মেঘের আড়ালে রোদ ২ পর্ব-১২

0
73

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব_১২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ছোঁয়া ঘুরে ফিরে নির্জনের সামনে এসে কোমরে হাত রেখে লম্বা লম্বা কয়েকটা শ্বাস নিল।

নির্জনঃ শেষ! তোর দৌড় কতো দূর বুঝতে পেরেছিস.? এখন চুপচাপ ভেতরে যা পার্লারের মেয়েরা অপেক্ষা করছে।
ছোঁয়াঃ নির্জনের বাচ্চা আমাকে এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দে! আমি তোকে ছাড়বো না।
নির্জনঃ ছাড়তে কে বলেছে জান! আমি ত চাই আমাকে সারাজীবন ধরে রাখো।
ছোঁয়াঃ তোর মতো নির্লজ্জ ছেলে আমি কখনো দেখিনি, বিন্দু মাত্র লজ্জা থাকলে বাড়িতে দিয়ে আসবি।
নির্জনঃ ছোঁয়া বাড়িতে যেতে চাইলে জলদি আমার কথা মতো কাজ কর তাহলেই হবে।
ছোঁয়াঃ কখনো না, আমি তোকে বিয়ে করবো না।
নির্জনঃ বিয়ে তোর আমাকেই করতে হবে।

নির্জন ছোঁয়াকে জোর করে ভেতরে একটা রুমে পাঠিয়ে দিল।

ছোঁয়া রাগে কটমট করে তাকিয়ে আছে নির্জনের দিকে।

নির্জন চোখ মেরে চলে গেল।

ছোঁয়াকে সুন্দর করে সাজানোর চেষ্টা করেও পারলো না। কোনো রকম শাড়ি পড়িয়ে একটা মেয়ে বের হয়ে নির্জন কে বললো।
নির্জন সবাইকে বের করে নিজে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
ছোঁয়া রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
নির্জনঃ এভাবে তাকালে প্রেমে পড়ে যাবি চোখ বন্ধ করে রাখ।
ছোঁয়াঃ হাস্যকর! তোকে দেখলেই আমার গোসল করতে ইচ্ছে হয়।
নির্জনঃ তোর শরীরে এতো ময়লা যে আমাকে দেখলে গোসল করতে ইচ্ছে হয়!!
ছোঁয়াঃ আমাকে এখান থেকে যেতে দে নির্জন বেশি বেশি করছিস!
নির্জন চুপচাপ গিয়ে ছোঁয়ার সামনে বসে জোর করে ওর মুখ চেপে ধরে সাজিয়ে দিল।

ছোঁয়া নিজেও এবার নড়াচড়া করলো না, রাত থেকে না খেয়ে আছে শরীর দুর্বল লাগছে।

নির্জন ছোঁয়াকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে সবার সামনে নিয়ে বসালো।

নির্জন কাজী কে বললো ” বিয়ে শুরু করুন”
ছোঁয়া হাজার চেষ্টা করেও বিয়ে থামাতে পারলো না।

বাহিরে গন্ডগোল শুনে নির্জন বেরিয়ে আসলো।

রাফি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্জনের দিকে পেছনে মিম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

নির্জন সবটা বুঝতে পারলো, মুচকি হেঁসে বললো,’ আরেকটু আগে আসলে আমার জানের জিগার দুস্ত কে উকিলআব্বু বানাতে হতো না। তোমাকে আর মিম কে বানিয়ে দিতাম, তোমরাও রেডিমেট ছেলে আর বউ পেয়ে যেতে।

নির্জন থুতনিতে হাত দিয়ে কিছু একটা ভেবে বললো,’ সমস্যা নেই দেরি করেছো বলে কি হয়েছে আমরা না হয় আজ থেকে তোমাদের আব্বুর নজরে দেখবো এসেছো মিষ্টি মুখ করে যাও।’

রাফি রাগে গিয়ে নির্জনের কলার চেপে ধরলো।

নির্জন নিজের কলারের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ দিলে ত বিয়ের পাঞ্জাবি নষ্ট করে!! ‘

রাফিঃ ছোঁয়া কে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস!.?
নির্জনঃ কলার ছাড়!
রাফি নির্জনের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি আর সেই ভীতু ছেলেটা নেই, যে তোর ভয়ে চুপসে যাব!!’
নির্জনঃ ওরেহ্ বাহ্ ভীষণ সাহসী হয়ে গেছিস! আজ আমার প্রথম বিয়ে তাই কিছু করতে চাচ্ছি না, এমনিতেই তোকে দেখেই আমার হাত নিসপিস করছে প্লিজ কলার ছেড়ে দূরে গিয়ে দাড়া।
রাফি রেগে নির্জনের মুখে ঘুসি মেরে বসলো।
নির্জন ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখে রক্ত চলে এসেছে।
নির্জনঃ হাতে ত দেখি ভালোই শক্তি! ভালোই ভালোই বলছি চলে যা।
রাফিঃ আমি ছোঁয়া কে ছাড়া এক পা ও নড়ছি না।
নির্জনঃ আরে বাপ অন্যের বউ কে দিয়ে তোর কাজ কি.?
রাফিঃ ছোঁয়া শুধু আমার বউ! ও শুধুই আমার।
নির্জনঃ কিন্তু সে এখন কাগজ কলমে, দুনিয়াতে আখিরাতে সব জায়গায় আমার হয়ে গেছে।
রাফি নির্জন কে ছেড়ে দৌড়ে ভেতরে চলে গেল।
ছোঁয়া চুপচাপ সোফায় বসে আছে।
রাফি দৌড়ে গিয়ে ছোঁয়ার পায়ের কাছে বসে পড়লো।

________________

শ্রাবণ সবাই কে বলে মেঘলা কে নিয়ে বের হয়ে গেল।
মেঘলা রাগে ফুসফুস করছে। সে কিছুতেই এখান থেকে যাবে না, শ্রাবণ ও মেঘলাকে এখানে এই গরমে থাকতে দিবে না। এই গরমে মেঘলার সাথে সাথে ওর মেয়েরও কষ্ট হচ্ছে।
মেঘলাঃ আমার শরীর,আমার বাচ্চা অথচ কষ্ট হচ্ছে তোমার! গরম লাগছে তোমার.? আজব আজব কথা বলা বন্ধ করো।
শ্রাবণঃ শরীর তোমার হলেও গরম আমার লাগে, আমি অনুভব করতে পারি, আমি তোমার কষ্ট গুলো বুঝতে পারি,আমার মেয়ের কষ্ট গুলো বুঝতে পারি। আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই এতোটা পাগলামি করি অথচ তোমার কাছে সব আজব লাগে!
মেঘলাঃ সব সময় বলি এতো কেয়ার করতে হবে না, আমারটা আমি বুঝে নিব। আল্লাহ না করুক যদি আমি না থাকি,আমার কিছু হয়ে যায় তখন…
মেঘলা আর কিছু বলার আগেই শ্রাবন ওর মুখ চেপে ধরলো।
শ্রাবণঃ চুপপপপ!! সব সময় উল্টা পাল্টা কথা না বললে তোমার শান্তি লাগে না! আমাকে কষ্ট দিয়ে শান্তি পাও.? তোমার এইসব কথা যে আমাকে কষ্ট দেয়! ভেতর থেকে ভেঙে দেয়! সারাক্ষণ মনের ভেতর ভয় ঢুকে থাকে তুমি বুঝতে পারো? তোমার কিছু হলে আমি কি নিয়ে থাকবো!.?
মেঘলা মুচকি হেসে গাড়ি থেকে বাহিরের দিকে তাকালো।
শ্রাবণ আঁড়চোখে মেঘলার দিকে তাকিয়ে রইলো। আজকাল মেঘলা শ্রাবণ কে ইগ্নোর করছে, দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করছে, কিছু বললেও চুপচাপ থাকে। মেঘলা কি বুঝে না ওর এইসব শ্রাবণ কে কষ্ট দেয়!!..

আহনাফ আমেনা বেগমের সাথে কথা বলে ছাঁদে গেল।
আমেনা বেগম ভেতর ভেতর ভীষণ খুশি, নিরুপমা ছাড়া সবাই খুশি ছোঁয়া নির্জনের সাথে আছে শুনে।

নিরুপমা শক্ত হয়ে বসে আছে, খুব শান্ত দেখা যাচ্ছে। যেমনটা ঝড় আসার আগে প্রকৃতি শান্ত হয়ে থাকে।

মহুয়া বার কয়েক তাকালো বুঝার চেষ্টা করলো, কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলো না।
আলভি গিয়ে নিরুপমার সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালো।
নিরুপমা চোখ তুলে আলভির দিকে তাকিয়ে এক হাত দিয়ে ওকে নিজের কাছে টেনে নিল।
আলভিও চুপচাপ শান্ত ছেলের মতো লেপ্টে গেল উনার বুকে।

আহনাফ কারো সাথে কথা বলে নিচে এসে দেখে মহুয়া চুপচাপ বসে আছে।
আহনাফ পাশে গিয়ে বসতেই মহুয়া উঠে যেতে চাইলো। আহনাফ মহুয়ার হাত ধরে ফেললো।
মহুয়া অন্য হাতে আহনাফের হাত ছাড়িয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
মহুয়াঃ আগামীকাল চলে যাচ্ছি নিজের শহরে। আশা করি আর কখনো আমাদের দেখা হবে না।
আহনাফঃ নিয়তি হয়তো অন্য কিছু চায়।
মহুয়াঃ আমি নিয়তি বদলে দিব!
আহনাফঃ চেষ্টা করে দেখো।
মহুয়া চলে যেতে নিলে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ সব কি ঠিক করা যায় না.? চাইলেই সব কিছু শুরু করা যায় মেহু।
মহুয়া তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ‘ যা শেষ তা শুরু কিভাবে হয় আহনাফ চৌধুরী!.? চাইলেই সব কিছু ভুলে যাওয়া যায় না, সব আঘাত মুছে যায় না! কিছু তিক্ত কথা ভুলে যাওয়া যায় না।
আহনাফঃ তুমি চাইলেই সবটা আমাকেবলতে পারতে, বুঝার পারতে।
মহুয়াঃ যেখানে অবিশ্বাস সেখানে আমি কি বলতাম.? কি বুঝাতাম.? আপনার ভালোবাসা এতোটাই হাল্কা ছিল সামান্য বাতাসে ঝরে গেছে । আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে কিছু শুরু হওয়ার নেই।

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে