এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-১৪

0
2126

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ১৪
#Arshi_Ayat

এখন বিকেল আর সন্ধ্যার মাঝামাঝি সময়।অরুণী বাসায় ফিরেছে মাত্রই।এতক্ষণ প্রণয়ের সাথেই ছিলো।প্রথম প্রথম অস্বস্তি লাগলেও পরে ঠিক হয়ে যায় প্রণয়ের কথায়।প্রণয় হাটতে হাটতে বলেছিলো”অরুণী আমাদের মধ্যে তথাকথিত কোনো সম্পর্ক নেই।তাই প্লিজ অস্বস্তিতে থেকো না।একদিনই তো।একদিনের জন্য হলেও বন্ধু ভাবতে পারো।কথা দিচ্ছি বন্ধু হিসেবে অতোটা ও খারাপ হবো না।”

অরুণী প্রণয়ের কথায় হালকা একটু হেসেছিলো।তারপর দুজনেই কথা বলা শুরু করলো।নিজেদের স্কুল কলেজের ঘটনাও বলতে শুরু করলো।এভাবেই কথাবার্তা, হাসাহাসি চলেছে পুরোটা সময়।সবটা প্রণয়ের জন্যই হয়েছে।বেশিরভাগ সময় ও ই কথা বলেছে।তারপর ওরা মাওয়া ঘাট গিয়েছিলো।সেখানে ইলিশ খিচুড়ি খেয়ে আসতে আসতে বিকেল হওয়ে যাওয়ায় দুজনেই দুজনের বাসায় চলে আসে।যাওয়ার আগে প্রণয় অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেছিলো”আজ সারাটাদিন আমি সারাজীবন মনে রাখবো।আর এই একমাসের মধ্যে আমি লন্ডন চলে যাবো।তারপর আর আসবো কি না জানি না।আশা করি সবকিছু নিয়ে তুমি ভালো থাকবে।আল্লাহ হাফেজ।”

এটা বলে প্রণয় চলে গিয়েছিলো।আর অরুণী নিজের বাসার দিকে চলে আসলো।আজকে থেকে দুজনের রাস্তা আলাদা হয়ে গেলো।কখনো কি আবার দুজনের রাস্তা এক হবে?

অরুণী ফ্রেশ হয়ে এসে বিছনায় বসে রুহিকে কল দিলো।রুহি ফোনের পাশে থাকায় সহজেই রিসিভ করে ফেললো
“হ্যাঁ বল।”

“কি করিস এখন?”

“তেমন কিছু না।বসে আছি।ভালো লাগছে না।”

“কেনো?”

“জানি না।আজ আকাশ ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছিলো।আমি সাইন করে দিয়েছি।”

“ভালোই হলো।এমনিতেও এটা হওয়ারই ছিলো।এখন মন খারাপ না করে শক্ত হ।আর নিজের জীবনটা আবার গুছিয়ে নে।”

“হুম।রুহি মলিন গলায় জবাব দিলো।

এভাবেই আরো কিছুক্ষণ কথা চললো ওদের মাঝে।
.
.
আরো পাঁচ দিন পর,,,

সকাল থেকেই অরুণীদের বাসার সবাই ব্যস্ত।কাল অরুণী হলুদ ছোয়া গেলো আজ বিয়ে।তাই কাজিনরা বন্ধু বান্ধব সবাই ব্যস্ত।অরুণীর বাবা মারও ব্যাস্ততার শেষ নেই।একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা।

নিলু,রাফা অরুণীর কাজিন আর রুহি সহ মাত্রই পার্লারে গেলো।
——————–
এদিকে প্রিয়মের সাথে প্রিয়মের মা রাগ করে আছে।প্রিয়ম এখনো থানা থেকে আসে নি।দুপুর বারোটা বাজতে চললো।এদিকে সব আত্মীয়রা অপেক্ষা করছে ওর জন্য আর ওইদিকে তিনি ক্রিমিনাল তাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন।পায়ের চৌধুরী মনে মনে এগুলো বকতে বকতে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলেন প্রিয়ম এসেছে।প্রিয়ম মাকে দেখে মেকি হেসে বলল”আর বলো না।তুমিতো জানোই আমি কতো ব্যস্ত থাকি।”

পায়েল চৌধুরী কপট রেগে বললেন”চুপচাপ ঘরে গিয়ে তৈরি হয়ে নে।একসপ্তাহর আগে যদি বউয়ের আচলের নিচ থেকে বের হইছিস তাহলে তোর খবর আছে।”

প্রিয়ম ভালো ছেলেদের মতো মাথাটা কাত করে নিজের রুমে চলে গেলো কিন্তু মনে মনে বলল’একসপ্তাহ কি মা।বৌভাতের পরেরদিনও তুমি আমাকে ধরে রাখতে পারবে না।’

তারপর প্রিয়ম রেডি হওয়া শুরু করলো।ওর বন্ধুরা আর ভাইরাও এতক্ষণে চলে এসেছে।ওরাই ওকে সাহায্য করছে।
———————-
আকাশ আর ওর বাবা মা নাতাশাদের বাড়িতে এসেছে বিয়ের কথা বলতে।নাতাশা ওদের সোফায় বসিয়ে দিয়ে ভেতরে গেলো নিজের বাবা মাকে ডাকতে।কিছুক্ষণ পরই ওর বাবা মা দুজনই এলেন।তারা আকাশের বাবা মায়ের মুখোমুখি বসলেন।তাদের মধ্যে কুশলবিনিময় হওয়ার পর প্রথমে নাতাশার বাবাই বললেন”ভাই সাহেব আপনার ছেলের নাকি এর আগেও এক বিয়ে হয়েছিলো?”

“হ্যাঁ,তবে মেয়ে ভালো না তাই আমাদের আকাশ ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে।” আকাশে বাবা বলল।

“ও,,,শুনলাম আপনার ছেলের আগের বউয়ের বাচ্চা হবে।তাহলে পেটের বাচ্চাটা কার?”

“আমরা জানি না।আকাশও জানে না।সেইজন্যই তো আকাশ ডিভোর্স দিচ্ছে।”

“ডিভোর্স দিলেই কি আর সব শেষ হয়ে যাবে?ওই মেয়ের বাচ্চাতো আকাশকেই বাবা বলবে।আর ওর সম্পত্তির ওপর ভাগ বসাতে চাইবে।”

এতক্ষণ আকাশ কথা না বললেও এখন মুখ খুললো।আকাশ বিরক্ত হয়ে বলল”আঙ্কেল ও বাচ্চা দিয়ে কিছুই করতে পারবে না।আমি সেই ব্যবস্থা করে ফেলবো।আপনি শুধু বিয়ের কথা বলুন।দিন তারিখ ঠিক করুন।”

“আমি তো তোমার কাছে আমার মেয়ে বিয়েই দিবো না।তো দিন তারিখ কেনো ঠিক করবো?”

আকাশ রেগে বলল”কেনো?”

“প্রথমত তোমার আগে এক বিয়ে হয়েছে দ্বীতিয়ত ওই বউয়ের বাচ্চা হবে তৃতীয়ত আমার মেয়ের জামাই হবার কোনো যোগ্যতা দেখি না তোমার মধ্যে।”

আকাশ প্রচুর রেগে নাতাশাকে বলল”এসব কি নাতাশা?”

“আমি কি করবো বলো বাবা মা না মানলে আমার কিছুই করার নেই।”

“কিন্তু আমাদের মধ্যে তো এমন কথা হয় নি।তুমি বলেছিলে বাবা মা না মানলেও আমরা বিয়ে করবো।”

“হ্যাঁ বলেছিলাম কিন্তু এখন আমার পক্ষে সম্ভব না।”

আকাশ রেগে একটা ফুলদানি আছড়ে ভেঙে ফেললো তারপর বলল”আমিও দেখি তোর কি করে অন্যকারো সাথে বিয়ে হয়।”

এটা বলেই আকাশ বেরিয়ে যায় সাথে আকাশের মা বাবাও।
——————
প্রিয়ম মোটামুটি তৈরি।জামাই সাজে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।পায়েল চৌধুরী ছেলের কপালে চুমু দিয়ে বললেন”মাশাল্লাহ আমার চাদের দিকে যাতে কারো নজর না লাগে।”

প্রিয়ম কিছু বলার চগেই ওর একটা কাজিন রুপম বলল”ধূর খালা তোমার চাঁদের দিকে মানুষ নজর দেয় না।তোমার চাঁদই মানুষের দিকে নজর দিয়ে কুল পায় না।”

রুপের কথা শুনে প্রিয়ম ওর পিঠে ধুম করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বলল”চুপ কর তুই,বেশি কথা বলিস।”

রুপম ওএবার প্রিয়মের পিঠে ধুম করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বলল”তুই চুপ কর।একটু পর তোর বিয়ে।একটু লজ্জা শরম রাখ।”

দুইজনের এমন মারামারি দেখে পায়েল চৌধুরী বললেন “তোরা দুইজনই চুপ কর।আর নিচে আয় আমরা এখনই রওনা হবো।”

এটা বলে পায়েল চৌধুরী চলে গেলো।
——————–
অরুণী বিছানায় বসে আছে সেজেগুজে।আজকে কেনো জানি মনটা বলছে প্রণয়কে একবার দেখতে।কিন্তু কেন?এখন দেখতে চাওয়ার মানে কি?তবে অরুণী কিছুতেই নিজের মনকে মানাতে পারছে না।পানির তৃষ্ণার মতো আজ প্রণয়কেও দেখার তৃষ্ণা পাচ্ছে অরুণীর।হঠাৎ করে মনে হচ্ছে বিয়েটা করা ঠিক হচ্ছে না!কিন্তু এই শেষ মুহুর্তে এসে কি করবে অরুণী?এখন কিছু করলে বাবা মায়ের সম্মান নষ্ট হবে।এবার কি হবে!!!!
—————-
প্রিয়মরা পৌঁছে গেছে কনের বাড়িতে।ভেতরে যেতে যেতে কেউ একজন জোরেজোরে বলে উঠলো”বউ পালিয়েছে।”

একথা শুনে প্রিয়মের বাবা চিন্তিত ভাঙ্গিতে ভেতরে গেলেন।গিয়ে জানতে পারলেন আসলেই বউ পালিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।

প্রিয়মের বাবা রাহাত চৌধুরী বাইরে এসে বরযাত্রীদের ফিরে যেতে নির্দেশ দিলেন।ওনার এই নির্দেশে সবাই বুঝতে পারলো আসলেই বউ পালিয়েছে।প্রিয়মের মেজাজ আগুনের মতো গরম হয়ে গেছে।পালানোর হলে কাল কি করেছে?কাল পালালেই তো আর এমন হতো না।প্রিয়ম মাথার ওপর থেকে পাগড়িটা ফেলে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।

চলবে…..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে