Friday, July 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1847



তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-০৪

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন ??
#মেঘ পরী ??

?? পর্ব-৪??

?
.
.
-: মে আই কাম ইন স্যার।

-: ইয়েস কাম ইন।

-: বল রাফি,,তোমাকে যা করতে বলেছিলাম তুমি তাই করেছো তো।

-: ইয়েস স্যার (রাফি)

-: বলে ফেলো,,,কি কি ডিটেলস এনেছো।(নিলয়)

-: স্যার আমরা যে মেয়েটাকে মিনিস্টারের মেয়ে ভেবে তুলে এনেছিলাম,,,,তার নাম হলো তিথি আহমেদ। বাড়ি হলদিয়া। ছোটবেলায় মা সুইসাইড করেছে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র তিন বছর।।মা মারা যাবার এক মাসের মাথায়,, বাবা অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে ফেলেন।। তিথির মামা মিস্টার নজরুল শেখ,, নিজের বোনের মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মনে করেন নি।।তাই তিনি তিথির বাবার বিরুদ্ধে কেস করেছিলেন।। কিন্তু তিনি হেরে যান। যখন তিনি দেখলেন যে,,,তিথি তার বাবা এবং সৎ মার কাছে ভালো নেই,,তখন তিনি তিথিকে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন।।নজরুল সাহেব পেশায় একজন প্রফেসর।তার একটা ছেলে আছে,,ছেলেটা তিথির থেকে বড়।।ছেলেটার নাম আসফি,,,,কিছুদিন আগে আসফি বিদেশ থেকে এমবিবিএস কমপ্লিট করে দেশে ফিরেছে।এখন সে একজন সরকারি হসপিটালে ডাক্তার হিসেবে নিযুক্ত।সে তিথি কে নিজের বোনের মতন ভালবাসে।।তিথির বয়স ১৭। এই বছর ক্লাস টুয়েলভে উঠলো। মামা মামি এবং দাদার খুব আদরের।

-: বাব্বা….রাফি তুমি তো পুরো তিথির নামের লাইব্রেরী তুলে এনেছ।। ভেরি গুড,,আই এম ইমপ্রেসড।

-:কি যে বলেন না স্যার।(লজ্জিত ভাবে বলল রাফি) একবার কাজে ভুল করেছি বলে কী আর ভুল করতে পারি।।তবে আর একটা কথা শুনেছি তিথির বাবার সম্পর্কে,,তিনি নাকি বিভিন্ন কালো ব্যবসার সাথে জড়িত,,,তাই তিথির মা নাকি তাকে সবসময় বলতেন এই ব্যবসা থেকে সরে আসতে,,,,কিন্তু তিনি তার কোন কথাই শুনতেন না।। তিথির মা যেদিন সুইসাইড করে,,, তার ঠিক দু’দিন আগে নাকি তিথির মা আর তিথির বাবার খুব ঝগড়া ঝাটি হয়,,, পরে তিনি নজরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠেছিলেন।। আর সুইসাইড করার দিন,,,নাকি তিথির বাবা নিজে গিয়ে তিথির মাকে নজরুল সাহেবের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলেন।।

-:হুম।।।।তিথির মার মৃত্যুর মধ্যে আমি একটা রহস্য রহস্য গন্ধ পাচ্ছি রাফি। যাই হোক আগে এই বাঁচাল মেয়েটাকে আমি সামলায়।।উফফ জীবনটা তেনা তেনা করে দিল।।

-:কেন সে আবার কি করলো স্যার।।(বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল রাফি)

-:আর বোলো না,,সে সব কথা থাক। আগে বল মিনিস্টারের মেয়ের কি খবর।।

-: স্যার আর বলবেন না,, মেয়েটাকে একদিন খেতে দিইনি বলে বাসি রুটি গপাগপ মেরে দিয়েছে।।(হেসে হেসে বলল রাফি)

-:বল কি।।(বাঁকা হেসে)

-:হ্যাঁ স্যার।।

-:আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এখন আসো,,আমার আবার বাড়ি যেতে হবে।।

-:ওকে স্যার,,,আসছি ।।

তারপর কিছুক্ষন নিলয় অফিসের কিছু কাজকর্ম সেরে,,,বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। রাত আটটার সময় নিলয় বাড়ি পৌঁছালো।।
.
?
.
বাড়িতে ঢুকে।।নিলয় তো পুরো হা হয়ে গেল।। ডাইনিং রুমটাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে,,,, বিশাল এক টাইফুন এসছিল,,,কারন চারিদিকে কেকের প্যাকেট,,,বিস্কুটের প্যাকেট,,,মিষ্টির প্যাকেট,,, চকলেটের প্যাকেট,, জুসের খালি ক্যান পড়ে রয়েছে।।
.
.
আর তিথি লিভিং রুমের সোফার উপর এক পা তুলে সোফার উপরে শুয়ে রয়েছে।। আর শুয়ে শুয়ে পপকন খাচ্ছে আর ডোরেমন কার্টুন দেখছে,,, আর গান গাইছে;

-: মে কিসি কা সপ্না হু,,যো আজ বানগে ই হে সাচ…… তারপর মাঝখানে লালালালা বলে চালিয়ে দিলো গানটা ভুলে গেছে বলে,,,তারপর আবার ডোরেমন ও ডোরেমন বলে গান করতে লাগলো।

নিলয় তো পুরো রেগে বোম হয়ে গেছে,,,এমনিতে সে অপরিষ্কার জিনিস একদমই পছন্দ করে না।।।তার ওপর তিথি পুরো ঘরটাকে ডাস্টবিনের মতো করে ফেলেছে আবার বসে বসে ডোরেমন ডোরেমন গান করছে।।তাই সে রেগে গিয়ে বিশাল জোরে এক হুংকার দিল।।তিথি তো নিজের নাম এত জোরে এভাবে শুনে থতমত খেয়ে গেল।।তারপরে পিছনে তাকিয়ে দেখল,,, নিলয় রক্ত লাল চোখে দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে,, মুখটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে।।তিথি এতটাই ভয় পেয়েছিল যে পপকন এর জায়গায় নিজের আঙুলটাকে খচ করে কামড়ে ধরল।।।তারপরে জরে চিৎকার করে উঠল-;

-:আহ আহ আহ আহ মরে গেলাম,,মরে গেলাম,, রে আমি মরে গেলাম।।

তিতির এরকম আওয়াজ শুনে নিলয়ের রাগ এক নিমেষেই উড়ে গেল।তারপরে সে ব্যাস্ত হয়ে তিথির কাছে দৌড়ে গেল।। তারপর আঙুলটা ধরে বললো-;

-:কি হয়েছে দেখি দেখি।

বলে আঙুলটা টার দিকে ভালোভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে। তারপর তিথির দিকে তাকালো,,, এবং তাকিয়ে বললো-;

-:এইভাবে কেউ খায় নাকি।।(রেগে গিয়ে)

তিথি তখন মিনমিন করে বলল-;

-:আপনি যেভাবে ষাঁড়ের মত চিৎকার করলেন।। তো আমি আঙুল খাবোনা তো কি খাবো শুনি।।উফ্ বাবা এত জোরে কেউ চিৎকার করে।।

-:কি এই মেয়ে তুমি আমাকে কি বললা।আমি ষাঁড়।।তোমার সাহস তো মন্দ না,,আমার ঘরের এই কি অবস্থা করেছো শুনি।।এক বেলা বাইরে গেছিলাম,,,তার মধ্যে এই অবস্থা করে ফেলেছ।।

-: এই শুনুন এইভাবে আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না,,সারাদিন একা একা ঘরে কি করব শুনি।।আর ঘরটা না হয় টুনির মা পরিষ্কার করে দেবে। কিন্তু আমার বুঝি মন খারাপ হয় না সারাদিন ঘরে একা একা বসে থাকতে।????

-:হোয়াট!!হু ইস টুনির মা।।

-:কেন আপনাদের ঘরের যে মহিলা কাজ করে,,,সে টুনির মা।।

-:হোয়াট রাবিশ ও আবার টুনির মা হতে যাবে কেন।ওর নামতো শেফালী।।

-: আপনাকে নিয়ে আর পারা গেল না।।???আমি বেশি কথা বলতে পারবোনা।।আর এই যে শুনুন এই লিস্টটা ধরুন তো।।

বলে একটা লিস্ট নিলয়ের দিকে এগিয়ে দিল।।নিলয় কিছুক্ষণ তিথীর দিকে তাকিয়ে তারপর লিস্টর দিকে তাকিয়ে,,,নিলয় হা হয়ে গেল তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বললো-;

-:এসব কি!!!

-: কেন আপনি কি চোখে কানা। শুনুন দুটো কুর্তি,, দুটো পালাজো,,আর একটা মিকি মাউস আঁকা টি শার্ট আর একটা লং স্কার্ট নিয়ে আসবেন।।কাল সকাল থেকেই একই জামা পড়ে আছি,,শায়র নিয়ে ও আমাকে এই একি জামা পরতে হল। আপনিতো আর বলে কয়ে আমাকে কিডন্যাপ করেননি,,,যদি আমাকে আগে থেকে বলতেন তাহলে না হয় কিছু জামা সঙ্গে করে নিয়ে আসতাম।।। কিন্তু এখন আর কি করা যাবে।কালকে আমার শাওয়ারের আগেই যেন আমি জামা গুলো পাই।। ওকে গুড নাইট আমার না প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।।আর আমার পেট পুরো ভরে গেছে।।আর আমার জন্য খাবার রাখতে হবে না,,,যদি খিদে পায় তো তিন-চারটে পরোটা রেখে দেবেন আমার জন্য,,আর একটু তরকারিও রেখে দেবেন।ওকে আর শুয়ে পরবেন তারাতাড়ি টাটা গুড নাইট।

এই বলে তিথী উপড়ে চলে গেল। আর নিলয় তো হা করে তাকিয়ে থাকলো তিথীর যাওয়ার পথে। তারপর নিলয় মনে মনে বলল,

-: মাঝে মাঝে আমি নিজেই কনফিউশড হয়ে যায় যে আমি এই মেয়েটা কে কিডন্যাপ করেছি নাকি এ মেয়ে নিজেই আমাকে কিডন্যাপ করেছে, হে আল্লাহ আমাকে বাঁচাও।?????

তারপর নিলয় রাতের খাবার খেয়ে তিথির জন্য ডাইনিং টেবিলে খাবার রেখে উপরে চলে গেল।
.
?
.
পরেরদিন নিলয়ের ঘুম ভাঙ্গল তিথীর ডাকে।নিলয় বেশ বিরক্ত হয়ে বলল;

-:উফ্ তিথী ঘুমাতে দেও তো।ডিস্টার্ব করো না।(ঘুম জড়ানো কন্ঠে)

-: আরে আমার জামা আনতে বলেছিলাম এনেছিলেন।

-: হে রামু চাচাকে বলে অনিয়ে নিয়েছি,,,নিচে গিয়ে রামু চাচা কে জিজ্ঞাসা কর,,তোমাকে দিয়ে দেবে। এখন যাও প্লিজ আমাকে ঘুমাতে দাও।

-:ওকে।

এই বলে তিথি চলে গেল। আজকে যেহেতু রবিবার তাই নিলয়ের অফিস ছুটি। বেলা দশটার সময় ঘুম থেকে উঠল তারপর বেড টি সেবন করে,,,,, ওয়াশ রুমের দিকে গেল। কিন্তু ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকা মাত্র,,,, নিলয় চিৎপটাং হয়ে গেল।

-:আআআআআআআআআ মাআআআআআ।।(ব্যথায় কাতরাচ্ছে)

নিলয় চিৎকার শুনে বাড়ির সমস্ত কাজের লোক নিলয় ঘরে এসে হাজির হলো তিথী ও সঙ্গে ঘরে ঢুকলো এবং নিলয় কে দেখে বলতে লাগল;

-: হায় আল্লাহ,,এই অবেলায় বাথরুমে বসেই মা কে স্মরণ করতে হলো।আচ্ছা আর কি কোন জায়গা পেলেন না মার কথা মনে করার জন্য,,,, মানছি মাকে সবাই ভালবাসে তাই বলে বাথরুমে।

-: তিথি ফাজলামো হচ্ছে আমার সাথে।আমি এখানে পড়ে গিয়েছি,, ব্যথা পেয়েছি,, আর তুমি ওখানে আমার সাথে মশকরা করছ।।আগে বল আমার বাথরুমে সাবান জল আসলো কোথা থেকে। (রেগে চিৎকার করে বলে উঠলো)

নিলয়ের কথা শুনে সবাই চুপ করে রইল আর তিথী ও একদম মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।নিলয় এবার চিৎকার করে উঠলো;

-: জিজ্ঞেস করছি তো আমি কিছু,,,,আমার ঘরে সকালবেলা কে এসেছিল।

-: স্যার আপনার ঘরে তো সকালবেলা করে প্রতিদিন শেফালী ই কফি দিয়ে যায়।। কিন্তু আজকের তিথি ম্যাম বললেন যে তিনি আজ নিজের হাতে আপনার জন্য কফি নিয়ে যাবেন।(একজন সার্ভেন্ট বলল)

সার্ভেন্ট দের কথা শুনে নিলয়ের বুঝতে বাকি রইল না এই মহৎ কাজটা কে করেছে। নিলয় রাগী চোখে তিথির দিকে তাকিয়ে রইল আর তিথি অসহায় ভাবে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে রইল।। তারপর নিলয় সার্ভেন্টদের সহায়তায় খাটে বসল এবং সবাইকে চলে যেতে বলল।।তিথি যেই মাত্র বাইরে বের হবে,,ঠিক তখনই নিলয় রাগী স্বরে বলে উঠলো;

-:তোমাকে আমি যেতে বলেছি??চুপচাপ এখানে দাড়াও,, আর আমার সামনে এসো,,,,হারি আপ।।

তিথী অসহায় ভাবে কিছুক্ষণ নিলয়ের দিকে তাকিয়ে থাকল,,,তারপর গুটি গুটি পায়ে নিলয়ের এদিকে এগোতে লাগবে।
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-০৩

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-৩??

?
.
.
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে নিলয় অবাক হয়ে গেল। কারণ নিচে বসার রুম থেকে প্রচন্ড চিৎকার-চেঁচ্চামিচির আওয়াজ আসছে। নিলয় রুম থেকে বসে, শুনে যা মনে হল দারোয়ানের সাথে কারো একজনার কথা কাটাকাটি হচ্ছে। তাই আর দেরি না করে ঝটপট ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে লিভিংরুমের উদ্দেশ্যে রওনা হল। নিচে নেমে নিলয় যাকে যাকে দেখল,,,,তাকে দেখে প্রথমে একটু অবাক হলেও পরে আবার তার দিকে তাকিয়ে একটু বাঁকা হাসি হাসল,,,,তারপর তার উদ্দেশ্যে বলল-;

-: আরে এ যে দেখছি মিনিস্টার সাহেব।তা এত সকাল বেলা আমার বাড়িতে আপনার পদধূলি কি কারনে পারল,,,তা জানতে পারি।

-: হাউ ডেয়ার ইউ।আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করার সাহস তোমাকে কে দিলো।জলদি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দাও আমার কাছে।

-: হোয়াট আপনার মেয়ে কিডন্যাপ হয়ে গেছে। কখন,,,কবে,,,আমিতো জানি না। তা কিডন্যাপ হয়ে গেছে,,,,,নাকি কোনো আসিকের সাথে পালিয়ে গেছে।(বাঁকা হেসে)

-: নিলয়য়য়য়য়য়য়।(রেগে চিৎকার করে বললো মিনিস্টার)

-: আওয়াজ নিচে,,,,ভুলে যাবেন না এটা আমার বাড়ি,,,,আপনার নয়।

-:২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার মেয়ে যেন সুস্থ ভাবে আমার বাড়িতে পৌঁছে যায়।। নইলে আমি পুলিশি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।।

-: কি প্রুফ আছে যে আপনার মেয়েকে আমি কিডন্যাপ করেছি। আর এইসব পুলিশের ভয় আমাকে দেখাবেন না,,,,,লাস্টে পুলিশকে ডাকতে গিয়ে না আপনার পাপের হাঁড়ি ফেঁটে যায়।

মিনিস্টার ভালোভাবেই বুঝতে পারল যে,,,, নিলয়কে ভয় দেখিয়ে কোনভাবেই তার মেয়েকে পাওয়া সম্ভব নয়,,,,,একমাত্র যদি না নিলয় নিজে তার মেয়েকে তার কাছে ফিরিয়ে দেয়। তাই তিনি গলার সুর পরিবর্তন করলেন এবং বললেন-;

-: দেখ নিলয় তোমার কত টাকা চাই তুমি আমাকে বল।।আমি তোমাকে তত টাকাই দিব,,,,তবু আমার মেয়েকে তুমি আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।

-: নিলয় চৌধুরীকে টাকার গরম দেখাবেন না। আর আমার সেরকম কিছুই চায় না। আর আমার কি চাই তা আপনি খুব ভাল করেই জানেন।
.
.
তারপর নিলয় মিনিস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে তার কানের কাছে মুখ এগিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল-;

-: আপনি যে ৯০ জন বৃদ্ধের পেনশন আটকে রেখেছেন তা তাদেরকে ভালই ভালই দিয়ে দিন। তারপরে আমার কাছে আসবেন,,,,দেখি তখন আপনি আপনার মেয়েকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারেন কিনা।(শান্ত কন্ঠে বলল নিলয়)

-: কিন্তু সে তো অনেক ঝামেলা। সেগুলো মেটাতে মেটাতে তো মিনিমাম সাত থেকে আট দিন সময় লাগবে। তুমি বরং আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও,,,,আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি তাদের পেনশন আর আটকে রাখব না।
.
নিলয় কিছুটা বাঁকা হেসে আবার ফিসফিসিয়ে বলল-ততদিন না হয় থাক আপনার মেয়ে আমার কাছে। আপনি বরং ঝটপট কাজটা সেরে নিন,,,,হ্যাঁ কি বলেন।
.
.
তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মিনিস্টার এবং তার সাথে আশা মানুষদের উদ্দেশ্যে বলল-;

-: এবার আসতে পারেন আপনারা। আর যদি ব্রেকফাস্ট করার ইচ্ছা থাকে তাহলে চলুন ডাইনিং টেবিল।
.
.
মিনিস্টার আর কোন কথা না বলে চলে গেলেন।কারণ তিনি ভালোভাবেই জানে,,,,যতক্ষণ না নিলয় তার কাজ হাসিল করতে পারছে,,,,,, ততক্ষণ না তার মেয়ে তার কাছ থেকে নিস্তার পাবে না।।তাই যত দ্রুত সম্ভব কাজটা করতে চাইছে,,,,তাতে তার মেয়ে তার কাছে ফিরে,,তত দ্রুত আসবে।।এমনিতেই তার স্ত্রী তার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে,,,মেয়ে,,মেয়ে করে।
.
?
.
.
এদিকে তিথি সকাল থেকে ঘরে বসে আছে,,, আর ভাবছে মনে মনে,,,, দুর নটা বেজে গেল অথচ কেউ তাকে ডাকল না খাওয়ার জন্য।।সেই রাতে একটুখানি খাবার দিল ব্যাস হয়ে গেল,,, ডিসগাস্টিং ব্যাপার-স্যাপার। এসব ভাবছে তখনই দরজা খোলার আওয়াজ পেল।।দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা মধ্যবয়স্ক মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল-;

-: স্যার আপনাকে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে বলেছে,,ব্রেকফাস্ট এর জন্য।
.
.
ব্যাস তিথিকে আর পায় কে। সে তো কখন থেকে বসে আছে ব্রেকফাস্ট এর জন্য তাই বলার সঙ্গে সঙ্গে সেই মেয়েটির সাথে সে নিচে নামল।।
নিচে নেমে সে হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছে,,,বাড়িটা বেশ বড়,,ডুপ্লেক্স বাড়ির মতোনই।চারিদিক বেশ ছিমছাম পরিষ্কার করে সাজানো।নিচে বড় হল রুম,,একদিকে সোফা সেট রাখা আছে বসার জন্য আর সামনে একটা বড়ো সেন্টার টেবিল আর তার ঠিক সামনে বড় একটা টিভি।।আর একদিকে রান্নাঘর আছে,,,তার সামন বরাবর বড় ডাইনিং টেবিল পাতা আছে।।রান্নাঘরটা বেশ বড় এবং খোলা।। অর্থাৎ বাইরে থেকে দেখা যাবে রান্না ঘরে কি কি আছে।। তিথি দেখলো নিলয় অলরেডি ডাইনিং টেবিলে বসে আছে,,,,তাই সে দেরি না করে ধপাস করে নিলয়ের পাশের চেয়ারে বসে পড়ল।।আচমকা এরকমভাবে বসে পড়ার জন্য টেবিল টা একটু কেঁপে উঠল,,,তার সাথে নিলয় ও।। নিলয় তিথির দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল-;

-: এই মেয়ে তুমি কি আস্তে আস্তে কোন কাজ করতে পারো না।।।সারাক্ষণ ব্যাঙের মতো তিড়িং বিড়িং করে লাফাও কেন।।

-: শুনেছি জন্ম আমার বর্ষাকালে হয়েছে,,,,তাই হয়তো ব্যাঙের DNA আর আমার DNA এর মধ্যে অনেক মিল আছে।

-: হোয়াট রাবিশ। এই..এই তুমি কি কোনদিন ভালো কথা বলতে শিখোনি,,,উফফ তোমার সাথে কথা বলতে আমি আর চাই না,,,সো চুপচাপ ব্রেকফাস্ট কমপ্লিট করো।
.
.
এই বলে নিলয় ব্রেকফাস্ট শুরু করলো।।কিন্তু তিথি ব্রেকফাস্ট এর দিকে তাকিয়ে জোরে চেঁচিয়ে উঠল,,,নিলয় থতমত খেয়ে গেল তিথির অমন চিৎকারে। আর উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল-;

-: কি হয়েছে!!!!!

-: মাত্র চারটে বাটার টোস্ট,,এক গ্লাস জুস আর ২ টা ডিম সেদ্ধ।।বেস এই টুকু,,,এই আপনি এতো কিপটুস কেন বলুনতো।।ভালোই তো কিডনেপিং এর টাকা দিয়ে এত সুন্দর বাড়ি ঝেপে নিলেন।।আর খাওয়ানোর বেলায় যত রাজ্যের কিপটামি। কাল রাতে তো শুধুমাত্র চারটে পরোটা আর একবাটি কষা মাংস দিছেন।আর সারাদিন না খাইয়ে রেখেছেন।। আর সকালবেলা এটুকুনি ব্রেকফাস্টে কারোর পেট ভরে।।উগন্ডা একটা।।???

-:নিলয় পুরো ???????
তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে সার্ভেন্ট কে ডাক দিল।। আর বলল-

-: শোনো এর যা যা লাগবে বানিয়ে নিয়ে এসো,, কুইক।

-: ওকে স্যার,,বলুন ম্যাম।।(সার্ভেন্ট)

-: আচ্ছা আমার জন্য এক প্লেট হোয়াইট সস পাস্তা আর এক প্লেট গ্রিন সালাদ আর হ্যাঁ এক গ্লাস ম্যাঙ্গ মিল্কশেক। আর এই ব্রেকফাস্টটা থাক তুমি এত কষ্ট করে বানিয়ে নিয়ে এসেছ,,, না খেয়ে থাকা যায় বল। তুমি যাও।

-: সার্ভেন্ট ?????
-:নিলয়???????
এইটুকুনি মেয়ের পেট তো নয় যেন একটা আস্ত বড় জলের ট্যাংকি।।(মনে মনে বলল নিলয়)

-: এবার বোঝো ঠেলা,,,,আমাকে আটকে রাখা তাও আবার বিনা দোষে।। এমন হাল করব না যে,, কাল সকালের মধ্যে আমাকে আমার বাড়িতে নিজে রেখে আসবে। একদিনই ফকির বানিয়ে দেবো।হুম আমার নাম ও তিথি নয়।????(মনে মনে বলল তিথি)

-: কি ভেবেছো,,,আমি কিছু বুঝিনা এসব তোমার চালাকী।।নাও নাও যত ইচ্ছা খাও,,,কিন্তু আমার কাজ যতদিন না পর্যন্ত শেষ হচ্ছে তোমাকে এখান থেকে মুক্তি পেতে দেবো।ইটস চ্যালেঞ্জ।??? (মনে মনে বলল নিলয়)
.
?
.
.
তিথি প্রায় দু ঘন্টা যাবত ঘরের এ মাথা থেকে ওমাথা চোরকি পাক খাচ্ছে। নিলয় অনেকক্ষণ আগেই অফিসে চলে গিয়েছে আসবে নাকি সেই সন্ধ্যেবেলা।।তিথি আঙুলের নখ খাচ্ছে,,,,আর ভাবছে সে কি করবে লোকটা তো তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিল,,যতক্ষণ না তার কাজ শেষ হবে না,,,,ততক্ষণ পর্যন্ত সে তাকে ছাড়বে না।।।।কিন্তু এদিকে বাড়ির লোক তো তার জন্য টেনশনে টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে হয়তো।। নিশ্চয়ই মামার বিপি মনে হয় ফল করে গেছে,,,আর টাকলু মামা তার মাথায় নিশ্চয়ই আইসবাগ দিয়ে বসে আছে।।আর মামী হয়তো মামার টাকলু মাথায় ফ্যান নিয়ে হাওয়া করছে।।এখন কি করা যায়,,,, তাদের একবার না জানলে তো তারা টেনশন করবে।।হয়তো পুলিশেও জানিয়ে ফেলবে,,এক কাজ করি একটা ফোন করে বরং জানিয়ে দি।
.
.
তিথি আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামল এবংআশেপাশে চারিদিকে খুঁজে কিছু পেল না,, তাই সে রান্নাঘরের দিকে গেল।।গিয়ে দেখলো সার্ভেন্টস রা দুপুরের জন্য খাবার রান্না করছে।। সে একটা সার্ভেন্ট এর কাছে গেল এবং তার কাছ গিয়ে বলল-;

-:ফোন আছে।

সার্ভেন্টটা কিছুক্ষণ তিথির দিকে তাকালো,,,,তারপর বলল-;

-:সরি ম্যাম,স্যার নিষেধ করেছে আপনাকে কোনরকম ফোন দিতে।

তিথি তখন বলল-: আরে চাচা কোনরকম ফোন দিতে হবে না,,,যেকোন একটা ফোন দিলেই চলবে।।প্লিজ দিন না খুব দরকার।

-: সরি ম্যাম স্যার বারণ করেছে।।

-:রাখ তোর স্যারের নিকুচি করেছে।দিতে হবে না তোর কোন ফোন যত্তসব আউলা-ঝাউলা।(মুখ ভেংচিয়ে তিথি চলে গেল)

তারপর তিথি মনে মনে নিলয় কে এবং সার্ভেন্টকে হাজার একটা গালি দিয়ে,,,সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নেবে,,,,কি সোফা রুমের পাশে দেখল একটা ল্যান্ডফোন রাখা আছে।।ব্যাস তিথিকে আর পায় কে ঝপাং করে সেখানে গিয়ে,, ফোনটা হাতে নিয়ে প্রথমে মামার নাম্বার ডায়াল করল,,কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে একজন ভদ্রলোক ফোনটা রিসিভ করল,, তারপর উত্তেজিত এবং চিন্তিত কণ্ঠে বলে উঠলেন-;

-: হ্যালো কে বলছেন।।

-: মামা আমি,,আমি তিথি বলছি।।

তিথির কন্ঠটা শুনে তার মামা মনে হয় একটু নিশ্চিন্ত হলেন,,তারপর বললেন-;

-:তুই….তুই কি আমাকে কোনদিনও শান্তি দিবি না ।।কোথায় গিয়েছিস তুই,,,ফোন ফেলে দিয়েছিস কেন বাড়িতে।।আর সারারাত কোথায় ছিলিস,,চারিদিকে খুঁজে খুঁজে পাগল হয়ে গিয়েছি,,সে খবর রাখিস তুই।

-:উফ্ মামা বেশি টেনশন করো না।।নাইলে বিপি বেশি লো হয়ে গেল তুমি টাটা বাই বাই হয়ে যাবে জন্মের মত।।

-:হ্যাঁরে তোর লজ্জা করে না নিজের মামার মৃত্যু কামনা করিস।আর তুই কোথায় বল দেখি।।

-:আরে মামা আমি মিতুর সাথে একটু ঘুরতে বেরিয়েছি।।সুতরাং আসতে মিনিমাম ৮ থেকে ৯ দিন লাগবে,,,,,তুমি বেশি টেনশন করো না।ফোন নিয়ে আসেনি বলে রাস্তার পাশের টেলিফোন থেকে ফোন করছি।।এই ফোনে আর ফোন দিও না কারণ এটা আমার ফোন নয় এটা টেলিফোন বুথের নাম্বার।।

-: তুই আবার কখন,,কোথায়,,ঘুরতে গেলি।। আমাকে তো কিছু বললি না।।তুই সব সময় এরকম কেন করিস,কোথায় ঘুরতে চলে গেছিস।

-:আরে মামা খুব গরম পড়েছে না,,,তাই দার্জিলিং ঘুরতে এসছি।

-: দার্জিলিং…. তুই দার্জিলিঙে চলে গেছিস!!!

-: উফ মামা তুমি মামীকে ফোনটা দাও তো।

কিছুক্ষণ পর ওর মামা তিথির মামি ফোনটা ধরি দিল।

-:হ্যাঁ রে মামনি তুই নাকি দার্জিলিং গেছিস।তা আমার জন্য একটা ভালো দেখে সোয়েটার আনিস তো,,আমারটা অনেক দিনের পুরনো হয়ে গেছে।।আমি বরং তোকে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি,,তুই তো বেশি টাকা নিয়ে যাস নি।(খুশিতে গদগদ হয়ে মামি বলল)

-:আরে….আরে মামি টাকা পাঠাতে হবে না। তোমার জন্য আমি নিয়ে আসব সোয়েটার,,আমার কাছে টাকা আছে।।তুমি বরং তোমার টেকো জামাইকে সামলাও।

পাশ থেকে তিথি মামা চেঁচিয়ে উঠলো-;

-: দেখছো তোমার ভাগ্নির কান্ড।।আমাকে টেকলো বলছে।আর তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছো।

-: আহ টেকো কে টেকো বলবে না তো কি বলবে শুনি।তুমি চুপ করে তো।।(বিরক্ত কন্ঠে)

-:আচ্ছা মামি অনেক হয়েছে,,রাখছি আর আমার যখন টাইম হবে আমি যোগাযোগ করে নেব।। আমার কাছে ফোন নেই তাই ফোন করোনা।আর মিতুর ফোনটা ও খুব ডিস্টার্ব করছে।

-:ওকে রাখছি। সাবধানে থাকিস।

-: বাই।।

বলে তিথি ফোনটা রেখে দিল।তারপর মিতুকে ফোন করে বলল যে তার মামা যদি তাকে ফোন করে সে যেন বলে যে সে আমার সাথে দার্জিলিং এ আছে। তারপর মিতুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে উপরে চলে গেল। আর মনে মনে ভাবল এবার বুঝবে আপনি,,নামটা কি যেন ও বলেইনি তো নামটা,,সে যাই হোক আপনার অবস্থা আমি টাইট করেই ছাড়ব।।এন্ড ইটস তিথির চ্যালেঞ্জ।। খচ্চর পোলা একটা।।
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-০২

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-২??

?

নিলয় কিছু বলতে যাবে কি তার আগে নিলয়ের ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। একবার তিথির দিকে তাকিয়ে ফোনটা রিসিভ করল। ফোনের অপর পাশ থেকে রাফি বলল,-

-: স্যার মিনিস্টার এর মেয়ে বলছে তার নাকি খুব গরম লাগছে এখানে নাকি এসির ব্যবস্থা করতে হবে।নইলে সে খাবে না।

-: তাই নাকি। (কিছুটা বাঁকা হেসে নিলয় বলল)
আজকে রাতে তার জন্য যে খাবারের ব্যবস্থা করেছিস সেটা বরং তোরা খেয়ে নে। তাকে দিতে হবে না।একদিন না খেয়ে থাক তাহলেই বুঝবে কত ধানে কত চাল।

বলে ফোনটা রেখে দিল নিলয়। তার পর তিথির দিকে তাকিয়ে বলল-

-: এই মেয়ে শোনো ভালো করে আমার কথা, এখানে থাকতে হলে চুপচাপ থাকবে,আমার কথা শুনবে। নইলে তোমার অবস্থাও মিনিস্টারের মেয়ের মত হবে। ইস দ্যাট ক্লিয়ার।(কিছুটা রেগে নিলয় বলল)

-: আরে রাগ তোর ক্লিয়ার ফ্লিয়ার। চুপচাপ খেতে দে।আমার খুব খিদে পেয়েছে।না খেতে দিতে পারলে না তোর যা অবস্থা করবো তুই নিজেও ভাবতে পারবি না।(কিছুটা রাগের অভিনয় করে তিথি বলল)

-: এই মেয়ে কখন থেকে তুমি আমাকে তুই তুই করে বলে যাচ্ছ। মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেই ভদ্রতাটুকু তুমি শেখোনি। বাড়ির লোক তোমাকে কি শিখিয়েছে।(রেগে নিলয় বলল)

-:ভালো মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা বাড়ির লোক শিখিয়েছে। কিন্তু একজন কিডনাপারের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা বাড়ির লোক আমাকে শেখায় নি। ঠিক আছে বয়স কতো আগে শুনি।

-: মানে আমার বয়স জেনে তুমি কি করবে। (কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে নিলয় বলল)

-:আরে গাধু আগে জেনে নেব না তুই আমার থেকে কত বড়। তারপরে তো তোকে তুমি করে বলবো। শোন যদি তুই আমার বয়সের থেকে তিন বছরের বড় হস, তাহলে তোকে আমি তুই করেই বলব।আর যদি তার থেকেও বেশি বড় হস তাহলে আমি তোকে তুমি করেই বলবো। এবার খুশি।

নিলয় তিথির কথা শুনে কি রিয়াক্ট করবে কিছু ভেবেই পাচ্ছে না।তাই কিছুক্ষণ তিথির দিকে তাকালো তারপরে বলল-

-: তুমি আমার বয়স যেনে তারপরে আমাকে তুমি করে বলবে।(ভ্যাবলাকান্তর মত তাকিয়ে থাকলো নিলয় তিথির দিকে)

-: উফ্ পোলা তো দেখছি বকরবকর করেই যাচ্ছে। তোর বয়স বলতে ইচ্ছা করলে বল,নইলে তুই থাক।আমার খুব খিদে পাচ্ছে খাবার ব্যবস্থা জলদি কর।

-: এই মেয়ে চুপচাপ বসে থাকো, আমি এক্ষুনি খাবার ব্যবস্থা করছি। আর আমার বয়স ২৬। তোমার থেকে আমি গুনে গুনে ৮-৯ বছরের বড় তো হবই। তুমি আমাকে তুমি করেই ডাকবে।

-:??? এত বড় আপনি। আমার তো মোটে ১৭ বছর বয়স।

-:?????

-: আজ থেকে আপনাকে আপনি করেই ডাকতে হবে। এত বড় একজন মানুষকে তুই করে বা তুমি করে ডাকা উচিত নয়।

-: অতটাও বেশি বয়স নয় আমার।???

এই বলে নিলয় আবার ফোন হাতে নিল এবং একজনকে ফোন করে বলল যে-

-: শোনো গেস্টরুমে ডিনারটা পাঠিয়ে দাও। হারি আপ।

এই বলে নিলয় নিজের রুমে চলে গেল, গেস্ট রুমের দরজাটা বন্ধ করে। তারপর সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে গেস্ট রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেল। গিয়ে দেখল সার্ভেন্ট প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে দরজার পাশে।নিলয় সার্ভেন্টের হাত থেকে প্লেটটা নিল এবং দরজাটা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো। তারপর তিথির সামনে খাবারটা রেখে,তিথি কে বলল-

-: নাও খেয়ে নাও।

-: এই আপনি কোন স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন বলুনতো।

-: কেন (কিছুটা অবাক হয়ে নিলয় উত্তর দিল)

-: এত বড় ধামসা ছেলে হয়েও এইটুকুনি কমন সেন্স নেই যে হাত-পা,চোখের বাঁধন না খুললে খাবার খাবে কি করে মানুষ। আর তাছাড়া হ্যান্ডুওয়াশ দিয়ে হাত না ধুয়ে খাবার খেতে নেই আপনি জানেন না। এই আপনার মতলব কি বলুন তো আপনি কি চান আমার করোনাভাইরাস হোক।

-: উফ কি মেয়ে রে বাবা, আমাকে একদিনেই পাগল করে ছাড়লো।এই এই মেয়ে চুপ করে থাকতে পারো না ।আমি খুলে দিচ্ছি তোমার হাতের বাঁধন পায়ের বাঁধন। দয়া করে একটু চুপ করো যত্তসব ভালো লাগেনা।(দাঁতে দাঁত চেপে বললো নিলয় )এইসব লোকেদের কাজে রাখতে আছে নাকি, ভুলভাল মানুষকে তুলে আনে আর যত প্যারা আমাকে পোয়াতে হয় যত্তসব।

এই বলে নিলয় তিথির হাতের বাঁধন এবং পায়ের বাধন খুলে দিল।সবার শেষে চোখের বাঁধন খুলে তিথির দিকে তাকিয়ে নিলয় হাঁ হয়ে গেল এমন ও মেয়ে হয়। নিলয় তো খেয়ালই করিনি এতক্ষন যে তার সামনে জলজ্যান্ত একটা মায়াপরী বসে আছে। হরিণীর মতো কাজলনয়না দুটি চোখ,আর্চ করা ভ্রু যেন চোখের উজ্জ্বলতা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। তার গভীর চোখের রহস্য ভেদ করা যেন সাধারন মানুষের কাম্য নয়।দুধে আলতা গায়ের রং এ যেন উপচে পড়ছে তার সৌন্দর্য।আর ডান গালে, ঠোঁটের নীচে মাঝ বরাবর জায়গার আর গলার নীচের তিল টা যেন তার সৌন্দর্যকে আরও একধাপ উপরে নিয়ে গিয়েছে। দুদিকে বাধা ঘন কালো কেশরাশি, বসা অবস্থাতেই কোমর ছুঁয়ে যাচ্ছে। উফ এ কোন রাজ্যের মায়াপরীকে আমি দেখছি,আমি যে হারিয়ে যাচ্ছি তার এই মায়াময় চেহারায়। চোখেমুখে এখনো তার বাচ্চা-বাচ্চা ছাপটা রয়েই গেছে। কতই বা হবে বয়স তার ১৬ কিংবা ১৭। আমি যে প্রথম দেখাতেই তার মায়ার জালে আটকে পড়ছি। যে মায়া থেকে নিস্তার পাওয়া অতটাও সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে না। নিলয় এক ধ্যানে তিথির দিকে তাকিয়ে এসব কথা ভেবছিল। তিথির ডাকে তার ধ্যান ভাঙ্গল।

-: আর ও মশাই আপনি কোথায় হারিয়ে গেলেন। আমার মুখে কি সিনেমা দেখতে পাচ্ছেন যে, এরকম ক্যাবলাকান্তের মত তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। জানি আমি দেখতে সুন্দর সবাই তাই বলে আমাকে।(কিছুটা ভাব নিয়ে তিথি বলল)

-: কি তুমি আর সুন্দর।হাউ ফানি নিজের রূপ টা নিয়ে একবার আয়নায় ভালো করে তাকাও। আর কি বললা তুমি আমি ক্যাবলাকান্ত, ওকে নো খাওয়া-দাওয়া ঘুমাও তুমি শুধু পানি খেয়ে যত্তসব।

এই বলে নিলয় উঠে দাঁড়িয়ে, খাবারের প্লেটটা হাতে নিতে যাবে কি,তখনই তিথি খাবারে প্লেটটা ছো মেরে নিয়ে নিল। আর বলল-

-: সরি সরি আর হবে না।বিশ্বাস করুন পেটের মধ্যে অলরেডি চারবার ইঁদুর দৌড় হয়ে গেছে। আমি আর চাইনা ইঁদুর দৌড়াক আমার পেটে। আমার খুব খিদে পেয়েছে। ওয়াশরুম টা কোথায় একটু বলবেন প্লিজ।

নিলয় হাতের ইশারায় ওয়াশরুম টা দেখিয়ে দিল তারপর তিথি ঘরের সাথে লাগোয়া ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেল।তারপর ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো আর নিলয় সোফায় বসে তিথিকে দেখতে লাগল। আর মনে মনে ভাবতে লাগল কি আছে তোমার মধ্যে যে একদিনেই এক মুহুর্তের মধ্যে নিলয় চৌধুরীকে বশ করে নিলে। এই কথাগুলো ভেবেই নিলয় নিজের মনে হেসে ফেলল। যে নিলয়ের মনে অনুভূতির ছিটাফুটোও ছিল না, সেই নিলয় কে এই মেয়ে তার মায়ার জালে ফেলে দিল,তাও আবার একদিনেই, ভাবা যায়।যাকে বলে #love at first sight। তারপর তিথির খাবা হলে প্লেটটা হাতে নিয়ে নিলয় সবেমাত্র বেরোতে যাবে কি,তিথি পিছন থেকে নিলয় কে ডাক দিল।

-: শুনুন একটু।

-:what!! দেখো তোমার ফালতু কথা শোনার জন্য এখন আমার সময় নেই। আই এম টু টায়ার্ড সো লেটস স্লিপ।

-: প্লিজ দুই মিনিট একটু শুনুন আমার কথা।

-: জলদি বলো। ইউ হ্যাভ অনলি ফাইভ মিনিটস।

-: বলছি কি আপনার গুন্ডা গুলোতে এক নম্বরে বলদ মার্কা,ভুল করে একটা ভালো বাচ্চা মেয়েকে তুলে এনেছে।তার ওপর সারা দিন খেতে দেয়নি, এই রাত দুপুরে খেতে দিলেন আপনি।বলছি কি আমার বাড়ির লোকতো টেনসন করছে আমাকে নিয়ে তাইনা।আমাকে একটু বাড়িতে পৌঁছে দেন না দয়া করে।প্রমিস করছি আমি কাউকে বলবো না যে আপনারা কিডনাপার নামের কলঙ্ক একটা কিডনাপ ও আপনারা ঠিক মতো করতে পারেন না। আর যেন কেউ আপনাদের ঘুষ দিয়ে কিডন্যাপ করানোর জন্য ফালতু টাকা নষ্ট না করে। প্লিজ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।(এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলল তিথি)

-: জাস্ট শাট আপ।(প্রচন্ড রেগে চিল্লিয়ে বলল নিলয়) নো মোর ওয়ার্ডস।কোথাও যাওয়া হবেনা তোমার।যতক্ষণ না আমার কাজ সাকসেসফুল হচ্ছে।ডু ই হিয়ার হোয়াট আই সে।

-:হ্যাঁ…হ্যাঁ শুনেছি শুনেছি সব শুনেছি। ঠিক আছে আমি এখানেই থাকবো,চিন্তা নেই আপনার।

প্রচন্ড ভয়ে তিথি বললো।আসলে তিথি বুঝতে পারিনি নিলয় এতটা রেগে যাবে।চোখ বাঁধা অবস্থায় যখন নিলয়ের কথা শুনছিল তখন অতটাও ভয় লাগেনি তিথির।কিন্তু সামনা সামনি নিলয়ের রক্তিম লাল চোখ দেখে মুহূর্তেই বীরনারীর হাওয়া ফুস হয়ে গেছে। নিলয় আর কিছু না বলে রুমের দরজা বাইরে থেকে লক করে নিজের রুমে চলে গেল। এইদিকে তিথি কি করবে ভেবে না পেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল বেডের উপর। সকালবেলা নিলয় ঘুম থেকে উঠে অবাক হয়ে গেল!!

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-০১

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন ??
#পর্ব-০১
#মেঘ পরী

-:উম্….উম্

-:এই মেয়ে চুপচাপ বসে থাকো।বেশি নড়াচড়া করবে না।

পাশ থেকে অপর আর একটা লোক বলল-

-:বস কখন আসবে?

-:আর আধ ঘন্টার মধ্যেই চলে আসবে।

-:উম্….উম্

-:উফ্ জ্বালাতন কোরে ছারলো দেখছি মেয়েটা।(প্রথম লোকটি)

-: মুখের বাঁধন খুলে দিই বরং,দেখি কি বলে।(দ্বিতীয় লোকটি)

-:বস কিছু বলবেনা তো।

-:আরে আমরা তো শুধু মুখের বাঁধন খুলব।

-:তাহলে তাই কর।

এরপর মেয়েটির মুখের বাঁধন খুলে দিল।খুলে দেবার সাথে সাথে মেয়েটি চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

-:এই কে তোরা।আমাকে এই ভাবে বেঁধে রাখার সাহস কি করে হলো।জানিস তোরা আমি কে। একবার এখান থেকে ছাড়া পায় এক এক টা কে যদি জেলের ভাত না খাওয়াতে পারি তো‌ আমার নাম তিথি নয়, দেখে নিশ।

-: উফ কান ঝালাপালা করে দিল মেয়েটা। এইজন্য আমি এর মুখটা খুলতে চাইছিলাম না, দেখলি তো।

-:আমি কি জানতাম নাকি এত বকবক করবে।(অসহায় মুখে বলল দ্বিতীয় লোকটি)

-: এই এই আমার হাতের বাধন খোল জলদি।উফ্ হাতটা যন্ত্রনায় ছেড়ে যাচ্ছে রে। আরে মুখ পোড়া বাঁদর খুলনা তারাতাড়ি আমার হাত তা।

-: দেখুন ম্যাডাম আপনি চুপচাপ একটু বসে থাকুন।আমাদের বস এক্ষুনি আসবে।আর হাতের বাধন খুলার পারমিশন আমাদের নেই। তাই বলছি নিজের ভালোর জন্য চুপচাপ থাকুন।

-:এই কে রে তোদের বস। একবার শুধু আমার হাত আর চোখের বাঁধন টা একবার খুলে দেখ শুধু। তারপর দেখ তোর কি করি। তোদের বস সাথে তোদের এমন হাল করব না, যে 10 দিন বেড থেকে উঠতে পারবি না‌। ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন আমি।ব্লেক বেল্ট পেয়েছি আমি।(তিথি)

আর কিছু বলার আগেই,প্রথম লোকটার ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।ফোনটা ধরে কিছুক্ষণ কথা বলার পর দ্বিতীয় লোকটিকে বলল-

-:রাফি বস চলে এসেছে। এক্ষুনি এই মেয়েটার মুখ টেপটা লাগিয়ে দে।

-:হুম। এরপর মুখের টেপটা লাগিয়ে দিল।

?

কিছুক্ষণ পর নিলয় চৌধুরী ঘরে প্রবেশ করল। [নিলয় চৌধুরী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন একবার। নিলয় চৌধুরী দ্যা চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির একমাত্র ওনার। বাবা-মা ছোটবেলায় কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে।ছয় ফিট লম্বা, গায়ের রং ফর্সা, চুলগুলো সিল্কি কপাল ছুঁয়ে যায়,বয়স ২৬,ঠোঁটের রং টকটকে লাল,দেখলে মনে হবে যেন কেউ লিপস্টিক পরিয়ে দিয়েছে। প্রচন্ড বদমেজাজি এবং রাগী স্বভাবের লোক। যেটা একবার চাই সেটা নিয়েই ছাড়ে যেকোনো মূল্যে। সবসময় অ্যাটিটিউড নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তার এই কিলার মার্কা রূপ দেখে সব মেয়েরাই ঘায়েল। নিলয় চৌধুরী এই রূপটার সাথে সবাই পরিচিত হলেও আরো একটি রূপের সাথে খুব কম সংখ্যক মানুষই পরিচিত। আর সেটা হল নিলয় চৌধুরী আন্ডারওয়ার্ল্ড একজন নামকরা মাফিয়া। দেশের যেখানে যেখানে কালোবাজারি,নারী পাচার, ড্রাগ সাপ্লাই ইত্যাদি হয় সেখানে‌ তাঁর দলের লোকেরা গিয়ে সেই সব ক্রিমিনালদের তুলে আনে এবং নিলয় নিজের হাতে তাদের শাস্তি দেয়। এমনকি কালোবাজারী সাথেযুক্ত মন্ত্রীরাও নিলয় কে দেখে ভয় কাট হয়ে থাকে। সবাই জানে নিলয়ের পাওয়ার কতটা তাই কেউ কিছু বলে না।সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিলয় এবং তার লোকেরা সব সময় রুখে দাঁড়িয়েছে এবং অন্যায়কারীদের শাস্তি দিয়ে এসেছে।চলুন দেখা যাক কেন নিলয় তিথি কে ধরে এনেছে।]

নিলয় ঘরে ঢুকে দেখল একটা ১৬- ১৭ বয়সী মেয়ে চেয়ারে চোখ মুখ হাত বাঁধা অবস্থায় বসে আছে। পরনে তার বেবি পিঙ্ক কালারের বারবি আঁকা টি শার্ট,আর থ্রি কোয়ার্টার জিন্সের প্যান্ট, দুই দিকে চুল বাধা। চুলগুলো বেশ লম্বা লম্বা। মেয়েটাকে দেখামাত্রই নিলয় রেগে গিয়ে লোকগুলোর দিকে তাকাল আর বলল-

-: একটা কাজ ও ঠিক করে করতে পারিস না তোরা। আমি কাকে ধরে আনতে বলেছিলাম।আর কাকে ধরে এনেছিস তোরা।একটা বাচ্চা মেয়েকে। আমি তদেরকে মিনিস্টারের মেয়েকে ধরে আনতে বলেছিলাম,একটা বাচ্চা মেয়েকে নয়।(রেগে চিল্লিয়ে বলল নিলয়)

-:স্যার এইটাই তো মিনিস্টার এর মেয়ে।(ভয়ে ভয়ে রাফি বলল।)

-: তোদের মাথা,ছবিটা ভালোভাবে দেখেছিস।

-: মানে..মানে.আসলে।(রাফি)

-: কী মানে মানে করছি সত্যি কথাটা বল।হারি আপ।

-: আসলে স্যার ছবিটা না হারিয়ে গিয়েছিল।কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন যে পার্কের পাশে যে মেয়েটা একটা লাল রঙের ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে সেটাই মিনিস্টার এর মেয়ে।(সোহেল)

-: জাস্ট শাট আপ। তোদের কোন একটা কমন সেন্স নেই লালব্যাগ যার কাছে থাকবে সেটাই হবে মিনিস্টারের মেয়ে।গাধা একটা।(রেগে চিল্লিয়ে বলল নিলয়)

-: সরি স্যার এখন কি হবে একে কি ওখানে রেখে আসবো।

-: না এখন একে ছাড়লে প্রবলেম হতে পারে। আগে আসল মেয়েটা কে তুলে নিয়ে আয়। তারপর কেসটা সলভ হলে একে ছাড়া হবে। নাহলে প্রবলেম হয়ে যেতে পারে।

-: তাহলে স্যার ঐই মেয়েটাকে কি করব।

কিছুক্ষণ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা চিন্তা করল নিলয়। তারপর বলল একে আমাদের ঘরের গেস্টরুমে সিফ্ট কর। আর আসল মেয়েটাকে ধরে এনে এই ঘরে বেঁধে রাখ। এদের একসাথে রাখলে রিক্স হয়ে যাবে। এই বলে নিলয় চলে গেল। নিলয়ের কথামতো মেয়েটাকে নিলয়ের বাড়ির গেস্ট রুমে নিয়ে গিয়ে রেখে দিল। তারপর তারা মিনিস্টারের মেয়েকে ধরে এনে আবার ওই রুমে বেঁধে রাখল। অবশ্য এবার কোনো ভুল হয়নি তাদের কারণ নিলয় তাদের ফোনে মেয়েটির ছবি দিয়ে দিয়েছিল।

?

এদিকে তিথী চোখ,মুখ, হাত বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছে। আর মনে মনে হাজারটা গালি দিচ্ছে সেই সব লোকেদের যারা তাকে এখানে বন্দি করে রেখেছে। রাত বারোটায় নিলয় ঘরে ফিরে নিজের রুমে প্রবেশ করতে যাবে কি পাশের গেস্ট রুম থেকে গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেল।আওয়াজটা কে অনুসরণ করে গেস্ট রুমের দিকে গিয়ে,দরজা খুলল তারপর লাইট জ্বালিয়ে দেখল যে তিথি হাত পা ছটফট করছে আর গোঙানির আওয়াজ বের করছে। নিলয় মনে মনে ভাবল-

-: ইস মেয়েটার কথা আমি একদম ভুলে গিয়েছিলাম।

এই বলে নিলয় তিথির সামনে বসল এবং তিথির মুখের বাঁধন খুলে দিল। খুলে দিবার সাথে সাথে তিথি চেঁচিয়ে উঠলো-

-: কোন গন্ডার,হাতি,বাঁদর,ইঁদুর,টিকটিকি আমাকে ধরে এনেছিস। সেই কখন থেকে আমাকে বেঁধে রেখেছিস না আমাকে বাড়ি যেতে দিচ্ছিস আর না আমাকে খেতে দিচ্ছিস।শালা খিদেতে আমার পেটে ধুম ধুম আওয়াজ হচ্ছে শুনতে পাচ্ছিস না।

তিথির এরকম কথা শুনে নিলয় ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল ।তারপর মনে মনে ভাবল সত্যি তো আমিতো একদমই ভুলে গিয়েছিলাম, খাবার কথা। কিন্তু তিথির পরবর্তী কথা শুনে নিলয় মুহূর্তেই রেগে যায়।

-: এই বাদুড় তোদের বস কোথায় রে।তাকে তো আমি নর্দমায় চোবাব। আমি শুনেছি তার সব কথা, আমাকে ভুল ভাবে ধরে এনে, আবার আমাকে বেঁধে রেখেছে।যদি না আমি তাকে জেলের ভাত খাওয়াতে পারি,তো আমার নাম ও তিথি নয়।

-: এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না তুমি আমাকে জেলের ভাত খাওয়াবে।তুমি জানো আমি কে।(রেগে চিল্লিয়ে নিলয় বলল)

তিথি এমন হুংকার শুনে কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল তারপর আবার নিজেকে সামলিয়ে বলল-

-:উম্ নিজেই নিজের নাম জানে না আবার আমাকে জিজ্ঞাসা করছে তিনি কে। আগে তুই বল তুই কি জানিস আমি কে। আমি হলাম তিথি,তিথি আহমেদ।ক্যারাটে যানি,ব্ল্যাক বেল্ট আছে আমার। একবার শুধু আমার হাতের বাঁধন খুলে দে, তারপর দেখ তোর কি হাল করি।(কিছুটা ভাব নিয়ে বলল)

নিলয় তো হা হয়ে গেল কিছুক্ষণ এর জন্যে। তারপর কিছু বলতে যাবে কি এমন সময়,-
.
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

পতিতা মেয়ে part -17 last

0

#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_17_last_with_HAPPY_ENDING

আবিদ,আমি সব কিছু পারব ৷শুধু ডেলিভারির সময় তুমি আমার পাশে থেকো,ব্যথার সময় আমি যেন তোমাকে আকড়ে ধরে রাখতে পারি,আর তোমার বুকে মাথা রাখতে দিও,আমাকে একটু তোমার বুকে আগলে রেখো,দেখবে আমি সব কিছু পেরে উঠব৷
–হূম
–আবিদ,থাকবে তো আমার পাশে?
–হুম থাকব,কিন্তু ডেলিভারির সময় কি ডাক্তাররা আমাকে তোমার সাথে ভিতরে ডুকতে দিবে?
–ভিতরে ডুকতে দিবে কিনা ,তা জানিনা তবে তোমাকে আমার সাথে থাকতে হবে,তুমি ডাক্তারদের ম্যানেজ করে হলেও আমার সাথে থাকবি৷প্লীজ এই টুকু করতে পারবে না?
–হুম পারব,আমি আমার পাগলিটার জন্য সব করতে পারব
বলার পরই আনিকা কেমন অদ্ভুদভাবে একটা হাসি দিল৷ওর হাসিটা দেখার পরই কলিজাটা কেমন ঠান্ডা হয়ে গেল৷
মনে মনে বলতে লাগলাম ,,আল্লাহ তূমি কিন্তূ সবকিছুই শুনছো,আর ওর পাশে থাকার,আর আমার পাগলিটা যেন সবকিছু পেরে উঠে তার জন্য তুমি সহায় হও আর ওকে সেই তৌফিক দান করো৷
আস্তে আস্তে ওর ডেলিভারির সময় খুব নিকটে চলে আসল৷আমি সবসময় ওর পাশেই থাকতাম৷কারন কি হয়ে যায় বলা তো যায় না৷আর আনিকার আম্মুও ওর সাথেই থাকত৷
হঠাৎ একদিন অফিসের জরুরি কাজ এসে গেল৷কলিগ ফোন করে জানালো৷আমি তখন খুব কঠিনভাবেই না করে দিলাম,পরিষ্কার বলে দিলাম,আমি অফিসে যেতে পারব না৷ঠিক সেই মুহুর্তেই আনিকা পিছন থেকে আসল৷আর এসেই বলল
–জরুরি কাজ যেহেতু,তোমার যাওয়াই উচিৎ
–দেখো আনিকা,কাজের চাইতেও তুমি আমার কাছে বেশি জরুরি
–হুম,আমি জানি,আর তোমাকে কিন্তূ যেতেই হবে
–কিন্তু যেতে পারব তো?অনেক দিন ধরেই তো বাইরে যাওয়া হয় না
–আবিদ,তুমি এখন সম্পূর্ন সুস্থ,এখনও যদি তুমি আলসেমি করো,তাহলে তো ,তুমি আরও সমস্যায় পড়বে
–আমার কোনো সমস্যা হবে না,কারন….
–কারন কী?
–কারন আমার একজন পাগলি আছে,যে কখনই আমাকে সমস্যায় পড়তে দিবে না
–হুম,এবার যাও
–না
–যাও বলছি
–হুম.কিন্তু তোমার কিছু হলে?
–আমার কিছুই হবে না,আম্মু আছে,আর কোনো প্রবলেম হলেই তোমাকে ফোন দিবো
–হুম
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

তারপর কি আর করার অনেক জোড় করে আনিকা আমাকে অফিসে পাঠিয়ে দিল”যেতে একদমই ইচ্ছে করছিল না৷কারন পাগলিটার ডেলিভারির এখন একদমই লাস্ট স্টেপ৷
যাই হোক,অফিসে চলে গেলাম৷খুব তাড়াতাড়ি
কাজ শেষ করেই ওকে ফোন দিলাম৷কিন্তু ফোন ধরছে না
কয়েকবার ফোন দিলাম৷কিন্তু ফোন বেজেই চলছে৷ ও ফোন ধরছে না৷তখনই হেব্বি ভয় পেয়ে গেলাম৷
বাসার ল্যান্ড ফোনে ফোন দিতেই আনিকার আম্মু ফোন ধরল
–হ্যালো মা,আনিকা কোথায়
–ওরে তো একটূ আগেই দেখলাম ওয়াশরুমে গেছে,তারপর তো আর দেখিনি
–মা,আপনি এখনি ওয়াশরুমে গিয়ে দেখেন,ও আছে কি না
–ঠিক আছে বাবা,আমি যাচ্ছি
বলেই ওনি ,চলে গেল অন্যদিকে আমি লাইনেই আছি,কেন জানি খুব ভয় হতে লাগল৷
হঠাৎই চিৎকারের আওয়াজ শুনেই বুকটা ধুক করে উঠল৷
আনিকার মা তখন ফোনের সামনে এসেই কান্না করে দিল ৷আর বলতে লাগল আনিকা ওয়াশরুমেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে৷
শুনেই মাথাটা ওলট পালট হয়ে গেল৷
ওর আম্মুকে বললাম এখনি তাকে হাসাপাতালে নিয়ে যেতে৷আর তখণ ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে বললাম,সে যেন তাদেরকে ঢাকা হসপিটালে নিয়ে যায়৷
আর আমিও সরাসরি হাসপাতালে চলে গেলাম৷
গিয়েই দেখলাম আনিকা বেডে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে,আর চিৎকার করছে৷ডাক্তাররা পাশেই দাড়িয়ে আছে৷ডাক্তারদের এমন কান্ড দেখে অনেক রাগ হলো,কারন যে জায়গায় আমার কলিজা এত কষ্ট ভোগ করছে,সে জায়গায় তারা চুপ করে দাড়িয়ে আছে৷
ডাক্তারদের সাথে রেগে গেলে আনিকা চিৎকার করে বলে উঠল
–আবিদ(কষ্টে কেমন জানি করছে)
–খূব কষ্ট হচ্ছে তোমার তাই না,দাড়াও এই ডাক্তারগুলোকে এখনি উচিৎ শিক্ষা দিব(কান্না করতে করতে)
–নাআআআ আবিদদদদদদ,আমি তাদের নিষেধ করেছি?(শ্বাস বেড়ে যাচ্ছে)
–কেন
–আমি তোমাকে ছাড়া ডেলিভারির রুমে যাবো না,তুমি আমার পাশে থাকবে
–এই পাগলি,,আমি তো আছিই,আর আমার জন্য তুমি এত কষ্ট করে কেন এখনও এখানেই পড়ে আছো
–আবিদ,আমি তোমাকে ছাড়া ভিতরে যাবো না,আর আমার সাথে তুমি যাবে,আর কোনো পুরুষ ডাক্তার ভিতরে যেতে দিও না আবিদ,প্লিজ
–কিন্তূ এখানে মেয়ে ডাক্তার আছে?
–জানিনা,তবে আমার এই কথাটা প্লীজ পূরন করো
–হুম
এরপরই আনিকা ব্যথায় চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে৷
তখনই বুকটা খা খা করতে লাগল৷মুহুর্তেই ঢাকা সিটি হাসপাতাল থেকে পরিচিত একজন নারী ডাক্তারকে আনা হলো৷
আমাকে ডাক্তার নিষেধ করলেও ,অনেক বুঝানোর পর যেতে দিল৷
আনিকার আবারও জ্ঞান ফিরল৷ও খূব চিৎকার করতে লাগল৷
হঠাৎই আনিকা উল্টো দিক থেকে শোয়া অবস্থায় আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল৷আর বার বার বলতে লাগল
–আবিদ,আমাকে খূব শক্ত করে জড়িয়ে ধরো
সেই মুহুর্তে মূখ দিয়ে কিছুই বলতে পারছিলাম না৷শুধু ঠোট দুটি কাপছিল৷আর চোখ দিয়ে টপটপ পানি পড়ছে,মা হবার যন্ত্রনা যে কতটা কষ্টের,কতটা বেদনার সেটা আমি নিজ চোখে না দেখলে হয়ত কখনই বুঝতাম না৷মা হবার জন্য যে একটা মেয়েকে এতটা কষ্ট ভোগ করতে হয়,সেটা যদি সব স্বামীরা তার স্ত্রীর ডেলিভারীর সময় পাশে থেকে দেখত,আমার মনে হয়,তাহলে কখনই কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে মারা তো দূরের কথা,খারাপ ব্যবহার করতেও দ্বিধাবোধ করত৷সেই মুহুর্তে আমি তখন আনিকাকে নিজের সমস্থ শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম৷
আনিকার ওই কষ্টের মুহুর্তে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কেমন মুচকি মুচকি হাসতে লাগল৷
আর হঠাৎই কেমন কুকড়িয়ে উঠে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল৷
পাশ থেকেই ওয়া ওয়া আওয়াজ আসতে লাগল৷বুঝতে পারলাম আমার সন্তান হইছে৷মেয়ে সন্তান হইছে আমাদের৷একদমই ওর মতই হইছে৷
কিন্তু আনিকা ঠিক আছে তো?
ওর দিকে তাকাতেই কেমন হো হো করে কেদে উঠলাম৷
ডাক্তার তখন আমাকে ধৈর্য ধরতে বললেন৷
সব কিছু পরিষ্কার করা হলো৷প্রায় ঘন্টাখানেক পর ওর জ্ঞান ফিরল৷ওর জ্ঞান ফিরার পর প্রথমেই আমার মেয়েকে কোলো তুলে নিল৷আর আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল৷আর আমি তখন ওর কপালে একটা চূমু দিলাম৷দুজনেই হাসিমুখে হাসছি৷আর আমার মেয়ে ওয়া ওয়া কান্না করছে৷
দুদিন পর
আজকে আনিকাকে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি৷বাসায় যাবার পর আনিকা আমাকে বলে উঠল
–আবিদ,তুমি খূশি হওনি?
আমি তখন ওর মাথায় আবারও একটা চুমু দিয়ে বললাম
–আমার মত খুশি আজ,এই পৃথিবীতে কেউ নেই,
আর আমি আরও খুশি হবো,যদি তুমি আরেকটা কাজ করতে পারো
–কি কাজ সেটা?
–সেটা অনেক বড় একটা কাজ,অনেক বড় একটা দায়িত্ব
–কি সেটা
–আনিকা,একটা সন্তান হবার পর,সন্তানের প্রতি বাবা মায়ের অনেক দায়িত্ব থাকে,আর বাবার চেয়ে সেই দায়িত্বটা মা ই বেশি পালন করে
–হুম,তুমি বলো,আর হ্যা তুমি আমার পাশে থাকলে আমি সব পারব
–আনিকা,আমার মেয়েটাকে তুমি ইসলামিক পরিবেশে বড় করবা৷পর্দা শিখাইবা,নামাজ শিখাইবা,আমার মেয়ে বর্তমান সমাজ থেকে একদমই আলাদা করে বড় করে তুলবা৷আজ থেকে আমরা এমন ফোন ব্যবহার করব,যেটাতে শুধু কথা বলা যাবে,আর কোনো কিছুর দরকার নেই,
আনিকা পারবা না এই কাজ গুলো করতে?(আনিকার হাত ধরে)
–আবিদ,তুমি শুধু আমার পাশে থেকো,আমাকে সাহস দিও,আমি সব পারব৷আমি আমাদের মেয়েকে একজন ধর্মপরায়ন মেয়ে হিসাবে বড় করে তুলব৷তবে তোমাকে সব সময় ৫ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে
–আমি নামাজ পড়ব আনিকা,
–আমিও তোমার কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করব
ওর এমন সুন্দর ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম৷আর ও আমার মেয়েকে কোলে নিয়েই আমার দিকে মুচকি হাসছে৷
৩বছর পর
–এই আবিদ,শোনো শোনো,দেখে যাও আমাদের আদিবা কি বলছে?(জোড়ে খূশিতে চিৎকার দিয়ে)
আমি অন্যরুম থেকে দৌড়ে আসলাম৷আর হ্যা আদিবা আমার মেয়ের নাম৷আমার নামের সাথে কিছুটা মিল রেখেই আনিকা ওর নাম রেখেছে৷
যাই হোক আমি খূব আগ্রহ নিয়ে আনিকার কাছে গেলাম৷যাবার পরই দেখলাম আমার ছোট্ট মেয়েটা
কি যেন বলছে,আরও সামনে যেতেই আমার কানে শব্দ আসতে লাগল,আমি স্পষ্ট ভাবে আদিবার কন্ঠে শুনতে পাচ্ছিলাম
আল হামদুলিল্লাহীর লব্বিল আলামিন
আল লকমানীর লহীম
মালিকিয়াও মিড্ডিন
ইয়া কানাবুদু ,ইয়া কানাসতাকিন…..
. **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

.
এই টূকু বাচ্ছার মুখে এমন ভাবে তিলাওয়াত শুনে আমি একদমই অবাক হয়ে গেলাম৷কারন ও এখনও ভালো করে কথাই বলতে পারেনা৷অথচ সুরা তিলাওয়াত করছে৷
দৌড়ে গিয়ে আমার মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলাম৷
আর তখন চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে৷তবে সেটা কষ্টের না,খূব আনন্দের৷
আমার মেয়েকে কোলে তোলে নিয়ে ওর গালে,কপালে চুমু দিচ্ছিলাম
–আব্বু,আব্বু,আমালে চককেট দাও,আমি হামু,চককেট দাও(কথাগুলো পূরোপুরি স্পষ্ট না)
আমি হাসিমুখে আনিকাকে ইশারা দিলাম,ড্রয়ির থেকে চকলেট আনার জন্য৷
তারপর ওকে চকলেট দিলে,আদিবা আমার গালে দূটো চুমু দিল৷
আমি আদিবাকে কোলে নিয়ে দাড়ালাম৷আর তারপরই আনিকাকে কাছে আসতে বললাম৷ও কাছে আসার পর ওর কপালে আমি কয়েকটা চুমু দিলাম৷আর তখন বলতে লাগলাম
–আনিকা,আজকে তোমাকে কি যে বলব,সেটার ভাষা আমার জানা নাই,শুধু একটা কথাই বলব তোমাকে পেয়ে আমার জীবন ধন্য,তোমার মত স্ত্রী যেন বাংলার প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে হয়
–আর তোমার মত স্বামিও যেন,প্রতিটা ঘরে ঘরে থাকে
–আনিকা,এভাবেই আমার মেয়েটাকে ইসলাম শিখাবা৷
–হুম৷আর তুমিও আমার পাশে সব সময় থাকবা
-হুম
–আচ্ছা,আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে?
–কোলে তো আদিবা
–তো কি হইছে?ধরবে কিনা বলো?
তারপর কি আর করার?আদিবাকে চকলেট দিয়ে অন্য ঘরে পাঠিয়ে দিলাম৷
আর আনিকাকে তখণ খূব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম”
একটূ পরই দেখতে পেলাম আদিবা আমাদের সামনে এসে দাড়িয়ে আছে,তখন খেয়াল করলাম ও আমাদের দিকে দূ হাত বাড়িয়ে রাখছে,
আর বলছে
–আমালে নেও,আমালে নেও
ও বোঝাতে চাচ্ছে ওকে আমরা জড়িয়ে রাখি৷
ওর এমন কীর্তি দেখে আমি আর আনিকা দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলাম”
ভালো থাকুক এমন ভালোবাসাগুলো,আর ভালো থাকুক এমন ভালাবাসার মানুষগুলো৷
.
প্রতিটি মুসলিম ঘরে ,এক একজন মা হয়ে উঠুক এমন ইসলামী ধর্মপরায়ন৷,তাহলেই পুরো পরিবার হয়ে উঠবে ধর্মপরায়ন৷তবেই আসবে শান্তি,তবেই আসবে আল্লাহর রহমত৷ সুখি হোক প্রতিটা পরিবার৷ভালোবাসায় ভরে যাক সমস্ত পৃথিবী৷
.
.
#গল্পটা_নিয়ে_কিছু_কথা_ : গল্পটা লেখার প্রধান উদ্দেশ্য ২টা৷যথা,
১৷আমাদের সমাজে কেউ ইচ্ছা বা নিজ ইচ্ছায় কেউ পতিতা হয় না,তাদেরকে এই পেশায় আনতে আমাদেরই সমাজের মুখোশধারি কিছু হিংস্র জানোয়ার তাদেরকে বাধ্য করে৷
আর তখন নিরীহ নিষ্পাপ ফুল গুলো এমন একটা পর্যায়ে চলে যায়,তখন তারা আর সেই অন্ধকার পথ থেকে ফিরে আসতে পারেনা৷বা তাদেরকে ফিরে আসার জন্য কেউ হাত বাড়িয়ে দেয় না”
কিন্তূ এই সকল মানুষগুলো যে,একটূ ভালবাসা পেলে নিজেকে কতটা পরিবর্তন করতে পারে,সেটা হয়ত গল্পে কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি৷আর তাদের কে ভালবাসলে কখনই সেটা বৃথা যাবে না৷
আপনার আমার জীবনও হয়ে উঠতে পারে অনেক সুখের৷
একটা কথা মনে রাখবেন,বর্তমান সমাজে ওরা হয়ত সবার সামনে পরিচিত পতিতা,আর এমন হাজারও মেয়ে আছে,যারা ভদ্রবেশি পতিতা৷
যাই হোক ওই দিকে গেলাম না৷
সবাইকে একটা অনুরোধ,ওদের প্রতি সবাই সদয় হোন৷ওদেরকে ভালোবাসতে শিখুন৷
.
২৷বর্তমানে আমাদের সমাজে বেশিরভাগই মা ই ,তাদের ছেলে মেয়ে ,একটু কথা বলতে শিখলেই বা একটু বড় হলেই সন্তানদের আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে,তাদেরকে আধুনিক করে গড়ে তুলছে৷যেটা হয়ত তার জন্য একদমই ভালো না৷
তার দুনিয়া আর আখেরাতের কথা চিন্তা করে,তাকে ইসলামি শিক্ষা দিন,আল্লাহর কসম,আপনি নিজে ঠিক হয়ে যখন,আপনার সন্তান ইসলাম শিখাবেন!আল্লাহ তখণ আপনার পরিবারকে শান্তি আর ভালোবাসায় পরিপুর্ন করে দিবে৷

পতিতা মেয়ে part_16

0

#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_16

আনিকাকে তখন পাগলের মত চূমু দিতে লাগলাম৷আর খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম৷আনিকা শুধু আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে আর আমি কি করছি সব কিছুই অদ্ভুদ ভাবে দেখছিল৷
অনেকক্ষন পর আমার মূখ থেকে কথা বের হলো
–আনিকা,আমি না তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসি,কখনই হারাতে পারবনা(অনেক জোরেই কান্না করে দিলাম)
–এই পাগল,তুমি কান্না করছো কেন?আর তোমার কি হইছে?আমাকে বলবে না?
–(বোবার মত কান্না করছি)
আনিকা তখন আমার চোখের পানিটা মুছে দিয়ে আবারও বলা শুরু করল
–এই পাগল,তুমি কি খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখছো
–হুম(মাথা নাড়িয়ে)
–কি দেখছো?
–আমি বলতে পারব না(মাথা নাড়িয়ে)
–বলো বলছি,
তারপর আনিকাকে আমার বিশাল এই দুঃস্বপ্নের কথা বললাম৷বললাম যে গতকাল ডাক্তার চাচার কাছ থেকে টেষ্ট করানোর পর যখণ ওনাকে ঘাবরে যেতে দেখলাম তখন থেকেই কেমন চিন্তা হচ্ছিলো৷আর ফলস্বরূপ রাতে এমন দুঃস্বপ্ন দেখেছি৷আর বলার পর আনিকাও কেমন কান্না করে দিল
–আরে বোকা অযথাই এত টেনশন করেছো বলেই এমন উল্টা পাল্টা স্বপ্ন দেখছো!রিপোর্ট যখন দিবে ,তখন দেখবা আমার কিছুই হয়নি,বোকা ছেলে
–হুম আনিকা,তাই যেন হয়,তোমার রিপোর্ট যেন খারাপ না আসে,আমি না তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না৷(কথাগুলো বলেই কান্না করে দিলাম)
—খুব ভালোবাসো আমায় তাই না?
–হুম৷অনেক ভালোবাসি
–আমিও আমার পাগলটাকে অনেক ভালবাসি
আর ওই স্বপ্ন টপ্নের কথা ভেবে একদমই মন খারাপ করবে না কীন্তু৷আর দেখো আমি তো তোমার সঙ্গেই আছি,তোমার সাথেই আছি
–কখনও ছেড়ে যাবে না তো?
–এই যে প্রমিস করে বলছি,আমি আমার পাগলটাকে কখনই ছেড়ে যাবো না৷ **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
এবার হাসো তো
আমার পাগলটার মুখে হাসি না দেখলে যে আমারও খুব খারাপ লাগে,হাসো বলছি
—হি হি হি ৷এবার তুমিও হাসো
–হি হি হি
বলেই একে অপরকে আবারও জড়িয়ে ধরলাম৷
কিছুক্ষন পরই ফজরের আযান দিচ্ছে৷আনিকা তখন বলে উঠল
–আযান দিচ্ছে,চলো দুজনে নামাজ পড়ে নিই
–ভালো লাগছে না৷তুমি পড়ো গিয়ে
–এই,কথা আর বলবা না৷আজ থেকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বা৷
–আর তুমি কি করবা
–আমিও পড়ব
–হুম
সেদিন থেকেই নামাজ পড়া শুরু করে দিলাম৷দুজনে একসাথে নামাজ আদায় করলাম৷আসলে যে ঘরে স্বামি স্ত্রী এক ঘরে নামাজ আদায় করে,আমার মনে হয় সে ঘরের মত সুখি ঘর আর হতে পারে না৷কারন আল্লাহ এতে তাদের ভিতর যেমন ভালোবাসা আরও বাড়িয়ে দেয়,তেমনি তাদের ওপর আল্লাহর রহমতও নাজিল হয়৷
আর সেদিন সকালবেলাই ডাক্তার চাচা ফোন দেয়৷স্বপ্নের মত ফোন ধরতে খুব ভয় পাচ্ছিলাম৷
হাতটা কাপছিল৷
ফোনটা ধরতেই
–বাবা,আবিদ,কেমন আছো(চাচা)
–জ্বি চাচা ভালো আছি,চাচা আনিকার রিপোর্ট বের করছেন
–জ্বি বাবা,সেজন্যই তো ফোন দিলাম
–তো চাচা,কি রিপোর্ট আসছে(কলিজা কাপছে)
–আসলে বাবা,তুমি আসলেই ভালো হতো
চাচার এমন কথা শুনে ভয়ে বুকটা ধুক করে উঠল৷কারন সব কিছুই স্বপ্নের মত মিলে যাবে না তো?
–চাচা,সিরিয়াস কীছু?
–তুমি আমার চেম্বারে আসো,তারপরই বলব
–হুম আমি আসতেছি
বলার পরই চাচা ফোন কেটে দিল৷
অন্যদিকে বুকটা প্রচন্ড কাপছে৷আল্লাহর কাছে বারবার দোয়া করছীলাম,রাতের ওই দুঃস্বপ্নটা যেন সত্যি না হয়৷আনিকাকে ডাকলাম,আনিকা আসার পর ওকে নিয়ে ডাক্তারের কথা বলার পর আমার ভিতর যে অনুভুতি শুরু হয় সেটা দেখে আনিকাও ভয় পেয়ে যায়,ও শুধু আমাকে ইশারা দিয়ে বলল
–ভয় পেয়ো না,কোনো কিছুই হবে না৷চলো আমরা যাই
–হুম
তারপরই দুজনে ডাক্তার চাচার চেম্বারে গেলাম৷যাবার
চাচাকে সালাম দিয়েই জিজ্ঞাসা করলাম
–চাচা,কি রিপোর্ট আসছে?
–আসলে বাবা,প্রথম প্রথম আমিও ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম৷কারন তুমি যে সমস্যার কারনে ওকে নিয়ে এসেছো,তার কোনো কারন খুজেই পাচ্ছিলাম না৷
কিন্তু হঠাৎ ই……….
–কী হঠাৎ ই কী চাচা?(বুকের কম্পনটা বেড়ে গেল)
–হঠাৎ ই বুঝতে পারলাম৷ওর কোনো অসুখই নেই৷
–তাহলে কি হইছে?
–তাহলে তুমি বাবা,আর ও মা হতে চলেছে
বলেই ডাক্তার চাচা হো হো হো করে হেসে উঠল”
বুঝতে পারছিলাম না তখণ আমি কি করব?মনের ভয়টা চলে গিয়ে মনের ভিতর এত পরিমান খুশির সঞ্চার হলো যে,মুখ দিয়ে তখণ কথাই বের হচ্ছীলো না৷ওখানেই লাফ দিয়ে উঠলাম,
হুররে আমি বাবা হবো,
বলেই খুশিতে লাফালাফি,নাচানাচি করতে লাগলাম৷৷আর আনিকার দিকে তখণ তাকাতেই দেখলাম ও মাথাটা নিচু করে কেমন মুচকি মুচকি হাসছে৷
তারপর ডাক্তার চাচার সাথে কীছু কথা বলেই আনিকাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম৷
এসেই আনিকাকে কোলে তুলে নিলাম৷
আর ঘূরতে লাগলাম
ওপস আনিকা তুমি আমাকে এটা কি খূশির সংবাদ দিলে?আমি তো খূশিতে পাগল হয়ে যাবো
বলেই আনিকার কপালে একটা চূমু দিলাম৷
আমি তখণ আনিকার দিকে তাকাতেই দেখলাম আনিকাও শুধু হাসছে৷হঠাৎই ও বলে উঠল
–আবিদ?তুমি কতটা খুশি হইছো?
–অনেক খুশি আনিকা৷যেটা বলে বুঝাতে পারব না
আর তূমিই বলো এমন খুশির কথা শুনে কে খুশি না হবে?আমি বাবা হবো,আর তুমি মা…
সেদিন দুজনেই খুব খূশি হলাম৷
আস্তে আস্তে দিন কাটতে লাগল৷
আনিকা আর আমি এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি৷আর আনিকা নামাজের পাশাপাশি নফল রোজা আর কোরআন তিলাওয়াত করে৷
আর আমাদের সংসার টা এতটাই সুখের সংসার হিসাবে পরিনত হয় যে,আমার কাছে মনে হয় এমন সংসার পৃথিবিতে আর দুটি নেই৷
আমাদের বিয়ের প্রায় ২বছরের বেশি হয়ে গেছে৷ **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
কিন্তূ এর ভিতর একদিনও আমাদের ভিতর ওই রকমের কোনো ঝগড়া হয়নি৷এমনকি এখন অব্দি আনিকা আমার একটা কথারও বিন্দু পরিমানও অবাদ্য হয়নি৷
আমি যেটা বলি,পাগলিটা সেটাই হাসামুখে মেনে নিবে৷আর আমার ভুল হলে সেটা ধরিয়ে দিবে৷
সত্যিই ওহ মত একজনকে পেয়ে আমার জিবন ধন্য ৷
আস্তে আস্তে ১মাস,২মাস,৩মাস করে যেতে যেতে ৯টা মাস শেষ হয়ে গেছে৷
আর ওর দিন যতই এগিয়ে যাচ্ছে ততই ওকে কোনো কাজ করতে দেইনা৷
সব কাজ আমি আর ওর আম্মুই করি৷
সব সময় ওর সঙ্গ দেই৷
যে ৯টা মাস চলে গেছে,এই ৯টা মাস আমার পাগলিটা যে কি পরিমান কষ্ট করেছে,সেটা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ভালো জানেনা৷
প্রায় প্রতিদিনই আমার বাবুটা ওর পেটের ভিতর খুব জোড়েই লাথি মারত৷আর সেই লাথি খেয়ে মাঝে মাঝে গুম থেকে লাফ দিয়ে চিৎকার করে উঠত৷
আর সেই সময়টাতে আমি ওকে বলতাম
–আনিকা,খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার তাই না?
–কই না তো?
–একদম মিথ্যে বলবে না৷
–জানো আবিদ,এই কষ্ট গুলো আমার কাছে একটূও কষ্টের মনে হয় না৷যখন দেখি আমি তোমার বুকের মাঝে মাথা রাখতে পেরেছি৷
ওর কথাগুলো শুনে মাঝে মাঝে একদমই বাকরুদ্দ হয়ে যেতাম৷
আসলে ওর মত স্ত্রী ভাগ্যগূনে একটা পাওয়া যাবে কি না,সেটা ভাবনার বিষয়৷
মাঝে মাঝে আনিকা আমাকে বলত
–আবিদ,সব কিছু আমি পেরে উঠতে পারব তো?
–আনিকা,তোমার যদি ভয় হয়,তাহলে বাচ্ছাটা ফেলে দাও,আমার বাচ্ছার দরকার নেই৷আমি তোমাকে সাথে নিয়ে সারাটা জীবন পার করে দিতে পারব(তখনই ও আমার মুখে হাত দিত)
–না আবিদ,এগূলো বলবা না,তুমি হয়ত জানোনা,মা হবার পর থেকে এ পর্যন্ত কতটা কষ্ট সহ্য করে আসছি৷আর সব কষ্টই তোমার বুকে মাথা রেখে ভুলে গেছি৷তবে আবিদ,আমি সব কিছু পারব ৷শুধু ডেলিভারির সময় তুমি আমার পাশে থেকো,ব্যথার সময় তুমি আমার পাশে থেকে,তোমার বুকে মাথা রাখতে দিও,আমাকে একটু তোমার বুকে আগলে রেখো,দেখবে আমি সব কিছু পেরে উঠব৷
–হূম
–আবিদ,থাকবে তো আমার পাশে?
–হুম থাকব,কিন্তু ডেলিভারির সময় কি ডাক্তাররা আমাকে তোমার সাথে ভিতরে ডুকতে দিবে?
–ভিতরে ডুকতে দিবে কিনা ,তা জানিনা তবে তোমাকে আমার সাথে থাকতে হবে,তুমি ডাক্তারদের মেনেজ করে হলেও আমার সাথে থাকবি৷প্লীজ এই টূকু করতে পারবে না?
–হুম পারব,আমি আমার পাগলিটার জন্য সব করতে পারব
বলার পরই আনিকা কেমন অদ্ভুদভাবে একটা হাসি দিল৷ওর হাসিটা দেখার পরই কলিজাটা কেমন ঠান্ডা হয়ে গেল৷
মনে মনে বলতে লাগলাম ,,আল্লাহ তূমি কিন্তূ সবকিছুই শুনছো,আর ওর পাশে থাকার,আর আমার পাগলিটা যেন সবকিছু পেরে উঠে তার জন্য তুমি সহায় হও আর ওকে সেই তৌফিক দান করো৷
.
.
.
চলবে….

পতিতা মেয়ে part_15

0

#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_15

আস্তে আস্তে আনিকার অবস্থা প্রচন্ড রকমের খারাপ হয়ে যাচ্ছে৷প্রায় ৫টা মাস কেটে গেছে৷আনিকার চোখ গুলো একদমই গর্তে ঢুকে গেছে৷চেহারাটা অনেক কালো হয়ে গেছে৷পুরো শরীর টা কেমন কঙ্কালের মত হয়ে গেছে৷কথাগুলো বাচ্ছাদের মত মুখে লেগে গেছে,ভাল করে কিছুই বুঝা যেত না৷
ওকে যতই দেখছিলাম ততই কান্না করছিলাম৷
আর এইদিকে আনিকাও সব কিছু অনেক আগেই জেনে গিয়েছিল৷আর জানার পর থেকে সব সময় আমাকে বুকের মধ্যে নিজেকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখত৷
হঠাৎই একদিন আনিকার প্রচন্ড কাশি হতে লাগল৷আর কাশির সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যথা করতে লাগল৷কাশির সাথে প্রচুর পরিমানে ব্লাড আসতে লাগল৷ওর রক্ত দেখে আমি নিজেও তখন পাগলের মত হয়ে যাচ্ছিলাম৷
আল্লাহকে ডেকে ডেকে বলছিলাম,
আল্লাহ,তুমি আমার পাগলিটাকে আর কষ্ট দিও না ,ও আর সহ্য করতে পরছেনা৷আল্লাহ গো,ওর বদলে না হয় তুমি আমাকে নিয়ে যাও,তারপরও ওকে ভালো করে দাও
কথাটা বলতেই আনিকা আমার মুখের মধ্যে হাত দিল আর রক্তমাখা মুখে বলতে লাগল
–এই আবিদ,প্লীজ এগুলো বলো না,তোমার কিছু হলে আমি কার মাধ্যমে পৃথিবিতে বেঁচে থাকব?জানো আবিদ,তুমি ছাড়া কেউ আমাকে মনে রাখবে না৷আর আমি তোমার মধ্য দিয়েই পৃথিবীতে বেঁচে থাকব(মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল)
–আনিকা!
–হুম আবিদ,আর একটা কথা রাখবে আমার?
–হুম বলো
–আবিদ,আমার মুখ দিয়ে রক্ত পড়ে,আমি তারপরও তোমার বুকের মধ্যেই নিজেকে আড়াল করে রাখি,তোমার শার্টসহ তোমার বুকটা লাল রক্তে ভরে ফেলি,প্লীজ তুমী না রাগ করো না,তুমিই বলো আমি কি করব?আমি যে আমার স্বর্গ সুখ খুজে পাই৷ তোমার বুকটাতে আমি অনেক শান্তি খুজে পাই
ওর কথাগূলো শুনছিলাম৷আর টপটপ করে চোখের পানি ঝড়াচ্ছিলাম৷
–কি আবিদ?আমি তোমার বুকে রক্তে লাল করে দেই বলে,তোমার অনেক রাগ হয় তাই না?
প্লীজ রাগ করো না৷আর তো মাত্র কয়টাদিন বাকি,তারপরই তো চলে যাবো
–আনিকা প্লীজ তুমি এগূলো বলো না,প্লিজ আনিকা প্লিজ,,আমি আর সহ্য করতে পারছিনা৷তোমার এত কষ্ট আর আমি সেই জায়গায় কিছুই করতে পারছিনা
বলেই চিৎকার দিয়ে কান্না করতে লাগলাম৷
আনিকা ওই অবস্থাতেই আমার চোখের পানি মুছে দিচ্ছে,আর আমি আনিকার মুখের রক্ত মুছে দিচ্ছি৷আমার ভাগ্যটা কত করুন৷এমন একজন মানুষ পেয়েও আমি ধরে রাখতে পারলাম না৷
আর আমি কিভাবেই পারব?আমি কি স্রষ্টার লিখন খন্ডাতে পারব?পারব না৷কারন সেই ক্ষমতা তো আমার নেই৷
আস্তে আস্তে রমজান মাস চলে আসল৷
আনিকার শরীর এখন এতটাই দুর্বল যে,সে এখন দাড়াতেই পারেনা৷সারাদিন শুয়ে থাকে৷
সন্ধে বেলায় আনিকা হঠাৎই বলে উঠল
–আবিদ,রমজান তো চলে এসেছে,রোজা রাখবে না?নামাজ পড়বা না?
–না,কিছুই পড়ব না,রোজাও রাখব না
–কেন আবিদ?(কথাগুলো তেমন বুঝা যায় না)
–আনিকা তুমি নিজেই বলো,যে আল্লাহ আমার কাছ থেকে তোমাকে কেড়ে নিচ্ছে,আমার সামনে আমার প্রিয় মানুষটাকে এভাবে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে নিয়ে যাবে,তার ইবাদত আমি কেন করব,আমি কিছুই করব না
–ছিঃ আবিদ,এসব বলতে নেই,আল্লাহ যা করে সব ভালোর জন্যই করে
–চাই না সে ভালোর,যে ভালো আমার পাগলিটাকে এত কষ্ট দিচ্ছি
–আরে বোকা,সেটা কিছুই না,আর তুমি কি চাও না মরার পর ওপারে আমি একটু শান্তিতে থাকি,(হাসিমুখে)
ওর হাসিমাখা মুখটা দেখে বুকটা কেমন ধুক করে কেদে উঠল৷একটা সময় যে হাসিমুখটার জন্য আমি সব করতাম৷আর আজ সেই হাসিমুখে তেমন সজীবতা নেই৷আছে শুধু কষ্টে ছাপ,
–কি হলো উত্তর দাও,তুমি কি চাও না,আমি মরার পরে সুখে থাকি
–হুম চাই তো(কান্না করে দিলাম)
–তাহলে নামাজ পড়ে আমার জন্য দোয়া করবা,আর দুজনকেই যেন মরার পর আল্লাহ এক করে দেয়,এই দুনিয়াতে আমরা একসাথে থাকতে না পারলেও যেন,ওই দুনিয়াতে দুজনে একসাথে থাকতে পারি
–হুম(মাথা নিচু করে কান্না করছিলাম)
–এবার বলো,আমার জন্য দোয়া করবা তো?
–হুম,তোমার জন্য দোয়া না করলে কার জন্য করব?বলো
–হুম৷তাহলে একটূ পরই এশারের আযান দিবে,তখন তারাবির নামাজসহ পূরো নামাজ পরবা৷একদমই ফাকিবাজি করবা না৷

**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

–হুম
কিছুক্ষন পরই আযান দিয়ে দিল৷আমি অযু করে তখন আনিকার কপালে একটা চূমু দিয়ে মসজিদে চলে গেলাম৷চেয়েছিলাম বাড়িতেই নামাজ পরতে কিন্তু আনিকা বার বার বলছে,মসজিদে গিয়ে!জামাআতের সহিত নামাজ পড়তে৷ইচ্ছা না সত্বেও গেলাম৷
বিশ রাকাত তারাবিসহ এশারের নামাজ পড়ে বাসায় আসতে আসতে প্রায় রাত সাড়ে ৯টা৷
বাসায় ডুকতেই আনিকাকে ডাক দিলাম৷
তারপর দরজা খুললাম৷কিন্তু দরজা খোলার পর যা দেখলাম সেটা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না৷
কারন আনিকা তখণ রক্তাক্ত অবস্থায় খাটের নিচে পড়ে গড়াগড়ি করছিল৷ওকে দেখেই চিৎকার দিয়ে কান্না করে দিলাম৷ওর সামনে গিয়ে ওকে ধরলাম৷
ওকে ধরতেই ওর অস্পষ্ট কন্ঠে আমার কানটার সামনে মুখটা নিয়ে বলে উঠল
–দেখছো আবিদ?আল্লাহ কত দয়াবান৷এই মুহুর্তে তোমাকে অনেক মিস করছিলাম৷আর আল্লাহ তোমাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিছে৷
আমি শুধু আনিকাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মত কেদেই চলেছি
–আবিদ,আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে,দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার
–আনিকা তোমার কিছু হবে না,আমি এক্ষনি তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো
–না আবিদ৷ওপর ওয়ালা যে আমাকে এখণ তার কাছে নিয়ে যেতে চাচ্ছে৷
–না,আনিকা এভাবে বলো না,খূব কষ্ট হয়(কান্না করতে করতে)
–আবিদ,তোমার বুকে আমাকে একটু মাথা রাখতে দিবে?আমাকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে?প্লিজ আবিদ,আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো,আমি যেতে চাইনা৷আমি তোমাকে হারাতে পারব না
তখনই আনিকাকে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম আর চিৎকার করছিলাম৷
আনিকা তোমার কিছু হতে পারে না৷তোমার কিছু হবে না
আনিকার শ্বাস নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল৷আর ও তখন একটা কথা বলছিল,
ভালোবাসি আবিদ৷খুব বেশিই ভালোবাসি,নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি,আর তোমার বুকে আমি স্বর্গসুখ খুজে পাই৷আর আমার কত সৌভাগ্য,আজ তোমার কোলেই মাথা রেখে মরতে পরছি৷
বলেই আমাকে ও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরল৷আর বলতে লাগল
আবিদ আমাকে ধরো,শক্ত করে জড়িয়ে ধরো আবিদ
আমি তখন খূব শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলাম৷আনিকা তখনও বলছে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে৷
হঠাৎই আনিকা দু-তিনবার কেমন করে একটু কেপে উঠল৷তারপর আস্তে আস্তে একদম নিথর হয়ে গেল৷
আমি তখনও আনিকাকে জড়িয়েই ধরে রাখলাম৷
অনেকক্ষন পর আনিকাকে ডাক দিচ্ছিলাম
আনিকা?এই আনিকা?আনিকা কথা বলো
কিন্তু কোনো কথা আসছে না৷
বুক থেকে মাথা টা সরাতেই দেখলাম৷আনিকা একদমই নিথর হয়ে গেছে৷
চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম
নাআআআআআআআআ,আনিকা তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না৷
এই আনিকা তুমি চলে গেলে কে আমাকে ভালোবাসবে?কে আমার বুকের মধ্যে নিজেকে আড়াল করে রাখবে৷
ভাবতেই কলিজাটা ফেটে যাচ্ছিলো৷এত কষ্ট লাগছিল মনে হচ্ছে আমিও এখণই চলে যাবো৷
তখন চিৎকার দিয়ে আনিকাকে ডাক দিয়ে বলছিলাম
আনিকাআআআআআ?????
কথা বলো?আনিকা কথা বলো
ভালোবাসি আনিকা ,ভালোবাসি
তখণ এমন জোড়েই চিৎকার মারলাম৷
আর লাফ মেরে উঠে পরলাম৷
লাফ মারতেই দেখলাম৷আমি খাটের ওপর,পুরো রুমটি কেমন অন্ধকার৷আমার শরীর থরথর করে কাপছে,প্রতিটা লোমকূপ থেকে ঝরঝর করে ঘাম ঝরছে৷
ঠিক তখনই কেউ লাইট অন করে দিল৷
লাইট অন করতেই দেখলাম আনিকা আমার সামনে দাড়িয়ে আছে৷আর বার বার বলছে
–এই আবিদ,কি হইছে তোমার?এই আবিদ?তুমি কি ভয় পাইছো?
আবিদ কথা বলো?তুমি কি কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখছো?
আনিকাকে দেখে আমি তখণ অনেক ভয়ে পেতে লাগলাম৷
ও তখন আমাকে এক গ্লাস পানি এনে দিল,এক গ্লাস পানি এক টানেই শেষ করে ফেললাম,শরিরটা তখনও থরথর করেই কাপতে লাগল
আনিকা তখণ আবারও বলতে লাগল
–এই আবিদ,বলো তোমার কি হইছে?আমাকে দেখে এমন অবাক হচ্ছো কেন?তূমি কী খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখছো?বলো বলছি কি হইছে তোমার?
বুঝতে পারলাম,তাহলে এত বিশাল কাহিনী পুরোটাই একটা দুঃস্বপ্ন ছিল৷তারমানে আমার আনিকার কিছুই হয়নি?তখন আল্লাহর কাছে লক্ষ কোটি শুকরিয়া আদায় করেই আনিকাকে পাগলের মত জড়িয়ে ধরলাম৷অনেক শক্ত করেই জড়িয়ে ধরে রাখলাম আর কান্না করে দিলাম৷৷আর একবার আনিকার কপালে আরেকবার মুখে আরেকবার হাতে পাগলের মত চুমু দিতে লাগলাম৷
আনিকা শুধু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷
.
.
.
.
চলবে……..
বিঃদ্রঃভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷
আর আপনাদের আগের পার্টগুলোতে,sad পোষ্ট করে এত কষ্ট দেবার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত৷
তবে হ্যা,গল্পটা এমনই হবার কথা ছিল৷
আর এমন হবার কারন ২টা৷
আর ২টা কারনই আপনাদের জন্য অনেক শিক্ষনীয়৷
শিক্ষনীয়: ১৷ ভালোবাসার মানুষগুলোকে যদি আমরা কখনও হারিয়ে ফেলি,তাহলে তার কষ্ট যে কতটা তীব্র থেকে তীব্রতর সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি৷আর তাই কখনই নিজের ভুল বা কোনো কারনেই ভালবাসার মানুষটিকে আলাদা করে দিবেন না৷হয়ত বা গল্পে আনিকাকে ক্যান্সার দিয়ে হারানোর বিষয়টা উল্লেখ করছি,কিন্তু হতে পারে,আপনার ভুলের কারনেও অন্যভাবেও,আপনার প্রিয় মানূষটা হারাতে পারে৷so be careful ৷
শিক্ষনীয়:২৷আমরা সবাই জানি,ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়েই আমাদের যত ভাবনা৷তবে হ্যা যাকে নিয়ে যত ভাবনা বেশি,তাকে হারানোর ভয়টাও অনেক বেশি৷আর মনের ভিতর সেই ভয়টা থাকার কারনেই আমাদের ভিতর এমন উল্টা পাল্টা অনেক ভাবনা বা স্বপ্ন গুলো চলে আসে৷তবে সেই সময়টাতে বিচলিত না হয়ে!সাথে সাথে আপনার ভালোবাসার মানুষটার সাথে তখনই মন খুলে কথা বলুন,হোক সেটা গভীর রাত,যখনই এমন প্রবলেম হবে তখনই ওর সাথে বেশি না পারলেও,কম করে হলেও একটূ কথা বলুন(যদি সম্ভব হয়)৷৷এতে করে আপনার মনের চাপা কষ্টটাও যেমন দুর হবে,তেমনি আপনার প্রতি আপনার সঙ্গীর ভালোবাসাটাও ততটাই গভীর হবে৷আর মনের ভিতর শান্তিও আসবে৷

পতিতা মেয়ে part_14

0

#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_14

দিন যতই যাচ্ছে আনিকার পাগলামিগুলো তত বেড়েই চলছে৷
সারাটাক্ষন আমার পাশেই বসে থাকবে নয়ত আমার কাধে মাথা রেখে ,শুয়ে থাকবে৷আর বলতে থাকবে একটা গল্প শোনাতে৷যদি আমি না করতাম,তখনই রাগ করত৷এইত সেদিনের একটা ঘটনা
–আবিদ,আমাকে একটা গল্প শোনাবে?
–আমার ভালো লাগছে না গো,এখন গল্প বলতে পারব না৷তার চেয়ে ভালো তুমি নিজেই বলো
–লাগবে না তোমার গল্প বলা,আর কখনই গল্প শুনতে চাইবো না(রাগ করে)
–আচ্ছা আমি বলছি
–সত্যি বলবে তো?
–হুম
–তাহলে শুনো
আমি গল্প বলা শুরু করলাম
জানো আনিকা?কোনো একটা রাজ্যে বসবাস করত একটা রাজকুমার৷সেই রাজ্যেই একটা রাজকুমারী ছিল৷রাজকুমার টা ওই রাজকুমারি কে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসতো
–হুম তারপর(আনিকা)
–জানো,ওই রাজকুমারিটা রাজকুমারকেও অনেক ভালোবাসত৷সব সময় রাজকুমারের বুকের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চাইতো৷সব সময় তারা স্বপ্ন দেখতো,তাদের একটা সুখের সংসার হবে৷তাদের ছেলেমেয়ে হবে,সবাইকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করবে,কিন্তু তা আর হয়ে উঠল না,
–কেন?তাদের ভিতর কি কোনো ঝগড়া হইছে?
–তাদের ভিতর কোনো ঝগড়া হয়নি,কিন্তু আল্লাহ হয়ত চাইনি,কখনই তারা এক সাথে থাকুক,যার কারনে তাদেরকে আল্লাহ চিরতরে আলাদা করে দেয়
–চিরতরে?কিন্তু কিভাবে?
–অনেক বড় একটা ঝড় আসল তাদের জীবনে৷তারপর সেই ঝড়টা রাজকুমারী কে রাজকুমারের থেকে চিরতরে আলাদা করে দেয়
–রাজকুমারের তখন কিছু হয়নি(আগ্রহ নিয়ে)
–হুম হয়েছে৷যার কুমারীকে না পেয়ে,ওই রাজকুমার টা পাগলের মত হয়ে যায়,আর ওক ছাড়া থাকতে না পেরে নিজেকে ও শেষ করে দেয়৷আর এভাবেই তাদের ভালোবাসার পরিসমাপ্তি ঘটে৷
–ইসসসস,রাজকুমারটার অনেক কষ্ট হইছে,হয়ত নিজের থেকেও বেশি ভালোলাসত,তাই না
–হুম
–আচ্ছা আবিদ,একটা কথা বলব?
–হুম বলো
–কখনও যদি আমিও ওই রাজকুমারীর মত হারিয়ে যাই,তখন তুমি কি করবা
আনিকার এমন প্রশ্ন শুনে মাথাটা ঘুরে গেল৷বুকটা কেন জানি কষ্টে ফেটে গেল৷ভাবতেই অবাক লাগছে!আনিকাও আমাক ছেড়ে চলে যাবে,আর এটা তো এতক্ষন ভুলেই গিয়েছিলাম৷
তখনই আনিকাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম৷
খূব কষ্ট হচ্ছিলো,তাই নিজেকে আর আটকাতে পারিনি৷
–এই রে,আমার পাগলটাকে খূব কষ্ট দিয়ে ফেলছি৷এই আবিদ,প্লীজ কান্না করবা৷আমি তো মজা করে বলছি
কিন্তু তখন কোনো কিছুই মাথায় ডুকছে না,কারন আনিকা নিজেও জানেনা,ও যেটা ফান করে বলেছে,দুদিন পর সেটাই সত্যি হবে৷
ভাবতেই আরও জোড়ে কান্না করে দিলাম৷আর তখণ আনিকাও কান্না করে দিছে৷আর বার বার আমাকে কান্না করতে নিষেধ করেছে৷
সেদিন কোনোভাবে ওর সামনে ঠিক হতে পারলেও পরে আর নিজেকে ঠিক করতে পারিনি৷সারাটাদিন ওকে নিয়েই ভাবতাম৷ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করতাম না৷এই দিকে আমার পা ঠিক হয়ে গেলেও,চোখের আগের থেকেও বেশি ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে,কারন আমি ঠিক মত কোনো ঔষধ খেতাম না৷
আনিকা এটা নিয়ে আমাকে কড়া ভাবেই শাসন করত৷
কিন্তু শাসন করলেই কি হবে,যেখানে আমি নিজেই দেখছি ,আমার প্রিয় মানুষটা আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছে,সেখানে আমি কিছুই করতে পারছিনা৷
আর সেই জায়গায় থেকে,আমি নিজেকে কিভাবে ঠিক করব?
সব সময় আল্লাহ কে একটা কথাই জিজ্ঞাসা করতাম,কেন আমার জীবনটা এমন করে দিল?কোন পাপে আমার লাইফটা শেষ হয়ে গেল৷
কিন্তূ কোনো উত্তর পেতাম না৷
আর উত্তর পাবোই বা কিভাবে?সৃষ্টি হয়ে স্রষ্টাকে প্রশ্ন করলে কি ওনি ওনার কাজের হিসাব দিবে?দিবে না
৷তাই আমার প্রশ্নের উত্তরটাও আমার অজানাই থেকে যাবে৷হয়ত মরার পর সব উত্তর আমাকে দিয়ে দিবে,কোন কারনে এসব করেছে৷
যাই হোক দিন যেতে যেতে প্রায় দুটা মাস কেটে গেল৷
এই দিকে আনিকার চিকাৎসাও পুরোপুরি ভাবে শুরু হয়ে গেল৷
আনিকা তখনও জানত না ওর কি হইছে?আমি যেটা বলতাম,ও ঠিক সেটাই করত৷আমার কোনো কথাই না করত না৷
হঠাৎই একদিন আনিকার প্রচন্ড কাশি হতে লাগল৷
আমি আস্তে আস্তে ওর সামনে গেলাম৷
আমাকে দেখে ও ওয়াশরুমে যেতে চাইলে আমি তাকে আটকিয়ে ফেললাম৷
পরে ওকে আটকানোর পর ওর দিকে তাকাতেই কেমন চোখের আবছা আলোতে ওর মুখে লাল বর্ন কিছু একটা দেখতে পেলাম৷ওর মুখে হাত দিতেই
আমার হাতটা কোনো এক তরল পদার্থে ভরে গেল৷নাকের সামনে হাতটা নিতেই রক্তের গন্ধ৷
তারমানে কি আনিকার মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে?
ঘটনাটা বুঝতেই কেমন কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে৷আনিকার আবারও কাশি শুরু হলো৷প্রচন্ড কাশি৷যেন থামতেই চাচ্ছে না৷
অনেকক্ষন কাশতে কাশতে প্রায় বেহুশ হবার অবস্থা৷
ওর কাশি দেখে বুকের ভিতর প্রচন্ড হাহাকার শুরু হয়ে গেছে৷
খূব কষ্ট লাগছিল৷কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারলাম না৷চিৎকার করে কান্না করে দিলাম৷
আমার কান্না দেখে আনিকা কেমন যেন হয়ে গেল৷ও ওয়াশরুম থেকে পরিষ্কার হতে চলে গেল৷
এই দিকে আমি কোনোভাবেই নিজেকে ঠিক করতে পারছিলাম৷
আল্লাহকে ডাকছিলাম,আর বার বারই বলতে লাগলাম
আল্লাহ,তুমি এমন কেন করলে?কেন এই নিষ্পাপ মেয়েটাকে এত বড় শাস্তি দিলে?ওর বদলে আমাকে তুমি নিয়ে যেতে৷ওকে তুমি আর কষ্ট দিও না আল্লাহ৷
আল্লাহ?ও আল্লাহ,তুমি তো নিয়েই যাইবা,তবে নেবার আগে আর কষ্ট দিও না৷সমস্ত কষ্ট তূমী আমাকে দাও৷
কান্না করতে করতে মাটিতে পড়ে গেলাম৷
হঠাৎই আনিকার আসার শব্দ পেলাম৷
তাই চোখটাকে একটু ঠিক করে দাড়িয়ে গেলাম৷
আর আনিকার কাছে গেলাম৷বুঝেও না বুঝার ম? গিয়ে বললাম
–আনিকা?তোমার কি হইছে?তোমার মুখে রক্ত আসল কিভাবে?কি হইছে তোমার বলো?
–আবিদ,এই কথাটার উত্তর যদি আমি তোমার কাছে চাই,তখন কি করবা?বলো আবিদ আমার কি হইছে
–তোমার কীছুই হয়নি,কিন্তু রক্ত আসল কিভাবে
–দেখো আবিদ,আমি জানি তুমি সবই জানো,
আমার কিছু হয়নি,তবে আমার কিসের জন্য চিকিৎসা করাচ্ছো?আর একটূ আগে আমার মুখে রক্ত দেখে,তুমি এত ভয় কেন পেয়েছিলে?
কি উত্তর দিবো ভেবে পাচ্ছিনা?কিভাবে বলব?ওর ব্লাড ক্যান্সার?ডাক্তার তো আমাকে নিষেধ করেছে ওকে না জানাতে?জানালে অনেক আগেই আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?আমি কি করব?
–আবিদ,চূপ কেন?উত্তর দাও
–কোথায় ভয় পেলাম?আমিতো তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারিনা?তাই ওই সময় এমন করেছি
–বাহ আবিদ বাহ৷আমার মুখে রক্ত দেখার পর,তোমার মুখে আমি যে ভয়টা দেখেছি,সেটা সত্যিই ভুলার মত না৷আর আমি ওয়াশ রুমে যাবার পর এভাবে কান্না করছিলে কেন?
–আমি কিছু জানিনা৷তুমি এই বিষয়ে আমাকে এখন কোনো প্রশ্ন করবে না
–প্রশ্ন তো আমি করবই!এতদিন আমাকে চিকিৎসা,ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়া,এগূলো সম্পর্কে আমি কিছুই জানতে চাইনি,কিন্তু আজ আমাকে জানতেই হবে৷বলো আবিদ বলো৷চূপ করে থেকো না
–বললাম তো,আমি এখন কোনো উত্তর দিতে পারব না
ঠিক তখনই আনিকা খুব রেগে গেল৷আর ও আমার সামনে এসেই ও আমার লাইফে প্রথমবারের মত আমার শার্টের কলারটা দুই হাতে চেপে ধরল৷
আর প্রথমবারের মত আমাকে তুই করে বলল
–একদম চূপ করে থাকবি না,বল আমার কি হইছে?একদম লুকাবি না?কেন বলছিস না?
আবিদ,তুই বল আমার কি হইছে?বল বলছি,তুই কি আর পারতাছছ না?তোর কি কোনো ক্ষমতা নাই আমাকে তোর কাছে সব সময় রাখার জন্য?আমিও তো চাই আমি সব সময় তোর সাথে থাকি?এই আবিদ বল না?আমার কি হইছে?আমি তো তোর কাছ থেকে হারিয়ে যেতে চাই না৷বল আবিদ আমার কি হইছে?
জানিনা তখন আমার কি হইছে?তখন মাথাটা কেমন জানি ওলট পালট হয়ে গেল৷নিজের যে তখণ কি হইছে সেটা আমি নিজেও জানি না৷
ওর হাতটা আমার কলার থেকে ছুটিয়ে ঠাস ঠাস করে ওর গালে দুইটা প্রচন্ড জোড়ে থাপ্পর মারলাম৷
থাপ্পর দুইটা খেয়ে আনিকা মাটিতে পড়ে গেল৷আমি তখন ওকে মাটি থেকে তুলে পাগলের মত অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম৷ আর চিৎকার করে কান্না করতে করতে পাগলের মত বার বার বলছিলাম,তোর কিছু হয় নাই,তোর কিছু হয় নাই৷তোর কীছু হতে আমি দিবো না তো৷তোকে আমি কখনই একা ছেড়ে যেতে দিব না৷ ও তখণ একটা কথাই বার বার বলছিল৷
এইযে আমার পাগল আবিদটার মাথাটা একদম নষ্ট হয়ে গেছে৷আমার পাগলটা অনেক ক্ষেপে গেছে৷
আমার পাগলটার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে৷
কথাগূলো বলছিল আর আনিকার চোখভর্তি পানিতে ছলোছলো অবস্থায় আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল৷
ওপরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে তখন আল্লাহ কে একটা কথাই বলছিলাম
আল্লাহ?ও আল্লাহ?তুমি বলো,আমার কি সেই ক্ষমতা আছে?মানুষ হয়ে কিভাবে তোমার হাতের ভাগ্য লেখা ,কিভাবে আমি পরিবর্তন করব?
আমার তো সেই ক্ষমতা নাই৷কিন্তু তোমার তো আছে৷দাও না গো আল্লাহ,আমার এই পাগলিটাকে ভাল করে৷আমার কাছ থেকে না আল্লাহ?ওকে আলাদা কইরো না?আল্লাহ তুমি ওকে সুস্থ করে আবার আনিকাকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও আল্লাহ,ফিরিয়ে দাও৷
.
.
.
.
চলবে..

পতিতা মেয়ে part_13

0

#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_13

আনিকাকে নিয়ে রিক্সায় উঠলাম৷তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে৷রিক্সা চলছে তখন আনমনে৷
হঠাৎই আনিকা আমার কাধে ওর মাথাটা রাখল৷আর ডান হাতটা আমার ডান হাতে শক্ত করে আকড়ে ধরল৷আর নরম সুরে বলে উঠল
–আবিদ?একটা কথা বলব?(নরম সুরে)

**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

–হুম বলো
–আচ্ছা আবিদ সত্যি করে বলো তো আমার কি হইছে?একদমই মিথ্যা বলবে না,বলো আবিদ আমার কি হইছে?
ওর এমন প্রশ্ন শুনে আমি থমকে গেলাম৷আমি তখন ওকে কি উত্তর দিবো?আমার তো কোনো উত্তর জানা নেই৷ ৷ও এই কথাগুলো জিজ্ঞাসা করার পর কেন জানি কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো৷আমি কোনো ভাবেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিনা৷আমি তখন কি উত্তর দিব আনিকাকে?
আকাশের দিকে তাকাতেই মনে হচ্ছে সমস্ত আকাশটা ভাইঙ্গা আমি আবিদের মাথার ওপর পইড়া যাইতাছে৷ ওপর দিকে তাকাইয়া মনে মনে আল্লাহকে ডাক দিয়া বললাম
“”আল্লাহ,ও আল্লাহ,আমার জীবনের সবটুকু হাসি তো কেড়েই নিছো তুমি৷কিন্তু আজকে এই মুহুর্তে আমাকে আমার হাসিটুকু কিছুক্ষনের জন্য ধার দাও৷আল্লাহ আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন?প্লিজ আল্লাহ,এমন করো না৷আমার আনিকার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার মুখে একটু হাসি দাও,নয়ত যে আমার আনিকা মরে যাইব৷আল্লাহ তুমি না এমন করো না৷
আল্লাহ,আমার জীবনের অন্ধকার সময়ে যে মানুষটা আমার হাতটা ধরে রাখছে,তার এই সময়ে আমাকে তার পাশে থাকার ক্ষমতা দাও৷আমার চোখে এখন কান্না দিও না আল্লাহ৷আল্লাহ ও আল্লাহ,তুমি তো নিয়েই যাইবা,কিন্তু এই মুহুর্তে আমার আনিকার সামনে আমাকে একটু হাসি দাও
–আবিদ,এই আবিদ,চুপ কেন?
বুকটা অনেক বেশি ভার হয়ে যাচ্ছে৷মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না৷আমি কি উত্তর দিব আনিকাকে?কি বলব?কিছুই মাথায় আসছে৷
–আবিদ?চুপ কেন?(একটু চিৎকার দিয়ে)
–আরে পাগলি?তোমার কিছুই হয়নি৷পৃথিবীতে কার এত ক্ষমতা আছে?যে আবিদের কাছ থেকে তার আনিকাকে কেড়ে নিবে?আমি দিবো না তো৷আমি আমার এই পাগলিটাকে আমার বুক থেকে কখনই আলাদা হতে দিব না(থরথর করে কাপতে লাগলাম)
আনিকা তখন আমার হাতটাকে আরও শক্ত করে ধরল৷আর বলে উঠল
–আবিদ,আমি যেমন তোমার হাত ছাড়ি নাই,আমি বিশ্বাস করি,আমার কাছ থেকে কখনই কেউ তোমাকে নিয়ে যেতে পারবে না,তেমনি তোমার কাছ থেকেও আমাকে কখনই আড়াল করতে পারবে না
তখনই ওপরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে আল্লাহকে ডাক দিয়ে বললাম
“”আল্লাহ?এই কোনো খেলায় আমায় ফেলছো?আমার মানুষ কয়,আমার কাছ থেকে পৃথিবীর কেউ তাকে কখনই নিয়ে যেতে পারবে না,আর তার কাছ থেকে আমাকে কখনই কেউ আলাদা করতে পারবে না৷কিন্তু তুমি তো ঠিকই নিয়া যাইবা৷তুমি তো ঠিকই আলাদা কইরা দিবা,
কেন আল্লাহ এইটা করলা?কোন দোষে এত বড় শাস্তি দিচ্ছো আমায় ?বলো আল্লাহ বলো৷হয়ত এই উত্তর আল্লাহ কখনই আমাকে দিবেনা৷
সেদিন অনেকক্ষনই দুজনে রিক্সাতে ছিলাম৷তারপর বাসায় এসে পড়লাম৷ বাসায় আসার পর থেকেই কেমন বুকের ভিতর ব্যাথাটা অনেক বেড়ে গেল৷
রাতে খেয়ে দুজনেই শুয়ে পড়লাম৷
প্রতিদিনের মতই আনিকা আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকের মধ্যে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল৷
লাইট অফ করে দিলাম৷পুরো ঘর ঘূটঘুটে অন্ধকার হয়ে গেল৷আমি তখন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি ৷তখন আমার চোখ দুটো থেকে অনিচ্ছা সত্বেও পানি পড়তে লাগল৷
কি হলো এটা আমার লাইফে?মাত্র ৬টা মাস পর কে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে?কার মাথায় আমি হাত বুলিয়ে দিবো৷কে আমাকে এত ভালোবাসবে?কে আমাকে নতুন করে পথচলা শিখাবে?কাকে নিয়ে আমি ভালোবাসার সুখের সংসার গড়ব?
কথা গূলো ভাবতেই মনে হচ্ছে বুকের ভিতর থেকে কলিজা কেউ টেনে ছিড়ে ফেলছে৷মনে হচ্ছে আমার আত্মা টা কেউ টেনে বের করে ফেলছে৷মৃত্যু যন্ত্রনা অনূভব করতে লাগলাম৷
এভাবেই রাতটা কেটে গেল৷
দিন যতই এগোতে লাগল ততই আমার মৃত্যু যন্ত্রনা বাড়তে লাগল৷
আনিকাকে নিয়েই সারাদিন চিন্তা করতে করতে দিন চলে যায়৷ওর সামনে হাসিখুসি থাকলেও ,ওর অনুপস্থিতিতে বুকটা ফেটে যায়৷
আনিকার চিকিৎসা শুরু করে দিলাম৷
কারন ইদানীং ধরে ওর মাথা ব্যাথা বেড়ে যাচ্ছে,আর কাশিও শুরু হতে লাগল৷
আনিকাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাইলেই আনিকা বার বার জিজ্ঞাসা করতো,ওকে কেন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই,কেনই বা ওকে ঔষধ খাওয়াই৷
এইত সেদিন ঔষধ খাওয়ানোর সময়
–আনিকা,এইদিকে আসো
–হুম,বলো
–এই ঔষধগুলো এখনি খেয়ে নাও
–আচ্ছা,তুমি প্রতিদিন খাওয়া শেষ হলে আমাকে ঔষধ খেতে বলো কেন?আমার কি হইছে
–তোমার কিছুই হয়নি,তোমার মাথায় ব্যাথা হয়,তার জন্যই ডাক্তার এই ঔষধগুলো রেগূলার খেতে বলছে
–কিন্তু শুধু মাথা ব্যাথার জন্যই এত ঔষধ খেতে দিবে কেন? **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
আর ব্যাথা তো বেশি কমছেও না৷সেই মাথা ব্যাথা তো হয়ই
–যাই হোক,তোমাকে ঔষধ খেতে হবে
–কেন খাবো
–কেন আবার?আমি ঔষধ দিলে কি তুমি খাবেনা?
–তূমি দিলে ঔষধ কেন ?বিষও খেতে পারি,কারন আমি আমার পাগলটার সব কথা শুনতে রাজি,কখনই আমি আমার পাগলটার অবাধ্য হবো না,বুঝেছো?
তখন ওর সাথে কী উত্তর দিব ভেবেই পাচ্ছিলাম না৷শুধু আমার বিবেকটাকে প্রশ্ন করছিলাম
“এই আবিদ শুনতে পাইছছ,তোর আনিকা কি বলছে?মরে যেতে রাজি,তারপরও তোর কথার অবাধ্য হবে না?তোর শাসন গূলো মেনে নিবে,
কীন্তু আর কয়টা দিন তুই ওকে শাসন করবি?
কাকে বলবি ঔষধ খেতে?আর তো মাত্র কয়টা দিন ,তারপরই তো ও চলে যাবে৷তখন তূই কী করবি?
কে এভাবে তোর সব কথা মেনে নিবে?কে তোকে এত ভালোবাসবে ?
ভাবতেই বুকটা কেমন চিনচিন করে ব্যাথা করতে লাগল৷
–এই,তুমি এমন চূপ হয়ে গেলে কেন?কি বিশ্বাস হচ্ছে না,তোমার কথায় আমি বিষ খেতে পারব না ভাবছো?
তখনই আনিকাকে খূব শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলাম৷হয়ত ও অবাক হয়ে গেছে,এভাবে হঠাৎ তাকে জড়িয়ে ধরার কারনে৷
জড়িয়ে ধরেই বললাম
–এই পাগলি ,কি বলছো এগূলো?আমি যে তোমায় অনেক ভালোবাসি,তোমাকে ছাড়া যে আমি একা কখনই থাকতে পারবো না৷তোমাকে ছাড়া যে এই আবিদ বেঁচে থাকতেই পারবে না৷তুমি কি জানোনা,তুমি আমার সেই অক্সিজেন,যেটা ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না,খূব ভালোবাসি,খূব বেশিই ভালোবাসি(কান্না করে দিলাম)
–হুম,আমিও খুব ভালোবাসি আমার পাগল টাকে৷আর একদম কান্না করবা না!তুমি কি জানো না?তোমার পাগলিটা তোমার কান্না একদমই সহ্য করতে পারেনা,অনেক কষ্ট লাগে,যখন তার পাগলটার মন খারাপ থাকে
–হূম
–আবিদ,আমাকে না,এভাবেই সব সময় বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখবা,কখনই না আলাদা হতে দিও না৷আমি না তোমার বুকে স্বর্গ সুখ খূজে পাই৷তোমার এই বুকটা শুধূ আমার জন্য,কখনই ওই বুকে ঠাই দিবে না৷
আর আমাকে কখনই একা ফেলে যাবে না৷সব সময় বুকের মধ্যেই আগলে রাখবা
(চোখের পানি গুলো তখন বৃষ্টির মত ঝড়তে লাগল৷আমার পাগলিটা কি আবদার রাখছে আমার কাছে,অথচ কয়টা দিন পরেই ও চলে যাবে!আমার ভালোবাসার কোনো শক্তি নেই তাকে আটকিয়ে রাখার৷
আর কিভাবেই বা আটকিয়ে রাখব?
আমি তো মানুষ!মানুষ হয়ে কিভাবে সৃষ্টিকর্তা লিখন আমি পরিবর্তন করব?
হয়ত আমি সেটা কখনই পারব না৷ভাবতেই আরও অনেক কান্না পেল৷নিজেকে কোনোভাবেই ঠিক রাখতে পারলাম না৷আনিকাকে তখণ নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম৷আর বলতে লাগলাম)
–হুম,আমি কখনই আমার পাগলিটাকে একা ফেলে চলে যাবো না৷সব সময় আমি আমার পাগলিটাকে আমার বুকের মধ্যেই রাখব৷আড়াল হতে দিবো না(কান্না করতে করতে)
–হুম৷এবার হাসো(চোখের পানি মুছে দিয়ে)
–হি হি হি(কোনোমতে একটা মিথ্যা হাসি দিয়ে)
–হি হি হি,এভাবেই সব সময় হাসবা,আর আমার ইয়ে টা কে দিবে
–ইয়েটা কি
–ওই যে,কপালে ভালবাসার স্পর্শ
বুঝে গেলাম ও কি চাচ্ছে এখন৷ঠিক তখন ওর কপালে আলতো করে একটা চূমু দিয়ে চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিলাম৷
কিছুদিন পর কে বলবে, আবিদ আমার কপালে একটা চুমু দিবে না?
ভাবতেই কলিজা ফেঠে চিৎকার করে কান্না আসে,তবে হয়ত সেটা করার অধিকার আমার নেই৷
.
.
.
.
.
চলবে

পতিতা মেয়ে part_12

0

#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_12

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার পর কেন জানি মনটা অনেক বেশি উতাল পাতাল করছিলো৷
ছাদের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বারবারই পায়চারি করছিলাম৷বার বার ই ডাক্তার চাচার ঘাবরে যাওয়ার বিষয়টা মনে পড়ছিল৷ওনি কেন এত ঘাবরে যাচ্ছিলো?ভাবতেই কেমন গায়ের লোম দাড়িয়ে যাচ্ছিলো৷হঠাৎই কারও হাতের স্পর্শ আমার কাধের ওপর অনুভুত হলো৷পিছনে তাকাতেই দেখলাম আনিকা৷
–আবিদ,তোমাকে খুব চিন্তিত লাগছে কেন?
–কই না তো
–সত্যি কথা বলো বলছী
–আরে একটূ কেমন জানি লাগছে তাই একটূ হাটাহাটি করছি
–কেমন লাগছে?
–আসলে আমাকে তো হাটতে হবে তাই না?আর তুমি তো জানো আমি এখনও ভালো করে হাটতে পারিনা,তাই হাটা শিখছি(মিথ্যা বলছি)
–ওয়াও,তুমি তো দেখছি ,খূব সুন্দর মিথ্যা কথা বলতে পারো
–আরে না গো
–সত্যি কথা বলো তো,তোমার কি হইছে?কাল থেকে তোমাকে কেমন চিন্তিত লাগছে
–আরে কিছু না গো,চলো ভিতরে যাবো,খুব খিদে লাগছে
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

–হুম
তারপর আনিকাকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলাম৷আর ও আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছিলো৷
খাওয়া শেষ করে৷একটূ শুয়ে থাকতেই ঘূম চলে আসল৷কারন গতকাল রাতে একদমই ঘূম হয়নি৷
ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই ফোনটা ক্রিং ক্রিং ভেজে উঠল৷
ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসল
–হ্যালো ,বাবা আবিদ?(ওপাশ)
–জ্বি আবিদ বলছি,কে?
–আমি তোমার ডাক্তার আংকেল
–জ্বি আংকেল,কেমন আছেন?আর রিপোর্ট কি বের হইছে?
–হুম ভালো আছি,আর বিকেল বেলা একটূ আমার চেম্বারে আসো
–আংকেল রিপোর্ট কেমন আসছে
–হুম ভালো,আগে আসো,তারপর সব বলব
–হুম
তারপরই ফোনটা কেটো দিলাম৷
বিকেলবেলা আনিকাকে নিয়ে হসপিটালে যাবার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম৷একাই যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু একা আমার মত অচলের পক্ষে যাওয়া সম্ভব না৷
হসপিটালে যাবার পরই ডাক্তার কাকার চেম্বারে গেলাম৷যাওয়ার পর
–চাচা,কেমন আছেন(আমি)
–ভালো,তুমি?
–হুম ভালো৷আবিদ আমি তোমার সাথে একটু একা কথা বলতে চাই,
–হুম
তারপরই আনিকাকে বললাম
–আনিকা,তুমি একটু বাইরে গিয়ে বসো,প্লীজ রাগ করো না
–হূম,যাচ্ছি,আর আমি একদমই রাগ করব না
বলেই মুখে একটা শুকনো হাসি দিয়ে বাইরে বের হয়ে গেল৷ও যাবার পরই চাচাকে বললাম
–চাচা কি রিপোর্ট আসছে?
ওনি কিছুক্ষন চুপ করে রইলেন৷একটু পর নিরবতা ভেঙে বললেন
–বাবা আবিদ,মেয়েটা তোমার কে হয়?
–চাচা ও আমার সব
–হুম৷কীন্তু ওর বাবা মা কোথায়
–ওর বাবা নেই,মা আছে,কিন্তু ওদের কথা কেন জিজ্ঞাসা করছেন?
–ওর মাকেই ডাকো,
–চাচা ,যা রিপোর্ট আসছে,আমাকে বলেন,ওর মাকে ডাকার দরকার নেই
–আসলে বাবা কিভাবে যে বলি(মুখটা একেবারে শুকনো করে)
–চাচা,আপনার মূখ এত শুকনো হলো কেন?কি হলো বলেন কি রিপোর্ট আসছে
চাচা চোখের পানি গূলো ছেড়ে দিলেন৷ওনার ঠোঠ দুটি থরথর করে কাপতে লাগল৷আর কেমন বোবার মত আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল৷ওনার এমন কীর্তি দেখে মনে অনেক ভয় হতে লাগল৷বুকের ভিতর কেমন ঘূর্নিঝড় শুরু হতে লাগল৷অজানা কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে৷ওনি রিপোর্ট বলতে গিয়ে এমন কান্না করে দিল কেন?এমন কাপছে কেন?
আমার আনিকার কিছু হয়নি তো?ওর রিপোর্ট খারাপ আসে নি তো?
—-চাচা কি হইছে বলেন৷চূপ কেন আপনি(কান্না করেই দিলাম)
–বাবা রে,কিভাবে বলি,যে মেয়েটার রিপোর্ট আজ তোকে দিতে যাচ্ছি,তার রিপোর্টের কথা আমি কিভাবে বলব?
–চাচা,সত্যি করে বলেন তো,আমার আনিকার কি হইছে?(ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলাম৷মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছেনা)
–বাবা,তুমি একটু শান্ত হও,
–হুম,আআআআ, আপনি রি রি পো র্ট ব বলেন(তোতলাচ্ছি)
–বাবা,তুমি যে মেয়েটারে নিয়ে আসছো,ওর রিপোর্টগূলো দ্বারা এটাই বলা যাচ্ছে,ওর ব্লাড ক্যান্সার…
কথাটা শুনেই মাথাটা কেমন ঘূরে গেল৷মনের ভিতর যেন ভুমিকম্প শুরু হয়ে গেল৷আর যেন মৃত্যু যন্ত্রনা তখন অনূভূত হতে লাগল৷দৌড়ে গিয়ে চাচার পায়ে পড়ে গেলাম,
–চাচা,আপনি হয়ত ভূ ভুল বলতাছেন,আপনি মিথ্যা কথা বলতাছেন৷আমার আনিকার কিচ্ছু হয় নাই৷আপনি আবার টেষ্ট করেন,আবার ভালো করে দেখেন(চাচার পায়ে ধরে কান্না করতে করতে)
–বাবা রে,রিপোর্টগূলো মিথ্যা হলেও আমিও খুব খুশি হতাম৷এই রিপোর্টগুলো গতকালই আমি বের করে ফেলি,তারপর আমি নিজেই ঘাবরে যাই,তারপর থেকে কয়েকবার নতূন করে টেষ্ট করি,সেই একই ফলাফল৷এরপর আরও কয়েকজন স্বনামধন্য হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে রিপোর্টগুলো পাঠালাম,তারাও সেম রিপোর্টই আমাকে দিছে,শুধু মাত্র তুমি আমার পরিচিত বলেই বারবার টেষ্ট করছিলাম শুধু মাত্র রিপোর্টটা ঘুরানো যায় কি না,সেটার জন্য কিন্তূ আল্লাহর দেওয়া বিধান কি আমার মত একজন ডাক্তার খন্ডাতে পারবে নাকি?পারবে না রে বাবা৷আমিও পারি নাই,,
—চাচা,এখন ওর চি চ(কথা আসছে না)
–শান্ত হও,নিজেকে শান্ত করো
–চাচা কেন ওর এমন হলো?কেন ওর জীবনটা এভাবে শেষ হয়ে গেল?
–বাবা রে,আসলে কথাটা মুখ দিয়ে আসছে,মেয়েটা তো আমার মেয়েরও মত,কিন্তু কথাটা যদিও খারাপ,তারপর তুমী জানতে চাচ্ছ বিধায়,আমি তোমাকে বলছি,আসলে মেয়েটা হয়ত,অনেক পুরুষের সাথে মেলামেশা করেছে,আর ওইগুলোর একটাও নিরাপদ ছিলোনা৷যার কারনে ওর শরীরের ভিতর অনেক রোগের জীবানুর সংক্রমন ঘটে৷আর আস্তে আস্তে ওর শরীরে ক্যান্সারের মত ভয়াবহ রোগের সৃষ্টি হয়৷
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
আর ওর ক্যান্সারটা এতইটাই ভয়াবহ যে,রোগ হবার পর সেটা অনেক দ্রুত ওর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শেষ করে দিছে৷
–আল্লাহ,তুমি এটা কি করলে?তুমি তো জানতে ,গ্রামের সহজ সরল মেয়েটা শহরে আসার পরই নিজের মামার হিংস্রতার শিকার হয়!আর তারপর শিকার হয় শত শত মানুষের খাবার হিসাবে,এখানে তো মেয়েটার কোনো দোষ ছিলো না ৷কেন মেয়েটাকে এত বড় শাস্তি দিলে?কেনই বা আমার জীবনটা এভাবে তচনছ করে দিলে?(মনে মনে কথাগুলো বলছিলাম৷আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছিলাম)
–শান্ত হও বাবা
–শান্ত হয়ে আর কি করব,চাচা ওকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করালে কেমন হবে?ও ঠিক হবে তো
–বাবারে,ওর ক্যান্সারটা মোটামুটি লাষ্ট স্টেপে এসে গেছে,হয়ত বেঁচে থাকলে আর ৫-৬মাস বেঁচে আছে,তারপরই মানুষটা হয়ত আমাদের ছেড়ে চলে যাবে,কিন্তু বাবা,যতদিন মেয়েটা আছে,ওকে একদমই বুঝতে দিও না,আর কথাগুলো যেন কোনোভাবেই জানতে না পারে,তাহলে হয়ত এর আগেই চলে যাবে,,
কথা গুলো বলেই ডাক্তার চাচা কান্না করে দিল৷আমার তখন মনে হতে লাগল,চোখে পাশাপাশি আমার কানটাও নষ্ট হয়ে গেছে৷কি বলছে এগুলো?আমার আনিকার কীছু হবে না৷আমি হতে দিবো না৷ এই দিকে আমার অবস্থাও তখন একদমই করুন হয়ে গেল৷কোনোভাবেই নিজেকে ঠিক করতে পারছিলাম না৷কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি,আর তখন চাচাই আমার জ্ঞান ফিরালো৷ওনি বার বারই আমাকে শান্ত হতে বলছে,আমি কিভাবে শান্ত হবো?আমি নিজেকে কিভাবে ঠিক করবো?যে মেয়েটা আমার জীবনের সব,যাকে ছাড়া আমি একদমই অচল৷মোবাইলের চার্জ ছাড়া যেমন মোবাইল অচল,ঠিক আনিকা ছাড়াও আমি একদমই অচল,সে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে!এই কথা শুনে আমি কিভাবে ঠিক থাকবো আল্লাহ?আমি কিভাবে বাচঁব?নিজেকে কোনোভাবে একটু ঠিক করে বললাম
–চাচা,কি কি লক্ষন দিতে পারে?
ওনি বলা শুরু করল
–বাবারে,মেয়েটার মধ্যে অনেকগুলো লক্ষন দেখা দিবে,প্রচন্ড কাশি আসবে,কাশির সাথে মুখ দিয়ে মাঝে মাঝে ব্লাড আসব,নাক দিয়ে রক্ত পড়ব,মানুষটা শুকিয়ে যাবে,মাথার চুল গুলো আস্তে আস্তে পড়ে যাবে৷আস্তে আস্তে শরীরটা একদমই দুর্বল হয়ে যাইব
মনে মনে তখন চিন্তা করতে লাগলাম,আল্লাহ?কি হইলো আমার লাইফে?আমার জীবনটাই তুমি নিয়ে নিতে!তুমি কেন আমার আনিকাকে এত বড় শাস্তি দিলে?
ওপরের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ কে ডাক দিয়ে বললাম,
“আল্লাহ,ও আল্লাহ,আমার জীবনে যদি এতই কষ্ট রেখেছিলে,তাহলে কেন আমাকে এইপৃথিবীতে পাঠালে?ওই আল্লাহ?আমার কথা উত্তর দাও৷জন্মের পর বুঝ না হতেই আমার বাবা মাকে তুমি কেড়ে নিছো,
এরপর কেড়ে নিছো,আমার জীবনের সমস্থ সুখ শান্তি,
রাস্থার টোকাই হিসাবে আমাকে মানুষের লাথি খেয়ে বড় হতে হইছে,যেই নিজের সবকীছু ফিরিয়ে দিলে,আনিকাকে আমার জীবনে পাঠালে,ভালো হয়ে গেলাম,আর তখন ভাল হবার বদলে কি দিলে আমায়?আমার পা আর চোখের ক্ষমতা প্রায় বিকল করে দিলে,আর তারপর যার মাধ্যমে আমার নতুন পৃথিবীটাকে সাজাবো,যে আমার চলার সবকিছু,এখন তাকেই নিয়ে যেতে চাচ্ছো,কেন এমন করলে আল্লাহ?কেন আমার জীবনটাকে এভাবে শেষ করে দিলে৷
নিজেকে কোনোভাবেই ঠিক করতে পারছিলাম না৷চাচা বারবার ই বলছে অনেক টাইম হয়ে গেছে,আনিকা বাইরে,আরও বেশি টাইম হলে,আনিকা সন্দেহ করতে পারে৷আর আনিকা বুঝে গেলেই ওর জন্য আরও অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে
তখন নিজেকে কোনোভাবে ঠিক রাখলাম,না আমি আমার আনিকা কিছুই বুঝতে দিবো না৷৷তবে মনটাকে কোনোভাবেই ঠিক রাখতে পারছিলাম না৷ইচ্ছা না থাকা সত্বেও চোখ দিয়ে পানি বের হতে থাকল৷আটকাতেই পারছিনা৷
আবারও আল্লাহকে ডাক দিয়ে বললাম,আল্লাহ,এই মুহুর্তে আমাকে আপাতত একটূ ছাড় দাও,আমার চোখের পানি যেন কোনোভাবেই না আসে৷আল্লাহ?ও আল্লাহ জীবনে যদি আমি একটা ভালো কাজ করে থাকি,তাহলে তার বিনিময়ে আজকে আমার আনিকার সামনে আমার চোখে পানি দিও না৷আমার আনিকা মইরা যাইবো আল্লাহ,তুমি আমার এই আবদারটা রাখো আল্লাহ,রাখো
জানিনা আমার আল্লাহ তখন কিভাবে আমার এই দোয়াটা কবুল করল৷
আমি তখন হাসতে হাসতে বাইরে বের হলাম৷আর তখন আনিকা অনেকটা দূর থেকে আমাকে দেখে আমার কাছে আসল৷আর বলল
–আবিদ,রিপোর্ট কি আসছে
–রিপোর্ট?হ্যা রিপোর্ট তো অনেক ভালো আসছে(কথাই বের হচ্ছিলো না)
–তাহলে এমন করে কথা বলছো কেন?আর তোমার চোখ এমন ফোলা কেন?তুমি কান্না করছো কেন
–কই না তো?
–একদমই মিথ্যা বলবা না ৷বলো কি হইছে
আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে আল্লাহকে বলছিলাম
ওই আল্লাহ,তুমি বলে দাও,আমি কি উত্তর দিমু?আমারে শিখাইয়া দাও,আমার কাছে তো কোনো উত্তর নেই৷প্লীজ আল্লাহ,আমারে উত্তরটা একটু শিখাইয়া দাও৷৷৷একটু পরই বললাম
–আসলে আনিকা,আমার তো চোখে প্রবলেম!তাই চাচার কাছে আমার চোখেরও কিছু টেষ্ট করাইছি,আর ওনি চোখে কিছু ঔষধ দিছে,যার কারনে চোখটা একটু জ্বালাপোড়া করছিল৷
–হুম চলো,বাসায় যাই,এখানে আর ভালো লাগছে না
–হুম
আনিকাকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে হসপিটালের বাইরে বের হলাম৷রাস্তায় বের হতেই হঠাৎই ইটের ওপর লাথি খেয়ে পরে যেতে লাগলাম ঠিক তখনই আনিকা আমার হাতটা ধরে ফেলল৷আর ধরেই বলে উঠল
–এই বোকা,ভয় পেয়ো না,তোমার এই পাগলিটা থাকতে!তোমার কিছুই হতে দিবেনা
বোবার মত ওর কথাটা শুনলাম৷ও থাকতে আমার কিছু হতে দিবেনা৷অথচ আমি থাকতে ওর কত কিছুই হয়ে যাবে৷ভাবতেই বুক ফেঠে কান্না আসছিলো৷তবে কান্নাটা আটকিয়ে রাখলাম৷নয়ত আনিকা বুঝে যাবে৷
একটু পর আনিকা আমাকে রাস্তা দিয়ে হাতে হাত ধরে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে,একবার বলছে ডানে হাটো,বামে উচু,আরেকবার ডানে গর্ত,বা উচু, এগুলো বলে বলে আমাকে হাত ধরে রাস্তা দিয়ে হাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷
তখন বুকের ভিতরটা আরও বেশি খা খা করে উঠল৷কান্না করে চিৎকার করে আল্লাহর কাছে বলতে ইচ্ছে করছিল,””আল্লাহ?মাত্র ছয়টা মাস পর আর তো আর এই মানুষটা থাকবে না৷তখন কেউ আর বলবে না!আবিদ ডানে হাটো,বামে গর্ত ,আবার বামে হাটো,ডানে গর্ত উচূ৷কে আমাকে এভাবে পথচলা শিখাবে ? আল্লাহ,ও আল্লাহ ?চুপ করে থেকো না৷উত্তর দাও৷তুমি উত্তর দাও
.
.
চলবে……