পতিতা মেয়ে part_14

0
1313

#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_14

দিন যতই যাচ্ছে আনিকার পাগলামিগুলো তত বেড়েই চলছে৷
সারাটাক্ষন আমার পাশেই বসে থাকবে নয়ত আমার কাধে মাথা রেখে ,শুয়ে থাকবে৷আর বলতে থাকবে একটা গল্প শোনাতে৷যদি আমি না করতাম,তখনই রাগ করত৷এইত সেদিনের একটা ঘটনা
–আবিদ,আমাকে একটা গল্প শোনাবে?
–আমার ভালো লাগছে না গো,এখন গল্প বলতে পারব না৷তার চেয়ে ভালো তুমি নিজেই বলো
–লাগবে না তোমার গল্প বলা,আর কখনই গল্প শুনতে চাইবো না(রাগ করে)
–আচ্ছা আমি বলছি
–সত্যি বলবে তো?
–হুম
–তাহলে শুনো
আমি গল্প বলা শুরু করলাম
জানো আনিকা?কোনো একটা রাজ্যে বসবাস করত একটা রাজকুমার৷সেই রাজ্যেই একটা রাজকুমারী ছিল৷রাজকুমার টা ওই রাজকুমারি কে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসতো
–হুম তারপর(আনিকা)
–জানো,ওই রাজকুমারিটা রাজকুমারকেও অনেক ভালোবাসত৷সব সময় রাজকুমারের বুকের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চাইতো৷সব সময় তারা স্বপ্ন দেখতো,তাদের একটা সুখের সংসার হবে৷তাদের ছেলেমেয়ে হবে,সবাইকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করবে,কিন্তু তা আর হয়ে উঠল না,
–কেন?তাদের ভিতর কি কোনো ঝগড়া হইছে?
–তাদের ভিতর কোনো ঝগড়া হয়নি,কিন্তু আল্লাহ হয়ত চাইনি,কখনই তারা এক সাথে থাকুক,যার কারনে তাদেরকে আল্লাহ চিরতরে আলাদা করে দেয়
–চিরতরে?কিন্তু কিভাবে?
–অনেক বড় একটা ঝড় আসল তাদের জীবনে৷তারপর সেই ঝড়টা রাজকুমারী কে রাজকুমারের থেকে চিরতরে আলাদা করে দেয়
–রাজকুমারের তখন কিছু হয়নি(আগ্রহ নিয়ে)
–হুম হয়েছে৷যার কুমারীকে না পেয়ে,ওই রাজকুমার টা পাগলের মত হয়ে যায়,আর ওক ছাড়া থাকতে না পেরে নিজেকে ও শেষ করে দেয়৷আর এভাবেই তাদের ভালোবাসার পরিসমাপ্তি ঘটে৷
–ইসসসস,রাজকুমারটার অনেক কষ্ট হইছে,হয়ত নিজের থেকেও বেশি ভালোলাসত,তাই না
–হুম
–আচ্ছা আবিদ,একটা কথা বলব?
–হুম বলো
–কখনও যদি আমিও ওই রাজকুমারীর মত হারিয়ে যাই,তখন তুমি কি করবা
আনিকার এমন প্রশ্ন শুনে মাথাটা ঘুরে গেল৷বুকটা কেন জানি কষ্টে ফেটে গেল৷ভাবতেই অবাক লাগছে!আনিকাও আমাক ছেড়ে চলে যাবে,আর এটা তো এতক্ষন ভুলেই গিয়েছিলাম৷
তখনই আনিকাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম৷
খূব কষ্ট হচ্ছিলো,তাই নিজেকে আর আটকাতে পারিনি৷
–এই রে,আমার পাগলটাকে খূব কষ্ট দিয়ে ফেলছি৷এই আবিদ,প্লীজ কান্না করবা৷আমি তো মজা করে বলছি
কিন্তু তখন কোনো কিছুই মাথায় ডুকছে না,কারন আনিকা নিজেও জানেনা,ও যেটা ফান করে বলেছে,দুদিন পর সেটাই সত্যি হবে৷
ভাবতেই আরও জোড়ে কান্না করে দিলাম৷আর তখণ আনিকাও কান্না করে দিছে৷আর বার বার আমাকে কান্না করতে নিষেধ করেছে৷
সেদিন কোনোভাবে ওর সামনে ঠিক হতে পারলেও পরে আর নিজেকে ঠিক করতে পারিনি৷সারাটাদিন ওকে নিয়েই ভাবতাম৷ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করতাম না৷এই দিকে আমার পা ঠিক হয়ে গেলেও,চোখের আগের থেকেও বেশি ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে,কারন আমি ঠিক মত কোনো ঔষধ খেতাম না৷
আনিকা এটা নিয়ে আমাকে কড়া ভাবেই শাসন করত৷
কিন্তু শাসন করলেই কি হবে,যেখানে আমি নিজেই দেখছি ,আমার প্রিয় মানুষটা আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছে,সেখানে আমি কিছুই করতে পারছিনা৷
আর সেই জায়গায় থেকে,আমি নিজেকে কিভাবে ঠিক করব?
সব সময় আল্লাহ কে একটা কথাই জিজ্ঞাসা করতাম,কেন আমার জীবনটা এমন করে দিল?কোন পাপে আমার লাইফটা শেষ হয়ে গেল৷
কিন্তূ কোনো উত্তর পেতাম না৷
আর উত্তর পাবোই বা কিভাবে?সৃষ্টি হয়ে স্রষ্টাকে প্রশ্ন করলে কি ওনি ওনার কাজের হিসাব দিবে?দিবে না
৷তাই আমার প্রশ্নের উত্তরটাও আমার অজানাই থেকে যাবে৷হয়ত মরার পর সব উত্তর আমাকে দিয়ে দিবে,কোন কারনে এসব করেছে৷
যাই হোক দিন যেতে যেতে প্রায় দুটা মাস কেটে গেল৷
এই দিকে আনিকার চিকাৎসাও পুরোপুরি ভাবে শুরু হয়ে গেল৷
আনিকা তখনও জানত না ওর কি হইছে?আমি যেটা বলতাম,ও ঠিক সেটাই করত৷আমার কোনো কথাই না করত না৷
হঠাৎই একদিন আনিকার প্রচন্ড কাশি হতে লাগল৷
আমি আস্তে আস্তে ওর সামনে গেলাম৷
আমাকে দেখে ও ওয়াশরুমে যেতে চাইলে আমি তাকে আটকিয়ে ফেললাম৷
পরে ওকে আটকানোর পর ওর দিকে তাকাতেই কেমন চোখের আবছা আলোতে ওর মুখে লাল বর্ন কিছু একটা দেখতে পেলাম৷ওর মুখে হাত দিতেই
আমার হাতটা কোনো এক তরল পদার্থে ভরে গেল৷নাকের সামনে হাতটা নিতেই রক্তের গন্ধ৷
তারমানে কি আনিকার মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে?
ঘটনাটা বুঝতেই কেমন কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে৷আনিকার আবারও কাশি শুরু হলো৷প্রচন্ড কাশি৷যেন থামতেই চাচ্ছে না৷
অনেকক্ষন কাশতে কাশতে প্রায় বেহুশ হবার অবস্থা৷
ওর কাশি দেখে বুকের ভিতর প্রচন্ড হাহাকার শুরু হয়ে গেছে৷
খূব কষ্ট লাগছিল৷কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারলাম না৷চিৎকার করে কান্না করে দিলাম৷
আমার কান্না দেখে আনিকা কেমন যেন হয়ে গেল৷ও ওয়াশরুম থেকে পরিষ্কার হতে চলে গেল৷
এই দিকে আমি কোনোভাবেই নিজেকে ঠিক করতে পারছিলাম৷
আল্লাহকে ডাকছিলাম,আর বার বারই বলতে লাগলাম
আল্লাহ,তুমি এমন কেন করলে?কেন এই নিষ্পাপ মেয়েটাকে এত বড় শাস্তি দিলে?ওর বদলে আমাকে তুমি নিয়ে যেতে৷ওকে তুমি আর কষ্ট দিও না আল্লাহ৷
আল্লাহ?ও আল্লাহ,তুমি তো নিয়েই যাইবা,তবে নেবার আগে আর কষ্ট দিও না৷সমস্ত কষ্ট তূমী আমাকে দাও৷
কান্না করতে করতে মাটিতে পড়ে গেলাম৷
হঠাৎই আনিকার আসার শব্দ পেলাম৷
তাই চোখটাকে একটু ঠিক করে দাড়িয়ে গেলাম৷
আর আনিকার কাছে গেলাম৷বুঝেও না বুঝার ম? গিয়ে বললাম
–আনিকা?তোমার কি হইছে?তোমার মুখে রক্ত আসল কিভাবে?কি হইছে তোমার বলো?
–আবিদ,এই কথাটার উত্তর যদি আমি তোমার কাছে চাই,তখন কি করবা?বলো আবিদ আমার কি হইছে
–তোমার কীছুই হয়নি,কিন্তু রক্ত আসল কিভাবে
–দেখো আবিদ,আমি জানি তুমি সবই জানো,
আমার কিছু হয়নি,তবে আমার কিসের জন্য চিকিৎসা করাচ্ছো?আর একটূ আগে আমার মুখে রক্ত দেখে,তুমি এত ভয় কেন পেয়েছিলে?
কি উত্তর দিবো ভেবে পাচ্ছিনা?কিভাবে বলব?ওর ব্লাড ক্যান্সার?ডাক্তার তো আমাকে নিষেধ করেছে ওকে না জানাতে?জানালে অনেক আগেই আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?আমি কি করব?
–আবিদ,চূপ কেন?উত্তর দাও
–কোথায় ভয় পেলাম?আমিতো তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারিনা?তাই ওই সময় এমন করেছি
–বাহ আবিদ বাহ৷আমার মুখে রক্ত দেখার পর,তোমার মুখে আমি যে ভয়টা দেখেছি,সেটা সত্যিই ভুলার মত না৷আর আমি ওয়াশ রুমে যাবার পর এভাবে কান্না করছিলে কেন?
–আমি কিছু জানিনা৷তুমি এই বিষয়ে আমাকে এখন কোনো প্রশ্ন করবে না
–প্রশ্ন তো আমি করবই!এতদিন আমাকে চিকিৎসা,ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়া,এগূলো সম্পর্কে আমি কিছুই জানতে চাইনি,কিন্তু আজ আমাকে জানতেই হবে৷বলো আবিদ বলো৷চূপ করে থেকো না
–বললাম তো,আমি এখন কোনো উত্তর দিতে পারব না
ঠিক তখনই আনিকা খুব রেগে গেল৷আর ও আমার সামনে এসেই ও আমার লাইফে প্রথমবারের মত আমার শার্টের কলারটা দুই হাতে চেপে ধরল৷
আর প্রথমবারের মত আমাকে তুই করে বলল
–একদম চূপ করে থাকবি না,বল আমার কি হইছে?একদম লুকাবি না?কেন বলছিস না?
আবিদ,তুই বল আমার কি হইছে?বল বলছি,তুই কি আর পারতাছছ না?তোর কি কোনো ক্ষমতা নাই আমাকে তোর কাছে সব সময় রাখার জন্য?আমিও তো চাই আমি সব সময় তোর সাথে থাকি?এই আবিদ বল না?আমার কি হইছে?আমি তো তোর কাছ থেকে হারিয়ে যেতে চাই না৷বল আবিদ আমার কি হইছে?
জানিনা তখন আমার কি হইছে?তখন মাথাটা কেমন জানি ওলট পালট হয়ে গেল৷নিজের যে তখণ কি হইছে সেটা আমি নিজেও জানি না৷
ওর হাতটা আমার কলার থেকে ছুটিয়ে ঠাস ঠাস করে ওর গালে দুইটা প্রচন্ড জোড়ে থাপ্পর মারলাম৷
থাপ্পর দুইটা খেয়ে আনিকা মাটিতে পড়ে গেল৷আমি তখন ওকে মাটি থেকে তুলে পাগলের মত অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম৷ আর চিৎকার করে কান্না করতে করতে পাগলের মত বার বার বলছিলাম,তোর কিছু হয় নাই,তোর কিছু হয় নাই৷তোর কীছু হতে আমি দিবো না তো৷তোকে আমি কখনই একা ছেড়ে যেতে দিব না৷ ও তখণ একটা কথাই বার বার বলছিল৷
এইযে আমার পাগল আবিদটার মাথাটা একদম নষ্ট হয়ে গেছে৷আমার পাগলটা অনেক ক্ষেপে গেছে৷
আমার পাগলটার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে৷
কথাগূলো বলছিল আর আনিকার চোখভর্তি পানিতে ছলোছলো অবস্থায় আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল৷
ওপরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে তখন আল্লাহ কে একটা কথাই বলছিলাম
আল্লাহ?ও আল্লাহ?তুমি বলো,আমার কি সেই ক্ষমতা আছে?মানুষ হয়ে কিভাবে তোমার হাতের ভাগ্য লেখা ,কিভাবে আমি পরিবর্তন করব?
আমার তো সেই ক্ষমতা নাই৷কিন্তু তোমার তো আছে৷দাও না গো আল্লাহ,আমার এই পাগলিটাকে ভাল করে৷আমার কাছ থেকে না আল্লাহ?ওকে আলাদা কইরো না?আল্লাহ তুমি ওকে সুস্থ করে আবার আনিকাকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও আল্লাহ,ফিরিয়ে দাও৷
.
.
.
.
চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে