-বলেছিলাম আমাকে নিয়ে খেলতে এসো না কিন্তু তোমরা দুভাই বোন আমার জীবন নিয়ে খেললে যে ছেড়ে কিভাবে দেই ( একা একা বসে কথা বলেছে রিদানশ চোখ তার রিদিতার রুমে ভাবছেন ওর রুমে কিভাবে চোখ আজকে সকালেই রিদানশ রিদিতার পুরো বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে )
চলুন জেনে আসি ৪বছর আগে কি হয়েছিল !
“” এই রিদি রিদি জানিস আজকে দাভাই আসবে কানাডা থেকে আমার যে কি খুশি লাগছে জানিস না ( মোহো )
-তোর দাভাই আসছে আমি কি করবো ( ভ্রু কুঁচকে রিদি )
-তুই নাচবি যা নাচ
-হুহ বাসায় যেতে হবে আমার ভাইয়া অফিস থেকে এসে পড়বে রে !
-তোর ওই ভাইকে তুই এতো ভয় পাস কেন আমিতো পাই না।
-তুই পাবি কেন ভাবিজি ( বলেই হাসতে লাগলাম )।
-যাহ তোর ভাই তো বুঝেও না বুঝার ভান করে ( চোখ দুটো ছলছল করতে লাগলো ) ।
-আচ্ছা মেরি মা এখন কান্না বন্ধ কর ।
-ভাইয়া চলে আসছে চল চল নিচে যাই ( বলেই দৌড়াতে লাগলাম )
-আচ্ছা চল ।
নিচে গিয়েই দেখি একটা লম্বা ফর্সা ইয়াং ছেলে দাঁড়িয়ে আছে । চোখে কি মায়া যে তাকাবে ওই মায়াতেই পড়ে যাবে তার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম কখন যে মোহো ডাকতে লাগল বুঝতে পারলাম না !
-আমার ভাইকে দেখে প্রেমে পড়ে গেলি না কি হুম হুম ( বলেই ধাক্কাতে লাগলো আমাকে আর আমি লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম )
-মোহো মাই সিস ( রিদানশ )
-দাভাই ( বলেই জড়িয়ে ধরলাম ) ।
-কেমন আছিস। আমি চলে এসেছি এইবার তোকে শশুর বাড়ী পাঠিয়ে দিব ওকেহ ( কোনোমতে দৌড়ে উপরে চলে গেল আর এদিকে আমি হাসতে হাসতে বসে পড়লাম আর মোহো চিল্লাতে লাগলো ) ।
নিচে ওই মেয়েটি কে একদম মায়াবী লাগে । মেয়েটি জন্য মনে কিছু নিষিদ্ধ অনূভুতি জাগছে।এই কি তাহলে আমার একগুচ্ছ কদম হবে । ও কি আমার নিষিদ্ধ ভালোবাসার মানুষটি হবে । উফফফ কি ভাবছি আমি এগুলা পাগল হয়ে যাব।
-রিদি কোথায় ছিলে তুমি ( রিদির ভাই মাহিত খান )।
-ভা ভাই মোহোর বাসায় গিয়েছিলাম ( বলেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম )।
-রিদি কোন ক্লাসে পড়ো তুমি
-ভাই কেনো ক্লাস ১০ এ
-তোমার পরিক্ষা সামনে মনে আছে তোমার বাহিরে ভাবা বন্ধ কর ।
-আ আচ্ছা ভাই
-যাও
রুমে গিয়ে শুয়ে পরলাম ভাবতে লাগলাম অচেনা মানুষটিকে নিয়ে।কেন এতো কাছের মনে হলো। তাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে উঠে স্কুলের জন্য রেডি হতে লাগলাম আজকে মোহো আসবে না । আজকে ওর ভাইয়া ওকে দিয়ে আসবে আর আমার ভাইয়ের সময়ই নেই । বলে দেখি ভাইয়াকে যদি নিয়ে যায় !
-ভা ভাই
-বল
-আমাকে আজকে দিয়ে আসবি স্কুলে
-গাড়ি নিয়ে চলে যা আমার কাজ আছে
-আ আচ্ছা ভাই ( চোখ দুটো ছলছল করে ওঠলো মাথা নিচু করে বেড়িয়ে আসলাম )
-দাভাই ওই দেখ মোহো এসে পড়েছে !
-কোথায় ?
-ওই যে।
-(গাড়ি থেকে নামছে কি মায়াবী সেই মুখ চোখ নাক লাল হয়ে আছে মনে হচ্ছে কান্না করেছে।)
-কিরে তোর চোখমুখ লাল কেন কান্না করেছিস ( বলেই আমার মুখ টেনে দেখতে লাগল )।
-আরে না কান্না করবো কেনো বাদ দে এসব ।
-চল তোকে দাভাই এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
-চল ।
-দাভাই এটা রিদিতা আমার বেষ্টু ।
-হেলো কদম সরি রিদিতা কেমন আছো ।
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া । আপনি কেমন আছেন।
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো যাও তাহলে তোমরা ক্লাস শুরু হয়ে যাবে ।
-হ্যা চল মোহো ।
“বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান
আমি দিতে এসেছি শ্রাবনের গান!!
মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ডেকে তারে
এই যে আমার সূরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান”
আজ এনে দিলে , হয়তো দিবে না কাল _
রিক্ত হবে যে তোমার ফুলের ডাল!!
( দেবেশী চক্রবর্তী )
মনে মনে গুনগুন করতে লাগলো রিদানশ। তাকিয়ে আছে রিদিতার যাবার পথে । ভাবছে এই দৃষ্টিতেই যে তার সর্বনাশের শুরু। কি মায়া সেই চোখে । সেদিন থেকে রিদানশের মনে একটু একটু করে রিদিতার জন্য অনূভুতি জাগতে শুরু করে। অপরদিকে রিদিতার মনেও জাগতে শুরু করে রিদানশের জন্য অনূভুতি কিন্তু বুঝতে পারে না। রিদিতার মধ্যে পরিবর্তন আসতে শুরু করে যা রিদিতার ভাই মাহিত খেয়াল করে এবং একদিন রাতে তাকে ডেকে নিয়ে যায়।
-ভাই ডেকেছিলে ?
-হ্যা তোমার পড়াশোনার কি খবর !
-ভালো ভাই
-ইদানিং শুনলাম তোমার পড়াশোনার অবনতি হচ্ছে জানতে পারি কেন?
-ভা ভাই আমি তো ঠিকঠাক মতোই পড়ছি ( বলেই মাথা নিচু করে বসে আছি )
-কালকে থেকে সম্পূর্ন ভাবে তোমার বাহিরে যাওয়া নিষেধ। স্কুলে আমি দিয়ে আসব তোমাকে। অন্যদিকে মন দেয়ার চেষ্টা করো না কারো জন্য ভালো হবে না। আমি তোমাকে ছোট থেকে নিজের সন্তানের মতো বড় করেছি আমি চাই না তুমি কোন ভুল করো । বাপি বাহিরে থাকে আর তোমার সম্পূর্ন দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গেছে তুমি কোন ভুল করলে তার দায় সম্পূর্ণ আমার উপর আসবে। তুমি কোন ভুল করলে তার ব্যর্থতা আমার হবে তুমি কি বুঝতে পারছো আমি যা বলেছি ?
-হ্যা হ্যা ভাই আমি বুঝতে পেরেছি আমি তোমার মাথা নিচু হতে দিবো না ভাই ।
-যাও ঘুমিয়ে পড়ো ।
রিদিতা যাবার পরে মাহিত বেলকনিতে এসে দাঁড়ায় ভাবতে থাকে তার ছেলেবেলা !!
ছোট বেলায় রিদিতাকে জন্ম দিতে মাম্মা মারা যায় তখন মনে হয়েছিল কেন আমি বোন চেয়েছিলাম কিন্তু বাপি বুঝিয়েছিল জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে । সেই ১২ বছর বয়স থেকে রিদিতাকে একটু একটু করে বড় করতে থাকি ।
রিদিতাকে কখনো সামনে ভালোবাসা দেয়নি । আড়ালে ওর খেয়াল রেখেছি । আর বাপি সেই কলেজে থাকতেই আমাদের এখানে রেখে বাহিরে সেটেল হয়ে যায়। মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে তার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। রিদিতা কখনো বাপির ভালোবাসা পায়নি । ও নিজেও আমার মতোই একা । কলেজ লাইফে ভালোবেসেছিলাম একজনকে সে ভালোবাসেনি আমায় বেসেছে আমার কাছেরই অন্য কাউকে। তাকে ভালোবেসে আর কাউকে ভালোবাসতে পারিনি ।
“আমরা কাউকে এতটাই ভালোবাসে ফেলি
যতটা ভালবাসে ফেললে অন্য কাউকে
ভালোবাসার ইচ্ছটাই মরে যায়
সারাজীবনের জন্য মরে যায় ?”
-গুড মর্নিং স্টুডেন্ট আমি আপনাদের নিউ টিচার রিদানশ চৌধুরী। কিছুদিন আপনাদের ক্লাস নিবো আমি। আশা করি আপনারা কিছু হলেও শিখতে পারবেন । আজকে আপাতত সবার সাথে পরিচয় পর্ব সেরে ফেলি ।
-তোমার নাম কি
– জান্নাত ইসলাম
-তুমি
-সাজি আহমেদ
-তুমি
-মোহো চৌধুরী
একে একে সবার নাম জেনে রিদিতার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় । রিদিতা ওকে খেয়ালই করেননি।
-হে ইউ কাঁপছো কেনো এভাবে নাম কি তোমার
– ( মাথা উঁচু করে বললাম ) রি রিদিতা খান
-এভাবে তুতলাচ্ছো কেনো কথা বলতে পারো না নাকি !
-ক ক কথা বলতে পারব না কেন আ আমি একটু অ অসুস্থ তাই কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে।
-ওহ আচ্ছা।
আরো কিছুক্ষণ ক্লাস নিয়ে বের হয়ে যায় রিদানশ।ওকে বেরূতে দেখে রিদিতা মোহো কে জিজ্ঞেস করে !
-তোর দাভাই এখানে কিভাবে আসলো সে এখানে আবার কেনো এসেছে আর কি ক্ষতি করবে আমার ( বলেই বেরিয়ে যায় রিদিতা )
করিডোরে আসতেই কে যেন টেনে একটা ক্লাসরুমে নিয়ে আসল !
-কে কে আপনি ছাড়ুন আমাকে
–
-ছাড়ুন বলছি
-কেনো ছাড়ব কদম ফুল
-আ আপনি ছা ছাড়ুন আমাকে ( বলেই নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে লাগলাম )
-পাগল করে ছেড়েছো তুমি আমাকে আর বলছো তোমাকে ছাড়তে ( বলেই আমার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে শ্বাস নিতে লাগল )
-আপনি একটা পাগল বদ উন্মাদ আপনি কেনো এসেছেন আমার জীবনে আবার ।
-হ্যা হ্যা পাগল আমি বদ উন্মাদ আমি তোর জন্য শুধু তোর জন্য কদম ফুল কেন আমাকে ছেড়ে ওই সৌহার্দ্য কে ভালোবাসলি বল না আমি একটা ভুল করেছিলাম তুই আমাকে কেন নিজের মতো করে গড়ে তুললি না আমার ভুল কেনো শুধরে দিলি না কদম বল আমাকে এর শাস্তি যে তোকে পেতেই হবে ( বলেই পাগলের মতো করতে লাগলো ওকে দেখে আমার ভয় লাগতে শুরু করে )
-ছাড়ুন আমাকে আপনি আবার কেনো এসেছেন আমার জীবনে কি চাই আপনার !
-তোকে চাই আমার তোকে তোকে তুই আমাকে ভালবাসলেই আমি কারো কোনো ক্ষতি করব না সত্যি।
-আপনার মতো জানোয়ার কে আর যাই হোক ভালোবাসা যায় না ( বলেই নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে আসলাম ) ।
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম। পিছন থেকে কে যেন কাঁধে হাত দিতে ভয় পেয়ে গেলাম তাকিয়ে দেখি সাজি আর জান্নাত।
সাজি : কিরে তুই এখানে আর তোকে আমরা সারা ভার্সিটি খুঁজছি ।
আমি : আচ্ছা মোহো কোথায় ওকে দেখছি না যে ?
জান্নাত : ও চলে গেছে !
আমি : চলে গেছে মানে কোথায় গেছে ( ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলাম )
সাজি : তুই ওকে ওভাবে বলায় ওর খারাপ লেগেছে তাই চলে গেছে।
আমি : ইশ্ আমি কি ভুলটাই না করলাম ও নিশ্চিত রাগ করেছে চল দেখি মহারানী কোথায় আছে ।
চললাম ৩জনে মোহো কে খুঁজতে । হঠাৎ একটা পিচ্চি এসে আমার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে গেলে !
সাজি : কিরে তোকে আবার কে দিলো চিরকুট ?
জান্নাত : আহ্ ওকে পড়ে দেখতে তো দিবি !
সাজি : আচ্ছা পড় ।
আমি চিরকুট টা খুলে পড়তে শুরু করলাম “মনে আছে ৪বছর আগে এক শ্রাবনে কদম ফুল দিয়ে তোমাকে বলেছিলাম ভালোবাসি আমার কদম ফুল জবাবে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে কেনো কদম কেনো চলে গেলে উত্তর যে দিতে হবে তোমাকে ” চিরকুট টা পড়তেই রিদিতা কাঁপতে লাগলো কোনো কিছু না বলেই দৌড়ে গাড়িতে উঠে বেড়িয়ে পড়লো আর আড়ালে কেউ একজন বলে উঠল এখনি এতো ভয় পাচ্ছো কদম ? সামনে যে আরো অনেক কিছু হবে পারবে তো সহ্য করতে !
চৌধুরী বাড়িতে ঢুকেই মোহো চিল্লাতে লাগলো আর বলতে লাগলো !
-দাভাই দাভাই আবার কেনো এসেছিস তুই আর কি চাইছিস তুই বল তোর জন্য আবার আমার সাথে রিদিতার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে আবারো ।
-কি হয়েছে কি মোহো ( মোহোর বাপি )
-তোমার ছেলে আবার রিদির লাইফে এসেছে কেন এসেছে তোমার ওই সাইকো ছেলে।
-ব্যস মোহো ব্যস যা হয়েছিল তাতে তোমার ওই রিদির দোষ ছিল ওর জন্য আ আমার ছেলে হসপি ….
-বাপি স্টপ । কি হয়েছে মোহো বল আমি কি তোর বান্ধবীকে কিছু বলেছি বলিনি তো তাহলে এতো চিল্লাছিস কেনো ( ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলেন )।
-তুই আর ওর জীবনে যাবি না বলে দিলাম ।
-সেটা আমি বুঝে নিবো ( বলেই মুচকি হেসে বেড়িয়ে গেলাম ) ।
প্রায় রাত বারোটা এমন সময় রিদিতার মনে হলো কেউ ওকে দেখছে কিন্তু ও চেয়েও চোখ খুলতে পারছিল না। ও কোনো রকম উঠেই বেলকনিতে গেল যেতেই ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো রিদানশ ।
-আ আবার কেন এসেছেন আপনি !
-কেন এমন করেছিলে কদম সত্যি কি আমার কোন দোষ ছিল তোমাকে ভালোবাসতাম আমি এখনো বাসি কিন্তু তুমি কি করে আমার জায়গা অন্য কাউকে দিয়ে দিলে কদম ?
“যদি আমার জন্য আসো তো আমার জন্যেই আসবে তার ভিতর যেন অন্য কেউ না থাকে ”
বেলকনির কোণ ঘেঁষে শরীর এলিয়ে দিয়ে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়ালো রিদিতা । বুক ভরা চাপা কষ্ট তার । আর কাউকে কাছে না পাওয়ার আর্তনাদ।ছটফটে মনে তাকে বারবার মনে করা । চোখের কোণে কালো দাগ স্পষ্ট।আধ ভেজা ঠোটটাতে মনের আবেশে গান গেয়ে চলেছে সে !
তুমি যাকে ভালোবাসো,
স্নানের ঘরে বাস্পে ভাসো,
তার জীবনে ঝড়।
তোমার কথার শব্দ দূষণ,
তোমার গলার স্বর।
আমার দরজায় খিল দিয়েছি,
আমার দারুন জ্বর।
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর,
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর।
তোমার নৌকোর মুখোমুখি আমার সৈন্যদল
বাঁচার লড়াই,
আমার মন্ত্রী খোয়া গেছে একটা চালের ভুল
কোথায় দাঁড়াই।
কথার ওপর কেবল কথা,
সিলিং ছুতে চায়।
নিজের মুখের আয়্না আদল,
লাগছে অসহায়।
তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধো গান,
তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধো গান।
কথার ওপর কেবল কথা,
সিলিং ছুতে চায়।
নিজের মুখের আয়না আদল,
লাগছে অসহায়।
তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধো গান,
তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধো গান।
তুমি যাকে ভালোবাসো,
স্নানের ঘরে বাস্পে ভাসো,
তার জীবনে ঝড়।
তোমার কথার শব্দ দূষণ,
তোমার গলার স্বর।
আমার দরজায় খিল দিয়েছি,
আমার দারুন জ্বর।
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর,
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর।
( অনুপম রায় )
গান গাইতে গাইতে চোখের কোণে পানি ঝড়ে পড়লো । দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল ” ভালো থেকো আমার ভালোবাসা” ।
আজকে যে রাদিতার ভালোবাসার মানুষটির বিয়ে ছিল। সৌহার্দ্য কিভাবে করলো এটা ওর সাথে কেনো আমাকে ভেঙ্গে দিলে সৌহার্দ্য কেন বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো রিদিতা আজকেই যে ওর শেষ কান্না।
দূর থেকে একজন রিদিতার বেলকনির দিকে তাকিয়ে আছে আর বলছে “ভালোবাসা না পাওয়ার কি জ্বালা তাই না রিদিতা” বলেই হাসতে লাগলো অপরিচিত লোকটি । বলেছিলাম আমাকে প্রত্যাখ্যান করার জবাব দিতে হবে আমার জায়গা অন্য কাউকে দেয়ার শাস্তি যে পেতেই হবে তোমাকে । এখন জমবে খেলা যতো টা কষ্ট আমি পেয়েছি তুমিও পাবে এবার বলেই রিদিতার নাম্বারে ম্যাসেজ টাইপ করলো ‘
“কাঁদছ কেন রিদিতা কষ্ট হচ্ছে
আমারো হয়েছিল কেমন লাগছে বলো তো
খুব কষ্ট হচ্ছে কি
‘ রিদানশ ‘
ফোনে ম্যাসেজ আসতেই ফোন টা হাতে নিল রিদিতা । ম্যাসেজ টা দেখে চিংকার করে বলতে লাগলো ‘আমি তোমাকে কখনই ভালবাসবো না রিদানশ । তুমি একটা বদ উন্মাদ । তুমি জানোয়ার হয়ে গেছো কখনোই ভালোবাসবো না তোমাকে। মরে যাবো আমি মরে যাবো আমি’ বলতে বলতে পড়ে মাথা ঘুরে উঠলো রিদিতার
সকালের আলোতে জেগে উঠলো রিদিতা । ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে বেলকনিতে আবিষ্কার করলো। তখনি উঠে রুমে চলে আসলাম। ভাইয়া আমাকে এই অবস্থায় দেখলে কষ্ট পাবে যে । তৈরি হয়ে নেই ভার্সিটি যেতে হবে
ভার্সিটির গেটের সামনে আসতেই তিন বান্দর মিলে ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার উপর।
মোহো : এখন আসার সময় হলো ম্যাডামের
জান্নাত : ঠিক আছিস তুই ( আমার গালে হাত দিয়ে ) ।
সাজি : চুপ কর তোরা । ওকে বলতে দে
আমি : ঠিক আছি আমি তোরা চিন্তা করছিস কেন। এখন চল ভেতরে যাই !
ক্লাসে যেতে যেতে মনে হলো কেউ একজন পিছনে কিন্তু পিছন ফিরে তাকাতেই কাউকে দেখতে পেলাম না হয়তো আমারই মনের ভুল।
আর এদিকে কেউ একজন বলতে লাগলো ‘তুমি যে আর ঠিক থাকবে না আমার কদম ফুল’ ( বলেই শয়তানি হাসি দিলো )
ক্লাসরুমে আসতে দেখলাম সবাই গল্পে ব্যস্ত। ভিতরে গিয়ে বসতেই মোহো বলে বসলো !
মোহো : কার জন্য কেঁদেছিলি ? তোর চোখমুখের এই অবস্থা কেন তুই এখনো কান্দিস ওই কুত্তার জন্য ! কি কথা বলিস না কেন কথা বল।
জান্নাত : মোহো চুপ কর ওকে কিছুদিন সময় দে ও স্বাভাবিক হোক ।
সাজি : হ্যাঁ মোহো ওকে সময় দে আর আমরা তো আছিই তাই না।
মোহো : শোন রিদি “একটা সময় আসবে যখন তুই বুঝতে পারবি এই জীবনে যারা তোকে ফেলে চলে গেছে তারা চলে যাওয়াতেই তোর মঙ্গল হয়েছে”
আমি : তোরা চুপ ক….( বলতে বলতেই স্যার চলে আসলো আর তার দিকে তাকিয়ে যেন আমার দুনিয়া ঘুরে গেল দাঁড়িয়ে গেলাম আমি আর মুখ দিয়ে একটা কথাই বের হলো “রিদানশ”
“আয়ান শুনছো, আমার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করতে যাচ্ছে আমাকে দেখতে আসবে ”
“দেখতে আসলে তো বিয়ে হয়ে যায় না ”
“হতে কতোক্ষন, তুমি দেশে আসবে কবে?”
“তোমার বিয়ে বলে কথা, বিয়েতে ভালো ভালো খাবার খেতে আসতেই হবে ”
“এখন মজা করার সময় না, সিরিয়াসলি বলছি আমার বিয়ের জন্য ছেলে দেখছে”
“তো আমি কি করবো “?
” তুমি তোমার বাবা মাকে জানাও, আমাদের বাসায় বিয়ে প্রপোজাল নিয়ে আসো”
“আরে আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না, আমার আরও সময় দরকার ”
“তুমি এখন আমার সাথে ফাজলামি করো? বিয়েটা কি ছেলেখেলা নাকি? যাকে ইচ্ছে তাকে বিয়ে করবো। ”
“শান্ত হও। আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম, আমি স্টাবিলিস না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করবো না”
“তোমার গ্রাজুয়েসন কম্পিলিট করেছো, বাবার বিজনেস জয়েন করছো তাহলে আবার কি ”
“তাও আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না ” বলে আয়ান কল কেটে দিলো ।
ইভা ফোনটা ছুড়ে খাটের উপর মারলো। বসে বসে একা কাঁদছে তখন ইভার মা এসে বললো,
-কিরে তোকে কখন থেকে ডাকতে আছি শুনছিস না কেনো?
তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে বললো,
-কেনো ডেকেছিলে বলো?
-তোর বাবা একটা ভালো ছেলের সন্ধান পেয়ে আর তারাও তোকে দেখতে চাচ্ছে।
-আমি এখন বিয়ে টিয়ে করবো না, আব্বুকে বারন করো বিয়ের ব্যবস্হা না করতে।
-আমি বলেছিলাম তোকে আরও পরে বিয়ে দিতে কিন্তু আমার কথা শুনছে না। বললো তো ছেলে তার পরিচিত অনেক ভালো, ফ্যামিলি ভালো তাই এই পাএ হাত ছাড়া করা যাবে না।
-না না না আমি এই বিয়ে করবো না
-পাগলামি করিস না আমার তোর ভালো চাই
-আমি আমার ভালো চাই না
-তোর কি কোনো পছন্দের মানুষ আছে? আমাকে সত্যিটা বল?
ইভা ওর মায়ের সাথে অনেক কথা শেয়ার করে কিন্তু আজ আয়ানের কথা বলতে পারছে না আয়ান এখন বিয়ে করবে না তাহলে মাকে বলে কি হবে তাই ওর মাকে বললো,
-না কেউ নেই, তুমি এখন যাও তো আমার ভাল্লাগে না।
-আচ্ছা
রাতেরবেলা ইভা সানভিকে কল করে আয়ানের কথা বলেছে, “যে আয়ান বিয়ে করতে চায় না ” সানভি বলেছে আয়ানকে ভালো করে বুঝিয়ে বলবে যেনো বিয়ে করে।
রাত ১১ঃ৩০সময় ইভা আয়ানকে বেশ কয়েকবার কল করার পর রিসিভ করলো
-কি তুমি এখনও ঘুমাও নি কেনো? আর এতো রাতে কল দিছো কেনো?
-আয়ান আমি তোমাকে সত্যি খুব ভালোবাসি, তুমি তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে এসো
-এখন সম্ভব না, তোমাকে বিয়ে করার জন্য দেশে আসলে বাবার বিজনেসে অনেক ক্ষতি হবে আর নিজেদের ক্ষতি নিজে কিভাবে করবো।
-তাহলে কি আমি অন্যের ঘরের বৌ হবো তা তুমি দেখবে?
-কিছু করার নেই সব ভালোবাসা পূর্নতা পায় না
-তোমার একটুও কষ্ট হবে না আমার জন্য? আমাদের সব স্বপ্ন মাটি চাপা দিবে?কয়েক মাসে তোমার এতো পরিবর্তন হলো কিসের জন্য?
-এসব কথা বলে কোনো লাভ নেই, তুমি বিয়েটা করে নেও
-আমি মরে যাবো তাও তুমি ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো না। তোমার মতো আমার ভালোবাসা সস্তা না
-কোনো পাগলামি করবে না। তুমি বড় মেয়ে তোমাকে নিয়ে তোমার বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন আছে। তুমি নিজের ক্ষতি করার সাথে তোমার ফ্যামিলির ও ক্ষতি হবে সেটা কি তুমি সহ্য করতে পারবে? হাজার হাজার মানুষ তার ভালোবাসার মানুষকে পায় না তারপরও তো তারা অন্য কারো সাথে সুখি হয়
-ছিঃ তোমার এসব কথা বলতে মুখে বাজলো না, বিদেশে গিয়ে শুধু টাকা চিনেছো আর ভালোবাসা কবর দিয়ে দিলে
-তুৃমি আমাকে যা ভাবার ভাবতে পারো, ভাবতে তো টেক্স লাগে না।
-আমাকে বিয়ে করবে না এটাই শেষ কথা???
-শুনো তুমি যদি আমাকে সত্যি খুব ভালোবেসে থাকো এবং তোমার ফ্যামিলির ভালো চাও তাহলে বিয়েটা করো এটাই তোামর কাছে আমার লাস্ট রিকোয়েস্ট
-আচ্ছা আমি বিয়ে করবো। তুমি জেনে রাখো কাউকে ঠকিয়ে কোনোদিন সুখী হওয়া যায় না।
-হাহাহা আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। তুমি সুখী হও।
-যত্তসব
ইভা সারা রাত কেঁদে আষাঢ় মাসের বন্যা বানিয়ে। সকালে লামিসা এসে ইভাকে নাস্তা খাইয়ে দিয়েছে।অনেক বুঝিয়েছে যেন বিয়ে করে নেয় আর কোনো পাগলামি না করে।
আয়ান বারন করা সত্ত্বেও ইভা বার বার কল করেছে। চার দিন ইভা ঘর বন্দি হয়ে রয়েছে প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলে না।
কালকে ইভাকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে বাসায় সেসব নিয়ে তোরজোর চলছে। সারা দিন আয়ানকে কল করেছে কিন্তু ফোন অফ।
তুলি ইভার রুমে প্রবেশ করতে ইভা তুলিকে ছড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।
-আমার সোনা বোন তুই এমন কান্নাকাটি করিস না, নিজের চেহারার অবস্থা কতো খারাপ করেছিস তা আয়নায় দেখ।
– – – –
-চুপ একটুও কাঁদবি না। যে চলে গেছে তার জন্য নিজের জীবন নষ্ট করার কোনো মানে হয় না
-আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না৷
-এখন থেকে থাকতে হবে। আল্লাহ যা করে আমাদের ভালোর জন্য করে
-তোরা কেউ আমার কষ্ট বুঝবি না তা জানি
-সবাই বুঝতে পারছে কিন্তু কিছু করার নেই যে।
-হুহহহ্
-ফুপি খুব সুন্দর একটা শাড়ি তোর জন্য কিনে এনেছে কালের জন্য
-আমি একটুও সাজবো না জীনের সব রংঢং একজনের জন্যই ছিলো
-তোর সাজতে হবে না আমি সাজিয়ে দিবো
-তুই এখন যা তো
-রাগ করিস না এখুনি যাচ্ছি, তুই ঘুমা।
-যা
তুলি যাওয়ার পর ইভর রুমে দরজা অফ করে আয়ানের দেওয়া সব স্মৃতি বের করে দেখতে লাগলো। আয়ানের সাথে ইভার হাজারটা পিক আছে।
ইভা রেড, ব্লু কম্বিনেশন কালারের শাড়ি পরেছে, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চোখে কাজল, হাতে চুড়ি সব মিলিয়ে খুব সুন্দর লাগছে কিন্তু ওর মুখে কোনো হাসি নেই। তুলি ইভাকে সাজিয়ে দিয়েছে
-ইভা এবার একটু হাসি দে, তোকে এমন মন মরা দেখতে ভালো লাগছে না।
-আমার সব হাসি যে একজন কেড়ে নিয়েছে।
-কেউ কেড়ে নেয় নি তুই নিজে ইচ্ছে করে কেড়ে নিচ্ছিস।
ইভার মা এসে বললো,
-পাএপক্ষ চলে এসেছে, তুলি তুই ওকে নিয়ে আয়।
-হ্যাঁ আসছি কিন্তু ফুপি তুমি কি ছেলেকে দেখেছো? কেমন দেখতে।
-হ্যাঁ খুব সুন্দর তবে ছেলেটাকে কোথাও দেখেছিলাম তা মনে পরছে না।
-ওহ্, আমি গিয়ে দেখি ছেলেটা কে।
তুলি ইভাকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে গেলো। ইভা মাথা নিচু করে বসে আছে ছেলেকে দেখার বিন্দু মাএ ইচ্ছে নেই।
একজন ভদ্র মহিলা বললো,
-ইভাকে তো আমার ছেলের বৌ হিসাবে আগে থেকে ঠিক করে রেখেছি।
ইভার মা বললো,
-আপনি ইভাকে আগে থেকে চিনতেন কিভাবে?
মহিলাটি বললো,
-সানভির বোনের বিয়েতে ওকে দেখেছিলাম।
ইভা মহিলার কথা শুনে মাথা উঁচু করে তাকালো। দেখলো আয়ান বসে আসে সাথে ওর বাবা,মা,বোন আরও কারা যেনো আছে। ইভা রাগি লুকে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ান তো মুচকি মুচকি হাসছে।
ইভার রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে এতোদিন ইচ্ছে করে কষ্ট দেওয়ার ফল আয়ানকে ভোগ করতে হবে।
বড়রা বিয়ে নিয়ে কথা বলছে তখন সানভি বললো,
-আপনাদের কোনো আপত্তি না থাকলে ওরা নিজেরা আলাদা গিয়ে কথা বলুক।
আয়ানের বাবা বললো,
-হ্যাঁ ওরা গিয়ে কথা বলুক আর আমরা বড়রা এখানে বিয়ে ডেট ফাইনাল করি।
তুলি, সানভি, লামিসা,আয়ান ইভার রুমে গেলো। ইভা রুমের দরজা লক করে হাতে লাঠি নিয়ে বললো,
-তোদের সব কয়টাকে মেরে হসপিটালে পাঠাবো, আমাকে এতোদিন কষ্ট দেওয়ার ফল সবগুলাকে পেতে হবে।
-বিশ্বাস কর বোন আমার আমি এসবের কিছু জানতাম না যে আয়ানের সাথে তোর বিয়ে হবে। (তুলি)
-হ্যাঁ দোস্ত আমিও কিছু জানতাম না (লামিসা)
-আচ্ছা তোদের দুজনকে ছেড়ে দিলাম কিন্তু এই যে গুনোধর ভাই আর আপনি (আয়ানের দিকে লাঠি দেখিয়ে) এদেরকে তো ছাড়া যাবে না (ইভা)
-আমি তোকে অনেক বার বলতে চেয়েছি কিন্তু আয়ান বলতে দেয় নি(সানভি)
– এই শালা তুই তো আমাকে বললি ইভাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা (আয়ান)
-আমি কি তোকে বলেছিলাম যে ইভাকে বিয়ে করবি না এই কথা বলতে? বলেছিলাম দেশে ফিরে এসে বাসায় বিয়ের প্রপোজাল দিতে (সানভি)
-না মানে আর কি একটু বেশি হয়ে গেছিলো(আয়ান)
-তোরা সবাই রুম থেকে বার হ্ (ইভা)
-না ওরা ও থাক এখনোও তো আমাদের বিয়ে হয় নি একসাথে রুমে থাকলে ব্যাপারটা কেমন যানো দেখায়(আয়ান).
-যেমন খুশি তেমন দেখাবে তোরা বার হ্(ইভা)
-ভাই সামলে, এখনই বাসর সেরে ফেলিস না বলেই সানভি দৌড়ে।
আয়ান খাটের উপর বসা ছিলো ইভা আয়ানের কাছে গিয়ে শার্টের কলাট ধরে বললো,
-তুই আমাকে এতো দিন কষ্ট দিয়েছিস তাই তোকে আমি বিয়ে করবো না।
-আহহা সোনা পাখি এমন করে না, তোমাকে আমি এতোগুলা ভালোবাসি তো।
-তোর ভালোবাসা তোর কাছে রাখ, তুই আমাকে কতো ভালোবাসিস তা দেখা হয়েছে
-মাফ করে দেও। আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম
-আমি কি তোকে বলেছিলাম সারপ্রাইজ দিতে?
-না
-তাহলে এমন কেনো করলি?
-সরি সোনা পাখি মাফ করো এই দেখো কানে ধরছি
-আচ্ছা ১০০বার কান ধরে উঠ বস কর মাফ করে দিবো
-এ্যাঁহ্ ১০০বার!!!! একটু কম হয় না?
-বেশি কথা বললে আরো বাড়বে
-আচ্ছা
আয়ান কান ধরে উঠ বস করা শুরু করলো। ইভা এক, দু, তিন, চার করে গুনতে আছে। ৫০পর্যন্ত করে আয়ান হাঁপিয়ে গেছে।
-বৌ আমার মাফ করো প্লিজ
-আচ্ছা মাফ করলাম আর যদি কোনোদিন দেখেছি ইচ্ছে করে আমাকে কষ্ট দিস তাহলে এর দশগুণ শাস্তি হবে
-আচ্ছা
-বাইরে চল সবাই ওয়েট করছে আমাদের জন্য
-তোমার মুখ তুই ডাকটা আমার কাছে বিষের মতো লাগে তাই তুমি করে বলো
-হুম।
আয়ান ইভাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আমিও অনেক কষ্ট পেয়েছি, তোমাকে কষ্ট দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু এসব কিছু হয়েছে রাইয়ানের জন্য।
-রাইয়ান আসলো কিভাবে? আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
-আমি বিদেশে যাওয়ার পর থেকে রাইয়ানের নজর আবার তোমার দিকে পরেছে। যে লোকটা তোমার বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে এসেছিলো উনি প্রথমে রাইয়ানের কথা বলেছে আর রাইয়ানের বাবার সাথে তোমার বাবার বিজনেসর ডিল হয়েছে।
-তাহলে রাইয়ানের জায়গায় তোমার ফ্যামিলি আসলো কিভাবে?
-আমার আরও ১০দিন পরে দেশে আসার কথা ছিলো কিন্তু এই যে তোমার বিয়ে নিয়ে তোরজোর চলছে তাই আসতে হলো।
-এসবের মধ্যে আমাকে কষ্ট দিলে কেনো? আর আমাকে কিছু জানাও কি কেনো?
-তোমাকে কষ্ট দিয়েছি যাতে তুমি বাসা থেকে বের না হও। বাসা থেকে বের হলে রাইয়ান কখন কি করে বসতো তাই আর তোমাকে না জানানোর কারন হচ্ছে তুমি জানলে তোমার বাবা মায়ের কাছে রাইয়ানের কুকীর্তি বলে দিতে তারপর তোমার বাবা ওদের ওপর ক্ষেপে যেতো নানান ধরনের সমস্যা হতো তাই আমি এতো কিছু করতে বাধ্য হয়েছি।
-কিন্তু তুমি যে বললে আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এসব করেছো তা ওদের বললে কেনো?
-কি দরকার সবাইকে ঝামেলার কথা বলা? এখন ভালো করে এনগেজমেন্ট শেষ হোক এটাই চাই। আর নিলয়কে দিয়ে তোমাদের বাসায় কল করিয়েছি যে আমরা আজকে আসবো, রাইয়ানদের আগামীকাল আসার কথা।
-এখন যদি কালকে ওরা আসে তখন মুশকিল হবে তো।
-ওরা একটু পরই চলে আসবে।
-কেনো?
-ও এতোক্ষণে জেনে গেছে আমি তোমাদের বাসায় এসেছি তাই।
-এসব শুনে আমার ভয় করছে
-উইর লাভার অলওয়েজ প্রোটেক্ট উই
– হুম
– আর এতোকিছুর মধ্য দেখা হলো তুমি আমাকে কতো ভালোবাসো আর হ্যাঁ এই প্রমিজ করলাম আর কোনো দিন তোমাকে কষ্ট দিবো না।
-নেকামি করতে হবে না কষ্ট দিয়ে আসছে ঢং করতে যত্তসব, ছাড়ো আমাকে
-ঢং না ভালোবাসা
-খুব ভালোবাসি তোমাকে আর কখনও আমাকে কিছু না জানিয়ে সব কাজ নিজে একা করবা না। সুখ, দুঃখ ভাগ করে নিবো
-যথা আগ্গা মহারানী
-আমি যে তোমাকে কান ধরে উঠ বস করিয়েছি তার জন্য সরি আর তুমিও তো কম বলদ না তখন বললেই পারতে এসব কেনো হয়েছে
-বললে তো তোমার রাগি চেহারা এতো কাছ থেকে দেখতে পেতাম না
-শুনতে পাচ্ছো এতো জোরে জোরে রাইয়ানরা কথা বলছে
-হ্যাঁ চলো তো গিয়ে দেখি
ইভা, আয়ান ড্রয়িং এসে দেখে রাইয়ান আর ওর বাবা এসে তর্কাতর্কি করছে। রাইয়ান আয়ানকে দেখে বললো,
-তোর জন্য আমার সব প্ল্যান বেহেশতে গেছে।
-হ্যাঁ যাবে তো, আমি ছাড়া ইভাকে কেউ বিয়ে করতে পারবে না।
রাইয়ানের বাবা বললো,
-সাইফুল চৌধুরী আপনি জানেন এই ছেলেটা এক নাম্বারের গুন্ডা ওর সাথে মেয়ের বিয়ে দিয়েন না। আমার ছেলে অনেক ভালো আপনার মেয়েকে অনেক সুখে রাখবে।
ইভার বাবা বললো,
-এসব কি হচ্ছে আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
আয়ান ইভার সম্পর্কে কথা ইভার বাসায় কেউ জানতো না তাই তাদের এসব ঘটনা না জানার কথা তাই আয়ান সবার সামনে ইভার সাথে সম্পর্কের কথা ও রাইয়ানের কুকীর্তি সব বলেছে।
সব শুনে ইভার বাবা বললো,
-আপনার সাথে বিজনেস ডিল ক্যান্সেল, স্বার্থের জন্য নিজের মেয়েকে অসুখী দেখতে পারবো না।
রাইয়ানের বাবা,
-আপনি বড় ভুল করছেন কিন্তু
-ভুল না ঠিক তা আপনার থেকে জানার ইচ্ছে নেই আপাতত আপনার ছেলেকে নিয়ে আমার বাসা থেকে বিদায় হন।
-তোদের দেখে নিবো (রাইয়ান)
-আপনারা দেখে যান, বেয়াই মশাই আপনার বিজনেসর ডিল আমার বিজনেসর সাথে হবে। আপনার ব্যবসায় কোনো ক্ষতি হবে না (আয়ানের বাবা)
কথাটা শুনে রাইয়ান আর ওর বাবা রাগে ফসফস করতে করতে চলে গেলো।
এনগেজমেন্টের রিং আয়ান ইভাকে পরিয়ে দিলো এবং ইভা আয়ানকে রিং পরিয়ে দিলো । বিয়ে ডেট ফিক্সড করলো তবে এনগেজমেন্টের দশ দিন পরে।
বিয়ে কেনাকাটা, আত্মীয় সজনের দাওয়াত দেওয়া ইত্যাদি মিলিয়ে সময় দূরুত চলে গেলো।
আজ ইভা- আয়ানের গায়ে হলুদ। ইভা লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি পরেছে, হাতে মেহেদী দিয়েছে। আর আয়ান হলুদ পাঞ্জাবি পরেছে। হলুদের অনুষ্ঠানে শেষ করে ইভা রুমে এসে বসলো তখন আয়ান কল করলো,
-তাড়াতাড়ি ছাদে চলে আসো।
-এতোরাতে তুমি কি আমাদের বাসার ছাদে?
