পতিতা মেয়ে part_13

0
1211

#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_13

আনিকাকে নিয়ে রিক্সায় উঠলাম৷তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে৷রিক্সা চলছে তখন আনমনে৷
হঠাৎই আনিকা আমার কাধে ওর মাথাটা রাখল৷আর ডান হাতটা আমার ডান হাতে শক্ত করে আকড়ে ধরল৷আর নরম সুরে বলে উঠল
–আবিদ?একটা কথা বলব?(নরম সুরে)

**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

–হুম বলো
–আচ্ছা আবিদ সত্যি করে বলো তো আমার কি হইছে?একদমই মিথ্যা বলবে না,বলো আবিদ আমার কি হইছে?
ওর এমন প্রশ্ন শুনে আমি থমকে গেলাম৷আমি তখন ওকে কি উত্তর দিবো?আমার তো কোনো উত্তর জানা নেই৷ ৷ও এই কথাগুলো জিজ্ঞাসা করার পর কেন জানি কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো৷আমি কোনো ভাবেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিনা৷আমি তখন কি উত্তর দিব আনিকাকে?
আকাশের দিকে তাকাতেই মনে হচ্ছে সমস্ত আকাশটা ভাইঙ্গা আমি আবিদের মাথার ওপর পইড়া যাইতাছে৷ ওপর দিকে তাকাইয়া মনে মনে আল্লাহকে ডাক দিয়া বললাম
“”আল্লাহ,ও আল্লাহ,আমার জীবনের সবটুকু হাসি তো কেড়েই নিছো তুমি৷কিন্তু আজকে এই মুহুর্তে আমাকে আমার হাসিটুকু কিছুক্ষনের জন্য ধার দাও৷আল্লাহ আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন?প্লিজ আল্লাহ,এমন করো না৷আমার আনিকার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার মুখে একটু হাসি দাও,নয়ত যে আমার আনিকা মরে যাইব৷আল্লাহ তুমি না এমন করো না৷
আল্লাহ,আমার জীবনের অন্ধকার সময়ে যে মানুষটা আমার হাতটা ধরে রাখছে,তার এই সময়ে আমাকে তার পাশে থাকার ক্ষমতা দাও৷আমার চোখে এখন কান্না দিও না আল্লাহ৷আল্লাহ ও আল্লাহ,তুমি তো নিয়েই যাইবা,কিন্তু এই মুহুর্তে আমার আনিকার সামনে আমাকে একটু হাসি দাও
–আবিদ,এই আবিদ,চুপ কেন?
বুকটা অনেক বেশি ভার হয়ে যাচ্ছে৷মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না৷আমি কি উত্তর দিব আনিকাকে?কি বলব?কিছুই মাথায় আসছে৷
–আবিদ?চুপ কেন?(একটু চিৎকার দিয়ে)
–আরে পাগলি?তোমার কিছুই হয়নি৷পৃথিবীতে কার এত ক্ষমতা আছে?যে আবিদের কাছ থেকে তার আনিকাকে কেড়ে নিবে?আমি দিবো না তো৷আমি আমার এই পাগলিটাকে আমার বুক থেকে কখনই আলাদা হতে দিব না(থরথর করে কাপতে লাগলাম)
আনিকা তখন আমার হাতটাকে আরও শক্ত করে ধরল৷আর বলে উঠল
–আবিদ,আমি যেমন তোমার হাত ছাড়ি নাই,আমি বিশ্বাস করি,আমার কাছ থেকে কখনই কেউ তোমাকে নিয়ে যেতে পারবে না,তেমনি তোমার কাছ থেকেও আমাকে কখনই আড়াল করতে পারবে না
তখনই ওপরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে আল্লাহকে ডাক দিয়ে বললাম
“”আল্লাহ?এই কোনো খেলায় আমায় ফেলছো?আমার মানুষ কয়,আমার কাছ থেকে পৃথিবীর কেউ তাকে কখনই নিয়ে যেতে পারবে না,আর তার কাছ থেকে আমাকে কখনই কেউ আলাদা করতে পারবে না৷কিন্তু তুমি তো ঠিকই নিয়া যাইবা৷তুমি তো ঠিকই আলাদা কইরা দিবা,
কেন আল্লাহ এইটা করলা?কোন দোষে এত বড় শাস্তি দিচ্ছো আমায় ?বলো আল্লাহ বলো৷হয়ত এই উত্তর আল্লাহ কখনই আমাকে দিবেনা৷
সেদিন অনেকক্ষনই দুজনে রিক্সাতে ছিলাম৷তারপর বাসায় এসে পড়লাম৷ বাসায় আসার পর থেকেই কেমন বুকের ভিতর ব্যাথাটা অনেক বেড়ে গেল৷
রাতে খেয়ে দুজনেই শুয়ে পড়লাম৷
প্রতিদিনের মতই আনিকা আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকের মধ্যে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল৷
লাইট অফ করে দিলাম৷পুরো ঘর ঘূটঘুটে অন্ধকার হয়ে গেল৷আমি তখন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি ৷তখন আমার চোখ দুটো থেকে অনিচ্ছা সত্বেও পানি পড়তে লাগল৷
কি হলো এটা আমার লাইফে?মাত্র ৬টা মাস পর কে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে?কার মাথায় আমি হাত বুলিয়ে দিবো৷কে আমাকে এত ভালোবাসবে?কে আমাকে নতুন করে পথচলা শিখাবে?কাকে নিয়ে আমি ভালোবাসার সুখের সংসার গড়ব?
কথা গূলো ভাবতেই মনে হচ্ছে বুকের ভিতর থেকে কলিজা কেউ টেনে ছিড়ে ফেলছে৷মনে হচ্ছে আমার আত্মা টা কেউ টেনে বের করে ফেলছে৷মৃত্যু যন্ত্রনা অনূভব করতে লাগলাম৷
এভাবেই রাতটা কেটে গেল৷
দিন যতই এগোতে লাগল ততই আমার মৃত্যু যন্ত্রনা বাড়তে লাগল৷
আনিকাকে নিয়েই সারাদিন চিন্তা করতে করতে দিন চলে যায়৷ওর সামনে হাসিখুসি থাকলেও ,ওর অনুপস্থিতিতে বুকটা ফেটে যায়৷
আনিকার চিকিৎসা শুরু করে দিলাম৷
কারন ইদানীং ধরে ওর মাথা ব্যাথা বেড়ে যাচ্ছে,আর কাশিও শুরু হতে লাগল৷
আনিকাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাইলেই আনিকা বার বার জিজ্ঞাসা করতো,ওকে কেন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই,কেনই বা ওকে ঔষধ খাওয়াই৷
এইত সেদিন ঔষধ খাওয়ানোর সময়
–আনিকা,এইদিকে আসো
–হুম,বলো
–এই ঔষধগুলো এখনি খেয়ে নাও
–আচ্ছা,তুমি প্রতিদিন খাওয়া শেষ হলে আমাকে ঔষধ খেতে বলো কেন?আমার কি হইছে
–তোমার কিছুই হয়নি,তোমার মাথায় ব্যাথা হয়,তার জন্যই ডাক্তার এই ঔষধগুলো রেগূলার খেতে বলছে
–কিন্তু শুধু মাথা ব্যাথার জন্যই এত ঔষধ খেতে দিবে কেন? **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
আর ব্যাথা তো বেশি কমছেও না৷সেই মাথা ব্যাথা তো হয়ই
–যাই হোক,তোমাকে ঔষধ খেতে হবে
–কেন খাবো
–কেন আবার?আমি ঔষধ দিলে কি তুমি খাবেনা?
–তূমি দিলে ঔষধ কেন ?বিষও খেতে পারি,কারন আমি আমার পাগলটার সব কথা শুনতে রাজি,কখনই আমি আমার পাগলটার অবাধ্য হবো না,বুঝেছো?
তখন ওর সাথে কী উত্তর দিব ভেবেই পাচ্ছিলাম না৷শুধু আমার বিবেকটাকে প্রশ্ন করছিলাম
“এই আবিদ শুনতে পাইছছ,তোর আনিকা কি বলছে?মরে যেতে রাজি,তারপরও তোর কথার অবাধ্য হবে না?তোর শাসন গূলো মেনে নিবে,
কীন্তু আর কয়টা দিন তুই ওকে শাসন করবি?
কাকে বলবি ঔষধ খেতে?আর তো মাত্র কয়টা দিন ,তারপরই তো ও চলে যাবে৷তখন তূই কী করবি?
কে এভাবে তোর সব কথা মেনে নিবে?কে তোকে এত ভালোবাসবে ?
ভাবতেই বুকটা কেমন চিনচিন করে ব্যাথা করতে লাগল৷
–এই,তুমি এমন চূপ হয়ে গেলে কেন?কি বিশ্বাস হচ্ছে না,তোমার কথায় আমি বিষ খেতে পারব না ভাবছো?
তখনই আনিকাকে খূব শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলাম৷হয়ত ও অবাক হয়ে গেছে,এভাবে হঠাৎ তাকে জড়িয়ে ধরার কারনে৷
জড়িয়ে ধরেই বললাম
–এই পাগলি ,কি বলছো এগূলো?আমি যে তোমায় অনেক ভালোবাসি,তোমাকে ছাড়া যে আমি একা কখনই থাকতে পারবো না৷তোমাকে ছাড়া যে এই আবিদ বেঁচে থাকতেই পারবে না৷তুমি কি জানোনা,তুমি আমার সেই অক্সিজেন,যেটা ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না,খূব ভালোবাসি,খূব বেশিই ভালোবাসি(কান্না করে দিলাম)
–হুম,আমিও খুব ভালোবাসি আমার পাগল টাকে৷আর একদম কান্না করবা না!তুমি কি জানো না?তোমার পাগলিটা তোমার কান্না একদমই সহ্য করতে পারেনা,অনেক কষ্ট লাগে,যখন তার পাগলটার মন খারাপ থাকে
–হূম
–আবিদ,আমাকে না,এভাবেই সব সময় বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখবা,কখনই না আলাদা হতে দিও না৷আমি না তোমার বুকে স্বর্গ সুখ খূজে পাই৷তোমার এই বুকটা শুধূ আমার জন্য,কখনই ওই বুকে ঠাই দিবে না৷
আর আমাকে কখনই একা ফেলে যাবে না৷সব সময় বুকের মধ্যেই আগলে রাখবা
(চোখের পানি গুলো তখন বৃষ্টির মত ঝড়তে লাগল৷আমার পাগলিটা কি আবদার রাখছে আমার কাছে,অথচ কয়টা দিন পরেই ও চলে যাবে!আমার ভালোবাসার কোনো শক্তি নেই তাকে আটকিয়ে রাখার৷
আর কিভাবেই বা আটকিয়ে রাখব?
আমি তো মানুষ!মানুষ হয়ে কিভাবে সৃষ্টিকর্তা লিখন আমি পরিবর্তন করব?
হয়ত আমি সেটা কখনই পারব না৷ভাবতেই আরও অনেক কান্না পেল৷নিজেকে কোনোভাবেই ঠিক রাখতে পারলাম না৷আনিকাকে তখণ নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম৷আর বলতে লাগলাম)
–হুম,আমি কখনই আমার পাগলিটাকে একা ফেলে চলে যাবো না৷সব সময় আমি আমার পাগলিটাকে আমার বুকের মধ্যেই রাখব৷আড়াল হতে দিবো না(কান্না করতে করতে)
–হুম৷এবার হাসো(চোখের পানি মুছে দিয়ে)
–হি হি হি(কোনোমতে একটা মিথ্যা হাসি দিয়ে)
–হি হি হি,এভাবেই সব সময় হাসবা,আর আমার ইয়ে টা কে দিবে
–ইয়েটা কি
–ওই যে,কপালে ভালবাসার স্পর্শ
বুঝে গেলাম ও কি চাচ্ছে এখন৷ঠিক তখন ওর কপালে আলতো করে একটা চূমু দিয়ে চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিলাম৷
কিছুদিন পর কে বলবে, আবিদ আমার কপালে একটা চুমু দিবে না?
ভাবতেই কলিজা ফেঠে চিৎকার করে কান্না আসে,তবে হয়ত সেটা করার অধিকার আমার নেই৷
.
.
.
.
.
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে