“জলি গাড়ি থেকে নামতেই আদি এসে জলিকে কোলে তুলে নেয়।জলি রেগে গিয়ে আদির কোলের উপরে দাপাদাপি ঝাঁপাঝাপি শুরু করে। তাল সামলাতে না পেরে আদি ধপাস করে জলিকে নিয়ে নিচে পরে যায়। নিচে পরে আদি কোমড়ে ব্যাথা পাই।তাই কোমড়ে হাত দিয়ে ডলে।আর জলি সেটা দেখে হাসতে থাকে।”
হাসতে হাসতে জলি বলে,
—হারামজাদা ঠিক হয়েছে পরেছিস!
আদির শার্টের কলারটা টেনে ধরে বলে,
—একদম উচিৎ শিক্ষা হয়েছে।এখন ভাঙা কোমড় নিয়ে বসে থাক।আর আমিও তোর পাশে বসে থাকি।
“কথাটা বলে দু’পায়ের হাঁটু ভাজ করে আদির পাশে বসে থাকে জলি।আর আদি জলির দিকে তাকিয়ে থাকে। জলির কথা বলা, হাসি এক অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে আদি।আজ যেন জলিকে আদির অন্য রকম লাগছে।”
“জলি পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে আদি তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চোখের কোনো পলক পরছে না।জলি হাত দিয়ে তুরি বাজিয়ে আদির চোখের সামনে নিজের মুখটা এনে আদির মুখে ফুঁ দেয়।আর জলির ফুঁ’তে আদি কেঁপে ওঠে।”
আদির ধ্যান ফিরলে জলি বলে,
—ভাঙা কোমড়ে তো কিছুই করতে পারবি না, আমি বরং যায়!
“কথাটা বলে জলি উঠে দাড়াতে যায় আদি হাত ধরে টেনে জলিকে বসিয়ে দেয়।”
তারপর বলে,
—বস না এখানে! তোকে একটু দেখি!
—ফাট্ট!
“জলি আবার উঠতে যায় আর আদি আবার জলিকে টেনে বসাই।”
তারপর আদি বলে,
—আচ্ছা জলি উল্টো জামা পরা কি মেয়েদের নিউ ফ্যাশান?
—মানে?
—তুই জামাটা উল্টো কেন পরেছিস?
“জলি তাকিয়ে দেখে তার জামাটা উল্টো পরা।”
—না আসলে অনেক গরম পরেছে তো তাই গোসল করতে গিয়েছিলাম।তারপর তোর জন্য তারাহুরো করতে গিয়ে উল্টো হয়ে গেছে।
—ওহহ বুঝতে পেরেছি।সমস্যা নেয় তুই আমার এখানে গোসল করে নিস।
“আদি কোমড় ধরে উঠে দাড়ায় তারপর জলিকে আবার কোলে তুলে নেয়। এবার আর জলি দাপাদাপি ঝাঁপাঝাপি করে না।আদি আস্তে করে জলিকে নিয়ে নিজের রুমে যায়।”
আদি আলমারি থেকে নিজের একটা শার্ট বের করে জলিকে দিয়ে বলে,
—এটা পরে গোসল করে নে!
—হিইইই হলুদ শার্ট? হলুদ রং আমার একদম পছন্দ না।
—তাহলে কি রং পছন্দ?
“আদি একটা একটা করে শার্ট জলির সামনে ধরে জলির একটাও পছন্দ হয় না।”
তারপর জলি বলে,
—আচ্ছা তুই রাখ আমি বেছে নিচ্ছি।
“জলি এগিয়ে গিয়ে একটা সাদা শার্ট উঠিয়ে বলে এটা সুন্দর।নিচে তাকিয়ে দেখে আলমারির মধ্যে একটা বক্স।”
“জলি বক্সটা খোলে দেখে একটা ছবি দুই খন্ড করে ছেঁড়া। জলি ছবিটা উঠিয়ে আদির সামনে ধরে।”
আর আদির কাছে জানতে চায়,
—কার ছবি এটা?
“আদি এক টান দিয়ে জলির হাত থেকে ছবিটা কেড়ে নেয়।”
আর বলে,
—তুই আমার বক্সে হাত দিয়েছিস কেন?
—এমনি চোখের সামনে পেলাম তাই।এতে এমন ভাং ধরার কি আছে? ঢং যতো!
“কথাটা বলে জলি ওয়াশরুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর গোসল করে আদির শার্টটা পরে বেড়িয়ে আসে।”
“আয়নার সামনে দাড়িয়ে জলি চুল ঝারছে।আর আয়নার ভেতর থেকে চেয়ে দেখছে আদিকে।আদি মাথাটা নিচু করে বসে আছে।একবারও তার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না।কিন্তু আদি তো এমন নয়।জলি মনে মনে ভাবছে আজ কি হয়েছে আদির।”
“জলি উঠে আদির পাশে গিয়ে বসে।আর আদির মুখটা তুলে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।”
—কি হলো আদি? এতোটা নিশ্চুপ কেন তুই?
“সঙ্গে সঙ্গে আদি জলিকে ঝাপটে ধরে। জলির বুকে মাথা রেখে শব্দ করে কাঁদে।”
আর সেই ছবিটার দিকে ইশারা করে বলে,
—জানিস জলি,,ওই ছবির লোকটা আমার বাবা।যে আমার মাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাবহার করেছিলো।তারপর যখন আমি গর্ভে আসি আমার মাকে ছুড়ে ফেলে দেয়।
—এসব কি বলছিস আদি?
—হ্যাঁ, এটাই সত্যি। আমার মা আমাকে গর্ভে নিয়ে আত্নহত্যা করতে গিয়েছিলো কিন্তু পারে নি।একজন মহিলা মাকে বাঁচায়।তারপর সেই আমার মাকে আশ্রয় দেয়।আর ওই ছবিটা মাই তাকে দেখিয়েছিলো।আর বলেছিলো ওটা আমার বাবা।আমার জন্মের সময় যখন আমার মা মারা যায় তখন সেই আমাকে মানুষ করে।আমি একটু বড় হলে আমার মা-বাবার কথা জানতে চাইলে সে আমাকে সব খুলে বলে।আজ থেকে দুবছর আগে সেও মারা গেছে।আমি খারাপ না জলি মানসিক হতাশা আর বিরহ আমাকে শেষ করে দিয়েছে।আমি যা করি নিজেকে ভালো রাখতে করি। তবে আর না। আমি এই সবকিছু ছেড়ে দেবো। আমি আর কখনো কোনো মেয়ের কাছে যাবো না। আমার একটা কথা রাখবি?
—কি?
—তুই আমার বউ হবি? আবিরকে ভুলে যাবি?
“জলি মনে মনে ভাবে এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না।”
আদির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
—হ্যাঁ ভুলে যাবো।আর তোকেও বিয়ে করবো।তার বদলে তোরও আমাকে সম্মান করতে হবে।
—হ্যাঁ করবো জলি।
—ঠিক আছে। তোর কাছে আমার যেই ভিডিও গুলো আছে ওগুলো আগে ডিলিট কর তারপর মানবো।
“আদি ভিডিও গুলো সব ডিলিট করে দেয়।” আর বলে,
—ডিলিট করে দিয়েছি জলি।
—বেশ ভালো করেছিস।
“কলিং বেলের শব্দ শুনেই অহনা ছুটে আসে।দরজা খুলতে গিয়ে ভাবে আবার যদি আদি হয়? নাহ নাহ দরজা খোলা যাবে না।আবির হলে তো নাম ধরে ঠিকই ডাকতো।”
“অহনা দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকে।আর বাইরে থেকে বারবার কলিং বেল বেজে চলেছে।অনেকক্ষণ পর অহনা বাইরে থেকে কারও কথা শুনতে পাই।”
—দেখেছিস আবির দরজা খুলছে না? হয়তো বেড রুমে কোন পুরোনো প্রেমিকের সাথে শুয়ে আছে।
—যদি তাই হয় তাহলে আজ এর শেষ আমি দেখে ছাড়বো।
“আবিরের কন্ঠটা শুনে অহনা নিশ্চিত হয়।হ্যাঁ আবির এসেছে।”
“অহনা সঙ্গে সঙ্গে দরজাটা খুলে দেয়। আর তাকিয়ে দেখে জলির সাথে গা ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে আবির।একদম নিজের বুকের সাথে জলিকে মিশিয়ে রেখেছে।”
“আবিরের এক হাতে মদের বোতল তার থেকে এক ডোগ গিলে তাকায় অহনার দিকে।”
“অহনা আবিরকে এমন অবস্থায় দেখে বড়সড় একটা ধাক্কা খায়।”
—আবির, জলি তোমরা এভাবে?
“অহনাকে কিছু না বলে, পাশ কেটে আবির জলিকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়।অহনা আবিরের পিছনে পিছনে আসে। দেখে আবির সারা বাড়িতে কিছু একটা খুঁজছে।”
—কি খুঁজছো আবির?
“আবিরের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে জানতে চায় অহনা।আর তখন আবির অহনার গালে ঠাসসসস! করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। আর বলে,”
—দরজা খুলতে এতো দেরি হলো কেন? বাড়িতে আর কে আছে বল?
“কথাটা বলে অহনার চুলের মুষ্টি টেনে ধরে।”
—আবির লাগছে ছাড়ও আমায়!
“আবির অহনাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।”
অহনা উঠে দাড়িয়ে আবিরের মুখটা ধরে বলে,
—কি হয়েছে তোমার আবির? আজ আবার কেন এমন করছো? তুমি না বলেছিলে আর কখনো আমাকে কস্ট দেবে না? ভালোবাসো না আমাকে? তাহলে এমন পাগলামি কেন করছো? আর এতো রাত্রে জলিকে কেন সাথে করে এনেছো?
“অহনা কথাটা বলতেই জলি এসে ধাক্কা দিয়ে অহনাকে আবিরের থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে দেয়। তারপর অহনার সামনে হাত উঁচিয়ে একটা সয়তানি হাসি দিয়ে বলে,”
—আবির আর তোর নেয় অহনা।
আবিরের বুকে হাত বুলিয়ে বলে, এখন থেকে আবির শুধু আমার। তাই না আবির?
আবির মদের বোতলে ডোগ গিলে বলে,
—হুমমমম!
“জলি আবিরের বোতাম খোলা শার্টটা দুই হাত দিয়ে দুই পাশে সরিয়ে দিয়ে, আবিরের নগ্ন বুকে নিজের নাকটা ঘেঁষে আবিরকে জড়িয়ে ধরে বলে, ”
—আমার আবির।
“এসব দেখে অহনা একেবারে ভেঙে পরে।ভাবে আবির এমনটা কিভাবে করতে পারে?”
“আর জলি আবিরকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় মুখটা অহনার দিকে ঘুরিয়ে বলে,”
—দেখেছো অহনা তোমাকে আমি আগেই বলেছিলাম আবিরের চরিত্র কেমন কিন্তু তুমি বিশ্বাস করলে না? যাই হোক, আবির আজ আমার।
“কথাটা বলে আবিরকে নিয়ে জলি বেড রুমের দিকে যায়।অহনাও আবির আর জলির পিছনে পিছনে যায়।কিন্তু অহনা রুমে ঢুকার আগে জলি ঠাসসস! করে দরজাটা অহনার মুখের সামনে ভেতর থেকে লক করে দেয়।”
“অহনা বাইরে থেকে দরজাটা টাকিয়ে চিৎকার করতে থাকে।”
—একি? দরজা দিয়েছো কেন জলি? দরজা খোলো।আমার কথা শুনতে পাচ্ছো দরজা খোলো।
ভেতর থেকে জলি বলে,
—চেঁচাও অহনা চেঁচাও যতো পারো চেঁচাও।কিন্তু এই দরজা আর খুলছে না।যতোক্ষণ না আবির পুরোপুরি ভাবে আমার হচ্ছে।
—মানে? কি করবে তুমি ওর সাথে? দরজা খোলো জলি। মদ খেলে ওর হুঁশ থাকে না। তোমার দোহাই লাগে ওর সাথে কিছু করবে না।দরজা খোলো প্লিজ জলি।
“বাইরে থেকে অহনা চিৎকার করতে থাকে জলিকে বারবার ডাকে আর বোঝায়।জলি অহনার কোনো কথা শোনে না।আবিরকে নিয়ে বিছানার কাছে গিয়ে ধাক্কা দিতেই আবির বিছানায় ঢুলে পরে।আর জলি সেই সুযোগে আবিরের কাছে যায়। আবিরের শার্টটা খুলে ফেলে তারপর আবিরের বুকে আর গালে কিস করে।তারপর আবিরের ঠোঁটে কিস করতে যাবে এমন সময় জলির ফোনটা বেজে ওঠে।জলি উঠে বসে দেখে আদির কল।জলি কলটা কেটে দেয়।তারপর নিজের কাপড়টা খুলে আবার আবিরের দিকে এগিয়ে আসে।আবিরকে ছুঁতে যাবে তখন আবার আদির কল আসে।”
“এবার রাগ করে জলি আদির ফোনটা রিসিভ করে,”
—সমস্যাটা কি তোর? এভাবে বারবার ফোন করে বিরক্ত কেন করছিস?
—কি করছিস জলি?
—আমি যা করি তাতে তোর কি? হারামজাদা যা চেয়েছিলি তাতো পেয়ে গেছিস এখন আবার কেন কল করেছিস? আমি বিজি আছি এখন রাখ।
“জলি ফোনটা কাটার আগেই আদি বলে ওঠে,”
—আরে আরে রাগ করছিস কেন? তোকে একটা ভিডিও পাঠিয়েছি দেখ।
—কিসের ভিডিও?
—দেখ তারপর বুঝবি।
“জলি কলটা কেটে দিয়ে ভিডিওটা দেখে।আজ সকালে গাড়িতে আদি আর জলি যা করেছে তার ভিডিও ওটা।”
“ভিডিওটা দেখে জলি মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে। আর চিন্তা করে এটা আদি কি করলো?”
“আদি আবার ফোন করে।আর জলিকে বলে,”
—এই মুহূর্তে যদি তুই আমার কাছে না আসিস তাহলে ভিডিওটা আমি ভাইরাল করে দেবো।
—নাহ আদি এমনটা করবি না প্লিজ।ভিডিও তে তো তুইও আছিস!
—হ্যাঁ আছি তো? একটা কথা শুনে রাখ ১০ মিনিটের মধ্যে তুই আমার কাছে আসবি।নাহলে আগে তোর পরিবার বাবা-মা সবার ফোনে ভিডিওটা চলে যাবে।
—তোর লজ্জা করবে না? আমার সাথে তোর নিজেও কতো অসম্মান হবে জানিস?
—নাহ আমার লজ্জা করবে না।আমার বাবা-মা পরিবার নেয়।তাই মান সম্মানেরও ভয় নেয়।তোকে যেটা বললাম সেটা কর।
“বলে কলটা কেটে দেয় আদি।আর জলি হ্যালো হ্যালো করে দেখে কলটা কেটে গেছে।”
“জলি আবিরের দিকে আর তাকায় না।অন্য মনুষ্ক হয়ে নিজের কাপড়টা পরে রুমের থেকে বেড়িয়ে যায়। দরজা খোলার শব্দে অহনা তাকিয়ে দেখে জলি উল্টো কাপড় পড়েছে।অহনা ভাবে, যখন আবিরকে নিয়ে ভেতরে গিয়েছিলো জলির কাপড়টা তো উল্টো পরা ছিলো না।তাহলে কি? অহনা ভাবতে ভাবতে ছুটে রুমে যায়। দেখে আবিরের গালে আর বুকে জলির ঠোঁটের লিপস্টিকের দাগ। অহনা এটা দেখে বড় একটা ধাক্কা খায়।দরজার সাথে মাথাটা ঘেঁষে আস্তে করে নিচে বসে পরে অহনা।আর এক দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকিয়ে থাকে।আর বলে,”
—এটা কি করলে তুমি আবির?
“জলি ঠেলতে ঠেলতে আদিকে নিয়ে গাড়িতে বসায়।তারপর গাড়ি ড্রাইব করে চলে আসতে লাগে।গাড়ির মধ্যে আদি এক দৃষ্টিতে বাঁকা নজরে জলির দিকে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পর জলির ট্রি শার্টটা টেনে ধরে বলে,”
—আচ্ছা জলি তুইও কিন্তু কম সুন্দর না?
“জলি খেয়াল করে সামনের থেকে আদি তার ট্রি শার্টটা টেনে ধরে আছে।আর আদির চোখ একদম তার ট্রি শার্টটার ভেতরে।জলি আদির থুতনিতে দেয় এক ঘাঁ।আদি মুখ তুলতেই জলি টেনে নিজের ট্রি শার্টটা ঠিক করে নেয়।”
—হারামজাদা তোকে তো আমি…
“জলি গাড়ির ভেতরে থাকা পানির বোতলটা উঠিয়ে আদির মাথায় বাঢ়ি দিতে যায় আর আদি জলির হাতটা ধরে বসে।জলির হাতের থেকে বোতলটা কেড়ে নিয়ে জলির ফোনটা হাতে তুলে নেয়।”
তারপর বলে,
—এই ফোনে আমার আর অহনার অনেক পিক তুলেছিস তুই তাই না? আচ্ছা এটাকে যদি এখন ভেঙে ফেলি?
“আদি আস্তে করে গাড়ির জানালার কাচটা নিচে নামিয়ে দেয়। তারপর ফোনটা ধরে বাইরে ছুঁড়ে মারতে গেলে জলি চিৎকার দিয়ে আদিকে থামাই।”
—নাহহহহহহ! প্লিজ আদি এমনটা করিস না।এই পিকগুলো আমার খুব প্রয়োজন।
“আদি ফোনটা নিজের প্যান্টের পকেটে রাখে। তারপর জানালার কাচটা তুলে দিয়ে বলে,”
—গুড, ফেলবো না।আর এই পিকগুলোও তোকে দেবো না।
—কেন?
—দেখ তুই এই পিকগুলো আবিরকে দিবি।আবির আবার এসে আমাকে মারবে এটা একটা বোকামির কাজ হয়ে গেলো না? আমি যেনে শুনে আবিরের হাতে মার কেন খেতে যাবো?
—প্লিজ আদি ওই পিকগুলো আমার খুব দরকার।ফোনটা আমায় দে আমি তোকে অনেক টাকা দেবো।
—থাপপপ! টাকা দিবি? আমার কাছে টাকার কোনো অভাব আছে নাকি? আমার তো চায় অন্য কিছু?
—-কি???
“আদি নেশা ধরা চোখে তাকিয়ে বলে,”
—তোকে।
—কখনোই না।
—ঠিক আছে ফোনটা ভেঙে ফেললাম।
“কথাটা বলে পকেট থেকে ফোনটা বের করে যেই জানালার কাচ খুলে ছুঁড়ে ফেলতে যাবে অমনি জলি জানালার কাচটা তুলে দেয়।”
—আমি রাজি।আবিরের জন্য আমি সব করতে পারি।
“জলির কথাটা শুনে আদি খুশি হয়ে যায়।জলির দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসে।তারপর জলির মাথাটা ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়,
জলির চুলের ভাজে নিজের আঙুল ডুবিয়ে দিয়ে নিজের ঠোঁটে জলির ঠোঁট জোড়া বসায়।নিচ থেকে আদি পা দুটো দিয়ে জলির পা ঘেষতে থাকে।কিছুক্ষণ পর জলির ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে একটানে দুইহাতে জলির ট্রি শার্টটা খুলে ফেলে।তারপর জলির গলায় আর বুকে ঠোঁট ছোঁয়াতে থাকে।গড়ির গ্লাসে জলির দু’হাত ঠেসে ধরে শরীরের সবটুকু ভার জলির উপরে ছেড়ে দেয়। একেবারে মিশে যায় আদি।”
“জলি খেয়াল করে আদির ঠোঁটের স্পর্শগুলো কামড়ে পরিণত হয়েছে। হাতের স্পর্শগুলো এখন নখের আচড় বসিয়ে দিচ্ছে।ব্যাথায়, রাগে, ক্ষোভে জলির দু’চোখ বন্ধ করে রাখে।জলির বন্ধ দু’চোখের কোণ ঘেঁষে পানি গড়িয়ে পরতে থাকে।তবুও সে আদির এই অত্যাচার সহ্য করে।শুধু মাত্র আবিরকে পাবে বলে।জলি না চাইতেও আরও একবার আবিরকে পাওয়ার আশায় আদির কাছে নিজেকে সমার্পন করে দেয়।তবে এবার আর আদি কাঁচা খেলা খেলে নি।গাড়ির ভেতরে তাদের দু’জনের সাথেও আদি আরেকটা চোখ ফিট করে রেখেছে সেটা জলির অজানা।”
.
.
.
“দুপুরে অফিসে বসে আবির অহনার কথা ভাবছে।এখন আবির ফ্রী আছে।ভাবে এই সময়ে অহনার সাথে একটু কথা বলে নিলে মন্দ হয় না।আবির ফোনটা হাতে নিতেই টুংটাং করে মেসেঞ্জারে শব্দ বেজে ওঠে। মেসেজ সীন করে দেখে অহনার সাথে আদির পিকগুলো।যা দেখে আবিরের চোখ দুটো রাগে গজগজ করতে থাকে।পিকগুলো ছিলোই এমন যা বিশ্বাস করার মতোন।”
“আবির আবার দিশেহারা হয়ে যায়। ভাবে, অহনা তাকে ঠকিয়েছে।কাল রাতের দেখা অহনার আর আদির একসাথে কিছুই মিথ্যা নয়।জলি ঠিকই বলেছে।অহনা তাহলে নিজের দোষ ঢাকতে জলিকে নিয়ে মিথ্যা গল্প শোনালো!”
,
,
“রাত অনেক হয়েছে আবিরের আসার নাম নেয়। অহনা বারবার আবিরকে ফোন করছে কিন্তু আবির তুলছে না।
অহনা এবার চিন্তায় পরে গেছে।আবির কেন ফিরছে না?”
“অহনার অনেক কিছু বলার আছে আবিরকে।অনেক কিছু শোনারও আছে।আবিরকে যে বলতে হবে অহনার আজ আদি এসেছিলো আর কি করেছে! সেই সাথে আবিরের কাছেও শুনবে জলি কেন এমনটা করেছে?”
,
,
,
চলবে,,,
“আবিরের হাত পুড়ছে, অহনা চুলাটা অফ করে আবিরের হাতটা ধরে টান দেয়।তারপর আবিরের হাতটা কল ছেড়ে দিয়ে ঠান্ডা পানির নিচে ধরে।ফ্রীজ থেকে বরফ এনে আবিরের হাতে ঘষতে থাকে।”
“আবির তাকিয়ে দেখে অহনার দুচোখ গড়িয়ে পানি পরছে।তখন আবিরের আরও বেশি খারাপ লাগে।অহনার থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”
—কাল আমি এমনটা করেছি না তোমার সাথে?
—প্লিজ আবির ভুলে যাও নাহ যা হয়েছে! এভাবে নিজেকে কেন পুড়াচ্ছো? এটা দেখে তো আমার আরও বেশি কস্ট হচ্ছে, তুমি বুঝছো না?
“অহনা আবিরকে জড়িয়ে ধরে।আর বলে,”
—আমি তো তোমার সারপ্রাইজটা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।কিন্তু হুট করে কিভাবে ওখানে আদি চলে আসলো বুঝলাম না।
—সারপ্রাইজ!!! কিসের সারপ্রাইজ?
“অহনা আবিরকে সব খুলে বলল।জলি বলেছিস আবির সারপ্রাইজ দিতে তাকে রুমে ডেকেছে।আর যতোক্ষণ না আবির বলবে চোখ খোলা যাবে না।”
—তুমিই বলো আবির আমি কি কোনো ভুল করেছি? আদি এসে যখন আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো তখন রুমটা অন্ধকার ছিলো। ওকে আমি দেখিনি আবির।তবে ওর প্রতিটা স্পর্শে আমার কাছে অস্বস্তিবোধ হচ্ছিলো।আমি যখন বুঝতে পারি ওটা তুমি নও তখন চোখ খুলতেই তোমাকে আমার সামনে পায়।তোমাকে কিছু বোঝানোর আগেই তুমি আমার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে আসো।আর ওই শাড়িটা নিয়ে কতো কথা শুনাও।ওটাতো তুমিই আমাকে অফিসে থাকতে পাঠিয়েছো। তাহলে কেন আমাকে এতোটা কস্ট দিলে?
“অহনার কথা শুনে আবিরের কাল রাতে জলির ফোন করে বলা কথাগুলো মনে পরে যায়।আবির ভাবে তাহলে এই সবকিছু জলিরই প্লান?”
“আবিরকে চুপ করে থাকতে দেখে অহনা বলে,”
—কি ভাবছো আবির? কিছু বলছো না কেন?
—অহনা ভুল করে ফেলেছি আমি।
—মানে?
—আমি তোমাকে কোনো শাড়ি পাঠাই নি।এমন কি কোনো সারপ্রাইজ প্লানও করি নি। বন্ধুদের জোড়াজুড়িতে পার্টিতে তোমাকে শুধু ফোন করে সময় মতো আসতে বলেছিলাম।
—তাহলে….
—সবকিছু জলির প্লান।
—কি বলছো আবির? জলি এমনটা কেন করবে?
—সে অনেক কথা।তোমাকে আমি অফিস থেকে ফিরে শোনাবো।
—কিন্তু..
“আবির অহানার ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে থামিয়ে দেয়।”
—চুপপপপ! আর কোনো কথা নয়।অফিস থেকে এসে সব খুলে বলবো।
“অহনা আর কোনো কথা বলে না।” “আবির রুটি বেলে ছেঁকে, আলুভাজি করে, অহনাকে খাইয়ে দিয়ে টিফিন রেডি করে নিয়ে অফিসে চলে যায়।”
“আবির চলে যাওয়ার পর অহনা ভাবতে থাকে, আবির কখন আসবে?” “আর কখন শুনবে সবটা।সব না শুনলে যে অহনার মনে শান্তি হচ্ছে না। তাহলে কি জলি এমনটা করেছে? কিন্তু কেন? এতে জলির কি লাভ?”
“অহনা গোসল করে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের ভেজা চুল ঝারছে।”
“হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ।অহনা ভাবে এমন সময় আবার কে এলো?”
“অহনা ভেজা চুল এক হাত দিয়ে মুছতে মুছতে দরজাটা গিয়ে খুলে দেয়।আর তাকিয়ে দেখে দরজার সামনের দেয়ালে হেলান দিয়ে আদি দাড়িয়ে আছে।”
“দরজা খোলার শব্দে আদি সামনে তাকিয়ে অহনাকে দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসে।”
—আপন…
“অহনা আর কিছু বলার আগে আদি অহনার মুখটা চেপে ধরে।অহনা চিৎকারও দিতে পারে না।আদি অহনার শরীরের গন্ধ শুকে জোড়ে একটা নিশ্বাস নেয়।”
—বাহহ সোনা! তোমার শরীরের গন্ধটা জাস্ট ওসাম।
“অহনার মুখ চেপে ধরায় কিছু বলতে পারে না।তাই হাত দিয়ে আদির চোখের মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে দিতে যায়।কিন্তু আদি অহনার হাত ধরে বসে।তারপর অহনার দিকে নেশা ধরা দৃষ্টিতে তাকায়। দেখে অহনার চুলের পানি গড়িয়ে গলা পর্যন্ত নেমে এসেছে। তাই আদি অহনার মুখ ছেড়ে দিয়ে দুই হাত ধরে দরজার সাথে চেপে ধরে।”
আর বলে,
—জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছি।কিন্তু তোমার মতোন দেখিনি।কি রূপ! কি যৌবন! দেখলেই মাতাল করে দেয়! আহহ কাল আবিরের জন্য কিছু করতেই পারলাম না।কিন্তু আজ তো আবির বাসায় নেয় চলো সোনা তোমাকে আদর দিই।
“কথাটা বলেই অহনার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিতেই জলি দূর থেকে অহনা আর আদির কয়েকটা ছবি তুলে নেয়।”
“আদি তার নাকটা অহনার গলায় ছোয়াতে যাবে তার আগেই অহনা নিজের সর্বস্ব শক্তিটুকু দিয়ে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে আদিকে ফেলে দেয়। তারপর ভেতর থেকে দরজাটা লক করে দেয়।”
“দরজার সাথে হেলান দিয়ে অহনা হাঁপাতে থাকে।আর কাঁদে। ভয়ে অহনার শরীর থেকে ঘাম ছুটছে।আর ওদিকে দরজায় লাথি, কিল, গুতা দিয়ে চলেছে দরজায় আদি।”
“আদির এমন কান্ড দেখে অহনা এবার সাহস করে উঠে দাড়ায় আর বলে,”
—এই মুহূর্তে, এখান থেকে আপনি যদি না যান তাহলে আমি চিৎকার করবো।চিৎকার করে পুরো এলাকার লোক জড় করব।তারপর কি অবস্থা হবে আপনার বুঝতে পারছেন?
“অহনার কথাটা জলি শুনে ফেলে। তাই জলি এসে টানতে টানতে আদিকে নিয়ে যায়। দূরে নিয়ে বলে,”
—আজ থাক অন্য একদিন আসিস!
—মানে? আমার ওকে আজই চায় সর জলি..
“আদি যেতে লাগলে জলি আবার আদিকে টেনে ধরে।তারপর আদির মাথায় থাবড়িয়ে থাবড়িয়ে বলে,”
—লুচ্চা! বলদ! বান্দর! তোর কি বুদ্ধি নাই? অহনা যদি চিৎকার করে এলাকার মানুষ জড় করে তাহলে কি অবস্থা হবে বুঝতে পেরেছিস? সেই সাথে আমার প্লানটাও যাবে।
—তাহলে?
—অন্য একদিন আসিস আজ চল।
চলবে,,,,,,,,
গল্পতো বড় করে দিতেই ইচ্ছা করে।কিন্তু আপনারা দেখি রিএ্যাক্ট দিতে কিপটামি করেন।তাই আমিও একটু করি কিপটামি।শোধবোধ।তাই কেউ বলবেন না পর্ব ছোট হচ্ছে।
“জলি ঘুম ভাংতেই, নিজের বুকের উপরে ভারী কিছু অনুভব করলো।”
“চোখ মেলে চেয়ে যা দেখলো, তাতে আর কিছু বলার ভাষায় খুঁজে পাচ্ছে না।”
“জলির মাথাটার মধ্যে যেন ঘুরছে, দুনিয়াটা একদম উলোট পালোট হয়ে যাচ্ছে।”
“হায়! হায়! এটা কি দেখছে জলি?”
“জলি বুকের উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে আদিকে সরাতে চায়।আর আদি শক্ত করে জলির বুকে মুখ গুজে দেয়।”
আর বলে,
—আহ শোনা, এমন করছো কেন? একটু শান্ত হয়ে ঘুমাও না!
—হারামজাদা শান্ত হয়ে ঘুমানো তোকে দেখাই দেব, ওঠ বলছি!
—নাহ নাহ এতো সকালে উঠার অভ্যাস আমার নেই।
—তোরে আমি…
জলি রেগে দুই হাত দিয়ে আদির চুলের মুষ্টি ধরে টেনে বলে,
—ওঠঠঠ
“আদি উঠে বসলে, জলি কম্বলটা টেনে নিজের শরীরে জড়িয়ে ভালোভাবে ঢেকে নেয়। তারপর ভ্যাআআআআ করে কান্না জুড়ে দেয়।”
জলির কান্না দেখে আদি বলে,
—যাহহ..এত্ত আদর দিলাম তারপরও কাঁদো। আসো না সোনা আরেকটু আদর করি।
“কথাটা বলে আদি আবার জলিকে জড়িয়ে ধরতে যায়। আর জলি বাঁধা দেয়।”
—দুশ্চরিত্র! লুচ্চা। দুনিয়ায় কি মেয়ে কম পরে গিয়েছিলো, যে আমার সাথে এমন করলি? কেন করলি এমনটা আমার সাথে?
“আদির গলাটা চেপে ধরে কথাটা বলে জলি।”
আদি জলির হাত শক্ত করে ধরে বসে।আর বলে,
—দোষ কি শুধু আমার একার?
যা হয়েছে তোর নিজের ইচ্ছাতে হয়েছে।আমি কতো করে বললাম প্লিজ জলি আমাকে ছুঁস না।কিন্তু তুই আমার কোনো কথাই শুনলি না।আমাকে টেনে টেনে চুম্মা দিলি।আমার শার্টের বোতামগুলোও ছিড়ে ফেললি।আমার সতিত্ব কেড়ে নিয়ে এখন আবার আমাকেই কথা শোনাচ্ছিস? যাহ তোকে আর সোনা বলবো না।বালডা..মিজাজটাই খারাপ করে দেয়..
—কি বললি তুই? আমি এসব করেছি?
—হুমমমম।নইলে কি আর তোর মতোন কেরোসিনের কাছে আমার মতোন আগুন আসা সম্ভব?
—আচ্ছা শোন তাইলে, এগুলো কারও সামনে বলতে যাস না।
—নাহ নাহ কি বলিস।এসব আমি কেন কাউকে বলবো? আমার একটা সম্মান আছে না।
“জলি মনে মনে ভাবছে, সে কি সত্যি এমনটা করেছে কাল রাতে? নাকি আদি মিথ্যা বলছে? সে যাই হোক।ব্যাপারটা কাউকে জানতে দেওয়া যাবে না।”
জলি আর কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই আদি নিচে নেমে প্যান্টটা পরে শার্টটা কাধেঁ উঠিয়ে দৌড় দেয়।
;
;
“ওদিকে আবির কিচেনে বসে রুটি বেলছে আর অহনা পাশে দাড়িয়ে আছে।”
—আবির! আমি পারবো প্লিজ আমাকে দাও?
আবির বেলনটা উঁচু করে অহনার সামনে ধরে বলে,
—আর একটাও কথা নয়।তুমি যতোদিন না সুস্থ হচ্ছো বাড়ির সব কাজ করে তাই আমি অফিসে যাবো।
—তুমি কি পাগল নাকি? এমন ছেলে মানুষি কেউ করে? দাও আমাকে দাও?