-না আমার বাসার ছাদে আসতে বলেছি
-আমি কিভাবে যাবো
-গাধী একটা, আমি তোমাদের বাসার ছাদে আসো।
-হুম
মোটামুটি সবাই ঘুমিয়েছে। ইভা চুপিচুপি ছাদে গেলো।
আয়ান হলুদ পাঞ্জাবি পরে দাড়িয়ে আছে। ইভাও হলুদের ড্রেস চেঞ্জ করে নি।
-এতো রাতে আাসার কি দরকার ছিলো, কালকে তো আমাদের বিয়ে
-তুমি হলদে পরী হয়েছো সেটা কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে হলো তাই চলে এলাম
-পাগল। দেখা হয়েছে এখন যাও
-আসার আগেই যাও যাও শুরু হলো
-দাঁড়াও তো কয়টা পিক তুলি
কতোগুলো পিক তুলে আয়ান চলে গেলো। আর আয়ানকে হেল্প করার জন্য তো সানভি আছে তাই এতো রাতে ইভাদের বাসায় আসতে পেরেছে।
পরের দিন ওদের বিয়ে। ইভা লাল কালারের গাউন পরেছে আর আয়ান লাল শেরোয়ানি পরেছে। দুজনকে এক সাথে অপূর্ব সুন্দর লাগছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে ভালো ভাবে হয়েছে। ইভা বাবার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে শশুড় বাড়ি চলে গেলো।
বাসর ঘরে ঘোমটা বেশি করে টেনে ইভা বসে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে আয়ানের আগমন।
-উহুম উহুম,
এতোদিন প্রেম করলেও এখন ইভা লজ্জা লাগছে তাই গুটিসুটি মেরে বসলো। আয়ান ইভার কাছে গিয়ে মাথার ঘোমটা টেনে তুললো।
-একদম আমার মনের মতো সেজেছো৷
-উঠো দাঁড়ও
-কেনো?.
-আগে দাঁড়াও তো
-আচ্ছা
আয়ান উঠে দাড়াতে ইভা আয়ানকে সালাম করে। আয়ান ইভার কপালে চুমু দিয়ে হাতে দুটো স্বর্নের চুড়ি পড়িয়ে দিলো।
-সবাই তো আংটি দেয় আমি চুড়ি দিলাম তুমি খুশি তো?
ইভা আয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-আমি খুব খুশি
-এখন আমাকেও একটু খুশি করো বলেই ইভাকে কোলে তুলে খাটে শুয়ে দিয়ে লাইট অফ করলো।
শুরু হলো আয়ান-ইভার নতুন জীবন।
এখন ওদেরকে একা ছেড়ে দিন। ওদের মতো করে ওরা সুখ খুঁজে নিবে, আপনাদের আর কিছু জানতে হবে না তাহলে বেচারারা লজ্জা পাবে।
“”পিঠ বের করে ব্লাউজ না পরলে কি হয়? শরীর দেখালেই সবাই প্রেমে পরে না। “”
কথা শুনে ইভা চমকে উঠে পাশে তাকিয়ে দেখে কথাটা আয়ান বলেছে তাই সাথে সাথে শাড়ির আঁচলটা পিঠের ওপর দিলো।
” দু মিনিটের মধ্যে উপরে যাও আমি আসতে আছি ”
”এখন কিভাবে যাবো, অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে তো”
“এতো কথা না বলে যা বলেছি তা করো ”
“আচ্ছা ”
ইভা বসা ছেড়ে উঠতে সানভির মা বললো,
-তুই এখন কোথায় যাচ্ছি? তুলিকে হলুদ লাগাবি না?
-হ্যাঁ, ওয়াস রুম যাবো তারপর এসে হলুদ লাগাবো।
-তাড়াতাড়ি আসিস।
ইভা উপরে গিয়ে আয়ানকে খুঁজতে লাগলো কোন রুমে কোথায় আছে?
আয়ান ইভার হাতটা টেনে নিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে দিলো।
-আয়ান এটা কোন ধরনের অসভ্যতা? রুমে দরজা লক করেছো কেনো?
-তুমি যে শরীর বের করে সবাইকে দেখাও এটা বুঝি আমার খুব ভালো লেগেছে?
-চুলগুলো খোলা রেখেছি পিঠ দেখা যাচ্ছে না তো।
-মুখে মুখে তর্ক করবে না, আমি স্পষ্ট দেখেছি তোমার শরীর দেখা যাচ্ছে।
—
-এখক্ষনি শাড়ী চেঞ্জ করো আসো।
-না
আয়ান ইভাকে দেওয়ালের সাথে ঠেকিয়ে দু হাত চেপে ধরে বললো,
-আমি যতোটা তোমার ভালো চাই ঠিক ততোটাই খারাপ করতে পারি
-আমার হাতে ব্যাথা লাগছে ছাড়ো
-আগে বলো শাড়ি চেঞ্জ করবে কি না?
-হুম করবো।
-যাও
-তুমি বাইরে যাও
-তুমি ওয়াস রুমে গিয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে আসো আমি রুমে বসে আছি
-অসহ্য
ইভা কিছুক্ষন পর শাড়ি চেঞ্জ করে গাউন করে পরে এসেছে।
-শান্তি হয়েছে, এখন চলো
-দাঁড়াও ভালো করে দেখি
-আবার ভালো করে দেখার কি আছে?
-ঠোঁটে গাড়ো লাল লিপস্টিক মুছে এসো
– না
আয়ান ইভার ঠোঁট নিজের ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে নিলো। ইভা আয়ানকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আয়ানের সেদিকে খেয়াল নেই কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলো।
-সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকাতে হয় ।দেখো এখন লিপস্টিক নেই।
ইভা আয়ানের গলা চেপে ধরে বললো,
-তোকে আজকে মেরে ফেলবো
-হ্যাঁ মেরে ফেলো তাতেও আমার শান্তি অন্তত তোমার এসব দেখতে হবে না
আয়ানকে ছেড়ে দিয়ে ইভা কান্না করে দিলো।
– তোমার শরীর দেখে কেউ মজা নিবে এটা আমি চাই না।
আয়ান ইভার চোখের পানি মুছে দিয়ে, জড়িয়ে ধরে বললো,
-তোমাকে আমি কতোটা ভালোবাসি তা বলে বোঝাতে পারবো না। তোমাকে নিয়ে কেউ কিছু বলবে তা আমি মানতে পারি না৷ বিয়ে বাড়ি কতো লোকজন থাকে তাদের মধ্যে খারাপ লোকের অভাব থাকে না। তোমাকে সব সময় চোখে চোখে দেখে রাখা সম্ভব হয় না। আর এখন তোমার বিয়েও করতে পারবো না তোমার নিজের তো ভালো মন্দ বুঝা উচিৎ।
-হুম
-হুম টা কি মাথায় কিছু কি ঠুকছে
-হুম সরি আমি বুঝতে পারি নি।
-এবারের মতো মাফ করে দিলাম
-এবার যাও
-হুম
ইভা হলুদের অনুষ্ঠানে গেলে সবাই একে একে প্রশ্ন করছে কেনো শাড়ি চেঞ্জ করে গাউন পরলো? সবার জন্য একটা উওর রেডি করে রেখেছে যে, শাড়িতে কম্ফোর্টাবেল ফিল করে না তাই চেঞ্জ করে আসছে ।
হলুদের অনুষ্ঠানে ভালো ভাবে কেটেছে। বিয়ের দিন ইভা পিংক কালারের লেহেঙ্গা পরেছে।
তুলি ইভাকে বলছে,
-তোকে আজকে পরীর মতো লাগছে রে ইভু
-তোকেও আজকে খুব সুন্দর লাগছে, ভাইয়া তো তোর দিক থেকে চোখ সরাতে পারবে না।
-তোর শুধু বাজে কথা
-উম্হ সত্যি কথা বলেছি
ইভার মা এসে বললো,
-তোদের দুবোনের বকবক এখন শেষ কর, ইভা তুই আমার সাথে আয়।
-কেনো? কোথায় যাবো?
-বরের বাড়ির লোকজন এসেছে সেখানে যেতে হবে
-হুম, আপু তুই বস আমি আসছি।
আজকে আয়ানের মা,বাবা,বোন এসেছে। আয়ানের মায়ের সাথে ইভাকে পরিচয় করিয়ে দিবে সে জন্য আয়ান ইভাকে ডাক দিলো,
-ইভা এদিকে আসো
-হুম বলো
-এই আমার মা আর আমার একমাত্র বোন আয়েশা
-আসসালামু আলাইকুম আন্টি
-ওয়ালাইকুম সালাম। মাশাল্লাহ দেখতে
-ভাইয়া তোর চয়েজ আছে ভাবি আমার খুব পছন্দ হয়েছে
ইভা খুব লজ্জা পাচ্ছে তাই বললো,
-আমার একটু কাজ আছে এখন আসি
আয়েশার ইভার হাত ধরে বললো, আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও দেখি তোমার কি কাছ আছে
-আচ্ছা চলো
ইভা তিয়াশের সাথে দেখা করে তুলির কাছে তখন একটা ছেলে এসে বললো,
-তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে
-জানি, পাম দেওয়া লাগবে না
-সত্যি বলছি, এই গোলাপ টা তোমার জন্য
-ধন্যবাদ তবে গোলাপ টা আমার লাগবে না।
ওদের কথার মধ্যে আয়ান এসে বললো,
-উহুম উহুম, ভাইয়া ওর পিছে লাইন মেরে লাভ নেই ওর বয়ফ্রেন্ড আছে
-ওহ আচ্ছা
-ইভা তোকে তুলি ডাকছে তুই যা
-হুম
তুলি বিয়ের অনুষ্ঠানে ভালো ভাবে হয়েছে। ইভারা নিজেদের বাড়ি ফিরে গেছে। কয়েকদিন পরে আয়ান ইভাকে জানিয়ে দিলো যে আয়ান বিদেশে চলে যাবে।
চলবে,
#Your_Lover
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৮
নদীর পারে আয়ান ইভা বসে আছে। দু’জনে আসার পর থেকে চুপ হয়ে রয়েছে। বেশ কিছুক্ষন পর আয়ান বললো,
-আমাকে কি মিস করবে?
-হুম, তুমি আমাকে ভুলে যাবে না তো?
-তোরে ভুলে যাওয়ার লাগি আমি ভালোবাসি নি,
সব ভেঙ্গে যাবে এভাবে ভাবতে পারি নি।
-তুমি মজা করছো? আমার কষ্ট হবে তা একটা বারও ভাবলে না?
-মজা করছি না তো।
-তো কি? তুমি ইচ্ছে করে বিদেশে চলে যেতে চাইছো তাই না?
-না বাবাকে অনেক বুঝিয়েছি যে যাবো না কিন্তু সে আমার কথা শুনলো না। তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমারও কষ্ট হবে।
-কতো দিন থাকবে?
-তিন মাস।
-এতোদিন না থাকলে কি হয় না?
– না গো অনেক কাজ আছে।
–
-তুমি নিজের খেয়াল রেখো, ভালো করে পড়াশোনা করো।
-হুম
-আমার দিকে তাকাও না, ঠিক করে কথা বলছো না কেনো কি হয়েছে?
-বলো তোমার কথা আমি শুনছি
এবার আয়ান ইভার গালে হাত দিয়ে দেখে ইভা কান্না করছে।
-তুমি যদি এমন করো তাহলে আমার তো বেশি কষ্ট হবে। তুমি সবার মাঝে থাকবে আর আমি একা থাকবো তাতে আমার কতো কষ্ট হবে তা কি বুঝো?
-তোমাকে ছাড়া কি করে থাকবো? আমার সবকিছু জুড়ে শুধু তুমি ছিলে।
-প্লিজ সোনা পাখিটা কান্না করো না। আমি সবসময় তোমার সাথে কথা বলবো, ভিডিও কল দিবো।
-হুম,
-আর একটুও চোখের পানি দেখতে চাই না, হাসো।
আয়ান ইভার চোখের পানি মুছে দিলো।
-তোমার জন্য পায়েস রান্না করে এনেছি বলে ইভা ব্যাগ থেকে পায়েসের বাটি বের করে
-খাইয়ে দেও
-হুম দিচ্ছি
দুজনে কিছুটা সময় এক সাথে কাটিয়ে বাসায় রওনা দিলো। রাস্তার কাছে ফুসকা দেখে আয়ান বাইক থামিয়ে বললো,
– নামো, আজকে তুমি যতো ইচ্ছে ফুসকা খাও, আমি বারন করবো না।
-না খাবো না
-আমি বলছি তো, চলো খেয়ে আসি
ইভার মন খুব খারাপ তাও প্রিয়জনের সাথে ফুসকা খাওয়া একটা ভালো লাগা আছে। ফুসকা খেয়ে ইভাকে বাসায় পৌঁছে দিলো।
রাতে আয়ান নিজের জিনিসপত্র প্যাক করে রাখলো৷ সকালের ফ্লাইটে চলে গেলো। ইভার সারা দিন মন খারাপ ছিলো। পরের দিন আয়ান দিলো,
-আসসালামু আলাইকুম, সোনা পাখিটা
-ওয়ালাইকুম সালাম, কেমন আছো?
-ভালো, তুমি?
-ভালো কিন্তু তোমার জন্য মন খারাপ।
-আহারে্ আমার সোনা পাখিটা মন খারাপ তাহলে মন ভালো করার জন্য কিছু একটা তো করতে হয়। যাও বারান্দায় গিয়ে দেখো যে একটা দড়ি বাধা আছে ওটা উপরে টান দেও।
-কেনো? কি আছে?
-তুমি আগে গিয়ে দেখো তো আমি লাইনে আছি
-আচ্ছা ।
ইভার রুমের বারান্দায় একটা দড়ি বাধা থাকতো যেটা দিয়ে আয়ান মাঝে মাঝে ইভাকে খাবার আর গিফ্ট দিতো।
ইভা দড়ি টেনে দেখলো এক বক্স কিটক্যাট।
– থ্যাংকউই এ লট। ভিডিও কল দেই
-হুম
ইভা আয়ানকে ভিডিও কল দিলো,
-তুমি বক্সটা কখন রেখে গেছো?
-তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে এসেছিলাম তখন রেখে গেছি। তোমার কিটক্যাট ফেভারিট আর চলে যাওয়ার পর মন খারাপ থাকবে সেটা ভালো করতে এসব করেছি।
-সত্যি খুব খুশি হয়েছি। তুমি এতো কিছু যে কিভাবে পারো বুঝি না।
-তোমার বুঝতেও হবে না।
-সারাজীবন আমাকে এভাবে ভালোবাসবে তো?
-হুম
দু’জন কিছু সময় কথা বলে, ইভা বই পড়তে বসলো। কিছুদিন পরে ইভার ফাইনাল পরীক্ষা।
প্রতিদিন ইভা আয়ানের কথা হয়। ইভা রাত জেগে বই পড়লে আয়ানও ভিডিও কলে বসে থাকে। দূরে থাকলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে ঠিক ওদের ভালোবাসাও অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ইভার পরীক্ষার মাঝে বার্থডে ছিলো, রাতে ইভা বই পড়ছে তখন আয়ান বললো,
-Happy Birthday to U Sona Pakhi
-থ্যাংকউই
-যাও বাসার মেইন দরজাটা খুলো।
-এতো রাতে দরজা খুলবে, কেউ যদি দেখে ফেলে।
-কেউ দেখবে না তুমি যাও
-আচ্ছা
ইভা দরজা খুলে দেখে একটা ফুলেরতোরা আর এতো বড়ো একটা গিফ্ট বক্স। চুপিচুপি রুমে এসে দরজা লক করে গিফ্ট বক্স খুলে দেখে ড্রেস, হিজাব, পারফিউম, মেকআপ, আর অনেক চকলেট, চিপস।
-তোমাকে যতো দেখছি ততো অবাক হচ্ছি। আমি অনেক ভাগ্যবতী তোমার মতো একজন লাইফ পার্টনার পেয়ে।
-আমিও তোমাকে পেয়ে খুব খুশি, তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে তাইতো এতোকিছু করি, এতো ভালোবাসি।
-কিন্তু তুমি তো বিদেশে তাহলে কে দিলো?
-আমি এগুলো কিনে সানভির কাছে দিয়েছিলাম ও এসে দিয়ে গেছে।
-সানভি ভাইয়া আমাদের জন্য অনেক করেছে। ওর মতো ভাই সবার যেনো হয়।
-হুম, ও আমার জন্য যা কিছু করেছে তার ঋন কোনো দিন শোধ করা যাবে না।
-হ্যাঁ, ও অনেক বেশি ভালো।
-ভাইয়ের প্রশংসা অনেক হয়েছে এখন বই পরেন।
-হ্যাঁ পরতে আছি।
-তোমার আরও পাঁচ টা পরীক্ষা আছে আর আমিও একমাসের মধ্যে চলে আসবো।
-হুম তোমার অপেক্ষায় আছি
কথা কোপন শেষ করে বই পড়তে শুরু করলো। দেখতে দেখতে ইভার পরীক্ষা শেষ হলো, আয়ানের সময় হয়েছে দেশে ফিরে আসা।
সাইফুল চৌধুরী মানে ইভার বাবা ওর মাকে বলছে,
-ইভার পরীক্ষা তো শেষ হলো এর মধ্যে আমার পরিচিত একজনের সাথে দেখা হয়েছে তখন সে বললো ভালো ছেলে আছে মেয়ের বিয়ে দিবেন কি না?
-তা তুমি কি বললে?
-বলেছি যদি ভালো ছেলে হয় আমার মেয়ে জন্য পার্ফেক্ট তাহলে বিয়ে দিবো
-আচ্ছা তাহলে তার সাথে কথা বলে দেখো।
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে সাইফুল চৌধুরী দরজা খুলে দেখে তার পরিচিত একজন এসেছে যে ইভার বিয়ের কথা বলেছে।
ইভা ড্রইং রুমে টিভি দেখতে যাবে বলে, এইসব কথা শুনে ফেলেছে।
টিভি দেখতে না গিয়ে আয়ানকে কল দিলো।।।
-তিয়াশ ভাইয়া চলো, তোমাকে উপরে নিয়ে যাই ওখানে আমার ভাই বোনেরা আছে এক সাথে আড্ডা দেওয়া যাবে। (সানভি)
-আচ্ছা চলো। (তিয়াশ)
সানভি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে যাবে তখন পিছন থেকে আয়ান ডাক দিলো,
-সানভি
-হুম আজকে তো তুমি আসবেই, আমি আসতে বললে তখন কতো বাহানা।
-আচ্ছা তাহলে আমি চলে যাচ্ছি
-আরে না দোস্ত মজা করছি, তুই এসে ভালো করেছিস আড্ডা ভালো জমবে ।
-কিন্তু উনি কে?
-পরিচয় করিয়ে দেই উনি তিয়াশ আহাম্মেদ। আর এই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড আয়ান চৌধুরী
দুজনে কুশল বিনিময় শেষে করে সানভির রুমে গেলো, গিয়ে দেখলো তুলি,রাইসা,ইভা লুডু খেলছে।
-আরে আপনি এখানে (তিয়াশ)
-আমারও তো এক প্রশ্ন আপনি এখানে কি ভাবে? (তুলি)
-তোরা দুজন দুজনকে চিনতিস?( সানভি)
-হ্যাঁ আমাদের দুবার দেখা হয়েছে। একবার শপিং মলে ওনার ব্যাগ থেকে টাকা পরে গেছে সেটা উনি খেয়াল করে নি তারপর আমি টাকাগুলো ওনাকে দিয়েছিলাম আবার দেখা হয় উনি কলেজ থেকে পিকনিকে গিয়েছিলো আর আমি অফিসের কাজে গেছি তখন আমার বাইকটা খারাপ হয়ে যাওয়া ওনাদের পিকনিক বাসে উঠছিলাম অবশ্য উনার সাহায্যের জন্য আমি সেদিন বাসে উঠতে পেরেছি। (তিয়াশ)
-ওহ আচ্ছা, এই ব্যাপারটা তুই আমাকে আগে বলিস নি তো (ইভা)
-না মানে আর কি(তুলি)
-আপনাকে কলেজে গিয়েও খুঁজেছি কিন্তু পাই নি (তিয়াশ)
-আর খুঁজে হবে না, এখন থেকে যখন ইচ্ছা তখনই দেখতে পাবেন (আয়ান)
-সর তো তোদের খালি বাজে কথা (তুলি)
-কোথাও যাওয়া হবে না, এখানে বস (ইভা)
-রাইসা তুই গিয়ে সবার জন্য কফি আর ফ্রেন্স ফ্রাই নিয়ে আয়(সানভি)
-উফফ্ ভাল্লাগে না, সব সময় আমাকে খাটাও (রাইসা)
-পুচকে বেশি কথা না বলে যা (সানভি)
-আহারে আমার এক মাএ শালিকার কি কষ্ট (আয়ান)
-হুহহহ্ (রাইসা মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে চলে গেলো)
-তিয়াশ ভাইয়া আপনি কেনো তুলিকে কলেজে খুঁজে গেয়েছিলেন? (আয়ান)
-সেদিন উনার জন্য আমার অনেক বড় উপকার হয়েছে কিন্তু ধন্যবাদ দিতে পারি নি তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চেয়েছি (তিয়াশ)
-ওহ্ আচ্ছা,( হেসে বললো আয়ান)
-কিরে আপু তুই কিছু বল (ইভা)
-আমি আর কি বা বলবো (তুলি)
-আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো যদি কিছু মনে না করেন? (তিয়াশ)
-একটা কেনো একশো কথা জিজ্ঞেস করতে পারেন (সানভি)
-আপনার বাসায় নিচের তলায় একটা ওয়ালমার্টে দেখছি ওটা কোথা থেকে কিনেছেন? আমার খুব পছন্দ হয়েছে তাই বললাম (তিয়াশ)
-ওটা কিনে আনতে হয় নি, বাসায় বানিয়েছে মিস.তুলি (ইভা)
-ওয়াও আপনার হাতের কাজ অনেক সুন্দর। আমি আপনাদের বাসায় ঢুকে ওটা দেখা অবাক হয়ে গেছি এতো সুন্দর তারমধ্য উনার সাথে ধাক্কা লেগেছে (তিয়াশ)
-আসলে ফ্লোরে পানি ছিলো আমি দেখি নি তাই পরতে পরতে আপনার সাথে ধাক্কা লেগেছে (ইভা)
-তুই তো পানি না থাকলেও পরে যাস (সানভি)
-একদম ঠিক, কোন দিন না জানি কোমর ভেঙ্গে পরে থেকে আমাকে,,,,,,,,, (আয়ান)
-চুপ থাকো (ইভা)
রাইসা সবার জন্য নাস্তা নিয়ে আাসলো, খেয়ে গল্প করে আয়ান, তিয়াশরা চলে গেলো।
ওহ্ হ্যাঁ তার মধ্যে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে ইভা, আয়ান দুজনে আলাদা কথা বলেছে চলুন কি বলেছে তা শুনে নেয়,
-তুমি তিয়াশের গায়ের উপর পরেছো সেটা আমি দেখেছি তাই সত্যি বলো ও তোমাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করে নি তো?
-আরে না।
-সত্যি বলছো তো?
-হ্যাঁ সত্যি
-আর যদি কোনো দিন দেখে ঠিক করে হাটতে পারো না অন্যের গায়ে পরো তাহলে আমি নিজে তোমার পা ভেঙ্গে ঘরে রেখে দিবো
-তুমি এতো শয়তান!! তোমার কষ্ট লাগবে না আমার জন্য?
-অসুস্থ হয়ে থাকলে কষ্ট লাগবে না কারন আমি সেবা করবো কিন্তু অন্য ছেলের সাথে দেখলে খুব কষ্ট হবে। আর আমি কোনো কষ্ট পেতে চাই না বুঝেছো।
-হুম বুঝলাম
-তিয়াশের সাথে তুলি দেখা করতে গেলে তুমিও তো যাবে তা জানা আছে তাই বলছি একটুও সাজগোজ করবে না
-একটু সাজলে হয় কি?
-আমার মাথা খারাপ হয় এখন আসি
-হুহহ্ কোনো রোমান্টিক নেই আছে শুধু ঝাঁঝালো কণ্ঠ
আয়ান পিছন থেকে এসে আবার ইভার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে চলে গেলো। ইভা চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে কি হলো । তুলি ইভাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,হা করে তাকিয়ে না থেকে খেতে চল।
ডাইনিং টেবিলের সবাই খেতে বসেছে তখন সানভির বাবা বললো,
-তুলি তোকে পরশু দিন তিয়াশের ফ্যামিলি দেখতে আসবে
-এর মধ্যে ওর বিয়ে দিবে? গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করুন তারপর বিয়ে দিলে ভালো হয় (সানভি)
-তিয়াশ ছেলেটা খুব ভালো ওর ফ্যামিলি লোকজন ও অনেক ভালো বিয়ের পর পড়ালেখা করতে কোনো প্রবলেম হবে না (ইভার বাবা)
-হ্যাঁ আমার সবকিছু বুঝেশুনে তোর বিয়ের কথা ভেবেছি (সানভির বাবা)
-তোমরা যদি সব কিছু ঠিক করে থাকো তাহলে আমার মতামতের তো কোনো দরকার নেই (তুলি খাওয়া ছেড়ে উঠে চলে গেলো).
-ওর মতামতে আমাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ, ও যদি আগে কথা বলে বুঝে যে ওর জন্য পারফেক্ট তারপর না হয় আমরা বড়রা বিয়ের ব্যাবস্থা করবো (ইভার বাবা)
-হ্যাঁ ভাই তুলিকে একটু সময় দেওয়া দরকার, ভাবি তুলির জন্য খাবার বেড়ে দেও আমি খাইয়ে দিয়ে আসি (ইভার মা)
-আচ্ছা (সানভির মা)
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ডিসিশন নিলো কালকে বিকেলে রেস্টুরেন্টে তিয়াশের সাথে তুলি দেখা করতে যাবে সাথে ইভা,আয়ান, সানভি ওরাও যাবে।
পরের দিন বিকেলে সবাই রেস্টুরেন্টে গেলো। তিয়াশ আগেই উপস্থিত ছিলো।
-আসসালামু আলাইকুম (সানভি)
-ওয়ালাইকুম সালাম। সবাই কেমন আছো?(তিয়াশ)
-ভালো, আপনি?(সানভি)
-ভালো। (সানভি)
-আপনার কথা বলুন আমরা একটু এই দিক থেকে আসছি (আয়ান)
তুলি, তিয়াশকে রেখে ইভা, আয়ান, সানভি রেস্টুরেন্টে থেকে বের হলো। সানভি ফোনে কথা বলছে আর আয়ান পাশে একটা ফুলের দোকান থেকে ফুল কিনে দেখে ইভা পাশে নেই ।
“”উফফরে্ এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারি না। কখন কোথায় যায়, কি করে না করে বুঝি না। একটা মিনিট আমাকে শান্তি দিবে না। “”
-এই সানভি তোর বোন কোথায় গিয়েছে?
-তোর সাথে তো ছিলো
-হ্যাঁ ছিলো কিন্তু আমি ফুল কিনে দেখি মহারানী উধাও হয়েছে।
-আজকে বাসায় নিয়ে ওটাকে গনধোলাই দিবো
আয়ান আর সানভি ইভাকে খুঁজতে শুরু করলো।
চলবে,,,,,,
#Your_Lover
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৬
একটু দূরে দেখা যাচ্ছে ইভা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুসকা খাচ্ছে। আয়ান ইভার কাছে গিয়ে দেখে ফুসকার ঝালের জন্য চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে তাও খাওয়া থামছে না।
-কাউকে কিছু না বলে এখানে আসা কি ঠিক হয়েছে বলো?
-আমি কি বাচ্চা নাকি যে হারিয়ে যাবো?
-বাচ্চা হলেও ভালো হতো, কোলে নিয়ে ঘুরতাম
-তাহলে তো আমাকে বিয়ে করার সময় তুমি বুড়ো থাকতে।
-বুড়ো থাকলে কি বিয়ে করতে না?
-নাহ্
-আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো সাথে সংসার তো দূরের কথা প্রেম করারও চিন্তা করো না তাহলে আমাকে তো চিনো কি কি করতে পারি।
-হয়ছে থামো, ফুসকা খাও?
-না তুমি অনেক ঝাল দিয়ে খাও যা আমি খেতে পারি না।
-আচ্ছা কম ঝালেরটা খাও।
আয়ান দুটা ফুসকা খেয়ে আর খেতে পারলো না ঝাল বেশি দেওয়া ছিলো৷
-এতো ঝাল খাওয়া ঠিক না, এখন চলো।
-আমার অনেক ভালো লাগে।
-বেশি ভালো লাগা ভালো না, চলো তো।
-বিল দেও।
-বারে তুমি ফুসকা খেয়েছো তার বিল আমি কেনো দিবো?
-আমি কোনো টাকা নিয়ে আসি নি
-তুমি কখনো টাকা নিয়ে আসবেও না।
-কিহ্ এতো বড় অপমান আমাকে, দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।
ইভা সানভির কাছে গিয়ে বললো,
-আমাকে দশহাজার টাকা দে।
-এতো টাকা,দিয়ে তুই কি করবি?
-আমার লাগবে, তোকে বাসায় গিয়ে ফেরত দিয়ে দিবো
-কিসের জন্য লাগবে তা বল?
-আগে টাকা দে পরে বলছি
সানভি এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে দিলো। এদিকে ফুসকার বিল না দিয়ে ইভা চলে এসেছে আয়ানের কাছে টাকা খুচরো করা ছিলো না তাই টাকা খুরচো করতে লেট হয়ে যায়। এসে দেখে ইভা টাকা হাতে নিয়ে রেস্টুরেন্টের বাহিরে দাড়িয়ে আছে।
-তুমি এতোগুলা টাকা এর মধ্যে কোথায় পেয়েছো।
-বাটি নিয়ে বসেছিলাম তাই পেয়েছি
-আহ্ রেগে যাচ্ছো কেনো?আমি তো মজা করে বলেছি
-তোর মজার গুষ্টিকিলাই চল আমার সাথে।
-পাবলিক প্লেসে হাত ধরে টানতে নেই সবাই দেখছে
-পাবলিক প্লেসে গালে থাপ্পড় দেওয়া যায় তাই না
-আচ্ছা মাথা ঠান্ডা করো। আমি তোমাকে অপমান করার জন্য কিছু বলি নি। জাস্ট মজা করে বলেছি
-না আমি কিছু শুনতে চাই না আমার সাথে এখনই যেতে হবে।
সানভি ইভার রাগ দেখে ওদের মধ্যে নাক গলালো না। শুধু আয়ানকে বললো “” ও যেখানে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে যা নয়তো রাগ কমবে না “”
আয়ান ইভার কথায় সম্মতি জানিয়ে রিকশায় দুজনে উঠলো । ইভা চুপচাপ বসে আছে। আয়ান আলতোভাবে ইভার হাতটা ধরলো কিন্তু ইভা সরিয়ে দিলো। আয়ানের আর দুঃসাহস দেখিয়ে হাত ধরলো না। সামান্য একটা কথার জন্য ইভা এতো রেগে যাবে আয়ান বুঝতে পারে নি।
শপিং মলের কাছে রিকশা থামলো। এবারের ভাড়া ইভা দিলো।
ইভার পিছু পিছু আয়ান হাটছে। সব দোকান ঘুরে দুটো টি-শার্ট আর সানগ্লাস কিনলো।এবং নিজের জন্য একটা ড্রেস নিলো। তারপর রেস্টুরেন্টে গিয়ে বার্গার, ফ্রেন্স ফ্রাই আর কোক খেলো, বিল ইভা দিয়েছে ।
আয়ান ইভার এরকম কান্ড চুপচাপ দেখলো। আয়ানের নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে ওই কথাটা না বললে ইভা এতো রাগতো না।
সানভিদের বাসার সামনে রিকশা থামলো। ইভা আয়ানের হাতে টি-শার্টের প্যাকেট দিয়ে চলে যাচ্ছে। আয়ান বললো,
-ইভা দাঁড়াও, প্লিজ কথা শুনো।
–
-তুমি না দাঁড়ালে আমি এখান থেকে যাবো না
-কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো, কেউ দেখে ফেলবে।
আয়ান ইভার হাত দুটো ধরে,
-সরি ইভা, আমি তোমাকে কথাটা ওই ভাবে বলতে চাই নি।
-আর কিছু?
-সরি সোনা পাখিটা সরি সরি।রাগ করো না প্লিজ
-হাহাহাহা, আমি এতোক্ষণ রাগ করি নি। তুমি সবসময় টাকা দেও যা আমার ভালো লাগে না। আমারও তো ইচ্ছে হয় বিল দিতে, তোমাকে কিছু কিনে দিতে কিন্তু যতো বার শপিং করতে গিয়েছি তুমি টাকা দিছো আমাকে দিতে দেও নি তাই আজকে সুযোগ বুঝে একটু রাগ দেখিয়ে নিজের ইচ্ছে টা পূরন করেছি। তবে হ্যাঁ এখন থেকে মাঝে মাঝে আমিও তোমাকে কিছু কিনে দিবো, রেস্টুরেন্টের বিল দিবো।
-মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি ছাড়া কিছু নেই।
-এটা ভালোবাসা বুঝছো।
-হুহ, আমার যে খারাপ লেগেছে তা একটুও ভাবলে না
-কিছু খারাপ লাগার মাঝে ভালো লাগা ও থাকে তা খুঁজে নিতে হয়।
-পাগলী
-বাসায় যাও, আমি গেলাম
-ভালোবাসি
-আমিও।
বাসায় গিয়ে বাবার থেকে টাকা এনে সানভিকে টাকা ফেরত দিলো। দুদিন সানভিদের বাসায় বেড়ানো পর বাসায় ফিরে গেলো। ভালো ভাবে পড়াশোনা শুরু করেছে। তিনমাস কেটে যায় আর তুলির বিয়ে ঠিক হয় তিয়াশের সাথে।
রোজ কলেজ ও কোচিং নিয়ে ইভা ব্যাস্ত হয়ে যায়, রাতে সময় করে আয়ানের সাথে কথা বলে ঘুমায় এবং মাঝে মাঝে রেস্টুরেন্টে দুজনে মিট করে। সব মিলিয়ে অনেক ভালো আছে।
আজ তুলির গায়ে হলুদ ইভা হলুদ রংয়ের শাড়ি পরেছে। ইভার মন পরে আছে আয়ানের কাছে কারন সকাল থেকে আয়ানের কোনো খবর নেই, সানভির সাথে একবার কথা হয়েছে তখন বললো সময় মতো হলুদের অনুষ্ঠানে পৌঁছে যাবে।
সবাই রেডি হয়ে হলুদের অনুষ্ঠানে গেলো। ইভা তুলির পাশে কিছুক্ষণ বসে উঠে চলে গেছে আয়ানকে কল করতে। রিং হয়ে যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। অনেক ব্যাস্তার মধ্যে সানভির দেখে পাওয়া গেলো,
-ভাইয়া, আয়ান কি আসবে না?
-সকালে একবার কথা হয়েছে তখন বললো, সময় মতো চলে আসবে।
-এখনও তো এলো না তার মানে ও আজকে আর আসবে না?
-ও আজকে না আসলে ওর সাথে কোনো কথা বলবো না তুই ওকে জানিয়ে দিস
-আমার সাথে কোনো কথা হয় নি সকাল থেকে।
-ওই তো আয়ান চলে এসেছে
-বলেছিলাম সময় মতো চলে আসবো। তুই রাগ করিস না একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম।
আয়ান সানভির সাথে চলো গেলো ইভাকে না দেখার ভান করলো। ইভা যতো বার আয়ানের কাছে গিয়ে কথা বলতে চেয়েছে ততই আয়ান দূরে সরে গেছে।
আয়ান মাহিরের ফোনটা নিয়ে ভিডিও অন করলো। ইভাকে আটকে রেখে আয়ানকে ব্ল্যাকমেইল করেছে তা সব ভিডিও করেছে৷
ভিডিওটা দেখা মাত্র তৃষা ফোনটা ছুঁড়ে মারলো। ফোনটা ভেঙ্গে গেছে।
-আয়ান দেখো তোমার ভিডিও নষ্ট হয়ে গেছে এখন কি প্রুভড আছে আমি এসব করেছি?
-হাহাহা তুই গুটি চালতে ভুল করেছিস। তুই যে এগ্রিমেন্ট পেপারে সিগনেচার করেছিস সেটা কি ভুলে গেছিস?
-এগ্রিমেন্ট পেপারটা তো ছয় মাসের জন্য বিয়ে ছিলো?
-নাহ্ ওটা ছিলো তুই আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছিস তা তুই নিজে শিকার করে সিগনেচার করছো। আমি সানভিকে কল করে বলেছিলাম আমার পরিচিত এডভোকেট আংকেল আছে তার কাছ থেকে পেপারটা নিয়ে আসতে। আর সানভিও জানতো না ওটা রেজেস্ট্রি পেপার না৷ এখন ভাবছিস কখন পেপারটা রেডি করতে বলছি তাই না? সানভিকে কল করার পরই এডভোকেট আংকেলকে কল করেছি কিন্তু তুই বুঝিস নি আমি কার সাথে কথা বলেছি।
-তার মানে তুমি আমাকে ঠকিয়েছো? তুমি মিথ্যা কথা বলে আমাকে এগ্রিমেন্ট পেপারে সিগনেচার করিয়েছো?
-এগ্রিমেন্ট পেপার তুই পড়ে নিস নি তার দায় ভার আমি কেন নিবো?
-আয়ান ভালো হবে না ওটা ছিঁড়ে ফেলো।
-ওটা ছিঁড়ে ফেললেই বা কি ভিডিও টা আমার ফোনে শেয়ার করে নিয়েছি। যখন মাহিরের থেকে ফোনটা নিয়েছি তখনই ভিডিওটা আমার ফোনে শেয়ার করে এনেছি কারন আমি জানতাম তুই এমন কিছু করবি।
-তোদের সব কয়টাকে মেরে ফেলবো
-তোকে কে বাঁচায় আগে সেটা চিন্তা কর বলে,
ইভা তৃষার গালে কয়টা ঠাসসসস্ ঠাসসস্ থাপ্পড় দিলো,
-তুই আমাকে সকাল থেকে আটকে রেখে যে কষ্ট দিয়েছিস সেগুলো এই থাপ্পড়ে কম হয়ে যায়।(ইভা)
-তোর ভিডিও আর ওই পেপার আমাদের মাননীয় প্রন্সিপালকে দেখাবো তাও কলেজে সবার সামনে। (সানভি)
-হ্যাঁ তুই একদম ঠিক বলেছিস ভাইয়া। তুই আমাকে বলেছিলি আমি আজ একজনের সাথে থাকি কাল আরেক জনের সাথে থাকি আর এখন তুই কি করেছিস সব দেখানোর সময় হয়েছে (ইভা)
-আয়ান আমি সব কিছু করেছি তোমাকে পাওয়ার জন্য। তুমি ওদের বারন করো যেনো এসব কিছু না করে, (তৃষা)
-আমি কেনো বারন করতে যাবো, আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তোর কৃর্তী ফাঁস করবো (আয়ান)
তৃষা নিজের ফাঁদে নিজে আটকে গেছে৷ এখন বাঁচার কোনো উপায় না পেয়ে আয়ানের পা জড়িয়ে ধরে বলে,
-আমার বাবার সম্মান থাকবে না, উনি এসব দেখলে মরে যাবে। প্লিজ আমাকে মাফ করে দেও (তৃষা)
-তোকে আমরা সবাই মাফ করবো একটা শর্ত আছে, তিন দিনের মধ্যে বিদেশ চলে যাবি (ইভা)
-হ্যাঁ হ্যাঁ। আমি দু দিনের মধ্যে সুইজারল্যান্ড চলে যাবো (তৃষা)
-না ইভা ওকে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না, ও অনেক ভয়ংকর কাল সাপ (সানভি)
-আমি সত্যি তোমাদের কোনো ক্ষতি করবো না আমাকে মাফ করে দেও (তৃষা)
-না তোকে মাফ করতে পারবো না। তুই মেয়ে বলে এখন পর্যন্ত ঠিক আছিস নয়তো দেখতি তোকে এতোক্ষণে জমের বাড়ি পাঠিয়ে দিতাম। এবার আমার পা ছাড়(আয়ান).
-তুই ক্ষমার অযোগ্য (সানভি)
-প্রতিটি মানুষকে একবার হলেও সুযোগ দিতে হয় তাই ওকে এবারের মতো ক্ষমা করে দিলাম (ইভা)
-ইভা তুমি ভুল করবে কিন্তু (আয়ান)
-না একবারের জন্য ক্ষমা করে দেই, তোমরা বাধা দিও না (ইভা)
-আমি আর কোনো দিন কারো ক্ষতি করবো না কথা দিচ্ছি (তৃষা).
কাওসার ও মাহিরকে পরশু দিন আয়ান দেখা করতে বলে। দুজনে কাজ দিবে তার জন্য আর ওরা ও ওদের ভুল শিকার করে, কখনও এমন খারাপ কাজ করবে না।
তৃষা গাড়ি নিয়ে একা চলে যায়৷
সানভি, আয়ান,ইভা একটা গাড়িতে আছে। সানভি ড্রাইভ করছে, আয়ান-ইভা পিছনে বসে আছে৷ তিন জন চুপচাপ আছে। ইভা বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে,ওর মনটা আজ বড্ড বিষন্ন আছে।
আয়ান কয়েক বার ইভাকে ডেকেছে তবে কোনো সাড়াশব্দ পায় নি। কিছু দূর যাওয়ার পর সানভি বললো,
-তোরা বাইরে গিয়ে একটু ঘুরে আয়, ততোক্ষণে আমি একটু ঘুমিয়ে নেই।
-তুই ও বাইরে চল, একা থাকতে হবে না।
-কাবাবের হাড্ডি হওয়ার শখ নাই, যা।
-না ভাইয়া আমি বাসায় যাবো, (ইভা)
আয়ান গাড়ি থেকে নেমে ইভাকে কোলে তুলে নিলো।কারন আয়ান জানে এখন ইভার সাথে কথা বললে কোনো কাজ হতো না উল্টো ঘাড়ত্যাড়ামি করে যেতো তাই কেলো নিয়েছে আর এই সুযোগে সানভি ফটোশুট করলো।
ইভা আয়ানকে কিল-ঘুষি মেরে বলতে আছে,
-আমাকে ছাড়ো, ভাইয়া দেখতে আছে।
-ওটা আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ও দেখলে আমার কেনো প্রোবলেম নেই।
-ও আমার ভাই, আমার লজ্জা লাগে।
-তোমার ভাইয়া তোমার লজ্জা লাগে তাতে আমার কিছু করার নেই।
-তোরা ওই দূরের গাছের ওখানে গিয়ে বস যা (সানভি)
ইভাকে কোলে নিয়ে আয়ান হাঁটছে। বেচারা দুপুরে রোদের মধ্যে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।
-আটা, গম, সুজির বস্তায় এতো ওজন নেই যতোটা তোমার গায়ে আছে।
-কিহ্ আমি বেশি মোটা? আমাকে নামিয়ে দেও, কোলে নিতে হবে না।
-মনে মনে চাইছিলে আমি কোলে নেই তাই না???
-মোটেও না। আমার আগে অন্য জনকে পছন্দ করে বসে আছে এখন আসছো আদিকখেতা দেখাতে।
-বাজে কথা বললে একদম ফালিয়ে দিবো, সোজা হসপিটাল চলে যাবে।
-হসপিটালে না গিয়ে মরে গেলোও তো তোমার কিছু না।
-আবাররররর্
-আচ্ছা আর বললো না এখন নামাও।
-গাছের কাছে এসেছি এখন তো নামবেই।
-ওই আমি এর আগে থেকে নামতে চেয়েছি
-হ্যাঁ এখন তো বলবেই
-আমার ঝগড়া করার মুড নেই, ঝগড়া করতে আসবে না।
-না না আদর দিবো
আয়ান ইভাকে নামিয়ে দিয়ে, দুজনে গাছের ছায়ার বসলো।
চলবে,,,,
#Your_Lover
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৪
-আমি যা কিছু করেছি তা সব তোমাকে বাঁচানোর জন্য করেছি, আমাকে ভুল বুঝো না!
– যদি আজকে ওই দুটো ছেলে তোমার পরিচিত না হতো তখন কি করতে?
-যদির কথা নদীতে ফেললাম, যা হয় নি তা নিয়ে কথা শুনতে চাই না।
-হ্যাঁ এখন আমার কথা শুনবে কেনো? তোমার জন্য মেয়ের অভাব হবে না তাই আমার কথার কোনো দাম নেই?
-আচ্ছা তোমার কথার দাম কতো টাকা বলো আমি দিয়ে দিচ্ছি ? ১পয়সা, ২পয়সা নাকি ১টাকা?
-একদম ফাজলামি করবে না
-ফাজলামি কই করেছি, তুমি তো বললা তোমার কথার দাম দেই না তাই তো টাকা দিতে চেয়েছি
-ধুর,
ইভা বসা ছেড়ে উঠে হাটা দিলে, পিছন থেকে আয়ান ইভার ওড়না টেনে ধরলো।
-ওড়না ছাড়ো
-ছাড়বো না।
-ভাইয়াকে ডাক দিবো কিন্তু
-তোমার ভাইয়া কে? ওই সান্নুকে আমি ভয় করি না
-তুমি ভয় পাও কাকে?
-আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করি না, এখন বসো তো।
-আমার ক্ষুধা লাগছে, বাসায় যাবো
-তোমার একা বুঝি ক্ষুধা লাগছে,আর কি আমি খেয়ে বসে আছি? সকাল থেকে কিছু খাই নাই
-চেহারা দেখে তো মনে হয় না যে ক্ষুধা লাগছে?
-আজ পর্যন্ত আমার চেহারা দেখে তো কিছু বুঝতে পারো নি। না পারছো ভালোবাসা বুঝতে না পারছো মনের কথা বুঝতে হুহ
-সব বুঝতে পারি
-কি বুঝো যে তা নিজেও জানো না।
-চলো এখন যাই
-হুম যাবো, তবে তোমাকে এতো বড় লম্বা থ্যাংকু
-কেনো?
-এই যে তোমার মাথার ঘিলু-টিলু এতোদিন পর জেগে উঠছে
-ঘিলু-টিলু কি এতো দিন ঘুমের দেশে ছিলো নাকি
-মনে তো হয় তাই
-দেখো তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছো
-তোমার প্রশংসা করেছি তো, যে তুমি বুদ্ধিমতির মতো আমার হাত থেকে পেপারটা নিয়ে তৃষাকে থাপ্পড় দিছো ।আমি চেয়েছিলাম তুমি নিজে তৃষাকে শাস্তি দেও।
-পেপার টা তোমার হাত থেকে না নিলে কি সিগনেচার করে দিতে?
-না ছিড়ে ফেলতাম
-জানো আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম, মনে হচ্ছিল এই বুঝি তোমাকে হারিয়ে ফেলি।
-কখনও আমার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে উল্টো পাল্টা কাজ করবে না কথাটা মনে থাকে জেনো।
-হুম
-কেঁদে কেঁদে চেহারার কি অবস্থা করেছো
-তোমার জন্যই তো হয়েছে
-কারো ভালো করলেও দোষ হয়
-হুম
-তোমাকে তৃষা কিভাবে নিয়ে এসেছে?
-কলেজে ঢুকেছি তখন তৃষা আমাকে বলেছে তুমি ওকে ভালোবাসো কিন্তু আমি ওর কথা বিশ্বাস করি নি তারপর ও বার বার জোড় করেছে ওর সাথে গেলে দেখতে পাবো তুমি ওর জন্য ওয়েট করতে আছে ওকে নাকি সারপ্রাইজ দিবা
-হাহাহাহা ও বোকা বানালো আর তুমি বিশ্বাস করছো, এই তুমি আমাকে ভালোবাসো? এতোটুকু বিশ্বাস করলে না, আমাকে একবার কল দিতে তো পারতে?
-তখন সব কিছু গুলিয়ে ফেলছি
-সব সময় এমন করবে তোমার দারা কোনো কাজ হয় না
-রাগ করো না, আমি বুঝতে পারি নি সরি
-হুহহ্
-প্লিজ রাগ করো না
-আচ্ছা রাগ করবো না তবে একটা শর্ত আছে?
-কি?
আয়ান গালে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো,
-এখানে একটু আদর দেও
-নাহ্
-না দিলে আমি রাগ করবো
ইভা আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দু গাল টেনে দিয়ে বলে,
-বিয়ে পর সব আদর পুষিয়ে দিবো।
-সব সময় ফাঁকি বাজি
-হুহ্
ওরা দুজনে গাড়ির কাছে এসে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
সানভি ওদের দুজনের সামনে হাত নেড়ে একটু ধাক্কা দিয়ে বলে,
-কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
-লামিসা এখানে কি ভাবে এলো (আয়ান)
-গাড়িতে করে এসেছি (লামিসা)
-কখন আর তোকে খবর দিলো কে? (ইভা)
-বারে আমার একটা বয়ফ্রেন্ড আছে সে কি ভুলে গেলি, সে আমাকে খবর দিছে (লামিসা)
-শালা এই কাজটা কখন করলি (আয়ান)
-তোমরা প্রেম করবা আর আমি বসে বসে দেখবো নাকি, তাই ওখান থেকে রওনা দিছি তখন লামিসাকে মেসেজ দিয়ে আসতে বলেছি আর অনেক ক্ষুধাও লেগেছে খাবারটাও নিয়ে আসতে বলেছি (সানভি)
-এর জন্যই তোকে আমি এতো ভালোবাসি। আমার পেটের খবরও তুই বুঝতে পারো (আয়ান)
-বুঝতে তো হবেই, চল এখন খেয়ে নেই (সানভি)
-কি খাবার এনেছিস (ইভা)
– তোর ফেভারিট বিরিয়ানি এনেছি, তোর উপর আজকে অনেক ধকল গেছে তাই ভাবলাম বেষ্টনীকে একটু ভালো করে খাওয়াই (লামিসা)
-অনেক কথা হয়েছে, চলো সবাই খেয়ে নেই (আয়ান)
ওরা বিরিয়ানি খাওয়া শেষে করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিছে তার মধ্যে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। সকালটা খারাপ গেলেও দুপুর বেলাটা খুব ভালো করে কেটেছে। খারাপের পর ভালো দিন ঠিক আসবে, শুধু আমাদের ধৈর্য্য রাখতে হবে।
ইভা বাসায় এসে ঘুমিয়ে গেলো। সন্ধ্যা বেলা ঘুম থেকে উঠে বই পড়লো। রাতে ডাইনিং টেবিলে সবাই এক সাথে খেতে বসেছে। সাইফুল চৌধুরী মানে ইভার বাবা বললো,
-কালকে সন্ধ্যার দিকে সবাই রেডি থেকো, দু দিনের জন্য তোমাদের নানু বাড়ি যাবো।
-হঠাৎ তুমি বেড়াতে যেতে চাচ্ছো? ( ইভার মা)
-সানভির বাবার সাথে বিজনেস নিয়ে আলোচনা করতে হবে আর অনেক দিন হলো ওদের কারো সাথে দেখা হয় না তাই ভাবলাম তোমাদের নিয়ে যাই
-আচ্ছা আব্বু নানি বাড়ি যাওয়ার পর যদি সবাই মিলে একটু দূরে পিকনিকে যাই তাহলে অনেক ভালো হবে (রাইসা)
-তুই একদম ঠিক বলেছিস, হ্যাঁ আব্বু তুমি রাজি হয়ে যাও (ইভা)
-তোমার চাইলে তাই হোক
পরের দিন ইভা কলেজে গিয়ে ক্লাস করে বাড়ি এসে গোঁজ গাঁজ করে নেয়। আয়ান কলেজে যায় নি তার বাবার বিজনেসের কাজে জন্য একটা জায়গায় যেতে হয়েছে তাবে রাতে কোনো এক বাহানা নিয়ে সানভিদের বাসায় ঠিক চলে যাবে।
সন্ধ্যার দিকে সানভিদের বাসায় ইভার ফ্যামিলি প্যাক গেলো। সবাই এতো দিন পরে একসাথে হয়ে আড্ডায় বেশ জমে গেলো।
রাত৪টা সময় কলিং বেলের আওয়াজ। দরজা খুলে দেখলো সানভির বাবার পরিচিত একজন লোক তার সাথে ইয়াং হ্যান্ডসাম ছেলেও আছে।
তাদের ভিতরে ঢুকতে দেখে ইভা তুলির রুমে যাওয়া শুরু করলো এর মধ্যে ফ্লোরে পানি পরে থাকায় পা পিছলে ইভা ছেলেটা গেয়ে গিয়ে পরলো। (দুজনে ফ্লোরের উপর পরে নি কিন্তু)
অপলক দৃষ্টিতে ছেলেটা ইভার দিকে তাকিয়ে আছে। সবার সামনে এরকম ঘটনা দেখে সানভি ওদের কাছে গিয়ে বললো,
-উহুম উহুম, এবার ছাড়ুন
-ওহ হ্যাঁ, আসলে উনি হয়তো দেখতে পাননি তাই পরে গেছে ( যে ছেলেটা এসেছে তার নাম তিয়াশ)
-দেখতে পেলে তো আপনার গায়ে পরতাম না আর ধন্যবাদ (ইভা এই কথাটা বলে তুলির রুমে চলে গেলো)
রাতে আয়ানের ফ্রেন্ডরা এসেছিলো। খেয়ে চলে গেছে। আয়মান চৌধুরী বার্থডে পার্টি করা পছন্দ করে না, তাই প্রতিবার পছন্দের খাবার রান্না করে আর ফ্রেন্ডেদের ইনভাইট করে ঘরোয়া ভাবে আয়োজন করে আয়ান, আয়েশার বার্থডে পালন করা হয়।
আয়ান নিজের রুমে শুয়ে গেম খেলছে তখন সামিহা বেগম এসে বললো,
-তোর বাবা তোকে ডেকেছে।
-আম্মু আমি এখন ঘুমাবো। সকালে দেখা করে নিবো।
-বাদ্ধ্য ছেলের মতো গিয়ে বাবার কথা শুনে আয় নয়তো রাগারাগি করবে।
-আম্মমমমু
-যা।
আয়ান আয়মান চৌধুরী রুমে প্রবেশ করে বললো,
-আব্বু তুমি ডেকেছিলে?
-হুম, আজ তোমার জন্মদিন কি গিফট চাও?
-আপাতত আমার কিছু লাগবে না।
-প্রতিবারই তো কিছু না কিছু দিয়ে থাকি তোমার পছন্দ মতো তাই এবার আমার পছন্দ মতো জিনিস তোমাকে দিবো.
-তোমার পছন্দ মতো জিনিস কি?
-আমার বিজনেসর অর্ধেক ভাগ তোমাকে দিলাম।
-না আব্বু আমি এখনই তোমার বিজনেস জয়েনিং দিতে পারবো না
-তুমি খুব ভালো করে জানো আমার ডিসিশন নরচর হয় না
-আমারও তো একটা ইচ্ছা থাকতে পারে কি করবো না করবো?
-তা বলো শুনি তোমার কি ইচ্ছা আছে।
-আর দুটা বছর পরে বিজনেস জয়েন করবো
-এখন করতে সমস্যা কি?
-আমার পড়াশোনা আছে।
-আচ্ছা তুমি যেহেতু চেয়েছো তাই দুটা বছর সময় দিচ্ছি তারপর আর সময় পাবে না ।
-হুম
আয়ানের কেনো ইচ্ছে নেই তার বাবার বিজনেস জয়েনিং করার। কিন্তু কি করবে একমাত্র ছেলে বাবার বিজনেস জয়েন না করেও উপায় নেই।
“”নিজে সারাজীবন টাকার পিছনে দৌড়ে জীবন শেষ করছে এখন আমার জীবনটাও শেষ করবে। বলতে পারতে তো, এখন বিয়ে করে নেও পরে বিজনেস জয়েন করো । শান্তি মতো বৌকে নিয়ে ঘুরবো তা না সারা দিন অফিসে সময় কাটাও। ” মনে মনে বলে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমালো।
কিছুদিন ভালোভাবে কাটে। ইভা আয়ানের প্রেমে দুষ্ট মিষ্টি, রাগ,অভিমান, ভালোবাসা সব আছে।
সকালে ঘুম ঘুম চোখে আয়ান ফোনের স্কিনেরদিকে তাকিয়ে দেখে রাফসান কল দিছে,
– এতো সকালে তুই কল দিলি যে,
– তুই ইভাকে এভাবে ঠকাতে পারলি?
-আমি কেনো ইভাকে ঠকাতে যাবো কালকেও তো আমরা এক সাথে ঘুরতে গেয়েছিলাম।
-তাহলে তৃষা যে বললো তোর সাথে ওর সম্পর্ক আছে
-আরে কি বলছিস এসব পাগলের মতো
-যা বলছি ঠিক বলছি তুই তাড়াতাড়ি কলেজে আয়।
-হুম।
আয়ান তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে কলেজে রওনা দিছে।
কলেজে পৌঁছে ইভাকে কল দিলো কিন্তু বার বার রিং হচ্ছে, রিসিভ করছে না। আয়ান চিন্তিত হয়ে পরলো। এদিকে তৃষাকে কলেজে খুঁজতে হবে কি করবে ভাবতে পারছে না।
রাফসান এসে বললো,
– তোকে তৃষা ডেকেছে আমার সাথে চল
-কোথায়?
-কলেজের পিছনের রাস্তা ওখানে
-আচ্ছা চল৷
তৃষা আর দুজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ান তৃষার সামনে গিয়ে দাড়াতে তৃষার হাত আলতোভাবে আয়ানের গাল ছুয়ে বললো,
-বেবি তুমি এতো হট কেনো? কি জাদু আছে তোমার মধ্যে?
আয়ান তৃষার হাতটা ছুড়ে মেরে বললো,
-খবরদার আমাকে স্পর্শ করার সহস দেখাবে না, হাত ভেঙ্গে দিবো।
-তাই বুঝি? এখন শুধু গালটা ছুয়ে দিলাম পরে আমার সাথে বাসর করতে হবে।
-ফালতু কথা না বলে কেনো আমাকে ডেকেছো তা বলো?
-সব বলবো আমার সাথে চলো।
-কোথায় যাবো?
-আমার সাথে গেলে দেখতে পাবে কিন্তু তোমার সাথে কেউ যেতে পারবে না।
-আচ্ছা রাফসান তুই সানভিকে খবর দিয়ে দিস।
আয়ান, তৃষা আর দু’জন ছেলে গাড়িতে উঠলো, আয়ান চুপ করে বসে আছে।
ঘন্টাখানেকর মধ্যে গাড়ি থামলো।
-এতো দূর আমাকে কেনো নিয়ে এসেছো?
-আজকে আমাদের বিয়ে হবে তাই
-তোমার সাথে আমার বিয়ে হাহাহাহা মরে গেলেও তা হবে না।
-কে মরে আর কে বাঁচে ভিতরে গিয়ে দেখতে পাবে।
-হুম চলো।
ভিতরে গিয়ে আয়ান হতবাক হয়ে গেছে। ইভাকে চেয়ারে বসিয়ে হাত পা মুখ বেধে রেখেছে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে এভাবে দেখলে কেউ ঠিক থাকতে পারে না। কিন্তু আয়ানকে যে এখন শক্ত থাকতে হবে।
-আয়ান দেখো তোমার ভালোবাসার মানুষ।
-কে আমার ভালোবাসার মানুষ?
-কে আবার ইভা।
-তোমাকে কে বললো, ও আমার ভালোবাসার মানুষ?
– তুমি আমাকে কয়েকবছর যাবত ইগনোর করেছো আর এই মেয়েটাকে কয়েক দিনের মধ্যে এতো ভালোবাসো কি আছে ওর মধ্যে?
-হাহাহাহা তোমার কাছে কি প্রুভড আছে যে আমি ওকে ভালোবাসি?
-সেদিন রেস্টুরেন্টে বসে ওকে নিয়ে কথা বলছিলাম তখন তোমার গায়ে লাগছে, ওর জন্য রাইয়ানকে মেরেছো আবার আরও দুটো ছেলেকে মেরেছো এগুলো কি যথেষ্ট প্রুভড না কাউকে ভালোবাসার জন্য?
-না এগুলো শুধু ভালোবাসার মানুষের জন্য করে এমন কোনো কথা নেই।
-তাহলে তুমি বলছো ওর সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই?
-হুম। আর আমি তো তোমাকে পছন্দ করতাম শুধু ওয়েট করেছি গ্রাজুয়েশন কম্পিলিট করার জন্য
-তুমি সত্যি আমাকে পছন্দ করতে?
-হ্যাঁ। তুমি জানো তো আমি এসব প্রেম টেম লাইক করি না একসাথে বিয়ে করে বৌয়ের সাথে প্রেম করবো বলে তোমাকে ইগনোর করেছি
-তাহলে আমাকে বিয়ে করতে কেনো প্রবলেম নেই
-না বিয়ে করতে রাজি আছি তবে একটা শর্ত আছে?
-কি?
-ছয় মাসের চুক্তিতে বিয়ে করবো, আমার যদি মনে হয় তুমি আমার জন্য পারফেক্ট তারপর ধুমধাম করে বিয়ে করবো। কারন কাউকে ভালো লাগা মানে তো ভালোবাসা না। ছয়টা মাস দুজন দুজনকে চিনবো, জানবো, বুঝবো, ভালোবাসবো।
-না এটা হতে পারে না।
-না হলে নেই। আমি এখন আসি।
-ইভাকে এখানে রেখে চলে যাবে?
-হুম, ওকে আমি ভালোবাসি না তাহলে কেনো ওর জন্য আমার জীবন নষ্ট করবো?
-ওর কিছু হলে তোমার কিছু যায় আসে না?
-নাহ্।
-আচ্ছা আমি তোমার শর্তে রাজি।
-তাহলে ওর হাত, পা, মুখের বাঁধন খুলে দেও।
-না না শুধু মুখে বাঁধন খুলে দিচ্ছি। বিয়ে হওয়ার পর ওকে আমি নিজ দ্বায়িত্বে বাসায় পৌঁছে দিবো।
-আচ্ছা তাই করো। আমি সানভিকে কল করে বলে দিচ্ছি এগ্রিমেন্ট পেপার নিয়ে আসতে।
-হুম। ওর মুখের বাধন খুলে দে।
ইভা আয়ানের কথা শুনে কেঁদে আষাঢ় মাসের বন্যা বানিয়ে ফেলছে। সত্যি আয়ান বিয়ে করবে? আমাকে কেনো মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়েছে। ও আগে থেকে তৃষাকে পছন্দ করে তা কেনো বলে নি? (কথা গুলো ভাবছে আর কাঁদছে)
ইভার মাথায় আয়ান হাত রেখে বলছে,
-এই পুচকে মেয়ে তুই আমার নামে সবাইকে মিথ্যা বলছিস যে তোকে আমি ভালোবাসি তাই না?
-চুপ
-তুই সানভির বোন বলে মাঝে মাঝে তুই সানভির সাথে থেকেছিস তাই কথা বলেছি আর তুই ভেবে নিলি আমি তোকে ভালোবাসি? কেনো এমন করলি বল তো? আমার কতো স্বপ্ন ছিলো ধুমধাম করে বিয়ে করার তা না এখন লুকিয়ে বিয়ে করতে হবে, শুধু মাএ তোর জন্য।
-আয়ান!!!!!! (কেঁদে দিলো কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না)
সানভিও চলে এসেছে । সানভি আয়ানের কথা শুনে অবাক হয়ে গেছে শেষ পর্যন্ত কি না তৃষাকে বিয়ে করবে?
-দোস্ত তোকে আমার রক্তের ভাই মনে করি, সেই ছোট বেলা থেকে তুই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। তুই আমার কথা শোন ওকে বিয়ে করিস না।
-না দোস্ত তোর এই কথা আমি রাখতে পারবো না।
ইভার কান্না দেখে সানভির চোখ ছলছল করছে।
চলবে,,,,
#Your_Lover
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১২
-তৃষা তুমি এগ্রিমেন্ট পেপারে সিগনেচার করো।
-না আগে তুমি রেজিস্ট্রি পেপারে সিগনেচার করো
-তুমি আমার কথা শুনলে শুনো, না শুনলে আমি যাই
-ইভার লাশ দেখতে পারবে তো?
-না দেখার কি আছে? একদিন না একদিন মরতে হবে এখন তোমার হাতে মরলে আমার কি বা করার আছে বলো?
-তুমি ভেবে বলছো তো?
-আয়ান চৌধুরী যা ভালো বোঝে তাই করে অন্যের কথায় কান দিয়ে কাজ করে না। দেখো তৃষা তোমাকে আমার ভালো লাগে তাই বলে বিয়ে করতে হবে এমন কোনো কথা নেই তাও তুমি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করতে চেয়েছো তাই রাজি হয়েছি তাতেও যদি তোমার মন না ভরে আমার কিছু করার নেই।
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি সিগনেচার করে দিচ্ছি তবে আজকেই আমাকে তোমার বাসায় নিয়ে যেতে হবে।
-হুম সিগনেচার করো।
(আমি মরে গেলে তোমার কিছু হবে না আয়ান, এই কথাটা বলতে একটা বার বুক কাঁপলো না, এতোটা স্বার্থপর হলে কি করে? এই ছিলো তোমার ভালোবাসা? প্লিজ আয়ান তুমি সিগনেচার করে আজকে সব মিথ্যা করে দিও না ইভা কাঁদতেছে আর মনে মনে কথা গুলো বলছে)
-ইভা তুই কাঁদিস না বোন, তোর কান্না দেখে আমার কষ্ট হচ্ছে।
-ভাইয়া ও কেনো এমন করলো? আমি কি ভুল করেছি যে এতো বড় শাস্তি দিলো?
-দেখ বোন, তুই তো জানিস জোড় করে ভালোবাসা হয় না, তৃষাও জোড় করে আয়ানের ভালোবাসা পাবে না ঠিক তোর কাছে ফিরে আসবে।
-বিয়ে পর আর কি ফিরে আসবে? বললেই তো ফিরে আসা যায় না
আয়ান ধমক দিয়ে বললো,
– ওই তোরা দু ভাইবোন মিলে কি শুরু করেছিস কি? তোদের জ্বালায় কি একটু শান্তি মতো থাকা যাবে না?
সানভি ইভার হাত, পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে আয়ানের সামনে গিয়ে বললো,
-আজ পর্যন্ত তুই যা কিছু করেছিস সবকিছুতে আমি তোর সাথে ছিলাম কিন্তু আজকে তুই আমার বোনকে কাঁদিয়ে এই ফালতু মেয়েকে বিয়ে করবি এটা আমি মেনে নিতে পারবো না।
-তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার পারমিশন ছাড়া ওর বাঁধন খুলে দিছো আবার আমাকে ফালতু মেয়ে বলো। (তৃষা)
-আমি এখানে তোমার জন্য আসি নি, আয়ানের জন্য এসেছি ওর কাজ শেষ তাই চলে যাচ্ছি (সানভি)
-দাঁড়া এখুনি কোথায় যাচ্ছিস, তোর বোন দেখে যাক আয়ান চৌধুরী কাকে বিয়ে করে (আয়ান)
-না ভাইয়া আমি এখানে একমুহূর্ত আর থাকবো না (ইভা)
-থাকবো না বললেই তো হবে না (আয়ান)
-আয়ান তুমি সিগনেচার করো বেবি (তৃষা)
আয়ান রেজিস্ট্রি পেপার হাতে নিয়ে সিগনেচার করতে যাবে তখন সানভি বললো,
-দোস্ত তুই সিগনেচার করিস না
-একদম চুপ করে থাকো (তৃষা)
-রেজিস্ট্রি পেপারের সাথে এগুলো কিসের পেপার? (আয়ান)
-তেমন কিছু না, জাস্ট একটা গিফট আছে। তুমি সিগনেচার করো (তৃষা)
-তা গিফট টা কি (আয়ান)
-সেটা বিয়ের পর জানবে (তৃষা)
-আচ্ছা (আয়ান)
আয়ান সিগনেচার করবে তখন ইভা ওর হাত থেকে রেজিস্ট্রি পেপার নিয়ে ভালো করে পেইজ গুলো পরতে শুরু করলো। এদিকে তৃষার হাত আয়ান ধরে রেখেছে যাতে ইভার কাজে বাঁধা দিতে না পারে। পেপারগুলো পড়া শেষে ইভা তৃষার গালে ঠাসসস্ ঠাসসসস্ দিয়ে বললো,
-তোর সম্পত্তির উপর এতো লোভ। তুই বিয়ে করতে চেয়েছিলি শুধু মাএ টাকার জন্য। তুই ভালোবেসে এসব করিস নি।
– তোকে আগেই বলেছিলাম ওকে বিয়ে করিস না, এখন ইভা পেপার গুলো না পড়লে কতো বড় ক্ষতি হতো (সানভি)
-তোর সাহস হয় কি ভাবে আমাকে থাপ্পড় দেওয়া, তুই এখন থেকে বেঁচে ফিরতে পারবি না। ওই তোরা ওকে বেঁধে ফেল(তৃষা)
-তোমার কথা এখন আর কেউ শুনবে না। তুমি নাকি আমাকে ভালোবাসতে? আমাকে পাওয়ার জন্য ব্ল্যাকমেইল করেছো তাহলে এসব কি? (আয়ান)
-আয়ান আমার কথাটা ভালো করে শুনো ওখানে আমার যা কিছু আছে তা সব তোমার নামে করে দিবো (তৃষা)
-সত্যি আমার নামে করে দিবে? (আায়ান).
-হুম(তৃষা)
আয়ান তৃষাকে ঠাসসসস্ ঠাসসস্ করে থাপ্পড় দিয়ে বললো,
-তোর কি আমাকে ভিখারি মনে হয়, যে তোর সম্পত্তির জন্য তোকে বিয়ে করবো৷ তোর বাবার তো কম সম্পত্তি নেই তাও এতো লোভ তোর?তুই কি মনে করেছিলি আমি তোকে পছন্দ করি? কখনও না। তুই হাজার টা ছেলেকে ঠকিয়েছিস। মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয় করেছিস এসব কিছু সবার জানা আছে। (আয়ন)
-যদি এতো কিছু জেনে থাকো তাহলে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলে কেনো? (তৃষা).
-তোর মিথ্যা ভালোবাসার নাটকটা দেখার জন্য (আয়ান)
-নাটক দেখা শেষ তো, এখন রেজিস্ট্রি পেপারে সিগনেচার করো নয়তো কেউ এখান থেকে যেতে পারবে না (তৃষা)
-কে যেতে দিবে না হ্যাঁ(আয়ান)
-তিন জন ছেলে আছে ওরা যেতে দিবে না৷ ওই ওদের বেঁধে ফেল (তৃষা)
-হাহাহাহা। কাওসার, মাহির তোরা এদিকে আয়(আয়ান)
-তুমি এদের চিনো কিভাবে? আর তোরা আমার কথা না শুনে ওর কথা শুনছিস কেনো (তৃষা)
কাওসার এবং মাহির ওদের আগে থেকে আয়ানকে চেনে আর ওরা ও আয়ানকে চিনতো কিন্তু ওরা কেনো এসব কাজ করছে তা শুনে নেওয়া যাক,
-ভাইয়া আমি জানতাম না আপনি এখানে আসবেন আর ইভা আপু আপনার পরিচিত তাহলে তৃষার সাথে কাজ করতাম না (কাওসার)
-তোরা কেনো এরকম কাজ করতে নেমেছিস?পুলিশের কাছে ধরা খেলে এই কাজের শাস্তি কতো হবে?(আয়ান)
-সবকিছু জানি কিন্তু আমরা যে নিরুপায় (মাহির)
-চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেছি তারা বললো চাকরি পেতে হলে ১০লক্ষ টাকা লাগবে, মা অসুস্হ, বোনের বিয়ে দিতে হতে বাবার সামান্য আয়ে সংসার চলে না। তাই এ কাজ করতে নেমেছি (কাওসার)
-আমার বাবা মা কেউ নেই। চাচার কাছে এতো দিন থাকতাম কিন্তু এখন চাচি রাখবে না। চাকরি করতে হলে টাকা লাগবে তাও নেই তাই একজনের সাথে কথা বলে এই কাজটা পেয়েছি (মাহির)
-সব বুঝলাম তোদের সাহায্য পরে করছি, এখন তোরা বল আমি ইশারায় যা বলছি সেগুলো বুঝতে পেরেছিলি (আয়ান)
-তোরা আমরা টাকা খেয়ে আমার সাথে বেইমানি করেছিস?তোদের সব কটাকে দেখে নিবো (তৃষা)
-আগে তুই এটা দেখে নে (আয়ান)
রেস্টুরেন্টে বসে ইভা ভাবছে,”” রাইয়ানকে মারা কি ঠিক হলো? ও এর প্রতিশোধ আবার নিবে তখন কি করবে? বারবার আয়ান যদি সাথে না থাকে তাহলে কি যে হবে, না না আব্বুকে বলবো আায়ানের কথা, আমাদের তারাতাড়ি বিয়ে দেয় জেনো।”” রাফসান, নিলয়,সানভি, আয়ান, তুলি,রাহি,লামিসা,ঈশিতা সবাই খাচ্ছে আর কথা বলে যাচ্ছে কিন্তু ইভার সেদিন কেনো খেয়াল নেই তাই সানভি বললো,
-কি রে তুই খাচ্ছিস না কেনো?
ইভার হাতে আয়ান চিমটি কেটে বলে,
-কি এতো ভাবো?
-আমরা বিয়ে করবো (ইভা)
-কিহ্ (আয়ান)
-কানে শুনো না কি বলছি, আমরা বিয়ে করবো(ইভা)
-দোস্ত তোর মাথা ঠিক নেই এখন আর কথা বলিস না চুপচাপ খেয়ে নে (ঈশিতা)
-আমার মাথা একদম ঠিক আছে (ইভা)
-এমনিতেই মাথার ঘিলু-টিলু নেই আবার যদি হয় মাথা খারাপ তখন কি করবি আয়ান (নিলয়)
-তাই তো ভাবছি, অন্য মেয়ে দেখতে হবে (আয়ান)
-রাইয়ানের মতো মার খাওয়ার শখ হয়েছে তাই না (ইভা)
-আহহা্ আমরা বোনটাকে তোমরা কেনো খেপাচ্ছো, ও এখনো পিচ্চি আছে (তুলি)
-আহারে পিচ্চি বৌ আমার আসো তোমাকে খাইয়ে দেই(আয়ান)
-ঢং করা লাগবে না, আমার হাত আছে একা খেতে পারি (ইভা)
আয়ান তৃষাকে দেখতে পেয়ে বললো,
-আচ্ছা তোমার ঢং ভালো না লাগলে অন্য কেউ আছে যে আমার ঢং লাইক করে (আয়ান)
-সে কে (তুলি)
-এই যে এসেছে (আয়ান)
তৃষাকে দেখে ইভার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আয়ানের দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে আছে।
-হায় আয়ান (তৃষা)
-কেমন আছো? (আয়ান)
-ভালো আছি, তুমি এই পিচ্চি মেয়েদের সাথে কেনো বসে আছো? আমার সাথে চলো (তৃষা)
-তুমিও একটা সময় পিচ্চি ছিলে, একেবারে কেউ বড় হয় না। আর আমি কার সাথে বসবো বা থাকবো তা তুমি ঠিক করার কেউ না (আয়ান)
-এখানে আমরাও আছি দেখতে পাচ্ছো না, আগে আমরা সবকিছু আয়ানের কাছে (সানভি)
-আমাকে ইনসাল্ট করছো কিন্তু (তৃষা)
– তুমিও ওদের ইনসাল্ট করছো (আয়ান)
-আপু আমাদের সাথে বসো (ইভা)
-নো ওয়ে, তোমাদের সাথে আমার যায় না। কালকে রাইয়ানকে পটিয়েছো আজকে আবার আয়ানের সাথে (তৃষা)
-মুখ সামনে কথা বলো, রাইয়ানের সাথে ওর কিছু হয়েছে কি না তা রাইয়ানকে জিজ্ঞেস করে দেখো (আয়ান)
-ওকে নিয়ে কথা বললে তোমার এতো গায়ে লাগে কেনো, কে হয় তোমার(তৃষা)
-এতো কিছু তোমার না জানলেও চলবে (আয়ান)
-আচ্ছা বেবি চলো আমার সাথে, একসাথে বসে খাবো (তৃষা)
-নাহ্, আমার ফ্রেন্ডরা আগে তুমি না (আয়ান)
“”কোনো একদিন তোমাকে আমার করেই ছাড়বো “”তৃষা মনে মনে বিরবির করে রাগে খজ খজ করতে চলে গেলো।
-তুমি কেনো ওর সাথে কথা বলতে গেলে? কি দরকার ছিলো ওকে এখানে বসতে বলা? (আয়ান রেগে বলছে)
-আমি বুঝতে পারি নি ভালো কথা বললেও এমন করবে (ইভা)
-তুমি কখনও কিছু বুঝতে পারবে না,বিরিয়ানি খাবার সাথে অপমান ও খাও। যত্তসব (আয়ান)
-আহ্ দোস্ত এভাবে বকিস না ও না বুঝে বলে ফেলেছে (রাফসান)
-ওকে অপমান করলে আমার ভালো লাগে না তা কেনো বুঝবে না? (আয়ান)
-সরি আর হবে না। নেক্সট টাইম কেউ অপমান জনক কথা বললে তার জবাব দিয়ে আসবো। (ইভা)
-সবার সামনে কথা দিচ্ছো তো (আয়ান)
-হুম (ইভা).
খাওয়া শেষে রেস্টুরেন্টের বিল আয়ান মিটিয়ে ইভাকে বাইকে করে বাসায় পৌঁছে দিলো।
কিছু দিনের মধ্যে তৃষা ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছে আয়ানের সাথে ইভার সম্পর্ক আছে। কিন্তু আয়ান কোনো ভাবে তৃষাকে পাত্তা দিচ্ছে না তাই কিছু বলার সুযোগ নেই।
আজ আয়নের জন্ম দিন তাই ইভা সকালে ঘুম থেকে উঠে খিচুড়ি, ডিম ভাজা আর মুরগীর মাংস রান্না করেছে, আর আমের আচার। আয়ানের দেওয়া নীল শাড়িটা পরেছে সাথে মেচিং নীল চুড়ি ও হিজাব পরেছে, চোখে গাঢ়ো কাজল এবং ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়েছে।
ও হ্যাঁ আপনাদের বলা হয় নি, কক্সবাজার থেকে আসার পর থেকে ইভা কোথাও গেলে হিজাব পরে যায়। ইভার লম্বা চুল আয়ান চায় না অন্য কেউ দেখুক।
ইভা রান্নাবান্না পারে না সকালে এতো রান্না করতে দেখে ইভার মা অবাক হয়ে দেখছে, হঠাৎ করে তার মেয়ের কি হলো? আবার সুন্দর করে সাজুগুজু করছে।
-দেখো তো আম্মু আমায় কেমন লাগছে?
-মাশাল্লাহ। তুই তো এমনিতে অনেক সুন্দর তোর সাজার দরকার হয় না।
-তুমি আমার আম্মু বলে বেশি প্রসংশা করছো?
-আরে না সত্যি বলছি। তবে তুই আজকে কোথায় যাচ্ছিস আর এতো রান্না করলি যে?
-আমরা ফ্রেন্ডরা ঠিক করেছি আজকে সবাই কিছু না কিছু রান্না করে নিয়ে যাবো তাই আর কি.
-কিন্তু কোথায় যাবি?
-বেশি দূর না ধারে কাছে। বিকেলের মধ্যে বাসায় আসবো।
-আচ্ছা সাবধানে থাকিস।
-আচ্ছা আমি আসি।
বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে ইভা আয়ানকে কল দিলো,
-হ্যালো,
-হুম বলো।
-রেডি হয়েছো?
-হুম। তুমি কোথায় এখন?
-এই তো বাসা থেকে বের হয়েছে
-আচ্ছা। আর কিছু বলবে?
-না রাখছি সাবধানে এসো।
-আচ্ছা
-শুনো
-হ্যাঁ বলো
-ভালোবাসি
-আমিও
-রাখছি।
আয়ান আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করে পারফিউম দিচ্ছে আর ভাবছে,
“”আজকে আমার জন্ম দিন আর ইভা একটা বারও উইস করলো না আজকের দিনটা ভুলে যেতে পারলো। বারবার জিজ্ঞাসা করার পরও কিছু মনে পড়লো না। আমাকে নাকি অনেক ভালোবাসে তার নমুনা এই হুহ “”
-কি রে ভাইয়া তোর মন খারাপ? আবার একা একা বিড়বিড় করছিস যে? (আয়ানের বোন আয়েশা)
-না মন অনেক ভালো আছে।
-ভালো থাকলেই ভালো। তবে আমার ট্রিট টা রাতে নিয়ে আসিস।
-তুইও আমার গিফট নিয়ে আসিস
-আমার কাছে টাকা নেই টাকা দে তোর জন্য গিফট কিনে আনবো
– বাবার থেকে টাকা নিয়ে কিনে আনিস। আমার লেট হচ্ছে আমি গেলাম।
-বাবা একটু দাড়া(আয়ানের মা)
-কি
-“আ” কর, তোর জন্য পায়েস রান্না করেছি আর রাতের জন্য তোর সব প্রিয় খাবার রান্না করবো।
-আ” দেও।
আয়ান পায়েস খেয়ে বাসা থেকে বের হলো। ও দিকে ইভা আগে পৌঁছে গিয়েছে। ওদের কথা ছিলো জাস্ট ১১টা বাজে মিট করবে আর আয়ানও ১১টা বাজে হাজির হলো।
-মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ, চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। যুগ যুগ এভাবে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
-থাকো তাকিয়ে আমি কি বারন করেছি নাকি?
-লজ্জা লাগবে না
-নাহ্ তুমিই তো
-তা আজকে হঠাৎ শাড়ি পরেছো যে (এবার অন্তত উইস কর ইভা) “আয়ান মনে মনে বললো”
-ইচ্ছে হলো তাই, এখন চলো কোথায় যেনো আমাকে নিয়ে যাবে।
-হুম চলো তবে তোমার হাতে এতো বড় প্যাকেটটা কিসের?
-একটা জিনিস আছে পরে দেখাবো
-আচ্ছা
শহর থেকে কিছুটা গ্রামের দিকে ওরা গেলো। চারপাশটা সবুজের মেলা, ছোট নদী, আশেপাশে কিছু বাড়িঘর আছে।
গ্রাম অঞ্চল বলে লোকজনেরও বেশি দেখা নেই। পরিবেশটা খুব শান্ত আছে। নদীর ধারে দুজন বসলো,
-আয়ান চোখটা বন্ধ করো
-কেনো?
-করতে বলছি করো
-আচ্ছা।
ইভা এক হাত দিয়ে আয়ানের চোখ ধরে রেখেছে আর এক হাত দিয়ে ব্যাগ থেকে একটা গোলাপ ফুলের তোরা বেড় করে আয়ানকে বললো,
-হ্যাপি বার্থডে টু উই মাই লাভার
-থ্যাকউই মাই সুইটহার্ট।
-ভেবেছিলে আমি তোমার বার্থডে ভুলে গেছি তাই না
-হুম আমার অনেক মন খারাপ হয়েছে আমাকে উইস করো নি বলে
– মেসেঞ্জারে রাত ১২টায় তোমাকে উইস করেছি
-কালকে থেকে একবার বারও মেসেঞ্জারে যাই নি
-জানতাম যাবে না তাই দিয়েছে
-খুব পাজি হয়েছো
ইভা আয়ানের হাতটা ধরে ঘড়িটা পড়িয়ে দিলো। আর পাঞ্জাবি হাতে দিয়ে বললো
-নেও এখন এটা পড়ো
-এখন এখানে কিভাবে পরবো
-এখানে কেউ নেই তো পরো
-আচ্ছা উঠো, ঐ যে বাড়ি দেখছো ওখানে আমি কয়েক বার এসেছি তারা আমাকে চিনে, তাদের বাসায় গিয়ে পাঞ্জাবিটা পরে আসি।
-হুম চলো
আয়ান ফ্রেন্ডের সাথে দুবার ঘুরতে এসে বৃষ্টিতে আটকা পরে একটা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলো সে বাড়িতে এখন গেলো।
চলবে,,,
#Your_Lover
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১০
-আসসালামু ওলাইকুম চাচা! কেমন আছেন?
– ওয়ালাইকুম সালাম, ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?
-আলহামদুলিল্লাহ।
-তুমি কখন আসছো?
-এই একটু আগে এসেছি।
-তা বাবা তোমার বাসার সবাই কেমন আছে? তোমার সাথে মেয়েটা তোমার বৌ?
-জ্বি, চাচা ভালো আছে। হবু বৌ আমার
ইভা মতিউর চাচাকে সালাম করলো।
-মাশাল্লাহ দেখতে, তোমরা সুখী হও দোয়া করি।
-চাচা বাসায় কেউ নেই?
-হ্যাঁ হ্যাঁ আছে। কই গো সুলতানের মা দেখো কে এসেছে?
সুলতানের মা এসে বললো,
-আরে আয়ান বাবা যে, কেমন আছো? আজকে সাথে করে বৌ নিয়ে এসেছো?
-ভালো আছি, আপনি ভালো আছেন? হবু বৌ নিয়ে আসছি আপনাদের দেখাতে।
-হ্যাঁ। মাশাল্লাহ দেখতে।
তুমি কি গো ওগো ভিতরে বসতে দিবা না (সুলতানের বাবার উদ্দেশ্যে বলেছে)
-হ্যাঁ তাই তো। চলো মা ভিতরে গিয়ে বসো।
-না না আমরা এখানে ঘুরতে এসেছি তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। (ইভা)
-সে কি মা তুমি এই প্রথম আর খালি মুখে যাবা তা হবে না
-অন্য একদিন সময় করে আসবো। চাচা সুলতান বাসায় নাই?
-ও স্কুলে গেছে।
আয়ান অনেক গুলো চকলেট সুলতানের মায়ের হাতে দিয়ে বললো,
-এগুলো সুলতানকে দিবেন আর চাচা আপনার নৌকার বৈঠাটা দেন।
-হ্যাঁ এই নেও।
-চাচা আমি ড্রেসটা চেঞ্জ করবো, ভিতরে যেতে পারি?
-হ্যাঁ যাও।
আয়ান ভিতরে গিয়ে পাঞ্জাবি পরে এসলো। ইভা নতুন করে আয়ানের প্রতি ক্রাস খেয়েছে। নীল পাঞ্জাবি, হাতে ঘড়ি, চোখ সানগ্লাস এতো গুলা কিউটের বাক্স যা দেখে যে কেউর ক্রাস খাবে।
তাদের থেকে বিদায় নিয়ে দুজনে নৌকায় বসলো।
-আয়ান আমার ভয় করছে যদি পানিতে পরে যাই।
-পরবে না আমি আছি তো।
-বৈঠা বাইতে হবে না এমনি বসে থাকি।
-আরে ভয় পেও না।
-ওনারা খুব ভালো মানুষ তাই না।
-হুম, একবার দুপুর খুব বৃষ্টি তখন ওনাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম তখন খেতেও দিয়েছিলো।
-হ্যাঁ। আমাদের বিয়েতে তাদের ইনভাইট করবো।
-আচ্ছা।
-তোমাকে আজকে এতোগুলা সুন্দর লাগছে
-আগে বুঝি এতোগুলা সুন্দর লাগে নি?
-লেগেছে তো তাও আজকে একটু অন্য রকম।
-তোমার হিজাবটা খুলো,
-কেনো? তুমি তো বলেছো বাসার বাইরে হিজাব না পরে যাওয়া যাবে না।
-আমি বলছি খুলো।
-আচ্ছা খুলছি।
আয়ান মনোমুগ্ধকর ভাবে তাকিয়ে আছে। আজকে দুজনের ভালো লাগা প্রকৃতির মাঝে অন্য রকম ভাবে ফুটে উঠেছে।
আকাশে মেঘ জমেছে, বাতাস বইতে লম্বা চুল এলোমেলো হয়ে আয়ানকে পাগল করে দিচ্ছে। ইভার ঘারে চুমু এঁকে দিয়ে শুর ধরলো,
-“কন্যারে কন্যারে বাঁকা চুলেতে খোঁপা আর বাইন্ধো না রে , ওই চুলেতে জাদু আছে আমার ঘুম আসে না রাতে একলা ঘরে”
-বাহ্ তোমার গানের গলা খুব ভালো। আগে কখনো গান গেয়ে শোনাও নি কেনো?
-বারে তুমি বুঝি কতো গান গেয়ে আমাকে শুনিয়েছো?
-আমি তোমার মতো ভালো পারি না।
-আমিও পারি না কিন্তু আজকে কেমন জানো তোমাকে কাছে পেয়ে রোমান্টিকতায় গেয়ে ফেলছি।
-এখন থেকে মাঝে মাঝে গান গেয়ে শোনাবে
-আচ্ছা । তোমার ইচ্ছে ছিলে নৌকায় চড়ার সে ইচ্ছা তো পূরণ করেছি, এখন বাড়ি ফেরা যাক।
-না আরও কিছুক্ষন থাকবো।
-বৃষ্টি নামবে তো
-নামুক, আজ দুজনে বৃষ্টিতে ভিজবো
-না তোমার ঠান্ডা ধাঁজ আছে।
-প্লিজ
-নাহ্।
-এখন উঠি চলো
-এতো বড় ব্যাগ নিয়ে এসেছি কি করতে হ্যাঁ
-তা আমি কি জানি?
-জানতে তো হবে, এটার মধ্যে তোমার জন্য খাবার এনেছি।
-শাশুড়ী আম্মা খাবার পাঠিয়েছে আর তুমি এখনও খেতে দেও নি।
-শাশুড়ী আম্মা না আমি রান্না করেছি।
-তুমি আবার রান্না বিশ্বাস হচ্ছে না
-তাহলে খেয়ে দেখো তোমার ফেভারিট খিচুড়ি, ডিম, আমের আচার আর মুরগীর মাংস।
-শুনে তো জিভে পানি এসে গেলো, তাড়াতাড়ি খাইয়ে দেও “আ”
-নেও।
-উম অনেক মজা হয়েছে সত্যি।
-ধন্যবাদ
দুজন দুজনকে খাইয়ে দিলো। খাওয়া শেষে আয়ান বৈঠা বেয়ে গান শুরু করলো,
“”তুমি না ডাকলে আসব না,
কাছে না এসে ভালোবাসবো না,
দূরত্ব কি ভালাবাসা বাড়ায়,
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়।
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল, গল্পটা পুরোনো
ডুবে ডুবে ভালোবাসি তুমি না বাসলেও আমি বাসি।(২)
এটা কি ছেলে খেলা আমার এই স্বপ্ন নিয়ে,
চাইলে ভেঙ্গে দেবে গুড়ে দেবে ইচ্ছে হলে।
আমি গোপনে ভালোবেসেছি,
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছি তোমায় নিয়ে যাবো।
একবার এসে দেখো এসে বুকে মাথা রেখো,
বুলে দেবো চুলে রেখে হাত।
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল গল্পটা পুরোনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি,
তুমি না বাসলেও আমি বাসি……………….!””
(নিজ দ্বায়িত্বে গান শুনে নিবেন)
ইভা চিৎকার করে বলছে,
-I LOVE U AYAN, I REALLY LOVE U SO MUCH
-I LOVE U A LOT EVA PAKHI
-আজকের দিনে কথা দেও সারা জীবন আমাকে তোমার ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে।
-হুম কথা দিলাম। সত্যি আজকে তুমি দারুন সারপ্রাইজ দিলা। আমি খুব খুব খশি।
-তোমাকে খুশি করতে পেরেছি তাতে আমি ধন্য।
-পাগলী
-দেখেছো পিক তুলতে তো ভুলে গেছি
-তাই তো চলো পিক তুলি।
অনেক পিক তুলে নৌকা থেকে নেমে মতিউর চাচাকে বৈঠা ফেরত দিতে যাবে তখন সুলতানের সাথে দেখা,
-ভাইয়া কেমন আছেন?
-ভালো, তুই কেমন আছিস?
-ভালো, সঙ্গে কি ভাবি?
-হুম।
-বৈঠাটা নে, আর বাসায় চকলেট রেখে আসছি।
-আচ্ছা,আবার আসবেন।
-হুম
ইভা -আয়ান হাটতেছে।সামনে একটা ইটে ইভার পায়ে বেজে হচোট খেলো, ভাগ্যিস আয়ান হাত ধরা ছিলো পরে যায় নি।
-চোখ থাকে কোথায়? দেখে চলতে পারো না
-চোখ তোমার দিকে থাকে।
-এখন আমার দিকে না তাকিয়ে নিজের শাড়ির দিকে তাকাও
-হায়রে এটাও হওয়ার ছিলো, এখন কি করবো।
-your_lover all time protect you. বলে আয়ান ইভাকে কোলে তুলে নিলো। ইভা আয়ানে জাপ্টে চোখ বন্ধ করে ধরলো। ইভার এরকম অবস্থা দেখে আয়ান বললো,
-ফালিয়ে দিলাম।
-নাহ্
-তাহলে চোখ খুলো
-আমার লজ্জা লাগে
-আমি খুলতে বলছি
-আচ্ছা খুলছি
আয়ান ইভার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।
-এখন শাড়ি ঠিক করে নেও।
-হুম, তুমি বাইরে থাকো আমি যতোক্ষণ না বলবো ততক্ষণে আসবে না।
-হাহাহাহা একটু আসি
-পাঁজি যাও এখান থেকে
-হাহাহা।
ইভা শাড়ি ঠিক করে আয়ানকে ডাক দিলো, আয়ান গাড়ি স্টার্ট দিতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। সাথে গান চলছে,
“এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলো তো,
এই পৃথিবীটা যদি স্বপ্নের দেশ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলো তো”,
ইভার জ্ঞান ফিরে দেখে ওর আশেপাশে অনেক লোক আর ও আয়ানের কোলে মাথা রেখে আছে৷
-ইভা তুমি ঠিক আছো?( আয়ান)
-এখন ঠিক আছি (ইভা)
-তুমি সাঁতার জানো না তাহলে কেনো পানিতে নেমেছো?(আয়ান)
-তুই ২মিনিটের মধ্যে কিভাবে ডুবে গেলি? আমার সাথে তো পিক তুলতে ছিলি ? (লামিসা)
-একটু সামনে এগিয়ে দেখি খুব সুন্দর একটা ঝিনুক সেটা তুলতে গিয়ে কে জানো পিছন থেকে আমাকে ধাক্কা দিলো আমি পরে গেলাম। (এতোটুকু বলে কান্না করে দিলো ইভা)
-থাক আর বলতে হবে না , তোমরা ওকে রুমে নিয়ে যাও (আয়ান)
আয়ান ও সানভি খুব ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছে কাজটা কে করেছে। ইভা আর ওর ফ্রেন্ডরা রুমে চলে যাওয়াতে সানভি বলে,
-আমাদের পরশু দিন ঢাকা ফিরে যাওয়া কথা থাকলেও আমরা কালকে ফিরে যাবো।
-না যে দিন যাওয়ার কথা সে দিন যাবো।
-বেশি জেদ করিস না, একটু আগে বড় বিপদ ঘটতে যাচ্ছিলো আল্লাহ এবারের জন্য বাঁচিয়েছে।
-যেখানে যার মৃত্যু আছে সেখানে তার মৃত্যু হবে এটা মানিস তো তাহলে যা হচ্ছে হতে দে।
-দেখ ইভার কিছু হয়ে গেলে আমার পরিবার, ফুপি, ফুফা এদের আমি কি জবাব দিবো বল।
-আমি আছি তো কিছু হবে না, চল ফ্রেস হয়ে আসি।
-হুম
সকাল থেকে রাইয়ানের দেখে মেলে নি। দুপুরে খাওয়া শেষ করে একটু রেস্ট নিয়ে সবাই ঘুরতে যাওয়ার কথা থাকলেও ইভাকে কেউ নিয়ে যাবে না। রুমে থাকতে বলা হয়েছে কিন্তু সানভি এসে বললো,
-ইভা তুই রেডি হয়ে নে, তোকে ছাড়া আমি ঘুরতে যাবো না
-কিন্তু ভাইয়া ওরা আমাকে নিবে না
-যেই ভাইকে পেলি অমনি আমাদের নামে নালিশ দিচ্ছিস (লামিসা)
-ননদকে টর্চার করলে তো ভাইয়ের কাছে নালিশ দিবেই (সানভি)
-এখানে ভাবি কে? কোনো একটা প্রেম রহস্য সুগন্ধি পাচ্ছি (রাহি)
ঈশিতা লামিসাকে একটু ধাক্কা দিয়ে বলে,
-জল অনেক দূর গরিয়ে গেছে
-ধুর তোরা কি শুরু করছিস হ্যাঁ, চল রেডি হয়ে নেই (লামিসা)
-আমার সাথে ঘুরতে যাওয়ার এতো ইচ্ছে তা জানতাম না (সানভি)
-আমি একবার ও বলছি আপনার সাথে ঘুরতে যাবো? (লামিসা)
-মুখ দেখে তো বোঝা যাচ্ছে (সানভি)
-বেশি বোঝা ভালো না (লামিসা)
-আরে ভাইয়া কি করছিস, প্রেম শুরু হওয়ার আগে ঝগড়া করলে প্রেম এখানে শেষ হয়ে যাবে (ইভা সানভিকে আস্তে করে বললো)
-তাও ঠিক। এই যে লামিসা ম্যাডাম আপনাকে লাল কালার ড্রেসে খুব সুন্দর লাগছে (সানভি)
লামিসা লজ্জা পেয়ে আর কিছু বললো না। পাশ থেকে রাহি বললো,
-ভাইয়া আপনারা কি ঘুরতে যাবেন নাকি এখানে প্রেম করবেন
-কি যে বলো তোমরা এখানে প্রেম করলে ম্যাডাম রাগ করবে (সানভি)
বের হতে লেট হচ্ছে বলে আয়ান এসে বললো,
-এই শালা তোকে আমি এখানে পাঠিয়ে ছিলাম কেনো? আর তুই কি করছিস?
-আমার লাইনটাও একটু ক্লিয়ার করতে দে(সানভি)
– ছেলেরা তোমরা এখন যাও বাকি কথা পরে হবে (ঈশিতা)
সবাই ঘুরতে বের হলো। সন্ধ্যার মধ্যে হোটেলে ফিরে আসলো। রাতে কাপাল ডান্স, গান, অভিনয়ের আসর জমিয়ে দিয়েছে।
কক্সবাজার তিন দিনের ট্যুর ভালো ভাবে কাটিয়ে সবাই বাড়ি ফিরেছে।
আয়ান ইভাকে বলে দিছে কলেজে আয়ানের সাথে বেশি কথা না বলতে। আর ওদের সম্পর্কের কথা সবাইকে যেন না বলে৷
আয়ান সব সময় ইভাকে নজরে রাখে। সানভির সাথে লামিসার রিলেশন শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে ভালো ভাবে আছে৷
নাজমিন বেগম ইভাকে ডাকতে আছে কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছে না কিছুটা ভয়ও করছে সেই সকালে এসে রুমের দরজা লাগিয়েছে এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। শুধু বলেছে মাথা ব্যাথা করে শরীর ভালো লাগে না কেউ যে ডিসর্টাব না করে।
রাইসা ড্রয়িং রুমে টিভি দেখতেছে, তখন সানভির আগমন।
-রাই
-হুম, তুমি আজকে হঠাৎ আমাদের বাসায় কি মনে করে?
