Monday, July 14, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1838



সুখপাখি পর্ব-০৩

0

সুখপাখি
৩.

শিমু পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। মাথাটা এখনো ঝিমঝিম করছে। দুইহাতের তালুতে ভর দিয়ে উঠে বসে। দুইহাতে মাথা চেপে ধরে। আবিরের কথা মাথায় আসতেই চোখ মেলে আশেপাশে তাকায়। বেডে দেখলো সেখানে নেই। ড্রেসিং টেবিল ধরে উঠে দাঁড়িয়ে আয়নায় তাকায়। বাম পাশের গাল ফুলে গেছে অনেকটা। ঠোঁট কেটে রক্ত যা বেরিয়েছে শুকিয়ে গেছে। চার আঙুলের দাগ একেবারে স্পষ্ট। শিমু আয়নার মাধ্যমে পেছনে তাকালো। আবির সোফায় বসে সেন্টার টেবিলের উপর পায়ের উপর পা তুলে আয়েসি ভঙ্গিতে বসে আছে। দুইহাত সোফার উপর মেলে দিয়ে পা নাচিয়ে নাচিয়ে শিমুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— “নিজেকে দেখা শেষ হয়েছে? সেই কখন থেকে খালি পেটে বসে আছি। তাড়াতাড়ি আমার জন্য খাবার নিয়ে আয়।”

শিমু পেছনে ফিরে আবিরের দিকে তাকালো। তারপর একবার ঘড়ি দেখলো। সে পাক্কা আড়াই ঘন্টা সেন্সে ছিলো না। শিমু পা টিপে টিপে রুমের বাহিরে এসে থমকে দাঁড়ালো। কোনদিকে যাবে সে জানে না। এতো বড় মেনসনের একটা রুমের মাঝেই দুইদিন কাটিয়ে দিয়েছে। বা দিকে পাঁচ মিনিট হাটলেই সিড়ি আবার ডান দিকেও সেম সিড়ি। কোনদিকে গিয়ে কোথায় খাবার খুজবে ভেবেই পাচ্ছে না। তাছাড়া রান্নাঘর কোনদিকে সেটাও বুঝতে পারছে না। শিমু পাঁচ মিনিট যাবৎ দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ কানের কাছে কেউ বললো,
— “এখানে দাঁড়িয়ে থেকে আমাকে উপোস রাখার চিন্তা করছো?”

শিমু চমকে পেছন ফিরে তাকায়। আবিরকে দেখে দুই কদম পিছিয়ে যায়। আবির প্যান্টের দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শিমু নজর নিচু করে মিনমিনে স্বরে বললো,
— “রান্নাঘর কোনদিকে?”

— “আজকে দেখিয়ে দিচ্ছি এরপর আর পারবো না।”

আবিরের পিছু পিছু হাটছে শিমু। কেমন যেনো ভয় ভয় লাগছে। এতোবড় বাড়ি অথচ এই দুইদিনে সে আবিরকে ছাড়া আর কাউকেই দেখেনি। আশ্চর্য লাগছে ব্যাপারটা। আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে আর হাটছে। ঘরের সব জিনিস অনেক দামি দামি। সোফা সেট, আসবাবপত্র সবই বেশ দামি। রুমের রঙ থেকে শুরু করে যাই আছে সব কালো। একটাও কালারিং কিছু নেই। বেশ ভূতুড়ে টাইপ লাগছে পরিবেশ। হাটতে হাটতে হোচট খেলো শিমু। সামনে তাকিয়ে দেখলো সে আবিরের সাথে হোচট খেয়েছে। আবির রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটু সরে এসে দাঁড়ায়। আবির বললো,
— “এটা কিচেন। এদিক থেকে সামান্য হেটে সামনে গেলে ডাইনিং টেবিল। আমি সেখানে আছি। দশ মিনিট দিলাম। তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে আসো। এগারো মিনিট হলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে বলে দিলাম।”

শিমু একটা ঢোক গিলে রান্নাঘরে পা রাখলো৷ এখানেও সব কালো। কি করবে বুঝতে পারছে না। পুরো রান্নাঘর ঘেটে দুইটা নুডলস এর প্যাকেট পেয়েছে। এতোরাতে কি করবে আর। তাই নুডলস রান্না করে তাড়াতাড়ি আবিরের কাছে গেলো। নুডলস এর বাটি টেবিলের উপর রাখতেই আবির তেড়ে এসে শিমুর গাল টিপে ধরে বললো,
— “বললাম না দশ মিনিটে আনতে? তাহলে দেরি করলি কেনো? আধা ঘন্টা হয়েছে। সামান্য নুডলস বানাতে তোর আধা ঘন্টা লাগে?”

শিমু আবিরকে কয়েকবার ধাক্কা দিয়েছে কিন্তু একটুও নড়াতে পারেনি। যে হাত দিয়ে গাল চেপে ধরেছে সে হাতেও খামছি দিয়েছে তাতেও আবিরের ভ্রুক্ষেপ নেই। শিমু ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। আবির ছেড়ে দিয়ে নুডলসের বাটি ছুড়ে মারে ফ্লোরে। ভয়ে কেপে উঠে শিমু। আবির কেনো এমন করছে এসব কিছুই বুঝতে পারছে না। এই দুইদিন তো ঠিকই ছিলো তাহলে হঠাৎ কি এমন হয়ে গেলো যার কারণে এমন হিংস্রতায় রুপ নিয়েছে আবির। শিমু ফুপিয়ে ফুপিয়েই কাঁদছে। আবির এসে শিমুর চুলের মুঠি ধরে বললো,
— “এগুলো তো পরিষ্কার করবিই সাথে আজ তোর খাওয়া বন্ধ। আমাকে দেরিতে খাবার দেয়ার জন্য এটা তোর শাস্তি।”

শিমু হেচকি তুলে তুলে বললো,
— “কিন্তু আমি কি এমন করেছি যার কারণে আপনি আমার সাথে এমন আচরণ করছেন? এই দুইদিন তো ঠিক ছিলেন…”

— “চুপ। একদম চুপ। আমার মুখে মুখে কথা বলার চেষ্টা করবিই না। কোনোদিন না। আমি এমনই। এই দুইদিন অন্যরকম ব্যাবহার করেছি। কিন্তু ভুল ছিলাম আমি। সে যাই হোক। এটাই আমার আসল রুপ। আমি এর থেকেও বেশি হিংস্র।”

শেষ কথাটা চিৎকার করে বলেই শিমুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ফ্লোরে ধপাস করে পরে কোমড়ে ব্যাথা পায়। চোখ মুখ খিচে নেয়। শব্দ করেই কেঁদে উঠে। আবির শিমুর সামনে এক হাটু গেড়ে বসে চুলের মুঠি ধরে মুখটা উপরে তুলে বললো,
— “আজকেই শেষ দিন। এরপর যেনো আর কোনোদিন তোকে শব্দ করে কাঁদতে না দেখি। না হলে জিহবা টেনে ছিড়ে ফেলবো।”

শিমু ঢোক গিলে। সাথে কান্নার শব্দও গিলে ফেলে। আবির দাঁড়িয়ে যায়। দুই হাত মেলে চিৎকার করে বললো,
— “এটা আবির চৌধুরির মেনসন। আবির চৌধুরির খাচায় তুই বন্দী। বুঝেছিস?”

শিমু কেঁদে কেঁদে বললো,
— “আমি থাকবো না আপনার এই মেনসনে। আপনার মতো হিংস্র একটা মানুষের সাথে। যার ভেতরে এক, বাহিরে আরেক রুপ। যার সামনে এক, পেছনে আরেক চেহারা। আপনি হচ্ছেন একটা দুই মুখি সাপের মতো। সামনে থেকেও ছোবল দেন, পেছন থেকেও ছোবল দেন।”

শিমুর কথায় আবিরের মাথায় রক্ত উঠে যায়। চোখ লাল হয়ে আসে। চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। রাগে পুরো শরীর কাপতে থাকে। শিমুকে টেনে উঠিয়ে ঠাটিয়ে চড় মারে। শিমু আবারো মেঝেতে পরে যায়। কোমড় ধরে ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে। শিমুর সামনে বসে গলা চেপে ধরে বললো,
— “কথা খুব কম বলবি। খুবই কম। তোর জন্যই ভালো। ভুলে যাস না তুই আমার টাকায় কেনা সম্পত্তি। আমি যখন যেভাবে চাই ব্যবহার করতে পারি। তাই টু শব্দও করবি না। আর হ্যাঁ, আমি ছোবল সামনে থেকেই দি। পেছন থেকে ছোবল বেঈমানরা দেয়। বেঈমান।”

আবির “বেঈমান” শব্দটা উচ্চারণ করে আরো হিংস্র হয়ে উঠে। শিমুর গলা আরো শক্ত করে চেপে ধরে। শিমুর প্রায় দম বন্ধ হয়ে আসবে এমন অবস্থা। দুই হাতের সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দেয় আবিরকে। আবির মেঝেতে বসে যায়। শিমুর কাশি শুরু হয়। সাথে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে। উঠে ডাইনিং-এ এসে ঢকঢক করে পানি খায়। আবির ওইখানে বসে আছে। মনে হচ্ছে ঝিমুচ্ছে। উঠে দাঁড়িয়ে একবার শিমুর দিকে তাকিয়ে আবার ঢুলে ঢুলে রুমে এসে বেডে চিৎ হয়ে শুয়ে পরে।

এদিকে শিমু মেঝেতে বসেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। ওড়নার কোনা দিয়ে চোখের পানি মুছতেই আবার চোখ ভরে আসে। মনে মনে বললো,
— “মাহিন ভাইয়া কেনো এমন করলে আমার সাথে? শুধু একটা রাত থাকিনি বলে এমন একজন মানুষের কাছে আমাকে দিয়ে দিলে। যদি এই লোকটা আমাকে মেরে ফেলে তখন? তখন আমি কি করবো?”

শিমু ভয় পায়। চারপাশে তাকিয়ে আরো ভয় পায়। গা ছমছম করে উঠে। এতোবড় বাড়িতে তারা দুইজন ছাড়া আর কেউ নেই। শিমু চোখ বন্ধ করে “দোয়ায় ইউনুস” পড়ে। তারপর ভাবে তাকে শয়তান কুমন্ত্রণা দিচ্ছে মনে। শিমু বড় করে নিঃশ্বাস নেয়। নিজেকে বললো,
— “যেই আবিরকে আমি দুইদিন ধরে দেখেছি সেই আবির আর এই আবিরের মধ্যে কত তফাত। আগের আবিরের মধ্যে একটা বাচ্চাসুলভ আচরণ দেখেছি। মানুষ যখন তার মনের মতো মানুষ পায় তখন তার সাথে খুনসুটি দুষ্টামি করে। তখনই তার ভেতর থেকে বাচ্চাসুলভ আচরণ বেরিয়ে আসে। আর আজকের আবির। এতোটা হিংস্র। মনে হচ্ছে নিজেকে হিংস্র বানিয়ে রেখেছে।”

শিমু উঠে রান্নাঘরে যায়। বেসিনের পানি ছেড়ে দেয়। পানি ধরে দেখলো ঠান্ডা পানি। ওজু করে নেয়। খুব বেশি রেগে গেলে বা মাথায় কিছু ঠিকমত না আসলে শিমু অজু করে নেয়। অজু করে রান্নাঘরের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিক তাকায়। এখন অনেক ফ্রেস লাগছে শিমুর।

ডাইনিং রুমে এসে ফ্লোর পরিষ্কার করে নেয় শিমু। বাটি ধুয়ে রেখে রুমে আসে। আবির বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। আবিরের পায়ের জুতা মোজা খুলে দেয়। মাথার কাছে এসে বসে। মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো খুব নিষ্পাপ লাগছে আবিরকে। বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে রেখেছে। একটু আগের হিংস্র আবিরের সাথে এখনের আবিরের কোনো মিল নেই।

ফজরের আযান শুরু হয়। শিমু ওয়াশরুমে এসে অজু করে নেয় আবার। নামাজ পড়ে কোর’আন নিয়ে বসে। দুই পৃষ্ঠা পড়তেই চোখে ঘুম নেমে আসে। সব ঠিকঠাক করে রেখে সোফায় ঘুমিয়ে যায়।

——————————
ঘুম থেকে এক ঝটকায় উঠে বসে আবির। মাথা ভার ভার লাগছে। চোখ কচলে পাশে তাকায়। শিমুকে পাশে না দেখে বুকটা ধক করে উঠে। তাড়াতাড়ি বেড থেকে নেমে দেখলো মেয়েটা সোফায় ঘুমিয়ে আছে। একটা প্রশান্তির হাসি হাসে আবির। ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে যায়। শিমুর মুখের কাছে মেঝেতে বসে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে মুখটার দিকে। দুই গালে সব থাপ্পড়ের দাগ। বাম গাল ফুলে আছে। আবির মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে গালে হাত বুলায়।

শিমুর কপালে চুমু দিয়ে আবারো পলকহীন ভাবে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কেনো যেনো রাগ বাড়ছে। কিছু একটা মনে পড়তেই রাগ চড়া দিয়ে উঠে মাথায়। চোখ বন্ধ করে চোয়াল শক্ত করে নেয়। ঘুমের মধ্যেই ঠাটিয়ে চড় মারে শিমুর গালে। শিমু উঠে বসে যায়। চোখে পানি টলমল করছে। বললো,
— “মারধর ছাড়া কথা বলতে পারেন না আপনি?

— ” আমার জন্য নাস্তা না বানিয়েই ঘুনিয়ে আছিস। তোকে কি আদর করে করে ঘুম থেকে জাগাবো আমি? তাড়াতাড়ি যা। নাস্তা বানা আমার জন্য। রাতের মতো করলে দেখিস তোর কি করি।”

শিমু কথা না বাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। ওয়াশরুম থেকে মুখ ধুয়ে এসে নিচে যায়। স্যান্ডউইচ আর কফি বানিয়ে টেবিলে আনে। মনে মনে শান্তি পাচ্ছে কারণ আবির আসার আগেই নাস্তা টেবিলে দিতে পেরেছে। উপর থেকে আবির শিমুকে চিল্লিয়ে ডাক দিলো। শিমু দৌড়ে রুমে আসলে হাত মোচড়ে ধরে বললো,
— “কোন সাহসে আমার কাবার্ডের জিনিস ঘাটিস? কি চুরি করেছিস বল?”

শিমু বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। কিছু না বলে জিজ্ঞেস করলো,
— “কি হারিয়েছে আপনার?”

— “সাদা শার্ট কই আমার?”

— “একটাই সাদা শার্ট আপনার? আর নেই?”

আবির থতমত খেয়ে গেলো। আমতা-আমতা করে বললো,
— “আছে অনেক সাদা শার্ট আছে।”

— “তো যেকোনো একটা পরে নিলেই তো হয়।”

— “বেশি কথা না বলে সেদিনের শার্ট বের কর যেটা আমি তোকে দিয়েছিলাম।”

— “সরুন আপনি। বের করে দিচ্ছি।”

আবির সরে দাঁড়ায়। শিমু নিচের তাকে শার্টটা ভাজ করে রেখেছিলো। আবিরের হাতে শার্টটা দিয়ে বললো,
— “না জেনে কাউকে মিথ্যে অপবাদ দেয়া ঠিক নয়।”

আবির কিছু বললো না। শিমুর নাক ধরে টান দিয়ে শার্ট পরতে শুরু করে। শিমুর সামনে এসে বললো,
— “বোতাম লাগিয়ে দে।”

— “কেনো? আপনার হাত নেই?”

— “উফ! এতো কথা বলো কেনো? লাগাও বলছি।”

শিমু মুখ ভেঙিয়ে বোতাম লাগাতে শুরু করে। আবির মুখের উপর ফু দিয়ে শিমুর চুল সরিয়ে দেয়। শিমুকে বললো,
— “আমার বডি দেখছো? সিক্স প্যাক দেখো, হুম?”

একথায় বেশ লজ্জা পেলো শিমু। ধবধবে ফর্সা গালে কালচে হয়ে আসা মারের দাগের উপরেও শিমুর লজ্জা পাওয়ায় গোলাপি আভা দেখা যাচ্ছে। আবির টুপ করে শিমুর গালে চুমু দেয়। শিমু সরে আসে। চলে যেতে নিলেই আবির ডাকলো,
— “এই মেয়ে।”

— “হুম।”

— “আমার ঘড়ি কই?”

শিমু ড্রয়ার থেকে ঘড়ি বের করে আবিরকে দিলো। আবির আবার বললো,
— “শিমু আমার ওয়ালেট কই?”

সেটাও আবিরের হাতে দিলো। আবির ভ্রু নাচিয়ে আবার বললো,
— “আমার নাস্তা কই?”

— “নিচে। ডাইনিং টেবিলে রেখে এসেছি।”

শিমুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
— “নিচে আসো। আমাকে নাস্তা খাইয়ে দিতে।”

চুপচাপ আবিরের সাথে নিচে গেলো। আবির চেয়ারে বসলো। শিমু আবিরের পাশে দাঁড়িয়ে নাস্তা বেড়ে দিলো। রান্নাঘরের দিকে যেতেই বললো,
— “এই মেয়ে। আমাকে খাইয়ে দাও।”

শিমু কিছুক্ষণ আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
— “আপনি নিজে খেতে পারেন না? আমাকে বলছেন কেনো?”

আবির রাগ দেখিয়ে বললো,
— “দেখ আমার রাগ উঠাস না। এখানে আয় আর আমাকে খাইয়ে দে।”

শিমু মনে মনে বললো,
— “সাইকো।”

আবিরকে খাইয়ে দিচ্ছে। আর আবির মোবাইলে গেমস খেলছে। শিমুর মনে হচ্ছে সে একটা বাচ্চাকে মানুষ করছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবিরকে খাওয়াচ্ছে। আবির কফির মগ হাতে নিয়ে বললো,
— “আর খাবো না বাবু।”

শিমু মনে মনে চমকালো। তবে সেটা উপরে প্রকাশ করলো না। সে আবিরের মতিগতি কিছু বুঝে না। ট্রে নিয়ে রান্নাঘরে যাচ্ছিলো পেছন থেকে কিছু ভাঙার আওয়াজ পেয়ে থমকে দাঁড়ায় শিমু। মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে নেয়। বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে পেছন ফিরে তাকায়। আবির চোখ গরম করে শিমুর দিকে তাকিয়ে আছে। রাগে তেড়ে এসে শিমুর হাত থেকে ট্রে নিয়ে ছুড়ে মারে অন্যদিকে। শিমুর দুই বাহু ধরে বললো,
— “কফিটা ঠান্ডা কেনো?”

— “আপনার জন্য আগেই দিয়েছিলাম তাই হয়ত ঠান্ডা হয়ে গেছে।”

আবিরের মোবাইলের টোন বেজে উঠতেই শিমুকে ছেড়ে দেয়। মেসেজ এসেছে। মেসেজ ওপেন করে দেখে। আস্তে আস্তে আবার হিংস্র হয়ে উঠে আবির৷

চলবে,,,
® নাহার।

সুখপাখি পর্ব-০২

0

সুখপাখি
২.

মেয়েটি আস্তে করে উত্তর দিলো,
— “শিমু।”

— “নাইস নেম। পুরা নাম?”

— “ওয়াসিফা বিনতে শিমু।”

— “ওকে।”

শিমু অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলো আবিরের দিকে। মনে মনে ভাবছে এটা কি কাল রাতের সেই লোক যে তার উপর এমন অমানবিক অত্যাচার চালিয়েছে। শিমু কেমন যেনো দ্বিধায় পরে গেলো। আবির শিমুর দিকে শীতল চাহনি নিক্ষেপ করে রেখেছে সেই প্রথম থেকেই। শিমু মিনমিনে স্বরে বললো,
— “আপনি কি সেই আবির চৌধুরি? যার কাছে আমাকে বিক্রি করে দিয়েছে?”

শেষের কথা বলতে গিয়ে শিমুর গলা ধরে এসেছে। চোখে পানি টলমল করছে। চোখ নিচু করে রেখেছে। আবির খেয়াল না করেই বলে দিলো,
— “হুম।”

শিমু মুখ তুলে আবিরের দিকে তাকালো। চোখে পানি টলমল করতে দেখে আবির কিছুটা নড়েচড়ে বসলো। পরক্ষণে মনে হলো তার উত্তরে মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে। আবির প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললো,
— “রান্না বান্না পারো?”

শিমু আবার মাথা নিচু করে নেয়। বালিশের সাথে হেলান দিয়ে একটু আধশোয়া হয়ে বসেছে যাতে কোমড়ে চাপ না পরে। গায়ের উপর কাঁথা দেয়া। আবির উত্তরের অপেক্ষায় শিমুর দিকেই তাকিয়ে আছে। শিমু আস্তে করেই বললো,
— “জ্বী পারি।”

— “কি কি পারো?”

— “মোটামুটি সব রান্না পারি।”

— “আমার জন্য চা আর নাস্তা বানাতে পারবে? না না শুধু আমার জন্য না। তোমার জন্যেও। পারবে?”

— “জ্বী পারবো।”

শিমু গায়ের উপর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে নেয়। শার্টের উপরের দিকে দুইটা বোতাম খোলা ছিলো। আবির এর সেদিকে চোখ পরে। শিমুর বুকে একটা বিউটি স্পট আছে। সাথে কাল রাতে তার দেয়া কালচে কামড়ের দাগ। এটা দেখে চোখ নামিয়ে নেয়। একটা অনুশোচনা আসে তার মনে। আবার শিমুর মুখের দিকে তাকায়। আবিরের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। পিচ্চি মেয়েটার সাথে অন্যায় করেছে সে।

শিমু পা দুটো মেঝেতে রাখে। কোমড়ে চাপ পরতে শুরু করে। পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে এক কদম চলতেই শিমু ব্যাথায় কুকড়ে উঠে। পরে যেতে নিলেই আবিরের দুই হাত দিয়ে শিমুর পেট জড়িয়ে ধরে বিছানায় বসিয়ে দেয়। শিমু নিজেকে দেখে বেশ লজ্জায় পরলো। চোখ নামিয়েই আবিরকে বললো,
— “আমার কাপড় কে পাল্টেছে?”

আবির অকপটে উত্তর দেয়,
— “আমি।”

শিমু লজ্জায় মাথা আরো নিচু করে নেয়। আবির সেটা উপভোগ করে। শিমু আস্তে করে বললো,
— “ছেলেদের কাপড় মেয়েদের পরা যায়েজ নেই। প্লিজ আমাকে একটা থ্রি পিস বা শাড়ি দিন।”

আবির যতই শিমুকে দেখছে, যতই শিমুর কথা শুনছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে। আবির কিছুক্ষণ শিমুর দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ এক শীতল হাওয়া আবিরের মনে বয়ে গেলো। উঠে দাঁড়িয়ে সোফার উপর থেকে সব কাপড়ের ব্যাগ ওর সামনে রেখে বললো,
— “এগুলো সব তোমার জন্য। যেটা ভালো লাগে সেটা পরে নিও।”

আবির উঠে বাহিরে চলে যায়। শিমু সব প্যাকেট খুলে দেখে। থ্রিপিস আর শাড়ি সব। বেশ সুন্দর। শিমু মনে মনে ভাবলো,
— “আচ্ছা এসব কি উনি পছন্দ করে এনেছেন? আনলেও কখন আনলেন? নাকি অন্যকেউ এনেছে?”

সব ভাবনা বাদ দিয়ে শিমু হলুদ রঙের একটা থ্রিপিস হাতে নেয়। আস্তে করে উঠে দাঁড়ায়। হাটতে গিয়ে কয়েকবার পরে গেছে। ব্যাথায় চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু নোনাপানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পরেছে। ওয়াশরুমে ঢুকে শিমু থমকে দাঁড়ালো। মনে মনে বললো,
— “এটা ওয়াশরুম নাকি আরেকটা রুম?”

কিছুক্ষণ ভালো করে তাকিয়ে বললো,
— “নাহ শিমু। এটা ওয়াশরুমই। যা তাড়াতাড়ি গোসল করে নে। দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।”

শিমু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে। ওড়নাটা ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে নেয়। বেডের এক কোণে বসে তাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে শুরু করে। দরজার দিকে পিঠ দিয়েই বসেছে। তখনই আবির রুমে আসে। শিমুকে ভেজা চুলে দেখে থমকে দাঁড়ায়। শিমুর ভেজা চুল আবিরকে টানছে। আবির আস্তে করে এসে শিমুর পেছনে বসে। শিমু নড়তে চাইলেই আবির তাকে থামিয়ে দেয়। চুলগুলো ঘাটছে। লম্বা লম্বা ভেজা চুল ঘাটতে আবিরের বেশ ভালোই লাগছে। শিমু জড়সড় হয়ে বসে আছে। শিমুর ভেজা চুল ঘাটা আবিরের কাছে একটা খেলা মনে হচ্ছে। কোনোদিকেই তাকাচ্ছে না। শুধু চুল নেড়েচেড়ে দেখছে। আবির দুই হাত মেলে লম্বা চুল হাতের উপর বিছিয়ে চুলে চুমু দেয়। শিমুকে বললো,
— “এই শোনো না বউ, তুমি কখনো চুল কাটবে না ঠিকাছে? যদি চুল কাটো আমি কিন্তু খুব রাগ করবো।”

আবিরের মুখে ‘বউ’ শব্দটা শুনে শিমুর কিশোরী মনে এক ভালোলাগা চেয়ে গেলো। নিজের অজান্তেই মুচকি হাসলো। শিমু হালকা মাথা ঘুরিয়ে আবিরের দিকে তাকালো। এখনো চুল দিয়ে খেলছে। আবিরকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো রত্ন পেয়েছে তাই খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। শিমু আবারো মুচকি হাসলো। এইমুহূর্তে আবিরকে একদম বাচ্চার মতো লাগছে শিমুর কাছে। একটা বাচ্চা যেমন দামি কোনো ভালো খেলনা পেলে মনোযোগ দিয়ে খেলে আবিরও তাই করছে।

——————————
আবির নিজের হাতে শিমুকে খাওয়াতে শুরু করে। শিমু কয়েকবার বলেছে সে খেতে পারবে কিন্তু আবির মানাই শুনছে না। লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে শিমু। ঘোমটা দিয়ে বসে আছে আবিরের সামনে। ওড়নাটা শিপন জরজেটের হওয়ায় বারবার পরে যাচ্ছে আর শিমু তা বারবার টেনে মাথায় রাখছে। আবির বিরক্ত হয়ে বললো,
— “ঘোমটা সরাও। চুল ঢাকছো কেনো? আজব আমি কি পরপুরুষ নাকি?”

শিমু কিছু বললো না। এক হাতে ঘোমটা টেনে ওড়না ধরে বসে আছে। আবির আর কিছু বললো না।

শিমুকে একটা ওষুধ দিলো। বললো,
— “এটা খাও ব্যাথা কমে যাবে।”

নাস্তার প্লেট নিয়ে রেখে আসলো। রুমে আসলে শিমু ডাকলো,
— “শুনুন।”

আবির এক ঝটকায় শিমুর সামনে এসে বসেছে। চুল ঠিক করতে করতে বললো,
— “জ্বী রাণীসাহেবা হুকুম করুন।”

শিমু কিছুটা চমকালো সাথে লজ্জাও পেলো। শিমুর গাল দুটো হালকা গোলাপি হয়ে এলো। তার নিজেকে সংযত রেখে বললো,
— “পুরুষদের একদম হলুদ এবং লাল রঙের ড্রেস পরা ইসলামে নেই। আপনি হলুদ গেঞ্জিটা পালটে অন্যকিছু পড়ুন।”

আবির এক টানে গেঞ্জিটা খুলে ছুড়ে মারে। তারপর শিমুকে বললো,
— “কি কালার পরবো?”

শিমুর কিছুটা অস্বস্তি হলো। একেতো খালি গায়ে বসে আছে তারপর উপর আবার বলছে কি কালার পরবে। যেনো ছোট বাচ্চা। শিমু মাথা নত অবস্থাতেই বললো,
— “হালকা যেকোনো কালারের শার্ট বা পাঞ্জাবি পড়ুন। তবে সেটা যেনো সিল্কের না হয়। সিল্কের কাপড় পরাও ইসলামে নিষিদ্ধ পুরুষদের জন্য।”

আবির উঠে কাবার্ড খুলে একটা পর একটা শার্ট নিজের সামনে ধরছে আর বেডে ছুড়ে মারছে। শিমু অবাক হলো। মনে মনে ভাবছে,
— “উনি এমন কেন করছে? পাগল।”

আনমনে হেসে দিলো। বেডের উপরে নেভি ব্লু কালার শার্টের উপর চোখ যেতেই শিমু সেটা হাতে নিলো। শার্টটা হাতে নিতে দেখে আবির বললো,
— “বউ আমি এটা পরবো?”

আবিরের মুখ থেকে যত বউ ডাক শুনছে শিমুর মনে ভালোলাগা ততই বাড়ছে। মুখ তুলে আবিরের দিকে তাকালো। ফর্সা মুখে কালো ঘন চাপ দাড়ি যেটার কারণে সৌন্দর্য যেনো উপচে পরছে আবিরের। শিমু অবাক হলো। ছেলেদের সৌন্দর্যও এভাবে উপচে পরার মতো হয় ভাবতেই আরেকদফা অবাক হলো। চোখ দুটো ছোট ছোট। সাদা গেজ দাঁতে হাসলে ঝিলিক মারে। চুলগুলো একদম সিল্কি। আবির বারবার হাত বুলাচ্ছে। আবির দুইহাতে টাউজার ধরে টেনে বললো,
— “খালি গায়ে টাউজার পরেছি এটা খেয়াল করেছো?”

শিমু চমকালো। কখন এভাবে এমন বেহায়ার মতো তাকিয়ে ছিলো বুঝতেই পারেনি। নিজেকে কড়া ধমক দিলো। পরক্ষণে মনটাই বললো,
— “শিমু রিল্যাক্স বেব। এটা তোর হাসবেন্ড হয়। তুই তার বিয়ে করা বউ। কাল পবিত্র কলমা পড়ে দুজন পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিস। তুই তোর স্বামীকে দেখতেই পারিস।”

শিমু মনটাকে আরেক কড়া ধমক দিয়ে হাত বাড়িয়ে শার্টটা আবিরকে দিলো। আবির হাসিমুখে শার্টটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে শিমুর সামনে এসে বললো,
— “এই বউ বোতাম লাগিয়ে দাও।”

শিমুকে পাওয়ার পর আবিরের নিজের কোনো কাজ করতেই ইচ্ছে করছে না তার। এমন মনে হচ্ছে যেনো অনেকদিন পর একটা খেলার সাথি পেয়েছে। নিজের ভেতরের শিশু সুলভ আচরণ বেরিয়ে আসছে। আবির নিজেও খেয়াল করেছে ব্যাপারটা। শিমুকে পাওয়ার পর একদিনেই অনেক বছর আগের আপন মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই সেই পুতুল যে তার অগোছালো জীবনটাকে গুছিয়ে পরিপাটি করে তুলবে। শিমুর মনে ঢিপঢিপ শুরু হয়। কাপাকাপা হাতে আবিরের শার্টের বোতামে হাত দেয়। আস্তে আস্তে সব গুলো বোতাম লাগিয়ে দেয়।

অফিসে যাওয়ার আগে আবির শিমুর কপালে চুমু দেয়। এতে লজ্জায় শিমুর গাল দুটো আবারো গোলাপি হয়ে উঠে। আবির গালে চুমু দিতেই শিমু বিছানায় শুয়ে কাঁথা মুড়ি দেয়। তা দেখে আবির শব্দ করে হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। শিমু কাথা মুড়ি দেয়া অবস্থায় ভাবতে লাগলো,
— “উনাকে হাসলে কেমন লাগে? নিশ্চয় অনেক বেশি সুন্দর?”

রুমে আর সাড়াশব্দ না পেয়ে শিমু কাঁথা সরিয়ে উঠে বসে। রুমটা অগোছালো করে রেখে গেছে লোকটা। শিমু আস্তে আস্তে উঠে বেডের এক কোণে বসে সব শার্ট হ্যাঙারে ঝুলিয়ে কাবার্ডে রেখে দেয়। এবার সে রুমটাতে চোখ বুলায়। রুমটা বিশাল বড়। আবকিছু কালো রঙের। পর্দা থেকে শুরু করে বেডশিট এমনকি আসবাবপত্র সব কালো। শিমু মনে মনে ভাবলো হয়ত উনার কালো রঙ বেশি পছন্দ। বেড সাইডের টেবিলে আবিরের ছবি রাখা। ফ্রেমে বাঁধানো। শিমু ছবিটা হাতে নেয়। কালো গেটআপে লোকটাকে অসম্ভব মানিয়েছে। শিমু আনমনে হাসে।

——————————
আবির অফিস শেষ করে জলদিই ঘরে ফিরতে চেয়েছিলো বন্ধুদের জোরাজোরি করাতে বারে গিয়ে বসে। আবিরের মুখের খুশি দেখে সব বন্ধুরাই খুব খুশি। কারণ আবিরের মতো এমন এরোগ্যান্টের মুখে হাসি কখনো তারা দেখেইনি। সেই রুড, বদমেজাজি আবির থেকে আজকের হাসিখুশি আবিরকে দেখে খুব খুশি সবাই। এর মধ্যেই একজন বলে উঠলো,
— “দোস্ত আজ এতো খুশি কেন তুই? ভাবি কি যাদু করলো তোরে?”

— “মেয়েটা আসলেই যাদু জানে। একদিনেই আমাকে এতোটা বদলে দিয়েছে। আমি এমন একটা মেয়েকে পাবো ভাবতেই অবাক লাগে।”

— “তাহলে তো ভাবিকে দেখাই লাগে। আমরাও দেখবো ভাবি কেমন।”

আবির হাসলো কিছু বললো না। আবিরের দুই একজন বন্ধুর মনে শিমুকে দেখার কামনা জাগলো সাথে অবৈধ কিছু আকাঙ্খা। আড্ডা শেষে বন্ধুবান্ধব সবাই আগে চলে গেছে। আবিরও বেরিয়ে আসে। গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়। কিছুদূর আসতেই ফুলের দোকান দেখে গাড়ি থামায় আবির। কিছু লাল গোলাপ আর একটা বেলীফুলের মালা কিনে নেয়।

রুমে এসে দেখলো শিমু জায়নামাজে বসা। আবির অবাক হয় কারণ সে শেষ কবে নামাজ পড়েছে মনে নেই। ফুল আর মালাটা রেখে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে দেখে শিমু ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গোলাপ ফুলগুলো নাকের কাছে ধরে রেখেছে। আবির এসে শিমুর পেছনে দাঁড়ায়। ঘোমটা সরিয়ে বেলীফুলের মালাটা নিয়ে খোপায় লাগিয়ে দেয়। শিমুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বারবার খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে কেমন লাগছে। যতই দেখছে ততই আবিরের নয়ন জুড়িয়ে যাচ্ছে।

আবির বললো,
— “আচ্ছা আমি খাবার নিয়ে আসছি। তুমি আমাকে তোমার হাতে খাইয়ে দেবে?”

শিমু একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালো। কি বলবে বুঝতে পারছে না। আবির আবার বললো,
— “দিবে না?”

শিমু মাথা নাড়ায়। আবির খুশিতে গালে টুপ করে চুমু দেয়। দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় খাবার আনতে। শিমু গালে হাত দিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।

শিমু আবিরের মুখে খাবার দিচ্ছে আর আবির একবার আঙুলে বা হাতে চুমু দিচ্ছে আবার আঙুলে কামড় দিচ্ছে। আবিরকেও খাইয়ে দিচ্ছে নিজেও খাচ্ছে। শিমু চেয়েছে পরে খেতে কারণ আবিরের সামনে এভাবে খেতে লজ্জা লাগছিলো। কিন্তু আবির বাচ্চামি শুরু করেছে। তার সামনে খেতে হবে মানে হবেই। বাধ্য হয়েই শিমু খাওয়া শুরু করে।

খেয়ে দেয়ে রাতে দুজন শুয়ে পরে। শোয়ার আগে আবির শিমুর চুল খুলে দেয়। বেলীফুলের মালাটা বেড সাইডের টেবিলে রাখে। চুলে চুমু দিয়ে বালিশে মাথা রাখতেই আবির ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। ঘুমন্ত আবিরকে দেখতে ব্যস্ত শিমু। হাতটা বাড়ায় আবিরের চুল ছুতে আবার কি মনে করে হাত সরিয়ে নেয়।

—————————————-
পরেরদিন আবির জলদি জলদি অফিসে চলে যায়। শিমু ঘুম থেকে উঠে আবিরকে পায়নি। বেড সাইডের টেবিলে নাস্তার প্লেট রাখা ছিলো। হাত মুখ ধুয়ে এসে নাস্তা খেয়ে নেয়। প্লেট রাখার সময় ছোট একটা চিরকুট পেলো শিমু। তাতে লেখা ছিলো, “মাই বিউটিফুল ওয়াইফ সরি। আজকে তাড়াতাড়ি যেতে হচ্ছে। সন্ধ্যায় ফিরে আসবো প্রমিজ। উম্মম্মাহ! এটা কিন্তু গালে।” চিরকুটের শেষ লাইন পড়ে শিমু মাথা নত করে মুচকি হাসলো।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত দশটা বাজতে চলেছে অথচ আবিরের ফেরার নাম নেই। শিমু অপেক্ষা করতে করতেই ঘুমিয়ে গেছে। দরজা খুলার আওয়াজে উঠে বসলো শিমুম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত দুইটা বাজে। অবাক হলো। আবিরকে ঘরে ঢুকতে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। আবির হেলেদুলে হেটে আসছে। গায়ের কোট হাত থেকে ছুড়ে মারলো। শার্টের ইন ঠিক নেই। গলার টাইও ঠিক নেই। চুল গুলো উসকোখুসকো। মুখটা মলিন। আবির এসে শিমুর সামনে দাড়ালো। শিমু আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ লাল হয়ে আছে। আবিরের মুখে মলিন হাসি। শিমু মনে মনে ভাবলো,
— “উনার কি শরীর খারাপ এমন লাগছে কেনো? আর শরীর থেকে কেমন উটকো গন্ধ বের হচ্ছে।”

হঠাৎই শিমুর কানটা ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। ছিটকে পরলো মেঝেতে। শিমু চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলো। মাথা ভনভন করছে। আবির পুরো শরীরের শক্তি দিয়ে থাপ্পড় মারলো শিমুকে। খোপা খুলে চুল পিঠে ছড়িয়ে গেছে। শিমু মাথা ঘুড়িয়ে আবিরকে দেখেই নেতিয়ে পরলো মেঝেতে।

চলবে,,,
® নাহার।

সুখপাখি। সূচনা পর্ব

0

সুখপাখি।
সূচনা পর্ব।
® নাহার।

“শিমুপু জানো ভাইয়ু তোমাকে বেচে দিয়েছে। একটু পর ওই লোকটা এসে তোমাকে নিয়ে যাবে।”

তাথৈই এর কাছ থেকে এমন একটা কথা শুনে শিমু হাসলো। তাথৈই প্রায়ই বলে সে শিমুকে বিক্রি করে দিবে। আর যে টাকা পাবে সেগুলা দিয়ে অনেক চকলেট খাবে। কলেজের আজকে তৃতীয় দিন ছিলো শিমুর। মাত্রই ফিরেছে সে। কাট ফাটা রোদের মধ্যে দিয়ে হেটে এসে প্রায়ই ক্লান্ত শিমু। কাধ থেকে ব্যাগটা রেখে নেকাব খুললো। ঢকঢক করে দুইগ্লাস পানি খেয়ে হাতের মোজা খুলছে। তাথৈই আবার শিমুকে বললো,
— “শিমু শুনো না, ভাইয়ু তোমাকে বেচে দিবে। তুমি পালিয়ে যাও।”

তাথৈইকে কোলে নিয়ে দুইগালে চুমু দিলো শিমু। কপালের চুল সরিয়ে দিয়ে বললো,
— “আমাকে বিক্রি করে যে টাকা পাবে সেগুলা দিয়ে আমার লক্ষী বোনটা অনেক চকলেট খাবে। ঠিকাছে?”

তাথৈইকে কোলে নিয়ে রুমে আসলো। বিছানায় বসিয়ে দিয়ে পরনের বোরকা খুলে হ্যাঙারে ঝুলিয়ে বারান্দায় রেখে আসলো। তাথৈই খুব রেগে আছে। ফোসফাস করছে। শিমু ওয়াশরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে এলো। তীব্র রোদের কারণে শিমুর গাল দুটো লাল হয়ে আছে।

ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই রুমে শিমুর দাদি আসলো। এসেই খট করে দরজা লাগিয়ে দিলো। শিমু তার দাদিকে দেখে হাসলো মাত্র। গামছা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো,
— “কি হয়েছে বুড়ি? দরজা লাগালে কেনো?”

দাদি শিমুর হাতে কিছু টাকা গুজে দিয়ে বললো,
— “শিমু তুই পালিয়ে যা। মাহিন তোকে বিক্রি করে দিয়েছে।”

— “কি যা তা বলছো দাদি। তুমি জানো মাহিন ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। তাহলে কেনো আমাকে বিক্রি করবে?”

— “তুই মাহিনকে চিনিস না। টাকার জন্য নিজের বউকে বিক্রি করতে দুই মিনিট ভাববে না।”

তাথৈই দৌড়ে এসে শিমুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বললো,
— “প্লিজ তুমি চলে যাও। ওই লোকটা অনেক খারাপ।”

শিমুর দাদি সৈয়দা খাতুন জোর করে বোরকা পরিয়ে দিলো। ব্যাগের মধ্যে কিছু কাপড় চোপড় ঢুকিয়ে দিয়ে বললো,
— “এখান থেকে অনেক দূরে চলে যা।”

সৈয়দা খাতুন আগে আগে বের হলেন। দরজার কাছে এসে দরজা খুলার আগে বাহির থেকে মাহিন ভেতরে ঢুকলো। সৈয়দা খাতুন ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। আমতা আমতা করে বললো,
— “তুই এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি যে? তোর তো তিনটায় আসার কথা।”

মাহিন বাঁকা হেসে বললো,
— “আমি আসায় সমস্যা হয়ে গেছে? তোমার নাতনিকে এখনো ভাগিয়ে দিতে পারোনি তাই না?”

মাহিনের মা মিসেস রাবেয়া বেগম বের হয়ে এলেন। বললেন,
— “বাবা এইকাজটা করিস না। শিমু কিছুদিন পর তোর বউ হবে। আর তুই ওকে বিক্রি করে দিতে চাচ্ছিস।”

মাহিন তেড়ে এসে রাবেয়া বেগমের গলা চেপে ধরে। সৈয়দা খাতুন আতকে উঠে। দৌড়ে এসে বললো,
— “মাহিন ছাড় আমার বউমাকে।”

মাহিন সৈয়দা খাতুনেরও গলা চেপে ধরে। মা এবং দাদি দুইজনের গলা চেপে ধরেছে। ভেতর থেকে শিমু তাড়াতাড়ি করে এসে বললো,
— “মাহিন ভাই প্লিজ উনাদের ছেড়ে দিন। কেনো এমন করছেন আপনি? প্লিজ উনাদের ছাড়ুন।”

দুইজনকে ছেড়ে দিয়ে মাহিন শিমুর দিকে তাকায়। শিমুর দুই বাহু চেপে ধরে বললো,
— “পালিয়ে যাওয়ার দুঃসাহস দেখাবি না। একটু পর আবির চৌধুরি আসবে। তার সাথে তোর বিয়ে। একটু গরমিল হলে তোর সামনেই এদের লাশ পরবে। মনে রাখিস কথাটা। পালানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করবি না।”

মাহিন তার মা এবং দাদির উদ্দেশ্যে বললো,
— “রান্নাবান্নার আয়োজন করো যাও। কোনো কমতি চাই না আমি।”

দরজার দিকে তাকিয়ে বললো,
— “বাজার নিয়ে ভেতরে আসো তোমরা।”

দুইটা ছেলে বাজারের ব্যাগ নিয়ে ভেতরে এলো। শিমু তাডের দেখে ভেতরে চলে গেলো। বাজারের ব্যাগ রান্নাঘরে রেখে ছেলে দুটো চলে যায়। সৈয়দা খাতুন এবং রাবেয়া বেগম নিরুপায় হয়ে রান্নাঘরে গিয়ে রান্নার ব্যবস্থা শুরু করলেন। মাহিন শিমুর কাছে গেলো। শিমু তাথৈইকে কোলে নিয়ে বসে ছিলো। মাহিন এসেই তাথৈইকে একটানে কোল থেকে নামিয়ে দিলো। তাথৈইকে বললো,
— “বাইরে যাও।”

তাথৈই না গিয়ে শিমুর হাত ধরেই দাঁড়িয়ে ছিলো। মাহিন ঠাটিয়ে চড় মারে তাথৈইকে। তাথৈই এর চিৎকারে রাবেয়া খাতুন এসে নিয়ে যান। শিমু বললো,
— “কেনো এমন করছেন আপনি? তাথৈইকে মারলেন কেনো? এতটুকু একটা বাচ্চাকে এভাবে মারলেন আপনি। আর বিয়েতো আপনার সাথে ঠিক হয়ে আছে তাহলে কেনো এসব করছেন?”

মাহিন বাঁকা হাসলো। শিমুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
— “খুব অহংকার না তোর? পর্দা করিস। পরপুরুষের সামনে যাস না। তোর এই অহংকার গুড়িয়ে দেয়ার জন্যই এতোকিছু।”

শিমু অবাক হলো এমন কথা শুনে। মাহিন আবার বললো,
— “অনেকবার বলেছি আমার কাছে আসতে। রাতে আমার সাথে সয়ম কাটাতে কিন্তু তোর এই অহংকারের কারণে পাত্তাই দিস নি।”

— “বিয়ের পর তো আমি আপনার সাথেই থাকতাম।”

— “উহু। বিয়ে নয়। বিয়ের আগে একটু ফুর্তি করতে চেয়েছি। উঠতি বয়স। আর তোর যে দৈহিক গঠন। ইশ্! আগুন ধরে মনে। তাই একটু মজা করতে চেয়েছিলাম। আচ্ছা তোর ইন্টারনাল সাইজ কত? থারর্টি ফোর? নাকি থার্টি সিক্স?”

শিমু থাপ্পড় দিলো মাহিনের গালে। বললো,
— “আপনি আমাকে নিয়ে এতো বাজে চিন্তা কিভাবে করতে পারেন? লজ্জা লাগে না আপনার? কয়েকদিন পর আপনার সাথে আমার বিয়ে হবে আর আপনি এখন এসব বলছেন কেনো? আর কেনোই বা অন্যের কাছে বিক্রি করছেন?”

— “একটা ফ্ল্যাট, দশ লক্ষ টাকা আর সারাজীবন ফূর্তি করার জন্য প্রতিদিন নতুন নতুন মেয়ে দিচ্ছে আমাকে এই আবির চৌধুরি। বিনিময়ে তার শুধু একটা ইনটেক মেয়ে চাই। যার কোনো আত্মীয় স্বজন থাকবে না। এমন একটা সুযোগ আমি হাত ছাড়া কিভাবে করি বল।”

শিমু কাঁদতে কাঁদতে বললো,
— “সেই ছোটবেলা থেকে আপনাকে আমি চেয়ে এসেছি তার বিনিময়ে আপনি আমাকে এভাবে ঠকাচ্ছেন?”

— “আমিও তোকে চাই। কিন্তু আগে আমি ফ্ল্যাট আর টাকা চাই। তাই ওইযে শাড়ি আর গয়না রাখা আছে সেগুলা পড়ে রেডি হয়ে নে।”

মাহিন শিমুর কানে ফিসফিস করে বললো,
— “তোর পর্দার অহংকার সব গুড়িয়ে দিবে এই আবির চৌধুরি। রেডি ফর ইট। আমি এসে যদি তোকে রেডি না পাই তাথৈইকে বিক্রি করে দিবো। কচি দেহ। টাকা অনেক আসবে।”

— “নিজের বোনকে নিয়ে এসব বলতে আপনার একটুও বাধছে না? আমি নাহয় পর কিন্তু তাথৈই তো আপনার নিজের মায়ের পেটের বোন।”

— “যেখানে আমি নিজের মাকে গলা চেপে ধরতে পারি। সেখানে এসব সম্পর্ক আমার জন্য কিছুই না।”

মাহিন চলে গেলো। শিমু মেঝেতে বসে পরলো। সৈয়দা খাতুন এগিয়ে এলেন। শিমু তার দাদিকে ধরে কান্নায় ভেঙে পরলো। ভাঙা গলায় বললো,
— “দাদি আমিতো কোনো অহংকার দেখাইনি। শুধু পর্দা করি, নামাজ পড়ি আর ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখি। তাহলে কেনো এমন হলো? আমি কি মাহিনকে কম ভালোবেসেছি? তাহলে কেনো আমাকে এভাবে ঠকালো মাহিন?”

— “এখনো সময় আছে তুই পালিয়ে যা। নিজের জীবন গড়ে নে।”

— ” না দাদি। আমি চলে গেলে একটু খানি বাচ্চা মেয়ে তাথৈইকে বিক্রি করে দিবে মাহিন।”

সৈয়দা খাতুন আর বলার জন্য কিছু পেলেন না। শিমুর মনে হলো তিনজন মানুষকে এভাবে শেষ হতে না দিয়ে সে নিজেই বলির পাঠা হয়ে গেলে তো সমস্যা নেই। তাছাড়া শিমুর জন্য কাঁদার আপন বলতে কেউ নেই। তাই মাহিনের কথা অনুযায়ী রেডি হয়ে নিয়েছে।

যথা সময়ে বিয়ে হয়ে গেলো শিমুর। খাওয়া দাওয়া শেষে শিমুকে নিয়ে চলে গেলো আবির চৌধুরি।

——————————
ফুলে সাজানো পুরো ঘর। ফুলের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে পুরোটা রুম। শিমু বিছানার এক কোণে বসে আছে। নিরবে কাঁদছে। মনে মনে ভাবছে — “কাউকে মন থেকে চাইলে বুঝি এভাবে ঠকতে হয়? কাউকে অন্ধের মতো ভালোবাসলে বুঝি তাকে অন্ধ প্রমাণ করা হয়?”

শিমুর ভাবনার মাঝেই দরজার খটখট আওয়াজ হলো। শিমু নড়ে চড়ে বসলো। শিমু মাথাটা হালকা তুলে সামনে তাকালো। চওড়া দেহের লম্বা এক যুবক তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে কালো সুট প্যান্ট। তার পারফিউমের ঘ্রাণ এসে শিমুর নাকে লাগছে। শিমু কাপা কাপা কণ্ঠে সালাম দিলো। অপাশ থেকে কোনো উত্তর নেই। লোকটা শিমুর কাছে এগিয়ে এলো। শিমু মিনমিনে স্বরে বললো,
— “স্ত্রীর কপালে হাত রেখে একটা দোয়া পড়তে হয়। আপনি আমার কপালে হাত রেখে দোয়াটা পড়ুন।”

শিমু মাথাটা তুলে দেখলো লোকটা কিছু বলছে না। শিমু আবার বললো,
— “না জানলে সমস্যা নেই আমি শিখিয়ে দেবো আপনাকে।”

কথাবার্তা ছাড়াই শিমুকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো লোকটা। গায়ের কোটটা খুলে ফ্লোরে আছাড় মারলো। গলার টাই খুলে ছুড়ে মারলো অন্যদিকে। শার্টের উপরের তিনটা বোতাম খুলে ঝাপিয়ে পরলো শিমুর উপর।

চাহিদা শেষে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় শিমুকে খাট থেকে। তখন ফজরের আযান পরেছে। শিমুর জ্ঞান নেই। লোকটার অমানবিক অত্যাচারে শিমু জ্ঞান হারিয়েছে।

——————————
এগারোটার দিকে ঘুম ভাঙলো আবিরের। চোখ খুলে নিজেকে ফুলে সজ্জিত বিছানায় আবিষ্কার করলো। লাফ দিয়ে উঠে বসলো। গায়ে কাপড় নেই। বেড থেকে নামতে গিয়ে দেখলো লাল শাড়িতে জড়ানো একটা কম বয়সি মেয়ে। আবিরের মনে হলো এটা তার বিয়ে করা বউ। নিচে নেমে মেয়েটার মাথার পাশে বসলো। শাড়িটা ঠিকভাবে নেই। এলোমেলো। চুলগুলোও এলোমেলো। ঠোঁট কেটে রক্ত জমাট বেধে গেছে। গালে, গলায়, বুকে কামড়ের দাগ। কোথাও কালচে তো কোথাও লাল হয়ে আছে। মেয়েটার গালে হালকা থাপ্পড় দিয়ে ডাকলো কোনো সাড়াশব্দ নেই। আবির তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
— “তোরা মেয়েরা এতো রঙ দেখাস কিভাবে? উঠ বলছি।”

আবির দাঁড়িয়ে যায়। পা দিয়ে গুতা দেয় পেটে তাতেও সাড়াশব্দ নেই। রাগের বসে জোরেই লাথি মারে। এতেও কোনো সাড়াশব্দ পেলো না। আবির বললো,
— “এভাবে মানবি না। দাড়া দেখাচ্ছি মজা।”

কোলে তুলে নিলো মেয়েটাকে। ওয়াশরুমে এসে বাথটাবে ফেলে দিলো। বেরিয়ে এসে বিছানার সামনে দাঁড়ালো। কোমড়ে একহাত রেখে অপর হাতে মাথা চুলকে ভাবছে মেয়েটা উঠছে না কেনো? বেডশিটের দিকে নজর যেতেই কাছে এসে ভালো করে দেখলো। অর্ধেক জায়গায় ব্লাডে লাল হয়ে আছে। আবির দৌড়ে ওয়াশরুমে গেলো। মেয়েটা বাথটাবের পানিতে ডুবে গেছে। তাড়াতাড়ি করে কোলে তুলে রুমে এনে বিছানায় শুয়ে দিলো। মেয়েটার জন্য কোনো কাপড় আনা হয়নি। নিজের একটা সাদা শার্ট এবং কালো টাউজার পরিয়ে দিয়ে বিছানা চাদর পালটে ডাক্তারকে ফোন দিলো।

লেডি ডাক্তার ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বললো,
— “ফার্স্ট টাইম?”

আবির আমতা আমতা করে বললো,
— “ইয়েস।”

— “আই সি।”

ডাক্তার দাঁড়িয়ে বললো,
— “শি ইজ ভেরি উইক ফিজিক্যালি এন্ড ম্যান্টালি। শি নিড রেস্ট। ইউ সুড গিভ হার সাম টাইম।”

— “ইয়াহ। থ্যাংক ইউ।”

ডাক্তার চলে গেলো। আবির শাওয়ার নিয়ে এসে মেয়েটার পাশে বসলো। একধ্যানে তাকিয়ে আছে আছে মেয়েটার দিকে। দুধে আলতা শরীর মেয়েটার। রক্তজবার ন্যায় ঠোঁট। ভ্রু কুচকুচে কালো। চোখের পাপড়ি বেশ ঘন এবং লম্বা। নাকের ডগায় একটা কালো তিল আছে। যেটা সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। দেখেই মনে হচ্ছে বয়স সতেরো কি আঠারো হবে। চেহারায় একটা অদ্ভুত মায়া আছে। ঘুমন্ত অবস্থায় আরো নিষ্পাপ লাগছে।

একধ্যানে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলো আবিরের জানা নেই। তবে সে এটা বুঝতে পারছে এর আগে এতোটা খুটিয়ে কোনো মেয়েকে সে দেখেনি। মেয়েটাকে পুতুলের মতো সাজানোর ইচ্ছে জাগলো আবিরের। মোবাইল নিয়ে কাকে যেনো ফোন দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ির মেইড অনেকগুলো শপিংব্যাগ এনে আবিরের রুমে রেখে গেলো। আবির মেয়েটার হাতে চুমু দেয়। কপালে চুমু দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
— “হেই বিউটিফুল লেডি গেট আপ আরলি। আই এম ওয়েটিং।”

মেয়েটা একটু নড়েচড়ে উঠে। আবির সোজা হয়ে বসে। মেয়েটা পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো অপরিচিত জায়গা। সামনে তাকিয়ে একজন সুদর্শন যুবককে দেখে ধড়ফড় করে উঠে বসতে চাইলেই ব্যাথায় কুকিয়ে যায়। ধপ করেই বিছানায় পরে যায়। আবির শুধু মুগ্ধ হয়ে দেখছে। চোখ কুচকে ফেললেও মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে। মেয়েটা শুয়ে থেকেই চোখ খুলে শান্ত হয়ে আবিরের দিকে তাকায়। আবির নেশা ধরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— নাম কি তোমার?

চলবে,,

একগুচ্ছ কদম শেষ পর্ব

1

একগুচ্ছ কদম ?
শেষ পর্ব
লেখা : আহমেদ রিপা

সেদিন সন্ধ্যায় রিদিদের বাসায় একটা ভিডিও ক্লিপ আর ডায়েরী দিয়ে পাঠিয়েছিলাম । তারপর চলে এসেছিলাম অনেক দূরে হয়তো কখনো ফিরব নয়তো সারাজীবন দূরেই রয়ে যাব

সেদিন সন্ধ্যায় রিদির কাছে পার্সেল আসতেই ও মাহিদের কাছে নিয়ে যায় সেখানে মোহো ও উপস্থিত ছিল ।

রিদি : ভাই পার্সেল এসেছে তোমার নামে ।
মাহিদ : দে দেখি কি আছে ।
রিদি : নাও ।
মাহিদ : ( পার্সেল হাতে নিয়ে বসে খুলতে লাগল । ভিতরে ডায়েরি দেখে অবাক হয়ে যায় কারণ ডায়েরি টা ছিল সানার । মাহিদের হাত থেকে ডায়েরি নিয়ে মোহো পড়তে লাগল !! )

“আমি সৌহার্দ্য কে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি কিন্তূ ও মনে হয় না আমায় ভালোবাসে। ও আমায় ব্যবহার করছে । ওর জন্যেই আমাকে মাহিদের সামনে বলতে হয়েছে আমি রিদানশকে ভালোবাসি । ওর জন্যই রিদানশ আর মাহিদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে । ও কি চায় আমি নিজেও বুঝতে পারছি না ।‌ কালকে ওর সাথে দেখা করে আমাকে এইসব এর শেষ করতে হবে। আমি মাহিদকে সব বলে দিবো সব । সৌহার্দ্য খুব হিংসা করে মাহিদ আর রিদানশ ও খুব খারাপ খুব । ওর কাজে বাধা দিলে ও আমাকে এবং আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলবে তবু আমি সব বলে দিব মাহিদকে অন্যকে কষ্ট দিয়ে কখনো সুখী হওয়া যায় না কখনো না । আমি সৌহার্দ্য কে ভালোবাসি তাই পারলাম না ওকে অভিশাপ দিতে। পরবর্তীতে আমার কিছু হলে তার জন্য দায়ী থাকবে সৌহার্দ্য আহমেদ ”

মোহো : এইটুকুই লেখা শেষ পৃষ্ঠাগুলোতে ।
রিদি : ভা ভাই ভিডিও ক্লিপ টা দাও আর ওখানে আরো কিছু আছে দাও আমাকে দেখব আমি ।
মাহিদ : এখানে তোর জন্য চিঠি রয়েছে নে পড়ে দেখ !!

কদম ?

প্রথমত তোমাকে কদম বলার জন্য সরি । আমি তোমাকে ভালোবাসি কদম খুব ভালোবাসি । তুমি যে কোনো অন্যায় করো নি আমি জানি তবু একটা অন্যায় তুমি করে ফেললে আমার সাথে তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারতে কদম । সৌহার্দ্য তোমায় যা যা বলেছিলো তা আমাকে আগেই বলতে পারতে তাহলে এতো গুলো দিন আমাদের কাউকে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো না। সব ভুল বোঝাবুঝি আগেই শেষ হয়ে যেত ।‌ এখন যে আমি চাইলেও তোমায় কাছে টেনে নিতে পারব না কদম ।‌ তোমাকে কাছে টেনে নিলেই আমার মন বলবে একসময় তুমি আমাকে অবিশ্বাস করেছিলে । ভুল সবার ছিল শাস্তি আমি আর আমার বোনটা পেল । আমার বোন তোমার ভাইকে খুব ভালোবাসে ওকে দেখে রেখো আর ওকে আবার বিনা অপরাধে শাস্তি দিও না যেন। ও কিন্তু একদম আলাদা । ওকে অনেক ভালোবেসও । ভিডিও ক্লিপ টা দেখে নিও সেখানে সৌহার্দ্য পুলিশের কাছে তার অপকর্মের স্বীকারোক্তি করেছে। আর তাতে তোমরা সবাই বুঝবে আমার কোন দোষ নেই আমি কাউকে মারিনি । আমি কিন্তু মাহিদকে ক্ষমা করে দিয়েছি ওর সাথে একটুও রাগ করে নেই । তাই ওকে একদম মন খারাপ করতে না করো । শুনলাম কাল ওরা বিয়ে করছে অনেক দোয়া রইল আমার ওদের জন্য ।ভালোবাসি তোমায় সত্যিই ভালোবাসি । তোমার জায়গা কখনো কেউ নিতে পারবে না কখনো না। কখনো আবার আসব কিনা জানিনা তবে তোমায় ভালবেসে যাব সারাজীবন। আমার কথা মনে হলে একগুচ্ছ কদম ? নিয়ে চলে যেও সেই পুকুর পাড়ে দেখবে তোমার একটুও মনে পড়বে না আমায় । এই কদম কান্না করো না কিন্তু তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারি না । তুমি অনেক অনেক ভালো থেকো আর নতুন কাউকে নিয়ে জীবনে এগিয়ে যাও । ভালো থেকো তোমরা।

ইতি তোমার
ভালোবাসা

রিদি : ( চিঠিটা পড়া শেষ হতেই ফ্লোরে বসে পড়লো রিদি ) আ আ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে ও ভাই ভাই ও চলে গেছে ও চলে গেছে ভাই । তোমাদের জন্য ও চলে গেছে তোমাদের জন্য । তোমাদের আমার লাগবে না লাগবে না কাউকে আমার ( বলেই চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো মাহিদ ওকে ধরতে আসলেই ও উঠে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল। আর মোহো সেই এক জায়গায় বসে আছে নিশ্চুপ হয়ে । মাহিদ ধীরে ধীরে ওর কাছে গিয়ে ওর কোলে মাথা রেখে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।)

মাহিদ : ও চলে গেছে মোহো ও চলে গেছে। আমি জানতাম না যে সৌহার্দ্য আমাদের সাথে এতো বড় বেইমানি করবে । ও কিভাবে পারল এটা করতে ।
মোহো : শান্ত হোন‌ আপনি । যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে । দাভাইয়ের রাগ কমে গেলেই চলে আসবে আমাদের কাছে । ও এখন নিজেকে সময় দিতে চাইছে দিক । আপনি কালকে আমাদের বিয়ের আয়োজন করুন ( বলেই চুপচাপ উঠে চলে গেল ) ।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একহাতে একগুচ্ছ কদম আরেক হাতে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম ” কেমন আছো কদম । কতো গুলো দিন হয়ে গেল তোমাদের থেকে দূরে আছি । মাহিদ আর মোহো বিয়ে করে সুখে আছে আর তুমি তোমার জব নিয়ে ব্যস্ত আমাকে কি তোমার আদৌ মনে পড়ে। আমি এখনো তোমায় আগের মত ভালোবাসি। বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় একগুচ্ছ কদম হাতে বাসায় ফিরি । আমি এখনো তোমায় কদম বলেই ডাকি তুমি কিন্তু রাগ করো না আবার । বাপি কতো বলে অন্য কাউকে নিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে কিন্তু আমি যে মনে প্রাণে তোমাকেই আমার স্ত্রীয়ের জায়গা দিয়েছি নতুন কাউকে নিয়ে কিভাবে ভাববো । এই একজীবনে তুমিই নাহয় আমার হলে ক্ষতি কি তাতে । একগুচ্ছ কদম হাতে আমি আজো বসে আছি শুধুই তোমার জন্য একবুক ভালোবাসা নিয়ে । কোনো একদিন হুট করে একগুচ্ছ কদম হাতে তোমার সামনে গিয়ে চমকে দিব তোমায় । ভালোবাসি কদম ?

সমাপ্ত

একগুচ্ছ কদম পর্ব : ৯

0

একগুচ্ছ কদম ?
পর্ব : ৯
লেখা : আহমেদ রিপা

[ গল্পের মাঝে বিভিন্ন ধরনের কথা থাকতে পারে।
কিছু কিছু ঘনিষ্ঠ দৃশ্যও উল্লেখ থাকতে পারে গল্পের ক্ষেত্রে। কারো কাছে চটি লাগলে এক্সট্রেমলি সরি আমার কিছু করার নেই।]

কিছুদিন পরে যখন আমি রিদির কাছে আমার ভালোবাসার প্রকাশ করি তখন সে আমায় জানায় তার সাথে সৌহার্দ্যের একটা প্রণয়ের সম্পর্ক আছে। আমি ভেঙে পড়েছিলাম বাপি আমায় সামলিয়ে রাখছিলেন। ঠিক সেই সময় একদিন সৌহার্দ্য এবং রিদিকে পার্কে একেঅপরের হাত ধরে হাঁটতে দেখে আমার কষ্টটা আবারও বাড়ছিল। রাগের মাথায় এলোমেলো ভাবে গাড়ি চালাতে গিয়ে একটা এক্সিডেন্ট করে বসেছিলাম । ৩বছর হসপিটালে ছিলাম আমেরিকাতে। মোহো জানত না ও জানত আমি রিদিকে কষ্ট দিয়ে দূরে চলে গিয়েছিলাম। বাপি আমাকে তখন সামলে নিয়েছিলেন তবে আমার মনে একটা রাগ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ওদের থেকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। বাপিকে বলে ওদের পিছনে লোক লাগিয়ে সব খোঁজ খবর নিয়েছি । ৪বছর পরে এই দেশের মাটিতে আবার পা রেখেছি সবার থেকে প্রতিশোধ নিতে।
এতো কিছুর পিছনে যে আছে তাকে শাস্তি পেতে হবে।

বর্তমান……….

অতীত ভাবতে ভাবতে কখন যে রাত শেষ হয়ে সকাল হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেলাম আজকে নতুন কিছু হবে ।

রিদিতা : নিজেকে শক্ত করে তৈরি হতে লাগলাম ভার্সিটির জন্য । ওরা আমার জন্য অপেক্ষা করবে । আমি আর ভেঙ্গে পড়ব না একবার যেহেতু ওর থেকে দূরে সরে এসেছি আর যাব না ওর কাছে অনেক কষ্ট দিয়েছি ওকে আমি আর পারব না। ও সবাইকে ধ্বংস করে দিবে ওর চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছি আমি । এইসব ভাবতে ভাবতে তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেলাম ভার্সিটির জন্য।

মোহো : আমার বাসায় কবে যাবেন বিয়ের কথা বলতে ?
মাহিদ : কিছুদিন পর ।
মোহো : কিছুদিন পর কিছুদিন পরে
কবে মাহিদ ?
মাহিদ : বললাম তো কিছুদিন পরে চেঁচামেচি করছো কেন।
মোহো : চেঁচামেচি করব না তো কি করব ২বছর যাবত আপনার কিছুদিন পর কিছুদিন পর শুনেই চলেছি । আপনি কি চাচ্ছেন বলুন আমাকে ।
মাহিদ : কিছুদিন পরেই যাব সত্যি ( বলেই মোহোর হাতে হাত রাখলাম )।
মোহো : তাহলে কিছুদিন পরেই কথা হবে আমাদের । আসছি ( বলেই হাত ছাড়িয়ে চলে আসলাম । ২বছর যাবত মাহিদকে বিয়ের কথা বললেই এড়িয়ে যায় । বাসায় জানাতে বললে বলে কিছুদিন পর আমি বুঝতে পারছি না কি চায় উনি । কেনো এই লুকোচুরি খেলছেন। আজকে আর ভার্সিটিতে যাব না । )

-হ্যালো পাঠিয়ে দিয়েছ ?
-হ্যা ভাই পাঠিয়ে দিয়েছি সন্ধ্যার পর পর পেয়ে যাবে।
-আচ্ছা ।

ফোন টা কেটে দিলাম। এইবার তোমরা দুভাই বোন অনুতপ্ত হয়ে আমার পিছন পিছন ঘুরবে । অথচ আমি ধরা দিব না । উমমমম সবচেয়ে বড় শাস্তি তো অনুতপ্ত হওয়া । তোমাদের মতো যদি আমিও একি পথে চলে তোমাদের শাস্তি দেই তবে তোমাদের আর আমার মধ্যে কোনো পার্থক্যই থাকবে না। রিদিকে আমি ভালোবাসি আর মাহিদকে আমার বোন। নিজের বোনের ভালোবাসাকে কঠিন শাস্তি দেয়ার মতো মন মানসিকতা আমার নেই । আর আমার ভালোবাসা সে তো সবার খেলায় একটা গুটি ছিল মাত্র যাকে সবাই ব্যবহার করেছে। আর কেউ ব্যবহার করবে না তাকে এইবার সে নিজের মতো বাঁচুক। আমি তোমায় দূর থেকেই ভালোবেসে যাবো কদম ।

ভার্সিটির সামনে রিদি আসতেই ওকে টেনে নিয়ে গাড়ির মধ্যে ফেললাম । আজই শেষ দেখা ওর সাথে আমার।

রিদি : কি চাই আপনার বলুন ।
আমি : আজকে তোমার কিছু সময় চাই । এরপর তোমার সামনে আসব না আর ।
রিদি : বলুন কি বলবেন শুনছি আমি ।
আমি : তোমাদের বাসায় সন্ধ্যায় কিছু জিনিস যাবে তোমরা দুভাই বোন দেখে নিও ।
রিদি : তারপর
আমি : আমার বোনকে যেন তোমার ভাই কখনো কোন কষ্ট না দেয় । আমার বোনকে তোমরা আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছ ঠিক আছে তবে ও যেন কখনো কোন কষ্ট না পায় নাহলে তার শাস্তি পাবে তোমার ভাই । আমি কখনো তোমাদের জীবনে আসব না আমার বাপি কে নিয়ে দূরে চলে যাব তোমরা আমার বোনকে দেখে রেখ ( বলেই রিদিকে জড়িয়ে ধরলাম কষ্ট হচ্ছে খুব তবে ওরা সবাই ভালো থাকুক এটাই চাই আমি চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া পানি মুছে। নিজেকে স্বাভাবিক করে সরে আসলাম । ) তোমার বাসার সামনে এসে পড়েছি নেমে যাও । ভালো থেকো।

রিদি : আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। ওর কথাগুলো এখনো আমার কানে বাজছে । ও আমার থেকে দূরে সরে যাবে এটা শুনে আমার এতো কষ্ট কেন লাগছে। আমিও তো এটাই চাইতাম । তবে কি রিদানশ ও তার কদমকে ভুল গিয়েছে নাকি এখনো তার মনে শুধু তার কদমই রয়েছে কোনটা ঠিক ?

চলবে …….

একগুচ্ছ কদম পর্ব : ৮

0

একগুচ্ছ কদম ?
পর্ব : ৮
লেখা : আহমেদ রিপা

[ গল্পের মাঝে বিভিন্ন ধরনের কথা থাকতে পারে । কিছু কিছু ঘনিষ্ঠ দৃশ্যও উল্লেখ থাকতে পারে গল্পের ক্ষেত্রে। কারো কাছে চটি লাগলে এক্সট্রেমলি সরি আমার কিছু করার নেই। ]

অন্ধকার রুমে বসে আছে রিদিতা ওর সামনের সোফায় বসে আছে সৌহার্দ্য। আজকে সকালে হুট করে বাহির থেকে রিদিতাকে নিয়ে আসে সৌহার্দ্য এবং বলে চলো আজকে তোমাকে সব সত্যি কথা বলি।

সৌহার্দ্য : আমি মাহিদ রিদানশ বন্ধু ছিলাম তবুও রিদানশ আর মাহিদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল ওরি সবসময় সবকিছুতে আমাকে হারাত যা আমার মনে দাগ কেটে যাচ্ছিল সেই ছোট থেকেই। আত্মীয়-স্বজন বাবা-মা সবার প্রশংসায় শুধু মাহিদ আর রিদানশ আর আমি ছিলাম অপদার্থ।এর জন্য আমি মনে মনে ওয়াদা করেছিলাম এদের এই বন্ধুত্বই শেষ করে দিব আর আমি সেটা পেরেছিও ওদের মধ্যে আজকে যদি কিছু থাকে তা হলো প্রতিশোধের আগুন । ওদের এই শত্রুতা দেখে আমার মনে শান্তি আসে খুব ( বলেই সৌহার্দ্য হাসতে লাগলো )
রিদিতা : ক কি করেছিলেন আপনি
সৌহার্দ্য : উমমম কি করেছিলাম কি করেছিলাম
রিদিতা : বলুন কি করেছিলেন আপনি বলুন
সৌহার্দ্য : আচ্ছা যাও সেটাও বলি !!!
আমরা যখন সদ্য কলেজে ভর্তি হই তখনই মাহিদ আমাদের একজন ক্লাসমেট সানার প্রেমে পড়ে ভালোওবেসে ফেলে । দিন যত যাচ্ছিল মাহিদ মেয়েটার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছিল আর মেয়েটা ওহ্ সরি সানা আমার এক্স জিএফ সে আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছিল আমি ঠিক এই সুযোগটাই কাজে লাগালাম। সানাকে বললাম মাহিদের কাছে বলতে যে ও রিদানশকে ভালোবাসে তাহলেই আমি ওকে মেনে নিব পাগল মেয়েটাও ঠিক তাই করলো আর মাহিদ ওর কথা শুনে সানাকে কিছুই বলেনি কিন্তু আমি ওই সুযোগে মাহিদের কানে বিষ ঢালছিলাম । তারপর একদিন সুযোগ বুঝে সানাকে মেরে দিলাম আর এমনভাবে ওর লাশটা রাখলাম যেটায় সবাই ভাবল ও আত্মহত্যা করেছে ওর হাতে একটা চিরকুট ও রেখেছিলাম মেটায় লেখা ছিল !!

আমার ভালোবাসার মানুষটি আমার সাথে ছলনা করেছে !!!

এই এক লাইনের লেখা মাহিদ আর রিদানশের বন্ধুত্ব শেষ করে। বেচারা রিদানশ‌আর মাহিদ আজো জানে না এগুলো সব আমার করা কাজ ।
এখন ভাবছো তোমাকে কেন এগুলো বললাম তার কারণ হলো আমি জানি তুমি আর রিদানশ একে অপরকে ভালোবাস কিন্তু কেউ কাউকে বলনি আর তুমি যদি ওর ভালোবাসা মেনেও নাও দ্যান হি উইল বি ফিনিশট । আমি কি করতে পারি তুমি নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছ তাহলে ওর কাছে যাওয়ার বা কাউকে বলার চেষ্টা করো না তাহলে তোমার বাপি শেষ হয়ে যাবে। এখন তুমি আসতে পারো যাও যাও ( বলেই হাসতে হাসতে চলে গেল সৌহার্দ্য । আর এদিকে আমি নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলাম ভাবতে লাগলাম একটা মানুষ কিভাবে এতো জঘন্য হতে পারে শুধুমাত্র প্রতিশোধের জন্য একটা মেয়েকে খুন করে ফেললো এখন কিভাবে বাঁচাব রিদানশকে না না উনাকে বাঁচাতেই হবে আমার )

রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ি যাচ্ছি আর ভাবছি ভালোবাসা পেয়েও পাব না। মানুষটির বেঁচে থাকাটাই আমার কাছে অনেক কিছু আমি দূর থেকেই ভালোবেসে যাবো উনায় । হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো মোহো ফোন করেছে নিজেকে স্বাভাবিক করে ফোনটা রিসিভ করলাম ।

আমি : হ্যা বল
মোহো : কোথায় তুই
আমি : আমি একটু বাহিরে এসেছিলাম বাসায় যাচ্ছি কিছু হয়েছে কি তোর
মোহো : তোর ভাই আমাকে বুঝে না কেন রিদি
আমি : আমি আজকে ভাইয়ের সাথে কথা বলবো। তুই কান্নাকাটি করিস না প্লিজ ইয়ার । আমি রাখছি ( বলেই ফোন টা কেটে দিলাম।না আমাকে আজকেই ভাইয়ের সাথে কথা বলতে হবে । এর একটা বিহিত করতেই হবে আজ। )

বাড়িতে এসে নিজেকে তৈরি করতে লাগলাম ভাইকে কিভাবে কি বলা যায় । উফফফ আজকে ভাই আসছেও না। বিরক্তিকর ব্যাপার কিছুই ভালো লাগছে না । এরইমধ্যে কে যেন দরজায় টোকা দিলো আবার !!!

আন্টি : মাহিদ বাবা এসেছে তোমাকে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসতে বলেছে ।
আমি : আচ্ছা আপনি যান আমি আসছি ।

ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসলাম। হাত পা কাঁপছে আমার কখনো ভাইয়ের সামনে কিছু বলিনি আজ কি হবে আল্লাহ জানে।

মাহিদ : দিন কেমন কাটলো তোমার ।
আমি : ভালোই ।
মাহিদ : আজকে তুমি বাড়িতেও ছিলে না ক্লাসেও যাওনি কোথায় ছিলে ।
আমি : মোহোর বাড়িতে ছিলাম ।
মাহিদ : ওহ্ আচ্ছা । খেয়ে নাও ।
আমি : আমার কিছু কথা ছিল ভাই ।
মাহিদ : বলো ।
আমি : তুমি মোহোকে কেন মেনে নিচ্ছো না ওর কি দোষ কি করলে তুমি ওকে মেনে নিবে বলো ভাই বলো ?
মাহিদ : মোহোকে আমি মেনে নিবো কিন্তু
আমি : কিন্তু ( বলেই ভ্রু কুঁচকে ফেললাম )
মাহিদ : প্রথমত তুমি রিদানশের প্রোপোজাল রিজেক্ট করবে। দ্বিতীয়ত মোহোর মনে ওর ভাইয়ের জন্য ঘৃণা সৃষ্টি করবে তাহলেই মেনে নিবো মোহো কে বুঝলে ।
আমি : ( চিল্লিয়ে বলতে লাগলাম ) ভাই তুমি এটা করতে পারো না পারো না তুমি ।
মাহিদ : ( খেতে খেতেই জবাব‌ দিল ) আমি সব পারি সব । সময় হলেই তুমি বুঝতে পারবে ( বলেই উঠে চলে গেল আর আমি নির্বাক হয়ে বসে রইলাম। সবাই সবার স্বার্থ দেখছে আমার কথা কেউই ভাবছে না )

চলবে…….

একগুচ্ছ কদম পর্ব : ৭

0

একগুচ্ছ কদম ?
পর্ব : ৭
লেখা : আহমেদ রিপা

[ গল্পের মাঝে বিভিন্ন ধরনের কথা থাকতে পারে। কিছু কিছু ঘনিষ্ঠ দৃশ্যও উল্লেখ থাকতে পারে গল্পের ক্ষেত্রে । কারো কাছে চটি লাগলে এক্সট্রেমলি সরি আমার কিছু করার নেই । ]

( রিদিতার ঘাড়ে মাথা রেখেই বলতে লাগলাম ) কিসের এতো কথা ওই সৌহার্দ্যের সাথে আমার সাথে তো কথা বলো না তাহলে সাথে কিসের এতো কথা ওর সাথে তোমার !!
রিদিতা : ভা ভা ভাইয়ের বন্ধু হয় উনি তাই পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল ( বলেই চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল )
আমি : ওর সাথে আমি যেন তোমায় আর কথা বলতে না দেখি মনে রেখো ( বলেই ওর গলায় স্লাইড করতে লাগলাম )
রিদিতা : কথা বলব আপনি কে হুহ ( ভেংচি কাটলো )
আমি : আমি কে তাই না আর কিছু দিন যাক বুঝতে পারবে আমি কে !
রিদিতা : আমায় যেতে দিন আপনি ! ভাই আমাকে না দেখলে চিন্তা করবে ।
আমি : আচ্ছা যাও ( বলেই জড়িয়ে ধরলাম )
রিদিতা : ( আকস্মিক ভাবে জড়িয়ে ধরায় কিছু মূহূর্ত দাঁড়িয়ে রইলাম যখন বুঝতে পারলাম কি হয়েছে তখন চারপাশে চোখ বুলাতে লাগলাম আর তখনই মনে হলো কেউ দরজার পাশ‌ থেকে সরে গেলো । তাড়াহুড়ো করে উনাকে ছাড়িয়ে চলে আসলাম )

এইদিকে একা একা দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম” মাহিদ রিদিতার ভাই আর এইজন্যই মোহো আমাকে ওই কথাগুলো বলেছিল কিন্তু মোহো কিভাবে জানল সবকিছু আমাকে সব জানতে হবে ”

মাহিদ : রিদি কোথায় ছিলে‌ তুমি ?
রিদি : এ এইতো ভাই এইদিকেই ছিলাম ।
মাহিদ : আচ্ছা !! মোহো কোথায় জানো !!
রিদি : হ্যাঁ হ্যাঁ ওইদিকে ও ( কি ব্যাপার ভাই মোহোর কথা জিজ্ঞেস করছে কেনো )
মাহিদ : ওকে একটু ওই সাইডে আসতে বলো ! আমি অপেক্ষা করছি !!
রিদি : আচ্ছা বলছি ( বলেই চলে আসলাম আর ভাবতে লাগলাম ভাই কি তবে মোহোকে ভালোবাসতে শুরু করলো )

রিদি : এই যে মহারানী আপনাকে ভাই ডাকছে ওইদিকে যাও ।
মোহো : মা মানে তোর ভাই আমাকে ডাকছে ( অবাক হয়ে )
রিদি : ( ওর এই অবস্থা‌ দেখে হাসতে লাগলো ) হ্যা রে আমারই ভাই যা এখন তুই !
মোহো : যাই তাহলে ।

মোহো ওইদিকে আসতেই মাহিদ ওর হাত মুচরিয়ে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো । আচমকা এমন ঘটনায় মোহো হতবাক।

মাহিদ : অনেক সাহস তোমার তাই না ।
মোহো : কি বলছেন আপনি আর এমন ব্যবহার এর কারণ কি ।
মাহিদ : এমন ব্যবহার আরো আগেই করার দরকার ছিল !
মোহো : তো করেননি কেনো ?
মাহিদ : প্রশ্ন করছো তুমি আমায় তোমার এতো সাহস !!
মোহো : সাহস আছে বলেই আপনার মতো বেয়াদবকে ভালোবেসেছি ( মুচকি হাসতে লাগল)
মাহিদ : আমাকে ভালোবাসার চেষ্টাও করো না ধ্বংস হয়ে যাবে ( মোহোর গাল চেপে ধরে )
মোহো : ( মাহিদের বুকের উপর হাত দিয়ে ) ভালোবেসে তো ফেলেছি এখন কি হবে আমার।
মাহিদ : ধ্বংস হয়ে যাবে তুমি আর তোমার সেই ভাই রিদানশ চৌধুরী ।
মোহো : সেটা তো সময়ই বলে দিবে মাই ডিয়ার লাভ ।
মাহিদ : ( বুক থেকে ওর হাত সরিয়ে ) আমার ডায়েরি কেনো ধরেছিলে মোহো ।
মোহো : সামনে পড়েছিল পড়ে ফেলেছি ।
মাহিদ : তাহলে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছ তোমার আর তোমার ভাইয়ের ভালোবাসার কোন দাম আমার কাছে নেই ।
মোহো : ( চোখের কোণে পানি মুছে নিয়ে বলল ) ভাইয়ের দোষ ছিল কি ?
মাহিদ : হ্যা হ্যা ছিল তোমার ভাইয়ের দোষ তোমার ভাই আমাকে শেষ করে দিয়েছে ।
মোহো : তাহলে আমার কি দোষ বলুন ( মাহিদের দুহাত ধরে ) ।
মাহিদ : তুমি তোমার ভাই আমাদের থেকে দূরে থাকবে ( চলে আসল ) ।

চোখে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল মোহো মনে মনে তার একটা কথাই বলতে লাগলো ” এই পৃথিবীতে প্রায়ই সবাই , তার বিপরীত স্বভাবের মানুষের প্রেমে পড়ে ” ( হুমায়ূন আহমেদ )
আমিও পড়েছি আমার বিপরীত স্বভাবের মানুষটির প্রেমে । তাকে ভালোবাসি বলেই তাকে পেতে চাই না। সে যেন আমায় ভালোবাসে কাছে টেনে নেয়। ভাইয়ের শাস্তি কেন আমি পাবো একদমই না আমি কেন পাবো ( বলেই চোখ মুছতে লাগল তড়িঘড়ি করে )

খোলা মাঠে একা দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে বলতে লাগলো সৌহার্দ্য” কতো চেষ্টা করে তোদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেছি সেটা তো আর এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যেতে পারে না।‌ ছোট থেকে তোরা দুইজন একসাথে আমাকে হারিয়ে এসেছিস আর তখন আমি নিজেই নিজের কাছে ওয়াদা করেছিলাম তোদের একে অপরের শক্র করে ছাড়ব আর সেটা আমি করেছি আমি সফল হয়েছি । ছোট থেকে হারতে হারতে আজকে আমি জিতে গেছি । তোদের মধ্যে আরো ভুল বোঝাবুঝি হবে মাহিদ !!!

~Dushmani Jamm Kar
Karo Lekin ye
Gunajaish Rahe

Jaab Kabhi Dost ho
Jaaen to Sharminda
Na hon❤️

চলবে….

একগুচ্ছ কদম পর্ব : ৬

0

একগুচ্ছ কদম ?
পর্ব : ৬
লেখা : আহমেদ রিপা

কারো ডাকে অতীত থেকে বের হয়ে আসলো রিদানশ । অতীত ভাবতে ভাবতে কখন যে এতোটা সময় কেটে গেছে বুঝতে পারলাম না। আজোও ওই সময়টা মনে পরলে বুকটা কেঁপে উঠে । ওই সময়টাতে কতো আকুতি মিনতি কররেও তোমাকে আটকে রাখতে পারলাম না। ভুল কি সত্যিই আমার ছিল না সবটাই তোমার ছলনা ছিল । ছলনাই করেছো তুমি !!

!! তুমি বিচ্ছেদ চেয়েছো আর আমি তোমাকে
অবশেষে তুমি পেলে নতুন সঙ্গী
আর আমি পেলাম কলুষিত
কিছু স্মৃতি!!!

মনে মনে আওড়াতে লাগলাম । বিচ্ছেদ এর যে কি যন্ত্রণা । সবটা এখনো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। যতো চাই সব ভুলে যেতে ততোই সব মনে পড়ে । সেইদিন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কালো দিন । ভেঙ্গে পড়েছিলাম বাপি সামলিয়েছেন আমায় । কতো বার চেষ্টা করেছি মরে যাওয়ার । পারিনি আমি কিভাবে পারতাম আমার সাথে যে অন্যায় করেছে তার শাস্তি তাকে যে পেতে হবে। আমার বোন আমার থেকে দূরে সরে গেছে শুধু মাত্র তোমার জন্য রিদিতা খান ছাড়ব না আমি তোমায় ( চিৎকার করে বলতে লাগলাম ) আবারো ডুব দিলো অতীতের পাতায় !

দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল এভাবেই । প্রতিদিন রিদিতাকে এক নজর দেখতে ওর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। দুজনের মনেই তো ভালোবাসা ছিলো ।

বাড়িতে ঢুকতেই মোহো ডাকতে লাগল!!!
-দাভাই কথা ছিল তোর সাথে ( মোহো )
-বল ( বলেই সোফায় বসে পড়ল রিদানশ )
-দাভাই তুই রিদিকে ভালোবাসিস (মোহো )
-হ্যা বাসি তো ( রিদানশ )
-লাভ নেই ওর ভাই কখনোই মানবে না এইসব প্রেম ভালোবাসা ( মোহো )
-ওর ভাইয়ের মানা না মানা দিয়ে কি ( রিদানশ )
-ওর ভাইয়ের মানা দিয়ে অনেক কিছু ( মোহো )
-রিদি মানলেই হবে ওর ভাইকে দিয়ে কি হবে ( রিদানশ )
-কারণ ওর কাছে ওর ভাই সবার আগে আর ওর ভাই কখনোই মানবে না তোকে ( মোহো )
-কেন কেন‌ মানবে না আমায় সেইটা তো বলবি আমায় ( রিদানশ )
-( চিৎকার করে বলতে লাগলাম ) কারণ তোর জন্য মাহিদ খানের ভালোবাসা মরে গেছে ( মোহো )
-কি বলছিস এইসব আবল তাবল ( রিদানশ )
-কেন মানতে কষ্ট হচ্ছে এটাই সত্যি মাহিদ‌‌ খান তোকে ঘৃণা করে ঘৃণা আর সারাজীবন তাই করবে ( মোহো বলেই চলে আসলাম উপরে )

আমার জন্য মাহিদের ভালোবাসা মারা গিয়েছে‌ মানে কি । এটা কোন মাহিদ আমাকে জানতে‌ হবে । সব ভুল বোঝাবুঝি শেষ করতে হবে । মোহো কিভাবে জানল এগুলো সব সব জানতে হবে আমার ।

-রিদি চলো ( মাহিদ )
-হ্যা ভাই ( রিদি )
-(গাড়িতে উঠে বেড়িয়ে পড়লাম )
-পড়াশোনা কেমন চলছে তোমার ( মাহিদ )
-ভালোই চলছে ( রিদি )
-সামনের মাসে বাপি আসবে ( মাহিদ )
-আচ্ছা ! ভা ভাই ( রিদি )
-বলো ( মাহিদ )
-মোহো তোমাকে ভালবাসে ভাই ( রিদি )
-জানি আমি কিন্তু এটা ওর আবেগের সময় ও ভাবছে ও আমায় ভালোবাসে কিন্তু এটা ভালোবাসা না এটা ওর মোহো । ও আবেগের বশে এমন পাগলামি করলেও আমি ওর পাগলামিতে সায় দিতে পারি না তাই না ( মাহিদ )
-কিন্তু ভাই ও তোমায় সত্যিই ভালোবাসে ( রিদি )
-মোহোর জন্য সব করতে পারো তুমি রিদি ? ( মাহিদ )
-পারব না কেন ভাই অবশ্যই পারি ওর জন্য সব করতে পারব ( রিদি )
-যদি কখনো তোমায় মোহো আর তোমার জীবনের বিশেষ কারো মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হয় তুমি কাকে নিবে ( মাহিদ )
-সে সেটা এখন কিভাবে বলব ভাই ( রিদি )
-আচ্ছা এখন বলো না সময় হলেই বলো । চলে এসেছি চলো ( মাহিদ )

শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের জন্য আজকের এই পার্টি‌ । ছোট বড় সব ব্যবসায়ী উপস্থিত আজকের এই পার্টিতে । আজকের পার্টিতে চৌধুরী আর খান‌ পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত। রিদি আর ওর ভাই এসেই সবার সাথে পরিচয় হতে লাগল ।

-রিদি আসো তোমাকে আমার ফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই ( রিদানশ )
-আচ্ছা ( রিদি )
-হেই সৌহার্দ্য ( বলেই জড়িয়ে ধরল রিদানশ )
-আরে মাহিদ ! কেমন আছিস ( সৌহার্দ্য )
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুই কেমন আছিস ( মাহিদ )
-আলহামদুলিল্লাহ ! এটা কে তোর সাথে ( সৌহার্দ্য )
-ওহ বলতে ভুলে গেছি এটা আমার ছোট বোন রিদিতা খান ( মাহিদ )
-তুমি তাহলে মাহিদের বোন ( ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে সৌহার্দ্য )
-হ্যা হ্যা ভাইয়া !!
-কেমন আছো তুমি ( সৌহার্দ্য )
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো ( রিদি )

কেউ একজন রাগে ক্ষোভে ফুঁসছে । সুযোগ পেলেই যেন তাকে ছাড়বে না ।

রিদিতা মোহোর কাছে যেতে গেলে কেউ একজন ওর হাত টেনে স্টোর রুমে নিয়ে আসে ভয় পেয়ে যায় রিদিতা ওকে নিয়েই দেয়ালের সাথে চেপে ধরে ওর গলায় স্লাইড করতে লাগলাম। নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলাম । রিদিতা কেঁপে কেঁপে উঠছে আর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।হুট করেই ওর গলায় ছোট ছোট চুমু দিতে লাগলাম !!!!!

“”সে তোমার সাথে থাকলে তুমি
ভয়ংকর রকম ঝড় ও সামলে
নিতে পারবে
কিন্তু সেই যখন তোমার জীবনে
ভয়ংকর ঝড় হয়ে উঠবে তখন তুমি
ধ্বংস হতে বাধ্য””?

চলবে…..

একগুচ্ছ কদম পর্ব : ৫

0

একগুচ্ছ কদম ?
পর্ব : ৫
লেখা : আহমেদ রিপা

মোহোর জন্মদিনের কেক কাটার পর পরই যখন মোহো আর রিদিতা দাঁড়িয়ে কথা বলছিল তখনই পাশে দাঁড়ানো কয়েকটা ছেলে রিদিতাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে লাগলো। যা রিদানশের চোখ এড়ায়নি। কাউকে কল করে বলে দিল ছেলেগুলো বের হলেই আটকে ফেলতে ।

-রিদি আজকে থাক প্লিজ ( মোহো )
-না যে ভাইয়া বকবে আমায় ( রিদি )
-তুমি তোমার ভাইকে এতো ভয় পাও কেন ( ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করল রিদানশ )
-ভয় না পাওয়ার তো কিছু নেই বড় ভাই সে আমার ( রিদি )
-তোমার ভাইয়ের নাম টা যেন কি ( রিদানশ )
-মাহিদ খান ( রিদি )
-ম মাহিদ তোমার ভাই ( রিদি )
-হ্যা কেন আপনি চিনেন ভাইকে ( রিদি )
-না না আমি কিভাবে চিনব চিনি না ( রিদানশ )
-ওহ আচ্ছা শোন মোহো আমি তাহলে যাই ( রিদি )
-তুমি একি কোথায় যাচ্ছো আমি দিয়ে আসব তোমায় ( রিদানশ )
-আচ্ছা মোহো যাই তাহলে ( বলেই জড়িয়ে ধরলাম মোহো কে )
-আচ্ছা যা !!

গাড়িতে চলতে লাগল । দু’জনের মধ্যে কেউ কথা বলছে না কি বলবে কেউ ভেবে পাচ্ছে না। দু’জনের মনের মধ্যে নিষিদ্ধ অনূভুতি চারা দিয়ে উঠছে ।

-পড়াশোনা কেমন চলছে তোমার ( রিদানশ )
-ভালোই চলছে ( রিদি )
-বাসা থেকে বের হও না যে এখন ( রিদানশ )
-সামনে পরিক্ষা তাই বের হই না ( রিদি )
-পরিক্ষা তাই না কি অন্য কোনো সমস্যা ( রিদানশ )
-না কি সমস্যা হবে ( রিদি )
-হতেও তো পারে ( রিদানশ )
-আমার এই ধরা বাধা জীবনে কোন সমস্যা নেই ( রিদি )
-সেদিন রাতে বেলকনিতে কাঁদলে কেন ( রিদানশ )
-ক কবে ( রিদি )
-মনে করে দেখো ( রিদানশ )
-আপনার এতো কিছু জেনে লাভ নেই বাহিরের মানুষ বাহিরের মানুষের মতোই থাকুন ( রিদি )
-(কথাগুলো শুনতে রিদানশের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল) বাহিরের মানুষ ভাবো আমায় !!
-আপনি তো সেটাই ( রিদি )
-আচ্ছা।

বাকি রাস্তায় আর কেউ কোন কথা বললো না।বাড়ির সামনে আসতেই রিদি বেড়িয়ে চলে আসতে নিলেই রিদানশ বেড়িয়ে আমাকে টেনে ধরলো ।

-কি হচ্ছে টা কি ( নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম )
-কিচ্ছু হয়নি হবে এখন ( রিদানশ )
-আপনি ছাড়ুন আমায় কেউ দেখে ফেলবে ( রিদি)
-ছাড়ব আগে আমার কথার উত্তর দাও ( রিদানশ )
-কিসের উত্তর ( রিদি )
-আমাকে বাহিরের মানুষ ভাবো তুমি । আমার দিকে তাকিয়ে উত্তর দাও ( রিদানশ )
-উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি ( রিদি )
-অবশ্যই বাধ্য ( রিদি )
-আমাকে আপনি ছাড়ুন কেউ দেখে ফেলবে ( রিদি)
-দেখুক কি হবে ( রিদানশ )
-আপনার কিছু না হলেও আমার হবে ( রিদি )
-আমার কথার উত্তর দাও আমি তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি ( রিদানশ )
-হ্যা হ্যা ভাবি ( রিদি )
-মাথা নিচু কেনো !! আমার দিকে তাকিয়ে বলো ।( রিদানশ‌ )
-ছাড়ুন তো আমাকে ( রিদি )
-বুঝে গেছি আমার যা বুঝার যাও তুমি ( বলেই জড়িয়ে ধরলো )
-( আনমনেই তার কাঁধে হাত রাখলাম বুঝতে পেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম ) আসছি
-যাও ( বলেই মুচকি হাসতে লাগল)

কেউ একজন দূর থেকে ওদের দেখছিল । রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছে । বলতে লাগলো !!

-যেই আগুন আমার বুকে লাগিয়েছিলি সেই আগুন তোর বুকে কেমন লাগবে রিদ । একদিন তোকেও সেই আগুনে পুড়তে হবে । তার ব্যবস্থা আমি নিজে করে দিব । যেই অন্ধকারকে তুই ভয় পাস সেই অন্ধকারকেই তোর ভালো লাগবে যে ( বলেই হাসতে লাগলো আর চোখের কোণে পানি ঝড়তে লাগলো ) ।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে মোহো । সবার সামনে হাসি খুশি থাকলেও রাতের এই সময়টা আর হাসি খুশি থাকতে পারে না। আক্ষেপ হয় তার এই সৌন্দর্য এই রূপ তাকে কেনো তার ভালোবাসাকে কাছে এনে দিল‌ না। লোকটাকে প্রথম থেকেই পছন্দ করে কখন যে ভালোবেসে ফেলেছে বুঝতে পারিনি । কতোবার বুঝাতে চেয়েছি কিন্তু ওই যে কথায় আছে না যে নিজে বুঝতে চায় না তাকে হাজার বুঝালেও বুঝবে না। মাঝেমধ্যে মনে হয় তার মনে অন্যকেও আছে । তখন নিজেকে নিজে বুঝায় । তাকে দেখার জন্য ওই বাড়িতে গিয়ে বসে থাকতাম কখন আসবে একটু কথা বলব । কিন্তু প্রতিবারই ইগনর করে চলে গেছে । মন বলে কোনো একদিন সে আমারই হবে । মাথায় চলে সে তোমার নয় তোমার হবেও না। আমি চাই‌ না সে জোর করে আমার হোক । আমি চাই সে ভালোবাসে আমার হোক । কখনো কখনো মনে হয় তার সামনে একগুচ্ছ কদম ? নিয়ে দাঁড়িয়ে বলি ভালোবাসি আপনাকে । ভালোবেসেছিলাম ভালোবাসি ভালোবাসব ।
আমি অপেক্ষা করবো সেদিনের যখন আপনি আমায় কাছে টেনে নিবেন ।

“চোখের দৃষ্টি যেন
মনের গীতি কবিতা
বুকের ভালোবাসা
কোথায় রয়েছে গাঁথা ”
( সংরক্ষিত )

চলবে…..

একগুচ্ছ কদম পর্ব : ৪

0

একগুচ্ছ কদম ?
পর্ব : ৪
লেখা : আহমেদ রিপা

“মানুষ বলে স্ত্রীর মৃত্যুর থেকেও প্রেমিকার মৃত্যু ভয়ংকর কারণ স্ত্রীর লাশে অধিকার থাকে যা প্রেমিকার লাশে থাকে না”
সেই সময়টি আমি ফেলে এসেছি যখন আমার ভালোবাসার মানুষটির মৃত্যু আমায় দেখতে হলো। ওর জন্য মারা গিয়েছিল আমার ভালোবাসা এর দাম ওকে একদিন না একদিন দিতে হবে । ওর বোন ও তো আমাকে ভালোবাসে ওর বোনও সেই জ্বালা অনুভব করবে । আমি নিজে করাব । যেই খেলা ও শুরু করেছে সেই খেলা আমি শেষ করব ।

পর পর কিছুদিন যাবত রিদানশ রিদিতার কোন দেখাই পাচ্ছিল না । তখন মরিয়া হয়ে উঠে রিদানশ । একদিন মাঝরাতে রিদিতার বেলকনির বাহিরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ওর মন বলছিল রিদিতা আসবে আর ঠিক তাই হয়েছিল কিছুক্ষণ পরেই রিদিতা বেলকনিতে গিয়ে বসে চিংকার করে কাঁদতে লাগে আর বলতে লাগলো!!

“এ কোন মায়ায় জড়িয়ে পরলাম আমি
এ মায়া কাটানো যে বড় কঠিন
এ কোন সর্বনাশের খন শুরু হলো
এ সর্বনাশ যে সবাইকে শেষ করে দিবে ”

দূর থেকে রিদানশ তার কদমকে কাঁদতে দেখে উতলা হয়ে উঠে। ভাবতে থাকে কি হয়েছে আমার কদমের । ভাবতে লাগে এ কোন খেলা নিয়তির !!

সময় বহমান নদীর পানির মতো। দুটি মনে দুজনের জন্য বাড়তে থাকে ভালোবাসা। কেউ ভাবে সে পাবে তার ভালোবাসার মানুষটিকে আর কেউ ভাবে আমার এই ধরা বাধা জীবনে তাকে আমি পাবো না।

মোহোর জন্মদিনে ও আসে রিদিতাকে নিয়ে যেতে।
-চল না তোকে নিতেই এসেছি আমি ( মোহো )।
-ভাই বকবে আমায় ( আমি ) ।
-আচ্ছা তোর ভাইকে আমি বলব ( মোহো ) ।
-আচ্ছা বলে দেখ ( আমি ) ।
-তো তোর ভাইটা কোথায় ? ( মোহো )
-ভাইয়ের স্টাডি রুমে তুই যা ( আমি ) ।
-আচ্ছা।

-আসব ?
-কে
-মোহো
-আসো
-কেমন আছেন
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি কেমন আছো
-আমার আর ভালো থাকতে দিলেন আপনি ( বিরবির করতে লাগলাম )
-কি বিরবির করছো ( ভ্রু কুঁচকে )
-না নাহ কি বিরবির করব ( হাসার চেষ্টা করতে লাগলাম )
-কিছু বলতে এসেছো কি
-হ্যা হ্যা
-তো বলো
-আ আসলে আজকে আমার জন্মদিন তাই রিদিতাকে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম যদি আপনি অনুমতি দেন
-( কিছুক্ষণ ভেবে বললাম ) আচ্ছা নিয়ে যাও সময় মতো দিয়ে যেও
-আচ্ছা দিয়ে যাব ধন্যবাদ
-আব শুভ জন্মদিন মোহো
-ধন্যবাদ আপনাকে । আচ্ছা তাহলে ওকে নিয়ে যাই আমি
-যাও
-আচ্ছা

কতোদিন পর আমার কদমকে দেখব। উফ্ কি খুশি না লাগছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো রিদানশ ।

রিদিতা আর মোহো চৌধুরী বাড়িতে ঢুকতেই ওদের উপর গোলাপের পাপড়ি পড়তে লাগলো। দু’জনে হাসতে লাগলো। আড়ালে একজন খুশি হয় ভাবে এই খুশিটাই দেখতে চেয়েছিলাম তোমার মুখে।

-কেমন‌ আছো কদম ? ( রিদানশ )
-কদম সে আবার কে ( ভ্রু কুঁচকে আমি )
-তুমি কদম ?
-ওহহো দাভাই একেবারে কদম হু হু ( মুচকি মুচকি হাসতে লাগল মোহো )
-যা তোরা তৈরি হয়ে আয় ( রিদানশ )
-হ্যা যাচ্ছি তুইও যা ( মোহো )

উপরে মোহোর রুমে চলে আসলাম।এসেই মোহোকে ড্রেস পছন্দ করে‌ দিতে লাগলাম ।

-তোর জন্য বাপি এটা এনেছে নে ( বলেই একটা ব্যাগ এগিয়ে দিলো আমার দিকে )
-আমার জন্য আবার কেনো
-তুই যা পড়ে আয়
-আচ্ছা ভাবিজি ( হাসতে লাগলাম )

কালো জামদানীর লেহেঙ্গা পড়েছি , চুলগুলো সোজা সিঁথি করে খোঁপা করে বেলি ফুল গুঁজে দিয়েছে মোহো । মোহো পড়েছে কালো গাউন চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে ওকে মা শাহ আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে।

-কিরে চল নিচে যাই ( মোহো )
-হ্যা চল ( বলেই লেহেঙ্গা ধরে নামতে লাগলাম )

উপর থেকে কাউকে নামতে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম । এ যে আমার প্রেয়সী। রিদিতাকে নামতে দেখেই বুকে হাত দিয়ে বলতে লাগলাম !!

“Meri Zindegi Ka Khajana
Mere Dil kii dolat hai tu
Mohabbat Hui hai Jabhse
Mere Sason ki Mohlat hai tu ”

-দাভাই ওই ওই ( হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে ডাকতে লাগলো মোহো )
-হ্যা হ্যা বল ( রিদানশ )
-আমাদের কেমন লাগছে বল না
-তোকে তো একদম ( ভ্রু কুঁচকে রিদানশ )
-একদম কি ( মোহো )
-ভুতনি লাগছে ( বলেই হাসতে লাগলাম )
-দাভাই তুই তুই খুব খারাপ খুব খারাপ ( বলেই মারতে লাগলাম )
-আরে সত্যি বলছি অনেক সুন্দর লাগছে তোদের দুইজনকে। বিশেষ করে কদমকে ( বলেই বাঁকা চোখে তাকালো আমার দিকে )
-( এই লোকটা শুধু শুধু আমাকে লজ্জায় ফেলে মনে মনে ভাবতে লাগল রিদিতা )
-আচ্ছা মোহো যা বাপি কে ডেকে নিয়ে আয়( রিদানশ )
-চল রিদি বাপি কে ডেকে নিয়ে আসি ( মোহো )
-ওর যেতে হবে না তুই যা ( রিদানশ )
-আচ্ছা তুই এখানে দাঁড়া আমি আসছি ( মোহো )
-আচ্ছা ( রিদিতা )

মোহো চলে যেতেই রিদিতার হাত ধরে এক সাইডে নিয়ে আসলাম !!

-আরে আরে ভাইয়া কি করছেন ( রিদিতা‌ )
-( দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলতে লাগলো ) তোমার কোন জন্মের ভাই লাগি আমি রিদিতা ( রিদানশ ) ।
-কোন জন্মের ভাই হবেন কেন‌ মোহোর ভাই আমারো ভাই ( রিদিতা ) ।
-তোমার ভাই না আমি বুঝলে নাম ধরে ডাকবে আমায় ( রিদানশ ) ।
-ডাকব না কি করবেন ( ভ্রু কুঁচকাতে লাগলাম ) ।
-ডাকবে না তাই তো ( রিদানশ ) ।
-হ্যা হ্যা
-আচ্ছা ( বলেই ওর ঘাড়ে হাত দিয়ে স্লাইড করতে লাগলাম ) ।
-কি কি করছেন আপনি ছাড়ুন আমায় ( রিদিতা )।
-নাম ধরে ডাকবে না হুম ( রিদানশ ) ।
-ডাকব ডাকব ( রিদিতা ) ।
-গুড গার্ল ( রিদানশ )

“Phir Aaj koi Gazal Tere
Naam Na ho Jaye
Kahin Likhte Likhte
Shaam Na ho Jaye
Kar Rahe Hain Intezar
Teri Mohabbat ka
Isi Intezar me Zindegi
Tamam Na ho Jaye ”

চলবে…….