“আবির বেলনটা অহনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে অহনাকে টেনে আনে। তারপর পেছনের থেকে অহনাকে জড়িয়ে অহনার হাতটা শক্ত করে বেলনের সাথে চেপে ধরে।আর অহনার কাঁধের উপরে নিজের থুতনিটা রেখে রুটি বেলতে থাকে।”
“অহনা বেলনাটা ছেড়ে ঘুরে আবিরের মুখোমুখি হয়।”আবিরের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
—এইভাবে কাজ করলে বেলা দুপুর গড়িয়ে যাবে।অফিসে আর যাওয়া লাগবে না তোমার।
“আবির অহনার কোমড় ধরে অহনাকে আরও কাছে টেনে নেয়।আর অহনার কোমড়ে পোড়া যায়গাটাই আবিরের হাত পরলে অহনা ব্যাথায় আহ্ করে ওঠে।”
“সঙ্গে সঙ্গে আবির অহনাকে ছেড়ে দেয়। নিচু হয়ে অহনার কোমড়ের পোড়া দাগটা দেখে উঠে দাড়িয়ে গ্যাসের চুলাটা অন করে নিজের হাতটা আগুনে রাখে।”
,
,
,
,
চলবে,,,,
ঘুমন্ত চোখ খুলতেই আবির লক্ষ করলো তার মাথাটা ব্যাথায় চিরে যাচ্ছে।মাথায় জোড় খাটিয়ে মনে করতে গেলে কিছুই মনে করতে পারে না।পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে অহনা বিছানার এক পাশে বসা।মাথাটা নিচু করে হাটুর সাথে মিশিয়ে হাঁপাচ্ছে।আর জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।কারণ কাল রাতের আগুনে অহনার কোমড়ে, পেটে আর হাতে কিছুটা পুড়ে দাগ বসে গেছে।আবির আস্তে করে মাথাটা চেপে ধরে উঠে অহনার কাছে আসে।তারপর অহনার হাতের পোড়া স্থানটাই স্পর্শ করতেই অহনা মুখ তুলে আহ্ করে চিৎকার দেয়।আবির অহনার মুখটা নিজের দিকে নিয়ে বলে,
—তোমার এই অবস্থা কিভাবে হলো অহনা?
অহনা কান্না জড়িত কন্ঠে পা ঘেষে আবিরের থেকে কিছুটা দূরে সরে এসে বলে,
—কেন মনে পরছে না? আমি চলে যাবো।আর থাকবো না এখানে।
কথাটা বলে অহনা নিজের পোড়া দাগগুলোতে হাত বুলাতে লাগে।অহনার পোড়া স্থানে জ্বালাপোড়া করছে তাই অহনা ব্যাথায় কুকড়ে আছে।
আবির বুঝতে পারে কাল রাতে নিশ্চয় অহনার সাথে খারাপ কিছু করেছে কিন্তু কি!
দুই হাত দিয়ে চোখ দুটো ডলে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে অহনার গালেও থাপ্পড়ের পাঁচটা আঙুলের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
—তাহলে কি অহনার এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী?
এরই মধ্যে আবিরের ফোনটা বেজে ওঠে।আর আবির গিয়ে রিসিভ করে।
—হ্যালো!
—হ্যালো আবির কোথায় তুই?
জলির নেশা এখোনো কাটে নি।মাতাল হয়ে এখনো আবল তাবল বকছে।
—কে?.. জলি?
নেশা নেশা কন্ঠে দুলে দুলে বলে,
—হ্যাঁ জলি! তোর জলি! ওই অহনা একদম ভালো না।ওকে মেরে তারিয়ে দে! তারপর আমি তো আছিই।তুই দেখিস আমার কাছে আসলে তুই ভালো থাকবি!
—জলি..তুই কি কিছু খেয়েছিস?
—হ্যাঁ, খেয়েছি তো..এখনো খাচ্ছি।সেলিব্রেট করছি!
—কিসের সেলিব্রেট?
—আরেহ অহনা তোর জীবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে নাহ,
সেই সেলিব্রেট!
—মানে???
—মানেটা এখনো বুঝতে পারছিস না? তুই আমার তাই তোকে পাওয়ার ব্যবস্থা করছি।
পাশ থেকে বনি এসে জলির হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়। ফোনটা কেটে দিয়ে বলে,
—কি তখন থেকে ফোন নিয়ে পরে আছিস জলি? ওদিকে সবাই তোর জন্য ওয়েট করছে চল…
বলে জলিকে টেনে নিয়ে যায় বনি।তারপর সব বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে বনি বলে,
—এখন আমাদের মাঝে জলি একটা গান শোনাবে।কিরে জলি শোনাবি তো?
বনির কোনো কথাই জলির কানে যায় না।জলি গিয়ে মদের বোতল হাতে নিয়ে ডগডগ করে মদের বোতলে চুমুক দেয়।
বনি আবার বলে,
—গা না একটা গান আমরা সবাই শুনি!
তারপর জলি দুলতে দুলতে বন্ধুদের গায়ে পরে পরে গান গায়,
—আবির হবে আমার
বাহরে বাহরে বাহ,,,,,
অহনা যাবে চলে,,,
আরে বাহরে বাহরে বাহ
হবো আমি আবিরের গিন্নি
অহনা যাবে আবিরকে ছেড়ে,,
মদের বোতলে নখ বাজিয়ে গান গাইতে গাইতে পরে যায় জলি।আর জলির সাথে নাচতে নাচতে অন্য ফ্রেন্ডরাও থেমে যায়।
আদি বলে,
—যাহ এইটুকু খেয়েই পরে গেল।আমি তো ভালোভাবে নাচতেও পারলাম না।তবে ভালোই হলো, বলেই জলিকে উঠিয়ে কোলে করে আদি রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।তারপর ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে জলির কাছে যেতে চোখ মেলে ঝাপসা আদিকে দেখে জলি বলে,
—আবির তুই এসেছিস?
আদি বলে,
—হ্যাঁ, সোনা আমি এসেছি।
কথাটা বলেই আদি জলিকে জড়িয়ে ধরে। আর জলিও আদিকে আবির ভেবে নিজেকে আদির মাঝে সমার্পণ করে দেয়।
।
।
।
ওদিকে অহনা আবিরের থেকে দূরে দূরে থাকছে।আবির না পেরে অহনাকে ধমক দিয়ে দিয়ে অহনার পোড়া যায়গাগুলোতে মলম লাগাচ্ছে।আর অহনাকে বলছে,
—কি করেছি আমি বলছো না কেন?
আবিরকে একটু স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে দেখে অহনা ভয় কাটিয়ে আবিরকে ধাক্কা দিয়ে সরে যায়। আর কান্না জড়িত কন্ঠস্বরে বলে,
—খুব খারাপ তুমি! আমাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলে।
কথাটা শুনে আবিরের বুকের ভেতরটা ধপ করে ওঠে।ভাবে এটা অহনা কি বলছে?
উঠে দাড়িয়েই অহনার মাথাটা আবির নিজের বুকের বা’পাশে চেপে রেখে বলে,
—বিশ্বাস করো অহনা আমার কিচ্ছু মনে নেয়। আর যদিও এমনটা করে থাকি আমার তখন হুঁশ ছিলো না।তুমি তো আমার হৃদপিণ্ড। আমি কি তোমাকে মেরে ফেলতে পারি?
আবিরের কথাশুনে অহনা আবিরকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদে। তারপর কান্না থামিয়ে আবিরের শার্টটা খামচে ধরে মুখোমুখী হয়ে বলে,
—বড্ড বদলে গেছো তুমি।আজ এমন বলছো কাল আবার ঠিক এই একই ভুল করবে।
আবির অহনার গালটা আকড়ে ধরে বলে,
—নাহ আমার হৃদপিণ্ডটাকে আমি আর কখনো কস্ট দেবো না।
—সত্যি?
—হুমমমম!
,
,
,
,
চলবে,,,,,
আবির মাতাল অবস্থায় দুলতে দুলতে বাড়িতে আসে। রুমে এসে দেখে অহনা এখনো সেই একই অবস্থায় বসে আছে।আর মেঝেতে বসে কাঁদছে।অহনার পড়নের সেই শাড়িটা এখনো চেঞ্জ করে নি।যা দেখে আবির আরও রেগে যায়।এসে অহনার চুলের মুষ্টি ধরে টেনে অহনাকে উঠিয়ে দাড় করায়। আর অহনার গালে ঠাসসসস! ঠাসসসস! করে অনেকগুলো চর বসিয়ে দেয়।তারপর অহনার গালটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
—তোকে আমি বলে গিয়েছিলাম এই শাড়িটা চেঞ্জ করে নিতে কিন্তু তুই করিস নি…কেন??…
আবিরের মুখ থেকে মদের গন্ধ আসতে থাকে।অহনার মদের গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে।যেন নিঃশ্বাসটাই নিতে কস্ট হচ্ছে।তবুও অহনা চেস্টা করে কোনো মতে আবিরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে।তারপর আবিরকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে আবার আবিরের শার্টের কলারটা খামচে ধরে বলে,
—কেন করছো এমনটা তুমি? আচ্ছা, তোমার জীবনে কি অন্য কোনো মেয়ে এসে গেছে? তাই আমাকে আর ভালো লাগছে না তোমার? ঠিক আছে! তাহলে মেরে ফেলো আমাকে।আর আমাকে মেরে তোমার মনের সব আশা পূর্ণ করো।
অহনার মুখ থেকে এমন কথা শুনে আবির যেন আরও বেশি রেগে যায়। আর অহনাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। তারপর প্যান্টের পকেট থেকে একটা কাঠি বের করে আগুন জ্বালিয়ে অহনার শাড়ির আঁচলটিতে ধরিয়ে দেয়।আর বলে,
—খুব মরবার শক না তোর? এইবার মর!
অহনা মুহূর্তের মধ্যে শাড়িতে আগুন লাগতে দেখে দিশেহারা হয়ে যায়।একদিকে আবিরের মার খেয়ে অহনা ভীষণ ক্লান্ত তার উপর শাড়িতে আগুন।অহনা চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দেয়।অহনার চিৎকারে আবিরের ধ্যান ফেরে।আবির চেয়ে দেখে বলে,
—রাগের বসে এটা আমি কি করলাম?
আবির হাত দিয়ে অহনার শাড়ির আঁচল থেকে থাবড়িয়ে আগুন লেভানোর চেস্টা করে।মাতাল অবস্থায় আগুনের সামনে আবির তেমন ভাবে তাকিয়েও কিছু দেখতে পারছে না।ঝাপসা চোখে আবির অহনার শাড়িটা একটানে খুলে ফেলে অহনার গায়ে বিছানার চাদরটা জড়িয়ে দেয়। আর অহনাকে ধরে বলে,
—তোমার কিছু হয়নি তো অহনা?
অহনা ধাক্কা দিয়ে আবিরকে সরিয়ে দেয়। আর আবির মাতাল অবস্থায় বিছানাতে পরে গিয়ে আর ওঠে না।অহনা বলে,
—আজ তোমাকে দেখলে আমার ঘৃণা হচ্ছে আবির! এতোটা বদলে গেছো তুমি? জলি ঠিকই বলে তুমি আর আগের আবির নেই।
।
ওদিকে পার্টিতে ড্রিক করতে করতে ড্রান্স করছে জলি।আজ জলির খুশির দিন।শেষ কবে জলি এতোটা খুশি হয়েছিলো তা মনে করতে পারছে না।আবির আর অহনার সম্পর্কে ভাঙন ধরাতে পেরেছে জলি।মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় জলি চিৎকার করে বলছে,
—আজ আমি সফল! আমার আবিরকে আমি আবার ফিরে পাবো।
পাশ থেকে ফ্রেন্ডরা জলিকে শান্ত হতে বলে,
—কি সব করছিস জলি শান্ত হহহ
জলি বলে,
—তোরা জানিস আমি কি করেছি?
সবাই জলির দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। আর জলি বলতে থাকে,
—আজকের যা কিছু ঘটেছে সব আমি করেছি।বলেই একটা অট্ট হাসি দিয়ে জলি আবার বলে, আবির অফিসে থাকতে আমিই আবিরের নাম করে অহনাকে শাড়ি পাঠিয়েছিলাম।আর আমিই অহনাকে জোড় করেছিলাম শাড়িটা পরতে।তারপর পার্টিতে আসলে আদির রুমে পাঠিয়েছিলাম আবির আছে বলে।বলেছিলাম আবির তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেবে।যতোক্ষণ না আবির বলবে তুমি চোখ খুলবে না।
সবাই বলে,
—তারপর??
—তারপর আর কি! এদিক থেকে আবিরকেও বুঝিয়েছি অহনার চরিত্র ভালো না।আবির তো প্রথমে বিশ্বাস করতেই চাই নি।তারপর আবিরকে নিয়ে গেলাম আদির রুমে। সেখানে গিয়ে আবির দেখলো তার অহনার শরীরে বাজে ভাবে আদি স্পর্শ করছে।কিন্তু অবাক করার বিষয় কি জানিস? অহনা তখনও চোখ বন্ধ করেই ছিলো।বেচারি অহনা ফেঁসে গেল হাহাহা..
,
,
,
চলবে,,,,,,
-তোর শাড়ির আঁচল বারবার খুলে খুলে পরে যায় কেন? পুরুষ মানুষকে কি শরীর না দেখালে চলে না? নাকি তাদের ছোঁয়া পেতে শাড়ি পরিস?
কথাটা বলেই একটানে অহনার ব্লাউজের হাতাটা ছিড়ে ফেলে আবির।অহনা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবির ঠাসসস! করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
-তোকে আমি আগেও বলেছি পুরুষ মানুষের থেকে একশত গজ দূরত্ব বজায় রাখবি।তোর কি আমার কথা কানে যায় না?
কথাটা বলে অহনাকে টেনে হিচড়ে সিঁড়ি দিয়ে ঘেষতে ঘেষতে রুমে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়।অহনা উঠে দাড়াতেই আবির অহনার শাড়ির আঁচলটা ধরে একটানে খুলে ফেলে।আর বলে চেঞ্জ করে নিতে।অহনা ভয়ে ভয়ে আবিরের দিকে তাকায়।আবিরের এমন রূপ আগে কখনো অহনা দেখেনি।অহনা আবিরকে বোঝাতে যায় আসলে ঘটেছিলোটা কি! কিন্তু আবির কিছুই শুনতে চাই না।সে অহনার প্রতি আরও বেশি রেগে যায়। আর রাগের বসে অহনার ব্লাউজের আরেকপাশের হাতাটাও টেনে ছিঁড়ে ফেলে।তারপর অহনার গালটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
-আজ থেকে বাড়ির বাইরে যাওয়া তোর জন্য বন্ধ।
কথাটা বলে শব্দ করে দরজারটা বন্ধ করে আবির রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
আর আবির চলে যাওয়ার পর অহনা সেঠায় বসে পরে।আর কাঁদতে থাকে।আবিরের এই রূপটা অহনার ভেতরটা যেন দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে।অনেকটা কস্ট হচ্ছে অহনার।
।
আবির বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা পার্টিতে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে বন্ধু আদি ড্রিক করতে করতে মেয়েদের গা ঘেঁষে ড্রান্স করছে।
আবির সেটা দেখে আর নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না।ওই মেয়েগুলোর মধ্যে যেন অহনাকে দেখতে পায় আবির।যেটা আবির সহ্য করতে না পেরে আদিকে ভীরের মধ্যে থেকে টেনে দূরে নিয়ে আসে।তারপর পার্টির মিউজিকটা অফ করে দিয়ে আদিকে মারে।মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলে। তারপর বলে,
-তোর সাহস কি করে হয় আমার অহনাকে স্পর্শ করার? তোকে তো আমি..
আবির ব্লেড খুলে আদিকে আবারও মারতে যায় আর জলি এসে আবিরের হাত থেকে ব্লেডটা কেড়ে নেয় আর বলে,
-ওকে কেন মারছিস আবির? তুই চিনিস না ওকে? ওতো এমনই।মেয়েদের প্রতি আসক্ত। কিন্তু তোর অহনা? ও কেন নিজের সতিত্ব বিলিয়ে দিতে এর কাছে এসেছিলো সেটা একবার গিয়ে নিজের অহনাকে জিজ্ঞাসা কর!
আবির আর কিছু না বলেই পার্টির থেকে চলে আসে।আর ড্রিক করতে করতে গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ির দিকে যায়।আর ভাবে, অহনাকে কিভাবে আদি স্পর্শ করছিলো।দূর থেকে দাড়িয়ে আবির দেখেছে আদির স্পর্শে অহনা একটুও অস্বস্তিবোধ করে নি।
-তাহলে কি জলি ঠিকই বলে অহনা..নাহ কি ভাবছি আমি..
।
অহনা সেখানেই বসে থাকে।আর কাঁদতে থাকে।ভাবে, কেন আবির এতোটা বদলে গেল? যেই আবিরকে ভালোবেসে অহনা নিজের পরিবার, আপনজনদের ছেড়ে চলে এসেছে আজ সেই আবির এমনটা করছে, কেন আবির তখন পুরো কথাটা শুনলো না।সবকিছু না শুনে কেন এমন আচারণ করছে!
-আবিরের কথা মতো তো কোনো ছেলেদের সাথে কথায় বলি না আমি।আর আজ আমি তো পার্টিতে যেতে চাই নি।আবিরই জোড় করেছে যেতে।আর এই শাড়িটাও তো আবিরই অফিসে থাকতে পাঠিয়েছিলো।একবার ভেবেছিলাম এমন পাতলা শাড়ি পরবো না কিন্তু জলিই বোঝালো এটা না পরলে আবির রেগে যাবে তাই তো পরলাম।ওকি জানতো না আমি শাড়িতে অভাস্ত না? জলি ঠিকই বলে আবির বদলে গেছে।হয়তো ওর জীবনে অন্য কেউ এসে গেছে।
,
,
,
চলবে,,,,
#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ১৩
লেখাঃ Mst Liza
,
আয়াত লাবন্যকে নিয়ে ওয়াশরুমের বাইরে আসলো।সবাই লাবন্যর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।যার আপাদমস্তষ্ক বোরখার আবরণে ঢাকা।লাবন্যর সান্ডপান্ডরাও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা কি সেই লাবন্য?
উৎসব জমে উঠেছে।কেউ নাচ করছে, কেউ গান করছে তো কেউ স্টেজে গিয়ে ফান করছে।আয়াত নাচ, গান থেকে একটু দূরেই আছে।মেঘ অনেকবার আয়াতের সাথে কথা বলার চেস্টা করেছে কিন্তু আয়াত মেঘকে এড়িয়ে চলছে।এভাবে দুপুর ১টা বেজে গেল।আয়াতের দাদু এসেছে আয়াতকে নিতে।আয়াত চলে যাবে তখনই টোমি এসে একটা সরবতের গ্লাস আয়াতের হাতে ধরিয়ে দিল।আয়াত গ্লাসটা রেখে দাদুর কাছে চলে যায় আর এদিকে গ্লাস সামনে থাকায় লাবন্য ডগডগ করে সরবতটা গিলে নেয়।আর মাতলামি শুরু করে।
নেহাল প্রচুর রেগে যায়।কে করেছে এটা?
টোমি নেচে নেচে উত্তর দেয় দোস্ত আমি তো এটা আয়াতকে…
নেহাল ধুসসস! করে একটা ঘুষি বসিয়ে দেই টোমির নাক বরাবর।
ওদিকে লাবন্যকে সামলানোও কস্টকর হয়ে পরেছে।নেশার ঘোরে কি কি করে যাচ্ছে তা নিজেও যানে না।আয়াত, নেহাল, দাদু আর মেঘ চারজন মিলে মেঘের গাড়িতে করে লাবন্যকে বাড়ি পৌঁছাতে যায়। নেহাল রাস্তায় আজকের পুরো ঘটনা দাদুকে খুলে বলে আর আয়াতের কাছে ক্ষমা চায়।লাবন্য আয়াতের কাধেঁ মাথা রেখে ঢুলে পরে।
লাবন্যকে বাড়িতে আনলে, সখিনা দরজা খুলেই চিৎকার।সাহেব জলদি আহেন।দেইখা যান কি কান্ড ঘটছে!
আবির নিচে নেমে দরজার দিকে তাকাতেই অবাক।আবিরের চোখে আর কিচ্ছু আসছে না। শুধু বাবাকে দেখছে।এতো বছর পর তার বাবার সাথে এইভাবে দেখা হবে সে ভাবে নি কখনও।অন্যদিকে আবিরের বাবারও চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।এ যেন এক নিছক মায়া। আবার তীব্র রাগও বুকের ভেতর পুষে আছে।
তোমরা লাবন্যকে নিয়ে ভেতরে যাও।আমি ওর বাবার সাথে কথা বলছি।
বাবা, কেমন আছো?
কিসের বাবা? কোন বাবা? আমার ছেলে ১৯বছর আগেই মারা গেছে।
প্লিজ বাবা ওভাবে বলো না।কোথায় ছিলে তোমরা?আমি ১৭ বছর আগে গিয়েছিলাম খুলনায়।যেই বাড়িটাতে আমরা থাকতাম সেখানে তোমাদের কাউকে খুজে পাই নি।আমি যানি আমি অনেক বড় অপরাধ করেছি কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটাও তো কখনও পাই নি বাবা! হাটু গেরে বসে ২হাত জোড় করে কান্নারত অবস্থায় বলল আবির।
অপরাধ করেছো তুমি? পাপ করেছো পাপ! তোমার মতো পাপি ছেলের আমার প্রয়োজন নেই।আর খুলনা থেকে ঢাকায় আমরা কেন এসেছি সেটা যানার কোনও অধিকার তুমি রাখো না!
প্লিজ বাবা ওভাবে বলো না।আমার আরি কেমন আছে? আর আমার মেয়ে! যাকে আমি এইটুকু ছোট্ট থাকতে দেখেছিলাম।
তোমার মেয়ে? হাসালে আবির! একটা কথা শুনে রাখ আয়াত যেন কিছুতেই যানতে না পারে তুমি ওর বাবা।ছোটবেলা থেকে ও যেনে এসেছে ওর বাবা খুব ভালো মানুষ ছিল।বাবা শব্দটার প্রতি একটা সম্মাণ সৃস্টি হয়েছে আমার দাদুভাইয়ের মনে।সেই সম্মাণটা তুমি ঘৃণায় পরিনত করে দিও না।
আয়াত! আমার মেয়ে আয়াত! কোথায় ও?
দাদু চলো এখন যায়!
হ্যাঁ দাদুভাই চলো!
আবির আয়াতকে পা থেকে মাথা অবদি একবার তাকিয়ে দেখল।একদম আরির মতোই হয়েছে। খুব ইচ্ছা করছে মেয়েটাকে একবার জড়িয়ে ধরতে।
আয়াত!
হ্যাঁ আংকেল! কিছু বলবেন?
না কিছু বলবে না।তুমি চলো তো দাদুভাই।এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে তোমার মাম্মাম চিন্তা করবে।আর হ্যা, মি.আবির খান।মেয়েকে সুশিক্ষা তো দিতে পারেন নি।শুধু ধন-দৌলতই বাড়িয়েছেন।এখন একটু মেয়েকে নিয়ে ভাবুন।বলেই চলে যাই আয়াতের হাত ধরে টানতে টানতে।
আচ্ছা দাদু আংকেল মনে হয় কিছু বলতে চাচ্ছিল আমাকে!
কই তেমনটা তো আমার মনে হলো না দাদুভাই।
দাদু!
বল,
লাবন্য চৌধুরীর বাবার নাম আবির খান হয় কিভাবে?
ছরি দাদুভাই আবির চৌধুরী বলতে যাবো তা আসলে আমার গুলিয়ে গিয়েছে!
ওহহ আচ্ছা।
আয়াতকে ওভাবে নিয়ে যাওয়ায় আবিরের কস্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।আবিরকে কাঁদতে দেখে মেঘ এসে শান্তনা দিচ্ছে।মেঘ তখন আবির আর আয়াতের দাদুর বলা সব কথা শুনে নিয়েছে আড়াল থেকে।
তাই আবিরের কাছে জানতে চাইলে আবির ১৯বছর আগের সব ঘটনাই মেঘকে খুলে বলে।
তার মানে আয়াত আপনার মেয়ে আংকেল?
হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ।আয়াত আমার মেয়ে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দেখ আজ নিজের মেয়েকেই আমি আমার পরিচয় দিতে পারবো না।বলতে পারবো না তুই আমার মেয়ে।
আপনি ভাববেন না আংকেল সব ঠিক হয়ে যাবে।
কি ঠিক হয়ে যাবে আবির? নেহা এতোক্ষণ বাড়িতে ছিল না।এইমাত্র বাড়িতে ফিরলো।
কই কিছু না তো! আবির চোখের পানিটা মুছে নেয়।
ইনি কে?
একে চিনছো না? আমার বন্ধুর ছেলে। যার কথা তোমাকে বলতাম আমাদের লাবন্যর জন্য।এ সেই বিজনেন্সম্যান মি.মেঘ রহমান।
কি? আপনি বিজনেন্সম্যান মি. মেঘ রহমান? আপনার সফলতার গল্প কত্তো পরেছি।আরে আবির তুমি তো আমাকে আগে বল নি ইনিই তোমার সেই বন্ধুর ছেলে।
নেহা মনে মনে স্বপ্ন দেখছে, ছেলেটাকে যদি আমাদের লাবুর সাথে বিয়ে দিয় তাহলে তার অধ্যেক সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া যাবে।
নেহালের আর কিছু বলার আগেই লাবন্যর সব মনে পরে গেল।এই সব আমার প্রাপ্য ছিল।আমি সত্যিই খুব খারাপ রে! আজ আমি আমার নিজের সব ভুল বুঝতে পেরেছি।আর কখনও কারও পিঁছনে লাগবো না।
আচ্ছা আমি এখন আসি অনেক রাত হয়েছে কাল ভার্সিটি যাবি?
যানি না! কিছুদিন নাও যেতে পারি।
ওকে।নিজের যত্ন নিস।বাই।
রাত ১টা। বিছানায় ছটফট করছে মেঘ।একবার এপাশ তো একবার ওপাশ।চোখ বন্ধ করলেই একটি মুখ বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।আয়াত! এই বোরখাওয়ালী আমায় তো ঘুমাতেই দিচ্ছে না।তাহলে কি আমি আয়াতকে? নাহ কি ভাবছি আমি! আমার তো লাবন্যর সাথে বিয়ে হওয়ার কথা।আয়াতকে ভেবে ভেবেই মেঘের রাতটা পার হয়ে গেছে।ফজরের আজানে মেঘের মা যখন নামাজ পরতে যায়।অজু করে ঘড়ের দিকে যেতেই মেঘের ঘড়ের লাইট অন দেখে এগিয়ে আসে।
কি হলো মেঘ তুই যেগে আছিস?
মেঘ গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে।মা আমি কি করব বুঝতে পারছি না!
কি হয়েছে আমাকে বল?
মেঘ আয়াতের বাবার অতীতের সব কথা মাকে খুলে বলে।মা আবির আংকেলের মেয়ে আয়াত।তাকে ছাড়া যে আমি একমুহূর্তও ভাবতে পারছি না।এখন আমি কি করব মা তুমিই বলও?
আচ্ছা মেঘ, তুই কি কখনও লাবন্যকে ভালোবাসি বলেছিস?
না মা।
তাহলে আর কি! তোর বাবার স্বপ্ন ছিল তার প্রিয় বন্ধুর মেয়ের সাথে তোর বিয়ে দেবে। দেখ লাবন্য যেমন তোর আবির আংকেলের মেয়ে আয়াতও তো তেমনই তোর আবির আংকেলেরই মেয়ে।আয়াতের সাথে তোর বিয়ে হলেও তোর বাবার স্বপ্নটা পূরণ হবে।এখন তুই ভেবে দেখ কি করবি?
এই কথাটাতো আমার মাথায় আগে আসে নি।তুমি যানো না মা কত বড় একটা ভুল ডিসিশন নেওয়ার থেকে বাচিঁয়েছো আমায়।
এখন একটু ঘুমা তো।চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারারাত ঘুমাসনি।
ভার্সিটিতে,,
মেঘ আয়াতের জন্য অপেক্ষা করেই চলেছে। এখনও আয়াত আসে নি। মন খারাপ করে বসে আছে মেঘ।আচ্ছা আয়াত কি এখনও আমার উপর রেগে আছে? ওকি আমার সাথে আর কথা বলবে না? নাহ আয়াত এখনও কেন আসছে না!
এখানে বসে বসে কি ভাবছেন?
মেঘ মাথা তুলে আয়াতকে সামনে দেখতে পেয়েই জড়িয়ে ধরল।আয়াততো থম হয়ে আছে।বলা নেই কওয়া নেয় হুট করে একজন পরপুরুষ এইভাবে তাকে জড়িয়ে ধরলো!
মেঘ ছাড়ুন আমাকে!
বিশ্বাস কর আয়াত আগে কখনও এমনটা হয় নি আমার সাথে।কাল সারারাত তোমার ওই মুখটাই শুধু আমার চোখে ভেসেছে।তোমাকে আমি কতোটা ভাল….
আয়াতের এক ধাক্কায় মেঘ ছিটকে পরে।আপনি একটা খারাপ লোক।আমাকে স্পর্শ করেছেন কোন অধিকারে?
আয়াত আমার কথাটাতো শোনো?
কি শুনবো আপনার কথা? আপনি একটা নোংরা লোক।নইলে এইভাবে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরতে পারতেন?
ওই কিসের নোংরা আমি? আমি তো তোমাকে ভালোবাসতে চেয়েছি।
দেখুন, আপনার এইসব প্রেম ভালোবাসার কথা আমাকে একদম শুনাতে আসবেন না।
কেন ভালোবাসা কি অন্যায়?
আপনার কাছে পবিত্র হতে পারে কিন্তু আমার কাছে এটা এক প্রকার পাপ।আমি এসব বিবাহ পূর্ব ভালোবাসায় আগ্রহী নই।
কিন্তু আয়াত আমি তো তোমাকে..
আমি আর কিছু শুনতে চাই না মেঘ।এখন আমার মুখ থেকে খারাপ কিছু বের হবার আগেই আপনি আমার সামনে থেকে চলে যান।
আয়াত!
মেঘ প্লিজ!
মেঘ চলে যায়।আর আয়াত সেথায় বসে রয়।খুব রাগ হচ্ছে।আবার মনের মধ্যে এক অজানা অনুভুতির যানান দিচ্ছে।তখন মেঘের ওই ভাবে জড়িয়ে ধরাটা, তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না আয়াত।কেমন যেন একটা শিহরন সৃস্টি হচ্ছে আয়াতের শরীরের প্রতিটা রোমে রোমে।কেন করল মেঘ এমনটা? একে কি ভালোবাসা বলে? আচ্ছা না ছুঁয়ে ভালোবাসা যায় না? এমন ভালোবাসার তো কোনও নাম নেই ইসলামিক দৃস্টিকোণ থেকে।
আয়াত মেঘকে খুঁজছে কোথাও পাচ্ছে না।হয়তো ভার্সিটি থেকে চলে গেছে।তারপর আর ২সপ্তাহ আয়াত মেঘকে দেখে নি।সাহশও হয় নি মেঘকে একবার ফোন করে খোঁজ নেবে।আজ দূর থেকে মেঘের গাড়ি আসতে দেখে দৌড়ে যায় আয়াত।মেঘ গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালে অপজিট পাশ থেকে আরেকজন গাড়ি থেকে নামলো।তারও আয়াতের মতো আপাদমাস্তষ্ক বোরখার আবরণে ঢাকা।
সে এসেই আয়াতের সামনে দাড়ালো।
আমাকে চিনতে পারছো না? আমি লাবন্য।থ্যাংকস আয়াত।তোমার জন্য আমি অনেক কিছু পেয়েছি।এই নাও।আমার বিয়ের কার্ড।সামনের সপ্তাহে ৫ তারিখে আমাদের বিয়ে।মেঘ বলল সবার আগের কার্ডটা তোমাকেই দিতে।
আয়াত লাবন্যর হাত থেকে বিয়ের কার্ডটা নেয়।চোখ বেয়ে গড়িয়ে আসা অশ্রুগুলো অনেক কস্টে আটকে রাখে।লাবন্য আয়াতকে সাথে নিয়ে একে একে পুরো ভার্সিটির সকলকে বিয়ের কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করছে।আর আয়াত দর্শক হয়ে চাপা কস্ট নিয়ে লাবন্যর সাথে লাবন্যর সুখটুকু উপভোগ করছে।ধীরে ধীরে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো।এখন মেঘের আসল পরিচয়ও সবাই যানে।মেঘ তো এই ভার্সিটিতে এসেছিল শুধু লাবন্যর জন্য।ভার্সিটি গেলেই এখন মেঘ-লাবন্যর লাভ-স্টোরি সকলের মুখে মুখে।আজ লাবন্যর গায়ে হলুদ ছিল।ভার্সিটির সকলে গেলেও আয়াত যায় নি।কাল অবশ্যই যেতে হবে।কাল যে বিয়ে।আজ আবির এসেছে লাবন্যর বিয়েতে তার পরিবারের সবাইকে নিমন্ত্রণ করতে।আয়াতকে তার দাদু ঘড়ে যেতে বলে কিন্তু আয়াত লুকিয়ে তাদের সব কথা শুনে নেই।অনেক বড় একটা ধাক্কা খায় যখন যানতে পারে আবির তার বাবা।
আয়াত কস্টে ঘড়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।ঘড়ের সব জিনিসপত্র ভাংচুর শুরু করে।কেন আমাকে সারাজীবন বলা হয়েছে আমার বাবা মৃত! আয়াত আবিরের ডাইয়েরিটা হাতে নিয়ে পুরিয়ে ফেলে।ঘড়ের ভেতরে জিনিসপত্র ভাংচুরের আওয়াজ পেয়ে সকলে দৌড়ে আসে।আবির বাইরের থেকে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে দরজা ভেঙে মেয়েকে এসে জড়িয়ে ধরে।কি করছিস কি মা? আয়াতের সামনে ডাইয়েরির পাতাগুলো পুরে ছাঁয় হয়ে আছে।আয়াতের মা এসে আয়াতের গালে সজোরে থাপ্পড় মারে।কি পুরিয়েছো তুমি এটা? মারও মাম্মাম! আমাকে তুমি যতো খুশি মারও।তবুও মাম্মাম এই লোকটাকে আমি বাপি বলে মানতে পারব না।এই ডাইয়েরির প্রত্যেকটা কথা মিথ্যা।এই লোকটা সম্পূর্ণ ভুলে ভরা।তোমাকে ঠকিয়েছে এই লোকটা।তুমি এই ডাইয়েরিটা আর কোনও দিন পরবে না।কখনও এই লোকটার কথা মনে করে কস্ট পাবে না।আয়াতের দাদা-দাদি আবিরকে আয়াতের এমন অবস্থা দেখে অনেক অপমান করে তারিয়ে দেয়।
অনেকদিন পর আয়াত ভার্সিটিতে আসে।এসে শোনে লাবন্যর সাথে নেহালের বিয়ে হয়েছে।লাবন্যর হঠাৎ এতো চেন্জ হয়ে যাওয়া আর নেহালের লাবন্যর প্রতি এতো কেয়ারিং এতো দিনের বন্ধুত্ব ভালোবাসাতে পরিণত হয় মনের অজান্তে।আর মেঘ সেটা যানতে পেরে নেহার ভয়ে প্রকাশ করে না। কারণ নেহার কাছে মেঘ হচ্ছে সোনার ডিম পারা হাসঁ।তাই মেঘ বিয়ের দিন নিজের জায়গায় নেহালকে বর বেশে বিয়ের আসনে বসিয়ে দেয়।আর মেঘ? সে কোথায়?
লাবন্য আর নেহাল আয়াতকে মেঘের কাছে নিয়ে যায়।আয়াতের সামনে মেঘ কান ধরে হাটুঁ গেরে বসে পরে।ছরি আয়াত! এটুকু অভিনয় করতেই হলো নেহাল-লাবন্যর জন্য।
ছরি বললেই সব ঠিক হয়ে যায়?আমার চোখের পানির বুঝি কোনও মূল্য নেই আপনার কাছে?
আচ্ছা ঠিক আছে, আজই মাকে পাঠাবো তোমাদের বাড়িতে বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে।
মেঘ আয়াতকে আবিরের কথা বলে।আবিরের কোনও কথায় আয়াত শুনতে চাই নি।মেঘ বোঝায় আবির পরিস্থিতির শিকার হয়ে নেহাকে বিয়ে করেছে।শুধুমাত্র লাবন্যর কথা ভেবে।মেঘের সব কথা শুনে আয়াত আবিরকে বাবা হিসেবে মেনে নেয়।আর তাই আবির এখন তার পরিবারের সাথে থাকে।
লাবন্যর বিয়ে হয়ে গেল।আবির তার পরিবারের সাথে থাকতে শুরু করল।আর নেহা একদম একা।আজ টাকা,পয়সা, ধন,দৌলত সব নেহার কাছে আছে।নেই শুধু আপনজনেরা।নেহা আর বেশীদিন বাঁচবেও না।ডাক্তার বলেছে ব্রেন্ডটিউমার।এখন লাস্ট স্ট্রেজ চলছে।বরচ ১মাসের মতো সময় নেহার হাতে আছে।জীবনের শেষ সময়ে এসে নেহা তার পাপের জন্য অনুশোচনা করছে।নেহা তার স্থাবর,অস্থাবর সব সম্পত্তি লাবন্য আর আয়াতের নামে লিখে দিয়ে লইয়ারকে নিয়ে আবিরের বাড়িতে যায়।কিন্তু আরিয়া নেহাকে ফিরে যেতে দেই না।জীবনের শেষ সময়টা নেহা অনেক যত্ন আর ভালোবাসা পেয়েছে।আর বুঝে গেছে অর্থ, সম্পদ আর অহংকারই জীবনের আসল সুখ নয়।জীবনের আসল সুখই হচ্ছে ভালোবাসা।
৩০বছর পর।আজ আবির আর আরিয়ার বিবাহের ৫০বছর পূর্ণ হলো।বয়সের ছাপ তাদের শরীরে পরে গেছে।সেই যৌবনটা এখন আর নেই।কিন্তু তাদের ভালোবাসা সেই আগের মতোই আছে।অন্ধকার রাতে ছাদে বসে আরিয়া আবিরের কাধেঁ মাথা রেখে আকাশের চাঁদটাকে দেখছে।আর আবির ওই চাঁদটাকে ডেকে বলছে।এই চাঁদ দেখও আমাদের পথচলা আজ ৫০বছর পূর্ণ হয়েছে।কিন্তু এখন আর আমার বউটার আখঁ চিবিয়ে খাওয়ার দাঁত নেই।এই আবির কি সব বলছো? আরে দাঁত নেই তো কি হয়েছে বিলিন্ডার তো আছে এই নাও।বলেই এক মগ আখেঁর রস আরিয়ার হাতে তুলে দিল।।।
#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ১২
লেখাঃ Mst Liza
,
লাবন্যর সব সান্ডপান্ডরা এসেছে আয়াতদের ক্লাসে, মেঘ ক্লাসরুমে থাকায় লাবন্য বাইরেই দাড়িয়ে আছে।
নেহাল সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, কাল আমরা সিনিয়ররা তোমাদের জন্য নবীন বরণ উৎসবের আয়োজন করেছি তো সবাই সকাল ১১টার মধ্যেই চলে আসবে।আর তুমি কি যেন নাম? আয়াতকে উদ্দেশ্য করে বলল।
আয়াত! ভয়ে ভয়ে নাম বলল।
ও হ্যাঁ আয়াত! তুমি কাল ৭টার সময় আসবে।বলে নেহাল যেই চলে যাবে,
আমি পারবো না আসতে!
না আসলে তো হবে না। কাল সবাইকেই আসতে হবে ব্যস।আর যে আসবে না তাকে তুলে আনা হবে।ভার্সিটিতে তোমাদের ১ম অনুষ্ঠান আর তোমরা না আসলে হবে?
মগের মুল্লুক নাকি যে তুলে আনা হবে? সবাই ১১টায় আর আমি ৭টায়।তাহলে কি মেঘ ওদেরকে, আমার কথা বলে দিল? ওরা কি তাহলে আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য! না এই মেঘ সুবিধার নয়।
ক্লাস শেষে, এই যে মেঘ শোনেন?
মেঘ আয়াতের ডাকের কোনও রেস্পোন্স দিচ্ছে না।
আপনার কি কান কাটা, কানে শোনেন না?
মেঘ এবার আয়াতকে বলল, তোমার কি ছেলেদের গায়ে পরে কথা বলতে ভালো লাগে? বোরখাওয়ালী হয়েছো! তোমার শরিয়াতের কোন আইনে ছেলেদের গায়ে পরে কথা বলার অনুমতি দেই আমাকে একটু বোঝাবে?
দেখুন আপনি কাল থেকে আমায় অনেক কিছুই শুনিয়েছেন।ভেবেছিলাম আপনার সাথে কথা বলব না।কিন্তু না বলে আর পারলাম না।আজ আমি আপনার জন্য এত্ত বড় একটা বিপদে পড়েছি!
মেঘ ভ্রু কুচকে, আমি আবার কি করলাম তোমাকে?
ওনাদের কে কি আমার নামটা না বললে আপনার হতো না? দেখলেন তো আমাকে সকাল ৭টায় আসতে বলল।
ওহহ এই কথা? ঠিক আছে। চলে এসো।
মেঘ আপনি কি কিছুই বোঝেন না? আমি বাড়িতে কিবলে আসবো? যেখানে কিনা সবাই আসবে ১১টায় সেখানে আমার মাম্মাম আমাকে এতো সকালে আসতে দেবে বলে আপনার মনে হয়?
তাহলে আসার দরকার নেই!
না আসলে ওরা আমাকে তুলে আনবে শোনেন নি?
ঠিক আছে।আমি দেখছি কি করা যায়!
আয়াতের চিন্তা মোটেও কাটে না।কি বলে যে সকাল ৭টায় বাড়ি থেকে বের হবে সেটাই সারাদিন ভেবেছে।রাত শেষে সকাল হয়ে গেল। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ।
এতো সকালে কে আসলো?
মাম্মাম আমি দেখছি।
দরজা খুলেই আয়াত অবাক।এতো সকালে রূপালী তুমি এখানে?
আন্টি কি ভিতরে আছে?
কে এসেছে মামনী?
আন্টি আমি রূপালী। আসলে আজ আমাদের ভার্সিটিতে নবীন বরণ উৎসব।ভাবলাম আমার বাসা তো কাছেই তাই আয়াতকেও ডেকে নিয়ে যায়।শুধু শুধু আজ আর ওর দাদুকে কস্ট করে দিতে যেতে হবে না।
আরিয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৬ঃ৩০ বাজে।এতো সকালে নবীন বরণ?
হ্যাঁ আন্টি।
আরিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আচ্ছা যাও।
তারপর আয়াত আর রূপালী দুজনেই বাড়ি থেকে বের হলো।আয়াত এখন আমি আসিরে।
মানে? তুমি যাবে না?
না।আমি গিয়ে কি করব আমাদের তো ১১টায় যেতে বলেছে।
প্লিজ রূপালী এমনটা করো না।আমার একা যেতে খুব ভয় করছে।
কে বলল তুমি একা যাচ্ছো? সামনে তাকিয়ে তো দেখ!
আয়াত সামনে তাকিয়ে দেখে মেঘ গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।না আমি মেঘের সাথে যাবো না।তুমি চলো না রূপালী।
পাগলামী করো না আয়াত।মেঘই আমাকে বলেছে তোমাকে নিয়ে আসতে।এখন তুমি যদি এমন কর তাহলে মেঘ চলে যাবে।আর তোমার সমস্যা তোমাকেই বুঝতে হবে।আমি যদিও তোমার সাথে যায় সিনিয়রদের থেকে কোনও ভাবেই তোমাকে বাচাঁতে পারবো না।তার চেয়ে তুমি মেঘের সাথে যাও সেটাই বেটার হবে।
আয়াত একটু একটু করে হেটে মেঘের সামনে এসে দাড়ালো। চলুন।
গাড়ি চলছে আর আয়াত অস্বাচ্ছন্দ বোধ করছে।মেঘ সেটা খেয়াল করে।তাই মেঘ গাড়ি থামিয়ে সামনের সিটে গিয়ে ড্রাইভারের পাশে বসে।গাড়ি আবার চলতে শুরু করেছে।আর মেঘ সামনের আয়নায় আয়াতকে দেখছে অনেক নারভাস মেয়েটা।না যানি লাবন্যর দলবল আবার কোন ফন্দি এটেছে মেয়েটাকে হেনেস্ত করার!
গাড়ি এসে ভার্সিটির সামনে থামলো।খুব শান্ত পরিবেশ।চারিদিকে কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।আচ্ছা ওরা আমাকে এতো সকালে বোকাঁ বানানোর জন্য আসতে বলি নি তো? সব আপনার জন্য হয়েছে, কে বলেছিল আপনাকে আমার নাম বলতে?
দেখ তোমার নাম আমি কাউকে বলি নি! বড্ড বেশি কথা বলছো।আর যদি একটাও কথা শুনি তাহলে তোমাকে একা রেখে এক্ষুণি চলে যাবো।
আয়াত ভয়ে আর কোনও কথা বলছে না।দুজনেই পুরো ভার্সিটিতে চক্কর দিচ্ছে। অডিটোরিয়াম রুমটার সামনে এসে।অডিটোরিয়াম রুমটা খোলা আছে! চলো!
বলেই মেঘ রুমের মধ্য যেই এক পা রাখলো অমনি একটা মোটা দড়ির সাথে মেঘের একপায়ে গিট লেগে গেল।তারপর সামনে আরেক পা বাড়াতেই দড়িটা টেনে ঘেষতে ঘেষতে মেঘকে ভেতরের দিকে নিয়ে যায়।আয়াত মেঘের এমন অবস্থা দেখেই দৌড়ে আসে।আর সামনের টেবিলে থাকা একটা কেচিঁ দেখতে পাই।ভাবে কেচিঁটা দিয়ে মেঘের পায়ের দড়িটা কাটা যাবে।আয়াত তারাহুরা করে কেচিঁর সাথে যে পাতলা লম্বা সুতোটা বাধাঁ আছে তা খেয়াল না করেই সোজা গিয়ে টান দিল আর উপর থেকে এক বালতি কাদাঁ এসে আয়াতের মাথায় পরল।আয়াতের বোরকা, নেকাব সব কাদাঁয় ভিজে গেছে।
আয়াতের এমন কাদাঁ মাখা শরীরের নাজেহাল অবস্থা দেখে মেঘ না হেসে পারলো না।
খুব হাসি পাচ্ছে আপনার? আয়াত ভ্যাআআআআ করে কান্না জুড়ে দিল।
তারপর মেঘ আয়াতকে শান্তনা দিচ্ছে।আয়াত অনেক কান্না হয়েছে এখন থাম। সামান্য কাদাঁই তো এতে কান্না করার কি হলো?
সামান্য কাদাঁ তাই না? আপনার গায়ের উপর পরলে বুঝতেন! ভ্যাআআআ করে কান্না করেই যাচ্ছে আয়াত।আর বলছে, এই কাদাঁ মাখা অবস্থায় আমি বাড়িতে যাব কিভাবে? রাস্তার মানুষ তো সব হাসবে আমাকে দেখে! আর মাম্মাম! আমার মাম্মাম কে কি বলব গিয়ে? দাদিও যানতে পারলে বলবে লেখাপড়া না করিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দাও।ভ্যাআআআ।
এই থামো! ধমক দিয়ে বলল মেঘ।কাঁদলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে? তার চেয়ে বরং ওয়াশরুমে গিয়ে পরিষ্কার করে নাও।
এগুলো ওয়াশরুমে গিয়ে পরিষ্কার করে শুকাবো কখন?
১১টা বাজলেই সবাই এসে পড়বে।আমাকে যোকার সেজেই থেকে যেতে হবে সবার সামনে।সবাই হাসবে আমাকে দেখে।যে রকমটা আপনি হাসছিলেন এতোক্ষণ।
ঠিক আছে! আমি দেখছি কি করা যায়।তুমি গিয়ে ওয়াশরুমে পরিষ্কার হয়ে নাও।আমি এখানে আছি।
আয়াত ওয়াশরুমে গিয়ে বোরখা খুলে পরিষ্কার হয়ে বসে কাপড়ের পানি শুকাচ্ছে ২ঘন্টা পর মেঘ এসে ওয়াশরুমের দরজা নক করে,
আয়াত দরজাটা খোলো!
না।
খোলো বলছি?
কি বলছেন আপনি মাথাটা ঠিক আছে?
আহহা খোলো আয়াত।এক মিনিটের জন্য।
বললাম তো খুলব না।আমার পর্দা নস্ট হয়ে যাবে।
আমি বলছি হবে না।সামান্য একটু খুললেই হবে।নইলে কিছুক্ষণ পর সবাই আসলে তখন বুঝবে।
দরজা খুললে আপনি কি করবেন?
শুধু, এই ব্যাগগুলো দেব তোমায়!
কিসের ব্যাগ?
দেখলেই বুঝতে পারবে!
আয়াত ওয়াশরুমের দরজাটা সামান্য একটু খুলে হাত বাড়াতেই মেঘ আয়াতের হাতের পানে চেয়ে রইলো।এতো সুন্দর ফর্সা হাত! চেহারা না যানি কত সুন্দর।অথচ এই মেয়ে আজকের দিনেও নিজের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে ঢেকে রাখে।
কি হলো মেঘ দেবেন?
আয়াতের ডাকে মেঘ তারাতারি ব্যাগগুলো আয়াতের হাতের আঙুলে বাধিঁয়ে দেই।আয়াত আঙুলের মোচর পেয়ে তাল সামলাতে না পেরে ২ হাত দিয়ে ব্যাগগুলো যেই ধরতে যাবে তখনই দরজাটা খুলে যায়। আর মেঘের সামনে আয়াতের মুখ চলে আসে। আয়াত সাথে সাথে ঘুরে ব্যাগগুলো নিয়ে ওয়াশরুমের ভেতর থেকে দরজাটা আবার বন্ধ করে দেই।আর মেঘ আয়াতের মুখটা দেখে সেখানেই থমকে যাই।মনে মনে ভাবে, এই বোরখাওয়ালী আয়াত এত্তো সুন্দর দেখতে!
আর ওদিকে আয়াত ওয়াশরুমের দরজার সাথে পিট ঠেকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে, ইয়া আল্লাহ! আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।আমি ইচ্ছা করে মেঘের সামনে আসি নি।
মেঘ আয়াতের মুখ দেখে নেওয়ায় আয়াত মেঘের সাথে কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে। হঠাৎ মেঘ আয়াতকে ডাকলো।
কি হলো। ওখানেই বসে থাকবে নাকি?
আয়াত চুপ হয়ে আছে!
দেখ আর কিছুক্ষণের মধ্যই সবাই চলে আসবে।
আয়াত নিরাবতা ভেঙে ব্যাগগুলো খুলে খুলে দেখছে আর বলছে এতোগুলো বোরখা দিয়ে আমি কি করব?
তাছাড়াও সব আমার সাইজেরও না।কিছু বড় হয়ে যাবে তো কিছু ছোট হয়ে যাবে।
আরে সেই জন্যই তো এতোগুলো এনেছি।তোমার মাপ তো আমার জানা নেই।যেটাতে ফিটিং হয় সেটা পরে বাইরে এসো।
কিছুক্ষণ পর ভালো দেখে একটা বোরখা পরে আয়াত নিজেকে সম্পূর্ণ ঢেকে পরিপূর্ণ পর্দা সহকারে বাইরে আসলো।এবার মেঘেরও আয়াতকে দেখে একটু লজ্জা লজ্জা লাগছে।মেঘ আয়াতকে একটু অপেক্ষা করতে বলে কোথায় যেন চলে গেল।কিছুক্ষণ পর মেঘ আসলে আয়াত জানতে চাইলো কিন্তু মেঘ বলল না সে কোথায় গিয়েছিল।শুধু বলল সময় হলে ঠিক যানতে পারবে।তারপর দুজনে পুরো ভার্সিটিতে অল্প অল্প করে কথা বলছে আর হাটছে।
ঘড়ির কাটায় সকাল ১১টা ছুঁই ছুঁই।সকলে আসতে শুরু করেছে।মেঘ কাউকেই অডিটোরিয়াম রুমে যেতে দিচ্ছে না।বলছে, সিনিয়ররা আমাদের জন্য এতো সুন্দর করে আয়োজন করেছে তারাই আগে রুমটা খুলুক।আমরা আরেকটু অপেক্ষা করি।না হলে ভালো দেখায় না।
সবাই অডিটোরিয়াম রুমটার সামনে দাড়িয়ে আছে।ইতিমধ্যে, লাবন্য তার সান্ডপান্ডদের নিয়ে হাজির।লাবন্য আয়াতকে হেসে হেসে সবার সাথে কথা বলতে দেখে ভীষণ রেগে যায়।
এই মেয়ে তোমাকে না সকাল ৭টায় আসতে বলা হয়েছে?
আপু আমি তো সকাল ৭টায় এসেছি।
লাবু ওকে পরে দেখে নেব।আর দেরি করিস না দরজাটা খোল!
লাবন্য অডিটোরিয়াম রুমের দরজাটা খুলে ভিতরে যেতেই এক বালতি কাদাঁ লাবন্যর মাথায় এসে পরে।আর লাবন্যর পুরো শরীর ভিজে যায়।
লাবন্যর এমন অবস্থা দেখে সবাই হেসে দেয়।হাসতে বাকি থাকে না তার সান্ডপান্ডগুলোও।
লাবন্য লজ্জায় সেখানেই বসে পরে।কিচ্ছু বুঝে উঠতে পারে না কি করবে।আয়াত লাবন্যর এমন অবস্থা দেখে।চিৎকার করে সবাইকে থামতে বলে।সবাইকে বোঝায় তোমরা এভাবে হেসো না লাবন্য আপুর যায়গায় তোমরা থাকলে তোমাদের অবস্থাও ঠিক এমনটাই হতো।তারপর দৌড়ে এসে লাবন্যকে উঠিয়ে দাড় করায়।
ওয়াশরুমে চলেন আপু কাদাঁ পরিষ্কার করবেন।
আয়াত তোমার কি বুদ্ধিলোপ পেয়েছে? যেই মেয়েটা তোমাকে সবার সামনে অপদস্ত করতে চেয়েছিল।সেই মেয়েটার জন্যই তুমি ভাবছো?
তাহলে এটা আপনারই কাজ? ছিঃ মেঘ ছিঃ আমি আপনার কাছে এমনটা আশা করি নি।কেউ ইট মারলেই কি তাকে পাটখেলটা ছুড়তে হবে? কি লাভ পেলেন এমনটা করে? একটা মেয়েকে এইভাবে সকলের সামনে অপমান না করলে আপনার হচ্ছিল না?
আয়াত ওকে শিক্ষা না দিলে ও সোজা হবে না।
তাই বলে এইভাবে?
আয়াত..
আয়াত হাতটা উচু করে মেঘকে থামিয়ে বলল, আপনার থেকে আমি আর একটাও কথা শুনতে চাই না।
তারপর লাবন্যকে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে আয়াত লাবন্যকে গোসল করিয়ে পরিষ্কার করে দেয়। লাবন্যর সামনে বোরখার ব্যাগগুলো রেখে।
লাবন্য বোরখা পরে আয়াতকে জড়িয়ে ধরে।আয়াত আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।আজ তো আমার মরে যেতেই ইচ্ছা করছিল।যাদেরকে আমার আপন ভেবেছি সেই ফ্রেন্ডরাও আমার এই অবস্থা দেখে হাসলো আর তুমি কিনা?
থাক না আপু।যা হয়ে গেছে ভুলে যান।আর নতুন করে সবকিছু শুরু করুন।আর যানেন আপনাকে বোরখাতে কত্ত সুন্দর দেখতে লাগছে? যাদের আপনি বন্ধু ভাবেন তারা কি অনন্তকাল আপনার সাথে থাকবে বলুন?আপনি একটা মেয়ে।আর মেয়েদের সৌন্দর্য সকলের সামনে প্রদর্শন করার জন্য নয়।মেয়েরা যে অতি মূল্যবান সম্পদ।এ দুনিয়া বেশীদিনের জন্য নয় আপু।এখন ফেতনার সময়।বাবা-মা, পরিবার-পরিজন কেউই একদিন থাকবে না।ওই অন্ধকার কবরে থাকবে না কোনও বন্ধুবান্ধব।আপনাকে ঐদিনটার জন্যই নিজেকে গোছাতে হবে।
তুমি ঠিক বলেছো আয়াত।আজ থেকে আমি সব খারাপ কাজ করা ছেড়ে দিব।