Sunday, August 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 173



আমার বিষাদীনি পর্ব-১১

0

#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_১১

রাদিফ ভাইয়ের ছোট মামার মেয়ে আদিবা এসে জানালো রাদিফ ভাই আমাকে ডাকছে। আমরা সবাই মিলে তখন ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছিলাম। আদিবা এসে কথাটা বলতেই সবার দৃষ্টি আমার উপর পড়লো। আমি কি করবো একটা ক্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে উঠে পড়লাম। আর আমি জানি রাদিফ ভাই থেকে এখন আমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। দোতলায় উঠে রাদিফ ভাই এর রুমে যেই পা দিলাম ওমনি উনি দরজাটা চাপিয়ে দিলেন। দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললেন,,

“তখন মিরাজের সাথে অমন হাসাহাসি করছিলি কেন?? শুধু সালাম দিলেই তো হতো। নেক্সট টাইমে যাতে আর না দেখি অন্য ছেলেদের সাথে হাসাহাসি করেছিস।”

আমি বললাম, “উনি নিজেই তো আমার সাথে কথা বলছিলো। আর আমি কই এত হাসাহাসি করলাম। শুধু সৌজন্যতার খাতিরেই একটা হাসি দিলাম। আচ্ছা ভালো কথা আপনি জেলাস হচ্ছেন??” বলে আমি মুচকি হাসি দিলাম।

রাদিফ ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,,
“অবশ্যই আমি জেলাস। আমার বউয়ের সাথে অন্য কেউ হাসাহাসি করে কথা বলছে আর তার সাথে আমার বউও তাল মেলাচ্ছে,, তাহলে অবশ্যই আমি জেলাস হবো”।

” আচ্ছা ঠিক আছে আর কোনো ছেলের সাথে কথাই বলবো না,,ইভেন কোনো কাজিন ভাইয়ার সাথেও না। কারণ আমার তো জামাই আছে।।আমি তার সাথে হাসাহাসি করবো” বলে আমিও রাদিফ ভাই কে জড়িয়ে ধরলাম।

“রাদিফ দেখতো আমাকে শাড়িতে কেমন লাগছে। আমি জানি আমাকে সুন্দ,,, বলেই মাথা উঠিয়ে তাকাতে সিনথিয়া রাদিফ আর তুবা কে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখলো।

আমি সিনথিয়া আপুর কথা শুনেই ঠেলে রাদিফ ভাই থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। সিনথিয়া আপু আমাকে ধমকের সুরে বললেন,,

” তুবা, তুমি এইকগানে রাদিফের সাথে কি করছো?? তাও আবার রাদিফ কে দেওয়া রুমে”

“তো, তুবা এইখানে থাকবে না তো কোথায় থাকবে। আফটার অল আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ। তুই তো যেভাবে বলছিস যেন আমাদের দুজনের একসাথে থাকা অসম্ভব ব্যাপার” বলে রাদিফ ভাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সিনথিয়া আপুর দিকে চাইলেন।

সিনথিয়া আপু নাটক করার ভঙ্গিতে বললেন,,
“ও সরি আমি তো ভুলেই গিয়েছি তোরা স্বামী স্ত্রী। আসলে হয়েছে কি, তুবাকে দেখতে আসলে তোর স্ত্রীর মতো লাগে নাহ তো৷ মনে হয় তোর ছোট বোন” বলে সিনথিয়া আপু বিদ্রুপ হাসি দিলো।

“যেদিন আমার বেবি কোলে নিবি সেইদিন তুই নিশ্চিন্ত হবি যে তুবা আমার স্ত্রী,, তাই তো?? আচ্ছা যা তোকে খুব তাড়াতাড়ি ফুফি বানানোর চেষ্টা করবো” বলে রাদিফ ভাই ও সিনথিয়া আপুর দিকে বিদ্রুপ হাসি ছুড়ে দিলো।

আর আমি ওনাদের ঝগড়া দেখতে দেখতে বেক্কেল হয়ে গেলাম। তাই দুজন থেকে মুক্তি পেতে আমি বললাম,,

“আচ্ছা আমি যাই। মা মনে হয় আমাকে ডাকছে” বলেই আমি কোনোরকম বের হয়ে আসলাম।
_____________________

দুপুরে মাহাদ ভাই কে গোসল করানোর সময় সবাই রঙ খেলছে। একমাত্র আমি এক কোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আমার দাদি আর রাদিফ ভাই এর নানুর সাথে। রাদিফ ভাই এর নানু তো এখন আমাকে তুবা থেকে ডিরেক্ট নাতবউ এর মধ্যে চলে এসেছে। সবাই যখন বললো এখন রং খেলা হবে রাদিফ ভাই তখনি আমার ফোনে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে
“এখন যদি তুই রং খেলিস তো তোর একদিন কি আমার একদিন। তোর শরীর দুর্বল। এখন দৌড়াদৌড়ি করলে নির্ঘাত উষ্ঠা খেয়ে পড়বি। সো, তুই রঙ খেলবি না।”

এই ম্যাসেজ দেখে তাই তখন থেকে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আমি নিজেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমাকে রঙ খেলতে বারণ করে উনি নিজেই রঙ খেলছে। আমি জানি উনি আমাকে মিরাজ ভাইয়ের জন্য রঙ খেলতে দিচ্ছে না। এসব যখন ভাবছি তখন দেখলাম সিনথিয়া আপু রাদিফ ভাই কে রঙ লাগিয়ে দিলো এবং ওনার হাতের অবশিষ্ট রঙ উনি নিজের মুখে লাগিয়ে নিলেন। কিন্তু দেখলাম রাদিফ ভাই এর কোনো হেলদোল নেই খুব সম্ভবত উনি সিনথিয়া আপু কে খেয়াল করেনি। রাদিফ ভাই কে মনে মনে বকাবকি করছি। আমাকে অন্য ছেলেদের সাথে মিশতে উনি সহ্য করতে পারে না আর নিজের বেলায় সাত খু*ন মাফ।
আসুক আমার কাছে আজকে তো বুঝিয়ে দেবো।

এসব ভাবছি তখন দেখলাম সিনথিয়া আপু আমার দিকে এগিয়ে আসতেছে। আমার কাছে এসে উনি বাকা হাসি দিয়ে বললো,,
“আরে তুবা, যে রঙ খেলছো না?! নাকি রাদিফ খেলতে দিচ্ছে না??”

আমি বললাম, “না আমার রঙ খেলতে ইচ্ছে করছে না” বলে আমি রাদিফ ভাই এর দিকে দৃষ্টিপাত করলাম।

সিনথিয়া আপু স্বান্তনার ভঙ্গিতে আমাকে বললো,,

“থাক মন খারাপ করো না। রাদিফ তোমাকে রঙ খেলতে দিচ্ছে না জানি আমি। আসলে ওর মনে কখন কি চলে কেউ বুঝতে পারে না। এই যে দেখো না খানিক্ষন আগেই আমার মুখে রঙ লাগিয়ে দিলো,, বলেই উনি আমাকে নিজের মুখে দেওয়া রঙ গুলো দেখলো। আর অস্ট্রেলিয়া তে তো আমরা একই ইউনিভার্সিটি তে। ও আমাকে মাঝে মাঝে অনেক জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যায়। দাঁড়াও আমার ফোনে ছবি আছে” উনি নিজের ফোন
থেকে আমাকে কিছু ছবি দেখালো। দেখলাম এগুলো কোনো একটা কফি শপে তোলা।

এদিকে সিনথিয়া মনে মনে ভাবছে,,
“আমাকে অপমান করা,,না। এইবার বুঝবে রাদিফ যখন তুবা তোমাকে আস্তে আস্তে ভুল বুঝতে শুরু করবে”।

আমি রাদিফ ভাই কে ফোন দিচ্ছি। রিং হচ্ছে কিন্তু ধরছে না। কয়েকবার কল দেওয়ার পর কল ধরলো উনি। ফোন ধরে চারপাশে তাকিয়ে আমাকে দেখলো উনি। আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,,

” কি হয়েছে?? ফোন দিলি যে,,কোনো সমস্যা হয়েছে। নাকি শরীর খারাপ করছে??” বলে আমার কপালে হাত রাখলো।

আমি ঝাটা মেরে হাত ফেলে দিয়ে বললাম,,

“আমাকে রঙ খেলতে বারণ করে এখন আপনি নিজেতো দিব্যি রঙ খেলে যাচ্ছেন। এমন রঙ খেলছেন যে কে আপনাকে রঙ লাগালো না লাগালো সেইদিকে কোনো খেয়ালই নেই। সিনথিয়া আপু যে আপনাকে রঙ লাগালো আপনি সেটাও খেয়াল করেননি তাই না”

“জান এতো রাগ করছো কেন!! সত্যি বলতে সিনথিয়া যে আমাকে রঙ লাগালো আমি নিজেই খেয়াল করিনি। খেয়াল করলে কি আমাকে স্পর্শ করতে দিতাম” বলে রাদিফ ভাই আমার এক হাত জড়িয়ে ধরলো।

হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,,

“আচ্ছা সেটা নাহয় খেয়াল করেননি,,কিন্তু যখন দুজনে একসাথে বসে কফি খাচ্ছিলেন সেটাও কি খেয়াল করেননি??”

রাদিফ বুঝলো সিনথিয়া যে তুবা কে ঐ ছবি গুলা দেখিয়ে তুবা কে ভুল বুঝাতে চাইছে তাই তুবা কে বললো,,

“আমি জানি তুই কোনটার কথা বলছিস। ঐদিন সিনথিয়া নিজেই আমাকে কফির অপার করেছে আর ও নিজেই জোর করে ছবি গুলা তুলেছে। আসলে অস্ট্রেলিয়া থাকতে সিনথিয়া আমাকে প্রপোজ করেছে আমি একসেপ্ট করিনি। তাই আঠার মতো আমার পিছে পড়ে আছে।”

“আর কখনো আপনি ওনার সাথে কোথাও জাবেন না। আমার ভালো লাগে না”

“আচ্ছা যাবো না। আমার বউয়ের হুকুম বলে কথা”।
আর মনে মনে বললো, ” তোকে আমি দেখে নেবো সিনথিয়া। আমার বউকে ভুল বোঝাচ্ছিস। এর শাস্তি তোকে পেতে হবে। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি”।

______________________

হলুদের স্টেজ করা হয়েছে রাদিফ ভাই এর নানু বাড়ির ছাদে। সন্ধ্যার দিকে রাহা আপুরা এসেছিলো। আর সঙ্গে তো আপুর ননদের মেয়ে লামিসা আছেই। যখনি শুনেছে রাদিফ ভাই এসেছে বিয়েতে তখন থেকেই নাকি ও বিয়েতে আসার জন্য উতলা হয়ে আছে। এই মেয়েগুলো র জন্যও আমার জামাই রে কি করতাম আমি।

ছাদে মোটামুটি সেজেগুজে সবাই চলে গেছে। আমি আর সাবিহা এখনো রেডি হই নাই। সবাই কে সাজিয়ে দিতে দিতে নিজেরাই এখনো কিছু করলাম না। সাজানোর সময় লামিসার ন্যাকামি গুলাতে তো আমি আর সাবিহা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। দুজনে কোনোরকম শাড়ি পড়েছি। আমি চুলগুলো হাত খোপা করে একটা বেলিফুলের মালা দিয়ে বেধে নিলাম। বেলি ফুলের মালাটা রাদিফ ভাই আদিবার দিকে আমার জন্য পাঠিয়েছে। হালকা একটু লিপস্টিক লাগিয়ে নিলাম আর চোখে কাজল,, ব্যাস আমি রেডি।

আমি আর সাবিহা ছাদে গিয়ে দেখলাম অলরেডি সবাই চলে এসেছে। দুজনেই একেবারে লাস্ট কর্ণারে দুইটা চেয়ারে গিয়ে বসলাম। বড় রা সবাই এক এক করে ছবি তুলছে মাহাদ ভাইয়ের সাথে। আমি আর সাবিহা শুধু সিনথিয়া আপু আর লামিসার কর্মকাণ্ড দেখতেছি। দুজনেই রাদিফ ভাইয়ের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে।
এতক্ষণে রাদিফ ভাইয়ের দিকে আমারচোখ পড়লো। আর আমি তো আড়চোখে শুধু রাদিফ ভাইকে দেখে যাচ্ছি। নীল কালারের পাঞ্জাবি টা ওনার ফর্সা ঘায়ে যেন দ্বিগুণ ফুটে উঠেছে। হাতে ঘড়ি,,পাঞ্জাবির হাতা গুটানো। বার বার চুল গুলো কে শুধু পেছনে ঠেলছে।

মনে মনে ভাবছি,, আমি করলেই যত দোষ। নিজে যে সেজেগুজে মেয়েদের সামনে ঘুরছে সেটা কিছু না।

পাশ থেকে এক মহিলা আমাকে জিজ্ঞেস করলো,,

“তুমি মাহাদের কি হও”??

” আমি মাহাদ ভাইয়ের ফুফাতো বোন হই”

“আমি মাহাদের বন্ধুর মা হই”
আমি বললাম,, ও আচ্ছা। এরপর মহিলা আমার পুরা জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে নিলো। বাড়ি কোথায়,,কয় ভাই বোন,,বাবা কি করে,,কিসে পড়ি সব।

তারপর ভদ্রমহিলা আমাকে তার ছেলের ছবি দেখালো। বললো,,আমার ছেলে কলেজের টিচার। বিয়ের জন্য পাত্রী খুজছি। তোমার মতো যদি একটা লক্ষ্মী মেয়ে পেতাম!! আচ্ছা যদি কিছু মনে না কর তোমার বাবার নাম্বার টা দাওতো।
যেই আমি ভদ্রমহিলা কে কিছু বলতে যাবো তখন শুনলাম পেছন থেকে কে যেন রাদিফ ভাই এর নাম্বার দিচ্ছে। পেছন ঘুরে দেখলাম রাদিফ ভাই!! উনি উনার নাম্বার ভদ্রমহিলা কে দিয়ে সৌজন্য হেসে আমার দিকে দাত চেপে বললো,,

“আমরা তো এখন ওকে বিয়ে দেবো না। ও এখনো অনেক ছোট তো,,তাই না বুঝে আপনাকে এতক্ষণ ওর পরিচয় বলছে। আপনি কিছু মনে করবেন না। ওকে যদি কেউ বিয়ে করতে চায় তাহলে ওর স্বামী সব কিছু শেষ করে দিবে” বলে আমাকে টেনে ধরে অন্য পাশে নিয়ে আসলেন।
আর ভদ্রমহিলা তো বেক্কেল বনে গেছে।

[দেরি করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত]

চলবে……..

আমার বিষাদীনি পর্ব-১০

0

#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_১০

রাদিফ ভাই কে আমার রুমে দেখে তো ভূত দেখার মতো চমকে গেলাম।বিকাল থেকেই তো পালাচ্ছি উনার থেকে কিন্তু এখন কই যাবো। যেই রুমের দরজা খুলে বের হয়ে যাবো ওমনি উনি আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন। কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন, “আমার থেকে কেন নিজেকে লুকাচ্ছো বউ। দিনশেষে তো সেই আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। তাহলে এত লুকোচুরি কেন?? ” বলে আমার ঘাড়ে মুখ গুজে দিলেন।

আর আমি তো চোখ বন্ধ করে জামা খামচি দিয়ে ধরে আছি। এই প্রথম রাদিফ ভাই আমার এত কাছাকাছি আসছে। হার্টবিট এর ঢিপঢিপ শব্দ মনে হয় রাদিফ ভাই শুনতে পারছেন। ঘাড়ে মুখ গুজা অবস্থায় রাদিফ ভাই বললো,

“আপনাকে অনেক বেশি মিস করেছি বউজান। আপনি ছাড়া আমার প্রতিটা মুহুর্ত বিষাদে কেটেছে। কারণ আপনি যে বিষাদীনি ” আমার বিষাদীনি”।

এদিকে আমি তো পুরা জমে গেছি। যেন আমি অন্য পৃথিবীতে আছি। যেখানে শুধু আমি আর রাদিফ ভাই। রাদিফ ভাই আমার ঘাড় থেকে মাথা তুলে ক্রমশ আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসতেছে। আমি চোখ বন্ধ করে আছি। মনের ভিতর তোলপাড় হচ্ছে। তোলপাড়ের সীমা যেন পেরিয়ে গেল যখন আমার ঠোঁটে উনি ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন।

কতক্ষণ সেই অন্য পৃথিবীতে বিচরণ করেছি জানিনা কিন্তু যখন চোখ খুললাম দেখলাম রাদিফ ভাই আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর আমি তো লজ্জায় উনার দিকে তাকাতে পারছিলাম নাহ। রাদিফ ভাই বাকা হাসি দিয়ে আমাকে বললো,,

“এরপরের বার আমার থেকে লুকিয়ে থাকলে লাভ ডোজ আরেকটু কড়া করে দেবো, এখন এইটুকু দিলাম।”
যা পড়েতে বস। বলে উনি চলে গেলেন।

আমি তো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়েই আছি। কিছুক্ষণ আগেই না আমার সাথে নরম স্বরে কথা বলছিলো এখন আমার থ্রেট দিয়ে গেলো। গিয়ে পড়ার টেবিলে বসলাম জানি মাথায় এখন রাদিফ ভাই ছাড়া অন্য কিছু ডুকবে না তারপরও বসে আছি। আর নিজে নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে আছি।
তখনি আমার কাছে সাবিহা আসলো। সাবিহা এসেই দেখলো তুবা নিজে নিজেই মুচকি হাসি দিচ্ছে। সাবিহা গিয়ে বললো,

“কি জান নিজে নিজে এইরকম ব্লাস হচ্ছো কেনো?? নিশ্চয়ই জামাইয়ের কথা ভাবতেছো। আসবে আসবে আমার ও এইরকম সময় আসবে” বলেই সাবিহা হাসছে।

আর আমি ভাবতেছি সাবিহা যদি আরেকটু আগে আসতো তাহলে রাদিফ ভাই এর এই রুপ দেখে নির্ঘাত অজ্ঞান হই যেতো। আমি বললাম,,

আমার এত বাড়তি সময় নাই যে রাদিফ ভাই এর কথা ভাববো। আচ্ছা কালকে কয়টায় রওনা দিবে সবাই??

সাবিহা বললো,, “জেঠু মনি বললো সকাল সকাল রওনা দেবে।তাহলে তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারবো। আচ্ছা তোর ইংরেজি নোট খাতাটা দে ঐটার জন্য আসছি”।

__________________
রাতে খাবার টেবিলে বসে আমি যেন রাদিফ ভাই এর দিকে তাকাতেই পারছিনা। উনি বসছে আমার সামনাসামনি চেয়ারে। কিন্তু ওনার মুখে কোনো ভাবান্তর নেই। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম উনি নির্বিকার ভাবে খাচ্ছে।জেঠু মনি বললো, ” সকাল সকাল সবাই তৈরি হয়ে থাকবে। তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট করেই আমরা রওনা দেবো। এখন সবাই ব্যাগ গুছিয়ে নাও। আমরা এক গাড়ি তে যাবো। আর ছেলে মেয়েদের কে রাদিফ নিয়ে যাবে”।

আমি কোনোরকম একটু খেয়ে উঠে পড়তে যাচ্ছিলাম। মেজো চাচ্চু বললো, “কিরে তুবা এত অল্প একটু খেয়ে উঠে যাচ্ছিস।প্লেটের বাকি খাবার কে খাবে??”

আমি যেই বলতে যাচ্ছিলাম,,আসলে চাচ্চু মানে কিন্তু রাদিফ ভাই এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাই বললাম,,ইয়ে চাচ্চু আমি তো খাবো। আসলে খেতে খেতে ক্লান্ত লাগছিলো তো,,হেহে।
বলেই অনিচ্ছাসত্ত্বেও আবার খেতে বসলাম।

খাবার খেয়ে রুমে এসে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। সকালে আবার তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। মাত্র চোখ লেগে আসছিলো তখনি ফোন বেজে উঠলো। দেখলাম রাদিফ ভাই। কল কেটে গেছে। পরপরই রাদিফ ভাই এর ম্যাসেজ আসলো,,

“ছাদে আয়। তোর জন্য অপেক্ষা করছি”।

ম্যাসেজ দেখে উঠে পড়লাম। রাদিফ ভাই আবার ছাদে ডেকেছে কেন। চুল গুলো কোনোরকম হাত খোপা করে উড়না পেচিয়ে রুম থেকে বের হলাম। ফোনের ফ্লাস জেলে ছাদে গিয়ে দেখলাম রাদিফ ভাই সিগারেট টানছে। আমি গিয়ে বললাম,,

” রাদিফ ভাই আপনি সিগারেট খান!!?? আগে তো কখনো দেখিনি।”

রাদিফ ভাই এক হাত দিয়ে আমাকে কাছে টেনে নিয়ে বললো, “আমার অনেক কিছুই তো তুই জানিস না। আমার চোখের ভাষা, মনের কথা অনেক কিছুই। কিন্তু ঐ যে আকাশ টা দেখতে পাচ্ছিস, চাঁদ টা দেখছিস ওরা কিন্তু ঠিকই জানে আমি আমার পাশে দাঁড়িনো এই মায়াবতী কে কতটা ভালোবাসি কতটা চাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই মেয়েটা জানেনা,,সে আমার কতটুকু জুড়ে রয়েছে।” বলেই রাদিফ ভাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি রাদিফ ভাই এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলাম,,
“বোধহয় একটু বেশিই ভালোবাসেন মেয়েটা,, তাই না!!??”

রাদিফ ভাই আরেকটু জড়িয়ে ধরে বললো,,
“অসম্ভব ভালোবাসি। মেয়েটা যখন আড়চোখে তাকায় তখন আমার মনে হয় সবচেয়ে রূপবতী মেয়েটাকে আমি দেখেছি। যখন রাগ করে নাক ফুলায় তখন মনে হয় এই রাগের দহনে আমি হাজারবার জ্বলতে রাজি আছি” বলেই উনি আমার হাতের তালুতে চুমু খেলেন।

আমি জিজ্ঞেস করলাম,, “কবে থেকে মেয়েটা কে এত ভালোবাসেন??”

“যবে থেকে মেয়েটা আমাকে অসম্ভব ভয় পেয়ে নিজেকে লুকাতে ব্যস্ত থাকতো তবে থেকে।”

“তাহলে হঠাৎ আপনার পাশের মেয়েটি অনেক কিছু বোঝার আগেই বিয়ে কেন করলেন?? ”

“কারণ আমি চাই নি আমার প্রেয়সীর জীবনে অন্য কেউ আসুক। সে অন্য কাউকে নিয়ে ভাবুক আমি চাই নি।”

“আপনার প্রেয়সী কেবল আপনারই। সে আপনাতেই বিভোর” বলে আমি রাদিফ ভাই এর বুকে মাথা রাখলাম।
উনার বুকে মাথা রেখে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম।
এদিকে রাদিফ তার প্রেয়সীর দিকে অনিমেষ তাকিয়ে আছে। আজ কে রাদিফ থেকে খুশি আর কেউ নেই। তার প্রেয়সী ও যে আস্তে আস্তে তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে এটা বুঝার আর বাকি নেই।

______________________

কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম জানা নেই। আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙলো। আম্মু একাধারে ডেকেই যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে বললাম,,
“উপ আম্মু এত সকাল সকাল ডাকছো কেন?? একটু ঘুমাই না।”

আম্মু বললো, “উঠ তাড়াতাড়ি। ব্রেকফাস্ট করে নে। আজিকে সবাই তোর বড় মায়ের বাবার বাড়ি যাবো। মনে নেই। উঠ তাড়াতাড়ি “।

আমি বললাম, ” যাও আসতেছি আমি।”
“তাড়াতাড়ি আয়” বলে আম্মু চলে গেলো।
আর আমি ভাবতেছি কালকে তো আমি রাদিফ ভাই এর কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছি। কিন্তু এখন বিছানায় কিভাবে?? তারমানে রাদিফ ভাই নিয়ে আসছে।

আমাদের গাড়িতে আমি, রাদিফ ভাই, সাবিহা, সাবা আপু আর রিজবী। রাহা আপু তার শশুর বাড়ির লোকদের সাথে যাবে। প্রায় তিন ঘন্টা পর আমরা রাদিফ ভাইয়ের নানু বাড়িতে পৌঁছালাম। আমরা গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম। রাদিফ ভাই বড় মামি ডাকতে এসেছে নাস্তা করার জন্য।
সব কাজিন রা নাস্তা করতে বসলাম। হঠাৎ একটা ছেলে এসে বললো,,
“আরে তুমি সেই তুবা না যাকে আমি ছোট বেলায় বলতাম তুবাকে আমি বিয়ে করবো। আর সেই তুবা কত বড় হয়ে গেলো”।

আমাকে আবারো বললো,, ” কি আমাকে চিনতে পারোনি??”
আমি মাথা নাড়ালাম যে আমি চিনতে পারিনি।
আরে তুমি তোমার মিরাজ ভাইয়াকে এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে। এরপর আমি বুঝলাম উনি মাহাদ ভাইয়ের ছোট ভাই মিরাজ ভাইয়া। আমি হাসি দিয়ে সালাম দিলাম উনাকে।
উনি বললেন, “আচ্ছা নাস্তা করে নাও। পরে কথা হবে” বলে উনি চলে গেলেন।

রাদিফ ভাই এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছেন।

চলবে……

আমার বিষাদীনি পর্ব-০৯

0

#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_০৯

আজকে সকাল থেকেই একটু অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। ব্রেকফাস্ট করতে গিয়েই শুনলাম আজ রাদিফ ভাই আসবে। আমি তো ভুলেই গেছি। রাদিফ ভাই এর জন্য এখন আমার কেমন অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়!আমি কি ওনাকে ভালোবাসতে শুরু করলাম!! ছিহ না কি ভাবছি। কিন্তু আগে তো ওনার জন্য আমার কোনো কিছু অনুভব হতো না। আগে তো ওনার ফর্সা মুখের চাপ দাড়ির অবয়ব আমার কল্পনায় আসতো না।
কিন্তু এখন যেন আমি চোখ বন্ধ করলেই ঐ ফর্সা গোলগাল চেহারা, কাটা ভ্রু আর কপালের বাম সাইডের সেই ছোট্ট লাল তিল টা ভেসে উঠে। আমার এইসব ভাবনার মাঝে সাবিহা আমাকে কনুই দিয়ে ঠেলে কানের কাছে আস্তে করে বলে,,

“কিরে রাদিফ ভাই মানে তোর জামাই আসার কথা শুনে কি মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটেছে। তাই নাস্তা করা বাদ দিয়ে রাদিফ ভাই কে নিয়ে ভাবতে বসে গেছিস”।

আমি থতমত খেয়ে বললাম, ” ধুর আমি তো ভাবতেছি আমরা দুজন মিলে একটা ব্যবসা করবো। সামনের শরৎ এ কাশফুল চাষ করবো”

“হ্যাঁ। আইডিয়া টা কিন্তু অনেক ভালো জান। তারপর আমরা দুজন ও বড়লোক্স হয়ে যাবো” বলে খুশিতে আত্মহারা সাবিহা।

_____________
আমি মনে মনে ঠিক করে রেখছি যেহেতু আজ রাদিফ ভাই আসবে আমি রাদিফ ভাই কে কলেজে যাওয়ার ঘটনাটা বলবো। কে সেই ব্যক্তি যে আমাদের জন্য রিকশা পাঠায়??ভাড়া মিটিয়ে দেয়?
ক্লাসে ঢুকার পর থেকেই তন্ময় আর অনিমা দুজনেই ঝগড়া করেই যাচ্ছে। ওদের এসব ক্যাচাল থেকে বাচঁতে আমি ওদের তিনজন কে রেখে আরেক বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। পিছনে বেঞ্চে আমাকে বসতে দেখে রিমি আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে তার দলের মেয়েদের কে বললো, “দেখ কালকে আমি সায়ান স্যারের সাথে কিসের সম্পর্ক ইঙ্গিত করায় সবাইকে দেখিয়ে বিবাহিত হওয়ার মিথ্যা নাটক করছে। যাতে ও ধোয়ার তুলসি পাতা নিজেকে প্রমাণ করতে পারে এইজন্য ” বলে সে অন্যদের সাথে হাসতে লাগলো।

“আমি ওর কথা শুনেও কিছু বলতেছিনা। ভেবেছিলাম আমি বিবাহিত জানলে হয়তো রিমি আমার পিছু ছেড়ে দেবে। কিন্তু ও তো বুঝলো না কিছু বরং উল্টো টা বুঝে বসলো।”

আজ কে সায়ান স্যার এর ক্লাস নেই। সরকারি ছুটির তিনদিন বন্ধ কলেজ। ছুটি শেষে কলেজের গেটে দাড়াতেই সায়ান স্যার আমাকে ডেকে উঠলো। আমি আর সাবিহা স্যারের কাছে যেতেই স্যার আমাকে বললো, “তুবা তোমার আব্বু বা জেঠুর নাম্বার টাহ দাওতো। কলেজের ডায়েরি তে লেখা ছিলো কিন্তু ঐটা এই মুহূর্তে পিয়ন পাচ্ছে না। তাই তোমাকে বললাম”।

” আমি স্যার কে জেঠু মনির নাম্বার দিলাম। বললাম স্যার কোনো সমস্যা?? আমরা কি কোনো অন্যায় করেছি??”আমি ঘাবড়ে গিয়ে স্যার কে জিজ্ঞেস করলাম।

স্যার আমাদের বললেন “না না তোমরা কোনো অন্যায় করো নি। আমি নাম্বার নিলাম অন্য একটা দরকারে”।

____________
কলেজ থেকে বাসায় গিয়ে শুনলাম রাদিফ ভাই এসেছে আরো প্রায় দুই ঘন্টা আগে। আর আজকে তো রাদিফ ভাই এর চামচা রিজবীর ঈদ লেগে গেছে। আমি আর সাবিহা যে যার রুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। রুম থেকে বের হয়ে যেই নিচে যাবো উপর থেকে দেখি রাদিফ ভাই সাবিহার ক্লাস নিচ্ছে। ওর অবস্থা তো এখন ‘ছেড়ে দে মা কেন্দে বাচি টাইপ’।
আমি পরিবেশ গরম দেখে আর নিচে গেলাম নাহ। আবার সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম। রুমের দরজা লক করে ড্রয়ার থেকে বিস্কিট এক প্যাকেট খেয়ে শুয়ে পড়লাম। ব্যাস এখন আমি ঘুমিয়ে যাবো।
পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে তারপর সন্ধ্যায় নিচে যাবো। আর আমি মাথামোটা কি চিন্তা করছি!! কলেজে যাওয়ার সময়ের অচেনা ছেলেটার কথা রাদিফ ভাই কে বলবো।

রাদিফ ভাই যদি এসব শুনে দেখা গেলো আমাকে আর সাবিহা কে বডিগার্ড ঠিক করে দেবে কলেজে যাওয়া আসা করার জন্য। নাহ বাবা তমাল ভাই ই ঠিক আছে।

এদিকে রাদিফ এর দুচোখ শুধু তার বউজান কে খুজছে। সাবিহা তো বললো দুজন এক সাথে ফিরেছে। পরে তার ছোট মা মানে তুবার মাকে জিজ্ঞেস করলে বলে যে রুমে আছে। এরপর রাদিফ গিয়ে কিছুক্ষণ তার মায়ের সাথে কথা বললো। কারণ তার মা তার নানু বাড়িতে চলে গেছে। কথা বলে ওর এসাইনমেন্ট গুলা শেষ করতেছে। কিন্তু মাথার মধ্যে শুধু তার প্রেয়সীর কথা ঘুরতেছে।
রাদিফ জানে তার বউ তাকে ফোনে যত কিছুই বলুক না কেন সামনে এলে তাকে ভয় পাবে আগের মতো। ওর এই ভয়টা কমাতে হবে।

চারদিকে মাগরিব এর আজান দিচ্ছে। হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেলো। দেখলাম অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি। উঠে নামাজ পড়ে নিলাম। নামাজ পড়ে নিচে গেলাম। নিচে যেতেই সাবিহার কিল, থাপ্পড় কতগুলা খেলাম আর আমারে বললো ” জান তুই তোর জামাই টারে সামলা। আমাদের জীবন টা তেজপাতা করে এই কদিনে আবার। আর সাথে তো রিজবী শয়তানডা আছে” বলে সাবিহা হা হুতাশ করতে লাগলো।কিছুক্ষণ মায়ের বকা শুনলাম। আমি কোনো রকম নাস্তা টা করে রুমে যেতে পারলেই বাচি।
রুমে গিয়ে পড়ার টেবিলে বসার আগেই দেখলাম রাদিফ ভাই আমার বিছানায় বসে আছে। আর বাকাঁ হাসি দিয়ে বললো,,

“বেইব এখন কই পালাবা??!!”

চলবে……

আমার বিষাদীনি পর্ব-০৭

0

#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_০৭

এপাশ থেকে লামিসা হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে রাদিফ ফোন টা কেটে দেয়। এমনিতেই আছি আমি আমার বউরে নিয়া টেনশনে,, আসছে আরেক উটকো ঝামেলা। রাদিফ আবার তুবার ফোনে ফোন দেয়। কিন্তু আবারো তুবা কেটে দেয়।
এদিকে রাদিফ ফোন টা কেটে দেওয়া তে লামিসা অনেক অপমানবোধ করছে। কিন্তু আবারো ও রাহা কে বলে,,

“মনি, আমি এইখান থেকে রাদিফের কাছে কল দিচ্ছি। নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে বোধহয় কেটে গেছে”।
এই বলে লামিসা আবারো ফোন দেয় রাদিফ এর কাছে।

রাহা মনে মনে বললো,,
” উফ এই মেয়েটা কে জাস্ট অসহ্য লাগতেছে। দেখেছে ওরা স্বামী স্ত্রী কথা বলতেছে। বেহায়ার মতো ওর থেকে ফোন টা নিয়ে নিয়েছে। রাদিফ সম্পর্কে ওর মামা হয় তারপরও লজ্জা হয় না। আর লুবনা আপুকেও (লামিসার মা) বলি কিভাবে এইগুলাতে মেয়ে কিভাবে যে প্রশ্রয় দেয়।”
রাহা বললো,,
“আচ্ছা কথা বলো তাহলে। আমার নিচে কাজ আছে ঐখানে যাই” এই বলে রাহা নিচে চলে গেল।

রাহা যাওয়ার পর লামিসা আবারো ছাদের অন্য সাইডে চলে যায় ফোন টা নিয়ে। আর আমরা সবাই বসে ওর কান্ড দেখতেছি। দেখলাম লামিসার ফোন ধরেছে রাদিফ ভাই কিন্তু কি কথা হচ্ছে শুনতে পারছি না। আমি সবার সামনে নিজ্রকে স্বাভাবিক দেখালেও মনে মনে রাদিফ ভাই এর উপরে অনেক অভিমান হলো।
এখন যে উনি কথা বলতেছে লামিসার সাথে এটা কিছু না কিন্তু আমাকে আনাস ভাইয়ের বন্ধু সামান্য একটা কমেন্ট করাতে কত গুলো কথা শুনালো।

লামিসা রাদিফ কে বললো,,
“আচ্ছা রাদিফ, আপনি আমাকে ফেসবুকে ঝুলাই রাখছেন কেন। আমি সেই কবে আপনাকে রিকুয়েষ্ট দিছিলাম”।
ওপাশ থেকে রাদিফ মনে মনে বললো,,
” আমার নিজের বউ আমারে এখনো ভাই ডাকে আর এই মেয়ে আমারে রাদিফ ডাকে। কি সাংঘাতিক ব্যাপার। মেয়েটা আমার অবুঝ বউটারে কিছু শেখাইতে পারে না।” তারপর রাদিফ বললো,,
“আচ্ছা আমি দেখবো চেক করে। আর এখন আমি ক্যাম্পাস এ আছি। বায়। ”

__________________
আমাকে সাবিহা কানের কাছে আস্তে করে বললো,,
” বইন, এই মেয়েটা তোর জামাইর সাথে এত কিসের কথা বলতেছে। তাও এত হেসে হেসে।এই মেয়েটা তো তোর থেকে তোর জামাই রে কেড়ে নিবো। একটু নজর রাখিস” এই বলে সাবিহা চোখ টিপলো।

আমি মনে মনে বললাম, ” কই আমার সাথে তো কথা বলার সময় ধমক ছাড়া কথাই বলে নাহ। আর লামিসার সাথে নিশ্চয়ই মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতেছে তাই ও হেসে হেসে কথা বলছে। এই ফিকে ন্যা*কামি করে আবার আমাকে কল দিচ্ছে।” আমি সাবিহা কে বললাম,
“সাবু আমাকে এইখান থেকে নিয়ে চল এই মেয়েটার ন্যা*কামি গুলা আমার জাস্ট অসহ্য লাগতেছে “।

সাবিহা বললো ” জানু কোথা থেকে যেন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি” বলেই দুষ্ট হাসি হাসলো
আমি ওর মাথায় দিলাম এক থাপ্পড়।
ছোট ফুফি আমাদের ডাকার জন্য রিজবী কে পাঠিয়েছে।নিচে গিয়ে দেখলাম সবাই প্যান্ডেলেই খাচ্ছে। আমাকে জেঠু মনি ডাইনিং এ এক প্লেট দিয়ে গেলো খাবার। বললো,,

“তুবা মনি, তুই এখানেই খেয়ে নে। খেয়ে রেস্ট কর গিয়ে। আজকে র*ক্ত দিয়ে আসছো, আজকে একটু রেস্ট কর। ওদের সবাই কে আমি প্যান্ডেলে নিয়ে যাচ্ছি খাওয়ার জন্য” বলেই জেঠু মনি সাবা আপুদের ডেকে নিয়ে গেলো খাওয়ার জন্য।

এদিকে আমি ডাইনিং রুমে বসে খাচ্ছি। জেঠু মনি এখানে আমাকে যে পরিমাণ খাবার দিয়েছে সেগুলো দুইজনে খেতে পারবে। তাই আমি অর্ধেক পরিমাণ খাবার অন্য প্লেটে উঠিয়ে রাখলাম। বড় আম্মু আর মেজো আম্মু বাইরে মেহমানদের দেখভাল করছে। খেতে খেতে দেখলাম আনাস ভাই আমার দিকে এগিয়ে আসতেছে হাতে ফোন নিয়ে। আমার কাছে এসেই ফোনে কাকে যেন বলছে,,

“দেখ তোর বউ কত্তগুলা খাবার নিয়ে বসছে। এরপরও তুই ঐখান থেকে বল আমরা তোর বউয়ের কোনো যত্ন নিচ্ছি না”।
বুঝলাম রাদিফ ভাই ফোনের ওপাশে ভিড়িও কলে আছে। রাদিফ বললো,,

” আমার বউ যদি এতগুলো খাবার খেতো তাহলে তো প্রেশার লো হয়ে অজ্ঞান হতো না” বলেই মুচকি হাসলো।

ওদের বকবকানির জন্য আমি খেতে পারছি নাহ। আরে ভাই ক্যামেরা একটা সামনে এভাবে ধরে রাখলে কে খাবার খেতে পারে। বিরক্ত হয়ে আনাস ভাই কে বললাম,,

“আনাস ভাই তোমার কি আমাকে দেখে ফুড ব্লগার মনে হয়??আনাস ভাই বললো,, না কেন??

” তো তাহলে তুমি ক্যামেরা টা আমার দিকে ঘুরাই রাখছো কেন,, আমি খাবার রিভিউ দেবো নাকি” বলেই আমি প্লেট নিয়ে ওখান থেকে উঠে গেলাম।
এইদিকে রাদিফ আনাস কে বললো,,
“তুই শুধু শুধু আমার আমার বউয়ের খাওয়ায় ডিস্টার্ব করেছিস” বলে ও ফোন কেটে দিলো।
আর আনাস তো বেক্কেল বলে গেলো।যাহ বাবা আমি কি করলাম আবার!!
________________
আজকের ঝামেলা মোটামুটি শেষ। মেহমান রা সবাই চলে গেছে। সন্ধ্যা পর ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে। কিচেনে আম্মুরা গরম গরম পকোড়া বাজতেছে। কারো চা কারো কফি। কালকে ফুফিরা দুইজনই চলে যাবে।
তখনই জেঠুর ফোন বেজে উঠে। জেঠু ফোন ধরে বলে,,

“ওয়াইলাইকুমুস সালাম। হ্যাঁ কেমন আছো সাগর?? ও বাড়ির সবাই কেমন আছে?? বলতে জেঠু মনি ড্রয়িংরুম থেকে উঠে বারান্দার দিকে চলে গেলো। এখানে আমরা যে পরিমাণ কথা বলতেছি একটুও কথা বুঝা যাবে নাহ।

সাগর মামা ফোন দিয়েছে মানে রাদিফ ভাই এর মেজো মামা। কিন্তু কেন???
মেজো মা আমাদের কে এখানে পকোড়া দিয়ে গেলো সাথে রয়েছে চা, কফি। আর আমি অলওয়েজ টি লাভার। আর এই দিক দিয়ে আমি আর রাদিফ ভাই আলাদা। ওনার কফি ছাড়া চলে না আর আমার চা ছাড়া।আমরা খাচ্ছি কম কথা বলতেছি বেশি।

কিছুক্ষণ পর জেঠু মনি এসে বললো,, সাগর মামার ছেলে মানে মাহাদ ভাইয়ার বিয়ে। আর সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি বিয়েতে রাদিফ ভাই নাকি আসবে।
ওনার ছুটি আছে তখন। ওনার মামা ওনার সাথে কথা বলেই বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছে।
আর এইদিকে আমি তো শেষ।

[গঠনমূলক মন্তব্য করুন ]।

চলবে………..

আমার বিষাদীনি পর্ব-০৬

0

#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_০৬

ঘুম থেকে যখন উঠলাম,,দেখি বাইরের একটুকরো মিষ্টি রোদ আমার রুমে আসছে। বুঝলাম সকাল হয়ে গেছে। কালকে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম টেরই পেলাম নাহ। কেউ কি আমাকে আর ডাকতে আসে নি। কালকের কথা মনে হতেই রাদিফ ভাই এর বলা কথাগুলো যেন আমার কানে বাজছে।
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে যাচ্ছিলাম। নিচে গিয়ে সবে ডাইনিং এ যাবো তখনি যেন আমার পুরো দুনিয়া ঘুরে উঠলো। নিবু নিবু চোখে দেখলাম আব্বু আমার দিকে দৌড়ে আসতেছে,, আর কানে বাজছে কালকে রাদিফ ভাইয়ের কথা গুলো।

তোফায়েল আহমেদ মানে তুবা বাবা মাত্রই মর্নিং ওয়াক করে বাসায় ফিরেছে। ডাইনিং কাছে আসতেই দেখলো তুবা অচেতন হয়ে পড়ে গেছে। উনি তাড়াতাড়ি গিয়ে মেয়ের মাথা তার কোলে উঠিয়ে নিলেন।
“এই তুবা। তুমা মা, চোখ খোল। এই বলে উনি তুবাক ঝাকাচ্ছে।”
ততক্ষণে কিচেন থেকে আর ডাইনিং থেকে সবাই চলে এসেছে। তুবার বাবা কোলে করে নিয়ে ওকে ওর রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। এই দিকে ওর মা তো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। তুবার বড় মা আর ওর মেজো মা কোনোভাবেই তার মায়ের কান্না থামাতে পারছে না।

তুবার চাচ্চু তাদের পারিবারিক ডাক্তার কে খবর দিলো। উনি আসতেছে। ওর জেঠু মনি মুখের উপর পানি ছিটাচ্ছে। তখনি মিটমিট করে তুবা চোখ খুললো।
চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো সবাই ওর রুমে। তুবার ব্বা মেয়ের হাত ধরে পাশে বসে আছে। চোখের পলক ফেললেই যেন টুপ করে পানি বের হয়ে যাবে। নিজেদের একমাত্র মেয়ে বলে কথা।

ডাক্তার এসে চেক আপ করতেছে ওকে। ডাক্তার বলল,,

“ওর শরীর দুর্বল। প্রেশার একে বারে লো। আর এই মাসে কি এখনো রক্ত দেন নাই ওকে। আপনারা জানেন ওর র*ক্তশূণ্য তা। তাই সময় মতো ওর শরীরে র*ক্ত দেওয়া প্রয়োজন। ঠিকভাবে খাবার খেতে হবে আর হ্যাঁ আজকেই গিয়ে র*ক্ত দিয়ে আসেন ওকে।” এই বলে ডাক্তার চলে গেলো।

তুবার জেঠু মনি বললো কারো বুঝি মনে নেই তুবা মায়ের র*
ক্ত দেওয়ার ডেট চলে গেছে।
খাওয়ার টেবিলে সবাই মিলে ব্রেকফাস্ট করতেছে। আজ বাড়িতে অনেক কাজ। বাইরে বাবুর্চি রা এসে গেছে রান্নার জন্য। তখন তুবার জেঠু মনি বললো,,

“তমাল, আনাস বা ইরহাম যেকোনো একজন তুবাকে হসপিটাল নিয়ে যাস। ঐখানে গিয়ে আমাকে ফোন দিস।আমি ডাক্তার হাসান হাসেবের সাথে কথা বলবো। আমরা তো কেউ যেতে পারবো না। জানিস তো আজকে সবাই একটু ব্যস্ত”।

তমাল বললো,” বড় মামা আমাকে একটু আজকে অফিসে যেতে হবে। একটু বেশিই জরুরী। নাহলে আমি যেতাম। আনাস তুই নিয়ে পারবি ওকে??”

“আচ্ছা আমি নিয়ে যাবো তুবা কে” আনাস বললো।

_________________
কালকে রাতে তুবার সাথে কথা বলে ফোন বন্ধ করে দিয়েছে রাদিফ। যাতে কেউ ওর সাথে যোগাযোগ করতে না পারে। তুবার ওপর ওর অনেক বেশি অভিমান হচ্ছে। তুবা কি ওকে স্বামী হিসেবে মানতে চায় না নাকি।

আমি রেডি হয়ে গেটের কাছে আসলাম। সাবিহারা কেউ আমার সাথে যেতে পারছে না কারণ ওরা সবাই আজ এই দিনে কোরআন তেলাওয়াত করতেছে। আমি গেটের কাছে আসতেই আনাস ভাই বললো,,
“বাইকে করে যেতে পারবি?? ”
আমি বললাম,, ” হ্যাঁ পারবো।”
হসপিটালে আসতেই জেঠু মনি ডাক্তারের সাথে কথা বললো।র*ক্ত দিয়ে বের হয়ে হসপিটালের নিচে আসতে আনাস ভাই কে একজন পেছন থেকে বলে উঠলো,,

“আরে আনাস,,তুই হসপিটালে কেন আসছিস। আর তুবাকে সাথে নিয়ে। কোনো সমস্যা?? ”

“রাতুল যে,,আসলে তুবার র*রক্তশূণ্যতা। তাই ওর প্রতি মাসে র*ক্ত দিতে হয়। আজকে মামু রা সবাই ব্যস্ত। তাই আমি নিয়ে আসলাম।কিন্তু তুই এখানে??” আনাস জিজ্ঞেস করলো।

“গতমাস থেকে আমি এখানে এই হসপিটালে কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে জয়েন করেছি”।

আমি এতক্ষণে বুঝলাম উনি আনাস ভাইয়ের সেই বন্ধুটা। উনি এইবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,
” তুবা, কি খাবে বলো??”
আমি বললাম, “না কিছু খাবো নাহ। আনাস ভাইকে বললাম,,ভাইয়া তাড়াতাড়ি চল আমার কাছে ভালো লাগছে নাহ।

আনাস ভাই রাতুল ভাইয়া থেকে বিদায় জানিয়ে আমাকে সাথে নিয়ে বাইকে উঠলো। আমি আনাস ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম” তুমি তোমার বন্ধু কে আমার নাম্বার দিয়েছ কেন??”

“আরে আমি তো এমনিতে মজা করেই দিছিলাম। ও যখন জানবে তুই বিবাহিত তখন একটা বড় ছ্যাঁকা খাবে সেইজন্য। কিন্তু আমি কি জানতাম তোর জামাই এইটাতে এত রিয়েক্ট করবে”। বলেই আনাস ভাই হেসে উঠলো।

__________
বাড়িতে এসে দেখলাম খাওয়া দাওয়া শুরু হয়ে গেছে। অনেকে খেয়ে পেলেছে অনেকে খায় নাই। রাহা আপু আসছে সাথে তার শশুরবাড়ির লোকজন। আমি গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে আসলাম। মেজো আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম,, সাবিহা রা কোথায়?? মেজো আম্মু বললো ওরা নাকি ছাদে গিয়েছে। রাহা আপুর জা য়ের মেয়েরা আর আপুর ননদের মেয়েদের কে নিয়ে। আপুর জা য়ের মেয়ে দুইটা ইশা আর তিসা। আর আপুর ননদের মেয়ে একটা লামিসা। ওরা আমাদের বয়সেরই
আমি ছাদে যেতেই অনামিকা আর সাবিহা জিজ্ঞেস করলো ” কখন এলি??” আমি বললাম, কিছুক্ষণ আগেই আসছি। ইরার কথা জিজ্ঞেস করতে বললো ওর নাকি শরীর খারাপ হয়েছে তাই শুয়ে আছে।
আমি ইশা,তিশা আর লামিসা কে জিজ্ঞেস করলাম “কেমন আছো তোমরা?? ইশা আর তিসা উত্তর দিলেও লামিসা উত্তর দেয় না। ও অন্য এক সাইডে চলে যায়। যেন আমার কথা শুনতেই পায় নি।
আর এর কারণ টাও জানি। ও হয়তো এতক্ষণে জেনে গেছে আমার আর রাদিফ ভাই এর বিয়ের কথা সেইজন্য। কারণ ও রাদিফ ভাই বলতেই পাগল। যদিও সম্পর্কে ওর মামা হয়।
_________
এদিকে রাদিফ ওর ফোন বন্ধ থাকার কারণে তুবার অসুস্থতার কথা জানে নাই। যখন ফোন খুললো দেখলো তমালের অনেক গুলা ফোন পরে একটা মেসেজ দিয়ে তুবার অসুস্থতার কথা জানায়।
এখন তমাল কে ফোন দিচ্ছে কিন্তু ও ধরছে নাহ। নিজের বউ য়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে ও যেন পাগল হয়ে গেছে। ও জানে এখানে ওর ও কিছু দোষ আছে।
এরপর রাদিফ তুবার ফোনে ফোন দেয়।

আমি যখন ওদের সাথে গল্প করতেছি দেখলাম ফোন বেজে উঠলো। রাদিফ ভাই ফোন দিয়েছে। আমি কেটে দিয়েছি এরপর অনেকবার ফোন দেয় কিন্তু আমি ধরিনি।কালকের রাদিফ ভাই এর একটা কথাও আমি ভুলি নি

এদিকে রাদিফ এবার না পেরে রাহার ফোনে ফোন দেয়। রাহার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তুবার কথা জিজ্ঞেস করতে বলে তুবা ছাদে। তখন রাদিফ রাহা কে বলে ” একটু কষ্ট করে ফোন টা তুবা কে দিয়ে আয় না আপু”

রাহা ফোন নিয়ে ছাদে এসে তুবা কে বলে”এই তুবা নে, রাদিফ কথা বলবে”।আর লামিসা তো রাদিফ এর কথা শুনেই ছাদের ওপাশ থেকে তুবাদের এখানে চলে আসছে। লামিসা রাহা কে একটু ন্যাকা স্বরে বললো “মামি আমি রাদিফ এর সাথে বলবো। তুমি ওর থেকে আমাকে ফোন টা নিয়ে দাও”।
রাহা কোনো রকম নিজের রাগ ধমন করে বললো ” আচ্ছা ও কথা বলে নিক। ওর সাথে রাদিফের কি যেন কথা আছে”।

এদিকে ওদের সামনে আমি ফোন টা কাটতেও পারতেছি না। তাই সালাম দিয়ে চুপ করেই আছি। ওপাশ থেকে রাদিফ ভাই নরম স্বরে বললো,,
“এই অসুস্থ শরীর নিয়ে ছাদে কেন আসছিস। রূমে গিয়ে রেস্ট নিতি। আমি জানি তুই ইচ্ছা করে আমার ফোন কেটে দিচ্ছিস”
আমি শুধু এপাশ থেকে হু হু বলতেছি।
রাদিফ ভাই বললো
“কালকের জন্য আমি সরি….
আমি এর মধ্যে বললাম ” রাদিফ ভাই আপনার সাথে লামিসা কথা বলবে”এই বলে ফোনটা ওকে দিলাম।

লামিসা হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে……..

[নাইস, নেক্সট বাদ দিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য করুন]।

চলবে……..

আমার বিষাদীনি পর্ব-০৫

0

#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_০৫

মেসেজ আর ছবিগুলো ওপেন করে দেখলাম আজকে ফুচকা খেতে গিয়ে যে ছবিগুলো তুলেছি সেগুলো। কিন্তু আজকের এই ছবিগুলো আমাকে কে পাঠিয়েছে!!??তাও আবার আননোন একটা আইডি থেকে। এরপর মেসেজ গুলোতে চোখ বুলিয়ে দেখলাম ঐ অচেনা ব্যক্তি লিখেছে,,
“তোমার চোখ গুলো ভিষণ মায়াবী। বয়সে আমার থেকে ছোট হবে তাই তুমি বললাম।”

আমি রিপ্লাই দিলাম,,কে আপনি?? আর এই ছবিগুলো কোথায় পেয়েছেন??!!

সাথে সাথেই রিপ্লাই এলো,, পেয়েছি আমার ফ্রেন্ড আনাস এর ফেসবুক আইডি থেকে। আর ওকে জিজ্ঞেস করলাম,, এরা কারা??ও বললো ওর কাজিন হও তোমরা সবাই।

আমি সাথে সাথে ফেসবুকে ডুকে দেখি সত্যি সত্যি আনাস ভাই আজকের ছবিগুলা আপলোড দিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। যেহেতু ওনার আইডিতে পরিচিত কেউ ছাড়া অন্য কেউ নেই। ঐ পোস্ট এর নিচে একজনের কমেন্ট দেখলাম লিখেছে,,
“আনাস, সবুজ সুন্দরী টাকে বলিস আর কখনো যাতে সবুজ কালার না পড়ে কারণ তার সবুজ সৌন্দর্যের দ্যুতি তে আমার মতো অনেকে হার্ট অ্যাটাক করবে”।
এখানে সবুজ কালার জামা পড়েছি আমি তারমানে কি,, ঐ আননোন ব্যক্তি টা কি উনি।

আমি তাই ঐ নাম্বারে রিপ্লাই দিলাম,,
” আচ্ছা আপনি মনে হয় ফেসবুক এ হার্ট অ্যাটাক করা ব্যক্তি,, তাই না??!
বললো,,
“হ্যাঁ। আমার না ” ডুবেছি আমি তোমার প্রেমের অনন্ত মায়ায়” গানটা অনেক প্রিয়। আজ আমি এই গানের সার্থকতা বুঝছি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,,

“আপনি আমার নাম্বার পাইলেন কই”??!!
বললো,, ” আনাস থেকে নিছি”।

আমি সাথে সাথে নিচে গেলাম,, আনাস ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করতে তানিশা আপু বলল আনাস ভাই ফোনে কথা বলতেছে। আমি আনাস ভাইয়ের কাছে যেতেই আনাস ভাই ফোনে বলতেছে,,
“রাদিফ,,দেখ আমি তো ছবিগুলা টা এমনিতেই মেমোরিজ হিসেবে দিলাম। একটু দুষ্টামি করেই হয়তো রাতুল কমেন্ট টা করছে। ও তো জানে এরা সবাই আমার ছোট বোন যে। তুই ব্যাপার টা এতো সিরিয়াসলি নিস নাহ। আমি রাতুল কে বলবো কমেন্ট টা ডিলেট করতে।”

আমি বুঝলাম ফোনের অপরপাশে রাদিফ ভাই আছে। বুঝলাম আমার বিপদ অতি নিকটে। অপরপাশ থেকে রাদিফ ভাই কি বললো জানিনা। আমি আস্তে করেই আনাস ভাইয়ের পিছন থেকে কেটে পড়লাম।

_______________________
ড্রয়িংরুমে এসে দেখলাম আব্বু, জেঠু মনি,আর মেজো চাচ্চু বাজারে লিস্ট করতেছে। কালকে দাদা ভাইয়ের মৃত্যু বার্ষিকী তে মানুষ কে খাওয়ানোর জন্য। আমি যেতেই দাদি আমাকে বললো,,
“তুবা, কিচেন থেকে তোর বড় মা ডেকে আন তো”
আমি কিচেনে গিয়ে বড় মা কে বললাম যে তাকে ড্রয়িংরুমে ডাকছে।
সাবিহাদের কাউকে দেখছিনা। সাবা আপুর রুমে গিয়ে দেখলাম ইরহাম ভাই বাদে সবাই এখানে গল্প করছে।
আমি গিয়ে বসলাম। আনাস ভাই এতক্ষণ রাদিফ ভাইয়ের কথাগুলো বলতেছে সবাই কে।
রাদিফ ভাই নাকি আনাস ভাইয়ের সাথে অনেক রাগারাগি করছে ছবি গুলো আপলোড দেওয়া তে
আমি গিয়ে বসতেই সাবিহা আর ইরা বললো,,

“আরে তোমরা জানো নাহ,,রাদিফ ভাই ছবি গুলো দেওয়া তে এমনি এমনি রাগ করে নাই। মূলত নিজের বউ আছে না ছবি গুলাতে,, সেজন্য এত রাগ করতেছে”। বলেই দুজন আড়চোখে আমার দিকে চাইলো।

অনামিকা মুচকি হেসে বললো,,
” আরে তোরা দুজনের মতো বেক্কেল আর বেয়াদব এর একটাও নাই। একজন স্ত্রী র সামনে তার স্বামী সমালোচনা করতেছিস। ছেহ!! কি অন্যায়!!

আর আমি অসহায় দৃষ্টিতে তমাল ভাই আর আনাস ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,,
“তোমরা দুজন এদের কে কিছু বলবা না!! দেখতেছো না ওরা আমার মতো এইরকম একটা নিষ্পাপ বাচ্চাকে কিভাবে রোস্ট করতেছে। এরা সবাই একদলে হয়ে গেছে”।

___________
এদিকে রাদিফ তো রেগে আগুন। একে ভার্সিটির এসাইনমেন্ট গুলো এখনো কমপ্লিট করতে পারে নাই। তারউপর এসাইনমেন্ট গুলা কালকের মধ্যেই জমা দিতে হবে। আবার এই দিকে তুবা কে একের পর এক কল, মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু ও ফোন তুলছেই না।
আনাসের বন্ধু রাতুলের সব রাগ যেন তুবার উপর পড়ছে। তাই তাকে কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু নো রেসপন্স।

রাদিফ যেখানে নিজের প্রেয়সীর দিকে কারো নজর শ্য করতে পারেনা সেখানে পাবলিক্যালি একজন তাকে উদ্দেশ্য করে এইভাবে বললো। কবে বুঝবে এই মেয়ে আমাকে??
শেষে ও না পেরে তার মায়ের ফোনে ফোন দেয়। কিন্তু ওর মাও ফোন ধরে নাই। তখন ওর ছোট ফুফির কাছে
দেয়। অবশেষে ছোট ফুফি ধরলো ফোন।

” হ্যালো রাদিফ,,কেমন আছিস আব্বু”?? ছোট ফুফি
“আসসালামু আলাইকুম ফুফি,,কেমন আছো তোমরা সবাই??” রাদিফ

“ওয়ালাইকুমুসসালাম। আমরা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি সবাই। কালকে আয়োজনের জন্য সবাই ব্যস্ত আছি একটু”। ছোট ফুফি বললো
” ও আচ্ছা। ঐ বিচ্চু বাহিনী গুলা সবাই কোথায়??”
“আছে ওরা। দিচ্ছি দাড়া। এই রিজবী ফোন টা ওদের কে দিয়ে আয় তো। আমি ব্যস্ত আছি। ”

রিজভী ফোন নিয়ে সাবার রুমে এসে ফোন টা তমালের হাতে দেয়। তমাল বলে,, কে এইটা??
“রাদিফ ভাইয়া”। রিজবী
” হ্যাঁ রাদিফ বল”।তমাল
“এখানে তাহিয়া আছে?? থাকলে ওকে দে।”
“তুবা, নে রাদিফ তোর সাথে কথা বলবে। বাইরে যা তুই এইখানে কথা বুঝবি নাহ”।

” আসসালামু আলাইকুম “খানিকটা ভয়ে ভয়েই বললো তুবা
” ওয়াইলাইকুমুস সালাম। ছোট ফুফির ফোনটা তাকে দিয়ে তুই তোর রুমে যা। মি তোর ফোনে ফোন দিচ্ছি।”খানিকটা গম্ভীর স্বরে ঐপাশ থেকে রাদিফ বললো।

আমি রুমে গিয়ে ফোন চেক করে তো হতভম্ব। এত্ত গুলা মেসেজ আর কল তাও রাদিফ ভাই এর থেকে। আজকে তুবা তুই শেষ। দেখলাম রাদিফ ভাই আবার দিয়েছে কল। বললো,,
“এতক্ষণে নিশ্চয়ই দেখেছিস কতগুলা কল আর মেসেজ দিয়েছি আমি। তোর এই ফোনটা সামনে যদি পাইতাম তাহলে আমি আচাড় মারতাম। ফোন দিয়ে যদি না পাই তাহলে ফোন ব্যবহার করার দরকার কি।
এইখানে আমি ফোন দিয়ে দিয়ে মরে যাচ্ছি আর তুই আড্ডা দিতে ব্যস্ত। খুব তো ঊড়তেছিস। যত পারিস উড়ে নে। আমি আসলেই তোর ডানা কাটবো আমি।”
একটু থেমে আবার বললো,,
ছেলেদের থেকে কমপ্লিমেন্ট পেতে খুব ভালো লাগে তাই নাহ?? সেজেগুজে বাইরে যাস তো কমপ্লিমেন্ট পেতে। আনাস যখন ছবি তুলছিলো তখন মানা করতে পারছিলিনাহ। কথা বল..ড্যাম

আমি কান্না শুরু করে দিয়েছি অলরেডি। রাদিফ ভাই এর থেকে এগুলো আশা করি নি। আমি বললাম,,
“আনাস ভাই এত করে বললো তাই। আর ওরা আমাকে কি ভাববে ছবি না তুললে”।
এই কথা শুনে অপরপাশ রাদিফ চিৎকার করে বলে,,
” হ্যাঁ। তুই তো সবার মন বুঝিস। খালি আমার টা ছাড়া। আমার টা কবে বুঝবি তুই। কি করলে তুই বুঝবি।একদম ন্যাকামি করবিনা আমার সাথে,,বলে দিলাম”।
এই বলে রাদিফ ভাই ফোন কেটে দিলো।

রাদিফ ভাইয়ের কথাগুলো যেন আমার কানে বাজছে। আমি যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না। কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম ঐখানে।

চলবে…….

আমার বিষাদীনি পর্ব-০৪

0

#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব:_৪

রাদিফ ভাইয়ের মুখে “বউ” ডাক শুনে মনের মধ্যে যেন অন্যরকম শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা রাদিফ ভাই এর প্রতি তো কখনো আমার এইরকম অন্যরকম অনুভূতি তো কখনো হয় নি। আমি যখন কথাগুলা ভাবতেছি তখনি রুমে আম্মু আসলো

“কিরে কখন থেকে ডাকছি খেতে যেতে। রিজবী কে পাঠালাম, পাজি টা গিয়ে বলল,, ছোট মা জানো তুবা আপু না কার সাথে হেসে হেসে ফোনে কথা বলতেছে আমার তো মনে হচ্ছে ডাল মে কুচ কালা হে।”
” না মানে রাদিফ ভাই ফোন দিয়েছে তো।তার সাথেই কথা বলতেছিলাম”।
আম্মু কোনোরকম আমতাআমতা করে চলে গেলো।
আর এইদিকে আমি ভাবতেছি,, যাক রাদিফ ভাইয়ের সাথে তো বিয়ে হয়ে একদিক দিয়ে ভালোই হইছে অন্তত একটু প্রাইভেসি পাইছি।

___________________
“কি কেমন লাগলো আমার বউয়ের সাথে কথা বলে” রাদিফ

“হ্যাঁ ভালো লাগলো” সিনথিয়া একটু জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললো। আর মনে মনে বলল,,
“এই তুবা কে তো আমি দেখে নেবো”।
” আচ্ছা তোমার সাথে বসে কি এক কাপ কফি খাওয়া যাবে?? তুমি কি ফ্রি আছো?? প্লিজ এক কাপ কফি ” সিনথিয়া রাদিফ কে বলল।

“আমার সাথে বেশি সময় নেই। জাস্ট টেন মিনিট। ”
“আচ্ছা চল” সিনথিয়া
এরপর একটা ক্যাপে তে ঢুকে দুইজনের জন্য দুইটা কফি অর্ডার করে।কফি আসতেই সিনথিয়া রাদিফ কে বললো,,
“একটা সেলফি প্লিজ ”
“আচ্ছা নে” রাদিফ

নিচে এসে দেখি

অনামিকা, ইরা,সাবিহা আর তানিশা আপু ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে। আব্বু, জেঠুরা কেউ এখনো অফিস থেকে ফিরেনি। সাবা আপু এখনো ভার্সিটি তে থেকে আসে নাই আর রাহা আপি তার শশুর বাড়ি চলে গেছে। আমি গিয়ে ওদের সাথে বোসতেই অনামিকা বলল,,

“অবশেষে আসলেন আমাদের নতুন ভাবি। তা ননন রা সেই কখন থেকে বসে আছে আর ভাবি আসছে এখন। এটা কি হয়”??
আমি অনামিকার মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বললাম,,

” কিসের ভাবি!!?? আমি আগেও এইবাড়ির আদরের মেয়ে ছিলাম এখনো আছি। কোনো উটকো ঝামেলার সাথে আমাকে বাধাবি নাহ”।

তখন সাবিহা আর ইরা বলে উঠলো,,

“কিহ!! তারমানে রাদিফ ভাই তোর কাছে উটকো ঝামেলা!!?? এই রিজবী কই তুই?? আজকেই এটা রাদিফ ভাইয়ের কানে পৌঁছাবি”।

তখনি রিজভী আমার পাশ থেকে বলে উঠলো,
” এইতো আমি আছি এবং সব শুনেছিও”

আমি বললাম,,
“তুই কখন এলি!!?”
“তুমি যখন রাদিফ ভাই কে উটকো ঝামেলা বলছিলে তখন” রিজভী।

ও আচ্ছা তারমানে তোমরা সবাই একসাথে হয়ে আমাকে লেগপুল করছো। থাকবোই না এখানে আমি এই বলে আমি উঠে কিচেনের দিকে গেলাম। ঐখানে যেতেই দেখলাম ফুফিরা আর আম্মুরা সবাই মিলে কাজ করছে আবার গল্পও করছে। এই দিক দিয়ে আমার ফুফিরা অনেক ভালো। অনেকজন কে দেখি ভাইয়ের বউদের পিছনে ননদ রা লেগে থাকে কিন্তু আমার ফুফিরা অনেক ভালো। নিজেদের ভাইয়ের বউদের কে বোনের মতো ভালোবাসে। আমি কিচেনে যেতেই মেজো আম্মু বললো,,

“কি তুবা, কিছু লাগবে তোদের”??
” নাহ মেজো আম্মু কিছু লাগবে না। ওরা সবাই মিলে আমাকে ওখানে পচাচ্ছে তাই এখানে আসলাম”।
ছোট ফুফি আমাকে তার পাশে বসিয়ে দিয়ে বললো,, “তাহলে তুবা মনি তুই এখানে বসে থাক”
যেই বসতে যাবো তখনি ছোট ফুফির মেয়ে তানহা পুচকি আমার হাত ধরে টেনে বললো,,

“তুবা আপি তোমাকে ডাকছে তমাল ভাইয়া”

ড্রয়িংরুমে এসে দেখলাম সব কাজিন গোষ্ঠী কি নিয়েন যেন আলোচনা করছে। আমি যেতেই আনাস ভাইয়া বললো,,
“এই তুবা, তুই যাবি?? তুই যদি যাবি বলিস তাহলে সবাই কে নিয়ে যাবো”।
আমি বললাম,,
” কোথায়”??
তখনি পাশ থেকে তমাল ভাইয়া বললো,,
“ওরা সবাই বলছে আজ কে সন্ধ্যার পরে সবাই নিয়ে ঐ যে, মোড়ের ফুচকা দোকান টা আছে না,, ঐখানে যাবে ফুচকা খেতে। ইরা আর অনামিকা নাকি খায় নাই ঐ দোকানের ফুচকা গুলো। যাবি তুই”??

ফুচকার নাম শুনে তো আমার এখনি জিবে পানি চলে আসছে। সাবিহা, ইরা, অনামিকা আর তানিশা আপু তো আমার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। কারণ এখন আমি যদি না বলি তাহলে সবার যাওয়া ক্যান্সেল। তাই আমি বললাম,,
” হ্যাঁ যাবো।ফুচকা যেখানে আছে সেখানে আমি কিভাবে না যাই”।কিন্তু আম্মুরা যেতে না দিলে!??

তখনি সাবা আপু এসে বললো,,
“কোথায় যাচ্ছিস সবাই??”
আমি বললাম,,
“চলো না সাবা আপু সবাই মিলে মোড়ের দোকান থেকে ফুচকা খেয়ে আসি। কিন্তু আম্মুরা যেতে না দিলে??”

“চল সবাই মিলে খেয়ে আসি। অনেকদিন হয় ফুচকা খাওয়া হয় নি। কিন্তু আম্মুরা??”
তখনি পাশ থেকে ইরহাম ভাই বলে উঠে,,
“মামিদের কে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার”

আমরা সবাই তো অবাক। এতক্ষণ যে ইরহাম ভাই চুপচাপ সোফার এক কোণে মোবাইল টিপছে,, সে ইরহাম ভাই এখন আম্মু দের কে রাজি করাবে। তাও সাবা আপু বলার পরপর।ব্যাপারটা একটু খটকা লাগলো।

চারদিকে মাগরিব এর আজান দিচ্ছে। আমরা মেয়েরা নামাজ পড়তে যাচ্ছি আর ভাইয়া রা মসজিদে যাচ্ছে। ওরা মসজিদ থেকে এলেই সবাই যাবো ফুচকা খেতে।

আমি একটা গ্রিন কালার কুর্তি পড়েছি এর মুখে একটু ক্রিম দিয়েছি। আর চুলগুলো কে খোপা করে কাঠি দিয়ে বেধেছি।ব্যাস আমি রেডি। ইরা আর অনামিকা যে লিপস্টিক দিয়েছে সেটা ফুচকা খেতেই চলে যাবে। এই বলে আমি আর সাবিহা ওদের কে পচাচ্ছি।
গেটের কাছে আসতেই দেখলাম তমাল ভাইয়া রা আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে আছে।
রাস্তায় নেমে সবাই হাটছি। সবাই শুধু আমাদের দিকে ঘুরে ঘুরে দেখতেছে যে,,এই বিশাল ডাকাতের দল যাচ্ছে কোথায়। হাহা

ফুচকা দোকানের সামনে ভিড়। আমরা কোনোরকম গিয়ে সবার জন্য ফুচকা অর্ডার দিলাম। কি সুন্দর পরিবেশ। খোলা আকাশের নিচে চেয়ার টেবিলে বসে ফুচকা খাচ্ছি সবাই মিলে। বাতাস বইছে সাথে আকাশে চাঁদ। ইশ! এখন রাদিফ ভাই থাকলে বেশ ভালো হতো। ছিহ! আমি রাদিফ ভাই কে নিয়ে কি উল্টো পালটা চিন্তা করছি।
দেখতে দেখতে সবার ফুচকা চলে এলো। ফুচকা আসার সাথে আনাস ভাই বললো,,
” এই দাড়া কয়েকটা ছবি তুলি। রাদিফ কে পাঠাবো।”

মাত্র ফুচকা একপ্লেট খেয়েছি আরেক প্লেট যেই অর্ডার করতে যাবো দেখলাম আমার ফোনে যমদূত থেকে ফোন আসছে। মানে রাদিফ ভাই। আমি উঠে একটা সাইডে গিয়ে ফোন রিসিভ করলাম।আমি কিছু বলার আগেই ঐপাশ থেকে রাদিফ ভাই ধমক দিয়ে বলে উঠে,,

” এই কই তুই?? তুই কোন সাহসে আমাকে জিজ্ঞেস করা ছাড়া ফুচকা খেতে গেয়েছিস!!?? আমাকে একবারও বলেছিস। আমি কি মানা করতাম। আর তোর হিজাব কই??!! হিজাব ছাড়া বের হয়েছিস কেন??”

এইদিকে ধমক খেয়ে আমি তো হতভম্ব। আমি একটু নরম সুরে বললাম,,
“আমি সবার সাথে এসেছি। একা আসছি নাকি?? আর ঘোমটা তো দিয়েছি। তখনি পাশ থেকে সিনথিয়া আপুর গলা শুনলাম। ”
রাদিফ বললো,,
“আচ্ছা তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে পড়তে বোস।”

বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে পড়তে বসলাম। সামনে আবার এক্সাম। পড়ার সময় আমি আর সাবিহা একসাথে বসি না। একসাথে বসলে দুজনে গল্প করি। তাই মেজো আম্মু আমাদের একসাথে বসতে দেয় নাহ।
কিছুক্ষণ পড়ার পর দেখলাম মোবাইল এ মেসেজ নোটিফিকেশন আসলো।ভাবলাম কোনো নোটিশ দিয়েছে কিনা। কিন্তু ফোন হাতে নিতেই দেখলাম অপরিচিত নাম্বার থেকে কিছু ছবি আর মেসেজ আসছে। মেসেজ গুলা ওপেন করেই আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।

চলবে………

আমার বিষাদীনি পর্ব-০৩

0

#আমার _বিষাদীনি
#উম্মে _হাফসা

#পর্ব: _৩

রাদিফ ভাইয়ের মেসেজ টা দেখে তো আমি পুরাই টাস্কি খাইলাম। এ যেনো এক অন্য রাদিফ ভাই। তাই আমি রিপ্লাই দিলাম,,

“এই আপনি সত্যি রাদিফ ভাই তো??!!”
দেখলাম মেজেস সিন করলো কিন্তু কোনো রিপ্লাই করলো নাহ। উপ!!ভাব। একটু আগে বউজান বলে এখন আবার ভাব। এইসব ভাবতে ভাবতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

এদিকে___
রাদিফ নিজে নিজে হাসতেছে। কি এক পাগলি কে ভালোবাসলাম,, বউজান বলার পর আমাকে বলতেছে আপনি সত্যি রাদিফ ভাই তো। কবে আমার এই অবুঝ বউ টা আমাকে একটু বুঝবে।
তখনি রাদিফের বন্ধু ইমন ওর রুমে প্রবেশ করলো। আর বললো,

“এই রাদিফ, সিনথিয়া যে আজকে তোকে প্রোপোজাল দিলো তুই তো কিছু বললি নাহ। আমি জানি অবশ্যই তুই ওকে একসেপ্ট করবি। আফটার অল ও আমাদের এই ভার্সিটির সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে আর তোর মামাতো বোন।”

তখন রাদিফ বললো,,
“আরে নাহ। কিসের একসেপ্ট!! আমি ম্যারিড। আমার বউ আছে। আর আমি নিজেই সিনথিয়া কে বলবো আমার বিয়ের কথা। আশা করি ও বুঝবে। আর না বুঝলেও আমার কিছু করার নাই। ”

“কিহ!!? তুই ম্যারিড!!” ইমন
“হ্যাঁ ” রাদিফ
_________________
“এই তাহিয়া এই দিকে আয় তো”
“নাহ আমি আসবো নাহ। আসলেই আপনি আমাকে পানিশমেন্ট দিবেন আমি জানি”
“আরে কিছু করবো না,,বলতে বলতে রাদিফ ভাই আমার দিকে এগিয়ে আসতেছে আর আমি পিছাচ্ছি।”
রাদিফ ভাই তার দুই হাত দেওয়ালে দিয়ে আমাকে আটকে রেখেছে। তারপর বললেন,,
“বউজান আমার কথা অবাধ্য করার জন্য তোকে পানিশমেন্ট হিসেবে তোকে আমি এখন একশ টা চুমু খাবো। ভাব নিয়ে বললো,, চাইলে তুই ও খেতে পারিস আমি মাইন্ড করবো নাহ। এই বলে উনি আস্তে আস্তে আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন,,,

নাহহ!! বলে ধড়ফড়িয়ে আমি বিছানা থেকে উঠে বসলাম। ও তারমানে এতক্ষণ আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। ছিহ! কি বিশ্রি স্বপ্ন। তাও আবার রাদিফ ভাই কে নিয়ে।
পরদিন সকাল বেলা ব্রেকফাস্ট করছিলো সবাই। তখন বড় মা বলে উঠলো আজকে নাকি আমাদের ফুফি রা আসবে। আমার বড় ফুফির চার ছেলে মেয়ে। তানিশা আপু,,অনামিকা আর পিচ্চি তানহা আর তমাল ভাইয়া। ছোট ফুফির তিন ছেলে মেয়ে। আনাস ভাইয়া, ইরহাম ভাইয়ার আর ইরা।
আর আজ সবাই আসতেছে কারণ কালকে দাদুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ হবে তাই।

আমি আর বললাম,,” উপ কত দিন সবাই একসাথ হবো। আমি আর সাবিহা দুজনেই ব্রেকফাস্ট করে কলেজের উদ্দেশ্য রোনা দিলাম। রাস্তায় যেতেই দুজন একটা রিকশা পেয়ে গেলাম। আমি সাবিহা কে আজকেও বললাম,,
“সাবিহা, আমার মনে হচ্ছে আজকেও আমাদের কেউ ফলো করছে”।
” কে ফলো করবে!!? পেছনে তো কাউকেই দেখতে পাচ্ছি নাহ।”সাবিহা বললো।
তারপর দুজন কলেজের গেটের সামনে নেমে রিকশাওয়ালা কে যেই ভাড়া দিতে যাবো রিকশাওয়ালা মামা তার আগেই রিকশা টান দিয়ে চলে গেলো!!
এইদিকে আমি আর সাবিহা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
সাবিহা বলল,,

“তুবা, তারমানে আজকেও কেউ আমাদের ভাড়া মিটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কে এমন মহৎ ব্যক্তি সাজতে গেলো যে আমাদের ভাড়া দিয়ে দেয়। আচ্ছা তুবা, বিষয় টা রাদিফ ভাইকে জানালে কেমন হয়??”
ও রাদিফ ভাইকে জানানোর কথা বলার সাথে সাথেই আমি বললাম,

“নাহ। রাদিফ ভাইকে জানানোর দরকার নেই। উনি শুধু শুধু ঝামেলা বাধাবে। তার থেকে বরং আজ যেহেতু ফুফিরা সবাই আসছে আমরা তমাল ভাইয়া দের জানাতে পারি। দেখ রাদিফ ভাই তো সামনাসামনি নাই তাই উনি ব্যাপার টা নিয়ে বেশি ঝামেলা করে ফেলবে আর তমাল ভাইরা তো আছে উনারা ব্যাপারটা বুঝবে।”
“হুম তাও ঠিক” সাবিহা বলল
এই বলে দুজন কলেজে প্রবেশ করলো।আজকে ওদের প্রথম ক্লাস নিচ্ছে সায়ান স্যার।
সায়ান স্যার ক্লাস নিচ্ছে আর এইদিকে মেয়েরা উনার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে রিমি তো একেবারে নজর সরাচ্ছেই নাহ।

দেখতে দেখতে স্যারের ক্লাস শেষ হয়ে গেলো। যাওয়ার আগে স্যার দেখলাম আমাদের ব্যাঞ্চের দিকে এগিয়ে আসতেছে!! এদিকে আমরা তো ভয়ে শেষ। ভাবলাম আমরা একটু আগে রিমির কান্ডে হাসাহাসি করেছি যে এই জন্য বোধহয় স্যার আমাদের দিকে আসতেছে!!। কিন্তু আমাদের ভুল প্রমাণ করে দিকে স্যার আমাকে বলল,,
“তুবা তোমাকে যে বইটা দিয়েছি ঐটা থেকে তুমি টপিক টাহ বুঝছো। না বুঝলে ব্রেক টাইমে আমি ফ্রি আছি বুঝিয়ে দিবো।”
আমি বললাম,,
“নাহ স্যার আমি বইটা পড়ে খুব সুন্দর ভাবে বুঝেছি। কিন্তু স্যার আমি তো আপনার বইটা আনতে ভুলে গিয়েছি। কালকে নিয়ে আসবো”।

” থাক বইটা দিতে হবে নাহ। তুমি তোমার কাছে রেখে দিও”
এই বলে স্যার ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলো। আর এইদিকে রিমি তো আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলবে লুক দিচ্ছে। আমি আজ থেকে রিমি আমার পেছনে উঠে পড়ে লাগবে।

_________________________
“সিনথিয়া তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে” রাদিফ
সিনথিয়া মনে মনে বললো,
“উপ আমাকে মনে হয় রাদিফ একসেপ্ট করবে। কত দিনের স্বপ্ন আমি রাদিফের বউ হবো। ও আমাকে ভালোবাসবে। ফাইনালি আজকে আমাকে ও ভালোবাসার কথা বলবে”।
” দেখ সিনথিয়া তুই এমনিতেই কালকে এক সিনক্রিয়েট সৃষ্টি করছিস। তাই আমি তোকে বেশি কিছু বলতে চাই না। আমি ম্যারিড। আমার ছোট চাচ্চুর মেয়ে তুবা কে তো তুই চিনিস,,ওর সাথেই আমার বিয়ে হয়েছে। আর আমি আমার বউকে ভালোবাসি ” রাদিফ বলল।

সিনথিয়া যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না। নিজের সেই ছোট্ট বেলা থেকে ভালোবাসার মানুষের মুখে এইসব কথা শুনে ও যেন উত্তেজিত হয়ে গেছে। ও রাদিফ কে বললো,,
“তুমি আমার সাথে নিশ্চয়ই মজা করছো তাই না। তুমি আমাকে সারপ্রাইজ দিবে এই জন্য এগুলো বলছো তাই না?? তুবা তো অনেক ছোট। ও কিভাবে তোমার বউ হবে। আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না। তুমি নিশ্চয়ই আমার সাথে,, মজা করছো।”
__________
আমি মাত্র কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে বের হলাম। তখনি দেখলাম ফোন বাজছে। দেখলাম “জমদূত” নাম্বার থেকে ফোন আসছে মানে রাদিফ ভাই ফোন দিয়েছে।
কিন্তু রাদিফ ভাই এইসময় আমাকে কল দিবে কেনো। তাও আবার হোয়াটসঅ্যাপে ভিড়িও কল দিছে। এতকিছু ভাবতে ভাবতে কল কেটে গেছে। যেই আমি রিপ্লাই কল দিতে যাবো দেখলাম আবার উনি দিয়েছে,,

“আসসালামু আলাইকুম”
“ওয়াইলাইকুমুসসালাম। এতক্ষণ ফোন দিচ্ছি। ফোন ধরছিস নাহ যে। আর পেছনের ক্যামেরা কেন দিয়েছিস। আমি কি তোর রুম দেখার জন্য ফোন দিয়েছি?? ”
“মাত্র কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেস হচ্ছিলাম। আর ফুফুরা এসেছে বাসায়।তাই ফোন ধরতে পারি নাই”
“ক্যামেরা তোর দিকে ঘুরা। তোর সাথে সিনথিয়া কথা বলবে। ও নাকি তোকে অনেকদিন দেখে নাই তাই”।

” হেই তুবা,,কেমন আছ?? তুমি নাকি এখন মিসেস রাদিফ হয়ে গেছো”কিছুটা কটাক্ষ করে সিনথিয়া বললো।
“আসসালামু আলাইকুম আপু। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?? তোমাকে সেই কবে দেখছিলাম। রাদিফ ভাই আসার সময় তুমিও এসো”
“হ্যাঁ আসবো। নিশ্চয়ই আসবো। আফটার অল আমার ফুফির বাসা। আচ্ছা বায়”।

ওর থেকে ফোন নিয়ে রাদিফ বললো,,
আচ্ছা তাহু এখন রাখি। তুমি গিয়ে খাবার খেয়ে নাও আর হ্যাঁ অবশ্যই দৌড়াদৌড়ি কম করবা এখন ফুফিরা আসছে মানে তো তুমি আকাশে চাঁদ পাইছো। নিজের খেয়াল রাখবা। আল্লাহ হাফেজ ” বউ”।

চলবে……..

আমার বিষাদীনি পর্ব-০২

0

#আমার বিষাদীনি
#উম্মে হাফসা
#পর্ব: ২

ড্রয়িংরুমে বড় মা রাদিফ ভাই কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। সবার চোখে পানি। কারণ;সবার আদরের ছেলে আজ চলে যাচ্ছা,,রিজবী তো রাদিফ ভাইকে ছাড়ছেই না। আমি এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছি আর মাথায় ঘুরছে রাদিফ ভাইয়ের তখনকার কথাগুলো।।ঐসময় আমি যেন এক অন্য রাদিফ ভাই কে দেখলাম।

যখন কথা গুলো ভাবতেছি রাদিফ ভাই আমার সামনে এসে বললো,,
“মন দিয়ে লেখাপড়া করবি। কোনো ফাঁকিবাজি করবি নাহ। দুজনে যেন কলেজ ছাড়া আর অন্য কোথাও ঘুরাঘুরি না করিস। সামনে কিন্তু ফাইনাল এক্সাম। আর ভাববি না যে,,আমি চলে যাচ্ছি বলে উড়তে পারবি।”
“আমার নজর কিন্তু সবসময় তোমাতেই আবদ্ধ ” আমার বিষাদীনি ” কানের কাছে আস্তে করে বললো।

“আর এইদিকে আমি তো যেন রোবট হয়ে গেলাম,, এটা কোন রাদিফ ভাই এত অচেনা। আর বুঝলাম যাওয়ার সময় ও কি হুমকি ধামকি দিয়ে যেতে হবে”!!

____________________
” কিরে রাদিফ ভাই তোকে তখন কি বললো?! আয়হায় কিতনা রোমান্টিক হ্যায়। কেউ খেয়াল না করলেও আমি কিন্তু করেছি। ইউ নো না জান্স আমার নজর সবসময় তোমার উপর” ভাব নিয়ে সাবিহা বললো

“কি আর বলবে রাদিফ ভাই। হুমকি দেওয়া ছাড়া আর পারে টা কি।? ” আমি বললাম

পরদিন সকাল বেলা সবাই টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছিলো। আমি আর সাবিহাও একেবারে কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আসলাম। বড় মা তখন রাদিফ ভাইয়ের সাথে ভিড়িও কলে কথা বলছে। সবাই কে দেখাচ্ছে। আমার আর সাবিহার দিকে ক্যামেরা ঘুরাতেই রাদিফ ভাই ঐপাশ থেকে বলে উঠলো,,

“তোরা দুজন আজকে থেকে বাড়ির গাড়ি করে কলেজে যাবি আসবি”।

যদিও আমি আর সাবিহা দুজনেই রাদিফ ভাইয়ের কথায় মাথা নেডেছি,, মনে মনে ঠিকই কিন্তু রাদিফ ভাই কয়েকশ খানেক বকাঝকা করেছি। আর মনে মনে ভাবতে ভাবতে আমি সত্যিই রাদিফ ভাই কে ভেংচি কেটে দিয়েছি। খেয়াল করে দেখলাম কেউ দেখেছে কি না।। না কেউ দেখে নি।

রাদিফ যদিও সবার সাথে কথা বলতেছে ওর দৃষ্টি কিন্তু ওর প্রেয়সী তেই সীমাবদ্ধ। কারণ ক্যামেরা এখনো কিন্তু ওর দিকে ঘুরানো। ইশ! আমার বউ টা কে যদি আরেকটু কম সুন্দর লাগতো তাহলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত। এই মেয়েটা আমাকে এখানে শান্তি তে থাকতে একটু ও দেবে না দেখছি।

” আচ্ছা মা আমরা গেলাম।” এই বলে আমি আর সাবিহা দুজনেই উঠে পড়লাম।
দুজনেই বাইরে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। তখনি দেখলাম একটা খালি রিকশা আসছে। দুজনেই উঠে পড়লাম। কিন্তু পথের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ আমাদের ফলো করছে। তাই সাবিহা কে আমি বললাম,,

“এই সাবিহা, মনে হচ্ছে কেউ আমাদের ফলো করছে।সাবিহা পেছনের দিকে তাকিয়ে বললো,,
” আরে কেউ নাই”।
দুজনেই কলেজের গেটের সামনে নামতেই রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিতেই মামা বললেন
“আপনাদের ভাড়া দিতে হইবো নাহ। আপনাদের ভাড়া দিয়া দিছে”। আমি আর সাবিহা তো অবাক আমাদের ভাড়া আবার কে দিবে। দুজনেই চিন্তায় পড়ে গেলাম। এরপর দুজন কলেজের বটতলায় যেতে আমাদের আরো দুই বেস্টফ্রেন্ড তন্ময় আর অনিমা আসলো। তন্ময় এর কাজই হচ্ছে সারাদিন অনিমার পিছে লেগে থাকা। আমরা আসতেই তন্ময় বললো,,
” এই তুবা,, দেখ আজকে অনিমা কে পুরা শাকচুন্নির মতো লাগছে তাই না??।ব্যাস হয়ে গেলো দুজনের ঝগড়া শুরু।

“তোরা থামবি। ক্লাসের লেট হয়ে যাচ্ছে। লেট করে গেলে ঐ টাকলু স্যার আবার দাঁড় করাই রাখবে ” সাবিহা
________
ব্রেক টাইমে চারজন মিলে সিংগাড়া খাচ্ছিলাম তখনি একটা মেয়ে এসে বললো,,
“এখানে তাহিয়া আহমেদ তুবা কে?? ”
আমি বললাম,”আমি তুবা। কেন??
সায়ান স্যার আপনাকে তার রুমে ডেকেছি আপু।
সায়ান স্যার। মানে আমাদের ইংলিশ টিচার। কিন্তু সায়ান স্যার হঠাৎ আমাকে ডাকবে কেন??!

স্যারের রুমে যেতে স্যার বললো,
“ও তুবা আসছো। এই নাও এই বইটা নাও। তুমি ওইদিন আমাকে যে টপিক টার কথা বললা,, যেটা তুমি বুঝো না এই বইটা থেকে তুমি টপিক টা তুমি খুব সুন্দর ভাবে বুঝবা। আর না বুঝলে তো আমি আছি।”

“জি স্যার”।

সায়ান স্যার হলো আমাদের কলেজের সবচেয়ে সুদর্শন স্যার। এক কথায় মেয়েরা ওনার উপর ক্রাশড। তাতে আমি কি আমি তো বিয়েত্তা।
_____________
কলেজ ছুটির পর আমি আর সাবিহা দুজনেই বাড়ির সামনে নামলাম। কিন্তু এইবার ও কলেজে যাওয়ার সময়ের মতো ঘটনা হইছে। রিকশাওয়ালা মামা টাকা নে নাই। কিন্তু কেন?? কে এইরকম করবে??

বাসায় ঢুকতেই মেজো আম্মু বললো,
” যা দুজন ফ্রেস হয়ে আয়। টেবিলে খাবার দিচ্ছি।”
কিন্তু আমরা দুজনেই ঐ আগুন্তকঃ কে নিয়ে চিন্তা করছি।

রাতে_______________

মাত্রই আমি পড়া শেষ করে উঠলাম। কারণ কয়েকদিন পর ইন্টার ফাইনাল এক্সাম। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি সকালে আবার উঠতে হবে। ফোন হাতে নিয়ে এলার্ম দিলাম। এরপর দেখলাম কলেজের গ্রুপে সবাই সায়ান স্যার আর মিথিলা ম্যামের কিছু একসাথে কফি খাওয়ার ছবি আপলোড দিয়েছে। আর সবাই শুধু আমাদের ক্লাসের লিডার মানে রিমিকে মেনশন দিচ্ছে কারণ ও সায়ান স্যার এর উপরে ভীষণ ক্রাশড। এক কথায় ও সায়ান স্যার এর দিওয়ানা।
আর আমি এগুলা দেখে মজা নিচ্ছি। তখনি হোয়াটসঅ্যাপে রাদিফ ভাইয়ের নাম্বার থেকে মেজেস নোটিফিকেশন আসলো,,

“এত রাতে অনলাইন এ কি তোর”??!

আমি বললাম,, নাহ এইতো আমি ঘুমিয়ে যাচ্ছিলাম। কলেজের গ্রুপে কিসের নোটিফিকেশন আসলো সেটা দেখতে গেলাম।

ওপাশ থেকে রাদিফ ভাই লিখলো,
” আমার কথা অমান্য করে আবার রিকশায় গিয়েছিস কলেজে। আর সকাল বেলায় আমাকে ভেংচি কেটেছিস কেন। তুই ভেবেছিলি কেউ দেখে নাই,,তাই না। এগুলার পানিশমেন্ট কেমন হবে সেটা কি আপনি জানেন “বউজান”।

চলবে…..

আমার বিষাদীনি পর্ব-০১

0

#আমার বিষাদীনি
#উম্মে হাফসা
#সূচনা পর্ব

কিছুক্ষণ আগেই রাফিদ ভাইয়ের সাথে আমার কাবিন সম্পন্ন হয়েছে। পরিবারের সকলে মিষ্টিমুখ করতেছে। কিন্তু আমি যেন, প্রাণহীন হয়ে আছি। সবকিছু মাথার উপর দিয়ে গেলো। এই এক ঘন্টার ব্যবধানে আমার জীবনের সাথে যে, রাফিদ ভাই জড়িয়ে যাবে কে জানতো।
__________________
আমি তাহিয়া আহমেদ তুবা। সবাই তুবা বলেই ডাকে। আমি বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে।আর যার সাথে কিছুক্ষণ আগে আমার কাবিন হলো সে হলো ইফতিখার আহমেদ রাফিদ।।
কাজিন মহলের সবচেয়ে ভালোবাসার মুখ। আমরা জয়েন ফ্যামিলি।। আবার বাবারা তিন ভাই আর দুবোন। বড় জেঠুর ছেলে মেয়ে দুজন,, রাফিদ ভাই আর রাহা আপু। মেজো চাচ্চুর ছেলেমেয়ে তিনজন,,সাবা আপু, সাবিহা আর রিজবী।
আর রাফিদ ভাইয়ের সাথে আজকেই কাবিনের কারণ হলো; আজ রাতেই রাফিদ ভাইয়ের অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইট।!

ফ্ল্যাসব্যাক______________

আজকে আমি আর সাবিহা দুজনেই বেশ খুশি মনেই কলেজ থেকে আসলাম,,কারণ আজকে আমাদের জম মানে রাফিদ ভাই চলে যাবে।।এরপর থেকে আমরা দুজন স্বাধীন। কিন্তু বাড়িতে আসার দেখলাম জেঠু, চাচ্চু আমার বাবা আর দাদি ড্রয়িংরুমে কি যেন আলোচনা করছে।!
“কি ব্যাপার সাবিহা, আজকে জেঠু মনিরা সবাই বাসায়?!” আমি বললাম
“জানিনা” সাবিহা
__________
“ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখতেছি আম্মু আর বড় মা আমার বিছানায় বসে আছে”
“কি ব্যাপার?? তোমরা দু’জা আমার রুমে কি করো”?!!
আর আম্মু তুমি হঠাৎ শাড়ি নিয়ে আমার রুমে!!

” আয়, তুবা বড় মা তোকে এই শাড়িটা পড়িয়ে দিই” বড় মা বললো
“কেন?? হঠাৎ শাড়ি পড়াবা কেন!!? বাই দ্যা ওয়ে, তোমরা কি আমাকে বিয়ে টিয়ে দিয়ে ফেলবা নাকি!! আমি হাসি দিয়ে বললাম”

বড় মা আর আম্মু দুজনেই হাসি দিয়ে বললো “হ্যাঁ,, দিয়ে দেবো বিয়ে তোকে”

“কিরে পুচকি, কি খবর?? তুই এখনো রেডি হসনি? আম্মু তোমরা এখনো ওকে রেডি করাও নাই যে,,,ওদিকে আব্বুরা সবাই বসে আছে”

“আরে রাহা আপি!!কেমন আছো তুমি?? তুমি হঠাৎ করে বাসায় আসলা?! তোমার পুচকু টা কই??” রাহা আপিকে জড়িয়ে ধরে আমি বললাম

“আমি ভালো আছি। তুই আগে ঝটপট রেডি হয়ে নে,,,আর কেন এসেছি সেটা সারপ্রাইজ। নিচে গেলেই দেখতে পারবি” রাহা বললো

____________________
নিচে গিয়ে দেখলাম সবাই আছে এখানে। আর অপরিচিত একজনও আছে। ও আল্লাহ পাঞ্জাবি পড়ে রাদিফ ভাই ও দেখলাম বসে আছে। এখন আমি যদি এই অপরিচিত ব্যক্তির সামনে যায়,, তাহলে রাদিফ ভাই সবার সামনে আমাকে ঠাটিয়ে দুই চড় মারবে। আমি রাহা আপিকে বললাম
“আপি, এখন যদি শাড়ি পড়ে আমি ওখানে যাই তোমার ভাই আমাকে সবার সামনে চড় মারবে। আমি যাবো আজকে অনন্ত তোমার ভাইয়ের হাতে আমি চড় খেতে পারবোনা। আজকে আমার আনন্দের দিন”

“আরে কিছু বলবে না, চল।” রাহা

ওখানে যেতেই জেঠু মনি আমাকে বললো ” আয় মা, তুই সাথে বোস এখানে”
রাদিফ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,, নির্বিকার চিত্তে বসে আছেন উনি।

“অপরিচিত লোকটা একটা কাগজ রাদিফ ভাইয়ের দিকে বাড়িয়ে দিলো,,সাইন করার জন্য। তারপর কাগজ টা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। জেঠু মনিকে জিজ্ঞেস করলাম,,এটা কিসের কাগজ জেঠু মনি?!

” তোর আর রাদিফ এর রেজিস্ট্রি পেপার” মেজো চাচ্চু বললো

“সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তখন বাবা আমার আমার মাথার উপর হাত রেখে বললো,,
সাইন করে দে,, মা। এই একটা মানুষের কথা আমি পেলতে পারি না। বাবা কে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি।”

রাদিফ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,যেন উনি চায় আমি সাইন টা করে দি। অবশেষে সাইন টা করে দিলাম।
ব্যাস,,আজ থেকেই রাদিফ ভাইয়ের নামের সাথে আমার নামটা জড়িয়ে গেলো।

“কিরে আজ থেকে তো আমার নাতি কে আমার থেকে নিয়া নিলি” দাদি হাসি দিয়ে আমাকে বললো।
_____________________
আমার রুমে আমি,সাবিহা, রাহা আপু আর সাবা আপু বসে আছি। তখন সাবিহা দুষ্ট হেসে বলে উঠলো

“কিরে জানু,,নিজের জম কে জামাই হিসেবে পেয়ে কেমন ফিল হচ্ছে?! রাদিফ ভাইয়া কিভাবে পারলো আমার থেকে আমার জানু কে কেড়ে নিতে!! না,,এটা আমি মানবো নাহ।।”
ওর কথায় সাবা আপু আর রাহা আপু দুজনেই হাসতেছে।আর আমি আমি এই বেয়াদব টার পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিলাম।

তখন উদয় হলো আরেক অসভ্য ছেলের,, মানে ওয়ান এন্ড অনলি সাবিহার ভাই রিজবীর। এই শয়তান ছেলে টা সারাক্ষণ রাদিফ ভাইয়ের কান ভাঙায়।।আমি আর সাবিহা কখন কোথায় কি করছি সব কিছু এই রিজবী দ্যা অসভ্য রাদিফ ভাইয়ের কাছে পৌঁছায়। এইবার অষ্টম শ্রেনী তে ও। ওর জন্যই সারাক্ষণ রাদিফ ভাইয়ের ঝাড়ি খেতে হয় আমাদের কে। ওকে দেখে আমি বললাম

“কিরে রাদিফ ভাইয়ের চামচা,, এইখানে কি?! মানে শুনতে আসছিস যে আমরা তোর দ্যা গ্রেট রাদিফ ভাইয়ের নামের কিছু বলতেছি কিনা,,তাই না??”

“এই রাদিফ ভাইয়ের চামচা এখান থেকে যা” সাবিহা বললো
“আহ তোরা ছেলেটা কে এভাবে বকছিস কেন?!” রাহা আপু বললো।
“রিজবী আমার আর সাবিহার দিকে কুটিল হাসি দিয়ে বললো,, তোমাদের কে নিচে খেতে ডাকছে। তাই এসেছি। নাহলে আমার বয়েই গেছে এখানে আসতে। ”

আমরা দুজনেই একসাথে ওকে ভেংচি কাটলাম।আমি বললাম
“যা বল গিয়ে আমি খাবো না এখন। আপু যাও তোমরা খেয়ে নাও। আমি এখন খাবো না।

“অবশেষে তুই তোর প্রেয়সী কে পেয়েই গেলি, রাদিফ,,মাহিন বললো। যাক এইবার নিশ্চিন্তে তুই দেশ ছাড় তে পারবি।
” রাদিফ এইবার আমার একটা ব্যবস্থা কর। আমি আর কত সিংগেল থাকুম। আহ!! কষ্ট তোর একটা শালিও নাই যে তার লগে ভাব করুম।”আবিদ বললো

“শালা আবিদ তুই বুঝি সিংগেল!! তাহলে মাইশা কে? সাদিয়া কে? নুসরাত কে? আরো কত জন আছে এরপর ও তুই সিংগেল!!!?”

“আরে ঐগুলা তো আমার ফেক,, কিন্তু রিয়েল তো নাই”
আফসোস এর সুরে আবিদ বললো
তখনি রাদিফের ফোন বেজে উঠলো,,
“হ্যাঁ মা আমি আসতেছি। এই তো আমি মোড়ের চায়ের দোকানে। মাহিনদের সাথে দেখা করে আসতেছি”।

” আচ্ছা তাহলে তোরা থাক। আর কিছুক্ষণ পরে আমি বাসা থেকে বের হই যামু। আর মাহিন তোকে যেভাবে বুঝিয়ে বললাম সেভাবে করিস”। রাদিফ বললো

“আচ্ছা দোস্ত ঠিক আছে। এই বলে তিন বন্ধু একসাথে রাদিফ কে জড়িয়ে ধরলো”।
_______________________
খাবার টেবিলে তুবা কে না দেখে রাদিফ তার ছোট মা মানে তুবার মা কে জিজ্ঞেস করলো,,
” ছোট মা তাহিয়া কোথায়?? খেতে আসলো না যে!?”
তখনি রাদিফের মা তাকে বললো,,
” যা না বাবা টেবিলে বসার আগে তুই মেয়েটা কে একটু ডেকে নিয়ে আয়। মেয়েটা সেই সকালে ব্রেকফাস্ট করেছে আর কিছুই খাই নি “।
” কি আশ্চর্য!! তোমরা জান না যে ও এরকম খালি পেটে থাকলে ওর প্রেশার পল করবে” রাদিফ বললো

এদিকে তুবার রুমে দরজা নক করলো রাদিফ। ভেতর থেকে তুবা বলে উঠলো,,
“রাদিফ ভাই কা চামচা,,রিজবীর বাচ্চা বললাম না আমি পরে খেয়ে নেবো। এখন ভালো লাগতেছে না”

“কেন ভালো লাগতেছে না তোর কাছে!? দুইটা চড় দিলেই এমনিতেই তোর কাছে ভালো লাগবে। সকাল থেকে না খেয়ে আছিস কেন”? রাদিফ বললো
রাদিফের আওয়াজ পেয়ে ধড়ফড় করে তুবা বিছানা থেকে উঠে বসলো। বললো,,
” আমি এখন খাবো না। পরে খেয়ে নেবো ”

“কি বললি আমার দিকে তাকিয়ে বল ” রাদিফ
“হ্যাঁ সবাই তো আমার সাথেই জোর করতে পারে। জোর করে বিয়ে,,জোর করে খাওয়ানো” তুবা একটু জোরে বললো।
এদিকে রাদিফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আসতেই তুবা পিছাতে লাগলো
“তুবার হাত ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রাদিফ বললো; আচ্ছা তাহিয়া বলতো ভালোবাসায় এত বিষাদ কেন। প্রতিটা মুহুর্তে ভালোবাসা মানুষকে পোড়ায়।কেন? ভালোবাসার মানুষ গুলো কেন চোখে ভাষা বুঝতে পারে না?! কেন তারা বুঝে না ভালোবাসার মানুষ টার ভালোবাসা না পেয়ে তারা বিষাদ অনুভব করে। আর তুই আমার এই বিষাদ অনুভবের বিষাদীনি ” আমার বিষাদীনি “।

[ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]