প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৮
#Writer_Afnan_Lara
?
শান্ত চোখ কচলাতে কচলাতে উঠেই সোজা হাঁটা ধরলো
আহানা পিছন পিছন আসতেসে
আরে কি আজব আমাকে নিবেন না?
.
শান্ত হেঁটেই চলছে
অনেক দূর হেঁটে অবশেষে গাড়ীর দেখা পেলো তারা
বাসে উঠে শান্তির নিশ্বাস ফেললো দুজনে,উফ খুব বাঁচা বাঁচলাম
.
আহানা ঘুমাচ্ছে শান্তিতে
শান্ত আহানার হাতে ঠিক তেমন করে চিমটি কাটলো যেমন করে আহানা সকাল বেলা ওর পায়ে কেটেছিল
আহানা এক চিৎকার দিয়ে চোখ মেলে তার হাতের দিকে তাকালো
শান্ত না দেখার ভান করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে
.
আপনি একটা অসভ্য লোক!
.
তুমি কম নাকি,আগে চিমটি কে দিসিলো?
আহানা আর কিছু বলতে পারলো না,চুপ করে থাকলো
.
আর কোনোদিন আমাকে চিমটি দিলে তোমার চামড়া উঠায় নিব আমি,সে চামড়া বিক্রি করে বিয়ার কিনবো
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহানা চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে,কিছু বলতেও পারছে না কারন বাসের পুরো ভাড়াটা শান্ত দিবে,এখন বাড়াবাড়ি করলে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে আমাকে রেখেই চলে যাবে
ঢাকায় ফিরতে ফিরতে বিকাল হয়ে গেলো
আহানা বাস থেকে নেমেই এক দৌড় মারলো
.
আজব তো,ভাড়া দিয়ে এতদূর থেকে আনলাম একটা ধন্যবাদ ও দিলো না,স্টুপিড গার্ল!
.
টিউশনি আজও মিস হয়ে গেলো,৩টা ৫০বাজে
টিয়াদের বাসার সামনে এসে হাঁপাচ্ছে আহানা
দরজায় নক করতেই টিয়ার মা এসে দরজা খুললেন
আহানার দিকে তাকিয়ে মুখটা ফুলিয়ে ভেতরে চলে গেলেন তারপর টাকা নিয়ে এসে বললেন নাও ১হাজার টাকা
আহানা টাকাটার দিকে তাকিয়ে তারপর টিয়ার মায়ের দিকে তাকালো
উনি বললেন আর টিয়াকে পড়াতে হবে না,এত মিস দিলে টিয়ার পড়ায় ডিস্টার্ব হয়
আহানা এই মাসের প্রথমদিন আসেনি ওর শরীর খারাপ ছিল বলে,কাল আর আজ ও আসেনি পিকনিকের কারনে
তাই উনি বললেন আর যেন না আসে,মাসের অর্ধেক দিনের বেতন আহানার হাতে ধরিয়ে দরজা লাগিয়ে চলে গেলেন উনি
আহানা টাকাগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে,তার মানে এখন তার প্রতিমাসে ৬হাজার টাকা হবে সংসার চালানোর জন্য?বাকি ২হাজার কাটা
আরেকটা টিউশনি খুঁজতে হবে আমাকে যে করেই হোক,ভাবতে ভাবতে আহানা হেঁটে বাকি ২টো টিউশনি করতে চলে গেলো
.
শান্ত বাসায় ঢুকতেই দেখলো রিয়াজ আর নওশাদ কোমড়ে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে
শান্ত জ্যাকেটটা খুলতে খুলতে চলে গেলো
নওশাদ আর রিয়াজ ও পেছন পেছন গেলো
।
হোয়াট?
.
তুই কাল কোথায় উধাও হয়ে গেসিলি?আর আহানা মেয়েটাও তো নাকি উধাও হয়ে গেসিলো
.
বাস নষ্ট হয়ে গেসিলো,আমি বাইরে বের হতেই ঐ মেয়েটার সাথে ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো,পরে তাকায় দেখলাম বাসই উধাও
.
রিয়াজ আর নওশাদ ব্রু কুঁচকে ২মিনিট শান্তর দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেলো,নির্ঘাত ভেবে নিসে আমার আর আহানার মধ্যে কিছু চলছে,এবার প্রতি পদে পদে খোঁচাবে
.
ফ্রেশ হয়ে এসে খাটে হেলান দিয়ে বসলো শান্ত
বুয়া দরজায় টোকা দিয়ে বললো খাবার রেডি,আজ মুরগীর কোর্মা,পোলাও রান্না হয়েছে
শান্ত বললো খিধে নেই,রাত ১২টার দিকে খাবো
.
আজ আহানার মন খারাপ অনেক,আলু দুটো হাতে নিয়ে তাকিয়ে আছে সে,খরচ আরও কমিয়ে দিতে হবে,টিউশনি তো বললেই পাওয়া যায় না,কত কাঠ খড় পুড়িয়ে আরেকটা টিউশনির ব্যবস্থা করতে হবে
কিসব ভেবে আলুগুলো রেখে দিলো সে
একটা ছোট পেঁয়াজ কেটে ২টুকরো করে, মরিচ একটা নিয়ে ভাত রেঁধে সেটাই খেলো আহানা
কাল আলু ভর্তা করবো আর ভাত,তরকারি আগে ৪দিন পর পর কিনতাম কোনোদিন ঢেঁড়স কোনোদিন করলা,কোনোদিন বেগুন,এবার মনে হয় সপ্তাহে একবার কিনাও কঠিন হয়ে য়াবে
ভাতে পানি ঢেলে পেঁয়াজ কাঁচামরিচ দিয়ে তৃপ্তি করেই খেলো আহানা,এটা নতুন না এরকম আরও কত খেয়েছে,আশ্রম থেকে বের হওয়ার পর তো পানি ছাড়া কপালে কিছুই জোটেনি তার
তারপর জুটেছে পান্তা ভাত আর নুন,এসব ভেবে কাজ নেই,জীবন এমন করে চলে আসছে,বাস্তবতাকে মানতে আমি বাধ্য
বাকি ভাত ঢাকনা দিয়ে রেখে দিলো আহানা,বাসায় ফ্রিজ নেই,তাই পানি দিয়েই রেখেছে ভাত,কাল সকালে খেয়ে ভার্সিটিতে যাব
জামাটা ধুয়ে বাসার সামনের উঠানে দিয়ে এসে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো আহানা
সকাল সকাল উঠে পান্তা ভাত নিলো,পেঁয়াজের দিকে তাকিয়ে দেখলো আর ৩টা আছে,এখন আর খাওয়া যাবে না রাতে এসে আলুর ভর্তার সাথেও তো পেঁয়াজ দিতে হবে
কাঁচামরিচ নিয়ে নুন কচলিয়ে খালি সাদা ভাত খেয়েই বের হলো আহানা,পানি দিয়ে খেলো নাহলে গলায় বারবার আটকে যায় খালি ভাত
ভার্সিটিতে আসতেই রুপা চেপে ধরলো আহানাকে
.
তুই কোথাই ছিলি,কই গেছিলি,তোদের বাসের কি হয়েছিল ১০০টা প্রশ্ন করে বসেছে সে
আহানা সবটা খুলে বললো
.
ব্রেক টাইমে ক্যামপাসে বের হতেই আহানা মুখোমুখি হলো শান্তর সাথে
শান্ত চশমা ঠিক করে ওর দিকে তাকিয়ে ভেঁংচি দিয়ে চলে গেলো
.
শান্তর দিকে আহানার তাকানো দেখে রুপা বললো এমন করে তাকাস কেন,খেয়ে ফেলবি নাকি?
.
পারলে তো মরিচ ছিটিয়ে খেয়ে নিতাম বেয়াদবটারে,ওর জন্য কাল আমার লেট হয়েছে,থেকে যেতে হয়েছে রাঙামাটিতে,তার উপর টিয়ার মা আমার টিউশনিও অফ করে দিসে
.
আহানা তুই থাক আমি একটু আসতেসি আমার বাবা এসেছে ভার্সিটির ফিস দিতে,,আচ্ছা তুই ফিস দিবি না?
.
ফিস কত?
.
৩হাজার টাকা
.
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো ওহ
.
হুম বাই.
রুপা চলে গেলো
.
আহানা!!!
আহানা পিছনে তাকিয়ে দেখলো এলিনা আর তার সাথে ৬/৭টা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
এলিনা হেসে বললো আজ না আমি সবাইকে ট্রিট দিচ্ছি ভাবলাম তোমাকেও দিই
.
ধন্যবাদ,তার দরকার নেই
.
আহা এমন করছো কেন,সেধে সেধে খাওয়াতে চাচ্ছি আমি! আর তুমি না করছো,তা হবে না,তোমাকে যেতেই হবে,এলিনা আহানার হাত ধরে জোর করে ভার্সিটির ক্যানটিনে নিয়ে আসলো
খাবার অনেকগুলো অর্ডার কলো,আহানা এক প্লেট ফুচকার দিকে তাকিয়ে আছে,জীবনে ফুচকা খায়নি সে,খেতে কেমন কে জানে,মুখে দিয়ে বেশ স্বাদ পেলো,খুশি হয়ে খেলো সে,আর ভাবলো এলিনা এতটাও খারাপ না
.
খাওয়া শেষে সবাই উঠে চলে যেতে থাকলো,ওয়েটার এসে আহানার হাতে বিল ধরিয়ে দিলো,১হাজার টাকা বরাবর
আহানা বললো বিল তো এলিনা আপু দিবে
.
কে বললো?
আহানা তুমি আমাদের ট্রিট দিসো বিল আমি কেন দিব?
.
কিন্তু মাত্রই তো আপনি বললেন ট্রিট দিতে আনছেন
.
এলিনা হেসে দিলো,সাথে বাকিরাও হাসলো
শুনছো মেয়েটার কথা?কানে কি কম শুনো?তুমি তো বললে আমাদের ট্রিট দিবে
সবাই একসাথে বললো হ্যাঁ আহানা বলেছে ট্রিট দিবে
.
আমাকে মিথ্যাবাদী বানাচ্ছেন কেন?
.
শশী ম্যাম পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন,গোলমাল দেখে ক্যানটিনে ঢুকে বললেন কি হয়েছে?
.
এলিনা বললো ম্যাম দেখুন না এই মেয়েটা আমাদের সবাইকে বললো ওর বার্থডে তে ট্রিট দিবে,আমরা খেয়ে উঠার পর এখন বলতেসে বিল নাকি আমি দিতাম
সবাই এলিনার কথার সাপোর্ট করলো
.
ম্যাম বিশ্বাস করুন আমাকে!আমি এটা বলিনি
.
আহানা?একা তুমি সত্যি বলতেসো আর বাকিরা মিথ্যা বলতেসে এটা তো আমি মানতে পারি না,টাকা পে করো যাও,আমি কোনো গোলমাল চাই না
.
ম্যাম আমার কাছে তো এখন টাকা নেই
.
ওয়েটার বললো বাসা থেকে নিয়ে আসতে
আহানা চুপ করে থেকে বেরিয়ে গেলো
বাসায় এসে আলমারি থেকে এক হাজার টাকার নোট নিয়ে চোখের পানি মুছে আবারও ভার্সিটিতে ফিরে আসলো,বিল পে করে দাঁড়িয়ে আছে সে,এলিনা হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে
আহানা আর কান্না থামাতে পারতেছে না কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো ভার্সিটি থেকে
.
শান্ত আহানাকে দেখলো কাঁদতে কাঁদতে চলে যাচ্ছে সে
.
এলিনা শান্তর পাশে বসে হাসতেসে অনবরত
.
কি হয়েছে?
.
জানো আজ ঐ আহানাকে টাইট দিসি
.
কি করছো?
.
ওকে বলসি আমি ট্রিট দিব তারপর আমি আর আমার কিছু ফ্রেন্ড খেয়ে দেয়ে বলে দিসি ও বলসিলো ট্রিট দিবে,সবাই আমার সাথে ওকে মিথ্যাবাদী বানায় দিসে,তারপর ও বাধ্য হয়ে বিলটা দিসে
.
এভাবে কারোর টাকা নিয়ে মজা করা ঠিক না
.
আরে বাদ দাও,মেয়েটা বেশি লাফায়,ভাব দেখায় আর জীবনে ভাব দেখাবে না,দেখিও
.
আহানা বাসায় ফিরে আসলো
মানুষ কেন আমাকেই ঠকায়,আমার সাথেই কেন সবসময় এমন হয়!
আলমারিতে আর ৪হাজার টাকা আছে,টিয়ার মায়ের দেওয়া এক হাজার নিয়ে বিল পে করেছে সে
আগের ঐ ৪হাজার টাকা থেকে কাল ৩হাজার টাকা ভার্সিটির ফিস দিতে হবে,কালই লাস্ট ডেট,আর থাকে এক হাজার,আমি এই টাকা দিয়ে কিভাবে পুরো মাস চালাবো
৪টা বাজে আহানা ফ্লোর থেকে উঠে মুখ ধুয়ে ওড়নাটা হাতে নিয়ে টিউশনিতে চলে গেলো,সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেই দেখলো কনিকা আপু রান্নাঘরে,আহানাকে দেখে বললো ভালো হয়েছে তাড়াতাড়ি এসেছিস তোর সাথে আমার কথা আছে
.
কি আপু?
.
তোকে যে ১হাজার টাকা দিয়েছিলাম বই কিনার জন্য আমার immediately টাকা গুলো লাগবে,আমার বাবার অসুখ,২০হাজার পাঠাতে হবে বিকাশে,১৯হাজার জোগাড় করেছি আর ১হাজার লাগবে
আহানা চুপ করে থেকে ৪হাজার থেকে ১হাজার নিয়ে দিয়ে দিলো কনিকা আপুকে
বাকি ৩হাজার কাল ফিস দিয়ে দিবে,হাতে আর ১টা পয়সাও বাঁচবে না,না খেয়ে মরে যাবো,আর কিছু করার নেই,ভাগ্য তো আমার এমনই,আমি বারবার ভুলে যাই আর মানুষ ঠকিয়ে মনে করিয়ে দেয় আমি অনাথ,আমি অসহায়! আমি বোকা!
আজ আর রান্না করলো না আহানা
না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো,খিধা লেগেছিল কিন্তু ২বেলা এভাবে খেলে তো একটা দিন আসবে ১বেলাই জুটবে না,তাই এখন থেকে শুধু এক বেলাই খাবো
কোনোদিন দুপুরে আহানা খাবার খায় না,এক বেলার খাবার বাঁচায়,আর এখন ২বেলার খাবার বাঁচাবে,তাও চলবে কিনা জানি না,ঘরে চাল,পেঁয়াজ ৩টা,আলু ৪টা ছাড়া কিছুই নেই,হাতে এক টাকাও নেই,আমি মরে যাই না কেন আল্লাহ,আমাকে তুলে নাও না কেন?
♣
পরেরদিন সকালে পানি ৩গ্লাস আর একটা বিসকুট খেয়ে বের হলো আহানা,ভার্সিটিতে এসে ফিস জমা দিয়ে চুপচাপ ক্লাসে বসে আছে সে,মাঝে মাঝে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তেসে,কেউ দেখার আগেই মুছে ফেলে
কাউকে দেখিয়ে লাভ নেই,আমার মত কপাল পোড়াকে মানুষ আর কিসের সহানুভূতি দেখাবে উল্টো ঠকায় বারবার
.
কিরে তোর চোখ মুখ এমন শুকিয়ে আছে কেন?সকালে কিছু খেয়ে আসিস নি?
.
আহানা হাত দিয়ে চোখ মুখ মুছে বললো হ্যাঁ রে রুপা! খেয়েছি তো,রুটি ভাজি,ডিম
.
ওহ,কেমন যেন তোর মুখটা শুকনো লাগতেসে,কিছু খাবি? চল!
.
না খিধে নেই
.
তাই বারবার পানি খাচ্ছিস?
.
গলা শুকায় তাই খাই আর কিছু না
.
একটা মেয়ে পাশের সিটে বসে বার্গার খাচ্ছে,আহানা একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো,মানুষ কত সুখে থাকে আর আমি সুখ কি তা জানি না,সুখের সন্ধান করলেই ঠকে যাই
.
ব্রেক টাইমে আহানা আর রুপা ঘাসের উপর এসে বসলো,রুপা আইস্ক্রিম খাচ্ছে আহানাকে ১০০বার বলসে তাও সে মানা করে দিসে
ক্যামপাসে থাকা সবাই কিছু না কিছু খাচ্ছে,আহানা ঘাসের দিকে তাকিয়ে বসে আছে,ওদের দিকে তাকালেই কষ্ট লাগবে তার টাকা নেই কেন এই ভেবে
পানির বোতলের পানি শেষ,আহানা বোতলটা নিয়ে ক্যানটিনের বাইরে ফিল্টারের সামনে এসে বোতলটা ভর্তি করে নিলো
পিছন ফিরতেই দেখলো শান্ত ও এসেছে বোতলে পানি নিতে
শান্ত আহানার চোখ মুখ দেখে অবাক হয়ে গেলো,মনে হয় অনেকদিন কিছু খায় না এমন তারপর চোখ নামিয়ে নিজের কাজে মন দিলো
আহানা ক্যামপাসের দিকে যাচ্ছে,মাথা ঘুরাচ্ছে,হাঁটা সম্ভব হচ্ছে না,তাও গিয়ে রুপার পাশে এসে বসলো
সকাল থেকে পানি খেতে খেতে আর মন চাচ্ছে না,বিরক্তি এসে গেছে,,বোতলের দিকে তাকিয়ে বসে আছে সে,রুপা ওর পাশে বসে ফোনে কথা বলতেসে
আহানার চোখ থেকে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে বোতলের উপর গিয়ে পড়লো সাথে সাথে মুছে নিয়ে সে রুপার দিকে তাকালো,রুপা খেয়াল করেনি,ভালো হয়েছে,খেয়াল করলে তো মাথায় উঠাবে ব্যাপারটা
শান্ত আহানাকে কাঁদতে দেখে ফেললো,কি ব্যাপার আমি তো কিছু করিনি তাহলে কাঁদে কেন?
.
মনে হয় এলিনা যে ধোলায় দিসে সেই ১হাজার টাকার জন্য কাঁদে
.
না রিয়াজ!১হাজারের জন্য কেউ ক্যামপাসে বসে চোখের পানি ফেলে না
.
নয়ত বিএফের সাথে ঝগড়া করেছে এমন কিছু হবে,বাদ দে
.
আহানা আজ তাড়াতাড়ি ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো,ব্যাগে একটা টাকাও নেই,আস্তে আস্তে হেঁটে পিউদের বাসায় যাচ্ছে,তাকে আজ তাড়াতাড়ি পড়িয়ে বাসায় ফিরে আসবে,শরীর বেশি খারাপ লাগতেসে সেই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় আহানার মনে পড়লো শান্তের কথা,সবসময় এই পথে এসে ওর পথ আটকায় শান্ত
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে হাঁটতেসে আর সামনে গিয়ে কারোর সাথে ধাক্কা খেলো,শান্ত গম্ভীর হয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে পকেটে হাত ঢুকিয়ে
.
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত বললো তখন কাঁদছিলে কেন?
.
আহানা থেমে গিয়ে বললো আপনার কি?
.
বিএফ ছ্যাঁকা দিয়েছে বুঝি?
.
আহানা কিছু না বলে হাঁটা ধরলো
শান্ত আহানার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের দিকে ফিরালো
.
বলো?
.
আপনাকে কোনো কথার জবাব দিতে বাধ্য না আমি,আমার হাত ছাড়ুন আহানা টানাটানি করতেসে
তার হাত শান্ত শক্ত করে ধরে তাকিয়ে আছে ওর উত্তর পাওয়ার জন্য
.
আপনি আমার হাত ছাড়ুনননন
আহানার চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসলো,তারপর সব অন্ধকার!
নিমিষেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে পড়ে যেতে নিতেই শান্ত আহানার হাত টেনে ধরে ওকে ধরে ফেললো
শান্ত বুঝতেসে না কি হয়েছে আহানার
.
আহানা?
আহানা কথা বলছে না দেখে শান্ত ওকে হসপিটালে নিয়ে আসলো
হাতে ক্যানেলার লাগিয়ে ডাক্তার একটা সেলাইন দিয়ে দিসে,তারপর বললেন ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করে না নাকি?
.
শান্ত তো জানেও না আহানা খাওয়া দাওয়া করে না কেন
.
আহানা চোখ মেলে দেখলো সে হসপিটালের বেডে,আশেপাশে কেউ নেই
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে জিজ্ঞেস করলেন এখন কেমন লাগছে আহানা বললো ভালো,উনি আহানার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিলেন
আহানা ভয়ে শেষ,না জানি কত বিল আসছে,কি দরকার ছিল আমাকে হসপিটালে ভর্তি করানোর,আর কে করেছে ভর্তি?
.
আমার মনে হয় উনার নাম শাহরিয়ার শান্ত,কাগজে লিখা আছে দেখে নিন
আহানা কাঁপা কাঁপা হাতে কাগজটা ধরে তাকালো,বিল পে করা আগে থেকেই
.
ডাক্তার বললেন ঔষধ গুলো কিনতে
আহানা হসপিটাল থেকে বের হয়ে হেঁটে যাচ্ছে আর ভাবতেসে যার হাতে এক টাকাও নেই সে ঔষুধ কিনবে এটা তো বিলাসিতাকেও হার মানাবে,কাগজটা মুড়িয়ে রোডে ফেলে দিলো আহানা
.
এই মেয়ে!!
.
আহানা ভয় পেয়ে পিছনে তাকালো
শান্ত চোখ বড় করে বললো prescription ফেলে দিসো কেন?আমি ঔষুধ সব কিনছি এটা দেখে কখন কোনটা খাবা সেটা জেনে নিতা,ফেললে কেন?
.
আহানা কি বলবে বুঝতেসে না
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৮
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৭
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৭
#Writer_Afnan_Lara
?
শান্ত আর কিছু বললো না জ্যাকেটটা পরে নিয়ে কানে হেডফোন গুজে আরেকদিকে চোখ ফিরিয়ে নিলো
সবাই গান গাইতেসে
♥দূরররর দ্বীপ ও বাসিনী
চিনি তোমারে চিনি
দারুচিনির ও দেশে
তুমি বিদেশিনী গো♥
গানের মাঝে ঘটে গেলো আরেকটা বিপদ,সেটা হলো গাড়ী নষ্ট হয়ে গেছে
১০/১৫মিনিট লাগবে ঠিক হতে
সবাই বাস থেকে নেমে এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করতেসে
বাকি বাসগুলো আগেই চলে গেছে
শান্ত ফোনে নেট আনার ট্রাই করতেসে যদি বাই চান্স নেটটা পাই রিয়াজ বা নওশাদের হেল্প নিয়ে যেতে পারবো গন্তব্যে
.
আহানা বাস থেকে নেমে একা একা রোডের পাশে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ,একটা কাক পক্ষি ও নজরে আসতেসে না,কি রকম নিবিড় একটা এলাকা,মাঝে মাঝে গা কাঁটা দিয়ে উঠে
.
শান্ত ফোন নিয়ে ঘুরে ঘুরে হাঁটতেসে নেটের জন্য,হাতে ফোন নিয়ে একবার উপরে উঠাচ্ছে আবার নিচে নামাচ্ছে
শেষে যেতে যেতে এক ধাক্কা খেলো আহানার সাথে
আহানা চোখ বড় করে বললো কি সমস্যা আপনার?আমাকে এমন ডিস্টার্ব করেন কেন
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আমি ডিস্টার্ব করেছি তোমাকে?ভেরি ফানি,আমি নেট খুঁজতেসিলাম,আর তুমি আমাকে দেখো নাই আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে আসতেসিলাম?
.
আজব তো!আপনি দেখে হাঁটতেসেন নাকি না দেখে হাঁটতেসেন সেটাও আমাকেই দেখতে হবে?আর না দেখলে আমার দোষ?
.
হ্যাঁ তোমার দোষ
.
আপনি একটা অসভ্য লোক!
শান্ত গাল ফুলিয়ে আহানার দিকে এগিয়ে যেতে নিতেই আহানা পিছিয়ে গেলো
শান্ত আরও এগিয়ে গেলো
আহানা এবারও পিছিয়ে গেলো
.
বেয়াদব মেয়ে!
.
আপনি বেয়াদব!
.
শান্ত পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলো বাস উধাও সাথে সবাই উধাও
আহানা একটু এগিয়ে চারিদিক দেখলো ওমা কেউ তো নেই,সবাই গেলো কই!
.
সব তোমার কারনে হয়েছে,তুমি বেশি বকরবকর করতেসিলা
.
কি?আমার কারনে?গায়ে পড়ে লাগতে আসছিলো কে?আজব লোক!
শান্ত রেগে বললো এখন তো নেট ও পাবো না ধুর!
আহানা নিজের ফোন নিয়ে চেষ্টা করলো,তার ফোনেও নেট নেই,নেটের একটা দাগ ও নেই,বিকাল হয়ে গেছে ততক্ষণে
একটা চিল ডাকতে ডাকতে পাহাড়ের উপর গিয়ে বসলো,শান্ত আর আহানা সেদিকে তাকিয়ে চিলটার দিকে মুখ ছোট করে চেয়ে আছে
চিলটা দেখে আহানার মনে চাচ্ছে কান্না শুরু করে দিতে,মনের ভয়টা আরও জেগে উঠলো
আর শান্তর মনে হচ্ছে বেকুব পাখি,মানুষের বিপদ দেখলে কাউ কাউ করতে করতে উড়ে,একটা থাবড় মারলে কাউ কাউ যেতো পাখিটার আর আমার রাগটাও কমতো!
আহানা ব্রু কুঁচকে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে শান্ত রেগে মেগে হনহনিয়ে হাঁটা ধরলো
আহানা মুখটা ছোট করে দাঁড়িয়ে শান্তর চলে যাওয়া দেখতেসে
শান্ত কিছুদূর গিয়ে থেমে আহানার দিকে তাকিয়ে বললো তোমাকে কি কোলে করে নিয়ে যেতে হবে?
.
যাব না আমি আপনি যান
আহানা আরেক দিকে ফিরে হাঁটা ধরলো
.
এই মেয়েটার মত বেয়াদব আর ২টা দেখিনি,কেয়ামতের ভিতরে ঢং দেখাচ্ছে
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার হাত চেপে ধরলো
.
চলো আমার সাথে
শান্ত আহানার কাটা হাতটা চেপে ধরে ওকে নিয়ে যাচ্ছে
.
আহানা কাঁদতে কাঁদতে বললো ছেড়ে দিতে
.
শান্ত ওর কথায় কান না দিয়ে হেঁটে চলছে
.
শেষে আহানা ব্যাথায় কুকড়িয়ে উঠতেই শান্ত থেমে গেলো,হাত ছেড়ে দিতেই দেখলো আহানার হাত ভর্তি রক্ত
.
এসব কি করে হলো?
.
আহানা হাত দিয়ে চোখ মুছে বললো কিছু না
.
এখন তো ব্যান্ডেজ করলে ভালো হতো,রক্ত বের হওয়া কমাতে পারতাম,দেখি তোমার ওড়না ছিঁড়ো সেটা দিয়ে বেঁধে দিব
.
আহানা চোখ বড় করে বললো না,আমি ঠিক আছি
.
আরে একটুই তো ছিঁড়বো,দাঁড়াও আমি ছিঁড়তেসি
শান্ত আহানার ওড়নায় হাত দিতেই আহানা টান দিয়ে সরিয়ে ফেলে বললো না,আমার ওড়না ছিঁড়বেন না একদম!
শান্ত চোখ রাঙিয়ে নিজের পকেট থেকে একটা সাদা রুমাল বের করে আহানার হাত টেনে ধরে একটা গিট্টু দিতে দিতে বললো আমার এত ফালতু সময় নেই তোমার মত মেয়ের কেয়ার করার
ইনফেকশন হয়ে গেলো অজ্ঞান হয়ে যাবা সেই আমাকেই তোমাকে বয়ে ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে তাই এই কাজ করতেসি
রুমাল দিয়ে আহানার হাত পেঁচাতে পেঁচাতে ভাবতে লাগলো কি এমন আছে এই ওড়নাতে,নিশ্চয় বিএফ দিসিলো,হুম সেটায় হবে
.
আহানা মনে মনে ভাবতেসে ওমন করে তাকিয়ে কি ভাবতেসেন উনি
.
তারপর আবারও ওর আরেক হাত ধরে হাঁটা ধরলো শান্ত
সন্ধ্যা নেমে আসতেসে শান্ত আহানাকে নিয়ে এখনও হেঁটে যাচ্ছে,কই যাচ্ছে তা দুজনের একজনেও জানে না
আহানা থেমে গেলো হঠাৎ
.
কি?
।
পায়ে ব্যাথা করে আর হাঁটতে পারবো না আমি
.
তো এখানে থাকার ইচ্ছা আছে নাকি?
.
চাকমাদের একটা দল হেঁটে যাচ্ছে,সম্ভবত কোনো অনুষ্ঠানে যাচ্ছে সবাই সেজে গুজে,বিরাট মিছিলের মত করে যাচ্ছে,রোডে একটু জায়গাও নেই,একজন আরেকজনের হাত ধরে হেঁটে চলেছে,শান্ত আর আহানা উনাদের চাপাচাপিতে মিছিলের মাঝখানে এসে পড়লো
উনারা খুশি হয়ে ভাবলেন হয়ত ওরা জয়েন করতে চায় তাদের সাথে
তাই ওদের টেনে দলে ঢুকিয়ে ফেললো তারা
.
শান্ত আর আহানা একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
একটা মাঠে এসে সবাই থেমে গিয়ে নাচগান শুরু করে দিলো একসাথে মিলে
একটা মেয়ে এসে আহানার হাত ধরে নিয়ে গেলো শান্তর পাশ থেকে
শান্ত কিছু বলতেও পারলো না,কারন সুপারি গাছের পাতা দিয়ে বেড়া দেওয়া একটা বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেছে আহানাকে
সেখানে সব মেয়েরা আছে শান্তর যাওয়া নিষেধ,এখন যেতে গেলেও মার খেতে হবে,যেনো তেনো মাইর না একেবারে গনপিটুনি
তাই চুপচাপ সে তাকিয়ে রইলো ওদিকে
একজন শান্তকে বললো আহানাকে নাচের পোশাক পরাতে নিয়ে গেছে,উনি যে ভাষা ইউজ করেছেন শান্তর তা বুঝতে পাক্কা ৫মিনিট লেগেছে
শান্ত একটা নারকেল গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,তার পাশের চাকমা লোকটাকে কিভাবে ঢাকা যাবে সেটা জিজ্ঞেস করতেই উনি ক্যাবলার মতে চেয়ে ছিলেন
শান্তর ইচ্ছে করতেসে নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে
চারপাশটা মানুষে ভর্তি তিল পরিমান জায়গা নেই কোথাও,সব ছেলের গায়ে এক পোশাক,সব মেয়ের গায়ে এক পোশাক
একজন বয়স্ক লোক শান্তর সাথে পরিচয় হতে আসলেন,সম্ভবত উনি গ্রামের প্রধান,তার পদের নাম চাকমা রাজা
তিনি শান্তকে শুদ্ধ ভাষায় বললেন এখানে যে অনুষ্ঠানটা হচ্ছে সেটার নাম হলো “নুত্তবজুর”,বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে তারা ৩টি পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠান উদযাপন করেন,নুত্তবজুর হলো শেষ পর্ব,তিনি তার পরিচয়টাও দিলেন
তারপর শান্তকে বললেন তোমরা কি স্বামী স্ত্রী?
শান্ত খুব ভালো করে জানে শুধু ফ্রেন্ড বললে কেলানি খেতে হবে,লোকটার সাথে ২জন পেয়াদাও আছে,স্বামী স্ত্রী বললে ভালো আপ্যায়ন করবে এরা
শান্ত হ্যাঁ বলে দিলো
হঠাৎ করে ঢাক ঢোলের আওয়াজ বেড়ে গেলো,এক সারিতে কিছু চাকমা নারী হেলেদুলে আসতেসে ঐ বেড়াটা পেরিয়ে
কারোর দিকেই ভালো করে শান্ত তাকালো না
চোখ নামাতে গিয়েই আটকে গেলো,সারির ৭ম জন যে আছে সে হলো আহানা,গায়ে চাকমাদের পোশাক,পুরো ওদের মত করেই আহানার ড্রেস আপ করা হয়েছে,স্কার্টের মত নিচের দিকে,সেটা কোমড় থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত,আর উপরে ব্লাউজের মত একটা পোশাক,খুব আঁটসাঁটভাবে বাঁধা পুরো পোশাকটি
শান্ত কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আরেকদিকে চোখ ফিরিয়ে নিলো
আহানা চুপচাপ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে অন্য মেয়েরা নেচে যাচ্ছে,আহানা তাকিয়ে ওদের নাচ দেখতেসে,মাঠের এপাশে শান্ত আর ওপাশে আহানা
সন্ধ্যা হয়ে গেছে,চারিদিকে জায়গায় জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে ফেললো সবাই,কিছুদূর গেলেই আগুন,খড়কুটা,কাঠ দিয়ে জ্বালানো সব
দুটো লোক এসে আগুনের পাশ থেকে কলাপাতায় মোড়ানো খাবার শান্ত আর আহানার হাতে তুলে দিয়ে চলে গেলো
শান্ত চোখ একবার বড় করে আবার ছোট করে বুঝার চেষ্টা করতেসে এটা কি খেতে দিলো ওরা
আহানার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে শান্তর দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে আছে,চোখ দেখেই বুঝা যায় এই খাবারের experiment সে আমাকে দিয়ে করাতে চায়,শান্ত খেলে সে খাবে,তার ও কেমন একটা লাগতেসে খাবারটা খেতে
শান্ত ঢোক গিলে খাবারটা নিয়ে মুখে দিলো তারপর বললো বাহ,মজা তো
সেই বয়স্ক লোকটা পাশেই চেয়ারে বসা ছিলেন,উনি বললেন এটা আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘বাঁশের রান্না”,মাছ,ঝাল জাতীয় মসলা আর শাকসবজি সিদ্ধ করে কলাপাতায় মুড়িয়ে আগুনের পাশে রেখে তারপর খাওয়া হয় এটা
আহানা এবার বুঝতে পেরে খাবারটা মুখে দিলো,ওতটাও খারাপ না,খেতে বেশ লেগেছে
৮টা বেজে গেছে ওদের অনুষ্ঠানটটা অবশেষে শেষ হলো
শান্ত কি করে রাতটা কাটাবে সেটাই ভাবতেসে
হঠাৎ করে সেই ক্যাবলা লোকটা শান্তর হাত ধরে বেড়া পেরিয়ে একটা ঘরে নিয়ে গেলো,বাঁশ আর কাঠের তৈরী ঘর,মই বেয়ে উঠতে হয়,ঘরটাতে ৩টে রুম,২টো বেডরুম, আর একটা রান্নাঘর
শান্তকে বাম পাশের রুমটাতে যেতে বললো লোকটা,তারপর নিজে ডান পাশের রুমটায় চলে গেলো,তার বউ আর সে ঐ রুমে থাকবে
শান্ত এদিক ওদিক তাকিয়ে বলতে গেলো আহানা কই কারন তখন আহানা হাত ধুতে এদিকে আসছিল আর তার দেখা পায়নি সে
তখনই ওর নজর গেলো রুমের ভেতর আহানার হাত দেখা যাচ্ছে
শান্ত রুমে প্রবেশ করতেই আহানা বাঁশের বেড়ার সাথে লেগে গিয়ে বললো খবরদার!
.
শান্ত গম্ভীর হয়ে বিছানায় এসে বসলো
আহানা পোশাকটার উপর তার ওড়নাটা পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
শান্ত নিরব থেকে বললো আমি অনেক ট্রাই করসি বাট ঢাকা যাওয়ার কোনো রাস্তাই পাচ্ছি না,হয়ত কাল সকাল অবধি পেয়ে যাবো,আজ রাতটা!
.
আহানা চিৎকার করে বললো আমি আপনার সাথে এই রুমে থাকবো?তাও একসাথে?
.
তোমার সমস্যা হলে বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো!
শান্ত জ্যাকেটটার চেইন আটকাতে আটকাতে কথাটা বলতেসিলো তারপর বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো
আহানা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,তারপর ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,যে বাসার সামনে এত এত মানুষ ছিল এতক্ষণ আর সেখানে এখন একটা পিপড়াও চোখে পড়ছে না,এখানকার মানুষ এত তাড়াতাড়ি ঘুমায়?
আহানা ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,চাঁদের আলো+কাঠের আগুন জ্বলতেসে
এই ছেলেটাকে একদম বিশ্বাস করতে পারছে না সে,তার উপর এই পোশাক,চেঞ্জ যে করবো তার ও উপায় নেই,জোর করে পরায় দিসে আমাকে
ঘরটার গা ঘেষে একটা পাহাড়,বেশি বড় ও না ছোট না,পাহাড়টা দেখে আহানার কলিজা বের হওয়ার উপক্রম কারন ঘুটঘুটে অন্ধকার তার উপর কেমন কেমন আওয়াজ আসতেসে পাহাড়টা থেকে,একটা শেয়াল কাছে দাঁড়িয়ে ডাক দিলো
আহানা ভয়ে চিৎকার দিয়ে সরতে যেতেই শান্তর সাথে ধাক্কা খেলো
.
কি?এখানে কি করো তুমি?
.
আপনাকে বলতে হবে?
.
চলো ভিতরে চলো এখানে থাকা সেফ না
.
যাব না আমি,আপনার সাথে এক রুমে থাকবো না
.
শান্ত আর কিছু বললো না চলে গেলো
আহানা ঘরটার সামনে বসে আছে
মশার কামড় খাচ্ছে
মশার উৎপাত এত বেড়ে গেছে মনে হয়ে রুমে যেতে বাধ্য করবে তাকে,,না উঠবো না আমি
শীতে গা কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গেছে,বাধ্য হয়ে ঘরটার ভিতরে এসে লুকিয়ে রুমে উঁকি দিলো আহানা,শান্ত আরামসে শুয়ে শুয়ে ফোনে গেমস খেলতেসে
আহানা সোজা গিয়ে খাটের এক কোণে পা তুলে বসে পড়লো
মশা কামড়িয়ে হাত পা ফটকা বানায় ফেলসে
.
রুমটাতে একটা খাট ছাড়া আর কিছু নেই,একটা চেয়ার ও না,থাকলে অন্তত সেখানে বসা যেতো
.
শান্ত আহানার দিকে চেয়ে দেখলো সে খাটের শেষ প্রান্তে জানালায় মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে
.
মাঝে মাঝে জানালা থেকে আসা হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে উঠতেছে
শান্ত তার জ্যাকেটার দিকে তাকিয়ে সেটা খুলে নিলো আহানার গায়ে পরাতে যেতেই ও জেগে তাকিয়ে দেখলো শান্ত খালি গায়ে হাতে জ্যাকেট
আহানা ভয় পেয়ে সরতে যেতেই বাঁশের জানালার কোণার সাথে ব্যাথা পেলো পিঠে
উহহ!
.
আগেও বলেছি এখনও বলতেসি তোমার মত মেয়ের প্রতি আমার কোনো interest নেই,শীতে মরে যাচ্ছো তাই জ্যাকেট দিচ্ছিলাম তোমাকে
.
লাগবে না!
আহানা ওড়নাটা ভালো করে গায়ে খিঁচে খাটের কোণায় দূরে গিয়ে বসলো
.
শান্তর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে,হাতের কব্জি কচলিয়ে দুহাত দুপাশে রেখে আহানার দিকে এগিয়ে গেলো সে
আহানা চিৎকার দেওয়ার আগেই ওর মুখ চেপে ধরে ফেললো শান্ত
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
শুনো!! তোমার সাথে আমি যদি এখন জোর করেও কিছু করে ফেলি তোমার ক্ষমতা নেই আমাকে আটকানোর
আর যাই হোক আমি তোমার সাথে এসব করবো না,তোমার প্রতি আমার বিন্দু মাত্র interest নেই,সো আমাকে এমন ভাব দেখিয়ে নিজেকে উপরে তুলতে যেও না
.
আহানার মুখ থেকে হাত ছাড়তেই ও চিল্লাই বললো আপনার চরিত্র খারাপ!!
শান্ত কথাটা না শুনার ভান করে জ্যাকেটটা আবারও পরে খাটের আরেক প্রান্তে গিয়ে বসে পড়লো
হারিকেন জ্বালানো,বাঁশের একটা কোণার সাথে ঝুলিয়ে রাখা আছে হারিকেনটা,শান্ত জীবনে হারিকেন বাস্তবে দেখেনি তাই ভালো করে উঁকিবুকি দিয়ে একটা ছবি তুলে নিলো হারিকেনের,বইতে না টিভিতে দেখসিলাম সামনা সামনি এই প্রথম দেখলাম ♥
আহানা কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো,চোখ মেলে দেখলো শান্ত লম্বা হয়ে ঘুমায় গেছে খাটের আরেকপাশে
আহানা খাট থেকে নেমে তার জামাটা হাতে নিয়ে বের হলো ঘর থেকে,যে মেয়েটা ওকে কাল জামাটা পরিয়ে দিয়েছিল তাকে গিয়ে বললো বাথরুম দেখাতে,সে দেখিয়ে দিতেই আহানা গিয়ে তার আগের জামাটা পরে আসলো,পোশাকটা মেয়েটাকে দিয়ে বললো ফেরত নিতে মেয়েটা মুচকি হেসে বললো নিয়ে যান আপামনি
.
আহানা জামাটা হাতে নিয়ে রুমে আসলো,শান্ত মরার মত ঘুমাচ্ছে
.
ইচ্ছে করছে চড় মেরে উঠাই বেয়াদবটাকে,ওর জন্য কাল রাত আমাকে এখানে থাকতে হয়েছে,অসভ্য!
.
আহানা শান্তর পাশে দাঁড়িয়ে ওর পায়ের আঙ্গুলে চিমটি কাটলো
সাথে সাথে শান্ত লাফ দিয়ে উঠে পা ধরে দেখলো কিছু কামড় দিসে কিনা
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো আজ ঢাকা যাবেন না নাকি??না গেলে বলেন আমি যাই
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৬
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৬
#Writer_Afnan_Lara
?
মনে হয় ৯টা বেজে গেছে,রোডে মানুষের সমাগম বেড়ে আসতেসে
বাস থেমে আছে কারন সামনে দিয়ে ট্রেন যাচ্ছে,কোন রুট এটা আহানা জানে না,এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করতেসে ট্রেনটা কোনদিকে যাবে সেই জায়গার নাম টা কি?
এদিকে বাজার বসেছে হাটের মত,তরিতরকারি,ফল
মাছই বেশির ভাগ চোখে পড়তেসে,মনে হয় কিছুক্ষন আগেই নদী থেকে তুলে এনে বাজারে বিক্রি করতে আনা হয়েছে মাছগুলা,এখনও লাফিয়ে যাচ্ছে
ইলিশ,চিংড়ি মাছ চিনতে পারলো আহানা কিন্তু বাকিসব চিনলো না সে
কেমন একটা আঁটসে গন্ধ আসতেসে
শান্ত হেড ফোন খুলে পকেট থেকে একটা মাস্ক নিয়ে পরে নিলো
৩মিনিট পর ট্রেন চলে গেলো বাস ও সেই হাট পেরিয়ে চলে যাচ্ছে
শান্ত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে মাস্কটা খুলে পকেটে পুরে নিলো
বাস এবার খুব জোরে গতি বাড়িয়ে দিলো
সাথে বাতাসের তোড়টাও বেড়ে গেলো,মনে হচ্ছে বাস দৌড়াচ্ছে
আহানার ১হাত লম্বা লম্বা চুলগুলো উড়ে শান্তর নাকে মুখের উপর পড়তেসে
.
হাইচ্ছুউউউউউউ!
আহানা চমকে তাকালো শান্তর দিকে
.
তোমার এই চুল বাঁধো বলতেসি,অসহ্যকর,কেন যে ম্যাম আমাকে এই বাসের দায়িত্ব দিলো,তাও দিলো তো দিলো এই মেয়েটার পাশের সিটটাই কপালে ছিল
আহানা মুখ বাঁকিয়ে খোঁপা করে নিলো,২মিনিটেই বাইরের বাতাসে ঘুম এসে গেলো তার,জানালায় মাথা ঠেকিয়ে ঘুমাচ্ছে সে
শান্ত এতক্ষণ ঘুমিয়েছে এবার সে বাইরের দৃশ্য দেখায় ব্যস্ত,বাসটা খালি বড় একটা রোড দিয়ে চলছে,মাঝে মাঝে কিছু কিছু দূর পাল্লার বাস চোখে পড়তেসে
ইকোনো,জোনাকি আর হিমাচল
রোদ এখন হাত ধুয়ে রোদের তাপ দিয়ে যাচ্ছে,বাস ভেদ করে গরম শান্তকে ধরেছে,আহানার পাশে বসায় শান্তর মুডটা এমনিতেও খারাপ হয়ে আছে তার উপর এত গরম!
আহানা জানালা আটকিয়ে জানালার গ্লাসে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমায় যার কারনে এক ফোটা বাতাস ও আসতেসে না
শান্ত একটু এগিয়ে গিয়ে জানালা খুলতে যেতেই আহানা জেগে গিয়ে চোখ বড় করে তাকালো শান্তর দিকে
.
আপনি কি করতেসেন এদিকে এসে,কি উদ্দেশ্য আপনার?
.
জানালা খুলতে খুলতে শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে বললো রেপ করবো তাই
আহানা ভয় পেয়ে ওড়না ঠিক করে একটু পিছিয়ে গেলো
.
শান্ত ভেটকি দিয়ে জানালা খুলে নিজের সিটে ফিরে আসলো তারপর হেডফোনের দিকে তাকিয়ে ব্রু কুঁচকে সেটার প্যাঁচ খুলতে খুলতে বললো তুমি এসবের যোগ্যও না,নিজেকে এত বড় কিছু ভেবো না,শাহরিয়ার শান্ত যে মেয়েকে পাত্তা দেয় সে হাই ক্লাসের হয়
.
আহানা আর কিছু বললো না,শান্ত ঠিক বলেছে,আমি এমনিতেও কোনো ক্লাসের না
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
এসে গেছে রাঙামাটি♥
সবাই বাস থেকে নামতেসে ধীরে ধীরে
শান্ত রোডের পাশের একটা পাহাড়ের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে সবাইকে বলতেসে বাস থেকে নামার জন্য
আহানা নেমে দাঁড়াতেই ওর চোখে পড়লো একটা পাহাড়ের উপর,কি সুন্দর!!সবুজে ঘেরা,পাহাড় আহানার খুব প্রিয়,আগে যে আশ্রমে সে থাকত সেখানে একটা ক্ষেতের ওপারে একটা ছোট খাটো পর্বত ছিল,আহানা রোজ বিকেলে সেখানে ঘুরতে যেতো,ইস কি ভালোই না লাগতো তখন
আহানা একটু এগিয়ে গেলো পাহাড়টা দেখার জন্য,মনে হয় যেনো হাত দিয়ে ছোঁয়া যাবে পাহাড়টা
.
তোমাদের কি যেখানে সেখানে ঘুরার জন্য আনছিলাম??চুপচাপ টিমের সাথে থাকবা,নড়বড়ে যেনো না হয়
আহানা পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকাতেই শান্ত ওকে না দেখার ভান করে হেঁটে চললো
.
এই লোকটা শান্তিতে আমাকে একটু কিছু দেখতেও দিবে না,বেয়াদব!কচুর লিডার হইসে উনি,আমি এদিক ওদিক গেলে উনার কি সমস্যা?খালি আমাকে কথা শুনানোর ধান্ধায় থাকে
.
টিমের সবাই হেঁটে রেস্টুরেন্টের দিকে যাচ্ছে
এলিনা কোথা থেকে এসে শান্তর সাথে হাঁটা ধরলো
.
বেব তোমাকে বলসিলাম না আমি কাল রাতে কল করলে রিসিভ করবা!তুমি জানো?নওশাদ কল ধরে মজা করসে আমার সাথে
.
শান্তর হাসি পাচ্ছে কালকের ঘটনা মনে পড়ায়,মুচকি হেসে নওশাদের দিকে তাকালো সে
একটা গাছের পাতা টানাটানি করতেসে নওশাদ আর খাতায় কিসব লিখছে,ফিউচার উদ্ভিদ বিজ্ঞানী আমাদের
.
এলিনা ওর দিকে তাকিয়ে বললো ওর তো খবর আছে
তুমি কি কাল দেখো নাই নওশাদ তোমার ফোন ধরে আমার সাথে মজা করতেছিলো?
.
নাহ তো, আমি তখন মেবি শাওয়ার নিচ্ছিলাম
.
ওহহ
.
দোস্ত!!
রুপা দৌড়ে এসে আহানাকে জড়িয়ে ধরলো
শান্ত ভাইয়া আমাকে তোদের বাসে উঠতে দেয়নি তাই আমাকে সেকেন্ড ইয়ারের বাসে উঠতে হয়েছে?
.
ওকে সমস্যা নেই,এখন তো আমরা একসাথে☺
.
জনপ্রতি পরোটা ২টা একটা ডিম আর ভাজি আর এক কাপ চা খাওয়ানো হচ্ছে সবাইকে
আহানা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে দূরে শান্ত আর এলিনা বসেছে
এলিনা এসব বাদ দিয়ে অন্য খাবার অর্ডার করেছে,তেল জাতীয় খাবার এলিনা একটুও পছন্দ করে না,আর হাতে টাকা থাকতে এমন ফালতু খাবার খাবো কেন আমি?
.
খাওয়া শেষ করে সবাই এবার ঘুরতে বের হলো
.
স্যার ম্যাডামরা সবার পিছনে আসতেসে গসিপ করতে করতে,এত বড় দামড়া স্টুডেন্টদের তো আর হাত ধরে উঠানো লাগবে না তাই উনারা আস্তে ধীরে আসতেসে,আর সবাইকে দেখে রাখার জন্য তো গ্রুপ লিডার আছেই!
এলিনা ইয়া বড় হিল জুতা পরে এসেছে,পাহাড়ে উঠার সময় দুম করে স্লিপ খেয়ে পড়ে গেলো সে
.
এটা দেখে রুপা ফিক করে হেসে দিলো,সাথে নওশাদ,সূর্য আর রিয়াজ ও হেসে দিলো তবে মুখে হাত দিয়ে
.
এ্যা শান্ত দেখো না আমার পা মচকে গেসে আমি এখন হেঁটে উপর পর্যন্ত কি করে যাবো?এ্যা?হিল ও ভেঙ্গে গেছে আমার
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এসে এলিনাকে কোলে তুলে হাঁটা ধরলো
.
হুহ যেভাবে আমার দিকে তাকিয়েছে মনে হয় যেনো আমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য এমনটা করলো
কচুর জেলাস হবো আমি,তাও এই বেয়াদবটাকে নিয়ে
.
এলিনা একটা ভাব নিয়ে আশেপাশের সবার দিকে তাকাচ্ছে,বাকিরা ওর দিকে তাকিয়ে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে,শান্তর কোলে উঠা ইজ এ বিগ থিং
.
পাহাড়ের উপরে এনে শান্ত এলিনাকে নামিয়ে দিলো,এলিনা হিল হাতে নিয়ে চারিদিকটা দেখায় মন দিসে,পাহাড়ের চারপাশ দিয়ে রাস্তা বানিয়ে রাখা ছিল বলে শান্তর খুব একটা কষ্ট হয়নি এলিনাকে নিয়ে উঠতে
সবাই এদিক ওদিক হেঁটে হেঁটে দেখছে
এতটা উপরে তারা যে আশেপাশের বাকি সব পাহাড়ের শীর্ষস্থান দেখা যাচ্ছে,দূরে একটা পাহাড়ের উপর স্থানীয় লোকেরা চাষাবাদ করতেসে,কারো কারো পিঠের সাথে বালতিও আটকানো
আহানা রুপাকে নিয়ে দূরের একটা পাহাড় নিয়ে কথা বলতেসে
.
শান্ত পানি খেয়ে রিয়াজ আর নওশাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো
.
কিরে শান্ত ঐ ভুটকিরে কোলে নিয়ে তোর হাড় আস্ত আছে তো??
.
আরে সূর্য কি বলিস ওর তো ঢাকায় ফিরে হাড্ডি অপারেশন করাতে হবে
.
তোরা থাম,শান্ত একটা কথা বল তুই তো এলিনাকে পাত্তা দেস না তাহলে আজ ওরে কোলে তুলে এত বড় পাহাড়ে উঠতে গেলি কেন?
.
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে আছে
.
রিয়াজ নওশাদকে একটা ধাক্কা মেরে ইশারা করলো ওকে
সূর্য ও ব্যাপারটা খেয়াল করলো,শান্ত আহানাকেই দেখছে শুধু
.
আরে নওশাদ বুঝিস না কেন শান্ত ভাই অন্য একটা মেয়েকে জেলাস ফিল করানোর জন্য এমন করেছে
.
আচ্ছা আচ্ছা
.
ওরা কি বললো শান্ত সেদিকে কান না দিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে
.
পাহাড় দেখা শেষে শান্ত আর রিয়াজ বললো হইসে এবার সবাই পাহাড় থেকে নামো আমাদের এবার আরেকটা জায়গায় যেতে হবে
সবাই নামা ধরলো আস্তে আস্তে
আহানা হাঁটতে যেতেই ওর ওড়না আটকে গেলো পাহাড়ের উপরের একটা বন্য গাছের সাথে
.
রুপা অনেক টানাটানি করলো ওড়না ধরে তাও ছুটাতে পারলো না
.
আহানাও চেষ্টা করতেসে তাও ছুটাতে পারছে না
ওড়নাটা ভালো করেই আটকেসে,এমন একটা গাছের সাথে আটকেসে যেটার ঢালেও কাটা,পাতায় ও কাটা
আহানা আসতেসে না দেখে শান্ত ধমক দিয়ে বললো এতই যখন থাকার শখ তো থেকে যাও এখানে,ঢং করে আবার আমাদের সাথে আসতে গেছো কেন?
.
আহানা আর ভাবিস না,ওড়নাটা ছিঁড়া ছাড়া আর উপায় নাই,গাছ তো টাচ ও করা যাবে না,যে কাঁটা বাপরে বাপ,ছিঁড়ে ফেল দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের
.
আহানা ভাবলো এই জামাটার ওড়না ছিঁড়ে গেলে আরেকটা ওড়না মিলিয়ে পড়বো কি করে,বাসায় যে ওড়নাগুলা আছে সেগুলা তো পুরান সব,সাথে ছিঁড়াও
আহানা এসব ভেবে গাছটার পাতা ধরে এক টান দিলো,গাছটা ছিল একটা কাঁটা গাছ
টান দেওয়ার ফলে আহানার হাত কেটে গেলো অনেকটা
.
একি এটা কি করলি তুই,সামান্য ওড়নার জন্য হাত কেটে ফেললি,বেকুব
.
আহানা হাত লুকিয়ে ফেললো
কিছু না তো চল যাই
.
আমি মাত্র দেখলাম কাটা গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে আর তুই বলিস কিছু না?দেখি হাত দেখা আমাকে
.
তোমরা এখানে গসিপ করতে এসেছো?চলো বলতেসি!আমার কথা শুনো না কেন?ম্যামের কাছে বিচার দিতাম?
.
আহানা শান্তর ধমকে রুপার হাত ধরে হাঁটা ধরলো,রুপাকে হাত কাটা নিয়ে আর কিছু বলার সুযোগই দিলো না
.
সবাই এবার কাপ্তাই হ্রদ যাবে
সেখানে ট্রলারে করে যাবে সবাই,মোট ৬টা ট্রলার হায়ার করলো স্যাররা
আহানা রুপাকে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বসে আছে,সে সাঁতার জানে না,তাই ভয় করতেসে তার
শান্ত ফোন নিয়ে পাহাড়ের ভিডিও করতেসে,এলিনা মেকআপ নিয়ে ব্যস্ত
দুপাশে পাহাড় মাঝখান দিয়ে হ্রদ,সেটার উপর দিয়ে ট্রলার যাচ্ছে
ট্রলার থামলো একটু দূরে গিয়ে একটা সুন্দর পাহাড়ের সামনে,যেটার নিচে বিরাট একটা পাথর, উপরে গাছপালা
সবাই হইহুল্লড় শুরু করে দিসে,এমন অপরুপ দৃশ্য দেখেই সবাই তো রীতিমত অবাক
বসার থেকে দাঁড়িয়ে সবাই পাহাড়টা দেখতেসে
এলিনা একটু কোণায় গিয়ে দাঁড়িয়ে তার একটা ফ্রেন্ডকে বললো ছবি তুলে দিতে পাথর পাহাড়টার সাথে,ভিউটা জোস
আহানা আর রুপা পাথরটা নিয়ে তার পাশেই দাঁড়িয়ে কথা বলতেসিলো
এলিনার ফ্রেন্ড বললো আহানার চুল দেখা যাচ্ছে ছবিটাতে,ওকে সরাতে বললো
এলিনা বিরক্তি নিয়ে আহানাকে এক ধাক্কা দিয়ে বললো সরে যেতে
আহানা কিণারায় দাঁড়িয়ে ছিল তখন
এলিনার ধাক্কায় সে স্লিপ খেয়ে ট্রলার থেকে পানিতে পড়ে গেলো
রুপা চিৎকার দিয়ে উঠলো
আহানা সাঁতরিয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করতেসে
কিন্তু যে সাঁতার জানে না সে বিপদে পড়ে সাঁতার কি করে পারবে?
রুপা চিৎকার দিয়ে বললো আহানা সাঁতার জানে না
.
এলিনা মুখে হাত দিয়ে বললো ইস আমি খেয়াল করি নাই,এখন এরে উঠাবে কে?
শান্তদের ট্রলারে ছিল ৭জন ছেলে বাকি সব মেয়ে,ছেলেগুলো পানিতে নামতে নানা বাহানা করতেসিলো,কেউ কেউ বললো পানিতে নামলে শার্ট ভিজে যাবে,কেউ বললো পানির গভীরতা বেশি
শান্ত আর কোনোদিক না ভেবেই ওর জ্যাকেট খুলে ঝাঁপ দিলো পানিতে
.
শান্ত!!
.
শান্ত পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আহানার হাত ধরে ফেললো আহানা আর একটুর জন্য ডুবেই যাচ্ছিলো
শান্ত আহানাকে কাছে টেনে এক হাতে আহানাকে ধরে আরেক হাতে ট্রলারের থাকা একটা ছেলের হাত ধরে উপরে উঠে আসলো পানি থেকে
আহানা নিচে বসে কাশতেসে যদিও এখনও জ্ঞান হারায়নি
রুপা তার ওড়না দিয়ে আহানার মাথা মুছে দিতেসে
শান্ত ট্রলারের শেষ প্রান্তে গিয়ে বসে তাকিয়ে আছে আহানার দিকে
এলিনা একটা রুমাল নিয়ে কাছে এসে শান্তর মাথা মুছে দিলো
.
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে আছে আর হাঁপিয়ে যাচ্ছে অনবরত
আহানা কাশি থামিয়ে শান্তর দিকে তাকালো
সাথে সাথে শান্ত আরেক দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো
কাপ্তাই হ্রদ এখনও ১০মিনিট ধরে দেখা বাকি
আহানা শীতে ভেজা শরীরে কাঁপতেসে বসে বসে
শান্ত নিজের জ্যাকেটটা ছুঁড়ে মারলো আহানার দিকে
.
এলিনা গাল ফুলিয়ে বললো তোমার জ্যাকেট ওকে দিচ্ছো কেন?দিতে হবে না
আহানা জ্যাকেটটা না নিয়ে আরেকদিকে ফিরে বসলো আর বললো লাগবে না আমার
এলিনা সাথে সাথে জ্যাকেটটা নিয়ে আসলো ওখান থেকে তারপর শান্তকে দিয়ে দিলো
শান্ত তার গায়ের ভেজা শার্ট খুলে জ্যাকেটটা পরে নিলো কারন শার্ট পুরো ভিজে গেছে তার
.
আহানা ওর ওড়না দিয়ে পুরো গা ঢেকে বসে আছে
সবাই ডাঙায় ফিরে আসতেই শশী ম্যাম আহানাকে দেখে চমকে বললেন একি ও এত ভিজলো কি করে?
.
ম্যাম এই এলিনা আহানাকে ধাক্কা দিতেই ও পানিতে পড়ে গেসিলো পরে শান্ত ভাই ওকে তুলেছে
.
কি বললে রুপা?আমি ধাক্কা দিয়েছি?আমি কি জানতাম নাকি ও এত কিনারায় দাঁড়িয়েছে?আজব তো!!
.
হইসে থামো তোমরা,আহানা বারতি জামা এনেছো?
.
না ম্যাম
.
এখন আর কি করার এই ভেজা জামায় থাকতে হবে,সবাই বাসে উঠো গিয়ে
শান্ত বাসের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে,সবাই বাসে উঠতেসে এক এক করে
.
আহানা তুই প্লিস একা বসিস বাসে আমি আজ তোর সাথে বসতে পারবো না
.
কেন?
.
আসলে আমার ইয়ে আসলে ও ঐ বাসে বসেছে তাই ওর সাথে গিয়ে বসবো
.
আহানা হেসে বললো ঠিক আছে তারপর সে গিয়ে আগের সিটে এসে বসলো
সবাইকে উঠিয়ে শান্ত সেই আবার আহানার পাশের সিটটাই খালি পেলো
চুপচাপ গিয়ে আবারও আহানার পাশে বসলো সে
আহানা দুহাত দিয়ে কাঁধ ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে,জানালার কাঁচে আহানাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,চোখ বন্ধ করে আছে সে
শান্ত নিজের জ্যাকেটটা খুলে আবারও আহানার দিকে বাড়িয়ে ধরলো
আহানা আরেকদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো,এবারও জ্যাকেটটা নিলো না
শান্ত এবার প্রচণ্ড রেগে গেলো
.
সমস্যা কি তোমার?সেধে সেধে জ্যাকেট দিচ্ছি নিচ্ছোই না এত ভাব কাকে দেখাও?ভুলে যেওনা কিছুক্ষন আগে তোমাকে আমি বাঁচিয়েছিলাম
.
কে বলেছিল বাঁচাতে?মরতে দিতেন,মরে গেলে আপনার জ্বালা যেতো
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৫
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৫
#Writer_Afnan_Lara
?
ম্যামের কাছে আসতেই ম্যাম টি-শার্টটা দিয়ে বললো এটা কাল যে ড্রেসই পরুক না কেন তার উপর দিয়ে পরতে
আহানা বললো ঠিক আছে
.
হুহ আরেকটা জামা কেন পরবো,শুধু টি-শার্ট পরলেই হয় তাই না বেব,আমি তো শুধু টি শার্ট আর জিন্স পরে আসবো
.
শান্ত এলিনার কথার প্রতিউত্তরে কিছু বললো না
রাগি লুকে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে সে,তার মন আহানার দিকে
আহানা শার্টটা নিয়ে শান্তর দিকে না তাকিয়েই চলে গেলো ভার্সিটি থেকে
.
ওকে গাইজ আমি আজ বাসায় যাই আমার অনেক কাজ আছে
এটা বলেই শান্ত পকেট থেকে চাবি নিয়ে তাড়াতাড়ি বাইক স্টার্ট করে বেরিয়ে গেলো
.
বেব রাতে কল করলে রিসিভ করিও!
.
শান্ত মনে মনে ভাবলো ফোন অফ করে রাখবে
তাই ভেবে হেসে দিলো সে
.
আহানা হেঁটে টিয়াদের বাসার দিকে যাচ্ছে,শান্ত বাইক নিয়ে একদম আহানার সামনে পথ আটকিয়ে ব্রেক করলো
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো কি সমস্যা আপনার?এরকম করেন কেন?আমার পথ থেকে সরুন,আমার আপনার মত এমন ফালতু কাজ নাই
.
শান্ত বাইক থেকে নেমে আহানার দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বললো কি বললে তুমি?ফালতু কাজ?
.
তাই নয়তো কি আমি আমার কাজে যাচ্ছি আর আপনি আমার পথ আটকে রেখেছেন!এত ডিস্টার্ব করেন কেন আমাকে?
.
কে তোমাকে ডিস্টার্ব করতেসে?যাও না আমি তো তোমার হাত ধরে রাখিনি
আহানা চোখ বাঁকিয়ে পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ধরলো
শান্ত আহানার সামনে গিয়ে আবারও পথ আটকালো
.
কি হলো যাও?
.
আপনি আমার পথ আটকে রাখলে যাবো কি করে?
.
সাহস থাকলে গিয়ে দেখাও
.
আপনি চান টা কি?একটু খোলসা করে বলুন
.
তুমি আমাকে দেখলে এত ভাব দেখাও কেন,তখন টি শার্ট নিয়ে চলে যাওয়ার সময় আমাকে দেখেও না দেখার ভান করসো কেন?
.
আজব তো!আমি কোন দিকে তাকাবো আর কোনদিকে তাকাবো না সেটা আপনাকে জিজ্ঞেস করবো?আপনার অনুমতি নিবো?আর আপনার মধ্যে তাকানোর আহামরি কিছু তো আমি দেখতেসি না
.
কি বললে?আমার জন্য ভার্সিটির সব মেয়ে পাগল আর তুমি আমাকে বলো আমার মধ্যে আছে টা কি?
.
হ্যাঁ পাগল বলেই,কোনো ভালো মানুষ আপনাকে পছন্দ করবে না,আপানকে নায়ক কম গুন্ডা বেশি মনে হয়
.
শান্ত খুব রেগে যাচ্ছে,এই মেয়েটা কেন এত বাজে বিহেভ করতেসে আমার সাথে
কি সমস্যা তোমার?একবার চড় মারো এখন আবার বড় বড় কথা বলতেসো!লজ্জা করে না তোমার?
.
আমি চড়ের জন্য মাফ চেয়েছি তাই বলে এই নয় যে আজীবন আপনার পা ধরে বসে থাকবো,আমার সময় নষ্ট করবেন না,পথ থেকে সরুন,আমার অনেক কাজ আছে
.
শান্ত একটু এগিয়ে গিয়ে বললো কি কাজ?কিসের কাজ?ছুটির পর তোমার আর কি কাজ থাকতে পারে?
ওহ হ্যাঁ বিএফের সাথে এক্সট্রা ক্লাস থাকতেই পারে
.
আপনার যা খুশি তাই ভাবুন,আমাকে যেতে দিন প্লিস
.
শান্ত কিছু না বলেই সানগ্লাসটা পরে নিয়ে বাইকে উঠে চলে গেলো
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
অসভ্য একটা লোক,হুদাই আমার পিছে লেগে থাকে,বেয়াদব,উগান্ডা কোথাকার!
আহানার মনে পড়ে গেলো ৩টা বেজে এসেছে,তাড়াতাড়ি করে দৌড় মারলো সে,টিয়াদের বাসায় যেতে আজ দেরি হয়ে যাবে শুধুমাত্র এই বেয়াদবটার জন্য
♣
শান্ত বেডে বসে একটা বল নিয়ে দেয়ালে মারতেসে,আবার বলটা ব্যাক করে শান্তর দিকে আসতেছে,শান্ত সেটা ক্যাচ নিয়ে আবারও মারতেসে
রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার,মাঝে মাঝে বল মারার গতিটা বাড়িয়ে দেয় সে,যার কারনে বল দেয়ালে বাড়ি খেয়ে খুব জোরে শান্তর দিকে ব্যাক আসলো
শান্ত ক্যাচ করতে পারলো না,বলটা গিয়ে ওর হাতে আঘাত হানলো,শান্তর গায়ে কিছু ছিল না,আঘাতে লাল দাগ হয়ে গেছে হাতের উপরিভাগে,শান্তর রাগ আরও বেড়ে গেলো বলটা নিয়ে আরও জোরে মারলো সে
.
লাইফে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ে এমনটা করে নি,এমন বিহেভ করে নাই আমার সাথে,আমার একটা চাহনিতেই মেয়েরা পাগল হয়ে যায় আর সেখানে এই মেয়েটা এত ভাব দেখাচ্ছে আমাকে?
ফোনে vibration দেওয়া,সেই কখন থেকে বাজতেসে
শান্ত বলটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে দেখলো এলিনার কল
একটু বিরক্তি নিয়ে নওশাদকে ডাক দিলো
.
নওশাদ?এই নওশাদ! একটু এদিকে আয় তো
.
কি হইসে বল
.
এলিনার ফোন,একটু handle কর,আমার মুড নাই ওর ন্যাকা কথা শুনার
.
নওশাদ ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে বললো
.
আপনার ডায়াল কৃত নাম্বারটি এই মুহুূর্তে বন্ধ আছে,একটু পর আবার ডায়াল করুন,টুট টুট টুট
.
শান্ত হেসে দিয়ে নওশাদের দিকে তাকালো
নওশাদ দাঁত কেলিয়ে বললো তোরে বাঁচাইতে যত উপরে যাওয়া লাগে যাবো,ওকে বাই এখন আমার গফ কল দিসে পরে কথা হবে
.
শান্ত ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দিয়ে আবারও বলটা দেয়ালে মারায় মন দিলো
♣
জামা ধোয়ার সময় আহানা ভাবলো এরকম বেয়াদব ছেলে আমি আর ২টা দেখি নাই,মানে মুখ দিয়ে সুন্দর কথাই তার বেরই হয় না,কোন জন্মের শত্রু ছিলাম তার কে জানে!আমি চড় মেরে একদম ঠিক করসিলাম,দরকার হলে ফিউচারে আরও মারবো বেয়াদবটাকে
.
পরেরদিন ভোরেই আহানা রেডি হয়ে নিলো ভালো করে,তার নীল জামাটার উপরে টি শার্টটা পরে নিয়ে পাশে একটা নীল ওড়না ঝুলিয়ে বের হলো,একটা সাইড ব্যাগ নিলো তাতে ফোন,রুমাল আর এক বোতল পানি,টাকা তো লাগবে না তাই আর টাকা নিলো না
ভোর বেলা হেঁটে যেতে ভয় করছে আহানার,কিছু করার নাই হেঁটেই যেতে হবে ভার্সিটিতে,সব জায়গায় হেঁটে গিয়েই টাকা বাঁচায় আহানা,মাঝে মাঝে ক্লান্তি বেশি লাগলে রিকসা নেয় তাও অনেক দিন পর পর,ঘনঘন আহানাকে রিকসায় দেখা যায় না কখনও
.
ভোর ৫টা বাজে তখন
রোডে কোনো লোকজন নেই,কেমন একটা ভয় ভয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে,এ সময়ে আহানা কোনোদিন বের হয়নি আগে,আল্লাহর নাম নিয়ে বের হয়েছে সে
পাখিদের কিচিরমিচির শুরু হয়ে গেছে,এখন এমন শূন্য রোডে তাদের ডাকাডাকি টাই ভরসা
আবছা আবছা আলো চারিদিকে,পা দ্রুত চালিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আহানা,এদিক ওদিক তাকানোর সময় নেই,তাকাতে গেলেই চোখে পড়বে কিছু বখাটে,শুধু শুধু ভয় পাওয়ার চেয়ে না তাকানোই ভালো
অবশেষে ভার্সিটিতে এসে পোঁছালো সে,৩টা বাস দাঁড়িয়ে আছে ভার্সিটির গেটের সামনে
সবাই এক এক করে বাসে উঠতেসে,আহানার চোখ গেলো শান্তর দিকে,ম্যামের দেওয়া টি শার্টটা পরে তার উপর দিয়ে পেস্ট কালারের একটা জ্যাকেট পরেছে সে,মাথায় কালো টুপি
চিল্লাই চিল্লাই বলতেসে ফার্স্ট ইয়ারের সবাইকে বাসে উঠতে
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সেদিকে
শান্ত এবার আহানাকে খেয়াল করলো
আরও জোরে চিল্লাই বললো এতটা irresponsible কি করে হতে পারো তোমরা?এত লেট করো কেন?তোমাদের জন্য কি আমরা সবাই লেট হবো?৫টায় আসতে বলা হয়েছে!এখন কয়টা বাজে?এতই লেট করার হলে বাপের গাড়ী করে যাইতা বাসের কি দরকার ছিল!
.
কথাগুলো আমাকে বললো বেয়াদবটা
আহানা রাগে ফুলতে ফুলতে বাসে উঠলো
রুপা দৌড়ে দৌড়ে আসতেসে
এই দাঁড়ান শান্ত ভাইয়া,আমার জন্য দাঁড়ান!
.
ওয়েট!বাস ফুল,তুমি সেকেন্ড ইয়ারের বাসে যাও
.
কিন্তু শান্ত ভাইয়া আমার বান্ধুবী তো এই বাসে আর আমিও তো ফার্স্ট ইয়ারের,সে হিসেবে তো আমার এখন এই বাসে উঠার কথা
.
তো?আর একটা সিট খালি আছে মাত্র,সেটা তোমাকে দিলে তোমার জন্য কি আমি বাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাব?
লেট করসো কেন তাহলে?এখন আর জায়গা নেই বাসে
.
রুপা মন খারাপ করে চলে গেলো আরেক বাসে
শান্ত বাসে উঠে তার সিটের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে আর একটা ছেলে বসে দাঁত কেলিয়ে আছে ওর দিকে তাকিয়ে,তাদের দাঁত কেলানোর মানেটা হলো তারা বিএফ জিএফ একসাথে টাইম স্পেন্ড করতে চায় শান্ত যেনো পিছনে গিয়ে বসে
শান্ত ব্রু কুঁচকে পিছনের দিকে চলে গেলো
আহানা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত দেখলো শুধু আহানার পাশের সিটটাই খালি
.
উফ এখন এই মেয়েটার সাথেই বসতে হবে আমাকে!
বাস এক টান দিতেই শান্ত গিয়ে আহানার গায়ে পড়লো
আহানা চমকে পাশে তাকিয়ে দেখলো শান্ত ওর নাক বরাবর
দুহাত দুপাশে রেখে নিজেকে সামলিয়েছে শান্ত নাহলে আহানার মুখের সাথে লেগেই যেতো একটুর জন্য
আহানা চোখ বড় করে বললো আপনি!এখানে?
শান্ত আহানার কথায় কান না দিয়ে ঠিক হয়ে ওর পাশের সিটে বসে গেলো
.
আমি আপনার সাথে বসবো না,উঠুন আমি আরেক সিটে গিয়ে বসবো
.
শুনো অন্য সিট খালি হলে আমি তোমার সাথে এখন বসতে আসতাম না,ঢং!
.
আহানা মাথা উঁচু করে সামনের সিটগুলো দেখলো সব ফুল
তারপর বিড়বিড় করে একটু চেপে গিয়ে বসলো
.
শান্ত নিজের ফোন নিয়ে গান প্লে করে হেডফোনটা কানে গুজে নিলো
আহানা জানালা দিয়ে ভোরের ঢাকা দেখতেসে,কি সুন্দর,তেমন কোনো গাড়ী নেই,নেই কোনো যানজট,কি ভালো লাগতেসে আহানার,কতদিন পর ঘুরতে বের হয়েছে সে,একজন দুজন লোক রোড পরিষ্কার করতেসে
একটা গাছ থেকে কতগুলো পাখি কিচিরমিচির করতে করতে আরেকটা গাছে গিয়ে বসতেসে,আহানা সেটা দেখে হাসতেসে
শান্ত চোখ বন্ধ করে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেলো
সেতু থেকে নামতে গিয়ে বাস একটা ব্রেক করতেই
আহানা গিয়ে সামনের সিটের সাথে জোরে একটা বাড়ি গেলো
.
আহহহ!!
.
শান্ত শব্দ পেয়ে জেগে চোখ মেলে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো,তারপর মাথাটা একটু বের করে সামনে তাকিয়ে দেখতে পেলো বাস থেমে আছে সামনে কিছু লোক জড়ো হয়ে বাসের ড্রাইভারের সাথে ঝগড়া করতেসে,আর খারাপ ভাষায় গালি গালাজ করতেসে
শান্ত আবার কানে হেড ফোন গুজতে গুজতে পাশে তাকাতেই দেখলো আহানা মাথা ঘষতেছে হাত দিয়ে
.
বাসে চড়তে পারে না আবার পিকনিকে যায়,ঢং যত্তসব!
.
কথাটা শুনে আহানা রেগে পাশে তাকালে শান্তর দিকে
কি সমস্যা আপনার?আমি কি বলেছি আমার মাথায় মলম লাগাই দেন?
শান্ত আহানার কথা উপেক্ষা করে আবারও চোখ বন্ধ করে গান শুনায় মন দিলো
আহানা মনে মনে শান্তকে বকে বাইরের দিকে তাকালো
বেশ লাগতেসে,হালকা হালকা রোদ উঠতেছে
রোডের দোকানপাট নজরে আসতেসে স্পষ্ট,কেউ কেউ দোকান খুলতেসে,কেউ বা খুলে ফেলেছে,আবার অনেকেই খোলে নি
মনে হয় আরেকটা সেতু আসতেসে,আহানা ভয় পেয়ে শক্ত করে বাস ধরে রেখেছে আগে থেকেই
তাও বিরাট আরেকটা ধাক্কাই আহানার হাত স্লিপ খেয়ে আবারও সামনের সিটের সাথে বাড়ি খাওয়া ধরতেই সে
চোখ বন্ধ করে ফেললো সাথে সাথে
কিন্তু কই ব্যাথা তো পেলাম না
আহানা চোখ খুলে দেখলো একটা হাত এসে ওর সামনে দিয়ে গিয়ে জানালা ছুঁয়ে রেখেছে,এই হাতের জন্যই সে ব্যাথা পায়নি,হাতটা শান্তর
আহানা ব্যাথা পাবে বলে শান্ত তখন সাথে সাথে তার হাত দিয়ে দিছিলো আহানার সামনে
শান্তর হাতের কারণে আহানা আর সামনে সিট পর্যন্ত যায়নি,ব্যাথাও পায়নি
আহানা পাশে তাকাতেই শান্ত সাথে সাথে তার হাতটা সরিয়ে ফেললো
.
উফ কেন যে এসব uncultured মেয়েদের সাথে বাসে উঠলাম!
.
আপনাকে আমি ধরে রেখেছি নাকি,গিয়ে আরেক সিটে বসেন যান,আর সিট না পেলে এক কাজ করেন একটা মেয়েকে উঠিয়ে সিট বদল করেন,তার সিটে আপনি বসেন তাকে এনে এখানে বসান
.
তোমার কথায় চলবো আমি?এখানে সব কাপল বসেছে,নাহলে তোমার সাথে বসার কোনো ইচ্ছা নাই আমার,এত বকবক করে আমার মাথা খাবা না একদম
.
আহানা আবারও বিড়বিড় করে জানালার দিকে ঘুরে বসলো,বাতাসে ঘুম এসে যাচ্ছে তার
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৪
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৪
#Writer_Afnan_Lara
?
রিয়াজ সূর্যের কানে ফিসফিসিয়ে বললো এই মাইয়া এখন আমাদের বলবে –
,,,রিয়াজু তোমরা একটু ওদিকে যাও না,,,
,,,শান্তর সাথে কথা বলবো যেগুলো ছিল পাওনা,,,
নওশাদ ফিক করে হেসে দিলো রিয়াজের কবিতা শুনে
.
এলিনা শান্তর গালে হাত বুলিয়ে মুখটা ছোট করে বললো তোমাকে নাকি কোথাকার কোন মেয়ে চড় মেরেছে?
.
শান্ত বলতে চায়নি তাও এলিনার জোরজবরদস্তিতে বললো হুম
.
কে?কিসে পড়ে,তার ক্লাস রুম কোনটা?আমাকে দেখিয়ে দাও
.
বাদ দাও এলিনা,তোমার ক্লাস শুরু হবে যাও ক্লাসে যাও পরে কথা হবে
.
না তোমাকে বলতেই হবে,আমি জাস্ট মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করবো তার এত সাহস আসলো কই থেকে
.
রিয়াজ মুখ ফসকে বলে দিলো ফার্স্ট ইয়ার,গ্র্যান্ড ফ্লোর
ব্যাস এলিনা সেদিকে ছুটলো
.
শান্ত রেগে গিয়ে বললো কেন বলতে গেলি?scene create করবে এখন,আমার সমস্যা আমি সমাধান করতাম তুই ওরে বলতি গেলি কেন?এখন পুরো ভার্সিটি মাথায় তুলবে
.
আরে দেখিস এখন এলিনা ঐ মেয়েটার কিমা বানাবে,চল দেখবো,মাইয়া মাইয়ার মধ্যে ঝগড়া দেখমু,মাইয়া মাইয়া চুল টানাটানি দেখতে সেই লাগে?
রিয়াজ আর সূর্য এলিনার পিছন পিছন গেলো দেখতে
শান্ত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে ক্যামপাসে,মাথার উপরে থাকা সূর্যটা কিরন দিচ্ছে খুব রেগে,এত রেগে আছে সূর্যটা সে পারতেসে না নিচে নেমে শান্তর মাথার সাথে লেগে কিরন দেয়
ঝামেলার ভিতরে আরেক ঝামেলা!
.
এলিনা রুমে ঢুকে চিৎকার করে বললো শান্তকে কে চড় মেরেছিলা?
সবাই চুপ করে এলিনার দিকে তাকিয়ে আছে
একজন এলিনাকে দেখিয়ে দিলো আহানার দিকে আঙ্গুল তুলে
.
এলিনা এগিয়ে এসে আহানার হাত ধরে ওকে বেঞ্চ থেকে টেনে উঠালো
.
আহানা বুঝলো এটা হয়ত শান্তর জিএফ হবে
তারপর সে বললো কে আপনি?আমার হাত ছাড়ুন,এমন বিহেভ করতেসেন কেন?
.
কে আমি?তোর এত বড় সাহস আমার লাভারের গায়ে হাত তুলিস,আমি ওকে আজ পর্যন্ত একটা ফুলের টোকাও দিই নাই আর তুই কিনা ওকে চড় মারলি?
জানতি না ও কে?শান্তকে চিনস না তুই?বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!
এলিনা একটা ধাক্কা দিয়ে আহানাকে নিচে ফ্লোরে ফেলে দিলো
আহানা কিছু বলতেও পারছে না,আসলেই দোষটা ওরই,না জেনে ঐদিন শান্তকে চড় মেরেছিল সে
এলিনা ওর হাত টেনে ধরে আবারও উঠালো নিচ থেকে,তারপর আহানার হাত মুচড়ে ধরলো
আহানা এলিনার সাথে পেরে উঠছে না,শুধু বলতেসে আমি ইচ্ছে করে করি নাই,আমি জানতাম না সত্যি!
.
নতুন এই ভার্সিটিতে পা রাখতে না রাখতেই এত বড় সাহস দেখালি তুই,আমার শান্তকে চড়??তোর গাল আমি ফাটায় দিব মারতে মারতে
এলিনার হাতের চাপে আহানার হাতের কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে নিচে পড়তেসে সব এক এক করে
শেষে একটা হাত এসে এলিনার হাত ধরে আটকালো
এলিনা চমকে পিছন ফিরে দেখলো শান্তকে
.
এলিনা!এসব কি করতেসো তুমি?ছাড়ো ওর হাত
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
শান্ত এলিনার হাত ছাড়িয়ে নিলো আহানার হাতের থেকে
আহানার নিচের দিকে তাকিয়ে একটু সরে দাঁড়ালো,হাতে ব্যাথা পেয়েছে অনেক,চুড়ি ভাঙ্গার কারনে হাত কাটা গেছে তাই ব্যাথাটা পেয়েছে সে
শান্ত নিচে তাকিয়ে দেখলো চুড়ি সব ভেঙ্গে চুরে পড়ে আছে
আর আহানা নিজের কাটা হাত লুকিয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে,ক্লাসের সবাই জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে,শান্ত এক ধমক দিয়ে বললো
.
কি নাটক হচ্ছে এখানে?সবাই সবার কাজ করো
শান্তর ধমকে সবাই যে যার কাজে মন দিলো
শান্ত কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে এলিনাকে নিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো ক্লাসরুম থেকে
.
আজ রুপা আসেনি,ক্লাসের এক কোণায় বসে আছে আহানা,জামাটা মুঠো করে ধরে
আমারই দোষ,সেদিন আমি ঐ ছেলেটাকে না বুঝে না মারলে এত কিছুই হতোই না,সব আমার দোষ
হাতের চুড়িগুলো ভেঙ্গে পড়ে আছে,শখ করে এক টাকা এক টাকা জমিয়ে ৩০টাকা মিলিয়ে চুড়ি গুলো কিনেছিল সে
♣
মেয়েটাকে চড় মারলে আমার কষ্ট যেতো,আমার বেবিকে মারে কত বড় সাহস,আর তুমিও বলিহারি কিছু বললেও না ওকে উল্টা আমার হাত আটকালে?
.
শান্ত ক্লাসরুমের দিকে তাকিয়ে আছে,এলিনা ধাক্কা দিতেই হুস আসলো তার
চারিদিকটা কেমন ঠাণ্ডা পরিবেশ হয়ে গেছে,এই ঠাণ্ডা হওয়ার কারনটা হলো কিছুক্ষন আগের ঘটে যাওয়া ঘটনা
.
কি হলো কিছু তো বলো!
মেয়েটাকে এত নরমালি handle করছো কেন?তুমি না পারলে আমাকে বলো আমি টাইট দিয়ে দিব
.
না থাক,আমি অলরেডি টাইট দিচ্ছি,কাল কিছু ফ্রেন্ডকে দিয়ে পানি ২বালতি ঢেলে দিসিলাম ওর গায়ে
এলিনা হেসে বললো বেশ করেছো,আমি হলে পুকুরে চুবাইতাম
ওহ হ্যাঁ আমি তো বলতে ভুলেই গেসিলাম কাল তো ভার্সিটি থেকে পিকনিকে যাবে সবাই
শান্তর সেদিকে খেয়াল নেই কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ক্যামপাসের ঘাসগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে সে,একদিকে মেয়েটার প্রতি রাগ আরেকদিকে মেয়েটার সেই অসহায় মুখ,দোটানায় পড়ে গেছে সে
রিয়াজ লাইব্রেরি থেকে এসে শান্তকে বললো শশী ম্যাম ডাকতেসে তোকে
শান্ত এলিনাকে বাই বলে ম্যামের কাছে গেলো
.
আসবো ম্যাম?
.
হুম আসো,কিছু কাজ আছে তাই তোমাকে ডেকেছি,জানো তো কাল সবাই পিকনিকে যাবে?
.
ইয়েস ম্যাম
.
ম্যাম তার হাতের ২পৃষ্ঠার একটা শিট ধরিয়ে দিলো শান্তর হাতে
.
শুনো শান্ত এখানে পিকনিকে যারা যারা যাবে তাদের নাম লিস্ট করা আছে,তুমি ফার্স্ট ইয়ার আর সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাসে গিয়ে বলবে সবার নাম আছে কিনা,নামগুলো পড়ে শুনাবে
শান্ত মাথাটা ঝাঁকিয়ে হাঁটা ধরলো,উফ আর কি স্টুডেন্ট ছিল না আমাকেই কেন এই দায়িত্ব দিতে গেলো,এমনিতেও মন মেজাজ ভালো না
♥
শান্ত ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসে ঢুকে এক হাতে শিটটা নিয়ে আরেক হাত পকেটে ঢুকিয়ে মুখটা গম্ভীর করে বললো
.
Attention everyone!
এটা বলার আগেই দেখলো আগে থেকে সবাই ওর দিকে হা করে চেয়ে আছে
শান্ত মুখের চুইংগামটা এক পাশ করে নিয়ে এক এক করে লিষ্টের সব নাম পড়ে বলতে লাগলো
আহানা খাতায় একটা রচনা লিখতেসিলো তখন,শান্তর মুখে আহানা নাম শুনে আহানা চমকে তাকিয়ে রইলো শান্তর দিকে,সবার শেষের নামটি আহানার ছিল,আহানা তো নাম দেয় নি,১২০০টাকা ছিল পিকনিকের ফিস তাই সে নাম দেয়নি তার কাছে এত টাকা নেই,তাহলে টাকাটা দিলো কে?
শান্ত যতজনের নাম নিসে তাদের মধ্যে যারা মেয়ে ছিল তারা তো বুকে হাত দিয়ে অজ্ঞান হওয়ার মত অবস্থা,শান্ত তাদের নাম নিসে এটার চাইতে ধুকবুক আলা ফিলিং আর কি হতে পারে!
শান্ত কাগজটা পকেটে ঢুকিয়ে হেঁটে চলে গেলো কারোর দিকে আর তাকালো না,তাকানোর মুড নাই,কেন তাকাবে?এদের কারোর প্রতি তার কোনো interest নেই,এলিনার প্রতি ও না
এলিনা হুদাই গায়ে লেগে পড়ে থাকে,প্রেম ভালোবাসা শান্তর একদম পছন্দ না,আসলে সে জানেও না প্রেম কি ভালোবাসা কি!!
চুপচাপ চলে গেলো সে
আহানা বসে ভাবতেসে ফিস কে দিলো
তখনই আহানার ফোন বেজে উঠলো,আহানা ফোনটার দিকে তাকিয়ে দেখলো রুপার কল,রিসিভ করতেই সে বলে উঠলো সারপ্রাইজ!
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আমি পিকনিকের লিস্টে তোর নামটা দিয়া দিসি আর ফিস ও দিয়া দিসি,আমি জানতাম তুই ফিস দেওয়ার ভয়ে যাবি না,তোকে ছাড়া মজা পাবো না তাই ফিসটা আমিই দিয়ে দিলাম,তোকে তো আমি নিয়েই ছাড়বো
.
আহানার মন খারাপ হয়ে গেলো,কারন কাল পিকনিকে গেলে একটা টিউশনি ও করাতে পারবে না সে
টিয়ার মা স্যালারি কেটে নিবে,ভাবতেই কান্না পাচ্ছে আহানার,কিছু করার ও নেই রুপা তো টাকা জমা দিয়ে দিসে
আহানা মিথ্যা হাসি দিয়ে thanks বললো রুপাকে
রুপা বললো কাল রেডি হয়ে ভোর ৫টায় ভার্সিটির সামনে এসে পৌঁছাতে
.
শান্তকে প্রতিবারের মত গ্রুপ লিডার বানানো হয়েছে,তার সাথে রিয়াজ আর সূর্য ও গ্রুপ লিডার,একটা বক্সে সব গ্রুপের নাম আলাদা করে লিখে রাখলেন শশী ম্যাম
শান্ত,সূর্য আর রিয়াজকে বললেন কাগজ চুজ করতে
শান্ত বক্সে হাত ঢুকিয়ে যে কাগজটা বের করলো তাতে লিখা ছিল ফার্স্ট ইয়ার
এলিনা রেগে বললো ধুর!
সেকেন্ড ইয়ার হলে আমার বাসে তুমি উঠতে পারতা,আমাদের কপালটাই খারাপ,ওকে সমস্যা নেই,বাস থেকে নামলে তো আমরা আবার একসাথে থাকবো তাই না?
.
হুম
.
নওশাদ বললো শান্ত ভাই দেখ ঐ মেয়েটা যাচ্ছে যে তোকে চড় মেরেছিল
আহানা ভাবতে ভাবতে চলে যাচ্ছে টিয়ার মা তো নির্ঘাত ৫০০/৬০০টাকা কেটে রেখে দিবে,রুপা কেন যে আমাকে না বলে ফিস দিতে গেলো
হঠাৎ করে সামনে শান্ত এসে দাঁড়ালো আহানার পথ আটকিয়ে
আহানা ভয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে একটু সরে দাঁড়ালো
.
আর কোনোদিন আমার সামনে দিয়ে এমন ঘুরঘুর করবা না বুঝছো?তোমাকে দেখলেই আমার চড়ের কথা মাথায় আসে,এত ঘুরঘুর করলে তোমাকে আমি একদিন সিরিয়াসলি চড় মেরে দিব
.
আহানা চোখ তুলে তাকিয়ে বললো চড় মেরেছি বলে কি মাথা খাবেন আমার?কাল ২বালতি পানি দিয়ে ভিজিয়ে শান্তি হয় নাই আপনার?আপনার মা বাবা এই কারনে আপনার নাম শান্ত রাখসিলো?শান্ত না ছাই
.
শান্তর মেজাজ গেলো গরম হয়ে,হাত বাড়িয়ে আহানার হাত চেপে ধরে টান দিয়ে বললো কি বললে তুমি?আমার মা বাবা আমার নাম না জেনে দিসে?তোমার সাহস হয় কি করে তাদের নিয়ে কথা বলার?How dare you!
আহানার হাতে যে চুড়িটা ছিল সেটাও এখন ভেঙ্গে গেছে
.
আহানা বলতেসে ওর হাত ছেড়ে দিতে শান্ত ছাড়তেসেই না ওর মা বাবা নিয়ে কথা না বললেও পারতো আহানা,তাদের নিয়ে বলায় শান্তর মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেসে
.
তুমি আসলেই একটা বেয়াদব মেয়ে!
.
কথাটা বলে শান্ত আহানার হাত ছুঁড়ে ফেলে দিলো
আহানা তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো সকালের যে রক্ত শুকিয়ে গেসিলো সেটা আবার তাজা হয়ে গেছে
আহানা ব্যাথা পেয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে রেগে বললো আপনিও তাহলে একটা বেয়াদব!
আপনি মেয়েদের ইজ্জত দিয়ে কথা বলতে পারেন না,খুব খারাপ আপনি!
আহানা শান্তকে বকতে বকতে চলে গেলো ওখান থেকে
শান্ত মুখ ফুলিয়ে ঘাসের দিকে তাকাতেই ওর চোখ গেলো ঘাসের উপর থাকা নীল চুড়িটার দিকে
চুড়িটা ২ভাগ হয়ে পড়ে আছে,শান্ত ঘাসের উপর থেকে চুড়িটা হাতে নিয়ে দেখে পিছনে তাকালো আহানার দিকে আহানা হাত ঝুলিয়ে হেঁটে যাচ্ছে,হাতে লাল লাল দাগ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে শান্ত
এলিনা আসতেই শান্ত চুড়ি গুলো মুঠো করে ফেললো
.
তুমি এখানে কি করো,শশী ম্যাম ডাকতেসে তোমাকে সেই কখন থেকে!!চলো তো!
শান্ত চুড়িগুলো পকেটে ঢুকিয়ে ম্যামের কাছে গেলো
ম্যাম একেক করে সবাইকে টি-শার্ট দিচ্ছে এগুলা কাল সবার গায়ে থাকবে,কালো টি-শার্ট,মাঝখানে ভার্সিটির নাম লিখা
ম্যাম আহানাকেও ডাক দিলো
আহানা চোখ মুছে পিছনে তাকিয়ে বললো আসতেসি ম্যাম
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৩
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৩
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানা পিছনে তাকিয়ে দেখলো শান্ত বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে,তার পাশে ১৫/২০টা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে,তাদের মধ্যে কেউ কেউ আহানার দিকে তাকিয়ে হাসতেসে আবার কেউ কেউ কিসব বলে যাচ্ছে,সবাইকে দেখতে গুন্ডাদের মতন,মেইন শান্তকেই দেখতে মুভির ভিলেনের মত মনে হয়
.
আহানা চোখ নামিয়ে আরেক দিকে ফিরে বসলো
.
আহানা?এত ভাব দেখাইস না,বুঝার চেষ্টা কর ওরা খুব মারাত্মক!
আমার কোনো কিছু বুঝার দরকার নাই
আহানা উঠে ব্যাগ নিয়ে ক্লাসের দিকে চলে গেলো
.
এই টুকু মেয়ের ভাব দেখসো?শান্ত ভাই এখনও ঠাণ্ডা
হয়ে আছে কিভাবে সেটাই বুঝতেসি না
.
নওশাদের কথা শুনে শান্ত হাতের পেপসি শেষ দিয়ে হেসে একটু নড়ে দাঁড়ালো,তারপর মাথার খয়েরী রঙের চুলগুলো ঠিক করে রিয়াজকে বললো পানির ব্যবস্থা করতে
.
আমি শান্ত থাকার কারণটা দেখাবো এখন!
.
কি করবি পানি দিয়ে?
.
ভেজা বিড়াল বানাবো এরে,ভাবের ভূত নামাতে যা লাগে আর কি!
সবাই হেসে দিলো শান্তর কথায়
.
নওশাদ তোর পরীক্ষা কেমন হলো?বললি না যে
.
আমার পরীক্ষার কথা ছাড় ভাই,আমার মন ভালো না,তোকে এই মাইয়া চড় মারছে,মন তো চাচ্ছে ধরে চড় মেরে ওর গালটাই ফাটাই দিই আমি,এত সাহস দেখায় কি করে সেটাই বুঝি না
.
চিল!ওরে টাইট দিতে জাস্ট ২/৩দিন লাগবে আমাদের
রিয়াজ বাদ দে এখন,খেলা শুরু আজ থেকে?
♣
আহানা চল আমাদের বাসায় যাবি আজকে আমাদের বাসায় তোর দাওয়াত,চল আমার সাথে
.
নাহ রুপা,আমার টিউশনি আছে,পড়াতে যেতে হবে তুই যা,পরে একদিন যাব তোদের বাসায়
.
তুই তো সকাল থেকে কিছুই খাস নি,এখন এই খালি পেটে টিউশনি করাতে যাবি?
.
আমি বাসায় ফিরে খেয়ে নিব,একটাই তো
.
আচ্ছা বাই
রুপা চলে গেলো,আহানা রুপার চলে যাওয়া দেখতেসে,রুপার কত ভাগ্য ভালো,ওর মা বাবা বেঁচে আছে আর আমার তো!
আহানা হেঁটে হেঁটে টিয়াদের বাসায় যাচ্ছে
টিয়া ক্লাস ২তে পড়ে,আহানা প্রতিদিন ওকে দুপুর ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত পড়ায়
কি রোদের তাপ মনে হয় মাথা ফেটে যাবে,তাও হেঁটে যেতেই হবে
শুধু ১০টাকা আছে হাতে,সেটা দিয়ে ফিরার সময় রিকসা নিবো
আহানা রুপাকে বললো জাস্ট একটাই তো টিউশন কিন্তু এটা সত্যি কথা না,সত্যি কথা হলো আহানা আরও দুটো টিউশন করিয়ে ৭টার দিকে বাসায় পোঁছাবে,খালি পেটেই,মাঝে মাঝে টিউশনিতে নাস্তা দেয় আবার মাঝে মাঝে দেয় না,আহানার অভ্যাস হয়ে গেছে তাতে
আপন বলতে এই দুনিয়ায় তার কেউ নেই,আগে আশ্রমে থাকতো,সেই আশ্রমের ম্যানেজার ছিলেন সালেহা বেগম,উনি আহানাকে পড়াশুনা করিয়েছেন নিজের টাকায়,আহানাকে নিজের মেয়ের মত বড় করেছেন তিনি,আহানাও উনাকে খুব ভালোবাসতো নিজের মায়ের মত,কিন্তু আহানার ১৮বছর পূর্ন হতেই তার কয়েক মাস পরে তিনি মারা যান,তারপর থেকে আহানার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার,কারন ১৮বছর হওয়ার পর সেই আশ্রমে কারোরই থাকার নিয়ম নেই,তাই আহানা সেখান থেকে বের হতে বাধ্য হয়
এখন সে একটা বাসায় ভাড়া থাকে যেখানে তার সাথে ২টা মেয়ে থাকে,আহানা টিউশনি করে তার ভার্সিটির খরচ আর খাওয়া দাওয়ার খরচ চালায়,আশ্রম থেকে বেরিয়ে এই টিউশনি আর বাসা খুঁজতে কতদিন রাত না খেয়ে থাকতে হয়েছে তাকে
টিউশনির সব টাকা মিলিয়ে মাসে ৮হাজার টাকা দিয়ে বেশ চলে ওর,মাঝে মাঝে শরীর আর কুলায় না এত দৌড়াদৌড়িতে কিন্তু সে ঘরে বসে থাকলে তার মুখে খাবার দিবে কে,কবে মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছে সেটায় ভুলে গেছে
মাত্র ২টাই জামা আছে তার ভার্সিটিতে পরে আসার জন্য,একটা ধুয়ে আরেকটা পরে আসে,আর যেগুলো ছিঁড়ে গিয়েছে সেগুলো বাসায় পরে,নতুন জামা কেনার টাকা কই,ব্যাস এরকম ছোট ছোট জিনিসে কিপটামু করেই বেশ চলছে দিন
এটাই ভেবে হাসে আহানা,সে তো জানেও না তার মা বাবা দেখতে কেমন ছিল,তাকে আশ্রমে কে রেখে গিয়েছিল
হাঁটতে হাঁটতেই থেমে যায় আহানা,৫হাত দূরে শান্ত পকেটে হাত ঢুকিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে
ওর পিছন থেকে ২জন বেরিয়ে আসলো,দুজনের হাতেই পানি ভর্তি বালতি
আহানা বুঝতেসে না ওরা কেন তার পথ আটকিয়েছে
শান্ত দাঁত বের করে হেসে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো
একটা জামগাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে শান্ত বললো দে একশান শুরু
রিয়াজ তার হাতের বালতির পানি আহানার গায়ে ছুঁড়ে মারলো
আহানা হা করে আছে,ওরা এরকম করবে সে একদমই ভাবেনি,রাগে আবারও তাকালো ওদের দিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নওশাদ তার হাতের বালতির পানিও আহানার গায়ে ঢেলে দিলো
আহানা চিৎকার দিয়ে বললো stop it!
জামা পুরো ভিজে গেছে,রাগে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই শান্তর বাইকে ওরা দুজন উঠে চলে গেলো
আহানা গালি গালাজ করলো কিছুক্ষন,চড় এর প্রতিশোধ এভাবে নিলো,বেয়াদব!
আমি এখন কি করবো,টিউশন মিস করলে টিয়ার মা টাকা কেটে নেয়,এই ভিজা জামাতেই যেতে হবে কিছু করার নেই,আসার সময় জামা যেটা ছিল সেটা ধুয়ে দিসিলাম সেটা তো এত তাড়াতাড়ি শুকাবে না
আহানা গায়ের থেকে পানি ঝাড়তে ঝাড়তে টিয়াদের বাসায় গেলো
টিয়া বললো ম্যাম আপনার জামা এত ভিজলো কি করে
আহানা হেসে বললো কিছু না এমনি,তুমি পড়ায় মন দাও
আজ খুব খিধা পেয়েছে,আমি জানি আজ টিয়ার মা কিছু দিবে না,৩দিন আগে দিসিলো চা বিসকিট,আবার ৪দিন পর মানে কাল দিবে,একটা নিশ্বাস ফেলে আহানা টিয়াকে পড়ানোয় মন দিলো
টিয়াদের বাসা থেকে বেরিয়ে রোডে একটা গাছের ছায়ায় একটু দাঁড়ালো,আজ আর শরীর টিকতেসে না,সকাল থেকে শরীর ভালো না এখনও দুটো টিউশনি করা বাকি,ব্যাগ থেকে পানি নিয়ে খেয়ে হাঁটা ধরলো আহানা জামা গায়ে থেকেই শুকিয়ে গেছে
অনেক কষ্টে সব টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরলো সে
আজ কেউ খেতে দেয়নি,এখন আবার রান্না করতে হবে,খিধায় মাথা ঘুরতেসে
তার উপর মাথাও ধরে আছে অনেক,চুলটা বেঁধে খোঁপা করে রান্নাঘরে গিয়ে চুলা জ্বালালো সে,বাকি যে ২জন মেয়ে ওর সাথে থাকে তারা হলো এয়ার হোস্টেস,আহানা যখন ভার্সিটিতে যায় তাদের তখন ডিউটি শেষ হয় তারপর তারা বাসায় আসে,আবার আহানা ফেরার আগেই চলে যায়,তাই বেশিরভাগ সময় আহানা একা থাকে
তরকারি কেটে চুলায় বসিয়ে বিসকিট খুঁজে মুখে দিয়ে পেট টাকে একটু দমালো আহানা,সকালে একটা রুটি আর ডিম খেয়ে বেরিয়েছিল শুধু
রাত ৮টার দিকে ভাত আর তরকারি রাঁধা হয়ে গেছে,এবার প্লেট নিয়ে খেয়ে নিলো সে,তারপর খাটে গিয়ে মাথাটা বালিশে রাখতেই রাজ্যের ঘুম এসে গেলো চোখে,কিন্তু এত ঘুমালে তো হবে না,ভার্সিটির কত পড়া,ভাগ্যিস রাত ১১টার এলার্ম দিসিলাম,১১টায় উঠে পড়তে বসলো সে,১টা পর্যন্ত পড়ে আবারও ঘুমিয়ে গেলো
♣
শান্ত একটা শো পিস নিয়ে বসে আছে,শো পিসটা একবার উল্টো করছে আবার সোজা করছে
শো পিসটার ভেতরে গুড়িগুড়ি চুমকি,সেগুলো ওলটপালট করলে কি সুন্দর দেখায়,কিন্তু এই সুন্দর দেখার জন্য শান্ত শো পিসটাকে এভাবে উল্টোচ্ছে না,তার মন আরেক দিকে
আজকে আরেকটা চড় খেয়েছে সেটাই ভাবতেসে সে
পাশের রুম থেকে সূর্য আর নওশাদের কথা শোনা যাচ্ছে,সম্ভবত ঐ মেয়েটাকে নিয়ে কিসব বলছে ওরা
♠
আহানা ভোর হতেই চোখ মেলে অনুভব করলো সারা শরীর জুড়ে যন্ত্রনা ছাড়া আর কিছু নেই,কাল কি বেশি কাজ করেছিলাম,উঠতেও তো পারতেসি না
অনেক কষ্টে উঠলো সে,মাথাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে,চাপাতা দুধের যে দাম,রঙ চা খেতে খেতে বিরক্তি এসে গেসে,রঙ চা তে কি আর মাথা ব্যাথা যায়?
ভাবতে ভাবতে রেডি হয়ে নেয় আহানা,আলমারি খুলে এক হাজার টাকার ৪টা নোট বের করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে সে,তারপর সেগুলো নিয়ে সোজা হেঁটে যায় মালিকের বাসার দরজার সামনে
কলিং বেল বাজাতেই মালিক মানে তারেক রহমান এসে দরজা খুললো
আহানাকে দেখে মুখটা ফ্যাকাসে করে বিরক্তি নিয়ে তাকালেন উনি,এই বিরক্তির কারন হলো আহানায় তার একমাত্র ভাঁড়াটিয়া যে ঠিকমত মাসে মাসে ভাড়া দেয় না,আহানাকে দেখলেই তার বিরক্তি আসে
আহানা সালাম দিয়ে একটু হেসে টাকাগুলো বাড়িয়ে ধরলো
উনি আহানার দিকে আর তাকালেন না,টাকার দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিয়ে পকেট থেকে একটা ছোট নোটবুক আর কলম নিয়ে কিসব লিখে মুখটা ছোট করে আহানাকে বললেন এটা তো এক মাসের ভাড়া তোমার যে এখনও ২মাসের ভাড়া বাকি জানো তুমি?
আহানা ইতস্তত বোধ নিয়ে বললো তাড়াতাড়ি দিয়ে দিব আঙ্কেল
তারেক রহমান ব্রু কুঁচকে বাসার ভেতরে চলে গেলেন,এভাবে চলে যাওয়ার কারনটা হলো উনি আর আহানার সাথে কথা বলতে চান না
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে চলে আসলো ওখান থেকে
হাতে আর ৪হাজার টাকা আছে,এই ৪হাজার দিয়ে পুরো মাস চলতে হবে,তার উপর ফার্স্ট ইয়ারের বইখাতা কিনেছি রুমমেট কনিকার টাকায়,তাকেও তো সেই টাকা ফেরত দিতে হবে,ভাবতে ভাবতে বাসা থেকে বের হলো অাহানা
সোজা হেঁটে ভার্সিটিতে যাবে সে,তেমন একটা দূরে না তবে বেশি কাছেও না,৪টা গলি ক্রস করলেই ভার্সিটির গেট সামনে এসে যায়
ওড়না ঠিক করে হাঁটতেসে সে,আজ দিনটা মেঘলা দিন,বাতাস বইছে মাঝে মাঝে,পথঘাটে প্রতিদিনের মত জ্যাম,হেঁটে যাওয়াই উত্তম,এসব জ্যামে কে বসে থাকবে এতো
আবার আহানা ভাবলো “আঙ্গুর ফল টক”
আমার টাকা নেই বলে হেঁটে যাচ্ছি আর দোষ দিচ্ছি জ্যামের
শান্ত বাইক নিয়ে জ্যামে বসে আছে সেই কখন থেকে,সানগ্লাস খুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে পরিবেশটা বুঝার চেষ্টা করছে আবার মাঝে মাঝে পকেট থেকে ফোন নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে নিউজফিড ঘুরে আসতেসে,তাও এই জ্যাম শেষ হওয়ার নামই নিচ্ছে না
বাইকের আয়নাতে তাকিয়ে নিজের চুলটা ঠিক করতে গিয়ে তার চোখে পড়লো তার নতুন শত্রু আহানার দিকে,দূর থেকে হেঁটে আসতেসে সে
বাইক থেকে চোখ নামিয়ে শান্ত পিছনে তাকালো,আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে ফুটপাতের উপর দিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে,কোনোদিকে তার খেয়াল নেই
আজ এই মেয়েটাকে আরেকটা টাইট দিব,আমার গালের চড়ের জ্বালা এখনও মিটে নাই
গালে হাত দিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে শান্ত
জ্যাম শেষ,বাইক নিয়ে আহানার আগেই ভার্সিটিতে ঢুকে গেলো সে
আহানা ক্লাসরুমে চুপচাপ বসে আছে,রুপা এখনও আসে নাই,আজ এত দেরি করছে কেন কে জানে
শান্ত ক্যামপাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে
রিয়াজ বললো শান্ত ব্রো তোমার সখিনা আইতাছে
.
নওশাদ দাঁত কেলিয়ে বললো আহ হা রিয়াজ! সখিনা বলিস কেন,বলবি চুইংগাম,সারাক্ষণ শান্তর সাথে চুইংগামের মত লেগে থাকে সে
.
সূর্য হেসে বললো আমিও একটা নাম দিসি,তোমরা যদি আজ্ঞা দাও পেশ করতে পারি
রিয়াজ আর নওশাদ একটু নড়েচড়ে বললো জাঁহাপনা নামটা বলুন আজ্ঞা দিলাম!
সূর্য মুখটা গোল করে দাঁত বের করে বললো জরিনা!
নওশাদ আর রিয়াজ হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে
সখিনা মানে হলো এলিনা?উফ!
শান্ত সানগ্লাস পরে বাইকে বসলো ভার্সিটি থেকে চলে যাওয়ার জন্য মানে এক প্রকার পালানোর জন্যই কিন্তু তার আগেই এলিনা এসে শান্তকে জড়িয়ে ধরে ফেললো
.
জান তুমি এমন কেন?আমি কাল ভার্সিটিতে আসি নাই আর তুমি কিনা আমাকে কল করলে না আর আমার একটা কল ও রিসিভ করলে না?কি হয়েছে তোমার জান?আর ইউ অলরাইট?টেল মি
.
শান্ত একটু কেশে বললো কিছু না বেব,আই ওয়াজ বিজি,সরি ফর দ্যাট
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_২
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_২
#Writer_Afnan_Lara
?
সকাল হয়ে গেছে
বারান্দার থাই গ্লাসের দরজাটা কাল রাতে অফ করতে ভুলে গেছিলো শান্ত,সেটা দিয়ে এক পাহাড় রোদ এসে পুরো রুমটা কমলা কালার করে দিয়েছে
কমলা হওয়ারই কথা,সূর্যের কালার তো কমলা আর তার উপর শান্তর রুমের বেড শিট থেকে শুরু করে পর্দা,কার্পেট সব কিছু কমলা রঙের
দুম করে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো শান্তর,কেন কাল রাতে অফ করলাম না এটা,কেন পর্দা টানলাম না,এত সুন্দর ঘুমটা নষ্ট করে দিলো আমার,অসহ্য!
পাশের টেবিল থেকে ফুলের টব আরেকটা নিয়ে থাই গ্লাসে ছুঁড়ে মারলো সে
টব তো ভেঙ্গেছে তবে থাই গ্লাস ভাঙ্গে নাই,সেটার দিকে ব্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে গেলো শান্ত
হয়ত গ্লাসটা ভাঙ্গলে সে খুশি হতো,রাগ যেতো কিছুটা!
বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ হাতে নিয়ে আয়নায় তাকাতেই গালের দিকে চোখ গেলো তার,মনে পড়ে গেলো চড়ের কথা,তারপর কিসব ভেবে শয়তানি হাসি দিয়ে fresh হয়ে বের হলো সে
জ্যাকেটটা পরে ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরিয়ে ডাইনিং এ এসে দেখলো সকালের নাস্তা বুয়া বানিয়ে টেবিলে রেখে চলে গেসে,বাট আমি খাবো না,আজ আমার একটাই উদ্দেশ্য সেটা হলো ঐ মেয়েটাকে চড়ের শাস্তি দেওয়া
রিয়াজ,সূর্য আর নওশাদ এক্সাম দিতে গেসে,ওরা অন্য ডিপার্টমেন্টের বলে আজ তাদের পরীক্ষা,কাল ছিল শান্তর
.
ফ্ল্যাট লক করে বের হলো শান্ত,বাইকে উঠে হেলমেট পরে হাই স্পিড দিয়ে ১০মিনিটেই ভার্সিটিতে এসে গেলো সে
ভার্সিটিতে আসতেই দেখা হয়ে গেলো তমালের সাথে,তমাল হলো শান্তর ক্লাসমেট,সে শান্তকে দেখেই হেসে দিলো
.
শান্ত ভাই কি খবর?আজ এত তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে তুমি?আজ কি সূর্য উঠেছে নাকি উঠে নাই,বিশ্বাস হচ্ছে না
.
চুপ!ঐ সূর্যের কারনেই আমার আজ এত সকাল সকাল ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে,যাই হোক তমাল তোমার থেকে আমার একটা হেল্প লাগবে
তুমি ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসে গিয়ে বলবে আহানা কে?then সে দাঁড়ালে বলবে আমি ডাকতেসি
.
ওকে ভাই
শান্ত হাতের কব্জি কচলাচ্ছে,একদম আজকে ৫টা চড় মেরে দিব ঐ মেয়েটার গালে,যাই হোক thanks টু রিসাদ,সে আমাকে মেয়েটার নাম আর ক্লাস খুঁজে দিতে হেল্প করেছিল
.
তমাল গিয়ে ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসে ঢুকলো,যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত,কেউ কেউ গসিপ করছে,কেউ কেউ পড়তেসে,নিশ্চয় এর পরের ক্লাস রোকসানা ম্যামের,কারন উনার ক্লাসের আগেই স্টুডেন্টদের পড়তে দেখা যায়
তাই হয়ত তমালের দিকে কেউ তাকাচ্ছে নাহ
এই বাচ্চা মেয়েগুলো মনে হয় আমাকে চেনে না
চিনলে এতক্ষনে গায়ে পড়ে কথা বলা শুরু করে দিতো,যাই হোক যে কাজে এসেছি সেটা করবো এখন!
হ্যালো everyone,আহানা কে এখানে?থাকলে সাড়া দাও
আহানা তখন রুপার সাথে কথা বলতেসিলো,তমালের মুখ থেকে আহানা নাম শুনে উঠে দাঁড়ালো সে
তমাল তার সামনে এসে বললো তোমাকে শান্ত ভাই ডাকতেসে,ঐ যে
আহানা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলো শান্ত বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,একটা ভাব নিয়ে একবার ডানে তাকাচ্ছে আবার বামে তাকাচ্ছে মাঝে মাঝে ক্লাসরুমের দিকেও তাকাচ্ছে,আহানা শান্তকে দেখেই চিনতে পারলো,এটা তো সেই ছেলেটা
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আমি যাব না,এরকম ছেঁসড়া ছেলেদের সাথে আমার কোনো কথা থাকতে পারে না,বাই
আহানা আরেকদিকে ফিরে বসে গেলো
রুপা চোখ বড় করে বললো আহানা এই ভুল করিস না,শান্ত ভাই অনেক ডেঞ্জারাস,কথা না শুনলে মারামারি শুরু করে দেয়,তোর জীবন হেল করে দিবে,গিয়ে কথা বলে আয়
.
আমি ওর জীবন হেল বানাই দিব,কাল একটা থাপ্পড় মেরে দিসিলাম
আহানার কথাটা শুনে ক্লাসের সবাই পড়া বাদ দিয়ে,গসিপ বাদ দিয়ে,তাদের কাজ বাদ দিয়ে মুখে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকালো
.
কি বললে তুমি?শান্ত ভাইকে থাপ্পড় মেরেছো?
তমাল রেগে গিয়ে আহানার হাত শক্ত করে ধরলো,চলো আমার সাথে শান্ত ভাই আজ তোমাকে ছাড় দিলেও আমি তোমাকে ছাড় দিব না,এত বড় সাহস তোমার আমাদের কলিজায় হাত দিসো
.
হাত ছাড়ুন আমার,আমি স্যারকে ডাক দিব এখন!
তমাল টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে আহানাকে
আহানা চিৎকার দিয়ে স্যারদের ডাকতে শুরু করে দিলো সবাইকেও বললো ওকে আটকাতে,কেউ এসে আহানাকে ছাড়াচ্ছে না তমালের থেকে কারন তমাল হলো শান্তর লেফট হ্যান্ড,ওকে ওর কাজে বাধা দেওয়া মানে শান্তকে বাধা দেওয়া তাই কেউ এগিয়ে আসলো না
স্যারদের রুম সেকেন্ড ফ্লোরে বলে তারা আহানার চিৎকার শুনে নাই
সবাই শান্তকে চেনে,চড়ের কথা শুনে সবাই মিলে পারতেসে না আহানাকেই মেরে ফেলে,সবাই রেগে আছে আহানার উপর
তমাল আহানাকে শান্তর সামনে এনে ছুঁড়ে মারলো
আহানা শান্তর পায়ের কাছে গিয়ে পড়লো
সানগ্লাসটা ঠিক করে শান্ত কিছুটা হেসে বললো পা ধরলেও ক্ষমা করবো না আমি
কথাটা বলে দূরে একটা বট গাছের দিকে তাকালো সে,আহানাকে দেখার প্রতি আর কোনো interest তার নেই
.
আহানা উঠে দাঁড়ালো,তারপর রেগেমেগে আরেকটা চড় মেরে দিলো শান্তর গালে
এটার জন্য তমাল আর শান্ত দুজনের একজনও প্রস্তুত ছিল না
আহানা রেগে রেগে বললো এসব করেন ভার্সিটিতে এসে??আপনার সাহস হয় কি করে লোক ধরিয়ে আমাকে আমার ক্লাস থেকে টেনে আনার?আমি এখন গিয়ে স্যারের কাছে আপনার নামে কমপ্লেইন করবো
শান্ত আর রাগ সামালতে পারছে না,আহানার হাত মুঠো করে টেনে ধরলো সে
.
কি বললে?বিচার দিবে!ফাইন চলো আমার সাথে
.
দেখুন আপনি এখন বাড়াবাড়ি করতেসেন,আমার হাত ছাড়ুন বলতেসি,খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু!
শান্ত আহানাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর বলতেছে খুব খারাপ কি হবে?আরেকটা চড় মারবে?এইটুকু বয়সে এত বড় সাহস দেখাও তুমি,আমার ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা আছে তোমার?
শান্ত প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের সামনে এনে আহানাকে ছুঁড়ে মারলো
.
স্যার ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে বললেন কি হয়েছে শান্ত?
.
স্যার এই মেয়েটা আমাকে কাল বিনা কারনে চড় মেরেছে আর আজ যখন আমি ওকে জিজ্ঞেস করানোর জন্য আমার কাছে নিয়ে আসলাম তখন আবারও আমাকে চড় মারলো
.
স্যার বিনা কারনে নয়,এই ছেলেটা কাল একটা মেয়েকে Tease করতেসিলো,টাচ ও করসে
.
প্রিন্সিপাল একটু হেসে বললো ওটা তাহলে শান্ত ছিল না,অন্য কেউ ছিল,শান্ত এমন কাজ জীবনেও করতে পারে না
.
শান্ত তমালকে ফোন করে বললো সকল ভেজালের মূল রিফাতকে ধরে আনতে
.
ভাই সে তো আজ ভার্সিটিতে আসে নাই,পালিয়েছে মনে হয়,আগামী ১০/১২দিনেও তার দেখা পাবো না
.
যেখান থেকে পারো আমার সামনে এনে দাঁড় করাও বেয়াদবরে
.
স্যার আমি সত্যি বলতেসি এই ছেলেটা খুব খারাপ!আজ আমাকে জোর করে আমার ক্লাস থেকে নিয়ে আনছে উনার একটা ফ্রেন্ডকে দিয়ে
.
শান্ত দেয়ালে হেলান দিয়ে আহানার কথা শুনে যাচ্ছে
তার আর আহানার দূরত্ব কেবল প্রিন্সিপালের স্যারের টেবিলটার এপার ওপার
আহানা যা পারতেসে তাই বলে যাচ্ছে স্যারকে
শান্ত হঠাৎ এক টান দিয়ে সানগ্লাসটা খুলে নিলো চোখ থেকে,এত জোরে খুললো চশমাটা
আহানা এক প্রকার ভয় পেয়ে গেলো,একটু পিছনে সরে গিয়ে আবারও বলা শুরু করলো
.
প্রিন্সিপাল স্যার শান্তকে খুব ভালো করে চেনেন,এমনকি উনারই বন্ধুর ছেলে হচ্ছে শান্ত,শান্ত এরকম কাজ করতে পারে না,আহানা যা বলছে এটা যে মিথ্যা কথা সেটা তিনি জানেন বাট আহানার কথার ধরনে মনে হচ্ছে সে সত্যি বলতেসে
.
আহানা বললো স্যার এক মিনিট আমি কালকের সেই মেয়েটাকে আনতেসি সে সত্যিটা বলবে আপনাকে
আহানা এক দৌড়ে ক্লাসে চলে গেলো,সেই মেয়েটা ওর ক্লাসেরই,তাকে টেনে নিয়ে আসলো আহানা
.
এসে দেখলো তমাল কালকের ছেলেটাকে নিয়ে এসেছে যাকে আহানা শান্তর সাথে ঝগড়া করতে দেখেছিল
.
বলো আপু এই ছেলেটা তোমাকে কাল টিজ করতেসিলো না?
মেয়েটা চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছে,কারন শান্ত ভাই তো ওকে টিজ করেনি বরং বাঁচিয়েছিল তাহলে আহানা উনার দিকে আঙ্গুল তুলেছে কেন,মেয়েটা ভেবে পাচ্ছে না সে কি বলবে
চুপ করে থেকে বললো না আপু শান্ত ভাইয়া না,তমাল ভাইয়ার পাশের এই ছেলেটা কাল আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিল আর শান্ত ভাইয়া তো এসে আমাকে বাঁচিয়েছিল
আহানার মনে পড়লো মেয়েটা বলেছিল ব্লু শার্ট পরা আর কাল ওরা দুজনেই ব্লু শার্ট পরে ছিল আহানা ঢোক গিলে শান্তর দিকে তাকালো
শান্ত অগ্নি দৃষ্টিতে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে
.
স্যার মুখটা গম্ভীর করে বললেন তোমার নাম কি?
.
আহানা ঢোক গিলে বললো -আহানা ইয়াসমিন
.
তো আহানা না জেনে তুমি তোমার সিনিয়র কারোর গায়ে হাত তুলতে পারো না,এখন তুমি এই মুহুর্তে শান্তর কাছে ক্ষমা চাইবে
.
আহানা চুপ করে থেকে বললো সরি
.
হুম যাও তোমরা যে যার ক্লাসে ফিরে যাও আর রিফাত তুমি দাঁড়াও,মেয়েদের হেরাস করার শাস্তি তোমাকে পেতে হবে,আমি তোমার বাবাকে কল করতেসি এখানে দাঁড়িয়ে থাকো
শান্ত জ্যাকেটটা পিছন থেকে একটু টেনে সামনে এনে ঠিক করে সানগ্লাসটা পরে আহানার দিকে তাকাতে তাকাতে চলে গেলো
আহানা মনে মনে নিজেকে বকতেছে,এত বড় ভুল,তার উপর এত বড় অপমান,ইস না জেনে শুনে মারলাম,পরেরবার তো মারতাম না আমাকে জোর করে ক্লাস থেকে নিয়ে আনায় মেরেছি,এতটাও ভালো না লোকটা,কিরকম ভাব দেখিয়ে গেলো,অসভ্য একটা!কাল তো মারামারি ও করতেসিলো
.
আহানা প্রিন্সিপাল স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ক্লাসে গেলো
রুমে ঢুকতেই দেখলো সবাই ওর দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে,একজন আরেকজন কে বলছে জানিস এ মেয়েটা শান্ত ভাইয়াকে চড় মেরেছে বিনা কারনে
আহানা চুপচাপ গিয়ে ওর বেঞ্চে বসলো,রুপা ছাড়া বাকিরা ওর বেঞ্চ থেকে উঠে দূরে গিয়ে বসলো
.
আহানা তাদের দিকে একবার তাকিয়ে ব্যাগ থেকে বই বের করে তা পড়ায় মনযোগ দিলো
.
তুই এটা কেন করলি?তোর এত কিসের রাগ,ছেলেদের চড় মারলে তারা যে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে জানিস না আর সেটা নাহয় বাদই দিলাম চড় তো মারলি তাও কাকে?ভার্সিটির ফেমাস বয় কে,তোকে যে কি পরিমান জ্বালাবে তা তুই নিজেও জানস না,এই ভুল কেন করলি?
.
বই থেকে চোখটা উঠিয়ে আহানা রুপার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বললো আমি কি জানতাম নাকি এত কিছু,আর ছেলেটা কাল মারামারি করছে বলেই আমি ভেবেছি ঐ মেয়েটাকে সে টিজ করতেসিলো
কারোর ফিসফিস শুনে আহানা পাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই এখনও ওর দিকে তাকিয়ে কিসব বলতেসে
♣
১২টা বাজে সবাই ক্লাস শেষ করে এখন ব্রেক টাইমে ক্যামপাসে ঘুরতেসে,কেউ খাচ্ছে,কেউ আড্ডা দিচ্ছে,কেউ বা প্রেম করছে
আহানা আর রুপা ঘাসের উপর এসে বসেছে
আহানা পুরো ক্যামপাসটায় চোখ বুলিয়ে নিলো,বেশ সুন্দর ভার্সিটিটা,সবুজ ঘাস চারিদিকে,গাছগাছালিতে ভরা,শান্তিতে শ্বাস নেওয়া যায়,তার উপর সবাই কি সুন্দর একজন আরেকজনের সাথে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক রেখেছে,বেশ লাগতেসে আমার কাছে
.
হুম সুন্দর তো বটেই আর তুই চড় মেরে তোর পরিবেশ নিজেই নষ্ট করেছিস,শান্ত ভাইকে চড় না মেরে চুমু দিলে এখন সবাই তোকে কোলে নিয়ে হাঁটতো আর চড় মারায় দেখেছিস?কেউ তোর পাশেও আসতেসে না
.
ভেরি ফানি ঐ অসভ্য লোকটাকে আমি চুমু কেন দিব?তোর মাথা কি গেছে নাকি,আজব মাইয়া আজব কথাবার্তা!
.
আহানারে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতেসে আমাকে একটু পানি দে,মনে হয় তোর কারনে আমি মরমু
.
কেন?কি হয়েছে?
.
পিছনে তাকা আহানা?
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_১
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_১
#Writer_Afnan_Lara
?
,,,কারো একদিন হবো,,
,,,কারো এক রাত হবো,,,
,,,এর বেশি কারো রুচি হবে না,,
,,আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না,,
.
আমি আজ সারাটারাত শুধু গান গাইবো,আহা গান ছাড়া আর আছে টা কি
.
ভাই নওশাদ তোর কি পড়ালেখা নাই?কাল যে ইংরেজী পরীক্ষা ধারনা আছে তোর কোনো?
.
সূর্য ভাই আই এম রেডি ফর দিস ফালতু ইংলিশ পরীক্ষা
.
এখন আমি গান গাইবো
মে নেশামে ইয়া মুঝমে নেশা হে,হার তারাপ ধুয়া হি ধুয়া হে
রিয়াজ ব্রো মদ কি বেশি দিসিলি আমাকে?উড়তে মন চায় শুধু,আহা আহা
.
আমি তোকে মদ এক গ্লাস দিসিলাম জাস্ট,তাই না সূর্য?
.
হ্যাঁ তাই তবে নওশাদ এক গ্লাস খেয়ে থেমে থাকেনি,সে পুরো বোতল একাই শেষ করেছে,ওর কালকের পরীক্ষা গোল্লায় গেলো বলে
.
আমার কথা বাদ দে! শান্ত ভাই এত শান্ত কেন,তার হদিস ও মিলতেসে না,এত কিছু করলাম আমরা সন্ধ্যা থেকে,এত নাচগান করলাম তাকে তো জাস্ট একবার চোখে পড়লো তাও কিনা বেরিয়ে ডাইনিং থেকে পানি খেয়ে আবার রুমে চলে গেলো,কিরে রিয়াজ?শান্ত ভাইয়ের কি হলো?
.
তাকে শান্তা টাচ করেছে
রিয়াজের কথা শুনে সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিলো,হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে
হঠাৎ ঠাস করে দরজা খোলার আওয়াজ হলো
শান্ত ফুল শার্ট পরা ছিল,হাতা উঠাতে উঠাতে সোজা হেঁটে এসে ধুমধাম মাইর শুরু করে দিলো নওশাদ,রিয়াজ আর সূর্যকে গনহারে মারতেসে সে
সবার আগে নওশাদকে মেরেছে তার পর রিয়াজকে তারপর সূর্যকে
মার খেয়ে সবাই চুপ করে বসে থেকে নিরবতা পালন করতেসে
শান্ত ফ্লোরে বসে গিয়ে রিয়াজের হাত থেকে ছোঁ মেরে মদের বোতলটা নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলো
.
আমি বুঝলাম না আমাদের এলোপাথাড়ি মারার মানে টা কি শান্ত?তুই সবসময় না বলে এসে আমাদের মারা শুরু করে দেস,আগে থেকে বললে আমরা একটু রেডি হয়ে নিতাম তারপর তোর সাথে ফাইট।।।
শান্ত মদ খাওয়া বন্ধ করে রিয়াজের দিকে চোখ তুলে তাকালো
রিয়াজ হালকা কেশে বললো না থাক,তোর সাথে মারামারিতে জীবনে ফার্স্ট হইনি শুধু শুধু পাঙ্গা নিবো না
.
শান্ত?এরকম চুপচাপ হয়ে গেছিস কেন?কি হয়েছে তোর?আজ তোর পরীক্ষা ভালো হয়নি নাকি?
.
শান্ত বোতলটা জানালার দিকে ছুঁড়ে মেরে ফেলে দিয়ে হাত দিয়ে মুখ ভালো করে মুছলো
চোখটা বন্ধ করে নিজেকে ঠিক করে বড় একটা নিশ্বাস ফেললো
তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো সূর্য!আমাকে আজ একটা মেয়ে থাপ্পড় মেরেছে!
.
কথাটা শুনে সূর্য আর রিয়াজ উঠে দাঁড়িয়ে গেলো মুখে হাত দিয়ে
নওশাদ মদ খেয়ে অচেতন হয়ে পড়ে ছিল,শান্তর মুখে এই কথা শুনে সেও দাঁড়িয়ে গেলো
.
কি বললি?তোকে থাপ্পড়? কার এত বড় সাহস?সে কি তোকে চিনতো না?তুই পাল্টা মারিস নি?
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
নাহ পারলাম না
.
কেন পারবি?পারস খালি আমাদের মারতে
শান্ত উঠে চলে গেলো রুমের দিকে,আবারও দুম করে দরজা দিয়ে খাটে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো,তারপর কিসব ভাবতে ভাবতে আবার উঠে বসে গেলো
মাথার উপর সো সো করে ফ্যান চলছে,আর কোনো শব্দ নেই,তাও বিরক্তি লাগছে তার
৫কদম পার হলেই আয়না,আয়নাতে শান্ত নিজেকে দেখছে,এতদিন ভার্সিটির যারা যারা ওর সাথে বাড়াবাড়ি করতো তাদের মেরে ও রড বানিয়ে দিতো আর সে কিনা আজ কিছুই পারলো না,মার খেয়ে আসলো?
গালে হাত দিয়ে মুছতেসে সে জোরে জোরে
শাহরিয়ার শান্তকে মারার ফল আমি তোমাকে বুঝাবো,তুমি মরা পর্যন্ত তিলে তিলে আমি তোমাকে কষ্ট দিব,নতুন স্টুডেন্ট হয়ে এত বড় সাহস তোমার,বেয়াদব মেয়ে একটা
ফ্যানের সো সো শব্দ আর সহ্য হচ্ছে না শান্তর
উঠে গিয়ে অফ করে দিলো,মনে পড়লো আজ কি ঘটেছিল
♥
সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত ক্লাস ভার্সিটিতে,প্রতিদিনের মত শান্ত ২ঘন্টা দেরি করে ভার্সিটিতে পোঁছালো,ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয় বলেই তার এসময়ে আসা,ইচ্ছে করেই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে না সে,কি দরকার,পড়লে পড়বে না পড়লে নাই,বাবার কথা সম্মান করেই বলে সে পড়াশুনা ধরে আছে এতদিন,সারাবছর একটুও পড়ে না শান্ত
শুধু পরীক্ষার আগের দিন খাওয়া দাওয়া ঘুম সব অফ করে পড়ে আর পরীক্ষায় ফার্স্ট ও হয়
যাই হোক ধীরে ধীরে সে ভার্সিটির সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় যাচ্ছে,তার ক্লাস রুম সেখানেই
উপরে উঠেই দেখলো তার থেকে জুনিয়র একটা ছেলে আরেকটা মেয়েকে ডিস্টার্ব করতেসে সেটা চোখে পড়তেই দাঁড়িয়ে যায় শান্ত
ছেলেটাকে সে চিনে,নাম ধরে বললো এসব কি?
সে বললো ভাই নাক গলাবেন না
মেয়েটা এ সুযোগে পালিয়ে গেলো
ছেলেটা হাত উঠিয়ে শান্তর ঘাঁড়ে রেখে বলে none of your business bro!
সো দূরে থাকেন,এটা আমার পার্সোনাল ম্যাটার
মেয়েটা পালানোর সময় ধাক্কা খেলো অাহানার সাথে
আহানা আজ প্রথমদিন ভার্সিটিতে এসেছে,যখন নিজের ক্লাসরুম খুঁজতেসিলো সে তখনই মেয়েটার সাথে ধাক্কা লেগে গেলো তার
.
সরি আপু,কি হয়েছে?তুমি এরকম হাঁপাচ্ছো কেন?
.
আপু হেল্প মি,ঐ ছেলেটা আমাকে ডিস্টার্ব করতেসে,আমাকে টাচ করার চেষ্টাও করতেসিলো
মেয়েটা কথা বলতে বলতে কেঁদে দিলো,টাচের কথা শুনে আহানার মেজাজ গেলো গরম হয়ে,কোনটা?
মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বললো ব্লু শার্ট পরাটা
আহানা তাকিয়ে দেখলো দুজনেই ব্লু শার্ট পরেছে
আহানা রেগে গিয়ে কাছে এসে দাঁড়ালো
শান্ত ঐ ছেলেটার কলার ধরে ওকে ঝাঁকিয়ে বললো তোর সাহস তো কম নয় আমার সাথে বড়বড় কথা বলিস
আহানা ভাবলো এরকম গুন্ডা টাইপ ছেলেটায় হবে যে ঐ আপুটাকে টাচ করার চেষ্টা করেছে
আহানা হুট করে একটা চড় মেরে দিলো শান্তর গালে
শান্ত ছেলেটার কলার ছেড়ে অবাক হয়ে পাশে তাকালো আহানা মুখটা ফুলিয়ে বললো লজ্জা করে না মেয়েদের tease করো?প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে বিচার দিব তোমার নামে,বেয়াদব ছেলে কোথাকার
আহানা কথাগুলো বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো
শান্ত গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে,বিশ্বাস হচ্ছে না তার! একটা মেয়ে ওকে চড় মারলো আবার চলেও গেলো
যে ছেলেটাকে এতক্ষণ কেলানি দিচ্ছিলো সে নিচে বসে শান্তর পা জড়িয়ে বললো ভাই আমাকে মাফ করে দিন আমার জন্য আপনাকে ঐ আপুটা মেরেছে
ছেলেটা খুব ভালো করে জানে শান্ত এখন মেয়েটার থাপ্পড় খেয়ে যে রাগের সাগরের স্রোত তার মাঝে বইছে তা ছেলেটার উপরই ঝাড়বে,যা হয়েছে সব ওর কারণের হয়েছে,ও যদি এত প্যাঁচাল না করতো আজ শান্ত চড়টা খেতো না
শান্ত চুপচাপ রোবটের মত হেঁটে তার ক্লাসে ফিরে গেলো,চারপাশটা কেমন যেন লাগতেসে,মনে হচ্ছে দেয়াল ও আমার উপর হাসতেসে,এটা কি ছিল?এত বড় সাহস?একে কিমা করবো নাকি ফ্রাই করবো,কোনটা করলে আমার চড়ের প্রতিশোধ উঠানো যাবে,ছেলেদের সাহস হয় না আমার গায়ে হাত তুলার আর সেখানে একটা মেয়ে এসে কিনা আমাকে মেরে চলে গেলো?এত বড় সাহস!
ছেলেটা আল্লাহর নাম নিয়ে পালালো,আগামী ১০দিনেও এই ভার্সিটিতে আসবো না বাপরে,এক বাঁচা বেঁচেছি
♠
খুব রাগ উঠতেসে আমার!!!
শান্ত ফুলের টবটা হাতে নিয়ে আয়নায় ছুঁড়ে মারলো,ছাড়বো না আমি ওরে,তিলে তিলে কষ্ট দিব,আমার পায়ে এসে বলবে ক্ষমা করেন
বাই দ্যা ওয়ে আজ মনে হয় মদ একটু বেশি খাওয়া হয়ে গিয়েছে,এখন ঘুমাতে হবে,মাথাটা চক্কর দিচ্ছে খুব!
শান্ত চুপচাপ আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো
ফোন বাজতেসে,মুখটা বেডশিটের নিচে রেখেই হাত বাড়িয়ে বিছানার পাশের টেবিলে হাতিয়ে অনেক খুঁজে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করলো সে
ওপার থেকে একটা কন্ঠ ভেসে উঠলো,বাবার ভয়েস এটা
এই পৃথিবীতে বাবা ছাড়া শান্তর আর আপন কেউ নেই,যারা আছে তারা সৎ
সৎ মা,সৎ ভাইবোন,তারা কেউই শান্তকে মেনে নেয় না তাই শান্ত নিজ থেকেই একটা ফ্ল্যাটে একা থাকে তার সাথে তার ৩বন্ধু থাকে,রিয়াজ,সূর্য আর নওশাদ
.
হুম বাবা বলো,ডিনার করেছো?
.
হুম
আবার ড্রিংক করেছিস?তোকে মানা করি নাই আমি?কথা শুনিস না কেন?শরীরের জন্য এটা কত ক্ষতিকর জানিস না?
.
বাবা সরি,কি করবো মাঝে মাঝে নিজেকে সামলাতে খেতে হয়,তুমিও তো খাও,আর আমি কি এখন বাচ্চা নাকি কদিন বাদে অফিস জয়েন করবো,মাস্টার্স ফাইনালটা দিয়েই
.
নিজের খেয়াল রাখিস শান্ত,আমি চেয়েও তোর খেয়াল রাখতে পারি না
.
বাবা নিজেকে দোষারোপ করবা না একদম,আমি তো এখানে নিজের ইচ্ছাতেই এসেছি তাহলে এটা কেন বলো?যাও ঔষুধ খেয়ে ঘুমাও,লাভ ইউ বাবা
শান্ত ফোনটা রেখে দিলো,আজ মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে,আমাকে ছোটবেলায় একটা ছেলে মেরেছিল বলে মা কেঁদেছিল,আর আজ মা থাকলে আজও কাঁদত নিশ্চয়
নাহ ঘুম চলে গেছে,আর আসবে না ঘুম
যাই বারান্দা বিলাস করবো,হাহা,মানুষ করে বৃষ্টি বিলাস আর আমি করবো বারান্দা বিলাস
এক কাপ কফি হলে জোস হতো,মা যদি থাকত তাহলে কফি বানিয়ে দিতো এখন
নাহ মা যেহেতু নেই সব কাজ আমাকেই করতে হবে,এতদিন তো তাই করে আসছি
শান্ত আকাশের দিকে তাকালো
মা?তুমি খাবে?তোমার জন্য বানাই?খাবে না?ওহ ঠিক আছে তাহলে আমিই খাবো
শান্ত দরজা খুলে বের হলো,প্রথমেই ওর নজর গেলো ফ্লোরের দিকে,রিয়াজের গায়ের উপর পা উঠিয়ে নওশাদ ঘুমায়,তার উপর পা তুলে সূর্য ঘুমায়,বলদগুলো পরীক্ষার আগের দিন মদ খেয়ে পড়ে থাকে সবসময়
শান্ত একটা কাঁথা আলমারি থেকে নিয়ে এসে ওদের গায়ে জড়িয়ে দিলো,এরা তার কাছে বন্ধু কম ভাই বেশি,বিপদে আপদে সবসময় ওরা শান্তর পাশে থাকে
কফি বানিয়ে আবারও রুমে ফিরে আসলো সে,আকাশের দিকে চেয়ে মায়ের সাথে কিছু কথা বললো শান্ত আর বললো সেই মেয়েটার কথা যে ওকে মেরেছে,তারপর কিসব ভেবে রুমে ফিরে আসলো,ঘুম পাচ্ছে খুব
৪টা বছর ধরে এই ফ্ল্যাটে সে থাকে,বাবার থেকে বহুদূরে
ঈদে গিয়ে দেখে আসে,থাকা আর হয়ে উঠে না,থাকলেই জ্বালা যন্ত্রনা শুরু হয়ে যায় তার সৎ ভাইবোনদের,এখানে একা বেশ আছে সে,বাবা খরচ চালায়,কিছুদিন পর সে বাবার খরচ চালাবে অবশ্য বাবা হয়ত টাকা নিতে চাইবে না,অভাব নেই তার তাও আমি আমার প্রথম সেলারি দিয়ে তাকে গিফট দিব কিছু একটা
কফির মগটা হাতে ঝুলিয়েই শান্ত ঘুমিয়ে পড়লো বিছানায়,হাতে থাকা কফির মগটা ঝুলতেসে,আজ আর ফ্যান চালানো হয়নি,এসি চালালো,নামেই এসি রাখসে,শান্তর এসি একদম পছন্দ না,কিন্তু কি করবে ফ্যানের গটগট শব্দের চেয়ে এটা বেটার
চলবে♥
অতন্দ্রিলার রোদ, পর্ব – ১
অতন্দ্রিলার রোদ
পর্ব : ১
লেখা : শঙ্খিনী
অতন্দ্রিলার মাথাটা ভ্নভ্ন করছে। তেইশ বছরের জীবনে এতটা বিভ্রান্ত এর আগে একবারই হয়েছিলো।
তখন তার বয়স মাত্র চার। এই বয়সে নানি-দাদি বা অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনেরা বাচ্চাদেরকে, “বাবা আর মায়ের মধ্যে কে বেশি আদর করে?” বা “বাবা আর মায়ের মধ্যে কাকে বেশি ভালোবাসো?” – এ ধরনের প্রশ্ন করে থাকেন।
কিন্তু অতন্দ্রিলার ক্ষেত্রে বিষয়টা ছিলো একটু ভিন্ন।
এক সন্ধ্যায় অতন্দ্রিলার দাদী তাকে
হতাশ গলায় বললেন, “অত, ঠিক করো কার সাথে থাকবে! মায়ের সাথে না বাবার সাথে?”
কথাগুলো অতন্দ্রিলার মাথার ওপর দিয়ে গেলো।
কিছুই বুঝতে না পেরে সে হতভম্ব গলায় বলল, “আমি তো দুজনের সাথেই থাকি!”
“সেটা তো এতদিন থাকতে। কিন্তু এখন তোমার বাবা-মা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। তাই দুজনের মধ্যে থেকে যেকোনো একজনকে বেছে নিতে হবে তোমাকে।”
“আলদা হয়ে যাওয়া মানে কি?”
“ডিভোর্স! তোমার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে।”
“ডিভোর্স মানে কি?”
“ডিভোর্স মানে তোমার বাবা-মা আর একসাথে থাকবে না।”
“একসাথে থাকবে না? কেন?”
“সেটা তোমার জানার বিষয় না! তুমি আগে বলো কার সাথে থাকবে?”
আলাদা হওয়া বা ডিভোর্স, এই ধরনের কঠিন কঠিন শব্দগুলোর অর্থ এখনো অতন্দ্রিলার সাথে পরিষ্কার না। তার ওপর আবার বাবা-মায়ের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেওয়া, ভয়ংকর ব্যাপার!
এত বড় একটা সিদ্ধান্তের কথা বাচ্চাদেরকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে হয়। দুটো মানুষের মধ্যে মতের অমিল হলে যে, তারা আলাদা হয়ে যেতে পারে, এটা তাদের কল্পনারও বাইরে।
পরে অতন্দ্রিলার মা শায়লা বিষয়টা তাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেন।
“অত? আমাদের বাসায় বা তোমার ক্লাসে এমন কেউ কি আছে যাকে তুমি সহ্য করতে পারো না? যাকে দেখলেই তোমার রাগ হয়?”
“আছে, সন্ধ্যা আপা।”
“সন্ধ্যা যখন তোমার ঘরে ঢুকে অকারণে তোমাকে ফুটবল দিয়ে মারে তখন তুমি তাকে ঘর থেকে চলে যেতে বলো না?”
“হুঁ বলি তো!”
“তোমার বাবার আর আমার ঘটনাটাও কিছুটা এমন।”
“বাবা কি তোমাকে ফুটবল দিয়ে মারে?”
“না। সে মারে কথা দিয়ে। তুমি যেমন ফুটবলের আঘাত সহ্য করতে পারো না, আমিও তেমনি কথার আঘাত সহ্য করতে পারি না। তাই আমি তোমার বাবার বাসা থেকে চলে যাচ্ছি। তুমি চাইলে আমার সাথেও যেতে পারো আবার চাইলে তোমার বাবার সাথেও থাকতে পারো।”
অতন্দ্রিলা শুকনো গলায় বলল, “তুমি কোথায় যাবে?”
“তোমার নানাবাড়ীতে।”
“শহর তোমার সাথে যাবে?”
“শহর তো এখন অনেক ছোট, তাই আপাতত আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। ও যখন তোমার মত একটু বড় হবে, তখন ওকেও জিজ্ঞেস করবো কার কাছে থাকবে।”
“আর আপা?”
“সন্ধ্যাও আমার সাথে যাবে। এখন তুমি বলো কি করতে চাও! যাবে আমার সাথে?”
“না। আমি এখানেই থাকবো।”
“তোমার কিন্তু অনেক সমস্যা হবে আমাকে ছাড়া। আমি চাই তুমি আমার সাথে চলো।”
“না। আমি তোমার সাথে যাবো না।”
“তুমি ঠিক তোমার বাবার জেদটা পেয়েছো।”
এরপর এক ঝড়-বৃষ্টির রাতে শায়লা ব্যাগ-পত্র গুছিয়ে তার দুই ছেলমেয়েকে নিয়ে চলে যায়।
সেদিন অতন্দ্রিলা বুঝতেই পারেনি তার মা ভাইবোনকে নিয়ে কেন চলে গেল। ভয়ঙ্কর বিভ্রান্তিতে পরেছিল সে।
তবে এবার তার বিভ্রান্তির কারনটা সম্পূর্ণই আলাদা।
সারাজীবন নাটক-সিনেমায় কিংবা গল্পে-উপন্যাসে ‘ভালোবাসা’ শব্দটা অহরহ শুনছে অতন্দ্রিলা। কিন্তু এই শব্দের অর্থটাই এখনো জানা হলো না। এই চার অক্ষরের শব্দটার অর্থ জানার জন্যই ইন্টারনেটে ছোটখাটো গবেষণা চালাচ্ছে। কিন্তু গবেষনা যতই এগুচ্ছে, অতন্দ্রিলার মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
দস্তয়েভস্কি বলেছেন, “কেউ ভালোবাসা পেলে এমন কি সুখ ছাড়াও সে বাঁচতে পারে।”
আবার ডেভিড রস বলেছেন, “ভালোবাসা এবং যত্ন দিয়ে মরুভূমিতেও ফুল ফোটানো যায়।”
এদিকে রবীন্দ্রনাথ তো অতন্দ্রিলার মতোই বিভ্রান্ত। তিনি নিজেই প্রশ্ন করেছেন, “সখী ভালোবাসা কারে কয়?”
আবার লা রচেফউকোল্ড বলেছেন, “সত্যিকারের ভালোবাসা হল অনেকটা প্রেতআত্মার মতো। এ নিয়ে সবাই কথা বলে,কিন্তু শুধুমাত্র কয়েকজনই এর দেখা পায়।”
হুমায়ূন আজাদ বলেছেন, “প্রেম হচ্ছে নিরন্তর অনিশ্চয়তা; বিয়ে ও সংসার হচ্ছে চূড়ান্ত নিশ্চিন্তির মধ্যে আহার, নিদ্রা, সঙ্গম, সন্তান, ও শয়তানি।”
সবশেষে অতন্দ্রিলার প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, “পৃথিবীতে অনেক ধরনের অত্যাচার আছে। ভালবাসার অত্যাচার হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ানক অত্যাচার। এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলা যায় না, শুধু সহ্য করে নিতে হয়।”
বিখ্যাত ব্যাক্তিদের এসব বিখ্যাত উক্তি পড়ে অতন্দ্রিলা একটা কথাই বুঝতে পরলো যে, ভালোবাসা হলো একটি এবং জটিল এবং বিভ্রান্তিমূলক অনুভূতি।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রাপ্ত অতন্দ্রিলা আশরাফ,
বসে পড়ে প্রতিবেদন লিখতে। এ বছরের শুরুর দিকে বাবা হামিদ সাহেবের সুপারিশে, একটা অনলাইন পত্রিকায় চাকরি পেয়েছে সে।
চাকরি পাওয়ার খবরটা পেয়েই সর্বপ্রথম শায়লাকে টেলিফোন করে জানায় অতন্দ্রিলা।
চাকরির কথা শুনতেই শায়লা হাই তুলতে তুলতে বলেন, “তোর এই চাকরিটা কি ধরনের?”
“খুবই বাজে ধরনের। পেটে ভাতে চাকরি বলতে পারো! এমন সব প্রতিবেদন লিখবো যা হয়তো ওয়েবসাইটের কোণায় পরে থাকবে, কেউ খুলে পড়বে পর্যন্ত না।”
“তাহলে এমন চাকরি তুই করবি কেন?”
“দুটো কারন আছে। প্রথমত, এখানে প্রতিবেদন লিখতে লিখতে আমার লেখার হাত পাকবে। নতুন অভিজ্ঞতা হবে। আর দ্বিতীয়ত, চাকরিটা করতে ঘর থেকে বের হতে হবে না। যেহেতু অনলাইন পত্রিকা, তাই ঘরে বসেই লিখতে পারবো।”
“কি কি বিষয়ে প্রতিবেদন লিখবি?”
“হাবিজাবি বিষয়ে। এই যেমন, ‘জেনে নিন অতিরিক্ত পরিশ্রম করার কুফল’ অথবা ‘জেনে নিন অতিরিক্ত বিশ্রামের কুফল’- এই টাইপের প্রতিবেদন।”
“এসব কুফল সম্পর্কে তুই কি জানিস? তুই কি ডাক্তার?”
“একজন সাংবাদিক যেমন ডাক্তারি বিষয় সম্পর্কে প্রতিবেদন লিখতে পারে, তেমনি মহাকাশ সম্পর্কেও প্রতিবেদন লিখতে পারে।
তোমাকে তো মাত্র একটা ধারনা দিলাম। চেষ্টা করবো সব বিষয়েই লিখতে।”
“তোর জ্ঞানের কথা শুনতে ভালো লাগছে না, রাখলাম।”
প্রথম দিকে অতন্দ্রিলার এই ঘরে বসে সাংবাদিকতাকে সবাই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেও, পাঠকদের বেশ ভালোই সাড়া পেয়েছে সে। তাই হাবিজাবি ধরনের প্রতিবেদন লিখে যাচ্ছে ছয় মাস ধরে।
আজ সে বিষয়টা নিয়ে প্রতিবেদন লিখছে তার শিরোনাম, ‘ভালোবাসা কারে কয়?’
এই প্রতিবেদনটি সাজানো থাকবে বিখ্যাত ব্যাক্তিদের ভালোবাসা সংক্রান্ত উক্তি দিয়ে।
তবে অতন্দ্রিলা ভাবছে এবারের প্রতিবেদটা একটু ভিন্নরকম ভাবে সাজবে।
বিখ্যাত ব্যাক্তিদের পাশাপাশি এবারের প্রতিবেদনে থাকবে, ভালোবাসা নিয়ে তার আশেপাশের মানুষগুলোর মতামত। এই যেমন তার ৭৫ বছর বয়সী দাদি ভালোবাসা নিয়ে কি ভাবেন কিংবা উনিশ বছর আগে যার স্ত্রী ছেড়ে যাওয়ার পর আর দ্বিতীয় বিয়ে করেননি সেই বাবা ভালোবাসা নিয়ে কি ভাবেন অথবা স্বামীকে ছেড়ে যাওয়ার পর যে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যাস্ত ছিলেন সেই মা ভালোবাসা নিয়ে কি ভাবেন। রোদ সাহেবের মতামতও নেওয়া যেতে পারে, তবে সেটা পরিস্থিতিতে সাপেক্ষে বিবেচ্য। সঙ্গে অতন্দ্রিলার নিজস্ব মতামতও যোগ করা যেতে পারে।
আর কার কার মতামত নেওয়া যায় তা ভাবতে ভাবতে দরজায় টোকা পরল।
“খোলা আছে!”
বেশ ব্যস্ত ভঙ্গিমায় ঘরে প্রবেশ করে অতন্দ্রিলাদের বাড়ির কাজের মেয়ে জরিনা।
“আফা নিচে আসেন, টেবিলে নাস্তা দিসি।
আইজ আপনের পছন্দের নাস্তা, পরটা দিয়া গরুর গোস্ত।”
“বাবা আর দাদি?”
“বইসা পরছে। আপনের জইন্যে দাঁড়াইবে নাকি? আপনে তো লিখতে লিখতেই দুপুর বাঁধায় ফেলবেন।”
“তুমি বেশি কথা বলো।”
“কি করবো আফা কন? আল্লাহর দুনিয়ার আসছি তো দুই দিনের জন্যে, কথা না কইলে কি করুম?”
“বেশি কথা না বলে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে?”
“এইটা কোনো কথা বললেন আফা? আপনি একটা কথা জিগাইবেন আর আমি বোলুম না এইটা হয়?”
“বলতো ভালোবাসা কি?”
“আফা, আমি মূর্খ মানুষ। পড়াশুনা বেশি দূর করতে পারি নাই! আমি আবার কি বোলুম ?”
“এমন অনেক বিষয়ই আছে যা সম্পর্কে জানতে লেখাপড়া করতে হয় না, চারপাশের পরিবেশ থেকেই জানা যায়। ভালোবাসা মানে তো তুমি নিশ্চই জানো!”
জরিনা খানিকটা সংকোচ নিয়ে বলল, “জানি, তয় আপনার মত সুন্দর কইরা বলতে পারমু না।”
“আমি তো তোমাকে সুন্দর করে বলতে বলিনি। তুমি যা জানো, নিজের মতো করে বলো।”
“আফা এইসব বদ মাইয়া-পোলার করবার। যেগুলি এইসব ভালোবাসাবাসি করে, হেগুলি বদের বদ।”
অতন্দ্রিলা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ঠিকাছে, তুমি নিচে যাও আমি আসছি।”
অতন্দ্রিলা নিচে এসে দেখে জরিনার কথা একেবারেই সত্য নয়। বাবা এবং দাদি তার জন্য নাস্তার টেবিলে অপেক্ষা করছেন। যদিও অপেক্ষা করছেন নিতান্ত অনিচ্ছায়।
অতন্দ্রিলাকে দেখে তার বাবা হারুন সাহেব শান্তির দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে বললেন, “গুড মর্নিং রাজকুমারী।”
অতন্দ্রিলা তার পাশে বসতে বসতে বলল “গুড মর্নিং।”
“তা, কেমন দেখলি ছেলেটাকে?”
“কোন ছেলে?”
“ঢং করবি না। পৃথিবীতে আমি সবকিছু সহ্য করতে পারি কিন্তু ঢং সহ্য করতে পারি না।”
“ভুল। তুমি ক্ষুদা সহ্য করতে পারো না, তাই এখন নাস্তা করছো। আবার তুমি শীত সহ্য করতে পারো না, তাই শীতকালে সোয়েটার পরো।”
“তোর সঙ্গে কথা বলাটাই বিপদ। কোনো আলোচনাকে কি হালকা পর্যায়ে রাখতে পারিস না?”
অতন্দ্রিলা বলল, “স্যরি বাবা, ভুল করেছি। আমার জীবনে তো অনেক ছেলেকেই দেখেছি তাই সত্যিই বুঝতে পারছি না তুমি কোন ছেলের কথা বলছো।”
“কার কথা আবার? কালকে যে ছেলেটা তোকে দেখতে এলো, সেই ছেলেটা।”
“ও সে! হুঁ ভালোই তো দেখেছি।”
অতন্দ্রিলার দাদি রওশন আরা অস্পষ্ট গলায় বললেন, “ভালো হলেই ভালো।”
অতন্দ্রিলা বলল, “তবে তার যে এর আগেও একবার বিয়ে হয়েছিলো, এই বিষয়টা তোমরা আমার কাছ থেকে গোপন না করলেও পারতে।”
হামিদ সাহেব হতভম্ব হয়ে বললেন, “তুই জানলি কিভাবে?”
“বাবা লোকটা না আহাম্মক নন। তাই যখন তার সাথে আমাকে আলাদাভাবে কথা বলতে পাঠিয়ে দিলে, তখনি সে তার জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা আমাকে জানায়।”
রওশন হতাশ গলায় বললেন, “দেখ মা, তুই তো সবই জানিস আর বুঝিস।”
“হুঁ বুঝি তো। আমি ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে, তাই এর থেকে বেশি আমি ডিজার্ভ করি না।”
“আহ্! এভাবে বলছিস কেন?”
“সত্যিই তো বলছি। তোমরা কি ভাবছো, ওনার যে আগে একটা বিয়ে হয়েছিল এই বিষয়টা ভেবে আমি রাগে দুঃখে মরে যাচ্ছি? না দাদি! আমি ব্যাপারটাকে অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছি। আমার দোষ হলো আমি ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে। আর ওনার দোষ হলো উনি আগেও একবার বিয়ে করেছিলেন। দোষে দোষে কাটাকাটি! তাছাড়া লোকটাকে যে আমার পছন্দ হয়নি তাও না। পছন্দ হয়েছে। ওনার বুদ্ধি ভালো, সুন্দর করে কথা বলে আর দেখতে শুনতেও খারাপ না।”
হামিদ সাহেব কিছু বলতে যাবেন, তখনি জরিনা খাবার ঘরে প্রবেশ করে।
“আফা! ছোট ভাইজান ফোন দিসে।”
“শহরকে বলো, আমি নাস্তা করে কলব্যাক করছি।”
শহর, অতন্দ্রিলার আদরের ছোট ভাই। শহরের বয়স যখন ৬ মাস, তখন তার মা তাকে নিয়ে নানাবাড়ীতে চলে যায়। মা, বড় আপাসহ নানাবাড়ির সকলেই যে অত্যন্ত বিরক্তিকর মানুষ, এই ব্যাপারটা শহর একটু বড় হয়েই বুঝতে পারে। তাই তিন বছর বয়স থেকে বাবা, দাদি এবং ছোট আপার সাথে থাকতে শুরু করে সে।
বর্তমানে সে জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্র।
হলে থাকাটা নিতান্তই তার শখের বসে নেওয়া সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তটা যে কত বড় ভুল ছিল, তা শহর এখন টের পাচ্ছে।
অতন্দ্রিলা তাড়াহুড়ো নাস্তা শেষ করে, ঘরে গিয়ে শহরকে কলব্যাক করে।
“আপা, তোমাকে নাকি কাল পাত্র দেখতে এসেছিল?”
“হুঁ এসেছিলো তো।”
“এটা আমাকে কেউ আগে জানায়নি কেন?”
“দেখতে আসবে আমাকে, তুই জেনে কি করবি?”
“তোমাকে দেখতে আসবে আর আমি সেখানে উপস্থিত থাকবো না?”
“না থাকবি না। কারন দেখতে আসা মানেই বিয়ে হয়ে যাওয়া না। আর তারা শুধু আমাকে দেখে গেছেন, বিয়ে পর্যন্ত ঠিক হয়নি। বলেছেন জানাবে।”
শহর বলল,“মা জানে?”
“না।”
“তোমার সাথে যার বিয়ে কথা চলছে, তার সম্পর্কে কিছু বলো।”
“কিছুই বলতে পারবো না। আগে সবকিছু ঠিকঠাক হোক, সব জানতে পারবি।”
শহরকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে অতন্দ্রিলা ফোনটা রেখে দিলো।
(চলবে)
লুকোচুড়ি_ভালোবাসা?Last part
লুকোচুড়ি_ভালোবাসা?Last part
#লেখিকা-তানজিনা আক্তার মিষ্টি
নেক্মট এক্মাম টা মিষ্টি এলোমেলোভাবে দিলো। ভয়ে ভয়ে রাজ কেন কারো সাথেই কথা বলে না। মিষ্টি মা মিনা সবাই ফোন করে বেশি কথা বলে না ওর মধ্যে এটা আলাদা ভয় কাজ করেছে তার উপর সেটা আর ও প্ররোক্ষ হয়েছে পাচঁ নাম্বার পরিক্ষার দিন। সেদিন একটা বোরকা আলা মহিলা মিষ্টির হাতে চাকু দিয়ে কেটে দিয়েছে। ফাস্ট মহিলাটি মিষ্টির কাছে সাহায্য চায় অন্ধ বলে রাস্তায় পার করতে হবে। মিষ্টি উদাসিন হলেও কেউ সাহায্য চাইছে না করে না নিজের যাই হোক কাউকে ফিরিয়ে দেয় না। অন্ধ জেনে আর ও খারাপ লাগে তাই তাকে ধরে এক্মাম শেষে পার করতে যায়। আর তখন ই মহিলাটি ওর হাত দাগ দিয়ে দৌড়ে একটা গাড়ি তে উঠে চলে যায়।
মিষ্টি চিৎকার না করে হতদম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। ওর ব্যাথা ও করে না তা না কিন্তু এতোটাই শক খেয়েছে যে কিছু বুঝছে না। রাজ গাড়ি আনতে গেছিলো এনেই মিষ্টি কে অন্য পাশে দেখেই একটু ঝটকা খায় একা কি করে?
রাজ মিষ্টি কাছে যেতে মিষ্টি ঢুলে পরে রাজ ভয় পেয়ে যায় হঠাৎ এভাবে পরে য়াওয়ায় হঠাৎ হাতে চোখ যেতেই আর ও ভয় পায় বিল্ডিং হচ্ছে কি করে? মিষ্টি মিষ্টি করে চিৎকার করে হসপিটালে নিয়ে আসে। পাগলের মতো কলতে থাকে একবার ফোন করে বাসার জানায় সবাই ছোটে আসে রাজ বাইরে দাড়িয়ে মেয়েদের মতো কেদেই যাচ্ছে এগুলো কি হচ্ছে কিছু ভাবতে পারছে না। রাজের ভা রেহেনা বেগম ও রাজের বাবা আসতেই রাজ ওর মাকে ধরে কান্না করে।ছেলে এমন কান্না দেখে তিনি ও কাদতে থাকে মিষ্টি কে নিজের মেয়ের চোখে দেখে তার এই অবস্থায় তো তার চোখের পানি আর আটকাতে পারছে না। আবার ছেলের চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না কতোটা ভালোবাসলে এভাবে কাদতে পারে।
দীর্ঘ পাচঁ ঘন্টা পর মিষ্টি চোখ মেলে তাকায় সামনে তাকাতেই চোখ পরে রাজের উপর। সাথে সাথে বুকটা ধুক করে উঠে কি অবস্থা হয়েছে রাজের। ফর্সা মুখ একদম লাল হয়ে আছে চোখের কোনা বেয়ে পানি আসছে চোখ দুটো ফুলে লাল টুককুকে হয়ে আছে। দেখেই মিষ্টির ভ য় পেয়ে যায় এই কি অবস্থা হয়েছে তার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। এক হাত মিষ্টির সেলাইন লাগানো হাতের আঙল ধরে আছে। আমাকে চোখ মেলতেই দেখেই রাজ বুকে হাত দিয়ে জোরে একটা নিশ্বাস নেয় আর সাথে সাথে আম্মু বলে চেচিয়ে উঠে। রেহেনা বেগম বাইরে বসে ছিলো এই সময় কাউকে মিষ্টির রুমে যেতে দিবে না কিন্তু ছেলে আমার মানছেই না ও নাকি মিষ্টি পাশে বসে থাকবে। সবাই বলে ও শুনাতে ব্যর্থ হয়ে রাজি হয়।
বসে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিলো মিষ্টির জন্য মেয়েটার হঠাৎ এমন কেন হলো সেদিন ও কি ভয় নি বাসায় আসে। এক্মাম চলছে তার উপর এসব পরিক্ষা ও নাকি বেশি ভালো করে দিতে পারেনি। একটু ঠিক হচ্ছি মলো আবার এসব। মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে হঠাৎ ই রাজের চিৎকার কানে আসতেই ভয় পেয়ে যায় এভাবে ডাকছে কেন মিষ্টির কিছু হলো না তো না না কি ভাবছি কিছু হবে না মিষ্টির ওর কিছু হলে। রাজ বাচবে না। ভেবেই দৌড়ে ডাক্তার ডেকে নিয়ে মিষ্টির কেবিনে যায়। আর গিয়ে যা দেখে তাতে স্তব্দ হয়ে আছে। রাজ মিষ্টি কে জরিয়ে ধরে আছে আর কি যেন বলছে কান্না করছে।
মিষ্টির চোখ অফ তাই ডাক্তার ভেবেছে জ্ঞান ফিরে নি তাই রাজের উপর রেগে উঠে এভাবে জরাজরি করলে পেশেন্টের ক্ষতি হবে।
–এই যে মিস্টার আপনাকে এই জন্য এলাউ করতে চাইনি। এভাবে অজ্ঞান পেশেন্টের সাথে কি করছের উনার ক্ষতি হবে ছারুন বলছি ছারুন।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
রেহেনা বেগম ও রেগে যায় এমন বাচ্চামো করার মানে কি?
–বাবুন মিষ্টিকে ছারু ওর প্রবলেম হবে ছারু ওকে বেডে রাখো।
রাজ কারো কথা শুনছে না দুজনের কাছে চলে আসে। মিষ্টি এবার চোখ মেলে রাজের বুকে থেকে মাথা উঠিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে রাজের দিকে চোখেপানি যা দেখে মিষ্টি ডান হাত দিয়ে মুছে দেয়। কারণ বাম হাতেই আঘাত টা লেগেছে।
দুজনে মিষ্টি কে নরতে দেখেই বুঝে যায় মিষ্টি জ্ঞান ফিরেছে। রাজ এতোক্ষণ তাদের কথা শুনেই নি মিষ্টি কে নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পরেছিল। এবার মিষ্টি রাজের থেকে চোখ সরিয়ে মামুনি আর তার পাশে একজন বয়ষ্ক ভদ্রলোক দাড়িয়ে থাকতে দেখে লোকটা ডাক্তার বুঝতে পারে ড্রেস দেখে। লজ্জা পেয়ে ছেড়ে দেয় রাজকে রাজ পেছনে ফিরে ডাক্তার কে দেখেই মিষ্টি কে দেখতে বলে ও ঠিক আছে কিনা।
ডাক্তার মিষ্টি কে দেখে বলে এক বিপদ মুক্ত কিন্তু দূর্বল শরীর আজকে থাকতে হবে। এটা শুনতেই মিষ্টি চেচিয়ে উঠে,,
— অসম্ভব আজকে হসপিটালে থাকতে হবে। নো ডাক্তার আন্কেল আমি থাকতে পারবো না আমার কালকেও এক্মাম আছে এখন ই বাসার যেতে হবে।
–সরি আজকে ছারতে পারবো না আপনার শরীর থেকে অনেক রক্ত ক্ষরণ হয়েছে আজকে থাকতেই হবে।
–আমি ঠিক আছি দেখুন একভ ফীট আছি এখানে থাকলে তো পড়া হবে না। রাজ আপনি কিছু বলেন।
রাজ কি বলবে বুঝতে পারছে না মিষ্টির সুস্থ তা ওর কাছে বেশি ইমর্পটেন্ট কিন্তু মিষ্টির লেখাপড়া এটা ও মিষ্টির সপ্ন। কি বলবে ও ডাক্তার এর কথা ও ফেলা যাচ্ছে না আবার মিষ্টি।
–আপনি একদম ঠিক নেই এখন মনে হচ্ছে ঠিক কিন্তু আবার মাথা ঘুরে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।
–কিছু হবে না আমার প্লিজ আপনি বুঝার চেষ্টা করেন আমার ক্ষতি হবে এখানে থাকলে রেজাল্ট খারাপ হলে আম্মু খুব কষ্ট পাবেএটা আমি কিছু তেই হতে দিতে পারি না।
রাজর আম্মু বলতে লাগল—” মিষ্টি তোর বই এখানে এনে দেবে রাজ এখানেই পরিস। ডাক্তার তো তোর খারাপ চায়না বল। কি অবস্থা হয়েছিলো জানিস পাচঁ ঘন্টা অজ্ঞান ছিলি রাজের কি অবস্থা হয়েছিলো ছেলেটা পাগলির মতো করেছে। তোর কিছু হলে আমার ছেলেটা বাচবে না তাই নিজের ক্ষতি হয় এমন কিছু করিস না। ”
মিষ্টি রাজর দিকে তাকিয়ে ই বুঝতে পেরেছিলো কিন্তু মামুনির কাছে শুনে আর ও খারাপ লাগছে। এতো ভালো কেন বাসে ওকে এই ছেলেটা। রাজ কিছু বলছে না এক দৃষ্টি তে মিষ্টি কাটা হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
মিষ্টি কি বলবে বুঝতে পারছে না মামুনির উপর কথার বলতে পারবে না তাই চুপ করে আছে ডাক্তার এখানে থাকার কথা কন্ফার্ম করে চলে যাচ্ছি লো হঠাৎ রাজ পেছনে থেকে ডেকে উঠে,,,
— ডাক্তার আপনি রিলিজ করার ব্যবস্থা করেন।
–কি বলছেন?
–হুম ঠিকই বলছি। মিষ্টি কে আমি নিজ দায়িত্ব তে নিয়ে যাবো আপনি শুধু বলে দেন কি করতে হবে ওর কিছু হবে না। কারণে আমি থাকতে ওর কিছু হতেই দেব না বুকে আগলে রাখবো আপনি আমার উপর বিলিভ করতে পারেন।
–এটা করা অন্যায় আপনার নেওয়া উপর উনার কিছু হলে দুষ তো আমাদের হবে না আমি এটা করতে পারবো না।
–যাকে ছাড়া আমার এক মুহূর্তে ও চলে না তার কিছু হতে দেবো আমি আপনি ভাবছেন কি করে? মিষ্টি দায়িত্ব আমি নিচ্ছি ওর কিছু হবে না ওকে রিলিজ করেন প্লিজ।
–এটা শর্ত ছারতে পারি।
0?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
–আপনাকে একটা কাগজে সাইন করতে হবে আপনারা নিয়ে যাওয়া পয কিছু হলে ডাক্তার ফা হসপিটালে কোন দায় থাকবে না। সম্পূর্ণ আপনার।
রাজ শক্ত হয়ে রাজি হো ও থাকতে মিষ্টি কিছু হবে না হতে দিবে না আগে দুবার যা হবার হয়েছে। এবার আর না তাকে ত আমি খুজে বের করবোই।
সাতটার দিকে মিষ্টি কে বাসায় নিয়ে আসা হয়। রাজ সব দায়িত্ব নিজে নিয়েছে সো নিজেই। গোসলের সময় শুধু মামুনি এসেছে এ ছাড়া সব সময় রাজ ছায়া হয়ে পাশে থেকেছে এক সেকেন্ডের জন্য ও যায় নি রাতে মিষ্টি যত সময় পরেছে রাজ বই বের করে সামনে ধরে রেখেছে। মিষ্টি যখন বসে থেকে ক্লান্ত হয়েছে রাজের বুকে এলান দিয়ে পরেছে ঘুমিয়ে ও পরেছে টের।ই পায়নি। রাজ জেগে সে ভাবেই এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিলো। মিষ্টি ঘুমাতেই ওকে খাটে শুইয়ে ফোন নিয়ে মারিয়ার নাম্বার এ কল করে না ফোন সুইচ অফ। মিষ্টির জ্ঞান ফেরার পর থেকে কতো বার যে ফোন দিয়ে ছে তার ঠিকানা নেয় কিন্তু মারিয়া ফোনে ঢুকে না। রাজ এখন ও ফ্রেন্ড দের কল করে ছানতে চায় এদের সাথে মারিয়ার কথা হয়েছে নাকি আজ কে ওরা সবাই এক কথা এই সপ্তাহে ও নাকি মারিয়ার না কল না দেখা মিলেনি ওদের এটা শুনে রাজ হতবাক গেল কোথায় মেয়েটা সবার আড়ারে কি ইচ্ছে করে আছে যাতে কেউ ওকে সন্দেহ না করে। মিষ্টির এসবের জন্য ওই দায়ি আমি সিউর কাল মিষ্টির থেকে জানতে হবে মিষ্টি এক্মাম কালেই শেষ।
মিষ্টি পরিক্ষা বেশি ভালো দিতে পারিনি মন খারাপ ওর কারণ,, হাত বিশ একদিনে তো আর বিষ কমে না। তিথি অনেক সাহায্য করেছে লোজ নিতে কিন্তু তবুও লিখতে তো ওকেই হয়েছে। সব কমন পরেছিলো মিষ্টি র কিন্তু লিখতে কষ্ট হয়েছে কেউ যদি ওকে লিখে দিতো তাহলে ও ভালো করতো এইবার শেষের পরিক্ষা গুলো এমন হলো কে ওই মহিলা কেন এমন করলো।
গাড়িতে বসে আছে মিষ্টি আর পাশে রাজ ড্রাইভ করছে মিষ্টির মনটা খারাপ সব দিতে পারেনি হাত ব্যাথায় লেখা শেষ হওয়া আগেই সময় শেষ। রাজ মিষ্টির ভন ভালো করার কথা ভাবছে হঠাৎ রাস্তায় পাশে ফোসকা দেখেই গাড়ি থামায়। আচমকা গাড়ি থামাতে মিষ্টি রাজের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায়,,
–কি হলো এভাবে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামালেন কেন?
রাজ খুশি হাসি বলল,,
— দেখ ওইদিকে কি?
–কি
বলে মিষ্টি তাকিয়ে দেখে ফোসকা ফোসকা ওর খুব পছন্দের কিন্তু এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।
–চলো খাই।
বলেই রাজ বের হতে যায়।
–আমি খাব না ভালো লাগছে না।
রাজ ব্যর্থ চোখে তাকায় তারপর কি মনে করে যেন বলে। ওকে তাহলে আমি আমার জন্য নিয়ে আসি তুমি বরং বসে থাকো একটু।
–আপনার জন্য মানে আপনি কে ফুসকা খান নাকি।
–না খেতাম না কিন্তু আজ খেতে ইচ্ছে করছে।
মিষ্টি কে আর কিছু বলতে না দিয়ে রাজ ফুসকা আনতে চলে গেল। মিষ্টি যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে হঠাৎ কি হলো আজ রাজ নিজে ফুসকা খাবে বলছে আবার আমাকে ও বলল,
–উমুমম কি মজা মিষ্টি আগে তো খাই নি এক দিন তুমি জোর করে দিচ্ছি লে ওই দিন ও এতোভালো লাগে নি আজ এত ভালো লাগছে কেন বলো তো।
একটা ফুসকা মুখে দিয়ে এমন করছে রাজ মিষ্টি হা করে রাজের খাওয়া দেখছে খাবি খা আমাকে বলে শুনানোর কি আছে।
মিষ্টি না চাইতে ও বারবার চাইছে রাজের দিকে ওর এখন খেতে মন চাইছে। ফুসকা ওর ফেবারেট খাবার রেগে না করেছিল কিন্তু এখন খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু রাজ অসভ্য আর বলছেনা মিষ্টি দুঃখী মুখ করে আছে আর একবার বললেই খেত। রাজ তিনটা খেয়ে নিয়েচে চতুর্থ টা মুখে দিতেই এমন করলো যেন অমরিত খাচ্ছে মিষ্টি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না টান মেরে ফুসকার পিলেট নিয়ে খেতে লাগলো।রাজ জানতো এমন হবে ওই ইচ্ছে করেই খেয়েছে যাতে মিষ্টি খায়। এই জন্য এতো গুন গাইছিল।
— একি মিষ্টি তুমি তো খাবে না বলছিলে। এখন আমার টা খাচ্ছো কেন দাও আমি খাব।
–নো একদম এদিকে আসবেন না আমি না বললাম আর আপনি আমাকে রেখে নিজের জন্য একা নিয়ে চরে এলেন এটা ঠিক না। ফুসকা আমার ফেবারিট সো এটা শুধু আমার রেগে না বলেছি মন খারাপ তাই আপনি সেটা ধরে বসে থাকবেন। আর একবার ও বলবেন না এটা কেমন।
–কেন বলতে যাবো তুমি তো নাই করছো তাহলে আর কেন বলবো?
–না করলে ও বলবেন হাজার বার বলবেন যেটা আমার পছন্দ এভাবে একা খাবেননা। আমার লাগ হয় তখন।
–এতো রাগ তো আমার মিষ্টি জানের ছিলোনা এখন কি করে হলো?
মিষ্টি রেগে তাকিয়ে খাওয়ায় মন দিলো , রাজ হেসে তাকিয়ে রইল ওর খাওয়ার দিকে,
বাসার এসে মিষ্টি দেখলো মিনা মা এসেছে তারা মিষ্টি হাত দেখেই তো অবাক হয়ে রইলো কি হয়েছে জানতে ব্যস্ত হয়ে পরলো সবাই এতো কিছু বললো না। মিষ্টির বলল যে নিজের অসাবধানতার ব্যাথা পেয়েছে ওইসব বললে খুব টেনশন করবে তাই।
মিষ্টি ওর মাকে পেয়ে তো সেই খুশি কতো দিন পর এখছে মাকে। কিন্তু বেশি দিন হয়নি এনগেজন্টেই তো এসেছিল কিন্তু মার কাছে মেয়ে একদিন অনেক আর মেয়ের কাছে ও তাই আর সেখানে তো ভালোই বারো দিন চলে গেছে। মিষ্টি পরে যা শুনল তাতে লজ্জায় রুমে চলে গেল ওর আর রাজের বিয়ের জন্য এসেছে যেটা এক্মামের আগে ছিলো সেটা এক্মামের পর ঠিক হয়েছিলো। কিন্তু সেই বিয়ে যে পরিক্ষার পরদিনই সেটা জানতো না মিষ্টি। মিষ্টি রুমে এসে বসে খাটে একটা মানুষকৈ দুবার বিয়ে করতে হবে। এমনটা কখনো হয়নাকি আমাদের ক্ষেএে হবে হুম হবে। হঠাৎ রাজে রুভে মিষ্টি ভাবে হয়তো রাজ এসব নিয়ে আমার সাথে দুষ্টু ভি করতে এসেছে লজ্জা পাচ্ছি বলে কথা শুনাবে যে আগে তো একবার বিয়ে করেছোই এখন আবার লজ্জা কি আছে? এসব বলবে কিন্তু রাজ এসে গম্ভীর হয়ে আমার সাভনে দাড়ালো আর সেদিনের কথা জিগ্গেস করলো।
–মিষ্টি চোপ করে থেকো না বলো কে তোমার সাথে এসব করেছে কে বলো? কে ছিলো তুমি কি তাকে চেনো কেন তোমার ক্ষতি করতে এসেছিল সে আর কোথায় ই বা গেল সে? তুমি থাকে যেতে দিলে কেন আর ঔই পাশেই কেন খেছিলে।
মিষ্টি চুপ করে আছে এটা মনে পরতেই ভ য় কাজ করছে ওর মাথায় ও ঢুকছে না কে সেই মহিলা আমি তো তার হেল্প করছিলাম কিন্তু সে কেন আমার ক্ষতি করতে চাইলো কেন? নিজেঈ ভাবনায় ঢুকে গেছে হঠাৎ রাজের কাধ ঝাকানিতে রাজের দিকে তাকায় রাজ রাগে লাল হয়ে আছে।
–কি হলো কি ভাবছো বলো?
–আমি তাকে চিনি না রাজ সে কেন আমার ক্ষতি করতে চাইলো জানি না। আমি তো তার হেল্প করছিলাম কিন্তু সে যে এমন কিছু করবে ভাবিনি।
মিষ্টি রাজকে ফাস্ট থেকে লাস্ট সব বলে। রাজ শুনে নিজেও ভাবতে থাকে অপরিচিত কেউ এমন কেন করলো সে কি সিনতাই কারি তাহলে মিষ্টি কাছে একে কিছু না নিয়ে মেরে দিয়ে পালালো কেন?
–তোমার কি গাড়ির নাম্বার মনে আছে?
মিষ্টি গাড়ির নাম্বার শুনেই মনে করার টাই করে হালকা দেখেছিল কিন্তু আপসা আপসা,,
–আপসা আপসা মনে আছে ক্লিয়ার না।
–একটু মনে করার টাই করো মিষ্টি কে কেন এমন করলো আমাকে জানতেই হবে।
মিষ্টি রাজকে এই ভাবে রাগতে দেখে বলে বলতে চায় না। কিন্তু রাজের জরাজরিয়ে ভাবতে থাকে ও। অনেকক্ষণ পর মনে আসে এবং বলে। রাজ ততক্ষণাক বেরিয়ে যায় রুমে থেকে।
মিষ্টি ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছে যাওয়ার দিকে রাগ প্রচণ্ড রেগে আছে। রাজ ওর এক ফ্রেন্ড কে ফোন করে খুজতে থাকে সেই গাড়ির মালিককে।
সাতটার দিকে মিষ্টি রুমে বসে আছে রাজ সেই যে বেরিয়েছে আর আসে নি বাসা কোথায় আছে কী করছে কে জানে। ফোন দিলে ও ধরে না কেটে দেয় এখন অফ বলছে একটু আগে আম্মু এসে আমাকে খাইয়ে দিয়ে গেছে।
–আপু আপু নিচে চলো তারাতারি।
–কেন কি হয়েছে?[ মিষ্টি ভয় পেয়ে জিগ্যেস করে]
–কি হবে কিছু না। চলো শাড়ি গহনা আসছে নিচে আন্কেল বাড়িতে আসতে বলেছে তোমার এই অবস্থায় আর বাইরে যেতে হবে না। কাল তো তোর গায়ে হলুদ আমি সুন্দর একটা ড্রেস নিয়েছি সবাই নিয়েছে তোমার জন্য সবাই মিলে কিছু পছন্দ করেছে। কিন্তু তোমাকে না দেখিয়ে ত রাখতে পারে না তাই চল দেখবি পছন্দ হয় কি না।
–রাজ বাসা এসেছে।
–না তো ভাইয়াকে বাসায় দেখিনি তো।
–আমার ভালো লাগছে না তুই যা।
–তোমার দেখতে হবে তো চলো একটু দেখেই চলে আসবে।
–মামুনি আর মা যা পছন্দ করেছে আমার তাই পছন্দ আলাদা করে আর দেখার দরকার নেই।
–তবুও তোমার বিয়ে তুমি দেখবে না পরে আবার বলবে আমার পছন্দ হয়নি কেন নিছে দেখলাম না। আপসস করবে তখন কিন্তু…..
–ওফফফ মিনা যাবি আমার মাথা ব্যাথা করছে।
মিনা আর কিছু বলে না মিষ্টি হাসির বা জোকসের মুডে নেই কিছু হয়েছে নিশ্চয়ই।
মিষ্টি কিছু খেলো ও না রাতে রাজ কোথায় গেছে ক জানে সবাই চিন্তিত এগারো টা বাজে এখন ওবাসায় আসে নি রাজ। দুষ্চিন্তা করতে করতে মিষ্টি ঘুভিয়ে পরেছে। শরীর টা এমনি দূর্বল হঠাৎ কারো উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে চোখ মেলে তাকায় আর দেখে রাজ আমার সামনে বসে আছে আর একটু পর পর হাতে চুমু দিচ্ছে আমাকে তাকাতে দেখেই ধরে উঠে বসায়। আমি সাথে সাথে প্রশ্ন ছুরি,
–কোথায় ছিলেন আপনি কতো বার কল করেছি দেখেছেন ধরেনি কেন চিন্তায় ফেলতে খুব ভালো লাগে তাইনা।
রাজ কিছু বলছে না শান্ত দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ খাবার ধরে মুখের সামনে আমি কি জিগ্গেস করি আর উনি কি করছেন?
–হা করো;
–আমি আপনাকে কিছু জিগ্গেস করেছি তার উওর না দিয়ে এসব কি? খাবার এনেছেন কেন?
–খাবে তাই। আর আমি চাইনা আর বউ কালকে অসুস্থ থাকুক একটু সময় বাইরে ছিলাম এতেই তোমার আমার জানটাকে কষ্ট দিচ্ছো।
–ঠিক করেছি। সরান এগুলো আমি খাবো না।
–ওকে আমি ও খাবো না আমার কিন্তু অনেক খিদে পেয়েছে অনেক ক্ষণ ধরে খাইনা সেই যে সকালে খেয়েছি আর খাইনি তোমার যদি আমাকে না খাইয়ি রাখতে ভালো লাগে তাহলে তাই হোক।
বলেই রাজ হাতের ভাত রেখে চলে যেতে নেয় পিলেট নিয়ে। মিষ্টি রাজ খায়নি শুনে আর জেদ ধরে রাখতে পারে না ও না খেলে ও রাগ দেখাতে পারবে কিন্তু রাজ নিজের কষ্ট দেখালে মিষ্টি আর রাগ রাখতে পারে না তাইই হলো মিষ্টি বলে উঠলো,
–আমি খাবো।
রাজ জানতো এমন কিছু হবে? শত বললে ও মিষ্টি কে রাজি করানো যাবে না তাই এই পদ্ধতি।
রাজ মিষ্টি কে খাইয়ে দিলো সাথে নিজেও খেল। প্রচণ্ড টায়ার্ড রাজ তাই আর কিছু না বলে লাইট অফ করে মিষ্টির পাশেই শুয়ে পরে। মিষ্টি এখন ও জেগে আছে কি হলো সব মাথায় উপর দিয়ে গেল ওর রাজ ওকে পাওআ না দিয়ে ঘুমিয়ে গেল। বারান্দায় দিয়ে হালকা আলো আসছে থাতে রাজের মুখ স্পশ্ট দেখা যাচ্ছে রাজ ঘুমিয়ে গেছে মিষ্টি কে জরিয়ে ও ধরে নি আজ। মিষ্টির ঘুম আসছে না রাজ কি করছে কে জানে কোথায় গিয়েছিল কে জানে কিছু ই তো বলল না ওকে। মিষ্টি ঘুম আসছে না রাজের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ঘুমের মাঝেও লোকটা কে কি অসাধারন লাগে তাকিয়ে থাকলে শুধু তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে হয়। রাজে চুল এলো মেলো হয়ে কপালে আসছে। সামনের চুল গুলো বড় বড় করে রাখা তাই কপালে পরে মিষ্টির খুব ইচ্ছে হলো চুল গুলো সরিয়ে দিতে। ইচ্ছে নিয়ে বসে থাকতে পারলো না হাত বারিয়ে চুল সরিয়ে দিলো সাথে সাথে রাজ ভ্র কুচকালো ঘুমের মধ্যে মিষ্টি ধরা খাওয়ার ভয়ে রাজের বুকে নিজে থেকেই মাথা রেখে এক হাতে জরিয়ে ধরে।
দশটার দিকে জাগানা পায় মিষ্টি চোখ খুলে নিজেকে একা পায় বেডে। পাশে রাজ নেয় কখন উঠে গেছে ও তো টেরই পায় নি। এমন কেন কি চলছে রাজের মনে কখন উঠে গেছে আমাকে ডাকে ও নি কাল রাতে ও কথা বলে নি। ঘড়ির দিকে চোখ পরতেই মিষ্টি চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হয় দশটা বাজে। এতো বেলা হয়ে গেছে অথচ ওকে কেউ ডাকে কেন? আর এতো চিৎকার চেচামেচি হচ্ছে বাইরে এতো মানুষ কোথায় থেকে এলো। মানুষের গমগম শুনে মিষ্টি তারাতারি উঠে বসে দরজায় কাছে এসেই আরেক দফা শক খায় পুরো বাসা ফুল ক্রান্ডেলা দিয়ে সাজানো। কিছু লোক এখন ও সাজাচ্ছে সাজানো শেষই কিছু জায়গা দেখে ঠিক আছে কিনা দেখছে। রাজকেও দেখলাম নীল শার্ট, কালো ফেন্ট পরে আছে আর কানে ফোন কারো সাথে কথা বলছে কিছু নিয়ে খুব সিরিয়াস ভাবে আর একটা লোককে হলুদের স্টেজে কিছু দেখিয়ে দিচ্ছে। দুটো কাজ সাথে করছে বারান্দায় থেকে বাগান দেখে আমি শিহরিত এত সুন্দর হয়েছে যে চোখ ফিরানো যাচ্ছে না। ফোন টা রেখে পকেটে রেখেই হঠাৎ আমার দিকে চোখ পরেমতে রাজের সাথে সাথে আমাকে ভেতরে যেতে বলে আমি বুঝতে পারছি না এসব বলছে কে আমাকে কি আজ বন্ধি করে রাখবে নাকি। রেগে তাই কি জন্য বলছি এবার রাজ রেগে বলে উঠে যাও আমি তারাতারি ভেতরে চলে আসি রাজের রাগী ফেস আমি এখন ও ভয় পায়।
আয়নার সামনে দাড়িয়ে রাজকে বকে যাচ্ছি অসভ্য লোক একটা আমাকে সকাল সকাল বকলো কথায় বলবো না আজ হূহ। বলেই মিষ্টি ফ্রেশ হয়ে চুল ঠিক করে বেধে সব ঠিক করে নিচে নেমে এলো নিচে আসতে মামুনি আমাকে খেতে বসালো। নিজে হাতে খেতে আনছে আমার আম্মুকে দেখছি না মিনা কে ও না মামুনি কে জিগ্গেস করলাম মামুনি বলল আম্মু নাকি রান্না ঘরে রান্না করছে। আর মিনা বাগানে কই আমি তো বারান্দায় থেকে মিনা কে দেখলাম না।মামুনির হাতে থেকে এক লোকমা মুখে দিতেই আন্কেল এসে সোফায় বসলো কাজ করে হাপিয়ে উঠে। উনি কিন্তু কাজ করে নি কাজের লোকই তো আছে সে শুধু পেছনে পেছনে ঘুরেছে খুব সচেতন মানুষ উনি নিজের জিনিসে একটু ও ভুল পছন্দ করে না। তাই এমন হাল উনার উনি মনে করে নিজে না থাকলে কিছু না কিছু ভুল হবে যা তার জন্য উচিত না। আমি মামুনির হাতে খাচ্ছি হঠাৎ রাজ খেয়েছে কিনা মনে পরে মামুনি কে জিগ্যেস করতে ও পারছি না। যতই হোক শাশুড়ি বলে কথা আবার শশুর ও এসেছে চুপ করে খাচ্ছি জিগ্গেস আর করতে পারলাম না।
হঠাৎ কারো চিৎকার কানে এলো আমি খাওয়া অফ করে সেদিকে তাকিয়ে আছি।
–ভাই তুমি এটা কি করলে আমার মেয়ের সাথে রাজের বিয়ের কথা ছিলো তুমি সেটা ভুলে এই এতিম মাইয়াটারে রাজের গারে তুলে দিচ্ছো।
— হেনা তুই কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস। বাসা ভরা মানুষের মধ্যে কি শুরু করলি আর কি বললি কথা ছিলো মানে। আমি কবে বলেছি তোর মেয়ের সাথে রাজের বিয়ে দেব।
–বলো নি কিন্তু আমি এটা ভেবেছিলাম আর তোমাকে অনেক বার বলেও ছি। তুমি সে সব ভুলে নিজের বোনের মেয়ে না এনে এই ছোট লোক ঘরের মেয়েকে আনলে। তোমার রুচি এতো বাজে এই বিয়ে ভেঙে দাও এখন ও বিয়েটা হয়ে যায় নি ভালো চাও এই ছোটঘরের মেয়েকে আমার রাজের গাড়ে দিয় না। আমার মেয়ে রাজের জন্য পারফেক্ট ওর সাথে বিয়ে দেব রাজের।
–হেনা আমি কিন্তু তোকে চুপ থাকতি বলছি তুই যদি এসব করিস আমি কিন্তু তোকে বাসা থেকে বের করে দেব। আমার বাসার এসে আমার ছেলের ব উ এর নামে আর একটা খারাপ কথা বললে তুই যে আমার বোন সেটা আমি ভুলে যাবো।
–এই মেয়ের জন্য তুমি আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলল,,[ ন্যাকা কান্না করে] আচ্ছা তোমাকে বের করতে হবে না। যেখানে আমার কোনো দাম নেই সেখানে আমি নিজেই থাকবো না। চল হাফসা আর এক মুহূর্তে ও না এই বাসার।
বলেই মেয়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগে কিন্তু যেতি পারেনা মেয়েটা মাকে ছাড়িয়ে বলে উঠে।
–ছারো আমার হাত আমি যাবো না।
হঠাৎ মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে উনি থমকে দাড়ায়।
–যাবি না মানে।
–যাবো না মানে যাবো না। বিয়ে না খেয়ে যাবো না রাজ ভাইয়ার বিয়ের জন্য এসেছি তা শেষ না করে যাবো কেন?
–ওরা আমাদের অপমান করলো দেখলি না তাও তুই এই বিয়েতে থাকতে চাইছিস।
–তোমার ব্যবহারে এমন কথা ঠিকই ছিলো অপমান না। তোমার মেয়ের কি আর বিয়ে দিতে পারবে না আম্মু যে এভাবে তারিয়ে দিতে উঠে পরে লেগেছো।
–কী বলছিস মা তুই?
–ঠিকই তো বলছি আমি কি তোমার কাছে বুজা হয়ে গেছি মা যে এভাবে অপমান করলে। আর একবার নিজের মেয়ের কথা ভাবলে না তোমার কি আছে বলো তো তোমার মেয়ে আর ওই মেয়ের দিকে তাকাও। তোমার মেয়েকে যদি কেউ এভাবে বলতো তোমার কেমন লাগতো বলতো। নিজের মেয়ের কথা ভাবলে না। আরেক মেয়েকে ছোট লোক ইত্যাদি খারাপ কথা বলছো কেন মা।
এবার তার টনক নরলো মেয়েটা সত্যি খুব সুন্দর এমন মেয়েকি যে কেউ ঘরের বউ করতে চাইবে। আর তার ও কিছু ছিলো না ভাই না সাহায্যে করলে আজ সে এদের মতো ই অবস্থা থাকতো। মেয়ের কথা শুনে হেনা বুকে কষ্টের পাহাড় জমা হলো মেয়েকে সে কষ্ট দিয়েছে খুব কষ্ট দিয়েছে। তার একটাই মেয়ে মেয়েটাকে সে খুব ভালোবাসে মেয়েটা একেবারে সহজ সরল যখন যা বলে তাই করে। এক কথায় বাধ্য মেয়ে যাকে বলে মায়ের উপরে কখনো কথা বলে নি সেই মেয়ে তার মুখের উপর কথা বলছে এটা শুনেই তার বুক ফেটে যাচ্ছে। এভাবে বিয়ে নিয়ে ঝগড়া করাটা তার অপরাধ হয়েছে গোর অপরাধ মেয়েকে সস্তা বানিয়ে ছে। ভেবে অপরাধী চোখে মেয়ে ও ভাইয়ের দিকে তাকায় ভাইয়ের সাথে সে খারাপ আচরন করেছে বুঝেছে ছোট রা বড় দের সাথে এভাবে কথা বলা উচিত না ব ড় ভাই আঘাত করা উচিত না। উনি ভাইয়ের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইলো।
মিষ্টি সব কিছু দেখছিল মহিলটির কথা শুনে খারাপ লাগলে ও মেয়েটির কাথা ভালো লেগেছে অনেক খারাপ লাগাটা চলে গেছে।
মামুনির থেকে জানতে পারলাম এটা রাজে ফুফি। খাওয়া শেষ করে উপর যাচ্ছে হঠাৎ মেয়েকে আমার পাশে এসে হাটতে লাগলো পা মিলিয়ে আর কথা ও বলছে। নাম হাফসা মাস্টাস করছে। একাই আর ভাই বোন নাই। তার মার হয়ে আমার থেকে ক্ষমা চাইলো। অনেক গল্প করলো আমার সাথে রুমে বসে মেয়েটা সত্যি ভালো খুব মিসুক। হাসফা যেতেই রাজের আগমন এসেই আমাকে অর্ডার করতে লাগলো,
— যাও তো বউ বর এর জন্য খাবার নিয়ে আসো।
মিষ্টি কিছু বলল না আগের মতোই বসে রইলো।
–কি হলো আমি কিছু বলছি কিছু বরের কথা শুনতে হয়। আর ওই দিকে ঘুরে আছো কেন এদিকে ফিরো।
মিষ্টি ফিরলো না কাল থেকে তার সাথে খারাপ বিহেভ করছে এখন অর্ডার করছে। তোর অর্ডার শুনবো না হূহ।
রাজ মিষ্টি দিকে তাকিয়ে আছে মিষ্টি পিঠ দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে আছে কিছু বলছে না। রাজ বুজলো মেডাম রাগ করেছে তাই নিজেই মিষ্টির কাছে গিয়ে কাধ ধরে নিজের দিকে ফেরায়।
–কি হয়েছে কথা বলছো না কেন? মুখটা এমন পেচার মতো করে রেখেছো কেন? বলো;
মিষ্টি তাকারো না রাজের দিকে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
–সকালের জন্য না রাতর জন্য রাগ হয়েছে বলো।তাও কথা অফ রেখো না জান আমি পাগল হয়ে যাবো তাহলে।
মিষ্টি তবুও কিছু বলল না,,
–কি হলো বলো আমার কিন্তু…
এবার মিষ্টি বলল,,
–দুই কারণেই সকালে ওমন করলেন কেন? আর রাতে কিছু বললেন না কেন?
–এই জন্য এতো রাগ বাপরে। আজ না আমাদের গায়ে হলুদ এখন রাতের কথা বলে টেনশনে ফেলতে ও পরতে চাইনা গায়ে হলুদ এর পর আমি নিজেই তোমাকে সব বলবো। আর সকালে সেটা তো মারাত্মক ব্যাপার জান কতোটা রেগে ছিলাম জানো আচমকা তোমার ই লুক দেখে ত আমি শিহরিত এলোমেলো চুল ঘুমঘুম ভাব ওই ভাবে কেউ বাইরর মানুষের সামনে যাই বলো। আমি বাদে যদি অন্য কেউ দেখে নিতো তখন কি হতো সবাই তো এই সুন্দর জিনিসটা দেখে ফেলতো কিন্তু আমার জিনিস অন্যরা কেন দেখবে বলো।তাই ত সরে যেতে বলেছি।
মিষ্টি হা হয়ে তাকিয়ে আছে। রাজ ওর হা মুখ বন্ধ করে খাবার আনতে বলে।
বিকেলে পার্লার থেকে লোক আসে মিষ্টি কে সাজাতে। মিষ্টি বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে এতো মেকাপ বের করছে তা দেখেই মিষ্টি আগ বলে নেয় সে এতো মেকাপ দিবে না একাই সাজবে। মেয়েগুলো বলেতাদের সাজাতে দিতে না হলে তারা টাকা পাবে না এটা তাদের কাজ তাদের যেন করতে দেয় মিষ্টি বুজতে পারে আসলেই এরা তো টাকা জন্য ই কাজ করছে ও করলে ওদের তো অপকার হবে। মিষ্টি রাজি হয় কিছু বলে হালকা কলে সাজাতে হবে বেশি গরজিয়াস যেন না সাজায় তারা তাতেই রাজি হয়।
মিষ্টি কি অপূর্ব লাগছে গায়ে জরিয়ে আছে হলুদের মাঝে সবুজ পের আলা কাতান শাড়ি। সবুজ ব্লিউজ 3 কুয়াটার, হাত ভর্তি সবুজ আর হলুদ মিক্ম করা চুড়ি। মুখে হালকা সাজ, ঠোটে গোলাপি লিপস্টিক, চোখে মোটা কাজল। চুল গুলো পাম করে ফুলিয়ে মাথায় টিকলি, মাজায় বিছা ফুলের গলায় ফুল দিয়ে মালা।
মিষ্টি কে সাজিয়ে দিয়ে গেছে একটু আগে এখন মিষ্টি আয়নার নিজেকে দেখছে হঠাৎ দরজায় দিকে চোখ পরতেই চোখ আটকে যায় রাজ ওর সাথে ম্যাচিং করা পান্জাবি পলেছে ফর্সা গায়ে হলুদ রং টা দারুণ মানিয়েছে। মিষ্টি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাজের দিকে রাজের ও সেম অবস্থা। চোখে চোখে কথা হচ্ছে তাদের কিন্তু বেশিক্ষণ কথা গুলো চললো না করো শব্দে তাকিয়ে দেখে মিনা দাড়িয়ে আছে ওদের মাঝে।
–ভাইয়া আপনি এখানে কি করছেন? যান নিচে যান সবাই আপনাকে খুজছে আর আমি আপুকে নিয়ে আসছি যান। কি হলো যাচ্ছে না কেন? এখন বউ এর সাথে প্রেম করতে এসেছেন তাই না যান যান প্রেম করা হচ্ছে না।
— আমার বউকে আমি ই নিয়ে যাবো মিনা তুমি নিচে যাও আমরা আসছি।
–কি আপনি নিয়ে আসবেন?
–হুম।
–কি প্রেম? আপু তোর কি কপাল রে এক জনকে দুই বার বিয়ে করছিস আর আমি?
–বাহহ আমার শালিকা দেখা যায় বিয়ের জন্য পাগল প্রায়। তোমার ও কেউ আছে নাকি আবার একা একাই বিয়ে কলে নাও নাই তো।
–ভাইয়া আপনি আমার কাটা গায়ে নুনের সিটা দিচ্ছে ঠিক হচ্ছে না কিন্তু। আজ একটা বয়ফ্রেন্ড নাই বলে কিছু করলাম না থাকলে আমি ও বিয়ে করে নিতাম পড়ালেখা তো একদম করতে মন চায় না আমার সেটা তো আপুর জিনিস আমার জন্য বিরক্তি কর। একটা হান্ডসাম ছেলে পায় তাকে নিয়ে প্রথম দিন আগে কাজি অফিসে যাবো।
–রাজ হা হয়ে আছে মেয়ে না হিটলার।
মিনা নিচে চলে যায়।
রাজ মিষ্টির দিকে এক পা একপা করে এগিয়ে যায়। একদম কাছ ঘেষে কোমর জরিয়ে কাছে টেনে নেয়। একদৃষ্টি তে মিষ্টি দিকে তাকিয়ে আছে ঘর লেগে যাচ্ছে রাজের রাজ নিজের চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে। মিষ্টি দিকে তাকিয়ে বলে,
— আজ আমাকে মারার পিলাণ করছো নাকি।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মিষ্টি ভ্রু কুচকে তাকায় রাজের দিকে,
–আবার এভাবে তাকাও কেন? ঠিকই তো বলেছি এভাবে তাকিয়ু না আমার এইখানে লাগে।
বলেই বুকে হাত রাখে।
–চলো নিচে যাই সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
বলেই মিষ্টির হাত ধরে নিচে নামে বাসার কেউ নেই সবাই বাগানে আছে। রাজ আর মিষ্টি একসাথে বাগানে আসতেই সবাই হা তাকিয়ে আছে। দুজন কে এতো সুন্দর মানিয়ে ছে যে সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। সবাই প্রশংসা ও করছে।
দুজনের পাশাপাশি বসার ব্যবস্থা হয়েছে। রাজ মিষ্টি কে নিয়ে বসে পরে। সবাই একে একে দুজনের গায়ে হলুদ ছুয়ে দেয়। মাঝে মাঝে মিষ্টি রাজের দিকে আড়ালে দৃষ্টি দেয়। মিষ্টি সবার আড়ালে একটু পর পর রাজের দিকে তাকায়। হঠাৎ একবার তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায় মিষ্টি লজ্জায় চোখ সরিয়ে নেয়। রাজ তা দেখে বাকাঁ হাসে রাজ আগে বুঝেছিলো মিষ্টি তাকাচ্ছে নিজেও তাকিয়ে ছে মিষ্টি কে অন্য রকম লাগছে না তাকিয়ে থাকতে পারলে সে।
রাত দশটায় মিষ্টি রুমে আসতে পারে। তিথি সে তো মিষ্টি পাশেই আছে আর ওদের কাণ্ড দেহয়ে খছে আর একটু পর পর এখকবার রাজের কানে কিছু বলে লজ্জা দিচ্ছে কিন্তু রাজতো লজ্জা পাচ্ছেই না উল্টো ওকে লজ্জা দিচ্ছে তাই আর সেই দিকে গেল না মিষ্টি কে লজ্জা দিতে লাগলো। তিথি আর মাসুদ এসেছিলো মাসুদের জন্য তিথি থাকতে পারলো না বলল কাল সকালে চলে আসবো কিন্তু আজ থাকা যাবে না।
ক্লান্ত সে প্রচুর সবার মাঝে থেকে নানা কিছু করতে হয়েছে সারা শরীর হলুদ মাখা মাখি ওয়াশ রুমে যাবে হঠাৎ কেউ হাত টেনে ধরে পেছনে তাকিয়ে দেখে রাজ দাড়িয়ে আছে। –কি চাই?
–তোমাকে;
–মানে,, [ভ্রু কুচকে ]
রাজ কিছু না বলেই মিষ্টি কে কোমর জরিয়ে কাছে টেনে গালের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিষ্টি ছুটাছুটি করছে এখন ফ্রেশ হবে ও এসব পরে থাকতে খারাপ লাগছে তাই ফ্রেশ তে যাচ্ছিলো রাজ আবার এমন করছে কেন?
— এভাবে ধরে রেখেছেন কেন ছারুন তো আমার গরম লাগছে। এসব পরে ধুম বন্ধ হয়ে আসছে।
–একদিন ই তো একটু সহ্য করো না জান। প্রতিদিন তো আর বিয়ে করবো না তাই না।
–প্রতিদিন না করলেও বিয়ে কিন্তু দ্বিতীয় বার এটা।
–বিয়ে দুইবার ঠিক আছে কিন্তু হলুদ তো আগের বার হয় নি সো এটা একবারই। আমার বউকে সবাই হলুদ দিলো আমি দিবো না তা কি হয় বলো এটা কেমন দেখা যাবে বলো তো।
–মানে কি সব বলছেন? আপনি কেন হলুদ দিবেন জীবন শুনেছেন কোন বর তার বউকে হলোদ দিয়ে ছে।
–সবাই না দিক আমি দিব সবাই আর রাজ মিষ্টি কি এক নাকি। সবাই কি দুইবার বিয়ে করেছে করে নি আমরা তো করছি। সো সবার টা বাদ দাও।
— আচ্ছা দেন। কিন্তু আপনার হলুদ কই।
–এইযে।
–কই হাতে তো দেখছি না।
রাজ মিষ্টি গালে নিজের গাল ঘষে দিলো মিষ্টি তো বরফ হয়ে গেছে ভেবেছে হাত দিয়ে দিবে কিন্তু এই ছেলে করছে কি। ব্যাথা ও পেল সাথেই চিৎকার দিলো।
–কিহ হয়েছে?
–ব্যাথা পাচ্ছি দাড়িতে ওফ গাল ছুলে গেল সরুন তো আর দিতে হবে না। বলেই হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে যেতে নেয়। রাজ আবার হাত ধরে নেই।
–আবার কি হলো?
— কিছু না যাও।
মিষ্টি চলে যায় রাজকে চিন্তিত তো লাগছে খুব। কিছু কি ভাবছে হুট করে পাল্টে যাচ্ছে কেন মাথায় আসছে না।
মিষ্টি গোসল করে এসে শুয়ে পরে খাটে। রাজের জন্য দরজা চাপিয়ে রাখে যাতে রাজে আসতেপারে। চোখ মেলে এপাশ ওপাশ করছে মিষ্টি রাজ আসা।
এভাবে কখন ঘুমিয়ে পরেছে কা জানে?
এদিকে মারিয়া প্লান মাফিক মিষ্টি রুমে ঢুকে আসে বারান্দায় সেই লোকটি দাড়িয়ে আছে। যাকে দিয়ে মারতে চেয়েছিলো এভাবে মারিয়া নিজের হাতে করতে চায়। রাগে ফুসতে ফুসতে মারিয়া মিষ্টি রুমে ঢুকে। দেখে মিষ্টি মিষ্টি ঘুমিয়ে আছে হাতে তার ফোন মারিয়া হেসে সেদিকে এগিয়ে যায়। আর মনে মনে বলতে থাকে আজ তোকে কেউ বাচতে পারবে না কেউ না। কই মাছের জান তোর এতো বার মারার টাই করলাম কিন্তু তোর কিছু হলো না। তাই এভাবে আমি নিজেই চলে এসেছি নিজে হাতে তোকে মারবো। বিয়ে করার শখ না তোর আমার রাজকে। সেটা তো কখনো হবে না আমি মারিয়া বেচেঁ থাকতে তুই কখনো রাজের কিছু হতে পারবি না। আহারে বেচারি কতো সপ্ন নিয়ে ঘুমিয়েছ কাল রাজকে বিয়ে করবে কিন্তু ও তো নিজের ও জানে না এখন ওর সাথে আমি কি কি করবো কাল তো ওর এই ঘুম আর ভাঙবেই না। ভাবতে ভাবতেই মারিয়া মিষ্টি পাশে গিয়ে বসলো মিষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কি আছে এই মেয়ের মধ্যে যে রাজ আমাকে রেখে এই মেয়েকে ভালোবাসলো কি আছে? এই মেয়ে মারিয়ার নখের যোগ্য এ না একে ভালোবাসা রাজ তোমাকে পস্তাতে হবে একে ভালোবেসে।
শুধুমাত্র তোমার জন্য এই মেয়েকে যে মরতেই হবে। এই মেয়েকে মরতেই হবে আর তা শুধু আমার হাতে বলেই মিষ্টি দাড়িয়ে পরে রিভলবার বের করে হাতে নেয় ওর হাত কাপছে এমন কিছু নিজের হিতে কখনো করতে চায় নি কিন্তু ভালোবাসার জন্য করতেই হবে। রাজকে পেতে হলে একে মরতেই হবে না হলে রাজ কখনো আমার হবে না। আর সেটা আমি মেনে নিতে পারি না আমাকে অবজ্ঞা করে এই মেয়েকে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে আমি কিছু তেই দেবো না।
রিভলবার যেই মিষ্টি কপালে ঠেকাতে যাবে কেউ ঝরের গতীতে এসে টান মেরে ওটা নিয়ে নেয় সাথে মারিয়া হাত মুচরে ধরে মারিয়া হঠাৎ এমন ঘটনায় ভয় পেয়ে পিছিয়ে যেতে চায় কিন্তু পারে না ওকে টেনে ধরে হাত এতো শক্ত করে ধরেছে যে ও ব্যাথায় চিৎকার করে উঠে। আর সামনের লোকটাকে দেখেই ওর আত্মা কেপেঁ উঠে। রাজ এখানে এই সময় কি করছে আর রফিকটা কই ওকে তো দরজায় কাছে খেয়াল রাখতে বলেছিলাম যাতে কেউ না আসতে পারে। রাজের পেছনে বন্দুক হাতে দাড়িয়ে আছে রফিক। কিন্তু বন্দুক তাক করা না নিচে নামানো হাত মারিয়া কিছু বুঝতে পারছে না। লোকটাক কেমন সন্দেহ লাগছে ওর কাছে এখন। হঠাৎ গালে চর পরায় মারিয়া রাজের দিকে তাকায় কিন্তু তাকিয়ে থাকতে পারে না মারিয়া চরটা খেয়ে একটা ধাক্কা খায় যায় জন্য ফ্লোরে পরে চিৎকার করে উঠে। সাথে সাথে মিষ্টি জাগানা পেয়ে যায় চোখ মেলে তাকাতেই মারিয়া, রাজ ও একজন অপরিচিত লোক দেখে। মারিয়া নিচে বসে কাতরাচ্ছে কপাল কেটে গেছে কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না ও ধরফরিয়ে উঠে বসে।
রাজ মারিয়াকে টেনে উঠে দাড় করায়। তারপর গলা চেপে ধরে দেয়ালে ঠেষে ধরে।
–রাজ ছার আমি ব্যাথা পাচ্ছি।
–তাই নাকি তুই ব্যাথা পাচ্ছিস বুঝি। আর আমি তো তোকি ব্যাথা দেওয়ার জন্যই এইসব করছি ছাররে না। তোর থেকে হাজার গুন বেশি ব্যাথা আমার জান পেয়েছে তার জন্য শুধু আমি দায়ি সেদিন তোকে ছেড়ে দিয়ে আমি সেই ভুল করেছি।
–রাজ আমার দুম বন্ধ হয়ে আসছে ছার হাতটা সরা।
রাজের সেদিকে হেল দুল নেই।
–তোর জন্য আমার বুক ধুক করে উঠেছে। ঘুমাতে পারিনি আমার জানে হাত দিয়েছিস তুই তোকে আমি সেদিন বলেছিলাম মিষ্টি আশেপাশে যেন তোকে না দেখি কিন্তু তুই তো ভালো খেলোয়াড় হয়ে গেছিস। বাপরে তোক ধরতে আমার এতো কষ্ট করতে হয়েছে ভাব যায়। তোর জন্য আমি রাতের ঘুম হারাম করে বিয়ের আনন্দ বির্সজন দিয়ে তোকে খুজতে হয়েছে। আর তোর বুদ্ধির তারিফ করতেই হয়। কি বুদ্ধি তোকে যখন আমার সন্দেহ হলো। কিন্তু কি সন্দেহ টা নিমিষেই বাদ ও হয়ে গেছিলো কেন বলতো। ওয়েট বলছি, তোর বাসায় গেলাম তোর বাবা কি বলল জানিস তুই দেশে নেই এক সপ্তাহ আগে বিদেশে চলে গেছিস এটা শোনা মাএ আমি হতবাক। তুই বিদেশ চলে গেলি তাহলে তো তুই এষব করিস নি করলো কে? কতো বুদ্ধি তোর বিশেদ যাওয়ার মিথ্যে কথা বলে আমার চোখের আড়ালে থাকতে চেয়েছিলি আমার জানকে মারতে। কিন্তু রাজ বেচে থাকতে তা তো তুই পারবি না। ফ্রেন্ড ভাবতাম খুব ভালো ফ্রেন্ড। কিন্তু তুই এই ফ্রেন্ড শীপ ভেঙে শএু বানিয়ে দিলি।
গলা চেপে ধরেই কথা বলছে রাজ। এদিকে মারিয়া ধম বন্ধ হয়ে আসছে রাজের হাত সরাতে পারছে না মিষ্টি সব শুনছিল এখন মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে ওর অবস্থা,
–রাজ হাত সরান।
— মিষ্টি সরে যাও আমি হাত কিছু তেই সরাবো না ওকে তো আগ আমি নিজে হাতে খুন করবো। ওর সাহস কি করে হলো তোমার গায়ে হাত দেওয়ার। তোমার হাত ওই কেটেছিল ওর জন্য তোমার কতো কষ্ট হয়েছে ওকে তো।
বলেই রাজ গলার চাপটা জোরে দেয় মিষ্টি নিজে টেনে সরাতে পারে না রাজকে কে এতো বডি আলা লোকে কে কি আমি সরাথে পারবো নাকি হঠাৎ লোকটার দিকে নজর যায় আর বলে তাকে সাহায্য করতে লোকটা টেনে রাজকে সরিয়ে আনে।
মারিয়া একটুর জন্য জান যাওয়া থেকে বেচে ছে গলায় হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। রাজ আবার আসার জন্য হাসফাস করছে মিষ্টি রাজের সামনে গিয়ে ওকে শান্ত করযে চাইছে।
–প্লিজ নিজেকে শান্ত করেনে এভাবে নিজে নিজের ক্ষতি করবেন না প্লিজ। ও আমাদের ক্ষতি করতে চেষ্টা করেছে জানি ওকে নিজে মেরে পুলিশের চোখে অপরাধী হাতে চান। ওকে পুলিশের হাতে তুলে দিন।
রাজ এবার হালকা রাগ কম এলো হয়তো মিষ্টির কথা ভালো লেগেছে। কিন্তু মারিয়া সাথে সাথে চিৎকার করে উঠে,
–আমাকে পুলিশের হাতে দিবি রাজ তুই আমার বাবার নাম ভুলে জাসনি হয়তো। আমাকে জেলে নেবার সাহস কারো নেই। আমি তো এই মেয়েকে মেরেই ছারবো।
বলেই মারিয়া মিষ্টির গলায় চেপে ধরে। রাজ মারিয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে মিষ্টি কে বুকে চেপে ধরে মিষ্টি ও ভ য় পেয়ে গেছে। মারিয়া ছিটকে কারো উপর পরে তাকিয়ে দেখে ওর পাপ্পা দেখেই ওর মুখে হাসি ফুটে উঠে এবার আর কেউ ওর কিছু করতে পারবে না। ওর বাবা ওর বিরুদ্ধে কিছু করে না শত খারাপ কাজেও পাশে থাকে।
–পাপ্পা তুমি চলে এসেছো দেখে ওরা আমার সাথে কি করছে? ওই রাজ আমাকে ঠকিয়েছে ওকে তুমি আমার কাছে এনে দাও ।
বলেই মারিয়া জরিয়ে ধরতে যায় কিন্তু ধরতে পারেনা। ঠাসস করে ওর গালে একটা চর পরে পরপর আর ও দুই তিনটে।
–তুমি আমাকে মারলে।
সোহেল চৌধুরী কিছু বলল না মেয়ের মুখ দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না। এতো টা খারাপ হয়েছে যে একজন মানুষকে মারতে পযর্ন্ত চলে এসেছে । এর সমান ভাবে দোষী ওনি ও উনি যদি এভাবে স্বাধীন ভাবে চলতে না দিতো ছোট্ট অপরাধ গুলো মেনে না নিতো আজ এ দিন দেখতে হতোনা।
–পাপ্পা
–আমাকে পাপ্পা বলে আর ডাকবে। আমি কারো পাপ্পা না আজ থেকে আমার কোন মেয়ে নেই যে ছিলো সে মরে গেছে। তোমাকে নিজের মতো চলতে দিয়েছি। নিজে সময় দিতে পারিনি বলে তোমাকে কিছু করতে বাধা দেয়নি। ভেবেছি নিজের মতো ভালো থাকো তার মানে এই নয় তুমি এভাবে কারো জীবন নিয়ে খেলা করবে। আমি ভাবতে পারছি না আমার মেয়ে একজনের জীবন নিতে অঠে পরে লেগেছে তাও একটা ছেলের জন্য যে কিনা তাকে ভালোইবাসে না। এক তরফা কোন কিছু ই ঠিক না এক তরফা ভালোবাসা ও তোমার জন্য না এটা তোমাকে আমি এনগেজমেন্টের দিন ই বলেছি তুমি আমার কথায় রাজি ও হয়েছিলে। লন্ডনে যাবে বলে টিকেট ও কেটে দিলাম আর এখন দেখছি সব ভুল তুমি আমি মিথ্যে বলে ধোকা দিয়েছো।
–আমি তোমাকে ধোকা দেয়নি।
–দাওনি তাহলে এখানে কি করছো তোমার তো বিদেশে থাকার কথা তুমি এখানে কেন হুয়াই?
–আমি রাজকে ভালোবাসি খুব বেশি ওকে ছেড়ে যেতে পারিনি।
–এটাকে ভালোবাসা বলে না মারু এটাকে জেদ বলে। ভালোবাসা মানে এই নয় যে তার সাথে থাকতে হবে দূরে থেকে ভালোবাসা যায়। ভালোবাসার মানুষ যার সাথে খুশি তার সাথে থাকতে দিতে হয় জোর করে তাকে পাওয়া মানে ভালোবাসা না।
বাসার সবাই চিৎকার চেচামেচি শুনে ছুটে এসেছে। আর কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না হা হয়ে দেখছে সব।
রাজ কিছু আর বলবে না কারণ রাজ নিজেই কাল ওনার বাসায় গিয়েছিল আর মারিয়ার সব বলে এসেছে যা শুনে সে নিজে তার মেয়ের ব্যবস্থা করবে বলেছে। মিষ্টি রাজকে জরিয়েই ছিলো সবাইকে আসতে দেখে নিজের মায়ের কাছে গিয়ে দাড়িয়ে পরে। এদিকে মারিয়া আর ওয বাবা একের পর এক কথা বলেই চলেছে হঠাৎ মারিয়ার গায়ে আবার হাত তুলতে গিয়ে ও থেমে গেলে কাউকে ফোন করে উপরে আসতে বললেন আমরা সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছি কি করবেন উনি হঠাৎ দুজন ছেলে ও একজন মেয়ে পুলিশ আসে সবার বুজতে বাকি নেই কি হবে? মারিয়া তো সেই চেচামেচি কিছু তেই যাবে না কিন্তু তা কি না নিয়ে যাবে। মারিয়ার বাবা একজন বড় বিজনেস ম্যান তাই কারো সাহস হতো না তার মেয়ের সাথে এই সব সে বলেই সবাই সাহস পেল। মারিয়া কে নিয়ে যাওয়া পর উনি ওসি কে ডেকে একটা কথায় বললেন।
” আমার মেয়েটা দেখিস রুমান। যাই করুক একটা মাএ মেয়েতো খুব আদরে মানুষ করেছি ওকে বেশি কষ্ট দিস না।”
লোকটা মাথা নেড়ে চলে যায়। মানুষ টা খুব ভালো তার মেয়ে হয়ে মারিয়া আপু এমন কি করে হলেন। রাজের সামনে গিয়ে হাত ধরে ক্ষমা চাইলেন মেয়ের হয়ে। রাজ কিছু বলল না লোকটা ভালো কিন্তু মারিয়া একদম তার মতো না ওকে কিছু তেই ক্ষমা করবো না। উনি বুঝতে পেরেছে রাজ রেগে আছে। তাই চলে যেতে নেয় মিষ্টি তাকে আটকে দেয় লোকটা কতো ভালো নিজের মেয়ের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের জন্য এতো কিছু করলো মারিয়াকে জেলে পাঠালো তাকে ক্ষমা করা উচিত। রাজকে বুঝাতে লাগলো।
–সরি আন্কেল আমাকে ক্ষমা করবেন আপনি না থাকলে মারিয়াকে আমি কখনো ক্ষমা করতাম না। শুধুমাত্র আপনার জন্য ওকে আমি ক্ষমা করলাম।
মিষ্টি এগিয়ে এসে বলল,
–আপনি থেকে যান আজকে।
–না মা আমার ছেলে চিন্তা করবে ও তো জানেই না আমি এখানে আছি। আর তোমার সাথেই এইসব হয়েছে মা ক্ষমা করো সব কিছু র জন্য তোমাদের ক্ষতি করতে আমার মারু আসতে পারবে না ওকে বিদেশে পাঠিয়ে দেব।
–আপনি কেন ক্ষমা চাইছেন এতে আপনার দোষ নেই।
–আমামর দোষ আছে মা। আমি এর জন্য সমান ভাবে দোষী মেয়েকে সঠিক পথ দেখাতে পারিনি টাকার পেছনে লরে ওদের সময় না দিয়ে আজ তাদের এই পরিণতি। আজ আসি মা তোমরা সুখে থেকে ভারো থেকো সেই কামনা করি।
বলেই আর এক পা দাড়ালো না চলে গেল তার পেছনে দুজন বর্ডি গার্ড ও বেরিয়ে গেলেন বাসা থেকে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
রফিক নামের ছেলেটিও চলে গেলেন।
সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে জানতে রাজ বিছানায় বসে একে একে সব বলতে লাগলো। সেদিন কুকুর টা মারা গেছিলো তাও মারিয়ার হাত আছে কিন্তু মারিয়া করেনি কাজটা করেছে এই রফিক। মিষ্টির কাছে থেকে গাড়ির নাম্বার নিয়ে রাজ সেই গাড়ির মালিকের ঠিকানায় গিয়ে জানতে পারে গাড়ি টা ভাড়া দেওয়া রফিক নামের এক ছেলের কাছে যারা অথনৈতিক ভাবে খুব দরিদ্র। সেখানে গিয়ে রফিকে ধরে জানতে পারে মারিয়ার জন্য এসব করেছে। তখন রাজ বুজতে পারে সবাইকে মারিয়া বলেছে ও বিদেশে গেছে আসলে যা মিথ্যা। কিন্তু মারিয়াকে ধরার পরিস্থিতি ছিল না কারণ রফিকের সাথে ও নাকি একবার দেখা হয়েছে এ ছাড়া কখনো সামনে আসে না কোথায় আছে তাও জানে। তাই ব্যর্থ হয় রাজ কিভাবে ধরবে ও হঠাৎ মারিয়া ফোন করে বলে আজ মিষ্টি কে মারে আসবে তাও ও নিজে। এই সুযোগ পেয়ে রাজ মারিয়ার বাবা কে ঘটনা বলে আর বাকি টা তো এখন ই
ঘটলো।
সবাই তো হা হয়ে আছে বাপরে কি ভয়ংকর মেয়ে। কিন্তু এখন আর কারো মাঝে ভয় নেয় কারণ যাকে নিয়ে ভয় পাবে সে তো তা শাস্তি পাবার জায়গার ই আছে আর তাদের জীবনে আসতে পারবে না ভাবতেই রাজ সস্তীর নিশ্বাস ফেলে।
পরদিন রাজ আর মিষ্টি বিবাহ সুষ্ঠ ভাবেই শেষ হয়।
মিষ্টি ছাদের দাড়িয়ে আছে আর পেছনে রাজ মিষ্টি কে জরিয়ে রে আছে কাধে থুতনি রেখে। মিষ্টি দৃষ্টি সামনে বিশাল আকাশের দিকে আনন্দ ওর চোখ জল পরছে। আর রাজ এক দৃষ্টি তে মিষ্টি দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের জীবনের কালো ছায়া শেষ হয়ে গেছে। মারিয়া আর কখনো আসতে পারবে না তাদের জীবনে । তারা একটা সুখি দামপ্রতি হবে। আজকে দুটি হৃদয় এক হবে পূর্ণতা পাবে তাদের ভালোবাসা। রাজ মিষ্টি কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দুগালে হাত রেখে কপালে ঠোট ছুয়ে দেয়। তারপর কোলে উঠিয়ে নেচ নামতে থাকে। সমস্ত বাধা পেরিয়ে আজ তারা এক হবে। ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায় তৈরি হবে।
[সবাই রাজ আর মিষ্টির জন্য দোয়া করবেন। যারা প্রথম থেকে শেষ পযর্ন্ত পাশে ছিলেন তাদের জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা। এতো ভালোবাসা দেবার জন্য পাশে থাকার জন্য।]
( সমাপ্ত )