Saturday, August 16, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 176



মেঘের আড়ালে রোদ ২ পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব_১৬(শেষ পর্ব)
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ছোঁয়া পানি খেয়ে পেছন ফিরতেই অবাক হয়ে গেল। গ্লাসটা টেবিলে রেখে দরজার কাছে ছুটে গেলো। হাত বাড়িয়ে নিরুপমার গালে রাখলো আজ এক সপ্তাহ পর মাকে দেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

নিরুপমার চোখে জল, ছোঁয়াও কাঁদছে।

পেছন হালিমা বেগম মুচকি হেঁসে মা মেয়ের ভালোবাসা দেখছে। আমেনা বেগম এসে নিরুপমা কে দেখে খুশি হলো।

সবাই সোফায় বসে আছে, ছোঁয়া ত আজ খুব খুশি মা এসেছে।

হালিমা বেগম ইশারায় ছোঁয়া কে কাছে ডাকলো। ছোঁয়া একবার নিরুপমার দিকে তাকালো নিরুপমা হেঁসে বললো,’ তোমার শাশুড়ী ডাকছে কাছে যাও।’
ছোঁয়া আসতেই হালিমা বেগম নিজের পাশে বসালো হাতে হাত রেখে বললো,’ এখনো অভিমান করে আছো.? রেগে আছো আমার উপর.?
ছোঁয়াঃ না মামি।
হালিমা বেগমঃ সরি ছোঁয়া, আমি ভীষণ ভাবে লজ্জিত সব কিছুর জন্য।
ছোঁয়াঃ এভাবে বলবেন না মামি আমরা কেউ কিছু মনে রাখিনি।
হালিমা বেগমঃ আমাকে ক্ষমা করে আগের মতো আপন করে নেওয়া যায় না.?
ছোঁয়াঃ একটা গ্লাস ভেঙে তা আবার কি আগের মতো করা যায় মামি.?
হালিমা বেগমঃ আমি ত তোমার মায়ের মতো আর মা দের ভুল কি মেয়েরা বেশি দিন মনে রাখতে পারে!.?
ছোঁয়াঃ আমার কাজ আছে মামি আসি।
হালিমা বেগমঃ ছোঁয়া! সব কিছু ভুলে আমাকে আপন করা যায় না.?

ছোঁয়া কিছু না বলে রান্না ঘরে চলে গেল।
ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো সবাই।
নিরুপমাঃ ভাবি কিছু মনে করবেন না জানেন ত ছোঁয়া কতোটা অভিমানী আর ও সবচেয়ে বেশি আপনার কাছে থাকতো আঘাত টাও আপনার কাছ থেকে পেয়েছে তাই।
হালিমা বেগম চুপচাপ বসে রইলেন।

___________

আহনাফ একের পর এক প্লেন করে যাচ্ছে কিভাবে মহুয়াকে প্রপোজ করবে। বাবা ছেলে মিলে একটা কেক বানাতে শুরু করলো।

মিম রাস্তা পাড় হতে গিয়ে একটা বাইকের সাথে ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে গেল।
রেগে বাইকের দিকে একটা ইট মারলো সাথে বকা ত আছেই।

কিছু দূর গিয়ে বাইকটা থেমে গেল৷ বাইক থেকে হেলমেট খুলে নেমে আসলো রাফি।

রাফিকে দেখেই মিম থমকে গেল,অটোমেটিক মুখ বন্ধ হয়ে গেল।
রাফি মিমের সামনে এসে বললো,’ আপনি ঠিক আছেন.?’
মিম উপর নিচ মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালো।
রাফিঃ সাবধানে রাস্তা পাড় হতে হয়! এভাবে তারাহুরো করে কোথায় যাচ্ছেন.?
মিমঃ আসলে আমার একটু জলদি ভার্সিটিতে জেতে হবে।
রাফিঃ চলুন নামিয়ে দিয়ে আসি।
মিমঃ না থাক আমি চলে যাব।
রাফিঃ চলুন..
কি ছিল এই একটা কথায়.? চলুন বলতেই মিম জমে গেল। এই ছেলেকে দেখলেই নিজেকে এলোমেলো লাগে মিমের, কিন্তু কেনো.? এমনটা হয় কেনো.? এই উত্তর কোথায় পাবে মিম.?

মিম গিয়ে দূরত্ব রেখে বসলো।
রাফিঃ আমার কাঁধে হাত রাখুন, না হয় পড়ে যাবেন।
মিমঃ নাহ্ আমি ঠিক আছি।
রাফি সামনের দিকে তাকিয়ে মুখে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে বাইক টান দিল মিম ভয়ে চুপসে আছে। এই ছেলে এতো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে! সাথে মিম ত ওর পরিচিত নয় শুধু একবার দেখা হয়েছে আজ নিয়ে দ্বিতীয় বার তবুও এই ছেলের কথা শুনে মনে হচ্ছে কতো পরিচিত একজন আরেকজনের।

মিম কে নামিয়ে দিয়ে রাফি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,’ ভালো থাকবেন,আবার দেখা হবে।’

মিমও হাসির বিনিময়ে হাসি ফিরিয়ে দিল।

মিম চলে যেতেই রাফি নিজের আসল রুপে চলে আসলো। রাগী চোখে মিমের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমিও বুঝবে মন ভাঙার আর্তনাদ কতোটা ভয়ংকর। ‘

মিম কিছুতেই কিছুই মন বসাতে পারছে না। বার বার রাফির কথা মনে পড়ছে। ওর হাসি, কথা বলার স্টাইল, তাকানো, আবার দেখা হবে!

মিমঃ ইশশশশশশ মিম তুই পাগল হয়ে যাবি। এতো কেন মনে পড়তে হবে! আমি আর একবারও তার কথা ভাববো না। অথচ চোখ বন্ধ করতেই সে।

____________

মহুয়া বাসায় এসে দেখে বাসার অবস্থা খুব খারাপ।

মুখ গোমড়া করে সোফায় বসে আছে আহনাফ ওর পাশেই কাঁদো কাঁদো মুখ করে বসে আছে আলভি।

মহুয়া প্রথম আলভির কাছে গেল। আলভিকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো মন খারাপ কেন.? কে বকেছে.?
আলভি মহুয়াকে দেখেই ভ্যাঁ করে কান্না করে দিল।

মহুয়া অবাক হয়ে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিল রেগে তাকালো আহনাফের দিকে।

আলভি কান্না করতে করতে বলে উঠলো, ‘ আব্বু হাত! আব্বু হাত..।
মহুয়া ভেবে নিল আহনাফ আলভিকে মেরেছে, সেই জন্য আব্বু হাত বলছে।

মহুয়াঃ আপনার সাহস কি করে হয় আমার সন্তানের গায়ে হাত তুলার.? আমি ত কখনো এই সন্তান আপনার পরিচয় দেইনি তাহলে আজও কেন এতো রাগ আমার সন্তানের উপর! কিসের রাগ! বলেছেন ত এই সন্তান আপনার নয়,আমিও মেনে নিয়েছি তাহলে কেন আজ এই বাসায় আপনি.? কেনো এসেছেন.? আমি আর আমার সন্তান আপনার কাছে অপবিত্র, ঠিক আছে আমরা পবিত্র হই আর অপবিত্র আপনার সাথে ত আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই তারপরও কেনো.???

আহনাফ চুপচাপ তাকিয়ে রইলো মহুয়ার দিকে, মহুয়ার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে, রাগে ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে।

মহুয়াঃ আমাদের বাসা থেকে এই মুহূর্তে চলে যান, আর কখনো জেনো আপনার ছায়াও না দেখি।
আহনাফঃ মহুয়া!
মহুয়াঃ চুপপপপপ!আমার নাম মুখে নিবেন না।
আহনাফঃ আমার কথা ত শুনবে।
মহুয়াঃ কি শোনবো.? আমার সন্তানের নামে নালিশ.?
আহনাফঃ আমি বলি আগে!
মহুয়াঃ আমি আপনার কোনো কথাই শোনবো না।

আহনাফ রাগে চুপচাপ উপরে চলে গেল।

মহুয়া আলভিকে নিয়ে সোফায় বসে পড়লো।
আলভি মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,’ আব্বুর হাত পুড়ে গেছে বলেই আবার কান্না শুরু করলো।’
মহুয়াঃ কি.??
আলভিঃ আব্বু কেক হাত পুড়ে গেছে।
মহুয়াঃ আব্বু তোমাকে মারেনি.?
আলভিঃ না
মহুয়াঃ বকেছে?
আলভিঃ না
মহুয়াঃ তাহলে কাঁদছো কেনো.?
আলভিঃ আব্বু কেক হাত পুড়ে গেছে।

মহুয়া আলভিকে বসিয়ে দ্রুত উপরে গেল।
আহনাফের রুমের দরজা লাগানো
মহুয়া বার বার নক করতে শুরু করলো ।
আহনাফ এক পর্যায়ে দরজা খুলে জিজ্ঞেস করলো, ” আর কিছু বলবে.? আর কিছু বলার বাকি আছে.?”
মহুয়াঃ হ্যাঁ বলবো! বলবো বলেই ত এসেছি।
আহনাফঃ বলো।
মহুয়াঃ সরো..
মহুয়া ভেতরে চলে আসলো৷ আহনাফ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
মহুয়া আহনাফের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,’ হাত দাও’
আহনাফঃ কেনো.?
মহুয়াঃ দিতে বলেছি দাও।
আহনাফ এক হাত বাড়িয়ে দিল।
মহুয়া ভালো করে হাত উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলো৷
আহনাফ চুপচাপ মহুয়ার পাগলামি দেখছে।
মহুয়াঃ অন্য হাত দাও
আহনাফঃ মহুয়া যাও..
মহুয়াঃ তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো না!.? হাত দিতে বলেছি।
আহনাফ অন্য হাত দিতেই মহুয়ার বুক কেঁপে উঠল।
মহুয়াঃ হাতের এই অবস্থা কেনো.? কিভাবেহলো.?
আহনাফঃ তেমন কিছু না ভালো হয়ে যাবে।
মহুয়াঃ পুরো হাত পুড়ে গেছে কিভাবে হলো.?
আহনাফঃ বাদ দাও।
মহুয়াঃ আপনি সব কিছু বাদ দিতে পারেন আমাকেও।
আহনাফঃ তুমি ছাড়া আমার জীবনের সবকিছু বাদ দিলাম।
মহুয়াঃ হাত ত ডাক্তার দেখাতে হবে চলুন।
আহনাফঃ ভুলে যাচ্ছেন কেনো ম্যাডাম আমি নিজেই ডক্টর।
মহুয়াঃ কেমন ডক্টর আপনি যে এখনো হাতে মলম, বা বরফ কিছুই দেননি।
আহনাফঃ আপনার কথা গুলো বরফ হতে পারতো অথচ প্রতিটা কথা মরিচের মতো ছিল। যেমন করে পুড়ে যাওয়া হাতে মরিচ দিলে যন্ত্রণায় ছটফট করে উঠে ঠিক তেমন করে আমার হৃদয় ছটফট করছে।
মহুয়াঃ সরি..
আহনাফঃ আপনি জানেন আমি আপনার মুখে সরি শুনতে পারি না।
মহুয়াঃ আমি মলম নিয়ে আসছি।
আহনাফঃ আপনি মলম হয়ে যাননা! একবার জড়িয়ে ধরে ভালোবাসি বলুন এটাই আমার মলম।

মহুয়া কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
কিছু সময় পর হাতে মলম নিয়ে এসে আহনাফের হাতে লাগিয়ে দিল।
আহনাফ মুখ ভার করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। কবে আসবে সেই দিন.? কবে অপেক্ষা শেষ হবে.?

মহুয়া মলম লাগিয়ে বললো,’ কিছু খেয়েছেন.?’
আহনাফঃ নাহ।
মহুয়াঃ আমি খাবার নিয়ে আসছি।
আহনাফঃ আমি খাব না।
মহুয়া আহনাফের গালে নিজের হাত রাখলো। আহনাফ ফিরে তাকাতেই মহুয়া আস্তে করে আহনাফের বুকে নিজের মাথা রাখলো।
আহনাফ খুশিতে কি রিয়াকশন দিবে ভুলে গেল। বুকে ভেজা কিছু অনুভব হলো মহুয়া ফুপিয়ে উঠলো।
আহনাফ বুঝলো মহুয়া কাঁদছে।
আহনাফঃ মহুয়া..
মহুয়াঃ জানেন কতোটা কষ্ট কর ছিল আমার এই লড়াই, কিভাবে কাটিয়েছি এই পাঁচটা বছর। কিভাবে একা এই সন্তান বড় করেছি, সন্তান পেটে নিয়ে প্রতিদিন অফিস করে বাসায় ফিরে মনে হতো এর বুঝি মৃত্যু ভালো! যখন আপনার কথা মনে হতো কেমন দমবন্ধ হয়ে আসতো..
আহনাফঃ আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি তোমার সাথে আমাকে ক্ষমা করে দাও।আর কখনো কোনো দুঃখ তোমাকে ছুঁতে পারবে না আমি দিব না।হলো.?
আহনাফঃ তেমন কিছু না ভালো হয়ে যাবে।
মহুয়াঃ পুরো হাত পুড়ে গেছে কিভাবে হলো.?
আহনাফঃ বাদ দাও।
মহুয়াঃ আপনি সব কিছু বাদ দিতে পারেন আমাকেও।
আহনাফঃ তুমি ছাড়া আমার জীবনের সবকিছু বাদ দিলাম।
মহুয়াঃ হাত ত ডাক্তার দেখাতে হবে চলুন।
আহনাফঃ ভুলে যাচ্ছেন কেনো ম্যাডাম আমি নিজেই ডক্টর।
মহুয়াঃ কেমন ডক্টর আপনি যে এখনো হাতে মলম, বা বরফ কিছুই দেননি।
আহনাফঃ আপনার কথা গুলো বরফ হতে পারতো অথচ প্রতিটা কথা মরিচের মতো ছিল। যেমন করে পুড়ে যাওয়া হাতে মরিচ দিলে যন্ত্রণায় ছটফট করে উঠে ঠিক তেমন করে আমার হৃদয় ছটফট করছে।
মহুয়াঃ সরি..
আহনাফঃ আপনি জানেন আমি আপনার মুখে সরি শুনতে পারি না।
মহুয়াঃ আমি মলম নিয়ে আসছি।
আহনাফঃ আপনি মলম হয়ে যাননা! একবার জড়িয়ে ধরে ভালোবাসি বলুন এটাই আমার মলম।

মহুয়া কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
কিছু সময় পর হাতে মলম নিয়ে এসে আহনাফের হাতে লাগিয়ে দিল।
আহনাফ মুখ ভার করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। কবে আসবে সেই দিন.? কবে অপেক্ষা শেষ হবে.?

মহুয়া মলম লাগিয়ে বললো,’ কিছু খেয়েছেন.?’
আহনাফঃ নাহ।
মহুয়াঃ আমি খাবার নিয়ে আসছি।
আহনাফঃ আমি খাব না।
মহুয়া আহনাফের গালে নিজের হাত রাখলো। আহনাফ ফিরে তাকাতেই মহুয়া আস্তে করে আহনাফের বুকে নিজের মাথা রাখলো।
আহনাফ খুশিতে কি রিয়াকশন দিবে ভুলে গেল। বুকে ভেজা কিছু অনুভব হলো মহুয়া ফুপিয়ে উঠলো।
আহনাফ বুঝলো মহুয়া কাঁদছে।
আহনাফঃ মহুয়া..
মহুয়াঃ জানেন কতোটা কষ্ট কর ছিল আমার এই লড়াই, কিভাবে কাটিয়েছি এই পাঁচটা বছর। কিভাবে একা এই সন্তান বড় করেছি, সন্তান পেটে নিয়ে প্রতিদিন অফিস করে বাসায় ফিরে মনে হতো এর বুঝি মৃত্যু ভালো! যখন আপনার কথা মনে হতো কেমন দমবন্ধ হয়ে আসতো..
আহনাফঃ আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি তোমার সাথে আমাকে ক্ষমা করে দাও।আর কখনো কোনো দুঃখ তোমাকে ছুঁতে পারবে না আমি দিব না।

________

দেখতে দেখতে কেটে গেল অনেক দিন। আহনাফ মহুয়ার সম্পর্ক ঠিক হয়ে গেছে।
ছোঁয়াও নির্জনের সাথে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাচ্ছে।

মিম ভার্সিটি থেকে বের হয়ে রাস্তায় রাফিকে দেখে মুচকি হাসলো।
রাফি অন্য দিকে ফিরে কারো সাথে কথা বলছে।
রাফি সব সময় মিমের জন্য এখানে অপেক্ষা করে, একসাথে বাইকে করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে, রাফি প্রতিদিন দিয়ে যায় আবার দিয়ে আসে। সম্পর্ক অনেকটা গভীরে চলে গেছে মিম বুঝতে পারে সে এই ছেলেটির প্রেমে পড়েছে খুব বাজে ভাবে।

মিম রাফির কাছাকাছি আসতেই শুনতে পেলো রাফি কাউকে বলছে,’ থুর আমাকে কি তোর পাগল মনে হয়! এই বিবাহিত মাইয়ার সাথে সম্পর্কে যাব.? কি যোগ্যতা আছে এই মেয়ের.? না পারিবারিক আর না ভার্জিন আমি শুধু আমার প্রতিশোধ নিতে চাই। আমার প্রেমের ফাঁদে ফেলতে চাই তারপরে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলবো।

মিম নিজের মুখ চেপে ধরে এক পা এক পা করে পিছিয়ে গেলো৷
কেমন মনে হচ্ছে পৃথিবীটাই ঘুরছে, মিম চোখের পানি মুছতে মুছতে মুচকি হেঁসে বললো, ‘ ভালোবাসা আমার জন্য নয় আমি ভুলে যাই কেনো আমি একজন ডিভোর্সি নারী! আমার স্বপ্ন পূরণ করাই আমার লক্ষ, এভাবে বার বার ভাঙবো তাও আমি উঠে দাঁড়াবো শুধু মাত্র নিজের জন্য। ‘

রাফি কথা শেষ করে দেখলো মিম বের হচ্ছে।
রাফি হাসি দিয়ে মিমের দিকে তাকাতেই মিমও হাসি দিয়ে বললো,’ অভিনয় শেষ পারিশ্রমিক কতো দিব!.?’
রাফিঃ মানে.?
মিমঃ প্রেমের ফাঁদে আমাকে ফেলতে এসে নিজে পড়ে যাননি ত.?
রাফি চুপ হয়ে গেলো যা বুঝার বুঝে গেল। কিছু বলার আগেই মিম বলে উঠলো, ‘ আমার মন ভেঙেছে আর কি চাই.?’
রাফি তাও চুপ করে আছে।
মিমঃ ভালো থাকবেন এটাই শেষ দেখা।

______________

সকাল থেকে মেঘলার শরীর ভালো না। দুপুরের দিকে শরীর আরও খারাপ হতে শুরু করলো।

মহুয়া কয়েকবার মেঘলাকে জিজ্ঞেস করলো হসপিটালে নিয়ে যাব.? মেঘলা নিষেধ করলো।

মহুয়া ফিরে এসেছে এই খুশিতে কারো খেয়াল নেই মেঘলার দিকে।

আমেনা বেগম মেঘলার চোখ দেখেই বললেন জলদি হসপিটাল নিতে হবে।

শ্রাবণ কাজ ফেলে দ্রুত হসপিটালে আসলো। সবাই চিন্তিত হয়ে বসে আছে। শ্রাবণ টেনশনে একবার এইদিকে যাচ্ছে ত আবার অন্য দিকে যাচ্ছে।
নির্জনঃ ভাই টেনশন করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।
শ্রাবণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কখন ডাক্তার বের হয়ে আসবে।

কিছু সময় যেতেই বাচ্চার কান্না শুনা গেলো।
ডাক্তার বের হয়ে আসতেই শ্রাবণ প্রথম মেঘলার কথা জিজ্ঞেস করলো। একজন নার্স শ্রাবণেরকোলে একটা বাচ্চা দিয়ে বললো, ‘ আপনার মেয়ে ‘
শ্রাবণ বুকের সাথে জড়িয়ে ধরতেই নির্জন ছোঁয়ার দিকে তাকালো। ছোঁয়া মুখ ফিরিয়ে নিতেই নির্জন বলে উঠলো, ‘ এ্যাই ছোঁয়া আমারও বাবা ডাক শুনতে ইচ্ছে হয়’
ছোঁয়াঃ ত আমি কি করবো.?
নির্জনঃ তুই কিছু না করলে বাবা কিভাবে হবো.?
ছোঁয়া অন্য দিকে ফিরে মুচকি হাসতে শুরু করলো।

মেঘলার কপালে কিস করে শ্রাবণ মেয়েকে মেঘলার কোলে দিল।

আলভি এসে বাবুর হাতে আঙ্গুল দিয়ে বললো,’ কিউট’

মেঘলা হেঁসে বললো,’ নবনী’
মহুয়া এসেই বাবু কোলে তুলে নিল।
মহুয়াঃ নাম কি রাখবো.?
আলভিঃ নবনী..
মহুয়া হেঁসে বললো,’ খালামুনি থেকে শুনেছো!

মহুয়া আলভি কথা বলছে তখনি পেছন থেকে আহনাফ এসে বাবুর দিকে তাকিয়ে বললো ” তোমার মতো হয়েছে ”
মহুয়াঃ কারণ মায়ের থেকে খালামুনি বেশি আপন সেই জন্য খালামুনির মতো হয়েছে।

মেঘলা হেঁসে বললো,’ একদম ‘

সমাপ্ত
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ সিজন-১ পড়তে লেখাটির উপর ক্লিক করুন।

মেঘের আড়ালে রোদ ২ পর্ব-১৫

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব_১৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

কেটে গেছে বেশ কয়েকদিন।
মহুয়া ফিরে এসেছে নিজের শহরে আজ এক সপ্তাহ হয়েছে ।
অফিসের জন্য রেডি হয়ে বের হতেই আলভি দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো।
মহুয়া আলভিকে কোলে নিয়ে বললো বাসা থেকে জেনো বের না হয়, আজ আসতে একটু দেরি হবে।
আলভি মাথা নেড়ে আচ্ছা বুঝালো।
মহুয়া আলভিকে রাবেয়া বেগমের কাছে দিয়ে বের হয়ে গেল।

______________

ছোঁয়া আমেনা বেগমের সাথে নাস্তার কাজে সাহায্য করে রান্না ঘর থেকে বের হতেই হালিমা বেগমের সামনে পরলো। হালিমা বেগম কে দেখেও না দেখার মতো সাইড কাটিয়ে উপরে চলে গেল।

হালিমা বেগম চুপচাপ তাকিয়ে রইলো ছোঁয়ার যাওয়ার দিকে।
আজ এক সপ্তাহ হয়েছে বিয়ে হয়েছে এখনো ছোঁয়া একবারও হালিমা বেগমের সাথে কোনো কথা বলেনি, উনার দেওয়া গহনা, শাড়ি কিছু ছুঁয়েও দেখেনি। ওর সব কিছু আমেনা বেগমের সাথে ছোট একটা ক্লিপ প্রয়োজন হলেও আমেনা বেগমের কাছে চলে যায়।
এদিকে নির্জন থাকে অন্য রুমে ছোঁয়া থাকে অন্য রুমে। হালিমা বেগম বার কয়েক চেষ্টা করেছে ছোঁয়ার সাথে কথা বলার কিন্তু ছোঁয়া বার বার এরিয়ে চলছে।

আমেনা বেগম হালিমা বেগম কে এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে.?
হালিমা বেগম চোখের পানি মুছে বললো,’ আমার ছেলেটা আমার শাস্তি পাচ্ছে। ‘
আমেনা বেগমঃ সবটা ঠিক করে নে,বসে শান্ত মাথায় কথা বল সব আগের মতো হয়ে যাবে।
হালিমা বেগমঃ সব ঠিক হলেও একটা দাগ ত থেকে যায়।

আমেনা বেগমঃ চেষ্টা করে দেখ নিরুর মন অনেক নরম। তুই ত জানিস নিরু আমাদের কতো ভালোবাসে।

হালিমা বেগম কিছু একটা ভেবে নিজের রুমে চলে গেল।

ছোঁয়া রুমে আসতেই দেখলো নির্জন ছোঁয়ার রুমে।
ছোঁয়াঃ তুই এখানে কেন!.?
নির্জনঃ আমি আমার বউয়ের কাছে আসতে পারি না.?
ছোঁয়াঃ পারমিশন ছাড়া কারো রুমে প্রবেশ করতে নেই সেটাকি জানিস না..?
নির্জনঃ বউয়ের রুমে আসতে আবার পারমিশন লাগে.? আমার বউয়ের রুমে আমি যখন ইচ্ছে আসতে যেতে পারি।
ছোঁয়া বিছানার কাপড় গুলো আলমারিতে তুলে রেখে পেছন ফিরতেই দেখলো নির্জন ওর পেছনে দাঁড়িয়ে।
ছোঁয়াঃ সামনে এমন খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন.? সর!
নির্জন এক হাত আলমারিতে রেখে অন্য হাতে ছোঁয়ার চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বললো,’ পাক্কা গিন্নী গিন্নী লাগছে,এলোমেলো চুল..
আর কিছু বলার আগেই ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ চুপপ! সামনে থেকে সর,এইসব সিনেমার ডায়লগ দিতে তোকে কেউ বলেনি।
নির্জন বিরক্ত হয়ে বললো,’ তুই এতো আনরোমান্টিক কেন.?’
ছোঁয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,’ আচ্ছা আমি আনরোমান্টিক!.? ‘
নির্জনঃ হ্যাঁ সাথে নিরামিষ একটা বউ..
ছোঁয়া এক ঝটকায় নির্জন কে নিজের জায়গায় নিজে নির্জনের জায়গায় চলে গেল। এক হাত আলমারিতে অন্য হাত আলতো করে নির্জনের গাল ছুয়ে গলায় নেমে আসলো।
নির্জন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
ছোঁয়া ধীরে ধীরে নির্জনের দিকে এগিয়ে গেল কিন্তু নির্জন ওর থেকে অনেকটা লম্বা হওয়াই উকি দিয়েও লাভ ইচ্ছে না।
নির্জন ইচ্ছে করে নিজের মুখ আরও উঁচুতে তুলে নিল।
ছোঁয়া নির্জনের পায়ের উপর ভর দিয়ে গলায় দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে নিচু করতে চাইলো নির্জন মুচকি হাসছে।
ছোঁয়া রেগে তাকাতেই নির্জন ছোঁয়ার কোমরে হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। ছোঁয়ার মনে হচ্ছে সে এখন অন্য একটা জগতে আছে যেখানে শুধুই ছোঁয়া আর নির্জন আর কেউ নেই,কোনো কষ্ট, দুঃখ কিছু নেই শুধু আছে দুচোখে অফুরন্ত ভালোবাসা।
ঠোঁটে ঠান্ডা কিছু অনুভব হতেই নিজের ভাবনা থেকে বের হলো ছোঁয়া। সে কি করছে.? নির্জনের থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছটফট শুরু করলো কিন্তু নির্জন ছাড়লো না। পাঁচ মিনিট পর নির্জন ছেড়ে দিতেই ছোঁয়া হাঁপাতে শুরু করলো দেহে প্রাণ ফিরে পেলো৷ হাত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে লজ্জায় অন্য দিকে ফিরে দৌড় দিলো৷ এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।

ছোঁয়ার অবস্থা দেখে নির্জন হাসতে হাসতে বিছানায় বসে পরলো। পরক্ষনে নিজেও ঠোঁটে হাত বুলিয়ে বললো এটাই প্রথম….

_______________

নিরুপমার সামনে বসে আছে হালিমা বেগম।
টলমল চোখে নিরুপমার হাত ধরতেই অবাক হয়ে নিরুপমা বললো,’ কি হয়েছে ভাবি.? সব ঠিক আছে ত.? আপনি কাঁদছেন কেন.?’
হালিমা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়লো।
নিরুপমা ভয় পেল, হঠাৎ কি হলো উনার.?
হালিমা বেগম নিরুপমার হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,’ আমাকে ক্ষমা করে দেন আপা,আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে, আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি। প্রতিটা মুহূর্ত আমাকে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে আমার করা ভুলগুলো। প্লিজ আপনি ফিরে আসুন আমি আর নিতে পারছি না।আমার আপনাদের সাথে এমন করা ঠিক হয়নি, আমি কথা দিচ্ছি এমন ভুল আর কখনো হবে না। আমি আপনার পায়ে ধরছি।

নিরুপমাঃ আল্লাহ ছিঃ ছিঃ এমন করবেন না ভাবি,আপনি আমার বড়। আর বড়রা ভুল করতেই পারে এভাবে বলে নিজেকে ছোট করবেন না।
হালিমা বেগমঃ তাহলে তুমি চলো আমার সাথে।
নিরুপমাঃ আমি অনেক আগেই সব ভুলে গেছি, তুমি তোমার ভুলগুলো বুঝতে পেরেছো এটাই অনেক।আমি এখানে ভালো আছি। আমার তোমার উপর কোনো রাগ,অভিমান নেই। এখন ত আমরা বেয়াইন বেয়াইন সব ঝামেলা শেষ শুধু আমার মেয়েটাকে ভালো রেখো।
হালিমা বেগম আবার কান্না শুরু করলেন। আজ উনি কিছুতেই নিরুপমা কে ছাড়া বাড়িতে যাবেন না।

______________

সন্ধ্যায় বাড়িতে আসলো মহুয়া। বাড়িতে আসতেই কেমন একটা অন্যরকম অনুভব হলো।

বাড়ির ভেতরে পা রেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
আহনাফ আলভিকে খাইয়ে দিচ্ছে।
মহুয়াঃ আপনি!.?
সবাই দরজার দিকে তাকালো।
মিম ভয়ে এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল।

আলভি ভয়ে আহনাফের থেকে দূরে সরে গেল।

আহনাফ স্বাভাবিক ভাবেই এসে মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ তোমাকে অনেক মিস করেছি, মনে হলো এই মুহূর্তে জড়িয়ে না ধরলে আমার দেহ থেকে আত্মা বেরিয়ে যাবে,আমি জেনেশুনে কিভাবে নিজেকে শেষ করতে পারি বলো!.?
মহুয়া ফ্রিজ হয়ে গেছে, একদম জমে গেছে গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।

আহনাফ মহুয়াকে ছেড়ে হাত ধরে ভেতরে নিয়ে আসলো। একটা শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো,’ খেয়ে নাও ভালো লাগবে, ভীষণ গরম পড়েছে তার উপর অফিস করে এসেছো।’
মহুয়াঃ এইসব কি নাটক হচ্ছে!.? আর আপনি এমন আচরণ কেন করছেন.?
আহনাফঃ এইসব ভাবার জন্য অনেক সময় পড়ে আছে আগে শরবত খেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।
মহুয়া শরবতের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেল।

মহুয়া যেতেই আড়াল থেকে মিম বেরিয়ে এসে বললো,’ প্রথম ধাপ সাকসেসফুল। ‘
আহনাফছেলের গাল টেনে বললো,’ আব্বু কেমন দিলাম বলো’
আলভি কিছু না বুঝে ভ্যাঁ করে কান্না করে দিল।

আহনাফ ভয়ে কানে হাত দিয়ে বললো,’ সরি বাবা এই দেখো আব্বু কানে ধরে উঠবস করছি তাও চুপ হয়ে যাও না হয় তোমার আম্মু এখনি ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিবে।
আলভি চুপ হয়ে গেল।
আহনাফ গালে হাত দিতে গিয়ে হাত সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ ওহ্ সরি বাবা আর তোমার কিউট গালে হাত দিব না, এখন আমি আমার দ্বিতীয় প্লেন শুরু করি।’

মহুয়া নিচে এসে চারপাশে দেখলো কেউ নেই। হঠাৎ রান্না ঘরে শব্দ হতেই মহুয়া রান্না ঘরে গিয়ে অবাক হলো।
আহনাফ আলভিকে উপরে বসিয়ে নিজে কি জেনো বানাচ্ছে আর আলভিকে গল্প শোনাচ্ছে। আলভি থেমে থেমে খিলখিল করে হেঁসে উঠছে সাথে আহনাফ ও হাসছে।
মহুয়া চুপচাপ তাকিয়ে রইলো বাবা ছেলের এই সুন্দর মুহূর্ত গুলোর দিকে।

আহনাফের চোখ পড়লো মহুয়ার উপর।
আহনাফঃ এসেছো তুমি, আজ আমি নিজেই হাতে তোমার জন্য রান্না করেছি,সব কিছু তোমার পছন্দের।
মহুয়া অবাক হয়ে বললো,’ আপনি রান্না করেছেন.? আপনি ত কোনটা লবন আর কোনটা চিনি সেটাই বুঝেন না।
আহনাফ হেঁসে বললো,’ তোমার জন্য সবকিছু শিখে গেছি।’
মহুয়ার মুখ বন্ধ হয়ে গেল,এই ছোট ছোট কথাগুলোতে কি থাকে.? মহুয়া কেনো এভাবে থমকে যায়!

আহনাফ আলভিকে কোলে নিয়ে এসে মহুয়ার হাত ধরে টেবিলে বসিয়ে দেয়,এক এক করে সব খাবার সামনে রাখে।
মহুয়া অবাকের উপর অবাক হচ্ছে! সব কি সত্যি নাকি সে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে..?

মহুয়া প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখলো আহনাফ ওর পছন্দের সব খাবার সাজিয়ে দিয়েছে। কি হচ্ছে এইসব.? সব কেনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে!

মহুয়া একটু খাবার মুখে দিয়ে বললো,’ সত্যি আপনি রান্না করেছেন.? ‘
আহনাফঃ হুম সারাদিন লাগিয়ে তোমার জন্য।
মহুয়াঃ খুবই জঘন্য হয়েছে এইসবও মানুষ খায়!

মহুয়া হাত ধুয়ে উঠে যেতে নিলে আহনাফ হাত ধরে বললো,’ এটা ভালো হয়নি অন্যটা খেয়ে দেখো।’
মহুয়াঃ প্রথমটায় এতো জঘন্য বাকিগুলো কেমন হবে জানা হয়ে গেছে, ভাত সবগুলো টিপে দেখতে হয় না একটা দেখলেই বুঝা যায় বাকিগুলো কেমন!..
আহনাফ কিছু খুঁজে পেল না কি বলবে!..

মহুয়া আলভিকে কোলে নিয়ে উপরে চলে গেল।

রাতে ছাঁদ থেকে নেমে আলভিকে খুজতে লাগলো মহুয়া।
আহনাফ পেছন থেকে বলে উঠলো, ‘ আমাকে খুঁজছ.? ‘
মহুয়াঃ আপনাকে কেন খুজবো.? কেনো এসেছেন এখানে.? কি চাই আপনার.?
আহনাফঃ শুরুতেও তোমাকে শেষেও তোমাকে চাই। তোমার জন্য এসেছি,আমার ছেলের জন্য এসেছি।
মহুয়াঃ খবর্দার ভুলেও আমার ছেলে বলবেন না। আলভি শুধু আমার ছেলে।
আহনাফঃ ঠিক আছে তোমার আমার দুইজনের ছেলে।
মহুয়াঃ শুধুই আমার।
মহুয়া আলভিকে আহনাফের থেকে নিতে চাইলে আলভি আহনাফ কে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
মহুয়া রেগে গেল।
আহনাফঃ তুমি এতো ছোট একটা বাচ্চার উপর রাগ দেখাচ্ছ!.?
মহুয়াঃ আপনি রুম থেকে বের হোন।
আহনাফঃ আলভি আমাকে ছাড়া ঘুমাবে না।
মহুয়াঃ ত.?
আহনাফ আমতা আমতা করে বললো,’ আজ না হয় আমরা..’
মহুয়াঃ চুপপ! আমাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেছে সব শেষ। কাল সকালে নিজের বাড়ি ফিরে যাবেন।
আহনাফঃ আমি ত সাইন করিনি।
মহুয়াঃ কিন্তু আমি করে দিয়েছি।

আহনাফ মহুয়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,’ আমি জানি তুমিও করনি ‘

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ ২ পর্ব-১৪

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব১৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আমার কাছে আশার চেষ্টা করলে এটা তোর গলায় চালিয়ে দিব! আমার থেকে দূরে থাক।

নির্জন অবাক হয়ে বললো, ‘ এটা কোথায় পেলি..?’
ছোঁয়াঃ বাসা থেকে আসার সময় ফলের ঝুড়ি থেকে নিয়ে এসেছি।
নির্জনঃ কি সাংঘাতিক বউ তুই! বিয়ের রাতে স্বামীর গলায় ছুরি চালাবি!!
ছোঁয়াঃ আমার থেকে একশো হাত দূরে থাক।
ছোঁয়ার হাতের চাকুর দিকে তাকিয়ে নির্জন মুখ গোমড়া করে বললো,’ এটা ঠিক না ছোঁয়া৷ বিয়ে ত একবারই মানুষ করে বাসর রাতও একবার আসে তুই আমার সব কিছু মাটি করতে পারিস না। আমাদের ত এই রাত নিয়ে কতো…
ছোঁয়া কানে হাত চেপে চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ চুপপপপ!! একম চুপপ! না হলে তোর মুখ সেলাই করে দিব।
নির্জনঃ গুন্ডি বউ।
ছোঁয়াঃ কি বললি.?
নির্জনঃ ক… কই কিছু না।
ছোঁয়াঃ চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে যা।
নির্জন একবার পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বলে উঠলো, ‘ কিন্তু রুমটা ত আমার’
ছোঁয়াঃ আমি তোর কে.?
নির্জনঃ বিয়ে করা একদম টাটকা নতুন বউ।
ছোঁয়াঃ বউ এর বিপরীত কি.?
নির্জনঃ কি!.?
ছোঁয়াঃ আমি তোকে জিজ্ঞেস করছি!!
নির্জনঃ জামাই.??
ছোঁয়াঃ তাহলে তুই আর আমি ত এক, তোর রুম আমারও রুম। যা এবার বের হ।
নির্জনঃ তুই আর আমি এক হলে এক সাথেই থেকে যাই!
ছোঁয়াঃ খবর্দার এই রুমে শুধু আমি থাকবো।
নির্জনঃ তাহলে আমি.?
ছোঁয়াঃ বাড়িতে অনেক রুম খালি আছে।
নির্জনঃ মানুষ কি ভাববে.? আমি সোফায় শুয়ে পড়ি..?
ছোঁয়াঃ আমি তোকে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই না।
নির্জনঃ তাহলে চোখ বন্ধ করে রাখবি।
ছোঁয়া বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে নির্জনের দিকে ছুড়ে মারলো।
নির্জন সরে গিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিল।

________________

মহুয়া ব্যাগ গুছিয়ে নিল। সকাল সকাল বের হতে হবে না হয় ট্রেন পাওয়া যাবে না।
আলভি একবার মায়ের দিকে আরেকবার দরজার দিকে তাকালো।
ছোট বাচ্চা হয়তো মায়ের এমন হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারণে ভয় পেয়েছে।
মহুয়া ছেলের গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,’ কিছু খাবে.?’
আলভি মাথা নেড়ে না বুঝালো।
মহুয়া লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।

বারান্দায় আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে আছে মিম। কিছুতেই চোখ বন্ধ করতে পারছে না। চোখ বন্ধ করলেই রাফির চোখ ভর্তি জল, কষ্টে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা ভেসে উঠছে।
মিম কি ভুল কিছু করেছে.? একজনের পূর্নতা দিতে গিয়ে অন্য জনের মন ভেঙেছে? ছেলেটা এখন কেমন আছে.? ঠিক আছে ত.? এইসব ভাবতে ভাবতে বিরক্ত হয়ে নিজের চুল টেনে ধরে মাথা নিচু করে নিল।এতোটা অশান্তি, ছটফট লাগছে কেন.?

আহনাফ মহুয়ার রুমের সামনে এসে রুমের চাবি দিয়ে খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো।

মহুয়া আলভিকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
মিম দরজা খুলার শব্দ পেয়ে রুমে এসে আহনাফ কে দেখে চোখ বড় বড় করে নিল।
আহনাফ ইশারায় চুপ থাকতে বলে আস্তে করে মহুয়ার পাশে গিয়ে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
মিম ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সবার জীবনে সুখ নেমে আসুক বিচ্ছেদের যন্ত্রণা ভুলে সবাই সুখী হোক। মিম গিয়ে আলভির পাশে শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো।

আহনাফ ছাঁদে এনে মহুয়াকে দোলনায় শুইয়ে দিল। চাঁদের আলোয় মহুয়ার সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে গেল। আহনাফ মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইলো মহুয়ার দিকে।
মহুয়ার মুখের উপর কয়েকটা চুল এসে বিরক্ত করছে। আহনাফ হাত দিয়ে তা সরিয়ে দিল।
আহনাফঃ আমার ভুল হয়ে গেছে মেহু,অনেক বড় ভুল,আমি কিভাবে এই ভুল সুধরে তোমাকে আমার করে নিব.? কিভাবে তোমার মনের ঘৃণা সরিয়ে ভালোবাসায় পরিণত করবো! আদৌও কি তুমি আমাকে ক্ষমা করবে.? সব কিছু কি আগের মতো হবে.? আমি কিভাবে পারলাম নিজের মানুষটার উপর সন্দেহ করতে! কিভাবে নিজের সন্তান কে অস্বীকার করলাম! আমার কেন আজ নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে! আমি তোমাদের ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই।

আহনাফের চোখে পানি টলমল করছে, আজ এক এক করে সব কিছু তার মনে পড়ছে, কিভাবে পারলো সে এমনটা করতে! মহুয়া পবিত্র, মহুয়া ফুলের মতো পবিত্র ছিল কিভাবে কলঙ্কিত করলো সেই ফুলকে! আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,’ দূর আকাশের চাঁদের গায়ে কলঙ্কের দাগ থাকলেও আমার বউয়ের গায়ে নেই,আমার বউ পবিত্র ফুল। আমার বউয়ের কাছে এই চাঁদের আলো ফিকে,আমার বউ সবচেয়ে সুন্দর মনের অধিকারী , আমার বউ সবচেয়ে সুন্দরী। আমি সব ঠিক করে নিব। যেভাবেই হোক সব ঠিক হবে আমার সন্তান বউ আমার বুকে ফিরে আসবে।

___________

সকালে ছোঁয়া উঠলো দশটায়। ঘুম থেকে উঠে দেখে রুমে কেউ নেই। আস্তে করে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল।

আমেনা বেগম মন খারাপ করে বসে আছেন৷ দেখেই মনে হচ্ছে কান্না করেছেন। বাড়ির সবার মন খারাপ। সে কিছু বুঝতে পারলো না, বুঝতে চাইলোও না,সোজা চলে গেল রান্না ঘরে। কফি হাতে নিয়ে মেঘলার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,’ কি হয়েছে মন খারাপ কেন.?’
মেঘলাঃ মহুয়া চলে গেছে।
মহুয়া চলে গেছে শুনে খুব কষ্ট পেল ছোঁয়া। ওকে একবার বলে যেতে পারতো! একবার ত বলতো চলে যাচ্ছি অথচ মহুয়া ওকে আপন মনে করে না। সবাই দেখলো শেষ বার ও দেখতে পারলো না। কফি হাতে নিয়ে সোজা উপরে চলে গেল ছোয়া।

আহনাফ বাসায় আসতেই আমেনা বেগম রাগী চোখে তাকালো।
আহনাফ বুঝলো মা কেন এতো রেগে আছে।
আহনাফ মায়ের পাশে বসতেই আমেনা বেগম মুখ অন্য দিকে করে ফেললো।
আহনাফ মায়ের হাতে হাত রেখে বললো,’ মাত্র কয়েকদিন আম্মু একটু অপেক্ষা করো। ওরা নিজ থেকে আসবে। ‘
আমেনা বেগম কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেল। আহনাফ সবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে নিজের রুমে চলে গেল।

মহুয়া ট্রেনে বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে, মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান কিছু ফেলে যাচ্ছে। ভেতরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, চোখে অজান্তেই পানি এসে জমা হচ্ছে, মনে হচ্ছে মন আকাশে মেঘ জমেছে এখনি টুপ করে বৃষ্টি শুরু হবে।
আলভি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
মিম রেগে বলে উঠলো, ‘ এতো কষ্ট হলে আশার কি দরকার ছিল.?’
মহুয়াঃ কিসের কষ্ট.?
মিমঃ শাক দিয়ে মাছ ডাকতে হবে না,তোমার চোখে মুখে স্পষ্ট কষ্টের ছাপ।
মহুয়াঃ আমাদের মধ্যে সব শেষ। কি পরিচয়ে থাকতাম, আর এমন মানুষের সাথে থাকার কল্পনা ও করি না।
মিমঃ আমি জানি কিছু শেষ হয়নি, না আহনাফ ভাই সাইন করে ছিল আর না তুমি। মানুষের ভুল হয় আপু, জীবনে ভুল থেকেই ত আমরা শিক্ষা পাই। সব ভুলে আলভির দিকে তাকিয়ে সব ঠিক করে নাও।নিজেও কষ্ট পাচ্ছ ভাইয়াকেও দিচ্ছ আর তোমাদের জন্য আমার ছোট আলভি বাবার ভালোবাসা পাচ্ছে না।

মহুয়া চুপচাপবাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এই টপিক বাদ, আজকের পর আর কখনো এই বিষয় কথা হবে না, ফেলে যাচ্ছি সব অতীত এখানে। ‘

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ ২ পর্ব-১৩

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব_১৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

নির্জন আর ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ছোঁয়া।
নিরুপমা দরজা খুলে নির্জন কে দেখে রেগে গেলো। ওর উত্তর হাত তুলতে গিয়েও থেমে গেল।

নির্জনঃ থামলে কেন!.? মারো! প্লিজ ফুপি মেরে সব রাগ শেষ করে ফেলো, আমি ত তোমার ছেলেই।সেই ছোট থেকে ছেলের মতো বড় করলে আজ কেন এতো দূরত্ব! প্লিজ ফুপি মারো,বকা দাও তাও আগের মতো হয়ে যাও।

নিরুপমাঃ সামনে থেকে সরো! তুমি আজ যা করলে আমার সম্মান কোথায় নিয়ে দাঁড় করালে.? কই আমার মেয়ে ত তোমার বিয়েতে গিয়ে কোনো সিনক্রিয়েট করেনি! তাহলে তুুমি কেন আজ সমাজের সামনে ওকে ছোট করলে.?
নির্জনঃ আমি ওকে ভালোবাসি ওর অসম্মান হোক কখনো চাইনি ফুপি,আজকের পর ওর দিকে ভয়েও কেউ আঙ্গুল তুলতে পারবে না, আজ থেকে ও নির্জন চৌধুরীর বউ।
নিরুপমাঃ বিয়েটা কি হয়ে গেছে!.?
নির্জন মাথা নাড়তেই নিরুপমা দুই পা পিছিয়ে গেল।
ছোঁয়া গিয়ে ঝাপটে ধরলো ওর আম্মুকে।
নিরুপমা মেয়ের মাথায় হাত রাখলো। ছোঁয়া কাঁদতে শুরু করলো।

রাফি রাগে চোখ মুখ শক্ত করে এসে নিরুপমার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ এই বিয়ে কিছুতেই হয়নি, এখানে ছোঁয়ার কোনো সম্মতি ছিল না, আজ আমাদের বিয়ে ছোঁয়া।
নির্জন বিরক্ত হয়ে রাফির দিকে তাকালো। মানে একটা ছেলে কতোটা বলদ হলে এমন কথা বলতে পারে!
ছোঁয়া লেপ্টে আছে নিরুপমার বুকে।

মহুয়া নির্জনের কাছে এসে বললো,’ ভেতরে এসো।’
নির্জনঃ ভেতরে যাব না ভাবি ছোঁয়া কে নিয়ে একদম বাড়িতে যাব। আপনারাও চলুন।

ছোঁয়া কিছুতেই নির্জনের সাথে যাবে না, নিরুপমা ও মেয়েকে ওই বাড়িতে দিবে না।

নির্জন ওর আম্মুকে আগেই কল দিয়ে ছিল।
হালিমা বেগম গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির সামনে এসে বললো,’ আমি বাড়ির গাড়ি নিয়ে এসেছি নিরু মেয়েকে বিদায় দিয়ে দাও এখন ছোঁয়া আমার বাড়ির বউ আর তোমার বাড়ির মেহমান।

নিরুপমাঃ কিন্তু এই বিয়ে…
হালিমা বেগমঃ যতো রাগ সব না হয় পরে হিসাব করে ফিরিয়ে দিও, এক সময় না হয় আমরা রাগ,অভিমান, ভুল বুঝাবুঝির হিসাব করে নিব আজ মেয়েকে বিদায় দাও।

মহুয়া ও বুঝালো।

রাফি শুধু চুপচাপ রক্ত বর্ন চোখে তাকিয়ে দেখলো সব। উপরে যতোটা শান্ত ভেতরে ঠিক তার থেকে গভীরে পুড়ছে, যার গন্ধ বের হচ্ছে না, শব্দ হচ্ছে না, কিন্তু কারো জীবন থমকে গেছে। রাফি বুকে হাত দিয়ে লম্বা কয়েকটা শ্বাস ফেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।

যাওয়ার সময় মিমের সামনে পড়তেই মিম মাথা নিচু করে বললো,’ সরি!!’

রাফি হাসলো! এই যে ভেতরে আগুন জ্বলছে সেটা কি এই সাধারণ সরি তে ঠান্ডা হবে!.? মিম কি বুঝতে পারছে সে কি করেছে..?

রাফি ত ছোঁয়া আর নির্জনের সবটা জানতো। একবার বিয়েটা হয়ে গেলে হয়তো রাফি সবটা ঠিক করে নিত,ছোঁয়ার মন জিতার জন্য সাত সমুদ্র পারি দিত, একটা মেয়ের মন জয় করা অতোটাও কঠিন নয়, না হয় ছোঁয়া সারাজীবন মনে অন্য কেউকে রাখলেও ভাগ্যে রাফির হয়ে থেকে যেত। রাফি ত লাভ,ক্ষতি হিসাব করে ছোঁয়া কে ভালোবাসেনি। সেই ছোট থেকে ভালোবেসে আসছে কতো অপমান, অবহেলা, মাইরও খেয়েছে। কলেজের সবার সামনে ছোঁয়া অপমান করেছে তাও গায়ে মাখেনি। এতোগুলো বছর পর এভাবে দেখা ভেবেছিল ভাগ্য হয়তো অন্য কিছু চাচ্ছে না হয় দেখা কেন হলো.! ওই দিনের চিঠি ছোঁয়া ডাস্টবিনে ফেলে দিলেও তা কুড়িয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়ে ছিলো রাফি। ভালোবাসা এতো অদ্ভুত কেন! এতো কষ্ট কেন.? লোকে বলে পুরুষ মানুষের কষ্ট পেলেও কাঁদতে নেই অথচ আজ রাফির না চাইতেও রক্তবর্ন চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে।

মিমের ভীষণ কষ্ট লাগলো রাফির শেষ তাকানোটা দেখে। ছেলেটা কি একটু বেশিই কষ্ট পেল!.?

রাফি বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো আজ চোখ যেদিকে যায় সে সেই দিকেই যাবে, অথচ রাস্তা আশপাশ সবকিছু ঝাপসা, রাফি চোখ বার বার মুছছে।

কলেজের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম ছেলে ছিল রাফি সব মেয়ে ওর পিছে ঘুরতো আর রাফি ঘুরতো ছোঁয়ার পিছু… শেষটা সুন্দর হতে পারতো।পুরনো ঘায়ে লবন দেওয়ার কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিল!.?

_____________

বউ নিয়ে বাড়িতে এসে অবাক হলো। পুরো বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো, ছোঁয়া বাড়ির ভেতরে পা ফেলার আগেই নিজেকে হাওয়াই ভাসতে দেখে ভয়ে নির্জনের গলা জড়িয়ে ধরলো।

নির্জনঃ আমার মহারাণীর প্রথম প্রবেশ আমার কোলেই হোক।

ছোঁয়া কিছু না বলে নির্জনের গলা ছেড়ে দিল। সে সব কিছুর বদলা খুব কঠিন ভাবে নিবে, এক এক করে সব ফিরিয়ে দিবে।

মহুয়া খুব খুশি আলভিকে কোলে নিয়ে আছে। আহনাফ এসে বললো,’ আমিও ত প্রথম দিন তোমাকে কোলে নিয়ে এসে ছিলাম।

মহুয়াঃ আপনার আর নির্জনের মধ্যে পার্থক্য ত নেই। দুইজনি হাত ছেড়ে দিতে সময় নেন না! আপনাদের ভালোবাসা বাতাসের চেয়েও হাল্কা।

আহনাফঃ মহুয়া…
মহুয়া আলভিকে জড়িয়ে ধরে উপরে চলে যায়।

আহনাফ মহুয়ার পেছন পেছন গেল।
মহুয়া বিরক্ত হয়ে বললো,’ কি সমস্যা!.? ‘
আহনাফঃ একটা জিনিস এনে ছিলাম।
মহুয়াঃ আমার কিছুর প্রয়োজন নেই।
আহনাফ পকেট থেকে বেলীফুলের মালা বের করে মহুয়ার চুলে পেঁচিয়ে দেয়।
মহুয়ার কোলে আলভি বলে মহুয়া কিছুই করতে পারলো না।
আহনাফ তাকিয়ে বললো,’ এবার সুন্দর লাগছে,ফুলের খোঁপায় ফুল।’

মহুয়া আলভিকে নামিয়ে খোঁপা থেকে ফুলটা এনে আহনাফের সামনে নিচে ফেলে দিল।
আহনাফ ভাবতেও পারেনি মহুয়া এমনটা করবে, তাহলে কি ঘৃণার পাল্লা এতো ভারি হয়ে গেছে.?
মহুয়াঃ আমার থেকে দূরে থাকুন!
আহনাফঃ ফুলটার ত দোষ ছিল না!
মহুয়াঃ কিন্তু এর মালিক যে আপনি! আগে ফুলের মতো পবিত্র নিজের মন করুন তারপর না হয় পবিত্র ফুলে হাত দেওয়ার মতো সাহস করবেন।
আহনাফ নিচ থেকে ফুলটা হাতে নিয়ে বললো,’ এতো জেদ ভালো না মহুয়া। আমি শিকার করছি আমার ভুল হয়েছে একন কি ক্ষমা করে সব ঠিক করা যায় না.?
মহুয়াঃ কোনো কিছু ঠিক করার নেই! যখন জীবনের সবচেয়ে বাজে সময়টায় ছিলাম তখন আপনি কোথায় ছিলেন.? যাকে আমি আমার খারাপ সময় পাশে পাইনি ভালো সময়ে তার ছায়াটার ও প্রয়োজন নেই।
আহনাফঃ আমাদের বাচ্চার কথা অন্তত ভাব।
মহুয়াঃ আমাদের বাচ্চা!..? আলভি শুধু মাত্র আমার বাচ্চা, আমার ছেলে। সে যখন বড় হয়ে শুনবে তার জন্মের কথা শুনে তার বাবা কি রিয়েক্ট করে ছিল তখন সে সহ্য করতে পারবে.? প্লিজ আমার সন্তান কে নিজের সন্তান বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
আহনাফ কিছু বলার আগেই মহুয়া ঠাসস করে মুখের উপর রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়।

আহনাফ শুধু চুপচাপ তাকিয়ে থাকে দরজার দিকে, কিভাবে সব ঠিক করবে ও..?!

____________

শ্রাবণ বাসায় এসে বুঝতে পারলো সবাই চলে এসেছে। বাসায় মেহমান সাথে রান্না বান্না নিয়ে সবাই ব্যস্ত।

শ্রাবণ আলভির জন্য চকলেট নিয়ে প্রথমে উপরে গেল। আলভির হাতে সব চকলেট দিয়ে গেল নিজের রুমে।

মেঘলা মাত্র ছোঁয়ার কাছ থেকে এসে বসেছে বারান্দায়।
শ্রাবণ পেছন থেকে গিয়ে একটা ফুল গুঁজে দিল মেঘলার কানে।
মেঘলা ফুলে হাত দিয়ে মুচকি হাসলো।
শ্রাবণ বুকে হাত দিয়ে বললো,’ ইসসসস তোমার এই হাসি আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি বউ, এতো মায়াবী কেন তুমি.?
মেঘলাঃ আমি মায়াবী নই তোমার চোখ মায়াবী শ্রাবণ।
শ্রাবণ আরেকটা ফুল এনে মেঘলার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,’ বউ! ভালোবাসি।’
মেঘলাঃ উঠো ঢং করতে হবে না! সব ফুল নির্জনের রুম থেকে নিয়ে এসেছো বেচারা দেবর নিজের বউয়ের জন্য এনে রেখেছে।
শ্রাবণঃ বউ আমাকে কি তোমার এতোটাই কিপটে মনে হয়! ফুল অনেক দামী জিনিস তার থেকেও বেশি দামী আমার বউফুল আমি কিভাবে দুই দামী জিনিস অন্য কারো থেকে আনতে পারি! এই ফুলগুলো আমি একটা পিচ্চি থেকে এনেছি শুধুই তোমার জন্য।

মেঘলা ফুলগুলো হাতে নিয়ে ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করলো।

শ্রাবণ পেছন থেকে মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ আমাকে আজকাল এতো ইগ্নোর কেন করো বউ! আমার যে কষ্ট হয় বুঝ.? কেন এতো মন খারাপ তোমার.? কিসের এতো টেনশন! আমি আছি ত।
মেঘলাঃ আমার মন ছটফট করে শ্রাবণ, আমার মনে হয় আমি দিন দিন তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি, আমার মনে হচ্ছে সময় আমার খুব নিকটে, আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো শ্রাবণ.? আমার ত তোমার বুক ছাড়া ঘুম আসনা,আমি কিভাবে ঘুমাবো?
শ্রাবণঃ চুপ! একদম চুপ, কিছু হবে না তোমার। তোমাকে ছাড়া জীবনটা আমার জীবন নয়,আমি বেঁচে থেকে মৃত, আমাকে বাঁচানোর জন্য না হয় থেকে যেও।

মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমার ভয় হয়! নিজেকে তোমার থেকে হারানোর ভয়!!… ‘

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ ২ পর্ব-১২

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব_১২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ছোঁয়া ঘুরে ফিরে নির্জনের সামনে এসে কোমরে হাত রেখে লম্বা লম্বা কয়েকটা শ্বাস নিল।

নির্জনঃ শেষ! তোর দৌড় কতো দূর বুঝতে পেরেছিস.? এখন চুপচাপ ভেতরে যা পার্লারের মেয়েরা অপেক্ষা করছে।
ছোঁয়াঃ নির্জনের বাচ্চা আমাকে এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দে! আমি তোকে ছাড়বো না।
নির্জনঃ ছাড়তে কে বলেছে জান! আমি ত চাই আমাকে সারাজীবন ধরে রাখো।
ছোঁয়াঃ তোর মতো নির্লজ্জ ছেলে আমি কখনো দেখিনি, বিন্দু মাত্র লজ্জা থাকলে বাড়িতে দিয়ে আসবি।
নির্জনঃ ছোঁয়া বাড়িতে যেতে চাইলে জলদি আমার কথা মতো কাজ কর তাহলেই হবে।
ছোঁয়াঃ কখনো না, আমি তোকে বিয়ে করবো না।
নির্জনঃ বিয়ে তোর আমাকেই করতে হবে।

নির্জন ছোঁয়াকে জোর করে ভেতরে একটা রুমে পাঠিয়ে দিল।

ছোঁয়া রাগে কটমট করে তাকিয়ে আছে নির্জনের দিকে।

নির্জন চোখ মেরে চলে গেল।

ছোঁয়াকে সুন্দর করে সাজানোর চেষ্টা করেও পারলো না। কোনো রকম শাড়ি পড়িয়ে একটা মেয়ে বের হয়ে নির্জন কে বললো।
নির্জন সবাইকে বের করে নিজে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
ছোঁয়া রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
নির্জনঃ এভাবে তাকালে প্রেমে পড়ে যাবি চোখ বন্ধ করে রাখ।
ছোঁয়াঃ হাস্যকর! তোকে দেখলেই আমার গোসল করতে ইচ্ছে হয়।
নির্জনঃ তোর শরীরে এতো ময়লা যে আমাকে দেখলে গোসল করতে ইচ্ছে হয়!!
ছোঁয়াঃ আমাকে এখান থেকে যেতে দে নির্জন বেশি বেশি করছিস!
নির্জন চুপচাপ গিয়ে ছোঁয়ার সামনে বসে জোর করে ওর মুখ চেপে ধরে সাজিয়ে দিল।

ছোঁয়া নিজেও এবার নড়াচড়া করলো না, রাত থেকে না খেয়ে আছে শরীর দুর্বল লাগছে।

নির্জন ছোঁয়াকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে সবার সামনে নিয়ে বসালো।

নির্জন কাজী কে বললো ” বিয়ে শুরু করুন”
ছোঁয়া হাজার চেষ্টা করেও বিয়ে থামাতে পারলো না।

বাহিরে গন্ডগোল শুনে নির্জন বেরিয়ে আসলো।

রাফি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্জনের দিকে পেছনে মিম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

নির্জন সবটা বুঝতে পারলো, মুচকি হেঁসে বললো,’ আরেকটু আগে আসলে আমার জানের জিগার দুস্ত কে উকিলআব্বু বানাতে হতো না। তোমাকে আর মিম কে বানিয়ে দিতাম, তোমরাও রেডিমেট ছেলে আর বউ পেয়ে যেতে।

নির্জন থুতনিতে হাত দিয়ে কিছু একটা ভেবে বললো,’ সমস্যা নেই দেরি করেছো বলে কি হয়েছে আমরা না হয় আজ থেকে তোমাদের আব্বুর নজরে দেখবো এসেছো মিষ্টি মুখ করে যাও।’

রাফি রাগে গিয়ে নির্জনের কলার চেপে ধরলো।

নির্জন নিজের কলারের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ দিলে ত বিয়ের পাঞ্জাবি নষ্ট করে!! ‘

রাফিঃ ছোঁয়া কে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস!.?
নির্জনঃ কলার ছাড়!
রাফি নির্জনের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি আর সেই ভীতু ছেলেটা নেই, যে তোর ভয়ে চুপসে যাব!!’
নির্জনঃ ওরেহ্ বাহ্ ভীষণ সাহসী হয়ে গেছিস! আজ আমার প্রথম বিয়ে তাই কিছু করতে চাচ্ছি না, এমনিতেই তোকে দেখেই আমার হাত নিসপিস করছে প্লিজ কলার ছেড়ে দূরে গিয়ে দাড়া।
রাফি রেগে নির্জনের মুখে ঘুসি মেরে বসলো।
নির্জন ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখে রক্ত চলে এসেছে।
নির্জনঃ হাতে ত দেখি ভালোই শক্তি! ভালোই ভালোই বলছি চলে যা।
রাফিঃ আমি ছোঁয়া কে ছাড়া এক পা ও নড়ছি না।
নির্জনঃ আরে বাপ অন্যের বউ কে দিয়ে তোর কাজ কি.?
রাফিঃ ছোঁয়া শুধু আমার বউ! ও শুধুই আমার।
নির্জনঃ কিন্তু সে এখন কাগজ কলমে, দুনিয়াতে আখিরাতে সব জায়গায় আমার হয়ে গেছে।
রাফি নির্জন কে ছেড়ে দৌড়ে ভেতরে চলে গেল।
ছোঁয়া চুপচাপ সোফায় বসে আছে।
রাফি দৌড়ে গিয়ে ছোঁয়ার পায়ের কাছে বসে পড়লো।

________________

শ্রাবণ সবাই কে বলে মেঘলা কে নিয়ে বের হয়ে গেল।
মেঘলা রাগে ফুসফুস করছে। সে কিছুতেই এখান থেকে যাবে না, শ্রাবণ ও মেঘলাকে এখানে এই গরমে থাকতে দিবে না। এই গরমে মেঘলার সাথে সাথে ওর মেয়েরও কষ্ট হচ্ছে।
মেঘলাঃ আমার শরীর,আমার বাচ্চা অথচ কষ্ট হচ্ছে তোমার! গরম লাগছে তোমার.? আজব আজব কথা বলা বন্ধ করো।
শ্রাবণঃ শরীর তোমার হলেও গরম আমার লাগে, আমি অনুভব করতে পারি, আমি তোমার কষ্ট গুলো বুঝতে পারি,আমার মেয়ের কষ্ট গুলো বুঝতে পারি। আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই এতোটা পাগলামি করি অথচ তোমার কাছে সব আজব লাগে!
মেঘলাঃ সব সময় বলি এতো কেয়ার করতে হবে না, আমারটা আমি বুঝে নিব। আল্লাহ না করুক যদি আমি না থাকি,আমার কিছু হয়ে যায় তখন…
মেঘলা আর কিছু বলার আগেই শ্রাবন ওর মুখ চেপে ধরলো।
শ্রাবণঃ চুপপপপ!! সব সময় উল্টা পাল্টা কথা না বললে তোমার শান্তি লাগে না! আমাকে কষ্ট দিয়ে শান্তি পাও.? তোমার এইসব কথা যে আমাকে কষ্ট দেয়! ভেতর থেকে ভেঙে দেয়! সারাক্ষণ মনের ভেতর ভয় ঢুকে থাকে তুমি বুঝতে পারো? তোমার কিছু হলে আমি কি নিয়ে থাকবো!.?
মেঘলা মুচকি হেসে গাড়ি থেকে বাহিরের দিকে তাকালো।
শ্রাবণ আঁড়চোখে মেঘলার দিকে তাকিয়ে রইলো। আজকাল মেঘলা শ্রাবণ কে ইগ্নোর করছে, দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করছে, কিছু বললেও চুপচাপ থাকে। মেঘলা কি বুঝে না ওর এইসব শ্রাবণ কে কষ্ট দেয়!!..

আহনাফ আমেনা বেগমের সাথে কথা বলে ছাঁদে গেল।
আমেনা বেগম ভেতর ভেতর ভীষণ খুশি, নিরুপমা ছাড়া সবাই খুশি ছোঁয়া নির্জনের সাথে আছে শুনে।

নিরুপমা শক্ত হয়ে বসে আছে, খুব শান্ত দেখা যাচ্ছে। যেমনটা ঝড় আসার আগে প্রকৃতি শান্ত হয়ে থাকে।

মহুয়া বার কয়েক তাকালো বুঝার চেষ্টা করলো, কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলো না।
আলভি গিয়ে নিরুপমার সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালো।
নিরুপমা চোখ তুলে আলভির দিকে তাকিয়ে এক হাত দিয়ে ওকে নিজের কাছে টেনে নিল।
আলভিও চুপচাপ শান্ত ছেলের মতো লেপ্টে গেল উনার বুকে।

আহনাফ কারো সাথে কথা বলে নিচে এসে দেখে মহুয়া চুপচাপ বসে আছে।
আহনাফ পাশে গিয়ে বসতেই মহুয়া উঠে যেতে চাইলো। আহনাফ মহুয়ার হাত ধরে ফেললো।
মহুয়া অন্য হাতে আহনাফের হাত ছাড়িয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
মহুয়াঃ আগামীকাল চলে যাচ্ছি নিজের শহরে। আশা করি আর কখনো আমাদের দেখা হবে না।
আহনাফঃ নিয়তি হয়তো অন্য কিছু চায়।
মহুয়াঃ আমি নিয়তি বদলে দিব!
আহনাফঃ চেষ্টা করে দেখো।
মহুয়া চলে যেতে নিলে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ সব কি ঠিক করা যায় না.? চাইলেই সব কিছু শুরু করা যায় মেহু।
মহুয়া তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ‘ যা শেষ তা শুরু কিভাবে হয় আহনাফ চৌধুরী!.? চাইলেই সব কিছু ভুলে যাওয়া যায় না, সব আঘাত মুছে যায় না! কিছু তিক্ত কথা ভুলে যাওয়া যায় না।
আহনাফঃ তুমি চাইলেই সবটা আমাকেবলতে পারতে, বুঝার পারতে।
মহুয়াঃ যেখানে অবিশ্বাস সেখানে আমি কি বলতাম.? কি বুঝাতাম.? আপনার ভালোবাসা এতোটাই হাল্কা ছিল সামান্য বাতাসে ঝরে গেছে । আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে কিছু শুরু হওয়ার নেই।

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ ২ পর্ব-১১

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব১১
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

বিয়ের আগের রাতে বউ উধাও! কোথাও বউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
মহুয়া পুরো বাসা,ছাঁদ খুঁজে এসে কথাটা মেঘলা কে বললো। মেঘলা চিন্তিত হয়ে নিরুপমা কে কথাটা বলতেই উনি বলে উঠলেন” আমার মেয়েকে আমি চিনি ও কখনো এমন কাজ করবে না যেটা আমার সম্মানে লাগে। ”
মহুয়াঃ তাহলে ছোঁয়া কোথায়.?

নিরুপমা হসপিটাল হতে শুরু করে ছোঁয়ার সব ফ্রেন্ডের বাসায় কল দিল। ছোঁয়া কোথাও নেই।

সারারাত গেল সবাই ছোঁয়ার অপেক্ষা করলো কিন্তু ছোঁয়া ফিরেনি।

নিরুপমার চোখ জলে ভরে উঠলো। এখন উনি কি জবাব দিবে ছেলে পক্ষ কে!.?

উনি মোবাইল বের করে রাফি কে কল দিল।
রাফি কল ধরতে নিরুপমা সবটা রাফি কে বললো। রাফি উনাকে শান্ত হতে বলে বললো,’ রাতে কেন এই খবর ওকে জানায়নি.? ও ছোঁয়ার হবু স্বামী একবার কি ওকে ছোঁয়া মিসিং সেটা জানানোর দরকার ছিল না.? এখন ও আসছে। ‘

বাড়ি ভর্তি মেহমান সবাই এটা সেটা বলা বলি করছে। মহুয়া সবাই কে চুপ করিয়ে বললো,’ ছোঁয়া ওর এক ফ্রেন্ডের বাসায় আছে।’

মিম সাইডে দাড়িয়ে কাউকে কল দিয়ে ওদিকের অবস্থা জিজ্ঞেস করলো!

কিছু সময়ের মধ্যে রাফি বাইক নিয়ে চলে আসলো।

প্রথমে এসেই জিজ্ঞেস করলো নির্জন কোথায়.??
সবাই অবাক হলো রাফি নির্জন কেও চিনে.!? রাত থেকে কেন একবারও কারো নির্জনের কথা মনে পরেনি!

নিরুপমা হালিমা বেগমের কাছে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলো ” নির্জন কোথায়!.?”
হালিমা বেগমঃ নির্জন ওর রুমে।কেন.?
নিরুপমাঃ নির্জনের রুমে গিয়ে ওকে ফোনটা দেন।
হালিমা বেগম নির্জনের রুমে গিয়ে অনেক বার দরজা ধাক্কা দিল, দরজা ভেতর দিয়ে লাগানো। অনেক ডেকেও কোনো সাড়াশব্দ না পেলে হালিমা বেগম ছেলের জন্য ভয় পেয়ে গেল! ছেলে উল্টা পাল্টা কিছু করে বসেনি ত! সুইসাইড করেছে কি.? এইসব মনে হতেই উনি চিৎকার চেচামেচি শুরু করলো দারোয়ান এনে দরজা ভাঙালো। ভেতরে গিয়ে দেখে কেউ নেই রুমে।

বাড়িতে হালিমা বেগম ছাড়া সবাই এখন নিরুপমার বাড়িতে।
হালিমা বেগম কল দিয়ে বললো নির্জন বাসায় নেই। কোথায় আছে উনি জানে না।
নিরুপমা রেগে বলে উঠলো, ‘ আপনার বেয়াদব ছেলে আমার মেয়েকে কোথায় নিয়ে গেছে!.? আজ ওর বিয়ে ছিল আর কিভাবে আমাদের নিচে নামাবেন!.? মা ছেলে মিলে পেয়েছেনটা কি.? আর কোনো ভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার থাকলে আমাকে মেরে ফেলুন।

হালিমা বেগম কিছুই বুঝলো না! নির্জন ছোঁয়াকে কোথায় নিয়ে গেছে! আর ছোঁয়া এতো ভালো হলে নির্জনের সাথে কেন গেল.?

আহনাফ শ্রাবণ অনেক বার নির্জন কে কল দিল ওর মোবাইল বন্ধ।
মহুয়া আহনাফের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল , আহনাফ কে শুনিয়ে শুনিয়ে বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ এদের ভাইদের এই স্বভাব জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করে নেওয়া! ভাইরা এমন করেছে সে কেন বাকি থাকবে!!

আহনাফ মহুয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে হেঁসে ফেললো। মহুয়ার দিকে আরও একটু ঘেঁসে দাঁড়িয়ে বললো,’ কেন তুমি খুশি হওনি.? জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ছিলাম বলেই ত আমার মতো হ্যান্ডসাম একটা স্বামী পেয়েছো!’
মহুয়াঃ হয় আমাকে উদ্ধার করেছেন! সুদর্শন পুরুষের চেয়ে একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী, যত্নশীল পুরুষ, কেয়ারিং হাসবেন্ড বেশি সুন্দর। যা আপনার মধ্যে নেই! সুন্দর চেহারা দিয়ে কি হবে যদি মন পরিস্কার না হয়।
আহনাফ মহুয়ার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ছোঁয়া নির্জনের কাছেই ভালো থাকবে, যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। ‘
মহুয়াঃ নিজের জিনিস সবার ভালো মনে হয়! ছোঁয়া নির্জনের কাছে ভালো থাকলে এতোটা কষ্ট পেতে হতো না! যখন ওকে প্রয়োজন ছিল এভাবে হাত ছেড়ে দিতে পারতো না, সুবিধা বাদি পুরুষ কখনো ভালো স্বামী হতে পারে না।
আহনাফ মহুয়ার রাগী মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ফর্সা মুখটা রাগে লাল হয়ে গেছে।
আহনাফঃ সুন্দর লাগছে…
মহুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আহনাফ বলে উঠলো, ‘ গরম ভীষণ বলে অন্য পাশে গিয়ে দাড়ালো।’

___________________

একটা রুমে হাত মুখ বাঁধা অবস্থায় ছোঁয়া রেগে ছুটার জন্য ছটফট করছে।

দূরে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্জন। ছোঁয়ার এমন রাগী চোখ দেখে নির্জন মুচকি হাসলো যা ছোঁয়ার রাগ আরও বাড়িয়ে দিল।

নির্জন উঠে গিয়ে ছোঁয়ার মুখের বাঁধন খুলে দিল।
ছোঁয়া জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ হাত গুলো খুলে দে।’
নির্জন বাধ্য ছেলের মতো ওর হাতের বাঁধন ও খুলে দিল।

হাত ছাড়া পেতেই ছোঁয়া হামলে পড়লো নির্জনের উপর। রাগে নির্জনের বুকে কিল ঘুসি মারলো, চুলগুলো টেনে ধরলো এক পর্যায়ে নির্জনের ঘাড়ে কামর বসিয়ে দিল।

নির্জন ব্যথায় চোখ বন্ধ করে নিল।

নিজের সব রাগ কামরের উপর দিয়ে গেল। রক্ত পড়ছে নির্জনের ঘাড় দিয়ে।
নির্জন ঘাড়ে হাত দিয়ে সামনে এনে দেখে রক্ত।
নির্জনঃ তোর এক রাতে এতো খিদে লাগলে আমাকে বলতি, রক্ত! মাংস যা লাগে আমি এনে দিতাম ডাইনীর মতো আমার রক্ত মাংস কেন খাচ্ছিস!.?
ছোঁয়াঃ পাঁচ মিনিটে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিবি না হলে তোকে আমি খু’ন করবো!
নির্জনঃ এমনিতেই সেই কয়েক যুগ,বছর আগে মরে গেছে, যেদিন তোকে প্রথম শাড়িতে দেখে ছিলাম সেই দিন কয়েকবার হার্ট মিস করে ছিলাম, আমাকে ত তুই সেই পিচ্চি থাকতেই মে’রে ফেলেছিস আর নতুন করে কি মারবি!.?
ছোঁয়াঃ এইসব সিনেমার ডায়লগ বন্ধ করে আমার সামনে থেকে যা। আজ আমার বিয়ে নিশ্চয়ই সবাই আমাকে খুঁজছে। আশেপাশের লোকজন আম্মুকে কথা শুনাচ্ছে! আর কিভাবে শেষ করবি আমাদের! এর থেকে ভালো মেরে ফেলতি।
নির্জনঃ রেডি হ এখন কাজী আসবে।
ছোঁয়া রেগে চিৎকার করে বলে উঠলো,’ কিসের কাজী!.?’
নির্জনঃ ওমা কাজী চিনস না!.? বিয়ে পড়ায়।
ছোঁয়া রেগে নির্জনের কলার চেপে ধরে বললো,’ কার বিয়ে!.? ‘
নির্জন ছোঁয়ার চোখের দিকে তাকাতেই হেঁসে বলে উঠলো, ‘ এখানে তুই আর আমি ছাড়া আছেটা কে!.?’
ছোঁয়াঃ নির্জনের বাচ্চা এখন কিন্তু অতিরিক্ত হচ্ছে!.? সারা রাত আমাকে আঁটকে রেখেছিস আমি তোকে পুলিশে দিব!
নির্জনঃ ছিঃ ছোঁয়া নিজের স্বামী কে পুলিশে দেওয়ার চিন্তা তোর মাথায় কিভাবে আসে! তুই অনেক ভদ্র, লক্ষি বউ ছিলি।

ছোঁয়াঃ আমি বাড়ি যাব।
নির্জনঃ আমি কি নিষেধ করেছি.? আগে শুভ কাজটা শেষ হোক।
ছোঁয়াঃ আমি তোকে মরে গেলেও বিয়ে করবো না।
নির্জনঃ তাহলে কাকে করবি!.?
ছোঁয়াঃ যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে।
নির্জনঃ ওর সাথে বিয়ের কথা ভুলে যাও।
ছোঁয়াঃ তুই বলে দিতে হবে কাকে ভুলবো আর কাকে মনে রাখবো!.?
নির্জনঃ আজ থেকে আমি যা বলবো তাই হবে।
ছোঁয়া রেগে দরজা খুলে আশেপাশে তাকিয়ে অবাক হলো। যতোদূর চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ পাশেই সমুদ্র এর একটু দূরে পাহাড়।
ছোঁয়াঃ এটা কোন জায়গা.? আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছিস.?
নির্জনঃ একটু পর স্বামী হবো একটু ত সম্মান দিয়ে তুমি করে বল।
ছোঁয়াঃ তুই এর থেকে নিচে কোনো শব্দ থাকলে সেটাই ব্যাবহার করতাম। আমাকে বাড়িতে দিয়ে আয়।
নির্জন ছোঁয়ার হাত ধরে বাহিরে সমুদ্রের পাড়ে নিয়ে আসলো।
নির্জনঃ সুন্দর না.?
ছোঁয়াঃ সব কিছু বিষাক্ত লাগছে নির্জন! সবাই আমার জন্য টেনশন করছে।
নির্জন কাউকে কল দিয়ে বললো জলদি নিয়ে আসতে।

কিছু সময়ের মধ্যে চারজন ছেলে একজন কাজী নিয়ে এসে দাঁড়ালো।
কাজী কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনাকে ভয় দেখিয়ে তুলে নিয়ে এসেছে।
ছোঁয়া কাজীর ভয়ার্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ নির্জন আর কতোটা নিচে নামবি.? তোকে আমি পুলিশে দিব!
নির্জন হাসলো ছোঁয়ার বোকার মতো কথা শুনে।
ছোঁয়াঃ হাসবি না! হাসলে তোকে রাক্ষসের মতো লাগে!!
নির্জনঃ ছোঁয়ারাণী ভুলে যান কেন! আপনার স্বামী একজন পুলিশ তাকে আর কি পুলিশের ভয় দেখান!?
ছোঁয়াঃ আমাকে বাড়িতে নিয়ে চল নির্জন পাগলামি করিস না! আমার বর নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে! আম্মুর কি অবস্থা কে জানে.! এইসব করে কি শান্তি পাচ্ছিস.?
নির্জন ওর হাত ধরে ভেতরে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিল।

ছোঁয়া নির্জনের হাত ছেড়ে দৌড়তে শুরু করলো। কোন দিকে যাচ্ছে সে নিজেও জানেনা কিন্তু ওকে বের হতেই হবে।
নির্জন পেছন থেকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে, শুধু শুধু নিজের এনার্জি গুলো নষ্ট করছো আমার বোকারাণী ঘুরে ফিরে সেই একই যায়গায় এসে তোমাকে থামতে হবে।

____________________

এমন কোনো জায়গা বাকি নেই রাফি ছোঁয়াকে খু্ঁজছে না।সব জায়গায় লোক লাগিয়েছে।

আহনাফ আলভিকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে মহুয়া চুপচাপ বসে বসে তা দেখছে ভেতর ভেতর রাগে ফেটে পড়লেও উপরে একদম শান্ত দেখাচ্ছে।
এদিকে শ্রাবণ বউকে নিয়ে ব্যস্ত জোর করে নিজেই খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। বাহিরের সব মেহমানদের খাইয়ে বিদায় করে দিয়েছে।
রাফি আহনাফ আর শ্রাবণের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো। এদের বোন কে পাওয়া যাচ্ছে না অথচ এই দিকে এদের কোনো খবর নেই একজন বাচ্চা ত আরেকজন বউ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে!!

মহুয়া হয়তো রাফির এভাবে তাকানোর কারণ বুঝলো।
রাফির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ ছোঁয়ার কোনো খবর.?’
রাফিঃ নাহ্ ভাবি তবে খুব জলদি পেয়ে যাব,লাস্ট নির্জনকে কোথায় দেখা গেছে তার লোকেশন পেয়ে গেছি।
মহুয়া অবাক হয়ে বললো,’ কোথায়!.? ‘
রাফি ইশারা করে মিমের দিকে তাকালো।
মহুয়া আরও অবাক হলো রাফি মিমকে ইশারা করায়।
মিম মোবাইলে কিছু একটা করে সামনে তাকিয়ে দেখে রাফি আর মহুয়া দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে।

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ ২ পর্ব-১০

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব_১০
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আম্মা আমি ছোঁয়া কে ছাড়া থাকতে পারবো না আম্মা, প্লিজ তুমি ছোঁয়াকে নিয়ে আসো, আমার যে ছোঁয়া কে বড্ড বেশি প্রয়োজন আম্মা। তুমি সব দেখো ছেলের কষ্টটা দেখো না!

হালিমা বেগম অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্জন নেশা করে আছে!.?
নির্জন হালিমা বেগমের পায়ের কাছে বসে কাঁদতে শুরু করলো।
~ আম্মা আমার ছোয়াকে লাগবে আম্মা।
হালিমা বেগমঃ রুমে যাও নির্জন।
~ আম্মা তুমি শুধু নিজের জেদ টাই দেখো, কোনটা সঠিক কোনটা ভুল কেনো বুঝ না! তোমার সিদ্ধান্ত কেন আমার উত্তর দিচ্ছ! তোমার জন্য কেন আজ আমি কষ্ট পাচ্ছি! আমার মানুষটা কেন আজ অন্যের জন্য বউ সাজছে.? আমি সব শেষ করে দিব আম্মা সব।

হালিমা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন।

__________________

আহনাফ হাতে পিস্তল নিয়ে মাহিনের কলার চেপে ধরলো।

মাহিন বিশ্রীভাবে হেঁসে উঠলো।

আহনাফ মাহিনের কলার ছেড়ে বললো,’ তুই কার সামনে বসে আছিস জানিস.!?’
মাহিনঃ তুই ও মানুষ আমিও মানুষ, আমি এখন মানুষের সামনে বসে আছি নাকি তুই নিজেকে পশু ভাবছিস!.?
বলেই আবার হেঁসে উঠলো।
আহনাফ আশেপাশে তাকিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মাহিনের মুখে পরপর কয়েকটা ঘুসি মারলো। মাহিনের মুখে দিয়ে রক্ত পরছে।
হাত পা বাঁধা মাহিন আবার হেঁসে উঠলো।
আহনাফঃ এমনটা কেনো করেছিস!.?
মাহিনঃ তোর আগে আমি ওকে চেয়েছি।
আহনাফঃ কিন্তু ও আমার বউ।
মাহিনঃ আগে ছিল।
আহনাফঃ এখনো আছে।
মাহিনঃ অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আহনাফঃ আমি তোকে শেষ করে ফেলবো।
মাহিনঃ তাহলে বসে আছিস কেন!.?
আহনাফঃ এতো সহজে না, আজ পাঁচটা বছর যেই কষ্টে প্রতিটা মুহূর্ত কাটিয়েছি তোকেও তার কিছু ভাগ দিতে হবে না!
মাহিনঃ মহুয়াকে আমি আমার করেই ছাড়বো।
আহনাফঃ বেঁচে থাকলে ত।
মাহিনঃ তুই আমাকে চাইলেও মারতে পারবি না।
আহনাফ পিস্তল মাহিনের মাথায় চেপে ধরে বললো,’ প্রতিটা মুহূর্ত ছটফট করবি মৃত্যুর জন্য ‘

আহনাফ চোখের ইশারায় কাউকে কিছু বলে বেরিয়ে গেলো।

__________

মহুয়া সবকিছু গুছিয়ে বসলো। আজ ছোঁয়ার বাসায় যাবে বিয়ে শেষ হলে নিজের শহরে ফিরে যেতে হবে।

নিজের রুম থেকে বের হতেই আহনাফ কে বাড়িতে আসতে দেখলো।

আহনাফ সোজা নিজের রুমে গেলো, মহুয়া নিচে গিয়ে মেঘলাকে বললো।
মেঘলা নিজেও রেডি হয়ে আছে।
মহুয়াঃ শ্রাবণ ভাইয়া কিছু বলবে.?
মেঘলাঃ একটু বকা দিবে আমি বুঝিয়ে নিব।
মহুয়াঃ ভাইয়া তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে।
মেঘলাঃ হুম।
মহুয়াঃ ভালোবাসার মধ্যে বিশ্বাসটা হয়তো একটু বেশি প্রয়োজন।
মেঘলা চায় না নিজের ভালোবাসার মানুষের কথা বলে মহুয়ার কষ্ট বাড়াতে তাই বলে উঠলো, ‘ আলভি কোথায়!.?’
মহুয়াঃ এখানেই ত ছিল।

আমেনা বেগমঃ আলভি ওর দাদার কাছেই ছিল আহনাফ এসে নিয়ে গেল।
আহনাফের কাছে আলভি এটা শুনতেই মহুয়ার মুখ কালো হয়ে গেল। সে কিছুতেই চায় না আলভির আশেপাশে আহনাফ থাকুক।

মহুয়া শাড়ির আঁচল টেনে উপরে যেতে নিলে আমেনা বেগম ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

চোখের থেকে কাজল নিয়ে মহুয়ার কানের পেছনে লাগিয়ে বললো,’ কারো নজর না লাগুক। তোমাকে দেখলেই মনে হয় চাঁদ আকাশে নয় আমার ঘরে। আল্লাহ খুব যত্ন করে তোমাকে বানিয়েছেন দেখলে দেখতেই ইচ্ছে হয়। আমার শাশুড়ী ছিল তোমার মতো সুন্দরী, সব সময় বলত মেয়েদের বেশি সুন্দর হতে নেই, সৌন্দর্য হলো একটা অভিশাপ।
মহুয়া হাল্কা হেঁসে বললো,’ দাদিশাশুড়ি ত ভুল কিছু বলেনি মা, সব সৌন্দর্য জীবনে সুখ আনে না, কিছু সৌন্দর্য জীবন জাহান্নাম করে দেয়, অভিশাপ হয়ে থেকে যায়।
আমেনা বেগমঃ তোমার জীবন থেকে সব কালো অধ্যায় মুছে যাক, আলোয় আলোকিত হয়ে উঠুক।
মহুয়াঃ দোয়া করবেন আমার জন্য।
আমেনা বেগমঃ সব সময় আমার দোয়া তোমাদের জন্য আছে। আহনাফের সাথে সব ঠিক করে নাও। আমাদের বয়স হচ্ছে সব মা বাবা তার সন্তানের সুখ দেখে যেতে চায়।
মহুয়া কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। কিভাবে বলবে উনার ছেলের সুখ যে ওর কাছে নেই, আহনাফ যে ওকে আর ওর সন্তান কে অস্বীকার করেছে! ওকে ডিভোর্স পেপার দিয়েছে এইসব বললে কতোটা কষ্ট পাবে উনি!

আমেনা বেগম নিজ থেকে বলে উঠলো, ‘ আমি জানিনা কেন আহনাফ আলভিকে নিজের সন্তান বলে স্বীকার করে না! কি হয়েছিল তোমার.? কেন আহনাফ এভাবে পাল্টে গেল.? যেই ছেলে তোমাকে চোখের আড়াল করতো না সে কেন এভাবে বদলে গেল.?
মহুয়া কি বলবে!.?
আমেনা বেগমঃ এখন অন্তত বলো পাঁচ বছর আগে কি হয়ে ছিল.? কেন আজ তোমাদের মধ্যে এমন দূরত্ব!.?
মহুয়ার চোখে পানি চিকচিক করছে। এখানে ত ওর কোনো দোষ নেই! আহনাফ ওকে ভুল বুঝে ছিল।

মহুয়া কিছু বলার আগে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ আম্মু আমার জন্য কফি পাঠান।’
আমেনা বেগম সিঁড়ির দিকে তাকালো। আহনাফের কোলে আলভি।

মহুয়া অন্য দিকে ফিরে চোখের পানি মুছে আহনাফের কোল থেকে আলভিকে নিয়ে আসতে চাইলো কিন্তু আলভি কিছুতেই আহনাফের কোল থেকে আসবে না।রাগে দুঃখে মহুয়া আলভির গালে থাপ্পড় মেরে বসলো৷
উপস্থিত সবাই বেশ চমকে উঠলো। আহনাফ নিজেও ভাবতে পারেনি মহুয়া এমন কাজ করে বসবে।

মিম ত অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো। আজ চার বছরে এই প্রথম মহুয়া আলভির গায়ে হাত তুললো।

মহুয়া রেগে আলভিকে আবার মারতে গেলে আহনাফ আলভিকে সরিয়ে নিল।

আমেনা বেগমঃ মহুয়া কি করছো.?
মহুয়াঃ যারতার কোলে ওর যাওয়া আমার পছন্দ না আম্মু।
আমেনা বেগমঃ যারতার! আহনাফ ওর বাবা।
মহুয়াঃ প্লিজ একবার বলেছেন দ্বিতীয় বার আমি কারো মুখে শুনতে চাই না। আলভি শুধু মাত্র আমার ছেলে।

মহুয়া আলভিকে নিতে চাইলে আহনাফ কোল থেকে ছাড়ল না। আলভি কাঁদছে মহুয়ার কোলে যাবে। এই প্রথম মা মেরেছে ফুপিয়ে কাঁদছে আলভি ছোট বাচ্চা হলেও মায়ের প্রথম থাপ্পড়ে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।

মহুয়াঃ আমার ছেলেকে ছেড়ে দেন।
আহনাফঃ তোমার সাহস কি করে হয় আমার ছেলের গায়ে হাত দেওয়ার!.?
মহুয়া হেঁসে উঠলো, তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ‘ আপনার ছেলে.? ভীষণ মজা পেলাম, এটা আমার শোনা সেরা বিনোদন কথা ছিল।’
আহনাফ কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
মহুয়া এক ঝটকায় আলভিকে আহনাফের কোল থেকে নিয়ে নিল।
মহুয়াঃ আমার সন্তানের কাছ থেকে দূরে থাকবেন।

মহুয়া চলে যেতেই আহনাফ মায়ের দিকে তাকালো।
আমেনা বেগমঃ একদম ঠিক করেছে মহুয়া, থাপ্পড়টা আমার নাতিকে না দিয়ে তোকে দেওয়ার দরকার ছিল।
আহনাফঃ আম্মু তুমিও!
আমেনা বেগমঃ কিছু জিনিসের ক্ষমা নেই। কিছু কথা হৃদয়ে গিয়ে লাগে,হৃদপিণ্ডটাকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়, রুহ অব্দি কেঁপে ওঠে।
আহনাফঃ আম্মু আমি মানছি আমার ভুল হয়ে গেছে।
আমেনা বেগমঃ এটা বুঝতে অনেক দেরি করে ফেলেছো।

_______________

দরজার খুলে হালিমা বেগম কে দেখে অবাক হোন নিরুপমা।
হালিমা বেগমঃ ভেতরে আসতে বলবে না.?
নিরুপমাঃ আসুন।
হালিমা বেগম ভেতরে এসে চারপাশে একবার তাকিয়ে সোফায় বসলো।
নিরুপমা হালিমা কে বসতে দেখে নাস্তা আনতে গেলো।

হালিমা বেগম চা হাতে নিয়ে বললো,’ কেমন আছো নিরু.?
নিরুপমাঃ ভালো।
হালিমা বেগমঃ আমার উপর রেগে আছো.?
নিরুপমা হাসলো, হেঁসে বললো,’ আপনার উপর আমি কেন রাগ করবো!.?’
হালিমা বেগম কি বলবে কনফিউশানে পরে গেল।
নিরুপমাঃ ভালো করেছেন এসেছেন একদম বিয়ের পর যাবেন।
হালিমা বেগমঃ একটা কথা ছিল নিরু।
নিরুপমাঃ বলুন।
হালিমা বেগমঃ আমার কথাটা রাখবে ত.?
নিরুপমাঃ রাখার মতো হলে চেষ্টা করব।
হালিমা বেগম নিরুপমার হাতে ধরে বলে উঠলো, ‘ বোন আমার ছেলেটাকে বাঁচাও। ‘
নিরুপমা আগের মতো বসে রইলো,’ আপনার ছেলের কি হয়েছে.? অসুস্থ হলে হসপিটাল আছে আমি ডাক্তার নই।’
হালিমা বেগমঃ ডাক্তার ত তোমার মেয়ে, আমার ছেলের জন্য তোমার মেয়েকে চাইতে এসেছি।
নিরুপমাঃ সরি, আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক, কাল বাদে পরশু বিয়ে।
হালিমা বেগমঃ তুমি চাইলে এখনো সম্ভব, তুমি তাদের নিষেধ করে দাও। আমার ছেলেটার দিকে তাকাতে পারছি না। তুমি ত নির্জন কে নিজের ছেলে বলতে।
নিরুপমা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি তাদের কথা দিয়ে ফেলেছি। আপনাদের বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্য এখনো আমার মেয়ে হতে পারেনি। বসুন নির্জন কে নিয়ে এসে আমার মেয়ের নতুন জীবনের জন্য দোয়া দিয়ে যাবেন।’

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ ২ পর্ব-০৯

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব_৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

নিরুপমা বাড়ির দিকে একবার তাকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।

মেঘলা সোফায় বসে আলভির সাথে খেলছিল।
আলভি মেঘলাকে পেয়ে মহুয়াকে একদম ভুলেই গেছে। খাবার খায় মেঘলার হাতে, ঘুমানোর জন্য বায়না ধরে মেঘলার সাথে মোট কথা মেঘলা বলতেই আলভি পাগল। কথায় আছে খালামুনির শরীরে মায়ের গন্ধ থাকে, খালামুনি সামনে থাকলে মায়ের কথা ভুলেই যায় বাচ্চারা।

মহুয়া চুপচাপ বসে ওদের খেলা দেখছে।
শ্রাবণ অফিসে, আহনাফ নিজের রুমে, নির্জনের খবর ঠিক জানা নেই। নির্জন আর আগের নির্জন নেই, সারাদিন দরজা বন্ধ করে রাখে ঠিক মতো অফিসেও যায় না। মহুয়া ত এখনো নির্জনের দেখাই পায়নি।

নিরুপমা মেঘলার দিকে এগিয়ে আসলো। মেঘলার কোলে বাচ্চা দেখে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো।
আলভি বল মারলো সেই বল গিয়ে পরলো নিরুপমার কপালে।
নিরুপমা কপালে হাত দিতেই আলভি ভয়ে চুপসে গেলো।
নিরুপমা আলভির দিকে হাত বাড়িয়ে ইশারায় কাছে ডাকলো।

মেঘলা নিরুপমা কে দেখে অবাক সাথে ভীষণ খুশি হলো।

আলভি ছোট ছোট পায়ে নিরুপমার সামনে গিয়ে বললো,’ সরি আনতি’
নিরুপমা আলভির সামনে বসে গালে হাত রেখে বললো,’ এ যে আমাদের ছোট আহনাফ’
মেঘলা হেঁসে বললো,’ একদম বাবার মতো হয়েছে। ‘
নিরুপমাঃ আহনাফের ছেলে.?
মেঘলাঃ হুম
নিরুপমা আলভিকে বুকে চেপে নিলো।

আমেনা বেগম নিরুপমা কে দেখে খুশিতে বলে উঠলো, ‘ নিরু তুই কখন আসলি.?’
নিরুপমাঃ এই ত এখনি।
আমেনা বেগমঃ বস, কতোদিন পর আসলি।
নিরুপমাঃ নাহ্ ভাবি বসার সময় নেই বাসায় অনেক কাজ ফেলে এসেছি।
আমেনা বেগমঃ এমন কি কাজ তোর বাসায়! চুপচাপ বস ত।
নিরুপমা হেঁসে বললো,’ অনেক কাজ ভাবি একটা দরকারে এসে ছিলাম। ‘
আমেনা বেগমঃ পরে শুনবো তোর দরকারী কথা আগে বস আমি কিছু নিয়ে আসি।
নিরুপমাঃ না,না ভাবি আমার এখনি চলে যেতে হবে।
আমেনা বেগমঃ মহুয়া এসেছে..
নিরুপমা এতোক্ষণ মহুয়াকে খেয়াল করেনি। সোফার পাশে মহুয়াকে দেখে কাছে গেলো।
মহুয়া উনাকে জড়িয়ে ধরলো নিরুপমা মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।কেমন আছে.? টুকটাক কথা জিজ্ঞেস করে বললো একদিন সময় করে বাসায় যেতে অনেক আড্ডা দিবে।

নিরুপমা উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলো হালিমা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। নিরুপমার চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো। ওই দিনের অপমান উনাকে আজও রাতে ঘুমাতে দেয় না।

নিরুপমাঃ ভাবি এই নেন ছোঁয়ার বিয়ের কার্ড।
ছোঁয়ার বিয়ে শুনতেই সবাই অবাক হয়ে তাকায়।
আমেনা বেগমঃ ছোঁয়ার বিয়ে মানে!.?
নিরুপমা হেঁসে বললো,’ হ্যাঁ গো ভাবি ছোঁয়ার বিয়ে, ছেলে ভালো আগে থেকে ওকে চিনে, একই সাথে পড়াশোনাও করেছে ভালো জব করে ইন্জিনিয়ার।’
আমেনা বেগমঃ নিজে নিজেই ঠিক করে নিলি!
নিরুপমাঃ মেয়ে ত আমার নিজের তাই না!
আমেনা বেগমঃ অথচ আমরা ওর কেউ না.?
নিরুপমাঃ প্লিজ ভাবি মন খারাপ করো না, আর কতো জ্বালাবো তোমাদের! আমাদের জন্য ত অনেক করলে।

মেঘলা, মহুয়া অবাক হয়ে বললো,’ ছোঁয়া রাজি!.?’
নিরুপমাঃ হুম, আমার মেয়ে আমার অবাধ্য কখনো হবে না।

নিরুপমা সবাই কে দাওয়াত দিয়ে গেলো। বিয়ে তিনদিন পর সবাই জেনো আগামীকাল চলে যায় বলে গেল নিরুপমা। কারো মুখে কোনো কথা নেই।

_________

রাতে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে মিম। আকাশের দিকে তাকিয়ে গুণগুণ করে গেয়ে উঠলো, ‘ সখি তোরা প্রেম করিও না, পিরিত ভালা না…
সখি তোরা প্রেম করিও না।

” তুমিও কখনো কাউকে ভালোবাসতে নাকি!.?”

পুরুষের কন্ঠ শুনে পেছন ফিরে তাকালো মিম।

নির্জন হাতে সিগারেট নিয়ে ধোঁয়া আকাশে ছেড়ে দূর অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছে।

মিম হেঁসে বললো,’ কই না ত!.’
নির্জন হাসলো। সে খুব করে মানুষের মন পরতে পারে। চার পাশে এত এত বিচ্ছেদ মন ভাঙার গল্প কেন! তার জন্য অবশ্য আমরা নিজেরাই দায়ী।

নির্জনঃ আচ্ছা, তাহলে এই গান কেন!.?
মিমঃ ইচ্ছে হলো।
নির্জনঃ আজকাল আমারও গান গেতে ইচ্ছে হয়, ইচ্ছে করে আকাশের বুকে কষ্ট গুলো ভাসিয়ে দেই।
মিমঃ কষ্ট গুলোর ওজন অনেক ভারি আকাশে ভাসবে না অতল সমুদ্রে ডুবে যাবে।
নির্জনঃ আমাদের ছোট ছোট ভুলগুলো মানুষ এত বড় করে কেন দেখে! ভালোবাসা গুলো কেন দেখে না.? সারাজীবন ভালোবেসে একদিন কষ্ট দিলে ওরা সব ভালোবাসা ভুলে যায় কেন!.? তাহলে কি ভালোবাসার ওজন নেই! ভালোবাসা খুবই সাধারণ কিছু! আর কষ্টের ওজন বেশি!?

মিমঃ জানিনা, তবে আমরা যেই কষ্ট গুলো ছোট ছোট মনে করি তা হয়তো বিপরীত মানুষটির জীবন পাল্টে দিতে পারে, আমাদের আগে পরিস্থিতি বুঝা দরকার।

নির্জন আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমার ভালো থাকতে তাকেই লাগবে, সে না চাইলেও লাগবে।’
মিমঃ তাহলে ত দেরি হয়ে গেল!
নির্জনঃ আমি ওকে মানানোর চেষ্টা করবো, একদিন ঠিক ও মেনে নিবে।
মিম হাসলো।
নির্জনঃ হাসছো কেন!.?
মিমঃ আর সেই একদিন আশার আগেই যদি সে অন্য কারো হয়ে যায়!.?
নির্জনঃ এমনটা কখনো হবে না।
মিমঃ এমনটাই হবে।
নির্জনঃ আমি হতে দিব না।
মিমঃ তুমি তাহলে কিছুই জানো না!
নির্জনঃ কি জানবো.?
মিমঃ ছোঁয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে, আজ বিয়ের কার্ড দিয়ে গেলো ফুপিমণি, তিন দিন পর বিয়ে।
নির্জন কি বলবে ভাষা হারিয়ে পেললো! এই মুহূর্তে ওর কি রিয়াকশন দেওয়া উচিত সেটাও ভুলে গেল।
মিমঃ নির্জন…
নির্জন কিছু না বলে ছাঁদ থেকে নেমে যেতে নিলে মিম ওর হাত ধরে থামিয়ে বললো,’ মাথা ঠান্ডা করো, আমি যা বলি শুনো। পরিবার একদিন মেনে নিবে, ছোঁয়াও একদিন সবটা মেনে নিবে তুমি ছোঁয়া কে তুলে এনে জোর করে বিয়ে করে নাও।অভিমান করে, রাগ দেখিয়ে দূরে সরে যাওয়া মানে তাকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলা, একবার সে অন্য কারো হয়ে গেলে সারাজীবন আপসোস করবে লাভ হবে না।

নির্জন কোনো উত্তর না দিয়ে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।

মিম আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার গুণ গুণ করে বলে উঠলো, ‘ সখি তোরা প্রেম করিও না, পিরিত ভালা না….’

_________________

রাস্তায় পাশাপাশি হাঁটছে মহুয়া মেঘলা।
মহুয়া নিষেধ করে ছিল কিন্তু মেঘলার নাকি হাঁটতে মন চাচ্ছে। শ্রাবণ ও বাসায় নেই।

মেঘলাঃ আলভি ঘুমিয়েছে.?
মহুয়াঃ হুম, আলভি ত তোমাকে পেলে আমাকে ভুলেই যায়।
মেঘলা হাসলো।
মহুয়াঃ শুনেছি বাচ্চারা মায়ের থেকে খালার কাছে থাকে বেশি।
মেঘলা অবাক হয়ে বললো,’ খালা!.’
মহুয়া মেঘলার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি ভেবে ছিলাম তুমি অন্তত নিজ থেকে সত্যিটা আমাকে বলবে!’
মেঘলা এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,’ কিসের সত্যি!.? কিসের সত্যির কথা বলছো!.?’
মহুয়া হাসলো মেঘলার ঘাঘাবড়ে যাওয়া মুখটা দেখে হেসে বললো,’ নিজের বোন হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা পাও!.?’
মেঘলাঃ এইসব কি বলছো!.
মহুয়াঃ আমাকে নিষেধ করলে আমিও সবটা গোপন রাখতাম তাও অন্তত একবার বলতে তুমি আমার বড় বোন।
মেঘলাঃ তোমাকে এইসব কে বলেছে.?
মহুয়াঃ আমাকে কেউ বলেনি ওইদিন আমি সব শুনে ছিলাম।
মেঘলাঃ তুমি সব শুনে ছিলে!.?
মহুয়াঃ হুম সবটা শুনে ছিলাম। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে যখন তুমি মামিকে বাবা মায়ের মৃত্যুর কথা জিজ্ঞেস করছিলে! তোমার ছবি দেখিয়ে সব বলে ছিলে আমি দরজার বাহিরে ছিলাম।
মেঘলা মহুয়ার কাঁধে হাত রেখে বললো,’ তাহলে তুমি আগে থেকেই সবটা জানতে তাহলে কখনো বলনি কেন!.?’
মহুয়াঃ তুমি আমাকে বোন হিসেবে পরিচয় দিতে ভয় পাও, লজ্জা পাও।
মেঘলাঃ উল্টো না বুঝে ভাজটা ত বুঝতে পারো। আমি তোমার ছোট মনটায় কষ্ট দিতে চাইনি, আমি চাইনি বাবা মায়ের মৃত্যুর আসল রহস্য জেনে তুমি কষ্ট পাও,আর তখন মামিকে তোমার ভীষণ প্রয়োজন ছিল।
মহুয়াঃ একবার এসে বোন বলে ত জড়িয়ে ধরতে, সব জায়গায় কেনো লাভ ক্ষতি বিচার করা হয়!
মেঘলাঃ মহুয়া!
মহুয়াঃ বাসায় চলো, অনেক রাত হয়েছে ভাইয়া বকবে।
মেঘলা কিছু বলতে চাইলে মহুয়া শুনতে চাইলো না।

মেঘলা আর মহুয়া বাড়িতে চলে আসলো।
বাড়িতে এসেই দেখে শ্রাবণ সোফায় বসে আছে।
মেঘলা শ্রাবণের গম্ভীর মুখ দেখে ভয় পেল।

শ্রাবণ মেঘলাকে দেখে কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো , ‘ তুমি ঠিক আছো..?
মেঘলাঃ হুম।
শ্রাবণঃ তোমাকে কতোবার নিষেধ করেছি রাতে বাহিরে না বের হতে! আল্লাহ না করুক কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলে কি করবে!.?
মেঘলাঃ শান্ত হও।আমি ছাড়া কি আর কেউ প্রেগন্যান্ট হয় না!..? আমার সব কাজ তুমি করে দিতে হবে কেন! আমাকে কিছুই করতে দাও না, খাবারও রুমে নিয়ে যাও। আমার সারাক্ষণ এমন থাকতে ভালো লাগে না কেমন খালি খালি লাগে।

শ্রাবণঃ আর কয়েকটা দিন এভাবেই থাকতে হবে রুমে চলো।

মহুয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শ্রাবণের কেয়ার দেখলো৷ কতোটা কেয়ারিং স্বামী। মহুয়ার মনে পরে গেলো নিজের প্রেগন্যান্সির দিনগুলোর কথা। সকালে উঠে গোসল করে কিছু খেয়ে অফিসে চলে যেত আর রাতে আসতো। সারাদিন এতো এতো কাজ, গরম, যানবাহন সব মিলিয়ে দুইদিন পর পর অসুস্থ হয়ে পড়তো। কি কষ্টের ছিল দিন গুলো! মহুয়া সেই সব কষ্টের দিনগুলো ভুলে যেতে চায়। এই বাড়ি থেকে যতোদ্রুত সম্ভব চলে যাওয়া ভালো।

_____________

আহনাফ নিজের এসিস্ট্যান্ট কে কল দিল।
~ কোনো খবর পেয়েছো.?
~ স্যার ম্যাডাম যে দিন হোটেলে ছিল সেই দিনের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পেয়েছি। আমি আপনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

আহনাফ কল কেটে দেখলো ভিডিও এসেছে বসে শান্ত মাথায় সবটা দেখলো। সেই রাতে হোটেলে মহুয়া একা ছিল দরজা বাহির থেকে কেউ লাগিয়ে দেয়, মহুয়া বের হওয়ার চেষ্টা করে। সব দেখে আহনাফ রেগে বলে উঠলো ‘ এই মাহিন কে একদিনের মধ্যে আমার সামনে দেখতে চাই!’

___________

কিছু কিছু মুখের আদল বুকের মধ্যে দাগ কেটে যায়!!বুকটা ধড়ফড়িয়ে ওঠে প্রচন্ড রকমের। দেখে মনে হয়,তুমি আমার কতো আপন! এই তুমি ত শতাব্দী শতাব্দী ধরেই আমার ছিলে! তাই না!.??
পরে বাস্তব জ্ঞান ফিরে পাই, বুঝতে পারি. এই তুমি আমার নও, এই আদলের কেউ কখনো আমার ছিল, ভালোবেসে ছিল হয়তো! ভালোবাসা ছিলো..??
বুঝতে পারি এই তুমি আমার নও…

ডায়রি বন্ধ করে জানালা দিয়ে বাহিরের অন্ধকার আকাশের দিকে তাকালো ছোঁয়া। কাঁদতে কাঁদত চোখ মুখ ফুলে গেছে, মাথা যন্ত্রণা করছে, এক হাতে মাথা চেপে ধরলো, অন্য হাতে ঝাপসা হয়ে আসা চোখের পানি মুছে নিল।

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ ২ পর্ব-০৮

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব_৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

” এ আমার ছেলে নয় আম্মু! আমার রুম থেকে নিয়ে যাও”

ছেলের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন আমেনা বেগম।
আমেনা বেগমঃ আহনাফ কি বলছো নিজে জানো.?
আহনাফ কিছু না বলে অন্য দিকে তাকিয়ে মোবাইল হাতে নিল।
আমেনা বেগমঃ একবার ওর দিকে ভালো করে তাকাও.. এই ছোট্ট বাচ্চাটার মাঝে কি নিজেকে দেখতে পাচ্ছ না.?
আহনাফঃ আমার রুম থেকে ওকে নিয়ে যান আম্মু।
আমেনা বেগমঃ নিজের এই অযথা রাগের জন্য একদিন পস্তাবে।

আমেনা বেগম আলভিকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আলভি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো আহনাফের দিকে।
আহনাফ নিজেও আমেনা বেগমের অগোচর তাকিয়ে রইলো আলভির দিকে খুব ইচ্ছে হলো আলভিকে একটু ছুঁয়ে দেখার কিন্তু নিজের রাগ, অভিমানের জন্য সেটা পারলো না।

আলভিকে পেয়ে বাড়ির প্রতিটা সদস্য ভীষণ খুশি। শুধু দেখা নেই নির্জনের।

আলভি অসুস্থ হয়েও এক মিনিট এক জায়গায় থাকছে না, সারা বাড়ি দৌড়ে বেড়াচ্ছে। ওকে দেখে মনেই হচ্ছে না এই বাড়িতে ও প্রথম এসেছে। বাচ্চারা হয়তো এমনি আদর, ভালোবাসা পেলে সেই জায়গা আর মানুষ দুইটাই আপন ভাবতে শুরু করে।

মহুয়া বসের কাছে কল দিতেই লোকটা রেগে এটা সেটা শুনিয়ে দিলো।বেতন কেটে রাখবে। এক দিনের ভেতর অফিসে না গেলে জব থেকে বের করে দিবে বলে হুমকি দিয়ে কল কেটে দিলো৷
মহুয়া মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো৷ বসটা খুব রাগী ওর কথা না শুনেই এতোগুলা কথা শুনালো বেয়াদব লোক। বেটার বউ যে শুধু শুধু তারে ডিভোর্স দেয় নাই এটাই তার প্রমাণ, এইসব লোকের সাথে দুই মিনিট থাকা যায় না আর সেখানে সারাজীবন থাকার কথা ভাবা ত…

মহুয়া মিমের দিকে তাকিয়ে বললো,’ সকালেই আমরা বাড়িতে চলে যাব। ‘
মিমঃ আচ্ছা, আমার ভার্সিটি আর তোর অফিস আছে।
মহুয়াঃ হুম, অফিসে গিয়ে আরও কতো কথা শুনতে হবে।
মিমঃ তোর ওই বজ্জাত বসকে একটা শিক্ষা না দিলে ঠিক হবে না।
মহুয়াঃ খবর্দার উল্টা পাল্টা কিছু করবে না কিন্তু।
মিমঃ উল্টা পাল্টা কিছু করবো না, উনার ত একটা কিউট বোকা ছেলে আছে তাই না.? আমাদের ভার্সিটিতেই পড়ে আমার সিনিয়র।
মহুয়াঃ ত!..?
মিম হাই তুলে বলে উঠলো, ‘ না, না কিছু না।
মহুয়াঃ কোনো ঝামেলা করো না, যাদের দেখতে হাবলা, বোকা মনে হয় তারা আসলেই বিপরীত মুখি হয়।
মিমঃ আরে আপু কিছুই করবো না তুমি এইসব নিয়ে চিন্তা করো না।
মহুয়াঃ মনে থাকে জেনো! আমি কিন্তু তোমাকে খুব ভালো করে চিনি।

মহুয়া মোবাইল রেখে আলভির কথা জিজ্ঞেস করলো।
মিমঃ আলভি তোর শশুরের কাছে।
শশুর এসেছে শুনে মহুয়া রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

আজাদ চৌধুরী মহুয়াকে দেখে বেশ খুশি হলো তাও মুখে গম্ভীরর্য এনে বললো,’ এতোদিন কোথায় ছিলে.? হুট করে কোথায় হারিয়ে গেলে! এতো খুঁজেও কেউ কোথাও পায়নি।
মহুয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না।
আজাদ চৌধুরী মহুয়াকে বসতে বললো।
মহুয়া বসলো।
আজাদ চৌধুরীঃ স্বামী স্ত্রী মধ্যে ঝগড়া, ভুল বুঝাবুঝি হয় তার মানে এই নয় দূরত্ব তৈরি করবে।অন্তত আমাদের কথা একবার ভাবতে! সবাই তোমাকে কতোটা ভালোবাসে সেটা ভাবতে। ঝগড়া হলে ইচ্ছে মতো ঝগড়া করে নিতে কিন্তু এটা কেমন হলো আজ পাঁচটা বছর তোমার কোনো খুজ নেই, আহনাফ হঠাৎ কাউকে কিছু না বলে দেশ ছাড়লো। যা হয়েছে তা ভুলে যাও আমাদেরও বয়স হয়েছে এখন নাতিনাতনিদের সাথে খেলা করার সময়। অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে আমি চাই এখন থেকে তুমি এখানে থাকো, আমাদের নাতি আমাদের বুকে থাক।
মহুয়া মাথা নিচু করে বলে উঠলো, ‘ আব্বু আমার কাল বাড়ি ফিরতে হবে, অফিসে ঝামেলা হচ্ছে। আমি আবার আসব,মাঝে মাঝে আলভি আসবে আপনারাও গিয়ে দেখে আসবেন।
আমেনা বেগম মাঝ থেকে বলে উঠলেন,’ আমি কিছুতেই আমার নাতি কে যেতে দিব না। মহুয়া আমাদের কি কোনো কিছুর কম আছে.? তোমার কেনো অফিস করতে হবে! অনেক কষ্ট করেছো আর না।
মহুয়াঃ প্লিজ আম্মু..
আমেনা বেগম কিছু বলতে গেলে আজাদ চৌধুরী থামিয়ে বলে উঠলো, ‘ তোমার অফিসের নাম বলো।’
মহুয়া অফিসের নাম বলতেই আজাদ চৌধুরী হেঁসে বললো,’ কোনো টেনশন নেই আমি তোমার ছুটি নিয়ে নিচ্ছি কয়েকদিন এখানে থাকো আমরা আমাদের নাতির সাথে সময় কাটাই।
মহুয়া আর কিছু বললো না, তবে মনে মনে বলে উঠলো, ‘ কার জন্য থাকবো.? যাকে ভালোবেসে হাত ধরলাম সেই অবিশ্বাস করে সব শেষ করে দিল! আমার যে তাকে দেখলেই দমবন্ধ হয়ে আসে।’

______________

আহনাফ আলভির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। আলভি আহনাফ কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আহনাফ আলভির মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ এতোটা মিল কিভাবে হতে পারে!.? একে দেখলে আমার অশান্ত মন শান্ত হয়ে যায়, কতোটা আপন নিজের মনে হয়, কাছে এনে ভীষণ আদর করতে ইচ্ছে হয়, বুকে জড়িয়ে রাখতে মন চায়, কিন্তু এমনটা কেনো হয়!.? তাহলে কি আমি ভুল করছি.?আহনাফের তখন শ্রাবণের বলা একটা কথা খুব মনে পড়লো,’ আহনাফ ভালো করে বাচ্চাটার দিকে তাকা! কি দেখতে পাচ্ছিস.? এই যে আমাদের ছোট আহনাফ। তুই যা করেছিস, করছিস সবটা ভুল আগে সত্যিটা জানার দরকার ছিল। এখনো সময় আছে সবটা জানার চেষ্টা কর। বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে দেখ নিজের মনে হয় না.? মহুয়া কেমন সেটাও তুই ভালো করে জানিস! তারপর ও তাকে কিভাবে অবিশ্বাস করলি.?

আহনাফ কি তাহলে সত্যি ভুল করছে.? আবার আলভির দিকে তাকালো। চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে আবার ঠিক করলো।

মহুয়া আলভিকে খুজতে খুঁজতে আহনাফের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো।

দরজা নক করতেই আহনাফ বিরক্ত হলো। সে তার ছেলেকে মন ভরে দেখছে কেনো কেউ ডিস্টার্ব করবে!

আহনাফ দরজা খুলে মহুয়াকে দেখেই থমকে গেলো।
মহুয়া আমেনা বেগমের একটা শাড়ি পড়েছে, ভেজা চুল কি স্নিগ্ধ লাগছে মহুয়া কে।
আহনাফ সাথে সাথে ঘুরে দাঁড়ালো।

মহুয়া উঁকি দিয়ে বিছানায় আলভিকে দেখে রুমে ঢুকে পড়লো। বিছানার পাশে গিয়ে আলভিকে কোলে নিতে চাইলে আহনাফ ওর হাত ধরে ফেললো।

মহুয়া রেগে হাত ছাড়তে বললে আহনাফ আরও দ্বিগুন রাগ দেখিয়ে বললো,’ আলভি ঘুমাচ্ছে। ‘
মহুয়াঃ আমার ছেলেকে এখানে কে এনেছে.?
আহনাফঃ আমি।
মহুয়াঃ কেনো.?
আহনাফঃ আমার ইচ্ছে।
মহুয়াঃ আমার ছেলের কাছ থেকে দূরে থাকবেন।
আহনাফঃ যদি না থাকি.?
মহুয়াঃ আমি ঘুমাবো।
আহনাফঃ তোমাকে ধরে রেখেছে কে যাও ঘুমাও..
মহুয়া আলভিকে নিতে গেলে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ আলভি আমার সাথে ঘুমাবে।’
মহুয়াঃ আলভি আমাকে ছাড়া আর কারো সাথেঘুমায় না।
আহনাফঃ অথচ আলভি আমার সাথে ঘুমাচ্ছে।
মহুয়াঃ আপনার সাথে আমি ঝগড়া করতে চাচ্ছি না।
আহনাফঃ আমারও কারো সাথে ঝগড়া করার ইচ্ছে নেই। আলভির ঘুম ভেঙে যাবে চুপচাপ চলে যাও।
মহুয়াঃ এখন কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে!
আহনাফঃ তুমি চলে গেলেই হয়।
মহুয়াঃ কেনো আমি চলে গেলে আমার ছেলেকে মেরে ফেলতে সুবিধা হবে তাই.?
আহনাফের ভীষণ রাগ হলো তাও নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে উঠলো, ‘ কি বলছো এইসব!.?
মহুয়াঃ আপনি ত বলে ছিলেন এই সন্তান আপনার নয়! যেখানে সন্তানের কথা শুনলে অন্যন্য বাবারা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় সেখানে আমার সন্তান কি পেয়ে ছিল.? আমি কি অপবাদ পেয়ে ছিলাম.?
আহনাফঃ মিথ্যা ত বলিনি!
মহুয়া রেগে চোখ গরম করে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আলভিকে কোলে তুলে নিল। দরজা দিয়ে বের হতে গিয়ে পেছন ফিরে বলে উঠলো, ‘ একদিন এইসব কিছুর জন্য আপনি পস্তাবেন! সেই দিন আপনার আপসোস আর্তনাদ আমার কান পর্যন্ত যাবে না।’

________________

ছোঁয়া বাসায় এসে অবাক হলো। চেয়ারে বসে আছে রাফি। রাফির সাথে একজন মহিলা আর একটা মেয়ে।

ছোঁয়া কে দেখে রাফি হেঁসে তাকালো বিনিময়ে ছোঁয়াও হাসলো। ওইদিন পর আজ আবার দেখা কিন্তু বাসা চিনলো কিভাবে.? আর এখানে কি করছে.?

মহিলাটা ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ এদিকে আসো মা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।’
ছোঁয়া কিছু বুঝতে পারছে না বোকার মতো হেসে মহিলার পাশে গিয়ে বসলো।

মেয়েটা বলে উঠলো, ‘ ভাবি আপনাকে দেখার জন্য আজ এক সপ্তাহ ভাইকে ভীষণ জ্বালিয়েছি, ভাই কিছুতেই দেখাতে চাইছে না, আমি বললাম আমার নজর খুব ভালো তাও দেখাবে না হুট করে আজ আমাদের নিয়ে এসে সারপ্রাইজ দিল। ‘
ছোঁয়া মনে মনে বলে উঠলো, ‘ ভাবি!’

রাফি চোখ গরম করে তাকাতেই মেয়েটা মুখে আঙ্গুল দিয়ে ভদ্র মেয়ের মতো বসে রইলো।

নিরুপমা রান্না ঘরে তাদের জন্য রান্না করছেন।

মহিলাটা উঠে রান্না ঘরে গিয়ে নিরুপমার সাথে কথা বলতে শুরু করলো, দেখা গেলো কিছু সময়ে তারা খুব ভালো বান্ধবী হয়ে গেছে একজন রান্না করছে ত আরেকজন এগিয়ে দিচ্ছে।

রাফি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ কেমন আছো.? ‘
ছোঁয়াঃ ভালো,আপনি.?
রাফিঃ এতোক্ষণ ভালো ছিলাম না, তোমাকে দেখে সুস্থ হয়ে গেছি।
ছোঁয়া ভ্রু কুঁচকে নিল।
~ দেখেছো ভাবি আমার ভাই কতো রোমান্টিক আগে ভাবতাম এই রসকষহীন ছেলেকে কে বিয়ে করবে! নিরামিষ একটা।
ছোঁয়াঃ আপনি আমাকে ভাবি কেনো বলছেন.?
মেয়েরা হিহি করে হেঁসে বললো,’ আমি রিমি।’
ছোঁয়াঃ আমি ছোঁয়া।
রিমিঃ তোমাকে ভাবি কেনো বলছি শুনতে চাও.?
ছোঁয়াঃ হু..

রিমি কিছু বলার আগেই রাফি গম্ভীর কণ্ঠে রিমির নাম নিতেই রিমি ভয়ে মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ হয়ে গেলো।
ছোঁয়া একবার রাফি আরেকবার রিমির দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনার বোন.?’
রাফিঃ আপন নয় তবে আপনের থেকেও বেশি। চাচাতো বোন, চাচা চাচি না থাকায় আমাদের কাছেই বড় হয়েছে।
ছোঁয়াঃওহ্..

ছোঁয়াঃ আমি ফ্রেশ হয়ে নেই।
রাফিঃ হুম যান..
ছোঁয়া যেতেই রিমি আঙ্গুল সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ জান! তুমি এখনি জান ডাকতে শুরু করেছো!.? হাউ রোমান্টিক!! ‘
রাফি চোখ গরম করে তাকালো কিন্তু এবার মেয়েটে ভয় না পেয়ে মুখ ভেংচি কাটলো।

রাফি আর ওর পরিবার চলে গেছে অনেক সময় হলো। ছোঁয়া থমথমে মুখে বসে আছে। নিরুপমা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,’ বিয়ের জন্য নিজেকে তৈরি করো, আমার কথাই হবে শেষ কথা।’
ছোঁয়া চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকালো।
নিরুপমা সবকিছু গুছিয়ে রাখছেন।
ছোঁয়ার ভীষণ কান্না পাচ্ছে সে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। ছোঁয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিরুপমা দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। মা’য়েরা ছেলে মেয়ের ভালোটাই চায়,আর ছোঁয়ার শান্তি এখানেই।

নির্জন বাড়িতে এসে ড্রয়িং রুমে পিচ্চি দেখে অবাক হলো। পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে পিচ্চি গিয়ে ওর পায়ে গ্লাস ফেললো সাথে সাথে গ্লাসটা ভেঙে গেছে সাথে নির্জনের পা অনেকটা কেটে গেছে।
নির্জন রাগ না দেখিয়ে পায়ের দিকে একবার পিচ্চির দিকে একবার তাকালো তারপর মনে মনে বলে উঠলো, ‘ বুকের ভেতর যেই ব্যথা নিয়ে আছি সেই ব্যথার কাছে এটা নিতান্তই ক্ষুদ্র ব্যথা। ‘

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ ২ পর্ব-০৭

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব_৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মহুয়া শ্রাবণকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
শ্রাবণ এসেই প্রথমে আলভির কথা জিজ্ঞেস করলো।
মহুয়া আঙ্গুল দিয়ে আলভিকে দেখিয়ে দিল। সাথে অবাক হচ্ছে শ্রাবণ আলভিকে চিনে!.? দেখে ভীষণ চিন্তিত মনে হচ্ছে!

শ্রাবণ গিয়ে আলভিকে জড়িয়ে ধরলো। আলভিও বড় আব্বু বলে জড়িয়ে ধরলো।

মহুয়া থমথমে মুখে তাকিয়ে রইলো, সব কিছু ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, আলভি কিভাবে শ্রাবণ কে চিনে!.?

শ্রাবণ আলভির মাথার উপর হাত রেখে বললো,’ বেশি ব্যাথা পেয়েছো বাবা!.??’
আলভি মাথা উপর নিচ করলো।সে বেশি ব্যাথা পেয়েছে।
শ্রাবণ আলভিকে আদর করে উঠে দাঁড়ালো।
মহুয়া এখনো অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
শ্রাবণ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ কেমন আছো.?’
মহুয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ।
মহুয়ার মনে অনেক প্রশ্ন সে প্রথম কোনটা করবে বুঝতে পারছে না।
শ্রাবণ নিজ থেকেই বলতে শুরু করলো, ‘ অবাক হচ্ছ.!? ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলাম। ওর এই অবস্থা কিভাবে হলো.?
মহুয়া এতো বছর পর শ্রাবণ কে দেখে সব কথা গুলিয়ে ফেললো।
শ্রাবণঃ আচ্ছা এই বিষয় না হয় পরে জানা যাবে।
মহুয়াঃ আপনি এখানে.?
শ্রাবণঃ মেঘলা বললো।
মহুয়াঃ মেঘলা কিভাবে জানে.?
শ্রাবণঃ তুমি বাড়ি থেকে চলে আসার পর আজ পাঁচ বছর মেঘলা তোমার সব খবর রাখে, তুমি কোথায় যাচ্ছ! কি করছো! সব.. আর বাবুন আমাকে চিনে কারণ আমি প্রায় গিয়ে বাবুনের সাথে দেখা করি, ঘুরতে নিয়ে যেতাম মামি সবটাই প্রথম থেকে জানে নিষেধ করে ছিলাম তোমাকে বলতে। তুমি অফিসে থাকলে আমি গিয়ে ওর সাথে গল্প করে আসতাম।

মহুয়াঃ কিন্তু কেনো.?
শ্রাবণ কিছু না বলে আলভির দিকে তাকালো।

শ্রাবণঃ আলভি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে থাকবে।
মহুয়াঃ সরি ভাইয়া আমি…
শ্রাবণঃ আমার কথাই শেষ কথা।
মহুয়াঃ কিন্তু…
শ্রাবণঃ আমি তোমার কথা শুনছি না। আলভির শরীরে আমাদের রক্ত বইছে আমি কি ওর উপর একটুও অধিকার রাখি না!
মহুয়া চুপ করে রইলো।
শ্রাবণ বের হয়ে গেলো ডাক্তারের সাথে কথা বলতে।
মহুয়া ক্লান্ত শরীর নিয়ে আলভির পাশে বসলো। কি হচ্ছে! কেনো হচ্ছে! জানা নেই। শুধু এই শহর থেকে পালাতে হবে।

______________

নির্জনের পাগলামি বাড়ছে। রাত দিন ছোঁয়া কে কল দেওয়া এটাই এখন ওর কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোঁয়া রেগে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে, একটা ব্লক করলে আরেকটা দিয়ে কল বিরক্ত হয়ে গেছে ছোঁয়া।

নির্জন ছোঁয়ার নাম্বার বন্ধ দেখে গায়ে শার্ট দিয়ে বেরিয়ে গেলো পেছন থেকে তাকিয়ে রইলো হালিমা বেগম। ছেলে কাজে যায় না, কারো সাথে কথা বলে না, ঠিক মতো খাবার খায় না। দুই দিনে কেমন হয়ে গেছে। ছেলের এই অবস্থার জন্য কি সত্যি আজ নিজে দায়ী!.? মেঘলা এসে হালিমা বেগমের হাতের উপর হাত রাখলো, উনি চমকে তাকালেন।
মেঘলা হেঁসে বললো,’ মাঝে মাঝে আমরা সব কিছু চোখের সামনে দেখেও ভুল করে বসি। ‘
হালিমা বেগম তাকিয়ে রইলেন মেঘলার দিকে।

_______________

ছোঁয়া নির্জনের দেওয়া শেষ চিঠিটাও পুড়াইয়া ফেলতেসে, বইয়ের মধ্যে থেকে শেষ ফুলটাও ফেলে দিতেসে, আর নির্জন তা দেখে বলে উঠলো ,’ ফুলটা ফেলে দেওয়ার সময় তো অন্তত আমার কথা মনে পড়সে? কী ভয়ঙ্কর হাহাকার হয়েছে বুকে.?!!

নির্জনঃ তোমার আমার এই ভালোবাসা দরকার ছিলো, প্রেম দরকার ছিলো, পাওয়া দরকার ছিলো, আবার এই হারাইয়া ফেলাটাও আসলে দরকার ছিলো। চোখের মধ্যে নদী না হইলে এতো যে ভালোবাসি, সেটাই বা আমরা বুঝতাম কেমনে, বলো?

ছোঁয়াঃ আমার আজ না ফিরে পাওয়ার আকুতি , জাস্ট মনে রাখার আকুতি। আমার হৃদয় যে ছিন্নভিন্ন হয়ে ছিল তা মনে রাখার আকুতি। আমি চাই তুমিও আমারে ভুলে যাও।আমাদের যে এতো এতো অপ্রয়োজনীয় কথা, সেই কথাগুলোও ভুলে যাও।
নির্জনাঃ তুমি তো আমারে বলসিলা, আমার নাম ধরে তুমি প্রার্থনা করো। এখনও কি করো? নাকি এখন আমার নামরে ভয় পাও?

ছোঁয়াঃ আমার সেই এক চেহারাই আছে।
তোমারও সেই আগের চেহারাই আছে।
খালি মাঝখান থেকে আমরা দুজনেই কোথায় যেন হারাইয়া গেলাম, হারাইয়া ফেললাম নিজেদের!!

ভালোবাসা আমাদের জন্য যেমন জরুরি ছিলো, তেমনি জরুরি ছিলো আমাদের এই বিচ্ছেদও!!

নির্জনঃ শেষ বার কি একটা চান্স দেওয়া যায় না! একবার সুযোগ দেওয়া যায় না.?
ছোঁয়াঃ ফিরে যাওও।
নির্জনঃ তোমাকে ছাড়া আমি এক পা ও নড়ছি না।।
ছোঁয়াঃ সারাজীবন অপেক্ষা করলেও আমি ফিরছি না।

___________

বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামতে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলো মহুয়া, মিম, শ্রাবণ, আলভি শ্রাবণের কোলে।

মহুয়া অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো বাড়িটার দিকে আজ কতোগুলো বছর পর বাড়ির আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে রইলো। বাড়িটা সেই আগের মতোই আছে।

গেইটের দারোয়ান পাল্টেছে।
শ্রাবণ আগে আগে আলভিকে নিয়ে ভেতরে গেলো৷

আহনাফ সিঁড়ি দিয়ে নামছিল শ্রাবণের কোলে আলভিকে দেখে থেমে গেলো।

আমেনা বেগম ছেলের কোলে বাচ্চা দেখে জিজ্ঞেস করলেন কে সে.?
শ্রাবণ আলভিকে নিয়ে মেয়ের কোলে তুলে দিল।

শ্রাবণঃ ভালো করে তাকিয়ে দেখুন ত!
আমেনা বেগম আলভির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এ-যে আমার ছোট আহনাফ। ‘

তখনি মেইন দরজা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো মহুয়া।

হালিমা বেগম রান্না ঘর থেকে বের হয়ে মহুয়াকে দেখে অবাক হয়ে গেলেন।

আমেনা বেগম তখনো আলভিকে দেখতে ব্যাস্ত। আলভি আমেনা বেগমের কাঁধে মাথা রেখে চুপচাপ জড়িয়ে ধরে আছে।

আমেনা বেগম মনে হলো উনি ছোট আহনাফ কে কোলে নিয়ে রেখেছেন, কি শান্তি বাচ্চাটার জড়িয়ে ধরায়, অশান্ত মন শান্ত করার ক্ষমতা রাখে।

” মহুয়া”

মহুয়া নামটা শুনতে সবাই দরজায় তাকায়।

হালিমা বেগম দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন মহুয়াকে। মহুয়া নিজেও জড়িয়ে ধরলো।

আহনাফ মহুয়াকে দেখেই নিজের রুমে চলে গেলো।

মহুয়া এসেছে শুনে মেঘলা আস্তে ধীরে নেমে আসলো।

মেঘলা কে দেখে এই প্রথম মহুয়া আপু বলে জড়িয়ে ধরলো । মেঘলা অবাক হলো মহুয়ার মুখে আপু ডাক শুনে।

আমেনা বেগম একবার আলভির আরেক বার মহুয়ার দিকে তাকালো। বুঝতে বাকি নেই আলভি মহুয়ার ছেলে উনার নাতি।খুশিতে আমেনা বেগম আলভিকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।

মহুয়া এসে শাশুড়ী কে সালাম জানালো, আমেনা বেগম মহুয়াকে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো।

আজ বাড়িতে খুশির ঢেউ খেলছে, বাড়ির প্রাণ গুলো বাড়িতে ফিরে এসেছে।

আমেনা বেগম আশেপাশে আহনাফ কে খুঁজলো। খুঁজে না পেয়ে আলভিকে নিয়ে যেতে শুরু করলো আহনাফের রুমের দিকে।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।