Sunday, June 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1589



এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-১৬

0

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ১৬
#Arshi_Ayat

কেসের কোনো সমাধান হচ্ছে না তাই কেসটা বন্ধ করে দিতে হলো প্রিয়মের।অনেক তদন্তে করেও যখন কোনো লাভ হলো না তখন কেসটা বন্ধ করা ছাড়া আর উপায় নেই।

প্রিয়ম ফাইলটা বন্ধ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো।ডিউটি শেষ এখন বাসায় যেতে হবে।প্রিয়ম ফোনটা টেবিলের ওপর থেকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
——————
রুহি রাস্তার একপাশে দাড়িয়ে আছে।এখন রাত ৮.০০টা।প্রায় পনেরো মিনিট ধরে দাড়িয়েও কোনো কিছু না পেয়ে রুহির মেজাজ গরম হয়ে আছে।অনেকগুলো খালি রিকশা দাড়িয়ে আছে কিন্তু একজনও যাবে না।না গেলে রিকশা নিয়ে দাড়িয়ে থাকে কেনো?রুহি মনে মনে রিকশাওয়ালাদের ইচ্ছামতো গালাগালি করছে।হঠাৎ ওর সামনে পুলিশের গাড়ি থামলো।প্রিয়ম গাড়ি থেকে নেমে এসে রুহিকে বলল”আরে আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?”

“কোনো রিকশা,অটো কিচ্ছু পাচ্ছি না।”

“ও আচ্ছা আসুন।আমিও বাসায় যাচ্ছিলাম।আপনাকে নামিয়ে দিয়ে যাই।”

“আচ্ছা।”

রিকশা আর অটো না থাকায় প্রিয়মের প্রস্তাবটা আর মানা করেনি রুহি।একমাস হলো ভার্সিটি ভর্তি হয়েছে রুহি আর এর পাশাপাশি টিউশনি করায় আর কিছুদিন হলো অনলাইনে শাড়ির ব্যাবসা করে।সবকিছু সামলে পড়াশোনা করে নিজেকে দেওয়ার মতো আর সময় পায় না রুহি।তাতেও ভালো এখন আর পুরোনো কষ্টগুলো ঘিরে ধরতে পারে না।

কিছুদূর যাওয়ার পর রুহি বলল”আচ্ছা কিছুদিন আগে শুনলাম আপনার বিয়ে ভেঙে গেছে আই থিংক মেয়ে পালিয়েছে।রাইট?”

“হ্যাঁ,আমরা কেউই জানতাম না মেয়ের বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি মেয়ে পালাইছে।”

“ওও,,,,এখন কি আর বিয়ে করার চিন্তা ভাবনা আছে?”

“না আমি আর বিয়েই করবো না।প্রথমবার যে অপমানটা সহ্য করতে হয়েছে তাতে বিয়ে করার ইচ্ছা মরে গেছে।এমনিই ভালো আছি।”

রুহি প্রিয়মের কথায় হেসে বলল”সামান্য এই কারণে আর বিয়ে করবেন না?আরে মশাই একবার এমন হয়েছে বলে সবসময় এমন হবে না কি?”

“নাহ!তবুও বিয়ে করার ইচ্ছা নেই।দেখি যদি কখনো মনে হয় তখন দেখা যাবে।”

প্রিয়ম কথা শেষ করতে করতে রুহিদের বাড়ি চলে এলো।প্রিয়ম গাড়ি থামাতেই রুহি গাড়ি থেকে নেমে বলল”ভেতরে আসুন।”

“না,,আরেকদিন।আজ বাসায় যেতে হবে।”

“আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ।”

“আল্লাহ হাফেজ।”
প্রিয়ম গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো আর রুহি ঘরে চলে এলো।
———————–
অরুণী আর প্রণয়ের বিয়ে হয়েছে একমাস হলো।এরমধ্যে ওদের ভেতরে সম্পর্কটা বেশ উন্নত হয়েছে।দুজনই দুজনকে ভালোবাসে।তবে ভালোবাসার দিক দিয়ে প্রণয় এগিয়ে।অরুণীরও আজকাল প্রেম প্রেম ভাব লাগে।এটা কি ছোঁয়াছে কি না কে জানে?হয়তো প্রণয়ের সাথে থাকতে থাকতে হয়ে গেছে রোগটা।

প্রণয়ের বাবা মা একমাসের জন্য সিলেট গেছে তাই বাসায় প্রণয় আর অরুণী থাকে।বাবা মা চলে যাওয়ার পর প্রণয় কাজের লোকদেরও একমাসের জন্য ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়েছে।এখন সব কাজ দুজনে একসাথে করে।এইতো প্রণয় এখন কিচেনে আছে।কি করছে কে জানে!অরুণী বই বন্ধ করে নিচে নামছে দেখার জন্য তার বর মহাশয় কি করছে দেখার জন্য।অরুণী কিচেনে গিয়ে দেখলো প্রণয় খিচুড়ি রান্না করছে।অরুণী প্রণয়ের পাশাপাশি দাড়িয়ে বলল আজ”খিচুড়ি রান্না করছেন যে?কোনো উপলক্ষ আছে নাকি?”

“হ্যাঁ আছে তো।খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে তাই রান্না করেছি।”

“ওমা এটা কোনো উপলক্ষ হলো নাকি?”

“নিজের ইচ্ছের চেয়ে বড়ো উপলক্ষ আর কি হতে পারে?আর একটু আগে তুমিও তো বলছিলে খিচুড়ি খাবে।”

“হ্যাঁ সেইজন্য কি আজই রান্না করতে হবে?কালও তো করা যেতো।”

“যেতো কিন্তু ধরো যদি আজ রাতে আমি ঘুমানোর পর আর যদি না জাগি চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে যাই তাহলে আমার একটা আক্ষেপ থেকে যাবে যে তুমি খিচুড়ি খেতে চেয়েছিলে আর আমি খাওয়াতে পারলাম না।এটা আমি হতে দেই কি করে বলো।”

প্রণয় কথাটা বলে আবার কাজে মনোযোগ দিলো কিন্তু ও এটা ভাবে নি যে ওর হেয়ালি করে মারা যাওয়ার কথাটা অরুণীর মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে।অরুণী আর কোনো কথা না বলে ঘরে গিয়ে জানালার পাশে বসে রইলো।

রান্না শেষে প্রণয় ফ্রেশ হয়ে এসে অরুণীর পাশে বসে বলল”মন খারাপ কেনো?”

“না মন খারাপ না এমনিতেই বসে আছি।”

“আমি জানি তোমার মন খারাপ অরু।টানা তিনবছর ধরে আপনাকে মহব্বত করি একমাস ধরে একই ছাদের তলায় থাকছি তাই আপনাকে পুরোপুরি বুঝতে না পারলে এতটুকু বুঝতে পারি যে কখন আপনার মন খারাপ হয় আর কখন হয় না।এবার মিথ্যা না বলে সত্যিটা বলুন কেনো মন খারাপ করে আছেন?”

অরুণী প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে এক পলক দেখে বলল”আজকে বলবো না।অন্য একদিন বলবো।”

“আচ্ছা।এখন খাবে নাকি পরে খাবে?”

“এখনি খেয়ে নেই চলুন।”

“চলো।”

অরুণী আর প্রণয় ডাইনিং টেবিলে বসলো।প্রণয় খিচুড়ি বেড়ে অরুণীকে দিলো তারপর নিজেও নিলো।অরুণী খেতে খেতে দেখলো প্রণয় খাচ্ছে না।অরুণী খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে জিগ্যেস করলো”খাচ্ছেন না কেনো?”

“আসলে পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে হাত কেটে গেছে।জ্বলছে তাই খেতে পারছি না।”

“হাত কেটে গেছে আর আপনি আমাকে বলেন নাই!দেখি কই কাটছে?”

“আরে এতো ব্যস্ত হওয়ার দরকার নাই।অল্পই কাটছে।”

“দেখান বলছি।” অরুণী ধমকে বলল।

অরুণীর ধমকের চোটে প্রণয় হাত ওর সামনে ধরলো।ক্ষতটা বেশি গভীরও না আবার ফেলে দেওয়ার মতোও না।ক্ষতটায় রক্ত জমাট বেধে রয়েছে।আশেপাশে রক্তের দাগ হয়ে আছে।একটু এনটিসেপটিকও লাগায় নি দেখে অরুণী রেগে চোখ গরম করে প্রণয়রের দিকে তাকিয়ে বলল”এগুলা কি হ্যাঁ?কাটা হাত এভাবে রাখছেন কেনো?নিজের কি বাহুবালী মনে হয় যে কাটা ছেড়ায় কিছু হবে না?কি কেয়ারলেস ছেলে!একটু এনটিসেপটিকও লাগায় নি।”

অরুণী প্রণয়কে লাগাতার বকতে বকতে চলে গেলো ফাস্ট এইড বক্স আনতে।প্রণয় বেচারা বকা খেয়ে চুপচাপ বসে আছে।ওর তো মনেই ছিলো না হাত কাটার কথা।খেতে বসেই মনে পড়েছিলো।ইশ!একটু আগে মনে পড়লো না কেনো?প্রণয়ের মনে মনে খুব আফসোস হচ্ছে।

অরুণী ফাস্ট এইড বক্সটা এনে প্রণয়ের হাতটা ওয়াশ করে ব্যান্ডেজ করে দিলো।তারপর প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে শাসনের সুরে বলল”আর যেনো এমন অবহেলা না দেখি।”

প্রণয় ছোটো বাচ্চাদের মতো ঘাড় কাত করে সম্মতি জানালো।অরুণী ফাস্ট এইড বক্সটা রেখে এসে প্রণয়ের প্লেটে থেকে খিচুড়ি তুলে এক লোকমা ওর মুখের সামনে ধরলো।প্রণয় আশ্চর্য চাহনীতে অরুণীর দিকে তাকিয়ে বলল”তুমি খাইয়ে দিবে?”

“হ্যাঁ,,আমি আপনার বউ। আমি দিবো না তো পাশের বাসার ভাবি দিবে নাকি?”

প্রণয় আর কিছু বলল না। মনেমনে খুব খুশী হয়ে অরুণী হাতে খেয়ে নিলো।আর মনেমনে বলল”পাশের বাসার ভাবি দিলেও আমি খাবো না।”

এভাবেই অরুণী নিজেও খেলো আর প্রণয়কেও খাইয়ে দিলো।
——————
হুট করে নাতাশার বিয়ের খবর শুনে আকাশের জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা।আকাশ বসে বসে অফিসের কাজ করছিলো।হঠাৎ ওর এক বন্ধু ফোন দিয়ে খবর দিলো নাতাশা নাকি একটু আগে বিয়ে করেছে।আকাশ দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে রিকশা নিলো নাতাশার বাসায় যাওয়ার জন্য।রিকশায় নাতাশাকে কয়েকবার ফোন দিয়েও পাওয়া গেলো না।নাতাশার বাড়ির সামনে রিকশা থামতেই আকাশ ছুটে ওর বাড়ির ভেতর যেতে নিলেই দারওয়ান আটকে দিয়ে বলল”ভেতরে যাওয়া যাবে না।”

“ভেতরে আমার কাজ আছে।সামনে থেকে সরেন আপনি।” আকাশ উত্তেজিত হয়ে বলল।

“আচ্ছা দাড়ান ভেতরে জিগ্যেস করি।”

এটা বলেই দারওয়ান নাতাশার বাবাকে কল দিলো।নাতাশার বাবা সরাসরি না করে দেওয়ায় দারওয়ান আকাশের কোনো কথা না শুনেই গেট আটকে দিলো।

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-১৫

0

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ১৫
#Arshi_Ayat

প্রণয় এখনো বুঝতে পারছে না বিয়েটা কার সাথে হয়েছে ওর!জ্বী একটু আগে কোনো একটা মেয়ের সাথে প্রণয়ের বিয়ে হয়েছে।প্রণয় বিয়ের ব্যাপার একটু জানে না।তাকে একপ্রকার জোর করে নিয়ে আসা হয়েছে।আর এর পিছনে হাত হলো তার কামিনা বন্ধুদের সাথে বাবা মা ও যোগ দিয়েছে।ওরা প্রণয়কে না জানিয়েই বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।তারপর দুপুরের দিকে জোরাজোরি করে মেয়ের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।প্রণয় চলে আসতে চাইলে ওর মা ওকে আটকেছে।পুরোটা সময় ও বোবার মতো চুপ ছিলো।এখনো মাথায় কিছু ঢুকছে না আসলে বিয়েটা কার সাথে হয়েছে।মেয়ের চেহারাও এখনো দেখেনি প্রণয়।এমনিতেই মনটা ভালো নেই।আজ অরুণীর বিয়ে হয়ে গেছে। তার ওপর এমন কিছু একদম নিতে পারছে না প্রণয়।এখন আবার বন্ধুরা জোরাজোরি করছে বাসর ঘরে যাওয়ার জন্য।বাসর ঘরে কি হবে?অসহ্য লাগছে সবকিছু।প্রণয় বাসর ঘরে যাবে না বলে বসে রইলো।কিন্তু ওর নাছোড়বান্দা বন্ধুরাও উঠে পড়ে লেগেছে যে করেই হোক প্রণয়কে বাসর ঘরে পাঠাবেই।

ফারদিন প্রণয়ের মাথায় গাট্টা মেরে বলল”শালা আর কতক্ষণ বসে থাকবি?ভাবি অপেক্ষা করছে তো।”

“ফারদিন বিরক্ত করিস না।তোরা জানতি আমার লাইফে আর ভালোবাসা আসবে না।তবুও এমন কেনো করলি?একটাবার আমাকে জানালে এমন হতো না।”

“আমরা ভালোই করছি।আর এখন তুই বাসর ঘরে যাবি মানে যাবিই।” তুর্য ধমকে বলল।

তারপর প্রণয়কে ঠেলেঠুলে ওর রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকে দিলো।প্রণয় মনেমনে বন্ধুদের ইচ্ছামতো গালি দিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো অরুণী বিছানায় বসে আছে।এটা কি করে সম্ভব?অরুণীও অবাক। এবার দুজনেই একসাথে ইয়া জোরে বাড়ি কাপিয়ে চিৎকার দিলো।ওদের চিৎকারে প্রণয়ের বাবা মা বন্ধুরাও চলে এলো।প্রণয়ের মা বলল”কি হলো চিল্লাচ্ছিস কেনো?”

প্রণয় তোতলাতে তোতলাতে বলল”ম,মা ও এখানে কেনো?”

প্রণয়ের বাবা উত্তরে বলল”গাধা ও তোর বউ।তাই এখানে।”

“এটা কি করে সম্ভব?ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে।” প্রণয় বিষ্ময়ে জবাব দিলো।

“হ্যাঁ ওর বিয়ে হয়েছে তোর সাথে।” ফারদিন বলল।

প্রণয় আর অরুণী দুজনই অবাক।ওরা কেউই জানতো না।আজ ওদেরই বিয়ে।প্রণয় আবার প্রশ্ন করলে”কিভাবে?”

এবার তুর্য হেসে বলল”এটা আঙ্কেল আন্টি আর আমাদের প্ল্যান ছিলো।আমরা ধরে নিয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত অরুণী তোকে একসেপ্ট করবে না এবং সেই দুঃখে তুই দেবদাস হবি তাই আমরা ভাবলাম অন্যভাবে চেষ্টা করা যাক।তারপর তোর ব্যাপারে আঙ্কলে আন্টিকে জানাই।আঙ্কলে আন্টি অরুণীদের বাসায় যায় ওকে দেখতে।তারপর ওখানেই কথা পাকাপাকি করে ফেলে।আর ওইদিন যাতে তোরা দুইজন এটা না জানতে পারিস সেইজন্য আমরা তোকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যাই।এর পর এতদিন তলেতলে সব হচ্ছিলো কিন্তু তুই জানতি না আর ওদিকে অরুণী জানলেও কে ওর বর হবে এটা জানতো না।আর আজকের কাহিনি তো তুই জানিসই।”

পুরো কাহিনী বলার পর প্রণয় মনেমনে খুশী হলেও মুখে প্রকাশ করলো না অরুণীর রিঅ্যাকশন দেখার জন্য কিন্তু অরুণী কোনো রিয়াকশন করলো না চুপচাপ বসে রইলো।

ওদেরকে ঘরে রেখে সবাই বের হয়ে যাওয়ার পর প্রণয় পাঁচ মিনিট চুপ থেকে বলল”ওজু করে আসো।”

অরুণী বিছানা থেকে নেমে ওজু করে আসলো তারপর প্রণয় গিয়ে ওজু করে ফ্রেশ হয়ে আসলো।দুজনে একসাথে নামাজ শেষ করার পর অরুণী বলল”শুয়ে পড়ুন।আমি সোফায় শোব।”

“না তুমি খাটে শোও।আমি সোফায় শুতে পারবো।”

“আচ্ছা।আর শুনুন।ভাব্বেন না আমি আপনার ওপর রেগে আছি অথবা বিয়েটা মানি নি।আমি বিয়েটা মন থেকেই মেনেছি।আল্লাহর কালাম পড়ে আমাদের বিয়ে হয়েছে তাই না মানার কিছু নেই হতে পারে কাকতালীয় ভাবে আমাদের বিয়েটা হয়েছে তবে সম্পর্কটা হালাল।তাই আমি এই সম্পর্ক কোনো রকম দুঃখী নই।শুধু সম্পর্কে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য একটু সময় চাইছি।”

প্রণয় অরুণীর কথায় মুচকি হাসি দিয়ে বলল”শুয়ে পড়ুন মতো মিসেস অরুণী।সকালে একসাথে নামাজ পড়বো।”

অরুণী আর প্রণয় মুচকি হেসে শুয়ে পড়লো।
———————
প্রিয়ম বাসায় এসে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।আজকের মতো বেইজ্জতি জীবনেও হয় নি সে।এদিকে পায়েল চৌধুরী নিচে বসে মাথায় হাত দিয়ে বলল”ছিহঃকতোটা বেয়াদব মেয়ে নিজের বাবা মায়ের সম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে পালিয়েছে।আরেকটা ছেলের সাথে।এমন মেয়ে আমার হলে কেটে দু টুকরো করে ফেলতাম।”

“পায়েল এবার থামো।মেয়েকে হয়তো জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাই এমন করেছে।”

“এমন হলে আমাদের বললেই পারতো।”

“হয়েছে এখন বাদ দাও।ওপরে গিয়ে প্রিয়ম ডাক দাও।ছেলেটা কখন থেকে দরজা বন্ধ করে বসে আছে।”

“আমি কয়েকবার গিয়ে দরজা ধাক্কিয়েছি।কিন্তু ও খোলে নি।”

“আবার যাও।কখন থেকে না খেয়ে আছে।”

“যাচ্ছি”

এটা বলেই পায়েল চৌধুরী প্রিয়মের রুমে কড়া নাড়া শুরু করলো।প্রিয়ম দরজা খুলছে না।পায়েল চৌধুরী বাইরে থেকে বলছে”বাবু দরজা খোল।শোন!দরজাটা খোল।তোর বাবা আমি না খেয়ে আছি।আয় একসাথে খাবো।”

“তোমরা খেয়ে নাও মা।আমি খাবো না।”

“তুই না খেলে আমরাও খাবো না।”

মায়ের কথা শুনে প্রিয়ম বিরক্ত হয়ে বলল”আচ্ছা টেবিলে খাবার দাও।আমি আসছি।”

পায়েল চৌধুরী নিচে চলে গেলো খাবার বাড়তে আর প্রিয়ম শেরওয়ানি খুলে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো।তিনজনে একসাথে খাওয়া শুরু করতেই পায়েল চৌধুরী বললেন”বাবু মন খারাপ করিস না।তোকে আরো ভালো মেয়ে বিয়ে করাবো।”

“মা আর বিয়ের কথা বলবে না।আমার শিক্ষা হয়ে গেছে।আমি বিয়েই করবো না।সিঙ্গেলই মরবো।”প্রিয়ম রেগে জবাব দিলো।

প্রিয়মের কথায় ওর বাবা মা চুপ হয়ে গেলো।বোঝাই যাচ্ছে মেজাজ গরম হয়ে আছে।এই অবস্থায় কথা না বলাই ভালো

প্রিয়ম খাওয়া শেষ করে চলে গেলো নিজের রুমে।প্রিয়ম যাওয়ার পর প্রিয়মের বাবা বলল” এখন আর বিয়ের কথা তুলো না।”

“হ্যাঁ এটাই ঠিক হবে।”

“আচ্ছা মেয়েটার নাম যেনো কি ছিলো?ভুলে গেছি।” রাহাত চৌধুরী বললেন।

“নাহার।” পায়েল চৌধুরী বিরক্ত নিয়ে বলল।

“ও,আচ্ছা নাহারের মাকে কাল কল দিয়ে বলে দিয়ো আমাদের গহনা গুলো যেনো ফেরত দেয়।”

“তুমি কইরো।আমি পারবো না।” এটা বলে পায়েল চৌধুরী মুখ ভেঙচিয়ে চলে গেলো।
.
.
————
প্রণয় ঘুম থেকে উঠে দেখে অরুণী ঘুমিয়ে আছে।প্রণয় অরুণীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ডাকতে লাগলো”অরুনী!ওঠো।নামাজ পড়তে হবে।”

দুই তিনবার ডাকার পর অরুণী উঠে ফ্রেশ হয়ে আসলো তারপর দুজনে নামাজ পড়া শেষ করে সোফায় বসলো।প্রণয় অরুণীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল”আমি তোমাকে অরু বলে ডাকি?”

“ডাকুন।”

“হাঁটতে যাবে আমার সাথে?”

“আজ?আজ তো ঘরে অনেক মেহমান।কেউ দেখলে কি বলবে?”

“আচ্ছা তাহলে ছাঁদে চলো।”

“চলুন।”

অরুণী আর প্রণয় দুজনে ছাদের কিনারায় দাড়িয়ে রইলো সূর্য ওঠার অপেক্ষায়।এইদিনটার অপেক্ষা প্রণয় গত তিনবছর ধরে করছিলো! অবশেষে আজ পূর্ণ হলো।এবার থেকে জীবনের প্রত্যেকটা মুহুর্ত যেনো অরুণীর সাথে কাটে মনে মনে সেটাই চাইছে প্রণয়।

সূর্যের সোনালী আলো দুজন কপোত কপোতীর চোখে মুখে পড়ছে।আর তার উজ্জ্বল আলোতা তাদের চেহারা খুশি ঝলমল করছে।অরুণী মুচকি হেসে প্রণয়ের দিকে চেয়ে মনে মনে বলল”আমার তাকদিরে আপনিই ছিলেন এটা জানলে কখনোই আপনাকে কষ্ট দিতাম না তবে এবার থেকে সবসময় আপনার হাসি খুশির কারণ হয়ে থাকবো!

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-১৪

0

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ১৪
#Arshi_Ayat

এখন বিকেল আর সন্ধ্যার মাঝামাঝি সময়।অরুণী বাসায় ফিরেছে মাত্রই।এতক্ষণ প্রণয়ের সাথেই ছিলো।প্রথম প্রথম অস্বস্তি লাগলেও পরে ঠিক হয়ে যায় প্রণয়ের কথায়।প্রণয় হাটতে হাটতে বলেছিলো”অরুণী আমাদের মধ্যে তথাকথিত কোনো সম্পর্ক নেই।তাই প্লিজ অস্বস্তিতে থেকো না।একদিনই তো।একদিনের জন্য হলেও বন্ধু ভাবতে পারো।কথা দিচ্ছি বন্ধু হিসেবে অতোটা ও খারাপ হবো না।”

অরুণী প্রণয়ের কথায় হালকা একটু হেসেছিলো।তারপর দুজনেই কথা বলা শুরু করলো।নিজেদের স্কুল কলেজের ঘটনাও বলতে শুরু করলো।এভাবেই কথাবার্তা, হাসাহাসি চলেছে পুরোটা সময়।সবটা প্রণয়ের জন্যই হয়েছে।বেশিরভাগ সময় ও ই কথা বলেছে।তারপর ওরা মাওয়া ঘাট গিয়েছিলো।সেখানে ইলিশ খিচুড়ি খেয়ে আসতে আসতে বিকেল হওয়ে যাওয়ায় দুজনেই দুজনের বাসায় চলে আসে।যাওয়ার আগে প্রণয় অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেছিলো”আজ সারাটাদিন আমি সারাজীবন মনে রাখবো।আর এই একমাসের মধ্যে আমি লন্ডন চলে যাবো।তারপর আর আসবো কি না জানি না।আশা করি সবকিছু নিয়ে তুমি ভালো থাকবে।আল্লাহ হাফেজ।”

এটা বলে প্রণয় চলে গিয়েছিলো।আর অরুণী নিজের বাসার দিকে চলে আসলো।আজকে থেকে দুজনের রাস্তা আলাদা হয়ে গেলো।কখনো কি আবার দুজনের রাস্তা এক হবে?

অরুণী ফ্রেশ হয়ে এসে বিছনায় বসে রুহিকে কল দিলো।রুহি ফোনের পাশে থাকায় সহজেই রিসিভ করে ফেললো
“হ্যাঁ বল।”

“কি করিস এখন?”

“তেমন কিছু না।বসে আছি।ভালো লাগছে না।”

“কেনো?”

“জানি না।আজ আকাশ ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছিলো।আমি সাইন করে দিয়েছি।”

“ভালোই হলো।এমনিতেও এটা হওয়ারই ছিলো।এখন মন খারাপ না করে শক্ত হ।আর নিজের জীবনটা আবার গুছিয়ে নে।”

“হুম।রুহি মলিন গলায় জবাব দিলো।

এভাবেই আরো কিছুক্ষণ কথা চললো ওদের মাঝে।
.
.
আরো পাঁচ দিন পর,,,

সকাল থেকেই অরুণীদের বাসার সবাই ব্যস্ত।কাল অরুণী হলুদ ছোয়া গেলো আজ বিয়ে।তাই কাজিনরা বন্ধু বান্ধব সবাই ব্যস্ত।অরুণীর বাবা মারও ব্যাস্ততার শেষ নেই।একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা।

নিলু,রাফা অরুণীর কাজিন আর রুহি সহ মাত্রই পার্লারে গেলো।
——————–
এদিকে প্রিয়মের সাথে প্রিয়মের মা রাগ করে আছে।প্রিয়ম এখনো থানা থেকে আসে নি।দুপুর বারোটা বাজতে চললো।এদিকে সব আত্মীয়রা অপেক্ষা করছে ওর জন্য আর ওইদিকে তিনি ক্রিমিনাল তাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন।পায়ের চৌধুরী মনে মনে এগুলো বকতে বকতে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলেন প্রিয়ম এসেছে।প্রিয়ম মাকে দেখে মেকি হেসে বলল”আর বলো না।তুমিতো জানোই আমি কতো ব্যস্ত থাকি।”

পায়েল চৌধুরী কপট রেগে বললেন”চুপচাপ ঘরে গিয়ে তৈরি হয়ে নে।একসপ্তাহর আগে যদি বউয়ের আচলের নিচ থেকে বের হইছিস তাহলে তোর খবর আছে।”

প্রিয়ম ভালো ছেলেদের মতো মাথাটা কাত করে নিজের রুমে চলে গেলো কিন্তু মনে মনে বলল’একসপ্তাহ কি মা।বৌভাতের পরেরদিনও তুমি আমাকে ধরে রাখতে পারবে না।’

তারপর প্রিয়ম রেডি হওয়া শুরু করলো।ওর বন্ধুরা আর ভাইরাও এতক্ষণে চলে এসেছে।ওরাই ওকে সাহায্য করছে।
———————-
আকাশ আর ওর বাবা মা নাতাশাদের বাড়িতে এসেছে বিয়ের কথা বলতে।নাতাশা ওদের সোফায় বসিয়ে দিয়ে ভেতরে গেলো নিজের বাবা মাকে ডাকতে।কিছুক্ষণ পরই ওর বাবা মা দুজনই এলেন।তারা আকাশের বাবা মায়ের মুখোমুখি বসলেন।তাদের মধ্যে কুশলবিনিময় হওয়ার পর প্রথমে নাতাশার বাবাই বললেন”ভাই সাহেব আপনার ছেলের নাকি এর আগেও এক বিয়ে হয়েছিলো?”

“হ্যাঁ,তবে মেয়ে ভালো না তাই আমাদের আকাশ ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে।” আকাশে বাবা বলল।

“ও,,,শুনলাম আপনার ছেলের আগের বউয়ের বাচ্চা হবে।তাহলে পেটের বাচ্চাটা কার?”

“আমরা জানি না।আকাশও জানে না।সেইজন্যই তো আকাশ ডিভোর্স দিচ্ছে।”

“ডিভোর্স দিলেই কি আর সব শেষ হয়ে যাবে?ওই মেয়ের বাচ্চাতো আকাশকেই বাবা বলবে।আর ওর সম্পত্তির ওপর ভাগ বসাতে চাইবে।”

এতক্ষণ আকাশ কথা না বললেও এখন মুখ খুললো।আকাশ বিরক্ত হয়ে বলল”আঙ্কেল ও বাচ্চা দিয়ে কিছুই করতে পারবে না।আমি সেই ব্যবস্থা করে ফেলবো।আপনি শুধু বিয়ের কথা বলুন।দিন তারিখ ঠিক করুন।”

“আমি তো তোমার কাছে আমার মেয়ে বিয়েই দিবো না।তো দিন তারিখ কেনো ঠিক করবো?”

আকাশ রেগে বলল”কেনো?”

“প্রথমত তোমার আগে এক বিয়ে হয়েছে দ্বীতিয়ত ওই বউয়ের বাচ্চা হবে তৃতীয়ত আমার মেয়ের জামাই হবার কোনো যোগ্যতা দেখি না তোমার মধ্যে।”

আকাশ প্রচুর রেগে নাতাশাকে বলল”এসব কি নাতাশা?”

“আমি কি করবো বলো বাবা মা না মানলে আমার কিছুই করার নেই।”

“কিন্তু আমাদের মধ্যে তো এমন কথা হয় নি।তুমি বলেছিলে বাবা মা না মানলেও আমরা বিয়ে করবো।”

“হ্যাঁ বলেছিলাম কিন্তু এখন আমার পক্ষে সম্ভব না।”

আকাশ রেগে একটা ফুলদানি আছড়ে ভেঙে ফেললো তারপর বলল”আমিও দেখি তোর কি করে অন্যকারো সাথে বিয়ে হয়।”

এটা বলেই আকাশ বেরিয়ে যায় সাথে আকাশের মা বাবাও।
——————
প্রিয়ম মোটামুটি তৈরি।জামাই সাজে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।পায়েল চৌধুরী ছেলের কপালে চুমু দিয়ে বললেন”মাশাল্লাহ আমার চাদের দিকে যাতে কারো নজর না লাগে।”

প্রিয়ম কিছু বলার চগেই ওর একটা কাজিন রুপম বলল”ধূর খালা তোমার চাঁদের দিকে মানুষ নজর দেয় না।তোমার চাঁদই মানুষের দিকে নজর দিয়ে কুল পায় না।”

রুপের কথা শুনে প্রিয়ম ওর পিঠে ধুম করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বলল”চুপ কর তুই,বেশি কথা বলিস।”

রুপম ওএবার প্রিয়মের পিঠে ধুম করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বলল”তুই চুপ কর।একটু পর তোর বিয়ে।একটু লজ্জা শরম রাখ।”

দুইজনের এমন মারামারি দেখে পায়েল চৌধুরী বললেন “তোরা দুইজনই চুপ কর।আর নিচে আয় আমরা এখনই রওনা হবো।”

এটা বলে পায়েল চৌধুরী চলে গেলো।
——————–
অরুণী বিছানায় বসে আছে সেজেগুজে।আজকে কেনো জানি মনটা বলছে প্রণয়কে একবার দেখতে।কিন্তু কেন?এখন দেখতে চাওয়ার মানে কি?তবে অরুণী কিছুতেই নিজের মনকে মানাতে পারছে না।পানির তৃষ্ণার মতো আজ প্রণয়কেও দেখার তৃষ্ণা পাচ্ছে অরুণীর।হঠাৎ করে মনে হচ্ছে বিয়েটা করা ঠিক হচ্ছে না!কিন্তু এই শেষ মুহুর্তে এসে কি করবে অরুণী?এখন কিছু করলে বাবা মায়ের সম্মান নষ্ট হবে।এবার কি হবে!!!!
—————-
প্রিয়মরা পৌঁছে গেছে কনের বাড়িতে।ভেতরে যেতে যেতে কেউ একজন জোরেজোরে বলে উঠলো”বউ পালিয়েছে।”

একথা শুনে প্রিয়মের বাবা চিন্তিত ভাঙ্গিতে ভেতরে গেলেন।গিয়ে জানতে পারলেন আসলেই বউ পালিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।

প্রিয়মের বাবা রাহাত চৌধুরী বাইরে এসে বরযাত্রীদের ফিরে যেতে নির্দেশ দিলেন।ওনার এই নির্দেশে সবাই বুঝতে পারলো আসলেই বউ পালিয়েছে।প্রিয়মের মেজাজ আগুনের মতো গরম হয়ে গেছে।পালানোর হলে কাল কি করেছে?কাল পালালেই তো আর এমন হতো না।প্রিয়ম মাথার ওপর থেকে পাগড়িটা ফেলে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।

চলবে…..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-১৩

0

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ১৩
#Arshi_Ayat

দুদিন অরুণী ভার্সিটিতে যায় নি। আত্মীয় স্বজন অনেকেই ছিলো তাই আর যাওয়া হয় নি।আজ যেতে হবে একটা প্রেজেন্টেশন জমা দিতে হবে তাই।অরুণী রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো।
——————–
সাত আটবার হয়ে গেছে ফারাদিন প্রণয়কে কল করছে।কিন্তু প্রণয়ের খবর নাই।দুইদিন ধরে ভার্সিটিতে আসছে না।সারাদিন বাসায় বসে থাকে।একটা মেয়ের জন্য জীবন দিবে নাকি?ফারদিনের রাগ হচ্ছে।ফারদিন রাগে কটমট করছে।ওর চেহারার দিকে চেয়ে মিনহা বলল”কি রে কি হইছে তোর?এমন এ্যানাকন্ডার মতো ফোসফোস করছিস কেন?”

“প্রণয় ফোন ধরে না।আল্লাহই জানে কি করে।”

“আচ্ছা আরেকবার দে।এবার না ধরলে ওর বাসায় যাবো।”

“আচ্ছা।”

ফারদিন আরেকবার ফোন করতেই প্রণয় ফোন ধরলো।প্রণয় ফোন রিসিভ করতেই ফারদিন বলল”কি রে কই তুই?এতোবার ফোন দিলাম রিসিভ করিস নাই কেনো?”

“ফোন দিচ্ছিস কেনো সেটা বল?” প্রণয় থমথমে গলায় বলল।

“তুই ভার্সিটিতে আয়।”

“ভাল্লাগছে না।আসবো না।”

“আসলেই ভাল্লাগবে।তাড়াতাড়ি আয়।”

“আচ্ছা আসছি।”

“আচ্ছা।”

ফারদিন ফোন রেখে দিয়ে মিনহাকে বলল”প্রণয় আসছে।”

“প্রণয় অনেক কষ্ট পাচ্ছে রে।”

“হুম,তোরা মেয়েরা খালি কষ্ট দেস।”

“আমি আবার কি করলাম?”

“কি করিস নাই সেটা বল?কতোদিন ধরে বলতেছি চল বিয়েটা করে ফেলি।তোর তো কোনো আমল ই নাই।”

“এখন কিসের বিয়ে।পরীক্ষা শেষ হোক তারপর হলেই তো ভালো হয়।”

“তো এখন করতে সমস্যা কই?পরীক্ষার পরে করলেও আমাকে করবি।এখন করলেও আমাকে করবি।যেই লাউ সেই কদু।”

“হুম বুঝছি।”

“কি বুঝলি?”

“তুই একটা কদু।” এটা বলেই মিনহা হাসা শুরু করলো।ফারদিন ওর পিঠে কিল দিতে যাবে তার আগেই তুর্য এসে বলল”কি রে প্রণয়,সাথী ওরা আসে নি?”

“প্রণয় আসছে।আর সাথী এখনও আসে নি সিলেট থেকে।” ফারদিন বলল।

ফারদিন বলতে বলতেই প্রণয় চলে এলো।প্রণয় এসে ওদের সাথে বসতেই মিনহা বলল”প্রণয় তোর হায়াত আছে।আমার দাদি বলে যদি কারো নাম নেওয়ার সাথে সাথে সে হাজির হয়ে যায় তাহলে নাকি তার দীর্ঘ হায়াত আছে।”

“আমার আবার হায়াত!” কথাটা প্রণয় বিড়বিড় করে বললেও ওরা শুনতে পেলো।তুর্য প্রণয়ের কাঁধে হাত রেখে বলল”ছাড় তো!অনেকদিন তুই গান করিস না।আমাদের সবার জন্য আজকে গাইতে হবে।”

“না রে মুড ঠিক নেই।ভালো লাগছে না।”

“আরে তুই ওর কথা শুনছিস কেনো?তুই গিয়ে গিটারটা নিয়ে আয়।” ফারদিন তুর্যকে এটা বলতেই তুর্য চলে গেলো গিটার আনতে।

প্রণয় বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে বলল “বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু ফারদিন।”

“হ্যাঁ তো কি হইছে?বাড়াবাড়ি আমরা করবো না তো কে করবে?”

প্রণয় আর কিছু বলল না।তুর্য গিটার এনে প্রণয়ের হাতে দিলো।প্রণয় গিটারে সুর তুলে গাওয়া শুরু করলো।

“এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম

তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি’বা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম

বকুলের মালা শুকাবে
রেখে দিবো তার সুরভী
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছো নাকো আমারি ছবি
আমি মিনতি করে গেলাম
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি’বা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম”

গানটা শেষ করে প্রণয় চোখ খুলতেই সবাই করতালি দিলো।ক্লাসমেট আর জুনিয়র রা তো মুগ্ধ।প্রণয় সবার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে উঠে গেলো।এই হাসির অর্থ আর এই গান কাকে উদ্দেশ্য করা সেটা আর কেউ না জানলেও ওর বন্ধুরা জানে।দূরে দাড়িয়ে অরুণীও প্রণয়ের গান শুনছিলো।কি আশ্চর্য তাই না! গানটা যার জন্য গাওয়া হয়েছে তার মন ছুতে না পারলেও বাকি সবার মন ছুয়ে গেছে।

অরুণী ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে পিছন থেকে প্রণয় বলল”

“ওহে,কি করিলে বলো পাইবো তোমারে,
রাখিবো আখিতে আখিতে।”

অরুণী পিছনে তাকিয়ে দেখলো প্রণয় ওর পিছনে এসে দাড়িয়েছে।অরুণী ওর বাম হাতের অনামিকা আঙ্গুলটা তুলে ওর সামনে ধরে বলল”কাল আংটি বদল হয়ে গেছে।আর কিছুতেই পাওয়া সম্ভব না।”

প্রণয় মলিন হেসে বলল”সারাজীবনের জন্য অন্যকারো হয়ে যাচ্ছো।চাইলেই পারতে আমার হতে।আচ্ছা আমার মধ্যে কিসের কমতি ছিলো যে ভালোবাসা তো দূরের কথা করুণাও হলো না।করুণা করে হলেও কখনো ভালো করে কথা বলতে!কী পাপ করেছিলাম আমি যে আমাকে কষ্ট পেতে হচ্ছে!”

প্রণয় শার্টের হাতায় চোখ মুছে বলল”একটু রিকুয়েষ্ট করবো রাখবে?কখনো তো কোনো আবদার রাখো নি।এই আবদারটা রাখো প্লিজ”

“বলুন।”

“আজ আমার সাথে একটু থাকবে?আজই শেষ।এরপর আর আমি তোমাকে কোনোদিন বিরক্ত করবো না।”

অরুণী একটু ভেবে বলল”চলুন।”
—————-
রুহি সেই সকাল থেকে কাগজটা হাতে নিয়ে বসে আছে।কোনো অনুভূতি কাজ করছে না।মাথাটা ফাঁকা হয়ে গেছে।

সকালে যখন রুহি নাস্তা করছিলো তখন কুরিয়ারের একজন লোক এসে দিয়ে গেলো এটা।রুহি খাম খুলতেই দেখতে পেলো ডিভোর্স পেপার।সেই তখন থেকেই এটা নিয়ে বসে আছে নিজের রুমে।

রুহি পেপারটা টেবিলের ওপর রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে আসলো।তারপর একটা কলম নিয়ে কাগজ টায় সাইন করে দিলো।এটাই বাকি ছিলো আজ এটাও হয়ে গেলো।রুহি কাগজে সাইন করে কাগজটা নিয়ে বাইরে এসে মায়ের হাতে কাগজটা দিয়ে বলল”এটা বাবাকে দিয়ে দিও।বলে দিও পোস্ট অফিসে দিয়ে আসতে।”

“সাইন করেছিস?”

“হ্যাঁ।”

বলেই রুহি নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।জানালার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে রইলো আপন দৃষ্টি মেলে।নিজেকে একলা লাগছে আজকাল।মনে হচ্ছে চারপাশে কেউ নেই!কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না।খেতে ইচ্ছে করে না।ঘুমাতেও ইচ্ছে করে না।মন শুধু শান্তি চায়!কিন্তু হায়,শান্তি যে কোথাও নেই!
————————
আকাশ নাতাশার কেবিনে এসে দেখলো ও কিছু একটা লিখছে।আকাশকে দেখে বলল”বসো।”

আকাশ বসতেই নাতাশা বলল”ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছো?”

“হ্যাঁ আজই পাঠালাম।”

“গুড।”

“তাহলে আমরা বিয়ে কবে করছি?”

“আরে এতো চাপ নিচ্ছো কেন?করবো তো বিয়ে।এতো জলদি কেনো?”

“আর কতো সময় লাগবে নাতাশা?অনেকদিন ধরে তুমি এগুলো বলছে।এবার বিয়ে করতে হবে।”

“ঠিকাছে তুমি তোমার বাবা মাকে আমার বাসায় পাঠিয়ো।আব্বু আম্মু মেনে নিলে বিয়ে হবে।”

“মানে কি?আব্বু আম্মু না মানার কথা আসছে কেন?আর না মানলে কি তুমি আমায় বিয়ে করতে পারবে না?”

“না।”

আকাশের রাগ উঠছে খুব।আকাশ রেগে কেবিন থেকে বের হতেই নাতাশা হাসতে লাগলো

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-১২

0

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ১২
#Arshi_Ayat

পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্টের হলো একতরফা ভালোবাসা।অপরপক্ষ থেকে কোনো সাড়া না এলেও অবাধ্য মন কিছুতেই মানতে চায় না শত উপেক্ষা আর অবহেলা নিয়েও ভালোবেসে যায়।

প্রণয় শার্টের হাতায় চোখের পানি মুছে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে গেলো।ভালো লাগছে না।পাঁজরটা ভেঙে যাচ্ছে।চোখে পানিরা বাধ মানছে না।প্রণয় গেটের সামনে আসতেই মিনহা ওর সামনে এসে বলল”কি রে যাচ্ছিস কই?ক্লাস করবি না?”

“না রে।ভালো লাগছে না।”

মিনহা প্রণয়ের চেহারার দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠে বলল”কি রে কি হইছে তোর?এই অবস্থা কেন তোর?”

“কিছু না।ছাড়।বাসায় যাচ্ছি।”

“নাহ!এভাবে তুই যেতে পারবি না।কি হয়েছে বল।না বললে এক পা ও নড়াতে পারবি না।”

প্রণয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারদিন এসে বলল”কি রে তোরা এখানে কি করছিস?”

“দেখ না ওর জানি কি হইছে।কিছু বলছে না।আজকে নাকি ক্লাস করবে না।”

ফারদিন প্রণয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রণয় নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে আছে।ফারদিন প্রণয়কে হালকা ঝাঁকিয়ে বলল”কি হইছে তোর প্রণয়?”

“কিছু না।তোরা ক্লাসে যা।আমাকে যেতে দে।”

“ওই মেয়েটা কি কিছু বলেছে তোকে?”মিনহা রেগে বলল।

” চল তো আজকে ওরে যদি দুই চারটা থাপ্পড় না লাগাইছি।”এটা বলে ফারদিন অরুণীর ক্লাসের দিকে হাটা ধরলেই প্রণয় ফারদিনর হাত ধরে ফেললো।তারপর ফারদিনকে জড়িয়ে ধরে বলল”দোস্ত ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।কি করবো আমি বল!আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে।ও আমায় ভালোবাসে নি।”

ফারদিন অনুভব করলো ওর ঘাড়ের ওপর প্রণয়ের দু ফোটা চোখের পানি পড়েছে।সেই সাথে বন্ধুর কষ্টটাও বুঝতে পারছে।বস্তুত আর কেউ জানুক আর না জানুক ওরা জানে তাদের এই বন্ধুটি ওই মেয়েটাকে কতোটা ভালোবাসে।তবু তার সাথেই কেনো এমন হচ্ছে?স্বচ্ছ ভালোবাসা কি সবসময় অপূর্ণ রয়ে যায়?

ফারদিন প্রণয়ের চোখ মুছে দিলো।মিনহা প্রণয়ের হাত ধরে বলল”চল,ওর বাবা মায়ের সাথে কথা বলি।”

“না রে।দরকার নেই।আমি চাই ও সুখে থাকুক।আমাকে তো ও ভালোই বাসে না।আমার সাথে ও সুখে থাকবে না।ও যার সাথে থাকুক ভালো থাকুক।আমি যাচ্ছি।তোরা ক্লাসে যা।”

এটা বলেই প্রণয় ভার্সিটি থেকে বের হয়ে নিজের বাসার দিকে চলে গেলো।
—————–
নাতাশার কল ওয়েটিং দেখাচ্ছে প্রায় একঘন্টা ধরে।এতো কার সাথে কথা বলছে মেয়েটা?আকাশ মনেমনে ভাবলো এবারই শেষ বার এবার না রিসিভ করলে ওর হসপিটালেই চলে যাবে।এটা ভেবে কল দিতেই এবার নাতাশা রিসিভ করলো।নাতাশা রিসিভ করতেই আকাশ রেগে বলল”ওয়েটিং এ কেনো তোমার ফোন?কার সাথে কথা বলছিলে?”

“ভাইয়ার সাথে।আর তুমি এভাবে চিল্লাচ্ছো কেনো?ফোন ওয়েটিং এ থাকা মানে এই না যে আমি অন্য ছেলের সাথে কথা বলছি।” নাতাশাও পাল্টা রেগে জবাব দিলো।

“আচ্ছা সরি।আচ্ছা আজকে ডেট এ যাবা?”

“না আজকে পারবো না।ডিউটি আছে।”

“আমারও তো অফিস ছিলো কিন্তু আমি ছুটি নিয়েছি।তুমিও নাও।”

“সম্ভব না আকাশ।আজকে পারবো না।কালকে হলে পারবো।কাল ছুটি নিও।ওকে বাই পেশেন্ট আসছে।”

এটা বলেই নাতাশা কুট করে ফোনটা কেটে দিলো।নাতাশা ফোন রাখার পর আকাশ মন খারাপ করে বসে রইলো।ইদানীং নাতাশা ওকে প্রচুর ব্যাস্ততা দেখাচ্ছে।কিন্তু আগে এমন হতো না।আকাশ কথা না বলতে চাইলেও নাতাশা জোর করে কথা বলতো।
————————–
প্রিয়ম একটা ফাইল দেখতে দেখতে হঠাৎই রিসাদকে ডাক দিলো।

“রিসাদ”

“জ্বি স্যার।”

“তোমাকে যে কাজগুলো দিয়েছিলাম সেগুলো করেছো?”

“জ্বি স্যার।কিন্তু মেয়েটার কললিস্ট চেক করে সন্দেহজনক কোনো রেকর্ডিং পাই নি।”

“আচ্ছা রিসাদ তোমার কি মনে হয় মেয়েটাকে কে মারতে পারে?”

“আমার তো মাথায় কিছুই ঢুকছে না স্যার।”

“কিন্তু আমার মনে হচ্ছে মেয়েটাকে ওর কাছের কেউ মেরেছে কারণ যখন মেয়েটাকে মারা হয় তখন বাসায় কেউ ছিলো না।আর মেয়েটাও একা ছিলো।কেউ কি করে জানবে যে মেয়েটা বাসায় একা?আর তুমি খেয়াল করেছো কি না জানি না মেয়েটার রুমে যখন ইনভেস্টিগেশনের জন্য গিয়েছিলাম তখন টেবিলে দুটো চায়ের কাপ দেখেছিলাম।যদি অচেনা কেউ হয় তাহলে ও কেনো চা করবে?বুঝতে পারছো?”

“জ্বি স্যার।তাহলে কাপ দুটো ফরেনসিক টেস্ট করতে দিলেই তো হয়।”

“দিয়েছি।কিন্তু একটা কাপে মেয়েটার ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট পেলেও অন্য কাপে কারো ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায় নি।যেই খুনটা করেছে খুব চালাকি করে করেছে।”

“আচ্ছা স্যার আমরা আরেকবার মেয়েটার ঘরটা দেখতে পারি যদি কিছু পাওয়া যায়!”

“হ্যাঁ হাতের কাজটা শেষ করি।তারপর যাবো।”

“জ্বি স্যার।”

রিসাদ গিয়ে নিজের চেয়ারে বসলো আর প্রিয়ম একটা ফাইল ঘাঁটতে শুরু করলো।
———————–
রুহি মাত্রই শাওয়ার নিয়ে বের হলো।চুল মুছতে মুছতে ঘরে এসে আয়নায় সামনে দাড়াতেই নিজের মলিন মুখটা দেখতে পেলো।সারাদিন যতোই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুক না কেনো একা হলেই ভেতরটা মুচড়ে উঠে।একাকীত্ব ভেতরটা গ্রাস করে ফেলে।কি অদ্ভুত যন্ত্রণা না বলা যায় আর বা সওয়া যায়!পৃথিবীতে এমন কিছু যন্ত্রণা আছে যেটা বলাও যায় না সওয়া ও যায় না গলার কাছে কাটার মতো বিঁধে থাকে।

রুহি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল ঝাড়তে লাগলো।হঠাৎ ড্রয়িং রুমে কারো গলার আওয়াজ পেয়ে রুহি বাইরে বের হতেই দেখতে পেলো ওর বড় ফুপু এসেছে।ও ফুপুকে দেখে সালাম দিয়ে ভেতরে চলে যেতে নিলেই ওর ফুপু বলল”কি রে রুহি কি অবস্থা তোর?জামাই নাকি ঘর থেকে বাইর কইরা দিছে।”

ফুপুর কথা শুনে সাথে সাথে রুহির চোখে পানি চলে এলো।রুহি চোখ বন্ধ করতেই একফোঁটা পানি ওর চিবুক বেয়ে নিচে পড়লো।রুহি বাম হাতে নিজের চোখ মুছে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।রুহি দরজা বন্ধ করতেই রুহির ফুপু রুহির মাকে বলল”কি গো ভাবি এখন মেয়ে রে নিয়া কি করবা?ঘরে রেখে দিবা নাকি?ওই ছেলে কি আর নিবো তোমার মেয়েরে?”

রুহির মা রেগে বলল”কি শুরু করলে মালতী।বাসায় আসছো ভালোমন্দ খাও। আরাম করো।আমার মেয়েরে নিয়া পড়ছো কেনো?আমার মেয়েরা ঘরে রেখে দেই নাকি আবার বিয়ে দেই তা তোমার দেখতে হবে না।ওর বাপ মা মরে নাই।”

রুহির মায়ের কথা শুনে রুহির ফুপু মুখ বাঁকা করে বলল”আমি কি ওর খারাপ চাই নাকি?এমন জোয়ান মেয়ে ঘরে রাখা ঠিক না।আবার বিয়ে দাও আর নাহলে ওর স্বামীরে নিয়ে মিমাংসা করো।”

রুহি মা এ কথার আর কোনো উত্তর না দিয়ে কিচেনে চলে গেলো।আর রুহির ফুপি রুহির বাবার রুমে গেলো ওর বাবার সাথে কথা বলতে।
.
.
কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে গেছে রুহি মনে নেই।ফোনের শব্দে রুহির ঘুম ভেঙেছে।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো অরুণী কল দিয়েছে।রুহি ঘড়িতে দেখলো বিকেল পাঁচটা বাজে।ও ফোন রিসিভ করতেই অরুণীর রাগী কন্ঠ ভেসে এলো।

“কি রে, কই তুই?আমার বিয়ের পরের দিন আসবি নাকি?”

“দোস্ত ঘুমিয়ে গেছিলাম।একটু ওয়েট কর আসতেছি।”

“আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়।”

“আচ্ছা।”

রুহি ফোনটা রেখেই ফ্রেশ হয়ে নীল রঙের শাড়ি পড়লো।শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে হিজাব পরে।ঘরের বাইরে আসতেই দেখলো ওর ফুপু আর মা একসাথে বসে টিভি দেখছে।রুহি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল”মা অরুণীর বাসায় যাচ্ছি।আজ ওকে দেখতে আসবে।ও যেতে বলেছে।”

“আচ্ছা যা তাড়াতাড়ি আসবি।”

“আচ্ছা।”

এটা বলে একটু এগোতেই রুহির ফুপি বলল”এমন আধ সন্ধ্যায় কোনো মেয়ে বাসা থেকে বের হয় না।আর যেগুলো বের হয় সেগুলোই ধর্ষণ হয়।রুহি তুই ঘরে যা বের হওয়া লাগবে না।বান্ধবীরে তো দেখতে আসতেছে।বিয়ে তো আর হচ্ছে না।ঘরে যা তুই।”

রুহি মা কিছু বলার আগেই রুহি বলল”ফুপু,বাসায় আসছেন ভালো কথা।ভালো ভাবে থাকেন তবে খবরদার আমার বিষয়ে একদম খবরদারি করবেন না।যেখানে আমার বাবা মায়ের সমস্যা নেই সেখানে আমি আপনাকে গুণিও না।”

এটা বলেই রুহি বেরিয়ে গেলো।আর রুহির ফুপি বলল’তোর মতো মেয়ের কপালে এইজন্যই সুখ নাই।এইজন্যই তোর নাগর তোরে ঘর থেকে বাইর কইরা দেয়।”

পায়েল চৌধুরী আর রাহাত চৌধুরী প্রিয়মের ওপর রেগে আছে ও নাকি আসতে পারবে না।তাদেরকে যেতে বলেছে।পছন্দ হলে কথা পাকাপাকিও করতে বলেছে।
——————-
ছেলে পক্ষ সামনেই বসে আছে।তবে ছেলে আসে নি।কি একটা কাজ নাকি পড়েছে তাই।ছেলের বাবা মায়ের পছন্দ হলে আজকেই আংটি পরিয়ে যাবে।অনেক্ক্ষণ কথাবার্তা বলে অরুণীকে ছেলের মা আংটি পরিয়ে দিতেই সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-১১

0

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ১১
#Arshi_Ayat

পুরো ঘরের জিনিসগুলো উল্টাপাল্টা হয়ে আছে।হাতের ফোনটাও আছড়ে ভেঙে ফেলেছে প্রণয়।রাগে মাথার রগগুলো দপদপ করছে।এখন মাথাটা ঠান্ডা করা প্রয়োজন।প্রণয় টাওয়াল আর একটা থ্রি কোয়ার্টার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
———————-
অনেক্ক্ষণ ধরে প্রণয়ের কল আর না আসায় অরুণী ভাবলো হয়তো বিরক্ত হয়ে ফোন দিচ্ছে না।না দেওয়াই ভালো।অরুণী ফোনটা হাতে নিয়ে রুহিকে কল দিলো।রুহি কল রিসিভ করতেই বলল”কি করিস?”

“চা খাই।তুই?”

“পড়তে বসেছিলাম।অনেক্ক্ষণ পড়ে তোকে কল করলাম।শোন কাল সকাল ৯.০০ টার সময় ভার্সিটিতে চলে আসিস।তারপর তোর এপ্লাইটা করে দিবো।”

“আচ্ছা।আসবো।”

“আর শোন একটা খুশীর খবর আছে।”

“কি?”

“গেস কর আগে।”

রুহি একটু ভেবে বলল”কোথাও ঘুরতে যাচ্ছিস?”

“না।”

“তাহলে?”

“আমার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে।কাল বোধহয় দেখতে আসবে।”

“বাহ!ছেলের ফটো দে।”

“আমি নিজেই তো দেখি নাই।আমার কাছে ফটোও নাই।কালকে আসুক তখন দেখিস।শোন আমরা ভার্সিটিতে গিয়ে এপ্লাইটা করেই চলে আসবো।”

“আচ্ছা।আমি কিন্তু অনেক এক্সাইটেড।”রুহি হেসে বলল।

রুহির কথা শুনে অরুণীও হাসলো।তারপর দুজনে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো।
——————
মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডকে অনেক্ক্ষণ জেরা করার পরও কোনো ক্লু পাওয়া গেলো না।আর মেয়েটার তেমন কোনো শত্রুও নেই।তবে মেয়েটাকে মারার উদ্দেশ্য কি?

প্রিয়ম এগুলো ভাবতে ভাবতেই গাড়ি ড্রাইভ করছিলো।আজকে একটু তাড়াতাড়িই বাসায় ফিরছে সে।একটু আগে পায়েল চৌধুরী বলেছেন আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে।মায়ের কথা রাখতেই আজ তাড়াতাড়ি ফেরা।বাসায় পৌঁছে নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই দেখলো বাবা মা একসাথে বসে তারজন্য অপেক্ষা করছে।প্রিয়ম মুচকি হেসে তাদের সামনের সোফায় বসে বলল” কি ব্যাপার রাহাত চৌধুরী আর পায়েল চৌধুরী একসাথে বসে কি ভাবছে?”

প্রিয়মের কথা শুনে ওর মা বসা থেকে উঠে গিয়ে প্রিয়মের কান মলে বলল”আমরা তোর বিয়ের কথা ভাবছি।কাল মেয়ে দেখতে যাবো।”

“ধূর মা।এখনি বিয়ে করবো না।”

“কেনো প্রিয়ম?কি সমস্যা বিয়ে করতে?” রাহাত চৌধুরী বললেন।

“আসলে বাবা এতো তাড়াতাড়ি প্যারা খাওয়ার ইচ্ছে নেই।”

প্রিয়মের কথা শুনে রাহাত চৌধুরী ঠোঁট টিপে হাসলো।আর পায়েল চৌধুরী প্রিয়মের দিকে চোখ পাকিয়ে বলল”বাপ ছেলে দুটোই বদ।যা আমি আর কিছু বলবো না।”
এটা বলে পায়েল চৌধুরী নিজের রুমের দিকে যেতে নিলেই প্রিয়ম দ্রুত এসে মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল”ও মাই ডার্লিং রাগ করে না।আচ্ছা ঠিকাছে কালকে মেয়ে দেখতে যাবো।এবার খুশী?”

পায়েল চৌধুরী আর নিজের রাগ ধরে রাখতে পারলেন না।ছেলের দিকে ঘুরে কপালে একটা চুমু দিলো।মায়ের আর ছেলের কান্ড দেখে রাহাত চৌধুরী বললেন”মা ছেলে একরকম। দুটোই আহ্লাদী।”

পায়েল চৌধুরী ভাব নিয়ে বলল”তো কি বাপ ছেলে একরকম হবে নাকি?”

“হ্যাঁ সেইজন্যই আমার দল ভারী করতে হবে।আর কয়েকদিনের মধ্যে বউ আসলে আমার দলও ভারী হবে।” রাহাত চৌধুরী বললেন।

“দেখা যাবে।” এটা বলে পায়েল চৌধুরী রাহাত চৌধুরীকে ভেংচি কাটলেন।
আর প্রিয়ম নিশ্চুপে বাবা মায়ের খুনসুটি দেখতে লাগলো।
————————
রুহি সকালে নাস্তা করেই বেরিয়ে পড়লো ভার্সিটির জন্য।ভার্সিটিতে পৌঁছে রুহি অরুণীকে কল দিতেই ও বলল পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে।রুহি ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো।অরুণী আসতে আসতে এখানেই অপেক্ষা করবে।

প্রণয় সারারাত ঘুমায় নি।মেজাজ প্রচুর গরম হয়ে রয়েছে।রাগে মাথার রগ দপদপ করছে।কিন্তু তবুও আজ ভার্সিটিতে যেতে হবে।এতোদিন কিছু বলে নি তাই যাচ্ছেতাই করবে নাকি।কতো বড়ো সাহস মুখের ওপর বলে দেয় যে তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।এতো সহজ!আমিও দেখি কি করে ও অন্য কাউকে বিয়ে করে।

এগুলো বিড়বিড় করে বলতে বলতেই প্রণয় ভার্সিটিতে ঢুকলো।ভার্সিটিতে ঢুকে ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো।এক কাপ কফি খেতে খেতে অরুণীর অপেক্ষা করতে লাগলো।হঠাৎ সামনের টেবিলে রুহিকে দেখে মনে হলো মেয়েটাকে আগে কোথাও মনে হয় দেখেছে।কিন্তু কোথায়?মনে পড়ছে না।

কিছুক্ষণ ভাবার পর মনে পড়লো এই মেয়েটাকেই অরুণীর সাথে দেখেছে সে।মেয়েটা এখানে কি করে?কারো জন্য কি অপেক্ষা করছে।আচ্ছা ওর কাছে অরুণীর বিষয়ে কিছু জিগ্যেস করলে ও কি কিছু বলবে?এগুলো ভাবতে ভাবতে প্রণয় গিয়ে রুহির টেবিলের সামনে দাড়িয়ে বলল”এক্সকিউজ মি মিস।আমি কি এখানে বসতে পারি।”

রুহি প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বলল”জ্বি বসুন।”

প্রণয় অনুমতি পেয়ে বসে পড়লো।তারপর কিছুটা সংকোচ নিয়ে জিগ্যেস করলো”আপনি কি কারো জন্য অপেক্ষা করছেন?”

“জ্বি,আমার বান্ধবীর জন্য।”

রুহির কথা শুনে প্রণয় মনে মনে বলল’হয়তো অরুণীর জন্য অপেক্ষা করছে।আচ্ছা জিগ্যেস করে ফেলি।’

“ও আচ্ছা। আপনি কি অরুণীর জন্য অপেক্ষা করছেন?”

“জ্বী কিন্তু আপনি জানলেন কি করে?”

“মনে হলো তাই আর কি।আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?”

“জ্বী করুন।”

“অরুণীর কি বিয়ে ঠিক হয়েছে?”

রুহি কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরুণী এসে বলল”চল।”

রুহি অরুণীকে দেখে দাড়িয়ে গেলো।সাথে প্রণয়ও দাড়ালো।অরুণী প্রণয়কে দেখেও না দেখার ভান করে অন্যদিকে চেয়ে রইলো।রুহি আর অরুণী চলে যেতে নিলেই প্রণয় বলল”অরুণী তোমার সাথে কথা আছে।”

“আমার আপনার সাথে কোনো কথা নেই।আর আপনার কথা শোনার মতো সময়ও নেই।”

প্রণয় খপ করে অরুণীর হাত ধরে বলল”শুনতে হবে কথা।এতোদিন যা ইচ্ছে করছো?কিছু বলি নি।কিন্তু আজ চুপ থাকতে পারবো না।কি শুরু করছো তুমি?”

“হাত ছাড়ুন।পাব্লিক প্লেসে সিনক্রিয়েট করবেন না।”

“অবশ্যই করবো।আমার কথার উত্তর না পেলে আরো ভয়াবহ কিছু ঘটবে।মাইন্ড ইট।”

অবস্থা বেগতিক দেখে অরুণী বলল”ঠিকাছে।আমি অফিসরুম থেকে আসছি।এখানে অপেক্ষা করুন।”

প্রণয় অরুণীর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল”এখানেই আছি।”

অরুণী প্রণয়ের দিকে না তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো ক্যান্টিন থেকে।ওর সাথে রুহিও বের হলো।রুহির মাথায় কিছু ঢুকছে না।হচ্ছেটা কি?রুহি ভ্রু কুঁচকে অরুণীকে জিগ্যেস করলো”কাহিনী কি রে অরু?”

“আরে আর বলিস না।ভার্সিটির প্রথম দিন থেকে আমার পিছনে পড়ে আছে।বারবার রিজেক্ট করেছি কিন্তু আস্ত একটা বেহায়া!কাল বলেছিলাম যে বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই এমন করছে।”

“ওও,এইজন্যই তুই আসার কিছুক্ষণ আগে আমার সামনে এসে বসেছিলো আর তোর বিষয়ে জিগ্যেস করছিলো।”

“তুই কি কিছু বলেছিলি?”

“বলতে পারলাম কই?তার আগেই তুই চলে আসলি।”

“যাক ভালোই হলো।”
দুজনে কথা বলতে বলতে অফিস রুমে আসলো।তারপর এপ্লাই করে বেরিয়ে আসলো।পাঁচদিন পরই রেজাল্ট দিবে।অফিস রুম থেকে বেরিয়ে অরুণী বলল”রুহি তুই গিয়ে রেডি হয়ে আমার বাসায় চলে আয়।আর আমি ওই পাগলকে কিছু কথা শুনিয়ে আসি।”

“আচ্ছা।”

তারপর রুহি বেরিয়ে গেলো আর অরুণী ক্যান্টিনে চলে গেলো।প্রণয়ে সামনে গিয়ে বসলো।তারপর বলল”জ্বি বলুন কি বলবেন?”

“এইগুলোর মানে কি?”

“বিয়ের বয়স হয়েছে। বাবা মা চাইছে বিয়ে দিতে।তাই আমিও রাজি হয়ে গেলাম।”

“তাহলে আমার ভালোবাসার কি কোনো দাম নেই?”

“আচ্ছা আমি কি কখনো আপনাকে ইঙ্গিত দিয়েছি অথবা ইশরায় বুঝিয়েছি যে আমি আপনাকে পছন্দ করি বা অন্যকিছু।সবসময় আমি ইগনোর করেছি।ভালোবাসাটা আপনার একতরফা ছিলো।আমার আপনার প্রতি কখনোই ফিলিংস ছিলো না।তবুও আপনার বাড়াবাড়িগুলো আপনি থামান নি।যাইহোক ভালো থাকবেন।আসি।”

এটা বলেই অরুণী উঠে চলে যেতে নিলেই প্রণয় ধরা গলায় বলল”ভালো থাকো।নতুন জীবনে সুখী হও।”

চলবে…..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-১০

0

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ১০
#Arshi_Ayat

বিকেল পাঁচটা বাজে ঘড়িতে।সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে।আকাশ ফাইল ঘুছিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লো।এখন ল’য়ার এর সাথে দেখা করতে হবে।অতি শীঘ্রই ডিভোর্স কার্যকর করতে হবে।আকাশ অফিসের সামনে এসে রিকশা নিলো।কিছুদূর যেতেই হঠাৎ দেখলো একটা হুডতোলা রিকশায় নাতাশার মতো একটা মেয়ে আর পাশে একটা ছেলেও আছে।রিকশাটা দ্রুত ক্রস করে যাওয়ায় আকাশ ভালো করে বুঝতে পারলো না আসলেই কি নাতাশা নাকি অন্য কেউ।আকাশ শিউর হওয়ার জন্য নাতাশাকে কল দিলো।নাতাশা রিসিভ করতেই আকাশ বলল”কি করো জান?”

“হসপিটালে আছি।কেন?”

“না এমনিতেই।আচ্ছা কতক্ষণ থাকবে?”

“এইতো আরো একঘন্টা।”

“ও,আচ্ছা আমি ল’য়ার সাথে কথা বলে হসপিটালে আসছি।একসাথে বাসায় যাবো ওকে?”

“না জান।আজকে পারবো না।আম্মুর সাথে শপিংয়ে যেতে হবে।”

“আচ্ছা ঠিকাছে।তাহলে রাতে ফোন করবো।”

“আচ্ছা জান।”
বলে নাতাশা ফোন রেখে দিলো।আকাশ ফোনটা পকেটে রেখে একটা মুচকি হাসি দিলো।এখন ও নিশ্চিত নাতাশা হসপিটালেই আছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশ ল’য়ারের অফিসে পৌঁছে গেলো।
—————
অরুণী আর রুহি বাসায় ফিরছে।প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র গুলো গুছিয়ে নিয়ে একসাথে বাইরে দুপুরের খাবার খেয়ে কতক্ষণ ঘুরাঘুরি করে এখন বাসায় ফিরছে।হঠাৎ অরুণীর ফোনে ওর মায়ের কল আসলো।অরুণী রিসিভ করে কথা বলা শুরু করলো।অরুণীর কথায় যতোটুকু বোঝা গেলো তাতে মনে হচ্ছে ওর বাসায় কিছু একটা হয়েছে।অরুণী ফোন রাখতেই রুহি বলল”কি হইছে অরু?”

অরুণী কাঁদতে কাঁদতে বলল”আব্বুর বুকে ব্যাথা উঠছে।ওনাকে মামা আর আম্মু মিলে হসপিটাল নিচ্ছে।”

রুহি রিকশাওয়ালাকে হসপিটালের দিকে রিকশা ঘোরাতে বলে। অরুণীর মাথাটা নিজের কাধে রেখে বলল”কাঁদিস না।আঙ্কেলের কিছু হবে না।আল্লাহকে ডাক।”

অরুণী কাদছে রুহির কাঁধে মাথা রেখে।আর রুহি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।রুহির নিজেও খুব টেনশন হচ্ছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা হসপিটালে পৌঁছে গেলো।হসপিটালে পৌঁছেই অরুণী দৌড়ে ভেতরে গেলো।অরুণীর পেছনে রুহিও আসলো তবে দৌড়ে নয় একটু দ্রুত হেটে।

রিসেপশন থেকে জেনে দোতলায় চলে গেলো।দোতলার একবারে কর্নারের রুমের সামনে অরুণী নিজের মা আর মামাকে দেখে দৌড়ে গিয়ে মা’কে বলল”মা আব্বু কোথায়?কি হইছে আব্বুর?”

অর্না রহমান ভেজা গলায় বললেন”এখনো জানি না।ডাক্তার সাহেব ভেতরে আছেন।বের হলে জানতে পারবো।”

অরুণী মায়ের পাশে চুপচাপ বসলো।পাশে রুহিও বসলো।সবাই বেশ চিন্তিত।

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বেরিয়ে আসতেই অরুণী এগিয়ে গিয়ে বলল”কি অবস্থা ডাক্তার সাহেব?”

“তেমন কিছু না।বুকে ব্যাথা হয়েছিলো। এখন ঠিকাছে।”

“আমরা দেখা করতে পারবো?”

“জ্বি আপনারা দেখা করে আসুন।চাইলে নিয়েও যেতে পারেন।”

“আচ্ছা।”

রুহি,অরুণী আর অর্না রহমান আর অরুণীর মামা ভেতরে গেলো।অরুণীর বাবা বেডে বসে রয়েছেন।অরুণীর মা কাছে গিয়ে বলল”এখন কেমন আছো?”

অরুণীর বাবা হেসে বলল”ভালোই।তেমন কিছু হয় নি।তোমরা মা মেয়ে শুধু শুধুই কান্না করো।”

অরুণীর মা কপট রাগ দেখিয়ে বলল”তুমি তো হাসবেই।আমাদের জায়গায় থাকলে বুঝতে।”

অরুণীর মায়ের কথায় সবাই হেসে দিলো।অরুণীর বাবা হাত বাড়িয়ে অরুণীকে ডাকতেই অরুণী গিয়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।অরুণীর বাবাও মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।তিনি জানেন মেয়েটা তাকে যে কি পরিমাণে ভালোবাসে!!অরুণীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে রুহির দিকে তাকিয়ে বলল”কেমন আছো মা?অনেকদিন দেখি না তোমাকে?”

“আলহামদুলিল্লাহ আক্কেল ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?”

“দুই এদের দুই মা মেয়েকে নিয়ে ভালোই আছি।চলো আমাদের সাথে বাসায় চলো।”

“না আঙ্কেল আব্বু আম্মু চিন্তা করবে।আমাকে যেতেই হবে।”

“আচ্ছা মা বাসায় এসো।”

“আচ্ছা।”

রুহি অরুণীর থেকে বিদায় নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে পড়লো।মূলত রুহির বিয়ের বিষয়ে অরুণী ওর বাবা মাকে কিছুই বলে নি।এইজন্যই ওনারা এগুলো নিয়ে কিছু বলে নি।

অরুণী হসপিটাল থেকে বেরিয়ে হাঁটতে লাগলো।একটু হেটে সি এন জি নিয়ে বাসায় যাবে।হঠাৎ কেউ একজন এসে ওকে ধাক্কা দিতেই ও রাস্তার একপাশে পড়ে গেলো।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতেই দেখলো প্রিয়ম ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।রুহি প্রিয়মের হাত ধরে উঠে দাড়াতেই প্রিয়ম বলল”‌যদি আপনাকে ধাক্কা না দিতাম আরেকটু হলেই আপনাকে পিষে দিয়ে যেতো।”

“ধন্যবাদ।”

“কোথায় যাচ্ছিলেন?”

“বাসায়।আপনি?”

“আমি থানায় যাচ্ছিলাম।একটু আগে এসেছিলাম একটা ইনভেস্টিগেশনের জন্য।”

“ওহ!আচ্ছা তাহলে আমি আসি।”

এটা বলে রুহি হাটা শুরু করলো।রুহি যেতেই প্রিয়ম ফোন বের করে কাকে যেনো কল দিয়ে বলল”৩০৯৮ এই টুলেট নাম্বারের গাড়ি কার।এটা বের করো।কুইকলি।”

বলেই ফোনটা রেখে গাড়িতে উঠে বসলো থানায় যাওয়ার জন্য।থানায় পৌঁছাতেই প্রিয়মের ফোনে কল এলো।প্রিয়ম রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল”স্যার ৩০৯৮ এটা ভাড়া গাড়ি।এটার মালিক গাড়িটা ভাড়ায় চালায়।”

“আচ্ছা।ঠিকাছে।”

বলে প্রিয়ম ফোন রেখে দিলো।ফোন রেখে ভাবতে শুরু করলো।মার্ডারটা নিয়ে।বিকেলে যে কেসটা হাতে পেলো এতে ভিকটিমের লাশের পাশে ৩০৯৮ লেখা ছিলো।৩০৯৮ দিয়ে কি বোঝাতে চাচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছে না প্রিয়ম। মেয়েটাকে কে বা কারা মেরেছে সেটারও হদিস পাঁচ্ছে না।লাশটা ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে আর রিসাদকে পাঠিয়েছে মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডকে ধরে আনার জন্য এসব কেসে প্রথমেই বয়ফ্রেন্ড তা নাহলে স্বামীরাই ফাঁসে।কিন্তু কেনো জানি প্রিয়মের মনে হচ্ছে এটা অন্যকেউ করেছে।মেয়েটার খুন ওর নিজের বাসাতেই হয়।বাসায় কেউই ছিলো না।সবাই দাওয়াতে গিয়েছিলো কিন্তু মেয়েটা যায় নি।বাসায় একাছিলো।এরকম ঘটনা এর আগে আর ঘটে নি।

পুরো জিনিসটা প্রিয়মকে ভাবাচ্ছে।প্রিয়ম চোখ বন্ধ করে ভাবছে।হঠাৎ রিসাদের ডাকে চোখ খুলতেই দেখতে পেলো রিসাদের সাথে একটা ছেলে।প্রিয়ম বুঝতে পারল এই ছেলেটাই মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড।প্রিয়ম ছেলেটাকে বসতে বলল।ছেলেটা বসতেই প্রিয়ম সোজা হয়ে বসে বলল”তুমিই অনিক?”

“জ্বি স্যার।”

“তুমি ইশার বয়ফ্রেন্ড?”

“না স্যার ওর সাথে আমার পনেরোদিন আগে ব্রেকাপ হয়েছে।”

“কেনো?”

“ও একাধিক রিলেশনে ছিলো।”

“কিন্তু ওর বান্ধবীরা যে তোমার কথা বলল। আর ওর ডায়েরিতেও কিন্তু তোমার নাম ছাড়া আর কোনো ছেলের নাম পাই নি আমরা।”

“স্যার আমি সত্যি বলছি।

এভাবেই প্রিয়ম অনিককে জেরা করা শুরু করলো।
——————-
অরুণীরা বাসায় চলে আসলো।বাসায় এসে নিজের রুমে চলে অরুণী।ফ্রেশ হয়ে বের হতেই অরুণীর মা বলল” অরু তোর বাবা ডাকছে তোকে।”

অরুণী মুখ মুছে বাবার ঘরে গিয়ে বলল”আব্বু ডেকেছো?”

“হ্যাঁ বস।”

অরুণী ওর আব্বুর সামনে বসলো।ওর বাবার পাশে ওর মামাও বসেছে।অরুণীর পিছনে ওর মা দাঁড়িয়ে।অরুণীর বাবা একটু কেশে বলল”দেখলি তো আজকে কি হলো।হঠাৎ করেই বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে।আল্লাহই জানে কয়দিন বাঁচি।তাই যাওয়ার আগে আমার ফরজ কাজটা করে যেতে চাই।তোর মামা তোর জন্য একটা সম্বন্ধ এনেছে।তোর যদি কোনো পছন্দ থাকে তাহলে বল।”

ওর বাবার কথা শেষ হতেই অরুণী বলল”না বাবা আমার কোনো পছন্দ নেই।তুমি ছেলে দেখতে পারো।তোমার পছন্দই আমার পছন্দ।”

ওর বাবা মা আর মামা একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলেন।অরুণীও একটু হেসে নিজের ঘরে চলে গেলো।ঘরে এসেই দেখলো ফোনে প্রণয়ের কল এসেছে।অরুণী রিসিভ করতেই প্রণয় বলল”কোথায় ছিলে?এতক্ষণ ফোন ধরছিলে না কেনো?”

“আমার ইচ্ছা আমি ধরি নাই।আপনাকে কৈফিয়ত দিবো না।”

“আচ্ছা দিয়ো না।কিন্তু একটু ভালো করে তো কথা বলতে পারো।”

“আপনি না আমাকে আর ডিস্টার্ব করবেন না প্লিজ।আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”

প্রণয় বুকটা ধড়াস করে উঠলো অরুণীর কথা শুনে।প্রণয় উত্তেজিত হয়ে বলল”সত্যি!ইয়ার্কি করো না প্লিজ।”

“আমি আপনার সাথে কখনো ইয়ার্কি করি না তাই না তাহলে আজ কেনো করবো।এটাই সত্যি।”

বলেই অরুণী ফোন রেখে দিলো।ফোন রেখে দিয়ে অরুণী মনে মনে বলল”আল্লাহ বাচাইছে।এখন আর ডিস্টার্ব করবে না।”

কিন্তু না অরুণীর কথাকে ভুল প্রমাণ করে প্রণয় আবার কল দিলো।অরুণী ফোনটা সাইলেন্ট করে পড়তে বসে গেলো।আর এদিকে প্রণয় এক হাত দিয়ে পুরো ঘরের জিনিসগুলো ভাঙছে আর আরেক হাত দিয়ে অরুণীকে ফোন করছে।

চলবে…..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-০৯

0

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ০৯
#Arshi_Ayat

রুহি নাস্তা করে বের হলো অরুণীদের ভার্সিটি যাওয়ার জন্য।বাসার নিচে নেমে কোনো রিকশা অটো না পেয়ে এক সাইডে দাঁড়িয়ে রইলো।অনেক্ক্ষণ দাড়ানোর পর রুহির সামনে একটা গাড়ি থামলো।পুলিশের গাড়ি।গাড়ি থেকে প্রিয়ম রুহির সামনে নেমে বলল”আরে আপনি!কোথাও যাচ্ছেন নাকি?”

“হ্যা,বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাবো।কিন্তু অটো বা রিকশা পাচ্ছি না।”

“ও,আচ্ছা।কিছু মনে না করলে আমি আপনাকে নামিয়ে দিতে পারি।”

“কিন্তু আপনি তো থানায় যাবেন।”

“হ্যাঁ তাও ঠিক।আচ্ছা আপনি যাবেন কোথায়?”

“কাজী নজরুল কলেজের সামনে।ওখানেই আমার বান্ধবী পড়ে।”

“ওও।তাহলে তো হলোই।আমি ওই রোড দিয়েই যাবো।তাহলে চলুন আপনাকে নামিয়ে দেই।”

অটো বা রিকশা না পাওয়ায় রুহি আর আপত্তি না করে গাড়িতে উঠে বসলো।প্রিয়মও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
———————
আকাশ নাতাশার কেবিনে এসে দেখলো নাতাশা একটা পেশেন্টের সাথে কথা বলছে।আকাশকে দেখে ইশারায় অপেক্ষা করতে বলল।আকাশ কেবিনের বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো।পাঁচ মিনিট পরে পেশেন্ট বের হতেই আকাশ ভেতরে গিয়ে রেগে বলল”হোয়াট হ্যাপেন্ড নাতাশা?ফোন ধরছো না কেন?কাল থেকে কতোবার কল করেছি হিসেব আছে?”

“হ্যাঁ তো আমি কি করবো?আমার ইচ্ছে হয় নি তাই আমি রিসিভ করি নি।” নাতাশা কফি খেতে খেতে জবাব দিলো।

নাতাশার উত্তরে আকাশ আরো রেগে গেলো।নাতাশার টেবিলের ওপর বাড়ি দিয়ে বলল”মানে কি নাতাশা?এমন করছো কেন?”

“করবো না কেন সেটাও বলো।তোমাকে বলেছিলাম যে ওই রুহি মেয়েটার বাচ্চাটা যেনো না বাঁচে কিন্তু তুমি কিচ্ছু করতে পারো নি।উল্টো জিডি খেয়ে এসেছো।এখন বাচ্চাটার কিছু হলেই তোমাকে আগে জেলে পুরবে।আর এইদিকে তুমি এখোনো মেয়েটাকে ডিভোর্স দিচ্ছো না।কেনো?

শেষ কথাটা নাতাশা চিল্লিয়ে বলল।আকাশ নাতাশার কাছে এসে ওর হাত ধরে বলল” আজই আমি উকিলের সাথে কথা বলবো।খুব শীঘ্রই ডিভোর্স হয়ে যাবে।তারপর আমরা বিয়ে করে নিলেই ও আর বাচ্চা দিয়ে কিছু করতে পারবে না।”

আকাশের কথা শুনে নাতাশা মৃদু হেসে ওকে জড়িয়ে ধরলো।আকাশও নাতাশাকে বাহুতে আবদ্ধ করলো।কিছুক্ষণ পর নাতাশার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো অফিসের উদ্দেশ্যে।আজকে অফিস থেকে ফেরার সময় উকিলের সাথে দেখা করে কথা বলে যাবে।
———————
অরুণী বাস থেকে নেমে সোজা হাটতে লাগলো।পিছনে একবারের জন্যও তাকাচ্ছে না।কেমন যেনো লজ্জায় ঘিরে ধরেছে তাকে।একটু আগের বাসের মধ্যে ঘটা ঘটনাগুলো বারবার চোখের সামবে ভাসছে।

আর দিকে অরুণী পিছন পিছন প্রণয়ও আসছে।আজকে প্রণয়ের অনেক খুশী লাগছে।ভাবতেই পারে নি এমন একটা মুহুর্ত কখনো আসবে।প্রণয় বাবার একমাত্র ছেলে।বাবা অনেক বড়ো শিল্পপতি।প্রণয়ের নিজেরই গাড়ি আছে সে প্রতিদিন নিজের গাড়ি করেই ভার্সিটিতে আসে কিন্তু আজ রাস্তায় গাড়ি খারাপ হওয়ায় অগত্যা বাসেই উঠতে হলো।বাসে উঠে দমবন্ধ অবস্থা ছিলো।কিন্তু হঠাৎ অরুণীর আগমনে দমবন্ধ ভাবটা কেটে খুশীর দোলা দিতে লাগলো মনে।অরুণী যতবার ওর বুকের ওপর পড়ছিলো ততবারই যেনো হার্টবিট মিস হয়েছিলো।আর যখন একবারে বুকের মধ্যে চুপটি করে ছিলো তখন প্রণয় মনে মনে বলছিলো”এই পথ যদি না শেষ তবে, কেমন হবে তুমি বলোতো।”
প্রণয় মনেপ্রাণে চাইছিলো যেনো অরুণী সারাজীবনের জন্য ওর বুকের মধ্যেই থেকে যায়।

হাটতে অরুণী ক্লাস ঢুকতে যাবে এই সময়ে পিছন থেকে প্রণয় বলল”ক্লাস শেষেও কি বাস দিয়ে যাও?”

“না বয়ফ্রেন্ডের হেলিকপ্টারে চড়ে যাই।” এটা বলেই ক্লাসে ঢুকে গেলো।

অরুণীর জবাব শুনে প্রণয়ের আবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।সবটা সময় অরুণী এমনই করে।একটা কথা জিগ্যেস করলে সোজা ভাবে উত্তর না দিয়ে ত্যাড়ামি করে উত্তর দিবে।এমন করে কি মজা যে পায়!আকাশ বিড়বিড় করতে করতে নিজের ক্লাসের দিকে চললো।ক্লাস গিয়ে বসতেই ফারদিন বলল”কি রে মামা আজকে এতো লেট কেন?”

“আরে আর বলিস না।গাড়ি খারাপ হয়ে গেছিলো তাই বাসে করে আসতে হলো।”

প্রণয়ের কথা শুনে ফারদিন চমকে বলল”কিহ!তুই বাসে আসছিস।বিশ্বাস হচ্ছে না।”

প্রণয় বিরক্তির স্বরে বলল”বিশ্বাস না হওয়ার কি আছে?আসতেই পারি।আচ্ছা শোন তুর্য,মিনহা,সাথী ওরা কই?”

“তুর্য চারুকলা ভবনে গেছে ওর গফের সাথে দেখা করতে।আর মিনহা এখনো আসে নাই।সাথী আজকে আসবে না।”

“ও!আচ্ছা।”
প্রণয়ের কথা শেষ হতে না হতেই ফারদিন বলল”দোস্ত তোর শার্টের বোতামে এতোবড় চুল কেনো?”

ফারদিনের কথায় প্রণয় ভ্রু কুচকে বলল”কই?”

ফারদিন প্রণয়ের শার্টের বোতাম থেকে চুলটা নিয়ে ওর হাতে দিয়ে বলল”এই যে দেখ।”

চুলটা দেখে প্রণয়ের মনে পড়লো বাসের ঘটনা।তখন মনে হয় চুলটা রয়ে গেছে।কিন্তু এখন ফারদিনকে কি বলবে?ওরে বললেই সাথী,মিনহা,তুর্য ওরাও জেনে যাবে তারপর ইচ্ছামতো মজা নিবে।তাই প্রণয় আমতা আমতা করতে করতে বলল”আরে ওইটা কিছু না।বাতাসে হয়তো উড়ে চলে আসছে।”

ফারদিন প্রণয়ের দিকে চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে বলল”সত্যি বল শালা।”

প্রণয় কিছু বলার আগেই মিনহা এসে ওদের পাশে বসে বলল”কি নিয়ে কথা বলছিস রে?”

প্রণয় কিছু বলার আগেই ফারদিন বলল”দোস্ত শোন প্রণয়ের শার্টে মেয়েদের চুল পাইছি।কিন্তু শালায় মিথ্যা বলে।বলে কি না বাতাসে উড়ে আসছে।”

ফারদিনের কথা শুনে মিনহা বলল”কি রে প্রণয় বল এই কেমনে আসলো তোর শার্টে?”

“আরে আমি সত্যি….” প্রণয় এতটুকু বলতেই ফারদিন বলল”অরুণীর কসম করে বল এটা কিভাবে আসছে তুই জানিস না।”

ফারদিনের কথা শুনে প্রণয় রেগে গেলো।এতটুকু একটা কথার জন্য অরুণীর কসম কাটতে হবে কেন?প্রণয় ওদের কিছু না বলে হনহন করে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলো।প্রণয় বেরিয়ে যেতেই মিনহা বলল”এইটা কি ঠিক হলো বল? প্রণয় কতোটা পসেসিভ অরুণীর জন্য এটা আমরা জানি।তোর এইভাবে বলাটা উচিত হয় নি।ওর কথাটা খারাপ লেগেছে।”

“আসলেই,বুঝতে পারি নি।এমন হবে।”

“প্রণয় সব সময়ই এমন করে।ওর সাথে কোনো কিছু হলেই ও আমাদের আগে নাচাবে তারপর বলবে।সহজে কোনো কথা বলতে দেখছিস ওরে?”

“হুম।আচ্ছা চল ওর কাছে যাই।শালার রাগ ভাঙাই।”
————————-
প্রিয়ম রুহিকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।রুহি পার্স থেকে ফোন বের করে অরুণীকে কল করলো।রুহির কল পেয়ে অরুণী ম্যাসেজে লিখলো”ক্যান্টিনে একটু বস।ক্লাসে আছি।”

রুহি ‘আচ্ছা’ লিখে ভেতরে গিয়ে ক্যান্টিনে বসলো।

প্রায় দশমিনিট পর অরুণী ক্লাস শেষ করে ব্যাগ নিয়ে ক্যান্টিনে চলে আসলো।আজকে আর ক্লাস করার নিয়ত নেই অরুণীর।ক্যান্টিনে এসে রুহির সামনে বসে বলল”কফি খাবি?”

“হুম খাওয়া যায়।”

অরুণী দুইকাপ কফি অর্ডার দিয়ে রুহিকে বলল”আসতে সমস্যা হয় নাই তো?”

“না,এসিপি প্রিয়মের গাড়িতে এসেছি।”

অরুণী ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো”কেনো?”

“আরে,রিকশা বা অটো কিচ্ছু পাচ্ছিলাম না আর উনিও এখান দিয়েই যাচ্ছিলেন।তো আমাকে বললেন পৌঁছে দিবেন।রিকশা,অটো না পাওয়ায় আমিও মানা করি নি।ওনার সাথেই আসলাম।উনি আমাকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিয়েছিলেন।আচ্ছা তুই আমাকে ডাকলি কেনো?”

“একটা বিষয়ে কথা বলবো সেইজন্য।”

“আচ্ছা বল।”
রুহি কথা শেষ করতেই কফি চলে এলো।অরুণী কফিতে চুমুক দিয়ে বলল”আমি ভাবছি তুই আবার স্টাডি টা শুরু করলে কেমন হয়?নিজের স্টাডি কমপ্লিট করে নে।”

রুহি মলিন গলায় বলল”না রে।আমাকে দিয়া আর হবে না।তিনবছর আগেই তো পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলাম।”

“তোকে দিয়েই হবে।তিনবছর আগে ছেড়েছিস তো কি হয়েছে।আবার ধরবি।নিজের ইচ্ছেগুলো পূরণ করবি।স্বাধীনভাবে চলবি।নিজের বাচ্চাকে নিজের মতো মানুষ করবি।ধর,আঙ্কেল আন্টি একসময় থাকলো না তখন তুই কি করবি?কার কাছে হাত পাতবি?তাই এখনি বলছি নিজের লাইফটা গুছিয়ে নে।”

বাস্তবিকই অরুণীর কথায় যুক্তি আছে।রুহিও বুঝতে পেরেছে।রুহি বলল”কিন্তু এখন কি অনার্স শেষ করা যাবে?তিনবছর ধরে তো লেখাপড়ার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।”

“সম্পর্ক গড়ে নিবি।আর আজকে গিয়ে তোর কলেজে গিয়ে ইন্টারের সার্টিফিকেট তুলবি।মেট্রিকের সার্টিফিকেট আর প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রগুলো গুছিয়ে নিবি।কাল ভার্সিটিতে এসে এপ্লাই করে যাবি।তোর রেজাল্ট ভালো তাই চান্স পেয়ে যাবি।”

“আচ্ছা।ঠিকাছে।”

তারপর ওরা আরো কিছুক্ষণ প্রয়োজনীয় কথা বার্তা বলে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে পড়লো সার্টিফিকেট তুলতে।
—————————–
প্রণয় আর ওর বন্ধুরা ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে আছে।একটু আগেই প্রণয় আজকে বাসের ঘটনা ওর বন্ধুদের বলে দিয়েছে।আজও অরুণী প্রণয়কে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে।মেয়েটা সবসময় এমনই করে।তুর্য প্রণয়ের কাধে হাত দিয়ে বলল”দোস্ত একটা কাজ করতে পারিস।”

প্রণয় তুর্যের দিকে তাকিয়ে বলল”কি?”

“তুই তোর আব্বু আম্মুকে সবটা বলে দে।আর আঙ্কেল আন্টিকে বল অরুণীদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে।তাহলেই তো হয়।ওর বাবা মা মেনে নিলেই তো ও আর কিছু করতে পারবে না।আর একবার বিয়ে হয়ে গেলেই ও তোকে ভালোবাসতে বাধ্য।”

তুর্যের কথায় সবাই সায় দিলেও প্রণয় মুচকি হেসে বলল”না রে ভালোবাসাটা জোর করে হয় না।আব্বু আম্মু প্রস্তাব নিয়ে গেলে ওর বাবা মা যদি মেনে যায় তাহলে বাবা মায়ের মুখের দিকে চেয়ে হয়তো অরুণী বিয়ে করে নিবে।কিন্তু আমাকে ভালোবাসবে না।নিয়ম করে আমার খেয়াল করবে,আমার চাহিদা মেটাবে কিন্তু ভালোবাসবে না।আর একটা সময় এসব কিছুতে অভস্ত্যতা চলে আসবে কিন্তু ভালোবাসবে না।ভালোবাসাটা বাধ্যবাধকতায় নেই।এটা মন থেকেই হয়।আমি ওর অভস্ত্যতা হতে চাই না আমি ওর ভালোবাসা হতে চাই।আমি চাই ও যেনো আমার জন্য যা কিছুই করুক না কেনো মন থেকে ভালোবেসে করে।আমি সেদিন বাবা মা কে জানাবো যেদিন ও নিজে আমাকে বলবে ‘প্রণয় আমি তোমার প্রণয়িনী হতে চাই।’

চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন}

এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-০৮

0

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ০৮
#Arshi_Ayat

একটু আগে উকিল নিয়ে এসে আকাশকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলো নাতাশা।ওরা যাওয়ার পর প্রিয়ম রুহিকে কল দিলো।রুহি বিছানায় শুয়ে ছিলো।প্রিয়মের কল পেয়ে রিসিভ করতেই প্রিয়ম বলল”হ্যালো,রুহি?”

“জ্বি বলুন।”

“কেমন আছেন?”

“ভালো আপনি?”

“ভালো,আপনাকে একটা কথা জানানোর জন্য ফোন দিয়েছি।”

“জ্বি বলুন।”

“একটু আগে নাতাশা নামের একটা মেয়ে আকাশকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে।তাই আপনাকে বলছি সাবধানে থাকবেন আর চিন্তার কারণ নেই আপনার বেবির কোনো ক্ষতি হবে না আকাশের নামে জিডি করা আছে তাই ও আর কোনো ক্ষতি আপাতত করবে না।তবুও সাবধানে থাকবেন।আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন।”

“আচ্ছা।ধন্যবাদ।” রুহি মলিন কন্ঠে জবাব দিলো।

তারপর প্রিয়ম সালাম দিয়ে ফোন রেখে দিলো।আর রুহি ফোনটা বেডসাইডের ওপর রেখে আবার চোখ বুজলো।
——————–
এখন রাত আট’টা।মাত্রই অরুণী রাতের খাবার খেয়ে নিজের রুমে আসলো।অরুণী ছোট বেলা থেকেই রাতের খাবার আট টায় খায়।সেইজন্য সবার সাথে খেতে পারে না।অরুণী রুমে এসে রুহিকে কল দিলো।রুহি ফোন রিসিভ করতেই অরুণী বলল”কি করিস এখন?”

“কিছু না শুয়ে আছি।ভালো লাগছে না।”

“কেনো?শরীর খারাপ লাগছে?”

“না তেমন কিছু না।” এটা বলে রুহী একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

রুহি কিছু না বললেও অরুণী বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে যাতে রুহি আপসেট হয়ে আছে তা নাহলে তো সন্ধ্যার সময়ও তো মন ভালো ছিলো ঘরে গিয়ে এমন কি হলো যে মন খারাপ হয়ে গেলো।অরুণী কড়া গলায় বলল”কিচ্ছু লুকাবি না আমার থেকে বল কি হয়েছে।”

রুহি এবার সন্ধ্যায় বাসায় আসার পর কি হয়েছে তা অরুণীকে বলল।সব শুনে অরুণী বলল”এতে মন খারাপ করার কি আছে।তুই যা বলেছিস বেশ করেছিস।শক্ত হতে শিখ।কেউ কিছু বললে ছেড়ে দিয়ে আসবি না উচিত মতো জবাব দিবি।আর এখন থেকে বাসায় কোনো পাশের বাসার আন্টি,বুড়ি মহিলা,কোনো ন্যারো মাইন্ডের মহিলা এলাউ করবি না।তাতে যদি তুই বেয়াদব হস তাহলে বেয়াদব হওয়াই ভালো।সবসময় লাইফটাকে ইনজয় করতে শিখ।কে কি বলল না বলল তাতে কারো কিছু আসে যায় না।তাই এগুলো ভাবা অফ কর।আর রাতে খেয়েছিস?”

“মাত্রতো আট টা বাজে।এখনি খাবো?”

“মানে কি রুহি?না খেলে বাচ্চা ভালো থাকবে কি করে।এখন খাবি রাতে শোয়ার সময় আবার খাবি।”

“আমি তো এতো খেতে পারি না।” রুহি অসহায় কন্ঠে বলল।

“আরে এখন খাবি তোর বাবুর জন্য আর ঘুমানোর সময় খাবি তোর জন্য।বুঝলি।কোনো বাহানা চলবে না।”

রুহি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল”আমি মনে রাখব।যখন তুই প্রেগন্যান্ট হবি তখন আমিও এমন করবো।”

অরুণী জোরেশোরেই হেসে দিলো।হাসতে হাসতেই বলল”আচ্ছা করিস।এখন আমার টাইম।”

অরুণীর কথা শুনে রুহিও হেসে দিলো।তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো।

ফোন রেখে অরুণী পড়তে বসতেই চিঠির কথা মনে পড়ে গেলো আজকে ভার্সিটিতে বই নেওয়ার সময় চিঠিগুলো বইয়ের ভেতর পেয়েছিলো।অরুণী চিঠি দুটো খুলতেই দেখলো প্রণয়ের হাতের লেখা।অরুণী রাগে চিঠি দুটো কুচিকুচি করে জানালা দিয়ে ফেলে পড়তে বসলো।প্রণয় যে ছেলে হিসেবে খারাপ তেমনও না।কিন্তু অরুণীর কেনো যেনো এগুলো তে ইন্টারেস্ট নেই।একা একাই থাকতে পছন্দ করে সে।কি দরকার কাউকে ভালোবাসার?সেই ভালো নিজেকে বাসলেও আরো ভালো থাকা যায়।মানুষ একজনকে ভালোবাসে ভালো থাকার জন্য কিন্তু দিনশেষে সেই মানুষটাই ছেড়ে যায় নিজের ভালো থাকার খোঁজে।এর চেয়ে কাউকে না ভালোবাসলে দিনশেষে অনেক বেশি ভালো না থাকলেও খারাপও থাকে না।অন্তত এটা ভেবে সান্ত্বনা পাওয়া যায় যে যে আমি তো কাউকে ভালোই বাসি নি তাহলে কষ্ট পাবারও কোনো কথা উঠছে না।
—————–
পায়েল চৌধুরী টেবিলে নাস্তা দিয়ে প্রিয়মকে ডাকতে গেলেন।প্রিয়মের ঘরে গিয়ে দেখলো ছেলে ইউনির্ফম পড়ছে।মাকে দেখে প্রিয়ম বলল”আম্মু একটু শার্টের বোতামগুলো লাগিয়ে দাও তো।”

পায়েল চৌধুরী হেসে প্রিয়মের সামনে দাড়িয়ে বলল”এবার একটা বিয়ে করে নিলেই তো পারিস বাবু।”

“ধূর,মা তুমি যে কি বলো!আমার এখনো বিয়ের বয়স হয় নি।”

পায়েল চৌধুরী কপট রাগ দেখিয়ে বলল”আটাশ বছরের দামড়া ছেলের নাকি বিয়ের বয়স হয় নি।তো কবে করবি বিয়ে আটত্রিশে?”

প্রিয়ম মায়ের কথা শুনে হেসে বলল”বিয়েই করবো না।”

“আমিও দেখবো তুমি কিভাবে বিয়ে না করো।আচ্ছা তোর কি কোনো পছন্দ আছে?”

“মা ক্রিমিনাল ধরেই তো কুল পাই না আবার মেয়ে পছন্দ করবো।কিন্তু একবার একটা লেডি কিলারের ওপর ক্রাশ খাইছিলাম।কিন্তু কি আর করার মেয়েটার ফাসি হয়ে গেছিলো।”

পায়ের চৌধুরী প্রিয়মে পিঠে একটা থাপ্পড় মেরে বলল”তোর চাপা বন্ধ করে খেতে আয়।পাঁজি ছেলে।”এটা বলে চলে গেলেন নিচে।মা যাওয়ার পর প্রিয়ম পারফিউম দিতে দিতে বলল”মা কাকে ভালোবাসবো বলো এই জগতে তুমি ছাড়া কেউই নির্স্বাথ ভাবে ভালোবাসে না।”

তারপর মাথার টুপিটা নিয়ে নিচে নেমে এলো।টেবিলে আগে থেকেই প্রিয়মের বাবা রাহাত চৌধুরী আর মা পায়েল চৌধুরী বসে আছে।প্রিয়ম বাবা মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে কিউট একটা স্মাইল দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো।

প্রতিদিন ওরা তিনজন সকালে নাস্তা একসাথেই করে কিন্তু দুপুরেরটা আর রাতেরটা প্রিয়ম বাইরে করে।কাজের চাপ থাকায় বাসায় ফিরতে লেট হয়।সেইজন্য বাইরে থেকেই খেয়ে আসে।আর ওর বাবা মা বাসায় খেয়ে নেয়।

মায়ের ডাকে অরুণী ঘুম ভাঙলো।কাল রাতে বইয়ের ওপরেই ঘুমিয়ে গেছিলো সে।অরুণী বইটাকে ঘুছিয়ে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ঘরে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে রুহি টেক্সট করলো ওর ভার্সিটির সামনে আসতে জরুরী কথা আছে তাই।

রুহি টেক্সট করে ফোনটা রেখে রেডি হতে লাগলো।কাল রাতে অরুনী পড়তে পড়তে ভাবলো যদি রুহি আবার পড়াশোনা করে তাহলে কেমন হবে?নিজের একটা পরিচয় থাকবে।মোটকথা নিজের স্টাডি কমপ্লিট করলে একটা জবও করতে পারবে।এই ভাবনা থেকেই অরুণী আজ রুহিকে ডেকেছে।
————————
আকাশের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে অনেক।কাল থেকে নাতাশা ফোন ধরছে না।কল দিলে বারবার কেটে দিচ্ছে।তাই আকাশ ভাবছে আজ যাবে নাতাশার চেম্বারে।যে ভাবনা সে কাজ।আকাশ অফিসের ফাইলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।নাতাশার সাথে দেখা করে অফিসে যাবে।
————
বাসে একফোঁটাও জায়গা নেই।তবুও বাসেই উঠতে হবে অরুণীর।প্রতিদিন সকলের এই সময়টা প্রচুর ভীড় হয় যাত্রীদের।দাড়িয়ে যাওয়াতো দূরের কথা।দাড়ানোর জায়গাই পাওয়া যায় না।তবুও কিচ্ছু করার নেই কষ্ট করতেই হবে।অরুণী বাসে উঠে পড়লো।প্রচুর ধাক্কা ধাক্কি হচ্ছে।যেনো একজনের গায়ের ওপর আরেকজন উঠে যাবে।হঠাৎ সামনে থেকে একটা ধাক্কা আসায় অরুণী টাল সামলাতে না পেরে কারো বুকের ওপর পড়লো।চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো প্রণয়ের চেহারা।অরুণী তাড়াতাড়ি উঠে দাড়িয়ে নিজেকে সামলে বলল”সরি।”

“ইট’স ওকে।” প্রণয় মৃদু হেসে জবাব দিলো।

দুইমিনিট পর আবার এক ধাক্কায় অরুণী আবারোও প্রণয়ের বুকের ওপর পড়লো।তড়িৎ গতিতে সরে গিয়ে আবারো সরি বলল অরুণী।তার উত্তরে প্রণয়ও ইটস ওকে বলল।একটু পর আবার ও একই কাজ হলো।এবার অরুণী প্রণয়ের বুকের ওপর থেকে উঠতে নিলেই প্রণয় বলল”এভাবে কতোবার সরি বলবে?আর আমি কতোবার ইট’স ওকে বলবো বলো?তার চেয়ে বরং সারাজীবন এখানেই থেকে যাও আমি বাধা দেবো না।”

অরুণী লজ্জা পেয়ে উঠে দাড়িয়ে অন্যদিকে তাকালো।তারপর আবারো ধাক্কা লেগে প্রণয়ের বুকের ওপর পড়লো অরুণী।বহুত হয়েছে আর না!এবার প্রণয় একহাত দিয়ে শক্ত করে অরুণীকে নিজের সাথে চেপে ধরলো।অরুণী উঠতে গিয়ে পারলো না।রেগে বলল”কি ধরনের অসভ্যতামি এগুলো?ছাড়ুন।উঠতে দিন।”

“না ছাড়বো না।বারবার তুমি আমার বুকের ওপর পড়বে আর বারবার আমার হার্টবিট বেড়ে যাবে ফলে আমার হার্ট অ্যাটাক চলে আসবে।তখন আমি কি করবো?তার চেয়ে ভালো আমার বুকের ওপর কান দিয়ে শোনো আমার হৃদয়ের ধ্বনি।বোঝার চেষ্টা করো সে কি বলছে?আর এদিকে আমার হার্ট টাও ভালো থাকলো।

অনেক মোড়ামুড়ি করেও অরুণী উঠতে পারলো না।শেষমেষ হাল ছেড়ে দিয়ে প্রণয়ের সাথেই লেপ্টে রইলো।শান্ত হয়ে ওর বুকের ওপর মাথা রাখতেই শুনতে পেলো প্রণয়ের বুকের ধুকপুকানি।কিছুক্ষণ শুনতেই অরুণী খেয়াল করলো ওর বুকের ধুকপুকানিটাও বেড়ে গেছে।এমন হচ্ছে কেনো?অরুণী আরো গভীর ভাবে শুনতে লাগলো।হঠাৎ প্রণয় অরুণীকে নাড়া দিয়ে বলল” এখানেই থাকবে নাকি ভার্সিটিতে যাবে?”

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-০৭

0

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ০৭
#Arshi_Ayat

সারাদিন আকাশ লকাপে ছিলো।নাতাশা বা অন্যকেউ আসে নি তাকে ছাড়াতে।আকাশের রাগ লাগছে প্রচন্ড।এই রুহির জন্য সব হয়েছে।রাগে মাথার ভেতরের রগ গুলো দপদপ করছে।আকাশ সামনে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়ম চা খাচ্ছে আর কি একটা ফাইল ঘাঁটছে।আকাশে প্রিয়মের দিকে চেয়ে দাত কিড়মিড়িয়ে বলল”এই শালা যদি আজ ওইখানে না থাকতো তাহলে ওই মা** বাচ্চা যে কই যাইতো।”
আকাশের প্রচুর আফসোস হচ্ছে।আর এখনতো কাউকে খবরও দিতে পারছে না।কতক্ষণ আর এখানে থাকবে!এখন প্রায় বিকেল।আজকে সারাদিনে কিছু খাওয়াও হয় নি।ইশ!যদি একবার নাতাশাকে ফোন করা যেত!এগুলোই মনে মনে ভাবছে আকাশ।
——————
রুহি আর অরুণী রিকশা করে ঘুরছে।দুজনেরই রিকশায় ঘুরতে ভালো লাগে।শেষ বিকেলের উচ্ছল বাতাসে অরুণীর চুলগুলো উড়ছে।পাশে রুহির চুলগুলো খোপায় থাকার কারণে তার চুলগুলো উড়ছে না।অরুণী এটা দেখে চুপিচুপি রুহির খোপাটা খুলে দিলো।রুহি ভ্রু কুচকে বলল”খোঁপা খুললি কেনো?”

“আমার চুল একা উড়বে কেনো?তোর গুলিও আমার গুলোর সাথে উড়বে।”

রুহি বিরক্ত কন্ঠে বলল”অরু খোপাটা দে চুল বাঁধবো।”

অরুণী অনুরোধের সুরে বলল”প্লিজ”

অরুণীর অনুরোধে রুহি আর চুল বাধলো না।এবার দুজনের চুলই লাগামহীন ভাবে উড়ছে।রাস্তার পাশে ফুচকার দোকান দেখে অরুণী রিকশা থামিয়ে রিকশা থেকে নেমে বলল”ফুচকা খাবি?”

“হুম,চল।”এই বলে রুহিও রিকশা থেকে নামলো।ওরা রিকশা ওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে দিলো।এখন দুজনে ফুচকে খেয়ে আশেপাশে একটু ঘুরবে।
অরুণী ফুচকার দোকানে গিয়ে বলল” মামা দুইপ্লেট ফুচকা দেন।একটায় ঝাল বেশি আরেকটায় কম দিবেন।”

অরুণীর অর্ডার দেওয়া শেষ হতেই কে যেনো বলল”মামা আমাদের পাঁচ প্লেট ফুচকা দেন।ঝাল ইচ্ছামতো দিবেন।”

অরুণী ঘুরে যেই বলবে তাড়াতাড়ি দিতে তখনই দেখলে প্রণয় দাড়িয়ে আছে।প্রণয়ও অরুণীকে দেখে কিছুটা অবাক হলো।যে মেয়ে এতো গম্ভীর হয়ে থাকে সে যে ফুচকাও খেতে পারে তা প্রণয়ের জানা ছিলো না।কিন্তু ও দুইপ্লেট কার জন্য নিচ্ছে?প্রণয় পাশে খেয়াল করতেই দেখলো একটা ছেলে পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।প্রণয়ের জায়গা থেকে দেখলে মনে হয় ওরা দুজন একসাথে কিন্তু না ছেলেটা ফুচকার জন্য দাড়িয়েছে আর অরুণী ছেলেটার পিছনে দাড়ানো রুহির জন্য আরেক প্লেট নিচ্ছিলো যা প্রণয় বুঝতে পারে নি।প্রণয়ের এই প্রথম রাগ হলো অরুণীর ওপর।এর আগে অরুণীর ব্যাবহারে কষ্ট হতো,অভিমান হতো কিন্তু কখনো রাগ হয় নি এই প্রথমবার প্রণয়ের রাগ হলো।প্রণয় কিছু না বলে একটু দূরে দাড়ানোর ওর বন্ধুদের কাছে গিয়ে দাড়ালো।বন্ধুরা দেখেই বুঝতে পারলে ওর কিছু হয়েছে।তা নাহলে ও এমন গাল ফুলিয়ে রাখারা মানুষ না।সাথী জিজ্ঞেস করলো”কি রে ভাই!এভাবে গাল ফুলিয়ে রেখেছিস কেনো?”

প্রণয় মন খারাপ করে বলল”জানিস আগে ভাবতাম অরুণী বোধহয় ভালোবাসা বিশ্বাস করে না।এইজন্যই এমন করে কিন্তু আজ পরিস্কার ওর বয়ফ্রেন্ড আছে বলেই ও এমন করে।”

প্রণয়ের কথা শুনে ফারদিন,সাথী,মিনহা,তুর্য সবার মুখ হা হয়ে গেছে।কেউই বিশ্বাস করতে পারছে না।মিনহা প্রণয়কে বলল”তুই কিভাবে জানলি যে ওর বয়ফ্রেন্ড আছে।”

“ওই যে ফুচকার দোকানে দাড়িয়ে দুজনে ফুচকা খাচ্ছে।”

“কিহ!”ফারদিন বিষ্ময়ে বলল।

প্রণয় বন্ধুদের এমন রিয়েকশন দেখে বলল” বিশ্বাস হচ্ছে না চল তোদের দেখাই।”

প্রণয় ওদের নিয়ে ফুচকার দোকানের সামনে যেতেই দেখলো অরুণী আর আরেকটা মেয়ে একসাথে দাড়িয়ে হাসাহাসি করতে করতে ফুচকা খাচ্ছে।আশেপাশে কোনো ছেলে নেই।এই দৃশ্য দেখে বন্ধুরা প্রণয়ের দিকে যেভাবে চাইলো তা দেখেই প্রণয় ঢোক গিলে বলল”বিশ্বাস কর আমি একটু আগেই দেখেছি।কিন্তু! ”

ফারদিন হতাশ গলায় বলল”দোস্ত তোকে ডাক্তার দেখাতে হবে তুই মেয়েকে ছেলে দেখিস।”

সাথী ভয় পাওয়ার ভান করে বলল”এই প্রণয় তুই আমাদের কে কি ঠিক ঠাক দেখতে পাচ্ছিস?নাকি আমাদেরও উল্টা পাল্টা দেখছিস?”

“প্রণয় মনে হয় তুই ভুল দেখেছিস।হয়তো যে ছেলেটি অরুণীর সাথে দাড়িয়েছিলো ও ওর কেউ না।হয়তো ফুচকা কিনার জন্য দাড়িয়েছিলো।”

তুর্যের কথায় সবাই সমর্থন করলো আর প্রণয়ও নিজের বলদামি ধরতে পেরে আবুল মার্কা হাসি দিলো ওর হাসি দেখে ওর বন্ধুরাও হেসে দিলো।হাসতে হাসতে মিনহা বলল”যা কথা বলে আয়।”

“না রে।এমনিতেই আমাকে সহ্য করতে পারে না।তার ওপর এখন দেখেই বোঝা যাচ্ছে মুড ভালো।তাই এখন গিয়ে মুডটা খারাপ করার কোনো দরকার নেই।”

তারপর পাঁচজন মিলে ফুচকা খাওয়া শুরু করলো।এদিকে রুহি আর অরুণী ফুচকা খাওয়া শেষ করে ফুটপাত ধরে হাটতে লাগলো দুজনে দুজনের হাত ধরে।

কিছুদূর যেতেই ছোটখাটো একটা মেলা দেখতে পেলো।দুজনেই মেলায় গেলো।মেলায় কিছুক্ষণ ঘুরে বেরিয়ে এলো।এতক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।বাসায় ফেরা উচিত।অরুণী রুহিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের বাসায় চলে গেলো।
———————-
প্রিয়ম একটা ফাইল দেখছিলো খুব মনোযোগ দিয়ে।হঠাৎ নাতাশা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বলল”আকাশা কেথায়?”

নাতাশা আচমকা কথার আক্রমনে প্রিয়মের মনোযোগ নষ্ট হলো সে বিরক্তিতে মুখ কুচকে সামনের দিকে চাইতেই দেখলো একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।প্রিয়ম চেয়ার দেখিয়ে বলল”বসুন।”

“বসতে আসি নি।আগে বলুন আকাশ কোথায়?”

“আপনার আর আমার মাথার ওপরে।” প্রিয়ম একটু মজা করে উত্তর দিলো।কেনো যেনো প্রিয়মের নাতাশাকে ক্ষেপাতে মন চাইছে।নাতাশার বিষয়ে সব তথ্যই নিয়েছে প্রিয়ম।
প্রিয়মের মন হেঁয়ালিপূর্ণ কথা শুনে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে নাতাশার।নাতাশা বিরক্তি কন্ঠে বলল”আমি হেয়ালি একদম পছন্দ করি না।আপনি বলবেন আকাশ কোথায়?”

“বললামই তো।”

“আপনি আমাকে চেনেন না।আমি চাইলে এই মুহুর্তে আপনাকে চাকুরীচ্যুত করতে পারি।”

প্রিয়ম কিছুটা ভয় পাওয়ার ভান করে বলল”ওহ!আমি ভয় পেয়েছি।প্লিজ আমার চাকরী খাবেন না।”
এটা বলে একটা বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলল”মিস নাতাশা হাসান।আপনাকে আমার চেনার প্রয়োজন নেই।আর আমার চাকরী আপনি পারলে খেয়ে দেখান।উপরন্তু আপনাকে এখন আমি জেলে পুরতে পারি।”

“কেনো?”

“এই যে জেলে বসে আমাকে থ্রেড দেওয়ার অপরাধে।”

“এসব বাদ দিন এখন বলুন আকাশকে কখন ছাড়বেন?”

“উকিল নিয়ে আসুন।”

“ওর ওপর কি অভিযোগ আনা হয়েছে?”

“নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগ।”

“কোনো প্রমাণ ছাড়াই এরেস্ট করেছেন কেনো?’

“প্রমাণ যখন আমি নিজে তখন এক্সট্রা প্রমানের প্রয়োজন নেই।”

নাতাশা দাঁত কিড়মিড় করে উঠে বাইরে গিয়ে ওর উকিল বন্ধুকে কল করে আসতে বলল।
————————
রুহি বাসায় ঢুকেই দেখলো একটা মহিলা বসে আছে সোফায়।মুখোমুখি সোফায় ওর মা ও বসে আছে।মহিলাটা রুহিকে দেখে বলল”তুমিই রুহি?”

রুহি নিজের মায়ের দিকে এক পলক চেয়ে বলল”হ্যাঁ।”

“বসো।”
রুহি ওর মায়ের পাশেই বসে পড়লো।মহিলাটা রুহিকে বলল”মাথা গরম করলে হবে না।স্বামীকে বোঝাও।জানো তো মেয়েদের বিয়ের পর স্বামীই সব।স্বামী মারুক কাটুক স্বামীর বাড়িই আপন।আর স্বামী রাগ করলে রাগ ভাঙাতে হয়।”

রুহির প্রচন্ড রাগ হলো।তবুও সামলে নিয়ে বলল”কিন্তু পরকিয়া করলে কি করবো?”

“আরে ছেলে মানুষ একটু এমনই।আর তোমার সমস্যা কি? ছেলেরা দুই বিয়ে করতেই পারে।তোমারে ঠিকমতো ভরণপোষণ দিতে পারলেই তো চলে।”

“হ্যাঁ ছেলেরা পরকিয়া করতে পারবে,বউ পেটাতে পারবে,বাচ্চা নষ্ট করতে পারবে কিন্তু মেয়েদের প্রতিবাদ করা যাবে না।মুখবুজে সহ্য করতে হবে।তারপর এমন সহ্য করতে করতে একসময় কবরে চলে যাবে।এই হলো মেয়েদের জীবন।কেনো?সবসময় সেক্রিফাইস মেয়েরাই কেনো করবে?আর আপনাদের মতো মায়েদের জন্য আমাদের মতো মেয়েরা এসব অত্যাচার সহ্য করতে হয়।কারণ বিয়ের আগে বলে দেওয়া হয় জামাই যেভাবে বলবে সেভাবে চলবি।জামাইর সেবা করবি।কেনো?সবসময় আমরাই কেনো ওদের কথামতো চলবো?ওদের সেবা করবো?আমরাও তো মানুষ আমাদেরও তো আদর যত্ন পেতে ইচ্ছে করে।কিন্তু…

রুহি আর কিছু বলতে পারলো না কান্না করে দিলো।তারপর দ্রুত একহাত দিয়ে চোখের পানি মুছে বলল”আমাকে যা জ্ঞান গুলো দিলেন সেগুলো আপনার মেয়েকে দিয়েন।এই জ্ঞানের আমার প্রয়োজন নেই।” কথাগুলো বলে রুহি হনহন করে উঠে চলে গেলো।

রুহির কথাগুলো শুনে মহিলার অপমানে মুখ কালো হয়ে গেলো।তাই সেখানে আর বসে না থেকে চলে গেলেন।মহিলাটা যেতেই রুহির মা রুহির কাছে গিয়ে দেখেন রুহি বালিশে মুখ গুঁজে আছেন।

রুনা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)