আমার বিষাদীনি পর্ব-১০

0
63

#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_১০

রাদিফ ভাই কে আমার রুমে দেখে তো ভূত দেখার মতো চমকে গেলাম।বিকাল থেকেই তো পালাচ্ছি উনার থেকে কিন্তু এখন কই যাবো। যেই রুমের দরজা খুলে বের হয়ে যাবো ওমনি উনি আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন। কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন, “আমার থেকে কেন নিজেকে লুকাচ্ছো বউ। দিনশেষে তো সেই আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। তাহলে এত লুকোচুরি কেন?? ” বলে আমার ঘাড়ে মুখ গুজে দিলেন।

আর আমি তো চোখ বন্ধ করে জামা খামচি দিয়ে ধরে আছি। এই প্রথম রাদিফ ভাই আমার এত কাছাকাছি আসছে। হার্টবিট এর ঢিপঢিপ শব্দ মনে হয় রাদিফ ভাই শুনতে পারছেন। ঘাড়ে মুখ গুজা অবস্থায় রাদিফ ভাই বললো,

“আপনাকে অনেক বেশি মিস করেছি বউজান। আপনি ছাড়া আমার প্রতিটা মুহুর্ত বিষাদে কেটেছে। কারণ আপনি যে বিষাদীনি ” আমার বিষাদীনি”।

এদিকে আমি তো পুরা জমে গেছি। যেন আমি অন্য পৃথিবীতে আছি। যেখানে শুধু আমি আর রাদিফ ভাই। রাদিফ ভাই আমার ঘাড় থেকে মাথা তুলে ক্রমশ আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসতেছে। আমি চোখ বন্ধ করে আছি। মনের ভিতর তোলপাড় হচ্ছে। তোলপাড়ের সীমা যেন পেরিয়ে গেল যখন আমার ঠোঁটে উনি ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন।

কতক্ষণ সেই অন্য পৃথিবীতে বিচরণ করেছি জানিনা কিন্তু যখন চোখ খুললাম দেখলাম রাদিফ ভাই আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর আমি তো লজ্জায় উনার দিকে তাকাতে পারছিলাম নাহ। রাদিফ ভাই বাকা হাসি দিয়ে আমাকে বললো,,

“এরপরের বার আমার থেকে লুকিয়ে থাকলে লাভ ডোজ আরেকটু কড়া করে দেবো, এখন এইটুকু দিলাম।”
যা পড়েতে বস। বলে উনি চলে গেলেন।

আমি তো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়েই আছি। কিছুক্ষণ আগেই না আমার সাথে নরম স্বরে কথা বলছিলো এখন আমার থ্রেট দিয়ে গেলো। গিয়ে পড়ার টেবিলে বসলাম জানি মাথায় এখন রাদিফ ভাই ছাড়া অন্য কিছু ডুকবে না তারপরও বসে আছি। আর নিজে নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে আছি।
তখনি আমার কাছে সাবিহা আসলো। সাবিহা এসেই দেখলো তুবা নিজে নিজেই মুচকি হাসি দিচ্ছে। সাবিহা গিয়ে বললো,

“কি জান নিজে নিজে এইরকম ব্লাস হচ্ছো কেনো?? নিশ্চয়ই জামাইয়ের কথা ভাবতেছো। আসবে আসবে আমার ও এইরকম সময় আসবে” বলেই সাবিহা হাসছে।

আর আমি ভাবতেছি সাবিহা যদি আরেকটু আগে আসতো তাহলে রাদিফ ভাই এর এই রুপ দেখে নির্ঘাত অজ্ঞান হই যেতো। আমি বললাম,,

আমার এত বাড়তি সময় নাই যে রাদিফ ভাই এর কথা ভাববো। আচ্ছা কালকে কয়টায় রওনা দিবে সবাই??

সাবিহা বললো,, “জেঠু মনি বললো সকাল সকাল রওনা দেবে।তাহলে তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারবো। আচ্ছা তোর ইংরেজি নোট খাতাটা দে ঐটার জন্য আসছি”।

__________________
রাতে খাবার টেবিলে বসে আমি যেন রাদিফ ভাই এর দিকে তাকাতেই পারছিনা। উনি বসছে আমার সামনাসামনি চেয়ারে। কিন্তু ওনার মুখে কোনো ভাবান্তর নেই। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম উনি নির্বিকার ভাবে খাচ্ছে।জেঠু মনি বললো, ” সকাল সকাল সবাই তৈরি হয়ে থাকবে। তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট করেই আমরা রওনা দেবো। এখন সবাই ব্যাগ গুছিয়ে নাও। আমরা এক গাড়ি তে যাবো। আর ছেলে মেয়েদের কে রাদিফ নিয়ে যাবে”।

আমি কোনোরকম একটু খেয়ে উঠে পড়তে যাচ্ছিলাম। মেজো চাচ্চু বললো, “কিরে তুবা এত অল্প একটু খেয়ে উঠে যাচ্ছিস।প্লেটের বাকি খাবার কে খাবে??”

আমি যেই বলতে যাচ্ছিলাম,,আসলে চাচ্চু মানে কিন্তু রাদিফ ভাই এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাই বললাম,,ইয়ে চাচ্চু আমি তো খাবো। আসলে খেতে খেতে ক্লান্ত লাগছিলো তো,,হেহে।
বলেই অনিচ্ছাসত্ত্বেও আবার খেতে বসলাম।

খাবার খেয়ে রুমে এসে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। সকালে আবার তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। মাত্র চোখ লেগে আসছিলো তখনি ফোন বেজে উঠলো। দেখলাম রাদিফ ভাই। কল কেটে গেছে। পরপরই রাদিফ ভাই এর ম্যাসেজ আসলো,,

“ছাদে আয়। তোর জন্য অপেক্ষা করছি”।

ম্যাসেজ দেখে উঠে পড়লাম। রাদিফ ভাই আবার ছাদে ডেকেছে কেন। চুল গুলো কোনোরকম হাত খোপা করে উড়না পেচিয়ে রুম থেকে বের হলাম। ফোনের ফ্লাস জেলে ছাদে গিয়ে দেখলাম রাদিফ ভাই সিগারেট টানছে। আমি গিয়ে বললাম,,

” রাদিফ ভাই আপনি সিগারেট খান!!?? আগে তো কখনো দেখিনি।”

রাদিফ ভাই এক হাত দিয়ে আমাকে কাছে টেনে নিয়ে বললো, “আমার অনেক কিছুই তো তুই জানিস না। আমার চোখের ভাষা, মনের কথা অনেক কিছুই। কিন্তু ঐ যে আকাশ টা দেখতে পাচ্ছিস, চাঁদ টা দেখছিস ওরা কিন্তু ঠিকই জানে আমি আমার পাশে দাঁড়িনো এই মায়াবতী কে কতটা ভালোবাসি কতটা চাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই মেয়েটা জানেনা,,সে আমার কতটুকু জুড়ে রয়েছে।” বলেই রাদিফ ভাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি রাদিফ ভাই এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলাম,,
“বোধহয় একটু বেশিই ভালোবাসেন মেয়েটা,, তাই না!!??”

রাদিফ ভাই আরেকটু জড়িয়ে ধরে বললো,,
“অসম্ভব ভালোবাসি। মেয়েটা যখন আড়চোখে তাকায় তখন আমার মনে হয় সবচেয়ে রূপবতী মেয়েটাকে আমি দেখেছি। যখন রাগ করে নাক ফুলায় তখন মনে হয় এই রাগের দহনে আমি হাজারবার জ্বলতে রাজি আছি” বলেই উনি আমার হাতের তালুতে চুমু খেলেন।

আমি জিজ্ঞেস করলাম,, “কবে থেকে মেয়েটা কে এত ভালোবাসেন??”

“যবে থেকে মেয়েটা আমাকে অসম্ভব ভয় পেয়ে নিজেকে লুকাতে ব্যস্ত থাকতো তবে থেকে।”

“তাহলে হঠাৎ আপনার পাশের মেয়েটি অনেক কিছু বোঝার আগেই বিয়ে কেন করলেন?? ”

“কারণ আমি চাই নি আমার প্রেয়সীর জীবনে অন্য কেউ আসুক। সে অন্য কাউকে নিয়ে ভাবুক আমি চাই নি।”

“আপনার প্রেয়সী কেবল আপনারই। সে আপনাতেই বিভোর” বলে আমি রাদিফ ভাই এর বুকে মাথা রাখলাম।
উনার বুকে মাথা রেখে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম।
এদিকে রাদিফ তার প্রেয়সীর দিকে অনিমেষ তাকিয়ে আছে। আজ কে রাদিফ থেকে খুশি আর কেউ নেই। তার প্রেয়সী ও যে আস্তে আস্তে তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে এটা বুঝার আর বাকি নেই।

______________________

কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম জানা নেই। আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙলো। আম্মু একাধারে ডেকেই যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে বললাম,,
“উপ আম্মু এত সকাল সকাল ডাকছো কেন?? একটু ঘুমাই না।”

আম্মু বললো, “উঠ তাড়াতাড়ি। ব্রেকফাস্ট করে নে। আজিকে সবাই তোর বড় মায়ের বাবার বাড়ি যাবো। মনে নেই। উঠ তাড়াতাড়ি “।

আমি বললাম, ” যাও আসতেছি আমি।”
“তাড়াতাড়ি আয়” বলে আম্মু চলে গেলো।
আর আমি ভাবতেছি কালকে তো আমি রাদিফ ভাই এর কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছি। কিন্তু এখন বিছানায় কিভাবে?? তারমানে রাদিফ ভাই নিয়ে আসছে।

আমাদের গাড়িতে আমি, রাদিফ ভাই, সাবিহা, সাবা আপু আর রিজবী। রাহা আপু তার শশুর বাড়ির লোকদের সাথে যাবে। প্রায় তিন ঘন্টা পর আমরা রাদিফ ভাইয়ের নানু বাড়িতে পৌঁছালাম। আমরা গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম। রাদিফ ভাই বড় মামি ডাকতে এসেছে নাস্তা করার জন্য।
সব কাজিন রা নাস্তা করতে বসলাম। হঠাৎ একটা ছেলে এসে বললো,,
“আরে তুমি সেই তুবা না যাকে আমি ছোট বেলায় বলতাম তুবাকে আমি বিয়ে করবো। আর সেই তুবা কত বড় হয়ে গেলো”।

আমাকে আবারো বললো,, ” কি আমাকে চিনতে পারোনি??”
আমি মাথা নাড়ালাম যে আমি চিনতে পারিনি।
আরে তুমি তোমার মিরাজ ভাইয়াকে এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে। এরপর আমি বুঝলাম উনি মাহাদ ভাইয়ের ছোট ভাই মিরাজ ভাইয়া। আমি হাসি দিয়ে সালাম দিলাম উনাকে।
উনি বললেন, “আচ্ছা নাস্তা করে নাও। পরে কথা হবে” বলে উনি চলে গেলেন।

রাদিফ ভাই এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছেন।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে