Tuesday, July 8, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1859



অনুভূতি পর্ব ২১

0

অনুভূতি
পর্ব ২১
মিশু মনি
.
৩৩.
সূর্যের সোনালী আলো মুখের উপর এসে পড়ায় ঘুম ভেঙে গেলো মিশুর। বুঝতে পারলো মেঘালয়ের উষ্ণ বুকের সাথে মিশে আছে ও। বুকের ঢিপঢিপ শব্দ কানে আসছে। মিশু উঠতে যেতেই মেঘালয় ওকে টেনে কাছে নিলো। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো, “কখনো আমাকে বিছানায় রেখে উঠবা না। আমার আগে ঘুম ভাংলেও শুয়ে থাকবা পাশে।”
মিশু হেসে বললো, “কেন?”
– “উম, ঘুম থেকে উঠেই তোমাকে পাশে চাই।”
– “আমিতো সবসময় ই পাশে আছি।”
– “উম,কাছে চাই রে।”
বলেই মিশুকে জাপটে ধরলো। ওর প্রশস্ত বুকের ভেতর লুকোতে লুকোতে মিশুর কেবলই সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছিলো। রাতটা এতবেশি সুখকর ছিলো যার কোনো বর্ণনা দিয়ে হয়ত বোঝানো সম্ভব না। মিশু বারবার মেঘালয়ের দিকে তাকাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে। গত রাতে মেঘালয় এক অন্যরকম পৃথিবীর সন্ধান দিয়েছে ওকে। ঘুরিয়ে এনেছে ভালোবাসার সুখের এক অন্যরকম রাজ্য থেকে। যে রাজ্যে শুধু সুখ আর সুখ! মেঘালয় বলেছে প্রতিটা দিন নতুন ভাবে শুরু হবে আর প্রত্যেকটা রাতে নতুন নতুন কিছু রাজ্য থেকে ঘুরিয়ে আনবে ওকে। মিশু মেঘালয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এসব ভেবে মুচকি হাসছিলো।
মেঘালয় চোখ বুজে ছিলো এতক্ষণ। চোখ মেলতেই মিশুর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো। মিশু হাসলো মিষ্টি করে। মেঘালয় জিজ্ঞেস করলো, “হাসছো কেন?”
– “তোমার শরীরটা খুব উষ্ণ।”
– “সেজন্য হাসছো?”
মিশু মাথাটা দুপাশে নেড়ে বললো, “উহু। আগে জানতাম ভালোবাসা শুধু দুটো হৃদয়ের ব্যাপার। এখন মনেহচ্ছে, শরীর ও বিশেষ প্রয়োজন। স্পর্শ একটা বিশাল প্রাপ্তি।”
মেঘালয় হেসে বললো, “পাগলি, যেখানে ভালোবাসা থাকবে সেখানে শরীর ও থাকবেই। হৃদয় তো শরীরের ই অংশ।”
– “তুমি খুব ভালো মেঘালয়, খুব ভালো।”
মেঘালয় মিশুর চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বললো, “এই প্রথম বউটা আমার নাম ধরে ডেকেছে। এজন্য একটা মিষ্টি পাওনা।”
মিশু মেঘালয়ের কপালে আলতো চুমু এঁকে দিলো। মেঘালয় মিশুকে জড়িয়ে ধরে বললো, “পাগলী একটা বউ আমার। সারাজীবন এভাবেই ভালোবাসবি হ্যা?”
– “না বাসবো না, এরচেয়ে বেশি বেশি বাসবো।”
মেঘালয় হেসে ফেললো। তারপর বিছানায় উঠে বসলো। মিশুকে টেনে তুলে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “পায়ের অবস্থা কেমন? ব্যথা সেরেছে?”
– “হুম একদম। একটু ব্যথা আছে, সেরে যাবে।”
মেঘালয় মিশুকে কাছে টেনে নিয়ে ওর চুলগুলো খোঁপা বেঁধে দিলো। মিশু মিটিমিটি হাসছে। মনেহচ্ছে ছেলেটা এখন থেকে ওকে আর কোনো কাজই করতে দেবেনা। সবই সে করিয়ে দেবে। এত সুখ কি কপালে সইবে! বড্ড ভয় হয় যে।
মেঘালয় চুলগুলো খোঁপা বেঁধে দিতে দিতে বললো, “একটা গল্প আছে তোমার চুলের। পরে শোনাবো।”
মিশু অবাক হয়ে বললো, “আমার চুলের গল্প মানে! এক্ষুনি শোনাও না।”
– “নাহ, পরে শোনাবো বউসোনা। এখন ওঠো, ফ্রেশ হবা।”
মেঘালয় বিছানা ছেড়ে নামলো। মিশুকে কোলে নিয়ে বাথরুমে এসে কোল থেকে নামিয়ে দিলো। ব্রাশে টুথপেস্ট লাগিয়ে মিশুর হাতে দিয়ে বললো, “নাও ব্রাশ করো।”
মিশু অবাক হয়ে বললো, ” এটা কার ব্রাশ?”
– “তোমার। নতুন ব্রাশ কিনে এনেছি কাল।”
মিশুর বিস্ময় আরো বেড়ে গেলো। ও বিস্ময় লুকাতে পারলো না। অবাক হয়ে বললো, “সামান্য একটা ব্রাশের কথাও তোমার মনে থাকে! ছোটছোট জিনিস গুলোকেও তুমি খুব গুরুত্ব দাও।”
মেঘালয় দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মিশুর দিকে তাকিয়ে বললো, “কাল যখন ঘুমাচ্ছিলে, তোমার কি কি জিনিস লাগবে সব লিস্ট করে পূর্বকে মেসেজ করে পাঠিয়েছিলাম। ওই নিয়ে এসেছে। তুমি তো ঘুমাচ্ছিলে, আমি বসে বসে এসব ই ভাবছিলাম।”
মিশুর ইচ্ছে করলো মেঘালয়কে জড়িয়ে ধরতে। ছেলেটা এত্ত ভালো কেন!
ও ব্রাশ করতে করতে বললো, “আর কি কি এনেছে?”
– “স্যান্ডেল, টিস্যু পেপার, হেয়ার ব্যান্ড, চিরুনি, সাবান, শ্যাম্পু,তোমার জন্য আলাদা টাওয়েল।”
– “আমার জন্য আলাদা টাওয়েল কেন?”
– “বারে, আমার বউ সায়ানের টাওয়েল ইউজ করবে নাকি?”
– “ওহ আচ্ছা।”
মিশু মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে ব্রাশ করতে লাগলো। মেঘালয় চেয়ে আছে ওর দিকে। মিশুর ব্রাশ করা হতেই মেঘালয় ব্রাশটা নিয়ে নিজে দাঁত মাজতে আরম্ভ করলো। মিশু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, “আমার টা দিয়েই ব্রাশ করবা?”
মেঘালয় কিছু না বলে দ্রুত ব্রাশ করে নিলো। তারপর বাথরুমের দরজা আটকিয়ে দিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিলো। মিশুকে শাওয়ারের নিচে দাড় করিয়ে দিয়ে ওর হাতে সাবান লাগাতে লাগাতে বললো, “টি শার্ট টা কি খুলবা নাকি লজ্জা পাবা?”
মিশু লাজুক গলায় বললো, “খুব লজ্জা পাবো।”
মেঘালয় একটা টাওয়েল ওর হাতে দিয়ে পিছন ফিরে বললো, “শার্ট খুলে এটা পড়ে নাও।”
– “কেন?”
– “তোমার উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের ময়লা সাফ করার দায়িত্ব নিয়েছি না?”
বলেই হো হো করে হেসে উঠলো। মিশু লজ্জা পেয়ে বললো, “কি খারাপ!”
টাওয়েল পড়ে নিয়ে মেঘালকে ফিরতে বললো। মেঘালয় ওর দিকে ফিরে একবার আপাদমস্তক তাকালো। মিষ্টি করে হাসি দিয়ে মিশুর গায়ে সাবান লাগাতে শুরু করলো। ভালোমতো শ্যাম্পুও করে দিলো চুলে। মিশু হাসতে হাসতে বললো, “আমি আমার জীবনে কক্ষনো এত ভালোমতো গোসল ই করিনি বোধহয়। আমিতো চুলে শ্যাম্পুও করতে পারিনা।”
– “পারতে হবেনা, আমি আছি কি করতে?”
মিশুর শ্যাম্পু করা হয়ে গেলে ওকে শাওয়ারের নিচে দাড় করিয়ে দিয়ে নিজে শ্যাম্পু করতে লাগলো। মিশু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে মেঘালয়ের দিকে। মেঘালয়ের উন্মুক্ত বুকে ঘন লোমগুলো ভিজতে দেখে বুকের ভেতরটা কেমন কেমন যেন করছে। হা করে সেদিকে চেয়ে রইলো অনেক্ষণ। মেঘালয়ের গোসল শেষ করতে মাত্র আড়াই মিনিট সময় লাগলো। মিশু একদম অবাক! একটা ছেলে এত তাড়াতাড়ি কিভাবে গোসল করতে পারে!
মেঘালয় প্যান্ট বদলে টাওয়েল পড়ে নিলো। তারপর মিশুকে কোলে নিয়ে রুমে এলো। মিশু মেঘালয়ের ভেজা পায়ের দিকে চেয়ে আছে হা করে। এত সুন্দর কারো পা হতে পারে! পা ভিজে লোমগুলো পায়ের সাথে আটকে আছে। দারুণ রকমের সুন্দর লাগছে। একদম খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
মেঘালয় লাগেজ খুলে একটা শাড়ি বের করে বিছানার উপর রাখলো। মিশুর দিকে তাকিয়ে দেখলো ভেজা চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। কেমন যেন ঘোর ঘোর লাগছে ওর। ভেজা চুলে মিশুর চেহারাটাই বদলে গেছে একদম। স্নিগ্ধতা ছেয়ে গেছে চেহারায়। মেঘালয় অনেক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাসলো। তারপর গভীর আবেশে ঠোঁটে চুমু খেলো একটা। শাড়িটা মিশুকে পড়িয়ে দিয়ে তোয়ালে দিয়ে ওর চুলগুলো পেঁচিয়ে মাথার উপরে তুলে দিয়ে বললো, “ভেজা চুল কিছুক্ষণ এভাবে পেঁচিয়ে রাখবা তোয়ালে দিয়ে।”
– “কেন?”
– “এটা চুলের জন্য উপকারী। আর ভূলেও কখনো ভেজা চুল আচড়াবা না। মনে থাকবে?”
– “হুম থাকবে।”
মেঘালয় মিশুকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে কাজল নিয়ে ওর হাতে দিয়ে বললো, “জাস্ট কাজল, আর একটা ছোট্ট কালো টিপ। ওকে?”
– “ওকে।”
– “কখনো মেকাপ করবা না, যখন লাগবে আমিই বলবো। ওকে?”
– “ওকে।”
মেঘালয় নিজে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বডি স্প্রে করলো। মিশু চেয়ে চেয়ে দেখছে। মিশুর শাড়ির কালারের সাথে ম্যাচিং করে একটা টি শার্ট ও জিন্স পড়লো। এখন বেশ দেখাচ্ছে মেঘালয়কে। ভেজা চুলগুলো আচড়ে নিলো। তারপর দুবার মুখটা ভালোমতো দেখে বললো, “দাড়ি বড় হয়ে গেছে।”
মিশু বললো, “ওটাতেই তোমাকে সুন্দর লাগছে। ক্লিন সেভে ছেলেদের ছিলা মুরগির মতো লাগে।”
মেঘালয় মিশুর দিকে তাকিয়ে বললো, “কি বললা! কি মুরগি?”
মিশু ফিক করে হেসে ফেললো, “সরি, কিছু বলিনি। তোমাকে না এখন বিপজ্জনক রকমের হ্যান্ডসাম লাগছে।”
– “খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে?”
– “হ্যা।”
মেঘালয় হেসে উঠলো। তারপর মিশুর সামনে এসে বসলো। মিশুর মাথা থেকে টাওয়েল খুলে নিয়ে চুলগুলো ঠিক করে দিলো। তারপর বললো, “নাস্তা তো করতে হবে। কিন্তু তোমাকে এখন যে পরিমাণ সুন্দর লাগছে, চাইনা আমার বন্ধুরা আমার মিষ্টি বউটাকে দেখুক। তোমাকে শুধু আমি দেখবো।”
বলেই এগিয়ে এসে মিশুর মাথার পিছনে হাত দিয়ে এগিয়ে এসে ঠোঁট দুটো আরেকবার স্পর্শ করলো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে মিশুর হাত ধরে বললো, “আসো, হাটতে পারবা তো?”
– “হুম পারবো ”
মেঘালয়ের হাত ধরে মিশু ড্রয়িংরুমে এলো। খাবার টেবিলে তিনবন্ধু নাস্তা নিয়ে বসে আছে ওদের জন্য। ওদেরকে একসাথে দেখে ওরা একবার মুগ্ধ হলো। দুটিকে সত্যিই বেশ মানিয়েছে। শাড়িতে মিশুকে বেশ বড়বড় লাগছে।মনেহচ্ছে মেয়েটা হুট করেই অনেক বড় হয়ে গেছে।
পূর্ব বললো, “গুড মর্নিং ভাবি।”
মিশুও হেসে গুড মর্নিং জানালো। মিশু বসামাত্র ওরা নাস্তা খেতে আরম্ভ করলো। মেঘালয় বললো, “আমাদের জন্য বসে আছিস কেন? তোরা খেয়ে নিতি।”
– “অতটাও স্বার্থপর ভাবিস না আমাদের। তোদেরকে রেখে খেয়ে নিবো?”
মিশু হাসলো। মেঘালয়ের বন্ধুরাও অনেক ভালো। কত হেল্পফুল, দায়িত্ববান, আর অনেক দুষ্টুও।
নাস্তা খেতে খেতে আরাফ বললো, “মেঘালয় একটা অফার আছে তোদের জন্য। তুই একসেপ্ট করবি কিনা তোর ব্যাপার। তবে করতে পারিস।”
– “বলে ফেল।”
আরাফ বললো, “আব্বু একটা চা বাগানের ব্যাপারে কথা বলছে তো, রাতে ফোন দিয়ে আমাকে দেখে আসতে বললো। আমিও বললাম, ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে গিয়ে দুটো দিন ঘুরে আসি। আব্বু হোটেলে দুটো রুম বুকিং এর টাকা দিয়েছে। আমরা ভাবছি, প্রথম দিন হোটেলে থাকবো আর দ্বিতীয় দিন চা বাগানের বাংলোয়। শীত প্রায় এসে গেছে, চা বাগানের ভিতরে তোর মধুচন্দ্রিমা দারুণ কাটবে, আগামী দুদিনের মধ্যেই আবার পূর্ণিমা আছে।”
মেঘালয় একবার মিশুর দিকে তাকিয়ে বললো, “যাবা?”
মিশু আনন্দে লাফিয়ে উঠে বললো, “সত্যি! আমি কক্ষনো চা বাগানে যাইনি। মজা হবে অনেক। কিন্তু তুমি না বললা সাজেকে যাবা? সাজেকে গেলে অনেক খরচ হবে, এমনিতেও অনেক খরচা হলো। আবার সিলেট যাবো? না থাক।”
মেঘালয় একটু ঝুঁকে এসে বললো, “খরচ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা। যেতে চাও কিনা সেটা বলো?”
মিশু চুপ করে রইলো। মেঘালয় বেশ বুঝতে পারছে সে যেতে কি পরিমাণ আগ্রহী। মেয়েটা নেভারল্যান্ডে গিয়েই যে খুশি হয়েছিলো, একবার ওকে ডাউকির মেঘালয় দেখিয়ে আনতে হবে। বিছানাকান্দির শীতল জলে একবার ডুব দিলেই সুখে মরে যেতে চাইবে। রাতারগুল দেখলে তো বোধহয় বিস্ময়ে কথাই বলতে পারবে না। এসব ভেবে মেঘালয় হাসলো।
মিশু বললো, “হাসছো কেন?”
– “এমনি। আমরা তাহলে কবে যাচ্ছি?”
আরাফ বললো, “কালকে সকালে বের হই?”
সায়ান খাবার চিবোতে চিবোতে জিজ্ঞেস করল, “আজকে রাতে বের হলে কি হয়?”
– “দূর ব্যাটা, রাত্রে জার্নি করে গিয়ে সারাদিন ভাবি ঘুমাবে নাকি ঘুরবে? তাছাড়া ওদের নতুন বিয়ে হইছে, বিয়ের পরের প্রত্যেকটা রাত অনেক দামী, চাইনা সেটা গাড়িতে নষ্ট হোক।”
মেঘালয় হাসতে হাসতে বললো, “নাহ, আজকে রাতেই বের হবো। তিনদিনের মধ্যেই ফিরে আসতে হবে রে। আমার আবার প্রোগ্রাম আছে টিএসসি তে।”
ওরা একটু ভেবে বললো, “আচ্ছা ঠিকাছে। তবে তাই হোক। আজকে রাতেই যাচ্ছি আমরা। গাড়ি কার টা নেবো?”
মেঘালয় বললো, “আমার টাই নিস। তেল ভরবে পূর্ব।”
পূর্ব লাফিয়ে উঠে বলল, “আমি ক্যান?”
– “থাকার দায়িত্ব আরাফের,গাড়ি আমার, তেল তোর।”
– ” আর খাওয়া?”
– “খাওয়া সায়ানের।”
সায়ান চেঁচিয়ে উঠলো, “সবচেয়ে বেশি খরচ হয় খাওয়া দাওয়ায়। সেটাই আমার?”
মেঘালয় হাসতে হাসতে বললো, “আমাদের সদ্য বিয়ে হইছে ভাই। আমাদের জন্য তোদের একটু ছাড় দেয়া উচিৎ না বল? নতুন সংসার পাততে চলেছি।”
সায়ান মুখ কাচুমাচু করে বললো, “অগত্যা.. কি আর করার? বন্ধু মানুষ, ভাবি আছে তো কিছু বললাম না।”
হাসাহাসি করতে করতে ওরা নাস্তা করার পর্ব শেষ করলো।
চলবে…

অনুভূতি পর্ব ২০

0

অনুভূতি
পর্ব ২০
মিশু মনি
.
৩২.
দোলনায় বসে গল্প করে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিলো ওরা। মেঘালয় দোলনা থেকে নেমে মিশুকে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো। বসার ঘরের পাশে করিডোরে এসে দাঁড়ালো।
করিডোরে সূর্যের আলো এসে পড়েছে। চোখ ধাঁধানো অন্ধকার থেকে বের হয়ে এসে সূর্যের আলো খুবই ভালো লাগছে। মিশুকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বললো, “দাড়াও দুটো চেয়ার নিয়ে আসি।”
মেঘালয় রুমে ঢুকতেই মিশু “ওমাগো” বলে চেঁচিয়ে উঠলো। মেঘালয় ছুটে চলে এলো বারান্দায়। এসে দেখে মিশু পা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। মেঘালয় উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?”
মেঘালয় মিশুর সামনে বসে ওর হাত সরিয়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক খানি জায়গা কেটে গেছে। ও উত্তেজিত হয়ে চেঁচাল, “এটা কিভাবে হলো?”
বারান্দার এক কোণে একটা ভাঙা ফুলদানি রাখা। কাঁচের ফুলদানি, সেটা দিয়েই মিশুর পা কেটে গেছে। কেমন যেন কষ্ট হতে লাগলো মেঘালয়ের। বললো, “কেন যে ওসব জিনিস এখানে রাখে? সায়ানকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। যত্তোসব।”
মিশু বললো, “ওরা কি আর জানত আমি এই কোণায় গিয়ে দাঁড়াবো? বাড়িতে কেউ নেই,বারান্দায় কেউ আসার কথা না। রেগে যাচ্ছো কেন?”
– “তাহলে?”
– “আহা! দোষটা তো আমার ই। আমার উচিৎ ছিলো দেখে পা ফেলা।”
-“তোমার পা কেটে গেছে মিশু। এটা আমার জন্য কি পরিমাণ যন্ত্রণার বুঝতে পারছো তুমি? এরচেয়ে যদি আমার গলা কেটে যেতো তবুও এত কষ্ট হতো না।”
মিশু মেঘালয়ের মুখের উপর হাত দিয়ে বললো, “ছি এসব কথা কেন বলো?”
– “তুই আমার কি তোকে কিভাবে বোঝাবো পাগলী?”
মিশু খুব বেশি অবাক হয়ে যাচ্ছে। বিস্ময় চেপে রেখে বললো, “এসব কখনো বলবা না।”
মেঘালয় মিশুকে কোলে নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে এলো। ওকে সোফার উপর বসিয়ে দিয়ে সায়ানকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে নিলো ফাস্ট এইড বক্স আছে কিনা। সায়ান জানালো ওর ঘরের প্রথম ড্রয়ারে রাখা আছে। মেঘালয় ফোন রেখে মিশুর পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো রক্ত পড়ছে মেঝেতে। ও দ্রুত ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এসে মিশুর পায়ের কাছে বসে খুব যত্নে ওর ক্ষতটা পরিষ্কার করে দিলো। সুন্দর ভাবে মুছে দিয়ে পা তুলে নিয়ে কাটা জায়গার উপর আলতো করে চুমু দিলো। মিশু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। মেঘালয় বললো, “এবার ঠিক হয়ে যাবে।”
তারপর ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলো। মিশু মেঘালয়কে যত দেখছে তত অবাক হয়ে যাচ্ছে। ওর ভালোবাসার ধরণ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছে। মেঘালয় মিশুর পাশে এসে বসলো। দুহাতে মিশুর মুখটা ধরে বললো, “আমার জন্য এই অবস্থা হয়েছে। বিয়ের পর প্রত্যেকটা সেকেন্ড তোমার খেয়াল রাখতে চেয়েছিলাম। পারলাম না, আমি থাকতেও তোমার পা কেটে গেলো। আমাকে মাফ করে দাও, আর কক্ষনো মুহুর্তের জন্যও তোমাকে একা ছাড়বো না। সরি মিশু, সরি।”
মিশুর চোখে পানি এসে গেলো। মেঘালয় এমন কেন! এভাবে ভালোবাসতে হয়? সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করবে তো। যত সময় যাচ্ছে, মেঘালয়ের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যাচ্ছে মিশুর। এরকম মানুষ এখনো পৃথিবীতে আছে! সত্যিই মিশু অনেক ভাগ্য করে ওকে পেয়েছে।
মেঘালয় মিশুকে বুকে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ওর ভেতরে চরম অস্থিরতা কাজ করছে। মিশু ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করেছে, আর এক বিন্দু পরিমাণ কষ্টকেও মিশুর কাছে ঘেষতে দেবেনা ও। মিশু মনে মনে ভাবল, একটা মজার ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে হবে। এই ব্যাপারটা ভূলিয়ে দিতে হবে মেঘালয়কে। ও মুখ তুলে বললো, “আচ্ছা আমাকে কেমন লাগছে?”
মেঘালয় ওর দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে বললো, “মাথা খারাপ হওয়ার মতো সুন্দর।”
– “ইস! আর বলতে হবেনা। আপনাকে আজ দারুণ হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে।”
– “তুমি কি বলতে চাচ্ছো আমি হ্যান্ডসাম নই?”
– “আহা! আপনি সবসময় ই হ্যান্ডসাম। আজকে আপনার ভাষায় বিপজ্জনক রকমের হ্যান্ডসাম লাগছে।”
মেঘালয় হেসে বললো, “তাই নাকি! বিপদ ঘটাচ্ছো না কেন?”
মিশু ভ্রু কুঁচকে বললো, “বিপদ ঘটাবো মানে!”
মেঘালয় দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বললো, “না কিছুনা।”
মিশু ওর গলার দিকে তাকিয়ে বললো, “শাস্ত্র পালন করতে হবে? সেটা আমি পারবো না আগেই বলেছি। আপনার গলায় কত্তগুলো আচড়ের দাগ। আর দাগ করে দিতে পারবো না আমি।”
মেঘালয় বললো, “সে আর বলোনা। আজকে মার্কেটে গিয়েছি, যে মেয়েটা আমাদের জিনিসপত্র দেখাচ্ছিলো সে বারবার হা করে আমার গলার দিকে তাকাচ্ছিলো। কি লজ্জার ব্যাপার। পরে একটা মাফলার কিনে নিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শপিং করেছি।”
– “হা হা হা, এই গরমে মাফলার?”
– “হ্যা। পূর্ব আর আরাফ খুবই জ্বালাচ্ছিলো এগুলো নিয়ে। দাগগুলো দেখে বারবার বলছিলো আমি নাকি অন্যায়ভাবে আক্রমণ করেছিলাম যার জন্য এই অবস্থা হয়েছে।”
মিশু হেসে বললো, “অন্যায়ভাবে কিনা জানিনা তবে সাংঘাতিক ভাবে। আমি কান্না করে ফেলেছিলাম।”
– “এই চোখের জলের দাম দিতেই তো বিয়েটা করলাম। তুমি কাঁদছিলে বলে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল। সেজন্যই এত তাড়াতাড়ি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলাম।নয়ত আরো কিছুদিন সময় দিতাম তোমাকে।”
মিশু বলল, “বিয়েটা করা উচিৎ কাজ হয়েছে। এত সুন্দর একটা ছেলেকে সারাক্ষণ সামনে বসিয়ে রেখে দেখতে পাচ্ছি,এরচেয়ে সুখকর ব্যাপার আর কি আছে? কাউকে দেখার মাঝেও যে এত সুখ থাকতে পারে আমার জানা ছিলোনা।”
মেঘালয় হাসলো। ওর নিজের ও মনেহচ্ছে বিয়েটা করে ভালো হয়েছে। মিশুকে দূরে রাখা অনেক কষ্টকর একটা ব্যাপার। মিষ্টি খুকিটার গাল টেনে দিয়ে আদর করতে ইচ্ছে করে। পাগলী একটা।
মিশু মেঘালয়ের কোলে মাথা রেখে সোফার উপর শুয়ে রইলো। মেঘালয় ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সারারাত ট্রেনে ঘুম হয়নি। ঘুম এসে যাচ্ছে মিশুর। কথা বলতে বলতে ঘুমিয়েও পড়লো। মেঘালয় ওকে কোলে নিয়ে বিছানায় গিয়ে শুইয়ে দিলো। তারপর ওর ঘুমন্ত মুখটার দিকে চেয়ে রইলো অনেক্ষণ। পবিত্র একটা মুখ মেয়েটার! বড্ড সুন্দর দেখাচ্ছে।
মিশুর ঘুম ভাংলো বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে। ও ঘুম থেকে উঠে চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো মেঘালয় নেই। ও অনেক্ষণ চোখ বুজে শুয়ে রইলো তারপর উঠে এলো বিছানা থেকে। বাইরের ঘরে আসতেই দেখলো মেঘালয় খাবার টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছে। ও এসে সামনে দাঁড়ালো। মেঘালয় ওকে দেখে বললো, “ঘুম হলো মহারাণী’র?”
– “হুম,এত সুখের ঘুম কক্ষনো হয়নি আমার। কিন্তু আপনি নাস্তা বানাচ্ছেন কেন?”
– “মহারাণী ঘুম থেকে উঠে কি খাবে তাহলে? ভাবলাম কিছু কিনে নিয়ে এসে রাখি। কিন্তু ফ্রিজে ফ্রুটস পেয়ে গেলাম, স্যান্ডুইচ পেলাম। মাত্র তিনটা আইটেম বানিয়েছি। কফি করেছি, কফি খাবে নাকি চা?”
– “উম, চুমু খাবো।”
মেঘালয় মাথা নিচু করে টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিলো। কথাটা শুনে চমকে তাকালো মিশুর দিকে। সে ভূল শোনেনি তো? ভূত দেখার মত চোখ বড়বড় করে চেয়ে রইলো মিশুর দিকে। ঘুম থেকে উঠে মিশুকে আরো সুন্দর দেখাচ্ছে। কণ্ঠটাও আবেগ মিশ্রিত। মেঘালয় হেসে বললো, “কি খাবা?”
মিশু মুচকি হেসে বললো, “কিচ্ছু না।”
বলেই একটা দৌড় দেয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না,পায়ে ব্যথা পেয়ে আহ বলে বসে পড়লো। মেঘালয় এসে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বলল, “হাঁটতেই পারছো না ঠিকমত। দৌড় দিতে যাও কেন হুম?”
– “তুমি যদি আবার হামলা করে বসো।”
– “পায়ে কি খুব ব্যথা? আমি তোমাকে একা রেখে বাইরে যেতে চাচ্ছিলাম না। ওদেরকে বলে দিয়েছি, ফেরার সময় ওষুধ নিয়ে আসবে।”
– “ইস! আমার খুব বেশি কিছু হয়নি যে ওষুধ খেতে হবে। আমি ঠিক আছি।”
– “সেজন্যই তো হাটতে পারছো না। অবশ্য ভালোই হয়েছে, তোমাকে এখন কোলে নিয়ে সব জায়গায় নিয়ে যেতে পারবো। পুতুলের মত একটা বাচ্চা, তাকে কি হাটতে দেয়া যায়?”
মিশু দুহাতে মেঘালয়ের গলা চেপে ধরে বললো, “এখন কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?”
– “স্বর্গে…”
– “হেঁটে হেঁটে বুঝি স্বর্গে যাওয়া যায়?”
মেঘালয় মিশুকে এনে বিছানায় শুইয়ে দিলো। শক্ত করে চেপে ধরে গভীর আবেশে চুমু খেলো ওর ঠোঁটে। মিশু সমানতালে দুই পা ছোড়াছুঁড়ি করছে, কিন্তু মেঘালয় শক্ত করে ওর একহাতে কোমর ধরে রেখেছে, আরেক হাতে ওর মুখ। মিশু দুহাতে মেঘালয়ের গলা খামচি দিয়ে ধরলো। অনেক্ষণ পর মেঘালয় ওকে ছেড়ে দিয়ে বললো, “শাস্ত্র পালন করে ফেলেছো।”
– “সরি।”
মিশু লজ্জায় মুখ লুকোচ্ছে মেঘালয়ের বুকে। মেঘালয় একটু সময় পর ওকে ছেড়ে দিয়ে বের হয়ে গেলো। মিশু হা করে চেয়ে রইলো ওর চলে যাওয়ার দিকে। ভেবেছে মেঘালয় বুঝি রাগ করেছে। কিন্তু মেঘালয় টেবিল থেকে ট্রেতে করে নাস্তা নিয়ে এসে হাজির হলো। হাসি ফুটলো মিশুর মুখে। দুজনে একসাথে বসে নাস্তা খেতে খেতে গল্প করলো। মিশুর শাড়ি এলোমেলো হয়ে গেছে। কফি খাওয়ার পর মেঘালয় ওর শাড়ি ঠিক করে দিলো।
আট টার পরেই ফিরলো ওরা। মিশুর জন্য ওষুধ এনেছে, খাবার এনেছে। সবাই মিলে একসাথে বসে খাবার খেলো। তারপর আড্ডায় বসলো। মেঘালয় বারবার তাকাচ্ছে মিশুর দিকে। ওর ইচ্ছে করছে একান্তই মিশুর সাথে সময় কাটাতে। কিন্তু বন্ধুদের কাছ থেকে মেয়েটাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যাওয়াও যায় না। বড্ড লজ্জাকর হয়ে যাবে ব্যাপার টা। মেঘালয় মাথা নিচু করে এসব ভাবছে।
পূর্ব জিজ্ঞেস করলো, “ভাবিজী বাসর দিন কেমন কাটলো?”
– “খুব ভালো। এতবেশি ভালো যে আমার কিচ্ছু মনে নেই। কারণ, আমি আড়াইটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছিলাম।”
সায়ান হেসে বলল, “মেঘু দোস্ত কি করছে একা একা? ফেসবুকিং?”
– “না, ও নাস্তা বানিয়েছে আমার জন্য।”
– “পূর্ব, তাহলে ওদের ছেড়ে দে। আমরা বরং নাচানাচি করি।”
মিশু বললো, “নাচানাচি করবেন? আমিও করবো।”
সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে একে অপরের দিকে তাকালো। মেঘালয় চোখ বড়বড় করে তাকালো মিশুর দিকে। তারপর বললো, “তুমি নাচতে পারো?”
– “হ্যা, খুব পারি।”
– “রুমে গিয়ে নাচাবো।”
-“না, আমি ওদের নাচ দেখবো।”
মেঘালয় উঠে দাঁড়িয়ে মিশুর হাত ধরে টানছে ওকে রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু মিশু নাছোড়বান্দা। সে কিছুতেই রুমে যাবে না। এখানে বসে বসে সবার সাথে আড্ডা দেবে আর নাচ দেখবে। মেঘালয় মুখটা কাচুমাচু করে সায়ানের কানেকানে বললো, “যা করবি তাড়াতাড়ি কর না ভাই। নাচলে এখনি নাচ,আমার বউটাকে ছেড়ে দে।”
– “আমি কি তোর বউকে ধরে রাখছি?”
– “ভাই, তোর দোহাই লাগে একটু নাচ দেখা। আমি আমার বউটাকে নিয়ে যাই।”
সায়ান হাসতে হাসতে বললো, “ওটা তো একটা অবুঝ শিশু। ওকে নিয়ে গিয়ে কি করবি? সে নাচ দেখতে চাচ্ছে, দেখা। তোর দেখতে মন না চাইলে তুই গিয়ে ঘুমা।”
– “হারামি, আমি গিয়ে ঘুমাবো?”
– “হ্যা ঘুমা, আমাদের নাচানাচি শেষ হলে তোর বউকে সহী সালামতে তোর কাছে রেখে আসবো।”
– “আমার আজ বাসর রাত রে ভাই, আমারে একটু ওরে নিয়ে যাইতে দে।”
– “আমরা তো নাবালক শিশু, আমরা কি কিছু করছি আপনার বউকে? আপনার বউই তো যাইতে চাচ্ছে না।”
– “প্লিজ একটু নাচ দেখা না।”
মেঘালয়ের করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো সায়ান। উঠে সাউন্ড বক্সে গান দিতে গেলো। মিশুকে খুবই উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। রাতে আবার কি পাগলামি করে সেটা ভেবে চিন্তা হচ্ছে মেঘালয়ের। সে নাচ না দেখে কিছুতেই এখান থেকে যাবে না। যদি বলে সারারাত ওদের সাথে বসে পার্টি করবে তাহলেই সেরেছে। এত সাধের বাসর রাত এ জন্মের মত ঘুচে যাবে।
মেঘালয় মিশুর দিকে চেয়ে আছে। মিশু ওর বন্ধুদের কাজকর্ম দেখছে। ওরা এখন কেক কাটবে, পার্টি স্প্রে দিচ্ছে বারবার। বেলুন ফুলিয়ে সাজিয়ে রাখছে আবার হাত দিয়ে ফাটাচ্ছে। তিনজন মিলে হাসাহাসি করছে, কোক খাচ্ছে। মিশু ও যোগ দিলো ওদের সাথে। এদিকে মেঘালয়ের মাথায় হাত। যা ভেবেছে তাই হতে যাচ্ছে। একবার যদি ও মেয়ে বলে, সে এখন এদের সাথে পার্টি করবে তবে আজ আর মিশুকে সে পাচ্ছে না। গালে হাত দিয়ে ওদের বাচ্চামো কাণ্ডকারখানা দেখছে মেঘালয়।
মিশু হাঁটতে পারছে না তবুও দিব্যি এনজয় করছে ওদের সাথে। সাউন্ড বক্সে গান বাজছে,
“Kabhi joo badal, barse na dekhu tujhe akhe…”
মিশু বললো, “এসব গানের সাথে কি নাচা যায়? আমি গান দিচ্ছি, সায়ান ভাইয়া নাচের জন্য রেডি হও।”
সায়ান সবার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মিশু পা খুঁড়িয়ে খুড়িয়ে হেটে গান বদলাতে গেলো। মেঘালয় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। কান্না করতে ইচ্ছে করছে ওর। বউটা এত অবুঝ কেন! এদিকে রাত বেড়ে যাচ্ছে। মিশু গান ছেড়ে দিলো, ” দিলবার দিলবার.. দিলবার দিলবার..”
সবাই অবাক হয়ে তাকাচ্ছে। সায়ান মিশুর দিকে হাত বাড়িয়ে সিনেম্যাটিক স্টাইলে তাকালো। মিশু একবার মেঘালয়ের দিকে তাকালো ও না। ও সায়ানের হাত ধরে কাছে এগিয়ে এলো। রিমিক্স বাজছে, বাকি তিনজন একদম হতভম্ব! মিশু শাড়ি পড়েই সায়ানের হাত ধরতে নাচতে আরম্ভ করলো,
“Ab toh hosh na khabar hai
Yeh kaisa asar hai
Hosh na khabar hai
Yeh kaisa asar hai
Tumse milne ke baad dilbar..
Tumse milne ke baad dilbar…
Dilbar dilbar.. Dilbar dilbar..”
মিশু এমন দক্ষ ভাবে সায়ানের হাত ধরে নাচছে যে মনেহচ্ছে দুজনেই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ড্যান্সার। সবাই হা করে চেয়ে আছে। পূর্ব উঠে গিয়ে মিশুকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে নাচতে শুরু করলো। মিশু পূর্ব’র মুখটা ধরে কাঁধে হাত রেখে তাল মিলাচ্ছে,
“Tu mera khaab hai
Tu mere dil ka qaraar
Dekh le jann-e-mann
Dekh le bas ek baar..”
মেঘালয় আর বসে থাকতে পারলো না। উঠে গিয়ে সবার সামনেই মিশুকে কোলে তুলে নিলো। মিশু রীতিমত অবাক! ও বারবার বলতে লাগলো, “নাচবো আমি,নাচবো আমি..”
বাকি দুই বন্ধু হাসছে আর নেচেই চলেছে। মেঘালয় ওদেরকে বললো, “তোরা একেকটা ভিলেন”
ওরা হাসতে হাসতে বললো, “হ্যাপি ফুলশয্যা, হ্যাপি জার্নি।”
বলতে বলতে নাচতেই লাগলো। মেঘালয় মিশুকে কোলে নিয়ে এসে রুমে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দিলো। তারপর মিশুকে কোল থেকে নামিয়ে দিতেই মিশু বললো, “আমি নাচ দেখতাম।”
মেঘালয় আচমকা গায়ের সমস্ত জোড় দিয়ে কষিয়ে থাপ্পড় দিলো মিশুর গালে। মিশু গাল ধরে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো। মেঘালয় কিছুতেই রাগ সামলাতে না পেরে বললো, “ওদের সাথে যা খুশি বলো কিছু মনে করতাম না। দুজনের সাথে হাত ধরে নাচবে আর আমি সেটা সহ্য করবো এটা ভাবলে কি করে?”
মিশুর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। মেঘালয়ের এমন আচরণ ওর কাছে দুঃস্বপ্নের মত লাগছে। ও বললো, “বিয়ে করতে না করতেই বিহ্যাভ চেঞ্জ হয়ে গেলো!”
মেঘালয়ের খুব খারাপ লাগলো কথাটা শুনতে। ও এগিয়ে এসে মিশুর মুখটা ধরে চোখ মুছে দিয়ে বললো, “সরি মিশু, সরি ”
মিশু এক ঝটকায় ওর হাত সরিয়ে দিলো। মেঘালয় বারবার সরি বলছে তবুও মিশু কান্না করেই চলেছে। মেঘালয় মিশুর পায়ে হাত রেখে সরি বলতেই মিশু চমকে উঠে ওর হাত ধরে বললো, “কি করছো তুমি এটা?”
– “আমাকে মাফ করে দাও। আমি তোমাকে আঘাত করে ফেললাম।”
– “ছি, তাই বলে পা ধরবা?”
মিশু মেঘালয়ের বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেললো।মেঘালয় নিজেও কেঁদে ফেললো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, “আমি রাগ সামলাতে পারিনি। তুমিই বলো, আমাকে কোনো মেয়ের হাত ধরে নাচতে দেখলে তোমার কেমন লাগতো? তার উপর তুমি একজন মেয়ে। আমার এসব পছন্দ না।”
মিশু আরো জোরে কাঁদতে লাগলো। মেঘালয়ের গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। মেঘালয় বললো, “তোমাকে আর কারো সাথে দেখলে আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়। শোনো,তোমার শরীরের প্রতিটা লোমকূপ আমার। আর কারো না।”
মিশু দুহাতে খামচে ধরলো মেঘালয়ের পাঞ্জাবি। মেঘালয় ওকে বুকের সাথে শক্ত করে ধরে বললো, “আমি জানি তুমি এখনো অনেক বাচ্চা স্বভাবের। ছেলেমানুষি ভাবটা এখনো যায় নি, সেজন্যই ওভাবে নাচছিলে। কিন্তু আমি পারিনা রে মানতে, আর কেউ তোর আঙুল স্পর্শ করুক আমি সহ্য করতে পারবো না। মরে যাবো।”
মিশু বললো, “আমিই সরি। আর কক্ষনো এমন হবেনা।”
– “আমাকে মাফ করে দিয়েছো তো? প্রথম দিনেই আঘাত করলাম তোমায়। আমি আসলে রেগে গেলে ভয়ংকর হয়ে যাই মিশু। সরি।”
– “না মাফ করবো না। একটা কাজ করলে মাফ করবো ”
– “কি কাজ?”
মিশু ওর বুকে মুখ লুকাতে লুকাতে বললো, “ট্রেনে যেটা করেছিলে সেটা করতে হবে। তুমি না বলছিলে বিয়ের পরে ওসব করতে হয়।”
মেঘালয় মিশুকে ছেড়ে দিয়ে হাসার চেষ্টা করলো, “আচ্ছা, মাফ করে দিও।”
বলামাত্রই যেই চোখ ঘুরিয়েছে দেখলো পেটের উপর থেকে মিশুর শাড়ি সরে গেছে। নাভীতে চোখ যাওয়া মাত্রই মেঘালয়ের সমস্ত শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। ঘোর লেগে গেলো চোখে। অনেক্ষণ ধরে চেয়ে রইলো। তারপর মিশুকে এক হাতে শুইয়ে দিয়ে আরেক হাতে ওর শাড়িটা সরালো। মিশু বুঝতে পারছে না মেঘালয় কি করতে চাইছে। মেঘালয় নিচু হয়ে ওর নাভীর উপর ঠোঁট স্পর্শ করলো। শিহরিত হয়ে উঠলো মিশু। এক অন্যরকম সুখের স্পর্শে মিশে যেতে লাগলো। মেঘালয়ের চুল খামচে ধরলো দুহাতে। গায়ের জোরে ওর চুল টানতে লাগলো। মেঘালয় মাথাটা ডুবিয়ে দিয়ে গভীর আবেশে চুম্বন করতে লাগলো। কেঁপে কেঁপে উঠছে মিশু।
চলবে..

অনুভূতি পর্ব ১৯

0

অনুভূতি
পর্ব ১৯
মিশু মনি
.
৩১.
বিয়ের সমস্ত প্রস্তুতি শেষ। মেঘালয় দরজায় গিয়ে মিশুকে ডাকলো।
মিশু দরজা খুলতেই দারুণ ভাবে চমকে গেলো মেঘালয়। লাল শাড়ি,ঘোমটা, আর পুরো কনের সাজে মিশুকে স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোনো পরি মনে হচ্ছে। মিশু যে এত সুন্দর সেটা আজকের সাজে না দেখলে ও হয়ত বুঝতেই পারতো না। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো মিশুর দিকে।
মিশুও বেশ অবাক। খয়েরি রঙের পাঞ্জাবি আর কালো জিন্সে মেঘালয়ের রূপ যেন আরো ফুটে উঠেছে। কি পরিমাণ সুন্দর লাগছে সেটা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না। গোসলের পর একটা স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে আছে মেঘালয়ের মুখে। ভেজা চুলে,লাল খয়েরি রঙের পাঞ্জাবি পড়ে ওর স্নিগ্ধ চেহারা আরো স্নিগ্ধ রূপ ধারণ করেছে।
মেঘালয় ই প্রথম কথা বললো, “মিশু! এটা তুমি!”
– “কেন?”
মেঘালয় দু পা এগিয়ে আসতেই মিশু একটু পিছিয়ে গেলো। মেঘালয় একহাত ওর কোমরে রেখে একটানে ওকে বুকে টেনে নিয়ে ওর মুখটা দুহাতে ধরলো। মিশু অবাক হয়ে বললো, “কি করছেন?”
– “আমার মিষ্টি বউয়ের সাথে শুভদৃষ্টি করছি।”
মিশুও মেঘালয়ের চোখে চোখ রাখলো। এত কাছ থেকে ওর স্নিগ্ধ মুখটা দেখে বুকের ভেতরে ধুকপুকুনিটা আরো বেড়ে গেলো যেন। এত সুন্দর একটা ছেলে ওর বর হতে চলেছে! ভাগ্য করে একটা রাজকুমার কে পেয়েছে ও। সত্যিই মেঘালয় অনেক বেশি সুন্দর!
একে অপরের চোখের দিকে অনেক্ষণ চেয়ে রইলো এভাবে। মিশুর চোখের পাতা ঘনঘন কাঁপছে। এর আগে কখনো মেয়েটাকে লিপস্টিক দেয়া অবস্থায় দেখেনি ও। আজকে দেখে কেমন যেন অস্থিরতা কাজ করছে ভেতরে। একটা কিউট ভাব আছে চেহারায়। মেঘালয় চোখ বড়বড় করে চেয়ে রইলো। মিশু একটু নড়াচড়া করে বললো, “উহ ছাড়ুন তো।”
মেঘালয় ওকে ছেড়ে দিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে মাথা চুলকালো। তারপর বললো, “আসো, বিয়ে করবো।”
মিশুর হাসি পেলেও খুব ভালো লাগলো কথাটা শুনতে। এভাবে কেউ কখনো বিয়ের কথা বলে নাকি? লজ্জা করছে তো। লজ্জায় ওর লাল মুখটা আরো লাল বর্ণ ধারণ করলো। মেঘালয় মিশুর হাত ধরে ওকে বসার ঘরে নিয়ে আসলো। বর কনেকে একসাথে দেখে ওর তিন বন্ধুই মুগ্ধ হয়ে গেলো। দুজনকে বেশ মানিয়েছে। মিশু এত সুন্দর সেটা ওরাও আগে বুঝতে পারেনি। তিনজন ই নতুন বউয়ের প্রশংসা করতে লাগলো। একা একা শাড়ি পড়ার কারণে কুচিগুলো একটু এলোমেলো হয়েছে। তবুও ভালো লাগছে, মনেহচ্ছে কুচিগুলো গোছালো হলে ভালো লাগতো না।
এরপর বিয়ে পড়ানোর কাজ শুরু হলো। বুকের ভিতর টা কেমন ঢিপঢিপ করছে মিশুর। বিয়েটা তো জীবনে একবার ই হয়,সেটা করতে চলেছে ও। অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছে। মেঘালয়ের মত একজনকে সারাজীবনের কত করে পাচ্ছে সেটা যেন স্বপ্নাতীত ব্যাপার। স্বপ্ন বাস্তবে নেমে এসেছে মনেহচ্ছে। ও একবার মনেমনে নিজের মাকে মনে করলো। আম্মুকে ফোন দিয়ে বললো, “আমার জন্য দোয়া করো আম্মু।”
আর বিশেষ কিছুই বললো না। ফোন রাখতেই কাজি ওনার কর্মকাণ্ড শুরু করে দিলেন। মেঘালয়ের খুব কাছের একজন চাচা আছেন, ওনাকে ডেকে এনেছে মেঘালয়। একজন মুরুব্বি অন্তত বিয়েতে উপস্থিত থাকুক। চাচা অনেক বিশ্বস্ত, মেঘালয়ের সব কথা উনি রাখবেন। একজন বড় ভাইকেও নিয়ে এসেছে ওরা।
সুপ্রসন্ন ভাবে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলো। মিশুর প্রথমে বুক কাঁপলেও পরে বেশ উত্তেজিত বোধ করলো। কেবলই মনে হতে লাগলো, বিয়ের মত মজার জিনিস বোধহয় আর হয়না। ওকে কবুল বলতে বলামাত্রই কবুল বলে দিলো। রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করার সময়েও মুখে প্রসন্ন হাসি ছিলো। কিন্তু কলম ধরার সময় মেঘালয়ের হাত কাঁপছিল, কারো চোখ এড়ায়নি ব্যাপার টা। মেঘালয় ছেলেটা সত্যিই অনেক ভালো।
বিয়ের কাজ শেষ হয়ে গেলে গেস্ট দুজন সহ সবাই একসাথে মিষ্টিমুখ ও খাওয়াদাওয়া করলো। তারপর গেস্টরা ও কাজি চলে গেলে পূর্ব বললো, “ওরা দুজন থাক,আমরা বরং বের হই?”
মেঘালয় বললো, “কই যাবি তোরা?”
– “আমরা থেকে কি করবো এখানে? পার্টি হবে রাতে। আমরা তিন জন এখন মিনি কক্সবাজার যাচ্ছি,সূর্যাস্ত দেখে তারপর ফিরবো। রাত্রে ফেরার সময় পার্টির জন্য যা লাগে কিনে নিয়ে আসবো।”
– “মিনি কক্সবাজার মানে? এখন তোরা মৈনট যাচ্ছিস?”
– “আজ্ঞে হা, আপনি তো বউ নিয়ে স্বর্গে যাবেন, আমরা কি ঘাস কাটবো? ঘুরে আসি।”
মেঘালয় হেসে বললো, “আচ্ছা যা। রাত্রে খাবার নিয়ে আসিস।”
সায়ান ইয়ার্কি করে বললো, “মামা তুমি আরো কি খাবার চাও? লিপস্টিক আজ থেকে তোমার প্রধান খাদ্য।”
বলেই ওরা তিনজন হেসে উঠলো। মেঘালয়ের সাথে খুনসুটি লেগে গেলো ওদের। মিশু লজ্জা পাচ্ছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। সেও মুখ টিপে হাসছে। যেন ওদের ফাজলামো দেখে মজ্জা পাচ্ছে বেশ।
ওরা ক’জন বন্ধু মিলে অনেক ফাজলামি করে বের হওয়ার জন্য দরজায় গেলো। সায়ান নব দম্পতির দিকে তাকিয়ে বললো, “মাত্র তো দুপুর দুইটা বাজে। রাত দশটা পর্যন্ত পুরা বাড়ি শুধু তোদের। ফিরে এসে যেন দেয়ালে দেয়ালে প্রেমের চিহ্ন দেখতে পাই।”
মেঘালয় হেসে বললো, “অনেক হইছে ভাই, এখন যাবি?”
– “এখন আমাদের তাড়িয়ে দিচ্ছিস? ভালোই। শোন, চিপাচাপায় কিন্তু সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। আমরা না থাকলে কি হবে? আমাদের ক্যামেরা আছে। মেঘ দেখে কেউ করিস না ভয়,আড়ালে তার ক্যামেরা আছে।”
বলেই চোখ মারলো। মেঘালয় ভ্রু কুঁচকে বললো, “সিরিয়াসলি?”
তিন বন্ধু হো হো করে হেসে উঠলো। আরাফ বললো, “ওর পুঁচকে বউ ভয় পেয়ে যাবে তো। তোরা ইয়ার্কি থামাবি এখন? তাড়াতাড়ি চল।”
– “আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি। মেঘালয়, তোদের বাসর রাত থুক্কু বাসর দিন শুভ হোক।”
ওরা হাসাহাসি করতে করতে চলে গেলো। মেঘালয় মেইন দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসে মিশুর দিকে তাকিয়ে বললো, “ওদের ফাজলামি দেখে কিছু মনে কোরো না। ওরা এরকম ই।”
– “সে তো প্রথম দিনেই জেনেছি। কিছু মনে করিনি।”
– “প্রথমবার রাতে রাস্তায় দেখা হইছিলো না? সায়ান তোমাকে ভাবি বলেছিলো? হা হা, শেষ অব্দি ওর ভাবি ই হয়ে গেলে তাহলে।”
মিশু হাসলো। তারপর এগিয়ে এসে মেঘালয়ের সামনে স্থির হয়ে দাঁড়ালো। মেঘালয়ের দিকে আঙুল তুলে বললো, “আমি পুঁচকে? আমি বাচ্চা? আমাকে কি বাচ্চাবাচ্চা লাগছে?”
মেঘালয় ওর আঙুল ধরে বললো, “নাহ, বিপজ্জনক লাগছে। রেড সিগন্যাল বরাবর ই বিপদজনক। ভয় পাচ্ছি।”
– “মানে!”
– “বুঝাচ্ছি।”
মেঘালয় দুম করেই মিশুকে কোলে তুলে নিলো। মিশু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো ওর দিকে। মেঘালয় ওকে কোলে নিয়ে এমন একটা রুমে চলে আসলো যার চতুর্দিকেই গ্লাস লাগানো। যেদিকে তাকাচ্ছে শুধু ওদের দুজনকেই দেখা যাচ্ছে। ফুল আর বেলুন দিয়ে সাজানো, তিনরকম আলো খেলা করছে ঘরটাতে। এসির শীতল হাওয়া আর শিউলি ফুলের ঘ্রাণ নাকে এসে লাগছে। চারিদিকের গ্লাসের সামনে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে, সেই ফুলের মাঝে ওদেরকে দেখতে পাচ্ছে মিশু। মেঘালয় ওকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কেমন যেন চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে ওর। মুগ্ধতার চেয়ে বেশি কিছু থাকলে সেটাই হলো ও। ঘরে ঢুকেই মনেহচ্ছে অন্য একটা জগতে চলে এসেছে ওরা। সম্ভবত থ্রিডি আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করেছে ঘরটাতে, নয়ত এরকম চোখ ধাঁধিয়ে যায় কেন?
মিশু দুহাতে মেঘালয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “এত সুন্দর কেন!”
– “তোমার জন্য।”
মিশুকে এনে একটা দোলনায় বসিয়ে দিলো ও। দোলনা দোল দিতেই মিশু দোলনার রশি দুহাতে চেপে ধরলো। মেঘালয়ের থেকে কয়েক হাত পিছিয়ে গেলো দোলনাটা। মিশু কিছুতেই ওর বিস্ময় চেপে রাখতে পারছে না। দোলনার রশিতেও ফুল দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে। অন্যরকম সুবাস মিশে আছে সবকিছুতে। দোলনা অনেক দূর পিছিয়ে এসে আবার যখন সামনের গিয়ে এগিয়ে এলো, মেঘালয়ের সামনে আসতেই মিশু বুঝে উঠতে পারলো না কি হচ্ছে। মেঘালয় আচমকা দোলনা আটকিয়ে দিয়ে মিশুর মুখটা ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে চাপ দিলো। এটা বুঝতে অনেক সময় লেগে গেলো মিশুর। ওর দারুণ ঘোর লেগে যাচ্ছে। এরকম অনুভূতি সত্যিই অভাবনীয়, কেবল স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে সবকিছু!
মেঘালয় মিশুকে ছেড়ে দিয়ে জোড়ে একটা নিশ্বাস নিয়ে বললো, “উফফ রাঙা ঠোঁটদুটো দেখার পর থেকে এটা করার জন্য পাগল হয়ে গেছিলাম।”
বলেই হেসে ফেললো। মেঘালয় দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা অনেক লম্বা। মিশু দোলনায় বসে ওর বুক অব্দি পৌছে গেছে। জাপটে ধরলো দুহাতে। মেঘালয় বললো, “এখন থেকে যখন তখন এরকম ভয়ংকর আক্রমণ হবে তোমার উপর। প্রস্তুত থেকো।”
– “আপনি একটা খুব খারাপ। খারাপের চেয়েও বেশি খারাপ।”
-“হা হা হা, সারাজীবনের কত ফ্যান্টাসি জমিয়ে রেখেছি তোমার জন্য। আস্তে আস্তে দেখবে কত সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। এই রুমের সাজসজ্জা দেখছো না? এটাও আমার একটা ফ্যান্টাসি ছিলো। এটা তো আমার প্লান মতই সাজানো হয়েছে।”
– “অদ্ভুত রকমের সুন্দর, মনেহচ্ছে অন্য কোনো পৃথিবীতে চলে এসেছি। এত টাকা খরচ করার কি দরকার ছিলো?”
– “একবার ই তো বিয়ে করছি রে, পরেরবার ওয়েডিং প্রোগ্রামে এত মজা হবেনা। আমার আনাড়ি বউটা তখন সেয়ানা হয়ে যাবে।”
মিশু ক্ষেপে গিয়ে বললো, “আপনি এত খারাপ কেন শুনি? পাজি কোথাকার।”
মেঘালয় মিশুকে দোলনা থেকে নামিয়ে এনে মেঝেতে বসিয়ে দিলো। রুমের সমস্ত আলো নিভিয়ে দিলো। মিশু হা করে সবকিছু দেখছে। অন্ধকারে দারুণ সুগন্ধিতে ভরে গেছে ঘরটা, আর এসির হিমেল হাওয়ায় সত্যিই অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।মনেহচ্ছে শীতের রাতে ও বাইরে ঠাণ্ডা ঘাসের উপর বসে আছে। মেঘালয় একটা মোমবাতি হাতে ঘরে প্রবেশ করলো। মিশুর বিস্ময় চরমে পৌছে গেছে। ঘরের চারিদিকেই মেঘালয়কে দেখা যাচ্ছে। ও ঘুরেঘুরে চারপাশে তাকাচ্ছে। চারদিকেই মেঘালয়ের প্রতিচ্ছবি! অন্ধকারে মোমের আলোয় শুধু মেঘালয়ের শুভ্র মুখটাই দেখা যাচ্ছে। হালকা খয়েরি পাঞ্জাবীতে ছেলেটার স্নিগ্ধ মুখটা মোমের আলোয় অন্যরকম দেখাচ্ছে। মেঘালয় এসে মেঝেতে মিশুর পাশে বসে পড়লো। মিশুর মাথাটা নিজের কাঁধে রেখে আরাম করে বসলো। মিশু মাথাটা ওর কাঁধে রাখার পর সামনে তাকিয়ে দেখে মোমের আলো আয়নায় রিফ্লেক্ট করছে, ঘরটা দারুণ আলোয় ভরে গেছে। মনেহচ্ছে ঘরে অনেক গুলো মোম জ্বলছে। আর মোমের মিষ্টি আলোয় দুজন সদ্য বিবাহিত বর বউ বসে আছে। আবছা আবছা আলোয় কত সুখী দেখাচ্ছে দুজনকে। এত সুখের মুহুর্ত যেন কখনো শেষ না হয়!
মেঘালয় একহাত মিশুর কোমড়ে রেখে আলতো চাপ দিয়ে ওকে একদম কাছে টেনে নিলো। মিশু লজ্জায় চোখ মেলতে পারছে না। ওর সবকিছু ঘোর ঘোর লাগছে। মেঘালয় মিশুকে কাতুকুতু দিয়ে নিজেই হেসে উঠলো। মিশু তিড়িং তিড়িং করে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো। মেঘালয় হাসছে। মিশু ক্ষেপে বললো, “এত দুষ্টু ক্যান আপনি?”
মেঘালয় গান গেয়ে উঠলো,
“কথা হবে,দেখা হবে, প্রেমে প্রেমে মেলা হবে,
কাছে আসা আসি আর হবেনা…
চোখে চোখে কথা হবে, ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে,
ভালোবাসা বাসি আর হবেনা…
শত রাত জাগা হবে,থালে ভাত জমা রবে,
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবেনা…
হুট করে ফিরে এসে লুট করে নিয়ে যাবে
এই মোন ভেঙে যাবে জানো না…
আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবেনা…”
এতটুকু গেয়েই মিশুর হাত ধরে টেনে ওকে বুকে নিলো। নিয়ে আবারো কাতুকুতু দিলো। মিশু আবারো তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে উঠে পিছিয়ে গিয়ে বললো, “আসলেই বাজে স্বভাব। বাজে বাজে, চরম বাজে একটা লোক আপনি।”
মেঘালয় আবারো গাইতে আরম্ভ করলো,
“যদি তুমি ভালোবাসো, ভালো করে ভেবে এসো
খেলে ধরা কোনোখানে রবেনা,
আমি ছুঁয়ে দিলে পরে,অকালেই যাবে ঝরে
গলে যাবে যে বরফ গলেনা…
আমি গলা বেঁচে খাবো, গানের আশেপাশে রবো
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে কথা হবেনা…
কারো একদিন হবো, কারো এক রাত হবো
এরবেশি কারো রুচি হবেনা…
আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবেনা…”
মিশু মেঘালয়ের কাছে এসে দাঁড়ালো। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, “গলা বেঁচে খান, গান করুন, বড় শিল্পী হোন, যাই করুন ঠোঁটে ঠোঁট রেখে কথা বলতেই হবে। আর কারো রুচি হওয়ার দরকার তো নেই, আমার রুচি থাকলেই হলো।”
মেঘালয় হেসে ফেললো। মিশুকে নিয়েই দোলনায় বসে মিশুর মাথাটা নিজের কাঁধে নিয়ে বলল, “আমার পাগলী টা।”
– “গানটা ভালো লেগেছে। আপনি সত্যিই একদিন অনেক বড় শিল্পী হবেন।”
– “বউয়ের দোয়া কি কাজে লাগে? লাগলে হয়ে যাবো। তা বউটা আমাকে কতক্ষণ আরো আপনি আপনি করে বলবে?”
মিশু হাসলো। মেঘালয়ের কাঁধে মাথা রেখে দোলনায় দোল খেতে লাগলো।
চলবে..

অনুভূতি পর্ব ১৮

0

অনুভূতি
পর্ব ১৮
মিশু মনি
.
২৯.
বিয়ের আয়োজন দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো মিশু -মেঘালয়!
বসার ঘরে কিছু ফুল আর বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে আর বাসর ঘরের সাজসজ্জা একদম অবাক হওয়ার মত! আরাফ ডেকোরেশনের কাজটা খুব ভালোই পারে। কিন্তু তাই বলে মাত্র এইটুকু সময়ের মধ্যে এত সুন্দর আয়োজন সত্যিই বিস্ময়কর।।
ভোর সাড়ে তিনটায় ফোন দিয়ে বলেছে,অথচ সকাল দশটার মধ্যেই একেবারে সকল আয়োজন করে ফেলেছে! ওর বন্ধুরা যে এতবেশি কাজের সেটা এতদিন জানা ছিলোনা মেঘালয়ের। কাজীকেও খবর দেয়া হয়েছে, খাবার দাবার, কয়েক প্রকার মিষ্টি, সবই আনা হয়ে গেছে। মেঘালয় বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জাপটে ধরলো ওদের।
মিশুর কাছে সবকিছু স্বপ্নের মত লাগছে। একজন সম্পূর্ণ অচেনা মানুষ অদ্ভুত ভাবে আপন হয়ে গেলো। রুমে বসে বসে এসব ভাবছিলো ও। সায়ান ও মিশুকে বাসায় রেখে মেঘালয় পূর্বকে নিয়ে বাইরে গেছে। একটা বিশেষ কাজে যাচ্ছি বলে বেড়িয়েছে মেঘালয়। বাইরে যাওয়ার আধ ঘন্টার মধ্যে দুইবার ফোন করে খোজ নিয়েছে মিশুর খারাপ লাগছে কিনা,টেনশন হচ্ছে কিনা? মিশু এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না এটা কি করতে চলেছে ও? মেঘালয়ের সম্পর্কে যতটুকু জানে, একজন মানুষকে চেনার জন্য সেটাই যথেষ্ট। কিন্তু বিয়ে করার জন্য এতটুকু জানাই কি যথেষ্ট?
হঠাৎ ই চিন্তা হচ্ছে মিশুর। যে মানুষটা রাস্তায় পড়ে থাকা বস্তির ময়লা কাপড় পড়া একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারে, তার প্রতি ভরসা করা যায়। আর যেকোনো মেয়ের ভালোবাসা পাওয়ার মত যোগ্যতা মেঘালয়ের আছে। তবুও কেন যে এমন লাগছে বুঝতে পারছে না মিশু।
বাইরে এসে সায়ানের পাশে বসে পড়লো ও। সায়ান জিজ্ঞেস করলো, “ভাবি কিছু হইছে? আপসেট কেন?”
মিশু করুণ মুখে বললো, “সায়ান ভাইয়া, আমার না ভয় হচ্ছে খুব। এরকম পরিস্থিতিতে জীবনে প্রথমবার পড়লাম।”
– “বিয়ে তো জীবনে একবার ই করত হয়। এত টেনশনের কিছু নাই।”
– “আমার ব্যাপার টা আমি কাউকে বুঝাতে পারবো না ভাইয়া।”
মিশু মাথা নিচু করে ফেললো। সায়ান উঠে এসে মিশুর পাশে বসে বললো, “মেঘালয়ের মত ছেলে তুমি আজকাল খুঁজে পাবে না। ওর মত ফ্রেন্ড পেয়ে আমরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করি। সেজন্যই তো রাতে পূর্ব আমাকে কল দেয়ার পর ঘুম থেকে উঠে এতকিছুর ব্যবস্থা করে ফেলেছি। ভাবতে পারো তুমি? কেন ওর জন্য এতকিছু করলাম?”
মিশু মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, “হুম। সবাই ওকে অনেক ভালোবাসেন আমি জানি।”
সায়ান বললো, “তার গুনেই ভালোবাসি। আমার ফ্রেন্ড বলে বলছি না, ওর একটা আদর্শ আছে।”
– “ও যদি বিয়ের পরে আমাকে ছেড়ে দেয়? আমি কই যাবো? আপনার কি মনেহয় সে আমাকে ছেড়ে দেবে?”
যাকে বিয়ে করতে চলেছে তার বন্ধুকে এরকম প্রশ্ন করছে সেটা আবার সায়ানের বাসাতেই বসে। সায়ানকে ও চেনেও না আগে থেকে। কতটা সরল মনের হলে এভাবে নিজের উদ্বিগ্নতা নিয়ে অন্যকে প্রশ্ন করা যায়?
মিশুর ব্যাপার টা বুঝতে পেরে সায়ান ওর একদম কাছাকাছি এসে সুন্দর ভাবে বললো, “শুনলাম ট্রেনে তুমি নিজেই ওকে কাছে টানছিলে, দেখো ওর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে কিন্তু তোমাকে আর এভাবে দেখতে পারতাম না। আর সবচেয়ে বড় কথা, সে যদি তোমাকে ছাড়ার জন্যই বিয়ে করার চিন্তা ভাবনা করে থাকে, তাহলে তো বিয়েটাই করতো না। ট্রেনেই যা দরকার সেরে ফেলতো, তার জন্য অযথা এত টাকা নষ্ট করে বিয়ে করার প্রয়োজন পড়েনা। তোমার সাথে তো ওর রিলেশন ও নাই। তুমি চাপ দিচ্ছো জন্য ও বিয়ে করতেছে এমনটাও তো না। মেঘালয় আমাকে বললো, ও বিয়ে করে প্রেম করবে। আর তোমার ফুল্লি দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে সেজন্যই বিয়ে করবে। আরো নাকি অনেক কারণ আছে।”
মিশু চোখ তুলে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনারা সবাই অনেক ভালো।”
– “থ্যাংকস মহারাণী, শুনে কৃতার্থ হলাম। আপনার টেনশন কমেছে?”
– “হ্যা কমেছে।”
এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। সায়ান দরজা খোলার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে আবার মিশুর দিকে ঝুঁকে বললো, “ভয় হওয়াটাই স্বাভাবিক। একজন সেলিব্রেটি দুম করেই বিয়ের প্রপোজাল দিলে আরো বেশি ভয় হওয়ার কথা। তুমি একটু সবকিছু কম বুঝো জন্য ভয়টা কম পাচ্ছো।”
– “আমার কি আরো বেশি ভয় পাওয়া উচিৎ? আপনি তো বললেন আপনার বন্ধু সবার চেয়ে আলাদা?”
– “হুম, তবে ও একদিন অনেক উপড়ে উঠে যাবে এটা বিশ্বাস করি। তখন কি হয় বলা যায় না। সো, সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে নিজের ও একটা জায়গা পাকাপোক্ত করে নেয়া। সেলিব্রেটিদের জন্য ডিভোর্স দেয়া আর বিয়ে করা একটা কমন ব্যাপার।”
– “ও তো এরকম না। ও অনেক ভালো।”
সায়ান ফিসফিস করে বললো, “একটা সময় ওরকম হতেও পারে, কাজেই আমি বলবো তুমি যত দ্রুত পারো নিজের ক্যারিয়ার গুছাও। তুমি এখন ওকে যা বলবা, ও কিন্তু তাই শুনবে। তুমি যা হতে চাও, কিংবা যা করতে চাও ওর হাত ধরে দ্রুত সেখানে ওঠার চেষ্টা করো। দুজনেই সমানতালে ক্যারিয়ারে এগোতে থাকবা, সেটা হবে পৃথিবীর সবচেয়ে হ্যাপিয়েস্ট রিলেশনশিপ গুলার একটা। শুধুমাত্র রান্নাবান্না,প্রেম ভালোবাসা আর আদর সোহাগ নিয়ে পড়ে থেকো না।”
মিশু অবাক হয়ে বললো, “তাহলে? কি করবো?”
– “এখনো বুঝো নি আমার কথা? আচ্ছা আমি পরে সময় নিয়ে বিস্তারিত বুঝাবো তোমাকে। শুধু একটা কথা মাথায় রাখবা, কখনো কোনোসময়েই পুতুপুতু টাইপের হয়ে পড়বা না। যেমন আছো, সবসময় এরকম থাকবা। পুতুপুতু হলেই সমস্যা।”
– “পুতুপুতু আবার কি?”
– “এইযে সারাক্ষণ স্বামীর জন্য বসে থাকা, কান্নাকাটি করা, এটা করবা না। অধিকার খাটাবা, সবসময় আত্মমর্যাদা বোধ জাগ্রত রাখবা। সে যদি কখনো একবার অপমান করে, ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তাকে দ্বিতীয় অপমান করার সুযোগ দিবা না।”
মিশু অবাক হয়ে চেয়ে রইলো সায়ানের দিকে। কিছু কথা বুঝতে পেরেছে আর কিছু কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারেনি। অনেক জ্ঞান দিলো ছেলেটা। নিজের বন্ধুর ব্যাপারে ভরসাও দিলো, আবার ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক ও করে দিলো। এইসব কথাবার্তা মিশুকে বলার কোনো দরকারই ওর ছিলোনা, মিশুকে অনেক সরল মনে হয়েছ তাই একটু ব্যাপার গুলো বলে দিলো ওকে। মেয়েটি এমনিতেই অসহায়, যদি দূর্ভাগ্যবশত কখনো মেঘালয় চলে যায়, তখন খুবই খারাপ অবস্থা হবে মেয়েটার। এটা ভেবেই কথাগুলো বললো সায়ান।
অনেক্ষণ থেকেই কলিং বেল বাজছে। সায়ান একটু এগিয়ে গিয়ে দরজার কাছ থেকে ফিরে এসে আবারো বললো, “আর ডক্টরের সাথে কথা হলে ভালো একটা প্লান করে ফেলবা। শ্বশুরবাড়িতে ওঠার আগে কোনোভাবেই কনসিভ করে ফেলো না যেন।”
সায়ান গিয়ে দরজা খুলে দিলো। মিশু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আশেপাশের মানুষজন,পরিবেশ সবই অদ্ভুত লাগছে ওর কাছে। এত বেশি অদ্ভুত যে, বাস্তবে ঘটছে নাকি স্বপ্নে ঘটছে বুঝতে পারছে না।
মেঘালয়, পূর্ব ও আরাফ এসেছে। ওরা রুমে ঢুকেই সায়ানকে গালি দিতে লাগলো দেরিতে দরজা খোলার জন্য। পূর্ব ফাজলামো করে বললো, “দোস্ত তুমি মেঘালয়ের কচি বউটার সাথে কিছু করতেছিলা না তো?”
এসব নিয়ে ওদের কয়েকজনে মধ্যে বেশ হাসাহাসি হলো। মেঘালয় এসে মিশুর পাশে বসে বললো, “খারাপ লাগছিলো তাইনা?”
– “না, ভালো লাগছিলো।”
– “তাহলে আবার বাইরে যাই?”
মিশু মুখ বাঁকা করে বললো, “আপনার ইচ্ছে। সায়ান ভাইয়াকে রেখে যাবেন তাহলেই হবে।”
মেঘালয় সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো, “বন্ধুরে আমার বউ তোকে একা রেখে আবার বাইরে যেতে বলছে কেন? এবার তো মনেহচ্ছে পূর্ব’র কথাই ঠিক।”
সবাই আবারো হাসাহাসি শুরু করে দিলো। ছেলেরা যে কেন এত দুষ্টু হয় বুঝতে পারেনা মিশু। কয়েকজন ভালো বন্ধু একত্রিত হলেই শুধু অদ্ভুত রকমের ইয়ার্কি আর হাসাহাসি।
আরাফ এগিয়ে এসে একটা ছোট্ট লাগেজ মিশুর দিকে এগিয়ে দিলো। মিশু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি এটা?”
মেঘালয় বললো, “বিয়ে করছি আর টুনিবউটা কনে সাজবে না তা কি করে হয়? দেখো তো পছন্দ হয় কিনা। সামান্য একটু কেনাকাটা করে আনলাম তোমার জন্য। দুটো দিন গেলে শপিং করিয়ে দিবো। মন খারাপ করোনা।”
মিশু একদম অবাক। ও বিস্ময় ভরা চোখে বললো, “আমিতো এইগুলাই আশা করিনি। শপিং করতে যাবেন আমাকে বলেন নি তো।”
– “সারপ্রাইজ”
– “আর কত সারপ্রাইজ দেবেন আমাকে?”
মেঘালয় হাসলো। পূর্ব ও আরাফ হা করে মিশুর দিকে চেয়ে আছে। ওরা এখন অপেক্ষা করছে মিশুর মুগ্ধ মুখটা দেখার জন্য। লাগেজ খুললেই শাড়ি দেখেই মেয়েটা খুশিতে কান্না করে ফেলবে এটা নিশ্চিত। ওর কল্পনার চেয়েও সুন্দর একটা শাড়ি কিনেছে মেঘালয়। আর টুকটাক কনে সাজের অনেক কিছুই কেনা হয়েছে। কিন্তু মিশুর আনন্দের কান্না আর কেউ না দেখুক, সেটাই চায় মেঘালয়। ও লাগেজটা রুমে দিয়ে এসে বললো, “ওখানে সবকিছু আছে। তুমি এখন গিয়ে একটু একা একাই সাজুগুজু করে নাও। আমরা এখানেই আছি। কিছু দরকার হলে ডেকো।”
মিশু মাথাটা নেড়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে লাগেজ খুলতে বসলো।
৩০.
ঘুম ভাংতেই বেশ অবাক হলো রৌদ্রময়ী। এখানে সে কিভাবে এলো! রাতে রাস্তায় হাটছিলো তারপর তো আর কিছুই মনে নেই। চোখ কচলে বিছানার উপর উঠে বসলো ও। রুমের দরজা লাগানো। রুমটা দেখে তো ছেলের রুম মনেহচ্ছে, কাপড়ের তাকে ছেলেদের কাপড় চোপড় রাখা। কিন্তু কে এখানে নিয়ে এলো সেটা বুঝতে পারছে না ও।
বিছানার উপরেই ঠায় বসে রইল। প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে। রাতের কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে ওর। বাবা বোধহয় অনেক কষ্ট পেয়েছেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রোদ। একটু বাদেই দরজা খুলে নিখিল প্রবেশ করলো। ও রুমে এসে বিছানায় রোদকে বসে থাকতে দেখে একটুও অবাক হলোনা। ওর চেহারায় বিরক্তির ছাপ। সারারাত জেগে থাকার দরুন আর কান্না করায় চেহারা খারাপ হয়ে গেছে অনেক।
রোদ অবাক হয় বললো, “নিখিল, তুই!”
– “হুম আমি।”
বলেই দরজা টা লাগিয়ে দিলো।
রোদ একটু চমকালো। দরজা বন্ধ করছে কেন ও! নিখিল আর রোদ একই কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেছিলো। কলেজে মোটামুটি ভালো বন্ধুত্বই ছিলো, কিন্তু ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আর তেমন দেখা হয়নি। আজকে নিখিল কোথ থেকে এলো? আর যশোরে সে কি করছে! এরকম অনেক প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো রোদের মনে।
নিখিল এসে প্রচণ্ড রকম রাগ দেখিয়ে রোদকে বললো, “আমার লাইফটা এরকম করে দিলি ক্যান তুই? তোর বাপ মা তোকে এই শিক্ষা দিছে?”
ওর ভয়ংকর গলা শুনে অবাক হয়ে চেয়ে আছে রোদ। কিছুই বুঝতে পারছে না। নিখিলের লাইফ কি করে দিয়েছে সে সেটা তো বললো না,আর তার সাথে রোদের ই বা কি সম্পর্ক! কেমন অদ্ভুত লাগছে সবকিছু। নিখিল একদম রোদের মুখের কাছে এসে বললো, “ইচ্ছে করছে তোকে খুন করে বাইরে ফেলে দিয়ে আসি”
ওর রাগ দেখে ভয় পেয়ে গেলো রোদ। ভয়ে ভয়ে বললো, “আমি কি করেছি?”
– “দুপুরকে আমি আমার নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসছি। তুই ওরে কেড়ে নিলি ক্যান আমার কাছ থেকে?”
রোদ মাথা নিচু করে ফেললো। দুপুরের যে কারো সাথে সম্পর্ক ছিলো সেটা ও জানতো না। আর নিখিলের সাথেই ওর সম্পর্ক সেটা জানলে তো কখনোই ওকে এই অবস্থায় ফেলে আসতো না।
রোদ জিজ্ঞেস করলো, “দুপুরে সাথে অরণ্য’র বিয়ে হয়ে গেছে? ”
– “হ্যা। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচি বলতো? কেন এরকম করলি তুই?”
রোদ বললো, “তোকে আমি সব বলবো। আর কাউকে বলতে পারবো না,তাই তোকেই বলবো। একটু সময় দে আমাকে প্লিজ। আমি তোকে সব বলবো কথা দিচ্ছি।”
চলবে..

অনুভূতি পর্ব ১৭

0

অনুভূতি
পর্ব ১৭
মিশু মনি
.
২৮.
মিশু জানালায় মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ওর ঠিক সামনা সামনি বসে ওর দিকে চেয়ে আছে মেঘালয়। কি বলা উচিৎ বা কি করা উচিৎ বুঝতে পারছে না।
একটু পর বললো, “আমি কি শার্ট গায়ে দিবো নাকি কেউ তাকাবে?”
মিশু তবুও ঠায় জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে রইলো। মেঘালয় আবারো জিজ্ঞেস করলো, “আমি কি শার্ট পড়বো?”
এবারেও মিশুর কোনো উত্তর নেই। মেঘালয় আবারো একই প্রশ্ন করতেই মিশু ভয়ানক রেগে জবাব দিলো, “সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন? আপনার যা খুশি করুন। আমি কেন তাকাবো আপনার দিকে? আমি আপনার কে? আমার কোনো কথাই আপনাকে রাখতে হবেনা। শার্ট গায়ে দিন পারলে ট্রেনের সিটের গদি খুলে গায়ে দিন।”
এমন রাগত কথাবার্তা শুনে মেঘালয়ের প্রচণ্ড হাসি পেলো। অনেক চেষ্টা করেও হাসি চেপে রাখতে পারলো না। মিশুর দিকে একটু ঝুঁকে এসে বললো, “তারমানে চাইছো আমি এভাবেই থাকি তাই তো?”
মিশু আবারো চেঁচাল, “বললাম না আপনার যা খুশি করুন। গায়ে দিবেন না খুলবেন সেটা আপনার ব্যাপার। পারলে কারো কাছে বস্তা চেয়ে নিয়ে গায়ে দিন।”
– “সিস্টেমে আমাকে খালি গায়ে থাকতে বলছো? যাতে বারবার তাকাতে পারো? আমি কি বুঝিনা তুমি আড়চোখে কতবার তাকাও।”
– “আমার বয়েই গেছে তাকাতে। গায়ে দিন, খুলুন আপনার ইচ্ছা। আমিতো কেউনা। আমার কথা কেন শুনবেন? শুনবেন ই না তো। পারলে গায়ে যেগুলা আছে সেগুলাও খুলে ফেলুন।”
মেঘালয় জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললো, “সিরিয়াসলি?”
মিশু থতমত খেয়ে গেলো। মেঘালয় দুষ্টুমি ভরা চোখে চেয়ে আছে। একবার ওর দিকে তাকিয়েই হাসি পেয়ে গেলো মিশুর। ফিক করে হেসে ফেললো। মেঘালয় ওর হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় চেপে ধরে বললো, “এত পিচ্চি কেন তুমি?”
– “আমি পিচ্চি? পিচ্চিকে বিয়ে করছেন কেন তাহলে?”
– “বিয়ে? ওহ হ্যা, দারুণ কথা মনে করিয়ে দিয়েছো তো। বিয়ে তো করতে হবে।”
কথাটা বলেই মিশুর হাত ছেড়ে দিয়ে পূর্বকে কল দিলো মেঘালয়। দুবার রিং হওয়ার পর পূর্ব রিসিভ করে বললো, “কোন শালা বে এত রাতে?”
– “তুই আমার কোন বোনকে বিয়ে করছিস যে শালা বলছিস?”
পূর্ব ঘুম জড়ানো গলায় বলল, “উম মেঘু শালা, তুই ব্যাটা। এত রাতে ঘুমাস না ক্রে? আমার মতন মিষ্টি কণ্ঠি পোলাদের ডিস্টার্ব করতাছোস হ্রামি।”
– “পূর্ব, একটু উঠে বস। দরকার ছাড়া এত রাতে কল দিইনি।”
– “মাত্র ঘুমালাম ব্যাটা। বল কি হইছে?”
– “আমি বিকেলে বিয়ে করবো।”
পূর্ব একলাফে বিছানার উপর উঠে বসলো। চোখ কচলাতে কচলাতে বললো, “কি বলছিস এসব?”
– “হুম, এমন ভাবে বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট করবি যাতে কোনো পাবলিক টের না পায়। কাজীকে কারো বাসায় নিয়ে এসে বিয়ে পড়ানো যায়?”
পূর্ব একদম হতভম্ব। মেঘালয় এসব বলছে সেটা বিশ্বাস ই হচ্ছেনা ওর। রীতিমত অবাক হওয়ার পালা। মেঘালয় বললো, “পুরো দায়িত্বটা তোকে দিলাম, তুই সায়ান আর আরাফ মিলে যা ব্যবস্থা করার করবি। তোদের তিনজনের বাইরে কোনো কাকপক্ষীও যেন টের না পায়।”
-“সেটা নাহয় করলাম, কিন্তু দুম করেই বিয়ে করছিস কি জন্য? কোনো ঝামেলায় ফেঁসেছিস?”
– “না ভাই, প্রেমে পড়ছি। বিয়ে করে তারপর প্রেম করবো।”
– “আন্টি আংকেল?”
– “আমার বউটা নিতান্তই বাচ্চামেয়ে, বউটা আরেকটু বড় হলে আবার বিয়ে করবো।”
– “বাচ্চা হোক আর কাচ্চাই হোক, বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যে বড় হয়ে যাবে।”
বলেই পূর্ব হেসে উঠলো। মেঘালয় বলল, “ফাজলামি পরে করিস। আমি সিরিয়াস হয়ে যা বলি শোন।”
– “তুই কি আসলেই সিরিয়াস দোস্ত?”
– “হ্যা, মিশুর আর কেউ নাই এই দুনিয়ায়। ওর অসুস্থ মা গ্রামে থাকে, সেই মায়ের ভরণ পোষণের দায়িত্বও মেয়েটার কাঁধে। ওর কাঁধসহ পুরো শরীরের দায়িত্ব এখন আমি নিতে চাচ্ছি। বুঝাতে পারলাম?”
পূর্ব অবাক হয়ে বললো,”মিশু মানে? সুপার শপের মেয়েটা? ওরে একদিন রাত্রে তোর বাইকে দেখছিলাম না?”
– “হ্যা সেই পিচ্চিটা।”
– “সেদিন ই ডাউট হইছিলো, তলে তলে এতদূর? ওই ৩৮ কেজি ওজনের বাচ্চাটার দায়িত্ব নিতে কি লাগে?”
– “আমার বউকে বাচ্চা বলবি না, একমাত্র আমি বলার অধিকার রাখি। তোকে যা বলি, তাই কর।”
– “টেনশন নিস না, ট্রিট হিসেবে সীতাকুণ্ড ট্যুরের সমস্ত খরচ তোর।”
– “সীতাকুণ্ড যাবো না, নতুন বউ নিয়ে সাজেক যাবো। মেঘের দেশে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।”
– “তোর মত হাই লেভেলের মেঘ সাজেকে আছে? তোর পুরো শরীর ঘুরিয়ে আন,তাহলেই হয়ে যাবে।”
মেঘালয় হেসে বললো, “দহন আর বাড়াস না দোস্ত। আমি একা কেবিনে মিশুকে নিয়ে আছি, সে সামনে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।”
– “বাহ! আমার হিংসে হচ্ছে মেঘু শালা। দিলি আমার ঘুম হারাম করে।”
– “সকালে বাসায় গিয়ে আম্মুর কাছে টাকা নিবি,আইডি কার্ড নিবি। আমাদের গাড়িটা নিয়ে সোজা কমলাপুর স্টেশনে চলে আসবি। আম্মুকে যা বলার আমি বলে রাখবো।”
– “বাসরের ব্যবস্থা করবো না?”
– “কোথায় নিবি? যেই হোটেলেই যাবো, পাবলিক চিনবে। রিস্কি হয়ে যায় না?”
– “সায়ানদের বাসায় ম্যানেজ করি। আংকেল ইংল্যান্ড গেছে,আন্টি ট্রেনিং এ গেছে। বাসা একদম ফাঁকা। সারারাত আমরা গান বাজিয়ে পার্টি করবো, ড্রিংকস করে স্বর্গে চলে যাবো, আর তোরা বিছানাকে স্বর্গ বানিয়ে ফেলবি।”
মেঘালয় শব্দ করে হেসে উঠলো। হাসি থামিয়ে বললো, “সায়ানদের বাসাতেই বিয়ের ব্যবস্থা কর। রেজিস্ট্রি, কবুল দুটোই একসাথে।”
মেঘালয় আরো অনেক খুঁটিনাটি বিষয় পূর্বকে বুঝিয়ে বললো। খাবারের ব্যবস্থা করতে বললো, আর কিসব যেন বলে দিলো। মিশু সেসব মন দিয়ে শুনতেও পেলোনা। ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেঘালয়ের উন্মুক্ত বুকের দিকে। ঘন লোমে আবৃত বুকটা যেন পৃথিবীর সমস্ত সুখ নিয়ে বসে আছে, লোমগুলো নাভি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গেছে, ট্রেনের ভিতরে হলুদ আলোয় মেঘালয়ের শরীরটা অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। মুখটায় রাজ্যের মায়া ভর করেছে,গলাটা দেখলেই বুকটা চিনচিন করে উঠে। মেঘালয়ের কপালের উপরে চুলের নিচের অংশটা, এই জায়গাটা এতবেশি সুন্দর লাগে যার তুলনা বোধহয় হয়ই না। একটা ছেলে কিভাবে এত সুন্দর হতে পারে! ভ্রু দুটো ঘন কালো, তার নিচে একজোড়া মায়াবী চোখ। ছেলেদের চোখ ও এত সুন্দর হয়! কত শত মেয়ে মেঘালয়ের এই সৌন্দর্য আর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব দেখে ওর পিছনে লাইন লেগে থাকে। সেই ছেলেটা ওকে আজকেই বিয়ে করে তারপর প্রেম করতে চাইছে! এটা তো স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। সুখে মিশুর মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
মেঘালয় কল কেটে দিয়ে খেয়াল করলো মিশু ওর গলার দিকে তাকিয়ে আছে। ও হেসে বললো, “কি দেখো মায়াবতী?”
মিশু চমকে উঠে বললো, “আপনার ফিগার টা অনেক আকর্ষণীয়।”
– “হা হা হা, হিংসে হয়?”
– “নাহ, সুখ হয়। আপনার কোমর আর হাতের মাসল ও অনেক সুন্দর, বিপজ্জনক রকমের সুন্দর।”
– “সুন্দর আবার বিপজ্জনক ও হয়?”
– “হুম হয়। ভয়ংকর সুন্দর।”
মেঘালয় এসে মিশুর পাশে বসে ওর হাতটা ধরে বললো, “আকর্ষণীয় ফিগার তোমার ও হবে। কয়েকটা ইয়োগা শিখিয়ে দিবো, রেগুলার প্রাক্টিস করবা। খাবারে একটু বৈচিত্রতা আনতে হবে,আর একটু যত্ন। তাহলেই দেখবা মিশুকে দেখলেই ছেলেরা কেমন ফিট খেয়ে পড়ে।”
– “উহু,আমি কাউকে ফিট খাওয়াতে চাইনা। আমার নায়িকা হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। শুধু আপনার পাশে দাঁড়াতে পারলেই হলো। আচ্ছা, আপনার আশেপাশে এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে, আমার চেয়েও সুন্দর অনেক মেয়ে আছে। আপনি কেন আমাকেই ভালোবাসলেন?”
– “সবাই তো আর মিশু না।”
– “মিশুর বুঝি আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে?”
– “কোনো মেয়ে কি ফাজলামো করে হলেও বলবে, শার্ট খুলুন। আগে বুকটা দেখবো তারপর বিয়েতে রাজি হবো?”
বলেই হেসে উঠলো। মিশু লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসলো। মেঘালয় আবারো বললো, “অবশ্য কোনো মেয়ে ঘাড়ে একটা চুম্বন প্রাপ্তির জন্য এত কান্নাকাটি ও করবে না।”
আবারো হেসে উঠলো মেঘালয়। মিশু লজ্জায় কুকড়ে যাওয়ার মত অবস্থা হলো। মাথা নিচু করে চেয়ে রইল মেঘালয়ের পায়ের পাতার দিকে। ছেলেটার পায়ের আঙুল গুলোও নজরকাড়া, বিয়ের পর রাতে যখন মেঘালয় ঘুমাবে, মিশু সারারাত জেগে বসে বসে ওর দিকে তাকিয়ে থাকবে। কাউকে হা করে দেখার মাঝেও যে এত সুখ বিরাজ করে এটা ওর জানা ছিলো না। যত দেখে, তত দেখতে ইচ্ছে করে।
মিশু জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা আপনি বারবার বলছিলেন যেন পাবলিক টের না পায়, কেন বলছিলেন?”
মেঘালয় বললো, “পাগলী, আমার ক্যারিয়ার মাত্র শুরু হচ্ছে। এখনই যে পরিমাণ লোক আমাকে চেনে, আমি কাজি অফিসে বিয়ে করছি এটা একজন পাবলিক জানলেই হয়েছে। যদি কোনোভাবে প্রকাশ হয়, ক্যারিয়ারের বারোটা বেজে যাবে। কিন্তু আমি এটা এখন আমার ফ্যামিলিকেও জানাতে চাইছি না।”
মিশু জিজ্ঞেস করলো,”আমি শ্বশুরবাড়ি যাবো না?”
মেঘালয় বললো, “যাবা। কিন্তু বিয়ের কথাটা এখনি জানাবো না বাসায়। আগে ক্যারিয়ারটা দাঁড়িয়ে যাক, তোমার ক্যারিয়ার গুছিয়ে দেই,বাবার বিজনেসে হাত লাগাই, তারপর ধুমধাম করে সবাইকে জানিয়ে আমাদের বিয়ে হবে। প্রেস আসবে, টিভিতে দেখাবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখাবে।”
মিশু মেঘালয়ের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, “আমার ভয় করছে। আপনি খুব বড় হয়ে গেলে আমাকে ছেড়ে চলে যান যদি?”
– “ছেড়ে কোথায় চলে যাবো? এই ভয়টা দূর করার জন্যই তো আইনের বাঁধনে বেঁধে ফেলছি। যাতে তোমার হারানোর ভয়টা কক্ষনো না হয়। ঘুড়ির নাটাইটা তোমার হাতে ধরা থাকবে, যখনি চলে যেতে চাইবো, সুতো ধরে টান দিবা।”
– “যদি সুতো ছিঁড়ে চলে যান?”
– “আমি শুধু তোমার আকাশেই উড়বো, সুতো ছিড়ে গেলেও তোমার আকাশের ই কোথাও না কোথাও থাকবো ঠিকই। জমিনে পড়লে তোমার বুকের জমিনেই পড়বো।”
মিশু মেঘালয়কে জাপটে ধরে বললো, “আমার ভয় করছে। খুব ভয় করছে।”
মেঘালয় হাতের বন্ধনে শক্ত করে বেঁধে ফেলে বললো, “সব ভয় দূর করে দিবো, তোমার শরীর থেকে সমস্ত বিষ শুষে নিবো।”
– “কিভাবে?”
মেঘালয় আবেগ মিশ্রিত কণ্ঠে ফিসফিস করে বললো, “যেটা আরেকবার করার জন্য তখন কান্নাকাটি করলে, ওরচেয়ে আরো গভীরভাবে।”
মিশু শিউড়ে উঠে ওর বুকে দুটো কিল বসিয়ে বললো, “খুব খারাপ একটা, আপনি খুব খুব খারাপ।”
– “সব ছেলেই বউয়ের কাছে খারাপ।”
মিশু আবেশে চোখ বুজে রইলো মেঘালয়ের উন্মুক্ত বুকে। ওর রোমশ বুকের ঘ্রাণ নিতে নিতে সুখে ভেসে যাচ্ছিলো একদম।
চলবে..

অনুভূতি পর্ব ১৬

0

অনুভূতি
পর্ব ১৬
মিশু মনি
.
২৭.
মিশু মেঘালয়ের বুকে হাত রাখতেই মেঘালয়ের মুখ থেকে যন্ত্রণার আওয়াজ বের হলো। মিশু অবাক হয়ে খেয়াল করলো, মেঘের বুকে অজস্র আচড়ের দাগ। গলায় তাকিয়ে দেখে একদম হিংস্র কিছু আচড়, নখ বসে গেছে। লাল হয়ে ফুলে গেছে কয়েক জায়গায়। ও আঁৎকে উঠলো।
মেঘালয় বললো,”দেখেছো কি অবস্থা করে ফেলেছো?”
মিশু মুখটা করুণ করে বললো,”এই অবস্থা আমি করেছি?”
– “তাছাড়া? কি পরিমাণ অত্যাচার চালাচ্ছিলে আমার বুকের উপর। দুহাত দিয়ে একদম। আচড়াতে আচড়াতে অবস্থা খারাপ করে দিয়েছো।”
আচড় দেয়া জায়গাগুলোতে আলতো করে স্পর্শ করলো মিশু। মেঘালয় ব্যথা পেয়ে শব্দ করে উঠছে। ফর্সা গলা আর বুকের এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখে খারাপ লাগছে মিশুর।
মেঘালয় বললো,”আগামী এক সপ্তাহ এই দাগ থাকবে মনেহচ্ছে।”
– “সেকি! এত গভীর ক্ষত করে ফেলেছি আমি?”
– “হুম ম্যাম। চিন্তা করছি আমি বাইরে বের হবো কিভাবে? মেয়ে হলে নাহয় হিজাব বাঁধতাম। এই অবস্থা দেখলে লোকজন কি যে ভাব্বে! ”
মিশু চিন্তিত হয়ে বললো,”লোকজন অনেক আজেবাজে জিনিস ভাব্বে।”
– “তা তো ভাব্বেই। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবো নতুন বিয়ে করছি ভাই। সেজন্য বউ এ দশা করছে।”
– “নতুন বিয়ে করলে বউ এ দশা কেন করবে?”
– “জানো না কেন করবে?”
– “না তো। কেন?”
মেঘালয় হেসে বললো,”ওটা একটা শাস্ত্র। বাসর রাতে বরের গলা,বুক,কাঁধে বড়বড় নখ দিয়ে আচড় দিয়ে দাগ করে দিতে হয়।”
মিশু অবাক হয়ে বললো, “কি বলছেন এসব? আমিতো এমন শাস্ত্র কক্ষনো শুনিনি। বউরা কেন এরকম হিংস্র কাজ করবে? আমি বাবা পারবো না। আচ্ছা, আমাকে ও কি আবারো এভাবে আচড় দিতে হবে?”
মিশুর অবুঝের মতন কথাবার্তা দেখে দারুণ মজা লাগছে মেঘালয়ের। ও মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, “হুম দিতে হবে।”
– “তোমার ব্যথা লাগবে না?”
– “নাহ লাগবে না। লাগলেও কিছু করার নাই।”
– “আমি পারবো না। তখন তো অজান্তেই এরকম করে আচড় দিয়ে ফেলেছিলাম। সিরিয়াসলি আমি জেনেশুনে এসব করতে পারবো না।”
মেঘালয়ের আরো হাসি পেয়ে গেলো। ও হাসি চেপে রেখে বললো,”তাহলে কামড় দিয়ে কাজ চালিয়ে দিবা। কামড়ে দাগ বসালেই হলো।”
– “আমি কি কুত্তা? মানুষ কি মানুষ কে কামড়ায়?”
মেঘালয় হেসে বললো,”তুমি কুত্তা না, বউরা তো কামড়ায় ই। কিছু করার নেই। বিয়ের শাস্ত্রে এটাও আছে। এটা তো মানতেই হবে তাইনা?”
– “এসব আজেবাজে শাস্ত্র কে বানিয়েছে বলুন তো? যত্তসব বাজে বাজে কথা। আমি আচড়াতেও পারবো না,কামড়াতেও পারবো না।”
– “তাহলে তো বিয়ে পরিপূর্ণ হবেনা ম্যাম। এটা যে শাস্ত্র।”
– “কি মুছিবত! দাগ করতেই হবে?”
– “হুম হবে। নিয়ম পালন করতে হবেনা?”
মিশু একটু ভেবে বললো,”তোমার ব্যথা লাগবে না?”
মিশুর করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে এবার সত্যিই বড্ড হাসি পেলো মেঘালয়ের। কিছুতেই হাসি চেপে রাখতে পারলো না। শব্দ করে হেসে ফেললো। মিশু জিজ্ঞেস করলো, “হাসছেন কেন আপনি? আমি কি হাসার মতন কিছু বলেছি? ”
– “একদম ই নাহ। তুমি একটা কাজ করতে পারো। তাহলে নিয়ম ও পালন হয়ে যাবে, আর আমি ব্যথাও পাবো না।”
মিশু মেঘালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি সেটা শুনি? আমি সেটাই করবো তাহলে।”
মেঘালয় কণ্ঠে একটু আবেগ ঢেলে বললো, “ঠোঁট দিয়ে কামড় দিতে পারো।”
কথাটা শোনামাত্র এক পলকেই মিশুর চেহারা নীল বর্ণ ধারণ করলো লজ্জায়। এতবেশি লজ্জা পেলো যে, না পারছে দাঁড়িয়ে থাকতে,না পারছে বসে পড়তে। লজ্জায় চোখ মেলে থাকতেও পারছে না। ওর এমন লাজুক চেহারাটা মেঘালয় হা হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছে। মিশু মুহুর্তেই পিছন ফিরে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো। মেঘালয় উঠে পিছন দিক থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে মিশুর কাঁধের উপর মাথা রাখলো। আবেশে চোখের পাতা ঘনঘন কাঁপছে মিশুর। অন্যরকম একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে ও।
মেঘালয় ওর লাল মসৃণ গালের সাথে নিজের খোঁচা খোঁচা দাড়ি ঘষে দিলো। সমস্ত শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো মিশুর। এ কেমন অনুভূতি! এমন অনুভূতি কক্ষনো হয়নি ওর। মেঘালয় আলতো করে মিশুর কাঁধ থেকে এক গোছা চুল সরিয়ে ওর ঘাড়ে খুব নিবিড় ভাবে দুই ঠোঁট দিয়ে চাপ দিলো। জিভটা চামড়া স্পর্শ করতেই দারুণ ভাবে শিহরিত হয়ে উঠলো মিশু। দ্রুত নিশ্বাস পড়তে লাগলো। সুখের আবেশে চোখে জল এসে গেছে। কোনো নড়াচড়া করতে পারলো না ও। মেঘালয় আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। একটু পিছিয়ে আসতেই মিশু ঢলে পড়ে যাচ্ছিলো। মেঘালয় মিশুকে টেনে এনে নিজের কোলের উপর বসিয়ে দিয়ে সিটে হেলান দিলো। মিশু ওর বুকে মাথা লুকিয়ে চুপটি মেরে রইলো।
এভাবে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ পর চোখ বুজেই বিড়বিড় করে মিশু বললো,”এটাকে কি চুমু বলে?”
– “হুম।”
মিশু কেঁপে উঠলো। আবারো বিড়বিড় করে বললো,”আমার না খুব ভালো লেগেছে। খুউউব ভালো লেগেছে। আমি আমার জীবনে কতবার কতরকম গাড়িতে উঠেছি। কক্ষনো এরকম আরাম লাগেনি।”
মেঘালয় ফিক করে হেসে বললো,”গাড়িতে ওঠা আর চুমু বুঝি এক হলো?”
– “কেন হবেনা? না মানে কখনো এত ভালো লাগেনি কোনোকিছু। সেজন্য বললাম। আর কোনো উদাহরণ পাচ্ছিলাম না ত।”
মেঘালয় মিশুর মাথাটা বুকে চেপে ধরে বললো,”পাগলী টা। এত অবুঝ কেন তুমি? আমি ভেবেছিলাম তুমি খুব ম্যাচিউরড। কিন্তু এতটা ইনোসেন্ট সেটা সত্যিই কল্পনা করিনি।”
– “কেন? আমি কি করেছি?”
– “নাহ, কিছু করোনি। অবুঝ মেয়েটা। খুকুমণি বললেও কম বলা হবে।”
মিশু কিছু বললো না। অনেক্ষণ চুপ করে থেকে মাথা তুলে তাকালো মেঘের দিকে।মেঘালয়ের চোখ একদম লাল হয়ে গেছে। মিশু অবাক হয়ে বললো,”আপনার চোখ লাল কেন?”
মিশুর চুলে হাত বুলিয়ে দিলো মেঘালয়। কিভাবে মেয়েটাকে বুঝাবে ওর ভেতরে কি তুমুল ঝড় শুরু হয়ে গেছে। মেয়েটা যে কিচ্ছু বুঝেনা। একটা সেকেন্ড ও স্থির হয়ে থাকতে পারছে না মেঘ, প্রচণ্ড ছটফটানি কাজ করছে ভেতরে। মিশুকে কিভাবে বুঝাবে সেটা? একটা ছোট নিশ্বাস ফেলে মেঘালয় বললো, “রাতে না ঘুমালে আমার চোখ লাল হয়ে যায়।”
মিশু মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, “ওহ আচ্ছা। এই আমার না কেমন কেমন লাগছে।”
হাসলো মেঘালয়। তার নিজের ই তো কেমন কেমন লাগছে। মিশুর কেমন লাগছে সেটা অনুধাবন করতে ওর কোনোই সমস্যা হলোনা। তবুও জিজ্ঞেস করলো, “কেমন কেমন?”
– “একটা কেমন কেমন, দুইটা কেমন কেমন, অনেক গুলা কেমন কেমন।”
মিশুর বাচ্চাদের মতন কথা বলার ভঙ্গি দেখে হেসে ফেললো মেঘালয়। সুখের মুহুর্ত গুলোতে মেয়েটার বয়স যেন হুট করেই অনেক কমে যায়। খুব কিউট লাগে তখন। গালটা টেনে দিতে ইচ্ছে করে।
মেঘালয় জিজ্ঞেস করলো, “সেই কেমন গুলা কেমন গো মিশু? একটু কওনা শুনি?”
– “আমি নিজেই তো বুঝতে পারছি না সেই কেমন গুলা কেমন। তবে ইচ্ছে করছে।”
– “কি ইচ্ছে করছে?”
মিশু ওর বুকে মুখটা আরো একটু লুকিয়ে বিড়বিড় করে বললো, “আপনি একটু আগে যেটা করলেন, আরেকবার সেটা করুন।”
শিউরে উঠলো মেঘালয়। কি বলবে মিশুকে? নিজেকে কোনোমতে সামলে নিয়ে বললো, “নারে পাগলী। ওটা করা যাবেনা আর।”
– “এটাও কি শাস্ত্রে আছে?”
– “হুম আছে। বিয়ের আগে এসব করতে হয়না রে।”
– “তাহলে আপনি কেন করলেন?”
থতমত খেয়ে গেলো মেঘালয়। এর উত্তর কি দেবে সে? আবেগের বশে অজান্তেই করে ফেলেছে। সেটা বললে তো মেয়েটা বুঝবে না। ও বললো, “আমিতো জানি রাত পোহালেই এই মেয়েটাকে আমি বিয়ে করে নিচ্ছি। সেজন্যই করেছি।”
-” আপনি আবার জানুন রাত পোহালেই আমাকে বিয়ে করে নিচ্ছেন। তারপর আবার করুন।”
মিশুর মাঝে এখন চরম আকারের ঘোর কাজ করছে। তার উপর একটু ঘুম ঘুম ভাব ও চলে এসেছে ওর। এমন ভাবে বলছে যে ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে বুকের সাথে পিষে ফেলি। ওর বুকের ভেতর ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। ও নিজেও জানেনা এভাবে বলে কিভাবে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে মেঘালয়কে। এতদিন শুধু মনের আকর্ষণ ছিলো, এখন দৈহিক আকর্ষণ অনুভূত হচ্ছে। ভেবেছিলো আরো কয়েকদিন সময় দেবে মিশুকে যাতে ও মেঘালয়কে বুঝতে পারে। কিন্তু এখন আর সে ইচ্ছে নেই, ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ওকে বিয়ে করে নিয়ে স্বর্গসুখের অন্যতম একটা স্তরে ওকে ঘুরিয়ে আনতে। অচেনা একটা পাগলামিতে পেয়েছে দুজনকে।
মিশু বললো, “কি ভাবছো? করবে না?”
– “উহু মিশু, এটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও।”
– “কেন? আপনার বুঝি ভালো লাগেনি?”
– “ব্যাপার টা ভালো লাগা খারাপ লাগার নয় রে। ব্যাপার টা অন্যকিছু।”
– “কি ব্যাপার? আমার গা ঘেমে গেছে বলে?”
– “কি বিপদে পড়লাম রে বাপ! মেয়েটাকে একটু বুঝ দাও কেউ। মিশু, তুমি কি দয়া করে আমার কোল থেকে উঠে সামনের সিটে গিয়ে বসবা? প্লিজ?”
– “না বসবো না। এভাবে বললে আমি কান্না করবো। আমি চেয়েছি বলে আপনি আমাকে দূরে গিয়ে বসতে বলবেন কেন? আমি কোলেই বসে থাকবো, আর আপনি আবারো ঠিক ওইভাবে ওইভাবেই একবার জিভ দিয়ে ছুঁয়ে দিবেন।”
মেঘালয় মিশুকে ছেড়ে দিয়ে সিটে হেলান দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এই মেয়েটা একেবারেই খুন করে ফেলেছে। এতটাও ইনোসেন্ট স্বভাবের মেয়েও জগতে আছে সেটা ওর জানা ছিলোনা। অনায়াসে এভাবে বললে কি মাথা ঠিক রাখা যায়?
– “মিশু, তোমার কি লজ্জা লাগেনা এসব বলতে?”
– “এখন লাগছে না। আপনি তো বললেন রাত পোহালেই আমাকে বিয়ে করে নেবেন। আর একটা মেয়ের সবচেয়ে আপন হচ্ছে তার বর।বরকেই তো বলবো তাইনা?”
– “এটা বুঝো আর আমার ব্যাপার টা বুঝো না? ন্যাকামি করো?”
– “আরে বাবা সত্যি বুঝিনি। বুঝলে কি আর বারবার বলি বলো? কোথায় সমস্যা একটু বলবে?”
– “আমি নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারবো না রে। টিকতে পারবো না,বুঝো না কেন?”
– “কেন পারবা না?”
মেঘালয় মাথাটা তুলে মিশুর দিকে তাকিয়ে বলল, “ধরো তুমি একজন রাইটার। তুমি আমাদের এই জার্নিটা নিয়ে একটা গল্প লিখবা। সেই গল্পটা পড়ে দুনিয়ার সমস্ত পাঠক বুঝে যাবে আমার মধ্যে কি হয়ে যাচ্ছে। একটা দুইমাসের বাচ্চাও এই গল্পটা পড়লে বুঝবে মেঘের ভেতরে কেমন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আর তুমি বুঝতে পারছো না। আজব না?”
মিশু হেসে বললো, “তাহলে আমি লিখালিখি শুরু করে দিই? পাঠকদেরকে জিজ্ঞেস করে করে জেনে নিবো তোমার ভেতরে কি চলছে? মেঘের ভেতরে বিদ্যুৎ চমকানোই স্বাভাবিক। আর তারপর সেই মেঘ থেকে জলকণা বৃষ্টি হয়ে ঝড়বে আমার গায়। ঠিক না?”
মেঘালয় বললো, “তোমাকে আর সাহিত্য চর্চা করতে হবেনা। নিজেও পাগল হইছো, আমাকে ও বানাইছো। এরপর পাঠকদেরকেও বানাবা। পাজি মেয়ে কোথাকার, দয়া করে উঠে গিয়ে ওই কোণায় জানালার সিটে বসে থাকো। আর একটাও কথা বলবা না। কালকে বিয়েটা হতে দাও, তারপর দেখে নিবো কত বৃষ্টিতে ভেজার শখ। অধিকারের বৃষ্টি দেখেছিলে কখনো?”
মিশু আর কিছু বললো না। মুখটা গোমরা করে উঠে গিয়ে সামনের সিটে জানালা দিয়ে মাথা বের করে বাইরে তাকিয়ে রইলো। মেঘালয়ের খুব খারাপ লাগছে মিশুর জন্য। ও জানে মিশু এখন বাইরে তাকিয়ে খুব কান্না করছে। কাঁদুক, তবু ওর কাছে যাওয়া যাবেনা। বিপজ্জনক মেয়ে একটা।
একবার ওর দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে বসে রইল মেঘালয়। মিশুকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে ভেবে নিজের ই কান্না করতে ইচ্ছে করছে।
চলবে..

অনুভূতি পর্ব ১৫

0

অনুভূতি
পর্ব ১৫
মিশু মনি
.
২৫.
-“বিয়ে করবা আমায়?”
নিঃসংকোচ প্রস্তাব! কোনো কথাবার্তা ছাড়াই কেউ এভাবে বিয়ে করতে বললে সত্যিই আশ্চর্য হতেই হয়। তার উপর মেঘালয়ের মত একজন মানুষ এ কথা বলছে এটাও অবিশ্বাস্য। ঢোক গিলে মিশু তাকিয়ে রইলো ওর দিকে।
মেঘালয় খুব নরম গলায় বললো, “আমাকে বিশ্বাস করতে পারো?”
– “হুম পারি। কিন্তু আপনি কেন এরকম প্রস্তাব দিচ্ছেন আমি বুঝতে পারছি না।”
মেঘালয় একটু নড়ে বসলো। তারপর মিশুর মুখোমুখি হয়ে বসে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, “আমাকে কতদিন ধরে চেনো তুমি? প্রথম দেখা কোথায় হয়েছিলো?”
– “রাস্তায়, বৃষ্টির দিনে। আপনার রেইনকোট চেয়ে নিয়েছিলাম আমি।”
মেঘালয় বললো, “এটাই পয়েন্ট। তুমি যখন আচমকা এসে বললে, ‘আপনার রেইনকোট টা একটু দেবেন? আমার বৃষ্টি সহ্য হয়না’ কথাটা চুড়ির মিষ্টি রিনিঝিনির মত এখনো কানে বাজে আমার। আমি একদম অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়েছিলাম তোমার দিকে। তুমি ব্যস্ত হয়ে বারবার চাইলে, আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তোমার আচরণে। বিশ্বাস করো, সেদিন ই অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করতে শুরু করে ছিলো। তারপর তোমার শপে গিয়ে যখন তোমাকে কষ্ট করে ডিউটি করতে দেখি,বুকের ভেতরে কেমন কষ্ট অনুভূত হচ্ছিলো। তোমার জন্য কিছু করার ইচ্ছে অনুভব করছিলাম।”
মিশু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। বললো, “তারপর?”
মেঘালয় বললো, “আমি সেদিন রাতেই অনেক জায়গায় ফোন দিয়ে কথা বলে রেখেছিলাম তোমার চাকরীর জন্য। মাঝরাতে তোমাকে রাস্তায় ছুটতে দেখে গিয়ে যখন বাইকে তুললাম, কেবলই মনে হচ্ছিলো তোমার জন্য একমাত্র ভরসার হাতটা হয়ত আমার ই। তখন বুঝিনি ধীরেধীরে তোমার প্রতি একটু একটু করে মায়া বাড়ছে আমার। এই মায়াটার নামই হয়ত ভালোবাসা।”
মিশু মুগ্ধ হয়ে শুনছে। ভালো লাগছে ওর। মেঘালয় সেইদিন থেকেই ওকে নিয়ে এত ভাবে ব্যাপার টা ভালো লাগার মত। কিন্তু কিছু না ভেবেই প্রশ্ন করে বসলো, “আপনি দেখতে অনেক সুন্দর, আমার মত কুৎসিত একটা মেয়ের মাঝে কি পেলেন শুনি?”
মেঘালয় মিশুর দিকে আপাদমস্তক তাকিয়ে হাসলো। তারপর বললো, “তুমি মোটেও কুৎসিত নও। তোমার দেহের গাঁথুনি একদম আকর্ষণীয়,যদি ঠিকঠাক কেয়ার করতে পারো তবে আর দু তিন বছর পর তোমার চেহারা দেখলে যে কোনো পুরুষের রাতের ঘুম হারাম হবে।”
মিশু লজ্জায় নীল হয়ে গেলো একেবারে। এসব আবার কেমন কথা! লজ্জায় মাথাই তুলতে পারছে না। মাথা নিচু করেই বললো, “আমার দেহের গাঁথুনি মানে! আপনি এসবের দিকেও নজর দেন?”
– “উহু, রাগ করোনা। তুমি নিজেকে কুৎসিত বললা সে জন্যই বললাম। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, যদি টানা ছয় মাস আসন করো, তুমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে ছেলেরা একবার তাকাতে বাধ্য।”
– “বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। ছি, এসব… ”
মিশু লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে একদম। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো ও। ওর লজ্জানত মুখের দিকে তাকিয়ে মেঘালয় বললো, “এটা গেলো দৈহিক সৌন্দর্য, আর মানসিক সৌন্দর্যের কথা বলতে গেলে বলবো, তোমার রুচিবোধ অনেক উন্নতমানের। আর তোমার মাঝে একটা ইনোসেন্ট ভাব আছে, তুমি নিজের ইচ্ছেকে সবসময় প্রায়োরিটি দাও। কাজের পরিণতি নিয়ে ভাবো না। ব্যাপার টা ভালো লাগে আমার।”
মিশু জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো, “আমাকে নিয়ে এতকিছু গবেষণা করা হয়ে গেছে আপনার?”
মেঘালয় মধুর ভঙ্গিতে হাসলো। এরকম করে মিশুকে বলতে পেরেছে দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছে। সাধারণত এরকম কথাবার্তা কাউকে বলে না ও, সবার সাথে সবকিছু শেয়ার করতেও পারেনা। সত্যিই মিশু অনেক আপন হয়ে গেছে, যার দরুন অনায়াসে ওকে এসব বলা যাচ্ছে।
মেঘালয় বললো, “কি হলো মিশু? কিছু বলবে না?”
মিশু ওর দিকে মুখ ফিরিয়ে বললো, “যা যা বললেন সব সত্যিই?”
– “হুম সত্যি। আমি কিছুতেই আর তোমাকে দূরে রাখতে পারছি না, আমরা বিয়ে করে ফেলবো।”
– “সরাসরি বিয়ে?”
– “হুম বিয়ে। তারপর চুটিয়ে প্রেম করবো।”
মিশু উঠে দাঁড়িয়ে এসে মেঘালয়ের সামনে দাঁড়ালো। তারপর ওর চোখের দিকে চোখ রেখে বললো, “আপনি কি সিরিয়াস?”
– “হুম একদম সিরিয়াস। আমি এইমাত্র সিদ্ধান্ত নিলাম আমি কাল পরশুর মধ্যেই তোমাকে বিয়ে করবো।”
– “কিহ! এত দ্রুত? কিভাবে সম্ভব এটা?”
চোখ দুটো স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বড় আকার ধারণ করেছে মিশুর। সবই কেমন স্বপ্নের মত লাগছে। মেঘালয় ঠিক আছে তো?
মেঘ বললো, “তুমি করতে পারবা কিনা সেটা বলো?”
– “আচমকা বিয়ের কথা শুনে আমার মুখ এমনিতেই হা হয়ে গেছে,তার উপর কাল পরশুর মধ্যে বিয়ে হবে শুনে আর গলা দিয়ে শব্দই বের হচ্ছে না।”
মেঘালয় হেসে বললো, “শুধুমাত্র কথার উপর নির্ভর করে আজকাল বিশ্বাস করা যায়না। এজন্যই বিয়ে করে ফেললে তোমার তো আর ভয় থাকবে না। বিয়ে করে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে তোমাকে রেখে দিবো, সেখানে থেকে পড়াশোনা করবা। সময় হলে বাসায় জানাবো আমি।”
মিশুর মাথা ঘুরছে। এই ছেলেটা এলিয়েনের মতন দুম করে নেমে এসে এসব কি বলছে? আকাশ থেকে নেমে আসেনি তো?
মেঘালয় উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে। মিশু একটু ভেবে বেশ জোড়ালো ভঙ্গিতে জবাব দিলো, “এত তাড়াতাড়ি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়াটা কি ঠিক? দুজন দুজনকে জানার অনেক বাকি, একসাথে বাকি জীবন থাকতে পারবো কিনা সবই তো বুঝতে হবে। তারপর না হয় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। এজন্য অনেক সময় দরকার।”
মেঘালয় একটু নিশ্চুপ হয়ে ভাবলো। মিশু যা বলেছে সবই সত্য। কিন্তু মিশুর জন্য যেটুকু জানে,এর বেশি কিছু জানার প্রয়োজন মনে করছে না ও। মিশুকে এভাবেই ভালোবাসতে, বিয়ে করতে আর সারাজীবন আগলে রাখতে ওর কোনো সমস্যাই হবেনা। কিন্তু মেঘালয়ের সম্পর্কে জানতে মিশুর হয়ত একটু সময়ের প্রয়োজন।
ও বললো, “তুমি এখন কি চাইছো? সময় নিতে?”
মিশু দুম করেই বললো, “আমার খুব বিয়ে নামক পাগলামি টা করতে ইচ্ছে করছে।”
– “সিরিয়াসলি?”
– “হুম, আমার তো আর কেউ নেই। একটা ছোট্ট ঘর,আর ঘরভর্তি ভালোবাসা থাকলে ব্যাপার টা মন্দ হয়না।”
বলেই হাসলো। মেঘালয় ওর গাল টেনে দিয়ে বললো, “ওরে আমার দুষ্টু টা রে। বিয়ে করার এত ইচ্ছে? অনেক যন্ত্রণা সইতে হবে কিন্তু।”
– “কি যন্ত্রণা?”
– “প্রচণ্ড জ্বালাবো, একটা রাতও ঘুমাতে দিবো না।”
– “সারা রাত কি রাস্তায় হাঁটবেন?”
– “হ্যা, হাঁটবো, ঘুরবো, আর বিয়ের পর বর কনেরা যা যা করে আর কি।”
– “কি কি করে?”
মিশু হা করে মেঘালয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলো। পরক্ষণেই আবার নিজেই লজ্জায় কুকড়ে যেতে লাগলো। অনেক্ষণ লজ্জানত হয়ে মাথা নিচু করে মেঘালয়ের পায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। খুব সুন্দর পা দুটো ওর। তারপর হঠাৎ মুখ টিপে বললো, “একটা জিনিস দেখবো তারপর বিয়েতে মত দিবো।”
মেঘালয় ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “কি জিনিস?”
– “শার্ট খুলুন।”
– “মানে!”
চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো মেঘালয়ের। শার্ট খুলবো মানে কি?
মিশু নির্লজ্জের মত বললো, “আপনার রোমশ বুকটা একবার দেখবো। ওখানে বাস করতে পারবো কিনা না দেখে কিভাবে বিয়ে করি?”
মেঘালয় হতভম্ব! এ কেমন অত্যাচার? আজ অব্দি জগতে কোনো মেয়ে পাত্রের জামা খুলে বডি দেখতে চেয়েছে নাকি? আজব মাইরি।
ও আস্তে আস্তে সব বোতাম খুলে শার্টটা খুলে ফেললো। একান্তই নির্জনে এভাবে মেঘালয়ের প্রশস্ত বুকটা দেখতে পেয়ে লজ্জায় গাল লাল হতে শুরু করেছে মিশুর। অন্যদিকে একটা ভালোলাগায় বিভোর হয়ে রইলো ও। ফর্সা বুকে ঘন ঘন লোম দেখে একবার নাক ডুবাতে ইচ্ছে করছে। আর গলার দিকে এতবেশি সুন্দর যা দেখলে শরীরে শিহরণ বয়ে যায়। একটা ছেলের গলা এত সুন্দর হতে পারে সেটা কল্পনাও করতে পারেনি মিশু। মেঘালয়ের কাঁধ, গলা সত্যিই ভয়ংকর সুন্দর! একদম খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। মিশুর ইচ্ছে করছে ওর ভেজা পা একবার দেখতে। কিন্তু সেটা সবচেয়ে নির্লজ্জ ব্যাপার হয়ে যাবে, থাক ওসব বলা যাবেনা।
মেঘালয় জিজ্ঞেস করলো, “আরো কিছু দেখাবো?”
মিশু জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললো, “না না। আমি আর কিছু দেখবো না।”
মেঘালয় শব্দ করে হেসে উঠলো। কি পরিমাণ ইনোসেন্ট হলে এভাবে শার্ট খুলতে বলা যায়? মেঘালয়ের জায়গায় অন্য কোনো ছেলে থাকলে আজকে মিশুর এই হাসিমাখা সুন্দর মুখটা আর থাকতো না। কয়জন ছেলেই বা আজকাল বিশ্বাসযোগ্য আছে? মেঘালয় নিজেই কন্ট্রোল হারাতে বসেছিলো।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ও। যা হয়েছে ভেবে আর কি হবে, বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে ফেলতে হবে। বাচ্চাটাকে বুকে চেপে ধরতে না পারলে শান্তি হচ্ছেনা কিছুতেই।
মিশু জিজ্ঞেস করলো, “কি ভাবছেন?”
– “এখানে নাক ডুবিয়ে শরীরের গন্ধ নিবা না?”
মেঘালয় নিজের বুকের দিকে দেখিয়ে এ কথা বলেছে। মিশুর পুরো শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। ছেলেটাকে যতটা ভালো মনেহয়,ততটা নয়। দুষ্টুও আছে। ইচ্ছেটা হচ্ছিলো ঠিকই, কিন্তু ইচ্ছে হলেই তো আর করা যায়না। ভাবতে ভাবতে মিশু এগিয়ে এসে সত্যিই ওর বুকে মাথা রাখলো। মানব মন বড়ই অদ্ভুত, মেয়েদের মন আরো বেশি অদ্ভুত। মেয়েরা যা ভাবে,তা করেনা। আর যা করে, তা ভাবেনা।
২৬.
রৌদ্রময়ী কোথায় যাবে নিজের ও অজানা। কোনো গন্তব্য নেই ওর। কিন্তু এরকম বিয়ের সাজে কতক্ষণ ই বা থাকা যায়? লোকজন তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। মাত্র কিছু টাকা আছে, সেটা নিয়ে কোনো ড্রেস কিনে নষ্ট করে ফেলা যাবেনা। যেকোনো মুহুর্তে টাকাটা লাগতে পারে।
এসব ভাবছে আর হাঁটছে রোদ। শরীর টা টলছে ওর। একদিকে খুব খিদে পেয়েছে,অন্যদিকে একটানা কয়েক ঘন্টা ধরে কাঁদছে। আর শরীর চলছে না, কিছু খেয়ে নেয়া দরকার। কিন্তু খাওয়ার রুচি টুকুও নেই। যশোর স্টেশন থেকে বেড়িয়ে এদিক সেদিক ঘুরছে ও। মাথাটা কেমন যেন ঘুরে উঠলো। ধপ করে পড়ে গেলো মাটিতে।
নিখিল এখানে বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছিলো। দুপুরের হঠাৎ বিয়ের কথা শুনে সারারাত বাইরে বাইরে ঘুরছিলো। শেষরাতে ও ফুটপাত ধরে হাঁটছে আর সিগারেট টানছে। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। বুক ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। এমন সময় রাস্তায় একটা কনের সাজে পড়ে থাকা মেয়েকে দেখে থমকে দাঁড়ালো সে। এখনো ভোর হতে অনেক বাকি। এত রাতে রাস্তায় একটা মেয়ে এভাবে পড়ে আছে কেন! তাও আবার বিয়ের সাজে।
ছুটে গিয়ে মেয়েটিকে সোজা করে দিতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো নিখিলের। এটা তো রোদ! রোদ এখানে এভাবে পড়ে আছে? এই মেয়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে নিখিল তার প্রিয়তমাকে হারিয়েছে। এখন রাস্তায় পড়ে থাকা কি কারণে? নিখিলের রাগে শরীর গর্জে উঠছে। আজকে রোদের কপালে চরম দুঃখ আছে। যে যন্ত্রণা টা ও নিখিলকে দিয়েছে সেটার পরিমাপ অনুযায়ী আজকে কষ্ট পাবে ও। নিখিলের যে কি ইচ্ছে করছে,রাগে ফুঁসছে ও। এই মুহুর্তে রোদের ওর সামনে পড়ে একদম ঠিক কাজটাই হয়েছে। আজ ওকে ইচ্ছেমত কয়েকটা থাপ্পড় লাগাতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু মেয়েদেরকে খুব সম্মান করে নিখিল তাই কিছু বলতে পারবে না হয়ত।
স্টেশনের দিক থেকে একটা রিক্সা ডেকে এনে সেটায় রোদকে তুলে নিলো নিখিল। তারপর শক্ত করে ধরে রইল। রিক্সাওয়ালাকে বাসার ঠিকানা জানিয়ে দিলো। আকাশে শুক্লপক্ষের চাঁদ। সুন্দর জোৎস্না ছড়িয়েছে চারিদিকে। বেহুশ হয়ে পড়ে থাকা রোদের মুখের দিকে তাকিয়ে এক ধরণের মায়া অনুভব করলো নিখিল। মেয়েটাকে খুব অসহায় দেখাচ্ছে। একটু সুস্থ স্বাভাবিক হোক,ওর কাছে পালানোর আসল ঘটনাটা জেনে নিতে হবে। কোনো একটা বড় কারণ নিশ্চয় ই আছে। নয়ত রোদের মত মেয়ে বাসা থেকে কখনোই পালাবে না।
বোনের বাসায় পৌছে ধরাধরি করে রিক্সা থেকে নামালো রোদকে। দরজায় নক করতেই আপু এসে খুলে দিয়ে হা করে চেয়ে রইলো। বললো, “কিরে নিখিল। সারারাত বাইরে ছিলি এখন আবার একটা মেয়েকে নিয়ে ফিরলি। তাও আবার অজ্ঞান! বিয়ে বাড়ি থেকে তুলে এনেছিস নাকি?”
– “আপু,তোকে পরে সব বলছি। আগে একে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে একটু সেবা যত্ন কর।”
নিখিলের বড় বোন যথেষ্ট আন্তরিক আর খুবই ভালো একটা মেয়ে। ও রোদকে ভেতরে নিয়ে শুইয়ে দিয়ে সেবা যত্ন করতে লাগলো।
চলবে..

অনুভূতি পর্ব ১৪

0

অনুভূতি
পর্ব ১৪
মিশু মনি
.
২৩.
মেঘালয় আর বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না। এবার ঘুমানো দরকার। জেগে থাকলে মাথায় ভূত চাপবে এসে।
কিন্তু ঘুমানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। কিছুতেই ঘুম আসছে না। বারবার চোখ খুলে যাচ্ছে আপনা আপনি। খুলে অন্যদিকে না তাকিয়ে সোজা মিশুর দিকে চলে যাচ্ছে। মিশুও বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছে মেঘালয়ের দিকে। এভাবে কতক্ষণ থাকা যায়? কেমন যেন অসহ্য লাগছে। একদিকে বুকের ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে নিজেকে নিয়ে ভয় হচ্ছে। একবার ইচ্ছে করছে মিশুকে ভালোবাসি বলতে, একবার মন সায় দিচ্ছে না। খুব খারাপ একটা অবস্থায় পড়ে গেছে মেঘালয়।
মেঘালয়ের হঠাৎ কি হলো নিজেই জানেনা। ঘোর ঘোর লাগছে বড্ড। ঘোরের মাঝেই মিশুকে জিজ্ঞেস করে বসলো, “আমি কি তোমার কোলে মাথা রেখে শুতে পারি?”
অদ্ভুত প্রস্তাব! এরকম প্রস্তাব জীবনেও কখনো শোনেনি মিশু। আর মেঘালয়ের মুখ থেকে এটা শুনছে সেটাও আশ্চর্যের ব্যাপার। কিন্তু না বলতে পারলো না। মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, “আচ্ছা।”
মেঘালয় অপ্রকৃতস্থের মত উঠে মিশুর সিটে গিয়ে বসলো। বেশ লম্বা সিট। অনায়াসে শোয়া যায়। যদিও সিটের উপরে বালিশ রাখা তবুও মেঘালয় মিশুর কোলেই মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। কোনোদিনো কেউ এভাবে কোলে মাথা রেখে শোয় নি, মিশুর কেমন যেন অপ্রস্তুত লাগছে।
মেঘালয়ের এখন একটু শান্তি লাগছে ভেতরে। মিশু আস্তে আস্তে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। মিশুর হাতের স্পর্শে ঘুম এসে যাচ্ছে। চোখ বুজতেই ঘুমিয়ে পড়লো মেঘালয়।
জোরে জোরে নিশ্বাস পড়ছে দেখে মিশুর বুঝতে অসুবিধা হলোনা যে মেঘ ঘুমিয়ে পড়েছে। ও আস্তে আস্তে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। অনেক সুন্দর মেঘালয়ের চুলগুলো। যেমনি সিল্কি, তেমনি সুন্দর ঘ্রাণ! মিশুর হঠাৎ চোখ চলে গেলো মেঘালয়ের বুকের দিকে। শার্টের উপরের দুটো বোতাম খোলা। সেখান দিয়ে ওর ফর্সা বুকে কিছু লোম উঁকি দিচ্ছে। এত সুন্দর লোভনীয় কারো বুক হতে পারে সেটা ভাবতেও পারছে না মিশু। কেমন ঘোরের মাঝে চলে যাচ্ছে। ছেলেদের বুকের লোম এত সুন্দর হয়? মেঘালয়ের হাতের লোমগুলোও ভারী সুন্দর দেখতে। মিশু একবার ওর হাতের দিকে তাকাচ্ছে, একবার বুকের দিকে তাকাচ্ছে। মাঝেমাঝে পলকহীন ভাবে ওর মুখের দিক তাকিয়ে থাকে। কেমন ঘোর ঘোর লাগে, খোঁচা খোঁচা দাড়ি, আর ওর মুখটা সবসময় ই হাসি হাসি জন্য একটা অন্যরকম স্নিগ্ধতা ছেঁয়ে থাকে। সত্যিই মেঘ অনেক বেশি সুন্দর!
ফ্যালফ্যাল করে ওর ঘুমন্ত মুখের দিয়ে চেয়ে চেয়ে নানান আঁকিবুঁকি স্বপ্ন দেখছে মিশু। নিজেও ঘুমিয়ে পড়তে ঘুম বেশি সময় লাগলো না। চেয়ে থাকতে থাকতে চোখ দুটো ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
কতক্ষণ ঘুমালো বলতে পারেনা কেউ। ট্রেন স্টেশনে দাঁড়ানোর আগ মুহুর্তে ট্রেন থামার ধাক্কায় মিশুর মাথাটা ঢলে পড়ে গেলো মেঘালয়ের মুখের উপর। ঠক করে দুজনের কপালের সাথে কপাল লেগে একটা আওয়াজ হলো। আঁৎকে উঠে ঘুম ভেঙে গেলো মেঘালয়ের। মিশু নিচু হয়েই আছে। একদম কাছাকাছি চলে এসেছে দুটো মুখ। একে অপরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। এত কাছ থেকে কখনোই কোনো পুরুষের চোখ দেখেনি মিশু। হার্টবিট রকেট গতিতে ছোটার মত দ্রুত বেড়ে গেলো। ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়তে লাগলো। দৃষ্টি যত গভীর হচ্ছে হার্টবিট তত বেশি বাড়ছে। মিশুর সমস্ত শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। মেঘালয়ের হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। এ কেমন অনুভূতি! মিশু ওর মুখের কাছে ঝুঁকে চোখে চোখ রেখে চেয়ে আছে। মাথা তুলতেই ভূলে গেছে কিছুক্ষণের জন্য। এভাবে কতক্ষণ সময় অতিবাহিত হয়ে গেলো বোঝা গেলো না। মিশু মেঘের চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে, আর মেঘ ও। দৃষ্টির গভীরতা বাড়ছে, যেন একে অপরের ভেতরটাও পরিষ্কার বুঝতে পারছে। মিশু অনুধাবন করতে পারছে মেঘের ভেতরে কি তুমুল ঝড় চলছে। ও ধীরেধীরে একদম ঝুঁকে পড়লো মেঘের মুখের কাছে। দুজনের নাকের সাথে নাক লেগে গেলো। ঘোরের মধ্যে চলে গেছে দুজনেই। মেঘালয় মিশুর মাথাটা চেপে ধরে ওর ঠোঁট স্পর্শ করলো।
কেঁপে উঠলো মিশু। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। বুক ফেটে কান্না এসে যাচ্ছে ওর। এটা কি হয়ে গেলো? চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে। মেঘালয় মিশুর মাথাটা ছেড়ে দিতেই ও সোজা হয়ে বসলো। কিন্তু চোখ খুলতে পারলো না। মেঘালয় ও উঠে ওর পাশে বসে বিভ্রান্তের মত ভাবতে লাগলো শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে ও? মিশুর কোলে মাথা রেখে শুয়েছে কখন? ও তো পাশের সিটে বসে ছিলো। এখানে কখন আর কিভাবেই বা এলো? কি থেকে কি হয়ে গেলো মাথায় ঢুকছে না।
মিশুর দিকে তাকিয়ে দেখলো ও একদম সোজা হয়ে বসে আছে। চোখ বন্ধ কিন্তু দুই গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে মেঘালয়ের। মেয়েটাকে শেষ পর্যন্ত কষ্ট দিয়ে ফেললো? ওর জন্য এতকিছু ভেবেও শেষ রক্ষা হলো না? মেয়েটা যে বড্ড ইনোসেন্ট, ওকে কিভাবে কি বোঝাবে মেঘালয়? মাথায় কিছুই আসছে না।
মেঘ একবার ডাকলো, “মিশু।”
মিশু চোখ খুললো না। নিচের ঠোঁট দাঁত দিয়ে চেপে ধরলো আর কান্নার গতিটা আরো বেড়ে গেলো। মেঘালয় আবারো বললো, “মিশু, আমি সরি।”
মিশু কোনো সাড়াশব্দ নেই। মেঘালয় কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। নিজের মাথার চুল নিজেরই টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। তবুও হয়ত রাগ কমবে না।
মেঘালয় আরেকবার বললো, “মিশু সরি, বুঝতে পারিনি এমন হবে। তুমি প্লিজ…”
আর কিছু বলতে পারলো না।মিশু ওর বুকে মাথা রেখে কেঁদে উঠলো। দুহাতে খামচে ধরলো মেঘালয়ের শার্ট। ওর কান্নার গতি যত বাড়ছে, হাতের শক্তিও যেন তত বাড়ছে। দুহাতে গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে মেঘালয়ের বুকে খামচে ধরছে ও। মেঘালয়ের খুব লাগছে কিন্তু টু শব্দটিও করলো না। মিশুকে ছুঁয়ে ও দেখলো না। মিশু একাই ওর বুকে মাথা রেখে অঝোরে কেঁদে চলেছে আর সমানে খামচে যাচ্ছে ওর বুক আর গলা। হাতটা উপরে তুলে গলায় কতগুলা যে খামচি দিলো কোনো হিসেব নেই। গলা থেকে কাঁধে, ঘাড়েও অজস্র আচড় দিয়ে তারপর ক্ষান্ত হয়ে ওর গলা জরিয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
যেসব জায়গায় ও খামচি দিয়েছে কয়েক জায়গায় বোধহয় ক্ষত হয়ে গেছে। জ্বালা করছে অনেক। তবুও কোনো শব্দ করলো না মেঘ। এমনকি একটু নড়লো ও না। মিশু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে একসময় সেটাও থেমে গেলো। স্তব্ধ হয়ে রইলো একদম। মেঘালয় নিজেও স্তব্ধ। নিশ্বাস পড়ছে খুবই আস্তে। মিশুর কান্না থেমেছে কিনা বোঝা যাচ্ছেনা। চোখের পানিতে বুক ভিজে একাকার হয়ে গেছে। মিশুর কোনো নড়াচড়া নেই। মেঘালয় ডাকতে গিয়েও গলায় জোর পাচ্ছেনা। চুপ করে রইল একদম, যতক্ষণ খুশি এভাবেই থাকুক মেয়েটা।
বেশ কিছুক্ষণ পর হাতটা মেঘের গলা থেকে সরিয়ে সামনে নিয়ে এলো মিশু। চোখ মুছলো এক হাতে। তারপর উঠে বসলো। দুহাতে বারকয়েক চোখ ও গাল মুছলো। তারপর একবার আড়চোখে মেঘালয়ের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো। মিশু আচমকা ওর গলা টিপে ধরে বললো, “খুন করে ফেলবো, খুন করে ফেলবো। এভাবে তাকান কেন? মেরে ফেলবো আপনাকে।”
মেঘালয় অনেক চেষ্টা করে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দুহাতে মিশুর মুখটা ধরে ফেললো। মিশু চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। চোখে পানি। মেঘালয় এক হাতে মুছে দিয়ে আলতো করে ওর মুখটা ধরলো দুহাত দিয়ে। তারপর খুব নরম গলায় বললো, “বিয়ে করবা আমায়?”
২৪.
খুব তাড়াতাড়ি ই বিছানা ছেড়ে নিচে নামলো দুপুর ও অরণ্য। দুজনের মাঝে এখন অনেকটাই সহজ ভাব চলে এসেছে। দুপুর ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে চুল আড়চাচ্ছে। হঠাৎ বাথরুমের খোলা দরজার দিকে চোখ চলে যাওয়ায় দেখলো অরণ্য ওর ব্রাশ টা দিয়েই দাঁত মাজছে। আশ্চর্য হওয়ার মত ব্যাপার! একজনের ব্রাশ অন্যজন কখনো ব্যবহার করে?
ছুটে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে দুপুর বললো, “আপনি আমার ব্রাশ নিয়েছেন কেন? আপনার ব্রাশ নেই?”
– “নাহ নেই।”
– “আপনার গায়ে হলুদের তত্ত্বের সাথে ব্রাশ পাঠিয়েছিলো আমাদের বাড়ি থেকে। সেটা কি করেছেন?”
– “জানিনা, কোথায় যে রেখেছে।”
– “আপনার আগে ব্রাশ ছিলোনা? সেটা?”
– “হারিয়ে গেছে।”
– “বিয়েতে আপনাকে নতুন ব্রাশ কিনে দেয়নি?”
– “না, দেয়নি।”
দুপুর বিরক্ত হয়ে বললো, “সেজন্য আপনি আমার ব্রাশ ব্যবহার করবেন?”
– “হুম, এ যাবত চারবার এটা দিয়েই দাঁত মেজেছি। তুমি ব্রাশ করার পর।”
– “ছি, এটা কেমন বিশ্রী ব্যাপার।”
– “বিশ্রী মনে হবে কেন? যদি একটা ব্রাশই দুজনে শেয়ার করতে না পারি তাহলে কিসের স্বামী স্ত্রী?”
প্রশ্নটা যথাযথ ছিলো। এর কোনো উত্তর দুপুরের জানা নেই। নিখিলের সাথে কথা হয়েছিলো, বিয়ের পর দুজনের একটাই ব্রাশ থাকবে। অরণ্য’র ক্ষেত্রে এর উলটা হবে কেন?
ও আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে এলো।
শাড়ি বদলে সুন্দর একটা শাড়ি পড়ে নিলো। চোখে কাজল ও কপালে একটা কালো টিপ দিলো। অরণ্য বাইরে আসার পর কেউ কারো সাথে কোনো কথাই বললো না।
আজ বাসায় তেমন কোনো কাজ নেই। বিয়েতে আসা অতিথি রা সবাই চলে যাচ্ছেন। সকালের নাস্তা খাওয়ার পর ব্যাগ গুছিয়ে নিতে আরম্ভ করলো ওরা। অরণ্য নিজেই ব্যাগ গুছাচ্ছে আর দুপুর বসে আছে। একটুও দেরি করতে চায়না ছেলেটা। ব্যাগ গুছানো শেষ হতেই দুপুরকে রেডি হতে বলে সে বাবাকে বলতে গেলো যে এখনি বেড়িয়ে পড়তে চায়। দুপুর থতমত খেয়ে রেডি হতে লাগলো। ছেলেটার সবকিছু তে এত চঞ্চলতা কেন বোঝেনা ও। মাঝেমাঝে খুব বিরক্ত লাগে ওকে। কিছু বলাও যায়না।
রেডি হতে হতে মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে উঠলো দুপুরের। এখন একটা লম্বা জার্নি দেয়া হবে। সুন্দর করে সেজেগুজে বসে রইলো। অরণ্য আসলেই বেড়িয়ে পড়তে হবে।
এমন সময় দুপুরের ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো নিখিলের নাম্বার থেকে কল। বুকটা কেমন ধক করে উঠলো ওর।
চলবে..

অনুভূতি পর্ব ১৩

0

অনুভূতি
পর্ব ১৩
মিশু মনি
.
২১.
আজকে খুব ভোরেই দুপুরের ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে শাড়ির আঁচলে টান পড়তেই পিছন ফিরে দেখলো অরণ্য’র গায়ের নিচে পুরোটা আঁচল। সেটা টেনে বের করা এখন কিছুতেই সম্ভব না। ঘুম ভেঙে যাবে অরণ্য ‘র। আবারো শুয়ে পড়লো দুপুর। বালিশে মাথা রেখে অরণ্য ‘র দিকে তাকিয়ে রইলো অনেক্ষণ। অন্ধকার ঘরে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে ওর মুখটা। কিন্তু তাতেই কেমন যেন লাগছে ওর। সত্যিই খুন হয়ে যাওয়ার মত মায়া ওর চেহারায়।বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়না।
চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে রইলো অনেক্ষণ। অরণ্য ঘুমের মাঝেই একটা হাত রাখলো দুপুরের গায়ের উপর। কেমন যেন ছ্যাত করে উঠলো বুকটা। তার স্পর্শ অসহ্য লাগে কিন্তু কিছুই করার নেই। সে তো এখন দুপুরের স্বামী, মেনে নিতেই হবে। স্বামীর সবটুকু অধিকার সে নেবেই। ভাগ্যিস অরণ্য আর সব ছেলের মত নয়। দুপুরকে রাতে কোনোরকম বিরক্ত করেনা বরং মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
নিখিলের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে হঠাৎ। একদিন ফোনে চার্জ ছিলোনা বলে নিখিলকে ফোন দিতে পারেনি দুপুর। এদিকে ইলেকট্রিক লাইনে সমস্যার কারণে ফোনে চার্জও দেয়া সম্ভব হচ্ছিলো না। সারাদিন কথা হয়নি, রাতেও কথা হয়নি। বাড়ির কারো ফোন দিয়ে ওকে জানায় ও নি দুপুর। নিজে দিব্যি আরামে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। রাত সাড়ে এগারো টার দিকে হঠাৎ এভাবেই গায়ের উপর একটা হাত পড়লে চমকে ঘুম ভেঙে যায় দুপুরের। ও পাশ ফিরে শুতে যাচ্ছিলো। ফিসফিস করে কেউ একজন ডাকলো, “দুপুর, এই দুপুর…”
দুপুর চমকে উঠলো নিখিলের গলা শুনে। এতরাতে নিখিল কোথ থেকে এলো? তাছাড়া রৌদ্রময়ী তো ওর পাশেই ঘুমিয়েছিলো। আপুই বা গেলো কোথায়? লাফিয়ে উঠে বিছানার উপর বসলো দুপুর। নিখিল ফিসফিস করে বললো, “তোমার ফোন বন্ধ পেয়ে টেনশন হচ্ছিলো। তাই চলে আসলাম।”
– “সেকি! আপু কোথায় গেলো?”
– “আপু তো বাসায় নেই। পাশের বাড়িতে তামিমার বিয়ে হচ্ছেনা? তামিমা আপুকে এসে নিয়ে গেছে, আপু তামিমার সাথে ওর শ্বশুরবাড়ি যাবে।”
– “তুমি কিভাবে জানলা?”
– “আমিই তো তামিমাকে বলেছি যাতে আপুকে নিয়ে যায়। আমি নিজেই বিদায় দিয়ে আসলাম।”
– “আপু কিছু বুঝতে পারেনি তো?”
– “না। ফোন বন্ধ থাকলে টেনশন হয়না বলো?”
দুপুর খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলো নিখিলকে। সে রাতে পুরোটা রাত নিখিল আর ও একই বিছানায় ঘুমিয়েছে। কিন্তু নিখিল একবার ও দুপুরকে অন্য কোনো মতলবে স্পর্শও করেনি। পুরোটা রাত দুপুর শুধুমাত্র নিখিলের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে। এতটাও দায়িত্ববোধ সম্পন্ন ও সত্যিকার একজন মানুষ ছিলো নিখিল। ভোরবেলা চলে যাওয়ার সময় দুপুর একবার জিজ্ঞেস করেছিলো, “তুমি আমাকে নিজে থেকে একবার টাচ ও করলা না। ভেবেছো আমি কষ্ট পাবো? তুমি টাচ করলে আমি বাধা দিতাম না।”
নিখিল দুপুরের হাত শক্ত করে ধরে বলেছে, “আমি তোমাকে পবিত্র ভাবে ভালোবাসি দুপুর। আর স্পর্শটা একান্তই তোমার স্বামীর হক। যেদিন আমাদের বিয়ে হবে,সেদিন থেকে সবরকমের স্পর্শের অধিকার আমার। আর যদি কোনো কারণে আমাদের বিয়ে না হয়, আজীবন এই অপরাধবোধ আমাকে তাড়া করে বেড়াবে।”
সেদিন নিখিলের কথা শুনে খুব বেশি অবাক হয়ে গিয়েছিলো দুপুর। তামিমা রোদের বান্ধবী, নিখিলের ও বান্ধবী। সেই মেয়েটাকে রাজি করিয়ে আপুকে বাড়ি থেকে পাঠিয়ে দিয়ে তারপর সে কিভাবে যেন দুপুরের ঘরে ঢুকেছে। অথচ সারাটা রাত দুপুরকে একবার স্পর্শ ও করলো না, এরকম মানুষ ও আছে দুনিয়ায়! এই আলাদা বৈশিষ্ট্যের জন্যই নিখিলকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো দুপুর। এখনো বাসে, কিন্তু এখন…. শুধুই একটা দীর্ঘশ্বাস!
গাল ভিজে চোখের জল বালিশে গিয়ে পড়েছে। চোখ মুছলো দুপুর। নিরব কান্না, এই কান্না কেউ দেখেনা, কেউ জানেনা। কিন্তু অরণ্য হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কি কাঁদছ দুপুর?”
দুপুর চমকে উঠে বললো, “কই না তো।”
চোখের জল মুছতে যেতেই অরণ্য নিজেই আলতো করে দুপুরের মুখটা স্পর্শ করলো। তারপর গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বললো, “কাঁদছ কেন?”
দুপুর নিজের হাত দিয়ে অরণ্য ‘র হাত ধরে ফেলে বললো, “এমনি।”
– “এমনি কেউ কখনো কাঁদেনা, আর কাঁদলেও সেটা অন্তত সারাক্ষন স্থায়ী হয়না।”
দুপুর কোনো কথা বললো না। অরণ্য ওকে জড়িয়ে নিলো নিজের বুকে। তারপর বললো, “কাঁদছ কেন বলবা না? আমি ঘুম ভাঙার পরই তোমার নাক টানার শব্দ শুনেই টের পেয়েছি তুমি কাঁদছ।”
– “আমি নাক টেনে কাঁদি?”
– “না, তবে একটা ফ্লেভার আছে কান্নার। বোঝা যায়।”
– “কান্নার কখনো ফ্লেভার থাকে?”
– “তোমার কান্নার আছে। তুমি অনেক দূরে থাকলেও কাঁদলে আমি বুঝতে পারবো। বুঝেছো?”
দুপুর কিছু বললো না। অরণ্য ওকে জাপটে ধরে রইলো। সকালের পাখির কিচিরমিচির কানে আসছে। এখন উঠতে হবে। অরণ্য বললো, “নাস্তা করে এসে দুজন মিলে ব্যাগ গোছাবো। আজ আমাদের সিলেট যাওয়ার কথা।”
দুপুর কিছুই বললো না। চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। অরণ্য’র শরীরে একটা গন্ধ আছে, সেটা অনুভূতি ইন্দ্রিয়েরা জানিয়ে দিচ্ছে ওকে। ধীরেধীরে এই গন্ধটাই সবচেয়ে চেনা আর প্রিয় হয়ে উঠবে।
২২.
ট্রেন থেকে নেমে আবারো ঢাকার ট্রেনে উঠে পড়েছে মিশু ও মেঘালয়। কাউন্টারে কথা বলে জেনেছে কোনো সিট ফাঁকা নেই, কিন্তু একটা কেবিন ফাঁকা আছে। মেঘালয়ের কাছে অতবেশি টাকা ছিলো না। বাসায় ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে পুরো কেবিনটাই বুক করে ফেলেছে।
মিশু একদম অবাক! এতবড় কেবিন বুক করে হবেটা কি? আর দুজন মানুষের জন্য একটা কেবিন নিতে হয়? ছেলেটা সত্যিই অদ্ভুত রকমের। বিশাল সাইজের একটা মন আছে বলতে হবে। তবে অযথা টাকা খরচ করার অভ্যাস টা ভালো লাগেনা মিশুর।
কথাটা বলতেই হেসে ফেললো মেঘালয়। জবাব দিলো, “অযথা খরচ করলাম কোথায়?”
– “এত টাকা দিয়ে একটা কেবিন পুরোটাই বুক করার কি দরকার ছিলো? সিট না পেলে আমরা দাঁড়িয়ে থেকে যেতাম।”
– “প্রথমত এখনো রাত বাকি আছে, আর দ্বিতীয়ত আমি সজ্ঞানে তোমাকে কষ্ট দিয়ে দাঁড়িয়ে নিয়ে যেতে পারবো না।”
মিশু বেশ অবাক হয়ে বললো, “একটা অচেনা মেয়ের জন্য এত দরদ কেন আপনার শুনি?”
– “যার মনে দরদ আছে তার চেনা অচেনা সবার জন্যই আছে।”
এর কোনো জবাব খুঁজে পেলো না মিশু। ট্রেনের কেবিন খুঁজে সেখানে ঢুকে পড়লো। মেঘালয় কেবিনে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলো। মিশু আঁৎকে উঠে বললো, “খোলা থাক, খোলা থাক।”
– “সেকি! খোলা থাকবে কেন?”
– “আমার ভয় করে।”
– “আমাকে?”
মেঘালয় জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে মিশুর দিকে। মিশু কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। মেঘালয়কে ভয় লাগছে বললে অন্যায় হয়ে যাবে। যে ছেলেটার সাথে বারবার দেখা হওয়ার পরও কখনো বদ নজরে তাকায় নি, তাকে তো ভয় পাওয়ার কোনো কারণ ই নেই। তাছাড়া মেঘালয় কতটা মহান সেটা মিশু ভালোভাবেই জানে। তবুও কেন যে কথাটা বললো নিজেও বুঝতে পারছে না। অবশ্য হঠাৎ একজনের সাথে বদ্ধ কেবিনে থাকতে একটু ভয় তো লাগবেই।
মিশুকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে মেঘালয় বললো, “কি ভাবছো?”
– “কিছু না। লাগিয়ে দিন।”
মেঘালয় দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসে সিটে বসতে বসতে বললো, “আমি কোনো সুযোগ নিবো কিনা সেটা ভয় পাচ্ছো?”
মিশু তাকালো মেঘালয়ের দিকে। কিছু বললো না মুখে। মেঘালয় বললো, “ট্রেনে যখন আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলে, তখন চাইলে অনেক সুযোগ নিতে পারতাম। সেটা যখন করিনি, এখন ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তাছাড়া একটা মেয়ে যখন আমার সাথে থাকে, তাকে সেফলি বাসায় পৌছে দেয়াটাকে আমি আমার দায়িত্ব মনে করি। সেখানে তুমি তো মিশু…”
মিশু আগ্রহ ভরা চোখে জিজ্ঞেস করলো, “আমি মিশু তো?”
মেঘালয় থতমত খেয়ে বললো, “না মানে খুবই ইনোসেন্ট একটা মেয়ে।”
কিন্তু মনে মনে বললো, “আমার মনের ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছো সেটা কিভাবে বলি বলো? এত তাড়াতাড়ি নিজের মনের কথা বুঝতে দিতে নেই। একটু সময় নিতে হয়। তুমি নিজে থেকেই বুঝবা এই মেঘ তোমার প্রতি কতটা আসক্ত হয়ে পড়েছে, তারপর নিজেও একটু একটু করে দূর্বল হতে শুরু করবা। তখন জানাবো মনের কথাটা।”
মিশু জিজ্ঞেস করলো, “কি ভাবছেন এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে?”
– “তোমার দিকে তাকিয়ে আছি?”
– “তো? আপনার চোখ তো আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে।”
লজ্জা পেয়ে হাসলো মেঘালয়। মিশুও হাসলো। আর মনেমনে ভাবল, “কি চাইছে এই ছেলেটা? এত আপন মনেহচ্ছে কেন ওকে? কিন্তু ওকে তো আপন ভাবা যাবেনা। মিশু যে বড্ড গরীব আর অসহায় ঘরের মেয়ে। তাকে নিজেকেই রোজগার করে বাঁচতে হয়। আর মেঘালয়! সে তো অনেক উঁচুতে। মেঘ যাকে ছুঁয়ে চলে যায়, সেখানে শুধু মেঘেদের বসবাস। অত উঁচুতে ওঠার সাহস হবেনা মিশুর। আর মেঘালয় অনেক ভালো গান গাইতে পারে, একদিন নিশ্চয় ই অনেক বড় শিল্পী হয়ে যাবে।
এবার একই প্রশ্ন মেঘালয় করলো, “আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কি ভাবছো?”
মিশুও মেঘালয়ের মত লাজুক ভঙ্গিতে হাসলো। তারপর জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে রইলো। সুন্দর হাওয়া আসছে। বাইরে হাত বাড়িয়ে গুনগুন করে গান গাইতে লাগলো মিশু। তারপর মেঘালয়কে বললো, “এখন তো কেউ নেই। একটা গান শোনান না।”
বলামাত্রই মেঘালয় গান গাইতে আরম্ভ করলো। মিশু গান শুনছে আর বাইরে তাকিয়ে আছে। মেঘালয় ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক্ষণ ধরে গান গাওয়ার পর সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো মেঘালয়। মিশুকে বললো ঘুমিয়ে পড়তে। কিন্তু তখন অত যাত্রীর ভিড়ে ঘুম পেলেও এখন ফাঁকা কেবিনে ঘুম আসছে না ওর।
দুজন দুদিকের আসনে বসে মুখোমুখি বসে আছে। হঠাৎ চোখাচোখি হয়ে গেলো দুজনাতে। মিশুর বুকের ভেতর টা কেমন যেন করে উঠলো। ধুকধুক করে উঠলো। এদিকে মেঘালয়ের ও একই অবস্থা। এর আগে কখনো এমন হয়নি ওর। কেমন যেন মায়া কাজ করছে। অন্যরকম একটা মায়া যার কোনো নাম দেয়া যায়না। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ও মিশুর দিকে। একদম নির্জনে এভাবে মিশুকে দেখলে মনটা কেমন যেন বিষণ্ণতায় ছেয়ে যায়। এত কাছে তবুও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বড্ড ছুতে ইচ্ছে করছে ওর লাজুক চিবুক, কিন্তু সেটা তো হয়না। সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। সীমা লংঘন ব্যাপার টা ভালো লাগেনা মেঘালয়ের, তবুও আজ বড্ড ইচ্ছে করছে একটু সীমা অতিক্রম করতে। এতবেশি মিশুকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে যে নিজেকে শেষ পর্যন্ত কন্ট্রোল করতে পারবে কিনা সেটা নিয়েই ভয় হচ্ছে মেঘালয়ের।
চলবে..

অনুভূতি পর্ব ১২

0

অনুভূতি
পর্ব ১২
মিশু মনি
.
১৯.
অরণ্য পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো দুপুরকে। একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো দুপুর। এই কাজটির জন্য ও প্রস্তুত ছিলোনা। অরণ্য এভাবে কেন কাছে টানছে ওকে? ও যে কিছুতেই অরণ্য কে মেনে নিতে পারছে না। বলাও যায়না, সহ্য করাও যায়না। শুধু নিরবে যন্ত্রণা টুকু হজম করে ফেলতে হয়।
অরণ্য দুপুরের কাঁধের উপর নিজের মাথাটা রাখলো। দুপুর একদম স্পন্দনহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। অরণ্য ফিসফিস করে বলল, “তোমাকে গতরাতে খুবই সুন্দর দেখাচ্ছিলো দুপুর।”
দুপুর ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। মনে মনে ভাবছে, অরণ্য ভাইয়ার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো আপুর সাথে। আমার সাথে হয়েছে এতে ভাইয়ার খুব অস্বস্তি হওয়ার কথা, এত সহজে আর এত অনায়াসে কিভাবে মিশে যেতে পারছে? ছেলেরা সবই পারে। খুব দ্রুত একজন অচেনা মানুষ কে ভালোবাসতেও পারে, ভূলে যেতেও পারে। রৌদ্রময়ীর মত মেয়েরাও পারে। কিন্তু দুপুর পারবে না। দুপুরের মন থেকে নিখিলকে সরাতে না জানি আরো কষ্ট মানসিক যন্ত্রণা পোহাতে হবে!
অরণ্য বললো, “মন খারাপ করে থেকো না দুপুরবেলা আমার। দুপুরে সবসময় রোদ ঝলমল করার কথা।”
– “রোদ ই তো নেই, ঝলমল করবে কোথ থেকে?”
– “উফফ দুপুর, তুমি প্লিজ ওর নামটা আমার সামনে উচ্চারক করবে না। সে আমাদের সবার সাথে যেরকম টা করেছে, তাকে কি বলা উচিৎ আমার জানা নেই। তুমি আর কক্ষনো ওর কথা বলবে না। প্লিজ আমার সাথে একটু সহজ হওয়ার চেষ্টা করো।”
দুপুর কিছুই বললো না। নিরবে দাঁড়িয়ে রইলো। অরণ্য শক্ত করে চেপে ধরলো ওকে। কাঁধের উপর মাথাটা রেখে বাম গালটা দুপুরের ডান গালের সাথে একবার ঘষে দিলো। শিউরে উঠলো দুপুর! সমস্ত শরীর ঝনঝন করে উঠলো। অরণ্য’র দাড়ির খোঁচায় গা শিরশির করে উঠছে ওর। ভিতরে দহন হচ্ছে, নিখিলকে মন থেকে জোর করে সরানোর দহন। এদিকে নতুন মানুষ কে জোর করে মনে জায়গা দেয়ার দহন। দুটো আগুন একসাথে হয়ে দাউদাউ করে জ্বলছে, কাউকে বলা যায়না, কাউকে বোঝানো ও সম্ভব না। একদম ই বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না ওর। তবুও মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে সবকিছু।
অরণ্য ওকে শক্ত করে ধরেই রইলো। এভাবে অনেক্ষণ কেটে যাওয়ার পর শ্বাশুরি মায়ের ডাকে ছাড়া পেলো দুপুর। প্রতিবেশী রা নতুন বউকে দেখতা এসেছেন। বাইরে তাদের সামনে বসে থাকতে হলো। বারান্দায় চেয়ারে বসে থাকার সময় দুপুর অরণ্য’র উপস্থিতি টের পাচ্ছিলো। অরণ্য আশেপাশেই ঘুরঘুর করছে। বউকে চোখের সামনে রাখাতেও ওর বোধহয় তর সইছে না, সবসময় ছুঁয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। বুকটা কেমন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে দুপুরের। গতরাতে তো ছাড়া পাওয়া গেছেক্স আজকে রাতে অরণ্য কত রকমের অধিকার খাটাতে আসবে কে জানে! আবারো একটা ভয়ংকর বেদনা ছুঁয়ে গেলো দুপুরকে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ও।
সারাদিন অনেক ব্যস্ততার মধ্য দিয়েই কাটলো। বাসায় অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছেন। সবার সাথে কথা বয়াল্র মাধ্যমে বেশ সহজ হয়ে গেলো দুপুর। একসাথে খাওয়া দাওয়া করলো, বৌভাতের মেহমান দের সাথে বসে আড্ডা দিতে হলো। অরণ্য’র বন্ধুদের সাথেও অনেক কথা বলতে হলো। রাত নেমে আসতে আসতে মনটা অনেকটাই হালকা হয়ে গেলো দুপুরের। তবুও মাঝেমাঝে কেমন একটা অন্যরকম বেদনা এসে বুকে ভর করে। কিন্তু হুটহাট অরণ্য কোথ থেকে যেন দুটো ছোট বাচ্চাকে পাঠিয়ে দেয়, নয়ত কোনো বন্ধুকে পাঠিয়ে দেয়। তারা এসে দুপুরের সাথে কথা বলার মাধ্যমে ব্যস্ত রাখে ওকে। অরণ্য নিজেও সারাদিন নানান ভাবে ফাজলামো করে মাতিয়ে রেখেছিলো দুপুরকে। দুপুর বেশ বুঝতে পারে অরণ্য অনেক খেয়াল রাখছে ওর প্রতি। নয়ত এভাবে এত করে ওর মন ভালো করার জন্য পিছনে লেগে থাকতো না। অরণ্য ছেলেটা অনেক ভালো! যদি আগের জীবনে নিখিল নামে কেউ না থাকতো, তবে অনায়াসে ভালোবাসতে পারতো এই ছেলেটাকে। নিখিল যে অরণ্য’র চেয়েও বেশি খেয়াল রাখতো ওর, নিখিলকে কিভাবে ভূলে যাবে ও?
রাত হয়ে এলো। ভাবি ও ননদরা দুপুরকে ঘরে রেখে বিদায় নিলেন। আজ বুকটা কেমন ধুকপুক করছে ওর। গতরাতে অন্যদিকে কোনো খেয়াল ছিলোনা, কোনো অনুভূতি কাজ করছিলো না। কিন্তু আজকে রাতে অরণ্য’র আগমনের কথা ভেবেই গায়ে কাটা দিচ্ছে। না জানি আজ কি আছে কপালে!
জড়োসড়ো হয়ে বসে রইলো দুপুর। অরণ্য এসে দরজা লাগিয়ে বিছানার উপর বসলো। বুকের ভেতরে দুম দুম করে যেন হাতুরি পড়ছে। কষ্টের মাত্রাটা বেড়েই যাচ্ছে দুপুরের। অরণ্য একটু এগিয়ে এসে দুপুরের হাত ধরলো। এবার আরো কষ্ট হতে লাগলো দুপুরের। এ কেমন নিদারুণ কষ্ট! ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। বুকটা ভেঙে যাচ্ছে, একটা বিশাল ঝড় দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে যাচ্ছে সব। দুপুর দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলো।
অরণ্য এগিয়ে এসে আস্তে আস্তে বললো, “আমার বউটাকে এখন একদম পুতুলের মত লাগছে। দুপুর সোনা, তুমি কি আমার কাছে কিছু চাও?”
দুপুর দুদিকে মাথা নাড়লো। অরণ্য বললো, “ভালোবাসাও না?”
বুকটা আরো একবার কেঁপে গেলো দুপুরের। যেন রিখটার মানের ভূমিকম্প বয়ে গেলো। হঠাৎ করেই প্রচণ্ড কান্না পেয়ে গেলো ওর। এতবেশি কান্না পাচ্ছে যে নিজেকে সামলাতেই পারলো না। দুম করেই অরণ্য’র বুকের উপর পড়ে গিয়ে দুহাতে অরণ্য’র টি শার্ট খামচে ধরে কাঁদতে লাগলো। ও শুধু কেঁদে কেঁদে নিজেকে হালকা করাতেই ব্যস্ত। এদিকে যে অরণ্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে সেটা খেয়ালেই রইলো না। অরণ্য ওর মাথায় হাত বুলাতে গিয়েও আর স্পর্শ করলো না। মেয়েটাকে এখন কাঁদতে দেয়াই উচিৎ, কেঁদে বুক ভিজিয়ে দিক।
২০.
মিশু ঘুমাচ্ছে মেঘালয়ের কাঁধে মাথা রেখে। আর ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে মেঘালয়ের মুগ্ধ দুটি চোখ! একটা মেয়ে এতটা ইনোসেন্ট স্বভাবের কিভাবে হতে পারে! ঘুম থেকে উঠেই বলে, “আমার খিদে পেয়েছে। হাঁসের গোশত দিয়ে ভাত খাবো।”
কথাটা মনে করেই হাসলো মেঘালয়। মিশু ঘুমে ঢলে পড়ে যাচ্ছে ওর বুকে। মেঘালয়ের বুকটা কেমন ছ্যাত করে উঠলো। মিশুর গরম নিঃশ্বাস পড়ছে মেঘালয়ের বুকের উপর। স্তব্ধ হয়ে ফিল করছে মেঘালয়। মেয়েটাকে এখান বড্ড বেশি আপন মনেহচ্ছে। কেন যেন মনেহচ্ছে বহুদিনের সম্পর্ক ওর সাথে। যুগ যুগ ধরে একে অপরকে চেনে! একসাথে কত পথ চলে এসেছি!
কথাগুলো ভেবে আপন মনেই আবারো বললো, “ধ্যাত কি সব ভাবছি। এসব ভাবা যাবেনা। ভাবা ঠিক না। মেয়েটা অনেক বাচ্চা স্বভাবের। বুঝতে পেলে কেঁদে ফেলবে।”
মুখ টিপে হাসলো মেঘালয়। মিশু ঘুমাচ্ছে, যেন ঘুমিয়ে কত শান্তি পাচ্ছে মেয়েটা। একবার রৌদ্রময়ীর দিকে তাকালো মেঘালয়। কনের সাজে বসে থাকা মেয়েটার গাল বেয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে। কি এমন দুঃখ আছে ওই সুন্দর মেয়েটার? জানতে বড্ড ইচ্ছে হয়। কিন্তু এখন কিছুতেই উঠে যাওয়ার সুযোগ নেই, মিশু এক হাতে মেঘালয়ের এক বাহু জাপটে ধরে ঘুমাচ্ছে। ভাবলেই কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে মেঘালয়।
এভাবে কতক্ষণ কেটে গেলো কেউই বলতে পারেনা। ঘুম থেকে উঠে একবার মেঘালয়ের দিকে তাকালো মিশু। আড়মোড়া ভেঙে বললো, “এখন কোথায় আমরা?”
– “ট্রেনে।”
– “ট্রেনটা কোথায়?”
– “রেল লাইনের উপর।”
– “রেল লাইনটা কোথায়?”
– “ভূ পৃষ্ঠের উপর।”
মিশু ক্ষেপে গিয়ে বললো, “একদম মাইর দিবো। এরকম দুষ্টুমি করছেন কেন?”
– “বাচ্চাদের সাথে তো দুষ্টুমি ই করতে হয়।”
– “আমি বাচ্চা? বাচ্চামির কি দেখালাম শুনি?”
– “কিছুই তো দেখিনি। দেখলে নাহয় বুঝতে পারতাম বাচ্চা নাকি বাচ্চার মা।”
কথাটা বলেই জিহ্বায় কামড় দিলো মেঘালয়। সর্বনাশ! খুবই লেইম টাইপের ডায়ালগ দিয়ে ফেলেছে ও। মিশু যদি অন্যকিছু বুঝে নেয় তাহলে তো খুবই রাগ করবে। কিন্তু মিশু মেঘালয়ের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারেনি। ও অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, “এখন মনেহয় আমরা ঈশ্বরদীর ওদিকে আছি।”
মেঘালয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “বাঁচলাম বাবা।”
– “বাঁচলাম মানে?”
– “না কিছুনা। কিছু খাবা?”
– “না, খিদে পায়নি। আচ্ছা ওই নতুন বউটা কোথায়?”
মেঘালয় রৌদ্রময়ীর সিটের দিকে তাকিয়ে বললো, “জানিনা তো। এখানেই তো ছিলো মেয়েটা। বোধহয় নেমে গেছে।”
-“মরে টরে যায়নি তো?”
– “মরলে আগেই মরতো, ট্রেনে উঠে বসে থাকতো না।”
– “হুম তাও ঠিক। সে যাই হোক, এরপর যেখানে ক্রসিং হবে আমরা সেখানেই নেমে পড়বো আচ্ছা?”
– “নেমে কি করবা?”
– “কি আবার? ওই ট্রেনে উঠে পড়বো। ঢাকায় ফিরে যাবো। কালকে আমাকে আপনার বাবার অফিসে যেতে হবেনা?”
– “ওহ আচ্ছা। ঠিকাছে তাই হোক। কিন্তু এটাতে তো পুলিশকে বলে সিট নিয়েছি, ওটায় দাঁড়িয়ে থেকে যেতে হবে।”
– “যাবো, সমস্যা কি?”
মেঘালয় হেসে বললো, “পুরো জার্নিতে ঘুমালে সমস্যা না থাকার ই কথা।”
– “আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম না?”
– “আবার জিজ্ঞেস ও করে!”
দাঁত বের করে হাসলো মেঘালয়। মিশুর ও হাসি পেয়ে গেলো। মেঘালয় একটু মিশুর দিকে এগিয়ে আসতেই মিশু বললো, “এই এই দূরে থাকুন, দূরে থাকুন।”
মেঘালয় অবাক হয়ে বললো, “কেন?”
– “বারে, ঘুম থেকা উঠলাম না? এখন আমার মুখে গন্ধ, ওয়্যাক….”
মিশু মুখের ভঙ্গিটা এমন করলো যে হাসি পেয়ে গেলো মেঘালয়ের। নিজের মুখের গন্ধের কথা কেউ কখনো এভাবে বলেছিলো কিনা ওর জানা নেই। হাসত হাসতে সিটের পিছনে হেলান দিয়ে মিশুর দিকে চেয়ে রইলো মেঘালয়। আর মিশু তাকিয়ে আছে মেঘালয়ের হাতের দিকে। গরমে ঘেমে গেছে মেঘালয়ের শরীর। হাত ঘামে ভিজে গেছে, হাতের উপরের ঘন লোমগুলো একদম গায়ের সাথে লেগে গেছে। দেখলেই কেমন যেন অনুভূতি কাজ করে, মিশু তাকিয়ে আছে মেঘালয়ের হাতের দিকে! একদম অপলক ভাবে!
চলবে…