“অহনাকে কোলে করে হসপিটালে নিয়ে এসে আবির পাগলের মতোন ডাক্তারকে ডাকে।ডাক্তার, নার্স সবাই ছুটে ছুটে আসে।অহনাকে খাটলিতে শুইয়ে দেওয়া হয়।ডাক্তার অহনাকে দেখে বলে এক্ষুনি ও.টি তে নিতে হবে।খাটলি ঠেলে দ্রুত ও.টির দিকে নেওয়া হয়।আবির এখনও অহনার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে।”
“ও.টির কাছে আসলে ডাক্তার আবিরকে বাঁধা দেয় আর অহনার থেকে আবিরের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ও.টির ভেতর চলে যায়।”
“ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ আর বাইরে থেকে আবির খুব টেনশনে আছে।জলির বাবা আবিরকে শান্তণা দিচ্ছে।আর আবির কাঁদছে।জলির বাবা বলছে,”
—“কিচ্ছু হবে না আমাদের অহনার ওই স্রষ্টার উপর ভরসা রাখো আবির।”
“কিন্তু আবিরের মন যে মানছে না।অহনা কিংবা তাদের সন্তানের কিছু হলে তখন যে তাদের সব স্বপ্ন ভেঙে যাবে।”
“বিয়ের তিন বছর পর আজ অহনা মা হতে চলেছে।কত স্বপ্ন বুনেছে দুজনে এই দিনটার জন্য! জলিকে দেখে রোজ মাঝ রাতে অহনা কেঁদে উঠতো আর আবিরের কাছে একটা সন্তান আবদার করতো।বলতো জলির মতোন সেও মা হতে চাই।সন্তানের জন্য তারা অনেক ডাক্তার দেখিয়েছিলো।অনেক ওষুধ খেয়েছিলো।আর আজ যখন তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে তখন এমনটা কেন হলো?”
“ওদিকে, জলির মায়েরও মনটা ছটফট করছে অহনার জন্য।আদি ব্যাপারটা লক্ষ্য করে জলির মাকে হসপিটালে যেতে বলে অহনার কাছে।জলি আর তার সন্তানদের সে দেখবে।জলির মা আর দেরি করে না।আদির কাছে জলিকে রেখে নিশ্চিন্তে হসপিটালে চলে যায়।”
“এখন বাড়িতে শুধু জলি, আদি আর তাদের সন্তান আছে।ছেলেমেয়ে গুলো দোলনায় হাত পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে খেলছে।বিছানায় পা এলিয়ে দিয়ে বসে জলি আদির কান্ড দেখছে।একবার একজনকে কোলে নিয়ে তাকে রেখে আরেকজনকে কোলে নিচ্ছে আদি।”
—“আদি কি হচ্ছে কি? ছেলে মেয়ে দেরকে ঘুমোতে দেনা।”
“আদি মেয়েকে কোলে করে নিয়ে এসে জলির কোলে তুলে দেয় আর দুই হাতে দুই ছেলেকে নেয়।তারপর জলির সামনে বসে বলে,”
—“তিন তিনটা বেবি আমাদের।কাকে ছেড়ে কাকে কোলে নিবো বুঝে উঠতে পারছি না।যদি কারও আদর কম হয়ে যায় তখন তো বড় হয়ে চুল ছিঁড়া ছিঁড়ি করবে তিনজনে।আর বলবে আমরা ওদের মধ্যে ভেদাভেদ করি।এক জনকে কম ভালোবাসি আরেক জনকে বেশি।”
“আদি কথা বলছে আর জলি আদির মুখের দিকে চেয়ে আছে। বাবার মাইরের দাগগুলো আদির মুখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। জলি বিছানার উপরে মেয়েটাকে শুইয়ে দিয়ে। তারপর আদির কোল থেকেও ছেলে দুটোকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তারপর আদির মুখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ওঠে।জলির কান্না দেখে আদি জলিকে ঝাঁকিয়ে বলে,”
—“এই কাঁদছিস কেন? ওহহ আমাদের বিয়ে হয় নি এইজন্য কাঁদছিস তাই না? ঠিক আছে তোর বাবা-মা বাড়িতে আসুক আমি তাদের অনুমতি নিয়ে যতো তারাতারি সম্ভব তোকে বিয়ে করবো। প্লিজ কাঁদিস না।”
“জলি ঝাপিয়ে আদির বুকে পরে কাঁদতে থাকে।আর কাঁদতে কাঁদতে বলে,”
—“আমাকে ক্ষমা করে দে আদি।আমার জন্য আজ বাবা তোকে এভাবে মারলো।কিন্তু বিশ্বাস করে আমার বাবা খারাপ না।আমাকে খুব ভালোবাসে তাই তোকে মেরেছে।”
“হসপিটালে, ডাক্তার ও.টি থেকে বেড়িয়ে আসে।আর আবির ডাক্তারকে দেখে বসা ছেড়ে উঠে দাড়ায়।জলির বাবা এগিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে।আর জলির মাও মাত্র হসপিটালে এসেছে।ডাক্তার বলে,”
—“ছরি এভাবে সিঁড়ি থেকে পরে যাওয়াতে প্রেসেন্ট পেটে খুব জোড়ে আঘাত পেয়েছে যার কারণে প্রেশেন্টকে বাঁচাতে পারলেও আমরা বেবিটাকে বাঁচাতে পারি নি।
“অহনা খুব চিন্তায় আছে।তখন টিভিতে ওভাবে সবটা দেখে অস্থির হয়ে আছে।আবিরের ফোনটাও বন্ধ।হয়তো ফোনে চার্জ নেয়।কিন্তু জলির আর ওর সন্তানের কি হলো সেটাতো জানতে হবে? এমনই সময় আবির আসে। এসে অহনাকে বলে জলির তিনটা সন্তান হয়েছে দুটো ছেলে আর একটা মেয়ে।আর তখন ফোনে চার্জ না থাকায় ফোনটা অফ হয়ে গিয়েছিলো।আবিরের বলতে দেরি আছে তো অহনার লাফাতে দেরি নেই।অহনা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। আর পরে যেতে নিলে আবির ধরে বসে।তারপর নিচু হয়ে অহনার পেটে মুখ গুজে আবির বলে,”
—“আমাদের সন্তানের যেন কিছু হয়না অহনা।”
“অহনা আবিরকে ধরে উঠায়।তারপর বলে,”
—“কিচ্ছু হবে না! প্লিজ আবির আর এক মিনিটও দেরি করও না।আমাকে এক্ষুনি জলির কাছে নিয়ে চলো। আমি ওই ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে কোলে নিবো।”
“এদিকে আদি তার দারোয়ানের কাছে সবটা শুনে জলির বাড়িতে আসে।”
“জলি বিছানায় শুয়ে আছে আর পাশে তিনটা দোলনাতে তিনটা বাচ্চা দোল খাচ্ছে।জলির মা তার এক হাতের সাথে তিনটা দোলনায় ওরনা বেঁধে একসাথে দোল দিচ্ছে আরেক হাত দিয়ে জলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর জলি ঘুমাচ্ছে।এমন সময় আদি এসে চিৎকার দিয়ে ওঠে। আদির চিৎকার শুনে জলির বাবা বেড়িয়ে আসে।দেখে আদি এসেছে।আদিকে দেখে জলির বাবার জলির সেই যন্ত্রণায় ছটফট করার দৃশ্যটি মনে পরে যায়।”
“আদি এগিয়ে এসে জলির বাবার কাছে জলির কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি রেগে আদিকে মেরে বসে।আর সেটা দেখে আদির গার্ডগুলো এগিয়ে আসলে আদি তাদের বাড়ির বাইরে বের হয়ে যেতে বলে।আদির কথা মতো গার্ডগুলো বাড়ির বাইরে চলে যায়।তখন আদি জলির বাবাকে বোঝাতে চেস্টা করে কিন্তু তিনি আদির কোনো কথায় শুনতে চাই না।আদিকে তিনি আবার মারে আর বের হয়ে যেতে বলে বাড়ি থেকে।আদি যায় না জলির বাবাকে বোঝানো বাদ দিয়ে এবার ছুটে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে জলির রুমে যায়।আর গিয়ে দেখে জলি ঘুম।বাচ্চাগুলোও দোলনায় ঘুমাচ্ছে।আদিকে দেখে জলির মা বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ায় আর আদি ছুটে জলির কাছে আসে।জলির মাথার পাশে বসে জলির কপালে একটা চুমু এঁকে দেয়। তারপর জলির মুখটার দিকে চেয়ে দেখে। যে তার জন্য এতোগুলা দিন এতোটা কস্ট সহ্য করেছে।আদি জীবনে জলিকে পেয়ে আজ খুব খুশি।আদির দুচোখ গড়িয়ে সুখের অশ্রু ঝড়ছে।পাশ ঘুরে আদি তিনটা দোলনায় তিনটা বাচ্চাকে দেখে জলির মায়ের দিকে চায়। জলির মা ইশারায় উত্তর দেয় ওরা তোমার আর জলির সন্তান।”
“এমন সময় জলির বাবা রুমে আসে আর আদির শার্টের কলারটা টেনে ধরে উঠিয়ে দাড় করায়। তারপর আদিকে মারতে থাকে। মারতে মারতে বলে তোর মতোন বেঈমানের জন্য আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে।কথা আর মারের শব্দে বাচ্চাদের ঘুম ভেঙে যায়। তিনটা বাচ্চা চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। তাদের কান্নার আওয়াজ শুনে জলি জেগে যায়। আর দেখে আদিকে তার বাবা মারছে।জলির মা ছাড়ানোর চেস্টা করছে কিন্তু পারছে না।জলি দেখেই চিৎকার দিয়ে বাবাকে বলে আদিকে আর না মারতে।কিন্তু সে শোনে না।আদিকে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলে।তারপর টেনে হিচরে আদিকে রুম থেকে বাইরে নিয়ে যায়।জলির মাও তাদের পিছনে পিছনে যায়।কিন্তু ছাড়াতে পারে না।উঠে দাড়ানোর শক্তি জলির নেই তবুও চেস্টা করে।আর খাট থেকে পরে যায়।জলি পরে গিয়ে ব্যাথা পাই।চলতে খুব কস্ট হয়।তবুও জলি মেঝেতে ঘেঁষতে ঘেঁষতে বাইরে আসে আর চিৎকার করে বলে ওকে মেরো না বাবা।ওর কোনো দোষ না।ও শুধুই আমাকে ভুল বুঝেছে।প্লিজ ওকে ছেড়ে দাও।”
“জলির বাবা অনেক মেরে আদিকে এক ধাক্কা দিয়ে বাড়ির বাইরে বের করে দেয় আর তখনই আবির এসে আদিকে ধরে বসে।আবির চেয়ে দেখে আদির সমস্ত মুখ রক্তাক্ত হয়ে আছে।আবিরের পাশ থেকে অহনা তাকিয়ে দেখে সিঁড়ির কাছে জলি এসে চিৎকার দিয়ে নামছে।একটু এমন তেমন হলেই জলি পরে যাবে।সেটা দেখে অহনা জলির নাম ধরে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে জলির কাছে যেতে লাগে আর পা পিছলে দোতলা সিঁড়ি থেকে পরে গিয়ে অহনা মাথায় চোর্ট খাই আর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।”
“আবির দেখে আদিকে ছেড়ে দিয়ে অহনার কাছে যায়।জলির বাবা-মাও ছুটে অহনার কাছে যায়। আবির অহনাকে ডাকে কিন্তু অহনা ওঠে না।আবিরের এখন কান্না পাচ্ছে।কাঁদতে কাঁদতে বলছে,”
—“এটা তুমি কি করলে অহনা? আমি তোমাকে সাবধানে থাকতে বলেছিলাম। আমাদের সন্তানের যদি কিছু হয়ে যায়?”
“জলির বাবা বলে,”
—“আর দেরি করো না আবির ওকে হসপিটালে নিয়ে চলো।”
“আবির অহনাকে কোলে তুলে নিয়ে হসপিটালে চলে যায়। আর জলির বাবাও আবিরের সাথে সাথে যায়। জলির মা জলির কাছেই থাকে।জলিকে ধরে রুমে নিয়ে যেতে গেলে, পারে না।তখন আদি ঢুলতে ঢুলতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে আসে আর জলিকে কোলে তুলে নেয়। জলি আদির রক্তাক্ত মুখটাই হাত ছুঁইয়ে কেঁদে ওঠে।আর কেঁদে আদির বুকে নিজের মুখ গুজে দেয়।”
“জলির জ্ঞান ফিরতেই আবার ছটফট করতে শুরু করে।চিৎকার করে আর আদিকে ডাকে।গাড়ির ভেতরে জলির মা জলির হাতটা চেপে ধরে রেখেছে আর বলছে একটু ধৈর্য ধরতে।খুব অল্প সময়ের মধ্য আমরা হসপিটালে চলে আসবো।এদিকে জলির অবস্থা আরও খারাপ হতে চলেছে।জলির বাবা খুব ভয়ে ভয়ে আছে। সে কাঁদতে কাঁদতে বলে তোর কিছু হবে না মা।কিছু হবে না।জলি বাবাকে ধরে বলে তুমি এসেছো বাবা তবে অনেক দেরি ফেলেছো।আমি হয়তো আর বাঁচবো না।আমি মারা গেলে আমার আদির সন্তানকে দেখো।জলির বাবা জলির মুখটা চেপে ধরে বলে তোর কিছু হবে না।কিচ্ছু না।”
“এদিকে আদি বসা ছেড়ে চোখ মুখ মুছে উঠে দাড়ায় আর এক মুহূর্তও দেরি করা যাবে না।গাড়িতে বসে পরে আদি আর খুব দ্রুত গতিতে তারাহুরো করে গাড়ি ড্রাইভ করে।আদির পিঁছনে পিঁছনে চারটা গাড়িতে শুধু ওর গার্ডরা আসে।”
“রাস্তায় অনেক জ্যাম আদি যেই রাস্তা দিয়ে আসছে পুলিশ আগে থেকেই সেই রাস্তা ফাঁকা করে দিচ্ছে। আর এদিকে জলিদের গাড়ি জ্যামে আটকে আছে। জ্যাম দেখে গাড়িটা ঘুরিয়ে আবির অন্য রাস্তা নিতে যায় আর ঠিক তখনই জলির চিৎকার আরও বেড়ে ওঠে।এদিকে পুলিশও আবিরের গাড়িটা আটকে সাইড করতে বলেছে এই রাস্তা দিয়ে আদি যাবে বলে।আবির পুলিশকে বোঝানোর চেস্টা করে কিন্তু পুলিশ কোনো মতে আবিরের কথা শোনে না।উপায় না পেয়ে আবির গাড়ি থেকে নেমে যায় আর আসেপাশের কিছু মহিলাকে ডেকে আনে।তারা এসে জলির অবস্থা দেখে জলিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে পাশের একটা ঝোঁপের কাছে নিয়ে যায়।আর জলির চারপাশে শাড়ি দিয়ে ঘিরে দেয়। দূর থেকে জলির বাবা আর আবিরের চিন্তা হতে থাকে।জলির মা জলির কাছেই আছে।সে জলিকে আর একটু ধৈর্য ধরতে বলছে।হঠাৎ করে একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ।বাচ্চার কান্নার আওয়াজ হতেই জলি শান্ত হয়ে যায়। আবির আর জলির বাবার চোখে খুশির বন্যা বয়।কিন্তু সেই খুশি বেশিক্ষণ টেকে না।মিনিট কয়েক পর জলি আবার চিৎকার শুরু করে দেয়।আর আবার আবিরের ও জলির বাবার চিন্তা শুরু হয়।ওদিকে কি হচ্ছে কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না। জলির মা কেন এখনো আসছে না? আর জলি কেন আবার চিৎকার করছে? এরই মধ্যে আবার বাচ্চার কান্নার আওয়াজ তাদের কানে আসে।জলির ওখান থেকে একজন মহিলা বলে ওঠে জমজ বাচ্চা।কথাটা শুনে জলির বাবা আর আবির আবার খুশি হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর জলি আবার চিৎকার করে।এবার জলির বাবা আর আবির আবার চিন্তায় পরে যায় জমজ বাচ্চা হবার পর জলি আবার কেন চিৎকার করছে? তাহলে এবার জলির কি হবে? জলির বাবা চিন্তায় কেঁদে দেয়। আবির জলির বাবাকে শান্তণা দিতে থাকে।এরই মধ্যে আবার বাচ্চার কান্নার আওয়াজ।জলির বাবা কাঁদতে কাঁদতে থেমে যায়।জলির চিৎকারও এখন আর নেই।কিছুক্ষণ পরিবেশ নিস্তব্ধ।তারপর জলির মা ঝোপের বাইরে বেড়িয়ে আসে।আর মুখটা কাল করে জলির বাবার সামনে এসে দাড়ায়। জলির বাবা সেটা দেখে জলির মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদে। আর বলে আমার জলি আর নেই তাই না? কথাটা শুনে জলির মা জলির বাবাকে এক ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় এক ঝাড়ি।জলির বাবা ভাবে জলির মা এখনো তার প্রতি রেগে আছে।জলিকে তারিয়ে দিয়ে যে ভুল করেছে তার জন্য জলির মৃত্যুর কারণ হয়তো তাকে ভাববে।তাই হাত জোড় করে জলির বাবা জলির মায়ের কাছে বলে আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার জন্য মেয়েটা আর এই পৃথিবীতে নেই। কথাটা শুনে জলির মা আবার ঝাড়ি দিয়ে জলির বাবাকে একদম নিশ্চুপ করিয়ে দেয়। তারপর বলে প্রথমে দুইটা ছেলে তারপর একটা মেয়ে হয়েছে আর তোমার মেয়েও ভালো আছে।কথাটা শুনে জলির বাবা আর আবির একে অপরের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে।”
“এদিকে রাস্তার সাইডে সাড়ি সাড়ি গাড়ি দাড় করিয়ে পুলিশ আদির যাওয়ার জন্য জায়গা করে দিয়েছে।এতো গাড়ির ভিরে আদি আর আবিরের গাড়িটা পাশ ফিরে দেখে না।গাড়িটার পাশ কেটে আদি চলে যায় হসপিটালে।সেখানে গিয়ে চিৎকার করে ডাক্তার নার্স সবাইকে ডাকে।আদিকে দেখে কিছু নার্স, হসপিটালের প্রেশেন্টদের বাড়ির লোক ছুটে আসে।আর সুন্দরী সুন্দরী মেয়েরা গা ঘেঁষে অটোগ্রাফ নিতে চায়। আদির একটা ইশারায় তার গার্ডগুলো সবাইকে সরিয়ে দেয় তারপর ডাক্তারের সাথে রিসিপশনে গিয়ে জলির ছবি দেখিয়ে খোঁজ করে।আর জানতে পারে নাহ এই হসপিটালে এই প্রেশেন্ট আসে নি।কথাটা শুনে আদি হসপিটালের থেকে বেড়িয়ে আসতে যায়। এমন সময় একজন ডাক্তার আদিকে জিজ্ঞাসা করে।ছবির মহিলাটি কে? তখন উত্তরে আদি বলে, আমার সন্তানের মা।”
“আদি ওই হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে এসে অন্য হসপিটালে যায়। একটার পর একটা শহরের সব হসপিটালে গিয়ে আদি জলিকে খোঁজে কিন্তু কোনো হসপিটালেই জলিকে খুঁজে পাই না।আদি এবার ক্লান্ত হয়ে তার বাড়িতে ফিরে আসে।আর সেখানে এসে তার দাড়োয়ানের কাছে জানতে পারে জলি প্রায় এবাড়িতে আসতো আর দিনে তিন-চার বার ফোন করে শুনতো আদির কোনো খবর আছে কিনা।কথাটা শুনে আদি এবার অনেক ভেঙে পরে।আর ভাবে, এতোটা ভালোবাসে জলি আমাকে আর আমি এতোগুলো দিন ওকে ভুল বুঝলাম? ওকে এতো মানুষের ভিরে অপমান করলাম? আমি আমার সন্তানকে আমার জলিকে অস্বীকার করেছি।নাহ নাহ আমি আমার জলিকে আর কস্ট পেতে দেবো না।ও’কে ফিরিয়ে আনবো।কিন্তু কোথায় পাবো ও’কে?”
“যত্নণায় ছটফট করছে জলি।দাপাচ্ছে আর চিৎকার করে আদিকে ডাকছে।আদি চাইলেও জলির কাছে আসতে পারছে না কারণ জলিকে আবির নিজের কোলের সাথে মিশিয়ে রেখেছে।জলির অবস্থা দেখে আবিরের চোখেও পানি চলে এসেছে।আদি ভাবছে জলির গর্ভের সন্তানটা আবিরের আর জলি এখন আবিরের স্ত্রী। যতো কস্টই হোক জলির কাছে যাওয়া চলবে না।নিজের হাতদুটো শক্ত করে মুট করে রেখেছে তবুও জলির কাছে আসছে না আদি।জলির থেকে দূরে সরে এসে অন্যদিকে নিজের মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে চোখের পানি ফেলছে আর জলির যত্নণাটা অনুভব করছে।”
“জলি চিৎকার করতে করতে ক্লান্ত খুব।প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।আর বিরবির করে এখনো বলছে, আদি আমি ছলনাময়ী নই, ঠকায়নি তোকে আমি।জলি আস্তে করে নিজের হাতটা পেটে রেখে বলে, সোনা আমি হয়তো আর বাঁচবো না।আমি মরে গেলে তুই তোর বাবাইয়ের মতো হবি না।ক্ষমা করে দিবি বাবাইকে।আবির ঝাড়ি দিয়ে জলিকে থামায় আর বলে এসব কি বলছিস তুই জলি? তোর কিছু হবে না হসপিটালে চল।জলি আবিরের হাত ধরে থামিয়ে দেয়।আর বলে সে বাঁচতে চাই না।যার জন্য এতোগুলো দিন অপেক্ষা করেছে। এতোটা কস্ট সহ্য করেছে। আজ সেই তাকে ভুল বুঝছে।এতোগুলা মানুষের সামনে অস্বীকার করেছে। অপমান করেছে জলির ভালোবাসাকে সে বোঝে নি।কথাটা বলার পর জলি চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়।আবির জলিকে ডাকে কিন্তু জলি আর ওঠে না।আবির বুঝতে পারে জলির হুস নেয়।”
“ফাংশনে উপস্থিত সকলের চোখে জলির অবস্থা দেখে পানি চলে আসে।কিন্তু কেউ আদির ভয়ে জলির কাছে আসতে পারছে না।আর আদি দূর থেকে জলি আর আবিরের মধ্যে কথা হতে দেখে ফাংশন থেকে চলে যেতে লাগে।আদি গাড়ির কাছে চলে এসেছে।গাড়িতে উঠতে যাবে আবির জলিকে ছেড়ে দিয়ে চিৎকার করে আদিকে ডাকে।আদি ঘুরে তাকালে আবির আদির কাছে আসে তারপর আদিকে মারতে থাকে।মারতে মারতে আদি বলে, বেঈমান, নিলজ্জ, এতোটা পাষাণ কিভাবে হলি তুই? যেই মেয়েটা তোর জন্য এতোটা কস্ট আর অপমান সহ্য করেছে।নিজের মা-বাবা পরিবার সব কিছু হারিয়েছে আজ তাকে এই ভাবে তুই অস্বীকার করছিস?”
“আবিরের কথাটা শুনে আদি থমকে যায়।আদি কিছু জিজ্ঞাসা করবে আবিরের কাছে তার আগেই আদির গার্ডগুলো আবিরকে ধরে আদির কাছে থেকে দূরে নিয়ে আসে।আবিরকে গার্ডগুলো মারতে যাবে এমন সময় জলির বাবা-মা এসে গার্ডগুলোর কাছ থেকে আবিরকে ছাড়িয়ে নেয়। তারপর জলির বাবা আদির কাছে আসে আর ঠাসসসস! করে আদির গালে একটা কষিয়ে থাপ্পড় মারে।সেটা দেখে আদির গার্ডগুলো জলির বাবার কাছে আসতে যায় আদি হাত উঁচু করে তাদেরকে ইশারায় থামিয়ে দেয়। তারপর জলির বাবা কাঁদতে কাঁদতে আদির দিকে আঙুল তুলে বলে,”
—তোর জন্য আমি আমার মেয়েকে অনেক মেরেছি।এমনকি মান-সম্মানের ভয়ে ঘাঢ় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে তারিয়ে পর্যন্ত দিয়েছি।আমার মেয়েটা বোকা।তাই তোকে ভালোবেসেছে।আর তোর সন্তানকে এতোগুলা মাস ধরে গর্ভে ধারণ করেছে।আজ আমার কোনো মান-সম্মানের ভয় নেয়।হয়তো টিভিতে আমার মতোন আমার আত্নীয়-স্বজন, সমাজ সবাই দেখেছে আমার মেয়ের কস্টটা।সবাই বুঝবে ওর পরিস্থিতি।
“জলির বাবা আবিরকে ডাকে,”
—আবির?
—হ্যাঁ, আঙ্কেল।
—মেয়েটাকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে।ওকে যে বাঁচাতে হবে।আমি আমার মেয়ের কাছে ক্ষমা না চাইলে যে আমাকে ওই সৃষ্টিকর্তাও ক্ষমা করবে না।
“জলির বাবার কথা শুনে আদি এখনো সেখানেই নিস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আদি।আর আদির সামনে থেকে জলিকে ধরে নিয়ে আবির আর জলির বাবা-মা হসপিটালে চলে যায়।ওরা চলে গেলে আদি চিৎকার দিয়ে ওঠে ভাবে জলির সাথে আবিরের বিয়ে হয় নি।ওই সন্তানটা আমার?সত্যিটা জেনে আদির এখন আরও বেশি কস্ট হচ্ছে।”
“খুশীতে জলি নিজের কান্না ধরে রাখতে পারে না।জলির চোখ ছলছল করছে।ঝাপসা চোখের টলোমলো জল গড়িয়ে পরার আগেই জলি মুছে নেয়।তারপর পেপারটা বুকের সাথে চেপে ধরে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে,”
—আদি আসছে! আমার আদি ফিরে আসছে।অহনা, আবির নিউজটা পড়েছিস তোরা? আমার আদি ফিরে আসছে।জলি নিজের পেটে হাত রেখে বলে, সোনা তোর বাবাই আসছে।
“জলির এমন আদির প্রতি ভালোবাসা দেখে অহনার চোখেও পানি চলে আসে।ভাবে আদিও কি এভাবে জলিকে ভালোবাসে নাকি আদি এখনও আগের মতোন আছে?”
“পরের দিন সকালে জলিকে রেডি করিয়ে চুল আঁচড়ে দিচ্ছে অহনা।আবির বাইরে থেকে চিৎকার করে ডাকছে,”
—কি হলো তোমাদের? ওদিকে আদিতো এয়ারপোর্ট থেকে চলে যাবে।
“টিভিতে নিউজ দিয়েছে এয়ারপোর্টে সাংবাদিকরা আদিকে ঘিরে ধরেছে আর তারা আদিকে একটার পর একটা প্রশ্ন করে চলেছে।আদিও তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে সেটা দেখে আবির অহনাকে বলছে জলিকে নিয়ে তারাতারি রুম থেকে বের হতে।আর অহনা আসছি বলে বলে জলিকে আরও বেশি করে সাজাতে ব্যাস্ত।”
“অবশেষে জলিকে খুব সুন্দর করে সাজানো হলো।অহনা জলিকে নিয়ে বাইরে আসে।আবির জলিকে দেখে বলে হ্যাঁ খুব সুন্দর লাগছে।আদি চোখ ফেরাতেই পারবে না জলির থেকে।কথাটা শুনে জলি লজ্জা পেয়ে যায়। লজ্জা পেয়ে বলে,”
—যাহ কি বলিস না তুই আবির!
“অহনা বলে,”
—আবির ঠিকই বলেছে।
“তারপর আবির আর অহনা হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে অহনা চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা দেখে।অহনা লক্ষ্য করে তার মাথাটা ঘুরছে।অহনা পরে যেতেই আবির অহনাকে ধরে বসে।অহনাকে আবির ডাকে দেখে কোনো সাড়া নেই।তাই আবির আর জলি এয়ারপোর্টে না গিয়ে অহনাকে নিয়ে হসপিটালে যায়।”
“হসপিটালে নেওয়ার পর অহনাকে চেকাব করে ডাক্তার বলে অহনা মা হতে চলেছে।কথাটা শুনে আবির আর জলি খুব খুশি হয়।আবার পরক্ষণে জলির মনটা খারাপ হয়ে যায় সে আদির কাছে যেতে পারলো না বলে।অহনার মাথাটা এখনো ভার হয়ে আছে।আবির আর জলি অহনাকে নিয়ে বাড়িতে আসলে অহনা আবিরকে বলে জলিকে নিয়ে আদির কাছে যেতে।অহনাকে বিশ্রাম নিতে বলে আবির জলিকে নিয়ে আদির কাছে যায়।”
“এয়ারপোর্টে জলি আর আবির আসার আগেই আদির গাড়িটা চলে যায়। জলির আর আদির সাথে দেখা হয় না।পেপারে লেখা ছিলো একটা এ্যাওয়ার্ড ফাংশনে নিমন্ত্রিত হয়ে দেশে এসেছে আদি।এ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর আবার আমেরিকাতে চলে যাবে।ফাংশন শুরু হবার টাইম তো পাঁচটা এখন মাত্র দশ মিনিট সময় আছে।না জানি ফাংশন শেষে আদির সাথে জলির দেখা হবে কিনা।”
“জলি আর আবির এ্যাওয়ার্ড ফাংশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আবিরের গাড়িটা থামাতেই জলি গাড়ি থেকে নেমে যায়। দূর থেকে তাকিয়ে জলি আবিরকে দেখতে পাই। স্ট্রেজে আদি এ্যাওয়ার্ড হাতে তার সফলতার গল্প শোনাচ্ছে।তার জীবনের ব্যার্থতার গল্পও শুনাচ্ছে।আদির জীবন কাহিনী শুনে সবার চোখে পানি চলে আসে।আদি যখন বলে সে একজনকে ভালোবেসেছিলো।এক ছলনাময়িকে বিশ্বাস করেছিলো।কিন্তু সেও তাকে ঠকিয়েছে তখন জলি বুঝতে পারে যে আদি তার কথাই বলছে।জলি চোখের পানি মুছে দূর থেকে চিৎকার দিয়ে ওঠে।আদিকে ডাকে জলি।আর জলির চিৎকারে সকলের নজর জলির দিকে।ভিরের মধ্যে আদি দূর থেকে অন্ধকারে জলিকে দেখতে পারে না।শুধু কন্ঠ শুনে বুঝে ফেলে এটা জলি।জলি ভির ঠেলে একটু এগিয়ে আসলে আদি আবছা জলির মুখটা দেখতে পাই।এতোদিন পর জলিকে দেখে আদি খুশি হয়।যে জলি তার কাছে এসেছে।আদি তার দুই হাত মেলে দেয় জলি কাছে আসলেই জলিকে জড়িয়ে ধরবে।জলি আটমাসে পেট নিয়ে জোড়ে হাটতেও পারছে না তবুও আজ নিজের সর্বস্ব শক্তিটুকু দিয়ে ছুটে আসে।জলি স্টেজের কাছাকাছি আসলে সব লাইট ক্যামেরা জলির দিকে আর আদির চোখ যায় জলির পেটের দিকে।আদি ভাবে জলি প্রেগনেন্ট? মুখ তুলে জলির পেছনে দেখে আবির হেঁটে আসছে।আবিরকে দেখে আদির ১১ মাস আগে জলির লিখে রেখে যাওয়া সেই চিঠিটার কথা মনে পরে যায়। আদি ভাবে আবিরের সাথে জলির বিয়ে হয়েছে আর জলির গর্ভে আবিরের সন্তান।এটা ভেবে আদি নিজের হাতটা নামিয়ে পিছনে ঘুরে যায়। জলে এসে আদিকে টেনে বলে, এই আদি এভাবে না বলে চলে কেন গিয়েছিলি রে? তুই জানিস না তোকে আমি কত্ত মিস করেছি…কথাটা বলেই জলি আদিকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। তারপর আদির গালটা ধরে বলে…কেন চলে গিয়েছিলি তুই? আদি কোন উত্তর না দিয়েই নিজের গাল থেকে জলির হাতটা নামাতে যায় আর জলি আরও শক্ত করে আদির গালটা ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়।তারপর আদির মুখে অজস্র চুমু এঁকে দিয়ে আদিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে।আদি খেয়াল করে সমস্ত লাইট ক্যামেরা তাদের উপর।আদি এক ধাক্কা দিয়ে জলিকে দূরে সরিয়ে দেয়। আর বলে,”
—আপনার সাহস হয় কিভাবে এভাবে আমাকে স্পর্শ করার? সিকিউরিটি গার্ড কে কোথায় আছেন। আপনাদের মাইনে দিয়ে রেখেছি কি জন্য? একজন মানুষ এভাবে স্ট্রেজে কিভাবে চলে আসলো?
“আদির কথা শুনে সবাই ভয়ে ভয়ে বলে,”
—স্যার আমরা ভেবেছি উনি আপনার পরিচিত।
—পরিচিত? আপনাদের কি বুদ্ধি নেই? দেখতেই পারছেন একজন গর্ভবতী মহিলা।এনাকে আমি কিভাবে চিনবো? নিশ্চয় আমার কোনো প্রতিপক্ষের সাজানো নাটক এটা।আমাকে দেশে কি এ্যাওয়ার্ড নিতে আসতে বলা হয়েছে নাকি ইনসাল্ট করতে সেটাই বুঝতে পারছি না।
“জলি আদির ব্যাবহার আর কথার মধ্যে বদল দেখে অবাক।ভাবে এসব কি বলছে আদি? জলি আদির কাছে আবার এগিয়ে আসে আর আদির শার্টের কলারটা টেনে ধরে বলে,”
—কিসব বলছিস তুই আদি? জলি আদির হাতটা নিজের পেটে ছুঁইয়ে বলে, এই সন্তানটা…
“জলি আর কিছু বলার আগেই আদি জলির পেট থেকে হাতটা টেনে এনে রাগে, কস্টে ঠাসসসস! করে জলির গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। জলিকে আদি থাপ্পড় দিলে আবির স্টেজের কাছে আসে কিন্তু সিকিউরিটি গার্ডরা আবিরকে স্টেজে উঠতে দেয় না।জলিকে টানতে টানতে তারা স্টেজ থেকে নিচে নামিয়ে নিয়ে আসে।আর আদি মাইক হাতে বলে কেউ ছবি তুলবেন না।এটা আমাকে ছোট করার জন্য পতিপক্ষের প্লান।”
“জলিকে কিছু দূর নিয়ে আসার পর গার্ডরা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। জলি পরে দিয়ে ব্যাথা পাই। হাতে ছিলে যায়।তারপরও জলি আবার উঠে দাড়ায় আর আদির কাছে আসতে চাই।গার্ডরা আবার জলিকে আটকায়। জলি বারবার বলে শুধু একবার আদির সাথে কথা বলে সে চলে যাবে তবুও জলির কোনো কথা তারা শুনতে চাই না।তাই জলি তাদের ঠেলে ছুটতে থাকে।ছুটে স্টেজের সিঁড়িতে আসতেই হোচট খেয়ে পরে যায় আর জলি পেটে আঘাত পাই।জলি আর উঠতে পারে না।যন্ত্রণায় চিৎকার করে আর আদিকে ডাকে।আদি জলির এই অবস্থা দেখে ছুটে আসে কিন্তু জলিকে স্পর্শ করে না।কারণ তার আগেই আবির জলিকে এসে ধরেছে।আদি উঠে দাড়ায় আর আবির জলিকে ডাকে।জলির প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়।দাপাচ্ছে আর চিৎকার করছে।আদি দূরে সরে গিয়ে নিজের চোখটা বন্ধ করে জলির যন্ত্রণা অনুভব করছে।আবির বলছে জলিকে হসপিটালে নিয়ে যাবে কিন্তু জলি আদির সাথে কথা না বলে যাবে না।আদি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে কাঁদছে আর জলি চিৎকার করে এখনো আদিকেই ডাকছে।
“অহনা বুঝতে পারে আবির নিজেকে আঘাত করে করে শাস্তি দিয়েছে এতোদিন ধরে।অহনা আবিরের হাতটা উঠিয়ে আবিরের হাতের ক্ষতগুলোতে চুমু খেতে থাকে।অহনার চোখ বেয়ে পানি পরছে।আবির হাতটা টেনে অহনার গালটা আকড়ে ধরে আর বলে,”
—কি হয়েছে অহনা? এমন কেন করছো?
“অহনা কাঁদতে কাঁদতে আবিরের গায়ে কয়েকটা কিল বসিয়ে দেয় আর বলে,”
—তুমি খুব খারাপ! খুব খারাপ! প্রথমে আমাকে কস্ট দাও তারপর নিজেকে।আমাকে মেরেছিলে বলেই নিজের হাতে আঘাত করে এতোদিন শাস্তি দিয়েছো তাই না?
“আবির অহনার হাতটা টেনে ধরে অহনাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় আর বলে,”
—এই অহনা শান্ত হও না এবার।আমি একদম ঠিক আছি।আমাকে আগে বলো তুমি কোথায় ছিলে এতোদিন?
“অহনা আবিরকে সব খুলে বলে।আজ তিনমাস অহনা জলিদের বাসায় ছিলো।অহনা আবিরকে এটাও বলে জলি প্রেগনেন্ট।”
—কি জলি প্রেগনেন্ট?
—হ্যাঁ আবির জলি প্রেগনেন্ট।আদির সন্তানের মা হতে চলেছে জলি।কিন্তু সমস্যা একটাই আদির কোনো খোঁজ নেই।আর আঙ্কেলও জলিকে অনেক মেরেছে।
—প্রেগনেন্সি অবস্থায় জলিকে মেরেছে আঙ্কেল?
—হুমমমম।কিন্তু কি করবে আঙ্কেল? এভাবে এটা মেনে নেওয়াটাও যে একজন বাবার জন্য অসম্মানের।তাছাড়াও আঙ্কেলের দৃষ্টিকোণ থেকে সে ঠিক আছে।সমাজের কথা ভাবাটা স্বাভাবিক নয় কি?
—হুমমমম সেটাও ঠিক।আমাদের উচিৎ আঙ্কেলকে বোঝানো।
—ঠিক বলেছো আবির।তারাহুরো করে আমি তোমার কাছে চলে আসলাম না জানি ওখানে কি হচ্ছে।
—আমাদের এখন ওবাড়িতে যাওয়া উচিৎ।
—হুমমমম।
.
.
.
.
“জলির বাবা জলির চুলের মুঠি টেনে ধরে বলছে,”
—ছিঃ জলি ছিঃ তোকে জন্ম দিয়েছি ভেবে আমার ঘৃণা হচ্ছে। এতোটা নিচে নামতে তোর লজ্জা করলো না? আজই এই বাচ্চাটাকে নস্ট করবি তুই আই আমার সাথে।
“কথাটা বলে জলির হাত ধরে টান দেয় জলির চিৎকার করে কাঁদে।কোনো মতে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বাবার পা জড়িয়ে ধরে বলে,”
—এটা করও না বাবা।এ আমার আদির সন্তান।একে আমি নস্ট করতে পারবো না।আমার আদি জানলে যে খুব কস্ট পাবে।আমাকে ঘৃণা করবে।
“জলির বাবা জলিকে চুলের মুঠি ধরে টেনে উঠায় তারপর বলে,”
—কে আদি? কি তার বংশ পরিচয়? আর কোথায় সে বল?
“জলি কেঁদে ওঠে।কাঁদতে কাঁদতে বলে,”
—ওর কোনো বংশ পরিচয় নেই বাবা।ওর জন্মের সময় মা মারা যায়।যে ওর মাকে আশ্রয় দিয়েছিলো সেই ওকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে।দু’বছর আগে সেও মারা যায়। আর এখন ও কোথায় আছে আমি জানি না।
“জলির মুখে কথাটা শুনে জলির বাবা জলির গালে ঠাসসসস! ঠাসসসস! করে থাপ্পড় মারতে থাকে।জলির বাবাকে এসে জলির মা আটকায় বলে আর মেরো না আমার মেয়েটাকে।জলিকে বুকে জড়িয়ে জলির মা কাঁদে আর জলির বাবা দূরে সরে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে এমন মেয়ে আমার চাই না।”
“জলির বাবা আলমারি থেকে জলির সব জিনিসপত্র বের করে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারপর জলির হাত ধরে টেনে হিচড়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে এসে বলে তুই আর আমার মেয়ে না।যদি মরেও যাস তবুও আমার বাড়িতে আর আসিস না।কথাটা বলে জলিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় জলি পরে যাওয়ার আগেই অহনা এসে জলিকে ধরে বসে।অহনার সাথে আবিরও এসেছে জলিদের বাসায়।”
“অহনা আর আবির জলির বাবাকে অনেক বুঝায় কিন্তু সে বোঝে না।জলিকে আর সে মেয়ে মানতেই চাই না।না পেরে আবির আর অহনা জলিকে নিজেদের সাথে নিয়ে আসে।”
“অহনা আর আবির জলিকে এই অবস্থায় আশ্রয় দেয় বলে জলি এদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ থাকে।”
“এই অবস্থায় অহনা জলির খুব যত্ন নেই। জলির জন্য ভালোমন্দ রান্না করা।জলিকে খাইয়ে দেওয়া।এমনকি জলির চুলটা পর্যন্ত আঁচড়ে দেওয়া।”
“অহনার এতো কেয়ারিং আর যত্নে জলি অহনাকে বোন ভাবতে শুরু করে।এখন জলি আর অহনার সম্পর্কটা একদম দুই বোনের মতোন।মাঝে মাঝে আবিরের দেখলে হিংসা হয়। অহনা জলিকে বেশি সময় দেয় বলে আবির রাগ করে মাঝে মাঝে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরে।অহনা এসে আবিরকে খাইয়ে দিলে তারপর খাই।”
“আবার মাঝে মাঝে আবির আর অহনার খুনসুটিময় ভালোবাসা চোখের সামনে দেখলে জলির আদির কথা মনে পরে।জলি আর আদির সম্পর্কটাই তো ছিলো খুনসুটিময়।তাই জলি তখন রুমে এসে দরজাটা বন্ধ করে পেটে হাত রেখে একা একা আদির সন্তানের সাথে কথা বলে।”
“এভাবে আট’টা মাস কেটে গেছে।আদির এখনো কোনো খোঁজ নেই। আজ সকালে হঠাৎ আবির চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে নিউজ পেপারটা হাতে নিয়েছে। পেপারের ১পৃষ্টায় চোখ যেতেই আবির চিৎকার দিয়ে ওঠে।”
—আদিইইইইই! অহনা জলি কোথায় তোমরা তারাতারি এসো।
“কিচেনে বসে জলির সাথে গল্প করতে করতে অহনা ময়দা মাখাচ্ছিলো রুটি বানাবে বলে।আবিরের চিৎকার শুনে আর আদির নামটা শুনে জলির বুকের ভেতরে ধপ দিয়ে ওঠে।উঁচু পেট নিয়ে জলি তারাহুরো করে উঠতেও পারছে না।অহনা জলিকে ধরে উঠায়।তারপর জলিকে নিয়ে আবিরের কাছে আসে।”
“জলি এসে আদিকে খোঁজে। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বলে।”
—কোথায় আদি?
“অহনা ভাবে আবির মজা করেছে।”
—কি হয়েছে’টা কি তোমার? এভাবে সাত সকালে চিৎকার চেঁচামেচি করছো কেন? চল বোন…..
“জলির হাত ধরে আবার কিচেনের দিকে যাবে অহনা আবির অহনাকে থামতে বলে।তারপর অহনার সামনে পেপারটা ধরে।অহনা পেপারটা দেখে বিশ্বাস করতে পারে না।হা হয়ে আছে।অহনার এমন হা হয়ে থাকা দেখে জলি পেপারটা হাতে নেয়।দেখে আদির ছবি।যা দেখে জলির চোখে পানি চলে আসে।তারপর লেখাটা পড়ে।”
—খুব অল্প সময়ে একজন সফল বিজনেসম্যান আদি চৌধুরী আগামীকাল দেশে ফিরছে।”
“জলির বাবা জলিকে খুব মারছে।আর জলি চিৎকার করছে।জলির মা রুমের বাইরে থেকে দরজা তাকাচ্ছে।আর কেঁদে কেঁদে বলছে মেয়েটাকে আর মেরো না।এই চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ অহনার রুমে ভেসে আসে।অহনা আজ তিন মাস নিজের রুম থেকে বের হয় না।কারও সাথে তেমন কথাও বলে না।অহনার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই তাই না চাইতেও জলিদের বাসায় পরে আছে।কিন্তু অহনা ভাবে জলি ঠিকই আবিরের সাথে সুখে আছে।অহনা আবিরকে আর জলিকে একসাথে দেখতে পারবে না।এতে অহনার খুব কস্ট হবে তাই নিজেকে বন্দী করে রেখেছে রুমে।কিন্তু কেন যেন অহনার আজ বাইরে যেতে খুব ইচ্ছা করছে।অহনা ভাবছে কিসের এতো চেঁচামেচি?”
“অহনা রুম থেকে বের হয়ে জলির রুমের সামনে আসে দেখে জলির মা দরজা তাকাচ্ছে আর কাঁদছে বলছে আর মেরো না মেয়েটাকে।অহনা জলির মাকে গিয়ে ধরে বলে আন্টি শান্ত হোন কি হয়েছে আমাকে বলুন? জলির মা অহনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে আর বলে জলিকে ওর বাবা তখন থেকে মেরে যাচ্ছে। অহনা দরজাটা তাকিয়ে বলে আঙ্কেল দরজা খুলুন কি হয়েছে? এভাবে মারছেন কেন জলিকে? অহনার কন্ঠ শুনে জলির বাবা থেমে যায়। এতোদিন পর অহনা নিজের রুম থেকে বেরিয়েছে বলে খুশি হয়।নিজের চোখের পানি মুছে এসে দরজাটা খুলে দেয়। আর অহনার মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদে।”
“অহনা জানতে চাই,”
—একি আঙ্কেল আপনি কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে?
—সব শেষ হয়ে গেছে মা।আমার মান সম্মান সব এই মেয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।আমার আর সমাজে মুখ দেখানোর উপায় নেই।
—মানে?
“জলির বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলে,”
—ডাক্তার বলেছে জলি প্রেগনেন্ট।
“কথাটা শুনে অহনা বড়সড় একটা ধাক্কা খাই।অহনা ভাবে সন্তানটা আবিরের।”
“জলির বাবা আবার বলে,”
—আমি আর সমাজে মাথা উঁচু করে দারাতে পারবো না।বিয়ের আগে আমার মেয়ে মা হতে চলেছে এটা জানাজানি হলে লোক সমাজে আমি মুখ দেখাতে পারবো না।রাস্তায় বের হলে লোক আঙুল দেখিয়ে বলবে দেখ জলির বাবা যাচ্ছে।
“অহনা নিজেকে সামলে নেয়।নিজের মনের মধ্যে থেকে বের হয়ে আসা কান্নাটা রোধ করে বলে।”
—কিচ্ছু হবে না আঙ্কেল।জলি আর আবির তো একে অপরকে ভালোবাসে।আর এই সন্তানটা তো আবিরের।আবিরকে বলুন জলিকে বিয়ে করে নিতে।
“কথাটা বলে অহনা রুমের মধ্যে যায়। জলি বিছানার উপরে বসে হাঁটুতে মুখ গুজে কাঁদছে। আর হাঁপাচ্ছে। এতো মার খেয়ে জলির আর শক্তি টুকু নেই উঠে দাড়াবার।অহনা গিয়ে জলির কাঁধে হাত রাখে। জলি আস্তে করে মাথাটা উঠায় আর সামনে তাকিয়ে অহনাকে দেখতে পাই।”
—অহনা তুমি এখানে?
“এমন সময়ে জলির বাবা রুমে ঢুকে পরে আর অহনাকে বলে,”
—আবির একটা দুশ্চরিত্র অহনা।ও কখনোই জলিকে বিয়ে করবে না।
“অহনা প্রশ্নসূচক ভঙ্গিতে জলির বাবার দিকে তাকায় আর বলে,”
—কি বলছেন আঙ্কেল?
—ঠিকই বলছি।আবির শুধু মেয়েদের ব্যাবহারই করে।প্রথমে তোমাকে ব্যাবহার করে তারিয়ে দিয়েছে।তারপর আমার মেয়েকে ব্যবহার করে ছেড়ে গেছে তার অন্য ভালোবাসার কাছে।
“জলি তার বাবার কথা শুনে অবাক।জলি তার বাবার কাছে জানতে চাই,”
—অহনাকে তারিয়ে দিয়েছে মানে? আবির তো অহনাকে পাগলের মতোন ভালোবাসে?
“অহনা জলির দিকে তাকায়। অহনা বুঝছে না জলি এটা কি বলছে।জলি আবার বলে,”
—আমি চেস্টা করেছিলাম আবিরকে অহনার থেকে আলাদা করে ফেলতে কিন্তু পারি নি।কারণ আমার কাছে যেমন অহনাকে হারানোর জেদ ছিলো আবিরের কাছে তেমন অহনাকে ভালোবেসে বেঁধে রাখার শক্তি ছিলো।
“অহনা জলিকে ঝাকিয়ে বলে,”
—এসব তুমি কি বলছো জলি? আবিরের সন্তানের মা হতে চলেছো তুমি।আবির যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসতো তাহলে ও আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতো না।তোমার সাথে ওই রাতে ওসব করতে পারতো না।
“জলি বুঝতে পারে অহনা কোনো ভান্তের মধ্যে আছে।জলি ভাবে, তাহলে কি এতোগুলা দিন আমার জন্য দুটো ভালোবাসার মানুষ আলাদা হয়ে আছে? নাহ এ হতে পারে না।এই পাপের শাস্তিই হয়তো আমি পাচ্ছি।জলি টেনে অহনাকে বিছানায় বসায়।আর সবকিছু খুলে বলে।জলি যা যা করেছে আবির আর অহনাকে আলাদা করবার জন্য।আর সেদিন রাতে তাদের মধ্যে কিছুই হয়নি।জলি আদির কাছে গিয়েছিলো সেদিন।”
“জলির মুখে সব শুনে অহনা জলিকে জিজ্ঞাসা করে,”
—তাহলে এই সন্তান আদির?
“জলি নিজের পেটে হাত রেখে মাথাটা ঝাকিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,”
—হুমমমম।এটা আমার আর আদির সন্তান।
“কথাটা শুনেই অহনা বিছানা থেকে নেমে নিচে এসে দাড়ায়। অহনা খুশি হবে না কাঁদবে কিছুই বুঝে উঠতে পরছে না।অহনা ভাবছে কেন আমি আবিরকে ছেড়ে চলে আসলাম? ওতো এমনই করে তাই বলে ওকে এতোটা অবিশ্বাস করলাম?অহনা জলির বাবা-মাকে বলে জলিদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে।সেই মুহূর্তেই খালি পায়ে ছুটতে ছুটতে আবিরের কাছে আসে।বাড়িতে কলিং বেল বাজায়।আর কিছুক্ষণ পর আবির এসে দরজাটা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই আবির তার চোখের সামনে অহনাকে দেখে।আবির কিছু বলার আগেই অহনা ঝাপিয়ে আবিরের বুকে আছড়ে পরে।আর কাঁদতে থাকে।কাঁদতে কাঁদতে বলে,”
—আমার ভুল হয়ে গেছে তোমাকে ছেড়ে চলে যাওয়া।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আবির।
“আবিরও অহনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে আর বলে,”
—কোথায় ছিলে এতোদিন? কতো কস্টে ছিলাম জানো? তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া আমি কিছুই করতে পারি না?
—হুমমমমম।আর যাবো না।জলি আমাকে সব বলেছে।তোমার কোন দোষ নেয়। তুমি ঠিক করেছো আমাকে সেদিন মেরে।তোমার জায়গায় আমি হলে আমিও ঠিক এমনটাই করতাম।কারণ তোমাকে আমি ভালোবাসি।আমি তোমার সাথে অন্য কাউকে দেখতে পারি না।আমার তখন খুব কস্ট হয়।
“আবির অহনাকে ছাড়িয়ে নিজের সামনে এনে অহনার মুখটা আকড়ে ধরে।অহনা দু’হাত দিয়ে আবিরের হাতে হাত রাখতেই আবির আহ্ করে ওঠে। অহনা আবিরের হাতদুটো নিজের সামনে এনে দেখে প্রচন্ড ক্ষত।”
—একি আবির তোমার হাতে কি হয়েছে?
—তেমন কিছু না। আগে বলো তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে?
“অহনার কস্টে বুকটা ভার হয়ে আছে।চাইলেও আবিরের কাছে যেতে পারছে না।জানালার গিরিল ছুয়ে দূর থেকে শুধু আবিরকে দেখছে আর কাঁদছে।”
“আবির জলির থেকে অনেকটা দূরে বসে আছে।জলির বাবা-মা জলিকে ডাকছে।”
—দেখ মা কাকে এনেছি।চোখ খোল না প্লিজ।
“জলি বিরবির করে বলছে পা..নি পানি।”
—পানি খাবি মা?
“জলির মা গ্লাসে পানি ঢালতে গিয়ে দেখে জগটা খালি।অহনা নিজের চোখ মুখ মুছে পাশের কলসি থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে নিয়ে উরনাটা টেনে নিজের মুখটা ঢেকে পানি হাতে জলির রুমে আসে।গ্লাসটা জলির মায়ের হাতে দিয়েই অহনা চলে যায়।”
“আবিরের কেমন যেন ঘোমটার আলাড়ে থাকা মেয়েটাকে খুব আপন মনে হয়।মেয়েটার চলন একদম অহনার মতোন।আবির উঠে মেয়েটাকে ডাকতে ডাকতে তার পিছনে যাবে এমন সময় জলির বাবা আবিরের হাত ধরে বসিয়ে দেয়।”
—যেও না বাবা! আমার মেয়েটার পাশে একটু বসো। ওকে ডাকো।
“আবির আর যায় না ওখানেই বসে থাকে। কিন্তু জলিকে ডাকে না।আবির এখানে এসেছে শুধুমাত্র বন্ধুত্বের খাতিরে জলিকে বাঁচাতে। আবির জানে জলি তাকে অনেকবার ভালোবাসার কথা বলেছে।হয়তো অনেক ভালোও বাসে। কিন্তু আবির শুধু অহনাকে ভালোবেসেছে।অহনাকে ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছে।তাদের বিয়ের পরও জলি অনেকবার আবিরকে বলেছে অহনাকে ছেড়ে দিতে অহনা ভালো মেয়ে নয়।কিন্তু আবির জলির কথা বিশ্বাস করে নি।তবে আজ যখন প্রমান হয়ে গেছে অহনা দুশ্চরিত্রা তখন আর অহনার সাথে থাকবে না।আর জলিকেও নিজের জীবনে জড়াবে না।জলি সুস্থ হলেই আবির চলে যাবে।আবির ভাবে অহনা তাকে ঠকালেও অহনার মতো এতো ভালো আর কাউকে সে বাসতে পারবে না।”
“জলির মুখে পানির ছিটা পরলে আস্তে আস্তে চোখ খোলে।তাকিয়ে দেখে বাবা-মা তার সামনে। জলি আস্তে করে উঠে বসে। দেখে কিছুটা দূরে আবির বসে আছে।জলি উঠে বসতেই আবির জলির দিকে ঘুরে তাকায়।জলি পাশ ফিরে রুমের দরজাটা খোলা দেখে খুশি হয়।”
“জলি বিছানা থেকে নামে যায়।সবাই ভাবে জলি আবিরের কাছে যাচ্ছে। বাইরে থেকে অহনা আবিরকে জলির কাছে আসতে দেখে ঘুরে নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। জলির বাবা-মাও বিছানার উপরে বসে আছে।তারা ভাবে জলি আবিরের কাছেই যাচ্ছে। জলির ঢুলে পরে যাওয়ার আগেই আবির ধরে নেবে।একি জলি আবিরের পাশ কেটে কোথায় চলে গেলো?”
“জলি রুম থেকে বেড়িয়ে দরজাটা বাইরে থেকে লক করে দেয়।আর মনে মনে বলে এখন আর কেউ আমাকে আদির কাছে যেতে বাঁধা দিতে পারবে না।আমি আসছি আদি, তোর কাছে।আর কক্ষনো তোকে ছেড়ে আসবো না।”
“জলি ঢুলতে ঢুলতে গিয়ে গাড়িতে বসে পরে। আর জলির বাবা-মা এসে ভেতর থেকে দরজা টাকাতে থাকে। অহনা তাদেরকে চিৎকার করে জলিকে ডাকতে শুনে চোখ খোলে।জানালা দিয়ে দেখে জলি তার রুমে নেয়।অহনা আবার মাথায় ঘোমটা দিয়ে এসে দরজাটা বাইরে থেকে খুলে দেয়। দরজা খুলতেই জলির বাবা-মা ছুটে আসে। দেখে জলি গাড়িতে স্ট্রাট দিচ্ছে। তারা জলিকে ডাকতে যাবে এর মধ্যে জলি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়।জলির মা কান্না করতে থাকে।”
—কোথায় গেলো আমার মেয়েটা? যদি নিজের কোনো ক্ষতি করে বসে?
“জলি নিজের চোখ মুছতে মুছতে ঝাপসা চোখে গাড়ি ড্রাইভ করে।অবশেষে জলি এসে আদির বাড়ির সামনে গাড়িটা থামাই।গাড়ি থেকে নেমে ঢুলতে ঢুলতে মেইন গেটে টাকাতে থাকে আর আস্তে করে বলে,”
—আদি! এই আদি!
“বাড়ির দারোয়ান জলিকে দেখে এগিয়ে আসে,”
—একি জলি ম্যাডাম আপনি? এখানে? এই অবস্থায়? আপনার শরীর ঠিক আছে ম্যাডাম?
“জলি আস্তে করে বলে,”
—আদিকে একটু ডেকে দিবেন চাচা?
—আদি স্যার তো আমেরিকায় চলে গেছে।ফ্লাইটের টিকিটে সময় তিনটা ছিলো আর এখন বাজে সাড়ে তিনটা এতোক্ষণে তো…
“জলি এটুকু শুনেই নাহহহহ বলে জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।চোখ মেলে দেখে জলি তার বাড়িতে।নিজের রুমে শুয়ে আছে।”
“জলির বাবা-মা জলির মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেসা করে,”
—কোথায় যাচ্ছিলি তুই মা? রাস্তার উপর পরে ছিলি।ভাগ্যিস আমি তোর পিছু নিয়েছিলাম।যেই বাড়িটার সামনে পরেছিলি সে বাড়ির দারোয়ান তোকে আমার গাড়িতে উঠাতে সাহায্য করেছে।যদি এমন তেমন কিছু হয়ে যেতো তখন আমাদের কি হতো?
“জলি ধুকড়ে কেঁদে ওঠে।আদির কথা মনে পরতেই জলির বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।জলি তার বাবা-মাকে কিছু বলে না।সামনে তাকিয়ে দেখে আবির দাড়ানো।জলি মনে মনে ভাবে সত্যিকারের ভালোবাসা সত্যিই খুব কস্টের।আমি যেমন আদিকে ভালোবাসি আবিরও ঠিক তেমনই অহনাকে ভালোবাসে।ওদের ভুল বুঝাবুঝিগুলো মিটিয়ে দিতে হবে।জলি তার বাবা-মাকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলে।জলির বাবা-মা রুমের বেড়িয়ে গেলে জলি আবিরকে সব খুলে বলে অহনার কোনো দোষ নেয়।সবকিছু জলির প্লান ওদেরকে আলাদা করবার।আবির সবটা শুনে জলির উপর রেগে যায়। কিন্তু জলি আদিকে হারিয়েছে ভেবে আর কিছু বলে না।জলির উপরের রাগ ধরে রেখে বাড়িতে চলে আসে।আর সজোরে নিজের হাতে আঘাত করতে থাকে দেয়ালের সাথে। কস্টে আবিরের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আবিরের হাত থেকে রক্ত ঝরছে।আবির অহনার নাম ধরে চিৎকার দিয়ে মেঝেতে বসে পরে।”
—এ আমি কি করলাম অহনা? কেন তোমায় ভুল বুঝে তারিয়ে দিলাম? এখন তোমায় আমি কোথায় খুঁজবো?
“আবির চলে গেছে সেদিকে কারও খেয়াল নেয়। অহনা রুমে কাঁদছে আর জলির বাবা-মা অহনাকে শান্তনা দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর অহনাকে ঘুম পারিয়ে তারা জলির রুমে যায়। দেখে আবির নেয়।তারা জলির কাছে আবিরের কথা জিজ্ঞাসা করলে জলি বলে,”
—আবির তার ভালোবাসার মানুষের কাছে গেছে।
“কথাটা শুনে জলির বাবা-মা অবাক।তারা ভাবে আবিরের জীবনে আরও কত মেয়ে আছে।আমাদের দুটো মেয়ের জীবন নস্ট করেও কি ওর হয় নি?”
“আবিরের জীবনে অন্য মেয়ে আছে সেটা জলির বাবা-মা অহনাকে বলে নি অহনা কস্ট পাবে বলে।অহনা নিজের রুম থেকে বের হয় না।সারাদিন কাঁদে আর ভাবে জলির সাথেই হয়তো আবির সুখে আছে।এদিকে জলিও নিজের রুম থেকে বের হয় না।সারাদিন আদির শার্টটা জড়িয়ে ধরে কাঁদে আর একা একা কথা বলে।ওদিকে আবির খাওয়া-দাওয়া, ঘুম কোনো কিছুতে নিজের যত্ন নেয় না।সারাদিন অহনার কথা ভাবতে থাকে আর নিজেকে আঘাত করে করে শাস্তি দেয়।”
“এভাবে তিনমাস কেটে গেছে আদির কোনো খোঁজ নেয়। জলি মাঝে মাঝে আদির বাড়ির দারোয়ানকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করে কিন্তু সেও আদির কোনো খবর জলিকে দিতে পারে না।আজ সকাল থেকে জলির মাথাটা ভারি ভারি লাগছে।কিছু খেলেই বমি পাচ্ছে। জোড় করে জলির মা জলিকে খাইয়ে দেবার পর জলি দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করে।রুমে আসার আগে মাথা ঘুরে পরে যায়। জলির বাবা-মা অনেক চিন্তায় পরে যায়। ভাবে জলির আবার কি হলো? ডাক্তার আসে জলিকে চেকাপ করে বলে, জলি প্রেগনেন্ট।”
“জলির শরীরটা আর চলছে না।মাথাটা ঘুরাচ্ছে।চার দেয়ালের মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসছে।চোখের সামনে যা কিছু দেখছে সব ঝাপসা।এই বুঝি জলি মাথা ঘুরে পরে যাবে! আদির শার্ট’টা বুকে জড়িয়ে রেখেছে।কান্না করার শক্তিটুকুও নেয়। আর কিভাবেই বা হবে আজ তিনদিন যে একফোঁটা পানিও মুখে তোলে নি।”
“জলির মা আজও খাবার নিয়ে এসে জানালার কাছে রাখে।ঘন্টা দুই পর প্লেট নিতে এসে দেখে খাবার এখনো সেখানেই পরে আছে।জানালার গিরিল ছুয়ে তাকিয়ে দেখে জলি মেঝেতে।জলির নাম ধরে কয়েকবার ডাক দেয়। কোনো সাড়া নেই।তারপর ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে।”
—জলি? কি হয়েছে মা তোর? ওঠ বলছি?
ওগো কোথায় তুমি তারাতাড়ি আসো।আমার জলির কি হলো?
“তার চিৎকার শুনে জলির বাবা আর অহনা ছুটে আসে।জানালার গিরিল দিয়ে দেখে জলি মেঝেতে পরে আছে।অহনা বাইরে থেকে জলির মুখটা ভালো করে দেখতে পারে না।জলির বাবা দিয়ে রুমের দরজাটা খুলে দিলে সবাই রুমের ভেতরে আসে।এসে দেখে জানালার সামনে দেয়ালের সাথে ভাত, রুটি, ডিম, এমন অনেক খাবার যা এতোদিন ধরে জলিকে খেতে দেওয়া হতো।সব পঁচে গন্ধ হয়ে আছে রুমের মধ্যে।তাহলে কি জলি কিছুই খেতো না?সব রুমের মধ্যেই ফেলে রাখতো? ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে জলির বাবা গিয়ে জলিকে ধরে বিছানায় উঠাই।অহনা এগিয়ে গিয়ে জলির মুখটা দেখেই অবাক।”
—একি জলি তুমি?
“জলির বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলে,”
—তুমি চেনো আমার জলিকে?
“অহনা কিছু বলতে যাবে তার আগেই জলি বিরবির করে বলে উঠলো,”
—ভালোবাসি তোকে।একবার বলার সুযোগ কি পাবো না।নাকি তার আগেই মরে যাবো।
“জলির বাবা-মায়ের খেয়াল এবার জলির দিকে গেল।তারা জলির কাছে জানতে চাই,”
—কাকে ভালোবাসিস তুই মা?
“অহনা ভাবে জলি আবিরের কথা বলছে।তাই মুহূর্তেই ছুটে জলির রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় পরে কাঁদে। আর সেদিন রাতের কথাগুলো ভাবে।”
“এদিকে ডাক্তার এসে জলিকে দেখে যায়। আর বলে খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতোন না করাই জলির এমন দশা হয়েছে।তার উপর শরীরেরও যত্ন নেয় না।এই মুহূর্তে মানসিক অশান্তিটা আর দুশ্চিন্তা ওর মন থেকে দূর করতে হবে।”
“অহনা কিছুক্ষণ পর আবার জলির রুমে আসে আর ডাক্তারের বলা কথাগুলো শুনে নেই।ডাক্তার চলে গেলে জলির বাবা-মা জলির কাছে আসে আর বলে,”
—কাকে ভালোবাসিস তুই মা? একবার আমাদেরকে বল। আমরা তাকে তোর কাছে এনে দেবো।
—জলির যে হুস নেয়।অসুস্থ অবস্থায় ওই একই কথা বলে যাচ্ছে।
“অহনা জলির অবস্থা খারাপ দিকে যাচ্ছে দেখে বলে,”
—জলি আমার স্বামীকে ভালোবাসে আঙ্কেল।
“জলির বাবা ঘুরে তাকায়”,
—এটা তুমি কি বলছো মা?
—ঠিকই বলছি।জলি সেই মেয়ে যার জন্য ও আমাকে এতো মেরেছে।যার সাথে আমার চোখের সামনে…
“অহনা আর কিছু বলতে পারে না কেঁদে দেয়।কিছুক্ষণ পর চোখ মুছে বলে,”
—আর দেরি করবেন না আঙ্কেল আবিরকে জলির কাছে আনার ব্যবস্থা করুন।
—অসম্ভব! যেই ছেলে নিজের বউ থাকতে অন্য মেয়ের সাথে মিশতে পারে।সেই ছেলেকে আমি আমার মেয়ের কাছে আসতে দেবো না।
—প্লিজ আঙ্কেল।বোঝার চেস্টা করুন।জলিকে বাঁচানোর জন্য এই একটাই উপায় আছে।
“জলির মাও জলির মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক জোড় করে জলির বাবাকে।তারপর সে রাজি হয়ে যায়। অহনা এবাড়িতে আছে সেটা আবিরকে বলতে বারন করে তাই বলে না।শুধু হাত জোড় করে জলির জীবন বাঁচানোর জন্য আবিরের কাছে ভিক্ষা চাই একবার জলির কাছে আসার জন্য। আবির প্রথমে রাজি না হলেও বন্ধুত্বের কথা ভেবে জলির বাড়িতে আসে।”
“আবির আসতেই অহনা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর জলির রুমের সামনে এসে আবিরকে দেখে।কিন্তু রুমে ঢোকে না।জানালার গিরিল ছুয়ে দাড়িয়ে দূর থেকে আবিরকে দেখতে থাকে।আর মুখ টিপে কাঁদতে থাকে। যেন সেই কান্নার আওয়াজ আবিরের কানে না পৌঁছায়।”
“ওদিকে ফ্লাইটের টিকিট কাটা শেষ।আজ আদি চলে যাচ্ছে আমেরিকায় আর আসার ইচ্ছা নেই এই দেশে।জলির ছবিটা বুকে চেপে রেখে বলে,”
—ছলনা করলি আমার সাথে? চলে যাচ্ছি রে আমি।তুই তোর আবিরকে বিয়ে করে সুখি হোস।কিন্তু তোর সে সুখ দেখার শক্তিটুকু আমার নেয়।তোকে জোড় করে বেঁধে রাখতে পারবো না।তাই চলে যাচ্ছি এই দেশ ছেড়ে।যাতে আর কখনো তোকে দেখতে না হয়।
“কাঁদতে কাঁদতে কথাটা বলে আদি।তারপর উঠে লাগেজটা নিয়ে বাড়ির চাবিটা দারোয়ানের কাছে দিয়ে এয়ারপোর্ট চলে যায়।”
“জলির বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে আদি।আজ আদির স্পর্শে জলি একটুও অস্বস্তিবোধ করে না।আদির চুলে বিলি কাটতে থাকে আর ভাবে আদি কি সত্যি আমাকে ভালোবাসতে চাই? কিন্তু আদিতো এমন না।আবার পরক্ষণে মনে হয়, এ আমি কি ভাবছি আবিরই বেস্ট।ভুলে গেলে চলবে না অহনা আর আবিরের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি তৈরি করতে আমাকে অনেক কিছু করতে হয়েছে।এখন যখন সফল হয়েছি তখন আবির আমার।এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে জলি।”
“সকালে ঘুম ভাঙলে জলি উঠে দেখে আদি এখনো ঘুমাচ্ছে। আদিকে না ডেকেই জলি চলে যেতে লাগে হঠাৎ খেয়াল করে তার হাতটা পেছনের থেকে আদি টেনে ধরেছে।জলি পেছনে ঘুরে দেখে আদি এখনো ঘুম।অনেক টানাপোড়েনের মধ্যে পরে যায় জলি ভাবে যাবে নাকি যাবে না।”
“জলির মন বলছে আদির কাছে থেকে যায়।আর মস্তিষ্ক বলছে নাহ! অহনার কাছে হেরে যাওয়া চলবে না।জলি আস্তে করে নিজের হাতটা আবিরের হাতের মুঠোর থেকে বেরিয়ে আনে।তারপর আদির গালে একটা কিস করে বলে,”
—এই আদি আমি চলে যাচ্ছি রে।তুই ভালো থাকিস।আমি আর কখনো তোর কাছে আসবো না।আমাদের আর দেখা হবে না।আর তোর এই শার্টটা আমি নিয়ে যাচ্ছি।
“জলি একটা চিরকুট লিখে আদির মাথার কাছে রেখে বেরিয়ে যায়। গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আদির কথা ভাবছে। জলির মন থেকে যেন আদি সরছেই না।”
—উফফ কি হয়েছে আমার? আমি আদির কথা কেন ভাবছি।
“গাড়ি থেকে এক বোতল পানি নিয়ে বাইরে এসে বারবার মুখে ছিটাচ্ছে জলি।চোখ বন্ধ করলেই জলির সামনে আদির মুখটা ভেসে উঠছে।আদির ছোঁয়া, কথা, কান্না সব বারবার উপলব্ধি করছে জলি।জলি কিছু না ভেবে সোজা বাড়িতে চলে যায়।”
“সারারাত বাড়িতে না ফেরায় জলির বাবা-মা দুশ্চিন্তায় ঘুমায় না।সকালে আদির শার্ট পরা অবস্থায় জলি বাড়িতে ঢোকে।জলির পড়নে ছেলে মানুষের শার্ট দেখে জলির বাবা-মা নানান প্রশ্ন করে।যার উত্তর জলি দিতে পারে না।তারা জলির কাছে এটাও জিজ্ঞাসা করে রাতে কল করলে ধরে নি কেন।জলি বলে তার ফোনটা সাইলেন্ট করা ছিলো তাই বুঝতে পারে নি।”
“জলির বাবা-মা জলিকে অনেক মারে।তারা বুঝতে পারে জলি নিশ্চয় বেপথে চলে গেছে।”
“জলিকে মেরে তার বাবা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। আর যাওয়ার সময় বলে যায় আজ থেকে বাড়ির বাইরে যাওয়া ওর জন্য বন্ধ।জলির ফোনটাও কেড়ে নেয় তার বাবা।”
“জলি মার খেয়ে রুমে গিয়ে কাঁদছে আর আদির কথা ভাবছে।আদির শার্টটা নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুঁকছে।”
—আমি ভুল করে ফেলেছি রে আদি।এই মুহূর্তে তোকে আমার বড্ড প্রয়োজন।যদি আর একবার বাড়ি থেকে বের হতে পারি আমি ছুটে তোর কাছেই যাবো।
“জলি দরজা টাকাতে থাকে আর চিৎকার করে তার মাকে বলে দরজা খুলে দিতে।”
—দরজা খোলো মা! আর একটাবার আমাকে বাইরে যেতে দাও একটাবার।
“জলি দরজা টাকাতে টাকাতে নিচে বসে পরে আর আদির কথা ভাবে।”
“ওদিকে আদি ঘুম থেকে উঠে জলিকে আর দেখতে পাই না।আদি সব জায়গাতে খোঁজে। ওয়াশরুমেও জলি নেই।”
—জলি আমাকে এভাবে না বলে চলে গেলো কেন?
“আদি বারবার জলিকে ফোন করে কিন্তু জলির ফোনটা বন্ধ।পাশ ফিরে বিছানার বালিশের উপরে একটা চিরকুট দেখতে পাই। আদি চিরকুট’টা হাতে নেয়।”
তাতে লেখা আছে,
—আমি চলে যাচ্ছি আদি।আর কখনো আমি তোর সাথে দেখা করতে চায় না।আমি আবিরকে ভালোবাসি। অনেক চেস্টা করে অহনা আর আবিরের সম্পর্কের মধ্যে ভাঙন ধরিয়েছি।এখন আর আবিরকে পেতে কোনো বাঁধা নেয়। তাই আমি ঠিক করেছি খুব শিঘ্রই অহনাকে তারিয়ে আবিরকে বিয়ে করবো।তুই ভালো থাকিস।তোকে বলে আসতে পারলাম না তার জন্য ছরি।আশা করছি আমার লেখাটা পরার পর তুই আর আমার জীবনে আসতে চাইবি না যদি তুই আমায় সত্যিকারে ভালোবেসে থাকিস।—–জলি।
“চিরকুট’টা পরার পর আদির দুচোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পরতে থাকে।”
—ভাগ্যের এ কি নির্মম পরিহাস। জীবনে প্রথমবার কাউকে ভালোবেসেছি।ঝলসানো অতীত ভুলে যাকে নিয়ে একটু সুখী হতে চেয়েছি।আর সেই এমন করলো আমার সাথে?
“আদি মদের বোতলে চুমুক দিয়ে বারবার খাচ্ছে। আর বলছে, আমি চাইলেও জীবন আমাকে আরেকটা সুযোগ দেবে না ভালো হবার।”
।
।
।
।
“ওদিকে আবির ঘুম ভাংলে উঠে দরজার কাছে অহনাকে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে।অহনার মুখের দিকে তাকাতেই আবিরের সেই ছবিগুলোর কথা মনে পরে যায়। আবির অহনাকে আর সহ্য করতে পারে না।উঠে এসেই অহনাকে একটা লাথি মারে।অহনা ছিটকে পড়ে গিয়ে কপালটা একটু কেটে যায়।”
“অহনা উঠে দাড়ায় আর বলে,”
—মদের নেশা কি এখনো কাটে নি তোমার?
—কি বললি তুই?
“আবির অহনার গালে একটা থাপ্পড় মারে।”
“অহনা ঘুরে রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে আবিরকে বলে,”
—অনেক সহ্য করেছি আবির আর নয়।তুমি যদি আর একটা বার আমার গায়ে হাত তোলো তাহলে আমি এই বাড়ি ছেড়ে, তোমার সংসার ছেড়ে, এই মুহূর্তে চলে যাবো।
“আবির অহনার গালটা চেপে ধরে,”
—ভালো বুদ্ধি এটেছিস দেখছি! নতুন প্রেমিক জুটিয়েছিস বলে এখন মুখে বলি ফুটেছে? যা না যা তোর প্রেমিকের কাছেই যা। থাকতে হবে না তোর আমার সাথে।
“আবির অহনাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দরজার কাছে নিয়ে আসে।তারপর বাইরের দিকে ইশারা করে বলে,”
—দরজা খোলা আছে যা চলে যা।
“অহনা না গেলে আবির দরজার বাইরে বের করে দিয়ে দরজাটা ভেতর থেকে আটকে দেয়।”
—দুশ্চরিত্রা, কলঙ্কিনী তুই মরে যা তবুও আমার কাছে আর আসিস না।
“অহনা আর এক মুহূর্তও দাড়ায় না।এতো অপমান বিনা দোষে নেওয়া যায় না।তাই অহনা চলে আসে।রাস্তায় নেমে অহনা অনমনা হয়ে হাঁটতে থাকে আর কালকের রাতের ঘটনাগুলো ভাবে,”
—আমি সত্যিই মরে যাবো তবুও তোমার কাছে আর কখনো আসবো না আবির।তুমি থাকো তোমার জলিকে নিয়ে।
“হঠাৎ অহনার সামনে একটা গাড়ি আসে আর সেই গাড়িটার সাথে অহনা ধাক্কা খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।”
“জলির বাবা-মা অহনার কাছে বাড়ির ঠিকানা জানতে চায়। অহনা বলে তার যাওয়ার কোনো জায়গা নেয়। ভালোবেসে যাকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলো সে চোখের সামনে অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটায় আর সকাল হলে মেরে তারিয়ে দেয়।”
“অহনার সব কথা শুনে জলির বাবা-মায়ের মায়া হয় আর তারা অহনাকে তাদের সাথে থাকতে বলে। তারা অহনাকে মেয়ের মতো রাখতে চায়। আর অহনাও কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় রাজি হয়ে যায়।”
।
।
।
।
“তিন দিন পর,,, অহনা এখন অনেকটা সুস্থ।”
“জলি এখনো তার রুমেই বন্দি।বাবা-মা এসে জানালার ফাঁক দিয়ে জলিকে খাবার দিয়ে যায়।জলি কিচ্ছু খাই না সব খাবার রুমের মধ্যেই ফেলে রেখে প্লেট’টা আবার জানালার কাছে রেখে দেয়।চোখের কোণের কালো দাগ জলির স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। না ঘুমাই আর না নিজের যত্ন নেয়।সারাক্ষণ মুখে একটাই নাম বিরবির করে বলে, আদি”
“ওদিকে আবির তখন রাগের বসে অহনাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে এখন অনুশোচনা করছে।না পারছে খেতে।আর না পারছে ঘুমাতে।আবিরের সবটা জুড়ে শুধু অহনা বিরাজ করছে।”
“আদি আর এখন কোনো মেয়ের কাছে যায় না।সারাদিন মদের বোতল হাতে বিছানার কোণে পরে থাকে।আদির কাছে এখন জলির মতো পৃথিবীর কোনো মেয়ে না।আদি শুধু নিজের শরীর না মনটাকেও জলির করে দিয়েছে।কিছুতেই জলিকে ভুলতে পারছে না।”