ছিস?
.
না এমনি রিয়াজ! মন চাইলো দেশের গরীব মানুষদের খাবার টেস্ট করা দরকার
.
ভাই এসব টেস্ট করতে গিয়ে খুব খারাপ লাগে,কষ্ট হয় তাদের জন্য
.
শান্ত হুম বলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো
সূর্যটা নিচে নামতেসে,পুরো বারান্দা জুড়ে রোদ,শান্ত সিগারেট নিয়ে বারান্দার গ্রিলে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো
সিগারেটটা ধরিয়ে মুখ দিয়ে ধোঁয়া আকাশের দিকে ছাড়তেসে সে
এই অনুভূতিটা একটা শান্তি জোগায়,আচ্ছা আহানার কি শাড়ীটা পছন্দ হয়েছে,আমি শাড়ী কিনতে পারি মা বলতো,তার মানে আহানার নিশ্চয় সেটা পছন্দ হয়েছে
মা সবসময় কোনো রিলেটিভকে শাড়ী গিফট করার হলে আমাকে নিয়ে যেতো,আমি বেছে বেছে অানকমনটা খুঁজে দিতাম
.
বাবা!তোমার চা
.
শান্ত সিগারেটটা ফেলে দিয়ে চায়ের কাপটা নিয়ে আবার তড়িগড়ি করে নিচে তাকালো,সিগারেটটা ফাঁকা রোডের উপর পড়েছে
ঐদিনের কথা মনে এসে গেলো যেদিন সে আহানার সামনে সিগারেট ফেলেছিল
চায়ের কাপ নিয়ে এক চুমুক দিয়ে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো তার
জীবনে রঙ চা খেয়েছে কিনা মনে নেই, হয়ত খেয়েছি মা থাকতে আজ আবার খেলাম,এত বাজে স্বাদ আর আহানা বললো কফির চেয়ে রঙ চা ভালো
ওর পছন্দ আর আমার পছন্দের সাথে আকাশ পাতাল তফাৎ!
.
নওশাদ বাবা,শান্ত বাবার যেন কি হয়েছে,সকালে এত কিছু বানালাম সেগুলো রেখে পান্তা ভাত খেয়েছে,এখন আবার কফি রেখে রঙ চা খাচ্ছে
.
ও রঙ চা চাইলো আর তুমিও দিয়ে দিলা?তুমি জানো না ওর এই সময়ে কফি না খেলে সারাদিন শরীর খারাপ থাকে,মাথা ব্যাথার জন্য হাঁটতে পারে না!
.
আমি কি করমু,আমাকে ধমক দিয়ে কইলো রঙ চা খাবে
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_১৬
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_১৬
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানা হেঁটে বাড়ি ফিরছে হঠাৎ ওর সাথে দেখা হয়ে গেলো সেই মেয়েটার যার কাছে ও কানের দুল বিক্রি করেছিল
মেয়েটা আহানাকে চিনতে পেরে এগিয়ে আসলো
.
তুমি আমার কানের দুলটা কি করেছিলা?
.
শান্ত ভাইয়া আমার থেকে ১০০টাকা দিয়ে সেটা কিনে নিয়ে গেছে
.
ওহ
.
ভাইরে কি আপনি চিনেন?
.
আহানা হুম বলে হেঁটে চলে গেলো,বাসায় ফিরে ভাবতেসে সে শান্ত ওর দুলটা কেন কিনেছিল,আবার ওকে সেটা ফেরত ও দিলো
ভার্সিটিতে গিয়ে আহানা চারিদিকে শুধু শান্তকেই খুঁজে যাচ্ছে,কোথায় গেলো,আজ আসে নাই নাকি
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে পিছন ফিরতেই শান্তর মুখোমুখি হলো
শান্ত মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে ওর দিকে,হাত দুটো পকেটে রেখে
আহানা ঢোক গিলে একটু পিছিয়ে গেলো,তারপর বললো রুপা ডাকতেসে
.
দাঁড়াও
.
কি?
.
রুপা তো ডাকতেসে না
.
আহানা চুপ করে থেকে বললো আসলে ঐ তখন ডাকতেসিলো
.
ওহ আচ্ছা,এতক্ষণ আমাকে খুঁজতেসিলে বুঝি?
.
নাহ তো,কে বললো?
.
ওহহহ,গুড
.
আমি যাই
আহানা কিছুটা দৌড়ে পালিয়ে আসলো,আজ শান্তর হাবভাব ঠিক লাগতেসে না তার
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
শান্ত আহানার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,হঠাৎ কেউ একজন ওর হাত ধরে নিজের দিকে ফিরালো
।
এলিনা!
.
বেব!কি ব্যাপার বলোতো,তুমি কি আমাকে মিস করো না একটুও?আমি ভার্সিটিতে না আসলে একটু ফোন ও করো না,আর আমি করলেও রিসিভ করো না
.
শুনো এলিনা আমি আগেও বলেছি এখন আবার বলতেসি তোমার প্রতি আমার কোনো ফিলিংস নেই,শুধু শুধু সম্পর্কটাকে আগে বাড়াতে চাও কেন বলোতো?
.
আমি কিছু জানি না,আমার শুধু তোমাকে চাই,ব্যাস!
আহানা ক্লাসরুমে থেকে শান্ত আর এলিনাকে দেখতেছে,রুপা বললো ওদের কাপলটা কত কিউট
আহানা হেসে বললো হুম
♣
আজ কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে আছে আহানা,শান্তর মত করে ইটের কণা একটা একটা করে পানিতে ফেলতেসে সে
খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো হুট করে,অবশ্য এতক্ষণ বাতাস ছিল,কিন্তু এভাবে বৃষ্টি এসে যাবে আবার গতিও বেড়ে যাবে তা একদমই ভাবেনি আহানা,উঠে মাথায় হাত দিয়ে দৌড়াতে যেতেই কেউ ওর হাতটা ধরে ফেললো
আহানা আটকে গিয়ে পিছনে তাকালো শান্ত ওর হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে,বৃষ্টির পানির কারণে একবার চোখ বন্ধ করছে আবার খুলছে
আহানা চুপ করে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে আছে,শান্ত কিছুই বলছে না,চুপচাপ ভিজে যাচ্ছে সাথে আহানাকেও ভিজাচ্ছে
আহানা হাত মুচড়াচ্ছে ছাড়ানোর জন্য কিন্তু শান্ত ছাড়তেসে না
গাছ বাতাসের কারণে নড়তেসে বারবার যার কারণে ফুল সব ঝরে পড়ে যাচ্ছে আহানার মুখের উপর গোটা একটা ফুলের তোড়া পড়তেই আহানা মুখটা বাঁকিয়ে ফেললো
শান্ত আহানার হাত ছেড়ে দিলো,আহানা হাত দিয়ে ফুলের তোড়াটা সরিয়ে চুপ করে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে,বৃষ্টি থামেনি এখনও
শান্ত তার হাত বাড়িয়ে আহানার থুতনিতে লেগে থাকা একটা সবুজ পাতা সরিয়ে ফেলে দিলো
আহানা বুঝতে পারলো না শান্ত কেন এমন করছে,কিসব ভেবে আহানার মুখটা মূহুর্তেই ফ্যাকাসে হয়ে গেলো,সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে আসলো সে
শান্তর এবার হুস আসলো,মাথার চুল থেকে পানি ঝেড়ে গাছের শেকড়ে গিয়ে বসলো সে,কি হলো আমার,কেন করলাম এমন!!
আহানা দৌড়াতে দৌড়াতে অনেক দূরে এসে গেছে,আর একটু হাঁটলেই পিউদের বাসা
এবার হাঁটার গতি কমিয়ে দিলো সে,আমি আর যাব না কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে,কোনোদিন ও না
শান্ত জ্যাকেটটা খুলে হাতে নিয়ে বসে আছে,কেন আমি আজ আহানার হাত ধরে ওকে আটকালাম,কেন আমার ওর থুতনির ঐ তিলটার প্রতি এত আকর্ষন,এলিনার ও তো তিল আছে গালে,তাহলে তার প্রতি আমার এমন ফিলিংস আসে না কেন,কেন আসে না
.
আজ আবারও আকাশদের বাসা থেকে বের হতেই আহানা দেখলো একটা রিকসা দাঁড়িয়ে আছে,আহানা রিকসায় না উঠে হাঁটা ধরতেই ছেলেগুলো কোথা থেকে এসে আহানার সামনে এসে হাত জোর করতে লাগলো ও যেন রিকসায় উঠে
১৬
আহানা বিরক্তি নিয়ে রিকসায় উঠে পড়লো
এমন কেন করছে ওরা,কাকে ভয় পাচ্ছে??
বাসায় ফিরে হাতে ৬হাজার টাকা নিয়ে কিছুক্ষন বসে রইলো সে,তারপর সেগুলো নিয়ে তারেক রহমানের বাসার দরজায় নক করলো
উনি দরজা খুলতেই আহানা হেসে সালাম দিয়ে বললো কেমন আছেন?
.
টাকা এনেছো?
.
আহানা চুপ করে থেকে বললো এনেছি
উনি টাকাটা হাতে নিয়ে ব্রু কুঁচকে বললেন এখানে দেখি ৬হাজার টাকা,বাকি ২হাজার কোথায়?আর এই মাসের ভাঁড়া ও তো বাকি
.
আঙ্কেল আমি বাকি ২হাজার টাকা কদিন পর দিয়ে দিব,এখন আমার হাতে টাকা নেই
মুখের উপর দুম করে দরজা লাগিয়ে চলে গেলেন তারেক রহমান
আহানা বাসায় ফিরে মন খারাপ করে খাটের উপর বসে আছে
কনিকা আপু ফোনে গেমস খেলতেসে,হঠাৎ আহানার মন খারাপ দেখে বললেন আহানা শুন তোকে একটা আইডিয়া দিই
.
হ্যাঁ বলো আপু
.
তুই এত ছোটাছুটি করে ১০০টা টিউশনি করে কি লাভ বল,যে টাকা পাস তা দিয়ে ঠিকমত বাসা ভাড়াও দিতে পারিস না,তোকে আমি একটা কিছু সাজেস্ট করতে পারি যদি তুই কিছু মনে না করিস??
.
না কিছু মনে করবো না,বলো
.
তুই টিউশনি ছেড়ে বাসা বাড়িতে কাজ কর,আমার চেনা এক বোনের নতুন বিয়ে হয়েছে,সে বুয়া খুঁজতেসে,সকালে সব কাজ করে দিয়ে তুই ভার্সিটিতে চলে যাবি,ব্যাস,মাসে ১০হাজার টাকা দিবে
.
আহানার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো কথাটা শুনে,চোখ মুছে বললো ওহহ আচ্ছা
.
কিরে করবি?কথা বলবো?
.
নাহ,থাক
.
শুন কোনো কাজই ছোট নয়,তোর তো টাকার দরকার,এই কটা টাকায় তো তোর চলে না তাই বললাম
আহানা হেসে বললো ধন্যবাদ আপু,আমি দেখি কি করা যায়
.
আহানা আরেকদিকে ফিরে শুয়ে পড়লো,খুব জোরে কান্না পাচ্ছে তার,চোখ মুছেই যাচ্ছে সে,তাও চোখে পানি এসে ভরে যাচ্ছে বারবার
ঠিক বলেছে আপু,বুয়াদের ও বেতন ভালো আমার থেকেও,আমার আর বুয়ার মধ্যে তো কোনো তফাৎ নেই,বুয়ারাও পেটের দায়ে মানুষের বাসায় কাজ করে আর আমিও পেটের দায়ে কাজ করি
.
কনিকা আপু আজ মুরগী রান্না করেছে,আহানা পাশে দাঁড়িয়ে তার ভাতের বাটিতে পানি ঢালতেসে
কনিকা আপু খেতে খেতে বললো আহারে আমরা কত গরীব,মানুষ একসাথে একটা মুরগি রাঁধে,আর আমি মুরগীটাকে ৪দিনের জন্য পিস করে রেখেছি,পিস গুলো প্যাকেটে করে উপরের তলার আন্টির ফ্রিজে রেখে এসেছি,আজ শুধু ২পিস রেঁধেছি তা নাহলে তোকেও দিতাম
.
সমস্যা নেই আপু
.
আহানা ভাতে পানি ঢেলে গুড়া মরিচ এক চামচ দিয়ে গুলে খাটে গিয়ে বসলো
কনিকার খাওয়া হয়ে গেছে,প্লেট ধুয়ে শুয়ে পড়লো সে
আহানা পানি দিয়ে গিলে গিলে ভাত শেষ করলো
আসলে মানুষ তার সুখের সময় কাউকে ভাগ দিতে চায় না
নানা বাহানা খুঁজে তা জানে আহানা,তাই শুধু শুধু এসব নিয়ে কষ্ট পায় না সে
কষ্ট তো পেয়েছিল প্রথমদিন,যেদিন সে এই বাসায় প্রথম এসেছিল,কনিকা আর মীম দুজনেই ছিল তখন,আহানার হাতে ১টা কানাকড়িও ছিল না বলে সেদিন সে না খেয়ে ছিল,শুধু সেদিন না আশ্রম থেকে বের হওয়ার পর কটা দিনই সে পানি ছাড়া কিছুই খাওয়ার জন্য পায়নি
সেদিন মীম আর কনিকা আহানার সামনে খাবার খেয়ে যে যার কাজে চলে গিয়েছিল,ঐদিন আহানা খুব কষ্ট পেয়েছিল,তার সামনে তারা দুজন অবশিষ্ট খাবার আলমারিতে রেখে তালা দিয়েছিলো
এরপর থেকে আহানা আর এসব দেখে কষ্ট পায় না
কনিকা ভেবেছে আহানা ঘুমিয়ে পড়েছে,সে তার মায়ের সাথে ফোনে কথা বলতেসে
.
হ্যাঁ মা আজ মুরগী রেঁধেছি,না গো,৪দিনের জন্য পিস কেটে আলাদা রেখেছি,কি করবো বলো,একদিনে রাঁধলে ঐ আহানাকেও দিতে হতো,তাই ২পিস ২পিস করে আলাদা করে রেখেছি,আরে না একসাথে গোটা একটা রাঁধলে ঐ মেয়েটাকে হাঁড় হলেও দিতে হতো,আমি সেটা দিব না,আমার কষ্টের কামাই শুধু আমি আর তোমরা খাবা,তারপর ও ঐ মেয়েটা ড্যাবড্যাব করে তাকায় থাকে,এক নাম্বারের ছেঁসড়া মেয়ে একটা,হুম মা,আচ্ছা বাই
.
আহানা সব কথা শুনলো,হাত দিয়ে চোখ মুছে উঠে বসলো,কনিকা চমকে উঠলো
আহানা শুনে নি তো,থাক শুনলেও কি,যা সত্যি তাই বললাম
আহানা চুপচাপ বিছনা থেকে উঠে পানি খেয়ে আবারও শুয়ে পড়লো
পরেরদিন মিষ্টিদের বাসার সামনে আসতেই কালকের ঘটনা মনে আসলো তার
সে কেঁপে কেঁপে শান্তর বাসা পেরিয়ে মিষ্টিদের বাসার ভেতরে ঢুকে গেলো
.
কি হয়েছে মিস?তুমি কি কেঁদেছো?
.
না তো
.
তোমার চোখ মুখ বেলুন হয়ে আছে,,আমার মা ও কাঁদলে এমন তার চোখ মুখ বেলুন হয়ে থাকে
.
আহানা হাত দিয়ে মুখ ঠিক করে হেসে দিয়ে বললো না,কই,,পড়ো ঠিক করে
.
মিষ্টিকে পড়ানো শেষে আহানা চুপচাপ বাসা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে,শান্ত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল এতক্ষণ, আহানা শান্তকে খেয়ালই করলো না
.
এই মেয়েটার মাঝে মাঝে মন এমন খারাপ থাকে কেন?
.
শান্ত সোফার উপর থেকে তার জ্যাকেটটা পরে আহানার পিছু নিলো
.
হেঁটেই চলেছে দুজন,শান্ত হাঁপিয়ে গেছে কিন্তু আহানার কোনো বিরক্তি নেই,সে হেঁটেই যাচ্ছে
.
এত কষ্ট না করে রিকসা নিলেই হয়,আমার পা শেষ,এতদূরে কই যায় মেয়েটা?
.
অবশেষে আহানা তার বাসার সামনে আসলো
.
ওমা এতদূরে ওর বাসা, কিভাবে হাঁটলো এতদূর,আমি তো মনে হয় মরে যাবো,ডেইলি এমন হেঁটে বাসায় আসে নাকি?
শান্ত আহানার বাসার জানালা দিয়ে উঁকিবুকি দিচ্ছে,বাসার ভেতর ৩টা আলাদা খাট,পাশে রান্নাঘর মনে হচ্ছে
আহানা বিছানায় ব্যাগ রেখে ওড়না কোমড়ে বেঁধে তার কালকের পরা জামাটা ধুতে গেলো
শান্তকে খেয়াল করেনি এখনও
জামাটা উঠানে দিয়ে এসে এবার ঘর ঝাড়ু দিলো,শান্ত সব দেখতেসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
এবার তার বিছানা ঠিক করে বই নিয়ে বসলো,মনোযোগ দিয়ে পড়তেসে সে
শান্ত পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে একটা সিগারেট শেষ দিয়ে আরেকটা মুখে দিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,এই রোডে সব বাসা,সবগুলোর রঙ পানসে পাসনে,মনে হয় কয় হাজার বছর পুরোনো,আদিম যুগের,এই গলিতে আগে কোনোদিন আসেনি শান্ত
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম সকাল ৯টা বেজে গেছে
আহানার পড়া শুনা যাচ্ছে না,শান্ত ৩টা সিগারেট খেয়েছে এতক্ষণ ধরে,এবার আবারও জানালায় এসে দাঁড়ালো সে
,আহানাকে রান্নাঘরে দেখা যাচ্ছে,সেখান থেকে একটা বাটি নিয়ে এসে খাটের উপর বসলো সে
আহানার হাতের বাটিতে কি আছে তা দেখে শান্তর মাথায় যেন বাজ পড়লো
আহানার হাতের বাটিটাতে শুধু ভাত আর কিছু নেই,ভাতগুলো পানিতে ডুবানো,আহানা সেটায় খুব তৃপ্তি করে খেয়ে যাচ্ছে,মাঝে মাঝে গলায় আটকে যায় তখন টেবিল থেকে পানি নিয়ে খায় সে
আহানার মনে হলো জানালায় কেউ আছে সে তাকাতেই শান্ত সরে গেলো সাথে সাথে
আহানা দেখতে পেলো না তাকে,আবারও খাওয়ায় মন দিলো
শান্ত দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে চুপ করে আছে,এটা কি খাচ্ছে এই মেয়েটা,রোজ এটা খায় নাকি??
না রোজ কেন খাবে,এত টিউশনি করায় টাকা তো কম পায় না মনে হয়,আর আমি যতদূর জানি ও ৩টা টিউশনি করায়,মিষ্টির মা ২হাজার টাকা দিবে বাকিরা কত দেয়,আর মিষ্টিকে তো নতুন পড়াচ্ছে সে তার মানে নিশ্চয় আগে আরেকটা পড়াতো সেটা ছেড়ে মিষ্টিকে পড়ায় এখন মেবি
কারন আমি তো ওকে এই ৩টা ছাড়া আর কোনো টিউশনি করতে দেখিনি,টিউশনিতে বেশি গেলে ৩হাজার করে দেয় নয়ত ২হাজার,আচ্ছা মাসিক বেতন মোট মিলিয়ে ৮হাজার ধরলাম,তাহলে এই খাবার খায় কেন,আমার বাসার বুয়াও তো আরও ভালো খাবার খায়
শান্ত জ্যাকেট ঠিক করে আহানাদের বাসার উপরের তলায় গেলো মালিকের বাসায়,দরজায় নক করতেই তারেক রহমান এসে দরজা খুললেন
শান্তকে দেখে কিছু বুঝতেসেন না তিনি,জিজ্ঞেস করলেন কি চাই?
শান্ত সালাম দিয়ে বললো আঙ্কেল আমি কি আপনার বাসার একটা ইউনিট ভাড়া নিতে পারি?
তারেক রহমান হেসে দিয়ে শান্তকে বললো ভিতরে আসতে
শান্ত ভিতরে গিয়ে সোফায় বসলো,উনি বললেন ৩তলায় একটা ইউনিট খালি আছে
.
তা কত ভাড়া আঙ্কেল?
.
তুমি কি একা থাকবে?নাকি আরও কেউ আছে
.
শান্তর মনে পড়লো,আহানার রুমে ৩টা খাট দেখেছিল,তারমানে সেখানে ৩জন থাকে
.
আঙ্কেল আমি আর আমার ২টো ফ্রেন্ড থাকবো
.
তাহলে জনপ্রতি ৪হাজার করে দিতে হবে
.
ওহহহ,৮হাজার থেকে ৪হাজার গেলে আর ৪হাজার থাকে,কদিন আগে এলিনা ১হাজার টাকা মাইর দিয়েছে আহানার,তাহলে আর থাকে ৩হাজার,ভার্সিটির ফিস ফার্স্ট ইয়ারের ৩হাজার আর আমাদের ৪হাজার,তার মানে আহানার হাতে এখন এক টাকাও নেই?তাই তো সেদিন কানের দুলের ২০টাকা দিতে চাইছিল না,কানের দুল বেচে চাল কিনেছিল!!সব রহস্যের সমাধান সামনে আসতেসে
.
আচ্ছা মাসে টাকা দিতে না পারলে কিছু বলেন?ইয়ে আসলে স্টুডেন্ট মানুষ তো আমি
.
না কিছু বলি না,কি বলবো আর,কিন্তু আমার বাসার নিচতলায় এক মেয়ে থাকে,সাথে আরও ২টো মেয়েও থাকে,সে মেয়েটা ২মাসের বেতন এখনও ঠিকমত দিতে পারছে না,সবসময় বকেয়াটা জমা দেয়
।
হাহাহা,কি নাম তার
.
আহানা
.
ওহহহ,কত মাসের টাকা দেয়নি?
.
গত মাস বাদে পুরোনো ২মাসের দেয়নি,কাল ৬হাজার দিয়ে বললো বাকি ২হাজার পরে দিবে,,এখনও আগের মাসেরটা বাকি,মোট মিলিয়ে এখনও ৬হাজার টাকা পাই আমি তার থেকে
.
আপনার বিকাশ আছে?
.
হ্যাঁ আছে তো,কেন?
.
আহানার রিলেটিভ হই আমি,জানতে এসেছিলাম ও আপনার বাসায় কেমন আছে,জানা হয়ে গেছে,আমি আপনাকে ৬হাজার টাকা বিকাশ করে দিব,নিয়ে আসবেন কেমন?
আর ওর থেকে টাকা চাইবেন না,এখন থেকে প্রতিমাসে আমি আপনাকে ৪হাজার টাকা বিকাশ করবো,ও জিজ্ঞেস করলে বলবেন ওর আত্নীয় দিয়েছে,নাম জানতে চাইলে বললেন রফিকুর রহিম
.
কিন্তু তোমার নাম তো শাহরিয়ার শান্ত
.
যেটা বলেছি সেটা বলবেন,এর জন্য আপনাকে আমি বিকাশের টাকা উঠানোর বারতি ফিসটার সাথে বারতি বোনাস ও দিবো
.
কিরকম?
.
২০০০/৩০০০/৪০০০টাকা
.
আচ্ছা ঠিক আছে
.
শান্ত সানগ্লাস পরে একটা ভাব নিয়ে চলে যেতে নিতেই
উনি বললেন চা খেয়ে যেতে
.
শান্ত পিছন ফিরে বললো আজ আহানাকে রাতে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াবেন কেমন?
উনি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো,শান্ত বের হয়ে যাওয়ার সময় আহানার রুমের জানালায় এসে আবারও দাঁড়ালো
আহানা জামা পরে চুল আঁচড়াচ্ছে,ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য
শান্ত মুখটা গম্ভীর করে চলে আসলো সেখান থেকে,বাইক আনেনি সাথে করে,একটা রিকসা নিয়ে উঠলো সে
এই মেয়েটার জীবনটা এমন কেন,আমি তো জানতামই না এসব,কিভাবে জানবো?কাউকে বুঝতেই দেয় না মেয়েটা!
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_১৫
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_১৫
#Writer_Afnan_Lara
?
আমি সত্যিটা জানতে চাই,আমি জানতে চাই তোমার এমন করে কান্নার কারণ কি?
.
কেন?জেনে কি করবেন?আপনার কি তাতে?একটা রাস্তার মেয়ে রাস্তায় কাঁদলে সেটায় আপনার কি যায় আসে?
.
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার দুহাত ধরে টেনে বললো কি বললে?রাস্তার মেয়ে?নিজেকে রাস্তার মেয়ে বলতে লজ্জা করে না তোমার?
.
কেন লজ্জা করবে,সত্যি কথাই তো বললাম,আমি রাস্তার মেয়ে,যাদেরকে মানুষ সামনে ফেলেই ছিলে খেতে চায়
.
শান্তর চোখ মূহুর্তেই রক্তবর্ণ ধারন করলো,সে হাত ছেড়ে দিলো আহানার
.
আহানা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শান্তর দিকে তাকিয়ে
.
শান্ত একটা ঢোক গিলে চোখ নরমাল করে আবারও আহানার দিকে তাকালো
.
কেন কাঁদছিলে?আমি সত্যিটা জানতে চাই,টেল মি Damn ইট!!!
.
আপনি সত্যিটা জানতে চান তাই না?জানতে চান?ঠিক আছে
.
আহানা এগিয়ে এসে শান্তর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো,হাত দিয়ে কাঁধ থেকে জামা টেনে নিচে নামিয়ে ফেললো
.
হাতে আঁচড়ের দাগগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে আছে
.
দেখুন!এটা হলো সত্যি
.
শান্ত চুপচাপ আহানার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে,তার নিজের হাতটা মুঠো করে
আহানা জামা ঠিক করে আরেকদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে পড়লো,ওড়না ঠিক করতে করতে চলে গেলো সেখান থেকে আর একটিবারও শান্তর দিকে তাকালো না সে
শান্তর চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে,নিজেকে ঠিক করে বাইকে উঠে বসলো,বাইকের আয়নায় তাকে দেখে সে নিজেই চিনতে পারলো না,চোখ মুখ দিয়ে আগুনের লাভা বের হচ্ছে মনে হচ্ছে,সে এখন কি করবে সে নিজেও জানে না
আহানা পিউকে পড়িয়ে আকাশদের বাসার দিকে আস্তে আস্তে যাচ্ছে,ভয় করছে খুব
যাওয়ার সময় ছেলেগুলোকে দেখলো না সে,আসার সময় তাদের আবারও দেখতেই আহানা থেমে গেলো,আজ কি করে বাঁচবে,বিকাল সাড়ে ৫টা বাজে মনে হয়,তেমন লোক ও নজরে পড়তেসে না,ছেলেগুলো দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে
আহানা নড়তেসে না,কি করবে সেটার হাজারও ভাবনা মাথায় ঘুরে যাচ্ছে তার
৫মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে ঢোক গিলে হাঁটার জন্য পা বাড়াতেই একটা রিকসা সামনে এসে পড়লো
.
আপা যাবেন নাকি?
.
রিকসায় একটা ৫বছরের বাচ্চা মেয়ে বসে আছে,সে বললো তার একা বাসায় যেতে ভয় করে,আহানা যেন তার সাথে উঠে,আহানাকে কোনো ভাড়া দিতে হবে না
.
এই সুযোগ আল্লাহ দিয়েছে,আমাকে বাঁচানোর জন্য
আহানা আর সাত পাঁচ না ভেবে রিকসায় উঠে পড়লো মেয়েটার হাত চেপে ধরে আছে সে,রিকসাটা ছেলেগুলোর সামনে দিয়ে যাওয়া ধরতেই ছেলেগুলো পথ আটকালো
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহানার কলিজা কাঁপতেসে,বড় বড় করে শ্বাস নিশ্বাস নিচ্ছে সে,ছেলেগুলো আহানার হাত ধরে ওকে টেনে নামাতে যেতেই রিকসার পিছনে কেউ একজনকে দেখে সবাই একসাথে রিকসার পিছনে তাকিয়ে রইলো তারপর হঠাৎই একটু পিছিয়ে গেলো
রিকসাআলা রিকসা ঘুরিয়ে রাস্তামত চলে যেতে থাকলো
আহানা বুঝতেসে না হঠাৎ ছেলেগুলো ওকে ছেড়ে দিলো কেন
আহানা আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে মেয়েটাকে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বসে আছে
মেয়েটা মেইন বাজারে আসতেই নেমে গেলো,তারপর আহানাকে টাটা দিয়ে একটা ৩তলা বাসার ভেতরে ঢুকে গেলো
আহানা নেমে যেতে নিতেই রিকসাআলা বললো মেয়েটা বাকি পুরো ভাড়া দিয়ে দিসে আহানা যেন তার বাসার ঠিকানা দেয় তাকে সেখানে নামিয়ে দিবে
আহানা অবাক হয়ে হ্যাঁ বলে দিলো
.
আজ তো বেঁচে গেলাম কিন্তু কাল!
বাসায় ফিরে জানালার ধারে বসে আছে আহানা,বৃষ্টি আসবে মনে হয়,বাতাসের গতি বেড়েই চলেছে,আবার মাঝে মাঝে কমে,আবারও বাড়ে,উঠানে রোদে দেওয়া ওড়নাটা উড়তেসে বারবার,ক্লিপ না লাগালে হয়ত উড়ে যেতো স্বাধীনভাবে
আহানা জানালায় মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো
আজ আর খায়নি সে কিছু,মন নেই,খিধা আছে
পরেরদিন ভোরবেলা সেই ছিঁড়া জামাটার দিকে চেয়ে আছে আহানা,এটা আজ পরতে হবে,গায়েরটা তো ধুয়ে দিয়েছি,কিন্তু ছিঁড়া জায়গাটা কি করবো,জামাটা পরে নিয়ে ওড়না ভালো করে পেঁচিয়ে জায়গাটা ঢেকে নিলো সে তারপর বের হলো বাসা থেকে,মিষ্টিদের বাসায় এসে লিফট থেকে বেরিয়েই দেখলো শান্ত ওর বাসার দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
আহানা একবার তাকিয়ে মিষ্টিদের বাসার ভেতর চলে গেলো,মিষ্টিকে পড়িয়ে বের হয়ে দেখলো শান্ত দরজার বাইরে এখনও হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,হাতে সিগারেট
আহানা সিগারেটের দিকে তাকিয়ে দেখতেসে তারপর ওর নজর গেলো শান্তর হাতের দিকে,হাতে ব্যান্ডেজ করা,আহানা ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে সেদিকে
শান্ত ব্যাপারটা খেয়াল করে হাত লুকিয়ে আরেকদিকে তাকিয়ে সিগারেট খাওয়ায় মন দিলো
আহানা কিছু না বুঝে হেঁটে চলে আসলো সেখান থেকে
ভার্সিটিতে এসে ক্যামপাসে বসে আছে সে,ভেবে যাচ্ছে আজ নিজেকে কি করে বাঁচাবে
.
কিরে?গরমের মধ্যে ওড়না এমন চাদরের মত করে পরেছিস কেন?খোল
.
না,আমার শীত করছে,বৃষ্টি হওয়ার পরেরদিন আমার শীত লাগে
.
এটা আবার কেমন কথা?
.
রুপার কথায় আহানা কোনো জবাব দিলো না
আহানা এখন শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে আর শান্ত বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,আহানা শান্তর এমন চাহনি দেখে চোখটা নামিয়ে নিলো
.
কিরে শান্ত?তুই আবার মাইরপিট করেছিস?
.
না
.
তাহলে তোর হাতে ব্যান্ডেজ কেন?
.
হকি খেলেছি তাই হাতে লেগেছে
.
শান্ত ভাই সহজে হকি খেলে না,যখন খেলে তখন বিপক্ষ দলের হাঁড় আস্ত থাকে না,তা কার সাথে হকি খেলেছিস?
.
কলেজে পড়ুয়া কিছু নিব্বার সাথে
.
বেঁচে আছে তো?কোন হসপিটালে এখন?
.
এদের হসপিটালে ভর্তি করাইনি টাকা দিয়ে দিসি
.
তুই পারিস ও বটে,তা এমন রাগ ঝাড়লি কেন,কি এমন করেছে?
.
যা করেছে তা আমার সহ্য হয়নি তাই মেরেছি
.
তোর থেকে জীবনে ঠিকঠাক প্রশ্নের জবাব পাই না আমরা
.
শান্ত হাতের ব্যান্ডেজটা খুলে ফেলে দিলো,কাল রিকসাআলাকে সে পাঠিয়েছিল, আর বাচ্চা মেয়েটা হলো তমালের বোন,তমালকে ফোন করে ওর বোনকে এনে রিকসায় বসিয়ে আহানার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল,সব শিখিয়ে পড়িয়ে,কাল পুরোটা সময় শান্ত আহানাকে ফলো করেছে,ছেলেগুলো যখন আহানার রিকসা আটকেছিলো ঠিক তখনই শান্ত সিউর হয়ে গেছে এরাই তারা যারা আহানার গায়ে আঁচড় দিয়েছে তারপর তারা আহানাকে আবারও ডিস্টার্ব করতে যাবে তখনই রিকসার পিছনে শান্তকে দেখতে পেলো হাতে হকিস্টিক,শান্ত তখন জ্যাকেট খুলতেসিলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে,ছেলেগুলো শান্তকে দেখে থেমে গেলো,কারন সে ইশারা করেছিল আহানাকে যেতে দিতে
আহানা চলে যেতেই শান্ত হকিস্টিক দিয়ে ৫জনের মধ্যে একজন একজন করে গলা টেনে টেনে জিজ্ঞেস করেছে আহানার হাত ধরতে গেছিলো কে,একজন সামনে এসে বললো আমি করেছি,তো?কি করবে?
শান্ত তার হাত ধরে ঘুরাতেই হাতটা বাঁকা হয়ে গেলো তার,সে নিচে বসে ছটফট করতে লাগলো যন্ত্রনায়,শান্ত জাস্ট হাতটা ঘুরিয়ে দিয়েছে যার কারনে হাতের হাঁড় নড়ে গেছে তার,বাকিরা দৌড়ে পালাতে যেতেই শান্ত ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,খুববববব ভালো করে বুঝিয়ে দিলো ৫জনকে যে আহানাকে কিভাবে সম্মান করতে হবে,আহানার সব দায়িত্ব তাদের উপর দিয়ে দিলো শান্ত,এটাও বললো আর কোনোদিন আহানার কোনো সমস্যা হলে এবার তো হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছে পরেরবার মাথা ফাটিয়ে দিবে
.
শান্ত?ইফ আই এম নট রং তুই এসব আহানার জন্য করেছিস?
.
কাম অন নওশাদ!আমি ওর জন্য কেন করবো,আমি এলিনার জন্য করেছি
.
ওহ আচ্ছা
.
আহানা কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে এসে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে
উপর থেকে ফুল এসে তার মুখে পড়তেসে,আহানা চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে লাগলো এই অনুভূতি
হঠাৎ খেয়াল করলো আর ফুল পড়তেসে না,চোখ মেলতেই দেখলো শান্ত তার মুখের উপর হাত দিয়ে রেখেছে
.
আহানা চমকে শান্তর দিকে ফিরে তাকালো
.
ফুলগুলো কিউট তাই না?দেখো না সব তোমার আশেপাশেই পড়ে,আমি হাত দিলে আমার হাতে পড়ে না,তাই বুদ্ধি করে তোমার মুখের উপর হাত দিয়ে এই এতগুলো ফুল কালেক্ট করতে পারলাম
.
আহানা কিছু বললো না,সোজা হাঁটা ধরলো,তারপর থেমে পিছন ফিরে শান্তর হাতের দিকে তাকালো,শান্ত হাতটা পকেটে ঢুকিয়ে লেকের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ততক্ষণে
.
আহানা সেখানে আর থাকলো না বেশিক্ষণ,চলে আসলো সেখান থেকে
আজ আবারও আকাশদের বাসায় যাচ্ছে সে,ছেলেগুলো দাঁড়িয়ে আছে,যাওয়ার পথেই দেখা হলো,বুক কেঁপে যাচ্ছে,কি করবো এখন আমি
ছেলেগুলো অসহায়ের মত আহানার দিকে তাকিয়ে আছে,একজনের হাতে ব্যান্ডেজ,আরেকজনের পায়ে,আরেকজনের ঘাড়ে
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো,ওমা কেউ কিছু বললো না,স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আহানা কেটে পরলো সেখান থেকে,আসার সময় আকাশদের বাসা থেকে বের হতেই দেখলো একটা রিকসা দাঁড়িয়ে আছে
.
৫টা ছেলের মধ্যে যে আহানার হাতে আঁচড় দিয়েছিলো সে দাঁত কেলিয়ে বললো আপু রিকসায় উঠেন,আপনাকে বাসায় পোঁছে দিবে
আহানা ভয় পেলো কারন এটা তাদের ষড়যন্ত্র ও হতে পারে
আহানা হেঁটে চলে যেতে লাগতেই ছেলেটা চোখ বড় করে আহানার সামনে এসে মাটিতে বসে পড়ে বললো আপু প্লিস রিকসায় উঠেন,আপনাকে সোজা বাসায় দিয়ে আসবে
.
নাহ,দরকার নেই
.
আপু প্লিস,আপনার পায়ে পড়ি আমি,আপু,আল্লাহর কসম আমি আর জীবনেও আপনার ক্ষতি করবো না আপু
আহানা চোখ তুলে পাশ দিয়ে হেঁটে চলে গেলো
ছেলেটা মাথার ঘাম মুছতে মুছতে আবারও আহানার সামনে গিয়ে বসে আহানার পা ধরতে যেতেই আহানা পিছিয়ে গেলো
.
প্লিস রিকসায় উঠুন প্লিস,আপনার কোনো ক্ষতি কেউ করবে না,আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি,আজ আপনি রিকসায় না উঠলে আমার মাথা ফেটে যাবে
.
মানে???
.
না কিছু না,আপনি প্লিস রিকসায় উঠুন,ভাড়া আমি দিয়ে দিছি
আহানা ছেলেটার জন্য রোড ক্রসই করতে পারছে না,শেষে বাধ্য হয়ে রিকসায় উঠলো
রিকসায় বসে ভাবতেসে ছেলেটা এমন কেন করতেসে,পথে আর কোনো বিপত্তি আসেনি,আহানা ঠিকমত বাসায় ফিরে আসলো,বুঝতেসে না এমনটা কেন হচ্ছে তার সাথে,ছেলেগুলো কোনো প্ল্যান করছে না তো আমাকে ফাঁসানোর??
নাহহহ এরকম ভাবে চলতে পারে না,রান্নাঘরে এসে এসব ভুলে গিয়ে হাসলো আহানা,কারন কাল সে বেতন পাবে,পিউ আর আকাশের মায়ের থেকে,কাল নতুন মাসের এক তারিখ,কি ভালো লাগতেসে,সেই টাকা তো তারেক রহমানকে দিয়ে দিতে হবে আবার,তাও ভালো,আমাকে তো আর বাসা থেকে বের করে দিতে পারবে না,এটাই অনেক
ওমা কাঁচা মরিচ শেষ,শুধু ভাত আর নুন আছে
মরিচের গুড়া এক চামচ ভাতে ছিঁটিয়ে খেতে বসলো সে
চাল ও তো কমে এসেছে,চাল কিনবো কি করে,হাতে এক পয়সাও নেই,যা কাল পাব পুরোটায় তারেক আঙ্কেলকে দিয়ে দিতে হবে,কানের দুল এগুলা বিক্রি করে ২০টাকা দিয়ে আবারও ২কেজি চাল পাবো,কিন্তু কথা হলো ঐ ছেলেটার জন্য আমি বিক্রি করতে পারবো না,১০০টা প্রশ্ন করে আর শেষে কোথা থেকে আমার দুলটা এনে হাজির করে ফেলে উফ!!
ভোরে উঠে রেডি হয়ে বের হলো আহানা,কাল ঐ ছেলেটার কথা মনে পড়ে হাসতে হাসতে যাচ্ছে সে,মনে হয় জ্বীন ধরছে ছেলেটাকে তাই আর মেয়েদের ডিস্টার্ব করার জায়গায় পা ধরতে আসে
আহানা হাসতে হাসতে মিষ্টিদের বিল্ডিং এর ভিতরে গেলো
শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে আহানার হাসি স্পষ্ট দেখতে পেয়ে সেও হাসলো,দূর থেকে আহানার আসা দেখা যায়,ছেলেগুলোকে একদিন চা খাওয়াবো,আমার কাজ করে দিচ্ছে ভালো মতন
.
আহানা মিষ্টিকে পড়িয়ে বের হয়ে শান্তর বাসার দরজার দিকে তাকালো,শান্ত দরজা আটকিয়ে ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে
আহানা দরজার এপাশে আর ওপাশে শান্ত,দুজন দুজনকে দেখছে না,কিন্তু দুজনের মনের ভেতর একই অনুভূতি♥
.
আহানা চলে গেলো ওখান থেকে,শান্ত গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো,আগে সকাল ১০/১১টা ছাড়া তার ঘুম ভাঙ্গতো না আর এখন কিনা ভোর ৬টায় সে উঠে যায়,unbelievable!!
.
হ্যাঁ জানি unbelievable! তুমি মজা নিতেসো মা?নওশাদ,রিয়াজ আর সূর্য ও মজা নেয় আর তুমি বাকি ছিলে!!হুহহ
শুনো আমি কিন্তু এবার বাবাকে দেখতে যাবো,আর তোমাকেও,তোমার কবরে আমি রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে আসবো,তোমার তো প্রিয় ফুল সেটা তাই না?
মায়ের ছবিতে হাত বুলাতে বুলাতে কথা বলে যাচ্ছে সে
.
আর কি লাগবে বলো?গোলাপি চুড়ি আনবো?পরবে?তোমার তো খুব প্রিয় ছিল
বিবাহ বার্ষিকির দিন বাবা যখন অফিস থেকে আসতো তখন তোমার জন্য গোলাপি চুড়ি নিয়ে আসতো,তোমার নাকি সবচেয়ে প্রিয় ছিল সেই রঙ সেই মুগ্ধতা
তোমার জন্য এবার তোমার ছেলে নিয়ে আসবে এসব
মুখটা ফ্যাকাসে করে শান্ত কেঁদে দিলো,কাঁদতে কাঁদতে বললো মা আমাকে ক্ষমা করে দিও,আমি বাবাকে ভালো রাখতে পারলাম না,বাবাকে তার নতুন স্ত্রী একটুও ভালোবাসে না,আমি পারলাম না তার পাশে থেকে তার ডেইলি ডিপ্রেশন দূর করতে,তারা আমাকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করেছে মা,তুমি তো বুঝবা ব্যাপারটা তাই না?
আমার সাথে যেমন কথা বলো বাবার সাথেও কি বলো?রাগ করে থেকো না মা
বাবার সাথেও কথা বলিও,বাবার কোনো দোষ নেই,বাবা আজও আমাকে আর তোমাকে ভালোবাসে,পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে আবারও বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি
আমি চাকরি পেয়ে সবার আগে তোমার জন্য গোলাপি চুড়ি আর রজনীগন্ধা কিনে নিয়ে যাব আর বাবার জন্য ক্রিম কালারের পাঞ্জাবি,ভালো হবে না?হুম হবে,তুমি বেঁচে থাকতে তোমাকে আমি খুশি উপহার দিতে পারিনি যখন এখন দিতে কি সমস্যা,আর এটাও জানি আল্লাহর কাছে থেকে তুমি কিভাবে সুখী হবে,তোমার কবরের পাশের আশ্রমের যত অনাথ শিশু আছে আমি সবাইকে পেট পুরে খাবার খাওয়াবো ইনশাল্লাহ,এতে করে দোয়া করবে তারা তোমার জন্য
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_১৪
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_১৪
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানা বাসায় ফিরে দেখলো ৯টা ২০বাজে,এত দেরি?তাড়াতাড়ি করে ঘর গুছিয়ে আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে
আহানা ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে হঠাৎ ফোন আসলো আকাশের মায়ের,উনি বললেন আজ আকাশকে ২ঘন্টা বেশি পড়াতে,কাল ওর পরীক্ষা
.
আহানা ভেবে বললো কিন্তু আন্টি তাহলে তো আমার বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যাবে
পিউকেও তো আজ ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পড়াবো বলেছি আমি,কারন পিউয়ের ও কাল পরীক্ষা,৫টা থেকে ৬টা লেগে যাবে আকাশদের বাসায় হেঁটে যেতে যেতে,তারপর আকাশকে ৬টা থেকে ২ঘন্টা পড়ালে তো ৮টা বেজে যাবে
আপনাদের বাসা তো দূরে
.
উনি বললেন রিকসা করে আসতে তো ৩০মিনিট লাগে
উনি তো আর জানেন না আহানা হেঁটে উনাদের বাসায় যায়,হেঁটে আসতে ৫০মিনিট লাগে প্রায়ই
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহানা হ্যাঁ বলে দিলো,কারন আকাশ সবসময় অংকতে ফেল করে,ম্যাথ বলতে কাঁচা সে,কাল ভালো করে বুঝিয়ে পড়িয়ে দিলে হয়ত পাস করতে পারবে
৮টার সময় তো সব অন্ধকার হয়ে যায়,হ্যাঁ তো বলে দিলাম কিন্তু বাসায় ফিরবো কি করে যদি পথে বিপদ হয়,
ভার্সিটিতে এসে ভেবে যাচ্ছে আহানা কি করে রাত করে বাসায় ফিরবে,যে গলি দিয়ে আসা লাগে সেটা অত্যান্ত নির্জন এলাকা,ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে
.
কিরে?কি এত ভাবিস?
.
নাহ কিছু না
.
আজ শান্ত ভার্সিটিতে আসে নাই মনে হয়,আমার কথায় এত কষ্ট পেলো?আমি কি এমন বললাম যে ভার্সিটিতেই আসলোনা,আজব!
♣
বাবা আমি ব্যাংকের সব কাজ fulfill করে দিয়েছি,আর টেনসন নিও না ওকে?
.
ওকে☺
শুন!এবার ঈদে কিন্তু অবশ্যই আসবি আমার কাছে
.
আচ্ছা আসবো
♦
২০,২১,২২,২৩!!
আহানা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,ওমা শান্ত নেই,হুর আমিও না
প্রতিদিন একই ঘটনা ঘটবে তা তো নয়
আহানা ২৪তম কদম ফেলার আগেই সামনে শান্ত এসে দাঁড়ালো
পরনে কালো টি-শার্ট তার উপর হলুদ জ্যাকেট,ইয়া লম্বু
আহানা হা করে উপরে তাকিয়ে আছে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে
.
শান্ত বাবাকে বাই বলে ফোনটা পকেটে ঢুকালো
.
আহানা কি বলবে বুঝতেসে না,পাশ দিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত বললো দাঁড়াও!
.
কি?
.
থ্যাংকস!
.
কেন?
.
আমাকে ঐ পাতাবাটা রেঁধে খাওয়ানোর জন্য
.
ওহ,সরি
.
সরি কেন?
.
আমি আপনাকে তখন আপনার মা কচুপাতা রেঁধে খাওয়ায় না কেন সেটা বলে কষ্ট দিয়েছিলাম
.
ইটস ওকে,তুমি তো সবটা জানো না
.
হুম,যাই
আহানা চলে গেলো ওখান থেকে
শান্ত ভার্সিটির দিকে গেলো তমালের সাথে কিছু কাজ আছে তার
৮টা বাজতে ১০মিনিট বাকি,আহানা বারবার ঘড়ি দেখতেসে
চারিদিক অন্ধকার হয়ে গিয়েছে,জানালা দিয়ে আহানা বারবার একটুখানি আলো চোখে পড়ে কিনা তা দেখার চেষ্টা করতেসে,নাহ একটু আলো ও নেই,আরও মনে হচ্ছে রাতের গভীরতা বেড়ে আসতেসে
.
৮টা বাজে আহানা আকাশদের বাসা থেকে বের হলো অবশেষে,ভয়ে ভয়ে কিছুটা জোরেই হেঁটে চলেছে সে,দুপাশে বিল্ডিং,মাঝখানে চিকন গলি,সেটা দিয়ে হেঁটে চলেছে সে
এখন পর্যন্ত কোনো বখাটে বা ছেলেদের আড্ডামহল চোখে পড়েনি তার
ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে,আজ নিজেকে সবচেয়ে বেশি অসহায় মনে হচ্ছে আহানার
.
যে গলি দিয়ে আহানা হেঁটে যাচ্ছে সেই গলিটা যেখানে শেষ হয়ে আরেকটা গলি শুরু হবে ঠিক সেই জায়গায় ৫টা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে,ল্যাম্পপোস্টের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তাদের
আহানা তাদের দেখেছে এবং তারাও আহানাকে দেখেছে,নির্জন এলাকা বলে ছেলেগুলো বাদে আশেপাশে কোনো মানুষ চোখে পড়তেসে না
.
আহানা ছেলেগুলোকে পেরিয়ে চলে গেলো,কিন্তু তার মনে হচ্ছে কেউ তাকে ফলো করছে,পিছনে তাকাতেই আহানার মনে হলো ভয়ে জ্ঞান হারাবে এখন,সেই ৫টা ছেলেগুলো কিভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে,তার পিছু পিছু আসতেসে
আহানা এখন কি করবে,ওর যদি কোনো ক্ষতি করে ফেলে
আহানা হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলো,খুব জোরে হেঁটে যাচ্ছে সে
কিন্তু না!!ছেলে ৫টার মধ্যে ২জনই সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
ককককি আআআআমমমমার পপপথ আটকিয়েছেন কককেন?
.
কেন জানো না?একা পথে সুন্দরি নারী দেখলে হাতছাড়া কি করে করি বলো
.
আহানা এদিক ওদিক তাকালো,সম্ভবত সে এখন ঐ রোডে যেখানে এক পাশে একটা ডোবা আর আরেকপাশে মাঠ
অন্ধকারে ঠিকমত বুঝা যায় না ভালো করে,কিন্তু একটা পিলার দেখে আহানা আন্দাজ করলো সে এখন কোথায়
.
ছেলেগুলো আরও কাছে আসতেসে,আহানা সরে দাঁড়ালো,পিছনে বাকি ৩জন,বাজে ভাষায় গান গাইতেসে তারা
.
আহানা সুযোগ খুঁজতেসে পালিয়ে যাওয়ার,কারন এখানে চিৎকার দিয়েও কাউকে পাবে না সে জানে,কারন বাসা বাড়ি পিছনে ফেলে এসেছে সে,এই জায়গাটা যে গলির জন্য তার কাছে নির্জন মনে হতো এটাই সেই গলি
.
আহানা তার সামনের ২টো ছেলের পাশে ফাঁক দেখে সময় নষ্ট না করে এক দৌড় দিলো,যার পাশ দিয়ে দৌড় দিলো সে আহানাকে ধরার জন্য ওর কাঁধ ধরতে গেলো
কিন্তু আহানা খুব জোর গতিতে দৌড় মেরেছিলো
যার কারণে ছেলেটার হাতটা আহানার হাতের উপর দিয়ে স্লিপ খেয়ে গেলো
তার নখের আঁচড়ে আহানার হাতের উপরিভাগ ছড়ে গেছে,এতই জোরে ধরতে গিয়েছিল যে আহানার জামাও ছিঁড়ে গেছে কিছুটা হাতার উপর দিয়ে
.
আহানা প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে,এখন তার ইজ্জত আগে পরে বাকি সব
দৌড়াতে দৌড়াতে একটা বিল্ডিং এর পিছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো সে
ছেলেগুলো অন্ধকারে ঠিক বুঝতে পারলো না আহানা কোনদিকে গেছে
আহানা হাঁপাতে হাঁপাতে উঁকি দিয়ে দেখলো ছেলেগুলো এখনও রোডে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর কিসব বলতেসে
৫মিনিট ধরে আহানা চুপচাপ বিল্ডিংটার পিছনে দাঁড়িয়ে রইলো ছেলেগুলো চলে যাওয়া পর্যন্ত,ওরা চলে যেতেই আহানা রোডে এসে ভালো করে চারিদিক দেখে ক্ষিপ্রগতিতে বাসায় ফিরে আসলো
রাত ৯টা ৩০বাজে,আজ খুব বাঁচা বেঁচেছি আমি,হাত খুব ব্যাথা করতেসে
জামা খুলতেই আহানা চমকে উঠলো তার হাতে ৪ আঙ্গুলের আঁচড় দেখে
জামাও ছিঁড়ে গেছে,থাক আমার মানসম্মানের কাছে এগুলা কিছু না
জামাটা ধুয়ে মেলতে গিয়ে আকাশের দিকে তাকালো সে
হঠাৎ খুব কান্না পেয়ে গেলো,কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়লো সে
আমার এই দুনিয়াতে কেন কেউ নেই?কেন আমার পরিবার নেই?আমাকে এত এতিম কেন বানালে?এত অসহায় কেন বানালে?কি দোষ করেছিলাম আল্লাহ?এতদিন ধরে কত মানুষের পশুত্ব চেহারা সামনে এসেছে সবসময় নিজের ইজ্জত বাঁচিয়ে রেখেছি আমি আর এখন তো মনে হয় নিজের এই সম্মানটুকুও শেষ হয়ে যাবে,কেন আমি একাই কষ্ট পাই,কেন সবসময় আমার সাথেই এমন হয়,না মা আছে না বাবা আছে,না ভাইবোন আছে,আমাকে দেখে রাখার জন্য কাউকে পাঠালে না তুমি,আমার নিজের উপর নিজের দায়িত্ব দিয়েছো তুমি
পারলে পারবো না পারলে মরবো তাই না?
মরতেও দাও না,মরন দাও না আমার!!
আহানা চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়ালো,চুপচাপ খাটের উপর এসে বসে আছে সে,কচুর তরকারি আছে,ভাত রেঁধে খেতে হবে
না খেলে নষ্ট হয়ে যাবে,ভাত বসিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো সে
পরেরদিন ভোরে রোবটের মত হেঁটে যাচ্ছে আহানা
গন্তব্য স্থান মিষ্টিদের বাসা,রাস্তা খালি তাও বারবার গা শিউরে উঠছে তার,এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে হাঁটতেসে সে,বুকের ভেতর ধরফর ধরফর করেই যাচ্ছে,থামাথামি নেই কোনো,কেন এমন হচ্ছে,আচ্ছা আমি আজ আবার আকাশদের বাসার ওদিকে যাব কি করে,যদি ছেলেগুলো আবারও এসে যায়,ভাবতে ভাবতে লিফটের দরজা খুলে গেলো,আহানা অন্যমনস্ক হয়ে লিফট থেকে বের হচ্ছে ধীর গতিতে
শান্ত লিফটের সামনেই ছিল,নিচে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল এতক্ষণ
হঠাৎ লিফটের দরজাটা আটকে যেতে লাগলো,আহানা এখনও বের হয়নি,দরজার মাঝ বরাবর সে
শান্ত চোখ বড় করে হাত এগিয়ে নিয়ে আহানাকে টান দিয়ে বের করে আনলো লিফট থেকে
.
আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড?
.
আহানা চমকে এদিকে ওদিক তাকিয়ে ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করলো
.
কি?কথার উত্তর দিচ্ছো না কেন?
.
আহানা এখনও বুঝতেসে না কি হচ্ছে,কি নিয়ে কথা বলতেসে শান্ত,কাল সারা রাত ঘুমাতে পারেনি আহানা ভয়ের চোটে,এখন একটা ঘোরের মধ্যে আছে সে
শান্ত আহানার কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে বললো কি হয়েছে তোমার?
আহানা কেঁপে উঠলো ব্যাথায় কারন আঁচড় যেখানে লেগেছিল শান্ত সেটাই চেপে ধরে আছে
আহানা শান্তর হাত সরিয়ে একটু পিছিয়ে গেলো,চুল ঠিক করে বললো না কিছু না
তারপর মিষ্টিদের বাসায় চলে গেলো
.
এই মেয়েটার মাঝে মাঝে কি হয় আমি বুঝি না!!
.
আহানা ভার্সিটিতে এসে মনমরা হয়ে বসে আছে
রুপা বারবার জিজ্ঞেস করতেসে কি হয়েছে
.
আহানা আর কষ্ট চেপে রাখতে পারলো না,কেঁদেই দিলো
ক্লাসের সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
.
কিরে এমন করে কাঁদছিস কেন,দেখি আমার দিকে তাকা,আহানা?কি হয়েছে তোর?কেউ কিছু বলেছে?
.
আহানা চোখ মুছে পাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে
এখানে আর না থেকে বেরিয়ে চলে গেলো সে
রুপা ডাকতে ডাকতে আসতেসে পিছন পিছন
আহানা চলে যাচ্ছে ভার্সিটির থেকে
শান্ত বাইকে বসে যখন বাসায় ফেরার জন্য বাইক ঘুরালো তখনই দেখলো আহানা বের হয়ে যাচ্ছে জোরে হেঁটে হেঁটে
রুপা আর আহানার সাথে দৌড়ে না পেরে ক্যামপাসের মাঝপথেই থেমে গেলো
।
শান্ত এবার চিন্তায় পড়লো কি হয়েছে তা জানার জন্য
.
আজ আর কদম গুনে নাই আহানা চোখ মুছতে মুছতে হাঁটতেসে সে
কৃষ্ণচূড়া গাছটার কাছে এসে হাঁটার গতি কমিয়ে দিলো
এই রোডটাতে মানুষের চলাচল একদম কম,বলতে গেলেই একদমই নেই
কারন এটা ভার্সিটির পেছনের রোড
আহানা নিচে রাস্তায় বসে কেঁদে যাচ্ছে,কেউ নেই সে জানে তাই চিৎকার করে কাঁদতেসে,সে চাইলেই টিউশনি ছেড়ে দিতে পারে কিন্তু ছেড়ে দিলে তাকে রাস্তায় বাসা বানাতে হবে এসব ভেবে কাঁদতেসে সে,আর টিউশনি না ছাড়লে সেই ছেলেগুলোর মুখোমুখি হতে হবে আবারও
শান্ত থ হয়ে আহানার কান্না দেখছে,কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না সে,পাবে কি করে,কি করে সান্ত্বনা দিবে সেটার কোনো কূল কিনারা সে খুঁজেই পাচ্ছে না
বাতাসে গাছের কৃষ্ণচূড়া ফুল ঝরে আহানার গায়ে, সামনে পড়তেসে একের পর এক
আজ আহানা হাত পাতে নি,তার খেয়ালই নেই তার প্রিয় ফুল ঝরে পড়ে যাচ্ছে
শান্ত কৃষ্ণচূড়া গাছটার পাশের একটা নাম না জানা গাছের শেকড়ে বসেছে
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে হাতপা গুটিয়ে কেঁদেই চলেছে,এই কান্নার থামাথামি নেই কোনো
শান্ত ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার আহানার দিকে তাকাচ্ছে,আবার ভাবতেসে কি কারন হতে পারে
সে আহানার খুব কাছে,আহানা টেরও পায়নি,কারন শান্ত একটুও নড়তেসে না,যেটা নড়তেসে সেটা হলো ওর চোখের পাতা,আহানাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পরক করছে সে
আহানা মুখ তুলে লেকটার দিকে তাকিয়ে আছে,আর চোখ দিয়ে নিঃশব্দে পানি গড়িয়ে পড়তেসে তার
লেকটার ওপাশে ঘন গাছগাছালি,আহানা সেটাই দেখতেসে
.
শান্ত এবার দেখলো আহানার চোখের পানি গড়িয়ে ওর থুতনির উপরের ঘাড়ো কালো রঙের তিলটার উপর দিয়ে বেয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে,শান্ত সেটা দেখে নড়ে উঠলো,তারপর মুখ খুললো
.
আবার কানের দুল হারিয়েছে বুঝি?
.
আহানা চমকে পাশে তাকিয়ে দেখলো শান্ত ওর থেকে একটু দূরে গাছের শেকড়ে বসে চেয়ে আছে ওর দিকে
ব্যাপারটা বুঝতে পেরে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট টা ভিজিয়ে হাত দিয়ে মুখটা ভালো করে মুছে দাঁড়িয়ে পড়লো সে
.
আপনি এখানে?
.
আমার প্রশ্নের জবাব পেলাম না,তাহলে তোমার প্রশ্নের জবাব কেন দিব?
.
আহানা মুখটা নিচু করে ব্যাগ কাঁধে নিতে নিতে বললো কানের দুল তো কানেই আছে
পালাতে যেতেই শান্ত সামনে হাত দিয়ে ওর পথ আটকালো
আহানা শান্তর চোখে চোখ রাখতেই ওর আরও জোরে কান্না পাচ্ছে,দাঁত মুখ খিঁচে ওড়নাটা মুঠো করে চেপে ধরে কান্না থামানোর চেষ্টা করতেসে সে
.
কাঁদো,আমি দেখি
.
না কিছু হয়নি,হাত সরান,আমার টিউশনিতে দেরি হচ্ছে
.
কিছু না হলে কেউ চিৎকার করে কাঁদে না
.
আমার পার্সোনাল লাইফে ইনটারফেয়ার করার অধিকার আমি আপনাকে দিই নাই
.
আমাকে কেউ অধিকার দেয় না,আমার অধিকার আমি নিজে তৈরি করি,তুমি আমাকে না বললে আমি তোমাকে এখান থেকে যেতে দিব না
♥
♥
আহানা ঘাপটি মেরে রাস্তার মাঝখানে বসে আছে সেই কখন থেকে
শান্ত তার পিছনে গাছটার শেকড়ে বসে একের পর এক ইটের কণা লেকটাতে টুকুর টুকুর করে ফেলতেসে
.
আহানা বিরক্ত হয়ে পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকালো
.
কি?আগে বলে দিলে আমি তো আর এভাবে বোরিং টাইম স্পেন্ড করতাম না তাই না?
.
আহানা ব্যাগ নিয়ে হাঁটা ধরলো
শান্ত উঠে জ্যাকেট টেনে ঠিক করে দৌড়ে আহানার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
কি সমস্যা আপনার?চিৎকার করে মানুষ ডাকবো?
.
ডাকো না,কে মানা করেছে?তোমার চিৎকারে আমি এসেছি আর কেউ আসবে না
.
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে আবারও কাঁদা শুরু করে দিলো
.
কাঁদলে কাঁদুক আমার কিছু না,কিন্তু থুতনির উপরের তিলটার উপর দিয়ে পানি গড়িয়ে যায় কেন,আর ব্যাপারটা আমি কেন সহ্য করতে পারতেসি না!
শান্ত হাত উঠিয়ে আহানার হাত ধরে বললো কি হয়েছে সেটা খুলে বলতে
.
আহানার কালকের কথা মনে পড়তেই গা কেঁপে উঠলো শান্তর টাচে,হাত জোরে টান দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো সে,
পিছিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_১৩
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_১৩
#Writer_Afnan_Lara
?
মিস জানো Santu ভাইয়ার অনেক দুঃখ,সে কদিন বাদেই মন খারাপ করে থাকে,কাল বিকালে আমি যখন মাম্মির সাথে ছাদে গেছিলাম গাছে পানি দেওয়ার জন্য তখন দেখলাম মন খারাপ করে দোলনায় বসে আছে
.
কেন?
.
জানি না তো,আমি অনেক জিজ্ঞেস করেছি,বলে না আমাকে
.
ওহ
আহানা মিষ্টিকে পড়িয়ে বাসায় ফিরার সময় তার চোখে পড়লো ১০তলা বিল্ডিংটার একটু দূরে কচু গাছের ক্ষেত
আহানা কচু গাছ অনেক খুঁজে এখন পেয়েছে,কচু গাছের পাতা সিদ্ধ করে মসলা দিয়ে রাঁধলে খুব ভালো লাগে এবং এটা অনেক উপকারী,বিশেষত চোখের জন্য
.
আহানা চুপিচুপি গিয়ে একটা একটা করে পাতা ছিঁড়তে লাগলো
অনেকগুলো পাতা নিয়ে রোডে এনে রাখলো,,আরও ২/৩টা নিলে বেশ হতো,২দিনের জন্য রান্না করতে পারতাম আমি
আহানা আবার ভিতরে গিয়ে পাতায় হাত দিতে গিয়ে পায়ের দিকে নজর গেলো তার,ইয়া বড় বড় দুটো জোঁক আরামসে নিশ্চুপ ভাবে তার রক্ত চুষে যাচ্ছে যা এতক্ষণ সে টেরই পায়নি
চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পড়লো আহানা,কি করবে কোথায় যাবে বুঝতেসে না
চোখ বন্ধ করে বসে আছে,সকাল ৭টায় তো ঢাকার অভিজাত এলাকার মানুষদের রাস্তায় চোখেই পড়ে না,আর সেই অভিজাত এলাকায় সে চিৎকার করেও মানুষ পাবে না
শান্ত কানে ইয়ারফোন দিয়ে জগিং করতে করতে যাচ্ছে রোড দিয়ে
.
গানের তালে তালে মাথা হেলিয়ে দুলিয়ে কচু ক্ষেতের দিকে একবার তাকিয়ে আবার আরেকদিকে তাকিয়ে থেমে গেলো,এক মিনিট কাকে দেখলাম?
.
শান্ত আবারও তাকালো সেদিকে,আহানা চোখ বন্ধ করে ক্ষেতের মাঝখানে বসে আছে,ভয়ে বিড়বিড় করে কিসব বলতেসে মনে হচ্ছে
কানের থেকে ইয়ারফোনটা খুলতে খুলতে শান্ত সেদিকে এগিয়ে গেলো
.
এই মেয়ে?মাথা ঠিক আছে তোমার??এরকম জঙ্গলের ভিতরে গিয়ে মাটিতে বসে কি করতেসো তুমি?
.
প্লিস আমাকে বাঁচান
.
কি হয়েছে?আশেপাশে কোনো গুণ্ডাপাণ্ডা তো দেখতেসি না আমি
.
আরে আমার পা?
.
শান্ত এগিয়ে এসে তাকিয়ে দেখলো আহানার পায়ের পাতাতে একটা জোঁক আরেকটা পায়ের টাকনুর উপরে,বড় বড়
.
?এগুলাকে সরান না প্লিস
.
তুমি এখানে আসতে গেসো কেন,আর মাঝখানে কেনোই বা আসলা?
আহানা জবাব না দিয়েই পড়ে যাচ্ছে
– লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্জুয়ালিমিন
.
শান্ত হাত দিয়ে জোঁক সরাতে যেতেই আহানা চিৎকার দিয়ে বললো এই কি করতেসেন,হাত দিয়ে ধরতেসেন কেন আপনি!!!
.
হাত দিয়ে ধরে সরাতে ইজি হবে বুঝছো?
.
শান্ত হাত লাগাতেই আহানা ভয়ে শান্তর টি- শার্ট টেনে ধরলো
.
ঐ দেখো তোমার ঘাড়ে একটা
আহানা আর থাকতে পারবে না,শান্তর মুখে এ কথা শুনে এগিয়ে এসে শান্তর কাছে গিয়ে বসে পড়লো ভয়ে
.
প্লিস ঘাড় থেকে সরান,
.
শান্ত হেসে দিয়ে আহানার পায়ের জোঁক ২টো সরিয়ে ফেললো
.
কই ঘাড়ের টা সরিয়েছেন?
।
আহানার চোখ বন্ধ,শান্ত বললো সরিয়েছি
আহানা এবার হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো,উফ,পা কি জ্বালা করতেসে,উঠে দাঁড়াতেই শান্ত ১০০টা প্রশ্ন করে বসলো,এখানে কেন এসেছে আহানা,কিসের জন্যে এসেছে!
.
কচু পাতা নিতে এসেছিলাম আমি
.
তোমার কি এখন চড়ুই ভাতি খেলার বয়স?ছোটবেলায় আমি কচু পাতা দিয়ে শাক রান্না করে আমার পাতানো বউকে খাওয়াতাম,কাঁচা কাঁচা,সে খেয়েও নিতো,একটা বলদই ছিল
.
পাতানো বউ?
.
ছোটবেলায় সবার এমন পাতানো বউ থাকো,তোমার পাতানো বর নাই?
.
নাহ
.
ওহ তাহলে তোমাকে বুঝিয়ে লাভ নেই,এই পাতা দিয়ে কি করবা সেটা বলো
.
কি করবো আর,রান্না করবো
.
হোয়াটটটটট!!!রান্না?তোমার মাথা ঠিক আছে?এ বয়সে কচু পাতা রেঁধে চড়ুই ভাতি খেলবা তুমি?
.
না ধুর,বলতে তো দিবেন,আর এমন ভাব করেন কেন,জীবনে কচু পাতা রান্না করা খাননি?
.
নাহ, জীবনে এ প্রথম শুনলাম কচু পাতা রেঁধেও খাওয়া যায়,ও মাই গড!
.
এটা সিদ্ধ করে মসলা দিয়ে ভাজি করলে অনেক মজা
.
শান্ত নিচে তাকিয়ে দেখলো আহানার পায়ে আরেকটা জোঁক
.
শান্তর চাহনি দেখে আহানাও তার পায়ের দিকে তাকালো!
আহানা জোঁক দেখে আবারও চিৎকার করে শান্তর হাত চেপে ধরলো
.
প্লিস এটাকে সরান প্লিস!
.
এক শর্তে
.
কি শর্ত?
.
তুমি যে ডিস রান্না করবা আমার জন্য ও আনতে হবে
.
আচ্ছা আনবো, সরান প্লিস প্লিস
.
আমার হাত না ছাড়লে সরাবো কি করে?
.
আহানার এবার হুস আসলো সে শান্তর হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে রেখেছে
তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলো ওর হাত
শান্ত ঝুঁকে এই জোঁকটাও সরিয়ে ফেলো দিলো
.
আহানা আর না দাঁড়িয়ে রোডের দিকে দৌড় মারলো,এখানে থাকা আর পসিবল না বাপরে বাপ
জোঁক ১০০টা ধরসে আমাকে
.
মনে থাকবে তো শর্তের কথা?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহানা কচুপাতা যেগুলো তুলেছিল সেগুলো হাতে নিতে নিতে বললো ঠিক আছে আনবো
বাসায় ফিরে কচুপাতাগুলো কাটতে বসে পড়লো সে,ভালো করে ধুয়ে কেটে সিদ্ধ করে রেখে দিলো,ভার্সিটি থেকে এসে রাঁধবে
সেদিনের পিঠা ২টা ছিল,সেগুলো খেয়ে বের হলো বাসা থেকে,তখন সকাল ১০:১৪বাজে
.
আহানা রুপাকে নিয়ে ক্যামপাসে বসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,শান্তকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না
.
আমাকে খুঁজতেসো?
.
আহানা চোখ বড় করে পাশে তাকিয়ে দেখলো শান্ত মুচকি হেসে ফোনে কথা বলতে বলতে চলে যাচ্ছে
.
কথাটা আমাকে বললো নাকি ফোনে যার সাথে কথা বলতেসে তাকে বললো?আজব লোক,কখন কি করে বুঝি না আমি
.
আজ শান্ত একটা কাজে চলে গেসে তাই আর আহানাকে টিউশনি যাওয়ার পথে ডিস্টার্ব করতে আসেনি
আহানা তো ভয়ে ভয়ে রোড পেরিয়ে চলে গেসে,যাক বাবা বাঁচলাম!
আল্লাহ এই বাঁদরটাকে সুবুদ্ধি দিয়েছে,আলহামদুলিল্লাহ
আহানা বাসায় ফিরে এসে সিদ্ধ করে রাখা কচু পাতাগুলো মসলা দিয়ে ভালো করে ভেজে নিলো,একটা ছোট বক্সে শান্তর জন্য আলাদা করে রেখে দিলো
মীম আপু বাসায় আছে আজকে,তার ডিউটি শেষ,আহানা উনার থেকে গোটা জিরা এক চামচ নিয়ে ভেজে কচুপাতার উপরে ছিঁটিয়ে দিলো,এতে করে স্বাদ হাজারগুন বেড়ে যায়
যাক হয়ে গেছে,কাল সকালে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো
পরেরদিন ভোরে আহানা বের হলো বক্সটা ব্যাগে নিয়ে,সোজা গিয়ে শান্তর বাসার দরজায় নক করলো
মনে হয় শান্ত ওর জন্যই অপেক্ষা করতেসিলো,নক করার ১০সেকেন্ডের মধ্যেই শান্ত এসে দরজা খুললো
.
নিন আপনার খাবার
.
শান্ত বক্সটা খুলে দেখলো শুধু কচু পাতার আইটেম টা সাথে আর কিছু নেই
.
একি??শুধু এটা?এটা যেটা দিয়ে খাব সেটা আনো নাই?
.
মানে?আপনি তো বলছেন এটা খাবেন,আবার সাথে অন্য কিছু আনতে হবে সেটা তো বলেন নাই
.
এটা কি দিয়ে খায়?
.
গরম ভাত
.
বুয়া তো ৯টা বাজা ছাড়া আসবে না,ততক্ষণ ওয়েট করার ধৈর্য্য আমার নেই,এক কাজ করো তুমি ভাত রেঁধে দাও আসো
.
কিহহ,আমি?আপনার মাথা ঠিক আছে?
.
কেন?কি সমস্যা?
.
আপনার মা কে বলেন
.
মা এখানে থাকলে তো আর তোমাকে বলতাম না
.
তার মানে আপনি বাসায় একা?আমি একা একটা ছেলের বাসায় যাব না
.
আমি কি তোমাকে খেয়ে ফেলবো নাকি?
.
খেতেও তো পারেন?
.
উফ!!
.
তাহলে বোন থাকলে বোনকে বলেন
.
শুনো আমার বাসায় আমি, নওশাদ,সূ্র্য আর রিয়াজ থাকি
.
কিহহহহ?আমি যেখানে এতগুলো ছেলে আছে সেখানে যাবো?ইমপসিবল
.
মিষ্টিইইইইইইই!
.
কিই Santuuu?
.
মিষ্টির মা বললেন কি হয়েছে শান্ত?
.
আন্টি মিষ্টি আজ আহানার কাছে আমার বাসায় পড়লে কোনো সমস্যা আছে?আসলে আমার আহানার থেকে একটা assignment নেওয়ার আছে,নোট করে নিতে হবে
.
ওকে সমস্যা নেই,যাও মিষ্টি বই খাতা নিয়ে শান্ত ভাইয়ার বাসায় যাও
.
আহানা ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে,মিথ্যুক কোথাকার!
.
কি?মিষ্টি থাকলে তো আর আমি আর তুমি একা না তাই না?
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে মিষ্টিকে নিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকলো
.
কি সুন্দর বাসা!!আল্লাহ গো!
মিষ্টি সোফায় গিয়ে বসে পড়লো খাতা কলম নিয়ে
আহানা ওকে একটা অংক করতে দিয়ে শান্তর দিকে তাকাতেই শান্ত বললো শুনো আমাদের ফ্রিজে ফ্রাইড রাইস আছে,ওটা দিয়ে এই ডিসটা খাওয়া যাবে?
.
কি বললেন?ফ্রাইড রাইস? সেটা কি?ভাজা ভাত?সেটা কেমনে খায়
.
কিহ?তুমি ফ্রাইড রাইস চিনো না?জীবনে খাও নাই?
.
না
.
পোলাও চিনো?
.
হ্যাঁ চিনি তো,ঐদিন মিরার বিয়েতে খেয়েছি
.
এর আগে খাও নাই?
.
না
.
ও মাই গড! ওকে ওয়েট
শান্ত ফ্রিজ থেকে ফ্রাইড রাইসের বাটিটা বের করে আহানাকে দেখালো
.
ওহহহ আচ্ছা এগুলো হলো পোলাও ভাজা তার সাথে সবজি,এটা বললেই হতো
.
আমি কি জানি তুমি উপকরন শুনে খাবার চিনো,নাম শুনো নয়
.
না না এটা দিয়ে কচু পাতা খাওয়া যাবে না,জীবনেও এমন নাম শুনি নাই,গরম ভাত দিয়েই খাওয়া যাবে
.
রাঁধতে পারো তো?
.
কেন পারবো না,আমাকে রান্নাঘর দেখিয়ে দিন
.
শান্ত রান্নাঘর দেখিয়ে দিলো,আহানা ভিতরে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলো,ওমা রান্নাঘর দেখি সোফার রুমের চাইতেও সুন্দর?,প্লেট,বাটি,গ্লাস রাখার একটা ওয়াল কেবিনেট,আহানা হা করে সেটাই দেখতেসে
.
তারপর পাতিল হাতে নিলো চাল ধোয়ার জন্য
.
এই যে শুনুন!!
.
শান্তর বুকে ধুক করে উঠলো আহানার ডাক শুনে
এগিয়ে এসে বললো এই খবরদার আমাকে এমন করে ডাকবা না একদম!
.
আহানা বিস্মিত হয়ে বললো কেন কি হয়েছে?
.
আমার কেমন যেন লাগে,আর তুমি এমন ভাবে ডাকতেসো যেন আমি তোমার বিয়ে করা বর!
.
আজব তো,আমি এতসব ভেবে ডেকেছি নাকি?আর আপনি এত উল্টা পাল্টা চিন্তাভাবনা নিয়ে থাকেন কেন?আমার ঠ্যাকা পড়ে নাই আপনাকে ভাত রেঁধে খাওয়ানোর,চাল কোথায় তা জানার জন্য ডেকেছি
.
এই বালতির ভিতরে
.
আহানা বালতির দিকে তাকাতেই ওর চোখ কপালে উঠে গেলো,এত বড় বালতি ভরা চাল!!
.
তো?
.
আহানা চুপচাপ বালতি থেকে পাতিলে চাল নিলো,তারপর ধুয়ে ভাত বসিয়ে দিলো,এরপর এসে মিষ্টিকে পড়াতে বসে গেলো,শান্ত একবার এক রুমে পায়চারি করতেসে
.
সোফার রুমের সামনে ২টো রুম,একটাতে নওশাদ,সূর্য আর রিয়াজ থাকে আরেকটায় শান্ত থাকে
.
মিষ্টি তুমি কিছু খাবে?
.
গোলাপজাম খাবো
.
তাহলে মিষ্টি মিষ্টিকে খাবে
.
হু?
.
শান্ত আহানার দিকে তাকাতেই আহানা বললো ও কিছু খাবে না
.
তোমাকে জিজ্ঞেস করি নাই আমি?
শান্ত মিষ্টি এনে দিলো,মিষ্টি তার অংক করা শেষে করেই খাওয়া শুরু করে দিসে
আহানা ভাত দেখতে রান্নাঘরে এসে এদিক ওদিক দেখতেসে,কি বিশাল রান্নাঘর,২০জন লোক দাঁড়াতে তাদের কোনো সমস্যা হবে না
.
এই আমাকে এক কাপ কফি বানিয়ে দাও
.
কফি বানায় কেমনে?
.
জানো না?
.
না
.
কি জানো?তোমার আম্মু তোমাকে রান্নাবান্না শেখায় নি?
.
?
.
শান্ত নিজে নিজে কফি বানালো,আহানার জন্য ও এক কাপ বানালো,কারন আহানা মিষ্টিকে পড়ানোর সময় ঝিমতেসিলো শান্ত দেখেছিল সেটা
.
মিষ্টির জন্য ভুলে কফি বানিয়ে ফেলসিলাম,বাট ও তো বাচ্চা মেয়ে এসব খায় না,লাইক ও করে না,বরং তুমি খাও এটা
.
আমি?
.
না তোমার ভূত!!
.
আহানা কফি এক চুমুক দিয়ে চোখ,ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো
ইচচচ কি তিতা,আমাকে এসব কি খেতে দিসেন,এর চেয়ে তো রঙ চা ভালো
.
কফি তো এমনই হয়
.
না আমি খাবো না,এটাকে পানীয় আইটেম বানিয়েছে কে?,কি দেখে বানিয়েছে কে জানে!
.
ভাত রাঁধা হয়ে গেছে, আহানা একটা প্লেটে রান্না করা কচুপাতা নিয়ে ভাত বেড়ে ডাইনিং এ এনে রাখলো
.
শান্ত হাত ধুয়ে বসে ছিল সেই কখন থেকে
আহানা প্লেট রাখতেই মেখে এক লোকমা মুখে দিয়ে দিলো সাথে সাথে
.
উমমম এটা তো খুব টেস্টি,আরেহহ এটা তো পাতাবাটা
.
পাতাবাটা?
.
হ্যাঁ!আমার মা এই ডিসটা বানাতো কিছুদিন পরপর,আমি এটাকে পাতাবাটা বলতাম,একদম আমার মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ,সেম টু সেম,আমার মা ও এভাবে উপর দিয়ে জিরা গুড়া ছিঁটিয়ে দিতো
.
বানাতো মানে?এখন আর বানায় না?
.
শান্তর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো মূহুর্তেই,নিচের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ খাবারটা শেষ করে উঠে চলে গেলো হাত ধোয়ার জন্য
.
আহানা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে,কি বললাম,এভাবে রিয়েক্ট করলেন কেন উনি?
আহানা ভাবতে ভাবতে প্লেটটা নিয়ে ধুয়ে রেখে দিলো
.
আচ্ছা আমি যাই
.
শান্ত তার রুমে বিছানায় আরেকদিকে মুখ করে বসে আছে,কথা বলার মুড নেই তার
আহানা কথাটা বলে চলে গেলো মিষ্টিকে তাদের বাসায় দিয়ে এসে
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_১২
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_১২
#Writer_Afnan_Lara
?
শান্তর পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে আহানা
.
দাঁড়াও!
.
কি?
.
কিছু না যাও
.
আপনি একটা!!!!
.
আহানা হাঁটতে হাঁটতে হাত থেকে কাঁটা ধরে টান দিয়ে খুলে ফেললো,ইস আমি এখন খাবার খাবো কি করে,ডান হাতেই কাঁটা ঢুকতে গেলো,২/৩বছর পর ভালো খাবার খাবো আর সেদিনই হাতে কাঁটা ঢুকতে গেলো,ফুটা কপাল আমার?
সব হয়েছে বেয়াদবটার জন্য
.
আহানা একটু হাঁটতেই সামনে রুপা আর নওশাদের সাথে দেখা হয়ে গেলো তার
নওশাদ শান্তর কাছে চলে গেসে
রুপা আর আহানা হেঁটে বাসার দিকে ফিরে গেলো
তারপর সেই ফুল মিরাকে পরিয়ে দিলো
বিয়ে পড়ানো শেষ
আহানা খাবারের দিকে তাকিয়ে বসে আছে,শেষে বাবুর্চিকে বলে একটা চামচ দিয়ে যা পেরেছে খেয়েছে,তবে তেমনটা খেতে পারে নি
.
আহানা আর রুপা বিকালের দিকে রিকসা ধরে বাসায় ফিরে আসলো,আহানা এর আগে আর শান্তর মুখোমুখি হয় নি
.
বাসায় এসে কোনো কাজই করতে পারছে না হাতের ব্যাথার জন্য,টনটন করতেসে কেমন যেন,উফ কি যন্ত্রনা!
.
পরেরদিন সকালে উঠে আহানা রেডি হতে যাবে তখনই মিষ্টির মায়ের ফোন আসলো,তিনি বললেন কাল মিষ্টি তার নানু বাসায় গেসিলো,আসে নাই,তাই আজকে পড়াতে হবে না
আহানা ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিলো,আবার গিয়ে একটু শুতেই ঘুমিয়ে পড়লো সে
♣
কিরে ভাই তুই এমন উদাস হয়ে আছিস কেন?কি হয়েছে তোর?
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
না কিছু না
.
রুপা বললো আজ আহানা আসে নাই ভার্সিটিতে
.
আমি আহানার কথা জিজ্ঞেস করসি তোকে নওশাদ?
.
নাহ ভাবলাম হয়ত ওকে মিস করতেছিস
.
না,আমি ওকে মিস কেন করবো,ওর প্রতি কোনো interest নেই আমার
♣
ইস রে!!দুপুর ১টা বেজে গেলো?আমি এতক্ষন ঘুমালাম,ভার্সিটিতেও যেতে পারিনি ধুর!
আহানা তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো,টিউশনি করাতেও যেতে হবে
হেঁটে যাচ্ছে আহানা,ভার্সিটির পিছনের রোড দিয়ে যাওয়া সহজ বলে আগে ভার্সিটিতে আসলো আহানা,এখন তো ২টা বাজে মনে হয়
৩টা বাজতে ১ঘন্টা বাকি,আহানা ভার্সিটির ক্যামপাসে দাঁড়িয়ে ক্লাসরুমের দিকে একবার তাকালো,রুপা আছে কিনা দেখার জন্য
নাহ দেখা তো যাচ্ছে না,থাক আমি বরং টিউশনির দিকে যাই
আহানা টিউশনির দিকে গেলো কিছুদূর যেতেই শান্তর মুখোমুখি হলো সে,শান্ত চুপচাপ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে
.
আজ ভার্সিটিতে আসলে না কেন?
.
আপনার কি তাতে?
.
আহানা চলে যেতে নিতেই শান্ত ওর হাত মুঠো করে ধরে টান দিলো
.
কিই?হাত ছাড়ুন,এটা কোনো ধরনের বেয়াদবি?কথায় কথায় আমার হাত ধরেন কেন?
.
শান্ত আহানার হাত টেনে ধরে ওকে কাছে নিয়ে আসলো
.
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো ছাড়ুন আমার হাত,ছাড়ুন,এমন করতেসেন কেন!
.
শান্ত তার আরেকহাত উঁচু করে ধরলো আহানার সামনে,তার হাতে কানের দুলগুলো যেগুলো আহানা বিক্রি করে দিয়েছিল
.
আহানা অবাক চোখে কানের দুলের দিকে তাকিয়ে আছে
.
এই দুলটা তোমার না?
.
আমার দুল আপনি পেলেন কই?
.
নিবে নাকি?
আহানা হাত বাড়িয়ে ধরতে যেতেই শান্ত তার হাতটা সরিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে ফেললো
.
কি হলো দিন আমার দুল!
.
২০টাকা দিতে হবে তাহলে দিব
.
আহানা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো এরকম করেন কেন,আমার দুল আমাকে দিন
.
কেন?তুমি তো হারিয়ে ফেলছিলে,তো আমি যখন পেয়েছি তখন এটা নেওয়ার সময় তোমার উচিত আমাকে টাকা দেওয়া হাদিয়া হিসেবে
.
আহানার চোখে পানি এসে গেলো,শান্তর হাতটা ছাড়ানোর জন্য হাত মুছড়াতে লাগলো সে
.
কি হলো বলো?নিবা নাকি নিবা না?নিতে হলে ২০টাকা দিতে হবে
.
থাক.আপনি রেখে দেন,লাগবে না আমার
আহানা তার হাতটা ছাড়িয়ে পিছিয়ে গেলো,তারপর চলে যেতে নিতেই শান্ত বলে উঠলো ২০টাকা নেই তোমার কাছে?তোমার হারিয়ে যাওয়া দুল কিনার জন্য?
.
না থাক,লাগবে না আমার
কথাটা বলে আহানা হেঁটে চলে গেলো
শান্ত দুলটা মুঠো করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে
আহানা ভাবতেসে শান্ত পেলো কই আমার দুলটা,ওটা তো আমি বিক্রি করে দিয়েছিলাম
.
আহানা বাসায় ফিরে বুঝার চেষ্টা করেই যাচ্ছে শান্ত দুলটা পেলো কই
ঘর ঝাড়ু দিতেসে সে, হঠাৎ একটা পোকা দেখলো সে,সম্ভবত চ্যালা হবে
আহানা ভয়ে পিছনে গিয়েই দুম করে দরজার সাথে একটা বাড়ি খেলো কপালে
.
উফ,!পোকার কামড় খাওয়ায় ভালো ছিল,কে জানত এই পোকার ভয়ে মাথায় ব্যাথা পাবো আমি
মাথা ঘষতে ঘষতে বিছানার উপর পা তুলে বসে পড়লো আহানা,ভয় করতেসে,এসব পোকা অনেক ভয় পায় সে,তার উপর বাসায় একা একা কি করবো এখন,না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো সে,ভয়ে আর বিছানা থেকে নামেনি সে,মিষ্টির আম্মু বলেছে ও এখনও নানু বাসা থেকে আসেনি
.
পরেরদিন রেডি হয়ে ভার্সিটিতে এসে বেশ ব্যস্ত সময় কাটছে আহানার
রুপা একটা assignment ধরিয়ে দিসে,ও কাল রাতে করতে পারেনি,আহানা সেটায় করতেসে
.
চল কাজ শেষ এবার ক্যামপাসে ঘুরবো
এক মিনিট তোর কপালে এটা কিসের দাগ?লাল লাল
.
নাহ কিছু না,রঙ লেগেছে মনে হয়
.
ওহহ,চল যাই
রুপা আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো ক্যামপাসের দিকে
.
তোর Assignment করে দিয়েছি আমি
.
থ্যাংক ইউ বনু
ক্যামপাসে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে আবারও ক্লাসে ফিরে আসলো দুজনে
ক্যামপাসে আজ শান্তকে আহানা দেখেনি একবারও
.
শুন তোর জামাটা আমি ধুয়ে শুকিয়ে নিয়ে এসেছি,দাঁড়া প্যাকেটটা আমার ব্যাগেই
আহানা তার ব্যাগ থেকে জামার প্যাকেটটা টান দিতেই ব্যাগ থেকে বেরিয়ে ফ্লোরে তার কানের দুল জোড়া পড়ে গেলো
.
আরেহহহহ আহানা তোর কানের দুল,দেখেছিস হারায়নি এটা,তোর ব্যাগের ভিতরেই ছিল এটা
.
কিন্তু এটা তো!
আহানা ভাবতেসে শান্ত তো ওকে এটা দেই নি,তাহলে এটা তার ব্যাগে আসলো কি করে
আহানা ভাবতেসে ব্যাপারটা
.
ধুর,কি এমন ভাবিস তুই,দে আমি পরিয়ে দিই
রুপা দুলগুলো নিয়ে আহানার কানে পরিয়ে দিলো
.
দেখ কেমন চকচক করতেসে তোর কান,তোর কান খালি মানায় না একদম
ভার্সিটিতে থেকে বের হওয়ার সময় শান্ত আহানাকে দেখে মুচকি হাসলো ওর কানে দুলটা দেখে তারপর আবার আরেকদিকে মন দিলো
আহানা শান্তর দিকে তাকাতে তাকাতে চলে যাচ্ছে টিউশনির দিকে
গুনে গুনে কদম ফেলতেসে আহানা,প্রতিদিন ২৩কদম হাঁটার পর শান্ত সামনে এসে দাঁড়ায়
২১…২২..২৩
সামনে শান্ত দাঁড়িয়ে আছে,তবে চোখ আহানার দিকে থাকলেও মন ফোনে,কার সাথে যেনন কথা বলতেসে সে
.
হুম বাবা,আমি ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছি,হুম!ওকে ডান
আহানা রোবটের মত দাঁড়িয়ে আছে শান্তর দিকে তাকিয়ে
.
শান্ত আহানাকে পেরিয়ে চলে যাচ্ছিলো,হঠাৎ থেমে গিয়ে পিছিয়ে আবার আহানার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো
আহানা মাত্রই হাঁপ ছাড়তেসিলো,শান্তকে দেখে আবারও দম বন্ধ হয়ে গেলো তার
.
শান্ত আহানার কানের দিকে তাকিয়ে তারপর কপালের দিকে তাকালো
.
কিই?
.
তোমার কপালে কি হয়েছে.?
.
রররররঙ লেগেছে
.
সবাইকে ধোকা দাও,আমাকে দিতে আসিও না,আমি ধোয়া তুলসি পাতা না,দুনিয়ার সব প্যাঁচ বুঝি
শান্ত হাত উঠিয়ে আহানার কপালে চাপ দিয়ে দিলো
.
উহহহ!
.
কি?রঙে ব্যাথা লাগে?
.
আপনি একটা বেয়াদব,জগন্যতম বেয়াদব!!!
আহানা রেগে হনহনিয়ে চলে গেলো
শান্ত হাসতেসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
.
আচ্ছা কে রাখলো দুলটা?
শান্ত?কিন্তু ও যদি ক্লাসরুমে ঢুকতো কেউ না কেউ তো দেখে ফেলতো তখন সারা ভার্সিটি হতো ব্যাপারটা,নিশ্চয় অন্য কাউকে দিয়ে আমার ব্যাগে রেখেছে,এত ঢং না করে তখন দিয়ে দিলেই ঝামেলা চুকে যেতো
.
তুমি হয়ত ভাবছো তখন কেন দিই নাই,এর কারন হলো আমি রহস্য একটার উত্তর বের করার জন্য আমি তোমার থেকে ২০টাকা চেয়েছি,তুমি বললা ২০টাকা দিবে না দুল আমার কাছেই থাক এর মানে তোমার হাতে টাকা নেই,এবার তোমার বাসা পর্যন্ত আমি পৌঁছে যাবো,রহস্য ভেদ করতে বেশ লাগে?
.
আহানা খাটে বসে কানের দুলগুলো হাতে নিয়ে তাকিয়ে আছে,বিক্রি করা জিনিস আবার ফেরত এসে গেলো,লাভ কি,আমার চাল দরকার হলে আবার বিক্রি করে দিব আমি?
.
শান্ত একটা বলপয়েন্ট নিয়ে বসে আছে,এই মেয়েটার বাবা কি চাকরি করে না??মেয়ের একটা কানের দুল কেনার সামর্থ্য ও তার নেই?মেয়েকে এতগুলো টিউশনি করে টাকা ইনকাম করতে হয়
ধুর আমিও না,কার জন্য এত ভাবতেসি,যে কিনা আমাকে চড় মেরেছিল?!!উফ শান্ত এসব ভাবা বাদ দে
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে বসে আছে,পিউর মায়ের একটা রেসিপি আজ সে ফলো করেছে,কাঁচামরিচ বেটে পেঁয়াজ দিয়ে মেখে ভাজবে,তারপর সেটা ২দিন ধরে খাবে,এটা ভেবে তার মন আজ খুশির আলমারি হয়ে আছে
পেঁয়াজকে কেটে কুচিকুচি করে কাঁচামরিচ বেটে সেটার সাথে মিশিয়ে বসে রইলো,পিউর মাকে দেখলাম সাথে রসুন ও দিচ্ছিলো,এখন আমি রসুন পাবো কই
.
আহানা সারা বাসা তন্নতন্ন করে খুঁজে খাটের নিচ থেকে রসুনের একটা কোয়া পেয়ে লাফাতে লাফাতে রান্নাঘরে গিয়ে সেটা কুচিকুচি করে কাটলো তারপর মেখে নিলো,পিউর মা তো তেল দিয়ে ভেজেছিল,আমি তেল দিয়ে ভাজবো?না না,তেল শেষ দেওয়া ঠিক না,আচ্ছা একটুখানি তেল দিই
তেল দিয়ে না ভাজলে গন্ধ আসবে ঝাঁঝ ও আসবে পরে পানি খেয়েই পেট পুরাতে হবে,তেল একটু দিয়ে ভেজে ২ভাগ করে নিলো সে
এক ভাগ কালকের জন্য রেখে বাকিটা নিয়ে বসলো,খেতে ঝাল তবে বেশ লেগেছে,রোজ রোজ একি খাবারের চেয়ে এটা বেটার
পরেরদিন আবার ভোরে রেডি হয়ে ছুটলো আহানা,গন্তব্য মিষ্টিদের বাসা,ওদের বাসায় এসে লিফটে উঠে ভাবতে লাগলো ঐ বাঁদরটার সাথে যেনো দেখা না হয়
লিফট থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে এগোনোর জন্য এক পা রাখতেই শান্ত সামনে এসে পড়লো,পরনে জগিং স্যুট
শান্ত আহানাকে না চেনার ভান করে চলে গেলো
.
ওমা!এই ছেলেটার মাঝে মাঝে কি হয় কে জানে
আহানা ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে শান্তর চলে যাওয়া দেখতেসে
চলবে♥
(সরি ফর লেট!ছোট করে দিলাম তার জন্যও সরি,মেহমান যায়নি এখনও?,কথা দিচ্ছি মেহমান গেলে ২পার্ট দিব একদিন)
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_১১
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_১১
#Writer_Afnan_Lara
?
মেয়েটা বুঝতে পারলো শান্ত তার কানের দিকে তাকিয়ে আছে,মুচকি হেসে বললো এই কানের দুলটা আমি নতুন কিনেছি এক বইনের থেকে,হিহি
মেয়েটা হেসে চলে গেলো হাত পা নাচিয়ে
শান্ত কিসব ভেবে দরজা লাগালো
.
ভার্সিটিতে এসে আহানা ক্লাসে ঢুকে চুপচাপ এক কোণায় গিয়ে বসে আছে
রুপা চুপিচুপি এসে আহানার হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো
.
কিরে আমাকে কই নেস তুই,ক্লাস করবি না?কিরে?
.
চল তোকে নিয়ে শপিংমলে যাব,মিরার জন্য কিছু কিনতে হবে তো
.
বাজেট কত?
.
৫হাজার
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কিহ!এত টাকা?
.
তো কিছে?বাবা তো আমাকে ৬হাজার দিসে,আমি ১হাজার মাইর দিসি?
রুপা আহানাকে নিয়ে একটা শাড়ীর দোকানে আসলো
.
দোকানদারকে বললো শাড়ী দেখাতে ৫হাজারের মধ্যে
.
আহানা তো রীতিমত অবাক,শাড়ী একটার চেয়ে একটা অসম্ভব সুন্দর,আহানার একটা শাড়ী আছে,তার আশ্রমের মা মারা যাওয়ার পর আসার সময় তার একটা শাড়ী নিয়ে সে এসেছিল,সাদার উপর লাল লাল সুতোর ডিজাইন করা শাড়ীটা,তেমন দামি না,৭০০/৮০০টাকার হবে
.
আহানা মন চাইলেই সেটা পরে পরে দেখে,শাড়ীটা ইউজ করা ছিল বলে আঁচল দিয়ে ছেঁড়া তাই সেটা পরে আহানা কোথাও যায় না
.
কিরে কি ভাবিস কোনটা ভালো লাগে বল
আহানা একটা গোলাপি রঙের শাড়ী হাতে নিয়ে বললো এটা সুন্দর
রুপা সেটাই কিনে নিলো,দুজনে আবার ভার্সিটিতে ফিরে আসলো
.
আহানা শান্তকে দেখে রুপাকে বললো চলে যেতে,তারপর জ্যাকেটটা নিয়ে শান্তর কাছে এসে তার দিকে বাড়িয়ে ধরলো
.
শান্ত জ্যাকেটটা হাতে নিয়ে তার ব্যাগ থেকে আহানার ওড়নাটা নিয়ে দিলো
আহানা ৫হাজার টাকা নিয়ে শান্তকে বললো নিন আপনার টাকা
.
এই টাকা আমাকে দিচ্ছো কেন?
.
এগুলা আপনার জ্যাকেটের পকেটে ছিল
.
ওহ আমি ভুলে গেসিলাম
শান্ত জ্যাকেটটা নিয়ে ঘ্রান নিয়ে দেখলো রিং পাউডারের সুবাস নয় তবে যে সুবাস সেটা শান্তর ভালো লাগলো কিছুটা
.
রুপা ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে আহানার হাতে ধরিয়ে দিলো
আহানা প্যাকেটটা খুলে দেখলো একটা জামা,খয়েরী রঙের,বেশ দেখতে,আহানা খুব খুশি হলো
.
কাল সেজেগুজে ভার্সিটির আসবি আমি আর তুই মিরাদের বাসায় যাব
.
ওকে
.
এক মিনিট,তোর কানের দুল কই?
.
ইয়ে আসলে হারিয়ে গেছে
.
একসাথে দুটোই?
.
না একটা হারিয়েছে তাই আরেকটা রেখে দিয়েছি
.
ওহ,তো অন্য একটা কানের দুল দিয়ে আসতি
.
বাদ দে,কানের দুল দিলে আমার কানে ব্যাথা করে
.
ওমা সেকি,কি বলিস তুই
.
হুম
.
ভার্সিটিতে ছুটি দেওয়া হয়ে গেছে
আহানা তার ওড়নাটা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে হাঁটতেসে,মনে হয় ভালো করে ধুয়েছে,কি সুন্দর মিষ্টি ঘ্রান আসতেসে,নিশ্চয় রিং পাউডার হবে
আমার ওড়নাকে তো নতুন বানিয়ে দিছে একদম
.
শান্ত ওড়নাটা বুয়াকে দিয়ে ধুইয়েছিল
.
আহানা কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচ দিয়ে যাচ্ছে,বাতাসে গাছটা নড়ে উঠতেই ফুল কতগুলো ঝরে নিচে পড়তে লাগলো
আহানা থেমে গিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়ালো,কি ভালো লাগতেসে,হাত বাড়িয়ে ধরলো আহানা,হাতে কতগুলো ফুল আর ফুলের পাপড়ি পড়ে জমা হচ্ছে
শান্ত ১০হাত দূরে একটা গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,এই নরমাল ফুল মানুষ এত পছন্দ করতে পারে জানতাম না!
আহানা আবারও কতগুলো ফুল কুড়িয়ে ব্যাগ থেকে সুতা টেনে ছিঁড়ে কানের দুল বানালো,কিন্তু কথা হলো কানে ঢুকাবে কি করে
১১
পরে বুদ্ধি করে কানের উপর দিয়ে সুতা নিয়ে গিট্টু দিলো,বাহ আমার কানের দুল হয়ে গেছে☺
আহানা খুশিতে লেকটার দিকে যাচ্ছিলো নিজেকে দেখার জন্য হঠাৎ ওর চোখ গেলো শান্তর দিকে
শান্ত কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, আহানার কানে দুল নেই,তাহলে কি আমার বাসার বুয়ার মেয়ের কানের দুলটা আহানা দিয়েছিলো,কিন্তু কেন?
আহানা আর লেকে গেলো না,নিজের ব্যাগটা নিয়ে হাঁটা ধরলো
.
দাঁড়াও!
.
কি?
.
তোমার কানের দুল কই?
.
আহানা কিছুটা হকচকিয়ে বললো কেন?
.
বলো শুনি
.
আপনাকে কেন বলবো?
.
কাকে দিয়েছো?
.
ককককককি,কাউককককে দিই নাই আমি,হারিয়ে গেছে
.
ওহ!
শান্ত জ্যাকেটটা ঠিক করতে করতে চলে গেলো
আহানা বুঝতেসে না শান্ত কি করে জানলো সে কাউকে দুলটা দিয়েছে ভাবতে ভাবতে হাঁটা ধরলো সে
♣
বুয়া!!বুয়া!
.
জি বলেন বাবা
.
আপনার মেয়েকে একটু ডাকেন তো
.
কেন কি হয়েছে?ও কি কোনো ভুল করেছে?
.
নাহ ভুল করেনি,একটা কাজ ছিল,কিছু কথা জিজ্ঞেস করবো,ডাকেন ওরে
.
আইচ্ছা
বুয়া তার মেয়েকে ডেকে নিলো
মেয়েটা ভয়ে ভয়ে শান্তর সামনে গিয়ে বললো
কি হইসে ভাইয়া?
.
তোমার ঐ কানের দুল কত দিয়ে নিয়েছিলে?
.
২০টাকা
.
২০টাকা?কে দিয়েছিল নাম জানো?
.
না তো,তবে মেয়েটার কাছে টাকা ছিল না বলে কানের দুল বিক্রি করে টাকা নিয়ে চাল কিনেছে
.
২০টাকার চাল?
।
জি ভাইয়া,১০টাকা করে ২০টাকার ২কেজি চাল
.
ওহ,মেয়েটার কি থুঁতনিতে তিল ছিল?
.
হহহহ ভাইয়া,যা সুন্দর লাগতেসিলো,আমি এরকম আর আগে দেখি নাই কোনোদিন, কিন্তু আপনি জানলেন কেমনে?
.
তোমার ঐ দুল আমাকে দাও,আর নাও ১০০টাকা
মেয়েটা দাঁত কেলিয়ে ১০০টাকার নোট নিয়ে দুলটা খুলে শান্তকে দিয়ে চলে গেলো
.
শান্ত দুলটার দিকে তাকিয়ে বসে আছে,২০টাকার জন্য মানুষ তার দুল বিক্রি করে?তাও যার কাছে একটাই দুল আছে?এই মেয়েটার সাথে অনেক অনেক রহস্য জড়িয়ে আছে
শান্ত দুলটা দেখে আলমারিতে তুলে রাখলো
আহানা বাসায় ফিরে কানের থেকে ফুলের দুলটা খুললো,কান খালি,গলা খালি,হাত ও খালি,কাল জামার সাথে কিছু পরা হবে না,কিরকম লাগবে আমাকে?
আগে তো গলায় একটা রুপালি হার ছিল,এমিটেশনের,সেটাও ৩০টাকা দিয়ে বিক্রি করে দিসিলাম,সেই টাকা দিয়ে পেঁয়াজ কিনেছিলাম,আর আজ দুল,আর কিছু নাই যে বিক্রি করবো
পেঁয়াজ একটা কেটে মরিচ নিয়ে ভাতে পানি ঢেলে বাটিটা নিয়ে বসে আছে আহানা,আজ কেন জানি খেতে মন চাচ্ছে না,রোজ রোজ একি খাবার,অবশ্য কাল ভালো খাবার পাবো☺
আহানা একটু পড়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো,আবার ভোরে উঠে নামাজ পড়ে রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হলো মিষ্টিদের বাসায় যাওয়ার জন্য
বাসার সামনে এসে হাঁপাচ্ছে আহানা,এতদূর বাসাটা,কমপক্ষে ৫০টাকার ভাড়া হবে,এতদূর কি আর হাঁটা যায়
লিফটে উঠে দোয়া দরুদ পড়লো যাতে শান্তর মুখ না দেখতে হয়,৫তলায় এসে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে দেখলো শান্তর ফ্ল্যাটের দরজা অফ,খুশিতে মিষ্টিদের বাসায় গিয়ে দরজা নক করলো সে,ওদের বুয়া এসে দরজা খুললো
মিষ্টিকে পড়ানো শেষে বাসা থেকে বেরিয়ে আহানা উপরের দিকে তাকালো,শান্তর রুমের বারান্দার দিকে,বারান্দায় একটা কি ২টা ফুলের টব ঝুলছে,আর কিছু দেখা যায় না,অনেক উপরে তো তাই
আহানা হেসে হেসে হাঁটা ধরলো,আজ আর ঐ বেয়াদবটার সাথে দেখা হবে না সারাদিন ?
বাসায় এসে আহানা বই নিয়ে বসলো,বই পড়া শেষ করে ১০টায় উঠে রেডি হতে গেলো,জামাটা পরে আহানার মনের ভেতরটা কেমন করতেসে নিজেকে কেমন লাগছে তা জানার জন্য
ফোনে নিজেকে দেখে মুখটা কালো করে ফেললো,গলায় কিছু নেই,হাতেও নেই,আর কান তো
ওড়নাটা পরে একটা পার্স নিয়ে বের হলো আহানা
ভার্সিটির সামনে এসে রুপার জন্য অপেক্ষা করতেসে সে
রুপা ৫মিনিটেই এসে পড়লো,সেও রেডি হয়ে এসেছে কমলা রঙের জামা পরে
.
কিরে,তোর গলায় কানে কিছু দেখি নেই,হাতেও তো নেই
.
বাদ দে,এসব পরতে ভালো লাগে না আমার
.
তাই বলে ওকেশানেও পরবি না?
.
তো কিছে,চল তো,দেরি হয়ে যাবে
দুজনে মিরাদের বাসায় আসলো,এক তলা বাড়ি,পাশে একটা পুকুর,আশেপাশেও বাড়ি আছে
কিছু টিনের কিছু ইটের
আহানা আর রুপা ভেতরে ঢুকতেই মানুষের ঠেলাঠেলিতে ওদের দুজনের দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম
বাসাটার পিছনে একটা উঠান,সবাই বাসার ঠেলাঠেলি সহ্য না করতে পেরে উঠানটায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে
রুপা গাল ভেটকিয়ে একটা কাছের দিকে তাকিয়ে আছে,পুরা গ্রাম মনে হয় তাই না?
.
তাও তো কি শান্তি এখানে,শহরের কোনো ছাপ নেই,আমার তো বেশ লাগতেসে
.
মিরাকে একটা রুমে পার্লারের লোক সাজাচ্ছে
.
আহানার গলা শুকিয়ে গেছে,বাসার ভেতরে এসে ডাইনিং টেবিল থেকে পানি নিতে গিয়ে চমকে গেলো শান্তকে দেখে,সে সোফায় বসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে বিরক্তি নিয়ে
.
আহানা চোখ বড় করে ভাবতে লাগলো ও এখানে কি করে,পাশেই এলিনা বসে আছে,পায়ের উপর পা তুলে,ফোন দেখতেসে,কারোর দিকে তাকাচ্ছে না সে
.
আহানা পানি খেয়ে এক দৌড়ে পালালো
বর এসেছে বলে সবাই চিৎকার দিতেছে
আহানা আর রুপা উঁকি দিয়ে বরকে দেখতে গেছে
শান্ত স্টেজের সামনে একটা চেয়ারে বসে আছে,এত বরিং লাগতেসে আজ,উফ!!
এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে শান্তর চোখে পড়ে গেলো আহানাকে
আহানা রুপা আর একটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলতেসে
.
শান্ত আহানাকে দেখে চেয়ার থেকে উঠে এগিয়ে গেলো,যা ভেবেছিলাম তাই!আহানার কান খালি
.
ওটা আহানারই দুল তাহলে
.
খুব জোরে গান বাজতেসে
.
আহানা রুপার সাথে এক কোণে বসে আছে চুপচাপ,মনে হয় এখানে কেউ ওদের চেনে না,সব মিরার রিলেটিভ
একটা মেয়ে ট্রেতে করে পিঠা,শরবত দিয়ে গেলো রুপা আর আহানার সামনে
আহানা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো এটা কি পিঠা,পিঠা জিনিস সম্পর্কে ওর ধারনা কম,সারাজীবন ভাত পেঁয়াজ,আলু আর কিছু তরকারি ছাড়াও যে কিছু খাবার থাকতে পারে তা আহানার অজানা
তো পিঠা দেখে এমন অবাক হওয়ারই কথা
.
কিরে এমন করে চেয়ে আছিস কেন?এটা ডিমের পিঠা
.
ওহ
আহানা মুখে দিয়ে বেশ মজা পেলো,এরকম পিঠা থাকলে তো বাসায় আর বিসকিট খেতে হয় না তার
.
শুন আমার না এখন কিছু খেতে মন চাচ্ছে না,আমি ৫টা পিঠা ব্যাগে করে নিয়ে যাই?
.
ওমা তের খিধা নাই কেন?আচ্ছে নে
আহানা তার ব্যাগে ৫টা পিঠা নিয়ে নিলো,খুশি লাগতেসে,কাল সকালে ভাত খাব না,পিঠা খেয়ে ভার্সিটিতে যাব,ভাত বেঁচে যাবে?
.,
বৌকে সাজানো হচ্ছে,রুপা আর আহানা বসে বসে সেটা দেখতেসে
.
আহানা?তুমি একটু সাজো ও নাই কেন,এরকম খালি খালি এসেছো কেন?কেমন লাগতেসে তোমাকে!
.
না আসলে এমনিতেই ভালো লাগে না
.
মিরার খোঁপায় ৪টা গোলাপ ফুল লাগতো,আছে ২টা
মিরাদের বাসা এমন একটা জায়গায় যেখান থেকে মেইন রোড অনেক দূরে,এখন ফুলের জন্য কাকে পাঠাবো সেটা নিয়ে গোলমাল শুরু হয়ে গেছে
.
আহানার মনে পড়লো রিকসা দিয়ে আসার সময় তারা একটা গোলাপগ্রাম দেখেছিল,বেশি দূরে না সেটা
মিরার যত কাজিন ভাই ছিল তারা নানা কাজে বিজি,একজন তো বলেই দিলো কি দরকার ফুল দিয়ে,এত সং সেজে লাভ কি,ফুল দিলেও বিয়ে হবে না দিলেও বিয়ে হবে
.
এদিকে স্টেজ সাজানো হয়েছে রজনীগন্ধা আর গাঁদা দিয়ে,গোলাপ দিয়ে সাজালে সেখান থেকে থেকে আনা যেতো
শেষে আহানা আর রুপা ঠিক করলো ঐ গোলাপগ্রামে যাবে কারন মিরা ততক্ষণে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে,তার কথা হলো তার বিয়ে perfectly end হবে,কোনো কমতি যদি তার বিয়েতে হয়ে যায় তা সারাজীবন মনে রেখে ফুঁফিয়ে কাঁদবে,এটা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না
আহানা আর রুপা রওনা হলো,হাঁটতেসে চিকন একটা রোড দিয়ে,দুপাশে ক্ষেত,ধানের ক্ষেত
হঠাৎ সামনে নওশাদ এসে দাঁড়ালো
আহানা চমকে তাকিয়ে আছে,কারন নওশাদ এখানে কেন সেটায় ভাবতেসে সে,ওদিকে রুপা মুচকি মুচকি হাসতেসে,ও আচ্ছা তার মানে শয়তান শান্তর চ্যালা নওশাদ হলো রুপার বফ,এবার বুঝলাম আমি
নওশাদ আহানাকে বললো দাঁড়াতে ওরা একটু ঘুরে আসবে বাম পাশের নির্জন রোডটা থেকে
রুপা আহানার হাতে গোলাপ কিনার টাকা দিয়ে চলে গেলো
আহানা ঠিক আছে বলে দাঁড়িয়ে আছে,পরে দেখলো আর কয়েক পা হাঁটলেই গোলাপ গ্রাম,দূর থেকে লাল রঙ চোখে আসতেসে
আহানা হেঁটে সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো
হঠাৎ ওর নজরে পড়লো শান্ত আর এলিনাকে,এলিনা একটা ছোট বাচ্চা মেয়েকে দিয়ে পিক তুলাচ্ছে আর শান্ত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গোলাপ গাছ দেখতেসে
.
আহানা চুপচাপ ভেতরে ঢুকে ক্ষেতের মালিককে টাকা দিয়ে দুটো ফুল নিলো,উনি আরেকটা ফ্রি দিয়ে দিলেন
আহানা খুশি হয়ে সেটা কানে গুজে নিলো
.
পেছন থেকে শান্ত বলে উঠলো তোমার কানের দুল কই?
.
আহানা চোখ বড় করে পেছনে তাকালো
.
আমার কানের দুলের পেছনে লাগছেন কেন,বলসি না হারায় গেছে
.
তো বাসায় আর কানের দুল নেই?
.
আপনার কি?আমার ইচ্ছা আমি কানে কিছু লাগাবো না
.
তাহলে ফুল লাগালে কেন
.
আহানা রেগে আর কিছু না বলেই হাঁটা ধরলো
ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে সরু উঁচু পথ,সেটাতে আহানা হেঁটে চলে যাচ্ছে
রেগে শান্তকে বকতেসে সে
হঠাৎ পড়ে যাওয়া ধরতেই শান্ত হাত ধরে ফেললো ওর
.
আপনি আমাকে ফলো করতেসিলেন?
.
শুনো এটা তোমার বাপের রাস্তা না,আমি যেখান দিয়ে ইচ্ছা সেখান দিয়ে হাঁটবো,তোমার কি,আর তোমাকে সেভ করায় এ কথা বলতেসো? ফাইন!
শান্ত আহানার হাত ছেড়ে দিলো,আহানা সাথেসাথে দুম করে পড়ে গেলো নিচে
.
হুম এই জায়গা তোমার জন্য ঠিক আছে একদম
.
শান্ত ভেংচি দিয়ে চলে গেলো
আহানা হাত পা মুছে উঠে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে
বেয়াদব কোথাকার,অসভ্য?
.
শান্ত আগে আগে হেঁটে যাচ্ছে সরু পথটা ধরে
.
আহানা আস্তে আস্তে পিছন পিছন আসতেসে
শান্ত পিছন ফিরে আহানার দিকে তাকালো,আহানা মুখ বাঁকিয়ে আরেকদিকে ফিরে গেলো
শান্ত দাঁড়িয়ে পড়ে হাতের কব্জি কচলানো শুরু করে দিসে
.
হুহ,আমি ভয় পাই নাকি
আহানা গোলাপে এক চাপ দিলো রাগে,হাতে যে কাঁটাযুক্ত গোলাপ আছে তা সে জানত না
চাপ দেওয়ার ফলে হাতে কাঁটা ঢুকে গেলো পুরোটা
.
উফ!
হাতের দিকে তাকিয়ে আহানার কলিজা মনে হয় বেরিয়েই যাবে,এত বড় কাঁটা ঢুকে গেছে তার উপর শান্ত কব্জি কচলাচ্ছে
আহানা কাঁটা সমেত হাতটা লুকিয়ে হাঁটা ধরলো আবার
চলবে♥
(বাসায় মেহমান আসছে তাই দিতে দেরি হলো?)
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_১০
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_১০
#Writer_Afnan_Lara
?
আমার কাছে শাড়ী বা ভালো ড্রেস নেই,কি করে যাবো?আর মিরাকে গিফট ও তো দিতে হবে,খালি হাতে তো আর যাওয়া যায় না,সেই টাকা নেই আমার কাছে,তাই যাব না
.
ওহ এই কারন?ধুর বোকা,আমি তোকে আমার একটা জামা দিব,আর গিফট আমি দিয়ে দিব আমার আর তোর হয়ে
.
তাও আমি কিছু না দিলে কেমন হবে ব্যাপারটা,বাদ দে,আমি যাব না,তুই যা
.
দরকার হলে গিফট তুই চুজ করিস,টাকা আমি দিব,তাহলে দুজনের দেওয়া গিফট হবে,তাও প্লিস আমার সাথে বিয়েতে attend করিস
.
আচ্ছা দেখি
♣
শান্ত কি সমস্যা তোমার?তুমি আমাকে ইগনোর করতেসো কেন?কাল রিয়াজকে বললাম তোমাকে বলতে আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে,আর তুমি কিনা কথা না বলেই বাসায় ফিরে গেলা?আমাকে একবার কল ও করলে না
.
শুনো এলিনা আমি আগেও বলেছি এখনও বলতেসি আমরা জাস্ট নরমাল ফ্রেন্ড এর চেয়ে বেশি কিছু না
.
বেশি কিছু আমি জানি,তুমি বলতে চাও না,বলতেও হবে না,আমি শুনতে চাই না
.
শান্ত ভাইয়া!
.
মিরা?কি হইসে বলো
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
ভাইয়া আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে,শুক্রবারে বিয়ে,আপনি প্লিস আসিয়েন,আপনি আসলে আমি অনেক খুশি হবো,প্লিস প্লিস
এলিনা আপু তুমিও আসিও শান্ত ভাইয়ার সাথে
.
congratulations মিরা♥আমি অবশ্যই আসবো
.
থ্যাংকস ভাইয়া,থ্যাংক ইউ সো মাচ,কার্ডটা নিন
.
ওয়াও দেখলে সবাই জানে আমি আর তুমি কাপল আর তাই আমাদের একসাথে ইনবাইট করেছে
সেখানে তুমি কিনা আমাকে অস্বীকার করতেসো?
.
শান্ত কিছু না বলে বিরক্ত হয়ে চলে গেলো
♣
এই তুই সারাদিন কার সাথে এমন কথা বলিস দেখি?
আহানা রুপার হাত থেকে ফোন নিয়ে দেখলো নওশাদ লেখা,ওমা নওশাদ??কে এই নওশাদ?
আহানা ফিক করে হেসে দিয়ে এক দৌড় দিলো
.
দাঁড়া আহানা,মজা করিস না প্লিস,আমার ফোন দে,আহানা!!
.
দিব না,আমি দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলবো
আহানা রুপার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে দৌড়াচ্ছে আর দুম করে এক ধাক্কা লেগে গেলো শান্তর সাথে,দুজনেই নিচে পড়ে গেলো
.
বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!এটা কি তোমার বাসা নাকি?এরকম পাগলের মত দৌড়াচ্ছিলে কেন,পুরো জ্যাকেট নোংরা করে দিসে আমার
.
আহানা জিহ্বায় কামড় দিয়ে তাকিয়ে আছে,সে নিজেও ঘাসের উপর পড়ে গিয়ে বসে আছে
.
শান্তর মেজাজ এমনিতেও গরম ছিল তার উপর আহানা আরও গরম করে দিসে
রেগে উঠে দাঁড়িয়ে জ্যাকেট খুলতে লাগলো সে
.
আহানা ভয় পেয়ে ঢোক গিলে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো
শান্ত তার জ্যাকেটটা খুলে আহানার হাতে ধরিয়ে দিলো
.
আহানা ব্রু কুঁচকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শান্ত বললো এটা ধুয়ে শুকিয়ে কাল এনে আমাকে দিবে
রিং ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুইবা বুঝছো?অন্য ডিটারজেন্টের ঘ্রান আমার পছন্দ না
.
আজব তো!আমি কেন ধুবো?
.
কেন মানে?তোমার জন্য আমি মাটিতে পড়ে গিয়ে আমার জ্যাকেট নোংরা হয়ে গেছে সো তুমি ধুয়ে শুকিয়ে এনে দিবা আমাকে বুঝছো!
.
আহানা ভেঁংচি দিয়ে উল্টো পথে হাঁটা ধরলো
.
শান্ত মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে
.
শান্ত এদিকে আয় আজকে ফুটবল ম্যাচ আছে,জয়েন হবি না?
.
আসতেসি!
শান্ত গিয়ে নওশাদ,রিয়াজের সাথে ফুটবল ম্যাচে জয়েন দিলো
ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে
আহানা হেঁটে হেঁটে টিউশনির দিকে যাচ্ছে,আজ আর ঐ পথে শান্ত আসেনি,যাক বাবা বাঁচলাম,আহানা খুশিতে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে হেঁটে যাচ্ছে,একটা গলি পার হলেই একটা বিরাট বড় মাঠ পড়ে
শান্ত সেখানেই ফুটবল খেলতেসে
আহানা জ্যাকেটটার দিকে তাকিয়ে শান্তকে বকতে বকতে যাচ্ছে মাঠটার পাশ দিয়ে
.
শান্ত কিক মার!!
.
শান্ত জোরে সোরে কিক মারলো বল গোল পোস্টে না ঢুকে আরেক দিকে গেলো,তাও যে দিকে গেলো সেদিকে আহানা ছিল
বল গিয়ে একদম ওর গায়ে পড়লো,মনে হয় কেউ পাথর মেরেছে
আহানা দুম করে পড়ে গেলো রোডের উপর
.
ইস রে,জনগনরে আঘাত করলি শেষমেষ এবার তুই সামলা,মনে হয় কোনো মেয়ের গায়ে পড়েছে,আমি বল নিতে যামু না,লোকজন ডেকে এবার কেয়ামত করবে
.
তুই চুপ থাক নওশাদ,আমি যাচ্ছি
.
শান্ত মাথার চুল থেকে ঘাম মুছতে মুছতে এগিয়ে গেলো
আহানা বল সরিয়ে জামা ঝাড়তেছে রাস্তায় বসে বসে
.
ওহ তুমি!দাও বল দাও
.
আপনি?আপনি আমার গায়ে বল মেরেছেন?
ইচ্ছে করেই এমন করেছেন তাই না?সকালের ঘটনার জন্য প্রতিশোধ নিলেন?
.
চুপ!আমার বল দাও
.
আহানা বল নিয়ে উঠে দাঁড়ালো,তারপর নিজের গায়ের ওড়নাটা খুলে শান্তর দিকে বাড়িয়ে ধরলো
.
শান্ত চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছে
ওড়না দিতেছে কেন আমাকে মেয়েটা?
শান্ত এদিক ওদিক তাকিয়ে ব্রু নাচিয়ে বললো কি?তোমার ওড়না আমাকে দিচ্ছো কেন?
.
সকালে আমার জন্য পড়ে গিয়ে আপনার জ্যাকেট নোংরা হয়েছিল তাই আমাকে সেটা ধুইতে দিসিলেন
.
হুম তো?
.
এখন আপনার কিক করা বলের কারনে আমি পড়ে গিয়ে আমার ওড়না নোংরা হয়ে গেছে,আপনি ধুয়ে আনবেন বাসা থেকে,শুকিয়ে আনবেন,কেমন?আর হ্যাঁ যেকোনো ডিটারজেন্ট হলেও চলবে আমার,ইটস ওকে
.
শান্ত রাগে গজগজ করতে করতে এগিয়ে গেলো ওর দিকে
.
আহানা একটু পিছিয়ে গিয়ে বললো নাহলে এক কাজ করেন আপনার জ্যাকেটটা নিয়ে যান,আমিও আমার ওড়না ফেরত নিব
.
শান্ত রেগে দাঁতে দাঁত চেপে আহানার ওড়না মুঠো করে ধরলো
.
গুড বয়!
.
তুমি এই অবস্থায় টিউশনিতে যাবে?ওড়না ছাড়াই?
.
না তো!আমার তো অন্য উপায় আছে,এক মিনিট!
আহানা তার চুলের খোঁপা থেকে কাঠিটা খুলে ফেললো,সাথে সাথে খোঁপা খুলে গিয়ে ওর পিঠের নিচ পর্যন্ত চুলগুলো মেলে গেলো
আহানা চুল দুভাগ করে সেগুলো তার সামনে নিয়ে আনলো
তারপর হেসে বললো ব্যাস,হয়ে গেলো না?
আহানা হাসতে হাসতে চলে গেলো
শান্ত অবাক হয়ে আহানার চলে যাওয়া দেখতেসে,তারপর বলটা নিয়ে ফিরে আসলো মাঠে
.
রিয়াজ আর নওশাদ ইয়া বড় হা করে তাকিয়ে আছে
.
হোয়াট?
.
কিরে ভাই তোর হাতে মেয়েদের ওড়না কেন?
.
সবাই হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পড়লো
.
শান্ত মুখ ফুলিয়ে বললো কিছু না
ওড়নাটা নিয়ে তার স্পোর্টস ব্যাগে ঢুকিয়ে বসে পড়লো চেয়ারে,রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার
.
কিরে বললি না ওড়নাটা পেলি কই,আর সেটা ব্যাগে ঢুকালি কেন?
.
কিছু না বাদ দে,খেলা শেষ,আমি যাই
শান্ত ব্যাগ নিয়ে বাইকে উঠে বাসায় ফিরে আসলো
বাসায় ঢুকেই ওড়নাটা ছুঁড়ে মারলো ফ্লোরে
এই মেয়েটার এত এত সাহস আসে কোথা থেকে,আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দেয়?বেয়াদব মেয়ে
.
আহানা শান্তর কথা মনে করে হাসতেসে বসে বসে
.
ম্যাম কি হয়েছে?হাসতেসেন কেন?
.
না কিছু না,অংকটা লিখে আমাকে দেখাও
♣
বাসায় এসে শান্তর জ্যাকেটটা নিয়ে ভাবলো বাসায় তো রিং পাউডার নেই,ওগুলার দাম যে বেশি,আমি তো সাবান দিয়ে জামা কাপড় ধুই,এখন কি করবো,আচ্ছা থাক সাবান দিয়েই ধুই,কি আর করার
পানিতে ভিজানোর আগেই আহানার মনে হলো জ্যাকেটের পকেটে কিছু একটা আছে
হাত ঢুকিয়ে আহানার চোখ কপালে উঠে গেলো,৫হাজার টাকা,বাপরে বাপ এত টাকা নিয়ে মানুষ ভার্সিটিতে আসে আবার ভুল করে ফেলেও যায়
আহানা টাকা গুলো তার ব্যাগে রেখে দিলো,কাল শান্তকে দিয়ে দিবে
তারপর জ্যাকেটটা ধুয়ে উঠানে মেলে দিয়ে আসলো
আলু ভেজে সেটা দিয়ে গরম ভাত খেয়ে ওযু করে নামাজ পড়ে বিছানায় বই নিয়ে বসলো সে
হঠাৎ পিউর মায়ের নাম্বার থেকে কল আসলো
আহানা কিছুটা ভয় পেয়ে রিসিভ করলো,না জানি বলে আর পড়াতে হবে না,আহানার গা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে
উনি বললেন একটা টিউশনির খোঁজ পেয়েছেন,তার খালাতো বোনের মেয়েকে পড়াতে হবে,ক্লাস ওয়ানে পড়ে,সব বিষয় পড়াতে হবে,২হাজার টাকা দিবে
আহানা তো খুশিতে অবাক,অনেক ধন্যবাদ জানালো পিউর মাকে,উনি ঠিকানাটা বলে দিলেন,আহানা নোট করে নিলো সেটা
আহানা খুশি হয়ে গেলো অনেক,কি যে ভালো লাগতেসে তার,মুখে প্রকাশ করে বুঝানো যাবে না,মনে হচ্ছে ২হাজার না ২লাখ বেতন
উনি বললেন ভোর ৬টায় পড়াতে হবে,যার মেয়েকে পড়াবে সে চায় তার মেয়ে যেন সকাল সকাল উঠা হেভিট করে নেয়,তাই এই টাইম ফিক্সড করেছেন
আহানা হ্যাঁ বলে দিলো
পরেরদিন ভোর ৪:৩০এ উঠে গেলো আহানা,খুশিতে চোখে ঘুম নেই তার
নামাজ পড়ে এসে সব গুছিয়ে ঠিক করে রাখলো,৫টা ৩০এ বাসা থেকে বের হলো,ভয় লাগতেসে একা একা হেঁটে যেতে,এত দূর উফ,একটা টাকাও নেই যে একটা রিকসা নিব,অবশ্য এ সময়ে রিকসা পাওয়াও টাফ,গলির পর গলি হেঁটেই চলেছে আহানা,ঠিকানার বাসাটা আসতেসেই না,মনে হচ্ছে পুরো বাংলাদেশ ঘুরা হয়ে গেছে
অবশেষে বাসাটার সামনে এসে দাঁড়ালো সে,ইয়া বড় ১০তলা বিল্ডিং,কি standard রে বাবা,মনে তো হয় কোটিপতিরা থাকে
পিউর মা বলেছেন ৫তলায় বাসা যাকে সে পড়াবে
লিফটে করে ৫তলায় গিয়ে এবার পড়লো কনফিউশনে
২টা ইউনিট,কোনটা ঐ মেয়েটার বাসা কে জানে,পিউর মা তো বলেন নাই কোন ইউনিট
মনে হয় দরজায় সূর্যমুখির ফুল সহ টব আটকানো এই ইউনিট হবে
আহানা গিয়ে দরজা নক করলো,কারোর কোনো response নাই,আবারও নক করলো,ওমা!এবারও response নাই কোনো
.
শান্ত হাই তুলতে তুলতে বিছানা থেকে নামলো,উফ নওশাদ,রিয়াজ সূর্য!!গন্ডারের মত ঘুমাচ্ছিস কেন,কলিংবেল বাজতেসে কানে শুনস না তোরা?আমি আমার রুম থেকে শুনতেসি,আর তোরা সামনের রুমে থেকে শুনস না?ধুর!
শান্ত মাথা চুলকাতে চুলাকতে গিয়ে দরজা খুললো
.
আহানা মুচকি হেসে সালাম দিতে গিয়ে চোখ বড় করে ফেললো শান্তকে দেখে
.
তুমি!!
.
আপনি?!
.
তুমি এখানে কি করো?আমার বাসার ঠিকানা পেলে কই?
.
আপনার বাসা এটা আমি জানতাম না,আমি তো এখানে একটা মেয়েকে পড়াতে এসেছিলাম
.
ওহ,তো আমাকে দেখে তোমার মেয়ে মনে হয়?
.
আহানা চোখ বড় করে বললো আপনার সাথে কথা বলা মানেই সময় নষ্ট!
আহানা ঘুরে আরেক ইউনিটে যাওয়া ধরতেই শান্ত ওর হাত ধরে টান দিলো
.
কি?
.
আমার জ্যাকেট কই?
.
আমার বাসায়,এখনও শুকায় নাই,যে বস্তা মার্কা জ্যাকেট আপনার,ভার্সিটিতে আসার সময় নিয়ে আসবো,হাত ছাড়ুন আমার
শান্ত ব্রু কুঁচকে আহানার হাত ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো
আহানা ডান পাশের ইউনিটে নক করতেই একজন মহিলা এসে দরজা খুললেন,তার সাথে একটা ছোট্ট বাবু
বাবুটা মুচকি হেসে বললো তুমি বুঝি আমার মিস?
.
আহানা হেসে দিয়ে বললো হুম
.
তার মা তাকে ধমক দিয়ে বললো আপনি করে বলতে
মেয়েটা ভয় পেয়ে বললো আপনি,তারপর আহানার পিছনে তাকিয়ে দেখলো শান্ত দাঁড়িয়ে আছ
.
Santuuuuuuu
.
ওলে আমার মিষ্টিইইইইইই
শান্ত এগিয়ে এসে মিষ্টিকে কোলে তুলে নিলো
.
মিসেস মিশু হক বললেন আসো ভিতরে আসো
উনি আহানাকে নিয়ে চলে গেলেন
শান্ত ভিতরে এসে মিষ্টিকে সোফায় বসালো,নিজেও বসে গেলো
.
এই বান্দরটার সাথে মিষ্টির এত ভাব?বাপরে,আমি তো ভাবলাম উনার মুখ দিয়ে তেতো কথা ছাড়া আর কিছুই বের হয় না
.
মিস এই হলো আমার Santuuu ভাইয়া,আমাকে প্রতিদিন চকলেট কিনে দেয়
.
হুহ এরে আমি চিনবো না!হারে হারে চিনি
.
ওকে মিষ্টি তুমি পড়ো আমি যাই
শান্ত বাই বলে চলে আহানার দিকে তাকিয়ে গেলো
.
মিস আপনি বসো,আমি বই নিয়ে আসি
.
আহানা মিষ্টির কথা শুনে হাসতেসে
শান্ত রুমে এসে বিছানায় শুয়ে তো পড়লো কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই,এপাশ ওপাশ করে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো,পকেট থেকে সিগারেট একটা নিয়ে লাইটার দিয়ে ধরালো
সিগারেট বেশি খাওয়া হয় না তার!এটা সম্পূর্ন মনের উপর ডিপেন্ড করে,মন চাইলে খাই নাহলে খাই না,নেশা না যে দিনে ৫/৬বার খাবো
♣
মিষ্টিকে পড়াতে বেশ লেগেছে আহানার,৭টা পর্যন্ত পড়িয়ে বাসা থেকে বের হলো সে
.
শান্ত সিগারেটের ধোঁয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে ছাড়তেসে,ব্রিক ফিল্ড আমি,হাহাহা
তারপর হঠাৎ ওর নজর গেলো নিচের দিকে,আহানা বাসা থেকে বের হয়ে ফোন বের করে কাকে যেন কল করতেসে
শান্ত ৫তলার উপরে দাঁড়িয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে মুখটা গম্ভীর করে সিগারেটটা আহানার সামনে ছুঁড়ে মারলো উপর থেকে
আহানা ফোন নিয়ে রুপাকে ফোন করলো আজ আসবে কিনা জিজ্ঞেস করার জন্য কিন্তু ফকিন্নিটা মনে হয় ঘুমাচ্ছে,হঠাৎ সামনে কিছু পড়েছে বুঝতে পেরে আহানা নিচে তাকালো,একটা সিগারেটের অর্ধেক অংশ পড়ে আছে,এখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে,আহানা চমকে উপরে তাকালো
শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা ভাব নিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে আবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে
.
বেয়াদব একটা!
আহানা পা দিয়ে সিগারেটটটা রোডের সাথে পিষিয়ে দিলো দাঁতে দাঁত চেপে
শান্তর মেজাজ গরম হয়ে গেছে
মন চাচ্ছে ৫তলা থেকে নেমে এক ধোলায় দিতে যেভাবে পিষাচ্ছে মনে হয় শান্তকে পিষাচ্ছে
.
হুহ!
আহানা চলে গেলো ওখান থেকে
.
এই মেয়েটার আজকে ভার্সিটিতে গিয়ে ১২টা বাজাবো আমি
এত ভাব আর সাহস দেখানোর শাস্তি ওর পেতে হবে!
শান্ত গিয়ে বিছানায় আবারও শুয়ে পড়লো
.
কতবড় বেয়াদব হলে একটা মেয়ের সামনে উপর থেকে কেউ সিগারেট ফেলতে পারে!অসভ্য লোক একটা,মন তো চায় ওর জ্যাকেটে বিচুটি পাতা লাগাই দিই!
আহানা বাসায় ফিরার সময় দেখলো একটা দোকানের সামনে সবাই লাইন ধরে আছে,মহিলা আবার পুরুষ ও
একজন মহিলা হাতে ইয়া বড় ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
বোরকা পরা
মাঝে মাঝে এদিক ওদিক তাকিয়ে ব্যাগটা ভাঁজ করে হাতের মুঠোয় রাখতেসে আবার কিসব ভেবে ব্যাগটা খুলে রাখতেসে
আহানা একটু এগিয়ে গিয়ে মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করলো ব্যাপারটা কি,সবাই এমন লাইন ধরেছে কেন,উনি বললেন এখানে ১০টাকায় ১কেজি চাল দেয়,১০০টাকায় ১০কেজি
আহানা তো অবাক হয়ে গেলো উনার কথা শুনে,ইশ আমার হাতে এখন ১০টা টাকা থাকলে এক কেজি কিনে নিতে পারতাম,কি করবো,বাসায় চাল ও তো কমে আসছে
কানে হাত দিয়ে চুল সরাতে গিয়ে মনে পড়ে গেলো
আরে আইডিয়া!
কানের দুল গুলো খুলে হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো সে
এগুলো সে মেলা থকে ৩০টাকা দিয়ে কিনেছিল,সে আবার ফিরে এসে মহিলাটির পিছনে থাকা একটা যুবতি মেয়েকে দেখতে পেলো,মেয়েটাকে দেখে মনে হয় তেমন বড়লোক না তবে গায়ের পোশাক আশাকে মনে হয় সাজগোজ পছন্দ করে বেশি
আহানা মেয়েটাকে বললো আপু আমার এই কানের দুলটা নিবা?আমি ৩০টাকা দিয়ে নিসিলাম তুমি যত দিবে তাই নিব,প্লিস নাও না,আমি ১০/১২দিন পরেছি,এখনও নতুন আছে দেখো
মেয়েটা কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে দিলো,কারন কানের দুল গুলো অনেক সুন্দর ছিল,আহানার পছন্দ অনেক ভালো
মেয়েটা তার ব্যাগ থেকে ২০টাকা নিয়ে আহানাকে দিলো
আহানা তো মহা খুশি,মেয়েটাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে তাকে দুলটা দিয়ে ২০টাকা নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লো,খুশিতে লাফাতে মন চাচ্ছে তার,চাল কেনা হয়ে গেলে আর কোনো চিন্তা নেই,নুন দিয়ে কচলিয়ে খেয়ে মাস কাটাতে পারলেই হলো?
২০টাকা দিয়ে ২কেজি কিনে বাসায় ফিরলো আহানা
চালগুলো তার চালের বালতিতে ঢালতে গিয়ে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো তার,চাল যদি ৫০% হয় বাকি ৫০% পোকাতে ভরা আর নষ্ট,এমন করে ঠকালো আমাকে?
মানুষ গরীব না হলে তো ১০টাকার জন্য লাইনে দাঁড়ায় না,আর ওরা এভাবে ঠকায় আমাদের,এর চেয়ে তো ৩৫টাকার চালই ভালো,ধুর!
মানুষ ঠকানোর জন্য বেছে বেছে গরীব মানুষ খোঁজে এরা
আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল ১০টাকায় ১কেজি চাল কেন দিবে,নিশ্চয় কোনো গণ্ডগোল ছিল,এটা মাথায় ছিল না একদম
থাক এগুলা পরিষ্কার করলে যা পাবো তাও চলবে,কি আর করার,আমার জন্মই হইসে ঠকে যাওয়ার জন্য
♣
কলিংবেল বাজতেসে
শান্ত এখনও ঘুমায়নি, ৮টা বাজে মনে হয়,বলদগুলো ঘুমায় এখনও
শান্ত গিয়ে দরজা খুললো,একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,মুরগী হাতে,সম্ভবত কেটে এনেছে
.
কে তুমি?
.
আপনি শান্ত ভাইয়া?
.
হুম,কেন?
.
আমি আছমার বেগমের মেয়ে,আপনার বাসায় যে কাজ করে
.
ওহ আচ্ছা,কি হইসে বলো?
.
আম্মা কইলো মুরগী এটা রাখতে উনি ১০টার দিকে আসি রাঁধি দিব
.
ওকে
শান্ত মেয়েটার হাত থেকে মুরগী নিয়ে হঠাৎ চোখ তুলে মেয়েটার কানের দিকে তাকালো,মেয়েটার কানের এই দুলটা তো একদম আহানার কানের দুলের মতন
চলবে ♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৯
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৯
#Writer_Afnan_Lara
?
শান্ত ঔষুধের প্যাকেটটা আহানার হাতে ধরিয়ে দিলো
.
তারপর কিছুক্ষন থেমে বললো যাও বাসার দিকে যাও
.
আহানা মাথার ঘাম মুছতে মুছতে বললো কয়টা বাজে?
.
৩টা ২০,কেন?
.
বাই
আহানা কিছুটা জোরেই হেঁটে পিউদের বাসার দিকে রওনা হলো
.
শান্ত পিছন পিছন একটু গিয়ে বললো কোথায় যাও তুমি?
.
আহানা শান্তর প্রশ্নের জবাব না দিয়েই চলে গেলো
.
এই মেয়েটা ধন্যবাদ দিতে জানে না,!
শান্ত মুখ বাঁকিয়ে বাসায় ফিরে আসলো
♣
আন্টি আপনার চেনা জানা কেউ আছে যাদের টিউটর লাগবে?
.
জানি না ঠিক,কেন তুমি পড়াবে?
.
হ্যাঁ আন্টি যদি বলতেন তাহলে আমার উপকার হতো
.
আচ্ছা পেলে জানাবো তোমাকে
পিউকে পড়িয়ে আহানা এবার গেলো আকাশদের বাসায়,আকাশ ৩য় শ্রেণির ছাত্র,তাকে পড়িয়ে এবার আহানা আর হাঁটতে পারছে না মনে হয় এখনই পড়ে যাবে,তাও আস্তে আস্তে হেঁটে বাসায় ফিরলো,বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে পানি নিয়ে খেয়ে বিসকিট মুখে দিলো,সাথে সাথে বমি এসে গেলো,সকালে একটা বিসকুটের পরে আর কোনো খাবার পেটে পড়েনি,বমি হওয়ারই কথা,বাথরুম থেকে বেরিয়ে আহানা কেঁপে কেঁপে রান্নাঘরে গিয়ে ভাত বসালো আর আলু সিদ্ধ করতে দিয়ে এসে বিছানায় বসলো
♣
কিরে শান্ত কি ভাবস এতো?
.
আসলে নওশাদ ভাবতেসি আহানা মেয়েটা মনে হয় কিছু লুকাচ্ছে
.
লুকালেও কি না লুকালেও কি,তোর কি তাতে?
.
হুম সেটাই,আমিও না! কোথাকার কোন মেয়ের জন্য ভাবতেসি,হুদাই সময় নষ্ট!
.
শান্ত রুমে এসে আলমারি থেকে টি শার্ট নিতে গিয়েই ফ্লোরে কি যেন ঝুন ঝুন শব্দ করে পড়লো
শান্ত নিচে ঝুঁকে হাতে নিয়ে দেখলো সেই নীল কাঁচের চুড়ি যেটা সেদিন শান্ত ঘাস থেকে নিয়েছিল,এটা তো আহানার
শান্ত চুড়ি গুলো ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলো,আবার কি মনে করে সেগুলো তুলে এনে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখলো
.
খুব জোরে বৃষ্টি হচ্ছে,কালবৈশাখী হতে পারে,বৈশাখ মাস তো
.
আহানা জানালা সব আটকিয়ে বসে আছে,কনিকা আপু ডিউটিতে,মীম আপুকে তো দেখিই না অনেকদিন,কারেন্ট গেলো চলে,অনেক খুঁজে মোমবাতি জ্বালিয়ে বসলো আহানা,মোমবাতিটা নিভার আগেই সব সেরে ফেলতে হবে,আগুন বাড়িয়ে দিয়ে ভাত রেঁধে নিলো আহানা,আলুর ভর্তা করে খাটের উপর বসে পেট পুরে ভাত খেলো,এবার ভালো লাগতেসে,আর আলু ২টা আছে,পেঁয়াজ ২টা,কাল চলবে,পরশু কি করবো?কেউ তো ধার ও দিবে না
.
মোমবাতিটা নিভিয়ে শুয়ে পড়লো আহানা,মেঘ খুব জোরে জোরে ডাকতেসে
.
শান্ত বারান্দার গ্লাস খুলে বের হয়ে চোখ বন্ধ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভিজতেসে
কি গো মা?ভালো আছো?হুম ভালো তো থাকবেই তোমার ছেলে সবসময় তোমার খেয়াল রাখে,মা জানো আমার না কেন জানি আজ মন ভালো নেই,কি কারনে ভালো নেই ঠিক বুঝতে পারতেসি না আমি,তুমি জানো মা?
জানো বাট বলবে না,কারন তুমি চাও আমি যেন নিজের মন খারাপ নিজেই ঠিক করি,কারোর হেল্প না নিয়েই,হ্যাঁ বেশি ভিজবো না এভাবে বকা দিতে হবে না আমাকে?
.
বৃষ্টি কমে গেছে,শান্ত হাত দিয়ে চুলের থেকে পানি গুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বের হয়ে রুমে ফিরে আসলো,তোয়ালেটা নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে
ঐ মেয়েটা ঔষুধ খেয়েছে কিনা কে জানে!বেয়াদব একটা মেয়ে কথা শুনে না একদম,কত বড় সাহস হলে মানুষ prescription রোডে ফেলে দিতে পারে!
♣
সকাল হতেই আহানা উঠে পড়লো,আজ আর ভার্সিটিতে যাবে না ঠিক করেছে,বই নিয়ে পড়তে বসলো তারপর মনে করলো বাসায় থাকলে তো খিধা লাগবে বারবার,তার চেয়ে বরং ভার্সিটিতে যাই,রুপার সাথে কথা বললে বেশ লাগবে,খিধা লাগলেও টের পাবো না
কালকের পান্তা ভাত নুন দিয়ে মেখে খেয়ে ব্যাগটা গুছিয়ে নিলো আহানা,বড় এক বোতল পানি নিয়ে বের হলো,বাসা থেকে
বের হওয়ার আগেই দেখা হলো তারেক রহমানের সাথে,উনি আহানাকে দাঁড়াতে বললেন
.
আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল,কেমন আছেন?
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম,ভালো আছি,তোমাকে একটা কথা বলার জন্য দাঁড়াতে বলেছি
.
জ্বি বলেন
.
পাশের একটা কলেজের দুটো মেয়ে এখানে থাকার জন্য বারবার রিকুয়েস্ট করতেসে,ওরা বলেছে ১বছরের টাকা advance ও করে দিতে পারবে,তুমি তো ২মাসের ভাড়া দাও নি এখনও,১মাসের মধ্যে ২মাসের টাকা জোগাড় করে দাও নাহলে আমি তোমাকে বাদ দিয়ে ঐ দুটো মেয়েকে বাসা ভাড়া দিয়ে দিব,বুঝেছো আশা করি?
.
আহানা চুপ করে থেকে বললো আচ্ছা
চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছে আহানা,আজকে যে করেই হোক একটা টিউশনি খুঁজে বের করতেই হবে
.
ভার্সিটিতে এসে রুপাকে অনেক খুঁজলো,ফকিন্নি আজও আসে নাই,ওরে ছাড়া আমার একটুও ভালো লাগে না
আহানা গালে হাত দিয়ে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে,কাল যে বৃষ্টি হয়েছিল তার কারণে ক্যামপাসের ঘাস সবুজ থেকে আরও সবুজ হয়ে গেছে,কি সুন্দর লাগতেসে,মনে হয় সকল গ্লানি দূর হয়ে গিয়েছে
দূরে তাকাতেই আহানার চোখে পড়লো একটা কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছ
আহানা খুশিতে আটখানা হয়ে মুখটা তুলে ভালো করে দেখলো গাছটা,আরে এটা তো এতদিন দেখিই নাই আমি,যাওয়ার সময় কাছে গিয়ে একবার দেখে আসবো
আহানা এবার ক্যামপাসের মাঝখানে বটগাছটার দিকে তাকালো
শান্ত বটগাছের তলায় নওশাদ,সূর্য,রিয়াজ আর তমালের সাথে হাসি ঠাট্টা করতেসে
আহানা ওদের দেখে ব্রু কুঁচকে চোখ ফিরিয়ে নিলো
.
কিরে শান্ত ভাই কাউকে খুঁজিস নাকি?
.
নাহ তো,ক্যামপাসটা দেখতেসি, ভালো লাগতেসে
.
নওশাদ আর সূর্য দাঁত কেলিয়ে চোখ টিপে বললো হুম অনেক জোস?
আহানা ক্লাস থেকে বের হচ্ছে না,রুপা নেই শুধু শুধু ক্যামপাসে গিয়ে কি লাভ,তাই সে একা বসে আছে ক্লাসে
সবাই ক্লাস থেকে বেরিয়ে ক্যামপাসে ঘুরাঘুরি করতেসে,অবশ্য ক্লাসে ও কয়েকজন আছে তারা তাদের কাজে ব্যস্ত,কেউ পড়তেসে,কেউ গান গাইতেসে,কেউ বা খাচ্ছে
.
শান্ত ভাই তোমার সখিনা আসতেছে
.
শান্ত সানগ্লাসটা পরে শার্টের হাতা উঠাতে উঠাতে আহানাদের ক্লাসরুমের দিকে চলে গেলো
.
কিরে এলিনার কথা শুনে শান্ত ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসের দিকে কেন গেছে?
.
কি হলো তমাল?শান্ত কই?আমাকে দেখে নাই নাকি?ওর সাথে আমার কিছু কথা ছিল
.
না আপু জানি না তোমাকে দেখেছে কিনা,মনে হয় ওয়াসরুমে গেছে,ও আসলে বলবো তোমার সাথে কথা বলতে
.
ওকে ফাইন
.
শান্ত ক্লাসরুমে ঢুকে একদম মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো
সবাই শান্তকে দেখে তাদের কাজ ফেলে তাকিয়ে আছে
আহানা শান্তকে দেখেনি,চুপচাপ টেবিলে মাথা রেখে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে সে,কৃষ্ণচূড়া গাছটা তাকে টানতেছে,ওর প্রিয় ফুল কৃষ্ণচূড়া,আজ অনেক গুলো কুড়িয়ে নিব যাওয়ার পথে
.
এসবের জন্য আসো এখানে?পড়া নাই লেখা নাই হুদাই বসে থাকো তোমরা!!
.
আহানা চমকে মাথা তুলে তাকালো শান্তর দিকে
.
শান্ত ওর দিকে তাকাতে তাকাতে চলো গেলো
আহানা কিছু না বুঝে পাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই বই নিয়ে পড়তে বসে গেছে,যারা খাচ্ছিলো এতক্ষণ তারা খাবার হাতে রেখেই গড়গড় করে পড়া শুরু করে দিয়েছে
.
আজব তো লোকটা! এমন করে কেন,কত বড় সাহস আমাদের ক্লাসে এসে আমাদেরই ধমক দেয়
.
কিরে শান্ত ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসে গেছিলি কেন?
.
কেউ পড়ালেখা করে না ঠিকমত তাই ধমক দিয়ে আসলাম
.
তোর জরিনা আসছিল বলসে তোর সাথে নাকি কিসের কথা আছে
.
উফ!!আচ্ছা আমি কি মেয়েটাকে বলসি আমি ওরে লাইক/লাভ করি?তাহলে এরকম করে আমার পিছে লেগে আছে কেন?
.
শুন শান্ত এলিনার মত অনেক মেয়েই তোর জন্য পাগল,সবাই তো আর গলায় ঝুলতে পারে না,এলিনার দাপট বেশি তাই তোর কোলেও উঠে গেছে,কদিন পর তো!
.
নো ওয়ে!আমি জীবনেও ওরে বিয়ে করবো না,ওর প্রতি আমার কোনো interest নেই
♣
ছুটি হয়ে গেছে আহানা টিউশনির দিকে যাচ্ছে তারপর মনে করলো এখনও ৩০মিনিটের মত সময় আছে,আমি গিয়ে কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছটা দেখে আসি বরং☺
আহানা গাছটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,কি অপূর্ব!এত সুন্দর কেন,লালে লাল হয়ে আছে চারিদিকটা
আহানা খিলখিল করে হেসে নিচে বসে ঝরে যাওয়া ফুলগুলো কুড়াতে লাগলো,গোটা ফুল ও নিচ্ছে আবার ঝড়ে যাওয়া পাপড়িও নিচ্ছে
ব্যাগের একটা সুতা খুলে গিয়ে ঝুলতেসে কদিন ধরে,আহানা সেটা ছিঁড়ে নিয়ে ফুলগুলোর গোড়ায় গিট্টু দিয়ে দিয়ে একটা ফ্লাওয়ার ক্রাউন বানালো,তারপর সেটা মাথায় দিলো,সুতাটা মাথায় লাগিয়ে কানের নিচ দিয়ে নিয়ে গলার পেছনে গিট্টু দিয়ে আটকালো,আয়না হলে ভালো হতো,দেখতে পারতাম কেমন লাগতেসে আমাকে☺
তারপর তার নজরে পড়লো দূরে একটা লেক,সেখানে এসে পানির উপর মাথা নিয়ে দেখতে লাগলো নিজেকে
উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রঙ আমার,অবশ্য গায়ের রঙের সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারনা নেই,আশ্রমের সেই মা টা বলেছিল আমার গায়ের রঙ নাকি উজ্জ্বল শ্যামলা
আমার মুখে কোনো মেকআপ নেই,নেই কোনো লিপস্টিক,কাজল তো দূরেই থাক,অবশ্য একবার আমি ঠোঁটে লিপস্টিক দিসিলাম,হিহি সেটা ছিল মজার ঘটনা,মীম আপু বিটের তরকারি রান্না করেছিল,উনি বিট কাটার সময় আমি একটা ছোট্ট বোতলের ছিপিতে করে বিটের রস নিয়ে ফোনের ক্যামেরা দিয়ে সেই রঙ লাগিয়েছিলাম ঠোঁটে,আমাকে কি সুন্দর লাগতেছিলো সেদিন
লিপস্টিক দিলে মেয়েদের অনেক সুন্দর লাগে
আহানা পানিতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে হাসতেসে,তার বাসায় আয়না নেই,ফোনের ক্যামেরায় মাঝে মাঝে নিজেকে দেখে সে,আজ পানিতে দেখতেসে
দুনিয়ায় কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে,আমি তো তাদের নখের যোগ্য ও না
মুখটা ফ্যাকাসে করে হাত দিয়ে আহানা পানিটা ঘোলায় দিয়ে উঠে আসলো
শান্ত বাইক নিয়ে সেই পথ দিয়ে বাসায় ফিরতেসিলো আহানাকে দেখলো গাছের নিচ থেকে নিজের ব্যাগটা নিতেসে
.
ও এখানে কি করে?
শান্ত বাইক থেকে নেমে তাকিয়ে আছে আহানার দিকে
আহানা শান্তকে দেখেই থেমে গেলো
শান্তর দিকে আহানা ফিরে তাকাতেই ওকে দেখে শান্ত কিছুটা চমকে গেলো কারন ওর মাথায় খুব সুন্দর করে কৃষ্ণচূড়ার একটা ক্রাউন,বাজারে কত ফুলের ক্রাউন সে দেখেছে,গোলাপ,গাঁধা আরও কত কি তবে এমনটা এ প্রথম দেখলো
প্রকৃতির পরীরা যেমন কৃত্রিম পন্যের বাইরে সাজে ন্যাচারালি ঠিক তেমনটা আজ আহানাকে লাগতেসে
.
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে হেঁটে চললো
শান্ত সামনে গিয়ে ওর পথ আটকালো
আহানা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে
.
সে কিছু বলার আগেই শান্ত বললো ঔষধ খেয়েছিলা?
.
হুম!
.
ব্যাস শান্ত বাইক নিয়ে চলে গেলো,আর একটা কথাও বললো না একটি বার তাকালো ও না
.
ওমা এটা জিজ্ঞেস করার জন্য বাইক এখানে ব্রেক করলো,আজব লোক তো!আজব লোক আজগুবি তার কাজকর্ম
.
শান্ত কিছুদূর গিয়ে ভাবলো আহানা প্রতিদিন এই পথ দিয়ে কই যায় দেখবো একটু
শান্ত বাইক ঘুরিয়ে আহানাকে ফলো করলো,আহানা একটা বাসায় এসে সেই বাসার কলিংবেলে চাপ দিলো
শান্ত উঁকিবুকি দিয়ে বুঝার চেষ্টা করতেসে ভেতরে কি হচ্ছে,পরক্ষনেই বাসার সামনের রুমের জানালা দিয়ে আহানাকে সে দেখতে পেলো
একটা ছোট্ট মেয়েকে টেবিলে বসিয়ে পড়াচ্ছে
.
ওহ তাহলে টিউশনি করাতে আসে এখানে
.
শান্ত বাইক নিয়ে চলে গেলো তার বাসার দিকে
.
আহানা বাসায় ফিরার সাথে সাথে আসলো রুপার কল
.
কিরে রুপা আজ ভার্সিটিতে আসলি না কেন?
.
একটা অনুষ্ঠানে গেসিলাম,কাল আসবো সিউর
.
আচ্ছা
চুলটা বেঁধে আলু একটাকে ১০টুকরা করে কেটে ভাজলো আহানা
হিহি,ভর্তা করলে ২টা আলু লাগে,আর আজ ভাজি করায় ১টা লাগলো,এই ১০টুকরো আলু দিয়ে আমার আজকে ভালো খাবার জমবে,গরম ভাত উইথ আলু ভাজা
বাকি যে আলু আছে সেটা কাল ভেজে নিব,পরশু পেঁয়াজ আর ভাত,তার পরেরদিন ও পেঁয়াজ আর ভাত,ব্যাস আগামী ৩দিনের মেনু রেডি,তারপর থেকে কি হবে!টিউশনি না পাওয়া পর্যন্ত খালি ভাত আর নুন খাবো,হুম ডান☺
আলু ভাজা দিয়ে গরম ভাত খুব মজা করে খেলো আহানা,এই বুদ্ধি আগে আসলে আমার আরেকটা আলু বেঁচে যেতো,ঘরে তো তেল ছিল,ফ্রুটোর বোতলের এক বোতল তেল আছে,কনিকা আপুর থেকে একটা ডিম ধার নিয়ে একদিন খাব ভেজে,না থাক তেল শেষ হয়ে গেলে বেতন পাওয়ার পর তো তারেক আঙ্কেলকে সব টাকা দিয়ে দিতে হবে,উনি ২মাসের ৮হাজার টাকা পান,৬হাজার টাকা পরেরমাসে বেতন পেয়ে উনাকে দিয়ে বলবো বাকি ২হাজার দিতে দেরি হবে,যাই হোক তেল এত খরচ করা ঠিক হবে না,আমি বরং ডিমটা সিদ্ধ করে নিব,তাই ভালো হবে
.
বুয়া!চিকেন কই?আমার চিকেন ছাড়া খাবার খেতে মন চায় না জানো না!
.
আইতাছি,মুরগী হইতে একটু দেরি হইসে,রান্নাটা শেষ,নেন খান
.
শান্ত ফোনে গেমস খেলতে খেলতে আরেক হাত দিয়ে ভাত খাচ্ছে হঠাৎ আহানার কথা মনে পড়লো,আগের মত খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিছে নাকি কে জানে,হুহ আমার কি!
.
পরেরদিন ভার্সিটিতে আসতেই আহানা তো অবাক,তাদের ক্লাস রুম কেমন জড়ো হয়ে আছে স্টুডেন্টের ভিড়ে
.
রুপা আহানাকে দেখে খুশি হয়ে ওর হাত ধরে টেনে জড়ো হওয়া লোকালয়ের ভিতরে ঢুকে গেলো
.
হাই রুপা!হাই আহানা
.
হাই!
.
শুনো আমার এই শুক্রবারে বিয়ে,তোমরা দুজনেই আসবা এই নাও কার্ড
রুপা তো কার্ড পেয়ে লাফাতে লাফাতে সিটে চলে গেলো
আহানা মিরাকে অভিনন্দন জানিয়ে রুপার পাশে এসে বসলো
.
কিরে?মিরার বিয়ে,আমরা নাচগান করবো,তুই এমন মুখটা বাংলার পাঁচ করে রাখছিস কেন?
.
তুই যাইস আমি যাব না
.
কিন্তু যাবি না কেন?
চলবে♥