Tuesday, July 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1612



শুধু তুই পর্ব-১০+১১+১২

0

#শুধু তুই
#পর্বঃ১০
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ান জুজুকে কোলে করে জুজুর মায়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। তুলি চোখের পানি টা মুছে ফেলে

“ধুর ধুর আমার কেনো খারাপ লাগছে উনি তো আমার কেউ না। তবে আমি সায়ানকে এই মহিলার সাথে কথা বলতে দেবো না। কিছু একটা করতেই হবে

তুলি পুরো রুম ঘুরে ঘুরে দেখে। একটা ডাইরি পায়। ডাইরির পাতায় উল্টে দেখে বড় বড় করে লিখা সায়ানের জুঁই

” উহহহ সায়ানের জুঁই। বেয়াদব মহিলা

তুলি পুরো ডাইরিটা পড়ে।

“তাহলে এই বেপার। আমার কি করা উচিৎ এখন? করবোটা কি? সায়ান কোনো ভাবেই এই মহিলাটাকে ডিজার্ভ করে না। দুনিয়ায় এতো ভালো কিউট কিউট মেয়ে থাকতে সায়ান কেনো এই মহিলার পেছনে পরে থাকবে? আর আমিই বা সেটা কেনো হতে দেবো?

” আপনি ওখানে কি করছেন?

সায়ানের কন্ঠে তুলি হকচকিয়ে যায়। হাত থেকে ডাইরিটা পড়ে যায়। সায়ান তুলির কাছে যায়

“আপনি না অসুস্থ

” কে বললো?

“কে বললো মানে আমি দেখেছি

” কি দেখেছেন

“ইডিয়েট

” আই নো

“চলুন

” কোথায়?

“আমার মাথায়?

” এতো ত্যাড়া কেনো আপনি?

“কি?

” আপনার মাথা

তুলি সায়ানের আগে আগে বেরিয়ে যায়

“এই মেয়েটা আমাকে পাগল করে দেবে।

জুজু ওর ফ্রেন্ড দের সাথে সায়ানের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। তুলি এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। জিসানকে ফোন করছে কিন্তু জিসান ফোন তুলছে না

” জিসানের বাচ্চা তোকে আগে হাতের কাছে পায় তার দেখ কি করি
তুলি বিরবির করে জিসানকে বকছে। তখন একটা মহিলা তুলিকে জিজ্ঞেস করে

“তোমার নাম কি?

তুলি বিরক্তির সাথে উওর দেয়

” তুলি

“বাবার নাম

” তুহিন

“আমার ছেলেটা সরকারি চাকরি করে দেখতে শুনতে ভালোই। তা তোমার বাবার সাথে কথা বলি

” ঠিক আছে বাবার নাম্বারটা তুলুন

মহিলাটা তুলির বাবার নাম্বার নেওয়ার জন্য ফোন হাতে নেয় তখন সায়ান আসে

“আন্টি ও বিবাহিত।

” কিহহহহ

তুলি সায়ানকে বলতে না করছে তাও সায়ান বলছে

“হুম আন্টি। আর আমি ওর স্বামী

মহিলাটা রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়।

” এই যে একদম আমাকে আপনার বউ বলে পরিচয় দেবেন না। আমার একটা সম্মান আছে

“আমারও আপনাকে বউ বলে পরিচয় দেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। আমারও অনেক গুলা সম্মান আছে

” ও মা গো তাই না কি? তো এখন বললেন কেনো?

“বাবার ফ্রেন্ডদের বউ উনি তাই পরিচয় দিলাম।

” আমাকে উদ্ধার করছেন। শুনুন

“বলুন

” মদ খাবো

“কিহহহহহহহ

” ওই দিন খাইছিলাম অনেক ইয়াম্মি খেতে আমি খাবো

সায়ান হাত জোর করে

“দয়া করুন আমাকে

” হুররর

তুলি দৌড়ে চলে যায় মদ আনতে। কিন্তু কোথাও মদ পায়,না শুধু জুসের বোতল মদ নাই। তুলি মন খারাপ করে আবার সায়ানের কাছে চলে যায়। সায়ান জুজুর মায়ের সাথে কথা বলছিলো

“ও গো শুনছো
সায়ানের হাত ধরে বলে

” বলুন

তুলি টান দিয়ে সায়ানকে নিচু করে কানে ফিসফিস করে বলে

“আর একবার যদি আপনি করে বলেন তো আপনার একদিন আমার যতদিন লাগে। তুমি করে বলেন

” কি গো

“ববলো। সায়ান থেমে থেমে বলে

” সায়ান ও
তুলি জুঁইয়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে

“ও মা জানেন না আমি ওনার বউ।

” বউ

“হুমমম। সায়ান তুমি ওনাকে বলো নি

” জুঁই বাবা

জুঁই সায়ানকে থামিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বলে

“বাহহ তোমার বউটা তো খুব মিষ্টি। দোয়া করি সুখী হও

জুঁই চলে যায়। সায়ান তুলির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়

” আপনি এভাবে কেনো বললেন?

“ইচ্ছে হয়েছে তাই

” লিসেন আমি আপনাকে স্ত্রী হিসেবে মানি না আর মানবোও না।

“এতে আমার কিচ্ছু এসে যায় না। না মানলেও আমি আপনার বউ। আর আমি এক বাচ্চার মা কে আপনার সাথে সয্য করবো না। যতখন এখানে আছি সব সময় আমার সাথে থাকবেন। ভুলেও যদি ওই মহিলার সাথে কথা বলতে দেখি তো চিৎকার চেচামেচি করে মাথায় তুলে ফেলবো। আর আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না। বুঝলেন আমার টুনুমুনু বর।

তুলি চলে যায়। সায়ান ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। তুলির শশুর বাড়ির সবাই চলে এসেছে। তুলি জিসানের কান ধরে টেনে এক সাইডে নিয়ে যায়

” আরে তুলি কানটা ছাড় লাগছে তো

তুলি কান ছেড়ে দেয়

“কতোবার ফোন দিছি তোরে

” সরি রে

“তোর সরি তুই তোর পকেটে রাখ। জানিস দারুণ একটা খবর আছে

” কিহহ

“জুজুর মায়ের নাম জুঁই

” এটা তো আমি ছোট বেলা থেকে জানি

“বলতে তো দিবি

” বল

“তোর ভাই জুজুর মাকে প্রচন্ড ভালোবাসে

” জানি

“আমাকে আগে কেনো বলিস নি

” বললে কি করতি

“লুঙ্গি ডান্স করতাম

” আবার

“হুর কথা বলার মুডটাই নষ্ট করে দিলি।

” তুই আমাকে মোটামুটি যা বলবি তা আমি জানি

“এবার উপায় বল

” তুই তো ভাইয়াকে লাইকই করিস তো এসব দিয়ে কি করবি

“আমি ওনাকে ওই মহিলার সাথে মিশতে দেবো না

” এই এক মিনিট তুই কি কোনোভাবে সায়ান চৌধুরীর প্রেমে পরে গেলি না কি। তাহলে গান ধরতে হবে

“প্রেম জেগেছে আমার মনে বলছি আমি তাই, তোমায় আমি ভালোবাসি তোমায় আমি চায়”

তুলি বিরক্ত হয়ে চলে যায় জিসানের ওই খান থেকে।

“সব পাগল এতো পাগলের মধ্যে আমি যে কি ভাবে থাকবো সেটাই বুঝতে পারছি না। আল্লাহ আমারে নেও একেবারে না কয়েকদিনের জন্য।

অনুষ্ঠান শেষ হতে রাত একটা বেজে যায়। জিসান ডাইভ করছে আর তুলি পাশে বসে আছে। সায়ান পেছনে বসেছে।

” জিসান

“বল

” একটা গান ধর তো

“এখানে কোনো গান হবে না

সায়ান বলে।

” এখানে গান হবে। জিসান ১ ২ ৩

“প্রেম জেগেছে আমার মনে বলছি আমি তাই, তোমায় আমি ভালোবাসি তোমায় আমি চায়

জিসান আর তুলি উচ্চ সুরে গান গাইছে সায়ান কানে হাত দিয়ে বসে আছে।

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ১১
#Tanisha Sultana (Writer)

মাঝ রাতে তুলির ঘুম ভেঙে যায়। ঘড়ির কাঁটায় দুইটা ছুঁই ছুঁই। তুলি সোফায় ঘুমায়। বিছানার দিকে চোখ পরতেই দেখে সায়ান নেই। তুলি উঠে বসে

“যাহহ বাবা উনি আবার কই গেলো? জুঁইয়ের কাছে চলে যায় নাই তো। গেলে যাক আমার কি? ভাববো না আর ওনার কথা।

হঠাৎ গিটারের সুর ভেসে আসে। সাথে গান

” এতো রোদ্দুর তুই এনে দিলি তাই তোর বৃষ্টি আমি একটু পেতে চায়
মেঘলা হয়ে যাক আরও পাঁচটা বারো মাস কোনো বিকেল বেলাতে তুই আমার হয়ে যাস
#শুধু তুই শুধু তুই আর চাইছি না কিছুই

তুলি গানের সুর অনুসরণ করে বাগানে চলে যায়। সায়ান গিটার বাজাচ্ছে আর গান গাইছে। তুলি সায়ানের পাশে বসে। সায়ান গান গাওয়ায় এতোই মগ্ন ছিলো যে তুলি ওর পাশে বসে আছে তা খেয়াল ই করে নি।

গান শেষে পাশে তাকিয়ে দেখে তুলি

“একি আপনি এখানে?

” গান শুনতে এলাম

“গান তো শেষ এবার যান

” হা করে ইলি বলেন তো

“হোয়াট

” হা করে ইলি বলতে বলছি

“এটা কখনো পসিবল না

” আপনাকে ছাড়াও পসিবল না

“কি বলছেন পাগলের মতো

” বুঝবেন না। তবে গানটা দারুণ গান

“জানি

” আর কি কি জানেন

“ইডিয়েট

” আচ্ছা সব সময় আমার সাথে এভাবে কথা বলেন কেনো? মানছি আপনার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমাদের বিয়েটা হয়েছে তাই বলে এভাবে কথা বলার কি আছে? আমি তো বলেছি চলে যাবো। যে কটা দিন আছি একটু ভালো করে কথা বলুন না

তুলির কথায় সায়ান চুপ হয়ে যায়।

“আপনি যত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন ততই আপনার ভালো।
শক্ত কন্ঠে বলে সায়ান।

” আমি চলে গেলে আপনি বেঁচে যান তাই না

সায়ান এক পলক তুলির দিকে তাকায়।

“হয়ত

” আচ্ছা আমরা তো ফ্রেন্ড হতেই পারি তাই না? করবেন আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ

তুলি সায়ানের দিকে হাত এগিয়ে দেয়। সায়ান তুলির হাতের দিকে তাকিয়ে আছে

“আমার মতো খারাপ মানুষের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করা যায় না

তুলি হাতটা নামিয়ে নেয়।

” আপনি খাবাপ? হুম আপনি একটু লুচু টাইপের লোক বউ থাকতেও একটা মহিলার পেছনে ঘুরেন বাট আমার তো আপনাকে খারাপ মনে হয় না

“মাঝে মাঝে আমরা চোখের সামনে যা দেখি সেটা ভুল হয়।

” কিন্তু

“আমি রুমে যাচ্ছি।

সায়ান উঠে চলে যায়।

” কি বোঝাতে চাইছে সায়ান? অনেক বড় একটা রহস্য আছে যেটা আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে।

তুলিও রুমে চলে আসে। সায়ান লম্বা হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। তুলি আস্তে করে দরজা চাপিয়ে দিয়ে সোফায় শুতে যায়।

“আপনি চাইলে বিছানায় শুতে পারেন।

সায়ান চোখ বন্ধ রেখেই বলে। সোফায় শুয়ে তুলির ঘাড় ব্যথা হয়ে গেছে। তাই সায়ান একবার বলাতেই বিছানায় শুয়ে পরে। মাঝখানে কোলবালিশ রেখে।

” আপনার মনে অনেক প্রশ্ন। আমি কেনো জুজুকে নিজের সন্তানের মতো আগলে রাখি। কেনো জুজুর মায়ের খেয়াল রাখি। কেনো গোমড়ামুখো হয়ে থাকি।

তুলি মাথা উঁচু করে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে

“আপনি জানলেন কি করে?

সায়ান চোখ খুলে তুলির দিকে তাকায়

” জুজু আর জুঁই আমার দায়িত্ব। আর দায়িত্বের কাছে ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই।

“কিছুই বুঝলাম না

” গুড নাইট

সায়ান আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। তুলি কিছু বলতে গিয়েও বলে না।

তুলির ঘুম ভাঙতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়।

“ও মাই আল্লাহ এখন তো করলা শাশুড়ী আমাকে করলা খাইয়ে ছাড়বে।

তুলি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায়। সবাই খাচ্ছে। তুলির শাশুড়ী আর কাকিমনি খাবার সার্ভ করছে। তুলি কাচুমাচু হয়ে ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

“বাড়ির বউ দুপুরে ঘুম থেকে উঠছে চমৎকার।

” সরি আন্টি আসলে

তুলির শাশুড়ী তুলিকে থামিয়ে বলে

“এক্সকিউজ দিতে হবে না। তুমি যে গুড ফর নাথিং সেটা আমি আগেই জানতাম তাই তো আমার সায়ানের গলায় তোমাকে ঝুলাতে চায় নি কিন্তু কপালে দোষ

তুলির কান্না পাচ্ছে। তুলি অনেক কষ্টে কান্না থামায়।
জিসান বলে

” মা তোমার পবলেম কি বলো তো? সব সময় তুলির সাথে এমন বিহের করো কেনো?

“ও কে আমার জাস্ট সয্য হয় না বুঝলি তুই

শাশুড়ী রেগে মেগে চলে যায়। তুলিও দৌড়ে রুমে চলে যায়। বেলকনিতে বসে কান্না করছে তুলি। কেনো জানি খুব কান্না পাচ্ছে। তুলির বাবা ফোন দেয়। তুলি ফোনটা রিসিভ করে কানে নেয়

” কেমন আছে আমার মামনিটা

তুলি এবার শব্দ করে কেঁদে ওঠে

“কি হয়েছে কান্না করছিস কেনো?

” আমাকে নিয়ে যাও না বাবা প্লিজ

“তুলি

” বাবা এখানে কেউ আমাকে চায় না। এখানে আমার কোনো সম্মান নেই।

“ঠিক আছে কাল নিয়ে আসবো তোমাকে

তুলি ফোনটা রেখে দেয়।

” শুনুন

পেছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান খাবার প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তুলি চোখের পানি মুছে ফেলে। সায়ান তুলির পাশে বসে।

“চলে যাবেন?

” হুম

“আর কিছু দিন থেকে যান

তুলি সায়ানের দিকে তাকায়

” না মানে আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাক তারপর যাইয়েন। এখন আপনি বাড়ি গেলে অনেকে অনেক কথা বলবে। অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। তাই বলছিলাম আর কি। বাকিটা আপনার ইচ্ছা।

“আমি চলে গেলে আপনি আমাকে মিছ করবেন?

তুলি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করে

” এই তো কাঁদছিলেন

“আমি বেশিখন কাঁদতে পারি না। সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট না হেসে থাকতে পারি না

“খেয়ে নিন

” আপনি আমার জন্য খাবার এনেছেন😱😱 সামথিং সামথিং

“ইডিয়েট

সায়ান চলে যায়। তুলি খাওয়া শুরু করে

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ১২
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ান অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে আর তুলি টিভি দেখছে

“অফিসে যেতে হবে আপনাকে?

” কেনো?

“টাকা দিয়ে পিএ রেখেছি কাজ করানোর জন্য। বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর জন্য না

” করলা
তুলি বিরবির করে বলে

“কি বললেন?
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে সায়ান।

” আপনার মাথা
তুলি বিরক্তি নিয়ে চলে যায়।
দুইদিন পরে তুলি অফিসে যাচ্ছে কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

“সবই তো নিয়ে এসেছি তাহলে এমন খালি খালি লাগছে না

তুলি নিজেকে একবার ভালো করে দেখে মনে মনে বলে।

তুলি সায়ানের কেবিনে উঁকি দিয়ে দেখে সায়ান আর জুজুর মা কিছু নিয়ে আলোচনা করছে।

” আসবো বাবু
তুলি নেকা সুরে বলে। সায়ান ড্যাপড্যাপ করে তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। জুঁই উঠে দাঁড়ায়।

“কি হলো আন্টি আপনি দাঁড়িয়ে গেলেন কেনো?

তুলির মুখে আন্টি শুনে জুঁই বড় বড় চোখ করে তুলির দিকে তাকায়

” আন্টি

“আপনি বাইরে যান আমরা দরকারি কথা বলছি। সায়ান শক্ত কন্ঠে বলে।

” কি এমন কথা যা আমার সামনে বলা যাবে না

“যেতে বললাম তো

তুলি সায়ানের পাশে চেয়ার টেনে বসে পরে।

” আমি যাবো না

“জুঁই চলো আমরা চলে যায়

” সায়ান ও

তুলি জুঁইকে থামিয়ে জুঁইয়ের সামনে যায়

“আপনার লজ্জা করে না। আমার সংসারটা কেনো ভাঙছেন আপনি? মানছি সায়ান আপনাকে ভালোবাসতো আপনিও সায়ানকে ভালোবাসতেন। আপনার বাবা জোর করে আপনার বিয়ে দিয়ে দিছে। ভালোই সুখে ছিলেন। সায়ানের তো একবারও খোঁজ ও নেন নি। মরে গেছে না কি বেঁচে আছে সেটাও জানতে চান নি। এখন যখন আপনার স্বামী আপনাকে ছেড়ে দিলো তখন আপনি আবার সায়ানের ঘাড়ে চেপে বসলেন

সায়ান তুলিকে সায়ানের দিকে ঘুড়িয়ে ঠাস করে একটা চড় মেরে দেয় তুলির গালে। জুঁই কেঁপে ওঠে। তুলি তাক সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায়।

” যা জানেন না তা নিয়ে কেনো বাড়াবাড়ি করেন আপনি?

চিৎকার করে বলে সায়ান।

“সায়ান তুমি ওর গায়ে কেনো হাত তুললে?

জুঁই তুলিকে তুলতে যায়। তুলি নিজে নিজে উঠে দাঁড়ায়। গালটা লাল হয়ে গেছে। পাঁচটা আঙুলের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তুলি বেরিয়ে যায়। সায়ান দেয়ালে ঘুসি মারে।

” কি করলে তুমি এটা?
চোখ মুখ শক্ত করে জিজ্ঞেস করে জুঁই

“একটু বেশি পাকনামি করে মেয়েটা। জানে না বুঝে না শুধু শুধু নাক গলায়

” তুলির দিক থেকে তুলি ঠিকি আছে। নিজের স্বামী যদি অন্য একটা মেয়ের পাশে ছায়ার মতো থাকে তাহলে তো খারাপ লাগবেই। আমার ই দোষ

“জুঁই

” অনেক করেছো সায়ান আমার আর জুজুর জন্য। আমার মেয়েটাকে বাবার ভালোবাসা দিয়েছো। বাবার অভাব পূরণ করেছো। তোমার দায়িত্ব শেষ। এবার নিজের লাইফের ওপর ফোকাস করো। তোমাদের ঘড়ে ছোট্ট একটা জুজু নিয়ে এসো।

সায়ান অন্য দিকে ঘুরে যায়।
জুঁই সায়ানের পাশে দাঁড়ায়।

“আমি জানি না অনিক (জুজুর বাবা) বেঁচে আছে কি নে। অনিক তোমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলো তুমি পূরণ করেছো। এবার আমি নিজেই জুজুর দায়িত্ব নিতে চায়

জুঁই আর এক মুহূর্ত দেরি না করে চলে যায়।

দুইঘন্টা যাবৎ তুলি জিসানের রুমে বসে আছে। সায়ানের রুমে যাবে না। ইভেন সায়ানের সামনেও যাবে না তুলি। তুলির শশুর কাকিমনি অনেক করে জিজ্ঞেস করেছে তুলির কাছে কি হয়েছে তুলি কারো সাথে কথা বলছে না। জিসান বাড়িতে নেই।

জিসান বাড়ি ফিরে রুমে ঢুকে দেখে তুলি নাক টানছে আর কাঁদছে। তুলি সাধারণত জিসানের রুমে আসে না। আজ এসেছে আবার কাঁদছেও জিসান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তুলির এবার জিসানের দিকে চোখ পড়ে।

” আমি কাঁদছি আর তুই দাঁড়িয়ে দেখছিস আমাকে সান্ত্বনা দে

নাক টেনে বলে তুলি। জিসান এবার তুলির পাশে বসে।

“কাঁদছিস কেনো?

” তোর ভাই মারছে আমারে

“ওহহ তাহলে বেশি করে কাঁদ। জোরে জোরে কাঁদ

তুলি কান্না থামিয়ে জিসানের দিকে কড়া চোখে তাকায়

” আরে এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো ভয় পায় তো।

“কেউ ভালোবাসে না আমাকে

তুলি কান্না করে বলে।

” এক কাজ কর ফেসবুকে স্টাটাস দে কেউ ভালোবাসে না আমাকে

“থাকবো না এখানে। তুইও খারাপ

তুলি জিসানের রুমে থেকে বেরিয়ে যায়। ছাঁদে চলে যায়। চোখ বন্ধ করে দোলনায় বসে আছে তুলি।

“কেনো যে বাড়াবাড়ি করি আমি। কি দরকার ছিলো জুঁই কে এতো কিছু বলার। কেনো বললাম আমি? থাক না ওরা ওদের মতো। আমার কি? আমি থাকবো না ওদের মাঝে। চলে যাবো। কিন্তু কথাটা হলো যাবো কোথায়? বাবার বাড়িতে যাওয়া যাবে না আবার গলা ধাক্কা দিয়ে এখানে পাঠিয়ে দেবে।
এতো ভেবে লাভ নেই যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকেই চলে যাবো। তবুও আমি যাবো।

তুলি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। টাকা পয়সা কিছু আনে নি। হাঁটছে তো হাঁটছেই। বিকেল হয়ে গেছে। তুলির পা ব্যাথা হয়ে গেছে। কোথায় চলে এসেছে তুলি সেটাও জানে না। একটা গাছের নিচে বসে পড়ে তুলি

” কেনো যে চলে আসতে গেলাম। এখন কোথায় যাবো? কি করবো? রাত হয়ে আসছে

বিরবির করে এসব বলছে তুলি। রাস্তার পাশে বসে থাকাতে অনেকেই তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশে মেঘ ডাকছে। লোকজন ছুটোছুটি করে যে যার গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। শুধু তুলি বসে আছে। হঠাৎ ঝুমঝুম করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। তুলি গাছের নিচে বসে ভিজছে।

সায়ান অফিস থেকে বাড়ি এসে রুমে চলে যায়। দেখে তুলি নেই। হয়ত ছাঁদে বা জিসানের রুমে আছে এটা ভেবে সায়ান ফ্রেশ হতে যায়। জিসান তুলিকে খুঁজতে এসে দেখে তুলি রুমে নেই। ওয়াশরুমে সাওয়ার চলছে তাই ভাবে হয়ত ওয়াশরুমে আছে।

সায়ান চুল মুছতে মুছতে বাইরে এসে দেখপ জিসান বেডে বসে আছে

“ইডিয়েট টা কোথায়?

সায়ান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে

” তুলি রুমে নেই

“নাহহহ

” তাহলে কোথায় গেছে

সায়ানের হাত থেকে টাওয়াল পরে যায়। জিসান বেরিয়ে পরে তুলিকে খুঁজতে। সায়ানও যায়।

সন্ধা হয়ে আসে। সূর্য ডুবে গেছে। বৃষ্টিও কিছুটা কমেছে। তুলি এখনও ওখানেই বসে আছে। অনেকখন ভেজার ফলে তুলির প্রচুর ঠান্ডা লাগছে।

সায়ানের অফিসের এক কর্মচারী তুলিকে এখানে বসে থাকতে দেখে সায়ানকে জানায়। সায়ান আর জিসান তুলির দিকে আসছে।

তুলির সামনে গাড়ি থামে। গাড়ি থেকে জিসান আর সায়ান নামে। জিসান রেগেমেগে তুলির আরেক গালে চড় মেরে দেয়।

“তোর যখন যা ইচ্ছে হবে তুই তাই করবি? এতো কেয়ারলেস কেনো তুই? তোর জন্য কারো চিন্তা হতে পারে তা তুই জানিস?

জিসান চিৎকার করে কথা গুলো বলছে আর হাঁপাচ্ছে। তুলির রাগ বেড়ে যায় একগালে জিসান আরেক গালে সায়ান থাপ্পড় মেরেছে। দুটো গালই লাল টমেটো হয়ে গেছে। সায়ান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুলির দিকে।

তুলি আবার চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। বৃষ্টির কারণে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে গেছে। তুলি ধপাক করে আছাড় খায়। রাগে দুঃখে তুলি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলে।

” মানুষ হবেন না

সায়ান তুলিকে উঠাতে যায়। তুলি সায়ানের হাত ধরে টান দিয়ে সায়ানকেও ফেলে দেয়। সায়ান পড়ে যাওয়াতে তুলি ফিক করে হেসে ওঠে। জিসান হো হো করে হাসছে।

“জিসান আমাকে তোল

তুলি হাত বাড়িয়ে দেয়। জিসান তুলির হাত ধরতেই তুলি জিসানকেও ফেলে দেয়। তিনজনই কাঁদায় মাখিয়ে গেছে। সায়ান তুলিকে বকতে চায় কিন্তু তুলির এতো খুশি দেখে আর কিছু বলে না।

” আমাকে ফেললি কেনো?

“আমাকে মারলি কেনো? দেখ গালটা কেমন লাল হয়ে গেছে
অভিমানের সুরে বলে তুলি। জিসান তুলির গালে আলতো কে হাত রাখে

” সরি খুব রাগ হয়ছিলো

“আরেকজনকে সরি বলতে বল

সায়ান এতোখন তুলির বাচ্চামো দেখছিলো।

” আমি এসব বলি না

সায়ান উঠে গাড়িতে বসে।

“গোমড়ামুখো করলা জলহস্তি

তুলি জোরে জোরে সায়ানকে গালি দিতে থাকে। জিসান তুলিকে টেনে তুলে।

চলবে

শুধু তুই পর্ব-৮+৯

0

#শুধু তুই
#পর্বঃ৮
#Tanisha Sultana (Writer)

“আমি আর লুঙ্গি ডান্স
তুলি অবাক হয়ে বলে৷ জিসান কোনোরকম হাসি থামিয়ে বলে

” শুধু কি লুঙ্গি না আরও কতো কি

তুলি জিসানের পাশে বসে বলে

“আর কি

” মদ খেয়ে সত্যি কথা বলছোস তুই

তুলি এবার ভয় পেয়ে যায়।

“আমি কি ওনাকে বলে দিয়েছি যে ওনার মুখ থেকে কথা বের করানোর জন্য আমি মদ এনেছিলাম

” নাহহ

তুলি এবার হাঁপ ছাড়ে

“তবে

” ও বর তোর গাল ভর্তি দাঁড়ি আমি কিছ করবো কোথায়?
জিসান আবার হাসতে শুরু করে। তুলিও ফিক করে হেসে ওঠে

“সত্যি ওনার গালে যে পরিমাণ দাঁড়ি

জিসান তুলির দিকে তাকায় আর তুলি থেমে যায়

” পুরো কথাটা শেষ করুন

সায়ানের কথায় তুলি চমকে ওঠে। পেছনে তাকিয়ে হাত পা কাঁপা শুরু করে তুলির

“বলুন
চোখ মুখ শক্ত করে বলে সায়ান

” ননননা মমমমমাননননে

“তোতলা আপনি

” না তো

“এই তো কথা ঠিক হয়ে গেছে এবার বলুন

” আমি যাচ্ছি
জিসান চলে যেতে নেয় তুলি জিসানের হাত ধরে

“বাঘের মুখে আমাকে একা ফেলে চলে যাচ্ছিস
জিসানের কানে ফিসফিস করে বলে

” আমি বাঘ
রেগে বলে সায়ান

“না তুলি তুই একদম ভয় পাবি না
মনে মনে নিজেই নিজেকে সাহস দিচ্ছে তুলি।

” নাহহ আপনি বাঘ না আপনি করলার জুস। চেহারা তো মাশাল্লাহ পাগল হওয়ার মতো। তা বলি মুখ এতো তেতো কেনো? একটু কি মিষ্টি করে কথা বলতে পারেন না

“জাস্ট সাট

সায়ানকে থামিয়ে তুলি বলে

” জানি জানি জাস্ট সাট আপ। তাইতো

“জিসান এই ইডিয়েট টা কে আমার চোখের সামনে থেকে সরা

হুম যাচ্ছি যাচ্ছি। তবে আপনাকে একটা কথা বলি আরো ইংরেজি শিখবেন এই একটা শব্দ শুনতে শুনতে কান পঁচে গেলো

” ইউ

তুলিকে আর পায় কে এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়। জিসানও তুলির পেছনে যায়। দৌড়াতে দৌড়াতে তুলি শাশুড়ীর সামনে পরে

“এই মরেছি এবার আমার করলার জুস খেতেই হবে। আল্লাহ বাঁচাও

তুলি বিরবির করে বলে। সায়ানের মা তো রাগে কটমট করছে

” এটা কি তুমি ফুটবল খেলার মাঠ পেয়েছো না কি? ভদ্র বাড়ির বউরা কখনো এভাবে দৌড়ায় না

“আর হবে না
তুলি মাথা নিচু করে বলে

” স্বামী খেলো কি না শাশুড়ী খেলো কিনা কোনো দিকেই তো তোমার খেয়াল নেই। শুধু ধেই ধেই করে ঘুরে বেড়াও

“এক মিনিট আন্টি আমি জেনে আসছি

তুলি আবার দৌড়ে চলে যায়।

” কোথায় গেলো এই মেয়ে আর কি জেনে আসবে?

তুলি দৌড়ে রুমে চলে যায়। সায়ান শার্ট পরছিলো। তুলি গিয়ে সায়ানের শার্টের বোতাম লাগাতে থাকে

“আরে আরে কি করছেন আপনি?

” করলার জুস বলেছে স্বামীর খেয়াল রাখতে তাই রাখছি

“মানে

” আপনি খেয়েছেন

“নাহহ। কেনো বলুন তো

তুলি সায়ানের বোতাম লাগিয়ে ট্রাই বেধে দেয়। সায়ান বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

তুলি শাশুড়ীর কাছে চলে যায়। শাশুড়ী আর কাকিমা খাবার সাজাচ্ছিলো। বাবা মনা ডলি ওরা বসে ছিলো।

“শাশুড়ী আপনি খেয়েছেন?

জিসান সিড়ি দিয়ে নামছিলো। তুলির কথায় বেষম খায়।

” দেখতে পাচ্ছো না মাএ খাবার বারছি

“ওহহহ স্বামীও খায় নাই। খেয়াল রাখা হয়ে গেছে।

জিসান আর বাবা এবার হেসে ফেলে। শাশুড়ীও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

“খেয়াল রাখা হয়ে গেছে মানে কি?
রেগে বলে শাশুড়ী

” খেয়েছেন না কি জানালাম তো আর আপনাকে বললাম

“মা থামো তো খেতে দাও

সবাই খাচ্ছে তুলি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কেউ তুলিকে খেতে বলছে না

” ধুর ছাতার মাথা কেউ তো খেতে বলছে না। এদিকে আমার তো খুব খিদে পেয়েছে।
বিরবির করে বলছে তুলি। সায়ান খাওয়া শেষ করে উঠে যেতে যেতে বলে

“মা আমি জুজুদের বাড়িতে যাচ্ছি তোমরা চলে এসো।

তুলি সায়ানের সামনে দাঁড়ায়।

” হোয়াট

“না মানে জুজু তো আমাকেও যেতে বলেছে

” তো

“আমি তো বাড়িটা চিনি না। যদি এড্রেসটা দিতেন

” পাঁচ মিনিট দিলাম রেডি হয়ে নিচে আসেন

“আমার টুনুমুনু

তুলি সায়ানের গাল টেনে দৌড়ে রুমে চলে যায়।

” ইডিয়েট

সায়ান বিরক্তি নিয়ে বলে।

তুলি গোলাপি রঙের লেহেঙ্গার পড়ে। সাথে মেচিং জুয়েলারি। আর ভারি মেকাপ। আয়নায় একবার দেইখা তুলি চলে যায়।

সায়ান আর জিসান দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো তখন তুলির দিকে নজর পরে ওদের। তুলি ওদের দিকে আসছে

“চলুন

তুলি সায়ানরে বলে সায়ান তো তাকিয়েই আছে। জিসান মাথা ঘুরে পরে যেতে নেয় তুলি ধরে

” কি হয়েছে তোর?

“তুই এতো কিউট কেন? আমি তো পুরাই ফিদা

” আমারে সুন্দর লাগতেছে

“হুম মারাক্তক

তুলি ফোন বের করে ফোনের স্কিনে খালি নিজেকে দেখছে।

” চলুন

“দাঁড়ান আগে আমি নিজেকে ভালো করে দেখে নি

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ৯
#Tanisha Sultana (Writer)

“আপনি কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। কোথায় কি ড্রেস পরে যেতে হয় সেটাও জানেন না স্টুপিট

সায়ান অন্য দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলে

” অনুষ্ঠান তো অনুষ্ঠান ই। সেটা বার্থডে হোক না বিয়ে। আর কোথাও লিখা নেই কোন অনুষ্ঠানে কি ড্রেস পরতে হবে না

“এটা কমন সেন্স

” আপনার কমন সেন্স আপনার পকেটে রাখুন আসছে ড্রেস চেনাতে

“আরে তোরা ঝগড়া না করে রওনা হ
জিসান বলে

” ওনার মতো করলার বংশধরের সাথে ঝগড়া করতে আমার বয়েই গেছে

“কি বললেন আপনি?

” কালা না কি শুনতে পান নি

“সাট আপ থাম তোরা। তুলি ঝগড়া করলে সাজ নষ্ট হয়ে যায়

” কি বলছিস তুই

“হ্যাঁ আর কিন্তু ঝগড়া করিস না

” ঠিক আছে

তুলি গাড়িতে বসে পড়ে। সায়ান ড্রাইভ করছে। তুলির পেটের মধ্যে কথা ঘুমপাক খাচ্ছে

“এই যে শুনছেন

সায়ান কিছু বলে না

” আল্লাহ শেষ মেষ একটা কালা আমার বর হলো

“কি বললেন আপনি

” শুনতে পেয়েছেন তাহলে। যাক বাবা আপনি কানে শুনতে পান

“মানুষ হইলেন না

” বাবা বলে মানুষ হইলি না। স্যাররা বলে মানুষ হইলি না জিসান + বাকি ফ্রেন্ডরাও তাই বলে। আমিও তাই। এখন আমার কোশ্চেন টা হলো আমি আসলে কি?

“ইডিয়েট আপনি বুঝছেন

” আমি ইডিয়েট হলে আপনি করলা

তুলির সাথে অহেতুক কথা বলে মাথা নষ্ট করার ইচ্ছে সায়ানের নেই তাই কানে হেডফোন দেয়।

“কথা বলবে না আমার সাথে ঠিক আছে আমিও বলবো না

তুলি ব্যাগ থেকে মেকআপ বের করে সাজতে থাকে।

ছোটমট একটা বাড়ির সামনে সায়ান গাড়ি থামায়। বাড়িটার পাশেই একটা ফুসকার দোকান। তুলিকে আর পায় কে গাড়ি থেকে নেমে ফুসকার দোকানে চলে যায়। সায়ান পেছন থেকে ডাকে কিন্তু তুলি তা কানেই নেয় না।

” মামা প্রচুর ঝাল দিয়ে দুই প্লেট ফুসকা দেন তো

ফুসকাওয়ালা তুলির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে

“আমি জানি আমাকে খুব সুন্দর লাগছে তাই বলে তাকিয়ে থাকার কিছু নেই😎

” না মানে আপনার কাছে তো ব্যাগ টেগ নাই তো টাকা দেবেন কোথা থেকে

তুলি রাগী দৃষ্টিতে তাকায়

“আমি কে??

কোমরে হাত দিয়ে বলে

” ও মা আপনি জানেন না

“সাট আপ। আমি মিস্টার সাট আপ থুক্কু করলা না মানে থুক্কু সায়ানের বউ। চিনলেন আমাকে?

” সায়ান আবার কে?

“আমি তো ভেবেছিলাম উনাকে সবাই চেনে এখন তো নিজের পরিচয় দিয়ে বলদ সাজলাম

তুলি বিরবির করে বলে

” ও মেডাম

“আমি টাকা নিয়ে আসছি

” খেয়ে যান টাকা পরে দিয়েন

তুলি খুশি হয়ে যায়। ফুসকাওয়ালা ফুসকা দেয় তুলি হাপুসহুপুস করে খেতে থাকে।

“বলছি সায়ান ভাই আপনার স্বামী

” নাহহ আমার শশুরের কাকাতো ভাইয়ের ফুপাতো বোনের চাচতো মেয়ের কাকাতো ভাইয়ের ছেলের ভাইয়ের বন্ধুর বোনের বন্ধু

ফুচকাওয়ালার মাথা ঘুরছে তুলি কথা শুনে।

“কি পাগলের পাল্লায় পরলাম রে বাবা

ফুসকা মামা বিরবির করে বলে

” আরও দেন

“আরও

ফুসকা মামা হতাশার কন্ঠে বলে

” হুম দেন

তুলি পুরো তিন প্লেট ফুসকা শেষ করে। এবার তুলির হাঁটতেও পারছে না।

“টাকা টা

তুলি ফুসকা মামার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলায়

” আমার কাছে যে টাকা নেই সেটা আপনি আগে জানতেন

“হুম জানতাম

” তাহলে ফুসকা কেনো দিলেন

“আপনি বললেন তাই

” এখন আমি বলছি টাকার কথা আল্লাহর নাম নিয়ে ভুল যান

“কিহহহহহ

তুলি দৌড়ে চলে যায়। জুজুদের বাড়িতে ঢুকে বসার রুমে সোফায় শুয়ে পরে। বাড়ি ভর্তি মেহমান। সবাই তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ান জুজুকে কোলে নিয়ে গল্প করছিলো তুলিকে দেখে তুলির কাছে আসে

” কি হচ্ছে?

সায়ান রাগী সুরে বলে। তুলি আশেপাশে তাকিয়ে বলে

“সব তো ঠিকি আছে

” নতুন মা তুমি এখানে শুয়ে আছো কেনো?

তুলি উঠে বসার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না

“ফ্রিতে অতিরিক্ত খেয়েছি

তুলির কথায় সায়ান ভ্রু কুচকে তাকায় তুলির দিকে

” কে আপনাকে ফ্রীতে খাইয়েছে

“কেউ না কায়দা করে খেয়েছি

” আপনি এখান থেকে উঠুন

“ট্রাই তো করছি কিন্তু পারছি না

” আরো খান ফ্রী তে

“কে খাওয়াবে

সায়ান বিরক্ত হয়ে জুজুকে কোল থেকে নামায়। আর তুলিকে কোলে তুলে নেয়।

” ও মা আপনি আবার কোলেও নিতে পারেন

“সাট আপ

সায়ান তুলিকে একটা রুমে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়।

” এখন এখানে পরে থাকেন

সায়ান চলে যায়। তুলি আস্তে আস্তে উঠে বসে পুরো রুমে চোখ বুলায়। দেয়াল জুড়ে শুধু জুজু জুজুর মামনি আর একটা লোকের ছবি। সব গুলো জুজুর ছোট বেলার ছবি

“ছবি দেখে তো মনে হচ্ছে হ্যাপি ফেমিলি তাহলে ওই লোকটা এখন কোথায়? কেনো থাকে না জুজুর সাথে? এর জুজুর মা কেনো সায়ানের পেছনে পরে আছে? আর সায়ানই বা কেনো ওদের এতো ভালোবাসে কেচ টা কি?

হাজার টা চিন্তা তুলির মাথায় ঘুটপাক খাচ্ছে। যার একটার উওর ও তুলি কাছে নেই। কি করে সমস্যা সমাধান করবে তুলি?

আর ভাবতে পারছে না তুলি

” ধুর আর ভাববো না যা হবার হবে। আমি বরং চারপাশটা ভালো করে দেখি

তুলি চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে। হঠ্যাৎ তুলির চোখ আটকে যায় সামনে থাকা মানুষদের দিকে। তুলির বুকের বা পাশে চিন চিন ব্যাথা করছে।

“আমি কেনো এটা মানতে পারছি না? কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে আমার? এটা তো আমার প্রাপ্য তাহলে?

তুলির চোখ দিয়ে দুঠোটা পানি পরে

চলবে

শুধু তুই পর্ব-৫+৬+৭

0

#শুধু তুই
#পর্বঃ৫
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ান জিসানকে টেবিলে বসায়।

“এবার তুই খা

তুলি মুখ টিপে হাসছে। বাহবা পাওয়ার জন্য এতোকিছু উল্টে মুরগি হয়ে গেলো।

” ভালো হয় নাই
জিসান মুখটা ছোট করে বলে

“খুব ভালো হয়েছে খা

সায়ান জোর করে জিসানের মুখে খাবার ঢুকিয়ে দেয়।। জিসান দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সায়ানের মা আর সায়ান তুলির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। তুলি মাথা নিচু করে বলে

” আমি তো রান্না করতে গেছিলামই কিন্তু জিসান বললো ও করবে

“কেউ আপনার কাছ থেকে এক্সকিউজ চায় নাই। আর মা তুমি জানো না ছাগল দিয়ে কখনো হাল চাষ হয় না।

” আমি তো ভেবেছিলাম একলিস্ট রান্না বারাটা পারে

“কেনো ভাববে তুমি? এই তোমার ভাবনার জন্য রাতের খাবারটা খাওয়া হলো না।

সায়ান রেগে মেগে রুমে চলে যায়।

” তোমার জন্য আমার ছেলে না খেয়ে চলে গেলো। আর তুমি (সায়ানের বাবা) কি মেয়ে ঘরে এনেছো দেখো

সায়ানের মাও চলে যায়।

“তুমি রান্না পারো না আগেই বলতে পারতে এমন সিনক্রিয়েট টা না করলেই পারতে। মনা তুলিকে বলে চলে যায়।

” তুলি কোনো বেপার না আমি তোমায় রান্না শিখিয়ে দেবো। সায়ানের কাকিমা হাসিমুখে বলে।

“তুমি আমায় বকলে না কেনো? তুলি সায়ানের বাবাকে বলে। সায়ানের বাবা তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

“সব ঠিক হয়ে যাবে।

ছাঁদে বসে আছে তুলি। মনটা ভীষণ খারাপ। ইউটিউব দেখে বেশ কয়েকটা রান্না শিখে নিয়েছে।

” কিউটি পাখির মন খারাপ কেনো?

তুলি পেছনে তাকিয়ে দেখে জিসান।

“এমনি

জিসান তুলির পাশে বসে বলে

” আমার বাড়ির মানুষরা এমনই। তেতো তেতো কথা বলে

“হুম করলার বংশধর

জিসান ফিক করে হেসে ওঠে

” সিরিয়াসলি তুলি তুই আমাদের করলার বংশধর বানিয়ে দিলি

“তা নয়ত কি? সবাই মুখটাকে পেঁচার মতো করে রাখে।

” ঠিক আছে বুঝলাম। তুই এখন রুমে চলে যা নাহলে কিন্তু ভাইয়া তোকে রেখেই দরজা লক করে দেবে

“জিসান আমি তোর ভাইয়ের সাথে থাকতে চায় না। প্লিজ কিছু কর

তুলি জিসানের হাত ধরে বলে

” কি হচ্ছে এখানে?

সায়ানের রাগী গলার কথা শুনে চমকে ওঠে জিসান আর তুলি। তুলি জিসানের হাত ছেড়ে দেয়। জিসান সায়ানের কাছে গিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বলে

“তোর বউ তোর সাথে থাকবে না তাই বলতে এসেছে আমার কাছে

” কেনো তুই কি উকিল না কি?

“তা না বাট আমাকে ডিভোর্সে ব্যবস্থা করতে বলছে

” ঠিক আছে তুই মন দিয়ে কাজটা কর

সায়ান চলে যায়। জিসান মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে

রাত দুটো ছুঁই ছুঁই। তুলি সোফায় শুয়ে আছে। ঘুম আসছে না। সায়ানের ফোনটা বেজে ওঠে।

“হেলো
……

” আমি এখুনি আসছি

সায়ান তারাহুরো করে বিছানা থেকে নেমে আলমারি থেকে শার্ট নিয়ে চলে যায়।

“কোথায় গেলো উনি? কি এমন কাজ তাও আবার এতো রাতে?
ধুর এসব ভেবে আমার কি? যা খুশি করুক।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তুলি রুটি আলুর দম বানায়। তারপর চায়ের পানি চুলায় বসিয়ে খাবার টেবিল সাজায়। একে একে সবাই খাবার টেবিলে চলে আসে। তুলির শাশুড়ী একবার সরুচোখে তুলির দিকে তাকায়। জিসান খাবার খেতে খেতে বলে

” জান্টুস কোথা থেকে আনিয়েছিস?

“আমি বানিয়েছি

জিসান বিষম খায়। জিসানের মা পানি এগিয়ে দেয়।

” আস্তে খেতে পারিস না? সব কিছুতেই এতো তারাহুরো কেনো তোর?

জিসান পানি খেয়ে একটু শান্ত হয়ে বলে

“এখোনো তো বিয়ে করলাম না আর তুমি বলছো তারাহুরো করি

” জিসান থুক্কু ছোট ভাই মেয়ে দেখবো না কি?

“তোমার দাঁত কেলাতে হবে না। সায়ান কোথায়?

শাশুড়ীর কথায় তুলির মুখটা কালো হয়ে যায়।

” কি হলো বলো?

“জানি না। মাথা নিচু করে বলে তুলি

” জানি না মানে? তোমার স্বামী কোথায় গেছে তুমি জানো না। কেমন বউ তুমি

“আহ তুমি থামবে (বাবা)

” কেনো থামবো? কেমন মেয়ে ও

“মা তুমি জানো তোমার ছেলে কোথায় গেছে? জিসানের কথায় সায়ানের মা চুপসে যায়।

” তুমি মা হয়ে জানো না তোমার ছেলে কোথায় যাচ্ছে কি করছে? আর তুলি তো দুদিন হলো এসেছে ও কি করে জানবে?

জিসানের কথায় তুলি খুশি হলো

“বেশ বলেছে তো। করলা শাশুড়ী এখন কথা বলো

মনে মনে তুলি বলছে আর হাসছে।

” খেতে বস

সবাই চুপ চাপ খেয়ে চলে যায়।

“নাহহ আজ ওনার থেকে জেনেই ছাড়বো উনি কোথায় যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলে তো বলবে না। বুদ্ধি দিয়ে জানতে হবে। ভাব তুলি ভাব কি করা যায়।

তুলি এবার রেডি হয়ে অফিসের জন্য বের হয়।
একটা ফার্মেসির সামনে সায়ানকে দেখে তুলি গাড়ি থেকে নেমে সায়ানের পিছু নেয়। পিছু নিতে নিতে একটা হাসপাতালে চলে আসে। সায়ান ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।

সায়ান তুলির দিকে তাকাতেই তুলি পায়ে ব্যাথার নাটক করতে যায় আর পেছন থেকে কেউ ধাক্কা মারে। তুলি মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। সায়ান তুলির কাছে আসে। তুলি উঠার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।

” আপনি এখানে?

“পপপায়ে ব্যাথা তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছি।

” এতো এতো হাসপাতাল থাকতে আপনি এখানেই কেনো এলেন? সায়ান চিৎকার করে বলে। তুলি ভয় পেয়ে যায়। কি বলবে ভাবছে

“আআআআআআ

” সাট আপ
নার্স নার্স। জোরে জোরে ডাকে। দুটো নার্স দৌড়ে আসে

“এই পাগলটাকে বের করে দিন এখুনি

তুলি চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরে। নার্স দুটো তুলিকে টেনে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যায়।

রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছে তুলি। আনমনে হাঁটছে।

” কেনো এমন করলো উনি? কি আছে ওই হাসপাতালে? জানতে হবে আমাকে? আমি তো চলে যাবোই তবে তার আগে সায়ানের সব কেচ্ছা ফাস করবো। করবোই

“তুলি মা তুমি এখানে?

কারো কথায় তুলি থেমে যায়। পেছনের মানুষটাকে দেখে তুলি হু হু করে কেঁদে ফেলে।

তুলির বাবা তুলিকে জড়িয়ে ধরে।

” মামনি কাঁদে না

“কেনো করলে এমনটা বাবা? ও বাড়ির কেউ আমাকে ভালোবাসে না। আমি থাকতে চাই না বাবা ওখানে। প্লিজ বাবা

হেঁচকি তুলে বলে তুলি।

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ৬
#Tanisha Sultana (Writer)

অফিসে পা রাখার সাথে সাথে মায়া দৌড়ে এসে তুলিকে বলে

“সায়ান স্যার তোমাকে তার কেবিনে ডাকছে

তুলির তো হাত পা থান্ডা হয়ে যাচ্ছে। না জানি কতো বকা দেবে এখন।

” কি হলো যাও

“বলছি যেতেই হবে?

” হুম যাও

অসহায় মুখ করে তুলি সায়ানের কেবিনের দিকে পা বাড়ায়।

“মে আই কাম ইন স্যার

সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে আছে।

” আসবো স্যার

এতেও সায়ান কিছুই বলে না

“স্যার আসবো📢

সায়ান হকচকিয়ে যায় তুলির চিল্লানিতে। রেগে চোখ মুখ শক্ত করে বলে

” কি হচ্ছে এসব

তুলি ভেতরে এসে বলে

“এতোখন ধরে পারমিশন চাচ্ছি আপনি তো কথায় বলছেন না

” তাই বলে চিল্লাবে ইডিয়েট

তুলি সায়ানকে ভেংচি কেটে অন্য দিকে তাকায়।

“সকালে আপনার সাথে ওমন বিহেভ করা আমার ঠিক হয় নাই

তুলি সরু চোখে সায়ানের দিকে তাকায়

” বাই এনি চান্স আপনি কি সরি বলতে চাচ্ছেন

“সরি মাই ফুট। জাস্ট মনে হলো ওমন করা ঠিক হয় নাই

” আমি জানি আপনিও জানেন তাহলে আবার বলার কি আছে?

“আমার ইচ্ছে হয়েছে বলেছি। তাতে আপনার কোনো সমস্যা?

” নাহ

“গুড। আউট

” হুম

“গেট আউট

” ওহহ তাহলে আপনি আরও একটা ওয়ার্ড পারেন

“মানে

” আমি ভেবেছিলাম আপনি জাস্ট সাট আপ বলতে পারেন এখন দেখছি গেট আউটও বলতে পারেন

“মাথা মোটা ইডিয়েট

তুলি এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়। বাইরে বেরিয়ে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।

” আল্লাহ বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ। আস্ত একটা হনুমানের হাত থেকে বাঁচিয়েছো।

সারাদিন আর তুলি সায়ানের সামনে যায় না। রাতের রান্নাটাও তুলি করে। খাবার টেবিলে সাজিয়ে চেয়ারে একটু বসে। প্রচুর ক্লান্ত থাকায় চোখ লেগে আসে।

সায়ান খাবার খাওয়ার জন্য এসে দেখে তুলি টেবিলে ঘুমিয়ে আছে। সায়ান টেবিলে বারি দেয়। তুলি ধরফরিয়ে ওঠে।

“এটা ঘুমানোর জায়গা না

তুলি উঠে দাঁড়ায়। একে একে সবাই চলে আসে। তুলির শাশুড়ী বারবার তুলির দিকে তাকাচ্ছে। তুলিকে ক্লান্ত লাগছে।

” মনা ওকে (তুলিকে উদ্দেশ্য করে) রুমে চলে যেতে বল। ওর খাবার আমি দিয়ে আসবো

তুলি একটু একটু করে হাঁটতে থাকে।

“তুলি তুই তো হাঁটতেও পারছিস না। জিসান তুলির কাছে এসে বলে।
তুলি সকালে ব্যাথা পেয়েছিলো। সারাদিন দৌড় ঝাপ করলেও এখন পা টা প্রচুর ব্যাথা করছে তুলির।

” জিসান ঠিক আছি আমি
নরম গলায় বলে তুলি।

“আমি দেখতে পাচ্ছি তুই ঠিক নেই। চল তোকে রুমে দিয়ে আসি।

তুলির খুব খারাপ লাখ। কথা কাটাকাটি করার মুড নেই। তাই জিসানের হাত ধরে রুমে চলে যায়।

তুলি শুয়ে আছে। সায়ানের ফোনটা বেজে ওঠে। সায়ান রুমে নেই। তুলি সাহস করে ফোনটা রিসিভ করে।

” সায়ান জুজু তোমার সাথে কথা বলবে। আমি জানি তুমি তোমার লাইফ নিয়ে বিজি। তোমার বউ আছে। কিন্তু কি করবো বলো আমার এই অনাথ মেয়েটা যে তোমাকে চায়। কথা বলছো না কেনো সায়ান?

তুলি ফোনটা কেটে দেয়।

“কে এই মহিলা? অনাথ মেয়ে মানে কি? জুজু যদি সায়ানের মেয়ে হয় তাহলে ও অনাথ কি করে হয়। তাহলে কি জুজু সায়ানের মেয়ে না?

হাজারটা প্রশ্ন তুলির মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে। একটারও হিসেব মিলাতে পারছে না তুলি।

” মামনি খাবারটা খেয়ে নাও

শশুরের ডাকে তুলি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়। বাবা তুলিকে খাইয়ে দিচ্ছে

“আংকেল জুজুর সাথে আপনাদের কি সম্পর্ক। কে হয় জুজু?

” জুজু কেউ হয় না আমাদের। আর এই জুজুর জন্য তোমাকে এবাড়িতে আনা হয়েছে।

“মানে

” তুমিই পারবে আমার সায়ানের জীবনটাকে সাজাতে। আমার ছেলেটা না বড্ড নরম মনের মানুষ

“কিন্তু আংকেল আমাকে

তুলির কথা শেষ হওয়ার আগেই সায়ান রুমে চলে আসে

” তোমার খাওয়ানো শেষ হলে যাও

“হুম শেষ

সায়ানের বাবা প্লেট নিয়ে চলে যায়

” বাবার সাথে একটু ভালো করে কথা বলতে পারেন না

“না পারি না

সায়ান সোফায় শুয়ে পরে। তুলি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে লাইট অফ করে শুয়ে পরে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখপ জুজু আর ওই মহিলাটা সবার সাথে কথা বলছে। জুজু তুলিকে দেখে দৌড়ে তুলির কাছে আসে। তুলি কোলে তুলে নেয়

” কেমন আছে আমার জুজু সোনা

“খুব ভালো। জানো আজ আমার বার্থডে। সন্ধায় পার্টি আছে তুমি কিন্তু অবশ্যই যাবে।

” আআমি

“হ্যাঁ তুমি যাবে।

জুজু তুলির কোল থেকে নেমে সায়ানের কাছে যায়

” ও পাপা নতুন মাকে নিয়ে যাবে তো

জুজুর মুখে নতুন মা শুনে তুলি চমকে ওঠে।

“ঠিক আছে নিয়ে যাবো

” লাভ ইউ পাপা

“লাভ ইউ টু সোনা।

তুলি আর জিসান পাশাপাশি হাঁটছে। উদ্দেশ্য ভার্সিটি।

” ও জিসান

“বল

” তোর ভাইয়ের কাছে থেকে মুক্তি পাবো কি করে

“আমার ভাই কি তোকে ধরে রেখেছে

” তা না বাট তোর ভাইয়ের রহস্য সমাধান না করে আমি কোথাও যাবো না

“ভেরি গুড

“ফুসকা খামু

” এখন

“হুম চল না

জিসান আর তুলি ফুসকা খেতে যায়। রাস্তার পাশে সায়ানকে দেখে তুলি দাঁড়িয়ে পরে। সায়ান জুজু আর জুজুর মা শপিং মলে ঢুকছে।

” কি হলো দাঁড়িয়ে গেলি কেনো?

তুলি সায়ানদের দিকে ইশারা করে।

“ভাইয়া এবার বারাবাড়ি করছে

জিসান সায়ানদের কাছে যেতে নেয় তুলি থামিয়ে দেয়।

” তোর ভাই ওদের সাথে ভালো থাকলে আমি ওনার সুখের বেবস্থা করবো

“মানে

” জাস্ট ওয়েট এন্ড সী

তুলি উল্টো পথে হাটা ধরে জিসানও তুলির পেছনে যায়।

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ৭
#Tanisha Sultana (Writer)

সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে তুলি। সায়ানের অপেক্ষায় আছে। আজ সায়ানের পেট থেকে সব কথা বের করবে। তাই সোফার পেছনে মদের বোতল রেখেছে কায়দা করে সায়ানকে খাইয়ে দেবে। তারপর সায়ানের সিক্রেট শুনবে।

দু’ঘন্টা ধরে বসে আছে। দরজা খোলার শব্দে তুলি নরেচরে বসে

“বেবি তুমি চলেছো?

” হুম জান চলে এসেছি

সামনে তাকিয়ে দেখে জিসান। তুলি জিসানকে দুইচারটা থাপ্পড় দেয়

“হারামি তুই এই সময় এখানে কেন?

” তুই মদ আনলি ওইটা আমি আর তুই খাবো তাই

“তোর ভাইরে খাওয়ামু

” যখন দেখছিস আমার ভাই তোকে পাত্তা দিচ্ছে না তখন তুই ভিলেনদের মতো মদ খাইয়ে আমার ভাইয়ের নোংরামি করে আমার ভাইয়ের ইজ্জত লুটে নিবি। হায় আল্লাহ আমারে নেও একেবারে না কিছু দিনের জন্য
নেকা কান্না করে বলে জিসান। তুলি মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে

“যেমন তোর ইডিয়েট ভাই তেমন ইডিয়েট তুই

” কেনো কেনো? হাছা কই নি

“তোর ভাইয়ের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই। ওই রকম হাজারটা সায়ান তুলির পেছনে ঘুরঘুর করে। তুলি পাত্তা দেয় না😎

” সেটাই তাহলে এই ড্রিংক কেনো?

“মদ খেলে মানুষ সত্যি কথা বলে

” কোথায় লেখা আছে?

“তোর মাথায়। মুডটাই নষ্ট করে দিলি

” আর কথা বলবো না। প্লানটা বল প্লিজ

“এটা তোর করলা ভাইকে খাইয়ে তোর ভাইয়ের পেটে যত কথা আছে সব শুনে ফেলবো আমি

” তারপর

“তারপর আমি ডিভোর্স নিয়ে চলে যাবো আর তোর ভাইকে সুন্দর একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দেবো

” আর তুই

“আমি আর কি রোমান্টিক একটা ছেলে দেখে বিয়ে করে নেবো

” আমায় বিয়ে করবি

জিসান সিরিয়াস হয়ে বলে। তুলি শক খায়। জিসানের দিকে গম্ভীর চোখে একটু তাকিয়ে হো হো করে হেসে ওঠে

“হাসসিস যে

তুলি পেটে হাত দিয়ে হাসছে। মন ভোলানো হাসি। তুলির হাসি দেখে জিসানও হেসে ফেলে। তুলি একটু হাসি থামিয়ে বলে

” নাইস জোকস। তুই এতো মজা করতে পারিস

“মাঝে মাঝে মনের মাঝে জমিয়ে রাখা কথা গুলো আমরা জোকস হিসেবে বলি

” কেনো?

কারণ সামনে থাকা মানুষটা যদি ভুল বুঝে বা দুরে সরে যায়

“জিসান তুই ঠিক আছিস
তুলি জিসানের কপালে হাত দেয়

” মনে হয় ভাই চলে আসছে আমি যাই

জিসান তারাহুরো করে চলে যায়।

“যাহ বাবা এর আবার কি হলো?

সায়ান রুমে আসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘড়ি খুলছে। তুলি একবুক সাহস নিয়ে সায়ানের সামনে মদ ভরা জুসের গ্লাস নিয়ে যায়।

” আআআপনার জুস
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে তুলি।

“আমি জুস খাই না। সায়ান আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে

” প্লিজ খান না

সায়ান তুলির দিকে তাকায়। করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুলি।

“হঠাৎ আমার জন্য জুস আনলেন? মতলব কি?

” কোনো মতলব নেই। ভালোবেসে এনেছি। স্বামী বলে কথা

“দেখুন

” দেখাদেখি পরে হবে আগে খান

“এই মেয়ের হঠাৎ কি হলো যে এতো দরদ উতলে পরছে। নিশ্চয় গন্ডগোল আছে
সায়ান মনে মনে বলে।

” কি হলো ধরুন

সায়ান বাঁকা হেসে বলে

“আপনি আগে খান বউ বলে কথা

” এই সেরেছে এখন আমি কি করবো( বিরবির করে বলে তুলি)
জোরপূর্বক হেসে বলে

“আমি কি করে খাবো আপনার জন্য এনেছি

” তাতে কি? স্বামী স্ত্রী এক গ্লাসে খেলে মহব্বত বারে।

“খান না

” খান না প্লিজ

সায়ান এবার জোর করে তুলিকে খাইয়ে দেয়। তুলির মাথা ভারি লাগছে। চোখ ঘোলা ঘোলা লাগছে। আরও খেতে ইচ্ছে করছে

“আমি আরও খাবো

” কিহহহহহ

“আরও মদ খাবো। কি ইয়াম্মি খেতে আমি তো পুরোটা খেয়ে নেবো

তুলি সোফার পেছন থেকে মদের বোতল বের করে টেবিলের ওপর বসে খাওয়া শুরু করে। আর গান গায়
” মদ গাজা আর কিসের নেশা তোমার নেশায় কাটে না”

“এবার কি করবো? এই ইডিয়েট যে হারে মদ গিলছে আমার তো আজ বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে
বিরবির করে বলছে সায়ান।

” ওই জামাই আমি আরও খাবো যা আমার জন্য মদ নিয়ে আয়

তুলির কথায় সায়ান ভরকে যায়।

“এই মেয়ে ভদ্র ভাবে কথা বলুন

তুলি এবার দাঁত কেলিয়ে ঢুকতে ঢুলতে সায়ানের কাছে আসে। সায়ানকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নেয়। সায়ানের দু গালে হাত দিয়ে বলে

” আচ্ছা আমি তোর কোথায় কিছ করবো রে? তোর গাল ভর্তি শুধু দাঁড়ি আর দাঁড়ি। আমি কিছ করবো কোথায়?

“মমানে কি? সায়ান তুতলিয়ে বলে

” কিছ মানে বুঝোস না। আরে চুম্মা পাপ্পি উম্মমমমমমমা

তুলি দুর থেকেই কিছ ছুড়ে দেয়। সায়ান চোখ বন্ধ করে অন্য দিকে ঘুরে যায়। তুলি হো হো করে হেসে সায়ানকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে

“লজ্জাবতী। লজ্জায় গালটা লাল টমেটো হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে খেয়ে ফেলি

” সাট

সায়ানকে থামিয়ে

“তুই সাট আপ। কালকেই দাঁড়ি কেটে ফেলবি

” কেনো?

তুলি চোখ রাঙিয়ে বলে

“মুখে মুখে তর্ক করছিস।

” ঠিক আছে তর্ক করবো না আপনি বসুন আমি আপনার জন্য মদ নিয়ে আসছি

তুলি সায়ানের গাল টেনে বলে

“আমার টুনুমুনু

সায়ান তুলিকে কোনোরকম বসিয়ে বাইরে চলে যায়।
রান্না ঘরে লেবুর শরবত বানাচ্ছে তখন জিসান আসে

” ব্রো শরবত কার জন্য

“ওই ইডিয়েটের জন্য

” কেনো

“মদ খেয়েছে

জিসান হো হো করে হেসে ওঠে

” ছাগলের মতো হাসছিস কেনো?

জিসান তো হাসি থামাতেই পারছে না

“তুই হেহে কর আমি আসছি

সায়ান লেবুর শরবত নিয়ে চলে যায়। রুমে ঢুকে সায়ানের চোখ কপালে ওঠে। তুলি মোবাইলে লুঙ্গি ডান্স গানটা চালিয়ে স্কার্ট ধরে নাচা শুরু করে দিছে।
সায়ানের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসে। ফোন বের করে তুলির নাচ ভিডিও করে।
তুলি এবার সায়ানের সামনে এসে সায়ানকে টেনে নিয়ে যায় নাচার জন্য। তারপর সায়ানকে ধরে উরাধুরা নাচ শুরু করে দেয়।

বেশ কিছুখন নাচার পরে তুলি হাঁপিয়ে যায়। সায়ান লেবুর শরবত দেয় তুলি ঢকঢক করে গিলে ফেলে। তুলি সায়ানকে নিয়ে ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পরে। সায়ান তুলিকে ভালো করে শুয়িয়ে দেয়

” উফ আল্লাহ বাঁচাইছো। ধন্যবাদ

সায়ান বেলকনিতে চলে যায়। সিগারেট ধরায়।

সকালে তুলি কোনোরকম চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকায়। ১১ঃ৪৫ বাজে লাভ দিয়ে তুলি উঠে।

“নতুন মা এতোখানে তোমার ঘুম ভাঙলো

তুলি তাকিয়ে দেখে সায়ানের কোলে জুজু বসে আছে।

” তুমি কখন আসলে?

“সেই সকালে। তোমাকে কতো ডাকলাম তুমি উঠলে না।

” উঠবে কি করে। কুমিরের মতো ঘুমায়।

তুলি কটমট চোখে সায়ানের দিকে তাকায়। তারপর ওয়াশরুমে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখে জিসান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তুলি ভ্রু কুচকে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে। হাসার রহস্য বোঝার চেষ্টা করছে।

“গাধার মতো হাসসিস কেনো?

” লুঙ্গি ডান্স
তুলি এবার জিসানের কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে ফোনটা নেয়। ফোনের স্কিনে তাকাতেই তুলির চোখ কপালে। তুলির নাচের ভিডিও।

চলবে

শুধু তুই পর্ব-৩+৪

0

#শুধু তুই
#পর্বঃ৩
#Tanisha Sultana (Writer)

“আপনার কি মনে হয় আপনি আমার পিএ হওয়ার যোগ্য? দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।

” নাা

“তাহলে কেনো এসেছে?

হুঙ্কার দিয়ে বলে সায়ান। তুলিতো ভয়ে শেষ।

” আআআআমাকে ববববববাবা

“সাট আপ

তুলির কথা শেষ হওয়ার আগেই ধমক দেয়। তুলি বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে সাহস বাড়িয়ে বলে

” আমি ইচ্ছে করে আপনার পিএ হতে আসি নি। আংকেল আই মিন আপনার বাবা আমাকে জোর করে এনেছে।
আংকেল আংকেলললললললল
তুলি জোরে ডাকে সায়ানের বাবাকে।

“এই মেয়ে এটা আপনার বাড়ি না। এটা অফিস

” আই নো। আমি যখন সাট আপ বলেন তখন আপনার মনে থাকে না এটা অফিস।

“আমার অফিসে আমার যা খুশি আমি তাই করবো

” কি হয়েছে তুলি
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সায়ানের বাবা বলে

“আংকেল উনি বলছে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা কম। আমি ওনার পিএ হওয়ার যোগ্য না

” সায়ান তুলিই তোমার পিএ। এটা আমার ডিসিশন

“তোমার ভালোবাসা তুমি পার্সোনাল ভাবে দেখাবে কোনোভাবে তাতে আমাকে ইনভলভ করবে না।

” তোমার পিএ কে হলো না হলো এতে তোমার এতো মাথা ব্যাথা কেনো? আর এতে ভালোবাসা দেখানোর কি আছে?

সায়ান টেবিলে একটা লাথি মেরে বেরিয়ে যায়।
সায়ানের বাবা তুলির কাছে গিয়ে বলে

“মামনি
তুলি ওনাকে থামিয়ে বলে

” আমি জানি না আপনি বাবা আপনারা কেনো আমার সাথে এমনটা করলেন? কেনো এমন করলার সাথে আমার বিয়ে দিলে? তোমরা কাজটা ভালো করো নি

তুলি বেরিয়ে যায়। সায়ানের বাবা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে

“কারণটা জানলে তুমিও চমকে যাবে।

লান্স টাইম। সায়ান তুলিকে সায়ানের জন্য খাবার আনতে বলে। তুলি ভাবছে কোথা থেকে খাবার আনবে। এখানকার দোকানপাট কিচ্ছু চেনে না তুলি তার ওপর আবার সায়ান কি খায় তাও জানে না।

” কি করবো? কোথায় যাবো? ওই গোমড়া মুখোর জন্য এবার আমি কোথা থেকে খাবার আনবো? যদি খাবার না নিয়ে যায় তাহলে বলবে সাট আপ।

ঠাস করে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যায় তুলি।

“ও মা গো কোমরটা গেলো রে

তুলি তাকিয়ে দেখে ইয়া লম্বা মোটা চোখে কানাদের চশমা। বড় বড় চুল। তুলির চুলের থেকেও বড়। আবার চাপ দাঁড়িও আছে। তুলি এবার কনফিউজড উনি ছেলে না মেয়ে। তুলি ওনার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়।

লোকটা তুলির দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে আছে। তুলি এবার লোকটার চুল ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়। লোকটা তুলিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে

” কি হচ্ছে এসব কি হচ্ছে? লোকটা মালয়েশিয়ার ভাষায় বলে।
তুলি এবার লোকটাকে ছেড়ে দেয়।

“ও মাই গড আপনি উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। তা বলছিলাম কি আপনি ছেলে না মেয়ে?

তুলি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করছে।

” আমি কিছু বুঝতে পারছি না আপনার কথা। লোকটা মালয়েশিয়ার ভাষায় বলে

“ওহহহ আপনি মেয়ে। দেখলেন আপনার ভাষা আমি কতো ভালো বুঝি। (তুলি লোকটার কাঁধে হাত দিয়ে বলে) আসলে আমি কে তুলি? আমি সব পারি। কারো মুখ দেখেই পবলেম বুঝতে পারি।😎

” কি হচ্ছে এসব
পেছন থেকে সায়ান রাগী সুরে বলে। তুলি চমকে লোকটার কাঁধ থেকে হাটটা সরিয়ে নেয়। সায়ান লোকটার কাছে এসে হাত মেলায়। তারপর কি কি বলতে থাকে তা তুলি বুঝতে পারে না। সায়ান বারবার লোকটাকে মিস্টার বলছে

“আরে আরে আপনি ভুল বুঝছেন উনি মিস্টার না মিসেস।

” সাট আপ

“সত্যি কথা বললেও ধমক খেতে হয়।

মাথা নিচু করে বলে তুলি।
” উনি আমাকে বলেছেন উনি উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। আর উনি মেয়ে। দাঁড়ি তো শখ করে রেখেছেন

তুলির কথা শুনে সায়ান হাসবে না কি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।

“উগান্ডা প্রেসিডেন্ট। লোকটা ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলে। তুলি খুশিতে গদগদ করে বলে

” দেখলেন উনি নিজেই বললো উনি উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। শুনে নিয়েছেন

“উনি আমার বিজনেস পাটনার। মালয়েশিয়া থেকে এসেছেন। আর উনি ছেলে

দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান। তুলি একবার সায়ানের দিকে তাকাচ্ছে একবার লোকটার দিকে তাকাচ্ছে

” দশ মিনিটের মধ্যে আমার খাবার চাই

এতোখান তুলি খাবারের কথা ভুলে গেছিলো।

“আসলে আমি তো জানি না আপনি কি খান

” যা খুশি নিয়ে আসেন

তবুও তুলি দাঁড়িয়ে আছে।

“যেতে বলছি। আউট

তুলি দৌড়ে চলে যায়। সায়ানের জন্য চিকেন বিরিয়ানি নিয়ে আসে। সায়ান লোকটার সাথে কথা বলছিলো। তুলি হাঁপাতে হাঁপাতে বলে

” বাকি নিয়ে এসেছি। এখন টাকা দেন দিয়ে আসি।

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ৪
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুলির দিকে।

“যাহ বাবা আমি কি করলাম? জাস্ট টাকা চাইলাম তাতেই এতো রেগে গেলো। মনে হয় টাকা নাই কাছে তাই রেগে গেছে।
বিরবির করে বলছে তুলি।
ধীর পায়ে সায়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে সায়ানের কানে ফিসফিস করে বলে

” আপনার কাছে টাকা নাই বলে রেগে যাচ্ছেন? বেপার না আমি আংকেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসছি

তুলি এবার লম্বা চুল ওয়ালা লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে

“বলছিলাম কি আপনার বউ কি টাকলা?

টাকলা। লোকটা উচ্চারণ করে। তুলি এবার লোকটার কাছে গিয়ে বলে

” হুম টাকলা। শুনুন এরকম লম্বা চুল এ আপনাকে পুরো উগান্ডার প্রেসিডেন্ট লাগে। এভাবে ঘুরে বেড়ালে উগান্ডার লোকজন আপনাকে তুলে নিয়ে যাবে।

“মিস্টার সায়ান উনি কি বলছেন? লোকটা তার ভাষায় সায়ানকে জিজ্ঞেস করে। সায়ান তুলির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে

” সি ইউ ম্যাড

তুলির মুখটা আপনা আপনি হা হয়ে যায়

“আমাকে পাগল বললো। আমি পাগল

বিরবির করে বলে তুলি। সায়ান লোকটাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

” আস্ত একটা করলার বংশধর। আমাকে পাগল বললো। তুই পাগল তোর বউ পাগল তোর চোদ্দো গোষ্ঠী পাগল।

তুলি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে

“What’s your problem?

দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ান

” অনেক পবলেম। আপনি আমাকে পাগল বললেন কেনো?

“পাগলের মতে ননস্টপ বকবক করলে পাগল বলবো না তো কি বলবো?

” আমি তো ঠিকই বলেছি

“সাট আপ। আমার খাবার কোথায়?

তুলি সায়ানের টেবিলে ঠাস করে খাবার রাখে। সায়ান খাবারে হাত দিতে গেলেই তুলি খাবার সরিয়ে নেয়। সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে বলে

” হোয়াট

“আগে টাকা

” মানে

“রেস্টুরেন্টের মালিক তো আর আমার জামাই হয় না যে ফ্রী তে খাবার দেবে।

সায়ান একশো টাকা বের করে দেয়

” ওরে আল্লারে। চিকেন বিরিয়ানি আনছি আপনার জন্য ডাল রুটি না

“তো

” তো মানে আরও টাকা লাগবো

সায়ান এবার পাঁচশত টাকার নোট দেয়। তুলি সেটা নিয়ে বাইরে চলে যায়।

“কি কিপ্টারে বাবা। ভাবছিলাম হাজার টাকা দেবে তা না পাঁচশত টাকা দিলো। ধুর

তুলি এসব বকবক করছে আর হাঁটছে। হঠাৎ তুলি সেই পিচ্চিটাকে দেখে দৌড়ে সায়ানের কেবিনে যাচ্ছে। তুলিকে দেখে পিচ্চিটা থামে তুলির কাছে আসে

” হেলো পাপার আপু

“আমি তুলি। আমাকে এই নামে ডেকো না প্লিজ

” কেনো?

“জামাইয়ের বউ হওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নাই

” জামাই কি?

তুলি দাঁত দিয়ে জিভ কেটে পিচ্চিটাকে কোলে নেয়

“নাম কি তোমার?

” জুজু

“এতো কিউট তোমার নাম? তো তুমি এখানে একা কেনো?

” মামনি দিয়ে গেছে। আমি পাপার কাছে যায়

জুজু তুলির কোল থেকে নেমে চলে যায়।

“আমাকে এবার সতিনের ঘর করতে হবে। এ জ্বালা আর প্রাণে সহে না

সন্ধায় তুলি আর সায়ানের বাবা বাড়িতে আসে।

” তুলি তুই

“জিসান

তুলি দৌড়ে গিয়ে জিসানকে জড়িয়ে ধরে। সায়ানের মা বাবা মনা কাকিমা ডলি সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সায়ানের মা তো রাগে ফুঁসছে।

” কি হচ্ছে এসব?

সায়ানের মা রাগী গলায় বলে। তুলি জিসানকে ছেড়ে দেয়।

“মা ওই তো তুলি আমার একমাত্র কিউট বেষ্টু। তোমাকে তো ওর কথা বলেছিলাম।

” জিসান ও আর এখন তোর বেষ্টু তুলি না। তোর বড় ভাইয়ের বউ

“কিহহহহ

জিসান হো হো করে হাসতে থাকে।

” সিরিয়াসলি মা তোমার ওই বোরিং ছেলের বউ তুলি

জিসান হাসিটা কন্টোল করে বলে।

“জিসান শোন

” শোন মানে কি? জিসান তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়। তো ছোট ভাই বলে ডাকবে

তুলি মাথা নিচু করে বলে

“হুম

” ওর সাথে কথা শেষ হলে আমার রুমে আসিস জিসান কথা আছে

“ওকে মামনি

” আর তুমি (তুলিকে ইশারা করে) বাড়ির বউ তুমি সারাদিন ঘুরে বেড়ালে হবে না। রাতের রান্নাটা তুমি করবে।

“তুলি মাথা নারায়। সায়ানের মা চলে যায়। এক এক করে সবাই চলে যায়।

” তুলি

“হারামি কুত্তা তোর ভাই আমার লাইফটা হেল করে দিলো

” আমার ভাই কি করে রে বল আমিও একটু শুনি

তুলি জিসানকে মারতে থাকে।

জিসান তুলির ফ্রেন্ড। জিসান তুলির বেষ্টুকে পছন্দ করতো সেই থেকে ওদের বন্ধুত্ব।

“মারছিস কেনো?

তুলি থামে

” দোস্ত আমি রান্না করতে পারি না

তুলি অসহায় মুখ করে বলে

“খেতে পারিস

” একদম এক্সপার্ট

“সেটাই। শোন যা পারিস তাই কর। আমি খাবার অর্ডার দিচ্ছি যখন কেউ তোর খাবার মুখে তুলতে পারবে না তখন আমার খাবার গুলো খাবে

” বাবা এতো বুদ্ধি তোর মাথায়

“মাথাটা কার দেখতে হবে না

” কার বেষ্টু দেখতে হবে না

দুজন একসাথে হেসে ফেলে।

তুলি কোমরে ওড়না বেধে রান্নায় নেমেছে। কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে। তখন জিসান আসে।

“দোস্ত পেঁয়াজ কাটে কেমনে

” পেঁয়াজটা হাতে নিয়ে ছুড়িটা হাতে নিয়ে কাঁটতে হয়।

“ওয়াও আমি তো জানতামই না।

” শোন ইউটিউবএ সার্চ দে

“পাওয়া যাবে

” কি বলছিস এখন তো ইউটিউব দেখে বড় বড় ডাক্তাররা সার্জারী করছে

“কি বলছিস

” হুম। আমি তো শিখতেছি। কদিন পরে একটা চেম্বার দেবো। কতো নাম হবে বল তো

“হুম আগে রান্না করি তারপর তোর আশারের গল্প শুনবো

ইউটিউব দেখে পেঁয়াজ কাটে কোনোরকম। তারপর মাংস রান্না করে

” এই এরকম কালার হলো কেনো?

“গাধী হলুদ দেস নাই তুই

” ওহহ

তুলি অনেকটা হলুদ দেয়।

ডাইনিংএ খাবার সার্ভ করে জিসান আর তুলি। সবাই খেতে বসেছে। খাবারের চেহারা দেখে সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে

“খাবারের চেহারা দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই অনেক ইয়াম্মি হয়েছে খেতে। কি রে জিসান সরি ছোট ভাই বলেন

” হ্যাঁ

সায়ান খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে। তুলি সবার প্লেটে খাবার দেয়। সবাই খাবার নারছে। সায়ান খাবারটা মুখে দেয়

“কে রান্না করছে?

তুলি বলতে চায় জিসান এগিয়ে গিয়ে বলে

” আমি রান্না করছি। তুলি জাস্ট একটু হেল্প করেছে। খুব ভালো হয়েছে না খেতে। দেখতে হবে না কে রান্না করছে 😎

চলবে

শুধু তুই পর্ব-১+২

0

#শুধু তুই
#পর্বঃ১
#Tanisha Sultana (Writer)

কবুল বলেই বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যায় সায়ান। বিয়ে বাড়িতে হট্টগোল পরে যায়। সবার মুখে এক কথা বর কোথায় গেলো। সায়ানের মা বলে

“আমার ছেলেটার সাথে এটা তুমি না করলেও পারতে

সায়ানের বাবাকে কথাটা বলে চলে যায়।

রাত বারোটা। সবাই এখানে ওখানে ফোন করছে। সায়ান কোথায় গেলো খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছে। তুলি সোফায় বসে ঝিমাচ্ছে। খুব ঘুম পাচ্ছে তুলির।

” একদম সোজা হয়ে বসে থাক। তোর বরকে পাওয়া যাচ্ছে না আর তোর ঘুম পাচ্ছে।

তুলির মা তুলির কানে ফিসফিস করে বলে। তুলি বিরক্তি নিয়ে একবার মায়ের দিকে তাকায়

“তোমরা এরকম একটা ছেলের সাথে কেনো আমার বিয়ে দিলে? উনাকে আর কখনো খুঁজে না পাওয়া গেলে বাঁচি।

” চাপকে গাল লাল করে দেবো। চুপ করে বসে থাক।

তুলি মাকে ভেংচি কেটে অন্য দিকে তাকিয়ে বসে।

“সায়ান

সায়ানের মায়ের কথায় তুলি মাথা তুলে তাকায়। প্রচন্ড লম্বা একটা ছেলে ঢুলতে ঢুলতে আসছে। হাতে মদের বোতল। চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে আছে। সায়ানের মা এগিয়ে গিয়ে সায়ান জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলে

” কোথায় গেছিলি তুই?

“আমি রুমে যাচ্ছি

সায়ান ঢুলতে ঢুলতে রুমে চলে যায়।

” কেমন ছেলেরে বাবা মা কাঁদছে একটু সান্ত্বনা দেবে তা না চলে গেলো।

“মনা (সায়ানের বোন) এই মেয়েটাকে সায়ানের রুমে দিয়ে আয়। কর্কশ গলায় বলে সায়ানের মা চলে যায়।

তুলির মা বাবাও বিদায় নিয়ে চলে যায়। এখন শুধু সায়ানের বাবা মুরাদ মনা আর তুলি দাঁড়িয়ে আছে

“তুলি রুমে যাও।

মুরাদের নরম গলার কথায়ও তুলি চমকে ওঠে। রুমে যাও শব্দটাতেই তুলির ভয়। মাতাল একটা ছেলের ঘরে তুলি কি করে যাবে যদি মারধর করে। এসব ভেবে তুলির আরও ভয় করছে।

মনা তুলির হাত ধরে বলে

” চলো

মনা তুলিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তুলি বারণও করতে পারছে না। মনা তুলিকে সায়ানের রুমের সামনে দাঁড় করায়।

“তুমি ভেতরে যাও আমি যাচ্ছি।

তুলি মাথা নারায়। মনা চলে যায়। এবার তুলি ভাবছে কি করবে।

” তোমাকে এখানে দাঁড়িয়ে হাত কচলাতে কেউ বলে নি

সায়ানের মায়ের কথায় তুলি চমকে ওঠে।
সায়ানের মা তুলির হাতে একটা গ্লাস ধরিয়ে দেয়।

“এটা আমার ছেলেকে খাইয়ে দিও

তুলি দরজাটা একটু ফাঁকা করে উঁকি মারে। সায়ান বিছানায় শুয়ে আছে।

” এই সুযোগে আমি দৌড়ে বেলকনিতে চলে যাবো আর বেলকনির দরজা বন্ধ করে দেবো

যেই ভাবা সেই কাজ। তুলি লেহেঙ্গারটা একটু উঁচু করে ধরে এক দৌড়ে বেলকনিতে চলে যায়। আর দরজা বন্ধ করে দেয়।
বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়

“যাক বাবা বেঁচে গেছি। কিন্তু ওই করলা মহিলা যে বললো এইটা মাতালকে খাওয়াতে। এবার

তুলি কিছুখন ভাবে

” ধুর এটা আমিই খেয়ে ফেলি। খুব টেষ্টা পেয়েছে।

তুলি ঢকঢক করে লেবুর শরবতটা খেয়ে ফেলে।

“এবার শুয়ে পরি।

বেলকনির দোলনায় শুয়ে পড়ে তুলি। প্রচুর ক্লান্ত থাকায় তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পরে।

চোখে রোদের আলো পরতেই তুলির ঘুম ভেঙে যায়। বেলকানির দরজাটা খুলে রুমে উঁকি মারে কোথাও কেউ নেই।
তুলি নিশ্চিত হয়ে রুমে চলে আসে। তুলির লাকেজটা খুঁজে লাকেজ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে।

ফ্রেশ হয়ে বাইরে গিয়ে দেখে সবাই খাচ্ছে। করলা থুক্কু শাশুড়ী সবাইকে খাবার বেরে দিচ্ছে। তুলি খাবার টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ান নেই। তুলি ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। তুলিকে দেখে তুলিল শশুর বলে

” এখানে বসে ব্রেকফাস্ট করে নাও

তুলি বসে পড়ে।

“জানো তোমার স্বামী কোথায়?

তুলি মাথা নিচু করে ফেলে সত্যিই তো জানে না।

” সত্যিই তো সায়ান কোথায়? তুলি
মুরাদ জিজ্ঞেসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তুলি মাথা নিচু করে বলে

“আমি জানি না

” দেখো কেমন মেয়ে এনেছো স্বামীর খবরই রাখতে পারে না আমাদের খবর রাখবে কি করে

“আহ আয়শা৷ চুপ করো তো। তুলি তুমি কোথায় ছিলে?

তুলি পরেছে এখন ঘোর বিপদে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। তখন হুরমুর করে একটা মহিলা একটা পুরুষ আর একটা মেয়ে ঢোকে। মেয়েটা মনা আর মনার মাকে জড়িয়ে ধরে। এদের কথা শুনে তুলি বুঝতে পারলো সায়ানের কাকা কাকিমা আর তাদের মেয়ে ডলি।

ওদের আলাপ শেষে সবাই খেতে বসে যায়। সায়ানের কথা আর তোলে না। তুলি বুঝতে পারে সায়ানের মা জানে সায়ান কোথায়।

তুলির আর খাওয়া হয় না রুমে চলে আসে। খুব কান্না পাচ্ছে তুলির। সবাই পর পর বিহের করছে। কেউ একটু ভালো করে কথা বলছে না পর্যন্ত। রাগে দুঃখে তুলি এবার কেঁদেই ফেলল।

” আমার রুমে ড্রামা নটএলাও

সায়ানের কন্ঠ শুনে তুলি কান্না থামিয়ে সায়ানের দিকে তাকায়। কোথাও গিয়েছিলো। পরনে সাদা শার্ট আর কালো জিন্স। শার্টের বোতাম খোলায় ব্যস্ত।

তুলি বেলকানিতে চলে যায় কাঁদতে। সায়ান ফ্রেশ হয়ে কফির মগ হাতে নিয়ে বেলকনিতে যায়।

“এই সময়টা আমি বেলকনিতে কাটায়। আশা করবো নেক্সট টাইম এই সময় এখানে আপনাকে দেখবো না।

তুলি দোলনায় বসে ছিলো সায়ানের কথায় উঠে দাঁড়ায়। সায়ান দোলনায় বসে কফি খাওয়ায় মন দেয়। তুলি একটু দাঁড়িয়ে থেকে চলে যায়।

” এ আমি কোথায় এসে পরলাম। করলার বংশধর। কারো মুখে মধু নেই। এখানে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাবো। বাবা মায়ের ওপর খুব রাগ হচ্ছে। ওনারা কেনো আমাকে করলার বাগানে পাঠালো।

বিরবির করে এসব বলছে তুলি। তখন মনা আসে রুমে

“শুনো

তুলি মনার দিকে তাকায়

” জ্বী

“মা তোমার জন্য এই শাড়ি গুলো পাঠিয়েছে

তুলি শাড়িগুলো নিয়ে কিছু বলতে যাবে দেখে মনা চলে যাচ্ছে

” যাহ বাবা এমন করে চলে গেলো কেনো? আমার সাথে কথা বললে কি মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না কি?

চলবে।

#শুধু তুই
#পর্বঃ২
#Tanisha Sultana (Writer)

প্রচন্ড খিদে পেয়েছে তুলির। রুমের মধ্যে পায়চারি করছে।

“এখন খাওয়ার জন্য গেলে করলা শাশুড়ী আমাকে করলা ভাজি খাইয়ে দেবে। আবার না খেয়েও থাকতে পারছি না। করবোটা কি?

তুলির ফোন বেজে ওঠে। তুলির বাবা ফোন দিয়েছে

” একদম সিমপেথি দেখাতে আসবা না। বলে দিতা বাসা থেকে বেরিয়ে যেতাম। এরকম একটা করলার বংশধরের বাড়িতে না পাঠালে পারতে।

“আমার কথাটা তো শোন

” কোনো কথা শুনবো না। ফোন রাখো আর নেক্সট টাইম কল দিবা না।

তুলি ফোন কেটে দেয়। প্রচুর রাগ হচ্ছে তুলির। নিজের চুল নিজে টানছে। সায়ান রুমে আসে।

“আমি খাবো

সায়ান সরু চোখে তুলির দিকে তাকায়। তুলি মাথা নিচু করে আছে।

” আমাকে কি আপনার খাবার মনে হয়? রাগী গলায় প্রশ্নটা করে সায়ান। তুলি আমতা আমতা কটছে।

“আমার খিদে পেয়েছে। যদি কোনো খাবার হতো। তুলি বলে।

সায়ান কিছু না বলে কানে হেটফোন গুজে শুয়ে পরে।
” এ কেমন মানুষরে বাবা। একটা মানুষ নিজ থেকে খাবার চাইছে তাকে ইগনোর করে শুয়ে পরলো। তুলি বিরবির করে বলছে।

“আসবো। সায়ানের বাবা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে।

” হুম আসুন। পারমিশন নেওয়ার কি আছে? তুলি বলে।

সায়ানের বাবা ভেতরে আসতে আসতে বলে
“ছেলে এখন বিয়ে করেছে তার রুমে কি পারমিশন ছাড়া ঢোকা যায়।

তুলি একটু লজ্জা পায়। যদিও লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু বলে নি।

সায়ানের বাবা সোফায় বসে খাবারের প্লেট টা টেবিলে রাখে।
” আমার পাশে বসো। হালকা হেসে বলে সায়ানের বাবা। তুলি ওনার পাশে বসে। উনি ভাত মেখে তুলির মুখের সামনে ধরে। তুলি খেয়ে নেয়।
“কাল থেকে তুমি অফিসে যাবে। তুমিই সায়ানের নতুন পিএ

তুলির গলায় খাবার আটকে যায়। সায়ানের বাবা তুলিকে পানি দেয়। পানি খেয়ে তুলি একটু শান্ত হয়ে মিনতির সুরে বলে
” আমি ওনার পিএ হতে পারবো না।

“কেনো
” প্লিজ

“তুলি তুমি আমার কথাটা রাখবে না।
তুলি পরেছে বিপদে।
” ওই গোমড়া মুখোর পিএ হলে তো সারাদিন ওনার সামনে থাকতে হবে।

“কি ভাবছো? সায়ানের বাবা তুলিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে।
” কিছু….. না। থেমে থেমে বলে তুলি।
সায়ানের বাবা তুলির মুখে ভাত দিয়ে বলে

“কাল থেকে অফিস জয়েন করবে। সকালে তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠবে ওকে।
তুলি ভাত চিবতে চিবতে মাথা নারায়।

সকালের খাবার বিকেলে খেয়ে তুলির খুব খারাপ লাগছে। সায়ান বেরিয়ে গেছে। তুলি এপাশ ওপাশ হাটছে। হঠাৎ তুলি চোখ পরে দেয়ালে থাকা একটা ছবির দিকে সায়ান আর একটা মেয়ের ছবি। সায়ান মেয়েটাকে হাটু মুরে প্রপোজ করছে আর মেয়েটা এক গাল হেসে ফুলটা নিচ্ছে।

” কে এই মেয়েটা ওনার গার্লফ্রেন্ড। আমি তো শুনেছিলাম ওনার একবার বিয়ে হয়েছিলো তাহলে এই মেয়েটাই ওনার বউ? কোথায় আছে এই মেয়েটা? দেখে তো মনে হচ্ছে উনি মেয়েটাকে খুব ভালোবাসে। তাহলে আমায় বিয়ে করলো কেনো? ধুর এসব ভেবে লাভ নেই।

বাইরে একটা বাচ্চার হাসির শব্দ শুনে তুলি বাইরে যায়।

“এবাড়িতে বাচ্চাও আছে। বাহ ভালোই হলো।

তুলি বাইরে গিয়ে দেখে সায়ানের কোলে একটা চার পাঁচ বছরের মেয়ে।সায়ানকে আবার পাপা বলছে।

“এমা ওনার তো দেখছি আবার বাচ্চাও আছে। বাবা আমাকে একটা বুরোর সাথে বিয়ে দিলো

” পাপা ওই বউটা কে?

বাচ্চা মেয়েটা সায়ানকে জিজ্ঞেস করে। ওখানে সায়ানের মা মনা আর একটা মেয়ে ছিলো।

“কি হলো পাপা বলো

সায়ান একবার তুলির দিকে তাকায়। তুলি সায়ান কি উত্তর দেবে এটার শোনার জন্য অধিক আগ্রহে সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।

” তুমি ওকে আন্টি বলতে পারো।

“তোমার কে হয় সেটা জানতে চাইছি

“কি বিচ্ছু মেয়েরে বাবা জেনেই ছাড়বে। বলুন বলুন আমি কে হই

” আমার আপু হয়

সায়ানের কথায় সবাই চোখ বড়বড় করে সায়ানের দিকে তাকায়।

“আমি ওনার আপু হই। আল্লাহ আমারে তুইলা নেও
বিরবির করে বলছে তুলি।
তুলি মুখ ফুলিয়ে রুমে চলে যায়।

” আজ আর দোলনায় শুতে পারবো না। তারাহুরো করে খেয়ে খাটে শুয়ে পরবো

যেই ভাবা সেই কাজ। তুলি চক করে খেতে চলে যায়। সবে রাত আটটা বাজে। তুলি খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে খাবার বেরে রুমে চলে যায়। তারপর পায়ের ওপর পা তুলে আরাম করে খাওয়া শুরু করে।

খাওয়া শেষে চাদর মুরি দিয়ে শুয়ে পরে। সায়ান খাবার খেয়ে রাত দশটায় রুমে আসে। দেখে তুলি বিছানায় শুয়ে আছে। সায়ান লাইট বন্ধ করে সোফায় শুয়ে পরে।

সকালে তুলি চোখ খুলে দেখে রুমের কোথাও সায়ান নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নয়টা বাজে

“ও মাই গড এতো বেলা হয়ে গেছে।

তুলি তারাহুরো করে উঠে ফ্রেশ হতে যায়। ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিচে যায়। দেখে সায়ানের বাবা বসে আছে খাবার টেবিলে।

” এতো লেট হলো

তুলি এক হাতে কান ধরে বলে

“সরি

সায়ানের বাবা একটু হেসে তুলিকে বসতে বলে। তুলি বসে খাওয়া শুরু করে।

সায়ান নিজের অফিস রুমে বসে আছে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। কারণ সায়ানের পিএ আসে নি এখনো।

” মায়া মায়া
চিৎকার করে ডাকে সায়ান। মায়া নামের মেয়েটি দৌড়ে সায়ানের কেবিনে ঢোকে

“সসস্যার

” পিএ আসে নি কেনো?

“বড় স্যার আপনার জন্য নতুন পিএ ঠিক করেছে

” কোথায় সে

“এখনো আসে নি

” আসে নি মানে নি?

সায়ানের রাগে মায়ার ভয় করছে।

“মে আই কাম ইন স্যার

সায়ান আর মায়া বাইরের দিকে তাকায়। তুলি ভয়ে ভয়ে ভেতরে ঢোকে।

” ডিসিপ্লিন বলে একটা শব্দ আছে জানেন

শান্ত গলায় বলে সায়ান।

“জ্বী

” আমি কি আপনাকে পারমিশন দিয়েছি ভেতরে ঢোকার
চিৎকার করে বলে সায়ান। তুলি কান চেপে ধরে

“আমি তো বলেছিলাম মে আই কাম ইন আপনি তে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলেন হ্যাঁ বা না কিছুই বললেন না। তো আমি ভেবেছিলাম আপনি কথা বলতে পারেন না। পরে

” সাট আপ
সায়ানের ধমকে মারা দৌড়ে চলে যায়। তুলি চোখ বুজে নেয়। এই বুঝি গালে থাপ্পড় পরলো।

চলবে

আপন মানুষ পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0

#আপন_মানুষ
#৪র্থ_এবং_শেষ_পর্ব
#অনন্য_শফিক



অবনীর খিলখিল হাসির শব্দে আমার ঘুম ভাঙলো।ঘুম ভেঙে দেখি মা আমার শিউরে বসে আছেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। ততক্ষণে আমার সারা শরীর ঘেমে একসার। বিশ্বাস করতে পারছি না কিছুতেই যে এটা আমার স্বপ্ন ছিল!আমি কাঁদছি ‌। হাউমাউ করে কাঁদছি।আর ভাবছি, বাস্তবতা যদি এরচেয়ে খারাপ হয়! ভয়াবহ হয়!
মা বললেন, ‘খারাপ স্বপ্ন দেখছো ?’
আমি কাঁদতে কাঁদতেই বললাম,’জ্বি মা।’
‘কী দেখছো?’
‘দেখেছি অবনীকে বিয়ে করে বাসায় নিয়ে এসেছে রবিন।আর ওরা আমায় তাড়িয়ে দিচ্ছে এখান থেকে।’
মা বললেন,’পারবে না।ওই মাগীকে আমি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো!’
মা খুব উত্তেজিত হয়ে উঠলেন।যেন সত্যি সত্যি ওরা আমায় তাড়িয়ে দিতে আসছে !

দুপুর দুপুর অত্যাধিক টেনশন করার কারণে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়লাম। কিছুতেই হুঁশ ফিরছে না।মা সঙ্গে সঙ্গে এম্বুলেন্স ডেকে আমায় হসপিটালে নিয়ে গেলেন।

তারপর যা ঘটলো-

জ্ঞান ফিরলো আমার বিকেল বেলা।জ্ঞান ফেরার পর চোখ খুলেই দেখি অবনী আমার এক পাশে বসে আছে।ওর গায়ে সেই স্বপ্নে দেখা শাড়ির মতো একটা শাড়ি।হাতে সেই সুন্দর বালা। গলায় মুক্তোর মালা।আর ও পাশে রবিন বসা।আমি ওদের দেখেই চিৎকার করে উঠলাম।অবনী আমার হাতটা শক্ত করে ধরলো।আমি বললাম,’নেমকহারাম মেয়ে, তোকে আমি খুন‌ করে ফেলবো!ছাড় আমার হাতটা।’
অবনী কিছু বলতে চাইলো এর আগেই আমি ওর গাল খসে একটা চড় বসিয়ে দিলাম।
অবনী আমার হাত তার গালের কাছে নিয়ে ধরে কান্নাভেজা গলায় বললো,’দে আরো চড় দে।যতো ইচ্ছে মার।’
তারপর তার গলার কাছে আমার হাত উঠিয়ে নিলো।বললো,’নে।মেরে ফেল আমায়।খুন কর।তোর ইচ্ছে পূরণ কর।’
রবিন তখন ধমক দিলো।বললো,’রাখো। তোমাদের নাটক এখন এসব বন্ধ রাখো।এটা নাটকের সময় না!’
এরপর রবিন বাইরে থেকে যাকে ডেকে নিয়ে এলো তাকে দেখে আমার কলিজা শুকিয়ে গেলো!ও তো সজীব। যার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়। কিন্তু আমার বাবা মা ওর কাছে বিয়ে দেয়নি।সজীবদের আর্থিক এবং বংশীও অবস্থা ভালো নয় বলে। আমাকেও সেদিন মেনে নিতে হয়েছিল সবকিছু। কারণ বাবা আমায় ভয় দেখিয়েছিলেন। বলেছিলেন,আমি যদি সজীবের সাথে সম্পর্ক রাখি তবে তিনি মারা যাবেন!

অবনী আমার কাছে ফিসফিস করে বললো,’আমি কী করে বলতাম এটা তোকে?বললে তুই কষ্ট পেতি। কিন্তু আমি কী করতাম বল? বেচারা তোর থেকে পাওয়া শোক কিছুতেই ভুলতে পারছিলো না।ওর শোক ভুলাতে গিয়ে কীভাবে যে আমি ওর প্রেমে পড়ে গেলাম! তারপর গোপনে বিয়েও করে ফেললাম।গোপনে বিয়ে করার কারণ হলো, ভেবেছিলাম তোকে জানাবোই না কিছু।আরো দিন গেলে পরে জানবি। তখন তুই সহজেই বিষয়টা মেনে নিতে পারবি! তাছাড়া রবিন ভাইয়াকে আমি নিষেধ করেছিলাম তোকে জানাতে!এই জন্য সেও তোর কাছে বিষয়টা ক্লিয়ার করেনি!’
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,’গোপনে বিয়ে করেছিস তো হঠাৎ পালিয়ে গেলি কেন?’
‘পালিয়ে যাইনি।একটা সমস্যা হয়ে গিয়েছিল। সজীবের ভালো চাকরি হয়েছে।টাকা হয়েছে এখন। এই লোভে তার ছোট চাচা জোর করছিলো তার মেয়েকেই যেন সজীব বিয়ে করে। এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে আমার ওখানে যেতে হয়েছিল। এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে তার পরিবার ওখানে আমায় বরণ করে নেয়!’
‘তো মা যে বললো ওসব?তোরা ঘরের দরজা বন্ধ করে–?’
অবনী কিছু বলার আগেই রবিন হেসে ফেললো। হেসে বললো,’ঘরের দরজা ঠিকই বন্ধ ছিল।আর মা যা সন্দেহ করেছিলো ঘরের ভেতর ঠিক তাই হয়েছিলো। কিন্তু ঘরের ভেতর আমি ছিলাম না।’
আমি অবাক হয়ে বললাম,’তাহলে কে ছিল ঘরের ভেতর?’
‘সজীব। ওদের গোপন বিয়ের পর থেকেই সে এখানে আনাগোনা করতো। তুমি বাসায় না থাকলেই আমি তাকে ফোন করে আনতাম!’
আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
আমি এবার বললাম,’রবিন শুনো,মা না তোমার বাবাকে নিয়ে একটা নোংরা কথা বলেছেন এটা কী সত্য?’
রবিন বললো,’ওই যে বুয়ার সাথে–‘
আমি বললাম,’হু।’
রবিন হেসে ফেললো। কিন্তু হাসির পর একটু গম্ভীরও হলো। এবার গম্ভীর মুখেই সে বললো,’বাবা পবিত্র মানুষ ছিলেন।তার চরিত্রে কালিমা লেপন ঠিক হবে না।মার এটা ভুল ধারণা। আসলে মা সকল পুরুষদেরই ভয় পান এবং বিশ্বাস করতে পারেন না।’
আমি অবাক হয়ে বললাম,’কেন?’
রবিন বললো,’ছোট বেলায় মাকে তার যে মামা সবচেয়ে বেশি আদর করতো সেই মামাই কিশোরী কালে তাকে প্রথম ধর্ষন করে।মা এই কথাটা আজ অবধি কাউকে বলেননি। শুধু আমার এক খালা জানতেন। কারণ সেই খালাও মার এই মামার হাতেই তার সতীত্ব হারিয়েছিলেন। আমার এই খালাই আমার কাছে সব খুলে বলেছেন। এরপর থেকেই মার এই সমস্যা। তিনি কাউকেই বিশ্বাস করতে পারেন না!’
রবিনের কাছ থেকে এমন একটা কথা শুনে ঘেন্নায় আমার মুখে থুথু জমে উঠলো।আর কেবল মনে হতে লাগলো,এই পৃথিবীর নারীরা কী কোনদিন মুক্তি পাবে না।তারা কী কোনদিন পুরুষের অধীনত্ব কাটিয়ে তাদের পাশাপাশি দাঁড়াতে পারবে না?তারা কী এই কথা বলতে শিখবে না, পুরুষ তুমিও যেমন মানুষ আমিও তেমন মানুষ। তুমি আমার চেয়ে বড় নও আর আমিও তোমার চেয়ে ছোট নয়।
আর পুরুষেরাও কী কোনদিন পুরুষ থেকে মানুষ হয়ে উঠতে পারবে না?
আমি ভাবি। ভেবে কূল পাই না!

সজীব আসে এবার আমার সামনে।ওর ঠোঁটে আলতো হাসি।এই হাসির ভেতরেও কেমন যেন বিষাদ!কেমন যেন কান্না!
আমারও চোখ ছলছল করছে। বুকের ভেতর কেমন ব্যথা হচ্ছে।চিন চিন করা ব্যথা। অনেক দিন আগে ভুলে গিয়েছিলাম আমি সজীবকে। আর রবিনকে কাছে টেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু সজীবকে কী আসলে ভুলা হয়েছে আমার? কিংবা সজীব আমায় ভুলতে পেরেছে?
বোধহয় না। একটুও না। ভালোবাসা হয়তোবা এমনই। আপনি চেষ্টা করবেন ভুলে যেতে।ভান করবেন ভুলে গিয়েছেন। কিন্তু ভুলতে পারবেন না। একদিন না একদিন আপনার পাশে শুয়ে থাকা মানুষটার চুমুর স্পর্শে মনে পড়বে ঠিক আপনার হারিয়ে ফেলা মানুষটার ঠোঁটের কথা!

—সমাপ্ত—

আপন মানুষ পর্ব-০৩

0

#আপন_মানুষ
#৩য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক


‘অন্ধকার রাত। ইলেকট্রিসিটি নাই।ঝড় টড় হবে বলে মনে হচ্ছে! এই জন্যই ইলেকট্রিসিটি নাই।মেঘ ডাকছে খুব ভয়ংকর রকম আওয়াজ করে।এর মধ্যে এক দু ফোটা বৃষ্টি পড়াও শুরু করেছে।
ঠিক এই সময় কলিং বেল চাপলো কেউ।
আমি আলসেমি করে উঠলাম না।ঘুম পাচ্ছে খুব। আবার ভয় ভয়ও করছে।মা ঘরে নাই।আমায় বাড়িতে একা রেখেই বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন তিনি।
আবার কলিং বেল বাজলো।
আমি তবুও উঠলাম না বিছানা থেকে।
এই সময় একটা লাথি ছুঁড়ে মারলো কেউ দরজায়। তারপর গলাটা শোনা গেল। রবিন। রবিনের গলা। রবিন রাগী রাগী গলায় বললো,’মরে টরে গেছো নাকি? বৃষ্টির ছাঁট এসে গায়ে লাগছে আর তুমি দরজাটা খুলে দিচ্ছো না! তাছাড়া অবনীর এমনিতেই প্রাগনেন্সি চলছে।ও আজ ক্লান্ত। ওকে দাঁড়িয়ে রাখছো কেন এভাবে?’
আমি রাগে কাঁপতে কাঁপতে বিছানা থেকে উঠলাম। ঘরে টর্চ নাই। মোবাইল ফোন নষ্ট। হাতড়ে হাতড়ে কোনমতে দেয়াশলাই খুঁজে বের করে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে নিলাম।
তারপর দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম। দরজা খুলে দিতেই মোমবাতির কাঁপা কাঁপা আলোয় আবছা রকম দেখলাম ,অবনী আর রবিন দাঁড়িয়ে আছে। অবনীর গায়ে দামি শাড়ি।গলায় মুক্তোর মালা।কানে কী সুন্দর দোল!হাতের বালা দুটোও মন কাড়া! রবিন আমার জন্য কোনদিন অত সুন্দর গয়না কিংবা শাড়ি কিনে আনেনি!ওর জন্য কিনেছে।কী অদ্ভুত ব্যাপার!

আমি ওদের দিকে তাকিয়ে রইলাম খানিক সময়। তারপর অবনীর হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম,’এই অবনী,তুই এমন নেমকহারাম কেন রে?তোর জন্য আমি কী না করেছিলাম?বল? তোকে আশ্রয় দিয়ে এই প্রাপ্য পেলাম আমি?অত সুন্দর প্রতিদান দিলি তুই আমায়?আসলে তুই হলি একটা নষ্টা! তোকে দেখলেই আমার বমি পাচ্ছে!’
এই সময় অবনী কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,’রবিন দেখেছো ও আমায় কী বললো? তুমি কী এরজন্য ওকে কিছু বলবে না?’
রবিন সঙ্গে রাগে দাঁত মুখ কামড়ে আমার কাছে এসে আমার গালে ঠাস করে দু দুটো চড় বসিয়ে দিলো। তারপর বললো,’যা।এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যা।’
আমি অবাক হয়ে বললাম,’এ কী বলছো রবিন?আমি না তোমার স্ত্রী?আর তুমি তো জানো না আমার পেটে যে তোমার সন্তান!’
রবিন বললো,’চুপ।একদম চুপ। আমার সন্তান শুধুমাত্র অবনীর পেটে।তোর পেটে কার সন্তান আমি জানি না।’
কথাগুলো বলে হা হা হা করে হেসে উঠলো রবিন।
অবনী তখন বললো,’রবিন,থাক ওকে তাড়িয়ে দিও না এখান থেকে।অতরাতে সে কোথায় যাবে?তারচে এখানে থাকুক। আমাদের তো একজন বুয়া লাগবেই। ওকে দিয়ে না হয় বুয়ার কাজটা করাবো আমরা। অবশ্য তোমাকে নিয়ে আমার ভয় আছে।তুমি তো তোমার বাবার মতই হয়েছো। তোমার বাবা নাকি বুয়ার সাথে শুতো।তুমিও কী আর না শুবে!’
রবিন বললো,’তোমার যখন অতই সন্দেহ তবে থাকার জন্য বলছো কেন ওকে।দাও বের করে দাও।’
অবনী বললো,’শুধু এভাবে বার করে দিলে হবে না। তুমি ওকে তিনবার একটি কথা বলবে। তারপর আর ওকে জোর করে আমাদের তাড়াতে হবে না।এমনি এমনিই চলে যাবে বেচারি!’
রবিন বললো,’কোন কথাটি বলতে হবে অবনী?’
অবনী বললো,’তুমি বলবে,তালাক,তালাক,তালাক।’
রবিন সঙ্গে সঙ্গে বললো,’তিশা,তোমায় আমি তালাক দিচ্ছি।
তালাক
তালাক
তালাক।’
রবিনের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছি।এই মানুষটাই তো গত দুদিন আগেও খুব সহজ সরল ছিল। সকাল বিকাল একটানা আমার কাছে এসে বলতো,তিশা,তোমায় আমি আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসি!
এই মানুষটাই আজ আমায় তালাক বলে দিলো?
ছিঃ!
নিজের উপর ঘেন্না হচ্ছে। ঘেন্না হচ্ছে অতদিন ওর সাথে করে আসা সংসারটার প্রতি!
আমার কান্না পাচ্ছে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছি আমি।গলা ছেড়ে কাঁদছি।আর এই সময় পৃথিবীতে ঝড়ের তান্ডব শুরু হলো। শুরু হলো বৃষ্টি।এই ঝড় বৃষ্টি এবং অন্ধকারের ভেতর আমায় ঠেলে বাইরে বের করে দিলো রবিন। তারপর বললো,’আজ থেকে তোমার জন্য এই ঘর নিষিদ্ধ।যাও, নিজের রাস্তা মাপো। তুমি এখানে থাকলে অবনীর ঘুম হবে না!’
এই কথা বলে আমায় ঘাড় ধাক্কা দিয়েই ঘর থেকে বের করে দিলো রবিন। তারপর ভেতর থেকে ঠাস করে দরজাটা আটকে দিলো।
আমি বাইরে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থেকে ভয়ে কাঁপছি। বৃষ্টি এসে পড়ছে আমার উপর।পরনের শাড়িখানা অনেকটাই ভিজে গেছে। এখন কী করবো আমি?
ওরা ভেতরে হাসি তামাশা করছে।
অবনী বলছে,’যাক বাবা,আপদ বিদেয় হয়েছে।’
রবিন বললো,’এই জন্য আগামীকাল আমরা দুজন শুকরানার নামাজ আদায় করবো।’
অবনী খিলখিল করে হেসে উঠলো।

#চলবে

আপন মানুষ পর্ব-০২

1

#আপন_মানুষ
#২য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক



কাগজের হাতের লিখাটা অবনীর।সে লিখেছে,’সবকিছু ভাগ করে দেয়া যায় দোস্ত কিন্তু ভালোবাসা না।আমি তাই আমার ভালোবাসা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছি।আমায় ক্ষমা করিস দোস্ত। তোকে কিছুই জানাতে পারিনি আগে। এছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না!’
লিখা গুলো পড়তে গিয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে এলো। মনে হলো তখন আমার চারপাশটা নিঝঝুম আঁধার।
আমি কাঁদছি। চিৎকার করে কাঁদছি।
মা আমার কাছে এলেন।আমায় টেনে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন। তারপর বললেন,’শান্ত হওগো মা। কান্নাকাটি করে কী লাভ হবে বলো!’
আমি কাঁদতে কাঁদতেই বললাম,’এখন আমার কী হবে গো মা? আমার কী উপায় হবে?’
মা চুপ করে রইলেন।যেন তার আর কিছুই বলার নেই!
ঠিক তখন খাটের উপর রাখা আমার ফোনটা বেজে উঠলো ‌। রবিন ফোন করেছে।সে বললো,’হ্যালো তিশা?’
আমি ওর ফোন রিসিভ করে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম।আর কাঁদতে কাঁদতে বললাম,’এটা কীভাবে করতে পারলে তুমি রবিন?এটা কীভাবে করতে পারলে তুমি আমার সাথে?’
রবিন বললো,’কোন চিন্তা করো না তুমি।আমি খুব দ্রুত তোমার কাছে ফিরে আসবো জান।’
‘ফিরে আসবে!’
‘তো কী করবো!একটু ঝামেলায় পড়ে গেছি এইজন্য কিছু বলতেও পারিনি। তাছাড়া অবনীর নিষেধ ছিল তোমায় কিছু বলতে। অবনী একটা গাধা মেয়ে। কনসিভ করে বসেছে।দু মাসের প্রাগনেন্ট।’
রবিনের মুখ থেকে কথাটা শোনার পর মনে হলো আমার চারপাশটা একটা বলের মতো ঘুরছে। প্রচন্ড রকম ঘুরছে।আর মাথা কেমন ভনভন করছে। হাত থেকে ফস করে মোবাইলটা পরে গেল ফ্লোরে। তারপর আমিও মাথা ঘুরে ঢলে পড়ে গেলাম মার গায়ের উপর।মা শক্ত করে ধরলেন আমায়।আমি এবার হড়হড় করে বমি করে ভাসিয়ে দিলাম মার শরীর।মা ঘেন্না করে দূরে সরলেন না।আমায় আরো কাছে টেনে নিলেন। শক্ত করে চেপে ধরলেন আমার নাভী।
আমি বললাম,’মা,আমি আর বাঁচবো না। বাঁচতে চাই না আমি।গলা টিপে মেরে ফেলুন আমায়!’
মা বললেন,’দূর বোকা মেয়ে। তুমি মরে যাবে। এটা তোমার নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু তোমার পেটে থাকা নিষ্পাপ একটা শিশুকে মেরে ফেলার অধিকার তো তোমার নাই!’
আমি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম আবার। কাঁদতে কাঁদতে বললাম,’ওমা,মাগো,আমি বেঁচে থাকবো কীভাবে বলুন। আমার যে সর্বনাশ হয়ে গেছে। আপনি জানেন মা, অবনীর পেটে দু মাসের বাচ্চা। আপনার কথা সত্য।ওরা ঘর বন্ধ করে নোংরামো করতো!’
মা বললেন,’এই জন্য আগে ভাগেই বলেছিলাম। পুরুষ মানুষের চরিত্র আমি জানি। তোমার শশুরের চরিত্র ভালো ছিল না। আমার ঘরের যে কাজের মেয়ে ছিল, সেই মেয়ের পেট বাঁধিয়ে দিয়েছিল তোমার শশুর।পরে আমি হারামজাদিকে এক লাখ টাকা দিয়ে বাচ্চা নষ্ট করিয়েছি।আর ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সেদিনই ঘর থেকে বের করে দিয়েছি!’
আমি বললাম,’মা আমার খুব খারাপ লাগছে। আমার জন্য পানি আনুন।মাথা কেমন আগুন হয়ে আসছে। মাথায় পানি ঢালুন।’
মা আমায় বিছানায় কোন রকম শুইয়ে দিয়ে বাথরুমে গেলেন। ওখান থেকে বালতি ভরে পানি এনে আমার মাথায় ঢেলে দিতে লাগলেন।আর বললেন,’অস্হির হইয়ো না মা।মনে মনে আল্লার নাম জপো।পড়ো,ইয়া সালামু,ইয়া সালামু।আল্লাহ শান্ত করে দিবে তোমায়।সব ঠিক হয়ে যাবে। এই মেয়েরে সড়ানো ব্যাপার না ‌।দু চার লাখ টাকা ধরিয়ে দিলেই শেষ। আমার ছেলে আমার ঘরে ফিরে আসবে। রবিন তোমার আছে, তোমার থাকবে।’
আমি কথা বলার কোন শক্তি পাচ্ছি না।শরীরে একটুও বল নেই।কথা বলার তীব্র চেষ্টা করছি। ঠোঁট নড়ছে। কিন্তু কথা ফুটছে না।কথা ফুটলে মাকে আমি বলতাম,’মা, আপনার এই কুলাঙ্গার ছেলের সাথে আমি আর সংসার করবো না। এরচেয়ে গলায় ফাঁস দিবো।মরে যাবো।’

রাতে আমার শরীরে খুব জ্বর উঠলো। রবিন তখন আবার ফোন করেছে।ওর ফোন দেখে জ্বরের ঘোরে রাগে এক আচাড় দিয়ে ফোন মেঝেতে ফেলে ভেঙে ফেললাম।ওর সাথে আমার আর কোন কথা নাই। কোন কথাই নাই!

অবনীর কথা খুব মনে পড়ছে। এটা সেই অবনী না?যাকে আমি আপন মানুষ ভেবে আমার কাছে আশ্রয় দিয়েছিলাম?আর রবিনও তো বলেছিলো অবনী তার বোন। কিন্তু বোনের সাথে ওসব কী করে করলো সে?
মাথা কাজ করছে না।আমি আবার কাঁদছি।আর ভাবছি,অবনীকে একদিন ঠিক খুঁজে বের করবো। তারপর এই নেমকহারাম মেয়েটাকে আমি নিজের হাতে খুন করবো!’

#চলবে

আপন মানুষ পর্ব-০১

0

#আপন_মানুষ
#১ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক

ডাক্তারের চেম্বার থেকে একটা সুসংবাদ নিয়ে বাসায় ফিরেছি। আমার শ্বাশুড়ি মাকে গিয়ে বলবো,মা আপনি দাদি হতে চলছেন!
কিন্তু বাসায় গিয়ে এই খবর দেয়ার আগেই শাশুড়ির মুখ থেকে আরেকটি দুঃসংবাদ শুনে আমার পৃথিবী থরথর করে কেঁপে উঠলো। শাশুড়ি মা মুখ শুকনো করে বললেন,’মাগো, তোমার কপাল পোড়ছে!’
আমি অবাক হয়ে বললাম,’কী হয়েছে মা?’
মা কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,’রবিন চলে গেছে!’
‘কোথায় গেছে?’
মা বললেন,’তোমার বান্ধবী অবনীরে নিয়া পালাইছে‌। এতোক্ষণে বোধহয় বিয়ে টিয়েও করে ফেলছে!’
মার মুখ থেকে কথাটা শুনে আমার রাগ পেলো।কারণ তিনি অবনীকে একটুও পছন্দ করেন না। পছন্দ না করার কারণ হলো অবনী আমার এখানে থাকে।ওর মা মারা গিয়েছিলেন তাকে ছোট রেখেই। তারপর ওর বাবাই লালন পালন করে ওকে বড় করেছেন। বছর খানেক হলো ওর বাবাও মারা গিয়েছেন। মেয়ে বড় হলেও বিয়ে দিয়ে যেতে পারেননি। অবনী বিয়ে করেনি।অবনীর ইচ্ছে ছিল সে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হবে। বাবার দুঃখ গুছাবে। তারপর বিয়ে!
কিন্তু ওর বাবা যখন ধুপ করে মারা গেলেন তখন ও অসহায় হয়ে পড়লো।কেউ নাই ওর যে ওকে দেখবে। ওকে একটুখানি আশ্রয় দিবে!ওর বাবার মৃত্যুর দিন ও আমায় জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলতে লাগলো,’তিশা, আমিও মরে যাবো রে!বিষ খেয়ে মরে যাবো!’
আমি ওর হাতটা উপরে তুলে শক্ত করে নাড়া দিয়ে বললাম,’এসব কী বলছিস অবনী?তুই মরে যাবে কেন? পৃথিবীতে কেউ তো আর চিরদিনের জন্য আসে না। মানুষ মরণশীল। আঙ্কেলের হায়াত শেষ।তাই তিনি মারা গিয়েছেন।তাই বলে তুই মারা যাবি ‌বিষ খাবি এটা কেমন কথা!’

অবনী তখন কেঁদে কেঁদে বললো,’না মরে কী উপায় বল?কার কাছে থাকবো রে আমি?কে আশ্রয় দেবে আমায়?’
আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম,’আমি না তোর বন্ধু অবনী?আমায় কী তোর আপন মানুষ মনে হয় না?আমি তোকে আশ্রয় দিবো। আমার কাছে থাকবি তুই!’
অবনী সেদিন কষ্টের ভেতরেই সামান্য হাসতে পেরেছিলো।তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম ও যেন নদীতে তলিয়ে যেতে গিয়ে বাঁচার মতো একটা খড়কুঠো খুঁজে পেলো!

অবনীকে যখন বাসায় নিয়ে এলাম তখন রবিন সবকিছু শুনে বললো,’খুব ভালো করেছো ওকে এনে। আমার তো কোন বোন নাই।আমি একটা বোন পেয়েছি। ‌’
কিন্তু মা বিষয়টা পছন্দ করলেন না। তিনি আমায় আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন,’বউমা, কাজটা তুমি ঠিক করো নাই কিন্তু! নিজের কপালে নিজে কুড়াল মারলা!’
আমি অবাক হয়ে বললাম,’এ কী বলছেন মা?’
মা বললেন,’এটাই সত্যি। স্বামীর বাড়িতে ছোট বোন-বান্ধবীরে পাড় করা আর সতিন ডেকে আনা এক কথা।’
আমি মার কথায় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।আর এই কথাটাই কেঁদে কেঁদে বলেছিলাম রবিনের কাছে। রবিন শুনে বললো,’মন খারাপ করো না।মার মাথায় একটু ছিট আছে।মা বাবাকেও খারাপ কথা বলতেন। আমার খালারা মার জন্য বাসায় আসতে পারতেন না ‌।মার আশঙ্কা ছিল,খালারা এখানে এলে বাবা তাদের সাথে —‘
আমি রবিনের মুখ চেপে ধরে ফেলেছিলাম।আর বলেছিলাম,’আর বলো না।শুনতে খুব বাজে লাগে এসব। ভাবতেই তো গা গুলিয়ে আসে! মানুষ নিজের স্বামীকে কীভাবে অত অবিশ্বাস করে!’
রবিন মৃদু হেসেছিলো।আর আমার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলেছিলো,’তিশা, তুমি খুব ভালো!’

এরপর একদিন হঠাৎ করে আমি একটা কাজে বাইরে গিয়েছিলাম। ওখান থেকে ফিরে এলে মা আমায় আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললেন,’বউমা, ঘটনা ভালো না গো মা! ছিঃ ছিঃ ছিঃ!’
আমি অবাক হয়ে বললাম,’কী হয়েছে মা?’
মা বললেন,’অবনীর সাথে রবিন দরজা আটকে কী সব করেছে!’
আমি রেগে গিয়ে মাকে বললাম,’মা, আপনি এমন মানুষ কেন?সব সময় অবনীকে নিয়ে খারাপ খারাপ কথা বলেন?’
মা তখন রাগত স্বরে বললেন,’কারোর ভালো করতে নাই! যেদিন নিজের কপাল পোড়বো তখন বুঝবা!’
আমি মার দিকে তাকিয়ে খুব হেসেছিলাম।কারণ আমি জানতাম মা এসব বানিয়ে বানিয়ে বলে।মার এটা একটা রোগ। সন্দেহ রোগ!

আজকেও যখন মা কথাটা বললেন তখন আমি মৃদু হাসলাম। হেসে বললাম,’মা আপনার বানানো কথা রাখেন আর সুখবরটা শুনেন!’
মা চুপ করে রইলেন।
আমি মাকে জাপটে ধরে বললাম,’মা, আমার পেটে আপনার নাতী!’
মার হাতটা নিয়ে আমার পেটে চেপে ধরলাম।
মা সঙ্গে সঙ্গে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।আর বললেন,’মা,মাগো, বিশ্বাস করো মা তোমার কপাল পোড়ে গেছে। তোমার অনাগত সন্তানের কপালও পোড়ছে! রবিন সত্যি সত্যি অবনীরে নিয়ে পালিয়ে গেছে!’
আমি অবাক হয়ে মার চোখের দিকে তাকালাম।জলে ভিজে আছে সেই চোখ।
মা তখনও বলছেন,’তোমার কপাল পোড়ে গেছে গো মা!’
আমার তবুও বিশ্বাস হতে চাই না।আমি এসব বিশ্বাস করতে চাই না।অবনীকে যে আমি নিজের বোনের মতো করে দেখি!আর রবিনকে যে নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করি!
আমি এবার দৌড়ে গেলাম ঘরে।ডাকলাম অবনীকে।ডাকলাম রবিনকে। ওরা সাড়া দিলো না।কারণ ওরা কেউই ঘরে নাই!
তারপর কম্পিত শরীর নিয়ে টেবিলের উপর তাকাতেই দেখলাম একটা সাদা কাগজ। সেই কাগজের উপর কলমটা রাখা।আমি ধীরে ধীরে টেবিলের কাছে গেলাম। তারপর কাগজটা হাতে নিতেই মনে হলো আমার পায়ের নীচে আর কোন মাটি নেই।এসব কী লিখা এই কাগজে!

#চলবে

মন চায় তোকে পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0

#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_২০_এবং_শেষ
#নিশাত_জাহান_নিশি

—–“অন্তর…..আপনি বাবা হতে চলেছেন।”

অন্তরের কোনো রেসপন্স না পেয়ে মল্লিকা ঠিক বুঝেছে অন্তর গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। মল্লিকা বাঁকা হেসে অন্তরের কানের লতিতে আস্তে করে এক্টা বাইট দিয়ে আবারো অন্তরের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,,

—-“অন্তর….. আপনি বাবা হতে চলেছেন।”

সাথে সাথে অন্তর নড়ে চড়ে উঠল। বাবা হওয়ার কথাটা অন্তরের কানে যাওয়ার সাথে সাথেই অন্তর শোয়া থেকে হুড়মুড়িয়ে উঠে মল্লিকার মুখোমুখি বসে বেশ জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

—-“সত্যি বলছ মল্লিকা? আমি বাবা হতে চলেছি?”

মল্লিকা অন্তরের নাক টেনে বলল,,,,,

—-“হুম অন্তর আপনি বাবা হতে চলেছেন।”

অাচমকাই অন্তর বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে চোখের জল ছেড়ে দিলো। মল্লিকা বেশ অবাক হয়ে অন্তরের দিকে ঝুঁকে বলল,,,,,

—-“অন্তর কি হয়েছে আপনার? আপনি হঠাৎ কাঁদছেন কেনো? আচ্ছা অন্তর…. আপনি কি খুশি হন নি?”

অন্তর ছলছল চোখে মল্লিকাকে ওর বুকের মাঝে চেঁপে ধরে বলল,,,,,,

—-“মল্লিকা….. আমি এতোটাই খুশি হয়েছি যে নিজের খুশি ধরে রাখতে পারছি না। আমার শরীরটা অনেক কাঁপছে মল্লিকা। বুকের ভেতর এক্টা সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে। বাবা হওয়ার এতো আনন্দ আমার আগে জানা ছিলো না। খুশিতে আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে মল্লিকা, খুব।”

অন্তরের কথাগুলো শুনে মল্লিকা চোখের জল ছেড়ে দিলো। সন্তানের প্রতি অন্তর এতোটা টান অনুভব করবে মল্লিকা বুঝতে পারে নি। মল্লিকা অন্তরকে ঝাপটে ধরে নিঃশব্দে কাঁদছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর অন্তর মল্লিকাকে ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে চোখের জল গুলো মুছে এক গাল হেসে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“বাড়ির সবাইকে খুশির খবরটা দিয়ে আসি। সবাই খুব খুশি হবে মল্লিকা।”

অন্তর আর এক মুহূর্ত ও দাঁড়াল না। রুম থেকে বের হয়ে সোজা নিচে চলে গেলো। মল্লিকা মৃদ্যু হেসে চুল থেকে টাওয়ালটা সরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাঁড়তে শুরু লাগল। ঐ দিকে অন্তর পুরো বাড়িতে দৌঁড়ে দৌঁড়ে খুশির খবরটা বলে বেড়াচ্ছে। মিসেস অরুনীমা আর অনন্যা খুশিতে দৌঁড়ে এসে মল্লিকার রুমে ঢুকে গেলো। মল্লিকাকে দুজনই ঝাপটে ধরল। মিসেস অরুনীমা খিলখিল হেসে মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“মল্লিকা….. এতোদিন ধরে এই খুশির খবরটা শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। তুমি আমাদের ধন্য করলে মল্লিকা।”

অন্তর আর সারফারাজ চৌধুরী এতক্ষনে মিষ্টির দোকানে ফোন করে কেজি কেজি মিষ্টির অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। পুরো বাড়িতে খুশি আর খুশি। সব কিছুতেই এক্সট্রা খুশি। নুসবাইবা এসে ও মল্লিকাকে ঝাপটে ধরল। অন্তর রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে মল্লিকাকে নিয়ে চলে গেলো। ব্রেকফাস্ট টেবিলে হরেক পদের খাবার সাজানো আছে। অন্তর মল্লিকাকে খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মল্লিকা খাচ্ছে আর মুগ্ধ নয়নে অন্তরকে দেখছে। মনে মনে সে উপর ওয়ালার কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করছে। সাথে ওর আম্মু, আব্বুকে ও অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছে। মিসেস অরুনীমা ফোন করে মল্লিকার আম্মু, আব্বুর কাছে খুশির খবরটা পৌঁছে দিলো। ওরা এমনিতে ও আজ বিকেলে অনন্যার হলুদ অনুষ্ঠানে আসত। কিন্তু খুশির খবরটা পেয়ে ওরা এখনই রওনা হয়ে গেলো অন্তরদের বাড়ি আসতে। মল্লরের কানে ও খুশির খবরটা পৌঁছে গেছে। মল্লর বিকেলের মধ্যেই ওর হাজবেন্ড কে অন্তরদের বাড়িতে চলে আসবে।

এভাবেই হাসি, খুশিতে সকাল গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে রাত নেমে এলো। মিসেস লিজা আর মল্লর ও চলে এলো। বাড়ির সবাই মল্লিকাকে ঘিরে রেখেছে। বাড়ির ছেলেরা বেশ ব্যস্ত হলুদের প্যান্ডেল সাজাতে। এক্টু পরেই অনন্যার হলুদ, মেহেদীর প্রোগ্রাম শুরু হয়ে যাবে। বাড়ির সব মহিলারা এবার সাজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তন্ময় খুব ভালো একজন মেকাপ আর্টিস্টকে অনন্যার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে অনন্যাকে সাজানের জন্য। অনন্যা খুশি খুশি মনে সেজে ও নিচ্ছে। নুসাইবা, মল্লিকা আর মল্লর ও নিজেদের মতো করে সাজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অন্তর হলুদ পান্জ্ঞাবী পড়ে অলরেডি স্ট্যাইজে চলে গেছে।

প্রায় দুই ঘন্টা পর। ঘড়িতে রাত ৯:৩০। অনন্যার সাজ কমপ্লিট। হলুদ লেহেঙ্গাতে অনন্যাকে ভারী মিষ্টি লাগছে। সাথে ভারী অরনামেন্টস তো আছেই। মল্লিকা, মল্লর আর নুসাইবা হলুদ কাপড় পড়ে রেডি হয়ে গেলো। এবার স্ট্যাইজে যাওয়ার পালা। মল্লিকা এক হাত দিয়ে অনন্যাকে আষ্টেপিষ্টে ধরে স্ট্যাজের দিকে এগুচ্ছে। সাথে মল্লর আর নুসাইবা ও আছে।

অন্তর মল্লিকাকে দেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মল্লিকার দিকে। মল্লিকা বাঁকা হেসে অন্তরকে ধাক্কা দিয়ে অনন্যাকে নিয়ে স্টেইজে বসে পড়ল। অন্তর হাসতে হাসতে অনন্যার অন্য পাশে বসল। দুজনই অনন্যাকে হলুদ মেখে ভূত বানিয়ে দিয়েছে। অনন্যা ও কম যায় না। সে ও মল্লিকা আর অন্তরকে হলুদ দিয়ে চুপচুপ করে ফেলেছে। এবার সবাই এক এক করে পালাক্রমে অনন্যাকে হলুদ পড়াতে লাগল। ঐ দিকে তন্ময়ের বাড়িতে ও খুব জোরচে হলুদ অনুষ্ঠান চলছে। তন্ময়ের ফ্রেন্ডসরা ও তন্ময়কে হলুদ ভূত বানিয়ে দিয়েছে। প্রায় দুই ঘন্টা পর অনন্যার হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হলো। সবাই এক এক করে নিজেদের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ল। অন্তর মল্লিকার পেটের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। মল্লিকা মুচকি হেসে অন্তরের মাথায় হাত বুলাচ্ছে। কিছুক্ষন পর মল্লিকা নিজে ও ঘুমিয়ে পড়ল।

পরের দিন। সকাল দশটা। অন্তরদের পুরো বাড়িতে রান্নার সুঘ্রাণ ম ম করছে। বাড়ির সবাই ব্যস্ত কাজে কাজে। কাজের ফাঁকে ও অন্তর মল্লিকার খুব খেয়াল রাখছে। মল্লিকাকে সাবধানে চলাচল করতে বলছে। অনন্যা সাজতে বসে গেছে। মেকাপ আর্টিস্ট এসে অনন্যাকে সাজাচ্ছে। এভাবেই কেটে গেলো দুই ঘন্টা। ঘড়িতে দুপুর বারোটা। তন্ময় লাল শেরোয়ানী পড়ে রেডি হয়ে গেছে। এবার শুধু অনন্যাদের বাড়ি আসার পালা। তন্ময়ের যেনো আর তর সইছে না, কখন সে অনন্যাকে দেখবে তার জন্য আনচান আনচান করছে।

মল্লিকা লাল শাড়ি পড়ে হালকা সাজে রেডি হয়ে গেছে। মল্লিকার সাথে সাথে মল্লর আর নুসাইবা ও লাল শাড়ী পড়েছে। তিনজনই হালকা ভাবে সেজেছে। তাছাড়া মল্লিকার এখন সাজ গোজে তেমন মন নেই। সে কেবল ওর বেবিকে নিয়ে ব্যস্ত। সারাক্ষন বেবিকে নিয়ে ভাবে। অন্তর লাল পান্জ্ঞাবী পড়ে গেইটের আশে পাশে ঘুড়াঘুড়ি করছে কখন তন্ময়রা আসবে। অন্তর ও কেমন উদাসীন হয়ে গেছে। সারাক্ষন শুধু ওর বেবিকে নিয়ে চিন্তা করে।

প্রায় এক ঘন্টা পর। ঘড়িতে দুপুর এক্টা। তন্ময়ের গাড়ি এসে অনন্যার বাড়ির গেইটের সামনে থামল। অন্তর, সাহেদ, সাহেল, সারফারাজ চৌধুরী খুব হাসি মুখে তন্ময় এবং ওর পরিবারকে বাড়ির ভিতর ঢুকালো। স্ট্যাইজে বসে আছে তন্ময়। তন্ময়ের পাশেই কাজী সাহেব বসে আছে। অনন্যাকে এখন স্ট্যাইজে আনা হবে। মল্লিকা আর নুসাইবা অনন্যার দুই হাতে ধরে অনন্যাকে স্ট্যাইজে নিয়ে আসছে। তন্ময়ের দৃষ্টি অনন্যাতে স্থির হয়ে গেলো। লাল লেহেঙ্গাতে অনন্যাকে লাল পরী লাগছে। অন্তর ও ড্যাব ড্যাব করে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা লাজুক হাসি দিয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা অন্তরকে ক্রস করে অনন্যাকে নিয়ে তন্ময়ের পাশে বসিয়ে দিলো। তন্ময় আর অনন্যা দুজন দুজনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কাজী সাহেব এবার বিয়ে পড়ানো শুরু করল। তিন কবুলের মাধ্যমে দুজনের বিয়ে পড়ানো শেষ হয়ে গেলো। দুই পরিবারের সবাই বেশ খুশি। সবাই খুশিতে মিষ্টিমুখ করছে।

প্রায় তিনঘন্টা পর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমে এসেছে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এবার এলো বিদায়ের পর্ব। সবাই খুব কেঁদে কেটে অনন্যাকে বিদেয় দিলো। অনন্যা ও খুব কেঁদেছে। কাঁদতে কাঁদতে ভাসিয়ে দিয়েছে। অন্তর আর সারফারাজ চৌধুরী খুব কষ্টে ওদের চোখের জল আটকে রেখেছে। মিসেস অরুনীমা কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে। মল্লিকা খুব কষ্টে মিসেস অরুনীমাকে সামলাচ্ছে। তন্ময় আর অনন্যা সবার থেকে বিদেয় নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ল। অন্তররা সবাই এবার বাড়িতে ঢুকে ড্রইং রুমে গোল হয়ে বসে পড়ল। সবার চোখেই চল গড়াগড়ি করছে। বাড়ির সব গেস্টরা এতক্ষনে চলে গেছে। রজনী অনন্যার বিয়েতে আসতে পারে নি। কিছু পার্সোনাল প্রবলেমের কারণে। মল্লিকা ও রজনীকে তেমন ফোর্স করে নি।

রাত দশটা। অনন্যা নীল রঙ্গের শাড়ী পড়ে ফুলসজ্জার খাটে বসে আছে। তন্ময় নীল পান্জ্ঞাবী পড়ে রুমের দরজা ঠেলে রুমের ভিতর ঢুকল। অনন্যা লজ্জায় মুখটা শাড়ীর আঁচল দিয়ে ঢেকে রেখেছে। তন্ময় বাঁকা হেসে অনন্যার মুখোমুখি বেডের উপর বসে পড়ল। অনন্যা লজ্জা কাটিয়ে তন্ময়ের দিকে তাকালো। তন্ময় মুচকি হেসে অনন্যার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। আস্তে আস্তে তন্ময়ের ভালোবাসার গভীরতা বাড়তে লাগল।

অন্তর আর মল্লিকা দুজন দুজনকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। অন্তর কিছক্ষন পর পর নড়ে চড়ে উঠে মল্লিকার পেটে হাত রাখছে। অন্তরের জ্বালায় মল্লিকা ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারছে না। বার বার ওর ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে। অনেকক্ষন জ্বালানোর পর অন্তর নিজেই ঘুমিয়ে গেলো। মল্লিকা ও আরামচে ঘুম দিলো।

এভাবেই কেটে গেলো পাঁচ পাঁচটে মাস। এই পাঁচ মাসে মল্লিকার পেটটা এক্টু বড় হয়েছে। এক্টু না অনেকটাই বড় হয়েছে। মল্লিকার ছেলে বাবু হবে। আলট্রাসনো করে জানা গেছে। অন্তর এবং ওর পরিবার মল্লিকার খুব যত্ন নিচ্ছে। মল্লিকার কাজ করা টোটালী বারণ। মিসেস অরুনীমা কোনো কাজ করতে দেয় না মল্লিকাকে। এর মাঝেই অন্তর আর মল্লিকা গিয়ে রজনীর বিয়ের দাওয়াত ও খেয়ে এসেছে। অন্তর বেশির ভাগ সময় ই এখন বাড়িতে কাটায়। মল্লিকাকে সে খুব চোখে চোখে হারায়। অনন্যা তো সুযোগ পেলেই মল্লিকার কাছে চলে আসে। মল্লিকার পেটে হাত দিয়ে ওর ভাইয়ের ছেলের সাথে নানা রকম কথা বলে আর খিলখিল করে হাসে। মল্লিকা অনন্যার কান্ড দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায়। মিসেস অরুনীমা তো তেড়ে এসে অনন্যার মাথায় গাড্ডা মারে। অনন্যা না কেঁদে উল্টো খিলখিল করে হাসে।

বাবুরা পাঁচ মাসে পড়লেই পাঁচ ফল খাওয়ানো হয়। তাই মিসেস অরুনীমা আজ বাড়িতে পাঁচ ফলের অনুষ্ঠান রেখেছে। ছোট খাটো করেই অনুষ্ঠানটা করা হবে। মল্লিকার পরিবার আর তন্ময়ের পরিবার থাকবে। ছেলেদের এই অনুষ্ঠানে থাকা এলাউড না। তাই অন্তর, তন্ময়, সারফারাজ চৌধুরী, মল্লিকার বাবা, তন্ময়ের বাবা মিলে বাড়ির ছাঁদে বসে খুব আড্ডা দিচ্ছে। মল্লিকাকে ব্ল্যাক কালার কাপড় পড়িয়ে বাড়ির ড্রইং রুমে বসানো হলো। নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ ফলের অনুষ্ঠান করা হলো। মল্লিকার পরিবার কেজি কেজি করে পাঁচ পাঁচটে ফল মিলিয়ে এনেছে। অনুষ্ঠান শেষে অনেক রিলেটিভসদের বাড়ি পাঁচ ফল পাঠানো হলো। মল্লিকার পরিবার আর তন্ময়ের পরিবার খাওয়া দাওয়া করে নিজেদের বাড়ি চলে গেলো। অনন্যা অবশ্য যেতে চায় নি। তন্ময় জোর করে অনন্যাকে বাড়ি নিয়ে গেছে।

মল্লিকা রুমে গিয়ে শাড়ী পাল্টে নিলো। অন্তরের সাহায্যে মল্লিকা শাড়ী পাল্টেছে। আজ রাতের আকাশে অগনিত তাঁরা আর মস্ত বড় এক চাঁদের মেলা। খোলা জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলো অন্তরের রুমটাকে আলোয় আলোকিত করে রেখেছে। অন্তর মুচকি হেসে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“মল্লিকা….. ব্যালকনীতে চলো। আজ আমরা দুজন একসাথে বসে চন্দ্রবিলাস করব। সাথে আমাদের ছেলে ও থাকবে।”

মল্লিকা অন্তরের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,

—-“চলুন অন্তর।”

অন্তর পিছু ফিরে মল্লিকার হাত ধরে আস্তে করে মল্লিকার সাথে ব্যালকনিতে পাতা ছোট্ট টুলটায় বসে পড়ল। মল্লিকা অন্তরের কাঁধে মাথা রেখে থালার মতো গোল চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর মল্লিকার মাথায় মাথা ঠেকিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“মল্লিকা…. আজ আমি পূর্ণ। আমার মন যাকে চেয়েছে আমি তাকেই পেয়েছি। সারাজীবন আমার #মন_চায়_তোকে। সাথে আমার সন্তানকে ও। আমি দুজনকেই চাই মল্লিকা। দারুনভাবে চাই।”

—-“অন্তর….. আজ আমি ও পূর্ণ। আপনার মতো একজন বেস্ট বেটার হাফ পেয়ে। আপনি ও সারাজীবন আমার মনে থাকবেন অন্তর। আমাদের সন্তান আর কিছু মাস পরেই এই পৃথিবীতে আসবে। তখন নিজেকে আরো বেশি পূর্ণ মনে হবে।”

অন্তর মুচকি হেসে মল্লিকাকে ঝাপটে ধরল। এভাবেই অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে কেটে গেলো প্রায় এক বছর। মল্লিকার কোল আলো করে এক্টা ছোট্ট প্রানের জন্ম হয়েছে। ছেলে হয়েছে মল্লিকার। আট বয়সে পড়ছে মল্লিকার
সন্তান। সুস্থ ভাবেই মল্লিকার ডেলিভারী হয়েছে। অন্তর সারাক্ষন ওর ছেলেকে নিয়ে মেতে থাকে। অফিসে যাওয়া টোটালী ছেড়ে দিয়েছে। মল্লিকা হাজার জোর করে ও অন্তরকে অফিসে পাঠাতে পারে না। অনন্যা দিনে দুইবার করে ওর ভাইয়ের ছেলেকে দেখতে আসে। মল্লিকার আম্মু, আব্বু ও দুইদিন পরে পরে চলে আসে উনাদের নানুভাইকে দেখতে। মিসেস অরুনীমা আর সারফারাজ চৌধূরী উনার নাতিকে কোলে নিয়ে মেলা হাসাহাসি আর গল্প জুড়ে দেয়। অনন্যা দুইমাসের প্রেগন্যান্ট। এর পরে ও সে দৌঁড় ঝাপ কমায় না। এই নিয়ে অনন্যার সাথে তন্ময়ের রোজই ঝগড়া হয়।

অন্তর ওর ছেলের নাম রেখেছে “আফনান চৌধুরী আদ্র।” অন্তরের ছেলে দেখতে একদম অন্তরের মতো হয়েছে। মল্লিকা তো এই হিংসেয় সারাক্ষন জ্বলে। আদ্র আধো আধো বুলিতে মল্লিকাকে মা মা করে ডাকে। অন্তরকে ও বা বা করে ডাকে। অন্তর তো খুশিতে ওর ছেলেকে বুকে পুড়ে নেয়। মাঝে মাঝে খুশিতে কান্না ও করে দেয়। মল্লিকা আড়ালে দাঁড়িয়ে এসব দেখে আর মুচকি হাসে।

এভাবেই ওদের সংসার জীবন চলতে থাকে। অন্তর আর মল্লিকা ওদের বিবাহিত জীবনে খুব খুশি। মা-বাবার ঠিক করা এ্যারেন্জ্ঞ ম্যারেজে হয়তো সুখ মিলে নয়তো দুখ। সবটা ডিপেন্ড করে ভাগ্যের উপর। মল্লিকা আর অন্তরের ভাগ্য ভালো ছিলো বলে ওরা বিবাহিত জীবনে খুব খুশে হয়েছে। দুজন দুজনকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে পেরেছে। ওদের ভালোবাসাকে খুব সুন্দর এক্টা রূপ দিয়েছে ওদের সন্তান।

—————–সমাপ্ত—————–