-কেউ বাসায় আসলে ভিতরে আসতে না বলে, পুলিশের মতো জেরা করছিস। তোদের বাসায় আর আসবো না।
– তুমি তো বাইরে দাড়িয়ে থাকো নি । তাহলে তোমাকে ভিতরে আসতে বলবো কিভাবে?
-খুব বেশি কথা বলা শিখে গেছিস
-ভুল কিছু বলি নি।
-হুহ, যা তো ঠান্ডা পানি নিয়ে আয়
-আসতে না আসতেই খাটানো শুরু।
-কাজ না করলে শরীরে মরীচিকা পরবে।
-তুমি বুজি কতো কাজ করো তা আমার জানা আছে।
-কেমনে জানো আজকাল আমাকে নিউজে দেখায়।
-ধুর, পানি খাও।
-হুম দে। ফুপি, ইভা কোথায়?
-উপরে আছে। আপু সেই কলেজ থেকে এসে রুমে শুয়ে আছে।
-কেনো কি হয়েছে?
-তা জানি না।
-আচ্ছা আমি গিয়ে দেখি।
সানভি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে দেখে নাজমিন বেগম ইভাকে ডাকতে আছে,
-ফুপি কি হয়েছে?
-আর বলিস না কি যে হয়েছে বুঝতে পারছি না।
-আচ্ছা আমি দেখছি।
-ইভা বোন আমার দরজা খোল, তোর জন্য একটা ভালো খবর নিয়ে এসেছি। প্লিজ দরজা খোল।
কয়েকবার ডাকতে ইভা দরজা খুলে দিলো।
-মা তোর কি হয়েছে আমাকে বল (নাজমিন বেগম)
-অনেক মাথা ব্যাথা করেছে তোমাকে বললাম তো(ইভা)
-তাই বলে না খেয়ে সারাদিন শুয়ে থাকতে হবে (নাজমিন বেগম)
-কি তুই সারাদিন খাস নি? ফুপি যাও খাবার রেডি করো আমিও দুপুরে খাই নি (সানভি)
-আচ্ছা তোরা নিচে আয়(নাজমিন বেগম চলে গেলো)
-ইভা তুই এমন পাগলামি করলে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা মুশকিল হবে।
-আমি কি পাগলামি করছি বল? আয়ান যে আমাকে কষ্ট দিলো তা তোর চোখে পড়লো না
-তোকে আয়ান বারন করেছিলো কলেজে ওর সাথে কথা না বলতে তাহলে তুই কেনো গিয়েছিল ওর কাছে?
-ও তৃষার সাথে ঢলাঢলি করে কথা বলেছে তাই
-এটা তুই মেসেজ দিয়ে বলতি।
-হ্যাঁ এখন সব দোষ আমার হবে
-হ্যাঁ তোর।
-যা তুই। আমার সাথে আর কথা বলতে আসবি না
-তুই এখন আমাদের বাসায় যাবি
-না যাবো না
-তোর জন্য আয়ান অপেক্ষা করে আছে।
-ওর সাথে আমার কোনো কথা নেই তুই ওকে জানিয়ে দিস আমি সম্পর্ক রাখবো না
-এখন আমি তোকে থাপ্পড় দিবো
–
-চল খেয়ে রেডি হয়ে নে৷ আমি ফুপির সাথে কথা বলে আসি।
-ও আমাকে ভুল বুঝছে আমার মুখ দেখতে চায় না তাহলে আমি কোন মুখ নিয়ে ওর সামনে যাবো।
-তুই আমার সাথে গেলে বুঝতে পারবি। তোকে ও আর অপমান করবে না
-আচ্ছা শুধু তোর কথার জন্য যাচ্ছি
নাজমিন বেগমের থেকে পারমিশন নিয়ে ইভা সানভিদের বাসায় গেলো।
ড্রয়িং রুমে আয়ান বসে আছে সাথে সানভির মা, দাদুও আছে। ইভা আয়ানকে দেখে চোখ রাঙিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
-কি রে দোস্ত কখন এলি। (সানভি)
-এইতো কিছুক্ষন হলো (আয়ান)
-ইভা কেমন আছিস? (সানভির মা)
-ভালো আছি মামি, তুমি?(ইভা)
-ভালো। তোরা বসে কথা বল আমি চা নিয়ে আসি (সানভির মা)
-তোরা বুড়ীর কথা ভুলে গেছিলি, কতদিন পর আজকে আয়ান, ইভা বাসায় এলি (দাদু)
-নানু তোমাকে আমি ভুলে থাকতে পারি নাকি, প্রতিদিন ফোন করি, গল্প করি তাও বলো ভুলে গেছি (ইভা)
-দেখা করতে আসিস না তো আর এই আয়ান চুপ করে বসো আছো কেনো গালফ্রেন্ডের কথা ভাবো (দাদু)
-গালফ্রেন্ড থাকলে তো তার কথা ভাববো। তোমার খোঁজে কোনো সুন্দরী মেয়ে আছে নাকি দাদু(আয়ান)
(কিহ্ সুন্দরী মেয়ে লাগবে, এখন আমাকে কালো লাগে। দাঁড়া আয়ান তোর ব্যবস্থা করতে আছি। ইভা মনে মনে বলতে আছে আর আয়ানে দিকে তাকিয়ে আছে)
-আমার নাতনীরা খুব সুন্দরী আছে, পটাতে পারো কি না দেখো (দাদু হাসতে হাসতে কথাটা বললো)
-তার মানে কি দাদু তোমার আয়ানকে পছন্দ হয়? তোমার কোনো নাতনী সাথে বিয়ে দিবে? (সানভি)
-হ্যাঁ দিবো, যাকে বলবে তার সাথে দিবো (দাদু)
-আয়ান বলে ফেল কাকে পছন্দ করিস (সানভি)
-এখনও বলার সময়,আসে নি (আয়ান)
-তোকে বাড়িতে ডাকছি একটা প্রোজেক্ট প্ল্যানিং করেছি তা দেখার জন্য আমার রুমে চল আর ইভা তুইও আয় তুলি উপরে আছে৷(সানভি)
সানভি নিজে চা নিয়ে উপরে গেলো যাতে আর কেউ উপরে না যায়।
তুলি সানভির বোন। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরে৷ ইভার সাথে খুব ক্লোজ। ওদের সম্পর্কের কথা জানে৷
চলবে,
#Your_Lover
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_৮
ছাদের কিনারায় ইভা দাঁড়িয়ে আছে। আয়ান ইভার কাঁধে হাতে রাখতেই ইভা ঘুরে তাকায়।
-আমার উপর রাগ করে থেকো না প্লিজ
-চুপ
-সরি সোনা পাখি
-সবার সামনে অপমান করে খুব ভালো লাগেছে তো?
-সবার সামনে অপমান করতে চাই নি আর অনেক গুলো কারন ছিলো সেটা বলবো বলে তোমাকে এখানে এনেছি।
-কি এমন কারন থাকতে পারে যে যাকে ভালোবাসো তার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে বাজে নি???
-আচ্ছা সব বলছি,
তুমি কি এটা জানো যে তৃষা কলেজের প্রিন্সিপালের মেয়ে?
-না জানি না, তৃষা প্রিন্সিপালারে মেয়ে নাকি লাটসাহেবের মেয়ে তাতে তোমার কি? আমার থেকে বেশি বড় লোক নাকি? (উত্তেজিত হয়ে বললো)
সানভি, তুলি ওদের কাছে দৌড়ে এসে বললো,
-ইভা তুই চিৎকার করছিস কেনো? বাসায় সবাই আছে। (তুলি)
-তুই একটু মাথা ঠান্ডা রেখে ওর সব কথা শোন তারপর যদি মনে করিস ও ভুল করেছে তাহলে তুই রিলেশন রাখিস না (সানভি)
ইভা চুপ করে দাড়িয়ে আছে।
-তোরা দরজার কাছে গিয়ে দাড়া আমি ভালো ভাবে বুঝাচ্ছি (আয়ান)
-হুম (তুলি)
-ইভা প্লিজ আমার কথাটা ভালো করে শুনো,
তৃষার আমাকে অনেক আগে থেকে পছন্দ করে কিন্তু আমি ওকে সব সময় এড়িয়ে চলি। ও এই দু মাস বিদেশে ছিলো কালকে কলেজে এসেছে তখন দেখা হওয়ার সূত্রে কথা বলছি। ওর সামনে আমাকে নিলয় একটা খাম দিয়েছে তারপর খামটা খুলে দেখি তোমার আর রাইয়ানের ছবি আর তৃষা দেখে ফেলছে। আমাদের রিলেশন সম্পর্কে ও কিছু জানে না। জানতে পারলে ওর উদ্দেশ্য থাকবে সবসময় তোমার খারাপ করার। ও অনেক রিলেশন করছে কিন্তু একটাও টিকে নি, অহংকার জেদের কাছে ভালোবাসা তুচ্ছ করে। আমি জেনে শুনে তোমার খারাপ করতে পারি নি।
– আচ্ছা তাহলে তুমি ওর সাথে কথা বলবে না
-আমি ওর সাথে তেমন কোনো কথা বলি না, প্রয়োজনের খাতিরে যতোটুকু দরকার ততোটুকু কথা বলি।
-হুহ, আমাকে থাপ্পড় মেরেছো কেনো?
-তোমার নামে তৃষা অনেক বাজে কথা বলেছে যার কারনে আমার মাথা গরম হয়ে গেছে
-তুমি আমাকে একটুও বিশ্বাস করো না, ভালোবাসো না। (কান্না করে দিলো)
-উফফফ্ রে, এতো চোখের পানি কোথায় রাখো। শান্তি মতো কথাও বলা যায় না। প্লিজ কেঁদো না।
-হ্যাঁ আমি এখন কান্না করলেও দোষ হয়।
-আচ্ছা কান্না করা শেষ হোক তারপর বাকি কথা বলবো। কাঁদো।
ভ্যা ভ্যা ভ্যা কান্নার স্পিড আরো বেড়ে গেলো তাই আয়ান ইভাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
-তুমি ঈশিতার বার্থডে পার্টিতে গিয়েছিলে মনে আছে?
-হুম
-সেখানে রাইয়ান ছিলো?
-হুম
-তোমাকে আমি ঈশিতার বার্থডে পার্টিতে নিয়ে গিয়েছিলে আবার আমি তো বাসায় পৌঁছে দিয়েছিলাম। আর ওখানে সিসিটিভি আছে তাহলে কেউ যদি কিছু করে থাকে সব দেখা যাবে।
-তুমি চেক করে দেখো আমি কিছু করি নি।
-মাথা মোটা একটা, আমি চেক না করে ডিটেইলস তোমাকে বললাম কিভাবে?.
-হ্যাঁ তাই তো।
-সে দিন ও তোমার কিছু ছবি তুলেছে সেগুলো দিয়ে তোমার সাথে ওর নোংরামো ছবি বানিয়েছে।
-তুমি জানলে কিভাবে?
-যেখান থেকে ছবি গুলো বানিয়েছে তার নাম ছবির নিচে দেওয়া আছে আমি সেখানে থেকে তার খোঁজ নিয়ে জেনেছি।
-এতো কিছু একদিনের মধ্যে জানা সম্ভব হয় কিভাবে আমার সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
– মাথার উপর দিয়ে যাবে মাথা মোটা বলি কি সাধে
-আবার বললে কান্না করবো কিন্তু
-না না আরও কাহিনী আছে শুনো, কক্সবাজার ট্যুরে তোমাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে রাইয়ান ফেলে দিয়েছিলো।
সেটা জেনেছি আমি সিওর ছিলাম তোমাকে রাইয়ান ফেলে দিয়েছে তাই আমি সব সময় ওর দিকে খেয়াল রেখেছি। ও কাকে যেনো ফোনে বলে ছিলো, তোমাকে কিডন্যাপ করার কথা কিন্তু যদি ঝামেলায় পরে যায় তাই মেরে ফেলে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে আর ওর এই সব কথা আমি শুনে রেকর্ড করে রেখেছি।
-আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছে। আমাদের সম্পর্ক ভুল বুঝাবুঝি তৈরি করতে চেয়েছে আমি ওকে ছাড়বো না। আমি ওকে মেরে ফেলবো। আর তুমি এসব জেনে কিছু না করে বসে বসে তামাশা দেখছো।
-হাহাহাহা কে বলেছে আমি কিছু করি নি। আমি আমার লোক,,,,,, থাক কালকে সকালে তোমাকে নিয়ে যাবো
-না এখন বলো।
-নাহ্ কালকে দেখতে পাবে। তবে ক্লাস ফাঁকি দিতে পারবে না ক্লাস শেষ করে আমাকে মেসেজ দিও আমি এসে নিয়ে যাবো।
-আচ্ছা
-তুমি এতো বোকা কেনো হ্যাঁ
-আমি আবার কি করলাম?
-ছবিগুলো তোমার গায়ে ছুড়ে মেরেছি তখন রাইয়ানকে কয়েকটা থাপ্পড় দিতো পারো নি। কোথা থেকে এসব করেছে জানতে চাইতে পারো নি। আমি কেনো তোমার এসব করতে যাবো?
-আমি তোমার দেওয়া কষ্ট সহ্য করতে পারি নি, ভাবছি তুমি এইগুলো সত্যি মনে করে আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছো।
-পাগলী একটা। ভালোবাসা, বিশ্বাস এতো সস্তা না যে কেউ এসে যা বলবে তা বিশ্বাস করতে হবে নাকি। ভালোবাসার প্রতি অটুট বিশ্বাস রাখতে হয়।
-হুম বুঝলাম
-আমি যা করবো তোমার ভালোর জন্য করবো এটা মনে রেখো।
-আমার এতো ঝামেলা ভালো লাগে না
-আমার তো বেশ ভালো লাগে, লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতে পারি, তোমাকে বকা দিতে পারি।
-আমাকে বকা দিতে ভালো লাগে তাই না এই বলে (আয়ানের পিঠে তাল পরা শুরু হলো)
-ব্যাথা পাচ্ছি তো। তোমার একটুও মায়া হয় না আমার জন্য
-না কোনো মায়া হয় না। সকলে আমাকে মেরেছিলে তখন তোমার মায়া হয় নি
-এতোটা জোরে মারি নি যে ব্যাথায় জ্বর আসবে।
-তাও আমার নরম তুলতুলে গালে মারার আগে কয়েকবার ভেবে মারবে
আয়ান ইভার গাল টেনে বললো,
-নরম গালে কিছু করতে হলে ভাবার সময় থাকে না, যেমন মিষ্টি সামনে নিয়ে বসে থেকে ভেবে খাওয়া যায় না মিষ্টি দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে।
-কি সব বলছো, ভাইয়া-আপু আছে
-এখন ভাইয়া-আপুর দোহাই দিচ্ছো, তাদের সামনে প্রেম করো তাতে লজ্জা লাগে না
-না, তুমি এখন যাও
-হুম যাবো, তুমি সাবধানে থেকো। তোমাকে কষ্ট দেওয়া জন্য সরি আর লাভ উই সোনা পাখি
-লাভ উই টু
-ওই তোদের বলছি,
সানভি এবং তুলি তোদের দুজনকে অনেক ধন্যবাদ দিবো না কারন তোরা আমার অপন জন তাই আমাদের রিলেশনশিপ উপলক্ষে ট্রিট দিবো।
-কালকেই হয়ে যাক (তুলি)
-হ্যাঁ একটা ভালো কাজের পর খাওয়া-দাওয়া না করলে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না (সানভি)
-আচ্ছা দোস্ত আমি এখন আসি আর কালকের কথা মনে রাখিস(আয়ান).
-রাতে খেয়ে তারপর যাবে (তুলি)
-না ছোট আপু অন্য কোনো দিন খেয়ে যাবো আর জামাই আদর এখনও পরে আছে (আয়ান)
-হাহাহাহাহ্ জামাই আদর পরে থাকলেও শালিদের আবদার এখন থেকে পূরন করতে হবে (তুলি).
-আর কথা বারিও না এখন বাসায় যাও রাত ৯টা বাজে খেয়াল আছে (ইভা)
-বাহ্ এখন এতো প্রেম, একটু আগে বলছিলি কি যেনো ওর সাথে কথা বলবো না ওর সাথে থাকবো না সেগুলো এখন কই? (সানভি)
-আহ্ ভাইয়া আমি তো ওগুলো রাগ করে বলেছি(ইভা)
-তুই রাগ করেই কেনো বা এসব বলবি? তুই জানিস না যে আপনজনদের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হয়। এক্ষুনি সরি বল (তুলি)
-আচ্ছা সরি আমার ভুল হয়ে গেছে (ইভা)
-ইট’স ওকে বেবি (আয়ান)
-বাসায় গিয়ে মেসেজ দিও, সাবধানে যেও (ইভা)
-এখানে আমরা আছি তোর বড় ভাই বোন (সানভি)
-আহারে বড় ভাই বোন আমার, ছোট বোনকে বন্ধুর সাথে প্রেম করতে হেল্প করো তখন বড় থাকে কোথায়(ইভা)
-পাকা পাকা কথা না বলে খেতে চল (তুলি)
ড্রয়িং রুমে মামা, মামি, নানু সবার সাথে কিছুক্ষন গল্প করে খেতে যাবো তখন আয়ান মেসেজ দিলো,
“” বাসায় আসছি। এখন তুমি খেয়ে নেও আমিও খাবো। বেশি রাত জাগবে না। ভালোবাসি “”
রাতে খেতে ভাই বোনেরা আড্ডা দিয়ে ঘুমালো। সকালে সানভিদের বাসা থেকে ইভা কলেজে গেলো।
তিনটা ক্লাস করে আয়ানকে ফোন করলে আয়ান সানভিকে পাঠায় ইভাকে নেওয়ার জন্য সাথে লামিসাও যায়।
পুরনো ভাঙ্গা বাড়ির সামনে গাড়ি থামে৷
-ইভা তুই ভিতরে যা (সানভি)
-কেনো? তোরা যাবি না(ইভা)
-আমরা এখনে আছি একটু প্রেম করি তুই যা(সানভি)
রাফসান ইভাকে ভিতরে নিয়ে গেলো। দেখলো রাইয়ানকে একটা চেয়ারের সাথে হাত পা বেধে রেখেছে।ইভাকে দেখেতে আয়ান বললো,
-রাইয়ান তোর গালফ্রেন্ড ইভা চৌধুরী এসেছে।
-ইভা তুমি আয়ানকে বলো আমাকে ছেড়ে দিতে।
-তোর সাথে ইভার শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত গরিয়ে গেছে তা আমি জানতে পারলাম না ।
-হ্যাঁ আমাদের সম্পর্ক হয়েছে তাতে তোর কি? ইভাও আমাকে ভালোবাসে
হাহাহাহা ইভা জোরে হাসি দিয়ে রাইয়ানের গালে ঠাসসস্ ঠাসসস্ থাপ্পড় দিয়ে বললো,
-বাহ্ বাহ্ তোর সাথে আমার সম্পর্ক হয়েছে তাও আবার শারীরিক সম্পর্কও। তোর এসব মিথ্যা কথা আয়ান বিশ্বাস করে আমাকে ছেড়ে দিবে তা ভাবিস না। আমাদের ভালোবাসা এতোটা সস্তা না।
আমাকে তুই মারতে চেয়েছিলি কিন্তু দেখ উপরে একজন আছে সে সব দেখতে পায়।
-ঈশিতার বার্থডে পার্টিতে সিসিটিভি ছিলো, ওখানে তোর সাথে আমি কিছু করে থাকলে তা দেখা যেতো বাট কিছু দেখা যায় নি কেনো?. তুই কি মিথ্যা বলবি বল দেখি তোর মিথ্যার জোর কতোক্ষন টিকে থাকতে পারে৷
-আমি তোমাকে ভালোবেসে করেছি।
-তোর ভালোবাসা আমি বের করছি দাঁড়া।
পাশে বাঁশ রাখা ছিলো সেটা দিয়ে রাইয়ানকে ইভা মারতে থাকে ।
বেশ কিছুক্ষন মেরে ছেড়ে দেয়।
রাইয়ানের হাত পায়ের বাধন আয়ান খুলে দিয়ে বলে,
-তোকে যেনো কোনো দিন ইভার ধারে কাছে না দেখি আর ইভা তুমি সবসময় মনে রেখো ইউর লাভার তোমাকে ছেড়ে কোনো দিন যাবে না। চলো আমরা যাই।