Tuesday, July 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1611



শুধু তুই পর্ব-৩২ এবং শেষ পর্ব

0

#শুধু তুই
#অন্তিম পর্ব
#Tanisha Sultana (Writer)

চোখ খুলে তুলি নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে। চারপাশে সবাইকে দেখতে পাচ্ছে কিন্তু সায়ান নেই। সবাই খুব খুশি

“এদের আবার কি হলো? এরা এতো খুশি কেনো? আমি অসুস্থ বলে কি?

তুলি উঠে বসতে যায় তুলির মা ধরে

” আস্তে বস

“বাবা জীবনেও তো এতো ভালোবাসা দেখাও নাই আজ কি হলো?

” তুই যে আজ আমাদের কি অনন্দ ছিলি তা তোকে বলে বুঝার পারবো না।

তুলি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তুলির শশুর তুলির মাথায় হাত বুলায়। শাশুড়ী মোটা স্বর্নের চুরি পরিয়ে দিচ্ছে। তুলির বাবা আর জিসান পাল্লা ধরে মিষ্টি খাচ্ছে

“কেউ আমারে বলবা কি হচ্ছে?
তুলি বলে

” কি হচ্ছে মানে তুই দেখতে পাচ্ছিস না (তন্নি)

“আমার ফুটপয়জন হলো আর তোমারা এতো খুশি কেনো?

” তুই মা হতে চলেছিস
তুলির শাশুড়ী বলে। তুলি তো ঢিংকাচিকা ডান্স দিতে থাকে। সবাই অবাক তুলির নাচ দেখে। সায়ান ঔষুধ নিয়ে রুমে এসে দেখে তুলি ধেই ধেই করে নাচছে। সায়ান তুলিকে বসায়

“এতো লাফাচ্ছ কেনো?

তুলি টুক করে সায়ানের গালে একটা চুম্মা দেয়। সবাই মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়

” উফ জামাই আপনি যে আমাকে কি উপহার দিছেন তা আমি বলে বুঝাতে পারবো না

“বোঝাতে হবে না। জাস্ট চুপচাপ থাকবা

” আমি আর চুপচাপ ইম্পসিবল

“বেবির জন্য থাকতে হবে

” কেনো?

“তুমি এতো লাফালাফি করলে বেবিও তো লাফালাফি করবে

” সত্যি

“হুম

” তাহলে তো এখন থেকে সব সময় লাফালাফি করবো

“পাগল তুমি

” আপনারই তো বউ

“কপাল আমার

” হুম এতো কিউট বউ পাইছেন

“সাথে বাঁদরও

” বেবি বাইরে আসলে ওকে বলে দিবো

“দিও এখন খেতে হবে

” খেলেি তো বমি আসে

“তবুও খেতে হবে

সায়ান জোর করে তুলিকে খাইয়ে দেয়। খাওয়া শেষে

” কি হচ্ছে

“বমি পাচ্ছে

সায়ান তুলিকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। বমি করিয়ে আবার নিয়ে আসে

এভাবেই দিন যাচ্ছে। সায়ান সারাক্ষণ তুলির সাথে থাকে। প্রচুর কেয়ার করে। সাথে অন্য সবাই তো আছেই।

এখন তুলির নয় মাস চলছে। সায়ান ফোনে কথা বলছে। তুলি আয়নার সামনে খাবার নিয়ে বসে আছে। কথা বলা শেষ করে সায়ান তুলির কাছে এসে বলে

” কও হয়েছে

“দেখুন না কেমন গোলুমলু হয়ে গেছি। আমি আট খাবো না

” এটা কোনো কথা

“এটাই কথা। এখন লোকে আমাকে দেখলে বলবে আমি মটু আর আপনি পাতলু

” ধুর কেউ এমন বলবে না। আমাদের বেবি তোমার পেটে তাই এমন মোটা দেখাচ্ছে বেবি বের হলে আবার আগস্ট মতো দেখাবে। এখন তুমি না খেলে বেবি তো হেলদি হবে না বলো

সায়ান বুঝিয়ে তুলিকে খাইয়ে দেয়।

তুলি সায়ানের কোলে মাথা দিয়ে সুয়ে আছে। সায়ান তুলির মাথায় হাত বুলচ্ছ

“তুলি

” হুম

“ধন্যবাদ এতো কষ্ট করে আমার বেবিটা তোমার মধ্যে গড়ে তোলার জন্য। জানো আমি কখনো ভাবতেই পারি নি তোমাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলবো। তোমাকে ছাড়া আমি দুই মিনিট থাকতে পারি না। ভালোবাসি তোমায় খুব। আমি ভীষণ ভাবে আসক্ত হয়ে পরেছি তুমি নামক নেশায়।

” আমিও খুব ভালোবাসি আপনাকে। আচ্ছা বেবি হওয়ার পরে কি আপনি আবার নিরামিষ হয়ে যাবেন

“নাহহহ আরও বেশি রোমান্টিক হয়ে যাবো

” সত্যি

“হুমম। আমার পাগলি

তুলি সায়ানকে জড়িয়ে ধরে

আজ তুলির ডেলিভারি দিন। তুলিকে নিয়ে যাচ্ছে। সায়ান তুলির হাত ধরে বলে

“একদম ভয় পাবে না। আমি আছি তো। একটু কষ্ট হবে সয্য করে নিও। একটু পরেই আমি তোমার কাছে যাবো কেমন

তুলি মাথা নারায়।

তুলিকে নিয়ে যাওয়ার একঘন্টা পরে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসে। সায়ান এতোখন মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলো। এখন উঠে দাঁড়ায়। সায়ানের বাবা মা কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়।
নার্স বাবুটাকে সায়ানের মায়ের কোলে দেয়। সায়ানকে বলে

” আপনার বউ আপনাকে দেখার জন্য মরিয়া হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি যান

সবাই হো হো করে হেসে ওঠে। সায়ান মাথা চুলকে মুচকি হেসে তুলির কেবিনে যায়। তুলি হাতে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। সায়ান তুলির মাথায় হাত রাখায় তুলি চোখ খুলে

“এতো দেরি করলেন কেনো?

” সরি

“জানেন আপনার বেবি আমাকে অনেক কষ্ট দিছে

” তাই

“হুমম। দেখেন আমার সুন্দর পেটটা কেটে ফেলছে

” আহারে

“পাপ্পি দেন সেরে যাবে

” কোন ডাক্তার বলছে

“ডাক্তার তুলি

সায়ান ফিক করে হেসে ওঠে

” ওই গানটা শোনান না

“কোনটা

” ওইটা

“এখানে

” হুম

এতো রোদ্দুর তুই এনে দিলি তাই, তোর বৃষ্টি আমি একটু পেতে চায়
মেঘলা হয়ে যাক আরও পাঁচটা বারো মাস কোনো বিকেল বেলাতে তুই আমার হয়ে যাস
#শুধু তুই শুধু তুই আর চাইছি না কিছু

সমাপ্ত

শুধু তুই পর্ব-৩০+৩১

0

#শুধু তুই
#পর্বঃ৩০
#Tanisha Sultana (Writer)

“হাসতেছো কেন?

শাশুড়ী হাসি চেপে বলে

” এমনি। সায়ান উঠছে

“হুম গোছল করতেছে?

” কেনো? ভাইয়ার গায়ে ও কি ইঁদুর মরা গন্ধ না কি?
মনা বলে

“না আমি ভিজিয়ে দিছি😁

” ইউ আর গ্রেট ভাবি

“দেখতে হবে না কার বউ😎

” হুম করলা, গোমড়ামুখো, নিরামিষ সায়ানের রোমান্টিক মিষ্টি বউ

“মা তুমি তো ফাটিয়ে দিয়েছো।

” কার শাশুড়ী দেখতে হবে না😎

তুলিও ওদের সাথে সাহায্য করে। রান্না শেষে তুলি সায়ানকে ডাকতে যায়। সায়ান কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনতেছিলো আর গেমস খেলতেছে। তুলি সায়ানকে কয়েকবার ডাকে সারা দেয় নাই। তুলি একটা নকল টিকটিক নিয়ে আসে জুজুর থেকে তারপর সায়ানের মোবাইলের ওপর ছেড়ে দেয়।

সায়ান এক চিৎকার দিয়ে লাফ দিয়ে ওঠে। তুলি হাসতে হাসতে শেষ

“এটা কি হলো😡

” আপনারে গুনে গুনে এিশবার ডাকছি সারা দেন নাি তাই এই পদ্ধতি

“এখানে কি চায়

” আপনারে খেতে ডাকতে আইছি

“আমি খাবো না

” কেনো?

“তুমি তো সবাইরে সব বলে দিছো। লজ্জায় মুখ দেখাবো কি করে

” মুখ ঢেকে চলেন

“তোমাকে তো আমি

” কিহ চুম্মা দিবেন

“থাপ্পড় দিবো দাঁড়াও তুমি

তুলি এক দৌড়ে চলে যায়। খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে হাঁপাতে থাকে।

” কি রে কি হইছে? (জিসান)

“আর কইস না তোর ভাই দৌড়ানি দিছে

” কেন তুই কি করছিলি

“মোবাইলের ওপর টিকটিক ছাড়ছিলাম😁

” দোস্ত তুই তো মানুষ না

“তাহলে আমি কি😡

” এলিয়েন

“আর তুই হিরো আলম

” এতো বড় অপবাদ দিতে পারলি

“হ পারলাম

” কষ্ট দিলি

“কোথায়

” কিহহ

“কোথায় কষ্ট দিছি

” মনে

“ওহহহহ

” হুম

“হুমমম

কাল জিসানের গায়ে হলুদ। বাড়ি সাজানো হচ্ছে। এই বিয়ের মধ্যেই নিরবের কোনো একটা ব্যবস্থা করবে তুলি।

হঠাৎ তুলির গা গুলিয়ে আসে। ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করে দেয়। সায়ান কাজ করছিলো। তুলি খুশিতে নাচতে নাচতে গিয়ে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে

” কি হয়েছে?

“আপনি বাবা হতে যাচ্ছেন। যাই সবাইকে বলে আসি

সায়ান তুলিকে টেনে রুমে নিয়ে আসে।

” এখানে আনলেন কেন?

“খুইলা কও

” আমার শরম করে🙈

“কি হইছে সেটা বলো😡।

” বমি হইছে

“তো

” তো আমি প্রেগন্যান্ট

“একদিনে কিছু হয় না

” আমার থেকে বেশি জানেন

“হুম জানি

” কচু জানেন আপনি।

“তুলি শুনো

” আপনি শুনেন

“ঠিক আছে চলো ডাক্তারের কাছে যায়

” আমার টুনুমুনু। চলো জান উম্মা

“পাগল

” আপনারই বউ

ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে সায়ান তুলি

“আমি প্রেগন্যান্ট তাই না ডাক্তার আংকেল। আমি জানতাম তাও উনি নিয়ে আসলেন। দেখছেন আপনি৷ খালি বেশি বুঝেন।

” তুমি চুপ করবা

“আপনি চুপ করুন। ডাক্তার আপনি বলুন ছেলে না মেয়ে। আমি তো ৯০% শিওর মেয়ে হবে। আমার মা বলে আমি যখন পেটে ছিলাম তখন না কি খালি বমি করতো। তো আমার ও মেয়ে হবে। তবে ছেলে হলেও পবলেম নেই

” মানে (ডাক্তার)

কিহ মানে মানে করছেন। বলেন কি হবে

” আসলে।

“আসলে নকলে পরে হবে আগে বলুন

” ফুড পয়জেন হইছে

“কিহহহহহহ📢📢📢

সায়ান আর ডাক্তার কান চেপে ধরে

” ওই জামাই চলেন

“এখন মানলা তো

” এতো কওয়ার কি আছে

গাড়িতে বসে সায়ান হেসেই যাচ্ছে।

“এতো হাহা করার কি আছে। কাছে আসবো ম
না। যতই ক্লোজ আপ এর এড দেন

” পাগল না কি তোমার কাছে যাবো

“আসবি না তো

” নাহহ

তুলি সায়ানের কলার ধরে কাছে আনে

“দুই মাসের মধ্যে বেবি চায়

” হুমমম

তুলি কলার ছেড়ে গ্লাস দিয়ে বাইরে তাকায়। দেখে নিরব দাঁড়িয়ে আছে

“এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেনো বেডাটা। মতলব কি? দাঁড়াও বেবি তোমাকে তো জিসানের বিয়ের মধ্যে মজা দেখাবো

সন্ধায় তুলি জিসান সায়ান মনা আড্ডা দিতেছে।

” দোস্ত (জিসান)

“কও(তুলি)

“ইউটিউব দেখে সার্জারী শিখছি। তোর ডেলিভারিটা আমিই করবো (জিসান)

” আমিও তো শিখছি। তোর বউয়ের ডেলিভারি আমি করবো (তুলি)

“তোরা থাম (মনা)

” পাগলরা কি কখনো চুপ থাকতে পারে(সায়ান)

“তুই পাগল তোর বউ পাগল (তুলি)

” হাছা কথা কইছোস😁 (জিসান)

“তুইও পাগল (তুলি)
ও জামাই

” বলো (সায়ান)

“মদ খামু (তুলি)

” ভাবি কও কি (মনা)

“ইয়াম্মি খেতে তোমারেও দিমু (তুলি)

” একদম না

“আমি খামু তাই আপনার কি (তুলি)

” তোমার লুঙ্গি ডান্স দেখার ইচ্ছে নেই🤣🤣

মনা জিসান 🤣🤣

“তুলি🙄

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে তুলি। সায়ান পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে

” আমার জামাই এতো রোমান্টিক হলো কবে

“যবে থেকে তোমার পাল্লায় পড়ছি

” তাহ ঠিক।

সায়ান তুলি দোলনায় বসে

“জানো যখন জুঁই হারালাম নিজের ভাগ্যের ওপর খুব রাগ হতো। নিজেকে অনলাকী মনে হতো। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আল্লাহ আমাদের থেকে যা নেয় তার থেকে বেশি দেয়৷ আমি তোমাতেই সন্তুষ্ট। তোমার আঙুল ধরে চলতে চায়। ছোট্ট সংসার সাজাতে চায়। ভালো থাকতে চায়। লাভ ইউ তুলি

” লাভ ইউ টু। আমি আপনার বেবির মা হতে চায়

“তুলি তুমি ছোট আর একটু বড় হও

” আমার অনেক ফ্রেন্ড মা হয়ে গেছে। আমাকে আপনার ছোট মনে হয় কেনো?

“ঠিক আছে দেখছি

” হুম দেখুন। আপনাকে কিছু বলতে চায়

“বলো

” নিরব বেঁচে আছে

“হুমমম

” তাও আপনি চুপচাপ

“আমি নিরবের লাইফ টা শেষ করে দিছি। নতুন কোনো শাস্তি দিতে চায় না

” ওহহহহ

চলবে।

#শুধু তুই
#পর্বঃ৩১
#Tanisha Sultana (Writer)

আজ জিসানের গায়ে হলুদ। ছেলের বাড়ি থেকে তত্ত্ব নিয়ে মেয়ের বাড়িতে যাওয়া হবে। তুলি তিন ঘন্টা যাবত সেজেই যাচ্ছে। আর জুজু তুলির পিছনে ঘুমছে

“ও মা আমাকে সাজিয়ে দাও

” এই তো সোনা লিপস্টিক টা লাগিয়ে তোমাকে সাজিয়ে দেবো।

তুলি লিপস্টিক লাগাতে লাগাতে বলে। সায়ান বসে বসে তামাশা দেখছে।

“জুজু সোনা এসো আমি রেডি করিয়ে দেই

সায়ান জুজুকে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দেয়। তুলি সাজিয়ে দেয়। জুজু চলে যায়।
তুলি আয়না দেখতে দেখতে বলে

” একদম নুসরাত ফারিয়ার মতো লাগছে আমাকপ তাই না

“জঘন্য লাগছে

” সয়তানরা ভালো জিনিস চোখে দেখে না

“এরকম সাজার মানে কি?

” কিরকম সাজছি

“পেট বের করে শাড়ি পড়ছো কেনো?

” আমার পেট অনেক সুন্দর তাই মানুষকে দেখাতে যাচ্ছি

“তুলি মেজাজ গরম করবানা

” আমি কি করলাম

“ভালো করে শাড়ি পড়ো

” আরে এরকম স্টাইলের শাড়ি এভাবেই পড়তে হয়। অন্য ভাবে পড়লে হ্মাত লাগবে। ইউটিউব দেখে পাক্কা এক ঘন্টা লাগিয়ে শাড়িটা পড়েছি।

“সায়ান টান দিয়ে তুলির শাড়িটা খুলে দেয়।

” করছেনডা কি?

“দেখো কি করি

” আমার শাড়ি😭

“চুপ😡

তুলি সায়ানের ধমকে চুপ করে যায়। সায়ান তুলিকে শাড়ি পরিয়ে দেয়।

“পারফেক্ট। দেখো

তুলি আয়নায় তাকিয়ে দেখে মোটামুটি হয়েছে। তুলি চলে যেতে নেয় সায়ান হাত ধরে

” আমার কিউট বউটা কি রাগ করেছে

“সত্যি আমি কিউট

” হুমমম

তুলি খুশি হয়ে সায়ানের গাল টেনে চলে যায়। বিয়ে বাড়ির সবার কাছে ঘুরে ঘুরে বলে সায়ান শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। তুলি জুজু আর সায়ান ছবি তুলছে তখন জুজু বাবা বলে দৌড়ে চলে যায়। সায়ান তুলিও পেছনে যায়। গিয়ে দেখে জুজু নিরবের কোলে। মনাও নিরবের কাছে যায়

নিরব বলে

“মনা আমি বিবাহিত জুজু আমার মেয়ে

” জানি

“তারপরও

“ভালোবাসি তোমায়। তুমি বিবাহিত তোমার মেয়ে আছে এতে আমার কিচ্ছু এসে যায় না। ভালোবাসলে বিয়ে করতে হবে সারাজীবন একসাথে থাকতে হবে এমনটা তো নয়। দুর থেকেও ভালোবাসা যায়। আমি তোমাকে দুর থেকেই ভালোবাসতে চায়। জুঁই আপু বেঁচে থাকলে আমি নিজে তোমাকে জুঁইয়ের কাছে ফিরিয়ে দেবো

” তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো আর আমি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোমার লাইফে এসেছি। তোমার ভাইয়ের থেকে তোমাকে আলাদা করার জন্য ভালোবেসেছি। আমার নিজের ওপর নিজেরি রাগ হচ্ছে

“নিরব ইটস ওকে। ভাইয়ার সাথে দেখা করবে না

” কোন মুখে যাবো। আমি কতো অন্যায় করেছি ওর সাথে

“সরি বলে দিও

” ঠিক আছে

নিরব আর মনা সায়ান তুলির সামনে যায়। নিরব মাথা নিচু করে বলে

“সরি সায়ান। তোকে ভুল বুঝেছি। আসলে প্রিয়ার মৃত্যুটা আমি মেনে নিতে পারি নি। জেদের বসে জুঁইকে বিয়ে করি। বিয়ের দুই মাস পরেই তোদের ওই পার্টিতে ঙান হারায়। জুঁইয়ের বাবা তোর নামে মিথ্যা অপবাদ দেয় যে তুই আমায় মেরে ফেলেছিস৷ আসলে আমি পাগল হয়ে গেছিলাম মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আর জুঁইয়ের বাবা চায় নি তার মেয়ে একটা পাগলের সাথে সংসার করুক। তাই এতো নাটক।

তুই আমার মেয়েটাকে আগলে রেখেছিস। যদি তুলি না বলতো তাহলে তো আমি জানতেই পারতাম না আমার মেয়ে আছে। ভেবেছিলাম জুঁই বেবিটা নষ্ট করে দিয়েছে। থ্যাংক্স এন্ড সরি

সায়ান নিরবকে জড়িয়ে ধরে। কিছু খন ইমোশনাল ড্রামা চলে।

“জুঁইয়ের খবর জানোস? (সায়ান)

” কাল আমার থেকে দশ লাখ টাকা নিয়ে কানাডা চলে গেছে সজীবের সাথে। ও ওর লাইফটা নতুন করে সাজাতে চায়। আমি অনেক রিকোয়েস্ট করেছিলাম কিন্তু থাকবে না আমার সাথে।

“ভালোই হয়েছে। আমি জানি তুই মনাকে ভীষণ ভালোবাসিস। বিয়ে করবি। জুজু তুমি কি মনাকে মামনি বানাবে

” কি মজা মনা আন্টি আমার মা হবে

জুজু তো খুব খুশি। বড়োরা মিলে সিদ্ধান্ত নেই জিসান তন্নির সাথে মনা নিরবেরও বিয়ে হবে।

ভালোভাবেই দুই জোড়া বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।
রাতে তুলি এতো এতো খাবার নিয়ে বসেছে। জিসান তন্নি আর সায়ান হা করে দেখছে তুলিকে

“দোস্ত রাহ্মস হইলি কবে? এতো খাইলে তো দুইদিনে আমাদের হাতে বাটি ধরায় দিবি (জিসান)

” আমি কি খাবার গুলো আমি খাওয়ার জন্য নিছি না কি? (তুলি)

“তাহলে (তন্নি)

তুলি সায়ানকে টান দিয়ে পাশে বসিয়ে বলে

” আমার জামাই খাইবো। দেখনা কেমন শুকায় গেছে। আমার ফিউচার বেবিরা তো কইবো আমি ওদের বাবাকে খেতে দেয় না

সায়ানের হেচকি উঠে যায়

“এএতো খাবার

” জিসান তুলি একটু বাইরে যা তো

“কেনো?

” জামাইয়ের হেঁচকি বন্ধ করতে হবে

“বন্ধ হয়ে গেছে। সায়ান হেঁচকি বন্ধ করে বলে

” গুড এবার খাও

জিসান ভিডিও করছে

“সায়ান মাহবুবরে ট্যাগ কইরা পোষ্ট করমু আমার ব্রো খাচ্ছে (জিসান)

” এই না। এমন করিস না (সায়ান)

“জিসান পোষ্ট করবে না যদি আপনি আমাদের ঘুরতে নিয়ে যান (তুলি)

” তার মানে ব্লাকমেইল করার জন্য এমনটা করছো (সায়ান)

“ইয়াহ। ইয়েস ওর নো

অনিচ্ছা সত্ত্বেও সায়ান ইয়েস বলে।

এরকম দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসায় দিন কাটছে সায়ান তুলির।

আজ সকাল থেকেই তুলির মাথা ঘুরছে বমি হচ্ছে। কিন্তু কাউকে বলছে না কারণ একবার বলছিলো ফুটপয়জন হইছিলো। এখনও হয়ত তাই হইছে।

তুলি ওয়াশরুম থেকে বমি করে বের হয়। বিছানায় যাওয়ার মতো শক্তি নেই। পরে যেতে নেয় সায়ান ধরে

” তুলি কি হয়েছে

“ফুটপয়জন

” কিভাবে বুঝলা

“বমি হচ্ছে

” কখন থেকে

“সকাল থেকে

সায়ান তুলিকে বিছানায় সুয়িয়ে দেয়

” বলো নি কেনো?

“যদি বকা দেন

” পাগল একটা

তুলি আবার উঠে বসে

“আবার কি

” বমি করমু

সায়ান তুলিকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। এভাবে তিন চার হয়

“তুলি চলো ডাক্তারের কাছে যেতে হবে

তুলির কথা বলার শক্তিও নেই।৷ সায়ান তুলিকে কোলে নিয়ে বের হয়।

জিসান ডাইভ করছে। সায়ান তুলিকে ধরে বসে আছে।

চলবে।

শুধু তুই পর্ব-২৮+২৯

0

#শুধু তুই
#পর্বঃ২৮
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ানের হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ। তুলি সায়ানকে ধরে বলে

“আপনার এই অবস্থা কি করে হলো?

কথা বলার শক্তি সায়নের নেই। সায়ান তুলির কাঁধে মাথা রাখে।

” জিসান জিসান
জিসান চিৎকার করে জিসানকে ডাকে। জিসান ছুটে এসে দেখে এই অবস্থা।

“কি করে হলো তুলি

” আমি কিছু জানি না। আমাকে হেল্প কর

জিসান আর তুলি সায়ানকে ধরে রুমে নিয়ে আসে।

“আমি ডাক্তারকে কল করছি

জিসান ডাক্তারকে কল করে। বাড়ির সবাই চলে আসে। সায়ানের মা তো কান্না কাটি শুরু করে দিছে। একটু পরে ডাক্তার আসে। কিছু ঔষুধ লিখে দিয়ে চলে যায়।

তুলি সায়ানের মাথার কাছে বসে আছে। একে একে সবাই চলে যায়। তুলির ফোনে ফোন আসে। তুলি চোখের পানি মুছে ফোনটা রিসিভ করে

” হেলো। কে বলছেন?

“জুঁই

” তুমি

“অনেক ভেবে দেখলাম এভাবে লাইফ কাটানো যায় না তাই ভাবছি সায়ানের লাইফে ব্যাক করবো

” মানে

“মানে কাল থেকে সায়ানের বাড়িতে থাকতে যাবো। আজ একটা পরিহ্মা নিলাম সায়ানের। দেখলাম বেচারা এখনো আমাকে ভালোবাসে

” তুমি এটা করো না আপু

“আমি এটাই করবো। না হলে কি করবো আমি? নিরব তো চলে গেছে। আমি একা একা থাকবো না কি?

” নিরব বেঁচে আছে।

“আমিও জানি

” তাহলে

“নিরব একটা সাইকো আর সায়ানের জন্যই নিরবের এই অবস্থা।

” আপু শুনো আমার কথা

“তুলি তুমি অনেক ভালো ছেলে পাবে। সায়ানকে ছেড়ে দাও

” সায়ান আমার স্বামী। মরে যাবো কিন্তু সায়ানকে ছাড়বো না।

তুলি ফোন কেটে দেয়।

“ছোট বেলায় ভাবতাম ইস যদি আমার জামাই নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে হইতো। এখন তাই হলো। করবো কি আমি? ওই ডাইনিরে তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করবো। আসুক না। আমিও দেখি কি করে আমার জামাইরে কাইরা নেই

তুলি আবার সায়ানের পাশে এসে বসে।

” কি কপাল আমার বিয়ের পর থেকে কন্টিনিউ জামাই নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছি। নেহাত ভালোবেসে ফেলেছি নাহলে থাপড়াইয়া দাঁত ফেলাই দিতাম

তুলি সায়ানের পাশে বসে বকবক করে যাচ্ছে। সায়ানকে ডাক্তার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছে তাই ঘুমচ্ছে।

সকালে তুলি ফ্রেশ হয়ে সায়ানের জন্য খাবার নিয়ে রুমে এসে দেখে সায়ান মাথা ধরে বসে আছে।

“গুড মর্নিং জান

সায়ান তুলির দিকে তাকায়

” জান😱

তুলি সায়ানের পাশে বসে গাল টেনে বলে

“হ তুমি আমার জান। এবার যান তো ফ্রেশ হয়ে আসুন

সায়ান উঠতে নেয় তুলি হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয়

” কি হলো

“আপনার এই অবস্থা কি করে হলো

” জুঁইকে দেখলাম একটা গাড়ি করে চলে যাচ্ছে আমি গাড়ির পেছনে দৌড় দিছিলাম। এক্সিডেন্ট করছি

“ভেরি গুড। ভালোবাসা উতলিয়ে পড়ে তাই না

” তুমি কখনো কাউকে ভালোবেসেছো

“হুম আপনাকে

” তুমি আমাকে ছাড়তে পারবে

“নাহহ

” তুমি জাস্ট কয়েক দিন আমাকে ভালোবাসো তাতেই আমাকে ছাড়তে পারবে না তাহলে আমার ভালোবাসা দশ বছরের তাহলে তুমি বলো আমি কি করে ভুলবো

তুলি মন খারাপ করে উঠে যেতে নেয় সায়ান হাত ধরে

“আমাকে একটু সময় দাও তুলি। সব ঠিক হবে

তুলি সায়ানকে জড়িয়ে ধরে

” তুই আমার শুধু আমার। ওই জুঁই ফুলকে আমি তেল বানিয়ে শাশুড়ীর পায়ে মালিশ করাবো

সায়ানকে ছেড়ে দিয়ে

“বিয়ের পর থেকে আপনাকে নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছি। জিলিপির পেছে আটকে যাচ্ছি। ভালোবাসার জন্য পিছু পিছু ঘুরছি। নেহাৎ আপনি সময় চেয়েছেন নাহলে

” নাহলে

“আপনারে রেপ করতাম

😱😱😱😱
এই মাইয়া কয় কি?

” ঠিকি কইছি
যান খাবো

সায়ান ফ্রেশ হয়ে আসে। সায়ান খাচ্ছে তুলি তাকিয়ে আছে

“তাকিয়ে আছেন কেন?

” খাওয়াই দেন

“অসুস্থ আমি খাওয়াই দিবো তোমারে

” হুমমম

“হা করো

তুলি হা করে সায়ান খাওয়াই দেয়। খাওয়া শেষে তুলি সাজুগুজু করতে বসে

” কোথাও যাইবা

“না তো

” তাহলে সাজছো কেনো?

“অনেক দিন ফেসবুকের প্রোফাইল কভার পিক চেঞ্জ করা হয় না। তাই সাজুগুজু করে পিক তুলে আপলোড দিবো

” দুইদিন আগেও না চেঞ্জ করছো

“আমার তো ঘন্টায় ঘন্টায় চেঞ্জ করতে মন চায়।

” পাগল যে তুমি

“আপনিও তো পাগলের জামাই

” কপাল

“লাকী আপনি আমার মতো একটা কিউট টুনুমুনু বউ পাইছেন

” সাথে গোলুমলুও

“আপনিও

” আমি যথেষ্ট ফিট

“মি টু

” তোমার সাথে তর্কে পারা যাবে না

“আসেন কেন

” সেটাই

“ভালো একটা শার্ট পরেন দেখি

” কেনো

“কভারে কপাল পিক দিমু

” না

“তুই পরবি না তোর ঘাড় পড়বো

তুলি জোর করে সায়ানকে নীল একটা শার্ট পড়ায়। তারপর জিসানরে ডেকে আনে পিক তোলার জন্য। কয়েকটা স্টাইলে পিক তোলার পরে তুলি বলে

” আপনি আমার কপালে চুমু দিবেন জিসান পিক তুলবো

“পারবো না

” তাহলে আমি এখন জিসানের সামনে আপনার

“করছি

” গুড জামাই

পিক তোলার পরে জিসান সুয়ে পড়ে। সায়ান আট তুলিও বসে পড়ে

“পিক তুলতে তুলতে জীবন শেষ (জিসান)

” সেম (সায়ান)

“আমার তো আরও পিক তুলতে মন চাইতেছে (তুলি)

” বোইন প্লিজ মাপ কর

সায়ানের ফোনে ফোন আসে। সায়ান বেরিয়ে যেতে যেতে বলে

“আমি একটু পরেই আসছি। জরুরি কাজ আছে

” আরে শুনুন। যাহ চলে গেলো। নিশ্চয় ডাইনিটাকে আনতে গেছে। আসো তুমি। এবার তুলির আদর দেখবা জুঁই বেবি। জন্মের মতো সায়ানের নাম ভুলিয়ে দেবো। আর তোমাকে ব্যবহার করে নিরবকে জাত করবো। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ২৯
#Tanisha Sultana (Writer)

মেইন দরজার কাছে বসে আছে তুলি। সায়ান জুঁইকে নিয়ে ফিরবে তখন তুলি জুঁইয়ের গায়ে লংকা গুড়ো ঢেলে দেবে তাই। কিন্তু ওদের ফেরার নামই নাই। তুলির এবার ঘুম পাচ্ছে। কোনোরকম চোখটা খোলা রেখেছে।

হঠাৎ কলিং বেল বাজায় তুলি হাত পেছনে রেখে দরজা খুলে দেয়। একি সায়ান একা জুঁই ফুল কই?
তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ান ভেতরে আসতে আসতে বলে

“চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছ কেনো?

” জুঁই ফুল থুক্কু আপু কই

“হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে আসছি?

” কেনো?

“জুঁইয়ের বাবা বললো জুঁই না কি পাগল হয়ে গেছে। আমি ছাড়া কাউকে চিন্তে পারছে না। ওকপ আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে বললো। আর আমি মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে আসলাম

” 🤣🤣🤣🤣
এই না হলো আমার জামাই। বেবি আসো আদর করি

তুলি সায়ানকে জড়িয়ে ধরতে যায় তখন শাশুড়ী কাশি দেয়। তুলি ছেড়ে দুরে দাঁড়ায়

“শাশুড়ী রুমে যাচ্ছি।

তুলি শাশুড়ীকে বাই বলে সায়ানকে টেনে রুমে নিয়ে যায়।

” হইছে কি

“আমাকে কেমন লাগছে

” মানে

“আমি যে শাড়ি পড়ছি সাজুগুজু করছি আপনি তো কইলেন না আমাকে কেমন লাগতেছে।

সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে বলে

” ভালোই

“নাহহহহহহ

” তাহলে

“হিরো রা হিরোইন দের যা বলে তাই বলেন

” কি বলে

“জানেন না

তুলি সায়ানের খুব কাছে গিয়ে বলে

” না মানে

“বলেন

” হহ

“তারপর

” ট

“এবার এক সাথে

” হট

“আমার বেবিটা

তুলি দুরে গিয়ে বসে। সায়ান হাত দিয়ে ঘাম মুছছে

” এখন তো শীত কাল তাও আপনি ঘামছেন

“এরকমভাবে এটাক করলে কে না ঘামবে
সায়ান বিরবির করে বলে

” কিছু বললেন

“ফ্রেশ হবো

” তো আমি কি তোমাকে চেঞ্জ করতে সাহায্য করবো

“না না আমি একাই পারবো

” তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?

সায়ান দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। তুলি তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। জুঁইকে ফোন দেয়

“আমি তোমার জন্য বরণডালা সাজালাম আর তুমি আসলা না। কেনো গো?

” মজা নিচ্ছো

“এভাবে নিজেকে মিরাক্কেলের মঞ্চে দাঁড় করালে কে না মজা নিবে। সময় আছে ভালো হয়ে যাও। নিজেকে হাসির পাত্র বানিয়ো না।

” রাখছি

“আপু আর একটা কথা পৃথিবীর সব থেকে শ্রেষ্ঠ জিনিসটা তোমার আছে তোমার জুজু। সন্তানকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করো। সুখী হবে। আমাকে আর সায়ানকে সারাজীবন পাশে পাবে।

জুঁই ফোন কেটে দেয়। তুলি পেছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান।

” এতো ভালো কেনো তুমি? সবাই কে কি করে এতো সহজে হ্মমা করে দাও বলো তো।

“হ্মমা করা মহৎগুন
আপনি

” খাবো

“আমাকে😁

” খাবার🙄

“নিরামিষ

তুলি ভেংচি কেটে চলে যায়।

” আমার পাগলি

একটু পরে তুলি আসে

“ও গো শুনছো

” বলো

“সবার সাথে বসে খেতে হবে

” চলো

সবাই এক সাথে খাচ্ছে। তুলি সায়ানের সামনে বসেছে।

“বাবা

” বলো তুলি

“আমি আর ও তো হানিমুনে গেলাম না

” পিচ্চিরা হানিমুনে যায় না (জিসান)

“আমারে তোর পিচ্চি মনে হয়? দুদিন পরে আমিই তো পিচ্চির মা হবো

তুলির কথায় সায়ান বেষম খায়। সায়ানের মা পানি এগিয়ে দেয়

” আমি যখনই বাচ্চার কথা বলি আপনি বেষম খান কেনো বলেন তো? ভয় পান না কি?

“কা কে ভয় পাবো? সায়ান মাহবুব কাউকে ভয় পায় না😎

” তাইতো আমি ধরলে বলেন ছেড়ে দাও প্লিজ

সবাই হো হো করে হেসে ওঠে। সায়ান তো রেগে আগুন হয়ে গেছে।

“জিসানের বিয়েটা হোক তারপর তোমরা চারজন হানিমুনে যাবে ওকে (বাবা)

” আমার সোনা বাবা(তুলি)

“হানুমুন থেকে ফিরে খুশির খবর দিবি (মা)

” তোমার ছেলে রাজী থাকলে আমি এখনই খুশির খবর দিয়ে দেবো
সায়ান ঠাস করে তুলির পায়ে লাথি দেয়।

“মা

” কি হলো

“তোমার ছেলে তো লাজুক মুখে বলতে পারছে না তাি ইশারায় বুঝিয়ে দিলো

সবাই এক সাথে কিহহহহহ

” তোমার ছেলে রাজী

সায়ান চলে যায়

“এরে বেশি বেশি করে ফেললাম মনে হয়।

” তোর কপালে দুঃখ আছে (জিসান)

“ও মা (তুলি)

“কি

” আজ আমারে বাঁচাও

“কিচ্ছু হবে না

রাত দশটা। তুলি রুমে উঁকি ঝুঁকি মারছে। লাইট অফ।

” করলাটা কোথায় গেলো?

তুলি পা টিপে ভেতরে ঢুকে আর সায়ান দরজা বন্ধ করে দেয়। তুলি চমকে পেছনে তাকায়

“দদরজা বন্ধ করলেন কেনো?

” আমিষ কাকে বলে এটা দেখাতে

তুলি পিছতে পিছতে বিছানায় পরে যায়। সায়ান তুলির ওরনা ধরে টান দেয়

“ওড়না নেবেন বললেই তো দিয়ে দেই টানাটানি করার কি আছে?

তুলি ওড়না খুলে সায়ানকে দিয়ে দেয়। সায়ান তুলির ওপর ঝুঁকতে যায় তুলি বলে

” আপনি অনেক ভারি। আমি হালুয়া হয়ে যাবো

সায়ানের এবার নিজের চুল নিজের ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। সায়ান বিছানায় সুয়ে তুলিকে টান দিয়ে ওপরে ওঠায়

“এবার ঠিক আছে?

” হুম

“শুরু করি

” এক মিনিট

“আবার কি

” ভিডিও করবো

“কিহহহহহ

” তারপর ফেসবুকে পোষ্ট দিমু। ইস কতো লাইক কমেন্ট শেয়ার হইবো

“থাপড়াইয়া কান ফাটাই দিমু

” কেনো?

“এতো সয়তান কেন তুমি

” আপনার বউ

“সাইনবোর্ড টাঙায় দিয়ো

” আইডিয়াটা খারাপ না

সায়ান এবার ভালোবাসা দিয়ে তুলির বকবক বন্ধ করে দেয় 😝

সকাল বেলা

“এই উঠুন তো

সায়ান ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে

” কি হয়েছে?

“ওড়নাটা খুঁজে পাচ্ছি না। খুঁজে দিন

” পাঁচ মিনিট ঘুমতে দিন

“কেনো ঘুমতে দিবো। আপনার জন্যই তো আমি ওড়না খুঁজে পাচ্ছি না। আপনার দোষ খুঁজে দিন না হলে বাড়ির সবাইকে বলে দিবো। কাল আপনি আমারে

” দিচ্ছি 📢📢📢

“জানটা😘

সায়ান খুঁজে দেখে খাটের নিচে পড়ে আসে।

” ধরো

“লাভ ইউ জান। এবার ঘুমাও

” ঘুমের বারোটা বাজিয়ে এবার ঘুমাও

সায়ান বিরবির করে বলে।

“কিছু বললেন?

” গোছল করে বেরিয়ো

“কেনো?

” গা থেকে মরা ইদুরের গন্ধ আসছে

“😡😡😡

” যাও গোছল করো

তুলি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে যায়। সায়ান আরাম করে সুয়ে পড়ে। তুলি গোছল করে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে দেখে সায়ান আরাম করে ঘুমচ্ছে।

“আহারে কতো আরাম করে ঘুমচ্ছে। দেখাচ্ছি তোমাকে

তুলি সায়ানের গা থেকে কম্বলটা সরিয়ে সায়ানের গায়ে পানি ঢেলে দিয়ে এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়।

” সয়তান মাইয়া

তুলি কিচেনে যায়। মনা আর শাশুড়ী রান্না করছে। কাকিশাশুড়ী বাপের বাড়ি গেছে।

“এতো সকালে গোছল করছোস কেনো?

” আমার গা থেকে না কি ইঁদুর মরা গন্ধ আসছিলো তাই

“কে বলছে

” তোমার ছেলে

মনা আর শাশুড়ী হাসতে হাসতে শেষ

চলবে

শুধু তুই পর্ব-২৬+২৭

0

#শুধু তুই
#পর্বঃ২৬
#Tanisha Sultana (Writer)

বাড়িতে এসে জোরে জোরে কলিংবেল বাজাচ্ছে তুলি। তুলির মা দৌড়ে এসে দরজা খুলে দেয়। তুলি হনহনিয়ে ভেতরে ঢুকে বাড়ির নিজিস পএ ভাঙতে থাকে। তুলির বাবা মা থামানোর চেষ্টা করছে

“মামনি কি হয়েছে বলবে তো

তুলি বাবার কলার ধরে টেনে সোফায় বসায়

” তুমি কেনো আমাকে ওই গোমড়ামুখোটার সাথে বিয়ে দিয়েছো বলো?
তুলি চিৎকার করে বলে। তুলির বাবা মা ভয় পেয়ে যায়

“কি হয়েছে?

” বের করে দিয়েছে আমাকে বাড়ি থেকে। শুনছো তোমরা

তুলি এবার কেঁদে দেয়। একটু পরে চোখ মুছে আবার বলে

“আমি প্রেম করবো। অনেক গুলো। দেখি উনি কি করতে পারে

তুলি রুমে চলে যায়। তুলির বাবা সায়ানের বাবাকে ফোন দেয়

” হেলো

“তুমি আমার পায়ে ধরে আমার মেয়ের সাথে তোমার ছেলের বিয়েতে রাজি করিয়েছিলে। এখন আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার সাহস হয় কি করে?

” কে বের করে দিয়েছে?

“তোমার গুনোধর ছেলে৷ আজ থেকে তোমার সাথে আমাদের সম্পর্ক শেষ।

তুলির বাবা ফোনটা কেটে দেয়।

তুলি রুমে পায়চারি করছে

” বফ না থেকেও আমি এতোগুলো কথা শুনলাম। এখন আমি বফ বানাবো। করবো আমি প্রেম। দেখি হনুমানটা কি করতে পারে।

তুলি ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট করে ইমারজেন্সি বফ লাগবো😁

সায়ান নিউজফিল্ডে ঘোরা ঘুরি করছিলো তখন তুলির পোষ্টটা চোখে পরে। পাঁচ মিনিট আগে পোষ্ট করছে তিনশত লাইক চারশো কমেন্ট হয়ে গেছে।

“এই মেয়েটাকে তাড়িয়ে দিয়ে ভুল করেছি। এটা যে একটা পাগল তা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। বফ লাগবো না। দেখাচ্ছি আমি

সায়ান শার্ট নিয়ে বেরিয়ে যায়। বাইরে বেরিয়ে দেখে বাবা দাঁড়িয়ে আছে।

” কোথায় যাচ্ছ?

“কাজ আছে

” তুলিকে বের করে দিয়েছো কোন সাহসে

অনেকটা রেগে বলে

“বাবা আসলে

” এতোটা বেহায়া তুমি। মেয়েটা তোমাকে ভালোবেসে আপন করে নিতে চায় আর তুমি সব সময় কষ্ট দাও কেনো?
ওহহ জুঁইকে ভালোবাসো। ঠিক আছে চলে যাও

সায়ান কিছু না বলে চলে যায়। তুলিদের বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছে। ঘড়িতে দুটো বাজে। এতো রাতে সবাইকে জাগাতে ভালো লাগছেনা সায়ানের। তাই গাড়িটা তুলিদের বাড়ির পেছনে নিয়ে যায় আর গাড়ির ভেতরে সুয়ে পড়ে।

পাঁচটা তেতাল্লিশে তুলির ঘুম ভেঙে যায়। হালকা শীত পড়েছে। তুলি গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে বেড়িয়ে পড়ে। বাড়ির পাশে একটা নদী আছে। যাকে সবাই ইচ্ছে নদী বলে। তুলি নদীর পারে যায় হাঁটতে হাঁটতে। নিস্তব্ধ পরিবেশ। দুইএকটা পাখির কিচিরমিচির ডাক শোনা যাচ্ছে। তুলির খুব ভালো লাগছে।

নদীতে পা ভিজিয়ে দুই হাত মেলে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। পরিবেশটা উপভোগ করছে।

কতোখন তুলি ওভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো জানা নেই

“ওই

তুলি চোখ খুলে পেছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান। তুলি আবার চোখ বন্ধ করে। সায়ান এসে তুলির সামনে দাঁড়ায়।

” এখানে কেনো?

“এটা আপনার নদী না। চাইলেও তাড়িয়ে দিতে পারবেন না

” তোমার পবলেম কি? ফেসবুকে কি পোষ্ট করছো?

তুলি একটা পাথরের ওপর বসে

“কোনো পোষ্ট করি নি তো

” মিথ্যা বলছো কেনো? আমি দেখেছি

দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান। তুলি হালকা হাসে

“দেখছেন তো আবার জিজ্ঞেস করছেন কেনো?

” কেনো করেছো সেটা জানতে চাইছি

“লাগবে তাই

” চলো আমার সাথে

“যাবো না

” মতামত জানতে চায় নি

“জানি

“অসয্য লাগে তোমাকে আমার

” তাহলে কেনো এসেছেন?

“বলতে বাধ্য নই

” তা থাকবেন কেনো আমি তো আর জুঁই না।

“তুলি

” আমি ভেবে নিয়েছি আপনাকে মুক্তি দেবো

“আমার মুক্তি চায় না

” আমার চায়

“নতুন পাইছো। এখন তো মুক্তি চাইবাই

” রাইট

“আমি এটা হতে দেবো না। তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে

” যাবো না

সায়ান তুলিকে কোলে তুলে নেয়। গাড়িতে বসিয়ে দরজা লক করে দেয়। সায়ান ডাইভ করছে

“কেনো জোর করে নিয়ে যাচ্ছেন?

” কাজের বুয়া আসবে না কইদিন। সব কাজ তুমি করবা। কাজ করানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছি।

“আমি কাজ পারি না

” শোখাবো তোমারে

“ইডিয়েট

” আমার কাছ থেকে শিখছো

“হুরর।

“ছেলেটা কে বলো?

” বলবো না

“বলতে বলছি

” বফ🥱

সায়ান ঠাস করে গাড়ি ব্রেক করে

“মারবেন না কি?

” নাম আমার গাড়ি থেকে

“কিহহহ

” নামতে বলছি

তুলি সিটবেল খুলে সায়ানের কোলে গিয়ে বসে। কলার ধরে বলে

“তোর যখন যা করতে ইচ্ছে হইবো তুই তাই করবি। আমার ইচ্ছার কোনো দাম নাই তাই না। তুই তো আমারে ভালোবাসোস না তাহলে আমার বফ থাকলে তোর পবলেম কি?

” সরো

তুলি সায়ানের গলা জড়িয়ে বলে

“সরবো না কি করবি তুই।

তুলি সায়ানের ঠোঁটে চুমু খায়। তারপর সরে যায়।

” চলুন

সায়ান ডাইভ শুরু করে। তুলি বাড়ি আসতেই সবাই তুলিকে ঘিরে ধরে। ডলি দুরে দুরে থাকে।

“মনা আমি তোমার সাথে ঘুমবো

সায়ান পানি মুখে দিছিলো তুলির কথায় পানি পড়ে যায়।

” তুই মনার সাথে ঘুমালে আমারে গোলুমলু নাতনি এনে দিবি কেমনে?

“দত্তক এনে দিবো।
তুলি আর মনা জিসানের রুমে চলে যায়। জিসান তন্নির সাথে কথা বলছিলো। ওদের দেখে ফোন কেটে দেয়।

“তোরা এখানে এসময়ে

মনা জিসানের পা টিপে দেয় আর তুলি চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে

” আমার ওপর সালমান খান ভর করছে না কি এতো বালুপাসা

“ভাইয়া তোকে না দারুণ লাগছে এই হেয়ার স্টাইলে

” মনা তুই গাঁজা খাইছোস না কি?

“কেনো?

” আমি তো তিন মাস হলো চুলই কাটি না

“ওহহহ

” দোস্ত তুই খুব ভালো। নিরিহদের সাহায্য করোস (তুলি)

“আমি ভালো কিন্তু নিরীহদের সাহায্য করি না

” দোস্ত দুই হাজার টাকা দে

জিসান লাভ দিয়ে উঠে বসে

“এই জন্য এতো পাম

” প্লিজ ভাইয়া

“দে না দোস্ত

জিসান পড়েছে মহা মুশকিলে। কাল সায়ানের থেকে তিন হাজার টাকা নিয়েছে তন্নিকে কিছু গিফট দেবে বলে। এখন ওদের দিয়ে দিলে তন্নিকে কি দেবে

জিসান এসব ভাবছে সেই ফাঁকে ওরা টাকা চুরি করে ভো দৌড় দেয়।

” আমার টাকা পয়সা সব গেলো😭😭😭

দরজার বাইরে গিয়ে বলে

“দেখি এবার গিভট কি করে দেস হিহিহি

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ২৭
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ান টিভি দেখছে আর নুডলস খাচ্ছে। তুলি ঠাস করে রুমে ঢুকে।সায়ানের দিকে এক পলক তাকিয়ে জামাকাপড় গোছাতে শুরু করে। সায়ান এসে তুলির হাত ধরে

“এগুলো গোছাচ্ছ কেনো?

তুলি টান দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয়। আবার গোছাতে শুরু করে। সায়ান লাগেজটা টেনে নিয়ে যায়

” বলো

তুলি সায়ানের মাথায় বালিশ দিয়ে বাড়ি দিয়ে আবার লাগেজ নিয়ে আসে

“হয়ছে টা কি বলবা। সারাক্ষণ তো বকবক করতেই থাকো আজ কি হলো? ওহহহ বুঝছি দাঁতে পোকা হইছে

তুলি বালিশ ছুড়ে মারে। সায়ান কেচ ধরে

” ভালোই ক্রিকেট খেলতে পারবো মনে হয়।

তুলি এবার বসে পড়ে। সায়ান তুলির পাশে বসে

“সরি তুলি। আসলে তোমার পিক দেখলাম একটা ছেলের সাথে। মাথা গরম হয়ে গেছিলো।

সায়ান তুলিকে পিক গুলো দেখায়।

” এই পিক গুলো কে তুলছে? নিরব তো আমার সাথেই ছিলো তাহলে? অন্যকেউ পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ছে। কিন্তু কে? তার মতলব আমাকে আর সায়ানকে আলাদা করা। এটা করে তার কি লাভ

“এই তুলি

সায়ানের ডাকে তুলি ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে

” আপনি কে বলুন তো?

“স্মৃতি শক্তি হারায় গেলো না কি?

তুলি সায়ানের চুল টেনে দেয়

” মারো কেন?

“আপনি আমারে দু দু বার বাসা থেকে বের করে দিছেন। তার শোধ তো আমি তুলবোই।

” হুম তুইলো

“আপনার লাইফটা জিলিপীর মতো।এতো পেছিগুছি মানুষ আমি জীবনে দেখিনি

” হুমমম

তুলি সায়ানের কপার ধরে সায়ানকে কাছে এনে বলে

“মেয়েদের জীবন একটা বিয়েও একটা। আমার বিয়ে আপনার সাথে হয়ে গেছে সো

” সো

তুলি কলার ছেড়ে লাগেজ হাতে নেয়

“চলে যাচ্ছ

” আমি চলে গেলে তো আপনি বেঁচে যান তাই না

“তাই না

” আজ থেকে মনার রুমে থাকবো জিলিপির রুমে থাকবো না

“আর কতো নাম দিবা

” যত ইচ্ছা

তুলি চলে যায়। মনা ফোনটা কথা বলছিলো তুলিকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়

“তুমি এখানে

” আজ থেকে তোমার সাথে ঘুমবো

“কিন্তু কেনো?

” তোর ভাই আমারে মারছে। ওর সাথে থাকবো না

তুলি বিছানায় বসে পড়ে। মনাকেও বসায়

“তোমার বফ আছে?

” হুমমম

“নাম কি?

” নিরব। জানো অনেক সুন্দর দেখতে। হাসলে তো পুরোই কিউটের ডিব্বা লাগে

তুলি তো শক

“নিরব মনার সাথে প্রেম করে। ও মাই গড। এই ছেলে তো পাগল করে দেবে

” এই কি ভাবছো

তুলি জোরপূর্বক হেসে বলে

“কিছু না। তুমি থাকো আমি আসছি

তুলি রান্না ঘরে শাশুড়ীর কাছে যায়। শাশুড়ী তুলির হাতে এক বাটি পায়েস ধরিয়ে দেয়

” ধর সায়ানকে দিয়ে আয়

“আমি

” তো কে যা

তুলি পায়েস নিয়ে সায়ানের রুমে যায়। সায়ান নেই ওয়াশরুমে গেছে। তুলি পায়েস রেখে বসে পড়ে। সায়ান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তুলিকে দেখে

“তুমি না আর এই রুমে আসবা না

” কখন বললাম

“তখন

” রুমটা কি আপনার একার না কি

“একারই তো

” আমারও সমান ভাগ আছে

“কইছে

” হুম কইছেই। এটা আমারও রুম। আপনার সব জিনিসেই আমার অধিকার আছে

“অধিকার দেখাচ্ছ

” হুম দেখাচ্ছি। আর আমি ভেবেনিয়েছি আপনার সাথে আর রাগ অভিমান কিছু করবো না

“কারণ

” অভিমান আমরা তার সাথেই করি যাকে আমরা ভালোবাসি। আর আপনাকে তো আমি ভালোই বাসি না

“তাহলে এতো অপমান সয্য করে পরে আছো কেনো?

” আপনার কি মনে হয় আমি আপনার জন্য এখানে আছি

“হুমমম

” একদম না। আমি তো

“তুমি তো

” আমি তো আমার

“???

” ফিউচার বেবিদের জন্য এখানে আছি

“ওহহহ আচ্ছা

” একটা কথা বলুন তো আমি এখন আপনার সামনে আছি তাই আপনি আমাকে বকেন ইডিয়েট স্টুপিট বলেন বাড়ি থেকে বের করে দেন। যখন আমি থাকবো না তখন কি করবেন? আমাকে তো মিছ করবেন তাই না

সায়ান থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি যখন থাকবো না কথাটা কানে বাজছে

“এই যে হেলো কোমায় চলে গেলেন না কি?

আচমকা সায়ান তুলিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তুলি তো অবাক

“আমি যখন থাকবো না এই কথাটা আর কখনো বলবা না

” সামথিং সামথিং

সায়ান তুলিকে ছেড়ে দেয়

“নাথিং

বলে চলে যায়। তুলি মুচকি হেসে চলে যায়

জিসান তুলি মনা আর জুজুর মধ্যে তুমুল ঝগড়া হচ্ছে। বিষয় ঘুরতে যাবে

” নিয়ে যাবি কি না বল (তুলি)

“তোরা আমার দুই হাজার টাকা চুরি করছোস তোদের নিমু না (জিসান)

” তোর কাছ থেকে বইলা নিছি টাকা। এটাকে চুরি বলে না (মনা)

“আমার বইটারে আমি গিফট দিতে পারি না (জিসান)

” ওলে আমার টুনুমুনু লে আসো আদর করে দেই (তুলি)

“তুই তোর নিরামিষরে আদর কর আমার আদর লাগবে না (জিসান)

” কেনো রে তন্নি বুঝি আদর করে দেয় (তুলি)

“হুম কাল কিছ করছে

” কিহহহহহহহহহহ📢

জিসান তুলির মুখ চেপে ধরে। সায়ান দৌড়ে আসে

“কি হয়েছে? জিসান ছাড় ওকে

জিসান তুলির মুখ ছেড়ে দেয়

“আপনার ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু শেখেন
বিয়ের আগেই কিছ হয়ে গেছে বিয়ের পর যে কি হবে সেটাই ভাবছি

” সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না

“আমি ওর একমাএ ভাবি আমি না ভাবলে কে ভাববে

” বোইন তোর ভাবতে হবে না। তুই প্লিজ যা

তুলি মুখ ফুলিয়ে চলে যায়

রাতে তুলি একটা মুভি দেখছে আর ঝালমুড়ি খাচ্ছে। সায়ান এসে তুলির পাশে বসে। তুলি মুড়ি এগিয়ে দেয়

“নাহহ আমি খাবো না

” কেনো

“যদি ঝাল গালে

” আই লাভ ইউ মুভি দেখেন নাই

“দেখছি তো

” পায়েল কিছ করে দেবের ঝাল কমিয়ে দেয়। তো আমিও কমিয়ে দেবো

“তুমি কি নিজেকে পায়েল ভাবছো না কি

” কিছু টা

“কোথায় পায়েল কোথায় তুমি

” এক আকাশের নিচেই তো থাকি তাি না

“তা ঠিক

” খান

সায়ান একমুঠ খায়।

“কিহহ ঝাল লাগছে

” নাহহ

“গুড

আমি একটু বেরুচ্ছি

” কোথায় যাবেন?

“একটু কাজ আছে

” ওকে

সায়ান চলে যায়। তুলি মন দিয়ে মুভি দেখতে থাকে।

রাত দুইটার দিকে কলিং বেল বাজে। তুলি দরজা খুলে দেয়। সামনের মানুষকে দেখে তুলি চোখে পানি চলে আসে।

চলবে

শুধু তুই পর্ব-২৪+২৫

0

#শুধু তুই
#পর্বঃ২৪
#Tanisha Sultana (Writer)

তুলি সারা বাড়ি খুঁজেও সায়ানকে পায় না

“কোথায় গেলো? কেমন মানুষ রে বাবা? করলাম কি? এতো রাগলো কেনো? রাগ ভাঙাবো কেমনে? গড হেল্প মি

” তুলি

সায়ানের মা রান্না করছিলো তুলিকে ডাকে

“জ্বী আন্টি

” কি আন্টি আন্টি করছিস মা বলবি। কিছু দিন পরে আমার নাতির মা হবি

তুলি লজ্জায় লাল নীল হতে থাকে

“এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেনো?

তুলি শাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরে বলে

” তোমার নাতি নাতনির ইচ্ছে মনে হয় কখনো পূরন হবে না

“কেনো?

“যে নিরামিষ ছেলে তোমার

” আমিষ করে নে

“কি করে?

” এরকম শাড়ি সালোয়ার পড়লে আমিষ হবে না

তুলি শাশুড়ীকে নিয়ে বসে

“তাহলে

” হট কিছু পড়

“মানে ছোট ছোট ড্রেস

” হুমমম। ছোট ছোট ড্রেস পড়ে ইমপ্রেস কর

“ওহহো তুমিও কি শশুড় মশায়কে এভাবে ইমপ্রেস করেছিলে

তুলি শাশুড়ীকে চোখ মেরে বলে। শাশুড়ী কান ধরে বলে

” ওরে দুষ্টুরে

রাত দশটা। সায়ান রুমে ঢুকে দেখে রুমটা অন্ধকার

“রুম অন্ধকার করে পাগলটা গেলো কই?

সায়ান লাইট অন করে অবাক😱😱

” একি দেখছি আমি

সায়ান চোখ ডলে আবার তাকায়। তুলি দুইহাত একটা ড্রেস পরে দাঁড়িয়ে আছে।

“হাই বেবি

তুলি সায়ানের দিকে এগিয়ে আসছে।

” তততুমি ঠিক আছো?
সায়ান পিছুতে পিছুতে বলে।তুলি দরজাটা বন্ধ করে দেয়।

“দরজা বন্ধ করছো কেনো?

” যাতে কেউ ডিস্টার্ব না করে

“মানে?

” আজ কোনো মানে টানে চলবে না। শুধু ভালোবাসা চলবে

তুলি সায়ানকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দেয়। সায়ান উঠে বসে

“কেমন লাগছে আমায়

” জঘন্য

“কিহহহ

রেগে বলে তুলি

” রেগে লাভ নেই যা সত্যি তাই বলছি।

তুলি সায়ানের কলার টেনে বলে

“আমার সাথে কেনো এমন করেন? জুঁইকে ভুলতে পারছেন না। এখনো মন খালি জুঁই জুঁই করে

সায়ান তুলিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চিৎকার করে বলে

” হ্যাঁ আমি জুঁইকে ভুলতে পারছি না। আর চায়ও না। আমি জুঁইকে ভালোবাসতাম ভালোবাসি আর ফিউচারেও বাসবো। জুঁইয়ের জায়গা আমি কখনো তোমাকে দিতে পারবো না। আর তুমিও কখনো নিজেকে জুঁইয়ের সাথে তুলনা করবা না। জুঁই আমার জন্য যা করেছে তুমি তা কখনো করতে পারবা না।

সায়ান হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তুলি কাঁদছে। তুলির ফোনে ফোন আসে। তুলি চোখের পানি মুছে বলে

“হেলো কে?

” পরের গল্পটা শুনবে না

কন্ঠ শুনেই তুলি চিনে ফেলে এটা নিরবের কন্ঠ।

“বলুন

” তোর স্বামী একজন খুনি। খুনির বউ তুই

“সাট আপ

লোকটা হো হো করে হাসে

” গায়ে লাগছে

তুলি উওর দেয় না

“একদিন আমি সায়ান জুঁই প্রিয়া ঘুরতে গেছিলাম। সায়ান রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো একটা ট্রাক আসছিলো। একটু হলেই ট্রাকটা সায়ানকে পিসে দিচ্ছিলো সেই সময় প্রিয়া সায়ানকে ধাক্কা দেয় আর প্রিয়া

নিরব থেমে যায়৷ তুলির চোখে পানি

” তারপর

“আমি জুঁইকে কেঁড়ে নিয়েছি। এখন তোকেও। সায়ানকে আমি ভালো থাকতে দেবো না

নিরব ফোন কেটে দেয়। সব মিলিয়ে তুলি প্রচুর কান্না পাচ্ছে।

” আচ্ছা সেদিন যদি প্রিয়া মারা না যেতো তাহলে তো আমি সায়ানকে পেতাম না। ওদের জীবনটা নষ্ট হতো না। জুজু বাবা মা হাড়া হতো না।

“নতুন মা কাঁদছো কেনো?

জুজু তুলির পাশে দাঁড়িয়ে বলে৷ তুলি চোখের পানি মুছে বলে

” কাঁদছি না তো। তুমি কাঁদছো কেনো?

“মামনির কথা মনে পরছে

জুজু শব্দ করে কেঁদে ওঠে। তুলি জুজুকে জড়িয়ে ধরে

” আমিই তোমার মা

তুলি আর জুজু কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে। নিরব ফেক আইডি খুলে সায়ানকে তুলি আর নিরবের সব ছবি পাঠায়। নিরবের মুখ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু তুলির মুখ দেখা যাচ্ছে। হাত ধরা অনেক রকমের পিক।

পিক দেখে সায়ানের মাথা গরম হয়ে গেছে। রাগ কমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।

রাত দুটোই তুলির ঘুম ভাঙে। চেয়ে দেখে সায়ান এখনো আসে নি। তুলি ওয়াশরুমে যায়। ড্রেস চেঞ্জ করে। বাইরে এসে দেখে সায়ান রুমে ঢুকছে। চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে

“আপনি এতো দেরি করলেন কেনো?

সায়ান কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢুকে। তুলি খাবার নিয়ে আসে সায়ানের জন্য।

” আপনার খাবার

সায়ান জুজুর পাশে সুয়ে পড়ে।

“খাবেন না

সায়ান চোখ বন্ধ করে। তুলি খাবারটা ঢেকে রেখে জুজুর আরেক পাশে সুয়ে পড়ে।

” এমন করছে কেনো আমার সাথে? কি করছি আমি?

সকালে ঘুম থেকে উঠে তুলি দেখে সায়ান অফিসের জন্য রেডি হয়েছে।

“বাড়ি থেকে এক পা নড়লে পা ভেঙে দেবো

কথাটা বলেই সায়ান চলে যায়।

” অদেশ দিলো না কি থ্রেট দিলো কিছুি তো বুঝলাম না।

তুলি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। জিসান তুলিকে টেনে জিসানের রুমে নিয়ে যায়

“এখানে আনলি কেন?

” ড্রেস চুজ করে দে

“কেনো?

” প্রথম শশুড় বাড়ি যাবো একটা বোপার আছে না

“আচ্ছা

” যদিও আমি জানি সব ড্রেসেই আমাকে দারুণ লাগে😎

“হনুমানের মতো লাগে তোরে

” তোর চোখই খারাপ

“হুরর

কিছুখন ঝগড়া করে তুলি সায়ানের ড্রেস চুজ করে দেয়।

তুলি আর ভার্সিটিতে যায়। বাসায় বসে বোর হচ্ছে। জিসানের শশুরবাড়িও যায় নি।

বিকেলে তুলি ঘুমচ্ছিলো। সায়ান অফিস ব্যাগটা নামিয়ে তুলির পাশে বসে তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তুলি এক চোখ খুলে সায়ানকে দেখে

“ভালুপাসা

” কিহহহ

তুলি লাভ দিয়ে বসে

“আলগা পিরিত ওরভে বালুপাসা দেখাচ্ছেন

” পিরিত বালুপাসা এসব কিহহ

“আপনার লিপ আর আমার লিপ। দুটো মিলে কি হয় বলেন তো

সায়ান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে

” কিহহহ

“লিপ কিছ। কখনো টেস্ট করেছেন?

” কিহহ

“লিপস্টিক

” নাহহহ

“করবেন

” ফালতু

সায়ান ড্রেস নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে যায়।

“নিরামিষ একটা।

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ২৫
#Tanisha Sultana (Writer)

“বলছিলাম ভার্সিটিতে যাবো

সায়ান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় তুলির দিকে

” এভাবে তাকায় কেন?

“যাবে না কোথাও

” আমি যাবো

“বললাম তো যাবে না

” আপনি কি আমার কথা শুনেন যে আমি শুনবো

“তুমি বাধ্য

” কইলেই হইলো

“হুম

“তুলি একবার যা বলে তাই করে।

” ওহহহ রিয়েলি

“ইয়াহ। আমি যাবো

” ছেলেদের হাত ধরে ঘুরতে

তুলি যেনো আকাশ থেকে পড়লো

“আমি ছেলেদের হাত ধরে ঘুরি

” কেনো মিথ্যা বললাম

“আমি আবার কার হাত ধরে ঘুরলাম? আমার তো কেনো ফ্রেন্ডই নেই

” নিশ্চয় বয়ফ্রেন্ডের কথা ভাবছেন?

“বয়ফেন্ড যেনো কা রে কয়

” ড্রামা কুইন

“আপনার

” বলেন বয়ফ্রেন্ডের

“আর যদিও বয়ফ্রেন্ড থাকে আর আমি যদি তার হাত ধরেও থাকি তাতে আপনার কি? আপনি তো নিরামিষ। আমাকে ছুঁতেই ভয় পান। মনে হয় আমি কারেন্টের মিটার ছুলেই শট খান।

” কিছুটা সেরকম

“হুররর। ভাবতেছি

” কি

“প্রপোজ করমু

” কারে

“আপনারে

” 😊😊

“না মানে যদি আপনি রাজি হন

” আগে প্রপোজ করো তারপর ভাববো

“তা হবে না

” কেনো?

“আমি দশ টাকা দিয়ে একটা গোলাপ কিনে আপনারে প্রপোজ করমু। আর আপনি যদি না করে দেন তো আমার দশটা টাকা তো লস হলো

” আল্লাহ। এসব ভাবো কি করে

“মাথা দিয়ে

” তুমি যদি সুন্দর করে প্রপোজ করতে পারো তো আমি এক্সেপ্ট করবো

“তুলি খুশি হয়ে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে

” ছাড়ো অফিসে যাবো

“হুম

তুলি ছেড়ে দেয়

” পাগলি
সায়ান চলে যায়। তুলিও রেডি হতে যায়

” আমার নিরবের সাথে দেখা করতেই হবে। লোকটা মনে হয় পাগল। জানতে হবে সব

তুলি রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চলে যায়। সায়ানের প্রচুর রাগ হয়।

“আমার কাছে এখন সবটা ক্লিয়ার। নিরবের প্রেম ছিলো প্রিয়ার সাথে। এক্সিডেন্ট এ প্রিয়া মরে যাওয়ায় নিরন সায়ানকে ভুল বুঝে। সায়ানের দুর্বল জায়গায় আঘাত করে। আর সায়ানের দুর্বল জায়গায় ছিলো জুঁই। ভীষণ ভালোবাসে। এখন কথা হলো জুঁই কই? আর জুজুদের বাড়িতে এলবামে যে লোকটার ছবি দেকছিলাম সে কে? আর নিরব এখান দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথৎ কেউ চিনতে পারছে না। কি করে? গাপলাটা কি?

” হেই মিছ

নিরবের ডাকে তুলির হুশ ফেরে। তুলি এতোখন ভার্সিটির পাশে বসে ছিলো।

“আপনি?

নিরব তুলির পাশে বসে। মুখে সেই ভুবন ভোলানো হাসি।

” এতো সুন্দর কেনো ছেলেটা? আর এতো সুন্দর ছেলের মনটা এতো জঘন্য।

“হেলো

” হুম বলুন

“আমাকে ভয় পাও

” নাহহহ। কিছু প্রশ্ন ছিলো

“বলো

” জুঁই কোথায়?

নিরব অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় তুলির দিকে

“জানি না

” আপনি কি জানেন আপনার ফুটফুটে একটা পরি আছে। ভীষণ মিষ্টি দেখতে। কেমন সুন্দর করে ডাকে। ছোট ছোট পায়ে ঘুরে বেড়ায়।

নিরব তুলির কথা মন দিয়ে শুনে

“আমার পরি নেই। আমার পরি তো মরে গেছে। তুমি মিথ্যা বলছো

” আমি সত্যি বলছি

“মিথ্যে মিথ্যে

চিৎকার করে বলে নিরব। তুলি কেঁপে ওঠে। তুলি নিরবের হাত ধরে।

” শান্ত হন। আমি মিথ্যা বলেছি। আমার পরি আছে। দেখবেন

নিরব শান্ত হয়

“নতুন মা

জুজু দৌড়ে তুলির কাছে আসে। তুলি কোলে নেয়

” সোনা তোমার পাপা কথা বলো

পাপা শব্দ শুনে নিরব চমকে ওঠে। জুজু নিরবের কোলে ওঠে। ছোট ছোট হাতে নিরবের সারা মুখ ছুঁয়ে দেয়। কপালে গালে চুমুকে ভরিয়ে দেয়। নিরব রোবটের মতো তাকিয়ে আছে। কিছু বলতে পারছে না। খুব টান অনুভব করছে

“ও পাপা তুমি কোথায় ছিলে? জানো কতো মিছ করেছি তোমাকে? তুমি চলে গেলে মামনিও চলে গেলো। আমাকে একা করে দিতে ভালো লাগে তোমাদের?

জুজু কান্না করছে। নিরব জুজুর চোখের পানি মুছে দেয়।

” কাঁদে না

তুলি বাবা মেয়ের ভালো মুহুর্ত দেখছে।

সায়ান অফিসে বসে আছে। আবার সেই অচেনা আইডি থেকে কিছু পিক আসে। সায়ান সেগুলো সিন করতেই মাথায় রক্ত চড়ে যায়। তুলি নিরবের ছবি। হাত ধরা বসে থাকা জুজুর সাথে সব ছবি।

সায়ান ফোনটা ভেঙে ফেলে। অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। জোরে ডাইভ করে তুলির ভার্সিটিতে চলে যায়। দেখে নিরব তুলি আর জুজু ফুসকা খাচ্ছে আর হাসা হাসি করছে। সায়ান চলে যায়

সন্ধায় তুলি জুজুকে রুমে দিয়ে নিজে রুমে চলে আসে। সায়ান সুয়ে ছিলো

“এই অবেলায় সুয়ে আছেন কেনো?

তুলি সায়ানের গায়ে হাত দিতে যায়। সায়ান তুলিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়

” তোর ওই নোংরা হাত দিয়ে আমাকে ছুবি না

তুলি ফ্লোরে পড়ে যায়। হাতে প্রচুর ব্যথা পায়

“কয়ডা লাগে তোর? ভার্সিটির নাম করে ছেলেদের সাথে নিক নিক করতে যাস। আর ঘরে তোর জায়গা নেই। বেরিয়ে যা

” আমার কথা শুনুন

“আর একটা কথা বলবি না

তুলি উঠে আবার সায়ানকে ধরতে যায়। সায়ান ধাক্কা দেয়। দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথা ফেটে যায়।

” তুই বেরোবি না তাই তো

সায়ান হাত ধরে টেনে তুলিকে দরজার বাইরে ফেলে দরজা বন্ধ করে দেয়। তুলি কাঁদছে আর সায়ানকে ডাকছে কিন্তু সায়ান দরজা খুলছে না।

সায়ান দারোয়ানকে ফোন দিয়ে তুলিকে বাড়ি পৌঁছে দিতে বলে।

“আপামনি চলেন

তুলি চোখ মুছে দাঁড়িয়ে বলে

” কোথায়?

“সায়ান বাবা আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে বলেছে

” লাগবে না আমার

তুলি একা একা এলোমেলো ভাবে দৌড়াতে থাকে।

দারোয়ান সায়ানকে বলে। সায়ান দরজায় একটা ঘুসি মারে

“ওই মেয়েটা এতো ইডিয়েট। যাক যেখানে খুশি। আমি ভাববো না

তুলি একটা বাসে ওঠে। একদম পেছনের ছিটে বসে।

চলবে

শুধু তুই পর্ব-২২+২৩

0

#শুধু তুই
#পর্বঃ২২
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ানের কেবিনে সায়ান যে চেয়ারটাতে সায়ান বসে তুলি সেখানে বসে।

“ম্যাম স্যার খুব রেগে যাবেন

” কেনো?

“এই চেয়ার কেউ টাচ করলেই স্যার বকাবকি করে আর আপনি তো বসেছেন

” আমি কে😎

“কে আপনি

” সায়ানের বউ

“হুম জানি। তবুও

” যাও আমার জন্য কফি নিয়ে আসেন

“কিন্তু

” যেতে বলছি

মায়া হতাশ হয়ে চলে যায়। তুলি এবার টেবিলের ওপর পা রেখে বসে। কিছুখন বসে তুলির বিরক্ত লাগে।

“সায়ান ঠিকি বলে। আমি সত্যিই স্টুপিট। পাঁচটা মিনিটও চুপ চাপ বসতে পারি না।

তুলি ঘুরে ঘুরে সবটা দেখছে। আলমারির পেছনে একটা ময়লা একটা চিঠির খাম দেখে। তুলি সেটা তুলে ময়লা পরিষ্কার করে খুলে দেখে তাতে সায়ান আর জুঁইয়ের হাসি মাখা অনেক ছবি।আর একটা চিঠি। তাতে লেখা

” তোর এই হাসি মাখা মুখটা আমার একদম সয্য হয় না। বিরক্ত লাগে। তোর চোখের পানির মাঝেই আছে আমার ভলো থাকার মেডিসিন। জুঁইকে খুব তারাতাড়ি আমি আমার করে নেবো। রেডি থাক। আর হ্যাঁ এর পরও যদি কোনো মেয়ে তোর হাসি মুখের কারণ হয় আমি তাকেও তোর থেকে দুরে করে দেবো। আই প্রমিজ

এটা তো রিতিনত থ্রেট। সায়ানকে কেউ দিয়েছিলো চিঠিটা। সায়ান নিশ্চয় এটা পড়ে এখানে ফেলে দিছে। আমি শিওর চিঠিটা নিরব দিছে। আর আমি এটাও শিওর নিরব বেঁচে আছে। নিরব কি এখন আমাকে টার্গেট করবে? আর জুঁই আপু উনি কোথায় গায়ের হয়ে গেলো

এসব আকাশ পাতাল চিন্তা ভাবনা করছে তুলি। জিসান যে কখন থেকে তুলিকে ডাকছে সেদিকে তুলির খেয়াল নেই। জিসান এবার তুলির মাথায় গাট্টা মারে

“কি হয়েছে?

” কখন থেকে ডাকছি তোকে

“কেনো ডাকছিস

” দোস্ত

তুলি চোখ ছোট ছোট করে জিসানের দিকে তাকায়।

“হেল্প মি

” কেসটা কি

“আগে বস

তুলি চিঠিটা আগের জায়গায় ফেলে বসে. জিসান তুলির পায়ের কাছে বসে

” একটা ভুল হয়ে গেছে

“কি রকম

” তন্নি প্রেগন্যান্ট

তুলি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

“কিহহহহহহহহহহ

জিসান তুলি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ান। জিসান সোফার পেছনে চলে যায়।

” এতো নোংরা তুই ছি। আমার ভাই তুই এটা ভাবতেই লজ্জা লাগছে

“এতো ছি ছি করার কি আছে? ভালোবাসে তন্নিকে। বিয়ে করবে

” এটাকে ভালোবাসা বলে?

“হুম এটাকেই ভালোবাসা বলে। কতো ফাস্ট জিসান দেখছেন। বিয়ের আগেই বউ প্রেগন্যান্ট। আর আপনি বিয়ের তিন বছর হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত একটা কিছও করেন নাই। আবার বড় বড় কথা বলছেন।

” আমিও তো তন্নিকে কিছ কি হাতটাও ধরি নি

জিসান সোফার পেছন থেকে বলে। সায়ান তুলি দুজনই অবাক হয়ে জিসানের দিকে তাকায়

“মানে

জিসান এবার সোফার পেছন থেকে বেরিয়ে আসে

” মানে না আমিও বুঝতেছি না। সকাল থেকে তন্নির মাথা ঘুরছে বমি হচ্ছে। আমি কিছু করি নি

সায়ান তুলি দুজনই ফিক করে হেসে ওঠে। জিসান হাবলার মতো তাকিয়ে আছে

“আমার মান সম্মান নিয়ে টানাটানি আর তোমরা হাসছো

” পাগল ওর গ্যাসে পবলেম হইছে তাই এমন হইতেছে।

তুলির কথায় জিসান বুকে থু থু নেয়

“আল্লাহ বাঁচছি।

” এতো গাধা কেনো তুই

“এক ভাই গাধা আর একটা নিরামিষ

জিসান কাশি দেয়। সায়ান রাগী দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকায়।
সায়ানের জরুরি মিটিং থাকায় তুলিকে একা বাড়ি ফিরে যেতে বলেছে। তুলি জুজুকে নিয়ে বাড়ি ফিরবে। তাই জুজুর স্কুলের যায়। স্কুল ছুটে হতে এখনো দশ মিনিট বাকি আছে। তাই তুলি স্কুলের চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে

” এক্সকিউজ মি

কোনো একটা ছেলের কন্ঠ শুনে তুলি পেছনে তাকায়। দেকে একজন সু দর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তার হাসি।

তুলি এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বলে

“আমাকে বলছেন?

ছেলেটা মুখে হাসির রেখা টেনে বলে

” জ্বী আপনাকে বলছি

“বলুন

” নাম কি আপনার?

“সরি

” আরে নাম জিজ্ঞেস করলে নাম বলতে হয়। কিন্তু আপনি সরি বলছেন তো আমি কি ধরে নেবো আপনার নাম সরি

তুলি বোকার মতো তাকিয়ে আছে

“সরি কি আপনার ডাক নাম

“যদি ভাবেন আপনি আমাকে পটাবেন তো আমি বলবো আপনি রং নাম্বারে ডায়াল করেছেন

ছেলেটা এবার হো হো করে হেসে ওঠে। হাসলে ছেলেটাকে মারাক্তক সুন্দর লাগে

” এই ছেলে কি পাগল না কি? এতো সুন্দর ছেলে পাগল?
তুলি মনে মনে ভাবছে

“আপনি যে দাঁত ব্রাশ করেছেন সেটা আমি জানি। দাঁত কেলিয়ে দেখাতে হবে না

” হুম ক্লোজ আপ দিয়ে ব্রাশ করছি কিন্তু আফসোস আপনি এখনো দুরেই দাঁড়িয়ে আছেন। কাছে আসলেন না

“কোন দেশের পাগল আপনি

ছেলেটা হাসি দ্বিগুন বেড়ে যায়। এই মুহূর্তে ভয়ংকর সুন্দর ছেলেকে তুলির বিরক্ত লাগছে। তাও আবার প্রচন্ড বিরক্ত

তুলি যেতে নেয় ছেলেটা তুলির সামনে দাঁড়ায়

” হোয়াট

“জাস্ট নামটা জানতে চায়

” আমি বিবাহিত একটা মেয়ে আছে

“নাম, এসব না

” বললাম তো বলবো না

“কেনো?

” কেনো বলবো?

“জিজ্ঞেস করছি তাই

” বলবো না বলবো না বলবো না

তুলি পাশ কাটিয়ে চলে যায়। কি বিরক্তিকর লোকরে বাবা।

মনে মনে ছেলেটাকে হাজারটা গালি দিচ্ছে আর হাঁটছে তুলি।

রাতে তুলি বেলকনিতে বসে আছে। হাজারটা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সায়ান তুলির পাশে এসে বসে

“কি ভাবছো?

” কতো কিছু

“যেমন

” আমার বেবি চায়

সায়ান বেষম খায়। তুলি টুস করে সায়ানের গালে একটা পাপ্পি দেয় আর আপনা আপনি সায়ানের কাশি থেমে যায়

“বাহহ আমার পাপ্পির কি জাদু

” ভয়ংকর ইডিয়েট তুমি

“আর

” কিছু না

তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়েই আছে

“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?

” ভয় পাচ্ছেন

“ননা তো

” তাহলে সমস্যা কি তাকিয়েই থাকি

না মানে

“না মানে কি

” তুমি খেয়েছো?

“খাই নি খাবো

” চলো খায়। আমিও খাবো

“কি

” কি মানে কি

“ধুর একটু রোমান্টিক মুডে ছিলাম নষ্ট করে দিলো

তুলি বিরক্তি নিয়ে বলে। সায়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না। তুলি সায়ানের কাঁধে মাথা রাখে।

“আমি আপনাকে ভালো বাসতে চায়। আপনার সাথে থাকতে চায়। আপনার হাসি মুখের কারণ হতে চায়। আপনার বেবির মা হতে চায়

সায়ান তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর তুলির কথা গুলো শুনছে।

” আপনি কি আমার হবেন

সায়ান কিছু বলছে না। তুলির সায়ানের কাঁধ থেকে মাথা তুলে সায়ানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়

“বললাম তো আমার একটু সময় চায়। একটু সময় দাও।

তুলি কিছু না বলে রুমে চলে যায়

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ২৩
#Tanisha Sultana (Writer)

কিছুদিন পরেই এক্সাম। তাই তুলি আজ ভার্সিটিতে যাচ্ছে। সায়ান তুলিকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিবে। সায়ান ডাইভ করছে তুলি পাশে বসে আছে

“শুনুন না

” বলুন

“আমাকে কেমন লাগছে

” সব সময় যেমন লাগে তেমন

“নিরামিষ

” আই নো। নতুন কিছু বলো

“ভাল্লাগে না

” আমাকে

“হুররর

” পাগলি
সায়ান মুচকি হেসে বলে।

“আমার সামনে হাসবেন না

” কেনো?

“খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে

” কিসব যে বলো

“তুমি তো ফিটার খাও বুঝবা না

” বোঝার দরকার নেই।

ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামায় সায়ান

“নামেন

তুলি সায়ানের গালে একটা কিছ করে বেরিয়ে যায়।

” সাবধানে যাইয়েন। পৌঁছে আমাকে কল করবেন। না করলে খবর আছে

তুলি চলে যায়। সায়ান মুচকি হেসে বলে

“আমি তো চায় তুলির সাথে স্বাভাবিক হতে। কিন্তু পারছি না। কেনো পারছি না? যদি জুঁইয়ের মতো তুলিকেও হারিয়ে ফেলি। না না এটা আমি হতে দেবো না

ভার্সিটিতে তুলির কোনো ফ্রেন্ড নেই। তুলি একা একা ক্লাসে বসে আছে।

“হেই

তুলি সামনে তাকিয়ে দেখে ওই দিনের সেই ক্লোজ আপ ছেলেটা।

” এ এখানে কেনো?

ছেলেটা তুলির সামনে এসে দাঁড়ায়। একগাল হেসে বলে

“এখন যে স্যারের ক্লাস সে আসে নি তো ক্লাস হবে না।

” জানতে চায় নি

“কিন্তু আমার জানাতে ইচ্ছে হলো।

ছেলেটা তুলির সামনে বসে।

” ফ্রেন্ডশিপ করবা

“নাা

” কেনো?

“আলরেডি এক ফ্রিজ ফ্রেন্ড আছে।

ছেলেটা হো হো করে হাসে

” ডিজগাস্টিং

তুলি বিরক্ত হয়ে উঠে ক্লাসের বাইরে যায়। ছেলেটাও তুলির পিছনে যায়

“আপনি আমার পিছু নিয়েছেন কেনো

“কিছু শেয়ার করতে চায়

” কিহহহ

“আমার দুঃখ কমাতে চায়

তুলি কিছু না বলে ঘাসের উপর বসে। ছেলেটা তুলির থেকে একটু দুরে বসে

“জানেন সময় হলো পৃথিবীর সব থেকে বড় বেইমান। একটা সময় আমি হাসতে পারতাম না আর এখন কাঁদতে পারি না।

তুলি মন দিয়ে শুনছে।

” আমিও একদিন এই ভার্সিটিতে পড়তাম। আমার কলিজার ফ্রেন্ড ছিলো তিনটা। সব সময় আমরা চার জন এক সাথে থাকতাম। মজার বেপার কি জানো আমরা চারজন মিলেমিশে দুজন হয়ে গেছিলাম

তুলি ভ্রু কুচকে বলে

“মানে

” মানে আমি ভালোবাসতাম প্রিয়াকে আর সায়ান জুঁইকে।

সায়ান নামটা শুনে তুলি চমকে ওঠে। ছেলেটা একটু হাসে

“আমি প্রিয়াকে এতোটা ভালোবাসতাম। ভীষণ ভালোবাসতাম। কিন্তু সায়ান প্রিয়াকে মেরে ফেলেছে

” মানে

তুলি জোরে বলে। ছেলেটা হো হো করে হাসে। তুলি ঘাবড়ে যায়

“হাসছেন কেনো?

” এতো হাইপার হচ্ছো কেনো? চলো তোমায় দেখাবো আমার প্রিয়াকে।

ছেলেটা তুলির হাত ধরে টেনে হিচরে নিয়ে যাচ্ছে।

“আমি যাবো না ছাড়েন আমার

ছেলেটা তুলির কোনো কথা শুনছে না। তুলিকে টানতে টানতে ভার্সিটি থেকে অনেকটা দুরে একটা কবরের সামনে নিয়ে আসে। কবরটা সুন্দর করে সাজানো। নিরন প্রিয়া লেখা।

” দেখো আমার প্রিয়াকে।

কবরের পাশে বড় একটা ছবি টাঙানো। সেই ছবিটা যেটা তুলি বিয়ের দিন সায়ানের রুমে দেখেছিলো। তুলি ছবিটা ছুঁতে যায়। ছেলেটা বাধা দেয়

“এটা ধরবে না

” কেনো?

“আমার প্রিয়াকে আমি ছাড়া আর কেউ ছুঁবে না

” আপনি নিরব। জুঁইয়ের হাজবেন্ড।

“আমি নিরব শুধু নিরব। প্রিয়ার নিরব আর কিছু না

নিরব চেচিয়ে বলে। তুলি ভয়ে কুঁকড়ে যায়।
নিরব শব্দ করে হাসছে। তুলির খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে আপনার ফুটফুটে একটা পরি আছে কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছে না।

তুলি দৌড় দেয়। এক দৌড়ে ক্লাসে চলে আসে।

রাতে তুলি জুজুকে খাইয়ে রুমে এসে দেখে সায়ান সেই ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে পানি চিকচিক করছে।

” কি হয়েছে?

সায়ান চোখের পানি মুছে নেয়। তারপর একটু হেসে বলে

“কিছু না

তুলি বেডে বসে বলে

” কি বেপার বলেন তো? আগে গোমড়ামুখো হয়ে থাকতেন আর এখন কথায় কথায় হাসেন।

সায়ান তুলির পাশে বসে বলে

“ইদানীং আমার ব্যবহারে আমিই অবাক। জানি না কি হয়েছে?

তুলি সায়ানকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে

“প্রেমে টেমে পড়লেন না কি?

“জানি না

” জানেন ডা কি

“সেটাও জানি না

“এই কিছ ইউ

” হপ

“ধমক দেন কেন

” বলো কি

তুলি সায়ানের কলার ধরে সায়ানকে কাছে নিয়ে আসে

“তুলি প্লিজ

তুলির কিছু শোনার মুডে নেই। যেই তুলি সায়ানকে কিছ করবে তখনই সায়ানের মা চলে আসে

” কি অবস্থা

তুলি সায়ান দুজনই ছিটকে দুরে সরে যায়। সায়ানের মা গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। তুলি আমতাআমতা করে বলে

“আন্টি আপনি

সায়ানের মা ধমকের সুরে বলে

” দরজা খোলা রেখে এসব কি হচ্ছে

“আসলে আপনার ছেলে যে নিরামিষ। কোনোরকম চান্সটা পেয়েছিলাম। কিন্তু আপনার জন্য কিচ্ছু হলো না

তুলির এরকম কথা শুনে সায়ান আর সায়ানের মা দুজনই বড় বড় চোখ করে তাকায় তুলির দিকে। তুলি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

” আমার কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি গোলুমোলু একটা নাতি নাতনি চায়

তুলি খুশি হয়ে শাশুড়ীকে টেনে বিছানায় বসায় আর নিজেও বসে

“তোমার ছেলেকে বলো। ও তো আমাকে

আর কিছু বলার আগেই সায়ান মুখ চেপে ধরে

” মা তুমি কিছু বলতে এসেছিলে।

“হুমম। কাল তন্নি আর জিসানের পাকা কথা বলতে যাবো তাই বলতে এসেছি

তুলি মুখ ছাড়িয়ে নিয়ে বলে

” আমিও যাবো

“ঠিক আছে

শাশুড়ী চলে যায়। সায়ান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুলির দিকে।

” এএভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?

তুলি ভয়ে ভয়ে বলে।

“সব সময় আমাকে ছোট করো কেনো?

তুলি খাটের অন্য পাশে যায়।

” সরি

সায়ান রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

“এতো রেগে গেলো কেনো?

চলবে

শুধু তুই পর্ব-১৯+২০+২১

0

#শুধু তুই
#পর্বঃ১৯
#Tanisha Sultana (Writer)

“ও তুলি

তুলি জিসানের দিকে না তাকিয়ে জুজুর সাথে খেলায় মন দেয়। জিসান তুলির পাশে বসে।

” কথা বলোস না কেন?

“হুম বল

” ওই মেয়ে সম্পর্কে খোঁজ নিছোস?

“লুডু খেলবি?

” আমি কি বলতেছি তোরে

“কি যেনো বললি

জিসান রেগে তুলির চুল ধরে টান দেয়। তুলিও জিসানের চুল ধরে টানে।

” তোমরা ঝগড়া করছো কেনো?

জুজু দুজনকে থামায়

“বলতে চাইছিলাম কিন্তু এখন বলবো না

তুলি মুখ ফুলিয়ে বলে। জিসান কান ধরে

” বেবি ভুল হয়ে গেছে প্লিজ

তুলি হেসে ফেলে।

“মেয়েটার নাম তন্নি। আমার কাজিন। অনার্স ফাস্ট ইয়ারে স্টাডি করে।

” ফোন নাম্বার আছে

“হুম আছে

” দে না

“শক কতো

” প্লিজ

“আগে তোর ভাইয়ের সাথে আমার প্রেমটা হোক তারপর নাম্বার পাবি

” তাহলে আর এ জীবনে প্রেম করা হলো না

জিসান বিরবির করে বলে

“কি বললি

” কিছু না

“পাপা মামনিকে পেয়েছো?

জুজু দৌড়ে দরজার কাছে যায়। তুলি আর জিসান দরজার দিকে তাকায়। সায়ান জুজুকে কোলে নেয়

” তোমার মামনি হারিয়ে যায় নি চলে গেছে আমাদের ছেড়ে। আর আসবে না আমাদের কাছে। আজ থেকে তোমার নতুন মা তোমার মামনি।

জুজু কি বুঝলো কে জানে তুলির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। সায়ান ওয়াশরুমে চলে যায়।

“তুলি তুই কিছু বুঝলি?

” না রে। কি বললো

“ভাবছি

জিসান ভাবতে ভাবতে চলে যায়।

আজ তুলির পায়ের ব্যান্ডেস খুলে দেওয়া হয়েছে। পায়ে হালকা ব্যাথা আছে কিন্তু তবুও ভালোই হাঁটতে পারছে।

তুলি বাড়ির সবাইকে এক জায়গায় এনেছে কিছু কথা বলবে বলে। সবাই অধিক আগ্রহে বসে আছে তুলির কথা শোনার জন্য

” কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন। আমার লেট হয়ে যাচ্ছে
সায়ান বিরক্তি নিয়ে বলে।

“আংকেল আপনি আমাকে সায়ানের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন কারণ আপনার ছেলে একটা বিবাহিত মেয়ের পেছনে ঘুরতো তাই। আপনার মনে হয়েছে আমার সাথে বিয়ে হলে সায়ান সব ভুলে আমার আচল ধরবে ঠিক বলেছি

সায়ানের বাবা মাথা নিচু করে বলে

” হ্যাঁ

“গুড৷ এবার আপনার ছেলের মাথা থেকে জুঁইয়ের ভুত নেমে গেছে। তো এবার আমার ছুটি

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে

” তুলি ছুটি মানে কি? জিসান বলে

“আমার পক্ষে এই গোমড়ামুখো নিরামিষ লোকটার সাথে থাকা পসিবল না তাই আমি চলে যাচ্ছি। আলরেডি আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। তবে হ্যাঁ আমি কিন্তু জবটা ছাড়বো না। কয়েকদিন পরেই নেইমারের মতো একটা ছেলেকে বিয়ে করবো আপনাদের সবাইকে দাওয়াত দিবো যাবেন কিন্তু।

তুলির শাশুড়ী তুলির কাছে যায়। কিছু বলবে তার আগেই তুলি বলে

” ঠিক আছে আপনি অনেক ভুল করছেন। আমাকে করলার জুস খাইয়েছেন ইটস ওকে। আমি কিছু মনে করি নি

তুলি কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুমে চলে আসে।

রুমে এসে গুনগুন করে গান গাইছে আর লাগেজ গোছাচ্ছে।

“কোনো জিনিস যেনো পরে না থাকে

সায়ান রুমে এসে বলে। তুলি মুচকি হেসে বলে

” না না কিচ্ছু পরে থাকবে না। আপনার নতুন বউ এসে কোনো সন্দেহ করবে না

“ভাবছি

” কি

“এখন থেকে আপনি কাকে ইডিয়েট স্টুপিট সাট আপ এগুলো বলবেন

” আপনার ভাবতে হবে না

“হুমম। আমার বিয়েতে কিন্তু যাবেন

” কবে বিয়ে

“এখনো ঠিক হয়নি তবে হবে তাড়াতাড়ি

সায়ান কিছু না বলে চলে যায়। তুলিও ব্যাগ গুছিয়ে চলে যায়। সবাই অনেক থাকতে বলে কিন্তু তুলি থাকবে না।

অফিসে বসে আছে সায়ান। মালয়েশিয়ার সেই বিজনেস পার্টনার আসে। বড় বড় চুল আর দাঁড়ি। লোকটা সায়ানের সামনে বসে অনেক কথা বলছে। আর সায়ান তুলির কথা ভাবছে। উগান্ডার প্রেসিডেন্ট, মহিলা এসব কথা মনে পড়ে সায়ান শব্দ করে হেসে ওঠে। সবাই মোটামুটি বড়সড় একটা শক খায়। এই প্রথম সায়ানকে হাসতে দেখছে সবাই।

সায়ান হাসি থামিয়ে সবার দিকে একবার তাকায়। তারপর কাশি দিয়ে কাজ শুরু করে।

তুলি শিবা কার্টুন দেখছে আর চিপস খাচ্ছে। শুধু বারবার সায়ানের কথা মনে পরছে

” ধুর ভাল্লাগে না সব সময় খালি ওই গোমড়ামুখোর কথা মনে পড়ে। মনডারে এতো করে বোঝায় ওই গোমড়ামুখো একটা জলহস্তী ওর মনে মায়া দায়া কিচ্ছু নাই। কতো বাজে বিহেব করেছে আমার সাথে। আমি ওই জিসানের কথা শুনে চলে এলাম। একবারও আমারে বললো না তুলি থেকে যাও না। আরও বলে কি আমার কোনো জিনিস যেনো না পড়ে থাকে।করলা একটা। আমার নিশ্পাপ মনে কষ্ট দিছোস তো জীবনেও বউ পাবি না। চিরকুমার থাকতে হবে তোকে বলে দিলাম

জিসান তুলিকে বুদ্ধি দিয়েছে চলে আসার। জিসানের ধারনা তুলি দুরে থাকলে সায়ান তুলির শূন্যতা বুঝতে পারবে।

“তুলি

তুলি তাকিয়ে দেখে তন্নি। তন্নি তুলির পাশে বসে

“তুলি জানোস আমি তোকে এতোটা ভালোবাসি

” কস কি আগে তো বলোস নাই

“তুই তো শুনোস নাই।

“ভালোবাসা

” হুম রে ভালোবাসা।

“ভালোবাসা

তৃতীয় কারো কন্ঠ শুনে তুলি আর তন্নি দরজার দিকে তাকায়। দেখে জিসান। জিসান তুলির পাশে বসে।

” জিসান তুই এখানে

“তোরে দেখতে আসলাম

” শুধু আমারে

“হুমমম

” তন্নি তুই যেতে পারিস

“ও যাবে কেনো?

” তুই তো শুধু আমাকে দেখতে এসেছিস তো তন্নি এখানে থাকবে কেনো?

জিসান মাথা চুলকায়। তন্নি মাথা মাথা নিচু করে হাসে

“আমি তোদের জন্য খাবার নিয়ে আসি

” হুম তারাতাড়ি যা

জিসান চট করে বলে ফেলে। তুলি জিসানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায় জিসান আমতা আমতা করে বলে

“খুব খিদে পেয়েছে তো তাই

তুলি মুচকি হেসে চলে যায়। জিসান আর তন্নি প্রেম আলাপ করতে থাকে।

আজ সায়ান একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বাড়ি আসে। রুমে ঢুকে মনটা খারাপ হয়ে যায়। ড্রেস চেঞ্জ না করেই বেলকনিতে চলে যায়।

” আগেও তো এই রুমটাতে আমি একা থেকেছি কখনো তো ফাঁকা ফাঁকা লাগে নি। তবে আজ কেনো তুলিকে ছাড়া এতো আসহায় লাগছে। মেয়েটা থাকলে এতোখনে কথা বলে মথা পাগল করে দিতো।

জুজু দৌড়ে আসে সায়ানের কাছে।

“পাপা তুমি নতুন মাকে নিয়ে আসোনি কেনো?

সায়ান জুজুকে কোলে নেয়

” ও আসবে না

“কেনো আসবে না। তুমি বললেি চলে আসবে। চলো না পাপা আমি আর তুমি গিয়ে নতুন মাকে নিয়ে আসি

সায়ান চুপ করে আছে।

” কি হলো পাপা কিছু বলো

“আমি একটু রেস্ট নেবো সোনা

জুজু সায়ানের কোল থেকে নেমে মন খারাপ করে চলে যায়।

” আচ্ছা তুলিরও কি খারাপ লাগছে? আমার কথা মনে পড়ছে? তুলি কি এখন কাঁদছে?

সায়ান বিরবির করে এসব বলতে বলতে ওয়াশরুমে চলে যায়।

রাত দশটা সায়ান বেলকানিতে বসে আছে। জুজু সায়ানের পাশে বসে ফোনে গেমস খেলছে।

“পাপা তুমি নতুন মাকে মিছ করছো?

সায়ান ঠিক বুঝতে পারছে না কি উওর দেবো।

জিসান আজ তুলিদের বাড়িতেই থাকবে। তুলি জিসান তন্নি তিনজন গল্প করছে। তখন কলিং বেল বাজে

” এতো রাতে আবার কে এলো? (জিসান)

“আমি দেখছি

তুলি যায় দরজা খুলতে। দরজা খুলে তুলি তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

” আমি কি ঠিক দেখছি?

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ২০
#Tanisha Sultana (Writer)

“আমাকে একটা চিমটি কাটেন তো

সায়ান ভ্রু কুচকে বলে

” কেনো?

“না মানে আপনি এখানে এসেছেন এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না

” না বিশ্বাস করার কি আছে?

“আমি তো আমার সব জিনিস নিয়ে এসেছি ভুলেও কিছু ফেলে আসি নি। তাহলে আপনি কেনো আমাকে বকতে এসেছেন?

” ইডিয়েট

“কে এসেছে রে তুলি

তুলির মা এগিয়ে আসতে আসতে বলে

” সায়ান বাবা যে দাঁড়িয়ে আছো কেনো ভেতরে আসো

সায়ান তুলিকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে আসে। জুজু সায়ানের কোলে ঘুমিয়ে আছে। তুলির মা সায়ানকে নিয়ে তুলির রুমে যায়। তন্নি আর জিসান কাপল ডান্স করছিলো সায়ানকে দেখে থামে। জিসান তন্নির থেকে দুরে গিয়ে দাঁড়ায়।

সায়ান জুজুকে বেডে শুয়িয়ে দেয়। তারপর হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে পড়ে জিসানের সামনে। জিসান বেশ বুঝতে পারছে তন্নিকে নিয়ে কিছু বলবে তাই জিসান ফট করে বলে ফেলে

“ব্রো তুমি এখানে? তুলিকে মিছ করছিলে বুঝি। আহা কতো ভালোবাসা

” সেরকম কিছু না জুজু কান্না করছিলো তাই এসেছি

তুলির মা খাবার আনতে চলে যায়।

“তাহলে এখন আসতে পারিস

সায়ান অবাক হয়ে জিসানের দিকে তাকায়

” হোয়াট

“জুজুকে পৌঁছে দিলেই এবার আসতে পারো। ওই দিকে দরজা

সায়ান অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে

” জিসান থাক না

তুলি জিসানকে বলে। জিসান রেগে বলে

“কি থাকবে বল আমায়

” আরে রাগ করছিস কেনো? তুই কি ভুলে গেলি না উনি আমার বস। বসকে ইমপ্রেস করতে পারলে তো আমারই লাভ। আজকে রাতটা বস আমাদের বাড়িতে থাকুক। আমরা বসকে খাতির যত্ন করি। সকালে চলে যাবে

“তুই যখন বলছিস থাক।

জিসানও তুলির সাথে তাল মিলায়। সায়ানের প্রচুর রাগ হচ্ছে

” জিসান আমার ঘুম পাচ্ছে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দে
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।

“ওই তোরা চল আমার বস ঘুমাবে

তুলি জিসান তন্নি চলে যায়।

” ইডিয়েট। সব থেকে বড় ইডিয়েট হলো আমার ভাই। আমাকে বেরিয়ে যেতে বলে সাহস কতো। সময় আমারও আসবে। সব ইডিয়েট আমার কপালেই জুটে। সোনায় বাঁধানো কপাল আমার।

সায়ান গাল ফুলিয়ে বেডে বসে পড়ে।

তুলির মা তুলিকে সায়ানের খাবার দিয়ে বলেছে। তুলির হাতে খাবারের প্লেট ধরিয়ে দিয়েছে।

তুলি খাবার নিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে সাহস সঞ্চার করছে ভেতরে যাওয়ার জন্য

“আরে তুলি ভয় পাচ্ছিস কেনো? সায়ান যদি বাঘ হয় তাহলে তুই সিংহ। ভয় পাবো না আমি

অবুক ফুলিয়ে তুলি রুমে ঢুকে। সায়ান চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে তুলি সায়ানের পাশে দাঁড়ায়।
একটু কাশি দিয়ে বলে

” আপনার খাবার। খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন

তুলি খাবার রেখে চলে যেতে নেয়। কয়েক পা বাড়ানোর পরে ঠাস করে পড়ে যায়। তুলির পরে যাওয়া দেখে সায়ান এগিয়ে আসে

“প্রতিবন্ধী না কি আপনি? ঠিক করে চলতে পারেন না

” মুখ সামলে কথা বলুন। তুলি সব সময় তুলির স্পিডে চলে। এখন যদি সামনে কিছু চলে আসে তো আমি কি করবো

“হুম তাই তো। আসেপাশের সব কিছু দোষ আপনার দোষ নেই

তুলি সায়ানের গাল টেনে বলে

” আমার টুনুমুনু উম্মা

“ছি ছি ছি এসব কি

” চুমু কিছ পাপ্পি

“এসব ভালো না।

” নিরামিষ

তুলি উঠে দাঁড়ায়। সায়ানও দাঁড়ায়। তুলি চলে যেতে নেয় সায়ান হাত টেনে ধরে

“কিহহ। প্রেম টেম করবেন না কি?

” একা খেতে ভালো লাগে না

তুলি বসে আছে সায়ান খাচ্ছে। তুলি সায়ানের সামনে মুখ নিয়ে হা করে

“কি

” খাইয়ে দেন খিদে পেয়েছে

তুলির ইনোসেন্ট মুখটা দেখে সায়ানের মনে লাড্ডু ফুটে। হা করে তাকিয়ে আছে

“কি হলো দেন

সায়ান তুলির মুখে ভাত দেয়। তুলি বাচ্চাদের মতো করে খায়।
খাওয়া শেষে সায়ান তুলির মুখটা মুছিয়ে দেয়।

তুলি প্লেট নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়

” তুলি

তুলি পেছনে তাকায়। এই প্রথম সায়ান তুলিকে নাম ধরে ডাকলো। তুলি প্লেটটা টেবিলে রেখে সায়ানের হাত ধরে টেনে বেলকনিতে নিয়ে যায়।

“খুব ভালো লাগছে আমার

” কেনো?

“আপনি আমার নাম ধরে ডাকলেন তাই

” ওহহ

“হুম। বসুন না

তুলি সায়ানকে বসিয়ে দেয়।

” এক মিনিট

তুলি দৌড়ে চলে যায়। একটু পড়ে হাতে একটা গিটার নিয়ে ফিরে আসে।

“এটা কেনো?

” আপনি গান গাইবেন

তুলি সায়ানের পাশে বসে পড়ে

“আমি গান গাইবো না

” হুম তা গাইবেন কেনো? আমি তো কেউ না

“হুমম

” কেউ না আমি

“জানি না

” বলতে হবে কে আমি?

“আমার

” আপনার

“আমার

” আমার শুনছি তারপর

“পিএ

তুলি এবার ফিক করে হেসে ফেলে।

” আপনার পিএ আমি।

সায়ান কিছু না বলে গিটার বাজানো শুরু করে। তুলি সায়ানের কাঁধে মাথা রাখে। সায়ান একটু মুচকি হেসে শুরু করে

#শুধু তুই শুধু তুই আর চাইছি না কিছু

গান শেষে তুলি সায়ানের পায়ের কাছে বসে।

“ওখানে বসলেন কেনো?

” বসের পাশে বসাটা উচিৎ না

“আপনি সত্যি ইডিয়েট।

” হয়তো

“তুলি আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি

” নিরামিষ একটা। বলবে তুলি আই লাভ ইউ তা না। বলদ একটা। তবে আমি যদি তোমার মুখ থেকে লাভ ইউ না বের করতে পারি তাহলে আমার নামও তুলি না।
তুলি মনে মনে বলে

“কি ভাবছেন?

তুলি হালকা হেসে বলে

” কিছু না

“ফ্রেন্ড হবেন?

” হতে পারি বাট একটা শর্তে

“কিহহ

” আমাকে তুমি করে বলতে হবে

সায়ান হালকা হেসে বলে

“ঠিক আছে।

দুজনই চুপ।

” তুলি

“হুম

” সরি

“কেনো

” তোমার সাথে অনেক বাজে বিহেব করেছি। তোমাকে হার্ট করছি। মা বাজে বিহেব করছে। সব কিছু মিলিয়ে সরি

“ইটস ওকে। আমি কিছু মনে করি নি।

” খুব সহজে কি করে সবটা মেনে নাও তুমি

“খুব সহজে সবটা মেনে নেই বলেই তো এতো হ্যাপি থাকতে পারি। ভালো থাকতে পারি। তা না হলে তো দম বন্ধ হয়ে মরে যেতাম।

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ২১
#Tanisha Sultana (Writer)

“আমি যাই ঘুমোবো

” আগে তো আমি আর তুমি এক রুমেই থাকতাম

“হুমম

” থাকো না এখানে

তুলি কিছু না বলে জুজুর পাশে শুয়ে পরে। সায়ান সোফায় শুতে যায়

“আমার খাটটা ভালোই বড়। তিনজনের জায়গা হবে

সায়ান জুজুর আপর পাশে শয়। তুলির এখন জুজুকে কাবাব মে হাড্ডি মনে হচ্ছে।

” এতোদিন কোলবালিশ এখন জুজু। ধুর ভাল্লাগে না

তখন দরজায় টোকা পরে।

“আমি দেখছি

সায়ান উঠে দরজা খুলে দেখে জিসান দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

” তুই এখানে

“হাড্ডিকে নিতে এলাম।

” হাড্ডি কে?

জিসান রুমে ঢুকে জুজুকে কোলে নেয়

“ও কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস

” জুজু আমার কাছে ঘুমোবে

জিসান তুলিকে চোখ মেরে চলে যায়। সায়ান দরজা বন্ধ করে এসে মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে শুয়ে পড়ে।

“সোনায় বাঁধানো কপাল আমার। নিরামিষের বাচ্চা নিরামিষ

” তুলি তুলি কোন ইয়ারে স্টাডি করো

সায়ানের এই প্রশ্নে তুলি অবাকের দশম পর্যায়ে উঠে যায়। তিন মাস এক সাথে থেকেও স্বামী জানে না স্ত্রী কোন ক্লাসে পড়ে। ভাবা যায়

“কিছু জিজ্ঞেস করছি

“পড়ি না

” মিথ্যা বলো কেন

“তো কি বলমু

” আজব একটা সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারো না ইডিয়েট

“তিন মাস এক সাথে থেকেও আপনি জানেন না আমি কোন ক্লাসে পড়ি। এরপর আর কিছু বলার থাকে না

সায়ান আর কিছু বলে না। তুলি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে চোখ বন্ধ করে।

সকালবেলা মুখের কারো স্পর্শ পেয়ে তুলির ঘুম ভেঙে যায়। তুলি ৯৯% শিওর সায়ান। তাই একটু রোমান্টিক মুড নিয়ে চোখটা খুলে। চোখ খুলেই দেখে জুজু। তুলির মুখটা কালো হয়ে যায়

” গুড মর্নিং নতুন মা

তুলি জুজুর গাল টেনে বলে

“গুড মর্নিং টু সোনা

” তুমি জানো কতোগুলা মিছ করছিলাম তোমায়

“আমার সোনাটা আমায় মিছ করেছে।

” হুম

তুলি জুজুকে একটা পাপ্পি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সায়ান ল্যাপটপে কাজ করছে।

“গুড মর্নিং জামাই

সায়ান তুলির দিকে একনজর তাকিয়ে বলে

” জামাই কি শব্দ

“জানেন না তাহলে আপনাকে ডিটেইলস বলি

তুলি আগ্রহ হয়ে সায়ানের পাশে বসে

” আমি শুনবো না

“তা শুনবেন কি করে। গোমড়ামুখো কোথাকার

” হুম

“আপনি কি জানেন আপনি পৃথিবীর সব থেকে বড় অনরোমান্টিক পারসন।

” সায়ান ল্যাপটপ বন্ধ করে তুলির দিকে তাকিয়ে বলে

“আমি অনরোমান্টিক

” হুম। নিরামিষ

“রিয়েলি

” হুম

সায়ান তুলির দিকে মুখটা একটু এগিয়ে দেয়। ভাবে তুলি হয়ত ভয় পাবে পিছিয়ে যাবে। কিন্তু তুলি সায়ানকে অবাক করে দিয়ে আরও একটু এগিয়ে আসে।

সায়ান পিছিয়ে যায়

“কি হলো

” কিছু না পানি খাবো

তুলি বিরক্তি নিয়ে উঠে যায়। সায়ান বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়

“আল্লাহ এটা মেয়ে না কি? একটু হলেই যাচ্ছিলাম। আল্লাহ বাঁচাইছো

তুলি সায়ানের সামনে ঠাস করে পানির বোতল নামায়

” খেয়ে নিন

“একটু মিষ্টি করে বলো

তুলি সায়ানের কলার ধরে বলে

” দুই দিন সময় দিলাম

কলার ছেড়ে দিয়ে হন হনিয়ে চলে যায়

“কিসের জন্য দুইদিন সময় দিলো। কিছুই তো বুঝলাম না

খাবার টেবিলে সায়ান জিসান তুলি আর তুলির বাবা খাচ্ছে। জুজু আগেই খেয়ে নিয়েছে।

সায়ান নিচের দিকে তাকিয়ে খেয়েই যাচ্ছে। তুলি একটু খাচ্ছে আর সায়ানের দিকে তাকাচ্ছে।

” খাচ্ছে দেখো মনে হয় জীবনেও খায় নাই। হনুমান একটা। জীবনটাই বেদনার

“তুলি ঠিক করে খা

তুলির মা তুলির প্লেটে রুটি দিয়ে বলে

” খাচ্ছি তো

খাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে যায়। সায়ান অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে। তুলি সায়ানের সামনে দাঁড়ায়

“কিহহ

” আপনার সাথে অফিসে যাবো

“যাও রেডি হয়ে এসো

তুলি খুশি হয়ে চলে যায়।

সায়ান গাড়ি ডাইভ করছে। আর তুলি সাজুগুজু করছে

” আমরা কোনো প্রোগ্রামে যাচ্ছি না

“আই নো

” তাহলে এরকম সং সাজার মানে কি?

“ছেলে পটানোর ধান্দা

” মানে

“মানে সাজুগুজু করলে আমার খুব হট লাগে। তো ছেলেরা আমার প্রতি ইমপ্রেস হবে আর প্রপোজ করবে

” যাতা চিন্তা ভাবনা

“গুড চিন্তা ভাবনা

” ছেলে পটাবে কেনো?

“ও মা বিয়ে করবো তাই।

” বিয়ে তো করেছোই

“আপনার মতো নিরামিষের সাথে থাকা যায় না কি

” আমিষ হওয়ার জন্য কি করতে হবে

“কিছ

সায়ান গাড়িটা থামিয়ে টুক করে তুলির গালে একটা চুমু দেয়। তুলি গালে হাত দিয়ে সায়ানের দিকে তাকায়

” এটা কি ছিলো

“কিছ

” এটাকে কিছ বলে

“হুমম

” ধুর। জুজুও তো এর থেকে ভালো কিছ করতে পারে।

“আমি এর থেকে ভালো পারি না

” পারেন কি?

“সব

” কথা বাদ দেন তো।

সায়ান গাড়ি চালানো শুরু করে

“জীবনে সব কিছুরই প্রয়োজন আছে। এই যে আমি নিরামিষ এটাও কিন্তু প্রয়োজন আছে। আমাকে একটু সময় দাও আমি সব ঠিক করে দেবো। আসলে আমার না মানিয়ে নিতে সময় লাগে। তোমার মতো এতো সহজে সব মেনে নিতে পারি না। আমি মানুষের মন পড়তে পারি না। কারো মন বোঝার চেষ্টাও করি না। কারো সাথে মিশতে পারি না। আর মেশার চেষ্টাও করি না। আমি যাদেরি আপন ভাবি তারাই আমাকে ঠকায়। বিপদে ফেলে। তাই আমি আমার মতো থাকি।

তুলি সায়ানের কথা গুলো মন দিয়ে শুনছে।

” জুঁই আমি আর নিরব মানে জুজুর বাবা এক ভার্সিটিতে পড়তাম। খুব ভালো বন্ধু ছিলাম আমরা। নিরবই আমার মনে কথা জুঁইকে বলতে হেল্প করেছিলো। পরে আবার ওই আমাদের মাঝে দেয়াল তৈরি করে দিলো। জুঁইকে আমি ভালোবাসতাম ঠিকই তবে নিরব যদি একবার বলতো জুঁইকে ও বিয়ে করবে আমি ওদের মধ্যে থেকে দুরে চলে যেতাম। কিন্তু

সায়ান চুপ হয়ে যায়

“তারপর

তুলি জিজ্ঞেস করে

চলবে

শুধু তুই পর্ব-১৭+১৮

0

#শুধু তুই
#পর্বঃ১৭
#Tanisha Sultana (Writer)

ফুল স্পিডে গাড়ি ডাইভ করছে সায়ান। নিজেকে খুব আসহায় মনে হচ্ছে। বারবার তুলির কথা মনে পড়ছে। তুলির জন্য মনের মধ্যে একটা শুন্যতা কাজ করছে কিন্তু সায়ান মানতে নারাজ। কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছে না তুলির মতো মেয়ে সায়ানের মনে জায়গা করে নিয়েছে।

“নাহহহ আমি তুলিকে ভালোবাসতে পারি না। আমার অনিশ্চিত জীবনে কোনোভাবেই আমি তুলিকে জড়াতে চায় না৷ আমি ভাববো না তুলির কথা। ভুলে যাবো তুলিকে। কিন্তু পারছি না কেনো?

হঠাৎ গাড়ির ব্রেক ফেল হয়ে যায়। একটা গাছের সাথে বারি খায়। মাথায় প্রচুর ব্যাথা পায়। রক্ত পড়ছে প্রচুর।

” চোখ খুলে সায়ান অবাক হয়ে যায়। কারণ সায়ান তুলির রুমে। চোখ খুলে সামনে তাকিয়েই তুলির ছবি দেখে। সেটা দেখেই বুঝে যায় এটা তুলির রুম। সায়ান মাথায় হাত দিয়ে দেখে ব্যান্ডেজ করা।
পাশে তাকিয়ে দেখে তুলি ফোন দেখছে

“আমি এখানে কেনো?

সায়ান উঠতে উঠতে বলে

” ও মা আপনি জানেন না

“জানলে কি জিজ্ঞেস করতাম

” তাও ঠিক। আসলে আপনি আমাকে অতিরিক্ত মিছ করছিলেন তো তাই ঘুমের মধ্যে হেঁটে হেঁটে চলে এসেছেন

“সাট

” আপ

সায়ান রাগী দৃষ্টিতে তাকায় তুলির দিকে। তুলি হাঁসে

“কাল আপনি রাস্তায় পরেছিলেন বাবা নিয়ে এসেছে আপনাকে।

সায়ান মাথায় হাত দিয়ে ভাবছে

” মাাাাাাাা

তুলি চিৎকার করে মা কে ডাকে। সায়ান কানে হাত দেয়

“স্টুপিটের মতো চিৎকার করছেন কেনো?

” স্টুপিটরা চিৎকার করে বুঝি?

“ইডিয়েট

তুলির মা দৌড়ে আসে

” কি হয়েছে

“তোমার জামাই খাবো খাবার আনো

তুলির মা সায়ানের সাথে দু একটা কথা বলে চলে যায়।

” জামাই কে?

তুলি আশেপাশে তাকিয়ে বলে

“আপনি ছাড়া এখানে আছে কে?

” আমি জামাই না

“তাহলে কি

সায়ানের ফোন বেজে ওঠে। সায়ান রিসিভ করতে যায় তুলি ফোনটা নিয়ে যায়

” হেলো

ওপাশ থেকে জুঁই বলে

“সায়ান কোথায়?

” আমার সাথে

“ওর কাছে দাও ফোনটা

” ও কথা বলবে না

“কেনো?

“আমার স্বামী পরোনারীর সাথে কথা বলবে না

” সায়ান বলেছে

“না সায়ানের অর্ধাঙ্গিনী বলছে

” সাধু সাজছে এখন তাই না। আমার সংসার ভেঙে সাধু সাজা হচ্ছে।

“আপনার সংসার আমার স্বামী ভাঙে নি

” তাই না কি? তাহলে আমার স্বামীকে কে খুন করেছে?

“এখানে গন্ডগোল আছে

” কোনো গোন্ডগোল নেই। আমার বাচ্চার দায়িত্ব কে নেবে? কেনো আমার মেয়ে বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হবে? সায়ান যদি দায়িত্ব না নেই তাহলে আমি পুলিশকে সব বলে দেবো

“রিলাক্স। এতো হাইপার হচ্ছো কেনো? তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে কেউ তোমার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে কথা গুলো বলাচ্ছে।

” তুমি বেশি কথা বলছো

“তুমি আমার বোনের মতো। জুজুকে আমিও খুব ভালোবাসি। আমি জানি না তোমরা কেনো এমন করছো। কি চাও তোমরা। এমন করো না বোন। কি পাবে বলো? হয়ত তোমার আর তোমার বাবার জোরাজোরিতে সায়ান তোমায় বিয়ে করবে। একটা কথা বলো তো তুমি যদি সায়ানকে জোর করে বিয়ে করো তোমার মরে যাওয়া স্বামীর কি ভাববে। সে কতোটা কষ্ট পাবে।

তুলি কথা গুলো জুঁইয়েরও খুব ভালো লাগছে। সত্যি কথাই তো বলছে তুলি।

” সবার চিন্তা ভাবনা এক না।

“হুম কিন্তু তুমি ভেবে দেখো আমি ভুল বলিনি। নিজের চিন্তাভাবনাকে ভালো কাজে ব্যবহার করো। দেখো তোমার জীবনটাও সুন্দর হবে তুমিও ভালো থাকবে

জুঁইকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তুলি ফোন কেটে দেয়। মনে মনে সায়ানের বকা খাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। এই বুঝি শুরু করলো

” আপন
তুলি সায়ানকে থামিয়ে

“প্লিজ বইকেন না। আমার মতো একটা মাসুম শিশুকে বকতে আপনার বিবেক বাধা দেয় না। কেমন পাষান আপনি।
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে তুলি। তুলির মুখ দেখপ সায়ানের হাসি পাচ্ছে।

” আচ্ছা আমি মেয়ে হিসেবে কেমন

“জঘন্য

” বউ হিসেবে

“বাজে

” ধুর আপনি মিথ্যা বলছেন। আমি খুব ভালো

“আমি কখন বললাম খারাপ

” এই তো বললেন

“খারাপ বলি নি

” তার মানে আমি ভালো

“তাও বলি নি

” শালা হনুমান

বিরবির করে বলে তুলি

“কি বললেন

” আপনার মাথা

তুলির মা আসে। সায়ান ওয়াশরুমে চলে যায়।

“মা খাবার রেখে যাও

” ঠিক আছে

খাবার দিয়ে তুলির মা চলে যায়। জিসান তুলিরে ফোন দেয়

“বল

” এইমাত্র তোদের বাড়ি থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে গেলো কে ওইডা

“আমাদের বাড়ি থেকে মেয়ে

” হুম৷ নীল ড্রেস

“আমি তো দেখি নি

” কানা না কি তুই

“হপ দাঁড়া আমি খোঁজ নিচ্ছি

” লাভ ইউ বেবি

“আলগা পীরিত দুরে রাখ

তুলি ফোন রেখে ভাবছে কে ছিলো।

” আমি খাবো

সায়ান হাত মুখ মুছতে মুছতে বলে

“খাবার রেডি

সায়ান খেতে বসে। রুটি ছিড়ে গালে দেওয়ার আগে তুলির দিকে তাকিয়ে দেখে তুলি হা করে তাকিয়ে আছে

” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো

“আমার বরটাকে দেখছি। কতো কিউট দেখলে খালি দেখতেই ইচ্ছে হয়।

” আপনাকে সেদিন ওইভাবে চলে আসতে বললাম।

“উদ্দেশ্য ছাড়া তুলি কোনো কাজ করে না। আপনার সাথে ভালো বিহের করার পেছনে বড় কোনো উদ্দেশ্য আছে। যা খুব তাড়াতাড়ি আপনি জানতে পারবেন। আপনি হয়ত ভাবেন আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি তাই আপনার সব ভুলে গেছি

” ভাবার কি আছে? সত্যি তাই

তুলি হো হো করে হাসে

“আমি ভালোবাসবো তাও আপনাকে সিরিয়াসলি আপনার এটা মনে হয়

সায়ান ভাবতে থাকে

” সত্যি তো আমি এরকম ভাবলাম কেনো? এমন তো নাও হতে পারে।

তুলি সায়ানের সামনে হাত নারায়

“হেলো কি ভাবছেন

” কিছু না

সায়ান খাবার মুখে দেয়।

“আমার বাবা কেনো আমাকে আপনার সাথে বিয়ে দিয়েছে সেটা এখন বুঝতে পারলাম আমি।

” কি কারণ

“দেখু তেতো আর তেতো তো একসাথে থাকতে পারে না। তাই বাবা তেতো আর মিষ্টি মিলিয়ে দিছে

” মানে

“মানে বুঝবেন না. আপনি এমন কেনো? আমার বাবার খাবার খাচ্ছেন অথচ আমাকে খেতে বলছেন না

” আমার খিদে পেয়েছে আমি খাচ্ছি। আপনার টা আপনি বুঝবেন

“কি সুন্দর বিচার আপনার

তুলিও খাওয়া শুরু করে। কার থেকে কে বেশি খেতে পারে। পাল্লাপাল্লি করে খাচ্ছে দুজন। তুলি ফাস্ট হওয়ার জন্য এতো এতো খাবার মুখে পুরেছে এখন চিবতে পারছে না। সায়ানের খাওয়া শেষ। তুলির অবস্থা দেখে সায়ান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তুলি মুগ্ধ হয়ে সায়ানের হাসি দেখছে।

হাসলে কতো সুন্দর লাগে মানুষটাকে অথচ সব সময় গোমড়ামুখো হয়ে থাকে। তুলির আর চিবোনোর কথা মনে নেই। ও তাকিয়ে আছে সায়ানের দিকে। আর তখনই ভেসে আসে একটা গানের সুর
#শুধু তুই শুধু তুই আর চাইছি না কিছুই।

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ১৮
#Tanisha Sultana (Writer)

“সায়ান

সায়ান তুলি দুজনই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ানের মা বাবা। সায়ানের মা সায়ানের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলে

” তুই ঠিক আছিস বাবা

“হুম মা ঠিক আছি

তুলি সায়ানের মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ানের মা একবার তুলির দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়

” চল বাড়ি ফিরতে হবে

“মা রেডি হয়ে নি

সায়ান শার্ট ঠিকঠাক করে। তুলি মাথা নিচু করে বসে আছে। সায়ানের বাবাও কিছু বলছে না৷ তুলি বেশ ভালো বুঝতে পারছে ওনারা তুলিকে নিবে না।

” তুমি একটু বাইরে যাও তো

সায়ানের বাবা আর তুলি চমকে সায়ানের মায়ের দিকে তাকায়।

“শুনতে পাও নি কি বললাম

” যাচ্ছি

সায়ানের বাবা চলে যায়।

“এখন আমাকে কাঁচা গিলে খাবে। যেমন শাশুড়ী তেমন ছেলে। আমার হয়েছে মরন। সব সময় এদের কথা শুনতে হয়।

তুলি বিরবির করে বলছে

” কি বিরবির করছো

“কককই ককককিছু না তো

তুলি তুতলিয়ে বলে

” এরকম জামা পড়ে বর শশুর শাশুড়ীর সামনে বসে আছো লজ্জা করছে না

“নাহহ

” লজ্জা থাকলে তো করবে। শাড়ি কোথায় তোমার?

“না মানে আমার শাড়ি নেই

” আমি তোমার এতো এতো শাড়ি দিলাম ওগুলো কই?

“রেখে এসেছি

” ভালো করছো। থ্রি পিছ আছে

“হুম আছে
তুলি মাথা নিচু করে বলে। সায়ানের মা আলমারি খুলে একটা নীল থ্রি পিছ বের করে।

“একা ড্রেস চেঞ্জ করতে পারবে

তুলি মাথা নারায়। মানে না

“মা কে একটু ডেকে দিন মা হেল্প করবে

” আমি হেল্প করছি

সায়ানের মা তুলিকে থ্রি পিছ পরিয়ে দেয়। চুল আঁচড়ে টেনেটুনে খোপা করে দেয়। তুলির খুব ভালো লাগছে। তুলির খুব করে ইচ্ছে করছে শাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু সাহস হচ্ছে না। সায়ান আসে

“মা চলো

” তুই তুলিকে কোলে নে

সায়ান আর তুলি তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে

“আমি হুইল চেয়ারে যেতে পারবো জাস্ট একটু ধাক্কা দিলেই হবে

” সায়ান ওকে নিয়ে আয়

সায়ানের মা চলে যায়। সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে বলে

“আমার মায়ের ওপর জাদুটাদু করছেন না কি?

” হুমমমম। বস করে রেখেছি

“তাই তো মনে হচ্ছে। আপনাকে তো দুচোখে দেখতে পারতো না আর আজ এতো কেয়ার করছে

” আমিও তাই ভাবছি। কেচটা কি?

“সেম টু ইউ

” গাড়িতে বসে দুজন পাল্লা দিয়ে ভাববো এবার ধাক্কা দেন

“ইডিয়েট

সায়ান তুলির হুইলচেয়ার ঠেলে নিয়ে যায়

“দাঁড়ান দাঁড়ান

” কেনো?
সায়ান দাঁড়িয়ে পরে। তুলি বলে ওঠে

তন্নি

মেয়েটা তুলির কাছে আসে।

“তোকে দেখতে আসলাম। তো তুই এমন খালাম্মা সেজে কোথায় যাচ্ছিস?

তন্নির কথায় সায়ান মুখ টিপে হাসছে। টেনেটুনে চুল খোপা করলে সত্যি খালাম্মা খালাম্মা লাগে। তুলি রেগে বলে

” চলে যাচ্ছি

“ও মা কেনো?

” তো কি তোর খালাম্মা ডাক শোনার জন্য বসে থাকবো না কি?

“সরি। প্লিজ যাস না

” যে হবে রে।

তন্নি মুন খারাপ করে। তন্নি তুলি কাজিন। ওদের বাসা তুলির বাসার পাশেই।জিসান তুলেকে এই মেয়ের কথাই বলেছিলো।
তন্নি নিচু হয়ে তুলির কানে কানে বলে

“বোইন সকালে একটা ছেলেরে দেখলাম

” কোন ছেলে

“আরে তোর ফ্রেন্ড

” ফ্রেন্ড কারে কয়?

“তুলি নেকামি করবি না

” নেকামি কেমনে করে?

“ভালো হচ্ছে না কিন্তু

” কি খারাপ হচ্ছে

“ওই ছেলেডারে ভাল্লাগছে 🙈 ক্রাশ খাইছি

” কেমনে খাইলি? তিতা না মিঠা

তন্নি তুলির চুল ধরে টান দেয়। তুলি রেগে যায়

“মনে মনে ভাবছিলাম পোলাডারে পটায় দিমু কিন্তু এখন আর না

” প্লিজ বোইন এমন করিস না

“করবোই রে। কিচ্ছু করার নাই। মিস্টার গোমড়ামুখো থুক্কু জামায় চলেন

তুলি তন্নিরে চোখ মেরে চলে যায়।

সায়ানের বাবা ডাইভ করছে সায়ানের মা পাশে বসে আছে। সায়ান আর তুলি পেছনে বসেছে।

“ওই শুনেন

” আপনার থেকে অনেক বড় আমি রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলুন

“শুনো না

” বফ না আমি আপনার

“শুনছেন

“বিয়াই লাগি না

” ওই শালা শোন
একটু জোরে বলে তুলি।
সায়ান বড় বড় চোখ বড় বড় করে তুলির দিকে তাকায়। তুলি দাঁত দিয়ে জিভ কাটে

“কি বললেন আপনি?
সায়ান রেগে বলে

” শুনেন নাই। ঠিক আছে আবার বলছি ওই

সায়ান তুলির মুখ চেপে ধরে

“শুনছি আর বলতে হবে না। স্টুপিট

তুলি উম উম করে

” বোবা হইলেন না কি?

তুলি সায়ানের হাতে জোরে একটা চিমটি কাটে। সায়ান চিৎকার দিয়ে হাত সরিয়ে নেয়। সায়ানের বাবা মা পেছনে তাকায়

“কি হয়েছে? (মা)

” মশা কামড়েছে

“কিহহহ আমাকে মশা বললো। কেমন খারাপ লোকরে বাবা
মনে মনে বলছে তুলি। সায়ান আস্তে আস্তে বলে

” চিমটি কাটলে কেনো

“ইয়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়েে

তুলি খুশিতে এক চিল্লান দেয়। সায়ান কান চেপে ধরে। সায়ানের বাবা গাড়ি থামায়। সবাই তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। তুলি এক হাত দিয়ে কান ধরে বলে

” সরি

“ইটস ওকে বাট ষাঁড়ের মতো চিল্লানোর কারণ কি? সায়ান বলে

” আজ আপনি আমাকে তুমি করে বলেছেন।

আজ মানে? সায়ানের মা বলে

“আপনার সাধু ছেলে আমাকে সম্মান দিয়ে আপনি করে বলতো। আজ ফাষ্ট তুমি কটে বললো।

সায়ানের বাবা মুচকি হেসে গাড়ি চালানো শুরু করে। সায়ান চুপচাপ বসে আছে।

” ভাবছি আমিও আর আপনি করে বলবো না তুমি করে বলবো। কেমন হবে?

“জঘন্য

” তবুও বলবো। আফটার আল একটা মাএ বর কি না

“বর আবার কয়ডা থাকে

” সাধারণত একটা থাকে তবে আমার দুইটা থাকবে

“মানে

” আপনি তো আমাকে ডিভোর্স দিলেন তো আমার আবার বিয়ে করতে হবে তাহলে তো দুইটা বর হবে

“চুপ করে একটু বসেন না।

” হুর

তুলি বাইরে তাকিয়ে দেখে জুজু দৌড়াচ্ছে ওদের গাড়ির পেছনে।

“আংকেল গাড়ি থামান

সায়ানের বাবা গাড়ি থামায়।

” কি হয়েছে

জুজুও গাড়ির কাছে আসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে

“পাপা

সায়ান গাড়ির দরজা খুলে জুজুকে কোলে নেয়

” তুমি এখানে? গাড়ির পেছনে দৌড়াচ্ছিলে কেনো?

জুজু কেঁদে দেয়

“মামনিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নানাভাই খুব বকেছে মামনিকে। আমাকেও বকেছে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছিলো। তারপর থেকে মামনিকে পাচ্ছি না। অনেক খুঁজেছি

সায়ান জুজুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে

” কাঁদে না মা। আমি দেখছি

“আমাকে তো মামনি ছাড়া কেউ ভালোবাসে না। মামনি বলে যাদের বাবা নেই মাথার ওপর ছায়া নেই তাদের কেউ ভালোবাসে না। আমার তো বাবা নেই তাই আমাদের কেউ ভালোবাসে না

জুজুর কথা শুনে সায়ান তুলি সায়ানের বাবা মা সবার চোখে পানি এসে যায়। বাবা ছাড়া সত্যি পৃথিবীটা অন্ধকার।

“আমি আছি তো।

সায়ান জুজুকে নিয়ে গাড়িতে বসে। তুলিকে জড়িয়ে জুজু কাঁদছে। জুজুকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা তুলির নেই। তুলির খুব রাগ হচ্ছে জুজুর নানাভাইয়ের ওপর।

তুলি আর জুজু লুডু খেলছে। সায়ান জুঁইকে খুঁজতে গেছে।

চলবে

শুধু তুই পর্ব-১৫+১৬

0

#শুধু তুই
#পর্বঃ১৫
#Tanisha Sultana (Writer)

রাস্তায় অনমনে হাঁটছে তুলি। সায়ানের কথা ভাবছে।

“সত্যি কি সায়ান জুঁইকে বিয়ে করবে? যদিও করে তাহলে আমি কি আটকাতে পারবো? আর আমি কেনো এতো অস্থির হচ্ছি। আমি তো ওনাকে ভালোবাসি না তাহলে ওনার পাশে অন্য কাউকে কেনো সয্য করতে পারছি না। কি হচ্ছে আমার সাথে? কি করবো আমি

একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খায় তুলি। পড়ে যায় তুলি। গাড়ি থেকে জিসান নেমে আসে। তুলি পায়ে প্রচুর ব্যাথা পায়৷ তুলির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

” তুই ঠিক আছিস

জিসান তুলিকে ধরে

“পায়ে খুব ব্যাথা করছে

তুলি কান্না করতে করতে বলে। সায়ান এদিকেই আসছিলো তাই ওদের দেখে ওদের দিকে আসে। তুলির পা থেকে রক্ত ঝড়ছে। জিসান তুলিকে কোলে তুলে নেয়। সায়ানের বুকের বা পাশে চিন চিন করছে৷

” ব্রো প্লিজ তুই ডাইভ কর তুলিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

সায়ান ডাইভিং সিটে বসে। জিসান তুলিকে নিয়ে পেছনের ছিটে বসে।

তুলির পা ভেঙে গেছে আর কেটে গেছে। পাঁচটা সিলি দেওয়া হয়েছে। বেডে শুয়ে আছে তুলি। হাঁটার মতো অবস্থায় নেই।

“তুলি এবার আমরা বাড়ি যাবো

তুলি এবার জিসানের দিকে তাকায়। সায়ান একটু দুরে দাঁড়িয়ে আছে।

” ব্রো তুলি হাঁটতে পারবে না। তুই ওকে কোলে করে নিয়ে আয়

“তখন তো তুই আনলি এখনও তুই নে

” তুলি কোথাও পোরা পোরা গন্ধ পাচ্ছি তুইও কি পাচ্ছিস

“হুম কারো মন পুরছে

” আপনি না অসুস্থ

“তো

” কথা বলছেন কি করে

“চোখে কি কম দেখেন না কি? আমার পা ভাঙছে মুখ না

” মুখ ভাঙলে ঠিক হতো
বিরবির করে বলে সায়ান

“কি বললেন

” কিছু না
জিসান

পাশে তাকিয়ে দেখে জিসান হাওয়া
জিসান কই গেলো

“চলে গেছে

” আপনাকে

“আপনি কোলে নিবেন

” অকালে প্রানটা হারাবো

“কি বললেন? তুলি রেগে বলে

” আসুন

“কানা না কি

” 😡😡

“আমি যদি আসতে পারতাম তাহলে তো হাঁটতেও পারতাম

” ইডিয়েট

তুলি হাত বাড়িয়ে বলে

“কোলে নেন

সায়ান তবে কোলে তুলে নেয়

” আপনার ওয়েট কতো

“42

” মিথ্যুক

“সত্যি

” ৮০ কেজি কে বলছে ৪২ কেজি
সায়ান বিরবির করে বলছে

“কি বিরবির করছেন?

” কিছু না

সায়ান হাঁটা শুরু করে। তুলি সায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে। সায়ানের কেনো জানি মুহুর্তটাকে খুব ভালো লাগছে। সময়টা যদি এখানেই থেমে যেতো। কিন্তু সেটা তো সম্ভব না।

কলিং বেল বাজায় জিসান। সায়ানের মা দরজা খুলে দেয়। সায়ানের কোলে তুলিকে দেখে ভ্রুকুচকে তাকায়

“ও কোলে কেনো?

তুলি সায়ানের গলা জড়িয়ে বলে

” শাশুমা আপনার ছেলেটা রোমান্টিক হওয়ার চেষ্টা করছে। তাই কোলে নিয়েছে। এতো দিন তো নিরামিষ ছিলো

“এখন বুঝি আমিষ
জিসান বলে

” আর আমিষ। কপাল খারাপ। এতোদিন হলো বিয়ের এপর্যন্ত একটা কিছ ও করে নাই। সম্মান দিয়ে কথা বলে আমার সাথে। মনে হয় আমি ওনার শাশুড়ী

সায়ানের মা কাশি দেয়

“কোথায় কি বলতে হয় সেটাও জানে না

সায়ানের মা চলে যায়। সায়ান হন হন করে তুলিকে রুমে নিয়ে যায়। বিছানায় শুয়িয়ে দেয়।

” মানুষ হবেন না তাই না

“আপনি মানুষ হবেন না

” আমি কি করছি

“আমি কি করছি

” ওসব কেনো বললেন

“মিথ্যা বলছি কি? আপনি তো নিরামিষ ই

” ওহহহ আচ্ছা

“হুমম। শুনুন না

” বলুন

“আমার একটা হবু বফ আছে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো আপনাকে।

” হবু বফ মানে কি

“ওয়েটিং এ আছে। ডিভোর্সের পরে এক্সেপ্ট করবো। তাই আপাতত হবু বফ

” পাগল একটা

“পাগল না পাগলি

” বসুন খাবার নিয়ে আসছি

“বিশ টিশ মিশায় দিয়েন না আবার

” চল্লিশ মিশিয়ে দেবো

সায়ান চলে যায়

“চল্লিশ আবার কি? পাগল হইলো না কি?

সায়ান তুলির জন্য খাবার নিয়ে আসে। তুলিকে ধরে বসিয়ে খাইয়ে দেয়। খাওয়া শেষে সায়ান প্লেট গোছাতে থাকে

” আমরা কি এক সাথে থাকতে পারি না

সায়ান থমকে তুলির দিকে তাকায়

“মানে

” মানে ফ্রেন্ড হয়ে। ডিভোর্সের পরে আমরা ফ্রেন্ড হয়ে থাকবো। যদি আপনি চান

“ভালো থাকতে কি লাগে?

সায়ান তুলির পাশে বসে পড়ে।

” ভালো একজন বন্ধু

“ভুল বললেন

” তাহলে

“বোঝার মতো ভালোবাসার মতো একজন মানুষ। যেটা আমার নেই। কেউ বোঝে না আমাকে। ছোট বেলা থেকেই সব সময় একা একা থাকতাম। কারণ কারো সাথে মিশতে ভালো লাগতো না। যখন নতুন কলেজে গেলাম জুঁইয়ের সাথে পরিচয় হলো। রিলেশন হলো।

” তারপর

“হাসতে শিখলাম। যে মানুষটা আমাকে হাসতে শেখালো আবার সেই হাসি কেড়ে নিলো। মজার বেপার কি জানেন আবার সেই মানুষটাই আমার জীবনে ফিরে আসতে চাইছে

” ভালো তো। আবার ভালোবাসার মানুষটাকে পাবেন

সায়ান একটু হাসে।

“শুয়ে পড়ুন

” জুজু কেমন আছে

“আমি ছাড়া সবাই ভালো আছে

সায়ান বেলকনিতে চলে যায়। সিগারেট ধরায়।

” তুলির জন্য মনের মধ্যে আলাদা একটা অনুভূতি হয়। ওর কাছাকাছি থাকতে ভালো লাগে। ওর পাগলামি ভালো। দোটানায় পড়ে গেছি আমি। কি করবো আমি? আমার জীবনটা কেনো এমন? যখন ভাবি হয়ত এখন একটু ভালো থাকবো তখনই ভালো থাকার জিনিসটা দুরে সরে যায়। বেঁচে থাকতে হয়ত আমি ভালো থাকতে পারবো না।

সায়ানের ফোনে ফোন আসে। জুজু কল করেছে

“পাপা কি করো

” বসে আছি সোনা। তুমি?

“মামনি বলছে তোমার সাথে কথা না বলতে। কিন্তু আমি তো তোমাকে এতোটা ভালোবাসি তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবো না। প্লিজ পাপা ডু সামথিং

“মামনি কি করে?

” রান্না করছে। নতুন মা কেমন আছে

“পা ভেঙে গেছে

“আমি নতুন মাকে দেখবো

” ঠিক আছে আমি কাল তোমাকে নিয়ে আসো

“প্রমিজ

” হুম প্রমিজ

“লাভ ইউ পাপা

” লাভ ইউ টু

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ১৬
#Tanisha Sultana (Writer)

রাত আটটা বাজে। তুলি সায়ানের অপেক্ষা করছে। সেই দুপুর বেলা বেরিয়েছে জুজুকে আনতে এখনো আসার নাম নেই।

“কি রে

জিসান আসে। তুলির পাশে বসে। তুলি একমনে সায়ানের কথা ভাবছে। জিসান যে ওর পাশে বসেছে সেদিকে তুলির খেয়াল নেই। সায়ান এবার তুলিকে একটু ধাক্কা দেয়

” কি রে কি ভাবছিস

“জিসান আমি তোর ভাইয়ের সাথে থাকতে চায়। সংসার করতে চায়।

জিসান তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। তুলি জিসানের হাত ধরে কেঁদে বলে

” খুব ভালোবাসে ফেলেছি তোর ভাইকে। আমি ওকে ছাড়তে চায় না।

“কিন্তু ভাই তোকে ভালোবাসে না

তুলি জিসানের হাত ছেড়ে দেয়। চোখের পানি মুছে

” কি বলতে এসেছিলি

“তুই তো কিছু খাস নি

” পরে খেয়ে নেবো

“তুলি

” সান্ত্বনা দিতে হবে না। আমি এমনিতেই স্টং

“সান্ত্বনা দেবো না। শুধু এটাই বলবো নিজের অধিকার ছাড়বি না

জিসান চলে যায়। তুলি চোখ বন্ধ করে ভাবছে

” আমি আমার অধিকার ছাড়বো না। কিন্তু জোর করে কি কারো মন জয় করা যায়? সায়ানের মনের কোথাও তো আমি নেই তাহলে কি করে অধিকার ধরে রাখবো?

এসব ভাবতে ভাবতে তুলি ঘুমিয়ে পরে। রাত দুটোই দরজা খোলার শব্দে তুলির ঘুম ভাঙে।
সায়ানের দিকে তাকিয়ে তুলি চমকে ওঠে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। চুল গুলো এলোমেলো। শার্ট ময়লা হয়ে গেছে। মুখটা শুকিয়ে গেছে।

“কোথায় ছিলেন আপনি?

সায়ান এক নজর তুলির দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। কিছুখন পরে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়।

” আমি জিজ্ঞেস করছি আপনি কোথায় ছিলেন?
তুলি একটু জোরে বলে

সায়ান তুলির সামনে এসে ডিভোর্স পেপার এগিয়ে দেয়

“আমি সাইন করে দিয়েছি আপনি সাইন করে কাল সকালেই বিদেয় হবেন প্লিজ

” আপনি এভাবে বলছেন কেনো?
তুলির চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি পড়তে।
সায়ান তুলিকে পেছন ঘুরে দাঁড়ায়।

“মুক্তি দিলাম আপনাকে

” আমি মুক্তি চায় না
তুলি চিৎকার করে বলে

“আমি চায়। আমি থাকতে চায় না আপনার সাথে। দম বন্ধ হয়ে আসে। যবে থেকে আমার লাইফে এসেছেন তবে থেকে বিরক্ত করে যাচ্ছেন। এবার একটু শান্তি দিন প্লিজ।
তুলির দিকে তাকিয়ে হাত জোর করে বলে
দয়া করে আপনার মুখটা যেনো আমাকে আর দেখতে না হয়।

সায়ান বেলকনিতে চলে যায়। তুলি হাউমাউ করে কাঁদছে। পায়ে অতিরিক্ত ব্যাথা নিয়েও দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। জিসান বলে চিৎকার করে। সায়ান আর জিসান দুজনই ছুটে আসে। সায়ান ধরার আগেই জিসান তুলিকে ধরে ফেলে। তুলির কাটা জায়গা থেকে রক্ত পড়ছে

” তুলি কি হয়েছে?

“জিসান আমি বাড়ি যাবো
তুলি কেঁদে বলে

” এতো রাতে

“হেল্প না করলে আমি একাই যাবো

” আমি নিয়ে যাচ্ছি

জিসান তুলিকে কোলে করে নিয়ে যায়।

বাড়ি গিয়ে কলিং বেল বাজায় জিসান। তুলিকে কোলে করে৷ তুলির মা দরজা খুলে দেয়। ওদের দেখে অবাক হয়

“তোরা এতো রাতে

জিসান কিছু না বলে তুলিকে তুলির রুমে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে চলে যায়। তুলির বাবা মা তুলির পাশে বসে আছে। তুলি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে

” মামনি কি হয়েছে?

“ঘুমাবো

” কিন্তু

“বলছি না ঘুমাবো বিরক্ত করছো কেনো?
তুলি চিৎকার করে বলে। তুলির বাবা মা চলে যায়।

জিসান নিজের রুমে ঢুকে দেখে সায়ান বসে আছে

” ব্রো তুই এখানে?

“তুলিকে ভালোবাসিস?

” হুম। তুলি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড বোনও বলতে পারিস। পাঁচ বছর নিনি ওকে।

“বিয়ে করে নিলেই তো পারিস

” এক মিনিট তুমি কি তুলি আর আমাকে নিয়ে জেলাস

“মাই ফুট

জিসান সায়ানের পাশে বসে

“আমি খুব খুশি যে তোর মতো একটা খুনির হাত থেকে তুলি বেঁচে গেছে। তুই তুলির মতো ভালো কাউকে ডিজার্ভ করিস না। আমি যদি কখনো তুলিকে ভালোবাসতাম তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম। এবার তুই যেতে পারিস

সায়ান জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে।

” যেতে বলছি

সায়ান বের হয়। জিসান দরজা বন্ধ করে দেয়।

প্রচন্ড জ্বর হয়েছে তুলির। হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে তুলিকে। তুলি কঠোর করে বলে দিয়েছে শশুড় বাড়ির কাউকে না জানাতে। জানালে তুলি চলে যাবে অনেক দুরে।

সকালে খাবার টেবিলে সবাই খাচ্ছে। সায়ানের মা বলে

“বেয়াদব মেয়েটার এখনো ওঠার নাম নেই। বাবা মা শেখায় নাই

জিসান খাওয়া ছেড়ে উঠে

” তুলি চলে গেছে। আমি আর তুলির নাম তোমার মুখে শুনতে চায় না

জিসান হনহন করে চলে যায়। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। তুলি কোথায় গেছে? কখন গেছে।

“তুলি চলে গেছে?

সায়ানও না খেয়ে চলে যায়।

অফিসে বসে আছে সায়ান। ভীষণ রাগ হচ্ছে নিজের ওপর। কেনো রাগ হচ্ছে জানে না সায়ান। রাগে মাথার চুল টানছে তুলি।

” মে আই কাম ইন

“তুলি আপনি কেনো এসেছেন? আপনাকে না চলে যেতে বলছি

” স্যার আমি মায়া

সায়ান দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মায়া।

“বলুন কি চায়?

মায়া ভেতরে ঢুকে

” স্যার তুলি কেমন আছে

“জানি না

” ওহহ। একটা কথা বলি

“হুমম

” আপনি তুলিকে

সায়ান গর্জে ওঠে

“তুলি তুলি তুলি। এই নামটাকে ভুলতে চায়। আই হেট তুলি

মায়া ভয়ে কেঁপে ওঠে।

” সরি স্যার

মায়া তাড়াহুড়ো করে চলে যায়।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে তুলি।

“মায়া নিশ্চয় সায়ানকে বলেছে আমি অসুস্থ। সায়ান কি আসবে একবার আমাকে দেখতে। ভালো না বাসলো মানবতার খাতিরে তো দেখতে আসতে পারে। আসবে তো সায়ান?

জিসান আসে। তুলির পাশে মোরা টেনে বসে

” কেমন আছে আমার জানুটা

“ভালো।

” পায়ের ব্যাথা কমেছে

“মোটামুটি

” খেয়েছিস

“হুম মা খাইয়ে দিয়েছে। তুই

” নারে

“ওখানে খাবার আছে খেয়ে নে

” লাভ ইউ বেবি

“ইয়াম্মি ইয়াম্মি খাবার দিলে নেইমার ও লাভ ইউ বলবো

” তাই না কি? নেইমার তোরে লাভ ইউ কইবো

“কথার কথা

” তাই বল। আমি তো প্রায় হার্টএ্যাটাক করছিলাম

তুলির মন ভালো নেই তাই আর কিছু বলে না।

চলবে

শুধু তুই পর্ব-১৩+১৪

0

#শুধু তুই
#পর্বঃ১৩
#Tanisha Sultana (Writer)

“আমি করলার গাড়িতে যাবো না

তুলি উল্টো পথে হাঁটা ধরে বলে। সায়ান বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে নামে। জিসান তুলির হাত টেনে ধরে

” জিসান হাত ছাড়

“আমি আর কোনো ড্রামা দেখতে চাচ্ছি না

তুলি জিসানের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয়

” জিসান চল আমরা বাসে করে যাবো

“কিহহহহ

” শুনতে পাস নাই? চিল্লিয়ে বলতে হবে না কি?

“জিসান তুই আমার সাথে যাবি আর এই মেয়েটাও। সায়ান বলে।

” আমি যাবো না

সায়ান তুলির হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দরজা লক করে দেয়

“ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
তুলি বেরোনোর চেষ্টা করতে করতে বলে। সায়ান গাড়ি স্ট্রার দেয়। জিসান দৌড়ে এসে কোনোরকম গাড়িতে ওঠে।

সায়ান ডাইভ করছে। তুলি ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপছে। জিসান শার্ট খুলে তুলির দিকে এগিয়ে দেয়

” এটা পড়ে নে

“বাই এনি চান্স তুই কি হিরো হওয়ার চেষ্টা করছিস

” মানে

“সাধারণত হিরোরা হিরোইনদের শার্ট জ্যাকেট এগুলো দেয়।

” আমার হিরে হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই জাস্ট তোর ঠান্ডা লাগছিলো তাই দিছিলাম।

“আমার ড্রেস ভেজা তো তুই তোর শার্ট দিয়ে কি ঠান্ডা কমাবি?

জিসান বিরক্তি নিয়ে তুলির দিকে তাকায়

” তুই মানুষ হবি না

“গরুকে ঘোড়ার দৌড় শেখানোর বিথা চেষ্টা করছিস তুই।
সায়ান জিসানকে বলে।

” জিসান করলাকে সাট আপ হতে বল নয়ত আমি জুঁই ফুলের রস খাইয়ে দেবো

“স্টুপিট

” আই নো

তুলি বাড়ির পেছনের দিকে যাচ্ছে

“ইডিয়েট টা ওদিকে যাচ্ছে কেনো?

” বুঝতেছি না।

“চল তো

” কোথায় যাস

তুলি ইশারায় চুপ করতে বলে

“আস্তে কথা বল

” কেনো?

“তোর করলা মা যদি জানতে পারে আমি চলে গেছিলাম আবার ফিরে এসেছি তো আমাকে অস্ত গিলে খাবে

” তো এখন কি করতে চাইছিস

“জানালা দিয়ে রুমে যাবো

” হোয়াট?

সায়ান চেচিয়ে বলে।

“জিসান ওনাকে গলা ফাটাতে না কর

” তুলি তুই অন্ধকারে কি করে যাবি

“দেখ না

তুলি চোরের মতো লুকিয়ে রুমে ঢুকে যায়।

” পাগল একটা
সায়ান বিরবির করে চলে যায়।

তুলি ড্রেস চেঞ্জ করে উকিলের সাথে কথা বলে। এক সপ্তাহের মধ্যে ওদের ডিভোর্স পেপার চলে আসবে। তুলির খুশি আর দেখে কে। খুশিতে নাগিন ডান্স করতে ইচ্ছে করছে তুলির।

সায়ান রুমে আসে। তুলি সায়ানকে ঘুরাতে থাকে। সায়ান ঠাস করে বেডে বসে পড়ে

“কি হচ্ছে?
সায়ান রেগে বলে। তুলি কানে হাত দিয়ে বলে

” সরি
তারপর সায়ানের পাশে বসে

“আর এক সপ্তাহ পরেই আমি চলে যাবো। আপনাকে মুক্তি দেবো। কি যে আনন্দ হচ্ছে

সায়ানের বুকের মধ্যে মোচড় দেয় তুলির চলে যাওয়ার কথা শুনে। ফ্যালফ্যাল চোখে তুলির দিকে তাকিয়ে আছে

” খুশিতে দেখি আপনার কথায় বন্ধ হয়ে গেছে। জানেন আপনিই ফাস্ট পারসোন যে আমাকে অপছন্দ করে। জানেন আমি এতো অকাম করি দুষ্টুমি করি তবুও সবাই আমাকে ভালোবাসে। আর আপনার আর আপনার মায়ের সামনে এতো ভালো বিহেব করি তবুও আপনারা আমাকে দুচোখে দেখতে পারেন না।

“এক সপ্তাহ

” অনেক সময় তাই না। কিন্তু কি করবো আর আগানো গেলো না সময়। জানেন আমি তো প্লান ও করে ফেলেছি ফিউচারে কি করবো

“কি করবেন?

” একটা রোমান্টিক ছেলে কে বিয়ে করবো। যে আমাকে ভালোবাসবে। আমার সব আবদার পূরণ করবে। অন্য মেয়ের দিকে তাকাবে না। আমাকে মারবে না। তবে চিন্তার বিষয় এমন ছেলে পাবো কই

তুলি গালে হাত দিয়ে ভাবছে।
“আচ্ছা জিসানকে বিয়ে করলে কেমন হয়? জিসানকে ঘর জামায় করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো। কেমন আইডিয়াটা

সায়ান কিছু না বলে বেলকনিতে চলে যায়।
ভোর পাঁচটায় তুলির ঘুম ভাঙে। পাশে তাকিয়ে দেখে সায়ান নেই।

” গোমড়ামুখোটা কোথায় গেলো? নিশ্চয় গার্লফ্রেন্ডের কাছে চলে গেছে। যাক না আমার কি? চলেই তো যাবো

তুলি উঠে বেলকনিতে চলে যায়। দেখে সায়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। তুলি পা টিপে টিপে গিয়ে সায়ানের পাশে দাঁড়ায়। তারপর সায়ানের কানের কাছে মুখ নিয়ে জোরে চিৎকার করে। সায়ান ভয় পেয়ে যায়। তুলি জোরে জোরে হাসতে থাকে।

“স্টুপিট

” হুম। আমি তো ভেবে নিয়েছি

তুলি সায়ানের পাশে বসে। সায়ান ভ্রু কুচকে বলে

“কি

” যে কটা দিন আছি আপনাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে মারবো। জানি প্রচুর বিরক্ত হবেন আমাকে ধমক দিবেন তবুও জ্বালাবো

“কেনো

” কারণ আপনাকে জ্বালাতে ভালো লাগে।

“ইডিয়েট

” ভাবছি

“কি

” আমি চলে গেলে আপনি কাকে ইডিয়েট বলবেন

“হুম

সায়ান আস্তে করে বলে।

” জুজুর সাথে কথা হয়েছে

“সরাসরি বললেই তো পারেন জুঁইয়ের সাথে কথা বলেছি কি না

“একই হলো। তাছাড়াও আমার কোনো আপত্তি নেই আপনার যা ইচ্ছে করেন আমার কী?

” হুম

“কি হুম হুম করছেন?

” একটা কথা বলবো

“বলেন

” জুজুর বাবাকে আমি মেরে ফেলেছি

তুলি চারশো বিশ বল্ডের শক খায়। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সায়ান স্বাভাবিক ভাবে আছে।

“কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না। ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে গেছিলাম। অনেক রাত ওবদি গান বাজনা করে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরি। সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি আমার হাতে চাকু আর পাশে জুজুর বাবার লাশটা পড়ে আছে।

সায়ান চোখের পানি মুছে। তুলির চোখেও পানি। এই মানুষটা খুন করছে। কথাটা হজম হচ্ছে না তুলির। কয়েকপা পিছিয়ে যায় তুলি।

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ১৪
#Tanisha Sultana (Writer)

ছাঁদে পায়চারি করছে করছে তুলি।

“সায়ান করেছে খুন। কি করে পসিবল। উনি তো মনে হয় একটা মসাও মারতে পারবে না। সব কেমন গোলমেল লাগছে।

” কি রে

জিসানের ডাকে তুলি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়।

“তুই

” চল বসি

তুলি আর জিসান দোলনায় বসে।

“মুড অফ

” নাহ তো

“তাহলে চুপচাপ কেনো?

” ভাবছি

“কিহহ

” ওই দেখ আম গাছ

তুলি পাশের ছাঁদে দেখায়।

“তো

” তো এখন আম চুরি করবো

জিসান পড়ে যায়। তুলি টেনে তোলে

“চুরি করমু

” হুম

“চল

” দেখ

“দেখমু কি?

” চুরি করা মহা পাপ

তুলি জিসানের দিকে চোখ গরম করে তাকায়।

“যাচ্ছি তো চল

তুলি গাছে উঠছে জিসান নিচে দাঁড়িয়ে আছে।

” তাড়াতাড়ি কর কেউ চলে আসবো

জিসান

পেছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান। জিসান চমকে ওঠে।

“তুই ওখানে কি করছিস

” ননননা মমমমমাননননে

“তুতলাসছিস কেনো?

” জিসান কে রে

তুলি গাছ থেকে বলে। সায়ান গাছের দিকে তাকিয়ে চোখ বড়বড় করে

“আপনি ওখানে কেনো?

” চুরি করতে এসেছি

“মানে

” আস্তে কথা বল ব্রো নইলে

“নইলে কি? আমি এখন চিৎকার করবো

তুলি সায়ানের মাথায় আম ফেলে

” আহহহ

“আর একবার কথা বললে মাথা ফাটায় ফেলমু
জিসান ধর

তুলি আম ফেলে জিসান কুরায়। সায়ান হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে।

” গাছে কে?

নিচ থেকে গাছের মালিক বলে
তুলি তাড়াহুরো করে নামতে গিয়ে ঠাস করে পড়ে যায়। তাও আবার সায়ানের ওপর। জিসান হাত বাড়িয়ে দেয় তুলি হাত ধরে টান দেয় ফলে সায়ান নিচে তারওপর তুলি তারপর জিসান।

“ও আল্লাহ গো আমার কোমর গেলো রে। আমি মরে গেলাম রে। এ্যা এ্যা

” হেলো আমার ওপর দুইশো কেজির বস্তা পড়ে আছে আপনার ওপর না

তুলি এবার তাকিয়ে দেখে সত্যি তাই।

“ওই জিসানের বাচ্চা ওঠ

জিসান ওঠে। তুলিকে টেনে ওঠায়। সায়ান পায়ে বেশ খানিকটা ব্যাথা পায়। তুলি হাত বাড়িয়ে দেয়

” নিন উঠুন

“ইডিয়েট

” আই নো এবার উঠুন

সায়ান তুলির হাত ধরে উঠে।

“তাড়াতাড়ি চল না হলে মালিক আমাদের দেখে ফেললে কিমা বানাবে

কোনো রকম দৌড়ে চলে যায়। সায়ানের রুমে এসে হাঁপাচ্ছে তুলি জিসান আর সায়ান। সায়ান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তুলি জিসানের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে।

” এএএভাবে তাকাচ্ছেন কেন? বাচ্চা মেয়ে ভয় পেয়ে তো মরেও যেতে পারি

“হুম তুলি ঠিক কইছে

” আপনি বাচ্চা?

“হহ নিষ্পাপ টুনুমুনু একটা বাচ্চা 😎

” চোর আপনি একটা। চিৎকার করে বলে

“ছি ছি ছি

সায়ান জিসান চোখ বড় বড় করে তাকায়।

” আপনার বউ একটা চোর। এটা তো আমি সবাইকে বলবো

তুলি বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় সায়ান তুলির হাত ধরে ফেলে

“কোথাও যাবেন না আপনি

জিসান চলে যায়।

” কেনো যাবো না

“আমি বলছি তাই

” হুম যাবো না একটা শর্তে

“কিহহ

” আমাকে তুমি বা তুই করে বলতে হবে

সায়ান হাত ছেড়ে দেয়।

“যেতে পারেন

সায়ান চলে যায়।

” কি ডেমাগ। বলি আমাকে তুমি করে বললে কি মহা ভারত অসুদ্ধ হয়ে যাবে? তবে আমি আপনার থেকে তুমি ডাকটা না শুনেছি তবে আমার নামও তুলি নয়।

তুলি বেলকনিতে চলে যায়। বসে বসে চুরি করা আম খায়।

সায়ান আজ জুজুদের বাড়িতে যায়। কাল থেকে একবারও ওদের খোঁজ নেওয়া হয় নি। জুজুদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজায়। জুজুর নানা (আজিম) দরজা খুলে দেয়

“তুমি এখানে?

” জুজুকে দেখতে এসেছিলাম।

সায়ান ভেতরে ঢুকে।

“সায়ান তুমি ওই মেয়েটাকে ডিভোর্স দিয়ে জুঁই কে বিয়ে করবে

সায়ান চমকে ওঠে আজিমের কথা শুনে।

” কি বলছেন আপনি?

“ঠিকি তো বললাম। নিরবকে (জুজুর বাবা) তুমি মেরে ফেলেছো। কেনো? জুঁইকে পাওয়ার জন্য। আমি তখন জোর করে জুঁইয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলাম। আর তুমি জুঁইয়ের স্বামীকে মেরে ফেলেছো। জুজুকে এতিম করে দিয়েছো। এর দায় তো তোমাকে নিতে হবেই

” আমি মারি নি নিরবকে।

“প্রমান তো বলছে তুমি মেরেছো। তোমার কেরিয়ারের কথা আর তুমি বলেছিলে জুজু আর জুঁইয়ের দায়িত্ব নেবে তাই আমি কথাটা গোপন রেখেছিলাম। কিন্তু এখন তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে না করলে কথাটা পুরো দেশ জেনে যাবে। থানা পুলিশ হবে। তোমার পরিবার কি কথাটা সয্য করতে পারবে

সায়ান মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।

” সিদ্ধান্ত তোমার

“জুজু কোথায়?

” তুমি সিদ্ধান্ত জানাও আমি ওদের কথা বলবো

“ভাবার জন্য একটু সময় চায়

তুলি সায়ানকে ফলো করতে করতে এখানে চলে আসে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সবটা শুনে

” সায়ানকে ভয় দেখাচ্ছে কেনো লোকটা। সব কিছুর পেছনে এই লোকটা জড়িয়ে নেই তো? জানতে হবে আমাকে। সায়ানকে আমি ছাড়ছি না। দেখি এই টাকলুটা কি করে আমার বরের সাথে ওনার মেয়ের বিয়ে দেয়।

চলবে