আমার বিষাদীনি পর্ব-০১

0
108

#আমার বিষাদীনি
#উম্মে হাফসা
#সূচনা পর্ব

কিছুক্ষণ আগেই রাফিদ ভাইয়ের সাথে আমার কাবিন সম্পন্ন হয়েছে। পরিবারের সকলে মিষ্টিমুখ করতেছে। কিন্তু আমি যেন, প্রাণহীন হয়ে আছি। সবকিছু মাথার উপর দিয়ে গেলো। এই এক ঘন্টার ব্যবধানে আমার জীবনের সাথে যে, রাফিদ ভাই জড়িয়ে যাবে কে জানতো।
__________________
আমি তাহিয়া আহমেদ তুবা। সবাই তুবা বলেই ডাকে। আমি বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে।আর যার সাথে কিছুক্ষণ আগে আমার কাবিন হলো সে হলো ইফতিখার আহমেদ রাফিদ।।
কাজিন মহলের সবচেয়ে ভালোবাসার মুখ। আমরা জয়েন ফ্যামিলি।। আবার বাবারা তিন ভাই আর দুবোন। বড় জেঠুর ছেলে মেয়ে দুজন,, রাফিদ ভাই আর রাহা আপু। মেজো চাচ্চুর ছেলেমেয়ে তিনজন,,সাবা আপু, সাবিহা আর রিজবী।
আর রাফিদ ভাইয়ের সাথে আজকেই কাবিনের কারণ হলো; আজ রাতেই রাফিদ ভাইয়ের অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইট।!

ফ্ল্যাসব্যাক______________

আজকে আমি আর সাবিহা দুজনেই বেশ খুশি মনেই কলেজ থেকে আসলাম,,কারণ আজকে আমাদের জম মানে রাফিদ ভাই চলে যাবে।।এরপর থেকে আমরা দুজন স্বাধীন। কিন্তু বাড়িতে আসার দেখলাম জেঠু, চাচ্চু আমার বাবা আর দাদি ড্রয়িংরুমে কি যেন আলোচনা করছে।!
“কি ব্যাপার সাবিহা, আজকে জেঠু মনিরা সবাই বাসায়?!” আমি বললাম
“জানিনা” সাবিহা
__________
“ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখতেছি আম্মু আর বড় মা আমার বিছানায় বসে আছে”
“কি ব্যাপার?? তোমরা দু’জা আমার রুমে কি করো”?!!
আর আম্মু তুমি হঠাৎ শাড়ি নিয়ে আমার রুমে!!

” আয়, তুবা বড় মা তোকে এই শাড়িটা পড়িয়ে দিই” বড় মা বললো
“কেন?? হঠাৎ শাড়ি পড়াবা কেন!!? বাই দ্যা ওয়ে, তোমরা কি আমাকে বিয়ে টিয়ে দিয়ে ফেলবা নাকি!! আমি হাসি দিয়ে বললাম”

বড় মা আর আম্মু দুজনেই হাসি দিয়ে বললো “হ্যাঁ,, দিয়ে দেবো বিয়ে তোকে”

“কিরে পুচকি, কি খবর?? তুই এখনো রেডি হসনি? আম্মু তোমরা এখনো ওকে রেডি করাও নাই যে,,,ওদিকে আব্বুরা সবাই বসে আছে”

“আরে রাহা আপি!!কেমন আছো তুমি?? তুমি হঠাৎ করে বাসায় আসলা?! তোমার পুচকু টা কই??” রাহা আপিকে জড়িয়ে ধরে আমি বললাম

“আমি ভালো আছি। তুই আগে ঝটপট রেডি হয়ে নে,,,আর কেন এসেছি সেটা সারপ্রাইজ। নিচে গেলেই দেখতে পারবি” রাহা বললো

____________________
নিচে গিয়ে দেখলাম সবাই আছে এখানে। আর অপরিচিত একজনও আছে। ও আল্লাহ পাঞ্জাবি পড়ে রাদিফ ভাই ও দেখলাম বসে আছে। এখন আমি যদি এই অপরিচিত ব্যক্তির সামনে যায়,, তাহলে রাদিফ ভাই সবার সামনে আমাকে ঠাটিয়ে দুই চড় মারবে। আমি রাহা আপিকে বললাম
“আপি, এখন যদি শাড়ি পড়ে আমি ওখানে যাই তোমার ভাই আমাকে সবার সামনে চড় মারবে। আমি যাবো আজকে অনন্ত তোমার ভাইয়ের হাতে আমি চড় খেতে পারবোনা। আজকে আমার আনন্দের দিন”

“আরে কিছু বলবে না, চল।” রাহা

ওখানে যেতেই জেঠু মনি আমাকে বললো ” আয় মা, তুই সাথে বোস এখানে”
রাদিফ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,, নির্বিকার চিত্তে বসে আছেন উনি।

“অপরিচিত লোকটা একটা কাগজ রাদিফ ভাইয়ের দিকে বাড়িয়ে দিলো,,সাইন করার জন্য। তারপর কাগজ টা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। জেঠু মনিকে জিজ্ঞেস করলাম,,এটা কিসের কাগজ জেঠু মনি?!

” তোর আর রাদিফ এর রেজিস্ট্রি পেপার” মেজো চাচ্চু বললো

“সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তখন বাবা আমার আমার মাথার উপর হাত রেখে বললো,,
সাইন করে দে,, মা। এই একটা মানুষের কথা আমি পেলতে পারি না। বাবা কে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি।”

রাদিফ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,যেন উনি চায় আমি সাইন টা করে দি। অবশেষে সাইন টা করে দিলাম।
ব্যাস,,আজ থেকেই রাদিফ ভাইয়ের নামের সাথে আমার নামটা জড়িয়ে গেলো।

“কিরে আজ থেকে তো আমার নাতি কে আমার থেকে নিয়া নিলি” দাদি হাসি দিয়ে আমাকে বললো।
_____________________
আমার রুমে আমি,সাবিহা, রাহা আপু আর সাবা আপু বসে আছি। তখন সাবিহা দুষ্ট হেসে বলে উঠলো

“কিরে জানু,,নিজের জম কে জামাই হিসেবে পেয়ে কেমন ফিল হচ্ছে?! রাদিফ ভাইয়া কিভাবে পারলো আমার থেকে আমার জানু কে কেড়ে নিতে!! না,,এটা আমি মানবো নাহ।।”
ওর কথায় সাবা আপু আর রাহা আপু দুজনেই হাসতেছে।আর আমি আমি এই বেয়াদব টার পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিলাম।

তখন উদয় হলো আরেক অসভ্য ছেলের,, মানে ওয়ান এন্ড অনলি সাবিহার ভাই রিজবীর। এই শয়তান ছেলে টা সারাক্ষণ রাদিফ ভাইয়ের কান ভাঙায়।।আমি আর সাবিহা কখন কোথায় কি করছি সব কিছু এই রিজবী দ্যা অসভ্য রাদিফ ভাইয়ের কাছে পৌঁছায়। এইবার অষ্টম শ্রেনী তে ও। ওর জন্যই সারাক্ষণ রাদিফ ভাইয়ের ঝাড়ি খেতে হয় আমাদের কে। ওকে দেখে আমি বললাম

“কিরে রাদিফ ভাইয়ের চামচা,, এইখানে কি?! মানে শুনতে আসছিস যে আমরা তোর দ্যা গ্রেট রাদিফ ভাইয়ের নামের কিছু বলতেছি কিনা,,তাই না??”

“এই রাদিফ ভাইয়ের চামচা এখান থেকে যা” সাবিহা বললো
“আহ তোরা ছেলেটা কে এভাবে বকছিস কেন?!” রাহা আপু বললো।
“রিজবী আমার আর সাবিহার দিকে কুটিল হাসি দিয়ে বললো,, তোমাদের কে নিচে খেতে ডাকছে। তাই এসেছি। নাহলে আমার বয়েই গেছে এখানে আসতে। ”

আমরা দুজনেই একসাথে ওকে ভেংচি কাটলাম।আমি বললাম
“যা বল গিয়ে আমি খাবো না এখন। আপু যাও তোমরা খেয়ে নাও। আমি এখন খাবো না।

“অবশেষে তুই তোর প্রেয়সী কে পেয়েই গেলি, রাদিফ,,মাহিন বললো। যাক এইবার নিশ্চিন্তে তুই দেশ ছাড় তে পারবি।
” রাদিফ এইবার আমার একটা ব্যবস্থা কর। আমি আর কত সিংগেল থাকুম। আহ!! কষ্ট তোর একটা শালিও নাই যে তার লগে ভাব করুম।”আবিদ বললো

“শালা আবিদ তুই বুঝি সিংগেল!! তাহলে মাইশা কে? সাদিয়া কে? নুসরাত কে? আরো কত জন আছে এরপর ও তুই সিংগেল!!!?”

“আরে ঐগুলা তো আমার ফেক,, কিন্তু রিয়েল তো নাই”
আফসোস এর সুরে আবিদ বললো
তখনি রাদিফের ফোন বেজে উঠলো,,
“হ্যাঁ মা আমি আসতেছি। এই তো আমি মোড়ের চায়ের দোকানে। মাহিনদের সাথে দেখা করে আসতেছি”।

” আচ্ছা তাহলে তোরা থাক। আর কিছুক্ষণ পরে আমি বাসা থেকে বের হই যামু। আর মাহিন তোকে যেভাবে বুঝিয়ে বললাম সেভাবে করিস”। রাদিফ বললো

“আচ্ছা দোস্ত ঠিক আছে। এই বলে তিন বন্ধু একসাথে রাদিফ কে জড়িয়ে ধরলো”।
_______________________
খাবার টেবিলে তুবা কে না দেখে রাদিফ তার ছোট মা মানে তুবার মা কে জিজ্ঞেস করলো,,
” ছোট মা তাহিয়া কোথায়?? খেতে আসলো না যে!?”
তখনি রাদিফের মা তাকে বললো,,
” যা না বাবা টেবিলে বসার আগে তুই মেয়েটা কে একটু ডেকে নিয়ে আয়। মেয়েটা সেই সকালে ব্রেকফাস্ট করেছে আর কিছুই খাই নি “।
” কি আশ্চর্য!! তোমরা জান না যে ও এরকম খালি পেটে থাকলে ওর প্রেশার পল করবে” রাদিফ বললো

এদিকে তুবার রুমে দরজা নক করলো রাদিফ। ভেতর থেকে তুবা বলে উঠলো,,
“রাদিফ ভাই কা চামচা,,রিজবীর বাচ্চা বললাম না আমি পরে খেয়ে নেবো। এখন ভালো লাগতেছে না”

“কেন ভালো লাগতেছে না তোর কাছে!? দুইটা চড় দিলেই এমনিতেই তোর কাছে ভালো লাগবে। সকাল থেকে না খেয়ে আছিস কেন”? রাদিফ বললো
রাদিফের আওয়াজ পেয়ে ধড়ফড় করে তুবা বিছানা থেকে উঠে বসলো। বললো,,
” আমি এখন খাবো না। পরে খেয়ে নেবো ”

“কি বললি আমার দিকে তাকিয়ে বল ” রাদিফ
“হ্যাঁ সবাই তো আমার সাথেই জোর করতে পারে। জোর করে বিয়ে,,জোর করে খাওয়ানো” তুবা একটু জোরে বললো।
এদিকে রাদিফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আসতেই তুবা পিছাতে লাগলো
“তুবার হাত ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রাদিফ বললো; আচ্ছা তাহিয়া বলতো ভালোবাসায় এত বিষাদ কেন। প্রতিটা মুহুর্তে ভালোবাসা মানুষকে পোড়ায়।কেন? ভালোবাসার মানুষ গুলো কেন চোখে ভাষা বুঝতে পারে না?! কেন তারা বুঝে না ভালোবাসার মানুষ টার ভালোবাসা না পেয়ে তারা বিষাদ অনুভব করে। আর তুই আমার এই বিষাদ অনুভবের বিষাদীনি ” আমার বিষাদীনি “।

[ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে