Sunday, July 6, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1874



বোরখাওয়ালী পর্বঃ ১১

0

#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ১১
লেখাঃ Mst Liza
,
আমি জঙ্গি? আমি রোহিঙ্গা? আর আপনি কি? আপনি তো একটা ফাঁটা বাশঁ!

হোয়াট ফাঁটা বাশঁ? ব্রু কুচকে বলল মেঘ।

ফাঁটা বাশঁ বোঝেন না? কারও পুরো কথা না শুনে নিজের চিন্তাকে তার উপর দুম করে চাপিয়ে দেওয়াইকে বলে ফাঁটা বাশঁ।

কি বলতে চাও তুমি?

সেটা শুনার ধৈর্য কি আপনার কাছে আছে?

দেখও আর কৌতুহল না বাড়িয়ে যা বলার তারাতারি বল?

সিনিয়র ভাইয়া, আপুরা আপনাকে এখানে হাত, পা, মুখ বেধেঁ ফেলে রেখে গেছে।আর আপনি কিনা ভাবলেন আমি এমনটা করেছি? হুট করে কতোগুলো কথাও শুনিয়ে দিলেন!

ওহহ সিটট, আমি এটা আগে কেন ভেবে দেখি নি?
ছরি আয়াত! আসলে আমার মাথার ঠিক ছিল না।কিছু মনে করো না তুমি।বলে মেঘ ভালোলাগার দৃস্টিতে চেয়ে দেখে বোরখার আবরনে ঢাকা আয়াতের মায়াবী চোখদুটোর পানে।কিছুক্ষণ পর মেঘ ক্লাসরুম থেকে বেড়িয়ে গেল।

মেঘ বুঝতে পেরেছে এটা তাহলে লাবন্য আর তার বন্ধুদেরই কাজ।মেঘ হন্য হয়ে পুরো ভার্সিটিতে লাবন্যকে খুজেঁ চলেছে।অবশেষে ক্যান্টিনে গিয়ে লাবন্যকে পেল।লাবন্যরা খুব হাসাহাসি করছে।

এই যে শুনুন? মেঘ গিয়ে লাবন্যকে ইঙ্গিত করে ডাকছে।

লাবন্য ঢং করা মুখ নিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি?

আপনি ছাড়া আর কাহাকে ডাকিতে পারি আমি? যদি একটু আমার সাথে আসিতেন! আসলে আপনার সাথে একান্তে আমার কিছু কথা ছিল?

লাবন্য ফ্রেন্ডদের বলল, তোরা এখানে থাক আমি আসছি।বলেই ঢং করে হেলে দুলে মেঘের সাথে ফাঁকা ক্লাসরুমটার মধ্যে ঢুকলো।

লাবন্য ক্লাসরুমে ঢুকতেই মেঘ ভেতর থেকে দরজার সিটকানিটা বুজিয়ে দিল।

ওদিকে লাবন্যর সান্ডপান্ডরা ক্লাসরুমের দরজার বাইরে আঠার মতো চিপকে আছে, কান পেতে শোনার চেস্টা করছে ভেতরে কি হচ্ছে!

দরজাটা বন্ধ করলেন কেন?

ইচ্ছে হয়েছে তাই!

মানে?

মানেটা কাছে এসেই বোঝায়?

কি করবেন?

মেঘ লাবন্য দিকে আগাচ্ছে।আপনাকে!

মেঘ লাবন্যর খুব কাছে চলে আসলো।আর লাবন্য চোখটা বন্ধ করে নিল।

মেঘ ঠাসসসসসস! করে একটা চর বসিয়ে দেয় লাবন্যর গালে।

লাবন্য গালে হাত রেখে, আপনি!

ঠাসসসসস। আরেকটা চর।

আমাকে মারছেন কেন?

ঠাসসস!

আমি কি করে..

ঠাসস!

দেখুন আপনি কিন..

ঠাসস!

লাবন্য যত কথা বলছে। ততো চর খাচ্ছে।যতো কথা বলছে ততোই ঠাসসস! ঠাসস! করে মেঘ চর মারতেই আছে। একসময় দুজনেই হাপিঁয়ে গেল।বেঞ্চের উপরে বসে দুজনে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।

আর যদি তোমাকে কখনও দেখেছি এই ধরনের কাজ করতে!

কি করেছি আমি?

মেঘ আবার রেগে যাই।রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকায় লাবন্যর দিকে।

লাবন্য দেখেই ভয়ে চুপসে যায়। হ্যাঁ আমিই করেছে।সব আমি করেছি।আমাকে আর মারবেন না প্লিজ!মুখ তুতলে কথাগুলো বলে।

আজকের মতোন মাফ করে দিলাম।২য় বার যেন এই ভুল না হয়। মনে থাকবে?

হ্যাঁ! থাকবে।ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয় লাবন্য।

ওসব কি ড্রেস পরো।ট্রি সার্ট কি মেয়েদের ড্রেস? তার উপর গিট দিয়ে ছোট করে রেখেছো! পরপুরুষকে নাভি দেখাতে ভালো লাগে বুঝি? এই দেখও মেয়ে, স্বামীকে দেখানোর জন্যও কিছু বাঁচিয়ে রাখো।ফের যদি কোনও দিন এসব পোশাক গায়ে দেখছি না! তাহলে সব খুলে পেক্টোল জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেব।আর তোমাকে!

লাবন্য চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে!

তোমাকে সেই অবস্থায় ক্লাসরুমের মধ্যে ফেলে রেখে দিয়ে চলে যাবো, মনে থাকে যেন!
মেঘ রাগি লুক নিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দাড়ায় আস্তে করে দরজার সিটকানিটা খুলতেই দরজার সাথে চিপকে থাকা লাবন্যর সব সান্ডপান্ডরা ধরাম দিয়ে পরে।মেঘ তাদের দিকে একটু রাগি লুকে তাকিয়ে তারপর চলে যায়।

মেঘ চলে গেলে লাবন্য ভ্যাআআআ করে কেঁদে দেয়।নেহাল দৌড়ে এসে লাবন্যকে জড়িয়ে ধরে আর বাকি সবাই এসে লাবন্যর পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিতে থাকে।নাহহ নাহ কাদেঁ না আমাদের লাবু কত্ত ভালো মেয়ে, তাই না? এ তোরা বল সবাই! হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ! খুব ভালো! খুব ভালো!

কান্নাজড়িত কন্ঠে, আমি কি খুব খারাপ বল নেহাল? আজ পর্যন্ত কেউ আমার ড্রেস নিয়ে এধরনের কথা বলি নি।কেউ আমার গায়ে সামান্য টোকা পর্যন্ত দেয় নি।আর ওই ছেলেটা কিনা? ভ্যাআআআ করে কাদঁতেই আছে লাবন্য।এতোটা লজ্জা হয়তো আগে কখনও পাই নি লাবন্য।অথচ আজ লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে তার।

সন্ধ্যার পর,,
আয়াতের পড়াই মনই বসছে না।বইয়ের পাতায় মুখ গুজে শুধু ভেবেই চলেছে, লাবন্য আর তার সান্ডপান্ডরা কি যেনে গেল আয়াত সব দেখেছে! মেঘ কি আয়াতের নাম বলে দিল তাহলে? ওরা যানলে তো আমাকে ছাড়বে না।নাহহ এভাবে থাকলে হবে না কিছু একটা করতেই হবে! কিন্তু কি? কিছু একটা ভেবে আয়াত ঝট করে সহপাঠী রূপালীকে ফোন দিল।

আসসালামু আলাইকুম।

ওয়া আলাইকুমুস সালাম।কেমন আছো রূপালী।

এইতো ভালো। তো কি মনে করে ফোন দিলে?

আসলে আমার একটা হেল্প লাগবে তোমার থেকে!

কিসের হেল্প?

মেঘের ফোন নাম্বারটা আমার একটু লাগতো।যদি তুমি একটু ম্যানেজ করে দিতে পারতে!

মেঘের ফোন নাম্বারটা তো আমার কাছে নেই তবে হ্যাঁ রবিনের কাছে থাকতে পারে।আমি কি তোমাকে রবিনের নাম্বারটা দেব?

না আসলে খুব দরকার তাই! আমার মেঘের নাম্বারটাই লাগবে!

আচ্ছা ঠিক আছে আমি বুঝেছি! আমি তাহলে রবিনের থেকে নাম্বারটা নিয়ে তোমাকে ব্যাক করছি!

ওকে।থ্যাংকস।

কিছুক্ষন পর,,
হ্যালো আয়াত!

হ্যাঁ, রূপালী বলো, মেঘের নাম্বার পেয়েছো?

হ্যাঁ, পেয়েছি।নোট কর।

ধন্যবাদ তোমাকে রূপালী।

আরে না ধন্যবাদের কি আছে! বাট মেঘের নাম্বারটা দিয়ে কি করবে তুমি?

সে আমি তোমায় কাল ভার্সিটিতে এসে বলব।ওকে আল্লাহ হাফেজ।

আল্লাহ হাফেজ।

আয়াত আর দেরি না করেই মেঘকে ফোন দিল।

হ্যালো; আসসালামু আলাইকুম কে?

ওয়া আলাইকুমুস সালাম, মেঘ আমি আয়াত?

হ্যাঁ বল আয়াত ফোন কেন করেছো?

আসলে আজকের ঘটনাটা আমি দেখেছি সেটা আপনি লাবন্য আপুদের যানাবেন না।তাহলে..

তাহলে কি? কেমন মেয়ে তুমি, সামান্য কথাটা বলতে রাতের বেলা একটা ছেলেকে ফোন করেছো? এটা কথা বলার মতো কোনও বিষয় হলো? দেখ আমি মেয়েদের সাথে খুব বেশী একটা প্রয়োজন ছাড়া কখনও কথা বলি না।আর এ বিষয়ে আমি আর কারও কোনও হেল্প চাই না।তুমি যতটুকু করেছো তারজন্য ধন্যবাদ।এখন আমার বিষয়টা আমাকেই বুঝতে দাও! বলেই কেটে দিল।

আয়াত আবার ফোন করল।কিন্তু পুরো কথা না শুনেই মেঘ আবার কল কেটে দিল।তারপর মেঘ নিজেই আয়াতকে ফোন করল, জানার জন্য যে তার নাম্বারটা আয়াতকে কে দিয়েছে?

আয়াত নামটা বলার সাথে সাথেই মেঘ আবার ফোন কলটা কেটে দিল।তারপর আয়াতের নাম্বারটাই ব্লক করে দিল।মেঘ এই আয়াত মেয়েটার সাথে কথা বলতে চাই না আর কখনও।কিন্তু কেন তার উত্তরও তার যানা নেই।হয়তো মায়ায় পরে গেছে নয়তো লাবন্যর প্রতি ভালোলাগাটা তার মধ্যে এখনও পুরোপুরি ভাবে সৃস্টি হয় নি।খুব দোটানার মধ্যে আছে মেঘ।

পরেরদিন ভার্সিটিতে,,
লাবন্য শাড়ি পড়ে আসে।মেঘের চরের দাগগুলো মেকাপের আড়ালে এমন ভাবে ঢেকে রেখে এসেছে যে আজ আরও বেশী দাড়ুন দেখতে লাগছে লাবন্যকে।সবাই দেখে খুব অবাক।ওয়াও লাবু তোকে তো একদম ডানাকাটা পরীর মতো দেখতে লাগছে।

আহহ রোজ! শাড়িতে কখনও কাউকে ডানা কাটা পরী দেখাই না! লাবন্যর মাথায় শাড়ির আচঁলটি তুলে দিয়ে নেহাল আবার বলল ওকে আজ একদম বউ বউ লাগছে!

লাবন্য একটু স্ট্রাইল দিয়ে হেটে বলতে গেল, দেখতে হবে না কে শাড়ি পড়ে এসেছে? আমাকে সবার ভালো লাগতেই হবে।অমনি মেঘকে সামনে দেখতে পেয়ে, নারভাস হয়ে, হাই হিলের টানে পায়ের কাছে শাড়ি বেধেঁ যাওয়ায় পরে গেল।লাবন্যর এভাবে পরে যাওয়ায় ভার্সিটির সকল স্টুডেন্টরা হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।লাবন্যর এবার খুব লজ্জা লাগছে।

মেঘ লাবন্যর কাছে এসে ডান হাতটা বারিয়ে দিল।লাবন্য প্রথমে গতকালের কথা ভেবে মেঘের হাতটা ধরতে চাইলো না।তারপর মেঘ ধমক দেওয়াই মেঘের হাত ধরে লাবন্য উঠে দাড়ালো।

আয়াত ভার্সিটিতে এসেই মেঘ আর লাবন্যকে খুব কাছাকাছি হাত ধরা অবস্থায় দেখে অবাক হয়।ইয়া আল্লাহ! এতো কিছুর পরেও মেঘকে ওই মেয়েটার সাথে এভাবে দেখতে পেলাম।আর আমি একটু সামান্য ফোন করায় মেঘ আমাকে অত্তগুলো কথা শুনিয়ে ব্লক করে দিল।ঠিক আছে! ওই মেঘও লাবন্যর মতোই।মেঘের সাথে আর কথাই বলব না।লুচু আফ্রিকান এনাকন্ডা, নাইজেরিয়ান হাতি আর যা তা মনে আসছে না।কাল রাতে আমাকে জ্ঞান দিয়ে এখন নিজেই সবার সামনে লাজ-লজ্জা বিলীন করছে।

এখানে দাড়িয়ে একা একা কি “বির বির” করছো তুমি আয়াত?

আসলে রূপালী গতকাল…আয়াত রূপালীকে গতকালের কথাগুলো সব বলে।

মোনা আয়াতের বলা কথাগুলো শুনে নেয়।আর লাবন্যকে গিয়ে বলে।লাবন্য শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।ওই বোরখাওয়ালীর এতো সাহশ? কাল নবীন বরণ উৎসব।আর কালই ওকে এর মাষুল চুকাতে হবে!

চলবে……

বোরখাওয়ালী পর্বঃ ১০

0

#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ১০
লেখাঃ Mst Liza
,
জালানার গিরিল ছুঁয়ে দাড়িয়ে আছে আবির।আকাশের চাঁদটাকে দেখছে আর নিজের মাঝে জমানো সব কথাগুলো তুলে ধরে মনকে প্রশান্ত করছে।সারাদিনের যতো অপেক্ষা,, হয়তো ওই আকাশের চাঁদটার জন্যই।যে শুধুই তাকে শুনবে।কখনও ভুল বুঝবে না, ঠকাবেও না।আর এভাবেই তার জীবনের এতোগুলো বছর পার হয়েছে।

ওদিকে আরিয়া,, গভীর রাতে তাহাজ্জুদের সিজদাহের মাঝে লুটিয়ে পরে নিজের সকল দুঃখ, কস্ট আর বেদঁনা, জমা করে রাখছে।স্রস্টার দরবারে নিজেকে সমার্পন করছে।কে যানে অপর পাশের মানুষটা কেমন আছে? হয়তো ভালোই থাকবে।

আচ্ছা মাম্মাম, তোমার তাহাজ্জুদের সিজদাহগুলো এতো লম্বা হয় কেন? আয়াত তার মাম্মামকে জিজ্ঞাসা করছে!

কারণ সিজদাহে আল্লাহু রাব্বুল আলামীন আমাদের অতি নিকটে থাকে।

তাহলে তো যে কোনও নামাজের সিজদাহেই আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অতি নিকটে সাক্ষাৎ পেতে পারি?

হ্যা, মামনী। তবে তাহাজ্জুদের নামাজের ফজিলত অত্যন্ত বেশী। যারা তাদের রবের জন্য সিজদাহরত ও দণ্ডায়মান হয়ে রাত্রি যাপন করে অর্থাৎ, তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে তাদের অবিচ্ছিন্ন আকাঙ্খাকে এই ইবাদতের অছিলায় মাহকাম মাহমুদে পৌঁছে দেয়।

তাহলে তো আমরা যা কিছু ইচ্ছা নিদ্বীধায় এই নামাজে চাইতে পারব রবের নিকটে!

হ্যা, পারবে! তবে সেটা তোমার জন্য হালাল আর বৈধ হতে হবে।

কথা বলতে বলতে ফজরের আজান দিয়ে দিল।দুজনের নামাজ পড়া শেষ। আয়াত এখন কোরআন তেলাওয়াত করছে, আরিয়া আয়াতের পাশে বসে মেয়ের কোরআন তেলাওয়াত শুনছে আর সকালের রুটি বেলছে।
,

চৌধুরী ভিলায়।ঘড়ির কাটায় সকাল ৬টা।লাবন্য লাউড স্পিকারে মিউজিক ছেড়ে দিয়ে রেডি হয়ে ডিজে গানে ড্যান্স করতে করতে মায়ের রুমে আসে।কারণ প্রতিদিন সকালে নেহা আর লাবন্য মনিং ওয়ালর্কে যাই।
ওহহ মম! এক্ষণও ঘুমাচ্ছো তুমি।এই দেখও আমি রেডি।তারাতারি ওঠো।শরীরকে ফিট রাখতে তবে না?

নেহা ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসে বেড ট্রি টা হাতে নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিল,
ওহহ লাবু! মাই বেবি! আর একটু অপেক্ষা কর আমি রেডি হয়ে আসছি।বলে চায়ের কাপটা রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো।

কিছুক্ষণ পর নেহা আর লাবন্য যখন বাড়ি থেকে বের হবে তখন আবির ফজরের নামাজ পরে তাসবিহ হাতে বাড়িতে ঢুকছে।

এতো সকালে যখন মা, মেয়ে ঘুম থেকে উঠেই পড় তখন ফজরের নামাজটা পড়ে নিলে কি হয়?

নেহার কানে হেডফোন থাকায় আবিরের কথাটা শুনতে পাই নি নইয়ে কুরুক্ষেত্র লেগে যেত।লাবন্য শুনতে পেয়ে পিঁছনে ঘুরে তাকিয়ে আবিরের সামনে এসে বলল, হোহহ ড্যাড! তুমি যেটা করছো কর না! আমাদের ব্যাপারে কেন নাক গলাতে আসো? তুমি তোমার নামাজ নিয়ে জান্নাতে যেও কেমন! আর আমরা আমাদেরটা বুঝবো।আবির কিছু বলতে যাবে তার আগেই লাবন্য চলে যায়।

আবির ভাবে তার কি আর কিচ্ছু করার নেই? অসহায় হয়ে পকেট থেকে সেলফোনটা বের করে মেঘকে ফোন দেয়।

আসসালামু আলাইকুম।আংকেল।

ওয়া আলাইকুমুস সালাম। মেঘ তোমাকে আমি যেটা বলেছিলাম সেটা মনে আছে তো?

হ্যাঁ, আংকেল। আপনি নিশ্চিত থাকুন। আপনার বাকাঁ মেয়েকে কিভাবে সোজা করতে হয় সেটা আমার উপরে ছেড়ে দিন।আপনি আমার বাবার বেস্টফ্রেন্ড।বাবা মৃত্যুর আগে মাকে বলে গিয়েছিল আপনার মেয়ের সাথেই আমার বিয়ে দেবে।আমি আমেরিকা থেকে লেখাপড়া শেষ করে আসার পর মায়ের কাছে কথাটা যানতে পারি।আপনার মেয়ের সাথে দেখা করতে চাচ্ছিলাম।কিন্তু আপনি বলেছেন আপনার মেয়ে একদম আলাদা, তাই তাকে সোজা করতে তার ভার্সিটিতেই আমি এ্যাডমিশন নিয়েছি।তবে দেখবেন আপনার মেয়েকে আমি সোজা পথে এনেই ছাড়ব।

তাই যেনো হয় বাবা! আমার মেয়েটা যে একদম ওর মায়ের মতো হয়েছে। আল্লাহ যেন তোমায় ওকে সোজা পথে আনার কাজে সহায়তা করে।

আচ্ছা আংকেল আমার এখন একটা মিটিং এ যেতে হবে।সারাদিন ভার্সিটিতে থাকবো তো তাই অফিসে যেতে পারবো না।এজন্য এখন মিটিংটা এটেন্ড করতেই হবে।পরে কথা বলব।আল্লাহ হাফেজ!

আল্লাহ হাফেজ!

সময়টা সকাল ১০টা ৪৫ এর কাছাকাছি
“ভার্সিটিতে”,,
মেঘ ক্লাসে ঢুকতে যাবে তখনই মানকি টুপি পরা তিনটা ছেলে এসে মেঘের নাকের কাছে একটি রুমাল ধরে আর মেঘ অজ্ঞান হয়ে যায়।তারপর মেঘের হাত, পা বেধেঁ কালো কাপড় দিয়ে মুখটা ঢেকে দেই।ছেলে তিনটা মেঘকে একটা ফাঁকা রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।আয়াত দূর থেকে ব্যাপারটা দেখে এগিয়ে আসে বিষয়টা কি বুঝতে!

লাবন্য ছেলেটাকে ধরে এনেছি কালকে আমাদের সাথে যেটা করেছে তার শাস্তি ওকে দেওয়াই লাগবে। বলেই নেহাল মুখ থেকে নিজের মানকিটা খুলে ফেলে।

আয়াত রুমের বন্ধ জানালাটা একটু ফাঁক করে বাইরে থেকে ব্যাপারটা দেখে চমকে যাই।

বল লাবু এর সাথে কি করতে চাস তুই? বলে এবার টোমি মানকি খোলে।

আয়াত ব্যাপারটা দেখছে! কিন্তু বুঝতে পারছে না, কালো কাপড়ে মোড়ানো মুখের ছেলেটা কে! যাকে এরা এভাবে ধরে এনেছে?

আরে কি আর করবি! ওর মুখে কালি মাখিয়ে পুরো ভার্সিটি আজ ঘুরাবি লাবু! এতে ইন্টারটেইনমেন্টও হবে আর সব স্টুডেন্টরা ফ্রীতে ফুরতিও নিতে পারবে! ঠিক বলছি না লাবু? বলেই রোজ নিজের মুখ থেকে মানকিটা খুলে ফেলে।

যাস্ট সার্ট আপ! রোজ এটা ফিল্ম নয় যে তোর এসব ফালতু আইডিয়া চলবে।এতে পিন্সিপাল যানলে আমাদেরই ক্ষতি হবে।ভালো কিছু ভাব কি করা যায় ছেলেটাকে নিয়ে? নেহাল রোজকে বলল।

লাবন্য এতোক্ষণ এদের কথাগুলো শুনছিল বেঞ্চের উপর বসে।এবার মুখ খুললো, দেখ তোরা এই ছেলেটাকে ছেড়ে দে। এত্ত কিউট আর হ্যান্ডস্যাম ছেলেকে খারাপ লাগছে শাস্তি দিতে!

তোর মাথা ঠিক আছে লাবন্য? কিসব যা তা বলছিস? কত কস্টে ছেলেটাকে সবার চোখকে এড়িয়ে এখানে এনেছি যানিস? নেহাল লাবন্যকে কথাটা বলে উল্টোদিকে ঘুরে তাকালো।

নেহাল ঘুরে তাকাতে জানালার কাছ থেকে আয়াত সরে যেতে চাইলো আর জানালাটা দপ করে শব্দ হয়ে উঠলো।মোনা আর টিনা শব্দটা শুনে দৌড়ে যায় ততোক্ষণে আয়াত ওখান থেকে পালায়।

নারে কেউ নেই এখানে, হয়তো বাতাসের শব্দে বন্ধ হয়ে গেছে জানালাটা।

লাবন্য বলতে শুরু করে, দেখ নেহাল আজ সকালে আমি একে একটা গাড়ি থেকে নামতে দেখেছি।পড়নে শুট, বুট আর টাই।চোখে ব্লাক সানগ্লাস। কত্তটা হ্যান্ডস্যাম আর কিউট লাগছিল তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।সাথে দুইজন বডিগার্ডও ছিল।তাছাড়া ছেলেটাকে দেখে বয়সের দিক থেকে মনে হয় না ও ১ম বর্ষের স্টুডেন্ট।এ যদি কোনও পাওয়ার ফুল পারসোন হয়।তখন একি আমাদের ছেড়ে দেবে বলে তোর মনে হয়? ছেলেটা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের ভার্সিটিতে এসেছে তা আগে যানতে হবে!

তাহলে কি করবি এখন? মোনা জিজ্ঞাসা করল!

দু’চার জন লোক ঠিক কর! যত টাকা লাগে দেব।বলিস দুই দিনের মধ্যে ছেলেটার সব ডিটেলস আমার চাই।বলেই টাকার বান্ডিল ছুড়ে মেরে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গেল লাবন্য।

লাবন্য যাওয়ার কিছুক্ষণ পর বাকি সবাই ক্লাস রুম থেকে বরিয়ে যায়।আয়াত দূর থেকে সব দেখছে।সবাই চলে গেল আয়াত কাউকে না ডেকে নিজেই ক্লাস রুমটার সামনে আসলো।ভাবছে কাউকে ডাকবে কিনা? লাবন্য বা লাবন্যর দলবল যদি যানতে পারে আয়াত সব দেখেছে তাহলে আয়াতের ক্ষতি হবে ভেবে আর কাউকে না ডেকে নিজেই ক্লাসরুমে ঢুকে পরল।

আয়াত ভাবছে হাত, পা তো বাধাঁ। ছোঁবো কি ছোঁবো না? নাহ মানুষকে বাচাঁনো ফরজ। নিজে নিজে বলছে আর হাত, পায়ের বাধঁনগুলো খুলছে।আচ্ছা ছেলেটা কে?

আয়াত মেঘের মুখ থেকে কালো কাপড়টি খুলে ফেলল,
একি! এতো মেঘ।মেঘ ওঠেন! আপনি কি শুনতে পারছেন? কি যে করি!

আয়াত মেঘের মুখের কাছে ঝুকেঁ খেয়াল করছে নিঃশ্বাস নিচ্ছে কিনা? হঠাৎ মেঘের জ্ঞান ফিরে আসে।উঠে বসে আর কিছু না ভেবেই আয়াতের দিকে রাগি দৃস্টিতে তাকালো।

তুমি! চিৎকার করে বলল।

হ্যাঁ, আসলে…

চুপ! একদম চুপ।কাল তোমাকে দেখে আমি ভালো মেয়ে ভেবেছিলাম।আর তুমিই আমাকে কিডন্যাপ করেছো? মেরে ফেলতে চাও আমাকে? সত্যি করে বল তুমি কে?

দেখুন আপনার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।

কিসের ভুল? এই তুমি কি একা আছো নাকি তোমার গ্যাংও আছে সাথে?

কিসের গ্যাং? কি বলছেন কি আপনি?

সাজ পোশাক দেখে তো মনে হচ্ছে জঙ্গি।

দেখুন আমি কোনও জঙ্গি নই।

তাহলে রোহিঙ্গা।

চলবে………

বোরখাওয়ালী পর্বঃ ০৯

0

#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ০৯
লেখাঃ Mst Liza

চৌধুরী ভিলা।।
আপনে খুব ভালা চাচা।সত্যি খুব ক্ষুদা লাগছিলো বলে খুব তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে ছেলেটা।

চিৎকার করে উঠে, আবির!!!
তোমার সাহশ কি করে হয় এইসব রাস্তার ফকিরদের আমার বাড়িতে এনে খাওয়ানোর?

কি হচ্ছে কি নেহা! করুন গলায় বলে।

ছেলেটা খাওয়া বন্ধ করে নেহার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

তোমাকে আমি আগেও বলেছি এসব রাস্তার যল-যান আমার বাড়িতে ঢুকাবা না।আমার একটা স্ট্রাটার্স আছে।এক্ষুণি আমার একজন বড় ক্লাইন্টকে বাড়িতে আসতে বলেছি।সে যদি এসে এমন নোংরা, বস্তির ছেলেকে এখানে দেখে তাহলে আমার প্রেজটিজের কি অবস্থা হবে তুমি বুঝতে পারছো?

ছেলেটার খুব ক্ষুধা লেগেছিল। ২দিন ধরে কিছু খাই নি।তাই আমি….

কথা শেষ করার আগেই বলল, তাই তুমি ছেলেটাকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসবে? চেয়ারটাই নোংরা করে ফেলেছো।এই ছেলেটাকে এক্ষুণি এখান থেকে বিদায় কর।সখিনা ছেলেটি চলে গেলে চেয়ারটা ভালো করে ধুঁয়ে পরিষ্কার করে দিস তো।

জ্বি বড় ম্যাডাম! সখিনা এবাড়িতে দীর্ঘ দিন যাবৎ কাজ করছে।

ছেলেটি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে।আমি অহন যাই চাচা।আমার জন্য আপনারে অনেক কথা হুনতে হইলো তার জন্য ক্ষমা কইরেন।বলে চলে গেল।

আবিরের আর সহ্য হচ্ছে না।রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে।বলেই ফেলে, বাহ্ নেহা বাহ্ ছেলেটা চেয়ারটাই বসেছিল বলে তুমি চেয়ারটাই ধুঁয়ে ফেলতে চাও।অথচ নিজের মনের মধ্যে বসে থাকা ময়লা? সেটা তুমি পরিষ্কার করবে কিভাবে?

মুখ সামলে কথা বল আবির।ভুলে যেও না আমি তোমার স্ত্রী।

স্ত্রী? হা হা হা। স্ত্রী শব্দটার মানে বোঝ তুমি? না তুমি বোঝ না। তুমি বোঝ শুধু অহংকার আর তোমার নিজের স্বার্থ।

তাই বুঝি? স্বার্থপর কি শুধু আমি একা তুমি নও? আজ পর্যন্ত নিয়েছো ছাড়া কি দিয়েছো তুমি আমায় আবার বড় বড় লেকচার দিচ্ছ?

কি দেই নি তোমায় আমি? আমার পরিবার, ভালোবাসা সব ছেড়েছি তোমার জন্য আমি।

ভালোবাসা!! তোমার ভালোবাসা মানেই তো ওই ধ্যারধ্যারে গেও মেয়েটা।কি পেয়েছিলে মেয়েটার থেকে তুমি বলতো? আমাকে দেখও, আজ তুমি যা তার সবই আমি তোমাকে দিয়েছি।তোমার টাকা, গাড়ি, বাড়ি, সম্পদ, ঐতিয্য সব! সব! আমার টাকায় কেনা। ভুলে যেও না মি.আবির খান ও ছরি আবির চৌধুরী। তোমার নামের সাথে যেই পদবীটা এখন ব্যাবহার কর ওটাও কিন্তু আমারই দেওয়া।

ব্যাস! অনেক বলেছ তুমি। কোনও কিছুর লোভই আমার নেই।আর কাকে তুমি গেও মেয়ে বলছো?আমিতো আমার আগের জীবনটাতেই ভালো ছিলাম। আজ আমি তোমার সাথে এখানে আছি সেটা শুধুই লাবন্যর জন্য।সেই দিনটা তোমার মনে আছে নেহা? তোমার জন্মদিনের পার্টিতে সরবতের সাথে আমাকে তুমি ঘুমের ঔষুধ মিষিয়ে দিয়েছিলে?
আমাকে পাওয়ার জেদে তুমি আমার সাথে যেই নোংরা খেলাটা খেলেছিলে সেদিন রাতে।তোমার সেই রাতের নোংরা খেলার ফসল আমাদের মেয়ে লাবন্য।আমি তো কিছুই যানতাম না।আমি আমার আর আরি, যাকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম তাকে আর আমাদের সন্তানকে দেখতে গিয়েছিলাম।কিন্তু তুমি আমার আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলে ১বছর বয়সের লাবন্যকে নিয়ে।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই নি।আরি বলেছে ইসলামে ২য় বিয়ে যায়েজ আছে।আমি তোমায় বিয়ে না করলে লাবন্য হবে সমাজের অবৈধ সন্তান।তার কথাই আমি তোমায় বিয়ে করেছি।আর তুমি বিয়ের পর নানান ভাবে লাবন্যকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আমার পরিবারের কাছ থেকে আমাকে আলাদা করেছ।আমাকে বাধ্য করেছো আমার পরিবারের কাছে ঘৃণার পাত্র হতে।

আমি কোনও নোংরা খেলা খেলি নি আবির।আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম।তোমার অফিসের বস ছিলাম আমি।আমার রূপ, সৌন্দর্য সব দিয়েই আমি তোমায় ধরে রাখতে চেয়েছি কিন্তু তুমি কখনও আমাকে পাত্তা দাও নি।আমি তোমায় আরও আগে পেতে পারতাম।কিন্তু তখন বাবার অসুস্থতার জন্য লন্ডনে গিয়ে ভিসার সমস্যাই আটকে পরি।আমি নিশ্চিত ছিলাম নেক্সট ৫বছরে আমার অফিস তুমি ছাড়বে না।কারণ তোমার কন্ট্যাক্ট পেপারে সিগনেচার করা ছিল যদি তুমি জব ছাড়ার চেস্টাও কর তাহলে তোমার জেল হতে পারে। আমি লন্ডনেই তোমার সন্তানকে ভূমিষ্ঠ করি।যখন ফিরে আসি, শুনি তোমার বিয়ে হয়ে গেছে! একটা মেয়েও হয়েছে! তখন আমার খুব কস্ট হয়।আর তাই তোমাকে নিজের করে নিই।কে চায় সতীনের ঘড় করতে? তাছাড়া আমার তো কোনও কিছুর অভাব নেই! তাহলে কেন আমি আমার স্বামীর ভাগ অন্য কারও সাথে শেয়ার করব? এজন্য আমি তোমাকে তোমার সব মায়াজাল থেকে
দূরে সরিয়ে এনেছি।কিন্তু তার বিনিময়ে তোমাকেও আমি অনেককিছু দিয়েছি!

কিচ্ছু দেও নি তুমি আমায়! তুমি শুধুই আমাকে চেয়েছ, কিন্তু কখনও ভালোবাসতে পারোনি! তুমি তোমার জেদ আর অহংকারে অনেকগুলো জীবনকে নস্ট করে ফেলেছো।এমনকি নিজের মেয়েটাকেও বিগড়ে দিয়েছ!

লাবন্য বাড়িতে ঢুকছে হঠাৎই দরজার কাছ থেকে আবিরের শেষর কথাটি শুনে ফেলে, ওহহ ড্যাড তুমি মময়ের সাথে কিভাবে কথা বলছো? চিৎকার দিয়ে বলে।

দেখ না লাবু তখন থেকে তোর ড্যাড আমার সাথে কি খারাপ ব্যবহারটাই না করছে।বলছে আমি নাকি তোকে বিগড়ে দিয়েছি! কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কলছে নেহা!

তোমার এসব নাটক বন্ধ কর নেহা।এই নাটকগুলো করেই তুমি আমার চোখে এতো নিচে নেমে যাচ্ছ।

দেখও ড্যাড আমার মমের সাথে তুমি এমন ভাবে কথা বলতে পারো না! আর মম আমার ২লাখ টাকা লাগবে দাও তো!

এতো টাকা দিয়ে তুমি কি করবে লাবন্য? কালই তো তোমার মায়ের থেকে ৪লাখ নিলে! আবির কথাটা বলে রাগি দৃস্টিতে তাকালো লাবন্যর দিকে!

তুমি চুপ কর! আমার টাকা আমার মেয়ে যেভাবে ইচ্ছে হয় খরচ করবে।যত লাগবে ততো নেবে।আমার যা আছে সবই তো ওর! লাবন্যর মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে নেহা।

তাই বলে এই বয়সে এতো টাকা উঁড়াবে? কখনও জিজ্ঞাসা করেছো তোমার মেয়ে করে কি এতো টাকা নিয়ে?

না আমার যানার কোনও প্রয়োজন নেই।আর একটা কথা তুমিও শুনে রাখ।আমার মেয়ের ব্যাপারে নাক গলাতে আসবে না।আবিরের মুখের সামনে আঙুল তুলে নেহা কথাটা বলে।

আবির নেহার আঙুলটা নামিয়ে দিয়ে, একদিন বুঝবে তুমি নেহা! তুমি কত বড় ভুল করছো।কিন্তু সেদিন খুব দেরি করে ফেলবে।
আর তুমি যদি ভেবে থাকো মেয়েকে দিয়ে আমাকে দূর্বল করতে পেরেছ? তাহলে সেটা ভুল ভাবছো।কারণ তুমি এটা বোঝ না মেয়েটা তোমার সেই চেস্টাকেই কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থ পূরণ করে! হাজার হোক তোমারই তো মেয়ে।হয়েছেও তোমার মতোন।বলেই চলে যাই ওখান থেকে।
,

ওদিকে আয়াত তার দাদুর সাথে ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরেছে।
মাম্মাম কোথায় তুমি? খুব ক্ষুধা লাগছে তারাতারি এসো না, কিছু খেতে দাও!

দাদুভাই ভার্সিটির প্রথম দিনটা তোমার কেমন গেল? আয়াতের দাদি একটু মুচকি হেসে আয়াতের পাশে বসে জিজ্ঞেসা করল।

আর বলো না দাদি আসলে আজ….আয়াত আজকের সব ঘটনা খুলে বলল তার দাদিকে।

কি বলছো কি দাদুভাই তাহলে তো ওরা তোমাদের পিঁছনে আবার লাগবে! আমি কত্তবার বলেছি মেয়েটা বড় হয়েছে বিয়ে দিয়ে দিতে।কিন্তু শুনলো না, এরা লেখাপড়া করাবে।যদি কোনও বিপদ আপদ হয় তাহলে সেই দায়িত্ব কে নেবে?

আহহা রেহেনা! তুমি এতো চিন্তা কেন করছো! আমাদের দাদুভাই খুবই বুদ্ধমতী মেয়ে।তুমি অযথাই চিন্তা করছো।ওর কিচ্ছু হবে না! ওসব ছেলেমেয়েদের তিনবেলা মেরে সোজা করতে হয়।বাবার টাকায় আসকারা পেয়ে পেয়ে এমন হয়েছে।

এমনভাবে বলছো যেন তুমি ওদের মারার ক্ষমতা রাখো! একটা কথা শুনে রাখো আমার দাদুভাইয়ের যদি কিছু হয় তাহলে তোমার খবর আছে!

ঠিক আছে আমার খবর বানিয়ে তুমি টেলিভিশনের পর্দায় দেখিয়ে দিও।

কি বললে তুমি?

আয়াত দেখছে দাদা-দাদির ঝগড়া।আহহ থামবে তোমরা!
আর দাদি লেখাপড়াটা আমার স্বপ্ন। আমি কি খারাপ ভাবে চলি বল? আমি যদি আমার ইসলামে উল্লেখিত নির্দেশনাগুলো মেনে লেখাপড়া করি তাহলে দোষ কোথায়? তুমি অন্য কারও আচারণের উপর ভিত্তি করে আমাকে কেন লেখাপড়া ছাড়তে বলছো?

কিন্তু দাদুভাই?

কোনও কিন্তু না! এই ছোট্ট একটা বিষয়কে তোমরা এতো বড় কেন করছো? দেখছো তো আমার ক্ষুধা লাগছে মাম্মামকে বল না খাবার দিতে!

আরিয়া এসে, মামনী খাবার টেবিলে গুছিয়ে রেখে এসেছি খাবে চলো।আসলে চোখটা লেগে গিয়েছিলো তাই উঠে রান্না করতে একটু দেরি হয়ে গেল।

ঠিক আছে মাম্মাম চলো!
আর তোমরা! একটুও ঝগড়া করবে না এই বলে দিয়ে গেলাম।নইলে তোমাদের সাথে আজ সারাদিন আমার কথা বলা বন্ধ!

চলবে…..

বোরখাওয়ালী পর্বঃ ০৮

0

#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ০৮
লেখাঃ Mst Liza

রিক্সার বুট ফেলে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে, যানো দাদু রিকশায় ওঠার মজাটাই আলাদা, প্রকৃতির ঠান্ডা স্নিগ্ধ বাতাস আর একটা শান্তির তিপ্ত প্রচ্ছাস যা তুমি ওসব দামি গাড়িতে খুজেঁ পাবে না!

ঠিক বলেছ দাদুভাই তুমি না হলে আমি এসব যানতেই পারতাম না।তোমার দাদি তো কখনও এসব বুঝতে চাই না।তার কাছে সব বুড়ো বয়সের হেংলামোপনা।তুমি আছো বলেই না এতোকিছু উপলব্ধি করি!

হি হি।দাদি আর তুমি এতো ঝগড়া কেন কর বল তো!

ওটা ঝগড়া না দাদুভাই ওটা তো আমাদের টোনাটুনির ভালোবাসা।

সে তুমি যাই বল দাদির থেকে কিন্তু আমিই বেশী স্মার্ট।

রিক্সা এসে ভার্সিটির সামনে দাড়ালো।
তো দাদুভাই তোমাকে কখন নিতে আসবো আমি?

সে আমি তোমাকে ক্লাস শেষে ফোন করে যানিয়ে দেব।রিক্সা থেকে নেমে ভার্সিটির ভেতরে যেতে যেতে বলে গেল দাদুকে।

আয়াত ভার্সিটির ভেতরে ঢুকেই দু’এক জনের কাছে ক্লাস কোথায় জিজ্ঞেসা করে যেই ক্লাসে ঢুকতে যাবে দূর থেকে খেয়াল করল সিনিয়ররা জুনিয়রদের সাথে রেগিং করছে।

লাবন্য হচ্ছে রেগিং মাস্টার।সাথে তার চেলাপালারাও আছে।নেহাল, রোজ, টোমি, মোনা, টিনা। এরা একটি ছেলেকে ধরে হাতে ফুল ধরিয়ে দিয়ে বলেছে লাবন্যকে প্রপোজ করতে।আর লাবন্য ক্লাসরুমের সামনে একটি বেঞ্চের উপর বসে পায়ের উপর পা তুলে পায়ের পাতা নাচাচ্ছে ।

দূর থেকে দেখে বুঝতে পারছে আয়াত।মেয়েগুলোর মধ্যে কোনও পোশাক আশাকের ধরণ নাই।পড়নে সর্ট কার্ট স্কার্ট আর ছোট ছোট টপস।লাবন্যর চোখে একটা ব্লাক এন্ড হোয়াইট সানগ্লাস আর মাথায় লেয়ারকাট চুলগুলো উচুঁ করে ঝুটি বেধেঁ রাখা।ঝুটির নিচের আধ্যেকটা আবার নীলচে কালার করা।কথা বলছে যেভাবে বডি হেলিয়ে দুলিয়ে মনে হচ্ছে যেন মাথার ঝুটিটা ঘাড়ের এপাশ থেকে ওপাশে গিয়ে পরছে। বেচারা ছেলেটার নাজেহাল অবস্থা সে আর পালাবে কোথায় ৫জনে যে ঘিরে রেখেছে।

কি হলো যা প্রপোজ কর! দেখছিস না লাবু সেই কখন থেকে বসে আছে।মোনা বলল ছেলেটাকে।

আমায় আপনারা ছেড়ে দেন ভাইয়া, আপুরা।আপনারা তো আমার বড়।আমি সিনিয়র আপুকে কিভাবে প্রপোজ করব? প্লিজ যেতে দেন আপনারা আমায় ছেলেটা হাটু গেরে বসে দুই হাত জোড় করে অনুরোধ করছে ওদেরকে।

দেখ কি বলে! বড় আপু বলে নাকি প্রপোজ করা যাবে না! তারাতারি প্রপোজ কর বলছি! তোর পর আমাদের আরও অনেককে স্বাগত জানাতে হবে।রোজ ছেলেটির সার্টের কলার চেপে ধরে বলল কথাটা।

আয়াত আর একটু এগিয়ে খেয়াল করল ক্লাসরুমের সামনে আরও অনেক স্টুডেন্ট লাইন দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আয়াত বুঝতে পেরেছে এরা সবাই হয়তো নবাগত স্টুডেন্ট।সবাইকে হেনস্ত করার জন্যই ওরা লাইনে দাড় করিয়েছে। এক একজনের থেকে মজা নিয়েই তাই ছাড়ছে।

আয়াত এবার ওদের সামনে গিয়েই দাড়ালো।একি এসব কি করছেন আপনারা? ক্লাস টাইম কি শুরু হয় নি?

ওরা সবাই আয়াতের কথা শুনে পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে দেখে….

এ কিরে দোস্ত আমাদের ভার্সিটিতে ভুত আসছে! টোমি গিয়ে টিনার পিছঁনে লুকায় কথাটি বলে।

আহহ কি হচ্ছে টা কি টোমি দেখছিস তো মানুষ।লাবন্য কথাটি বলে এবার বেঞ্চ থেকে উঠে দাড়ালো।
আপনি কে খালাম্মা? আয়াতকে প্রশ্ন করল লাবন্য।

জ্বি আমি আয়াত।কলেজে আজ আমার প্রথম দিন।

আয়াত আর কিছু বলার আগেই সবাই মিলে জোড়ে হেসে দিল।
এ দেখ দেখ খালাম্মারাও ভার্সিটিতে পড়তে আসে।লাবন্য বলল।

আয়াত গম্ভীর ভাবে বলল দেখুন আমি মোটেই খালাম্মা নই।

তাই বুঝি? তাহলে এমন ঢোলেঢালা বোরকা আর এইসব হাত, পা মোজা এগুলো কি? এসব বুঝি এখনকার নিউ ফ্যাশান? লাবন্য বলছে আর ওর চেলাপেলারা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।

দেখুন আমি আপনাদের মতো আলর্টা মর্ডাণ না।আমি আমার মায়ের শিক্ষায় বড় হয়েছি। যেটাকে আপনি ঢোলাঢালা বোরকা বলছেন সেটাকে ইসলামের দৃস্টিতে অনেক সম্মাণ এবং মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।এটাকে পর্দা বলে।যা নারীর সুন্দর্য্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।এসব তো আপনারা বুঝবেন না কারণ আপনাদের চোখে ডিজিটাল যুগের চশমা পরে আছেন।আমি পর্দা করি কারণ এই পর্দা আমার রক্ষা কবজ, এই পর্দায় আমায় নিরাপত্তা দেই এবং এই পর্দায় আমার রাসূলেরর নির্দেশ। আমি আমার রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে জাহান্নামে যেতে চাই না।এক দমে বলে কথা গুলো আয়াত।

তাই বুঝি? হা হা হা আবারও হেসে দেই সবাই।অনেক কথা যানো তো মেয়ে।তারপর সেই ছেলেটার দিকে ঘুরে তাকিয়ে লাবন্য আবার বলে, তো কি যেন বলছিল ছেলেটা? সিনিয়র আপুকে প্রপোজ করা যাবে না তাই তো! ঠিক আছে এই খালাম্মা তো তোরই ক্লাসমিট নে একে প্রপোজ কর!
কি হলো কর! ধমক দিয়ে বলল।

ছেলেটি ভয়ে ভয়ে আয়াতের সামনে এসে দাড়ায়।অতিরিক্ত নারভাসে ছেলেটির কপাল থেকে ঘাম ঝড়ছে।যখনই হাতের ফুলটা আয়াতের সামনে এগিয়ে দিল ছেলেটির পিঁছনের থেকে কারও মৃদু কন্ঠের আওয়াজ আসল।

কি হচ্ছে কি এখানে?

সবাই হা হয়ে আছে।নেহাল, রোজ, টোমি, মোনা, টিনা বলল এটা আবার কে’রে লাবু?

লাবন্য তাকিয়ে শুধু হা হয়ে আছে।মনে মনে বলছে এত্তো সুন্দর ছেলেটা! ওয়াউউউ সো কিউট! হ্যান্ডস্যাম ড্যসিং বয়।কি বডি ফিগার! একদম হিরো টাইপ ছেলেটা।একে যদি আমার বয়ফ্রেন্ড বানাতে পারতাম! কথাগুলো বলছে আর মনে মনে গদগদ হচ্ছে।

আমি কিছু জিজ্ঞেসা করেছি! এখানে কি হচ্ছে?

তার আগে বলেন আপনি কে? নেহাল তাকে প্রশ্ন করল।

আমি এখানের নিউ কেমেস্ট্রি টিচার।এখন আমার ক্লাস টাইম।তাই ক্লাস নিতে এসেছি।কড়া গলাই বলল।

ওহহহ স্যার! এই ইনি তো স্যার! আসলে স্যার আমরা সিনিয়ররা জুনিয়রদের সাথে আলোচনা করতে এসেছিলাম নবীন বরণ অনুষ্ঠানটা কেমন করে আয়োজন করলে এদের ভালো লাগবে।লাবন্য কথাটা একটু নারভাস হয়ে বলল।

ওহহহ ঠিক আছে।এটা নিয়ে তোমরা পড়ে কথা বলবে।এখন ক্লাস টাইম নিউ স্টুডেন্টরা যাদের ক্লাস আছে ক্লাসে এসো।

স্যার আপনার নামটা যদি একটু বলতেন? লাবন্য যানতে চাইলো।

মেঘ রহমান।রাগি লুকে বলল তোমাদের আর কিছু যানার আছে?

না স্যার। আপনার সাথে আমাদের যখন ক্লাস হবে তখন যেনে নেব।এই চল তোরা আমাদের তো এখন ইমপ্রটেন্ট একটা ক্লাস আছে ঢং করে বলেই লাবন্য তার সান্ডপান্ডদের নিয়ে চলে গেল।

চলেন স্যার ক্লাস নেবেন একজন স্টুডেন্ট বলল।

কে ক্লাস নেবে? আমিও যে স্টুডেন্ট ওদের টাইট দিলাম! মেঘ কথাটি বলেই হেসে দিল।

তারমানে আপনি আমাদের টিচার না? ওদের বোকা বানিয়েছেন? আয়াত চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল মেঘকে।

হুমম। আমিও স্টুডেন্ট তোমাদের সাথেই ১ম বর্ষে পড়ি।

আয়াত ছেলেটির পা থেকে মাথা অবদি দেখছে আর মনে মনে বলছে ছেলেটাকে তো দেখে মনে হয় না আমাদের বয়সের! যাই হোক ছেলেটার বুদ্ধি আছে বলতে হবে!

তারপর সবাই হো হো করে হাসতে হাসতে ক্লাস রুমের মধ্যে ঢুকলো।

চলবে…

বোরখাওয়ালী পর্বঃ ০৭

0

#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ০৭
লেখাঃ Mst Liza
,
-দেখও তোমাকে কি আমি বারন করেছি?

আমি আস্তে করে ওর মুখের নিকাবটি খুলে দিলাম।ওকে দেখে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।কারণ পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা এতো সুন্দর অপ্সরী কিকরে হয়!! আল্লাহ মনে হয় জান্নাতের কোনও হুরের রূপ আমার মায়াবতীর চেহারাতে বসিয়ে দিয়েছে।স্যামলা বর্ণের মায়বী চোখদুটির পিঁছনে নিকাবের আড়ালে ঢেকে রাখা এই রূপ থাকবে তা আমি কল্পনাও করতে পারি নি।ওর হাতের পায়ের মোজাগুলো খুলে ফেললাম।এতো সুন্দর ফর্সা আমার মায়াবতী!! ওর হাতদুটো আমার ঠোঁঠের কাছে নিয়ে আলতো স্পর্শ দিতেই,,
-কি করছো কি আবির?
-এতো বছরের সব ভালোবাসা আজ উজার করে দেব তোমায়!
ও লজ্জায় আমার বুকে মুখ গুজে ফেলে,
-তুমি কি সত্যিই আমাকে এতোটা ভালোবাসো?
-বিশ্বাস হয় না?
-হুমম।আমিও তোমাকে ভালোবাসি।কিন্তু কিভাবে বলব বুঝতে পারছিলাম না।কাল রাতে আমি তোমাকে সেটাই বলতে গিয়েছিলাম।যানি বিয়ের আগে প্রেম ভালোবাসা বৈধ না।তাই তো তোমাকে বিয়ের কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
-তুমি যানো আমাকে কতটা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে?
-ভুল হয়েছে! চলো আমরা ২রাকাত নামাজ পড়ে স্রস্টার দরবারে শুকরিয়া আদায় করি!
আমি মাথা কাত করে সম্মতিসূচক উত্তর দিলাম।

তারপর আমরা দুজনে ২রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম।নামাজ শেষে আলমারী থেকে আমি একটা প্যাকেট বের করলাম।ওর হাতে দিয়ে বললাম এটা তোমার জন্য।ও প্যাকেটটি খুলেই দেখে একটি লাল বেনারসি।
-আমি আমার বউটাকে আজ বউ সাজে দেখতে চাই।
-এখন শাড়ি পড়তে হবে?
-হুমম! এখন আমি তোমার স্বামী আমার সামনে তুমি শাড়ি পরে আসতেই পারো!
-সে তুমি ঠিক বলেছো! কিন্তু আমি তো শাড়ি কখনও পরি নি!
-পরনি আজ পরবে!
-তুমি বুঝতে পারছো না! আমি পারি না শাড়ি পরতে অন্য কোনও দি..
-উসসস! চুপপ! আমি তোমাকে আজই শাড়িতে দেখতে চাই।যাও এগুলো ওয়াশরুম থেকে পরে এসো।
(শাড়ির সাথে আর যেই কাপড়গুলো পরতে হয় ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম)
-শাড়িটা কে পরিয়ে দেবে শুনি?
-আমি!
-তুমি শাড়ি পরাতে পারও নাকি?
-দেখি চেস্টা করে পারি কিনা!
ও চেন্জ করে আমার সামনে এসে,
-এখন কি করব?
শাড়িটা ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম,
-তুমি পারো তো?
-এতো কথা বল কেন?
আমি নিজের হাতে শাড়ি পড়িয়ে ওকে আয়নার সামনে নিয়ে গেলাম।শাড়ির আচঁলটি ওর মাথাই তুলে দিয়ে বললাম,
-কত্ত সুন্দর লাগছে আমার বউটাকে!!
আয়নাতে ওর মুখটা দেখে মনে হলো লজ্জা পেয়েছে।আমি ওকে বললাম,
-ছাদে যাবে?
-এখন?
-হুমম।বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে এতোক্ষণে।
-গিয়ে কি হবে?
-ওই চাদঁটাকে যানাতে হবে না তুমি আমার হয়েছ?
ও মুচকি হেসে আমার হাত ধরে বলল চলো।তারপর আমরা দুজন ছাদে গিয়ে ওই আকাশটার দিকে তাকিয়ে অনেক্ষণ কথা বললাম।আখঁ খাবে?
-মানে?
-তুমি আখঁ খেতে ভালোবাসো তো তাই এনে রেখেছি! দাড়াও আনছি!
কিছুক্ষণ পর ওর হাতে একটা আখঁ ধরিয়ে দিলাম।তারপর আখঁ খেতে খেতে অনেকটা সময় কথা বলতে লাগলাম দুজনে।ও বলল আমার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে আবির। আমি ওকে তখন কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে গেলাম।তারপর দরজাটা বন্ধ করে।নিজেকে ওর মাঝে বিলিয়ে দিলাম। এতোবছরে যতো অপেক্ষার সব অবসান ঘটল।আর আমার ভালোবাসা পেল পূর্ণতা।

দুদিন পরে আমরা বাড়ির সবাই মিলে আরির খালার বাসায় গেলাম।ওর খালা প্রথমে একটু রেগে ছিল ওর ওভাবে পালিয়ে যাওয়ায় ওনাকে অনেক অপদস্ত হতে হয়েছিল পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে।কিন্তু বাবা-মা অনেক বোঝানোর পর উনি আমাদের মেনে নিয়েছে আর বিবাহিত জীবনের জন্য অনেক দোয়াও করেছে।

বাবা-মা আর রেখা চলে আসার পর অফিসের পাশেই একটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে সেখানে আমরা দুজন খুব সুন্দর ভাবে নিজেদের ছোট্ট একটি সংসার গুছিয়ে ফেলি।খুব অল্প সময়ে আমাকে আরি নিজের মনের মতো করে গড়ে তোলে।ওর সাথে থাকতে থাকতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেও অভ্যাস্ত হয়ে গেছি।কোনও ওয়াক্ত নামাজ মিছ হলে কাজ্বা না পড়া অবদি বউ আমায় খেতে দেয় না।আমাকে বলে দাড়ি রাখলে নাকি আমাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগবে।কি আর করার! বউকে খুশী করতে আমি দাড়ি রাখতেও শুরু করলাম।বিয়ের ছয়মাস পর একদিন আমি অফিসে থাকা অবস্থায় ফোন দিয়ে খুশীর সংবাদ দেয় আমি বাবা হতে চলেছি!! আমার ইচ্ছা হচ্ছিল তখনই আমার বউটার কাছে ছুট্টে চলে যায়।রাতে বাড়ি ফিরে ওকে কোলে তুলে ছাদে নিয়ে যায়।আর সেখানেই বাবুটা আসার পর কি কি করব দুজন আলোচনা করতে করতেই রাতটা কাটিয়ে দিই।মাকে খুশীর সংবাদটা দিলাম মাও খুশীতে আর থাকতে পারলো না।দুইদিন পরই মা এসে আরিকে খুলনায় নিয়ে যাই।এই সময়ে তো মেয়েদের অনেক যত্নের প্রয়োজন। আমি থাকি সারাদিন অফিসে ওর যত্ন ঠিক মতো নিতে পারব না।তবে দিনের মধ্যে সাত,আট বার সময় করে ফোনে খোঁজ নিই।রাতে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ি।আর ঘুম ভাঙে ফজরে সময়, ওর ফোনের রিংটনের শব্দে।মায়ের সাথে যখনই কথা হয় ও সময়মত খেল কিনা।নিজের যত্ন নিল কিনা এসব বারবার জানতে চাই বলে মা হয়তো রেগে যাই আমার উপর।কিন্তু কি করব! খুব ভালোবাসি যে ওকে।আজ আমার বিয়ের এক বছর পাচঁ মাস পূর্ণ হলো।আর আজ আমার একটা ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে।আরিকে সবসময় বলতাম আমার মেয়ে হলে তোমার মতোই বোরখাওয়ালী বানাবো।আজ আমি খুব খুশী অফিসের থেকে ছুটি নিয়ে রওয়া হয়েছি খুলনার উদ্দেশ্য।
,
,
,
১৯ বছর পর,,,,
,
,
ডাইয়েরীর পাতাগুলো বুজিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে অঝোর নয়তে কাদঁতে থাকে আয়াত।আয়াতের কস্টে দম বন্ধ হয়ে আসছে।

বাপি এত্তো ভালোবাসতে তুমি মাম্মামকে? যানো মাম্মামও তোমাকে খুব ভালোবাসে।এখনও তোমার এই ডাইয়েরীটা না জড়িয়ে ধরে রাতে ঘুমাতেই পারে না।আমি অনেক চেস্টা করেছি মাম্মাম আমাকে ডাইয়েরীটা ছুঁতেও দেই নি।বলছে অন্যের ডাইয়েরীতে হাত দেওয়া উচিৎ নয়।আজ মাম্মামকে লুকিয়ে পড়েছি তারজন্য তওবা! তুমি সত্যিই খুব ভালো বাপি।আজ মনে হচ্ছে এই ডাইয়েরীর প্রতিটি পাতার ভাজে ভাজে আমার বাপি মিশে আছে।যানো বাপি যখন আমি প্রাইমারিতে পড়তাম তখন স্কুল ছুটি হলে সবার বাবা তাদের নিতে আসত।আর আমার তখন তোমাকে খুব মনে পরত।হাই স্কুলে প্রেরেন্স ডে’তে বাবা-মাকে নিয়ে টিচারর্সরা মিটিং করত।সবাই তাদের বাবা-মাকে সাথে করে আনত।আমার ওদেরকে বাবার আদর খেতে দেখে তখন খুব মন খারাপ হতো।আজ আমি কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে উঠেছি।অনেক বড় হয়ে গেছি।তবুও মাম্মাম বলে আমি নাকি এখনও শিশু!!

মামনী ভার্সিটির প্রথম দিনে লেট হয়ে যাবে তো তারাতারি আসো।আয়াতকে ডাকছে তার মা।

আসছি মাম্মাম! নিকাবটা বাধঁলেই হয়ে যায়।

মাম্মাম আমি রেডি।পিঁছনের থেকে জড়িয়ে ধরে আয়াত তার মাকে বলল।

এইতো সোনা মেয়ে আমার সাবধানে যাবে আর কারও সাথে দুস্টুমি করবে না কিন্তু।একদম লক্ষী মেয়ের মতোন থাকবে।আয়াতের মাথায় হাত রেখে বলে।

মাম্মাম আজ আমার বাপিকে খুব মনে পরছে।আমাকে একটাবার বাপির ছবি দেখাবে?

কথাটা শুনে আরিয়ার বুকের ভেতরটা ব্যাথায় চিনচিন করে ওঠে।ও চাই না আয়াত তার বাবার সত্যিটা যানুক।
তোমার বাপি বেচেঁ নেই।তুমি যানো তো মৃত ব্যাক্তির ছবি দেখতে হয় না! তাই তোমার বাপির কোনও ছবিই আমরা রাখি নি।বলে বোঝায় আয়াতকে।

সরি মাম্মাম। তোমাকে বাপির কথা মনে করিয়ে খুব কস্ট দিয়ে ফেললাম। এই প্রমিছ আর কক্ষনও এমটা করবো না।

দাদুভাই কত্তক্ষণ বাইরে দাড়িয়ে থাকবো তারাতারি এসো।তোমাকে ভার্সিটি ছেড়ে দিয়ে যে আমাকে ফ্যাক্টেরি যেতে হবে।আয়াতের দাদু বলল।

হ্যাঁ হ্যাঁ যাবে দাদুভাই তোমার দাদু সেই কতোক্ষণ হলো রিক্সা নিয়ে দাড়িয়ে আছে বাইরে।আয়াতের দাদি কথাটি বলে আয়াতকে সাথে নিয়ে এগিয়ে দিতে গেল।

আয়াত চলে যাওয়ার পরই আরিয়া দৌড়ে নিজের ঘড়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দেই।আর আবিরের ডাইয়েরীটা নিজের বাহুতে চেপে ধরে চিৎকার করে কাদঁতে থাকে।কেন আবির, তুমি কেন এমনটা করলে আমার সাথে? আজ আমি চাইলেও তোমার মেয়েকে সত্যিটা বলতে পারছি না।আমি চাইনা তোমার মেয়ে তোমাকে ঘৃণা করুক।হোক না তোমার ডাইয়েরীর প্রত্যেকটা আবেগ মিথ্যা। তবুও আমি তো শুধু তোমায় ভালোবেসেছি।আর তোমার এই ডাইয়েরীর আবেগমাখা শব্দ চয়নগুলো বিশ্বাস করতে চেয়েছি।তুমি খুব ভালো থাকো।তুমি সুখে থাকলেই যে আমি সুখী।

চলবে…..

বোরখাওয়ালী পর্বঃ ০৬

0

#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ০৬
লেখাঃ Mst Liza
,

সন্ধ্যায় ইফতার শেষে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হলাম ডাগবাংলা শপিং মলের উদ্দেশ্যে।এই দিনটাই শপিং মলে প্রচুর ভীর থাকে।হবেই না’বা কেন কাল যে ঈদ! চারিদিকে মানুষ গজগজ করছে।অনেক ঠেলাঠেলির মধ্যে দিয়ে একটি দোকানে গিয়ে বসলাম।গিয়ে বললাম, আমাকে কিছু থ্রীপিস দেখান তো ভাই! সেখান থেকে পাচঁটা ফুল হাতার লং সেলোয়াড় কামিজ কিনে নিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম।বাড়ি এসে দেখি মা ব্যাগ থেকে বাজার নামিয়ে ডালাতে সাজিয়ে রাখছে আর বাবা খাতা-কলমে হিসাব করছে কতটাকা খরচ হলো।রেখার ঘড়ে গিয়ে দেখি পাশের বাসার ভাবীরা হাতে মেহেন্দি দিচ্ছে।আর বোরখাওয়ালী মেহেন্দির ডিজাইনের বইটা নিয়ে নারাচারা করছে।আমি গিয়ে শপিং এর ব্যাগগুলো রেখার সামনে রেখে বললাম তোর আরিয়া আপুকে নিয়ে দর্জির কাছে মাপ দিয়ে আসিস কতোদিন এইভাবে বোরখা পড়ে থাকবে?!

সময়টা রাত ১১টার কাছাকাছি।খাওয়া-দাওয়া শেষে ছাদে এসে দাড়িয়ে ওই বিশাল আকাশটাকে দেখছি।আকাশের ছোট্ট নব চাঁদটা বড়ই সুন্দর লাগছে দেখতে।ইচ্ছে করছে এই রাতটা আমার মায়াবতীকে সাথে নিয়ে কাটিয়ে দিতে।আজ কেন যানি না ওর প্রত্যাবর্তন আমাকে আরও বেশী অনুভব করাচ্ছে।ওকে কাছে পেতে খুব ইচ্ছে করছে।কিন্তু সাহশ হচ্ছে না কিছুতেই ওকে বলতে কতটা ভালোবাসি! ও যদি না বলে দেই!!

হঠাৎ পিঁছন থেকে কারও হাতের নরম স্পর্শ অনুভব করলাম আমার কাধেঁ।ঘুরে তাকিয়ে দেখি আরি।আমার মনে আর কোনও বাধঁ মানছে না।এতোক্ষণতো আমি ওকে নিয়েই ভাবছিলাম।এই চাদঁনি রাতে হালকা আলোর ঝলকানিতে ওকে হঠাৎ এভাবে দেখে আমার খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে!

-এই অন্ধকার রাতে ছাদে এভাবে একা দাড়িয়ে কি করছেন?
-ওই আকাশটাকে দেখছি! আর..
-আর কি?
-তোমার কথা ভাবছি।(আবেগের বসে আমি কি বলে যাচ্ছি তা নিজেও যানি না)
-মানে?
-যানো আরি সেই ছোটবেলায় তোমার দুস্টু, মিস্টি কথাগুলো আমার শুনতে খুব ভালোলাগতো।যেদিন শুনলাম তুমি আর মামি হারিয়ে গিয়েছ সেদিন আমার খুব কস্ট হচ্ছিল। বুকের ভেতরটা শূণ্যতায় ভরে গিয়েছিল।তখন থেকেই এই আকাশটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।আর তোমাকে ভাবতাম।তুমিও তো কোথাও না কোথাও এই আকাশটার নিচেই ছিলে।আমার মনের সব জমানো কথা ওই চাদঁটার কাছে শেয়ার করতাম।আর বলতাম তোমাকে গিয়ে বলতে আমার কথা! এতো বছরে তুমি অনেক বড় হয়ে গেছ।অনেকটা বদলেও গেছ।আমি যানি না এখন তুমি দেখতে কেমন হয়েছ! শুধু যানি তুমিহীনা এই আমির জীবনটাই ব্যর্থ।
-কি বলছেন এসব আপনি?
-সত্যি বলছি আরি বিশ্বাস কর আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি! আর তোমাকে বিয়ে করতে চাই! আমি যানি না আমি তোমার মনের মতো হতে পারবো কিনা! তবে তুমি চাইলেই আমাকে তোমার মনের মতো করে গড়ে তুলতে পারবে! আমাকে একটা সুযোগ দাও প্লিজ!!
-আমি এখানে আপনাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে এসেছিলাম।আর এসে আপনার মুখে যা শুনছি আমি সত্যিই খুব অবাক হচ্ছি।
-কি বলতে এসেছিলে?
-এখন আপনাকে আমার আর কিচ্ছু বলার নেই।বলেই চলে গেল।
ওর এভাবে চলে যাওয়া দেখে আমার হুশ ফিরলো।কি বললাম এসব আমি! আবেগের বসে আমি তো সব বলে ফেললাম।ও রেগে যাবে নাতো! সিইট আমি একটু নিজের ভেতরের আবেগটা কন্ট্রোল করে রাখতে পারলাম না? যদি আমার সাথে আর কথা না বলে? কি করব এখন আমি?

সারাটা রাত জেগে কাটিয়ে দিলাম।সকালে বাবার সাথে ঈদের নামাজ পড়ে এসে রুমে যাব তখন বাবা আর মা আমাকে নিয়ে তাদের রুমে বসলো আগামীকাল মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা বলতে।আমি তো বাবা-মাকে অনেক বুঝিয়েছি।এবার তারা আর ছাড়ার পাত্র না।আমার মাথায় কিছুই খেলছে না।সবকিছু যে আমি গুলিয়ে ফেলছি।দুহাত জোড় করে বাবা-মাকে বোঝালাম।প্লিজ আমাকে তোমরা আর বিয়ের কথা বলো না।আমার এসব শুনতে ভালো লাগছে না।বলেই বাবা-মায়ের রুম থেকে বেড়িয়ে আসবো ঠিক তখনই আরি পাশ কেটে বাবা-মায়ের রুমে ঢুকলো।ওকে দেখে ভাবলাম, কাল রাতের জন্য ওকে সরি বলতে হবে, রুমের বাইরে দাড়িয়ে থাকি ও বের হলেই তখন বলব।তাই দাড়িয়ে ওর অপেক্ষা করছি।আর ভেতরে মায়ের সাথে ওর কথা চলছে,,
-কি হলো ফুপ্পি ওভাবে বসে আছো কেন? রান্না বান্না করবে না, নাকি? শুধু সেমাই খেয়েই সারাদিন থাকা যাই?
-মন ভালো নেই রে মা।
-কেন আমার ফুপ্পিটার আবার কি হলো?
-কি আর হবে।মা হলে ছেলেমেয়ের চিন্তা সবসময় মাথায় ঘুরপাক খাই।আমার ছেলেটা কিছুই বোঝে না।আমাদের বয়স হচ্ছে। কতদিন এভাবে ওদের যত্ন নিতে পারব।এখনই তো সময় ওর বিয়ে করার কিন্তু রাজিই হচ্ছে না!
-কি বললে!! তোমার ছেলের বিয়ে দিবে?
-হ্যা কিন্তু ওতো মেয়ে দেখতেই রাজি হচ্ছে না।
-কেন রাজি হচ্ছে না?
-যানি না! কাউকে পছন্দ থাকলে আমাদের বলুক! কিন্তু তাও বলছে না!
-একটা কথা বলব ফুপ্পি?
-হুমম বল?
-তোমার ছেলেটাকে আমায় দিয়ে দাও।ওকে বল আমায় বিয়ে করতে!
-তুই আমার ছেলেকে বিয়ে করবি মা?
-কেন তোমার আপত্তি আছে?
-কিসের আপত্তি থাকবে! তুই তো আমারই মেয়ে! তোরও তো বিয়ে দিতে হবে।যদি ঘড়ের মেয়ে ঘড়েই থেকে যায় তাহলে তো তার থেকে খুশীর আর কিছুই নেই। কিন্তু আমি ভাবছি আমার ছেলেটাকে নিয়ে।ওকি রাজি হবে?

আমি এতোক্ষণ রুমের বাইরে দাড়িয়েই সব কথা শুনেছিলাম।আরি আমাকে বিয়ে করতে চাই কথাটা শুনেই আমার মনের ভেতরটা খুশীতে ভরে উঠল।আমি খুশিতে ওখানে দাড়িয়েই বললাম,
-মা আমি তোমাদের সব কথাই এতোক্ষণ শুনেছি।ওকে বলে দাও আমার ওকে বিয়ে করতে কোনও আপত্তি নেই।

মা হা হয়ে আছে! এতো তারাতারি আমার সিদ্ধান্ত চেন্জ হতে দেখে হয়তো অবাক হয়েছে! কথাটা বলার পর আমারও একটু লজ্জাবোধ হচ্ছিল।তাই আমি ওখান থেকে আমার রুমে চলে আসি।মনে মনে খুশীতে লাফালাফি করতে থাকি!!

পরের দিন সন্ধ্যার পর মসজিদে আমাদের বিয়ে হয়।বিয়ের সকল নিয়ম আরির সাথে আলোচনা করেই করা হয়েছে।আমাদের গায়ের হলুদও হয়েছিল।ওর পর্দার কোনও ক্ষতি হয় নি।আলাদা রুমে কিছু প্রতিবেশী ভাবী আর চাচিরা ওর গায়ের হলুদের আয়োজন করে।এদিকে রাত হয়ে গেল।খাওয়া-দাওয়া শেষ।আমার বউয়ের মুখটাই এখনও আমার দেখা হলো না।অথচ তাকে আমি কত্তো ভালেবাসি।ভালোবাসার কথা বলতেই তার ছোটবেলার ওই মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে আসে।

রেখা আর প্রতিবেশী ভাবীরা আমাকে বাসর ঘড়ে ঢুকিয়ে দিয়ে চলে গেল।আমার রুমটা আমি নিজেই চিনতে পারছি না।এত্ত সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।ফুলে ফুলে কেমন যেন অন্য রকম এক রাজ্যে মনে হচ্ছে।যেই রাজ্যে আমি শাহাজাদা আর আমার শাহাজাদী আমার জন্য ফুলের বিছানায় বসে আছে। এতোদিনের সব অপেক্ষার আজ বাধঁ ভাঙবে।আমি দরজাটা বন্ধ করে বিছানার কাছে গিয়ে দাড়াতেই আরি আমাকে নেমে সালাম করল।আমি ওকে উঠিয়ে সালামের উত্তর দিলাম।আর বললাম, আমার বউটা দেখছি বাসর ঘড়েও বোরখা পড়েই আছে।আজ কি আমি তার মুখটা দেখতে পারব?

চলবে….

বোরখাওয়ালী পর্বঃ ০৫

0

#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ০৫
লেখাঃ Mst Liza
,
আমি আধ ঘন্টা পর বাড়িতে ঢুকলাম। গিয়ে দেখি বাড়ির মেইন দরজাটা খোলা।কোনও সাড়া শব্দ কিচ্ছু নেই।আমার পায়ের শব্দ পেয়ে কেউ একজন এগিয়ে আসলো।দেখি ছোট বোন রেখা।মায়ের রুমের দরজাটা হালকা করে ভিজিয়েই আমাকে দেখে দৌড়ে এসে আমার হাত থেকে ব্যাগগুলো কেরে নিয়ে,
-আমাদের জন্য কি কি এনেছিস রে ভাইয়া?
-এইতো তোদের জন্য ঈদের কাপড় সর তো!
আমি ওর সাথে কথা বলছি আর এদিকে ওদিকে তাকিয়ে খুঁজছি বোরখাওয়ালী গেল কোথায়?
-কি রে ভাইয়া ওভাবে কাকে খুঁজছিস তুই? আর ওইভাবে গা ঝারা দিয়ে কেন কথা বলছিস?
-কোই না তো বাবা-মাকে দেখছি না, বাবা-মা কোথায় রে?
-বাবা এখনও বাড়িতে ফিরে নি।আর মা রুমে আছে সাথে আরিয়া আপুও।
কি ভাবছিস আরিয়া আপু কে? আরে তুই বলতি না আশরাফ মামার একটা মেয়ে ছিল সেই মেয়ে।চল দেখবি আয়।বলে আমার হাত ধরে টানতে টানতে মায়ের রুমে নিয়ে যাই।মা দেখ আবির ভাইয়া এসেছে।
গিয়ে দেখি বিছানায় মায়ের কোলে মাথা রেখে বোরখাওয়ালী শুয়ে আছে আর মায়ের চোখে পানি।আমি যেতেই বোরখাওয়ালী উঠে বসে আমাকে দেখে অবাক!!
-আপনি??
মা, রেখা দুজনেই প্রশ্ন করল কি হলো??
রেখার মুখে ভাইয়া শব্দটা শুনে ও হয়তো বুঝে গেছে আমি আবির!
-এইটা কি তোমার ছেলে ফুপ্পি??
-হ্যাঁ কেন?
-তোমার ছেলেটা খুব পচাঁ ফুপ্পি।আজ সারাটা রাস্তা সেই ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত আমার সাথে আমার পাশের সিটে বসে একই বাসে করে এসেছে।আমি তোমাদের বাড়ির ঠিকানা দেখিয়েছিলাম।আমার নামও বলেছিলাম।বলেছিলাম আমার ফুপ্পির বাড়িতে যাব!কিন্তু আমাকে একবারের জন্যও নিজের পরিচয়টা দিল না।কেন এমন করল?? (একদমে বলল কথাগুলো)

আমি তখন কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না তবুও নিঃশ্বংকোচে বললাম।সরি আরি।আসলে আমি তোমাকে প্রথমে দেখে চিনতে পারছিলাম না।পরে যখন চিনলাম তোমাকে আমি তোমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম।তুমি তো আমাকে কিছুই বল নি।পরিচয় না যেনে কিভাবে..
-আচ্ছা ঠিক আছে।সরি বলার কোনও দরকার নেই।বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
মেয়েটা এখনও সেই বোরখা পরেই আছে। চেন্জ করে নি।
-কি হলো মা ওকি এই বোরখা পরেই সারাজীবন থাকবে নাকি?
-আরে কথা বলতে বলতে চেনন্জ করার সময় পাই নি! এখানে আই আমার কাছে বস্ তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে?
বসতে বসতে বললাম,
-কি কথা?
-পরসু তো তোর মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা ভুলে গেলি?
আমার মনে পরল হ্যাঁ বাবা-মা তো আমাকে বলেছিল আমার জন্য মেয়ে পছন্দ করে রেখেছে।আর পরসুই তো দেখতে যাওয়ার কথা।কিন্তু আমি তো কখনও ভাবি নি এইভাবে আরির সাথে আমার আবার দেখা হয়ে যাবে।কি করব এখন আমি?
-কিরে কি ভাবছিস?
-মা অপরাধ নিও না, আমি এখন কোনও বিয়ে টিয়ে করতে পারবো না!
-কেন,,বড় হয়েছিস।ভাল জব করছিস তাহলে বিয়ে করতে অসুবিধা কোথায়?
-মা আমাকে আর কিছুদিন সময় দাও তারপর!
-দেখ মেয়েটাকে দেখে আসতে তো সমস্যা নেই! প্রথমে তুই দেখ তারপর নাহয় পছন্দ হলে সেইভাবে পাকা কথাবার্তা বলে সময় নিয়ে পড়ে বিয়ে করিস!
আমি হ্যাঁ না কিছুই বলি নি।মায়ের রুম থেকে বেড়িয়ে এসে ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখি সোফায় বোরখাওয়ালী বসে আছে।আমি গিয়ে পাশে বসলাম।
-কি হলো এখনও আপনি এই বোরখা পরেই থাকবেন নাকি?
-মানে?
-চেন্জ করবেন না? বাসার মধ্যেও বোরখা পরে থাকবেন?
-সেই তো তুমি করে কথা বলছিলেন এখন আবার আপনি তে ফিরে আসলেন যে??
-এখানে তো আপনার মাহারাম নেই তাই! একান্তে কথা বলতে গিয়ে খারাপ কিছু যেন না ঘটে তাই আরকি!!
-আসলে আমি আসার সময় পরনের কোনও পোষাক সাথে করে আনি নাই।শুধু কিছু টাকা আর এই ঠিকানাটাই ছিল!!

কথাটা শুনে আমি একটু থমকে গেলাম,
,
-আচ্ছা আরি মামি কেমন আছে? আর কি এমন হয়েছিল যার জন্য এইভাবে পালিয়ে আসতে হলো?

-আসলে সেদিন আপনারা খুলনায় চলে আসার পর।কিছু লোক এসে বলেছিল বাবাই তাদের কাছ থেকে অনেক টাকা ধার নিয়েছে।সুদসমেত ১৫লক্ষ টাকার মতো দাড়ায়। মা সেই সময় কোনও উপায় না খুজেঁ পেয়ে সবকিছু বিক্রি করে তাদের সব পাওনা মিটিয়ে আমাকে নিয়ে খালার বাসায় যায়।খালা মাকে একটা চাকরি যোগার করে দেই আর সেইখানে মা চাকরি করে আমাকে নিয়ে খালার সংসারেই ভালোভাবে এতোবছর ছিল।দুইবছর আগে মা ইন্তেকাল করেন।তারপর খালা আমাকে আর পড়ালেখা করাতে চান নি।কিছুদিন আগে খালা আমার বিয়ে ঠিক করে এক বিশাল ধনী লোকের সাথে।যারা খুব মর্ডাণ।খালা বলে দিয়েছে বিয়ে করলে ওই পরিবারেই করতে হবে।খালা বলেছিল ওই পরিবারে বিয়ে হলে আমি নাকি জীবনটা আরাম, আয়েশে কাটাতে পারব।কিন্তু যখন শুনলাম-বিয়ে, গায়ের হলুদ, বউ ভাতের দিন আমাকে সঙ সেজে স্টেজে বসে থাকতে হবে।আর শহর ভর্তি হাজার হাজার নিমন্ত্রিত পরপুরুষের চোখ পরবে আমার দিকে।তখন আমার মনে হল, এই বিয়েটা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আমি জাহান্নামে যেতে চাই না!
আমি চাইনা এমন আরাম আয়েশ, চাইনা এমন ধনী বর।আমার তো একজন দ্বীনদার স্বামী চাই।যে আল্লাহর ভয়ে আমাকে ভালোবাসবে।আমাকে নিয়ে জান্নাতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখবে।
ওখানে বিয়ে হলে আমি আল্লাহর পথে ঠিকভাবে চলতে পারতাম না।আমি আল্লাহকে খুব ভয় পাই।আমার তো যাওয়ার কোনও জায়গা নেই।আপন বলতেও তো আমার আর কেউ ছিল না দুনিয়াতে। দুদিন আগে আমার পুরোনো বাড়িটাতে ঘুরতে গিয়েছিলাম।যেখানে আমার বাবাই আর মায়ের স্মৃতি মিশে আছে।আছে আমার ছোটবেলার সেই সুন্দর দিনগুলো মিশে।ওখানে গিয়েই কথায় কথায় এক বৃদ্ধা মহিলা আমাকে আপনাদের বাড়ির ঠিকানাটা দেই।তারপর আর কিছু ভেবে না পেয়ে, কিছু টাকা আর এই ঠিকানাটা নিয়ে এখানে পালিয়ে চলে আসি।আমি যানি না আমার এভাবে পালিয়ে আসা ঠিক হয়েছে কিনা! আমি এটাও যানি না এখন আমার কি করা উচিৎ।তবে এটোটুকু যানি আমি যা করেছি আল্লাহ সেটা বুঝবে। (কথাগুলো বলতে বলতে আরির ডান চোখ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে নেকাবের উপর পরতে দেখলাম)

ওর কথাগুলো শুনে আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম।ভাবলাম যে রকম জীবনসঙ্গী ও চাই আমি তো তার কিছুই না।ঠিক মতো ৫ ওয়াক্ত নামাজটায় আদায় করা হয় না।কিভাবে ওকে বলব আমি কতটা ভালোবাসি? ওর সাথে সারাটাজীবন কাটাতে চাই!!

কিছুক্ষণ পর,,,

-আচ্ছা আপনি তাহলে এখন কি পরবেন? কাপড় চোপড় কিছুই তো আনেন নি! রেখার সেলোয়ার আপনার গায়ে খাটবে না।আমি কি মাকে একটা শাড়ি দিতে বলব?
-না আমি শাড়ি পড়ব না।শাড়িতে সঠিকভাবে পর্দা রক্ষা হয় না।তার থেকে আমি এভাবেই ঠিক আছি।কোনও অসুবিধা হচ্ছে না আমার!
-আশ্চর্য, এইভাবে বোরখা পরে কতক্ষণ থাকবেন আপনি?
-আমি পারব! সে আপনার চিন্তা করা লাগবে না!
কিছুক্ষণ পর আমি মায়ের রুম থেকে মায়ের বোরখাটা এনে দিলাম,
-নিন গোসল করে এটা পড়ে নিন!

চলবে…..

বোরখাওয়ালী পর্বঃ ৪

0

#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ৪
লেখাঃ Mst Liza
.

লঞ্চ-ঘাট পার হয়ে আমরা গিয়ে বাসে উঠলাম।এর মাধ্যে আমাদের মাঝে আর তেমন কোনও কথা হয় নি।বাস চলতে শুরু করেছে…আর আমরা দুজনেই পাশাপাশি নীরবে বসে আছি।এমন সময় জানালার দমকা বাতাস এসে আমার চুলগুলো হালকা ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে।খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে এক প্রশান্তির আভাস ফিরে পেয়েছি।চোখদুটো বন্ধ করে ডুব দিলাম সেই অতীতের ১৫ বছর আগে..
তখন আমি ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়ি।বাবা প্রবাসী ছিল তাই আমি আর মা তখন মামার বাড়িতেই থাকতাম।বড়দের খুব সম্মাণ করতাম।আমি যখন যা আবদার করতাম মামা সব আবদার পূরণ করে দিত।মামার একটি পুচকি মেয়ে ছিল নাম আরি।সবার খুব আদরের।শুধু আদরের বললেই ভুল হবে যা পটু না!!একবার কথা বলা শুরু করলে আর থামার নাম নেই।ওইটুকু ছোট্ট একটি মেয়ে তার কথা শুনলে যে কোনও বড়, বুড়ো মানুষও টাসকি খেয়ে যাবে।সে একবার ঈদের সময়কার কথা খুব রমরমাট আয়োজন চলছিলো চারিদিকে।সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেই আমাকে ডাকা শুরু করে দিয়েছে।বলছে এই আবির ওঠো! ওঠো না! তুমি না বলেছিলে আজ আমায় মেলায় নিয়ে যাবে?
আমি ওকে বুঝালাম দেখো আরি এতো সকালে মেলার কোনও দোকানপাট খুলে নি।সবাই আগে ঈদের নামাজ পরবে, সেমাই খাবে, সেলামি দেবে। তাই দোকান খুলবে। তুমি আমাকে এখন ঘুমাতে দাও।
-নাহ না তুমি আমাকে ঢপ দিচ্ছ।এক্ষুণি আমাকে নিয়ে যাবে তোমার স্কুল মাঠটিতে।আমি এখনই যাব, গিয়ে দেখবো, তাই তোমার কথা বিশ্বাস করবো মেলা হচ্ছে কিনা!! কাল সারারাত ঘুমিইনি আমি মেলায় গিয়ে নাগরদোলা চরবো বলে।আর তুমি বলছ এখন যাবে না তাই না?
-আহহ আমি যাব না কখন বললাম আমি তো বলেছি পরে যাব।আর মেলাতে নাগরদোলা আসবে তোমায় কে বলেছে?
-আমি যানি মেলায় নাগরদোলা থাকে।আগে একবার নাগরদোলা এসেছিল তো। তখন তো আমি ছোট ছিলাম।তাই বাবাই উঠতে দেই নি।বলেছিল পরে যাবো এখন পরে যাব না তুমি আছো তো।তোমার সাথে উঠে চুপচাপ তোমার হাতটি ধরে বসে থাকব।একবার আকাশে উড়বো আবার আকাশ থেকে ঘুরে এসে মাটিতে নামবো কি মজাটাই না হবে বল? চল চল!! আমি তো ওর কথা শুনে হাত, পা ছুটিয়ে হাসা শুরু করেছি।আর ঘুমিয়ে কি হবে।এই পুচকি আমায় ঘুমাতে দিল তো।তার থেকে বরং গিয়ে দেখিয়ে আনি।
গিয়ে দেখি মাঠ খালি।সবে কয়েকটি দোকান বসেছে কসমেটিকস্ এর সেইগুলো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা আছে।আসে পাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না।-দেখেছো সব দোকান বন্ধ।এখন বাড়ি চল।তখন মুখ কালো করে বাড়ি চলে আসলো।আমার খুব খারাপ লাগছিল ওর অমন চেহারাটা দেখে।
জানুয়ারি তে আরি কে স্কুলে ভর্তি করা হলো।রোজ একসাথে স্কুলে যেতাম।একদিন স্কুলের সামনে একটি লোক ভ্যানে করে আঁখ নিয়ে বসেছিল।ওর যখন ছুটি হয় তখন আমার টিফিন।সেদিন ক্লাসে কারও পড়া হয় নি।আমাদের সবাইকে স্যার কান ধরে বেঞ্চের উপর দাড়ঁ করিয়ে রেখেছে।টিফিনের ঘন্টা বেজে উঠার পরও স্যার ক্লাস থেকে যায় নি।হঠাৎ ক্লাস রুমের দরজার সামনে এসে
-এই আবির তোমরা সবাই ওই রকম কান ধরে দারিয়ে আছো কেন? এটা আবার কেমন পিটি করছো তোমরা সবাই?
-একি আরি দেখছো না স্যার ক্লাসে আছে।এখন এখান থেকে যাও।
-যাব তার আগে আমাকে ৫টা টাকা ধার দাও তো।আমি আঁখ খাবো। বাড়িতে গিয়ে বাবাই কে বলে তোমার টাকাটা আমি দিয়ে দেব।
সবাই হাসছে ওর কথা শুনে।স্যারও কিছু বলে নি পুচকি মেয়ে বলে কথা।আমার কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে স্যার ওকে দিয়ে দিলে ও দৌড়ে চলে গেল।এরকম আরও অনেক স্মৃতি আছে যেগুলো মন থেকে মুছে যাবার নয়।জীবনে যেমন আনন্দের সময় আসে তেমন কস্টের সময়ও আসে।হঠাৎ একদিন মামার ট্রাক এক্সিডেন্টে মৃত্যু হয়।তার কিছুদিন পর আমার বাবা দেশে ফিরে আসে।আমাকে আর মাকে নিয়ে খুলনায় এসে বিজনেস শুরু করে।আমরা পরে ওদের খোঁজ নিয়েছিলাম কিন্তু পাই নি।আরি আর মামি তখন মামার বাড়িতে ছিল না।শুনেছিলাম মামা সব সম্পত্তি মামির নামে অনেক আগেই লিখে দিয়েছিল।আর মামি সম্পত্তি বিক্রি করে মেয়েকে নিয়ে কোথায় গিয়েছে তা কেউ বলতে পারবে না।মামা আর মামির বিয়েটা পালিয়ে হয়েছিল।মামির বাবার বাড়ির কোনও ঠিকানা না পাওয়ায় আমাদের আর তাদের সাথে যোগাযোগ রাখা হয় নি।তবে আমরা অনেক খুঁজেছি।যারা মামির কাছ থেকে সম্পত্তি কিনেছিল তাদেরকে অনেক অনুরোধ করে আমাদের খুলনার বাড়ির ঠিকানাটা বাবা-মা দিয়ে এসেছিল।বলেছিল যদি কখনও ওরা খোঁজ করে তাহলে যেন আমাদের ঠিকানা টা দিয়ে দেই।
কিন্তু এতো বছর পর আরি এইভাবে আমার সামনে এসে দাড়াবে তা আমি ভাবতে পারি নি।সত্যি বলতে সেই ছোটবেলা থেকেই আমার মন শুধু ওকেই ভালোবেসেছে।অনেক অপেক্ষা করেছি ওর জন্য।কিন্তু এখন ও কাছে থাকতেও আমি কিছু বলতে পারছি না।এ যেন সম্পূর্ণ আলাদা একটি মেয়ে।কেউ এতোটা বদলে যাই কিভাবে? আচ্ছা ওকি আমাকে চিনবে? সেই আগের মতোন নাম ধরে ডেকে দুষ্টু-মিস্টি কথাগুলো বলবে? না ওতো এখন বোরখাওয়ালী।বদলে গেছেও।এখন এই বোরখাওয়ালীর মাথায় ভালোবাসার মানে ঢুকবে না।

বর্তমান,,,,,,

-এই যে শুনুন
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আমাকে বোরখাওয়ালী ডাকছে।
-আমরা কি চলে এসেছি?
তাকিয়ে দেখি বাসের সব যাত্রী নেমে যাচ্ছে।বাসের জানালায় উঁকি দিয়ে দেখি বাস নতুন রাস্তায় এসে দাড়িঁয়েছে।এখান থেকে বাস আর যাবে না।
-হ্যাঁ, আমরা এসে গেছি নামুন।
-আপনি সরলে তো নামবো
-ওহহ হ্যাঁ, সরি!
আমি সিট থেকে উঠে উপর থেকে ব্যাগগুলো নামালাম।
তারপর বাস থেকে নেমে একটি রিক্সা ডাকলাম।
যদিও রিক্সাতে বোরখাওয়ালী উঠতে চাই নি।বলেছিল ইজি বাইকে যাবে।কিন্তু আমি বোঝালাম এতোগুলো ব্যাগ নিয়ে ইজি বাইকে গেলে মেইন রোডে গিয়ে নামিয়ে দেবে তারথেকে বরং রিক্সাতে করে যাই বাড়ির সামনে নামালে ব্যাগগুলো বইয়ে নেওয়ার ধকল থাকবে না।
-পুরুষ মানুষের এত্তগুলো ব্যাগ লাগে?
-আরে এতে কি শুধু আমার কাপড় নাকি? বাড়ির সকলের জন্য ঈদের কাপড়ও আছে।

দুজনে একটা দোতলা বিল্ডিং এর সামনে এসে রিক্সা থেকে নামলাম।
-নিন এসে গেছি আপনার ফুপ্পির বাড়িতে!
-আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেব? যানি না আর কোনও দিন দেখা হবে কিনা!! তবে আল্লাহর যেন আপনার ভালো করে। ভালো থাকবেন। আসি।আল্লাহ হাফেজ।
পেঁছনের দিকে আর ঘুরে তাকালো না।সোজা হেটে গেটের কাছে গিয়ে কলিংবেল বাজাল।

চলবে…. ইনশাআল্লাহ..

বোরখাওয়ালী পর্বঃ ০৩

2

#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ০৩
লেখাঃ Mst Liza

-না চাইলে বলবেন না!! তবুও আমি আপনাকে আপনার ফুপ্পির বাড়িতে পৌঁছে দেব।এতোটা রাস্তা আপনার সাথে চললাম আমার তো এটুকু যানার রাইট আছে।
-আসলে আমি নিজের কথা বাইরের মানুষের সাথে শেয়ার করি না।
-আচ্ছা বাদ দিন অন্যকথা বলি!!
-অন্য কি কথা? (মুচকি হেসে)
-এই যে আপনি পর্দা করেন।আজকের দিনে আপনার মতো বোরখাওয়ালী ঢাকা শহরে কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায় না।সব মেয়েরা যদি আপনার মতো হতো তাহলে আজ স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির মেয়েদের রাস্তার বকাটেদের কাছে উত্তক্ত হতে হতো না।
-তার কারণ তাদের মধ্য পর্দার বাস্তবিক জ্ঞান নেই।পর্দায় যে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় সেটা তারা বোঝে না। এমন অনেক অহরহ খবর রেডিও, পত্রিকা, টেলিভিশনের পর্দায় খুঁজে পাবেন যেখানে অনেক যুবতী এবং নাবালক শিশুও নির্যাতিত হচ্ছে।পর্দার অভাবে ছাড় পাচ্ছে না রাস্তা বকাটেদের কাছেও উত্যাক্ত হওয়ার থেকে।
-আচ্ছা বুঝলাম! তবে একটা প্রশ্ন!! পর্দা না করার জন্য তো রাস্তার বকাটেদের কাছে মেয়েদের উত্তাক্ত হতে হয় তাহলে যারা পর্দা করে এবং শিশুরা, তারা কেন নির্যাতিত হয়?
-এর জন্য পুরুষদের ও পর্দা করতে বলা হয়েছে।
-বলেন কি? পুরুষরা ও বোরখা এসব পড়বে নাকি? হাহাহা
-হিহি, আসলেই তা না। পুরুষদের পর্দা বলতে তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার কথা বলা হয়েছে…
(কোন নারীর উপর আপনার দৃষ্টি পড়লে তার প্রতি) বারবার দৃষ্টিপাত করতে পারবেন না। বরং নজর অতিসত্তর ফিরিয়ে নিন, কারণ, আপনার জন্য প্রথমবার ক্ষমা, দ্বিতীয়বার নয়। (আহমদঃ ১৩৬৯)
.
পুরুষরা যদি তাদের দৃষ্টি সংযত রাখতো তাহলে এভাবে আর পর্দাশীল নারী এবং শিশুদের নির্যাতিত হতে হতোনা!
-বুঝলাম! পুরুষরা যদি পর্দাশীল নারীর উপর খারাপ দৃষ্টি দেয় তাহলে আর পর্দা করে লাভ কি?
-ওই যে আপনি বললেন না? তার জন্য!!
পর্দা না করলে যে জাহান্নামে যেতে হবে!

পর্দা না করার শাস্তি সম্পর্কিত হাদিস

?
১)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“ দু’ শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামী হবে: –

যারা গরুর লেজ সদৃশ বেত দ্বারা মানুষকে প্রহার করে এবং যে সব নারী এত পাতলা পোশাক পরিধান করে যে তার ভেতর দিয়ে শরীরের অংশ দেখা যায় এবং উটের কুঁজের মতন কেশ বিন্যাস করবে। এ নারী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না, যা বহুদূর থেকে পাওয়া যায়।”

[সহীহ মুসলিম হাদিস নং: ২১২৭,মুসনাদে আহমাদ, হাদীস:৮৬৬৫]

২)
রাসুল [সা.] বলেছেন, তিন শ্রেণীর মানুষের উপর জান্নাত হারাম অর্থাৎ এই তিন শ্রেণীর মানুষ কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

প্রথম শ্রেণী হলো- যারা কোনো প্রকার নেশাদারদ্রব্য পান বা গ্রহণ করে।

দ্বিতীয় শ্রেণী হলো- যে বা যারা পিতা-মাতারঅবাধ্য, এই শ্রেণীভূক্ত মানুষরাওজান্নাতে যাবে না।

তৃতীয় শ্রেণী হলো-দাইউস। ঐ দাইউস ব্যক্তি যে তার পরিবারে পর্দা প্রথা চালু রাখেনি। পরিবারের সদ্যসের মাঝে বেপর্দা ছিলো, বেহায়াপনা ছিলো কিন্তু সে বাধা প্রদান করেনি। পরিবারের কর্তা হিসেবে বেপর্দা-বেহায়াপনা বন্ধ না করার জন্য এই শাস্তি পাবে সে।
[মুসনাদে আহমাদ: ২/৬৯]

৩)
আর সুগন্ধি আকর্ষণের এমন একটি মাধ্যম যা দৃষ্টি-অবনত ব্যাক্তিকেও আকৃষ্ট করে। সুতরাং এ বিষয়ে কতটা সতর্ক থাকা দরকার তা নিজেরাই ভেবে দেখি। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘‘প্রত্যেক চোখ যিনা করে। আর কোন নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন মজলিশের পাশ দিয়ে যায় তাহলে সেও নযরের যিনা বা সরাসরি যিনার প্রতি প্রলব্ধুকারী হিসেবে গণ্য হবে।
(জামেতিরমিযী, হাদীস:২৭৮৬)

৪)
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হলে নিঃসন্দেহে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান।(অর্থাৎ তখন শয়তান তাদের মনে কুমন্ত্রণা দেয়)।”
(জামে তিরমিযী,হাদীস : ১১৭১)

৫)
রাসুল(সঃ) ইরশাদ করেন, খবরদার তোমার বেগানা স্ত্রীলোকের ঘরে প্রবেশ করো না। জনৈক সাহাবী জিজ্ঞাসা করেন ইয়া রাসুলুল্লাহ(সঃ) স্বামীর ভাইদের(ভাসুর, দেবর, বেয়াই ইত্যাদি) সম্পর্কে কি নির্দেশ? রাসুল(সঃ) ইরশাদ করেন তারা তো স্ত্রীর জন্য মৃত্যুতুল্য। অর্থাৎ মহাবিপদতুল্য। (তিরমিজিঃ ১/২২০)

৬)
উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা(রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি এবং মাইমুনা(রাঃ) রাসুল(সঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় অন্ধ সাহাবী ইবনে উম্মে মাখতুম(রাঃ) সেখানে আসতে লাগলেন। তখন রাসুল(স) বললেন তোমরা তার থেকে পর্দা করো, আড়ালে চলে যাও। আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ তিনি তো অন্ধ। তিনি তো আমাদের দেখতে পাচ্ছেন না। তখন রাসুল(স) বললেন তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখতে পাচ্ছো না? (আবু দাউদ ২/৫৬৮)

৭)
রাসুল(সঃ) বলেন নারী হল গোপনীয় সত্ত্বা।যখন সে ঘর থেকে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে দৃষ্টি উচু করে তাকাতে থাকে। (তিরমিযি১/২২২)

৮)
রাসুল(সঃ) বলেন , আমার পরে নারী ফিতনা(পরীক্ষা) পুরুষদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করবে। (বুখারি ও মুসলিম)

৯)
ভ্রু প্লাক করা ও পরচুলা পরা হারাম !!

বর্তমান সময়ের ফ্যাশন সচেতন বোনেরা অনেকেই ভ্রু প্লাক করে থাকে এবং নানা রঙের নানা ধরনের পরচুলাও ব্যাবহার করে থাকে। অথচ যারা এমন করে, রাসুল (সাঃ) তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন। কাজেই তাদেরকে আল্লাহর ভয়ে এই ধরনের গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

● আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ হোক সেই সব নারীদের উপর, যারা দেহাঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে এবং যারা করায়, এবং সেসব উপর, যারা ভ্রু চেঁছে সরু (প্লাক) করে, যারা সৌন্দর্য মানসে দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে।’ জনৈক মহিলা এ ব্যাপারে তার (ইবনে মাসউদের) প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন, ‘আমি কি তাকে অভিসম্পাত করব না, যাকে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) অভিসম্পাত করেছেন এবং তা আল্লাহর কিতাবে আছে? আল্লাহ বলেছেন, “রাসুল যে বিধান তোমাদেরকে দিয়েছেন তা গ্রহন কর, আর যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাক। (সূরা হাশরঃ৭)”

● ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যে মহিলা পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যে পরচুলা লাগাতে বলে, আর যে মহিলা অঙ্গ প্রত্যঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে ও উল্কি উৎকীর্ণ করতে বলে তাদেরকে অভিশাপ করেছেন।

[সহীহ বুখারির ৫৫০৭ থেকে ৫৫২৪ নং হাদিস দেখুন]

১০)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “নারীরা হচ্ছে চাদর এবং যদি সে গৃহের বাইরে যায় তবে শয়তান খুশি হয় (তাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে বলে)। সে (নারী) আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে না যতটা সে গৃহে থেকে করতে পারতো।” [ইবনে হিব্বান ও ইবনে আবী খুযাইমাহ, আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন, সিলসিলা আস সহীহাহ ২৬৮৮]

এবং তিনি (সাঃ) নারীদের মসজিদে সালাত আদায়ের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে বলেছিলেন, “তাদের গৃহই তাদের জন্য উত্তম।” [আবু দাউদ ৫৬৭]

১১)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বড় আর কোন ফিতনাহ রেখে যাচ্ছিনা। আর, বনী ইসরাইলের প্রথম ফিতনাহই ছিলো নারী সংক্রান্ত। সুতরাং লোকদের উচিত তাদের পরিবারকে ফিতনাহ এবং ফিতনাহর উপকরণ থেকে দুরে রাখা। [ফতোয়ায়ে আল-মার’আহ আল মুসলিমাহ : ২/৯৮১]

১২)
আবু হুরায়ররা (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মহান আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে, তার মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন এক রাতের দূরত্ব সফর করা বৈধ নয়।’’

[সহীহ বুখারীঃ হাদীস ১০৮৮, সহীহ মুসলিমঃ ১৩৩৯]

-সব বুঝলাম!! কিন্তু এই যে আপনি মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকি সফরে বের হয়েছেন। তাহলে তো এটাও বৈধ নয়।এটা তাহলে হারাম যা ইসলাম আপনাকে অনুমতি দেয় না।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে…
-কারণ আমি পরিস্থিতির স্বীকার।আর তাছাড়াও “তীব্র প্রয়োজন হারামকে হালাল করে দেয়।”[কাওয়ায়েদুল ফিক্কহ, কায়দা নং-১৭১] আর আমার বিশ্বাস আল্লাহ আমার অবস্থা বুঝবে এবং ইনশাআল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন।

চলবে….ইনশাআল্লাহ..

বোরখাওয়ালী পর্বঃ০২

0

#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ০২
লেখাঃ Mst Liza

আমি মেয়েটির হাতের কাগজটা নিয়ে দেখে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইলাম।তারপর বললাম,

-কার বাড়ির ঠিকানা এটা??
-আমার ফুপ্পির বাড়ির ঠিকানা।।।

আমি একটু অবাক হলাম।আর মনে মনে ভাবলাম এ কি সে? আচ্ছা, এই জন্যই হয়তো আমার মেয়েটাকে এতো চেনা চেনা লাগছে।না হলে এতো মায়া জড়ানো কেন এই বোরকাওয়ালীর চোখে।যা আমাকে ভেতর থেকে শুধুই তার দিকে টানছে। ভাবতে ভাবতেই আমার মুখে এক চিলতি বিজয়ের হাসি চলে আসলো।মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে, খেয়াল করেছে আমি হাসছি।

-একি আপনি হাসছেন কেন?

(ভাবনার দেয়াল ভেদ করে আমি বাস্তবে ফিরে আসলাম)

-কোই না তো, হাসছি না।অনেকদিন পর বাড়িতে যাচ্ছি তো পরিবারের সকলে কত্ত খুশী হবে আমাকে দেখে তাই আর কি মনে মনে ভেবেই না কত্ত আনন্দ লাগছে।
-আচ্ছা ঠিকানাটা ভালো করে দেখেছেন আপনি?
-হ্যাঁ; দেখলাম তো।
-আপনার এলাকারই ঠিকানা বাড়িটা কি আপনার বাড়ির আসে পাশে? আপনি কি চিনতে পারবেন ঠিকানাটা?
-ঝট করে বলে উঠলাম চিনি তো।আমি না চিনলে কে চিনবে?
-জ্বি; আপনি চিনেন?
-না মাননে আমি আমার বাড়ির আসেপাশের কোনও বাড়ির ঠিকানা চিনবো না তাকি হয় নাকি? এই তো আমাদের বাড়ি থেকে দুই রাস্তার মোড় ঘুড়লেই এই বাড়িটা।
-যাক ভালোই হলো।আপনি আমাকে এই ঠিকানাটাই একটু পৌঁছে দিতে পারবেন? তাহলে আমি আপনার কাছে খুব কৃতজ্ঞ থাকবো।
-অবশ্যই পারব!! আরি..
-জ্বী, কি?
-কিছু বলবেন?
-না আপনি আমার নাম ধরে ডাকলেন তো!
-আপনার নাম বুঝি আরি?
-আরিয়া। ভালোবেসে সবাই আরি বলে ডাকে।কিন্তু আপনি আমার নাম যানলেন কিভাবে?
-কোই আমি তো আপনার নাম যানি না।আমি তো বললাম আরে।।ঐ তো দেখেন সামনের সিটে মহিলার কোলে বসা বাচ্চাটা সেই বাসে উঠেছে ধরেই কতোবার যে বমি করে যাচ্ছে!!

(মেয়েটি খেয়াল করল হ্যাঁ বাচ্চাটার অবস্থা খুব খারাপ)

কিছুক্ষণ পর,,,,

মেয়েটি ঘুমিয়ে আছে।আমি ডাকতে শুরু করলাম,

-এই যে মিস বোরকাওয়ালী!! সরি আরিয়া উঠেন এখানেই ঘুমিয়ে থাকার প্লান করেছেন নাকি?

আরিয়া ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে,

-কি হলো ডাকছেন কেন?
-এই বাসে করেই আবার ঢাকায় চলে যেতে চান নাকি?

বোরকাওয়ালী আই মিন আরিয়া চোখ ডলতে ডলতে মাথাটা একটু উঁচু করে ডানে-বামে, সামনে-পিঁছনে, তাকিয়ে দেখে পুরো বাস খালী।কোনও যাত্রী নেই।শুধু আমরা দুজন ছাড়া।

-একি আমি চলে এসেছি খুলনা শহরে?(হাতের ঘড়িটার দিকে তাকাতে তাকাতে বলল)
-কে বলেছে আমরা চলে এসেছি।
চোখদুটো বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে!
-তাইতো এখনতো মাত্র (11:57 am) বাজে এত্ত তারাতারি কিভাবে আসলাম আমরা?
-কে বলেছে আমরা চলে আসছি?
-তাহলে বাসের অন্যযাত্রীরা গেল কোথায়?
-এটা লঞ্চ-ঘাট। লঞ্চ পার হয়ে এই কোম্পানির বাস ওপার পাবেন।সেখানে গিয়ে কোড নাম্বার 105 খুঁজে কোম্পানির বাসটিতে আপনাকে উঠতে হবে।
-আমি যদি বাস খুঁজে না পাই?
-এত্ত ভয় পান কেন আপনি? আমি আছি তো!তাছাড়াও আপনি বাস পর্যন্ত না পৌঁছালেও টিকিট কাটার সময় যেই ফোন নাম্বারটা দিয়েছিলেন তাতে ওরা ফোন করবে।এখনে বসে বসে না ভেবে চলুন আমার সাথে তা না হলে লঞ্চ ছেড়ে দিলে আমরা দুজন এখানেই থেকে যাব।
-হ্যাঁ, হ্যাঁ; চলুন।

দুজন লঞ্চে উঠলাম..
-এই সিঁরি বেয়ে উপরে উঠে যান।
-কেন?
-আরে কত্তক্ষণ এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকবেন?উপরে বসার জায়গা আছে, দোকান আছে।গিয়ে বসতেও পারবেন আর কিছু খেতেও পারবেন।
-ওহহ, আচ্ছা চলুন।

দুজনে উপরে গিয়ে দেখি সারি সারি চেয়ার, টেবিল আর বেঞ্চ দখল করে সবাই বসে আছে।কেউ ভাত খাচ্ছে তো কেউবা চা বিস্কিট।
আমি বোরকাওয়ালীকে বললাম,
-এখানে খুব ভালো সরিসা ইলিশ রান্না পাওয়া যায় ভাত দিয়ে খাবেন নাকি?
-না
-তাহলে মুরগি?
-না
-কেন?
-আমি রোজা।
-ওহহ তাহলে চলুন ঐদিকটাতে গিয়ে বসি।

দুজনে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসে আছি সামনা সামনি মুখ করে।আমাদের মাঝে একটি উচুঁ টেবিল যেটাতে বাম হাতটি ঠেকিয়ে ডান হাতটি গালে দিয়ে বসে বোরকাওয়ালীর সাথে কথা বলছি।আরিয়া বলল,

-আপনি কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হলে খেয়ে নিন
-না
-কেন আপনিও রোজা?
-হ্যাঁ, আজকে শেষ রোজা কালই তো ঈদ।যানেন!! আমি প্রথম, সাতাস আর শেষ রোজাটা থাকি।
-আর মাঝখানের গুলো?
-ওগুলো থাকি না। একবেলা না খেয়ে থাকলেই আমার কলিজাটা শুকিয়ে যাই।তাই তো আমার ছোটবেলার থেকেই প্রথম, সাতাস আর শেষ রোজাটা থাকার অভ্যাস।
-ওহহ এই অভ্যাসটা নিজে করে নিয়েছেন তাহলে।
-না তাই নয় তবে।আমার খুব কস্ট হয়ে যায় ঢাকা শহরে এই গরমে রোজা থাকাটা সত্যি আমার শরীরের সাথে যাই না।
-আপনি কি যানেন, রমজানের রোজা ফরজ।ফরজ নামাজের ন্যায় ফরজ রোজাও পালন করা আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- যে ব্যাক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখে, আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে নিয়ে যায়।(সহীহ, বুখারী: ২৬৮৫)
-নেক্সট বছরের থেকে সবগুলো থাকবো! এই প্রমিছ।
(হাতের ৩ আঙুল দিয়ে গলাটা চিমটি কেটে বললাম)
-আমাকে প্রমিছ করে কি হবে আমি তো পরবর্তী বছরগুলো আপনি রোজা থাকলেন কিনা তা দেখতে আসবো না।আপনি বরং আল্লাহকে বলুন।আল্লাহ আপনাকে সেই তৌফিক দান করুক।
-আচ্ছা আপনার গরম লাগছে না?
-কেন?
-এই গরমে সেই কখন থেকে নিজেকে বোরকার আরালে ঢেকে রেখেছেন!
-সেটা তো আমি আপনাকে আগেও বুঝিয়েছি
-হুমম বুঝিয়েছিলেন।কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন ছিল আপনার কাছে??
-যেমন?
-তখন আপনি বলেছিলেন না? বিয়ে করবেন না বলে পালিয়ে এসেছেন সেটা আবার নিজের নিরাপত্তা জন্য এটা সত্যি আমার মাথার উপর দিয়ে গেল।
-দেখুন এ বিষয়ে আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাইনা।
-না চাইলে বলবেন না!! তবুও আমি আপনাকে আপনার ফুপ্পি বাড়িতে পৌঁছে দেব।এতোটা রাস্তা আপনার সাথে চললাম আমার তো এটুকু যানার রাইট আছে।
-আসলে আমি নিজের কথা বাইরের মানুষের সাথে শেয়ার করি না।

চলবে…. ইনশাআল্লাহ…